ন্যাট্রন হ্রদ (যেখানে কোনো প্রাণী পড়লেই পাথর হয়ে যায়) 🥶🥶🥶

______________________________________

তানজানিয়ার লেক ন্যাট্রন আফ্রিকার সবচেয়ে নির্মল হ্রদগুলির মধ্যে একটি। এর পানির সংস্পর্শে আসলে যেকোনো প্রাণীর চামড়া পুড়ে যায় এবং তারা সেখান থেকে পালিয়ে যেতে পারে না। এভাবে দীর্ঘকাল ধরে তাদের দেহ  সেখানে থাকার কারণে তা পাথরে পরিণত হয়। এর সৌন্দর্যের কারণে প্রতিবছর অনেক অতিথি পাখি এখানে আসে দুর্ঘটনাবসত এদের অনেকেই মারা যায়।

 Natron লেকের ক্ষারীয় জলের pH 10.5 এর মতো এবং এটি এতই ক্ষারীয় যে এটি প্রাণীদের ত্বক এবং চোখ পুড়িয়ে ফেলতে পারে। জলের ক্ষারত্ব আসে সোডিয়াম কার্বনেট এবং অন্যান্য খনিজ থেকে যা পার্শ্ববর্তী পাহাড় থেকে হ্রদে প্রবাহিত হয়।পানিতে সোডিয়াম কার্বনেট থাকার কারণে মৃতদেহ গুলো পচে না।

পূর্ব আফ্রিকার ওই এলাকার দুটি ক্ষারীয় হ্রদের মধ্যে একটি হ্রদ ন্যাট্রন;  অন্যটি হ্রদ বাহি।  উভয়  হ্রদ যা কোনো নদী বা সাগরে পানি নিষ্কাশন করে না।

"টেডি ডে" কিভাবে এলো? এটা কি আদৌ ভ্যালেন্টাইন্স ডের সাথে সম্পৃক্ত? 

// ১৯০২ সালের ঘটনা। মিসিসিপির গভর্নর অ্যান্ড্রু লংলিনোর আমন্ত্রণে প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট গেছেন সেখানের জঙ্গলে শিকার করতে। শিকার দলের সবাই কিছু না কিছু শিকার করেছেন, পারেন নি প্রেসিডেন্ট নিজে। কিন্তু যার সম্মানে এই অভিযান, তিনিই যদি শিকারে ব্যর্থ হন, তবে কি করে চলে? প্রত্যেক বড় বড় নেতার অতি উৎসাহী একজন সঙ্গী থাকেন। এক্ষেত্রেও ছিলেন। তাঁর নাম হোল্ট কোলিয়ার। সে করল কি, কোথা থেকে একটা ছোট্ট, কালো ভালুকের বাচ্চাকে ডান্ডা পেটা করে, গলায় দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে এসে বলল" এই নিন প্রেসিডেন্ট। প্রায় মেরে এনেছি। এবার এটাকেই গুলি করে মারুন"। রুজভেল্টের দয়া হল।

বললেন " এ তো একেবারে শিশু! আমি একে মারতে পারব না।" ততক্ষণে অবশ্য দড়ির ফাঁসে সে বেচারার মরমর দশা। তাই প্রেসিডেন্টের এক সঙ্গী অবশেষে বেচারী ভালুক শিশুটির ভবযন্ত্রণা ঘুচালো।

১৯০২ সালের ১৬ নভেম্বর, ওয়াশিংটন পোস্টে এই ঘটনা নিয়ে দারুন একটা কার্টুন আঁকলেন ক্লিফোর্ড ব্যারিম্যান। তাতে দেখাই যাচ্ছে কোলিয়ার দড়ি দিয়ে ভালুকের গলা টেনে ধরে আছেন আর প্রেসিডেন্ট পিছন ফিরে “ না, না” করছেন। ভালুকের মুখে বেশ একটা হতভম্ব ভাব। গোটা আমেরিকা জুড়ে বেশ হইহই পড়ে গেল এটা নিয়ে। বাচ্চাদের অনেকেই ভালবেসে ফেলল ওই ভালুকটাকে।পুতুল ব্যবসায়ী মরিস মিচটম দেখলেন এ তো বেশ মজা। তিনি ঠিক সেই ভালুকটার মত দেখতে একটা পুতুল বানিয়ে দোকানের শো-কেসে সাজিয়ে রাখলেন। তলায় একটা কার্ড। যাতে লেখা " টেডি'স বিয়ার"। থিওডোর রুজভেল্টকে ভালবেসে আমেরিকাবাসী টেডিই ডাকতো।

আমেরিকার শিশুরা এই খেলনা পেয়ে যেন পাগলপারা হয়ে গেল। লাখে লাখে বিক্রি হতে লাগল এই “টেডি বিয়ার”। মিচটমের আইডিয়াল নভেলটি এন্ড টয় কোম্পানি রাতারাতি বড়লোক হয়ে গেল এই একটি পুতুল বিক্রি করে।

তবে টেডিকে অমর বানিয়ে দিলেন যিনি তিনি কিন্তু কোন পুতুল ব্যবসায়ী নন- অ্যালান আলেকজান্ডার মিলনে নামের এক ইংরেজ লেখক। মিলনের ছেলে ক্রিস্টোফার রবিনের বড় সাধের একটা টেডি বিয়ার ছিল। লণ্ডন চিড়িয়াখানার ছোট্ট ভালুকের নামে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল উইনি। প্রতি রাতে ছেলেকে ঘুম পাড়াতে সেই উইনিকে নিয়েই গপ্পো শোনাতেন মিলনে। একদিন ভেবে দেখলেন “ আরে! এই গল্পগুলো তো ছেপে প্রকাশ করলেই হয়!” যেমন ভাবা তেমন কাজ। ১৯২৫ সালে বড়দিনের ঠিক আগের দিন লন্ডন ইভিনিং নিউজে প্রকাশ পেল সেই গল্প। ভালুকের নামটা একটু বদলে “উইনি দ্য পুহ” করে দিলেন শুধু।

বাকিটা ইতিহাস...

টেডি নিয়ে আর দুখানি দরকারি কথা বলে যাই-

পৃথিবীর প্রথম টেডি বিয়ার মিউজিয়াম তৈরি করা হয় ইংল্যান্ডের হ্যাম্পশায়ারে ১৯৮৪ সালে। পরে আমেরিকার ফ্লোরিডাতেও এ রকম একটা মিউজিয়াম খোলা হয় ১৯৯০ সালে। এই দু'টো মিউজিয়ামই পরে বন্ধ হয়ে যায় এবং এখানে রাখা টেডি বিয়ারগুলো নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এখন অবশ্য পৃথিবীর অন্য অনেক জায়গায় টেডি বিয়ারের মিউজিয়াম আছে।

টেডি বিয়ার হাতে পেলেই বাচ্চাদের মন ভাল হয়ে যায় লক্ষ করে মার্কিন প্রশাসন ১৯৯৭ সালে 'টেডি বিয়ার কপস প্রোগ্রাম' বলে এক কর্মসূচি হাতে নেয় যাতে সে দেশের পুলিশ, দমকল-সহ বিভিন্ন এমারজেন্সি সার্ভিসে কর্মরত কর্মচারীদের টেডি বিয়ার দেওয়া হতে থাকে নিয়মিত ভাবে। এর কারণ একটাই,  কোনও বিশেষ জরুরি পরিস্থিতিতে বাচ্চাদের শান্ত করতে, তাদের মন ভাল করতে এই সব পুলিশ, দমকল কর্মীরা যাতে এই টেডি বিয়ারগুলো বাচ্চাদের মধ্যে বিলি করতে পারেন। //

লিখেছেন: Ashok Majumdar

যখন ঘপু সিগারেট কেনে;

“সাম্যবাদ একটা ত্রুটিপূর্ণ, এবং ক্ষেত্রবিশেষে ভয়ানক বিপজ্জনক নীতি। বর্তমান যুগে এর বাস্তব প্রয়োগ কোনোভাবেই যে সম্ভব নয় তা প্রমাণিত সত্য। স্তালিন, মাও এদের উদাহরণ, বিবেচনা করে দেখুন, কী ঘৃণ্য পুতুলনাচ...

যখন বন্ধুবান্ধব সিগারেট কেনে;

সমাজের সকল সদস্য সমান পরিমাণে ভোগ্যসামগ্রীর সুবিধা পাবে - এটি সাম্যবাদের বিশ্বাস। বুর্জোয়াশ্রেণির চোখের চকচকে লোভকে পায়ে দ'লে - "ভুখা থাকবে না কেউ" - এই নীতিই হোক আমাদের আদর্শ। ওয়ার্কারস অফ দা ওয়ার্ল্ড...

 

ব্রুনোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল- "এই মহাবিশ্বের মতো আরো মহাবিশ্ব আছে, পৃথিবী গোল, সূর্য এই মহাবিশ্বের কেন্দ্র নয় এবং এটি একটি নক্ষত্র ছাড়া আর কিছু নয়"

বাইবেল  বলেছে : ‘সূর্য পৃথিবীর চার পাশে ঘোরে’-

শাস্তি : বিনা রক্তপাতে মৃত্যু।

        অর্থাৎ পুড়িয়ে মারা।

°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°

১৭ ফেব্রুয়ারী তারিখে আজ থেকে প্রায় ৪০০বছর আগে ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে রোমে জীবন্ত জ্বালিয়ে জিওর্দানো ব্রুনোকে হত্যা করা হয়েছিলো– সামনে উপস্থিত মানুষ সেই দৃশ্ব্য দেখেছিলো নীরবে।

জিওর্দানো ব্রুনো এক বেপরোয়ামানুষ ছিলেন, তিনি জ্যোতিবিজ্ঞানী কোপারনিকাসের সেই সময়ের নিষিদ্ধ বইগুলো পড়তেন। বিপদকে অগ্রাহ্য করে সাধারন মানুষের অন্ধবিশ্বাস ভাঙ্গতে শুরু করে তিনি প্রচার করতে থাকেন– নিকোলাস কোপারনিকাস ভ্রান্ত নন।পৃথিবী সূর্যকেই প্রদক্ষিণ করে ঘুরছে।

ব্রুনো গির্জার কুনজরে পরলেন, বাধ্য হলেন দেশান্তরী হতে। যাজকের ছদ্মবেশ নিয়ে তিনি চললেন সুইজারল্যাণ্ড, হাতে কোপারনিকাসের বই– ফ্রান্স, ইংল্যাণ্ড, জার্মান গিয়ে তিনি মানুষকে সত্যের ধারনা দিতে থাকেন। রোমের যাজকরা চর পাঠিয়ে কৌশলে তাঁকে ধরে আনে। বিচারে তাঁকে বিনা রক্তপাতে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়, যার মানে জীবন্ত পুড়িয়ে খুন করার নির্দেশ। তখন ৫২বছর বয়স জিওর্দানো ব্রুনোর।

তাঁকে হাত-পা শিকলে বেঁধে নিয়ে এসে, ধর্মের বিপক্ষে যাতে আর কিছু বলতে না পারেন তাই পেরেক ফুটিয়ে তাঁর জিভ ঠোঁটে আটকানো হয়। সেই অবস্থায় যাজকরা তাঁকে আবারো তাকে বিজ্ঞানের বিপক্ষে যেতে বলে, রক্তাক্ত ব্রুনো আপোষ করে বেঁচে থাকতে চাননি। আগুন দেয়া হয় লোহার পিলারে বাঁধা ব্রুনোর শরীরে।

ব্রুনোকে খুন করার ৪০০ বছর পরে সেই গির্জাকেই ভুল স্বীকার করতে হয়। ইতিহাসের শিক্ষা বিজ্ঞান ও সত্য হার মানেনা। অন্ধকার কখনোই শেষ কথা না। খুন হওয়ার দিনে শ্রদ্ধা জানাই জিওর্দানো ব্রুনো।

---------

হঠাৎ এক মহিলা সিকিউরিটি কর্মী পাশের একটা গেট খুলে দিয়ে বলল, ঢুকে পড়ো। ... অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে আমরাও সেই গেট দিয়ে হাতের কেবিন-ব্যাগ বিনা-পরীক্ষাতেই ভিতরে ঢুকে গেলাম।

কলকাতায় আমরা যখন কোনও লাইনে দাঁড়াই-- টিকিটের জন্য লাইন বা মাংসের দোকানের লাইন কিংবা শপিং মলে টাকা মেটানোর লাইন-- প্রতিটি লোক যেন সামনের লোকের গায়ে সেঁটে যাওয়ার চেষ্টা করে ! কলকাতা এয়ারপোর্টে দেখেছি, পিছনের লোকের নিঃশ্বাস এসে আমার কাঁধের উপরে পড়ছে, তাতে আমি যদি একটু বিব্রত হয়ে সামান্য এগিয়ে যাই- পিছনের লোকটিও আমার কাঁধে নিঃশ্বাস ফেলার জন্য ফের এগিয়ে আসবে !!!

কিন্তু আটলান্টায় এসে শিখলাম, লাইনে দাঁড়ানোর সময় সামনের লোকের পিছনে অন্তত দু'হাত দূরে দাঁড়াতে হবে।

যে কোনও কাউন্টারের সামনে দেখেছি, লোকেরা লাইন দিয়ে দূরে দূরে অলস ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে, বিন্দুমাত্র অধৈর্য, উত্তেজনা বা অস্থিরতা নেই।

একটি কোরিয়ান দোকানে একটা কেক কেনার পরে আমার কন্যা গেছে দাম দিতে। আমি বেশ অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি। ফাঁকা দোকান। একজন আমেরিকান ভদ্রমহিলা একটা কেক নিয়ে আমার থেকেও চার হাত দূরে দাঁড়িয়ে পড়লেন !

আমি তাড়াতাড়ি তাঁকে বললাম, না, না, আমি লাইনে নেই, আপনি এগিয়ে যান !

আটলান্টায় একটা দারুণ সুন্দর ব্যাপার দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছি। ধরুন কোনও শপিং মলে ঢুকতে যাচ্ছি, আমাদের ঠিক আগেই একজন বৃদ্ধা দরজা ঠেলে ভেতরে গেলেন, কিন্তু তিনি দরজাটি খুলে ধরেই দাঁড়িয়ে থাকবেন, কারণ তিনি তাঁর পিছনের লোকেদের মুখের উপরে দরজা বন্ধ করে ভেতরে যাবেন না।

এই সৌজন্য এখন আমরাও শিখে গেছি। আমরা কোথাও ঢোকার সময় যদি দেখি আমাদের ঠিক পিছনেই অন্য কেউ আছেন, তবে আমাদেরকেও দরজাটা খুলে রেখে ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেই ভদ্রলোক ঢুকেই দরজার হাতলে হাত রেখে আমাদেরকে নিষ্কৃতি দেবেন।

এই আটলান্টার মানুষের সৌজন্য দেখে আমি বিস্মিত। দোকানের কাউন্টারের মেয়েটি প্রতিটি খদ্দেরকে হাসিমুখে ''হাই'' "হ্যালো" "হাউ আর ইউ" ইত্যাদি বলে যাচ্ছে ! সারাদিনে এত ক্রেতা, কিন্তু কাউন্টারের মেয়েটির মুখে হাসির অভাব নেই, বলাতেও খামতি নেই।

একই জিনিস এয়ারপোর্টে। বোর্ডিং পাসের জন্য কাউন্টারে গেলেই ''হাই'' "হ্যালো" "হাউ আর ইউ" ইত্যাদি কিছু একটা বলবেই !

বাড়ির দরজায় কোনও কুরিয়ারের লোক বা পোস্ট অফিসের লোক, কোনও প্লাম্বার বা ইলেক্ট্রিসিয়ান এলো, পিৎজা ডেলিভারি দিতে এলো, আমরা দরজা খুললেই সে হাসিমুখে বলে উঠবে, ''হাই'' "হাউ আর ইউ" এরকম কিছু।

আমাদের এ্যাপার্টমেন্টের পাশ দিয়ে একটি নদী বয়ে গেছে, সেই নদীর নাম চাট্টাহুচি। নদীর দুই পাশে জঙ্গল ও ভেতর দিয়ে সুন্দর রাস্তা। নদীর ধারে আমরা মাঝেমধ্যে বেড়াতে যাই।

বহু মানুষ সেই নদীর ধারে শর্টস পরে দৌড়ুতে আসে। দর-দর করে ঘামছে ও দৌড়ুচ্ছে। আমাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় অন্তত একবার হাসিমুখে "হাই" বলে যাবে !

