তথ্য-১০১  ▌বাঙালিরা যেভাবে মুসলমান হল: 

ভারতে মুসলমান শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বাংলার বাইরে থেকে মুসলমানরাও বেশি সংখ্যায় আসতে থাকে।  যে সব মুসলমান ধর্মপ্রচারক এদেশে ধর্ম প্রচার করতে এসেছিলেন তারা মুসলমান প্রশাসকদের (১২০৪ থেকে ১৭৫৭)  সহায়তা পেয়েছিলেন। ১৫৭৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে দিল্লির মোগল সম্রাটদের নিযুক্ত সুবেদাররা বাংলা শাসন করতে থাকেন। মোগল সুবেদার মুর্শিদ কুলি খাঁ ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে  বাংলায় স্বাধীন নবাবতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের জয়লাভ পর্যন্ত এই নবাবরাই বাংলা শাসন করেন। এ দেশের মানুষ মুসলমান হয়ে যাওয়ার সব থেকে বড় কারণ ব্রাহ্মণ্য ধর্মের অত্যাচার থেকে মুক্তি পাওয়ার আকুতি। পাল আমলে এদেশে অনেক বৌদ্ধ ছিল। ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পৃষ্ঠপোষক সেন-বর্মন-দেব আমলে তাদের ওপর অকথ্য অত্যাচার হতো। স্বাভাবিকভাবেই বহুসংখ্যক বৌদ্ধ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল। সুফী দরবেশরা বিভিন্ন জায়গায় খানকাহ প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করলেন। সূফীদের ধর্মীয় গোঁড়ামি ছিল না। ফলে খুব সহজেই মানুষ তাদের প্রতি আকৃষ্ট হতো।


 তথ্য-১০২  ▌বাংলা থেকে বৌদ্ধ ধর্মের অবলুপ্তি: 

একসময় এই বাংলার মেজরিটি মানুষ বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী ছিলেন। আজও বাংলাদেশে এবং পশ্চিমবঙ্গে বৌদ্ধ শাসনামলের নানা নিদর্শন, পুরনো অনেক বিহারের অস্তিত্ব বিদ্যমান। বৌদ্ধরাই সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় কিছু ধর্মীয় গান রচনা করেছিলেন যেগুলো চর্যাপদ নামে পরিচিত। ৭৫০ সালে পাল বংশের  প্রথম রাজা গোপালের মাধ্যমে বৌদ্ধদের শাসনামল শুরু হয় এবং ৪শ’ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। পরবর্তীতে দক্ষিণ ভারত থেকে আগত সেন বংশের ব্রাহ্মণরা পালদের থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয় এবং বৌদ্ধদের উপর নির্যাতন শুরু করে। সেন রাজাদের অত্যাচারে বৌদ্ধদের একটা অংশ নেপালে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন।  বাঁচার তাগিদে বাধ্য হয়ে বৌদ্ধদের একটা অংশ হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে বর্ণপ্রথার সর্বনি¤েœ স্থান পায়। বৌদ্ধদের আরেকটি অংশ দিল্লির মুসলিম শাসক কুতুবুদ্দিন আইবেকের শরণাপন্ন হয় এবং বৌদ্ধদের রক্ষার অনুরোধ করেন। বৌদ্ধদের অনুরোধে বখতিয়ার খিলজি তার বাহিনী নিয়ে এগিয়ে আসেন এবং লক্ষণ সেনকে আক্রমণ করে ১২০৪ সালে বাংলায় মুসলিম শাসনের সূচনা করেন।


 তথ্য-১০৩  ▌ বৈশিক কলা ও হাম্বুবারী আইন : 

প্রাগৈতিহাসিককালে পুরুষরা শিকারের কাজে অনেক দূরে যেতে হতো। এই সময় পুরুষরা শিকার করতে করতে অন্য একটি গোত্রেও চলে যেত অনেকসময়। এই সময়  ঐ শিকারী পুরুষ তখন নতুন গোত্রের নারীর সঙ্গে সে যৌনতা করতে পারত। তবে তাকে শিকারের কিছু অংশ দিতে হতো। নৃবিজ্ঞানীদের মতে এখন থেকেই পতিতাবৃত্তির শুরু। প্রাগৈতিহাসিককালে বিবাহ প্রথা ছিল না বলেই মানুষ যৌন স্বাধীনতা ভোগ করত।  ঐতিহাসিক হেরোডেটাস লিখেছেনÑ প্রাচীন ব্যাবিলনে  “মাইলিত্তা (ব্যাবিলনীয়দের রতিদেবী) দেবীর মন্দিরে প্রত্যেক বাড়ীর প্রত্যেক নারীকেই বছরে অন্তত একবার যেতে হতো। তারা মন্দিরে লাইন ধরে বসে থাকত। এই মন্দিরে যে সকল পুরুষ আসত তারা নিজেদের পছন্দ মতো নারীকে রৌপ্যমুদ্রা নিক্ষেপ করত এবং বলত তোমার উপর মাইলিত্তার আশীর্বাদ বর্ষিত হয়েছে। তখন তারা কোনো নির্জন স্থানে গিয়ে যৌনতা করত।” সুন্দর নারীরা খুব সহজেই খদ্দের পেয়ে যেত কিন্তু কুৎসিত নারীদের দুই-তিন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো ঘরে ফিরতে। এটাই হাম্বুবারী আইন।


 তথ্য-১০৪  ▌রোমান সাম্রাজ্যের হাম্মামখানা: 

গ্রিক দার্শনিক সলোন (ঝড়ষড়হ) আইন প্রণয়ন করেন যে, পতিতারা রাষ্ট্রের সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এদের আয়ের টাকা দিয়ে  মন্দির নির্মাণ ও সংস্কার করা হবে। সলোনের সময় গ্রিসের নারীরা স্বেচ্ছায় মন্দিরে আসত না, তাই বিজিত অঞ্চলের সকল নারীকেই জোর করে মন্দিরে রাখা হতো পতিতাবৃত্তির জন্য। তারা রাস্তার পাশে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। হেতায়ারা (ঐবঃধরৎধ) নামে এক শ্রেণির উঁচু দরের পতিতা ছিল গ্রিসে। এরা ছিল গ্রিসের কবি, দার্শনিক, সেনাপতি, রাজপুরুষের ভোগের সামগ্রী। রোমান সাম্রাজ্যের চরম উন্নতির সময় নারী- পুরুষ একত্রে উলঙ্গ অবস্থায় গোসল করার প্রথা চালু হয়। এর ফলে সমগ্র ইতালি জুড়ে অনেক হাম্মামখানা চালু হয়। এই হাম্মামখানাগুলো হয়ে উঠে যৌনাচারণের কেন্দ্র। রোমের সার্কাস, থিয়েটার,মেলা, তীর্থস্থানগুলোতে গণিকাতে পরিপূর্ণ থাকত। এই হাম্মামখানায় অনেক পুরুষ নিজের স্ত্রীকে বিক্রি করে দিত। আবার বড় বড় সম্রাটের স্ত্রীরাও নির্জন স্থানে বাড়ি ভাড়া করে সম্রাটের অজ্ঞাতে পতিতাবৃত্তি করত। সম্রাট ক্লাডিয়াসের স্ত্রী মোনালিসা এই অপরাধে সম্রাটের আদেশে মৃত্যুদ-ে দ-িত হন।


 তথ্য-১০৫  ▌প্রাচীন ভারত এবং দেবদাসী প্রথা: 

প্রাচীন ভারতে পুরোহিতরা অনেক সময় নিজেকে দেবতার সঙ্গে তুলনা করতেন। অনেক গ্রোত্রে কোনো নববিবাহিতা নারী স্বামীর সঙ্গে রাত কাটানোর পূর্বে পুরোহিতের সঙ্গে রাত কাটাতে হতো। বড় বড় মন্দির, তীর্থস্থানগুলোতে দেবদাসী রাখা হতো। এলাকার সুন্দরী নারীকে ধরে এনে দেবদাসী বানানো হতো। এসব দেবদাসীদের সঙ্গে পুরোহিতদের যৌনতা চলত। অনেক সময় পুরোহিতরা মন্দিরের অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের সঙ্গেও সঙ্গমের অনুমতি দিত। এখনো গোপনে ভারতের অনেক মন্দিরে দেবদাসী প্রথা চালু আছে। এছাড়া ‘উত্তর ভারতে জিপসি সম্প্রদায়ের মধ্যে মেয়ে শিশুকে পতিতা বানানোর প্রথা ছিল। বিহার ও উত্তর প্রদেশে ছিল নায়েক, গুজরাটে রা-ি এবং দাক্ষিণাত্যে ছিল মোহর নামক পতিতা প্রথা। এর কারণ, মহাভারতে উল্লেখ আছে যে, একজন ভালো বেশ্যা উচ্চতর জীবনে পুনর্জন্ম লাভ করতে পারে। মুহম্মদ বিন কাসিম সিন্ধু বিজয়ের পর সেবাদাসী প্রথাটা বন্ধ করেন। নিম্নবর্ণের হিন্দু মেয়েরা তখন  কাসিমের মূর্তি বানিয়ে পূজা শুরু করে দিয়েছিলো।  


 তথ্য-১০৬  ▌অটোমান সাম্রাজ্য: 

তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহর থেকে সারা পৃথিবীর তিনটি মহাদেশ শাসন করা অটোমান রাজবংশ টিকে ছিল ৬২৪ বছর। মুসলিম অটোমান সুলতানগণ শাসন করেছেন ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়াসহ এশিয়া ও আফ্রিকার দেশসমূহ এবং বর্তমান বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশ। অটোমান বা উসমানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম উসমানের বাবা আর্তুগ্রুল গাজী ছিলেন মঙ্গোলিয়ান বংশোদ্ভূত এক যোদ্ধা।  সেলজুক সুলতান আলাউদ্দিনকে এক যুদ্ধে সাহায্য করার জন্য পুরস্কার হিসেবে তার সাম্রাজ্যের একটি অংশের শাসনকর্তা বানিয়ে দেন আর্তুগ্রুল গাজীকে।  সেলজুক সাম্রাজ্য দিন দিন দুর্বল হয়ে ভেঙে যাওয়ার কারণে তুরস্কের বিভিন্ন অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আর্র্তুুগ্রুল গাজীর ছেলে প্রথম উসমান তার শাসনাধীন অঞ্চলকে বৃদ্ধি করে ১২৯৯ সালে নিজেকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর তার ছেলেরা সাম্রাজ্যের আরও বিস্তৃতি ঘটান। দক্ষ সুলতান সুলেমান তার দুই যোগ্য সন্তানকে মৃত্যুদ- দেন, ফলে একমাত্র উত্তরসূরি ছিলেন মদ্যপ কবি শাহজাদা সেলিম। তার অমনোযোগিতার কারণে অটোমান সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়।


তথ্য-১০৭ ▌ ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ: 

প্রথমদিকে রোমে বসবাসরত খ্রিস্টানরা তাদের ধর্মীয় সভা করতো অত্যন্ত গোপনে। খ্রিস্টমতবাদ দরিদ্র রোমান বিশেষ করে দাসদের মধ্যে ব্যাপক আবেদন সৃষ্টি করে এবং দলে দলে তারা খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা নিতে থাকে। ৩১৩ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট কনস্টানটাইন খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। খ্রিস্টধর্মে রাজধর্মে পরিণত হওয়ায় যাজকরা হয়ে ওঠে পরাক্রান্ত। চরম অসিহিষ্ণুতা যেনো খ্রিস্টধর্মের একটি অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। তারা ইহুদিদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চালায় তাদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ। এ প্রক্রিয়া থাকে আরবীয় মুসলিমদের আগমন পর্যন্ত। মুসলমানদের আগমন জেরুজালেমের ইহুদিদের জীবনে আনে স্বস্তি। প্রাণে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা মেলে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে খ্রিস্টানদের প্রতি সেলজুক সুলতানের বিদ্বেষমূলক আচরণ ডেকে আনে ক্রুসেড। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের খ্রিস্টনরপতি ও ধর্মাচার্যরা ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে ধর্মান্ধতার রক্তবীজ ছড়িয়ে। ১০৯৬ সাল  থেকে জেরুজালেম দখলের যুদ্ধে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ সংঘটিত হয় আটটি। খ্রিস্টান ধর্মান্ধদের এই ক্রুসেডের মূল শক্তি ছিল ফ্রাঙ্করা (জার্মান জাতি যারা আজকের ফ্রান্স দখল করে)।


তথ্য-১০৮▌মুসলিম সাম্রাজ্য ভাগাভাগি: 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত তুরস্কের ওসমানিয়া সাম্রাজ্য ভেঙে টুকরো টুকরো করে যখন নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা নেয় ব্রিটেন ও ফ্রান্স, সেই সময় তাদের ভিতরে ঘাপটি মেরে থাকা মৌলবাদী বিষাক্ত সাপটি ফণা তোলে। ভাগাভাগিতে ফ্রান্স পায় সিরিয়া। সিরিয়ার শক্তি খর্ব করার জন্য সাম্রাজ্যবাদীরা এর একটি অংশ কেটে সৃষ্টি করে লেবানন।  তিউনিসিয়া, মরক্কোয় ফ্রান্সের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। এ দুটি দেশ ফ্রান্সের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়। আলজিরিয়ায় সরাসরি ফ্রান্সের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। লিবিয়া ব্রিটেনের আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এরপর ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার ব্যালফোরের ইহুদি রাষ্ট্র সৃষ্টির ঘোষণায় ভাগাভাগি হয়ে যায় আরব জাহান। ভাগাভাগিতে ব্রিটিশের তাঁবেদারিতে আসে সারা আরব উপদ্বীপ, ইরাক, মিশর ও প্যালেস্টাইন। ব্রিটিশ, ফ্রান্স ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ সমর্থন নিয়ে জেরুজালেমের মুসলমানদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইহুদিরা। অথচ এই ইহুদিরাই এতোবছর মুসলমানদের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছে ক্রুসেডার খ্রিস্টধর্মীদের বিরুদ্ধে। 


 তথ্য-১০৯  ▌কাসিমের ভারত অভিযান : 

হজরত মুহাম্মদ (স:)- এর জীবদ্দশাতেই সাহাবী মালিক ইবনে দিনার ২০ জন সঙ্গী নিয়ে ইসলাম প্রচারে ভারত আসেন। ৬২৯- সনে ভারতের কেরালাতে চেরামান জুম্মা মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রায় ১০০ বছর পর মাত্র ১৭ বছর বয়সে ৭১০ সালে  ৬০০০ সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে মুহাম্মদ বিন কাসিম ভারত অভিযানে আসেন এবং সিন্ধু ও মুলতান জয় করেন। মুহাম্মদ বিন কাসিম স¤পর্কের দিক থেকে ছিলেন ইরাকের তৎকালীন গভর্নর হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ-এর জামাতা।   সিন্ধুর রাজা দাহিরকে পরাজয়ের মাধ্যমে সিন্ধু মুসলিমদের অধীনে চলে আসে। অন্যত্র অগ্রসর না হয়ে তারা সেখানেই বসতি স্থাপন করল এবং ভারতীয়দের জন্য নতুন কোনও উপদ্রব তৈরি করল না। পরিস্থিতি কিছুকাল শান্ত থাকলেও ১০০০ সাল থেকে গজনীর সুলতান মাহমুদ ভারতের মূল ভূখ-ে১৭বার আক্রমণ করেন। প্রতিবারই তিনি বিজয়ী হয়ে স্বদেশ আফগানিস্তানে প্রত্যাবর্তন করেন। পিতার মৃত্যুর পর ৯৯৭ খৃস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ গজনীর সিংহাসনে বসেন। 


তথ্য-১১০  ▌গজনীর সোমনাথ বিজয়: 

সুলতান মাহমুদ গজনীর  অভিযানসমূহের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য সোমনাথ বিজয়। তিনি উত্তর ও মধ্য ভারতে উপর্যুপরি কয়েকবার সামরিক অভিযানের মাধ্যমে প্রচুর ধনস¤পদ লাভ করেন। ফলে সোমনাথের দিকে তার নজর পড়ে।  গুজরাটের দক্ষিণে কথিওয়ারের সমুদ্র উপকূলে বিশাল এলাকাজুড়ে তদানীন্তন ভারতবর্ষের শ্রেষ্ঠ মন্দির ছিল সোমনাথ। এর যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য হিন্দু রাজাগণ দশ হাজার গ্রামকে স¤পত্তিরূপে দান করেন। পূজা-পার্বনের জন্য সর্বদা এক হাজার ব্রাক্ষণ থাকত। দেবতার সন্তুষ্টির জন্য দুইশত গায়িকা ও পাঁচশত নর্তকী সর্বক্ষণ নৃত্য-গীত করতো। তীর্থ যাত্রীদের মস্তক মুন্ডিত করার জন্য তিনশত নাপিত ছিল।  ১০২৫-২৬ খৃস্টাব্দে সুলতান মাহমুদ নিয়মিত বাহিনী এবং ত্রিশ হাজার স্বেচ্ছাসেবকসহ গুজরাটের দিকে ধাবিত হলেন।  হিন্দু রাজপুত নৃপতিগণ মাহমুদের গতিরোধ করলেন। তুমুল যুদ্ধে  মুসলিম বাহিনী জয়লাভ করে। এ মন্দির থেকে সুলতান মাহমুদ অসংখ্য ধনস¤পদ লাভ করেন। 


তথ্য-১১১  ▌কুতুবুদ্দীন আইবেক: 

