নরওয়ে সরকারি ফান্ড

 

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সরকারি ফান্ডের মালিক নরওয়ে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তৈরি এই

ফান্ডের নাম নরওয়েজিয়ান পেনশন ফান্ড। এটা অয়েল ফান্ড নামেও পরিচিত, কারণ এর

ভিত্তি তেল-গ্যাস বিক্রির পয়সা।

খুবই স্বচ্ছ এই ফান্ড প্রতি মুহূর্তে আপডেট হয়। গত তিন মাসে এর ভ্যালু যে পরিমাণ

বেড়েছে তা ২০২৪ সালের পুরো বাজেটের চেয়েও বেশি।

মোট ৭২টা দেশে এর বিনিয়োগ রয়েছে এবং কোথায় কত তাও সাইটে উল্লেখ রয়েছে। মার্কেট

ভ্যালু বিচারে পৃথিবীর সব কোম্পানির সব শেয়ারের ১.৫%-এর মালিক এই ফান্ড। বাংলাদেশের

শেয়ারও রয়েছে তার মধ্যে।

এছাড়া পৃথিবীর প্রায় সকল বড় শহরেই রিয়েল এস্টেট, অর্থাৎ বিল্ডিং কেনা হয়েছে এই

ফান্ড দিয়ে, যেগুলো ভাড়া দেওয়া হয়।

নরওয়েকে অনুসরণ করে আরো কিছু দেশ এরকম ফান্ড খুলেছে, যার মধ্যে সৌদি আরব

অন্যতম। নরওয়ের এই ফান্ডের মূলনীতি হলো সম্পদ কেবল বর্তমানের ভোগের জন্য নয়,

ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও এর অংশীদার করা।

 

========

পৃথিবীর সব যুদ্ধ জেতা যায় না, কিন্তু লড়াইয়ের ময়দানে থাকতে হয় - এটা বোঝানোর জন্য

কেউ তো একজন ছিল, কেউ তো একজন শুরু করেছিল, কেউ তো একজন শাসকের চোখে চোখ

রেখে বলতে পেরেছিলো।

জেতা হারাটা‌ তো সাময়িক, জীবনে নীতিটাই সব-

------------------------

ঢাকা শহরের নামকরণে সঙ্গে জড়িয়ে আছে হিন্দু কিংবদন্তি। বল্লাল সেনের মা তীর্থ করতে

গিয়ে এখানে ঢাকনার নিচে একটি দেবী মূর্তি পেয়েছিলেন। তাই দেবীর নাম হয়ে যায় ঢাকেশ্বরী।

সেখানে একটি মন্দির গড়ে বল্লাল মাতা। নাম হয়ে যায় ‘ঢাকেশ্বরী মন্দির’। সেই ঢাকেশ্বরী

থেকেই ‘ঢাকা’ শব্দের জন্ম। সেটাই হয়ে যায় ঐ স্থানের নাম। বিস্তৃত হতে থাকে ঢাকার

আকার। এই ইতিহাস বা কিংবদন্তি বাঙালি মুসলমানের কাছে আজ অস্বস্তিকর।

------------

সম্রাট আওরঙ্গজেব ৪৯ বছর ধরে ভারত শাসন করেছেন। তাঁর সাম্রাজ্যের আয়তন ছিল ৪০

লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। বলতে গেলে, ভারতবর্ষের প্রায় সম্পূর্ণ এলাকা ছিল তার রাজ্যের

অন্তর্ভূক্ত। প্রজার সংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৮০ লক্ষ।

আওরঙ্গজেব বছরে রাজস্ব আদায় করতেন ৪৫০ মিলিয়ন ইউ এস ডলার। ঐ সময়ে ফ্রান্সের

সম্রাট ছিলেন চতুর্দশ লুই। লুই এর চেয়ে আওরঙ্গজেব এর রাজ্যে দশগুণ বেশি রাজস্ব আদায়

হত।

তাঁর অধীনে ভারতবর্ষের অর্থনীতি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। ১৭০০ সালে তিনি

ভারতবর্ষের অর্থনীতিকে ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেন। ভারতবর্ষের জিডিপি

ছিল পুরো পৃথিবীর জিডিপির চার ভাগের এক ভাগ।

 

১৭০৭ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান আওরঙ্গজেব ৮৮ বছর বয়সে

নিজের সম্পত্তির একটা উইল তৈরী করলেন। মৃত্যুর পরে উইলে দেখা গেল- তাঁর কাছে ১৪ রুপি

আর নিজ হাতে বোনা কিছু টুপি আছে। এগুলো বিক্রি করে তাঁর জানাযা আর দাফনে খরচ করতে

বলেছেন। আর সারাজীবন কুরআন শরীফ নকল করে ৩০০ রূপি জমিয়েছেন। এই টাকাগুলো

গরীবদের মাঝে দান করে দিতে বলেছেন।

দরবার আর রাজকোষে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল- উইলের বাইরে সম্রাটের কোথাও কোনো সম্পদ

নেই।

====

"বিস্ময়কর যে সেই ইউরোপই এখন বদলে গেছে। যে ইউরোপের খৃস্টানরা ধর্মের জন্য ক্রুসেড

করতে আসতো ঘরবাড়ি, বউ-পোলাপান ছেড়ে, জীবনের মায়া ত্যাগ করে তারা এখন আর

গীর্জায় যায় না। অলৌকিক শক্তির উপর বিশ্বাস হারিয়ে আস্থা রাখছে বিজ্ঞানে। তারা এখন

সপ্তাহান্তে গীর্জায় যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বা সাক্ষাৎ হবে অনেকের সাথে সেই

আশায়। ধর্ম তাদের আর আকর্ষণ করে না। আমরা যেমন ভুত-প্রেত নিয়ে হাসি তামাশা করি

তেমনি ওরা করে ওদের ধর্মকে নিয়ে৷"

===

========

সিন্ধু সভ্যতার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি হল জলের ব্যবহার ও তার

সংরক্ষণ। আমরা মুখে সেই মহান সভ্যতার উত্তরিধিকারী বললেও এই বিষয়ে তাদের

ধারেকাছেও পোঁছতে পারিনি। আজকের দিনের প্রযুক্তি দিয়ে প্রকৃতির জল ভাণ্ডারকে আমরা

যথেচ্ছ ভাবে শুধু ব্যবহার করেছি কিন্তু সংরক্ষণ বিষয়টা শিখতে পারিনি। আর তাই উন্নত

শহরে আমাদের জলসঙ্কট দেখতে হয়। সিন্ধু সভ্যতার প্রায় সব শহরই নদীর তীরে অবস্থিত

হলেও শহরের মধ্যে অনেক কূপ থাকতো। খাওয়ার ও স্নানের জল অধিবাসীরা মূলত কূপ

থেকেই সংগ্রহ করতো। মহেঞ্জোদারোর প্রায় প্রত্যেকটি আবাসিক বাড়িতেই স্নানাগার এবং

কূপ ছিল। খননের সময়ে দেখা গেছে যে অনেক কূপ তখনও ব্যবহারের উপযুক্ত রয়েছে। শুধু

মহেঞ্জোদারোতেই আমরা শতাধিক কূপ পেয়েছি এবং এই কূপগুলি কয়েক শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত

হয়েছে। খননের এলাকায় পাওয়া কুপের ঘনত্বের হিসাব করে বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ

মাইকেল জ্যানসেন (Michael Jansen) দেখিয়েছেন যে তৎকালীন মহেঞ্জোদারোতে প্রায়

৭০০ খানি কূপ ছিল। আবার অন্যদিকে মহেঞ্জোদারোর তুলনায় হরপ্পায় অনেক কম কূপ ছিল,

সেখানে মাত্র ৩০ খানির মতো কূপ ছিল। আপনাদের শুনলে অবাক লাগবে যে কালিবঙ্গানের

খননের সময়ে প্রাচীন একটি কূপ খননকারী দলের প্রয়োজনীয় জলের যোগান দিয়েছিল।

আজ দেখাব ভারতে অবস্থিত সিন্ধু সভ্যতার কিছু কূপ। প্রথম কূপটি লোথালের। দ্বিতীয়টি

রাখিগড়ির ও তৃতীয়টি বানাওয়ালির। চতুর্থ কূপটি কালিবঙ্গানের কিন্তু সেটি উন্মুক্ত নয়,

তাই তার উপরের বেড়ের ইটের আভাস শুধু পাওয়া যাচ্ছে। একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন যে

গোলাকার মুখের কূপকে মজবুত করে বাঁধানোর জন্যে তাঁরা কেমন একদিক মোটা ও অন্য দিক

সরু (wedged) ইটের ব্যবহার করেছেন। পঞ্চম কূপটি ধোলাভিরার, বিরাট বাঁধানো কূপের

উপরের পাথরটিকে লক্ষ্য করবেন, তার প্রান্তে রয়েছে তখনকার দড়ি দিয়ে জল তোলার

 

চিহ্ন। পাথরের গাঁ ঘষে দড়ির দাগ এখনও সেই মানুষদের স্মরণ করছে। না জানি পাঁচ হাজার

বছর আগে কতো গল্প, ঝগড়া, মান- অভিমানের সাক্ষী রয়েছে এই কুয়োতলা।

আদিতে সব ধর্মই ছিল লৌকিক ধর্ম। লোকসাধারণের আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্নকে ধারণ করে তাদের মধ্যেই ধর্মের উদ্ভব এবং বিস্তার। কিন্তু পরে প্রায় সব ধর্মই সাধারণের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, সমাজের অধিপতি শ্রেণী ধর্মকে নিজেদের স্বার্থ সাধনে নিয়োজিত করে, তৈরী হয় বিধিবদ্ধ শাস্ত্রীয় ধর্ম।

কখনো বা সরাসরি বল প্রয়োগে এবং কখনো বা ছল কৌশলের আশ্রয়ে লোক সাধারণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় সেই শাস্ত্রীয় ধর্ম, যাজক-পুরোহিত-মোল্লার দল নিয়োজিত হয় সে ধর্মের খবরদারির দায়িত্বে। পৃথিবীর সব ধর্মের ইতিহাস পরিক্রমাতেই এ সত্যের সন্ধান মেলে।

ইতিহাসের পাতা থেকে বলছি এবার -

সময়কাল চতুর্থ শতাব্দি। রোমান সাম্রাজ্য ভেঙে চার টুকরা, পুরো সাম্রাজ্যের বেহাল অবস্থা, ভেঙে পড়েছে কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা। পার্সিয়ান ও গোথ এর আক্রমণে শক্তিশালী রোম ক্রমেই দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে উঠছে। সিজার বা ডেমিগডের যুগ শেষ। প্যাগান টেম্পল নানাধারায় বিভক্ত। তাদের মধ্যে চলছিল নানা ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।

কন্সট্যান্টাইন দ্য গ্রেট, সাধারণ এক সৈন্য থেকে দ্রুত সেনাপতি বনে যান তাঁর ব্যক্তিগত ক্যারিশমায়। সাম্রাজ্যের চারখণ্ডকে জুড়ে একখণ্ড করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। সুযোগ বুঝে কন্সট্যান্টাইন ভর করলেন খ্রিস্ট ধর্মের উপর।

“ওয়ান গড ওয়ান ইম্পেরর ওয়ান টেম্পল” - স্লোগানটি সৈনিকদের মধ্যে হয়ে ওঠে তুমুল জনপ্রিয়। প্যাগানদের সাথে একাধিক যুদ্ধ হয় খ্রিস্টান সৈন্যদের। বলা হয় “ওয়ান গড ওয়ান ইম্পেরর ওয়ান টেম্পল” শ্লোগানটির কারণে যুদ্ধে কন্সট্যান্টাইন হয়ে ওঠেন অপ্রতিরোধ্য। একের পর এক যুদ্ধ জয় করেন কন্সট্যান্টাইন। এক করেন সাম্রাজ্যের চার টুকরো কে। চালু করেন কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা। ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে ওঠে রোমান সাম্রাজ্য। টিকে যায় কয়েক শত বছর।

কন্সট্যান্টাইন দ্য গ্রেট এর হাত ধরে ক্রিস্টিনিয়াটি প্রবেশ করে পশ্চিমা দুনিয়াতে। চিরতরে বদলে যায় পশ্চিমা দুনিয়ার ভাগ্য। ছয়শত বছর পর একাদশ শতাব্দীতে ভাঙ্গনের হাত থেকে টিকে রাখার কারণে রোমান সাম্রাজ্যকে ঘোষণা করা হয় “হোলি রোমানএম্পেয়ার”। 

“হোলি রোমানএম্পেয়ার” সেই সোনার পাথর বাটি, যেখানে না ছিল কোন কিছু হোলি, না ছিল তারা রোমান; না ছিল তাদের এম্পেয়ার।

সারা ইউরোপ তখন ডিউকডোম, ব্যারনডোম, নগররাষ্ট্র ইত্যাদিতে বিভক্ত। ক্যাথলিক-চার্চ ততদিনে ধর্মীয় সংগঠন থেকে বিবর্তিত হয়ে পুরোদস্তুর ধর্ম-রাজনৈতিক সংগঠন। ক্যাথলিক চার্চ এর হাতে তখন নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। তারাই নিযুক্ত করে সব রাজ্যের রাজা বা অধিকর্তা।

ধর্মই তখন ইউরোপের জীবনযাত্রার সবচে গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। ক্যাথলিক-চার্চ তার একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে রাখে ধর্মীয় দিকগুলোতে তার আধিপত্য দিয়ে। সকল নাগরিকের জীবনের সমস্ত দিকের দিক-নির্দেশনা দেয় বাইবেল গ্রন্থটি। যদিও সেই বাইবেল পড়া তো দূরের কথা, চোখেও দেখেনি সাধারণ প্রজা। ক্যাথলিক চার্চ যেভাবে বলছে বাইবেলে যা লেখা আছে, সেটাই মেনে নিতে বাধ্য তারা।

খ্রিস্টধর্মের সূচনাকারী যিশু এবং তাঁর শিষ্যরা সবাই ছিলেন ভবঘুরে, নিগৃহীত ও নির্যাতীত। তার তিনশত বছর পরে রোমান সম্রাট কনস্টানটিন দ্য গ্রেট সাম্রাজ্যের প্রয়োজনে খ্রিস্টধর্মকে দাপ্তরিকভাবে প্রতিষ্ঠা করে। তখন আর খ্রিস্টধর্ম ভবঘুরে নিগৃহীতদের ধর্ম নয়, তখন তা রাজ ধর্ম।

তারপর মোল্লা পুরুতের কারিশমায় ডালপালা মেলে সেই ক্যাথলিক চার্চ নিজেই হয়ে উঠে শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়ণের মূল কেন্দ্র। ক্যাথলিক চার্চ বৈধ অবৈধ নানানভাবে আয় রোজগার করেও তার রাক্ষুসে ক্ষুধা মিটাতে সক্ষম ছিল না, তখন তারা প্রবর্তন করে ইনডালজেন্স বা পাপপুণ্য কাটাকাটির ব্যবস্থা। অর্থাৎ যে কোন পাপ করার পর চার্চকে ধার্য্যকৃত অর্থ দিলেই সেই পাপ মুছে যাবে।

