তথ্য-২০১ ▌জরাথুস্ট্রবাদ :
জরাথুস্ট্রবাদ একটি অতিপ্রাচীন ইরানীয় একেশ্বরবাদী ধর্ম। এটি পারসিক বা পার্সি ধর্ম নামেও পরিচিত। জরাথুস্ট্রীয় ধর্মের প্রবর্তক জরাথুস্ত্র। ধর্মগ্রন্থের নাম আবেস্তা। বর্তমানে পৃথিবীতে জরাথুস্ট্রীয়দের প্রায় ২৬ লক্ষ। ভারত, আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন, ইরানসহ হাতে গোনা কয়েকটি দেশে এদের বাস। তবে ধর্মটির অনুসারীদের অর্ধেকই বর্তমানে ভারতে বসবাস করছে। ভারতে এসব পার্সিদের ৯০ শতাংশ থাকেন মুম্বাইয়ে। বাকি ১০ শতাংশ সারা ভারতে। কলকাতায় পার্সি জনসংখ্যা প্রায় চারশ’। তবে ২০১৫ সালে ইরাকের কুর্দ উপজাতির ১ লক্ষ মানুষ নতুন করে জরাথুস্ট্রীয় ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। জরাথুস্ট্রীয় ধর্মে আনুষ্ঠানিকভাবে দীক্ষিত করার জন্য নভজোত নামে একটি আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়। সাত বছর বয়স হওয়ার আগে কারও নভজোত হয় না। জরথুস্ট্রীয়বাদী অগ্নি উপাসক। অগ্নিকে জরাথুস্ট্র ধর্মে শুদ্ধতার প্রতিনিধি এবং ন্যায় ও সত্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, এমনকি তাদের ফায়ার টেম্পল বা অগ্নি মন্দিরও এই ধারণার উপর তৈরি।
তথ্য-২০২ ▌ ইহুদি ধর্ম :
অত্যন্ত প্রাচীন একেশ্বরবাদী ধর্ম। ইহুদি ধর্মের ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে খিস্টধর্ম, ইসলাম ধর্ম, বাহাই ধর্ম, ইয়াজিদি ধর্ম ও দ্রুজ ধর্ম। ইহুদি ধর্মানুসারীরা নিজেদেরকে ইব্রাহিমের পৌত্র জ্যাকব (বা ইয়াকুব)-এর উত্তরপুরুষ বলে মনে করেন। তাদের মূল ধর্মগ্রন্থ তোরাহ বা হিব্রু বাইবেল। ঔঁফধরংস হল ইহুদি ধর্মের প্রতিশব্দ, যারা বিশ্বের প্রাচীনতম জাতি ও ধর্মধারী। ‘যিহোবা’কে তারা বিশ্বের একমাত্র স্রষ্টা মনে করত। এটি আব্রাম কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও মোজেস কর্তৃক প্রবর্তিত বিশ্বের প্রথম একেশ্বরবাদী ধর্ম ছিল। প্রায় ৫০০০ বছর আগে সুমেরু দেশের উর শহরে আব্রাম নামে এক লোক বাস করত, যাকে ইহুদিরা তাদের ‘জাতির পিতা’ ও নবী মনে করত। তিনি আদেশ পেলেন যে, স্রষ্টা তথা ‘যিহোবা’কে মেনে চললে ‘যিহোবা’ তাদের এমন এক দেশ উপহার দিবেন, যেখানে শান্তি-ই শান্তি! আব্রাম তার জাতিকে নিয়ে গিয়েছিলেন ‘কেনান’-এ (প্যালেস্টাইন)। ইহুদিদের পূর্বপুরুষ ছিল যাযাাবর হিব্রু জাতি, যাদের উদ্ভব ইরাকের মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে।
তথ্য-২০৩ ▌খ্রিস্টান ধর্ম :
খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে যিশু খ্রিস্ট হচ্ছেন ঈশ্বরের পুত্র। ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ হিব্রু বাইবেলকে খ্রিষ্টানরা পুরাতন বাইবেল বলে থাকে। নতুন বাইবেল বা নিউ টেস্টামেন্ট খ্রিস্টানদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের শেষভাগ। একসময় রোমে ভয়ঙ্কর দুঃখের জীবন কাটিয়েছে দাস ও দরিদ্ররা। তাদের কাছে যিশুখ্রিস্টের মতবাদ ছিল সুস্থ ও সুন্দর জীবনের প্রতীক। তার দাওয়াতি কার্যক্রমের ফলে তাকে পাগল, অবৈধ সন্তান, বলে হেয়প্রতিপন্ন করতে থাকে। অতঃপর একদিন তাকে ব্লাসফেমী আইনে আটক করা হয়। অভিযোগ তার দ্বারা খোদা অবমাননামূলক কর্মকা- পরিচানার। প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ডের ঘুষ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচারক তার মৃত্যুদ- প্রদান করেন। মৃত্যুদ- কার্যকর করার দিনটি ছিল শুক্রবার এবং তারিখ ছিল এপ্রিলের ৩ মতান্তরে ১২ তারিখ। যিশুকে হত্যা করার তিনদিন পর তিনি নাকি পুনরায় এই দুনিয়াতে আগমন করেন এবং তার ১১ জন অনুসারীদের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে তার ধর্ম প্রচার করার নির্দেশ জ্ঞাপন করেন। এরপর তাকে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়।
তথ্য-২০৪ ▌‘ইসলাম’ ধর্ম :
জনসংখ্যার দিক দিয়ে (১৪২ কোটি) এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ধর্মীয় মতানৈক্যের ভিত্তিতে ইসলামের অনুসারীরা মূলত দুই ভাগে বিভক্ত: সুন্নি ইসলাম (১২৫ কোটি) ও শিয়া ইসলাম (১৭ কোটি)। মুসলমানরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে মৃত্যুর পরে পুনরুত্থানের উপর। ইহুদি ও খিস্ট ধর্মের ন্যায় ইসলাম ধর্মও ইব্রাহিমীয়। তিন বছর গোপনে দাওয়াত দেওয়ার পর মুহাম্মদ (সা.) প্রকাশ্যে ইসলামের প্রচার শুরু করেন। এ ধরনের প্রচারের সূচনাটা বেশ নাটকীয় ছিল। মুহাম্মদ (সা.) সাফা পর্বতের উপর দাঁড়িয়ে চিৎকার করে সবাইকে সমবেত করেন। এরপর প্রকাশ্যে বলেন যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল’। কিন্তু এতে সবাই তাঁর বিরুদ্ধে প্রচ- খেপে যায়। ধর্ম প্রচার করার সময় কাবার পুরোহিত সম্প্রদায়ের অন্যতম কুরেশীয়রা হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে নানা ধরনের কষ্ট দিয়েছিল। এমনকি তারা হযরতের প্রাণনাশের চেষ্টা করেছিল, তখন বাধ্য হয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা ত্যাগ করে মদিনাকে তাঁর নিবাস স্থল হিসেবে বেছে নেন। এই প্রবাসের তিথি থেকেই হিজরি সনের আরম্ভ হয়।
তথ্য-২০৫ ▌সালাফি মতবাদ :
‘সালাফি’ শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘পূর্বপুরুষকে নিঃশর্তভাবে অনুসরণ! বিশুদ্ব ইসলাম চর্চার দাবীদার ওহাবীবাদকে সালাফিবাদও বলা হয়ে থাকে। তাদের মতে রসুলের মদীনায় হিজরতের ৩০০ বছর পর পর্যন্ত মুসলমানরা খাঁটি ইসলাম ধর্ম পালন করেছে। এই সময়টাকে ওহাবীরা সালাফ বলে। তারা মনে করে সালাফের পর মুসলমানরা খাঁটি ইসলাম ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়েছে। মুসলমানদেরকে সালাফের সময়ের মতো ইসলাম চর্চায় ফিরিয়ে আনাই ওহাবীবাদের লক্ষ্য। ওহাবি মতবাদের মূল ভাবনাগুলো গৃহীত হয়েছে 'ইবনে তাইমিয়া'র চিন্তাধারা থেকে। সালাফিদের চিন্তায় বিবেক-বুদ্ধি বা যুক্তি তথা গবেষণার কোনো স্থান নেই, তাদের কাছে কেবল কোরআন-হাদিসের মূল মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত বিখ্যাত ধ্যান-ধারণার সাথে ইবনে তাইমিয়ার বক্তব্য সাংঘর্ষিক হবার ফলে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। যার পরিণতিতে ৭০৫ হিজরিতে সিরিয়ার আদালত তাঁর বিরুদ্ধে মিশরে নির্বাসনের রায় দেয়। হিজরি ৭০৭ সালে তিনি কারামুক্ত হন।
তথ্য-২০৬ ▌ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাংলাদেশ :
ধর্মনিরপেক্ষতার প্রধান শর্ত হলো, রাষ্ট্রনীতি এবং রাষ্ট্রাচারে কোনো ধর্মকে না রাখা। ব্যক্তিগত পর্যায়ে ধর্ম পালনে সব ধর্মের অনুসারীদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের প্রধান দু'টি রাজনৈতিক দলের ইসলামিক গ্রুপ আছে। এর বাইরে আরো শতাধিক ইসলামি রাজনৈতিক দল আছে। আবার বাংলাদেশে ৫০টি হিন্দু রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সমন্বয়ে আছে বাংলাদেশ জনতা পার্টি বা বিজেপি। শুরুতে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মের কোনো বিধান ছিল না। বরং সংবিধানের চার মূলনীতির অন্যতম ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। রাষ্ট্রকে ধর্মীয় চরিত্র দেওয়ার ধারণাটি পাকিস্তান থেকে ধার করা। পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭১ সালে যে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিল, তা থেকে উত্তরণের জন্য ১৯৭৩ সালে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করার মাধ্যমে পাকিস্তানকে ইসলামিক রিপাবলিকে রূপান্তর করে। জিয়াউর রহমান ভোটের রাজনীতিকে টার্গেট করেই সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম' সংযোজন করেন। এরপর এরশাদ ভুট্টো’র নীতি অনুসরণ করে ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম করেন।
তথ্য-২০৭ ▌মোতাজিলা মতবাদ :
ইসলামে উগ্রপন্থার বিপরীতে আছে মুতাজিলা। তারা যুক্তি আলোচনার উপর সবকিছু প্রতিষ্ঠা করতে চায়। বসরা শহরে অষ্টম শতাব্দীতে মোতাজিলা মতবাদের সূচনা হয়। মুতাজিলারা আল কিন্দির তত্ত্ব ‘শূন্য থেকে সৃষ্টি’ তত্ত্বটি সত্য বলে বিশ্বাস করেন। আব্বাসীয় খলিফা আল মামুন-এর শাসনামলে মুতাজিলা মতবাদ চিন্তাশীল ও সংস্কৃতিমনা লোকদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়েছিল। অন্ধ বিশ্বাসের পরিবর্তে যুক্তি ও বাস্তবতার ভিত্তিতে প্রচার চালিয়েছিলেন মুতাজিলায়। কোরান শরীফ-এ কিছু যুদ্ধের কাহিনী আছে মাত্র। এই বিশ্বাসকে আল মামুন সরকারী নীতি হিসাবে জনসাধারণকে গ্রহণ করতে বাধ্য করেন। অনেকে এই মতবাদ গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। এর ফলে অসংখ্য মানুষ কারারুদ্ধ হন; শাস্তি ভোগ করেন। অনেকে প্রাণ হারান। এই ঘটনা মুসলিম ইনকুইজিশন মিনহা বলে পরিচিত। জনসাধারণের বিরোধিতার মুখে খলিফা আল মুতাওয়াকিলের রাজত্বকালে মিনহা বন্ধ করে দেয়া হয়। রাজনৈতিকভাবে এই মতবাদের পতন হলেও ধর্মতত্ত্ব এবং দর্শনচর্চায় মুতাজিলাদের প্রভাব আজ পর্যন্ত মুছে যায়নি।
তথ্য-২০৮ ▌ শিয়া মতবাদ :
হযরত আলী (রা.)কে যাঁরা খিলাফত ও ইমামাত-এর একমাত্র যোগ্য উত্তরসূরি মনে করেন তারাই শিয়া। হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর উত্তরাধিকারী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইসলামে সর্বপ্রথম কোন্দল শুরু হয়। হযরত আবু বকর (রা.)-এর নির্বাচনের সময় কিছু ব্যক্তি হযরত আলী (রা.)-কে সমর্থন করেন। কারণ তিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহর জামাতা এবং চাচাতো ভাই। ৬৮০ খ্রিস্টাব্দে কারবালা প্রান্তরে ইয়াজিদ বাহিনী কর্তৃক ইমাম হোসেনের নৃশংসভাবে মৃত্যু শিয়া আন্দোলনকে সুদূরপ্রসারী করে। উমাইয়া খিলাফতের আমলে (৬৬১-৭৫০ খ্রি.) শিয়া সম্প্রদায় কারবালার নৃশংসতার প্রতিবাদে আল-মুখতার নেতৃত্বে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ইরাক ও পারস্যে তাদের আধিপত্য দৃঢ় হয়। শিয়াদের নিজস্ব হাদিস গ্রন্থ রয়েছে, যার মধ্যে আলী (রা.)’র লেখা হিসাবে প্রচলিত নাহজুল বালাগা। শিয়ারা সাময়িক বিবাহ তথা মু’তা বিবাহে বিশ্বাস রাখেন, যা অন্য ধারার মুসলিমরা রাখেন না। চার মাজহাবের সকল ইমাম ও ৫০+ হাদীসের গ্রন্থের সকল ইমাম সবাইকেই পথভ্রষ্ট মনে করেন শিয়ারা।
তথ্য-২০৯ ▌আহমদীয়া সম্প্রদায় :
মির্জা গোলাম আহমেদের নামানুসারেই আহমেদিয়া সম্প্রদায়। তিনি ভারতীয় পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলার কাদিয়ান শহরে ১৮৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। আহমেদিয়াদের মতে, রসুল(স:) বলেছিলেন যে, যখন মুসলমানদের ইমাম দূর্বল হয়ে আসবে, তখন ইসলামকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ ইমাম মেহেদি প্রেরণ করবেন। আহমেদিয়রা মনে করেন যে, ইমাম মেহেদি আর্বিভুত হয়েছেন, যার নাম মির্জা গোলাম মোহাম্মদ। ইসলামে জিহাদকে তিনি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। তিনি মনে করতেন যে, বর্তমান যুগে মুসলমানরা যুদ্ধ করবে কলমের সাহায্যে, তরবারি নয়। আহমদিয়া মনে করে যে, ১৫০০ বছরের আগের তৈরি করা মুসলিম আইন যুগের কারণে সংস্কার কিংবা পরিবর্তন হওয়া উচিত। তাদের মতে, মির্যা গোলাম আহ্মেদ হচ্ছেন যিশুর পাশাপাশি মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রদর্শিত পথে পাঠানো একজন নবী। তাদের মতে, নব্যুয়াতের সমাপ্তি মানে আর কোনো নতুন নবী আসতে পারবেন না তা নয়, নতুন নবী আসতে পারবেন তবে তা অবশ্যই হতে হবে মুহাম্মদ (সা.) যে পথ-প্রদর্শন করে গেছেন সেই পথে।
তথ্য-২১০ ▌ইসমাইলিয়া সম্প্রদায় :
নিজারী শিয়াদের দাবি ও তালিকা মোতাবেক ঈমাম জাফর সাদেকের দুই সন্তান, যথাক্রমে মুসা কাজেম ও ইসমাইল। এই ইসমাইল-এর ১৪তম অধঃস্থন পুরুষ নিজার এবং নিজারের ২৭তম অধঃস্থন পুরুষ প্রথম আগা খান। খলিফা আলী (রা.)-এর সূত্র ধরে তাদের হিসেবে বর্তমানের প্রিন্স করিম আগা খান ইসমাইলিয়া সম্প্রদায়ের ৪৯তম ইমাম। কুরআন তাদের মূল ধর্ম গ্রন্থ। তারা মনে করেন যে, ১৪০০ বছর আগে তদানীন্তন আরবের সমস্যার সমাধান দিয়েই কোরআনের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। কেয়ামত পর্যন্ত আসমানি ওহী আল্লাহর সুনির্দিষ্ট বান্দাদের উপর আসতে থাকবে। যেভাবে ইসমাইলিয়া ইমামদের উপর আসে। পাপীরা ইমাম আগা খানের নিকট এসে পাপের প্রায়চিত্তের জন্য ক্ষমা চাইলে, তিনি স্বীয় গুণে ক্ষমা করতে পারেন। এতে করে অনুসারীদের হজ্বের অনুষ্ঠানটি পালন করার সুযোগ ঘটে যায়। আগা খান তরিকা বোর্ডের মাধ্যমে সুদকে হালাল ঘোষণা করেছেন। স্বল্প সুদে ঋণ দেবার ব্যবস্থায় তারা পৃথিবীর দেশে দেশে কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে।
তথ্য-২১১ ▌ বাউল দর্শন :
বাউল দর্শন একটি আলাদা ধর্ম। সতেরো শতকে বাংলাদেশে বাউল মতের উদ্ভব হয়। এ মতের প্রবর্তক হলেন আউল চাঁদ ও মাধববিবি। বীরভদ্র নামে এক বৈষ্ণব মহাজন সেই সময়ে একে জনপ্রিয় করে তোলেন। হিন্দুতান্ত্রিক সাধনা, সুফী সাধনার বিকৃত রূপ ও বৌদ্ধ সহজিয়াদের সাধনার মিলন রূপ মূলত বাউল নামে পরিচিত। আবেগে উন্মাদ, প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতি ও লোকাচার পরিত্যাগী সাধকগণই বাউল নামে খ্যাত। বাউল দর্শনের মূল ভিত্তি হচ্ছে দেহতত্ত্ব। বাউলরা মনে করেন বিশ্ব স্রষ্টা যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার সমস্তই এই মানব দেহে বিদ্যমান আছে। সুতরাং ঈশ্বরকে খোঁজার জন্য দেহের বাইরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যৌনাচার হলো বাউল সাধনার অপরিহার্য অঙ্গ। পরকীয়া প্রেম এবং গাঁজা সেবন অনুমোদিত। বাউলরা বিশ্বাস করে যে, কুমারী মেয়ের রজঃপান করলে শরীরে রোগ প্রতিরোধক তৈরি হয়। এছাড়া, তারা রোগমুক্তির জন্য স্বীয় মূত্র ও স্তনদুগ্ধ পান করে। সর্বরোগ থেকে মুক্তির জন্য তারা মুত্র, রজঃ ও বীর্য মিশ্রণে প্রেমভাজা নামক পদার্থ তৈরি করে তা ভক্ষণ করে। একজন বাউলের একাধিক সেবাদাসী থাকে। অধিকাংশই কমবয়সী মেয়ে।
তথ্য-২১২ ▌সুফীবাদ :
সুষ্টিকর্তা ও তাঁর সৃষ্টির মধ্যে পারস্পরিক গভীর প্রেম সুফিবাদের মূল কথা। অষ্টম শতাব্দীতে মধ্যপ্রচ্যে সুফিবাদের জন্ম। সুফিবাদের প্রভাব ইসলাম ছাড়াও অন্যান্য ধর্মের উপরেও ছড়িয়ে পড়ে। বৌদ্ধধর্ম, ইহুদিধর্ম, খ্রিস্টানধর্ম ও হিন্দুধর্মের অনেক আধ্যাত্মিক গুরু সুফিবাদ গ্রহণ ও প্রচার করেন। আমরা অনেকেই অনেক সুফী ধারণা ইসলামি বিশ্বাস বলে মনে করি, কিন্তু সত্যিকার অর্থে ইসলামের সঙ্গে সূফীবাদের কোনো মৌলিক মিল নেই। সুফিরা বিশ্বাস করে তারা সরাসরি ঈশ্বর থেকে জ্ঞানপ্রাপ্ত। মুসলমানদের মধ্যে প্রথম ‘খানকা’ স্থাপন করেন ‘আবুল হাসেম উসমান বিন সারেক’ নামক এক ব্যক্তি যিনি কুফাতে (ইরাক) বসবাস করতেন এবং ১৬০ হিজরি সনে মৃত্যুবরণ করেন। তার ‘খানকা’র ন্যায় ভারতীয় অনেক সুফী খানকা স্থাপন করেন। সেখানে সাময়িক ‘মুতা’ বিয়ের ব্যবস্থা ছিল। এখান থেকেই ‘খানকি’ শব্দের উদ্ভব। আমরা ধর্মের নামে অনেক কিছুই করি যা মূলত এই সুফীবাদ থেকে এসেছে, যেমন- মাজার, কুলখানী, চল্লিশা, পীর, মুর্শিদ, মুরীদ, মিলাদ, শবেবরাত ইত্যাদি।
তথ্য-২১৩ ▌লৌকিক দর্শন :
আরজ আলী মাতুব্বর ধর্মের সত্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে বিপুলভাবে ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের গ্রন্থ অধ্যয়ন করেন। তিনি মনে করেন, ধর্ম যুগে যুগে মানুষকে সুশৃক্সখল করে শুভ ও মঙ্গলের পথে নিয়ে যেতে চেয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোনো ধর্ম নেই, যা মানুষকে অমঙ্গলের পথে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু কালে কালে কুসংস্কারের কালো মেঘ ক্রমশ ধর্মকে আচ্ছন্ন করে ধর্মান্ধ মানুষকে মনুষ্যত্ব বিবর্জিত করে ফেলেছে। একই ধর্মের ভিতরেও মতভেদের অন্ত নাই। হিন্দু ধর্মের বেদ যা বলে, উপনিষদ সকল ক্ষেত্রে তার সঙ্গে একমত নয়। বাইবেল-এর পুরাতন নিয়ম ও নতুন নিয়মে অনেক পার্থক্য। মুসলিমদের মধ্যে শিয়া, সুন্নী, মুতাজিলা, ওহাবী, কাদিয়ানী, খারিজী ইত্যাদি সম্প্রদায়ের মত এক নয়। আবার একই সুন্নী সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হানাফী, শাফী ইত্যাদি চার মাজহাবের মতামত এক নয়। এমনকি একই হানাফীদের বিভিন্ন পীরদের যথাÑ জৌনপুরী, ফুরফুরা, শর্ষিণা, ইত্যাদি বিভিন্ন খান্দানের বিভিন্ন রেছালা। কিন্তু বোবারও কল্পনাশক্তি আছে। ধর্মের মূল ভিত্তি বিশ্বাস। তবে যে কোনো বিশ্বাস জ্ঞান নয়।
