একটি স্ত্রী শিশু প্রায় ২০ লক্ষ এগস নিয়েই জন্মগ্রহণ করে।
নারীর ইউটেরাসে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে নিষিক্ত এগস এর জন্য বা ভ্রূণর বসবাসের জন্য পুরু আস্তরণ তৈরি হতে থাকে। কিন্তু যদি ভ্রূণ না জন্মায় তা হলে ইউটেরাসের আস্তরণটির আর কোন প্রয়োজন থাকে না, সেটি নষ্ট হয়ে যায় এবং তার টিস্যু ও কিছু রক্ত দেহ থেকে বেরিয়ে আসে। একেই বলা হয় মেনস্ট্রুয়াল পিরিয়ড। আবার পরবর্তী ওভাল্যুয়েশনের আগে একই ভাবে আস্তরণ তৈরি হয়।
মানুষ ছাড়া অন্য কিছু কিছু প্রাইমেটদের মেনস্ট্রুয়াল পিরিয়ড হয় বটে, স্ত্রীলোকের মেনস্ট্রুয়াল পিরিয়ড প্রতিমাসে একবার, বছরে ১২ বার হয়। প্রতি মাসে একটি (কখনও দুটি) পরিপক্ব এগস ওভারি থেকে বেরিয়ে আসে। এগস টি নিষিক্ত হলে মহিলা গর্ভবতী হবেন, এগস অনিষিক্ত হলে শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে এবং ফলে মেনস্ট্রুয়েশন।
একটি স্ত্রী শিশু তার সমস্ত এগস নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। সংখ্যায় তা প্রায় ২০ লক্ষ। শিশুর জন্মের পর আর একটিও এগ তৈরি হয় না। বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছনোর আগেই বিপুল সংখ্যক এগস মরে যায়। বেঁচে থাকে মোটামুটি তিন থেকে চার লক্ষ এগস । মেনস্ট্রুয়াল পিরিয়ড শুরু হওয়ার পর প্রতিমাসে প্রায় এক হাজার এগস (প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫) মরে যায়। এমন কি মহিলা গর্ভবতী হলেও এগস এর মৃত্যু থেমে থাকে না। ফলে মহিলার বয়স ৫০ হওয়ার আগেই সব এগস ফুরিয়ে যায়। এগস ফুরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওভারি ইস্ট্রোজেন উৎপন্ন করা বন্ধ করে দেয়। তার ফলেই আসে মেনোপজ। এগস এর জন্যই মেনস্ট্রুয়েশন। এগস না থাকলে কিসের ওভাল্যুয়েশন, কিসের মেনস?
দেখা যাচ্ছে মোটামুটি ৫০ এর আগেই মহিলাদের প্রজননক্ষমতা চলে যায়। তবে পুরুষের প্রজননক্ষমতা কিন্তু অত তাড়াতাড়ি যায় না। তার স্পার্ম উৎপন্ন করার ক্ষমতা ৭০ ৮০ বছরেও থাকে।
‘আয়োডিনযুক্ত’ লবণ—১২
বাংলাদেশ থেকে সব রকমের লবণ কেনালাম। এর কিছু ইংল্যান্ডে এনে পরীক্ষা করানোর উদ্যোগ নিলাম। যা ভেবেছিলাম তাই। কোনো একটি ব্র্যান্ডের লবণেও আয়োডিন নেই, যদিও প্যাকেটের গায়ে লেখা আছে ‘আয়োডিনযুক্ত’। বাংলাদেশের কোনো লবণেই আয়োডিন নেই, এটি অবশ্যই উদ্বেগজনক একটি বিষয়। এক প্যাকেট লবণে আয়োডিন যুক্ত করতে খরচ হয় মাত্র ২৫ পয়সা। এই ২৫ পয়সা বাঁচানোর লোভে একটি জাতিকে কীভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
আয়োডিনকে বলা হয় ‘ট্রেস মিনারেল’। একজন পরিণত বয়সের মানুষের দিনে ১৫০ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিনের প্রয়োজন। তার মানে হল, এটি আমাদের শরীরে খুব সামান্য পরিমাণে দরকার হয়। সারা পৃথিবীতে দুই বিলিয়ন মানুষ, অর্থাৎ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশই আয়োডিনের অভাবে ভুগছেন। খোদ আমেরিকাতেই শতকরা ৭২ শতাংশ মানুষ আয়োডিন ঘাটতিতে আছেন। ইংল্যান্ডে এ হার ৫০ শতাংশ। বাংলাদেশের পরিসংখ্যান নেই।
প্রশ্ন হল, পৃথিবীজুড়ে এত বিশাল সংখ্যক মানুষ কেন আয়োডিনের অভাবে জর্জরিত। উত্তরটি হল, আয়োডিন নামক খনিজ লবণটি এখন বিলুপ্ত ।আয়োডিনের একমাত্র উৎস হল মাটি ও সমুদ্র। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মাটিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি কারণে মাটি থেকে আয়োডিন বিতাড়িত। আয়োডিন পাওয়ার সহজ উপায় হল সামুদ্রিক শৈবাল, সী কেল্প, সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি জাতীয় মাছ, দুধ, ডিম, আলু। কিন্তু যেহেতু মাটিতে আয়োডিন নেই, তাই প্রাণিজ এবং উদ্ভিজ খাবার থেকে আয়োডিন পাবার সম্ভাবনা খুব কম। এই কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আদেশে সারা পৃথিবীতে ১২০ টি দেশে খাবারের সঙ্গে লবণ যোগ করা হয়, বাংলাদেশ যার অন্যতম। খাবারে কৃত্রিমভাবে আয়োডিন যুক্ত করা না হলে আয়োডিন পাবার আর কোনো উপায় বাংলাদেশে নেই।