১২০৬ সাল থেকে শুরু করে ১৫২৬ সাল পর্যন্ত মোট ৩২২ বছর একাধিক মুসলিম রাজবংশ ভারত শাসন করেছে। ১২০৬-১৫২৬ সাল পর্যন্ত তুর্কী আর আফগান মুসলিম রাজবংশের এই শাসনকে একত্রে ‘দিল্লি সালতানাত’ বলা হয়। গজনীর শাসনকর্তা মুহাম্মদ ঘুরি ভারত জয়ের পর তার বিশ্বস্ত সেনাপতি কুতুবুদ্দীন আইবেককে রেখে গজনী ফিরে যান। কুতুবুদ্দীন আইবেক ১২০৬ সালেই দিল্লীর সিংহাসনে বসেন।  সিংহাসনে বসার মাত্র ৪ বছর পর, পোলো খেলার সময় ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে মারা যান। তার সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি ১২০৩ সালে বিহার এবং ১২০৫-০৬ সালের মধ্যে তিনি বাংলা জয় করেন। কুতুবুদ্দীন আইবেকের জামাতা ইলতুতমিশ ১২১১-৩৬ সাল পর্যন্ত দিল্লীর সুলতান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।  ১২৩৬ সালে ইলতুতমিশের মৃত্যুর পর তার কন্যা রাজিয়া দিল্লির সিংহাসনে বসেন। ইলতুতমিশের অবর্তমানে রাজ্য পরিচালনা করতেন তার কন্যা রাজিয়াই। 


তথ্য-১১২  ▌বখতিয়ার খিলজী: 

ত্রিয়োদশ শতকের গোড়ার  বাংলায় রাজত্ব করতেন সেন বংশের রাজা লক্ষণ সেন। রাজা লক্ষণ সেনের রাজধানী ছিল ঢাকার বিক্রমপুরে। তিনি বৃদ্ধ বয়সে গঙ্গাপাড়ের পবিত্র তীর্থস্থান নদীয়ায় বাস করছিলেন। ততদিনে সমগ্র উত্তর ভারত তুর্কীরা অধিকার করেছে এবং বখতিয়ার খিলজী বিহার জয় করেছেন। পন্ডিতগণের পরামর্শে রাজা লক্ষণ সেন নিশ্চিত হন যে, বিহারজয়ী বখতিয়ার খিলজী তাকে আক্রমণ করবে। তার অনতিকাল পরেই বখতিয়ার খিলজী নদীয়া আক্রমণ করেন। বখতিয়ার খিলজী ১৮ জন অশ্বারোহী নিয়ে নদীয়া পৌঁছেন এবং তার মূল বাহিনী পেছনে আসছিল।  খিলজী সোজা রাজা লক্ষণ সেনের প্রাসাদদ্বারে উপস্থিত হন এবং দ্বাররক্ষীদের হত্যা করেন। রাজা তখন মধ্যাহ্নভোজে লিপ্ত ছিলেন। খবর শুনে তিনি নগ্নপদে প্রাসাদের পশ্চাৎদ্বার দিয়ে পলায়ন করেন এবং বিক্রমপুরে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। বাংলা বিজয়ের অনতিকাল পরে তিনি তিব্বত আক্রমনে বের হন। এই অভিযানে তিনি শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়ে বিপর্যস্ত বখতিয়ার ১২০৬ সালে মারা যান।


তথ্য-১১৩  ▌ ১২৪৬  থেকে ১৫২৬  :  

১২৪৬ সালে ইলতুতমিশের পুত্র নাসিরুদ্দীন মাহমুদ মসনদে বসেন।   তিনি ধর্মকর্মে ব্যস্ত থাকতেন। ১২৬৬ সালে তার অনুসারি  গিয়াসউদ্দীন বলবন সিংহাসনে বসেন। তার মৃত্যুর পর  নাতি মুহাম্মদ কায়কোবাদ সিংহাসনে বসেন। মাত্র ৪ বছর শাসন করার পর এক আফগান খিলজী প্রধানের হাতে তিনি নিহত হন। জালালুদ্দিন খিলজির শাসনকালে (১২৯০-৯৬)। পরবর্তী সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি ১২৯৯ সালে গুজরাটে এক বড় ধরনের অভিযান চালিয়ে সবগুলো বড় বড় শহর ও নগর অধিকারে আনেন। ১৩০৩ সালে চিতোর আক্রমণ করেন। এতে কিছু রাজপুত নারী আত্মহত্যা করে। ১৩২০ সালে এলো তুঘলকরা। ভারতে সবচেয়ে শিক্ষিত ও জ্ঞানী মুসলিম শাসকদের মধ্যে একজন ছিল মোহাম্মদ শাহ তুঘলক (১৩২৫-৫১)। পরবর্তী সুলতান ফিরোজ শাহ তুঘলক (শাসনকাল ১৩৫১-৮৮) ভারতীয়দের প্রতি ছিল যথেষ্ট দয়ালু। এরপর লোদী বংশের কর্তৃত (১৪৫১-১৫২৬)। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে ইব্রাহিমলাদীকে পরাভূত করার মাধ্যমে বাবর ভারতে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।


তথ্য-১১৪ ▌মুঘল শাসনামল:

মুঘল সম্রাটরা ছিলেন মধ্য এশিয়ার তুর্কো-মঙ্গোল বংশোদ্ভূত। তারা চেঙ্গিস খানের বংশধর। বাবরের মৃত্যুর পর (১৫৩০) তার পুত্র হুমায়ুন ও শেরশাহ সূরীর (একজন আফগান) মধ্যেকার প্রতিদ্বন্দ্বিতার ফলে একটা বিক্ষুব্ধ সময় অতিবাহিত হয়।  বাবরের নাতি ‘আকবর দ্য গ্রেট’ ১৫৫৬ সালে ক্ষমতারোহণের মাধ্যমে মুঘল সাম্রাজ্যের ধ্রƒপদী যুগ শুরু হয়। আকবর ও তার ছেলে জাহাঙ্গীরের শাসনামলে ভারতে অর্থনৈতিক প্রগতি বহুদূর অগ্রসর হয়। শাহজাহানের যুগে মুঘল স্থাপত্যের স্বর্ণযুগে প্রবেশ করে। তিনি নির্মাণ করেন আগ্রার তাজমহল, মোতি মসজিদ, লালকেল্লা, দিল্লি জামে মসজিদ। আওরঙ্গজেবের শাসনামলে মুঘল সাম্রাজ্যের সীমানা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছায়। ১৭৩৯ সালে কারনালের যুদ্ধে নাদির শাহের বাহিনীর কাছে মুঘলরা পরাজিত হয়ে মুঘল শক্তি ক্রমান্বয়ে সীমিত হয়ে পড়ে এবং শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে  ই্ংরেজরা কারাবন্দী করে রেঙ্গুনে নির্বাসিত করে এবং সেখানেই তিনি মারা যান।


 তথ্য-১১৫ ▌ নবাব সিরাজ উদদৌল্লাহ : 

নবাব মুর্শিদ কুলি খান বাংলা, বিহার, উড়িষ্যায় ১৭১৭ সালে স্বাধীন নবাবী আমল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭০০ সালে দিল্লির সম্রাট আওরঙ্গজেব তাকে বাংলায় দেওয়ান/ট্রেজারার হিসাবে নিয়োগ দেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব মুর্শিদ কুলি খানকে ঢাকা থেকে বদলি করে মুকসুবাদ পাঠান। পরে এই শহরকেই নবাব মুর্শিদ কুলি খান- মুর্শিদাবাদ নাম করণ করেন। নবাবী আমলের তালিকা -মুর্শিদ কুলি খান -১৭১৭ -১৭২৭ সরফরাজ খান-( ১৭২৭ –- ১৭২৭ সুজা উদ দৌল্লাহ ১৭২৭- ১৭৩৯। নবাব আলী বর্দি খান১৭৪০ -১৭৫৬। নবাব সিরাজ উদ দৌল্লাহ ১৭৫৬- ১৭৫৭। সিরাজ উদ দৌল্লাহর নানা নবাব আলী বর্দি খান এর কোন পুত্র সন্তান না থাকায় নাতি সিরাজ উদ দৌল্লাহকে ১৭৫২ সনের মে মাসে পরবর্তী নবাব হিসাবে ঘোষণা দেন। নবাব সিরাজ উদ দৌল্লাহ নানা- নবাব আলী বর্দি খানের মতোই একজন দেশ প্রেমিক প্রজা হিতৌষী জনদরদী সাহসী নবাব ছিলেন।


 তথ্য-১১৬  ▌  ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি

মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর ১৬১২ সালে সুরাট বন্দরে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কো¤পানিকে বাণিজ্যকুঠি স্থাপনের অনুমতি প্রদান করেন। তারা মাদ্রাজে দ্বিতীয় বাণিজ্যকুঠিটি স্থাপন করে। সুরাটের অদূরে বোম্বাই দ্বীপটি পূর্বে পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিলো।  দ্বিতীয় চার্লসের সঙ্গে ক্যাথারিন অফ র্ব্যাগাঞ্জার বিবাহের যৌতুক স্বরূপ দ্বীপটি ইংল্যান্ডের হাতে তুলে দেওয়া হয়। কো¤পানি কলকাতায় একটি বাণিজ্যকুঠি স্থাপন করে। এই সময় পর্তুগিজ, ডাচ, ফরাসি ও ড্যানিশ বণিকেরা এই অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্য চালাচ্ছিলো।১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাব কো¤পানির হাতে পরাজিত হলে কার্যত ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কো¤পানির শাসনের সূচনা ঘটে। ১৭৬৪ সালে বিহারে বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভ করার পর কো¤পানির ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পায়। একইভাবে কো¤পানি বোম্বাই ও মাদ্রাজকে কেন্দ্র করে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও রাজ্যবিস্তারে মনোনিবেশ করে। ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ (১৭৬৬-৯৯) ও ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের (১৭৭২-১৮১৮) পর ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলে কো¤পানির শাসন কায়েম হয়।


 তথ্য-১১৭  ▌ পলাশী যুদ্ধ : 

ইংরেজরা ১৬০৮-এ মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের শাসনকালে সুরাটে প্রথম বাণিজ্য কুঠি স্থাপনের অনুমতি পায়। আস্তে আস্তে ভারতবর্ষের অন্যান্য অঞ্চলে তাদের বিচরণ শুরু হয়। ১৬৫৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কো¤পানির একজন প্রতিনিধি হিসেবে জেমস হার্ট ঢাকা প্রবেশ করার মধ্য দিয়ে বাংলায় ইংরেজ আগমন শুরু হয়। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব নবাব সিরাজ উদ দৌল্লাহর সাথে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কো¤পানির ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশী যুদ্ধ হয়, তাতে বাংলার নবাবের করুণ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই ভুখ-ে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সূচিত হয়। এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয় ইংরেজদের পক্ষ থেকে লর্ড ক্লাইভ। তাকে সহায়তা করে  মীরজাফর, উমিচাঁদ, জগত শেঠসহ অন্যান্য বিশ্বাসঘাতক। বিশ্বাসঘাতকতার পুরস্কারস্বরূপ মীরজাফর বাংলার নবাব হয়। এর পরে লর্ড ক্লাইভ ইংল্যান্ড চলে যায়, আবারো ফিরে আসে ১৭৬৫ সালের মে মাসে তিনি ইংরেজ সরকারের গভর্নর নিযুক্ত হন। একজন কেরানী থেকে তিনি গর্ভনর হয়।


তথ্য-১১৮  ▌ভারতে ইংরেজ শাসন :

১৭৬৫ সালের ১লা অগাষ্ট লর্ড ক্লাইভ দিল্লির বাদশাহ শাহ আলমের কাছ থেকে বাংলা- বিহার-ওড়িশার দেওয়ানি লাভ করেন। বিহার-ওড়িশার প্রকৃত শাসন ক্ষমতা লাভ করে, নবাবের নামে মাত্র অস্তিত্ব থাকে। ফলে পূর্ব ভারতের এই অঞ্চলে যে শাসন-ব্যবস্থা চালু হয় তা দ্বৈত শাসন নামে পরিচিতি পায়। নবাবের হাতে থাকে প্রশাসনিক দায়িত্ব, আর রাজস্ব আদায় ও ব্যয়ের পূর্ণ কর্তৃত্ব পায় কো¤পানি। এতে বাংলার নবাব আসলে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে আর এই সুযোগে কো¤পানির লোকেরা খাজনা আদায়ের নামে অবাধ লুণ্ঠন ও অত্যাচার শুরু করে দেয়। মূলতঃ ১৭৫৭ সাল থেকে ১৮৫৭ সাল এই প্রায় ১০০ বছর ইষ্টইন্ডিয়া কো¤পানির হাতে ভারতবর্ষের শাসনভার থাকে। ১৮৫৮ সালে ভারতের শাসনভার ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কো¤পানির হাত থেকে ব্রিটিশ রাজশক্তির হাতে স্থানান্তরিত হন। রানি ভিক্টোরিয়া নিজ হাতে ভারতের শাসনভার তুলে নেন। এর সঙ্গে সঙ্গে ভারতে আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ ভারতীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।


তথ্য-১১৯  ▌ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত :  

লর্ড কর্নওয়ালিশ প্রথম ‘দশ বছরের জন্য’ জমিদারদের জমির মালিকানা দিয়েছিলেন। তিনি এর নাম দেন দশশালা বন্দোবস্ত। এই ব্যবস্থাই পরবর্তীকালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে রূপান্তরিত হয়। ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে ২২ মার্চ লর্ড কর্নওয়ালিশ চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রবর্তন করেন। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা ও বেনারসে এই ব্যবস্থা চালু হয়।  নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তকালের মধ্যে খাজনা জমা দিতে না পারলে জমিদার জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে সূর্যাস্তের পূর্বে রাজস্ব পরিশোধ করতে হত বলে একে সূর্যাস্ত আইন ও বলা হয়। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে  নতুন অভিজাত শ্রেণি গড়ে ওঠে যারা সরকারের প্রধান সমর্থক ছিলেন। এদের সহযোগিতায় ভারতে ব্রিটিশ শাসনের স্থায়িত্ব ও বিস্তার ঘটতে থাকে। অপরদিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাজনা পরিশোধ করতে গিয়ে জমিদার ও প্রজা উভয়কেই টাকার জন্য বিত্তবানদের কাছে হাত পাততে হত। এইভাবে সমাজে মহাজন তথা সুদখোর সম্প্রদায়ের  উদ্ভব হয়।


তথ্য-১২০ ▌ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লব : 

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল সূর্য সেন-এর নেতৃত্বে কয়েকজন স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী ব্রিটিশবাহিনীর চট্টগ্রামে অবস্থিত অস্ত্রাগার লুন্ঠনের প্রয়াস চালায়। সূর্য সেন ছাড়াও এই দলে ছিলেন গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, নির্মল সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, নরেশ রায়, শশাঙ্ক দত্ত, অর্ধেন্দু দস্তিদার, হরিগোপাল বল, তারকেশ্বর দস্তিদার, অনন্ত সিং, জীবন ঘোষাল, আনন্দ গুপ্ত, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত। এদের সাথে সুবোধ রায় নামক ১৪ বছরের এক বালকও ছিলেন।  কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা গোলাবারুদের অবস্থান শনাক্ত করতে ব্যর্থ হন। বিপ্লবীরা সফলভাবে টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সক্ষম হন এবং রেল চলাচল বন্ধ করে দেন। ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি, চট্টগ্রাম শাখা - এই নামের অধীনে সর্বমোট ৬৫ জন বিপ্লবী এই বিপ্লবে অংশ নেন।   মাস্টারদার নেতৃত্বে প্রীতিলতা ইউরোপীয় ক্লাবে আক্রমণ করেন। যেখানে ¯পষ্টভাবে লেখা থাকতো ‘কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশের অধিকার নেই’। ধরা পড়ে প্রীতিলতা সায়ানাইড খেয়ে নিজের প্রাণ ত্যাগ করেছিলেন।


তথ্য-১২১  ▌নীল বিদ্রোহ : 

ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলে সেখানকার বস্ত্র-শিল্পে নীলের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল। এই সময় নীলের ব্যবসা হয়ে উঠেছিল লাভজনক। ইংরেজরা নীল উৎপাদনে তৎকালীন বাংলায় সামন্ততান্ত্রিক শোষণ প্রক্রিয়া চালু করে এর জবরদস্তিমূলক চুক্তির প্রচলন করেছিল। এই চুক্তির পরিণতিতে কৃষকরা নীল চাষ করে যে টাকা পেতেন তাতে দাদনের টাকা পরিশোধ হতো না। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে কৃষকরা বিদ্রোহ ঘোষণা করলে নীল চাষ অবনতির দিকে গিয়েছিল। কৃষকদের নেতৃত্বে বহু নীলকুঠি ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। কুঠিরের পর কুঠি লুটতরাজ করে সব রকমের হিসাবের খাতা আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়। বিলাতের পার্লামেন্টে বাংলার তৎকালীন কৃষকরা দুরবস্থার বিষয় নিয়ে এ দেশের ইংরেজ শাসকদের কাছে কৈফিয়ত তলব করে। বাংলার ছোট লাট এ বিষয়ে ফয়সালার জন্য ডাকেন। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে নীলের উৎপাদন কমে যাওয়ায় নীলকরদের এ ব্যবসা তুলে নিতে হয়েছিল।


 তথ্য-১২২ ▌চিতোরের রানা প্রতাপ : 

অধিকাংশ রাজপুত রাজারা আকবরের বশ্যতা মেনে নিলেও বেঁকে বসেন চিতোরের রানা  প্রতাপ।  তাঁর  দৃষ্টিতে মোঘলরা স্রেফ বৈদেশিক হানাদার। সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে সম্রাট আকবর সেনাপতি মানসিংহকে পাঠান দূত হিসেবে। কিন্তু মানসিংহর সাথে এক টেবিলে বসে আহার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান রানা।  এতে বিস্মিত হয়ে কারণ জিজ্ঞেস করলে রানা উত্তর দেন,  বিদেশি শত্রুর নিকট আত্মমর্যাদা বিলিয়ে দেয়া মানুষের সঙ্গে আমি এক পাতে খেতে বসতে  পারি না।  প্রচ- ক্ষুব্ধ হয়েই দিল্লি ফিরে যান মানসিংহ। সব শুনে ক্ষিপ্ত হন সম্রাট। মানসিংহ আর শাহজাদা সেলিমের নেতৃত্বে বিশাল  বাহিনী প্রেরণ করেন। কামান, বন্দুকের সামনে তলোয়ার আর বর্শা দিয়ে কতক্ষণ  টেকা যায়? জঙ্গলে আশ্রয় নেন সপরিবারে রানা ও তাঁর  অনুসারীরা। জঙ্গলে  সুসম্পর্ক গড়ে  উঠেছিল স্থানীয় ভীল আদিবাসীদের সঙ্গে। ভীলদের নিয়েই গঠন করেন তাঁর নতুন বাহিনী। গরিলা কৌশলে ব্যতিব্যস্ত করে তুলেন মোগল বাহিনীকে। দীর্ঘ ২০ বছর মোগলদের বিরুদ্ধে  সংগ্রামের পরে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান রানা প্রতাপ। 


