মহাবিশ্বের বয়স ১৩.৮২ বিলিয়ন বছর।
পৃথিবীর বয়স ৪.৫৪ বিলিয়ন বছর।
মানব ইতিহাসের বয়স দুই লাখ বছর।
ঈশ্বর ধারণার বয়স ১০ হাজার বছর।
দেবী ধারণার বয়স ৮ হাজার বছর।
হিন্দু ধর্মের বয়স ৫ হাজার বছর।
জরাথুস্ট্রবাদের বয়স ৪ হাজার বছর।
জুডাইজমের বয়স ৪ হাজার বছর।
জৈনবাদের বয়স ২,৬০০ বছর।
বুদ্ধীজমের বয়স ২,৬০০ বছর।
কনফুসিয়ানিজমের বয়স ২,৫০০ বছর।
তাওবাদের বয়স ২,৪০০ বছর।
খৃষ্টবাদের বয়স ২ হাজার বছর।
ইসলামের বয়স সাড়ে ১৪০০ বছর প্রায়।
শিখ ধর্মের বয়স ৪০০ বছর।
1 = 1193 মোহাম্মদ ঘোরি
2 = 1206 কুতুবুদ্দিন আইবাক
3 = 1210 বাকি শাহ
4 = 1211 ইলতুৎমিস
5 = 1236 রকিনউদ্দিন ফিরোজ শাহ
6 = 1236 রাজা সুলতান
7 = 1240 মোজাদ্দিন বাহরাম শাহ
8 = 1242 আল-দীন মাসউদ শাহ
9 = 1246 নাসিরুদ্দিন মাহমুদ
10 = 1266 গিয়াসউদ্দিন বালবিন
11 = 1286 ..........
12 = 1287 মসজিদের কাবাদন
13 = 1290 শামসুদ্দিন কামার্স
মহান সাম্রাজ্যের সমাপ্তি
সাম্রাজ্যের সাম্রাজ্য
1 = 1290 জালালউদ্দিন ফিরোজ খিলজি
2 = 1292 ineশিক ধর্ম
4 = 1316 শাহাবুদ্দিন ওমর শাহ
5 = 1316 কুতুবুদ্দীন মোবারক শাহ
6 = 1320 নাসিরুদ্দিন খুসরো শাহ
খলজি সাম্রাজ্যের সমাপ্তি
তুঘলক সাম্রাজ্য
1 = 1320 গিয়াসউদ্দিন তুঘলক (প্রথম)
2 = 1325 মোহাম্মদ ইবনে তুঘলক (দ্বিতীয়)
3 = 1351 ফিরোজ শাহ তুঘলক
4 = 1388 গিয়াসউদ্দিন তুঘলক (দ্বিতীয়)
5 = 1389 আবু বকর শাহ
6 = 1389 মোহাম্মদ তুঘলক (সোম)
7 = 1394 .......... (আমি)
8 = 1394 নাসিরুদ্দিন শাহ (দ্বিতীয়)
9 = 1395 নুসরত শাহ
10 = 1399 নাসিরুদ্দিন মোহাম্মদ শাহ (দ্বিতীয়)
11 = 1413 সরকার
তুঘলক সাম্রাজ্যের সমাপ্তি
(সরকার -94 বছর প্রায় দূরে।)
* সা Saeedদ রাজবংশ *
1 = 1414 খেজুর খান
2 = 1421 মুইজউদ্দিন মোবারক শাহ (দ্বিতীয়)
3 = 1434 মুহাম্মদ শাহ (চতুর্থ)
4 = 1445 আল্লাহ আলম শাহ
সা'দ রাজ্যের সমাপ্তি
লোধি সাম্রাজ্য
1 = 1451 বাহলোল লোধি
2 = 1489 লোধি (দ্বিতীয়)
3 = 1517 আব্রাহাম লোধি
লোধি সাম্রাজ্যের সমাপ্তি
(সরকারী-75 বছর প্রায়)
মুঘল সাম্রাজ্য
1 = 1526 জহিরউদ্দিন বাবর
2 = 1530 হুমায়ুন
মুঘল সাম্রাজ্যের সমাপ্তি
সুরিয়ান সাম্রাজ্য
1 = 1539 শের শাহ সুরি
2 = 1545 ইসলাম শাহ সুরি
3 = 1552 মাহমুদ শাহ সুরি
4 = 1553 আব্রাহাম সুরি
5 = 1554 পারভেজ শাহ সুরি
6 = 1554 মোবারক খান সুরি
সুররিয়ান সাম্রাজ্যের সমাপ্তি
মোগল সাম্রাজ্য
1 = 1555 হুমায়ুন (আবার)
2 = 1556 জালালউদ্দিন আকবর
3 = 1605 জাহাঙ্গীর স্লাম
4 = 1628 শাহ জাহান
5 = 1659 আওরঙ্গজেব
6 = 1707 শাহ আলম (প্রথম)
7 = 1712 বাহাদুর শাহ
8 = 1713 ফার্কুয়ারশিয়ার
9 = 1719 রিফাদ রজত
10 = 1719 এই সময়ে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে
11 = 1719 মাহমুদ শাহ
12 = 1748 আহমেদ শাহ
13 = 1754 .'ফরাসি ও ভারতীয় যুদ্ধ' ( ১৭৫৪–১৭৬৩) শুরু
14 = 1759 শাহ আলম
15 = 1806 আকবর শাহ
16 = 1837 সাহসী কিং জাফর
মুঘল সাম্রাজ্যের সমাপ্তি
* ব্রিটিশ রাজ *
1 = 1858 লর্ড কিং
2 = 1862 লর্ড জেমস ব্রুস এলগিন
3 = 1864 লর্ড জে লরেন্স
4 = 1869 লর্ড রিচার্ড মায়ো
5 = 1872 লর্ড নর্থবাক
6 = 1876 লর্ড এডওয়ার্ড ল্যাটিন
7 = 1880 লর্ড জর্জ রিপন
8 = 1884 লর্ড ডাফারিন
9 = 1888 লর্ড হ্যানি লেসডন
10 = 1894 লর্ড ভিক্টর ব্রুস এলগিন
11 = 1899 লর্ড জর্জ করজিয়ান
12 = 1905 লর্ড গিলবার্ট মিন্টো
13 = 1910 লর্ড চার্লস হার্ড্জ
14 = 1916 লর্ড ফ্রেডেরিক থেকে এক্সিকিউয়ারে
15 = 1921 লর্ড রাক্স আজাক রিদিগ
16 = 1926 লর্ড এডওয়ার্ড ইরউইন
17 = 1931 লর্ড ফারম্যান ওয়েলডন
18 = 1936 লর্ড আলেজান্দ্রা লিনলিথগো
19 = 1943 লর্ড অর্কিবল্ড হুইল
20 = 1947 লর্ড মাউন্ট ব্যাটন
ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সমাপ্তি
কাকে বলে সিঙ্গেল মাদার?
যেই মহিলার সন্তান আছে অথচ তার স্বামী মৃত বা ডিভোর্সি, সন্তানকে নিয়েই করে চলেছেন জীবন-জীবিকার লড়াই। আবার অনেক মহিলা আছেন, যারা স্বামী, বিয়ে বা সংসার চায় না, তবে একটা বাচ্চা চায়৷ এই সব আধুনিক স্বাবলম্বী মেয়েরা স্পাম ব্যংক থেকে শুক্রানু সংগ্রহ করে নিচ্ছেন মাতৃত্বের আস্বাদ। এরকম একলা মাদের বলা হয় সিঙ্গেল মাদার।
তিব্বত সীমান্তের কাছে, চিনের ইয়ুনান ও সিচুয়ান প্রদেশে এমন এক প্রাচীন জাতিগোষ্ঠী বসবাস করে যারা শত শত বছর ধরে এই ‘সিঙ্গল মাদার’ বা একক মাতৃত্বের অধিকারকেই প্রাধান্য দিয়ে আসছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৭০০ কিলোমিটার উচ্চতায় লুগুর হ্রদের পাড়ে বসবাস করা এই মোসুও (Musuo) উপজাতিরা সম্ভবত বিশ্বের মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম সেরা দৃষ্টান্ত।বংশানুক্রমিকভাবে এখানে প্রত্যেকটি পরিবারের প্রধান একজন মহিলা। তিনি পরিবারের সম্পত্তির অধিকারী হয়ে থাকেন এবং সকল দায়-দায়িত্ব, সব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। এই সম্প্রদায়ের শিশুরা মায়ের কাছেই বড় হয় এবং মায়ের পরিচয়েই বেড়ে ওঠে। মোসুও মেয়েরা যখন তেরো বছর বয়স পার করে ফেলে, তখন তারা নিজেরাই নিজেদের পছন্দের পুরুষ সঙ্গী নির্বাচন করার যোগ্যতা অর্জন করে এবং আলাদা কক্ষে রাত্রি যাপন করে। তখন মেয়েটির ইচ্ছা অনুযায়ী তার পুরুষ সঙ্গীটি মেয়ের কক্ষে একাধিকবার রাত্রিযাপন করেন। মোসুও মহিলা তাঁর সম্পূর্ণ জীবনকালে এ ভাবে একাধিক পুরুষ সঙ্গী নির্বাচন করে থাকেন বা করতে পারেন। কোনও মোসুও মহিলা অন্তঃসত্তা হলে, তার সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের কোনও প্রয়োজন হয় না। শিশুটি বেড়ে ওঠে তার মায়ের কাছেই।
আমাদের সমাজ ব্যবস্থা পুরুষতান্ত্রিক হওয়ায় অবিবাহিতা কোনও মহিলা ‘মা’ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পায় না৷ স্কুল কলেজ হোক বা অন্য যে কোনও বিষয়ে এখনও বাবার নাম সব কাজে দরকার হয়৷ তাই কোন নারি কৃত্রিম উপায়ে মা হলে সন্তানের বাবার পরিচয় দিতে পারেন না৷ যেমন- কিছুদিন আগের কথা। ভারতে পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে একটি তরুণী তাঁর বাবার নাম দিতে অস্বীকার করেন। যে বাবা কোনও দিন সঙ্গে থাকেননি, তাঁর নাম পাসপোর্টে থাকবে কেন? যে মা বড় করেছেন, তাঁর নামই কেন যথেষ্ট নয়? এইসব প্রশন সে করেছে। পাসপোর্ট অফিস রাজি না হওয়ায় তরুণী ও তাঁর মা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। অনেক আরগমেন্টের পর রায় বেরোয়, কেবল মায়ের নামে সন্তান পাসপোর্ট পেতে পারেন। এর ফলে ভারতের সরকারি নিয়মে এখন আধার কার্ড, ভোটার কার্ড ইত্যাদিতে বাবার নাম না দিলেও সমস্যা হয় না।
কিন্তু আমাদের সমাজ পশ্চাৎপদ হওয়ায় এখনও মেয়েরা স্বামীর পরিচয়ে বাঁচে। সমাজে ‘ডিভোর্স’ কথাটা বলতে অনেকেই দ্বিধা বোধ করেন। স্বামী কোথায় থাকে, জিজ্ঞাসা করলে তাই অনেক মেয়ে ‘বাইরে থাকেন’ বলে কাটিয়ে যান। পরিবার থেকে ডিভোর্সি মেয়েটিকে শেখানো হয়, এখুনি আত্মীয়-স্বজনকে ডিভোর্সের কথা না জানাতে। কিন্তু সে কথা এড়িয়ে ভুল ধারণা দেওয়া একটা ডিভোর্সি মেয়ের কাছে যে কতটা ঘৃণার, তা বোধহয় একমাত্র ওই মেয়েটিই বোঝে। যে সম্পর্ক চুকে গেছে, তার পরিচয়ে বাঁচতে হবে কেন? বাপের বাড়িতে কোনও আলোচনা হলে মেয়েটি একটু জোর গলায় কথা বললে সবাই চুপ করিয়ে দেয়। পাছে পাশের বাড়ির লোক শুনে ফেলে। জেনে যায়, মেয়ে এখনও বাপের বাড়িতেই থাকে। কী আশ্চর্য ভাবুন, নিজের বাড়িতে জোরে কথা বলাটাও সমস্যা। শুধু মেয়ের ডিভোর্সের কথা লুকিয়ে রাখার জন্য এত কিছু। বাড়িতে খোলামেলা কথা বলার অধিকারও হারায় মেয়েটি।
একলা মায়ের বাড়িতে কোনও পুরুষ বন্ধু বা সহকর্মী এলেও বিপদ। প্রতিবেশীরা অনেকে বাচ্ছাকে ডেকে আলাদা করে জিজ্ঞাসা করে, ‘‘তোর নতুন বাবা এসেছিল রে?’ অথচ ওই দুধের শিশুর তো জানেই না ‘বাবা’ কাকে বলে।
আমাদের পরিবারে ডিভোর্স কথাটা বলার মধ্যে কোথাও একটা লজ্জাও থাকে। কোনও আত্মীয়ের বাড়িতে ডিভোর্সি মেয়েকে না নিয়ে যাওয়াই শ্রেয় মনে করেন অনেকে। একলা মা একটু সেজেগুজে রাস্তায় বের হলে বা অফিস গেলে রাস্তায় বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। আদৌ অফিস যাচ্ছে কিনা, সে-ও শুনতে হয়। তবে বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, আমাদের সমাজে বিধবা বা ডিভোর্সি মায়ের একা থাকাটা সম্ভব হলেও, বিপত্নীক বা ডিভোর্সি বাবার একা থাকাটা মোটেও কাম্য নয়। কোন কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে বা বউ মরে গেলে, আত্মীয়স্বজন, বন্ধু বান্ধব সবাই উঠে পড়ে বউ খুঁজতে লেগে যায়।
সবার একটাই চিন্তা, একা কী করে থাকবে লোকটা? বিয়ে তো দিতেই হবে। হোক সে ঘাটের মরা কিংবা মাঝবয়সী। যুক্তি হিসাবে একে একে যুক্ত হয়, লোকটার ছেলেপুলে কে পালবে? লোকটা খাবে কী? লোকটার যত্নআত্তি, সেবা কে করবে? (লোকটার শারীরিক চাহিদা কে মেটাবে? – এই কথাটা মুখ ফুটে না বললেও, সবারই মনেই থাকে কথাটা।) লোকটার বয়স যদি খুব বেশি হয়, তাতেও কুছ পরোয়া নেহি। গ্রাম থেকে গরীব কোন আত্মীয় বা অনাত্মীয়কে এনে বিয়ে দিয়ে দাও। পুরুষমানুষ একা থাকতে পারে নাকি?
এর ঠিক উল্টো প্রতিক্রিয়া হয় নারীর ক্ষেত্রে। কোন কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে বা স্বামী মরে গেলে, আত্মীয় অনাত্মীয়, বন্ধু বান্ধব সবাই আশা করে, বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে বাকি জীবনটা সে একা কাটিয়ে দেবে। হোক সে একদম তরুণী কিংবা বয়স্ক। একা একা সব কর। আর শারীরিক চাহিদা? সেটা আবার কী জিনিস? এমনিতে, একলা পেলে কাছের লোকজনও সুযোগ নিতে ছাড়বে না। কিন্তু বিয়ে? ছিঃ ছিঃ।
এসবের ভিড়ে যেসব বাবারা একা সন্তান পালনের সিদ্ধান্ত নেন, বিয়ে না করে সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দেন জীবন, তারা বাহাবা পাওয়ার যোগ্য। সিঙ্গেল বাবার মেয়েবন্ধু থাকা স্বাভাবিক। সিঙ্গেল মায়ের ছেলেবন্ধু থাকাটা দুশ্চরিত্রের লক্ষ্মণ। একা বাবা কিংবা মা, দুজনই সমান সহমর্মিতা পাওয়ার যোগ্য। আশার কথা, আজকাল নিয়ম ভাঙ্গতে পারছে অনেকেই।
বিদেশে অনেক আগে থেকেই ‘সিঙ্গেল মাদার’দের নিয়ে ‘সিঙ্গল মম’স ক্লাবও আছে। সারা বিশ্বে গত ২০ বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে ‘সিঙ্গেল মাদার। ধীরে ধীরে আমাদের দেশেও এই কনসেপ্টের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে। আধুনিক ভাবনায় বিশ্বাসী অনেক মহিলাই বিয়েকে একটা অতিরিক্ত বোঝা
ভাবেন কিন্তু মাতৃত্বের স্বাদ পেতে চান কমবেশি সকলেই। তাই সারোগেসি হোক কিংবা দত্তক সন্তান— অথবা স্পার্ম ব্যাঙ্ক থেকে স্পার্ম কিনে তা নিজের গর্ভে স্থাপন করার মাধ্যমে মা হওয়ার উপায় বেছে নিচ্ছেন স্বাবলম্বী মেয়েরা, প্রতিবেশীদের উঁকুঝুকি, গসিপ, সমালোচনার তোয়াক্কা না
করেই। কিন্তু এইসব সিঙ্গেল মাদারদের আইনগত সমস্যা ছাড়াও কিছু সামাজিক সমস্যা আছে। যেমন, সন্তান কেবলমাত্র মায়ের সঙ্গেই বড় হয়ে ওঠার ফলে পরবর্তীকালে দুজনের মধ্যে কোনো তৃতীয় ব্যক্তি এলে অর্থাৎ মা কারো সাথে ঘনিষ্ঠ হলে অনেক সময়ই সন্তান অভিমানী হয়ে উঠতে পারে। সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারে। অথবা সন্তান বড় হয়ে বিয়ে করলে মা সহ্য করতে পারেন না সে মানুষটিকে। ফলে সম্পর্কটা শ্বাসরোধকারী হয়ে ওঠে। তাই যেসব মহিলাই কর্মরতা আছেন কিন্তু বিয়ে ব্যাপারটাতে যথেষ্ট আপত্তি আছে, আবার পাশাপাশি ‘মা’ ডাক শোনার ইচ্ছেও প্রবল? সেই মহিলারা দত্তক সন্তান নিলেন সকল সমস্যার সমাধান হয়, অনেক অনাথ শিশু আছে যারা বঞ্চিত, অবহেলিত, শোষিত। যারা কখনো মা, বাবা,পরিবার কি জানে না, পায়নি কখনো মা বা বাবার স্নেহ স্পর্শ ভালোবাসা,তাদের মধ্যে একজনকে সস্নেহে মানুষের মতো মানুষ করাই যায়।
PhD ডিগ্রী
বিজ্ঞান বাণিজ্য বা কলা বিভাগ, যা নিয়েই পড়াশোনা করুন না কেন, সর্বোচ্চ ডিগ্রি হল PhD. এটাই আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে D.
