কলেজ গুড ম্যানার্স প্রতিযোগিতা
কলেজ গুড ম্যানার্স প্রতিযোগিতা
একাদশ শ্রেণীর জন্য প্রথম ৮৫টি, দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য প্রথম ১০০ টি এবং অনার্স ১ম বর্ষের জন্য ১১০ টি , অনার্স ২য় বর্ষের জন্য ১২০ টি , অনার্স ৩য় বর্ষের জন্য ১৩০ টি, এবং মাস্টার্স -এর জন্য ১৫০টি অর্থাৎ সকল প্রশ্ন উত্তর বাধ্যতামূলক। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ অনলাইনে। প্রত্যেককে আলাদা ডিভাইসে এবং একই সময়ে পরীক্ষা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
নিচের অংশটুকু ইন্টারমিডিয়েট শিক্ষার্থীদের জন্য
১০০ টি আদব কায়দা ও নৈতিকতা
খাবারের চারটি নিয়ম মেনে চলুন -
১। লবণ, চিনি মেশানো ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার, আলু, রুটি, ভাত, তেল, ঘি, চর্বি ইত্যাদি যতটা সম্ভব কম খাবেন, শাক-সবজি, ফলমূল লাইভফুড বেশি খাবেন। একটি ছোট প্লেটে ভাতের চেয়ে সবজি বা তরিতরকারি বেশি নিয়ে একটি ছোট চামচের মাধ্যমে খাবেন অতি ধীরে ধীরে কচ্ছপের গতিতে। হাত থেকে খাবারের দূরত্ব বজায় রাখবেন। হাত ভালোভাবে ওয়াশ না করে কোনো খাবারই হাত দিয়ে ধরবেন না।
২। মুখ বন্ধ করে খাবার ছিটাবেন, খাবারের সময় কারো সাথে বা মোবাইলে কথা বললে মুখের লালা তিন ফুট পর্যন্ত চারদিকে ছড়াতে থাকে; যা খালি চোখে দেখা যায় না। এতে একজনের রোগ জীবাণু অন্যজনের পেটে যায়।
৩। দিনের তিন বেলা খাবারকে ৬ থেকে ১০ ভাগে ভাগ করে খাবেন, দিনে দু’ঘন্টার বেশি না খেয়ে থাকবেন না, অন্তত পানি হলেও খেতে হবে। সন্ধ্যার পর বা রাতে শুধুমাত্র পানি ছাড়া সকল খাবার গ্রহণ ১৩ থেকে ১৬ ঘন্টা বন্ধ রাখুন।
৪। ডেড ফুড ও প্রসেস ফুড কম খাবেন। খাবারের সময় বা খাবারের পর পর পানি খাবেন না, অন্তত খাবারের আধা ঘন্টা পরে খাবেন। ক্ষিধে না লাগলে কেউ জোর করলেও খাবেন না।
মলত্যাগের নিয়ম:-সপ্তাহে তিনবার থেকে দিনে তিনবার মলত্যাগ করাটা আদর্শ। যখন একজন ব্যক্তির মলত্যাগ কম হয়, তখন মল তাদের অন্ত্রে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকে। ফলে তাদের অন্ত্রের জীবাণুগুলো তাজা খাবার পায় না,– তাই তারা ফাইবার এবং কার্বোহাইড্রেট খাওয়া থেকে প্রোটিন খাওয়ার দিকে চলে যায়। এতে ক্ষতিকর টক্সিন তৈরি হয়, যা রক্তে মিশে কিডনি ও হৃদযন্ত্রের মতো বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। ফল ও শাক সবজিতে আছে ফাইবার। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ও পর্যপ্ত পানি পানে নিয়মিত মলত্যাগ হয়।
গোসলের নিয়ম:-শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা বাইরের পানির তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগে। তাই প্রথমেই মাথায় পানি দিলে সঙ্গে সঙ্গে রক্তসঞ্চালনের গতি বহু গুণ বেড়ে যায়। ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ও মস্তিষ্কের ধমনি ছিঁড়ে যেতে পারে। এজন্য স্ট্রোক সাধারণত বাথরুমেই বেশি হয়। প্রথমে পায়ের পাতা ভেজাতে হবে। এরপর ওপর দিকে কাঁধ পর্যন্ত তারপর মুখ, সবার শেষে মাথা। দুই বা তিন দিন পরপর গোসল করা স্বাস্থ্যসম্মত। অন্যসময় গামছা /তোয়ালে দিয়ে বগল এবং কুচকি মুছে সংক্ষিপ্ত গোসল হতে পারে। প্রতিদিন সাবান বা শাওয়ার জেল ব্যবহার করবেন না। আমাদের ত্বক থেকে এক ধরনের তেল নিঃসরিত হয়, যা ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল রাখে। এ ছাড়াও ত্বকের বাইরের স্তরে কয়েক ধরনের স্বাস্থ্যকর জীবাণু থাকে। যারা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে এবং শরীরে প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে। সাবান বা জেল ব্যবহারে ত্বকের নিঃসরিত তেল এবং ভালো জীবাণুও পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে ত্বক উজ্জ্বলতা হারায়।
ঘুমের নিয়ম:-মন-মেজাজ ভালো রাখার সঙ্গে শরীর ও মনকে কার্যকর রাখতে পরিমিত ঘুম দরকার। রাত ১০টা-১১টার মধ্যে শুয়ে পড়া এবং ভোর ৫টা-৭টার মধ্যে ওঠা স্বাস্থ্যসম্মত। শিশু (৬-১৩ বছর): ৯-১১ ঘন্টা; কিশোর (১৪-১৭ বছর): ৮-১০ ঘন্টা; এবং প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৬৫ বছর): ৭-৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। শোবার ঘর অন্ধকার এবং শান্ত হওয়া উচিত। শক্ত ও নরমের মাঝামাঝি গদি এবং নরম বালিশ ব্যবহার করুন। পিঠ বা বাঁ দিকে ফিরে শোয়া সর্বোত্তম; উপুড় বা পেটের উপর নয়। প্রস্রাবের বেগ এড়াতে ঘুমের ১ ঘন্টা আগে পানি কম পান করুন। ঘুম না এলে উঠে বই পড়ুন। সন্ধ্যার পর হাটা বা জগিং কিংবা ব্যায়াম করা উচিত নয়। দুপুরে ১০-২০ মিনিট হালকা ঘুমিয়ে নিতে পারেন।
১। কোনো কিছু চাওয়ার সময় কাইণ্ডলি বা ‘দয়া করে’ বলতে হবে এবং কোনো কিছু পাওয়ার সময় ‘ধন্যবাদ’ বা থ্যাংক ইউ। কারো অনুমতি নেওয়ার আগে 'হ্যালো' ‘এক্সকিউজ মি‘ বা ‘আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি’ বলতে হবে। যে কোনো ভুলের জন্য নিঃসংকোচে ‘দুঃখিত’ বা সরি বলতে হবে। আমাদের প্রধান ব্যক্তিগত সমস্যা 'সরি' বলতে না চাওয়া। সরি বলাকে অনেকে মনে করে ' নিজের হার মেনে নেওয়া এবং সবার সামনে নিজেই ছোট হয়ে যাওয়া । অথচ বাস্তবতা ঠিক উল্টো—সরি বলার মানে হচ্ছে সহমর্মী হওয়া। অর্থাৎ আমার ভিতর কোন দম্ভ আর অহংকার নাই বুঝাতে 'সরি' ব্যবহার করা হয়। উন্নত বিশ্বে সরি বলা হচ্ছে 'সুপার গ্লুর' মতো একটা শব্দ, যা যেকোনো বিষয়কে মেরামত করে দিতে পারে, বহু জটিলতা কেটে যেতে পারে। তাই তারা এমনকি হাঁচি বা কাশির সময়ও মুখে তাত চাপা দিয়ে সরি বলে।
২। যে কারও ঘরে প্রবেশ করার আগে দরজায় কড়া নাড়ানো এবং অনুমতি চেয়ে নিতে হবে। নিজেদের নয় এমন কোনও জিনিসে, এমনকি তার মা-বাবার জিনিসেও হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই তাদের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি নেওয়া হলে সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করে। বিনা অনুমতিতে কিছু নিলে ভুল বোঝাবুঝি বা বিরোধের সৃষ্টি হয়। কারো ব্যক্তিগত মোবাইল, কম্পিউটার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট, ছবি, ভিডিও ইত্যাদিসহ যে কোন কিছু ওই ব্যক্তির অগোচরে দেখা গোয়েন্দাগিরি করার শামিল, যা অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ। কারো ব্যক্তিগত ছবি তোলার আগে বা ভিডিও করার আগে তাদের অনুমতি চাইবেন। অন্যের জিনিসকে নিজের দামী জিনিসের মতো ভেবে, যত্ন করে রাখতে হবে।
৩। সব সময় রাস্তার ডান পাশ দিয়ে হাঁটতে হবে। মোবাইল ব্যবহার, গান শোনা, বা অন্য কোন কিছুতে মনোযোগ দিয়ে হাঁটা থেকে বিরত থাকতে হবে। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে বাঁক বা মোড়ের রাস্তা ব্যাবহার করবেন না। রাস্তায় খেলা করা বা দৌড়াদৌড়ি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেউ আপনার দিকে আসছেন দেখে তার দিকে তাকিয়ে থাকা অভদ্রতা।
৪। যত অল্প খাবারই হোক না কেন, খাবারগুলি অপরের সাথে ভাগ করে নেবার অভ্যাস চর্চা করতে হবে। কখনো একা খাবেন না। আপনার মূল নীতি হবে- আমার আছে, তোমার নেই" নয় - বরং "আমাদের আছে" । যখন আপনি নিজের খাবার, বই-নোট বা জ্ঞান অন্যদের সাথে ভাগ করে নেন, তখন আপনাদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি ও সহযোগিতা করার মানসিকতা তৈরি হয় এবং আন্তরিকতা ও উদারতা প্রকাশ পায়। এটি পারস্পরিক বিশ্বাস এবং বোঝাপড়া বাড়ায়, যা এটি একটি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সভ্য সমাজ গঠনে সহায় হয়। এটা সমষ্টিগতভাবে আপনার উন্নতিতে সাহায্য করে। বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত যে, অন্যদের সাথে কিছু ভাগ করে নেওয়া আমাদের মনে সুখ ও মানসিক শান্তি বয়ে আনে। যখন কোনো আত্মীয় বা বন্ধুদের বাড়িতে যাবেন, তখন সেখানে শান্ত, ভদ্র এবং নম্র হয়ে থাকবেন। তাদের পরিবেশিত খাবারের উপর কোনো খুঁতখুঁতে ভাব দেখাবেন না এবং আপনার পছন্দের খাবারের কথা বলবেন না।
৫। কেউ যদি আপনাকে খাওয়াতে নিয়ে যায় তবে অল্পদামি কোনো খাবার বাছাই করুন। ছুরি ডান হাতে এবং চামচ বা কাঁটা চামচ থাকবে বাম হাতে। স্যুপ গরম হলে তাতে ফুঁ না দিয়ে চামচ দিয়ে নেড়ে ঠাণ্ডা করুন। পাস্তা, নুডলস, কাঁটা চামচ দিয়ে খেতে হয়।
৬। হাঁচি বা কাশির সময় বা হাই তোলার সময় মুখ হাত দিয়ে চাপা দিতে হবে। কারো সামনে নাকে,গালে, মুখে হাত দেওয়া বা খোঁটা থেকে বিরত থাকতে হবে। কথা বলার সময় হাত দিয়ে মুখ ঢাকার অর্থ আপনি নার্ভাস।
৭। যে কেউ ঘরে প্রবেশ করার সময় বা বের হবার সময় দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে বা হাতলটা টেনে ধরে ঢুকতে/বেরুতে সাহায্য করতে হবে। অতিথি যাবার সময় অবশ্যই বাড়ির গেট পর্যন্ত এগিয়ে দেয়া এবং তিনি অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা উচিত।
৮। যারা মুখের ডান পাশ দিয়ে খাবার চিবান,তারা ডানহাতি অর্থাৎ তারা কোনো কিছু করতে ডান হাত ব্যবহার করেন; আর যারা মুখের বাম পাশে খাবার চিবান, তারা বাম হাত দিয়ে সবকিছু করেন। তবে কোনো কারণ ছাড়া বাম হাতে পানি পান করা মাকরুহ। তবে প্রয়োজন হলে বাম হাতের সাহায্য নেওয়া যায়। আমাদের দেশে বাম হাতে খাবার স্পর্শ করাকে অশালীন কাজ হিসেবে দেখা হয়। একইভাবে খাবার সরবরাহ করা বা পাত্র ধরতে ডান হাত ব্যবহার করার রীতি অনুসরণ করা হয়। কাউকে টাকা দিতে বা গ্রহণ করতে ডান হাত ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে বাম হাতকে কাজে লাগানোকে অভদ্র হিসেবে দেখা হয়। তবে সব দেশেই করমর্দনের ক্ষেত্রে মানুষ এগিয়ে দেয় ডান হাত।
৯। পায়খানা বা প্রস্রাবের সময় কিবলামুখী হয়ে না বসা, ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য করা, তিনটি ঢিলার কম দিয়ে শৌচকার্য না করা ইসলামি সুন্নাত। আমরা ইসলামি সুন্নাহ মেনে বসে প্রস্রাব করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তবে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার ভঙ্গি স্বাস্থ্যের উপর কোনও প্রভাব ফেলে না। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা পুরুষদের জন্য ক্ষতিকর নয়। বহু সংস্কৃতিতে বাচ্চাদের শেখানো হয় ছেলেরা দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগ করবে আর মেয়েরা বসে। যারা বসে মূত্রত্যাগ করেন তাদেরকে 'সিটজস্পিঙ্কলার' বলা হয়, এর মানে ওই কাজটি ঠিক পুরুষালী নয়। পাবলিক টয়লেটগুলিতেও পুরুষদের জন্য দাঁড়িয়েই প্রস্রাব করার ব্যবস্থা থাকে। তবে সুন্নাহ মেনে পুরুষদের দাঁড়িয়ে করার থেকে বসে প্রস্রাব করা উচিত।
১০। রেস্তোরাঁ বা বাড়ীতে নিজের খাবারের ওয়েস্টিজ নিজেই ডাস্টবিনে ফেলবেন। অন্যের ওয়েস্টিজও নিজের মনে করে সংরক্ষণ করে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। আপনার ওয়েস্টিজ ও প্লেট অন্য কেউ পরিষ্কার করাটা অসভ্যতা।
১১। কখনো কাউকে কাজের লোক বা বুয়া বলে ডাকা যাবে না। মনে রাখতে হবে তারাও কারো না কারো ভাই, বোন, মা, বাবা। তাদেরকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে।
১২। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে বা কোথাও কোনো বয়স্ক ব্যক্তি বা মহিলা চোখে পড়লে, তাকে নিজের বসার স্থানটি ছেড়ে দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা উচিত।
