কীভাবে আজকের বাঙালি জাতিসত্তা গড়ে উঠেছে


প্রায় ৬ হাজার বছর আগে আমাদের এই ভূমিতে প্রথম পা রাখে আদি-অস্ট্রাল জাতিগোষ্ঠী। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে আসা এই নব্য প্রস্তর যুগের মানুষেরাই ছিল এই অঞ্চলের আদিম অধিবাসী। আমাদের পরিচিত সাঁওতাল, মুণ্ডা, শবর, কোলের মতো আদিবাসী গোষ্ঠীগুলো তাদেরই উত্তরসূরী।

তাদের আগমনের প্রায় এক থেকে দুই হাজার বছর পর, অর্থাৎ প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার বছর আগে দক্ষিণ ভারত থেকে আসেন দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর মানুষ।


অনেকে মনে করেন, সিন্ধু সভ্যতার স্রষ্টা ছিল এই দ্রাবিড়রা। তারা কৃষিকাজ ও নগর সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দুই আদিম গোষ্ঠীর সংমিশ্রণই আমাদের জাতিগত পরিচয়ের প্রথম ভিত্তি স্থাপন করে।

মধ্য এশিয়ার যাযাবর গোষ্ঠী  শকরা আসে প্রায় ২০০০ বছর আগে আর হুনরা আসে ১৫০০ বছর আগে। তারা স্থানীয় ধর্ম ও সংস্কৃতি গ্রহণ করে নিজেদের পরিচয়কে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে মিশিয়ে দেয়।


৩৫০০ বছর পূর্ব  থেকে আর্যদের আগমন শুরু হয়। উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসা এই গোষ্ঠী তাদের ভাষা, সংস্কৃতি নিয়ে সময়ের সাথে সাথে স্থানীয় বাঙালি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিশে যায় এবং বাঙালি জাতিসত্তায় এক নতুন মাত্রা যোগ হয়।

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব এবং পার্বত্য অঞ্চলে ত্রিপুরা নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী  আসে প্রায় ৫ হাজার বছর আগে মঙ্গোলিয়া থেকে। এদের পর গারোরা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বছর আগে তিব্বত থেকে।


আবার চাকমা ও মারমারা আসেন ৫০০ থেকে ৭০০ বছর আগে, আর ম্রো জনগোষ্ঠীর আগমন ঘটে প্রায় ৬০০ বছর আগে।

দশম শতাব্দী থেকে বাণিজ্যিক কাফেলা নিয়ে আসে আরবরা। এদের মধ্যে অনেক পীর, দরবেশ, এবং শাসক ছিলেন।

এরপরে আসে ১৫১৬ খৃষ্টাব্দে পর্তুগিজ, ইংরেজ, আর্মেনীয়দের মতো ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠী। বাণিজ্যিক ও শাসনের প্রয়োজনে তারা এখানে আসে এবং তাদের রক্তের ধারাও বাঙালির সাথে মিশে যায়।


এই দীর্ঘ হাজার হাজার বছর ধরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর সংমিশ্রণের মধ্য দিয়ে আজকের বাঙালি জাতি একটি সমৃদ্ধ ও মিশ্র জাতিসত্তা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। আমরা বিভিন্ন সংস্কৃতির এক বিশাল এবং প্রাণবন্ত মেলবন্ধন। 




হিন্দুদের বিয়ের কথা

যে বিয়েকে ‘জন্ম জন্মান্তরের বন্ধন’ বলে দাবি করা হচ্ছে, মজার বিষয় হলো, বন্ধনটা শুধু নারীর জন্য। পুরুষের কোনো বন্ধন নেই। পুরুষ এক বিয়ের পিঁড়ি থেকে উঠেই আরেকটি পিঁড়িতে বসতে পারে; যতবার ইচ্ছে বিয়ে করতে পারে, তাতে বাধা নেই। আগের স্ত্রীদের ডিভোর্স না দিয়েই পুরুষ তার ইচ্ছা অনুযায়ী বিয়ে করতে পারে। কিন্তু নারীর সে উপায় নেই। স্বামী পরিত্যক্তা যে নারী, তাকেও বিয়ে করতে দেবে না। স্বামী নেশাগ্রস্থ, উন্মত্ত, পাগল, পিশাচ যাই হোক—স্ত্রীর মুক্তি নেই। নারীর ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে তার বিয়ে নাকি জন্ম জন্মান্তরের বন্ধন। কথাটি বলা হচ্ছে শুধু ডিভোর্স আইন প্রণয়নে বাধা দেওয়ার জন্য। যেহেতু বিবাহ বিচ্ছেদের সুযোগ নেই, তাই নারীর দ্বিতীয়বার বিয়ে করার উপায় নেই।  


ছেলে-মেয়ে সুখে সংসার করবে—এরকম চুক্তিতে কন্যাদান করাকে ‘প্রাজাপত্য বিবাহ’ বলে থাকে, যা বর্তমানে বহুল প্রচলিত পণের বিনিময়ে আপনি যদি আপনার মেয়েকে (বিক্রি করে) দেন তবে তা আরেক রকম বিয়ে। এর নাম ‘আসুর বিয়ে’, যদি পাত্র-পা্ত্রী নিজেরা পরস্পরকে পছন্দ করে বিয়ে করে, তাহলে সেটি আরেক প্রকারের। একে বলে ‘গান্ধর্ব্য বিয়ে’। 

যদি ক্ষমতার জোরে কারও মেয়েকে বলপূর্বক তুলে এনে বিয়ে করেন সেটা হবে আরেক রকম বিয়ে। একে বলে ‘রাক্ষস বিয়ে’ আর যদি কোনো মেয়েকে ঘুমন্ত, উন্মত্ত বা নেশাগ্রস্ত করে তাকে প্রতারণাপূর্বক সম্ভোগ করেন সেটি হবে সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রকারের বিয়ে–যার নাম ‘পৈশাচ বিয়ে’।

বর্ণভেদে এসব বিয়ের অধিকার ভেদ আছে। অর্থাৎ ব্রাহ্মণের জন্য যা বৈধ, শূদ্রের জন্য তা বৈধ নয়। এছাড়াও বর্ণভেদে তিন প্রকার বিয়ে আছে–সমলোম, অনুলোম ও প্রতিলোম। 


বর্তমান যুগে আপনার-আমার জন্মও সরকারের খাতায় নিবন্ধন করতে হয়। তাহলে বিয়ে নিবন্ধন করতে আপত্তি কেন? কেন আপনি বিবাহ আইন প্রণয়ন করতে দেবেন না? অপরিবর্তিত হিন্দু আইন’ বলতে আদৌ কিছু আছে নাকি? ইংরেজরা এই আইন চালু করেছে, আবার তারাই বহুবার সংশোধন করে গেছে। আমাদের দেশে বিয়ের পূর্বে ‘পাটিপত্র’ করার সংস্কৃতি আগে থেকে চালু আছে। এটি হিন্দু বিবাহের প্রথম আচার। স্ত্রীকে ঠকাতে না চাইলে বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে ভয় পান কেন?

আমাদের বুদ্ধিমান দাদারা যখন হিন্দুদের চাইতে মুসলমানদের ডিভোর্স অনেক বেশি হয় বলে দাবি করেন, তখন আমি প্রশ্ন করি, ‘হিন্দুদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয় প্রমাণ দেখাতে পারবেন?’ তারা প্রমাণ দেখাতে চায়। হিন্দু বিবাহ বিচ্ছেদের আইন নেই। কিভাবে বিবাহ বিচ্ছেদ হবে? বিচ্ছেদ ছাড়া হিন্দু মেয়েদের আবার বিয়ে হয় কিভাবে?