Sc. / D Lit. জাতীয় ডিগ্রী দেয়া হলেও ব্যাপক অর্থে তার প্রচলন তেমন নেই। তো এই PhD ডিগ্রীরt;Doctor of Philosophy". মানে আপনি
পড়াশোনা যে বিষয় নিয়েই করুন না কেন সর্বোচ্চ ডিগ্রী পাবেন দর্শনে। আমার প্রশ্ন এর কারণ কি? এটা কি ধরেই নেয়া হয় যে দর্শন হলো সমস্ত
বিদ্যার মূল বিদ্যা এবং বাকি সমস্ত বিষয় দর্শন থেকে উদ্ভূত হয়েছে?
“প্রেম” এবং “ব্রেকাপ”
প্রেম কি কেন?
যিনি যত আবেগি তথ্য বা প্রলাপ বকুক না কেন, বাস্তবিক অর্থে প্রেম হচ্ছে যৌন আকর্ষণের ভদ্র পরিভাষা। মানুষের মস্তিষ্কে সেরাটোনিন নামক একটি উপাদানের প্রভাবে নারী ও পুরুষের একে অপরের প্রতি স্বভাবজাত আকর্ষণ তৈরি হয়। তা ধীরে ধীরে কামনায় রূপান্তরিত হয় সেক্স হরমোন টেস্টোসটেরন ও ইসট্রোজেনের মাধ্যমে। কোনও বাঁধাই মানে না এই সম্পর্ক। এ এক এমন অনির্বচনীয় অনুভূতি, যার অভিজ্ঞতা যে কোনও বয়সেই জীবনে এসে পড়তে পারে আচমকা। প্রেমের উন্মাদনায় প্রেমিক-প্রেমিকা অসাধ্যকেও সাধ্য করে। শুধু প্রেমের জন্যে ঘটেছে কত রক্তপাত-যুদ্ধ। ধ্বংস হয়েছে নগরী।
প্রেম কি জীবনে একবার আসে?
বিভিন্ন সময়ে মন মানসিকতা, পরিস্থিতির কারণে প্রেম বহুবার আসতেই পারে। একবার প্রেম ভেঙে গেলে অন্য কারো প্রতি আবার ভালোলাগা কাজ করতেই পারে।বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, যারা আবেগ প্রবণ কিংবা কল্পনার জগতে থাকতে পছন্দ করেন তারা ঘন ঘন প্রেমে পড়েন। এরাই পরকীয়াও করেন বেশি। বর্তমান আধুনিক সময়ে সম্পর্কে নতুনত্ব খুঁজতে গিয়ে তরুণ সমাজ বিভিন্ন প্রেম বা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তেই পারে। তারা একই ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে থাকতে পছন্দ করেন না।
কাপ লাভ বা বয়ঃসন্ধিকালে প্রেম (১০-১২বছর):
এই বয়সের প্রেমকে বেশিরভাগ মানুষই অল্প বয়সের ভুল, মোহ, খামখেয়ালি, পাকামো ইত্যাদি বলে মনে করে থাকেন। এই প্রেম অন্যের সাথে পারস্পারিক যোগাযোগ, বোঝাপড়া, বন্ধুত্ব জীবনের জন্য একটি চালিকাশক্তি।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রথম প্রেম হয়ে থাকে এই বয়ঃসন্ধিকালে। মাত্র ৩বার ডেট করেই পুরুষরা বুঝে ফেলে যে তারা প্রেমে পড়েছে। কিন্তু নারীরা এক্ষেত্রে প্রায় ১৪বার বা তারও বেশি ডেট করার পর বুঝতে পারে প্রেমে পড়ার বিষয়টি। সাধারণত ৩ থেকে ৫ মাসের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ব্রেকআপ হয়। কিশোর-কিশোরীদের জন্য প্রেমের এই সম্পর্কগুলি আরও নিবিড় অনুভুতির হয় কারণ তারা তাদের সম্পর্কে কে কী ভাবছে তা নিয়ে বেশিরভাগ সময় চিন্তিত থাকে। সবকিছুতে তারা খুব বেশি কাতর হয়ে পড়ে, কারন তাদের অভিজ্ঞতা কম, চেনা জগৎ তুলনামূলক ছোট হয়। কেউ যদি “না” বলেন কিংবা বাঁধা দেন, দেখবেন তারা হয়ত খাওয়া বন্ধ করে দেয়, রুমের দরজা বন্ধ করে রাখে। অকারণে হাসি-কান্না, ক্ষণেক্ষণে পছন্দ বদল, প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে অন্য কেউ কথা বললে, অন্য কারও বেশি ভাব হলে; সেটাতেও তাদের ভেতরে একরকম হীনমন্যতা তৈরি হয়।কিশোর-কিশোরীরা প্রত্যাখ্যান সহজে মেনে নিতে পারে না। তারা নিজের কোনো কিছুই শেয়ার করতে পছন্দ করে না এবং তাদের নিজের ভাল লাগার গুরুত্ব খোঁজে সব জায়গায়।
যেখানে বেশি প্রশংসা পায়, গুরুত্ব পায় শুধু সেখানেই তারা একটা “নিরাপদ আশ্রয়স্থল” বানাতে চেষ্টা করে। নিজেকে জাহির করতে সেলফি, টি্কটকসহ উদ্ভট কাজ কারবার করতেও ছাড়ে না। “আমি অন্য রকম, সবার থেকে আলাদা” এরকম তীব্র আবেগ তৈরি হয়। এই অতি আবেগ থেকে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এসময় বন্ধু, সহপাঠী, খেলার সাথী, প্রতিবেশি, শিক্ষক-শিক্ষিকা, তারকা, ভাই/বোনের বন্ধু, এমনকি বাবা-মার বন্ধুর প্রেমে পড়াটাও অস্বাভাবিক নয়। আর এখনকার সময় বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোর কিশোরীদের কাছে জনপ্রিয় শব্দ হল ;ক্রাশ মজার ছলে সব বন্ধু-বান্ধবী মিলে একজনের ওপর ক্রাশ খেতেও দেখা যায় এবং এ নিয়ে পরবর্তীতে নিজেদের মাঝে বন্ধুত্বে দূরত্ব তৈরি হয়। তার প্রথম প্রেম কিন্তু শুরু হতে পারে ক্রাশ খাওয়া দিয়েই। অনেক সময় অবশ্য অনেকে তার ও তার মনে মনে ভালোবাসার মানুষটির মাঝে সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে বা সেগুলোকে বিবেচনা করে সে মনের কথা জানাতে অপারগ হয়। সে ক্ষেত্রে সে নিজেকে এই চিন্তা থেকে বের করতে পারে না, আবার যাকে পছন্দ করে তাকে তা বলতেও পারছে না। অথচ সারাক্ষণই একই চিন্তা করতে থাকে যা বারংবার ভাবনায় ফিরে আসে বা তার একটি অবসেশনে পরিণত হয়।”
“এই যে প্রত্যাখ্যানকে গ্রহণ করা এবং তার মধ্য থেকে বের হয়ে এসে অন্য কোনো কাজে বা সম্পর্কে নিজেকে জড়ানোর শিক্ষা যাদের অসম্পূর্ণ থাকে তাদের মধ্যেই সমস্যা দেখা দেয়। কারও কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হলে জীবন সেখানেই শেষ হয়ে গেল, সেই ভুলের ভেতরেও বসবাস করে। ছেলেরা এ ধরনের অবস্থায় কেউ কেউ খুব প্রতিহিংসাপ্রবণ বা প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে ওঠে এবং যে মেয়েটি তার প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য লেগে যায় বা নিজেকে ক্ষতি করতে থাকে। কিন্তু পরিবারে যদি এসব নিয়ে বাবা বা মা কারও সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করার পরিবেশ থাকে, তাহলে একটি মানুষ তার শৈশব থেকে সঙ্গী কেন হয়, কীভাবে সঠিক সঙ্গী নির্বাচন করা যাবে, কারও প্রতি ভালো লাগাকে কীভাবে প্রকাশ করা যাবে, অন্যের অনীহাকে কীভাবে সহজভাবে ও শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করা যাবে বা অন্যের প্রস্তাবকে কীভাবে আঘাত না করে প্রত্যাখ্যান করতে হবে, এ সকল সামাজিক আচরণ ছোটবেলা থেকেই শেখা যায়। এ শিক্ষাগুলোর অভাবের কারণেই অনেক সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রত্যাখ্যানকে গ্রহণ করে নেওয়ার মানসিক শক্তি তৈরি না হওয়ার ফলে প্রত্যাখাত হওয়ার পর অনেকে ভেঙে পড়ে, মানসিক অবসাদগ্রস্থ হয়, মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে, কাজে মনোযোগ দেয় না, লেখাপড়া ছেড়ে দেয়, অনেকে আত্মহত্যার পথও বেছে নেয়। এই সামাজিক আচরণ ও শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিবারের অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে।
প্রেমে পড়লে মানুষের শরীরে কি কি পরিবর্তন ঘটে-
ঘুম কম হয়
প্রেমে পড়লে অন্তত পক্ষে ১ ঘণ্টা রাতের ঘুম কমে যায়। রাতে ঘুমাতে গেলেই মনে মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রিয় মানুষটির কথা সবচাইতে বেশি মনে পড়তে থাকে এবং শারীরিক ও মানসিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত হতে পারে না শরীর। যার কারণে ঘুমাতে দেরি হয়ে যায়। ঘুম ভাংলেও একই অবস্থা হতে পারে।
‘ভুলোমনা’ হয়ে যায়
মানুষ প্রেমে পড়লে সে সব কিছু ভুলে যাওয়া শুরু করে৷ এজন্য দায়ী অবশ্য অক্সিটসিন হরমোন। প্রেমে পড়লে মস্তিষ্কে প্রচুর পরিমাণে অক্সিটসিন হরমোন উৎপন্ন হয়, যা স্মৃতিশক্তি কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে। আর তাই প্রেমে পড়লে মানুষ কিছুটা ভুলোমনা ও অন্যমনষ্ক হয়ে যায়।
খাবারের ‘স্বাদ বেশি লাগে
যারা নতুন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছেন তাদের কাছে সব খাবারের স্বাদই অন্যদের তুলনায় একটু বেশিই লাগে।
মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিবর্তিত হয়ে যায়
মস্তিষ্ক সব সময়ে যেভাবে চিন্তা করেছে, প্রেমে পড়লে সেভাবে চিন্তা করতে পারবে না। প্রেমে পড়ার পরে অনেক বিষয়ই আবেগ দিয়ে নিয়ন্ত্রিত হবে তখন।
শরীরের নানান ব্যথা কমে যায়
প্রেমে পড়লে মানুষের শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যাথা সেরে যায়। প্রেম মস্তিষ্কের নিউরাল রিসেপটরের কার্যকারিতা বাড়িয়ে ব্যাথার অনুভূতি কমিয়ে দেয়।
সম্পর্কের জটিলতা কাটতে:
বোঝাপড়ার অভাব ঘটলেই হাঁটতে বেরোন সঙ্গীকে নিয়ে। সে সকালেই হোক কিংবা রোদ গড়ানো বিকেল। মনোবিদদের মতে, চিড় ধরা স¤পর্ককে জোড় লাগোনোর জন্য মাথায় রাখতে হবে কয়েকটি ফর্মুলা। তার মধ্যে প্রধান হল একসঙ্গে হাঁটতে যাওয়া। অনেকটা পথ এক সঙ্গে চলতে চলতেই বেরিয়ে আসবে মনের কথা। তবে সঙ্গীর সঙ্গে আপনি কত ঘণ্টা পার করলেন সেটি কিন্তু মোটেও দেখার বিষয় নয়। যতক্ষণই কাটিয়েছেন, সে সময়টুকু ভালো ছিলো কি-না সেটিই দেখবার বিষয়। কোন জুটি যখন অযথা খুব বেশি সময় একত্রে কাটান তখন সে স¤পর্কের দম বন্ধ অবস্থা তৈরি হয় এবং অসুস্থ হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই গভীর স¤পর্কের জন্য বেশি সময় নয়, কোয়ালিটি টাইম অতিবাহিত করাই খুব দরকার।
সম্পর্ককে সুন্দর রাখতে :
সঙ্গীর বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুদের ব্যাপারে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাবেন না। আপনার সঙ্গীকে অন্য কারো ভালো লাগতেই পারে কিন্তু তিনি যদ দুর্বল হয়ে না থাকেন, তবে অন্য কারো প্রত্যাশার শাস্তি যাতে আপনার কাছের মানুষটি আপনার কাছ থেকে না পান। বন্ধুদেরকে লিঙ্গের বিচারে না দেখে বন্ধু হিসেবেই দেখুন। প্রত্যেকের জীবনেই একটি অতীত থাকে। হয়তো আপনি আপনার সঙ্গীর প্রথম প্রেম নন, কিন্তু তাই বলে তাকে অযথা খোঁচাবেন না। এতে তার নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হবে। প্রত্যেকেই চান, তার সঙ্গী সবার আগে তাকেই প্রাধান্য দিক। কিন্তু তাই বলে আপনার সঙ্গী যদি মাঝে মাঝে অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তবে সেটি নিয়ে ঝগড়াঝাঁটি না করে বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার সঙ্গীর ব্যক্তিগত মোবাইল, ডায়েরী, মেইল, এসএমএস তার অনুমতি ছাড়া ঘাঁটবেন না। প্রত্যেকের একটি নিজস্ব জগৎ থাকে যা একান্তই তার। তার গোপন জিনিসের গোপনীয়তা বজায় রাখতে তাকে আপনিও সাহায্য করুন।
ব্রেকআপ ঠেকাতে :
আপনার সঙ্গী যেমন তাকে আপনি তেমনিভাবেই পছন্দ করেছিলেন। তাই তাকে আমূল বদলাতে চেষ্টা করবেন না। কারো সাথে তুলনা দিয়ে বদলাতে বলবেন না। এতে আপনার সঙ্গীর মনে হীনম্মন্যতা তৈরি হবে। আবার হয়তো একদিন তিনি বদলে যাবেন কিন্তু সেদিন হয়তো আপনার প্রয়োজনও তার কাছে ফুরিয়ে যাবে। অনেক সময় একটি স¤পর্ক ভেঙ্গে যাবার জন্যে একজন বাইরের মানুষই যথেষ্ট। তাই চেষ্টা করুন, আপনাদের স¤পর্কের ব্যক্তিগত ব্যাপারে যতটা সম্ভব গোপনীয়তা বজায় রাখতে। ঝগড়া একটি স¤পর্কে অনিবার্য। কিন্তু তাই বলে দীর্ঘদিন যাতে সেটি না গড়ায়। অল্প সময়ের ঝগড় সম্পর্ককে মজবুত করে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদের দূরত্ব (কথা বন্ধ রাখা, দেখা না করা) একটি স¤পর্ককে বিচ্ছেদের দিকে নিয়ে যায়। আপনার সঙ্গী আপনার সাথে সময় কাটাবেন স্বাভাবিক। কিন্তু তাকে তার জগৎ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবেন না। তাকে তার বন্ধুদের সাথে আলাদা সময় কাটাতে দিন।
প্রেমের সম্পর্ক অতি তাড়াতাড়ি ভেঙে যায় চারটি ভুলের কারণে:
১. বোঝাপড়ায় ঘটতি... যদি প্রেম বা দাম্পত্য জীবনে অসন্তুষ্টি এসে ভর করে, তবে সম্পর্কের বন্ধন আলগা হয়ে যায়। তাই খেয়াল রাখুন যাতে বোঝাপড়া ঠিক থাকে। খোলামেলা আলোচনায় অনেক সমস্যার সহজ সমাধান মেলে।
২.অহেতুক সন্দেহ...পরষ্পরের প্রতি অহেতুক সন্দেহ সম্পর্কের
বন্ধন আলগা করে দেয়। পরষ্পরের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির মানসিকতা একবার পেয়ে বসলে সম্পর্ক গতি হারায়।
৩.প্রলোভনে পা দেওয়া...জীবনে চলার পথে বিভিন্ন প্রলোভন সামনে আসতে পারে। তবে সেই সব ফাঁদে পা দেওয়ার থেকে উভয়কেই সতর্ক থাকতে হবে।
৪.অধিকারবোধ তৈরি হওয়া... সম্পর্কের প্রথমদিকে দু’জন পরস্পরকে সন্মান ও মর্যাদা দিয়ে শুরু করলেও ধীরে ধীরে অধিকারবোধ এসে পড়ে। এই অধিকারবোধ থেকে বিধি-নিষেধ, কৈফিয়ৎ, অভিযোগ, প্রতিবাদ ইত্যাদি জন্ম নেয়। ফলে সম্পর্ক গতিহারায়। ভেঙ্গে যায় প্রেম, লিভ টুগেদার কিংবা বিয়েও, কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে অন্য কারো সাথে থাকার পারমিশান পৃথিবীর কোনো আদালত দেয় না। আদালত শুধু অর্থনৈতিক দিকটার সুরাহা করে দেয়। কেউ যেনো কারো ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় ব্যস এটুকুই। প্রেমে বিচ্ছেদ হবার পর অনেককে বলতে শোনা যায় “বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সম্পর্ক"। এই কথাটাও চরম আপত্তিকর। “প্রলোভন” দেখানো যদি অপরাধ হয়, তাহলে “প্রলোভিত” হওয়াও অপরাধ নয় কি? অযথা অভিযোগ, অপবাদ না দিয়ে ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
প্রেমের মেয়াদ থাকে ৩ বছর ৯ মাস ২৬ দিন:
প্রেম আসলে শরীরে হরমোনের খেলা। প্রেমে পড়ার প্রধম ধাপেই এসট্রোজেন ও টেস্টটোটেরন নামক হরমোন মানুষকে তাড়িত করে। প্রেমের দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ প্রেমের নেশায় দুজনই যখন মক্ত থাকে, তখন চলে ডোপামিয়ন হরমোনের খেলা। অবাক ব্যাপার হলো কোকেন বা নিকোটিন নিলে এই হরমোনটি যেমন সাড়া দেয়, তেমনি প্রেমে পরলেও একইভাবে সাড়া দেয়। তাই বলায় যেতে পারে যে প্রেম পড়াটা একধরনের নেশায় আসক্ত হয়ে যাবার মতো। এই হরমোনের প্রভাবে মানুষ যা কিছু ইচ্ছে করতে পারে। এ সময় আমাদের মস্তিস্কের পিটুইটারি গ্লান্ড হতে এমফিটামিন নামক আর একটি হরমোন সিক্রেশন হয়। যা প্রেমে পড়ার আনন্দ অনুভুতি সৃষ্টি করে মনে। এই এমফিটামিনের সর্বোচ্চ মেয়াদ মাত্র ৩ বছর নয় মাস ২৬ দিন। ফলে চার বছরেই শেষ হয় প্রেম। প্রেম করে যারা বিয়ে করেন, তারা প্রেমের চার বছরের মাথায় একটা সন্তান নিলে সন্তানের উপর মায়া-মমতার করনে সংসার আরো কয়েক বছর ঠিকে যায়।
“ব্রেকাপ”
“প্রেম” যেমন শ্বাশত ব্যাপার, “ব্রেকাপ”ও তাই। দিন শেষে রাত আসবেই। একটা দেশলাই কাঠি যখন জ্বালাও, তখন তা ভালো দেয়, তাপ দেয় প্রয়োজনীয় আগুনও দেয় কিন্তু কাঠিটা যখন জ্বলতে জ্বলতে শেষ পর্যায়ে আঙ্গুলের কাছাকাছি আসে, তখন তাকে নেবাতে হয় বা ছুঁড়ে ফেলে দিতে হয়, নয়তো হাত পুড়ে যায়। সম্পর্কও তেমনি অর্থাৎ একটা সময়ে প্রেম ভাঙবেই। এটা মাথায় রেখেই সম্পর্কে জড়াতে হবে। মানুষের মন বদলায়, পরিস্থিতি বদলায়, অনুভুতি,রুচি বদলায়। এ বদলের সঙ্গে একঘেয়েমিতে ক্লান্ত হয়ে মানুষের মন ঘড়ির কাটার মতো ঘুরে ঘুরে নতুন কাউকে খুঁজে বেডায়। প্রেমে পড়লে মানুষ যেমন উত্তাল জোয়ারে ভাসে, ব্রেকাপে তেমন ডিপ্রেশানে ভোগে। নিদ্রাহীন রাত, অশ্রু জলে ভাসা, অদম্য রাগ আর ঘৃণা আসতেই পারে। তবে চিন্তা- চৈতন্যতেও যুক্তি আনেন, সামনের দিকে তাকান, পেছনে না। নতুন করে শুরু করুন। কারো জন্য জীবন শেষ হয়ে যায় না, অর্থাৎ জীবনের জন্য নির্দিষ্ট কেউই একান্ত অপরিহার্য নয়। এক রাজা যাবে তো অন্য রাজা আসবে, সিংহাসন কভু খালি নাহি রবে, এই ধারনা মাথায় রেখে এগিয়ে চলুন।
আপনার সকল ইচ্ছা, আপনার সকল মূল্যবান সময় ব্যয় করেও যখন আপনার ভালোবাসার স¤পর্ক ঠিক করতে পারছেন না, তখন বুঝতে হবে আপনি খুব ভুল জায়গায় আছেন। অনেক সময় এমন হয় যে আমরা আমাদের বাজে স¤পর্কটাকেই টেনে নিয়ে যেতে চাই, কারণ আমরা ভাবি যে হয়তো এর চাইতে ভালো কোন মানুষকে পাওয়া সম্ভব হবে না। কিন্তু আমাদের ভুলটা এখানেই। দুনিয়াটা অনেক বড় এবং চারপাশেই বহু সম্ভাবনা। ভুল ভেবে ছোট কিছুতে নিজেকে বেঁধে ফেলাটা এক ধরনের বোকামি। আবার একটা অহেতুক ভালোবাসার স¤পর্ককে আমরা অনেক সময় সামনে টেনে নিয়ে যাই এটা ভেবে যে, অপরপক্ সম্পর্ক ভাঙনকে কীভাবে নিবেন। কিন্তু সত্যি কথা হলো, একটা অহেতুক স¤পর্ককে টেনে নিয়ে যাওয়াটা একটা বোঝা। সেখানে আপনি নিজে থেকে বের হয়ে আসলে আপনার সঙ্গীও সেটা থেকে বের হয়ে আসবে এবং কিছুদিনের মধ্যে সে ব্যপারটা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
প্রাক্তনের সাথে বন্ধুত্ব কি আসলেই সম্ভব?
