হেল্থ টিপস্-৩০১ ▌চোখের জ্বালাপোড়া :
কারণ কী? *চোখের পানি শুকিয়ে যাওয়া * চোখের অ্যালার্জি ক্স বাতরোগ * চোখের পাপড়ির গোড়ায় প্রদাহ * চোখের অপারেশন * চোখের কালো মণিতে ভাইরাস সংক্রামণ * কালো ধোঁয়া, ধুলোবালি চোখে পড়লে * চোখে রাসায়নিক পড়লে। যেমনÑ চুন, এসিড ইত্যাদি * চোখের ড্রপ ব্যবহারেও প্রাথমিক অবস্থায় চোখ জ্বলতে পারে। করণীয়- *রাস্তাঘাটের কালো ধোঁয়া ও ধুলোবালি থেকে চোখ রক্ষা করার জন্য সানগ্লাস ব্যবহার করুন। *চোখের পানি কমে গেলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চোখে কৃত্রিম চোখের পানি ড্রপ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। *চিকিৎসকের পরামর্শে চোখের অ্যালার্জি এবং কর্নিয়ায় ভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা করাতে হবে। *চোখ বেশিক্ষণ বন্ধ রাখলে অনেক ক্ষেত্রে চোখের জ্বালা কমে। সে জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন।
হেল্থ টিপস্-৩০২ ▌চোখের ছানি বা ক্যাটারেক্ট:
ক্যামেরাতে যেমন লেন্স থাকে, তেমনি চোখের ভিতরেও একটি স্বচ্ছ লেন্স থাকে। চোখের কর্নিয়া ও আইরিসের পিছনে অবস্থিত স্বচ্ছ লেন্স বাধক্যজনিত কারণে এবং অন্যান্য কারণে অস্বচ্ছ হয়। এই স্বচ্ছ লেন্স অস্বচ্ছ হওয়াকেই ছানি পড়া রোগ বলে। কী কী কারণে হয়? ● বার্ধক্যজনিত কারণে, ● ডায়াবেটিস এর কারণে, ● চোখে আঘাত পেলে ● চোখে কোনো প্রদাহ ইউভাইটিস হলে, ● রেডিয়েশন ● অনিয়ন্ত্রিত ঔষধ সেবন। লক্ষণ কী- ধীরে ধীরে দৃষ্টিক্ষমতা লোপ পাওয়া, চশমার পাওয়ার পরিবর্তন হওয়া, আলোর চারদিকে রংধনু দেখা, একটি জিনিসকে দুই বা ততোধিক দেখা, দৃষ্টি সীমানায় কালো দাগ দেখা, আলোতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসা ইত্যাদি। ছানি পরিপক্ব হয়ে গেলে ঝুঁকি বেড়ে যায়। অপারেশন করে চোখের ভেতর লেন্স লাগিয়ে নিলে রোগী আবার পূর্বের মতো দেখতে পাবে। ফ্যাকো সার্জারির মতো আধুনিক সার্জারি চোখের ছানি পড়া চকিৎসা সহজ করে তুলেছে।
হেল্থ টিপস্-৩০৩ ▌চোখে অঞ্জনি?:
চোখের পাপড়ি যেখান থেকে বের হয়, সেই রেখা ঘেঁষে যে লাল ছোট্ট দানা বা পুঁটুলি মাঝে মাঝে তৈরি হয়, তাকে চলতি কথায় অঞ্জনি বলে। চোখের পানি তৈরি করার মেবোমিয়ান গ্রন্থির মুখ বন্ধ হয়ে গিয়ে ভেতরে প্রদাহ বা সংক্রমণ থেকে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই দানাটা লাল হয়ে ফুলে যায় ও ব্যথা করে। প্রতিদিন দুইবার করে গরম সেক দিলেই অঞ্জনি সেরে যায়। উপসর্গ # চোখের পাতা ভারী ভারী লাগে। আক্রান্ত স্থান লাল হয়ে ওঠে, ফুলে যায় এবং শক্ত হয়ে পড়ে। # আক্রান্ত স্থানে চুলকায়। কেন হয়? # রক্তস্বল্পতা, হরমোনের পরিবর্তন এবং পুষ্টির অভাবে হতে পারে। # বংশগত কারণে হয়। # শরীরে পানি ঘাটতি হলে # পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে # সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মির কারণে হতে পারে। # ধূমপান, মদ্যপান এবং ড্রাগ আ্যডিকশনের জন্য হয়। # ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্যও হয়। * চোখের পাতা অযথা ঘষবেন না। *নিজে নিজে সুঁচ দিয়ে অঞ্জনি গলাবার চেষ্টা করবেন না।
হেল্থ টিপস্-৩০৪ ▌ কন্টাক্ট লেন্স:
কন্টাক্ট লেন্স একটা ¯পর্শকাতর ‘মেডিকেল ডিভাইস’। স্টেরিলাইজ করা ছোট্ট পাত্রে বিশেষ তরলের মধ্যে রাখা এই লেন্স মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে নিজেই দূষিত হয়ে যেতে পারে। কন্টাক্ট লেন্স পরে ঘুমালে কর্নিয়ায় সংক্রমণ ২০ গুণ বেড়ে যেতে পারে। লেন্স পরা অবস্থায় চোখের পাতা বন্ধ থাকায় কর্নিয়া অক্সিজেন সংকটে পড়ে। এ কারণে জীবাণু মোকাবিলায় দুর্বল হয়ে পড়ে চোখ। করণীয়-১. হাত ধোয়ার পর হাত শুকিয়ে নিয়ে শুকনো হাতেই লেন্স পরতে বা খুলতে হবে। ২. কন্টাক্ট লেন্স কখনোই গোসলের পানি বা অন্য কোনো পানিতে ভেজানো ঠিক না। অতি ক্ষুদ্র জীবাণু লেন্সে লেগে থেকে কর্নিয়ার আলসার সৃষ্টি করতে পারে। ৩. ভুলেও কন্টাক্ট লেন্স থুতুতে ভিজানো যাবে না। থুতুতে বহু ব্যাকটেরিয়া থাকে। ৪. আপনার চোখ যদি লালচে হয়ে ওঠে, চোখ যদি জ্বালা-পোড়া করতে থাকে, তাহলে দেরি না করে লেন্স খুলে নিন। লেন্সের বিকল্প হিসেবে আপনার সঙ্গেই চশমা রাখুন।
হেল্থ টিপস্-৩০৫ ▌ফ্যাকো সার্জারী:
ফ্যাকো সার্জারিÑছানি অপারেশনের এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। এটি একটি সহজ অপারেশন। কিন্তু অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সম্পন্ন করতে হয়। সেজন্য একটি ছোটো ছিদ্রের মাধ্যমে ফ্যাকো মেশিনের সাহায্যে ঘোলা লেন্সটিকে ভেঙে ছোটো ছোটো টুকরায় বের করে আনা হয় এবং তার জায়গায় একটি নতুন কৃত্রিম লেন্স বসানো হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি স¤পন্ন করতে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে। এই কৃত্রিম লেন্সটি পূর্বের স্বাভাবিক লেন্সের মতো কাজ করবে। এই পদ্ধতিতে সেলাইবিহীন ও ব্যান্ডেজের প্রয়োজন হয় না। রক্তক্ষরণ সাধারণত হয় না ও প্রায় ব্যথামুক্ত। চোখ সামান্য কাটা হয় বলে দ্রুত সেরে উঠে। হাসপাতালে থাকতে হয় না। প্রতিস্থাপিত লেন্স দুরকমের হয়: ১) শক্ত লেন্স ২) নরম লেন্স ১) শক্ত বলে ভাঁজ করা যায় না। ফলে বেশি কাটতে হয়। নরম হওয়ায় ভাঁজ করা যায়। ফলে কটি ক্ষুদ্র ছিদ্র করে লেন্স প্রতিস্থাপিত করা যায়। এতে পুনরায় ঘোলা হওয়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত অনেক কম।
হেল্থ টিপস্-৩০৬ ▌ ল্যাসিক সার্জারি:
যাদের চোখের পাওয়ার আছে কিন্তু চশমা বা কনট্যাক্ট লেন্স পরতে চান না, তাঁদের জন্য আধুনিক একটি চিকিৎসাব্যবস্থার নাম ল্যাসিক সার্জারি। এক্সাইমার লেজার রশ্মির সাহায্যে চোখের কর্নিয়ায় আকৃতি বা গঠনের পরিবর্তন করে স¤পূর্ণ চোখের পাওয়ারের পরিবর্তন করা হয়। ল্যাসিক-পদ্ধতির অপারেশন এর প্রকারভেদের মাধ্যমে মাইনাস বা প্লাস পাওয়ারকে পরিবর্তন করে বিনা পাওয়ার বা জিরো পাওয়ার করা হয়। সাধারণত দৃষ্টিজনিত সমস্যা অর্থাৎ দূরের বা কাছের বস্তু দেখতে সমস্যা হওয়া বা ঝাপসা দেখা এধরনের চক্ষু সমস্যার সমাধানের জন্যই ল্যাসিক সার্জারি করা হয়ে থাকে। যারা দেখার সমস্যার কারণে (+) বা (-) চশমা ব্যবহার করেন তাদের ক্ষেত্রেই বেশিরভাগ সময় চিকিৎসকগণ ল্যাসিক সার্জারি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে ঠিক এগুলো ছাড়াও আরো কিছু চিকিৎসায় ল্যাসিক সার্জারি করা হয়। যাতে রোগীকে চশমা ব্যবহার করতে না হয়।
হেল্থ টিপস্-৩০৭ ▌ চোখের চশমা:
দুনিয়ার প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে কোনো না কোনো সময় চশমা লাগে - কেউ পরে আর কেউ পরে না, এই যা তফাৎ। ▪ চশমা নিলেই পাওয়ার বাড়বে, এ ধারণা ভুল। পাওয়ার যা বাড়ার তা বাড়বেই। ▪ চশমা পরলে চোখ ভাল হয় না। আর না পরলেও চোখ খারাপ হয় না। পরলে ভাল দেখবেন, এই যা। ▪ শতকরা দশজন স্কুলের বাচ্চার চশমা লাগে এবং দেরিতে চশমা নেওয়ার জন্য তার তিন জনের অলস চোখ হয়ে থাকে, যার কোনো চিকিৎসা নেই। ▪ খাদ্যের সঙ্গে চশমার পাওয়ারের কোনো স¤পর্ক নেই তবে ভিটামিন-এ যুক্ত খাবারের সঙ্গে বিশেষ একটা রাতকানা এবং অন্যকিছু চোখের রোগের স¤পর্ক আছে । বড়োরা চশমা না পরলে তার হয়তো কোন লেখা পড়তে অসুবিধা হবে। কিন্তু শিশুর ৫-৮ বছর বয়সে চোখের সমস্যা ছিলো। তখন তার একটি চশমা প্রয়োজন। কিন্তু সেটা যদি না দেওয়া হয় তবে তার সেই ঝাপসা দৃষ্টি সারাজীবনের জন্য ঝাপসাই থেকে যেতে পারে।
হেল্থ টিপস্-৩০৮ ▌ সানগ্লাাস:
রোদেলা দিনের প্রতি মুহূর্তে সানগ্লাস চোখকে সুরক্ষা করে। উপকারিতাগুলো- ১. দীর্ঘসময় রোদে থাকলে বয়স বাড়ার সঙ্গে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া আশঙ্কাও বেড়ে যায়। তাই সানগ্লাস ব্যবহার জরুরি। ২. বাইসাইকেল ও মোটরসাইকেল চলন্ত অবস্থায় বাতাসের ধুলাবালি এবং পোকা-মাকড় আমাদের চোখে এসে পড়তে পারে। আর এসব ধুলাবালি ও পোকামাকড় থেকে সানগ্লাস রক্ষা পেতে সহায়তা করে। ৩. সূর্যের ক্ষতিকর অতি-বেগুনি রশ্মি কর্নিয়া ও অক্ষিপটের ক্ষতি করে। সানগ্লাস চোখকে রশ্মি থেকে পুরোপুরি রক্ষা করে। ৪. চোখে প্রচুর আলো পড়লে আইরিস ছোটো হয়ে চোখ কুচকে যেতে পারে। এতে অক্ষিপটের ক্ষতি হয়। ভালো মানের সানগ্লাস ব্যবহার এই আলোর পরিমাণ ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। ৫. দীর্ঘ সময় রোদে থাকলে চোখের পাতা, চোখের চারপাশ, ত্বকে জ্বালাভাব, কালি পড়া, ভাঁজ পড়া সমস্যার দেখা দেয়। তাই সানগ্লাস ব্যবহার জরুরি।
--:: বক্ষব্যাধী সম্পর্কীত ::--
হেল্থ টিপস্-৩০৯ ▌বুক জ্বালাপোড়া করা :
ঠিক বুকের মাঝ বরাবর উপর থেকে নিচে জ্বালাপোড়া হওয়া। বিশেষত খাওয়া-দাওয়ার পর এই জ্বালাপোড়া শুরু হয় এবং কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। গলায় জ্বলুনি হওয়া, কিংবা গলার ভেতরের দিকে ঝাল, টক বা লবণাক্ত কোন তরলের উপস্থিতি অনুভব হওয়া। মাঝেমধ্যে ঢেকুর তোলা। কী করা উচিত : আদা চা খেতে পারেন। যদি আপনাকে অবশ্যই শুয়ে পড়তে হয়, সেক্ষেত্রে আপনার শরীরের বাম পাশে ভর দিয়ে কাত হয়ে শোন; কেননা এই অবস্থানে আপনার পাকস্থলীর নি¤œাংশ খাদ্যনালী বা এসোফেগাস থেকে নিচে থাকে; ফলত এসিড জমা হবার সুযোগ কম পায়। বিছানার যে পাশে মাথা রেখে ঘুমান, সেই পাশে মেট্রেসের নিচে ছোটো বালিশ বা কোনো বুক বা বই ইত্যাদি ঢুকিয়ে চার থেকে ছয় ইঞ্চি উঁচু করে নিন।
হেল্থ টিপস্-৩১০ ▌ফুসফুসে পানি জমা:
ফুসফুসের পাতলা আবরণী বা পুরাল পর্দা, যা ফুসফুসকে ধরে রাখে তাতেই মূলত পানি জমা হয়। এ রোগকে পুরাল ইফিউশন বা ফুসফুসে পানি জমা বলা হয়। বিভিন্ন কারণে ফুসফুসে পানি জমতে পারে। সাধারণত ফুসফুসের টিবি, নিউমোনিয়া, ক্যান্সার, ইনফার্কশন জাতীয় রোগে ফুসফুসে পানি জমে। ফুসফুসের মতো পুরালও দুটি। কোনো কোনো রোগে একটিতে পানি জমে, কোনো কোনো রোগে দুই পুরালে পানি জমতে পারে। ফুসফুসে পানি জমলে রোগীর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুকে ব্যথা হয়, কাশি বা হালকা কফসহ জ্বর আসতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা গেলে, বুকের এক্স-রে করালে ফুসফুসের ইফিউশন ধরা পড়লে তবে পানির পরিমাণ যদি খুব কম হয়, সুই দিয়ে পানি বের করে পরীক্ষা করে পুরাল বায়োপসি করারও প্রয়োজন হতে পারে। দীর্ঘদিন যাবৎ পুরাল পানি থাকার পরও যদি চিকিৎসা শুরু করা না হয় তাহলে পুরাল শক্ত আবরণ পড়ে গিয়ে তা ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে।
হেল্থ টিপস্-৩১১ ▌খাদ্যনালিতে হঠাৎ কিছু আটকে গেলে:
খাওয়ার সময় মাছের কাঁটা বা মাংসের হাড় আমাদের গলায় আটকে যেতে পারে। শিশুরা খেলার সময় কোনো কিছু মুখে দিলে তা গলায় আটকে যেতে পারে। এ অবস্থায় রোগীকে শিগগিরই হাসপাতালে জরুরি বিভাগ অথবা নিকটস্থ নাক, কান, গলা বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে। খাদ্যনালির কোথায় আটকাতে পারে- গলবিল ও খাদ্যনালির সংযুক্ত স্থান খাদ্যনালির সবচেয়ে সঙ্কীর্ণ অংশ। এখানেই বেশিরভাগ জিনিস আটকায়। লক্ষণ ▪ ঢোক গিলতে অসুবিধা হতে পারে ▪ গলাব্যথা হতে পারে ▪ অতিরিক্ত লালা বের হতে পারে ▪ বমি বমি ভাব হতে পারে। চিকিৎসা- রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। স¤পূর্ণ অজ্ঞান করে ইসোফ্যাগোস্কপির (এন্ডোসকপি) মাধ্যমে খাদ্যনালিতে আটকানো জিনিস বের করতে হবে। বাচ্চা খেতে চায় না বলে অনেক মা ঘুমের মধ্যে খাবার বাচ্চার গালে দেয়, এভাবে খাদ্যনালিতে খাবার আটকে বাচ্চার মৃত্যু হয় অনেক।
হেল্থ টিপস্-৩১২ ▌বুকে ব্যথা:
বুকে ব্যথা হার্ট অ্যাটাকের একটি বিপজ্জনক সংকেত বা উপসর্গ। অনেকে হৃদরোগের ব্যথাকে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা ভেবে চিকিৎসকের শরণাপণœ না হয়ে নিজে নিজেই এন্টাসিড জাতীয় ওধুষ খেতে থাকেন। এতে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ায়। মনে রাখবেন বুকে ব্যথা হলে, শরীরে ঘাম হলে, বমি বমি লাগলে বা বমি হলে, কালক্ষেপণ করবেন না। হার্টঅ্যাটাকে শতকরা ২৫ জন এক ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়। বাকি রোগীদের শতকরা ১৫ জন হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যায়। হার্টঅ্যাটাকের উপসর্গ হলে অ্যাসপিরিন ৩০০ মি. গ্রাম এবং ক্লোপিডোগ্রেল ৩০০ মিগ্রা (৭৫ গ্রামের ৪টি বড়ি) এক সঙ্গে খেতে হবে। এছাড়া বুকে চাপ বা ভার ভার অনুভূত হলে, রক্তচাপ থাকলে নাইট্রোমিন্ট ¯েপ্র (২ চাপ) জিহ্বার নিচে দেবেন। হার্টঅ্যাটাকে আক্রান্ত রোগী সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছলে ওষুধের চিকিৎসার পাশাপাশি প্রাইমারি পিসিআই করা হয়। চল্লিশের উপরে প্রত্যেক পুরুষ এবং মহিলার চেকআপ জানা প্রয়োজন।
