প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য
১৮১ ▌দ্য কলম্বিয়ান এক্সচেঞ্জ:
১৪৯২ সালে কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কারের পর ইউরোপ এবং আমেরিকার মাঝে রোগজীবাণু, খাদ্যশস্য এবং পশুপাখির যে পার¯পরিক স্থানান্তর সংঘটিত হয়, ইতিহাসে সেই ঘটনাই 'কলম্বিয়ান এক্সচেঞ্জ' নামে পরিচিত। তখন স্থানীয় আমেরিকানদের রোগবালাই ছিল না বললেই চলে। এমনকি সর্দি কাশি কী, তারা তাও জানত না। তাই সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে তাদের শরীরে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ছিল না। ইউরোপীয়রা নিজের অজান্তে জলবসন্ত, গুটিবসন্ত, হাম, টাইফয়েড, কলেরা, প্লেগ, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি সংক্রামক রোগের জীবাণু সঙ্গে নিয়ে আমেরিকায় যায়। ফলে এসব সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে থাকে লাখ লাখ স্থানীয় মানুষ। এক-দেড়শ' বছরের মধ্যেইএই ভুখ-ের ৮০- ৯৫% মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ১৫১৭ সালের মাঝেই মধ্য মেক্সিকোর জনসংখ্যা ১ কোটি ৫০ লক্ষ থেকে মাত্র ১৫ লক্ষে নেমে আসে। ইতিহাসবিদদের মতে, সবচেয়ে কম আক্রান্ত জনপদও ৮০% জনসংখ্যা হারিয়েছে! আমেরিকার খাদ্যশস্য যেমন- আলু, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া, কাঁচা মরিচ, ভ্যানিলা, কোকো (যা থেকে চকলেট তৈরি হয়), শিম ইত্যাদি; ফলমূলের মধ্যে রয়েছে পেঁপে, আনারস ইত্যাদি কোনো কোনো দেশের খাদ্য প্রধান-খাদ্য হয়ে যায়। যেমন- আয়ারল্যা-ে আলু। চিলির এই আলু সারা বিশ্বের সমস্থ দুভিক্ষে মানুষকে বাঁিচয়েছে। আলু খাওয়ার দরুন ইউরোপের মানুষজন সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে থাকল। মেয়েদের পিরিয়ডের সময়কাল এগিয়ে এলো এবং পুরুষদের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে গেল। অন্যদিকে বিশাল আমেরিকার মাটিতে ধান, গম, আখ, বার্লি ইত্যাদি ফসল ফলাতে ইউরোপীয়রা পঙ্গপালের মতো ঝাঁকে ঝাঁকে আমেরিকায় পাড়ি জমাতে থাকে। কিন্তু হাজার হাজার মাইল বিস্তৃত এই অনাবাদী জমি চাষাবাদ করার মতো জনবল কোথায়? নেটিভ আমেরিকানরা তো সংক্রামক রোগের মহামারীতে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে! তাই ইউরোপীয়রা আফ্রিকা থেকে ব্যাপকভাবে মানুষজন দাস হিসেবে ধরে নিয়ে আসতে শুরু করে। ১৫০২ থেকে ১৮৬০ সাল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশ বছর ধরে আফ্রিকার প্রায় এক থেকে দেড় কোটির মতো নারী, পুরুষ ও শিশুকে দাস বানিয়ে ধরে আনা হয়েছিল। এই কলম্বিয়ান এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকা সম্পদে, প্রাচুর্যে সারা পৃথিবীর প্রভু হয়ে বসে।
১৮২ ▌জাপানি দর্শন :
# জাপানী বাচ্চারা স্কুলে তাদের শিক্ষকের সাথে প্রতিদিন ১৫/২০ মিনিট স্কুল পরিষ্কার করে। # বয়স্ক জাপানীরা বাসায় এক জাতের কুকুর পালেন। বেশি হাঁটাহাঁটি না করলে এসব কুকুরের পায়খানা বন্ধ হয়ে যায়, আর তাই প্রভুগণ কুকুরদের হাঁটাতে ও নিজেরা হাঁটতে রাস্তায় বের হন। সংগে হাতে একটি ব্যাগ নিয়ে যান। যেন কুকুরের পায়খানা ব্যাগে ভরে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে পারেন। # অবসরপ্রাপ্ত লোকজন যাদের কোনো কাজ নেই, তাঁরা দলবদ্ধভাবে স্বেচ্ছাসেবীর পোশাক পড়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে নামে । # জাপানী জনগণ ট্রেনে, বাসে, রেস্টুরেন্টে, ফোনে কথা বলা থেকে বিরত থাকে। # মানুষের সাথে চলাচলের সুবিধার্থে, প্রাইমারী স্কুলের ১ম শ্রেণী থেকে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত জাপানী বাচ্চাদের নৈতিকতা শিক্ষা দেয়া হয়। # জাপানে কোনো কাজের আয়া বা বুয়া নাই। সন্তান এবং ঘরের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব একমাত্র পিতা মাতার । # যদি কোন জাপানি বুফে রেস্টুরেন্টে যায়, নির্দেশ থাকে- দয়া করে যা যা খেতে পারবেন, তাই পাতে নেবেন। অতিরিক্ত নিয়ে খাবার নষ্ট করবেন না । এটাকে তারা খুবই মন্দভাবে দেখেন। # প্রতি বছরে ট্রেন লেটের হার মাত্র ৭ সেকেন্ড । জাপানীরা সময়কে মূল্য দেয় এমনকি সেকেন্ডের বেলাতেও ।
১৮৩ ▌সিঙ্গাপুরের দর্শন:
সিঙ্গাপুরে চারটি সরকারি ভাষা রয়েছে। ইংরেজি, মান্দারিন, মালয়ের সঙ্গে রয়েছে তামিল ভাষাও। সিঙ্গাপুরের নাগরিকরা বেশিরভাগ কথার শেষে 'লা' শব্দটি ব্যবহার করেন। যেমন 'ওকে' বলেন 'ওকে-লা', 'থ্যাঙ্কউ' বলেন 'থ্যাঙ্কউ-লা'। # পাঁচ বা তার বেশি লোকজনের ক্ষেত্রে কোথাও জড়ো হতে গেলে পুলিশের নানা কড়া নিয়মাবলি মানতে হয়। রাত দশটার পর দুজনের বেশি লোক জমায়েত হওয়া অবৈধ। # সিঙ্গাপুরিয়ানরা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটের মধ্যে ডিনার সেরে ফেলেন। # সিঙ্গাপুরে মাত্র একটাই দল রয়েছে। 'পিপলস অ্যাকশন পার্টি'। ১৯৫৯ সাল থেকে তারা ক্ষমতায় রয়েছে। # সমকামিতা এখানে বেআইনি, তবে জুয়া আইনসিদ্ধ। # সিঙ্গাপুরের নাগরিকরা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম হাঁটা মানুষ। ঘণ্টায় ৬.১৫ কিলোমিটার। সেখানে ভারতীয়দের হাঁটার গতি ঘণ্টায় গড়ে ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার। # অনুমতি না নিয়ে কাউকে জড়িয়ে ধরা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। # সিঙ্গাপুরের ডাক নাম ফাইন সিটি বা জরিমানার শহর। কারণ ছোট ছোট কারণেও এখানে জরিমানার ব্যবস্থা আছে।
১৮৪ ▌তিব্বত ও দালাইলামা :
৩ হাজার ৬শ' বছর আগে মানুষ প্রায় ৩ হাজার ৪শ' মিটার উচ্চতার তিব্বত মালভূমিতে বসবাস শুরু করে। পশু শিকার করতেই মানুষ প্রথমে হিমালয়ের উত্তরে তিব্বত মালভূমিতে যায়। গণচীনের একটি স্বশাসিত অঞ্চল এটি। তিব্বতীয়রা এই অঞ্চলকে গণচীনের অংশ মানতে রাজি নয়। ১৯৫৯ সালে গণচীনের বিরুদ্ধে তিব্বতিদের স্বাধিকার আন্দোলনে ব্যর্থ হয়। তখন দালাইলামার নেতৃত্বে অসংখ্য তিব্বতি ভারত সরকারের আশ্রয় গ্রহণপূর্বক হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় বসবাস শুরু করেন। সেখানে স্বাধীন তিব্বতের নির্বাসিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। তিব্বতের অধিকাংশ মানুষই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তিব্বতের বিভিন্ন মন্দিরের ভেতর সোনার তৈরি বড় বড় প্রদীপ জ্বালানো থাকে। ৪ হাজার ভরি ওজনের একটি প্রদীপও সেখানে রয়েছে। তিব্বতিরা অত্যান্ত ধর্মভীরু। তাদের প্রধান ধর্মগুরুর নাম দালাইলামা। ১৩৯১ সালে প্রথম দালাইলামার আবির্ভাব ঘটে। দালাইলামাকে তিব্বতিরা বুদ্ধের অবতার মনে করে থাকে। যখনই কেউ দালাইলামার পদে অভিষিক্ত হয় তখনই বুদ্ধের আত্মা তার মধ্যে আবির্ভূত হয়।
১৮৫ ▌জেরুজালেমে ইহুদি বসতি :
আজকের ইহুদি জাতির পূর্বপুরুষ যাযাবর হিব্রু গোত্রের মানুষরা যুগ যুগ ধরে মেসোপটিয়ামিয়ায় (আজকের ইরাক) প্রতিপক্ষ গোত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করে হারিয়েছে হাজার হাজার প্রিয়জনকে। তারা একসময় আসে মিসরে। সেখানে ফারাওদের অত্যাচার থেকে প্রাণে বাঁচাতে পালিয়ে আসে জুডিয়ার পাহাড় এলাকায় (প্যালেস্টাইন) এবং স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে। একসময় ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার স্থল বাণিজ্য পথের কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠে এই জেরুজালেম নগরী। কাফেলার পর কাফেলা আসছে বা যাচ্ছে ইউরোপ, এশিয়া বা আফ্রিকার নানান দেশে। তাকে থামতে হচ্ছে, বিশ্রাম নিতে হচ্ছে এই নগরীতে। রোমান সম্রাটের খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ ও ইউরোপে খ্রিস্টধর্মের প্রসারের ফলে জেরুজালেমে ইহুদি আধিপত্যের অবসান ঘটে। দখলদার খ্রিস্টধর্মীদের অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য তারা ছড়িয়ে পড়ে এশিয়া-ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ-আমেরিকানদের সহায়তায় তারা আবার প্যালেস্টাইনে ফিরে আসে।
১৮৬ ▌মাদ্রাসা শিক্ষা :
১১৭৪ সালে মুহাম্মদ ঘোরীর রাজত্বকাল থেকে এবং সর্বশেষ মুঘলদের রাজত্ব কাল ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত পার্শী ও আরবি ভাষায় ধর্ম শিক্ষা দেওয়া হতো। এই মুগল আমলে মসজিদ কেন্দ্রিক মক্তব গড়ে উঠে, এবং মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠক্রম বর্ধিত করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা চালু করা হয়। সে আমলে পর্যায়ক্রমে জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, ভূগোল, হিসাববিজ্ঞান, কৃষি, লোকপ্রশাসন, জীববিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা ও চারুকলা প্রভৃতি বিষয় মাদ্রাসা পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল। সিকদার লোদির সময়কালে হিন্দুরা মূলতঃ রাজকর্মচারী হওয়ার জন্য পার্শী শিখতে এই মক্তবগুলোতে আসতো। কারণ তখন রাজভাষা ছিল পার্শী। মাদ্রাসা শিক্ষা শুরু হয় সুলতানি আমলে (১২১০-১৫৭৬)। সুলতান আলাউদ্দীন হোসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯) বহু মাদ্রাসা স্থাপন করেন। মওলানা আবু তাওয়ামা ১২৭৮ সালে সোনারগাঁয়ে একটি মাদ্রাসা স্থাপন করেন। ১৮৬৬ সালে প্রথমে ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত মাদ্রাসার সংখ্যা ১৬ হাজার ২২৬।