তথ্য-১২৩  ▌টিপু সুলতান: 

ভারতের কর্ণাটক রাজ্য মহীশূরের শাসনকর্তা ছিলেন টিপু সুলতান। বীরত্বের জন্য তিনি মহীশূরের বাঘ নামে পরিচিত ছিলেন। ভারতবর্ষে ব্রিটিশদের আগ্রাসনের শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন তিনি। যুদ্ধের ময়দানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন।  টিপুর ছিল চার স্ত্রী। পুত্র সন্তানের সংখ্যা ১৫ জন। আর কন্যা আটজন। টিপু সুলতানের রাজ্যের প্রতীক ছিল বাঘ। তিনি সিংহাসনে বসে প্রায়ই বলতেন ভেড়া বা শিয়ালের মতো ২০০ বছর বাঁচার চেয়ে বাঘের মতো দুদিন বেঁচে থাকাও ভালো। টিপু সুলতানের শাসনামলে ধাতব মুদ্রায় বাঘের ছবি খোদাই করা ছিল। বাঘময় ছিল টিপুর জীবন। ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজ সেনাপতি হেক্টর মুনরোর কাছে দ্বিতীয় মহীশূর যুদ্ধে টিপু এবং তার বাবা মারাত্মক নাজেহাল হন। ১৭৯৯ সালের ৪ মে ইংরেজ ও হায়দ্রাবাদের নিজামের যৌথ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রাণ হারান তিনি। টিপু সুলতানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ, পূর্ণিয়া। আর তার সেনাপতি কৃষ্ণ রাও-ও ছিলেন একজন ব্রাহ্মণ। তাছাড়া মন্দিরে মুক্তহস্তে দান করতেন তিনি। কারও ধর্ম পালনে বাধা দিতেন না।


 তথ্য-১২৪ ▌ তেভাগা আন্দোলন : 

চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রচলনের ফলে চাষিদের জমির মালিকানা চলে যায় জমিদারদের হাতে। ফসল উৎপাদনের স¤পূর্ণ খরচ কৃষকেরা বহন করলেও  যেহেতু তারা জমির মালিক নন সে অপরাধে উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক তুলে দিতে হতো। জমিদারদের এই শোষণ কৃষকের মনে বিক্ষোভের জন্ম  দেয়। এই বিক্ষোভকে সংগঠিত করে ১৯৩৬ সালে গঠিত হয় ‘সর্ব ভারতীয় কৃষক সমিতি’। ১৯৪০  সালে ফজলুল হক মন্ত্রিসভার উদ্যোগে বাংলার ভূমি ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব দেয় ‘ফ্লাউড কমিশন’। এই কমিশনের সুপারিশ ছিল জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ করে চাষিদের সরাসরি সরকারের প্রজা করা এবং তাদের উৎপাদিত ফসলের তিনভাগের দুইভাগের মালিকানা প্রদান করা। তেভাগা মানে তিন ভাগ। তেভাগা আন্দোলন ১৯৪৬ সালের ডিসেম্বর-এ শুরু হয়ে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত চলে। তেভাগা  আন্দোলনের অগ্রদূতি ছিলেন নাচোলের রানী ইলা মিত্র। তবে ব্রিটিশ আমলে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত রদ করা সম্ভব হয়নি, পাকিস্তান আমলে গিয়ে ১৯৫০ সালে  চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত রদ হয়।


তথ্য-১২৫  ▌জমিদারি প্রথার বিলোপ:  

মুগল আমলে জমিদাররা শুধু খাজনা আদায়ের স্বত্বাধিকারী, জমির স্বত্বাধিকারী নয়। পক্ষান্তরে, জমির মালিকদের বলা হতো রায়ত। বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গনে কোম্পানির অভ্যুদয়ের পর  জমিদারদের ওপর নবাবের নির্ভরশীলতা আরও বেড়ে যায়। উদীয়মান অর্থলগ্নিকার তথা ব্যাংকিং শ্রেণী ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে যোগসাজশক্রমে বড় জমিদারগণ রাজনীতির মূলধারায় প্রবেশ করেন। পুর্বপাকিস্তনে ১৯৫০ সালে “ইস্ট বেঙ্গল স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যাক্ট”-এর অধীনে জমিদারি প্রথার বিলোপ ঘটে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানে আজ অবধি সেই জমিদারী প্রথা চালু আছে। যার ফলে মাত্র ৫% পরিবার পাকিস্তানের ৭৫% জমি নিয়ন্ত্রন করে এবং পাকিস্তান সরকার এ প্রথা বিলোপ করার সামর্থ রাখে না। উল্লেখ্য পুর্ববাংলায় জমিদারেরা ছিল প্রধানত হিন্দু, যার ফলে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত করতে সরকারের কোন সমস্যা হয়নি। পূর্বপাকিস্তানের মুসলমানরা তাই নিমেষেই চাষী থেকে জমির মালিক হয়ে যেতে সক্ষম হন।

 

তথ্য-১২৬  ▌বাংলার নবজাগরণ:  

রাজা রামমোহন রায়ের (১৭৭৫-১৮৩৩) সময় এই নবজাগরণের শুরু এবং এর শেষ ধরা হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) সময়কাল পর্যন্ত। ঊনবিংশ শতকের বাংলা ছিল সমাজ সংস্কার, ধর্মীয় দর্শনচিন্তা, সাহিত্য, সাংবাদিকতা, দেশপ্রেম, ও বিজ্ঞানের পথিকৃৎদের এক অন্যন্য সমাহার; যা মধ্যযুগের অন্ত ঘটিয়ে এদেশে আধুনিক যুগের সূচনা করে। রাজা রামমোহন রায় শিক্ষা সংস্কারের যে সূচনা করে দিয়েছিলেন সেটা আরও বহুদূর নিয়ে গিয়েছেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বাংলায় আধুনিক সমাজ তৈরির পথিকৃৎ যদি রাজা রামমোহন রায় হয়ে থাকেন, তাহলে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার পেছনে অবদান ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের। বিদ্যালয় পরিদর্শক হিসেবে কাজ করবার সময়ে তাঁর সরাসরি তত্ত্বাবধানে বিশটি মডেল স্কুল এবং পঁয়ত্রিশটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিনি শুধু বিধবা বিবাহপ্রথা চালুরই অগ্রদূত নন স্বয়ং নিজ ছেলেকে দুঃখিনী এক বিধবার সাথে বিয়ে দেন। তৎকালীন সমাজপতিদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে বাল্যিবিবাহ রোধে এগিয়ে আসেন তিনি।


তথ্য-১২৭  ▌প্রথম বুদ্ধিমুক্তির আন্দোলন : 

‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ’ প্রতিষ্ঠিত হয়  ১৯২৬ সালে। এই প্রতিষ্ঠানের মূলমন্ত্র ছিল ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আর এর মুখপত্র ছিল ‘শিখা পত্রিকা’। ‘শিখা’ ছিল  বাঙালি মুসলমান সমাজের আধুনিকত্ব ও অগ্রগতির অবিস্মরণীয় স্মারক। এই পত্রিকার শ্লোগান ছিল, ‘জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব।’ উদ্দেশ্য এবং আদর্শ ছিল নবজাগরণ,  এটি ছিল ধর্মীয় ও সামাজিক কুসংস্কারবিরোধী একটি প্রগতিশীল আন্দোলন। এই শিখা গোষ্ঠী ছিল বাংলাদেশের প্রথম বুদ্ধিমুক্তির আন্দোলনের দল, এর কর্ণধার ছিলেন কাজী মোতাহার হোসেন, কাজী আবদুল ওদুদ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, আব্দুল কাদির এবং আবুল হুসাইন। ছয়টি বিষয়কে কেন্দ্র করেই তাদের চিন্তা-ভাবনা আবর্তিত হতো। বিষয় ছয়টি হলো: মাতৃভাষা, শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা, রাজনৈতিক সমস্যা, ললিতকলার চর্চা, ধর্মীয় রীতিনীতির ব্যাখ্যা। বাংলার মুসলমান সমাজের যে ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার ও কুপ্রথা  ছিল, তা দূর করা ছিল এ আন্দোলনের উদ্দেশ্য।


তথ্য-১২৮ ▌বাঙালি বাবু সমাজ : 

১৮৫৩ তে কলকাতা শহরে ৪০৪৯টি বেশ্যাগৃহ ছিল যাতে ছিল ১২,৪১৯ জন যৌনকর্মী। ১৯২১ সালের আদম শুমারিতে অনুযায়ী ১০,৮১৪ জন যৌনকর্মী ছিল কলকাতায়। হিন্দুরা মনে করে, বেশ্যারা এই সমাজকে নির্মল রাখে। আর সেই কারণেই দুর্গা পূজার সময় বেশ্যার দরজার মাটি অপরিহার্য। আসলে বেশ্যাবাজি ছিল বাবু সমাজের সাধারণ ঘটনা। নারী আন্দোলনের ভারত পথিক রাজা রামমোহন রায়েরও একাধিক রক্ষিতা ছিল। এমনকি এক রক্ষিতার গর্ভে তাঁর একটি পুত্রও জন্মেছিল। সাহিত্যিক মীর মশাররফ হোসেন নিয়মিত বেশ্যা পাড়ায় যেতেন তা তিনি নিজেই তার ডাইরিতে লিখে গেছেন। মরমি কবি হাসন রাজা, কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত পতিতালয়ে যেতেন।  নিষিদ্ধ পল্লীতে গমনের ফলে রবীন্দ্রনাথের সিফিলিস আক্রান্ত হয়েছিল। বাংলাদেশের যশোর শহরে পতিতাবৃত্তির ইতিহাস রয়েছে ৫শ’ বছরের। বর্তমান আমাদের দেশে চার ধরনের যৌনকর্মী রয়েছে। ক) যৌনপল্লী বেইজ খ) রেসিডেন্স বেইজ গ) হোটেল বেইজ ঘ) অনলাইন বেইজ।


তথ্য-১২৯  ▌   ব্যাকরণ ও বাংলা অক্ষর : 

প্রথম দিকের মুদ্রিত বাংলা পুস্তক হিসেবে পর্তুগিজ পাদ্রি মানোএল রচিত কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ ছাপা হয়েছিল রোমান হরফে আর পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে ১৭৪৩ সালে । কিন্তু এ বই ছাড়াও মানোএল একটি বাংলা ব্যাকরণও রচনা করেছিলেন। এর প্রায় ৩৫ বছর পর হ্যালহেডের পূর্ণাঙ্গ ব্যায়াকরণ প্রকাশিত হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কো¤পানির ইংরেজদেরকে বাংলা ভাষার সঙ্গে পরিচয় ঘটানোর প্রয়োজন থেকেই হ্যালহেড ব্যাকরণটি লিখেছিলেন ১৭৭৮ সালে।  এটি ছাপার জণ্র ইস্ট ইন্ডিয়া কো¤পানি হুগলিতে একটি প্রেস স্থাপন করেন । এ কাজে তাঁকে সহায়তা করেছিলেন পঞ্চানন কর্মকার। হরফ নির্মাণের পাশাপাশি পঞ্চানন কর্মকার খোদাই চিত্র শিল্পী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। হ্যালহেডের জন্ম ১৭৫১ খ্রিস্টাব্দে।। ১৭৭৪ সালে হ্যালহেডের  বাংলা শিখতে গিয়েই একটি বাংলা ব্যাকরণ পুস্তকের প্রয়োজন অনুভব করেন। ১৭৭৫-এর শেষে হ্যালহেড সুপ্রিম কোর্টে দোভাষীর কাজ করতেন।


তথ্য-১৩০ ▌‘কাপড়ের দাঙ্গা’: 

য়েকশ’ বছর আগে ভারতের কেরালা অঙ্গরাজ্যে হিন্দুদের মধ্যে এক প্রকার ট্যাক্স বা কর প্রচলিত ছিলো। যার নাম স্তনকর। ঐ সময় নিয়ম ছিলো শুধু ব্রাহ্মণ ব্যতিত অন্য কোন হিন্দু নারী তার স্তনকে ঢেকে রাখতে পারবে না। যদি কোন নারী তার স্তনকে কাপড় দ্বারা আবৃত করতে চাইতো, তবে তাকে কর দিতে হতো। ১৮০৩ সালে নাঙ্গেলী  নামক এক নারী তার স্তনকে আবৃত করে রাখে। যথন গ্রামের ট্যাক্স কালেকটর তার থেকে স্তনকর চাইতে আসে, তখন নালেঙ্গী তা দিতে অস্বীকার করে এবং নিজের দুটি স্তনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটে, এতে ট্যাক্স কালেকটর অবাক হয়ে পালায়। কিছুক্ষণ পরেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য নাঙ্গেলীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর স্তনকর রোহিত হলেও তখন হিন্দু পুরোহিতরা ¯পষ্ট করে বলে দেয়, নিচু বর্ণের নারীদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করা ধর্ম বিরোধী। বিষয়টি নিয়ে ১৮৫৯ সালে দক্ষিণ ভারতে একটি দাঙ্গা সংগঠিত হয়। এটা ‘কাপড়ের দাঙ্গা’ হিসেবে পরিচিত।


তথ্য-১৩১ ▌ফরাজি আন্দোলন: 

বাংলার ওয়াহাবি আন্দোলনের আদর্শে ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে ফরাজি আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত  ফরাজি আন্দোলন চলে। ফরাজি আন্দোলনের  মূল প্রবর্তক ছিলেন হাজি শরিয়তুল্লাহ। ফরিদপুর ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল প্রভৃতি স্থানের গরিব হিন্দু-মুসলিম কৃষক, তাঁতি, কারিগর, শ্রমিক প্রমুখ এই ফরাজি আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন। বাংলার নিপীড়িত ও অত্যাচারিত মানুষের কাছে হাজি শরিয়তুল্লাহ ছিলেন এক আদর্শ পুরুষ। হাজি শরিয়তুল্লাহ  এই সম্প্রদায়ের লোকজনদের নিয়ে তিনি সংস্কার ও সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দে হাজি শরিয়তুল্লাহ মারা গেলে তাঁর পুত্র দুধু মিঁয়া এই আন্দোলনের হাল ধরেন। দুধু মিঁয়া ফরাজি আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করেন। ক্রমে ফরাজি আন্দোলন তার অসাম্প্রদায়িক চরিত্র হারায়।  কো¤পানি ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে দুধু মিঞাকে কারারুদ্ধ করেন। কারারুদ্ধ অবস্থায় ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যু হয়। 


তথ্য-১৩২  ▌ সিপাহী বিপ্লব ও মঙ্গল পান্ডে: 

১৮৪৯ সালে তিনি ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানিতে সিপাহী পদে চাকরি নেন মঙ্গল পা-ে। চাকরি করতে এসে তিনি অনেক রকম বৈষম্য আর অন্যায় দেখতে পান, যা মঙ্গল পা-েকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। ১৮৫৩ সালে তৈরি করা হয়েছিল ৫৫৭ ক্যালিবার  রাইফেল। রাইফেলগুলোর কার্তুজ গরু ও শুকরের চর্বি দিয়ে তৈরি হতো। সৈন্যরা তাদের রাইফেলের কার্তুজ লোড করার সময় তা দাঁত দিয়ে খুলে লাগাতে হতো। গরু ও শুকরের চর্বি মুখে দেওয়া হিন্দু- মুসলিম সৈন্যদের জন্য অধার্মিক ও গর্হিত কাজ। সিপাহীরা নতুন কার্তুজ ব্যবহার করতে অস্বীকার করে। ধীরে ধীরে বিদ্রোহের সূচনা করে। ১৮৫৭ সালের ২৯ মার্চ কলকাতার ব্যারাকপুরে মঙ্গল পা-ে সমস্ত সৈনিকদের প্যারেড গ্রাউন্ডে ডাকেন ও দেশ স্বাধীন করার  আহ্বান জানালেন। কিন্তু পা-েকে শায়েস্তা করার জন্য ছুটে এলেন  ইংরেজ সেনাপতিরা। মুখোমুখি যুদ্ধ হয়। অনেক ইংরেজ সেনাপতি মারা যান।  ফাঁসির দন্ডাদেশ দেয়া হয় তাকে। পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে  এ বিদ্রোহ  ছিল এক নতুন সূর্য।


তথ্য-১৩৩  ▌অসহযোগ আন্দোলন: 

৯২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ১৯২২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এই আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে “গান্ধী যুগ”-এর সূত্রপাত ঘটায়। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে রাওলাট আইন পাস হলে, ভারতের ভাইসরয় ও ই¤িপরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ১৯১৯ সালের ৬ এপ্রিল সেই আইন বলবৎ করে। এই আইনবলে ভারতবাসীর উপর দমনমূলক নানা বিধিনিষেধ আরোপিত হয়। সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার লঙ্ঘিত হয়, ন্যূনতম প্রমাণ দাখিল ব্যতিরেকেই সেনা ও পুলিশকে সাধারণ ভারতীয়দের গ্রেফতার, কয়েদ ও স¤পত্তি বাজেয়াপ্ত করার অনুমতি দেওয়া হয়। অধিকন্তু, ভারতীয় জনসাধারণের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের একতরফা ভারতীয় সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত অনেক ভারতবাসীকেই ক্ষুব্ধ করেছিল। আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এটিই ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বৃহত্তম আন্দোলন।


তথ্য-১৩৪  ▌জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা-: 