যে মানুষটি আসলে ভেঙ্গে ফেলেছেন ভালোবাসার স¤পর্কটি, তার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখাটা ভালো মনে হতে পারে। কারণ আমরা স¤পর্ক ভেঙ্গে ফেললেও অনুভূতি রাতারাতি শেষ হয়ে যায় না। দুই পক্ষ থেকেই বন্ধুত্বের চিন্তাটা ভালো মনে হতে পারে কিন্তু এর উল্টোটা করতে হবে আমাদের। প্রথমত, প্রেমিক থেকে বন্ধুর পদে নেমে আসাটাতে স¤পর্কে জটিলতা তৈরি করে। প্রতিবার প্রাক্তনকে দেখার সাথে সাথে তার মনে নতুন করে আশা ও বাসনা জেগে উঠতে পারে, আবার প্রাক্তন সঙ্গীকে অন্য কারো হাত ধরতে দেখলেও মনে আক্রোশ/হতাশা জন্ম নেবে। শুধু তাই নয়, সেটাও বন্ধুত্বের বদলে বরং স¤পর্ক অত্যাচারেই রূপান্তরিত হয়। মনে রাখবেন, একটি সম্পর্কের ধ্বংসস্তূপের উপরে কখনোই বন্ধুত্ব দাঁড়াতে পারে না।
প্রেম তথ্য
বিয়ের পরে সাধারণত ৪ বছর পরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভাঙনের লক্ষণ দেখা দেয়। এটা এসেছে আদিম সমাজ থেকে। যখন বিয়ের প্রচলন ছিল না। নারী পুরুষ একত্রিত হতো। সন্তানের জন্ম দিত। সন্তানের বয়স তিন হলেই তারা আলাদা হয়ে যেত।
সাধারণত সুন্দর ছেলেদের কম সুন্দর মেয়ে জোটে, সুন্দর মেয়েদের কম সুন্দর ছেলে জোটে। এটা প্রকৃতির কারসাজি, প্রকৃতি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বখাটেপনা করলে প্রেম হয় না। প্রেমের জন্য মেলামেশার সুযোগ থাকতে হবে। সাধারণত যে কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে জুটি হয়, কারণ তারা কথা বলার, ভাব বিনিময়ের সুযোগ পায়। মেয়েরাও ছেলেদের সৌন্দর্য পছন্দ করে। তবে সুন্দর করে কথা বলা, সেন্স অফ হিউমার, আর্টিস্ট,
ক্রিকেটার বা স্টারদের প্রতি মেয়েরা আকৃষ্ট হয়। যে ছেলে একাধিক প্রেম করেছে বা সম্পর্ক স্থাপন করেছে, মেয়েরা তার প্রতিই আকৃষ্ট হয়। এটা হয়তো ওই ছেলেদের মেয়েদের আকৃষ্ট করার ক্ষমতার কারণেই হয়।
এ কি জেনজি প্রেম?
বনিবনা না হলে স্বামীকে ত্যাগ করছে। বনিবনা হলেও মাতৃত্বের ঝামেলা পোহাতে চাইছে না। এই মেয়েরা পাছে লোকে কিছু বলবে বলে মোটেও গুটিয়ে রাখছে না নিজেদের, কুঁকড়ে যাচ্ছে না সংকোচে, নিজেদের ইচ্ছের শরীরে পেট্রোল ঢেলে দাউদাউ আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে না, গলায় ফাঁস পরিয়ে নিজেদের স্বপ্নগুলো ঝুলিয়ে দিচ্ছে না কড়িকাঠে। প্রেম করছে, কিন্তু প্রেম করলেই যে বিয়ে করতে হবে, তার কোনও মানে দেখছে না। প্রেম হওয়া মানেই যে প্রেমকে দীর্ঘস্থায়ী করতে হবে যেন তেন প্রকারে, তারও যুক্তি দেখছে না। প্রেমিকের সঙ্গে গভীর আবেগে শরীর মেলাতেও কোনওরকম দ্বিধা করছে না। যৌনসম্পর্কের কারণে শরীর দূষিত হয়ে উঠবে এমন কোনও গ্লানিতে তারা ভুগছে না। প্রেমিকের আচার-ব্যবহার পছন্দ না হলে কেঁদেকেটে তারা তাদের পূর্বনারীদের মতো নাওয়া-খাওয়া বাদ দিচ্ছে না, আত্মহত্যা করছে না, বরং প্রেমিককে টা-টা বাই-বাই বলে বিদায় দিচ্ছে। আবার নতুন করে কারও সঙ্গে প্রেম হচ্ছে। প্রেমে মানুষ একবারই পড়ে, প্রথম যে প্রেমটি হয়, সে প্রেমটিই আসল প্রেম, এর পরের প্রেম আর প্রেম নয়- এই আজগুবি কথাও ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে আস্তাকুঁড়ে। প্রেমে মানুষ যে-কোনও বয়সে পড়তে পারে, পঞ্চাশ, ষাট, সত্তর, আশিতেও। শতবার প্রেম হতে পারে, এক প্রেমের বোঝাই সারাজীবন বয়ে বেড়াতে যে হবে, সে কোনও কথা নয়, প্রেম ক্ষণস্থায়ী হলেও হতে পারে সুন্দর, আবার দীর্ঘস্থায়ী প্রেমও কিন্তু হতে পারে একঘেয়ে।
---------
উর্দু ভাষার শ্রেষ্ঠ গল্পকার সাদাত হাসান মান্টোকে একজন একবার জিজ্ঞাসা করলেন: আপনার দেশের খবর কী?
মান্টো উত্তরে বললেন: কারাগারে জুম্মার নামাজে যে দৃশ্য হয় দেশের অবস্থা ঠিক তেমন। আজান দেয় বাটপার, ইমামতি করে খুনী, পেছনে নামাজ পড়ে
সব চোরের দল।
======================
হাতেটানা স্বভাব কি চুরি?
যে যত বড় চোর সে নাকি তত বড় নেতা। কয়েক বছর আগে একটি ইরানি চলচ্চিত্র সারাবিশ্ব তোলপাড় করে ফেলেছিল। মাত্র তিন মিনিটের এই চলচ্চিত্রে দৃশ্যও ছিল মাত্র তিনটি। প্রথম দৃশ্য ছিল এরকমঃ একটি খেলার মাঠে ৫/৬ বছর বয়সী দুইটি শিশু খেলছে। ছেলে শিশুটি তার লাঠিম, খেলনা গাড়ি ও অন্যান্য খেলনা নিয়ে খেলছে আর মেয়ে শিশুটি তার পুতুল ও রান্নার সামগ্রী নিয়ে আপন মনে খেলছে।প্রথম দৃশ্য শেষ এবার দ্বিতীয় দৃশ্যঃ খেলতে খেলতে হঠাৎ ছেলে শিশুটির মনে হল; মেয়ে শিশুটির খেলনাগুলি খুবই চমৎকার। তাই সে মেয়েটিকে বললঃ আমরা খেলনাগুলি বদল করে খেলতে পারি। তুমি যদি একদিনের জন্য তোমার ওই সুন্দর খেলনাগুলো আমাকে খেলতে দিতে, তাহলে আমিও আমার খেলনাগুলি তোমাকে দিতাম। একদিন পর আমরা আবার খেলনা ফেরত নিতাম।কথাটি মেয়েটির মনে ধরল, তাই সে চট করে তার খেলনাগুলো ছেলেটিকে দিয়ে দিল।এবার জামার পকেট থেকে ছেলেটিও তার খেলনা ধীরে ধীরে বের করে মেয়েটিকে দিল।
তারপর দুজন দুজনের বাড়িতে চলে গেল। তৃতীয় অর্থাৎ শেষ দৃশ্যে দেখা গেল, মেয়েটি তার তার বিছানায় নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে, আর ছেলেটি তার বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে, কিছুতেই সে ঘুমোতে পারছে না, সে আপন মনে বারংবার ভাবছে, আচ্ছা আমি তো আমার সব খেলনা মেয়েটাকে দিই নাই, একটা খেলনা রেখেদিয়েছি পকেটে, মেয়েটাও নিশ্চয়ই একটা খেলনা রেখে দিয়েছে। তাহলে কোন খেলনাটা সে আমাকে দেয় নাই।ওটা নিশ্চয়ই চমৎকার কোন খেলনা হবে।এই ভেবে ভেবে তার কিছুতেই ঘুম আসছে না। সব দৃশ্য শেষ। এবার বড় বড় করে লেখা ভেসে উঠলো। যদি আপনি নীতিতে সৎ না থাকে থাকেন, তাহলে কোনদিন শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন না। এরকম অস্থিরতার মধ্যেই আপনার জীবন কাটবে।
এখন কথা হচ্ছে, কেন মানুষ অকারণে এভাবে চুরি করে?মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, তুচ্ছ জিনিস চুরি করার এই বাতিক একটি রোগ, যার নাম ক্লেপটোম্যানিয়া। অনেকে এই রোগটি উত্তরাধিকার সূত্রে পায়, যদি তার পিতামাতা বা ভাইবোনের পারিবারিক ইতিহাসে ক্লেপ্টোম্যানিয়া থাকে। এটা এক ধরনের মানসিক ডিসঅর্ডার, যার কারণে একজন মানুষ নিজেকে চুরি করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। চুরির একমাত্র কারণ ব্যক্তির চুরি করার আকাঙ্ক্ষা দমনে ব্যর্থতা। এক্ষেত্রে বস্তুর অর্থনৈতিক মূল্যের ভূমিকা কোনো গুরুত্ব বহন করে না। এই চোর অর্থাৎ একজন ক্লেপ্টোম্যানিয়াক সাধারণত দোকান বা বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজন থেকে চুরি করে। তারা বেশিরভাগই এমন জিনিস চুরি করে যা তাদের কাছে মূল্যহীন। চুরি করার পরে নিজেকে দোষী বোধ করে। আবার মানহানির ভয় পান । অনেক সময় চুরির জিনিস কাউকে দান করে, কিন্তু চুরি করার ইচ্ছা আবার ফিরে আসে। যেমন- চট্টগ্রামের একজন বিখ্যাত চৌধুরী্র কথা লোকমুখে প্রচলিত আছে, সে কোথাও দাওয়াতে গেলে, ছোট একটি চামচ পকেটে করে নিয়ে আসতে আসতেন। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও এটি ঘটছে নিয়মিত। যেমন
সম্প্রতি লন্ডনে সিটি গ্রুপের ইউয়োপীয় হেডকোয়ার্টারে কর্মরত উচ্চপদস্থ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পরশ শাহকে অফিসের ক্যান্টিন থেকে খাবার চুরির অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে। এই ভারতীয় ব্যক্তির বাৎসরিক আয় আনুমানিক ৯ কোটি ২০ লাখ রুপি। ২০১৬ সালে সহকর্মীর সাইকেল থেকে নামমাত্র দামের একটি চেইন-গার্ড চুরির দায়ের লন্ডনের এক ট্রেডারকে বরখাস্ত করে জাপানের মিজুহো ব্যাংক।যা বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছে।
২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকরক ‘জোনাথন বারোস’ নামে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজীবন নিষিদ্ধ করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ট্রেনে যাতায়াতের সময় তিনি প্রায় ভাড়া দিতেন না। এ জন্য তাকে ৪৩ হাজার ডলার জরিমানা দিতে হয়েছিল।
আমাদের মধ্যে এরকম হাজার নয়, লক্ষ লক্ষ মানুষ পাওয়া যাবে; যারা এভাবে বাস বা ট্রেনের ভাড়া ফাঁকি দিয়ে চলতে অভ্যস্ত। এই স্বভাবটা ধীরে ধীরে তাদেরকে আরো বেশি চুরি করতে প্ররোচিত করছে।এভাবে লেখাপড়া করা শিক্ষিত ভদ্রলোক হয়েও আমরা চোর হয়ে বেড়ে উঠছি।এতো গেল চুরি করার খারাপ দিক, আবার ভালো দিকও আছে। অনেক চুরি মানব সভ্যতা বিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। যেমন-রাবারের উৎপত্তি ব্রাজিলে। বিশ্বে যখন শিল্প বিপ্লব শুরু হয়, রাবারের চাহিদা প্রচুর বৃদ্ধি পায়, আর এর দামও বেড়ে যায়। ব্রাজিল সরকার সিদ্ধান্তে নেয় কোন ভাবেই রাবারের বীজ যেন কোনো দেশে যেতে না পারে। তখন এক ইংরেজ এই রাবারের বীজ চুরি করে ইংল্যান্ডের নিয়ে আসে। পরে ব্রিটিশরা ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতে এর চাষ শুরু করে। ব্রিটিশ সরকার সেই ইংরেজেকে নাইট উপাধী দিয়ে পুরস্কৃত করে।
আরো একটি উদাহরণ দিইঃ এখনকার এত জনপ্রিয় আলু যখন দক্ষিন আমেরিকার পেরুর পাহাড় হতে স্প্যানিসরা প্রথম ইউরোপে এনেছিল, তখন দির্ঘদিন মানুষ এগুলো কেউ খেত না। ফ্রান্সের রাজা আলুকে জনপ্রিয় করার জন্য একটা কৌশল বের করল। বিভিন্ন রকম আলু লাগিয়ে সারাদিন খুব পাহারা দিত যেন রাজার জন্য তৈরি ফসল কেউ হাত দিতে না পারে। কিন্তু রাত হলে সব পাহারাদার উঠিয়ে নিত। এই সুযোগে মানুষ ক্ষেত থেকে আলু চুরি করে নিয়ে খাওয়া শুরু করল। তৈরি হল অভ্যাস।
গভীর রাতে করবো চুরি,
মাঁখছি গায়ে তেল,
বেজায় রকম পিছল্যা এখন,
দেখবা মজার খেল।
দুই হাতে ধরতে এলে,
বাঈম মাছের মতো,
পিছল্যা বাইর হইয়া যামু,
ধরতে পারবা নাতো।
সিঁধেল চোর নিয়ে রিয়েল আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছড়া এটি।সিঁধেল চোর শব্দটি গ্রামে বেশ পরিচিত। সিঁধ কাটিয়া চুরি করে তাই আঞ্চলিক ভাষায় শিং চোরও বলে অনেকে। এমন চোরের যন্ত্রনায় একসময় পুরো গ্রাম অতিষ্ঠ থাকত। কত সালিশ, শাস্তি, লজ্জা, জ্ঞান, বুঝ, পরামর্শ যে দেয়া হতো সিঁধেল চোরদের। কুরআন শপথ থেকে শুরু করে আল্লাহর কিরা, মসজিদে তওবা পড়ানো ইত্যাদি করার পরও শুধরাতো না। কিন্তু এখন হঠাৎ করেই যেন বিলুপ্তির খাতায় নাম উঠাল তারা। অশব্য এখন সিঁধেল চোর যেমন আগের মতো নাই। তেমনি আগের মতো গ্রামে আর কাঁচা বা মাটির ভিটের ঘরও তেমন নাই। আমরা কতো রকম চুরির কাহিনী শুনেছি বা নিজেদেরও চুরি গেছে কতো কিছু।
আমেরিকান ইতিহাসবিদ David McCullough, ফসলের ইতিহাস, আর বাংলাদেশের ফসল। (American Historian David McCullough, history of crops and crops of Bangladesh) ইতিহাসবিদ ডেভিড ম্যাককুলোর মতে, মানুষের জন্য যত শিক্ষা আছে তার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হচ্ছে ইতিহাস। মানুষ যদি সঠিক ইতিহাস না জানে তাহলে সে কোন কিছুই সঠিকভাবে জানতে, বুঝতে আর করতে পারবে না। সে হবে অনেকটা রক্তশুন্য মানুষের মত দুর্বল। আমি যখন নতুন ফসলের কথা বলি তখন বেশিরভাগ মানুষই বলে ঐ ফসল কি বাংলাদেশে হবে? কিন্তু মানুষ যদি ফসলের ইতিহাস জানতো তাহলে আর কেউ এমন প্রশ্ন করতো না। আমরা বর্তমানে বিশ্বের দেশে দেশে যে ফসল দেখছি যদি আমরা ৫০, ১০০, ২০০ বা ৫০০ বা ১০০০ বছর পিছিয়ে দেখি, তাহলে দেখবো আগের আর এখন কার ফসল আকাশ পাতাল তফাত।