ধনী ও ক্ষমতাধররা তখন নিজেদের খেয়াল খুশিমতো প্রজাদের উপর নানা নির্যাতন নিপীড়ণ চালিয়ে জীবনযাপন করছিল। যতটুকু বাধা ছিল ধর্মের ভয়। সেই ভয়কেও হাস্যকরভাবে অর্থহীন করে ফেললো ইনডালজেন্স। “ইনডালজেন্স” ব্যবসা দিয়ে ক্যাথলিক চার্চ প্রভূত ধনসম্পদের মালিক হল। গচ্ছিত টাকাপয়সা গড’স ব্যাঙ্কে জড়ো হতো। মজার কথা এই গড’স ব্যাঙ্কে লেনদেন যা হয় সবই আনহোলি।

“ডোন্ট ওভারএস্টিমেট দ্য পাওয়ার অব ফরগিভনেস” - বিখ্যাত এই সংলাপটি আছে মারিও পুজোর "দ্য গডফাদার" বইতে। যেখানে মাইকেল কর্লিয়নির কাছে ক্যাথলিক চার্চ দাবি করে ৮০০ মিলিয়ন ডলার।

অর্থের বিনিময়ে পোপ স্বয়ং ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলে মাইকেল কর্লিয়নির সব পাপ মোচনের ব্যবস্থা করবেন। আয়কৃত টাকা জমা হয় গড’স ব্যাঙ্কে। গড’স ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণকর্তা ভয়ংকর কিছু মাফিয়া সর্দার। কাহিনীটি দেখানো হয়েছে হলিউডের "দ্য গডফাদার" ছবির পার্ট থ্রিতে। সত্য ঘটনার উপর নির্মিত ছবির শেষ দৃশ্যে দেখা যায় লন্ডন ব্রিজের উপর গড’স ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের ঝুলন্ত লাশ।

গডস ব্যাঙ্ক বা ভ্যাটিকান ব্যাঙ্ক নগদ লেনদেনে গোপনীয়তার সংস্কৃতির কারণে  পরিণত হয় পৃথিবীর সবচে কুখ্যাত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। এই ভ্যাটিকান ব্যাঙ্কের অর্থই শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে দেয় হোলি ভ্যাটিক্যান সিটি নামক দেশটির।

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ ভীষণভাবে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, নির্মোহ ও আশাহীন হয়ে পড়েছে; যুদ্ধের অভিঘাতে বোধগুলো তখন বিকৃত হয়ে পড়েছে। আত্মহত্যা, খুন, ধর্ষণ সহ নানা অপরাধের সমস্যার সমাধান খোঁজা হচ্ছিল তখন। ভয়াবহ মানবিক ও মূল্যবোধ বিপর্যয়ের পর সে গুলোর পুন:প্রতিষ্ঠা জরুরি মনে করেছিল তারা।

নৈরাজ্যবাদের সীমাবদ্ধতায় থেকেও এটি সম্ভব, তারা দেখিয়েছে। পথ বের করে নৈরাজ্যবাদের ঊর্ধ্বে এগিয়েছে অনেকটা পথ। দার্শনিক অন্বেষণ ছিল সেটা। চিরন্তন মূল্যবোধ কে মানদন্ড ধরা হয়নি তখন। আজকের ইউরোপের দিকে তাকিয়ে আমরা বুঝতে পারি  সফল হয়েছে তারা।

নেদারল্যান্ড সহ কিছু দেশগুলোতে আজ অপরাধ নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোঠায়। ইউরোপ পুরাতন মূল্যবোধগুলোকে ঝেটিয়ে বিদায় করেছে। ইউরোপ থেকে সাম্প্রদায়িকতা পালিয়েছে।

অন্যদিকে ষোড়শ শতাব্দীতে সৌদি জাতিসত্ত্বার মূল ভিত্তি গড়ে দেয় ওয়াহাবিজম নামক একটি মতবাদ।

এই মতবাদের জনক মুহম্মদ ইবন আব্দ আল ওয়াহাব। মুহম্মদ ইবন আব্দ আল ওয়াহাবের “এক নেতা, এক শাসক, এক মসজিদ” মতবাদকে শাসনের তিন স্তম্ভ হিসাবে গ্রহণ করা হয়। অর্থাৎ সৌদি বাদশাহকে প্রাতিষ্ঠানিক ওয়াহাবিজমের সর্বময় কর্তৃত্ব এবং “মসজিদের” মানুষের “বক্তব্য” নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়।

১৭৯০ সালের মধ্যে এই জোট প্রায় পুরো আরব উপদ্বীপ দখল করে কয়েক দফায় মদিনা, সিরিয়া এবং ইরাক আক্রমণ করে। তাদের স্ট্র্যাটেজি ছিলো বিজিত জনগোষ্ঠিকে নিজেদের সামনে আত্মসমর্পণ করানো। তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিলো মানুষের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া।

১৮০১ সালে এই জোট ইরাকের পবিত্র শহর কারবালা আক্রমণ করে। তারা নারী ও শিশুসহ হাজার হাজার শিয়া মুসলিম হত্যা করে, ধ্বংস করে শিয়া উপাসনালয়। ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় নবী মুহম্মদের দৌহিত্র ইমাম হুসেইনের কবর।

সৌদি রাষ্ট্রের প্রথম ইতিহাসবিদ ওসমান ইবন বাশির নাজদি অনুসারে, ১৮০১ সালে ইবন সৌদ কারবালায় গণহত্যা চালিয়েছেন। তিনি গর্বের সাথে এই গণহত্যার দলিল লিখেছেন, “আমরা কারবালা দখল করেছি। হত্যা করেছি এবং দাস হিসাবে নিয়েছি এর মানুষকে, কেননা সকল প্রশংসা আল্লাহর। যিনি সমস্ত পৃথিবীর মালিক; আমরা ক্ষমা চাইবো না, বরং বলবোঃ ‘হে অবিশ্বাসীগণঃ তোমাদের জন্যও অপেক্ষা করছে একই শাস্তি!’

১৮০৩ তে এক গুপ্তঘাতক কারবালার গণহত্যার প্রতিশোধ নিতে বাদশাহ আব্দ আল আজিজকে হত্যা করে। তার ছেলে, সৌদ বিন আব্দ আল আজিজ বাদশাহ পদবী নেন এবং সেই সাথে আরব বিজয়ের সংকল্প করেন।

অটোমান সুলতান অবশ্য নিরুপায় বসে থেকে তাদের সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাওয়া দেখতে পারছিল না।

১৮১২ সালে মিশরিয়দের নিয়ে তৈরি করা অটোমান সেনাবাহিনী এই জোটকে মদিনা, জেদ্দা এবং মক্কা থেকে উৎখাত করতে সক্ষম হয়।

১৮১৪ সালে সৌদ বিন আব্দ আল আজিজ জ্বরে ভুগে মারা যান। তার ছেলে, আব্দুল্লাহ বিন সৌদ অটোমানদের হাতে ধরা পড়ে। তাকে ইস্তানবুলে নিয়ে গিয়ে বীভৎসভাবে হত্যা করা হয়। তার বিচ্ছিন্ন মাথা কামানের ভেতর ঢুকিয়ে আকাশে ছুঁড়ে মারা মারা হয়, তার শরীর থেকে হৃদপিন্ড বের করে এনে বাকি শরীরকে শূলে চড়ানো হয়।

১৮১৫ সালের এক যুদ্ধে অটোমানরা ওয়াহাবি শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে। ১৮১৮ সালে অটোমানরা ওয়াহাবি রাজধানী দারিয়াহ ধ্বংস করে দেয়। প্রথম সৌদি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব তখন বিলুপ্ত হয়। বেঁচে যাওয়া ওয়াহাবিরা মরুভূমিতে পালিয়ে গিয়ে নতুন দল তৈরির চেষ্টা করে। তারা নিস্ক্রিয় এবং চুপচাপ হয়ে বেঁচে থাকে ১৯শ’ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

১৮শ’ শতকের ওয়াহাবিজমের তত্ত্ব না’জদের মরুভূমিতে শুকিয়ে হারিয়ে যায় না, বরং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিশৃংখলায় অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের সাথে সাথে তা আবার স্বগৌরবে জীবনে ফিরে আসে।

আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ১৯৩২ সালে সৌদি আরব সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মের নামে দেশটি পুরোপুরি রাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হচ্ছে।

মানব সভ্যতার ইতিহাস আসলে ক্ষমতা, লোভ, অর্থ-সম্পদ এবং ধর্মতন্ত্র হাত ধরাধরি করে চলার ইতিহাস।

ক্ষমতার লড়াইয়ে যুগে যুগে ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছে, আজও হচ্ছে। পুরাতন মূল্যবোধগুলো আমাদের এখানে টিকে গেছে। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প থেকে  মুক্তি পাওয়ার উপায়গুলোও বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

Razik Hasan

=============

আজ থেকে ২০ হাজার বছর আগে যখন চরম হিমযুগ চলছিল, তখন সমুদ্র জলের উচ্চতা আজকের তুলনায় ১২২ মিটার কম ছিল!

ভারত-শ্রীলঙ্কা, এশিয়া ও আমেরিকা মহাদেশের মধ্যে পায়ে চলার পথ ছিল।

ছোট ডিঙির সাহায্যেই মায়ানমার থেকে আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে যাওয়া যেত; ইন্দোনেশিয়া থেকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়া যেত।

প্রায় ১১৭০০ বছর আগে হিমযুগ শেষ হয়, হিমযুগ শেষের আগে সমুদ্র জলের উচ্চতা আজকের তুলনায় প্রায় ২৮ মিটার কম বা ৯তলা বাড়ির সমান কম ছিল।

তথ্যসূত্র: প্যালিও ক্লাইমেট মডেল প্রজেক্ট; ইন্টারনেট।

 

=================

 

হিমালয় পর্বতমালা বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশ্রেণি। এটি প্রায় ২,৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২০০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার প্রশস্ত, উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে বিস্তৃত। এই বিশাল পর্বতমালা এশিয়ার ছয়টি দেশের মধ্যে অবস্থিত এবং এটির শৃঙ্গগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গগুলোর মধ্যে গণ্য হয়। দেশগুলো হলো নেপাল, ভূটান, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও চীন।

ভৌগোলিক গঠন-হিমালয় ৩টি প্রধান অঞ্চলে বিভক্ত:

১. গ্রেট হিমালয়: এই অঞ্চলটি সবচেয়ে উঁচু এবং এতে মাউন্ট এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে, এবং মাকালুর মতো শৃঙ্গ রয়েছে। মাউন্ট এভারেস্ট, যার উচ্চতা ৮,৮৪৯ মিটার, পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হিসেবে পরিচিত।

২. মধ্য হিমালয়: এটি তুলনামূলকভাবে কম উঁচু, তবে এখানেও অনেক উঁচু শৃঙ্গ এবং উপত্যকা আছে। এই অঞ্চলে বিভিন্ন সুন্দর উপত্যকা এবং নদী প্রবাহিত হয়, যেমন কাশ্মীর উপত্যকা ও কাঠমাণ্ডু উপত্যকা।

৩. বাইরের হিমালয়: এটির উচ্চতা তুলনামূলকভাবে কম, তবে এটি খুবই বিস্তৃত এবং এতে অনেক পাহাড়ি বনভূমি ও গিরিখাত রয়েছে।

**টেকটোনিক প্লেটের প্রভাব-

হিমালয় পর্বতমালার গঠন একটি জটিল প্রক্রিয়ার ফলাফল, যা প্রায় ৫০ মিলিয়ন বছর আগে শুরু হয়েছিল। ভারতীয় টেকটোনিক প্লেট ইউরেশিয়ান প্লেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উপরে উঠতে শুরু করে, যা হিমালয়ের জন্ম দেয়। এই প্রক্রিয়াটি এখনো চলমান, যার ফলে পর্বতমালার উচ্চতা প্রতি বছর কয়েক মিলিমিটার করে বাড়ছে।

**জীববৈচিত্র্য-

হিমালয়ের ভৌগোলিক ও জলবায়ুর বৈচিত্র্যের কারণে এখানে বিস্তৃত জীববৈচিত্র্য পাওয়া যায়:

~উদ্ভিদকুল: হিমালয়ে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা রয়েছে, যা উচ্চতা এবং জলবায়ুর ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন। নিম্ন উচ্চতায় চিরসবুজ বন এবং উপরে তুষারাবৃত অঞ্চল রয়েছে যেখানে লিকার এবং মোস পাওয়া যায়।

~প্রাণীকুল: তুষার চিতা, লাল পান্ডা, হিমালয়ী কালো ভাল্লুক, এবং মস্ক হরিণের মতো বিরল প্রাণী হিমালয়ে বাস করে।

**হিমালয়ের নদীগুলি-

হিমালয় পর্বতমালা এশিয়ার অনেক গুরুত্বপূর্ণ নদীর উৎস, যেগুলো কয়েক মিলিয়ন মানুষের জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয়। এর মধ্যে প্রধান নদীগুলি হলো:

গঙ্গা: ভারত ও বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নদী। বাংলাদেশে এটি পদ্মা নামে পরিচিত।

যমুনা: গঙ্গার একটি প্রধান উপনদী (ভারত) এবং এটি ব্রহ্মপুত্র নদের প্রধান শাখা (বাংলাদেশ)।

ব্রহ্মপুত্র: এটি তিব্বত থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের আসাম ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়।

ইন্দাস: পাকিস্তানের প্রধান নদী।

**ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব-

হিমালয় শুধু প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের জন্যই নয়, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ:

হিন্দুধর্মে: হিমালয়কে দেবতা শিবের বাসস্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কেদারনাথ, বদ্রিনাথ, এবং কৈলাস পর্বত হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান।

বৌদ্ধধর্মে: হিমালয়ে অনেক বৌদ্ধ মঠ রয়েছে, যেমন লাদাখ ও ভূটানের মঠগুলো।

জৈনধর্মে: অনেক জৈন তীর্থস্থান হিমালয় অঞ্চলে অবস্থিত।

**পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ-

হিমালয় পর্বতমালা আজ জলবায়ু পরিবর্তন, হিমবাহ গলন, বন উজাড়, এবং ভূমিকম্পের মতো বিভিন্ন পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। হিমবাহ গলনের কারণে নদীগুলোর পানি প্রবাহে পরিবর্তন আসছে, যা নিম্ন অববাহিকায় বসবাসরত মানুষের ওপর প্রভাব ফেলছে।

হিমালয় একটি অনন্য প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, যা সারা বিশ্বের মানুষের কাছে বিস্ময় ও সম্মানের প্রতীক। এটি বিশ্বের সর্বোচ্চ এবং সবচেয়ে নাটকীয় পর্বতমালা, যা আমাদের পরিবেশ, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে চলেছে।

sanjib das

 

===============

পৃথিবীর সবথেকে উত্তেজনাপূর্ণ খেলার মধ্যে একটি বুল রাইডিং, যে খেলাটি আপনার মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে "

**************************************************

সারা পৃথিবী জুড়ে এমন কিছু খেলা রয়েছে যা আক্ষরিক অর্থে দেখতে অত্যন্ত বিপজ্জনক। কিন্তু তবুও মানুষ সাময়িক আনন্দ দেওয়ার আশায় কিংবা লড়াকু মনোভাব থেকে এই সমস্ত খেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। এমন কিছু খেলা এর মধ্যে রয়েছে যার মাধ্যমে হয়তো তার প্রাণ চলে যেতে পারে কিন্তু তবুও মানুষ এই সব খেলা থেকে পিছপা হয় না। আজ আমাদের পর্বে ঠিক সে রকমই একটি অদ্ভুত ধরনের খেলার সম্পর্কে অজানা তথ্য শেয়ার করলাম আপনাদের সঙ্গে।

বুল রাইডিং ::--

অদ্ভুত ধরনের এই খেলায় পাগলা ষাঁড়ের পিঠে চড়ে তাকে সঙ্গে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ানোর নাম বুল রাইডিং। পৃথিবীর উত্তেজনা পূর্ণ খেলার মধ্যে এটিকে সবার আগে রাখা হয়। খেলাটির নিয়ম ঠিক এমন যে আপনাকে একটি পাগলা ষাঁড়ের পিঠে বসিয়ে দেওয়া হবে। আপনি ষাঁড়ের পিঠে বসা মাত্রই সে লাফালাফি শুরু করবে ও আপনাকে তার ওপর থেকে নিচে নামিয়ে দেবার চেষ্টা করবে। তবে কথা শুনে খেলাটিকে যতটা সহজ বলে মনে হচ্ছে অতটা সহজ নয় বিষয়টি। মুহূর্তের ভুলে এই খেলায় অংশগ্রহণকারী যে কোন মানুষের মুহূর্তেই প্রাণ চলে যেতে পারে ষাঁড়ের পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে।

খেলার নিয়ম অনুযায়ী আপনাকে ন্যূনতম ৮ সেকেন্ড ষাঁড়ের পিঠে বসে থাকতে হবে। ৮ সেকেন্ড এর কথা শুনে খুব সহজ মনে হলেও বাস্তবে কিন্তু এতো সোজা না। অনভিজ্ঞ কারো পক্ষে ২-৩ সেকেন্ডের অধিক ষাঁড়ের পিঠে বসে থাকা সম্ভব নয়। আর নিচে পড়ে গেলেই তো শেষ নয়, এরপর আপনার নিজেকে রক্ষা করতে হবে পাগলা ষাঁড়ের হাত থেকে। এখানে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে বহু বুল ফাইটার মৃত্যু গ্রহণ করেছেন অতি অল্প বয়সে। অনেকেই আবার মারাত্মক জখম হয়ে চিরকালের মতো পঙ্গু হয়ে গেছেন।

 

 

 

যেকোনও দেশের আইনের শাসনের অনুপস্থিতি ওই দেশকে দোজখে পরিণত করে। বাংলার ইতিহাসের আলোচনায় বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার “দোজখপুর নিয়ামত” কথাটি বারবার ঘুরেফিরে  আলোচিত হয়। তিনি মধ্যযুগের বাংলাকে দোজখপুর নিয়ামত বলে অভিহিত করেছেন।

 

 

 

. অন্যের ভাবমূর্তি খারাপ করার চেষ্টা করে আপনার কখনও ভাল ভাবমূর্তি তৈরি হয় না

 

বতর্মানে টাকাই হল বাংলাদেশের মেরুদন্ড, শিক্ষা-জ্ঞানচর্চা এগুলো হল মৃত্যুদণ্ড।

 

“যদি আপনি শেয়ালের কাছে থেকে ধর্ম শিখেন, তাহলে মুরগি চুরি করাকে আপনি মহান কাজ ভাবতে শুরু করবেন।"- তুর্কি প্রবাদ ৷ 

 

 

 

পরিবর্তন আসে চ্যালেঞ্জ থেকে

====

 

=====




 যে সুখী সে অন্যকেও সুখী করবে

সব বাদ্যযন্ত্র যদি একই হয় তবে সংগীত হবে প্রাণহীন; একটি দেশের সব মানুষ যদি জ্ঞান আর মানসিকতার একই রকম হয় বা কোনো বৈচিত্রতা যদি না থাকে, তাহলে সেটা হবে  প্রাণহীন সমাজ।

 

(

====

 

" পৃথিবীর মধ্যে একমাত্র উপজাতি সম্প্রদায় যাদের রয়েছে নিজস্ব ক্রিকেট টিম "

*************************************************

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আফ্রিকার আদি কৃষকগোষ্ঠী মাসাই। কেনিয়া এবং তাঞ্জানিয়ার দক্ষিণে সীমান্ত অঞ্চলে ভিক্টোরিয়া হ্রদের পশ্চিম তীরে বসবাস এই উপজাতির মানুষদের। প্রাচীন এই আদিবাসী গোষ্ঠীর জীবন-ব্যবস্থায় বর্তমানে এসেছে অনেক পরিবর্তন। এখন তাদের সুসংগঠিত ক্রিকেট দলও আছে। এবার জেনে নেওয়া যাক, মাসাই উপজাতিদের জীবনের গল্প, তাদের পরিবর্তনের গল্প। আদিম যাযাবর থেকে সভ্য ক্রিকেট খেলোয়াড় হয়ে ওঠার গল্প। 

মাসাইরা সমগ্র আফ্রিকায় মূলত পশু পালনকারী সম্প্রদায় নামে পরিচিত। মাসাইদের সমৃদ্ধি তথা সামাজিক অবস্থান নির্ভর করে কার কটা গরু, তাই দেখে।  গবাদি পশুকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে তাদের আর্থসামাজিক কাঠামো। সামাজিক অবস্থান, মর্যাদা নির্ভর করে সাধারণ অধিকারে থাকা গরুর সংখ্যার ওপর। আদর্শ কৃষিভিত্তিক সমাজের উদাহরণ দিতে গেলে মাসাইদের কথা এখন সবার আগে চলে আসে, যদিও তাদের জীবনব্যবস্থা সভ্য মানুষের মতো নয়।

মাসাইদের দৈহিক গড়ন অদ্ভুত। শরীরের অন্যান্য অঙ্গের তুলনায় গলা ও পা বেশি লম্বা। বেশিরভাগ মাসাই মাটির এক ধরনের গাছের তৈরি কুঁড়েতে বাস করে।  ব্রাসউড নামে গাছ দিয়ে তারা কুঁড়ে তৈরি করে। বলতে পারেন গাছ এবং স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি এসব কুঁড়েঘর মাসাইদের ঐতিহ্যের প্রতীক। মাসাই যুবকদের জীবন ভবঘুরেদের মতো। তারা ১৩ বছর থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত বনে-জঙ্গলে কাটায়। বনে-বাদাড়ে অহেতুক ঘুরে বেড়ায় না তারা। এ সময় তাদের ওপর নিজেদের তৈরির দায়িত্ব থাকে, যা বংশ পরম্পরায় খানিকটা একাই চলে আসছে।

বনে-জঙ্গলে জীবনের সুবর্ণ সময় কাটালেও এ সময় তারা যুদ্ধের বিভিন্ন কৌশল রপ্ত করে। এ কৌশলের ওপর ভর করে তাদের দক্ষতা নির্ধারিত হয়। বাকি জীবনে সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে তারা ওই কৌশলের আশ্রয় নেয়। বন-জঙ্গলের জীবন শেষে আবার নিজ গোত্রে ফিরে আসে যুবকরা। এরপর শুরু হয় সাংসারিক জীবন। সংসারে আধুনিক সভ্যতার উপকরণ কম থাকলেও তাদের যা আছে, তা কিন্তু কম সুন্দর নয়।

মাসাইদের খাদ্যাভ্যাসে রোমহর্ষক এক উপাদান রয়েছে। শুনলে আপনার গা শিউরে উঠতে বাধ্য। তাদের পছন্দের খাবারের মধ্যে আছে গরু, বিশেষ করে ষাঁড়ের তাজা রক্ত। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা এই খাদ্য উপাদেয় হিসাবে গ্রহণ করে আসছে। তবে মাসাইদের প্রধান খাদ্য ভুট্টা ও বাজরা। বাজরা আফ্রিকা অঞ্চলের মানুষের খাবার। তবে পশুর দুধও তাদের প্রিয় খাবার। গবাদি পশুর ব্যাপারে মাসাই সম্প্রদায়ের লোকেরা খুবই স্পর্শকাতর। এ নিয়ে অনেক নিয়ননীতি পালনের রেওয়াজ রয়েছে। তা ছাড়া এ উপজাতির লোকরা গবাদিপুশুর প্রতি দারুণ অনুরক্ত।

পশুপ্রেমী মাসাইরা সাধারণত গবাদিপশু হত্যা করে না। খুবই অসুস্থ বা মৃতপ্রায় না হলে মাসাইরা গবাদিপশু হত্যা করে না। অন্য যাযাবর গোষ্ঠী থেকে মাসাইদের সহজে আলাদা করা যায়। পোশাক ও জীবনাচরণ ও দৈহিক গড়ন, সব মিলে মাসাইরা অন্য উপজাতিদের চেয়ে আলাদা। তবে বর্তমানে আধুনিকতার আলোকচ্ছটা তাদের ওপর পড়তে শুরু করেছে। মাশাই সম্প্রদায়ের অধিবাসীদের অন্যতম জীবিকা পশুপালন।

নিজেদের ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে তারা আধুনিকতার আলো নিতে শুরু করেছে। সামাজিক রীতিনীতিগুলো প্রাচীন হলেও নতুন ধ্যান-ধারণায় আগ্রহ রয়েছে তাদের। বাল্যবিবাহ রোধ, নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধ, এইডস/এইচআইভি সচেতনতা বৃদ্ধি, নারী-পুরুষে সমতা এবং শিক্ষার প্রসারে তাদের মধ্যে কিছু অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়। অন্যান্য আফ্রিকান গোত্রের মধ্যে যা খুব একটা দেখা যায় না।

মাসাই গোষ্ঠী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সম্প্রতি তাদের সংস্কারমূলক কাজ আফ্রিকার অন্য গোত্রগুলোর মধ্যে প্রবাহিত হচ্ছে। সভ্যতার স্বাদ নিতে শুরু করেছে তারা। বিনোদন-ক্রীড়া ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। মাসাই আদিবাসী গোত্র গড়ে তুলেছে একটি নিজস্ব ক্রিকেট দল, যার নাম ‘মাসাই ক্রিকেট ওয়ারিয়র্স’। মাসাইয়ের এই ক্রিকেট যোদ্ধাদের লক্ষ্য আধুনিক, শিক্ষিত ও কুসংস্কারমুক্ত একটি গোষ্ঠী হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে নিজেদের তুলে ধরা।

নিজেদের মূলটাকে অপরিবর্তিত রেখেই তারা অর্জন করতে চায় তাদের লক্ষ্য। এ জন্যই মাসাই ক্রিকেট দল অন্য সব ক্রিকেট দল থেকে ভিন্ন। মাসাইরা ক্রিকেট খেলে অন্য সবার মতোই, কিন্তু তারা জার্সি, টি-শার্ট বা ট্রাউজার পরে না। ক্রিকেটে অন্য সমস্ত কিছু নিয়মকানুন বাকি বিশ্বের মত মেনে চললেও মাসাই ক্রিকেট ওয়ারিয়র্স মাঠে নামে তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরেই, সঙ্গে তাদের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে থাকে অদ্ভূত মাসাই

 

=====

স্বেচ্ছাসেবা করার জন্য এগিয়ে আসুন। যে স্বেচ্ছায় কাজে আগ্রহ দেখায় সে সম্পূর্ণ আলাদা। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা হলো, সে স্বেচ্ছায় কাজ করতে চেয়ে নিজেকে নিজের বিশেষ ক্ষমতা ও আশা অভিলাষ প্রকাশ করার সুযোগ দেয়। স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ একান্তই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে স্বেচ্ছায় করতে হবে।

 

====




===

 

 

 







পুঁজিবাদ বিকাশের অচেনা রূপ

 

শিল্প বিপ্লব যেমন পুঁজিবাদের বিকাশের নতুন রাস্তা দেখিয়েছে তেমনি মানুষের গড় আয়ু দ্বিগুণ করেছে। শিল্প বিপ্লবের আগে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৪০ বছর। শিশু মৃত্যুর হার ছিল ৪০% । জাপানে মানুষের গড় আয়ু ৯০ তে পৌঁছেছে। আমরা ৭০ বছরের মধ্যে আছি।  পুঁজিবাদ পৃথিবীর নারীদের জীবনের অধিকার দিয়েছে।  নারী এখন আর কেবল সন্তানধারণের কাজে ব্যস্ত থাকে না। যে কারণে উন্নত পুঁজিবাদী দেশগুলিতে জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন ঘটেছে । নারী পুরুষের সম্পর্কও পরিবর্তন হচ্ছে। 

কিন্তু এই পুঁজিবাদের অনেকগুলো খারাপ প্রতিক্রিয়া আছে, যেমন- শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি। ব্যাপক জীবাশ্মজ্বালানি ব্যবহারের ফলে উৎপাদিত কার্বন ডাইঅক্সাইড পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ায় উত্তর মেরুর বরফ গলা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, অতিবৃষ্টি, খরা, তীব্র ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস ইত্যাদির কারণে প্রতি বছর ব্যাপক জানমালের ক্ষতি তো আছেই।আরো কিছু অদৃশ্য ক্ষতি আছে যেমন-জীবাণু প্রতিরোধী এন্টিবায়োটিকের আবিষ্কার মানব ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা। কিন্তু আমাদের শরীর থেকে নিঃসৃত হবার পর এই জীবাণুগুলো জলপথে ছড়িয়ে যায়। 

এদের মধ্যে কিছু ‘সুপার’ জীবাণু তৈরি হয়ে জলজপ্রাণির প্রজননে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। জলজপ্রাণির ডিম্বাণু দ্রুত মরে যায় এবং শ্যাওলা জাতীয় জলজ উদ্ভিদের বৃদ্ধি থেমে যায় যা জলজপ্রাণির খাদ্য হিসেবে বিবেচিত।ফলে  হুমকির মধ্যে ফেলা হয়েছে পৃথিবীর প্রাণিকুল, পরিবেশ, এমন কি নদী ও সমুদ্রের পানি।

 

 

 

ব্যাংক ব্যবস্থার উদ্ভব হলো যেভাবে

 

ইহুদীরা অন্য জাতির সাথে মেশে না, অইহুদীর মেয়েকে বিয়ে করে না, এবং মেয়ে বিয়ে দেয় না- এরা বহুকাল আগে থেকেই ইহুদি রক্তের বিশুদ্ধতা রক্ষা করতো । ইহুদিরা বহু আগে থেকেই নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে বিভিন্ন দেশে বসবাস করত। তবে ইহুদীদেরকে বহু দেশেই চাষবাস করতে দেওয়া হত না । সেকালে অন্য কোন পেশা তেমন তো ছিল না,  বাঁচার তাগিদে তারা জুতা তৈরী ও সেলাই, কাপড় সেলাই, কামার ও স্বর্ণকারের কাজ, পাথর খোদাইয়ের কাজ এইসব করে অতিকষ্টে বেঁচে থেকেছে আর দেশে দেশে তাড়া খেয়ে ঘুরেছে । গ্রামে ওদের থাকা হয় নি । আর শহরে থাকতে গিয়ে লেখাপড়া শিখতে বাধ্য হয়েছে ।