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা- (অমৃতসর হত্যাকা-) ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্যতম কুখ্যাত গণহত্যা। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল তারিখে অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসর শহরে ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার রেগিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে এই হত্যাকা- সংঘটিত হয়। এই শহরের জালিয়ানওয়ালাবাগ নামক একটি বদ্ধ উদ্যানে সমবেত নিরস্ত্র জনগণের উপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছিল। এই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজ সরকারের দেওয়া "নাইটহুড" উপাধি ত্যাগ করেন। ১০০ জন গুর্খা সৈন্য আর ২টি সাজোয়া গাড়ি নিয়ে ডায়ারের নির্দেশে জালিয়ানওয়ালাবাগে ২০০০-এর মত "বিদ্রোহী"কে হতাহত করা হয়েছিল। দেশে-বিদেশে সর্বত্র সরকারের নগ্ন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ডের ঘটনার প্রতিবাদে দেশের সর্বত্র ঘৃণা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।


তথ্য-১৩৫  ▌লবন আন্দোলন: 

১৯৩০ সালের ১২ মার্চ ডান্ডি পদযাত্রা  ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশদের একচেটিয়া লবণ নীতির বিরুদ্ধে একটি অহিংস করপ্রদান-বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলন। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা হয়। মহাত্মা গান্ধী আমেদাবাদের কাছে তার সবরমতী আশ্রম থেকে ডান্ডি পদযাত্রা শুরু করে ২৪ দিনে ২৪০ মাইল (৩৯০ কিলোমিটার) পথ পায়ে হেঁটে ডান্ডি গ্রামে এসে বিনা-করে সমুদ্রের জল থেকে লবণ প্রস্তুত করেন। বিরাট সংখ্যক ভারতীয় তার সঙ্গে ডান্ডিতে আসেন। ১৯৩০ সালের ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৬টার সময় গান্ধীজি লবণ আইন ভেঙে প্রথম লবণ প্রস্তুত করেছিলেন। সেই সঙ্গে তার লক্ষাধিক অনুগামীও লবণ আইন ভেঙে ভারতে আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করলেন। এই আন্দোলনের ফলে ভারতের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে ব্রিটিশদের মনোভাব অনেকটাই বদলে যায়। আইন অমান্য আন্দোলন ভারত জাতিকে সর্বপ্রকার ত্যাগস্বীকার করতে প্রস্তুত করে তোলে। 


তথ্য-১৩৬  ▌বঙ্গভঙ্গের সূত্রপাত: 

১৭৬৫ সালের পর থেকেই বিহার ও উড়িষ্যা বাংলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে সরকারি প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে বাংলা অতিরিক্ত বড় হয়ে যায় এবং বৃটিশ সরকারের পক্ষে এটির সুষ্ঠু শাসনক্রিয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। ১৯০৫ সালে  বঙ্গভঙ্গের সূত্রপাত এখান থেকেই। বড়লাট কার্জনের বঙ্গভঙ্গের ফলে বাংলার হিন্দু নেতাদের মধ্যে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং এর ফলে অরবিন্দ ঘোষ, বিপিন চন্দ্র পাল, বাল গঙ্গাধর তিলক এবং লালা লাজপত রায়ের যুদ্ধংদেহী রাজনীতির সুত্রপাত হয়।  স্বদেশী আন্দোলন এবং ব্রিটিশ পণ্য বর্জনের কার্যক্রমের ফলে কংগ্রেসের মধ্যেও একটি উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়। ১৯১১ সালে, প্রচ- গণআন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বাংলার পুনরেকত্রীকরণের দিন ধার্য হয় ১৯১২ সালের ১ এপ্রিল। বাংলার পুনরেকত্রীকরণ বাঙালিদের ক্রোধকে কিছুটা প্রশমিত করে বটে, কিন্তু কলকাতাকে ভারতের রাজধানী থেকে কেবল প্রাদেশিক রাজধানীর মর্যাদায় নামিয়ে আনায় পশ্চিম বঙ্গের বাঙালিরা আহত হয়। 


তথ্য-১৩৭ ▌বঙ্গভঙ্গ রদ ও ঢাবি প্রতিষ্ঠা :  

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের নতুন গভর্নর স্যার ব্যামফিল্ড ফুলার মুসলমানদের শিক্ষার উন্নতির জন্য বিশেষ নজর দেন। ব্রিটিশ সরকার এপর্বে নানাভাবে মুসলমানদের সুবিধা দিতে থাকে, নতুন প্রশাসনে মুসলমান ও হিন্দুর অনুপাত ২:১ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়।  ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর পূর্ববঙ্গ জেগে উঠে এবং ব্যস্ত হয়ে পরে মাধ্যমিক শিক্ষার সম্প্রসারনে। পরবর্তী পাঁচ বছরে এই এলাকায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় বৃদ্ধির শতকরা হার দাঁড়িয়েছিলো ৮২.৯ ভাগ। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয়। ফলশ্রুতিতে, পূর্ববঙ্গে চরম হতাশা দেখা দেয়। ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকায় এলে নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরে বাংলা এ.কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের জন্য এ অঞ্চলে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। লর্ড হার্ডিঞ্জ এ দাবির যৌক্তিকতা অনুভব করে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন।


তথ্য-১৩৮  ▌  কলকাতা দাঙ্গা :  

মূলত পাকিস্তান কায়েম হয়েছে রক্তক্ষয়ী এক দাঙ্গার মাধ্যমে। একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে মুসলিম লিগ ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট একটি সাধারণ ধর্মঘটের (হরতাল) ডাক দেয়। উপমহাদেশের সর্বত্র মুসলমানগণ ওই দিন সকল কাজ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। অন্যদিকে, হিন্দু জনমত পাকিস্তান বিরোধী হিসেবে সংগঠিত হতে থাকে। ১৬ আগষ্ট ভোরে উত্তেজনা শুরু হয় যখন মুসলিম লীগের স্বেচ্ছাসেবকেরা উত্তর কলকাতায় হিন্দু ব্যবসায়ীদের দোকানপাট বন্ধ রাখতে বাধ্য করে এবং হিন্দুরা এর সমুচিত প্রতিশোধ হিসেবে লীগের শোভাযাত্রাসমূহের পথে বাধার সৃষ্টি করে। সমবেত জনতা প্রতিপক্ষ সম্প্রদায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সরকারি হিসাব মতে এ দাঙ্গায় ৪,০০০ লোক নিহত ও ১,০০,০০০  আহত হয়। দাঙ্গা আরম্ভের বহু পূর্বে হিন্দুদের মালিকানাধীন ফ্যাক্টরিসমূহে বোমা মজুদ রাখা হয়। মুসলিমরাও বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাকে করে অনেক যোদ্ধা কলকাতায় জড়ো করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সোহরাওয়ার্দী ১,২০০ প্রশিক্ষিত মুসলিম পাঞ্জাবি সিপাহি নিয়োগ করে কলকাতা দাঙ্গা দমন করে।


তথ্য-১৩৯ ▌ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ : 

১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর হিটলার পোল্যান্ড আক্রমণ করলে জার্মানির প্রতি তোষণ নীতি ত্যাগ করে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩রা সেপ্টেম্বর যুদ্ধ ঘোষণা করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় । ১৯৩৯ থেকে ১৯৪১ পর্যন্ত জার্মানি ইতালির সঙ্গে একটি মিত্রজোট গঠন করে এবং ইউরোপের অধিকাংশ অঞ্চল নিজের দখলে আনতে সমর্থ হয়। ১৯৪১ সালের ডিসেম্বরে জাপান অক্ষশক্তিতে যোগ দেয়। জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়নকে আক্রমণ করে। কিন্তু হিটলার বাহিনী রাশিয়ার শীতের জন্য প্রস্তুত ছিল না। গরমের পোশাকে রাশিয়ার প্রবল শীতে যুদ্ধ করতে গিয়ে মস্কো দখলে ব্যর্থ হয় জার্মানরা। যুদ্ধে আমেরিকা নিরপেক্ষ থাকলেও গোপনে যুক্তরাজ্যকে সহায়তা করে থাকে এমন অজুহাতে জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নৌ-ঘাঁটি এই পার্ল হার্বার আক্রমণ করে প্রায় সব যুদ্ধজাহাজ ও ২৭২টি মার্কিন বিমান ধ্বংস করে দেয়। এতে প্রায় আড়াই হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়।


তথ্য-১৪০ ▌ হিরোসিমা ও নাগাসাকি: 

১৯৪৪ সালে ১৫ই জুন আমেরিকা জাপানের চাইপান দ্বীপে আক্রমণ চালিয়ে দ্বীপটি দখল করে নেয়। জাপানীরা যখন দেখল তারা জিততে পারছে না, তখন তারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। সবথেকে বেদনাদায়ক হল এই দ্বীপের প্রায় ২৫ হাজার সাধারণ জনগণ জাপানী সৈন্যদের সাথে আত্মহত্যা করে। এ আত্মহত্যা সময়ের সাথে সাথে বাড়তে খাকে। প্রতিটি পরাজয়ের পর জাপনীরা আত্মহত্যা করতে থাকে। আত্মহত্যা করে প্রায় ২০ হাজার জাপানী সেনা আর জনগণ অগণিত। মাঞ্চুরিয়ায় সোভিয়েত সৈন্যবাহিনীর হাতে কুয়ান্টুং বাহিনীর পরাজয়ের ফলে জাপান আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলেও জাপনী সৈন্যরা সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোদ্ধে বিদ্রোহ করে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়।  তারা কিছুতেই আত্মসমর্পণ করছিল না। ফলে আমেরিকা বাদ্য হয়ে জাপানের মূল ভূখ-ে আক্রমণের পরিকল্পনা নেয়। তারা জাপানীদের পরাজিত করার জন্য সবচেয়ে জঘন্য পথ বেচে নেয়। জাপানের হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে পরমানু হামলা চালায়।


তথ্য-১৪১  ▌আজাদ হিন্দ ফৌজ:  

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় "ইংরেজ ভারত ছাড়" আন্দোলন তীব্রতর হয়। কিন্তু মহাত্তা গান্ধীর "অহিংসা মনোভাব"-এর কারণে আন্দোলন বেগবান হচ্ছিল না। নেতাজী সুভাষ বসুর বক্তব্য ছিল, "তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব"। এই সময় নেতাজী সুবাস বসু ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হিটলারের কাছে গেলেন। কিন্তু সেই মুহুর্তে হিটলার প্রচ- ব্যস্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে। তাই নেতাজী জাপানের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। জাপান নেতাজীকে প্রয়োজনীয় অর্থ ও সমরাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে। নেতাজী তখন রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজের দায়িত্ব নিয়ে ইংরেজদের আক্রমণ করেন। তার নেতৃত্বের ফলে প্রায় ৬০ হাজার সৈন্যের একটি সুশৃঙ্খল দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী গড়ে ওঠে।  দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ভিতরে শুরু হয় আরেক যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ভারতের আরাকান, ইম্ফল, ময়রাং, বিষেণপুর প্রভৃতি স্থান সুভাষ চন্দ্র দখল করে নেন। কিন্তু ঠিক  সেই মূহুর্তে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় পরাজিত হয় অক্ষ বাহিনী। যুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পনের পর নেতাজী নিখোঁজ হন।


তথ্য-১৪২ ▌পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবি: 

১৯৪৬ সালে ক্যাবিনেট মিশন ভারতীয় নেতৃবর্গের হাতে ব্রিটিশ ভারতের শাসনভার তুলে দেওয়ার প্রস্তাব রাখে। এই প্রস্তাবে একটি নতুন ভারত অধিরাজ্য ও তার সরকার গঠনেরও প্রস্তাব জানানো হয়। এর অব্যবহিত পরে, একটি বিকল্প প্রস্তাবে হিন্দুপ্রধান ভারত ও মুসলমানপ্রধান পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তব দেওয়া হয়। কংগ্রেস বিকল্প প্রস্তাবটি স¤পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করে। এই প্রত্যাখ্যানের বিরুদ্ধে এবং একটি পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দাবিতে মুসলিম লীগ ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট একটি সাধারণ ধর্মঘটের (হরতাল) ডাক দেয়। এই প্রতিবাদ আন্দোলন থেকেই কলকাতায় এক ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্ম হয়। মাত্র ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শহরে চার হাজারেরও বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান ও এক লক্ষ বাসিন্দা গৃহহারা হন। কলকাতার দেখাদেখি দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে নোয়াখালী, বিহার, যুক্তপ্রদেশ  উত্তরপ্রদেশ) পাঞ্জাব ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশেও। এই ঘটনাই ভারত বিভাগের বীজ বপন করে।


তথ্য-১৪৩  ▌১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচন : 

পূর্ব পাকিস্তানে ১৯৫৪ সালের মার্চ মাসের এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ এবং পাঁচটি দলের সমন্বয়ে গঠিত যুক্তফ্রন্ট। যুক্তফ্রন্টের প্রধান শরিক দলগুলো ছিল মওলানা  ভাসানীর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী মুসলিম লীগ, এ. কে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক পার্টি, মওলানা আতাহার আলীর নেতৃত্বাধীন নেজামে ইসলাম, হাজী মোহাম্মদ দানেশের নেতৃত্বাধীন গণতন্ত্রী দল এবং খিলাফতে রব্বানী পার্টি। এ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসন পান।   এর মধ্যে ১৩০ জন ছিলেন আওয়ামী লীগের। শেখ মুজিব গোপালগঞ্জের আসনে নির্বাচিত হয়ে প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।  পূর্ব বাংলায় যুক্তফ্রন্টের এহেন বিজয়ের রূপকার ছিলেন এ.কে ফজলুল হক,  হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং মৌলানা  আবদুল হামিদ খান ভাসানী।  কিন্তু এক বছরের মধ্যেই দ্বন্দ্ব, সমঝোতাহীনতা, মতানৈক্য এবং বহুমুখি দলীয় কর্মসূচির কারণে যুক্তফ্রন্টের ঐক্যে ভাঙ্গন দেখা দেয়। এই বছররে ২৯ মে কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা বাতিল করে দেয়।


তথ্য-১৪৪ ▌ভারত ভাগ করার প্রস্তাব: 

অন্তর্বর্তী সরকারে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের দ্বন্ধের প্রেক্ষাপটে ভাইসরয় এবং গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন পরিস্থিতির পুরোপুরি সুযোগ নিয়ে ধীরে ধীরে পূর্ণ ক্ষমতা নিজের কাছে নিয়ে নেন। তখন লর্ড মাউন্টব্যাটেন বলেছিলেন, একমাত্র ভারত বিভক্ত হলে এর সমাধান হতে পারে।  লর্ড মাউন্টব্যাটেন উভয়পক্ষকে খুশি রাখতে চেয়েছিলেন এবং উভয়পক্ষকে বুঝিয়েছিলেন যে পাকিস্তানের সৃষ্টি না হয়ে উপায় নেই।  ভারতীয় নেতাদের মধ্যে সরদার প্যাটেল মাউন্টব্যাটেনের এ ধারণা সবার আগে গ্রহণ করেছিলেন। ফলে ভারত ভাগ করার বিষয়ে সরদার প্যাটেল এতোটাই অনড় ছিলেন যে, তিনি অন্য কারো মতামত শুনতে মোটেই রাজি ছিলেন না।  এ ধরনের ভাগ করার ফর্মুলার কথা শুনে প্রথমে নেহেরু খুবই রাগান্বিত হন। শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন। কংগ্রেসের এ অবস্থানের কারণে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ তাঁর পাকিস্তান সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়ে আরো জোরালো অবস্থান নিলেন।


তথ্য-১৪৫  ▌ র‌্যাডক্লিফ লাইন : 

একজন ব্রিটিশ আইনজীবী সিরিল র‌্যাডক্লিফকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো ব্রিটিশ শাসিত ভারতকে ভাগ করে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের সীমানা ঠিক করার জন্য।  মাত্র পাঁচ সপ্তাহ সময় দেয়া হয়েছিলো তাকে।  ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ছিলো দুটি বড় প্রদেশ, (বাংলা ও পাঞ্জাব) যেখানে মুসলিম ও অমুসলিমরা ছিলো প্রায় সমান সংখ্যক। র‌্যাডক্লিফের দায়িত্ব ছিলো এই দুটি প্রদেশের মধ্যে বিভক্তি লাইন টেনে দেয়া।  শত বছর ধরে পাশাপাশি বসবাস করে আসা কোন সম্প্রদায়কে সোজা লাইন টেনে বিভক্ত করা জটিল কাজ। তার সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হয়েছিলো ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার কয়েকদিন পর। যখন লাখ লাখ মানুষ স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপন করছে, কিন্তু তারা নিজেরাই জানতোনা যে তারা ঠিক কোন দেশের অধিবাসী। ১ কোটি ২০ লাখ মানুষকে র‌্যাডক্লিফের আঁকা বিভক্তি লাইন (র‌্যাডক্লিফ লাইন) লাইন অতিক্রম করতে হয় নিজের বসবাসের জন্য। ধর্মীয় সহিংসতায় প্রাণ হারায় ৫থেকে ১০লাখ মানুষ।  


তথ্য-১৪৬ ▌সিলেটের গণভোট: 

ঐতিহাসিকভাবে পূর্ববঙ্গের সাথে সিলেটের যোগ থাকলেও ১৮৭৪ সালে সংখ্যাগরিষ্ঠ অহমিয়া ভাষীদের নিয়ে গঠিত আসাম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয় সিলেটকে। ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই প্রদেশে অহমিয়া, বোড়ো আদিবাসী ছাড়াও বাঙালি, নাগা, মণিপুরীসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সম্মিলন ঘটেছে। লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭র ৩রা জুন এক ঘোষণায়  সিলেটের ভবিষ্যৎ নির্ধারনের দায়িত্ব দেন স্থানীয় জনসাধারণের কাঁধে। সিদ্ধান্ত হলো গণভোট অনুষ্ঠানের। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ই জুলাই সিলেটে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। সিলেটের জনগণকে পাকিস্তানের পক্ষে ভোটদিতে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল মুসলীম লীগ। মোট ভোটার ছিল ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৮১৫ জন। ভোট দিয়েছিল ৭৭ শতাংশ মানুষ। ভোটে করিমগঞ্জের মানুষও আসাম ছাড়ার রায় দিলেও  গণভোটের রায় না মেনে মানচিত্রে দাগ কেটে করিমগঞ্জের কিছু অংশ ভারতকে দিয়ে দেয়ায় সিলেটের মানুষের কাছেও চির বিতর্কিত হয়ে যায় র‌্যাডক্লিফ লাইন। 