১৩। কোথাও গিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসা, পা নাচিয়ে চলা, হেলাল দিয়ে বাঁকিয়ে বসা কিংবা টেবিলে সামনে ঝুঁকে কারো সাথে কথা বলা অভদ্রতা। এছাড়া ২পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা অতিথির সাথে কথা বলার সময় বা যে-কারো সামনে বসে’ মোবাইল ফোন টিপা কিংবা কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না একা থাকা যাবে।
১৪। অন্যের অনুপস্থিতিতে কখনো তার সমালোচনা করবেন না। এই ধরণের আলাপ আলোচনা থেকে দূরে থাকুন। কেউ অন্যে কারো সমালোচনা করলে আপনি তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে সবার কাছে আপনি সম্মানিত হবেন।
১৫। কোনো প্রয়োজনে কোথাও গেছেন, সেখানে সালাম দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা ভদ্রতা। বসতে আনুমতি চাওয়া, খুব সংক্ষেপে আপনার প্রয়োজন তুলে ধরা, প্রশ্নের সঠিক জবার দেয়া ইত্যাদি ভদ্রতা ও সভ্য আচরণের অংশ।
১৬। অপরিচিতজনের সঙ্গে কথাবার্তার সময় প্রথমে নিজের পরিচয় দিয়ে আলাপ শুরু করুন। কোনো প্রতিষ্ঠানে গেলে অপরিচিত সবাইকে স্যার, ম্যাম বলে সম্বোধন করা নিয়ম। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের বাইরে সবাইকে ভাইজান / আপামনি / বড়ভাই / ছোটভাই / মামা /আংকেল-আন্টি ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত।
১৭। শিক্ষক ও গুরুজনদের নিয়ে উপহাস/হাসাহাসি করা নিম্ন শ্রেণির বর্বর কাজ। এই আচরণ যারা করে, এমন জঘন্যদের বর্জন করুন। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনসহ চেনা-পরিচিতদের ভাল গুণগুলোর প্রশংসা করতে হবে এবং খাবাপ গুণ বা সমালোচনা এড়িয়ে চলতে হবে।
১৮। পরিবারের সদস্য, আত্মীয় বা অন্য যে-কোনো নারী-পুরুষ, কে কী পোষাক পরেছে, হিজাব না টপলেস, স্কাট না বিকিনি, তা নিয়ে উৎসুখ থাকা এবং মন্দ মন্তব্য করা জঘন্য অপরাধ। কে কি পরবে, তা তার রুচি ও পছন্দের ব্যাপার।
১৯। বাড়িতে অতিথি এলে প্রথমে অতিথিদের ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিন, তার পরে অন্যরুম দেখান। আপনি কোথাও অতিথি হলে আয়োজকের জন্য অপেক্ষা না করে খাবার খাওয়া শুরু করবেন না। আপনার যদি আগে চলে যেতে হয়, তবে অনুমুতি নিন। কারো বাড়িতে অনুমতি না নিয়ে কোন জিনিসে হাত দিবেন না।
২০। কখনো মুখটাকে হাঁড়ি করে রাখা যাবে না। সৌন্দর্য ও নের্তৃত্বের মূল শর্ত হল: মধুর স্বভাব, হাস্যোজ্জ্বল মুখ। তাই রাস্তাঘাটে পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে সৌজন্যমূলক স্মাইল দেয়া শুরু করতে হবে এবং সব সময় স্মাইলির সংগে কথা বলা চর্চা করতে হবে।
২১। কারো সাথে দেখা করতে গেলে খালি হাতে যাবেন না, সে যদি বলেও কিছু লাগবে না, তবুও ছোট কিছু (অন্তত একটা চকলেট কিংবা আপনার খাবারের ছোট্ট একটু অংশ) নিয়ে যান। মাঝে মাঝে প্রিয় মানুষদের কিছু না কিছু উপহার দিন।
২২। নিজে কম বলে অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার অভ্যাস চর্চা করতে হবে। যত বেশি শুনবেন, ততবেশি তথ্য পাবেন। অন্যকে এমন কোনো কথা বলা যাবে না, যাতে সে বিরক্ত হয়ে উঠে। যে কথা বলা দরকার, সেটা বলার আগে মনে মনে কয়েকবার গুছিয়ে নিতে হয়।
২৩। সুন্দর করে কথা বলা এক ধরনের আর্ট। অন্যদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। কথার মাঝে কথা বলা যাবে না। যখন কিছু বলার থাকে না, তখন চুপ করে থাকত হবে। নম্রতার সাথে আন্তরিকতা মিশিয়ে কথা বলা চর্চা করতে হবে।
২৪। কথা বলতে বলতে অযথা বা অপ্রয়োজনীয় তর্কে মেতে উঠবেন না। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে না বাড়িয়ে সে জায়গা থেকে সরে যেতে হবে। তর্কে জেতা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নির্বোধের কথার উত্তর না দেয়াই তার যথার্ত উত্তর।
২৫। অন্যের সঙ্গে ফিসফিস করে বা ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলা যাবে না- যা তৃতীয় জনের পক্ষে বোধগম্য নয়। অনেকের মাঝে যদি কাউকে কিছু একান্তই বলতে হয় তাহলে নিচু স্বরে বা আড়ালে ডেকে নিয়ে বলতে হবে। একাধিকজন উপস্থিত থাকলে মাত্র একজনের সঙ্গে কথা বলা যাবে না, সবার সাথে কম/বেশি কথা বলতে হবে।
২৬। নতুন সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে, তার প্রশ্নের জবাব একলাইনে দেবেন না, ‘কথার হাত-পা বের হবার মত’ কিছু তথ্য বা ঘটনা বলতে হবে। যেমন: আপনি কোথায় থাকেন জানতে চাইলে; এক শব্দে না বলে এভাবে বলবেন- মোহাম্মদপুর, ঈদগাঁ মাঠের পাশে, আমাদের কাছেই জেনেভা ক্যাম্প। অন্য পাশে শিয়া মসজিদ।
২৭। যদি আপনি সামনের মানুষটির সাখে কথা আরো বাড়াতে চান, তাহলে সামনের মানুষটির কথার অংশ তোতা পাখির মত রিপিট করতে হবে। যেমন- এক ব্যক্তি বলল- সে একটা বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরছে। আপনি বলুন: বিয়ে? ব্যক্তি:-হ্যাঁ, আমার মামাত বোনের বিয়ে। আপনি:-মামাত বোন? ব্যক্তি:--হ্যাঁ, সে ডাক্তারি পড়ছে। আপনি:- ও ডাক্তার? এভাবে রিপিট করে করে চালিয়ে যান।
২৮। “সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি” সোজা হয়ে দাঁড়ানোর নিয়ম হল: আপনার কাঁধ কোমর, হাঁট, গোড়ালি একটি সরলরেখায় থাকবে। আর বসে থাকার সময় আপনার ঘাড় সোজা, কাঁধ শিথিল, কনুই চেয়ারের হাতলে,হাঁটু ফ্লোরের সাথে সমকোণে,পায়ের পাতা ফ্লোরের সাথে লাগানো থাকবে।
২৯। ভিন্ন মত এবং অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান ও সহনশীলতা দেখাতে হবে। সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার জন্য বাড়াতে হবে অন্যের সাথে মেশার দক্ষতা। আপনি যতবেশি মানুষের সঙ্গে মিশবেন, ততবেশি আপনার সৌভাগ্যের দরজা খুলে যাবে। সুযোগ মিশুক মানুষের জন্য সর্বদা অপেক্ষামান থাকে।
৩০। মুড না থাকা অস্বাস্থ্যের লক্ষণ। মুড নেই বলে দরকারি কাজ থেকে হাত গুটিয়ে থাকলে পরে আর মুড আসতে চায় না। এর কারণ, কাজটা না করার জন্য আমাদের ব্রেন অসংখ্য অজুহাত তৈরি করে। ব্রেনের এ অজুহাত বন্ধ করার জন্য ৫ সেকেন্ডের মধ্যেই সচেতন হয়ে যান। নিজেকে বলুন, ইয়েস এক্ষুণি আমি এটা করবো এবং শুরু করে দিন; নয়তো ব্রেনের ড্রেনে পড়ে যাবেন।
৩১। কারো মতামতে কিংবা কাজে ভুল ধরা উচিত নয়। এতে তার হীনমনোবৃত্তি দেখা দেয়। তাই কখনো বলবেন না “আপনার কাজ কিছুই হয় নাই।” বরং বলুন- “ঠিক আছে আপনি এভাবে করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয় অন্যভাবে চেষ্টা করা যেতে পারে। যেমন..অর্থাৎ ভুল না ধরে তাকে প্রসংসা ও উৎসাহপূর্ণ পরামর্শ দিন।
৩২। কাউকে এমন কোনো মন্তব্য করতে যাবেন না- যা অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করে। তার কোনো অদক্ষতা, অক্ষমতার প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন না। আক্রমণাত্মক ঠাট্টা মসকারা, কাউকে কটাক্ষ বা ব্যঙ্গক্তি করা বা কাউকে নিয়ে ট্রল করার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে কাউকে অপমান করা হয়। অপরের দুর্বলতায় খোঁচা দিবেন না। যে কথা বা কাজ অন্যজনে দেখতে চায় না, জানতে চায় না- সে কথা ও কাজের প্রতি উৎসাহী হবেন না।
৩৩। সর্বক্ষেত্রে আমাদের অথেনটিক হতে হবে। অথেনটিক অর্থ হচ্ছে খাঁটি, বিশুদ্ধ, সত্য, প্রকৃত, বিশ্বাসযোগ্য, আসল, নির্ভরযোগ্য, নির্ভেজাল, প্রমাণসিদ্ধ, অকৃত্রিম। যদি কাজে-কর্মে কোনো ভুল হয়ে যায় তবে তা সহজে মেনে নিন এবং স্বীকার করুন। প্রয়োজনে বিনয়ের সঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করুন।
৩৪। নিজের বড়ত্ব জাহির করার জন্য আপনাকে কেউ ছোট করলে রেগে যাবেন না। তবে হাসিমুখে আপনি যে তাদের কথায় আঘাত পেয়েছেন সেটা বুঝিয়ে বলুন। প্রতিনিয়ত যারা আপনাকে অপমানের চেষ্টা করে তাদেরকে নিজ থেকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
৩৫। আপনি মনে মনে হয়তো ভালো কিছু করতে চেয়েছিলেন কিন্তু কথায় ও আচরণে সেটি ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে বা প্রকাশ করতে না পারলে, ফলাফল উল্টো হয়ে যাবে। কোনো বিষয় নিয়ে সঠিক সময়ে নীরব থাকা কিংবা স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে না পারলে সবকিছু আপনার বিরুদ্ধে চলে যাবে। কাজেই আপনি কি করেছেন বা করতে চাইছেন, তার ¯পষ্ট ব্যাখ্যা দিন, মনে মনে রাখবেন না।
৩৬। নিজের ঘরের সব কথা বন্ধুকে বলে দেবেন না। কোনো বিষয় নিয়ে পরিবারের মানুষদের সঙ্গে ঝগড়া হলে তা বন্ধুকে জানাবেন না। এতে আপনার পারিবারিক কলহের কথা সবাই জেনে যাবে। আপনাদের অর্থনৈতিক অবস্থা, অস্বচ্ছলতার কথা বন্ধুকে জানিয়ে নিজেকে ছোট করবেন না। কিন্তু কেউ যখন কোনো গোপন বিষয় আপনাকে জানায়, তা নিজ দায়িত্বে গোপন রাখুন।
৩৭। শরীরকে যা খাওয়ানো হয়, শরীর তেমনটি হয়ে ওঠে। অনুরূপ মনকে যে খোরাক দেওয়া হয়, মনও তেমন হয়ে ওঠে। মনের খোরাক হচ্ছে, ভাল বই, জ্ঞানী ব্যক্তি, ভাল চ্যানেল ইত্যাদি। আপনি যদি কিছুদিন হতাশাবাদী মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেন, তাহলে আপনিও হতাশাস্থ মানুষ হয়ে যাবেন।
৩৮। অন্যের কাছে নিজের দক্ষতা জাহির করতে সবকিছু জানার ভান করে চুপ থাকবেন না। যে ব্যক্তি প্রশ্ন করে কিছু জানতে চায়, সে বোকা থাকে পাঁচ মিনিটের জন্য, আর যে জানার ভান করে প্রশ্ন করে না, সে বোকা থাকে সারা জীবন। কাজেই প্রশ্ন করতে শিখুন।
৩৯। কোন কাজ তাড়াহুড়া করে স্বল্প সময়ের মধ্যে করে ফেলার চেষ্টা করা ঠিক নয়। কাজের সংখ্যা নয়, কাজের মানই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাড়াহুড়া বিপদের কারন। ৪০। রাগের সময় অনেক বেফাস কথাও মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে; যা সর্বনাশ ডেকে আনে। জিহ্বার উপর কড়া শাসন চালান। রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। আমরা যার উপর রাগ করি, সেই মানুষটি তো আমাদের সামনেই থাকে তবুও কেন আমাদেরকে চেঁচিয়ে তার সাথে কথা বলতে হবে? কারণ, এই রাগ দুজনের অন্তরের মাঝেও দূরত্ব সৃষ্টি করে। "আবার যদি দুজন মানুষ যখন একে অন্যের বন্ধু হয়, তখন তারা একে অন্যের সাথে নরম স্বরে কথা বলে। কারণ তারা একে অন্যের অন্তরের খুব কাছে থাকে। " রাগ নিয়ন্ত্রণের ৮ উপায়: ১) রাগের মাথায় কিছু বলার আগে একবার চিন্তা করে নিন ২) কিছুক্ষণ নিজের সঙ্গে কথা বলুন ৩) যত দ্রুত সম্ভব স্থান পরিবর্তন করুন ৪) একবার নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করুন তারপর কথা বলুন ৫) জোর জোরে শ্বাস নিন ৬) পড়া বা কাজের মধ্য থাকলে একটু বিরতি নিন ৭) সম্ভাব্য সমাধানের কথা চিন্তা করুন ৮) যতকিছুই হোক, বিদ্বেষ নিজের মধ্যে আটকে রাখবেন না।
৪১। প্রতিশ্রুতি দিলে তা যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে। অপারগতায় ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। চরিত্রবান ব্যক্তিরা একবার কথা দিলে তা যত তুচ্ছ বা কঠিন হোক তা পালন করবেই।
৪২। আপনি পোশাক যদি পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি না হন, তাহলে বহুক্ষেত্রে আপনাকে অবমূল্যায়িত হতে হবে, যা কার্যসিদ্ধিতে সহায়ক হবে না। একটি ছোট্ট শিশু যখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাকে কোথাও যায়, তখন তাকে সবাই আদর করে, খেতে দেয়; কিন্তু একই শিশু যখন ময়লা কাপড়ে সেখানে যায়, সবাই তাকে দূর দূর করে তাড়ায়।