তথ্য-২১৪ ▌আধ্যাত্মবাদ:
প্রচীন মানুষের ঘুম এবং স্বপ্নের কারণ না জানা থাকায়, তারা যুক্তি খাঁড়া করে কল্পনা করেছিল যে, দেহের ভিতরে থাকে আত্মা। ঘুমের সময় সেই আত্মা বেড়িয়ে গিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তারা ভাবত, কেউ মারা গেলে, আত্মা তার দেহ ছেড়ে বেড়িয়ে যায় এবং ঘুরে বেড়ায়। কিন্তু আত্মা কি.......তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ হলো- প্রাণী জবাই করার পর খ-িত টুকরোগুলোকে আমরা লাফাতে দেখি। অথবা সাপ, কেঁচো, টিকটিকি ইত্যাদির ছেঁড়া লেজ কিছুক্ষণ লাফাতে দেখি, কিংবা কোনো গাছের ডাল কেটে রোপণ করলে তা থেকে পৃথক পৃথক দশটি জীবিত গাছ উৎপত্তি হয়। এই গাছের জীবন কোথা থেকে আসে? আসলে মানব দেহের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ রয়েছেÑ মস্তিষ্ক, হৃৎপি-, আর ফুসফুস। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বন্ধ হলে কোমা হয়, হৃৎপি-ের কার্যকারিতা বন্ধ হওয়াকে বলে সিনকোপ, আর ফুসফুসের কার্যকারিতা বন্ধ হওয়াকে বলে আসফিক্সিয়া। আগেকার যুগের মানুষেরা মৃত্যুর এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানত না বলেই কল্পনার ফানুস উড়িয়ে ভাবতো যে, যমদূত এসে প্রাণ হরণ করলে মানুষ মারা যায়।
তথ্য-২১৫ ▌সাবমিশন ইসলাম :
আল-কোরআনই একমাত্র গ্রহণীয় ধর্মগ্রন্থ। তবে এটি বিকৃতি থেকে রক্ষা পায়নি বলে মত সাবমিশনবাদীদের। তাই পবিত্র কোরআনের এই বিকৃত অংশ বাদ দেওয়ার জন্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে রাশেদ খলিফা নিজেকে ইসলামের একজন রাসূল দাবি করে বসলেন। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর সুন্নাহ পুরোপুরি বাতিল করে এবং নবী ইব্রাহিমের রীতি অনুসরণ করে ‘সাবমিশন ইসলাম’ নামে নতুন একটি ধর্মের প্রচার করেন। এই মিসরীয় প-িত ১৯৬৪ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন জৈব-রসায়ন বিদ্যায়। ১৯৭৫-৭৬ সালে তিনি লিবিয়া সরকারের বিজ্ঞান উপদেষ্টাও ছিলেন। পরবর্তীতে রসায়নবিদ হিসেবে জাতিসংঘের অধীনে ভিয়েনাতে শিল্প উন্নয়ন সংস্থায় যোগ দেন। তিনি নিজে ইংরেজিতে কোরআন অনুবাদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ রচনা করেছেন। তবে রাশেদ খলিফার নিজেকে রাসূল দাবিতে মুসলিম কট্টরপন্থীরা ক্ষেপে উঠে। ফলে তারা ১৯৯০ সালের ৩১ জানুয়ারি আমেরিকার এরিজোনা রাজ্যের টুকসন মসজিদের ভেতর ৫৪ বছর বয়সে তাকে হত্যা করে।
তথ্য-২১৬ ▌বাহাই ধর্ম :
শিয়া মতবাদের প্রাথমিক যুগে ইমামের প্রধান শিষ্যকে বাব বলা হতো। বাবী মতবাদের শুরু হয় সাইয়েদ আলী মুহাম্মদ শিরাজী’র হাত ধরে। তিনি প্রচার করতে থাকেন যে, আল্লাহ তাঁর সঙ্গে কথা বলেন, তার নিকট ওহী আসে এবং তিনি আল্লাহর মনোনীত বাব। ধীরে ধীরে তার সমর্থক সংখ্যা বাড়তে থাকে। ইরানের শাহ তাকে গ্রেফতার করে। ১৮৫০ সালে ফায়ারিং স্কোয়াডে তার মৃত্যুদ- হয়। এই বাবের দেখানো পথ থেকে বাহাই আন্দোলনের সূত্রপাত। তাঁর অনুসারী মন্ত্রীপুত্র হুসাইন আলী নূরী দেখতে পান বাব কোরআনের আদলে ‘বেয়ান’ নামের যে ধর্মগ্রন্থ রচনা করেছিলেন, সেখানে একজন ইমাম মাহদী আগমনের কথা বলে গেছেন। তিনি সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে মাহদী দাবি করে বাহাউল্লাহ নাম ধারণ করেন। বাহাই ধর্মমত হচ্ছে; পরকাল নেই। এমনকি কবরের আজাব, কিয়ামত, পুনরুত্থান, হাশর, হিসাব, জান্নাত-জাহান্নাম বলতে কিছু নেই। শুধুমাত্র পিতার স্ত্রী ব্যতীত অন্য সকল মহিলাকে বিবাহের অনুমতি আছে বাহাই ধর্মে। এদের বর্ষপঞ্জিতে ১৯ মাস, প্রতি মাস ১৯ দিন।
তথ্য-২১৭ ▌ আলাওয়িবাদ :
আলাওয়ি শব্দের অর্থ হচ্ছে আলীর অনুসারি। আলাওয়িরা মূলত সিরিয়াতে বসবাস করেন। তাদের সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ। সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম আলাওয়ি। আলাওয়িরা আগে ইসমাইলি সম্প্রদায়ের অংশ ছিল। ৯ম শতাব্দীতে শিয়াদের ইমাম আল হাসান আল আসকারী এবং তার শিষ্য ইবনে নুসায়রী এই মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন। আলাওয়িদেরকে নুসায়রিসও বলা হয়। আলাওয়িরা আল্লাহর নবরূপে বিশ্বাস করেন। তাদের মতে, হযরত আলী হচ্ছে আল্লাহর নবরূপ। হযরত মোহাম্মদ (স:) আলাওয়ি ধর্মের ইমাম ‘সালমান’কে সৃষ্টি করেছেন। কোরান শরীফকে তারা বিশেষ গুরুত্ব দেয় না। তারা পুনর্জন্মে বিশ্বাস করে। কিন্তু তাদের মতে, যেহেতু ‘নারীদের আত্মা নেই’ তাই তাদের পুনর্জন্ম হবে না। আলাওয়িরা বিশ্বাস করে যে, প্রত্যেককে ৭বার পুনর্জন্ম লাভ করে বিশুদ্ধ হতে হবে মহাকাশে আলীর দেশে বাস করতে। যারা বিধর্মী তারা পশু হিসাবে পুনর্জন্ম লাভ করে। সিরিয়ার শাসক হাফিজ আল আসাদ আলাওয়ি সম্প্রদায়ের। তাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে কিতাব আল মাযম। আলাওয়িদের ধর্মচর্চা অত্যন্ত গোপনীয়।
তথ্য-২১৮ ▌ জায়েদিবাদ :
বইমাম জায়েদ ইবনে আলীর প্রবর্তিত ধর্মই জায়েদিবাদ। জায়েদিরা পাঁচজন ইমামে বিশ্বাস করে কিন্তু পঞ্চম ইমাম হিসাবে তারা মোহাম্মদ আল বাকিরের পরিবর্তে জায়েদ ইবনে আলীকে স্বীকার করে। ধর্মীয় দর্শনের দিক দিয়ে তারা উদারপন্থী মোতাজ্জিলা সম্প্রদায়ের অনুসারী। ইয়েমেনের শতকরা ৪৫ জন জায়েদি। সৌদি আরবে ১০ লক্ষ জায়েদি আছে। জায়েদিদের একটা বড় অংশ ইরাকের ওয়াসিটে বসবাস করে। জায়েদিরা তিনটি উপদলে বিভক্ত। প্রথম দলটির নাম জুরুদিয়া। এরা মনে করে, রসুল (স:) হযরত আলীকে উত্তরাধিকারী মনোনিত করেছিলেন। তাঁর নির্দেশ না মানবার জন্য হযরত আবু বকর(র:), হযরত ওসমান(র:) ও হযরত ওমর(র:)কে তারা পাপী মনে করে। দ্বিতীয় দলটিকে সুলায়মানী বলা হয়। হযরত আবু বকর(র:), হযরত ওসমান(র:) ও হযরত ওমরকে(র:) তারা পাপী মনে করে না, কিন্তু দোষী মনে করে। তৃতীয় দলটিকে তারাবিয়া বলা হয়। হযরত আবু বকর(র:), হযরত ওসমান(র:) ও হযরত ওমরকে(র:) তারা পাপী ও দোষী মনে করে না। এরা সর্বাপেক্ষা উদারপন্থী।
তথ্য-২১৯ ▌কাদারবাদ :
মুসলমানরা বিশ্বাস করে মানুষ যা কিছুু করে, তা আল্লাহ আগে থেকেই ঠিক করে রাখে। কিন্তু কাদারবাদীরা ঠিক এর উল্টো ভাবেন। তারা বলেন, মানুষের নিয়তি মানুষই স্থির করেন। কাদারবাদের জন্ম সপ্তম শতাব্দীতে। কাদারিরা বিশ্বাস করেন, মানুষের ভাল কাজগুলি আল্লার ইচ্ছাতেই ঘটে, মন্দ কাজগুলির জন্য দায়ী মানুষ। কাদারিপন্থীদের প্রবক্তা জুহানিক প্রথম নিয়তি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, যদি আল্লাহ আগে থেকেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে, কার নিয়তি কেমন হবে; তাহলে তাদের ভুলের জন্য মানুষ দায়ী হবে না। পক্ষান্তরে আল্লাহ যদি মানুষের ভবিষ্যত আগে থেকেই না জানেন, তবে অনেকেই তাঁকে সর্বশক্তিমান বলে মনে করবে না। এই নিয়তি বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত ঘেলান আদ্্ দিমাস্কি। তিনি মনে করেন যে, ‘আল্লাহ সবকিছু আগে থেকেই জানেন’ এই মতবাদটি মানুষ সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করলে মানুষের কর্মতৎপরতা কমে যেতে পারে। কারণ সবাই মনে করবে যে, সে কি করবে তা আল্লাহ আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছেন। কাজেই তার চেষ্ঠা করে লাভ নেই।
তথ্য-২২০ ▌মায়াবাদ:
অশরীরী আত্মায় বিশ্বাসকে মায়াবাদ বলে। তাবিজ, পানি পড়া, ফুঁ দেয়া এসব পীর-ফকিরের চিকিৎসা মায়াবাদেরই অংশ। জ্বীন তাড়ানোর নাম করে অসহায় কিশোরী ও নারীদের উপর অকথ্য অত্যাচার করা হয়। উৎসাহদাতারা মনে করেন, অত্যাচারটার হচ্ছে জ্বীনের উপর। ইউরোপ-আমেরিকায় মায়াবাদে বিশ্বাস ছিল কয়েক শ’ বছর আগে। স্বার্থান্ধ ক্ষমতাবানরা সাধারণ মানুষের মনে মায়াবাদ বজায় রাখতে ধর্মীয় নেতাদের সাহায্য নিয়েছেন। পাশ্চাত্যে অশরীরী আত্মা যেটাকে উইচ, আরবে যাকে জ্বীন আর ভারতবর্ষে সেটা ভুত হয়ে বিরাজ করেছে ধর্মের সহায়তায়। খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের কয়েকশ বছর পর্যন্ত খ্রিস্টান সাধু-পাদ্রীরা তাবিজ-কবজ, ঝাড়-ফু ব্যবহার করেছিলেন স্যাটান বা শয়তান ধমন করতে। অশরীরী আত্মা ভর করেছে এমন সন্দেহে হাজার হাজার নারীকে ডাইনী বা উইচ অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে সমগ্র ইউরোপে। উইচদের পোড়ানোর খরচ উইচদের আত্মীদেরকে বহন করতে হতো। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন জ্বীনের আছর বলে যেসব উৎসর্গ দেখা যায়, তার ৯৯.২১ শতাংশই মস্তিষ্কের রোগ।
তথ্য-২২১ ▌দ্রুজ ধর্ম :
এটি একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। দ্রুজদের আবাসভূমি সিরিয়া, লেবানন, ইসরাইল, এবং জর্ডানে। দ্রুজধর্ম মূলত শিয়া ইসলামের একটি শাখা। দ্রুজগণ নিজেদেরকে ‘আহলে তাওহীদ’ (একতাবদ্ধ মানুষ) অথবা ‘আল মুয়াহিদুন’ বলে পরিচয় দেয়। লেবাননের ইতিহাস গঠনে দ্রুজদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুজগণ আরবিতে কথা বলে। দ্রুজ অনুসারীগণের সংখ্যা দশ লাখেরও বেশি। দ্রুজ ধর্মের উৎপত্তি ১০ শতাব্দিতে। ইসমাইলিয় খলিফা আল হাকিমের রাজত্বকালে ধর্মনেতা মোহাম্মদ আদ দারাজি খলিাফা আল হাকিমকে স্বর্গীয় দূত হিসাবে ঘোষণা করেন। এই ধর্মনেতা আদ দারাজির নামানুসারেই এই ধর্মের নাম দ্রুজ। ১০১৮ সালে আদ-দারাজী আততায়ীর হাতে নিহত হন। দ্রুজরা প্রধানত পর্বতবাসী। দ্রুজরা তাদের ধর্মকর্ম সম্পর্কে গোপনীয়তা বজায় রাখে। নতুন কাউকে তাদের ধর্ম গ্রহণ করতে দেয় না, অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করাও নিষেধ। দ্রুজদের শতকরা ৯০ জনকে বলা হয় অজ্ঞান। এরা কর্মী। অন্য ১০ জনকে বলা হয় জ্ঞানী। এরা ধর্মীয় নেতা। মহিলাদেরকে দ্রুজরা জ্ঞানীদের মতোই সন্মান করেন।
তথ্য-২২২ ▌ ইয়াজিদি ধর্ম :
ইয়াজিদি হচ্ছে একটি কুর্দি নৃ-ধর্মীয় গোষ্ঠী, ইয়াজিদিগণ প্রধানত উত্তর ইরাকের নিনেভেহ প্রদেশে বসবাস করে। ১৯৯০ সালের দিকে ইয়াজিদিদের একটা অংশ আমেরিকা ও জার্মানিতে অভিবাসিত হয়। ইয়াজিদিগণ বিশ্বাস করেন, ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি সাতটি পবিত্র জিনিস বা ফেরেশতার মাঝে এটাকে স্থাপন করেছেন। এই সাতজনের প্রধান হচ্ছেন মেলেক তাউস, ময়ূর ফেরেশতা। ইয়াজিদিদের বর্ণিত তাউসের সঙ্গে ইসলাম ধর্মে বর্ণিত শয়তানের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। এমনকি স্বর্গ থেকে শয়তান ও মেলেক তাউসের বিতাড়নের কাহিনি একই, আদমকে সিজদা না করা। ইয়াজিদিরা দিনে পাঁচবার প্রার্থনা করে। দিনের সকল প্রার্থনা সূর্যের দিকে মুখ করে পড়া হয়। বুধবার হচ্ছে তাদের পবিত্র দিন এবং শনিবার বিশ্রাম দিবস। ডিসেম্বর মাসে তারা তিন দিনের রোজা পালন করে। ইয়াজিদিদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের একটি হচ্ছে ইরাকের উত্তর মসুলের লালিস-এ অবস্থিত শেখ সাদির মাজারে সাতদিনের তীর্থভ্রমণ পালন।
তথ্য-২২৩ ▌ জৈন ধর্ম :
"জৈন" শব্দটি এসেছে সংস্কৃত "জিন" (অর্থাৎ, জয়ী) থেকে। যে মানুষ আসক্তি, আকাক্সক্ষা, ক্রোধ, অহংকার, লোভ ইত্যাদি আন্তরিক আবেগগুলিকে জয় করেছেন এবং সেই জয়ের মাধ্যমে অনন্ত জ্ঞান লাভ করেছেন, তাঁকেই "জিন" বলা হয়। "জিন"দের আচরিত ও প্রচারিত পথের অনুগামীদের বলে "জৈন"। জৈনরা তাঁদের ইতিহাসে চব্বিশজন তীর্থঙ্করের কথা উল্লেখ করেন। এঁদের শিক্ষাই জৈনধর্মের মূল ভিত্তি। প্রথম তীর্থঙ্করের নাম ঋষভ এবং সর্বশেষ তীর্থঙ্করের নাম মহাবীর। ভারতে জৈন ধর্মবলম্বীদের সংখ্যা প্রায় ১০,২০০,০০০। অহিংসা জৈনধর্মের প্রধান ও সর্বাধিক পরিচিত বৈশিষ্ট্য। আবেগের তাড়নায় কোনো জীবিত প্রাণীকে হত্যা করাকেই জৈনধর্মে ‘হিংসা’ বলা হয়। প্রত্যেক মানুষ নিজেদের মধ্যে বাক্যালাপ ও কোনো আদানপ্রদানের সময় অহিংসার চর্চা করবে এবং কাজ, বাক্য বা চিন্তার মাধ্যমে অন্যকে আঘাত করা থেকে বিরত থাকবে, এই হল জৈনদের অহিংসা আদর্শের মূল কথা। মানুষ ছাড়াও সমস্ত জীবিত প্রাণীর প্রতিই জৈনরা অহিংসা ব্রত পালন করেন। জৈনধর্মের দ্বিতীয় আদর্শ হল মুক্তমনস্ক ‘ হওয়া বা অনেকান্তবাদ’।
তথ্য-২২৪ ▌ শিখ ধর্ম :
একেশ্বরবাদী ধর্মটির মূল ভিত্তি গুরু নানক দেব ও তার উত্তরসূরি দশজন গুরুর ধর্মোপদেশ। এর মধ্যে ধর্মগ্রন্থ ‘গ্রন্থসাহেব’ দশম গুরু হিসেবে বিবেচিত। প্রথম পাঁচ জন শিখ গুরু তা সংকলন করেছিলেন। শিখধর্ম বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী। এই ধর্মের অনুগামীর সংখ্যা প্রায় প্রায় ৩ কোটি। তবে শিখ ধর্মে মূর্তিপুজা নিষিদ্ধ। শিখ ধর্ম কঠিন আত্ম সাধনায় বিশ্বাসী। একেশ্বরবাদ এই ধর্মের প্রধান বিশ্বাস। গুরু নানক স্বর্গ, নরক ও কর্মফলে বিশ্বাস করতেন। ধর্মপ্রাণ শিখরা সাধারণত সূর্য ওঠার তিন ঘণ্টা আগে ঘুম থেকে ওঠেন। ¯œান শেষে গুরুর আরাধনায় মনোনিবেশ করবেন। তাদের মধ্যে সকাল, সন্ধ্যা ও রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে প্রার্থনা করার রীতি প্রচলিত আছে। শিখ ধর্মালম্বীরা গুরুদুয়ারায় উপস্থিত হয়েও সমবেত প্রার্থনায় যোগ দেন। শিখধর্মে ‘অহংকার, ক্রোধ, লোভ, মোহ ও কাম’ এই পাঁচটি পাঁচ চোর হিসেবে পরিচিত। শিখরা মনে করেন, এগুলি মানুষকে বিচ্যুত করে এবং এগুলি ক্ষতিকারক। অন্যদিকে মানুষের পাঁচটি সদগুণ হলো- সততা, সন্তোষ, দয়া, নম্রতা ও প্রেম।
তথ্য-২২৫ ▌ তাও ধর্ম :
সুপ্রাচীনকালে লোকেরা প্রকৃতিকে পুঁজা করতেন এবং দেবতা ও ভূতে অন্ধ বিশ্বাস করতেন। এদের তাড়িয়ে দেয়ার জন্যে লোকেরা জাদুবিদ্যা আবিষ্কার করেন। আড়াই হাজার বছর আগে চীনের পূর্ব চৌ আমলে বসবাসকারী দার্শনিক লাওচি "তাও নৈতিকতা শাস্ত্র" রচনা করেন। তাও ধর্ম ছুয়ান চেন ও চেং ই - দুই সম্প্রদায়ে বিভক্ত। ছুয়ান চেন সম্প্রদায়ের লোক মানে সন্যাসী। তারা বিয়ে করেন না এবং মাংস জাতীয় খাবার খান না। তারা সাধারণত তাও ধর্মের মন্দিরে বাস করেন। চেংই সম্প্রদায়ের লোকেরা সাধারণত নিজেদের বাড়িতে থাকেন। তারা বিয়ে করতে পারেন এবং মাংস জাতীয় খাবার খেতে পারেন। লাওৎস-এর হাত ধরে এ দর্শনের বিকাশ লাভ করে। মনে করা হয় তিনি ছিলেন অপর চীনা দার্শনিক কনফুসীয়াসের সমসাময়িক। কোনো কোনো ঐতিহাসিক মনে করেন লাওৎস একজন নয়, অনেক। তাও পূজার জন্য দেড় হাজার মন্দির রয়েছে। বেইজিংয়ের হোয়াইট ক্লাউড মন্দিরকে ধরা হয় তাওবাদের মূলকেন্দ্র ভূমি। এ পথের অনুসরণকারী ২০ লাখের মতো। তাওবাদের মূল গ্রন্থ তা ওটেচিং।
তথ্য-২২৬ ▌কনফুসীয় ধর্ম :
চীনের একটি নৈতিক ও দার্শনিক বিশ্বাস ও ব্যবস্থা যা বিখ্যাত চৈনিক সাধু কনফুসিয়াসের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। এটি মূলত নৈতিকতা, সমাজ, রাজনীতি, দর্শন এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও চিন্তাধারাসমূহের সম্মিলনে সৃষ্ট একটি জটিল ব্যবস্থা যা একবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতি ও ইতিহাসে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। কনফুসিয় ধর্মের মূলকথা হচ্ছে মানবতাবাদ। দু’হাজার বছর ধরে চীনে কনফুসিয়ান তত্ত্বের প্রভাব শুধু রাজনীতি ও সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে নয়, চীনাদের চিন্তাধারা ও আচার-আচরণেও আছে। খিৃস্টপূর্ব ৫৫১ সালে কনফুসিয়াসের জন্ম। তার নাম খুন ছিউ, কনফুসিয়াস হলো তার প্রতি সবার সম্মানসূচক ডাক। ‘লুন ইয়ু নামক একটি বইয়ে কনফুসিয়াসের চিন্তাধারা ও আচার- আচরণ বর্ণনা করা হয়েছে। চীনে এই বই ধর্মগ্রন্থের মতো পবিত্র ছিল। চীনের একটি কথা আছে, ‘লুন ইয়ু’ বইয়ের অর্ধেক তত্বই দেশশাসনে যথেষ্ঠ। কনফুসিয়াস বলেছিলেন, তিনজনের মধ্যে অবশ্যই আমার শিক্ষক আছেন। এ কথার অর্থ হলো প্রত্যেকের গুণ আছে, কাজেই পর¯পরকে শিখতে হবে।
তথ্য-২২৭ ▌শিন্তো ধর্ম :