তথ্য-১৪৭ ▌কাশ্মীর নিয়ে দ্বন্দ্ব : 

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের অধীনে থাকা ভারত দুই দেশে বিভক্ত হয়। জন্ম নেয় নতুন দুই রাষ্ট্র, ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং তাঁর দল অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জানান।  ভারত ও পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে প্রকাশিত হওয়ার সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমাঞ্চলে, বিশেষ করে পাঞ্জাবে, ঐ দাঙ্গায় লক্ষ লক্ষ  মানুষের মৃত্যু হয়। জন্মভূমি ছেড়ে ভারত থেকে পাকিস্তান এবং পাকিস্তান থেকে ভারতে আসে লাখ লাখ মানুষ। স্বাধীনতার কয়েক মাসের মধ্যেই ‘কাশ্মীর কার?’ এ নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়ায় দুই দেশ। হিন্দু মহারাজার অধীন থেকে মুসলমানদের ‘মুক্ত' করতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সহযোগীরা স্থানীয় যোদ্ধাদের পাঠান কাশ্মীরে, অন্যদিকে সৈন্য পাঠিয়ে কাশ্মীরের বেশিরভাগ দখলে নেয় ভারত, বাকিটা দখলে থাকে পাকিস্তানের।  দুই দেশের স¤পর্কোন্নয়নের প্রধান বাধা এই কাশ্মীর বিরোধ। 


তথ্য-১৪৮ ▌ ভারত-পাকিস্তানের অভিবাসন : 

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত তৈরি হয়। এর মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তান ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দূরত্ব ছিল ১০০০ মাইল। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। ভারত বিভক্তির পর কয়েক মিলিয়ন হিন্দু ধর্মাবলম্বী পূর্ব বাঙলা থেকে ভারতে অভিবাসন প্রক্রিয়া শুরু করে। তাদের অধিকাংশই পশ্চিম বাংলায় এবং অল্প কিছু জনগোষ্ঠী আসাম, ত্রিপুরা এবং অন্যান্য প্রদেশে থাকতে শুরু করে। কিন্তু  শরণার্থী সমস্যা সবেচেয়ে বেশি মারাত্মক আকার ধারণ করে পাঞ্জাবে,  যেখানে চরম সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়। এর ফলাফল স্বরূপ পুর্ব এবং পশ্চিম পাঞ্জাবে খুব দ্রুতই ১ বছরের মাঝে উভয় পক্ষের লোকজনই অভিবাসন প্রক্রিয়া শেষ করেন। কিন্তু বাংলার ক্ষেত্রে কোলকাতা এবং নোয়াখালিতে দাঙ্গা এবং সন্ত্রাস সীমাবদ্ধ ছিলো। ফলে অভিবাসন প্রক্রিয়া ছিলো ধীর গতির এবং বিভক্তির পরে তিন দশক ধরে এই প্রক্রিয়া চলমান ছিল। 


তথ্য-১৪৯  ▌পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি বৈষম্য:

সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ বাঙালি হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের মন্ত্রিসভায় বাঙালি প্রতিনিধির সংখ্যা ছিল খুবই কম। পাকিস্তানের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে মূল চালিকাশক্তি ছিলেন সিভিল সার্ভিস কর্মকর্তারা।  ১৯৬২ সালে পাকিস্তানের মন্ত্রণালয়গুলোতে শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ৯৫৪ জনের মধ্যে বাঙালি ছিল মাত্র ১১৯ জন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তনের কেন্দ্রীয় সরকারের ৪২০০০ কর্মকর্তার মধ্যে বাঙালির সংখ্যা ছিল মাত্র ২৯০০। ১৯৪৭ সালে করাচিতে রাজধানী হওয়ায় সব সরকারি অফিস-আদালতে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ব্যাপকহারে চাকরি লাভ করে। সিভিল সার্ভিসে পশ্চিম পাকিস্তানি ছিল ৮৪% আর আমাদের ১৬%। ফরেন সার্ভিসে তাদের ৮৫% আর আমাদের মাত্র ১৫%, আর্মিতে ৯৬% ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের আর আমাদের ৪%। জেনারেল পদে ছিল মাত্র ১ জন আর তাদের ১৬ জন। ৫ লাখ আর্মির মাত্র ২০ হাজার ছিল বাঙালি। ওদের ট্রাক্টর ছিল ২০০০০ আর আমাদের ১৮০০।  ১ মন চাল পশ্চিম পাকিস্তানে দাম ছিল ১৮ রুপি আর আমাদের জন্য দাম ৫০ রুপি।


তথ্য-১৫০  ▌ ৬ দফার পরিবর্তে ১ দফা :  

১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ ৬ দফার ভিত্তিতে সমগ্র পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। বঙ্গবন্ধু ৬ দফার ওপর ভিত্তি করে আপাতত স্বায়ত্তশাসন অর্জনের মাধ্যমে নিয়মতান্ত্রিত স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছিলেন। ১ মার্চ থেকে সমগ্র দৃশ্যপট দ্রুত বদলে যেতে থাকে। বাঙালিদের দাবি ৬ দফার পরিবর্তে ১ দফা তথা স্বাধীনতার দাবিতে পরিণত হয়। ৬ মার্চ পাকিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে এই বার্তা দেন যে, এ অঞ্চলের স্বাধীনতার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করবে না। কিন্তু সারাবিশ্ব বাংলাদেশের নিপীড়িত জনগণের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলো- বিপক্ষে ছিল সবাই।  তাই আমাদের স্বাধীনতা-অর্জন এক অসম্ভব পাহাড় ডিঙানোরও গল্প।


তথ্য-১৬৩  ▌তাহের ও জিয়ার দ্বন্ধ : 

গৃহবন্দী জিয়া কর্নেল তাহেরের সাথে কথা বলেন নভেম্বরের পাঁচ তারিখে। ছয় তারিখে কর্নেল তাহের তাকে ঘরবন্দী দশা থেকে বাইরে বের করে আনেন। রাত আড়াইটায় দুজনার মধ্যে একান্ত উত্তপ্ত আলোচনার পরও দুজনার বনিবনা না হওয়াতে কর্নেল তাহের হিংসাত্মক পথে অগ্রসর হয়। ক্ষমতার সিংহাসনে বসার সন্ধিক্ষণে দুই বাদশাহ; এক সিংহাসন।  তাহের জেনারেল জিয়ার কাঁধে বন্দুক রেখে ক্ষমতার মসনদে আরোহন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু জিয়া তার চেয়ে অধিক উচ্চাকাক্সক্ষী। লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে তাহের যখন দেখলেন, তার হাত থেকে ক্ষমতার মসনদ হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে, তখনই শুরু হয় অফিসার নিধন অভিযান। ৭/৮ নভেম্বরের রাত ছিল বিভীষিকার রাত। কিন্তু জিয়াকে ক্ষমতার আসন থেকে উৎখাত করতে ব্যর্থ হয় তাহের।” গ্রেফতার হন কর্নেল তাহের। ১৯৭৬ সালের ২১ জুলাই তাকে ফাঁসি  দেয় জিয়া। তাহেরসহ ১৭ জনকে সামরিক আদালতে গোপন বিচারের মুখোমুখি করা হয়। “বিচার হয়েছে জেলখানার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যদের সামনে কোনো নথি উপস্থাপন করা হয়নি। 


তথ্য-১৬৪  ▌এশাদের ক্ষমতা দখল :  

লে. জে. এরশাদ ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা গ্রহণ এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।  তিনি দেশের সংবিধানকে রহিত করেন, জাতীয় সংসদ বাতিল করেন, নিজেকে সশস্ত্রবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করেন এবং এবং সাত্তারের মন্ত্রিসভাকে বরখাস্ত  করেন।। তিনি ঘোষণা করেন যে ভবিষ্যতে সামরিক আইনের অধীনে জারিকৃত বিধিবিধান ও আদেশই হবে দেশের সর্বোচ্চ আইন। এরপর এরশাদ বিচারপতি আবুল ফজল চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে অধিষ্ঠিত করেন। কিন্তু তার কোন কর্তৃত্ব ছিল না, কারণ সিএমএল-এর অনুমোদন ব্যতীত প্রেসিডেন্ট কোনো ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন না। ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর নিজেই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরশাদের অপশাসনের বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলোর প্রবল গণঅভ্যুত্থানের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ১৯৯১ সালে জেনারেল এরশাদ গ্রেপ্তার হন। বিএনপি সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কয়েকটি দুর্নীতি মামলা দায়ের করে।


তথ্য-১৬৫  ▌ পানামা খাল: 

পানামা প্রজাতন্ত্রের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা কৃত্রিম খালটি একটি ক্যানেল যা আটলান্টিক ও প্রশান্তমহাসাগরকে যুক্ত করেছে। এর খনন কাজ ১৯০৪ সালে শুরু হয়ে ১৯১৪ সালে সমাপ্ত হয়। এর দৈর্ঘ্য ৬৫ কি.মি। ২০১৪ সাল থেকে পানামা খাল দিয়ে একসাথে দুটি জাহাজ চলাচল করতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৮৫ ফুট উপর দিয়ে পানামা খাল প্রবাহিত হয়েছে।  এত উঁচু দিয়ে পানি প্রবাহ চলমান রাখার জন্য এর রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতিও বেশ চ্যালেঞ্জিং। জাহাজ পারাপার করার সময় বিশেষ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়। পানামা খাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা সমগ্র আমেরিকা মহাদেশের সাথে এশিয়া, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যের নতুন রূপ দান করেছে। পানামা খাল তৈরির ফলে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার জাহাজ চলাচলের দূরত্ব ৬৫০০ কি.মি. কমে গিয়েছে। তেমনি আমেরিকা যাওয়ার ক্ষেত্রে এশিয়া, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ার জাহাজসমূহকেও ৩৫০০ কিলোমিটার পথ কম পাড়ি দিতে হয়। 


তথ্য-১৬৬  ▌ মিশরের সুয়েজ খাল:  

১৮৫৪ সালে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রকৌশলীরা মিলে সুয়েজ খাল খননের নিঁখুত পরিকল্পনা করেন। ১৮৫৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে শুরু হয় সুয়েজ খালের খনন কাজ। দীর্ঘ দশ বছর ধরে খনন করার পর ১৯৬৯ সালের নভেম্বর মাসে খালটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ খাল খনন করতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার শ্রমিককে। শুরুর দিকে সুয়েজ খালের দৈর্ঘ্য ছিল ১৬৪ কিলোমিটার ও প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। তারপর আরো কিছু সংস্কারের পর ২০১০ সালের হিসাব মতে, সুয়েজ খালের দৈর্ঘ্য ১৯০.৩ কিলোমিটার, গভীরতা ২৪ মিটার ও সবচেয়ে সরু স্থানে এর প্রস্থ ২০৫ মিটার। এই সুয়েজ খাল দিয়ে দৈনিক ৯৭ টি জাহাজ চলাচল করতে পারবে। সুয়েজ খালে পানির সমতা বজায় রাখার জন্য পানামা খালের মতো কোন গেট নেই। তবে দুটি লেক রয়েছে। 


তথ্য-১৬৭  ▌ হরমুজ প্রণালী ও মালাক্কা প্রণালী: 

হরমুজ প্রণালী মূলত একটি সরু জলপথ যা পশ্চিমের পারস্য উপসাগরকে পূর্বে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সাথে সংযুক্ত করেছে এবং আরব উপদ্বীপ থেকে ইরানকে পৃথক করেছে। ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই প্রণালীটি পারস্য উপসাগরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ওমান ও ইরানকে সংযুক্ত করেছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় তেল রপ্তানি করা হয় হরমুজ প্রণালীর মাধ্যমে। এই সমুদ্র পথে আরব দেশগুলো থেকে তেল যায় এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা এবং অন্যান্য জায়গায়। ২য় স্থানে রয়েছে মালাক্কা প্রণালী। মালয়েশিয়া উপদ্বীপ এবং ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত সরু জলপথের নাম মালাক্কা প্রণালী। ভারত মহাসাগর আর প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে মূল শিপিং চ্যানেল এ মালাক্কা প্রণালী। বিশ্বে সমুদ্র পথে যত পন্য পরিবহন করা হয় তার ৬০ ভাগেরও বেশি আনা নেয়া করা হয় এ প্রণালী দিয়ে। মালাক্কা প্রণালীর পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে ভারতের আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। ফলে মালাক্কা প্রনালীর এ প্রবেশ মুখে রয়েছে ভারতের ন্যাচারাল আধিপত্য। আর চীনা সমুদ্র বানিজ্যের মূল রুট এ মালাক্কা প্রণালী। 


তথ্য-১৬৮  ▌ইনকাদের কথা: 

পাঁচশ’ বছর আগের দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে  উন্নত সমাজ ছিল ইনকাদের। ইনকারা ছিল অর্থের সঙ্গে পরিচিতিবিহীন। তাদের বর্ণনায় সোনা হচ্ছে সূর্যের স্বেদ আর রুপা হচ্ছে চাঁদের অশ্রু। এহেন  জগৎ দখল করার জন্য হানা দিলেন এক স্পেনীয় আক্রমণকারী। নাম কর্নেল ফ্যানসিস্কো পিজারো। সময়কাল ১৫০২ সাল। তিনটি জাহাজ, সাতাশটি ঘোড়া, একশ’ আশিজন সৈন্য এবং সেকালের বিবেচনায় অত্যাধুনিক কিছু অস্ত্রশস্ত্র। যেমনÑ গাদাবন্দুক। মজার কথা, ঐ ঘোড়ার আতঙ্কেই ইনকারা শেষ! অর্থের মতোই তারা অপরিচিত ছিল অশ্বের সঙ্গেও। পরাজিত ইনকা যুবরাজ আতাহুয়ালপাকে  বিজেতারা প্রস্তাব দিয়েছিল খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার। কিন্তু আতাহুয়ালপা ঘৃণাভরে বাইবেল মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। ইনকারা বিদেশি আক্রমণকারীদের  হাত থেকে বাঁচার জন্য ১৩,৪২০ পাউন্ড সোনা, যার শুদ্ধতা ২২ ক্যারেট, এবং ২৬,০০০ পাউন্ড বিশুদ্ধ রৌপ্য বিনা বাধায় দিয়েছিলেন স্পেনীয়দের। কিন্তু তাতেও বাঁচতে পারলেন না ইনকারা এবং  তাদের সাহসী যুবরাজ আতাহুয়ালপা।


তথ্য-১৬৯  ▌আমেরিকান ইন্ডিয়ান : 

আমেরিকায় উপজাতিরা সবাই আমেরিকান ইন্ডিয়ান নামে পরিচিত। তাদের পোশাক, ঘরবাড়ি প্রভৃতির বৈশিষ্ট্য আছে। ঘরগুলো বেশ উঁচু এবং গম্বুজের মতো। এক জায়গায় অনেকগুলো ঘর থাকে। ঘরের উপরিভাগ শুকনো তৃণ দিয়ে ঢাকা থাকে। পোশাক অনেকের জমকালো। পুরুষেরা সর্বাঙ্গ ঢাকা দিয়ে রাখেন পোশাকে। অনেকে মাথায় পাখির পালকের টুপি পরেন। কেউবা দু-একটা পালক মাথায় গুঁজে রাখেন। এক এক জায়গায় বাস করেন এক একটি দল। আলু একমাত্র আমেরিকার কৃষিজীবী উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ চাষ করতেন। তাঁদের অন্যতম প্রধান খাদ্য ছিল আলু। কোকো গাছের মাদকগুণও আমেরিকার আদিম বাসিন্দাদের আবিষ্কার। অপরদিকে কোকো ফলের বীচিকে ভেজে খোসা ছাড়ানোর পর পিষে কেকের মতো তৈরি করার বিদ্যাটা স্পেনীয়রা আমেরিকার আদিবাসীদের কাছ থেকেই রপ্ত করেছিলেন। ওই কেকের কিছু অংশ পানিতে গুলে এবং মশলাপাতি দিয়ে আদিম বাসিন্দারা এক ধরনের শরবত তৈরি করতেন।স্পেনীয়রা কোকো বীজ থেকে চকোলেট বানিয়ে ছিলেন। 


তথ্য-১৭০  ▌এস্কিমো : 

তুন্দ্রা অঞ্চলের প্রবল শীত এলাকায় এস্কিমোরা বাস করেন।  বছরের অধিকাংশ সময় সাগর ও নদী বরফে বরফে আচ্ছাদিত হয়ে থাকে। এস্কিমোরা শিকারি জাতি। জনসংখ্যা মাত্র আট লক্ষের মতো। জাতিতে সবাই মঙ্গোলীয়। সবাই একটি ভাষায় কথা বলেন না।   সীল, তিমি, সিন্ধুঘোটক, স্যামন মাছ প্রভৃতি শিকার করেন। আর ডাঙার প্রাণী শ্বেতভল্লুক, মেরু শিয়াল, মেরু খরগোশ, ক্যারিবু নামের একজাতের হরিণ ও পাখি শিকার করেন।  চর্বিকে রান্নার তেল হিসেবে, আলো জ্বালাতে এবং ঘরকে গরম রাখতে ব্যবহার করেন। সারা বছর আপাদমস্তক লোমশ পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি মোটা পোশাকে ঢেকে রাখতে হয়।  সীল সিন্ধুঘোটকের চামড়া দিয়ে যেমন অস্থায়ী তাঁবু ও কায়াক নৌকা নির্মাণ করেন, তেমনই ক্যারিবু হরিণের চামড়া দিয়ে তৈরি করেন পোশাক এবং পানির ব্যাগ। ওই ব্যাগে গরম পানি রেখে ঘুমানোর সময় ব্যবহার করেন। পুরুষেরা একের অধিক স্ত্রী রাখতে পারে উপরুন্ত নীজের স্ত্রী শারিরিকভাবে অসুস্থ হলে বন্ধুর স্ত্রীকে পারিবারিকভাবে ধার করতে পারে। এই বউ বদল করে বেড়ায়। 


