এখানে দুইটি অধ্যায় দেয়া হয়েছে।প্রথম অধ্যায় ৫০ টি আদব কায়দা ও নৈতিকতা" এবং দ্বিতীয় অধ্যায় "প্রযুক্তি ও ৪র্থ শিল্প বিপ্লব" পড়ে একত্রে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
প্রথম অধ্যায়
৫০ টি আদব কায়দা ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উত্তর প্রতিযোগিতা
খাবারের চারটি নিয়ম মেনে চলুন -
১। লবণ, চিনি মেশানো ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার, আলু, রুটি, ভাত, তেল, ঘি, চর্বি ইত্যাদি যতটা সম্ভব কম খাবেন, শাক-সবজি, ফলমূল লাইভফুড বেশি খাবেন। একটি ছোট প্লেটে ভাতের চেয়ে সবজি বা তরিতরকারি বেশি নিয়ে একটি ছোট চামচের মাধ্যমে খাবেন অতি ধীরে ধীরে কচ্ছপের গতিতে। হাত থেকে খাবারের দূরত্ব বজায় রাখবেন। হাত ভালোভাবে ওয়াশ না করে কোনো খাবারই হাত দিয়ে ধরবেন না।
২। মুখ বন্ধ করে খাবার ছিবাবেন, খাবারের সময় কারো সাথে বা মোবাইলে কথা বললে মুখের লালা তিন ফুট পর্যন্ত চারদিকে ছড়াতে থাকে; যা খালি চোখে দেখা যায় না। এতে একজনের রোগ জীবাণু অন্যজনের পেটে যায়।
৩। দিনের তিন বেলা খাবারকে ৬ থেকে ১০ ভাগে ভাগ করে খাবেন, দিনে দু’ঘন্টার বেশি না খেয়ে থাকবেন না, অন্তত পানি হলেও খেতে হবে। সন্ধ্যার পর বা রাতে শুধুমাত্র পানি ছাড়া সকল খাবার গ্রহণ ১৩ থেকে ১৬ ঘন্টা বন্ধ রাখুন।
৪। ডেড ফুড ও প্রসেস ফুড কম খাবেন। খাবারের সময় বা খাবারের পর পর পানি খাবেন না, অন্তত খাবারের আধা ঘন্টা পরে খাবেন। ক্ষিধে না লাগলে কেউ জোর করলেও খাবেন না।
মলত্যাগের নিয়ম:-সপ্তাহে তিনবার থেকে দিনে তিনবার মলত্যাগ করাটা আদর্শ। যখন একজন ব্যক্তির মলত্যাগ কম হয়, তখন মল তাদের অন্ত্রে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকে। ফলে তাদের অন্ত্রের জীবাণুগুলো তাজা খাবার পায় না,– তাই তারা ফাইবার এবং কার্বোহাইড্রেট খাওয়া থেকে প্রোটিন খাওয়ার দিকে চলে যায়। এতে ক্ষতিকর টক্সিন তৈরি হয়, যা রক্তে মিশে কিডনি ও হৃদযন্ত্রের মতো বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। ফল ও শাক সবজিতে আছে ফাইবার। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ও পর্যপ্ত পানি পানে নিয়মিত মলত্যাগ হয়।
গোসলের নিয়ম:-শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা বাইরের পানির তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগে। তাই প্রথমেই মাথায় পানি দিলে সঙ্গে সঙ্গে রক্তসঞ্চালনের গতি বহু গুণ বেড়ে যায়। ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ও মস্তিষ্কের ধমনি ছিঁড়ে যেতে পারে। এজন্য স্ট্রোক সাধারণত বাথরুমেই বেশি হয়। প্রথমে পায়ের পাতা ভেজাতে হবে। এরপর ওপর দিকে কাঁধ পর্যন্ত তারপর মুখ, সবার শেষে মাথা। দুই বা তিন দিন পরপর গোসল করা স্বাস্থ্যসম্মত। অন্যসময় গামছা /তোয়ালে দিয়ে বগল এবং কুচকি মুছে সংক্ষিপ্ত গোসল হতে পারে। প্রতিদিন সাবান বা শাওয়ার জেল ব্যবহার করবেন না। আমাদের ত্বক থেকে এক ধরনের তেল নিঃসরিত হয়, যা ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল রাখে। এ ছাড়াও ত্বকের বাইরের স্তরে কয়েক ধরনের স্বাস্থ্যকর জীবাণু থাকে। যারা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে এবং শরীরে প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে। সাবান বা জেল ব্যবহারে ত্বকের নিঃসরিত তেল এবং ভালো জীবাণুও পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে ত্বক উজ্জ্বলতা হারায়।
ঘুমের নিয়ম:-মন-মেজাজ ভালো রাখার সঙ্গে শরীর ও মনকে কার্যকর রাখতে পরিমিত ঘুম দরকার। রাত ১০টা-১১টার মধ্যে শুয়ে পড়া এবং ভোর ৫টা-৭টার মধ্যে ওঠা স্বাস্থ্যসম্মত। শিশু (৬-১৩ বছর): ৯-১১ ঘন্টা; কিশোর (১৪-১৭ বছর): ৮-১০ ঘন্টা; এবং প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৬৫ বছর): ৭-৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। শোবার ঘর অন্ধকার এবং শান্ত হওয়া উচিত। শক্ত ও নরমের মাঝামাঝি গদি এবং নরম বালিশ ব্যবহার করুন। পিঠ বা বাঁ দিকে ফিরে শোয়া সর্বোত্তম; উপুড় বা পেটের উপর নয়। প্রস্রাবের বেগ এড়াতে ঘুমের ১ ঘন্টা আগে পানি কম পান করুন। ঘুম না এলে উঠে বই পড়ুন। সন্ধ্যার পর হাটা বা জগিং কিংবা ব্যায়াম করা উচিত নয়। দুপুরে ১০-২০ মিনিট হালকা ঘুমিয়ে নিতে পারেন।
১। কোনো কিছু চাওয়ার সময় ‘দয়া করে’ বলতে হবে এবং কোনো কিছু পাওয়ার সময় ‘ধন্যবাদ’। যে কোনো ভুলের জন্য নিঃসংকোচে ‘দুঃখিত’ বলতে হবে। কারো অনুমতি নেওয়ার আগে ‘আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি’ বলতে হবে।
২। যে কারও ঘরে প্রবেশ করার আগে দরজায় কড়া নাড়ানো এবং অনুমতি চেয়ে নিতে হবে। নিজেদের নয় এমন কোনও জিনিসে, এমনকি তার মা-বাবার জিনিসেও হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই তাদের অনুমতি নিতে হবে। অন্যের জিনিসকে নিজের দামী জিনিসের মতো ভেবে, যত্ন করে রাখতে হবে।
৩। সব সময় রাস্তার ডান পাশ দিয়ে হাঁটতে হবে। মোবাইল ব্যবহার, গান শোনা, বা অন্য কোন কিছুতে মনোযোগ দিয়ে হাঁটা থেকে বিরত থাকতে হবে। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে বাঁক বা মোড়ের রাস্তা ব্যাবহার করবেন না। রাস্তায় খেলা করা বা দৌড়াদৌড়ি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেউ আপনার দিকে আসছেন দেখে তার দিকে তাকিয়ে থাকা অভদ্রতা।
৪। যত অল্প খাবারই হোক না কেন, খাবারগুলি অপরের সাথে ভাগ করে নেবার অভ্যাস চর্চা করতে হবে। কখনো একা খাবেন না। যখন কোনো আত্মীয় বা বন্ধুদের বাড়িতে যাবেন, তখন সেখানে শান্ত, ভদ্র এবং নম্র হয়ে থাকবেন। তাদের পরিবেশিত খাবারের উপর কোনো খুঁতখুঁতে ভাব দেখাবেন না এবং আপনার পছন্দের খাবারের কথা বলবেন না।
৫। কেউ যদি আপনাকে খাওয়াতে নিয়ে যায় তবে অল্পদামি কোনো খাবার বাছাই করুন। ছুরি ডান হাতে এবং চামচ বা কাঁটা চামচ থাকবে বাম হাতে। স্যুপ গরম হলে তাতে ফুঁ না দিয়ে চামচ দিয়ে নেড়ে ঠাণ্ড্া করুন। পাস্তা, নুডলস, কাঁটা চামচ দিয়ে খেতে হয়।