আমরা যে দেশে দেশে এত ফসল দেখছি, এ সব ফসল কিন্তু প্রাচীন কালে বিশ্বের যে কোন মাত্র একটি দেশেই বা ১টি অঞ্চলে উৎপত্তি হয়েছিল, যাকে লে উৎপত্তস্থল বা Centre of Origin. সেখান থেকেই পৃথিবীর সব দেশে দেশে ছড়িয়েছে। এই যেমন ধানের উৎপত্তি চীনের পার্ল নদী অঞ্চলে। সেখান থেকেই সকল দেশে ছড়িয়েছে। ভারতে এসেছে ৬-৭ হাজার বছর আগে। গম তরস্ক আর ঐ অন্চলে, আম ভারতে, কুল, লিচু চিনে বহু ফসল হয়েছে দক্ষিন আমেরিকা যেমন ভুট্টা, আনারস, পেপে, ইত্যাদি।
গমের উৎপত্তি তুরস্ক বা ঐ অঞ্চল। ভুট্টার উৎপত্তি দক্ষিন আমেরিকার অ্যান্ডিস পর্বত অঞ্চলে। আলু, মিস্টি আলু, টমেটো সহ অনেক ফসলেরও উৎপত্তি ঐ অঞ্চলে। চা চিনে, কফি আফ্রিকার ইথিওপিয়া হতে বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়েছে। রাবারের উৎপত্তি ব্রাজিলে, তামাক উত্তর আমেরিকা, আম ভারতের থেকেই বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়েছে। লিচু চীন থেকে ছড়িয়েছে। এখনকার এত জনপ্রিয় আলু আর টমেটো যখন দক্ষিন আমেরিকা হতে স্প্যানিসরা প্রথম ইউরোপে এনেছিল, তখন দির্ঘদিন মানুষ এগুলো শুধু লাগিয়ে রাখতো কিন্তু কেউ খেত না। অভাবে না খেয়ে থাকলেও কেও খেত না। ফ্রান্সের রাজা আলুকে জনপ্রিয় করার জন্য আলু লাগিয়ে সারাদিন খুব পাহারা দিত। কিন্তু রাত হলে সব পাহারাদার উঠিয়ে নিত। এই সুযোগে মানুষ ক্ষেত থেকে আলু চুরি করে নিয়ে খাওয়া শিখেছিল। এদেশ এখন ১ কোটি টন আলু হলেও এক সময়ে এই আলুকে জনপ্রিয় করতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকেও চেস্টা করতে হয়েছিল।
গোলমরিচ ভারতে উৎপত্তি হলেও সব থেকে বেশি উৎপাদন হচ্ছে ব্রাজিল আর ভিয়েতনামে। রাবারের উৎপত্তি ব্রাজিলে হলেও বর্তমানে মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া বা ভিয়েতনামে বেশি উৎপাদন হয়। কফির উৎপত্তি আফ্রিকার ইথিওপিয়া হলেও বিশ্বের সব থেকে বেশি কফি উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে ব্রাজিল আর ভিয়েতনাম। অ্যাভোকেডো আমেরিকা হতে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে। বিশ্বে যখন শিল্প বিপ্লব শুরু হলে রাবারের চাহিদা প্রচুর বৃদ্ধি পায়, আর এর দামও বেড়ে যায়। ব্রাজিল সরকার সিদ্ধান্তে নেয় কোন ভাবেই রাবারের বীজ যেন কোনো দেশে যেতে না পারে। তখন এক ইংরেজ এই রাবারের বীজ চুরি করে ইংল্যান্ডের নিয়ে আসে। পরে ব্রিটিশরা ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতে এর চাষ শুরু করে। ব্রিটিশ সরকার সেই ইংরেজেকে নাইট উপাধী দিয়ে পুরস্কৃত করে।
বর্তমানে আমাদের দেশে শীতকালে যত ফসল চাষ হয়, এর সবই বিদেশী তাও আবার সুদুর দক্ষিন আমেরিকার, যেমন আলু, গম, ভুট্টা, যত রকমের সবজী এর সবই বিদেশী। এখন যে সারা বছর জুড়ে থাই পিয়ারা পাওয়া যাচ্ছে তা ৫-৭ বছর আগেও ছিলো না। তেমনি আমরা বর্তমানে যে সব নুতন ফসলের কথা বলছি যেমন কফি, কাজুবাদাম, গোলমরিচ, ড্রাগন, অ্যাভোকেডো, ডেটপাম বা খেজুর, রাম্বুতান, লংগান, পারসিমন, যত রকম সাইট্রাস যেমন পোমেলো, গ্রেপফ্রুট, বহুরকম অরেন্জ এসবও এক সময়ে দেশের সিংহভাগ স্থান জুড়ে চাষ করা হবে। কারন এসব ফসল এদেশের জলবায়ুর জন্য খুবই উপযোগী।
কোন ফসল বিশ্বের যেখানেই উৎপত্তি হোক না কেন, ঐ ফসলের জন্য যে জলবায়ু যেমন Tropical, Subtropical বা Temperate climate যেখানেই থাকুক সেখানেই ভাল হবে। আমাদের দেশের জলবায়ু Subtropical and partly Tropical, কাজেই Tropical and subtropical যত ফসল আছে সে বিশ্বের যে দেশেই হোক না কেন তার সবই এদেশে খুব ভাল হবে।
গণতন্ত্র
মহান দার্শনিক সক্রেটিস গণতন্ত্র পছন্দ করতেন না। কারণ, সক্রেটিস তার নিজের চোখেই দেখেছিলেন, একটা দেশ বা সমাজের জনগোষ্ঠীকে একটা জাহাজের নাবিক নির্বাচন করতে বলা হলে জনগণ সবসময়ই জনপ্রিয় ব্যক্তিটিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। তারা জাহাজ চালানোর জন্য উপযুক্ত ব্যক্তিটিকে নির্বাচিত করে না। কারণ, অশিক্ষিত জনগণ জানেই না- একটা জাহাজ চালাতে আসলে কি ধরণের শিক্ষা আর যোগ্যতার প্রয়োজন হয়।
মূল কথাটা হচ্ছে, গণতন্ত্র আসলে অশিক্ষিত জনগণের জন্য নয়। কারণ, গণতন্ত্র কি জিনিস, সেটা বুঝতে হলে একটা জনগোষ্ঠীকে নূন্যতম শিক্ষিত হতে হয়।
খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ অব্দ থেকে চতুর্থ অব্দ। প্রাচীন গ্রিসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল হাজারেরও বেশি নগররাষ্ট্র। দীর্ঘ রাজনৈতিক সংস্কারের মধ্যে দিয়ে এই নগররাষ্ট্রগুলোতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গ্রিসের এই নগররাষ্ট্রগুলো গণতন্ত্রের চর্চা করতো এসেম্বলির মাধ্যমে, প্রতি দশ দিন অন্তর অন্তর বসতো এসেম্বলি। বিশ বছরের উর্ধ্বে প্রাপ্তবয়স্ক সকল পুরুষের অংশপ্রহণ ও ভোটদানের অধিকার ছিল। তবে, এসেম্বলিগুলোতে নারী্রা অংশগ্রহণ করতে পারতো না, দাসেরাও অংশগ্রহণ করতে পারতো না । এই জন্য প্রাচীন গ্রীসের দার্শনিক সক্রেটিস প্রায়ই এথেন্সের এই গণতন্ত্রের সমালোচনা করতেন এবং ‘জেন্টলম্যানস ক্লাব’ বলে অবিহিত করতেন।
সেই প্রাচীন গ্রীস থেকে গনতন্ত্র শুরু হলেও বর্তমান আধুনিক বিশ্বে প্রথম গণতন্ত্রায়নের ঢেউ শুরু হয় রেনেসাঁর প্রভাবে ইউরোপের দেশগুলোতে। শক্তিশালী হতে থাকে সংস্কারপন্থীরা। ইউরোপ উত্তাল হয়ে উঠে ফরাসি বিপ্লবের ঢেউয়ে, বাস্তিল দুর্গের পতনের সাথে ক্ষমতাচ্যুতি ঘটে ফ্রান্সের সম্রাটেরও। ইউরোপের অনেক দেশে নিরঙ্কুশ রাজতন্ত্রকে ঠেলে প্রতিষ্ঠা হয় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র। জাপান,ইংল্যান্ডসহ স্ক্যানডেনেভিয়ান দেশ ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন ইত্যাদি দেশে সাংবিধানিক রাজতন্ত্র কাঠামো তৈরি হয় । এই কাঠামোতে সরকারপ্রধান, জাতীয় আইনসভা আর স্থানীয় আইনসভার সদস্যরা সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হলেও, রাষ্ট্রপ্রধান হন উত্তরাধিকার সূত্রে।
সংস্কারচিন্তার প্রভাব পড়ে আটলান্টিকের অপর পাড়ে উত্তর আমেরিকাতেও। আমেরিকায় শুরু হয় স্বাধীনতা আন্দোলন। আমেরিকান স্বাধীনতাকামী নেতারা ফেডারেল কাঠামোতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন । এই ফেডারেল কাঠামোতে প্রেসিডেন্ট একইসাথে দায়িত্ব পালন করেন সরকারপ্রধান আর রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে, নির্বাচিত হন জনগণের সরাসরি ভোটে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে প্রধানমন্ত্রী, নির্বাচিত হন জনগণের সরাসরি ভোটে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয় পরোক্ষ ভোটের মাধ্যমে।
বর্তমানে গণতান্ত্রিক দেশের সংখ্যা ১৬৭ । গণতন্ত্র পরিণত হয়েছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য শাসনব্যবস্থায়। আমেরিকার ষোড়শ রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকন তার গেটিসবার্গ ভাষণে গণতন্ত্রের সংজ্ঞায়ন করেন এভাবে, “গণতন্ত্র হলো জনগণের, জনগণের দ্বারা, এবং জনগণের জন্য সরকার।”
গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্রের মূল বিষয়ে তেমন পার্থক্য নেই। গণতন্ত্র ও প্রজাতন্ত্র –এর মধ্যে পার্থক্য হল। প্রজাতন্ত্রে রাষ্ট্রের প্রধানকে অবশ্যই নির্বাচিত হতে হয়। এজন্য ব্রিটেন একটি গণতান্ত্রিক রাস্ট্র হলেও প্রজাতন্ত্র না। যেহেতু সেখানে রাজা বংশানুক্রমিকভাবে আসেন। তেমনিভাবে চীন গণতান্ত্রিক রাস্ট্র না হলেও প্রজাতন্ত্র, কারণ দেশটির রাষ্ট্রপ্রধানকে নির্বাচিত হতে হয়।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই পূর্ব ইউরোপের গণতন্ত্রের উত্থানের সাথে সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটলেও ২০০৫ সালের পরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পতন শুরু হয় । পৃথিবীর অনেক দেশের সরকার একক কর্তৃত্ববাদী ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে গণতন্ত্রের বিকৃতি ঘটিয়েধীরে ধীরে ধবংস করেছে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, গণতান্ত্রিক নিয়ম ও আদর্শ। তাদের যুক্তিতে বলা হয়ে থাকে, গরীব দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ‘গণতন্ত্র’ বাধা সৃষ্টি করে এবং ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা’ হচ্ছে উপযুক্ত শাসনব্যবস্থা;এই তত্ত্বকে বলা হয় লি থিসিস। ২০১৫ সালে আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক খ্যাত লি কুয়ান ইউয়ের মৃত্যুর পর এই ‘লি থিসিস’ ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। দুই দশকের বেশি সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে সিঙ্গাপুর তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে প্রথম বিশ্বের উন্নত দেশ হয়ে ওঠে, জিডিপি পৌঁছায় ৫০০ ডলার থেকে ৫৫,০০০ ডলারে। তার নামেই তত্ত্বটি লি থিসিস নামে পরিচিত। লি থিসিসের মূলকথা হচ্ছে- গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাজনৈতিক স্বাধীনতার কারণে দেশে অস্থিরতা, রাজনৈতিক অচলাবস্থা তৈরি হয়। ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নিতে হয় জনগণের বর্তমানের কথা ভেবে, কিন্তু ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা’ সরকার ভবিষ্যতের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কার্যকর অর্থনৈতিক সংস্কার নেয়া বেশ দুরূহ কাজ। কারণ এখানে রাতারাতি কোনো বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব না। তাই উন্নয়ন ধীর গতিতে হয়। কিন্তু অর্থনীতিবীদ অমর্ত্য সেনের মতে, ‘হাইব্রিড শাসনব্যবস্থা’র জন্য নয়, বরং মুক্তবাজার অর্থনীতির জন্য উন্নয়ন হয় । বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চাকরি ও ব্যবসা করার সুযোগ না পেলে এত বিশাল জনসংখ্যা একে অন্যের মাংস খেতো। একসময় ইউরোপের মানুষেরা জীবিকার সন্ধানে ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছে, সময়ের প্রয়োজনে এখন ঘটছে উল্টো প্রক্রিয়া, আমরা যাচ্ছি তাদের কাছে।
সংসদীয় গণতন্ত্রের সীমবদ্ধতা-
বর্তমান সময়ের গণতন্ত্র নগররাষ্ট্রের যুগের প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র থেকে আলাদা। জাতিরাষ্ট্রের আকার নগররাষ্ট্রের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক বড়, জনসংখ্যাও অনেক বেশি। মানুষের একটি স্বাভাবিক প্রবণতা হচ্ছে, মানুষ যখন তুলনামূলকভাবে কোনো ক্ষুদ্র গ্রুপের সদস্য হয়, তখন সে সহজেই সেই গ্রুপের নেতার কর্তৃত্ব আর নির্দেশ মেনে নেয়। কিন্তু, গ্রুপের আকার যতই বড় হতে থাকে, গ্রুপের সদস্য হিসেবে গ্রুপের নেতার সাথে মানসিক দূরত্ব বাড়তে থাকে, পাল্লা দিয়ে বাড়ে গ্রুপের নেতার নির্দেশ না মানার প্রবণতা। মানুষের এই স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে সামনে রেখেই, গণতান্ত্রিক কাঠামোতে ক্ষমতাকে তৃণমূল পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, ক্ষমতার ভারসাম্য আনা হয়েছে কেন্দ্র আর স্থানীয় সরকারের মধ্যে কাঠামো শ্রেনি বিন্যাস এর মাধ্যমে।
আধুনিক যুগে রাষ্ট্রকাঠামোকে সাধারণত তিন অংশে ভাগ করা হয়, আইন বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ আর বিচার বিভাগ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আইন বিভাগের সদস্য হন, তারা আইন তৈরি করেন। সরকারপ্রধানের নেতৃত্বাধীন নির্বাহী বিভাগ সেই আইন প্রয়োগ করেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে সংসদ সদস্যরা সাধারণত একইসাথে আইনসভার ও নির্বাহী বিভাগেরও সদস্য হন।