হেল্থ টিপস্-৩১৩ ▌বক্ষব্যাধি এমফাইসিমা:
ফুসফুসের বিভিন্ন ধরনের ব্যাধির মধ্যে একটি জটিল ব্যাধি হচ্ছে এমফাইসিমা। এমফাইসিমার ফলে ফুসফুসে মাত্রাতিরিক্ত বাতাস জমা হয়। এটি প্রধানত একটি শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। কারণ যখন ফুসফুসের ভিতরের দিকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাতাস জমা হয় তখন রোগীর বক্ষ, কাশির সঙ্গে সঙ্গে শ্বাসকষ্ট প্রকোপ আকার দেখা দেয়। এমফাইসিমা একটি কষ্টদায়ক ব্যাধি এ রোগ মানবদেহে একদিনে বাসা বাঁধে না। বাড়তি বাতাস জমা হলে ফুসফুস খুব দ্রুত ফুলে উঠে এবং এর অভ্যন্তরের অংশগুলো অকেজো হয়ে কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। কারণ : কেউ যদি হাঁপানি বা অ্যাজমা রোগী হয়ে থাকে, তবে তার এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি। ক্রনিক ব্রংকাইটিসে আক্রান্ত রোগীদেরও ফুসফুসে এমফাইসিমা হতে পারে। প্রতিরোধ : এমফাইসিমা স¤পূর্ণ ভালো হয় না। তবে চিকিৎসকদের পরামর্শ গ্রহণ করলে এ ব্যাধিটি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ওষুধের দ্বারা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
হেল্থ টিপস্-৩১৪ ▌ হার্টঅ্যাটাক রোধে করণীয়:
হার্টের উপরিভাগে লেপ্টে থাকে করোনারি আর্টারি বা ধমনি, যার মাধ্যমে হার্ট পুষ্টি এবং অক্সিজেন পায়। যখন করোনারি ধমনীতে চর্বি জমে এবং রক্ত জমাট বেঁধে (শতকরা ১০০ ভাগ) রক্তনালির রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় তখন আমরা হার্টঅ্যাটাক বলি। মারাত্মক এই রোগটিকে কখনো কখনো নিঃশব্দ আততায়ী বলা হয়। ঝুঁকিসমূহ - ০ করোনারি ধমনীতে চর্বির আধিক্য ০ ডায়াবেটিস ০ উচ্চ রক্তচাপ ০ ধূমপান ০ শারীরিক ওজন বৃদ্ধি ০ পারিবারিক হৃদরোগের ইতিহাস ০ কায়িক পরিশ্রমহীনতা ০ স্ট্রেস ০ মহিলাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি ইত্যাদি। করণীয় - শুধু ধূমপান ত্যাগের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখুন। নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করুন। বেশি করে শাকসবজি, কাঁচা ফলমূল গ্রহণ করুন। চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করুন। খাদ্য তালিকায় শাকসবজি, কিছু টাটকা মৌসুমি ফল খাওয়া যেতে পারে।
হেল্থ টিপস্-৩১৫ ▌হার্টব্লক:
হার্ট যে দিবারাত্র পা¤প করে চলেছে তার জন্য তার দরকার নিজস্ব একটি বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার এবং তাতে কোনও বিঘœ হলে দেখা দেয় হার্ট ব্লক। কেন দেখা দেয় হাটব্লক? * বয়সজনিত ক্ষয়ক্ষতির জন্য হতে পারে। * করানোরি আর্টারি ডিজিজ থাকলে বা হার্ট অ্যাটাক হলে হার্টের ব্যাটারি দুর্বল হয়ে যেতে পারে। * রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ কোনও কারণে বেড়ে গেলে, কিডনির অসুখে এরকম হয়, বেশি মাত্রায় বিটাব্লকার, ডিজস্কিন ইত্যাদি ওষুধ খেলে সাময়িকভাবে হার্টব্লক হতে পারে। কী করে বুঝব? * মাথাঘোরা বুক ধড়ফড়। ক্স মাথা হালকা লাগা * শ্বাসকষ্ট থাকতে পারে। কী করব ? রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ কমে যাওয়ার দরুণ বা কোনও ওষুধপত্রের জন্য হাটব্লক হলে সামান্য চিকিৎসাতেই অবস্থা আয়ত্তে চলে আসবে। * অবস্থা খারাপের দিকে গেলে অস্থায়ী পেসমেকার বসাতে হয়। * মাবাইল ফোন ধরবেন যেদিকে পেসমেকার বসানো হয়েছে তার উল্টো দিকের হাতে।
--:: লিভার সম্পর্কীত ::--
হেল্থ টিপস্-৩১৬ ▌লিভার ড্যামেজের ৬টি লক্ষণ:
১। ক্ষুধামন্দা- লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেহে টক্সিক উপাদানের সঞ্চয় হতে থাকে। যার বিরূপ প্রভাবে ক্ষুধা কমে যায়। যদি এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ক্ষুধামন্দায় ভুগে থাকেন তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ২। বমি- লিভারের বিষাক্ততার জন্যই বদহজম ও পেটের সমস্যা হয়। যার ফলশ্রুতিতে ক্রমাগত বমি হয়। ৩। চোখের বিবর্ণতা-জন্ডিস বা হেপাটাইটিসের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হচ্ছে চোখ ও ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া। বিশেষ করে সকালে চোখের বিবর্ণতা দেখা গেলে তা লিভার ড্যামেজের লক্ষণ বুঝায়। ৪। ডার্ক ইউরিন- যখন যকৃত ঠিকভাবে কাজ করে না তখন পিত্ত লবণের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। যা মল-মূত্রের সাথে বের হয়ে যায়। এটি গাঢ় রঙের হয়। ৫। পেট ব্যথা ও ফুলে যাওয়া-পেটের উপরের দিকের ডানপাশে যকৃত অবস্থিত। শরীরের এই অংশে ব্যথা হলে তা লিভার ড্যামেজের ¯পষ্ট লক্ষণ। ৬। পা ফুলে যাওয়া-লিভার ড্যামেজের ক্ষেত্রে পা ফুলে যেতে পারে।
হেল্থ টিপস্-৩১৭ ▌লিভার সিরোসিস:
লিভার সিরোসিস একটি মারাত্মক ও অনিরাময়যোগ্য রোগ। এতে যকৃৎ বা লিভারের কোষকলা এমনভাবে ধ্বংস হয়ে যায় যে তা স¤পূর্ণ বিকৃত ও অকার্যকর হয়ে পড়ে এবং প্রদাহ এর কারণে লিভারে ফাইব্রোসিস এবং নুডিউল বা গুটি গুটি জিনিস তৈরি হয়, ফলে লিভার এর যেসব স্বাভাবিক কাজ আছে, যেমন বিপাক ক্রিয়া, পুষ্টি উপাদান সঞ্চয়, ওষুধ ও নানা রাসায়নিকের শোষণ, রক্ত জমাট বাঁধার উপকরণ তৈরি ইত্যাদি কাজ ব্যাহত হয়। দেখা দেয় নানাবিধ সমস্যা। এ ছাড়া কিছু জন্মগত অসুখের কারণেও এই সমস্যা হয়ে থাকে যেমন, ওইলসন ডিজিজ, হেমোক্রোমেটাসিস ইত্যাদি। লক্ষণ-প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়তে দেরি হয় তবে সাধারণত খাদ্যে অরুচি, ওজন হ্রাস, বমি ভাব বা বমি, বমি বা মলের সঙ্গে রক্তপাত, শরীরে পানি আসা ইত্যাদি হলো মূল উপসর্গ। করণীয়-হেপাটাইটিস বি-এর যেহেতু প্রতিশেধক আছে। তাই উচিত প্রত্যেকেরই এই প্রতিশেধক নেওয়া।
হেল্থ টিপস্-৩১৮ ▌লিভারের ফোঁড়া বা লিভার অ্যাবসেস:
লিভারে দুধরনের ফোঁড়া হয়, পায়োজেনিক ও অ্যামিবিক। ইকোলাই, স্টাফাইলোকক্কাই, স্ট্রেপ্টোকক্কাই, ক্লেবসিয়েলা ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়া পায়োজেনিক লিভার অ্যাবসেসের জন্য দায়ী, আর অ্যামিবিক লিভার অ্যাবসেস হয় অ্যামিবা থেকে। ডায়াবেটিস, অ্যাপেন্ডিসাইটিস, গ্যাস্ট্রোএন্টাররাইটিস, রক্তের ইনফেকশন, নবজাত শিশুর নাভির ইনফেকশন, অতিরিক্ত মদ্যপান, পেটে আঘাত পাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে লিভারে ফোঁড়া হতে পারে। রোগীর লিভারে একটি বা একাধিক ফোঁড়া থাকতে পারে। লক্ষণ- রোগীদের সাধারণত খাবারে অরুচি, জ্বর ও পেটে ব্যথা থাকে। অনেক সময় কাশি কিংবা ডান কাঁধে ব্যথা থাকতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে রোগীর জন্ডিস হতে পারে। লিভার অ্যাবসেস সাধারণত অ্যান্টিবায়োটিকেই সেরে যায়। তবে লিভার থেকে পুঁজ বের করে দেয়াটা জরুরি। বিশেষ করে লিভারে যদি বড়ো বা একাধিক অ্যাবসেস থাকে।
হেল্থ টিপস্-৩১৯ ▌লিভার ক্যান্সার:
লিভার ক্যান্সারের মূল কারণ হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস আর অ্যালকোহল। হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত ৫ থেকে ১০ শতাংশ লোক জীবনের কোনো এক পর্যায়ে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি পুরুষদের ক্ষেত্রে মহিলাদের চেয়ে ৪ থেকে ৬ গুণ বেশি। লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ-সাধারণত ক্যান্সার হওয়ার আগে লিভারে সিরোসিস দেখা দেয়, তবে এর ব্যতিক্রম হওয়াটাও অস্বাভাবিক না। লিভার ক্যান্সারের রোগীরা প্রায়ই পেটের ডানপাশে উপরের দিকে অথবা বুকের ঠিক নিচে ব্যথা অনুভব করেন যার তীব্রতা রোগীভেদে বিভিন্ন রকম। রোগীদের খাওয়ায় অরুচি, অতিরিক্ত গ্যাস কিংবা কষা পায়খানার উপসর্গ থাকতে পারে- আবার কখনো দেখা দেয় ডায়রিয়া। করণীয়-শুরুতে ধরা পড়লে আর আকারে ছোটো থাকলে অপারেশনের মাধ্যমে এই টিউমার বাদ দেয়া যায়। পাশাপাশি আছে বিনা অপারেশনে টিউমার অ্যাবলেশন বা টিউমারকে পুড়িয়ে দেয়া।
হেল্থ টিপস্-৩২০ ▌ফ্যাটি লিভার:
লিভার কোষে অতিরিক্ত চর্বি জমা হলে যা তার গাঠনিক উপাদানের ৫ থেকে ১০ শতাংশ তাকে ফ্যাটি লিভার বলে। যখন কোনো মানুষ তার দেহের প্রয়োজনের অতিরিক্ত চর্বি খাবারের সঙ্গে গ্রহণ করে, তখন এ চর্বি ধীরে ধীরে তার কলা বা টিসুতে জমতে থাকে। স্থূলতা ফ্যাটি লিভারের একটি প্রধান কারণ। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, রক্তে চর্বির মাত্রা বেশি (হাইপার লিপিডেমিয়া), বংশগত, ওষুধ এবং বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য যেমন, মদ বা অ্যালকোহল, স্টেরয়েড, টেট্রাসাইক্লিন এবং কার্বন টেট্রাক্লোরাইড ইত্যাদি কারণে ফ্যাটি লিভার হতে পারে। মুটিয়ে গেলে শিশুদেরও এ রোগ হতে পারে। লক্ষণ-ক্লান্তি, অবসাদ, ওপরের পেটের ডানদিকে ব্যথা কী খাবেন-রেড মিট যেমন খাসি বা গরুর মাংস, ডিমের কুসুম, চিংড়ি মাছ, পনির, মাখন, বিরিয়ানী ইত্যাদি পরিহার করতে হবে, পাশাপাশি অতিরিক্ত শর্করা যেমন ভাতের ব্যাপারেও খুব সাবধান।সাবধাণ থাকতে হবে ফাস্টফুড এবং জাঙ্ক ফুডের ব্যাপারেও।
হেল্থ টিপস্-৩২১ ▌ পিত্তপাথর ও ল্যাপারোস্কপি:
পিত্তপাথর অতি বড়ো অসুখ। পুরুষের তুলনায় মহিলাদের এই রোগের হার দ্বিগুণ। আফ্রিকাতে এর হার খুবই কম যার শতকরা হার ১ ভাগেরও কম। পিত্তপাথরের প্রকারভেদ: (ক) কোলেস্টরল পাথর: শতকরা ৭৫ ভাগ পাথর এই শ্রেণিভুক্ত। সাধারণত সংখ্যায় অধিক। একটি মাত্র পাথর হলে তা বিরাট আকার ধারণ করে। (খ) কালো রঙের পাথর: এই পাথর সংখ্যায় অনেক বেশি এবং ছোটো আকারের হয়। (গ) বাদামি রঙের পাথর: জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনে পাথরের হার বৃদ্ধি পায় কম বয়সী মহিলাদের ক্ষেত্রে। লক্ষণসমূহ: পেটে ব্যথা: উপর পেটের মাঝখানে ও ডান পার্শ্বে ব্যথা থাকে। এই ব্যথা কখনো হালকাভাবে এবং কখনো তীব্রভাবে হয়ে থাকে। ক্ষুদামন্দা: একবার খাওয়ার পর আর সারাদিন খেতে ইচ্ছে হবে না। মনে হবে পেট ভরা আছে। জন্ডিস: জন্ডিস কখনো কখনো দেখা দেয়। (৪) জ্বর: কখনো মারাত্মক জ্বর হয়। ল্যাপারোস্কপিক পদ্ধতিতে সেরা চিকিৎসা হয়।
হেল্থ টিপস্-৩২২ ▌হেপাটাইটিস-বি:
অ্যাকিউট হেপ বি হলো একটি সংক্রমণ। হেপ বি হওয়া বেশিরভাগ সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি তাদের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং কোনো চিকিৎসা ছাড়া ছয় মাসের মধ্যে ভাইরাস থেকে মুক্তি পায়। দুরারোগ্য হেপ বি হলো আজীবন চলতে থাকা সংক্রমণ। উপসর্গ-হেপ বি থাকা অনেক মানুষের কোনো উপসর্গ থাকে না। উপসর্গ বিকশিত হওয়ার জন্য ৩০ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। যখন উপসর্গ দেখা যায়, তখন প্রায়ই পরিণত লিভারের রোগের লক্ষণ দেখা যায়। জ্বর, ক্লান্তি, ক্ষুধা হ্রাস, বমি ভাব, বমি করা, পেটে ব্যথা, গাঢ় প্রস্রাব, ধূসর বর্ণের পায়খানা, গ্রন্থিতে ব্যথা, জন্ডিস এবং আরো অনেক কিছু। দুরারোগ্য হেপ বি হওয়া চারজন ব্যক্তির মধ্যে অন্তত একজনের লিভার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। কাঁচা সালাদ, ফল-মূল বেশি খাবেন। তেল-চর্বিযুক্ত খাবার স¤পূর্ণ নিষিদ্ধ। গরু বা খাসির মাংস যেগুলো লাল মাংস হিসেবে পরিচিত এগুলো খাবেন না। লবণ একেবারেই খাবেন না।
হেল্থ টিপস্-৩২৩ ▌হেপাটাইটিস সি:
হেপাটাইটিস ‘সি’ প্রধানত রক্তের মাধ্যমে একজনের দেহ থেকে অন্য জনের দেহে ছড়ায়। এই ভাইরাসটি লিভারের কোষে বাসা বাঁধে এবং সেখানে ধীরে ধীরে বংশবিস্তার করতে থাকে। এর ফলে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের সৃষ্টি হয়। মূলত রক্তের মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়ালেও থুথু, ঘামের মাধ্যমেও একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে এ রোগটি ছড়ায়। লক্ষণ: হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্তদের ৫/১০ বছরের মধ্যে কোনো লক্ষণ থাকে না। অধিকাংশ ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর শরীর ম্যাজম্যাজ করে, অনেকের হাত-পায়ের পাতা গরম থাকে এবং চোখ জ্বালা করে। আহারে রুচি কম থাকে এবং পেটের পীড়ায় ভুগতে থাকে। অনেকে সাদা আমযুক্ত মলত্যাগও করে। সচেতনতা : * অন্যের ব্যবহৃত সূঁচ ব্যবহার না করা * সেলুনে টিস্যু পেপার গলায় ব্যবহার করা।
--:: হাড়-জোড়া-পঙ্গু সম্পর্কীত ::--
হেল্থ টিপস্-৩২৪ ▌ হাড় ক্ষয়রোগ:
১৬ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি হওয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ২০ বছর বয়স পর্যন্ত হাড়ের ভেতরের গঠন ও ক্ষয় একই গতিতে চলতে থাকে। ৪০ বছর পার হলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ের ক্ষয়ের মাত্রা একটু একটু করে বাড়তে থাকে। মহিলাদের মেনোপজ বা ঋতুস্রাব বন্ধের পর শরীরে ইস্ট্রোপেন নামক হরমোন কমে যায়। ফলে হাড়ের ক্ষয়ের মাত্রা বেড়ে যায়। কী কী কারণে হাড় ক্ষয় বেশি হয়?- পর্যাপ্ত পরিমাণ শারীরিক পরিশ্রম না করা। পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি গ্রহণ না করা। শরীরে ওজন (বিএমআই অনুযায়ী অতিরিক্ত কম হলে)। অতিরিক্ত ধূমপান বা এলকোহল পান করলে। লক্ষণ কী-সারা শরীরে ব্যথা অনুভূত হয়। বেশিক্ষণ হাঁটাহাঁটি বা চলাচল করতে কষ্ট হয়। প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা। যেমনÑ ননী তোলা দুধ, কম ¯েœহজাতীয় দই, ইত্যাদি। নিয়মিত শরীর চর্চা ও ব্যায়াম করা।
হেল্থ টিপস্-৩২৫ ▌হাড় ভেঙে গেলে করণীয়:
আমাদের হাড়গুলোতে দুই ধরনের কোষ আছে যারা নতুন হাড় তৈরি করে এবং পুরাতন হাড় ভেঙে ফেলে ক্রমাগতভাবে কাজ করে চলেছে। বয়স ৪০ পেরোনোর পর থেকে, ধ্বংসকারী কোষগুলো বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং আমাদের হাড়গুলো ধীরে ধীরে ঘনত্ব হারাতে শুরু করে। হাড় ভেঙে গেলে যতটা ক্ষতি হতে পারে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হতে পারে টানাটানিতে। কারণ ভাঙা হাড় নড়াচড়া করলে ভাঙা অংশ আশেপাশের রক্তনালি ছিঁড়ে ফেলতে পারে। এতে হাড় ভাঙা পরবর্তী অংশ রক্তশূন্যতার কারণে পচে যেতে পারে। কোনো কারণে হাড়ে ব্যথার পর যদি তা প্রচুর পরিমাণে ফুলে যায়, নড়াচড়া করলে প্রচ- ব্যথা অনুভুত হয়। তাহলে এক্সরে করলে নিশ্চিত হওয়া যাবে হাড় ভেঙেছে কি না। দ্রুত চিকিৎসা করালে যত তাড়াতাড়ি হাড় জোড়া লাগার সম্ভবনা থাকে, দেরি করলে তা ক্ষীণ হয়। এমনকি হাড় ঠিক জায়গায় জোড়া না লেগে বেঁকে জোড়া লাগতে পারে বা জোড়াই লাগবে না।
হেল্থ টিপস্-৩২৬ ▌ফ্র্যাকচার:
হাড় ফেটে যাওয়াই ফ্র্যাকচার হিসেবে পরিচিত। ফ্র্যাকচারের কারণ- হাড়ের ওপর সরাসরি আঘাত, ইনজুরি ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের ফ্র্যাকচার: ১. গ্রিন স্টিক ফ্র্যাকচার: যখন কেবল এক দিকের পেরিওস্টিয়াম ভেঙে যায়। এটি সাধারণত শিশুদের ক্ষেত্রে হয়। ২. কমপাউন্ড ফ্র্যাকচার: যখন ভাঙা হাড় বাইরের বাতাসের সং¯পর্শে আসে। ৩. সি¤পল ফ্র্যাকচার (ক্লোজড): ভেঙে যাওয়া হাড়ের প্রান্ত ত্বক ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে না, তবে উভয় পেরিওস্টিয়াম অন্তর্ভুক্ত হয়। ৪. কমপ্লিকেটেড ফ্র্যাকচার: হাড় ভাঙার সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যন্তরীণ অঙ্গে ইনজুরি হয়। যেমন- মস্তিষ্ক, ¯পাইনাল কর্ড, ফুসফুস ইত্যাদি। কী করবেন-শরীরের আঘাতপ্রাপ্ত স্থানটি নিশ্চল রাখতে হবে, সেখানে সাপোর্ট দিয়ে রাখতে হবে, যাতে নাড়াচাড়া করতে না পারে। এতে হাড়ের ভাঙা প্রান্ত রক্তনালি, নার্ভ বা মাংসপেশিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না। ব্যান্ডেজ এমনভাবে এমন টাইটও করবেন না, যাতে রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়।
হেল্থ টিপস্-৩২৭ ▌হঠাৎ হাত-পা মচকে গেলে করণীয়:
চলাচলের সময় হাড়ের সংযোগস্থান হঠাৎ বেঁকে গেলে সংযোগস্থান সংলগ্ন ¯œায়ুতন্ত্রের ওপর টান পড়ে বা ছিঁড়ে গিয়ে আমাদের হাত-পা মচকে যেতে পারে। ১. আঘাতের সাথে সাথে আহত স্থানে ঠা-া পানি বা বরফ লাগাতে হবে। ২. আহত স্থানটি নড়াচড়া করতে দেয়া যাবে না। ৩. মচকানো স্থানটি যথাসম্ভব আরামদায়ক অবস্থায় রাখতে হবে। ৪. আহত স্থানে হাড়ভাঙার ব্যান্ডেজ প্রয়োগ করতে হবে। ৫. ব্যান্ডেজ সব সময় ভেজা রাখবে। সম্ভব হলে বরফ লাগাবে। * পা ফুলে গেলে, যন্ত্রণা হলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিশ্রাম। যন্ত্রণা কমে গেলেও বিশ্রাম না নিয়ে হাঁটাহাঁটি, খাটাখাটনি করলে গোড়ালির ফোলা থেকেই যাবে। * ফোলা কমাতে সবচেয়ে উপকারী বরফ। সরাসরি বরফ দেবেন না, * পা যত নামিয়ে বা ঝুলিয়ে রাখবেন তত ফোলা বাড়বে। তাই দিনে অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা পা তুলে রাখুন।
--:: মনোরোগ সম্পর্কীত ::--
হেল্থ টিপস্-৩২৮ ▌সেলফ হার্ম:
নিজেকে আঘাত করার মাধ্যমে মানসিক শান্তি আনার চেষ্টা করা, এ ধরনের সমস্যাকে সেলফ হামবলা হয়ে থাকে। এটি কোনো মানসিক রোগ নয় তবে কিছু মানসিক সমস্যা এর সাথে স¤পৃক্ত। সব ক্ষেত্রে এটি নিজের ইচ্ছাধীন হয় না, সে চাইলেও নিজেকে আঘাত করা থেকে বিরত থাকতে পারে না। সেলফ হার্ম বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন চামড়া কেটে রক্তাক্ত করা, নিজেকে খামচে রক্তাক্ত করা,শরীরে বিভিন্ন অংশে ভীষণভাবে আঘাত করা, মাথা শক্ত কিছুর সাথে আঘাত করা, হাত পা আগুনে পুড়িয়ে ফেলা, চুল কেটে কিংবা ছিঁড়ে ফেলা। এদের বয়স ১৪-২১ এর মধ্যেই থাকে। কেন এ সমস্যা হয়?-প্রচ- মানসিক চাপ, অতিআবেগ, কিংবা সাধারণত পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা না থাকলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। সমাধান: - কারো সাথে ফিলিং শেয়ার করা - তাৎক্ষণিক ঠা-া পানিতে গোসল করা - লেখালেখি-ছবি আঁকা-দৌড়, লাফ বা পরিশ্রমের কাজ করা -বাদ্যযন্ত্র বাজানো-ঝাল কিংবা তেতো খাওয়া।
হেল্থ টিপস্-৩২৯ ▌সিজোফ্রেনিয়া:
ধরুন আপনি কোথাও যাচ্ছেন, হাঁটছেন। আপনার বারবার মনে হচ্ছে পেছন থেকে কেউ যেনো ডাকছে। সেই ভাবনায় পেছন ফিরলেন, ঘুরাঘুরি করলেন, অথচ কিছুই পেলেন না। অথবা আপনি ঘুমোচ্ছেন। ঘুমের মাঝেই স্বপ্নে বিভোর হয়ে এটা দেখছেন কেউ আপনাকে গলা টিপে বা ধাঁরালো ছুরি দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। তড়িঘড়ি করে উঠেও কিছুই পেলেন না। এটি এক ধরনের জটিল মানসিক রোগ। লক্ষণ: ১. নিজেকে মহাপুরুষ বা শ্রেষ্ঠ পুরুষ/নারী মনে করে। নিজের সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দেন। ২. অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণ হয়। ভাবে অন্যরা তাকে হত্যা বা কোনোভাবে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। প্রতিকার-রোগীকে সময় দিতে হবে, একাকিত্ব দূরীকরণ ব্রত হতে হবে, তার ইচ্ছাগুলোকে গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। শতকরা ২৫ ভাগ রোগীই চিকিৎসা নেবার পর একদম সুস্থ হয়ে যায়। ৫০ ভাগ বিভিন্ন ঔষধ সেবনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। বাকি ২৫ ভাগ সুস্থ হয় না।
হেল্থ টিপস্-৩৩০ ▌বোবায় ধরা বা শ্লিপিং প্যারালাইসিস:
যখন কাউকে বোবায় ধরে, তখন সে তার শরীরের কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়াতে পারে না, অসারতা অনুভব করে। এটি ঘটে একজন ব্যক্তির ঘুমিয়ে পড়া বা জেগে ওঠার পূর্ব মুহূর্তে। কেন হয়?-মানুষ যখন ঘুমায় তখন ঘুমের মাঝে জঊগ (ৎধঢ়রফ বুব সড়াবসবহঃং) চক্র চলতে থাকে। মানুষের স্বপ্ন দেখার পর্যায়কেই বলা হয় জঊগ। মানুষ ঘুমের মধ্যে এই চক্রে থাকাকালে মস্তিষ্ক শরীরের কার্যকলাপ বন্ধ করে রাখে। যদি কখনো জঊগ চক্র চলাকালে শরীরের কার্যকলাপ বন্ধ না থাকে, তখন অনেকেই ঘুমের মাঝে চিৎকার করে, হাত-পা ছোড়াছুড়ি করে। ঠিক তেমনি বিপরীতভাবে অনেক সময় দেখা যায়, মানুষ ঘুম থেকে ঠিকই জেগে ওঠে কিন্তু তখনো শরীরের কার্যকলাপ বন্ধ থাকে। শরীর বুঝতে পারে না যে সে জেগে উঠেছে। ঘুম থেকে জেগে উঠলেও একই সঙ্গে শরীর যেমন বুঝতে পারে না ঠিক সেভাবেই জঊগ চক্রও চলতে থাকে। যখন দুটো একসঙ্গে হয় সেই অবস্থাকেই বলে বোবায় ধরা। এটাা কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট হয়।
হেল্থ টিপস্-৩৩১ ▌মনোফোবিয়া:
মনোফোবিয়া হলো একধরনের মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সবসময় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। সবসময় তার মধ্যে উদ্বিগ্নতা, বিষণèতা এবং একা হয়ে যাবার ভয় পেতে দেখা যায়। ফলে তার ঘুম, খাওয়া, এমনকি একা বাথরুমে যেতেও সমস্যা হয়। মনোফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষ স্বাভাবিক কোনো কাজ করতে পারে না। লক্ষণসমূহ-▪ অস্থির লাগা, মাথা ঘোরা, হাত পা অবশ হয়ে আসা ▪ কেউ গলা চেপে ধরছে এমন বোধ হওয়া ▪ মারা যাবার দুশ্চিন্তা হওয়া ▪ কাছের মানুষকে হারিয়ে ফেলার ভয় কারণ-কারো হয়তবা ছোটোবেলায় কোনো বড়ো দুর্ঘটনা থেকে হতে পারে, কারো চোখের সামনে ঘটে যাওয়া কোনো অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা থেকে, দীর্ঘ সময় ধরে পুষে রাখা দুশ্চিন্তা, স¤পর্কে অবনতি, বাসায় অসঙ্গতিমূলক পরিবেশ ইত্যাদিও মনোফোবিয়া সৃষ্টি করতে পারে। ▪ সঙ্গ দিন। এই সময়ে ভরসা করার মতো একজন মানুষের প্রয়োজন। ▪ তাকে আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করুন। বিভিন্ন কাজ তাকে একাই করতে দিন।
হেল্থ টিপস্-৩৩২ ▌প্যানিক ডিজঅর্ডার:
যেকোনো ব্যাপারেই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়া। সাধারণ ঘটনাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে না পারা। সুপ্ত ভয় পাওয়া, বুক ধড়ফড় করে উঠা, মাথার ভেতরে দপদপ করতে থাকা, হাঁটু কাঁপতে থাকা, গলা ক্রমশ শুকিয়ে আসা আর খুব ঘাম ঝরা। হৃৎপি-ের গতি বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি প্যানিক ডিজঅর্ডারের স্বাভাবিক লক্ষণ। প্যানিক অ্যাটাক হঠাৎই শুরু হয় ও কমপক্ষে ১০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। ডিজঅর্ডার কেন হয়?-প্যানিক ডিজঅর্ডার শরীরবৃত্তীয়, পরিবেশগত উভয় কারণের সংমিশ্রণ। আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা ও দূরত্বে রাখতে পছন্দ করেন। বিচ্ছিন্ন ভাবনা মস্তিষ্কে আসতে থাকে যার রেশ আত্মহনন পর্যন্ত যেতে পারে। চিকিৎসা-প্যানিক ডিজঅর্ডারে সাইকোথেরাপি, কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি ও ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এছাড়াও শিথিলায়ন পদ্ধতিও রয়েছে। প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণগুলো কমিয়ে আনতে প্রথমেই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করতে হবে। অতিরিক্ত কফি, চা, কোলা খাওয়া থেকে বিরত রাখুন।
হেল্থ টিপস্-৩৩৩ ▌ হিস্টিরিয়া:
হিস্টিরিয়া হচ্ছে এমন একটি মানসিক অবস্থা যেখানে ব্যক্তির মধ্যে দুর্দমনীয় ভয় ও অতিরিক্ত আবেগ লক্ষ্য করা যায়। তারা অনিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন ও মানসিক অবসাদগ্রস্ত থাকেন। ১৪ থেকে ২০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে হরমোনাল ইমব্যালেন্স ও পিরিয়ডিক্যাল কারণে এর আধিক্য দেখা যায়। কেন হয়? ▪ স্ট্রেস ▪ যৌন নিপীড়ন ▪ অলসতা ▪ পরিবারের কারও থেকে থাকলে ▪ নার্ভাসনেস ▪ ভয় ▪ দুশ্চিন্তা ▪ দীর্ঘকালীন অসুস্থতা ▪ ব্রেন টিউমার ▪ স্মৃতিভ্রংশতা বা ডিমেনশিয়া ইত্যাদি। হিস্টিরিয়ার লক্ষণ- ▪ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ভারী লাগা ▪ মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া ▪ দাঁত লেগে যাওয়া ▪ দীর্ঘশ্বাস ও নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা ▪ বুক ধড়ফড় করা ▪ মাথাব্যথা ও দুর্বলতা ▪ মানসিক অস্থিরতা ও ইচ্ছাশক্তি হ্রাস। প্রতিকার-▪ তিনবেলা খাবারেই আপেল, আঙুর, কমলা, আনারস, পেঁপে ইত্যাদি ফল রাখুন। ▪ টানা এক মাসের জন্য প্রচুর পরিমাণে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খান।▪ প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম ও ব্যায়াম হিস্টিরিয়া সারিয়ে তুলতে সহায়ক।
হেল্থ টিপস্-৩৩৪ ▌ রেগে যাওয়া বা মুড ডিজঅর্ডার:
যাঁরা চট করে রেগে যান তাদেরকে আমরা বলি মাথা গরম! কেউবা এতটাই রাগ করেন যে, তার তাৎক্ষণিক বহিঃপ্রকাশ না ঘটিয়ে পারিপার্শ্বিকতা থেকে নিজেকে শামুকের মতো গুটিয়ে নেন! এই যে একেক জনের রাগ একেক রকম, তার মূলে রয়েছে : ১। জেনেটিক প্রভাব (যা কি না বংশ থেকে প্রাপ্ত) ২। পারিবারিক বা পারিপার্শ্বিক প্রভাব। এছাড়াও অর্থনৈতিক দুরবস্থা, পেশাগত ঝামেলা, অবজ্ঞা-অবহেলা, ডিভোর্স, অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া, বেকারত্ব, অনিদ্রা, ক্ষুধা, দীর্ঘস্থায়ী রোগ- বালাই, অসুখী দা¤পত্য জীবন, ভুল বুঝাবুঝি, হিংসা ইত্যাদি। রাগের প্রতিক্রিয়ায় হার্টের গতি বৃদ্ধি পায়, রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, শরীরে অনেক সময় ক¤পনের সৃষ্টি হয়, মাথা ব্যথা করে, মস্তিষ্কের শিরায় চাপ পড়ে, এমনকি স্ট্রোক পর্যন্ত হতে পারে!