জাপানি জাতির প্রচলিত আচারনির্ভর ধর্ম। খ্রিস্টের জন্মের ৬৬০ বছর পূর্বে শিন্তো ধর্ম উৎপত্তি লাভ করে। জাপানের প্রধান ৮০% মানুষ বিভিন্নভাবে শিন্তো রীতিনীতি পালন করে কিন্তু খুব অল্প সংখ্যক লোক নিজেদেরকে শিন্তো ধর্মানুসারী বলে পরিচয় দেয়। জাপানের প্রধান দুইটি ধর্ম হলো শিন্তো ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম। শিন্তো ধর্মে মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে কিছু বলা নেই বলে বৌদ্ধ ধর্ম ও শিন্তো ধর্ম বহু যুগ ধরে জাপানে সহাবস্থান করেছে। বর্তমানেও বহু জাপানি দুই ধর্মই সমানভাবে অনুসরণ করে। শিন্তো ধর্ম ১৬শ থেকে ১৯শ শতকে বিস্তার লাভ করে। জাপানের অনেক বাসাতে শিন্তো দেবদেবীদের পূজার উদ্দেশ্যে নির্মিত একটি তাক বা স্থান থাকে। “জাপানি লোকেরা জন্মগ্রহনের অনুষ্ঠান পালন করে শিন্তো ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী, বিয়ে করে খৃস্টীয় ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী এবং শেষকৃত্য অনুষ্ঠান পালন করে বৌদ্ধ ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী”। এই যে একই ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন ইভেন্টে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের রীতিগুলো পালন করে, একে তারা কখনো সাংঘর্ষিক বিষয় মনে করে না; বরং সানন্দেই তা গ্রহন করে।
তথ্য-২২৮ ▌পুঁজিবাদ :
পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্র (ইংরেজি ভাষায়: ঈধঢ়রঃধষরংস) বলতে এমন একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বোঝানো হয় যেখানে বাজার অর্থনীতিতে মুনাফা তৈরির লক্ষ্যে বাণিজ্য, কারখানা এবং উৎপাদনের উপকরণসমূহের উপর ব্যক্তিগত মালিকানার নিয়ন্ত্রণ থাকে। এটি হলো সেই সমাজ সংগঠন যাতে পণ্য স¤পর্ক, মানে কেনাবেচার স¤পর্ক জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমান যান্ত্রিক বিশ্বের চালিকা শক্তি হচ্ছে -পুঁজিবাদ। এখানে সবকিছুর উপরে অর্থের পূজা করা হয়। মানুষের শ্রম থেকে শুরু করে ভালোবাসা, মানবতা সবই অর্থের মানদ-ে মূল্যায়ন করা হয়। পুঁজিবাদের অভ্যুদয় ঘটেছিল সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতকে রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে, তখন শিল্প বিপ্লবের ঝান্ডা বহন করে ব্যাপক শিল্পায়ন, বিজ্ঞানের অগ্রগতি, সাহিত্য-সংস্কৃতির অগ্রগতি, মানবতাবাদ-গণতন্ত্রের শ্লোগান, এইসব ঘোষণা নিয়ে পুঁজিসামনে উপস্থিত হয়েছিল। তখন কেউই দুঃস্বপ্নে ভাবেন নাই এই পুঁজিবাদ আজকে মানবসভ্যতাকে কী ভয়ঙ্কর বিপদের সম্মুখীন করবে। আজ ৩৫০ কোটি মানুষের সমান স¤পদ, মাত্র ৮৫ জন ব্যক্তি ভোগ করছে।-
তথ্য-২২৯ ▌ মৌলবাদ :
বমৌলবাদ মানে গোঁড়া সম্প্রদায়। ধর্মের আদি/মূল নীতি বা নিয়মগুলোর কঠোর অনুসরণই হলো মৌলবাদ। ঈহুদি মৌলবাদীরা মনে করে তারা ঠিক, অন্যরা বেঠিক। খ্রিস্টান মৌলবাদীরা মনে করে তাদের ধর্মের মত বা বাণী ব্যতীত অন্য সব অগ্রহণযোগ্য। হিন্দু মৌলবাদীরা মনে করে তাদের ধর্মের বাণী সনাতন বা আদি তাই অন্য সব অগ্রহণযোগ্য। মুসলিম মৌলবাদীরা মনে করে তাদের ধমই সঠিক অন্য সব বাতিলযোগ্য। যদি বিষয়টা এই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকতো তাহলেও কোনো কথা ছিলো না। কিন্তু‘ এক ধর্মের মৌলবাদীরা অন্য ধর্মের প্রতি কোনোকালেই সহনশীল নয়, সহিংস। শুধু অন্য ধর্ম কেনো, নিজ ধর্মের উদার ধর্মতত্ত্ববাদীদের প্রতিও তারা সহনশীল নয়! বর্তমানে ইসলামী, ঈহুদী এবং হিন্দু মৌলবাদীরা বিশ্বময় বিষফোঁড়া। আবার নাস্তিক মৌলবাদও আছে। একজন নাস্তিক মনে করে সে মহাজ্ঞানী আর বাকিরা মহামূর্খ্য। তবে নাস্তিক মৌলবাদীরা সহিংস নয়; ধর্ম বিদ্বেষী। আমাদের বিভিন্ন মৌলবাদী চেতনার পরিবর্তন ঘটিয়ে মানবতার চেতনার সুদৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। তবেই উন্নত নৈতিকতাবোধ সম্পন্ন মানবিকমানুষ হতে পারবো।
তথ্য-২৩০ ▌প্রগতিবাদ :
যারা অগ্রগতির ধারণাকে সমুন্নত রেখে জীবন পরিচালনা করতে চান, তাদের বলা হতে থাকে প্রগতিশীল। আর যারা তাদের বিরোধিতা করেন, ফিরে যেতে চান আগের অবস্থায়, তাদের বলা হতে থাকে প্রতিক্রিয়াশীল। আমাদের দেশে প্রগতিশীলদের একটি অংশ নিজেদের মুক্তমনা বলে দাবি করেন। মুক্তমনা মূলত মুক্তচিন্তক, যুক্তিবাদী এবং মানবতাবাদীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্র। এই মুক্তমনারা বর্তমান সমাজে বিদ্যমান অদৃষ্টবাদ, ভাববাদ আর বিশ্বাসনির্ভরতার বিপরীতে একটি বিজ্ঞানমনস্ক এবং যুক্তিবাদী ধারা প্রবর্তনে বদ্ধপরিকর। মুক্তমনাদের আস্থা মুক্তবুদ্ধিতে, অন্ধবিশ্বাসে নয়। কোন বিশ্বাস বংশ-পর¤পরায় প্রচলিত হয়ে এসেছে বলেই সেটাকে অবলীলায় বিশ্বাস করতে হবে এমন যুক্তি মুক্তমনারা মানেন না। তাঁরা মুক্তমনে প্রতিটি ধারণাকে যাচাই-বাছাই করতে চান। আবার অনেক মুক্তমনা তার বিশ্বাসকে সমগ্র সমাজের উপর চাপিয়ে দেবার নীতি পছন্দ করেন না। তাদের মতে, ওই প্রচেষ্টা কম হয়নি, কিন্তু‘ শেষাবধি ফলাফল জঙ্গিবাদের উত্থান।
তথ্য-২৩১ ▌“মানবতাবাদ”:
পানির ধর্ম যেমন নিবারণ করা, আগুনের ধর্ম দহন করা তেমনি মানুষের ধর্ম মনুষ্যত্ব বা মানবতা। আমরা যেটাকে বলি খ্রিস্টানধর্ম, ইসলামধর্ম বা আরও পৃথিবীর ১০০০ ধর্ম; এগুলো ধর্ম নয়। এসব এক একটা বিশ্বাস। মানবতাবাদ হচ্ছে অন্যকে নিজের মত করে দেখতে জানা, তাকে যথোপযুক্ত আসনে সমাসীন করা। মানবতার কল্যাণে যা কিছু প্রয়োজন তার চিন্তা ও বাস্তবায়নের প্রচেষ্টাই মানবতাবাদ। মানবিকতাবোধের যতো বেশি উন্মেষ ঘটবে ততোই মানবতাবাদ ধারণাটি পূর্ণতা পাবে। বাংলাদেশে ইসলাম প্রচারের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাই, মৌলবাদী রক্ষণশীল মৌলভি-মোল্লাদের প্রচারণার চেয়ে সুফি-সাধক, পীর-দরবেশ, আউল-বাউলদের অবদান এ দেশে ইসলাম প্রচারে অধিক কার্যকর হয়েছে। আঠারো ও উনিশ শতকে বাংলার গ্রাম অঞ্চলে কিছুসংখ্যক আউল-বাউল ও চারণকবির আবির্ভাব দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিলেন মরমি কবি ফকির লালন শাহ। হিন্দুরা লালনকে হিন্দু সাধক বলে মনে করতেন; অন্যদিকে মুসলমানদের কাছে তিনি ছিলেন সুফি ফকির।
তথ্য-২৩২ ▌অজ্ঞেয়বাদ :
অজ্ঞেয়বাদ হচ্ছে একটি মতবাদ অথবা কতিপয় যুক্তির সমন্বয়ে গঠিত একটি ধারণা, এটি কোনো ধর্ম নয় যদিও এটি ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করে না আবার স্বীকারও করে না। ইংরেজ জীববিজ্ঞানী টমাস হেনরি হাক্সলি 'অজ্ঞেয়বাদ' শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন ১৮৬৯ সালে। মার্কিন দার্শনিক উইলিয়াম এল. রোয়ে বলেন, "অজ্ঞেয়বাদ হচ্ছে মানবজাতি কখনো ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা যে আছেন এটি শক্তভাবে প্রমাণ করতে সমর্থ হবে না আবার ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা যে নেই এটিও শক্তভাবে প্রমাণ করতে অসমর্থ থেকে যাবে"। আস্তিকতা এবং নাস্তিকতার মধ্যে মিল হচ্ছে দুই পক্ষই নিশ্চিত যে তাদের বিশ্বাসটাই সঠিক। কিন্তু অজ্ঞেয়বাদীরা পরিপূর্ণভাবে নিশ্চিত নয় কোন ব্যাপারেই। অজ্ঞেয় এর ইংরেজী প্রতিশব্দ 'অ্যাগনস্টিক' (ধমহড়ংঃরপ) শব্দটি প্রাচীন গ্রীক ভাষার দুটি শব্দ 'এ', (ধ-) এবং 'নসিস' '(মহōংরং) থেকে এসেছে যাদের অর্থ যথাক্রমে নেই এবং জ্ঞান। প্রাচীন যুগের খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারকরা গ্রীক শব্দ 'নসিস' (জ্ঞান) কে "আধ্যাত্মিক জ্ঞান" বোঝাতে ব্যবহার করতেন।
তথ্য-২৩৩ ▌ বিবর্তনবাদ :
ধরুন, আপনার বয়স ৫০ বছর। আপনার ১ বছর বয়সের একটি ছবি তোলা হয়েছিল। এরপর ১ মাস, ২ মাস, ৩ মাস... এভাবে ৫০ বছর বয়সের প্রত্যেক মাসের ছবি তোলা হয়েছিল। এবার যে-কোনো ২ মাসের ২টি ছবি পাশাপাশি রাখলে দেখা যাবে, ছবি ২টির মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু আপনি যদি ৫ বছর বয়সের ছবির সঙ্গে ৫০ বছর বয়সের ছবি পাশাপাশি রাখেন, তাহলে এই ছবি ২টি একই ব্যক্তির বলে মনে হবে না। সময়ের ব্যবধানে শরীরে ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে একই ব্যক্তির ভিন্ন চেহারা বা ভিন্ন কাঠামো দেখা যায়, এটাই বিবর্তন। কোটি কোটি কিংবা লক্ষ লক্ষ বছর ব্যবধানে পৃথিবীতে বা জীবদেহে যে পরিবর্তন এসেছে, এটা যারা জানেন এবং মানেন তারা বিবর্তনবাদী। বিবর্তনবাদিতা মানে পৃথিবী কীভাবে উৎপত্তি হয়েছে এবং মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী কীভাবে পৃথিবীতে এসেছে, তার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা জানা। ১৯৫৯ সালে চার্লস ডারউইন লিখেন বিবর্তনের পিছনে চালিকাশক্তি হলো ‘প্রাকৃতিক নির্বাচন’। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রকৃতি যোগ্যতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে বেছে নেয়। আর অযোগ্যকে বাতিল করে দেয়।
তথ্য-২৩৪ ▌ নাস্তিক্যবাদ :
আস্তিক্যবাদ-এর বর্জনকেই নাস্তিক্যবাদ বলা হয়। ইংরেজি ‘এইথিজম’ (অঃযবরংস) শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক ‘এথোস’ শব্দটি থেকে। শব্দটি সেই সকল মানুষকে নির্দেশ করে, যারা এথেন্সবাসী সক্রেটিস, প্লেটো গং দার্শনিকদের মতো ঈশ্বরের অস্তিত্ব নেই বলে মনে করে এবং প্রচলিত ধর্মগুলোর প্রতি অন্ধবিশ্বাসকে যুক্তি দ্বারা ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করে। বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার ১৪.৯% মানুষ ধর্মেই বিশ্বাস করে না। জাপানের ৬৪% থেকে ৭৫% নাস্তিক, রাশিয়াতে এই সংখ্যা প্রায় ৬৮% এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এ ৪০% (ইতালি) থেকে শুরু করে ৮৫% (সুইডেন) পর্যন্ত। চীনের ৯০ % লোক নাস্তিক। নাস্তিকতা ধর্ম নয়। কারণ, একজন নাস্তিক কারো প্রার্থনা করেন না। কোনো সৃষ্টিকর্তা মানেন না। কোনো উপাসনালয়ে যান না। একজন মুসলিম, হিন্দু, বা খ্রিস্টান জন্মগতভাবে সে তার পারিবারিক ধর্মের অনুসারী হয় কিন্তু একজন নাস্তিক সে তার নিজের বিবেক, বুদ্ধি, বিচার বিশ্লেষণ করেই নিজের ধর্ম নির্ধারণ করেন। নাস্তিকতা জন্মগতভাবে অর্জিত হয় না। মেধাবী ও গবেষকরা নাস্তিক হয়।
তথ্য-২৩৫ ▌চার্বাক দর্শন :
চার্বাকপন্থীরা জগতের সৃষ্টিকর্তা হিসেবে কোনো ঈশ্বরকে স্বীকার করেন না। ‘চারু’ বা ‘বৃহস্পতি’ প্রবর্তিত দর্শন বলে একে ‘চার্বাক’ বা ‘বার্হস্পত্য’ বলে। বার্হস্পত্যসূত্র চার্বাকগণের মূলগ্রন্থ। চার্বাকরা বলেন, যা দেখা যায় না, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়, অর্থাৎ আনসিন ইজ নাথিং। তাঁরা অনুমানের উপর ভিত্তি করে রচিত কোনো তথ্য মানেন না এবং শোনা কোনো কিছু সত্য বলে স্বীকার করেন না। তাদের মত হলোÑ যা প্রত্যক্ষযোগ্য নয়, তার অস্তিত্ব নেই। কাজেই ঈশ্বর, পরলোক, পাপ-পুণ্য এ সবকিছুই নেই, যেহেতু এগুলো প্রত্যক্ষযোগ্য নয়। চার্বাক মতে ইন্দ্রিয়জ সুখই মানুষের জীবনে একমাত্র কাম্য। তাই এই ইন্দ্রিয়-সুখই মানুষের জীবনের চরম লক্ষ্য হওয়া উচিত। পার্থিব দুঃখই নরক। মৃত্যুতেই সবকিছুর সমাপ্তি ঘটে। চার্বাকগণ বলেনÑ অতীত চলে গেছে, ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত, কেবল বর্তমান মানুষের আয়ত্তে আছে। সুতরাং বর্তমান জীবনে মানুষ যে উপায়েই হোক, যত বেশি সুখ করতে পারে তা করা উচিত। কোনো কারণে বর্তমান সুখকে বিসর্জন দেয়া মানুষের পক্ষে মূর্খতা। বৌদ্ধ ধর্ম চার্বাক দর্শনের সাহায্যে অগ্রসর হয়।
তথ্য-২৩৬ ▌কমিউনিজম :
১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের সময় পার্লামেন্টের ডানদিকে বসতেন শাসকদল এবং সভাপতির বাঁ পাশের আসনগুলোয় বসতেন বিরোধীদল। বাঁ দিকে বসার জন্য তাদের বলা হতো বামপন্থী। পরবর্তীকালে সমাজতন্ত্রীদেরই সাধারণভাবে বামপন্থী বলা শুরু হয়। দার্শনিক হেগেলের মৃত্যুর পর তার সমর্থকগণ ডানপন্থী ও বামপন্থী এই দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকে ডানপন্থী হেগেলীয়রা হেগেলের ভাববাদের আলোকে ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে চেষ্টা করেন। আবার অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত তরুণ হেগেলীয় সমর্থকগণ দ্বান্দ্বিক দিকটি গ্রহণ করেন। আর এই দলের একজন অগ্রনায়ক ছিলেন ফয়েরবাখ। যিনি যান্ত্রিক বস্তুবাদ মতের অবতারণা করেন। কার্ল মার্কস ফয়েরবাখের বস্তুবাদকে গতিশীল করতে সচেষ্ট হোন। মার্কসের ঘনিষ্ট সহযোগী ছিলেন এঙ্গেলস। মার্কস ও এঙ্গেলস -এর তত্ত্বই লেনিন-এর হাত ধরে কমিউনিস্ট মেনিফেস্টোতে যোগ হয়। আর এভাবেই হেগেলের দর্শনের বাম হাত বলে খ্যাত দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি মার্কস-এঙ্গেলস-লেনিনের হাত করে বামপন্থী মতাদর্শের ভিত্তিমূল।
তথ্য-১৩৭ ▌নগ্নতাবাদ বা প্রকৃতিবাদ :
(ঘধঃঁৎরংস বা ঘঁফরংস) হচ্ছে এক ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। এই আন্দোলন সর্বসমক্ষে ও প্রকাশ্যে নগ্নতাকে সমর্থন জানায় এবং তার সপক্ষে মতপ্রকাশ করে। তাঁরা এমন এক সামাজিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান যেখানে কেউ সাধারণ মানুষের সামনে নগ্ন হয়ে থাকতে অস্বস্তিবোধ করবে না। এই দর্শনের অনেকগুলো এসেছে স্বাস্থ্য ও শারীরিক সামর্থ্য সংক্রান্ত, যা এসেছে বিশ শতকের জার্মানি থেকে। এর পেছনে আছে প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়ার ধারণা। এছাড়া সাম্যতার সৃষ্টিও এর পেছনে একটি স্পৃহা হিসেবে কাজ করেছে। জার্মানি থেকে পরবর্তীতে এই ধারণা ইংল্যান্ড, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশে বিস্তার লাভ করে এবং বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ক্লাব তৈরি হয়। ফরাসিরা দীর্ঘমেয়াদি ছুটিতে নগ্নতা উপভোগের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট স্থানে বড় কমপ্লেক্স নির্মাণ করেছে। এই ধারণা পরবর্তীতে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রেও প্রসারিত হয়েছে। এছাড়া নগ্নতাবাদী পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন দেশে ন্যুড ভিলেজ, ন্যুড বিচ তৈরি হয়েছে। এই ধারণাটি সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ক্যারিবীয় অঞ্চলে।
তথ্য-২৩৮ ▌ভাববাদ ও বস্তুবাদ :
বস্তুবাদ: পৃথিবী বস্তুগত, তার অস্তিত্ব আছে বিষয়গতভাবে, চৈতন্যের বাইরে ও চৈতন্য-নিরপেক্ষভাবে, বস্তুই মুখ্য, তা কারো দ্বারা সৃষ্টি হয়নি। চৈতন্য হল বস্তুরই একটি গুণধর্ম; পৃথিবী ও তার নিয়মগুলি জ্ঞেয়। ভাববাদ: জগতের সবকিছু পরমাত্মা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়, অর্থাৎ বস্তুজগতের সৃষ্টি ও ধ্বংসসহ সকল রকমের পরিবর্তন পরমাত্মা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ভাববাদীরা মনে করেন বস্তু ও শক্তি দুটো ভিন্ন জিনিস। বস্তু জড় বিশেষ, কিন্তু শক্তি একটি অবস্তুগত জিনিস। শক্তি যখন বস্তুর উপর ক্রিয়া করে তখনি বস্তু সক্রিয় হয়ে ওঠে। অন্যদিকে বস্তুবাদ অনুসারে বস্তু ও শক্তি ভিন্ন কিছু নয়। যতটুকু পার্থক্য তা নিতান্তই অবস্থাগত এবং বাহ্যিক। এ জন্য এরা পর¯পর রূপান্তরযোগ্য। ভাববাদী তত্ত্ব অনুসারে মানুষের দেহের মধ্যে আত্মা নামক অবস্তুগত একটি অবিনাশী অস্থিত্ব আছে। মানুষের দেহের অবসানের পরেও আত্মা অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকে। অন্যদিকে বস্তুবাদী তত্ত্ব অনুসারে আত্মা বলে অবিনাশী ও চিরন্তন কিছু নেই। কাজেই আত্মা অমরত্বের কোন প্রশ্নই ওঠে না।
তথ্য-২৩৯ ▌সংশয়বাদ: ও মুক্তমনা :
সংশয়বাদ: যে-কোন কিছুকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মনোভাবকেই সংশয়বাদ বলা হয়। কোনকিছুর নিদর্শন পেলে তাকে বিনা বাক্যে মেনে না নিয়ে বরং সেই নিদর্শনটিকেই প্রশ্নবিদ্ধ করাই সংশয়বাদ। প্রাচীন গ্রিসে কিছু দার্শনিক ছিলেন যারা "কোন কিছুকেই নিশ্চিত বলে ঘোষণা দিতেন না বরং সবকিছুতেই তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করতেন"। দার্শনিকদের এই ধারাটিকে স্কেপ্টিসিজম বলা হয়। অভিজ্ঞতাবাদ: অভিজ্ঞতাবাদ বলতে এরূপ তত্ত্বকে বোঝায় যে, মানুষের ইন্দ্রিয়-অভিজ্ঞতাই হচ্ছে জ্ঞানের একমাত্র উৎস। অভিজ্ঞতাবাদের তত্ত্ব অনুযায়ী আমাদের চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহবা, ত্বক- অর্থাৎ ইন্দ্রিয়সমূহ হচ্ছে ভাবের বাহক এবং ভাবের উৎস কেন্দ্র। ইন্দ্রিয়জ অভিজ্ঞতাই হচ্ছে জ্ঞানের মূল। মুক্তচিন্তা: মুক্তচিন্তা হল এক প্রকার দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গী যা বলে যে বিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা এবং যুক্তির আলোকে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত; মতামত গঠনের ক্ষেত্রে প্রথা, অন্ধ বিশ্বাস এবং কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হওয়া বাঞ্চনীয় নয়। সচেতনভাবে মুক্তচিন্তার প্রয়োগকে বলে মুক্তচিন্তন এবং এর অনুশীলনকারীদের বলে মুক্তমনা।