একই ব্যক্তি দুই বিভাগের সদস্য থাকায়, যে নির্বাহী বিভাগে থাকা ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার কথা আইনসভার। এখন, সরকারপ্রধান ও অন্যান্য মন্ত্রীরা নির্বাহী বিভাগের অংশ হওয়ার ফলে, জবাবদিহিতা হয় না। আইনসভার কোনো সদস্য জবাবদিহিতা চাইলেও, বাস্তবিক রাজনীতিতে সেটি করা প্রায় অসম্ভব। এইভাবে, সরকারপ্রধান মন্ত্রিসভার সদস্যদের পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি নিয়োগেও ভূমিকা রাখেন, এমনকি বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও আসে সরকারপ্রধানের দপ্তর থেকেই। আবার, সরকারপ্রধান সাধারণভাবে ক্ষমতাসীন দলেরও প্রধান হন। ফলে, ওই একক ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক তৈরি করে সুবিধা নিতে থাকে দলীয় লোক এবং কিছু ব্যবসায়ীরা। ফলে সাধারন মানুষ প্রশ্ন তুলছেন, সরকারী প্রকল্প এবং সরকারী নিয়োগ নিয়ে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা মূলক উন্নততর জীবনের প্রয়োজনে সংসদীয় গণতন্ত্রের এই সীমবদ্ধতাগুলো কাঁটিয়ে উঠার জন্য শাসনতান্ত্রিক বিবর্তন একান্ত অপরিহার্য। প্রাথমিকভাবে দুইটি বিষয়ে পরিবর্তন একান্ত দরকারঃ একটি হচ্ছে নির্বাচন প্রক্রিয়া, আর অপরটি হচ্ছে শাসনতান্ত্রিক কাঠামো। প্রথমত সমস্ত নির্বাচন-প্রক্রিয়া হতে হবে একই সঙ্গে প্রতিযোগিতা এবং সহযোগিতামূলক। যেমন-কোন ইউনিয়ন পরিষদে যদি নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট প্রাপ্ত হবেন, তিনি হবেন চেয়ারম্যান। তার চেয়ে কম ভোট প্রাপ্ত ব্যক্তি হবেন ভাইস-চেয়ারম্যান, তার চেয়ে কম ভোট প্রাপ্ত ব্যক্তি হবেন সাধারণ সম্পাদক। এভাবে সবাইকে বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত করে পরিষদ পরিচালনা করা যায়। এতে একদিকে যোগ্যরা সবাই যেমন দায়িত্ব পাবে, অন্যদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এলাকার সবাই সবার শত্রুতে পরিণত হওয়ার যে প্রক্রিয়া সেটা চিরতরে বন্ধ হবে। এভাবে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে ক্লাব,সমিতি পর্যন্ত সকল প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা যায়। দ্বিতীয়তঃ যে শাসনতান্ত্রিক কাঠামো দুই অংশে ভাগ থাকবে, একটি নির্বাহী বিভাগ এবং অন্যটি আইন ও বিচার বিভাগ। নির্বাহী বিভাগের সদস্যরা জনভোটে নির্বাচিত হয়ে আসবেন আর আইন ও বিচার বিভাগের সদস্যরা পড়াশুনা, জ্ঞানচর্চা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিয়োগ পাবেন। ২টি ধাপে এই প্রকৃয়া, চার শতাধীক বিষয়ে যিনি বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা বা লিখতে পারবেন তাকে প্রাথমিক সদস্য এবং এক থেকে তিন হাজার বিষয়ে যিনি বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান রাখেন তিনি স্থায়ী সদস্য। এভাবে সংসদ থেকে পরিবার পর্যন্ত সব কাঠামোতে নির্বাহী ও পরিচালক আলাদা থাকবেন, মা নির্বাহী কিসেবে থাকেন মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়াতেও। মেয়েরা সেখানে ব্যবসা থেকে রান্না সকল কাজের দায়িত্বে থাকেন আর পুরুষেরা পরিকল্পনা, পরিচালনা, যোগাযোগ, শিল্প কারখানা ও অন্যান্য দায়িত্বে থাকেন।
জিন্নাহর মেয়ে দিনা
ভারতের গুজরাট রাজ্যের পানেলি মতি গ্রামে মেঘজিভাই ঠাকুর নামে এক ব্রাক্ষণ মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। সমুদ্রপাড়ের শহর। মাছের ব্যবসাপাতি ভালোই চলছিলো। রুজি রোজগার বেশ। এসব দেখে হঠাৎ বাধ সাধলো লোকাল পুরোহিতরা। ব্রাহ্মণ কিভাবে মাছের ব্যবসা করে ! এজন্য অনেকটা হুট করেই মাছ ব্যবসা আর আমিষ গ্রহণের অজুহাতে সপরিবারে সেই ব্রাহ্মণকে তারা সমাজচ্যুত করেন সমাজপতিরা। ধোপা-নাপিত বন্ধ। পূজা আর্চণা-সামাজিক নিমন্ত্রণ বন্ধ। এভবে চলতে থাকলে একসময় সেই ব্রাক্ষণ মাছের ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে আবার তার বর্ণে ফিরে আসার চেষ্টা করলেন, তবুও বাকিরা তাকে অচ্ছুৎ করে একঘরে ফেলে রেখে দিলো। ফলস্বরূপ, সেই ব্রাহ্মণের পুত্র পুঞ্জলাল ঠাকুর এইসব অবমাননায় এতটাই ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি নিজে সহ তাঁর চার ছেলেকে নিয়ে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন এবং বোম্বেতে স্থায়ীভাবে চলে আসেন। এই পুঞ্জলাল ঠাকুরের মেজো ছেলের সাথে আমরা পরিচিত। তিনি কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
তবে এই লেখাটা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহকে নিয়ে না। জিন্নাহর একমাত্র উত্তরাধিকার, তার মেয়ে দিনা জিন্নাহকে নিয়ে। জিন্নাহ নিজে বিয়ে করেছিলেন এক পার্সী রমনী রতনবাঈকে। তাদের একমাত্র কন্যা দিনার জন্ম ১৯১৯ সালের ১৫ই আগস্ট। ঠিক ভারত-পাকিস্তানের ভাগের দিন এবং গণিতের হিসেবে দেশভাগের আটাশ বছর আাগে। ১৯৩৮ সালে এক পার্সি যুবকের প্রেমে পড়েন উনিশ বছর বয়সী দিনা। নিজে অমুসলিম বিয়ে করলেও একমাত্র মেয়ে এক অমুসলিমকে বিয়ে করবে এইটা কখনোই মেনে নিতে পারেননি কায়েদে আজম।
পাকিস্তানের সর্বেসর্বা হতে চলছেন তিনি, ক্ষমতার মোহে বিভোর সবকিছু। তবে মেয়ে ছিলেন অনড়। বাবার নিষেধ সত্ত্বেও তিনি পার্সী- বংশোদ্ভূত ভারতীয় নেভিল ওয়াদিয়াকে বিয়ে করেন। ১৯৪৩ সালে তার স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে বোম্বেতে নিজের পিতামহের বানানো পৈত্রিক নিবাসে বসবাস শুরু করেন।
এরপর কালে কালে দেশ ভাগ হয়। এপারের মানুষ ওপারে যায়, ওপারের মানুষ এপারে। জিন্নাহ তখন পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল। প্রবল পরাক্রমশালী ব্যক্তি। মেয়েকে বললেন তার কাছে চলে আসতে করাচিতে। তখন মেয়ে বাবাকে প্রশ্ন করেন-;আমার মায়ের কি হবে ? তুমি কি মায়ের কবর বোম্বে থেকে পাকিস্তানে নিয়ে যেতে পারবে? । স্পষ্ট জানিয়ে দেন বাবাকে যে ভারতেই থাকছেন তিনি। আমৃত্যু বলে গিয়েছেন- Bombay is my city.
হ্যা দিনা গিয়েছিলেন পাকিস্তানে একবার। ১৯৪৮ সালে। পিতার শেষ্যকৃতি অনুষ্ঠানে। এরপর আর যান নি। ব্যবসাপাতিতে মন দেন। শক্ত হাতে হাল ধরেন। আজও ভারতের অন্যতম শীর্ষ ধনী নাসলি ওয়াদিয়া। দিনা জিন্নাহর ছেলে, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নাতি। নাসলি ওয়াদিয়ার দুই সন্তান- জাহাঙ্গীর এবং নেস। বর্তমানে আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের অন্যতম মালিক নেস ওয়াদিয়া।
ভাগ্যের এক নির্মম পরিহাস- লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান আদায় করে নেওয়া জিন্নাহর সব উত্তরাধিকারই ভারতীয় নাগরিক, পাকিস্তানে কেউ নেই।
উনি ৯৮ বছর বয়সে নিউইয়র্কে মারা যান কিন্তু ওনার আপনজনদের উনি বোম্বাইতে সেটেল্ড করে যান।
সুপার কনফিউজ্ড জাতি!
পাঁচ হাজার বৎসর পূর্ব হইতে এই ভূমির সকল মানুষই মোটামুটি একই সনাতন ধর্মবিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিল; সোজা কথায় পাথর, পুতুল আর নানা প্রাকৃতিক শক্তির পূজা-অর্চনায়। মাঝে বৌদ্ধ ধর্ম নিয়া বেশ কিছু চড়াই-উৎড়াই পার হইলেও মোটাদাগে নম: নম: করিয়া ইহারা বেশ নির্বিঘ্নে জীবনকাল কাটাইল। তারপর আসিল বারোশো শতক। পারস্য হইতে ঘুরি সাম্রাজ্যের সিপাহসালারগণ একে একে কাবুল, লাহোর, দিল্লী দখল করিয়া বাংলা মুলুকে আসিয়া হাজির হইল। রাজা ;লক্ষণ সেন কে হটাইয়া সেই বিদেশী ঘোড়া সওয়ারকারী মুসলিম সেনাপতি দখল করিল বাংলা মুলুকের সিংহাসন।
যাহা হোক, এরা সিংহাসন দখল করে গজনীর সুলতান মাহমুদের মত পুনরায় পারস্যে ফিরলেন না। তারা দিল্লী-বাংলা জয় করে এই স্থানেই আসন গাড়িয়া বসলেন। প্রজারা দেখলেন, ইসলাম ধর্ম হিসাবেও অনেক উদার, সমতা-সম্পন্ন, জাত-পাত ইত্যাদির অত্যাচার নাই। সুতরাং, নিন্মবর্ণের হিন্দুগণ বর্ণপ্রথার নিপীড়নে অতিষ্ট হইয়া বাপ-দাদার ধর্ম ছাড়ল। সুলতানদের পৃষ্ঠপোষকতায় সেই পালে আরও হাওয়া লাগল।
নব্য মুসলমানগণ রাতারাতি ধর্ম তো পাল্টাইলেন কিন্তু মনের ভিতরে দীর্ঘ চারহাজার বছরের আচার-আচরণ, কৃষ্টি-কালচার, রীতিনীতি, আনন্দ-উৎসব-সামাজিকতা ইত্যাদি তো হঠাৎ করিয়া পাল্টানো সম্ভব নহে। তাই তারা সামাজিক রীতিনীতিসমূহকে ধর্মীয় সুরে বদলিয়ে দিল। শ্রাদ্ধের নাম দিল চল্লিশা, কির্তনের নাম দিল ওয়াজ মাহফিল, বিবাহের সময় দেয়া পণের নাম দিল যৌতুক, ইত্যাদি ইত্যাদি। নিজের পরিচয় নিয়ে বিস্তর দ্বিধার সূত্রপাত হল। আমরা কি? বাঙ্গালী না কি মুসলমান? এভাই কাটছিল দিন। এরপর আসল সাদা চামড়ার ইউরোপীয়ানগণ, এবং সাথে আসিল তাহাদের খ্রীস্টান কালসার। এইবার বাঙ্গালী আবারও এক পা এগিয়ে আসল আসল।
লুংগী-ধুতি খুলিয়া প্যান্টু পরল। পাঞ্জাবী-ফতুয়া খুলে শার্ট-কোর্ট গায়ে চড়াল, শাড়িতে ব্লাউজ জুড়িল। এর মধ্যে আসল পুঁজিবাদ। 'বাঙ্গালী টাকা বানাবার পিছনে ছুটল। চুরি, জোচ্চুরী, লোক ঠকানো, দূর্নীতি, ঘুষ, দখলদারিত্ব যে করেই হোক। আবার দিন শেষে বেহেশতে যেতেও হইবে। একটা কটিন অবস্থা! অতঃপর, এখন আমরা নিজেদের পোষাকটা ছেড়ে আরব ইউরোপের পোষাক পরে নিজেদের মুসলমান দাবি করিতে থাকি.....
ডাঃ দেবী শেঠী বললেন-
সোয়াবিন খাওয়ার বা রান্নার তেল নয়- সোয়াবিন একটা কেমিকেল বিশেষ- শরীরের জন্য একটা বিষ- যা হৃদযন্ত্রের জন্য বিশেষ ক্ষতিকর- সোয়াবিন বর্জন করুন- হার্টে ব্লক হবেনা- হার্ট সুস্হ রাখতে চাইলে- শরীরে যেন সোয়াবিন না ডুকে। আর্টারীগুলো রক্ত সন্চালনে বাধাঁপ্রাপ্ত হয়।
সোয়াবিন ছাড়ুন- তেল ছাড়া রান্না করতে শিখুন- জীবন দীর্ঘায়ু হবে- শরীর নিরোগ থাকবে? তেল নামক স্লো পয়জনটির দাম - কেজি ১০০০ টাকা হলে খুশী হতাম। আগেকার দিনে সাপ্তাহিক বাজার থেকে- কাঁচের শিশিতে এক ছটাক / আধ পোয়া তেল কিনে সপ্তাহ পার করতেন মা দাদিরা। তখন হার্ট, প্রেসার, গ্যাস্ট্রিক আর- ডায়াবেটিস, ব্লক, স্ট্রোকও ছিল না এত।
এখন মাসে ৫- ৮ লিটারেও কুলায় না এখন- তাই এসব রোগে ৪০/৫০ বছর বয়সে নোটিশ ছাড়া মরছে-
এবার অন্তত একটু কম তেলে রান্না শিখুন- মানুষের আয়ু বাড়ুক,কম তেলে রান্নার প্রতিযোগিতা চলছে বিশ্বময়। হাটুন- হাসুন,জীবনটা হাতের মুটোয়।
পুরুষ মৌমাছি ও আমাদের রাজনীতিবিদ
একটি মৌচাকে তিন ধরনের মৌমাছি থাকে.১। রাণী মৌমাছি ২। পুরুষ মৌমাছি আর ৩। কর্মী মৌমাছি। রাণী মৌমাছি শুধু খায় আর ডিম পারে! রাণী মৌমাছি প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ২৫০০ ডিম দেয়। পুরুষ মৌমাছির স্বভাব আমাদের দেশের রাজনীতিবিদদের মত । এরা জীবনেও কোন কাজ করে না, এমনকি কর্মী মৌমাছিকে এদের খাবার পর্যন্ত মুখে তুলে দিতে হয়। এদের জীবনের একমাত্র লক্ষ হলো রাণী মৌমাছির সাথে মিলিত হওয়া! মিলন মৌসুমে প্রতিদিন দুপুরবেলা চাকের পুরুষ মৌমাছিগুলো একটি নির্দিষ্ট স্থানে ভিড় জমায় যাকে বলা হয় পুরুষ আড্ডাখানা !
এই সময়ে চাক থেকে রাণী মৌমাছি বের হয়, যাকে বলা হয় “দি মিটিং ফ্লাইট” রাণী মৌমাছি হঠাৎ করে ঢুকে পড়ে পুরুষদের আড্ডায়। সে এসেই এক বিশেষ ধরণের গন্ধ ছড়িয়ে দেয়, যার ফলে শত শত পুরুষ মৌমাছি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এর পরপরই রাণী মৌমাছি উড়ন্ত অবস্থায় পছন্দমত পুরুষের সাথে মিলিত হয়। রাণী মৌমাছি একেবারে পর্যায়ক্রমে ১৮-২০টা পুরুষ মৌমাছির সাথে মিলিত হতে পারে! অদ্ভুত ব্যাপার হল, এই মিলনের সময় পুরুষ মৌমাছির এন্ডোফেরাস বা যৌনাঙ্গ ভেঙ্গে যায় এবং তখনই মারা যায় পুরুষ মৌমাছি। এজন্যই এই মিলনকে বলা হয় “দি ড্রামাটিক সেক্সুয়াল সুইসাইড”। এই নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও পুরুষ মৌমাছি স্ত্রী মৌমাছির সাথে মিলন করে?