এবার আসা যাক এই আয়োডিন আমাদের শরীরের জন্য কতটা প্রয়োজনীয় সে প্রসঙ্গে। আমেরিকার এক বিজ্ঞানী কয়েকজন গর্ভবতী মহিলাকে অতিরিক্ত পরিমাণে আয়োডিন খেতে দিয়েছিলেন। তাদের গর্ভের শিশুদের জন্মের এক বছরের মাথায় দেখা গেল, তাদের আই কিউ সাধারণ শিশুদের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি। এর কারণ হল গর্ভস্থ শিশুর বুদ্ধি বিকাশে আয়োডিনের ভূমিকা অনন্য। আয়োডিনের অভাবে শিশু হাবাগোবা বা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হতে পারে। তাছাড়া আয়োডিনের অভাবে শিশুর শারীরিক বিকাশ সুসম্পন্ন হয় না এবং শিশু শারীরিকভাবে খর্বাকৃতিও হতে পারে। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস বেশি করে আয়োডিনযুক্ত খাবার খেতে হয়। কারণ গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ৭০ শতাংশ আয়োডিন শরীর থেকে নিঃসৃত হয়ে যায়। মায়ের শরীরে আয়োডিনের অভাব হলে গর্ভপাত ও স্টিল বার্থের (গর্ভাবস্থায় শিশুর মৃত্যু) আশঙ্কা বাড়ে। বর্তমানে শিশুদের অটিজম এবং অ্যাটেনসন ডেফিসিট, হাইপার অ্যাকটিভ বিহেভিয়ার এবং লার্নিং ডিসঅ্যাবিলিটির কারণ হিসেবে আয়োডিনের ঘাটতিকে দায়ী করা হচ্ছে।
আয়োডিনের কাজ হল শরীরে ক্যান্সার সেল কন্ট্রোল করা। ব্রেস্ট ক্যন্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সার, পেটের ক্যান্সার এবং পুরুষের প্রোস্টেট ক্যান্সারের জন্য আয়োডিন ঘাটতিকে দায়ী করা হচ্ছে। এছাড়া মহিলাদের ব্রেস্ট এবং ওভারিতে সিস্ট ও ফাইব্রয়েডের কারণও হল আয়োডিন ঘাটতি।
শরীরে থাইরয়েড হরমোনের অভাব হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এর ফলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমতে থাকে এবং লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। লিভারের কাজ হল ইস্ট্রোজেন প্রসেস করা। লিভার সে ক্ষমতা হারায় বলে শরীরে ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ক্যান্সার ও সিস্ট তৈরি করে। ড. জেফরি অতিরিক্ত আয়োডিন যোগ করে ব্রেস্ট এবং পেটের ফাইব্রয়েড ভালো করেছেন।
শরীরে থাইরয়েড এবং আয়োডিনের অভাব হলে হাতে-পায়ে প্রচুর ব্যথা হয়। কেননা আয়োডিনের অভাবে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম রক্ত থেকে চামড়ায় যেতে বিঘ্ন ঘটে। ফলে হাড়ের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এছাড়া যাদের গলব্লাডারের সমস্যা আছে তাদের শরীরেও আয়োডিনের ঘাটতি দেখা দেয়। যাদের পায়ে ব্যথা, অলস লাগে, ঘন ঘন সর্দি বা ইনফেকশন হচ্ছে, চিন্তা করতে সময় লাগে অনেক, প্রচুর পরিমাণে চুল পড়ছে, গলগণ্ড দেখা দিয়েছে, তারা দয়া করে থাইরয়েড চেক করিয়ে নেন। শুধুমাত্র আয়োডিনের অভাব হলেই লিভার ও কিডনির ওপর অনেক বেশি চাপ পড়ে।
এত প্রয়োজনীয় যে আয়োডিন তা যদি পাওয়া না যায় তাহলে একজন ব্যক্তি, তার পরিবার এবং গোটা জাতির ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে তা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। প্রতিদিন কমপক্ষে এক থেকে তিন মিলিগ্রাম আয়োডিন প্রয়োজন শরীরের সবগুলো কাজ ঠিকমতো করার জন্য।
তাহলে আয়োডিন পাবার সহজ উপায় কী হতে পারে? সহজ উত্তর হল, সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে। কেননা যে পরিমাণ আয়োডিন শরীরে প্রয়োজন তা পূরণ করতে হলে দিনে কমপক্ষে ছয়টি ডিম খেতে হবে। বাংলাদেশে ডিমে আয়োডিন না থাকারই কথা। তাই বাংলাদেশ সরকার, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর কাছে আবেদন করছি, তিন মিলিগ্রাম আয়োডিন বা আয়োডাইড-সম্পন্ন সাপ্লিমেন্ট অতি দ্রুত বাজারে ছাড়ার জন্য। আর লবণ কোম্পানিগুলোর কাছে আবেদন হল, দয়া করে লবণে আয়োডিন যোগ করুন। একটি জাতিকে বুদ্ধিহীন নির্জীব করে মেরে ফেলার অধিকার আপনাদের নেই। রান্না করার সময়ও লবণের আয়োডিন উড়ে চলে যায়। লবণ যদি খোলা জায়গায় রেখে দেওয়া হয় তাহলেও আয়োডিন হারিয়ে যেতে পারে। কিন্তু সরকার বা খাদ্য কোম্পানিগুলো যদি পাউরুটি, দই বা চালে আয়োডিন যোগ করে, তাহলে মানুষ খুব সহজেই আয়োডিন পেতে পারে।