তথ্য-২৪০ ▌ট্রোবিয়ান্ড দ্বীপপুঞ্জ :
১৭৯৩ সালে ফরাসি নাবিক ডেনিস ট্রোবিয়ান্ড পাপুয়া নিউগিনির ট্রোবিয়ান্ড দ্বীপটি আবিষ্কার করেন। দ্বীপটি আদিম মানুষের এক ভালোবাসার মুক্ত দুনিয়া। অবাধ প্রেম সেখানে। ইচ্ছা হলেই নারী বা পুরুষ তার সঙ্গী বদল করতে পারে। বেছে নিতে পারে পছন্দের সঙ্গী। অবাধে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে তারা। এমন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রতিটি গ্রামে বিশেষ আকৃতির কুঁড়েঘর আছে। একে বলা হয় ‘লাভ হাট’। বা বুকুমাতুলা। সেখানে বসবাসকারী নারীদের শরীরের উপরের অংশে কোনো পোশাক থাকে না। ট্রোবিয়ান্ড দ্বীপপুঞ্জের মানুষরা মনে করেন শিশুর জন্ম হলো এক ধরনের জাদু। এতে যৌনতা, গর্ভধারণের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা মিষ্টি আলুকে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করে। যদি সেখানে কোনো যুবতী অন্তঃসত্ত্বা হয়, তাহলে নবজাতকের পিতা ধরা হয় ঐশ্বরিক শক্তি। ইদানীং এ সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। এতে তাদের দু’চারজনের দৃষ্টিভঙ্গিতে সামান্য পরিবর্তন আসছে। ভালোবাসাময় এ সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে থাকেন নাররীরা।
তথ্য-২৪১ ▌চারটি প্রধান ধর্মীয় বিশ্বাস :
বর্তমানে জনসংখ্যার বিচারে চারটি প্রধান ধর্মীয় বিশ্বাসের ভেতর হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে ভারতবর্ষ থেকে এবং খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে আরব উপদ্বীপ থেকে। সংখ্যার দিক থেকে সর্বাধিক হচ্ছে খ্রিষ্টানÑ ২১০ কোটি, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩১.৫%। মুসলমান ও হিন্দু হচ্ছে প্রায় সমান; ১৫০ কোটি বিশ্ব জনসংখ্যার ২৫% মুসলমান ও ২৩% হিন্দু। বৌদ্ধ হচ্ছে ৭১ কোটি, বিশ্ব জনসংখ্যার ৭ দশমিক ১%। ধর্মে বিশ্বাসী নয়, নাস্তিক ও অজ্ঞেয়বাদীর সংখ্যা হচ্ছে ১১০ কোটি। এদের ভেতর বৌদ্ধদের একটি অংশ আছে, যারা ঈশ্বর ও পরকালে বিশ্বাস করে না। বিশ্বের এই চারটি প্রধান ধর্মবিশ্বাসের মানুষই বাংলাদেশে আছে, যাদের ভেতর বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে মুসলিম, মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৯%। এ চারটি ধর্মের কোনোটি বাংলাদেশের আদি ধর্ম নয়। হিন্দু ধর্মের সঙ্গে এ দেশের মানুষের পরিচয় ঘটেছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে। এরপর বৌদ্ধ ধর্ম এসেছে আড়াই হাজার বছর আগে, ইসলাম ধর্ম এসেছে প্রায় এক হাজার চারশ’ বছর আগে এবং খ্রিস্ট-ধর্ম এসেছে প্রায় দুই হাজার বছর আগে।
তথ্য-২৪২ ▌লোকায়ত দর্শন :
লোকায়ত বলতে বোঝায় সাধারণ লোকের দর্শন। যারা সাধারণ লোকের মতো বিচার আচরণ করে তাদেরই বলে লোকায়ত। লোকায়ত হলো ইহকাল-সংক্রান্ত দর্শন। যারা পরকাল মানে না, আত্মা মানে না, ধর্ম মানে না, মোক্ষ মানে না, তাদেরই বলে লোকায়তিক। তাহলে এই মানে অনুসারে লোকায়ত হলো দেহাত্মবাদ, বস্তুবাদ। ইংরেজি পরিভাষায় যাকে বলে মেটিরিয়ালিস্ম্। তার মানে, প্রত্যক্ষে যেটুকু ধরা পড়ে লোকায়তিকরা শুধুমাত্র সেইটুকুকেই সত্যি বলে স্বীকার করেন। আজো এমন অনেক সম্প্রদায় টিকে রয়েছে যার অনুগামীরা মনে করে দেহই হলো একমাত্র সত্য; তাদের ধর্মে স্ত্রী-পুরুষের মিলনই একমাত্র অনুষ্ঠান এবং তাদের মতে সিদ্ধি নির্ভর করছে এই মিলনের দীর্ঘস্থায়িত্বের উপর। তারা নিজেদের বৈষ্ণব বলে; কিন্তু বিষ্ণু বা কৃষ্ণ বা তাঁর কোনো অবতার তারা মানে না। তারা বিশ্বাস করে শুধু দেহতে। তাদের আর একটা নাম হলো সহজিয়া, ভারতবর্ষে শেষ চার শতাব্দী ধরে মহাযান বৌদ্ধদের যে-অস্তিত্ব ছিল তার থেকেই এ-নামের সম্প্রদায় দেখা দিয়েছিল।
তথ্য-২৪৩ ▌হিপ্পি বিপ্লব :
ষাট ও সত্তর দশকের বিদ্রোহী মার্কিন তরুণ প্রজম্মকেই হিপ্পি বলা হয়। এই তরুণ প্রজন্ম এক স্বপ্নাতুর আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল এবং সে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল মার্কিন দেশ থেকে দেশান্তরে। সানফ্রানসিসকো ছিল হিপ্পি বিপ্লবের কেন্দ্র। ষাটের দশকের গোড়ায় সংগীত, সাইকো অ্যাকটিভ ড্রাগস, যৌনস্বাধীনতা, সৃজনশীলতা এবং প্রগতিশীল রাজনীতির কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল সানফ্রানসিসকোর হাইট-অ্যাশবারি। এখানেই ১৯৬৭ সালের গ্রীষ্মে মার্কিন সমাজের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে এক লাখ সংস্কৃতি কর্মী ও হিপ্পিদের এক মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই মহাসমাবেশ দ্য সামার অব লাভ নামে পরিচিত। পরের দশকে এ আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। কফি হাউসগুলোয় আড্ডা চলে। এসব ছন্নছাড়াদের পরনে সর্বদা শীর্ণ পোশাক, মুখ ভরতি দাড়িগোঁফ, লম্বা চুল আর চোখে লালচে সানগ্লাস। হিপ্পি-দর্শনের মূলে রয়েছে প্রেম ও স্বাধীনতা ও সংঘবদ্ধ যৌনতা। হিপ্পি আন্দোলন ছিল প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতা কাঠামোর বিরুদ্ধে বিপ্লব। এই আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন কবি অ্যালেন গিনসবার্গ।
তথ্য-২৪৪ ▌ক্রুসেড :
যদি কোন রাজনৈতিক দল বা ধর্মীয় উদ্দেশ্যে জনগণ শক্ত কোন ধারণা পোষণ করে, তাঁহলে তাকেও ক্রুসেড নাম দেয়া হয়। সাধারণত দেখা গেছে বিশ্ব ইতিহাসে ক্রুসেড বলতে পবিত্র ভূমি অর্থাৎ জেরুজালেম ও কন্সটান্টিনোপল-এর অধিকার নেওয়ার জন্য ইউরোপের খ্রিস্টানদের সম্মিলিত শক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে ১০৯৫ সাল থেকে ১২৯১ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকবার বিভিন্ন ধরনের যে যুদ্ধ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে সেগুলোকেও ক্রুসেড বোঝানো হয়েছে। আসলে পূর্বাঞ্চলীয় অর্থডক্স বাইজেন্টাইন সম্রাট এই যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন আনাতোলিয়াতে মুসলমান সেলজুক সম্রাজ্যের বিস্তার রোধ করার জন্য। প্রথমে ক্রুসেড বলতে মুসলমানদের কাছ থেকে জেরুসালেম শহর ফিরিয়ে নেওয়ার ইউরোপীয় প্রচেষ্টাকে বোঝানো হত। পবিত্র ভূমি স¤পর্কে ধর্মীয় অনুভূতির মিশেল এবং পোপের নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতাই একটি সময় এসব ক্রুসেডের খ্রিস্টানদের প্রস্তুত করে তোলেন। এরপর থেকে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে ইউরোপীয়দের যেকোন সময় সামরিক প্রচেষ্টাকে ক্রুসেড বলা শুরু হয় ।
তথ্য-২৪৫ ▌অসমীয়া ভাষা :
আসামের করিমগঞ্জ আর কামরুপ জেলায় প্রচুর বাঙালীর বসবাস। সময় ১৯৬১ সালের ১৯ শে মে আসামের রাজ্য সরকার বাঙালীদের দাবি উপেক্ষা করে অসমীয়া ভাষাকে আসামের একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা করার প্রতিবাদে শিলচরের রাস্তায় নামে বাঙালীরা। সেদিন পুলিশের গুলিতে প্রান হারালো ১১ জন। কামরূপ জেলার ২৫ গ্রামের ৪,০১৯টি কুঁড়েঘর এবং ৫৮টি বাড়ি ধ্বংস ও আক্রমণ করা হয়। নয়জন বাঙালি হিন্দুকে হত্যা করা হয় এবং একশতর বেশি আহত হয়। এরপর ১৯৮৬ সালেও গুলি চালানো হয় বাঙালীদের উপর। সবশেষ ২০১০ সালেও দুইজন শহীদ হন মায়ের ভাষার জন্য। ৫০,০০০ বাঙালি পশ্চিমবঙ্গে পালিয়ে যায়। অন্য ৯০,০০০ বরাক উপত্যকা ও অন্যত্র পালিয়ে যায়। ১৯৪০ এর দশকের শেষ থেকে ১৯৫০ এর দশকের মধ্যভাগ পর্যন্ত মানভূম জেলায় (পুরুলিয়া) অনুষ্ঠিত হয় এক আন্দোলন। তৎকালীন বিহার রাজ্যের মানভূম জেলায় বসবাসকারী বাংলাভাষী মানুষদের মধ্যে জোর করে হিন্দী ভাষা চাপিয়ে দিতে গেলে এই আন্দোলন করে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে নতুন জেলা তৈরি করেন।
তথ্য-২৪৬ ▌খুনী সম্প্রদায় :
ভারতের ইতিহাসে ভয়াবহ এবং নৃশংস একটি গোষ্ঠীর নাম ‘ঠগি সম্প্রদায়’। তেরো থেকে উনিশ শতকে বাংলাসহ উত্তর ভারতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল এরা। বাংলা এবং উত্তর ভারতজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব ছিল ঠগিদের। ঠগিদের এই রাজত্ব ধ্বংস করে দেয় ব্রিটিশরা। একজন ঠগি বালকের বয়স ১৮ বছর হলে অন্যকে হত্যার অনুমতি পেত। ঠগিরা তাদের দেবীকে বাংলায় ভবানী নামে ডাকত। তারা সাধারণত বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় ঘর সংসার করত এবং শরৎকালে দলগতভাবে যাত্রা করত রক্তের নেশায়! দলের সর্দারকে জমাদার বলে। তাদের প্রধান তীর্থক্ষেত্র ছিল পশ্চিমবঙ্গের ‘কালীঘাট’ ও বিন্ধ্যাচলের ‘ভবানী মন্দির’। এরা হত্যাকান্ডের জন্য একটি হলুদ রঙের রুমাল ব্যবহার করত, যার বহর ছিল মাত্র ৩০ ইঞ্চি। রুমালটি ভাঁজ করে তার দুই মাথায় দুটি রুপার মুদ্রা বেঁধে দিত। একজনকে হত্যার জন্য হাত লাগাতো তিন ঠগি। এদের একজন মাথা ঠেসে ধরত, একজন রুমালটি শিকারীর গলায় পেঁচিয়ে ধরত আর বাকিজন পা ধরে রাখতো।
তথ্য-২৪৭ ▌ক্লিওপেট্র্রা :
ক্লিওপেট্রা প্রাচীন মিসর এবং ইতিহাসের এক বিস্ময়কর নাম। মাত্র ৩৯ বছর তিনি বেঁচে ছিলেন। মিসরের রানী ছিলেন তিনি। তিনি জন্মগ্রহণ করেন খিস্টপূর্ব ৬৯ সালে। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ সালে আলেকজান্ডার মারা গেলে তার অন্যতম সেনাপতি টলেমি মিসরে স্বাধীন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। কিওপেট্রা এই বংশেরই শেষ শাসক। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মিসরে প্রায় ৩০০ বছরের মেসিডোনিয়ান শাসনের অবসান ঘটে। আলেক্সান্দ্রিয়ায় রাজপ্রাসাদে সিজারের পাহারায় ছিল কিওপেট্রার স্বামী-ভাইয়ের বাহিনী। ফলে পরিচয় প্রকাশ করে সিজারের কাছে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনাও ছিল না। তাই কৌশল গ্রহণ করলেন। এক ব্যবসায়ীকে হাত করলেন। একদিন সিজারের সামনে রোল করা একটি কার্পেট আনা হলো। একে খোলা হলো সিজারের সামনে। সেটির ভেতর থেকে নাটকীয়ভাবে বেরিয়ে এলেন ক্লিওপেট্রা। তার বুদ্ধিমত্তা আর সৌন্দর্যে ভেসে গেলেন রোমান সম্রাট। তিনি সিজারের মিসরে অবস্থানকালে তার প্রেমিকা হিসেবে সঙ্গ দিতে থাকেন। সিজারের এক পুত্রসন্তানের জন্মও দেন তিনি।
তথ্য-২৪৮ ▌স্পার্টাকাস :
বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে বিখ্যাত গ্ল্যাডিয়েটর মানা হয় ¯পার্টাকাসকে। একজন বীর গ্ল্যাডিয়েটর হিসেবে জনপ্রিয়তা পাওয়ার আগে দারিদ্রের জীবন কাটাতে হয়েছে তাকে। গ্ল্যাডিয়েটর হওয়ার আগে তিনি ছিলেন একজন থ্রাসিয়ান সৈনিক এবং যাকে রোমান সৈন্যরা বন্দী করে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়। গ্ল্যাডিয়েটর স্কুলে স্পার্টাকাস শিক্ষালাভ করলেন। ক্রমে ক্রমে অনেক যুদ্ধ জয় করেন। কথা ছিল একটা সময় পর মালিক তাকে স্বাধীনতা দেবেন। কিন্তু প্রতারণার শিকার হন স্পার্টাকাস। ৭৩খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে স্পার্টাকাস তার ৭০ গ্ল্যাডিয়েটরকে সঙ্গে নিয়ে বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। আর ওই সময়ই অনেক ক্রীতদাস মুক্ত হয়ে পড়ে। যার ফলে ৭০,০০০ হাজার দাসের একটি বাহিনীতে পরিণত হয়। এরপর বাধে যুদ্ধ। রোমান বাহিনী ও গ্ল্যাডিয়েটর-দাসদের এই যুদ্ধ তৃতীয় সারভিল ওয়ার হিসেবে পরিচিত। স্পার্টাকাসকে হত্যার জন্য অনেক বাহিনী পাঠানো হয় কিন্তু অভিজ্ঞতা দিয়ে সহজেই তাদের পরাজিত করে। শেষ পর্যন্ত ইতালিতে স্পার্টাকাসকে আটক করে হত্যা করা হয়।
তথ্য-২৪৯ ▌আর্মেনিয়া গণহত্যা :
বিংশ শতকের শুরুতে আর্মেনিয়ানরা অটোমান সাম্রাজ্যের অধীনে তুরস্ক রাষ্ট্রের অন্তর্গত ছিল। ১৯০৮ সালে “তরুণ তুর্কী” দল ক্ষমতায় এলে আর্মেনিয়ানদের অবিশ্বাসের চোখে দেখতো এই ভেবে যে, শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশী দেশ রাশিয়ার সাথে একই ধর্মাবলম্বী হওয়ায় আর্মেনিয়ানরা রুশদের পক্ষ হয়েই যুদ্ধ করবে। ১৯১৪ সালে শুরু হওয়া ১ম বিশ্বযুদ্ধে সকল খ্রীস্টানদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে তালাত পাশা। ককেশাসের যুদ্ধে তুর্কী বাহিনীর শোচনীয় পরাজয় হয়। তুর্কীরা এই ব্যর্থতার অজুহাত হিসাবে দেখায় আর্মেনিয়ান সেনাদের “বিশ্বাসঘাতকতা” কে। ফলে আর্মেনিয়ান গণহত্যা শুরু হয় ১৯১৫ সালের ২৪ এপ্রিল। সমগ্র তুরস্কব্যাপী অভিযানে নেতৃস্থানীয় আর্মেনিয়ানকে হত্যা করা হয়। তুর্কী পুলিশ, দলের নেতকর্মীরা যে অবস্থায় আর্মেনিয়ানদের পেয়েছে, লুটপাট অত্যচার করেছে। লক্ষ-লক্ষ আর্মেনিয়ানকে পায়ে হেঁটে মরুভূমি পাড়ি দিয়ে সিরিয়া যায়। তাদের নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মেরে ফেলে তুর্কীরা। এখনো ঐ মরুভূমিতে প্রায়ই খুঁজে পাওয়া যায় আর্মেনিয়ানদের বধ্যভূমি। এভাবে ৫লক্ষ আর্মেনিয়ান জীবন হারান ।
তথ্য-২৫০ ▌ডাইনী শিকার :
ডাইনী শিকারের যুগ ছিল ১৪৮০ সাল থেকে ১৭০০ সালের মধ্যে। পৃথিবীর অনেক সংস্কৃতিতেই এই ডাইনী শিকার হয়ে আসছে প্রাচীন এবং আধুনিককাল জুড়ে। ৭৮৫ সালে চার্চ অব প্যাডেরবর্ন ডাকিনীবিদ্যা নিষিদ্ধ করেন। তখন থেকে ইউরোপে ডাইনী বিচার শুরু হয়েছিল। দক্ষিণ পশ্চিম জার্মানীতে ডাইনী শিকারের সফল বছর ছিল ১৫৬১ থেকে ১৬৭০ সাল। তখনকার সময় ডাইনীদের ধরে পুড়িয়ে মারা হত। সারা ইউরোপে প্রায় ১২০০০ ডাইনী বিচারের ঘটনা ঘটেছিল। ১৮ শতকে এ ধরনের অভ্যাস কমে যায়। ইংল্যান্ডে শেষ ডাইনী শিকারের ঘটনা ঘটেছিল ১৬৮২ সালে। এখনও ডাইনী শিকার চলছে আফ্রিকাতে। কঙ্গোতে শিশুদের ডাইনী সন্দেহ করা হচ্ছে এবং তাঞ্জানিয়াতে ডাইনী সন্দেহে বয়স্ক মহিলাদের মারা হচ্ছে, যদি তাদের চোখ লাল হয়। ডাইনী শিকার করে আফ্রিকাতে মূলত করে ডাইনীর আতœীয় স্বজনরা তার স¤পত্তির লোভে। গবেষণা করে দেখা গেছে, যাদের কাছে স¤পত্তি আছে, কিন্তু উত্তরসুরি বলতে তেমন কেউ নাই, তারাই ডাইনী হিসাবে শিকারে পরিণত হয়।
তথ্য-২৫১ ▌সংস্কৃত ভাষা :
সংস্কৃত ভাষা প্রায় পাঁচ হাজার বছর যাবৎ চর্চা হয়ে আসছে। ঋগে¦দে এ ভাষার প্রাচীন রূপটি দেখা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দ ঋগে¦দের রচনাকাল বলে ধরা হয়। ঋগে¦দ থেকে উপনিষদের কাল পর্যন্ত এ ভাষা বৈদিক ভাষা নামে পরিচিত। সংস্কারের মাধ্যমে গৃহীত হওয়ায় এর নাম হয় ‘সংস্কৃত’। সংস্কৃত ভাষার দুটি স্তর: বৈদিক ও লৌকিক। এই লৌকিক ভাষাই ধ্রুপদী সংস্কৃত ভাষা নামে পরিচিত। এদুটি ভাষার প্রধান পার্থক্য স্বরবৈচির্ত্যে। সংস্কৃত ভাষা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্গত ইন্দো-ইরানীয় উপশাখার একটি ভাষা। গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষার সঙ্গে এর বিস্ময়কর সাদৃশ্য রয়েছে। সংস্কৃত ভাষার নিজস্ব কোনো বর্ণমালা নেই। যে অঞ্চলে এর চর্চা হয়েছে সেই অঞ্চলে প্রচলিত বর্ণমালাই এতে গৃহীত হয়েছে। তবে নাগরী বা দেবনাগরী বর্ণমালা সংস্কৃতের জন্য ব্যাপকভাবে গৃহীত। সংস্কৃত ভাষা তিনটি স্তরে বিভাজিত: পালি, প্রাকৃত ও অপভ্রংশ এবং নব্যভারতীয় আর্যভাষা- বাংলা, উড়িয়া, হিন্দি, মারাঠি ইত্যাদি। প্রথম দিকে সংস্কৃত ভাষা চর্চা হতো ভারতের উত্তরাংশ; পরে তা পশ্চিম ও পূর্বভারতে বিস্তার লাভ করে।
তথ্য-২৫২ ▌কুমারী দেবী :
নেপালের রাষ্ট্রপতি কুমারী দেবী নিযুক্ত করেন মেয়েটির বয়স ৪ থেকে প্রথম রজঃস্রাব হওয়া পর্যন্ত। দেশটির বিভিন্ন শহরে এরকম আরো কয়েক জন দেবী আছে। নেপালের ৮০ শতাংশ মানুষই হিন্দু ধর্মাবলম্বী, ১১ শতাংশ বৌদ্ধ। কুমারী দেবী নির্বাচনের প্রথাটিও বৌদ্ধ ধর্ম থেকে হিন্দু ধর্মে এসেছে। কুমারী দেবীকে হতে হয় গৌতম বুদ্ধের নেওয়ারী সম্প্রদায়ের শাক্য বংশের মেয়ে। শ্রমণরা শাক্য বংশের মধ্য থেকে নতুন কুমারী খুঁজতে শুরু করে। নিখুঁত ত্বক, সুন্দর চুল, দীঘল চোখ, ঝকঝকে দাঁত। আর বিনয় ও সুভাষিণীও হতে হয়। এসব গুণ একত্রে থাকলে সে মেয়ের ভেতরেই দুর্গা দেবী অধিষ্ঠিতা বলে ধরে নেয়া হয়। কয়েকজন শিশুকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করে কয়েকটি পরীক্ষা দিতে হয়: যেমন- আলো-আঁধারি ঘরে ভুতুড়ে ভয় ধরানো মুখোশ পরা ছায়ামূর্তিরাও থাকবে। কুমারী দেবী হওয়ার পর থেকে ১২ মাসে ১৩ বার ধর্মীয় শোভাযাত্রায় এবং সপ্তাহে ছয় দিন সকালে আশীর্বাদ নিতে আসে ধার্মিক মানুষ। কুমারীর জীবন শেষে তিনি সাধারণ জীবনে ফিরে আসেন।