হেল্থ টিপস্-৩৩৫ ▌ বাইপোলার ডিজওর্ডার :
আমাদের জীবনে এমন সময় আসে যখন কোন কিছু ভালো লাগে না। আবার নিজে নিজেই সব ঠিক হয়ে যায়। মাঝ্যেমধ্যে এমন হতেই পারে। তবে যদি নিয়মিত মুড সুইং হয় তাকে সাধারণত বলে মুড ডিজঅর্ডার। এমনই এক ধরনের মুড ডিজ়অর্ডার হল বাইপোলার ডিজঅর্ডার। রোগীর ডিপ্রেশন হলে সাধারণত কোনও কাজে উৎসাহ পাওয়া যায় না। আগে যে কাজের মধ্যে সে আনন্দ খুঁজে পেত, এখন সেই কাজই আর ভাল লাগে না। সব সময় একটা ক্লান্তি ভাব জড়িয়ে থাকে। এর সঙ্গে ঘুম কমে যাওয়া ,ক্ষুধা চলে যাওয়া, একা থাকতে পচ্ছন্দ করা, কারো সাথে কথা বলতে পচ্ছন্দ না করা এসব সমস্যা দেখা দেয়। এ সময়ে অনেকের নিজেকে অপরাধী বলে মনে হতে পারে। আত্মবিশ্বাস কমে যায় এবং একসময় মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়। অনেকের ক্ষেত্রেই নিয়মিত ওষুধ খেলে রোগকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। বাইপোলার ডিজঅর্ডার মূলত কমবয়সিদের অসুখ। ডিপ্রেশন দিয়েই এর শুরু। আবার বয়স্কদেরও হতে পারে এই রোগ।
হেল্থ টিপস্-৩৩৬ ▌সিজোরয়েড পার্সোনালিটি ও এন্টি সোশাল পার্সোনালিটি:
সিজোরয়েড পার্সোনালিটির মানুষরা আত্মকেন্দ্রিক, এদের সাথে লোকজনের সাথে অতো মেলামেশা বা বনিবনা নেই। আন্তরিকতার অভাবে ঘনিষ্ঠ বন্ধু তৈরি হয় না। রসবোধের অভাবে এরা সহজেই মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে! এই ধরনের ব্যক্তির অনেক রাগ থাকে, এরা সহজেই রেগে যেতে পারে! অন্যদিকে এন্টি সোশাল পার্সোনালিটি মানুষরা খুব অল্প বয়স থেকেই অপরাধপ্রবণ, বদরাগী স্বভাবের, বেপরোয়া, কলহ প্রবণ, নেশা দ্রব্যের প্রতি আসক্ত হয়ে থাকে। এরা সব সময় রাগের যাতনায় ভুগতে থাকে। সহজেই রেগে যায়, এবং সহজেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে! আবার কিছু কিছু ব্যক্তি এমনিতেই ক্ষ্যাপাটে ধরনের হয়। আবার অনেক কিছুতেই ভীত হয়ে পড়ে! ছোটোখাটো ভুলে দিশা হারিয়ে ফেলে! কাছের মানুষদের উচিত, ব্যক্তি যখন রেগে যান, তখন সবাই মাথা ঠা-া রেখে চুপ করে থাকা।
হেল্থ টিপস্-৩৩৭ ▌ শুঁচিবাই বা (ওসিডি):
যেকোনো বিষয়ে ‘মনের মাঝে বারবার আসা’। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি মনের অজান্তে হয়ে থাকে। চিন্তাটি বারবার মনে এসে একটি তাড়না তৈরি করে। ধরা যাক’ কারো মনে হলো, তার হাতে বা গায়ে ময়লা লেগে আছে। যদিও তিনি ভালো করেই জানেন কোথাও ময়লা নেই, তরপরও চিন্তাটি বারবার আসতে থাকে এবং তিনি বারবার হাত ধুতে যান। এখানে ময়লার চিন্তাটি হলো অবসেশন, আর হাত ধোয়াকে বলা হবে ক¤পালশান। এ দুটি মিলিয়েই রোগটির নাম দেওয়া হয়েছে অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডার বা ওসিডি’ যাকে বাংলায় শুঁচিবাই বলা হয়। ওসিডি বা শুঁচিবায়ের কারণ-মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু স্থানে সামান্য তারতম্যের কারণে শুচিবায় হয়। ওসিডি বা শুঁচিবায়ের চিকিৎসা- যতো আগে চিকিৎসা শুরু করা যায়, ততই ভালো। ওষুধ ও সাইকোথেরাপি, দুটোই প্রয়োজনীয়। সই সঙ্গে সাইকোথেরাপি সিবিটি বা কিউ এক্সপোজার ও রেসপন্স প্রিভেনশান। চিকিৎসার অভাবে রোগী আত্মহত্যা পর্যন্ত করতে পারে।
হেল্থ টিপস্-৩৩৮ ▌ চুল তুলে ফেলা, একটা মানসিক রোগ:
রোগের নাম ট্রাইকোটিলোম্যানিয়া। এটি এমন একটি মানসিক রোগ যেখানে রোগী বা আক্রান্ত মানুষটি নিজেই তার চুল টেনে টেনে তুলে ফেলেন। তুলতে তুলতে একটা বিশাল জায়গা খালি করে ফেলেন। বিষয়টি এমন না যে, হঠাৎ একদিন বসে বসে এক সাথে অনেক চুল তুলে ফেললেন। এ কাজটি তিনি অনেক দিন ধরে ধীরে ধীরে করেন; করতেই থাকেন। ইচ্ছে করেও সে অভ্যাস বা কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারেন না। তুলনামূলকভাবে মেয়েদেরই বেশি হয়। সাধারণত দেখা যায় ১২-১৩ বছর বয়সে এ রোগের শুরু হয়। তবে সেসবের বেশিরভাগই কিছুদিনের ভিতর সেরে যেতে দেখা যায়। এ রোগের চিকিৎসা একটু সময় সাপেক্ষ, সুতরাং ধৈর্য ধরে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। ওষুধ ও সাইকোথেরাপি দুটোই দরকারি। দীর্ঘদিন এ রোগ থাকলে ডিপ্রেশন চলে আসতে পারে।
হেল্থ টিপস্-৩৩৯ ▌ মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার:
আমরা কথা বলতে বলতে বা কাজ করতে করতেই হঠাৎ কোথাও হারিয়ে যাই, যাকে আমরা পোশাকি ভাষায় দিবাস্বপ্ন বলে থাকি। কিন্তু কারো দিবাস্বপ্ন থেকে অনেক বেশি কিছু ঘটে , যার ফলে মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও অন্যান্য কাজের সাথে তার একটি বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়। এই রোগে একজন মানুষের মধ্যে একাধিক ব্যক্তিত্বের প্রকাশ পায়। তা হতে পারে কোনো কাল্পনিক মানুষের, কোনো কল্পনার চরিত্রের, এমনকি কারো কারো মাঝে পশুপাখির স্বভাবও দেখা যায়! মানুষটি অনেকগুলো সত্তার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলে, নিজেকে আর আলাদা করতে পারে না। ঐ বিচ্ছিন্ন সত্তাগুলো রোগীকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এবং যখন সে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে, নিজের অন্য সত্তাগুলো স¤পর্কে তার কিছু মনেও থাকে না, তার মনে হয় সে কোথাও হারিয়ে গিয়েছিল। একে সাইকোলজির ভাষায় ‘ব্ল্যাক আউট’ বলা হয়। একজনের মাঝে দু’য়ের অধিক ব্যক্তিত্বও দেখা যায়। তাই একে ’মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার’ও বলা হয় ।
হেল্থ টিপস্-৩৪০ ▌ প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার:
অহেতুক সন্দেহপ্রবণতা, সহজে কাউকে বিশ্বাস না করা, পরশ্রীকাতরতা, অনুভূতিপ্রবণতা, প্রায়ই বিরক্ত এবং অসন্তুষ্ট থাকা এসব এধরণের ব্যক্তিত্বের অধিকারীদের বৈশিষ্ট্য। এরা নিজেকে অন্যদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে থাকে।
সিজোটাইপাল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এ ধরনের ব্যক্তিত্বের মানুষ সামাজিকতা এড়িয়ে চলে, সামাজিক উদ্বিগ্নতায় ভোগে। তাদের কথোপকথনে অসামঞ্জস্যতা থাকতে পারে এবং তারা বেশ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। অনেক সময় তারা মনে করে, তারা অন্যদের মনের কথা বুঝতে পারে। মাঝেমধ্যে তারা মনে করে, অন্যরা সব সময় তাকে নিয়ে সমালোচনা করছে।
সিজয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: আবেগ কম থাকা, একা থাকতে পছন্দ করা, আনন্দের অনুভূতি কম থাকা ইত্যাদি পরিলক্ষিত হয়। তবে এই সমস্যায় যারা ভোগে তাদের অন্তর্দৃষ্টি অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে।
হেল্থ টিপস্-৩৪১ ▌ অ্যান্টিসোশ্যাল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার:
এদের আচরণ হয় নির্মম। অন্যের প্রতি সাধারণত এদের কোনো অনুভূতি কাজ করে না। এরা দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়, হঠাৎ করেই রেগে যায় এবং মেজাজ হয় খিটখিটে। তারা পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে এবং অপরাধ করলেও এদের মধ্যে কোনো অপরাধবোধ বা অনুতাপ থাকে না। যেকোনো সময় ছোটো থেকে বড়ো নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে তারা জড়িয়ে যেতে পারে।
▪ বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এরা অস্তিত্বের সংকটে ভোগে, কারও সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী স¤পর্ক বজায় রাখতে পারে না। এদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ কেমন হবে, তা আগে থেকে ধারণা করা যায় না। এরা হঠকারী আচরণ করে, নিজের ক্ষতি নিজে করে ফেলতে পারে এবং হাত-পা ধারালো অস্ত্র বা ব্লেড দিয়ে কাটে, দেয়ালে মাথা ঠুকে ইত্যাদি।
হেল্থ টিপস্-৩৪২ ▌হিস্ট্রিয়োনিক পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার:
এরা নাটুকেপনা করতে পছন্দ করে, অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা প্রবল এবং অন্যের মনোযোগ পেতে ভালোবাসে। তবে এ ধরনের মানুষের অনুভূতিগুলো খুব একটা গভীর নয় এবং বাহ্যিক বা শারীরিক সৌন্দর্যকে এরা বেশি গুরুত্ব দেয়।
নার্সিসিস্টিক পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, গ্রিক দেবী নার্সিসিসের মতো এরা নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। নিজেকে এরা অনেক বড়ো মনে করে এবং অন্যদের চেয়ে আলাদা এবং ক্ষমতাবান ভাবে। কিছুটা স্বার্থপর ও হিংসুটে স্বভাবের হয়ে থাকে। অন্যের মতামতের মূল্য এদের কাছে কম।
এভয়ডেন্ট পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এরা সব সময় টেনশনে ভোগে। হীনম্মন্যতার উপস্থিতির জন্য সমাজের অন্যদের চেয়ে এরা নিজেকে ছোটো মনে করে। এদের মধ্যে সর্বদা অন্যের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যান হবার ভয় কাজ করে। ঝুঁকি নিতে ভয় পাবার ফলে সামাজিক কর্মকা-ে এরা সাধারণত নিজেকে যুক্ত করে না।
হেল্থ টিপস্-৩৪৩ ▌ডিপেনডেন্ট পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার:
এ ধরনের ব্যক্তিত্বের সমস্যায় আক্রান্তরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। নিজে নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, এমনকি নিজের চাহিদা বা প্রয়োজনের কথাও প্রকাশ করতে পারে না। নিজের ঘাড়ে কোনো দায়িত্ব এসে পড়তে পারে, এটা নিয়ে এরা সর্বদা ভীত থাকে।
অবসেসিভ-ক¤পালসিভ পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: নিয়মনীতি কঠোরভাবে মেনে চলতে চায় এ ধরনের ব্যক্তিত্বের সমস্যায় আক্রান্তরা। এরা সবকিছুর মধ্যে পারফেকশন খুঁজে বেড়ায় এবং স্বভাবটা হয়ে যায় খুঁতখুঁতে এবং শুঁচিবায়ুগ্রস্ত। এরা অপেক্ষাকৃত দৃঢ়চেতা হয়, বেশি কাজ করতে পছন্দ করে। সতর্ক থাকা, অন্যকে সন্দেহ করা এদের আরেক বৈশিষ্ট্য। সে চায় অন্যরা তার মতো অনুযায়ী চলুক।
হেল্থ টিপস্-৩৪৪ ▌ কনডাক্ট ডিজঅর্ডার:
কনডাক্ট ডিজঅর্ডার শিশু-কিশোরদের আচরণগত সমস্যা-একটি রোগ। বাচ্চাদের ১৮ বছরের আগ পর্যন্ত এটাকে কন্ডাক্ট বলা হয়। লক্ষণসমূহ- ১) বাবা-মা কে বিভিন্ন জিনিসের জন্য চাপ সৃষ্টি করা (টাকা-পয়সা, খেলনা ইত্যাদি)। ২) বাবা-মা'য়ের কথা না শোনা। ৩) পড়াশোনায় অমনযোগী। ৪) স্কুল বা প্রতিবেশীদের নিকট থেকে শিশুর বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযোগ আসা। ৫) শিশু কাউকেই ভয় পায় না। ৬) বড়োদের সাথে অশোভন বা অভদ্র আচরণ করা। ৭) নিয়মিত স্কুল ফাঁকি দেয়া। বেপরোয়া, উন্নাসিকতা, উশৃঙ্খলতা, উদাসীনতা, উগ্রতা এমনকি মিথ্যা কথা বলা চরিত্রের একটি বড়ো অংশকে দখল করে নেয়। বেশিরভাগ সময়ই তারা ক্রুদ্ধ ও ক্ষুব্ধ আচরণ করে থাকে। প্রতিকার- শিশুকে ভালোমন্দ বুঝিয়ে বলুন। সে কোনো মানসিক চাপে রয়েছে কি না, জানার চেষ্টা করুন।
হেল্থ টিপস্-৩৪৫ ▌অনিদ্রা বা ইনসমনিয়া:
প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ঘুমানোর মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, মন সতেজ থাকে আবার কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। ইনসমনিয়ার কারণ-প্রথম দিকে বিভিন্ন কারণে যেমন- ফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, পড়াশোনা করা ইত্যাদি কারণে ঘুমে দেরি হয় এবং পরবর্তীতে সঠিক সময়ে আর ঘুম আসে না। এ ছাড়াও আরও বেশ কিছু কারণ আছে যা আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। যেমন-▪ ডিপ্রেশন বা অবসাদগ্রস্ত, টেনশন, দুঃস্বপ্ন ইত্যাদি ঘুমের ব্যঘাত ঘটাতে পারে। অতিরিক্ত চা, কফি ইত্যাদি উত্তেজক পান ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করতে পারে। ▪ যাদের নিয়মিত একস্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করতে হয়, তাদের ঘুমের সমস্যা হতে পারে। ▪ প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় রুটিন করে বিছানায় যাওয়ার চেষ্টা করুন। ঘুমানোর কমপক্ষে ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করুন। ▪ ঘুম না এলে বিছানায় না শুয়ে থেকে বরং বই পড়–ন বা হাঁটাহাঁটি করুন।
হেল্থ টিপস্-৩৪৬ ▌ভুলে যাওয়ার রোগ- ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমার:
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই ভুলে যাওয়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন। যেমন- পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা হলে তার নাম মনে করতে না পারা, কোনো জরুরি কথা বা জরুরি ফোন নাম্বার মনে করতে না পারা এমনকি চশমা কোথায় রেখেছেন তাও অনেক ক্ষেত্রে মনে থাকে না। এটি হচ্ছে স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়া। রোগের কারণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, এইডস, থাইরয়েডের সমস্যা, দীর্ঘমেয়াদি ধূমপান বা মদ্যপান, আলঝেইমার, শরীরে ভিটামিন বা খনিজ উপাদানের ঘাটতি, ভিটামিন বিএর অভাব, মস্তিষ্কের নানান রোগ ইত্যাদি। করণীয়- নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক ব্যয়াম, খাবার গ্রহণে সচেতন হলে এবং জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনলে ডিমেনশিয়াকে কিছুটা হলেও প্রতিরোধ করা যায়। ▪ প্রয়োজন অনুযায়ী বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত ঘুম মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধু ও স্বজনদের সঙ্গে আরও বেশি সময় কাটাতে হবে। ▪ ফলমূল ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
-:: এ্যাজমা-এলার্জি সম্পর্কীত ::--
হেল্থ টিপস্-৩৪৭ ▌ এলার্জি কি? কেন হয়, মুক্তির উপায়:
সাধারণত মানুষের শরীর ক্ষতিকর বস্তুকে (পরজীবী, ছত্রাক, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া) প্রতিরোধের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের চেষ্টা করে বা এই প্রচেষ্টাকে ইমিউন বলা হয় কিন্তু কখনো কখনো আমাদের শরীর সাধারণত ক্ষতিকর নয় এমন অনেক ধরনের বস্তুকেও ইমিউন সিস্টেম ক্ষতিকর ভেবে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াকে এলার্জি বলা হয়। ঘরের ধুলাবালি, ফুলের ঘ্রাণ, গরুর মাংস, চিংড়ি, ইলিশ, গরুর দুধ ইত্যাদি সাধারণ ব্যাপারে গা চুলকানি শুরু হলে অথবা চামড়ায় লাল লাল চাকা হয়ে ফুলে ওঠলে ধরে নিতে হবে আপনার এলার্জি আছে। কারও ফাঙ্গাল এলার্জি হয় আবার কারও হয় খাবারে। কোন খাবারে এলার্জিজনিত সমস্যা হলে, সেই খাবারটি দীর্ঘদিন বন্ধ রাখতে হবে। খাবারে এলার্জির কারণে বেশ কিছু সমস্যা যেমন- বমি, মাথাব্যথা, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। ▪ প্রতিদিন ঘর পরিষ্কার , বিছানার চাদর, বালিশের কভার, মশারি ইত্যাদি ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
হেল্থ টিপস্-৩৪৮ ▌ এলার্জিজনিত কিছু রোগ:
১। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া জনিত এলার্জি-সাধারণত মাইট নামক এক ধরনের ক্ষুদ্র জীবাণু যা ধুলাতে থাকে, মোল্ড, ফুলের রেণু, ঠা-া এবং শুষ্ক আবহাওয়া, খাবার, ঘরের ধুলো ময়লা, পশুপাখির পশম,পোকা মাকড়ের কামড়, ঔষধ, রাসায়নিক দ্রব্যাদিইত্যাদির সং¯পর্শে এটা হয়ে থাকে। এলার্জিজনিত সর্দি- অনবরত হাঁচি, নাক চুলকানো, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। আর্টিকেরিয়া-ত্বকে চাকা চাকা হয়, ফুলে ওঠে এবং চুলকানি হয়। লালচে চাকা চাকা ফোলা দাগ হতে পারে। এলার্জিক কনটাক্ট ডারমাটাইটিস-চামড়ার কোথাও কোথাও শুকনো, খসখসে ও ছোট ছোট দানা যদি বহিস্থ উপাদান বা এলার্জেনের সং¯পর্শে ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এ্যাজমা বা হাঁপানি-কাশি, শ্বাস নিতে ও ছাড়তে কষ্ট, ঘন ঘন নিঃশ্বাসের সহিত বাঁশির মতো শব্দ হওয়া বা বুকে চাপ লাগা, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যে ঠা-া লাগা ইত্যাদি।
হেল্থ টিপস্-৩৪৯ ▌এ্যাজমা বা হাঁপানি:-
এ্যাজমা হচ্ছে শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহজনিত অসুস্থতা। অর্থাৎ যে নালীপথে বাতাস ফুসফুসে প্রবেশ করে তাতে সবসময় প্রদাহ চলতে থাকে, ফলে নালীগাত্র ফুলে যায়। বাতাস তখন আর সহজে ভেতরের দিকে প্রবাহিত হতে পারে না। কেন হয়? ▪ পরিবারে কারো হাঁপানি আছে। ▪ ছোট বয়সে একজিমা হলে ▪ ধুলো বা ধোঁয়ার মধ্যে পড়ে গেলে হাঁচি, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হয়, কয়লার উনুনের ধোঁয়া থেকে, আরশোলা, কুকুর, বেড়াল ইত্যাদির সংস্পর্শে এলে হতে পারে ভাইরাসঘটিত কোনো অসুখে ভুগে উঠার পর। হলে কি করবো?-▪ যত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু হবে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। খেয়াল রাখবেন অন্তত ছ-মাসের মধ্যে যাতে চিকিৎসা শুরু করা যায়। ডিম, দুধ, চিংড়ি মাছ, পুঁইশাক, ডাল, কলা ইত্যাদি থেকেও কারো কারো এলার্জি হয়।
হেল্থ টিপস্-১৫০ ▌হাঁপানি হলে কি করবেন?