তথ্য-১৭১ ▌নিগ্রো ও হ্যামিটিক : 

আফ্রিকার কেনিয়া অঞ্চলেই যেসব আদি মানবের আবির্ভাব হয়েছিল। তাদের নিগ্রো বলা হয়। এঁরা দীর্ঘকায়, শক্তিমান, কটিদেশ দেহের অনুপাতে সরু, মোটা ঠোঁট এবং ভোঁতা নাক এবং মাথার চুল অত্যন্ত কোঁকড়ানো হলেও কালো। হ্যামিটিকদের উন্নত হাতিয়ারের সামনে নিগ্রোরা দাঁড়াতে পারেননি। বহু  নিগ্রো হ্যামিটিকদের দাসত্ব স্বীকার করেছিলেন। ওই নিগ্রো শ্রমিক ও ক্রীতদাসরাই পিরামিড প্রভৃতি নির্মাণ করেছিলেন। উন্নত কৃষি ব্যবস্থাও সম্ভব হয়েছিল নিগ্রো শ্রমিকদের দ্বারা। খ্রিষ্ট-পূর্ব ৩৩২ অব্দে গ্রিক বীর আলেকজান্ডারের হাতে প্রথম পর্যুদস্ত হয়েছিল হ্যামিটিক সভ্যতা। অতএব সহস্র সহস্র বছর নিগ্রো ও হ্যামিটিক একত্রে বসবাসের ফলে উভয়ের মধ্যে রক্তের সংমিশ্রণ ঘটেছিল।   উদ্ভব হয়েছিল সঙ্কর জাতির।  পশুপালক শিলুক ও ডিংকা উপজাতির সঙ্গে হ্যামিটিকদের মিশ্রণে বেশকিছু উপজাতির উদ্ভব হয়েছে। তাঁরা যথাক্রমে কেনিয়া রাজ্যের মাসাই, নান্দী, লমবাওয়া, সুফ, তুরকানা প্রভৃতি এবং দক্ষিণ সুদানের ডিডিংগা ও উগান্ডার ইতোসো বিশেষ প্রসিদ্ধ উপজাতি। এঁরা সবাই যাযাবার পশুপালক।


তথ্য-১৭২  ▌মাসাই : 

আফ্রিকার পশুপালক আদিম উপজাতির সংখ্যা প্রায় ৪০। মাসাইরা তাঁদের মধ্যে প্রধান এবং বৃহৎ গোষ্ঠী।  যেহেতু স্বভাবে ওঁরা পশুপালক, তাই পশুখাদ্যের অভাব দেখা দিলে বাধ্য হয়ে অন্যত্র সরে যেতে হয়। মাসাইরা একজাতীয় গরুকেই পালন করেন। সেসব গরুর  পিঠে  উটের মতো কুঁজ আছে। ওঁরা গরুর মাংস, গরুর দুধ এবং গরুর রক্ত খেয়ে জীবন ধারণ করেন। গরুর রক্ত গ্রহণের জন্য গরুকে মেরে ফেলেন না। গলার কাছে রক্তবাহী নালীতে তীক্ষè শলাকা বিদ্ধ করিয়ে রক্ত বার করেন। সেই রক্তকে মোটা মোটা বাঁশের চোঙে পুরে রাখেন। রক্তকে শুকনোও করে রাখেন। এদের দেহের গড়ন লম্বাটে হলেও মোটাসোটা নয়, ছিপছিপে। মাসাই পুরুষ ও মহিলা একই ধরনের কাপড় পরেন। বগলের নিচে কাপড়কে ভালোভাবে বেঁধে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখেন। পুরুষ ও মহিলা সবাই কানে বড় বড়  রিং পরেন, হাতে মাদুলি বাঁধেন এবং গলায় পুঁতির মালা ঝুলিয়ে রাখেন। প্রধান হাতিয়ার তীর-ধনুক ও বর্শা।পুরুষেরা হাতে একটি করে বর্শা থাকে। অনেকে কোমরে একটা ছোরাও গুঁজে রাখেন।  কেনিয়া ও তানজেনিয়ায় বাস। 


তথ্য-১৭৩ ▌পিগমি: 

আফ্রিকার কঙ্গো অববাহিকার আদিম অধিবাসী পিগমি।  পিগমিরা সেই দুর্গম অঞ্চলের বাসিন্দা এবং ওই কারণে তাঁরা সভ্যতার সংস্পর্শে আসতে পারেননি। পিগমিরা অরণ্যের ফলমূলাদি সংগ্রহ করেন এবং বন্যপশুদের শিকার করেন। কৃষিকাজ জানেন না, পশুপালনও করেন না। তাঁরা অত্যস্ত বেঁটে মানুষ, তাই তাঁদের তৈরি ঘরও ছোট-খাটো। মাত্র দশ বারোটি পরিবার মিলে এক জায়গায় থাকেন। শিকার ও বনজ খাদ্যের উপর নির্ভর করে বাস করতে হয় বলে  দশ বারোটি পরিবার একত্রে  গোল করে বাস করেন। ওই গোল উঠানটাতেই তাঁদের দলের বাজনা, নাচ, গান ইত্যাদি চলে। কাছাকাছি নদী অবশ্যই থাকে। কেননা, নদী থেকে পানি ও মাছ উভয়ই পেয়ে থাকেন। ঘরের ছাউনি দেন বড় বড় পাতার। মেঝে স্যাঁতস্যাঁতে হওয়ায় মেঝেতে শুকনো পাতা বিছিয়ে রাখেন। স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ে কেবলমাত্র কোমর থেকে হাঁটুর উপর পর্যন্ত গাছের চওড়া পাতা অথবা গাছের বাকল অথবা পত্রবহুল লতা কোমরে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখেন। কীট-পতঙ্গের দংশনকে প্রতিহত করতে গায়ে কাদার প্রলেপও দেন।


তথ্য-১৭৪  ▌বুশম্যান : 

বুশম্যান নামিবিয়ার  কালাহারি মরুভূমির যাযাবর বাসিন্দা। প্রায় ৬২০০০ বুশম্যান আছেন। মাত্র চার পাঁচটি পরিবারের এক একটি দল।  এক এক জায়গায় মাত্র সপ্তাহ খানেক অবস্থান করেন। বুশ অর্থ ঝোপ  অর্থাৎ তারা ঝোপের মানুষ।  বুশম্যানরা কিছুটা খর্বাকায়। শরীরের উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চির মতো। কিন্তুু চোখ, নাক ও ঠোঁটের গড়ন নিগ্রোদের মতো নয়। মরুভূমির বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে, দিনে প্রচ- গরম এবং রাতে বেজায় শীত। সারা বছরই  ওই একই আবহাওয়া। লজ্জা নিবারণের জন্য কোমরে পশুচর্ম জড়িয়ে রাখেন। বুশম্যানরা যাযাবর। ঝোপের পাশে মাটিতে গর্ত খুঁড়ে এবং কখনও বা দু-চারটে ঝোপ কেটে এনে চারপাশে বেড়া দিয়ে উপরটা চামড়া দিয়ে ঢেকে দেন। গর্ত পেলে গর্তে, গুহা পেলে গুহায়ও আশ্রয় গ্রহণ করেন। রাতের শীত থেকে পরিত্রাণের জন্য সামনে আগুনও জ্বালিয়ে রাখেন।  শিকার করা পশুর মাংস খেয়েই জীবন ধারণ করেন। পশুর গলার স্বর নকল করার অদ্ভুত ক্ষমতা আছেএঁদের। শিকার করার কাজে ব্যবহার করেন শরকাঠি দিয়ে তৈরি তীর। ইঁদুর, সাপ, ব্যাঙ, টিকটিকি, পোকা-মাকড়ও খেতে থাকেন। 


তথ্য-১৭৫  ▌সাহারার তুয়ারেগ: 

আল্্জেরিয়ার আহা¹ার মালভূমি অঞ্চলে তুয়ারেগরা ঘোরাফেরা করেন। নীল নদের তীরে এককালে যাঁরা নগর সভ্যতার পত্তন করেছিলেন, সেই বহিরাগত হ্যামিটিকদের বংশধর তারা। লম্বাটে গড়ন, নাসার অগ্রভাগ তীক্ষè, মাথায় ঢেউ খেলানো কালো চুল, ছিপছিপে গড়ন এবং গায়ের রঙ হালকা বাদামি। এদের সদস্য সংখ্যা ১০ লাখ। পৌত্তলিক অবস্থাতেও তুয়ারেগরা যেমন স্বাধীন যৌনতার চর্চা করতো, ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পরেও তা অব্যাহত রেখেছে। বিয়ের আগে তুয়ারেগ নারী-পুরুষেরা অনেকের সঙ্গে স¤পর্কে জড়াতে পারে। তাদের মাঝে নর-নারীর মধ্যকার স¤পর্কটা এতোটাই স্বাভাবিক যে, কোনো নর-নারী যদি তাঁবুর ভেতরে প্রবেশ করে এবং তাঁবুর বাইরে কোনো উট অপেক্ষমান থাকে তাহলে সেই তাঁবুর আশেপাশে কেউই যায় না। যদি ওই দুই নর-নারীর ইচ্ছে হয় একে অপরের সঙ্গে দীর্ঘদিন থাকার, তবেই তাদের বিয়ে হয়।  তবে বিয়ের পর শুধু নারীরাই একাধিক যৌনসঙ্গী রাখতে পারে। তুয়ারেগরা সারা শরীর যেন কাপড় দিয়ে ঘেরা। তুয়ারেগরা, উট,ভেড়া  ও ছাগল প্রতিপালন করেন। 


তথ্য-১৭৬ ▌আরবের বেদুইন : 

বেদুইনরা সাহারা ও লিবিয়ার মরুভূমিতে থাকেন। তাছাড়া মিসরেও দেখা যায়। এঁরা যাযাবর পশুপালক। বেদুইন অর্থে মরুভূমির সন্তান।  আরবের রূবাল আলখালি মরুভূমিতে প্রায় ১০ লক্ষের মতো বেদুইন জীবন-যাপন করেন। এঁদেরও নিত্যসঙ্গী উট। প্রতিপালন করেন ছাগল ও মেষকে। মরুভূমির শুষ্ক পরিবেশে কাল কাটানোর দরুন তাঁদের চেহারাও শুষ্ক ও রুক্ষ। নাকের ডগা তীক্ষè। মুখম-ল সরু ও লম্বাটে। প্রধান খাদ্য দুধ, বার্লি, মাংস ও খেজুর। পানি সঙ্কটে ভুগতে হয় এবং বহু দূর থেকে পানি বয়ে আনতে হয়। বেদুইনরা তাঁবুতে বাস করেন। উটের চুল দিয়ে দড়ি তৈরি করেন এবং উটের চামড়া দিয়েই তৈরি করেন পানি ও দুধ রাখার থলে। যাঁরা একটু অভিজাত তাঁরাই ঘোড়া প্রতিপালন করেন। বেদুইনরা সাহসী, যোদ্ধা। অধিকাংশ বেদুইন গরিব। ডাকাতি বা লুন্ঠনকে অন্যায় বলে মনে করেন না তাঁরা। বরং ডাকাতি করার সাহস যাঁদের নেই, তাঁরা বেদুইন সমাজে মর্যদাহীন।  ভয়ানক অতিথি বৎসল ও বন্ধুবৎসল। অভাবের ফলে  ডাকাতি করেন। মরুদ্যানগুলোতে এখন  সেচের ব্যবস্থা হয়েছে এবং কৃষিজমির প্রসার  ঘটেছে। 


তথ্য-১৭৭ ▌মধ্য এশিয়ার কিরঘিজ : 

কিরঘিজ শব্দের স্থানীয় অর্থ ‘পশুচোর’। এঁরাও তাঁবুতে বাস করেন। শীতকালে পর্বতের থেকে নেমে আসতে বাধ্য হন কিরঘিজরা। সারা শীতকালটা কাটিয়ে দেন উপত্যকা ও নিম্নভূমিগুলোতে। অধিকাংশ কিরঘিজ রিপাবলিক অব কিরঘিজিয়ার বাসিন্দা। এঁদের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখের মতো। দেহাকৃতি মঙ্গোলীয়দের অনুরূপ। একটু বেঁটে বটে কিন্তু শক্তিমান। গাত্র বর্ণ পীত এবং মাথার চুল কালো। অনেকে মনে করেন মঙ্গোলীয় ও তুর্কিদের মিশ্রণে কিরঘিজ উপজাতি।  তাদের শিকারের উপযুক্ত সময় বসন্তকাল। মর‌্যাল নামক এক জাতের হরিণ তাঁদের প্রিয় শিকার। কিরঘিজরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। তাঁদের ব্যবহৃত পোশাককে কাফটান বলা হয়।  পুরুষ ও মেয়ে উভয়েই মাথায় ব্যবহার করেন ভেড়ার চামড়ার টুপি। পশুপালনই কিরঘিজদের একমাত্র বৃত্তি, প্রত্যেক পরিবারের থাকে পালে পালে পশু। কাজেই তৃণভূমির খোঁজে ঘুরে বেড়াতে হয়।  কিরঘিজদের প্রধান খাদ্য পশুর মাংস, দুধ ও দুগ্ধজাত সামগ্রী। দুধ থেকে মাখন ও পনির প্রস্তুত করেন। কিরঘিজদের বড় সম্পদ মেষ। 


তথ্য-১৭৮ ▌মঙ্গোল : 

মঙ্গোলরা মঙ্গোলিয়ার আদি বাসিন্দা। মঙ্গোলরা সুতি ও পশম উভয় প্রকারের পোশাক ব্যবহার করেন। বাস করেন তাঁবুতে এবং তাঁবুর সরঞ্জাম কিরঘিজদের মতো হলেও তাঁবু ছোট। বেশি উঁচুও করেন না। ঘরের ভেতরে দাঁড়ালে তাঁবুর উপরিভাগ মাথায় ঠেকে যায়। মঙ্গোলদের এলাকায় প্রচুর নেকড়ে ও শেয়াল থাকে। ওঁরা প্রতি বছর প্রচুরসংখ্যক শেয়াল মেরে চামড়া সংগ্রহ করেন। নেকড়ের উপদ্রবের জন্য যেখানে পশুপাল নিয়ে অবস্থান করেন সেখানে খোঁয়াড় বানাতে হয়। পশুর বিষ্ঠা দিয়ে তৈরি ইটের বেড়া। এঁরা ভেড়া ছাড়াও ঘোড়া, উট ও চামরি গাই প্রতিপালন করেন। সুখের কথা, এঁরা আধুনিক সভ্যতার সংস্পর্শে আসছেন। অনেকে যাযাবর জীবন পরিত্যাগ করলেও পশুপালন ছাড়েননি। তাই স্থায়ী বাসস্থানের মতো স্থায়ী পশুখামারও গড়ে তুলছেন। মঙ্গোলরা কৃষিকাজেও অংশগ্রহণ করছেন। বাড়ছে শিক্ষিতের সংখ্যা। ধীর ও মন্থরগতিতে হলেও তাঁরা উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। 


তথ্য-১৭৯ ▌ফিলিপাইনের মালয়: 

মালয়, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপিন্সের আদিম বাসিন্দা মালয় উপদ্বীপ (১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে ১৩টি রাজ্য নিয়ে মালয়েশিয়ার প্রতিষ্ঠা) ও ইন্দোনেশিয়া। সারা বছরই বৃষ্টিপাত ঘটে। তাই ঘন অরণ্য অধ্যুষিত দ্বীপবহুল এলাকায়। প্রায় সাড়ে তিন হাজার দ্বীপ নিয়ে গঠিত ইন্দোনেশিয়া। সুমাত্রা, জাভা, বোর্নিও প্রভৃতি বড় বড় দ্বীপ। এদের মধ্যে বোর্নিও দ্বীপই সব থেকে বড় এবং পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম দ্বীপ (গ্রিনল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার পরে)। সংস্কৃতিগত কিছু কিছু পার্থক্য থাকলেও দেখতে এবং জীবনযাত্রা প্রণালী অনেকটা কঙ্গো অববাহিকার আদিম বাসিন্দাদের মতো। গাত্রবর্ণ কালো, মাথার চুল পশমের মতো কুঁচকানো, উঁচু চোয়াল এবং ঠোঁট পুরু, দেহ দৈর্ঘ মাঝারি। এঁরা কৃষিকাজ জানতেন না। পশু শিকার, মংস্য শিকার ও বনের ফলমূল সংগ্রহ করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। কোমরে চওড়া পাতার মালা ঝুলিয়ে লজ্জা নিবরণ করতেন। পশু শিকার ও মৎস্য শিকার পুরুষের এবং ফলমূল, পোকামাকড়, পাখির ডিম ইত্যাদি সংগ্রহ মেয়েদেরই কাজ। তাঁরা সেই প্রস্তর যুগেই পড়েছিলেন। হরিণ, শুয়র, বানর প্রভৃতি শিকার করেন।


তথ্য-১৮০  ▌ওশিয়ানিয়ার আদিম বাসিন্দা: 

এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ-পূর্বে প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরের মাঝখানে প্রায় দশ লক্ষ ছোট-বড় দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জ আছে। সবচেয়ে বড় দ্বীপ অস্ট্রেলিয়া। অন্যদের মধ্যে নিউজিল্যান্ড, তাসমানিয়া, পাপুয়া, নিউগিনি, ফিজি, সোলেমান, সামোয়া, টোঙ্গা প্রভৃতি দ্বীপ উল্লেখযোগ্য। এই আদিম বাসিন্দাদের পাপুয়ান বলা হয়। এদের প্রায় ৮০০ উপজাতি বিচ্ছিন্নভাবে এখানে ওখানে বসবাস করেন। এঁরাও নেগ্রিটো জাতি। ওদের নিজস্ব ভাষা আছে। বিগত হিমযুগেও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে পানির ব্যবধান ছিল। তা না হলে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে বাঘরা ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে পারেনি।  অস্ট্রেলিয়ার আদিম বাসিন্দাদের অধিকাংশ এখনও সেই আদিম অবস্থায় পড়ে আছেন। আগুনও জ্বালাতে জানেন না। আগুনকে কাছে কাছে রাখেন। লজ্জা নিবারণের জন্য স্ত্রী ও পুরুষ উভয়ে নেংটির মতো ব্যবহার করেন একফালি গাছের বাকল বা চামড়া। পশু-পাখি শিকারই প্রধান উপজীবিকা। বুমেরাং নামক পশু শিকারের এক ধরনের অস্ত্র এঁদের প্রধান হাতিয়ার। 