৪৩। প্রকাশ্যে চেঁচিয়ে, চিৎকার করে এবং অট্টহাসির সাথে জোরে জোরে কথা বলাটা প্যুয়র মেন্টালিটি বা কাঙ্গালি মানসিকতার লক্ষণ। কারো অগোচরে তার সমালোচনা করা, গোপনে অন্যের ক্ষতি করা, যেমন-আপনি যে-কোন পাবলিক প্লেসে গেলে দেখবেন, সেখানে এটা ভাঙ্গা, উঠা ছিরা বা কাটা; বাথরুম বা কোনো দেওয়ালে এটা ওটা লিখা-আঁকা, কারো বাড়ী বা গাড়ীর দিকে ঢিল মারা ইত্যাদি হলো কাঙ্গালি মানসিকতারই অবদমিত প্রতিক্রিয়া।
৪৪। প্রতিযোগিতায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্য প্রতিযোগিতাকে প্রতিহিংসায় পরিণত করা যাবে না। কারো সঙ্গে অন্যায় করে, শত্রুতা করে বা জোর করে আসন ছিনিয়ে নিলে, সে হয় ছিনতাইকারী প্রতিযোগী নয়।
৪৫। নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস হচ্ছে আত্মনির্ভরশীলতা। অপরের উপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল হলে, তাতে সম্পর্কের আসল আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যায়। কারণ আপনার কাছে যা নির্ভরশীলতা, অপরজনের কাছে তা-ই বাড়তি দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব সামলানো তার বোঝা হয়ে দাঁডায়।
৪৬। কারো সাথে পরিচয় হওয়া মাত্রই তার গ্রামের বাড়ি বা ব্যক্তিগত পরিচয় জানতে চাওয়া মূর্খতা ও অভদ্রতা। নিজে থেকে না বললে কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে জানতে চাওয়া বা আলোচনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় ও সমস্যাদি শেয়ার করবেন না।
৪৭। কোনো কক্ষে প্রবেশের সময় সবাইকে সালাম। কাউকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় তার সম্পর্কে ছোট একটা কথা যোগ করে দিন। ইনি আমার ভাই/বন্ধু রাসেদ, ও ভাল ক্রিকেট খেলে..। যখন কোন ব্যক্তি কক্ষে প্রবেশ করে, সে প্রথম বসে থাকা মানুষটার দিকে হাত বাড়াবে এবং বসে থাকা মানুষটি দাঁড়িয়ে হাত মেলাবে। বসে থেকে হাত মেলালে অভদ্রতা।
৪৮। আত্মঘাতি কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকুন। কাজ করতে করতে সহসা কেন জেদের বশে কাজটি নষ্ট করা আত্মঘাতিক কাজ । কোনো ছোট কথায় আহত হয়ে নিজের মহান দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে সরে দাঁড়ানো আত্মঘাতি কাজ । ভুল বুঝাবুঝির ফলে কাজ পণ্ড করে ফেলাটাও আত্মঘাতি কাজ । আত্মঘাতি কাজ কেবল আমাদের নিজের মনের শান্তিকেই বিনষ্ট করে না বরং তা আত্ম-উন্নতির পথেও অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই সব ধরনের আখ্যাতি কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। জেদের বশে বা রাগে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে কখনো নিজের পায়ে কুড়াল মারবেন না ।
৪৯। ওজুহাত একটি রোগ। এই ব্যাধির নাম এক্সকিউসাইটিস। আপনি দেখবেন, একজন মানুষ যত বেশি সফল, সে ততই কম অজুহাত দেখান। এই রোগগ্রস্ত মানুষ নিজের ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্য কি কি অজুহাত দেওয়া যায়.? সব ভাবেন এবং বলেন। যেমন: ‘আমার ভাগ্য খারাপ।’ .. শিক্ষা কম, বয়স বেশি? দুর্ভাগ্য? ব্যক্তিগত দুর্ভোগ? বউ ভালো না? পরিবারেসমস্যা ইত্যাদি দোষ খুঁজে বেড়ায় তারা। কাজেই কোনো অজুহাত বা অভিযোগ করতে যাবেন না, নিজের যোগ্যতা, জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে নতুন সুযোগ তৈরি করুন এবং কাজে লাগান।
৫০। কাছের লোকজনের প্রতি প্রতিদিন আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। তাঁদের সান্নিধ্যে থাকা অবস্থায় কিছুতেই অন্যমনস্ক হওয়া যাবে না। প্রিয়জনদের রেইকি বা স্পর্শ চিকিৎসা পরিসেবা দিন। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক স্পর্শ কেবল আনন্দের মুহূর্তই তৈরি করে না; বরং এটি মানসিক অস্থিরতা কমানো থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রিয়জনের সঙ্গে আলিঙ্গন বা তাঁর হাত ধরায় রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। কোমল স্পর্শ ব্যথা নিবারণকারী কার্যক্রমকে উদ্দীপিত করে ব্যথা কমায়।
৫১। যেভাবে পড়লে কখনই ভুলে যাবেন না। সুযোগ মাত্র ১টা। একটা মাত্র পেনাল্টি মারার সুযোগ পেয়েছেন জীবনে, এর পরই অবধারিত জয় অথবা পরাজয়। এরকম মনোযোগ দিয়ে কোন কিছু কয়েকবার পড়ুন। দেখবেন কমপক্ষে ৮০% আপনার মনে থাকবেই। এবার এক দিনের জন্য রেখে দিন। এক দিন পরে আবার মনে করার চেষ্টা করুন। কিছুটা হয়তো ভুলে যাবেন, কমপক্ষে ৮০% মনে থাকবেই। এবার বিষয়টা এক দিনের জন্য রেখে দিন। তারপর আবার একবার পডুন। এবার দেখবেন কমপক্ষে ৯০% নির্ভুল বলতে পারবেন। এভাবে মাঝে পড়ে যদি আপনি রেখে দেন, কমপক্ষে একমাস পর্যন্ত একটুও ভুলবেন না। মনে রাখবেন, প্রতি মাসে এবার রিভিশন না করলে ধীরে ধীরে মরিচা পড়তে থাকবে এবং এক সময় সব হারিয়ে যাবে, কিছুই খুঁজে পাবেন না। প্রতিদিন আপনি নতুন কিছু শিখছেন। পুরাতন ফাইলে ধুলা পড়ে জং পড়ে যাচ্ছে। একমাস পর নিচ থেকে পুরাতন ফাইলটা বের করে একটু পরিষ্কার করুন, দেখবেন জং পড়বে না। দ্বিতীয়তঃ আপনি যদি পড়া বা কোনো কাজ মন থেকে করেন তাহলে সে কাজটি করে আপনি মজা পাবেন। অনেকে নিজেকে দক্ষ হিসাবে জাহির করার জন্য এক সাথে অনেকগুলো পড়া বা কাজ করার চেষ্টা করে। ফলে সে একটি কাজেও ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারে না। বলা যায় যে, একসাথে অনেক পড়া বা কাজ করা আপনার মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য শত্রুু হিসাবে কাজ করে। তাই একনাগাড়ে অনেকক্ষণ পড়াশুনা বা লাগাতার পড়া কিংবা কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে একটু থামুন এবং বিশ্রাম করে নেন। পড়া বা কাজ করার সমায় যদি আপনার মনে হয় যে আপনি পড়া বা কাজের উপর ফোকাস বা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন, তাহলে কাজে একটা বিরতি টানুন এবং উঠে ৫ মিনিট এর জন্য হাঁটতে পারেন।
৫২। অনেক সময়ই আমাদের নিচ থেকে ভারী কোনো বস্তু ওঠাতে হয়। ভারী জিনিসটি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিতে হবে বা ওপরে তুলতে হয়। কিন্তু এ সময় অবশ্যিই উঠানোর নিয়ম মানতে হবে। কারণ এটি আমাদের শরীরে বিভিন্ন ব্যাথা-বেদনা এমনকি পঙ্গুত্ব হওয়ার সাথে জড়িত। পিঠ যদি সোজা না থাকে বা কুঁজো হয়ে থাকে, তবে চোট পাবেন। ফলে কখনো দেখা যায় ঘাড়ে, পিটে বা কোমরেও ব্যথা হচ্ছে। কিংবা পায়ের পেশীতে টান লাগার কারণে গুরুতর শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ভারী জিনিস একা তোলার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। কোনো ভারী জিনিস তুলতে হলে প্রথমে সোজা করে বসে যাবেন,তারপর তুলতে হবে। শরীরের মাঝ ভাগ বরাবর ভারী বস্তুটি তুলতে হবে। পিঠ সোজা রেখে বুক একটু সামনে ঝুঁকে থাকলেও সমস্যা নেই। কোমরের নিচের অংশটুকু সামান্য এগিয়ে এই অবস্থানে হাঁটু ভাঁজ করলেও পা আর উরু ভালোভাবে কাজ করে। ভারী বস্তু উঠাতে এতে শরীরে তেমন চাপ পড়ে না। বেশি বড় ও ভারী বস্তু তোলার সময় আরেকজন ব্যক্তির সাহায্য নেওয়া ভালো। এতে ওজন ভাগাভাগি হয়ে যায়। মনে রাখবেন, অতিরিক্ত ভারী বড় জিনিস বেশি দূরত্বে কাঁধে বহন করা ঠিক নয়। একভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকবেন না। মাঝে মা
৫৩। অতিথি হিসেবে কোথাও গেলে নিজের ইচ্ছেমতো চেয়ার টেনে বসে না পড়ে আপ্যায়ক চেয়ারে না বসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আর অবশ্যই বসার সময় কর্কশ শব্দে চেয়ার না সরিয়ে আস্তে করে টেনে নিয়ে পিঠ সোজা করে বসতে হবে। প্রধান অতিথি বসবেন হোস্টের ডানপাশে।খাবার টেবিলের সবার সাথে গতি রক্ষা করতে হবে খাওয়ার সময়। টেবিলে খাবার পরিবেশন করতে হবে হোস্টের বামপাশ থেকে। তরল জাতীয় খাবারগুলো প্রধান পদের বামে এবং অন্য খাবারগুলো ডানে রাখতে হয়। যে খাবারের পদটি আপনি খেতে চাইছেন, তা হাতের নাগালের মধ্যেযদি না থাকে, তবেপাত্রটির কাছে থাকা মানুষটিকে অনুরোধ করুন, পাত্রটি এগিয়ে দেওয়ার জন্য। অন্যকে টপকে বা খাবার টেবিলে ভর দিয়ে পাত্রটি টেনে নিতে যাবেন না।
খাবার টেবিলে শব্দ করে খাওয়া আদব-কায়দাহীনতারই পরিচয়। মুখ বন্ধ রেখে চিবিয়ে খেতে হবে। দাওয়াতে বা রেস্তোরাঁয় মাছের কাঁটা বা মাংসের হাড় চিবিয়া খাওয়া বেশ দৃষ্টিকটু একটি ব্যাপার। এ অভ্যাস পরিহার করা উচিত। খাবার টেবিলে হাঁচি বা কাশি পেলে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে মুখে রুমাল বা হাত দিয়ে ঢেকে নিতে হবে। টেবিলে মুখের খাওয়াটুকু শেষ করেই কথা বলতে হবে। খাবার টেবিলে ন্যাপকিন কোলের ওপর বিছিয়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করতে হবে। খাওয়ার মাঝে টেবিল ছেড়ে কোথাও গেলে ন্যাপকিনটি চেয়ারের ওপর রেখে যেতে হবে। খাওয়া শেষ হলে ন্যাপকিন টেবিলের নিজের স্থানের বামপাশে রেখে দিতে হবে। দাঁতে খাবার আটকে গেলে তা টেবিলে বসে বের করার জন্য খোঁচাখুঁচি করা খুবই বিব্রতকর। অবশ্যই মুখে হাত দিয়ে ঢেকে অপর হাত দিয়ে বের করা উচিত। একেবারে বেশি খাবার মুখে পুরে না দিয়ে প্রতিবার অল্প অল্প পরিমাণে মুখে পুরে নিন। খাওয়া শেষে প্লেটে হাত ধুবেন না। খাবার টেবিল থেকে ওঠার সময় পাশেরজনকে বলে টেবিল থেকে উঠুন।
৫৪। ছুরি-চামচ ব্যবহারের নিয়ম হল- আমেরিকান স্টাইলে ছুরি ও কাঁটা চামচ দিয়ে কয়েক গ্রাস খাবার কেটে নিতে হয়। খাবার সময় ছুরিটিকে প্লেটে রেখে কাঁটা চামচ দিয়ে খেতে হয়। কাঁটা চামচ ধরতে হয় ডান হাতে। * ইউরোপিয়ান স্টাইলে ছুরি ডান হাতে এবং চামচ বা কাঁটা চামচ থাকে বাম হাতে। প্রতি গ্রাস খাবার কেটে নিয়ে তারপর মুখে দিতে হয়। পুরো খাবার সময়টাতেই দুই হাতে ছুরি আর চামচ থাকে। * কাঁটা চামচ ব্যবহারের সময় এবং হাতলের ওপর অংশ ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনি ও মধ্যমা দিয়ে ধরতে হয়। বৃদ্ধাঙ্গুলি কাঁটা চামচকে শক্ত করে এবং কাঁটাগুলোকে ওপরের দিকে মুখ করে রাখতে সাহায্য করে। এ সময় বাম হাতে ধরা ছুরিটির ধারালো প্রান্ত নিচের দিকে মুখ করে থাকে। * ডান হাতে ছুরি ব্যবহারের সময় ছুরির হাতল থাকবে হাতের তালুতে এবং তর্জনি থাকবে হাতলের ঠিক ওপরে, যাতে ছুরির ব্লেডে চাপ প্রয়োগ করা যায়। * খাবার বিরতিতে আপনার কাঁটা চামচ ছুরির ওপর ক্রস করে রাখুন। এর কাঁটাগুলো নিচের দিকে মুখ করে থাকবে। খাওয়া শেষে ছুরি ও কাঁটা চামচ পাশাপাশি রাখুন। * স্যুপ খাওয়া শেষ হলে স্যুপের চামচ স্যুপের প্লেটে রাখুন, কাপের ভেতর রাখবেন না। যদি আলাদা গামলায় স্যুপ পরিবেশন করা হয়, তাহলে স্যুপের চামচ স্যুপের কাপের নিচে প্লেটের ওপর রাখুন। * শক্ত মুষ্টি করে চামচ ধরবেন না। * স্যুপ গরম হলে তাতে ফুঁ না দিয়ে চামচ দিয়ে নেড়ে ঠাণ্ডা করুন। স্যুপের চামচের পাশ দিয়ে স্যুপ মুখে ঢালুন। চামচের পার্শ্বদেশ আপনার মুখে প্রবেশ করবে, চামচের প্রান্তভাগ নয়। * মাছ কেটে খেতে হলে আগে মাছটিকে কাঁটা চামচ দিয়ে ধরুন। তারপর ঠিক মাঝ বরাবর মুড়ো থেকে লেজ বরাবর কাটুন। এরপর ফিস নাইফ ব্যবহার করে মাঝখান থেকে পাশে মাছ আলগা করে নিন। প্রথমে ওপরের অংশ খেতে হবে, এরপর নিচের অংশ। ছুরি দিয়ে কাঁটা সরান এরপর নিচের অংশ খেয়ে নিন। ফিস নাইফ থাকবে আপনার ডান হাতে। * মাংস খাবার সময় সঠিক ছুরি ও কাঁটা চামচ ব্যবহার করুন। মাংস খাবার সময় চামচ ব্যবহার করা হয় না। * পাস্তা, নুডলস, স্প্যাগেন্ডি কাঁটা চামচ দিয়ে খেতে হয়। খাবার আগে চামচ বা কাঁটা চামচে ঠিকমতো পেঁচিয়ে নিতে হয়।