শ্বাস টানার সময় তত অসুবিধে নেই, কিন্তু ছাড়ার সময় মনে হচ্ছে পুরো দম ছাড়া গেল না। কিছুটা থেকে যাচ্ছে বুকের মধ্যে। সেখানে কান বসালে সাঁই সাঁই একটা আওয়াজ পাওয়া যাবে। হাঁপানি হয় অ্যালার্জি থেকে। অর্থাৎ কোনো একটা জিনিস শ্বাসনালি সহ্য করতে পারছে না। কিন্তু তাকে বারবার সেই জিনিসের সং¯পর্শে আসতে হচ্ছে। ফলে প্রদাহ হচ্ছে শ্বাসনালিতে। প্রদাহের ফল হাঁপানি। ▪ ধুলো বা ধোঁয়ার মধ্যে পড়ে গেলে যাদের হাঁচি, কাশি বা শ্বাসকষ্ট হয়, তাদের ঘর ঝাড়া মোছা করলে, আসবাবপত্র ঝাড়লে, বাড়িতে ভাঙাচোরা বা রংয়ের কাজ চললে, কয়লার উনুনের ধোঁয়া থেকে, আরশোলা, কুকুর, বেড়াল ইত্যাদির সং¯পর্শে এলে এমনকি ফুলের পরাগ থেকেও তাদের হাঁপানি প্রকোপ দেখা দিতে পারে। ডিম, দুধ, চিংড়ি মাছ, কাঁকড়া, পুঁইশাক, অড়হড় ডাল, কলা ইত্যাদি থেকে কারও কারও অ্যালার্জি হয়। হাঁপানি হলে ধুলো থেকে দূরে থাকতে হবে।
হেল্থ টিপস্-৩৫১ ▌ হাঁপানি বাড়াবাড়ি হলে কি করবো?:
বছরে ৫-৬ বা তার বেশিবার রোগের আক্রমণ হলে উপসর্গের তীব্রতার উপর নির্ভর করে তাকে মাঝারি বা মারাত্মক হাঁপানি বলা হয়। ওষুধপত্র ঠিকভাবে ব্যবহার না করলে, ধোঁয়া, ধুলো বা ঠা-া লাগানোর ব্যাপারে যথাযথ সাবধানতা মেনে না চললে অথবা আচমকা ভাইরার ঘটিত কোনো অসুখে পড়ে গেলে হাঁপানি মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে। মাতৃকুলে হাঁপানি থাকলে তিনগুণ বেশি ঝুঁকি আর পিতৃকুলে হাঁপানি থাকলে অনেকটা কম ঝুঁকি। মায়ের হাঁপানি থাকলে মোটামুটিভাবে বলা যায় তিন সন্তানের মধ্যে একটির হাঁপানি, একটি আপাত সুস্থ এবং একটির অস্বাভাবিক শ্বাসনালীর সংকোচন থাকতে পারে। শেষেরটির হাঁপানি না হয়ে সর্দি কাশির প্রবণতা থাকতে পারে। মারাত্মকভাবে আক্রান্ত কিনা বুঝবেন কিভাবে? যখন উপশমকারী ইনহেলার ব্যবহার করে ৫-১০ মিনিটের ভেতর শ্বাসকষ্ট লাঘব হচ্ছে না তখন বুঝতে হবে আপনার হাঁপানি মারাত্মক অবস্থা ধারণ করতে যাচ্ছে।
হেল্থ টিপস্-১৫২ ▌ এলার্জি, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টে করণীয়:
* কার্পেট ব্যবহার না করা। * ধূমপান পরিহার করা। * বাসায় কোনোপ্রকার পোষা প্রাণি না রাখা। * মশার কয়েল বা স্প্রে ও উচ্চ মাত্রার সুগন্ধি ব্যবহার না করা। * ধুলাবালি ও ঘর ঝাড়– দেওয়ার সময় নাকে মুখে মাস্ক বা গামছা ব্যবহার করা।* জমে থাকা ধুলাবালি সপ্তাহে অন্তত একবার অন্য কাউকে দিয়ে পরিষ্কার করে নেওয়া। * শীতের সময় শীতবস্ত্র ধুয়ে ব্যবহার শুরু করা। * লেপ ভাল করে রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করা। যেকোনো স্যাঁতস্যাঁতে স্থান এড়িয়ে চলা। * হাঁটার সময় ঘাস পরিহার করা। * ছোটো বা বড়ো ফুল ধরা গাছের নিচে / পাশে না বসা। * খাবার ভালো করে গরম করে গ্রহণ করা। * ঠা-া পানি এবং খাবার পরিহার করা। যেসব খাবার পরিহার করা উচিত-* মাছ-ইলিশ, চিংড়ি * গরুর মাংস * দুধ * হাঁসের ডিম (সাদা অংশ) * সবজি-মিষ্টি কুমড়া, কচু, বেগুন * আপেল, কলা। পালনীয় * প্রতিদিন দশ মিনিট শ্বাসের ব্যায়াম করা।
হেল্থ টিপস্-৩৫৩ ▌ শৈশবের স্থুলতা ও এ্যাজমা:
ব্যায়ামের সময় গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হয় ফলে শ্বাসতন্ত্রের গভীরতম অংশগুলিও সংকোচন প্রসারণে অংশ নিতে পারে। ফলে তারা শক্তিশালী হয়ে ওঠে ও এ্যাজমা প্রতিরোধ সম্ভব হয়। শ্বাসকষ্টের কারণে শিশুরা অধিক সময় ঘরে থাকতে বাধ্য হয়, তাদের শরীরের ক্যালরি ঠিক পরিমাণে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় বা এর ফলে তাদের স্থূলতাতে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বেড়ে যায়। স্থুলতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরেকটি বিষয় এ্যাজমা চিকিৎসায় বিরূপ ভূমিকা পালন করে। তা হচ্ছে বিষাদ বা হতাশা। যেসব কিশোর-কিশোরী বেশি স্থূল হয়ে যায়, তারা হীনম্মন্যতায় ভোগে। তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। এই হতাশার কারণে এ্যাজমা আক্রান্ত শিশু ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করে। ফলে এ্যাজমার প্রকোপ বেড়ে যায়। শিশুদের মধ্যে ভিডিও গেম ও টেলিভিশন দেখার বেশি বেশি প্রবণতা এ্যাজমা ও স্থূলতা-উভয় রোগেই প্রকোপ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
হেল্থ টিপস্-৩৫৪ ▌ এ্যাজমা ও এ্যালার্জি রোগীর ভ্রমণকালীন কিছু উপদেশ:
বাস, ট্রেন, ট্যাক্সিতে ভ্রমণ : যানবাহনের কার্পেট আসনের গদি এবং বাতাস চলাচলের জানালাগুলোতে সঞ্চিত থাকে ধুলো এবং ছত্রাক। এই ধরণের বাহনে চলাচল করার সময় এ্যাজমা ও এ্যালার্জি রোগীদের উচিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরায় ভ্রমণ করা। সিগারেটের ধোঁয়া এবং বাতাসের দূষণ রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটায়। সে কারণে খুব ভোরে এবং বেশি রাত্রিতে ভ্রমণ করা ভাল, কারণ এই সময়ে বায়ুদূষণ কম থাকে। সহজে বহনযোগ্য নেবুলাইজার সঙ্গে নেবেন। বিমানে ভ্রমণ : বিমানে সিট নেবার সময় চেষ্টা করতে হবে ধূমপান কর্নার থেকে যত দূরে সম্ভব সিট রিজার্ভ করা। বিমান ৩৫০০০ ফিট উপরে উঠলে আপনার অক্সিজেনের প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। এপিনেফ্রিন ইঞ্জেকশন রাখতে হবে। বিমানে তীব্র এ্যালার্জিতে আক্রান্ত হলে এই ইঞ্জেকশন কাজে লাগবে। লঞ্চ/জাহাজে ভ্রমণ : এপিনেফ্রিন ইঞ্জেকশন নেবেন। স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় ও ঠা-া বাতাসও এ্যাজমার প্রকোপ বাড়িয়ে দিতে পারে।
হেল্থ টিপস্-৩৫৫ ▌পেশাসংশ্লিষ্ট এ্যাজমা রোগীদের জন্য কিছু উপদেশ:
যে কর্মী যত বেশি সময় ক্ষতিকর উপাদানগুলোর মধ্যে কাজ করবেন, তার আক্রাš Íহবার সম্ভাবনাও তত বেড়ে যাবে। বিভিন্ন কারখানায় এই রোগে আক্রান্তদের হার ভিন্ন ভিন্ন। যেমনÑওয়াশিং পাউডার তৈরি করার জন্য যে এনজাইম ব্যবহার করা হয় তা শতকরা ২৫ জন কর্মীই শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রাš Íহয়। পশুপালন ল্যাবরেটরি ও গ্লোভ তৈরির কারখানার কর্মীদের শতকরা ৫ জন এ্যাজমায় আক্রান্ত। পেইন্ট, তাপরোধক, প্লাস্টিক রাবার এবং ফোম ফ্যাক্টরিতে বহুল ব্যাবহৃত একটি উপাদান হচ্ছে আইসোসায়ানেট। এসব কারখানার কর্মীদের শতকরা ১০ জন এ্যাজমাতে আক্রান্ত হন। কৃষকরা যে কীটনাশক ব্যবহার করেন তাতে এসিটাইলকেলিন থাকে। এটি শ্বাসতন্ত্রের মাংশপেশিকে সংকুচিত করে ফলে শ্বাসতন্ত্রের বায়ু চলাচলের পথ সংবর্ধন হয়ে যায়। একবার চিহ্নিত করা গেলে সেই দ্রব্যটির সংস্পর্শ থেকে রোগীকে দূরে রাখতে হবে।
হেল্থ টিপস্-৩৫৬ ▌ গর্ভধারণ ও এ্যাজমা:
যদি গর্ভাবস্থায় এ্যাজমা ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে মায়ের রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। কাজেই শিশুর রক্তেও অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়। ফলে অক্সিজেনস্বল্পতা নিয়ে গর্ভস্থ শিশু বেড়ে উঠে, যা সত্যিই মারাত্মক। গর্ভাবস্থায় এ্যাজমার ওষুধ হিসাবে ইনহেলারের ব্যবহারই যথোপযুক্ত। চেষ্টা রাখতে হবে মুখে খাওয়ার ওষুধ না খাওয়ার। গর্ভাবস্থায় মেয়েদের রক্তে কার্টিসোল নামক হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই কার্টিসোল এ্যাজমার তীব্রতা কমাতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় কিছু কারণ যেমন সাইনাস ইনফেকশন, ভাইরাসজনিত শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ইত্যাদির জন্যও এ্যাজমার তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে পারে। আগে যদি রোগী কোনদিন এ্যালার্জি ভ্যাকসিন না নিয়ে থাকে তাহলে গর্ভাবস্থায় সে তা শুরু করতে পারবে না।
হেল্থ টিপস্-৩৫৭ ▌নাকের এলার্জি:
নাকের এলার্জি দুই ধরনের ১- সিজনাল এলার্জিক রাইনাইটিস ২- পেরিনিয়াল এলার্জিক রাইনাইটিস। ঋতু পরিবর্তনের সময় বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় অ্যালার্জি হলে একে সিজনাল এলার্জিক রাইনাইটিস বলা হয়। বিশেষ ঋতুতে বিশেষ কোনো ফুল ফুটলে বাতাসের সঙ্গে তার রেণু ভেসে নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে ও অ্যালার্জেন সৃষ্টি করে। গ্রীষ্মের শেষে এবং বর্ষা ও শরতে এ রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। লক্ষণ : অনবরত হাঁচি, নাক দিয়ে তরল পানি ঝরা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া। তবে সচরাচর তা ২থেকে ৭দিনের মধ্যে সেরে যায়। পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস : সারাবছর ধরে অ্যালার্জিক রাইনাইটিস হলে একে পেরিনিয়াল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস বলা হয়। ঘরের অ্যালার্জি উদ্দীপক ধূলিময়লা , প্রাণির পরিত্যক্ত লোম বা ত্বকের কোষ। চিকিৎসা: যখন এলার্জির সুনির্দিষ্ট কারণ খুঁজে পাওয়া যায় তখন তা পরিহার করে চললেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
--:: স্ত্রীরোগ সম্পর্কীত ::--
হেল্থ টিপস্-৩৫৮ ▌ ওভার অ্যাক্টিভ ব্লাডার বা অতি ক্রিয়াশীল মূত্রাশয়:
এ সমস্যায় রোগীকে দিনের বেলায় ঘনঘন প্রস্রাব করতে হয়, হঠাৎ প্রবল বেগ পায়, দ্রুত টয়লেটে যেতে হয় এবং মূত্র ত্যাগ বিলম্বিত করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়, এমনকি টয়লেটে যেতে যেতে অনেক সময় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে কাপড়ে প্রস্রাব হয়ে যায়। এ ছাড়া রাতে একাধিকবার ঘুম ভেঙে প্রস্রাব করতে উঠতে হয়। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি (ক্রনিক) সমস্যা, যা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। রোগের তীব্রতা কিছুদিন বেড়ে যায়, আবার কিছুদিন একটু সহনীয় পর্যায়ে আসে। প্রথমত, রোগীর জীবনাচরণ ও অভ্যাসে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে হবে। যেমন- ধূমপান পরিহার করা, অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলা, কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখা ইত্যাদি। প্রস্রাবের পরিমাণ ও আবহাওয়ার উষ্ণতার ওপর নির্ভর করে পরিমিত পানি পান (কখনোই অতিরিক্ত নয়), যেসব পানীয়তে প্রস্রাবের মাত্রা বেড়ে যায়, যেমন- চা, কফি, কিছু ফলের রস, বিভিন্ন কোমল পানীয় ইত্যাদি পান করা কমিয়ে দিতে হবে।
হেল্থ টিপস্-৩৫৯ ▌ জরায়ুতে ইনফেকশন:
আমাদের দেশে কমবয়সী মহিলাদের (২০-৪০) বছরের মধ্যে জরায়ুর ইনফেকশনের হার অনেক বেশি। ৮৫% ক্ষেত্রে সাধারণত স্বাভাবিকভাবে শুধু যৌনবাহিত হয়েই এটি হতে পারে। ১৫% ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে যেমন ডি অ্যান্ড সি, কপার টি, অ্যান্ডোমেট্রিয়াল বায়োপসি, হিস্টারোসালফিঙ্গোগ্রাফি নামক পরীক্ষার পর জীবাণু সংক্রামিত হতে পারে। উপসর্গ : তলপেটে ব্যথা, অতিরিক্ত রক্তস্রাব, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব, মাসিক ছাড়া রক্তস্রাব। কাদের ঝুঁকি বেশি : যাদের একাধিক পুরুষ যৌন সঙ্গী আছে, যারা কনডম ব্যবহার করেন না; আগে যাদের জরায়ু ইনফেকশন হয়েছে, যারা কপার টি ব্যবহার করেন। প্রতিরোধ : নিরাপদ যৌনস¤পর্ক, কনডম, পিল ব্যবহার, একের অধিক যৌনসঙ্গী না থাকা, গোপনঅঙ্গ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। সংক্রমিত হলে চিকিৎসকের পরামর্শানুযায়ী কমপক্ষে ১৪ দিন নিয়মিত এন্টিবায়োটিক সেবন করতে হবে। অনেক সময় পেটে খুব বেশি পুঁজ জমে গেলে এবং এন্টিবায়োটিক কাজ না করলে অপারেশন লাগতে পারে।
হেল্থ টিপস্-৩৬০ ▌ ডিজমেনোরিয়া:
ঋতুকালীন ব্যথা: বয়ঃসন্ধির পর থেকে মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া (মেনোপোজ) পর্যন্ত গর্ভকাল ছাড়া প্রতিটি নারীর মাসিক চক্র চলতে থাকে। প্রতি মাসে একটির বেশি ডিম্বাণু বড়ো হতে থাকে। মাসিক শুরু হওয়ার দিন থেকে হিসাব করে চতুর্দশ দিনে সাধারণত ডিম্বাণুু ডিম্বাশয় থেকে বের হয়ে আসে। যাঁরা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খান, তাঁদের ডিম্বাণু বড়ো হয় না। তাই তাঁদের এই ব্যথা হয় না। ডিম্বাণু স্ফুরণের সময় হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা তলপেটের যেকোনো এক পাশে শুরু হয়ে পুরো তলপেটে এমনকি প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। বসতে, হাঁটতে বা রিকশায় চলাচল করতে কষ্ট হতে পারে। আবার অনেক গাইনি রোগের কারণে মাসিকের সময় ব্যথা হতে পারে, যেমন- তলপেটের ইনফেকশন, জরায়ুর টিউমার, পলিপ, জন্মগত ত্রুটি, এন্ডোমেট্রিয়োসিস ইত্যাদি। মাসিক শুরুর তিন-চার দিন আগে থেকেই ব্যথা হয়। মাসিক শুরু হলে ব্যথা কমতে থাকে।
হেল্থ টিপস্-৩৬১ ▌ মেয়েদের মূূত্রনালির সংক্রমণ:
মূূত্রনালির সংক্রমণ খুব বেশি দেখা দেয় মেয়েদের মধ্যে। কারণ, মেয়েদের ক্ষেত্রে মূূত্রদ্বার ও যোনিপথ খুব কাছাকাছি অব¯হান করে। মাসিক ঋতুস্রাবের সময় অনেকক্ষেত্রে মেয়েরা ময়লা, ছেঁড়া ও নোংরা নেকড়া জাতীয় কাপড় স্ত্রী-অঙ্গে ব্যবহার করেন, এতে জীবাণু প্রথমে যোনিপথে ও পরে তৎসংলগ্ন মূূত্রনালিকে সংক্রমিত করে। লক্ষণ- ◦ মূূত্রথলির প্রদাহ হলে প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া করবে। ◦ প্রস্রাব পরিমাণে কম হতে পারে। ◦ খুব ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ হবে। ◦ তলপেটে ব্যথা ও যন্ত্রণা হবে। বারবার সে বাথরুমে ছুটে যাবে কিংবা দীর্ঘসময় প্রস্রাবের জন্য বসে থাকবে। ◦ কাঁপুনি দিয়ে জ্বর হবে এবং জ্বরের সময় বেশ শীত ভাব অনুভুত হবে। প্রতিকার কী?-রেহাই পাবার এক উপায় প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। সারাদিন অন্তত ১৫/২০ গ্লাস পানি বা পানিজাতীয় খাবার খাবেন, যেমন ধরুন শরবত, ডাবের পানি, ফলের রস ইত্যাদি। মূূত্রনালি সংক্রমণের চিকিৎসা যথাসময়ে না করালে কিডনি নষ্ট হয়ে যাবার আশঙ্কা থাকে।
হেল্থ টিপস্-৩৬২ ▌মেয়েদের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া:
প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করার প্রধান জীবাণুটি হলো ব্যাকটেরিয়া। তবে ছত্রাক এবং ভাইরাসও এ ধরনের প্রদাহ ঘটায়। মেয়েদের মূত্রনালি পায়ুপথের খুব কাছে থাকে বলে সহজেই জীবাণু প্রবেশ করতে পারে। ই-কলাই নামক জীবাণু শতকরা ৭০-৮০ ভাগ প্রস্রাবের প্রদাহের কারণ। অনেক সময় যৌনতার কারণেও জীবাণু মূত্রনালিতে প্রবেশ করে। এসব জীবাণু মূত্রনালিপথে মূত্রথলিতে ও কিডনিতে প্রবেশ করে। এক্ষেত্রে শুধু প্রস্রাবে জ্বালাপোড়াই করে না, বার বার প্রস্রাবের বেগ হয়, ফোঁটায় ফোঁটায় প্রস্রাব পড়ে। প্রস্রাবের রঙ ধোঁয়াটে, দুর্গন্ধযুক্ত ও পরিমাণে কম হয়। মাঝে মাঝে তলপেটে ব্যথা হতে পারে। যৌনতায় অনিচ্ছা জাগে। অনেক সময় শরীরে জ্বর আসে। মাঝে মাঝে বমি হতে পারে। প্রতিরোধ- ০ পানি খাবার পরিমাণ এত বেশি হতে হবে যাতে দৈনিক কমপক্ষে দুই লিটার প্রস্রাব তৈরি হয়। দিনের মধ্যে দুই থেকে তিন ঘন্টার মধ্যে প্রস্রাব করতে হবে। কখনো প্রস্রাব আটকে রাখা যাবে না।