১৮৭ ▌নৃত্যকলা :
মিশরীয় দেয়াল চিত্রে খৃস্টপূর্ব ৩৩০০ সালের এবং ভারতের গুহা চিত্রে প্রাচীন নৃত্যকলার চিত্র রয়েছে। লিখিত বর্ণমালা প্রচলনের আগে নৃত্যকলার এই পদ্ধতির মাধ্যমেই আদিম লোককাহিনী বংশ পর¤পরায় চলে আসতো। নাচে দেহভঙ্গিমার মাধ্যমে ছন্দের তালে তালে ফুটে ওঠে প্রেম, রাগ, অনুরাগ, প্রতিবাদসহ সককিছু। ভারতীয় ক্লাসিক্যাল নাচে দুটি উপাদান : 'অভিনয়া' ও 'নৃত্যা'। 'নৃত্যা' ছন্দ ও শারীরিক নড়াচড়ার মাধ্যমে সঙ্গীতের ভাষার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে 'অভিনয়া' অভিব্যক্তি এবং আবেগের মধ্যেই নিহিত। সিলেট অঞ্চলে প্রচলিত কাহিনী সম্বলিত নৃত্য হল ধামাইল নাচ। তিব্বতী সংস্কৃতির ছাম নৃত্য থেকে ছৌ নাচের উদ্ভব ঘটলেও মুখোশ থেকে নাচটির নামকরণ ছৌ হয়েছে। ওড়িশি নৃত্য হল পূর্ব ভারতের ওড়িশা রাজ্যের একটি শাস্ত্রীয় নৃত্যশৈলী। মোহিনীঅট্টম হচ্ছে দক্ষিণ ভারতের কেরল রাজ্যের একটি ধ্রুপদী নৃত্যশৈলী। মুগল ঐতিহ্য মুজরা এখন পাকিস্তানের সংস্কৃতির অংশ। ব্যালে নৃত্যে নাচ-মূকাভিনয় অভিনয় এবং সঙ্গীতের (কন্ঠ ও যন্ত্র) সমন্বয়ে শিল্প সৃষ্টি করা হয়।
১৮৮ ▌অসুস্থতার কারণ জীবাণু :
সূর্যকে ঘিরে অন্য সকল গ্রহের মত পৃথিবীও ঘুরছে, এই মতবাদ প্রচারের জন্য কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও আর ব্রুনোকে কিরকমভাবে অত্যাচারের স্টিমরোলার চালানো হয়েছিল সে এক ইতিহাস। ব্রুনোকে তো পুড়িয়েই মারলো ইশ্বরের পুত্ররা। ষোড়শ শতকে সুইজারল্যান্ডের বেসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন শাস্ত্র এবং ভেষজবিদ্যার অধ্যাপক ফিলিপ্রাস প্যারাসেলসাস ঘোষণা করলেন- মানুষের অসুস্থতার কারণ কোন পাপের ফল কিংবা অশুভ শক্তি নয়, রোগের কারণ হল জীবাণু। ওষুধ প্রয়োগে জীবাণু নাশ করতে পারলেই রোগ ভাল হয়ে যাবে। প্যারাসেলসাসের এই ‘উদ্ভট’ তত্ত্ব শুনে ধর্মের ধ্বজাধারীরা হা রে রে করে উঠলেন। সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক ধর্মবিরোধী মতবাদ প্রচারের জন্য প্যারাসেলসাসকে হাজির করা হয়েছিল ‘বিচার’ নামক এক প্রহসনের মুখোমুখি। ধর্মান্ধ বিচারকেরা ব্রুনোর মতই প্যারসেলসাসকে মৃত্যুদ-ে দন্ডিত করেছিলো। প্যারাসেলসাসকে সেদিন জীবন বাঁচাতে মাতৃভূমি ছেড়ে পালাতে হয়েছিলো।
১৮৯ ▌বংশধারা, রক্তধারা বা জিনতত্ত্ব :
গাধার পেটে কখনো ঘোড়া হয় না। ‘বংশগতি’ বলে কিছু যে হয়, তা আদিম যুগ থেকেই মানুষ পর্যবেক্ষণ করে এসেছে। বাবা-মায়েরা নিজের ছেলেমেয়ের মধ্যে নিজেদের বৈশিষ্ট্য খুঁজে বেড়াতেন তখনো। যে গরু বেশি দুধ দেয় তার বাচ্চাও যে বেশি দুধ দিতে পারে বা যে গাছের ফল বড় বড় হয় তার একই বীজ থেকে জন্মানো গাছের ফলও বড় হবে। বংশগতির এই জেনেটিক্সের তত্ত্ব নিয়ে বিজ্ঞানী বললেন, ‘দুর্বলকে সাহায্য করা ভালো, কিন্তু এটাও মনে রাখা উচিত যে, দুর্বল যদি বেঁচে থেকে বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে তাহলে সমাজে দুর্বলের সংখ্যা বেড়ে যায়। এমনিতে মেধাবীদের সন্তান সংখ্যা একেবারেই কম (বিয়ে, সন্তান এসব তাদের অতি নিয়ন্ত্রিত), পক্ষান্তরে মেধাহীন সাধারণ মানুষের সন্তান হয় চক্রবৃদ্ধি হারে। অর্থাৎ সমাজে গরিবদেরই সন্তান-সন্ততি বেশি হওয়ায় সমগ্র সমাজে আস্তে আস্তে ‘খারাপ জিন’-ওয়ালা মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলবে। ১৮৮৩ সালে গাল্টন প্রতিভাবানদের বেশি সন্তান উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করতে আর ‘খারাপ’দের নিরুৎসাহিত করতে ‘ইউজেনিক্স’ নামে এক সামাজিক বিপ্লবের ডাক দেন।
১৯০ ▌‘জিনগত ক্রুটি নির্মূল অভিযান :