তথ্য-১৮১ ▌অস্ট্রেলিয়া মানুষ ও প্রকৃতি: 

অিস্ট্রেলিয়ায় সমভূমির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে খুবই কম এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কম। মরুভূমি এবং মালভূমিতে ভরা। পৃথিবীর আদিম স্থলভাগ যখন খ--বিখ- হয়ে চলমান অবস্থায় এসেছিল তখন এটি আন্টার্কটিকা থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়েছিল স্তন্যপায়ীদের বিবর্তনের দ্বিতীয় ধাপের সময়। এজন্য অস্ট্রেলিয়াতে কোনও উন্নতমানের স্তন্যপায়ী নেই। এখানে আছে ডিম্বপ্রসবী ও স্তন্যপায়ীর মাঝামাঝি প্রাণীগুলো। মা অপুষ্ট সস্তান প্রসব করে এবং সেই অপুষ্ট সন্তান বুকের বিকল্প গর্ভ বা থলিতে রাখে। থলির ভেতর থেকেই মায়ের দুধ পান করতে করতে পূর্ণাঙ্গ অবস্থা লাভ করে। ক্যাঙ্গারু, ে নানাজাতের বেড়ালÑ সবাই অঙ্কগর্ভ প্রাণী। হিংস্র প্রাণী বলতে একমাত্র ‘ডিঙ্গো’ নামক এক জাতীয় কুকুর। এখানে বানর জাতীয় কোনও প্রাণীও নেই। তখন ডাঙা থেকে অস্ট্রেলিয়ার পানির ব্যবধান সামান্যই ছিল। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলো থেকে বরফের চাঁইর উপর বা ভেলায় করে হাজির হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়। অস্ট্রেলিয়ার আদিম বাসিন্দারা অন্তত ৫০০ দল ও উপদলে বিভক্ত ছিলেন। ত্াদের ভাষাও পৃথক। 


তথ্য-১৮২ ▌খর্বাকৃতির মানব : 

ভারতের আদিম বাসিন্দাদের কথা উঠলে প্রথমেই মনের কোণে ভেসে উঠে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দাদের কথা। এরা পড়ে আছেন সভ্যতার একেবারে আদিম পর্যায়ে। মোট ২০৪টি দ্বীপের সমষ্টি আন্দামান দ্বীপপুুঞ্জ এবং মাত্র ১৯টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। সারা বছর প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটে। আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে মোট চারটি উপজাতির মানুষ বাস করেন এবং নিকোবরে দুটি। আশ্চর্য, আন্দামানের চারটি উপজাতি নেগ্রিটো গোষ্ঠীর এবং নিকোবরের আদিম বাসিন্দারা মঙ্গোলীয়। সেই আদিম প্রস্তর যুগে শ্রীলঙ্কারও দক্ষিণ-পূর্ব ভারত থেকে মায়ানমার, মালয়, ইন্দোনেশিয়া এমনকি পাপুয়া নিউগিনি পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল এলাকায় নেগ্রিটো  গোষ্ঠীর মানুষ এক বিশেষ ধরনের সভ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। সময়টা  পনেরো হাজার বছর আগে। সে সময় পৃথিবীর সব জাতের মানুষই প্রস্তর যুগে ছিলেন এবং তাঁদের সবার সংস্কৃতিও ছিল আদিম সংস্কৃতি। নেগ্রিটোদের কিছু দল হয় বর্তমানের মায়ানমার অথবা সুমাত্রা থেকে ভেলার মাধ্যমে আন্দামানে উপস্থিত হয়েছিলেন। 


তথ্য-১৮৩ ▌নাগাল্যান্ডের নাগা : 

মনিপুরের উত্তরের ও উত্তর-পূর্ব নাগাল্যান্ডের বাসিন্দা হল নাগা। ‘নাগা’ নামটির উৎপত্তি নাগা পর্বত থেকে। নাগা ভাষায় নাগা অর্থে মানুষ। নাগারা স্বাধীনচেতা। এঁরা দীর্ঘকাল ইংরেজদের বিরুদ্ধাচরণ করেছিলেন। এঁদের দমন করতে হামেসাই সরকারকে সামরিক অভিযান প্রেরণ করতে হতো। নাগাদের গাত্রবর্ণ অনেকটা ধূসর। গায়ে লোম আছে। দাড়ির চুল পাতলা। মাথার চুল কালো ও ঢেউ খেলানো। মুখম-লের অবয়ব মঙ্গোলীয়দের মতো। নাগারা প্রায় সব ধরনের প্রাণী শিকার করেন। কুকুরের মাংস তাঁদের খুব প্রিয়। যুবকরা একত্রিত হয়ে বনের এক একটা অংশকে ঘিরে ফেলেন। বর্শা নিক্ষেপের দ্বারা নাগালের মধ্যে পাওয়া পশুকে ঘায়েল করে। শিকার করা পশু সমভাবে বন্টন করা হয় গ্রামের সমূহ পরিবারের মধ্যে। নাগাদের শিকারের প্রধান হাতিয়ার বর্শা ও তীরধনুক। নাগাদের প্রধান খাদ্য ভাত এবং ভাত থেকে চোলাই  করা মদ। পাহাড়ের ঢালে ঘর। ঘরগুলোর দেওয়াল বাঁশ দিয়ে তৈরি। পাম গাছের পাতার ছাউনি। নাগাদের গ্রামে যুব আবাস থাকে। যার নাম মোরাঙ। মেয়েদের জন্য পৃথক মোরাং থাকে।


তথ্য-১৮৪ ▌ মিনাংকাবাউ : 

ইন্দোনেশিয়ার মুসলিম সমাজের মাঝে সারা পৃথিবীর আড়ালে থেকে যাওয়া একটা গোত্রের নাম মিনাংকাবাউ। পশ্চিম সুমাত্রায় আবাস গড়ে তোলা সুশৃঙ্খল সভ্য এই সমাজটি অত্যন্ত শান্তিপ্রিয়। এ সমাজের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও এখানে পুরুষদের চেয়ে নারীরা প্রাধান্য পেয়ে থাকে বেশি। মিনাংকাবাউ গোত্রে সকল স¤পদের অধিকার মা থেকে মেয়ের ওপর বর্তায়। পরিবারে মাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ  স্থান দেয়া হয়। কুমারীত্ব থাকাও এখানে বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু  হালের ‘ডেটিং’, অর্থাৎ প্রেমের স¤পর্ক কিংবা বিয়ের আগেই একসাথে  সেক্স করা খুবই স্বাভাবিক একটি সংস্কৃতি- যা কি না সাধারণ একটি মুসলিম সমাজে কল্পনাতীত। মিনাংকাবাউ পরিবারের মায়েরা আশা করেন, তাদের মেয়েরা সামাজিক অবস্থান ও মর্যাদার ভিত্তিতে নিজেদের স্বামীকে পছন্দ করে নেবে। বিয়ের ক্ষেত্রে নারীরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। নারীরা আর্থিক দিক থেকে স্বাবলম্বী বিধায় এখানে বিবাহবিচ্ছেদ খুব অহরহ ঘটছে বলে জানা যায়।


তথ্য-১৮৫ ▌খাসিয়া সমাজ : 

খাসিয়ারা প্রধানত খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ের ঢালগুলোতে গ্রাম গড়ে তুলেছেন। তাঁদের মধ্যেও শিক্ষিতের হার বেশ ভালোই। এঁরা কৃষিজীবী ও স্বাধীনচেতা। গাত্রবর্ণ কালো, ঈষৎ পীতাভ কিংবা ধূসর। কারও কারও নাসারন্ধ্র বড়। চেহারা একটু বেঁটে হলেও সুঠাম ও শক্তপোক্ত। পায়ের জোর অসাধারণ। তাই তো তাঁরা অক্লেশে পাহাড়ের চড়াই-উৎরাই পার হতে পারেন। খাসিয়াদের প্রধান খাদ্য ভাত। নিজেরাই ধানের চাষ করেন। হস্তশিল্পে খাসিয়াদের জুড়ি নেই। মৃৎশিল্প, রেশমশিল্প, বস্ত্রবয়ন শিল্প, বাঁশ ও বেত শিল্প প্রধান। নাচ-গান করতে ভালোবাসেন। পুরুষেরা সুতির কাপড় এবং হাতাবিহীন জামা পরেন। মেয়েরা কোমর বন্ধের উপর শাড়ি পরেন। খাসিয়া সমাজ পুরোপুরি মাতৃতান্ত্রিক। বিবাহের পর মেয়েরা স্বামীসহ পিত্রালয়েই থাকেন। মূল গৃহের কাছাকাছি একটা বাসস্থান তৈরি করে নেন। জামাইয়ের রোজগারকেও পরিবারের প্রধানের হাতে তুলে দিতে হয়। প্রধানের মৃত্যুর পর তাঁর মেয়েরাই সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী। কিন্তু মূল গৃহটি কনিষ্ঠা কন্যার প্রাপ্য।  


তথ্য-১৮৬ ▌গারো :  

গারোদের আদি বাসভূমি বর্তমান চীনের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের সিন-কিয়াং প্রদেশ, যেখান থেকে তারা দেশত্যাগ করে পরবর্তীকালে তিববতে দীর্ঘদিন বসবাস করে। এরপর ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় এবং বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের কিছু এলাকায় এরা বসবাস শুরু করে। সর্বশেষ গারোরা ময়মনসিংহ জেলায় আশ্রয় গ্রহণ করে এবং ক্ষুদ্র সামন্ত রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে গারোদের শতকরা নিরানববইজনই খ্রিস্টধর্মে বিশ্বাসী। এরা ভারতের নাগাল্যান্ড, মণিপুর, ত্রিপুরা এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও বাস করেন। গারো গ্রামে সহজ ও চমৎকার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা থাকে। গ্রামে প্রতি পরিবারের জন্য মাত্র একটি ঘর। ঘর বড়-সড় ও বাঁশের তৈরি। সামনে ও পেছনে দরজা থাকে। গারোরা কৃষিজীবী। -গারোরা মঙ্গোলীয়। দেহের উচ্চতা মাঝারি। গায়ের রঙ পীতাভ ও ধূসর। নাক চ্যাপ্টা, চোখ ছোট ছোট। গারোদের সমাজও মাতৃতান্ত্রিক। মায়ের গোত্রকে ওঁরা ‘মাচাং’ বলেন। ছেলেরা মামাতো, খুড়তুতো ও পিসতুতো বোনকে বিয়ে করে থাকেন। সস্তানরা মায়ের পদবি ধারণ করে। 


 তথ্য-১৮৭  ▌ চাকমা : 

চাকমারা পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিম বাসিন্দা। চাকমারা পূর্বে হরি ধর্মের অনুসারী হলেও পরবর্তীতে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে।  চাকমারা জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করে। হিন্দুদের মতোই শবদাহ করেন। ঘর বাঁধেন মাচার উপরÑ বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা। এঁদের দৈহিক গঠন মগ ও আরাকানীদের সঙ্গে মিল আছে। বিবাহে কন্যার পিতাকে পণ দিতে হয়।  সমাজে বিধবা বিবাহেরও প্রচলন আছে। এঁরা এখন উন্নত। পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমাদের সংখ্যা তিন লাখের বেশি। ভারতের অরুণাচল, মিজোরাম ও ত্রিপুরা রাজ্যে চাকমাদের কিছু বসতি রয়েছে।  চাকমাদের মধ্যে স্বগোত্রে বা স্বগোষ্ঠীতে বিবাহ হয় না। পিসী, মাসী, সিতুতো, মাসতুতো , চাচাত ফুপাত বোনের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ। ধর্মীয় উৎসব পূর্ণিমা কেন্দ্রিক। চাকমাদের অন্যতম সামাজিক, সাংস্কৃতিক উৎসব বিঝু। চৈত্র মাসের শেষ দুই দিন এবং বাংলা নববর্ষেরএকদিন মোট তিন দিন বিঝু উৎসব উদযাপন করা হয় । মাথা ধোয়া একটি সামাজিক রীতি। কোন অমঙ্গল, অশুভ, আপদ- বিপদ থেকে রক্ষা পাবার জন্য এ অনুষ্টানটি করেন  ।


 তথ্য-১৮৮  ▌ সাঁওতাল :   

সাঁওতালরাই ভারতের প্রথম বৃহত্তম উপজাতি, আমাদের দেশেও অনেক সাঁওতাল বাস করেন। অত্যন্ত সরল তাঁদের জীবনযাত্রা প্রণালী। কোনও প্রকার কপটতা ও অসাধুতা তাদের অভিধানে ছিল না। ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন যা ইতিহাসে সাঁওতাল বিদ্রোহ নামে পরিচিত। ইংরেজরা ২৫ হাজার সাঁওতালকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলেন। গায়ের রঙ বাদামি থেকে কালো, চুল ঢেউ খেলানো,  ঠোঁট পুরু ও লম্বা। অনেকের মতে সাঁওতালরা দ্রাবিড় গোষ্ঠীর বংশধর। নিজস্ব ভাষা আছে, কিন্তু বর্ণমালা নেই। সাঁওতালরা মূলত কৃষিজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ। সাঁওতালদের প্রধান খাদ্য ভাত। সাঁওতালদের বাসগৃহ ছোট। মাটির দেওয়াল পাঁচ-ছয় হাত উঁচু। মেয়েরা গোবর মাটির প্রলেপ দিয়ে ঘরকে ঝকঝকে করে রাখেন। ঘরের জানালা থাকে না, দরজাও ছোট। বিবাহে জাঁকজমক না হলেও বরপক্ষকে কন্যাপণ দিতে হয়। কিছু অর্থ, ধান, একটা গাভী এবং একটা শূকর।  মেয়ে বন্ধ্যা হলে পুরুষ দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। নিজেদের গোত্রে বিবাহ হয়।  হিন্দুদের মতো ওরা মৃত দেহকে দাহ করেন। 


 তথ্য-১৮৯  ▌ মসুও সমাজ : 

এমন সমাজ ব্যবস্থা মসুও গোত্রে, যেখানে বিয়ের কোনো অস্তিত্বই নেই। চীন আর তিব্বতের সীমারেখার একেবারে কাছাকাছি বসবাসরত এই গোত্রটি পৃথিবীর একমাত্র শুদ্ধতম মাতৃতান্ত্রিক জাতি। পরিবারপ্রধান একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নারী। মসুওদের মাঝে আছে একটি অদ্ভুত রীতি, যাকে বলা হয় 'ওয়াকিং লাভ'। এর মানে হলো নারী-পুরুষ চাইলেই কিছু সময় পর পর নিজেদের সঙ্গী পরিবর্তন করতে পারে। দুজনের মাঝে এই মিলনের ফলে দুটো পরিবার কখনোই এক হয় না। মেয়েরা তার পরিবারের সাথেই থাকে, ছেলেরা থাকে তার নিজের মায়ের পরিবারের সাথে। কেবলমাত্র একটা নির্দিষ্ট সময়ে দুজন মিলিত হয়। মসুও কিশোরীর মাসিক চক্র শুরু হলেই পরিবার অনুষ্ঠান করে তার জন্য আলাদা রুমের ব্যবস্থা করে দেয়। তখন থেকে সে পছন্দসই যে-কোন পুরুষের সাথে একলা সময় কাটাতে পারে। এখানে  জীবিকা অর্জন থেকে শুরু করে বাজার সদাই, ঘরের কাজ, ছেলেমেয়েদের বড় করে তোলা- এই সবই নারীরা করে থাকে। সকল স¤পদের মালিক পরিবারের নারীরা হয়। 

  

 তথ্য-১৯০  ▌ জিপসি : 

উরোপের  জিপসিদের পূর্বপুরুষরা ভারতবর্ষ থেকে এসেছিল। দশম শতাব্দীর অনেক আগেই ছোট ছোট দলে দেশ ছাড়ে তারা। ছড়িয়ে পড়ে পারস্য, মধ্য এশিয়া, মিশর, আর্মেনিয়া ইত্যাদি দেশে,পরে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও যেতে শুরু করে তারা। রুমেনিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরিসহ পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আজও তারা এক প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, জনসাধারণের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ তাদের এড়িয়ে চলে। তাই তাদের বসবাস করতে হয় আলাদা বসতিতে। জিপসিরা ইউরোপে হাজির হয়েছিল ১৪ শতকের শেষ ও ১৫ শতকের প্রথম ভাগে, মানে আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগে। এই মানুষদের ইউরোপে এনেছিল ভেনেসিয়ান ও অন্যান্য উদ্যোক্তারা। এদের আনা হয়েছিল বাজিকর, গায়ক, নাচিয়ে ও আরো বিভিন্ন ধরনের শারীরিক কসরত দেখানোর জন্য। তারা এসেছিল মিসরীয় মাধ্যম থেকে। ইজিপশিয়ান-এর সংক্ষিপ্ত শব্দ  জিপসি। কিন্তু তারা নিজেদের রোমা পরিচয়ে পরিচিত করল। তাদের ভাষা, যা আদতে ছিল ভারত, বাইজানাটিয়াম, আর্মেনিয়া ও পারস্যের ভাষার সমন্বয়ে তৈরি লিংগুয়া ফ্রাংকা।  


তথ্য-১৯১ ▌ মাড়োয়ারি : 