৫৫। উচ্চশিক্ষিত থেকে শুরু গ্রামের কৃষক পর্যন্ত পর্যন্ত সবাই ভাইরাল হওয়ার নেশায় অপসংস্কৃতি দিকে ঝুঁকছেন। ফলোয়ার আর ভিউয়ের নেশায় ভিডিওতে অশালীন কথাবার্তা ও অঙ্গভঙ্গিতে অশ্লীলতার দিকে ইঙ্গিত করছেন। এসব দেখে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করছেন অনেক তরুণ, আসক্ত হচ্ছেন ডিজিটাল ডিভাইসে। ফলস্বরূপ, তরুণদের উন্নত রুচিসম্মত চিন্তাভাবনার পরিবর্তে নিচু মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। লাইফ আপনার, ডিসিশনও আপনার।"."নেগেটিভিটি যেখানেই দেখবেন, সেখান থেকেই নিজেকে সরিয়ে নেবেন। এটা দুর্বলতা নয়, বরং নিজের প্রতি দায়িত্বশীল থাকা।"."নিজেকে বাঁচান অপ্রয়োজনীয় মানুষের আগ্রাসন থেকে। আপনার জন্য আসল মানুষগুলোকে চিনে নিন। যারা আপনার ভালোটা চায়। বাকি দুনিয়াকে জঞ্জাল ভাবুন, পথে চলতে গিয়ে আগাছা আর কাঁটাঝোপ থাকবেই, কিন্তু আপনাকেই পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।"
"সব কথার উত্তর দিতে নেই, সবকিছুর প্রতিক্রিয়াও দিতে নেই। নিজেকে প্রমাণ করার দরকার নেই, শুধু নিজের পথে স্থিরভাবে এগিয়ে যান।","এমন সময় আপনি যা করবেন তা হলো ইগনোর। কারণ জীবনে কিছু মানুষ থাকবেই, যাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আবর্জনা ছড়ানো, অন্যের জীবনে বিষ ঢালা। অপ্রয়োজনীয় তর্ক বা, কাউকে কিছু বোঝাতে যাবেন না। কেউ যদি আপনাকে মূর্খ বলে, হেসে বেরিয়ে আসুন। এতে আপনার এনার্জি আর মানসিক শান্তি—সবই বাঁচবে।"
৫৬। কারো সাথে আঙুল তুলে কথা বলা বেয়াদবি। কারণ এর মাধ্যমে আপনি যাদের দিকে আঙুল তুলছেন তাদের প্রতি আপনার শ্রদ্ধার সম্পূর্ণ অভাব বুঝায়। আঙ্গুল তোলা অন্যের প্রতি আক্রমণাত্মক ভাব প্রকাশ করে। তাই সব সংস্কৃতিতেই এটিকে অশালীন মনে করা হয় । কথা বলার সময় যদি আপনার এই অভ্যাস আসে , তাহলে সচেতনভাবেই একটি পরিহার করুন। এছাড়া কথা বলার সময় এলোমেলোভাবে বসা বা দাঁড়ানো কিংবা সামনের দিকে ঝুঁকা অথবা পিছনের দিকে বেঁকে যাওয়া ভঙ্গিতে কথা বলাও অসৌজন্যতা হিসেবে দেখা হয়।
৫৭। যখন মানুষ তার বিবেকের কথা শোনে, তখন সে নৈতিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। নৈতিকতা বিসর্জন মানে নিজের আত্মা ও বিবেকের বিরুদ্ধে যাওয়া। সততা ও নৈতিকতা মানুষকে সত্যিকার মানুষে পরিণত করে। সততা ছাড়া কোনো সম্পর্কই দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তা ব্যক্তিগত হোক বা পেশাগত। যখন আপনি সৎ থাকেন, তখন মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করতে শেখে। এই বিশ্বাসই যেকোনো সম্পর্কের ভিত গড়ে তোলে। মিথ্যা বা অসততা সাময়িক সুবিধা দিলেও দীর্ঘমেয়াদে তা শুধু অবিশ্বাস আর তিক্ততাই সৃষ্টি করে। জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আসে যখন বহু প্রলোভন আসতে পারে। হতে পারে সেটা দ্রুত ধনী হওয়ার সুযোগ, অন্যায়ভাবে সুবিধা পাওয়া। কিন্তু এই প্রলোভন এড়িয়ে চলুন। মনে রাখবেন, ক্ষণিকের প্রলোভন সাময়িক আনন্দ দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা ক্ষতির কারণ হয়। কোনো চাপের মুখেও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না। সততা একটি অভ্যাস। ছোট ছোট সৎ কাজ আপনার চরিত্রকে মজবুত করে। প্রতিটি ধাপে নৈতিকতার প্রশ্নে আপস না করার সিদ্ধান্ত নিন। মনে রাখবেন, আপনার সততাই আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ ।
৫৮। টাকা ধার করার অভ্যাস ত্যাগ করুন। আপনি হয়তো বলবেন ওর কাছে তো মাত্র একবার টাকা ধার চেয়েছি। বন্ধু তো বন্ধুই যদি প্রয়োজনে বন্ধুর পাশে না দাঁড়ায় তাহলে কিভাবে হবে? কিন্তু আপনার এই আচরণ ভিখারী মানসিকতার পরিচায়ক। ফ্রয়েড বলেন, যদি কেউ মনে করে, তাকে আপনার আর্থিক দায়িত্ব বহন করতে হয়, তখন আপনাদের সম্পর্ক তার নিচু ধারণা ও বিরক্তিকর মনোভাব তৈরি হয়। তখন সে আপনার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করবে।
৫৯। ফোন ব্যবহারে শিষ্টাচার: ১। দ্বিতীয়বার রিং হওয়ার পরেও যদি কল না ধরে তবে কল কেটে দিন। এসএমএস করে নিজের খুশির সংবাদ জানাবেন না, কল করে জানাবেন। ২। লাইব্রেরীতে, হল্রুমে, ক্লাসরুমে মোবাইল সাইলেন্ট মুডে রাখবেন। ৩। দ্বিতীয়বার রিং হওয়ার পরেও যদি কল না ধরে তবে কল কেটে দিন। ৪। বন্ধুদের সাথে কথা বলার সময় মোবাইল এক নজর দেখতে পারেন, কিন্তু যদি কল ধরতে হয় বা করতে হয় তবে একটু দূরে গিয়ে করুন। ৫। কথার মাঝেই যদি লাইন কেটে যায়, তবে আপনি আবার কল দিন। ৬। যদি অপরিচিত কাউকে কল দেন তাহলে আপনার পুরো নাম বা পরিচয়টা বলুন। আপনি যদি বলেন 'আমি রবি', তবে সে যদি জিজ্ঞেস করতে হয় কোন রবি? তা খুবই অস্বস্তিকর।
মেসেজিংয়ের ক্ষেত্রে: ১। কেউ যদি আপনাকে মেসেজ পাঠায় তার মেসেজের উত্তর দিন। কিন্তু তাকে কল করবেন না। ২। খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু যেমন কারও মৃত্যুর সংবাদ ব্যাতিত অন্য কোনো দুঃসংবাদ বা বিচ্ছেদের ঘটনা মেসেজের মাধ্যমে বলাকে এড়িয়ে চলুন। ৩। কেউ যদি আপনাকে মেসেজ পাঠায়, তার মেসেজের উত্তর দিন। কিন্তু তাকে কল করবেন না। ৪। বেশিরভাগ সময়ই দ্রুত মেসেজ লেখার ফলে আমাদের মেসেজের ভেতর কিছু ভুল ত্রুটি থেকেই যায়। তাই কাউকে মেসেজ পাঠানোর আগে নিজে একবার পড়ুন। ৫। কেউ আপনাকে মেসেজ পাঠালে ২ ঘণ্টার ভেতর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। ৬। কাউকে দুটি মেসেজ পাঠানোর পরও যদি সে আপনার মেসেজের উত্তর না দেয় তাহলে বুঝবেন সে আপনাকে এড়িয়ে চলছে। তাই কাউকে পুনরায় মেসেজ দিয়ে আপনার ব্যক্তিত্ত্বকে ছোট করবেন না।
৬০। মানুষকে তার উৎকৃষ্ট নামে আবেগ মিশিয়ে ডাকুন: প্রত্যেক মানুষের নিজের উৎকৃষ্ট নামটা নিজের কাছে সবচেয়ে মধুর লাগে। ব্যঙ্গ সম্বোধনের দ্বারা মানুষকে হেয় ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয় বলে তার মন বিষিয়ে উঠে। ফলে তাকে সে মনে মনে ঘৃণা করে। কাজেই মানুষের সুন্দর নামটা মনে রাখতে চেষ্টা করুন। কাউকে উপহাস করা বা বিকৃত নামে ডাকা থেকে বিরত থাকুন। অপরিচিত কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে হলে আবেগ মিশিয়ে ভাইজান/ আপামনি বলে সম্মোধন করে তারপর বলুন। অন্যদের যাদের নাম মনে নেই, তাদেরকে সন্মানের সাথে বড়ভাই/ ছোট ভাই, আপু, মিয়া ভাই, মামা, আংকেল/আন্টি এভাবে সম্মোধন করুন।
৬১। উপকারির নিকট সব সময় কৃতজ্ঞ থাকুন। যিনি আপনার কোনো উপকার করেছে বা আপনার প্রশ্নের জবাব দিয়েছে তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন; থ্যাঙ্কস বলুন, খুশিমনে ধন্যবাদ দিন। পরবর্তীতে তার সাথে দেখা হলে তাকে তার আগের কথা বা কাজের জন্য পুনরায় ধন্যবাদ দিয়ে মনে করিয়ে দিন। কেউ উপকার করলে মাঝে মাঝে তার উপকারের কথা তাকে স্মরণ করিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন কিন্তু পরের উপকার করে আপনি তা মনে রাখবেন না। কৃতজ্ঞতা পাওয়ার আশায় কোনো কিছু করা বা দেওয়া উচিত নয়, বরং দেবার আনন্দেই দেয়া উচিত। উপকারির কাছে অকৃতজ্ঞতাই আশা করা উচিত, তাতে হতাশ হবার ভয় থাকে না। অনেকে অপর লোকের কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করেন এবং তা না পেলে নিরাশ হয়ে পড়েন। এটা উচিত নয়। অপরের কাছ থেকে যত কম আশা করা যায়, হতাশাও তত কমে যাবে। সব সময় মনে রাখবেন, অভিযোগ-প্রতিবাদ শুধু বোকা লোকদের ভাষা; এইসব পরিহার করতে হবে।
৬২। কাউকে সরাসরি হুকুম না করে আব্দার কিংবা অনুরোধের সুরে বলুন । অনেকে আছেন- যারা সব সময় সর্বোসর্বা হয়ে অন্যকে দিয়ে কাজ করাতে বোকার মতো হুকুম করেন। কিন্তু তারা জানেন না যে, হুকুম জিনিসটা কেউ পছন্দ করে না। কোনো কাজে হুকুম দেওয়া মানে তাকে ছোট প্রমাণ করা। এটা খুব খারাপ। কোনো কাজের জন্য কাউকে সরাসরি হুকুম না করে একটু ঘুরিয়ে আব্দার কিংবা অনুরোধের সুরে বলুন, অথবা কাজটা করতে পরোক্ষভাবে তাকে উৎসাহিত করুন। প্রত্যক্ষ বাক্য না বলে সবসময় পরোক্ষ বাক্য বলার অভ্যাস করুন। যেমনÑ এই করিম, বাজারে যাও; এটা প্রত্যক্ষ বা সরাসরি বাক্য। এটা না বলে এভাবে বলুনÑ করিম, বাজার করা দরকার, এখন গেলে সবকিছু টাটকা পাওয়া যাবে, তাই না? সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। তাই এমন কিছু মানুষের সান্নিধ্যে থাকুন যারা স্বল্পভাষী। দেখবেন আপনিও ধীরে ধীরে সেই গুণাবলী অর্জন করছেন। সব অর্জনের মূলেই থাকে সাধনা। আর এ জন্য প্রয়োজন ধৈর্য।
৬৩। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনসহ চেনা-পরিচিতজনদেরকে যতটা সম্ভব প্রশংসা করুন। প্রত্যেক মানুষের মনের গভীরে থাকে প্রশংসা পাবার আকুতি। মানুষের বাহ্যিক পরিপাটি, সবই তার প্রতিফলন। কাজেই বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনসহ চেনা-পরিচিতজনদেরকে যতটা সম্ভব প্রশংসা করতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না। তার গুণগুলোর সোজাসুজি প্রশংসা করুন। আপনার প্রশংসা তার মনকে ভরিয়ে তুলবে। এমন কি আপনার ছোট প্রশংসাটির জন্য দেখবেন, সারাজীবন সে আপনাকে মনে রাখবে। প্রশংসা হচ্ছে আত্মার খাদ্য। উপযুক্ত খাদ্য পেলে মন আত্মবিশ্বাসে, মনোবলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। কিন্তু সাবধান, তোষামোদ করবেন না। তোষামোদ হচ্ছে, জাল করা টাকার মতো- যা চালাতে গেলে প্রতি মুহূর্তে ঝুঁকি। সৎ থাকুন যখন কেউ আপনার প্রশংসা করছেন এবং আপনি কার প্রশংসা করছেন। প্রশংসা কখনো প্রত্যাখ্যান করবেন না এবং অবশ্যই মনে করবেন না যে আপনাকে প্রশংসা ফেরত দিতে হবে। বিনয়ী হতে হলে আপনাকে মাত্রাতিরিক্ত লাজুক, শান্ত বা সাধু হতে হবে এমনটা নয়।
৬৪। কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবেন: ১) অর্থহীন অহঙ্কার থেকে বিরত থাকুন ২) আপনি, আপনার পরিবার বা নিকট আত্মীয়রা কত অর্থ-সস্পদের মালিক এসব আলোচনা এড়িয়ে চলুন। কে কত অর্থ উপার্জন করেছেন এসব আলোচনাও বন্ধ করুন। আপনার এইসব ছোটলোকিপনা অন্য মানুষের বিরক্তি ও ঈর্ষা-হিংসা কারণ হতে পারে। ৩) নিজের গুণাবলী নিয়েও আলোচনা করবেন না: আপনি স্মার্ট, মেধাবী ও চতুর এগুলো বলার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। আপনার যদি ভালো কোনো গুণাবলী থেকে থাকে, তাহলে মানুষ নিজ থেকেই আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে। ৪) অহেতুক অন্যের কথাবার্তায় নিজেকে জড়াবেন না: আপনি তাদের কাজে আসলে তারা আপনাকে নিজে থেকে আলোচনায় আহ্বান জানাবে।
৬৫। নিজের দোষ-ত্রুটির সমালোচনা করতে শিখুন, অন্যের নয়। সমালোচনা হচ্ছে পোষা পায়রার মতো, তাকে যেখানে যত দূরে ছেড়ে দেয়া হোক, ঠিক নিজের ঘরে ফিরে আসবেই। সহজ কথায়, আপনি যতটুকু অপরের সমালোচনা করবেন-নিজেই (প্রকাশ্যে-গোপনে) ততটুকু অপরের সমালোচনার সম্মুখীন হবেন। নিজের দোষ-ত্রুটির সমালোচনা করতে শিখলে তার দ্বারা অবশ্যই বড় হওয়া সম্ভব। কাজেই অপরের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিজের সমালোচনা করতে শিখুন। অযথা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা ভালো। যার বাসায় ছোট টিভি আছে, তাকে বড় টিভির গুণ বর্ণনা করা ঠিক নয়। এক কথায়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কারো কোনো বিষয়ে, বিরূপ মন্তব্য করবেন না কিংবা অপেক্ষাকৃত উন্নত কিছুর সাথে তুলনা করবেন না। মানুষের জীবনী শক্তির অধিকাংশই শেষ হয়ে যায় শুধু পাশের মানুষের নেগেটিভ কথা শুনতে শুনতে। লক্ষ্য করে দেখবেন, আপনি যখন কোনো ভালো কাজ করতে যাচ্ছেন, তখন একগাদা মানুষ জড়ো হয়ে আপনাকে নিরুৎসাহিত করবে। এসব এড়িয়ে চলুন।