প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে বন্দরে বন্দরে সোনার চাক্তি আর রূপার চাক্তি দিয়ে কেনাবেচা হত । ক্রমে বন্দরে স্থায়ী ঘর তুলে বাবসা শুরু করল এক দল লোক । কিন্তু এক বন্দর থেকে অন্য বন্দরে মালামাল পৌঁছে দিয়ে টাকা আনার ক্ষেত্রে দেখা গেল বিপত্তি । পথে ডাকাতি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো। তখন ইহুদীরা এই সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এল। বিভিন্ন বন্দরে অবস্থান নেওয়া ইহুদীরা যৌথভাবে একটি ব্যাংক ব্যবস্থা প্রবর্তন করলো।  ইহুদিদের একটা প্রধান নীতি হলো এরা কোনদিন পরের ধন আত্মসাৎ করে না তাই সবাই তাদের বিশ্বাস করে টাকা পয়সা জমা রাখত। সেই টাকা ইহুদীরা উৎপাদন খাটে সুদে লাগিয়ে আয় করতো।

 

টাকা যে কি জিনিস সেটা পৃথিবীতে জানতেন মাত্র দুইজন মানুষ- দুইজনই ইহুদী । একজন হলেন স্যার গ্রেশাম (রাণী প্রথম এলিজাবেথের অর্থ উপদেষ্টা) আর অন্যজন ছিলেন হ্যারি ডেক্সটার হোয়াইট (বিশ্বব্যাঙ্ক, আই-এম-এফ ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার স্রষ্টা) ।ইহুদীরা অন্য জাতির সাথে মেশে না, অইহুদীর মেয়েকে বিয়ে করে না, অইহুদির কাছে মেয়ে বিয়ে দেয় না- এইসব কারণে এরা বহুকাল আগে থেকেই অন্য জাতিদের বিরাগভাজন ছিল । ১৭৩০ সালের আগে সারা পৃথিবীর জমির মালিক ছিলেন রাজা আর প্রজারা চাইলেই রাজার জমি চাষ করতে পারত ; তবে খাজনা দিয়ে । ইহুদীদেরকে বহু দেশেই চাষবাস করতে দেওয়া হত না । সেকালে অন্য কোন পেশা তেমন তো ছিল না, ওরা বাঁচবে কি করে ? তাই প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ওরা জুতা তৈরী ও সেলাই, কাপড় সেলাই, কামার ও স্বর্ণকারের কাজ, পাথর খোদাইয়ের কাজ এইসব করে অতিকষ্টে বেঁচে থেকেছে আর দেশে দেশে তাড়া খেয়ে ঘুরেছে, বারেবারে গণহত্যার শিকার হয়েছে । গ্রামে ওদের থাকা হয় নি । প্রথম থেকেই ওরা থেকেছে শহরে আর আগের যুগের শহর মানে সেনাবাহিনীর আখড়া আর শহরে থাকতে গিয়ে লেখাপড়া শিখতে বাধ্য হয়েছে ।

কৃষি উদ্ভাবনের পর থেকেই চাষীদের কপালে মার জুটেছে । বহু কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করে ঘরে তোলার পরেই খুনি দস্যুর দল এসে সব কেড়ে নিয়ে গেছে আর প্রাণে না মারলে পরাজিত লোকটাকে দাস বানাচ্ছে, চাষার বউটাকে নিয়ে গণধর্ষণ করছে বা রক্ষিতা বানাচ্ছে বা পতিতা বানাচ্ছে । ছয় হাজার বছর ধরে এইসব চলার পর মধ্য এশিয়া অঞ্চলে ঘোড়ায় চড়ে ডাকাতি করার জন্য এক জাতির উন্মেষ হয় । তাদের নাম হল আর্য । 

 

তারপর তারা ভারতে এসে স্থানীয় লোকজনকে দাসে পরিণত করে আর নিজদের পান্ডাগুলোকে ব্রাহ্মণ এবং গুন্ডাগুলোকে ক্ষত্রিয় ঘোষণা করে । টাকা বলতে তারা লুন্ঠিত সামগ্রী বা লুটকেই বুঝেছিল । সেই ভয়ঙ্কর যুগে মিশরের বড় গুন্ডা নিজেকে কেবল রাজা নয়, ঈশ্বর ঘোষণা করেছিল আর মিশরের ঈশ্বর নিজের সহোদরা বোনকে স্ত্রী হিসাবে নিয়ে তার রক্তের বিশুদ্ধতা জারি করেছিল । এই দস্যু রাজা ফেরাউন মেরে কেটে দেশছাড়া করেছিল ইহুদীদেরকে । সে প্রায় চার হাজার বছর আগের ঘটনা । এরপর পৃথিবীর কোথাও ইহুদীরা টেকে না । এরপর অল্প কয়দিন বর্তমানকালের ইসরাইল আর জর্ডান এবং প্যালেস্টাইন এলাকায় ওরা বাস করে ও তারপর মার খেয়ে দেশ ছাড়া হয় । উদ্বাস্তু হিসাবে দেশে দেশে ঘুরে গুন্ডা রাজাদের সোনা-রূপা-হীরার কারিগর হিসাবে, কামার, ছুতার, পাথর মিস্ত্রি আর লেখকের কাজ করে ওরা বেঁচে থাকে ।

প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে বন্দরে বন্দরে সোনার চাক্তি আর রূপার চাক্তি দিয়ে কেনাবেচা হত । ক্রমে বন্দরে স্থায়ী ঘর তুলে বাবসা শুরু করল এক দল লোক ।

মু সলমান সংখ্যায় অনেক ; তবে চরিত্রে বেঈমান, বুদ্ধিতে নাকাল, শিক্ষায় সব সময় সবার পিছে ।

—===

বই ছিদ্র করা উঁইপোকা তাড়ানোর জন্য ইঁদুর ডেকে আনবেন না। পুরো বইই কেটে ফেলবে।

====

ঊনবিংশ শতাব্দীতে শিক্ষিত মুসলমান বলতে আরবি, ফারসী, উর্দু শিক্ষিত মুসলমানকে বোঝানো হতো। তাঁদের শিক্ষা দীক্ষায় কোনও দ্বন্দ্ব ছিল না। তাঁরা বাংলা জানতেন না। 

হিন্দুর তুলনায় মুসলমানদের ধর্মের প্রতি টান বেশী - বিদ্যাসাগর, মুধুসূধন, লালবিহারী, কৃষ্ণমোহনের দৃষ্টান্ত মুসলমান সমাজে নাই। অবাঙালি নেতা বাঙলা দেশে এসে উর্দুতে বক্তৃতা দিলেন, দাওয়াতে-খানা-পিনাতে উর্দু বললেন, 

======

বিদ্যাসাগর একবার দুর্ভিক্ষের সময় লঙ্গরখানা খুলেছিলেন শহরে। অনেক লোক খেতো। ভাত, ডাল আর একটা তরকারি। পুরোটাই নিজের টাকায়। কিছুদিন চলার পর কলকাতার কিছু ভদ্রলোক এসে মিনমিনে স্বরে বললো, বাঙালীর কি একটু মাছ না হলে চলে? দেখুন না পাতে একটু মাছ দেওয়া যায় কিনা ? বিদ্যাসাগর, যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের বললেন, এক টুকরো করে মাছও দিও। এভাবে চললো কিছুদিন। আবার সেই ভদ্রলোকগুলো এলো। গলার স্বরটা একটু চড়া; বললো সবইতো হলো মশাই, বাঙালীর শেষ পাতে একটু অম্বল হলে ভালো হতো না???আমরা নিজেরা কিছু করতে পারিনা কিন্তু কেউ করলে তাকে নানা রকম উপদেশ দিতে ওস্তাদ। এটা হয়নি, ওটা হয়নি, এটা করতে হতো, 

—-

আমরা চারদিকে কেবল নারী ইলিশই দেখি কেন? কয়েক বছর আগে একই প্রশ্ন তাড়া করে বেড়ায় আব্দুল কাইয়ুম নামের আরেক সাংবাদিক ও পপুলার সায়েন্সের লেখককেও। তিনি চেষ্টা করেন রহস্যভেদের।

কাইয়ুম বলেন, 'বেশ কয়েকজন জেলে ও বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে আমি জানতে পারি, পুরুষ ইলিশ আসলে আমরা যতটা ভাবি ততটা বিরল নয়। জেলেরা তাদের জালে পুরুষ মাছও ধরে, কিন্তু কোন মাছটি পুরুষ আর কোনটি নারী, তা তারা আলাদা করতে পারে না, কেননা পুরুষ ইলিশের কোনো জননাঙ্গ নেই।'

ড. ওয়াহাব বলেন, 'নারী ইলিশরা যেভাবে পানিতে তাদের ডিম ছাড়ে, পুরুষ ইলিশরা পানি ঠিক সেভাবেই ছাড়ে তাদের বীর্য। আর এই দুটি জিনিস প্রায় একই রকম দেখতে। শুধু এটুকুই ব্যতিক্রম যে, পুরুষ ইলিশদের ভেতরে ডিম থাকে না, কিন্তু সে কথা ডিম ছাড়া নারী ইলিশদের বেলায়ও প্রযোজ্য।

নারী ইলিশের মাঝে যে দীপ্তি দেখা যায়, পুরুষ ইলিশের ভেতর তা অনুপস্থিত। তারা দেখতে কদাকার না হলেও কিছুটা অনাকর্ষণীয় তো বটেই।'

গতানুগতিক মাছের বাজারে তাই আর এসব পুরুষ ইলিশের ঠাঁই হয় না। জেলেরা সেগুলোকে আলাদা করেন এবং পাঠিয়ে দেন লবণ মাখিয়ে শুকানোর জন্য। স্থানীয় কৌশলে সংরক্ষিত এসব ইলিশকে বলা হয় 'নোনা ইলিশ'।

স্যামন, স্মেল্ট, হিকরি শ্যাড, ল্যাম্প্রে এবং গালফ স্টার্জনের মতো ইলিশও একটি অ্যানাড্রোমাস মাছ, যারা একটি বিশেষ ধরনের জীবনচক্র অনুসরণ করে থাকে। তাদের জন্ম হয় মিঠাপানিতে। এরপর অভিবাসিত হয়ে আট মাস তারা সমুদ্রে চলে যায় এবং সেখানেই কৈশোর পেরিয়ে পরিণত মাছ হয়ে ওঠে। তারপর তারা আবার মিঠাপানিতে ফিরে আসে প্রজননের উদ্দেশ্যে।

ইলিশ যৌনকর্মে লিপ্ত হয় না। পুরুষ মাছ পানিতে তাদের ফোমের মতো শুক্রাণু ছেড়ে দেয় এবং নারী মাছ ওই ফোম-সদৃশ ব্রথের ওপর তাদের ডিম্বাণু ছেড়ে সেগুলোকে নিষিক্ত করে।

লিশের বিচরণ কেবল মেঘনার অববাহিকাতেই সীমাবদ্ধ নয়। তারা মিয়ানমারের ইরাবতী নদী এবং পশ্চিমবঙ্গের ভাগীরথী-হুগলী নদীতে প্রবেশ করে। তা ছাড়া ইলিশের উপস্থিতি রয়েছে আরও সুদূরে। পূর্বের মেকং বদ্বীপ থেকে শুরু করে পশ্চিমের পারস্য উপসাগরেও দেখা মেলে তাদের।কিন্তু মেঘনার মোহনায় যে পরিমাণ ইলিশ দেখা যায়, আর কোথাও এই মাছকে এত বেশি দেখা যায় না,

=====

আলোকিত সন্তান সবাই চায়। কিন্তু সন্তানকে আলোকিত করতে হলে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, সে সম্পর্কে অনেকেই বেখবর। অনেকের ইচ্ছে থাকে সন্তান গড়ার কলাকৌশল জানার। 

আহমদুল্লাহরা হিটলারের চেয়েও ক্ষতিকর। কারণ হিটলারদের উত্থানের জন্য যে-ধরণের মূর্খ জনগোষ্ঠী দরকার, তার প্রধান উৎপাদক ও যোগানদাতা আহমদুল্লাহ-সদৃশ মানুষরা। স্প্যানিশ ইনকুইজিশন কী করতো? ক্যাথোলিক চার্চের মাধ্যমে গরিবদের সাহায্য করতো, হাসপাতাল বানাতো, সেবামূলক কাজ করতো। কিন্তু আড়ালে মুসলিম, ইহুদী, ও প্রোটেস্টান্টদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ উৎপাদন করতো, নির্বোধ জনগোষ্ঠীর চোখে ধূলো দেয়ার একটি প্রাচীন কৌশল হলো ‘সমাজসেবা’। পাবলো এস্কোবার, আল কাপোন, এরা খুব দান-খয়রাত করতো। কিন্তু আড়ালে ছিলো ডাকাত, পেশাদার খুনী, ও ড্রাগলর্ড। রাজা দ্বিতীয় লিওপোল্ড যখন বেলজিয়ামে যান, তখন দান-খয়রাতী ত্রাতা হিশেবেই গিয়েছিলেন। কোনো উল্লেখযোগ্য দক্ষতা তাদের নেই, যা দিয়ে ওয়াজ ও ধর্মব্যবসা ছাড়া আয়-রুজগার করে খেতে পারবেন। 

=========

 

আর আমরা?  কেবল ফেসবুকে হা হা রিয়েক্ট দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ছি!

আমরা সরকারি লোকজন সব ফ্রি-তে করায় নিতে চাই। ভালো কাজ যথোপযুক্ত সম্মানীর বিনিময়ে করিয়ে নিতে হবে।স্বেচ্ছাসেবায় গাছ লাগানো যায়, 

========

 

ইসলাম পালন বাংলাদেশে এখন নিছক লোক দেখানো বিষয়। এর বাইরে মানুষের মানবিক চরিত্র গঠনের উপরে এর কোন প্রভাব আছে বলে মনে হয় না, প্রমাণও পাওয়া যায় না।দাড়ি বেশি সুন্নতি কায়দার, আবার কেউ টুপি ছেড়ে বেশি সুন্নতি পাগরির দিকে ঝুকছে, কার কতগুলো বাচ্চা মাদ্রাসায় হাফেজ হচ্ছে, কার বিবি কত পর্দানশীল ইত্যাদি ইত্যাদি,অনেকটা মানুষের বেশি বেশি মুসলিম হওয়ার চেষ্টার সাথে সামাজিক অন্যায় ও ক্রমবদ্ধমান ভাবে বেড়ে চলেছে। মানুষ আগের চাইতে আরো মুসলিম ফদান দেশে কোরানকে এক নাম্বার পাঠ্যপুস্তক বিবেচনায় রেখে বাকি সব বিধর্মীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হোক।হাউকাউ করে নতুন সংস্কারকর্মী নিয়োগ দিয়ে, নতুন বই ছাপিয়ে হুদাই রাষ্ট্রীয় টেকা খসানোর পায়তারা করার কোন মানে দেখি না।ইসলামী ব্যাংক নাম দিচ্ছে কেন? খ্রীষ্টান ব্যাংক, হিন্দু ব্যাংক তো নাই। নাম দিয়ে ভুলানো তো প্রতারণা। এত ঘটনা ধর্ম বাণিজ্যের কারণে।এদেশের যত লোকজন ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন -  অধিকাংশই তাদের নবম পূর্ব পুরুষদের নাম জানেন না।

====

ইলিশ কি ভারতকে ঘুস দেয়া?

