অভ্যাস-২০১ ▌ কমফোর্ট জোনে আটকাবেন না
একটি সুপরিচিত কথা রয়েছে—‘আপনি যদি আপনার আরামের অঞ্চল থেকে বেরিয়ে না যান তবে আপনি সবসময় একই জায়গায় আটকে থাকবেন।’ পাশাপাশি একটি জনপ্রিয় গল্প আছেঃ একবার একটি এরোপ্লেন তার পাশে থাকা একটি রকেটকে জিজ্ঞাসা করল- রকেটভাই, তুমি এত দ্রুত গতিতে কিভাবে উড়ে যাও বলতো? তখন রকেট বলে, আমার মত পাছায় আগুন ধরিয়ে দিলে তুমিও আবার মত দ্রুত যেতে পারবে। অর্থাৎ চাপে ও তাপে সবকিছুর অবস্থান পরিবর্তন হয়। লক্ষ কোটি বছরের চাপে ডায়মন্ড এবং গোল্ড তৈরি হয়েছে। জীবনে যে যত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে, সে তত সফল মানুষ। আর চ্যালেঞ্জ বাদ দিয়ে যে বা যারা কমফোর্ট জোনে পড়ে থাকে; তারা সব দিক থেকে ব্যর্থ মানুষ।
কমফোর্ট জোন হলো সেই আরামদায়ক জায়গা যেখানে মানুষ নিজের রুটিনমত কাজ নিরাপদে করতে পারেন। সাধারণত মানুষ আটে আটকায়। অর্থাৎ সে যা কিছু করে, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-অফিস, বিয়ে সাদি সবকিছু ৮ কিলোমিটার জায়গার মধ্যেই করে। যারা এই ৮কে অতিক্রম করতে পারেন, তারাই নেতা হিসেবে গড়ে উঠে। সর্বদা মনে রাখবেন, জীবনের চ্যালেঞ্জগুলি জেতার জন্য একটি বৃহত্তর ক্ষমতার সঙ্গে লড়াই করা ভীষণ জরুরি, আর তা হলো ‘ভয়’। এটি প্রায়শই আমাদেরকে কমফোর্ট জোন বা আরামের অঞ্চলের বাইরে যেতে বাধা দেয়। অথচ নিজের উন্নতির জন্য এই কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসার বিকল্প নেই। এটি এমন একটি যাত্রা, যার জন্য সাহস, দৃঢ়তা এবং পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করা জরুরি হয়ে পড়ে। ঠান্ডা বরফের মধ্যে পর্যাপ্ত গম উৎপাদন করতে না পেরে পশ্চিমারা না খেয়ে মরতে বসেছিল। ফলে বাধ্য হয়ে পালতোলা জাহাজে করে অজানা উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয় এবং আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি আবিস্কার করে। তারা ইউরোপের বরফের স্তুপ থেকে বের না হলে ডাইনোসরদের মত বিলুপ্ত হয়ে যেত। কাজেই আপনার উন্নতি তখনই ঘটবে, যখন আরাম বা কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে অজানায় পা রাখতে পারবেন।
অভ্যাস-২০২ ▌ ' আপনজনের সুখ শান্তি এবং নিরাপদ জীবন কামনা করবেন না।
জার্মান ফিলোসফার নিটসে'র তত্ত্ব মতে পশ্চিমারা জীবন-যাপন করেন। তার তত্ত্ব মতে, প্রিয়জনদের জন্য সবসময় কামনা করবেন দুর্ভোগ এবং দুর্দশা। কটিন দুর্ভোগ, চরম একাকিত্ব, অসুস্থতা, দুর্ব্যবহার ,অপমান এবং জীবনে অনেক সময় এই ধরনের সিচুয়েশন আসুক, যখন নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা হয়, এমনকি একটা অবস্থা আসুক যেখানে জীবনে বারবার পরাজিত হতে হতে তার পক্ষে যে জীবনে কখনো জেতা সম্ভব সেটাই ভুলে যায় অর্থাৎ তিনি নিজের এবং প্রিয় মানুষগুলার জন্য এরকম তীব্র পরাজয়ের দুর্দশা কামনা করতে বলেছেন। অর্থাৎ প্রমাণ করুক তারা প্রকৃতিতে ঠিকে থাকার যোগ্য কিনা। তাদের উন্নতি ও সফলতা নির্ভর করবে তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া এসব দুর্বিষহ পরিস্থিতিগুলো হেন্ডল করতে পারে কি পারে না। অর্থাৎ একটা মানুষ তার জীবনে কখনোই যোগ্য হবে না, তার ভিতরের শক্তিটা কখনো সঞ্চয় হবে না, যদি এরকম ভয়াবহ দুঃখ এবং দুর্দশার শিকার না হয়। অর্থাৎ মানুষ বড় হওয়ার এটাই হল মূল জ্বালানি। এটা না থাকলে সে জীবনে বেশিদূর যেতে পারবে না, প্রতি পদে পদে হারতে হারতে একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছেন একটাই " নিজের ভাগ্যকে ভালোবাসো"। কারণ আমাদের সাথে যা কিছু ঘটেছে এবং যা কিছু ঘটবে এ সবকিছুই নেসেসারি বা আমাদের জন্য দরকারী। অর্থাৎ একটা মানুষের গ্রেট হয়ে ওঠার ফর্মুলা হচ্ছে, সে তার ভাগ্যকে ভালোবাসবে। তার অতীত ভবিষ্যৎ বা অনন্তকালে তার সাথে যা কিছু ঘটবে সে কখনোই বলবে না যে আমার সাথে তো এরকমটা না হলেও পারতো।
সর্বক্ষণ প্রতিযোগিতা এই যুগে এই জীবনের কিছু ক্ষেত্রে আমরা কোনদিনই জিততে পারবো না। আমাদের জীবনের কিছু গোল, কিছু অ্যাম্বিশন, কিছু স্বপ্ন হাতছাড়া হয়ে যাবেই। সেই জিনিসগুলোকে আমাদের হাসিমুখে ছেড়ে দিতে হবে । তার মতে আমাদের জীবনের এসব সাফারিং, স্ট্রাগল বা আমাদের পার্সোনাল লিমিটেশনস এ সবকিছুই কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের ডেভেলপমেন্ট এর জন্য নেসেসারি। সুতরাং যেটা নেসেসারি সেটাই বিউটিফুল এবং যত বেশি আমরা এই বিউটিটাকে গ্রহন করব, তত বেশি যোগ্য নেতা হিসেবে গড়ে উঠতে পারব। জীবনে যেই পরিস্থিতি আসুক না কেন সব সময় ইয়েস বলতে হবে। যতটুকু আপনার কন্ট্রোলে আছে ততটুকু দিয়ে আপনি চেষ্টা করে যাবেন। যাকিছু কন্ট্রোলে নাই সেটাকে শুধুমাত্র আপনি এক্সেপ্ট করে নিবেন এবং ভালোবাসবেন।
মৌলানা রুমি মানব জীবনটাকে একটা গেস্ট হাউজের সাথে তুলনা করেছেন। যেখানে প্রত্যেকটা দিনকে তিনি একটা নতুন মেহমান হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। প্রত্যেকটা দিন এক একজন নতুন অতিথির মতো আমাদের জীবনে কখনো বয়ে আনবে আনন্দ, কখনো হতাশা, বিষন্নতা বা নিষ্ঠুরতা। কিন্তু সবকিছুকে সাদরে গ্রহণ করতে হবে। মানুষ হিসেবে আমাদের ভিতরে অনেক ধরনের খারাপ চিন্তা থাকবে। অতীতে খারাপ কাজের জন্য আমাদের ভিতরে লজ্জাবোধ থাকবে। আমাদের ভিতরে অনেক হিংসা থাকবে। এই নেগেটিভ ইমোশনস গুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে এবং চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাতে হবে। মনে করেন, আপনি অনেকদিন ধরে কঠোর পরিশ্রম করে একটা প্রমোশন পেলেন বা একটা উচ্চ পদে ক্ষমতা পেলেন। এই বড় সাকসেস যদি আপনি প্রপারলি হ্যান্ডেল করতে না পারেন, সেটা আপনাকে অনেক বেশি অহংকারী এবং স্বৈরাচারী করে তুলবে । এই সাফল্য আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সুতরাং কটিন দুর্ভোগ, চরম একাকিত্ব, অসুস্থতা, দুর্ব্যবহার ,অপমান সবকিছুকে মন থেকে আলহামদুলিল্লাহ বলে ভাগ্যটাকে আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করুন। মনে রাখুন, যা কিছু আসে সবকিছুরই একটা পারপাস আছে।
অভ্যাস-২০৩ ▌ প্রতিটি দিন নতুনভাবে শুরু করুন
* প্রতিদিন যে সময়ে ওঠেন তার থেকে অন্তত ত্রিশ মিনিট আগে ঘুম থেকে জাগুন। তাহলে খুব ধীরস্থিরভাবে দিন শুরু করতে পারবেন আপনি। ঘুম থেকে উঠেই শুয়ে শুয়ে বা ইজিভাবে চেয়ারে বসে কল্পনা-পরিকল্পনায় মগ্ন থাকুন। * সকালের নাস্তার জন্য কিছু সময় ব্যয় করুন। স্বাস্থ্যকর নাস্তা করা খুব জরুরি। * কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য বাস, সাইকেল কিংবা পায়ে হেঁটে যেভাবেই যান না কেন, সিদ্ধান্ত নিন যে আপনি চিন্তামুক্ত হয়ে যাবেন। প্রয়োজনে গান শুনতে শুনতে যান। * সারাদিন আপনি কি কি কাজ করবেন, সেটির একটি তালিকা তৈরি করুন। * পরিশেষে, আপনি যদি ‘সকাল বেলার পাখি’ না হয়ে থাকেন, তবে নিজেকে একটু অতিরিক্ত সময় দিন।
অভ্যাস-২০৪ ▌ শিক্ষার্থী হোন, তা না হলে আপনি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন না।
শেখা এবং সাফল্য লাভ ব্যাপার দুটো অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ‘মানুষের শেখা কখনো শেষ হয় না। এটি একটি চিরন্তন প্রক্রিয়া’। জীবনের কোন কোন পর্যায়ে আপনার শিক্ষাগ্রহণ জরুরি। আমাদের জীবন একটি বিশ্ববিদ্যালয়। আপনি যা-ই করেন কিংবা যে-ই অভিজ্ঞতা হোক না কেন আপনার, আপনি কিছু একটা শিখবেন। এটিই আমাদের জীবন। প্রতিদিনই আপনি নতুন চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি এবং মনোবল সঞ্চার করবেন।
প্রতিদিন নিত্যনতুন জিনিস শেখাও কিন্তু এক ধরনের সাফল্য। আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করার জন্য শেখার জন্য হাত বাড়িয়ে দিন। বিরক্তিকর কোনো কাজ থেকেই আনন্দময় কিছু নেওয়ার চেষ্টা করুন। আপনাকে নতুন নতুন জিনিস শিখতেই হবে, তা না হলে আপনি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন না। প্রতিদিন শেষে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আজ আমি কী শিখলাম? জীবনে সফলতা অর্জন করার জন্য আমাকে আর কী কী করতে হবে?। কখনো আপনার উত্তরগুলো হবে ¯পষ্ট, আবার কখনো হবে অ¯পষ্ট। কিন্তু নিয়মিত প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করলে আপনি নিজেকে আরো ভালো করে বুঝতে ও জানতে পারবেন। মাঝে মাঝে আবার এমন হবে যখন আপনার দিন পুরোটাই বৃথা যাবে। এমন দিনগুলো থেকেও কিছু শেখার চেষ্টা করুন। মুহূর্তগুলোকে কাজে লাগান।
অভ্যাস-২০৫ ▌ কথায় আছে, নিজে চেষ্টা না করলে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও কাউকে সহযোগিতা করেন না।
সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার তরুণ প্রজন্ম বুঁদ হয়ে আছে আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন গ্যাজেটের মধ্যে। তারা ভিডিও গেম কিংবা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুঁদ হয়ে থাকে। অথচ নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করবার বিনিময়ে তারা বেকার অবস্থা হতে উত্তরণের নূতন কোনো প্রচেষ্টায় বা কোয়ালিটি টাইম দিতে ইচ্ছুক নয়।
সত্যি কথা বলতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম সারা রাত ধরে অনলাইনে থাকে, সারা সকাল ঘুমায়। এরা সূর্যোদয় দেখে না, সূর্যাস্ত দেখে না। সূর্যোদয়ে বিছানায় থাকে, সূর্যাস্তে মোবাইলে থাকে। এরা ফার্স্টফুডে আসক্ত। এরা আউটডোর খেলা পছন্দ করে না। ইনডোরে স্বস্তি পায়। এক অস্থির জেনারেশন তৈরি করছি আমরা। এদের স্পেসিফিক কোনো লক্ষ্য নাই। আদর্শিক কোনো এমবিশান নাই। এরা বই পড়ে না, নিউজপেপার পড়ে না। এরা হাঁটতে পছন্দ করে না। আধা কিলোমিটার গন্তব্যে যেতে আধা ঘন্টা রিক্সার জন্য অপেক্ষা করে। এরা অনর্থক তর্ক জুড়ে দেবে। এদের নেই বিনয়, নেই কৃতজ্ঞতাবোধ। এদের উদ্ধত আচরণে আপনি ভয়ে কুকড়ে যাবেন।
তাদের বুঁদ হয়ে থাকার আর একটা বিষয় হচ্ছে ক্রিকেট খেলা। ইউরোপে ইংল্যান্ড বাদে বাকি দেশগুলোর মানুষ ক্রিকেট কী, সেটা জানেই না। যে নেদারল্যান্ডস দল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেট খেলে, তাদের দেশের নারীরা বলছিলেন, ক্রিকেট একধরনের পোকা। আমেরিকায় বেস বল, ভলিবল—এসবের দাপট দেখার মত। বেশিরভাগ আমেরিকান ক্রিকেট-নামে নামে একটি খেলা আছে, তা জানে না। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, আমাদের দেশে জ্ঞানবিজ্ঞান, আর্ট-কালচার সব ছাপিয়ে এই ক্রিকেটাররা হয়ে গেলেন জাতীয় হিরো। এদের ফলোয়ার অনুগামীর সংখ্যা লাখে লাখে। একসময় ফুটবল ছিল আকাশ সমান জনপ্রিয় খেলা। ধীরে ধীরে সে খেলা ইতিহাসে ঠাঁই নিতে চলেছে। সত্যি কথা বলতে কি, সনাতন সমাজব্যবস্থা হতে আমরা আধুনিক সমাজব্যবস্থায় পদার্পণ করেছি বটে; কিন্তু মডার্ন সোসাইটির রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন আমরা ফলো করি না।
অভ্যাস-২০৬ ▌ ক্ষমতা অপব্যবহার রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ হউন
স্বনামধন্য ফরাসি পণ্ডিত মন্টেস্কু তার ‘দ্য স্পিরিট অব দ্য লজ’ গ্রন্থে বলেছেন—‘ প্রত্যেক ব্যক্তি, যার হাতে ক্ষমতা আছে, তিনি তা সুকৌশলে অপব্যবহার করে চলেন এবং তাকে রুখে না দেয়া পর্যন্ত তিনি তার কর্তৃত্বপরায়ণতা বজায় রেখে চলেন।’
মানবসমাজে ছয়টি স্তর আছে।এই ছয়টি স্তর হচ্ছে—(১) অতি উচ্চবিত্ত বা উপচে পড়া ধন-সম্পদের মালিক; (২) উচ্চবিত্ত (৩) উচ্চ মধ্যবিত্ত বা প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদের মালিক; (৪) মধ্যবিত্ত বা চাহিদার তুলনায় কিছু কম সম্পদের মলিক; (৫) নিম্ন-মধ্যবিত্ত বা কোনো রকম জীবন ধারণ করার মতো সম্পদের মালিক; (৬) নিম্নবিত্ত বা চাহিদার তুলনায় অনেক কম আয় থাকা মানবেতর জীবন যাপনকারী মানুষ। আমাদের দেশে অতি উচ্চবিত্ত ২ ভাগ, উচ্চবিত্ত ১০ ভাগ, উচ্চমধ্যবিত্ত ২০ ভাগ, মধ্যবিত্ত ৩০ ভাগ, নিম্নমধ্যবিত্ত ৩৫ ভাগ, নিম্নবিত্ত ১৩ ভাগ।
পৃথিবীতে বৈধ পথে সচ্ছল হওয়া যায়, কিন্তু বিপুল পরিমাণে অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়া কখনো সম্ভব নয়। ধনীরা অধিকাংশ মানুষকে ঠকিয়ে কখনো কখনো বোকা বানিয়ে, ধোঁকা দিয়ে সম্পদের মালিক হয়েছেন। নিয়মানুযায়ী ১৫ শতাংশের বেশি মুনাফা করা অন্যায় বা অবৈধ। কিন্তু ধনী ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে ৫০০ থেকে ১০০ শতাংশ মুনাফা করে থাকেন। এ ব্যাপারে তাদের কেউ কিছু বলতে পারবে না। কারণ তারা রাষ্ট্র ও সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করে তারা রাতারাতি শতকোটি টাকার মালিক বনে যান। পৃথিবীতে শান্তিপ্রিয় ভাল মানুষের সংখ্যা বেশি হলেও এরা ঐক্যবদ্ধ নয়। এদের ঐক্যবদ্ধ করতে যারা নেতৃত্ব দেয়, সেই নেতারা ছলে-বলে-কৌশলে একবার ধন কামানোর সুযোগ পেলে তারা নিজেদের আখের ঘুছিয়ে সরে পড়ে। এটা কেবল আমাদের বাংলাদেশের চিত্র নয়, পৃথিবীর অনেক দেশের চিত্র।
অভ্যাস-২০৭ ▌আপনার নিয়ন্ত্রিত বিষয়গুলোর দিকে মনোযোগ দিন
যে বিষয়গুলো আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সেগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা করা বন্ধ করুন। এটি পুরোটাই সময়ের অপচয়। সে সময়টা অন্য কোথাও লাগালেও আপনি সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছতে পারবেন। যারা অনিয়ন্ত্রিত ব্যাপারগুলো নিয়ে মাথা ঘামায়, তারাই দিনভর অভিযোগ করতে করতে সময় নষ্ট করে। যেসব বিষয় বদলানোর ক্ষমতা আপনার নেই, সেগুলো মেনে নেওয়ার শক্তি দিন নিজেকে।
মাঝে মাঝে ধার নিতে পারেন কিন্তু আপনার লালবাতি তখনই জ্বলতে শুরু করবে; যখন আপনি টাকা ধার নিয়েও আর শোধ করতে পারবেন না।
অভ্যাস-২০৮ ▌অনলাইনে অতিবাহিত সময় কমিয়ে আনুন
ইন্টারনেট একটি দারুণ বিষয় কিন্তু আপনাকে বাস্তব জীবন ও ইন্টারনেটের মধ্যে সমতা আনতে হবে। দিনে অনেকটুকু সময় আপনি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটস অ্যাপে ব্যয় করেন। তাহলে আজই কয়েকটি কাজ করুন- *মোবাইলের ইন্টারনেট বন্ধ করে দিন। শুধুমাত্র বাসা এবং অফিসে ব্যবহার করুন। তাহলে রাস্তায় ব্যয় করা সময়টুকু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে কাটাতে পারবেন, নোটিফিকেশনের আওয়াজ শুনে বার বার ফোন বের করে দেখতে হবে না। *বন্ধুদের বাসায় দাওয়াত দিন এবং তাদের অনুরোধ করুন ফোনগুলো পকেট এবং হ্যান্ডব্যাগে রেখে দেওয়ার জন্য। *প্রতিদিন ফেসবুক, মেসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে ছোট ছোট শব্দ কিংবা বাক্যে মেসেজ আদান-প্রদান না করে সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলুন।*কাউকে চিঠি কিংবা কার্ডে লিখে মনের ভাব প্রকাশ করুন। আপনার হাতের লেখা যেমনই হোক না কেন সেটি খুব আন্তরিক হয়ে ধরা দিবে অপর পার্শ্বে। *কোনো বই এবং ম্যাগাজিনের মধ্যে কিছু সময় অতিবাহিত করুন। *কোনো রকম ইন্টারনেটের ¯স্পর্শ ছাড়া ছুটি কাটিয়ে আসুন মাসে একবার। ছবি তুলুন কিন্তু সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় সেদিনই পোস্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের জীবন একটাই এবং এটি খুবই সংক্ষিপ্ত। সেজন্য পুরোদমে সময়গুলো উপভোগ করুন।
অভ্যাস-২০৯ ▌ মনের মধ্যে সদা সাহস এবং সুন্দর চিন্তার আবাদ করা দরকার।