৬। হাঁচি বা কাশির সময় বা হাই তোলার সময় মুখ হাত দিয়ে চাপা দিতে হবে। কারো সামনে নাকে,গালে, মুখে হাত দেওয়া বা খোঁটা থেকে বিরত থাকতে হবে। কথা বলার সময় হাত দিয়ে মুখ ঢাকার অর্থ আপনি নার্ভাস।
৭। যে কেউ ঘরে প্রবেশ করার সময় বা বের হবার সময় দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে বা হাতলটা টেনে ধরে ঢুকতে/বেরুতে সাহায্য করতে হবে। অতিথি যাবার সময় অবশ্যই বাড়ির গেট পর্যন্ত এগিয়ে দেয়া এবং তিনি অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা উচিত।
৮। কারো সাথে পরিচয় হওয়া মাত্রই তার গ্রামের বাড়ি বা ব্যক্তিগত পরিচয় জানতে চাওয়া মূর্খতা ও অভদ্রতা। নিজে থেকে না বললে কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে জানতে চাওয়া বা আলোচনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় ও সমস্যাদি শেয়ার করবেন না।
৯। কোনো কক্ষে প্রবেশের সময় সবাইকে সালাম। কাউকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় তার স¤পর্কে ছোট একটা কথা যোগ করে দিন। ইনি আমার ভাই/বন্ধু রাসেদ, ও ভাল ক্রিকেট খেলে..। যখন কোন ব্যক্তি কক্ষে প্রবেশ করে, সে প্রথম বসে থাকা মানুষটার দিকে হাত বাড়াবে এবং বসে থাকা মানুষটি দাঁড়িয়ে হাত মেলাবে। বসে থেকে হাত মেলালে অভদ্রতা।
১০। রেস্তোরাঁ বা বাড়ীতে নিজের খাবারের ওয়েস্টিজ নিজেই ডাস্টবিনে ফেলবেন। অন্যের ওয়েস্টিজও নিজের মনে করে সংরক্ষণ করে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। আপনার ওয়েস্টিজ ও প্লেট অন্য কেউ পরিষ্কার করাটা অসভ্যতা।
১১। কখনো কাউকে কাজের লোক বা বুয়া বলে ডাকা যাবে না। মনে রাখতে হবে তারাও কারো না কারো ভাই, বোন, মা, বাবা। তাদেরকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে।
১২। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে বা কোথাও কোনো বয়স্ক ব্যক্তি বা মহিলা চোখে পড়লে, তাকে নিজের বসার স্থানটি ছেড়ে দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা উচিত।
১৩। কোথাও গিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসা, পা নাচিয়ে চলা, হেলাল দিয়ে বাঁকিয়ে বসা কিংবা টেবিলে সামনে ঝুঁকে কারো সাথে কথা বলা অভদ্রতা। এছাড়া ২পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা অতিথির সাথে কথা বলার সময় বা যে-কারো সামনে বসে’ মোবাইল ফোন টিপা কিংবা কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না একা থাকা যাবে।
১৪। অন্যের অনুপস্থিতিতে কখনো তার সমালোচনা করবেন না। এই ধরণের আলাপ আলোচনা থেকে দূরে থাকুন। কেউ অন্যে কারো সমালোচনা করলে আপনি তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে সবার কাছে আপনি সম্মানিত হবেন।
১৫। প্রকাশ্যে চেঁচিয়ে, চিৎকার করে এবং অট্টহাসির সাথে জোরে জোরে কথা বলাটা প্যুয়র মেন্টালিটি বা কাঙ্গালি মানসিকতার লক্ষণ। কারো অগোচরে তার সমালোচনা করা, গোপনে অন্যের ক্ষতি করা, যেমন-আপনি যে-কোন পাবলিক প্লেসে গেলে দেখবেন, সেখানে এটা ভাঙ্গা, উঠা ছিরা বা কাটা; বাথরুম বা কোনো দেওয়ালে এটা ওটা লিখা-আঁকা, কারো বাড়ী বা গাড়ীর দিকে ঢিল মারা ইত্যাদি হলো কাঙ্গালি মানসিকতারই অবদমিত প্রতিক্রিয়া।
১৬। অপরিচিতজনের সঙ্গে কথাবার্তার সময় প্রথমে নিজের পরিচয় দিয়ে আলাপ শুরু করুন। কোনো প্রতিষ্ঠানে গেলে অপরিচিত সবাইকে স্যার, ম্যাম বলে সম্বোধন করা নিয়ম। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের বাইরে সবাইকে ভাইজান / আপামনি / বড়ভাই / ছোটভাই / মামা /আংকেল-আন্টি ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত।
১৭। শিক্ষক ও গুরুজনদের নিয়ে উপহাস/হাসাহাসি করা নিম্ন শ্রেণির বর্বর কাজ। এই আচরণ যারা করে, এমন জঘন্যদের বর্জন করুন। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনসহ চেনা-পরিচিতদের ভাল গুণগুলোর প্রশংসা করতে হবে এবং খাবাপ গুণ বা সমালোচনা এড়িয়ে চলতে হবে।
১৮। পরিবারের সদস্য, আত্মীয় বা অন্য যে-কোনো নারী-পুরুষ, কে কী পোষাক পরেছে, হিজাব না টপলেস, স্কাট না বিকিনি, তা নিয়ে উৎসুখ থাকা এবং মন্দ মন্তব্য করা জঘন্য অপরাধ। কে কি পরবে, তা তার রুচি ও পছন্দের ব্যাপার।
১৯। বাড়িতে অতিথি এলে প্রথমে অতিথিদের ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিন, তার পরে অন্যরুম দেখান। আপনি কোথাও অতিথি হলে আয়োজকের জন্য অপেক্ষা না করে খাবার খাওয়া শুরু করবেন না। আপনার যদি আগে চলে যেতে হয়, তবে অনুমুতি নিন। কারো বাড়িতে অনুমতি না নিয়ে কোন জিনিসে হাত দিবেন না।
২০। কারো মতামতে কিংবা কাজে ভুল ধরা উচিত নয়। এতে তার হীনমনোবৃত্তি দেখা দেয়। তাই কখনো বলবেন না “আপনার কাজ কিছুই হয় নাই।” বরং বলুন- “ঠিক আছে আপনি এভাবে করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয় অন্যভাবে চেষ্টা করা যেতে পারে। যেমন..অর্থাৎ ভুল না ধরে তাকে প্রসংসা ও উৎসাহপূর্ণ পরামর্শ দিন।
২১। কখনো মুখটাকে হাঁড়ি করে রাখা যাবে না। সৌন্দর্য ও নের্তৃত্বের মূল শর্ত হল: মধুর স্বভাব, হাস্যোজ্জ্বল মুখ। তাই রাস্তাঘাটে পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে সৌজন্যমূলক স্মাইল দেয়া শুরু করতে হবে এবং সব সময় স্মাইলির সংগে কথা বলা চর্চা করতে হবে।
২২। নিজে কম বলে অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার অভ্যাস চর্চা করতে হবে। যত বেশি শুনবেন, ততবেশি তথ্য পাবেন। অন্যকে এমন কোনো কথা বলা যাবে না, যাতে সে বিরক্ত হয়ে উঠে। যে কথা বলা দরকার, সেটা বলার আগে মনে মনে কয়েকবার গুছিয়ে নিতে হয়।
২৩। সুন্দর করে কথা বলা এক ধরনের আর্ট। অন্যদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। কথার মাঝে কথা বলা যাবে না। যখন কিছু বলার থাকে না, তখন চুপ করে থাকত হবে। নম্রতার সাথে আন্তরিকতা মিশিয়ে কথা বলা চর্চা করতে হবে।
২৪। কথা বলতে বলতে অযথা বা অপ্রয়োজনীয় তর্কে মেতে উঠবেন না। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে না বাড়িয়ে সে জায়গা থেকে সরে যেতে হবে। তর্কে জেতা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নির্বোধের কথার উত্তর না দেয়াই তার যথার্ত উত্তর।