তথ্য-১৫৩ ▌খাজা মইনুদ্দিন চিশতী :
খাজা মইনুদ্দিন চিশতী হলেন চিশতীয় ধারার ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত সুফি সাধক। তিনি ১১৪১ সালে পারস্যে জন্মগ্রহণ করেন। তার অনুসারীরা যেমন বখতিয়ার কাকী, বাবা ফরিদ, নেজামুদ্দিন আউলিয়াসহ আরো অনেকে ভারতের ইতিহাসে সুফি ধারাকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। তিনি পিতার কাছ একটি ফলের বাগান উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেন। কিংবদন্তী অনুসারে একদিন তিনি তার ফলবাগানে পানি দিচ্ছিলেন তখন তার ফলবাগানে আসেন বিখ্যাত সুফি শেখ ইব্রাহিম কুন্দুজী। যুবক মইনুদ্দিন তার কাছে মুরীদ হন। এইপর তিনি তার স¤পত্তি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গরীবদের মাঝে বিতরণ করে বুখারার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সেখানে চিশতীয়া তরীকার অপর প্রসিদ্ধ সুুফি সাধক খাজা উসমান হারুনীর নিকট শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তার সেবায় ২০ বছর থাকার পর তিনি বহু দেশ ভ্রমণ করেন। তিনি ইরাকের বাগদাদে আব্দুল কাদির জিলানীর সাহচর্যে ৫৭ দিন অবস্থান করেন। এ সময় আব্দুল কাদির জিলানী তাকে হিন্দুস্থানের দায়িত্ব দেন। তিনি দিল্লী হয়ে আজমিরে বসতি স্থাপন করেন।
তথ্য-২৫৪ ▌হযরত শাহ জালাল :
হযরত শাহ জালাল ইয়েমেন থেকে বিভিন্ন দেশ পাড়ি দিয়ে অবশেষে স্বপ্ন রাজ্য ভারতের আজমীরে আসেন ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দে। সেখানে পান পীর খাজা মঈন উদ্দীন হাসান চিস্তিকে। পরে যান দিল্লি সেখানে সংস্পর্শে আসেন ইসলাম প্রচারক নিজাম উদ্দীন আউলিয়ার সাথে। তাদের ইসলাম প্রচারের মহীমা, কলাকৌশল এবং তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি শাহ জালালকে বিশেষ প্রভাবিত করে। তখন সিলেট শাসন করতেন হিন্দু রাজা গোবিন্দ। গৌড়ের সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহ তার ভাগ্নে সিকান্দার খান গাজীর নেতৃতে একদল সৈন্য বাহিনী পাঠালেন সিলেটে মুসলমানের বিজয় পতাকা ওড়ানোর জন্য। যুদ্ধে সিকান্দার খান গোবিন্দের কাছে হেরে যায়। পরবর্তীতে যুদ্ধ জয়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি হিসেবে সুলতান ফিরোজ শাহ সহায়তা চাইলেন নিজাম উদ্দীন আউলিয়ার। নিজাম উদ্দীন অনুরোধ করলেন শাহ জালালকে। শাহ জালাল ৩৬০ জন যুবককে সঙ্গে নিয়ে ফিরোজ শাহ-র মুসলমান সৈন্য দলের সঙ্গে যোগ দিলেন। এই বাহিনীতে তার ভাগ্নে শাহ্ পরানও ছিলেন। সিলেট এলো মুসলমানদের দখলে।
তথ্য-১৫৫ ▌অ্যারিস্টটল:
খ্রিষ্টপূর্ব ৩৮৪ অব্দে জন্ম মহাজ্ঞানী অ্যারিস্টটলের। বাবা নিকোমাকাস ছিলেন চিকিৎসক। ১৭ বছর বয়সে বাব-মাকে হারিয়ে গৃহত্যাগ করেন তিনি। ঘুরতে ঘুরতে গ্রিসের এথেন্স নগরে এসে উপস্থিত হন। প্লেটো এখানে গড়ে তুলেছিলেন পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় খ্যাত নতুন একাডেমি। অ্যারিস্টোটল এখানে প্লেটোর শিষ্যত্ব নিলেন। প্লেটোও তাঁর অসাধারণ বুদ্ধিমত্তায় মুগ্ধ হলেন। অল্পদিনের মধ্যেই তাঁর গভীর জ্ঞান, অসাধারণ পা-িত্যের কথা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে রাজার ছেলে আলেকজান্ডারের শিক্ষার ভার পড়ে তার ওপর। তখন অ্যারিস্টটল অষ্টাদর্শী যুবক আর আলেকজান্ডার ১৩ বছরের কিশোর। অ্যারিস্টোটলের শিক্ষা উপদেশই আলেকজান্ডারের অদম্য মনোবল, লৌহকঠিন দৃঢ় চরিত্র গড়ে তুলতে তাঁকে সক্ষমতা দিয়েছিল। তাঁর পলিটিকস লেখা হয়েছে আজ থেকে দুই হাজার ৩০০ বছর (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৫-৩২২ অব্দে) আগে, কিন্তু এই গ্রন্থ নিয়ে আলোচনা আজও শেষ হয়নি।
===========================
তথ্য-২৫৬ ▌ডায়োজেনিস :
ডায়োজেনিস ছিলেন গ্রিক দার্শনিক। কাউকে পরোয়া এবং তোষামোদ না করার ব্যাপারে তাঁর খুব সুনাম ছিল। সে ছিল দিগি¦জয়ী বীর আলেকজান্ডারের শাসনামল। ডায়োজেনিস নিজেকে পরিচয় দিতেন ‘সিনিক বা কুকুরের মতো’ মানুষ হিসাবে; যিনি তার স্বজাতীদের কামড়ায় ‘তাদের ভাল করার জন্য’। তিনি জীবনযাপনের আশ্রয়স্থল খুঁজতেন না। কারন তিনি দেখেছেন ইঁদুরের কোন আশ্রয়স্থল লাগে না। দেশ ছেড়ে পালাবার সময় তাকে দাস হিসাবে নিলামে তোলা হয়েছিল, তিনি বলেছিলেন, ‘তাকে এমন কারো কাছে বিক্রি করতে, যার মনিব দরকার’। আমরা তাকে বাজারে লন্ঠন হাতে হাজির হতে দেখি। জিজ্ঞেস করলে বলেন, তিনি আসলে মানুষ খুঁজছেন। গ্রীসের কোথায় তিনি সৎ আর ভালো মানুষ খুঁজে পাবেন কেউ কি বলতে পারবে? তার কাছে একটি লাঠি, থলে আর খাবার জন্য একটি পেয়ালা ছাড়া কিছুই থাকতো না, যখন তিনি একটি শিশুকে দুই হাত দিয়ে পানি খেতে দেখেন, তখন পেয়ালাটাও ফেলে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন স্রষ্টার মতো মানুষদের প্রয়োজন খুব সীমিত’।
তথ্য-২৫৭ ▌পিথাগোরাস :
পিথাগোরাসের উপপাদ্যের নাম শোনেনি, এমন শিক্ষিত মানুষ পাওয়া ভার। পিথাগোরাস এমন একজন মানুষ যিনি প্রতিটি বস্তুর পেছনে সংখ্যা খুঁজতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন এই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছে সংখ্যাতত্ত্বের উপর ভিত্তি করে। পিথাগোরাস এর জন্ম ৫৭০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রাচীন গ্রীসের সামোস দ্বীপে। আরেক বিখ্যাত গণিতবিদ থেলিসের নিকট গণিত শিক্ষা লাভ করেন পিথাগোরাস। থেলিসের উপদেশে তিনি প্রাচীন মিশরে ভ্রমণে যান। ২২ বছর বয়সী পিথাগোরাস মিশরে গিয়ে কাটিয়েছিলেন তাঁর জীবনের পরবর্তী ২২টি বছর। ৫৬ বছর বয়সে পিথাগোরাস নিজের জন্মভূমি সামোসে ফিরে আসেন এবং গণিত ও জীবন স¤পর্কে নিজের দর্শন থেকে মানুষকে শিক্ষা দেন। তাঁর নতুন নতুন তত্ত্বে অনেক মানুষ অবিশ্বাস পোষণ করতো এবং তারা ক্রমশই তাঁর শত্রু হয়ে ওঠে। ফলে তিনি প্রাচীন গ্রীসের ক্রটন শহরে পাড়ি জমান যা বর্তমানে ইতালির অংশ। পিথাগোরাসে গাণিতিক তত্ত্বগুলো প্রাচীন গ্রীসে গণিতশাস্ত্রের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটায়। পিথাগোরাসের মৃত্যু হয় ৭৫ বছর বয়সে।
তথ্য-২৫৮ ▌ইবনে সিনা :
চিকিৎসাবিদ্যায় তিনি ছিলেন অন্যতম পথপ্রদর্শক। তার লেখা বই “কানুন ফিত তিবব” এখনো মেডিকেলের ছাত্রদের অন্যতম পাথেয়। মুসলিম স্বর্ণযুগে তিনি ছিলেন অন্যতম একজন দার্শনিক ও চিন্তাবিদ। ইবনে সিনা তার সমগ্র জীবনে প্রায় ৪৫০টিরও বেশি বিষয়ে লেখালেখি করেছেন এবং তাদের মধ্যে ২৪০টি অক্ষত রয়েছে। তিনি উজবেকিস্তানের এক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কিশোর বয়সেই ইবনে সিনা দর্শন শাস্ত্রের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং এরিস্টটলের নানা চিন্তা-ভাবনা নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। আল ফারাবীর দর্শনও তাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। ১৬ বছর বয়সেই তিনি ঔষধ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন এবং ১৮ বছর বয়সে স¤পূর্ণরূপে একজন চিকিৎসক হয়ে যান। ৯৯৭ হিজরি সনে তিনি তাদের অঞ্চলের আমিরের একটি জটিল রোগ আরোগ্য করেন। এরপর আমিরের পাঠাগারে যাওয়ার পথ সুগম হয়ে যায় এবং সেখানে তিনি নানা বিষয় স¤পর্কে পড়াশোনা শুরু করে ইশ্বরের প্রতি অবিশ্বাসী হয়ে উঠেন। তিনি নানা জায়গা ঘোরা শুরু করেন এবং নানা বিষয়ে লেখালেখি শুরু করেন।
তথ্য-২৫৯ ▌ মুহাম্মদ ইবন মুসা আল খারিজমী :
আল খারিজমী ছিলেন পারস্যের একজন গণিতবিদ, জ্যোতির্বিদ, ভূ-তাত্ত্বিক ও বাগদাদের জ্ঞানগৃহের একজন উঁচুস্তরের প-িত। ৭৮০ সালের কাছাকাছি কোন সময়ে বাগদাদে তার জন্ম। খলিফা আল মামুনের রাজত্বকালে তার জ্ঞানের পরিধির সীমা আরো বিস্তৃত হয়েছিল। আল খারিজমীকে বীজগণিতের জনক বলা হয়ে থাকে। তবে তিনি গণিতের শাখায় অ্যালগরিদম নিয়ে নানা ধরনের কাজ করেন এবং বর্তমানের অ্যালগরিদমের যে রূপ, তার অনেকটাই পূর্ণতা লাভ পেয়েছে আল খারিজমীর গবেষণার ফলে। তার লেখা বিখ্যাত বই হচ্ছে হিসাব আল-জাবর ওয়া-আল-মুকাবালা। এছাড়াও জ্যামিতিক উপায়ের সাহায্যে তিনি নানা ধরণের জটিল সমস্যার সমাধান এই বইয়ের সাহায্যে দেখিয়েছেন। তিনি সূর্যের গতিপথ, চন্দ্র কিভাবে ঘুরছে, জোয়ার ভাটা কখন হয় ইত্যাদি স¤পর্কে নানা ধরণের তথ্য দিয়েছেন তার বিখ্যাত যিজ আল সিনধিন্দ নামক বইটিতে। সেসময়কার আরব প-িতেরা গণিত নিয়ে বেশ উঁচুমানের ধারণা পোষণ করতেন।
তথ্য-২৬০ ▌ আল রাজি :
শল্য চিকিৎসার প্রাণপুরুষ আল রাজি ছিলেন পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া ধর্ম ও দর্শনের প্রতি সন্দেহপ্রবন। আল রাজির সময়ে গুটি বসন্ত মহামারি আকারে গ্রামের পর গ্রাম মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়াতো। সমাজে এই বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে, গুটি বসন্ত সৃষ্টিকর্তার অভিশাপ। আল রাজি বিভিন্ন গ্রীক বই অনুবাদ করে ও নিজের গবেষনালব্ধ জ্ঞান প্রয়োগ করে গুটি বসন্ত প্রতিরোধের কার্যকরি উপায় বের করেন। তিনি তার সারা জীবনের প্রাপ্ত জ্ঞান ও গবেষণা একত্র করে একটি বই লিখেন। কিন্তু এখন থেকে এই রোগ আর মারতে পারবে না। কিন্তু আল রাজির বিরুদ্ধেও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এর অভিযোগ উঠে। সিদ্ধান্ত হলো, আল রাজি যে বই রচনা করেছেন সে বই দিয়েই আল রাজির মাথায় আঘাত করা হবে। যতক্ষন সে বই কিংবা আল রাজির মাথা, দুইটার একটা ছিন্ন না হয়। আমিরের নির্দেশে বইয়ের শক্ত মলাটের আঘাতে আঘাতে একসময় আল রাজির মাথা রক্তাক্ত হয়ে যায়। রক্তশূন্যতার কারনে পরবর্তীতে আল রাজির দুচোখ নষ্ট হয়ে যায়। রাজ্যের সব দু:খ নিয়েই ৯২৫ খ্রীষ্টাব্দে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন আল রাজি।
তথ্য-২৬১ ▌আবদুল গফফার খান :
আবদুল গফফার খান ছিলেন উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের লোক। উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে শিক্ষার বিস্তার ঘটলেও ঐ অঞ্চলের পাঠানরা ছিল ভয়ানক রকম বঞ্চিত। গফফার খান যৌবনে এদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে শুরু করেন। গফফার খান আবার মুসলিম লীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। ছিলেন গান্ধীর অহিংস মতবাদের বিশেষ অনুসারী। গফফার খান পাকিস্তান ধারণাটিকেই মনে-প্রাণে ঘৃণা করতেন। এদিকে মুসলীম লীগ ও ব্রিটিশ সরকার চাচ্ছিলো, সীমান্তপ্রদেশ যেহেতু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠÑ এটা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হোক। ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান স্বাধীন হয়। সীমান্তপ্রদেশের পাঠান ও বালুচরা এই স্বাধীনতাকে সত্যিকার স্বাধীনতা বলে মেনে নিতে পারেনি। সীমান্তপ্রদেশ ছিল খনিজস¤পদের ভা-ার। বাংলার মতই এই প্রদেশগুলোতেও পাঞ্জাবীরা ঔপনিবেশিক কায়দায় শাসন-শোষণ চালাতো। গফফার খানকেও শাসকগোষ্ঠী শান্তিতে রাজনীতি করতে দেয়নি। পাকিস্তান আমলের একটা দীর্ঘ সময় তার কেটেছে কারাভ্যন্তরে, নয়তো গহবন্দী হয়ে।
তথ্য-২৬২ ▌গান্ধীর আদর্শ :
গান্ধীর বড় ছেলে হরিলাল গান্ধীকে তার সন্তানদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন ও পিতার কর্তব্য পালনে ব্যর্থতার অভিযোগই আনেন। হরিলালের বিদ্রোহের অযৌক্তিক নয়। তিনি উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য অত্যন্ত যৌক্তিকভাবেই পিতার কাছ থেকে সাহায্যের আশা করেছিলেন। কিন্তু নিজের তৈরি করা আদর্শের প্রতি অটল গান্ধী সিদ্ধান্ত নিলেন তার সঞ্চিত অর্থ পরিবারের উন্নতির জন্য নয়, গরীব জনগণের কল্যাণে ব্যয় হবে। তাই তিনি হরিলালের অনুরোধ অগ্রাহ্য করলেন ও উচ্চশিক্ষার জন্য জনৈক পারসি যুবককে লন্ডন পাঠালেন। গান্ধী তার আত্মজীবনীতে লিখেন : তাদের পুঁথিগত বিদ্যা দেয়ার ইচ্ছা আমার খুবই ছিল, চেষ্টাও করতাম। কিন্তু এই কাজে সব সময় কোনো না কোনো বাধা এসে পড়ত। এ জন্য আমার ও তাদের দুঃখ রয়ে গেছে। পিতার সাথে বিচ্ছিন্নতার পর হতাশায় হরিলাল অ্যালকোহলে আসক্ত এবং নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হন। তারপর এক সময়ে হিন্দু ধর্মের প্রতি তার ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং তিনি ১৯৩৬ সালে বোম্বাইয়ের জামে মসজিদে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন।
তথ্য-২৬৩ ▌দর্শনের জনক থেলিস :
থেলিস চাঁদ ও সূর্যের আকার মাপতে চেষ্টা করেছিলেন বলে জানা যায় এবং তিনিই প্রথম বছরকে ৩৬৫ দিনে ভাগ করেন। থেলিস যেহেতু জ্যোতির্বিদ ছিলেন সেহেতু তিনি গবেষণা করে ভালোভাবে বুঝতে পারতেন যে, আগামী শীতে জলপাইয়ের বা¤পার ফলন হবে কিনা। তিনি টাকা পয়সা ধার করে আশেপাশের সকল জমি লিজ নিয়ে ফেলতেন। ফলে পুরো জলপাইয়ের ব্যবসা ছিল তার হাতের মুঠোয়। থেলিস বিয়ে করেননি। থেলিস পিরামিডের ছায়া দিয়ে পিরামিডের উচ্চতা মাপতেও সক্ষম হয়েছিলেন। থেলিসই প্রথম বলেছেন ‘সব সৃষ্টি এসেছে পানি থেকে। মিশরে অবস্থানকালে তিনি নীলনদে জাদু দেখেছিলেন। কিভাবে বন্যার পানি চলে যাওয়ার পর পলিতে ভালো ফলন হয়। কিভাবে একটু বৃষ্টি নামলেই সেখানে ব্যাঙ ও বিভিন্ন পোকামাকড় জন্ম নেওয়া শুরু করে দেয় এবং তা ভালো ফসলে ফলাতে কিভাবে কাজে লাগানো যায় ইত্যাদি। পুরো বিশ্বসৃষ্টিকে ব্যাখ্যা করার জন্য মিথ বা ধর্মের উপর আস্থা না রেখে বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস চালিয়েছিলেন বলে তাকে দর্শনের জনক বলা হয়।
তথ্য-২৬৪ ▌ হেলেনের ট্রয় :
চার হাজার বছর আগে ধ্বংসপ্রাপ্ত ট্রয় নগরীটি এখনো আছে এবং সেটা তুরস্কেই। ইস্তাম্বুল থেকে মাত্র ছয় ঘণ্টার দূরত্বে হেলেনের সেই শহর! খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ থেকে হেলেন রানী হিসেবে রাজত্ব করে। কবি হোমারের ইলিয়াড ও ওডিসি’তেই লুকিয়েছিল ট্রয় এবং তার হেলেন-উপাখ্যান। এর অস্তিত্বের কথা মানুষ বিস্মৃত ছিল প্রায় দুই হাজার বছর। চার্লস ম্যাকলারেন নামের এক প্রতœতত্ত্ববিদ ১৮২২ সালে নতুন করে ট্রয় আবিষ্কার করেন। প্রাচীরবেষ্টিত ট্রয় নগরীর চারপাশে থাকত প্রজারা। এর বিস্তৃত ছিল পনেরো মাইল পর্যন্ত। ট্রয়কে কীর্তিমান করেছে হেলেন, যদিও সেই ট্রয়ও ভস্মীভূত হয়েছে আগুনে! হেলেনের বিয়ে হয়েছিল তিন বার; রাজা মেনেলাস, প্যারিস ও তার ভাই ডাইফোবাসের সাথে। মেনেলাসকে সে একটি কন্যা উপহার দেয় নাম হারমিয়ন। ট্রয়যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই প্যারিস নিহত হয় এবং তার দুই ভাই হেলেনাস ও ডাইফোবাস ভ্রাতৃবধূকে পাওয়ার জন্য দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। হেলেনকে লাভ করে ডাইফোবাস। যুদ্ধ শেষে মেনেলাসের হাতে নিহত হয় ডাইফোবাস।
তথ্য-২৬৫ ▌আর্কিমিডিস :
আর্কিমিডিসকে সর্বকালের অন্যতম সেরা গণিতজ্ঞ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যদিও রোমানরা আর্কিমিডিসের কোনো ক্ষতি করার ব্যাপারে নিষেধ করেছিল, কিন্তু রোমানদের সিরাকিউজ অবরোধের সময় এক রোমান সৈন্যের ভুলের কারনে আর্কিমিডিস নিহত হন। আর্কিমিডিসের জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ২১২ সালে সিসিলি দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত সাইরাকিউস দ্বীপে। পিতা ফেইদিয়াস ছিলেন একজন জ্যোতির্বিদ। আর্কিমিডিস যুদ্ধকে ঘৃণা করতেন। কারো আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করাও তার প্রকৃতিবিরুদ্ধ ছিল। কিন্তু যেহেতু তিনি ছিলেন সম্রাট হিয়েরোর রাজকর্মচারী, তাই নিরুপায় হয়েই তাকে সম্রাটের আদেশ মেনে চলতে হতো। সম্রাটের আদেশেই তিনি প্রায় ৪০টি আবিষ্কার করেন। তার অধিকাংশই ছিল সামরিক বিভাগের প্রয়োজনে। বিজ্ঞানীর ছিন্ন মুন্ডু দেখে গভীর দুঃখিত হয়েছিলেন মার্কিউলাস। তিনি মর্যাদার সাথে আর্কিমিডিসের দেহ সমাহিত করেন। তার সূত্র:"কোন বস্তুকে তরল পদার্থে আংশিক বা স¤পূর্ণরূপে নিমজ্জিত করলে বস্তুটি কিছু ওজন হারায়। বস্তুর এই হারানো ওজন বস্তুটি দ্বারা অপসারিত তরল পদার্থের ওজনের সমান।"