ভারতের হিন্দু আইনে বিবাহ বিচ্ছেদ এবং নারীর পুনরায় বিয়ের বিধান আছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু আইনে বিচ্ছেদের কোনো সুযোগ নেই। ১৯৪৬ সালের Hindu Married Women's Rights to Separate Residence and Maintenance Act হিন্দু বিবাহ বিচ্ছেদ (divorce) স্বীকার করে না। একজন নারী চাইলে ঘোষণা দিয়ে যৌনকর্মী হতে পারে। সে অধিকার আছে। কোনো পুরুষের রক্ষিতাও হতে পারে। কিন্তু পুনরায় বিয়ে করে স্বাভাবিক ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের অধিকার হিন্দু নারীকে দেয়া হয়নি।


বিবাহ বিচ্ছেদ একটি প্রয়োজনীয়তা। প্রয়োজন আইন মানে না (Necessity knows no law.)। অনেক মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে আইনবহির্ভূত অবৈধ বিয়ের দিকে যেতে বাধ্য হচ্ছে। বিবাহ বিচ্ছেদ সবার জন্য প্রয়োজনীয় নয়। কিন্তু যার জন্য প্রয়োজন তাকে এই অধিকার না দিয়ে উপায় নেই। তবুও মৌলবাদী মুর্খরা এই আইন প্রণয়নে বাধা দিচ্ছে। তারা হিন্দু বিবাহ বিচ্ছেদ আইন প্রণয়নের বিরোধিতা করে, অথচ অবৈধ ডিভোর্স এবং মেয়েদের অবৈধভাবে পুনরায় বিয়ের উদাহরণ দেয়। তাদের কথা হল, এভাবেই চলুক। কোনো নীতিবান মানুষ এরকম মতামত দিতে পারে না।

যদি ডিভোর্স ছাড়া পুরুষদের নতুন বউ ঘরে তুলতে আইনগত অসুবিধা থাকত, তাহলে পুরুষরাই আগে বিবাহ বিচ্ছেদ আইনের জন্য দাবি তুলত। 


 ‘হ্যাটলেন সিনড্রোম’

উনিশশ চুরানব্বই সালে হলিউড থেকে ‘দ্য শোশাঙ্ক রিডেমশন’ নামে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা মুক্তি পায়।কারাগারে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা এ সিনেমার বিষয়বস্তু।ছবির গল্প অনুযায়ী দীর্ঘ ৫০ বছর কারাভোগ করার পর ষাটের দশকের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে  হ্যাটলেন জেল থেকে ছাড়া পান। কারামুক্তির পর হ্যাটলেন  যেদিকে যেতেন, শুধু অবাক হয়ে দেখতেন ৫০ বছরে সবকিছু কীভাবে বদলে গেছে! সমাজ, দেশ, দেশের মানুষ, মানুষের চিন্তাভাবনা, জীবন-জীবিকা, এমনকি রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি, দালানকোঠা সবকিছুতেই তিনি আমূল পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছিলেন। তাঁর আশপাশের কোনো কিছুই তিনি আর চিনতে পারছিলেন না। ফলে মুক্তজীবনে তাঁর কাছে কোনো কিছুই ভালো লাগছিল না।

সবসময় তিনি ভয় ও আতঙ্কের মধ্যেই থাকতেন! এ রকম এক মানসিক অবস্থায় হ্যাটলেন নিজেকে নিজে বলছেন, ‘আই ওয়ান্ট টু কমিট অ্যানাদার ক্রাইম, সো দ্যাট দে উইল সেন্ড মি হোম।’ অর্থাৎ তিনি আরেকটি অপরাধ করতে চান, তাহলে আইন-আদালত তাঁকে ‘বাড়ি’ পাঠিয়ে দেবে। টানা ৫০ বছর কারাগারে থেকে হ্যাটলেন কারাগারকেই মনে করছেন তাঁর ‘বাড়ি’ আর মুক্ত জীবনের বাসগৃহকে মনে করছেন যন্ত্রণাদায়ক ‘কারাগার’! দিন দিন এ জীবন হ্যাটলেনের কাছে অসহ্য হয়ে উঠছিল। জেলে (তাঁর ভাষায় নিরাপদ ও শান্তিময় আপন ঘর) ফিরে যাওয়ার মতো কোনো অপরাধ করতে না পেরে হ্যাটলেন আত্মহত্যা করেন।  দীর্ঘদিন অস্বাভাবিক, অস্বাস্থ্যকর ও খারাপ পরিবেশে থাকতে থাকতে মানুষের কাছে ‘খারাপ’-কে ভালো এবং ‘ভালো’-কে খারাপ মনে হতে পারে। এ অবস্থাকে ‘হ্যাটলেন সিনড্রোম’ বলে।

 

ফেসবুক-গুগল-ইউটিউব

ফেসবুক-গুগল-ইউটিউবের মতো বৈশ্বিক প্রযুক্তি জায়ান্টের দৌরাত্ম্যেও কোণঠাসা প্রথাগত সংবাদমাধ্যম। বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী যত বাড়ছে ততই ডিজিটাল দুনিয়ায় বিজ্ঞাপন বাণিজ্য একচেটিয়া দখলে নিয়েছে এসব প্রযুক্তি কোম্পানি। আর ডিজিটাল মাধ্যমের দাপটে ছাপা পত্রিকা এবং টিভি অনুষ্ঠান বাণিজ্যে ভাটা পড়ায় অনলাইনমুখী এখন সব সংবাদমাধ্যম। অনলাইনে বাণিজ্যের লক্ষ্মী হচ্ছে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মগুলোয় বাণিজ্যের জাদুমন্ত্র হচ্ছেযত ভিউ, তত আয়’! আয় বাড়াতেভিউ’-এর জাঁতাকলে পিষ্ট বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা। চটকদার শিরোনাম, অপতথ্য, ভুল তথ্যনির্ভর, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন খবরে দর্শক-পাঠকের জন্য প্রকৃত ঘটনা কী, সেটা বেছে নেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে। রুচিহীন, মূল্যবোধহীন এসব গুজবসর্বস্বসস্তা খবরদ্রুত ভিউয়ের টপচার্টে উঠে আসছে, ভাইরাল হচ্ছে। আয় বাড়িয়ে যেনতেনভাবে টিকে থাকতে ভাইরাল কনটেন্টের নেশায় যুক্ত হয়েছে মূলধারার সংবাদমাধ্যমও। এতেই হচ্ছে সর্বনাশ। মানুষ মূলধারার সংবাদমাধ্যমের ওপরেও আস্থা-বিশ্বাস হারিয়ে ফেলছে। 

দেশে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের বাজার ঠিক কত, তা নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য নেই। ধারণা করা হয়, ইতোমধ্যে এ বাজার ১০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে। এই বাণিজ্যের লাগাম প্রায় পুরোটাই এখন ফেসবুক, গুগল, ইউটিউবের হাতে। ফলে এসব বহুজাতিক কোম্পানির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সংবাদমাধ্যমসহ কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। বাংলাদেশে ফেসবুক-গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানের কোনো অফিস কিংবা জবাবদিহির জায়গা না থাকলেও সরকারের উদার নীতিমালাকে পুঁজি করে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পকেটে পুরছে এসব প্রতিষ্ঠান।
কোনো কনটেন্ট থেকে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব ঠিক কত টাকা দেয় কনটেন্টের প্রকাশকদের, এটি নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সরকার ২০১৮ সাল থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও জরিপ করে দেখেছে, দেশটিতে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনে ১০০ ডলার খরচ হলে ৮১ ডলারই পায় গুগল ও ফেসবুক। কিন্তু বাকি ১৯ ভাগও কি কনটেন্ট নির্মাতারা পায়? কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের দোহাই দিয়ে ছোটখাটো অজুহাতে কনটেন্ট প্রকাশকদের পাওনা অর্থ বাতিল করা, আটকে রাখা কিংবা কনটেন্টের রিচ কমিয়ে দেওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে।

বাংলাদেশের মিডিয়াগুলো গুগল-ফেসবুক-ইউটিউব থেকে যে আয় করছে; বলা যায়, এর বিনিয়োগকারী প্রায় শতভাগই বাংলাদেশি বিজ্ঞাপনদাতা কোম্পানি। বাংলাদেশি কোম্পানির বিজ্ঞাপন বাংলাদেশি মিডিয়ায় ফিরে আসছে, মাঝখানে ডিজিটাল মধ্যস্বত্বভোগী হচ্ছে গুগল, ফেসবুক কিংবা ইউটিউব। ফলে বলা যায়, এখানে লাভের গুড় প্রায় পুরোটাই খাচ্ছে ওই ডিজিটাল মধ্যস্বত্বভোগী নামের পিঁপড়াগুলো। আবার এসব বিজ্ঞাপনের সব যে বাংলাদেশি মিডিয়ায় ফেরত আসে, সেটিও নয়। বাংলাদেশিরা যেসব বিদেশি সাইট ব্রাউজ করেন, সেসব সাইটও এই বিজ্ঞাপনের আয়ে ভাগ বসাচ্ছে। মোট কথা, ভিউ বাণিজ্য এবং ফেসবুক-গুগল-ইউটিউবে নির্ভরতার পরও ডিজিটাল সংবাদমাধ্যমগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কঠিন হচ্ছে। এই চক্র থেকে বের হতে না পারলে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রাপ্তি এবং টেকসই মিডিয়া স্থাপন দুরাশাই থেকে যাবে। 

 ---------------------

মৃত্যুর পরও ব্যাংকে আপনার টাকা রয়ে যায় কিন্ত, আমরা আমাদের জীবদ্দশায় খরচ করার জন্য যথেষ্ট টাকা পাই না। অথচ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেবার পরও বহু মানুষের প্রচুর টাকা উদ্বৃত্ত থেকে যায়।