না হলে যশোরে পাইকারী কেজি ১৬৫০ টাকা, ভরতে ১১৮০ টাকায় দেয় কেন?

=====

 

সারা দেশ থেকে ঢাকায় ঢোকার রাস্তা মাত্র ৩টা। এর মধ্যে,

গাবতলী দিয়ে ঢাকায় আসে ১৮ জেলার মানুষ।

উত্তরা দিয়ে ৫ জেলার মানুষ।

যাত্রাবাড়ি দিয়ে ৪০ জেলার মানুষ।

.

এই তিন পয়েন্টের বাইরে যে রাস্তাগুলো আছে সেগুলোর ডিজাইন ভালো না। তাই প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহারের অযোগ্য। যেমন ধরেন বাবুবাজার সেতু পারতপক্ষে কেউ ব্যবহার করবে না কারণ পুরান ঢাকার যানজট পাড়ি দিতে কমপক্ষে ৩ ঘন্টা লাগবে। ৩০০ ফিটের রাস্তা কেউ ব্যবহার করবে না কারণ রাস্তা সরু আর প্রায় ১৫ কিমি বেশি ঘুরতে হয়। ইত্যাদি।

.

এখন ফিরে আসি ওই তিন প্রবেশপথের প্রসঙ্গে। এই তিন প্রবেশপথের মধ্যে যেটা সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ সেটা হলো উত্তরার রাস্তা। এটা দিয়ে ৫ জেলার মানুষ ঢাকায় ঢুকে। এই রাস্তায় আছে ৪ লেন মহাসড়ক, বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট, দুইটা এক্সপ্রেসওয়ে (ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে আর আশুলিয়া-ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে)।

.

উত্তরার রাস্তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ গাবতলী। এটা দিয়ে ১৮ জেলার মানুষ ঢাকায় আসে। এতে ৪ লেন মহাসড়ক আছে। তবে এক্সপ্রেসওয়ে নেই। রাতে এই রাস্তায় ব্যাপক যানজট থাকে।

.

এরপর আসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ি। এটা দিয়ে ৪০ জেলার (চট্টগ্রাম, সিলেট, দক্ষিণবঙ্গ) মানুষ ঢাকায় আসে। এই প্রবেশপথটা সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে মজাদার প্রবেশপথ। সিলেট মহাসড়কের ৪ লেন, চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৬ লেন, মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ৪ লেন = মোট ১৪ লেন সড়ককে একত্র করে ১ লেন বানানো হয়।

.

বিষয়টি বুঝিয়ে বলি। প্রথমে সিলেট মহাসড়ক এনে চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে সিলেটের ৪ লেন আর চট্টগ্রামের ৬ লেন মিলে জোর করে ৬ লেন করা হয়েছে, যেখানে প্রয়োজন ছিল ১০ লেন। এই ৬ লেন এসে ঢুকেছে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে।

.

এদিকে বাম দিকে থেকে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের ৪ লেনও মেয়র হানিফে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মানে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ১৪ লেন মহাসড়কের চাপ নিয়েছে।

.

এখন হানিফ ফ্লাইওভার যে ঢাকায় ঢুকলো সেটার দিকে তাকাই। হানিফের এক্সিট পয়েন্ট দুইটা। একটা গুলিস্তান (২ লেন)। এই ২ লেন একেবারেই অব্যবহারযোগ্য। হকারদের জন্য গুলিস্তান দিয়ে কোন গাড়ি, বাস ঢোকার উপায় নেই। তাই গুলিস্তানের এক্সিট পয়েন্ট বাতিল।

বাকি থাকলো চানখারপুল এক্সিট। শুধু এটাই কাজ করে। এটা মাত্র ১ লেন। দুটো গাড়ি পাশাপাশি দাঁড়ানোরও উপায় নেই। ১৪ লেন মহাসড়ক এনে জোর করে ১ লেন করা হয়েছে।

.

প্রশ্ন আসবে, তাহলে এই ট্রাফিক সিস্টেম কাজ করে কীভাবে?

উত্তর হলো, করে না।

প্রতিদিন চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১২ কিলোমিটার, মাওয়া মহাসড়কে ২ কিলোমিটার আর সিলেট মহাসড়কে ৬ কিলোমিটার যানজট লেগে থাকে। প্রতিদিন যাত্রাবাড়ি থেকে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে আসতে এত ৪০ জেলার মানুষ ৫ কিলোমিটার রাস্তায় ন্যূনতম ৩ ঘন্টা বসে থাকে।

.

এতো বড় ভোগান্তির কথা আপনি আমি জানি না কেন?

জানি না কারণ আমাদের মিডিয়া হাউজগুলো ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে অবস্থিত। যাত্রাবাড়ির যানজট পাড়ি দিয়ে কোন ব্যক্তির পক্ষে সকাল ১০টায় উত্তর ঢাকায় গিয়ে অফিস ধরা রীতিমত সুপারহিউম্যানের কাজ। ফলে মিডিয়া ও সাংবাদিক এবং অন্য যারা আমাদের মনোযোগ নিয়ন্ত্রণ করেন তারা সবাই বাস করেন নিকেতন, মিরপুর, মোহাম্মদপুর, খিলগাও, বনানী বা ফার্মগেটের দিকে। ফলে ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশপথ এবং ঢাকার সর্বাধিক জনসংখ্যাপূর্ণ ৪টি থানা কখনোই কোন মিডিয়াতে গুরুত্ব পায় না। যে কারণে এলাকা বিচারে এই গণঅভ্যুত্থানে সারা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ছাত্র ও পুলিশ যাত্রাবাড়িতে মারা গেলেও আমরা জানিনা।




 

ভিন্নমত, মতপার্থক্য এগুলো একটি মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজের চিরায়ত বৈশিষ্ট্য।

বহুল প্রচলিত একটি কথা, যখন দুইজন ইংরেজ একত্রিত হন – তারা গঠন করেন একটি ক্লাব, দুইজন স্কটিশ যদি এক হন – তৈরি হয় একটি ব্যাংক, দুইজন জাপানি একত্রিত হলে জন্ম নেয় একটি গোপন সংগঠনের আর দুইজন বাঙালি একসাথে হলে সেখানে সৃষ্টি হয় তিনটি দলের! তার মানে? কোনো বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছানো বাঙালির জন্য ভীষণ কষ্টসাধ্য বা বিরল একটা ব্যাপার। 

ভিন্নমতের মধ্যদিয়ে বিকাশ ঘটে নতুন-নতুন চিন্তাধারা, দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শনের। তবে এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজন পরমতসহিষ্ণুতা, ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ এবং সেটা গ্রহণের উদারনৈতিক মানসিকতা।  

====

যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও লেখক বেঞ্জামিন ডিসরেইলি মিথ্যাকে ভাগ করেছেন তিনভাগে, মিথ্যা, ডাহা মিথ্যা, ও পরিসংখ্যান। পরিসংখ্যান কখনো কখনো বিভ্রান্তিকরও বটে।

 

আমরা কেন তামিলনাড়ু হতে পারি না?

বাঙালিরা তামিলনাড়ুতে ব্যাপক হারে চিকিৎসার জন্য যাতায়াত করে, এই বাঙ্গালীদের অনেকেই বুঝতে পারে না যে, ভারতের এই রাজ্যটির উন্নতির পিছনে রহস্য কি রহস্য কোথায়?

দক্ষিণ ভারতের রাজ্য এ রাজ্য তামিলনাড়ু।জাহাজে বাণিজ্য করার সুবাদে তামিলনাড়ুর সঙ্গে আরবীয় মুসলমানদের একটি যোগাযোগ স্থাপিত হয়। বৃহত্তর তামিলনাড়ুর কেরালা রাজ্যের একটি মসজিদের সন্ধান পাওয়া যায়, যা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে। তখন রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সা:) জীবিত।

গত শত শত বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তামিলনাড়ুতে সাম্প্রদায়িকতার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। তামিলনাড়ুরকে প্রথম ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার বলা হয়। ব্রিটিশ শাসনামলে তামিলনাড়ুতে নানান ভাষা প্রচারিত ছিল: তামিল, মালায়লাম, আরবি। তখন তামিলনাড়ুর মাত্র এক শতাংশ মানুষ হিন্দি ভাষায় কথা বলত। এখনো অনেকটা তাই। কংগ্রেসের নেতা বহুভাষী এই রাজ্যের মূল ভাষা হিন্দি ঘোষণার কারণে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে এবং প্রাণহানীর ঘটনাও ঘটে। ১৯৫০ সালে তামিলনাড়ুর পথ ধরে আরো বহু রাজ্যে সে সময়ে ভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। এবং এই আন্দোলনের পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯৬৫ সালে। ভারতের রাজ্যগুলোতে নিজ নিজ রাজ্যের স্বীকৃতি ভাষাকে দেওয়া হয়।

তামিলনাড়ুর  ভাষা আন্দোলন এক অভূতপূর্ব ঐক্য গড়ে  রাজ্যে বিভিন্ন ভাষার পরিবর্তে ইংরেজিকে প্রতিষ্ঠা করার দাবি তুলেছিল। যদিও সেখানে তামিল ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৭০%। এরপর তামিলনাড়ুর একাধিক রাজ্যে বিভাজিত হলেও দক্ষিণের এই রাজ্যগুলো ভারতীয় অর্থনীতি এবং শিক্ষার সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থান করছে। যেমন-এই অঞ্চলের একটি রাজ্য কেরালা শতভাগ শিক্ষায় শিক্ষিত, তেমনি রাজ্যটি ভারতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তিও।  সেখানে হানাহানি ও সহিংসতার কোনো নজির নেই। হিন্দু-মুসলিম ছাড়াও খৃষ্টান শিখ জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মসহ বহু ধর্মের অবস্থান থাকা সত্তেও এই সব রাজ্যগুলিতে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার মতো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনাও নেই। তাদের নীতি আদর্শ তাবত বিশ্বে পুজনীয় হচ্ছে।

পহেলা বৈশাখ বনাম নওরোজ উৎসবঃ

বাংলা সনের প্রথম অগ্রহায়ণকে বাদ দিয়ে বৈশাখকে বাংলা নববর্ষ করা হল?

 বৈদিক যুগে বাংলা সনের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ। মোগল জ্ঞানীরা বৈশাখকে বাংলা নববর্ষ করেন

 

 ১৯৮৯ সনে  ঢাকা 'আর্ট কলেজ' ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'চারুকলা ইনস্টিটিউট' রূপান্ত্রিত হয়েছে। সেখান থেকে নববর্ষের মিছিল বের হয় যার শিরোনাম ছিলো 'আনন্দ শোভাযাত্রা'। কিন্তু কালের বিবর্তনে তা হয়ে যায় 'মঙ্গল শোভাযাত্রা'। এই নতুন নামকরণটি নিয়ে শুরু হয়ে যায় ধর্মীয় বিতর্ক। কারণ  'মঙ্গল শোভাযাত্রা'র সাথে হিন্দু সম্প্রদায়-এর মঙ্গল পুজার কিছু মিল আছে। তাই যারা নাম পরিবর্তন করে মঙ্গল শোভাযাত্রা' করেছে,তারা কাজটি ঠিক করেনি।  এই  শোভা যাত্রাটির নাম 'আনন্দ শোভাযাত্রা'ই ঠিক। এই শোভা যাত্রায় থাকবে গ্রাম বাংলার পুরনো ঐতিহ্য, যা হারিয়ে গেছে যেমন ঢেঁকি, ধামা, ডালি, কুলা হ্যারিকেন, কুপি,গরুর গাড়ি,পাল্কি, হুুকা,যাতা,লাঙ্গল, মই, ইত্যাদি। আমাদের আজকের বিষয় বাংলা নববর্ষ

 

===

 

সবাই বলেন- পহেলা বৈশাখের বাংলা ক্যালেন্ডার সম্রাট আকবর চালু করেছেন। কিন্তু তিনি কিসের উপর ভিত্তি করে এই ক্যালেন্ডার চালু করলেন? 

 মুঘলরা ভারত উপমহাদেশে এসে শাসন শুরু করার পর জ্ঞানী গুণীদের ডেকে একটা ক্যালেন্ডার তৈরি কারার দায়িত্ব দিলেন। কারণ সে সময় খাজনা আসতো ফসল থেকে। হিজরি পঞ্চিকা চন্দ্রমাস বছরে ৩৬৫ দিনের পরিবর্তে ৩৫৪ দিন হওয়ায় কৃষকরা ফসল কাটার আগেই, খাজনার সময় চলে আসতো, ফলে অসময়ে কৃষকদেরকে খাজনা পরিশোধ করতে বলা হলে কৃষকদের সাথে রাজ কর্মচারীদের দ্বন্দ্বযুদ্ধ দেখা দিত । জ্ঞানীগুনিরা যে ক্যালেন্ডারের উপর ভিত্তি করে নতুন এই বাংলা সন চালু করেন, সেটা বৈদিক যুগ থেকেই এই অঞ্চলে প্রচলিত ছিল। মুঘলদের পূর্বপুরুষরা যখন উজবেকে অসভ্য বর্বর জীবনযাপন করছিল, বাঙালি পন্ডিতরা তখন সৌর সনের পাঁজি বা পঞ্জিকা রচনা করেছিল। হিন্দু সম্প্রদায় পূজা করত এই পাঁজি বা পঞ্জিকা অনুসারে। বৈদিক যুগে বাংলা সনের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ। মোগল জ্ঞানীরা বৈশাখ মাসকে বাংলাবর্ষের প্রথম ধরে বাংলা বর্ষপঞ্জি প্রবর্তন করেন।

প্রাচীন ভারতীয়দের এই ক্যালেন্ডারকে বলা হত পাঞ্চাংগাম । বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা এবং আসামে এটাকে বলা হত পঞ্চিকা । প্রায় একই সময়ে পুরো এশিয়ায় ফসল উঠতো বলে ‘১৩ থেকে ১৫ এপ্রিল’ বাংলা অঞ্চল ছাড়াও তামিল, শ্রিলংকান, কম্বোডিয়া  “থাইল্যান্ড,মায়ানমার, পাকিস্তান ও ভারতের বিভিন্ন গোষ্ঠীর নববর্ষ এই সময়টাতে হয়।  

খ্রিস্টের জন্মের সাথে সম্পর্কিত হল খ্রিস্টাব্দ  আর মহানবী'র হিজরতের ঘটনার সাথে হিজরি সন। কিন্তু  বাঙালি জাতিসত্তা থেকে এসেছে বঙ্গাব্দ। 'বঙ্গাব্দ' শব্দটি  রাজা শশাঙ্কর আমলে দুটো শিব মন্দিরে পাওয়া যায়।। রাজা শশাঙ্ক ৫৯০ হতে ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত গৌড়ের রাজা ছিলেন> অর্থাৎ মহানবীর প্রায় সমসাময়িক ছিলেন তিনি।  গৌড় রাজ্যটি হল- মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান, মালদহ, এবং আমাদের ছাপাই নবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর কিছু অংশ

 

কেউ কেউ সংস্কৃতি বলতে মনে করে  সংস্কৃত, অর্থাৎ হিন্দুয়ানি কিছু। সংস্কৃতি হল- আমরা যে জীবন যাপন করি, আমরা যেসব প্রথা বা আদব কায়দা মানি, আমরা যা খাই, যেসব কাপড় পরি, আমরা যেভাবে অন্যকে শ্রদ্ধা করি, যেভাবে রাগ করি, যেভাবে ভালবাসি এগুলোই আমাদের সংস্কৃতি। প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ সাদাসিদে গরীব মানুষ ছিল। এরা নেন্টি পরতো, মাছ ভাত খেতো, শুকনো মরিচ এবং পান্তাও খেত। মাটি দিয়ে ট্যাপা পুতুল বানাতো। চৈত্র সঙ্ক্রান্তিতে মুখোশ পরে বিভিন্ন ধরনের নাচ-গান করতো। সাথে বাঘের মুখোশ পরেও নাচতো। আগেকার দিনে লোকগল্পে বাঘের উপস্থিতি মোটামুটি কমন ছিল। যৌথ পরিবারে বাচ্চারা দাদা-দাদির কাছে বাঘের গল্প গুনতে চাইত”। তাই হয়ত শোভাযাত্রায় বাঘের মুখোস রাখে। আবার প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ বিশ্বাস করতো প্যাচা দেখলে যাত্রা শুভ হয় । তাই  লক্ষ্মী প্যাচার মুখোসও শোভাযাত্রা'য় থাকে।

প্রাচীনকালে আমাদের পূর্বপুরুষরা মূলত প্রকৃতি পুজারী ছিল। ব্রাহ্মণ সেন রাজারা এখানে এসে আর্য হিন্দু সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয় । ফলে  আমাদের জীবন-যাপনের বহুকিছুই হিন্দু সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠে। 

 আরবের হুবাল দেবতা হচ্ছে চন্দ্র দেবতা। ইসলামের চাঁদ কিন্তু আরবের এই পৌত্তলিকতার সিম্বল। আরবরা তাদের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য সংস্কৃতি-ইতিহাসকে সম্মান করে। তারা তাদের দেশের মসজিদগুলোর মিনারে চাঁদের সিম্বল রাখে। এমন কি তারা তাদের নামের সাথেও বাপ-দাদাদের নাম লাগিয়ে রাখে। যেমন-ওমর বিন আবদুল আজিজ, আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মোতালিব এভাবে। তারপরও আরব জাতির সংস্কৃতিতে কিছু কমতি আছে বলেই বর্তমান বাদশা শত শত সিনেমা হল থেকে শুরু করে লাইভ কনসার্ট পর্যন্ত আনন্দ ফুর্তির সবকিছুই যোগ করছে। অন্যদিকে আমাদের পূর্বপুরুষদের ধর্মের অনুষঙ্গই ছিল সাংস্কৃতিক আনন্দ তথা নাচ-গান  ইত্যাদি। সংস্কৃতি হলো সহজাত প্রবিত্তির মত। চাইলেই ত্যাগ করা যায় না, বাদ দেয়া যায় না। যার বাদ দেওয়া চেষ্টা করে তা না বুঝে করে।  আমরা বাঙ্গালি মুসলমানরা নিজের বাপকে বাপ না ডেকে পরের বাপকে বাপ ডাকি, কারণ আমাদের নামের সাথে তো আরবদের মত বাপ-দাদাদের নাম জুডে নাই। আমরা কেউ দাদার বাপের নাম কি ছিল বলতে পারি না। আর একটু আগের অর্থাৎ সাত পুরুষ গেলেই আমাদের বাপের পরিচয় বের হয় বৌদ্ধ না হয় হিন্দু । এটা সে মানতে পারি না। ফলে বখতিয়ার খিলজিকে বাঙালি মুসল্মানদের বাপ হিসেবে ধরে ইতিহাস রচনা করি।  আমরা বৈশাখ পালন না করে নওরোজ পালন করতে চাই। নূহ নবীর নতুন পৃথিবী উদযাপন থেকে নওরোজ উত্সব। আর সেই উত্সব ভারতবর্ষে পারস্যবাসীরা নিয়ে এসেছে! ইহুদী পুরাণের নূহ নবীর মহাপ্লাবণের গল্পটা কিন্তু কোনো মৌলিক গল্প নয়। এটা প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় প্রচলিত মহাপ্লাবণের গল্প থেকে এসেছে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়া ছিল বর্তমান ইরান-ইরাক অঞ্চল। ফলে আমাদের দেশে ‘চাদের বুড়ি সুতা কাটে’ গল্পের মত মহাপ্লাবণের গল্প আবহমানকাল থেকেই  ইরান-ইরাক অঞ্চলে বিদ্যমান ছিল। নওরোজ যেমন মধ্যপ্রাচ্যের নববর্ষ আয়োজন, বৈশাখও তেমনি আমাদের বর্ষবরণ। মুগোল সম্রাটের বাপ- দাদা্দের জন্মের আগেও বাংলার কৃষক বৈশাখ মাসকে চিনত। মাস দেখেই সে ফসল ফলাতো। আকবর খাজনা আদায়ের জন্য সে সব মাসকে একটা লিখিত ক্যালেন্ডার রূপ  দিয়েছিলেন মাত্র।

একটা বিষয় হয়তো অনেকেই জানেন না যে, পশ্চিমবঙ্গে যেদিন বাংলা নববর্ষ পালিত হয় তার আগের দিনই আমাদের দেশে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত হয়ে যায়!   ১৯৫২ সালে বিশ্ববিখ্যাত জ্যোতিঃ পদার্থবিদ ড. মেঘনাদ সাহা এই বাংলা বর্ষপঞ্জির আমূল সংস্কার করেন। সেই অনুসারে প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখ হওয়ার কথা। ড. মেঘনাদ সাহাকে সমর্থন করেন ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সনাতনপন্থীরা তার প্রস্তাব গ্রহণ না করায় তারা আগের নিয়মই মেনে চলেন। ফলেবাংলাদেশের পঞ্জিকা, পশ্চিমবঙ্গের পঞ্জিকা থেকে একদিন এগিয়ে  আছে।

আগেকার আমলে বৈশাখ উদযাপন ছিল গ্রামকেন্দ্রীক। গ্রামে নানা আয়োজনের সাথে বিভিন্ন মেলা  ছিল বৈশাখের অনুষঙ্গ। আজ গ্রামেই বৈশাখ নেই। গ্রামের কোথাও কোনো আয়োজন নেই। শহরে না গেলে মনেই হয় না বৈশাখ এসেছে। গ্রামের মানুষ ধর্মভীরু। ওয়াজ আর ফতোয়া শহরে কাজে না লাগলেও গ্রামে কাজে লেগেছে। কারণ ভূত আর জিন-পরীর আছর শুধু  মেয়ে ও শিশুদের উপর ভর করে, পুরুষদের উপর নয়,  কারণ একটাই, পুরুষ শক্তিমান।

 মিশরীয়রা যদি পিরামিড আর ফারাহকে জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক মনে করতে পারে,  আরব সমাজে  যদি এখনো বিয়েতে তাদের সংস্কৃতি হিসেবে উলু ধ্বনি ও কপালে সাদা সিঁদুর ব্যবহার করতে পারে।  আমারা কেন আমাদের নিজস্ব প্রাচীন ঐতিহ্য বৈশাখকে ধারণ করতে  পারব না? দেশ বদলে নাগরিকত্ব পাল্টানো যায়, ইচ্ছে করলেই ধর্ম পরিবর্তন করা যায়। এমন কি অপারেশন করে লিঙ্গও পরিবর্তন করা যায়।   কিন্তু পরিবর্তন করতে পারেন না জাতিসত্তা। আপনি বাঙালি থেকে কোনদিনই ইংরেজ, তামিল, কিংবা চিনা জাতি হতে পারবেন না। আপনি মুসলিম হলেও বাঙালি থাকবেন, হিন্দু হলেও বাঙালি থাকবেন। আপনি প্রথমত 'মানুষ' তারপর 'বাঙালি' তারপর হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান, ইত্যাদি।

 

===============

 

হেলদি রিলেশনশিপ 

ওপেন রিলেশনশিপ, লিভ-ইন-রিলেশনশিপ,  পকেটিং রিলেশনশিপ,  সিচুয়েশনশিপ রিলেশন ও ‘এরেঞ্জ ম্যারেজ’

দুইজন নারী পুরুষ গোপনে প্রেম করছেন কিন্তু সবার সামনে তা প্রকাশ করেন না। এইভাবে লুকিয়ে প্রেম করার নাম 'পকেটিং রিলেশনশিপ' বলে। আবার গভীর আবেগ বিনিময়ের মাধ্যমে একে অপরের কাছাকাছি এলেও এই প্রেমিক-প্রেমিকা মানতে নারাজ যে, তাঁরা প্রেম করছেন। তাদের এই সম্পর্ককে বিয়ের দিকে এগিয়ে নিতে যারা বারবার ভাবছেন। এই অনিশ্চয়তার সম্পর্কের নাম সিচুয়েশনশিপ রিলেশন। কিন্তু বর্তমান সময়ে খুব স্বাভাবিক একটি বিষয় হচ্ছে লিভ-ইন-রিলেশনশিপ কিংবা লিভ-টুগেদার। প্রেমের সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে বিয়ের আগে একে অপরকে ভালো করে বোঝার জন্যও অনেকে লিভ ইন রিলেশনশিপে থাকতে চানএকসঙ্গে থাকালে সঙ্গীর ভিন্ন চিন্তা, ভিন্ন মন-মেজাজ বাজে অভ্যেসগুলোর মুখোমুখি হতে হ প্রতিনিয়ত। এর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হ! তবে জীবনে কোন কিছুই স্থায়ী নয়। আজকের সঙ্গীর যে গুনটি দেখে প্রেমে পড়েছেন, কালকে সেটি নাও থাকতে পারে।  যে মানুষটার সঙ্গে কমিটমেন্ট করেছিলেন আজীবন একসাথে থাকার। তিনি যদি টক্সিক হন, তাহলে তাঁকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে বের হয় এসে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে হয়। এমন মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে, যিনি আপনার মূল্যায়ন করবে।  

আধুনিক সভ্য সময়ে ‘এরেঞ্জ ম্যারেজ’ একটা অগ্রহণযোগ্য বিষয়। আপনি নিজে জীবনে একটাও প্রেম করতে পারেননি, নিজের জীবন-সঙ্গী নিজে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছেন, এটা আপনার অনেক বড়ো অযোগ্যতা এবং লজ্জার বিষয়। আবার কারো সাথে আপনার প্রেম বা বিয়ে হলে তিনি আপনার কেনা সম্পত্তিতে পরিনত হয়ে যান না। বিয়ের আগে বা পরেও সেই মানুষটি অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন, বা রাখবেন না, এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। বিয়ে বা প্রেমের ক্ষেত্রে আপনার জীবনসঙ্গী শুধুই আপনাকে ভালোবাসবে এবং আপনার প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে- এই বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি করা এবং তা রক্ষা করার দায়িত্ব আপনার এবং এটার জন্য নিজের জীবনসঙ্গীর কাছে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হয়। অভিযোগ, কৈফিয়ত কিংবা অধিকারবোধ চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।  শুধু মাত্র ভালবাসার টানে, বা মানসিক নির্ভরশীলতার কারণে প্রিয় মানুষটি ওপেন রিলেশনশিপ-এ জড়াতে পারেন। ওপেন রিলেশনশিপেএকজন নারী বা পুরুষ তাঁদের মনের মানুষ হিসাবে দুই বা ততোধিক জনকে রাখতে পারেন। দুজন নর-নারী ভালোবেসে বা পছন্দ করে বিয়ে করেছেবলেই শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার জন্য কেউ কাউকে জোর করতে পারেন না। যখন দুজনেরই ইচ্ছা হবে তখন তাঁরা সম্পর্কে লিপ্ত হবেন।  

 

তবে, বন্ধুত্ব হোক বা দাম্পত্য কিংবা ওপেন রিলেশনশিপ, আপনার প্রিয় মানুষ বা প্রিয় বন্ধুর উপস্থিতি মনের চাপ কমায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা এড়ানো সহজ করে তোলে। তাই প্রিয়জন বা বন্ধুকে সম্মান করতে শিখুন। এতে আপনার প্রতি আস্থা, বিশ্বাস, ভরসা বাড়বে। কোনো সম্পর্ককে তখনই হেলদি রিলেশনশিপ বলা যায়, যখন এতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও সহানুভূতি থাকে।

 

==============

 

 

অশোক ও আকবর

 

 ভারতের ইতিহাসে দুজন রাজাকে গ্রেট উপাধি দেয়া হয়েছে, তাদের একজন হলেন অহিংসার পূজারী অশোক দ্যা গ্রেট আরেকজনহচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ আকবর দ্যা গ্রেট। মজার ব্যাপার হল হিন্দু অধ্যুষিত ভারতে একজন হিন্দু রাজাও এই উপাধি লাভ করেননি।

 

মোগল বাদশাহ হুমায়ুনের পুরো শাসনকালই ছিল অশান্তির। সাম্রাজ্যহারা হয়ে দিল্লি থেকে পালিয়ে বাদশাহ হুমায়ুন ঘুরেছেন পথে পথে। পালিয়ে বেড়ানো এমনি এক রাতে তার স্ত্রী হামিদা বানু সন্তান ধারণের খবর দেন। সে সন্তান একদিন হয়ে ওঠেন দিল্লির সবচেয়ে দাপুটে শাসক। মাত্র ১৩ বছর বয়সে দিল্লির শাসনভার গ্রহণ করেন আকবর। 

 

তার সফলতার  সবচেয়ে বড় কারণ দক্ষ, মেধাবী, বিচক্ষণ মানুষদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন তিনি।   দেশের সেরা রত্নদের তিনি রাজসভায় ঠাঁই দিতেন। এ কারণে তার মন্ত্রিসভাকে বলা হতো নবরত্ন। আকবর সবার কথা শুনতেন। কিন্তু সিদ্ধান্ত দিতেন নিজে। শাসনকাজে নিজের সন্তানকেও ছাড় দিতেন না। শাহজাদা সেলিমকেও ছাড় না দেবার কথা সবার জানা। তার শাসনাধীন প্রদেশগুলোকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে প্রত্যেক অঞ্চলে একজন করে শাসক নিয়োগ দিতেন আকবর। আর শাসকদের নিয়োগ দেওয়ার সময় বলা হতো, ক্ষমতার অপব্যবহারের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। সরকার চালানোর সময় কেউ ন্যায়পরায়ণতা ভঙ্গ করলেই ব্যবস্থা নেওয়া হতো। নবরত্নের কাজ ছিল সম্রাটকে সব বিষয়ে সতর্ক রাখা ও উন্নত পরামর্শ দিয়ে যাওয়া। তখন রাষ্ট্র পরিচালনায় সততা ও দক্ষতাকে গুরুত্ব দেওয়া হতো। আমলাদের প্রমাণ দিতে হতো সততা ও দক্ষতার। রাজ্যের সুখ-দুঃখ আলোচনা হত  রাজসভায়। গোপনে বাদশাহ খবর নিতেন প্রজাদের। 

 

শাসন কার্য পরিচালনা করতে গিয়ে  তিনি উপলব্ধি করেছিলেন মারাঠা অর্থাৎ  রাজপুতদের শক্তি ও সাহসিকতার সঙ্গে তাঁর পেরে ওঠা প্রায় অসম্ভব। তার পূর্বসূরি মুসলমান শাসকরা যেমন রাজপুতদের খুঁচিয়েছিলেন, আকবর কিন্তু সেই পথে হাঁটলেন না। তিনি অভিজাত রাজপুতদের আপন করে নিলেন। বহু রাজপুতকে রাজদরবারে চাকরি দিলেন।  আকবর নিজে কাচ্ছোরা রাজার কন্যাকে বিয়ে করলেন। শুধু তাই নয়, রাজার নাতিনির সঙ্গে তাঁর বড় ছেলে জাহাঙ্গিরকেও বিয়ে দেন।  এই বন্ধুত্বের  নীতি খুব ভালোভাবে কাজে লাগলো। এর ফলে যোধপুর, জয়পুরইত্যাদি রাজপুত অঞ্চল তাঁর বশ্যতা স্বীকার করে নিল। তিনি রাজপুতদের  শক্তি নিয়ে প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকে একের পর এক জয় করে নিলেন। এইভাবে আকবর উত্তর ,মধ্য ও দক্ষিণ ভারত তাঁর অধীনে আনেন। 

 

আকবর তাঁর রাজত্বকালের দ্বিতীয় ভাগে মানবতাবাদকে জাতীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করে বহু সংস্কার প্রবর্তন করেন। জয় করা অঞ্চলে তাঁর উন্নত শাসন, ও ন্যায় বিচারব্যবস্থার কারণে কোন বিদ্রোহ দেখা যায় নাই। আকবর তাঁর ধর্মসহিষ্ণু  নীতিদ্বারা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্য ও সম্প্রীতি স্থাপন করেন।  

তিনি অ-মুসলিমদের উপর থেকে জিজিয়া কর বন্ধ করে সকল ধর্মের প্রজাদের সমান মর্যাদা দেন। তার সময় বহু হিন্দু ফারসি শিখে মোগল সরকারের চাকরি করতেন। যোগ্যতার প্রশ্নে হিন্দু-মুসমান হিসেবে কোনো আপোস করতেন না তিনি। তিনি ভারতীয় চিত্রকলা, স্থাপত্য, সংগীত ও সাহিত্যের বড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তিনি কোতোয়ালদের ক্রীতদাস কেনাবেচা বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়ে ভারতের ক্রীতদাস প্রথা বিলুপ্ত করেন।  জাতিধর্মনির্বিশেষে ভারতবর্ষের জনসাধারণের কাছে মানবিক শাসক হিসেবে  তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।  

তার ৬৩ বছর জীবনের মধ্যে ৫০ বছর তিনি ভারতে ছিলেন। আর  ৪৯ বছরই সম্রাট হিসাবে রাজত্ব করেন।





 

আকবরের জন্মের  পৌনে দুই হাজার বছর  আগে ভারতবর্ষের সর্বকালের সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্যগুলির অন্যতম ছিল অশোকের সাম্রাজ্য। সেই বিশাল সাম্রাজ্যকে শাসন করতে সকল ধর্ম গোষ্ঠীগুলিকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হয়েছে তাকে। 

 

বিহারের পার্টনার কাছাকাছি পাটলীপুত্র থেকে এই বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করতেন সম্রাট অশোক। ২৬৯-২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে) 37 বছর অশোকের শাসনামল ( বাংলাদেশের বগুড়া ছিল পুণ্ড্রবর্ধন নামে একটি প্রদেশ । 

নিজের শাসনের প্রথম পর্বে অশোক উপমহাদেশের প্রায় বেশির ভাগ অংশে তাঁর রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটান; 

তখন শক্তিশালী প্রতিবেশী রাজ্য ছিল কলিঙ্গ যা বর্তমানে উড়িষ্যা রাজ্য। সম্রাট অশোক মনে শান্তি ছিল না। কলিঙ্গ নামের প্রতিবেশী শক্তিশালী এই শত্রুকে রেখে কি নিশ্চিন্ত হওয়া যায়! দুই পক্ষের সৈন্যবাহিনীই শক্তিশালী। ফলে শুরু হয়ে গেল কলিঙ্গ যুদ্ধ। কলিঙ্গের সৈন্যরা বীর বীক্রমে লড়াই করেও পরাজিত হলো। লক্ষ লক্ষ আহত আর নিহত সৈন্যে ভরে উঠল যুদ্ধক্ষেত্র। বিজয়ী অশোক হাতির পিঠে চেপে যেতে যেতে দেখলেন তার দুপাশে ছড়িয়ে রয়েছে কত অসংখ্য মৃতদেহ। কত আহত সৈনিক। কেউ আর্তনাদ করছে, কেউ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে চিৎকার করছে। কেউ সামান্য একটু পানির জন্য ছটফট করছে। যুদ্ধক্ষেত্রের এই বিভীষিকাময় দৃশ্য দেখে তার সমস্ত অন্তর ভারাক্রান্ত হয়ে উঠে। ধীরে ধীরে নিজের তাঁবুতে ফিরে দেখলেন তাবুর সামনে দিয়ে চলেছে একদল বৌদ্ধ সন্ন্যাসী। সন্ন্যাসীরা বললেন, তারা যুদ্ধক্ষেত্রে আহত সৈনিকদের বাচাতে যাচ্ছেন। মুহূর্তে অনুতাপের আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল সম্রাটের হৃদয়। তিনি শপথ করলেন আর যুদ্ধ নয়, আর হিংসা নয়, অহিংসা মন্ত্রে ভরিয়ে দিবেন সমগ্র পৃথিবী।

এরপর বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনায় আমূল পরিবর্তন আনেন। জায়গায় জায়গায় তিনি স্থাপন করেন হাসপাতাল, বিদ্যালয়, কুয়া, অতিথিশালা ইত্যাদি। বুদ্ধের অহিংস নীতি অনুসরণ করে রাজ্যে নিষিদ্ধ করেন জীবহত্যা। তার রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় তিনি স্তম্ভ নির্মাণ করেন যাতে খোদাই করা ছিল গৌতম বুদ্ধ ও তার নিজের অনেক বানী। 

 

তার নির্মিত অশোকস্তম্ভ বর্তমানে ভারতের রাস্ট্রীয় প্রতীক। তিনি মোট ১৯ টি অশোকস্তম্ভ নির্মান করেছিলেন। আশোকস্তম্ভের উপরে চারটি সিংহমূর্তি চারদিকে মুখ করে বসে আছে। এরদ্বারা বোঝানো হয় যে, অশোক ভারতের চতুরদিকে রাজত্ব করেছিলেন। বাস্তবিকভাবে সম্রাট অশোকের আগে বা পরে এমন কোন রাজা বা সম্রাট ছিলেন না, যিনি  আজকের নেপাল, বাংলাদেশসহ, সমগ্র ভারত, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান এর মতো বিশাল ভূখণ্ডের উপর এক ছত্রে শাসন করেছেন।

 

অশোক রাস্তার দুই পাশে বৃক্ষরোপন করিয়েছিলেন যাতে পথিকদের পথ চলায় ক্লান্তি কমে। নিদ্দিষ্ট দূরত্ব পর পর পান্থশালা নির্মান ও কূপ খনন করেছিলেন।

শুধু মানুষই নয়, অবলা পশুদের জন্য পশু চিকিৎসালয় গড়েছিলেন।

 

সম্রাট অশোক রাজা হয়েও ছিলেন ঋষি। " তার রাজত্বকালকে ইতিহাসবিদরা ভারতীয় ইতিহাসের স্বর্ণযুগ বলে মনে করেন’ সম্রাট অশোকের সময়ে 23টি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।  যার মধ্যে তক্ষশীলা, নালন্দা, বিক্রমশীলা, কান্দাহার প্রভৃতি বিদ্যালয় ছিল বিশিষ্ট।  ভারতীয়রা তাদের পতাকায় রাখে*"অশোক চক্র"* এই অশোক চক্রের ২৪টি স্পোক জীবনের বিভিন্ন নীতিকে তুলে ধরে।  




 

========

হিন্দু আর্যরা জাতিভেদ বা বর্ণপ্রথার মাধ্যমে কিভাবে  নিচু জাতের সম্পদ, নারী ভোগ করতো? 

 

পুরুষতান্ত্রিক আর্য সমাজ 

 

 

আদি  আর্য জাতির বাসস্থান ছিল  রাশিয়ার উরাল পর্বতের দক্ষিণে অবস্থিত সমতল ভূখন্ডে। পোল্যান্ড থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত বিস্তীর্ণ তৃণভুমি তথা স্তেপ এলাকায়  আধা যাযাবর  জীবন যাপন করত  আর্যরা।  এই জাতির শারীরিক গড়ন ছিল লম্বা, নাক ছিল উন্নত, গায়ের রঙ ফর্সা আর মাথা লম্বাটে। সেই আদিকালে তারা ঘোড়াকে বশ মানায় এবং চাকাওয়ালা রথ ব্যবহার করে। তারা প্রধানত মেষপালক হিসাবে জীবিকা নির্বাহ করতো। সামান্য কৃষিকাজেও অভ্যস্ত ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ অব্দের প্রথম দিকে স্তেপ অঞ্চলে তাদের জনসংখ্যা প্রচুর বৃদ্ধি পায় আর খরায় পশুচারণভূমির ঘাস পুড়ে যায়। ফলে বাঁচার তাগিদে তারা স্থান ত্যাগ করতে থাকে। দলবদ্ধভাবে তারা সরে গিয়ে যে সমস্ত অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে সেখানে শুরু হয় পিতৃতান্ত্রিক পরিবার ব্যবস্থা।  এই গোষ্ঠীর একটি শাখা চলে যায় ইউরোপে;এরাই হলো গ্রিক, ল্যাটিন, কেলট এবং টিউটন জনগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষ। আর্য ভাষাগোষ্ঠীর প্রধান সাতটি ভাষার মধ্যে পাঁচটি ভাষা এখনো ইউরোপের বহাল আছে, শুধুমাত্র সংস্কৃত ভাষা ও পারসিক ভাষা এশিয়ায় আছে। ইউরোপে গ্রিক, ল্যাটিন, জার্মান প্রভৃতি আর্য ভাষাগুলোর যেভাবে ব্যবহার আছে, ভারতে সেভাবে নাই। আর্যদের অন্য একটি শাখা চলে যায় তুরস্কের আনাতোলিয়া অঞ্চলে। তাদের সঙ্গে স্থানীয় অধিবাসীদের মিশ্রণে স্থাপিত হয় হিট্টাইটদের বিশাল সাম্রাজ্য। তাদেরএকটি শাখা তাদের পুরাতন বাসস্থানেই রয়ে যায়। এরাই বাল্টিক ও স্লাভোনিক জাতির পূর্বপুরুষ। আর্যদের আরেকটি শাখা চলে যায় দক্ষিণ ইরানের সমতল মালভূমিতে। তাদের বংশই পরবর্তিতে  ব্যাবিলন দখল করেছিল। 

  ইরান অঞ্চলের আর্যদের একটি অংশ, ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে হিন্দুকুশ পর্বতের গিরিপথ দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে । আফগানিস্তান থেকে পাঞ্জাবের সীমান্তবর্তী এলাকাকে তারা বলতো ‘সপ্তসিন্ধু’। আর্যরা ছিল মূলত গো-পালক জাতি। তাই পশুচারণ ভূমির সন্ধানে প্রথমে তারা পাঞ্জাবের সমভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর জঙ্গল পরিষ্কার করে ছোট ছোট গোষ্ঠীতে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। 

বেদ হচ্ছে আর্যদের প্রাচীনতম সাহিত্য। চারটি বেদের মধ্যে ঋগে¦দ প্রাচীনতম। এই, ঋগে¦দ কোনো একটি নির্দিষ্ট সময়ে রচিত হয়নি। এর বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন সময় রচিত হয়েছিল। এর রচনাকাল ছিল ১২০০-১০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মধ্যে।  আর্যদের স্বভাব ছিল যুদ্ধ করার। আর্যরা ভারতে আসার আগে এই ভারতে যে সিন্ধু সভ্যতার মানুষ ছিল তারা ছিল বণিক শ্রণির। এই বণিকদের ঐশ্বর্য ও ধনদৌলত আর্যদের মনে ঈর্ষার সঞ্চার করেছিল। সে জন্যই গ্রামবাসী আর্যরা সিন্ধুসভ্যতার নগরসমূহকে ধ্বংস করে ।

আর্যদের  সমাজে গো-ধন দিয়েই মূল্য নিরুপিত হতো এবং সম্পত্তি বলতে ছিল গবাদি পশু।প্রাচীন ভারতীয় সমাজে বেদ-এর কঠোর অনুশাসন ছিল বলে প্রাচীন ভারতীয় সমাজকে বৈদিক সমাজও বলা হয়। 

 

আর্যরা যখন প্রথম ভারতে আসে, তাদের মধ্যে তিনটি সামাজিক শ্রেণি ছিল— যোদ্ধা বা অভিজাত শ্রেণি, পুরোহিত ও সাধারণ মানুষ।  তখন জাতিভেদ ছিল না।

 তিন শ্রেণির মধ্যে বিবাহ হত অবাধে। বর্ণভেদ প্রথম দেখা দিল যখন আর্যরা দাসদেরকে নিজেদের বাইরের মানুষ বলে গণ্য করতে শুরু করল। কারণ, দাসদের সঙ্গে মিশ্রণ ঘটলে আর্যদের রক্তের বিশুদ্ধতার অবসান ঘটার আশঙ্কা ছিল। দাসদের গায়ের রঙ কালো ও তাদের সংস্কৃতি ভিন্ন হওয়ায় পার্থক্যটা হলো প্রধানতই বর্ণগত। তাই শূদ্র, অর্থাৎ দাসরা হয়ে গেল চতুর্থ বর্ণ । 

 