২৫। অন্যের সঙ্গে ফিসফিস করে বা ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলা যাবে না- যা তৃতীয় জনের পক্ষে বোধগম্য নয়। অনেকের মাঝে যদি কাউকে কিছু একান্তই বলতে হয় তাহলে নিচু স্বরে বা আড়ালে ডেকে নিয়ে বলতে হবে। একাধিকজন উপস্থিত থাকলে মাত্র একজনের সঙ্গে কথা বলা যাবে না, সবার সাথে কম/বেশি কথা বলতে হবে।
২৬। নতুন সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে, তার প্রশ্নের জবাব একলাইনে দেবেন না, ‘কথার হাত-পা বের হবার মত’ কিছু তথ্য বা ঘটনা বলতে হবে। যেমন: আপনি কোথায় থাকেন জানতে চাইলে; এক শব্দে না বলে এভাবে বলবেন- মোহাম্মদপুর, ঈদগাঁ মাঠের পাশে, আমাদের কাছেই জেনেভা ক্যাম্প। অন্য পাশে শিয়া মসজিদ।
২৭। যদি আপনি সামনের মানুষটির সাখে কথা আরো বাড়াতে চান, তাহলে সামনের মানুষটির কথার অংশ তোতা পাখির মত রিপিট করতে হবে। যেমন- এক ব্যক্তি বলল- সে একটা বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরছে। আপনি বলুন: বিয়ে? ব্যক্তি:-হ্যাঁ, আমার মামাত বোনের বিয়ে। আপনি:-মামাত বোন? ব্যক্তি:--হ্যাঁ, সে ডাক্তারি পড়ছে। আপনি:- ও ডাক্তার? এভাবে রিপিট করে করে চালিয়ে যান।
২৮। “সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি” সোজা হয়ে দাঁড়ানোর নিয়ম হল: আপনার কাঁধ কোমর, হাঁট, গোড়ালি একটি সরলরেখায় থাকবে। আর বসে থাকার সময় আপনার ঘাড় সোজা, কাঁধ শিথিল, কনুই চেয়ারের হাতলে,হাঁটু ফ্লোরের সাথে সমকোণে,পায়ের পাতা ফ্লোরের সাথে লাগানো থাকবে।
২৯। ভিন্ন মত এবং অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান ও সহনশীলতা দেখাতে হবে। সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার জন্য বাড়াতে হবে অন্যের সাথে মেশার দক্ষতা। আপনি যতবেশি মানুষের সঙ্গে মিশবেন, ততবেশি আপনার সৌভাগ্যের দরজা খুলে যাবে। সুযোগ মিশুক মানুষের জন্য সর্বদা অপেক্ষামান থাকে।
৩০। কারো সাথে দেখা করতে গেলে খালি হাতে যাবেন না, সে যদি বলেও কিছু লাগবে না, তবুও ছোট কিছু (অন্তত একটা চকলেট কিংবা আপনার খাবারের ছোট্ট একটু অংশ) নিয়ে যান। মাঝে মাঝে প্রিয় মানুষদের কিছু না কিছু উপহার দিন।
৩১। মুড না থাকা অস্বাস্থ্যের লক্ষণ। মুড নেই বলে দরকারি কাজ থেকে হাত গুটিয়ে থাকলে পরে আর মুড আসতে চায় না। এর কারণ, কাজটা না করার জন্য আমাদের ব্রেন অসংখ্য অজুহাত তৈরি করে। ব্রেনের এ অজুহাত বন্ধ করার জন্য ৫ সেকেন্ডের মধ্যেই সচেতন হয়ে যান। নিজেকে বলুন, ইয়েস এক্ষুণি আমি এটা করবো এবং শুরু করে দিন; নয়তো ব্রেনের ড্রেনে পড়ে যাবেন।
৩২। কাউকে এমন কোনো মন্তব্য করতে যাবেন না- যা অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করে। তার কোনো অদক্ষতা, অক্ষমতার প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন না। আক্রমণাত্মক ঠাট্টা মসকারা, কাউকে কটাক্ষ বা ব্যঙ্গক্তি করা বা কাউকে নিয়ে ট্রল করার মধ্যে পরোক্ষভাবে কাউকে অপমান করা হয়।
৩৩। সর্বক্ষেত্রে আমাদের অথেনটিক হতে হবে। অথেনটিক অর্থ হচ্ছে খাঁটি, বিশুদ্ধ, সত্য, প্রকৃত, বিশ্বাসযোগ্য, আসল, নির্ভরযোগ্য, নির্ভেজাল, প্রমাণসিদ্ধ, অকৃত্রিম। যদি কাজে-কর্মে কোনো ভুল হয়ে যায় তবে তা সহজে মেনে নিন এবং স্বীকার করুন। প্রয়োজনে বিনয়ের সঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করুন।
৩৪। নিজের বড়ত্ব জাহির করার জন্য আপনাকে কেউ ছোট করলে রেগে যাবেন না। তবে হাসিমুখে আপনি যে তাদের কথায় আঘাত পেয়েছেন সেটা বুঝিয়ে বলুন। প্রতিনিয়ত যারা আপনাকে অপমানের চেষ্টা করে তাদেরকে নিজ থেকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
৩৫। আপনি মনে মনে হয়তো ভালো কিছু করতে চেয়েছিলেন কিন্তু কথায় ও আচরণে সেটি ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে বা প্রকাশ করতে না পারলে, ফলাফল উল্টো হয়ে যাবে। কোনো বিষয় নিয়ে সঠিক সময়ে নীরব থাকা কিংবা স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে না পারলে সবকিছু আপনার বিরুদ্ধে চলে যাবে। কাজেই আপনি কি করেছেন বা করতে চাইছেন, তার ¯পষ্ট ব্যাখ্যা দিন, মনে মনে রাখবেন না।
৩৬। নিজের ঘরের সব কথা বন্ধুকে বলে দেবেন না। কোনো বিষয় নিয়ে পরিবারের মানুষদের সঙ্গে ঝগড়া হলে তা বন্ধুকে জানাবেন না। এতে আপনার পারিবারিক কলহের কথা সবাই জেনে যাবে। আপনাদের অর্থনৈতিক অবস্থা, অস্বচ্ছলতার কথা বন্ধুকে জানিয়ে নিজেকে ছোট করবেন না। কিন্তু কেউ যখন কোনো গোপন বিষয় আপনাকে জানায়, তা নিজ দায়িত্বে গোপন রাখুন।
৩৭। শরীরকে যা খাওয়ানো হয়, শরীর তেমনটি হয়ে ওঠে। অনুরূপ মনকে যে খোরাক দেওয়া হয়, মনও তেমন হয়ে ওঠে। মনের খোরাক হচ্ছে, ভাল বই, জ্ঞানী ব্যক্তি, ভাল চ্যানেল ইত্যাদি। আপনি যদি কিছুদিন হতাশাবাদী মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেন, তাহলে আপনিও হতাশাস্থ মানুষ হয়ে যাবেন।
৩৮। অন্যের কাছে নিজের দক্ষতা জাহির করতে সবকিছু জানার ভান করে চুপ থাকবেন না। যে ব্যক্তি প্রশ্ন করে কিছু জানতে চায়, সে বোকা থাকে পাঁচ মিনিটের জন্য, আর যে জানার ভান করে প্রশ্ন করে না, সে বোকা থাকে সারা জীবন।
৩৯। কোন কাজ তাড়াহুড়া করে স্বল্প সময়ের মধ্যে করে ফেলার চেষ্টা করা ঠিক নয়। কাজের সংখ্যা নয়, কাজের মানই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাড়াহুড়া বিপদের কারন।
৪০। রাগের সময় অনেক বেফাস কথাও মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে; যা সর্বনাশ ডেকে আনে। জিহ্বার উপর কড়া শাসন চালান। রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।
৪১। প্রতিশ্রুতি দিলে তা যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে। অপারগতায় ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। চরিত্রবান ব্যক্তিরা একবার কথা দিলে তা যত তুচ্ছ বা কঠিন হোক তা পালন করবেই।