হেল্থ টিপস্-৩৬৩ ▌ স্তন বোটার প্যাজেটস রোগ:
অনেক সময় স্তনে ক্যান্সার হলে এর বোটা বা নিপল এ পাঁচড়ার মতো একধরনের ঘা হয়। একসময় নিপল এর ক্ষত বাড়তে থাকে এবং তা স্তনের গা থেকে খুলে পড়ে যায়। নিপলের (বোটা) ভেতর দিয়ে পানি নিঃসরণ হয়। সেই রসটা হতে পারে পানির মতো, অনেক ক্ষেত্রে সেটা পুঁজের মতো হতে পারে, সেটা রক্তও হতে পারে। আবার কখনো কখনো সেটা দুধ হতে পারে। স্তনে বোটা থেকে যেকোনো ধরনের নি:সরণের ক্ষেত্রে প্রথমেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেওয়াটা ভালো। কী কী কারণে নিপলে নিঃসরণ হতে পারে: মিল্ক ডিসচার্য হতে পারে। তথা যারা বাচ্চাকে দুধ পান করাচ্ছেন বা যাদের বেবী হতে পারে তাদের ক্ষেত্রে দুধ নি:সরণ হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এগুলো ছাড়াও টিউমারের জন্য এমন ডিসচার্য হয়। হরমোনের লেভেল পরিবর্তন হওয়ার জন্যও এসব ডিসটার্য হয়। যদি পুঁজ ডিসচার্য হয়, তাহলে বুঝতে হবে কোনো এক জায়গায় ইনফেকশন আছে।
হেল্থ টিপস্-৩৬৪ ▌নিপ্পল ভেতরে ঢুকে যাওয়া:
বয়ঃসন্ধিতে স্তনের পরিপূর্ণতা ও বৃদ্ধির সময় অনেক মেয়ের স্তনের বোটা (ঘরঢ়ঢ়ষব) স্তনের ভিতরের দিকে ঢুকে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুধু একপাশের স্তন এই ধরনের সমস্যায় পড়ে। এর জন্য বিশেষ কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। সাধারণত গর্ভধারণ অথবা দুগ্ধদানের সময় নিজে নিজেই এই সমস্যা ভালো হয়ে যায়। যদি দুগ্ধদানের সময় এই সমস্যা ভালো না হয়ে যায় সেক্ষেত্রে তা শিশুকে দুগ্ধদানে বাধা সৃষ্টি করে। একধরনের মেকানিকাল সাকশন ডিভাইস ব্যবহার করে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে। তাতেও কাজ না হলে কসমেটিক সার্জারির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। পরিণত বয়সে নতুন করে কারো স্তনের বোটা ভিতরে ঢুকে যাওয়া স্তনের আভ্যন্তরীন জটিল কোনো সমস্যা নির্দেশ করে থাকে। ডাক্ট এক্টেশিয়া, মাসটাইটিস বা টিউমার হলে এমনটি হতে পারে। অনেক সময় ক্যান্সার হলেও বোটা ভিতরের দিকে ঢুকে যেতে পারে। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হতে হবে।
হেল্থ টিপস্-৩৬৫ ▌লাইপোমা:
স্তনে অবস্থিত পরিণত চর্বি কোষ এর অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধির কারণে এই টিউমারটি হতে পারে। টিউমারটি রোগীর মনে অস্বস্তি এবং আতংক সৃষ্টি করতে পারে তাই বায়োপসি করে নিশ্চিত হওয়া উচিত যে এটা লাইপোমা। লাইপোমা হলে এর জন্য কোনো চিকিৎসা নেবার প্রয়োজন হয় না। তবে রোগী খুব অস্বস্তি বোধ করলে কসমেটিক সার্জন দ্বারা অপারেশন করিয়ে নিতে পারেন। রোগটি ফ্যাটি টিউমার নামেও পরিচিত। আক্সগুল দিয়ে সামান্য চাপ দিলে এটি নড়াচড়া করে, তাই সহজেই একে শনাক্ত করা যায়। এটি সাধারণত বেশ শক্ত হয়।একজন ব্যক্তির একাধিক লাইপোমা হতে পারে। যেকোনো বয়সে লাইপোমা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে মধ্য বয়সিদের এটি বেশি হয়ে থাকে। লাইপোমা একটি নির্দোষ টিউমার যা চর্বিযুক্ত টিস্যু দিয়ে গঠিত। লাইপোমাগুলোতে হাত দিয়ে ¯পর্শ করলে নরম অনুভূত হয়, সাধারণত নড়ানো চড়ানো যায় এবং সাধারণভাবে এগুলো ব্যথাহীন।
হেল্থ টিপস্-৩৬৬ ▌ঋতুচক্রে স্তনে ব্যথা বা মাস্টালজিয়া:
অনেক মেয়েরাই ঋতুচক্রের সময় তাদের স্তনে তীব্র ব্যথা অনুভব করে। একে মাস্টালজিয়া বলা হয়। অনেক মেয়েই ধারণা করে যে, স্তনের এই ব্যথা বুঝিবা স্তন ক্যান্সার-এর কারণে হয়; কিন্ত তাদের এই ধারণা একদমই ঠিক নয়। ঋতুচক্র বা মাসিকের সময় ইসট্রোজেন হরমোনের প্রতি তাদের স্তনের বাড়তি ¯পর্শকাতরতার কারণেই অনেক সময় এই সমস্যাটির সৃষ্টি হয়। এই সময় মেয়েটিকে সারাদিন একদম সঠিক মাপের একটি ব্রা পরে থাকতে হয় এবং রাতের বেলা একটি তুলতুলে নরম ব্রা পরে থাকতে হয়। এসময় কফি পান করলে ব্যথার তীব্রতা বাড়তে পারে। মনে রাখতে হবে এটা কোনো রোগ নয়, শুধু একটি উপসর্গ, এজন্য স্তন বা মেয়েটি কারোরই কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। যাদের স্তনের ব্যথা ঋতুচক্রের সাথে স¤পর্কিত নয় তাদের চিকিৎসা কিন্তু ভিন্ন। যদি সত্যিই স্তনের ব্যথা হয় তাহলে অবশ্যই স্তন বায়োপসি করে নিশ্চিত হতে হবে যে তার স্তন ক্যান্সার হয়নি।
হেল্থ টিপস্-৩৬৭ ▌ মহিলাদের ওভারিয়ান সিস্ট:
ওভারি বা ডিম্বাশয়ে পানিপূর্ণ থলেকে সিস্ট বলা হয়। যেকোনো বয়সী নারীরা এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। কারণ : অনিয়মিত লাইফ, হরমোনের সমস্যা, পিরিয়ড, অল্পবয়সে ঋতুস্রাব হওয়ার কারণে সিস্টের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন নারীরা। এছাড়া বয়ঃসন্ধিকালে এ সমস্যা শুরু হয়, দেরিতে বিয়ে, দেরিতে সন্তান নেয়ার কারণে এ সমস্যা দেখা দেয়। প্রাথমিক পর্যয়ে যদি এ রোগের চিকিৎসা শুরু করা যায়, তবে তা সারিয়ে তোলা সম্ভব। সিস্টের লক্ষণগুলো : ১) অনিয়মিত ঋতুস্রাব ওভারিন সিস্টের অন্যতম প্রধান লক্ষণ। এছাড়া মাসিকের সময় মারাত্মক ব্যথা হয়। বিশেষত মাসিক শুরুর আগে এবং পরে ব্যথা হয়। ২)ওভারিতে সিস্ট হলে তলপেট ফুলে যায়। এসইসঙ্গে প্রচ- ব্যথা অনুভব হয় এবং তলপেট কামড়ায়। ৩) প্রস্রাবে ব্যথা অথবা অতিরিক্ত প্রস্রাবের বেগ এমনকি বারবার প্রস্রাবের বেগ আসে। ৪)ওভারিতে সিস্ট দেখা দিলে ডায়ারিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
হেল্থ টিপস্-৩৬৮ ▌ অনিয়মিত মাসিক:
অনেক নারীর মাঝেই অনিয়মিত মাসিক দেখা দেয়। এর ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক ওজন বৃদ্ধি পাওয়া থেকে শুরু করে বাচ্চা না হওয়ার মতো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভোগেন অনেকে। যদিও এই সমস্যাটি ডায়াবেটিস বা কিডনি রোগের মতো নিরাময়যোগ্য নয়, তবে সময় মতো চিকিৎসা, সচেতনতা, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং জীবনযাপনের মাধ্যমে একে নিয়ন্ত্রণে রেখে অনেক ভালো থাকা সম্ভব। এটি এমন একটি অবস্থা যখন মহিলাদের সেক্স হরমোন ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্ট্রেরন হরমোন ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ চঈঙঝ থাকা নারীদের ওভারিতে ছোটো ছোটো অনেক সিস্ট হয়। মূলত সিস্টগুলো যখন ছোটো থাকে তখন তা ক্ষতি নয়, আকার বড়ো হলেই তা ক্ষতিকর হয়। সাধারণত: চঈঙঝ এর কারণে নারীদের ঋতুচক্রে অনিয়ম, প্রজননে সমস্যা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ, কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
হেল্থ টিপস্-৩৬৯ ▌লকোরিয়া বা সাদা স্রাব:
মহিলাদের এক প্রকার ঘন স্রাব হওয়াকে প্রদর বা লিকোরিয়া বলে। মনে রাখবেন- ইহা কোনো রোগ নয়, সাদাস্রাব বা লিকোরিয়া রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ মাত্র। অনেক মহিলাদের বিয়ের আগে ও পরে এই রোগ হয়। কিন্তু অনেকে লজ্জায় বা অবহেলা করে নিজের নিকট তা লুকিয়ে রাখে। কেন সাদা স্রাব হয়? ০১। প্রধান কারণ হলো ইনফেকশন। মহিলাদের যেহেতু জরায়ু উন্মুক্ত থাকে, তাই যে কোনোভাবে এইখানে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। ২। মলদ্বার বা পায়ুদেশ থেকে জীবাণু এসে খুব সহজেই জরায়ুতে ইনফেকশন হতে পারে। ৩। পুরুষের মাধ্যমেও এই রোগ হতে পারে। ৪। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব ও উপযুক্ত পরিবেশের অভাবের কারণে এই রোগ হতে পারে। এই রোগের চিকিৎসা (বিবাহিত হলে) স্বামী স্ত্রী দু’জনকে একসাথে করতে হবে। কেননা স্বামীর নিকট থেকে পরবর্তীতে আবার স্ত্রী ইনফেকশন হতে পারে।
হেল্থ টিপস্-৩৭০ ▌ স্তন ক্যান্সার:
স্তনের কিছু কোষ যখন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠে তখন স্তন ক্যান্সার হতে দেখা যায়। মহিলাদের জন্য এই রোগ একটি আতঙ্কের কারণ। স্তন ক্যান্সার হয়েছে কী করে বুঝবেন? *স্তনে একটি পি-ের মতো অনুভব হয়। *স্তনের বোঁটা থেকে রক্ত বের হয়। *স্তনের আকার ও আকৃতির পরিবর্তন হয়। *স্তনের ত্বকে পরিবর্তন দেখা দেয়, যেমন- টোল পড়া। *স্তনের বোঁটা ভিতরের দিকে ঢুকে যায়। *স্তনের বোঁটার চামড়া উঠতে থাকে। *স্তনের ত্বক লালচে যেমন- কমলার খোসার মতো এবং গর্ত-গর্ত হয়ে যায়। কখন ডাক্তার দেখাবেন? *স্তনে নতুন এবং অস্বাভাবিক পি- অনুভব করলে। *পরবর্তী মাসিক পার হয়ে গেলেও পি- না গেলে। *স্তনের পি- আরও বড়ো এবং শক্ত হলে। *স্তনের বোঁটা থেকে অনবরত রক্ত নির্গত হলে। চিকিৎসা-অধিকাংশ মহিলারাই স্তন অপারেশনের পাশাপাশি অন্যান্য বাড়তি চিকিৎসাও গ্রহণ করতে হয়। যেমন: কেমোথেরাপি, হরমোন থেরাপি অথবা রশ্মি থেরাপি ।
হেল্থ টিপস্-৩৭১ ▌জরায়ু নিচে নেমে আসা:
এই রোগটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই একটি বা একাধিক সন্তান জন্মের জন্য হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে জরায়ু প্রায় সবটাই যোনির মধ্যে ঝুলে পড়ে । বাইমেনুয়াল পরীক্ষাতে একটি আঙ্গুল প্রবেশ করালেই এই রোগ অনেকটা বুঝতে পারা যায়। এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর কোমরে এবং পিঠে বেদনার লক্ষণ দেখা দেয়। অনেক সময় প্রদাহ বেশি হলে জ্বরও আসতে পারে। যদি জরায়ু অধিক পরিমাণ নেমে আসে তবে রোগীর পায়খানা প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসা-এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। প্রতিরোধ-* গর্ভাবস্থায় মাকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে * গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যেতে হবে। * ডাক্তার অথবা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী দ্বারা প্রসবের ব্যবস্থা করাতে হবে। * প্রসবের সময় সন্তান টানাটানি করা যাবে না * প্রসবের সময় জরায়ুর মুখ স¤পূর্ণরূপে না খুললে চাপ দেওয়ার জন্য বলা যাবে না।
হেল্থ টিপস্-৩৭২ ▌ আইবিএস:
ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস নামের রোগটি তরুণ বয়সী থেকে ৫০ বছর অবধি নারীদেরই বেশি হয়ে থাকে। এতে আক্রান্ত নারীরা মূলত পেটের নানা উপসর্গে ভুগে থাকেন, কিন্তু তেমন কোনো কারণ পাওয়া যায় না। উপসর্গগুলো সপ্তাহে অন্তত দুবার এবং তিন মাসের বেশি সময় ধরে দেখা দিতে থাকলে আইবিএস আছে কি না সন্দেহ করা হয়। উপসর্গগুলো : * আইবিএস সি টাইপে কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি হয়। মলত্যাগের সময় পেট ব্যথা করে। * আইবিএস ডি টাইপ আবার উল্টো, ডায়রিয়ার মতো হয় বারবার। কিছু খেলেই বদহজম হয়, পেট নরম হয়। সকালের দিকেই বেশি দেখা দেয়। এর পেছনের কারণ বেশিরভাগই মানসিক চাপজনিত। তাঁরা দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, কফি, কোমল পানীয়, কিছু কিছু শাক ও ফল খেতে পারেন না। ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন। * প্রতিদিন ৭-৮ গ্লাস পানি পান করুন। অল্প অল্প করে সারাদিনে ভাগ করে খাবেন।
--:: গর্ভাবস্থা সম্পর্কীত ::--
হেল্থ টিপস্-৩৭৩ ▌ গর্ভবতী মায়ের ৫ ধরনের টিকা ১) ফ্লু এর টিকা:
গর্ভাবস্থার মধ্যবর্তী সময়ে ফ্লুতে আক্রান্ত হলে তীব্র উপসর্গ বা নিউমোনিয়ার মতো জটিল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। ২) টিটেনাস/ডিপথেরিয়া/পারটুসিস টিকা: গর্ভবস্থায় ২৭-৩৬ মাসের মধ্যে নেয়াটাই উপযুক্ত সময়। টিটেনাস-এর ফলে কেন্দ্রীয় ¯œায়ুতন্ত্র আক্রান্ত হয় এবং পেশীতে বেদনাদায়ক খিঁচুনি হয়। টিটেনাস সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া মাটিতে এবং পশুর বর্জ্যে পাওয়া যায়। ৩) হেপাটাইটিস বি টিকা: হেপাটাইটিস বি ভাইরাস জনিত সংক্রামক রোগ যকৃতের প্রদাহ, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি এবং জন্ডিস প্রতিরোধ করে। ৪) হেপাটাইটিস এ টিকা: হেপাটাইটিস এ এর টিকা গর্ভবতী মাকে সংক্রমিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়ানো রোগ প্রতিরোধ করে। ৫) নিউমোকক্কাল ভ্যাক্সিন: দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেমন- ডায়াবেটিস অথবা কিডনি রোগ থাকলে নিউমোকক্কাল ভ্যাক্সিন নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। যা কয়েক ধরনের নিউমোনিয়া থেকে সুরক্ষা দেবে।
হেল্থ টিপস্-৩৭৪ ▌ গর্ভবতী মায়েদের টিটি টিকা দেয়ার নিয়ম:
গর্ভবতী যাদের বয়স ১৫ থকে ৪৯ বছর, তাদের জন্য ধনুষ্টংকার ও রুবেলার বিরুদ্ধে টিটি ও এমআর টিকা দেয়া হয়। তবে টিটেনাসের ৫টি টিকার ডোজ স¤পন্ন থাকলে আর গর্ভাবস্থায় এই টিকা নেয়ার প্রয়োজন নেই। আর কেউ যদি কোনো টিকা না নিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় ৫ মাসের পর ১ মাসের ব্যবধানে পর পর দুটি টিটি টিকা দিয়ে নিতে হবে। আর যদি পূর্বে দুই ডোজ টিকা নেয়া থাকে, তাহলে প্রতি গর্ভাবস্থায় মাত্র একটি বুষ্টার ডোজ নিতে হবে। মাকে দেয়া এই টিকা মা ও বাচ্চা উভয়েরই ধনুষ্টংকার রোগের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে। প্রসবকালে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পরিচ্ছন্নতায় অসতর্কতা বাচ্চার নাভী কাটার সময় অথবা নাভীর গোড়ায় নোংরা কিছু লাগিয়ে দিলে নবজাতকের ধনুষ্টংকার রোগ হয়। টিটি টিকা সূর্যের হাসি চিহ্নিত ক্লিনিক, মেরিস্টোপস ক্লিনিক, সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দেয়া হয়।
হেল্থ টিপস্-৩৭৫ ▌সিজার নয় নর্মাল ডেলিভারি চান? মেনে চলুন এই নিয়মগুলি:
প্রথমত, মায়ের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাসবোধ থাকতে হবে যে, তিনি স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করবেন। দ্বিতীয়ত, ষঁমবষ বীবৎপরংব নামে এক ধরণের ব্যায়াম আছে। যাতে পেলভিক এলাকার মাংসপেশী সংকোচন ও প্রসারণ করার মাধ্যমে কটি দেশের প্রসারণ ক্ষমতা বাড়ানো হয়। তৃতীয়ত, গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে প্রশ্বাস ছাড়লে ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়ে। অন্তঃস্বত্ত্বার ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বড় একটি সমস্যা। তাই এ পদ্ধতি অবলম্বন করে নিস্কৃতি পেতে পারেন। চতুর্থত, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত হাঁটলে সাঁতার কাটলে ও হালকা কিছু ব্যায়াম করলে অন্তঃস্বত্ত্বা শারীরিকভাবে শক্ত-সামর্থ্যবান থাকেন। যা স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে সহায়ক হয়। পঞ্চমত, ডাক্তারের দেওয়া খাদ্য তালিকা অনুসরণ করলে সন্তান খুব বড়ও হয় না আবার ছোটও হয় না। ফলে স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বেশি থাকে। সিজারে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মায়ের জীবন যেমন ঝুঁকির মুখে পড়ে তেমনি পরবর্তীতে মাকে নানা ধরনের স্বাস্থ্য জটিলতার শিকার হতে হয়।