৬৬। খুঁতখুঁতে স্বভাব পরিত্যাগ করুন। এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যারা অনেক খুঁতখুঁতে। সব কিছু মনের মতো বা একেবারে নিখুঁত না হলে তাদের মন ভরে না, নিজের সব কিছুকে খুঁতহীন একটা অবস্থায় নিয়ে যেতে চান। এরকম মানুষ সমাজজীবনে, কর্মজীবনে, ব্যক্তিজীবনে অস্থির লোক হিসেবে গণ্য হয়। আবার অনেক লোক আছেন, যারা সামনে দিয়ে মশা গেলেও ধরে ফেলেন কিন্তু পিছন দিয়ে হাতি গেলেও টের পায় না। এরা শ্রমিকের পেটে লাথি মেরে হুজুরের কাছে সিন্নি পাঠায়। মজুরকে শোষণ করে মাজারে দান করে। এরা শ্রমিকের ন্যায্য পাওনার বেলায় খুব হিসাবি, অথচ ভোগ-বিলাসিতার বেলায় হিসাবি নয় মোটেই। এই মনোভাব খুব জঘন্য। মনে রাখা উচিত- একজন কর্মী যদি তার কাজের যথার্থ পুরস্কার পায়, তাহলে তার হৃত উদ্যম অবশ্যই শতগুণে বেড়ে যায়। কর্মী বা সহপাঠীরা যত ভুল করুক, উত্তেজিত হবেন না, আফসোস করবেন না; মনে করবেন, ভুলটা আপনার। কাজটা অন্যভাবে বুঝানোর বা যোগ্যা লোককে দায়িত্ব দেয়ার দরকার ছিল।
৬৭। মুদ্রাদোষ পরিহার করুন: কেউ কথা বলার সময় হাত নাড়ে বেশি। আবার অনেকে আছেন, যারা কোনো কাজের জন্য কারো গায় হাত দিয়ে অনুনয়-বিনয় করেন। কেউ মানুষের সামনে দাঁত খোঁচায়, কেউ বা হাত চাপা না দিয়ে ঢেঁকুর তোলেন, হ্ইা তোলেন, জোরে কাশেন, হাঁচি দেন। কেউ বা যেখানে-সেখানে থুথু পানের পিক ইত্যাদি ফেলেন। আমাদের দেশে খুব কম মানুষ আছেন, যারা টেলিফোনটি বাজা দেখতে পারেন না। তারা আপনাকে বসিয়ে রেখেই ফোনটি ধরবেন এবং অনেকক্ষণ কথা বলবেন। আপনি যে এত কষ্ট করে ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে তার কাছে গিয়েছেন, সেটা তার কাছে গুরুত্ব পায় না, আপনার থেকেও মূল্যবান হয়ে ওঠে টেলিফোন বা অন্যান্য কাজ। এটা চরম অসভ্যতা। জাপানে আপনি যদি কোনো অতিথির সামনে বা মিটিংয়ের ভেতর ফোন ধরেন বা টেক্সট মেসেজ করেন, ওখানকার মানুষ এটাকে চরম বেয়াদবী বলে ধরে নেয়।
৬৮। ধীরগতি ও স্পষ্ট বাক্যে কথা বলুন । প্রত্যেক জরুরি কথা শুরু করার আগে এবং শেষ হলে কয়েক মুহূর্ত থেমে থাকুন। এতে কথাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে শ্রোতার মনে আলাদা আসন করে নেবে। কথা কম হবে অথচ বেশি প্রভাবশালী শব্দে সমৃদ্ধ হওয়া চাই। ছোট ছোট উদ্ধৃতি, প্রবাদ-প্রবচণ, বাণী এবং হাস্যকর সংলাপযুক্ত করে বক্তব্যকে নাট্যরসে সমৃদ্ধ করে তুলুন। গলার সুর ও প্রকাশভঙ্গির উঠানামা করুন। গুরুত্ব অনুসারে শব্দের ওপর জোর বাড়ান-কমান। পরিবার, শৈশব স্মৃতি, স্কুল-কলেজ দিনগুলো, জীবনে নানা বাধা, আশা-আকাক্সক্ষা, জয়, শখ, বিনোদন, বিখ্যাত ব্যক্তির সাক্ষাৎ ইত্যাদি অভিজ্ঞতা গুছিয়ে বললে চমৎকার ফল পাবেন। বক্তব্যের বিষয়ের সঙ্গে সাদৃশ্যমূলক উপমা দিন। কোনো গল্প বা হাসির টিপ্পনি যদি বলেন, তা হওয়া চাই সংক্ষিপ্ত, অথচ জোরালো এবং চিত্ত আকর্ষক। যদি অপর কেউ কোনো কৌতুক- রহস্যের অবতারণা করেন, সেটা আপনার জানা থাকলেও তা অপরকে বলতে বাধা দেবেন না বরং খুব উৎসাহ নিয়ে শুনবেন।
৬৯। সামনের মানুষটির মুড বুঝে কথা বলুন। আপনার জীবনে এমন ঘটনা অনেক আছে যে, যখন আপনি খুব খারাপ মুডে আছেন, আর একজন এসে খুব উত্তেজিতভাবে আনন্দ প্রকাশ করে আপনার সাথে কথা বলছেন, তামাশা করছেন। এই সময় ওই লোকটির প্রতি বিরক্তিও আসতে পারে বা রাগ আসতে পারে। ফলে আপনি, মানুষটি থেকে দূরে সরে যেতে চেষ্টা করেন। এটা আরো বেশি মাত্রায় দেখা যায়, যদি দুজনের মধ্যে ক্লোজ রিলেশন না থাকে। এই কারণে যখন আপনি কারো সাথে কথা বলা শুরু করবেন, তখন আপনাকে দেখতে হবে যে, সামনের মানুষটির মুড কেমন আছে। যদি সে ‘লো’ বা খারাপ মুডে থাকে, তাহলে আপনি তার সাথে খুব বেশি এক্সাইটেড মুডে কথা বলবেন না। প্রথমে আপনি শান্তভাবে তার সাথে কথা বলা শুরু করুন। তারপর ধীরে ধীরে আপনার মুড এবং এক্সসাইট লেবেল বাড়ান। এই টেকনিকটা আপনার সামনে থাকা মানুষটির মুডও ঠিক করে দিতে পারে।
৭০। অনন্ত চাহিদা মানে অশান্তির ঘর: জীবনের দাবি হচ্ছে চাহিদা। মানব জীবন চাহিদার শেষ নেই। একটা চাহিদা না মিটতেই আর একটা চাহিদা তৈরি হয়। তবে একজন প্রকৃত মানুষ জীবনে যা যা চায় , তার সবকিছু পূর্ণ হওয়া উচিত নয়। শিশু এবং মূর্খ যারা তারাই সবকিছু চায়। কারণ চাওয়ার গুণাগুণ বিচারের ক্ষমতা এদের নাই। সাধারণ মানুষের সবসময় সুখী হয়ে থাকে, কারণ তাদের চাওয়া অতি সাধারণ, যা সহজে পূর্ণ করা সম্ভব। মানুষের অনন্ত চাহিদা তাকে অশান্তির পথে টেনে নেয়। অল্পতে সস্তুষ্ট থাকতে পারলেই মন শান্ত ও সুখি হবে। আমরা সর্বদা ভাবি কি পেলাম না, কী নাই আমাদের? কী আছে, তা ভুলেও আমাদের ভাবনায় আসে না। কী পেলাম না তা নিয়ে হিসাব না করে, যা আছে তা মনে মনে বিবেচনায় নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চেষ্টা করুন। আপনার থেকে বেশি যাদের আছে তাদের দিকে না তাকিয়ে, আপনার থেকে কম যাছে যাদের তাদের দিকে তাকিয়ে নিজের পার্থক্য করুন। একঘেঁয়ে সুখ বা আনন্দ লাভই যদি কারো উদ্দেশ্য হয়, তবে তা সফল হওয়া কঠিন। কারণ নিরানন্দের পরেই শুধু আনন্দের এবং কষ্ট বা দুঃখের পরেই সুখের অনুভূতি আসে। যে লোক সব সময় গাড়িতে চড়ে তার পক্ষে গাড়ি চড়ায় কোনো সুখ নেই। যে রোজ ভালো খায় তার পক্ষে ভালো খাওয়াটটা সুখের অংশ বলে মনে হবে না। কাজেই সুখের স্বাদ পেতে হলে আগে কিছুটা দুঃখের অংশ থাকা চাই। রাতকে বাদ দিয়ে যেমন দিন হয় না, তেমনি হতাশা , অপ্রাপ্তি কিংবা দুঃখ-কষ্টকে বাদ দিয়ে সুখ কিংবা আনন্দ হয় না। প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি দুটোই জীবনের অংশ। যার প্রাপ্তি তালিকা যত বড় , তার অপ্রাপ্তির তালিকা তার চেয়েও বৃহৎ হয়।
৭১। আমরা যেমন মাছে-ভাতে বাঙালি, জাপানিরাও মাছে-ভাতে জাপানি। কিন্তু আমাদের সাথে জাপানিদের মূল পার্থক্য হল- তাদের লেগে থাকার ক্ষমতা আমাদের চেয়ে শতগুণ বেশি। আমরা ধরি আর ছাড়ি। কিন্তু জাপানিরা কোনো কিছু ১০০% আয়ত্ব আসা পর্যন্ত ছাড়ে না। সহজে আয়ত্ব করার কিছু কৌশল তারা প্রয়োগ করে । এখানে পড়ালেখায় ধৈর্য ও মনোযোগ বাড়াতে জাপানিদের মতো ৫ কৌশল:
শিসা কঙ্কো
প্রায় ১০০ বছর আগে থেকে জাপানের ট্রেনের চালকেরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করতেন দুর্ঘটনা এড়াতে। ট্রেন আসার সময়ে খুব জোরে চেঁচিয়ে এবং সঙ্কেত দেখিয়ে সতর্ক করা হত, যাতে ওই সময়ে লাইন পারাপার কেউ না করেন। ইংরেজিতে এর অর্থ হল ‘পয়েন্টিং অ্যান্ড কলিং’। মনোযোগ বাড়াতে এই পদ্ধতির সবচেয়ে কার্যকর বলেছেন গবেষকরা। শিশুরা যেন চেঁচিয়ে ও স্পষ্ট উচ্চারণে পড়ে। প্রতিটি লাইন জোরে জোরে পড়লে তা কানে যায় এবং মুখস্থও হয় দ্রুত। আর জোরে পড়ার সময়ে অন্য কোনও দিকে মন যাবে না। এতে একাগ্রতাও বাড়বে।
জানশিন
পড়ার নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুটি নিয়ে ভাবতে হবে। ওই সময়ে অন্য কোনও কাজ করা যাবে না। পড়তে বসে অন্য ভাবনা মাথায় ঢ়ুকলে মুহুর্তে সেটি থেকে সরে আসতে হবে।
নাইকান
প্রতিদিন নিয়ম করে নাইকান বা আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে, যেমন— কি কি শিখলাম, কোন কোন বিষয়ে পুনরায় রিভাইজ বা চোখ বুলাতে হবে, তালিকা ধরে কোন পড়া কতটুকু নিয়ন্ত্রনে এলো, তা বুঝে নিজেকে নম্বর দিতে হবে।
চৌরেই
চৌরেই-এর অর্থ ‘মর্নিং মিটিং’। রোজ সকালে ঘুম থেকে জাগার পর পড়তে হবে। কারণ, এই সময় মানুষের মস্তিষ্ক ১০০% সার্প থাকে। জ্ঞান-বুদ্ধি বিকাশের এটা খুবই উপযুক্ত সময়।
কাকেইবো
কাকেইবো মানে পড়া বিষয়টি একবার লেখা। এজন্য শিক্ষাকে পড়ালেখা বলে। প্রতিদিন কি কি পড়া শেষ হয়েছে, তা লিখে ফেলতে হবে। পড়াটি ৫০গুণ মনে সেট হবে লেখার মাধ্যমে।
৭২। যদি কোনো মানুষের এই ধারণা থাকে যে, তার মাঝে আরো অনেক লুকানো শক্তি আছে; তাহলে সে যা কাজ করছে, প্রয়োজনে তার থেকে বহুগুণ বেশি কাজ সে অবশ্যই করতে পারবে। আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে কোনো কাজে কৃতিত্ব লাভ করা যায় না। যার যত বেশি আত্মবিশ্বাস, সে তত বেশি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। আত্মবিশ্বাসে মন সর্বদাই সবল ও নির্ভীক থাকে। আত্মবিশ্বাসে কর্মক্ষমতা দিন দিন বাড়তে থাকবে। কাজের অহেতুক ভয়-ভীতি চলে যায়। যার আত্মবিশ্বাস নেই, কোনো কাজ আরম্ভ করার পূর্বে তার সন্দেহ হয়, বুঝি কাজটা সফল হবে না। হতাশা, চিন্তায় তার কাজ বিনষ্ট হয়ে যায়। মনে রাখবেন, প্রতিটি মানুষের কাজের চেহারাটি তার আত্মবিশ্বাসের অনুরূপ হবে।
আত্মবিশ্বাস বিকাশের তিনটি উপায়।
১) সাফল্যের কথা ভাবুন, ব্যর্থতার ভাবনাকে প্রশ্রয় দেবেন না। কঠিন পরিস্থিতিতে ‘আমি জিতবো’, ‘আমি সফল হবো’ এই ধারণাটি বদ্ধমূল করে তুলুন। সাফল্যের চিন্তা আপনার মনকে সফল হওয়ার পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে সাহায্য করে। ২) সফল মানুষেরা কেউই মহামানব নয়। সাফল্যের জন্য অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার দরকার হয় না। সাফল্য কোনো অলৌকিক ব্যাপার নয়, সৌভাগ্যের সঙ্গেও সাফল্যের কোনো সম্পর্ক নেই। সফল মানুষটিও সাধারণ মানুষ, তবে তার নিজের ওপর, নিজের কাজের ওপর আস্থা ছিল বলেই সে সফল। তাই কখনও নিজেকে ছোট ভাববেন না। ৩) বড় বড় আশা রাখুন। আপনার বিশ্বাসের আয়তন যতখানি, ততটাই বড় হবে আপনার সাফল্যের আয়তন। ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করলে প্রাপ্তিও হবে যৎসামান্য। বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, এই বড় লক্ষ্যকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে অগ্রসর হোন।
৭৩। শুধু নিজের কথা নয়, অন্যের কথাও ভাবুন: আমরা সবাই নিজের সুযোগ-সুবিধা, আরাম-আয়েশ, ভালো-মন্দ সবার আগে হিসেব করে নিই। তবে সেটা যদি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় এবং অন্যর কথা না ভেবে শুধু নিজেরটাই বেশি বেশি ভাবতে থাকি, তাহলে তা বেশি স্বার্থপরতায় রূপ নেয়। মূলত নিজের সুবিধার জন্য অন্য কারো ক্ষতি করছি এটাই আসলে স্বার্থপরতা। অনেক সময় মানুষ নিজেরটা এতটাই ভাবে যে অন্যের কথা ভাবতে চায় না। নিজের সুবিধা আদায়ের জন্য সহকর্মী বা পাশের মানুষটিকে অন্যের কাছে ছোট করে, আঘাত করে। এই ধরনের স্বার্থপরতা ও সংকীর্ণতা মনে পুষে রাখবেন না। কারণ সময়ের স্রোতে স্বার্থপরতার ব্লাকহোলে আপনি হারিয়ে যাবেন। অন্যকে সাহায্য করুন। দাতা হোন, গ্রহীতা নয়। ধরুন কেউ কোন ভুল করে ফেলেছে। আর আপনি তখন তার সঙ্গে চোটপাট শুরু করলেন । তার ফোন রিসিভ করেন না বা ব্লক করে রাখেন। ফ্রয়েড বলেন, অপরের দোষ ত্রুটি সহ্য করতে না পারলে, কারো সঙ্গে তোমার সম্পর্ক গড়ে উঠবে না বরং যাদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে তারাও পালিয়ে যাবে।
৭৪। গলাবাজী-চাপাবাজী এড়িয়ে চলুন। আপনার মাথায় অনেক পরিকল্পনা আছে, আইডিয়া আছে, অনেক বড় বড় লক্ষ্য আছে। কিন্তু কাজের বেলায় ঠন ঠন। আপনাকে শুধু বড় বড় বুলি আওড়াতে শোনা যায়। শুধু বলেন আগামীমাস থেকেই নেমে পড়বো। তারপর ফাটিয়ে দেব। আপনার এই আচরণে আপনার চারপাশের মানুষগুলো ধীরে ধীরে একটি জিনিস বুঝে ফেলছে। সেটা হচ্ছে, চাপাবাজের গলাবাজী। আপনাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তাই আপনার কাছ থেকে কেটে পড়লেই ভালো। আপনি যখন বড় বড় পরিকল্পনার কথা বলেন তখন আপনি চান তারা আপনার প্রশংসা করুক। কিন্তু মানুষ দেখে যে, সবকিছুই অন্তঃশ্বাস শূন্য ফাঁকা বুলি। তখন আপনার গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়। আপনাকে সবাই ফালতু ভেবে নেয়।