 -----------

ফার্স্ট ইমপ্রেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কোন কথা বলার আগেই একজনের সাথে সাক্ষাত হওয়ার তিন থেকে পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যেই তার সম্পর্কে একটা ধারণা হয়ে যায়।

 

 সফল ও ব্যর্থ উভয়ের দিনই ২৪ ঘন্টায়।

কারো সাথে তর্ক করার এনার্জি নাই। "জ্বী আপনেই সেরা" বলে তর্কে হার মেনে নিই

অন্যের সাফল্য-ব্যর্থতার গাল-গপ্প শুনতে আর ভালো লাগে না। "আইজ আছি কাইল নাই" মুড অলওয়েজ এক্টিভেট। পকেটে টাকা থাকলে মন ভালো থাকে।

সত্য যত খারাপ আর কঠিন হোক, তাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, যদি কোনো কিছু সত্যি হয়, তবে তা কখনোই অমলিন হবে না, হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে না। 

আজকের জন্য না বেঁচে আমরা ভবিষ্যতের জন্য দুশ্চিন্তায় মশগুল হয়ে যাই। জীবনে সুখী ও সফল হতে হলে দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে আজকের জন্য কাজ করতে হবে। কেননা জীবনে কোনো কিছুই স্থায়ী নয়।

------

সময় যখন খারাপ হয়

তখন কবুতর পুষলেও শকুন হয়....

 =========

সব সমস্যারই সমাধান তিনটা এক মেনে নাও দুই বদলে দাও তিন ছেড়ে দাও

 =========

 

  জাতীয়তাবাদ 

 জাতীয়তাবাদ হলো এমন একটি রাজনৈতিক মতাদর্শ যেখানে জাতীয় পরিচয়কে সামাজিক ঐক্যের সর্বোচ্চ ও শীর্ষরূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মতাদর্শে একথা ধরে নেয়া হয় যে, ‘জাতীয় স্বার্থ’ বলে এমন কিছু আছে যার কাছে শ্রেণীস্বার্থ, শোষণ ব্যবস্থা থাকা বা না থাকা, সামাজিক বিভাজনজনিত সবরকম স্বার্থবোধ ইত্যাদি সবকিছু অধীনস্ত থাকে। স্বজাতি-বোধের স্বাভাবিক উপলব্ধিকে রূপান্তর করা হলো জাতীয়তাবাদের মতাদর্শে। জাতীয়তাবাদের একটি স্বাভাবিক প্রবণতা হলো জাত্যাভিমান। ‘আমাদের জাতিই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি’। জাত্যাভিমান থেকেই উৎসারিত হয় উগ্র জাতীয়তাবাদ। নিজ জাতির তথাকথিত স্বার্থরক্ষায় কোনো অন্যায় কাজই তখন অন্যায্য মনে হয় না। জাতীয়তাবাদের সবচেয়ে বড় বিপদ হলো তার অন্তর্নিহিত রক্ষণশীলতা। জাতীয় ঐতিহ্য ও জাতীয় ভাবধারা রক্ষার নামে নানা ধরনের বর্ণবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও কূপমন্ডকতাকে সে উস্কে দিতে সক্ষম। জাতীয়তাবাদ এক ধরনের আত্মমুখীনতা ও আত্মকেন্দ্রিকতার প্রবণতা ধারণ করে, যা কিনা বিশ্ব সভ্যতার অর্জন থেকে জাতির দূরত্বকে বাড়িয়ে দেয়

জাতীয়তাবাদ অন্ধ একমুখীনতা ও সংকীর্ণতাবাদী প্রবণতাও লালন করে। জাতীয়তাবাদ দাবি করতে চায় যে- সমাজের মধ্যে শ্রেণী বিভাজন, শ্রেণী সচেতনতা, ইতিহাস ও সমাজ রূপান্তরে শ্রেণীর ভ‚মিকা, শোষক ও শোষিতের মধ্যে মৌলিক অমোচনীয় দ্বন্দ্ব, শোষিত মানুষের ঐক্য, মানবিক ও শোষণমুক্ত নতুন সভ্যতা নির্মাণে বিশ্বের শ্রমিক সংহতি ও আন্তর্জাতিকতাবাদ ইত্যাদি বিষয়গুলোর ঊর্ধ্বে যে সুপ্রিম বিষয়টি, তা হলো জাতির সার্বজনীন স্বকীয়তা। অন্যদিকে, বৃহৎ ও শক্তিমান জাতির ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদ যে আগ্রাসী, আধিপত্যবাদী, সাম্রাজ্যবাদী, উপনিবেশবাদী ও নয়া-উপনিবেশবাদী এবং চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে ফ্যাসিবাদী, নাৎসিবাদী, জিয়নবাদী, তালেবানি জঙ্গিবাদী, প্যান-ইসলামবাদী, ব্রাহ্মণ্যবাদী ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের চরম প্রতিক্রিয়াশীলতায় পর্যবসিত হতে পারে তা ইতিহাসের দিকে তাকালেই দেখতে পাওয়া যায়।  

‘দেশপ্রেম’ (patriotism) ও ‘জাতীয়তাবাদ’  (nationalism)  এক জিনিস নয়। 

 

সবাই পৃথিবী বদলানোর কথা ভাবে, কিন্তু কেউ নিজেকে বদলানোর কথা ভাবে না!

মাউলানা জালালুদ্দিন রুমি প্রচন্ডভাবে বিশ্বাস করতেন যে সৃষ্টিকর্তার কাছে পৌছানোর রাস্তা হচ্ছে সঙ্গীত, কবিতা, এবং নৃত্য !

যেভা‌বে দে‌শের শিল্প বা‌নিজ‌্য বি‌ভিন্ন কারখানা ধ্বংস করা হ‌চ্ছে কিছুদিন পর নতুন স্লোগান হবে---তুমি কে? আমি কে? ভিখারি! ভিখারি!


খচ্চর হইতে সাবধান

ঘোড়া এবং গাধার মিলনে খচ্চর পয়দা হয়। পুরুষঘোড়া ও নারীগাধার মিলনে জন্ম নেয়া খচ্চরকে ইংরেজিতে মিউল এবং পুরুষগাধা ও নারীঘোড়ার মিলনে জন্ম নেয়া খচ্চরকে হিনি বলা হয়। নারী ও পুরুষ উভয় ধরণের খচ্চর বন্ধ্যা।বাংলাভাষায় খচ্চর বলতে হারামিলোক, শয়তান মানুষ, বদমাশলোক,দুষ্টু, দুর্বৃত্ত, কুখ্যাতজন, মানবেতর মানুষ ইত্যাদি বোঝানো হয়।

 

তুমি সত্যিই গাধা। না সিংহ

গরু আমাদের দুধ দেয় না, আমরা কেড়ে নি(ই)। গাধাও বোঝা বয় না, জোর করে কাজটি করাই। হিসেব মত সিংহীও দুধ দেয়, সিংহও ওজন বইতে সক্ষম। কিন্তু, সিংহীর দুধ নেওয়া বা সিংহকে দিয়ে ওসব করানো মানুষের ক্ষমতার বাইরে।

একটু বোকা আর ভালো মানুষদের গরু কিংবা গাধার সাথে তুলনা করা হয়। এই দুটো প্রাণীর নামে কোনো মানুষকে ডাকা মানে সেটা অপমান করা। কিন্তু কাউকে সিংহ বললে সে উল্টে গর্ববোধ করবে।

সেই সিংহ, যে আজ অবধি মানুষের উপকার করল না, যার সামনে মানুষ গেলে মুহূর্তের মধ্যে পরপারে চলে যাবে, সেই সিংহ হচ্ছে মানুষের চোখে রাজা আর উপকারী গাধা হচ্ছে হাসির বস্তু।

অতিরিক্ত ভালো হওয়ার সমস্যাই এটা। অতিরিক্ত ভালো মানুষরা কারোর কাছে গুরুত্ব পায় না। তুমি নিঃস্বার্থভাবে ত্যাগ করতে থাকো, ভালো মনে কারোর ক্রমাগত উপকার করতে থাকো, আঘাতের পর আঘাত সহ্য করেও হাসিমুখে কাউকে ভালোবাসতে থাকো, তুমি তার চোখে 'গাধা' ছাড়া আর কিছুই হবে না।

যদি মনে করো সে একদিন এগুলোর মূল্য বুঝবে, তাহলে তুমি সত্যিই গাধা।

(অনলাইন)

-------------

চুরিটা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে এমনভাবে মিশে গেছে, এ নিয়ে কেউ তেমন আর মাথা ঘামায় না।