রাজস্থানের মরুভূমিতে বসবাসকারী একটি ছোট্ট গোষ্ঠী উনিশ শতকে বাংলা থেকে শুরু করে পুরো ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে; গড়ে তোলে অসংখ্য গ্রাম, নগর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতে হতে এ গোষ্ঠী পুরো ভারতবর্ষের স্থলপথের বাণিজ্যের বেশির ভাগ নিয়ন্ত্রণ শুরু করে। ঝুঁকি নেয়ার ক্ষুধা ছিল তাদের, তারা মাড়োয়ারি। পশ্চিম বাংলায় এদের ডাকা হয় মেরো  বাংলাদেশে মাউরা। মাড়োয়ারি মানে গ্রাম বা শহরের কোণে ছোট এক শয়তান দোকানদার। এরা চড়া সুদে মানুষকে ঋণ দেয় এবং টাকা বা সুদ দিতে না পরলে মানুষকে হেনস্তা করে। এ ছিল  সাধারণ মানুষের প্রচলিত ধারণা। ব্যবসা পরিচালনার প্রতিভার কারণে সারা ভারতবর্ষের লোকরা তাদের সম্মান করে। ব্যবসার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে রীতি-রেওয়াজ মেনে চললেও মাড়োয়ারিরা বন্ধুবৎসল। গবেষকদের মতে ‘ভারতে দশজন ব্যবসাসংক্রান্ত ব্যক্তির নয়জনই মাড়োয়ারি এবং এরা মূলত জৈন ধর্মাবলম্বী’। বিড়লাদের নাম ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত স্কুল-কলেজ, মন্দিরে মিশে আছে। এই শতকেও টাটার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী বিড়লা। এরা সবাই মাড়োয়ারি।


তথ্য-১৯২  ▌কালাশ : 

হন্দুকুশ পর্বতমালার দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত আফগানিস্তানের একটি এলাকা কাফিরিস্তান। মূর্তি পূজারিদের দেখে মুসলিমরা একদা কাফিরিস্তান নামকরণ করেছিলেন। ১৮৯৫ সালে শেষ কাফিরকেও বলপ্রয়োগে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করেন আফগান  নেতা আমির আবদুর রহমান খান। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনওয়া প্রদেশের একটি জেলা চিত্রাল। এ চিত্রাল ও সোয়াত উপত্যকা জুড়ে বিস্তৃত কালাশ সম্প্রদায়। পান্ডুর গাত্রবর্ণ আর নীল চোখ। এ শারীরিক বৈশিষ্ট্যের উৎস খুঁজতে গিয়ে গবেষকরা কালাশদের মিল খুঁজে পান গ্রিকদের সঙ্গে। কালাশরা নিজেদের আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সেনাবাহিনীর বংশধর বলে দাবি করেন। উল্লেখ্য, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে আলেকজান্ডার ভারত আক্রমণ করেছিলেন। জার্মানি গবেষকরা দেখেছেন কালাশদের শরীরে আছে ইউরোপীয় ডিএনএ। মূর্তি উপাসক কালাশদের দেবতা, পূজা পদ্ধতি, পুরাণে প্রাচীন গ্রিসের ছায়া পাওয়া যায়। রাতের বেলা অগ্নিকু-কে ঘিরে নাচ, মদ ও অলি¤িপকের অনুকরণে বিভিন্ন খেলাধুলা, তাদের আন্তরিক আতিথেয়তা। 


তথ্য-১৯৩ ▌উড্যাব পুরুষদের রূপচর্চা : 

সেপ্টম্বরের বাৎসরিক উৎসবে পুরুষেরা নানা সজ্জায় নিজেকে সাজান নারীর চোখে আকর্ষণীয় হতে। কারণ এখানেই নারীরা যৌনসঙ্গী হিসেবে বেছে নেন পছন্দের পুরুষকে। এমনকি নিজের স্বামীকে রেখেই অন্যপুরুষকে সঙ্গী  হিসেবে বাছাই করার অধিকার রয়েছে বিবাহিত নারীদের। সঙ্গী, স্বামী কিংবা খ-কালিন যৌনসঙ্গী নির্বাচনে প্রায়  স্বয়ংবর সভার মতই স্বাধীনতা উপভোগ করেন উড্যাব উপজাতির নারীরা।   বিয়ের আগে খুশীমত যৌনসঙ্গী খুঁজে যৌনাচারের স্বাধীনতা রয়েছে তাদের। রয়েছে যতজন খুশী ততজন স্বামীকে বিয়ে  করার। পুরুষদের রূপচর্চা এবং নিজেকে আকর্ষণীয় করে গড়ে তুলতে হয় নারীদের কাছে নিজের যথাযথ উপস্থাপনের জন্যই। নিজের সাজ সজ্জা পরিপাটি  রাখার উদ্দেশ্যে সকল পুরুষই বয়ে বেড়ান আয়না। সাহেল মরুভূমিতে মূলত এই যাযাবর নিগ্রো উপজাতির বসবাস। এছাড়া ক্যামেরুন,  মূল আফ্রিকা রিপাবলিক, চাঁদ, নাইজেরিয়ায় দেখা মেলে গর্বিত উড্যাবদের। মাসের পর মাস তারা হেঁটে বসত গড়ে কোন একটা জায়গায়। মেতে ওঠে গান, নাচ, মদ এবং উৎসবে।


তথ্য-১৯৪  ▌ রাসলীলা ও মণিপুরী সমাজ : 

রস থেকেই রাস শব্দের উৎপত্তি। আর লীলা মানে খেলা।  অর্থাৎ রাসলীলার মানে শ্রীকৃষ্ণ,  ও  রাধার লীলাখেলা। মণিপুরী সমাজে রাসনৃত্য  আবার ছয়টি ভাগে ভাগ করা। রাসলীলা উৎসবের শুরুটা হয় সকালে। গোষ্ঠলীলা বা  রাখাল নৃত্য দিয়ে। রাখাল নৃত্য একটানা চলে বিকেল পর্যন্ত। সন্ধ্যার পর শুরু হয় রাসপূর্ণিমার রাসলীলা বা রাসনৃত্য।  রাসনৃত্য পরিবেশনা করে মণিপুরী কুমারী মেয়েরা। রাসনৃত্য কখনও  একক, কখনও দ্বৈত এবং কখনও দলবেঁধে পরিবেশিত হয়। এ নৃত্যে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের শুরু,  মান-অভিমান এবং শেষে মিলন দেখানো হয়। # অষ্টাদশ শতাব্দীতে(১৮৪৩ খ্রীঃ) মণিপুরের রাজা মহারাজ ভাগ্যচন্দ্র একদিন স্বপ্নে দেখতে পান রাধা  ও কৃষ্ণের রাসলীলা। তারপর তিনি স্বপ্নের আলোকেই উপস্থাপন করেন রাসলীলার রাসনৃত্য।  মণিপুরীদের তিনটি গোত্র। এর একটি মৈতেই, আরেকটি বিষ্ণুপ্রিয়া সর্বশেষ মৈতেই পাঙান। বিষ্ণুপ্রিয়া  ও মৈতেই গোত্রের লোকরা সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী। এরা গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ভুক্ত। এ ছাড়া মৈতেই  পাঙানরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। তবে সব মণিপুরীরই প্রধান বার্ষিক উৎসব রাসলীলা।  


তথ্য-১৯৫  ▌টোডা জাতি: 

টোডা জাতি হলো দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি পাহাড়গুলোয় বসবাসরত উপজাতি। ২০ শতকে টোডাদের জনসংখ্যা ছিল মোটামুটি ৭০০ থেকে ৯০০ জন।  জনসংখ্যার নগণ্য অংশ হলেও টোডারা "তাদের প্রতিবেশীদের থেকে ভিন্ন রূপ, প্রথা ও রীতিনীতির কারণে মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। টোডারা ঐতিহ্যগতভাবে মান্ড নামক বসতিতে থাকে। তিন থেকে সাতটি খড়-ছাওয়া বাড়ি নিয়ে একটি মান্ড গঠিত হয়। তাদের অর্থনীতি  মহিষ-নির্ভর, মহিষের দুগ্ধজাত খাদ্য তারা নীলগিরি পাহাড়ের অন্য লোকদের কাছে বিক্রি করে। টোডা সমাজে কয়েক ভাইকে একসাথে বিয়ে করা ছিল বেশ সাধারণ ব্যাপার।  টোডাদের জমিগুলো এখন ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের অন্তর্ভুক্ত। টোডা পোশাক হলো একপ্রস্থ কাপড়, যা পুরুষেরা শালের মতো করে ধুতির ওপর গায়ে জড়িয়ে নেয় এবং নারীরা নেয় স্কার্টের মতো করে এবং শাল জড়িয়ে। টোডারা  নারী কোনো পরিবারের সব ভাইকে বিয়ে করলেও সন্তানেরা সামাজিকভাবে বড়ভাইয়ের বলে গণ্য করা হতো। এই প্রথা এখন বাতিল হয়ে গেছে। 


 তথ্য-১৯৬  ▌ অ্যামিশ পিউপল : 

অ্যামিশরা হল উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষত পেনসিলভানিয়াতে বসবাসরত একদল এ্যানা ব্যাপ্টিস্ট খ্রিস্টান। তারা প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর নিজ ইচ্ছায় বুঝেশুনে পুনরায় খ্রিস্টধর্মে দীক্ষা নেয়। আমরা মুসলমানের ঘরে জন্মালে মুসলমান হই, হিন্দুর ঘরে জন্মালে হিন্দু। জেনে-বুঝেশুনে ধর্ম বেছে নেই না ! অ্যামিশরা খুব সাধাসিধে জীবনযাপনে বিশ্বাসী। তারা আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারে অনাগ্রহী। তারা মোটরচালিত যানবাহন, ফোন, টেলিভিশন ইত্যাদি ব্যবহার করে না। অ্যামিশ কমিউনিতে মুখোমুখি যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অ্যামিশরা তাদের বাড়িতে রান্নার জন্য কাঠের চুলা ব্যবহার করে। তাদের যানবাহন বলতে শুধু ঘোড়ায় টানা গাড়ি আর বাইসাইকেল। তারা তাদের ছেলেমেয়েদের অষ্টম শ্রেণীর পর আর স্কুলে পাঠায় না। অ্যামিশদের ঘরে আসবাবপত্র থাকে না। তাদের তিনটির বেশি পোশাক থাকে না। পোশাকে কোন সেলাই থাকে না, পিন দিয়ে আটকায়। বিবাহিত মহিলারা সাদা এবং অবিবাহিতরা কাল ক্যাপ পড়ে। ছেলেরা বিয়ে করার পর তারা শেভ করা বন্ধ করে দেয়।


তথ্য-১৯৭ ▌হরিয়ানার মিও মুসলিম : 

নিজেদের মুসলিম বলেই পরিচয় দেয় মিওরা, তবে হিন্দু ধর্মের প্রায় সব আচরণবিধিও মেনে চলে। তাদের ধারণা, তারা রাম, কৃষ্ণ এবং অর্জুনের মতো হিন্দু দেবতাদের বংশধর। এমনকি দিওয়ালি, দুশেরা এবং হোলির মতো উৎসবগুলোও পালন করে। ভারতের উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং রাজস্থানজুড়ে প্রায় পাঁচ লাখ মিও মুসলিমের বাস। মূলধারার হিন্দু এবং মুসলিম সমাজ থেকে স¤পূর্ণ আলাদা পরিচয় বহন করে মিওরা। বিয়ের ক্ষেত্রেও ইসলাম এবং হিন্দু উভয় ধর্মের কাউকে বিয়ে করতে পারেন। বিয়ের পর ধর্ম বদলানো প্রয়োজন মনে করে না তারা। মসজিদের পাশাপাশি মন্দিরেও পুজা দেন। ধারণা করা হয়, বারো থেকে ষোল শতকের মধ্যে ধীরে ধীরে ইসলামে প্রবেশ করে মিওরা। তাদের নামগুলোতে এখানো হিন্দু যুগের উপাধি ব্যবহার করা হয়। তাদের নামগুলো হয়, রাম সিং, তিল সিং এই ধরনের। তারা বিভিন্ন সুফি পীরদের সং¯পর্শে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।  গ্রামের ভেতরে মিওরা সবাই হিন্দুদের মতোই জীবন যাপন করে। আপনি হিন্দু এবং মিওদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করতে পারবেন না। 


তথ্য-১৯৮  ▌ হিন্দু ধর্ম :  

হিন্দুদের মূল ধর্মগ্রন্থ বেদ। হিন্দু ধর্মের যাবতীয় একান্ত করণীয় বিষয়ই বেদে বর্ণিত আছে। তবে  ঐতিহাসিকদের  মতে, বেদ  ঐশ্বরিক পুঁথি নহে। ইহা   কেবল প্রাচীন মুনি-ঋষিদের ও আর্যদের সভ্যতার ইতিহাস মাত্র। ইহার লিখিত শ্লোকগুলো তৎকালীন আর্য ঋষিদের ধ্যান--ধারণা এবং অভিজ্ঞতা ও কল্পনার  সৃষ্টি । হিন্দু ধর্মের তিনটি শাখা। শাক্ত ধর্ম, বৈষ্ণব ধর্ম, শৈব ধর্ম।  ‘হিন্দু মাতৃকা শক্তি বা দেবীই সর্বোচ্চ ঈশ্বর’ এই মতবাদের উপর ভিত্তি করেই শাক্ত ধর্মের উদ্ভব। তান্ত্রিক ও অতান্ত্রিক পদ্ধতিসহ একাধিক পন্থায় শাক্ত ধর্মানুশীলন চলে। যারা দূর্গা/কালির পূজা করে তারা শাক্ত, যারা শিবের পূজা করে তারা শৈব, আর যারা বিষ্ণুর পূজা করে তারা বৈষ্ণব।  বৈষ্ণববাদে  ভগবান বিষ্ণু বা কৃষ্ণকে ভক্তির মাধ্যমে ভজনা করা হয়। বিষ্ণুর পূজারীদের দার্শনিক ভিত্তি প্রধানত ভাগবত গীতা এবং ভগবত পুরাণসহ উপনিষদ। দ্রাবিড়দের প্রধান দেবতা ছিলেন শিব। যে কারণে সিন্ধুসভ্যতার সঙ্গে শিব-এর স¤র্পক রয়েছে।  শৈব ধর্মটি একেশ্বরবাদী এবং ভক্তিবাদী। ধর্মটির ব্যবহারিক দিক হল চর্যা, ক্রিয়া, যোগ ও জ্ঞান। 


তথ্য-১৯৯ ▌বৌদ্ধধর্ম : 

বৌদ্ধধর্ম গৌতম বুদ্ধ কর্তৃক প্রচারিত একটি ধর্ম বিশ্বাস এবং জীবন দর্শন। আনুমানিক খ্রিষ্ট-পূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গৌতম বুদ্ধের জন্ম। বর্তমানে বৌদ্ধধর্ম দুটি প্রধান মতবাদে বিভক্ত। প্রধান অংশটি হচ্ছে হীনযান বা থেরবাদ। দ্বিতীয়টি মহাযান নামে পরিচিত। বজ্রযান বা তান্ত্রিক মতবাদটি মহাযানের একটি অংশ। জনসংখ্যার দিক দিয়ে (৩৮ কোটি) এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম ধর্ম। শ্রীলঙ্কা, ভারত, ভুটান, নেপাল, লাওস, কম্বোডিয়া, মায়ানমার, চীন, জাপান, মঙ্গোলিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও কোরিয়াসহ  অনেক দেশে এ ধর্মের অনুসারী রয়েছে। এই ধর্মমতে, ঈশ্বরকে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে ধরে নিলে মানুষের সব কাজ ও উদ্যম অর্থহীন হয়ে পড়ে। তাই সৃষ্টিকর্তার অস্তিতে বিশ্বাস না করে স¤পূর্ণই নিজের বুদ্ধির ওপর নির্ভর করে নির্বাণ লাভের চেষ্টা করতে হবে। বুদ্ধ তার মতবাদে অভিজাতদের ভাষা সংস্কৃতকে অপসারিত করে সাধারণ মানুষের ভাষা পালিকে করলেন ধর্ম ও জ্ঞানচর্চার মাধ্যম। আসলে এ হচ্ছে অন্ধবিশ্বাসের বিরুদ্ধে বুদ্ধের বিদ্রোহ; বেদের বর্ণভেদ ও  সাধারণ মানুষের শ্রম-ডাকাতির বিরুদ্ধে এ বিদ্রোহ। 


তথ্য-২০০  ▌ব্রাহ্ম সমাজ :  

বাংলা গদ্য প্রথম লেখেন রাজা রামমোহন রায়, তাঁর যখন ১৬ বছর বয়স (১৭৮৮  খ্রিষ্টাব্দ), তখন হিন্দু ধর্মের অসারতা নিয়ে লেখা বইটি  হিন্দুদের বিশ্বাসে আঘাত করার কারণে বাজেয়াপ্ত করা হয়। রাজা রামমোহন রায় ব্রাহ্মণ হলেও, ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন। হিন্দু সমাজে ব্রাহ্মণরাই জাতিপ্রথা  বা জাতিবিভেদ তৈরি করেছিল। ধর্মের সকল সুবিধা তারাই ভোগ করত। রাজা রামমোহন রায় এর প্রতিবাদে ব্রাহ্মণ সভা ভেঙে ব্রাহ্ম সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। তাঁর এই আন্দোলন গতি  লাভ করে যখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্ম ধর্ম প্রচারণায় যুক্ত হন। হিন্দুদের একাধিক ঈশ্বর বিশ্বাসের পৌত্তলিকতার বিরোধিতার পর সতীদাহ প্রথা রদের জন্য তাঁর  আন্দোলনের জন্য তিনি পরিচিতি পান। তাঁর ধর্মবিশ্বাস ছিল সকল ধর্মের  সমন্বয়ের পক্ষে। তিনি বিশ্বাস করতেন, তাঁর বা যেকোনো লোকের নিজের ধর্ম পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন নেই। সব ধরনের অন্ধবিশ্বাস, গোঁড়ামি ও কুসংস্কার বর্জন করে প্রতিটি ধর্মের নৈতিক উপদেশগুলো গ্রহণ করা উচিত।