কিন্তু যে মেয়েটি দৌড়ুতে দৌড়ুতে এত হাঁসফাঁস করছে, কথা বলার মতো ক্ষমতায় নেই, সে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে একবার মাথা ঝাঁকিয়ে তার সম্ভাষণটুকু বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাবে।

 

আমাদের এই পৃথিবীর একটা অদ্ভুত নিয়ম আছে। কয়েক মিলিয়ন বছর পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিন মেরুতে প্রচুর বরফ ও হিমবাহ জমে থাকে, তাপমাত্রা থাকে খুবই কম। এই সময়টাকে বলা হয় বরফ যুগ। বরফ যুগ শেষ হলে শুরু হয় একটা গরম আবহাওয়ার যুগ। এসময় পৃথিবীতে কোন হিমবাহ থাকে না। তাপমাত্রা থাকে অনেক বেশি। এই ধরনের সময়কে বলা হয় গ্রিনহাউজ যুগ। এই গ্রিনহাউজ যুগও চলে কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে। পৃথিবীতে পালা করে একবার আসে বরফ যুগ, একবার আসে গ্রিনহাউজ যুগ।

আমরা এখন একটা বরফ যুগের শেষদিকে আছি। অর্থাৎ বর্তমান সময়ের পর আসতে চলেছে একটা গরম আবহাওয়ার যুগ, অর্থাৎ গ্রিনহাউজ যুগ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বর্তমান বরফ যুগ তাহলে কতদিন স্থায়ী হচ্ছে? বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখেছেন যে পৃথিবীর মানুষ যদি বিভিন্ন ধরণের কলকারখানা থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাস তৈরি না করত তাহলে পরবর্তী গ্রিনহাউজ যুগ শুরু হতে অন্তত ৫০০০০ বছর দেরি হতো। কিন্তু বিগত একশো বছরে মানুষ যে পরিমান গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন করেছে তাতে পরবর্তী গ্রিনহাউজ যুগ খুব দ্রুতই শুরু হতে যাচ্ছে।

গ্রিন হাউজ যুগ শুরু হয়ে গেলে পৃথিবীতে ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসবে। দুই মেরুর বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাবে, সমুদ্রের তীরবর্তী বিশাল অঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাবে। মারাত্মক খড়া দেখা দেবে। ফলে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের ঘাটতি দেখা দেবে। বিশ্বব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যেই ১২০ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়বে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা WHO এর হিসাব অনুযায়ী প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ লোকের মৃত্যু হবে এই আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য। বুঝতেই পারছেন পরবর্তী একশো বছর খুব খারাপ সময় অপেক্ষা করছে আমাদের এই পৃথিবীবাসির জন্য। আফ্রিকায় দীর্ঘকাল ধরে যে খড়া চলছে সেই খরা এতই মারাত্মক আকার ধারণ করবে যে আফ্রিকার লক্ষ লক্ষ মানুষকে না খেয়ে দিন কাটাতে হবে। অন্যদিকে আফ্রিকার জনসংখ্যা আগামী দিনগুলোতে বৃদ্ধি পাবে মারাত্মক হারে। 

অন্যদিকে এই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শস্যের পাশাপাশি পৃথিবীতে মাছের সংখ্যাও কমে যাবে। উপকূলীয় অঞ্চল তলিয়ে যাওয়ায় পৃথিবীতে দেখা দেবে মারাত্মক রিফিউজি ক্রাইসিস। এক দেশের মানুষ তখন বাধ্য হয়ে অন্য দেশে পারি জমাবে, তৈরি হবে পৃথিবীব্যপী এক বিরাট অস্থির পরিস্থিতি। 

তবে অনেকেই মনে করেন আমরা যদি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কার্বন নিঃসরণকে শুন্য করে ফেলতে পারি তাহলে এই মানুষের সৃষ্টি করা বাড়তি সমস্যাটুকু সামাল দেওয়া যাবে। তাহলে পরবর্তী গ্রিন হাউজ যুগ আসতে এখনো অন্তত ৫০০০০ বছর দেরি আছে।

মাইক্রসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস বিগত প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি এই বিষয়ে স্টাডি করেছেন, এই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে টাকা পয়সা বিনিয়োগ করেছেন। ফলে গ্রিন হাউজ গ্যাসের সমস্যা কিভাবে নির্মুল করা যায় এবং তেমন যন্ত্রপাতি কিভাবে তৈরি করা যায় সে সম্পর্কে তার একটি ভাল ধারনা তৈরি হয়েছে। বিল গেটসের মতে, আমরা যদি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সবাই একত্রে কাজ করতে পারি এবং নতুন কিছু কার্বন জিরো টেকনোলজি বের করে সেটাকে সকল ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারি তাহলে এই সমস্যা সামাল দেওয়া যাবে।

 

 

=========

মানুষকে সতেচনভাবে কষ্ট দেবেন না, চেষ্টা করবেন মানুষকে আঘাত না দিয়ে কথা বলতে। পারলে মনে মনেও ঘৃণা করবেন না। কারন আপনার মত প্রতিটা মানুষেরও ব্যক্তিগত ব্যর্থতা আছে, হতাশা আছে, বিষণ্ণতা আছে, লজ্জা আছে, অনেক না বলা দুঃখ আছে। অনেক বড় বড় ভুল আছে, যে ভুলের জন্য সেই মানুষটা লজ্জিত। তাকে বাড়তি লজ্জা দেওয়া কোন প্রয়োজন নেই। মানুষের মস্তিষ্কের গঠনটাই এমন যে- কেউ চাইলেও বছরের ৩৬৫ দিন পরম সুখে শান্তিতে কাটাতে পারবে না। তা সে যত সফল হোক, বা যত টাকা পয়সার মালিক হক,বা যে এ্যাট্রিবিউটই দেন না কেন।

মানুষের মস্তিষ্কের একটা বিল্ট ইন ব্যপার আছে। সেটা হলো- সে সবার সাথে মিলে মিশে দল বেঁধে কাজ করতে ভালোবাসে। সে সবার সাথে একসাথে সুখে থাকতে পছন্দ করে। এই বিষয়টার সাথে আবার অনেকগুলো আলাদা আলাদা বিষয় জড়িত। ফলে মানুষ আসলে অন্যকে সাহায্য করতে ভালোবাসে। আপনি দেখবেন আপনি কারও কোন উপকার করলে বা সাহায্য করলে একটা ভাল ফিলিংস পান। কারন আপনার মস্তিষ্কের কাছে এই বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ। তাই ভাল কোন কাজ করা বা অন্য মানুষকে সাহায্য করার জন্য আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে কিছু ভালো নিউরোট্রান্সমিটার উপহার দিয়েছে। ঠিক একই ঘটনাই ঘটে যখন আপনি কোন কাজে সফল হন বা কোন মদক গ্রহণ করেন। অনেকেই ভাবতে পারেন অন্য মানুষকে সাহায্য করলে নিশ্চয় আমার নিজের ক্ষতি হলো(যেমন আর্থিক ক্ষতি), তাহলে মস্তিষ্কের কাছে তো এটা ভালো কোন বিষয় হওয়ার কথা ছিলো না। এটাকে তার নিজের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে দেখা উচিত ছিল।

আপনার ধারণা আসলে পুরোপুরি ঠিক না। কারন আধুনিক বিজ্ঞানে আমাদের মস্তিস্ককে বলা হয় মডুলার ব্রেইন। কারন আমাদের ব্রেইন মূলত অনেকগুলো আলাদা আলাদা মডিউল বা অংশ দিয়ে গঠিত। এই অংশগুলো আমাদের বিবর্তনের বিভিন্ন সময়ে তৈরি হয়েছে। এবং প্রতিটা অংশই আসলে এ্যাকটিভ। ফলে নিজের স্বার্থ চিন্তা করার যেমন আপনার মস্তিষ্কের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি আপনার প্রজাতির অন্য সদস্যদের চিন্তা করাও আপনার মস্তিষ্কের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে অন্য প্রাণীর চিন্তা করাও। আমাদের মানবজাতির ইতিহাসে এমনও সময় ছিল যখন একজন অন্যজনকে সহায়তা না করলে আমাদের পুরো মানব জাতিই আসলে বিলুপ্ত হয়ে যেত। ফলে আপনার মস্তিষ্কের অনেক অংশ রয়েছে যেগুলো অন্য কারও সাহায্য করাটাকে খুবই এপ্রিসিয়েট করে।

============

প্রশ্নটি হয়তো সহজ, আর উত্তরও হয়তো আপনাদের জানা! তবুও একটু আলোচনা করা যাক।

যদি বলি আপনার হাজার নম্বর পূর্বপুরুষটি সত্তর হাজার বছর আগে আফ্রিকার কোন জঙ্গলাকীর্ণ পর্বতের ঢালুতে বসে একটা আধপাকা কলা খেয়ে শেষে কলার ছোপার উপর হাতের আঙুলগুলো রেখে অবাক হয়ে দেখছে –’আরে এই ছোপা দেখি আমার হাতের আঙুলের সমান টুকরো !’

হাউ ফানি! অংক আবিষ্কারের এই আজগুবি কথা কি বিশ্বাস করবেন? না করলেও সমস্যা নেই । কিন্তু কল্পনাটি অসম্ভব কিছু না। প্রাগৈতিহাসিক যুগের আদিম কোনো মানব হয়তো ওই ভাবেই প্রথম গুনতে শিখেছিল! যার অসংখ্য বিবর্তনের ফসল হিসেবে ৭০ হাজার বছর পরে আপনি কম্পিউটার স্মার্টফোন ঘাঁটাঘাঁটি করার দুর্লভ সুযোগ সুলভে ভোগ করছেন!

আপনার কি জানা আছে আজ থেকে প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে আপনি গরু ছাগল কুকুর বেড়াল বা শিম্পাঞ্জির চেয়ে উন্নত তেমন কোনো প্রাণী ছিলেন না! প্রাগৈতিহাসিক যুগে দুনিয়ার বুকে আপনার ভূমিকাটা একটা জেলিফিশ, কাঠঠোকরা এমনকি একটা মৌমাছির চেয়েও নগণ্য ছিল!

অথচ আজকে আপনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পাখায় ভর করে গোটা দুনিয়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, আকাশে উড়ছেন, চাঁদে যাচ্ছেন, গঙ্গার তলা দিয়ে মেট্রো চড়ে এসপ্লানেড থেকে হাওড়া যাচ্ছেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আধমরাকে বাঁচিয়ে তুলছেন , আবার অস্ত্রশস্ত্র কাজে লাগিয়ে জীবিতকে শ্মশানে পাঠাচ্ছেন ! হাতের তালুর সাইজের স্মার্টফোনে জগতের সব খোঁজ খবর নিতে পারছেন, প্যারা গ্লাইডিং করছেন! আপনার এই অভাবনীয় সাফল্যের গোপন চাবিকাঠি কোথায়? কোন যাদু বলে আফ্রিকার অখ্যাত জঙ্গলের এক কোণায় কলা ছিলে খাওয়া এক নগণ্য আদিম জানোয়ার থেকে মাত্র পঞ্চাশ হাজার বছরে পরিবর্তিত হয়ে গেলেন পৃথিবীর শাসক প্রাণীতে?

প্রচলিত বিশ্বাসে আপনি হয়তো ভাবেন আপনারা অর্থাৎ মানুষের দল সবচেয়ে বুদ্ধিমান! অন্য সকল প্রাণীদের চেয়ে আপনাদের আলাদা করে বানানো হয়েছে।হয়তো বিশ্বাস করেন সর্বশক্তিমান কোন এক মহান স্রষ্ট্রা বানিয়েছে। আপনি বিশ্বাস করতে ভালোবাসেন আপনার শরীরে কিংবা মগজে এমন কোন বিশেষ কোন মাল মশলা আছে যা আপনাকে একটা বাঘ, সিংহ, হাতি কিংবা গণ্ডারের চেয়ে বেশী যোগ্যতা দিয়েছে। কিন্তু বিব্রতকর তথ্য হলো মগজের হিসেবে আপনি বড়জোর একটা শিম্পাঞ্জির প্রায় সমতূল্য। তাতেও আবার কিন্তু আছে। শিম্পাঞ্জি আর আপনাকে যদি একটা নির্জন দ্বীপে ছেড়ে দিয়ে আসা হয়, তাহলে এমন হওয়া অস্বাভাবিক নয় শিম্পাঞ্জীর জিত আর আপনার হার! এমনও হতে পারে আপনি পেটের টানে কাতর হয়ে হাবিজাবি কিছু খেয়ে পেট খারাপ করে পটল তুলবেন, অথচ শিম্পাঞ্জি লতাপাতা খেয়ে দিব্যি চাঙ্গা হয়ে বলবে, 'শালার মনুষ্যি একটা অপদার্থ জানোয়ার!' অথবা শিম্পাঞ্জি আপনাকে খাবারের প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে টুঁটি চেপে পরপারে চালান করে দেবে।

আপনার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে টানাটানি করছি বলে চিন্তায় পড়ে গেলেন? চিন্তার কিছু নাই। খুলেই বলছি। আসলে অন্য প্রাণীদের সাথে মানুষের আসল পার্থক্য হলো দলগত অবস্থানে। মানুষের এতো ক্ষমতার প্রাথমিক সুত্র হলো একজন মানুষ অন্য একাধিক মানুষের সাথে দলগত সহাবস্থান করতে পারে তা আবার বিভিন্ন বিচিত্র পরিস্থিতিতে। পিঁপড়ে বা মৌমাছিও দলগত অবস্থানে যথেষ্ট পারদর্শী কিন্তু তাদের মধ্যে নিয়ম শৃংখলার নমনীয়তা নেই। হাজার হাজার বছর ধরে যে ফরমাটে ওরা কাজ করে তার বাইরে যেতে পারে না। একটা মৌচাক যদি আক্রান্ত হয় তখন সেই সমস্যা মোকাবিলার জন্য রাতারাতি নতুন কোন নিয়ম চালু করতে পারে না ওরা। তারা রাণীকে বিতাড়িত করে নতুন রাষ্ট্র গড়ার কথা ভাবতেও পারে না!

নেকড়ে আর শিম্পাঞ্জিরা যদিও পিঁপড়েদের তুলনায় অধিক নমনীয় কিন্তু সেটা শুধুমাত্র অল্প কটা নেকড়ে বা শিম্পাঞ্জি হলেই সম্ভব। কোন একটা শিকার ধরার জন্য আক্রমনের দলগত পরিকল্পনা করা সম্ভব তাদের পক্ষে। তবে এটাকে ঠিক সামাজিক সহযোগিতা হিসেবে দেখানো যায় না।

ধরা যাক আপনি একজন শিম্পাঞ্জি এবং আমিও একজন। এখন আপনি যদি কোন কাজে আমাকে লাগাতে চান, সেটার জন্য আগে আমাকে চিনতে হবে, আমার স্বভাব চরিত্র বুঝতে হবে, আমার মধ্যে কোন শয়তানি বুদ্ধি বা বদ মতলব আছে কিনা সেটা বোঝার শক্তি থাকতে হবে। আপনি যদি আমাকে ভালোভাবে না চেনেন তাহলে কোনো কাজে আমাকে নিতে ভরসা পাবেন না। হোমো স্যাপিয়েন্স বা মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা অসংখ্য অচেনা মানুষের সাথেও জোটবদ্ধভাবে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে যে কোন মিশন সম্পন্ন করতে পারে!

একটা শিম্পাঞ্জির সাথে একটা মানুষের হাতাহাতি লাগলে শিম্পাঞ্জিটা জিতবে, এমনকি দশটা শিম্পাঞ্জীও দশটা মানুষকে হারাতে পারবে। কিন্তু ১০০০ শিম্পাঞ্জিকে ১০০০ মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিলে মানুষই জিতবে কেননা ১০০০ মানুষের মধ্যে ঐকতান সৃষ্টির যে ক্ষমতা মানুষের আছে যেটা শিম্পাঞ্জির নেই।আমাদের যুবভারতী স্টেডিয়ামে এক লাখ শিম্পাঞ্জিকে এনে বসিয়ে দিলে কী ভয়ানক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে চিন্তা করতে পারেন? অথচ লাখ লাখ মানুষ স্টেডিয়ামে বসে হামেশাই আনন্দের সাথে খেলা দেখে শৃংখলা মেনে। এখানেই মানুষের জিত।

তবে মানুষের এই জোটবদ্ধ অবস্থান সবসময় সুখের হয় না এটাও ঠিক। এই মানুষই দলবদ্ধভাবে ভয়ানক সব কর্মকাণ্ড করেছে সমগ্র ইতিহাস জুড়ে। জেলখানা, কনসেনট্রেশান ক্যাম্প, গণহত্যা এসবই যুথবদ্ধ কর্মকাণ্ড। অন্যদিকে অপরাধ বা অপকর্মের দিক থেকে দেখলে আবার শিম্পাঞ্জিদের জেলখানাও নেই, কনসেনট্রেশান ক্যাম্পও নেই। সেদিক দিয়ে ওরা মানুষের চেয়ে সেরা।

কিন্তু মানুষের এই দলবদ্ধভাবে সুপরিকল্পিত উপায়ে কাজ করার রহস্যটা কী? হোক সেটা খেলাধুলা কিংবা ব্যবসা বাণিজ্য অথবা খু*ন খারাবি।

উত্তর হলো – মানুষের অপরিসীম কল্পনাশক্তি।

হ্যাঁ, একমাত্র মানুষের কল্পনার জোরেই অনেক অচেনা মানুষের সাথে মিলেমিশে কাজ করতে পারে, মানুষ বানিয়ে গল্প কাহিনী লিখতে পারে, সেটা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে পারে, লক্ষ লক্ষ মানুষকে তাতে বিশ্বাস করাতে পারে, এই সবকিছুর মূলে মানুষের কল্পনাশক্তি।এই যে গল্পটি আমি লিখছি তা আপনি বিশ্বাস করবেন এমনকি শেয়ার করে অন্যরা যাতে বিশ্বাস করেন তা বলবেন!আর এটার জোরেই আমরা সবাই একটা ধারণায় সম্মিলিতভাবে বিশ্বাস করতে পারি, একই আইনে নিজেদের শৃংখলিত রাখতে পারি, পরস্পরকে সহযোগিতা করতে পারি।

সমগ্র প্রাণীজগতের কিছু ব্যাপার একমাত্র মানুষকে দিয়েই সম্ভব। যেমন আপনি কোন একটা শিম্পাঞ্জিকে বিশ্বাস করাতে পারবেন না যে সে যদি আপনাকে একটা কলা খেতে দেয় ,পরকালে এই পূন্যের জোরে সে লক্ষ লক্ষ কলার মালিক হবে।কিংবা এই বা এই এই করলে মৃত্যুর পর সে স্বর্গে যাবে! কিন্তু একজন মানুষকে আপনি এটা বিশ্বাস করাতে পারবেন। এই ক্ষমতার জোরেই আমরা সারা পৃথিবী শাসন করি, আর শিম্পাঞ্জিরা বনজঙ্গল, চিড়িয়াখানা কিংবা গবেষণাগারে আটক থাকে।

পৃথিবীর অধিকাংশ ধর্মের পেছনে কিছু না কিছু গল্প কাহিনীর প্রভাব আছে। সেসব গল্পের বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে মানুষ ধর্মের প্রতি অনুরক্ত থাকে কিংবা ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ দাঙ্গা করে। কেননা তারা ঈশ্বর ও স্বর্গের কাহিনীতে বিশ্বাস স্থাপন করেছে।

শুধু ধর্ম না, আইনকানুন বিষয়েও একই কথা প্রযোজ্য। সভ্য যুগে সকল আইন কানুনের অন্যতম ভিত্তি হলো ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার। কিন্তু বাস্তবে মানবাধিকার ব্যাপারটিও একটি রূপকথা যার বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই। বস্তুতপক্ষে মানবের কোন অধিকার নেই, যেমন নেই শিম্পাঞ্জি বা নেকড়ের। পুরো মানবাধিকার ব্যাপারটি একটি গালগল্প যা আমরা নিজেরা বানিয়ে অন্যদেরকে বিশ্বাস করতে বলি। এটা খুব আকর্ষণীয় গল্প কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু এ শুধুই গল্প, বাস্তব কিছু না।

রাজনীতির ক্ষেত্রেও এই কথা প্রযোজ্য। যেমন একটা পর্বত হলো সত্যিকারের অস্তিত্ব। আপনি তাকে ছুঁতে পারেন, বেয়ে উঠতে পারেন, পর্বতের মাটি পাথরের ঘ্রাণ নিতে পারেন। কিন্তু আমেরিকা বা ইসরায়েল বা জাপান কোন বাস্তব ব্যাপার না। আপনি আমেরিকা- ইসরায়েল - জাপান নামের কোন অস্তিত্বকে ছুঁয়ে দেখতে পারবেন না। রাষ্ট্র নামক বিষয়টি পুরোপুরি একটা কল্পনা। এটি মানুষের তৈরী এবং মানুষ তাতে প্রবলভাবে বিশ্বাস করে যেমন বিশ্বাস করে ঈশ্বর বা স্বর্গের উপস্থিতি।