—--------------------------------

কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক অবস্থা যখন দুর্বল হয়, তখন সামাজিক অপরাধ সবল হইয়া উঠে; সমাজে অস্থিরতা প্রকাশ পাইতে থাকে। এই চিরন্তন সত্য লইয়া জার্মানির বিখ্যাত পলিটিক্যাল ইকোনমিস্ট ম্যাক্স ওয়েভার ১৯৬৮ সালে একটি ভুবনবিখ্যাত গ্রন্থ লিখিয়াছিলেন, যাহার শিরোনামইকোনমি অ্যান্ড সোসাইটি :অ্যান আউটলাইন অব ইন্টারপ্রেটিভ সোসিওলজি। ১৯৯৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল সোসিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন এই গ্রন্থকে বিংশ শতাব্দীর সমাজবিজ্ঞানবিষয়ক সেরা গ্রন্থ বলিয়া ঘোষণা করে। 

উন্নয়নশীল দেশগুলির সবচাইতে বড় দুর্বলতা হইল, যাহারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকেন, তাহারা অতি সাময়িক চিন্তা দ্বারা পরিব্যাপ্ত হন।


ডাচ ডিজিজবা ডাচ রোগ

 দেশি-বিদেশি বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি আসলে নড়বড়ে, তাই একটু টোকা দিলেই ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। আর এমনই এক অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশ গরিব বা স্বল্পোন্নত দেশের এলডিসির (লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি) কাতার থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছে, যা ২০২৬ সালে বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশের মর্যাদা এনে দেবে। তবে ২০২১ সালের এলডিসি উত্তরণযাত্রার পরবর্তী তিন বছরের কর্মধারা বিশ্লেষণ করে অনেকের আশঙ্কা বাংলাদেশ তার উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় সাবলীল অবতরণ পরিকল্পনা বা স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি (এসটিএস) সময়মতো বাস্তবায়ন করতে পারবে না, যা বাংলাদেশকেমধ্য আয়ের দেশের ফাঁদেবন্দী করে ফেলতে পারে, যেখানে গরিব দেশের নাগরিক না হয়েও জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে গরিবি হালেই জীবন কাটাতে হবে। সময়মতো এসটিএস অর্জনে ব্যর্থতা বাংলাদেশের অর্থনীতিকেডাচ ডিজিজবা ডাচ রোগে আক্রান্ত করতে পারে। কারণ, বাংলাদেশের ডাচ ডিজিজের মূল অনুষঙ্গ রপ্তানি ও রেমিট্যান্সে অনিশ্চয়তার পাশাপাশি অন্যতম তিন উপসর্গ যথা অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি, মাত্রাতিরিক্ত আয়বৈষম্য এবং ক্রমবর্ধমান আমদানি প্রবণতা বাংলাদেশে ভালো করেই উপস্থিত আছে।

 ১৯৭৭ সালেদ্য ইকোনমিস্টম্যাগাজিন ডাচ ডিজিজ শব্দের প্রথম প্রয়োগ করে ১৯৫৯ সালে নেদারল্যান্ডসে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল এলাকা আবিষ্কৃত হওয়া, গাসের ওপর অতিনির্ভরশীলতা এবং গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ার পর দেশটির অর্থনীতিতে নানামুখী নেতিবাচক প্রভাব ব্যাখ্যা করতে। কোনো দেশের অর্থনীতি সুনির্দিষ্ট কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ বা অন্য কোনো খাতের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে উঠলে বুঝতে হবে নিকট ভবিষ্যতে সেখানে নেতিবাচক প্রভাবেরই প্রসার ঘটছে। অর্থাত্, প্রাকৃতিক সম্পদ বা কোনো খাতে চমত্কার নৈপুণ্য প্রদর্শন পাওয়া সৌভাগ্যের, কিন্তু তার ওপর নির্ভরশীলতা দুর্ভাগ্যের।

 বাংলাদেশের জিডিপির অন্যতম দুই উত্স তৈরি পোশাকশিল্প এবং বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্স ডাচ ডিজিজের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। এ দুই খাতের চাহিদা বিশ্ববাজারে কমে গেলে আয় কমে যাবে। এমন অবস্থায় নির্দিষ্ট ক্ষেত্র থেকে উত্পাদিত দ্রব্যসেবা বাদে বাকি দ্রব্যসেবাগুলোর জন্য আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা আরো বাড়বে। এতে করে রপ্তানির ক্ষেত্রগুলোতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হবে, যার প্রভাবে দীর্ঘ মেয়াদের জন্য উচ্চ বেকারত্ব দেখা দেবে এবং তা চক্রাকারে অর্থনীতির সব খাতে ছড়িয়ে পড়বে। এমন এক জটিল পরিস্থিতির সঙ্গে যদি অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি, মাত্রাতিরিক্ত আয়বৈষম্য এবং আমদানির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার মিশ্রণ ঘটে, তাহলে ডাচ ডিজিজে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। 

বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্রিফ অনুসারে, মুদ্রার অবমূল্যায়ন ও বিনিময় হার ব্যবস্থাপনা নীতির কারণে বাংলাদেশ কালোবাজারের সুবিধা নিতে এবং অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে অর্থ লেনদেন করতে উত্সাহিত করছে, যে কারণে আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিয়েও রেমিট্যান্স আয় কমছে।বিশ্ব জুড়ে গার্মেন্টস শিল্পে আধুনিক প্রযুক্তি যুক্ত হচ্ছে, আফ্রিকা ও এশিয়ার দেশগুলো উঠে আসছে, উচ্চমূল্যের পোশাক বাজারে বাংলাদেশের দুর্বল অবস্থার পাশাপাশি নতুন বাজার ধরাতেও ঘাটতি রয়েছে। অন্যদিকে একসময় অনেক দেশে বৈধভাবে কর্মসংস্থানের জন্য কর্মীরা গেলেও

—---------------------

বল প্রয়োগে ক্ষমতা ক্ষয় /জন্মই আমাদের আজন্ম পাপ

 কবি শামসুর রাহমানের ভাষায় বলতে হয়:উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ।

 =============


কামলারা আমলা হবে, দেশ যাবে রসাতলে

শিক্ষার্থীরা তো কোটা বাতিল চাননি। কোটা বাতিল হয়েছিল সরকারপ্রধানের নির্বাহী আদেশে। সেই আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। সেখান থেকেই নতুন করে জটিলতার শুরু।আজকে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে রাস্তায় নেমেছেন মূলতবেকারত্বঘোচানোর জন্য।ক্ষমতাসীনেরা যদি মনে করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মানের জন্য যদি তাঁদের নাতি-পুতিদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলে, ‘স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিশক্তিশালী হবে, তা হলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী চাকরিক্ষেত্রে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নামতেন না।কোটা সংস্কারের জন্য কমিশন করুন, আলোচনা করুন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, প্রতিবছর কর্মবাজারে যুক্ত হচ্ছেন ১৮-১৯ লাখ তরুণ।  বছরে গড়ে মাত্র ৭০ থেকে ৭১ হাজার কর্মসংস্থান হয় সরকারি খাতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের যে আন্দোলন, সেটা মূলত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি। সরকারি খাতে চাকরির বাইরে থেকে যাওয়া লাখ-লাখ তরুণ প্রতিবছর শ্রমবাজারে আসছেন, তাঁদের কর্মসংস্থান ও জীবিকার ব্যবস্থা হয় বেসরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে। তাঁদের বেশির ভাগের কর্মসংস্থান ও জীবিকার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। দেশে কাজ না থাকায় প্রতিবছর ছয় থেকে সাত লাখ তরুণ কর্মসংস্থানের আশায় বিদেশে পাড়ি জমান। খেয়ে না-খেয়ে রেমিট্যান্স পাঠান, বাংলাদেশি সেই খেটে খাওয়া তরুণদের কর্মসংস্থানের অন্যতম বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় যাওয়ার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে যে সিন্ডিকেট, তাতে চারজন সংসদ সদস্য জড়িত। মালয়েশিয়া যেতে যেখানে সরকার নির্ধারিত ব্যয় ৭৯ হাজার টাকা, সেখানে এই চক্রের কারণে সে ব্যয় বেড়ে হয়েছিল ৫ লাখ ৪৪ হাজার টাকা।