সবার আগে সরকারকে মনিটরিং সেল গঠন করে খাবারে আয়োডিন যোগ করা নিশ্চিত করতে হবে। নয়তো মহামারীর খড়গ নিয়ে বাঙালি জাতির ধ্বংস রোখার ক্ষমতা আর কারও থাকবে না। তাই স্বাস্থ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করছি যেন বিশেষ একটি কমিটি গঠন করে খাবারের লবণে আয়োডিন যোগ নিশ্চিত করা হয়। আপনারা চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, লইট্টা মাছ খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেন।
খাবার ছাড়াও চামড়ার মাধ্যমে আয়োডিন গ্রহণ করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশে আয়োডিনযুক্ত ক্রিম বা লোশন পাওয়া যায় না , বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদনও শুরু করা যেতে পারে। ক্যান্সার, স্ট্রোক বা ব্রেইন টিউমার হবার কারণগুলো আগে রুখুন। আর কতদিন বিষ খাবেন বা আপনাদের সন্তানের মুখে তুলে দেবেন? খাবার থেকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ দূর করার জন্য আন্দোলন করুন।
শুধু প্রবৃদ্ধি নয়, দরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
প্রতীক বর্ধন
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ওয়েবসাইট ঘাঁটতে গিয়ে দেখলাম, ২০১৩ সালের লেবার ফোর্স সার্ভে অনুসারে, দেশে ১৫ বছরের বেশি বয়সী যে ৫ কোটি ৮১ লাখ মানুষ কর্মরত আছেন, তার মধ্যে ৮৬ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ এমন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন, যারা রাষ্ট্রকে রাজস্ব দেয় না, যাদের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণও নেই। অর্থাৎ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বেশির ভাগই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি।
আবার অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষ এমন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন, যার কোনো ডেফার্ড বেনিফিট (পিএফ, গ্র্যাচুইটি প্রভৃতি) নেই। যখন-তখন তাদের চাকরি যেতে পারে। এই মানুষদের অনেকেই হয়তো পথে বসে যাবেন, যদি তঁাদের পরিবারের কেউ মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়। তাঁদের জীবনে সব সময়ই একধরনের অনিশ্চয়তা থাকে। অনিশ্চয়তা তাঁদের জীবনের নিত্যসঙ্গী। তাই এই প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীদের বিমার আওতায় আনা উচিত।
বলাই বাহুল্য, এই খাতের শ্রমশক্তির একটি বিপুল অংশ হচ্ছে নারী। এখন ধরুন, গ্রাম থেকে যে নিরক্ষর বা স্রেফ অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন মানুষটি নদীভাঙনের কারণে শহরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন, তিনি শহরে এসে কী করবেন? তাঁকে হয়তো রিকশা চালাতে হবে, না হয় দোকানে কর্মচারীর কাজ করতে হবে অথবা ছোট কারখানায় কাজ করতে হবে। তাঁদের সস্তা শ্রমে উৎপাদিত পণ্য শহরের উঠতি মধ্যবিত্ত কম দামে কিনতে পারছেন। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে এটা সমাজের গতিশীলতার লক্ষণ।
কিন্তু আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) মনে করে, এই খাত মানুষের ভালো চাকরি লাভের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে এই খাতকে কীভাবে ধীরে ধীরে আনুষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে আনা যায়, সেটা সরকারকে ভেবে দেখতে হবে। উদাহরণ হিসেবে দেশে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) পরিচালিত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের কথা বলা যায়। আমরা সবাই জানি, একসময় গ্রামের গরিব মানুষ মহাজনদের কাছ থেকে সুদে টাকা ঋণ নিত, যার ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছিল না। কিন্তু এনজিওগুলো আসার পর ব্যাপারটা বদলে গেল। ক্ষুদ্রঋণ একটা কাঠামোর মধ্যে চলে এল। যদিও এনজিওগুলোর কার্যক্রম নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে। সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। একইভাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের কথা বলা যায়। দেশে মোবাইল ব্যাংকিং আসার আগে মানুষ নানাভাবে টাকা লেনদেন করত, যার সবগুলো আইনসংগত ছিল না। মোবাইল ব্যাংকিং