হেল্থ টিপস্-৩৭৬ ▌ চিনি খেলে কি গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হয়?:
চিনি,জনস্বাস্থ্যের এক নম্বর শক্র। যারা বেশি মিষ্টি খায় তাদের টাইপ-টু ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি। বাড়তি চিনিওয়ালা পানীয়, জুস ড্রিংক, মধূ, বা সাদা চিনি এগেুলো হৃদযন্ত্রের সমস্যা তৈরি করতে পারে, কারণ তা ধমনীর ভেতর ট্রাইগ্লিসারাইড জাতীয় চর্বি জমাতে ভূমিকা রাখে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, সাধারণ চিনির চেয়ে প্রায় ২০০ গুণ বেশি মিষ্টি অ্যাসপার্টেম কৃত্রিম চিনি। যেকোনো প্রক্রিয়াজাত খাবার, জাঙ্ক ফুড, ডায়েট পানীয়তেও এই অ্যাসপার্টেমের উপস্থিতি থাকে। এ উপাদান অতিরিক্ত পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করলে হানা দিতে পারে কিডনির অসুখ, ক্যানসারের মতো মারণরোগও। মাথা যন্ত্রণা, কিডনির উপর প্রভাব, হতাশা, খিদে বেড়ে যাওয়ার মতো নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে কৃত্রিম চিনিতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ অনুযায়ী পুরুষদের দিনে ৬ চামচ ও মহিলাদের ৪ চামচের বেশি চিনি খাওয়া উচিত নয়।
হেল্থ টিপস্-৩৭৭ ▌গর্ভবতী নারীরা যে ৫ ভুল করেন:
১. কোনো কোনো গর্ভবতী নারী গর্ভাবস্থাকে অসুস্থতা ধরে নিয়ে শুয়ে-বসে থাকেন। গর্ভাবস্থায়ও স্বল্পমাত্রায় শারীরিক কার্যক্রম যেমন চালাতে হবে, একইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাবারও খেতে হবে। ২. গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনের তুলনায় কম খাবার খান এমন নারীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। অনেকে আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবারও খান। দুটোই গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর প্রভাব রাখে। ৩. গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় টিকা নেওয়া উচিত। এটি সুস্থ সন্তান জন্মদানের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ৪. চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গর্ভাবস্থায় উপযোগী ব্যায়াম করতে হবে। ৫. অনেক গর্ভবতী নারী যেমন সঠিক মাত্রায় ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট খেতে চান না তেমন অনেক নারী আবার অতিরিক্ত ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট সেবন করেন। উভয় বিষয়ই ক্ষতিকর। এ কারণে চিকিৎসকের পরামর্শমতো সঠিক মাত্রায় ভিটামিন ও সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উচিত।
--:: শিশুরোগ সম্পর্কীত ::--
হেল্থ টিপস্-৩৭৮ ▌ যেসব খাবার শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক:
১. গরুর দুধ-শিশুর প্রথম বছরের আগে গরুর দুধ না দেয়াই ভালো। কারণ গরুর দুধে থাকে বেশি প্রোটিন এবং সোডিয়াম যা শিশুর ছোট পেটে তা পরিপাক করতে ব্যাঘাত ঘটায়। এছাড়া গরুর দুধে ফর্মুলা দুধের থেকে কম আয়রন এবং অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড কম থাকে। ২. সামুদ্রিক মাছÑটুনা, স্যামন, কোরাল ইত্যাদি সামুদ্রিক মাছে উচ্চ পরিমাণে পারদ থাকে তাই এগুলো শিশুদের দেয়া ঠিক নয়। ৩. মধু-শিশুর ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মধু তো দূরের কথা কোনও খাবার শিশুর মুখে দেয়া যাবে না। কারণ এক বছর পর্যন্ত শিশুর বটুলিজম হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়, আর মধু এই ছত্রাক বহন করে। ৪. চকলেট-কোকো বাচ্চাদের হজম শক্তি নষ্ট করে এবং দাঁতের ক্ষতি করে। এ থেকে অনেক শিশুর অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। ৫.লবণ-শিশুদের কিডনি লবণ ও সোডিয়াম সহ্য করতে পারে না। এক বছরের আগে শিশুরে লবণ ব্যবহার করা যাবে না।
হেল্থ টিপস্-৩৭৯ ▌ শিশুর বারেবারেই ঠা-া লাগার ধাত? কি করবেন?:
আপনার সন্তান নিয়মিত হাত ধোয় কিনা তা নিশ্চিত করুন। জ্বর বা ঠা-া লেগেছে এমন মানুষের কাছ থেকে আপনার সন্তানকে দূরে রাখুন। এছাড়াও, নিয়মিত আপনার সন্তানের খেলনা ধোবেন। বাচ্চার আশপাশ যেন সবসময় পরিষ্কার থাকে। বাথরুম, রান্নাঘর এবং মেঝে নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন। ঘুমানোর আগে সেল ফোন, টেলিভিশন এবং ক¤িপউটার স্ক্রিনে কোনো কিছু দেখা থেকে বিরত থাকুন। পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম না হলে মস্তিষ্কের ওপর তার প্রভাব পড়ে। মস্তিষ্কের উর্বরতা বাড়াতে কিছু খাবার খাওয়া জরুরি। এর মধ্যে সবুজ শাকসবজি, জাম, শস্যদানা, বাদাম, মুরগির মাংস, অলিভ ওয়েল অথবা নারকেল তেল, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
হেল্থ টিপস্-৩৮০ ▌ শিশুর রোগ ক্লষ্ট্রিডিয়াম টিটানী:
জন্মের ১ম ও ২য় দিন শিশু স্বাভাবিকভাবে কাঁদতে পারে এবং বুকের দুধ টেনে খেতে পারে। জন্মের ৩-২৮ দিনের মধ্যে শিশু অসুস্থ্য হয়ে পড়ে এবং শিশু বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়, শিশুর মুখ ও চোয়াল শক্ত হয়ে যায় এবং জোরে কাঁদতে পারে না। শিশুর খিঁচুনি হয় এবং শরীর পেছনের দিকে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে যায়। ভয়াবহতা- নবজাতকের ধনুষ্টংকার শিশুমৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। এই রোগের চিকিৎসা করা অত্যন্ত কষ্টকর। এই রোগে আক্রান্ত নবজাতক প্রায়ই মারা যায়। প্রতিরোধ-গর্ভবর্তী ও সন্তান ধারণক্ষম সকল নারীকে যথা শীঘ্র সম্ভব পাঁচ ডোজ টিটি টিকা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে দিয়ে নবজাতকের ধনুষ্টংকার রোধ করা যায়। যদি ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে টেটানি হয়, তাহলে ম্যাগনেসিয়ামের স¤পূরক দরকার।
হেল্থ টিপস্-৩৮১ ▌শিশুর ডিপথেরিয়া:
ক্ষুদ্র এক প্রকার জীবাণু ডিপথেরিয়া রোগাক্রান্ত শিশুর হাঁচি কাশির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। ওই জীবাণু যখন সুস্থ শিশুর শরীরে প্রবেশ করে তখন এই রোগ দেখা দিতে পারে। জীবাণুর নাম করিনে ব্যাকটেরিয়াম ডিপথেরি ব্যাকটেরিয়া। লক্ষণ: ১-৩ দিন। শিশু খুব সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে ঠিক মতো খায় না এবং খেলাধুলা করে না। শিশুর জ্বর, সর্দি ও কাশি দেখা দেয়। গলা ফুলে যায় এবং কন্ঠনালি বা গল দেশের ভিতরে সরের মত সাদা আস্তরন পড়ে। ◦ ৪-৬দিন: শিশু খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে। কণ্ঠনালির গ্রন্থিগুলি খুব বেশি ফুলে যায় এবং শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে। ভয়াবহতা-এ রোগ হৃৎপি- এবং ¯œায়ুরতন্ত্রকে আক্রান্ত করতে পারে এবং শিশুর মৃত্যু ঘটাতে পারে। প্রতিরোধ-শিশুর জম্মের এক বৎসরের মধ্যে ২৮ দিন বা একমাস পরপর তিন ডোজ ডিপিটি টিকা দিলে তা শিশুকে ডিপথেরিয়া থেকে রক্ষা করে। প্রথম ডোজ ডিপিটি টিকা দেয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হলো শিশুর ছয় সপ্তাহ বয়সে।
হেল্থ টিপস্-৩৮২ ▌ শিশুর হুপিং কাশি:
হুপিং কাশিতে আক্রান্ত শিশু হাঁচিকাশি দেয়ার সময় বাতাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায় এবং আক্রান্ত শিশুর সং¯পর্শেও এই রোগ ছড়ায়। জীবাণুর নাম-বড়ডেটলা পারটুসিস লক্ষণ-১ম সপ্তাহ-শিশুর জ্বর হয়, নাক দিয়ে পানি পড়ে, চোখ মুখ লাল হয়ে যায়, কাশি দেখা দেয়। ২য় সপ্তাহ-কাশি মারাত্মক আকার ধারণ করে। শিশু যখন কাশে তখন তার খুব কষ্ট হয় এবং চোখ স্ফীত ও লাল হয়ে যায়। কাশির পর শিশু হুপ শব্দ করে শ্বাস নেয়। অনেক সময় বমিও হয়। যদি কাশি তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলে তাহলে হুপিংকাশি বলে অনুমান করা যেতে পারে। ৩ থেকে ৬ সপ্তাহ-কাশি ধীরে ধীরে কমে যায়। হুপিংকাশির ফলে শিশু দুর্বল হয়ে যায় এবং অপুষ্টিতে ভোগে। শিশুর নিউমোনিয়া হতে পারে শিশুর চোখে রক্তজমাট বেঁধে অন্ধ হয়ে যেতে পারে। শিশুর মস্তিষ্কের ক্ষতি হতে পারে। শিশুর এক বছর বয়সের মধ্যে ২৮ দিন বা এক মাস অন্তর অন্তর তিন ডোজ ডিপিটি টিকা দিয়ে শিশুকে হুপিংকাশি থেকে রক্ষা করা যায়।
হেল্থ টিপস্-৩৮৩ ▌ শিশুর পোলিও:
আক্রান্ত শিশুর মল দ্বারা দূষিত পানি খেলে বা আক্রান্ত শিশুর সং¯পর্শে এলে এই রোগ হতে পারে। লক্ষণ ▪ ১-৩দিন: শিশুর সর্দি, কাশি এবং সামান্য জ্বর হয়। ▪ ১-৫ দিন: মাথা ব্যথা করে, ঘাড় শক্ত হয়ে যায় জ্বর থাকে। ▪ শিশুর হাত অথবা পা অবশ হয়ে যায়। ▪ শিশু দাঁড়াতে চায় না। ▪ উঁচু করে ধরলে আক্রান্ত পায়ের পাতা ঝুলে পড়ে দাঁড়া করাতে চাইলে শিশু কান্নাকাটি করে এবং নাড়াচড়া করতে পারে না। ▪ শিশুর আক্রান্ত অঙ্গ ক্রমশ দুর্বল হয় এবং পরে স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে। ভয়াবহতা- শিশুর এক বা একাধিক অঙ্গ অবশ হয়ে য়ায়। আক্রান্ত অঙ্গের মাংস পেশি চিকন হয়ে যায়। প্রতিরোধ-একমাস পর তিন ডোজ এবং হামের টিকা দেয়ার সময় আরো একবার অর্থাৎ মোট চারবার পোলিও টিকা শিশুর এক বছর বয়সের ভিতরে খাওয়ানো হলে তা শিশুর দেহে পোলিও রোগ প্রতিরোধ করে। প্রথম ডোজ দেয়ার সব চেয়ে ভালো সময় শিশুর ছয় সপ্তাহ বয়স।
হেল্থ টিপস্-৩৮৪ ▌ শিশুর হাম:
হামে আক্রান্ত শিশুর কাছ থেকে এই রোগের জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে সুস্থ শিশুর শরীরে প্রবেশ করে এবং হাম রোগ সৃষ্টি করে। জীবাণুর নাম: হাম ভাইরাস। লক্ষণ- ১-৩দিন: বেশি জ্বর, সর্দি, কাশি। চোখ লাল হয়ে যায় এবং পানিতে টলটল করে। চতুর্থ দিন- জ্বর কমে আসে, মুখে এবং শরীরে লালচে দানা দেখা দেয়। হামে দানা উঠার ৩/৪ দিন পর দানা কালচে হয়ে এক সময় খুসকির মতো হয়ে ঝরে যায়। ভয়াবহতা-হামের ফলে শিশু নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও পুষ্টিহীনতায় ভোগে। কান পাকা রোগ হতে পারে। শিশুর রাতকানা রোগ দেখা দিতে পারে, এমন কি চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। হামের নানা জটিলতার কারণে অনেক শিশু মারাও যায়। প্রতিরোধ-শিশুর নয় মাস বয়স পূর্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে এক ডোজ হামের টিকা দিলে সে হাম রোগের হাত থেকে রক্ষা পাবে। তবে এই টিকা অবশ্যই এক বৎসর পূণর্ হওয়ার আগেই দেয়া উচিত। পুষ্টিহীন শিশুরা হামের পরে মারাত্মক রোগ পরবর্তী জটিলতার সম্মুখীন হয়।
হেল্থ টিপস্-৩৮৫ ▌শিশুর যক্ষ্মা:
যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত লোকের সঙ্গে ঘনিষ্ট সং¯পর্শে, আক্রান্ত লোক যখন কাশে তখন তার থুথুর মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। জীবাণুর নাম: মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস। লক্ষণ ▪ অল্প অল্প জ্বর ও কাশি, ক্ষুধা কমে যায়, দুর্বলতা। ▪ গ্রন্থি ফুলে যায়, পরে পেকে যে গ্রন্থি বগল বা ঘাড়ে ক্ষতের সৃষ্টি করে। ▪ অনেক দিন ধরে ধীরে ধীরে ওজন কমে যায়। যেকোনো হাড়ের জোড়া ফুলে যায় এবং অচল হয়ে যায়। ▪ মেরুদ-ের যক্ষ্মার ফলে বাঁকা হয়ে যায়, ব্যথা হয়। ▪ মস্তিষ্ক (টিভি মেনিনজাইটিস)-এর ফলে মাথা ব্যথা, অচেতনতা, ঘাড় শক্ত ও খিঁচুনি হয়। ভয়াবহতা-সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করলে আক্রান্ত শিশুর মৃত্যু হতে পারে এবং রোগ ছড়াতে পারে। প্রতিরোধ-জন্মের পরপরই যত শীঘ্র সম্ভব বিসিজি টিকা দিলে তা শিশুর দেহে যক্ষ্মার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জন্মের পরপর বিসিজি দেয়া না হলে, শিশুর এক বৎসর বয়সের মধ্যেই এই টিকা দেয়া উচিৎ।
হেল্থ টিপস্-৩৮৬ ▌ শিশুর হেপাটাইটিস-বি:
হেপাটাইটিস-বি লিভারের একটি মারাত্মক রোগ, যা হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। এমনকি অনেক বছর পরও লিভারে মারাত্মক প্রদাহের সৃষ্টি হতে পারে। জন্মের সময় নবজাতক তার মায়ের কাছ থেকে সংক্রমিত হতে পারে। বুকের দুধের মাধ্যমে এই ভাইরাস সংক্রমিত হয় না। খেলাধুলার সময় আঘাতের কারণে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত শিশু হতে রক্ত বা অন্যান্য দেহ রসের মাধ্যমে সুস্থ শিশুতে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। অনিরাপদ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও এই ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুরাই ভবিষ্যতে হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী বাহক হওয়ার ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং অন্যদের মাঝে ভাইরাস সংক্রমিত করে। প্রতিরোধ-তিন ডোজ হেপাটাইটিস-বি টিকা দিলে এটি শিশুকে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস থেকে রক্ষা করবে।
হেল্থ টিপস্-৩৮৭ ▌ শিশুর হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি (হিব):
হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া যা শিশুদের দেহে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটায়। ভয়াবহতা-এ সংক্রমণের মধ্যে অন্যতম হলো ব্যাকটেরিয়া জনিত মস্তিষ্কের সংক্রমণ এবং মারাত্মক নিউমোনিয়া। এছাড়া এ ব্যাকটেরিয়া রক্ত, অস্থিসন্ধি, হাড়, গলা, কান এবং হৃৎপি-ের আবরণের সংক্রমণ ঘটায়। হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা এ.বি.সি. ডি.ই.এফএই ছয় ধরনের হয়ে থাকে। তবে শিশুদের মারাত্মক সংক্রমণের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি দায়ী। সময়মত সঠিক চিকিৎসা না করলে আক্রান্ত শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে যেতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। চার থেকে ১৮ মাসের শিশুরাই এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি ঝূঁকিপূর্ণ। শিশুকে এ রোগের বিরুদ্ধে টিকা দিতে হবে। সাধারণত পাঁচ বছরের বড়ো শিশুরা বা বয়স্করা এ রোগে আক্রান্ত হয় না। এ রোগের জীবাণু রোগাক্রান্ত শিশুর হাঁচি কাশির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
হেল্থ টিপস্-৩৮৮ ▌ শিশুর সর্দি-কাশি:
বাচ্চার ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকে, যার কারণে তারা সহজেই অসুখে আক্রান্ত হতে পারে। এ কারণে বাচ্চাদের বেশি সর্দি হয় বা ঠা-া লাগে। প্রায় ২০০ ধরনের ভাইরাস শিশুর কমন কোল্ড বা ঠা-া লাগা বা সর্দির কারণ। বাচ্চা যখন ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এসময় সে এসব জিনিসে হাত দেয় (মাঝে মাঝে তা জিব দিয়ে চেটেও দেখে)। এর ফলে তার হাতে সর্দির ভাইরাস লাগতে পারে। এরপর যখন সে হাত মুখে দেয় বা হাত দিয়ে নাক মুখ কচলায় তখনই ভাইরাস তার শরীরে বাসা বাঁধার সুযোগ পেয়ে যায়। বাচ্চা শীতের সময় খুব বেশি এসবে আক্রান্ত হয়। একটা তোয়ালে বা কাপড় রোল করে শিশুর মাথার নিচে দিয়ে তাকে চিত করে শোয়ান। এবার ৩০ থেকে ৬০ মিনিট পর পর দুই বা তিন ফোঁটা ড্রপ দিয়ে নাক পরিষ্কার করে দিন। ড্রপ দেয়ার পর কাত করে শুইয়ে দিয়ে তরল সর্দি বেয়ে পড়তে দিন, টিস্যু দিয়ে মুছে দিন। দুই বছর বয়সের নিচে নাকের ডিকনজেসটেন্ট ড্রপ বা স্প্রে ব্যবহার করা নিষেধ।
হেল্থ টিপস্-৩৮৯ ▌শিশুর জ্বর:
মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা হচ্ছে ৯৮.৮৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর বেশি হলেই আমরা জ্বরে আক্রান্ত হতে পারি। আমরা জিহ্বার নিচে থার্মোমিটার রেখে জ্বর মাপতে পারি। সেক্ষেত্রে লক্ষ রাখতে হবে থার্মোমিটার অবশ্যই ১ মিনিট জিহ্বার নিচে রাখতে হবে। কম মাত্রার জ্বরÑযাতে ১০০.৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর কম থাকে, শরীরের জন্য উপকারী বিবেচিত হয়। কম মাত্রার জ্বরের সাথে অন্য কোনো উপসর্গ না থাকলে কোনো চিকিৎসার দরকার নাই। জ্বরের ক্ষতিকর প্রভাব : ১. শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। ২. চিকিৎসা না হলে এর ফলে মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রে মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। যা করবেন না: জ্বরের কারণে আপনার শিশু খেতে না চাইলে সায় দেবেন না। সে যা পছন্দ করে তা খেতে দিন, কারণ খাবার খেলে ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তি অর্জিত হয়। শিশুকে গরম কম্বলে মোড়াবেন না।
হেল্থ টিপস্-৩৯০ ▌ শিশুর নিউমোনিয়া:
নিউমোনিয়া সাধারণত বাচ্চাদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং এটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণও হতে পারে। লক্ষণ: প্রথমে দেখুন শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি অর্থাৎ মিনিটে বুক কয়বার ওঠানামা করছে। তারপর দেখুন বুকের নিচের অংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে দেবে যাচ্ছে কি না বা ভেতরে ঢুকে যাচ্ছে কি না। কাশি বা ঠা-ার সঙ্গে যদি বুক দেবে যায় এবং শিশু দ্রুত নিঃশ্বাস নেয়, তাহলে ধরে নিতে হবে শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। নিউমোনিয়া হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কারণ আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের মৃত্যুর প্রথম কারণ হলো নিউমোনিয়া। করণীয়: শিশুর নাক বন্ধ থাকলে নরম কাপড় বা কটনবাড দিয়ে নাক পরিষ্কার করে দিন। প্রয়োজনে নরসল ড্রপ বা লবণ-পানির মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। শিশুর কাশি থাকলে পানি জাতীয় খাবার বেশি করে খেতে দিন। স্বাভাবিক খাবারও দিন। একেবারে খেতে না পারলে অল্প অল্প করে বারবার দিন। বারবার বুকের দুধ দিন।
হেল্থ টিপস্-৩৯১ ▌ শিশুর ডায়রিয়া:
পায়খানা বারবার হয়েও মল যদি পাতলা না হয়, তা ডায়রিয়া নয়। * ঘনঘন পায়খানা সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ৩ বা তারও বেশিবার পায়খানা হলে ডায়রিয়া বলা হয়। মনে রাখতে হবে, শুধু মায়ের দুধ পান করে এমন শিশু অনেক সময় দিনে ৫-১০ বার পর্যন্ত পায়খানা করতে পারে, যা পেস্টের মতো সামান্য তরল হয়, একে ডায়রিয়া বলা যাবে না। শিশু যদি খেলাধুলা করে, হাসি-খুশি থাকে তা হলে এর জন্য কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কীভাবে ডায়রিয়ার জীবাণু খাদ্যনালিতে প্রবেশ করে? * খাদ্য বা পানীয় বস্তু। * অপরিষ্কার হাত, গ্লাস, চামচ, বাসনপত্র বা সচরাচর ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিসপত্র। * মাছি ইত্যাদির মাধ্যমে। পানিস্বল্পতা এবং সময় মতো তার সুচিকিৎসা না হলে অনিবার্য মৃত্যু। * পরবর্তীকালে-অপুষ্টি এবং রাতকানা, অন্যান্য রোগ দেখা দিতে পারে। স্যালাইন ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। কোনো ওষুধ ব্যবহার না করলেও তা এক সময় আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যায়।
হেল্থ টিপস্-৩৯২ ▌ শিশুর আমাশয় বা ডিসেনট্রি হলে:
যখন খালিচোখে মলে রক্ত দেখা যাবে। এ ছড়া গায়ে জ্বর, পেটে ব্যথা ও পায়খানা করার সময় প্রচ- কোঁত দেয়ার ইচ্ছা থাকে। তখন তাকে আমাশয় বা ডিসেনট্রি বলে। চিকিৎসা শুরুর পর ৪৮ ঘণ্টা বা পূর্ণ ২ দিন অপেক্ষা করতে হবে। যদি রোগীর উন্নতি দেখা যায়, তবে এই চিকিৎসা ৫ দিন চালিয়ে যেতে হবে। আর যদি রোগীর কোনো উন্নতির লক্ষণ না দেখা যায় তবে ডাক্তার ওষুধ পরিবর্তন করবে। বা নিকটস্থ হাসপাতালে সুচিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে। শিশু কলেরায় আক্রান্ত হলে: অন্ত্রে ভিবরিও কলেরা জীবাণু প্রবেশ করে ডায়রিয়া সৃষ্টি করলে কলেরা বলে। কোনো রোগীর পাতলা পায়খানা শুরু হওয়ার পর খুব অল্প সময়ের মধ্যে যদি চরম পানিস্বল্পতা হয়, চালধোয়া পানির মতো পাতলা পায়খানা হয়, ঘনঘন বমি হয় এবং রোগী দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে, প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যায় এবং রোগী খুবই পিপাসার্ত হয়- তবে কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা যায়।
হেল্থ টিপস্-৩৯৩ ▌ শিশুর পেটে ব্যথা:
শিশুদের পেটে ব্যথা হলেই আমরা মনে করি ক্রিমি হয়েছে কিংবা ক্ষুধা লেগেছে। অথচ বাচ্চাদেরও যে অ্যাসিডিটি হতে পারে, সেটা আমরা হয়তো চিন্তাও করি না। গ্যাস্ট্রিক, পেপটিক আলসার বা অ্যাসিডিটি-যে নামেই ডাকি না কেন, বাচ্চাদের মধ্যে এটি কিন্তু দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্কুল থেকে বের হলেই বাচ্চারা বায়না ধরে ঝালমুড়ি, ফুচকা, চটপটি ইত্যাদি খাওয়ার। আজকাল শিশুদের কোনো বিনোদন নেই, আছে কেবল বইয়ের বিশাল বোঝা। তার ওপর মানসিকভাবে চাপে থাকার কারণে তাদের অ্যাসিডিটিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অ্যাসিডিটি বেশি বেড়ে গেলে তা থেকে পেটে আলসার বা পেপটিক আলসার হতে পারে। লক্ষণগুলো হলো: পেটে ব্যথা, পেট ফাঁপা, ঢেকুর ওঠা, বমি বমি ভাব, ক্ষুধা কমে যাওয়া ইত্যাদি। অনেক বাচ্চা এর কিছুই বুঝতে পারে না, তারা কেবল পেট চেপে ধরে অস্থিরতা কিংবা কান্না করতে থাকে। প্রতিকার: চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বড়োদের গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বাচ্চাদের খাওয়াবেন না।
হেল্থ টিপস্-৩৯৪ ▌শিশুর বমি ও তার প্রতিকার:
শিশুদের ক্ষেত্রে বমি হয় সাধারণত খাওয়ার গোলমালের জন্য। শিশু যখন মায়ের বুকের দুধ পান করতে যায় আর বুকে যদি দুধ কম থাকে তবে শিশু বুকের দুধ চাটার সময় প্রচুর বাতাস খায়। আবার বুকে যদি দুধ বেশি থাকে এবং সে দুধ খুব বেশি তাড়াতাড়ি শিশুর মুখে আসে তাহলেও শিশু অনেকটা বাতাস খেয়ে ফেলতে পারে। যে সকল শিশু বোতলে বা ফিডারে দুধ খায় সে ক্ষেত্রে যদি বোতল উপড় করে না ধরা হয় তবে নিপলের অর্ধেকটায় বাতাস আর অর্ধেকটায় দুধ থাকে। দুধ খাওয়ার শেষে এই বাতাস পাকস্থলী থেকে বের হবার সময় কিছু দুধ নিয়ে বের হয়। শিশুকে যদি জোর করে খাওয়ানো হয়, একই ধরনের খাবার বারবার খেতে দেওয়া হয়, তাতে শিশুর অরুচি হয় এবং বমি করে ফেলে দেয়। শিশুর জ্বর কাশি থাকলেও শিশু বমি করে। পেটের অসুখ, বদহজম, পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার কারণে বমি হতে পারে। প্র্রতিকার : শিশুর বমি হবার সাথে সাথে তাকে খাবার স্যালাইন খাওয়াতে হবে।
হেল্থ টিপস্-৩৯৫ ▌ শিশুর হজম ঠিক রাখতে কিছ ুপরামর্শ:
বেশি ভারী ও তেল-মশলাযুক্ত খাবার খেয়ে শুরু হতে পারে পেটব্যথা, পেট ফাঁপা, ঢেকুর ওঠা, পায়ুপথে বাতাস নির্গমন বা ডায়রিয়ার মতো সমস্যা। * খাওয়ার সময় তাড়াহুড়া করবেন না। সময় নিয়ে, ধীরেসুস্থে ভালো করে চিবিয়ে খাওয়া শেষ করবেন। * খাওয়ার সময় ও মাঝখানে বেশি পানি পান করলে পাকস্থলীর অ্যাসিড দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ভালো করে খাবার ভাঙতে পারে না। তাই খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে এক গ্লাস পানি পান করুন। * খাওয়ার সময় বেশি পানি নয়। খাওয়া শেষে আবার সামান্য একটু পানি পান করতে পারেন। * একেক জনের একেক ধরনের খাবার হজম করতে সমস্যা হয়। যাঁদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, তাঁরা দুধ ও দুধের তৈরি খাবার খেতে পারেন না। অনেকের মিষ্টিজাতীয় দ্রব্যে সমস্যা হয়। কারও সমস্যা হয় রুটি, যব বা ডালজাতীয় খাবারে। কার কোনটাতে সমস্যা, সেটা তিনিই ভালো ধরতে পারবেন।
হেল্থ টিপস্-৩৯৬ ▌শিশু কেন খেতে চায় না?:
বাচ্চা খেতে না চাইলে বেশি জোর করবেন না। কিছু কিছু রোগের কারণে শিশুদের রুচি কমে যেতে পারে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অত জটিল কিছু নয়। শিশুর প্রতি মনোযোগ কমে গেলেও সে খাওয়া কমিয়ে দিতে পারে। সে যখন দেখে যে ঠিকমতো না খেলে বা খাবার নিয়ে যন্ত্রণা করলে তাকে নিয়ে সবাই অস্থির হয়ে পড়ছে, তখন খাবার নিয়ে বায়না ধরে। তবে কিছু বাচ্চা আছে যারা, সত্যি সত্যি খায় না। তাহলে দেখতে হবে যে বাচ্চাটি অপুষ্টির শিকার হচ্ছে কি না বা তার রক্তশূন্যতা হয়েছে কি না? নাকি বাচ্চার ঘনঘন কোনো সংক্রমণ হচ্ছে, যার জন্য খাওয়ায় রুচি কমে যাচ্ছে। যদি শিশুটির রক্তশূন্যতা থাকে, অপুষ্টি থাকে- বাচ্চাটি বসে থাকবে, খুব বেশি সচল থাকবে না। পাশাপাশি কৃমি আছে কি না দেখতে হবে। সচরাচর দেখা গেছে, শিশু যদি একা খায়, তাহলে সে খুব বেশি খেতে চায় না। কিন্তু যদি সপরিবারে বসে একসঙ্গে খায়, তাহলে আপনার শিশুটিও খেতে উৎসাহ পাবে।
হেল্থ টিপস্-৩৯৭ ▌ শিশুর কানব্যথা ও কানের খোল:
কানে খোল জমে অনেক সময় কানে ব্যথা হয়। অনেক মা-বাবা আছেন যারা কানে ময়লা পরিষ্কার করার জন্য কটনবাড ব্যবহার করেন এবং ময়লা কান থেকে বের করে আনার চেষ্টা করেন। যারা এই কাজটি করছেন তারা ঠিক করছেন না। প্রকৃতপক্ষে কান পরিষ্কার করার দরকার নেই। প্রকৃতিগতভাবেই কান নিজে নিজে পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার ব্যব¯হা আছে। হঠাৎ যদি কান পরিষ্কার করার দরকার পড়ে তাহলে সেই কাজটি নাক কান গলা বিশেষজ্ঞকেই করতে দেয়া উচিত। তা না হলে সমস্যা হতে পারে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কান পরিষ্কার করতে যেয়ে কানের ময়লা কিছুটা বের করে আনার সময় কিছু ময়লা ধাক্কা খেয়ে ভিতরে চলে যায়। এভাবে বারবার কান পরিষ্কার করার কারণে একটু একটু করে ময়লার বাড়তে থাকে এবং ব্যথার উদ্রেক করে। এছাড়া কান পরিষ্কার করতে যেয়ে কানে খোঁচা খাওয়া কিংবা কানে যে কোনো ধরনের ইনজুরি কানের মধ্যে ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। এবং তৃতীয় দৃশের অবতারণা হয়।
হেল্থ টিপস্-৩৯৮ ▌শিশুর সমস্যা যখন তোতলানো:
তোতলানো একটা কথা বলার সমস্যা, যেটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ভালো হয়ে যায়। সাধারণত ১৬ বছর বয়সের আগেই শতকরা ৮০ ভাগ ভালো হয়ে যায়। হালকা-পাতলা তোতলানোর কোনো বিশেষ চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না, কিন্তু বেশি মাত্রায় যারা তোতলায়, তাদের ¯িপচ থেরাপির (শব্দ উচ্চারণের চিকিৎসা) মাধ্যমেই চিকিৎসা করে উন্নত করা সম্ভব। সাধারণত মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের তিন-চার গুণ বেশি হয়। করণীয়:-- কখনো তাকে নিয়ে হাসাহাসি করবেন না। -- তার সঙ্গে কথা বলুন বারবার। তার লজ্জা, হতাশা ও দুশ্চিন্তা কমান। -- তাকে ধীরে ধীরে কথা বলার অভ্যাস করান। -- প্রতিটি আওয়াজ ধীরে ধীরে ও চাপ দিয়ে বলার অভ্যাস করান। একটু সচেতন হলেই তোতলানোর সমস্যা থেকে মুক্ত হওয়া যায়। প্রয়োজন শুধু সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ।
হেল্থ টিপস্-৩৯৯ ▌ শিশুর অটিজম:
অটিজম কোনো রোগ নয়, মস্তিষ্কের একটি বিকাশজনিত সমস্যা। যার ফলে শিশু অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও সামাজিক স¤পর্ক তৈরি করতে পারে না। অটিজমের নির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। বংশগত কারণ, পরিবেশগত প্রভাব- শিশুর মাঝে অটিজম হবার ঝুঁকি সৃষ্টি করে। পিতা-মাতার অধিক বয়স, গর্ভকালীন অবস্থায় মায়ের কোনো অসুস্থতা, জন্মলাভের স্বাভাবিক সময়ের অনেক আগেই শিশুর ভূমিষ্ঠ হওয়া অথবা জন্মকালীন সময়ে অস্বাভাবিক কম ওজন, মস্তিষ্কে কম অক্সিজেন হওয়া, মায়েদের গর্ভকালীন সময়ে বায়ুদূষণ, কীটনাশকের পরোক্ষ সং¯পর্শে আসাও শিশুর অটিজম হওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকি সৃষ্টি করে। অটিজমের বেশিরভাগ লক্ষণসমূহ সাধারণত ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সেই শিশুদের মাঝে স¤পূর্ণ ¯পষ্ট হয়ে দেখা দেয়। লক্ষণ: # শিশু যদি ৬ মাসের ভেতর স্বতঃস্ফূর্তভাবে না হাসে। # ৯ মাসে শব্দ, হাসি এবং মুখের ভাবভঙ্গির সাথে প্রতিক্রিয়ামূলক আচরণ না করে। # ১ বছরের ভেতর আঙুল দিয়ে কোনো কিছু দেখায় না।
হেল্থ টিপস্-৪০০ ▌ শিশুর দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশ: জন্ম থেকে ১ মাস বয়স :
এ সময় শিশু দিনে ৫-৮ বার খাবে। ঘুমাবে ১৮-২০ ঘণ্টা। ২-৩ মাস বয়স : এ বয়সে সে রঙ চিনতে পারে, মুখ দিয়ে বিভিন্ন শব্দ করে। হাত উঠিয়ে নাড়াচাড়া করে। ক্ষুধা পেলে কাঁদে। খুশি হলে হাসে। ৪-৬ মাস বয়স : এ সময়েই তার মাকে চিনতে পারে। পরিচিত এবং অপরিচিতের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। মুখ দিয়ে নানা রকম শব্দ করে। দিনে ৩-৫ বার খায়। মাথা এবং বাহুর নড়াচড়ায় তার একটা নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ চলে আসে। উঠে বসতে চায়। অনেক শিশু এ বয়সে বসতেও পারে। ৭-৯ মাস বয়স : এ সময়টাতে শিশু হামাগুড়ি দেয়, কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়াই বসতে পারে। মায়ের কাছ থেকে আলাদা হলেই কাঁদতে থাকে। ১০-১২ মাস বয়স : এ সময় শিশু তার হাত-পায়ের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। উঠে দাঁড়াতে পারে। হাটতে পারে। কোনো কোনো শিশু দৌড়াতেও পারে। দু-একটা শব্দ বলতে পারে। বিভিন্ন শব্দ বা ঘরের কারো অঙ্গভঙ্গি অনুকরণ করতে পারে।