কল্পনার এই ঘটনা টাকাপয়সার ক্ষেত্রেও। ধরুন আপনার কাছে ১০০ টাকার একটা নোট আছে। এটা আপনি চিবিয়ে খেয়ে কোন মজা পাবেন না, জলে চুবিয়ে সরবত বানানো যাবে না, অলংকার বানিয়ে পরলেও সুবিধার হবে না। কিন্তু দেশের সরকার বা ব্যাংকের গভর্নর বলেছে এটার মূল্য দুই কেজি চিনির সমান। আপনি অচেনা কোন এক দোকানে গিয়ে নোটটি দিয়ে দোকানীকে বললেন দুই কেজি চিনি দিতে। সেই দোকানী লোকটা আপনাকে কখনো না চিনলেও বিনাবাক্য ব্যয়ে দুই কেজি চিনি দিয়ে দেবে ১০০ টাকা নামক কাগজের টুকরোর বিনিময়ে।

কেন দিয়েছে? দিয়েছে কেননা সেও আপনার মতো গভর্নরের গল্পটা বিশ্বাস করেছে যে এই টুকরো কাগজটির মূল্য দুই কেজি চিনির সমান। কিন্তু একটা শিম্পাঞ্জিকে কাগজের টুকরোটা দিলে কেমন হবে নিশ্চয়ই বোঝার বাকি নেই।

সম্ভবতঃ টাকা হচ্ছে মানব আবিষ্কৃত সর্বশ্রেষ্ঠ ফিকশন! পৃথিবীর সব মানুষ সমভাবে ঈশ্বর, মানবাধিকার কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের উপর আস্থাশীল নয়, কিন্তু ডলারের উপর আস্থা আছে সবার, এমনকি ওসামা বিন লাদেনেরওছিল । লাদেন আমেরিকার ধর্ম রাজনীতি সংস্কৃতি সবকিছুকে ঘৃণা করলেও আমেরিকান ডলারের উপর তার প্রেমে কোন খাদ ছিল না।ওই ফিকশনে তার কোন আপত্তি ছিল না।

সুতরাং যেখানে অন্য সকল প্রাণী নদী বৃক্ষ কিংবা বনের পশু যে কোন একটির উপর নির্ভর করে জীবনধারণ করে কিন্তু আমরা মানুষেরা সেখানে দ্বৈত জীবনে অভ্যস্ত। আমাদের জীবনধারণের প্রাথমিক উদ্দেশ্যের সাথে আমরা আরেকটি বিশ্বাসের স্তর নিয়ে বাস করি যা পুরোপুরি কাল্পনিক অস্তিত্ব নিয়ে আছে !যেমন জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ঈশ্বর, ডলার, মানবাধিকার ইত্যাদি। সময়ের সাথে সাথে এসব কাল্পনিক অস্তিত্বগুলো অনেক বেশী শক্তিশালী হয়েছে এবং আজকের পৃথিবীতে সেইসব কাল্পনিক বস্তুর প্রভাবই সবচেয়ে বেশী। বলা চলে তারাই আজ পৃথিবীর মূল চালিকাশক্তি। তাদের উপর নির্ভর করছে সমস্ত পৃথিবীর সব মানুষের জীবনধারণ চলন বলন নদী সমুদ্র বন কিংবা পশুপাখির অস্তিত্ব!

সবচেয়ে বড় কথা এই দ্বিতীয় কাল্পনিক জগতের জন্যই মানুষ আজ পৃথিবী শাসন করছে, অন্য প্রাণীরা তার নিজ নিজ শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিয়ে বনে জঙ্গলে বাস করছে।

[Professor Yuval Noah Harari এর WHY HUMANS RUN THE WORLD অনুসরণে লিখিত]

==========

আপনি জানেন কি?

সৌদির জনসংখ্যা কোটি ২১ লক্ষ। এর মধ্যে পুরুষ ৬১.% নারী ৩৮.% অর্থাৎ নারীর সংখ্যা কম প্রায় ৭৩ লক্ষ। একজন নারী পুরুষ যদি একজন নারীকে বিয়ে করে। তাহলে ৭৩ লক্ষ পুরুষ নারী খুঁজে পাবে না।

সৌদির পুরুষদের যৌন চাহিদা বেশি। এর কারণ হচ্ছে ধর্ম যৌনতা শেখায়, একাধিক বিয়েতে উৎসাহিত করে, বিনোদনের মাধ্যম কম,অলস মানুষের সংখ্যা বেশি, প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যতা ইত্যাদি। তবে প্রচুর পরিমাণ গৃহকর্মী নিয়োগ দিয়ে তাদের যৌনতা নিবারণ করছে। আমাদের দেয়া টাকায় বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মী/যৌন দাসী নিয়োগ দিতে পারবে।

২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে সৌদি আরব থেকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি আমাদের জনশক্তি কাজ করে। প্রায় বার লক্ষ নারী পুরুষ কাজ করছে সৌদিতে। যা থেকে বিশাল রিজার্ভ/বৈদেশিক মুদ্রা পাচ্ছি আমরা। চলুন জেনে নিই...

সৌদিতে আমাদের ১২ লক্ষ কর্মী কাজ করছে। তার মধ্যে লক্ষ পুরুষ এবং লক্ষ নারী।

তাদের নীট বেতন স্কেল...

দক্ষ। ৩০,৫৬১ টাকা

অদক্ষ ২৫'৭০০ টাকা

গৃহকর্মী ১৬,৪৬৭ টাকা

আমি ধরে নিচ্ছি, আমাদের ১০০% কর্মী দক্ষ। আর মহিলাদের প্রায় সবাই গৃহকর্মীর কাজ করে।

তাহলে পুরুষদের নীট আয় (,০০,০০০*৩০,৫৬১=,৭৫০) কোটি টাকা।

নারীদের নীট আয়

(,০০,০০০*১৬,৪৬৭=৪৯৪) কোটি টাকা।

নারী পুরুষের নীট আয় (,৭৫০+৪৯৪=,২৪৪) কোটি টাকা।

ধরে নিলাম পুরো টাকাই বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসে। মানে আমরা মাসে ,২৪৪ কোটি টাকা রিজার্ভ পাচ্ছি সৌদি থেকে।

যা বৈদেশিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে।

ঋণ কি আমরা আধো শোধ করতে পারবো?

চলুন দেখি ঋণ শোধ করা যায় কি না...

২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে হজ্জে যায় ,২৭,১৯৮ জন। উমরা করতে যান ,৩২,০৯২ জন।

হজ্জের খরচ ছিল ,৭২,৬১৮ টাকা। উমরার খরচ ছিল ,৩৩,০০০ থেকে ,৯০,০০০ টাকা।

তাহলে হজ্জ ব্যায় (,২৭,১৯৮*,৭২,৬১৮=,৫৫৫ কোটি টাকা।

উমরা ব্যায়

(,৩২,০৯২*,৬১,৫০০=,৭৪৮) কোটি টাকা।

উমরা এবং হজ্জের ব্যায় (,৫৫৫+,৭৪৮=,৩০৩) কোটি টাকা।

যা মাসিক রেমিটেন্সের প্রায় তিন গুণ।

,৩০,৩০,০০,০০,০০০/১৬,৪৬৭=.৬৪) কোটি।

তাহলে আমাদের দেয়া টাকায়, আমাদের দেশিয় গৃহকর্মী/যৌন দাসী প্রায় টি করে তারা ভাগে পেত। অর্থাৎ আমরা যে টাকা তাদের উপহার হিসেবে দিচ্ছি,সেই টাকায় আমাদের অধিকাংশ নারীরা হচ্ছে তাদের যৌন দাসী।

---------------------

দুর্ঘটনা মৃত্যু ও ডিনামাইট

 আবদুল গাফফার রনি

২৪ মার্চ, ২০২৪ ১৬:০০

শেয়ার

দুর্ঘটনা মৃত্যু ও ডিনামাইট

আলফ্রেড নোবেলের বাবার ছিল মানুষ মারার কারবার; যুদ্ধে অস্ত্র সাপ্লাই দিতেন। কিন্তু যুদ্ধ থেমে গেলে ব্যবসায় মন্দা আসে। অচীরেই দরিদ্র হয়ে পড়ে নোবেল পরিবার। তবে আলফ্রেড নোবেল ছিলেন নাছোড়বান্দা।

 

 

মাটি কামড়ে পড়ে থাকেন পৈত্রিক ব্যবসায়। বুঝতে পারেন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন অস্ত্র যদি তৈরি না করা যায়, তাহলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তিনি তাই নতুন বিস্ফোরকের খোঁজ করেন—এমন বিস্ফোরক, যা মুহূর্তেই ধ্বংস করে দিতে পারবে বড় বড় বিল্ডিং কিংবা পাথুরে পাহাড়। তিনি জানতেন, তরল নাইট্রোগ্লিসিরিনের আছে এহেন বিস্ফোরণের ক্ষমতা।

 

কিন্তু সমস্যা হলো নাইটোগ্লিসিরিন স্পর্শকাতর। একটুখানি ঝাুঁকনিতেই ঘটে যেতে পারে বড়সড় দুর্ঘটনা। তাই অত্যন্ত সাবধানে কাজ করতে হয়।

আলফ্রেড সুইডেনে একটা বিস্ফোরক কারখানা গড়লেন।

 

 

সেখানেই চলছিল নাইটোগ্লিসারিনকে বশে আনার চেষ্টা। কারণ, যত শক্তিশালী বিস্ফোরকই হোক, তাকে যদি নিরাপদে বহন বা নিক্ষেপ না করা যায়, সেটা কোনো কাজেই আসবে না। নানা পরীক্ষা-নিরীেক্ষা চলছিল, এর মধ্যে একদিন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে। নাইট্রোগ্লিসারিনের বিস্ফোরণে কারখানার একাংশ উড়ে যায়, নোবেল ছোট ভাই এমিল মারা যান, এমনকী আলফ্রেডও মারাত্মক আহত হন।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ফ্রান্স সরকার নোবেলের কারখানা বন্ধ করে দেয়।

 

 

ফলে নোবেল সুইডেন থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যান জার্মানিতে। সেখানে আরেকটি কারখানা খোলেন। নতুন উদ্যমে শুরু হয় নাইট্রোগ্লিসারিন গবেষণা। কিন্তু সেখানেও দুর্ঘটনা ঘটনার উপক্রম হয়েছিল। তাঁর হাত ফসকে নাইটোগ্লিসারিনের একটা বোতল পড়ে যায় মেঝেতে। নোবেল আতংকিত হয়ে উঠেছিলেন, ভেবেছিলেন এবার বিস্ফোরণে হয়তো তিনিও মারা পড়বেন। কিন্তু সেটা আর ঘটেনি।

নাইট্রোগ্লিসারিন তরল মাটিতে পড়ে দিব্যি শান্ত হয়ে ওঠে। এমনটা কেন হলো? নোবেল দেখলেন, মেঝেতে নাইট্রোগ্লিসারিণ যেখানে পড়েছে, সেখানে বিশেষ এক ধরনের বালু আছে। সেই বালু নাইট্রোগ্লিসারিনকে শুষে নিয়েছে বিস্ফোরণ ঘটার আগেই।

 

নোবেল বোঝার চেষ্টা করেন এই বালুর উৎস কী? খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে যান উত্তর—নাইট্রোগ্লিসারিনের বাক্সেই ছিল সেই বালু। ঝাঁকুনি লেগে যাতে নাইট্রোগ্লিসারিনের বোতল পড়ে না যায়, সেজন্য বাক্সে বোতলের চারপাশে বালু ঠেসে দেওয়া ছিল। পরে তারই কিছু অংশ মাটিতে পড়ে গিয়েছিল।

 

নোবেল  বুঝে ফেলেন, এই বালুই হতে যাচ্ছে তার তুরুপের তাস। সেই বিশেষ বালু আর নাইট্রোগ্লিসারিণের  পেস্ট তৈরি করে দেখলেন বিস্ফোরণ ঝাঁকুনি বা নড়াচড়ায় বিস্ফোরণ ঘটায় না। কিন্তু জোরে ছুড়ে মারলে কিংবা আগুনে পোড়ালে ভয়ানক বিস্ফোরণ ঘটায়। তবে স্বাভাবিক তাপ-চাপে এর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এটাই ছিল মহাবিস্ফোরক ডিনামাইট আবিষ্কারের মূলমন্ত্র। আলফ্রেড নতুন উদ্যমে কাজে লেগে যান। ১৯৬৭ সাল নাগাদ উদ্ভাবন করে ফেললেন ডিনামাইট। ইউরোপে এর পেটেন্ট রাইট নিলেন,  আমেরিকাতেও নিলেন।

শুধু যুদ্ধেই সীমাবদ্ধ থাকে না ডিনামাইট ব্যবহার। মাটির নিচে খনি তৈরিতে, বড় বড় পরিত্যাক্ত দালান ভাঙতে, এমনকী প্রয়োজনে পাহাড় গুড়িয়ে দিতেও ডিনামাইট ব্যবহার করা হয়।

 

আইন সবার জন্য সমান’ নাকি ক্ষমতাবানদের জন্য ভিন্ন?

‘ন্যায়বিচার বলে কিছু নেই, যদি না আপনি অর্থ দিয়ে তা কিনতে পারেন।’

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বৈজ্ঞানিক জার্নাল উইলিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বাংলাদেশের ৮৫ শতাংশ মানুষ খুশি নয়।ক্লিনিকগুলো দস্তুরমতো চিকিৎসক-রোগী আর টেস্টের হাটবাজার।রোগীর কথা শুনে বা না শুনে একগাদা টেস্ট, শেষে ব্যবস্থাপত্র। ব্যবস্থাপত্রে ৫ থেকে ১০ ধরনের ওষুধ।

সুন্নতে খতনা করতে জীবন সংহার। এন্ডোসকপি করতে গিয়ে তরুণের মৃত্যু। বাঁ কানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ডান কানে অস্ত্রোপচার। প্রসূতি পেলেই পকেটের ওজন বুঝে সিজার।কোনো প্রাইভেট প্রাকটিশনার কি কখনো কোনো রোগীকে নিজে থেকে কোনো ফলোআপ করেন? ফি নিয়ে টেস্ট করিয়ে রোগী দেখে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে দায়িত্ব কীভাবে শেষ হয়? রোগী ওষুধে ভালো হলো না খারাপ হলো, সে খবর নেওয়ার আইনত ও নৈতিক দায় তো রয়েছে।দুই. ওষুধের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে শিল্পমালিকেরা ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, কাঁচামালের উচ্চ মূল্য, বেতন বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণ দেখাবেন। কিন্তু বিপণনের অনৈতিক ব্যয় বন্ধ করার কথা কেন বলা হয় না। এ ব্যয় স্বাভাবিকভাবে ভোক্তার ওপরই আসে।অভিযোগ আছে, একই কোম্পানি দেশীয় লাইসেন্স নিয়ে বিদেশে গুণ ও মানসম্পন্ন ওষুধ রপ্তানি করে, আর দেশে নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ করে থাকে।

 

 

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনীতি থেকে দুর্নীতিকে আলাদা করা যায় না। দুর্নীতি এখন এসব দেশের রাজনীতির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোট এখানে রাজনৈতিক দুর্নীতি রুখতে পারছে না এবং দুর্নীতিগ্রস্তদেরও থামাতে পারছে না।জাতিবাদ ও ধর্মবাদ দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সমাজকে মাতিয়ে রাখতে পারছেন রাজনীতিবিদেরা।দক্ষিণ এশিয়ায় এরশাদের মতো চরিত্র বহু আছে। অনেকের স্মৃতিতে হয়তো ২০২২ সালের শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষেদের ক্ষমতাচ্যুতি ও পলায়নের কথা সজীব আছে। সমৃদ্ধ দেশকে দুর্নীতিতে দেউলিয়া করে দিয়েছিল এই পরিবার।

ট্রাম্প, ওরবানদের গণতন্ত্র গিলে ফেলা কতটা ভয়ংকর

ভারতের ধনী-গরিবের ব্যবধান অবাক করার মতো। শতকোটিপতি মুকেশ আম্বানির ছেলের প্রাক বিবাহে ১২ কোটি ডলার খরচ করার কথাই বিবেচনা করুন। ছেলেটি ১০ লাখ ডলারের ঘড়ি পরেছিল। সেখানে পারফর্ম করার জন্য একজন সুপারস্টার ৬০ লাখ ডলার পেয়েছিলেন।

 

অন্যদিকে, দরিদ্র লোকেরা ঠিকমতো খেতেও পাচ্ছে না। বাংলাদেশের মতো অকার্যকর বিপনন ব‍্যবস্থা ভারতের না। বিল গেটস ও এখন ভারতের ফুটপাতে চা খায়। ধনী -গরিবদের বৈষম্য যখন কমে তখন দারিদ্রতাও কমে।

অনলাইনে যেসব কাণ্ড ঘটছে, তাতে আমেরিকানরা খুব যৌক্তিকভাবেই উদ্বিগ্ন। ব্যক্তিজীবনের গোপনীয়তা লঙ্ঘনজনিত ক্ষতির বাইরে অন্যান্য ডিজিটাল ক্ষতি নিয়ে (যেমন ভুল তথ্য ও অপতথ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের দ্বারা প্ররোচিত কিশোর উদ্বেগ, বর্ণবাদী উসকানি ইত্যাদি) তাঁরা দুশ্চিন্তায় থাকেন।

 

এক যে ছিল রাজা। রাজার ভারি অসুখ। যায় যায় অবস্থা। ওষুধে কাজ হচ্ছে না। বদ্যি বলল, ‘সুখী মানুষের জামা এনে রাজার গায়ে পরিয়ে দাও। ব্যারামের আরাম হবে।

রাজার লোক সুখী মানুষের তালাশে বেরোল। তারা যার কাছে যায়, সে- বলে, তার দুঃখের শেষ নাই; তার এই সমস্যা, সেই সমস্যা।

শেষে নেংটি পরা এক লোককে পাওয়া গেল। সে বলল, তার কোনো দুঃখ নাই। সে বিরাট সুখী মানুষ।

রাজার লোক বলল, ‘তোর জামাটা নিয়ে আয়, লাখ টাকা দেব।’ লোকটা বলল, ‘কেমনে জামা আনব? আমার তো কোনো জামা নাই।’

গল্পটার এইটুকু আমরা সবাই জানি। পরেরটুকু জানি না। পরেরটুকু হলো: রাজার লোকেরা চলে গেল। রাত নামল। প্রচণ্ড ঠান্ডা পড়ল। জামা না থাকায় খালি গায়ে কাঁপতে কাঁপতে সুখী লোকটা নিউমোনিয়া বাঁধিয়ে শেষমেশ মারা গেল।