ভয় ও লজ্জা এই মানবীয়বৈশিষ্ট্যদ্বয় মানব জীবনে উন্নতির আলাস্কা পর্বতে আরোহণের জন্য সবচেয়ে বড় মানসিক বাধা। একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ জীবনের পথে এটি মারাত্মক রকম অন্তরায়ও। কোনো কাজে নামতে গেলে মনে উঁকি দেয়, এ কাজ লোকে কি বলবে! লোকে আমাকে নিয়ে কী ভাববে! সমাজে মাছি চরিত্রের কিছু মানুষ আছে, যাদের দিনের শুরুটাই হয় অন্যের খারাপ সমালোচনার মধ্য দিয়ে আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তা চলতে থাকে। মাছি যেমন ক্ষত, ময়লা, বিষ্ঠায় স্বাদ খোঁজে—এসব লোক অনুরূপ অন্যের দোষ খোঁজে। আসলে এরা অন্যের সমৃদ্ধি দেখে হিংসার দাবানলে জ্বলতে থাকে। এসব লোকের পাহাড়সম দোষ থাকা সত্ত্বেও এরা নিজের দোষ দেখে না, অন্যের দোষ জনে জনে বলে বেড়ায় এবং অন্যের শুভ যাত্রায় অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি করতে সদা ব্যস্ত থাকে। বুদ্ধিমান ব্যক্তি কখনো অন্যের দোষ খুঁজে না, তারা সর্বদা নিজেকে সংশোধনের কাজে ব্যস্ত থাকে। যারাই সাফল্যের শীর্ষ চূড়ায় উঠেছেন, প্রত্যেকেই কটু কথা আর সমালোচনা শুনে শুনেই উঠেছেন। যারা সর্বদা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করে যায়, তারা দিন শেষে সাফল্যের হাসি হাসে। তারা ভুল করে ভুল শোধরায়, কিন্তু তারা থেমে যায় না। অন্যের কটু কথা তাদের দৃঢ়তাকে টলাতে পারে না। তাই মনের মধ্যে সদা সাহস এবং সুন্দর চিন্তার আবাদ করতে হবে। সর্বদা ইতিবাচক চিন্তার আবাদ করিতে পারাটা বিশাল এক শক্তি। অন্যের দূষিত বাক্যকে উপেক্ষা করে চলতে পারলে জীবনটা অনেক মসৃণ হবে।
অভ্যাস-২১০ ▌ জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে কাজ করুন
জ্ঞান বিনির্মাণের কাঁচামাল হলো তথ্য। তথ্য থেকে সৃষ্টি হয় জ্ঞান; জ্ঞান পরিচর্যায় আসে প্রজ্ঞা এবং প্রজ্ঞাবানের কর্মের ফসল হলো সৃজনশীলতা।
মুসলিম শাসকদের স্বর্ণযুগে নবম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে মধ্য এশিয়া, ইরান, স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে ও উত্তর আফ্রিকার কিছু দেশে জ্ঞানচর্চার জোয়ার এসেছিল। এরই সূত্র ধরে ইউরোপের রেনেসাসে তা পরিপূর্ণতা পায়। এ সময় জ্ঞানচর্চার সূত্র ধরেই পশ্চিমে উচ্চতর গবেষণা ও পঠনপাঠনের সহায়ক নানা প্রতিষ্ঠান যেমন গড়ে উঠেছিল, তেমনি আবিষ্কৃত হয়েছিল জ্ঞানচর্চার উপযোগী সহায়ক অনেক যন্ত্রপাতি। আড়াই শ বছর আগে ইংরেজদের মাধ্যমে রেনেসাঁ-পরবর্তী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে আমাদের সংযোগ ঘটতে শুরু করে। বর্তমানে বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকে বরাবরই ভালো করছে স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলো। এবারো শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে সুইজারল্যান্ড। দ্বিতীয় অবস্থানে সুইডেন। তৃতীয় অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম পাঁচে আছে স্ক্যান্ডিনেভীয় আরো দুটি দেশ: ফিনল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো করেছে সিঙ্গাপুর। দেশটির বৈশ্বিক অবস্থান ষষ্ঠ। ভালো অবস্থানে আছে ইসরায়েল, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও চীন। মূলত প্রশিক্ষণ ও গবেষণার পর্যাপ্ত সুবিধা, মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা দেশগুলোকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে।বৈশ্বিক দৃশ্যপটে সবকিছু দ্রুত বদলে যাচ্ছে, এই দেশগুলো দ্রুততার সাথে প্রবেশ করছে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে। দুর্বল মানবসম্পদ দিয়ে আমরা ওই প্রতিযোগিতায় পেরে উঠব না। কাজেই মানবসম্পদের উত্পাদনশীলতা ও দক্ষতা অনেক বাড়াতে হবে।
জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রক্রিয়া প্রকৃত সমাজসংস্কারকের অভাবে গড়ে উঠছে না। এর প্রধান কারণ হলো, মানুষ এখন সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার চেয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থকে গুরুত্ব দিচ্ছে। শিক্ষার গুণগত মান যত শক্তিশালী হবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজের ভিত্তি তত দৃঢ় হবে। তিন রকম মানুষ সামাজিক জীবনে পরিবর্তন আনতে পারেন। তাঁরা হলেন- পিতা-মাতা, সমাজ কর্মী ও ছাত্র-শিক্ষক।’
অভ্যাস-২১১ ▌ সবকিছু মাঝে মাঝে অন্যরকম করে করতে হবে
একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বাঁ হাত দিয়ে দাঁত মাজার চেষ্টা করা, কম্পিউটার মাউস বাঁ হাত দিয়ে ধরা, খাবারগুলো একটু অন্যরকম করে সাজানো, বাড়ি ফিরতে গিয়ে অন্য রাস্তা দিয়ে বাড়িতে আসা, হাঁটতে গিয়ে পথ হারিয়ে ফেলা-এসব ইচ্ছাকৃতভাবে করা উচিত। তাতে আমাদের ব্রেনের সেলগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে।
অভ্যাস-২১২ ▌ কথার শক্তিকে কাজে লাগান।
এক বিশিষ্টজন বলেছিলেন—বাঙালির আসলে কোন কালচারই নাই, যা আছে তা হচ্ছে এগ্রিকালচার। আমরা আসলে মুখের এই ‘কুিসত কালচার’ হতে বের হতে পারছি না। তার কারণ বলতে গিয়ে অনেকে বলেন, মেধা যদি না থাকে, তা হলে মনন তৈরি হয় না।
আমাদের দেশ উচ্চ গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন অনেকেরই মনন তৈরি হয়নি। তাই তার জিহ্বা সংযত না কবে মুখে যা আসে তাই অর্থাৎ চাষা-ভূষার ভাষায় বলে ফেলেন। তখন এই ভাষার বিষে নীল হতে হয় সামনের মানুষকে, তৈরি হয় পরম শত্রু । অথচ জিহ্বার মধু দিয়ে অন্যকে বন্ধু বানানো যায় সহজে। এই কারণে জাপানে একটি প্রবাদ আছে একটি একটি তিন ইঞ্চি জিহ্বা এক বা একাধিক ৬ ফুটের মানুষকে নিমিষে হত্যা করতে পারে। এজন্য বলা হয়, কথায় লোকে হাতি পায়, আবার কথায় লোকে হাতির পায়।
এক রাজা তার পাঁচককে জিজ্ঞাসা করলেন, আগামীকাল বিদেশ থেকে আবার দুইজন মেহমান আসবে। তাদের একজনকে আমি বকাবকি না করে ভদ্রভাবে তাড়াতে চাই, কিন্তু অন্যজনকে আমি খুবই আপন করে রাখতে চাই। এখন তুমি বলতো, কার জন্য কি মাংস রান্না করতে পারি? পাঁচক উত্তর দিল- মহাশয়, আপনি আমাকে মাংস না দিয়ে বরং দুটো জিহ্বা এনে দিন। দুইটা দুইভাবে এমন করে রান্না করবো, যা খেয়ে একজন পালাবে, আর অন্যজন আনন্দে-খুশিতে রাজমহল ছাড়তে চাইবে না। রাজা বলল সেটা কিভাবে? পাঁচক বলল- মহাশয়, শত্রু-মিত্র তৈরীর মূল উপাদান হল জিহ্বা। এটাকে আপনি যেভাবে ব্যবহার করবেন, ঠিক সেরকম রেজাল্ট দিবে। জিহ্বা এমন একটি অঙ্গ, যা দিয়ে আমরা অনেক সম্পদ ও সন্মান অর্জন করিতে পারি, আবার এর খারাপ ব্যবহার আমাদের দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
অভ্যাস-২১৩ ▌ অন্য মানুষের অনুরোধ আপাতত জমানো থাক
পৃথিবীর সকল মানুষের কাছেই আপনি সমানভাবে ভালো হতে পারবেন না। প্রত্যেক মানুষের প্রয়োজন এবং অনুরোধ আপনার একার পূরণ করার কোনো দরকার নেই। ভদ্রভাবে, শান্তভাবে এবং কৌশলে এড়ানোর চেষ্টা করুন। অবশ্যই আপনি অন্যদের, পরিবারের সদস্যদের, বন্ধুদের, সহকর্মীদের এবং প্রতিবেশীদের সাহায্য করবেন। কিন্তু আপনাকে সমতা বজায় রাখা শিখতে হবে। আপনাকে জানতে হবে যে, কখন আপনি তার অনুরূধ গ্রহণ করবেন এবং কখন বর্জন করবেন।
অভ্যাস-২১৪ ▌ স্থায়ী ভালবাসায় বিনিয়োগ করুন
ভালোবাসা দুই ধরনের । ক্ষণস্থায়ী ভালোবাসা এবং স্থায়ী ভালোবাসা। ক্ষণস্থায়ী ভালবাসা কোনো মোহ, প্রয়োজন, আবেগ, যৌনতা এমনকি কাউকে পাওয়ার আকাক্সক্ষা হতে পারে। মাঝে মাঝেই এমন হতে পারে যে কোনো বস্তু কিংবা কোনো মানুষকে দেখে তাদের আপন করার তীব্র আকাক্সক্ষা ধরা দিতে পারে। এক্ষেত্রে অনুভূতি খুব প্রখর হয় কিন্তু এটা খুব বেশিদিন স্থায়ী হয় না। হাজার চেষ্টা করলেও আপনি এমন অনুভূতিকে ধরে রাখতে পারবেন না। এ মুহূর্তগুলো আপনাকে কিছু সময়ের জন্য পাগল করে তোলে কিন্তু স্থায়ী ভালবাসা এর মধ্যে নিহিত নেই। কাউকে দেখে পাগল হয়ে কাছে গেলেন, মিশে গেলেন, কিন্তু পরে দেখবেন ক্রাশ।
স্থায়ী ভালোবাসা বাবা-মা, সঙ্গী, সহকর্মী কিংবা কোনো বন্ধুর সঙ্গে হতে পারে। এমন সম্পর্ক সারা জীবনের জন্য সঞ্চয় হিসেবে কাজ করবে।এজন্য দেখা যায়, মানুষের খুব কাছের বন্ধু মাত্র কয়েকজন হয়। তাই ক্ষণস্থায়ী সকল মোহ থেকে বের হয়ে স্থায়ী ভালোবাসার বিনিয়োগ শুরু করুন। যে সম্পর্কগুলো আপনার জীবনে দামী, সেগুলোতে সময় ও বিনিয়োগ বাড়ান।
অভ্যাস-২১৫ ▌ সুখী হতে চেষ্টা করুন
মানুষের সব চেষ্টাই সুখী হওয়ার জন্য। কিন্তু সুখের প্রকৃত সংজ্ঞা না জানার কারণেই সুখের সব উপকরণ নিজেদের কাছে থাকার পরও অধিকাংশের মানুষ চরম অসুখী জীবন যাপন করছে। কারণ সুখের অর্থ একেক মানুষের কাছে একেক রকম। সক্রেটিস বলেছেন, তোমার যা আছে তা নিয়ে তুমি যদি সুখী না হও, তবে যা তুমি পেতে চাও তা নিয়ে সুখী হবে না। প্লেটোর মতে, সুখ, প্রকৃতি, সৌন্দর্য ও সমাজ পরস্পর সম্পর্কিত। সুখী হওয়ার অর্থ একজন প্রতিদিন প্রতিক্ষণ নির্মল আনন্দ ও প্রফুল্লতা উপভোগ করবেন—এই ধারণাও সঠিক নয়। সুখী হওয়ার পন্থা একেক জনের কাছে একেক রকম হলেও সুখী থাকার ব্যাপারে কতগুলো সাধারণ বিষয়ে সবাই একমত প্রকাশ করেছেন—কৃতজ্ঞতা ও মননশীলতার চর্চা করা, মানসিকতার উন্নয়ন করা, নিজের পছন্দসই বা শখের কাজে যুক্ত থাকা, প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো, চ্যালেঞ্জকে আলিঙ্গন করা, মানবিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া এবং অন্যের প্রতি দয়ালু হওয়া ও সাহায্য করা, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ককে প্রতিপালন দ্বারা সামাজিক বন্ধন জোরদার করা, পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে নিজের প্রতি যত্নশীল থাকা, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করা, স্ব-আলাপে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা ইত্যাদি। তবে অন্যের সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং বৃহত্তর কিছুর অংশ হওয়ার বোধ থেকেই আসে স্থায়ী সুখ।
অভ্যাস-২১৬ ▌ নিজের স্বাস্থ্যকে সম্পদ হিসেবে ভাবা শুরু করুন
অর্থ-সম্পদের ব্যাপার হচ্ছে এমন যে, আপনি কষ্ট করে উপার্জন করলেও হারিয়ে ফেলতে পারেন কোন দুর্ঘটনায়। আপনি আবারো অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। কিন্তু আপনার যদি শরীরে ক্ষতি হয়, তখন কি আপনি কোনভাবেই এটি ফেরত পাবেন না। সেজন্যেই জীবনের যে অবস্থাই থাকুন না কেন, নিজের স্বাস্থের খেয়াল রাখতে হবে সভার আগে। প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস তৈরি করুন। আপনি নিজেকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ভাবতে পারেন অন্তত আপনার যদি- ১. প্রতি রাতে ভালো ঘুম হয়; ২. খাবারের প্রতি অনীহা না থাকে; ৩. শরীরে ক্লান্তি ও ব্যথা না থাকে; ৪. চাপ ও হতাশায় না ভোগেন এবং ৫. কাজকর্মে উদ্যম পান।
অভ্যাস-২১৭ ▌ 'অপরকে ক্ষমা করতে শিখুন'
শুধু শুধু মন খারাপ করে, রাগ পুষে রাখলে কিংবা হিংসা করলে কখনোই ভালো অনুভব করবেন না আপনি। যারা আপনাকে কষ্ট দিয়েছে কিংবা নীচু চোখে দেখেছে তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া ইতিবাচক মানসিকতার লক্ষন। তাদের ক্ষমা করে আপনি নিজের বানানো কারাগার থেকে নিজেকে মুক্ত করে দিলেন। অন্যকে ক্ষমা করলে আপনি নিজের জন্যই একটি দারুণ পৃথিবী তৈরি করে নিতে পারবেন।
কারো উপর রাগ করা দোষের কোন কিছু। কিন্তু অন্যকে ক্ষমা করে আপনি এটাই প্রমান করছেন যে, 'আমি আমার আবেগ-অনুভূতি, এনার্জি, মেধা কোনভাবেই তোমার মতন মানুষের জন্য নষ্ট করতে চাচ্ছি না'।
অভ্যাস-২১৮ ▌ 'কোন সংগঠনের অন্তর্ভূক্ত হন'
এ পৃথিবীতে আপনার সময় খুবই সংক্ষিপ্ত। সুতরাং এ সময়টুকু আপনি যাকে পছন্দ করেন, ভালোবাসেন এবং যে আপনাকে যত্ন করেন তার সঙ্গেই কাটানোর চেষ্টা করুন। যে মানুষগুলো আপনাকে উপরে উঠতে সাহায্য করবে এবং খুশি রাখতে পারবে, মুল্যবান সময়গুলো তাদেরই উপহার দিন। আপনার জীবন নিয়ে কাদের সঙ্গে কাটান সেগুলো নিয়ে এক মুহূর্ত চিন্তা করুন। কোন সংগঠনের অন্তর্ভূক্ত হওয়া আপনাকে বন্ধু বানাতে এবং তাদের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক রাখতে সাহায্য করে। জীবনের আলাদা একটা অর্থ তৈরি হয় এতে।
আপনি, আমি সবাই কোথাও না কোথাও থেকে এসেছি দিন শেষে আমরা কিন্তু একা । একটা গ্রুপের সঙ্গে মিলেমিশে থাকলে বেচে থাকার সার্থকতা বোধগম্য হবে আপনার। আপনি যদি অন্তর্মুখীও হন, তাহলেও এ জায়গাটিই আপনার আপন মনে হবে বেশি।
*এ সংগঠনের সদস্য হয়ে আমি কি উপকার পাচ্ছি বা সংগঠনে কি দিতে পারছি? এখানে জড়িত হওয়া কি আমার জন্য সুবিধার হবে?
*এ সংগঠনের সদস্য হলে কি কি ক্ষতি হবে আমার? এটা কি আমাকে কোনভাবে পেছনে আটকে রাখছে? ইত্যাদি চিন্তা করে ইতিবাচক মনে হলে লেগে পড়ুন।
অভ্যাস-২১৯ ▌ 'আত্মবিশ্বাস সঞ্চয় করুন'
অন্য কারো ছোটখাটো কথা শুনে নিজের আÍবিশ্বাস কমানোর কোন দরকার নেই। আÍবিশ্বাসী মানুষেরা জানেন যে মাঝে মাঝে তারা আÍবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। নতুন নতুন অবস্থান এবং চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া কঠিন হতে পারে কিন্তু অসম্ভব নয়। পৃথিবীতে কেউই সমপূর্ণ নয়। সবার কাছেই সব কিছুর উত্তর নেই।
আপনি যদি আÍবিশ্বাসী হয়ে সকলের সামনে যান তবে মানুষ আপনার সঙ্গে বেশি যোগাযোগ করবে, কথা বলবে ও মিশবে। আÍবিশ্বাস কিন্তু ছোঁয়াচেও বটে! আপনি যদি যথেষ্ট আÍবিশ্বাসী থাকেন তবে আপনার আশেপাশের মানুষের মধ্যেও সেটি ছড়িয়ে যাবে।
জগতের সামনে দাঁড়িয়ে প্রকাশিত হতে কোন ভয় পাবেন না। পৃথিবীর সবচেয়ে আÍবিশ্বাসী মানুষও কিন্তু মাঝে মাঝে ভীত অনুভব করেন, মনে রাখবেন।
অভ্যাস-২২০ ▌'যেখানে বাহবা দেওয়ার সেখানে তা-ই করুন'
মানুষ মাত্রই মূল্য, ভালোবাসা ও নির্ভরতা পাবার আশা রাখে। এজন্যই আশেপাশের মানুষগুলোকে প্রতিনিয়ত ধন্যবাদ দেওয়া ও তাদের কাজকে প্রশংসা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দুইভাবে আপনি কাউকে বাহবা দিতে পারেন। তা হলোঃ ব্যক্তিগতভাবে ও জনসম্মুখে। তবে যাই করেন না কেন ধন্যবাদ ও বাহবা দেওয়াটাই হলো মূখ্য। মনে রাখবেন, একটি ছোট্ট ধন্যবাদের কিন্তু অনেক শক্তি রয়েছে। কিছু মানুষের 'ধন্যবাদ' একটু বেশিই দরকার কারণ এটি তাদের ব্যক্তিত্ব ও বেড়ে ওঠার সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এটিকে দৈনিক অভ্যাসে পরিণত করুন। *আপনার কোন সহকর্মীকে কোন কাজের জন্য ধন্যবাদ জানান *আপনার সঙ্গীকে চকোলেট উপহার দিয়ে বা কফি খাইয়ে ধন্যবাদ জানান আপনি যদি কোন কারণে যথাসময়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করতে ভুলেও যান তবে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এভাবে আপনার প্রতি মানুষের নির্ভরশীলতা বাড়বে এবং আপনি হয়ে উঠবেন সকলের চোখে অনন্য
অভ্যাস-২২১ ▌ 'মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ান'
মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক বৃদ্ধি করা ছাড়া আপনি কখনোই সফলতা অর্জন করতে পারবেন না। একে অপরের সাথে বোঝাপড়া এবং খাপ খাওয়ানোর জন্য মানুষের সঙ্গে মেশার দরকার আছে। মানুষ আপনাকে চিনবে, জানবে, আপনার সঙ্গে কাজ করবে এবং আপনাকে বিশ্বাস করবে, তবেই আপনি সফলতা অর্জন করতে পারবেন। এজন্য আপনার সঙ্গে অনেকজন মানুষের স্বচ্ছন্দ হওয়াটা খুব জরুরী।
নারীরা পুরুষের চাইতে যোগাযোগ তৈরিতে অধিক পটু। তবে আপনি গণহারে সকলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারবেন না, হয়তো চাইবেনও না।স্বার্থপর, আত্মনিমগ্ন এবং বিরক্তিকর মানুষ এড়িয়ে চলুন। তবে আপনি যে তাকে এড়িয়ে চলছেন এটি প্রকাশ করারও কোন দরকার নেই। যার সঙ্গে মিশছেন তার চিন্তাধারা, লক্ষ্য, বিশ্বাস কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করুন। তাহলে বুঝতে পারবেন কোথায় আপনাদের মিল রয়েছে এবং কোথায় অমিল। শুধুমাত্র অপরের খুশির জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার কোন মানে নেই!