দেশে থেকে যাওয়া তরুণদের একটা বড় অংশ ফুটপাতে হকারি, পান-সিগারেট-চা কিংবা আলুপুরি-বেগুনি-চা বিক্রির মতো স্বনিয়োজিত কাজে যুক্ত হন। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী ও পুলিশকে চাঁদা দিয়ে তাঁদের ব্যবসা করতে হয়। বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ঢাকায় একেকজন হকারের কাছ থেকে দিনে গড়ে ৩০০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। তার মানে বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা চাঁদা দিতে হয়।  ৫৬ শতাংশ কোটা থাকায় অপেক্ষাকৃত ভালো প্রতিযোগীরা বিসিএসের চাকরি পাওয়ার প্রতিযোগিতা থেকে বাদ পড়ে যাচ্ছেন। ২০১৮ সালের প্রথম কোটাবিরোধী আন্দোলনের পর সরকার একতরফভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরি থেকে কোটা তুলে দেয়। বাতিল করা সেই সিদ্ধান্ত 

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরকারের প্রতিপক্ষ নয়।

যতই দিন যাচ্ছে, ততই দুর্নীতিতে নিমজ্জিত একটি দেশের সামগ্রিক চিত্র নির্লজ্জভাবে বের হয়ে আসছে। প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অর্থ কেলেংকারী, অর্থ পাচারসহ নানা ধরনের অপকর্মের খবর নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে। এসব দেখেশুনে সাধারণ মানুষদের সরকারি চাকরির প্রতি বিমুখ হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু হচ্ছে উল্টোটা। বাস্তবতা হলো, দিন দিনই সরকারি চাকরির প্রতি মোহ বাড়ছে, বাড়ছে প্রতিযোগিতা। লুটপাট আর দুর্নীতির এই চিত্র কিছুমাত্র প্রভাব ফেলছে না তরুণ প্রজন্মের ওপর।প্রশ্ন হলো, কেন তাঁরা সরকারি চাকরি লাভের জন্য এতটা মরিয়া হয়ে উঠেছেন?

আবার অণ্যদিকে ৩৩তম থেকে ৪৬তম বিসিএস পর্যন্ত প্রশ্নফাঁসের সত্যতা ওঠে এসেছে,‘   এমন পরিস্থিতিতে কবি দাউদ হায়দারের কণ্ঠে তাল মিলিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে—‘এ বঙ্গমুল্লুকে জন্মই আমার আজন্ম পাপ!’  যেকোনো দেশের চাকরিসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কোটাব্যবস্থা চালু করা হয় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ও সমতা তৈরি করার জন্য।

একটা উদাহরণ দিইভিকারুননিসা নূন স্কুল (সিদ্ধেশ্বরী শাখা) থেকে যত ছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছিল, তাদের মধ্যে অধিকাংশই গড় নম্বর ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পেলেও তাদের কাউকে বৃত্তি দেওয়া হয়নি। কারণ, সংখ্যা সীমিত। যদি কোটা না থাকত, তবে তারা সবাই  বৃত্তি পেত।  কিন্তু খুলনার প্রত্যন্ত অঞ্চল দাকোপ ও কয়রা উপজেলা থেকে শতকরা ৫০ থেকে ৬০ নম্বরপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীদেরই বৃত্তি দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু বৃত্তি কোটাভিত্তিক। কিন্তু প্রশাসনে এই ব্যবস্থা বলবৎ থাকলে কামলারা আমলা হবে, দেশ যাবে রসাতলে।

===============

২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হলফনামা এবং প্রতিবছর সম্পদের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। এখন তা উধাও। প্রতিবছর নির্বাচনের আগে এমপি প্রার্থীরা সম্পদের হিসাব দেন। সরকারি দলের প্রার্থীদের প্রায় সবারই প্রকাশ্য আয় কয়েক শ শতাংশ বাড়ে। কোনো তদন্ত হয়?

ক্ষমতার আশপাশে থাকা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পত্তিও হু হু করে বাড়তে থাক


====================

হেনকালে গগনেতে উঠিলেন চাদা, নেত্রী বলে উঠে এস মোর দাদা

তিব্বতের কথিত শাসক ও ধর্মগুরু তেনজিন গিয়াৎসো (চতুর্দশ দালাই লামা) যখন ১৯৫৯ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন নর্থ ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার এজেন্সিতে (নেফা) (বর্তমানে অরুণাচল প্রদেশ) প্রবেশ করেন এবং পরবর্তী সময়ে ভারতে আশ্রয় নেন, তখন থেকেই বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী চীনের সঙ্গে ভারতের উষ্ণতায় ভাটা পড়তে শুরু করে। ব্রিটিশ রাজের নির্ধারিত পশ্চিমের জনসন লাইন এবং পূর্বের ম্যাকমোহন লাইন বলে পরিচিত সীমান্তের ঐতিহাসিক অধিকার নিয়ে একসময়কারহিন্দি-চীনা ভাই ভাইসম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়  উত্তেজনা প্রশমনে চীনের নেতা চৌ এনলাই ১৯৬০ সালে দিল্লি সফরে এসে তিব্বত ইস্যু সামনে এনে দুই দেশের সীমান্ত বিভেদ, বিশেষ করে পশ্চিম সীমান্তের উত্তেজনা কমাতে একটিগ্রহণযোগ্যপ্রস্তাব দিয়েছিলেন। 

 কিন্তু ওই সময়কার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অতি চাহিদার কারণে চৌ এনলাইয়ের প্রস্তাবটি নেহরু নাকচ করতে বাধ্য হন। এর পরে ভারতের কিছু উচ্চাভিলাষী পরামর্শকের কারণে দুদেশের মধ্যে প্রায় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। ১৯৬২ সালের ২০ অক্টোবর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত এই যুদ্ধে চীন পশ্চিম রণাঙ্গনে আকসাই চীনের ৩৮ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূমি দখল করে নেয়। একই সঙ্গে তারা পূর্ব সীমান্তে আসামের পূর্ব পর্যন্ত দখল করে একতরফা যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করে সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়।ভারতের অরুণাচল প্রদেশকে চীন এখনো নিজের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। গত মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওই অঞ্চলে সফর নিয়ে চীন কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য অঞ্চলটি ভারতের নয়, চীনের অংশ।২০২৩ সালে চীনে অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে ভারতের উশু দলের ৩ খেলোয়াড়কে (যঁাদের বাড়ি অরুণাচল) চীন ভিসা দেয়নি এবং তার প্রতিবাদে ভারতীয় দল চীন সফর বাতিল করেছিল। খেলোয়াড়দের ভিসা না দেওয়ার মাধ্যমে চীন বোঝাতে চেয়েছে, অরুণাচল তাদের ভূখণ্ড, ভারতের নয়।

ঐতিহাসিকভাবে অরুণাচল (এক সময়েরনেফা’) ১৯১৪ সালের আগে চীনের অংশ ছিলএই কথা বেইজিং প্রায়ই দিল্লিকে মনে করিয়ে দেয়। চীন এই প্রদেশের নাম দিয়েছে সিয়াং। একই সঙ্গে চীন এ অঞ্চলের ৩০টি স্থানের ঐতিহাসিক তিব্বতি তথা চীনা নাম দিয়েছে। 

১৯৬২ সালের যুদ্ধ থেকে ভারত যে শিক্ষা নিয়েছে, তারই পরিপ্রেক্ষিতে ওই অঞ্চলকে ভারত অধিকতর সামরিকায়ন করেছে একই সঙ্গে ভারত শিলিগুড়ি করিডর বাচিকেন নেক’–এর প্রতিরক্ষা এবং সরবরাহ লাইনের প্রভূত উন্নতি ঘটিয়েছে। তারপরও এই অঞ্চলই চীনের সরাসরি নজরদারির আওতায় রয়েছে। এ কারণে এখানে ভারতের জন্য বিকল্প এবং নিরাপদ আপত্কালীন সরবরাহ পথ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

ভূকৌশলগত কারণে এখন ভারতের প্রয়োজন কথিত চিকেন নেক বা শিলিগুড়ি করিডরের বিপরীতে আরও সুরক্ষিত বিকল্প সরবরাহ পথ তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশের সহযোগিতা আশা করে। 

========================

 

 বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা উক্তি আমাকে নাড়া দেয়, ‘আগুনকে যে ভয় পায়, সে আগুনকে ব্যবহার করতে পারে না।

আগুনের ভয়ে আমরা অতি বেশি নিজেকে খোলসের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলেছি। 

 

==============================

 

রক্ষকই যদি ভক্ষক হয়, তাহলে সেখানে রাস্ট্র ব্যর্থ হতে বাধ্য।



সারা দেশে দুর্নীতির মহামারি, করোনা মহামারির চেয়েও ভয়াবহ 

সারা দেশ আজ দুর্নীতির মহামারিতে আক্রান্ত, যা করোনা মহামারির চেয়েও ভয়াবহ। প্রতিটি সেক্টরে বিরামহীনভাবে দেশপ্রেম আর সততার লাশ দাফন হয়ে চলেছে। ঢাকা শহরে এখন ফ্ল্যাটগুলোর দাম গগনচুম্বী। আমি হলফ করে বলতে পারি, কোনো সৎ কর্মকর্তা তিনি যত বেতনই পান না কেন, ঢাকার অভিজাত এলাকায় কোনো অবস্থাতেই বেতনের টাকা দিয়ে ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারবেন না। সেখানে নতুন ঢাকার প্রায় ৭০শতাংশ বাড়ী-ফ্লাট সরকারী চাকুরীজীবীদের। এক জনের চার/পাঁচটা বাড়ী। শুধু ঢাকাতেই নয়; বিদেশে একাধিক বাসস্থান আছে এইসব কর্মকর্তাদের।

আমাদের দেশে সরকারি কর্মচারীদের চাকরি যাওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। এমনও দেখা যায়, অনেকে চাকরি ছেড়ে গেছেন, পরে আবার আদালতের মাধ্যমে চার থেকে পাঁচ বছর আগের সব বেতনসহ ফেরত আসছেন। আমাদের এত এত অপচয়ের প্রজেক্ট হচ্ছে, ব্যর্থতার জন্য কারও কখনো কোনো শাস্তি হয়েছে?