আসার পর পরিস্থিতি বদলে গেল। এ প্রসঙ্গ টানার লক্ষ্য হলো এটা বোঝানো যে, সরকারকে এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে, যা মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে, তার সম্ভাবনার সীমান্ত খুলে দেয়। এই মানুষদের কথা শোনার যেন কেউ নেই, তাঁদের সংগঠনও নেই। তাঁরা সংখ্যায় বিপুল। ভোটের রাজনীতিতে তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন ঠিকই, কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তাঁদের গুরুত্ব নেই। তাঁরা যেন ফেলনা বস্তু, এটা মোটেও কাম্য নয়। দরকার সমতামুখী উন্নয়ন, যাতে এরাও প্রবৃদ্ধির সুফল ভোগ করতে পারে।
প্রতীক বর্ধন: সাংবাদিক ও অনুবাদক।
ৃৃৃৃৃৃৃৃ
সভ্যতার সংকট
রিগানের সময় থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে ধারায় চলে আসছে, ট্রাম্প সে ধারায় চলছেন না। তিনি ভিন্ন ধারায় চলতে চাইছেন।অন্যদিকে রাশিয়ায় পুতিন চলছেন লেনিনের বিপরীত নীতি নিয়ে। তুরস্কে এরদোগান চলছেন কামাল আতাতুর্কের ঠিক বিপরীত নীতি নিয়ে। ভারতে নরেন্দ্র মোদি চলছেন জওহরলাল নেহরুর বিপরীত ধারায়।রেনেসাঁস ও শিল্প-বিপ্লবের মধ্য দিয়ে চৌদ্দ শতক থেকে উনিশ শতক পর্যন্ত মানবজাতি এগিয়েছিল একটা সভ্যতার ধারা ধরে। তাতে খারাপ ব্যাপার ছিল উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ। সেই সভ্যতা সংকটে পড়ে বিশ্বযুদ্ধ পর্বে। বিশ শতকের দুই বিশ্বযুদ্ধ সভ্যতার চরম সংকটেরই প্রকাশ। সে অবস্থায় মার্ক্সবাদ, রুশ-বিপ্লব ও চীন বিপ্লবের আদর্শ অবলম্বন করে এবং উপনিবেশ দেশগুলোর স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছিল। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপর্যয়ের সময় থেকে সভ্যতার সংকট কাটিয়ে ওঠার সে চেষ্টা আর নেই। এখন সভ্যতার সংকট আগের চেয়ে গভীরতা ও ব্যাপকতা নিয়ে সামনে এসেছে। অবশ্য এর মধ্যে বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও শ্রমশক্তির কল্যাণে উত্পাদন ও সম্পদ অনেক বেড়েছে এবং বেড়ে চলছে। প্রশ্ন হলো সভ্যতার সংকট কাটানোর ও নতুন সভ্যতার ধারা সৃষ্টির উপায় কী?
লেখক : আবুল কাসেম ফজলুল হক
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
====================
পৃথিবী বিখ্যাত কিছু মনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষা
সমাজে যারা অবহেলিত তারা কেন পিছিয়ে পড়ে এবং নানা অপরাধের সাথে যুক্ত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেটের স্কুল শিক্ষক জেন এলিয়ট তার শিক্ষার্থীদের উপর এই এক্সপেরিমেন্টটি চালান। মার্টিন লুথার কিংয়ের চিন্তাধারা তাকে সবসময় প্রভাবিত করত। ১৯৬৮ সালে যখন মার্টিন লুথার কিংকে খুন করা হয় তারপর থেকেই তিনি তার ছাত্র-ছাত্রীদের বর্ণবাদ, বৈষম্য এই ব্যাপারগুলো বোঝাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হচ্ছিলো না। তারা আগের মতোই মফস্বল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের অবজ্ঞার চোখেই দেখে যাচ্ছিল।
এলিয়ট তার শিক্ষার্থীদের উপর দুইদিনব্যাপী একটি এক্সপেরিমেন্ট চালালেন। প্রথমে তিনি তার ক্লাসটিকে দুটি গ্রুপে ভাগ করলেন। প্রথম গ্রুপে রাখলেন যাদের চোখের রং নীল এবং দ্বিতীয় গ্রুপে রাখলেন যাদের চোখের রং বাদামী। প্রথম দিন তিনি প্রথম গ্রুপ অর্থাৎ যাদের চোখের রঙ নীল তাদেরকে বাদামী চোখের শিক্ষার্থীদের চেয়ে উঁচু মর্যাদার বলে ধরে নিলেন এবং বেশি সুযোগ সুবিধা দিতে শুরু করলেন। দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যদের কোণঠাসা করার জন্য তিনি তাদের বিভিন্ন দোষ-ত্রুটি সবার সামনে বর্ণনা করতে শুরু করলেন।
এর ফলাফল হলো খুবই চমকপ্রদ। প্রথম গ্রুপের শিক্ষার্থীরা অর্থাৎ যারা নিজেদেরকে সুপিরিয়র ভাবছে তাদের আচরণ খুব দ্রুত পরিবর্তিত হতে লাগল। তারা ক্লাসে এখন সবচেয়ে মনোযোগী এবং কোন কিছু না বুঝলে তারা সাথে সাথে প্রশ্ন করে। ক্লাস টেস্টেও তারা দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যদের চেয়ে অনেক ভাল করল। সবথেকে মন খারাপ করা যে ব্যাপারটা ঘটল তা হলো, তারা তাদের দ্বিতীয় গ্রুপের বন্ধুদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করল এবং তাদের উপর এক ধরনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করতে লাগল। অন্যদিকে দ্বিতীয় গ্রুপের শিক্ষার্থীরা হীনমন্যতায় ভুগতে লাগল এবং সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়তে লাগল।