অভ্যাস-২২২ ▌ছোটখাটো মুহূর্তগুলো উপভোগ করা শিখুন
একটু থামুন এবং চারপাশে চোখ বুলান। কি হচ্ছে খেয়াল করার চেষ্টা করুন। গতকাল কি হয়েছে এবং আগামীকাল কি হবে এসব ভেবে চিন্তায় মগ্ন হয়ে যাবেন না। আপোষ করার মানসিকতা তৈরি করতে শিখুন। সেটি আপনার সম্পর্কের জন্যেই উপকারী হবে।
প্রতিদিন সকালে নিজেকে বলুন, "আজ আমি নতুন কিছু শিখব এবং আরো ভালো কিছু করব।" এই ইতিবাচক মানসিকতা আপনাকে জীবনের সব বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করবে।
অভ্যাস-২২৩ ▌ 'অন্তর্মুখী এবং বহির্মুখী দুই-ই হোন'
আপনি কি একজন অন্তর্মুখী নাকি বহির্মুখী ব্যক্তিত্ব? সকলেরই একটি সাধারণ ধারণা রয়েছে যে, বহির্মুখী মানুষেরা অধিক আত্মবিশ্বাসী এবং মুখরা। অপরদিকে, অন্তর্মুখী ব্যক্তিরা লাজুক ও শান্ত। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। একজন সত্যিকারের বহির্মুখী ব্যক্তি তিনিই যিনি মনের ভাব পুরোপুরিভাবে প্রকাশ করতে পারেন, অন্যের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করেন এবং কাজের মাধ্যমেই সর্বদা শিক্ষা নিয়ে থাকেন। অন্যদিকে, যিনি একজন সত্যিকারের অন্তর্মুখী ব্যক্তি, তিনি কথা বলার আগে অনেকবার চিন্তা করে নেন, মনোযোগ দিয়ে অপরের কথা শোনেন এবং নিজের কোন কাজ করার আগে অনেকবার ভাবেন। একজন বহির্মুখী ব্যক্তিও কিন্তু লাজুক ও আত্মবিশ্বাসী হতে পারেন অন্তর্মুখী ব্যক্তির মতন। কার্ল জুং এর একটি প্রসিদ্ধ সাইকোলজি গবেষনা মতে, আমরা সবাইই হয়তো অন্তর্মুখী নয়তো বহির্মুখী। আমরা প্রত্যেকে নিজ নিজ জায়গা থেকে উভয় শৈলীই প্রদর্শন করি কিন্তু আধিপত্য স্থাপনের বেলায় যেকোন এক দিকে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
অভ্যাস-২২৪ ▌সফল জীবনের কিছু গোপন সূত্র
১* কিছু শখের ক্ষেত্র গড়ে তুলুন। সেগুলো হতে পারে ভিডিও কন্টেন্ট তৈরি, বই পড়া কিংবা হাঁটা ইত্যাদি। এতে করে আপনি নিজের সঙ্গে কিছু সময় কাটাতে পারবেন । ২* ধৈর্যশীল হতে শিখুন। চটজলদি করে কথা বলা বা কথার উত্তর দেওয়া, রাগ বা আবেগের বসে চটজলদি কোনো কাজ করা কিংবা কোনো সমস্যা সমাধান করার করার অভ্যাস রোধ করুন। ৩* খুব মনোযোগী হয়ে আগে শুনুন, অতঃপর কথা বলুন। যেকোন মিটিং কিংবা গ্রুপ আলোচনায় সর্বপ্রথম বক্তা হওয়ার অভ্যাস কাটিয়ে তুলুন। ৪* নিজেকে লুকিয়ে রাখার অভ্যাস থাকলে তা থেকে বের হোন। মানুষের সঙ্গে মিশুন এবং কথা বলুন। অফিসের দরজা কিংবা ঘরের দরজা খুলে রাখুন। সহকর্মী কিংবা প্রতিবেশীদের সঙ্গে মাঝে মাঝে আড্ডা চালিয়ে যান। ৫* যেকোন সৃজনশীল চিন্তা মাথায় আসার পরপর সেটি নিয়ে কারো সঙ্গে আলোচনা করুন এবং এবং তা কিভাবে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায় তার পরিকল্পনা করুন। ৬* নিজের বৃত্তের পরিধিটা বড় করুন। এমন কোনো সামাজিক কর্মকাণ্ড খুঁজে বের করুন যেখানে আপনি নিজেকে প্রকাশ করতে পারবেন। ক্লাব বা কোনো সংগঠন আপনাকে এক্ষেত্রে বেশ সাহায্য করতে পারে। ৭* কিছু মানুষ আছে, যারা সারাক্ষণ কেবল হা-হুতাশ করে। তাদের কাছে দুনিয়ায় সমস্যা ছাড়া কিছুই নেই, তাদের দুশ্চিন্তারও শেষ নেই। আবার কিছু মানুষ আছে, যারা এসব সমস্যাকে খুব একটা গায়ে মাখে না। তারা নিজেদের মতো করে পথ চলে। তারা বাঁচার আনন্দেই বেঁচে থাকে। আপনি এই দ্বিতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত হোন।
অভ্যাস-২২৫ ▌জ্ঞান আহরণ করুন এবং ব্যবহার করুন'
গুগল চ্যাট জিটিপি জেমিনি ইত্যাদি এ আইয়ের মাধ্যমে জ্ঞান আপনার চারপাশেই ঘুরঘুর করছে। সব জায়গা থেকে জ্ঞান আহরণ করার মানসিকতা রাখুন। আপনার চারপাশে অনেক জ্ঞানী মানুষ আছেন নিশ্চয়ই, যাদের অনেক অভিজ্ঞতা আছে। তাদের কাছ থেকে কথা বলে অভিজ্ঞতা শুনে নিন। আপনি অজানা ও অচেনা কোন মানুষের কাছ থেকেও অসংখ্য অভিজ্ঞতা সঞ্চার করতে পারবেন। জ্ঞান অর্জন করার অন্যতম সুবিধা হলো আপনি একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে ভেতর থেকে গড়ে উঠতে পারবেন। আপনি কাকে কাকে নিজ আদর্শ মনে করেন? তাদের একটা তালিকা তৈরি করুন। তাদের কোন কোন গুণ আপনার ভালো লাগে এবং আপনি কী কী অনুসরণ করতে চান সেটি চিন্তা করে নিন। একটা মানুষের সব গুণই যে ভালো হবে এমন কিন্তু নয়। বুঝে শুনে একেকটি পদক্ষেপ নিন।
অভ্যাস-২২৬ ▌ 'নিজের মতো থাকুন' নকল হয়ে পৃথিবী ত্যাগ করবেন না'
দু'জন মানুষ কখনোই চিন্তা-ভাবনার দিক থেকে এক নয়। এমনকি জমজ ভাইবোনদের ও ব্যক্তিত্বে, লক্ষ্যে ও আকাঙ্ক্ষায় ভিন্নতা থাকে। জ্যাসন ম্যাসন এর একটি উক্তি আমার খুব পছন্দ এবং তা হলো, 'আপনি অনন্য হয়েই জন্মেছেন। খেয়াল করবেন যেন, নকল হয়ে আপনি পৃথিবী ত্যাগ না করেন'। মনে রাখবেন,প্রতিটি মানুষেরই তার নিজস্ব উপলব্ধি এবং ধ্যানধারণা আছে। কোনো লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য বা উদ্দেশ্য পূরণের জন্য মানুষের নিজের মতো করে কাজ করা জরুরি। মানুষ তো সবাই, তাহলে আপনি অন্য মানুষ থেকে আলাদা কেন? উত্তর হলো, আপনার প্রতিভা আসলে আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। তাই প্রতিটি মানুষের কাজের ধরন, দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা এবং সবার উচিত নিজের এই স্বকীয়তা বজায় রাখা।
অভ্যাস-২২৭ ▌ দুশ্চিন্তা কখনো বিছানা পর্যন্ত নেবেন না
ঘুম থেকে নিজেকে বঞ্চিত করার ফলে আপনি অনেক ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হবেন। আপনি নিজের তীক্ষèতা, কাজের প্রতি মনোযোগ ও ইতিবাচকতা হারিয়ে ফেলবেন। একটা ক্লান্তির রেশ চারিদিক থেকে আপনাকে ঘিরে ধরবে। আপনি যৌনজীবনেও দুর্বল হয়ে পড়বেন।
এমনকি ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয় অনিদ্রা! ছুটির দিনে সারাদিন ঘুমিয়ে কাটানোও কিন্তু স্বাস্থ্যের পক্ষে খুব খারাপ, মনে রাখবেন। দুশ্চিন্তা কখনো বিছানা অবধি নেবেন না, ঘুমের অন্তত এক ঘণ্টা আগে থেকেই প্রতিদিনকার ঝুটঝামেলা দূরে সরিয়ে রাখুন; এমনকি প্রিয় মোবাইলটিও দূরে রাখুন। ঘুমানোর আগে হাহা-হিহি জাতীয় শর্ট ভিডিওর পাল্লায় পড়ে নিদ্রাহীনতা তৈরি করবেন না। তার বদলে বই পড়ে পড়ে ঘুমের রাজ্যে এগিয়ে যান।
অভ্যাস-২২৮ ▌ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়দের থেকে নেতৃত্ব শিখুন।
কোনো প্রতিষ্ঠান বা সমাজে যদি উচ্চ–নিচ বিভাজনটি থাকে, ইংরেজিতে তাকে হায়ারার্কি বলা হয়। এই উচু নিচু বিভাজনটা ইহুদী সংস্কৃতিতে একদম নাই। তাদের সমাজে বা প্রতিষ্ঠানে ‘চুটজপাহ’ সংস্কৃতি চালু আছে। চুটজপাহ সংস্কৃতি হচছে: মনে করুন একটি প্রতিষ্ঠানে ১০জন মানুষ আছে। এই দশজনের কেউ দারোয়ান আবার কেউ কর্মী বা কর্মকর্তা। সেখানে কেউ কাউকে স্যার বা ম্যম বলবে না। সবাই সবাইকে নাম ধরে কিংবা ভাইজান বলে ডাকবে। সার্টিফিকেট বা টাকার জোরে কেউ নেতা হবে না, কাজে যোগ্যতার ভিত্তিতে পদ মর্যদা হবে। সবাই মিলে আনন্দ আর সুবিধা-অসুবিধা ভাগাভাগি করে কমিউনাল বা কৌম সমাজ গড়ে তুলে।
অপরদিকে হিন্দু সমাজ হচ্ছে জাত-পাত ভেদাভেদ-এর সমাজ। এ সমাজের ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়রা নিজেদেরকে উঁচু জাত বলে মনে করে। এভাবে বংশ পরস্পরায় নিজেদেরকে সেরা বলে মনে করার কারণে তাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে এক ধরনের অহংকার এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। যার ফলাফলে তারা সর্ব ক্ষেত্রে উন্নতি করে। তারাই হয়ে উঠে নেতা বা কর্তা। আপনি হিসাব করলে দেখবেন, ভারতে যত সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী কিংবা প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তি দেখা যায়, তারা প্রায় সবাই এই দুই বর্ণের লোক। কাজেই আপনার প্রজন্ম বা আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধবকে অন্য অনেক মানুষ থেকে সেরা হিসেবে আখ্যা দিন এবং তাকে এগিয়ে যেতে সর্বদা উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করুন।
অভ্যাস-২২৯ ▌ মজুরকে মেরে হুজুরকে সালাম দেবার অভ্যাস ত্যাগ করুন
গরিব মানুষদের ঠকিয়ে বা কম দিয়ে ধর্মশালায় দান করার অভ্যাস ত্যাগ করুন। এ ব্যাপারে ফেইসবুকীয় একটি গল্প প্রচলিত আছে- এক বৃদ্ধলোক বাজারে ডিম বিক্রি করতে গেছে। ক্রেতা দর কষাকষি করে এক হালি ডিম ২৫ টাকার বেশি দিতে চাইলো না। বিক্রেতা বললো-স্যার তবে তাই দিন, কারণ এখনো পর্যন্ত কোনো বিক্রি হয়নি, রাতের জন্য চাল নিতে হবে।ক্রেতা তা দিয়ে চলে গেলো। এবার ক্রেতা তার বান্ধবীকে নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে লান্স করতে বসলো। খাবার শেষে ওয়েটারকে ২০ টাকা বকশিস দিল। এ ঘটনা প্রতিদিন অহরহ ঘটছে আপনার আমার সবার বেলায়। আমরা মজুরকে বেশি দেয়া তো দূরে থাক, ন্যায্যটাই দিতে চাই না। প্রয়োজনে গায়ে হাত তুলি। আবার সে একই আমি নিজেকে জাহির করতে জায়গায়মত অপব্যয় করি ছোট-বড়, ধনী গরিব সবাইকে আপনি সম্ভোধন করে কথা বলুন। শুধু শুধু গরীবের কাছ থেকে এটা ওটা কিনুন, তাদেরকে উৎসাহিত করার জন্য একটু বেশি টাকা দিন । * বাসে আপনার সিট ছেড়ে দিন অন্য কারো জন্য, * প্রতিবেশী বাড়িতে না থাকলে তার বাসা দেখাশোনা করুন, * সহকর্মীদের সঙ্গে আন্তরিক সহযোগী হয়ে একটু বাড়তি সময় অতিবাহিত করুন।
অভ্যাস-২৩০ ▌অতীতের সঙ্গে বন্ধুত্ব করুন
আপনার অতীতের ভুলগুলোর কথা স্মরণ করে আপনি কি কোনো ঝুঁকি গ্রহণ করতে ভয় পাচ্ছেন? আপনি যখন পেছন ফিরে তাকান, এমন কিছু কী আছে যা আপনাকে ভীত ও বিষণ্ন করে তোলে? এ ব্যাপারে আপনি একা নন। আমরা সকলেই এরকম চিন্তা-ভাবনা নিজের সঙ্গে বহন করে বেড়াই। তবে, অতীতের কোনো ভয় বা ব্যর্থতা আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে কী না সেটি হলো মূলকথা। ইতিবাচক চিন্তাগুলো ভুলে গিয়ে এবং নেতিবাচক চিন্তাগুলো মনে রেখে কোনো লাভ নেই। নিজের অতীত নিয়ে নিজের সাথেই আলোচনা করুন।
আপনার ব্যক্তিগত শান্তির জন্য এবং সাফল্যের জন্য অতীতের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের প্রয়োজন হতে পারে। হয়তো এমন কোনো মানুষের সাথেও আপনার খোলাখুলিভাবে কথা বলতে হবে, যাকে আপনি কখনো ক্ষমা করতে পারেননি। আপনাকে শক্তি ও সাহসের সাথে সবকিছুর মোকাবিলা করতে হবে।
অভ্যাস-২৩১ ▌লক্ষ্য পূরণের মূল চাবিকাঠি হল আকাঙ্ক্ষা ও পরিকল্পনা
লক্ষ্য পূরণের ক্ষেত্রে প্রথম ধাপই হল সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করা। যদি আপনার লক্ষ্য অস্পষ্ট বা বড় ধরনের হয়, তাহলে তা অর্জন করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি লক্ষ্য হয় "আমি সফল হতে চাই"—এটি যথেষ্ট অস্পষ্ট। এর পরিবর্তে বলুন—"আমি আগামী ৫ বছরে একটি সফল ব্যবসা দাঁড় করাতে চাই।" এর পাশাপাশি, বন্ধু বা মেন্টরের কাছ থেকে সমর্থন গ্রহণ করুন। সঠিক মানুষদের সহযোগিতা ও পরামর্শ আপনার লক্ষ্য পূরণে অনেকটা সাহায্য করতে পারে। পরিকল্পনাগুলিকে ছোট ছোট ধাপে ভাগ করুন। আমরা অনেক সময় দ্রুত সাফল্য অর্জনের তাড়না অনুভব করি। তবে যেকোনো লক্ষ্য পূরণ করতে গেলে ধৈর্য ধরতে হবে। নতুন স্কিল শিখুন, নতুন কিছু জানুন এবং জ্ঞান কাজে লাগান। লক্ষ্য পূরণের পথে আপনি যত বেশি দক্ষ হবেন, সফলতার পথ তত সহজ হবে। ব্যর্থতার ভয় বা অন্যের নেতিবাচক মন্তব্য আপনার লক্ষ্য পূরণের পথে বাধা হতে পারে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকুন। তরুণ বয়সে হয়ত আপনার উদ্যম বেশি থাকে, তবে মধ্য বয়স বা প্রবীণ বয়সে অভিজ্ঞতা, ধৈর্য এবং জীবনের জটিলতাগুলিকে আরও ভালভাবে বোঝার ক্ষমতা থাকে। আপনি যদি ৪০-এর বেশি বয়সী হন, আপনার অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, এবং সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে। সাফল্যের কোনো বয়স নেই—এটা মানসিকতার ওপর নির্ভরশীল।
অভ্যাস-২৩২ ▌ 'যতদিন পারেন কাজের মধ্যেই থাকুন'
একটি দারুণ ফ্রেঞ্চ প্রবাদ আছে যে, আমরা আমাদের জীবনের প্রথম অর্ধেক সময় দ্বিতীয় অর্ধেকের আশায় কাটাই এবং দ্বিতীয় অর্ধেক সময় প্রথম অর্ধেকের ব্যাপারে হা-হুতাশ করে কাটাই। নিজের চেষ্টায় এমন জীবন তৈরি করুন যেন অবসরে যাওয়ার কথা আপনার মনে না আসে।
যতদিন পর্যন্ত আপনার মধ্যে কোনো কাজ করার শারীরিক এবং মানসিক শক্তি বা ক্ষমতা থাকবে, ততদিন পর্যন্ত কারো উপর ডিপেন্ড করবেন না। এই দুনিয়ায় আপনার নিজের শক্তি সামর্থ্য ছাড়া আর কেউ আপন নয়। ভাই নিজেকে ফিট রাখতে অন্তত আধাঘন্টা হাটুন বা ব্যায়াম করুন। আপনি আপনার শরীরের প্রয়োজনকে বুঝে যদি সাপোর্ট দিতে পারেন, তাহলে আপনার শরীরও মৃত্যু পর্যন্ত আপনাকে সাপোর্ট দিবে।
অভ্যাস-২৩৩ ▌ 'মুখে যা বলছেন, তা কাজেও প্রমাণ করে দেখান'
আপনি যা মুখে বলেন, তাই যদি কাজে প্রমাণ করে দেখাতে পারেন, তাহলে আপনি সম্পূর্ন বিশ্বস্ততার একটি প্রতীকে প্রমাণিত হবেন। ছোটখাটো বিশ্বাস ভঙ্গই বড় বড় অবিশ্বাসের জন্ম দেয়। আমরা অনেককেই দেখি কথায় খুব পণ্ডিত কিন্তু কাজের বেলায় আমড়া কাঠের ঢেঁকি। ভারসাম্যহীন কথাবার্তা যে বলে তাকে সবাই পাগল বলে। কথা ও কাজের ভারসাম্যহীনতা যেমন একজন ব্যক্তিকে পতনের গহবরে নিক্ষেপ করে তেমনি সম্পদের ভারসাম্যহীন খরচ একজন বিত্তশালীকে দেউলিয়া করে দেয়। ঠিক তেমনিভাবে ভাসাম্যহীন খাওয়ার কারণে স্বাস্থ্যের হানি হয়, ভারসাম্যহীন আচরণের কারণে মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়।
অভ্যাস-২৩৪ ▌ জিরো নয়, পাওয়ার হয়ে উঠুন।
জিরোর কোন নিজস্ব মান নাই। সে সব সময় অন্যের (পাওয়ারের) পাশে বশে পাওয়ারের মান বাড়ায়। এই মানহীন জিরো বা শূণ্য যত বেশী পাশে থাকবে,পাওয়ারের মান বাড়বে অকল্পনীয় হারে, যেমন- ১এর পাশে বসলে ১০হয়। আরো বেশি বসলে ১০০,১০০০,১০০০০ এভাবে হয়। জিরোদের সব আছে, ক্ষমতা, অর্থ, পেশীশক্তি’ এমনকি কাজ করার দক্ষতাও, কেবল মস্তিষ্ক নেই। আপনি যতই জ্ঞান বা অর্থবিত্তে পাওয়ারফুল (১ থেকে বেড়ে ৯) হতে থাকবেন’ অর্থাৎ অন্যকে কিছু দেওয়ার ক্ষমতা আপনার যতদিন থাকবে, ততদিন জিরুরা এসে আপনার পাশে বসবে।
জিরোরা মনে করে ‘তারা যা জানে, যা বুঝে’ একমাত্র সেটাই সঠিক। নিজের বিশ্বাসের বাইরে কোনো কিছুই সে মেনে নিতে পারে না। অন্যদিকে পাওয়াররা হচ্ছে সৃষ্টিশীল ও প্রতিভাবান, সবকিছুকে তারা জ্ঞান ও যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষন করেন। নিজেকে পাওয়ার হিসাবে গড়ে তুলতে সর্বদা চেষ্টা করে।
অভ্যাস-২৩৫ ▌ প্রথমেই কোন ব্যাপারে রাজি হয়ে যাবেন না
আপনি যদি জানেন যে, সেই কাজটি করতে পারবেন না, তাহলে এমন বিষয়ে হুট করে রাজি হয়ে যাবেন না। আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, আমরা যা করতে পারবো না সে বিষয়ে কথা দেওয়া একেবারে অযৌক্তিক, তাতে করে আমাদের এমন কাজের দায়িত্ব দেওয়া হবে, যাতে আমরা ব্যর্থ হব। আপনি অনিশ্চিত থাকলে 'না' বলে দিন। দ্বিতীয়বার কাউকে হতাশ করার চাইতে প্রথমবার না বলে দেওয়াই শ্রেয়। জীবনে অন্যদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সুন্দর করে না বলতে পারাটা খুবই জরুরী। যদি তা না পারেন তাহলে আপনাকে সবাই ভাঙ্গিয়ে খাবে এবং এক সময় কথা রাখতে না পারার কারণে আপনি সবার কাছে ছোট হয়ে যাবেন।
অভ্যাস-২৩৬ ▌ 'যেকোন একটি কাজে দক্ষ হয়ে উঠুন'
আপনি যদি সকল বিষয়ে দক্ষ হয়ে থাকেন তবে একটু থামুন। নিজেকে পুনরায় বিচার করুন। আপনার আভ্যন্তরীণ শক্তি ও মননশীলতার দিকে নজর দিন। যে সকল বিষয়ে আপনি গর্ববোধ করতে পারবেন, সেগুলো নিয়ে ভাবুন। এদের মধ্য থেকে আপনি যেকোন একটি বিষয়ে দক্ষ হবার জন্যে কিংবা দক্ষতা বাড়ানোর জন্যে কাজ করতে পারেন।
কোন কিছুতে অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে চলে প্রচুর সময় ও কর্মশক্তির প্রয়োজন হয়। ডব্লিউ স্টোনের ভাষ্যমতে, চেষ্টা করো, চেষ্টা করো এবং চেষ্টা করতেই থাকো যতোক্ষণ না পর্যন্ত সফল হতে পারো। রাতারাতি কোন কিছু শিখে উঠতে পারবেন না, প্রতি মুহুর্তে আপনার কাজ করে যেতে হবে, ব্যর্থ হলেও আবার উঠে দাঁড়াতে হবে। কোনভাবেই হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ভুল থেকেই শিখতে হবে। আপনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে চান, তা অন্যকেও শেখান। নিজস্ব মতবাদ, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অন্যকে শেখালে সেগুলো দিনদিন বৃদ্ধি পাবে। কখনো কমবে না
অভ্যাস-২৩৭ ▌ মানুষের কল্যানে কাজ করুন
স্কটিশ লেখক রবার্ট লুইস স্টিভেনসন ১৮৮৬ সালে প্রকাশ করেছিলেন তার জগদ্বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ডক্টর জেকিল ও মিস্টার হাইড’। এই বইয়ে একই মানুষের দুটি রূপ ছিল—ভালো সত্তাটি হল ‘ডক্টর জেকিল’ এবং খারাপ সত্তাটি মিস্টার হাইড। গ্রন্থটির মূল বক্তব্য এক কথায় : মানুষ একই সঙ্গে দেবতা ও দানব। এই চিত্র আমরা সমগ্র মানবজাতির ক্ষেত্রেই দেখতে পাই। শুভ সত্তাসম্পন্ন ডক্টর জেকিলদের মাধ্যমে পৃথিবী মানুষের জন্য একদিকে বসবাস উপযুক্ত হয়ে উঠবার চেষ্টা করে, অন্যদিকে অশুভ সত্তার ‘মিস্টার হাইডদের’ মাধ্যমে পৃথিবী অগ্রসর হতে থাকবে ধ্বংসের দিকে। এটা যেন শুভ-অশুভের লড়াই। এ যেন সাপ-লুডু খেলা। মই দিয়ে উপরে উঠে সাপের মুখে পড়ে গভীর খাদে। বলা যায়, তৈলাক্ত বাঁশে আমরা বানর হয়ে উঠা-নামায় দিন পার করছি।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, এই সভ্যতা যতই এগিয়ে যাবে, ততই শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের সংখ্যা বাড়বে। অন্যদিকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং বৈজ্ঞানিক অ্যাভি লোয়েব বলেছেন, যেই দিন মানুষ প্রযুক্তির শীর্ষে পৌঁছাবে সেইদিন মানবজাতি ধ্বংসের মুখে পড়বে। সুতরাং পৃথিবীতে চলিতেছে শুভ-অশুভ শক্তির দ্বন্দ্ব। এখানে মানুষই দেবতা, মানুষই দানব। উভয় শক্তিরই দড়ি টানাটানি হচ্ছে। যর জোর বেশি, তারই জয় হবে। এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে শুভ সত্তার শক্তি বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে বিনাশ ঘটানো সম্ভব হয় দানবসত্তার। সুতরাং খারাপ চিন্তা মাথা থেকে বিদায় করুন, মানুষের কল্যানে কাজ করুন।
অভ্যাস-২৩৮ ▌ 'পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন'
ছোট-বড় যেকোনো প্রয়োজনে আমরা সবার আগে ছুটে যাই বন্ধুর কাছে। শৈশব থেকে বার্ধক্য—এই দীর্ঘ যাত্রায় আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বন্ধু। পুরনো আমেরিকায় একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। সেটি হলো 'বন্ধুত্বের পথে কখনো ঘাস জমতে দিওনা'। বন্ধুত্বকে সতেজ ও পরিপূর্ণ রাখতে যা যা করতে হয়, সময়ের সঙ্গে যেকোন বন্ধুতই গাঢ় হয়।
আপনার সঙ্গে আপনার অতীত স্মৃতি, অভিজ্ঞতা ও গোপনীয়তা সবকিছুর যোগসাযোগ ঘটে বন্ধুদের মাধ্যমে। তাই হয়তো বলা হয়, গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল , বন্ধুও তেমনি একটি বিশেষ জাতের মানুষ। যারা আমাদের থেকে দূরে চলে গেলেও মিষ্টি সুবাসের মত স্মৃতিতে থেকে যায়। আপনি যদি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থেকে দীর্ঘ জীবন যাপন করতে চান, তাহলে এখন থেকেই আপনার বন্ধুত্বের পরিচর্যা করুন।
অভ্যাস-২৩৯ ▌ 'প্রযুক্তিকে আপন করতে হবে সিমুলাক্রাম’ রক্ষা করে...