আর অপসারণের প্রক্রিয়া এতই ঝামেলার, এত এত দুর্নীতিতে কয়জন অপসারিত হয়েছে? এটা এমন একটি মেশিন, যেখানে আপনি ঢুকলেন এবং আপনার বয়স না হওয়া পর্যন্ত সেই মেশিন চলতেই থাকল। এই সুযোগই অনেকে নিচ্ছে, ভবিষ্যতেও নেবে যত দিন এই চাকরি কর্মদক্ষতাভিত্তিক ও জবাবদিহিমূলক করা না হবে।

আপনারা কি দেখেছেন ভারতের গত ২৫ বছরের পরিবর্তন? কারণ হচ্ছে, ভারতের সরকারি চাকরি হয়ে গেছে অনেকটা চুক্তিভিত্তিক, আপনি কাজ করলে তা নবায়ন করা হবে, না হলে টা টা। এটাই আসলে একমাত্র উপায় এই সিস্টেমকে ঠিক করার। ভারত পারলে আমরা পারব না কেন? এর ফলে সৎ কর্মচারীরা অনুপ্রাণিত হবেন, নিজের উত্তম ভবিষ্যতের জন্যই তাঁরা কাজ করবেন, দেশ হবে গতিশীল।

শেষবার বেতন স্কেল দেওয়া হলো, তখন বলা হলো, বেতন বাড়লে দুর্নীতি কমবে। কিন্তু আমরা বরাবরই দুর্নীতিতে প্রথম দিকেই থেকে গেছি।

কয়েক বছর আগে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কিছু সম্রাটের ক্যাসিনো, জুয়া ও চাঁদাবাজি সূত্রে অর্জিত অবৈধ সম্পদ নিয়েও জিরো টলারেন্সের আওয়াজ প্রতিধ্বনিত হয়েছিল। তাঁরা নামে সম্রাট হলেও মহা দুর্নীতিতে ছিল চুনোপুটি। বর্তমানে মহা মহা দুর্নীতির অভিযোগের পর আমলাদের বদলি বা পদাবনতির মতো যেসব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তাতে মনে হয়, সরকারপাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। অপরাধীদের তাই ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা উঠিয়ে নেওয়া বা সম্পদ জব্দের আগে তা হস্তান্তর করা ও বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায়ও কোনো সমস্যা হয়নি। তাঁরা যদি সরকারের সমালোচক বা বিরোধী দলের কেউ হতেন, তাহলে তাঁদের বিমানবন্দরের গণ্ডি পেরোতে আদালতের কাছে মিনতি করতে হতো।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ১০ জন সংসদ সদস্যের ৫ বছরে সম্পদ বেড়েছে ৪ থেকে ৫৪ গুণ পর্যন্ত। আবার যাঁর নিজের সম্পদ বেড়েছে ৫৪ গুণ, তাঁর স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে ৩৪ গুণ। আর ১৫ বছরে তাঁর সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ ২ হাজার ৪৩৫ গুণ। স্ত্রী ও নির্ভরশীল ব্যক্তিদের সম্পদ বাড়ার দিক থেকে যে ১০ জন শীর্ষে, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে কম বেড়েছে যাঁর, তাঁরও বেড়েছে ৮ গুণ। 

ট্রান্সপারেন্সির হিসাবে মোট প্রার্থীদের মধ্যে দেখা মিলেছে ১ হাজার ৮০০ কোটিপতির। দেশের আইনে একক মালিকানায় ১০০ বিঘার বেশি জমি রাখার অনুমতি না থাকলেও হলফনামা বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অনেকেই এই সীমার বাইরে কৃষি ও অকৃষিজমির মালিক। তাঁরা জমির মালিকানায় শীর্ষে থাকা ১০ জনের যে তালিকা প্রকাশ করেছেন, তাতে দেখা যায়, বৈধ সীমার দেড় গুণ থেকে ২০ গুণ জমির মালিকানা আছে তাঁদের।

আমাদের দেশ ধুঁকছে টাকা পাচারের জন্য। ২০২১ সালে সরকার তদন্তে অনেক পাচারকারীর নাম পায়। একজন মন্ত্রীই বললেন, তাঁদের বেশির ভাগই সরকারি কর্মচারী। কিন্তু এত দিনে একজনও কি শাস্তি পায়নি। এমনকি নাম প্রকাশও করা হয়নি। এদিকে দুদক সরকারের অনুমতি ছাড়া তদন্ত করবে না। যেখানে জবাবদিহি থাকে না, সেখানে দুর্নীতি থাকবেই। 

 

বিভিন্ন হাসপাতালে বার্ষিক যে ওষুধ, অক্সিজেন, রোগ পরীক্ষার যন্ত্রপাতি, এক্স-রে ফিল্ম, ইসিজি পেপার, আলট্রাসনোগ্রাফি পেপার, তুলাব্যান্ডেজগজ, মানে চিকিৎসা-সম্পর্কিত যা কিছু ব্যবহার করা হয়, সেগুলোকে বলা হয় মেডিকেল সার্ভিসেস রিক্যুইজিটস বা এমএসআর।

এখন মোটামুটি একদেড় লাখ জনসংখ্যাবিশিষ্ট উপজেলার একটি হাসপাতালে এই এমএসআরের জিনিস কেনাকাটার বাজেট থাকে ৬৫ লাখ থেকে ৭০ লাখ টাকার কাছাকাছি।  পুরো এক বছরে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। এই বাজেটও অনেক জায়গাতেই সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় না, নানা রকম ফাঁকফোকর আর লোপাট হয়

 চিন্তা করেন, একটি হাসপাতালে সারা বছর যে জীবন রক্ষাকারী কার্যক্রম চলবে, ওষুধ-অক্সিজেন সব মিলিয়ে যা খরচ হবে, তার চেয়ে কোনো সরকারী কর্মকর্তার এক পবিবারের কোরবানির খরচ বেশি।


কফি গাছ 


ইথিওপিয়ান লোককথা অনুযায়ী, নবম শতাব্দীতে কালদি নামের এক ছাগলপালক দেখলেন, তাঁর ছাগলগুলো এক বিশেষ গাছের ফল খাওয়ার পর বেশি চঞ্চল হয়ে ওঠে। স্থানীয় এক সুফি সাধক সেই ফল দিয়ে একটি পানীয় তৈরি করলেন। সেই পানীয়ই পরে কফি হিসেবে পরিচিতি পায়। ইউরোপে প্রথম দিকে কফিকে ‘শয়তানের পানীয়’ নামে ডাকা হতো। ঘটনাটি ছিল ষোলো শতকের দিকের। সেই সময় কফি প্রথম ইউরোপে পাড়ি জমায়। কয়েকজন খ্রিষ্টান ধর্মযাজক সেই পানীয় পান করে তাকে শয়তানের পানীয় নামে ডাকতে শুরু করেন।  


১৬ শতক পর্যন্ত কফি শুধু ইয়েমেনে চাষ হতো। আরবরা কফি বীজ রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল। ইয়েমেনের আইন অনুসারে সে সময় কফি বীজ রপ্তানি করা ছিল মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ। কিন্তু তারপরেও সেটি চুরি হয়েছিল। বাবা বুদান গিয়েছিলেন হজ করতে। মক্কা থেকে ফেরার সময় তিনি ইয়েমেনে যাত্রাবিরতি করেন। সেখানে কফি বীজ থেকে তৈরি হওয়া সুগন্ধি পানীয় দেখে মুগ্ধ হন। তিনি বীজ সংগ্রহের ইচ্ছা পোষণ করেন। কিন্তু স্থানীয়রা তাঁকে বীজ দিতে রাজি না হওয়ায় তিনি গোপনে ৭টি বীজ সংগ্রহ করেন। বাবা বুদান সেই বীজগুলো কর্ণাটকের চন্দ্রগিরি পাহাড়ে রোপণ করেন। সেখান থেকে চারা তৈরি হলে তা ছড়িয়ে পড়ে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও। বাবা বুদানের প্রতি সম্মান জানাতে চন্দ্রগিরি পাহাড়ের নাম রাখা হয় বাবা বুদান গিরি। 