৭৫। টেনশন এমন বাতাস, যা যেকোনো দিক থেকে হঠাৎ য়াসতে পারে, যা এড়ানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে পরিস্থিতিকে মেনে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট অবস্থাকেও যে মেনে নিতে পারে, তার হারাবার কিছুই থাকে না। সমস্যা চিরস্থায়ী নয়। মনে করলে দেখতে পাবেন বিগত দিনে আপনি অনেক বড় বড় সমস্যায় দিশেহারা হয়েছিলেন, ভয়ে আতঙ্কে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিলেন। সে সব সমস্যাগুলো কি এখন আছে? নিশ্চয়ই নেই। আজকের সমস্যাও আগামিকাল থাকবে না। তখন হয়তো নতুন সমস্যা দেখা দিবে। কাজেই সমস্যায় বিচলিত হবেন না। ভেঙ্গে পড়বেন না। সমস্যাকে ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করুন। সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তা সময়ের উপর ছেড়ে দিন। দেখবেন সেটা নরম হতে হতে সমাধানের নাগালে এসে যাবে। মোট কথা বাস্তবকে মেনে নিন। প্রত্যেক মানুষের অন্তত এমন একজন বন্ধু থাকা উচিত, যাকে মনের কথা বলে হালকা হওয়া যায়। রাগ উত্তেজনা কখনো মনে পুষে রাখতে নেই। এতে কষ্ট ও টেনশনের মাত্রা আরো বাড়বে।
৭৬। উত্থান-পতন মেনে নিয়ে লেগে থাকুন: সব সময় মনে রাখবেন আপনি আজ যে অবস্থায় আছেন তার থেকে অনেক খারাপ অবস্থায় আছে পৃথিবীর অনেক মানুষ। জীবনের উত্থান-পতন আছেই। যদি আপনি কোনো একটি কাজে প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন তাহলে হতাশ না হয়ে বরং ভাবুন কী কারণে তা ব্যর্থ হলো। তাহলেই তা অন্য নতুন কোনো উপায়ে শুরু করা যায়। জীবনে যত বেশি উত্থান-পতন হবে, আপনার লক্ষ্য ততই নিকটে আসার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। কখনো হাল ছেড়ে দেবেন না। কারণ, আপনি জানেন না, আপনার লক্ষের কত কাছাকাছি আপনি আছেন। ভুল সংশোধন করে নতুন ভাবে পরিকল্পনা সাজিয়ে কাজ করতে থাকুন। প্রথমে সমস্ত সমস্যাই কঠিন মনে হয়, কালক্রমে তা সহজ হয়ে আসে। ব্যর্থতা সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর পথ। সিনিয়র টম ওয়াটসনের কথায়, ‘যদি সফল হতে চাও তবে ব্যর্থতার হার দ্বিগুণ করে দাও।’ ইতিহাস পড়লে দেখা যায় যে, সমস্ত সাফল্যের কাহিনীর সঙ্গে আছে ব্যর্থতার কাহিনীও। কিন্তু সফলতা লাভের পর ব্যর্থতা মানুষের নজরে পড়ে না। সবাই মনে করে লোকটি ভাগ্যবান।
৭৭। স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু এবং সহকর্মীদের খুশি করতে সবাই বেশ অর্থ খরচে প্রস্তুত থাকেন। অথচ এটা অর্থহীন পয়সার অপচয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারো জন্যে পয়সা খরচ করে বড় একটা উপহার কিনলে অল্প সময়ের জন্যে খুব ভালো লাগবে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে নয়। অর্থকষ্টে না থাকতে চাইলে এসব অর্থ সঞ্চয় করে রাখুন। মানুষের অর্থনৈতিক জীবনটা অনেক বেশি বাস্তবিক। তাই হিসাব করে খরচ করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে নিজের কাছে অর্থ থাকাটাই পুরস্কারের মতো। অর্থ খরচ করেও কাউকে স্থায়ীভাবে তুষ্ট করা যায় না। তাই অর্থ খরচ শেষ পর্যন্ত অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। বন্ধুত্ব ধরে রাখতে দামি উপহার শর্ত হতে পারে না। আপনি যেমন তেমন মানুষটাকেই গ্রহণ করে নেবেন তারা। এর জন্যে তাদের দামি বিশেষ উপহার প্রদান বা অর্থ খরচ করে দামি রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে হবে না।
৭৮। রাজা [ষোড়শ লুই]। ধনী গরিব নির্বিশেষে সবাই যাতে তার সভায় থাকেন, তিনি তা খেয়াল রাখতেন। সবকিছু খেয়াল করতেন। সব শ্রেণীর মানুষ সভায় না থাকলে তিনি অসন্তুষ্ট হতেন এবং যাদের খুব কম দেখা যেতো তারা তার রোষে পড়তেন। তিনি তার কাছে আসার সমস্ত মানুষ জনকে আন্তরিকতা দিয়ে কাছে টেনে রাখতেন, কখনো কাউকে খবরদারি, কটু কথা বলা, রাগ দেখানো কিংবা অভদ্রতা দেখাতেন না। তিনি মনে করতেন, নিজেকে রক্ষা করার জন্য দুর্গ তৈরি করা আসলে আপনাকে সাহায্য পাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে।
নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিবর্তে নিজেকে অন্যের কাছে মেলে ধরুন। পুরনো বন্ধু খুঁজুন, নতুন বন্ধু করুন, নিজেকে আরো বিভিন্ন মহলে প্রবেশ করান। আপনি অন্যদের সঙ্গে যত মিশবেন, আপনি তত উদার ও সহজ হতে পারবেন। আপনাকে যত্রতত্র যেতে হবে, বিভিন্ন মহলে ও বিভিন্ন ধরনের লোকের সঙ্গে মিশতে হবে। দেখা গেছে যেসব ব্যক্তি শৈশবে বাবার কর্মসূত্রে বা অন্য কারনে বিভিন্ন জায়গায় বেড়ে উঠেছেন, তারাই পরবর্তীতে সফলতা পেয়েছেন। যেসব ভাড়াটিয়া ঘুরে ঘুরে বাসা পাল্টিয়ে থাকেন, তাদের সন্তানরা বাস্তব ক্ষেত্রে হিরো হয়।
৭৯। জীবনটা রেস নয়, জীবনটা জার্নি! একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরেই এদেশের ছেলেমেয়েদের একটা বড় অংশ বলতে থাকে: আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা। এখন আর বয়স নেই? অনেক সময় আমাদের এমনটা মনে হতে পারে। বাস্তবতা হল, লক্ষ্য পূরণ করা আসলে যেকোনো বয়সে সম্ভব। আপনার বয়স ২০,বা ৯০ যাইহোক না কেন লক্ষ্য পূরণ করা নির্ভর করে আপনার মানসিক প্রস্তুতি, আগ্রহ এবং সঠিক কৌশলের ওপর, বয়সের উপর নয়। লিও তলস্তয় সাইকেল চালানো শিখেছিলেন ৬৭ বছর বয়সে, আর্টিস্ট পাবলো পিকাসো বিয়ে করেছিলেন ছিয়াত্তর বছর বয়সে। লিওনিদ হুরউইজ, ৯০ বছর বয়সে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন! সবচেয়ে বেশি বয়সী যে মানুষটি এভারেস্টে উঠেছেন তাঁর নাম ইউকিরো মুইরা, ৮১ বছর বয়সে! হাল ছেড়ে দিবেন না। সফলতার মার্কশিট বলে কিছু নাই। যদি থাকতো তাহলে ড্রপ আউট স্টুডেন্ট ইলন মার্কস, মার্ক জুকারবার্গ ,বিল গেটসরা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী হতেন না। লক্ষ্য পূরণ করতে সঠিক মানসিক প্রস্তুতি, আত্মবিশ্বাস এবং ধারাবাহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে আপনি যেকোনো বয়সেই সফল হতে পারবেন। বয়স একটা সংখ্যা মাত্র।
৮০। যাঁরা আপনার থেকে বেশি জ্ঞানী ও ক্ষমতাবান। তাদের সঙ্গে নিজেকে সম্বন্ধযুক্ত করুন। যখন কোনো মানুষ কোনোকিছু করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে অনর্ববরত চেষ্টা করতে থাকেন, তখ্ন অসুবিধা যাই থাকুক, তিনি সফল হবেনই। ক্ষমতার জগতে আপনার অন্য লোকের সাহায্য দরকার হবে, যাঁরা আপনার থেকে বেশি ক্ষমতাবান। এ জন্য যদি আপনি একটি উপযুক্ত ক্ষমতার উৎস খুঁজে পান, তার সঙ্গে নিজেকে সম্বন্ধযুক্ত করুন। কখনো কিছু পাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করবেন না। সব সময় ধৈর্যশীল হোন, দেখবেন যে, সবকিছু একসময় আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। এই সঠিক সময় নিরূপণের জন্য পরিস্থিতির ভাব শুঁকে উপযুক্ত সময় বের করুন, সেটা আপনাকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবে। যখন সময় হয়নি তখন পিছনে সরে যাওয়া আয়ত্ব করুন এবং কাজেই- অপেক্ষা করুন। যখন সময় এবং সুযোগ একবিন্দুতে আসবে, তখন হিংস্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। যে সাফল্য ধীরে ধীরে গড়া হয় একমাত্র তাই টিকে থাকে।
৮১। নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করুন, গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন। যে হীনম্বন্যতায় ভোগে, তার যতই যোগ্যতা থাক, সে তুচ্ছ নগণ্যই রয়ে যায়। কারণ মনের অবস্থা থেকেই ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার উৎপত্তি হয়। কেউ নিজেকে তুচ্ছ মনে করলে, সে অনুরূপ হতে বাধ্য। তাই নিজেকে যে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না, সে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পার না, গুরুত্ব পায় না। নিজেকে চটপটে সপ্রতিভ দেখালে আপনি নিজেও বুদ্ধিমান মানুষের মত চিন্তা করতে পারবেন। আপনার বাইরের চেহারাটা আপনার সঙ্গে কথা বলে এবং অন্যদের সঙ্গেও কথা বলে। মানুষ আপনার বাইরের চেহারা দেখেই আপনার মূল্যায়ন করে। অর্থাৎ আপনাকে মূল্যায়নের প্রথম ভিত্তি আপনার চেহারা ও পোশাক। আর প্রথম দর্শনে যে ধারণাটা সৃষ্টি হয় তা-ই সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়।
৮২। একটি ছোট দলে নিজের সামাজিক পরিবেশ সীমায়িত রাখলে তা নিরস, বিরক্তিকর, একঘেঁয়ে হয়ে যায়। নতুন বন্ধুত্ব গড়তে নতুন নতুন সংগঠনে যোগ দিন, আপনার সামাজিক পরিধি বিস্তৃত করুন। তাছাড়া, যে কোনো জিনিসের মতই মানুষের বৈচিত্র্য জীবনে নতুন স্বাদ আনে, নতুন বন্ধুত্বের মাধ্যমে জীবনকে ব্যাপক দিশা দেয়, মনের রসদ জোগায়। যত বেশি বন্ধুত্ব গড়ে তুলবেন, ততই বেশি উপরে ওঠার সম্ভাবনা থাকবে। আর সবার প্রিয় হয়ে উঠলে আপনাকে না ঠেলে তোলাও সহজ হবে। এমন কিছু বন্ধু তৈরি করুন যাদের মতামত আপনার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করুন। বিপরীতমুখীদের সঙ্গে আলাপ করুন। তবে লক্ষ্য রাখবেন এরা সবাই যেন সম্ভাবনাময় বিচক্ষণ ব্যক্তি হয়।
৮৩। যে বন্ধু বৎসল তার বন্ধু ভাগ্য হবেই। যদি আপনি বন্ধুত্ব গড়ে তোলার দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন, তাহলে সম্ভবত আপনার বেশি বন্ধু জুটবে না। নতুন বন্ধুত্ব পাতানোর তিনটি উপায়: ১. যে কোনো জায়গায়, যে কোনো সময় সুযোগ পেলেই নতুন লোকের সঙ্গে আলাপ করুন। প্রথমে আপনার নাম এবং কোথায় থাকেন, এখানে কি কাজ তা সংক্ষেপে বলুন। ২.লক্ষ্য রাখবেন, অন্যজন যেন আপনার নামটা স্পষ্ট শুনতে ও বুঝতে পারে। এবং লক্ষ্য রাখবেন, আপনি যেন অন্যজনের নামটা তারই মতন করে উচ্চারণ করেন। তারপর তাকে তাকে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিন। কোথায় থাকে? কোন কাজে এসেছে কিনা? ইত্যাদি। এরপর সামান্য প্রশংসা করুন। যেমন তার জামাটা খুব সুন্দর, তাকে দেখতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে কিংবা তার কিছু কোনো স্বভাব আচরণ ইত্যাদি। ৩। কোনো বাক্য শেষ করে চুপ হয়ে যাবেন না। অতিরিক্ত কিছু বলুন। তাকে তার মতামত, মন্তব্য, কৃতিত্ব সম্বন্ধে বলার সুযোগ দিন। ইজি হলে তার ঠিকানা ও ফোন নম্বর চেয়ে নিন।
৮৪। ভেড়ার পালে একটা নেতা থাকে । ভেড়ারা নেতাকে এমন অন্ধভাবে অনুসরণ করে, নেতা যদি নদীতে ঝাঁপ দেয়, তাহলে অন্যান্য ভেড়ারা কোন বিকল্প চিন্তা না করেই তাকে অনুসরণ করে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ইংরেজিতে একটা শব্দ আছে “শীপল” (Sheeple)। শীপ এবং পিপল-এর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে এই শব্দটি। যে মানুষ ভেড়ার মতো আচরণ করে,তাকেই শীপল বলা হয়। বিশেষ করে একজন মানুষ যখন কোন ব্যক্তি বা মতবাদকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে, কোন চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই, সন্দেহাতীত বা প্রশ্নাতীতভাবে উক্ত ব্যক্তি বা মতবাদের নির্দেশনা মান্য করে বা অনুসরণ করে, তাদেরকেই শীপল বলা হয়। বাংলাদেশে দুই ধরণের শীপল-এর সংখ্যাধীক্য লক্ষ্য করা যায়। নাম্বার ওয়ান- ধর্মীয় শীপল এবং নাম্বার টু- রাজনৈতিক শীপল! ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক শীপল-এর মিশ্রণও আর এক ধরনের শীপল আছে। তবে কেউ যদি নিজে শীপল হয়ে থাকেন, তাহলে অন্যান্য শীপলদের উপস্থিতি সে টের পায় না। পড়াশুনার কারণে বিশ্বের অনেক দেশে শীপলদের সংখ্যা দিন দিন কমছে, আর বাংলাদেশে বাড়ছে।