এই সুখী লোকের সুখের সঙ্গে পাগলের সুখের মিল আছে। তাদের দুজনেরই সুখের উৎপত্তিস্থল হলো অজ্ঞানতা। ঘরে আগুন লাগলে অবুঝ শিশু খিলখিলিয়ে সুখের হাসি হাসে। তার সুখও অজ্ঞানতাজাত। এই সুখ সর্বনাশা। এই সুখ বোধহীন। এই সুখ প্রগতিঘাতী।

আমরা মনে করি, অসুখী ও লোভীরাই উন্নয়নের মূল কারিগর। মাটিতে হেঁটে সুখী হতে পারেনি বলেই মানুষ প্লেন বানাতে পেরেছে।

 

লঞ্চ আর ফেরি পারাপার নিয়ে সুখী হতে পারিনি বলেই আমাদের মনে সেতু বানানোর অদম্য আকাঙ্ক্ষা পয়দা হয়েছে।

এর মধ্যে জিডিপি বাদে যতগুলো বিষয় আছে, তার সবগুলোই একেক লোকের কাছে একেক রকম ঠেকতে পারে। ব্যক্তিগত সুস্থতার অনুভূতি, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, উদারতা—এর কোনোটিরই তো কোনো স্পষ্ট অবয়ব নেই।

এগুলো পাঁচতলায় থাকা লোকের কাছে এক রকম ঠেকে, গাছতলায় লোকের কাছে ঠেকে আরেক রকম।

ইউরোপ আমেরিকার জল হাওয়া, সেখানকার মানুষের মেজাজ মর্জি আর তাদের জিডিপি, পার ক্যাপিটা ইনকাম, রিজার্ভকে প্যারামিটার ধরে তাদের সঙ্গে আমাদের তুলনা করে এগোলে আমরা মানব কেন? অনেকে আছে যারা সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষী। সে যা চায়, তা পায়। কিন্তু সে আরও চায়। এই লোক বিষণ্ন না। সতত অতৃপ্তিতে সে সারাক্ষণ অস্থির। সে সব সময়ই প্রতিষ্ঠার পরবর্তী ধাপে ওঠার জন্য উদ্দীপ্ত। সতেজ।

===

খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ২৫০০ সালে সুমেরীয় শহর লাগাশ এবং উম্মার মধ্যে টাইগ্রিস নদীর পানি নিয়ে বিরোধ বাধে। একটি চুক্তির মাধ্যমে এ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হয়।

 

এটিকে মানব ইতিহাসের প্রথম চুক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী, যা বাংলাদেশ এবং ভারত দুটি দেশেরই অংশ। এটি ভারতের সিকিম থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রংপুর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। পরে তা পদ্মা ও মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। তিস্তার অববাহিকা আনুমানিক ১২ হাজার ১৫৯ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত।

এ নদীটি বাংলাদেশ ও ভারতের তিন কোটির বেশি মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে জড়িত। এর মধ্যে দুই কোটির বেশি লোক বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে তিস্তার অববাহিকায় বসবাস করে। ৪০ লাখ লোক ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং প্রায় ৫০ লাখ লোক সিকিমের অববাহিকায় বসবাস করে। অর্থাৎ তিস্তার ওপর নির্ভরশীল ৭০ ভাগ লোক বাংলাদেশে তিস্তার অববাহিকায় বসবাস করে।

তিস্তা নদীতে ভারতের উজানে পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিমে বাঁধ, ব্যারাজ, জলবিদ্যুৎসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে তিস্তা নদীর পানির প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফসলগুলোর একটি বোরো ধান উৎপাদনে এর প্রভাব ব্যাপক। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা যায়, তিস্তার পানির ঘাটতির কারণে প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ টন বোরো ধান উৎপাদনের ক্ষতি হয়েছে। এটা দেশের মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৯ শতাংশের সমান।দীর্ঘদিন ধরে এই অবস্থা চলতে থাকলে তা ভবিষ্যতে পুড়ো উত্তরবঙ্গের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।এর সমাধান হলে কেবল পানি সমস্যার সমাধানই যে হবে তা নয়, এটি দুই দেশের জনগণের মধ্যে বিশ্বাস, আস্থা, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির সহায়ক হবে।

====

দেশের বাজারে এখনো লাগামহীন অবস্থায় রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট যেন কেড়ে নিয়েছে বাংলাদেশের সুখ। অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি দেশের আপামর জনসাধারণ। অবস্থা এমন, দেখে মনে হচ্ছে সরকারও রয়েছে এই অসাধু সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মিদশায়।

=====

ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি দান করেছিলেন, সেখানেই বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হয়েছে, আর রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করে বলেছিলেন, চাষাভুষাদের জন্য আবার কিসের বিশ্ববিদ্যালয়!

একটা মিথ্যা বারবার বলতে বলতে সত্যের মত প্রতিষ্ঠা পায় সেটা বাংলাদেশে এসে না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না। উপরের বাক্যগুলো আবার ফেইসবুকে ভাইরাল হচ্ছে। অথচ এই অসত্য তথ্যগুলো নিয়ে আমাদের মত অনেকেই অনেকবার লিখেছেন। দুঃখজনক হচ্ছে তাও কথাগুলো সত্য কিনা জানতে যখন বহু পাঠক আমাকে ইনবক্স করেন তখন প্রশ্ন জাগে আমি যে এই বিষয় নিয়ে একাধিকবার লিখেছি সেগুলোর তাহলে কি হলো? আপনারা যারা পড়েছিলেন তারা কি আমাদের লেখাগুলো যথেষ্ঠ প্রচার করেননি? এই যে বলেন পাশে আছি ভাই, এই পাশে থাকার অর্থটা কি?

মুহাম্মদ কয়টা বিয়ে করেছে, তার শিশু বিয়ে, দাসী ছহবত- কেবল এগুলো জানলেই হবে না। রবীন্দ্রনাথ আর সলিমুল্লাহকে দাঁড় করিয়ে একজনের জমিতে বিশ্ববিদ্যালয় বানানো আর অপরজনকে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধীতাকারী বানিয়ে ইতিহাস প্রতিষ্ঠা করতে পারলে একজন মুসলিম ব্যাকগ্রাউন্ডের নাস্তিককেও মুসলিম জাতীয়তাবাদী করানো যাবে। আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই নাস্তিক ধর্মকর্মহীন ছিলেন কিন্তু মুসলিম জাতীয়তাবাদ ধারণ করেছিলেন এইরকম হিন্দু বিদ্বেষ থেকে। হিন্দুদের বাড়িতে মুসলমান গিয়ে দাঁড়ালে সেই জায়গাটা গঙ্গজলে ধুঁয়ে ফেলার মত কালচার থেকেও ধর্ম অবিশ্বাসী মুসলমান দেশভাগের প্রাককালে মুসলিম জাতীয়তাবাদী হয়েছিল। তাই সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ইতিহাস জানা নিজের বুদ্ধি দিয়ে যাচাই না করে নিলে বুদ্ধির মুক্তি অসাম্প্রদায়িক মানুষ হওয়া সম্ভব হবে না।

সরদার ফজলুল করিম প্রশ্ন করেছিলেন প্রফেসর আবদুর রাজ্জাককে, স্যার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নাকি নবাব সলিমুল্লাহ অর্থ জমিদান করেছিলেন। সে কারণেই তার নামে একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ নাকি করা হয়েছিলো। প্রফেসর রাজ্জাক এই দাবী পুরোটাই নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন আপনারা ঢাকা কালেক্টরেটে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখেন জমি দান করার মত জমি আহসান মঞ্জিলের ছিল না।

বর্তমানে মডারেট মুসলমান মৌলবাদী মুসলমানদের কাছে সলিমুল্লাহ খান জনপ্রিয়। সলিমুল্লাহর গুরু ছফা, ছফার গুরু রাজ্জাক। ফলে মডারেট সমাজ এই তথ্যদাতাকে অগ্রহণযোগ্য বলার কোন সুযোগ নেই। রাজ্জাক সাহেব বলেছেন, আহসান মঞ্জিলের বৃত্তিতে কিছু মুসলমান ছেলে লেখাপড়া করত। তাদের একজন আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী। কৃতজ্ঞ আবদুল্লাহ সাহেব সলিমুল্লার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করত। সলিমুল্লাহর মৃত্যুর দশ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্রদের জন্য একটি ছাত্রাবাস তৈরি করা হলে তার নামকরণ সলিমুল্লাহ মুসলিম হল প্রস্তাব করেন আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী। (সূত্র: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ববঙ্গীয় সমাজ: অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর আলাপচারিতা, সরদার ফজলুল করিম, পৃষ্ঠা ২০-২১)

এই হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে নবাব সলিমুল্লাহর সম্পর্ক! আহসান মঞ্জিলের আসলে কোন জমি ছিল না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করার মত। ঢাকার নবাবদের জমির উত্স ছিল ওয়াকফ করা জমি। এসব জমি আসত মুসলমানদের কাছ থেকে। অনেক মুসলমান তাদের জমি ঢাকার নবাবদের ওয়াকফ করে দিতো। এসব জমিই মূলত নবাব পরিবার ভোগ করতো। ঢাকার নবাব ঋণে জর্জরিত ছিল। ফলে ১৯০৫ সালে ইংরেজদের কাছে এক লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে বঙ্গভঙ্গের আন্দোলনে যোগ দেয়। ইংরেজদের দালাল হিসেবে ঢাকার নবাবকে আমাদের ইতিহাস কোনদিন দায়ী করেনি কারণ এখানকার ইতিহাস আগাগোড়া মুসলিম জাতীয়তাবাদ থেকে লেখা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে সরকারের খাস জমিতে কিছু হিন্দু জমিদারের দান করা জমিতে। ঢাকায় শিক্ষা বিস্তারে ঢাকার হিন্দু জমিদারদের ভূমিকা আমাদের ইতিহাস হাইড করে ফেলে দেশভাগের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে। শতবর্ষী সমস্ত কলেজ স্কুলগুলোর প্রতিষ্ঠাতা হিন্দু জমিদার, উকিল, সরকারী চাকুরে ব্যক্তিবর্গ। বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর দানে তার পিতার নামে ১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জগন্নাথ কলেজ’ যা বর্তমানে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করেছে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল জগন্নাথ কলেজ ঢাকা কলেজের ছাত্রদের নিয়ে। এর স্বীকৃতি স্বরূপ কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কমিশনের সুপারিশে কলেজ দুটির নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ছাত্রাবাসের নাম করা হয় যথাক্রমে ‘জগন্নাখ হল’ ‘ঢাকা হল’। ফলে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রদায়িকভাবে সলিমুল্লাহকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমিদাতা দেখিয়ে রবীন্দ্রনাথকে খলনায়ক করে যে ইতিহাস চর্চা এখানে হচ্ছে তার কোন অস্তিত্বই নেই।

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতার কোন ইতিহাস নেই। একটি প্রমাণ, দলিল আজ পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেনি। কোলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করে যে সভা হয়েছিলো সেখানে রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত ছিলেন না। তখন তিনি কুষ্টিয়ার শিলাইদহে। তাছাড়া ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় হোক এটা মুসলমান নেতারাই চাচ্ছিলেন না। কারণ এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে তার সুফল মুসলমানদের হবে না। ছাত্র তো সব হিন্দু। মুসলমানরা তখন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যেতে পারত না। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সরকারের শিক্ষা বাজেটের অনেক অংশ সেখানে চলে যাবে। ফলে স্কুলের ফান্ডে টান পড়বে। এমন কি আলীগড় পর্যন্ত ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় হোক চায়নি। প্রফেসর রাজ্জাক সাহেব জানিয়েছেন, দেশভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছিল শিক্ষকদের অভাবে। শিক্ষকদের ৯৯ জন ছিলেন হিন্দু। তারা চলে যাওয়ায় শিক্ষকের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঠেকাতে বিলেত থেকে শিক্ষক আমদানি করে আনতে হয়েছিল। মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষক হওয়ার মত তেমন শিক্ষিত শ্রেণীই গড়ে উঠেনি তখন পর্যন্ত! তাহলে চিন্তা করুন ১৯২১ সালে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় হলে কাদের লাভ হওয়ার কথা? এটা কমনসেন্সের বিষয়।

রবীন্দ্রনাথ তার নোবেল পুরস্কার থেকে পাওয়া টাকার পুরোটা্ পূর্ববঙ্গে বিলিয়ে দেন। কৃষি ব্যাংক খুলে সমস্ত টাকা খুইয়ে দেন কৃষকদের ঋণ দিয়ে। এই ঋষিতুল্য মানুষটিকে নিয়ে বাংলাদেশে সলিমুল্লাহদের হাতে যেভাবে আক্রান্ত হোন তার স্বপক্ষে একটি যৌক্তিক কারণ কোথাও নেই। স্রেফ সাম্প্রদায়িক কারণে এই মহান কবি এখানে লাঞ্ছিত হোন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যখন এই রকম লেইম তথ্য শেয়ার করে তখন আমারই বলতে ইচ্ছে করে, মুসলমানদের জন্য আবার বিশ্ববিদ্যালয় কেন, ওদের জন্য তো মাদ্রাসা আছে...

- প্রকৃত সত্য।

- ঢাকার নবাবরা মুর্শিদাবাদের মত নবাব ছিল না। এরা কাশ্মিরে মামলায় পড়ে সিলেটে এসে লবনের ব্যবসা করেন। সেখান থেকে ঢাকা। ব্যবসায় প্রচুর লাভ করেন। ভাষা ছিল উর্দু। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহে ইংরেজদের দালালী করতেন। বাংলার বিদ্রোহীদেরকে ভিক্টোরিয়া পার্কের গাছে গাছে ফাঁসি দিতে সহায়তা করেন। পুরস্কার স্বরূপ ইংরেজ নবাব উপাধি দেন। সুন্দর বনের জমি নামমাত্র মুল্যে কিনে বন কেটে বেশি দামে বেঁচেন। কোন কোন এলাকার জমিদারী নিলাম হলে তা কিনে লাভবান হন। পরে ঢাকা মিউনিসিপালিটির কর্মকর্তা হন। তখন মেডিকেল করাসহ কিছু প্রতিষ্ঠান ইংরেজ করতে সহায়তা দেন - এটুকু অবদান তাদের।

নবাব বাড়ীটাও তাদের করা না। জামালপুরের এক জমিদারের করা প্রমোদ ভবন। সে জমিদারকে মোগল ফৌজদার বিষ খাইয়ে হত্যা করে এক নাচনেওয়ালী জমিদার প্রেমিককে পাওয়ার জন্য। পায়নি। সে নাচনেওয়ালী আত্মহত্যা করেছিল ফৌজদারের হাতে না পড়তে। করুন সে কাহিনী। এরপর বাড়ীটা ফরাসি ও ইংরেজদের হাত হয়ে অনেক পরে নবাবরা কিনে নেয়। এরাই ভারতে মুসলিম লীগ করে। ভারত ভাগে কোলকাতা এ বঙ্গে পড়তো। সোহরাওয়ার্দী ও মুজিব দৃঢ় ছিল। নবাব খাজা নাজিমদ্দিনকে জিন্নাহ বাংলার প্রধানমন্ত্রী বানায় সেহরাওয়ার্দীকে সরিয়ে। খাজা নাজিমদ্দিন পিএম হয়েই সব দাবী বাদ দিয়ে ঢাকায় চলে আসে। (বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে দেখুন)।  জিন্নাহ বাংলাকে বড় করতে চায়নি। আসাম, কোলকাতাসহ বড় হলে ক্ষমতা পুর্বপাকিস্তানে থাকার ভয়ে জিন্নাহ তা করে।

১৯৫২ সালে বাংলা ভাষার দাবীতে গুলি করার অর্ডার এই নাজিমুদ্দিন দেয়। তখন তিনি করাচিতে পাকিস্তানের গভর্ণর জেনারেল।

এরা বাঙালী বিরোধী ছিল প্রচন্ড। তাই ৭১ এর পর বাংলাদেশে থাকতে পারেনি। পাকিস্তানে চলে যায়। শেষ নবাবরা (ওয়াকফ ষ্টেট মালিক) পাকিস্তানে মারা যায়।

এরকম একটা পরিবারের পক্ষে কোন বাঙালী কথা বলাই পাপ। রাজাকাররা সে পাপ এখনো করছে। এদের বরং ধিক্কার দেয়ার ভাস্কর্য বানানো উচিৎ ঢাকা শহরে। এসব ইতিহাস গুগলেই আছে। এরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি দিয়েছিল এটা ১০০% মিথ্যা। গুগলে বা কোথাও নাই। এখন গুগলে দেখায় যা ডক্যুমেন্টেড না, সমসাময়িক বক্তব্য প্রেক্ষিত দেখায়। ইতিহাসে নাই। কেউ প্রমাণ করতে পারবে না।

===

আমি নিজে সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময় তাঁর নামকরণের ইতিহাস ঘেঁটে প্রবন্ধ লিখিয়েছিলাম কলেজ ম্যাগাজিনে। জনাব সলিমুল্লাহ দান করেছিলেন পাঁচ হাজার টাকা, রাণী দিনমণি পঞ্চাশ হাজার টাকা আর মিটফোর্ট দিয়েছিলেন তাঁর সারা জীবনের সঞ্চয়, জমি সব। তবু নামকরণ হলো নবাবের নামে, আর দিনমনির নাম প্রায় বিলুপ্ত! এ

=

মুসলমান মূলত কালচারালি আইসোলেটেড। এদের জীবনে আনন্দঘন মুহূর্ত খুব কম আসে। ধর্মীয় ভাবেই এদের সঙ্গে আনন্দ উৎসবের সম্পর্ক নাই। ধর্মীয় ভাবে মুসলমানরা যে দুটা দিন সেলিব্রেট করে তার একটা হইলো রোজার ইদ, আর একটা কুরবানির ইদ। এই দুটা কে উৎসব বলা হলেও, উৎসব বলতে আমরা যা বুঝি, জানি তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। মুসলমানদের জন্য যে দুটা দিন নবী মোহাম্মদ ফিক্সড করে দিয়েছে সেটা মূলত ইবাদতের অনুষঙ্গ। ইদানিং কালে আহালে কুরআন নামের এক শ্রেণির বাটপারের উদ্ভব হয়েছে, যারা হাদিস অস্বীকার করে। অথচ হাদিস অস্বীকার করলে রোজার ইদ, কুরবানির ইদ দুটাই ইনভ্যালিড হয়ে যায়। রোজা কিংবা কুরবানি দুটা ইবাদতের অংশ, কোন ভাবেই উৎসব না। এই দুটা ইভেন্টে কেবল মুসলমানরা অংশ গ্রহণ করে।