একটি মৌচাক একটি মাত্র রাণী আ স্ত্রী মৌমাছি থাকে। রাণীকে কেন্দ্র করেই মৌচাক গড়ে ওঠে। যদি কোন ডিম থেকে স্ত্রী মৌমাছির জন্ম হয় সে শিশু স্ত্রী মৌমাছিকে কর্মী মৌমাছিরা লুকিয়ে রাখে যেন রাণীর নজরে না আসে। রাণীর নজরে পড়লে ঐ শিশু স্ত্রী মৌমাছির নিশ্চিত মৃত্যু । শিশু রাণী মৌমাছিটি বড় হলে দুই রাণীর মধ্যে যুদ্ধ হয়। এতে দুটি পথ খোলা থাকে । হয় যুদ্ধে মৃত্যু ( একজন অপর জনকে হত্যা করে মৌচাকের কর্তৃত্ব গ্রহণ করে) না হয় দুজন আলাদা হয়ে পৃথক দুটি মৌচাক গড়ে তোলা। অনাকাঙ্খিতভাবে যদি কোন রাণী মৌমাছি মারা যায় তবে সে খবর ১৫ মিনিটের মধ্যে সকল কর্মী মৌমাছি জানতে পারে এবং সম্মিলিতভাবে নতুন রাণী মৌমাছি তৈরি করার উদ্যোগ নেয়।
একটি কর্মী মৌমাছি সারা জীবনে আধা চা চামচ মধু তৈরি করতে পারে। আরো একটা মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবীতে মধু একমাত্র খাদ্য যা কখনোই পঁচে না!!! আমাদের সমাজ জীবনের দিকে তাকালে দেখা যায় বাস্তবে এই তিন শ্রেণীর মানুষ আমাদের সমাজেও আছে। রানী মৌমাছির মতো এক ধরনের মানুষ আছে যারা সব সময় ক্ষমতার মধ্যখানে থাকে, মধু খেয়ে বেড়ায়। তাকে ঘিরে এক ধরনের পুরুষ মৌমাছি আছে, যাদের একমাত্র স্বপ্নই হলো ওই রাজ ওই রানী মৌমাছির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলা, এবং রাজনীতির নামে লুটেপুটে খাওয়া। আর কর্মী মৌমাছির মত হচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবন, এরা সারা জীবন কষ্ট করে বেঁচে থাকার জন্য।
ঈদুল ফোসাখ
ঈদুল ফোসাখ নামে ইহুদিরা ঈদ পালন করে। এইদিন মিশরের শাসক ফেরাউনের কাছ থেকে ইহুদিরা উদ্ধার পেয়েছিল। ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থে হযরত আদম (আঃ) থেকে শুরু করে নুহ , মুসা ,ইব্রাহীম , সোলায়মান সহ আরো অসংখ্য নবীদের ইতিহাস আছে। আজ থেকে প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে ইহুদি ধর্মের উৎপত্তি। ১৪৫০ এর দশকে যখন স্পেন ও ফ্রান্স থেকে ইহুদীদের বিতাড়িত করা হয়েছিলো তখন ওরা ইতালিতে আশ্রয় নিয়েছিলো। খ্রিষ্টানরা ইহুদিদের ধর্মপালনে বাঁধা দিতো, জোর পূর্বক তাদের ধর্মান্তরিত করতো, তাদের উপাসনালয় ভেঙে ফেলতো। তখন ওরা ধর্মের থেকে জ্ঞান ও বিজ্ঞানকে প্রাধান্য দিয়ে ইউরোপীয় সমাজে নেতৃত্ব দিতে শুরু করলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সারাবিশ্বে ইহুদীদের ব্যাপকভাবে হত্যা করা হয়। তারপরও তারা জ্ঞান ও বিজ্ঞানে সবার থেকে এগিয়ে।
খ্রিষ্টানরা অতিরিক্ত ধর্মান্ধ হয়ে নিজ ধর্মের মানুষদের উপরও অত্যাচার শুরু করে। ১৩ শতকে আজকের মুসলমানদের মত খ্রিষ্টানরাও জ্ঞান বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলো। খ্রিষ্টান ধর্ম ও খ্রিষ্টান ধর্মগ্রন্থের বাইরে তারা আর কিছুই মানতে চাইছিলোনা। বিজ্ঞানের কোন আবিস্কার খ্রিষ্টান ধর্মের বিরুদ্ধে গেলেই খ্রিষ্টানরা তাকে হত্যা করতো। কিন্তু ছাপাখানা আবিস্কারের পর ইউরোপের মানুষের চোখ খুলতে শুরু করল। খ্রিষ্টানদের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে মানবতার ডাক নিয়ে হাজির হলেন ফ্রান্সেস্কো পেত্রার্ক, তাকে ইতালীয় মানবতাবাদের জনক বলা হয়। নিকোলাস কোপারনিকাস , লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, নিকোলো
ম্যাকিয়াভেলি, ক্রিস্টোফার কলম্বাস , মিকেলাঞ্জেলো , গ্যালিলিও, ফ্রান্সিস বেকন সহ এমন আরও অসংখ্য মানুষের জ্ঞানের আলোয় বদলে যায় পুরো ইউরোপের চিত্র। ৬০০ সাল থেকে ১২শ সাল এই ৬০০বছর মুসলমানরাও জ্ঞান-বিজ্ঞানে সারা বিশ্ব শাসন করেছে। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্টেনলি বলেন, ' একটা সময় আরবের মসজিদগুলো ছিলো বিশ্ববিদ্যালয়।এখানে জ্ঞানপিপাসু ছাত্রদের শোরগোলে ভর্তি ছিলো। মসজিদের ভেতরে ধর্মীয় শরীয়ত ছাড়াও, দর্শন , বিজ্ঞান , চিকিৎসা ও গণিত বিষয়ে পাঠদান করা হত। এই সময় ইবনে সিনা , আল রাযী, জাবির ইবনে হাইয়ান, খোয়ারিজমি, হাসান ইবনে হাইশাম ও আরো অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী পৃথীবীকে বদলে ছিলেন। এদের মধ্যে কিছু বিজ্ঞানী মৃত্যুর পর পুনঃজন্মে বিশ্বাস করতেন না কিন্তু সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করতেন। এদের অনেকেই তাই ইউরোপে সম্মানিত হলেও নিজ মাতৃভূমিতে অতোটা সম্মান পাননি। অধিকাংশ মুসলমান এদের নাম পর্যন্ত জানেনা। বর্তমান সময়ে জ্ঞান ও বিজ্ঞানের সেই চর্চা এখন আর মসজিদে হয় না। বিজ্ঞানবিরোধী এক ধর্মান্ধ উগ্র জনগোষ্ঠী সেই মধ্যযুগের খ্রিষ্টানদের মত উগ্রতা মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মুসলিম সমাজে। জ্ঞান ও বিজ্ঞানে সারা বিশ্বে মুসলমান তাই অনেক পিছিয়ে পড়েছে।
ধর্মান্ধতা আজ মুসলমানদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সুন্দর এক দেশ, অসভ্য একটি মানব সমাজে তৈরি করতে ব্যার্থ হচ্ছি আমরা।
ধর্ম হোক মানুষের কল্যাণের জন্য। আমাদের নতুন নতুন প্রজন্ম যখন ধর্মগ্রন্থের পাশাপাশি সভ্যতার ইতিহাস , মানুষের ইতিহাস , দর্শন, যুক্তিবিদ্যা, নিজেদের সংস্কৃতির ইতিহাস, জ্ঞান ও বিজ্ঞানকে জানা শুরু করবে তখন তারা এই দেশে রেনেসাঁর বিপ্লবের সূচনা হবে।
অমুসলিমরা কিভাবে দেখে মুসলিমদের!
মুসলিম দর্শনের স্বর্ণযুগ নিয়ে আমরা গর্ব করি৷ আমরা কি কখনো অনুসন্ধান করেছি কেন সেই জ্ঞানচর্চা বন্ধ হয়ে গেল? স্বর্ণযুগের সেই দার্শনিকদের সাথেই বা সমাজ- রাষ্ট্র কেমন আচরণ করেছে? ইমাম আবু হামিদ আল গাজ্জালির কট্টরপন্থা কিভাবে আমাদের দর্শন চিন্তার ইতি ঘটালো? ইবনে সিনা, আবু রুশদ, আল ফারাবি, আল কেমি বিজ্ঞানিরা, আল জাবের এবং আরো দার্শনিকরা কেন স্বাভাবিক জ্ঞানচর্চা করতে পারেনি? রাষ্ট্র স্বয়ং কাউকে হত্যার জন্য ধাওয়া করেছে, কারো সমস্ত পুস্তক পুড়িয়ে দিয়েছে? কেন? ইমাম গাজ্জালি থেকে আজকের ওহাবীবাদি চেতনা মুসলিমদের জ্ঞান চর্চা করতে দেয় না৷ আবার এই ওহাবী কট্টরপন্থা মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবকে দিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করিয়েছে৷ এখন শুধু কতিপয় পীর আর ওয়াজের বক্তাই কথা বলতে পারছে৷ বিপরীতে প্রকৃত মুসলিম জ্ঞান- বিজ্ঞান চর্চাকারীরা বারবারই হামলার শিকার হয়েছেন৷ হুমায়ুন আজাদের মতো অনেকেই মারা পড়েছেন জঙ্গিদের ঘৃণা, হিংষা ও বিদ্বেষের আগুনে৷ এসব বিষয়ে বিশ্বের জ্ঞানী মানুষের বক্তব্য রয়েছে৷ আমরা কি তাদের চোখ দিয়ে দেখতে পারছি?
মরিস বুকাইলি নিজে মুসলিম হলেন না৷ ইউরোপ থেকে আরবে এসেছিলেন টাকা কামাতে৷ অথচ আমাদের জন্য এমন একটি বই রেখে গেলেন যা আমাদের অন্ধ করে দেয়৷ আমাদের জ্ঞান চর্চা করতে নিরুৎসাহিত করে৷ বিভ্রান্তকর ও অযুক্তিতে পূর্ণ বইটি আমাদের ক্ষতিই করেছে৷ এমন আরো কয়েকটি লেখা রয়েছে৷ এগুলো তাদের লেখার কথা নয়৷ সৌদি রাজপুত্রকে খুশি করে টাকা কামাতেই তারা এমনটি লিখেন৷ ওহাবী কট্টর মতবাদ সাধারণ মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিতে মরিসদের ব্যবহার করা হয়েছে৷ কেন আমরা সত্য অনুসন্ধান না করেই মরিসদের নিয়ে গদগদ করবো? মুসলিমদের ভাল করতে হলে, অমুসলিমদের চোখ দিয়ে মুসলিমদের দেখা শিখতে হবে৷ তাহলেই ভুলত্রুটিগুলো চোখে পড়বে, রোগ সারানোর দাওয়াইটা বের করা সম্ভব হবে৷ মুসলিমরা পিছনে যেতে যেতে ধ্বংস হয়ে যাবে৷
বিশ্ব আমাদের কি চোখে দেখে সেটা আমলে নিতে হবে৷ ইংরেজ আমলে মুসলিমরা রাগ করে কিভাবে পিছিয়ে গেছে সেই ইতিহাস জানতে হবে৷ ধরি বিশ্ব আমাদের ধরে নিচ্ছে বন্য জন্তু হিসেবে৷ আমরা গালি দিলাম, দু চারটা বোমা ফাটালাম৷ কিন্তু ওরা আমাদের জন্য জঙ্গলই তৈরি করে রাখবে এবং সেদিকেই তাড়িয়ে নিয়ে যাবে৷ আমরা যদি সভ্য হওয়ার চেষ্টা করি সেটাই আমাদের জন্য লাভজনক৷ হুমায়ুন আজাদ ও শাহজাহান বাচ্চুর পাঁচ দুগুণে দশ খুনির সবাই হয় ক্রসফায়ারে মরেছে নয়তো ফাঁসির অপেক্ষায় আছে৷ কিন্তু এই দশ জনওতো মুসলিমই ছিল! আজ একজন ভট্টাচার্য ওহাবী মতবাদ বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছে৷ কেন? ওতো টাকার শক্তিতো আছে৷
আজ সন্ত্রাসবাদ বলতেই বুঝানো হয়, ইসলামিক সন্ত্রাসবাদকে৷ উগ্র মৌলবাদ শব্দের সাথে জড়িয়ে দিয়েছে মুসলিমদের৷ পশ্চিমাদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনে তা দিয়ে পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়তে যাওয়া ছেলেমানুষী৷ ওরা ক্রেতা বানিয়েই রাখবে৷ তেলতো মধ্যপ্রাচ্যে আজীবন থাকবে না৷ নাউরু দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ শেষ হওয়ায় শীর্ষ ধনী দেশ থেকে আবারো ভিক্ষুকের দেশে পরিণত হয়েছে৷ আফগানিস্তানের মতো হয়ে আমাদের লাভ কি হবে? ওরা এখন আন্তর্জাতিক ভিক্ষুকেই পরিণত হয়েছে৷
কেউ বলে সৃষ্টিকর্তা আছে , কেউ বলে সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু নেই।কেউ ধর্ম মানেন আর কেউ মানেন না।ধর্ম ও সৃষ্টিকর্তা নিয়ে এই যুদ্ধ ইহুদীদের মত খ্রিষ্টানরাও করেছে।খ্রিষ্টান বিজ্ঞানের ধারণা, পৃথিবীর বয়স দশ হাজার বছর আর বিশ্ব ব্রক্ষান্ডের বয়সও তাই। কিন্তু এর স্বপক্ষে খ্রিষ্টানদের কাছে কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। অপরদিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন , পৃথিবীর বয়স হচ্ছে প্রায় পাঁচশো কোটি বছর।বিজ্ঞানীদের কাছে খ্রিষ্টানদের এই যুক্তি ভীষণ হাস্যকর মনে হয়েছে।বিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে নৃ- বিজ্ঞান, প্রাইমেট বিজ্ঞান, জীবাশ্মবিজ্ঞান , প্রত্নতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, ও জিনতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করলেও প্রচলিত অন্য ধর্মের কোন ধর্মেরই এই বিষয়ে কোন গবেষণা ও সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ নেই।বিজ্ঞানীরা নিউজল্যান্ডের মুরশিসন শহরের ভূগর্ভস্থ শিলার ধূলিকণার মধ্যে ৪০ টি কণার বিশ্লেষণ করেন এবং আইসোটোপ ব্যাবহার করেন ।এর বেশিরভাগই ৪.৯ বিলিয়ন বছর আগের। পৃথিবী সৃষ্টিতত্ত্বে খ্রিষ্টান ও ইহুদীরা বলেন, পৃথিবী ছয় দিনে আর কেউ বলেন ২৪ ঘন্টা তথা একদিনে সৃষ্টি করা হয়েছে। এক পর্যায়ে পৃথিবীর মানুষ যখন বিজ্ঞানকে জানতে শুরু করেছে তখন তারাও খ্রিষ্টানদের এই যুক্তিও এখন আর মানেনা । তবুও পৃথিবীর প্রায় ২৪০ কোটি মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাস করে এটাই সত্য।তবে বর্তমান খ্রিষ্টান ও ইহুদীরা এখন আর পূর্বের মত মৌলবাদী ও ধর্মান্ধ নয়।ওরা এখন নিজেদের ধর্ম নিজেরা পালন করে আর বিজ্ঞানীদের কাজ বিজ্ঞানীদের করার সুযোগ দিচ্ছে।
খ্রিষ্টানরা একটা সময় আমাদের মতো প্রচন্ড মৌলবাদী ও ধর্মান্ধ ছিলো।ধর্মের বিপক্ষে কোন যুক্তিকেই ওরা স্বীকার করতোনা।ওরা গ্যালিলিও কে হত্যা করেছে, হাইপেশিয়াকে হত্যা করেছে, বিষ খাইয়ে সক্রেটিসকে মেরে ফেলেছে, ওরা মিকেলাঞ্জেলোর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলেছে , জ্ঞান ও বিজ্ঞানের সকল দরজা খ্রিষ্টানদের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। সৃষ্টিতত্ত্বের বিরুদ্ধে খ্রিষ্টানরা তাদের নিজস্ব বিজ্ঞান দাঁড় করিয়েছিলো কিন্তু বিজ্ঞানের জয়যাত্রার সাথে সাথে এসব আজ বিলীনের পথে।
ঈশ্বর আছে এই সম্পর্কে অন্যতম শক্তিশালী যুক্তিটি হচ্ছে মাইমোনাডাইস যিনি মুসা বিন মাহমুন নামেও পরিচিত এক ইহুদী পন্ডিত। তিনি বলেন , " পৃথিবীর প্রতিটি ভৌত বস্তু সসীম , এটি শুধুমাত্র একটি সীমিত পরিমাণ শক্তি ধারণ করতে পারে। যদি এই মহাবিশ্বের সমস্ত কিছু গ্রহ এবং নক্ষত্র রয়েছে, সসীম হয় তাহলে মহাবিশ্বের সকল গতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি অসীম শক্তি থাকা বাধ্যতামূলক।" মাইমোনাডাইসের এই যুক্তিটির মত পৃথিবীর অনেক জ্ঞানী মানুষ কে দেখবেন তারা পৃথিবীর কুসংস্কারেভরা প্রচলিত ধর্মগুলোর উপর বিশ্বাস না করলেও তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন।এদের মধ্যে বিজ্ঞানী আইনস্টাইন ও নিউটনও আছেনযারা পৃথিবীর প্রচলিত কোন ধর্মই পালন করেন না অথচ ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন। ঈশ্বর হচ্ছে তাদের কাছে একটা অসীম গতি যা মানুষের মত দেখতে নয় এবং যার কোন অস্তিত্ব দেখা যায়না কিন্তু অনুভব করা যায়।
কিন্তু ইশ্বর নেই এই যুক্তিটি প্রমাণের জন্য প্রয়োজন হয় আরো অধিক প্রমাণের। পৃথিবীর মানুষের কাছে এই যুক্তি ও প্রমাণ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং।তিনি সৃষ্টিকর্তা বলে কোনকিছুর অস্তিত্বেই বিশ্বাস করতেন না।তিনি এ ও প্রমাণ করে দেখিয়েছেন বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে এই পৃথিবী ও এই মহাকাশ কিভাবে তৈরি হয়েছিল।দশ বিলিয়ন ডলারের নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ১৩৫০ কোটি বছর আগের ছবি তুলে হকিংয়ের কথার সত্যতা প্রমাণ দিলো। অর্থাৎ মহাকাশের কোথাও এখন পর্যন্ত তারা ঈশ্বরকে খুঁজে পায়নি।মহাকাশে জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ, হাবল টেলিস্কোপ ও হাজার হাজার স্যাটেলাইটের কেউ গত শত শত বছরেও ঈশ্বরের অস্তিত্বের কোন প্রমাণ পায়নি। এজন্য পৃথিবীর অধিকাংশ পদার্থ বিজ্ঞানী তারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন না। চার্লস ডারউইনের ' দ্য অরিজিন অব স্পেসিস প্রকাশিত হওয়ার পর তা পড়ে জীব বিজ্ঞানীরাও সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করা ছেড়ে দিয়েছেন।আদতে বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ বিভিন্ন ধর্মের অনুসারী হলেও সব বিজ্ঞানীই তার কাজ করার সময় সৃষ্টিকর্তা আছে কি নেই এটা বাদ দিয়ে তার কাজ করেন। বিজ্ঞানীদের কাজ সৃষ্টিকর্তাকে অনুসন্ধান নয় , বিজ্ঞানীরদের কাজ হচ্ছে রহস্য ও তার সমাধান এবং তার থেকে নতুন সৃষ্টির সুত্র ধরে এগিয়ে যাওয়া। বর্তমান পৃথিবীর মাত্র বিশ কোটি মানুষ এবং তাদের অধিকাংশই স্রষ্টা নেই, এটা যুক্তি ও তর্কসহ প্রমাণ করে দেখাতে পারেন এবং নিজ কর্মে অবিচল থেকে মৃত্যবরণ করেন। এছাড়াও পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ আছেন যাদের সাথে মানব সভ্যতা ও বই পুস্তকের কোন সম্পর্কই নেই তাদের অধিকাংশই সৃষ্টিকর্তা আছে কি নেই এই বোধটুকুর সাথেও পরিচিত নন তারাও কোন ধর্ম সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন না।ধর্মে বিশ্বাসীর সাথে ধর্মে অবিশ্বাসীদের সংখ্যা পৃথিবীতে এখন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। বিজ্ঞান যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে এই পৃথিবী ও মহাবিশ্ব সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে তথা তাদের শক্তির ক্ষয় হচ্ছে। বিজ্ঞান আবার এটাও বলে ক্ষয় থেকেই আবার নতুন সৃষ্ট হয়।