তথ্য-২৬৬ ▌গ্যালিলিও :
গ্যালিলিও একজন বিখ্যাত ইতালিয়ান বিজ্ঞানী যিনি বিশেষত স্বর্নের খাদ ও পৃথিবী সুর্যের চারপাশে ঘুরছে এই তত্ত্বে¡র জন্য বিখ্যাত । তিনি ১৫৬৪ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তারিখে ইতালির টুসকানিতে অবস্থিত পিসা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ভিনসেঞ্জো গ্যালিলি গণিতজ্ঞ এবং সংগীতশিল্পী ছিলেন। বেশ অল্প বয়স থেকে গ্যালিলিওর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। সাধারণ শিক্ষার পর তিনি পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার দরুণ সেখানেই তার পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে হয়। তার পরেও ১৫৮৯ সালে গ্যালিলিও পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার জন্য একটি পদ পান এবং সেখানে গণিত পড়ানো শুরু করেন। এর পরপরই তিনি পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান এবং সেখানকার অনুষদে জ্যামিতি, বলবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে ১৬১০ সালের পূর্ব পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। এই সময়ের মধ্যেই তিনি বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে ভাবেন এবং বহু গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করেন।
তথ্য-২৬৭ ▌নাচ গার্ল :
প্রাচীন ভারতে পাওয়া গণিকারা ৬৪ প্রকার কলায় পারদর্শী ছিলেন, যার মধ্যে ছিল নাচ এবং গানও। মুসলমানদের আগমনের পর মোগল শাসকদের জন্য নাচ ছিল দরবারি বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ। তারা পারস্যের নৃত্যশিল্পীদের ভারতে এনেছিলেন। স¤্রাট আকবর দক্ষ নৃত্যশিল্পীদের কাঞ্চনী উপাধিতে ভূষিত করতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মোগল দরবারে গায়ক ও নর্তকীদের জৌলুস বাড়তে থাকে। অনেক রাজপুরুষ নর্তকীদের প্রেমে পড়েন। মোগল শাসন পতনের পর এই নৃত্য তার জৌলুস হারাতে থাকে। ঔপনিবেশিক আমলে দুই শতক ধরে এ নর্তকীরা ইংরেজ বণিকদের বাংলোয় বিনোদন কিংবা উৎসবের অবিচ্ছেদ্য উপাদানে পরিণত হয়েছিল। মধ্যযুগে বাংলার পরিবারগুলোয় নৃত্য- কলা শিক্ষা দেয়া হতো। ঢাকায় ইসলাম খানের (সুবেদার) দরবারে ১ হাজার ২০০ কাঞ্চনী ছিলেন। কাঞ্চনীদের এ সংখ্যা থেকে বলা যায়, ঢাকায় আগে থেকেই নাচ-গানের একটি সমৃদ্ধ ও ধারাবাহিক চর্চা ছিল। ঢাকার নওয়াব আবদুল গনি ও নওয়াব আহসানউল্লাহর দরবারে বেশ কয়েকজন বাইজি ছিলেন।
তথ্য-২৬৮ ▌কুকুর যেভাবে মানুষের বন্ধু:
প্রথমদিকে মানুষের শিকার কাজে সঙ্গ দিতে, জিনিসপত্র দেখাশোনার কাজে, পূর্বাভাস ও সংকেত প্রাপ্তির জন্য, খাদ্যের উৎস খোজার কাজে কুকুরের সহযোগিতার সূত্র ধরে মানুষের সাথে এই প্রাণীটির সখ্যতার শুরু হয়।কুকুরের বিবর্তন পরীক্ষা করে দেখা গেছে, আজ থেকে প্রায় এক লক্ষ বছর আগে নেকড়ে এবং কুকুর দুটি আলাদা প্রজাতিতে বিভক্ত হয়েছিল। কুকুরকে পোষ মানানোর প্রথা সর্বপ্রথম চালু হয়েছিল আজ থেকে ৪০ হাজার বছর আগে পূর্ব এশিয়ায়।এরপর মধ্যপ্রাচ্যে এবং পরবর্তীতে ইউরোপে। চীনে সর্বপ্রথম পোষা কুকুরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল ৭০০০-৫৮০০ খ্রিস্টপূর্বে হেনান প্রদেশে। কুকুরের প্রজাতিতে বিভিন্ন ভিন্নতা থাকার একটি কারণ হচ্ছে প্রাচীনকাল থেকে শিকারী জনগোষ্ঠীর সাথে বসবাস এবং একেক সময়ে একেক স্থানে স্থানান্তরিত হয়ে যাওয়া। কারণ মানুষ যখনই এক দেশ থেকে আরেক দেশে গিয়েছে,তখনই এই বন্ধুপ্রতীম প্রাণীটিকে তারা সাথে রেখেছে। তারপর মানুষ এবং কুকুর একইসাথে ভৌগোলিক অবস্থান অনুসারে বিকশিত হতে থাকে।
তথ্য-১৬৯ ▌বিসিআই প্রযুক্তি :
মানব মস্তিষ্ক প্রায় ১০০ বিলিয়ন ক্ষুদ্র নিউরন দ্বারা তৈরি। নিউরনগুলি একে অপরের সাথে ডেনড্রাইট এবং অ্যাক্সন নামক দুটো অংশ দিয়ে সংযুক্ত থাকে। ডেনড্রাইট নিউরন থেকে তথ্য গ্রহণ করে এবং অ্যাক্সন সেই তথ্যকে পরিবহন করে। নিউরনের তথ্য আদান-প্রদানের কাজটি স¤পাদিত হয় ক্ষুদ্র সিগন্যালের মাধ্যমে। রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি মস্তিষ্কের সাথে আইসি, ট্রানজিস্টার, ও নানারকম ইলেকট্রনিক ডিভাইসের তৈরি ক¤িপউটারের সংযোগকে কাজে লাগিয়েই বিজ্ঞানীরা দেহের বিভিন্ন ইন্দ্রিয়ের সাথে মস্তিষ্কের নিউরনে তথ্য প্রেরণের সময়ে তৈরি হওয়া সিগন্যাল ধরতে সক্ষম হয়েছেন। একে 'নিউরাল কন্ট্রোল ইন্টারফেস' বা এনসিই নামেও ডাকা হয়। মস্তিষ্কের করোটিতে অনেকগুলো ইলেক্ট্রোড স্থাপন করার মাধ্যমে নিউরন থেকে সিগন্যাল রিড করে বিসিআই সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেসব সিগন্যালকে রিভার্স করে আবার মস্তিষ্কের নিউরনে স্থাপন করা যায়। নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক রোগ নির্মূলের জন্য বিসিআই প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে মানুষ।
তথ্য-২৭০ ▌হাফ প্রাণী-হাফ উদ্ভিদ!: '
প্রাণীটির' নাম এলাইশিয়া (ঊষুংরধ). এরা গ্রীন সি ¯¬াগ (ংবধ ংষঁম) গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু প্রাণী হলেও এরা জীবন যাপন করে উদ্ভিদের মতো সালোক সং¯ে¬শন করে। এরা শৈবাল থেকে ক্লোরোপ্লাস্ট আহরন করে শরীরে জমা রাখে। আমরা জানি, ক্লোরোফিল পিগমেন্টের সাহায্যে উদ্ভিদ সালোক সংশ্লেষন করে থাকে। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, যদি বায়োটেকনলজি ব্যবহার করে, কোন ভাবে মানুষের চামড়ার মধ্যে ক্লোরপ্লাস্টকে ঢুকানো যায়, তাহলে মানুষও কোন বাইরের খাদ্য ছাড়াই জীবন যাপন করতে পারবে,.. শুধু সূর্যের আলো ব্যবহার করে। কিন্তু শুধু ক্লোরোফিল থাকলেই সালোক সংশ্লেষন করা যায় না, তার জন্য লাগে অনেক সাহায্যকারী প্রোটিন এবং এই সমস্ত প্রোটিন আমাদের ডিএনএর মধ্যেই থাকতে হবে..... কিন্তু আমাদের মধ্যে এই ডিএনএ নাই। চেষ্টা চলছে, বায়োটেকনলজি ব্যবহার করে জিন থেরাপি-র মাধ্যমে উদ্ভিদের ডিএনএ মানুষের শরীরে প্রতি¯হাপন করার। এই 'প্রাণীটি' শৈবাল-এর ৫২ টা ডিএনএ তার নিজের ডিএনএর মধ্যে প্রতি¯হাপন করেছে এবং তাতেই সম্ভব হয়েছে সালোক সংশ্লেষন করে খাদ্য উৎপাদন করা।
তথ্য-২৭১ ▌ চেঙ্গিস খান:
১১৬২ সালে মঙ্গোলিয়ার ছোট্ট একটি ট্রাইবে চেঙ্গিস খানের জন্ম। আসল নাম তেমুজিন। চেঙ্গিস খানের ৯ বছর বয়সে মা, ভাই বোনসহ তাকে গোত্র থেকে বের কর দেয়া হয়। চরম দারিদ্রের মুখোমুখি হন। এ সময় তিনি সৎ ভাইকে হত্যা করেন এবং জেলেও যান। মুক্ত হয়ে চেঙ্গিস দেখতে পান অনৈক্যের কারনে মোঙ্গল গোত্রগুলো দিশাহারা। তেমুজিনের সুন্দরী স্ত্রী অন্য একটি গোত্র দ্বারা অপহরণ হয়। তেমুজিন তার বাবার বন্ধুর সহায়তায় যুদ্ধ করে স্ত্রীকে উদ্ধার করেন। এইটা ছিলো ইতিহাসে তার প্রথম বিজয়। এরপর তেমুজিন অনেক ক্ষুুদ্র ক্ষুুদ্র যুদ্ধের মাধ্যমে ১২০৬ সালে সমস্ত মঙ্গল গোত্রগুলাকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিজেকে চেঙ্গিস খান (অর্থাৎ সর্বময় প্রভু) উপাধি দেন। ১২২৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চেঙ্গিস খানের রাজ্য বিস্তৃত ছিল পারস্য থেকে পিকিং, সাইবেরিয়া থেকে সিন্ধু নদ পর্যন্ত। চেঙ্গিস খান আফগানিস্তানে ১৬ লাখ মানুষ হত্যা করে। ইরানের জনসংখ্যা পঁচিশ লক্ষ থেকে আড়াই লক্ষতে নেমে আসে তার হামলায়। আর চীনের জনসংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে। চেঙ্গিসের আক্রমণে তৎকালীন বিশ্বের ৩ থেকে ৫ কোটি মানুষ প্রাণ হারান।
তথ্য-২৭২ ▌‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’:
অ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৬ সালে। এই প্রতিষ্ঠানের মূলমন্ত্র ছিল ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আর এর মুখপত্র ছিল ‘শিখা পত্রিকা’। এই পত্রিকার ¯ে¬াগান ছিল, ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব। শিখা গোষ্ঠী ছিল বাংলাদেশের প্রথম বুদ্ধিমুক্তির আন্দোলনের দল, এর কর্ণধার ছিলেন কাজী মোতাহার হোসেন, কাজী আবদুল ওদুদ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, আব্দুল কাদির এবং আবুল হুসাইন। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত মাত্র এক দশক চলেছিল ঢাকাকেন্দ্রিক এই গোষ্ঠীটির কার্যক্রম। বাংলার মুসলমান সমাজের যে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার ও কুপ্রথা ছিল, তা দূর করা ছিল এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য। কাজী মোতাহের হোসেন লেখেন: ‘মুসলমানদের যে গৃহ নেই তার একটা কারণ, আনন্দের উপকরণের অভাব। মুসলমানগণ গাইবে না, ছবি আঁকবে না, এক কথায় মনোরঞ্জনের চালিতকলার কোনও সংস্রবেই নেই। মুসলমান পুরুষেরা কেবল কাজ করবে, আর ঘর শাসন করবে; মেয়েরা কেবল রাঁধবে, বাড়বে, আর বসে বসে স্বামীর পা টিপে দিবে ..। -[আনন্দ ও মুসলমান গৃহ]।
তথ্য-২৭৩ ▌প্রগতি কাকে বলে? :
আগেকার বিশেষ চিন্তা থেকে বের হওয়াটার প্রগতির প্রথম শর্ত। সন্তানেরা পিতামাতার অবাধ্য না হলে সমাজে প্রগতি হতেই পারে না। কথাটা হয়তো শুনতে বেখাপ্পা লাগছে। একটু ভেবে দেখলেই দেখা যাবে এতটুকুও অতিরঞ্জন বলা হচ্ছে না। যুগে যুগে মানুষের চিন্তা ও আচরণ, সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রভৃতির যে পরিবর্তন- যাকে বেশিরভাগ সময়ই উন্নতিকর বলে ইতিহাসে মেনে নেওয়া হয়েছে, তাকেই বলা হয় প্রগতি। সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার পরিবর্তনের পশ্চাতেও রয়েছে মানুষের চিন্তার জগতে পরিবর্তন। চিন্তায় পরিবর্তন যদি না আসে তো উপরোক্ত পরিবর্তনগুলি আসতে পারে না। ইতিহাসে যে বিশাল প্রগতি ঘটেছে তা আর কিছুই নয়, বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে চিন্তা ও আচরণের পরিবর্তনের শৃঙ্খলিত রূপ। এক প্রজন্মে যেভাবে চিন্তা করেছে, তার পরের প্রজন্ম অন্যভাবে চিন্তা করছে। সেটাই হচ্ছে প্রগতির এক একটি পদক্ষেপ। পিতা ও সন্তানের প্রজন্মের মধ্যে যদি কোন প্রভেদ লক্ষ্য করা না যায়, তো বলতে হবে এই দুই প্রজন্মে মধ্যে কোন সামাজিক প্রগতি ঘটেনি।
তথ্য-২৭৪ ▌আগামীর মাতৃতান্ত্রিক সমাজ :
মানুষের সমাজ সভ্যতা একসময় মাতৃতান্ত্রিক ছিলো। একটি শিশুর জন্মপ্রক্রিয়া ঠিক কি প্রক্রিয়ায় ঘটে, এ ব্যাপারে মানুষের বস্তুনিষ্ট জ্ঞান ছিলো না। সন্তান উৎপাদনের প্রক্রিয়াটিকে তারা ঐশ্বরিক শক্তির নির্দেশনার ব্যাপার বলে বিশ্বাস করেছিলো। পিতৃত্বের কোনো দাবি ছিলো না; ছিলো শুধু মাতৃত্বের দাবি। কারণ, প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে মাতাই সন্তান জন্মদান করতো। একসময় মানুষ জানতে পারলো, সন্তানটি পুরুষের নিজেরও অংশ। তখন থেকেই মূলত সন্তানের প্রতি পুরুষের সৃষ্টি হয় এক কর্তৃত্ব, দায়িত্ব, মায়াবোধ, ভালবাসা। এটি নিশ্চিত যে, একদিন পৃথিবীতে পিতৃত্বের ধারণা বিলুপ্ত হবে। কেনো এবং কিভাবে? আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সন্তানের নিরাপত্তামূলক দায় দায়িত্ব নিচ্ছে রাষ্ট্র নিজে। রাষ্ট্রে নাগরিক সুযোগ সুবিধা বাড়লে পিতা ছাড়াও তখন একটি শিশু বড় হতে পারবে, তখন স্বাভাবিকভাবেই ভবিষ্যতের পরিবারে পুরুষের চাইতে নারীই হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ। আবার নারী স্বাবলম্বী হয়ে উঠলে নির্দিষ্ট একজন পুরুষের সাথেই নারীকে আজীবন সঙ্গী হয়ে থাকতে হবে, এমন ধারণার মৃত্যু ঘটবে।
তথ্য-২৭৫ ▌অর্গানিক সোসাইটি :
হিপ্পো বা অন্তু সমাজে কোনো সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে শিশুটি সমাজের সকল স্তন্যদায়ী মাতার দুগ্ধ পান করে বড় হয়। যাদের দুগ্ধ নেই, তারা মুখের লালা মিশ্রিত ছিবানো খাবার খাইয়ে সন্তানটি বড় করে। এর মধ্য দিয়ে তারা মনে করে সমস্ত মাকে এ সন্তান ধারণ করেছে। এ প্রকৃয়ার মধ্য দিয়ে সন্তানটি সকল মায়ের সন্তানে পরিণত হয়। এই কারণে তাদের মধ্যে আমি-আমার ধারণা নেই। আমার স্বামী/স্ত্রী এসবের পরিবর্তে সেখানে বলা হয়, তার সাথে আছি, তাদের সাথে থাকছি। তাদের এই অর্গানিক সোসাইটি হল ইন্টার ডিফেন্সি, ইন্ ডিফেনসি নয়। আজকের মানুষের মতো স্ব-অধীন নয়, পরষ্পরের অধীন। পৃথিবীব্যাপী কোটি কোটি শিশু অনাহারে অপুষ্টিতে মানবেতর জীবন-যাপন করছে, শুধু আমি এবং আমার সন্তান কনসেপ্টের কারণে। নিজের সন্তানটা তার ‘হাজার হাজার কোটি’ শুক্রাণুর মধ্যে মাত্র একটির অর্ধেকাংশ। তার বাকীসব বিলিয়ন বিলিয়ন শুক্রাণু প্রতিদিন মরে যাচ্ছে বেচে থাকার আশ্রয় না পেয়ে। মানুষ বা প্রাণির যে শুক্রাণু অংশটি বেচে থাকার সুয়োগ পেয়েছে, তাকে বাচিয়ে রাখা তার দায়িত্ব ও নৈতিকতার মধ্যেই পড়ে।
তথ্য-২৭৬ ▌ বিটগেনস্টাইন :
বিটগেনস্টাইন-কে দার্শনিকদের স¤্রাট বলা হয়ে থাকে। বিটগেনস্টাইন মতে, ইঞ্চি হিসেব করে আমার টেবিলটার মাপ হয় ৪ফুট, কিন্তু কত মিলিমিটারে ইঞ্চি হয় বা কতটুকু ফাঁকে এই ইঞ্চি, তা তৈরি করল কে? ইঞ্চির ফাঁক যদি আরো বেশি হতো, তাহলে কি আমার টেবিলটা ৪ফুট হতো? সুতরাং গজ, ফুট, ইঞ্জির মতো পৃথিবীর সকল নিয়ম’ যা আজ আমাদের কাছে চরম সত্য, তা কিন্তু এক বা একাধিক জনের বেধে দেয়া একটা সিদ্ধান্ত। তার একটা বিখ্যাত তাত্ত্বিক সূত্র হল-যা অমিমাংসিত তা পরিত্যাজ্য। অর্থাৎ যা কিছু মিমাংসা করা যায় না, তা মিথ্যা। যেমন- যার জন্ম আছে, তার মৃত্যু হবেই; এ ব্যাপারে কারো সন্দেহ বা দ্বিমত নেই; সুতরাং এটা সত্য। কিন্তু মৃত্যুর পরে জীবন আছে এমন ধারণা কেউ বিশ্বাস করে আবার কেউ মনে করে এটা গাজাখুরি কল্পনা। অর্থাৎ একটা অমিমাংসিত তর্ক আছে, আগামীতেও থাকবে। সুতরাং এটা মিথ্যা। তেমনিভাবে ইশ্বর আছে কি নেই, এ বিষয়ে হাজার বছর ধরে বিতর্ক ছিল, এখনো আছে, আগামীতেও থাকবে। সুতরাং এটাও মিথ্যা।
তথ্য-২৭৭ ▌মনের ব্লাকহোল :
জ্যাক দেরিদার একটা বিখ্যাত উক্তি হল-আমরা জীবন ধারণের জন্য অবচেতন মনে একটি কাথা সেলাই করে গায়ে জড়াই, এই কাথায় দুই ধরণের বস্তু থাকে। এক হলো, আলো আর অন্যটা অন্ধকার। অর্থাৎ আমাদের বিশ্বাসের এই চাদরে সব সময় আলো ও অন্ধকারের লুকোচুরি চলে। ফলে দেখা যায়, পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষকের আঙ্গুলে রতœ পাথর। আমরা আসলে আমারা গ্যালাক্সির পাশাপাশি ব্লাকহোলকেও রেখেছি। ফলে দেখা যায়, যিনি প্রগতিশীল, সময়ে তিনিই আবার প্রতিক্রিয়াশীল। জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে নিজের ব্লাকহোলকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সমস্ত গ্যালাক্সি গ্রাস করে নেয় ব্লাকহোল। একটা কথা মনে রাখবেন, পাশের বাড়ীতে আগুন লাগলে আপনি কখনোই নিরাপদ নন। রাস্তায় আপনি যদি একা ভাল গাড়ী চালান, তা হলে কি আপনি নরাপদ? আপনার পাশাপাশি অন্যকেও ভাল চালাতে হবে। অর্থাৎ সবকিছু একা নিয়ন্ত্রণ করে আপনি কখনো ভাল থাকতে পারবেন না। সুতরাং সব দরজা-জানালা বন্ধ করে নিরাপত্তা কল্পনা করে পাগলে।
তথ্য-২৭৮ ▌ শ্রেণি বৈষম্য ও জেল :
আমাদের প্রায় সমস্ত ক্রাইম হচ্ছে-পলিটিক্যাল ক্রাইম। রাজনীতি আর অর্থনীতি দখলের সংকট। পৃথিবীতে যত জেলখানা আছে, তার ৯৯.৩ পার্সন কয়েদি হচ্ছে গরিব মানুষ। বিভিন্ন ধরণের শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, নিপিড়নের শিকার হয়ে তারা অপরাধী হিসাবে কিছু সভ্য নামধারী মানুষের কয়েদখানায় বন্ধী হয়ে আছে। এই জেলখানা হচ্ছে একটা কয়েদি তৈরির কারখানা। এখানে নানা ধরণের অপরাধীর সংস্পর্শে মানুষ বিভিন্ন ক্রাইমে পারদর্শী হয়ে উঠে। আপনি একটু হিসাব করলেই দেখতে পাবেন, যে দেশে জেলখানা যত বেশি, সে দেশে ক্রাইমও ততো বেশি। নেদারল্যা-, ফিনল্যান্ডে কয়েদির অভাবে জেলখানা বন্ধ হয়ে যায়, আর আমেরিকা তার কয়েদখানা গুয়েতেমালা পর্যন্ত স্থাপন করে। যে সমাজে নির্যাতন, জুলুম, অনিয়ম, শ্রেণী বৈষম্য থাকবে, জেলখানা তো সেখানেই থাকবে। মানবিক সমাজে জেলখানার কি দরকার? সমস্ত খাবার নিজেদের জন্য রেখে আপনি যদি এক হাজার অনাহারীদের মাঝে কয়েক টুকরা রুটি দিয়ে বলেন, তোমরা মারামারি করলে জেলে ঢুকিয়ে দেব। তাহলে কি কাড়াকাড়ি বন্ধ হবে?