পরের সপ্তাহে এলিয়ট একই এক্সপেরিমেন্ট চালালেন। কিন্তু এবার যাদের চোখের রঙ বাদামী তাদেরকে নীল চোখের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সুপিরিয়র হিসেবে ধরে নিলেন। তখন ফলাফলও উল্টে গেল। অর্থাৎ নীল চোখ যাদের তারা সবকিছুতে পিছিয়ে পড়তে লাগল।
এই এক্সপেরিমেন্টটি খুবই আলোচিত হয়। পরীক্ষাটি করার সময়কার ভিডিওগুলো নিয়ে ২৫ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয় যার নাম ‘The Eye of the Storm’। এছাড়া ‘A Class Devided’ নামে আরও একটি ডকুমেন্টারি আছে একই বিষয়ের উপর। এই এক্সপেরিমেন্টটি আমাদেরকে বোঝাতে পারে যে সমাজে যারা অবহেলিত তারা কেন পিছিয়ে পড়ে এবং নানা অপরাধের সাথে যুক্ত হয়।
মানুষ সবসময় চায় অন্য সবার মতো হতে, যদিও সে আসলে অন্যদের চেয়ে উৎকৃষ্ট কেউ হতে পারত।
ড. সলোমন অ্যাশ ১৯৫১ সালে Asch Conformity Study পরীক্ষাটি করেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের তিনি একটি কার্ড দেখান, যেখানে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের তিনটি সরলরেখা আঁকা আছে। এরপর তিনি তাদেরকে আরও একটি কার্ড দেখান যেখানে একটি সরলরেখা আঁকা ছিল। দ্বিতীয় কার্ডের সরলরেখাটির দৈর্ঘ্য পরিস্কারভাবেই প্রথম কার্ডের তিনটির যেকোনো একটির সমান এবং বাকি দুটোর দৈর্ঘ্য হয় এর থেকে বড় না হয় ছোট।
এরপর তিনি তাদেরকে খুব সাধারণ একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন। তা হলো, দ্বিতীয় কার্ডের সরলরেখাটি প্রথম কার্ডের কোন সরলরেখাটির মতো দেখতে? খুবই সোজা একটি প্রশ্ন এবং এখানে ১,০০ জনকেও এই প্রশ্ন করা হলে ১০০% ক্ষেত্রে সঠিক উত্তরটি পাওয়া উচিত।
মজার ব্যাপার হচ্ছে অংশগ্রহণকারীদের একটি গ্রুপের মধ্যে মাত্র একজন বাদে বাকি সবাই ছিলেন ড. সলোমনের নিজের লোক।তাদেরকে আগে থেকেই বলা হয়েছিল ভুল উত্তর দিতে। সবশেষে যখন প্রকৃত অংশগ্রহণকারীকে একই প্রশ্ন করা হল তখন দেখা গেল সেই একজন বাকি সবার উত্তরে বিভ্রান্ত হয়ে গেল।
যদিও সে খুব পরিস্কার ভাবেই জানে যে কোন সরলরেখাটি সবচেয়ে বড়, তবুও সে অন্যদের ভুল উত্তরগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভুল উত্তর দিল। এই এক্সপেরিমেন্ট এটাই প্রমাণ করে, মানুষ সবসময় চায় অন্য সবার মতো হতে যদিও সে আসলে তাদের চেয়ে উৎকৃষ্ট কেউ হতে পারত।
তুমি যত বেশি মানুষের সামনে বিপদে পড়বে তোমার সাহায্য পাবার সম্ভাবনা তত কম।
১৯৬৪ সালে নিউ ইয়র্ক শহরে নিজ অ্যাপার্টমেন্টের সামনে কিটি জেনোভেস নামের এক নারীকে প্রকাশ্যে উপুর্যুপুরি ছুরিকাঘাতের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। সেটি ছিল ওই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি।
কিটি জেনোভেস
The New York Times দাবি করেছিল যে, ওই সময়ে ঘটনাটির প্রত্যক্ষদর্শী ছিল প্রায় ৩৭-৩৮ জনের মতো, যাদের কেউ ওই নারীকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেনি। এরপর থেকেই এই ঘটনা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়। কেন সাধারণত জনাকীর্ণ একটি জায়গায় কেউ বিপদে পড়লে আশেপাশের কেউ সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে না? এর উত্তর বুঝতে হলে দুটি বিষয়ের সাথে পরিচিত হতে হবে। ‘Diffusion of Responsibility’ এবং ‘Bystander Effect’।
এমন ক্ষেত্রে সবাই ভাবে, অন্য সবাই তো আছে সাহায্য করার জন্য, আমি কেন ঝামেলায় জড়াবো নিজেকে? পরবর্তীতে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, তুমি যত বেশি মানুষের সামনে বিপদে পড়বে তোমার সাহায্য পাবার সম্ভাবনা তত কম। কারণ তখন সবার মধ্যে কাজ করে Diffusion of Responsibility এবং Bystander Effect।
সাধারণ মানুষ তার চারপাশে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলোকে কত কম গুরুত্ব দিয়ে বিচার করে।