বর্তমান সময়ে কফি চাষের জন্য খুবই বিখ্যাত দেশের নাম ব্রাজিল। সেই ব্রাজিলে কফি গাছ প্রথম যায় ১৭২৭ সালে। যিনি কফি বীজ ব্রাজিলে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁর নাম ফ্রান্সিসকো দে মেলো পালহেতা। ফরাসি এই ভদ্রলোক গায়ানার গভর্নরের স্ত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে কফি বীজ সংগ্রহ করে ব্রাজিলে এনেছিলেন। দেশটি এখন পুরো বিশ্বে উৎপাদিত কফির প্রায় ৪০ শতাংশ একাই সরবরাহ করে। আরও মজার তথ্য হলো, ব্রাজিলিয়ানরা প্রতিবছর প্রায় ২১ মিলিয়ন ব্যাগ কফি পান করে! আর ব্রাজিলের সান্তোস বন্দর দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কফি রপ্তানি হয়।ফ্রান্স ব্রাজিল থেকে কফি চারা চুরি করে নিজেদের কলোনিতে চাষ করতে চেয়েছিল বলে ১৮০০ সালের দিকে দুই দেশের মধ্যে ‘কফি যুদ্ধ’ হয়েছিল।


বিশ্বের দামি কফির নাম কী? অনেকে জানেন, তার নাম কোপি লুয়াক। ইন্দোনেশিয়ায় লুয়াক বা পাম সিভেট নামের এক প্রকার বেজি কফি ফল খেয়ে পরিপাক করে মলত্যাগ করে। সেই মল থেকে সংগ্রহ করা বীজ থেকে তৈরি হয় কোপি লুয়াক। এটি কিলোগ্রাম প্রতি ১০০ থেকে ৬০০ ডলার পর্যন্ত বিক্রি হয়!


একটি কফি গাছ সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ভালো ফলন দেয়। প্রতিটি ফলে সাধারণত দুটি বীজ থাকে। তবে কখনো কখনো একটিমাত্র গোল বীজও থাকে, যাকে বলে পিবেরি।ফিনল্যান্ড বিশ্বের সর্বোচ্চ কফি পানকারী দেশ। কফি বীজ থেকে ১০০ বছর পরও অঙ্কুরিত হতে পারে!

তেলের পরেই কফি হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবসা হওয়া পণ্য। প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে ২ বিলিয়নের বেশি কাপ কফি পান করা হয়!ব্ল্যাক কফি হজমক্ষমতা বাড়ায় এবং চর্বি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত কফি পানকারীদের টাইপ-২ ডায়াবেটিস, পার্কিনসন্স ও লিভারের রোগ হওয়ার আশঙ্কা কম। এমনকি কিছু গবেষণা বলছে, কফি পানকারীরা সাধারণত বেশি দিন বাঁচেন!


মুসলমান

এশিয়া ও ইউরোপ—উভয় মহাদেশেই অবস্থিত দেশ কাজাখস্তানের ৭১ শতাংশ মানুষ মুসলমান হলেও সেখানে মুখ ঢাকা পর্দাযুক্ত পোশাক নিষিদ্ধ। গত  পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে আরেক মুসলিম দেশ কিরগিজস্তানে রাস্তায় নিকাব পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইন লঙ্ঘন করলে গুনতে হবে জরিমানা। ২০২৪ সালে তাজিকিস্তানের এবং ২০২৩ সাল থেকে উজবেকিস্তানে  মুখ ঢাকা পর্দা নিষিদ্ধ হয়েছে। তাঁদের মতে, নিকাব পরার ফলে মুখমণ্ডল সম্পূর্ণভাবে ঢাকা থাকে। এমন পরিস্থিতি জনসমাগমস্থলে ব্যক্তিকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়। তাই জনসমক্ষে প্রত্যেকের চেহারা দেখা বাধ্যতামূলক। ‘আমাদের মায়েরা ও বোনেরা ঐতিহ্যগতভাবেই মাথায় স্কার্ফ পরেন, যা আমাদের সংস্কৃতি ও ধর্মের অংশ।’


কাদা নিয়ে খেলাধুলা

 প্রতিবছরের ২৯ জুন বিশ্বজুড়ে পালিত হয় কাদা নিয়ে খেলাধুলা। শিশুদের প্রকৃতির সঙ্গে আরও বেশি সংযুক্ত করার লক্ষ্যে দিনটি পালন করা হয় বিশ্বজুড়ে। জাপানে আছে পান্টু পুণ্যাহ বা কাদার দৈত্য উৎসব।জাপানে কাদার মধ্যে বা কাদাকে কেন্দ্র করে অনেক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় বোরিয়াং মাড ফেস্টিভ্যাল। এই উৎসবে কাদার মধ্যে দৌড়, কুস্তি, স্লাইডিং এবং এটি দিয়ে বডি পেইন্টিং করা হয়। থাইল্যান্ডের চোনবুরি প্রদেশে কাদা মাঠে মহিষ দৌড়ের প্রতিযোগিতা হয়। এর নাম বাফালো রেস। কৃষিকাজে মহিষের ভূমিকাকে সম্মান জানাতে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। কাদায় হওয়া খেলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মাড রান বিখ্যাত। ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার দৌড়ে কাদা, পানিসহ বিভিন্ন বাধা পার হতে হয় খেলোয়াড়দের।শুধু আমেরিকায় নয়, যুক্তরাজ্যেও খেলা হয় গ্র্যাংজার্স মাড রেস। এটি প্রাচীন গ্রামীণ ঐতিহ্য। স্থানীয় কৃষক সম্প্রদায়ের উৎসব হিসেবে এটি উদ্‌যাপিত হয়।

ব্রিটিশদের অপরাধ

 ১৯৪৩-৪৪ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষে লাখো মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল। এটি ছিল প্রতিরোধযোগ্য মানবিক বিপর্যয়। দুর্ভিক্ষ চলাকালে ব্রিটিশরা বাংলার কৃষিজাত খাদ্যশস্য, বিশেষ করে চাল ও গম, হাজার হাজার টন বিদেশে রপ্তানি করে। এই খাদ্য মজুদ রাখলে লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করা যেত। ভারতের ভাইসরয় ফিল্ড মার্শাল ওয়াভেল বারবার সাহায্যের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু চার্চিল তা প্রত্যাখ্যান করেন। দুর্ভিক্ষের সময়ও চাল বিদেশে পাঠাতে একটি জাহাজও থামানো হয়নি। এই দুর্ভিক্ষে ৩০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ মারা যায় অনাহার, রোগ ও হতাশায়। এটি ছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অপরাধের এক ভয়াবহ উদাহরণ। 


ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য

বাংলাদেশে প্রচলিত ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর ৪ ধারা অনুযায়ী প্রকাশ্যে ধূমপানের ফলে জরিমানা হিসেবে প্রথমবার অনধিক ৩০০ টাকা এবং দ্বিতীয় বা পরবর্তী প্রতিবারের জন্য দ্বিগুণ টাকা দিতে হয়।মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, ভিয়েতনাম, পাকিস্থান সহ বিশ্বেও ১০৯ টি দেশ সিঙ্গেল সিগারেট স্টিক বা ছোটো প্যাকেট বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। শ্রীলংকায় সিগারেটের খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধ করার উদ্যোগটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বিড়ি-সিগারেটে খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। বিশেষভাবে উঠতি বয়সী শিশু-কিশোরদের দিকে অভিভাবকরা সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। কোনো বন্ধুর পাল্লায় পরে শিশু-কিশোররা কৌতুহলবশতঃ বিড়ি, সিগারেট ধরতে পারে। 


আপনি শুনলে অবাক হবেন — ১৯৫০ সালের আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের  অনেক বিখ্যাত ডাক্তার সিগারেট কোম্পানির বিজ্ঞাপনে মুখ দেখাতেন। 'সিগারেট নাকি গলা ব্যথা কমায়!' — এমন আজগুবি দাবি পর্যন্ত করা হতো। তখনও বিজ্ঞানের কাছে সিগারেট ও ক্যান্সারের মধ্যকার সম্পর্ক স্পষ্টভাবে ধরা পড়েনি!