তথ্য-২৭৯ ▌আন্তোনিও গ্রামসি :
ফ্যাসিস্ট মুসোলিনীর কোপানলে পরে গ্রামসি যৌবনেই কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। জেলেই তাঁর জীবনের এগারো বছর কেটেছিল অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, রক্তবমির মধ্যে। জেল থেকে বেরিয়েই তিনি মারা যান। তিনিই প্রথম একমূখী জেনারেল এ্যাডুকেশনের কথা বলেছেন। তাঁর মতে, আমরা ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে (যেমন, ইংলিশ স্কুল, ধর্মীয় মক্তব, জেনারেল স্কুল, ক্যাডেট স্কুল ইত্যাদি) আলাদা ভাগে শিক্ষা গ্রহণ করার ফলে, সমাজে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্ঠিভঙ্গির আর বিপরীত জ্ঞানের হযবরল শ্রেণীর প্রাণী তৈরি করছি, মানুষ নয়। প্রিজন’স নোটবুক-এর এক জায়গায় গ্রামসি লিখেছেন, ভাষার কারণেই কেউ নতুন কিছু বললে অন্যরা তা বুঝতে পারে, আবার পূর্বে কখনো শুনেনি এমন কিছুও বলতে পারে। সকল সৃজনশীল চিন্তা ভাষার মাধ্যমেই হয়। উন্নত চিন্তা তখনি আমরা পাব, যদি সব ভাষার সমন্বয়ে একটি জাতীয় ভাষা থাকে। এক অঞ্চলে যদি একাধিক ভাষার প্রাধান্য থাকে, সেখানে ঐক্য ও চিন্তার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। কারণ, ভাষা হচ্ছে মানুষের মধ্যে কানেক্টিভিটি।
তথ্য-২৮০ ▌সন্ত্রাসনির্ভর রাজনীতি :
বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা নকশাল বাড়ি আন্দোলন অনুসরণে সর্বহারা পার্টির রাজনৈতিক সন্ত্রাস প্রত্যক্ষ করেছি। ধর্মনির্ভর রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সন্ত্রাসের নতুন রূপ দেখা যায় গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের শেষের দিক থেকে। ১৯৭৮ সালে আফগানিস্তানে যখন বামপন্থী পিপলস ডেমোক্রাটিক পার্টি ক্ষমতায় আসে তখন এ সরকারকে উৎখাত করার জন্য মুজাহিদিন বাহিনী গড়ে উঠে। আফগান যুদ্ধ শুধুমাত্র আফগান জনগণের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগান যুদ্ধকে তাদের ভিয়েতনাম যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখে। ফলে পাশ্চাত্যের সহায়তায় আফগানিস্থানে যাতে সারা বিশ্ব থেকে মুসলিমরা সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে অংশ নিতে পারে তার ক্ষেত্র তৈরি করা হয়। বাংলাদেশ থেকেও অনেকে, বিশেষত যারা বিভিন্ন ইসলামপন্থী দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তারা এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে আফগানিস্তান যায়। যুদ্ধ শেষে তারা দেশে ফেরত এসে আলকায়েদার চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়ে সন্ত্রাসনির্ভর, আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে তোলে।
তথ্য-২৮১ ▌নারী-পুরুষের পার্থক্য :
পুরুষের যৌনাঙ্গ থাকে শরীরের বাইরের দিকে। পুরুষ এর সংবেদনশীলতার ব্যাপারে জ্ঞান হবার পর থেকেই সচেতন থাকে। বয়:সন্ধিকালে যৌন অনুভুতি প্রবলভাবে পুরুষের শরীরে জেকে বসে, যার বহিঃপ্রকাশ পুরুষাঙ্গের মাধ্যমেই ঘটে। অন্যদিকে নারীর যৌনাঙ্গের ক্লিটোরিস থাকে অনেকটা ভিতরে। পর্যাপ্ত উদ্দীপনা ছাড়া এটি সক্রিয় হতে পারে না। ফলে বয়:সন্ধিকালে প্রায় সব পুরুষ মাস্টারবেশনে অভ্যস্ত হয়ে গেলেও অনেক নারী তাদের শরীরে ক্লিটোরিসের অস্তিত্ব স¤পর্কে অজ্ঞ থাকে। ক্লিটোরিস পুরুষাঙ্গের মত নিজের অস্তিত্ব জানান দিতে সমর্থ নয়। পুরুষের শরীরের টেস্টোস্টেরন হরমোনের কারণেই প্রবল যৌন তাড়না সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে নারীর এই হরমোনের আধিক্য না থাকায় আশে পাশের পুরুষ তার মনে তেমন কোনো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে না। পুরুষের অর্গাজমের বিষয়টি বেশ সহজ, সঙ্গম বা মাস্টারবেশন না করলেও স্বপ্নদোষের মাধ্যমে পুরুষ অর্গাজমের সাথে পরিচিত হয়ে যায়। অন্যদিকে নারীর অর্গাজম এমনই যে, নারী না চাইলে তা অনুভব করার কোন সুযোগ নেই। ফলে নারীকে জাগাতে হয়। তাই পুরুষ সক্রিয়, নারী নিষ্ক্রয়।
তথ্য-২৮২ ▌ফুকোর ডিসকোসর্:
মিসেল ফুকো (১৯২৬- ১৯৮৪) সবচেয়ে প্রভাবশালী ফরাসি দার্শনিক। ফেকো বলেন, পাগলামির মিশ্রণ ছাড়া বড় কোন প্রতিভার জন্ম হয় না। তার মতে, সক্রেটিস পাগলদের ২টি ভাগে ভাগ করেছিলেন। সক্রেটিস দ্বিতীয় ভাগটিতে শিল্পী, প্রেমিক, ধর্মান্ধ, ভাববাদী অথবা নবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে প্লেটো বললেন, মানব সভ্যতা বিকাশে এই দ্বিতীয় ভাগটির পাগলদের ভূমিকাই মূখ্য। মশেল ফুকো’ বলেন- যৌনতা’ বিষয়টি মূলত চাপিয়ে দেওয়া। পরিবার আর বিয়ের মোড়কে যৌনতার বিষয়টি হয়ে পড়ে একান্তই ব্যক্তিগত, বা ‘প্রাইভেট’। বিবাহ বহির্ভূত যৌনচর্চাকারী গোষ্ঠী (সমকামী, বেশ্যা) হয়ে পড়ে প্রান্তিক। ফুকোর দর্শন অনুসারে, আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম যৌনতার প্রশ্নে স্বাভাবিক-ই ছিলেন পরবর্তি প্রজন্মও হয়ে উঠবে স্বাভাবিক। মাঝখানে আমাদের এখনকার প্রজন্মটা যৌন সংস্কৃতির ‘কঠিন নিয়মরীতির ভিতর’ হয়ে পড়ছে অবরুদ্ধ। ফলে মানসিক সমস্যা বাড়ছে বহুগুণ, অবদমিত ইচ্ছার রোগ হিসেবে ধরা দিচ্ছে ‘ধর্ষণ’ আর কমে যাচ্ছে এই প্রজন্মের প্রোডাক্টিভিটি।
তথ্য-২৮৩ ▌বৈধ-অবৈধ সম্পর্ক :
ইন্টারনেটের কল্যাণে অল্প বয়স থেকেই ছেলে-মেয়েরা টিভির পরিবর্তে পর্ণ-এ বেশি মনযোগী হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব জীবনে সমাজের অবদমনের রোসানলে পড়ে গোপনে স্বাধ মেটানোর জন্য অস্থির হয়ে দিক-বেদিক ছুটছে। শহরের পতিতালয়গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের চাহিদা বিকৃত হয়ে ধর্ষণের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অন্যদিনে যুবকরা হরমোনের তাড়নায় অবৈধ স¤পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। বাংলাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে ষাটের দশকের তুলনায় বর্তমানে বিবাহবহির্ভূত ও বিবাহপূর্ব অবৈধ স¤পর্কে জড়িয়ে পড়ার পরিমাণ তিনগুণ বেশি। বর্তমানে প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিনজনকেই অবৈধ স¤পর্কে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। বিয়ে টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। সংসার বাচাতে শিক্ষিত মেয়েরাও আনস্মার্ট, স্বল্প শিক্ষিত বয়স্ক পুরুষকে বিয়ে করার দিকে ঝুকছে। অন্যদিকে রূপান্তরকামীদের দ্বিরূপী মস্তিষ্কের গঠনগত কারণে ব্যক্তি তার বিপরীত লিঙ্গের মত আচরণ দেখায়। এই যে মানুষ ঝুটিবদ্ধ চুল রাখে, কানে দুল পরে এগুলি হল তার যৌন স্বাতন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ।
তথ্য-২৮৪ ▌ কুলীন ব্রাহ্মণ ও বিবাহ বণিক :
পশ্চিমবঙ্গে ব্রাহ্মণের অভাবের কারণে একাদশ শতাব্দীতে উত্তর ভারতের কনৌজ থেকে ৫টি গোত্রের ব্রাহ্মণকে আনা হয়। এরাই কুলীন ব্রাহ্মণ। এদের পদবী বন্দ্যোপাধ্যায়, গঙ্গোপাধ্যায়, চট্টোপাধ্যায়, মুখোপাধ্যায় ও ভট্টাচার্য। এই কুলীন ব্রাহ্মণদের মর্যাদা অন্যান্য ব্রাহ্মণদের চাইতেও উপরে। এই বাহ্মণদের বহুবিবাহ প্রথার জন্য প্রায় উনবিংশ শতক পর্যন্ত বাঙ্গালী সমাজ কলঙ্কিত ছিল। কারণ একজন পুরুষ কুলীন ব্রাহ্মণ কুলীন বা অকুলীন যেকোন ব্রাহ্মণ বংশেই বিয়ে করতে পারতো, কিন্তু যদি কুলীনকন্যা কুলীন বংশের বাইরের কাউকে বিয়ে করত তবে তার পিতা কৌলিন্য হারাতো। ফলে দেখা গেল, কুলীন ব্রাহ্মণ কন্যাদের জন্য পাত্র পাওয়া যায় না। কুলীন পুরুষেরা সুন্দরী পাত্রী পেলে ঠিকই অকুলীন কন্যাকে বিয়ে করে নিত। কুলীনদের মধ্যে বেড়ে গেল বহুবিবাহ। কুলীন ব্রাহ্মণ পেলেই যে করেই হোক বিয়ে দিয়ে কন্যাদায়মুক্ত হতো পিতারা। কুলীন পুরুষেরা বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে অর্থের বিনিময়ে কুলীন কন্যাকে বিয়ে করে নাম ধাম খাতায় লিখে নিয়ে চলে যেতো। মাঝেমাঝে বছরে দুই একবার আসতো।
তথ্য-২৮৫ ▌সাদাত হাসান মান্টো :
পাঞ্জাবের সাদাত হাসান মান্টো একজন ছোটগল্প লেখক, নাট্যকার এবং অনুবাদক ছিলেন। উর্দু সাহিত্যিক মান্টো দেশভাগের সময় হাজার হাজার হিন্দু মুসলমান হত্যাযজ্ঞকে ধর্মের বাইরে মানবতার হত্যাকা- বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন: “এটা বোলো না যে এক লাখ হিন্দু ও এক লাখ মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। বল, দুই লাখ মানুষকে খুন করা হয়েছে।” ১৯৩২ সালে পিতার মৃত্যুর পর তিনি আয়-উপার্জনের পথ খুঁজতে থাকেন। সে সময় তার্কিক লেখক আবদুল বারি মান্টোকে রাশিয়ান এবং ফরাসি ভাষা শিখতে উদ্বুদ্ধ করেন। মান্টো, ভিক্টর হুগোর “ঞযব ষধংঃ উধু ড়ভ ধ ঈড়হফবসহবফ গধহ” এর উর্দু অনুবাদ করেন। বিদেশী সাহিত্য পড়তে গিয়ে মান্টো ভিক্টর হুগো, অস্কার ওয়াইল্ড, রাশিয়ান লেখক আন্তন চেখভ, মাক্সিম গোর্কি প্রমুখের সাহিত্য কীর্তির সাথে পরিচিত হন নিবিড়ভাবে। ক্রমশ তিনি হয়ে ওঠেন উর্দু সাহিত্যের একজন জনপ্রিয় ছোটগল্পকার। তার রচনায় দেশভাগ, সাম্প্রদায়িকতা, দাংগা, মানব চরিত্রের বীভৎসতা বারংবার ঘুরে ফিরে আসে।
তথ্য-২৮৬ ▌ফিনল্যান্ডের শিক্ষক :
ফিনল্যান্ডের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আপনি শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পেতে চাইলে আপনাকে আপনার ক্লাসে প্রথম ১০ জনের মধ্যে থাকতে হবে। এর বাইরে হলে আপনি অ্যাপ্লাই করতে পারবেন না। অ্যাপ্লাই করার পর প্রতি প্রার্থী এক বছরেরও বেশি সময় কোনও না কোনও স্কুলের সাথে যুক্ত হন। এই সময় চলে তাদের নানারকম প্রশিক্ষণ। স্কুলের সবচেয়ে ভালো শিক্ষকদের সাথে তাকে থেকে থেকে তাদের ক্লাস দেখতে হয়। এর কিছুদিন পর সে নিজে ক্লাস নেয়ার উপযুক্ত হলে তাকে নিজে নিজে ক্লাস নিতে দেয়া হয়। তখন আবার সিনিয়র শিক্ষকরা তার ক্লাসগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন। মাঝে মাঝে আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষ প্রশিক্ষকরা এসে সেই ক্লাসগুলো মূল্যায়ন করেন। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মনোযোগ দিচ্ছে কিনা, ঠিকমতো শিখছে কিনা ইত্যাদি। এক বছরের এই প্রশিক্ষণে থাকে ভাইভা, থাকে লিখিত পরীক্ষা আর সবশেষে প্যাকটিক্যাল (আসল ক্লাস নেয়া) পরীক্ষা। এই এক বছরের প্রশিক্ষণের পর সব প্রার্থীদের মধ্যে থেকে বাছাই করে সেরা ১০% প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে।
তথ্য-২৮৭ ▌ ডিম্বপাত প্রক্রিয়া :
নারীর ডিম্বপাত হয় (সাধারণত) মাসিকের শুরু থেকে ১৩ বা ১৪তম দিনে। ডিম্বপাতের তিনদিন আগে থেকে শুরু করে একদিন পর পর্যন্ত (অর্থাৎ ১১তম দিন থেকে ১৫তম দিন) হল গর্ভধারণের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। কারণ, ডিম্ব কার্যকরী থাকে মাত্র ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু শুক্রাণু নারীর শরীরে পাঁচ দিন পর্যন্ত কার্যকরী থাকতে পারে। ণ (ছেলে) শুক্রাণু তুলনামূলকভাবে অনেক ছোট, কিন্তু বেশ দ্রুতগামী। তারা খুব বেশিক্ষণ জীবিত থাকে না। এ দিকে ঢ(মেয়ে) শুক্রাণু বেশ বড় এবং ধীরগতির, কিন্তু তারা আবার একটু বেশ সময় বাঁচে। সন্তান হিসেবে ছেলে চাইলে ণ শুক্রাণকে খুব দ্রুত ডিম্বের কাছাকাছি পাঠাতে হবে। এর জন্য নারীর যে দিন ডিম্বপাত হচ্ছে, সে দিনেই মিলিত হওয়াটা জরুরি (১২ থেকে ১৫তম দিন)। না হলে ণ শুক্রানুটি কার্যকরী থাকবে না। আবার আপনি যদি কন্যা সন্তান চান তবে ডিম্বপাতের দুই থেকে তিনদিন আগে মিলিত হতে হবে। ( অর্থাৎ ১৩ থেকে ১৪তম দিন দুটি বাদ দিতে হবে) ডিম্বপাত হবার আগেই সব ণ শুক্রাণু মারা যাবে, বেঁচে থাকবে শুধু মাত্র ঢ শুক্রাণুগুলি। ফলে কন্যা হবার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
তথ্য-২৮৮ ▌ রাজ্য নেই, তবু সে রাজা :
বাবা রামকান্ত তাকে পাঠিয়ে দিলেন কাঁশীতে সংস্কৃত পন্ডিতের আখড়ায়। কয়েক বছরের মধ্যে পন্ডিত হয়ে বাড়ী ফিরে শুরু হল ফের দৌরাত্ম। বাবা ফের পাঠিয়ে দিলেন পাটনায় ফার্সি শেখাতে। এত ভাল ফার্সি শিখলেন যে, লোকে তাকে মৌলভি বলে ডাকতো। এই মেধাই হল তাঁর কাল। বাড়ীতে নি®প্রাণ মাটির দেব-দেবীর পূজার বিরুদ্ধে সবসময় তর্ক জূড়ে দিত। ১৫ বছর বয়সে অতিষ্ঠ হয়ে বাবা তাড়িয়ে দিলেন বাড়ী থেকে। একদিন ইংরেজ সিভিলিয়ান ডিগবি সাহেবের সাথে পরিচয় ঘটে। নিয়োগ করলেন দেওয়ান পদে। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে হাজির হলেন, কিন্তু বিধর্মী নাস্তিক বলে সবাই তাকে দুর-দুর করে তাড়িয়ে দিলেন। একদিন কানে এলো বড়'দা মারা গেছেন। তার বড়ো বৌঠানকে স্বামীর চিতায় বেঁধে সহমরণে পাঠানো হবে। হাজার হাজার মানুষ খোল করতাল কাঁসর ঘন্টা নিয়ে ছুটতে লাগলো তাদের বাড়ী অভিমুখে। ছুটে গেল সে। কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ। তার চিতার সামনে প্রতিজ্ঞা করলো এই বর্বরতা সে বন্ধ করবেই। তার প্রচেষ্ঠায় ১৮২৯ সালে আইন করে বন্ধ করা হল সতীদাহ প্রথা।
তথ্য-২৮৯ ▌ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর :
বাংলায় আধুনিক সমাজ তৈরির পথিকৃৎ যদি রাজা রামমোহন রায় হয়ে থাকেন, তাহলে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার পেছনে অবদান ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের। বিদ্যালয় পরিদর্শক হিসেবে কাজ করবার সময়ে তাঁর তত্ত্বাবধানে বিশটি মডেল স্কুল এবং পঁয়ত্রিশটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে তিনি তৎকালীন মেট্রোপলিটন কলেজ স্থাপন করেন। দরিদ্র ব্যক্তির কাছে তিনি ছিলেন ‘দয়ার সাগর’। তাঁর চরিত্র মাধুর্য সম্বন্ধে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বলেন, ঋষির প্রজ্ঞা, ইংরেজদের কর্মশক্তি এবং বাঙালি মায়ের হৃদয়বৃত্তি’র সম্মিলন ঘটেছিল তাঁর মাঝে। কর্মজীবনের শেষে ইংরেজদের সাথে আপোষ না করে ‘পেনসন’ না নিয়েই সরকারের সাথে স¤পর্ক ছিন্ন করেন। তিনি শুধু বিধবা বিবাহপ্রথা চালুরই অগ্রদূত নন স্বয়ং নিজ ছেলেকে দুঃখিনী এক বিধবার সাথে বিয়ে দেন। সংস্কৃত কলেজে শুধু উচ্চবর্ণের বদলে সকল বর্ণের জন্য দ্বার উন্মুক্ত করেন। একটি শিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলার জন্য তিনি আজীবন কাজ করে গেছেন। তার কাছে সবার উপরে একটি কাজই ছিল, সমাজকে শিক্ষিত করা।