৪২। আপনি পোশাক যদি পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি না হন, তাহলে বহুক্ষেত্রে আপনাকে অবমূল্যায়িত হতে হবে, যা কার্যসিদ্ধিতে সহায়ক হবে না।
৪৩। কোনো প্রয়োজনে কোথাও গেছেন, সেখানে সালাম দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা ভদ্রতা। বসতে আনুমতি চাওয়া, খুব সংক্ষেপে আপনার প্রয়োজন তুলে ধরা, প্রশ্নের সঠিক জবার দেয়া ইত্যাদি ভদ্রতা ও সভ্য আচরণের অংশ।
৪৪। প্রতিযোগিতায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্য প্রতিযোগিতাকে প্রতিহিংসায় পরিণত করা যাবে না। কারো সঙ্গে অন্যায় করে, শত্রুতা করে বা জোর করে আসন ছিনিয়ে নিলে, সে হয় ছিনতাইকারী প্রতিযোগী নয়।
৪৫। নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস হচ্ছে আত্মনির্ভরশীলতা। অপরের উপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল হলে, তাতে সম্পর্কের আসল আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যায়। কারণ আপনার কাছে যা নির্ভরশীলতা, অপরজনের কাছে তা-ই বাড়তি দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব সামলানো তার বোঝা হয়ে দাঁডায়।
৪৬। পড়তে পড়তে যখনই আপনার খুব ঘুম লাগবে, তখনই বিরতি দিন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করুন এবং মুখ ধুয়ে নিন। প্রতি ২০ মিনিটে মোবাইল বা কম্পিউটারের পর্দা থেকে দূরে সরে চোখকে বিশ্রাম দিন।
৪৭। কোকের ক্যানে বা এনার্জি ড্রিংকসে প্রচুর চিনি থাকে। যা দেহে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এনার্জি ড্রিংকসে থাকা ‘টাউরিন’ ও কোমল পানীয়ের ‘অ্যাসিড লোড’ হিসেবে কাজ করে। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিডিটির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
৪৮। দ্বিতীয়বার রিং হওয়ার পরেও যদি কল না ধরে তবে কল কেটে দিন। যদি অপরিচিত কাউকে কল দেন, তাহলে আপনার পুরো নাম/পরিচয়টা প্রথমে বলুন।
৪৯। কাছের লোকজনের প্রতি প্রতিদিন আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। তাঁদের সান্নিধ্যে থাকা অবস্থায় কিছুতেই অন্যমনস্ক হওয়া যাবে না।
৫০। যত বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন, ভাল ভাল খাবেন, ততবেশি দেখা দেবে লাইফস্টাইল অসুখ।
প্রকৃতিক সাধারণ জীবন যাপন চর্চা ও অভ্যাস করুন।
দ্বিতীয় অধ্যায়
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে প্রশ্ন উত্তর প্রতিযোগিতা
প্রযুক্তি ও ৪র্থ শিল্প বিপ্লব
স্টেম এডুকেশন কি?
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে শিক্ষার যে ধরণটি এগিয়ে যাচ্ছে, সেটি হলো স্টেম এডুকেশন। সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যাথেম্যাটিকস - এই চারটি বিষয়ের আদ্যক্ষর মিলিয়ে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে স্টেম এডুকেশন। উন্নত দেশগুলো মনে করছে, ভবিষ্যতে তাদের দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে হলে স্টেম এডুকেশন অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। যেসব দেশ স্টেম এডুকেশনের উপর জোর দেবে তারাই ভবিষ্যতে এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব কি?
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হলো আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচলিত উৎপাদন এবং শিল্প ব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণের একটি চলমান প্রক্রিয়া।
অটোমেশনের ফলে কি কি সমস্যা হতে পারে?
বাংলাদেশ পোশাক শিল্প যদি অটোমেশনে চলে যায়, তাহলে বিশাল এক জনগোষ্ঠী কাজ হারাবে। চীন ও জাপানে ইতোমধ্যে কিছু পোশাক কারখানা অটোমেশনে চলে গেছে। সমীক্ষার তথ্য: ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ৪৬টি দেশে ৮০ কোটি কর্মসংস্থান দখল করবে এআই চালিত অটোমেশনে।
Re-skilling I Up-skilling কেন করা দরকার?
এআই চালিত অটোমেশনে নতুন কাজের সুযোগ পেতে আমাদের বর্তমান কর্মীবাহিনীকে পুনরায় রিস্কিলিং বা নতুন দক্ষতার প্রয়োজন হবে। আবার কর্মচারীদের স্থানচ্যুতির মতো উদ্যোগ মোকাবেলা করার জন্য আপস্কিলিং (বিশেষ দক্ষতা বাড়ানো)-এর বিকল্প থাকবে না।
কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে IOT ব্যবহার করা হয়ে থাকে?
আইওটি বা IOT মানে হলো Internet of things আপনার দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্রকে আপনার স্মার্ট ফোনের সাথে কানেক্ট করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার নাম আইওটি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে যেকোনো শিল্প কারখানায় এ ধরনের স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের ব্যবহার বেড়ে যাবে। ফলে মোবাইল দিয়ে নিয়ন্ত্রণ ও কাজ করা যাবে।
গ্রাফিন কি
গ্রাফিন হল এক ধরনের কার্বন, এই পদার্থগুলো এত পাতলা যে এগুলোর পুরুত্ব নেই বললেই চলে। তাই এগুলোকে দ্বিমাত্রিক পদার্থ বলা হয়। এটি নমনীয় এবং স্বচ্ছ। এটি ই¯পাতের তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী এবং অনেক হালকা। অর্থাৎ একে ভাঙ্গা অনেক কঠিন, এবং এর ওজন নেই বললেই চলে। তাছাড়া সবচেয়ে ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী। বর্তমানে গাড়ি, উড়োজাহাজসহ অনেককিছুতে গ্রাফিন ব্যবহারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ন্যানো-প্রযুক্তি কি?
ন্যানোপ্রযুক্তি বা ন্যানো ট্যাকনোলজি হলো পদার্থকে আণবিক পর্যায়ে পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ করার বিদ্যা। একে সংক্ষেপে ন্যানো টেক বলা হয়। ধাতব এ বস্তুকে সূক্ষভাবে কাজে লাগিয়ে যে পদ্ধতিতে টেকসই ও স্থায়ী ডিভাইস উৎপন্ন করে তাকে ন্যানো-প্রযুক্তি বলে।
ন্যানোমিটার কি?
১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগকে বলা হয় ১ ন্যানোমিটার। একটি চুলের ব্যাস হচ্ছে এক লক্ষ ন্যানোমিটার এবং পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট ব্যাকটেরিয়ার আকার ২০০ ন্যানোমিটার। আমাদের ডিএনএ অণুর ব্যাস প্রায় দুই ন্যানোমিটার।
ন্যানো পার্টিকেল কি?