একটা প্রাণী মরে গেলে তার শরীর পচে জৈব সার সৃষ্টি হয় এবং যা খেয়ে উদ্ভিদ ও পোকামাকড় বেঁচে থাকে। তাদের খেয়ে আবার মানুষ বেঁচে থাকে।উদ্ভিদ মরে গেলেও তা মাটির সাথে মিশতে মিশতে নতুন আরেক জ্বালানীতে রূপান্তরিত হয়।মৃত মানুষ পুড়িয়ে ফেললে তার আর কোন চিহ্ন নেই এটাই সত্য। কিন্তু তাকে পোড়ানোর ফলে বিভিন্ন গ্যাসের সৃষ্টি হয় এবং মৃতদেহ পচেও বিভিন্ন ধরণের গ্যাস হয়।তাছাড়া মানব শরীরেও বিভিন্ন গ্যাস যেমন অক্সিজেন , হাইড্রোজেন এসবের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।আবার সূর্যের মধ্যে সেই হাইড্রোজেন গ্যাসের অস্তিত্ব খুঁজে পায় যা পুড়ে পুড়ে হিলিয়ামে পরিণত হয়। অর্থাৎ মহাবিশ্বে যত ভৌত বস্তু আছে সবকিছুই রূপান্তরিত হয়।মানুষ যেমন মৃত্যুর পর আর মানুষ থাকেনা তথা বিভিন্ন গ্যাসে পরিণত হয় সেই গ্যাস যেটা আমরা খালি চোখে দেখতে পাইনা তা আবার অন্য গ্যাসের অনুর সাথে বিক্রিয়া করে আরেক তরলে পরিণত হয়।পৃথিবী , চাঁদ ও সূর্য সবকিছুই এইভাবেই তৈরি হয়েছে।
নক্ষত্রের মৃত্যু হচ্ছে আবার প্রচন্ড আর্তনাদে নতুন নক্ষত্রেরও জন্ম হচ্ছে।এই মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে এটাই ধ্রুব সত্য।এভাবে চলতে থাকলে এই মহাবিশ্বে শুধুই দুটো জিনিসের অস্তিত্ব থাকবে এক হচ্ছে আলো আর দুই হচ্ছে অন্ধকার। আমাদের এই মহাবিশ্বে দুই থেকে পাঁচ শতাংশ আলো ছাড়া আর বাকি সব অন্ধকার।তার মানে এভাবে চলতে চলতে একটা সময় অন্ধকার আর বল ছাড়া মহাবিশ্বের আর কোনকিছুরই অস্তিত্ব থাকবেনা।খুব গাঢ় অন্ধকার পথে একটা ম্যাচের কাঠি জ্বালিয়ে দেখুন । যতক্ষণ আলো জ্বলবে ততক্ষণ আপনি দেখবেন তথা আলো ক্ষণস্থায়ী আর অন্ধকার হচ্ছে চিরস্থায়ী।সেই অন্ধকারও একসময় নিজের শক্তির ভারসাম্য রাখতে হয়তো আবার আলোর সৃষ্টি করবে ।এই আলোর সাথে সম্পর্ক হচ্ছে গতির আর অন্ধকারের সাথে সম্পর্ক হচ্ছে বলের।বল হচ্ছে একটি শক্তি যা অসীম।এই বল সৃষ্টি হয়েছে একটি ক্ষুদ্র বিন্দু থেকে।এই বিষয়গুলো বুঝতে হলে আমাদের আরো প্রচুর পড়াশোনা ও গবেষণা করতে হবে এবং এটাই হচ্ছে বিজ্ঞান।৯৫ শতাংশ অন্ধকারের বিপরীতে যা পাঁচ শতাংশ আলো হয়ে পুরো পৃথিবীর ৮০০ কোটি মানুষকে পথ দেখাচ্ছে।।আলো যখন তার অস্তিত্বের জানান দেয় তখন অন্ধকার সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যায়। সৃষ্টির এই খেলা চলতেই থাকবে।
সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে জানতে হলে আদি মতবাদ, দার্শনিক মতবাদ, ধর্মীয় মতবাদ ও বৈজ্ঞানিক মতবাদ সব বিষয়ে আপনার জানতে হবে।ধর্ম হচ্ছে মানুষের জন্য তৈরি
একটা আইন যা মানব জাতির মঙ্গলের জন্য রচিত হয়েছিলো। পৃথিবীর কোন ধর্মই মানুষকে অন্যায় করতে শিক্ষা দেয়না। কিন্তু ধর্ম নিয়ে পৃথিবীতে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণে মানুষ ধর্মের ভালো ও খারাপ দিক এবং এর কুসংস্কারগুলো চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়েছে।
পৃথিবী ও মানুষ সৃষ্টি সম্পর্কে এখন কোন মতবাদই উন্নত দেশের বিদ্যালয়ে পড়ানো হয়না। মূলত ধর্মের সৃষ্টি হয়েছে দর্শন থেকে আবার ধর্মের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ির কারণে সৃষ্ট হয়েছে রেনেসা বিপ্লব। ধর্ম মানুষকে শৃঙ্খলা শিখিয়েছে কিন্তু ধর্মীয় মৌলবাদ মানুষ কে অন্ধকারে ঢেকে দিয়েছে। বর্তমান পৃথিবীর অনেক দেশেই ধর্ম পালন করার পাশাপাশি ধর্ম পালন না করার অধিকারও মানুষের রয়েছে। মানুষকে ধর্ম দিয়ে নয় বরং বিবেচনা করতে হবে তার কর্ম দিয়ে।কেউ যদি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে তার পক্ষে যেমন সৃষ্টিকর্তাকে প্রমাণ সম্ভব নয় ঠিক তেমনি কেউ যদি অবিশ্বাস করে এতেও কারো কিছু করার নেই।এর জন্য মানুষের উপর জোর জবরদস্তি করে ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েই পৃথিবীতে ৩.৫ বিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
খ্রিষ্টানরা একটা সময় আমাদের মতো প্রচন্ড মৌলবাদী ও ধর্মান্ধ ছিলো।ধর্মের বিপক্ষে কোন যুক্তিকেই ওরা স্বীকার করতোনা।ওরা গ্যালিলিও কে হত্যা করেছে, হাইপেশিয়াকে হত্যা করেছে, বিষ খাইয়ে সক্রেটিসকে মেরে ফেলেছে।হিরোডোটাস ও জোসিফারের মত বিখ্যাত গ্রিক দার্শনি করা যা উপাসনা অর্থে ব্যাবহার করতেন পরবর্তীতে ধর্ম বানিয়ে ফেলেছে একদল লোক। জাপানের ইতিহাসে কখনোই কোনকালে ধর্ম শব্দটি ছিলোনা। জাপানি ভাষায় ধর্ম বুঝাতে এমন কোন শব্দ নেই।
১৮৫৩ সালে জাপানে কোন ধর্ম দেখতে না পেয়ে মার্কিন রণতরী জাপানি উপকূলে ভীড়ে জাপানের জলসীমায় অবস্থান নেয় এবং জাপানকে জোর করে ধর্মের স্বাধীনতাকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে স্বীকার করে নিতে বাধ্য করে। জাপানীরা পৃথিবীর কোন ধর্মই পালন করেনা অথচ তারা পৃথিবীর অন্যতম ভদ্র ও সভ্য জাতি।
ভিকুনার পশম
পৃথিবীর সবচেয়ে দামী কাপড় তৈরি হয় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দশ থেকে পনের হাজার ফুট উঁচুতে থাকা ভিকুনা নামক দূর্লভ ছোট ও মায়াবী গঠনের প্রাণী থেকে।এর একটি কোটের মূল্য ২১ হাজার ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ২৩ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা।ভিকুনার পশম দিয়ে তৈরি একটি মাফলারের দাম বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৪ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা।আমরা যে কাশ্মিরী শাল নিয়ে গর্ব করি তা কাশ্মীরি ছাগল থেকে তৈরি হয়। পৃথিবীর কোন ধর্মগ্রন্থেই এই কাপড় তৈরির ফর্মূলা ছিলনা।সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে আমরা বিভিন্ন ধর্মের জন্য আলাদা আলাদা পোশাকের ব্যাবস্থা করেছি।পৃথিবীতে প্রাণের উপযোগী পরিবেশ তৈরি হয়েছে উদ্ভিদ থেকে।সেই উদ্ভিদকেও আমাদের দৈনন্দিন কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেছে মানুষ।
পৃথিবীর কোন ধর্মগ্রন্থ-ই মানুষকে এই আবিস্কারের পদ্ধতি শিখায়নি। মানুষ তার প্রয়োজনে পৃথিবীকে চাষাবাদের বিচরণভূমিতে পরিণত করেছে, মানুষ নগর সভ্যতা গড়ার পাশাপাশি নিজেদের জন্য সামাজিক নিয়ম কানুন তৈরি করেছে।সেই সামাজিক নিয়মকানুন আবার মানুষের গলায় ফাঁস পরিয়েছে।
স্প্যানিশরা ইনকা সম্প্রদায় হামলা করে ভিকুনাদের প্রায় বিলুপ্ত প্রাণীতে পরিণত করেছিল।এর পেছনে কাজ করেছিলো লোভ ও ক্ষমতার আধিপত্য।এই আধিপত্যবাদের যুদ্ধে জড়িয়ে পৃথিবীর ১৪,৫০০ যুদ্ধে ৩.৫ বিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের লোভের কাছে প্রাণীদের মত মানুষরাও ভীষণ অসহায়।আমরা মানব সম্প্রদায় ধর্ম নিয়ে মারামারি করে একদিন হয়তো আমাদেরও বিলুপ্ত প্রাণীতে পরিণত করবে।
আমাদের দেশের মানুষ যেখানে কুকুরকে চরম ঘৃণা করে সেখানে চীন, জাপান ও কোরিয়ানদের অন্যতম প্রধান খাদ্য হচ্ছে কুকুর।এমনকি চীনে কুকুর খাওয়ার বার্ষিক উৎসবও পালিত হয়।
ভারত ও বাংলাদেশের মত পৃথিবীর সব দেশ যেমন মাছে ভাতে বাঙালি নয় ঠিক তেমনি একেক দেশের ধর্ম পালন ও খাদ্যর রীতিও এক নয়।মানুষ যে যেখানে জন্মেছে সে সেই পরিবেশ , ধর্ম ও খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বড় হয়েছে। ইচ্ছে করলেও আমরা যাদু দিয়ে চীনে বাচ্চা উৎপাদন যেমন বন্ধ করতে পারবোনা ঠিক তেমনি তাদেরও আমাদের ধর্ম ও খাদ্যাভ্যাস শিখাতে পারবোনা।পৃথিবীর সব দেশের উদ্ভিদ , প্রাণী ও মানুষের আকার ও রংয়ের ভিন্নতা মানুষ কে সুন্দর - অসুন্দর, ধনী- গরীব, ধর্ম- অধর্ম নানাভাগে বিভক্ত করেছে।বর্তমানে গ্লোবালাইজেশনের কারণে ও আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা পৃথিবীর অনেক তথ্য জানতে পারি।অথচ আমাদের মধ্যে নিজেদের পরিবর্তনের চিন্তা কাজ করেনা।বাঘের চামড়া গায়ে দিলে কেউ যেমন বাঘ হয়না ঠিক তেমনি পেছনে লেজ লাগালেও কেউ বানর হয়ে যাবেনা।মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতাই মানুষকে ১৫ হাজার মিটার উঁচুতে উঠে ভিকুনাদের খুঁজে বের করতে সাহায্য করেছে। মানুষের কিছু করতে চাওয়ার চেষ্টা তাকে ভিকুনার পশম দিয়ে পোশাক বানাতে শিখিয়েছে।
লক্ষ লক্ষ টাকা দামের পোশাক পরে একশ্রেণীর লোক সমাজে আভিজাত্যবাদ প্রতিষ্ঠিত করেছে আরেক শ্রেণীর মানুষ খাবারের জন্য হাহাকার করছে।এর পেছনে কোন অদৃশ্য সৃষ্টিকর্তকাকে খুঁজবেন না।এভাবেই লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানুষ খেতে না পেয়ে আত্মহত্যা করছে।ইশ্বর , ভগবান ও যিশু কেউই ওদের বাঁচাতে কখনোই এগিয়ে আসেননি , ভবিষ্যতেও আসবেন না।
পৃথিবীর সবচেয়ে দামী কফি তৈরি হচ্ছে হাতি ও বিড়ালের মল থেকে একথা শোনার পর আপনি নিশ্চয়ই আর কফি খেতে চাইবেন না।হাতি ও বিড়ালের মলের পাশাপাশি এখানে দুধ ও ক্যালোরি মেশানো হয় যা অতিরিক্ত সাস্থ্যসম্মত এবং তাই এর দামও বেশি।
অথচ গরুর গোবর থেকে তৈরিকৃত জ্বালানি আপনি ঠিক ব্যাবহার করবেন।জল আমাদের বেঁচে থাকার নিঃশ্বাস দিচ্ছে আর আমরা বিনিময়ে জলকে দিচ্ছি বিষ।প্লাস্টিক ফেলে নদী ও সাগর সব ভরাট করে ফেলছি। জলবায়ু আমাদের শীতল বাতাস দিতো , গাছ কেটে আমরাই গরম আমদানি করছি।পপি ফুল থেকে আমরাইতো আফিম ও হিরোইন তৈরি করছি।আমরাই আমাদের পৃথিবীকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি। সৃষ্টি ও ধ্বংস এসবকিছুই মানুষ করছে। পৃথিবীর নামিদামি কোম্পানিগুলো মানুষের মাথা দিয়েই দামী দামী ব্রান্ডের পণ্য তৈরি করছে।এর জন্য ধর্মগ্রন্থ রিসার্চ করছে একথা পাগলেও বিশ্বাস করবেনা। মানুষ তার বুদ্ধিভিত্তিক চিন্তাকে কাজে লাগিয়ে আজকের এই অবস্থানে এসেছে।পৃথিবীর ধর্মগ্রন্থ পড়েই যদি সবাই বিজ্ঞানী হতো তবে পৃথিবীর এক দেশে শুক্র হালাল আর অন্যদেশে হারাম হতোনা। বিজ্ঞানীদের সব অবিস্কার পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য , এটা কোন একক ধর্মের মানুষের জন্য নয়।তবুও বোকা মানুষরা এখনো ধর্ম নিয়ে নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে ।যে সাপকে বিষাক্ত জেনে আমরা লাঠি দিয়ে হত্যা করে ফেলতাম সেই সাপের বিষ থেকেই বিজ্ঞানীরা ওষুধ তৈরি করছেন এবং সে ওষুধও মানুষ খাচ্ছে।পৃথিবীকে বেঁচে থাকতে হলে মানুষকে এই পৃথিবী সম্পর্কে জানতে হবে , মানব সৃষ্টির রহস্য উন্মোচন করতে হবে।এই পৃথিবীতে উন্নত হলে আমাদের দেশের সকল ধর্মের মানুষকে এক হয়ে নিজের দেশের ব্রান্ড বানাতে হবে।ধর্ম নিয়ে গবেষণা বাদ দিয়ে আমাদের দেশের প্রাণী , উদ্ভিদ , জল , পাহাড় ও আবহাওয়া এসব নিয়ে আমাদের আরো বেশি গবেষণা করতে হবে।ধর্মকে পালন করুন আর বিজ্ঞানকে গবেষণা করুন তবেই একদিন উন্নত জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। এসব বাদ দিয়ে খাদ্য , ধর্ম , পোশাক ও লিঙ্গ এসব নিয়ে গবেষণা করতে করতে আপনারাই একদিন পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবেন। খাদ্য কে খাদ্য , পোশাক কে পোশাক আর নারী ও পুরুষ উভয়কেই মানুষ ভাবতে শিখুন।এসব নিয়ে নিজেদের মধ্যে অহেতুক বিভেদ না করে নিজ দেশের উন্নতির কথা ভাবুন। আমি হলফ করে বলতে পারি , আমাদের দেশের এন্টারকটিক বিজ্ঞানীদের ৯৯.৯৯ শতাংশ মানুষও ভিকুনা এবং লুওয়াক জাতীয় প্রাণীর নামই শুনেনি।
এরাতোসথেনেস
আজ থেকে ২৩ শত বছর আগে সাইরিন নামে এক প্রাচীন গ্রীক নগরে জন্ম নেন এরাতোসথেনেস নামে এক জ্ঞান পাগল মানুষ। প্রাচীন সাইরিন নগরী অবস্থিত বর্তমান লিবিয়াতে। সাইরিনে জন্মগ্রহণ করলেও জ্ঞান অর্জনের প্রতি মারাত্মক আকর্ষণ তাকে নিয়ে যায় গ্রিক নগরী এথেন্সে। এথেন্সে বিচিত্র সব বিষয়ে জ্ঞান অর্জন শেষে তিনি চলে আসেন আলেকজান্দ্রিয়াতে। এই আলেকজান্দ্রিয়া অবস্থিত বর্তমান মিশরে। ঐ আমলে আলেকজান্দ্রিয়া নগরটা ছিল জ্ঞান অর্জনের কেন্দ্র। গ্রীকরাই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই নগরী। মেসেডোনিয়ার রাজা আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট নিজে গোড়া পত্তন করেন এই নগরীর। আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরী ছিল প্রাচীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লাইব্রেরী। সমস্ত পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ সব পুঁথি-পুস্তক সমাহার ছিল এই লাইব্রেরী। এরাতোসথেনেস ছিলেন এই বিখ্যাত লাইব্রেরীর পরিচালক।
বলা হয় যে, ঐ আমলের এমন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে এরাতোসথেনেসের জ্ঞান ছিলনা। যারা তার জ্ঞানের জন্য তাকে হিংসা করত, তারা অনেকেই টিপ্পনি কেটে বলত- “এরাতোসথেনেস হলো পৃথিবীর সব বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী”। কিন্তু তারা নিজেরাও এটা জানত যে, এরাতোসথেনেস ছিলেন শ্রেষ্ঠ।