প্রযুক্তির টুকিটাকি ক্ষেত্রগুলো রপ্ত করে নিলে আপনার জীবনযাপন খুব সহজ হয়ে যাবে। দিনের পর দিন প্রযুক্তির ক্ষেত্রসমূহ উন্নত থেকে উন্নততর হতে থাকবে। তবে , 'প্রযুক্তি একটি আশ্চর্জজনক ব্যাপার। এটি যেমন আমাদের স্বাধীনতা দান করে ঠিক, তেমনিভাবে আমাদের পায়ে শিকলও পরিয়ে দেয়। ফরাসি দার্শনিক জাঁ বদ্রিয়ারের ভাষায় ‘সিমুলাক্রাম’। যখন নকল চর্চার হতে হতে মূল বিষয়টাই হারিয়ে যায়। একসময় কিছু মূল্যবোধ অন্তত আমরা লালন করতাম। এখন সেসবের একটা বড় অভাব দেখতে পাই। বয়স্কদের সম্মান দেখানো, সৌজন্যবোধের চর্চা, পরার্থপরতা, অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকা, ঘুষ-উৎকোচ থেকে দূরে থাকা, ধর্মটাকে পোশাকে-আস্তিনে বয়ে না বেড়িয়ে হৃদয়ে ধারণ করা, ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টি না করা, সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের নিপীড়ন না করা, নিজের চর্চা অন্যের ওপর চাপিয়ে না দেওয়া, সংবেদনশীল বিষয়ে কোনো বিতর্ক সহিংসতায় সমাধান না করে যুক্তি দিয়ে তার সমাপ্তি ঘটানো। এসবের চর্চা আমি শৈশবে দেখেছি, কিন্তু এখন দেখছি খুবই কম। আগামী ত্রিশ-চল্লিশ বছর পর ভিনদেশের কেউ বাংলাদেশে বেড়াতে এলে যা দেখতে পাবেন, তা্তে কোনো সংস্কৃতি হয়তো থাকবে না, থাকবে শুধু প্রযুক্তির বাড়াবাড়ি।
অভ্যাস-২৪০ ▌ গুজব এডিয়ে চলুন।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দ্রুত ছড়ানো হচ্ছে।
কেউ কেউ বলেন, গুজব বাতাসের চেয়েও দ্রুত গতিতে ছড়ায়। আগে গুজব ছড়াত মূলত মুখে মুখে। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
বাঙালি গুজবপ্রিয় জাতি। এজন্য বাংলা ভাষায় “গল্পগুজব” একটি সমার্থক শব্দ। এখনো বাঙালি গ্রামীণ বৌ-ঝি-রা ঘরে আর কর্তারা চায়ের দোকানে গল্পগুজব করে সময় কাটায়।
রবিন ডানবার নামের একজন নৃতাত্ত্বিক ১৯৯৮ সালে একটা বই লেখেন। নাম গ্রুমিং, গসিপ অ্যান্ড দ৵ ইভল্যুশন অব ল্যাঙ্গুয়েজ। এই বইতে তিনি দেখিয়েছেন প্রাণিজগতের মধ্যে সবচেয়ে বড় মগজ মানুষের। এই মানুষ দিন-রাত ছোট ছোট জিনিস নিয়ে বকবক করে সময় নষ্ট করে! এই ছোট কথা ও গুজবের একটা বড় ভূমিকা আছে মানুষের উন্নতির পেছনে। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে ফেসবুকে মানুষ পরষ্পরের সাথে আলাপ করে; তবে সেখানে মানুষ থাকে না। থাকে মানুষের একটা আরোপিত চরিত্র। আসল মানুষ নিজেকে রাখে লুকিয়ে। আর লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিদিন অজস্র অডিও–ভিডিও ফাঁস করে, যার এক বিরাট অংশই ফেক বা গুজব। তারপরো মানুষ তাতে আগ্রহ নিয়ে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষ করে টিকটক, ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে যেভাবে মিথ্যা ও ঘৃণা ছড়ানো হয়, তা একটি সভ্য সমাজের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। এমনকি এসব গণমাধ্যমে বহু ক্ষেত্রে চলে অশ্লীলতার বেসাতি। ভাষা ব্যবহারে ভদ্রতা, নম্রতা ও শালীনতার নেই বললেই চলে। গুজবকে রাজনৈতিক প্রচার, ব্যক্তিগত রাগ, ঘৃণা ও ব্যাবসায়িক স্বার্থ হাসিলে কারসাজি এবং সাম্প্রদায়িক উসকানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এরা। বর্তমানে এআই দিয়ে ছবি ও ভিডিও এডিট করে অহরহ গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এছাড়া পুরোনো ভিডিওতে ডিপ ফেইক প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন একটি ভুয়া ভিডিও তৈরি করে গুজব ছড়ানো হয়।
অভ্যাস-২৪১ ▌ 'কখনো হাল ছেড়ে দেবেন না'
জীবনে কোন কিছু অর্জন করতে হলে কখনো থেমে যাওয়া এবং সহজেই হাল ছেড়ে দেওয়া চলবে না। আপনি হয়তো নিজেও জানেন না যে, জয়ী হবার কতোটা কাছে আপনি। বরং এর পরিবর্তে নিজের মনের মধ্যে জেদ আনুন। অতিরিক্ত কিছু করে দেখানোর চেষ্টা করুন। আপনার জেদ ও কর্মশক্তিই আপনাকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যাবে।
অভ্যাস-২৪১ ▌'যেকোন ধরনের নেশা সামলে রাখুন'
আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কিছু না কিছু বিষয়ে নেশা কিংবা আসক্তি থাকে। কিছু নেশা খুব সাবলীল হয় আবার কিছু কিছু আমাদের মরণ ফাঁদে ফেলে দেয়। কিছুদিন আগেও নেশা ও আসক্তি হিসেবে ধূমপান ও মদ্যপানকেই বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি সে জায়গা দখল করে নিয়েছে। বর্তমানে সেক্স এবং খাবারও নেশার তালিকায় চলে গেছে। আপনি নিশ্চয়ই আপনার আশেপাশে এমন অনেক মানুষকে দেখেছেন যারা আরো বিভিন্ন বিষয়ে আসক্ত-- কাজের প্রতি আসক্ত মানুষটি প্রতিদিন দেরি করে বাড়ি ফেরে,- কেনাকাটার প্রতি আসক্ত মানুষ প্রতি মাসের শেষে কারো না কারো কাছে হাত পাতে,- কমবয়সী ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেটে গেইম খেলে সময় কাটিয়ে দিচ্ছে।
আপনার আসক্তি কী কী? কোন কিছুর প্রতি আসক্তি কি আপনার সফলতার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে? স্বীকার করুন, নিজের সঙ্গে সৎ হোন এ ব্যাপারে ।
অভ্যাস-২৪২ ▌ সৃজনশীল মানুষের জন্য কিছু পরামর্শ
১. সংক্ষেপে তথ্যপূর্ণ বক্তব্য লেখা: স্ট্যাটার্স লেখার সময় সংক্ষেপে তথ্যপূর্ণ লেখা দিন, তবে খেয়াল রাখুন, আপনার স্ট্যাটার্স বা বক্তব্য যেন কাউকে আহত না করে।
২. নিজের সমস্যার কথা না বলা: নিজের সমস্যার কথা বাইরের কাউকে বলার দরকার নেই। মনে রাখবেন, ২০% লোক ভাল করে সমস্যা শোনেই না, আর বাকী ৮০% লোক আপনার সমস্যা আছে দেখে মনে মনে খুশী হয়।
৩. অভিযোগ/দোষারোপ জিরোরাই করে। জীবনে কাউকে অভিযোগ/দোষারোপ করবেন না।
.৪. নাম ব্যবহার করা: প্রত্যেকেরই একটি করে সুন্দর নাম রয়েছে। কিন্তু আপনি যদি তার এ নামটি ভুলে যান তাহলে তা খুবই দুঃখজনক বিষয়। সম্বোধনের সময় প্রত্যেকের নাম উল্লেখ হতে পারে তাদের প্রতি আপনার ‘বিশেষ’ দৃষ্টি রাখার একটি প্রমাণ।
৫. আন্তরিক হাসি: সামাজিক প্রাণী হিসেবে একে অন্যের সঙ্গে দেখা হলে মনের ভাব প্রকাশের জন্য স্নিগ্ধ একটি হাসির তুলনা হয় না। তবে খেয়াল রাখবেন হাসিটি যেন হয় আন্তরিকতাপূর্ণ।
৬. শুনুন: অন্যের কথা না শুনে আপনি যদি শুধু বলতে থাকেন তা জিরো মানসিকতার লক্ষণ। পাওয়ার হতে হলে অন্যের কথা শুধু শুনলেই চলবে না, এসব কথা হৃদয়ে আত্মস্থ করতে হবে।
৭. মৌখিক আদান-প্রদান: আপনি কারো কথা শুধু শুনলেই হবে না, তার কথাটি যে বুঝেছেন তার প্রমাণস্বরূপ পাল্টা কোনো মন্তব্য বা প্রশ্ন জুড়ে দেবেন। আপনি তাকে আন্তরিক প্রশংসা করেন
৮. সমালোচনায় সতর্কতা: প্রত্যেক মানুষেরই ‘আত্মমর্যাদা’ বা অহংবোধ রয়েছে। এতে আঘাত না দিয়ে সঠিক বিষয়টি সতর্কভাবে তুলে ধরুন।
৯. উৎসাহ দিন: উৎসাহ পেলে মানুষের কাজ করার ক্ষমতা বহুগুন বেড়ে যায়। আপনার আচরণে যেন অন্যকে উৎসাহ দেওয়ার প্রবণতা থাকে। ফেজবুকে লাইক দেয়া, কমেন্ট করা হচ্ছে অন্যকে উৎসাহ দেওয়ার প্রবণতা।
১০. গল্প বলায় পারদর্শীতা: ভালোভাবে গল্প বলতে পারা এমন একটি দক্ষতা, যা সবাই অর্জন করতে পারে না। আপনি যদি গল্প বলায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেন তাহলে ধরে নিন সফল হয়ে ওঠার দিকে একধাপ অগ্রসর হলেন।
১১. পরামর্শ আহ্বান: কারো পরামর্শ চাওয়ার অর্থ আপনি তার মতামতকে গুরুত্ব দেন। আর এতে পরামর্শদাতাও নিজেকে মূল্যবান বলে মনে করে।
১২. বিরক্তিকর হবেন না: কেউই বিরক্তিকর বা একঘেয়ে মানুষ পছন্দ করে না। তাই অন্যের বিরক্তি আনে এমন সব আচরণ বাদ দিন।
১৩. প্রশ্ন করুন: প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব জীবনযাত্রা, শখ ও আগ্রহ রয়েছে। আপনি যদি নানা প্রশ্ন করে এসব বিষয় সম্বন্ধে আগ্রহ প্রকাশ করেন তাহলে সহজেই তাদের কাছাকাছি যেতে বা প্রিয়পাত্র হতে পারবেন।
১৪. আল্পতে সুখী থাকুন: একজন মানুষ সুখী......কত তার আছে' তার উপর নয়, কত কম তার প্রয়োজন' তার উপর নিরর্ভর করে। সুতরাং সুখী জীবন-যাপন করতে হলে আল্পতে সন্তুষ্ট থাকুন।
১৫.ক্ষতিকর বন্ধুকে পরিহার করুন: ক্ষতিকর বন্ধুকে আঁকড়ে ধরে রাখলে একদিন না একদিন সে তার রূপ দেখাবেই। প্রতারিত হবেন, ক্ষতিগ্রস্থ হবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। শেখ সাদি বলেছিলেন...তুমি কার ঘরে জন্ম নিয়েছ, সেটা বড় কথা নয়, তুমি কাদের সংগে চলাফেরা কর, সেটাই বিষয়। কারন, একটা বক যদি কাকের সাথে বসবাস করে, তাহলে বকের বাহিরর্টা কাকের মত না হলেও ভিতরটা একই হয়ে যায়।
১৬. সময় ব্যবস্থাপনা শিখুন: ফালতু কাজ আর ভুল মানুষগুলোর পেছনে বেশি সময় দেবেন না। দিনের ২৪ঘন্টা সময়কে ভাগ করে নিন। কোন কাজের পর কোন কাজ কতক্ষণ ধরে করবেন, তা ঠিক করে নিন। যে কাজটা আজ করতে পারেন, তা কালকের জন্য ফেলে রাখবেন না। যে কাজগুলি এবং যে মানুষগুলো আপনাকে পেছনে টেনে ধরে রাখছে, তা এড়িয়ে চলুন।
অভ্যাস-২৪৩ ▌ দুঃখিত বা সরি বলা জাপানি পদ্ধতি অনুসরণ করুন
স্বেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় কারো সাথে বাজে আচরণ করার পর তাকে দুঃখিত বলাটা আসলে কষ্টকর। তবে এই কষ্টকর বিষয়টিকে বেশ সহজ করে নিয়েছে জাপানিরা। দুঃখিত বা স্যরি বলার জন্য দেশটিতে বিভিন্ন এজেন্সি রয়েছে। এরা টাকার বিনিময়ে আপনার পক্ষে দুঃখিত শব্দটি বলে আসবে। এসব প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মচারীদের দুঃখিত বলার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়। প্রশিক্ষিত এসব কর্মী পাঠিয়ে দেবে আপনার দেয়া ঠিকানায়।
তারা ওই ব্যক্তির কাছে খুবই বিনীতভাবে আপনার পক্ষে দুঃখপ্রকাশ করে আসবে।
অভ্যাস-২৪৪ ▌ ফরেস্ট বাথিং বা ''প্রকৃতির সঙ্গে অধিক সময় কাটান'
আপনি কম স্ট্রেস অনুভব করেন যখন প্রকৃতির কাছাকাছি থাকেন। জাপানিরা এটিকে 'ফরেস্ট বাথিং' বলে থাকে। যদি আপনি গাছগাছালি এবং জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হেঁটে যান তাহলে আপনার রক্তচাপ এবং স্ট্রেস অনেকাংশে কমে যাবে।- প্রাকৃতিক সূর্যালোক আপনাকে ভিটামিন ডি সরবরাহ করে, এটি আপনার ত্বক ও স্বাস্থ্যের উপর বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। প্রাকৃতিক নির্মল বাতাস থেকে আপনার ফুসফুস সতেজ হাওয়া পায় এবং এতে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটালে আপনার মানসিকতা এবং চিন্তাধারা প্রসারিত হয়। প্রকৃতি আপনাকে শান্ত, ধৈর্যশীল এবং সহনশীল হতে শেখায়।
অভ্যাস-২৪৫ ▌ 'বয়স বাড়লেও কাজ থামিয়ে দেবেন না'
যতক্ষণ আপনার শক্তি, সুস্বাস্থ্য এবং প্রতিপত্তি আছে ততদিন সত্যিকার অর্থে জীবন যাপন করে নিন। থেমে যাওয়া চলবে না। ক্যারিয়ার, পরিবার এবং বাসস্থানের প্রতি মনোনিবেশ করতে যেয়ে আপনি কী কী শখ,আনন্দ ও লক্ষ্যের বিসর্জন দিয়েছেন? সেসব নিয়ে অনুশোচনা মন থেকে ঝেড়েমুছে ফেলুন। জীবনের ছোট ছোট আশা ও আকাক্সক্ষার দিকে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন। নতুন কিছু করার চেষ্টা করে দেখুন, গলা ছেড়ে গান ধরুন, নতুন ভাষা শিখুন কিংবা নাচুন। আপনার বয়স কতো, এতে কিচ্ছু এসে যায় না।
অভ্যাস-২৪৬ ▌ শিক্ষিত জ্ঞানী মানুষদের সন্তান প্রতিপালনে উতসাহিত করুন
সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা চালান একদল বিজ্ঞানী। নিউ সায়েন্টিস্ট পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন লিখেছেন সাংবাদিক বব হোমস। যুদ্ধপরবর্তী জাপান ও ডেনমার্কে আইকিউ বেড়েছিল। এই বৃদ্ধি প্রব্ণতাকে ‘ফ্লিন প্রভাব’ বলে। ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমন ফ্লিন বলেছিলেন, যুদ্ধপরবর্তী সময়ে ঐসব দেশে খবাবের পুষ্টিমান বাড়া এবং জীবনযাত্রার উন্নতি ও শিক্ষার সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার উন্নতি সম্পর্কযুক্ত, হয়। এ থেকেই ওই প্রবণতাকে ‘ফ্লিন প্রভাব’ বলে। তবে একুশ শতকে এসে ফ্লিন প্রভাবের উল্টোটা ঘটছে বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। অনেকে মনে করেন, ফ্লিন প্রভাব অনেকটা বংশগতির ব্যাপার। উচ্চশিক্ষিত মানুষেরা কম সন্তান নেন। একারণে ক্রমেই বিশ্বে বুদ্ধিমান মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ববিদ রিচার্ড লিন মানুষের জিনের সক্ষমতা কমে যাওয়ার হার হিসাব করে বলেছেন- এই প্রবণতা অব্যহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে মানুষ আরো ১.৩ পয়েন্ট আইকিউ হারাবে। আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্বের অধ্যাপক জ্যাঁ তি নিজেনহিস বলেন, পশ্চিমারা ভিক্টোরীয় যুগের পর থেকে এ পর্যন্ত গড়ে ১৪ পয়েন্ট আইকিউ হারিয়েছে। তিনিও বিশ্বাস করেন, শিক্ষিত জ্ঞানী মানুষেরা এবং বুদ্ধিমতি নারীরা কম সন্তান নেয়ার কারণেই এটি ঘটছে।
অভ্যাস-২৪৭ ▌ 'দূরে পরিভ্রমণ করুন'
দূরে কোথাও ঘুরে আসলে আপনার হৃদয় ও মন দুই-ই প্রসারিত হবে। অচেনা শহরে কিছু দিন কিংবা সপ্তাহ কাটালে আপনি নতুন নতুন মানুষকে জানতে পারবেন, পৃথিবীকে অন্য নজরে দেখতে পারবেন এবং বিভিন্ন ইস্যু খুব সহজে আবিষ্কার করতে পারবেন। নেতিবাচক মানসিকতা, গোঁড়ামি ও হতাশা দূর করার এটি বেশ ভালো একটি উপায়। নিজের মনের খোরাক মেটানোর জন্য হলেও পৃথিবী পরিভ্রমণে বেরিয়ে পড়ুন। জাগতিক কিছু জিনিস কেনাকাটা না করে ঘোরাঘুরি করতে কাজে লাগান। পৃথিবীটা চষে ফেলুন, এবং জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করুন।
অভ্যাস-২৪৮ ▌ 'সামনের দিনের জন্যে পরিকল্পনা করুন'
যেকোন পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত হবার সঙ্গে সঙ্গেই একটি দ্বিতীয় পরিকল্পনা রাখুন। যেন প্রথম পরিকল্পনা সফল না হলেও দ্বিতীয়টি গ্রহণ করতে পারেন। মনে রাখবেন, পৃথিবীর সকল সর্বশ্রেষ্ট কাজগুলো কিন্তু একদম পরিপাটি পরিকল্পনার মাধ্যমে হয়ে ওঠেনি। তবে কাজের প্রতি আপনার সদিচ্ছা, মনোযোগ এবং ভালোবাসা থাকা জরুরী। সবচাইতে ছোট ব্যাপারটির জন্যেও পরিকল্পনা করুন।
অভ্যাস-২৪৯ ▌ পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠুন
ঘরের জন্য নতুন কোন জিনিস কিনলে পুরনো কিছু দান করে দিন। পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিদিন কিছু সময় ব্যয় করুন।
জীবনযাপনে এবং ভ্রমণে সবুজের সমন্বয় গড়ে তুলুন।
প্লাস্টিকের বোতল, ওয়ানটাইম প্লেট, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ইত্যাদির ব্যবহার কমান।
পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ, বোতল ইত্যাদি ব্যবহারের চেষ্টা করুন।
প্লাস্টিক ব্যাগ ফেলে দেওয়ার আগে কয়েকবার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। খাদ্যের উচ্ছিষ্ট ফেলে না দিয়ে কাউকে দান করে দিন, পশুপাখিকে খাওয়ান, এ ছাড়া সার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
গোসল, কাপড় কাচা, দাঁত ব্রাশ, থালাবাসন ধোয়ার সময় শুধু শুধু পানির কল চালু করে রাখবেন না। নষ্ট কোনো কল থেকে অনবরত পানি পড়লে সেটি বদলে ফেলুন। আপনার এলাকায় বসবাসরত কোনো ব্যক্তি যদি কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকেন, তাঁর কাছ থেকে সরাসরি শাকসবজি, ফলমূল ও খাদ্যদ্রব্য কেনার চেষ্টা করুন। শরীর ভালো রাখতে মাংস ও দুগ্ধজাত খাদ্যের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। অতিরিক্ত মাংস ও দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়েশাকসবজি ও অর্গানিক খাবার খাওয়ার প্রতি আরও জোর দিন।
অভ্যাস-২৫০ ▌ শেখাতে পারবেন এমন কাউকে খুঁজুন
কোন ব্যাপারে দক্ষতা অর্জন করার সর্বশ্রেষ্ট উপায় হলো কাউকে তা শেখানো। আপনি যদি কোন কিছু তৈরি করা শিখতে চান তবে অপর একজন মানুষকে সেটি শেখান। তাদেরকে আপনার সময় এবং মনোযোগ দিয়ে শেখান যা তারা এখনো আয়ত্ব করতে পারেননি।
যে বিষয় আপনাকে কৌতূহলী করে, সেটিই শিখতে চেষ্টা করুন। যা কিছুতে আমাদের ভালো লাগা বা ভালোবাসা কাজ করে, সেগুলোই আমরা দ্রুত শিখতে পারি। প্রতিটি দক্ষতা অর্জনেই বেশ পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করতে হয়। তাই অনেকগুলো দক্ষতা অর্জনের প্রকল্প যদি আপনি একসঙ্গে নেন, তাহলে হতে পারে হতাশা।
অভ্যাস-২৫১ ▌ অন্যকে অনুপ্রেরণা দিন।
আপনার দেওয়া একটুখানি অনুপ্রেরণা কারো দিনটাই সুন্দর করে দিতে পারে। কষ্টের দিনে আপনার বলা সামান্য দু’টি কথা কারও পুরো জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিতে পারে। আমাদের বন্ধু, পরিবার, সঙ্গী বা এমনকী অপরিচিত কেউ তার আচরণের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের ক্ষত সারিয়ে তুলতে পারে। তারা আগামীকালের জন্য আমাদের আশা দিতে পারে। কখনো কখনো ছোট্ট একটি বাক্যও দিনটি সহজ ও সুন্দর করে দিতে পারে।
অফিস, কলেজ বা বাড়িতেই যেখানে হোক না কেন, সবাইকে তার কোন না কোন বিষয়ে প্রশসা করুন তার সাফল্য একত্রে উদযাপন করুন। একে অপরের কৃতিত্ব স্বীকার করা এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অভ্যাস-২৫২ ▌ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সফট স্কিল অর্জন করিন
আপনি কি কখনও আপনার পেশাগত বা ব্যক্তিগত জীবনে এমন কাউকে দেখেছেন যিনি অত্যন্ত প্রতিভাবান, জ্ঞানী এবং দুর্দান্ত আইডিয়া থাকার পরও তাকে উপেক্ষা করা হয় কারণ তার কথাগুলো তিনি গুছিয়ে বলতে পারেন না? এটি একটি সাধারণ অভিজ্ঞতা। জনসাধারণের সামনে কথা বলার শিল্প আয়ত্ত করা, নার্ভাসনেসের ভয় ছাড়াই শ্রোতাদের সামনে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উপস্থাপন করতে সক্ষম হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা যা আপনার গ্রহণযোগ্যতাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