নিজের ব্রেনকে কাজে লাগিয়ে মানুষ অন্যের মতামত, চিন্তা বা সিদ্ধান্তকে বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারে, চ্যালেঞ্জ করতে পারে্ ভিন্নমত পোষণ করতে পারে। কিন্ত,মানুষ তা না করে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতাদের অন্ধভাবে অনুসরণ করে? আপনার ব্রেনটিকে কাজে লাগান। চিন্তা করুন, গবেষণা করুন, প্রশ্ন করুন, প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করুন! তখন দেখতেই পাবেন আপনার চারপাশে শীপলদের উপস্থিতি কত ভয়াবহ!! একটা কলম না লিখলেও সক্রেটিসকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী বলা হয়। কারণ প্রশ্ন ছাড়া কোন সিদ্ধান্তকে মেনে নিতেন না। সবকিছুতে সে প্রশ্নের পর প্রশ্ন ছুড়ে দিতেন।
৮৫। কারো ইচ্ছায় হউক, অনিচ্ছায় হউক’ কোটি কোটি মানব সন্তান জন্ম নিয়েছে পৃথিবীতে। কিন্তু এ মানব সন্তানগুলো জন্মের সময় জন্মস্থান কিংবা জন্মদাতা বেঁছে নেবার সুযোগ কি পেয়েছিল? যারা জন্ম নিয়েছে পৃথিবীর দুর্বল জন্মদাতার অধীনে, তারা অন্য সবল মানবের নিষ্ঠুরতার স্বীকার হয়ে করুন জীবন-যাপন করছে। কেউ চুরি কছে, কেউ দাসত্ব করছে, কেউ সঠিক শিক্ষা না পেয়ে কট্টরপন্থী কিংবা কেউ সাধারণ শ্রমিক; এরা সবাই সুবিধাবঞ্চিত মানব সন্তান। আমরা শুধু আমাদের ঔরসজাতদের সুবিধার কথা ভেবেছি, আর অন্যদের বঞ্চিত করে চলেছি। এটা চরম অমানবিকতা।
আপনি যেই হোন, যেকোন মুহুর্তে পৃথিবী থেকে আপনাকে বিদায় নিতে হবে এবং এ পৃথিবীতে আপনি আর আসতে পারবেন না। ফলে অজস্র টাকা আর মরিচিকার পিচনে ছুটে জীবন শেষ করে বোকারাই। জ্ঞানীরা অন্যের সাথে শেয়ার করে জীবন উপভোগ করে; অন্যকে ভাল রাখার মাধ্যমে নিজে ভাল থাকার চেষ্ঠা করে। স্বার্থপররা নিজের শুক্র কিটের বাইরে বাইরে কিছুই বুঝতে চায় না, এমনকি নিজের মেয়েদেরকেও বঞ্চিত করে ছেলেদের পেট বাড়ায়। এই অসভ্য সংকীর্ণমনা মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে, আপনি পশুদের কাতারে থাকবেন মানুষ নয়।
৮৬। কেউ যত ভাল মানুষ বা ভালো মেয়েকে বিয়ে করোক না কেন, তার খুঁত থাকবেই। সঙ্গীর খুঁতের দিকে তাকিয়ে থাকলে, তার যোগ্যতাকে কখনো দেখতে পাওয়া যায় না। সঙ্গীর অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে, বর্তমান জীবনকে হারাতে হয় । অন্যের সংসারের জৌলুসকে সুখ ভেবে নিয়ে, নিজের সংসারকে অসুখের আখড়ায় পরিণত করা যাবে না। সংসার জীবন হলো একটি গাছের চারা, যাকে নিয়মিত পরিচর্যা করলে একটি ফলদায়ক গাছে পরিণত হবে; পরিচর্যা না-করলে, ধুঁকতে-ধুঁকতে, দ্রুতই মরে যাবে। উপার্জন ছাড়া সংসার করার ভাবনাটিই তামাশা এবং অপরাধ। অভাব এমন একটা ছুরির নাম, যা প্রতিনিয়তই ভালোবাসাকে কাটতে থাকে। প্রেম ভালোবাসাহীন সংসার একসময় পরিণত হয় দাসত্ব ও মালিকানায়। সংসারে, ডিভোর্স না-হওয়া মানে এই নয় যে─ এরা সুখী। কারণ─ ডিভোর্স সবসময় কাগজে-কলমে হয় না, ডিভোর্স মূলত হয় মনে, এবং চিরকাল মনের ভিতরেই এই ডিভোর্স রয়ে যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। তাই সংসার নামের চারাগাছ পরিচর্যা করুন নিয়মিত।
৮৭। অর্থের পেছনে ছুটতে থাকা একটা অনন্তকালের যাত্রা। ছুটতেই থাকো, ছুটতেই থাকো। প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন চাহিদারা তাড়িয়ে বেড়াবে। প্রতিনিয়ত গন্তব্যটা আরো একটু করে দূরে সরে যাবে। ক্যারিয়ারের সিঁড়িটাও বোধহয় অমন। উঠতে উঠতে কোনো একদিন ভীষণ ক্লান্ত লাগবে। একদিন থামতে হবে। এরপর মনে হবে, এই ভয়ংকর প্রতিযোগিতায় কি পেলাম আর কি হারালাম। তাই জীবনে অর্থ ও ক্যারিয়ার-এর পিছনে জীবন শেষ করবেন না। অতিরিক্ত অর্থ আপনাকে অহংকারী ও বিচ্ছিন্ন করে তুলবে। আপনি যত বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন ততবেশি দূষণে আপনার শরীর ব্যাধিতে ভরে উঠবে। দেখা দেবে নানা লাইফস্টাইল অসুখ। প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ সবচেয়ে যে ক্ষতিটা করবে, মানুষের সঙ্গে সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্ক নষ্ট করে দেবে। দৃষ্টিভঙ্গি এমনভাবে আচ্ছন্ন করবে যে মনে হবে টাকা দিয়ে আপনি সবই কিনতে পারেন। আপনার ধারণা হবে একমাত্র আপনিই এ পৃথিবীতে যোগ্যতম ব্যক্তি । আপনার চেয়ে অপেক্ষাকৃত গরিব লোকদের সাথে সম্পর্ক এড়িয়ে চলতে চাইবেন ।
৮৮। ইদুঁরের কলোনির উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপর ভিত্তি করে মানব সভ্যতাকে বোঝার চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা। যা 'ইউনিভার্স ২৫' নামে বিখ্যাত। এতে ইদুঁরের জন্য একটি 'আদর্শ দুনিয়া' নির্মাণ করেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে ইঁদুরেরা থাকবে এবং বংশবৃদ্ধি করবে। যাকে ইদুরের স্বর্গও বলা যায়। অঢেল খাবার, পানি ও থাকার জন্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জায়গা। শুরুতে সেখানে তিনি চার জোড়া ইঁদুর রাখা হয়, যেগুলা অল্প সময়ের মধ্যে বংশবৃদ্ধি শুরু করে। অবাক করা ব্যাপার হল, ইঁদুরদের সেই স্বর্গে মাত্র ৩১৫ দিন পরেই বংশবৃদ্ধির হার কমে যায়। যখন ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে ৬০০ তে পৌছালো, তখন সেখানে দুটি জাত তৈরি হয়ঃ ভালো ও 'বিকৃত'। এরপর থেকে দূর্বল ইঁদুরগুলো সবলদের আক্রমণের শিকার হয় এবং কোণঠাসা হয়ে পড়ে'।
নারী ইঁদুররা বেশি সন্তান জন্ম দেবার পরিবর্তে জন্ম নেয়া সন্তানদের প্রতি আক্রমনাত্মক হয়ে উঠে এবং জন্মহার ক্রমেই কমতে শুরু করে । পুরুষদের মাঝে একটি নতুন জাতের ইঁদুরের উৎপত্তি হয়, যারা বংশবৃদ্ধির জন্য 'লড়াই' করতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা শুধু খাদ্য ও ঘুম নিয়ে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বিজ্ঞানী জন ক্যালহোনের মতে, আগামীতে সমৃদ্ধ মানব জাতীর জন্য দুটি ধাপ আসছে। 'প্রথমত হচ্ছে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়া এবং বংশবৃদ্ধি ও সন্তান প্রতিপালনের প্রতি অনিহা। 'দ্বিতীয়্ত হচ্ছে মৃত্যু'। কারণ সমৃদ্ধির পরিনাম হচ্ছে মৃত্যুর দিকে দ্রুত যাত্রা। তাই স্টিভ জবসের সূত্র মেনে চলুনঃ "ক্ষুধার্ত থাকুন ভালো থাকুন।"
৮৯। জীবনসঙ্গী বা সন্তানকে আড়ালে বা সবার সামনে ছোট করা, বকাবকি করা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, কোনো কিছু নিয়ে প্রশ্ন তোলা, চিৎকার চেঁচামেচি করা,খোঁটা দেয়া,অবিশ্বাস করা, অপমান বা অসম্মান করাটাকে গ্যাসলাইটিং’ বলে। এটা এক ধরনের মানসিক অত্যাচার। কারো সামনে কিংবা বেডরুমের মধ্যে এভাবে যে কাউকে, সঙ্গী বা সন্তানকে লজ্জা দিলে বা অপমান করলে, তাদের, আত্মবিশ্বাস, মনোবল একেবারে তছনছ হয়ে ভেঙ্গে যায়। ফলে ভিকটিম নিজেকে অসহায়, দুর্বল, অযোগ্য ও ব্যার্থ মানুষ ভাবতে শুরু করে এবং ক্রমেই, তার মানসিক ট্রমা বেড়ে যায় এবং সে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন। কাজেই কাউকে নিয়ে হাসাহাসি করবেন না। কাউকে হেয় করবেন না। কারো মুখের অভিযোগ বা ধমকের সুরে কথা বলবেন না যে, ‘তুমি কী বোঝো? চুপ করো’, ‘মেয়ে মানুষ মেয়ে মানুষের মতো থাকো’ ‘এটা কোরো না’, ‘এখানে যেয়ো না’, ‘অমুকের সঙ্গে মিশবে না’, ‘এ ধরনের পোশাক পরবে না’ ইত্যাদি কথা প্রতিনিয়ত শুনতে শুনতে হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকা মানুষটি ভিতরের আশা-আকাঙ্ক্ষা, পছন্দ-অপছন্দ, স্বপন-ইচ্ছা-স্বাধীনতা সব মরে যায়। স্ত্রী ও স্বামী বা প্রেমিক-প্রেমিকা দুজনই গ্যাসলাইটিং করতে গিয়ে পরস্পরের গতিবিধির ওপর নজর রাখেন, বারবার ফোন করেন। ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে ফোন না ধরলে কৈফিয়ত চাওয়া,ফোনে একবার না পেলে বারবার ফোন করা, গোপনে টাকা সরানো, কল লিস্ট চেক করা,্ম্যাসেজ চেক করা, ফেসবুক পাসওয়ার্ড জানতে চাওয়া, বিকৃত নামে ডাকা ইত্যাদি গচ্ছে ‘গ্যাসলাইট আচরণ।’ পরিবারে কেউ যদি গ্যাসলাইটিংয়ের শিকার হন, সেটা শিশু ও অন্যান্যদের ওপরও খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৯০। গরিব হওয়াটা আপনার হাতে নেই। কিন্তু গরিবি হঠাতে গেলে অন্যান্য কারো সহযোগিতার চেয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগ বেশি দরকার হয়। গরিব থেকে সচ্ছল হওয়া এমনকি ধনী হওয়াও একেবারে সম্ভব। তবে এ জন্য প্রচণ্ড খাটতে হয়। শুধু স্বপ্ন দেখলে চলে না। সময় ও পরিকল্পনা লাগে। তবে আপনি গরিব হলেও মনটা সমৃদ্ধ করে তুলুন। সেটা আপনারই হাতে। গরিব হলেও দারিদ্রকে সবার আগে তাড়াতে হবে মনের ভেতর থেকে। রাজার মতো আচরণ করুন। তবে রাজার মতো বিলাসিতা করতে যাবেন না। আমি আপনাকে স্পেন্ট নামক একটি গেম-এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। যুক্তরাষ্ট্রের রয়েল সোসাইটির অধীনে এই গেমটি পরিচালিত হয়। এটি ধনী পরিবারের সন্তানদেরকে এমন একটি পরিস্থিতিতে ফেলে, যেখানে তাকে একজন দরিদ্র ব্যক্তি হিসাবে এক মাস বেঁচে থাকতে হয়। খাবারের কষ্ট, থাকার কষ্টসহ একজন দরিদ্র ব্যক্তি্র প্রতিদিন কি অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন-রাত কাটে তা তাকে ভোগ করতে হয়। কিন্তু গরিব হলেও তার আচরণ যদি রয়েল ফ্যামিলির মানুষের মত বজায় থাকে, তবেই সে উপযুক্ত সার্টিফিকেট পায়; যা তার রয়েল ফ্যামিলিতে গেইট বা সিঁড়ির সঙ্গে ঝুলানো থাকে। কাজেই গরিব হোন কিন্তু গরিবের মতো আচরণ করবেন না।
৯১। সাধারণত মানুষের ক্ষমতা ও অর্থবল বেড়ে গেলে তার অপরিকল্পিত কাজ বৃদ্ধি হয়। সোজা বাংলায় বলে অতি বাড় বাড়া। গরিব যদি ধনী হয়ে উঠে তাহলে তারা পুরনো বন্ধু-বান্ধব পরিচিতদের ধীরে ধীরে চিনতে পারে না। ক্ষমতায়িত লোকেরা তার চেয়ে বেশি ক্ষমতাবানদের সাথে মেশে। গণতান্ত্রিক সুশীল নেতা বা নেত্রীও একচ্ছত্র ক্ষমতা পেলে স্বৈরাচারিতে পরিণত হয়। কিন্তু বহু জাদরেল অফিসার রিটায়ার করার পর সাপ থেকে কেঁচোয় পরিণত হন। নামের আগে যতক্ষণ না একটা এক্স বা প্রাক্তন বসছে ততক্ষণ আর তিনি এ পৃথিবীর মানুষ থাকেন না। প্রতিবেশির যখন টাকা-পয়সা বেশি নেই, তখন তিনি আপনাকে দাদা বলে ডাকবেন। যেই তাঁর আঙুল ফুলে কলাগাছ হবে, অমনি দাদার বদলে গাধা বলবেন। যার যত অর্থ জমে তার তত স্বার্থ বিনাশ হয়। ক্ষমতায়িত ব্যক্তি তার কাজকর্মের জন্যই প্রতিদিন শত্রু তৈরি করে। এই শত্রুরা তার পতন ডেকে আনে। যখন অর্থ যশ একনাগারে চলতে থাকে; তখন নিজেকে কন্ট্রোল করতে শিখুন। কোথায় থামতে হবে তা উপলব্ধি করুন। অতিরিক্ত আশা, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, অতিরক্তক কল্পনা ছেঁটে নিন। নয়তো আপনাকে স্থায়ীভাবেই থেমে যেতে হবে।
৯২। বিভিন্ন সংস্কৃতি মিলেমিশে একটি বৃহত্তর সম্প্রদায় গড়ে তুলুন। ব্রিটিশ নাট্যকার ইসরাইল জাংউইল-এর দ্য মেন্টিং পট নামের নাটকে মূলত অভিবাসী সম্প্রদায়গুলোর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে একটি নতুন জাতির উদ্ভবের কাহিনী বলা হয়। মেন্টিং পটে বিভিন্ন ধরনের ধাতুকে একত্রে রাখা হয় এবং তারপর উত্তপ্ত করে গলানো হয়। এই উত্তাপে প্রতিটি ধাতু তার নিজস্ব গঠনতন্ত্র হারিয়ে ফেলে এবং অন্য ধাতৃগুলোর সঙ্গে মিশে একক, সমন্বিত ধাতু তৈরি করে। যুক্তরাষ্ট্রেও তেমন ব্যাপারটি ঘটেছে। সেখানে বিভিন্ন জাতি, সংস্কৃতি এবং ধর্মের মানুষ একত্রে মিশে একটি অভিন্ন সামাজিক পরিচয় তৈরি করেছে। মেন্টিং পটের মাধ্যমে একটি বহুমুখী, সহনশীল এবং সংহত সমাজ গড়ে ওঠে যেখানে সকল সংস্কৃতি মিলেমিশে একটি বৃহত্তর সম্প্রদায়ের জন্ম হয়। এতে মুক্তভাবে মতামত বিনিময়ের সুযোগ থাকায় নতুন আইডিয়া এবং উদ্ভাবনের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, যা প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং শিল্পকলায় বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই জন্যই যুক্তরাষ্ট্র সকলের কাছে এখনো স্বপ্ন পূরণের দেশ হিসেবে পরিচিত ৷ আপনার পরিবার ও পরিবেশের চারপাশে এমনিভাবে বিভিন্ন ধর্ম বর্ণ সম্প্রদায়, ধনী-গরীব, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের সংমিশ্রণে নতুন একটি সমাজ তৈরি করুন।