জশুয়া বেল বাজাচ্ছেন সাবওয়েতে
জশুয়া বেল (Joshua Bell) একজন অতি বিখ্যাত ভায়োলিনবাদক। তার রচিত একটি Piece (স্বরলিপি) আছে যেটিকে ধরা হয় পৃথিবীর সবথেকে অপূর্ব সৃষ্টিগুলোর একটি।
তিনি বোস্টনের একটি থিয়েটারে ভায়োলিন বাজিয়েছিলেন, যেখানে তার ভায়োলিনের বাজনা শোনার জন্য প্রতি শ্রোতাকে জনপ্রতি গুণতে হয়েছিল ১০০ ডলারের মতো করে। এবং সিট বুক থাকে একমাস আগে থেকে; কিন্তু গবেষণার স্বার্থে তিনি একদিন ওয়াশিংটন ডিসির মেট্রো সাবওয়ে স্টেশনের প্রবেশপথের মাথায় একটি ক্যাপ পরে বাজাচ্ছিলেন ভায়োলিন, যা শোনার জন্য লোকজন ১০০ ডলার খরচ করে মাসের পর মাস অপেক্ষা করে। তিনি ৪৫ মিনিটের মতো বাজিয়েছিলেন। পুরো ঘটনাটি একটি গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। যেখানে দেখা যায়, এই সময়ের মধ্যে ১,০৯৭ জন লোক তার সামনে দিয়ে চলে গিয়েছিল, যার মধ্যে মাত্র ৩ জন কিছুক্ষণের জন্য থেমেছিল তার ভায়োলিন শুনতে এবং কেবলমাত্র একজন তাকে চিনতে পেরেছিল।
সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপারটি কী জানেন? এই ৪৫ মিনিটের পারফরমেন্স দিয়ে তিনি পথচারীদের কাছ থেকে আয় করতে পেরেছিলেন মাত্র ৩২.১৭ ডলার, যা অনুগ্রহ করে দেয়া। মজার ব্যাপার হল, যে ভায়োলিনটি তিনি বাজিয়েছিলেন তার মূল্যই ছিল ৩৫ লক্ষ মার্কিন ডলার! এবং এই ৪৫ মিনিটের পারফরমেন্স-এর জন্য তিনি পেতেন অন্তত ৬০ হাজার মার্কিন ডলার!
এই পরীক্ষাটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, সাধারণ মানুষ তার চারপাশে ঘটতে থাকা ঘটনাগুলোকে কত কম গুরুত্ব দিয়ে বিচার করে।
===================
ঘুম যত গভীর হবে, তত বেশি সুস্থ থাকবেন
পরিমিত আহার করুন। ওজন কমান। নাক ডাকা বন্ধ করে প্রশান্তিতে ঘুমান। আর ঘুম যত গভীর হবে, তত বেশি সুস্থ থাকবেন। হৃদ্রোগসহ নানা রোগের ঝুঁকিও কমবে। নাক ডাকার মূল কারণ অতিরিক্ত ওজন। কাজেই পরিমিত আহার করে ওজন ঠিক রাখতে হবে। তাতে প্রশান্তির ঘুম হবে। জীবনযাপন পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনে নাক ডাকার ও ঘুম কম হওয়ার সমস্যা থেকে দূরে থাকা সম্ভব। এ ছাড়া ধূমপান ও মদ্যপান না করলে ঘুম ভালো হয়। রাতে খাওয়ার পরপরই ঘুমাতে না যাওয়া
ৃৃৃৃৃৃ
হেরে যাওয়া নয়!
আমার কাছে মানুষই বড় সত্য, এর চেয়ে বড় কিছু নেই। হোক সে নারী কিংবা পুরুষ। বিশাল এই পৃথিবীতে ভন্ড প্রতারক, মিথ্যাবাদী, লোভী, অহংকারী পাপিষ্ট যেমন আছে, তার উল্টোটাও আছে। আছে অনেক হৃদয়বান, উদার মহানুভব, সত্যবাদী দেবতুল্য মানব, মহামানব। এখনো অনেক ভালো মানুষ আছে বলেই পৃথিবীতে ফুল ফোটে, বসন্ত আসে, মানুষ ভালোবাসে একে অপরকে। আমরা বাঁচতে চাই, বেঁচে থেকে এর স্বাদ, মধু, গন্ধ উপভোগ করতে চাই।
আমরা কেউ চাই না সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে। জীবন একটাই এর চেয়ে বড় সত্য আর কিছু নেই। এই জীবন কারোর জন্য নয়, প্রত্যেকের নিজের জন্যই বেঁচে থাকতে হয়। অন্য কারও উপর অভিমান করে মহামূল্যবান জীবনটা নষ্ট করার মধ্যে কোনো মহাত্ম্য নেই। সামান্য একজন মানুষের ভুল ভালোবাসা পাওয়ার জন্যে মিছামিছি আবেগের বলি হলো সুন্দর একটা জীবনের। আসলে ভালোবাসা সুন্দরতম অনুভূতির নাম। ভালোবাসা যেখানে থাকবে, সেখানে দুঃখ থাকবে, হাসি থাকবে, কান্না থাকবে, কষ্ট থাকবে। আর সব মিলিয়েই জীবন। সুখ চাই, দুঃখ নিব না, তা তো হবে না। তবে হ্যাঁ, এটাই সত্যি এই বিশাল পৃথিবীতে কারও জন্যে সব শেষ হয়ে যায় না। নিজের মতো করে বাঁচতে চাইলে বাঁচার অনেক পথ আছে। সুন্দরভাবে বাঁচার আনন্দও আছে। একটা হাত সরে গেলেও হাজারটা হাত থাকে। পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে সেই প্রসারিত হাত অপেক্ষার প্রহর গুনে বসে থাকে তোমায় পূর্ণ করবে বলে। যে যেতে চায় তাকে যেতে দাও, প্রতারককে ভুলে যাও, মিথ্যাবাদী থেকে দূরে থাকো, জয় তোমার হবেই। যে কটা দিন বাঁচব মাথা উঁচু করে বাঁচব। হেরে যাওয়া নয়, জয় ছিনিয়ে আনাই হোক জীবনে বেঁচে থাকার লক্ষ্য।
লেখক: ফাহমিদা হক: পরিচালক, সিসিএন/সম্পাদনা: আশিক রহমান
হিন্দুদের কাছে ১০৮ সংখ্যাটি কেন পবিত্র?
বৈদিক তত্ত্ব অনুযায়ী মহাবিশ্বের অস্তিত্বের প্রমাণ হয় এই সংখ্যাটিতেই৷ আরও বিশ্বাস করা হত যে, ভারতে ১০৮টি পবিত্র তীর্থস্থান আছে৷ এছাড়া চারটি বেদ মিলিয়ে মোট উপনিষদের সংখ্যাও নাকি ১০৮৷ দেহতত্বেও মনে করা হয়, আমাদের শরীরে ১০৮টি বিশেষ জায়গা আছে, যেগুলির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব৷ সে কারণেই সূর্যপ্রণাম মন্ত্র বা মালা জপ করার ক্ষেত্রেও ১০৮ সংখ্যাকেই বেছে নেওয়া হয়৷ দেবাদিদেব নৃত্যের ভঙ্গি ভরতনাট্যম-এ নৃত্যেরও ১০৮টি মুদ্রা রয়েছে৷
“অন্ধদের বিপরীতে”
আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব ৬৬০ । এথেন্সের কাছেই ছিলো এক শহর, নাম তার মেগারা। এই শহরেরই এক নাগরিক ছিলেন বাইজোস। গ্রীসের জনসংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলেছিলো, আর এটা নিয়েই শঙ্কিত ছিলেন বাইজোস। এ বিষয়ে সঠিক কোনো দিকনির্দেশনা পেতে তা তিনি চলে গেলেন ডেলফিতে।
উল্লেখ্য, প্রাচীন পৃথিবীতে দেবতা অ্যাপোলোর মন্দির হিসেবে ডেলফি ছিলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দৈববাণী প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হতো এ জায়গাকে। এই ডেলফিতে গিয়েই নিজের শঙ্কার কথা ব্যক্ত করেছিলেন বাইজোস, জানতে চেয়েছিলেন তিনি কোথায় গিয়ে নতুন একটি বসতি স্থাপন করবেন। কথিত আছে যে, এর উত্তরে ফিসফিসিয়ে তিনি শুধু একটি কথাই শুনেছিলেন, “অন্ধদের বিপরীতে”!
এ কথাটির সঠিক কোনো অর্থ বুঝতে পারেন নি বাইজোস। তবে বসে থাকেন নি তিনি, এজিয়ান সাগর ধরে নতুন বসতি স্থাপনের আশায় বেরিয়ে পড়েন উত্তর-পূর্ব দিকে। এভাবে চলতে চলতে বসফরাস প্রণালীতে এসেই ডেলফিতে শোনা ভবিষ্যদ্বাণীর প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করেন তিনি। গ্রীক শহর চালসেডনকে শহর দেখে তার মনে হয়েছিলো যে, এই শহরের গোড়াপত্তনকারীরা নিশ্চিত বোকা আর অন্ধ ছিলো! কারণ এই শহর চালসেডন থেকে মাত্র আধা কিলোমিটারের মতো দূরত্বে ছিলো অত্যন্ত চমৎকার এক জায়গা। বাইজোস সেখানে, গড়ে তোলেন নতুন এক বসতি। তার নামানুসারে জায়গাটির তিনি নাম রেখেছিলেন বাইজান্টিয়াম।
বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য পরিচালিত হতো রোমের আইন-কানুন অনুযায়ী। তবে ল্যাটিনই ছিলো এ অঞ্চলের প্রধান ভাষা। এছাড়া গ্রীকভাষী মানুষের সংখ্যাও ছিলো অনেক। শিক্ষার্থীরা গ্রীক ইতিহাস, সাহিত্য, সংস্কৃতি নিয়ে পড়াশোনা করতো।
৪৫১ খ্রিষ্টাব্দে কাউন্সিল পুরো খ্রিষ্টান বিশ্বকে ৫টি অঞ্চলে ভাগ করেছিলো। এগুলো হলো- রোম, আলেকজান্দ্রিয়া, কনস্টান্টিনোপল, অ্যান্টিওক ও জেরুজালেম। এর মাঝে কনস্টান্টিনোপল অঞ্চলের দায়িত্বে ছিলেন বাইজান্টাইনের সম্রাট। তিনি একই সাথে চার্চের প্রধানও ছিলেন। অবশ্য সপ্তম শতকে মুসলিমরা আলেকজান্দ্রিয়া, অ্যান্টিওক ও জেরুজালেম জয় করে
মঙ্গোল সাম্রাজ্যের বিচিত্র যত কাহিনী