কালচারালি আইসোলেটেড হবার কারণে মুসলমানরা এসব দিনে খাওয়া দাওয়ার প্রতি ফোকাস করে, অথচ এই দুটা দিন কেবল ইবাদতের। ২৯/৩০ দিন রোজা রেখে, পরের দিন ভোরে উঠে গিয়ে নামাজ পড়বেন, কুরবানির সময় আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য, তাকওয়া প্রুফ করার জন্য পশু কুরআনি করবেন। কিন্তু এটা এখন হয়ে গেছে রেড মিট ফেস্টিভ্যাল, তাকওয়া, ইবাদতের ছিটেফোঁটা নাই।

এরা যে কালচারালি আইসোলেটেড, এটা এরা নিজেরাও ভালো রিয়েলাইজ করে। এজন্য আশেপাশের মানুষের উৎসব, নাচ গান, পানাহার, আনন্দ হৈ হুলোড়ে এরা পেঁচার মত মুখ করে থাকে। কোন সময় এরা সংখ্যাগরিষ্ট হলে এসব বন্ধ করে দেবার স্বপ্ন দেখে, কিংবা বন্ধ হয়ে যাবার অপেক্ষা করে। এদের টেনডেন্সি হলো, আমাদের নাই, বাকিদের থাকতে পারবে না। এতে আসলে এদের দোষ নাই।

মানুষ সুপ্রাচীন কাল থেকে উৎসব, পার্বন এসবের প্রতি সংবেদনশীল। সুরেলা কন্ঠ, সুর,লয় তাল এসবের প্রতি মানুষের বিবর্তনীয় সংবেদনশীলতা লক্ষ্য করা যায়। বাঙালির কথা ধরুন! ট্যাগ লাইন হচ্ছে " বারো মাসে তের পার্বন" অর্থাৎ বারো মাসে গুনে গুনে তেরো টা উৎসব। বাঙালির ভাটিয়ালি আছে, ভাওয়াইয়া আছে, জারি সারি আছে, পুঁথি পাঠ আছে, যাত্রাপালা আছে, বাংলা নববর্ষ - পহেলা বৈশাখ, বর্ষা উৎসব, নবান্ন উৎসব, পৌষ মেলা

বসন্ত বরন - পহেলা ফাল্গুন, নৌকা বাইচ, বাউল উৎসব

জাতীয় পিঠা উৎসব, ঘুড়ি উৎসব সহ কত শত আনন্দ উদযাপনের উপলক্ষ্য আছে। কিন্তু কোন বাঙালি সাম হাউ মুসলমান হয়ে গেলে ধর্মীয় ভাবেই তার জন্য এসব বন্ধ।

এরা বাকিদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণের জন্য মিলাদুন নবী, শবে বরাত ইত্যাদির প্রচলন করার চেষ্টা করলেও সেসব ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এসবের ধর্মীয় ভিত্তি নেই, নবী মোহাম্মদ কখনো এসব উৎসব হিসেবে পালন করে নাই। এসব দিনে হালুয়া রুটি খেয়ে সুগার বাড়ানো ছাড়া অন্য কোন সিগনিফিকেন্ট ভ্যালু নাই। নবী মোহাম্মদ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, তার জন্মদিন নিয়ে। তিনি বলেছিলো, তিনি সোমবার জন্মগ্রহণ করেন, এবং সেজন্য সোমবার রোজা রাখেন। ওই যে আবার ইবাদতের অনুষঙ্গ হয়ে গেলো। কিন্তু বাঙালি মুসলিম রোজা বাদ দিয়ে নবীর জন্ম দিনে কবজি ডুবিয়ে খেয়ে বেড়ায়।

মূলত বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে মুসলমানের বিরোধ আছে। বাঙালি কখনো মুসলমান হতে পারবে না, মুসলমান কখনো তার ধর্মীয় বিধিনিষেধ বাদ দিয়ে বাঙালি হতে পারবে না। অন্য দিকে বাঙালি হিন্দুদের উৎসব দেখেন, দুর্গা পূজা, কালীপূজা, সরস্বতী পূজা, রথযাত্রা, দোলযাত্রা

জন্মাষ্টমী, কোজাগরী, লক্ষ্মীপূজা, ভাই ফোঁটা সহ আরো কত কী! সব গুলো ফেক্সিবল। এগুলো তে আপনি ইনস্ট্যান্ট গিয়ে এটেন্ড করতে পারবেন, তাদের আনন্দে গিয়ে সামিল হতে পারবেন, আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারবেন। মুসলমানদের সেই সুযোগ নাই। কদিন আগে বড় দিন গেলো, কলকাতায় সাঁজ সাঁজ রবে ক্রিসমাস পালন হয়েছে। দুনিয়ায় হিন্দু গিয়ে সেটায় আনন্দ করছে। বাট আপনি মুসলমান হয়ে একটা পোস্ট দিতে পারবেন না, ক্রিসমাসে উইশ করে। এটা ফ্যাক্ট।

আগে বলেছিলাম বাঙালির সংস্কৃতির সঙ্গে মুসলমানের বিরোধ আছে। এই বিরোধটা একনলেজ করে বলে অনেক মুসলিম কে দেখবেন বলবে "সে আগে মুসলিম, তারপর বাংলাদেশী" কারণ যে জানে, বাঙালি মুসলিম বলতে কিছু হয় না। তার প্রথম এবং এক মাত্র পরিচয়, সে মুসলিম। ঠিকঠাক পর্দা করে না,ধর্মীয় ভাবে এমন অর্ধ উলঙ্গ আপ্পিদেরও দেখবেন প্রোফাইলে লিখে রাখে " প্রাউড মুসলিম " বা "মুসলিম বাংলাদেশী" কারণ সে এই বিরোধ সম্পর্কে অবগত। ঠিকঠাক ভাবে আমল না করলেও তার ইমান ঠিক আছে।

প্রাক ইসলামী যুগেও কাবার চারদিকে কবিদের কবিতার আসর বসতো, সেরা সেরা কবিতা গুলো কাবার দেয়ালে টাঙিয়ে দেয়া হতো, গায়িকা ছিলো, আসমা বিনতে মারওয়ানের মত মহিলা কবি ছিলো। কিন্তু মোহাম্মদের নব্যুয়তের পর সব শেষ। মুসলিমরা মাইনরদের নানাভাবে এপ্রেসড করে, এটা মূলত কালাচারাল আইসোলেশনের আউট কাম। কালচারালি মুসলমান পঙ্গু, দুনিয়ায় সঙ্গে সে সম্পর্কহীন, তার মেইন এইম হচ্ছে আখিরাত।

ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে, নারী পুরুষ বাচ্চাকাচ্চা বিভিন্ন উৎসব পার্বনে হৈ হুল্লোড়ে মেতে উঠেছে, আর ঠিক সেই সময়ে কোন মুসলিম এই আনন্দঘন মুহূর্ত বিরস বদনে জানালায় দাঁড়িয়ে দেখছে। এটা তার উপর মনস্তাত্ত্বিক প্রেসার ফেলে, নিজের ভেতর সে কুঁকড়ে যেতে থাকে। এজন্য সে ক্ষমতা পাওয়ার পর অন্যদের ইনভেইড করে, অপ্রেসড করে, অন্যদের উপর নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।

======

প্রথম পর্ব: জৈন নিরীশ্বরবাদ

লেখক: সুদীপ্ত পাল

প্রাচীন ভারতের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারসমূহ নিয়ে বহুবিধ কাহিনী আমরা বলি - কিছু সত্য, কিছু কষ্টকল্পিত। কিন্তু ভারতীয় বিজ্ঞানভাবনার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অনেকে এড়িয়ে যায়- বিশেষ করে যারা কষ্টকল্পিত কাহিনী নিয়ে সবচেয়ে বেশি গর্ব করে তারা এই বিষয়টা সম্পূর্ণ এড়িয়ে যায়- সেটা হল নাস্তিকতা। সঠিকভাবে বলতে গেলে নিরীশ্বরবাদ।

যে দর্শনগুলি বেদের প্রামাণ্যতাকে অস্বীকার করত তাদের বলা হয় নাস্তিক দর্শন - বৌদ্ধ, জৈন, চার্বাক, আজীবক। আর যারা করত না তারা আস্তিক দর্শন - সাংখ্য, ন্যায়, বৈশেষিক, যোগ, মীমাংসা আর বেদান্ত। এদের মধ্যে সাংখ্য, ন্যায়, বৈশেষিক প্রাচীনতর। আস্তিক দর্শনের মধ্যেও দুটি নিরীশ্বরবাদী দর্শন ছিল- সাংখ্য মীমাংসা।

ঈশ্বরের ধারণা প্রথম দেখা যায় ন্যায় দর্শনে, যা পরবর্তীতে বৈশেষিক, যোগ বেদান্ত দর্শনে গৃহীত হয়। এই ঈশ্বরের ধারণাকে বলিষ্ঠভাবে খণ্ডন করেছিল জৈন চার্বাক দর্শন। ন্যায় দর্শনের আগেও উপনিষদে ঈশ্বরের আভাস পাওয়া যায়। নিরীশ্বরবাদে প্রবেশ করার আগে আমাদের বুঝতে হবে ঈশ্বর কীভাবে জন্মালেন! আর দর্শনশাস্ত্রেই বা তাঁকে টেনে আনার প্রয়োজন কেন হল?

ভারতীয় দর্শনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল কার্যকারণ ব্যাখ্যা। কার্য অর্থাৎ ফলাফল (effect) , আর কারণ হল cause মৃৎপাত্রের উপাদানকারণ হল মাটি, আর নিমিত্তকারণ হল কুমোর। আবার এই কারণগুলোর পিছনেও কারণ থাকবে, তাদের পেছনেও কারণ থাকবে- এই কার্যকারণ পরম্পরা প্রায় সব দর্শনেরই আলোচ্য বিষয়। ন্যায় দর্শনের মতে জগৎ সৃষ্টির নেপথ্যেও একজনকে থাকতে হবে যার “ইচ্ছা” থেকে জগতের সৃষ্টি প্রলয় বারবার চক্রাকারে হয়েছে। ইনিই ন্যায় দর্শনে ঈশ্বর রূপে পরিচিত। ন্যায়মতে জগতের উপাদানকারণ হল পরমাণু, আর নিমিত্তকারণ হলেন ঈশ্বর। এই ঈশ্বরের ইচ্ছা না থাকলে ন্যায় দর্শনে জগৎ সৃষ্টির ব্যাখ্যা করা যায় না। এই ঈশ্বর অতীন্দ্রিয় কিন্তু তাঁর ইচ্ছা আছে। এই ধারণার প্রতিফলন দেখা যায় বেদান্তেও। ন্যায়মতে উপাদানকারণ জড়, আর নিমিত্তকারণ হল চেতন- মাটি আর কুমোরের মতো‌। নৈয়ায়িকরা মনে করে এই নিয়ম সমগ্র জগতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য- তাই একজন চেতনাসম্পন্ন ঈশ্বরকে তারা জরুরি মনে করে।

ন্যায় দর্শনে ঈশ্বর একটিই, নাহলে একাধিক ঈশ্বরের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব চলত। পরে বেদান্তেও এই ধারণা দেখা যায়। বেদান্তের সিংহভাগ শাখায় বিষ্ণুই সেই একমাত্র ঈশ্বর যার ইচ্ছায় জগৎ বারবার সৃষ্টি ধ্বংস হচ্ছে- এবং তিনিই একমাত্র ঈশ্বর - বাকি দেবতারাও তাঁর ইচ্ছায় চালিত। আরও পরবর্তী যুগে যখন পুরাণ সাহিত্যের রচনা শুরু হল, সেখানে বারবার বিষ্ণুকে দেখানো হয়েছে সৃষ্টি এবং প্রলয়ের নিয়ন্তা হিসেবে- ন্যায় দর্শনকে অনুসরণ করে।

ন্যায় বেদান্তের এই ঈশ্বরের ধারণাকে নস্যাৎ করেছিল জৈন দর্শন।

জৈনধর্ম মৌলিকভাবে নিরীশ্বরবাদী। মহাবিশ্ব ঐশ্বরিক ইচ্ছা দ্বারা সৃষ্ট বা ঐশ্বরিক মনন দ্বারা পরিচালিত- এই মতবাদকে জৈনরা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করে এসেছে - জৈন দর্শনে প্রকৃতির নিয়মগুলিই প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করার জন্য যথেষ্ট। জৈনধর্মে যক্ষযক্ষী দেবদেবীদের অস্তিত্ব থাকলেও সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের ধারণা সেখানে নেই।

ঈশ্বরের ধারণার বিরুদ্ধে জৈন দর্শনের যুক্তির সবচেয়ে ভালো উদাহরণ পাওয়া যায় জৈন “মহাপুরাণ” গ্রন্থে, যা নবম শতাব্দীতে দিগম্বর শিক্ষক জিনসেন দ্বারা সংস্কৃতে রচিত হয়েছিল। জিনসেন রাষ্ট্রকূট রাজ্যবাসী ছিলেন। সমগ্র মহাপুরাণ বইটি হিন্দু পুরাণের আদলে লেখা এবং এতে প্রধানত বিশ্বতত্ত্ব এবং পিতৃপুরুষ তীর্থঙ্করদের কিংবদন্তি রয়েছে। হিন্দু পুরাণের মতো, এটিতেও বহুবিধ দার্শনিক এবং তার্কিক বিষয় আলোচিত হয়েছে।

আমি মহাপুরাণের বিশেষ একটি অংশের [মহাপুরাণ, 4.16-31, 38-40] অনুবাদ পাঠকের সামনে রাখব। মূল সংস্কৃতের ইংরাজি অনুবাদ থেকে যথাসম্ভব বাংলায় অনুবাদ করলাম (বন্ধনীর অংশগুলো এই লেখকের নিজস্ব টিপ্পনী)-

কিছু মূর্খ ঘোষণা করে যে একজন সৃষ্টিকর্তা পৃথিবী তৈরি করেছেন। বিশ্বকে যে সৃষ্টি করা হয়েছিল এই ধারণাটিই অযৌক্তিক।

ঈশ্বর যদি পৃথিবী সৃষ্টি করেন তবে সৃষ্টির আগে তিনি কোথায় ছিলেন? আপনি যদি বলেন তিনি তখন অতীন্দ্রিয় ছিলেন, এবং তাঁর কোনো অবলম্বনের প্রয়োজন ছিল না, তাহলে এখন তিনি কোথায়?

কোন সত্তারই এককভাবে এই জগৎ তৈরি করার দক্ষতা ছিল না- কেননা একজন নির্বস্তুক ঈশ্বর কি করে সেই জিনিস তৈরি করবেন যা বস্তুনির্মিত? কিভাবে ঈশ্বর কোন কাঁচামাল ছাড়া পৃথিবী তৈরি করতে পারে? আপনি যদি বলেন যে তিনি প্রথমে কাঁচামাল তৈরি করেছেন, এবং তারপরে এই বিশ্বকে, তাহলে এই যুক্তি একটি সীমাহীন চক্রের মুখোমুখি হয়।

(অর্থাৎ প্রশ্ন আসবে কাঁচামালগুলো কে নির্মাণ করেছিল বা কাঁচামালের কাঁচামাল কোথা থেকে এলো)

আপনি যদি দাবি করেন যে এই কাঁচামাল “স্বাভাবিকভাবেই” উদ্ভূত হয়েছে, তাহলে আপনি অন্য একটি ভ্রান্তির মধ্যে পড়ে যান- যে মহাবিশ্বের অনেক বস্তু নিজেই নিজের স্রষ্টা- অতএব তারা ওই একই স্বাভাবিক নিয়মে উদ্ভূত হয়েছে (ঈশ্বরের হস্তক্ষেপ ছাড়াই)

ঈশ্বর যদি কোন কাঁচামাল ছাড়া শুধু নিজের ইচ্ছা থেকে পৃথিবী নির্মাণ করেন, তাহলে এটা শুধু তার ইচ্ছা ব্যতীত আর কিছু না- এই মূর্খতা কে বিশ্বাস করবে?

তিনি যদি চিরন্তনভাবে নিখুঁত এবং সম্পূর্ণ হন, তবে কীভাবে তাঁর মধ্যে সৃষ্টি করার ইচ্ছা জাগবে? (সম্পূর্ণতা লাভের পর আরও কিছু যোগ করার ইচ্ছা সম্পূর্ণতার পরিপন্থী)

অন্যদিকে, তিনি যদি নিখুঁত না হন, তবে তাঁর তৈরী মহাবিশ্ব একজন কুম্ভকারের সৃষ্টির চেয়ে খুব বেশি আলাদা হবে না।

তিনি যদি নিরাকার, কর্মহীন এবং সর্বাঙ্গীণ হন, তাহলে তিনি কীভাবে বিশ্ব সৃষ্টি করতে পারতেন?

কারণ এইরূপ আত্মা সমস্ত সংসাধনবর্জিত, তার কিছু সৃষ্টি করার কোন ইচ্ছা থাকবে না।

যদি তিনি নিখুঁত হন, তবে তিনি মানুষের মতো তিনটি লক্ষ্যের (ধৰ্ম-অর্থ-কাম) প্রত্যাশা রাখেন না, তাহলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে তার লাভ কি হবে?

আপনি যদি বলেন যে তিনি কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই সৃষ্টি করেছেন, কারণ এটি করা তার স্বভাব ছিল, তাহলে ঈশ্বর অর্থহীন।

যদি তিনি খেলাচ্ছলে জগৎ সৃষ্টি করেন, তবে এটি একটি মূর্খ শিশুর খেলা ছিল।

যদি তিনি প্রাণীদের বিগত জন্মের কর্মফলরূপে জগৎ সৃষ্টি করেন তবে তিনি সর্বশক্তিমান প্রভু নন, অন্য কিছুর দ্বারা চালিত।

(টিপ্পনী- ন্যায় দর্শনের মতে প্রত্যেকবার সৃষ্টিক্রিয়ার সময় ঈশ্বর পূর্বকর্মের ফল জগতের প্রতিটা পরমাণুর মধ্যে আরোপ করেন, এবং এর ফলে তাদের ভবিষ্যৎ বা অদৃষ্ট নির্ধারিত হয়। প্রশ্ন আসে- যদি কর্মফল দিয়েই ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ নির্মাণে ঈশ্বরের ভূমিকা কী? আর ঈশ্বরই যদি সমস্ত বস্তুর ভবিষ্যৎ ঠিক করে দেন তাহলে কর্মফলের ভূমিকা কী? ঠিক এই জায়গাটায় এসেই জিনসেন মোক্ষম আঘাত হেনেছেন ন্যায় দর্শনের সৃষ্টিতত্ত্বে।)

যদি ঈশ্বর জীবের প্রতি ভালবাসা এবং তাদের প্রয়োজন মাথায় রেখে পৃথিবী তৈরি করেন তবে কেন তিনি এই সৃষ্টিকে সম্পূর্ণ আনন্দময়, দুর্ভাগ্যমুক্ত করলেন না?