৯৩। পরিবর্তন ইতিহাসের অনিবার্য গতি। আপনি কিছুদিন তার গতিরোধ করতে পারেন, কিন্তু চিরদিন পারেন না। পরিবর্তনের বিরোধিতা করলে পরিবর্তনের ঝড়ে ও বৃষ্টিতে আপনি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবেন। পরিবর্তনের পক্ষে থাকুন। নতুন ভাবনা-চিন্তা উপেক্ষা করবেন না। একসময় যা প্রাসঙ্গিক ছিলো আজ তার প্রাসঙ্গিকতা নেই। বয়স্ক মানুষ কখনো কোনো পরিবর্তন হয় চায় না। পরিবর্তন করতে চাইলে কম বয়সি ও যুবকদের মধ্য দিয়ে করতে হয়।কনফুসিয়াস বলেছিলেন— পুরুষের সবচেয়ে খারাপ এবং বোকামীর দিক হলো সে সহজে পরিবর্তন মেনে নেয় না। আপনি যদি শিক্ষিত এবং মুক্ত মনের হয়ে থাকেন, তাহলে পরিবর্তনকে বাধা দেবেন না; পরিবর্তন মেনে নিন। পরিবর্তনকে ভয় না পেয়ে সুযোগ হিসেবে দেখুন।
নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সৃজনশীল সমাধান ও আইডিয়া চিন্তা করুন। ব্যর্থতাকে অভিজ্ঞতা ও শেখার অংশ হিসেবে গ্রহণ করুন। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য ছোট ছোট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হোন। অনুপ্রেরণাদায়ক বন্ধু, মেন্টর বা সহকর্মীদের সাথে সময় কাটান। সামনে সবচেয়ে খারাপ কী আসতে পারে, তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে রাখুন।
নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন। নেটওয়ার্ক আপনাকে নতুন নতুন সুযোগ এনে দিবে, কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আপনার উন্নতি হবে তা ভাবুন, তাদের সাথে ধীরে ধীরে নিজেকে কানেক্ট করুন। প্রশিক্ষণ, ইভেন্ট, সেমিনার, কর্মশালা ইত্যাদিতে অংশগ্রহন করুন। এখান থেকে সমমনা মানুষদের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পাবেন। নেটওয়ার্কের সদস্যদের সাহায্য এবং সহযোগিতা করুন।
দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নিন। সঠিক প্রশিক্ষণ আপনাকে নতুন জ্ঞান অর্জন, কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে সহায়তা করবে। নিজের দুর্বলতা ও উন্নতির সুযোগ চিহ্নিত করুন। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আপনার অজানা বিষয়ের উপর অসংখ্য ফ্রি কোর্স আছে, যা ঘরে বসেই শেখা যায়। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তা ধরে রাখার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করুন।
৯৪। চেনাজানা নিরীহ মানুষ, ভিড়ের মধ্যে হয়ে যায় এক অচেনা মানুষ।, মানুষ একলা একরকম আচরণ করে আর যখন সে ভিড়ের মধ্যে যায়, তখন তার আচরণ হয় অন্য রকম। স্তাভ লে বঁ নামের ফরাসি পণ্ডিতের দ্য ক্রাউড: আ স্টাডি অব দ্য পপুলার মাইন্ড নামে বইতে (১৮৯৫ সালে) প্রথম ভিড় করা মানুষের এই মনস্তত্ত্ব তুলে ধরা হয়। অনেক একা মানুষ যখন কোনো মুহূর্তে ভিড়ের মধ্যে একাত্ম হয়ে যায়, তখন তাদের মন মোটেও একলা মানুষের মনের মতো থাকে না। তার মনে তখন সঠিক চেতনা থাকে না। সব মানুষের মন মিলে বিশাল এক খারাপ মানুষের মনের মতো কাজ করে। তখন তাদের সিদ্ধান্তও হয় কোনো আদিম প্রাণীর মতো। তার শরীর মন, বিবেক, বোধবুদ্ধি, যুক্তি বলে কিছু থাকে না। কাজেই, ভিড় এডিয়ে চলুন।
৯৫। যদি আপনি খুব বলবান হন, সমালোচকদের পিটিয়ে ঠাণ্ডা করতে চাইবেন। যদি ধনবান হন, তাহলে টাকা দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করতে চাইবেন আর যদি আপনি কমজোরি হন তাহলে ধুত্তোর নিকুচি করেছে বলে কাজটা ছেড়ে দেবেন। কিন্তু কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে নিজের কানে ছিপি দেবেন। সমালোচনায় আপনার কান বন্ধ রাখুন। কোনোমতেই সমালোচকদের কণ্ঠরুদ্ধ করবেন না। তাহলে বড় কাজ করার চ্যালেঞ্জটা নষ্ট হয়ে যাবে। পৃথিবীতে এমন কোনো দার্শনিক বা তাত্ত্বিক নেই যাদের দর্শন-তত্ত্ব সমাজ নির্বিবাদে মেনে নিয়েছে। তবে, মাঝে মাঝে কানের কুলুপটা খুলে একবার একঝলকে শুনে নিন সমালোচকদের মোদ্দা কথাটা কি। যদি দেখেন রাবিশ তাহলে আবার কানের ছিপি বন্ধ করে যে কাজ করছিলেন দ্বিগুণ উৎসাহে তাতে লেগে পড়ুন। কিছুতেই সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করবেন না। একজন ২৫ বছরেই মন্ত্রী হয়েছিলেন, তিনি বেঁচেছিলেন ৫০ বছর। আরেকজন ৬৮বছর বয়সে চাকরি পেলেন। মানুষটা বেঁচে ছিলেন ৯০বছর! বেঁচে থাকাই হলো সার্থকতা। অল্পতেই কেউ সব পেয়ে গেলো মানে সে আপনার চেয়ে ভালো আছে এমন নয়। আবার আপনি যা চান সেটা পাননি বলে আর কখনো পাবেন না, এমনও নয়। নিজের মতো করে মনোযোগ দিয়ে কাজ করে যান, আপনার টাইম জোনে সুযোগ আসবেই।
৯৬। দিন বদলায়, যুগ বদলায়, সমাজও বদলায় ও নতুন সমাজ পুরনো দিনের ধ্যান-ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে অথবা নতুন দিনের ভোরে পুরনো দিনের ভাবনা-চিন্তা ভুল ছিলো বলে প্রমাণ হয়। তাই কখনো ভাববেন না, যা ভাবছেন, যা বলছেন সেটাই শেষ কথা। অথবা আপনার গুরু বা আপনার নেতা আপনাকে যা বুঝিয়েছেন সেটাই সত্যি। এর বিপরীতটা সত্যি নয়। বলতে পারেন তখনকার মতো সত্যি, কিন্তু চিরকালের জন্য নয়। পৃথিবীতে যুগ যুগ ধরে বহু মানুষ তাঁদের বিশ্বাসের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। প্রাণ দানটা সত্যি। কিন্তু বিশ্বাসটা সত্যি নাও হতে পারে। দুটি পরস্পরবিরোধী বিশ্বাসের পক্ষে বহু লোক থাকে। সেই বিশ্বাসের জন্য দুপক্ষের লোকই প্রাণ দেয়। বার্টান্ড রাসেলকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিলো আপনার বিশ্বাসের জন্য আপনি কি প্রাণ দিতে পারেন? রাসেল বলেছিলেন, না। আমার বিশ্বাসটা তো ভুল হতে পারে। সময়ই একমাত্র বিচার করতে পারে কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক। কাজেই নিজেকে অভ্রান্ত ভাববেন না, অন্যদের তো নয়ই।
৯৭। অধিকাংশ লোকই যত ধরেন তত ছাড়েন। উপকারী বন্ধুকে ছেড়ে দেন। অনেকদিন ধরে সম্পর্কের পর একে অন্যকে ছেড়ে দেয়। অনেকে বৃদ্ধ বাবা-মা, ভাই-বোনদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্কও অস্বীকার করে স্বতন্ত্র জীবনযাপন করেন। এক সময়ের উপকারকে ছেড়ে যাওয়া আকছার ঘটে। যখন যাকে দরকার হয় মানুষ তখন তাকে ধরে আর দরকার না থাকলে ছাড়ে। যেটা ছাড়া উচিত সেটাকে সারাজীবন মানুষ ধরে রেখে দেয়, যেমন সিগারেট।আর যেটা ধরে রাখা উচিত তাকে ছেড়ে দেয়, যেমন বন্ধু পরিজন সম্পর্ক । রবীন্দ্রনাথ একদা বলেছিলেন, আমরা যাহা শুরু করি তাহা শেষ করি না। কেন আমরা চট করে ধরি, চট করে ছেড়ে দেই? প্রথমে ধরি আবেগের বশে, অথবা অন্যের অনুকরণ করে। তারপর আমাদের বাস্তব মনস্তত্ত্ব কাজ করে, ফলে ছেড়ে দিই। যতক্ষণ না পাই, মনটা আকুলি-বিকুলি করে। তারপর পেয়ে গেলে তৃষ্ণাটা মিটে যায়। বিরক্ত হই। খিদে পেলে যেমন খেতে ইচ্ছে করে, আবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলে ভরা পেটে মধুও তেতো লাগে, তেমনি। দ্বিতীয়ত মানুষ মূলত স্বার্থপর প্রাণি। তার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা সবটা প্রয়োজনভিত্তিক। যতক্ষণ শিক্ষকের সান্নিধ্য তার কাজে লাগে ততক্ষণ সে শিক্ষকের অনুগত ছাত্র। তোমার যখন কাউকে কিছু দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে, তখন তোমার চারপাশে বহু মানুষের ভিড় থাকবে। দুধ নাই তো মাছি নাই।
৯৮। কারও অভদ্র আচরণে দুঃখ পাবেন না। ভদ্রতা অনেকটা জন্মগত। ভদ্রলোকের ছেলেরাই সাধারণ ভদ্রলোক হয়। এটি একটি জেনেটিক উত্তরাধিকার। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ছেলে-মেয়েরা খুবই ভদ্র। পরিবেশগত কারণে ভদ্রলোকদের সংখ্যা কমছে। কারণ নিজেকে সুখী অনুভব না করলে লোকে ভদ্র আচরণ করতে পারে না। আজকাল নানা কারণে লোকের মেজাজ খিঁচড়ে থাকে। ভেতরে ভেতরে থাকে অভাববোধ, অপারাগতাবোধ, হীনম্মন্যতা। তাই মন বিক্ষিপ্ত হলে চিত্তও হতাশগ্রস্ত ও বিষাদগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই অন্যের কাছ থেকে ভদ্র ব্যবহার চাইলে নিজে বেশি ভদ্র ব্যবহার করুন। অন্যের অভদ্রতার দ্বারা কিছুতেই প্রভাবিত হবেন না। আপনি নিজে ভদ্র না হলে অন্যের কাছ থেকে ভদ্র ব্যবহার দাবি করতে পারেন না। ভদ্র হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে রাগ ক্ষোভ দমন করুন। হেসে কথা বলুন। একশো জনের মধ্যে একজন ভদ্রলোক দেখতে পেলে তাকে সম্মান করুন।
৯৯। স্থায়ী বন্ধু রাখতে গেলে টাকা ধার দেবেন না, টাকা ধার দিলে বন্ধু হারাবেন ও একজন শত্রু তৈরি করবেন। কারণ, বাংলাদেশের একটা বিপুল সংখ্যক মানুষ মনে করে কারো কাছ থেকে টাকা ধার নিলে সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার দরকার নেই। টাকা ধার দেওয়ার পরে আপনি বুঝতে পারবেন যে, টাকা ধার দিয়ে আপনি নিজেই বরং মহাবিপদে পড়ে গেছেন। আজ দেব কাল দেব করে টাকা দিচ্ছে না। এক পর্যায়ে এমন পরিস্থিতিও দাঁড়ায় যে, সে আপনাকে দেখলে অন্য রাস্তা দিয়ে চলে যাবে। পুরো পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর এক মাত্র দেশ যেখানে টাকা পয়সা অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে ধার দেনার কোন লিখিত ডকুমেন্ট রাখা হয় না। আপনার কষ্টার্জিত টাকা ধার দিয়ে আপনি অযথা মানুষকে শত্রুতে পরিণত করতে যাবেন কেন? হ্যা, যদি কাউকে টাকা ধার দিতে হয়, তাহলে তা একেবারেই দিন উপহার হিসেবে; ফেরতের আশা করবেন না। আবার কারো কাছ থেকে ধার নিবেনও না। পেটে-ভাতে কষ্ট করে চলবেন। প্রয়োজনে না খেয়ে থাকবেন। যদি অল্প দিনের জন্যে টাকা ধার নিতে হয়, ক্রেডিট কার্ড নিতে পারেন। এতে অন্যকেও বিব্রত আর বিরক্ত করা হলো না, আবার নিজের মান-সম্মানও বাঁচলো।
১০০। কারো জন্য জীবন থেমে যায় না। আমরা কেউ চাই না সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে। জীবন একটাই। এই জীবন অন্য কারোর জন্য নয়, প্রত্যেকের নিজের জন্যই বেঁচে থাকতে হয়। অন্য কারও উপর অভিমান করে মহামূল্যবান জীবনটা নষ্ট করার মধ্যে কোনো মহাত্ম নেই। সামান্য একজন মানুষের ভুল ভালোবাসা পাওয়ার জন্যে মিছামিছি আবেগের বলি হয় সুন্দর একটা জীবনের। আসলে ভালোবাসা-বিচ্ছেদ, দুঃখ -হাসি থাকবে, কান্না -কষ্ট থাকবে। আর সব মিলিয়েই জীবন।
এটাই চরমভাাবে সত্যি যে, এই বিশাল পৃথিবীতে কারও জন্যে সব শেষ হয়ে যায় না। নিজের মতো করে বাঁচতে চাইলে বাঁচার অনেক পথ আছে। সুন্দরভাবে বাঁচার আনন্দও আছে। একটা হাত সরে গেলেও হাজারটা হাত থাকে। পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে সেই প্রসারিত হাত অপেক্ষার প্রহর গুনে বসে থাকে আপনাকে পূর্ণ করবে বলে। যে যেতে চায় তাকে যেতে দিন, যে আসতে চায় তাকে আসতে দিন,। যে কটা দিন বাঁচবেন মাথা উঁচু করে বাঁচতে হবে। হেরে যাওয়া নয়, আনন্দ আর জয় ছিনিয়ে আনাই হোক জীবনে বেঁচে থাকার লক্ষ্য।
অনার্স ১ম বর্ষের জন্য ১১০ টি , অনার্স ২য় বর্ষের জন্য ১২০ টি , অনার্স ৩য় বর্ষের জন্য ১৩০ টি, এবং মাস্টার্স -এর জন্য ১৫০টি অর্থাৎ সকল প্রশ্ন উত্তর বাধ্যতামূলক।