যে সকল কণার দৈর্ঘ্য ১-১০০ হস সেগুলোকে ন্যানো পার্টিকেল বলে। এটি ক্ষুদ্রাকৃতির (ত্রিমাত্রিক) কণা। ন্যানো পার্টিকেল দিয়ে যে কোনো ধরনের পদার্থ তৈরি করা সম্ভব।
কার্বন ন্যানোটিউব কি?
কার্বন ন্যানোটিউব হচ্ছে সিলিন্ডার আকৃতির ফুলারিন। সাধারণ স্টিলের চেয়ে সিলিন্ডার ন্যানোটিউব এক হাজার গুণ বেশি মজবুত এবং প্রায় ৬ গুণ হালকা।
ন্যানো রোবট কি?
একটি অতি ক্ষুদ্র মেশিন, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জটিল কাজ করতে সক্ষম। সেই রোবটকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করিয়ে আমাদের রক্তে বা শরীরের কলকব্জায় যেসব সমস্যা আছে, তা এই রোবট ঠিক করে দিচ্ছে। তার মানে ভবিষ্যতে কোনো রোগ সারানোর জন্য হয়তো ওষুধ খেতে হবে না, বা অস্ত্রপচারও করতে হবে না।
বায়োটেকনোলজি কি?
বায়োটেকনোলজি বা জৈবপ্রযুক্তি হলো জীবদের ব্যবহার করার মাধ্যমে মানুষের জন্য কল্যাণকর ও ব্যবহারযোগ্য প্রয়োজনীয় মালামাল তৈরির বিশেষ প্রযুক্তি। এটি বিশেষ করে কৃষি, খাদ্য বিজ্ঞান, এবং ঔষধশিল্পে ব্যবহৃত হয়।
গোল্ড বায়োটেকনোলজি কি?
এই জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার করে জীববিজ্ঞানের সমস্যাগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করা যায় কম্পিউটারের প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
ব্লু বায়োটেকনোলজি কি?
মূলত সামুদ্রিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্র।
গ্রিন বায়োটেকনোলজি কি?
এই জৈবপ্রযুক্তি কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। যেমন- মাইক্রোপ্রোপাগেশনের মাধ্যমে একসাথে অনেক উদ্ভিদ উৎপন্ন করা যায়।
রেড বায়োটেকনোলজি কি?
চিকিৎসা শাস্ত্র এবং ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার। যেমন- টিকা ও অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি, বিভিন্ন থেরাপি, কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি, কৃত্রিম হরমোন তৈরি, স্টেম কোষ তৈরি।
হোয়াইট বায়োটেকনোলজি কি?
এই প্রযুক্তি শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। যেমন- বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ তৈরি এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ধ্বংস করা হয়।
ইয়োলো বায়োটেকনোলজি কি?
খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তি। যেমন- গাঁজন পদ্ধতিতে ওয়াইন, পনির, বিয়ার প্রভৃতি উৎপাদন।
গ্রে বায়োটেকনোলজি কি?
পরিবেশে প্রয়োগকৃত জৈবপ্রযুক্তি। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং পরিবেশ দূষণ দূর করাই এর প্রধান লক্ষ্য।
ব্রাউন বায়োটেকনোলজি কি?
শুষ্ক বা মরুভূমি এলাকার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তি। এক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বীজ উৎপাদন করা হয় যা কঠিন প্রাকৃতিক সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে সক্ষম।
ভায়োলেট বায়োটেকনোলজি কি?
এই ক্ষেত্রটি জৈবপ্রযুক্তির আইনি, নৈতিক এবং দার্শনিক দিকগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত।
ডার্ক বায়োটেকনোলজি কি?
সন্ত্রাসবাদে জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার, জীবাণু অস্ত্র তৈরি এই শাখার অন্তর্গত। যেমন- অণুজীব বা বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করে মানুষ, গবাদি পশু বা ফসলের রোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষতি সাধন করা।
জীবপ্রযুক্তির কতিপয় ব্যবহার কি কি?
*টিস্যু কালচার পদ্ধতি *জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও DNA প্রযুক্তি
টিস্যুকালচার পদ্ধতি কি?
কৃত্রিম পুষ্টির মাধ্যমে মাতৃদেহ থেকে বিচ্ছিন্নকৃত টিস্যুকে আবাদ করার অর্থাৎ বর্ধন ও বিকাশের পদ্ধতিকে টিস্যুকালচার বলে। এই পদ্ধতিতে কোষ থেকে তৈরি উদ্ভিদ চারার বৈশিষ্ট্য হলো রোগমুক্ত থাকা। অতি ক্ষুদ্র টিস্যু থেকে বহু চারা উৎপাদনের পদ্ধতি এটি।
ডিএনএ (DNA) কি
ডিএনএ হলো একটি অণু যা কোনও জীবের বিকাশ, বাঁচতে এবং পুনরায় উৎপাদন করার প্রয়োজনীয় সেল। এই সেল কোষের ভিতরে পাওয়া যায় এবং এর মাধ্যমে পিতামাতাদের কিছু বৈশিষ্ট্য তাদের বাচ্চাদের কাছে আসে। অর্থাৎ উঘঅ হলো বংশগতির ধারক ও বাহক।
জিন কি?
জিনগুলি ডিএনএর সংক্ষিপ্ত বিভাগ। জিনগুলি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের জন্য কানের আকার বা চোখের রঙের মতো তথ্য বহন করে।
রিকম্বিনেন্ট DNA কি?
যে কৌশল অবলম্বন করে এক জীবের কোষ থেকে অন্য জিবে ডিএনএ হস্তান্তর করা হয় তাদেরকে রিকম্বিনেন্ট DNA প্রযুক্তি বলে।
ব্লকচেইন কি ?
ডেটা স্টোর করার জন্য সব থেকে নিরাপদ একটি স্থান হল ব্লক চেন। যা কেউ নষ্ট ও হ্যাক করতে পারবে না। বিটকয়েন বা অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি এই ব্লকচেন টেকনোলজির উপর নির্ভর করে কাজ করে। ব্লকচেইন অর্থ হচ্ছে ব্লক দিয়ে তৈরি চেইন। ব্লকগুলো মূলত তথ্য সংরক্ষণ করে। এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত। নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কোনো তথ্য অনেকগুলি ব্লকে রাখা হয়, যে ব্লগগুলো একে অপরের সঙ্গে কানেক্ট থাকার ফলে এর ডাটা পরিবর্তন বা হ্যাক করা অসম্ভব। কারণ যদি কোনো ব্লকের ডাটা পরিবর্তন হয়, তাহলে অন্যান্য হাজারো ব্লক সেটাকে তার লেজারে নিতে পারে না।
ব্লক কি দিয়ে তৈরি হয়?
প্রত্যেকটি ব্লক তিনটি জিনিস দিয়ে তৈরি হয়। ১) ডাটা: এখানে যে তথ্যগুলো সংগ্রিহত হয়। যেমন-আপনি কাউকে যদি কোন তথ্য পাঠাতে চান তাহলে এখানে আপনার ঠিকানা সংরক্ষিত থাকে আর যাকে পাঠাবেন তার ঠিকানা সংরক্ষিত থাকবে এবং যে পরিমাণ তথ্য বা অ্যামাউন্ট পাঠাবেন সেটি সংরক্ষিত থাকে। অনেকটাা ইমেইল এর মত। ২) হ্যাশ : এটি হচ্ছে প্রত্যেকটি ব্লকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট। এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট একটি কোডের মাধ্যমে থাকে। ৩) হ্যাশ অব দি প্রিবিয়াস ব্লক: এটির কাজ হচ্ছে প্রত্যেকটি ব্লক তার পেছনের ব্লকের হ্যাশ বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংরক্ষণ করে রাখবে।
ব্লকচেইন প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ কি?
ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি অসংখ্য সেক্টরগুলোতে ব্যবহার হবে। যেমন-ব্যাংকিং এবং বীমা সেক্টর, সাইবার নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, তথ্য প্রযুক্তি এবং তথ্য ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা, ডেটা স্টোরেজ এবং ডেটা ট্রান্সফার, জমির হিসাব, গোয়েন্দা ব্যুরো ইত্যাদি। আশা করা যায় আগামী বিশ্বে হয়তো আমরা সম্পূর্ণ ব্লকচেইন টেকনোলজি ছাড়া চলতে পারব না।
ক্রিপ্টো কারেন্সি কি?
ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ধরনের স্ব নিরাপদ ও লুকায়িত মুদ্রা। এর অস্তিত্ত্ব শুধু ইন্টারনেট জগতেই আছে। যার পুরো কার্যক্রম ক্রিপ্টগ্রাফি নামক একটি সুরক্ষিত প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। এতে তৃতীয় পক্ষের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই কে কার কাছে এই ডিজিটাল মুদ্রা বিনিময় করছে তা অন্য কেউ জানতে পারে না। তবে এর এনক্রিপটেড লেজার সব লেনদেনকে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়া থেকে নিয়ন্ত্রণ করে। ক্রিপ্টোকারেন্সির ভ্যালুর উপর কোনো দেশের সরকারেই হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা নেই। তাই পৃথিবীর অনেক দেশেই এ ডিজিটাল মুদ্রার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, লাইটকয়েন ও অন্যান্য ১৫০০-এর বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে।
ব্রেইন মেশিন ইন্টারফেস কি?
নিউরালিংক একটি ব্রেইন-মেশিন ইন্টারফেস তৈরি করেছে। তাদের আবিষ্কৃত সূতার ন্যায় কিছু কানেক্টর/থ্রেড মানুষের ব্রেইনে ঢুকাবে। অতঃপর সেই তারগুলো (থ্রেড) মাথার খুলির উপর থাকা ছোট্ট চিপে যুক্ত হবে। সেই চিপটি কানের সাথে যুক্ত যন্ত্রের মাধ্যমে সিগন্যাল কম্পিউটার বা স্মার্টফোনের পাঠাবে। আর এই সিগন্যাল ব্যবহার করে পক্ষাঘাতগ্রস্থ শুধু চিন্তা করার মাধ্যমে কোন যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। ব্রেইনের ভিতরে ঢুকানো সূক্ষ্ম সূতা (থ্রেড) ব্রেইনের কোন ক্ষতি করবে না। ব্রেইনের ভিতরে লেজার বিমের মাধ্যমেই এই তন্তুগুলো যুক্ত করা যাবে। এই প্রযুক্তিটি শুকর ও বানর এর উপর প্রয়োগ করে সফলতা এসেছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI ) কি?
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে কোনো মেশিন মানুষের মত করে কিছু চিন্তা এবং জটিল সমস্যা সমাধান করে থাকে। এটি একই সাথে নতুন কিছু শিখতে পারে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা AI কত ভাগে বিভক্ত?
মোটামুটি তিনটি ভাগে বিভক্ত- ১. উইক এআই (Narrow AI) : এই ইন্টেলিজেন্স শুধুমাত্র নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর কাজ করতে পারে। ২. স্ট্রং এআই (Artificial General Intelligence) : মেশিন বা কম্পিপউটার যখন মানুষের মতো কাজ করতে পারবে, তখন তাকে বলা হবে স্ট্রং এআই। ৩. সিঙ্গুলারিটি (Super Intelligence) : এই ইন্টেলিজেন্স, সবচেয়ে প্রতিভাধর মানুষের ক্ষমতাকেও অতিক্রম করতে পারে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা AI -এর ব্যবহার কিভাবে হয়?
নানানভাবে ব্যবহার হয়, যেমন- ডাইভার ছাড়া গাড়ি নিজে থেকে তার চারপাশের অবস্থা বুঝে চলাফেরা করতে পারে। অনলাইন শপিং সিস্টেম আপনার পছন্দের ভিত্তিতে অ্যালগরিদম পছন্দের বস্তুগুলোকে আপনার সামনে তুলে ধরে। কারো কোনো রোগ হলে সেটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য, তার জন্য কি ওষুধ কি চিকিৎসা দরকার, তার পিছনেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কাজ করে। আবার আই ফোন-এর ফিচার SIRI Personal Assistant এর মাধ্যমে অটো টাইপ করা, ট্রান্সলেট করা, ইন্টারনেটে সার্চ করা, মেসেজ করা, কোনো জিনিসকে সনাক্ত করা ইত্যাদি সব অসংখ্য কাজে AI ব্যবহার হচ্ছে।
মেশিন লার্নিং কি?
অনেক অনেক ডাটা যেগুলি খুবই সংক্ষিপ্ত চিহ্নের মধ্যে থাকে কিন্তু অর্থবহুল তথ্য বের করা মেশিন লানিং-এর কাজ। যেমন মেসিন রিডেবল পাসপোর্ট এখন সবার হাতে।
বট কি?
বট (Bot) হল কথা বলতে পারে এরকম একধরনের চ্যাট, যেখানে আগে থেকেই বিভিন্ন তথ্যাদি দেয়া থাকে। মনে হবে যেন আপনি একজন মানুষের সাথেই কথা বলছেন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সমৃদ্ধ বটকে আপনি যত ব্যবহার করবেন সে তত শিখবে, তত ভালোভাবে কাজ করে দিবে! যেমন বাঘা বট।
মেটাভার্স Metaverse কি ?
মেটা অর্থ কাল্পনিক আর ভার্স অর্থ হলো দুনিয়া। মেটাভার্স ইন্টারনেটের এমন একটি ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড যা একদম বাস্তব পৃথিবীর মতোই। মেটাভার্স এর দুনিয়ায় আপনি নিজেকে একটা Avatar বা কার্টুন হিসাবে পাবেন যা অবিকল আপনার মতোই দেখতে হবে, এছাড়া আপনি সেই সমস্ত কাজ করতে পারবেন যা আপনি বাস্তব জীবনে করে থাকেন, যেমন জমি কিনে নিজের বাড়ি তৈরি করতে পারেন, ঘুরতে যেতে পারেন, পার্টি করতে পারেন, বিনোদন করতে পারেন, মিটিং করতে পারেন, কারোর সাথে গেম খেলতে পারেন। এমনকি ডিজিটাল কারেন্সি অর্থাৎ ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে লেনদেন করতে পারেন, এইসব ছাড়াও আরও অনেক কিছু করতে পারেন, যা বাস্তব নয়, অনেকটা আমাদের দেখা স্বপ্নের মতো।
ভিপিএন কি?
ভিপিএন এর পূর্ণরূপ হলো ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক। VPN ইন্টারনেটের গোপন “টানেল” যার মাধ্যমে ডাটা কম্পিউটার থেকে আদান প্রদান করতে পারে। অধিকাংশ মানুষ মূলত অঞ্চল ভিত্তিক ব্লক করা সাইটগুলোতে প্রবেশ করতে, তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার্থে এবং সেনসিটিভ কন্টেন্ট ব্রাউজ করার সময় নিজেকে ট্রেস করা থেকে বাঁচাতেই ভিপিএন ব্যবহার করে।
৬জি কি সুবিধা নিয়ে আসছে?
৫জি হলো ৪জি-র চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি স্পিড। আর সিক্স-জি আসছে ফাইভ-জির চেয়ে ৮ হাজার গুণ বেশি গতি নিয়ে। ধারণা করা হচ্ছে, আমাদের পরিবেশে যত বিষাক্ত রাসায়নিক আছে, তা সিক্স-জি’র মাধ্যমে পরীক্ষা করা যাবে। ২০৩০ সালে ‘বিশ্ব সিক্স-জি’র যুগে প্রবেশ করতে পারে বলে ধারণা গবেষকদের।
অ্যালগরিদম কি?