 ভারতীয় হরপ্পা সভ্যতার  লোকেদের নিজস্ব বর্ণমালা থাকলেও আর্যরা কিন্তু বহুদিন পর্যন্ত লিখতে জানত না। বৈদিক যুগের প্রথমদিকে শিক্ষা ছিল মৌখিক। সে যুগের একটি চমৎকার বর্ণনা পাওয়া যায়— বর্ষার সময়ে ব্যাঙরা যেমন একত্র হয়ে একে অপরের ডাকে প্রতিধ্বনি তুলে ডাকতে থাকে, ছাত্ররা তেমনি শিক্ষকের কণ্ঠস্বরের প্রতিধ্বনি তুলে নিজেরাও আবৃত্তি করত। 

আর্যদের ধর্মীয় আচারের প্রধান অঙ্গ ছিল বলিদান। আর্যদের বিশ্বাস ছিল বলি দিয়ে অর্চনা করলেই দেবতারা খুশি হয়ে অনুগ্রহ করবেন। মৃতদেহ কবরও দেওয়া হতো, দাহও করা হতো। তবে প্রথমদিকে কবর দেওয়াই ছিল প্রথা।পবিত্রতার সঙ্গে আগুনের একটা সম্পর্ক স্থাপিত হবার পর কবরের চেয়ে মৃতদেহ দাহই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠল। শেষ পর্যন্ত জন্মান্তরবাদ যখন প্রচলিত হলো তখন আর একটি ধারণার উৎপত্তি হয় : পূর্বজন্মের কর্মফল অনুসারে আত্মারা পরের জন্মে সুখ বা দুঃখ ভোগ করে। এ থেকে এলো কর্মবাদ, যা পরের হিন্দুধর্মের সমস্ত ভাবনাচিন্তাকে প্রভাবিত করেছে।  উচ্চ বা নিম্নবর্ণের জন্ম নির্ভর করত পূর্ববর্তী জন্মের কর্মফলের ওপর। এর ফলে মানুষ ভাল কাজ করে পরের জনমে উচ্চ জাতে উঠার আশা করতে শিখল।   

 

আর্যযুগের ভারতীয় নারী, সমাজ ও সংস্কৃতি

আর্য সমাজ ও আমাদের বর্তমান যৌন সংস্কৃতিনতুন গবেষণা




আর্যদের আগমনের পূর্বে এ অঞ্চলের আদিবাসীরা ছিল দ্রাবিড় গুষ্টির। তারা ছিল কৃষক শ্রেণির।  যুদ্ধ-বিগ্রহের চেয়ে তারা শস্য ফলাতে এবং বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্মে বেশি পারদর্শী ছিল। যোদ্ধা ও যাযাবর জাতির আর্যরা এসে তাদেরকে কিছু স্থান থেকে বিতাড়িত করে, আবার কিছু স্থানে দাস বানিয়ে রাখে। ষষ্ট ও সপ্তম শতাব্দীতে আর্যদের কঠোর বর্ণপ্রথা সমাজকে আষ্টেপিষ্টে বেঁধে ফেলে। সমাজের নিম্নবর্ণের মানুষের কোন অধিকারই ছিল না। সেই সময়ের ভারতীয় সমাজে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল নারীদের। স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রীদেরকে স্বামীর সাথে জীবন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হতো। এই প্রথাকে বলা হতো সহমরণ বা সতীদাহ প্রথা। ১৫০ বছর আগেও এটা হিন্দু সমাজে ব্যাপক হারে প্রচলিত ছিল। রামমোহন রায় এর চেষ্টায় এটা বাতিল হয় । কোন কোন অঞ্চলে সহমরণ প্রথা শিথিল হলেও বিধবারা জীবন্মৃতের মত বেঁচে থাকতো। তারা সংসারের অন্যদের দাসী হয়ে জীবন কাটাতো।

 

প্রাচীন ভারতবর্ষের মানুষের পোশাক-পরিচ্ছদ ছিল সাদাসিধে । অধিকাংশ লোক কেবল দেহের নিম্নাংশ ঢাকার জন্যে নেংটি পরতো। অবসর কাটাত, নাচ, ও গান-বাজনার মধ্য দিয়ে। স্বয়ম্বর সভার নারী নিজেই তার জীবনসঙ্গী বেছে নেবার মতো নারীতান্ত্রিক ব্যবস্থার যে ছবি ফুটে ওঠে গল্প কাহিনীগুলিতে? এই স্বয়ম্বর সভার প্রথা মূলত প্রাক আর্যযুগের ভারতীয় সমাজ সংস্কৃতি

 এই পুরুষতান্ত্রিক বৈদিক আর্য সমাজে পুরুষের একাধিক স্ত্রী ছিল। স্ত্রীদের শাসনের মন্ত্রও রয়েছে বেদে। বৈদিক যুগের আগে নারী যে অপেক্ষাকৃত স্বাধীন ছিল সেরকম ইঙ্গিত ঋগ্বেদে রয়েছে । 

যেখানে সন্তানের বংশপরিচয় ঠিক হতো মাতৃপরিচয়তেই। 

 

প্রাচীন বাংলার নারীরা ছিলেন স্বল্পবসনা। তারা নিম্নাঙ্গে ধুতি বা শাড়ি, কোঁচা/ কাছা  মেরে অথবা কোমরে পেঁচিয়ে পরতো। একে অধিবাস বা অধোবাস বলা হতো। কেউ কেউ ওড়না দিয়ে শরীরঢেকে রাখত, যাকে উত্তরীয় বলে। অনেকে স্তন ঢাকার জন্য এক টুকরা কাপড় ব্যবহার করতো । একে কাঁচুলি বলা হতো। তাছাড়া বিভিন্ন ধাতু ও পাথরের গয়না পরতো ।  কপালে তিলক, টিপ, কুমকুম লাগাতো। 

আবার অনেক মেয়েরা হাঁটু পর্যন্ত কাছা মেরে এক টুকরো কাপড় পরতো। খাজুরাহো মন্দির, কোনার্কের সূর্য মন্দির, অজন্তা ও ইলোরা গুহায় যেসব নারীদের বা দেবীর প্রতিকৃতি দেখি, তাতে এই ধরনের কাপড় আছে। প্রাচীন ভারতীয় নারীরা উন্নত বক্ষ, চিকন কোমর ও খোলা পেট- নাভি  উন্মুক্ত রেখে চলাফেরা করত। দুর্গাপূজায়, সরস্বতী পূজায় যে দেবীমূর্তি পেট-নাভি বের করে তৈরি করা হয়,  এটি আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতি।

বৈদিক আর্য যুগে পরিবার প্রথার মাধ্যমে স্ত্রীদের সতীত্ব ও পিতৃত্বের নিশ্চয়তার দাবীদার হয়ে উঠে পুরুষ। আর স্ত্রীদের জন্য এক পতী নিশ্চিৎ করে বা যৌন স্বাধীনতা হরণ করে, গরীব নারীদের নিয়ে বেশ্যালয় গড়ে তুলে।  অর্থাৎ নারী তুমি একগামী হও। আর বহু নারী গমন হচ্ছে পুরুষত্বের অধিকার। বদরুদ্দীন উমর তাঁর ‘নারী প্রশ্ন প্রসঙ্গে’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেছেন, ভারতে  এ সময় পুরুষের বহুগামিতা সহজ করার জন্য উদ্ভব হয়েছিল রক্ষিতা বা উপপত্নী রাখার ব্যবস্থা এবং ব্যাপারটা আরো সহজ করার জন্য উদ্ভব হয়েছিল পতিতাবৃত্তির।

আর্যযুগে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠার পর থেকে পুরুষেরা বিয়ের নামে নারীদের চার দেয়ালে আটকে রেখে নিজে হয়েছে বহুগামী। কিন্তু আদিম সমাজ ব্যবস্থায় আমরা যে মাতৃপ্রধান পরিবারের অস্তিত্ব দেখতে পাই, তাতে পতিতাবৃত্তির প্রয়োজন ছিল না । পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পরিবার গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য হল সন্তান জন্মদান। কিন্তু আদিম সমাজে্র উদ্দেশ্য সন্তান জন্মদান ছিলো না । তাদের পরিবারের গঠনের উদ্দেশ্য হলো সম্মিলিতভাবে জীবিকা নির্বাহ করা। 

 

 ধর্মীয় সমাজ ব্যবস্থা নারীর যৌন স্বাধীনতাকে  হত্যা করে  বিবাহপ্রথার  নামে ভালোবাসাহীন যৌন জীবনকে বৈধতা দেয় । ফলে ভালোবাসার এখানে মৃত্যু ঘটে । পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের প্রতি ক্লান্ত হয়ে পড়লে তারা পতিতা বা রক্ষিতার সন্ধান করে । বিবাহ পরবর্তী দীর্ঘসময়ে পুরুষরা তাদের স্ত্রীদের প্রতি একঘেয়েমীতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে ।  এই যৌন ক্লান্তি কারণ হচ্ছে নারী-পুরুষের সহজাত কামপ্রবৃত্তি; যা আমরা ধর্মীয় নৈতিকতার দোহাই দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি । যৌনতা চিরকালীন বাধা-বিপত্তিমুক্ত মানবিক আচরণ । যৌনতাকে শৃংখলাবদ্ধ করা মানব প্রবৃত্তির বিরুদ্ধ । তাই  আধুনিক সমাজব্যবস্থায় নারীরা যেখানে যেখানে সমাজিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করছে, সেখানে বিবাহ নামক আদিম প্রথাটির বিলুপ্তি ঘটছে,‌ যেমনটি ঘটছে, কোরিয়া, জাপান বা ইউরোপ-আমেরিকায় । বর্তমান বিজ্ঞান বলছে- যৌনতার অবদমনে শুধু মানসিক বিকৃতিই নয়, শাররিক ও মস্তিষ্কগত জটিলতা অনিবার্য। একারনে পশ্চিমা সমাজ ব্যবস্থায় বাল্যকাল থেকে সমবয়সীদের সাথে যৌনতা উপভোগ কোন শাস্তিযোগ্য আপরাধ নয়। তাহলে কি আমরা মানসিক বিকৃতি নিয়েই জীবন যাপন করছি?

 

 

 

ইবনে বতুতা 

 বাংলা হচ্ছে - ভালো জিনিসে পরিপূর্ণ একটি নরক? ইবনে বতুতার ভ্রমণ কাহিনী 

 

ইবনে বতুতা আশুরা নামে এক সুন্দরী বালিকা এবং তার সঙ্গী, লুলু নামে অল্প বয়সী  বালিকা ক্রয় করেন?!

ইবনে বতুতার ভ্রমণ কাহিনি থেকেই আজকে আমরা জানব তৎকালীন বাংলার প্রকৃতি, সমাজব্যবস্থা ও মানুষের জীবনাচরণ। চলুন জেনে নিই-

 

ইবনে বতুতা প্রায় ৪৪টি দেশ ভ্রমণ করেন,যা প্রায় ১,২০,০০০ কিলোমিটার  দৈর্ঘ্য। বিশেষ করে তিনি সেই সময়কার সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ করেন। সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক-এর শাসনামলে ইবনে বতুতার ভারত সফরে আসেন। ইবনে বতুতা প্রায় সাত বছর অবস্থান করেন ভারতে। তিনি সুলতান কর্তৃক মালদ্বীপের কাজী হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে প্রায় ৯ মাসের বেশি সময় অবস্থান করেছিলেন সেখানে। সে সময় মালদ্বীপ ছিল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এলাকা। ইবনে বতুতা লিখেছেন, এখানকার মেয়েরা ভারতের অন্যান্য এলাকার মত শরীরের নিম্নাংশ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখলেও উপরের অংশ অনাবৃত রাখত। তিনি কাজী থাকা অবস্থায় অনেক ইসলামিক নিয়ম চালু করতে পারলেও কোনোভাবেই মেয়েদের স্তন ঢেকে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেননি। এসমস্ত ছোটখাট বিষয় নিয়ে মালদ্বীপের উজিরের সাথে ইবনে বতুতার মনোমালিন্য দেখা দেয়। ফলে তিনি শ্রীলংকা হয়ে চীন ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নিলেন। চীন যাওয়ার পথে ১৩৪৬ সালে তিনি সাদকাওয়ান বা  চট্টগ্রাম বন্দরে এসে পৌছান। তখন বাংলার শাসক ছিল ফখরউদ্দীন। তিনি দিল্লির সুলতানের আনুগত্য করতেন না। তবে ফখরউদ্দীন দরবেশ ও সুফিদের প্রতি বিশেষ অনুগত ছিলেন। 

ইবনে বতুতা লিখেছে, এ বিশাল দেশে প্রচুর চাল উৎপন্ন হয়। সারা পৃথিবীতে আমি এমন কোন দেশ দেখিনি যেখানে জিনিসপত্রের মুল্য বাংলার চেয়ে কম। অর্থাৎ তার দেখা দেশগুলোর মধ্যে বাংলায় ছিল জিনিসপত্র সবচেয়ে সস্তা। তবে আফগানিস্থানের খোরাসান অঞ্চলের লোকেরা নাকী এ দেশটিকে বলত ‘ ভালো জিনিসে পরিপূর্ণ একটি নরক । খোরাসানের কাবুলিওয়ালারা ব্যাবসা করতে এসে বাংলাকে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের জলাবদ্ধতা  আর জঙ্গলাকীর্ণ  অঞ্চল হিসেবে ম্যালেরিয়া, কলেরা, বসন্ত রোগে আক্রান্ত  এলাকা হিসেবে দেখত ৷  তাই নরক বলে প্রচার করত। ১৩৪৬ সালের জুলাই ও আগস্ট প্রায় দুই মাস বাংলায় অবস্থান করেন ইবনে বতুতা।  মেঘনা নদীর মধ্যে দিয়ে পনেরো দিনের পথ পাড়ি দিয়ে তিনি  সোনারগাঁও পৌঁছান। এই পনেরো দিনের নদী পথের যাত্রায় বাংলার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য তাকে বিমুহিত করে তুলেছিল। নদীর দুইধারে ফলের বাগান ও গ্রামাগুলো দেখতে দেখতে তার মনে হয়েছিল তিনি বাজারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। অসংখ্য নৌকা এই নদীপথে যাত্রা করতো, কিন্তু যখন একটি নৌকা অপর নৌকার সঙ্গে দেখা হতো তখন উভয়ে নিজেদের ঢাক পিটিয়ে অভিবাদন জানাত।  

ইবনে বতুতা সোনারগাও এলাকায় আশুরা নামে এক সুন্দরী ক্রীতদাসী বালিকা ক্রয় করেন এবং তার সফর সঙ্গী, লুলু (মুক্তা) নামে অল্প বয়সী দাসী কিনার কথাও তার বর্ণনায় পাওয়া যায়। অর্থাৎ বাংলায় আবহমান কাল থেকে কিশোরি পতিতাবৃত্তি সহজলভ্য ছিল। আরব ও মধ্যপ্রাচ্ছে দাসী বলতে টাকা দিয়ে কেনা উপপত্নীকে বুঝানো হয়, যাকে আমরা যৌনকর্মী বলি।