একটা বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখার পেছনে যেমন শ্রম দিতে হয়, তেমনই পাবলিক স্পিকিংও একটি দক্ষতা যা মানুষকে অর্জন করতে হয়। এ বিষয়ে উন্নতি করতে চাইলে নিয়মনিষ্ঠভাবে চর্চা ও অনুশীলন করে যেতে হবে এবং সফলতা অর্জনের মতো মনমানসিকতা থাকতে হবে।
শুধু স্মার্টলি কথা না বলতে পারার কারণে অনেকেই পিছিয়ে পড়েন।
অভ্যাস-২৫৩ ▌পাবলিক স্পিকিংয়ে ভালো করার ক্ষেত্রে ২টি বিষয়ে খেয়াল রাখবেন,
১. আপনি যদি বক্তব্যের আগেই টপিক পেয়ে যান, তাহলে বক্তব্যটি লিখুন। কিছু গবেষণা করে খুঁজে বের করবেন, এতে আপনার তথ্যভান্ডার সমৃদ্ধ হবে। ২.পাবলিক স্পিকিংয়ের ভয়কে বলে গ্লোসোফোবিয়া। তবে এটা কাটানো জরুরি। এ ক্ষেত্রে আপনি বেশি বেশি বন্ধু বানান। তাঁদের সঙ্গে কথা বলুন। আয়না বা মোবাইলের সামনে দাঁড়িয়ে অনুশীলন করুন। যত বেশি অনুশীলন করবেন ভয় তত কমবে এবং দক্ষতাকে বাড়বে।
গোপন টিপসঃ কথা বলার ক্ষেত্রে মনের সাহস যত বেশি থাকবে, আপনি তত ভালো বক্তা হয়ে উঠতে পারবেন।
অভ্যাস-২৫৪ ▌ এই পৃথিবীতে সবচেয়ে মারাত্মক জিনিস হল ভয়।
. ভয় আপনাকে হিরো থেকে জিরো বানিয়ে দিতে পারে। ধরুন,আপনি কোথাও কোনো প্রেজেন্টেশন দিচ্ছেন,আপনি অনেক ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। কিন্তু আপনার মনের মধ্যে এক ধরণের ভয় কাজ করছে। দেখবেন এই ভয় থেকে একটু পরে কনফিউশনের সৃষ্টি হবে। তারপর হাত-পা ঘামতে থাকবে। তারপর আপনি আস্তে আস্তে সব ভুলে যাবেন। এত ভালভাবে প্রেজেন্টেশনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পরও, শুধুমাত্র ভয়ের জন্য সব প্রস্তুতি ভেস্তে গেল। শুধু প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে নয়, জীবনের ছোট-বড় যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে ভয় অনেক বড় একটি বাঁধ। আপনার খুব ভালভাবে জানা জিনিসও আপনি ভুলে যেতে পারেন এই ভয়ের কারণে। তাই আপনার জীবনের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত, "ভয়কে জয় করা"। কারণ ভয়কে যদি আপনি জয় না করেন, তাহলে আপনার শত পরিশ্রম,শত প্রস্তুতি, শত কষ্ট কোনো কাজে আসবে না। জীবনের প্রতিটি ধাপ সফলতার সাথে পেরোতে চাইলে প্রথমে ভয়কে জয় করুন।
অভ্যাস-২৫৫ ▌ব্রেইন-ড্রেইন’ রোধে জ্নমত গড়ে তুলুন
উচ্চশিক্ষিত মানুষেরা কম সন্তান নেন। একারণে ক্রমেই বিশ্বে বুদ্ধিমান মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি “ব্রেইন ড্রেইন” বা মেধা পাচারের কারণেও আমরা মাথামোটা জাতিতে পরিণত হচ্ছি। তৃতীয় বিশ্বের মেধাবী ছাত্র, দক্ষ এবং উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা তাদের দেশ হতে তুলনামূলক উন্নত দেশে অভিবাসন করতে চান, যাতে তার দক্ষতা ও মেধা আরও ভালোমতো কাজে লাগাতে পারেন।
অদক্ষ শ্রমিকদের কোনো উন্নত দেশ নাগরিকত্ব দেয় না। কিন্তু দক্ষ, মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিতদের প্রয়োজন সব উন্নত দেশেই আছে। এটা যেন অনেকটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কণিকার কবিতার মতো—‘কেরোসিন-শিখা বলে মাটির প্রদীপে,/ ভাই ব’লে ডাক যদি দেব গলা টিপে।/ হেনকালে গগনেতে উঠিলেন চাঁদা—/ কেরোসিন বলি উঠে, এসো মোর দাদা!’ এইখানে উন্নত বিশ্ব হল কেরোসিনের শিখা, আর মাটির প্রদীপ হল অদক্ষ অশিক্ষিত শ্রমিক। অন্যদিকে আকাশের চাঁদ হল দক্ষ মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি। সুতরাং গগনের চাঁদ অর্থাৎ দক্ষ মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিতদের তাদের দরকার। এভাবেই আমাদের আকাশের চাঁদগুলি বিদেশেই স্থায়ী হয়ে যান আর আমরা চাঁদহারা অন্ধকারের ডুবে আছি। বেশ নীরবেই দেশ থেকে ‘মেধা পাচারের বিপ্লব’ ঘটে যাচ্ছে। অথচ সেদিকে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই! সবাই শুধু ক্ষমতা দখলের চিন্তা আর দেশকে লোপাট করার চিন্তায়। মেধাবী প্রজন্মের সঠিক পরিচর্যা ও তাদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ ও মূল্যায়নের ওপরই নির্ভর করে একটা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কেমন হবে। এদেশে মেধাবীরা তাঁদের মেধার মূল্যায়ন পায় না। অথচ তাঁর চেয়ে কম যোগ্যতার কেউ একজন রাজনৈতিক চেষ্টা-তদবির বা ঘুষ–বাণিজ্যের মাধ্যমে তাঁর কাঙ্ক্ষিত যোগ্য আসনটি দখল করে নিচ্ছেন। ফলে সিস্টেমের প্রতি, সার্বিকভাবে দেশের প্রতি তার একটা অনীহা জন্মে যায়। তখন তিনি দেশত্যাগে মরিয়া হয়ে ওঠেন।
অভ্যাস-২৫৬ ▌জন সচেতনতায় কাজ করুন
আমাদের দেশে এখন তিন ধরনের মানুষের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। প্রথম শ্রেণিতে আছেন—যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। এরা দলের হয়ে সব সময়ই হাততালি দেয়। দল ভালো করলেও বাহবা দেয়, জঘন্য খারাপ কিছু করলেও বাহবা দেয়। এদের বলা যায় দলবাজ। এর বাইরে একদল—‘গোপাল কলা খায়’-মার্কা মানুষ আছেন, যারা ‘কী করতে হবে’ বিষয়ে রেডিও-টেলিভিশনে-সেমিনারে-গোলটেবিল বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। নানা বিষয়ে নসিহত করেন। এরা চমত্কার করে কথা বলেন। ধোপদুরস্ত পোশাক পরেন। রুটি-রুজি নিয়ে তাদের ভাবতে হয় না। কারণ তারা প্রায় সবাই ভালো রোজগার করেন বা করেছেন। এদের অনেকেই আবার ‘অবসরপ্রাপ্ত’। জীবনের তিন কাল আরাম-আয়েশে কাটিয়ে শেষ বয়সে অবসর বিনোদনের উপায় হিসেবে ‘কী করতে হবে’-বিষয়ে জ্ঞানদান করতে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এদের অনেকের মনের কোণে একটু পদ-পদবি-সম্মান-পদক-পুরস্কারের মোহও কাজ করে। এই শ্রেণির ব্যক্তিরা নিজেদের নাম দিয়েছেন—সিভিল সমাজ বা নাগরিক সমাজ বা সুশীল সমাজ।
এই রাজনৈতিক সমাজ আর সুশীল সমাজের বাইরে আরো এক শ্রেণির মানুষ আছেন। তারা হলেন—আমপাবলিক। সুশীল সমাজ আর রাজনৈতিক সমাজ এদের নাম দিয়েছেন—জনগণ। এই জনগণও এক আজব চিজ। তারা কারো সাতেও নেই পাঁচেও নেই। আবার তারা সবখানেই আছে। তারা সুশীল সমাজের টিভি টকশো মনোযোগ দিয়ে শোনে। এই কথাগুলো সমাজে প্রচার করে বেডায়। কিন্তু যখন কোনো সুশীল ব্যক্তি ভোটে দাঁড়ায়, তখন তাকে ভোট দেয় না! ভোট দেয় তাদের, যাদের কারণে তারা দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করে এবং সারা বছর যাদের গালাগাল করে।
অভ্যাস-২৫৭ ▌সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সোলেমানস প্যারাডক্স মাথায় রাখুন
সঠিক সিদ্ধান্ত এর ওপর জীবনের বাঁচার আনন্দ নির্ভর করে । আমরা জীবনে চলার পথে কত ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি আর তার মাসুল সারা জীবন দিতে হয় । তরুণদের মাঝে অতি আবেগের কারণে সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হয়ে যায়। যার ফলে মন খারাপ থেকে শুরু করে ঝগড়া কিংবা খারাপ পথে অগ্রসর হওয়ার মতো ভয়াবহ কিছু ঘটতে পারে। যেকোনো পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালোভাবে তিনটি বিষয়ের দিকে অবশ্যই নজর দিতে হবে। এক) আসলেই সিদ্ধান্তটি সুস্থ মস্তিষ্কে নিচ্ছি নাকি আবেগের বশে! দুই) যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো; এই বিষয়ে কারো সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। তাতে সিদ্ধান্তে ভুল হওয়ার সুযোগ কম হবে। তিন) যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে কী কী সমস্যা হতে পারে কিংবা কী কী সুবিধা হতে পারে, তা হিসাব করতে হবে।
রোমান সেনাপতি ও একনায়ক জুলিয়াস সিজার ৫৮-৫০ খ্রিষ্টাপূর্বাব্দের গ্যালিক যুদ্ধের কথা লেখার সময় ‘আমি বদলা নিয়েছি’ না লিখে লিখেছিলেন ‘সিজার বদলা নিয়েছে’। নিজের নাম নিয়ে নিজেকে সম্বোধনের এই কৌশলকে বলে ইলিয়েজম। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তির জায়গায় রেখে চিন্তা করলে, আবেগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায় এবং নিরপেক্ষ হয়ে ভাবা যায়। জানেন তো সোলেমানস প্যারাডক্স বলে একটি গবেষবা আছে। ‘বাইবেল’ বর্ণিত প্রাচীন রাজা সোলেমান রাজ্যের সবাইকে বিজ্ঞ পরামর্শ দেওয়ার জন্য জনপ্রিয় রাজা ছিলেন । কিন্তু নিজের জীবনে কোনো সঠিক সিদ্ধান্তই নিতে না পারার কারণে শেষ পর্যন্ত রাজ্য ছেড়ে তাঁকে পালাতে হয়েছিল। অর্থাৎ, ‘আমরা নিজেদের ব্যক্তিগত সমস্যায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি; কিন্তু অন্যেকে সিদ্ধান্ত বা পরামর্শ দেয়া সহজ হয়ে যায়। পুরো ব্যাপারটি ঘটে মনের ভিতর আবেগের জন্য। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তির জায়গায় রেখে চিন্তা করলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে ।
অভ্যাস-২৫৮ ▌আইনস্টাইন হওয়ার চক্করে "ওভার প্যারেন্টি " বন্ধে কাজ করুন
যখন সন্তানের জন্য অতিরিক্ত ভালো চাইতে শুরু করবেন, বিপত্তি ঘটে তখনই। তাকে ওভার প্যারেন্টিং বলে। আমরা নিজেদের জীবনের না পাওয়াগুলো সন্তানের প্রাপ্তির খাতায় যোগ করতে গিয়ে মনের অজান্তেই সন্তানের ওপর কত ধরনের যে চাপ প্রয়োগ করি, তার ইয়ত্তা নেই। শুধু পুথিগত বিদ্যার পেছনে ছুটতে গিয়ে জীবনের অনেক জরুরি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমাদের সন্তানরা। সন্তানদের মানুষ করার নামে যে অতিরিক্ত অভিভাবকত্ব ফলাচ্ছি আমরা, তার ফলাফল অনেক ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হচ্ছে। অমুক আর তমুকের সন্তানের সাফল্য দেখে বার বারই নিজের সন্তানকে হেয় করতে থাকেন। আপনার এ ধরনের তুলনা সন্তানকে শুধু অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকেই ঠেলে দেয় না, আত্মবিশ্বাসকেও গুঁড়িয়ে দেয়, যার পরিণতি আরো ভয়ংকর। অথচ সন্তানদের শেখানো উচিত প্রতিযোগিতা যদি করতেই হয়, তা হবে কেবল নিজের সঙ্গে। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা।
আধুনিক সমাজে সবাই বিচ্ছিন্ন। নিউক্লিয়ার পরিবারে বেড়ে উঠছে সন্তানেরা। বাবা-মায়ের বাইরে দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা-ফুফু, মামা-খালাদের সংস্পর্শ নেই বললেই চলে। এ বিচ্ছিন্ন বিলাসিতা আমাদের এবং পরবর্তী প্রজন্মকে মানসিক ভাবে পঙ্গু করে দিচ্ছে। দেখা যায়, আমাদের দেশে সন্তানকে ঝুট-ঝামেলামুক্ত জীবন দিতে চান অনেক বাবা মা-ই। অতি আরাম-আহ্লাদ, ফুলের টোকাটি গায়ে না যেন লাগে প্রেক্ষিত তৈরি করে সন্তানদের বড় করতে চান। এভাবে তারা হয়ে ওঠে ননির পুতুল। কিন্তু সন্তানকে যতই আপনার শীতল ছায়ায় রেখে আরাম দেন না কেন, বাইরের কঠিন পৃথিবীর সঙ্গে লড়াইটা কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে একাই লড়তে হয়। নিজের ঘর পরিষ্কার করা, মেহমান আপ্যায়ন, ছোটখাটো রান্না, বিভিন্ন বিল দেওয়াসহ নানা কাজে সন্তানদের অংশ নিতে দিন। এই ছোট ছোট অংশগ্রহণই একদিন বড় কাজ করার রসদ জোগাবে। এতে করে চারদিক সামলিয়ে জীবনে কীভাবে এগিয়ে যেতে হয় এবং নেতৃত্বের মৌলিক গুণাবলির দীক্ষা ছোটবেলা থেকেই পাবে সন্তানরা।
অল্পতে তুষ্ট থাকা, সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত থাকার চেষ্টা, নিজের শখগুলোর যত্ন নেওয়া, মানুষের বিপদে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা পরিবার থেকেই শুরু হওয়া প্রয়োজন। জীবনে কেবল ভালো ছাত্র হওয়ার পেছনে না দৌড়িয়ে ভালো মানুষ হওয়ার চর্চা জারি রাখা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারকে হতে হবে এসব শুভচর্চার সূতিকাগার।মনে রাখা দরকার, সন্তানের প্রথম বিদ্যালয় হচ্ছে পরিবার। নৈতিক শিক্ষা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীল আচরণবিষয়ক শিক্ষা সন্তান বাবা-মায়ের কাছ থেকেই শেখে। বউকে আমরা যে আচরণ করব, আমাদের সন্তানরা সেটাই শিখবে।
অভ্যাস-২৫৯ ▌সফল হতে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনুন।
১) তালিকা তৈরি করুন-প্রথমে আপনার লক্ষ্যে পৌছাতে কি কি যোগ্যতা অর্জন করা দরকার, তার একটি তালিকা তৈরি করুন। তালিকা তৈরির পর সেটি এমন জায়গায় টাঙিয়ে রাখুন যাতে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত আপনার চেখে পড়ে।
২) আপনার কাজের জায়গা পরিষ্কার ও গোছালো করে রাখুন-বিশৃঙ্খলা মানুষকে সর্বদাই বিভ্রান্ত করে। আপনার কাজের অথবা পড়ার জায়গা যদি অপরিষ্কার ও বিশৃঙ্খল অবস্থায় থাকে তবে আপনি কোনও কিছুতেই মনোনিবেশ করতে পারবেন না।
৩) মনোযোগ নষ্ট হয় এমন জিনিস সরিয়ে রাখুন-যেই সময়টুকু আপনি আপনার কাজ করছেন অন্তত সেই সময়ে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-পরিজন, স্মার্ট ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া কোনও কিছুতেই সময় নষ্ট করবেন না।
৪) ভোরে ওঠার অভ্যাস করুন-প্রথম প্রথম একটু অসুবিধে হলেও সূর্য ওঠার আগে বা সঙ্গে সঙ্গে ঘুম থেকে উঠতে পারলে কাজের জন্য অনেকটা সময় পাওয়া যায়। তাছাড়া ভোরে উঠলে একাগ্রতা ও মেধার উৎকর্ষতা বাড়ে।
৫) সপ্তাহের শেষে আনন্দ করুন-৫/৬দিন কাজ করার পর হাতে এক বা দুই দিন রাখুন আরাম এবং আনন্দ করার জন্য। এই সময় কাজ বা অন্যান্য গুরুত্বপূ্র্ণ বিষয়ের কথা ভাববেন না।
অভ্যাস-২৬০ ▌’না’ বলার অভ্যাস তৈরি করুন
কখনো কি এমন হয়েছে যে, আপনি কোনো কাজ করতে চাচ্ছেন না, অথচ শুধু ‘না’ বলতে পারার কারণে ঠিক সেই অপছন্দের কাজটিই করতে হয়েছে আপনাকে? ঠিক একই ব্যাপার খাওয়ার ক্ষেত্রেও সত্য। আমরা ভ্রদ্রতার তাগিদে ‘না’ বলার অভ্যাস হারিয়ে ফেলি। যেটা পরবর্তীতে সমস্যাগুলোর জন্ম দেয়। হয়তো না বলাটা ঠিক হবে কিনা দ্বিধায় ভোগেন বলে ‘না’ বলতে পারেন না আপনার অপছন্দের ব্যাপারেও। অনেক সময় শুধু ভয় কিংবা সম্মানের জায়গা থেকেও কাউকে ‘না’বলাটা সম্ভব হয় না। আপনি কি নিশ্চিত জানেন যে, আপনার কাজটি করতে ভালো লাগছে না। তাহলে বেশি না ভেবে দ্রুত ‘না’ বলে দিন। অন্যথায়, ব্যাপারটি মানসিকভাবে আপনাকে আরো সমস্যায় ফেলে দেবে। আপনি তাকে এটাও বলতে পারেন যে, আপনি এখন কাজটি করতে পারছেন না; তবে ভবিষ্যতে সেটা করার চেষ্টা করবেন। এতে আপনিও নেতিবাচক হবেন না এবং আপনার উপরে কোনো বাড়তি দায়িত্বও থাকবে না।
অভ্যাস-২৬১ ▌বার্ধক্যকে উপভোগ করার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করুন
আগের আমলে কলেরা, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, প্লেগ, কালাজ্বরের মতো মহামারি, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃত্যু গড় আয়ু কমিয়ে রেখেছিল। ফলে মানুষ প্রবীণ হওয়ার সুযোগ তেমন একটা পেত না। অল্প কিছুসংখ্যক মানুষ যারা প্রবীণ হতেন, তাদের বেশির ভাগই নারী। এই প্রবীণ নারীরা সমাজে, পরিবারে খানিকটা অসম্মান-অপমানের শিকার হতেন। তাদের সবাই বুড়ি হিসেবে সম্বোধন করতো। কানা বুড়ি, চরকা বুড়ি, কুটনি বুড়ি, কুঁজো বুড়ি, উকুনে বুড়ি, পেত্নি বুড়ি, ডাইনি বুড়ি—এসব বলে প্রবীণ নারীর চলাফেরা, আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা হতো। নেতিবাচক পরিচিতি দিতে বলা হতো—চাল নষ্ট মুড়ি আর পাড়া নষ্ট বুড়ি। ফলে প্রবীণ নারীরা রাগে-দুঃখে, অসম্মান, অপমানে অভিযোগ, নালিশ, অভিশাপ দিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তবে প্রবীণ পুরুষদের হাতে জমিজমা, সহায়-সম্পদ থাকায় তারা তেমন একটা বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো না। নোবেল বিজয়ী আমেরিকান লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ১৯৫২ সালে রচনা করলেন ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ নামের কালজয়ী উপন্যাস। উপন্যাসের নায়ক সান্তিয়াগো ৮৫ বছর বয়সি কিউবান মৎস্য শিকারি। স্ত্রী বেঁচে নেই। একাকী থাকেন। যিনি প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে বিজয়ীর বেশে ফিরে আসেন। নিঃসঙ্গতা, হতাশা, সমালোচনা, ক্লান্তি তার কাছে পাত্তা পায় না। এতে সারা পৃথিবী প্রবীণদের স্পেস দিতে শুরু করে।
আমাদের দেশে প্রবীণদের জন্য আলাদা করে বিনোদন নেই। আছে বিক্ষিপ্তভাবে। প্রবীণের মন-মানসিকতা, চাহিদা, বিনোদন বিবেচনায় নিয়ে প্রবীণ ক্লাব,সমিতি তৈরি করা সময়ের দাবি। বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি প্রবীণের বসবাস। তাদের জীবনের নানান চ্যালেঞ্জ, সংকট, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, প্রেম-বিরহ, ব্যথা-বেদনা, নিঃসঙ্গতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ বার্ধক্যকে উপভোগ করার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হোক।
অভ্যাস-২৬২ ▌ ভেবেচিন্তে কাজ করুন
বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রগতির পুরাভাগে রয়েছে তরুণদের অংশগ্রহণ। আমরা জানি, তরুণরাই জাতির সবচাইতে উজ্জ্বল, সৃষ্টিশীল ও উদ্যমী শক্তি। তারা একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। দার্শনিক জর্জ বার্নার্ড শ বলেছেন যে, নূতন কিছু করাই তরুণদের ধর্ম। তরুণরা সত্যিই নূতনের পূজারি। কিন্তু কোনো কাজ পেলেন আর ওমনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কাজটা কি? কীভাবে করবেন। একটুও ভাবলেন না। বুঝেও নিলেন না। এমন চঞ্চল স্বভাবের যারা। তারা এক কাজ দশবার করেন। বারবার সংশোধন করেন। না বুঝে কাজে নামলে এমনটাই হয়। তাই কাজটা কি বুঝে নিন। পূর্বে এই কাজটা করা হয়ে থাকলে সে রিপোর্ট দেখুন। একটু চিন্তা করুন। কাজটি করার অনেক পথ আছে। সঠিক পথটা ভেবে চিন্তে বেছে নিন।
অভ্যাস-২৬৩ ▌নিজের জিন সম্পর্কে জানুন:
জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে ডিএনএ সম্পাদনার সূক্ষ্মতম কৌশল উদ্ভাবনের স্বীকৃতি হিসাবে রসায়নে নোবেল পেয়েছেন দু'জন নারী গবেষক - ফ্রান্সের এমানুয়েল শাপেনটিয়ে এবং যুক্তরাষ্ট্রের জেনিফার ডুডনা। এর ফলে জন্মসূত্রে পাওয়া বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের সুযোগও তৈরি হবে। মানুষের শরীরে তিন বিলিয়ন জোড়া বেইসের মধ্যে জিন রয়েছে মাত্র ২০ হাজারের মতো। এই জিনগুলো সম্মিলিতভাবে মানবের সকল বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। বিশেষ কোনো অসুখে পড়ার প্রবণতা হয়তো আপনার মধ্যে বেশি থাকতে পারে। কিন্তু আপনার পরিবারের বা বংশের অন্যান্য সদস্যদের অসুখ বিসুখের ইতিহাস জানা থাকলে সেটা আপনাকে সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করতে সাহায্য করবে। শরীরে কোনো কোনো জিনের কারণে আমরা বিশেষ একটি রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। বংশের কারো কোনো জটিল রোগ হয়েছিল কিংবা কোনো রোগে পরিবার বা বংশের কার মৃত্যু হয়েছিল সেটা মাথায় রাখা উচিত। একই ধরনের রোগ যাতে নিজের কাছে না আসে, আগে থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নি্তে হবে।
অভ্যাস-২৬৪ ▌পর্যাপ্ত পানি পান করুন
শরীরের একটা কমন রুলস আছে। এটাকে বলা হয়- রুলস অফ থ্রি। বাতাস ছাড়া একজন মানুষ তিন মিনিটের বেশি বেঁচে থাকতে পারে না। পানি ছাড়া একজন মানুষ তিন দিনের বেশি বেঁচে থাকতে পারে। খাবার ছাড়া একজন মানুষ তিন সপ্তাহের বেশি বেঁচে থাকতে পারে না। কোনো ধরনের রোগ ছাড়া যাদের শরীরের চামড়া অযথাই খসখসে, অন্যতম প্রধান কারণ পানিশূন্যতা।
চামড়াকে উজ্জ্বল এবং সতেজ রাখতে প্রয়োজনীয় পানিপান করবেন নিয়মিত। কোনো কারণ ছাড়াই অযথা দুর্বল লাগছে, ক্লান্ত লাগছে। বুঝবেন- শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেছে। অযথা মুখ, ঠোঁট শুকনো থাকলে বুঝবেন নিয়মিত পানিপান করছেন না। কোনো রোগ বা ওষুধ ছাড়া কোনো কারণে প্রস্রাবের রং গাঢ় হলে বুঝবেন পানিপান জরুরি।
ব্যায়ামের পর ভুল করে অনেকে একসঙ্গে অনেক বেশি পানিপান করবেন না। উল্টো ফল হবে। এক কাপ বা দু কাপ পানি একটু পর পর আস্তে আস্তে পান করবেন। মহিলাদের দৈনিক ২.৭ লিটার এবং পুরুষের ৩.৭ লিটার পানিপান করতে পারলে ভালো। প্রতিদিন বেশি বেশি পান করা সুস্বাস্থ্য, শক্তি এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার গোপন রহস্য, বেশি পানি খেলে ওজন কমবে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
অভ্যাস-২৬৫ ▌পড়া বা কম্পিউটারে কাজ করার সময় গভীরভাবে শ্বাস নিন
একটানা সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টার বেশি পড়া উচিত নয়। প্রতি ২ ঘণ্টা পর পর ২০ মিনিটের বিরতি নিতে হবে। এই সময়ে দীর্ঘশ্বাস নিলে দেহে সজীবতা এনে দিবে। শান্ত হয়ে দীর্ঘশ্বাস নিলে শরীর অতিরিক্ত অক্সিজেন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে বহন করে শরীরে শক্তি এনে দেয়। দীর্ঘশ্বাস নেয়া চাপ ও উদ্বেগও হ্রাস করে।
পড়াশোনার সময় ঘুমিয়ে পড়া থেকে বিরত থাকতে পুষ্টি এবং ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। সালাদ, মসুর ডাল এবং প্রচুর ফল ও শাকসবজি-সমৃদ্ধ সুষম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া জরুরি। সাধারণত যে খাবারে ফ্যাট বেশি থাকে তা আমাদের তন্দ্রাচ্ছন্ন এবং অলস করে তোলে। পড়াশোনার সময় ঘুম আসার প্রধান কারণ রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রতি রাতে অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি।
পড়তে পড়তে যখনই আপনার খুব ঘুম লাগবে, তখনই বিরতি দিন এবং ২০ থেকে ৩০ মিনিটের একটি পাওয়ার ন্যাপ( হালকা ঘুম) নিয়ে নিন। পানি শূণ্যতা মস্তিষ্ককে সঙ্কুচিত করে থাকে! তাই পড়ার সময় পর্যাপ্ত পানি না পান করুন। এর পরও যদি আপনি ঘুম ঘুম অনুভব করেন তাহলে কিছুক্ষণের জন্য হাঁটাহাঁটি করুন। নাচতে পারেন আপনার পছন্দের গান চালিয়ে দিয়ে।
অভ্যাস-২৬৬ ▌নির্বোধ থাকবেন না। চিন্তা করুন->>
নিজের ভিতরে খুঁড়ে দেখুনমি? বিশ্লেষণ ক্রুন নিজেকে। পরিস্থিতির ওজন না বুঝে যা খুশি বলা যাবে না। যা ইচ্ছে প্রত্যাশা করা যাবে না। পরিস্থিতিকে সন্ধিবিচ্ছেদ করে বুঝে দেখতে হবে—যা হচ্ছে বা হতে চলেছে;, তা কেন দরকার? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে তারপর পদক্ষেপ ্নিতে হবে। নইলে পতন অনিবার্য।
আগ-পিচ না ভেবে হয়তো পাইপলাইনে থাকবার জন্য লাফ দিয়ে পাইপের মধ্যে ঢুকে পড়লেন। সেই পাইপলাইনে জ্যাম তৈরি করে সমস্যা তৈরি করলেন। কিন্তু লাভ কিছুই হলো না, বরং বড় ক্ষতি হয়ে গেল। হিসেব করে ক্ষতির মাত্রা দেখলে অবাক হয়ে যাবেন। কাজেই নিজের ওজন বুঝে পা ফেলতে হবে, ওজন না বুঝে ঝাঁপ দিলে বিপদে পড়তে হবে।
আসলে আমাদের বেশির ভাগ মানুষই খুব বেশি ‘চিন্তা’ করার ধীশক্তি রাখেই না। বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন মনে করতেন—‘৫ শতাংশ মানুষ চিন্তা করতে পারেন। ১০ শতাংশ মানুষ মনে করেন যে, তারা চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা রাখেন। অন্যদিকে ৮৫ শতাংশ মানুষ যেন পণ করেছে, তারা বরং মারা যাবেন তবু চিন্তাভাবনার ধার ধারবেন না।’ তারা আসলে অবোধ শিশুর মতো। যেই শিশু জানে না—আগুনে হাত দিলে হাত পুড়বে—সে তো আগুনের উজ্জ্বল জ্যোতি দেখে তাকে ধরতে ব্যাকুল হবেই।
দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছেন—‘একজন মানুষকে উত্তরের চাইতে তার প্রশ্ন দ্বারা বিচার করো।’ কারণ প্রশ্ন করতে হলে চিন্তাভাবনা করতে হয়। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী বলে খ্যাত সক্রেটিস কিন্তু উত্তর দিতেন না, শুধু প্রশ্ন আর পাল্টা প্রশ্ন করতেন, এই ধারালো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যুবকদের দল তার পিছনে সারাদিন ঘুরঘুর করত।
অভ্যাস-২৬৭ ▌জীবনের মূল লক্ষ্য করুন- প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করা
কারো কাছে জীবন মানে একটি সুখী সুন্দর পরিবার গঠন, কারো কাছে জীবন একটি যন্ত্রণার নাম, আবার কারো কাছে জীবন মানে অঢেল সম্পদশালী হওয়া, কিন্তু সহজ মানুষের কাছে জীবন মানে শুধুই ভালোবাসা আর হাসি-আনন্দের মাধ্যমে প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করা।
আপনি পৃথিবীতে যখন এসেছিলেন তখন এত দুর্বল ছিলেন যে, মায়ের সাহায্য ছাড়া নড়া-চড়া বা খাবারটুকুও মুখে নিতে পারতেন না। আপনি যখন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন, তখনও এরকম অত্যন্ত দুর্বল ও অসহায় থাকবেন। তার অনেক আগে থেকেই অর্থাৎ মধ্য বয়সের পর থেকেই একাকিত্বের মাধ্যমে শুরু হবে এই বিরক্তিকর পথ চলা। বয়স যত বাড়বে, তত একা হতে থাকবেন আর সুত্র অনুযারী একা মানে বোকা।
একটাই জীবন! আমার এই জীবনের দৈর্ঘ্য কত, তা আমরা কেউ জানি না। অর্থাৎ একই সময় জন্ম নেয়া এই মানুষগুলোর একসাথে থাকার এই পরিসর খুবই ছোট। তারপরও ক্ষণিকের এই যাত্রায় নিজেদের মধ্যে কেন এত হানাহানি, এত মারামারি, এত হিংসা, এত বিদ্বেষ, এত সংঘাত, এত বেঈমানী।
অভ্যাস-২৬৮ ▌ রিভাইজ, রিভাইজ এন্ড রিভাইজ
গবেষণায় দেখা গেছে- আমরা আজকে সারাদিনে যত কিছু, দেখি, শুনি, জানি বা পড়ি তার ৫দিন পরে চারভাগের তিনভাগই ভুলে যাই। তবে এই ভুলে যাওয়া ঠেকানোর জন্য অনেকগুলা ট্রিকস আছে। যেমন ফ্রি সময়ে পড়াটা মনে মনে রিভাইজ দেয়া এবং কোথাও আটকে গেলে আরেকবার দেখে নেয়া। আজকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পড়লে ঘুমানোর আগে এবং ঘুম থেকে উঠে এই বিষয়টি আবার রিভাইজ দেয়া।
তারপর এক সপ্তাহ পরে আরেকবার রিভাইজ দিলে এই পড়ার ৯০% জিনিস এক মাস পর্যন্ত আপনার মনে থাকবে। যে জিনিসটা আজকে পড়ছেন, সেটা- গোসল, ভাত খাওয়া, সিঁড়ি দিয়েই নামা, বাসের জন্য অপেক্ষা, এমনকি বাথরুম করার সময় চিন্তা করবেন। যতবেশি চিন্তা করবেন, যতবেশি মনে মনে রিভাইজ দিবেন, তত বেশি মনে থাকবে।
অভ্যাস-২৬৯ ▌পরিপাটি পোশাক পরিধান করুন
বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে যে সুষ্ঠু পোশাক পরিধান আপনার পারফর্মেন্সের এর ওপর মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রভাব ফেলে। একটি পুরনো উক্তি আছে এমন, ‘আপনি সেই চাকরীর জন্যে পোশাক পরিধান করুন, যে চাকরী আপনি পেতে চান। সেটির জন্য নয় যা আপনি বর্তমানে করছেন’। আমরা সকল মানুষকে তার পোশাক দিয়ে বিচার করতে ভালোবাসি। কেউ যদি সবার থেকে আলাদা হয়ে নিজেকে তুলে ধরতে চায়, তবে এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে তার পোশাক আসে। রাস্তায় কোন সাধারণ মানুষ বসে থাকলে পাশাপাশি একজন পুলিশ বা ডাক্তারি পোশাক পরা কেউ বসে থাকলে মানুষ দুইজনকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করবে।
বেশ কয়েকটি গবেষণা বলছে আপনার পরিধানকৃত পোশাকের রঙ আপনার শারীরিক ও মানসিক পারফরমেন্সের উপর প্রভাব রাখতে পারে। আপনার চিন্তাভাবনা, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা-দক্ষতা, হরমোন লেভেল, এমনকি মানসিক উৎকর্ষতা ও উৎফুল্লতার উপর প্রভাব রাখতে পারে পোশাকের রঙ। গবেষণা বলছে পোশাক পরিধানের ধরণ অনুসারে মানবদেহ-মনে কিছু জৈবিক ব্যাপার স্যাপার ঘটে যায়। কোনো পোশাক পড়লে নিজের কাছে অস্বস্তি লাগতে পারে, আবার কোনো পোশাক পরলে নিজেকে নতুন এক উদ্দীপ্ত মানব বলেও মনে হতে পারে।
অভ্যাস-২৭০ ▌ সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর জন্য কী করবেন?
কানাডার কুইনস ইউনিভার্সিটির এক নতুন গবেষণা জানাচ্ছে, একাকিত্বের সঙ্গে মানুষের হুট করে বুড়ো হয়ে যাওয়ার ও বয়সজনিত বিভিন্ন রোগ ও সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার সরাসরি প্রভাব আছে। গবেষণাটি ১ হাজার ৬০০ জন বয়স্ক মানুষের ওপর ২০ বছর ধরে পরিচালিত হয়েছে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কসহ শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কার্যকারিতা হারাতে থাকে। সে সময় কেউ যদি একা থাকেন, তাঁর যদি বেঁচে থাকার কোনো লক্ষ্য, উদ্দেশ্য বা তাগিদ না থাকে, তাহলে সেই প্রক্রিয়া আরও দ্রুতগতিতে চলতে থাকে। সামাজিক বা পারিবারিক জীবনযাপন না করলে বৃদ্ধদের বয়সজনিত জটিলতা বাড়ে। তাই আপনি যদি চান যে আপনার মা–বাবা সুস্থভাবে বেঁচে থাকুক, তাহলে তাঁদেরকে সময় দিন। মা–বাবাকে ছোট ছোট দায়িত্ব দিন। দূরে থাকলেও নিশ্চিত করুন, তাঁরা যাতে একা না হয়ে যান নতুন বন্ধু তৈরি এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাদের যুক্ত করুন।
পাশাপাশি আপনার শরীর সুস্থ রাখতে হাটা বা ব্যায়াম করা যেমন প্রয়োজন, তেমন প্রয়োজন বন্ধুত্বের। এটি বোঝার জন্য ‘বায়োসাইকোসোশ্যাল’ মডেল সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন। এই মডেল ব্যাখ্যা করে কীভাবে জৈবিক, মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক কারণ স্বাস্থ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেলথের কয়েকজন গবেষক প্রায় সাত হাজার মানুষের ওপর একটি দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা শুরু করেন। গবেষণার যে ফলাফল গবেষকদেরও অবাক করেছিল তা হলো, সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক। সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কের এই সংযোগকে স্বীকৃতি দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘আ গ্লোবাল হেলথ প্রায়োরিটি’ নামে নতুন একটি কমিশন গঠন করেছে।
অভ্যাস-২৭১ ▌ ক্রিয়েটিভ চিন্তার সহায়ক হাঁটা-হাঁটি করুন
দীর্ঘ দিন ধরে একটি কথা প্রচলিত রয়েছে, ক্রিয়েটিভ চিন্তা করছেন? তাহলে হাঁটুন। হাঁটলে দ্রুত কাজ হবে। এই পদ্ধতি যে সত্যিই কাজ করে এমন প্রমাণ মিলেছে এবার গবেষকদের হাতে। একটি জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে স্ট্যানফোর্ডের গবেষকরা বলেন, তারা বিভিন্ন ছোট ছোট মানদণ্ড নির্ধারণ করে গবেষণাটি চালান। পরবর্তীতের নিউ ইয়র্ক টাইমস তাদের এ গবেষণাটি ব্রেক করে।
গবেষণায় দেখা গেছে হাঁটার সময় মানুষের ক্রিয়েটিভিটি বেড়ে যায়। তাদের ক্রিয়েটিভ চিন্তা করতে দিয়ে দেখা যায়, হাঁটা ক্রিয়েটিভ চিন্তাকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়। কেবল হাঁটার সময়ই নয়, কিছুক্ষণ হেঁটে আসার পরে বসে থাকলেও এর রেশ থাকে। ফলে যারা ক্রিয়েটিভ কাজ করেন, এ গবেষণাটি তাদের জন্য খুবই কার্যকর । বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গবেষকরা বলেন, হাঁটলে আমাদের শরীরে ঠিকমতো রক্ত সঞ্চালন হয়, ফলে শক্তি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এতে মস্তিষ্কেও কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আসে।
অভ্যাস-২৭২ ▌লার্নিং ইজ আ নেভার এন্ডিং প্রসেস।
শেখার যেমন কোনো বয়স নেই, তেমনি নেই শেষও। যে কোনো বয়সে, যে কোনো অবস্থাতেই শেখার সুযোগ রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়তই শিখছি—হোক তা প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা অপ্রাতিষ্ঠানিক। আবার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই যে আমাদের শিক্ষিত করে তোলে, সবক্ষেত্রে এমনটাও নয়! একইভাবে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করলেই যে শিক্ষিত হওয়া যায়, এ কথাও ঠিক নয়! মূলত এ কারণেই ‘সুশিক্ষিত’ ও ‘স্বশিক্ষিত’ শব্দ দুটির সঙ্গে প্রতিনিয়ত পরিচিত হতে হয় আমাদের।
অভ্যাস-২৭৩ ▌ নতুনত্ব ও বৈচিত্র খুঁজুন
নানা জায়গায় ঘোরা এবং এক্সপ্লোর করা আমাদের মন-মানসিকতা ও ব্রেনের জন্য ভালো। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ নতুন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেলামেশা ও কথা বলা আমাদের ব্রেনের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। যে লোক সমাজের নানা লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করে, দেখা যায় তাদের স্মরণশক্তি অনেকখানি বেড়ে গেছে, তার এডজাস্টমেন্ট করার ক্ষমতা এবং নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা বেড়ে যায়। যে শিশু বাড়িতে একা বড় হয়,; তার সঙ্গে যে শিশু স্কুলে যায়, বাজারে যায়; তাদের পার্থক্য তৈরি হয়।
সুখ নিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫ বছরের এই গবেষণার ফলাফল হলো, সুখ আপনি ক্যারিয়ার, সফলতা বা অর্থস¤পদের মধ্যে খুঁজে পাবেন না, বরং সুখে থাকার জন্য আমাদের দরকার হয় ‘সঠিক মানুষ’। আমাদের দরকার চারপাশে ‘সামাজিক সুস্থতা’ তৈরি করা। প্রিয়জনের সঙ্গে ঠুনকো ঝগড়া হলে যখন আপনি রাতে ঘুমাতে পারেন না, তখন বুঝবেন, সমস্যাটা আপনার ঘুমে নয়; সমস্যাটা আপনার স¤পর্কে। সুখ আভ্যন্তরীণ শান্তি অর্থাৎ ‘ডোপামিন হরমোনের’ উপর নির্ভরশীল। এই হরমোন ধরে রাখার উপায় হচ্ছে-‘পরিবর্তন’। অর্থাৎ নতুনভাবে কিছু করতে পারলে ডোপামিনের মাত্রা বাড়ে। কারণ মস্তিষ্ক নতুনত্ব পছন্দ করে। তাই স¤পূর্ণ নতুন কোনো দক্ষতা অর্জনের চেষ্টাও করুন। যা কিছু মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করবে, তাতেই তৈরি হবে টাটকা ডোপামিন। ভুল ও টক্সিক মানুষকে দূর করে সঠিক মানুষদের নিজের আশপাশে রাখা এবং স¤পর্ক মজবুত রাখার মাধ্যমে সামাজিকভাবে সুস্থ থাকার লাইফ স্ট্যাইল হচ্ছে ‘সহজ জীবন’।
অভ্যাস-২৭৪ ▌কাউকে বদলানোর চেষ্টা করা বাদ দিন
প্রিয় মানূষ্টির অভ্যাস, তার পছন্দ, ইচ্ছা, শখ অথবা অভ্যাস হুট করে মানসিক চাপ দিয়ে বদলানোর চেষ্টা করলে সেক্ষেত্রে সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হবে। দুইজনে মিলেই দুইজনের পছন্দ-অপছন্দকে জানুন, গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করুন। একে অন্যের ভালো লাগাগুলোকে সম্মান করতে শিখুন। আপনি যদি মনে করে থাকেন যে, আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে বদলালে আপনার সম্পর্কের ক্ষেত্রে উন্নতি হবে, তবে সেক্ষেত্রে আপনার নিজের চিন্তাধারাই সবার আগে বদলাতে হবে! কথায় আছে, মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়। সকালে বদলায়, বিকেলে বদলায়—কারণে বদলায়, অকারণে বদলায়। এই বদলানোটা দোষের নয়। সময়ের এই বহমান স্রোতোধারা মানুষকে বদলানোর মাধ্যমে পরিণত হতে সাহায্য করে।
অভ্যাস-২৭৫ ▌টানেলের শেষপ্রান্তে অবশ্যই আলো আছে...লেগে থাকুন
অনেক জ্ঞানী-গুণীর মতে, আধুনিক জীবনে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ হল আমাদের কর্মের চালিকাশক্তি। অর্থাত্ মানসিক চাপ হল ঘানি। আর সেই ঘানি আমাদের ভিতর হতে নিংড়িয়ে কর্মরস বের করে। এই ঘানি বা চাপ আমাদের জন্য প্রতিবন্ধকতা নয়। এই জন্য আধুনিক জীবনটা যেন অনেকটা প্রেশার কুকারের মতো—যাতে অল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে কা্জ হাসিল করা হয়; কিন্তু সেই প্রেশার কখনো-সখনো ভয়ংকর বিপদও ডেকে আনে।
উদ্বেগের ক্ষেত্রে উইনস্টন চার্চিল বলেছেন, ‘যখন আমি আমার সমস্ত উদ্বেগের দিকে ফিরে তাকাই, তখন আমার সেই বৃদ্ধের গল্পটি মনে পড়ে, যে বৃদ্ধে তার মৃত্যুশয্যায় বলেছিলেন—তার জীবনে যত দুশ্চিন্তাজনিত আতংকে জর্জরিত ছিল, যেই সব দুশ্চিন্তার প্রায় কোনোটাই, কখনো ঘটে নাই।’
আমরা কখনোই আমাদের ‘ভবিষ্যত্’ জানি না। আমরা যা যেইভাবে ভাবি, কখনই তান সেইভাবে হয় না। অতীতেও হয় নাই, ভবিষ্যতেও হবে না। সুতরাং টানেলের শেষপ্রান্তে অবশ্যই আলো আছে। শুধু প্রশ্নটা হল, টানেলটা কতখানি লম্বা এবং আপনি সেই লম্বা টানেল পাড়ি দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন কি-না, কিংবা ভয় পাচ্ছেন কি-না। কখনো না কখনো আলো আসবেই—এই বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
অভ্যাস-২৭৬ ▌ অন্যের খুশির জন্য যা করবেন না