তথ্য-২৯০ ▌পাকিস্তানের বাংলাভাষী :
প্রায় ১৬ লাখ বাংলাভাষী আছেন পাকিস্তানে। স্থানীয় রাজনীতিবিদরা সোজাসাপ্টা বলে দেন, করাচির জনসংখ্যার ১০ শতাংশই বাঙ্গালি। করাচিতে বাংলাভাষীদের অন্তত ১৩২টি কলোনি আছে। পাকিস্তানের অন্যত্রও আছে অন্তত ৭০টি। অনেক বাংলাভাষী পুরুষ পরিবারকে করাচিতে রেখে ইরানেও কাজ করেন। করাচির চিটাংগা কলোনি, মাচ্ছের পাড়া, বিল্লাল টাউন, জিয়াউল হক কলোনি, শুক্কুুর কলোনি ইত্যাদি বাঙ্গালি পাড়া। পাকিস্তানের ২৫ বিলিয়ন ডলারের মাছ রফতানি খাতের মূল শক্তি তারাই। শিক্ষার হারও এই জনগোষ্ঠীতে খুব কম। ১৯৪৭-এ করাচিতে বাঙ্গালি ছিল তিন লাখের মতো। বর্তমানের ১৬ লাখ বাংলাভাষীর সকলেই পূর্বতনদের বংশধর নন অনেকেই পরবর্তীকালে আয়-রোজগারের সন্ধানে বিভিন্ন স্থান থেকে ওখানে গিয়েছেন; কোন মানবাধিকার সংগঠনকে কখনোই করাচির বাংলাভাষীদের স্বার্থে সোচ্চার দেখা যায় না। বস্তুত জাতীয়তাবাদ ক্ষমতার জন্যই মানুষ যতটা লড়ে, মানুষের অধিকার ও মুক্তির জন্য ততটা নয়।
তথ্য-২৯১ ▌সুন্দরী প্রতিযোগিতা :
সুন্দরী প্রতিযোগিতার নিয়ে বিতর্ক আছে। সাদা-কালো, লম্বা-বেটে নানান ধরনের মানুষ আছে পৃথিবীতে। মানুষের চেহারা বা আকৃতি প্রকৃতিসৃষ্ট। এজন্য কাউকে খারাপ চেহারার বলে ভর্ৎসনা করা, হেয় করা বা গালি দেয়া মস্ত বড় অন্যায়। তেমনিভাবে আরও বড় অন্যায় কাউকে নির্দিষ্ট কিছু ক্যাটগরির ভিত্তিতে সুন্দরী হিসেবে চিহ্নিত এবং পুরস্কৃত করা। ইদানীং সুন্দরী নির্বাচনের ক্ষেত্রে শারীরিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি নারীর ব্যক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা, সাহস, চতুরতা, মানসিকতা, সাধারণ জ্ঞান ইত্যাদিও যোগ করে দেয়া হয়েছে। তারা বোঝাতে চায়, দেখো, আমরা শুধু শরীর নয়, মেধা বা মানসিক উৎকর্ষকেও গুরুত্ব দিই। কিন্ত মূল বিষয় হলো ৩৬-২৪- ৩৬ শরীরের ভাঁজ। আবার সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বিবাহিত নারী অংশ নিতে পারেন না। কেন? তার মানে বিবাহিত নারী সুন্দরী নন? , ডিভোর্সি মেয়েটি কি করবে? কিংবা যে লিভ টুগেদার করে কিংবা যে মেয়েটি ধর্ষিতা সে কী করবে? বিয়ে, ডিভোর্স বা সন্তান ধারণ নারীকে অসুন্দর করে ফেলে? এগুলো নারীকে এতটাই কুৎসিত করে?
তথ্য-২৯২ ▌চীনের শেয়ারিং ফরমুলা :
চীন আপাদমস্তক একটি দর্শনের দেশ। চপস্টিক -এর পেছনের গল্প হচ্ছে চীনারা গরম খাবার খেতে পছন্দ করে। তাছাড়া, হাত ময়লা থাকতে পারে। চীনের বাচ্চাদের বয়স যখন এক বছর তখন থেকেই তারা চপস্টিকে অভ্যস্ত হতে শুরু করে। চীনে কোনো খাবার টেবিলে পানি দেখা যায় না। কারণ, তারা খাবারের সঙ্গে পানি খায় না। পথ চলতে চলতে এরা ছাতা খুলে ধরে থাকতো। কারণ হলো- ছায়ার মধ্যেও রোদের রশ্মি শরীরে এসে ত্বকের ক্ষতি করে। কর্মই তাদের কাছে ধর্ম। তাদের কাছে ‘টাইম ইজ মানি, মানি ইজ টাইম।’ চীনে গাড়ির হর্ণ খুব একটা শুনা যায় না। চীনাদের সকালে নাস্তা আটটার মধ্যে। দুপুরের খাবার ১২টার মধ্যে। ডিনার সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে শেষ। চীনে কোনো আড্ডা বা জটলা দেখা যায় না। চীনারা সাইকেলে ছুটছে। উইচাট এ যে কোন স্থানে সাইকেল পাওয়া যায়। এই উইচাটে সব করা যায়, ওয়াশিং মেশিনে কাপড় দিয়ে রুমে এলে উইচাট জানিয়ে দেবে আপনার কাপড় তৈরি হয়েছে কিনা? মন খারাপ, বন্ধু/বান্ধবী দরকার? উইচাট ঘটকালী করবে।
তথ্য-২৯৩ ▌ অজুহাতের ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যর্থ মানুষ:
মানুষকে সুগভীর অধ্যয়ন করলে দেখবেন ব্যর্থ মানুষগুলি এক ভয়ানক ব্যাধিতে আক্রান্ত। সেই ব্যাধির নাম এক্সকিউসাইটিস। আর বেশিরভাগ ‘আমজনতা’র মধ্যে এই রোগের কয়েকটি লক্ষণ অবশ্যই বিদ্যমান থাকে। লক্ষ্য করবেন, এই এক্সকিউসাইটিস কিন্তু একটা সফল মানুষ ও এক ব্যর্থ মানুষের মধ্যে প্রভেদের প্রধান কারণ। আপনি দেখবেন একজন মানুষ যত বেশি সফল, সে ততই কম অজুহাত দেখান। অন্যান্য যে কোনো রোগের মতোই এক্সকিউসাইটিসের যথাযথ চিকিৎসা না হলে তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এই রোগগ্রস্ত মানুষের চিন্তা-ভাবনা অনেকটা এরকম : ‘আমার ভাগ্য খারাপ।’ নিজের এই ব্যর্থতার কি অজুহাত দেওয়া যায়... শিক্ষা কম, বয়স বেশি? দুর্ভাগ্য? ব্যক্তিগত দুর্ভোগ? বউ ভালো না? পরিবারের দোষ ইত্যাদি খুঁজে বেড়ায়। অজুহাতের ব্যাধিতে আক্রান্ত এই ব্যর্থ মানুষটি ‘ভালো’ একটি অজুহাত খুঁজে বের করে সেটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
তথ্য-২৯৪ ▌নারীর দ্বিতীয় নাম :
নির্বাচন কমিশনের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নারীরা বিশেষ প্রয়োজনে যদি কেউ স্বামীর নাম যুক্ত করতে চান তাহলে তাকে নির্বাচন কমিশন থেকে অনুমোদন নিতে হবে। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা ইসির এই নতুন নিয়মের বিরোধিতা করেছে। এর পেছনে রয়েছে হিন্দু ধর্মের বিবাহের বিশেষ নিয়ম, যে নিয়ম অনুযায়ী বিয়ের পর নারীরা বাবার গোত্র থেকে স্বামীর গোত্রে চলে যান। তখন তাদেরকে স্বামীর গোত্রের পদবি ব্যবহার করতে হয়। একসময় শুধু পদবি নয় ভারতের অভিজাত পরিবারের লোকেরা নতুন বউ এনে তার পুরো নামটাই পালটে ফেলতো। এর দেখাদেখি অভিজাত মুসলিম পরিবারকেও দেখা যায় বিয়ের পর স্বামীর নামের অংশ জুড়ে দিতে। ইউরোপ আমেরিকায় প্রায় সব নারীই বিয়ের পর স্বামীর বংশের পদবি বা স্বামীর নামের শেষ অংশ ব্যবহার করেন। যেহেতু ইসলাম ধর্মে জন্মের পরেই আকিকা দিয়ে নাম রাখা হয়, তাই বিয়ের পর নতুন নাম রাখা জায়েজ নয়। যদি হতো, হযরত আয়েশা(রা.)কে আয়েশা মোহাম্মদ বলতো, আয়েশা সিদ্দিক নয়। শেখ হাসিনা নয়, খালেদা জিয়া প্রশ্নবিদ্ধ।
তথ্য-২৯৫ ▌ওয়া জাতি ও ইয়াবা :
ওয়ারা একটি পার্বত্য জাতি। বাস তাদের মায়ানমারের ওয়া প্রদেশে। স্রেফ বীরত্ব চরিতার্থ করবার জন্যেই প্রতিবেশী গোত্রগুলোর মানুষের মাথা কেটে নেওয়ার একটি বাজে অভ্যাস ছিল তাদের। ব্রিটিশরাও পাহাড়ি এই জাতির সাথে যুদ্ধের বদলে ওয়াদেরকে নিজেদের মতো থাকতে দেওয়াটাই শ্রেয় মনে করে। কিন্তু বার্মার সামরিক জান্তাদের আমলে বেঁধে গেলো যুদ্ধ। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত চলা এই যুদ্ধে দু'পক্ষেরই বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। শেষমেষ বর্মী জান্তাও ব্রিটিশদের পন্থা অনুসরণ করলো। মায়ানমার সরকার ওয়াদেরকে ১৭ হাজার বর্গ কিলোমিটারের একটি পার্বত্য জমি ছেড়ে দেয়। যদিও কাগজে-কলমে মায়ানমারের অধীনে। ওয়া পাহাড়গুলো পপি চাষের জন্য অতি উত্তম। কাজেই ওয়ারা ঝুঁকে আফিম আর হেরোইন উৎপাদনের সাথে। পরে চীন, থাইল্যান্ড বা যুক্তরাষ্ট্রের চাপে পড়ে হেরোইন উৎপাদন বন্ধ হয়। কিন্তু ওয়ারা হেরোইন উৎপাদন বাতিল করলো বটে, কিন্তু তার জায়গা দখল করে নিল ইয়াবা। ওয়াদের সেনাদল এখন মাদক কারবারী দল হিসেবে পরিচিত।
তথ্য-২৯৬ ▌একাকীত্বে নারী :
শিক্ষিত অশিক্ষিত প্রায় সব পুরুষই এখনও নারীকে ঘরের কোনে দেখতেই পছন্দ করেন। তাহলে এই যে এত পড়াশুনা, এত বিদ্যালয়, এত শিল্প সংস্কৃতি, আচার সবকিছুই কি তাহলে বৃথা? এমনি এক আবদ্ধ সমাজে নারীরা কেবলি একা হয়ে যাচ্ছে; গুটিয়ে যাচ্ছে। নারীদরকে কোনঠাসা করে দেয়ার পায়তারা চলছে প্রতিনিয়ত। নির্যাতন করে হোক, মুখের ভাষায় হোক, তাদের আঁটকে দেয়ার আয়োজন চলছে ঘরে ও বাইরে। এই সমাজে একজন নারীর মনের কথা শোনার মত কোন পরিবেশ নাই, কোন বন্ধু নাই। কোন সামাজিক সংগঠন নাই। পরিবারে যেমন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর্মস্থল সব জায়গাতেই একই অবস্থা। নারী আজ প্রেমিকের কাছেও নিরাপদ নয়। চাপের মাঝে থাকায় নারীরা ক্রমশ বন্ধুহীন হয়ে পড়ছে। একা চলা নারীর জন্য প্রতি পদে রয়েছে কাঁটা বিছানো। এ যেন নারী তুই জন্মালি কেন, এটাই তোর পাপ। বাইরের আলো তুমি সইতে পারবে না। সে আলো তোমার জন্য নয়-ভাবতে ভাবতেই একজন নারী আবারও একাকীত্বের মাঝেই ডুবে যায়!
তথ্য-২৯৭ ▌সুস্থ সম্পর্কের শর্ত:
দাম্পত্যকে আমরা এতোটাই আটপৌরে করে ফেলি যে, কেবল নিয়ম করে শুতে পারলেই আমরা বলি, সুখে আছি। আমরা বাইরে যাওয়ার জন্য নিজেকে সুবাসিত করি, ভালো পোষাক পরি, তুমুল সাজি। অথচ ভালোবাসাবাসি বলার সময় সঙ্গীর কাছে যাই- গা ভর্তি গন্ধ নিয়ে, ছাপা ওঠে যাওয়া পোশাক পরে। আর খাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়ি। এভাবে একদিন আমাদের প্রেমও চিরতরে ঘুমিয়ে পড়ে। দুজন মানুষ একসাথে পথ হাঁটবে বলে আমি থেকে আমরা হই। অথচ, কোন ফাঁকে সে দুজন মানুষ আবার আমরা থেকে আমি হয়ে যাই, নিজেরাও টের পাই না। সংসারের চাপে, বাচ্চা পালতে গিয়ে, বাজার সদাইয়ের ভীড়ে প্রেমই যদি হারিয়ে যায়। একটাই এই ছোট্ট জীবন ভালোবাসার। এই ভালোবাসাটুকু বাঁচিয়ে রাখার জন্য কিছুটা মনোযোগ, কিছুটা প্রায়োরিটি প্রতিটি স¤পর্ক দাবী করে। একটু ছোঁয়া, একটু ঘন হয়ে বসা, একটু খুনসুটি, একটু চোখে চোখে কথা বলা, একটু খোলা হাওয়া লাগানোর ¯েপস রাখতেই হয় স¤পর্কে। প্রায়োরিটি, প্রাইভেসি, সম্মান, মনোযোগ সুস্থ স¤পর্কের শর্ত।
তথ্য-২৯৮ ▌চীনাদের পিএইচডি ও বুয়েট :
কেন চীন ভারতের চেয়ে বেশি উন্নতি করছে, তা নিয়ে কেমব্রিজের গবেষক জানুস সোহু লিখেছেন, চীন তাদের প্রবাসী কৃতী গবেষক, বিজ্ঞানী, পন্ডিতদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য নানা রকমের অত্যন্ত আকর্ষণীয় উদ্যোগ নেয়। যে প্রবাসী চীনাদের পিএইচডি আছে, চীনে ফেরার জন্য তাঁদের প্রথমে দেওয়া হয় প্রায় এক কোটি ত্রিশ লাখ টাকা। ফলে অক্সর্ফোড- কেমব্রিজে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের দেখা যায়, পড়াশোনা শেষ করে তাঁরা বিলেতে স্থায়ী হয়ে যান। আর চীনারা দেশে ফিরে গিয়ে দেশের জন্য কাজ করেন। বাংলাদেশের ৫০০ জন ছাত্র যদি বুয়েট থেকে বের হয়, তাদের ৪০০ জনই বিদেশে থাকে। যাঁরা উচ্চশিক্ষিত, কিংবা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে আসেন, তারা দেশে কোনো দিন ফিরে যাবেন -এই স্বপ্ন কখনো লালন করেন না। একটা সময়ে আমরা দেখেছি, বহু স্কলার বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। এখনো কিন্তু সার্বিকভাবে সেই সংখ্যাটা কম। আবার দেশে অঢেল টাকাকড়ি হয়েছে এমন মানুষেরা তাঁদের স্ত্রী-সন্তানদের বিদেশে রেখেছেন, তারা দেশ থেকে আনা টাকায় আরামেই থাকেন।
তথ্য-২৯৯ ▌সিস্টেমের কাছে জিম্মি জাতি :
পুরো পৃথিবীর ৪০ ভাগ মেডিক্যাল ট্যুরিস্টদের গন্তব্যস্থল থাইল্যান্ড। সেখানকার ২৫৬টি প্রাইভেট মেডিক্যাল হাসপাতালের বেশিরভাগই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। চিকিৎসাসেবা অত্যাধুনিক, অতিদ্রুত ও তুলনামূলক বেশ সস্তা। ইউরোপের সমমানের চিকিৎসা অথচ খরচ ৫০ থেকে ৬০ ভাগ কম। ডাক্তার, নার্সদের ব্যবহার অস্বাভাবিক ভালো। তাই বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লোকজন ছুটছেন থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিতে। থাই সরকার শুধু মেডিক্যাল সেবা নয়, মেডিক্যাল প্রযুক্তি, ওষুধ, বিকল্প চিকিৎসা, বায়োটেকনোলজি ইত্যাদির উন্নয়নের মাধ্যমে থাইল্যান্ডকে এশিয়ার মেডিক্যাল হাব বানাতে চাইছে। আমরা সবক্ষেত্রে শুধুমাত্র ডাক্তারদের দায়ী করছি। কিন্তু বুঝতে হবে তারা একটি সিস্টেমের অংশমাত্র, অনে কক্ষেত্রে তাদেরও করণীয় কিছু থাকে না। অনেকেই একপর্যায়ে জিম্মি হয়ে পড়েন সিস্টেমের কাছে। বাংলাদেশে সব পেশায় এরকম ঘটছে। অনেক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিজের কর্মক্ষেত্র ফেলে সারা দিন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে থাকেন।
তথ্য-৩০০ ▌ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক সংগ্রাম :
বিশ্বের ভিক্ষুকদের ক্লাব হিসেবে পরিচিত ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হতে ঘানা, ভিয়েতনাম ও জিম্বাবুয়ের মতো কিছু দেশ, তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় থাকা সত্ত্বেও। ভিয়েতনামের নজিরটি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উপনিবেশ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণাকারী ভিয়েতনামকে ১৯৪৫ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত যুদ্ধে নামতে বাধ্য করেছিল ফ্রান্স। কিন্তু ১৯৫৪ সালে ফ্রান্সকে পরাজিত করেও আবার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসনের শিকার হতে হয়েছিল সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনামকে। ২১ বছরের প্রতিরোধ যুদ্ধে তারা মার্কিনদের পলায়নে বাধ্য করেছিল ১৯৭৫ সালে। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত ভিয়েতনাম কখনই জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত হতে আবেদন করেনি। ভিয়েতনামের জনগণের মাথাপিছু জিডিপি ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু জিডিপির চেয়ে কম ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের প্রকাশিত ইউএনডিপি, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ভিয়েতনামের মাথাপিছু জিডিপি বাংলাদেশের দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে।