মেহমান

একদিন এক গুরু তার এক গরীব ভক্তকে ডেকে বললেন “বাবারা আমার কথাটা মনে রাখিস, সব সময় ভাল ভাল খাবার খাবি, ভাল বিছানায় ঘুমাবি আর মেহমান হয়ে থাকবি”।

এ কথা শুনে গরীব ভক্তরা কিছুটা অবাক হলেন ভাবলেন বাবা মনে হয় তাদের সাথে মজা করছেন। তারা জিজ্ঞেস করলেন বাবা আমরা তো গরীব, বর্তমানে বাজারে যে জিনিসপত্রের দাম তাতে কিভাবে ভাল ভাল খাব, কোথায় ভাল বিছানা পাব আর গরীব মানুষকে কে মেহমান বানাবে?

গুরু বললেন, “যখন প্রচন্ড ক্ষুধা লাগবে শুধু তখন ই খাবি, দেখবি যা খাবি তাই মনে হবে ভাল খাবার, দামী খাবার।” “যখন ঘুমে চোখ ভেঙ্গে আসবে, তাকাতে পারবিনা শুধুমাত্র তখন ই ঘুমাতে যাবি। দেখবি মাটির বিছানায় শুয়ে থাকলেও মনে হবে যে রাজ পালঙ্কে ঘুমাচ্ছিস।” “আর যখন মানুষের সাথে চলবি, তখন বিনয়ের সাথে তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবি, মুখে রস ও আন্তরিকতা  মিশিয়ে কথা বলবি,  দেখবি মানুষের মনে তোর জন্য একটা জায়গা তৈরী হবে, সবাই তোমাকে সারাক্ষণ মেহমান হিসেবে আদর আপ্যায়নের মধ্যে রাখবে ।” সুতরাং শারীরিক পরিশ্রম করলে ঠিকমতো ঘুমাবে এবং খাবারে স্বাদ পাবে এবং মানুষকে আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা চর্চা করলে সবাই তোমাকে মূল্যায়ন করবে।


সমাজতন্ত্র কি একটা ইউটোপিয়া?


জারের সময় রাশিয়ায় লেখকদের স্বাধীনতা ছিল না। সাইব্রেরিয়ার কারাগার জারের সময় নরক ছিল। দস্তয়ভস্কি সেখানে জেল খেটে এসে জেল স্মৃতি নিয়ে বই লিখলেন। জার সে বই পড়ে কাঁদলেন। সাইব্রেরিয়ার কুখ্যাত জেলখানা জার বন্ধ করলেন।  ১৯১৭ সালে লেনিন রাশিয়াতে শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লব করে জারের রাশিয়া দখল করে নিলো। কমিউনিস্ট আমলে সে জেলখানা আবার চালু হলো। লেনিনের কমিউনিস্ট রাশিয়ায় কত লেখক জেলে পঁচল, মরে গেলো; দেশ ছেড়ে পালালো। স্তালিন হিটলারের সঙ্গে মিলে পোল্যান্ড দখল করে নিলো। শুরু হলো শ্রমিক শ্রেণীর সাম্রাজ্যবাদ। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিকে আমেরিকা রাশিয়া ভাগাভাগি করে নিলো। পশ্চিম জার্মানি আমেরিকার মত পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক হলো। পূর্ব জার্মানি সোভিয়েত রাশিয়ার মত কমিউনিস্ট হলো। দুই জার্মানি হলো দু রকম। পশ্চিম জার্মানি ধনী। খাদ্য চাকরি কোন কিছুর অভাব নেই। পূর্ব জার্মানিতে কিছুই ছিল না কমিউনিজম ছাড়া। পূর্ব জার্মানি একদিন ইতিহাস খ্যাত বার্লিন দেয়াল ভেঙে ফেলল।

একই রকম ঘটনা ঘটলো উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে।কোরিয়ার উত্তরের অংশ ছিল শহর-বন্দর কলকারখানা ইন্ডাস্ট্রির ধনী এলাকা, আর দক্ষিণ কোরিয়া ছিল কৃষি প্রধান গরিব এলাকা।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্র বনাম সোভিয়েত ইউনিয়ন এই দুই পরাশক্তি একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কোরিয়ার দক্ষিণ দিক থেকে আক্রমণ করে মার্কিন সেনাবাহিনী এবং উত্তর দিক থেকে আক্রমণ করে সোভিয়েত কমিউনিস্ট রেড আর্মি।দক্ষিণ কোরিয়া কমিউনিস্ট বিরোধী সরকার গঠন করে। আর সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্টালিন উত্তর অংশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কিম ইল--সাংককে নিয়োগ দেন। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। প্রায় তিন বছর ধরে যুদ্ধ চলে আর ত্রিশ লাখ কোরিয়ান নিহত হয়।  আমেরিকা-ইউরোপ এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের সহায়তায় দক্ষিণ কোরিয়া একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। অন্যদিকে উত্তর কোরিয়া পৃথিবী থেকে একটি বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র হয়ে উঠে।

১৯৪৯ সালের ১লা অক্টোবর মাও সেতুং চীনে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেও, সে দেশে ‘সমাজতন্ত্র’ বলতে  সব সম্পদের মালিক ছিল রাষ্ট্র, সব নাগরিকের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের দায়িত্ব রাষ্ট্রর,  এই সোভিয়েত ধাচের সমাজতন্ত্র চিনে নেই। চীনে প্রাইভেট সেক্টর বা ব্যক্তিমালিকানাধীন খাত বিশাল, সে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রধান অবদান ব্যক্তি খাতের।একইভাবে কিউবা, লাওস, উত্তর কোরিয়া ও ভিয়েতনাম, বেলারুশ ও ভেনেজুয়েলা সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলে দাবি করলেও পুঁজিবাদই এখন এদের অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি।দেশগুলোর উৎপাদন ও মুনাফার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতাসীন শাসক দলের হাতেই রয়েছে।অর্থাৎ একদলীয় শাসনের অধীন সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করা। এদের এই গণতন্ত্রের সঙ্গে সমাজতন্ত্রের আর কোন পার্থক্য নাই বললেই চলে।

 


নবাব সলিমুল্লাহ


ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ'র দাদা নবাব আবদুল গণি ইংরেজ শাসকদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন মাত্র সাতাশ বছর বয়সে। ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিপ্লবের সময় তিনি ইংরেজদের অর্থ, হাতি, ঘোড়া, নৌকা সবকিছু দিয়ে খুবই সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছিলেন।  ব্রিটিশদের প্রতি এই বিশ্বস্ততার জন্য ব্রিটিশ রাজ এই পরিবারকে নবাব উপাধিতে ভূষিত করে।


১২০ বছর আগে, খাজা সলিমুল্লাহ ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা দান করেছিলেন বুয়েটের (BUET) জন‍্য। তখন সেটার নাম ছিলো ঢাকা সার্ভে স্কুল। সেটাকে তিনি তার  বাবার নামে রূপ দিলেন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে। 

১৯০৮ সালে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক সভায় বিনা বেতনে বাধ‍্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার দাবি তুলেন তিনি। পূর্ব বাংলায় কোন ইউনিভার্সিটি নেই। সলিমুল্লাহ সেটা মানতে পারলেন না। ১৯১২ সালের ২৯ জানুয়ারি, তখনকার ভাইস রয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকায় আসেন। সে সময়ের ১৯ জন প্রখ‍্যাত মুসলিম লিডার নিয়ে তিনি হার্ডিঞ্জের সাথে দেখা করেন। বিশ্ববিদ‍্যালয়ের দাবি তুলেন। 

সলিমুল্লাহ ছিলেন আদ‍্যোপান্ত শিক্ষানুরাগী। পূর্ব বাংলায় শিক্ষার বিস্তারের জন‍্য, পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগোষ্ঠিকে শিক্ষিত করার লক্ষ‍্যে তিনি বহু বৃত্তি, বহু প্রকল্প চালু করেন। মাত্র ৪৪ বছর বয়সে তিনি মারা যান। নবাব স্যার সলিমুল্লাহর স্ত্রী নাজলী বেগম বা (শাহবাগ বেগম) এর নামেই ঢাকার শাহবাগের নামকরণ করা হয়। 


 

 রানী দিনমণি কে? 

রানী দিনমণি ছিলেন সন্তোষের জমিদার বাড়ীর তিনজন শিক্ষানুরাগী নারীর একজন। এই তিনজন ছিলেন জাহ্নবী চৌধুরানী, দিনমনি চৌধুরানী এবং বিন্দুবাসিনী চৌধুরানী। অবিভক্ত বাংলায় শিক্ষা বিস্তারে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এদের মধ্যে রানী দিনমণি চৌধুরানী জগন্নাথ কলেজ (আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠার জন্য নগদ অর্থ দিয়েছিলেন। মিটফোর্ড হাসপাতালে নগদ অর্থ দান করেছিলেন সেখানে নারীদের ওয়ার্ড স্থাপন করার জন্য। সরিষাবাড়ি ও জামালপুরে স্কুল স্থাপন করেছেন। এছাড়া অন্যান্য নয়ান জায়গায় হাসপাতাল ও স্কুল কলেজের জন্যে অনেক অর্থ দান করেন। 

====

শেখ সাদী রহঃ-এর ছেলে একবার তাহাজ্জুদের নামাজ শেষে পিতাকে বলেন, দেখো সবাই ঘুমাচ্ছে আর আমি রাত জেগে ইবাদত করছি। শেখ সাদী রহঃ ছেলেকে বললেন , অন্যের দোষ ও গোপনীয়তা অনুসন্ধান করাই যদি তোমার লক্ষ্য ছিল, তাহলে ঘুমিয়ে থাকাটাই তোমার জন্য উত্তম ছিল।



 যশোর রোড

যশোর রোডের অপরূপ শোভা।এই যশোর রোড বাংলাদেশের যশোর জেলার  বকচরা থেকে পশ্চিমবঙ্গের কালীঘাট পযর্ন্ত বিস্তৃত,যদিও এখনকার রোড ম‍্যাপে এই রাস্তার বিস্তৃতি শ‍্যামবাজার পযর্ন্ত।1842 সালে বাংলাদেশের নড়াইলের জমিদার কালি পোদ্দার তাঁর মায়ের গঙ্গাস্নানের জন‍্য যশোরের বকচরা থেকে কলকাতার কালীঘাট পযর্ন্ত এই রাস্তা আনুমানিক দুই লক্ষ আটান্ন হাজার টাকায় প্রায় দুই বছর ধরে কয়েক হাজার শ্রমিকের সাহায্যে নির্মান করেন। যোশোর রোডের এই শতবর্ষি গাছগুলি (জমিদার রোপিত)1842 সালের সাক্ষী বহণ করে চলেছে বছরের পর বছর।

যশোর রোডের আরও একটি ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে।বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রাক্কালে 1971 সালে পাকিস্তানি হানাদারদের অত‍্যাচার থেকে রেহাই পেতে হাজার হাজার বাংলাদেশী শরণার্থী পায়ে হেঁটে পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থী শিবিরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন।যাত্রাপথে অসংখ‍্য শরণার্থী মৃত‍‍্যূবরণ করেন।ঐ সময়কালে কবি অ‍্যালেন গিন্সবার্গ এই দৃশ‍্য প্রত‍্যক্ষ করেন এবং 151 লাইনের একটি কবিতা রচণা করেন "September on Jessore Road"।পরবর্তীকালে এই কবিতা বিশ্বখ‍্যাত সুরকার,গীতিকার ও গায়ক বব ডিলানের সৌজনে সঙ্গীতাকারে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। 

তথ‍্যসূত্র- "The Naihati Buzz"

 


-===========

আফ্রিকার আছে সবচে বেশি  জমি অথচ সেখানের অনেক দেশেই মানুষ পুস্টিকর খাবার পায়না ।

ভারতীয় উপমহাদেশে আছে সবচে উর্বর জমি অথচ এখানে ৭০% শিশু পুস্টিকর খাবার পায়না ।



 

বীজের ব্যাবসা


আমেরিয়াক্য কোনো চাষী যদি ভুট্টা বীজ সংরক্ষন করেন পরের সিজনে লাগানর জন্য - তবে তিনি একটি কোম্পানির বীজ রাখার দায়ে জেলে যাবেন এবং বিরাট অংকের অর্থ দন্ড দিতে বাধ্য থাকবেন । পেটেন্ট করা আছে, কেউ বীজ সংরক্ষণ করতে পারবে না । তাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছে থেকেই বীজ কিনতে হবে । আমাদের বাজারের কোনো বীজের দোকানে আপনি দেশি বীজ পাবেন না । ব্যক্তি পর্যায়ে দেশি জাতের সবজি বীজ প্রায় বিলুপ্ত । এই যে ৩২০০ কোটি টাকার বীজ আমদানি করতে হয় - এইভাবে চলতে থাকলে আমাদের বীজের বাজার ফিরে পাবার তেমন আর কোন উপায় নাই । ইন্দোনেশিয়া আর ভারত যদি আমাদের কাছে বীজ না পাঠায় - তবে পরের সীজনে দেশের ৭০% জমিতে ফসল ফলবে না ।

এই যে বীজের ব্যাবসা  তাদের হাতে আমরা তুলে দিয়েছি - এখান থেকে ফিরে আসার উপাই কি কারো জানা আছে?

 

-----------

আমরা ১৪ কিলোমিটারের আলপনা একে গিনেজ রেকর্ড করি, কোটি কন্ঠে জাতীয় সংগীত গাই। রেকর্ড আর এচিভমেন্টের পার্থক্য বুঝতে না পারলে আমরা শুধুই মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে ঝাড়ু দিতে পারব আর দেশে দর্জির কাজ করতে পারব। কখনোই সৃষ্টিশীল জাতি হতে পারবে না।

 

—--

চীনের ডাক বিভাগে চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে মোট ২ হাজার ৬২৬ কোটি পার্সেল পাঠিয়েছে চীনের ডাক বিভাগ। আর আমাদের ডাক বিভাগ নতুন নতুন নিয়োগ আর বাজেট বাড়িয়ে চলছে কিন্তু আয় আর সার্ভিস আর পাওয়া গেল না।

 

=============

আপনি কি জানেন ক্যালকুলেটরের আদিরূপ এবাকাসের স্ট্রাটেজি যদি শিশুদের ব্রেইনে ঢুকিয়ে দেয়া যায় তাহলে তার মানসিক স্মরণশক্তি পরিশীলিত হয়ে গাণিতিক দক্ষতাও বাড়বে বহুগুণে!

,---------------

আমি ঠিক জানি না মে দিবস কেন পালিত হয়? দেখি যে এই দিবস এলে কমিউনিস্টরা চঞ্চল হয়ে উঠে। লাল নিশান নিয়ে মিছিল করে। পৃথিবীতে শাসন ব্যবস্থা নিয়ে ইউটোপিয়া চলে। ইসলামী শাসন, কমিউনিস্ট শাসন যে সুখ স্বপ্ন, ন্যায্য সমাজ ব্যবস্থা, ন্যায় বিচার, সাম্য, সমতার সমাজ রাষ্ট্রের গল্প বলা হয়, পৃথিবীতে এমন কোন ইসলামিক শাসন, কমিউনিস্ট শাসনের বাস্তব উদাহরণ নেই।



“নো মানি নো হানি”?

প্রধানত বিনিময়ের ২টা মাধ্যম। টাকা ও বিনয়। টাকা ছাড়াও অনেক কিছু আপনি অর্জন করতে পারেন শুধুমাত্র বিনয়ের মাধ্যমে। এমনকি, কিছু কিছু বিষয় আছে- যা টাকা দিয়েও অর্জন করা যায় না, সেখানে বিনয় অতি চমৎকার ও অলৌকিকভাবে কাজ করে। বিনয় মানে অন্যকে জিতানোর মাধ্যমে নিজের জয় ছিনিয়ে আনা। অর্থাৎ গলায় মালা পড়তে হলে মাথা নিচু করতে হয়, এটাই বিনয়। 

আর বিনিময়ের অন্য মাধ্যম টাকা হলো আগুনের মত, আপনার দরকার অনুযায়ী ব্যবহার করে, বাকীটুকু নিভিয়ে রাখতে হয়। নয়তো তা কোন না কোনভাবে আপনার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কিভাবে? চলুন দেখি,-আমরা মূলত ছা-পোষা বাঙালি। নিজের শখ-আহলাদ, সুখ-সুবিধা সব কিছু শেষ করে দিই সন্তান মানুষ করার জন্য’। আমরা সম্পদ জমিয়ে সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করাতে চাই, মূলত  এতে আমাদের সন্তানকে ফার্মের মুরগি হিসেবে তৈরি করছি, ফলে জীবন যুদ্ধে জয়ী হবার প্রয়োজনীয় শক্তি, সাহস কিংবা সৃজনশীলতা তার মাথায় তৈরি হবে না, তার হাত-পা কাজ করবে না। সে যত শিক্ষিত হোক না কেন, দিনে দিনে অথর্ব মানুষের পরিণত হবে। ফলে উদ্বাস্তু ও বিপর্যস্তদের সাথে প্রতিযোগিতায় সে কিছুতেই টিকে থাকতে পারবে না। কারণ বিবর্তনের সূত্র হচ্ছে- উপযুক্তরাই টিকে থাকবে। তাইতো, পৃথিবীর যত রাজবংশ, জমিদার কিংবা বড় শিল্পপতি এক সময় ছিল, এখন তাদের বাড়িঘর, হয় জাদুঘর, নয়তো পরিত্যক্ত সম্পত্তি। তাদের বংশধরেরা প্রায় প্রতিবন্ধীর মত জীবন কাটাচ্ছে অর্ধ ারে অনাহারে কিংবা বিভিন্ন জটিল রোগ ব্যাধি নিয়ে। কিছু ব্যতিক্রম থাকতে পারে, যারা সময়ের সাথে সাথে নিজেদেরকে নতুন করে তৈরি করেছেন তারা। 

আপনার অনেক টাকা আছে কিংবা বাড়ি -গাড়ি-জমি-কল-কারখানা আছে, এটা আপনার সন্তানকে প্রভাবিত করবে, খাবারে অতি পুষ্টির কারণে  সে ধীরে ধীরে শারীরিকভাবে ফার্মের মুরগি হবে আর অর্থকষ্ট কিংবা অনিচ্ছায়তার  চাপ বা ঝুঁকি কম থাকায়, তাদের মস্তিষ্কের নিউরনগুলো সক্রিয় হবে না। তার মস্তিষ্ক নির্দিষ্ট সার্কেলের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করবে; আর জলাবদ্ধতা মানে ‘দুর্গন্ধ ময়লা দূষিত পানি; তা কখনো নদীর পানির মতো চলমান সচ্ছল ও স্বাধীন হবে নাঅর্থাৎ পরিশ্রমী ও কষ্ট সহিংসু না হয়ে আপনার পরবর্তী প্রজন্ম অলস,অহংকারী , তথা বড়লোক বাপের কুলাঙ্গার সন্তান হবে। 

  তার মানে, ধনসম্পত্তি নয় বরং আপনার চারপাশে আগুনের স্তুপ তৈরি করছেন। যে আগুন আপনি ও আপনার পরিবারকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে ফেলবে। অর্থাৎ ধনী হবার সাথে সাথে ধনের কিছু মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আপনি ও আপনার পরিবারের উপর পড়বে,  যেমন- সম্পদ ধরে রাখার চিন্তা আপনাকে চাপে রাখবে। ফলে আপনি কৃপণ হয়ে যাবেন দান করার ক্ষেত্রে।  আপনি গরিবদের বাদ দিয়ে আপনার চেয়ে ধনীদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে চাইবেন। গরীব মানুষগুলোকে পশু মনে হবে , আর নিজেকে জ্ঞানী ভাবা শুরু করবেন । কোনো কিছুতেই আপনার তৃপ্তি আসবে না কারণ  টাকা থাকলে ক্ষুধা কমতে থাকবে আর রুচি বদলাবে । ফলাফল লাইফস্টাইল রোগ ব্যাধি।

ধনীকে সবাই হিংসে করে, তার বিরুদ্ধেই কথা বলে। অর্থাৎ বন্ধুত্ব  থেকে সবাই শত্রু তৈরি হবে, আপনার আত্মীয়রা চাইবে যেকোনো প্রয়োজনে আপনিই তাদের সাহায্য  করবেন। না দিলেই শত্রু। আর দিলে এই চাহিদা বাড়তেই থাকবে। একসময় পরিবার-পরিজনসহ আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব সবাই আপনার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে । তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা বিলুপ্ত হবে। কাজেই

কী পেলে বা কতটুকু পেলে আপনি নিজেকে ধনী আর সুখী মনে করবেন সেটা আপনাকে  আগে নির্ধারণ  করতে হবে। আপনি একটা বাড়ি পেলে নিজেকে সুখী মনে করবেন নাকি পাঁচটা বাড়ি পেলে । এখানেও একটা সীমারেখা টানার দরকার। কারণ সীমারেখা না টানলে, আপনি শুধু ছুঁটবেন আর ছুঁটবেন ,যেখানে পৌঁছাতে চান, সেখানে পৌঁছাতে পারবেন না।  অর্থাৎ ধনী হোওয়াটা একটা দৌড় বা রেস। এই দৌড়ের কোন শেষ নেই। কারণ মানুষ যত পায়, ততই আরো পাবার স্পৃহা তার বেড়ে যায়, 

 

 আবার  যার অনেক আছে তার কিন্তু সংকটও অনেক হয়ে যায়। টাকা থাকার কারণে অনেক আজেবাজে জিনিস কিনে বা সম্পদ কিনে, পরবর্তীতে সেই অতিরক্ত সম্পদ বা জিনিসপত্র অতিরক্ত প্যারা বা মাথাব্যথার কারণ হয়ে ্তাকে অসুস্থ করে তুলবে । হাই ফুড , প্রসেস ফুড ও অতিরক্ত প্রোটিন খাবার কারণে তার অসুখেরও সীমা পরিসীমা ছাড়িয়া যায় ধীরে ধীরে। 

 

ফলে নানাবিধ চাপে সে অস্থির থাকে। অস্থির মনে সুখ-শান্তি বসবাস করতে পারে না। তাই বলা হয় যে, সুখী হওয়া সহজ, কিন্তু ধনী হওয়া সহজ নয়। । কারণ " ধণী হওয়া ধনের উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে মনের তৃপ্তির উপর।


 

অটোফেজি শরীরে কখন এবং কিভাবে চালু করবেন?

 

হিন্দু বা বৌদ্ধদের "উপবাস"। খ্রিস্টানদের ‘’ফাস্টিং"। মুসলিমদের রোজা কিংবা  বিপ্লবীদের ‘’অনশন"-কে, মেডিক্যাল সাইন্সে "অটোফেজি" বলে। তবে সারাদিন না খেয়ে থেকে রাতের বেলা খাওয়ার নাম "অটোফেজি" নয়। কারণ "অটোফেজিতে" পানি পান করা বাধ্যতামূলক, পানি পান না করলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির পরিমাণই বেশী হয়। উপবাসের ১৩ তম থেকে ১৮ তম ঘণ্টায় গিয়ে আমাদের দেহে অটোফেজি প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়। সাধারণত, প্রতিদিন সন্ধ্যার আগে বা ৬ থেকে পরদিন ১০টা/১২টা পর্যন্ত সময় অটোফেজির সময় ধরা হয়  

 

 ষাটের  দশকে  বিখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী হেলমুট লুটজনার বিখ্যাত বই Secret of successful fasting.প্রচার হওয়ার পরপরই ইউরোপ, আমেরিকানরা, ফাস্টিং এ ঝুকে পরে, যার মূল উদ্দেশ্য শরীরকে সুস্থ্য রাখা। 

বেলজিয়ামের বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান ডে ১৯৭৪ সালে প্রথম দেখতে পান, শরীরের প্রতিটি কোষ নিজের ভেতরে চারপাশে বস্তার মতো ঝিল্লি তৈরি করে নিজের খাবারের কিছু উপাদানকে তার ভেতরে আটকে রাখে। কোষের এই ঝিল্লির নাম লাইসোজম। এই লাইসোজম আবিষ্কারের কারণে চিকিৎসা বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। 

 

কিন্তু এই লাইসোজমের মধ্যে ঠিক কী ঘটে, সেটা তখনো বিজ্ঞানীদের জানা ছিল না। জাপানি বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওহশোমি  লক্ষ্য করেন, কোষেরা নিজেদের চাহিদার  অতিরিক্ত খাদ্য এই লাইসোজমে জমা করে রাখে । তারপর একসময় শরীরে খাদ্যে বা পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিলে কোষেরা  ওই দরকারি খাদ্য থেকে শক্তি উৎপাদন করে কিংবা গড়ে তোলে নতুন নতুন কোষ। এই গবেষণার জন্য তাঁকে ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কার ্দেয়া হয়। আমাদের শরীরের কোষগুলো মূলত অনেকটা ফ্রিজের মত, অতিরিক্ত খাদ্য আমরা ফ্রিজে রাখি, দরকার হলে সেখান থেকে ব্যবহার করি। কিন্তু আমরা যদি ফ্রিজের এই খাবার দীর্ঘদিন ব্যবহার না করি, তাহলে সেগুলো জমতে জমতে ফ্রিজকে অচল করে তুলবে, খাদ্যও পচে যাবে। তেমনি  আপনি যদি ১৩ থেকে ১৮ ঘন্টা খাবার গ্রহণ বন্ধ রাখেন তবে, তবে আপনার দেহের কোষগুলো নিজেদের ফ্রিজ অর্থাৎ লাইসোজমে থাকা খাদ্যকে খাওয়া শুরু করে! যদি উপস না করে খাবার খেতেই থাকেন, তাহলে অটোফেজির করার জন্য যে ১৫টি জিন শরীরে আছে,সেগুলোতে মিউটেশন হয়ে নানা ধরনের অসুখ তৈরি করবে, যাকে লাইফস্টাইল ডিজিস বলা হয়।

 

অটোফেজির অটো মানে ‘নিজে’ ফেজি মানে ‘খেয়ে ফেলা’। তার মানে নিজের কোষের ভিতরের খাবার খেয়ে ফেলা।   

নিয়মিত  অটোফেজির মাধ্যমে আপনার দেহের কোষগুলো  নতুনভাবে তৈরি হতে থাকবে তখন আপনি তারুণ্য ফিরে পেতে শুরু করবেন, যেমনিভাবে বসন্তে গাছে নতুন পাতা গজানো শুরু করে ঠিক তেমনি। আপনি মূলত উপবাস করে আপনার নিজের শরীরের চর্বি খাচ্ছেন বলা যায়। 

অটোফেজির বড় লক্ষণ। অটোফেজি চলাকালে শারীরিক অবসন্নতা বা ক্লান্তি ভাব চলে আসে। মুখে দুুর্গন্ধ আসা। ওজন কমতে থাকা। অটোফেজি যত শক্তিশালী হবে, ওজন তত কমতে থাকবে।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও টেস্টেটেরন বাড়বে।

 

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে কোনো সময় আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা হাটঁতে হবে অথবা ব্যায়াম বা শারিরিক পরিশ্রম করতে হবে। হাটা পথের দূরত্বে গাড়ি ব্যবহার করবেন না। ১ থেকে ৫-৬ তলা পর্যন্ত সিঁড়ি দিয়ে চলুন। লবণ চিনি রুটি ভাত দুধ ইত্যাদি ‘হোয়াইট পয়জন’ বা সাদা বিষ যতটা সম্ভব কম খাবেন। একটি ছোট প্লেটে ভাতের চেয়ে সবজি বা তড়িতরকারি বেশি নিয়ে একটি ছোট চামচের মাধ্যমে খাবেন অতি ধীরে ধীরে কচ্ছপের গতিতে। হাত থেকে খাবারের দূরত্ব বজায় রাখবেন। হাত ভালোভাবে ওয়াশ না করে কোন খাবারই হাত দিয়ে ধরবেন না। মুখ বন্ধ করে খাবার ছিটাবেন, খাবারের সময় কারো সাথে বা মোবাইলে কথা বললে মুখের লালা তিন ফুট পর্যন্ত চারদিকে ছড়াতে থাকে যা খালি চোখে দেখা যায় না এতে একজনের রোগ জীবাণু অন্যজনের পেটে যায়। দিনের তিন বেলা খাবার কে ৬ থেকে ১০ ভাগে ভাগ করে খাবেন, দিনে দু ঘন্টার বেশি না খেয়ে থাকবেন না, অন্তত পানি হলেও খেতে হবে।  বাইরে থেকে এসে ভালোভাবে হাত ধুরে তারপর কিছু করবেন। 

 

খাবারের সময় এবং গতি’ এই দুটি বিষয় খুবই ইমপোর্টেন্ট অর্থাৎ সূর্যের আলো থাকা অবস্থায়, যখন যা পারেন অল্প অল্প খাবেন এবং সেটা খুব ধীর গতিতে চিবাবেন।  খাবারের বেশিরভাগ থাকবে লাইভ ফুড থাকবে, ডেড ফুড থাকবে কম। অর্থাৎ তাজা ফলমূল শাক সবজি মাছ তৈরি তরকারি বেশি খাবেন আর শুকনো খাবার কম খাবেন। খাবারের সময় বা খাবারের পর পর পানি বা ঔষধ খাবেন না অন্তত খাবারের আধা ঘন্টা পরে খাবেন।  ক্ষিধে না লাগলে কেউ জোর করে খাওয়ালেও খাবেন না, শরীরে খাবা্রের দরকার হলে ক্ষিদের মাধ্যমে শরীর সিগন্যাল দিবে তখন খাবেন, ঘুমের প্রয়োজন হলে শরীর সিগনাল দিবে তখন ডান পাশ ফিরে ঘুমাবেন, অসময়ে নয়। সব সময় বসে কাজ করবেন না, মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করবেন। 

 

বৌদ্ধরা সপ্তাহে একদিন করে অর্থাৎ পূর্ণিমা, অষ্টমী, অমাবস্যাতে দুপুর ১২ টা থেকে পরদিন ভোর ৫টা পর্যন্ত মোট ১৭ ঘন্টা  শুধু পানি ও লাইট লিকুইড জুস খেয়ে অষ্টশীল উপবাস করেন। এটাকে "অটোফেজিরকাছাকাছি বলা চলে। 


 

ভেলা ভাসানোই ছিল আমাদের প্রাচীন ধর্ম

 

 দক্ষিণ ভারতের সেনরা আসার আগে এখানে ‘হিন্দু ধর্ম’ বলতে কিছু ছিল না। তার আগে বৌদ্ধ ধর্ম ছিল। বৌদ্ধ ধর্মের আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিল ‘প্রকৃতি পূজারী’।  এই যে আর্যরা তাদের ধর্ম,  সেন রাজবংশের মাধ্যমে এদেশে নিয়ে এলো আর আর্য অনার্য ধর্ম মিলে গিয়ে সনাতন ধর্মের জন্ম দিল; এখনো সেখানে প্রমাণ রয়ে গেছে ‘অনার্য দেব-দেবীদের’ তালিকা থেকে। যেমন- মনসা দেবী হচ্ছে অনার্য দেবী। বাংলার সবচেয়ে প্রাচীনকালে চলে গেলে আমাদের পূর্ব পুরুষ রাখালদেরকে নদীর ধারে মনসার পূজা করতে দেখা যাবে। মুসলমানরা এসেও দেখে নদীর ধারে সাপের দেবীর পূজা করছে কাফেররা। এসব পূজার ঘট ভেঙে দেয়া মুসলমান কাজির কথা মধ্যযুগের কাব্যে উঠে এসেছে। তো এই হচ্ছে আমাদের শেকড়। সাপের কামড় থেকে বাঁচার জন্য ভেলা ভাসানোই আমাদের প্রাচীন ধর্ম। তো মানবেন এখন ঐতিহ্য হিসেবে এসবকে? মিশরীয়রা যদি পিড়ামিড আর ফারাহকে জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক মনে করতে পারে, তাহলে আমাদের যদি নিজস্ব প্রাচীন ঐতিহ্য ধারণ করতে হয় তাহলে ভেলা ভাসানোইকে বেছে নিতে হবে!  না, এটা পূজা করা নয়,জাতির ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে স্মরণ করা । ধর্মে আপনি মুসলমান। কিন্তু জাতির ঐতিহ্য সংস্কৃতি (আমরা কোথা থেকে এসেছি আমাদের শিখড় কোথায়) ধারণ করতে হলে অনুসন্ধান করতে হবে। সেসব হজম করা আপনার পক্ষে সম্ভব নয় বলেই মেসোপটেমিয়া সভ্যতা ও পারস্য সভ্যতার নওরোজ পালনকে বাঙালি জীবনে যোগ করে  " আমাদের ফসল তোলার উৎসব বৈশাখকে"  বাদ দিতে  চাইছি!

 

বাফেলো কথন

সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিযোগিতা হতো একদিনে কে কত বাফেলো মারতে পারে। কেন?!  কারন সমভূমিতে সমস্ত মহিষকে হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিল যাতে স্থানীয় রেড  ইন্ডিয়ানরা অনাহারে মারা যায়। ধীরে ধীরে স্থানীয় রেড ইন্ডিয়ানরা খাদ্যে ও বস্রের জন্য তাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং পর্যায়ক্রমে মার্কিনরা হত্যা ও বাস্তুচ্যুতির মাধ্যমে তাদের বিতাড়িত করেই আজ আমেরিকার মালিক । তারা বাফেলো এতো পরিমানে হত্যা করেছিলো যে আমেরিকা থেকে তা বিলুপ্ত হয়ে যায় ।পরবর্তীতে কিছু কানাডিয় তাদের স্থানীয় বাফেলোর সাথে গরুর ক্রস ঘটিয়ে সংকর বাফেলোর প্রজনন করেন যা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে দেখা যায়।



দেশের মানুষ চিন্তা

কোনো এক নামাজের ওয়াক্তে যেকোনো সরকারি অফিসের মসজিদে যান। দেখবেন সবাই নামাজ পড়ছে। কিন্তু ঐ অফিসেই একটি কাজ করাতে যান। কি ? ঘুষ ছাড়া কাজ হলো? বাংলাদেশের লোকজন আগের তুলনায় অনেক বেশি ওয়াজ শোনে। দাঁড়ি রাখে। এখনকার মেয়েরা তো হিজাব আগের চেয়ে বেশি পড়ে।  তাহলে নিশ্চয়ই গত কয়েক বছর ধরে রমজান মাসে জিনিসপত্রের দাম কমার কথা।  পরিবার থেকে বাজার রাস্তাঘাট সর্বত্র

সিগারেট বিক্রি কম হবার কথা, পরস্পরের সাথে ঝগড়াঝাঁটি , গীবত , পরকীয়া ইত্যাদি কম হবার কথা, কারণ মুসলমান মাত্রই পরস্পরের ভাই। কিন্তু বাস্তবে ঠিক উল্টোটা দেখবেন। এদেশের মানুষ কি চিন্তা করে , কি বিশ্বাস করে কিংবা কি পালন করে, তা আসলে বুঝার কোন উপায় নেই।


মুঘল শাসনামলে পূর্ব বঙ্গে বা বর্তমান বাংলাদেশে ইসলামের দারুণ প্রসার ঘটে। অন্যসব শাসক যারা বাংলা শাসন করেছিলেন তাদের সব প্রসাশনিক কার্যক্রম বা রাজধানী ছিলো পশ্চিম বঙ্গের কলকাতায়৷ কিন্তু মোঘলরা বাংলার রাজধানী করেন ঢাকাতে।  এছাড়াও চট্টগ্রাম অঞ্চলে অনেক আরবরা বসবাস শুরু করে, সেখানেই বিয়ে করে, এর ফলেও মুসলিম বাড়তে থাকে ঐ অঞ্চলে৷ তাছাড়া উত্তর ভারত থেকেও অনেক মুসলিম এসে এই পূর্ব বঙ্গে বসবাস শুরু করে। এরপর ব্রিটিশ আমলে তো এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং পূর্ব বঙ্গে মুসলিম বাড়তে থাকে। আসলে এদেশের মানুষ জেনে বুঝে ধর্ম পালন করে না , ঐতিহ্য হিসেবে নিজেকে মুসলমান মনে করে।


 

 

বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে মুসলমান হল!


বাংলার ইতিহাসে সর্বপ্রথম ১৮৭২ সালে পরিচালিত জনসংখ্যা গণনায় পূর্ব-বাংলায় যে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ মুসলমান, তা দেখে ইংরেজসহ বাংলার হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায় আশ্চর্য হয়ে যায়। এর আগে ইংরেজরা অনুমান করত যে, পুর্ব বাংলায় হিন্দুরা মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রায় দ্বিগুণ। অথচ, জনসংখ্যা গণনায় দেখা যায় ঠিক উল্টো। কিন্তু কিভাবে সবার অগোচরে পূর্ব বাংলায় মুসল্মানদের সংখ্যা বেড়ে গেল আজকে আমরা তা জানব।

 

 ৭০০-৮০০ সালের দিকে আরব-চীন বাণিজ্য যাত্রার সময় আরব বণিকরা নিয়মিত যাত্রাবিরতি করতেন আরাকান রাজ্যের সাদজাম বা বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দরে ।   আগত এসব আরব মুসলিম বণিকরা এ দেশের জনগণের মধ্যে ইসলাম প্রচারের সুযোগ হাতছাড়া করেননি।  ফলে  বিখ্যাত আরব geographer আল মাসুদি ৯৫৭ সালে যখন চট্টগ্রাম অঞ্চলে আসেন তখন কিছু মুসলিম পরিবার দেখতে পাওয়ার দাবি করেন। এছাড়াও বর্তমান লালমনিরহাটের নিদারিয়া মসজিদকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ ধরা হয়৷   অর্থাৎ বিচ্ছিন্নভাবে হলেও অনেক আগে থেকে ইসলাম প্রচারণা চলে আসছিল এ দেশে। কিন্তু এই প্রচারণা পূর্ব বাংলায় ইসলাম প্রতিষ্ঠায় বড় কোন ভুমিকা বাখেনি। তাহলে ম্যাজিকটা কি ছিল? সেটা জানতে হলে আগে আমাদের জানতে হবে মুসলমান হবার আগে পুর্ব বাংলায় কোন ধর্মের মানুষ বাস করত, তাদের সমাজটা কেমন ছিল


(৭৫০-১১৬১ খ্রি) বৌদ্ধ পাল রাজারা এ দেশে এসে শাসন করার  আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা ছিল ‘প্রকৃতি পূজারী’। মানে কোন মূর্তি-টূর্তির পূজা করতো না। এই বৌদ্ধ পাল শাসন আমল  এদেশে বৌদ্ধ ধর্ম বিকশিত হয়েছিল। এরপর 'দক্ষিণ ভারতের সেন রাজারা এসে পালদের হটিয়ে এ দেশ দখল করে নেয়। সেন রাজারা জাতিতে ব্রাহ্মণ ছিলেন এবং গোঁড়া হিন্দু ছিল।  তাদের ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতায়  অর্থাৎ এই সেন-বর্মন-দেব আমলে দেশের বৌদ্ধদের উপর অকথ্য অত্যাচার বা রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চালত। অন্যদিকে ভয়ে এবং কৃপা পাবার আশায় এদেশের প্রকৃতি পূজারী’ সাধারণ মানুষরা এই সেন রাজাদের ধর্মে মিলে গিয়ে সনাতন ধর্মের জন্ম দিল, তারা  হিন্দু সংস্কৃতির দেব-দেবি পুজা করল। কিন্তু সেন-বর্মন-দেব আমলে্র ব্রাহ্মণরা  এিপ্রকৃতি পূজারী সাধারণ মানুষকে জাতিভেদের শিকলে আটকে রাখল। ব্রাহ্মণরা বলল- হিন্দু ধর্মে মানুষকে চারটা জাতে ভাগ করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবা ঈশ্বরের মাথা হতে সৃষ্টি হয়েছে। ফলে তারা সবচেয়ে সম্মানিত। আর ক্ষতীয়রা ছিল যোদ্ধা। কারণ তারা ঈশ্বরের হাত হতে সৃষ্টি হয়েছে। আবার, বৈশ্যরা ঈশ্বরের হাঁটু হতে সৃষ্ট। ফলে তারা ব্যবসায়ী গোত্র ছিল। আর সর্বশেষে শূদ্ররা ঈশ্বরের পা হতে সৃষ্ট হয়। ফলে নিম্ন শ্রেণী মানুষ, তাদের পরিচয় দাস।

 

সুতারাং এদেশের প্রকৃতি পুজারী মানুষ, যারা  বৈশ্য আর শূদ্ররা নিম্ন শ্রেণীভুক্ত হয়েছে, তারাও হয়ে যায় বৌদ্ধদের মত অবহেলিত। ঠিক এমন সময় ইসলামের সুফি-দরবেশরা এদেশে  আসতে থাকে। যেহেতু ইসলাম ধর্ম কোনো জাতে পাতে ভাগাভাগি করত না। তারা বৌদ্ধ এবং  বৈশ্য- শূদ্র জাতের মানুষকে সহজে আপন করে নিল।

সেন-বর্মন-দেব আমলে ব্রাহ্মণরা ধর্ম দিয়ে সমাজকে এমনভাবে বেঁধেছিল যে, সাধারণ মানুষ অনায়াসে দাস শ্রেণীতে পরিণত হয়েছিল এবং তাদের শ্রম,তাদের ভূমি ও তাদের নারী তারা উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণদের কাছে তুলে  দিতে বাধ্য হত । এমন কি উচ্চবর্ণের লোকেরা যাতে তাদের ছোঁয়াচ এড়িয়ে চলেতে পারে,তার জন্য নিম্নবর্ণের লোকদের গলায় ঘন্টি ঝুলিয়ে চলতে হত। কিন্তু সে যদি মুসলমান হয়ে যেত, তাহলে রক্ষা পেত। কারণ ইসলাম ধর্ম মানুষকে সমানাধিকার দেয়। মুসলমান হলে সে আর যে কোন মুসলমানের সঙ্গে সমান। তার ছোঁয়া লাগলে তার সমাজে আর কারও জাত যায় না।

সেই অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পাবার আশায় বহু সংখ্যক  বৈশ্য- শূদ্র ও বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এদের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ বেশি ছিল। কারণ রাস্ট্রীয় সন্ত্রাসটা তাদের উপর বেশি হত, কারণ ভবিষ্যতে পুনরায় তাদের দ্বারা রাস্ট্র ক্ষমতা দখলের আশংখা ছিল। বাংলার যে উত্তর ও পূর্ব অংশে বৌদ্ধদের সংখ্যা বেশী ছিল, সেই উত্তর ও পূর্ব অংশে পরবর্তীকালে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা ছিলেন মুন্ডিত মস্তক অর্থাৎ ন্যাড়া। তাই তাদের নেড়ে বলে বিদ্রুপ করা হত। পরে তাঁরা যখন মুসলমান হলেন তাঁদের সূত্র ধরে সব মুসলমানকেই নেড়ে বলে উপহাস করার উন্নাসিকতা প্রচলিত হল।


সেই সময় পূর্ববঙ্গের মানুষ তুলনামূলকভাবে দরিদ্র ছিল। বাংলার এই পূর্বাঞ্চলকে বলা হয় (ভাটি বাংলা)। বছরের অধিকাংশ সময় কয়েকফুট পানির নিচে থাকত এই অঞ্চল। ঘনঘন বন্যা, জলোচ্ছ্বাস ও সাইক্লোনে আক্রান্ত হয়ে প্রায়শঃই ব্যাপকভাবে বিধ্বস্ত থাকত এই পূর্ব বাংলা। ফলস্বরূপ, এই অঞ্চলে বসতিস্থাপনকারী কৃষিজীবি, মৎস্যজীবী, নৌকাবাসী এবং অনুরূপ অন্যান্য জনগোষ্ঠিসমূহ নিরন্তর ব্যস্ত থাকত ধ্বংসাত্মক এইসব প্রাকৃতিক শক্তির বিরুদ্ধে  টিকে থাকার লড়াইয়ে। 


কিন্তু পূর্ববাংলার উর্বর ভূমিতে অগ্রবর্তী কৃষিজীবীরা নতুন চর দখল করে জনবসতি গড়ে তুলতে থাকলে পূর্ববাংলা  সর্বাধিক ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামীণ সমাজের উদ্ভব ঘটে। বিশৃংখলা আর কলহ-বিবাদ হয়ে দাঁড়ায় এই সমাজের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা। একই কারণে পূর্ববাংলায় শক্তিশালী ও সুগঠিত প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা দুরূহ ছিল যা’ ইংরেজরাও লিপিবদ্ধ করে গেছে। এই বৈরী প্রকৃতি আর প্রাতিষ্ঠানিক শূন্যতা  একটা বিশৃংখল সামাজিক অবস্থার জন্ম দেয়।  তারা প্রকৃতি বা দেব-দেবির পুজা করে মানসিক শান্তনা  লাভ করলেও বাস্তবিক দিকনির্দেশনা, পরামর্শ এবং নের্তৃত্বের অভাব তাদের সমাজ জীবনে থেকেই যায়। এই বিশেষ অভাববোধের সুযোগ নেয়  পীর হিসেবে আসা লোকেরা। পূর্ববাংলার জনগোষ্ঠি ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় এই ‘পীর’দের মাধ্যমে। 


ফলে বাঙালি মুসলমান সমাজ পীরের নির্দেশিত এক ধরনের লৌকিকধর্ম গড়ে তোলে এবং তাদের দৈনন্দিন জীবনের নানান ঘাতপ্রতিঘাতে তারা পীরদের মুখাপেক্ষী হয়। এজন্যই পূর্ববাংলার আনাচে-কানাচে পীরদের অস্তিত্বের নিদর্শন দেখা যায় । পীরের কবর জিয়ারত বা সেখানে মাজার প্রতিষ্ঠা করা এবং ধর্মের বয়ান দিয়ে ওয়াজ-নচিহত করার প্রথা সারা পৃথিবীর মধ্যে পুর্ব বাংলায় সবচেয়ে বেশি।

 

 এমন কি ভারতের যেসব এলাকায় ব্রাহ্মণ্যবাদ কঠোরভাবে বর্ণপ্রথা চাপিয়ে দিতে পেরেছিল (যেমন উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, ইত্যাদি) সেসব এলাকা কয়েকশ’ বছর মুসলমান শাসনাধীনে থাকার পরেও এইসব তথাকথিত পীরেরা সেখানকার নিম্নবর্ণের জনগোষ্ঠিসমূহ ধর্মান্তরিত করেও মুসলিম করতে পারেনি। এর কারণ সেখানে নিম্নবর্ণের হিন্দু ছিল, কিন্তু বৌদ্ধ  ছিল না। তার মানে পূর্ব বাংলায়  বৌদ্ধরা এবং স্থানীয় কিছু জনগোষ্ঠী সুফি পীরদের সহযোগিতায় মুসলমান গ্রাম সমাজের উদ্ভব করেছে। কিন্তু কখন কিভাবে এত পীর বাংলায় আস্তানা করল?


১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী সেনদের হটিয়ে বাংলা দখল করার পর তার বিজিত রাজ্যের সীমানা দাড়ায় পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্গত নদিয়া  থেকে রংপুর শহরতিস্তা ও করতোয়াপদ্মা এবং কুশীইয়ারা নদীর নিম্নাঞ্চল পর্যন্ত ।  এ সময় ভারতের অন্যান্য অঞ্চল থেকে দলে দলে মুসলিমরা এবং অনেক পীর দরবেশরা বাংলায় এসে বসতি স্থাপন করেন এবং ইসলাম প্রচার কাজ শুরু করেন। ১৩০৩ সালে সিলেট অঞ্চলে হযরত শাহজালাল(রহঃ) এর প্রভাবে মুসলিম বাড়তে থাকে, ১৩৯৮ এর দিকে খানজাহান আ(রহঃ) এর প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলে মুসলিম বাড়তে থাকে৷  এ সবের মধ্যেই   রাজা গণেশ এবং পুনরায় বাংলায় হিন্দু শাসনের আবির্ভাব ঘ্টান। কিন্তু ১৪১৮ সালে রাজা গণেশের ছেলে জাদু নারায়ণ শাসভার নিয়েই  ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং নিজের নাম রাখেন জালালউদ্দিন মোহাম্মদ শাহ। তিনিই প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন এবং আরাকানকেও বাংলার অধীনে নিয়ে আসেন। এভাবেও মুসলিম সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।


এরপর সাড়ে পাঁচ’শ বছর ধরে মুসলমানরা এখানকার শাসনকর্তা সুলতান বা সুবেদার বা নবাব ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের সেনাবাহিনীতে, বিচার বিভাগে এবং রাজস্ব বিভাগে যেমন স্থানীয় লোকদের নিয়োগ করা হতো। আবার দিল্লী ভারতের মধ্যে প্রধান মুসলমান কেন্দ্র হলেও সেখানে সব সময় ষড়যন্ত্র-শঠতা-হত্যা আর রাজনৈতিক গোলযোগ লেগেই থাকত। বাংলা ছিল তুলনায় নিরাপদ। ফলে বেশ কিছু সংখ্যক অবাঙালি (আরবী, ইরানী, তুর্কী, আফগানী, হাবশী, মোগল, পাঞ্জাবী, বিহারী প্রভৃতি) মুসলমান বাংলায় বসবাস করতে শুরু করে।

 তাছাড়া পুর্ববঙ্গে (বর্তমান বাংলাদেশে) ভারতের অন্যান্য অংশের মত শক্তিশালী কোন 'পঞ্চায়েত' না থাকায় মুসলমান সুফিদের প্রবেশ সহজ ছিল এবং তাদের পক্ষে ব্রাহ্মণ্য অত্যাচারে জর্জরিত বৌদ্ধএবং বৈশ্য- শূদ্রদের কাছে পৌছা সহজ হয়েছিল।  

 

কিন্তু  বাংলাতে তখন এই মুসলিম সমাজ মূলতঃ বহিরাগত এবং স্থানীয় এই দুইভাগে বিভক্ত ছিল । বহিরাগতরা সমাজের মানুষ্রা উঁচু শ্রেণী এবং স্থানীয় ধর্মান্তরিতরা নিচুশ্রেণীতে অবস্থান করত। বহিরাগত উঁচু শ্রেণী বা উচ্চবর্ণের হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হওয়াদের বলা হত  ‘আশরাফ’ (বা শরীফ) । নিচুজা্রের স্থানীয় ধর্মান্তরিতরা মুসলিমদের বলা হত ‘আরজাল’ বা ‘আতরাফ’ । বহিরাগত আরব থেকে আসা পরিচয় দিয়ে  বা ্মহা নবীর দূরবর্তী  আত্মীয় পরিচয় দিয়ে এদেশে বিয়ে করে উচ্চ সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে যারা সক্ষম হয়েছিল, তারা সৈয়দ নামে পরিচিতি পেল। যারা ইয়েমেন, ইরাক, পারস্য, ইত্যাদি অঞ্চল থেকে আগমনের দাবী করে এদেশে বিয়ে করে তারা শেখ, খান, পাঠান, শাহ, মীর, ইত্যাদি বংশপদবী জুড়ে নিল।  

১৮৮২ এবং ১৯০১ সালের সরকারি জনসংখ্যা গনণায় জেলাভিত্তিক বংশবিন্যাসের পরিসংখ্যানে দেখা গেল- ১৯০১ সালে নোয়াখালী জেলায় সর্বমোট ৮৬৫,৭০৯ জন মুসলমানের মধ্যে ৮৬২,২৯০ জনই নিজেদেরকে বহিরাগত বংশধর বলে দাবী করেছিল। এই অতিরঞ্জনের প্রবণতা এতোটাই বেশি ছিল যে, এটিকে নিয়ে তৎকালীন সমাজে উপহাস-বিদ্রুপের করত। যেমন, শুরুতে ছিল উল্লা/তুল্লা, পরে হলো উদ্দিন।  এ ভাবে চালিয়ে যাও, ধরা না পড় যদ্দিন।

 

মজার ব্যাপার হলো,  ঐ সময় অভিজাত মুসলমানরা উর্দু ভাষায় কথা বলত। নবার সলিমুল্লাহ থেকে শেরে বাংলা পর্যন্ত সকল নেতার পারিবারিক ও যোগাযোগের ভাষা ছিল উর্দু। হিন্দু অভিজাত ব্রাহ্মণদের মধ্যেও এটি লক্ষ্য করা গেছে। বহিরাগত ব্রাহ্মণরা সংস্কৃত ভাষাকে বলত ‘দেবভাষা’ আর বাঙলাকে বলতো ‘গৌড়ীয় ভাষা’। 

 

সে যাই হোক, মূল কথায় আসি, ত্রয়োদশ থেকে পঞ্চদশ শতক পর্যস্ত বাংলায় সুফী প্রচারের স্বর্ণযুগ।  সে সময় সুফী দরবেশরা বিভিন্ন জায়গায় খানকাহ প্রতিষ্ঠা করে তাঁরা ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করলেন।  

সূফীদের  আগমনের আগে এদেশের প্রকৃতি পুজারী মানুষ তান্ত্রিকতায় বিশ্বাসী করত। তান্ত্রিক গুরুদের লোকে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে বিশ্বাস করত। সূফী দরবেশদের সাধনাও ছিল তান্ত্রিক গুরুদের মত। ফলে এখানকার সাধারণ লোক খুব সহজেই সূফীদের তান্ত্রিক গুরুদের আসনে বসালো। অন্যদিকে সূফীদের কোনো  ধর্মীয় গোঁড়ামী ছিল না। ফলে খুব সহজেই সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি আকৃষ্ট হত।


ভারত ভাগের পর লোকবিনিময় নীতিতে শুধুমাত্র ৪৭ সনে পূর্ব বাংলা ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে চলে যায় এগরো লাখ হিন্দু, বিপরীতে পশ্চিমবঙ্গ আসাম বিহার ত্রিপুরা প্রভৃতি রাজ্য থেকে মাত্র পঞ্চাশ হাজার মুসলমান পূর্ব পাকিস্তানে আসে। সেই যে শুরু বাংলাদেশী হিন্দুদের দেশত্যাগের মহামিছিল, সেই মিছিল আজো থামেনি। পূর্ববঙ্গের ৩৪ শতাংশ হিন্দু ১৯৭১ সালে গিয়ে কমে দাঁড়ায় মাত্র ১৮ শতাংশে আর বর্তমানে ৮%। পূর্ব বাংলায় কোন কালেই ৪০% এর বেশি হিন্দু ছিল না। সেন আমলে ব্রাহ্মণ্ণরা বৌদ্ধ হত্যায় ইতিহাস সৃষ্টি করেছে শংকরাচার্য-এর পথ ধরে। বৌদ্ধ ভিক্ষুকদের মঠ থেকে ধরে এনে ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ের মধ্যে ছেড়ে দিত তারা। আসলে তার ভক্তেরা তর্কের কথা বললেও মূলত বৌদ্ধদের ধরে এনে ফুটন্ত তেলের কড়াইয়ের মধ্যে ছেড়ে দেয়া হতো। 

জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করা পূর্ব বঙ্গের মানুষদের প্রধান কর্ম ছিল , শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহ তেমন ছিল না। সেই চাষাভুষা নিন্মবর্গের মুসলমানরা আজ এত সম্পদ সম্পত্তির মালিক হলেও শিক্ষা-দিক্ষা বা জ্ঞানের প্রতি অনাগ্রহতা থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি এখনও। 

 

 

মধ্যপ্রাচ্যের ইসলাম 

মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক মুসলিম দেশ রয়েছে। এই মুসলিম দেশগুলোর নেতৃত্বে রয়েছে সৌদি আরব। সৌদি আরবের প্রতিবেশী কিছু দেশ যেমন- ইয়েমেন, সুদান, সোমালিয়া, ইথিওপিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রণায় মারা যাচ্ছেন। কিন্তু সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, আরব-আমিরাত ও বাহারাইন এর মুসলিম শাসকরা এইসব গরিব দেশের নাগরিকদের কল্যাণে কখনোই পাশে দাঁড়াচ্ছেন না।
 উল্লেখিত দেশের রাজ পরিবারের রয়েছে শতশত কোটি ডলারের রাজপ্রাসাদ, ব্যক্তিগত বিমান, নিজস্ব বিমানবন্দর, স্বর্ণের তৈরি বাথরুম। এই ভোগবাদীরা নিজেদের মোহাম্মাদী (স.) ইসলামের অনুসারি দাবি করলেও তারা কিন্তু গরিব মুসলমানদের সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে আসে না।




আমাদের জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাত


গ্যাসের দাম বাড়লে পরিবহন ব্যয় বাড়বে, বিদ্যুতের দাম বাড়বে, এগুলোর কারণে আবার বাড়বে বাসা ভাড়াসহ অন্য সব দ্রব্যসামগ্রীর দাম, বাড়বে শিল্প-কৃষি উৎপাদন ব্যয়। যেসব ব্যবসায়ী সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পান, কিংবা বড় ঋণখেলাপি হলেও যাঁদের জন্য ব্যাংকের সিন্দুক সব সময় খোলা থাকে, তাঁরা বাদে সব উদ্যোক্তার জন্যই নতুন বিনিয়োগ এতে আরও কঠিন হয়ে যাবে।

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম তিন ভাগের এক ভাগ হওয়ার পরও জ্বালানি তেলের দাম কমানো হয়নি। এক বছরেই ১৬ হাজার কোটি টাকা মুনাফা হয়েছে সরকারের। এই মুনাফার টাকা কোথায় যাচ্ছে, তা-ও পরিষ্কার নয়।

গ্যাস খাতের উন্নয়নের জন্য গঠিত তহবিল দিয়ে দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে বাপেক্সকে বসিয়ে রেখে তিন গুণ বেশি খরচে রাশিয়ান কোম্পানি গাজপ্রমকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে সরকার। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতকে ক্রমে দেশি-বিদেশি বৃহৎ কোম্পানির ব্যবসার বা মুনাফাভিত্তিক ব্যক্তিমালিকানার খাতে পরিণত করার নীতি বাস্তবায়নের কাজ চলছে দুই দশক ধরে। এই গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষায় ক্রমে বাংলাদেশে গ্যাস উত্তোলনে বিদেশি সংস্থার অংশীদারত্ব বাড়ানো হয়েছে, হচ্ছে। এদের কাছ থেকে দেশের প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ১০ গুণ বেশি দামে বিদেশি মুদ্রায় গ্যাস কিনতে হয়। সেভাবেই বাংলাদেশে গ্যাস সম্পদের ওপর একক কর্তৃত্ব এখন মার্কিন কোম্পানি শেভরনের, যারা বহু বছর ভালো ব্যবসা করে এখন তা বিক্রি করে চলে যেতে চায়। তারা যে দামে এই ব্যবসা বিক্রি করছে, তার চেয়ে বেশি টাকা আমরা মাগুরছড়ার ক্ষক্ষতিপূরণ হিসেবে শেভরনের কাছে পাই। কোনো সরকার এই ক্ষতিপূরণ আদায়ে উদ্যোগ নেয়নি, উল্টো সরকার ‘আমাদের সক্ষমতা নাই’ বলে বলে চীনা কোম্পানির হাতে এই গ্যাস খাত হস্তান্তরের রাস্তা তৈরি করছে।


 

উঁচু দালানের চেয়ে উচ্চতর আদর্শ মূল্যবান


জ্ঞানচর্চার জন্য শান্ত পরিবেশ দরকার। কোনো প্রজন্মের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষিতরা যদি ডিগ্রি নিয়েই শুধু চাকরি ও অর্থ-উপার্জনের পেছনে ছোটে, জাতি গঠনে কোনো ভূমিকাই না রাখে, তাহলে সে জাতির ভবিষ্যৎ থাকে না। মেধাবীরা যদি শুধু বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করাকেই জীবনের ধ্রুবতারা মনে করে; গাড়ি পাবে, ফ্ল্যাট কিনবে অভিজাত এলাকায়—এসবই হয় তাদের লক্ষ্য, তাহলে তাদের থেকে জাতি কিছু পায় না।

চতুর্দিকে ইতিহাসের লেকচার। তবে উঠতি ছেলেমেয়েদের আগ্রহ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গিয়ে ব্যবসায় প্রশাসনের (বিবিএ/এমবিএ) লেকচার শোনায়। যে বিষয়ে পেট ভরে না, সে বিষয়ে মানুষের চিরকাল আগ্রহ কম। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাহিত্য নয়, দর্শন নয়, পদার্থবিজ্ঞান নয়, বেশি ভিড় ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে। পাস দিচ্ছে অজস্র, চাকরি পাচ্ছে অল্প। ফলে শতকরা ৮০ ভাগের জীবনে আসে হতাশা।

আজ উঁচু উঁচু দালান উঠছে, কিন্তু যা মানবিক তার সবকিছু ভেঙে পড়ছে।



পেটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ

শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিদ্রোহ করেছে । পেটের বিরুদ্ধে । অভিযোগ একটাই । সবাই পরিশ্রম করে । পেট শুধু বসে বসে খাবার স্টোর করে ।  এই  পেট  ক্ষুধা থাকলেও খাবার চায়, না থাকলেও চায় । একারণে শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গদের বেশি বেশি খাটতে হয়। পায়ের যত হাঁটাহাঁটি, তা মূলত পেটের খাবার যোগাড়ের জন্য । হাত সব কাজ করে পেটের জন্য । কিন্তু জিব  পেটের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের  কথা শুনে হাসে । কারণ, পেট একটা গুদামঘর মাত্র । সব খাবার খায় জিব নিজে ।  প্রতিটি খাবারের স্বাদ সে পায় ।  তারপরও সে সবাইকে আশ্বস্ত করে ।  পেটের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন শুরু।  কিন্তু দ্বিতীয় দিনে টনক নড়ে সবার । বুঝতে পারে ভুল হয়েছে তাদের ।  পেটের বিরুদ্ধে আন্দোলন  করতে গিয়ে,  এক সাথে মারা যাচ্ছে সবাই ।  জিব চিৎকার দিয়ে  ওঠে । তোমাদের বোঝা উচিৎ,  পেট শুধু তার নিজের জন্য খায় না । গোটা দেহের ক্ষয় পূরণ ও পুষ্টিসাধনের জন্য সে খায় । আর, এই খাওয়ার কারণেই আমরা বেঁচে আছি । অন্যের সমালোচনা নয়, বরং আমাদের প্রত্যেকের যার যে কাজ, তা  শতভাগ নিষ্ঠার সাথে করতে হবে ।  

 



আধুনিক সভ্যতা ক্ষেত্রপ্রস্তুত করেছেন মুসলমানরা


সভ্যতা মূলত: গনিতের উপর নির্ভর করেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। যেসব মহান মুসলিম বিজ্ঞানী সভ্যতা বিনির্মানে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তারা যদিও স্থানীয় মুসলিম শাসকদের কাছ থেকে অনেকসময় অপমানিত হয়েছেন। তবুও ইতিহাস তাদেরকে মনে রাখবে যুগের পর যুগ।
  .
  ১। ফেরাবিয়াস(Ferabias) : উচ্চতর পদার্থবিজ্ঞানে তিনিই প্রথম ‘শূণ্যতা’র অবস্থান প্রমান করেছিলেন। তাঁর প্রকৃত নাম আল ফারাবি। ৮৭০ খ্রীষ্টাব্দে তুর্কিস্তানের ফারাব শহরে আল ফারাবি’র জন্ম।
 
  ২। জিবার (Geber): উচ্চতর রসায়নের এই প্রাণপুরুষই প্রথম সমগ্র বস্তুজগতকে (স্পিরিট, ধাতু ও মিশ্রিত) তিনটি ভাগে বিভক্ত করেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞানীরা এই থিউরির অনুসরনেই বস্তুজগতকে (বাষ্পীয়, পদার্থ ও পদার্থ বহির্ভুত) তিনটি ভাগে ভাগ করেন। অষ্টম শতাব্দিতে বসে তিনিই প্রথম নাইট্রিক এসিড আবিষ্কার করেন। সালফিউরিক এসিডও তাঁরই আবিষ্কার। নাইট্রিক এসিড ও হাইড্রোক্লোরিক এসিডে স্বর্ণ গলানোর পদার্থটির নাম যে ‘একোয়া রেজিয়া’, এই নামটিও তাঁর দেওয়া। পাতন উর্ধ্বপাতন পরিস্রাবণ দ্রবণ কেলাসন ভস্মীকরন গলন ও বাষ্পিভবন ইত্যাদির পৃথক পৃথক রাসায়নিক বিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ এর ধারনা তিনিই প্রথম দেন। চামড়া ও কাপড়ে রং করার রাসায়নিক পদ্ধতি, ইস্পাত তৈরির পদ্ধতি, লোহা ও ওয়াটার প্রুফ কাপড়ে বার্নিশ করার উপায় তিনিই প্রথম দেখিয়ে দিয়েছিলেন। সেই অজ্ঞানতার যুগে বসে তিনিই প্রথম বলেছিলেন, পৃথিবীতে কোনো ধাতুই মৌলিক নয়। এই মহান বিজ্ঞানী’র প্রকৃত নাম জাবির ইবনে হাইয়ান। ৭২২ খ্রীষ্টাব্দে পারস্যের তুস নগরে তাঁর জন্ম।
  .
  ৩। এভেরোস (Eaveros): ইউরোপীয় আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রথম দিকে বহুল প্রচলিত একটি বই ছিল। ‘The Incoherence of the Incoherence' নামের ইংরেজি অনুদিত এই বইটির মূল বইয়ের নাম ছিল ‘তাহদজুল আল তাহদজুল’। এই বইটি তাঁরই লেখা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই প্রভাবশালী বিজ্ঞানী’র প্রকৃত নাম ইবনে রুশদ। ১১২৬ খ্রীষ্টাব্দে স্পেনের কর্ডোভা’য় তাঁর জন্ম।
  .
  ৪। ইবনুন নাফিস: ১২০৮ সালে দামেস্কে জন্মগ্রহন করেন। মানবদেহে রক্তসঞ্চালনের মৌলিক পদ্ধতি সম্পর্কে প্রথম স্পষ্ট ধারনা দিয়েছিলেন তিনি। রক্ত চলাচল সম্পর্কিত তৎকালীন প্রচলিত গ্যালেনের মতবাদকে ভুল প্রমান করেছিলেন। তিনিই প্রথম বলেছিলেন, ‘শিরার রক্ত ছিদ্রপথ দিয়ে ডান দিক থেকে বাম দিকের হৃদপ্রকোষ্টে চলাচল করে না, বরং শিরার রক্ত সব সময়েই ধমনীর মধ্য দিয়ে ফুসফুসে পৌছায়। সেখানে বাতাসের সঙ্গে শিরার ধমনীর মাধ্যমে বাম দিকের হৃদপ্রকোষ্টে পৌছায়। এবং সেখানে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। অ্যারিস্টটলের মত তখনকার বিজ্ঞানীরাও বিশ্বাস করতো যে, হৃদপিন্ডের প্রকোষ্ট হলো তিনটি। ইবনুন নাফিস এখানে দ্বিমত করেন। তিনি বলেন হৃৎপিন্ডের প্রকোষ্ট হলো দুটি। বর্তমান বিজ্ঞানে তা প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু, নাফিসের মূল্যায়ন হয় নি। মূল্যায়ন করা হয়েছে নাফিসের জন্মেরও ৩৭০ বছর পরে জন্ম নেওয়া উইলিয়াম হার্ভের। আজকের ইউরেপীয় পন্ডিতগন, নাফিসকে আড়ালে রেখে উইলিয়াম হার্ভে’কে ইতিহাসের পাতায় স্থান দিয়েছে।
  .
  ৫। আল বাত্তানী: ৮৫৮ সালে মেসোপটেমিয়া’র অন্তর্গত বাত্তান নগরে জন্মগ্রহন করেন। প্রভাবশালী প্রাচীন জ্যোতির্বিদ টলেমি’র মতামতের সাথে দ্বিমত করে তিনিই প্রথম এক সৌর বছরের প্রকৃত হিসাব তুলে ধরেছিলেন। সেই যুগে বসেও তিনি নির্ভুল পরিমাপ করে দেখিয়ে ছিলেন যে, এক সৌর বছরে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড হয়। আধুনিক বিজ্ঞানে অবশ্য সামান্য কিছু তারতম্য হয়েছে। তবু তখনকার হিসেবে তাঁর এই পরিমাপ ছিল নি:সন্দেহে বিস্ময়ের। টলেমি’র তথ্য কে অস্বীকার করে তিনি দেখিয়েছিলেন, সূর্যের আপাত কৌণিক ব্যাসার্ধ বাড়ে ও কমে। টলেমি’র মতে বিশ্বাস করা হতো যে, সূর্য স্থির। কিন্তু, আল বাত্তানী এখানেও দ্বিমত করে বলেছিলেন, সূর্য স্থির নয়। ত্রিকোণোমিতি’র সাইন ও কোসাইনের সঙ্গে ট্যানজেস্টের সম্পর্ক আল বাত্তানী’ই প্রথম আবিষ্কার করেন। ত্রিভুজের বাহুর সাথে কোণের ত্রিকোনোমিতিক সম্পর্কিত ধারনাও তারই দেওয়া। ইতিহাস বদলে দেওয়া এমন বিজ্ঞানীকেও ইউরোপীয় ঐতিহাসিকেরা আড়াল করে রেখেছে।
  .
  ৬। ওমর খৈয়াম: ১০৪৪ সালে খোরাসানের নিশাপুরে জন্মগ্রহন করেন। ইউরোপীয় ঐতিহাসিকেরা ওমর খৈয়াম’কে পরিচিত করেছে কেবল একজন কবি হিসেবে। কিন্তু, বাস্তবে তিনি ‘কবি’ পরিচয়ের চেয়ে ‘বিজ্ঞানী’ পরিচয় সুলভ কাজ করেই জীবন কাটিয়েছেন। তখনকার সময়ে কোনো নির্ভুল সৌর ক্যালেন্ডার ছিল না। ওমর খৈয়াম একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করেন। তৎকালীন সুলতান জালাল উদ্দিন মালিক শাহের নাম অনুসারে তিনি এর নাম দেন ‘জালালী’ বর্ষপঞ্জি। আধুনিক ইউরোপিয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে ৩৩৭০ বছরের হিসেবে ১ দিনের ভ্রান্তি ছিল। আর ওমর খৈয়ামের তৈরি জালালী ক্যালেন্ডারে সেই ভ্রান্তি ছিল ৩৭৭০ বছরের হিসেবে ১ দিন। জ্যামিতি সমাধানে বীজগনিত ও বীজগনিত সমাধানে জ্যামিতি পদ্ধতি তারই আবিষ্কার। ভগ্নাংশীয় সমীকরনের স্বার্থক উল্লেখ-প্রয়োগ ও সমাধান তিনিই প্রথম করে দেখান। বীজগনিতের ‘বাইনোমিয়াল থিউরাম’ তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন। কিন্তু, এই থিওরি’র সম্পুর্ন কৃতিত্ব দেওয়া হয় ওমর খেয়ামেরও ৫৯৮ বছর পরে জন্ম নেওয়া আইজ্যাক নিউটন কে। ইউরোপীয় ঐতিহাসিকেরা এভাবেই ‘কবি’ পরিচয়ের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছেন ‘বিজ্ঞানী’ ওমর খৈয়াম কে।
  .
  আধুনিক সভ্যতা যদি আইজ্যাক নিউটন, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, রাদারফোর্ড, ডাল্টন, লুই পাস্তুর, মার্কোনি, আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল, ফ্লেমিং এবং টমাস আলভা এডিসন দের জন্য গর্ব করতে পারে। তবে তাদের জন্য ক্ষেত্রপ্রস্তুত করার মত গুরুত্বপূর্ন কাজের জন্য আল ফারাবি, ইবনে নাফিস, ইবনে খালদুন, জাবির ইবনে হাইয়ান, আল খুয়ারিজমী, আল বাত্তানি, আল বেরুনি, আল রাজি, ওমর খৈয়াম, ইবনে রুশদ ও ইবনে সিনা 



‘কালো বিড়াল কে পোষে পাড়ায়?’


প্রায় ৪৫ বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বটতলায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত বিখ্যাত এক বাউল গায়ক গান গেয়ে দর্শকদের মাতোয়ারা করে তুলেছিলেন। গানটি হল কালো বিড়াল কে পোষে পাড়ায়?’ এর পরের চরণটি আরো তাৎপর্যময়:বিড়ালটি মোটা হতে হতে নিজেই নিজের স্বাস্থ্যের চাপে মৃত্যুবরণ করবে!

আসুন, এবার আসল কথায় ফিরে আসি। 

অক্সফামের রিপোটের দিকে নজর দেওয়া যাক। এই ধরণীর মাত্র ৮৫ জন ধনী ব্যক্তির সম্পদ, সারা পৃথিবী ৩৫০ কোটি দরিদ্র লোকের সম্পদের সমান।অক্সফামের জ্যেষ্ঠ গবেষক “জ্যাকবের মতে, বিশ্বে শত কোটি ডলারে বা ততোধিক সম্পত্তির মালিকদের যে তালিকা ১৯৮৭ সাল থেকে নিয়মিতভাবে ফোর্বেস (যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত) পত্রিকা প্রকাশ করে আসছে, তাদের সম্পত্তি নির্মাণের উৎস বিশ্লেষণ করে তিনি দেখতে পেয়েছেন যে, তাদের ৫০ শতাংশ সম্পদ হচ্ছে উত্তরাধিকারী সূত্রে অথবা ক্ষমতাবানদের সঙ্গে বিশেষ সখ্যের ভিত্তিতে প্রাপ্ত। অতএব স্বোপার্জিত সম্পত্তি সেটা নয়। আরো ১৫ শতাংশ সম্পদ জমা হয়েছে তাদের প্রতিযোগিতাহীন বাজারে একচেটিয়া মুনাফা অর্জনের সুযোগ দ্বারা। সেটিও স্বোপার্জিত নয়। আর যদি অসম বিশ্বায়নের সুযোগকেও সম্পদ ধরি, তাহলে তাদের একশ’ ভাগ সম্পত্তিই হচ্ছে অনোপার্জিত। তবে জ্যাকব প্রণীত এই অতি-ধনীদের তালিকায় আরে দুধরনেরবিলিওনিয়ারেরকথা আছে।এদের মধ্যে একটি ছোট দল সম্পত্তি বানিয়েছেন সরাসরি আইন ভঙ্গ করে অপরাধের মাধ্যমে। যেমন অবৈধ ড্রাগ ব্যবসা চোরাচালান ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া কালো টাকা, ঘুষ ইত্যাদির মাধ্যমে অবৈধ কন্ট্রাক্ট আদায়, ব্যাংক জোচ্চুরি, ইত্যাদি বেআইনি পন্থায় শত কোটি ডলারের মালিক হয়েছেন।এরা অবশ্য হাত ধুয়ে ফেলে সমাজে গ্রহণযোগ্য মর্যাদা পেয়ে যান। এর পরেও এই ধনীদের তালিকায় এমন সামান্য কয়েকজন আছেন যারা প্রকৃতই নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে নিজেদের এই শিখরসম ভাগ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। শেষোক্ত এই গোষ্ঠির উদাহরণ দিতে গিয়ে জ্যাকব যাদের নাম বলেছেন তাঁরা হচ্ছেন বিশ্বখ্যাত চিত্রনির্মাতা স্টিফেন স্পিলবার্গ, আইপড আবিষ্কারক স্টীভ জব এবং হ্যারি পটার সিরিজের লেখক জে.কে. রলিং। এই নগণ্য সংখ্যক ব্যতিক্রমকে বাদ দিলে ফোর্বেস কথিত অতি উচ্চ ধনী লোকদের বেশিরভাগই হচ্ছেন ‘কালো বিড়াল’। 

গুরুত্বের ক্রমানুসারে যোগ্যতাহীনের উপরে ওঠার মইয়ের ৬টি ধাপকে জ্যাকব চিহ্নিত করেছেন।
 ১। অপরাধ; ২। স্বজনপ্রীতি; ৩। উত্তরাধিকার; ৪। একচেটিয়াত্ব; ৫। বিশ্বায়ন; ৬। প্রযুক্তি।

কিন্তু তারপরেও একটা অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করেছেন জ্যাকব। সেটা হচ্ছে এদের প্রত্যেকেরই অসীম ধনতৃষ্ণা রয়েই গেছে। এটি অবশ্য আমাদের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতায় বহু আগেই অনবদ্য ভাষায় লিখে গিয়েছিলেন-
  ‘এই জগতে হায়, সেই বেশি চায়, আছে যার ভূরি-ভূরি’।

কিন্তু ধন সম্পদ হচ্ছে চুম্বকের  মতো, যত পুজি তত রুজি। ফলে গরীব আরো গরিব হচ্ছে।   তারা একধরনের ‘দারিদ্র্য ফাঁদে’ বন্দি হয়ে আটকে আছেন। কিন্তু রাষ্ট্র যদি এর পরেও ‘কালো বিড়ালের’ গলায় ঘণ্টা না বেঁধে কালো বিড়ালদের খপ্পরে বন্দি হয়ে যায়, তাহলে কী হবে?


 

বিটগেনস্টাইন তত্ত্ব


ধার্মিকরা বলছেন ঈশ্বর একজন আছেন, অন্যদিকে যুক্তিবাদীরা বলছেন সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে মানুষ ঈশ্বরে বিশ্বাস করে,ঈশ্বরের ধারণা হলো পরিবার থেকে পাওয়া একটা প্রাচীন কুসংস্কার, যা এখনো মানুষ বয়ে চলেছে। কিন্তু এ বিষয়ে দার্শনিকদের দার্শনিক নামে খ্যাত  বিটগেনস্টাইন-এর  দর্শন কি তা বোঝার চেষ্টা করব আজকের ভিডিওতে।

 আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে খ্রিষ্টপূর্ব ৫৮৫ সালে থেলিস নামে এক গ্রিক পণ্ডিত ভবিষ্যদ্বাণী করলেন, ২৮ মে সূর্য দেখা যাবে না। কী আজব কথা, লোকেরা থেলিসকে পাগল বলা শুরু কইরা দ্যায়। কেউ তাঁকে বিশ্বাসই করল না।কিন্তু তার কথাই ঠিক হলো। ২৮ মে  সূর্যগ্রহণ সবাই অবাক হয়ে দেখল। তাই থেলিসকে মনে করা হয় ইতিহাসের প্রথম বিজ্ঞানী এবং একই সাথে তাকে প্রাচীন দর্শনের জনকও বলা হয়। কারন তিনিই প্রথম এই জগত সৃষ্টির মূল উপাদান কি সেই বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। তবে আধুনিক দর্শনের জনক রেনে দেকার্ত। (তার জীবনকাল ১৫৯৬-১৬৫০)। তিনিই প্রথম মধ্যযুগীয় খ্রিস্টীয় দর্শনের সাথে রেনেসাঁর মাধ্যমে প্রাপ্ত নতুন বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের উদ্ভব ঘটান। কিন্তু টাইম ম্যাগাজিনের মতে বিংশ শতকের সেরা দার্শনিক হচ্ছেন বিটগেনস্টাইন। তার রচিত পিলোসফিক্যাল ইনভেস্টিগেসন্স বইটির কারণে তাকে দার্শনিকদের দার্শনিক হিসাবে ভাবা হয়।

 

আজকে আমরা তার দুইটি দর্শন তত্ত্বের সাথে পরিচিত হব।

বিটগেনস্টাইন-এর প্রথম তত্ত্ব হচ্ছে, ইঞ্চি হিসেব করে আমার টেবিলটার মাপ হয় ৪ফুট, কিন্তু কত মিলিমিটারে ইঞ্চি হয় বা কতটুকু ফাঁকে এই ইঞ্চি হয়, তা তৈরি করল কে? ইঞ্চির ফাঁক যদি আরো বেশি হতো, তাহলে কি আমার টেবিলটা ৪ফুট হতো? সুতরাং গজ, ফুট, ইঞ্জির মতো পৃথিবীর সকল নিয়ম’ যা আজ আমাদের কাছে চরম সত্য ও বাস্তব নিয়ম বলে মনে করি, তা হচ্ছে এক বা একাধিক ব্যক্তির বেধে দেয়া কিছু সিদ্ধান্ত।

.

বিটগেনস্টাইন-এর দ্বিতীয় তত্ত্ব হচ্ছে-

যা নিয়ে বিতর্ক আছে, তা সত্য নয়। অর্থাৎ যা অমিমাংসিত তা পরিত্যাজ্য। যা কিছু মমাংসা করা যায় না, যুক্ত-তর্ক চলতেই থাকে, তা হল মিথ্যা।  যেমন- জন্মিলেই মরতে হয়। যার জন্ম আছে, তার মৃত্যু হবেই; এটা মিমাংসিত। এ ব্যাপারে কারো সন্দেহ বা দ্বিমত নেই; সুতরাং এটা সত্য। কিন্তু মৃত্যুর পরে জীবন আছে এমন ধারণা কেউ বিশ্বাস করে আবার কেউ মনে করে এটা গাজাখুরি কল্পনা। অর্থাৎ একটা অমিমাংসিত তর্ক আছে, আগামীতেও থাকবে। সুতরাং এটা মিথ্যা। তেমনিভাবে ইশ্বর আছে কি নেই, এ বিষয়ে হাজার বছর ধরে বিতর্ক ছিল, এখনো আছে। সুতরাং এটাও মিথ্যা। তেমনিভাবে দৈত্য-দানব ভূত কিংবা জিন-পরী-শয়তান এইসব অমিমাংসিত বিষয়। তাই এগুলো সব মিথ্যা। তার মতে, 'ইশ্বর মানে একটা অন্ধকার ঘর।  একদল বলেন, এই ঘরে কেউ একজন আছেন, যিনি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করেন। আবার অন্য আরেকদল বলেন, ওই ঘরে একজন নয়, বরং একাধিক সুপার পাওয়ার আছেন; কিন্তু জ্ঞানীরা বলেন, আমরা টর্চ জালিয়ে তন্ন তন্ন করে দেখেছি, ওটা আসলে ফাঁকা খালি ঘর।' 

প্রকৃত অর্থে ধর্ম হচ্ছে এক ধরনের পোশাক আমাদের গায়ের পোশাক। কে কোন পোষাক গায়ে জড়াবে তা তুমি-আমি নির্ধারণ করতে পারি না, এটা তার নিজস্ব ব্যাপার। সুতরাং কে কোন পোশাক গায়ে পড়েছে সেটা দেখে নয়, বরং মানুষের ভিতরের মনুষ্যত্ব ও মানবিক গুণাবলী দেখে একে অন্যনে বিচার করব।


 বিটগেনস্টাইন- ১৮৮৯ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার সবচেয়ে প্রভাবশালী ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অস্ট্রিয়ার লোহা এবং ইস্পাত শিল্পের একচেটিয়া মালিকানা ছিল তার বাবার। তিনি ১৯১১ সালে ক্যামব্রিজের বিখ্যাত দার্শনিক বাট্রান্ড রাসেলের কাছে পড়াশুনা শুরু করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৪ সালে তিনি দেশের হয়ে যুদ্ধে যান। যুদ্ধ থেকে ফিরে তিনি তার বিশাল পৈত্রিক সম্পত্তি নিজ ভাই বোন ও গরীব মানুষের মাঝে দান করে অতি সরল জীবন-যাপনের জন্য একটি সন্যাসিদের মঠে মালির কাজ নেন অনেকটা গৌতম বৌদ্ধের স্টাইলে। 

এরপর তিনি অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন গ্রামের স্কুলে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত শিক্ষকতা করেন। গ্রামের লোকজন বুঝতে পারতো যে, তিনি আসলে শুধুু একজন শিক্ষকই নন, মানব জাতীরও একজন মহান শিক্ষকও। তাই চারপাশে ভিড় লেগে থাকতো তার একটা বাক্য শোনার জন্য। রবীন্দ্রনাথের রাজা নাটকটা তিনি অনুবাদ করে শিষ্যদের শিক্ষা দিয়েছেন। তার ট্রাক্টাটাস গ্রন্থটা বের হবার পর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে পিএইডি ডিগ্রি দেয়া হয়। ১৯৩০ থেকে ১৯৩৬ সালে তিনি ক্যামব্রিজে লেকজারার ফেলো হিসাবে শিক্ষকতা করেন।

.

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি পরিচয় গোপন করে লন্ডনের গাইস হাসপাতালে  কুলির (গায়ে খাটার পুটার) কাজ নেন। উদ্দেশ্য যুদ্ধাহতদের সেবায় আত্মনিয়োগ। যুদ্ধ শেষ হবার পর তিনি আবার ক্যামব্রিজে অধ্যাপকের পদে ফিরে আসেন। জীবনে তিনি বাড়ী করেননি, বিয়ে করেননি। শিক্ষকতায় পেশায় তিনি যে বেতন পেতেন, তাও তার কাছে বেশি মনে হতো বিধায় সঞ্চিত অপ্রয়োজনীয় টাকা গরীবদের মাঝে বিলি করে দিতেন।

.

-সূত্র: উইকি, ফেয়ার জার্নাল, প্রিয়ম্বদা সরকার দর্শন অধ্যাপক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, সাহিদ সুমন (দর্শন অধ্যাপক জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়)



 

হুই মুসলমান বনাম উই মুসলমান


চীন দেশে মুসলমানদের দুইটা জাতি আছে একটা চিনা জাতি তাদেরকে হুই মুসলমান বলে আর একটা তুর্কি জাতি তাদেরকে উইঘর মুসলমান বলে। আজ আমরা জানব চিনা জাতির সুফি মতবাদের হুইরা কেন ভাল মুসলমানরা  আর সালাফি মতবাদের উইঘুররা কেন খারাপ মুসলমান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে? বাঙ্গালি মুলত কাঙ্গালি

বাংলাদেশীরা যেমন বাঙালি জাতি, তেমনি  চীনের জনসংখ্যার ৯২ ভাগই হল হান জাতির মানুষ। তাদের মোট সংখ্যা ১০০ কোটির বেশি।  হানদের যে বংশগুলো মুসলিম হয়েছেন, তাদের বলা হয় হুই মুসলমান। টুপি বা হিজাব না থাকলে মুল চীনাদের থেকে এই হুই মুসলমানদের তফাত করা যায় না। শুকরের মাংস আর মদ বাদে মূল চীনাদের সাথে খাদ্যাভ্যাসেও হুইদের বড় কোনো তফাত নেই। তারা কথাও বলেন মুল চিনা ভাষায় অর্থাৎ মান্দারিন ভাষায়।  

এই হুইরা মূলত ইসলামের সুফিবাদী আদর্শের অনুসারী। কনফুসিয়াসের দর্শনের সাথে তাদের সুফিবাদী আদর্শের একরকম সমন্বয় ঘটিয়ে তারা ইসলাম ধর্মকে নিয়ে গেছেন নতুন উচ্চতায়। আমাদের দেশের বিক্রমপুর কিংবা চট্টগ্রামের সাতকানিয়া বাসীদের মত এই হুইরা ব্যবসা করতে গিয়ে ও সরকারি চাকরি করতে গিয়ে গোটা চিনে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের সব উন্নত শহরে গেলেই হুইদের চোখে পড়বে। এমনকি নিষিদ্ধ নগরী তিব্বতের রাজধানী লাসার অধিকাংশ ব্যবসাপাটও হুইদের দখলে। এই হুইদের কারণে চীনের রাজধানী বেইজিং থেকে ৬০০ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত ইনচুয়ান শহরটিকে ‘বিশ্ব মুসলিম শহর’ রূপ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন চিন সরকার। এই শহরটি হল চীনা হুই মুসলিমদের ‘নিজস্ব’ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল নিংজিয়া প্রদেশের রাজধানী। এছাড়া গানসু, কিংহাই ও অন্যান্য প্রদেশে এবং বেইজিং, সাংহাইসহ বড় বড় শহরে দাপটের সাথে বসবাস করে এই  হুই মুসলমানরা। হুই সম্প্রদায়ে মসজিদগুলো শুধু  নামাজ পড়ার কেন্দ্র নয়; বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে। চিনা সরকার সারা বিশ্বের কাছে এই হুই মুসলমানেদেরকে ভালো মুসলিম হিসেবে উপস্থাপন করে। 

 

অপরদিকে চিনা সরকারের দৃষ্টিতে খারাপ মুসলিম হিসেবে তকমা পাওয়া উইঘুর মুসলিম নামে তুর্কি মুসলিম জনগোষ্ঠী যে এলাকায় বসবাস করে,তার আগের নাম ছিল ‘পূর্ব তুর্কিস্তান’। তারা  তুর্কি  ভাষায় কথা বলে, লেখে আরবি হরফে। এক সময় এই পূর্ব তুর্কিস্তান স্বাধীন  দেশ ছিল। মুসলিম অটোম্যান  শাসনামলে এই এলাকার নাম ছিল উইঘুরিস্তান বা পূর্ব তুর্কিস্তান। ১৮৭৬ সালে চীন এই উইঘুরিস্তান বা পূর্ব তুর্কিস্তান দেশটি দখল করে এর নাম দেয় শিনজিয়াং প্রদেশ। ফলে ফিলিস্তিন বা আরাকানের মুসলমানদের মতো তারাও নিজ ভূ্মিতে পরবাসী হয়ে যান।

ফলে স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীদের বিচ্ছিন্নতাবাদ ও ধর্মীয় জঙ্গিবাদের হিংসাত্মক তৎপরতা রয়েছে চিনের এই প্রদেশে। উইঘুর জঙ্গিদের প্রধান সংগঠন ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইআইটিএম) আইএস-এর মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। প্রায় ১ কোটি মুসলিম অধ্যুষিত এ অঞ্চলের ১০ লাখের বেশি নারী-পুরুষকে চিন সরকার বন্দি করে রাখে উশৃংঙ্খল, উগ্রপন্থী মুসলমান হিসেবে চিহ্নিত করে। চীন সরকার এ বন্দি শিবিরকে নাম দিয়েছেন ‘চরিত্র সংশোধনাগার’ ।

 এই কারণে এই উইঘুর মুসলমানরা যতটা না চীন দেশকে আপন মনে করে, তার চেয়ে বেশি  আপন মনে করে ‘স্তান’ নামের দেশগুলোর সাথে। যেমন- উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তুর্কমেনিস্তানের মত তারা এখনো স্বাধীন ‘পূর্ব তুর্কিস্তান’ রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেন।কিন্তু চিনারা এটা কিছুতেই বরদাস্ত করতে রাজি নয়। কারণ এই ‘পূর্ব তুর্কিস্তান’ বা শিনজিয়াং প্রদেশটি   চীনের সর্ববৃহৎ প্রদেশ। চিনের  উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এ প্রদেশটির আয়তন ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার, যা বাংলাদেশের প্রায় ১২ গুণ। আয়তনে গোটা চীনের প্রায় ছয় ভাগের একভাগ। এর পশ্চিম ও উত্তর দিকে আছে মুসলিম দেশ তাজিকিস্তান, কিরগিজস্তান ও কাজাখস্তান; আর দক্ষিণ-পশ্চিমে আছে আফগানিস্তান ও জম্মু-কাশ্মীর। আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল, চীনের মোট কয়লার ৪০ ভাগ, তরল জ্বালানির ২২ ভাগ এবং গ্যাসের ২৮ ভাগ রয়েছে এই  শিনজিয়াং প্রদেশে।  বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে, এই অঞ্চলের শহরগুলোর ভেতর দিয়ে গেছে আবহমানকালে বহুল আলোচিত  'সিল্করোড'।

 উইঘুর মুসলমানেরা  চিনা সরকারের প্রতি খারাপ বা হিংসাত্মক আচরণের মূল কারণ ভূখণ্ড হারা্নো।,এছাড়া নিজস্ব সাংস্কৃতিক কারণেও উইঘুররা চিনের মূলধারায় মিশতে আগ্রহী নয়, তারা তাদের সাংস্কৃতিতে কোনো ধরনের ছাড় দিতে রাজি নয়। আমাদের কওমী মাদ্রাসার মত তাদের ধর্মতত্ত্ব শিক্ষালয়গুলি চিন সরকার বন্ধ করে দেয়ায় লেখাপড়ায়ও তারা অনাগহী। তাই তিব্বতের মতো কঠোর নজরদারি চালানো হয় মুসলমানদের এ প্রদেশে। চিন সরকার উইঘুরদের মধ্যে চীনা জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে মেকিং ফ্যামিলি নামে একটি অভিনব পদ্ধতি চালু করে। এর আওতায় উইঘুর পরিবারগুলোতে মোটা টাকার বিনিময়ে প্রতি মাসে কয়েক দিন অতিথি হয়ে থাকেন হুই মুসলমানরা। তারা শিক্ষা দিতেন চীনা জাতীয়তাবাদ ও কমিউনিস্ট আদর্শ সম্পর্কে। কিন্তু তা সত্তেও এই তুর্কি বংশভূত উইঘুর মুসলমানরা চিনের হুই মুসলিমদের সাথে পারিবারিক বা বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে আত্মীয়তার বন্ধন তৈরিতে রাজি হল না। ফলে সালাফি মতবাদের উইঘর মুসলিমদের সাথে সুফি মতবাদের হুই মুসলমানরা  ধর্মে এক হলেও সম্পর্কটা একেবারে নেই বললে চলে । উইঘুরদের শিনজিয়াং প্রদেশ  আর তিব্বতের বৌদ্ধদেরকে চীনারা মূলস্রোতে আনতে না পেরে  এখন চিন সরকার মূল চীনা জনগোষ্ঠীকেই বরং এই দুই স্থানে ঢোকাতে তৎপর । হুই মুসলিম ও মুল চীনা জনগোষ্ঠীর লোকজনকে বেশি বেশি করে এই দুই স্থানে বসতি ও ব্যবসা বাণিজ্য স্থাপনে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।

উইঘুরদের শিনজিয়াং প্রদেশে সেনা, পুলিশ বা সরকারি অফিস, খামার ও কলকারখানায় কাজ করতে বিপুল পরিমাণ হুই মুসলিমদের কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন করা হচ্ছে। ১৯৪৯ এ শিনজিয়াং যখন ২য় বার চীনের দখলে  আসলো, তখন সেখানে উইঘুর বা তুর্কি মানুষের সংখ্যা  ছিলো শতকরা ৭৬ ভাগ, আর বর্তমানে তা নেমে আসে ৪২ ভাগের কম!  এই উইঘুররা বিদেশ গমনের জন্য সহজে পাসপোর্টও পান না। বিদেশের কোন সংযোগ বা আত্মীয় স্বজন থাকলে তাদেরকে কড়া নজরদারিতে রাখেন চীন সরকার। অথচ তাবদ বিশ্বে ব্যবসা-বানিজ্যে চিনা হুই মুসলমানরা এগিয়ে আছে, এমনকি সৌদি আরবে হজ করতে যাওয়া চিনা হুই মুসলিমদের সংখ্যা বাড়ছে বছর বছর।,

 

এতক্ষণ আমরা চীনের তথাকথিত ভাল মুসলমান ও খারাপ মুসলমান সম্পর্কে জানলাম, চোখের দেখাতেই এই দুই জাতির মুসলমান আলাদা করা যায়। দৈহিক গঠনেও এই দুই জাতি যেন  ইউরোপীয় শেতাঙ্গ আর আফ্রিকান নিগ্রোর মতোই স্পষ্ট। আর স্বভাব-চরিত্রও দুই জাতির একে অন্যের বিপরীত। এমনটি কেন?  চিনা হুই জনগোষ্ঠী একটি কারণে ভালো মুসলিম। কারণটি হচ্ছে, মূল চিনা জনগোষ্ঠী হানদের সাথে তাল মিলিয়ে এই হুই মুসলমানরা চিনা কর্তৃপক্ষের সহযোগী হিসেবে নিজেদের তৈরি করেছে। ফলে তাদের হারানো তালিকার বদলে প্রাপ্তীর তালিকাই বড়। অন্যদিকে উইঘুর মুসলমানেরা হল আমাদের মতো কাঙ্গালী। আমাদের বাপ-দাদার অনেক কিছু ছিল, দুর্বৃত্তরা সব লুটেপুটে খেলো, ধনীরা এখনো আমদেরকে শোষন করে চলেছে, ভারত আমাদের বঞ্চিত করে চলেছে ইত্যাদি, ইত্যাদি হল আমাদের জপমন্ত্র। কিন্তু অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, আমরা অশিক্ষা, ও অদক্ষতার কারণে নিজেরাই নিজেদেরকে বঞ্চিত করে রেখেছি চিনের ওই উইঘুরের মুসলমানদের মত। বাঙ্গালি মুলত কাঙ্গালী, আমরা করে খেতে চাই না, ভিক্ষা বা ফ্রিতে পেতে চাই। বাবা কলেজের বেতন দাও, মামা একটা মোটরসাইকেল কিনব, কিছু টাকা পাঠাও। এই চাওয়া আমাদের নিত্যসঙ্গী। একজন প্রবাসে বা দেশে কাজ করে, অন্যরা হাত-পা-মাথা থাকা সত্তেও প্রতিবন্ধী হয়ে তার কাছে ভিক্ষা করে। না পেলেই অভিমান, আক্রোশ মনে পোষে রেখে ভিতরে ভিতরে বিদ্বেষ  আর প্রতিহিংসা আগুনে জ্বলতে থাকে। ধনী মানুষের গরিব আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীরা এই অভিমান , আক্রোশ আর হিংসার আগুন বুকে নিয়ে সমাজে বাস করছে। অথচ তারা যদি চীনের হুই মুসলমানদের মত ওই ধনী আত্মীয়ের সহযোগী হয়ে এবং সুপপ্রতিবেশী সুলভ আচরণের মধ্য দিয়ে সার্থকভাবে জীবন যাপন করতে পারে।

কাজেই  আমাদের আত্মীয়-স্বজন বা প্রতিবেশীদের কি আছে,, কি নাই; এসব নিয়ে আমাদের  মাথা ব্যথা বা আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত নয়। অভিমান আর হিংসা-বিদ্বেষের পরিবর্তে সহযোগিতামূলক মনোভাবের মাধ্যমে তার বা তাদের সাথে মনের দূরত্ব কমাতে চেষ্টা করুন। নিজেকে সেরা ওর যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিন। মনে রাখুন, ভিক্ষা করাটা চুরি করার চেয়ে জঘন্য কাজ।