১/ সকলের সাথে সকল বিষয়েই একমত হবার ভান করবেন না। কারোর কোন মতামতের সাথে একমত হতে না পারলেও ধৈর্য ধরে বিনয়ের সাথে শোনা দারুণ একটি সামাজিক দক্ষতা। কিন্তু, নিজের দর্শন, বিশ্বাস ও মতের বিরুদ্ধে গিয়ে শুধুমাত্র অন্যের/সবার কাছে ভালো হতে চান বলে সকলের মতামতের সাথে একমত হওয়াটা দারুণ বাজে ব্যাপার। ২/ আপনি কষ্ট পেলেও সেটা স্বীকার না করা থেকে বিরত থাকুন। আপনি কখনো কখনো আপনার চারপাশের মানুষের কোনো না কোনো আচরণে কষ্ট পাবেন। এটাকে স্বীকার করে, তাদেরকে সরাসরি জানানোর মাধ্যমে আপনি কোন ভুল কাজ করছেন না, বরং সম্পর্কটা মজবুত করছেন। কিন্তু, আপনার রাগ, জেদ, মনঃকষ্ট, হতাশা আপনি নিজের মধ্যে চেপে রেখে দেন, তা আপনার জীবনে উন্নতির ক্ষেত্রে অনেক বড় একটি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে। নিজের মূল্যবোধ, নিজের ব্যক্তিত্ব, বিশ্বাস, মতামতকে সবার আগে গুরুত্ব দিতে শিখুন, নিজেকে মূল্যায়ন করতে শিখুন। অন্যের কাছে নিজের একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করুন।
অভ্যাস-২৭৭ ▌অসময়ের ঘুম কমিয়ে আনার কৌশলগুলি কাজে লাগান।
১. রাতে যথেষ্ট ঘুমান। দিনের বেলা ঘুমের প্রবণতা কমিয়ে আনার জন্য রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের কোনো বিকল্প নেই। রাতে সাধারণত আপনি যত ঘণ্টা ঘুমিয়ে পরদিন চনমনে অনুভব করেন তার থেকে দুই ঘণ্টা এমনকি এক ঘণ্টা কম ঘুমালেও পরদিন দুপুর বা বিকেলের দিকে আপনার ঘুম পাবে।
২. আরামদায়ক চেয়ার পরিহার করুন। কোনো কারণে আগের রাতে যথেষ্ট ঘুম না হলে পরদিন অফিসে বা ক্লাসে তুলনামূলক শক্ত চেয়ার বেছে নিন। বাছাইয়ের সুযোগ না থাকলে আপনি পিঠ সোজা করে রেখে বসতে পারেন। চেয়ারে গা এলিয়ে বসবেন না।
৩. সময়মত খাবার গ্রহণ করুন। কাজের চাপে হয়ত সকালের নাস্তা মিস হয়ে গিয়েছে। দুপুরে তাই প্রচণ্ড ক্ষুধায় অনেকখানি খেয়ে ফেললেন। এরপর এমন ভরা পেটে আপনি আর কোনোভাবেই বসে থাকতে পারছেন না। একটু না ঘুমালে তখন মনে হবে বেঁচে থাকাই কষ্টকর। তাই কোনো বেলায় খাবার যেন মিস না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
৪.পাওয়ার ন্যাপ নিন। ব্যাপারটা অনেকটা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতো। হালকা ঘুমিয়ে আপনি পুরো ঘুমটাকে কাটিয়ে দিতে পারেন। চেয়ারে গা এলিয়ে ১০/১৫ মিনিটের জন্য একটি ছোট ঘুম দিতে পারেন।
৫. প্রচুর পানি পান করুন। পানিশূন্যতার জন্য শরীরে অবসাদের পরিমাণ বাড়ে। এর জন্য ঘুম পায় বেশি।
৬. কাজ বা পড়াশোনার বিষয়বস্তু বদলান। কাজ বা পড়াশোনায় একঘেয়েমির জন্য অনেক সময় ক্লান্ত লাগে বা ঘুম পায়। সকালের প্রথম দিকেই রাখতে পারেন অপেক্ষাকৃত সৃজনশীল কাজগুলো।
৭. উঠুন, হাঁটাচলা করুন। একইভাবে আর কতক্ষণ বসে থাকবেন? উঠে একটু হাঁটাচলা করুন। যখন কফি বা চা পান করছেন তখন একটু জানালার কাছে কিংবা সুযোগ থাকলে বারান্দায় বেরিয়ে পড়ুন।
অভ্যাস-২৭৮ ▌ চা/কফি পানের নিয়ম মেনে চলুন
আমরা প্রায় সকালের নাস্তা অথবা দুপুরের খাবারের পরে পরেই চা/কফি পান করি| কিন্তু চা/কপি পেটের ভিতবে খাবার থেকে আমিষ ও ভিটামিন শোষণ করে এবংএর ফলে শরীর এই খাবারগুলোকে হজম করতে পারে না| খাবার খাওয়ার অন্তত: আধা ঘন্টা আগে অথবা খাবার খাওয়ার এক ঘন্টা পরে অর্থাৎ খাবারগুলোকে শরীর ঠিক মত হজম প্রক্রিয়া শেষ করার পর চা পান করা উচিত|
দুধ চা না রঙ চা: জার্মানির বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এক পরীক্ষায় ১৬ জন নারীকে একবার রং চা, আরেকবার দুধ চা পান করতে দেন। তারপর প্রতিবারই আলট্রাসাউন্ড পদ্ধতিতে তাঁদের রক্তনালির প্রসারণ মাপা হয়। এই পরীক্ষায় দেখা যায়, রং চা রক্তনালির প্রসারণ ঘটায়। রক্তনালির প্রসারণ উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্রোগ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত জরুরি। চায়ে থাকা ক্যাটেচিন রক্তনালির প্রসারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অন্যদিকে দুধ চা রক্তনালির প্রসারণ ঘটাতে ব্যর্থ। কারণ, দুধের মধ্যে থাকে ক্যাসেইন নামের একটি পদার্থ, যা চায়ের মধ্যে থাকা ক্যাটেচিনকে বাধাগ্রস্ত করে। এতে চায়ে দুধ মেশালে চায়ের রক্তনালি প্রসারণের ক্ষমতা একবারেই চলে যায়। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব অ্যাগ্রিকালচারের গবেষকেরা পরীক্ষা করে দেখেন, চায়ের প্রভাবে কোষগুলো থেকে সাধারণের তুলনায় ১৫ গুণ বেশি ইনসুলিন নির্গত হয়।
ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন নির্গত হওয়া জরুরি। কিন্তু চায়ে দুধ মেশালে এই ইনসুলিন নির্গমনের হার কমতে থাকে। চায়ে যদি ৫০ গ্রাম দুধ মেশানো হয়, তাহলে ইনসুলিনের নির্গমন ৯০ শতাংশ কমে যায়। রং চা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস ও ওজন নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর।
কপিঃ আপনি যদি কফি নিয়মিত পান করেন, তাহলে টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগের ঝুঁকি কমে আসে। কারণ, কফি আপনার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের যে অবস্থান, এটাকে কারেক্ট করে। সাথে সাথে কফি উদ্বেগ দূর করে, বিষণ্ণতা দূর করে এবং আপনাকে এনার্জেটিক করে তোলে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, মুড সুয়িং দূর করতে কফি সহায়তা করে। অনেকে নার্ভাসনেসে ভোগেন, তখন কফি পান করলে এই সমস্যা দূর হয়। নিয়মিত কফি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
অভ্যাস-২৭৯ ▌ 'সমাধান বৃত্ত' খুজে বের করুন
আমরা নিত্যদিন হাজারও বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাই, বিচলিত হই, আলোড়িত হই, আক্ষেপ করি, হতাশা প্রকাশ করি। যেমন- দেশের কী যে হবে, জঙ্গিরা দেশটাকে নষ্ট করে ফেলল, এই ট্রাফিক জ্যাম আর সহ্য হয় না, বাচ্চাটাকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না, ইত্যাদি। এমন অসংখ্য বিষয় প্রতিদিন আমাদেরকে আলোড়িত করে। একটি বড় বৃত্ত আঁকুন এবং তার ভেতর এগুলো সব লিখে ফেলুন, এই বৃত্তটির নাম ‘সমস্যা বৃত্ত।’ একটু খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, এই অসংখ্য বিষয়ের অনেকগুলোতে আপনার করণীয় কিছু নেই; কিংবা আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আবার অনেকগুলো পাবেন যেগুলো আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে। এবারে ছোট করে আরেকটি বৃত্ত আঁকুন, যার ভেতরে ওই বিষয়গুলো থাকবে, যেগুলোকে আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এই বৃত্তটির নাম সমাধান বৃত্ত। এখন কোন বৃত্তটির ওপর আমরা আমাদের সময় এবং শক্তি ক্ষয় করছি, তার ওপর নির্ভর করবে আপনার জিরো বা হিরো হবার প্রক্রিয়া। হিরোরা সময় ব্যয় করেন সমাধান বৃত্ত-এর ওপর, যেগুলো মূলত তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। এবং সে যখন সেগুলোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে শুরু করেন, তখন ধীরে ধীরে হিরো হতে থাকে। অপরদিকে জিরোরা চারদিকের পরিস্থিতিকে দোষারোপ করেন, যেগুলোর ওপর তার নিজের কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। তারা সবসময় খুঁত বের করেন। তাদের অসংখ্য অভিযোগ, যে সকল ক্ষেত্রে নিজের কিছু করার নেই, তারা সেসবে ফোকাস করেন। আমাদের এক ‘হিরো’ একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর সঙ্গে কিছু কাজ করেছিলেন। তিনি ছিলেন প্রচণ্ড মেধাবী, ক্রিয়েটিভ, বুদ্ধিমান এবং দক্ষ। কিন্তু তার নির্বাহীর ব্যবস্থাপনা ছিল অনেকটা স্বৈরশাসকের মতো। সারাক্ষণ তার কর্মচারিদের তাড়া করে বেড়াচ্ছেন, এটা করো, ওটা করো, এক্ষুনি এটা শেষ করতে হবে, এক্ষুনি ওখানে যেতে হবে। কিন্তু আমাদের ‘হিরো’ বুঝতে চেষ্টা করলেন, তার প্রধান নির্বাহী ঠিক কী চাইছেন, তার ভিশনটা বুঝার চেষ্টা করলেন, তার প্রয়োজনটা ধরার চেষ্টা করলেন। তারপর তিনি পুরো বিষয়টির ভেতর প্রবেশ করে কিছু সমাধান একটি কাগজে লিখলেন। পুরো রিপোর্টটি পড়ে প্রধান নির্বাহী অবাক হলেন। এরপর থেকেই পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করল এবং একটা সময়ে সেই হিরো ছেলেটিই হয়ে ওঠে সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু।
অভ্যাস-২৮০ ▌আপনি নিজস্ব নীতি দিয়ে নিজেকে পরিচালিত করুন।
ড. স্টিফেন কোভে তার বই দি সেভেন হ্যাবিট অফ হাইলি এ্যাবফেক্টিভ পিপল-এ লিখেছেন, আমাদের জীবন পরিচালিত দশটি কেন্দ্রের উপর।
১. স্বামী/স্ত্রীকেন্দ্রিক: আমাদের ভেতর অনেক মানুষ আছেন যারা পরিচালিত হন স্বামী কিংবা স্ত্রী দ্বারা। তাদের সব কিছুর সাথেই তাদের স্বামী কিংবা স্ত্রী জড়িয়ে রয়েছে। এই ধরনের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রজ্ঞা এবং ক্ষমতা দুটোই বিলুপ্ত হয়।
২. পরিবারকেন্দ্রিক: যারা পরিবারকেন্দ্রিক, তাদের নিরাপত্তা কিংবা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যকে ঘিরে থাকে তাদের পারিবারিক ট্রেডিশন নয়তো কালচার। এটা করা যাবে না, ওটা করলে পরিবারের সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে, জমিদার বাড়ির ছেলেরা পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলতে পারবে না, এমন সব অদ্ভুত বিষয় চলে আসে। ফলে এগুলো যদি কখনও ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তখন আপনি পড়েন মহাসাগরে।
৩. টাকাকেন্দ্রিক: অনেকেই আছেন যাদের ধ্যান-জ্ঞান হলো টাকা। তাদের কাছে আর কোনো কিছুর মূল্য নেই। সারাক্ষণ টাকার পিছনে ছোটে। তারা রীতিমত অন্ধই বলা চলে। তাদের সন্তানদের শৈশব থাকে না, পরিবারে সদস্যদের সাথে স¤পর্ক থাকে না। ফলে তার টাকা সবাই ভোগ করে, কিন্তু তাকে সময় দেওয়ার মতো কেউ থাকে না।
৪. কাজকেন্দ্রিক: যারা কাজকেন্দ্রিক মানুষ, তারা একটা সময়ে নিজের শরীর এবং মানুষের সাথে স¤পর্ককে উৎসর্গ করে কাজে মেতে থাকেন। কাজ দিয়েই তাদের পরিচয়- যেমন আমি একজন ডাক্তার, আমি একজন লেখক, আমি একজন অভিনেতা ইত্যাদি। তারা মূলত অন্যান্য ক্ষেত্রে খুব একটা ইতিবাচক হন না।
৫. দখলকেন্দ্রিক: আমাদের মাঝে অনেকেরই দখল মনোবৃত্তি রয়েছে। তারা ঘর, বাড়ি, গাড়ি, গয়না, দামি জিনিসপত্র ইত্যাদি বিষয়গুলো নিজেদের দখলে রাখার পাশাপাশি অনেকেই আবার নাম, খ্যাতি, সামাজিক প্রতিপত্তি ধরে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। তারা বুঝতেই পারেন না যে, এগুলো যেকোনো সময় হারিয়ে যেতে পারে এবং তখন তারা দিশেহারা হয়ে ওঠে। বড় বড় সেলিব্রেটিরা অনেক সময় হতাশায় পতিত হন।
৬. বিনোদনকেন্দ্রিক: একদল মানুষ আছে যাদের কাছে বিনোদন ছাড়া বোর হয়ে যায়। কিন্তু বিনোদন হলো এমন একটা বিষয় যা আপনি এই মুহূর্তে পেয়ে সুখি হচ্ছেন, পরেরবার আপনার এর চেয়েও বেশি কিছুর প্রয়োজন হয়।
আপনি যদি মাত্রারিক্ত ছুটি কাটান, অধিক পরিমাণে সিনেমা দেখেন, অতিরিক্ত টিভি দেখেন, অতিরিক্ত গেম খেলেন, এমন কি নিয়মহীনভাবে অবসর কাটান তাহলে আপনি বিনোদনকেন্দ্রিক মানুষের দলে পড়বেন। এর ফলে আপনার ভেতর অন্য যে ক্ষমতাগুলো ছিল তা আর বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে না।
৭. বন্ধুকেন্দ্রিক: বন্ধুদের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তুলে। তাদের সাথে কোনো মান-অভিমান আপনার যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করতে পারে।
আপনার ভালো বন্ধু থাকবে; কিন্তু সেই নির্ভরতা যেন কোনো অবস্থাতেই স্বামী/স্ত্রীর মতো অতিরিক্ত নির্ভরতায় চলে না যায়। সেক্ষেত্রে বন্ধুদের কর্মকাণ্ডের ওপর নির্ভর করে আপনার মুড ওঠানামা করতে পারে।
৮. শত্রুকেন্দ্রিক: অনেক সময়ে আমরা না বুঝেই কাউকে কাউকে এমন শত্রু বানিয়ে ফেলি যে, সেই শত্রুটিই তার অজান্তেই আপনার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
আপনি বুঝতেই পারছেন না যে, আপনি দিন-রাত যা কিছু ভাবছেন, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সেই শত্রুটি। আপনি প্রতিদিন ভাবছেন, এই লোকটি না থাকলেই আপনার জীবন সুন্দর হয়ে যেত। কিংবা এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আপনি যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অর্থাৎ আপনি আপনার জীবন নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় কলকাঠি দিয়ে দিয়েছেন অন্যের উপর। একইভাবে দেখবেন অনেকেই বিয়ে কিংবা প্রেম ভেঙে দেওয়ার পরও সারাক্ষণ আগের স¤পর্কের কথা বলতে থাকে। আরেকজনকে দোষারোপ করতে থাকে।
৯. ধর্মকেন্দ্রিক: একদল মানুষ আছেন যারা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন। তারা নিজেদেরকে একটি এক্সট্রিম পর্যায়ে নিয়ে যান এবং অন্যদেরকেও সেই পথে নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। তাদের স্বাভাবিক জীবন নেই। মানুষের যে স্বাভাবিক জীবন, তারা সেটা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করেন।
১০. আত্মকেন্দ্রিক: আমাদের ভেতর সবচে বেশি পাওয়া যাবে আত্মকেন্দ্রিক মানুষ। এরা নিজেদের ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারে না। এরা অনেকটা মৃত সাগরের মতো, যা খালি নিতেই জানে, কোনোও কিছুই ফেরত দেয় না। যখনই মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যায় তখন তার জ্ঞান, ক্ষমতা সবই খুব ক্ষুদ্র হয়ে যায়। এখন দেখে নিন, আপনার কেন্দ্র কোনটি! এই দশ ধরনের মানসিকতার যদি কোনোটি আপনার মধ্যে থাকে, তাহলে আপনি খুব বেশি পাওয়ার হতে পারবেন না। এই দশ কেন্দ্রিকতা নিয়ন্ত্রণ করে আপনাকে হতে হবে নৈতিকতা কেন্দ্রিক।
একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হতে পারে। ধরুন আপনি স্ত্রীকে নিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখতে যাবেন। টিকিট আছে। সব প্রস্তুত। কিন্তু সকালবেলা অফিস থেকে বস ফোন করে বললেন, তিনি এখনও তার কাজ শেষ করতে পারেননি। কাল তো প্রেজেন্টেশন। আপনি গিয়ে একটু সহায়তা করতে পারেন কি না? আপনি যদি স্ত্রীকেন্দ্রিক হন, তাহলে আপনি বসের কথা অবজ্ঞা করে স্ত্রীকে নিয়ে খেলা দেখতে চলে যাবেন। অফিসের সমস্যা হলে আপনার কী, তাই না? আপনি যদি কাজকেন্দ্রিক হন, তাহলে স্ত্রীকে কিছু না বলেই আপনি অফিসে চলে যাবেন। স্ত্রী মনে কষ্ট পেয়েছে, সেটা নিয়ে আপনি বিব্রত হবেন না। আপনি যদি টাকাকেন্দ্রিক হন, তাহলে এই কাজটি করে আরেকটু বেশি টাকা পেতে পারেন ভেবে আপনি অফিসে যাবেন। আপনি যদি বন্ধুকেন্দ্রিক হন নয়তো বিনোদনকেন্দ্রিক, তাহলে হয়তো দেখতে পাবেন আপনার কিছু বন্ধু খেলা দেখতে যাচ্ছে, তাই আপনিও সেটা মিস করতে চাইবেন না। আপনার সিদ্ধান্তগুলো কিন্তু এভাবেই ঘুরপাক খাবে। আপনি যখন নিশ্চিত হয়ে যাবেন, আপনার সিদ্ধান্ত এই দশটি কেন্দ্র দিয়ে তাড়িত নয়, বরং নিজস্ব নীতি দিয়ে তাড়িত তখন আপনি হয়ে উঠবেন পরবর্তী নেতা। প্রতিষ্ঠান আপনার ওপরই নির্ভর করতে থাকবে। আপনাকে কেন্দ্র করেই ঘটতে থাকবে সবকিছু।
অভ্যাস-২৮১ ▌‘ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স’ জানুন এবং অন্যকে জানান।
আমরা এমন একটি সমাজে বসবাস করছি, যেখানে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ হীনম্মন্যতায় ভুগছে, যার একটি বড় অংশ তরুণ প্রজন্ম। হীনম্মন্যতা এমন এক ধরনের মানসিক সমস্যা, যা নিজের ভালো দিকগুলোকে অস্বীকার করে অহেতুক অন্যের তুলনায় নিজেকে দুর্বল ভাবতে বাধ্য করে।
প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে কেউ এগিয়ে যাবে, কেউ পিছিয়ে পড়বে। পিছিয়ে পড়া মানুষটি ইচ্ছাশক্তি ও কর্মশক্তি দিয়ে আবার সামনের দিকে ধাবিত হবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত হয় তখন, যখন অন্য কারো সাফল্য আমরা সহজভাবে মেনে নিতে পারি না। অথবা অন্য কারো তুলনায় নিজেদের কম যোগ্যতাসম্পন্ন কিংবা কম আকর্ষণীয় মনে করতে শুরু করি। মনস্তত্ত্বের ভাষায় এটিই ‘ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স’।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সাধারণত ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স শৈশবের কোনো জটিল অভিজ্ঞতার কারণে তৈরি হয় বা এমন কোনো পরিবারে শিশুর বেড়ে ওঠে, যেখানে শিশুকে ক্রমাগত হেয় করা হয় কিংবা শিশুকে উত্সাহিত না করে বরং সাফল্য অর্জন করতে না পারায় কটাক্ষ বা বিদ্রুপ করা হয়।
আমরা এমন একটি সমাজে বসবাস করছি, যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক বা সাফল্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক সৌন্দর্য, উচ্চতা এমনকি গায়ের রং দিয়ে সমাজে মানুষকে বিচার করা হয়। ফলে আমাদের আশপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা খুব অল্পতেই ভেঙে পড়েন। এইসব মানুষদের দুর্বলতায় প্রতিনিয়ত আঘাত করছি আমরা।
অভ্যাস-২৮২ ▌ ক্ষুদ্র বিষয়গুলোকে মূল্য দিন
যেকোনো সম্পর্কের গোপন কথা হচ্ছে- সম্পর্কে ক্ষুদ্র বিষয়গুলোই হয়ে ওঠে সবচে’ বড় বিষয়; আর বড় বিষয়গুলো হয়ে যায় গৌন।
আপনি একজন মানুষকে খুব দামি একটি উপহার দিলেন। তাতে হয়তো তিনি সাময়িক খুশি হবেন। আবার আরেকটি মানুষকে আপনি তেমন কোনো উপহার দিলেন না, কিন্তু তিনি গাড়িতে ওঠার সময় ভদ্রতা করে দরজাটা খুলে দিলেন। কার কাছে আপনার প্রভাব বেশি হবে বলে মনে হয়? যার প্রতি আপনি ভালোবাসা দেখিয়েছেন তার কাছে। আপনি দাওয়াত দিয়ে খুব ভালো ভালো খাবার খাওয়ালেন, কিন্তু যাওয়ার সময় অতিথিকে সামান্য হাসিমুখে বিদায় দিলেন না, তাকে ঠিকমতো সময় দিলেন না, কিংবা অতিথির মনে হলো তাকে অবহেলা করা হয়েছে, সেই অতিথি কিন্তু নিজেকে গুটিয়ে নেবে। আপনার প্রতি তার আন্তরিকতা কমে যাবে। তাই ছোট ছোট বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখুন।