তিনি নিজের সন্তানদের হত্যা করেন- যা পাপ। যদি আপনি বলেন দুরাচারীদের শাস্তি দিতে তিনি এই কাজ করেন, তাহলে প্রশ্ন ওঠে- তিনি দুরাচার বা দুরাচারীদের সৃষ্টিই বা করলেন কেন?

কার্ল সাগান তাঁর কসমোস বইটিতে জিনসেনের এই বক্তব্যের কিছু অংশ উদ্ধৃত করেছেন।

এছাড়া গুণরত্নের তর্করহস্যদীপিকায় দেখা যায় জৈন দর্শন প্রমাণ করেছিল- ঈশ্বরও মূলতঃ কার্য (অর্থাৎ ফলাফল) তাই তাঁকে সব কারণের আদি কারণ বলা যায় না। জৈন দর্শন কার্যতঃ এটাই বলেছিল - ঈশ্বর আসলে সৃষ্ট বস্তু- সৃষ্টিকর্তা নন। গুণরত্নের লেখায় জৈন দর্শনের আরও কয়েকটি যুক্তি দেখা যায়- ঈশ্বরের সৃষ্টির বৈচিত্র এতই বেশি যে মানতে হবে ভিন্ন ভিন্ন বস্তু সৃষ্টি করার সময় তাঁর ইচ্ছারও বারবার পরিবর্তন হয়েছে, আর তা যদি হয় তিনি অপরিবর্তনশীল শ্বাশ্বত নন। আর দেখা যায় ন্যায়দর্শনের একেশ্বর তত্ত্বের উপর মোক্ষম আঘাত। নৈয়ায়িকরা বলে- ঈশ্বর একাধিক হলে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকত। জৈন দর্শন তার উত্তরে বলেছে- যেখানে পিঁপড়ে আর মৌমাছিরা পারস্পরিক সহযোগিতা সহকারে কাজ করে- সেখানে ঈশ্বর এই দ্বন্দ্বটুকু যদি সামলাতে না পারে তাহলে সেই ঈশ্বর অনির্ভরযোগ্য। তোমরা যে ঈশ্বরকে সমস্ত সদ্গুণের আধার বানিয়েছ এই ঈশ্বর তার বিপরীত।

আধুনিক বিজ্ঞান গত দুই শতাব্দীতে প্রমাণ করতে পেরেছে যে জগতের নির্মাণ স্বতঃস্ফুর্ত ভাবেই সম্ভব। ডারউইনীয় বিবর্তন এবং বিগ ব্যাং থিওরি দেখাতে পেরেছে বিশ্বসৃষ্টির ব্যাখ্যায় কোনো বুদ্ধিমান স্রষ্টার ইচ্ছা বা উদ্যোগের প্রয়োজন নেই। এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলোকে নাকচ করার জন্য খ্রিস্টান ধর্মতাত্ত্বিকরা গত শতাব্দীতে একটা নূতন তত্ত্ব আনার চেষ্টা করেছে - যার নাম হল 'ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন' তারা প্রাণপনে প্রমাণ করার চেষ্টা করছে যে জগৎসৃষ্টি একজন বুদ্ধিমান স্রষ্টার কাজ। এই 'ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন' তত্ত্বকে নস্যাৎ করার জন্য বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং একটা বই লিখেছিলেন যার নাম 'দ্য গ্র্যান্ড ডিজাইন' একটু ভালো করে দেখলে বোঝা যায় ন্যায়দর্শন বেদান্তের প্রণেতারা প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন একজন ঈশ্বরের ইচ্ছা এবং উদ্যোগ থেকে বারবার জগৎ সৃষ্টি হয় - যেটাকে 'ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন' তত্ত্বের সঙ্গে তুলনা করা যায়। আর সেটাকে নস্যাৎ করার জন্য জিনসেন অন্যান্য জৈন দার্শনিকেরা যে যুক্তিগুলো দিয়েছেন তা অনেকাংশেই আধুনিক যুক্তিবাদীদের সঙ্গে তুলনীয়।

===========

বহুত্ববাদী সমাজে থাকতে হইলে সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হইলো, নিজের অপছন্দের জিনিস অন্য কেউ করলে তা মেনে নিতে শেখা, যতোক্ষন তা অন্য কাউকে ক্ষতি না করছে৷

=========

অতিরিক্ত শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য শুধু এই চন্দ্রবিন্দু কেন, যদি র-ফলাও ব্যবহার করা হয়, তবুও আমাদের মেনে নেওয়া উচিত।

বৃটিশ পিরিয়ডে যখন নিয়ম করা হয়, ছেলে-মেয়ে পরিপূর্ণ বয়স না হলে বিয়ে দেওয়া যাবে না। তখন গ্রামবাঙলায় একটা গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, আগামী ৪০ বছরের মধ্যে কোনো বিয়ে-শাদী হবে না। ইংরেজ সরকার আইন করে বিয়ে-শাদী বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফল হয় উল্টো। শিশু, বালক-বালিকাদের তো বটেই, এমনকি পেটে পেটেও বিয়ে দেওয়া শুরু হয়ে যায়। পেটে পেটে বিয়ে অর্থ- দু'জন গর্ভবতী নারী অঙ্গীকারাবদ্ধ হয় যে, একজনের ছেলে এবং অন্য জনের মেয়ে হলে তাদের বিয়ে দেওয়া হলো। এমন একটা বিয়ের বরের বয়স সাত এবং কনের বয়স পাঁচবছর। বর্ষাকাল, বর একটি ডোঙা নৌকায় এবং কনেটি কলাগাছের ভেলায় বসে খেলা করছিলো। বউটি ছোটো একটা গামছা পরা ছিলো। সেকালে নিয়ম ছিলো, স্বামীর সামনে মাথায় কাপড় দিতে হয়। বয়সে বড় কেউ একজন বললো -- ঐ করিমন, ওই যে তোর জামাই(স্বামী) না লগে , তাড়াতাড়ি মাথায় কাপড় দে। কি আর করা, করিমন তার পরা গামছাটা খুলে মাথায় ঘোমটা টেনে দেয়। নিচের দিকে যে আলগা হয়ে গেছে সেটা কোনো ব্যাপার না, স্বামীকে সম্মান করা হয়েছে এটাই সবচেয়ে বড়ো ব্যাপার।

তাই শুধু মৃত নয়, জীবিতও যাকে তৈলমর্দন করতে চান তার নামে চন্দ্রবিন্দু বসিয়ে দিন🙂🙂🙂

----------

বিজ্ঞান বলে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ্য পুরুষ একবার সহবাস করলে যে পরিমান বীর্য নির্গত হয় তাতে ৪০ কোটি শুক্রাণু থাকে। তো, লজিক অনুযায়ি মেয়েদের গর্ভে যদি সেই পরিমান শুক্রানু স্থান পেতো তাহলে ৪০ কোটি বাচ্চা তৈরি হতো, এই ৪০ কোটি শুক্রাণু মায়ের জরায়ুর দিকে পাগলের মত ছুটতে থাকে, জীবিত থাকে মাত্র ৩০০-৫০০ শুক্রাণু। আর বাকিরা? এই ছুটে চলার পথে ক্লান্ত অথবা পরাজিত হয়ে মারা যায়। এই ৩০০-৫০০ শুক্রাণু যেগুলো ডিম্বানুর কাছে যেতে পেরেছে, তাদের মধ্যে মাত্র একটি মহা শক্তিশালী শুক্রাণু ডিম্বানুকে ফার্টিলাইজ করে অথবা ডিম্বানুতে আসন গ্রহন করে। সেই ভাগ্যবান শুক্রাণুটি হচ্ছে আপনি কিংবা আমি অথবা আমরা সবাই।

======

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সরকারি ফান্ডের মালিক নরওয়ে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তৈরি এই ফান্ডের নাম নরওয়েজিয়ান পেনশন ফান্ড। এটা অয়েল ফান্ড নামেও পরিচিত, কারণ এর ভিত্তি তেল-গ্যাস বিক্রির পয়সা।

খুবই স্বচ্ছ এই ফান্ড প্রতি মুহূর্তে আপডেট হয়। গত তিন মাসে এর ভ্যালু যে পরিমাণ বেড়েছে তা ২০২৪ সালের পুরো বাজেটের চেয়েও বেশি।

মোট ৭২টা দেশে এর বিনিয়োগ রয়েছে এবং কোথায় কত তাও সাইটে উল্লেখ রয়েছে। মার্কেট ভ্যালু বিচারে পৃথিবীর সব কোম্পানির সব শেয়ারের ১.৫%-এর মালিক এই ফান্ড। বাংলাদেশের শেয়ারও রয়েছে তার মধ্যে।

এছাড়া পৃথিবীর প্রায় সকল বড় শহরেই রিয়েল এস্টেট, অর্থাৎ বিল্ডিং কেনা হয়েছে এই ফান্ড দিয়ে, যেগুলো ভাড়া দেওয়া হয়।

নরওয়েকে অনুসরণ করে আরো কিছু দেশ এরকম ফান্ড খুলেছে, যার মধ্যে সৌদি আরব অন্যতম। নরওয়ের এই ফান্ডের মূলনীতি হলো সম্পদ কেবল বর্তমানের ভোগের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও এর অংশীদার করা।

====

ঋকবেদের শুরুর দিকে যখন দেব-অসুর একই গোষ্ঠীর মানুষ সেই সময়ে ভারতে অনার্যদের সংখ্যাই বেশি। অনার্য বড় বড় যোদ্ধাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে যাদের সাথে এই গোষ্ঠীর লড়াই হয়েছে। ধীরে ধীরে অনার্যদের এলাকা দখল হয়েছে আর্যদের হাতে। এলাকা আর্যদের দখলে এলেও অগণিত অনার্য রইল শাসিত হয়ে। তারা সমাজে নানা স্তরের কাজকর্মে নিয়োজিত হয়ে রইল। শাসক আর্যদের দুটি প্রধান স্তম্ভ হল ক্ষত্রিয় ও ব্রাহ্মণ শ্রেণী। একটি রাজনৈতিক, অপরটি ধর্মীয় ও সামাজিক শাসনের কেন্দ্রে অবস্থান করত।

বহিঃশত্রু প্রবল হলে যে ঐক্য দেখা যায়, সে শত্রু দুর্বল হলে শত্রুতা ঘরের মধ্যেই সৃষ্টি হয়। মানুষের চরিত্রই এমন। অনার্যদের নেতারা পরাজিত হলে, বনে জঙ্গলে পাহাড়ে পালিয়ে গেলে কিছুদিন সুখে শান্তিতে আর্যরা ছিল। ক্রমে আর্যদের মধ্যেই ভাঙ্গন ধরেছিল। যজ্ঞ করা বা না করা, যজ্ঞ করলেও করার রীতি নিয়ে বিরোধ শুরু হয়েছিল। বিরোধ হয়েছিল আদিতাদের সাথে অন্যদের। দেব ও অসুর গোষ্ঠী ভাগাভাগি হয়ে গেলে তাদের শাসনের ভৌগোলিক স্থানেও ভেদ হয়ে গেল। হারিয়ে যাওয়া সরস্বতী নদী (যা হিমালয় থেকে নেমে হরিয়ানা, রাজস্থান হয়ে আরব সাগরে এসে পড়েছিল) হল একপ্রকার সীমানা। এর পূর্বদিকে গঙ্গা-যমুনা ধরে যাজ্ঞিক গোষ্ঠীরা এবং পশ্চিমদিকে শতদ্রু,সিন্ধু, বিপাশা অঞ্চলে অযান্ত্রিক অসুরদের কেন্দ্র হয়ে উঠল। সিন্ধু সভ্যতার পুর্বদিকের ক্ষেত্রগুলিতে আর্য সংস্কৃতির উপাদান যতটা পাওয়া যায়, পশ্চিমদিকের ক্ষেত্রগুলিতে সেই তুলনায় প্রাপ্তি প্রায় নেই বলা যায়। হরপ্পা-মহেঞ্জোদড়োর- সাথে কালিবঙ্গান-ধোলাভিরার তুলনা করলেই এটা বোঝা যায়।

দেবাসুরে যুদ্ধ চলছিল দীর্ঘসময় ধরে। উত্তর ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাটে যাঙ্গিক বৈদিক সংস্কৃতির বিকাশের পাশাপাশি ভারতের পশ্চিম প্রাপ্ত বা আজকের পাকিস্তান অঞ্চলে শক্তিশালী ছিল অসুরদের শক্তি। অসুরেরা নানা ভিন্ন ধারার সংস্কৃতি বহন করত। বিভিন্ন জাদুমূর্তি, হরমায় প্রাপ্ত শিবলিঙ্গ থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। অসুরদের একটি অংশ পূর্ব ভারতের দিকেও অবস্থান করছিল। মাজিক বৈদিক আধিপত্যের ক্ষেত্রগুলির বাইরের অঞ্চলগুলিকে পাতাল বলা হয়েছে।

বাংলার ইতিহাস বলতে আমরা শশাঙ্ক এবং পরবর্তী পাল, সেন ও সুলতানি যুগের ইতিহাসকেই বুঝে থাকি সাধারণত। কিন্তু আদতে বাংলার ইতিহাস বহু প্রাচীন। রামায়ণ এবং মহাভারতে ‘বঙ্গ’ নামক স্থানের উল্লেখ রয়েছে। বিষ্ণু পুরাণ, ভাগবত ও হরিবংশে রয়েছে পৌণ্ড্রক বাসুদেব ও বাণাসুরের কথা। কিন্তু এসব গ্রন্থগুলিতে প্রাপ্ত উপাদানের ঐতিহাসিক সত্যতা স্বীকৃত নয় সার্বিকভাবে। আমাদের প্রত্ন আবিষ্কার বাংলায় যে কয়টি মৌর্য-পূর্ববর্তী যুগের ইতিহাসের সাক্ষ্য প্রদান করে থাকে তার মধ্যে পাণ্ডুরাজার ঢিবি, বাণগড় এবং মহাস্থানগড় হল অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র। খুব কম করে হলেও আড়াই হাজার বছর ধরে ধারাবাহিক ইতিহাসের উপাদান রয়েছে দিনাজপুরের বাণগড় এবং বগুড়ার মহাস্থানে।

এই দুই স্থানের ইতিহাসকে অনুভব করার এবং পালযুগের ইতিহাসের নানা ‘মিসিং লিঙ্ক'-এর উদ্ধার করার উদ্দেশ্য নিয়েই এই বইটির উপস্থাপনা। কোথা থেকে এলেন পালবংশের সম্রাট গোপাল? কোথায় ছিল তাঁর আদি জন্মস্থান? কিভাবে মাৎস্যন্যায়ের সময়ে হঠাৎ করে তাঁর উত্থান হল? যে ‘প্রকৃতিপুঞ্জ’ তাঁকে রাজসিংহাসনে বসিয়েছিল, সেই প্রকৃতিপুঞ্জ বলতে কি বোঝানো হয়েছে আসলে?

========

নবাব সলিমুল্লাহর মৃত্যু হয় ১৯১৫ সালে আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২১ সালে। তাও নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমি দান করেছিলো।

এই জাতি চান্দে দেইল্লা রাজাকারকে দেখবে না ত কারা দেখবে?

 

========

 

পৃথিবীর সব যুদ্ধ জেতা যায় না, কিন্তু লড়াইয়ের ময়দানে থাকতে হয় - এটা বোঝানোর জন্য কেউ তো একজন ছিল, কেউ তো একজন শুরু করেছিল, কেউ তো একজন শাসকের চোখে চোখ রেখে বলতে পেরেছিলো।

রাজা তোর কাপড় কোথায়❔

জেতা হারাটা‌ তো সাময়িক, জীবনে নীতিটাই সব-

 

------------------------

ঢাকা শহরের নামকরণে সঙ্গে জড়িয়ে আছে হিন্দু কিংবদন্তি। বল্লাল সেনের মা তীর্থ করতে গিয়ে এখানে ঢাকনার নিচে একটি দেবী মূর্তি পেয়েছিলেন। তাই দেবীর নাম হয়ে যায় ঢাকেশ্বরী। সেখানে একটি মন্দির গড়ে বল্লাল মাতা। নাম হয়ে যায় ‘ঢাকেশ্বরী মন্দির’। সেই ঢাকেশ্বরী থেকেই ‘ঢাকা’ শব্দের জন্ম। সেটাই হয়ে যায় ঐ স্থানের নাম। বিস্তৃত হতে থাকে ঢাকার আকার। এই ইতিহাস বা কিংবদন্তি বাঙালি মুসলমানের কাছে আজ অস্বস্তিকর।

------------

সম্রাট আওরঙ্গজেব ৪৯ বছর ধরে ভারত শাসন করেছেন। তাঁর সাম্রাজ্যের আয়তন ছিল ৪০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। বলতে গেলে, ভারতবর্ষের প্রায় সম্পূর্ণ এলাকা ছিল তার রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত। প্রজার সংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৮০ লক্ষ।

আওরঙ্গজেব বছরে রাজস্ব আদায় করতেন ৪৫০ মিলিয়ন ইউ এস ডলার। ঐ সময়ে ফ্রান্সের সম্রাট ছিলেন চতুর্দশ লুই। লুই এর চেয়ে আওরঙ্গজেব এর রাজ্যে দশগুণ বেশি রাজস্ব আদায় হত।

তাঁর অধীনে ভারতবর্ষের অর্থনীতি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। ১৭০০ সালে তিনি ভারতবর্ষের অর্থনীতিকে ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেন। ভারতবর্ষের জিডিপি ছিল পুরো পৃথিবীর জিডিপির চার ভাগের এক ভাগ।

১৭০৭ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান আওরঙ্গজেব ৮৮ বছর বয়সে নিজের সম্পত্তির একটা উইল তৈরী করলেন। মৃত্যুর পরে উইলে দেখা গেল- তাঁর কাছে ১৪ রুপি আর নিজ হাতে বোনা কিছু টুপি আছে। এগুলো বিক্রি করে তাঁর জানাযা আর দাফনে খরচ করতে বলেছেন। আর সারাজীবন কুরআন শরীফ নকল করে ৩০০ রূপি জমিয়েছেন। এই টাকাগুলো

গরীবদের মাঝে দান করে দিতে বলেছেন।

দরবার আর রাজকোষে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল- উইলের বাইরে সম্রাটের কোথাও কোনো সম্পদ নেই।

====

"বিস্ময়কর যে সেই ইউরোপই এখন বদলে গেছে। যে ইউরোপের খৃস্টানরা ধর্মের জন্য ক্রুসেড করতে আসতো ঘরবাড়ি, বউ-পোলাপান ছেড়ে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে তারা এখন আর গীর্জায় যায় না। অলৌকিক শক্তির উপর বিশ্বাস হারিয়ে আস্থা রাখছে বিজ্ঞানে। তারা এখন সপ্তাহান্তে গীর্জায় যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বা সাক্ষাৎ হবে অনেকের সাথে সেই আশায়। ধর্ম তাদের আর আকর্ষণ করে না। আমরা যেমন ভুত-প্রেত নিয়ে হাসি তামাশা করি তেমনি ওরা করে ওদের ধর্মকে নিয়ে৷"