কোন সমস্যা সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট ধারাবাহিক নিয়মাবলী স্বয়ংক্রিয়ভাবে করাকে অ্যালগরিদম বলে। সার্চ ইঞ্জিন ছাড়াও ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, গুগল ম্যাপ ইত্যাদি এলগোরিদম-এর অনুসারে হয়ে থাকে। কম্পিউটার সায়েন্টিস্ট ও সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়াররা এর ব্যবহার করে, এমন কি মহাকাশ গবেষণা, স্যাটেলাইট, রোবট তৈরি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলেজেন্স ইত্যাদি ক্ষেত্রে করা হয়।
ক্লাউড কম্পিউটিং কী ?
সাধারণ কম্পিউটারের মতো, তবে Cloud Computing এ একধরণের স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, এর মাধ্যমে অনলাইনে যে কোনো ফাইল এডিট ও শেয়ার করতে পারি। যেমন Google Drive।
সুপার কম্পিপউটার কি?
যেখানে অনেক বেশি কাজ খুব কম সময়ের মধ্যে করার প্রয়োজন হয়, সেখানে Super Computer কে ব্যবহার করা হয়। সুপার কম্পিউটারের গতি বা স্পিড এর পরিমাপ FLOPS এর দ্বারা করা হয়, সেখানে একটি সাধারণ কম্পিউটারের গতি বা স্পিড এর গণনা MIPS দ্বারা করা হয়। বেশিরভাগ Super কম্পিউটার বৈজ্ঞানিক কাজের জন্য তৈরি হয়, যার উচ্চতা ৫ ফুট থেকে শুরু করে ১০০ ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ডিপ ওয়েব কি?
ডিপ ওয়েব বা ডার্ক ওয়েব হল ইন্টারনেটের লুকায়িত অংশ। গুগল সার্ফেস ওয়েবের একটি সামান্য অংশ আর সার্ফেস ওয়েব পুরো ওয়েবের চারভাগের এক ভাগ। সার্ফেস ওয়েবের চেয়ে ডিপ ওয়েব ৫০০ গুণ বেশি বড়। আমরা যে সার্ফেস ওয়েবে পড়ে আছি, তা ডিপ ওয়েবের তুলনায় কিছুই না।
ডিপ ওয়েবের সিল্করোড কি?
ইন্টারনেটের ওয়েবের মাত্র ১৬% সার্চ ইঞ্জিণ দিয়ে পাওয়া যায়, বাকি ৮৪% সার্চের আয়ত্তের বাইরে। প্রতিদিন ডিপ ওয়েবের ৩০ হাজার ওয়েবসাইট হ্যাক হয়। কারণ, ডিপ ওয়েবে কোন সিকিউরিটি নাই। সিল্করোড হল ডিপ ওয়েবের সবচেয়ে সফল একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে সবকিছুই কেনা-বেচা হয়। এমন কোনো অবৈধ কাজ নাই যা এখানে হয় না।
ডট অনিয়ন ও টর ব্রাউজার কি?
ডিপ ওয়েবের সাইট ডট কম ডোমেইনে হয় না। এসব ওয়েব সাইটের ডোমেইন হয় ডট অনিয়ন। ডীপ ওয়েব যেহেতু ওনিয়ন বা পেঁয়াজের মতোই ঢাকা, তাই এই ডোমেইন এক্সটেশন দেয়া হয়েছে। টর ব্রাউজার ডিপ ওয়েবে এক্সেস করা যায়।
রোবটিকস অটোমেশন কি?
রোবট ইতিমধ্যেই দূর নিয়ন্ত্রণ, কারখানার বিপজ্জনক কাজ, স্থাপনার শ্রমিক, কিংবা স্রেফ নিরাপত্তা প্রহরী বা গৃহস্থালি কাজ করতে সক্ষম। রোবটিকস অটোমেশন বলতে বোঝায় কারখানার সবগুলো মেশিন এমন একটি সিস্টেমের সাথে যুক্ত থাকবে, যেটি স্বয়ংক্রিয় চালনা থেকে শুরু করে পুরো উৎপাদন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধান করবে। বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয়করণ, ডুবে যাওয়া জাহাজের অনুসন্ধান, খনি অভ্যন্তরের কাজ ইত্যাদি কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের বা বিপজ্জনক ও জটিল কাজগুলো রোবটের সাহায্যে করা যায়। ওয়েল্ডিং, ঢালাই, ভারী মাল উঠানো বা নামানো, যন্ত্রাংশ সংযোজন করা ইত্যাদি। চিকিৎসাক্ষেত্রে রোবট সার্জনদের জটিল অপারেশনে ও নানা ধরনের কাজে সহায়তা করে থাকে। মহাকাশ অভিযানে এখন মানুষের পরিবর্তে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য সংবলিত রোবট ব্যবহৃত হচ্ছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স কি
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রধানত যে চারটি কাজ করে তা হল- কথা শুনে চিনতে পারা, নতুন জিনিস শেখা, পরিকল্পনা করা এবং সমস্যার সমাধান করা। মূলত এইসব সুবিধাই যখন বিভিন্ন বস্তুতে যোগ করা হয় তখনই সেটা হয় ইন্টারনেট অব থিংস।
ভার্চুয়াল রিয়ালিটি কি?
উন্নত বিশ্বে ডাক্তারদের আধুনিক মানের প্রশিক্ষণ প্রদানে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীরা কৌশলগত দক্ষতা, অপারেশন ও রোগ সম্পর্কিত তাত্ত্বিক বিষয়াদির কার্যপ্রণালী অনুশীলন করতে সক্ষম হন। ২. ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মাধ্যমে ভার্চুয়ালি ড্রাইভিং ও ড্রাইভিংয়ের নানা নিয়ম-কানুন খুব সহজেই এর ফলে আয়ত্ত করা সম্ভব। ৩. উন্নত বিশ্বের বাণিজ্যিক বিমান সংস্থা কিংবা সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে বিমান পরিচালনা প্রশিক্ষণে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ব্যবহার করছে।
অগমেন্টেড রিয়ালিটি কি?
অচেনা কোন এক স্থানে ঘুরতে গেলেন গাড়িতে করে। আপনি ড্রাইভ করার সময় চোখের ইশারাতেই আপনার সামনে ভেসে উঠছে রাস্তা কিংবা আশপাশের বিভিন্ন তথ্য। কখনও কখনও আপনি চাইলেই ইশারায় শুনে নিতে পারছেন দরকারি বিভিন্ন নির্দেশনা, যেমন- আজকের দিনের সম্ভাব্য আবহাওয়ার তথ্য। রাস্তায় জ্যাম থাকলে আপনার সামনে চলে আসছে শর্টকাট পথের নেভিগেশন, যা আপনার জন্য নিরাপদ ও সময়সাশ্রয়ী। কিংবা যাবার পথে খাবার জন্য হোটেল খুঁজছেন? রাস্তা দিয়ে যাবার সময়ই আপনি আপনার স্মার্টফোনটি বিল্ডিংগুলোর দিকে তাক করাতেই সেগুলোর ট্যাগ আপনার ফোনে স্ক্রিনে উঠে বলে দিচ্ছে, কোন বিল্ডিংটি কিসের আর সেটির কোন বিখ্যাত ইতিহাস আছে কি না।
থ্রিডি প্রিন্টার কি?