আমেরিকায় ক্রমাগত ইউজেনিক সোসাইটি তৈরি হয়Ñ যারা ‘উন্নত পরিবার’দের পুরস্কৃত করত বেশি করে সন্তান উৎপাদনে। অপর পাশে ছিল ‘অনুন্নত’দের জোর করে জন্ম-নিয়ন্ত্রণ। ১৯০৭ সালে ইন্ডিয়ানা স্টেটে আইন করে অপরাধী, বোকাদের সমাজের স্বার্থে বন্ধ্যাত্বকরণ করানো বাধ্যতামূলক হয়। ১৯৪১ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় এরকম ষাট হাজার বন্ধ্যাত্বকরণ করানো হয়েছিল। এই ট্রেউ গিয়ে লাগে নাৎসি জার্মানিতেও। ১৯৩৩ সালে ক্ষমতায় আসার পরেই হিটলার মাত্র তিন বছরের মধ্যেই ২,২৫,০০০ মানুষের বন্ধ্যাত্বকরণ করল। নাৎসিদের রাজত্বের শেষদিকে দেখা গেল মোট ৪ লক্ষ মানুষের বন্ধ্যাত্বকরণ করা হয়েছে, অথচ তারা কারাগারে রাষ্ট্রের পয়সায় খেয়ে চলেছে। তাদের চিহ্নিত করা হলো ‘খাদ্য ধ্বংসকারী বলে। কিছুদিনের মধ্যেই নাৎসীরা এর পরিধি বিস্তৃত করে সমস্ত ইহুদি আর জিপসীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করলেন। আর এদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে তৈরি হলো গ্যাস চেম্বার। পরে বন্ধ্যাত্বকরণ কাজে মেয়েদেরকেই ব্যবহার করা হয়।
১৯১ ▌জন্মসূত্র :
‘ছা পোষা বাঙালি’: বাঙালিরা নিজের জন্য নয়, শুধু বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ তৈরির জন্যই সে বেঁচে থাকে। এটা একদিকে যেমন কল্যাণকর, অন্যদিকে ক্ষতিকরও বটে। দেখুন, আপনার থেকে বের হওয়া লক্ষ কোটি শুক্রকিটের একটির অর্ধেক হচ্ছে আপনার সন্তান। আপনার বাকি লক্ষ কোটি শুক্রকিট বাঁচার জায়গা না পেয়ে মরে গেছে। আপনার সন্তানের মতো শত শত কোটি মানব সন্তান জন্ম নিয়েছে পৃথিবীতে। পৃথিবীতে আসা এ মানব সন্তানগুলো জন্মের সময় জন্মস্থান এবং জন্মদাতা বেছে নেবার সুযোগ কি পেয়েছিল? আপনি-আমি নিজেও কিন্তু অন্য অনেকের তুলনায় সুবিধাবঞ্চিত। যারা জন্ম নিয়েছে পৃথিবীর দুর্বল জন্মস্থান ও জন্মদাতার অধীনে, তারা করুণ জীবন-যাপন করছে। আমরা শুধু আমাদের শুক্রকিটের অর্ধেকাংশের সুবিধার কথা ভেবেছি আর অন্যদের বঞ্চিত করে চলেছি। এটা মানবিকতা নয়। যে কোনো মুহূর্তে পৃথিবী থেকে আপনাকে বিদায় নিতে হবে। ফলে অজস্র টাকা আর মরীচিকার পিছনে ছুটে জীবন শেষ করে বোকারাই, জ্ঞানীরা অন্যের সঙ্গে শেয়ার করে জীবন উপভোগ করে।
১৯২ ▌সাহারা মরুভূমি :
সাহারা মরুভূমি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মরুভূমি। এর বিস্তৃৃতি ৯৪,০০,০০০ বর্গ কিলোমিটার। উত্তর আফ্রিকার প্রায় সবটা জুড়েই এর বিস্থার। মিশর, মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, সুদান, নাইজার, মালি প্রভৃতি দেশ পর্যন্ত সাহারা মরুভুমি বিস্তৃত। সারা সাহারা মরুভূমি জুড়েই রয়েছে পাহাড়, মালভূমি, বালি ও অনূর্বর ভূমি। বেশ কিছু মরূদ্যান ও আছে সাহারাতে। এই সমস্ত মরুদ্যানেই সাহারার বেসির ভাগ লোক বাস করলেও কিছু কিছু যাযাবর উপজাতিরা বাস করে আরো দুর্গম অঞ্চলে। এদের সবাইকে নিয়ে সাহারা মরুভূমি জুড়ে এর লোকসংখ্যা ২০ লক্ষের বেশি হবে না। এদের মূল জীবিকা ছাগল, ভেড়া, ও উট পালন আর খেজুড়, গম, বার্লি ইত্যাদি চাষ করা। সাহারার আবহাওয়া মাত্রাতিরিক্ত গরম কিন্তু তা শুধু দিনের বেলাতে থাকে কিন্তু রাতে বেশ ঠান্ডা পড়ে। এমনকি কখনো কখনো পাহারের চুড়ায় বরফও জমতে দেখা যায়। সেখানকার প্রাণীদের মধ্যে উট, সাপ, গিরগিটি, শিয়ালের, এ্যান্টিলোপ, উট পাখি, গাজলা হরিণ, মরুছাগল ইত্যাদির নাম উল্লেখ করা যায়।
১৯৩ ▌শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক :
শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হক, কলকাতার মেয়র (১৯৩৫), অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী (১৯৩৭-১৯৪৩) এবং পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী (১৯৫৪), পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী (১৯৫৫) এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নরের পদ (১৯৫৬-১৯৫৮)সহ বহু উঁচু রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। বরিশাল শহর থেকে চৌদ্দ মাইল দূরে চাখার গ্রামে তার জন্ম। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র পুত্র। স্যার খাজা সলিমুল্লাহ ও নওয়াব নওয়াব আলী চৌধুরীর কাছে রাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি হয়। তিনি বৃটিশ আমলে বঙ্গদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে স্থাপন করেছেন ঋণ সালিশী বোর্ড, পাস করেছেন প্রজাস্বত্ব আইন, পাস করেছেন মহাজনি আইন, প্রথমবারের মতো করেছেন পঞ্চম শ্রেণী জন্য অবৈতনিক শিক্ষা কার্যক্রম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আলীগড় বশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতাদের একজন তিনি। গড়লেন বাংলা একাডেমী। ২১শে ফেব্রুয়ারীকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা কৃষক, প্রজা, শ্রমিক দরদী এবং নারী ও শিশু শিক্ষার প্রতি যতœবান, মুসলিম অধিকার সচেতন ছিলেন তিনি।