===

একসময় মানুষের ৬টি প্রজাতি ছিল, যার পাঁচটি পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। থেকে গেছে মাত্র একটি প্রজাতি - *হোমো স্যাপিয়ান্স*। কেন হোমো স্যাপিয়ান্স প্রজাতিটি টিকে গেলো আর অনেক বড়ো আকৃতির এবং অনেক বেশি শক্তিশালী *"নিয়ান্ডারথাল"* নামক মানুষের প্রজাতিটি বিলুপ্ত হয়ে গেলো তার কারণ খুঁজতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা বলছেন - তার প্রধান একটি কারণ হচ্ছে নিয়ান্ডারথাল মানুষ ছিল মূলত *"সলিটারি"* - মানে তারা একা একা বাঁচতে পছন্দ করতো। অন্যদিকে হোমো স্যাপিয়ান্স প্রজাতিটি সব সময় দল বেঁধে থাকতো।

জীব জগতে এটি নতুন কিছু নয়। একদিকে লেপার্ড যেমন সলিটারি আনিম্যাল, অন্যদিকে সিংহ, হায়েনারা থাকে দল বেঁধে। দল বেঁধে থাকার সুবিধে হলো - *সেফটি ইন নাম্বারস*। মানে একজন বিপদে পড়লে বাকিরা তাকে সাহায্য করতে পারে। সলিটারি আনিম্যালদের ক্ষেত্রে তেমন ঘটে না। ঠিক এই কারণেই হোমো স্যাপিয়ান্স একসময় দল বেঁধে মেরে শেষ করেছিল অনেক বেশি শক্তিশালী কিন্তু সলিটারি নিয়ান্ডারথাল প্রজাতিকে। নিয়ান্ডারথালরা সলিটারি প্রাণী হওয়ায় তারা তেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। তাছাড়া দল বেঁধে থাকায় স্যাপিয়ান্স প্রজাতিটির খাদ্যের অভাব হয়নি এবং মহিলা, শিশু ও অসুস্থরা প্রয়োজনীয় প্রটেকশন পেয়েছে।  

কিন্তু ঘোর নগরকেন্দ্রিক জীবনে এসে আমরা *ক্রমশ ভুলে যাচ্ছি* যে হোমো স্যাপিয়ান্স প্রজাতিটি সংঘবন্ধ জীব। নেচারে আমরা যে এখনো বিলুপ্ত হইনি তার কারণ আমরা দল বেঁধে ছিলাম। *একা বাঁচার জন্য আমাদের তৈরী করা হয়নি*। কাজেই মানুষ কোনো কারণে একা হয়ে গেলে, নেচার শরীরবৃত্তীয়ভাবে মানুষকে ফাইটিং মোডে নিয়ে যায়। একাকিত্বে ভোগা মানুষের উপর স্টাডি করে দেখা গেছে যে *তাদের প্রেসার বেশি, সুগার লেভেল বেশি এবং হার্টবিটও বেশি*। মানুষ তখন অপরিচিতদের থ্রেট হিসেবে দেখতে শুরু করে। তার থেকে একটি ভিসিয়াস সাইকেল তৈরী হয়। মানুষের ইমিউনিটি কমে  যায়, ইনফ্লামেশন বেড়ে যায়, হার্ট ডিসিস, স্ট্রোক এবং প্রিম্যাচিওর ডেথের চান্স বেড়ে যায় *প্রায় ৫৮%* !

স্টাডি বলছে, বর্তমান পৃথিবীতে ৩৩% মানুষ একাকিত্বে ভোগেন - মানে প্রত্যেক তিনজনের একজন। তারা কিন্তু সবাই বয়স্ক নন। *সবচেয়ে বেশি একাকী মানুষ থাকেন ব্রাজিলে, তারপর তুরস্ক এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে ভারত* ! ডিমেনশিয়া, আলজাইমার, ডিপ্রেশন ভারতে যে প্রায় মহামারীর আকার ধারণ করেছে তার অন্যতম কারণ এই একাকিত্ব। সাইকোলজিস্টরা বলছেন একাকিত্ব মানে কিন্তু একা থাকা নয়। *একাকিত্ব একটি "স্টেট অফ মাইন্ড" যেখানে মানুষটির মনে হচ্ছে সে একা, নির্বান্ধব*, মন খুলে দুটি কথা বলার যার কেউ নেই। 

তাহলে উপায় ? এই নিয়ে একটি সেমিনারে সেখানে ভারত-আমেরিকা -ইংল্যান্ডের নামকরা ডাক্তারবাবুরা নিদান দিলেন আরো বেশি বেশি "*সোশ্যাল ইন্টারঅ্যাকশন এবং সোশ্যাল কানেক্ট" তৈরী করার*। তারা বললেন হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের খুঁজে বের করে তাদের সঙ্গে দেখা করার। সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে বন্ধু সার্কেলকে বাড়ানো এবং *রিয়েল ওয়ার্ল্ডে তাদের সঙ্গে বেশি বেশি সোশালাইজ করার*।

কে জানতো, ছেলে-বুড়োদের সকাল-সন্ধেতে *চায়ের দোকানের আড্ডা বা পাড়ার কাকিমা-জ্যেঠিমাদের "পাড়া বেড়ানো"* বস্তুটিই আসলে সুস্থ থাকার চাবিকাঠি !

এই সেমিনারে এক বয়স্ক ভদ্রলোক নিজের জীবনের কথা বললেন। স্ত্রী মারা যাবার পর তিনি নিদারুন একাকিত্বে ভোগেন এবং ২০১৯ তে তার স্টেজ ওয়ান ক্যান্সার ধরা পড়ে। ভদ্রলোক তখন "আর ক'দিনই বা বাঁচবো, *যাবার আগে সবার সঙ্গে দেখা করে যাই" মোডে চলে গিয়ে* খুঁজে খুঁজে তার হারিয়ে যাওয়া আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং নিজের বাড়িতে তাদের ডেকে নিয়ে সকাল-সন্ধে আড্ডা বসান। ভদ্রলোক যে শুধু  ক্যান্সার সারভাইভ করেছেন তাই নয়, তিনি বললেন আমি এখন মানসিক ভাবে সম্পূর্নই সুস্থ। মজা করে আরো বললেন, বাড়িতে আড্ডা বসানোয় *চা, সিঙ্গারা, মিষ্টি দিয়ে আতিথেয়তায় তার যে খরচ হয় সেটি ওষুধের খরচের ৩০%-ও নয়*। ওটাকে তিনি ভালো থাকার ইনভেস্টমেন্ট হিসেবেই দেখেন !

রবি ঠাকুর সেই কবেই লিখে গেছেন *"আরেকটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয় / মোরা সুখের-দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়"* - ডিপ্রেশন ও নানাবিধ সাইকোলজিক্যাল রোগ থেকে বাঁচতে সোশ্যাল ইন্টারঅ্যাকশনের মাধ্যমে এই *"প্রাণ জুড়োনোর"* কোনো বিকল্প কিন্তু ডাক্তারবাবুরাও দিতে পারছেন না কেননা নেচার, হোমো স্যাপিয়ান্স প্রজাতিকে সেভাবে বানায়নি।

========

নওরোজ

সারা পৃথিবীর পার্সিদের নতুন বছরের শুরুর অনুষ্ঠান হল নওরোজ। এই সময়টি (২১-২৪ মার্চ) ইরানে জাতীয় ছুটি দেওয়া হয়। বর্তমান ইরানের জাতীয় ছুটির ইসলামী ক্যালেন্ডারে এই একটি মাত্র ছুটি যেটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়। আলবেনিয়া, আজারবাইজান, জর্জিয়া, ইরাকের কুর্দিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরঘিজিকস্তান, মঙ্গোলিয়া, তুর্কমেনিস্তান, আফগানিস্তানে নওরোজ পালিত হয় এবং এই সব অঞ্চলে প্রথম দিনটি বা একাধিক দিন জাতীয় ছুটি থাকে। এই দেশগুলোতে এটি নতুন বছরের শুরু। এখানে বছর শুরু হয় বসন্ত সমাগমে।

অবশ্য ভিন্ন নামে এই অনুষ্ঠানের মূল দিনটি জাতীয় ছুটি হিসেবে পালিত হয় পার্শ্ববর্তী প্রায় সমস্ত দেশে— রাশিয়া, তুরস্ক, পুরো ইরাক, সিরিয়া, লেবানন এবং সৌদি আরবেও। সেখানে দিনটি মার্চ ইকুইনক্স (যখন দিন ও রাত সমান হয়) হিসেবে ছুটি থাকে।

অবশ্য ভারতে পার্সিদের মধ্যে আগামী কাল (২০ মার্চ) তা পালিত হবে। এদেশে পার্সিদের ক্যালেন্ডারে লিপ ইয়ার নেই। তাই এখানে এই বিশেষ দিন পিছিয়ে গেছে।

যদিও নওরোজ অনুষ্ঠান প্রাচীন পার্সিদের জরোথ্রুস্ট্রীয় ধর্ম থেকে শুরু, তবে এটি আজ আর বিশেষ কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়। সারা মধ্য প্রাচ্য ও সেন্ট্রাল এশিয়াতে এই সময়টা আনন্দের সঙ্গে পালিত হয়। পৃথিবীর প্রায় ৩০ কোটি মানুষ নওরোজ পালন করেন।

নওরোজ পৃথিবীর প্রাচীনতম অনুষ্ঠানগুলির একটা, যা এখনও টিঁকে আছে। প্রায় চার হাজার বছর ধরে এই অনুষ্ঠান হয়ে আসছে ইরান ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। দুটি পার্সি শব্দের যুক্ত শব্দবন্ধ হলো নওরোজ। নাউ অর্থ নতুন ও রুজ অর্থ দিন। নবদিন।

১৭২৫ সাধারণ পূর্বাব্দে পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন দার্শনিক জরাথ্রুস্ত্র তাদের ক্যালেন্ডারকে উন্নত করেন। জরোথ্রুস্ট্রীয় ক্যালেন্ডার শুরু হয় নওরোজ থেকে। সম্ভবত সেই সময়ে দিনটির নাম নওরোজ ছিল না, অন্য কোনো নাম ছিল। ইরানের সিস্তান অঞ্চলে জরাথ্রুস্ত্র এক মানমন্দির নির্মাণ করেছিলেন। এই মানমন্দিরের সাহায্যে তারা সৌর ক্যালেন্ডার তৈরি করেন। তখন তারা বছরের হিসেব করেছিলেন ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিটে।

এই দিন বিষুব রেখার উর্ধাংশে বসন্তের আগমন বার্তা আনে। তাই এই অনুষ্ঠান বসন্ত উৎসবও বটে। মানুষ প্রথম গম ও বার্লি চাষ শুরু করেছিল তুরস্ক থেকে ইরানের বিস্তৃত অঞ্চলে। কৃষিকাজ শুরু হবার পরে তারা এক জায়গায় বসবাস শুরু করেছিল। এই অনুষ্ঠান মানব সভ্যতার সেই নতুন পর্যায়ের স্মরণও বটে।

মাগুসরা ছিলেন তাদের অগ্নি মন্দিরের রক্ষক ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী। ষষ্ঠ শতাব্দীতে তারা মার্চের ২০ বা ২১ তারিখকে উত্তর গোলার্ধের বসন্ত উৎসবের শুরু হিসেবে চিহ্নিত করেন। লক্ষ্য করবার বিষয়, ভারতেও কিন্তু প্রায় একই সময়ে বসন্ত উৎসবের শুরু। এই বছর দোল উৎসব পড়েছে ২৫ মার্চ। চিনে যদিও প্রায় একমাস আগে এই উৎসব হয়।

তখন ইরানের রাজা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির মানুষদের রাজদরবারে ডাকতেন অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করবার জন্য। এই উপলক্ষে নানা উপহার আদান প্রদান হতো। এখনও নওরোজের আগে বাড়ি পরিষ্কার করা হয়। এই দিনে সবাই একে অপরের বাড়ি স্বল্পক্ষণের জন্য যায়। তারপরে খাবার টেবিলে পরিবারের সদস্যরা একসঙ্গে জড়ো হয়। নিজেদের মধ্যে উপহার বিনিময় করে। টেবিলে হাফ্ত সীন অর্থাৎ সাত রকমের খাদ্য সাজানো থাকে।

এগুলি হল—

Sabzeh– গমের চারা, প্রকৃতির নবজন্মের প্রতীক।

Samanu– জীবনের সুন্দর মুহূর্তর প্রতীক মিষ্টি পুডিং, গমের অঙ্কুর থেকে তৈরি।

Sib– সৌন্দর্যের প্রতীকস্বরূপ লাল আপেল।

Senjed– মিষ্টি রুপালি বেরি, প্রেমের প্রতীক।

Sir– রসুন, স্বাস্থ্যের প্রতীক।

Sumaq– এই মশলা হলো জীবনে সূর্য ওঠার আগের রং। সূর্য একদিন উঠবে।

Serkeh– ভিনেগার হল বার্ধক্য ও সহিষ্ণুতার প্রতীক।

আরও কিছু জিনিসও টেবিলে থাকে।

Sham- মোমবাতি, Ayeneh- আয়না, Mahee- মাছ, Tokhmeh Morgh- ডিম।

কিছু শব্দের সঙ্গে বাংলার কিছু শব্দের মিল লক্ষ্য করবেন।

ইরান, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, রাশিয়া অঞ্চলে এই অনুষ্ঠান জাঁকজমকের সাথে এখনও অনুষ্ঠিত হয়। ১৩ দিন ধরে চলে এই অনুষ্ঠান। সঙ্গে থাকে নাচ, গান ও অন্যান্য আনন্দানুষ্ঠান।

UNESCO এই অনুষ্ঠানকে তার Intangible Cultural Heritage of Humanity এই লিস্টে রেখেছে।

এ হল আনন্দের সময়।

========

"সরদার ফজলুল করিম প্রশ্ন করেছিলেন প্রফেসর আবদুর রাজ্জাককে, স্যার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নাকি নবাব সলিমুল্লাহ অর্থ ও জমিদান করেছিলেন। সে কারণেই তার নামে একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ নাকি করা হয়েছিলো। প্রফেসর রাজ্জাক এই দাবী পুরোটাই নাকচ করে দিয়েছেন।

রাজ্জাক সাহেব বলেছেন, আহসান মঞ্জিলের বৃত্তিতে কিছু মুসলমান ছেলে লেখাপড়া করত।

আহসান মঞ্জিলের আসলে কোন জমি ছিল না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দান করার মত। ঢাকার নবাবদের জমির উত্স ছিল ওয়াকফ করা জমি। এসব জমি আসত মুসলমানদের কাছ থেকে। অনেক মুসলমান তাদের জমি ঢাকার নবাবদের ওয়াকফ করে দিতো। এসব জমিই মূলত নবাব পরিবার ভোগ করতো। ঢাকার নবাব ঋণে জর্জরিত ছিল। ফলে ১৯০৫ সালে ইংরেজদের কাছে এক লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে বঙ্গভঙ্গের আন্দোলনে যোগ দেয়। (সূত্র: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও পূর্ববঙ্গীয় সমাজ: অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক-এর আলাপচারিতা, সরদার ফজলুল করিম, পৃষ্ঠা ২০-২১)

ইংরেজদের দালাল হিসেবে ঢাকার নবাবকে আমাদের ইতিহাস কোনদিন দায়ী করেনি কারণ এখানকার ইতিহাস আগাগোড়া মুসলিম জাতীয়তাবাদ থেকে লেখা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে সরকারের খাস জমিতে ও কিছু হিন্দু জমিদারের দান করা জমিতে। ঢাকায় শিক্ষা বিস্তারে ঢাকার হিন্দু জমিদারদের ভূমিকা আমাদের ইতিহাস হাইড করে ফেলে দেশভাগের প্রেক্ষাপট তৈরি করতে।

বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর দানে তার পিতার নামে ১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জগন্নাথ কলেজ’ যা বর্তমানে আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়। "

"রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতার কোন ইতিহাস নেই। একটি প্রমাণ, দলিল আজ পর্যন্ত কেউ দেখাতে পারেনি।

কোলকাতার গড়ের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করে যে সভা হয়েছিলো সেখানে রবীন্দ্রনাথ উপস্থিত ছিলেন না। তখন তিনি কুষ্টিয়ার শিলাইদহে।

তাছাড়া ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় হোক এটা মুসলমান নেতারাই চাচ্ছিলেন না। কারণ এখানে বিশ্ববিদ্যালয় হলে তার সুফল মুসলমানদের হবে না। ছাত্র তো সব হিন্দু। মুসলমানরা তখন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যেতে পারত না।

এমন কি আলীগড় পর্যন্ত ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় হোক চায়নি। প্রফেসর রাজ্জাক সাহেব জানিয়েছেন, দেশভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছিল শিক্ষকদের অভাবে। শিক্ষকদের ৯৯ জন ছিলেন হিন্দু। তারা চলে যাওয়ায় শিক্ষকের অভাবে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঠেকাতে বিলেত থেকে শিক্ষক আমদানি করে আনতে হয়েছিল। মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষক হওয়ার মত তেমন শিক্ষিত শ্রেণীই গড়ে উঠেনি তখন পর্যন্ত! তাহলে চিন্তা করুন ১৯২১ সালে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় হলে কাদের লাভ হওয়ার কথা? এটা কমনসেন্সের বিষয়।

রবীন্দ্রনাথ তার নোবেল পুরস্কার থেকে পাওয়া টাকার পুরোটা্ পূর্ববঙ্গে বিলিয়ে দেন। কৃষি ব্যাংক খুলে সমস্ত টাকা খুইয়ে দেন কৃষকদের ঋণ দিয়ে। এই ঋষিতুল্য মানুষটিকে নিয়ে বাংলাদেশে সলিমুল্লাহদের হাতে যেভাবে আক্রান্ত হোন তার স্বপক্ষে একটি যৌক্তিক কারণ কোথাও নেই। স্রেফ সাম্প্রদায়িক কারণে এই মহান কবি এখানে লাঞ্ছিত হোন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যখন এই রকম লেইম তথ্য শেয়ার করে তখন আমারই বলতে ইচ্ছে করে, মুসলমানদের জন্য আবার বিশ্ববিদ্যালয় কেন, ওদের জন্য তো মাদ্রাসা আছে...!"