রেপ্লিকা তৈরি করতে থ্রিডি প্রিন্টার। থ্রিডি প্রিন্টাররের তিনটি অংশ রয়েছে- মেশিন প্রোপার, কম্পিউটার এবং ত্রিমাত্রিক ছবি তোলার জন্য একটি ক্যামেরা বা স্ক্যানার। যে বস্তুটিকে প্রিন্ট করা হবে, প্রথমে স্ক্যানারের সাহায্যে তার একটি ত্রিমাত্রিক ছবি তোলা হয়, বস্তুটির সব দিক ঘুরিয়ে সব খুঁটিনাটি অংশ ক্যামেরায় ধরা পড়ে। এবার এই ইমেজটিকে কম্পিউটারে প্রসেস করা হয়। কম্পিউটারে চাইলে ইচ্ছামত এডিটও করা যায়, যেমন- আকার পরিবর্তন, কোন অংশ বাদ দেয়া বা সংযোজন বা রঙ পরিবর্তন ইত্যাদি। এবার প্রসেসিং শেষে প্রিন্ট দিলেই মেশিন প্রোপারে রাখা ম্যাটেরিয়ালের সাহায্যে বস্তুটির একটি বাস্তব রেপ্লিকা তৈরি হয়ে যায়! এই যন্ত্র দ্বারা কিডনি থেকে শুরু করে বন্দুক, গাড়ি, কৃত্রিম হাত-পা সংযোজন, শিল্পকর্মের প্রতিরূপ (রেপ্লিকা) তৈরি করা যায়।
ইন্টারনেট অব থিংস কি?
যার বাংলা অর্থ হল বিভিন্ন জিনিসের সাথে ইন্টারনেটের সংযোগ। আমাদের চারপাশের সকল বস্তু যখন নিজেদের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ করবে এবং নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে, সেটাই হবে ইন্টারনেট অব থিংস। ইতিমধ্যে আমরা গুগল হোম, অ্যামাজনের আলেক্সার কথা শুনেছি, যা আপনার ঘরের বাতি, সাউন্ড সিস্টেম, দরজাসহ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনার বাসার চুলাকে আপনি একবার শিখিয়ে দেবেন কখন কী খেতে পছন্দ করেন। ধরুন বৃষ্টির দিনে আপনি খিচুড়ি ভালোবাসেন, আপনার চুলা সেটা মনে রাখবে এবং বাইরে বৃষ্টি পড়লে সেদিন আপনার জন্য খিচুড়ি রান্না করে রাখবে। আপনি সকালে ডিম-রুটি খাবেন, সেটাও সে প্রতিদিন করে দেবে অথবা সপ্তাহের একেক দিন তাকে একেক রেসিপি রাঁধতে বলবেন, সে তাই করবে। বাড়ির দরজা দিয়ে যখন বেরিয়ে যাবেন আপনাকে দরজা লাগাতে হবে না, আপনি বাড়িতে নেই জেনে দরজাটি আর খুলবে না, আবার আপনি এসে যখন দরজার সামনে দাঁড়াবেন, আপনার চোখ, হাত, পা, শরীর দেখেই আপনাকে চিনে নিজে নিজেই খুলে যাবে। আপনার চোখের চশমা কিংবা কানের হেডফোনই আপনাকে রাস্তা দেখাবে আর সব তথ্য দিয়ে দেবে।
সেমিকন্ডাক্টর বা সিলিকন চিপ কি?
সেমিকন্ডাক্টর হলো একটি ছোট ইলেকট্রনিক ডিভাইস, এটি মূলত সিলিকন দিয়ে তৈরি বলে একে সিলিকন চিপও বলা হয় । একটা চুলের চেয়েও হাজার ভাগের এক ভাগ পাতলা সার্কিটের মধ্যে কোটি কোটি ট্রানজিস্টর থাকে, যা কম্পিউটারের প্রসেসর, মেমরি ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক গ্যাজেটের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি ও কার্যকারিতা প্রদান করে। আজকের দিনে মোবাইল ফোন, মাইক্রোওয়েব ওভেন, ইলেকট্রিক গাড়ি থেকে শুরু করে যেকোনো অত্যাধুনিক যন্ত্রের মূল শক্তিই হলো সেমিকন্ডাক্টর চিপ। আজকের দিনের কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার জন্য প্রয়জন হয় জিপিইউ নামে এক ধরনের চিপ। মানবজাতির ইতিহাসে এই মাইক্রোচিপের চেয়ে জটিল কোনো কিছু আমরা কখনো তৈরি করিনি। সর্বাধুনিক প্রযুক্তির চিপ তৈরি করতে EUV লিথোগ্রাফি নামে একটি জটিল যন্ত্র প্রয়োজন হয়। এই যন্ত্রটি এতই জটিল যে এর লেজার সিস্টেমের মধ্যেই রয়েছে ৪৫৭,৩২৯টি আলাদা যন্ত্রাংশ। এটি তৈরির জন্য অনেকগুলো দেশের বিজ্ঞানীদের প্রায় ৩০ বছর শুধু গবেষণাই করতে হয়েছে। এই যন্ত্রের লেজার থেকে EUV আলো তৈরি করতে প্রয়োজন হয় এক ধরনের প্লাজমার। এই প্লাজমার তাপমাত্রা পৌছে যায় প্রায় পাঁচ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াসে! এই ভয়ঙ্কর তাপ থেকে জন্ম নেয় ক্ষণস্থায়ী EUV আলো। এই ধরনের একটা যন্ত্র চাইলেই তৈরি করা যায় না। এখন পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে এই যন্ত্রটি তৈরি করতে পারে মাত্র একটি কোম্পানি।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি?
বিজ্ঞানীরা বলছেন এখনকার সাধারণ একটি কম্পিউটারকে যদি গরুর গাড়ির সঙ্গে তুলনা করা হয় তাহলে কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে তুলনা করা যাবে দ্রুত গতির বুলেট ট্রেন কিম্বা রকেটের সঙ্গে। কোয়ান্টাম এ্যালগরিদম ব্যবহার করে কিছু কিছু সমস্যা খুব কম সময়ে সমাধান করা যাবে, যেগুলো করতে ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের হয়তো দুই চার বিলিয়ন বছর লেগে যেতে পারে! এর মধ্যে রয়েছে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সিমুলেশন ও মৌলিক উৎপাদকে বিশ্লেষণ। প্রথমটা করা গেলে ওষুধ ও রোগ নিয়ে গবেষণায় এক ধরনের মারাত্মক অগ্রগতি হবে, আর দ্বিতীয়টা করা গেলে যেকোনো সার্ভার বা কম্পিউটারের সিকিউরিটি খুব সহজেই ভেঙ্গে ফেলা যাবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সাথে যদি যুক্ত হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, তাহলে পরিস্থিতি হবে আরও ভয়াবহ। তখন তৈরি হবে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা। AI আমাদের সবার মুখ চিনবে, অভ্যাস জানবে, কথাবার্তা বিশ্লেষণ করবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার আমাদের সবার মেসেজ, ইমেইল, হিসাবপত্র—সবকিছু পড়ে ফেলবে। ফলে পৃথিবীতে গোপন বলে কোনোকিছু থাকবে না।
যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের সরকার এধরনের সুপার-ফাস্ট কম্পিউটার তৈরির পেছনে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে। গুগলসহ বেশকিছু কোম্পানি কিছু প্রোটোটাইপও তৈরি করেছে। ২০১৯ সালে গুগল তাদের কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সফলতার একটি খবর প্রকাশ করে। সেখানে তারা দেখিয়েছে যে, বিশ্বের সবচেয়ে ভালো সুপার কম্পিউটারের যে সমস্যাটি সমাধান করতে প্রায় দশ হাজার বছর লাগবে, সেটা তারা তাদের কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করে মাত্র ৩ মিনিট ২০ সেকেন্ডেই সমাধান করেছে। এখনো ব্যবহার উপযোগী কোনো কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি হয়নি, তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইতোমধ্যে বেশ কার্যকর হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে। যদি কখনো এই দুই প্রযুক্তির দেখা হয়ে যায়, তাহলে মানবজাতির ভবিষ্যৎ দাঁড়িয়ে থাকবে ন্যানোমিটার ব্যাসার্ধের একটি সুতার উপর।
https://form-timer.com/start/42572929