১৯৪ ▌মাহম্মদ আলী জিন্না :
ভারতের গুজরাট প্রদেশের কাথিয়াবাড়ের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বাবা জেনাভাই। মুসলিম শিয়া সম্প্রদায়ভুক্ত খোজা সম্প্রদায়ের লোক তারা। গুজরাটের এই কাথিয়াবাড়ে ভারত মহাদেশের মহাত্মা গান্ধীর পিতৃভূমি। নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য জেনাভাই একদিন করাচিতে আগমন করেন। করাচিতে ২৫ শে ডিসেম্বর ১৮৭৬ সালে জেনা ভাই ও মিঠিবাইয়ের একটি পুত্র সন্তান জম্মগ্রহণ করেন, নাম রাখা হয় মোহম্মদ আলী জেনাভাই (জিন্না)। ব্যাপক আর্থিক দুর্যোগের কারণে পিতার বন্ধু ফ্রেডরিকের সহযোগিতায় ইংল্যান্ডে যাওয়ার সুযোগ পান জিন্না। লন্ডনে তিনি দেখা পান দাদাভাই নওরোজীর। দাদাভাই নওরোজী ছিলেন সকল ধর্মের মানুষের কাছে পূজনীয় ব্যক্তি। দাদাভাই ব্রিটিশ হাউস অব কমনসের সদস্য হওয়ায় জিন্না নিয়মিত অতিথি হিসাবে সেখানে যেতেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দাদাভাইকে ভারতের জন্য কাজ করা দেখে তিনিও ইংল্যান্ডে রাজনীতি করার বিষয়ে উৎসাহী হয়ে উঠেন। ১৮৯৬ সালে ভারতে ফিরে এলেন। ম্যাজিস্ট্রেট হয়েও তিনি সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
১৯৫ ▌ওলন্দাজ নারী-পুরুষ:
ওলন্দাজরাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘকায় জাতি আর নেদারল্যান্ডস সবচেয়ে দীর্ঘকায়দের দেশ। কিন্তু মাত্র দুই’শ বছর আগেও তাদের নাম ছিল খর্বকায় বা খাটো জাতির তালিকাতেই। এই দুই’শ বছরে এমন কী ঘটল যে, ওলন্দাজরা ধাই ধাই করে লম্বা হয়ে যাচ্ছে! মূল কারণ পুষ্টিতে সমৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মানের উন্নতি। গত দেড় ’শ বছরে ওলন্দাজ পুরুষদের গড় উচ্চতা বেড়েছে ৮ ইঞ্চি! এখন ওলন্দাজ পুরুষদের গড় উচ্চতা ৬ ফুটের কিছু বেশি আর নারীদের গড় উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। বেশি ক্যালরি ঠাসা মাংস ও দুগ্ধজাত খাবার-দাবার বেশি বেশি খায় তারা। লাইফলাইনস নামে অভিহিত এই তথ্যভান্ডারে দেখা যায় নেদারল্যান্ডসে বসবাসকারী যে মানুষদের সবচেয়ে বেশি সন্তান ছিল তাঁরা দীর্ঘকায় পুরুষ এবং তাঁদের স্ত্রীরা ছিলেন গড় উচ্চতার নারী। গত একশ বছর ধরে নারীরা খাটো মানুষের সাথে সংসার করলেও তাদের সন্তান ধারণ করতো না। আর এভাবে কয়েক প্রজন্মের মধ্যেই এমন একটা প্রজন্ম তৈরি হয়ে যেতে পারে যাদের বেশির ভাগই বেশি উচ্চতার নারী-পুরুষ।
১৯৬ ▌বাঙালি সংস্কৃতি :
আমরা মূলত সাংস্কৃতিক বলয়ের বাইরের কেউ নই। জন্মের সময় আমরা একটি জীব হয়ে জন্মাই। কিন্তু সংস্কৃতিই আমাদের মানুষে পরিণত করে। পরিণত করে সামাজিক জীবে। সংস্কৃতি দিয়েই মানুষ মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণার, মন-মানসিকতার অধিকারী হয়। আমরা বাঙালিরা সংস্কৃতিবান হয়েছি, এগিয়ে চলেছি সৃজন করে নয়, গ্রহণ করেই। আমাদের ধর্ম এসেছে উত্তর ভারত ও আরব থেকে। ভাষাটাও উত্তর ভারতের। প্রশাসনিক ঐতিহ্যও উত্তর ভারত, উত্তর এশিয়া ও ইউরোপ থেকে পাওয়া। আজকের ব্যবহারিক জীবনের সব উপকরণ এবং মানস জীবনের সব প্রেরণা এসেছে ইউরোপ থেকে। আর্য, শক, হুন্দল, পাঠান, মোঘল, ইংরেজ - বাঙালি কাউকেই দূরে সরিয়ে রাখেনি। সে সবাইকে গ্রহণ করেছে। সকলের সংস্কৃতি তিল তিল করে ধারণ করে সমৃদ্ধ বাঙালি সংস্কৃতি। এখানেই বাঙালি সংস্কৃতির অনন্যতা। বিদেশের সবকিছুই আমাদের জন্য অপসংস্কৃতি তা নয়। তবে বিদেশের কোন কিছুকে গ্রহণ করার আগে দেখতে হবে তা আমাদের জীবনকে সুন্দর ও উন্নত ও পরিশীলিত করছে কিনা।
১৯৭ ▌মুহাজির ও ঘটি :
পশ্চিমবঙ্গ থেকে যারা মাইগ্রেট করে এপারে এসেছিল ওদেরকে 'ঘটি' বলে একসময় ঠাট্টা করতো এপারের লোকেরা। এখন সকলে একরকম মিলেমিশে গেছি। অবাঙালি যারা সেসময় মাইগ্রেট করে এসেছিল, তাদের বড় অংশ বিহার থেকে এসেছিল বলে এদেরকে সবাই বিহারী হিসেবেই চেনে। এছাড়া উড়িষ্যা, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ থেকেও এই মানুষগুলি এসেছিল। কেবল ধর্মীয় বিশ্বাসের মিল ছাড়া এদের সাথে আমাদের আর কোন মিল নাই। আর এই ধর্মীয় বিশ্বাস যে মানুষের মধ্যে আসলেই কোন অর্থবহ বা স্থায়ী ঐক্য গড়ে তুলতে পারে না তার মর্মান্তিক প্রমাণ হয়ে এই লোকগুলি আমাদের দেশে এখনো করুণ জীবনযাপন করছে। ১৯৪৭’র পর যেসব মুসলমান নয়া দেশ পাকিস্তানে ‘হিজরত’ করেছিল দ্বিজাতিতত্বের ভ্রান্তির শিকার হয়ে কি মূল্যই না ওরা দিচ্ছে! পাকিস্তানে মুহাজিরদেরও একই করুণ অবস্থা! পাকিস্তানে মুহাজিররা থাকে মূলত সিন্ধু প্রদেশের রাজধানী করাচীতে। পাকিস্তানে ওদেরকে ঠাট্টা করে ডাকা হয় 'গাদ্দার' 'মাক্কার' এরকম আরও নানারকম বিচিত্র নামে।