©সুষুপ্ত পাঠক

10 m

Reply

Jakir Hossain

শিক্ষাই মুসলমানদের মুক্তির একমাত্র পথ—এ বিবেচনায় ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য নবাব সলিমুল্লাহ ভারত সচিবের কাছে সুপারিশ করেন। তদনুসারে ১৯১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি এক ইশতেহারে ভারত সরকার কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ ঘোষণা করা হয়। ঢাকা ইউনিভার্সিটি কমিটির অধীনে ইউনিভার্সিটির পাঠ্যসূচি রচনার উদ্দেশ্যে ২৫টি সাব-কমিটি গঠিত হয়। ‘ইসলামিক স্টাডিজ’ বিষয়ের সাব-কমিটির সঙ্গে নবাব সলিমুল্লাহ ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন।

নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে বঙ্গভঙ্গকে অটুট রাখার যে আন্দোলন হয়েছিল তার প্রভাব সর্বভারতীয় রাজনীতিতে সুদূরপ্রসারী হয়েছিল। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত হয়েছিল। বঙ্গভঙ্গ রহিতকরণের ঘটনায় সলিমুল্লাহ খুবই দুঃখ পেয়েছিলেন। কিন্তু শাসকদের সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে আবেদন-অনুরোধের পথেই থাকেন তিনি। তিনি অবিভক্ত বাংলার ব্যবস্থাপক পরিষদের সদস্য, ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সদস্য এবং পূর্ববঙ্গ ও আসামের ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ছিলেন। বঙ্গভঙ্গের পর ব্রিটিশ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ বরাবর পূর্ববঙ্গ ও ঢাকার অমর্যাদার কথা তুলে ধরে হতাশা ব্যক্ত করেন। নওয়াব আলী চৌধুরী, এ কে ফজলুল হকসহ পূর্ববঙ্গের মুসলিম নেতাদের নিয়ে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জোর দাবি তোলেন তিনি। সরকার এই দাবি ১৯১২ সালে মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিলে এর বিরুদ্ধেও যে প্রবল আন্দোলন হয়েছিল, সে কথা সুবিদিত। তবে শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলেও তিনি নিজে এর প্রতিষ্ঠা দেখে যেতে পারেননি।

 

==============

ভারতবর্ষকে বুঝতে হলে জানতে হবে অশোক ও আকবরকে।

তাঁরা জানতেন ভারতের মানুষ বহু ধর্মে নিবেদিত, বহু ভাষী ও বিভিন্নতায় বিশ্বাসী।

অশোক

অশোক তাঁর ৪৩ বছর বয়স থেকে বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি আসক্তির কথা মুক্ত কণ্ঠে স্বীকার করেন— ৪৪ বছর বয়সে শুরু করেন ধম্ম যাত্রা। বোধিবৃক্ষ দর্শনকালে তবু তিনি ব্রাহ্মণদের দান করতে ভোলেন না। দানের ক্ষেত্রে অশোক তাঁর শিলানুশাসনগুলিতে প্রায় সকল সময়ে একই সঙ্গে বৌদ্ধ শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ সন্ন্যাসীদের কথা উল্লেখ করেছেন। লক্ষ্য করার বিষয়, সমগ্র ব্রাহ্মণকুল নয়, তিনি বিভিন্ন সময়ে ব্রাহ্মণ সন্ন্যাসীদের কথা উল্লেখ করেছেন। তখন বৌদ্ধ শ্রমণ ও ব্রাহ্মণ সন্ন্যাসী নিজ নিজ ধর্মের অগ্রণী অংশ হিসাবে সম্মানিত ছিল— তিনি শ্রমণ ও সন্ন্যাসীদের মধ্যে সাম্যভাব বজায় রাখতে চেয়েছেন। দ্বাদশ প্রস্তর অনুশাসনে তিনি বলেছেন, শুধু সংঘের প্রতি মনোযোগ দিলেই হবে না; ব্রাহ্মণ, আজীবিক ও জৈনদের প্রতিও সমান যত্নবান হতে হবে। বোঝা যায়, তাঁর ধর্মত্যাগে ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ছিল না— হঠাৎ উৎসারিত আবেগের প্রাবল্যে ধর্মান্তরিত হলে এই সমদৃষ্টি থাকা সম্ভব ছিল না।

অশোকের সাম্রাজ্য ভারতবর্ষের সর্বকালের সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্যগুলির অন্যতম। সেই বিশাল সাম্রাজ্যকে বেঁধে রাখতে তাঁকে সমাজের সকল ক্ষমতাশালী গোষ্ঠীগুলিকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হয়েছে। ব্রাহ্মণদের দান ও সম্মান প্রদর্শন যদি রাজনৈতিক দণ্ড নীতির (রাষ্ট্র পরিচালন নীতি) অংশও হয়, আজীবিক, জৈন ইত্যাদি সম্প্রদায়ের প্রতি কর্তব্য-কর্ম তাঁর ধম্মের অঙ্গ।

কলিঙ্গ যুদ্ধের পরে-

“সকল মানুষের এ ধরনের কষ্ট পাওয়ার বিষয়টি ঈশ্বরের প্রিয়পাত্রের মনের উপর ভারী বোঝা হয়ে জেঁকে বসে। ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র বিশ্বাস করেন যে, যারা ভুল কাজ করে তাদের যতদূর সম্ভব ক্ষমা করে দেয়া উচিত। ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র বনবাসী অপরাপর গোত্রদের তাঁর সাম্রাজ্যে স্বাগত জানিয়েছেন এবং ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন যে, প্রত্যেক মানবগোষ্ঠীকে নির্বিঘ্নে, স্বনিয়ন্ত্রিত হয়ে মানসিক শান্তিতে এবং ভদ্রভাবে বাস করতে দেয়া উচিত...’’ [রোমিলা থাপার, অশোক ও মৌর্য্যের পতন]।

অশোক নিজেকে সমগ্র মানব জাতির কাছে ঋণে আবদ্ধ বলেছেন। এ এমনই ঋণ যা পরিশোধের জন্য সমগ্র মানব জাতির সুখের ব্যবস্থা তাঁকে করতে হবে— 'সমস্ত মানুষই আমার সন্তান।'

৫৪ বছর বয়সে গয়ার পাশে বারাবার গুহাগুলি থেকে তিনটি গুহা দান করেছেন আজীবিকদের। পাথরের গুহা কাটিয়ে তাকে পালিশ করে বাসযোগ্য করা সহজ কাজ নয়। সেই গুহা তিনি বৌদ্ধদের না দিয়ে দান করেছিলেন আজীবিকদের। সেই সময়ের বৌদ্ধ পরম্পরায় আজীবিকদের সঙ্গে বৌদ্ধদের বৈরিতা ছিল। বৌদ্ধ, জৈন, আজীবিক ও ব্রাহ্মণ্য ধর্মের মধ্যে বিশেষ হৃদ্যতাঁর সম্পর্ক ছিল এমন মনে করা যায় না। অশোকের পৌত্র দশরথের মৃত্যুর পরে আজীবিকদের তাড়িয়ে দেওয়া হয় গুহাগুলি থেকে এবং তারা ইতিহাস থেকে চিরতরে হারিয়ে যায়।

আকবর

অশোকের মৃত্যুর পরে ~ পৌনে দুই হাজার বছর কেটে গেছে। উত্তর ভারতে আফগান শাসন ১৫৫৫ সাল পর্যন্ত চলেছে, সেই সময়ে হুমায়ুন উত্তর ভারতের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। তাঁর পুত্র আকবরের হাতে রাজত্ব চলে যায়, আকবর তাঁর উত্তরসূরিদের জন্য যে বিস্তৃত সাম্রাজ্য রেখেছিলেন তা উপমহাদেশের উত্তরভাগ জুড়ে বিস্তৃত ছিল।

দেশে তখন বিপুল হিন্দুদের মধ্যে অন্যান্য ধর্মীয়রা ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু। অবশ্য তখনও দেশে আছে বিভিন্ন ধর্মে বিশ্বাসী, বহু ভাষী, বহু জাতির মানুষ। যদিও আকবরের পরিবার সুন্নি ছিল, কিন্তু তাঁর শৈশবের দুইজন শিক্ষক ছিলেন পারস্যের শিয়া মুসলমান।

হিন্দু ও মুসলমান ছাড়াও তাঁর দরবারে আসতেন জৈন, পারস্য দেশ থেকে আগত জরোথ্রুস্ট্রীয়, সুফী সন্ন্যাসী, পর্তুগিজদের হাত ধরে খ্রিস্টান মিশনারি।

তিনি বিশাল এক দেশের সম্রাট ছিলেন, কিন্তু তাঁর অমাত্যদের বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে পারস্পরিক বিসম্বাদ তাঁকে সুখী করেনি। এত ভোগ ও বিলাস শেষ পর্যন্ত তাঁকে সুখী করেনি। অমাত্যদের ধর্মীয় ক্ষুদ্রতা দেখে তিনি রেগে যেতেন। খ্রিস্টান মিশনারি ও মুসলমান মৌলবীদের দ্বন্দ্ব দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছিলেন, ‘The superiority of man rests on the jewel of reasons’

মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ভর করে যুক্তির বিন্যাসের ওপরে। শুধু বিশ্বাস নয়, তার সঙ্গে চাই যুক্তি। এখানেই তিনি তাঁর সময়ের পৃথিবীর বিভিন্ন সম্রাটের থেকে ভিন্ন।

তাঁর সমালোচক বদায়ুনী বলেছেন, তিনি ইসলামের থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন এবং হিন্দু , খ্রিস্টান ও জরোথ্রুস্ট্রীয় ধর্মের এক মিশ্র দর্শনের মধ্যে সত্য খুঁজে পান। হরবনস মুখিয়া মনে করেন, হিন্দুদের প্রতি বাদাউনির অসহিষ্ণু মনোভাব বদায়ুনীকে আকবরের ধর্মীয় নীতির সমালোচনা করতে বাধ্য করে, তিনি আকবরকে হিন্দুপন্থী হিসেবে দেখেছিলেন।

বদায়ুনী আকবর বুঝতে পারেননি। আকবর ধর্মের প্রশ্নে উন্মুক্ত ও কৌতূহলী মনের অধিকারী ছিলেন। তিনি চিঠিতে স্পেনের দ্বিতীয় ফিলিপকে উল্লেখ করেছেন— তিনি ধর্মতত্ত্ব এবং দর্শন নিয়ে আলোচনা করার জন্য সমস্ত ধর্মের বিদ্বান পুরুষ এবং মহিলাদের সাথে দেখা করতে পছন্দ করেন। মহিলা জৈনগুরু চম্পা থেকে শুরু করে পর্তুগিজ জেসুইট পুরোহিত, আকবর তাদের সবার কাছ থেকে শুনতে চেয়েছিলেন।

তিনি এক 'ঐশ্বরিক একেশ্বরবাদ'-এর মধ্যে তাঁর পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন তা অনেকটা সুফীবাদের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল। একজন সম্রাট হিসেবে আকবর সুফী ধারণাকে সুল-ই-কুহল, বা "সকলের জন্য শান্তি,"— তাঁর আইনের একটি নীতি করে নিয়েছিলেন। কোনো নির্দিষ্ট পুস্তক নয়, নির্দিষ্ট পুরোহিত নয়, শুধু সম্রাটের কাছে দীক্ষা নেওয়া ছিল এই ধর্মাচরণের প্রথম কথা। কোনো অর্থ, জারিজুরি তিনি এই জন্য করেননি।

হয়তো তিনি চেয়েছিলেন এক দল অমাত্য তৈরি করতে যারা তাঁর কথা শুনে চলবেন, ধর্মীয় বিষয়ে হবেন সহনশীল। ভুলে গেলে চলবে না, হিন্দু সংখ্যাগুরু দেশেও গোঁড়া মুসলমান অমাত্যরা সম্পূর্ণ ইসলামী আইন মোতাবেক দেশ চালানোর পক্ষে ছিলেন।

অশোক ও আকবর

অমাত্যদের নিজের বশে রাখা রাজার এক বড়ো করণীয় কাজ। অশোকও এই নিয়ে কম ভোগেননি— অশোক ভালোই বুঝতেন তাঁর অমাত্যবর্গের এক বড় অংশ দুর্নীতিগ্রস্ত, নির্মম ও অসৎ। আকবরেরও সেই উপলব্ধি ছিল। বিশেষ করে তাঁর কিছু করনীতি সেই সময়ে মুসলমান অমাত্যদের সমর্থন পায়নি। ১৫৬৩ সালে আকবর পবিত্র স্থান দর্শনকারী হিন্দু তীর্থযাত্রীদের ওপর বিশেষ কর বাতিল করেন এবং ১৫৬৪ সালে তিনি অমুসলিমদের উপর জিজিয়া বা বার্ষিক কর সম্পূর্ণরূপে বাতিল করেন।

ধম্ম প্রচারের জন্য অশোক কান্দাহার থেকে ধৌলি পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলে শিলালেখ, স্তম্ভলেখ স্থাপন করেছেন। আকবর চেষ্টা করেছেন, সব ধর্মের মূল গ্রন্থগুলোকে ভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করতে। অথর্ব বেদ, বাইবেল রামায়ণ, মহাভারত, গীতা তিনি ফার্সি ভাষায় অনুবাদ করিয়েছিলেন। কোরানের ফার্সি অনুবাদও সেই সময়ে হয়। তিনি অতি যত্ন নিয়ে মহাভারত পড়েছেন। সম্ভবত তাঁর জিজ্ঞাসু মন তাঁকে প্ররোচিত করেছে বিভিন্ন পুরান, ধর্মগ্রন্থ জানতে।

তিনি ভারতে জেসুইটদের এমনকি মুসলমানদেরও ধর্মান্তরকরণে সম্মতি দিয়েছিলেন।

অবাক হয়ে যেতে হয়, যখন ইউরোপে ব্রুনোকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, জলে বিষ মিশিয়ে তার দায় ইহুদিদের ওপরে চাপানো হচ্ছে, ক্যাথলিকদের অত্যাচারে ইউরোপে বিজ্ঞানীদের তটস্থ অবস্থা তখন এই দেশে এক সম্রাট ছিলেন যিনি ধর্মীয় ক্ষেত্রে উদার, স্বচ্ছ ও জিজ্ঞাসু। এসব সত্ত্বেও তিনি ছিলেন বাস্তববাদী, সম্ভবত অশোকের থেকে বেশি।

আকবর, শেষ জীবনে অনেকটা নিরামিষাশী হয়ে গেছিলেন। হয়তো জৈন ধর্মগুরুদের প্রভাবে। অশোকও নিরামিষাশী হতে চেষ্টা করেছেন তবে পারেননি।

আমরা সকলেই আমাদের সময়ের মানুষ। আমাদের চিন্তা, কর্ম সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে। তিনিই সাধারণের ওপরে যিনি সময়ের উর্ধে উঠে চিন্তা করতে পারেন, কর্ম করে যেতে পারেন- নিজের ধর্ম, কর্ম নিয়ে বাগাড়ম্বর করেন না।

এই বিশাল ও বিভিন্ন দেশকে একত্রিত রাখতে হলে সব ধর্মের মানুষের প্রতি উষ্ণ হতে হবে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু প্রজাদের কাছ থেকে সদিচ্ছা না পেলে এই দেশ শুধু গায়ের জোরে শাসন করা যায় না।

দীর্ঘদিনের জন্য কোনো দেশই কি যায়?

 

আকবর দি গ্রেট, ইসলামের সমস্যা ধরতে পেরেছিলেন। বহু ধর্ম, বহুমত নিয়ে চলতে হবে বুঝেছিলেন। অশোক ও আকবর দুজনকে নিয়ে এমন গুরুত্ব যথার্থ্য।

====

সিন্ধু সভ্যতার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হল জলের ব্যবহার ও তার সংরক্ষণ। আমরা মুখে সেই মহান সভ্যতার উত্তরিধিকারী বললেও এই বিষয়ে তাদের ধারেকাছেও পোঁছতে পারিনি। আজকের দিনের প্রযুক্তি দিয়ে প্রকৃতির জল ভাণ্ডারকে আমরা যথেচ্ছ ভাবে শুধু ব্যবহার করেছি কিন্তু সংরক্ষণ বিষয়টা শিখতে পারিনি। আর তাই উন্নত শহরে আমাদের জলসঙ্কট দেখতে হয়। সিন্ধু সভ্যতার প্রায় সব শহরই নদীর তীরে অবস্থিত হলেও শহরের মধ্যে অনেক কূপ থাকতো। খাওয়ার ও স্নানের জল অধিবাসীরা মূলত কূপ থেকেই সংগ্রহ করতো। মহেঞ্জোদারোর প্রায় প্রত্যেকটি আবাসিক বাড়িতেই স্নানাগার এবং কূপ ছিল।  খননের সময়ে দেখা গেছে যে অনেক কূপ তখনও ব্যবহারের উপযুক্ত রয়েছে। শুধু মহেঞ্জোদারোতেই আমরা শতাধিক কূপ পেয়েছি এবং এই কূপগুলি কয়েক শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়েছে। খননের এলাকায় পাওয়া কুপের ঘনত্বের হিসাব করে বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ মাইকেল জ্যানসেন (Michael Jansen) দেখিয়েছেন যে তৎকালীন মহেঞ্জোদারোতে প্রায় ৭০০ খানি কূপ ছিল। আবার অন্যদিকে মহেঞ্জোদারোর তুলনায় হরপ্পায় অনেক কম কূপ ছিল, সেখানে মাত্র ৩০ খানির মতো কূপ ছিল। আপনাদের শুনলে অবাক লাগবে যে কালিবঙ্গানের খননের সময়ে প্রাচীন একটি কূপ খননকারী দলের প্রয়োজনীয় জলের যোগান দিয়েছিল।

আজ দেখাব ভারতে অবস্থিত সিন্ধু সভ্যতার কিছু কূপ। প্রথম কূপটি লোথালের। দ্বিতীয়টি রাখিগড়ির ও তৃতীয়টি বানাওয়ালির। চতুর্থ কূপটি কালিবঙ্গানের কিন্তু সেটি উন্মুক্ত নয়, তাই তার উপরের বেড়ের ইটের আভাস শুধু পাওয়া যাচ্ছে। একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন যে গোলাকার মুখের কূপকে মজবুত করে বাঁধানোর জন্যে তাঁরা কেমন একদিক মোটা ও অন্য দিক সরু (wedged) ইটের ব্যবহার করেছেন। পঞ্চম কূপটি ধোলাভিরার, বিরাট বাঁধানো কূপের উপরের পাথরটিকে লক্ষ্য করবেন, তার প্রান্তে রয়েছে তখনকার দড়ি দিয়ে জল তোলার চিহ্ন। পাথরের গাঁ ঘষে দড়ির দাগ এখনও সেই মানুষদের স্মরণ করছে। না জানি পাঁচ হাজার বছর আগে কতো গল্প, ঝগড়া, মান- অভিমানের সাক্ষী রয়েছে এই কুয়োতলা।