এরাতোসথেনেস একদিন আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরীতে কিছু প্রাচীন পুঁথি নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলেন। ঐ আমলের বেশিরভাগ পুঁথিই ছিল প্যাপিরাসের। সেই প্যাপিরাসের পুঁথিতে এমন অদ্ভুত একটা কথা লেখা ছিল- যেখানে তার চোখ আটকে যায়। সেখানে লেখা আছে, “সায়ানের দক্ষিণ সিমান্তের কাছে একটি এলাকায়, অর্থাৎ নীলনদের প্রথম খাড়া জলপ্রপাতের কাছে একটি এলাকাতে- ২১ শে জুন দুপুর বেলা খাড়া করা লাঠির কোন ছায়া পরে না”। এই ঘটনা একটা সাধারণ লোক পড়লে হয়ত আবাক হতেন না। দুপুর বেলা লাঠির ছায়া পড়ে না, না পড়ল! তাতে অবাক হওয়ার কি আছে! কিন্তু এরাতোসথেনিস ছিলেন বিজ্ঞানী মানুষ, তিনি খুবই আবাক হলেন। তার যতদুর মনে পরে আলেকজান্দ্রিয়া বা এথেন্সে তিনি এমন কোন ঘটনা দেখেন নি। এই সময়টাতে সূর্য একদম মাথার উপরেই থাকার কথা, কিন্তু তারপরও ছায়া একদম মিলিয়ে যেতে তিনি দেখেননি। ফলে তিনি অপেক্ষা শুরু করলেন। সত্যি সত্যি দেখা গেল ২১ জুন তিনি খাড়া লাঠিরও ছোট একটা ছায়া পাচ্ছেন।
কিন্তু এটি কিভাবে সম্ভব? এরাতোসথেনেসের বৈজ্ঞানিক মন চিন্তা করতে থাকল। তিনি ভেবে দেখলেন পৃথিবীর পৃষ্ঠটা যদি সমতল হয় তবে এটি কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাহলে পৃথিবী নিশ্চই কোন গোলোক, আর এর পৃষ্ঠটা নিশ্চয় বাকা। তিনি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হলেন যে আসলেই ২১ জুন দুপুরবেলা সায়েনে থাকা কোন লম্বা লাঠিতে ছায়া পরে না। এরপর তিনি একজন লোক নিয়োগ করে সায়েন থেকে আলেকজান্দ্রিয়ার দূরত্ব মেপে বের করলেন। এরপর তিনি মেপে দেখলেন আলেকজান্দ্রিয়ার ছায়ার সাথে লাঠিটি ৭ ডিগ্রি কোন তৈরি করে। পৃথিবী যদি একটি গোলোক হয়, তাহলে তার পরিধিও এবার বের করা সম্ভব। কারন বৃত্তের ৩৬০ ডিগ্রিকে সাত দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় ৫০। তাহলে পৃথিবীর পরিধি হবে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সায়েনের দূরত্বের ৫০ গুণের মত। তার নিয়োগ করা লোক মেপে দেখেছিলেন যে দুই জায়গার দূরত্ব ৮০০ কিলোমিটারের মত। ফলে তিনি ঘোষণা করলেন যে- পৃথিবীর পরিধি হলো ৮০০ গুণ ৫০ = ৪০০০০ কিলোমিটার। ভাবলে অবাক হতে হয় আজ থেকে প্রায় ২৩০০ বছর আগে একটা লাঠির সাহায্যে তিনি হিসেব করে পৃথিবীর পরিধি বের করে ফেলেছিলেন।
তবে ২৩০০ বছর আগে আধুনিক কোন যন্ত্র ছাড়াই পৃথিবীর পরিধি মেপে বের করাটা কিন্তু তার মূল কৃতিত্ব নয়। ঐ আমলে কেউ চিন্তাই করত না যে, পৃথিবীটাকে আমরা মেপে ফেলতে পারি। আমাদের এই পৃথিবীটা যে একটা ছোট গোলাকার গ্রহ, এটাকে যে মেপে দেখা সম্ভব, এই ধারণাটাই আমরা প্রথম পেলাম এরাতোসথেনেসের কাছ থেকে। ঐ সময়টাতে এই চিন্তাটাই ছিল সবচেয়ে বৈপ্লবিক।
আজকের দিনে আমরা মহাবিশ্বের বিলিয়ন বিলিয়ন কিলোমিটার দুরের নক্ষত্রদের হাই ডেফিনেশন ছবি তুলতে পারি। মহাবিশ্বের কোথায় কোথায় ডার্ক ম্যাটার আছে তার ত্রিমাত্রিক নকশা করে ফেলতে পারি। কিন্তু এই যে এত বিশাল মহাবিশ্বে আমাদের ক্ষুদ্র পৃথিবীর অবস্থান, এইসব সম্পর্কে চিন্তার শুরুটাই হয়েছিল এরাতোসথেনেসের ঐ পরিমাপের ফলে।
এরাতোসথেনেসের এই কাহিনীটা নেওয়া হয়েছে কার্ল সাগানের লেখা কসমস বইটি থেকে। এরাতোসথেনেসের আমাদের পৃথিবীটাকে পরিমাপ করে এই পৃথিবীতে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে চিন্তা করার শুরুটা করে দিয়েছিলেন, অন্যদিকে কার্ল সাগান আমাদের শিখিয়েছেন এই বিশাল মহাবিশ্বে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে চিন্তা করতে।
কোটি কিলোমিটার দুরের মহাকাশযান থেকে যখন প্রথম বারের মত পৃথিবীর ছবিটি তোলা হয়েছিল, তখন পৃথিবীকে মনে হচ্ছিল একটি ধুসর বিবর্ণ নীল বিন্দু। কার্ল সাগানই এর নাম দিয়েছিলেন পেল ব্লু ডট। আজকের দিনে আমরা হরহামেশাই বলি, “আমরা হলাম নক্ষত্রের সন্তান”, কিন্তু এভাবে মহাজাগতিক প্রেক্ষাপটে চিন্তা করতে আমাদের শিখিয়েছিলেন এই কার্ল সাগান।
কার্ল সাগান তার কসমস বইতে- সেই প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি আমরা এই মহাবিশ্ব, পৃথিবী এবং মানবজাতি সম্পর্কে যা কিছু জেনেছি, আমাদের যে মহাজাগতিক বোধ তৈরি হয়েছে- তার এক নতুন মহাকাব্য তৈরি করেছেন। এই কসমস বইটিকে সাধারণ এক বিজ্ঞান বা ইতিহাসের বই বললে আসলে এর গভীরতা বোঝানো যাবে না। এটা হলো আমাদের এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানবজাতির বোধের এক পরিপূর্ণ উপাখ্যান। আমরা যদি মহাজাগতিক পরিসরে চিন্তা করি, তাহলেই বোঝা যাবে এই মহাবিশ্বের তুলনায় আমরা এবং আমাদের পৃথিবী কত ক্ষুদ্র। আর তখন আমাদের মধ্যে জেগে ওঠে সম্পূর্ণ আলাদা এক ভ্রাতৃত্ববোধ।
আমরা যদি মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত পুরো সময়টাকে নিয়ে চিন্তা করি, তাহলেই বুঝতে পারব মহাকালের কত ক্ষুদ্র সময়জুড়ে আমাদের অস্তিত্ব। আমরা যদি এই পুরো সময়টাকে এক বছর হিসাবে ধরে নেই তাহলে বিষয়টা বুঝতে আমাদের সুবিধা হবে। এই এক বছরের ক্যালেন্ডারের আমাদের মহাবিশ্ব সৃষ্টি যদি হয় ১ লা জানুয়ারী, তাহলে এই পৃথিবীতে আমাদের মানব প্রজাতির আগমন হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১ টা ৫২ মিনিটে! আর আমরা কৃষিকাজ শুরু করেছিলাম ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট ৩২ সেকেন্ডে। অর্থাৎ পুরো বছর জুড়ে আমাদের মানব প্রজাতির কোন অস্তিত্বই ছিল না। আমরা সিনে এসেছি বছরের শেষ দিন, তাও আবার রাত বারোটা বাজার মাত্র ৮ মিনিট আগে। মহাকালের কাছে আমরা যেমন অর্বাচীন, মহাবিশ্বের কাছে আমরা তেমনি ক্ষুদ্র। আজকাল অনেক লেখকই মহাজাগতিক বর্ষপঞ্জির মত করে একটা কিছু তাদের বইতে রাখেন, এই আইডিয়াটাও তৈরি করেছেন কার্ল সাগান তার এই কসমস বইতে। কার্ল সাগান এবং তার কসমস প্রতিটি গভীর বোধসম্পন্ন মানুষের এক অবশ্যপাঠ্য। আপনি যদি কসমস না পড়ে থাকেন, তাহলে আমি বলব আজই শুরু করুন মানবজাতির সাথে এই মহাবিশ্বের সম্পর্কের এই মহা-উপাখ্যান।
ভাইকিংরা মাছ খাওয়ার অনিহার কারনে ওরা টিকে থাকতে পারেনি
ভাইকিংরা আজ থেকে প্রায় ১০০০ বছর আগে গ্রিনল্যান্ডে গিয়ে বসবাস শুরু করে। গ্রিনল্যান্ডে এই নর্স সমাজ প্রায় ৫০০ বছর টিকে ছিল। ৫০০ বছর পর ওদের সমাজ কলাপ্স করে। একটি সমাজ কলাপ্স করার পেছনে বেশ কিছু কারন থাকে। গ্রিনল্যান্ডের এই ভাইকিংদের পতনের প্রধান কারনটা ছিল একটু ব্যতিক্রমী। সোজা কথায় বলতে গেলে- মাছ খাওয়ার অনিহার কারনে ওরা টিকে থাকতে পারেনি।
মেরু অঞ্চলে বছরের একটা বিশাল সময় জুড়ে সূর্যের তাপ থাকে না। ফলে ভিটামিট ডি পাওয়ার জন্য এইসব অঞ্চলের মানুষদের সামুদ্রিক মাছের উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু প্রাচীনকালের মানুষ তো আর আজকের দিনের মত ভিটামিট ডি টেস্ট করতে পারত না। মূলত স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ সামুদ্রিক মাছ ধরা পরে, বিশেষ করে এই অঞ্চলটাতে স্যামন মাছের ছড়াছড়ি। ফলে এই অঞ্চলের মানুষের একটা সহজ খাদ্য হলো সামুদ্রিক মাছ। অন্যদিকে এই সহজ খাদ্যটাতেই ওমেগা ৩ এবং ভিটামিট ডি থাকে। এই অঞ্চলে টিকে থাকার জন্য এই দুইটা জিনিস আবশ্যক।
আইসল্যান্ডেরও অবস্থাটাও সেম। সেখানেও একদিকে যেমন প্রচুর মাছ ধরা পরে, তেমনি সূর্যের আলোও নেই। ফলে এই অঞ্চলের বাসিন্দারা কোনদিন ভিটামিন ডি এর অভাবে বিপদে পরে নি।
কিন্তু গ্রিনল্যান্ডের ল্যান্ডস্কেপটা একটু আলাদা। সেখানে এত মাছ ধরার সুবিধা নেই। আরেকটি বিষয় হলো ভাইকিংরা গিয়ে বসতি করেছিল দ্বীপের ভেতরের দিকে। ওরা সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল ভেড়া, ছাগল এবং আরও কিছু গবাদি পশু। পাশাপাশি ওরা গ্রিনল্যান্ডে থাকা সিল শিকার করতে পারত। ছিল কিছু রেইন্ডিয়ারও। ফলে এই দিয়ে ওদের খাদ্যের অভাব মিটে যেত। ফলে কষ্ট করে মাছ ধরার প্রতি ওদের ধীরে ধীরে অনিহা দেখা দিতে থাকে। এবং এক পর্যায়ে ওরা মাছ ধরা একদমই বাদ দিয়ে দেয়। প্রত্নতাত্ত্বিক এবং গবেষকরা ওদের শেষ দিনগুলিতে মাছ খাওয়ার কোন প্রমাণ পান নি।
মেরু অঞ্চলে বসবাস করে দীর্ঘদিন মাছ না খেলে সেই সংস্কৃতির মানুষরা বেশি দিন টিকে থাকার কথা না। ভিটামিট ডি এর অভাবে মানুষের শরীর মারাত্মক দুর্বল হয়ে যায়, হাড় ডিজেনারেট করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আর এই মাছ না খাওয়ার কারনেই প্রধানত গ্রিনল্যান্ডের ভাইকিংদের সংস্কৃতি কলাপ্স করে।
আধুনিককালে স্ক্যান্ডিনেভিয়ানরা আর অত মাছ খায় না। বৈশ্বিক যুগে এসে ওদেরও খাদ্যাভ্যাস বদলে গেছে। কিন্তু তাহলে আধুনিককালে নরওয়ে বা আইসল্যান্ডে যারা বাস করে তারা টিকে আছে কি করে? ওরা মূলত ত্রান নামে একটি জিনিস প্রায় সারা বছর নিয়ম করে খায়। এই জিনিসটা মূলত মাছের তেল। খেতে খুবই বিস্বাদ, কিন্তু না খেলে উপায় নেই (আমি নিজেও খাই)। অবশ্য এই জিনিসের ক্যাপসুলও পাওয়া যায়, তবে অনেকেই র জিনিসটা খেতেই বেশি পছন্দ করেন। কারন সেটা একদম অর্গানিক।
ডেলোইডদের জীবন ও আমাদের পৃথিবী
পৃথিবীর সব জায়গার মিঠা পানিতে ডেলোইড (Bdelloid) নামে একটা অদ্ভুত প্রাণী পাওয়া যায়। এরা দেখতে অনেকটা ইংরেজি কমার মত। এই প্রাণীগুলো এতই ছোট যে, খালি চোখে এদের দেখবার উপায় নাই। সাইজ যত ছোটই হোক, এরা কিন্তু প্রাণী। না ব্যকটেরিয়া, না শৈবাল। এদের শরীরের সাথে ছোট চাকার মত থাকে, সেই চাকা ঘুরিয়ে এরা পানির মধ্যে আরামে ঘুরেফিরে ব্যকটেরিয়া খেয়ে বেড়ায়। পানি ছাড়া এই প্রাণীগুলো অচল। পানি যখন শুকিয়ে যায় বা পানি বরফ হয়ে যায়, তখন এরা ঘুমিয়ে পরে। ওদের এই ঘুমন্ত দশাকে বলা হয় টুন।
একবার এই টুন দশায় যাওয়ার পর আপনি এদের মাইনাস ১০০ ডিগ্রিতে ফ্রিজিং করে রেখে দিন, বা ঘন্টাখানেক সেদ্ধ করেন- তাদের ওদের তেমন কিছুই যায় আসে না। এদের দেহ ভেঙ্গে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়া তো দূরে থাক, এরা দিব্যি বেঁচে থাকে। এদের সাইজ খবই ছোট হওয়ার কারনে- আফ্রিকার ধূলিকণা যখন আটলান্টিক মহাসাগর পারি দিয়ে আমাজনে বনে চলে যায়, তখন সেই ধূলিকণার সাথে এই ডলোয়েডরাও পুরো অ্যাটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আফ্রিকা থেকে অ্যামেরিকায় চলে যায়। এরপর কোন জলাশয়ে গিয়ে পরার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জীবিত হয়ে ডিম দিয়ে, তাতে বাচ্চাও ফুটিয়ে ফেলে।
এদের প্রজনন হার এতই বেশি যে, দুই মাসের মধ্যে এরা যেকোনো মাঝারি আকারের পুকুরকে বাচ্চা দিয়ে ভরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এই যে প্রডাকশন রেট- তা কিন্তু একদমই পুরুষ সদস্য ছাড়া। সারা পৃথিবীতে ডেলোইডদের প্রায় ৫০০ টি মত প্রজাতি পাওয়া গেলেও- একটি প্রজাতিতেও এদের কোন পুরুষ সদস্য নেই। সোজা কথায় এদের সাথে “সেক্স” ব্যাপারটার কোন সম্পর্কই নেই।
গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে যে- এরা মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরেই এমন সেক্স না করে টিকে আছে। দুইটি আলাদা ডেলোইড নিয়ে তাদের DNA পরীক্ষা করলে দেখা যাবে- এদের শরীরের একই জিনের মধ্যে পার্থক্য প্রায় ৩০%। এই পার্থক্য থেকে বোঝা যায় যে- ওরা অন্তত ৪০ থেকে ৮০ মিলিয়ন বছর আগে সেক্স করা বাদ দিয়েছে।
তবে এই অতিক্ষুদ্র প্রাণীই নয়, সেক্স করে না এমন বড় আকারের প্রাণীও কিন্তু রয়েছে। অ্যামেরিকার নিউ মেক্সিকোতে এক ধরণের গিরিগিটী পাওয়া যায় যারা সেক্স ছাড়াই বাচ্চা উৎপাদন করে। কিন্তু ডেলোইডরাই একমাত্র প্রাণী যাদের ৫০০ প্রজাতির একটি প্রজাতিতেও সেক্সের অস্তিত্ব নেই। আর একারনেই হয়ত সব ডেলোইডরা দেখতেই প্রায় একই রকম। বিজ্ঞানীদের কাছে তাই এই প্রাণীগুলো এক বিস্ময়- যারা বিগত ৮০ মিলিয়ন বছর আগে সেক্সকে বিদায় জানিয়ে এখনো ৫০০ প্রজাতি নিয়ে টিকে আছে। ব্রিটিশ এক জীববিজ্ঞানী তাই এদেরকে নাম দিয়েছেন, “ইভ্যোলুশনারি স্ক্যান্ডাল”।
এই “সেক্স” বা যৌন জনন ব্যপারটার শুরু হয়েছিল মূলত পরজীবীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। আজ থেকে বিলিয়ন বছর আগে যখন সেক্সের উৎপত্তি ঘটেছিল- তখন এটি ছিল টিকে থাকার একটা কৌশল। যৌন জননের ফলে সহজেই জেনেটিক ভেরিয়েশন তৈরি হতো, আর জেনেটিক ভেরিয়েশনের ফলে নতুন পরিবেশে বা পরজীবীর আক্রমণ থেকে টিকে থাকতে একটা সুবিধা পাওয়া যেত। কিন্তু দেখুন সেই ছোট ঘটনা কতদুর গড়িয়েছে। এখন পুরুষরা BMW, বিলিয়ন ডলার আর ক্ষমতার পেছনে ছুটছে- কারন এগুলো পেলে সে তার ইচ্ছামত সুন্দরীকে বাছাই করতে পারবে, তাদের সঙ্গী হিসেবে পাবে।
আর এই সেক্স শব্দটা আমাদের সাধারণ মানুষের কাছে যতটা ফ্যাসিনেটিং, বিজ্ঞানীদের কাছে সম্ভবত তার থেকে অনেক বেশি ফ্যাসিনেটিং এবং অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সেক্স বিষয়টার অস্তিত্ব কেন আছে সেটা নিয়েই রয়েছে বিপুল পরিমাণ গবেষণা। অন্যদিকে মানুষের যৌনতা এবং তার যৌন আচরণ অন্যসব প্রাণীর থেকে অনেক আলাদা। ম্যাট রিডলি মানুষের যৌন আচরণের এই আকর্ষণীয় এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখেছেন আস্ত এক বই, নাম The Red Queen: Sex and the Evolution of Human Nature।
এই বইতে তিনি মানুষের যৌন আচরণ এবং এর বিবর্তন নিয়ে বস্তারিত আলোচনা করেছেন। তবে সেই আলোচনা শুধুমাত্র একটা দুইটা টপিকেই আটকে থাকেনি। উঠে এসেছে লক্ষ লক্ষ বছরের ইভ্যোলুশনারি হিস্টোরি। এই বইয়ের পাতায় পাতায় রয়েছে অবাক হবার মত সব বিষয়। ম্যাট রিডলি একজন ব্রিটিশ জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক, সাংবাদিক, রয়েল সোসাইটির ফেলো এবং সফল ব্যবসায়ী। তার লেখালেখির পরিধি জনপ্রিয় বিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান থেকে শুরু করে অর্থনীতি পর্যন্ত বিস্তৃত। কৌতূহলী মানুষের জন্য The Red Queen বইটা একটা মাস্ট রিড।