১৯৮ ▌অদৃশ্য প্রচারণা শক্তি:
বর্তমানে স্বাধীনভাবে কোনো কিছু চিন্তা করার আগেই আমাদের চিন্তাশক্তিকে প্রভাবিত করা হয় । এ জন্য ক্ষমতাবান মিডিয়া, ধনবাদী বিশ্বের পিআর ফার্ম, টেক-জায়ান্টস, লবিস্ট ও নানা বুদ্ধিজীবীদের সংস্থার সমন্বয়ে এমন শক্তিশালী প্রচার জগৎ গড়ে উঠেছে যে, ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত ভাবেও মানুষ তার নিয়ন্ত্রণ এড়াতে পারে না। এই অদৃশ্য প্রচারণা শিল্পের কাজ হচ্ছে প্রতিনিয়ত ম্যানিপুলেট করে আমাদের বিশ্বাস ও চিন্তাশক্তিকে তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাওয়া। একটা জনপ্রিয় থিওরী আছে যে, একটি মিথ্যাকে শতবার বললে ওটা সত্য হয়ে যায়। স্বার্থ হাসিল করতে বৃহৎ শক্তিগুলো এই সুত্রটি কাজে লাগাচ্ছে বহুকাল থেকে। উন্নতবিশ্বে হাজার হাজার শক্তিশালী পিআর ও এজেন্সি গড়ে উঠেছে, যারা শত মুখে একটি মিথ্যাকে সত্য বলে প্রচার করে। এইসব এজেন্সিগুলির আনেক শাখা-প্রশাখা আছে দেশে-বিদেশে। যেমন কোনো দেশের স্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের মধ্য থেকে লোক বেঁছে বের করে অর্থ বা অন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা দিয়ে স্টাডি সার্কেল, রিসার্চ গ্রুপ ইত্যাদি নানা সংস্থা গড়ে তোলে তারা।
১৯৯ ▌সালোক সংশ্লেষণ পদ্ধতিতে খাদ্য :
গাছ যেভাবে পাতার সাহায্যে সালোকসংশ্লেষণ পদ্ধতিতে নিজের খাবার নিজে তৈরি করে, ঠিক তেমনি ভবিষ্যতে মানুষও নিজের খাবার নিজেই তৈরি করতে পারবে! মার্কিন গবেষক মাইকেল বার্টন ও মিচিকো নিত্তা ‘অ্যালজিকালচার সিমবায়োসিস স্যুট’ প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন। তাঁদের তৈরি প্রকল্প অনুয়ায়ী অ্যালজি বা শৈবাল থেকে উৎপন্ন খাবার সরাসরি মানুষের শরীর শোষণ করে নিতে পারবে। একটি বিশেষ স্যুট পরিধান করে রোদে বের হলে তা খাবার তৈরি করা শুরু করবে। এ প্রক্রিয়ায় মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস থেকে সংগৃহীত হবে কার্বন ডাই অক্সাইড। এ স্যুটটির আরও উন্নত করতে কাজ করছেন বিজ্ঞানীরা। প্রকল্পটি এমন একটি ভবিষ্যতে কথা জানায় যেখানে মানুষ তার শরীরের ভেতর শৈবাল উৎপন্ন করবে এবং সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করবে। ভবিষ্যতে মানুষ টিকে থাকার জন্য শরীরকে খাবার উৎপাদনের জন্যই কাজে লাগাতে গবেষণা এগিয়ে চলছে এবং এর সম্ভাবনা ও সাফল্য এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
২০০ ▌সম্রাট অশোক ও বৌদ্ধ ধর্ম :
গৌতম বুদ্ধ মৃত্যুবরণ করেন খ্রিস্টপূর্ব ৪৮৬ সালে। গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর ১৬৫ বছর পর অশোক এক শক্তিশালী সম্রাট হিসেবে ভারতবর্ষে আবির্ভূত হন। এই অশোকই বৌদ্ধ ধর্মকে নিয়ে যান দেশে বিদেশে। সম্রাট অশোকের পুত্র মহেন্দ্র ও কন্যা সংঘমিত্রা শ্রীলংকায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার করেন। এছাড়া চীন, কাশ্মীর, গান্ধার, মহারাষ্ট্র, আফগানিস্তান, নেপাল, থাইল্যান্ড, জাপান, প্রভৃতি দেশে এখনো আমরা যে সকল বৌদ্ধ ধর্মালম্বী দেখতে পাই এটা মূলত সম্রাট অশোকেরই অবদান । মগধ আর্যদেরই রাজ্য ছিল প্রথমে। বিহার এবং বাংলার অধিকাংশই মগধ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এই মগধেই এক পর্যায়ে মৌর্য সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে, সম্রাট অশোকই ছিলেন এই মৌর্য সাম্রাজ্যের শেষ রাজা। লোহা উৎপাদনে বিখ্যাত ছিল মগধ। বিন্দুসারের ১৬ জন স্ত্রী ছিলো, এই ১৬ জন স্ত্রীর ছিলো সর্বমোট ১০০টি পুত্র। অশোক ছিলেন এই একশো জনের মধ্যে একজন। অশোক ৮৪ হাজার বৌদ্ধ বিহার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাছাড়া তৎকালীন প্রায় ৬০ হাজার বৌদ্ধ ভিক্ষুকে খাবার সরবরাহ করতেন।
২০১ ▌আমেরিকার যাযাবর জীবন:
আস্ত বাড়িটাকে নিয়ে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করে দিন গুজরান করছে এমন মার্কিনির সংখ্যা নেহায়েত কম নয়, পাক্কা দুই কোটি! সাউথ ক্যারোলিনা রাজ্যে গেলে দেখা যাবে প্রতি পাঁচটি বাড়ির মধ্যে একটিই ভ্রাম্যমাণ। মানে চার চাকায় ভর করে ঘুরে বেড়াচ্ছে ওই পরিবারগুলো। দক্ষিণের আরো সাতটি রাজ্যের চিত্রটাও কমবেশি একই রকম। যুক্তরাষ্ট্রে মোট ভ্রাম্যমাণ বাড়ি আছে ৮৫ লাখ। এসব বাড়ির ৫৭ শতাংশ মালিকই চাকরিতে নিয়োজিত আর ২৩ শতাংশ গেছে অবসরপ্রাপ্ত। চাকা ছাড়াও কিছু বাড়িও আছে যেগুলো দেখে অবসর কাটানোর কটেজ মনে হতে পারে। এগুলোও এক ধরনের মোবাইল হোম। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় এ ধরনের বাড়ি নিয়ে রীতিমতো কয়েকটা পাড়া আছে। যেমন- ওক হ্যাভেন। ছোটখাটো অস্থায়ী বাড়িগুলো ওক কাঠের বানানো ভূস্বর্গের মতোই। ১৯৩০ সালের মহামন্দার সময়টাতে অনেকে বাধ্য হয়েছিল ঘরবাড়ি ছাড়তে। তখনই পরিত্যক্ত ও খালি পড়ে থাকা এলাকাগুলোতে গড়ে উঠতে থাকে ট্রেইলার পার্ক। ফেলে দেয়া গাড়িতে সংসার শুরু করে মানুষ।
২০২ ▌ পাকিস্তানের বালুচিস্তান :
১৯৪৭ সালে সেক্যুলার বালুচিস্তান অঞ্চল, যার পূর্ব নাম ছিল খালাত স্টেট, ইসলামিস্ট পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল সেনাবাহিনীকে আদেশ দিলেন খালাতে অভিযান চালাতে। সে কারণে বালুচিস্তান সার্বভৌমত্ব হারাল এবং বন্দুকের মুখে পাকিস্তানের একটি অংশে পরিণত হলো। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় বাঙালিদের মতোই বালুচরা পাকিস্তান পিপলস পার্টিকে ভোট দেয়নি। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতৃত্বে বালুচ জাতীয়তাবাদীরা তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়েছিল। তখন পাকিস্তান বালুচদের ম্যান্ডেট অস্বীকার করেছিল এবং সব কয়জন নির্বাচিত পার্লামেন্টারিয়ানকে জেলখানায় পুরেছিল। হাজার হাজার বালুচকে গৃহহারা করে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, যারা পার্শ্ববর্তী আফগানিস্তানে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। বালুচিস্তানের সমাজ উন্নয়নের অবস্থান এখন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। পাকিস্তান বিরতিহীনভাবে বালুচিস্তানে সেনা অপারেশন চালিয়ে যাচ্ছে।
২০৩ ▌ইবনে বতুতা :
১৩০৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মরক্কোর তানজিয়ারে জন্মগ্রহণ করেন পরিব্রাজক- ইবনে বতুতা। একজন সুন্নি মুসলিম চিন্তাবিদ, বিচারক হিসাবে তিনি আফ্রিকা থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্য, ভারতীয় উপমহাদেশ, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং চীন পর্যন্ত বিস্তির্ন এলাকা ভ্রমন করেছেন। প্রায় ৩০ বছরের ভ্রমণ জীবনে পাড়ি দিয়েছেন ৭৩ হাজার মাইল। এই ভ্রমণপিপাসা তাকে মাত্র একুশ বছর বয়সে বাড়ি থেকে পথে নামায়। ইবনে বতুতা নিজের লেখা ভ্রমন কাহিনীতে বাংলাকে অতিথিপরায়ণ একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এই ভ্রমণ কাহিনী হতে জানা যায় যে, সেসময় বাংলাদেশ ইসলাম ধর্ম প্রচারের একটি প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বহু দরবেশ, ফকির ও উলামা বাস করতেন। চতুর্দশ শতকে ইবন বতুতা যখন বাংলাদেশ পরিভ্রমণে আসেন তখন তিনি বাজারে দাস-দাসী ক্রয় বিক্রয় হতে দেখেন। তিনি লিখেছেন, “উপ স্ত্রীরূপে সেবা কর্মের উপযুক্ত একটি সুন্দরী যুবতীকে এক স্বর্ণ দিনারে আমার সম্মুখে বিক্রয় করা হয়। ১৩৬৯ সালে ইবনে বতুতা ইন্তেকাল করেন ।
২০৪ ▌মির্জা গালিব :
“বাংলা সাহিত্যে রবীন্দনাথের যে গুরুত্ব, উর্দু সাহিত্যে মির্জা গালিবের গুরুত্ব তারচেয়ে অধিক বললে অত্যুক্তি হবে না। ভারত উপমহাদেশের চিরায়ত উর্দু এবং ফার্সি কবি মির্জা গালিব ৫০ বছর দিল্লী-আগ্রায় মোগলদের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন। কিন্তু নিজের বসবাসের জন্যে একটি বাড়ি কিনেননি। সারা জীবন থেকেছেন ভাড়া করা বাড়িতে। আবার সারা জীবনই শুধু বই পড়েছেন। তার খ্যাতি আসে তার মৃত্যুর পর। নয় বছর বয়সেই গালিব ফার্সিতে কবিতা লিখতে শুরু করেন। তেরো বছর বয়সে গালিব মুঘল দরবারের এক আমীরের মেয়ে উমরাও বেগমকে বিয়ে করেন। তাঁদের সাতটি সন্তান জন্ম নিলেও একজনও বাঁচেনি। গালিব শুধু তাঁর কাব্যের জন্যই বিখ্যাত ছিলেন না।’ বিখ্যাত ছিলেন বেপরোয়া জীবনযাপন, মদ, নারী আর জুয়ার প্রতি তীব্র আসক্তির জন্যও। সাহিত্যাকাশে মির্জা গালিব পূর্ণ চাঁদের মতো- তাঁর কলংক আছে কিন্তু তাঁর জোছনার সৌ›ন্দর্যের কাছে সবাইকে হার মানতে হয়। ১৮৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি গালিব ইন্তেকাল করেন। দিল্লির নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজারের কাছে তাকে দাফন করা হয়।
২০৫ ▌কার্বন ন্যানোটিউব:
‘ন্যানো’ হলো পরিমাপের অতি ক্ষুদ্র একটি একক। ১ মিটারের একশ’ কোটি ভাগের ১ ভাগকে বলা হয় ১ ন্যানোমিটার, যা দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে চেয়েও ক্ষুদ্র। আমাদের চুলের ব্যাস হলো ৫০,০০০ ন্যানোমিটার। এ থেকে মোটামুটি ধারণা করতে পারছেন, কত ক্ষুদ্র এই ন্যানোমিটার। কার্বন ন্যানোটিউব হলো সিলিন্ডার আকৃতিতে পেঁচানো গ্রাফিন। সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতি তৈরিতে, চিকিৎসাবিজ্ঞানে, এমনকি টেক্সটাইল শিল্পেও কার্বন ন্যানোটিউবের ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে। ইলেকট্রনিক্সের জগতে এ টিউবের ব্যবহার হচ্ছে। গবেষকরা মানুষের রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ন্যানোটিউব প্রযুক্তিকে কাজে লাগানোর নতুন সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছেন। কার্বন ন্যানোটিউব ব্যবহার করে জাপানি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এমন একটি ন্যানো রোবট তৈরির দ্বারপ্রান্তে, যা মানুষের রক্তের মধ্যে ঘুরে বেড়াবে, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ যে-কোন রোগের জীবাণু নির্মূল করবে। রোগ নির্ণয়ের জন্যও আর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হবে না। মুহূর্তে শরীরে অবস্থা ‘কম্পিউটার ও মোবাইলে’ জানাবে এই কার্বন ন্যানোটিউব।
২০৬ ▌কন্সপিরেসি থিওরি :
যিশু খ্রিস্টের মৃত্যুর কয়েক বছর পরে বাতাসে ভেসে বেড়ায় এক নতুন গুপ্তসংঘের গুজব। এই গুপ্তসংঘের সদস্যরা বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যায়। তারা জ্যন্ত অবস্থায় বাচ্চার রক্ত পান করে। প্রাচীন রোমে গরীব ঘরের শিশুদের না খাওয়াতে পেরে রোমানরা তাদের বাচ্চাদেরকে বন-জঙ্গলে ফেলে রেখে আসতো। খ্রিস্টানরা এ বাচ্চাগুলোকে পরবর্তীতে তুলে নিয়ে এসে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করে। তাদের মাথায় চিন্তা আসলো কেন একজন আরেকজনের বাচ্চাকে পেলেপুষে বড় করবে? তারা এত বাচ্চা দিয়ে করবেইটা কী? ফলে তারা বাচ্চা খেয়ে ফেলার মতো গুজব তৈরি করে। এভাবেই তৈরি হয় কন্সপিরেসি থিওরি। শতকরা ৯৯ ভাগ কন্সপিরেসি থিওরির সাথেই কোনো না কোনো গুপ্ত সংগঠন জড়িয়ে আছেন বলে মানুষ মনে করেন। এমনকি কন্সপিরেসি থিওরিস্টদের মতে, পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করার পেছনেও আছে ইলুমিনাটি এবং রথসচাইল্ড পরিবারের হাত। কন্সপিরেসি থিওরিতে বিশ্বাসীরা মনে করে, পৃথিবীর সব ঘটনার পেছনেই কোনো না কোনো কারণ আছে।
২০৭ ▌মস্তিষ্কের ডাটা ট্রান্সফার:
যদি কোনোভাবে কারো মস্তিষ্ক কপি করে নেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে আর কষ্ট করে পড়াশোনা করে শিক্ষিত হতে হবে না। কেননা সকল জ্ঞান বুদ্ধি, অনুভূতি সবই কপি করা হয়েছে তার মস্তিষ্কে। এই প্রযুক্তিকে সফল করার লক্ষ্যে ২০৪৫ ইনিশিয়েটিভ নামে একটি প্রোজেক্ট চলছে। ইতিমধ্যেই বিজ্ঞানীরা কেঁচোর ব্রেইন ম্যাপ থেকে একটি রোবট বানিয়েছেন। এতে রোবটটি সম্পূর্ণ কেঁচোর ব্রেইনে কাজ করছে। কেঁচোর মস্তিষ্কে ৩০২টি নিউরন থাকে এবং প্রত্যেকের মধ্যে ৭,০০০ নিউরন ইন্টারকানেকশন আছে। কিন্তু মানুষের মস্তিকের ১০০ বিলিয়ন নিউরন এবং এদের মধ্যকার ১০০ ট্রিলিয়ন কানেকশন। তবে যত কঠিনই হউক ২০৫০ সালের মধ্যে আমাদের কাছে মাইন্ড আপলোডিং প্রযুক্তি বা ইমর্টালিটি প্রযুক্তি বাস্তবে দেখা দেবে। ইতিমধ্যে বিজ্ঞানীরা দুটি মস্তিষ্কের মধ্যে কিছু তথ্য শেয়ার করার সফলতা পেয়েছে। যেমনÑ দুটি আলাদা রুমে দুইজনকে কম্পিউটারে বসিয়ে তাদের মধ্যে মস্তিষ্কের সংযোগ দিয়ে একজনের ইচ্ছায় অন্যজনের হাত-পা দিয়ে কাজ করিয়েছেন।
২০৮ ▌কুম্ভমেলা:
একটি হিন্দু ধর্মের ঐতিহ্যবাহী উৎসব। প্রতি ছয় বছর অন্তর হরিদ্বার ও এলাহাবাদে অর্ধকুম্ভ মেলা বসে। প্রতি বারো বছর বা এক যুগ অন্তর অন্তর প্রয়াগ, হরিদ্বার, উজ্জ্বয়িনী ও নাসিকে পূর্ণকুম্ভ আয়োজিত হয়ে থাকে। হিসাব করলে দেখা যায় প্রতি তিন বছর পরপর চার জায়গার কোথাও না কোথাও কুম্ভমেলা বসবেই যদিও তা পূর্ণই হোক বা অর্ধ। কুম্ভমেলা চারটি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে আয়োজিত হয়ে থাকে। এই চারটি স্থান নির্বাচিত হয় বৃহ¯পতি গ্রহ ও সূর্যের অবস্থান অনুযায়ী। ইলাহাবাদের মেলাটি হয় গঙ্গাÑযমুনা ও অন্তসলিলা সরস্বতীর সংযোগ স্থানে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন যে এই ¯স্নানের মধ্য পাপ এবং জন্ম ও পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্ত হওয়া যায়।