এই অন্ধকার কাটিয়ে বিজ্ঞানের আলো ফেললেন এক মহান চিকিৎসক  গবেষক — স্যার উইলিয়াম রিচার্ড ডোল (Sir Richard Doll)।

(জন্ম: ২৮ অক্টোবর ১৯১২ – মৃত্যু: ২৪ জুলাই ২০০৫)

একজন কিংবদন্তি ব্রিটিশ এপিডেমিওলজিস্ট, যিনি প্রথম বিশ্ববাসীকে তথ্যভিত্তিকভাবে জানালেন: ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধান কারণ।

১৯৫০ সালে তিনি এবং অস্টিন ব্র্যাডফোর্ড হিল মিলে প্রথম গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেন British Medical Journal-এ। এই ঐতিহাসিক গবেষণাই বিশ্বজুড়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্য নীতিতে বিপুল প্রভাব ফেলে।

কিন্তু ডোল এখানেই থেমে যাননি।

পরবর্তী ৫০ বছর ধরে তিনি ৩৫,০০০ ব্রিটিশ চিকিৎসকের উপর একটি দীর্ঘমেয়াদী সমীক্ষা চালিয়ে যান। ফলাফল প্রকাশ করেন ২০০৪ সালের ২২শে জুন, সেই একই British Medical Journal-এ। গবেষণার ফল ছিল চোখ কপালে তোলার মতো:


যাঁরা নিয়মিত ধূমপান করতেন, তাঁদের অর্ধেকই অকালে মারা গেছেন।

২৫% চিকিৎসক ৭০ বছর হওয়ার আগেই মারা যান।

কিন্তু যাঁরা ৩০ বছর বয়সের আগে ধূমপান ছেড়েছিলেন, তাঁদের গড় আয়ু ছিল ধূমপান না-করা সাধারণ মানুষের কাছাকাছি।

আর যাঁরা ৫০ বছর বয়সের মধ্যে ধূমপান ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা গড়ে ৬ বছর বেশি বেঁচেছেন সেইসব চিকিৎসকের তুলনায়, যাঁরা সারাজীবন ধূমপান চালিয়ে গিয়েছেন।


এক সময় যাঁরা বিজ্ঞাপনে বলতেন “My doctor recommends this brand”, এখন তাঁরাই বলেন — 'ধূমপান মৃত্যুর কারণ'।

একজন বিজ্ঞানীর ধৈর্য, সততা ও নিষ্ঠাই যে কীভাবে পৃথিবীর কোটি কোটি প্রাণ বাঁচাতে পারে, স্যার রিচার্ড ডোল এর জীবন তার অমোঘ প্রমাণ ।


==============

সাল ১৮৬৭। ভারতের উত্তর প্রদেশের এক জঙ্গলে সন্ধান পাওয়া যায় এক শিশুর। বয়স ছয় হবে। সে নেকড়ের পালের সাথে ছুটছিল। চার পায়ে। উদ্ধার করে তাকে পাঠানো হয় মিশনারির এক আশ্রমে। সেখানেই তার নাম রাখা হয় দিনা শনিচর।

নেকড়েই লালন পালন করছিল দিনাকে। নেকড়ের পালের সাথে থাকতো এক গুহায়। তাকে মানুষের আদব কায়দা শেখানো কঠিন হয়ে পড়ে। মাংস ছাড়া কিছুই খেত না। সোজা হয়েও দাঁড়াতে পারেনি সে। অবশেষে ৩৪ বছর বয়সে মারা যায় দিনা। মৃত্যুর কারণ যক্ষা।


দৈনিক ৮ ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে প্রতিজন চা-শ্রমিক পান ১৭৯ টাকা।

ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চীনের চা আমদানির ওপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্য বজায় রাখা ব্রিটিশদের পক্ষে ক্রমশ অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। তখন ব্রিটিশরা চিন্তা করে কিভাবে চায়ের চাষ নিজেদের উপনিবেশেই শুরু করা যায়। তারা নজর দেয় ভারতবর্ষের ওপর, বিশেষত আসাম ও দার্জিলিং অঞ্চলের পাহাড়ি ভূমিতে, যেখানে জলবায়ু ও ভূপ্রকৃতি চা চাষের অনুকূল। ১৮৩০-এর দশকে যখন ব্রিটিশরা আসামে পরীক্ষামূলকভাবে চা চাষ শুরু করে, তখন থেকেই শ্রমশক্তি সংগ্রহ ও নিয়ন্ত্রণের এক নির্মম প্রক্রিয়া শুরু হয়। ব্রিটিশরা চা বাগান স্থাপনের জন্য জনপদ থেকে দরিদ্র কৃষকদের ধরে এনে বাগানের শ্রমিক বানায়। অনেক সময় প্রতারণা করে, আবার কখনো জোর করে তাদেরকে বাধ্য করা হয় এই শ্রমজীবনে প্রবেশ করতে। 

চুক্তিভিত্তিক এই শ্রমিকদের উপর চলত অমানবিক নির্যাতন, ছিল না ন্যূনতম শ্রমিক অধিকার কিংবা সামাজিক নিরাপত্তা।ব্রিটিশদের চা খাওয়ার অভ্যাস ভারতীয় অভিজাত শ্রেণির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও এই অভ্যাসে অভ্যস্ত হয়। স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে চা শিল্প ধীরে ধীরে জাতীয় অর্থনীতির অংশ হয়ে ওঠে। রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় চা আজও একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান ধরে রেখেছে। বাংলাদেশের সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ কিছু অঞ্চলে চা বাগানের বিস্তার জাতীয় রাজস্ব আয়ের একটি শক্তিশালী উৎস। ইংরেজ সাহেব হার্ডসনের হাত ধরে ১৮৪৯ সালে ১৫০০ একর জায়গা জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয় উপমহাদেশের প্রথম চা বাগান মালনীছড়া। এরপর ব্রিটিশরা বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিক এনে গড়ে তোলে শ্রমিক সম্প্রদায়, যারা আজও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাস করছেন সেসব বাগানে। 

বর্তমানে দেশে ১৭০টি চা বাগান রয়েছে। এ খাতে ৯৭ হাজার স্থায়ী ও ৪০-৫০ হাজার অস্থায়ী শ্রমিক মিলে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তারা মূলত সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড় অঞ্চলের চা-বাগানগুলোতে কাজ করেন।চা বাগানে প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই শুরু হয় শ্রমিকদের জীবন। মাথায় ঝুড়ি, হাতে কাঁচি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে পাতা তোলা। একদিনে একজন শ্রমিকের সংগ্রহ করতে হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ পাতা, তা না হলে কমে যায় মজুরি। অথচ দৈনিক ৮ ঘণ্টা কঠোর পরিশ্রমের বিনিময়ে প্রতিজন শ্রমিক পান ১৭৯ টাকা। অনেক জায়গায় নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা, শিক্ষাব্যবস্থা বা স্যানিটেশন সুবিধা।প্রতি বছর ২১ মে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক চা দিবস। 

ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, মালাউই, মালয়েশিয়া, উগান্ডা ও তানজানিয়ার মতো চা উৎপাদনকারী দেশসমূহ ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিবসটি উদযাপন করে আসছে। পূর্বে ১৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক চা দিবস পালন করা হতো। পরে ২০১৯ সালে ২১ মে বিশ্ব চা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।  বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ১৬০টির বেশি চা বাগান রয়েছে এবং এর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে।বাংলাদেশের প্রধান চা উৎপাদন এলাকাগুলোর তালিকা হলো: সিলেটের মৌলভীবাজার জেলা, দেশের চা উৎপাদনের প্রায় অর্ধেকই এই জেলায় হয়। বিশেষত শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ, রাজনগর ইত্যাদি উপজেলায় অনেকগুলো চা বাগান রয়েছে। 

শ্রীমঙ্গলকে ‘চায়ের রাজধানী’ বলা হয়। এছাড়াও হবিগঞ্জ জেলায়ও চা উৎপাদন হয়।চট্টগ্রামের মীরসরাই, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি ইত্যাদি এলাকায় চা বাগানও রয়েছে।রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় অঞ্চলের সমতল ভূমিতে চা চাষের সাফল্য বাংলাদেশের চা শিল্পের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। ব্রিটিশদের সময় থেকে শুরু হওয়া এই শিল্পে আজও প্রায় দেড় লাখের মতো শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এই শ্রমিকরা প্রতিদিন সকালে নেমে পড়েন পাহাড়ি বাগানে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাতা তুলেন, অথচ মাস শেষে তাদের বেতন হয় মাত্র ১৭০ টাকা (বর্তমানে কিছু বাগানে ১৮০-১৯০ টাকায় উন্নীত হয়েছে)।