অভ্যাস-২৮৩ ▌যেকোনো মূল্যে প্রতিশ্রুতি রাখুন
আপনি যদি কাউকে কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন এবং সেটাকে রক্ষা করেন, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলেন তো আপনার মূল্য কমিয়ে ফেললেন।
এর চেয়ে প্রতিশ্রুতি না দেওয়াটাই সবচে’ উত্তম কাজ।
আপনি যখনই আপনার প্রতিশ্রুতিগুলো রাখতে শুরু করবেন, আপনার উপর সবার বিশ্বাস এবং আস্থা হাজার গুণে বেড়ে যাবে এবং তখন আপনি যা-ই বলবেন, সেটা মানুষ গ্রহণ করবে। আমরা অনেক সময় কথায় কথায় অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে ফেলি। সেটা মূলত আপনার মূল্যকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনবে। তাই যখনই কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেটা রাখার সবটুকু চেষ্টা করবেন; নইলে প্রতিশ্রুতি দেবেন না।
অভ্যাস-২৮৪ ▌ চাওয়া-পাওয়ার গরমিল হলেই সেখানে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে।
আপনার কাছে কে কি প্রত্যাশা করে বসে আছে, কিংবা আপনি কার কাছে কি প্রত্যাশা করে বসে আছেন, সেটার চাওয়া-পাওয়ার গরমিল হলেই সেখানে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। এমনকি কর্মক্ষেত্রেও আপনি ভাবলেন এটা আপনার সহকর্মী করবে, আর উনি ভাবলেন আপনার নিজেরই তো সেটা করার কথা। তারপর তৈরি হলো দূরত্ব। সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনার প্রত্যাশা সে ঠিকমতো বুঝেছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করাটাও জরুরি। প্রত্যাশা এবং তা পূরণের ফারাক যদি থাকে কোনো সম্পর্কে তাহলে সেখানে হতাশা তৈরি হতে বাধ্য। সম্পর্কের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য সঠিক প্রত্যাশাটা ঠিক করে নিন এবং তা অপর পক্ষকে বুঝিয়ে দিন। এটা করতে বেশ সাহসের প্রয়োজন হয়। অনেক সময় মুখফুটে কথাগুলো বলা যায় না। কিন্তু সেই না-বলা কথাই হয়তো ভুল প্রত্যাশার জন্ম দেবে।
অভ্যাস-২৮৫ ▌পারসোনাল ইন্টিগ্রিটি বজায় রাখুন
ইন্টিগ্রিটি হলো, তাদের প্রতি অনুগত থাকা, যারা আপনার সামনে উপস্থিত নেই। বিষয়টি আরেকটু খুলে বলা যেতে পারে। ধরুন, আপনি আপনার সহকর্মী মিলে অপর একজন সহকর্মীকে নিয়ে কথা বলছেন, তাকে নিয়ে এমন কিছু বলছেন যা তার সামনে হয়তো বলতেন না। অর্থাৎ যে মানুষটি উপস্থিত নেই তার প্রতি আপনি অনুগত থাকছেন না; তাকে আপনি রক্ষা করছেন না। আপনি আপনার ইন্টিগ্রিটি হারাচ্ছেন। আপনার যদি ইন্টিগ্রিটি থাকে তাহলে আপনি সেই ব্যক্তিটিকে সামনে ডেকে এনে বলবেন, ঠিক কোন জায়গায় তিনি ভুলটি করেছেন কিংবা ঠিক কোথায় ঝামেলাটা হয়েছে।
ছোটবেলায় সিনেমায় দেখেছিলাম, একজন ভদ্র নারী আরেকজনকে বলছেন,‘খালা গো, আপনাকে একটা গোপন কথা কই, আর কাউরে কইয়েন না। আপনে আপন মানুষ বইল্যা কইতাছি। ওই বাড়ির বউ কিন্তু পোয়াতি...’। এটা শুনে খালার চোখ বড় বড় হয়ে যায় এবং সেই ভদ্র নারী আবারও বলেন, ‘কাকপক্ষীও যেন না জানে গো’ এবং তিনি একই কথা পাড়ার সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন। এমন দৃশ্য নিশ্চয়ই আপনারাও দেখেছেন। ইন্টিগ্রিটি হলো মানুষটির অনুপস্থিতিতে তার প্রশংসা করা, সমালোচনা নয়, তার প্রতি অনুগত থাকা।
অভ্যাস-২৮৬ ▌নিজের ক্রটি খুঁজে বের করুন, ক্রটি স্বীকার করুন
আপনাকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং সেটা সঠিকভাবেই করতে হবে। -- আমি ভুল করেছিলাম, -- আমি তোমাকে সম্মান দেখাইনি, দুঃখিত
মন থেকে এই ধরনের কথা বলতে পারার জন্য প্রচণ্ড মানসিক চারিত্রিক শক্তির প্রয়োজন। যে মানুষটার গভীরের ভীত অনেক শক্ত, যার নীতি প্রচণ্ডরকম প্রখর, কেবল সেই মানুষটাই এভাবে ক্ষমা চাইতে পারে। এর বাইরে এভাবে ক্ষমা চাইবার মতো সৎ সাহস আর কেউ দেখাতে পারবে না। কেউ হয়তো অভিনয় করে ওভাবে দেখাতে পারবে। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই দুঃখিত হয়ে এভাবে ক্ষমা চাইবে একমাত্র সেই ব্যক্তি, যে ভেতরে অনুভব করবে তার ইন্টিগ্রিটিতে একটু ঝাঁকুনি লেগেছিল; কিংবা বিশেষ কোনো মুহূর্তে খেয়াল না করে কাজটি করে ফেলেছেন। তিনি তৎক্ষণাৎ সেটা বুঝতে পেরেই ক্ষমা চাইবেন। সত্যিকার অর্থে ক্ষমা চাইলে আপনার গ্রহণযোগ্যতা ও সম্মান বাড়বে। আর বারবার ক্ষমা চাওয়ার মতো কাজ করলে আপনার ক্ষমা চাওয়াটাকে কেউ সিরিয়াসভাবে নেবে না; আপনার সম্পর্কে অবনতি ঘটবে।
অভ্যাস-২৮৭ ▌ অভিযোগ করার আগে আরেকবার ভাবুন
অভিযোগ করবেন না। মনে রাখবেন, বোকারাই শুধু অভিযোগ করে আর জ্ঞানীরা নতুনভাবে পরিকল্পনা সাজায়। সুতরাং কারো বিরোদ্ধে অভিযোগ করা নয়। এটা নেতিবাচক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ এবং এটা আপনার কোনো কাজে আসবে না।
অভ্যাস-২৮৮ ▌সময় এমন একটা জিনিস, যা কখনো ফিরে আসে না
সময় এমন একটা সম্পদ, যা কাউকে দিয়ে দেওয়া যায়, খরচ করা যায় বা নষ্ট করা যায়। তা নিয়ে আপনি যাই করুন না কেন, একবার চলে গেলে এটা আর ফেরত পাওয়া যায় না। সময় টাকার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। জীবনের শেষে আপনার অনেক টাকা থাকলেও আপনি সময় কিনতে পারবেন না।
অভ্যাস-২৮৯ ▌ আচরণ আপনার মেধার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ
শক্তিশালী ইতিবাচক আচরণ আপনাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। এমনকি এটা কারো মেধার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ গুণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বহু ব্যক্তি খেলাধুলা, বিনোদন, রাজনীতি, বিজ্ঞান ও শিল্পে মেধাবী ছিলেন। কিন্তু তারা তাদের আচরণের জন্য বিফল হয়েছেন। মানুষ কখনোই সবদিক থেকে নিখুঁত কিংবা পরিপূর্ণ হয় না। সবাই একরকমও হয় না। তেমনি আপনাকেও মেনে নিতে হবে, আপনারও ভুল হতেই পারে। আপনার কাজেরও সমালোচনা হতে পারে, নিন্দা হতে পারে। নিজের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিন। আপনি চাইলে আপনার বদ অভ্যাস কিংবা ভুলগুলোর একটা তালিকা তৈরি করতে পারেন। সমালোচনাকে কখনো খারাপভাবে নিবেন না। মনে রাখবেন, সমালোচনাই আপনাকে ধীরে ধীরে নিখুঁত এবং পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
অভ্যাস-২৯০ ▌ মান সবসময় সংখ্যার তুলনায় গুরুত্বপূর্ণ
আপনি যদি কোনোকিছু করতে চান, তাহলে তা এমনভাবে করুন, যেন তা দ্বিতীয়বার করতে না হয়। কোনো কাজ করার জন্য পেছনে ফিরে যাওয়া নিঃসন্দেহে অপচয়। কোয়ানটিটির চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে কোয়ালিটি।
অভ্যাস-২৯১ ▌যৌবনের মূল্য বুঝা যায় বৃদ্ধ বয়সে
ভালোবাসা ...শৈশবে না চাইতেই পাওয়া যায়, যৌবনে তা চুরি করে নিতে হয়, আর বার্ধক্যে তা ভিক্ষা করে পেতে হয়। যৌবনের মূল্য বুঝবে বৃদ্ধ বয়সে, যেমন টাকার গুরুত্ব বুঝবে অভাবে পড়লে।
অভ্যাস-২৯২ ▌ মানুষের শরীরে বানরের মন ( ডোয়ার্ফিজম ও জাইগান্টিজম)
বড় প্রাণীরা, যেমন হাতি, বাঘ, সিংহ, এরা যখন কোনো ছোট ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসবাস শুরু করে, তখন বংশপরম্পরায় এদের আকার ছোট হতে থাকে। তাদের শরীর, মগজ, সবই ধীরে ধীরে খর্বাকায় হয়। কারণ বড় শরীর ধারণের জন্য যে-পরিমাণ খাদ্য দরকার, তা ছোট দ্বীপ বা এলাকায় পাওয়া যায় না। ফলে টিকে থাকার তাগিদে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, প্রাণীগুলোর আকার খর্ব হয়ে আসে, যেন কম খাবারে বেশিদিন বাঁচা যায়। বড় অতিকায় প্রাণী তখন পরিণত হয় বেঁটে জন্তুতে।
অন্যদিকে ছোট প্রাণীরা, যেমন ইঁদুর, ছুঁচো, টিকটিকি, এগুলো ওই পরিবেশে বংশ পরম্পরায় বড় হতে থাকে। কারণ ছোট দ্বীপে বড় প্রাণীর খাবার কম থাকলেও, ছোট প্রাণীর খাবার থাকে অঢেল। শিকারী প্রাণীর ভয়ও সেখানে কম থাকে। ফলে ছোট প্রাণীগুলো নির্ভয়ে প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারে। এতে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, ছোট প্রাণী পরিণত হয় বড় প্রাণীতে। উদাহরণ হিশেবে মাদাগাস্কার, সার্ডিনিয়া, ও মৌরিশাসের কথা বলা যায়। ওখানে ইঁদুর, টিকটিকি, কোমোডো, এসব প্রাণী দানবাকৃতির, কিন্তু হাতি, ছাগল, জলহস্তী, এগুলো খর্বাকৃতির। এই যে ছোট দ্বীপ বা এলাকায়, রসদের অভাবে বড় প্রাণীর ছোট হয়ে যাওয়া, এটি হলো ডোয়ার্ফিজম; আর রসদের প্রাচুর্যে, ছোট প্রাণীর বড় হয়ে যাওয়া, এটি হলো জাইগান্টিজম। জাইগান্টিজম ও ডোয়ার্ফিজম, প্রাণিজগতের মতো সমাজেও প্রতিদিন ঘটে চলছে। কোনো এলাকায় মহৎ সাহিত্য, মহৎ দর্শন, মহৎ শিল্পকলা, মহৎ বৈজ্ঞানিক চিন্তা, উঁচু রাজনীতিক ভাবনা, এগুলোর গ্রাহক যদি কমে যায়, তাহলে ওই এলাকায় প্রতিভাবান মহৎ মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, কমতে থাকে। জাতি টবের গাছের মতো বেচে থাকে,কিন্তু বড় গাছে পরিণত হয় না। উঁচু সভ্যতা ক্ষয় হয়ে হয়ে রূপ ধারণ করে বামন-সভ্যতার। সভ্যতা কী? লর্ড রাগলান বলতেন— মানুষ যা করে, আর বানর যা করে না, তাই সভ্যতা। বামন-সভ্যতার লোকজন শরীর ধারণ করে মানুষের, আর মন ধারণ করে বানরের।
অভ্যাস-২৯৩ ▌মেয়েরা প্রজাতিগতভাবে পুরুষের থেকে আলাদা
মেয়েরা মানসিকভাবে অনেকটা শিশুর মতো। অল্পতে খুশি হয়, অল্পতে রাগ-অভিমান-কান্না করে। আবার আদর পেলে সব ভুলে যায়। এইজন্য ইংরেজিতে মেয়েদেরকেও ‘বেবি’ বলা হয়। মেয়েরা, তার প্রেমিক পুরুষকে নিজের মত করে সাজাতে পছন্দ করে।এর বিপরীত হলে রাগ-অভিমান করে। কিন্তু এসব ভালোবাসা তারা প্রকাশ করে না। নারীকে,তাদের মত করে,আপনাকে আগলে রাখার মত সুযোগ দিন। নারী ভালোবাসার জিনিস। নারীকে কড়া কথা, অযৌক্তিক শাসন, মিথ্যা অপবাদ-সন্দেহ-অবিশ্বাসের শিকল দিয়ে বাঁধবেন না। তাকে উৎসাহের মাধ্যমে তার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিন; এতেই গড়ে উঠবে আপনার সুন্দর পরিবার এবং আগামীর সমৃদ্ধ প্রজন্ম ।
অভ্যাস-২৯৪ ▌নিখুঁত মানুষ খুজঁবেন না। মানুষ কখনো নিখুঁত এবং পরিপূর্ণ হয় না
মানুষ কখনোই সবদিক থেকে নিখুঁত কিংবা পরিপূর্ণ হয় না। সবাই একরকমও হয় না। তেমনি আপনাকেও মেনে নিতে হবে, আপনারও ভুল হতেই পারে। আপনার কাজেরও সমালোচনা হতে পারে, নিন্দা হতে পারে। নিজের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিন। আপনি চাইলে আপনার বদ অভ্যাস কিংবা ভুলগুলোর একটা তালিকা তৈরি করতে পারেন। সমালোচনাকে কখনো খারাপভাবে নিবেন না। মনে রাখবেন সমালোচনাই আপনাকে ধীরে ধীরে নিখুঁত এবং পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
অভ্যাস-২৯৫ ▌মিনিটের যত্ন নিন, ঘন্টাগুলো নিজের যত্ন নেবে।
সময় ব্যবস্থাপনা হল জীবনের শ্রেষ্ট মন্ত্র। কারণ এটি ছাড়া সাফল্য অসম্ভব। আপনাকে কেউ সময় দিচ্ছে, তার মানে সে আপনাকে তার জীবন থেকে কিছু অংশ আপনায় দিচ্ছে। তাই তার জীবনের সেই অংশটুকুকে মুল্যায়ন করতে শিখুন। আপনি নিজেও কাউকে সময় দিচ্ছেন মানে আপনার জীবনের একটু অংশ তাকে দিচ্ছেন। তাই জীবনটা এতটা সস্তা নয় যে, কেউ একজন আসলো এবং আপনার জীবনের অংশ সে বিনামূল্যে নষ্ট করে দিয়ে গেলো। আবার আপনি যদি " আপনার অনুকুলে সময় আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন, তাহলে আপনার জীবনটাই নষ্ট করবেন। কারণ কখনো পারফেক্ট সময় আসে না, তৈরি করে নিতে হয়।
অভ্যাস-২৯৬ ▌সুখের জন্য দরকার সঠিক মানুষ।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গবেষণা দাবি করছে, সুখ আমাদের ক্যারিয়ার, সফলতা বা অর্থসম্পদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সুখের জন্য দরকার সঠিক মানুষ। ভুল ও টক্সিক মানুষকে দূর করে সঠিক ইতিবাচক মানুষদের খুঁজে বের করে নিজের আশপাশে রাখুন। সম্পর্ক একটা গাছের মতো। নিয়মিত যত্ন নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তবেই সেখানে গজাবে নতুন নতুন কুড়ি, ফুল আর ফল।
অভ্যাস-২৯৭ ▌পরাজিতরা কোন কিছু ঘটার অপেক্ষায় থাকে। তারা কখনই কোন কিছু ঘটাতে পারে না।
যে সবকিছু তৈরি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে, সে জীবনে কিছু করতে পারে না। ভয় হলো জীবনের লক্ষ্য অর্জনের সবচেয়ে বড় বাধা। ব্যর্থতা এবং ‘অজানা ভয় পেয়ে’ সফলতার পথে আমরা এগোতে পারি না। জীবনে সফল হতে হলে অজানা ভয়কে সবচেয়ে আগে বিদায় করতে হবে। স্বপ্ন পূরণ করতে গেলে চ্যালেঞ্জ, বাধা, সমস্যা আসবেই। আপনি কী অর্জন করেছেন, সাফল্য মাপার মানদন্ড সেটা নয় বরং আপনি পড়ে যাওয়ার পর কতবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন সেটাই আপনার মানদন্ড। প্রতিটা মুহুর্ত পূর্ণ উদ্যম নিয়ে বাঁচুন, কখনো হাল ছাড়বেন না, কখনো আত্মসমর্পণ করবেন না।
অভ্যাস-২৯৮ ▌ আকর্ষণ ঘড়ির কাটার মত, স্থির নয়,ক্রমে সরে যায়, তাই কারো জন্য পাগল হবেন না।
তথাকথিত প্রেম পড়ে কত তরুণ-তরুণী যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জীবনের সম্ভাবনাকে নষ্ট করেছে, নিজের এবং পরিবারের জীবনে বিপর্যয় ডেকে এনেছে তার ইয়ত্তা নেই । কিন্তু কেন ? প্রেম মানুষকে অন্ধ করে, প্রেম মানুষকে পাগল করে- এ কথাগুলো অনেকদিন ধরেই ছিলো গল্প-কবিতা-উপন্যাসের কথা । কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে সম্প্রতি বিজ্ঞানও এই একই সুরে কথা বলছে । ইদানীং নানা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মানসিকভাবে অসুস্থ হলে মানুষের মস্তিষ্কে যে, রাসায়নিক অবস্থা দেখা যায়, প্রেমে পড়লেও সেই একই অবস্থা হয় ।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক লাভ দ্যা কেমিক্যাল রি-একশন' প্রতিবেদনে উঠে এসেছে- প্রেমে পড়লে মানুষ আর মানসিকভাবে সুস্থ থাকে না । তার বিচার বুদ্ধি লোপ পায় এবং সে অন্ধ আবেগে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এ আবেগের স্থায়িত্ব আবার খুবই কম । আজকে যাকে না পেলে বাঁচবো না বলে মনে হচ্ছে, বছর না ঘুরতেই মনে হতে পারে যে, তাকে না ছাড়লে বাঁচবো না । ৬ মাস আগেও যে চেহারাটা দেখার জন্যে অস্থির হতো মন, এখন সে চেহারাটাই হতে পারে সবচেয়ে অসহ্য দৃশ্য । এর কারণ কি ? বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এর পেছনে আছে ডোপামাইন নামে এক নিউরোট্রান্সমিটারের ভূমিকা । প্রেমিক বা প্রেমিকাকে দেখলে মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশ এই ডোপামাইন দ্বারা উদ্দীপ্ত হয় । এর প্রভাবে শরীর-মনে তখন সৃষ্টি হতে পারে বাঁধভাঙা আনন্দ, অসাধারণ প্রাণশক্তি, গভীর মনোযোগ ও সীমাহীন অনুপ্রেরণা । এ জন্যেই হয়তো যারা সদ্য প্রেমে পড়ে, হঠাত করেই তাদের মধ্যে এক ধরনের বেয়াড়া, একগুঁয়ে, দুঃসাহসী চরিত্র ফুটে ওঠে । ঘর ছাড়বে, সিংহাসন ছাড়বে, জীবন দেবে; তবু প্রেম ছাড়বে না- এমনই এক বেয়াড়াপনা দেখা যায় তাদের মধ্যে । বিজ্ঞানীরা বলেন, মাদকাসক্তির সাথে এ অবস্থাটার খুব মিল রয়েছে । .মাদকাসক্তদের কিন্তু মাদক গ্রহণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলে । কারণ মাদকের পরিমাণ যা-ই হোক না কেন ব্রেন তাতেই অভ্যস্ত হয়ে পড়ে । ফলে পরিমাণ না বাড়ালে তার নেশা হয় না । প্রেমের ক্ষেত্রেও তা-ই । তীব্র আবেগের আতিশয্য খুব বেশি সময় ধরে থাকেনা যদি না নতুন নতুন উত্তেজনা দেয়া না যায় । কিন্তু বাস্তব জীবনে তো আর তা সম্ভব নয় । ফলে অল্পতেই ঘোলাটে হয়ে যায় আবেগের রঙিন চশমা । আসলে স্বর্গীয়, পবিত্র ইত্যাদি নানারকম বিশেষণ যুক্ত করে যে প্রেমকে মহান বানানো চেষ্টা চলে তা যে স্রেফ বংশধারা রক্ষার জন্য নারী-পুরুষের জৈবিক চাহিদারই নামান্তর। একজন পুরুষ বা একজন নারী অবচেতনভাবেই এমন সঙ্গীকে পছন্দ করে, যে তাকে সুস্থ সবল একটি সন্তান উপহার দিতে পারবে ।
অভ্যাস-২৯৯ ▌গঠনমূলক সমালোচনা আপনাকে এগিয়ে নিবে।
প্রথমেই বুঝতে চেষ্টা করুন আপনার কাজের কিংবা চিন্তাভাবনার যে সমালোচনা করা হচ্ছে, তা কি গঠনমূলক নাকি শুধু আঘাত করার জন্য। যদি গঠনমূলক হয়, রাগ না করে তাদের কথায় মনোযোগ দিন। মানুষ কখনোই সবদিক থেকে নিখুঁত কিংবা পরিপূর্ণ হয় না। আপনাকে মেনে নিতে হবে, আপনারও ভুল হতেই পারে। নিজের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে আপনি আপনার বদ অভ্যাস কিংবা ভুলগুলোর একটা তালিকা তৈরি করুন। গঠনমূলক সমালোচনাকে কখনো খারাপভাবে নিবেন না। মনে রাখবেন সমালোচনাই আপনাকে ধীরে ধীরে নিখুঁত এবং পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
অভ্যাস-৩০০ ▌ইনফ্রাস্ট্রাকচার নয়, সুপার ইনফ্রাস্ট্রাকচার-এ নজর দিন
শুধু ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা অবকাঠামোগত উন্নয়ন কোনো কাজেই আসবে না, যদি সুপার ইনফ্রাস্ট্রাকচার অর্থাৎ তার ভিতর প্রাণ না থাকে। সুপার ইনফ্রাস্ট্রাকচার হল সামাজিক ও সাংস্কৃতি উন্নয়ন। কোন দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে হলে, তাকে অবশ্যই সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে উন্নত হতে হয়। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে এই তিন স্রোত একই তালে এগিয়ে নিতে না পারলে কখনই স্থায়ী উন্নয়ন আসে না। বাংলাদেশ এখনও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশকে একই স্রোতে প্রবাহিত করতে পারেনি। যা আমাদের দেশ ও সমাজের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের কারণ। ঠিক তেমনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে অবকাঠামোর উপর গুরুত্ব না দিয়ে সুপার অবকাঠামোর উপর গুরুত্ব দিতে হবে অর্থাৎদামি বাড়ি গাড়ির পিছনে না ছুটে সুখে থাকার , শান্তিতে থাকার বিভিন্ন উপকরণগুলির উপর মনোযোগ দিতে হবে।