মঙ্গোল সাম্রাজ্যের দৈনন্দিন জীবনের বিচিত্র কিছু দিক আলোচনার উদ্দেশ্যেই এ লেখার অবতারণা।
অপরিচ্ছন্নতা
চেঙ্গিস খানের সময়কালীন মঙ্গোলীয়রা বিশ্বাস করতো যে, কোনো কারণে পানি অপবিত্র করলে সৃষ্টিকর্তা তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে ধ্বংস করে দিবেন তাদের ঘরবাড়ি। এজন্য গোসল করা কিংবা কাপড় ধোয়া ছিলো নিষিদ্ধ। অধিকাংশ মঙ্গোলীয় যোদ্ধাই তাদের কাপড় ধোয়ার নাম মুখে আনতো না। খুব বেশি হলে একটু ঝেড়ে ওটা থেকে উকুনগুলো সরিয়ে তারপর আবার গায়ে দিত। এভাবে যতদিন না কাপড়টা গায়ে দেয়ার অনুপযুক্ত হতো, ততদিন তারা এভাবেই সেগুলো ব্যবহার করতো।
খাওয়াদাওয়ার পর থালা-বাসন ঠিকমতো ধোয়ার নামও তারা মুখে আনতো না। এজন্য তারা সর্বশেষ যে পানি দিয়ে তরকারি সিদ্ধ করা হয়েছে, সেটাই ব্যবহার করতো। ধোয়া শেষে সেই পানি দিয়ে আবার পরেরবার রান্নার কাজ চালাতো!
মাত্র তিন বছর বয়সে অশ্বচালনা
ধনী-গরীব নির্বিশেষে প্রতিটি মঙ্গোলীয় পরিবারেই ঘোড়ার উপস্থিতি দেখা যেত। ফলে খুব ছোটবেলা থেকেই তাদের সন্তানেরা ঘোড়া চালাতে শিখতো।
একটি বাচ্চার হাঁটাহাঁটি ও দৌড়াদৌড়ির মতো ঘোড়া চালাতে শেখাও ছিলো তাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে তীর-ধনুকের ব্যবহারও শিখতো তারা।
ঘোড়ার রক্ত পান
মঙ্গোলীয় সেনারা একদিনে সর্বোচ্চ ১২৯ কিলোমিটার পর্যন্ত পথও পাড়ি দিতে পারতো দীর্ঘ এ যাত্রাপথে ক্ষুধা নিবারণের জন্য তারা ঘোড়ার পিঠে কাচা মাংস বয়ে নিয়ে যেত।
মার্কো পোলোর মতে, কুখ্যাত এ যোদ্ধারা একটানা দশদিন পর্যন্ত অত্যন্ত অল্প বিরতি দিয়ে চলতে পারতো। কখনো যদি পিপাসা পেত, তবে কেটে ফেলতো ঘোড়ার গলাটাই। এরপর ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসা রক্তই হতো তাদের তৃষ্ণা নিবারণের মাধ্যম! এছাড়া ঘোড়ার দুধ থেকে গাজন প্রক্রিয়ায় মদ বানানোর রীতি তো চালু ছিলোই।
বিচিত্র নিয়মে পশু জবাই
তৎকালে মঙ্গোলীয়দের প্রধান খাবার ছিলো মূলত পশুর মাংস ও দুধ। তবে তাদের পশু জবাইয়ের নিয়ম শুনলে আঁতকে উঠবে যে কেউ।
প্রথমেই পশুটিকে বেঁধে মাটিতে ফেলে দিতো তারা। এরপর ছুরি দিয়ে বুক চিরে হৃৎপিণ্ড বের করে আনা হতো। এবার সেই হৃৎপিণ্ডটি চিপে মৃত পশুর সারা গায়ে ছড়িয়ে দেয়া হতো রক্ত! এরপর সেই মাংস সিদ্ধ করে কিংবা কাবাব বানিয়ে খাওয়া হতো। বিশেষ উপলক্ষ্যে কখনো কখনো ঘোড়াও আসতো তাদের খাদ্যতালিকায়। এমনকি সদ্যোজাত ঘোড়ার ছানাও বাদ যেত না সেই তালিকা থেকে।
বহুবিবাহ
বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের ব্যাপারে বেশ কড়াকড়ি ছিলো প্রাচীন মঙ্গোল সমাজে। বেশ ঘৃণার চোখেই দেখতো তারা এ ব্যাপারটিকে।
যদি একজন পুরুষকে স্ত্রী ব্যাতীত অন্য কোনো বিবাহিতা নারীর সাথে দেখা যেত, তাহলে সেই লোকটির ঠোঁট কেটে নেয়া যেত। যদি সেই সম্পর্ক বিছানা পর্যন্ত গড়াতো, তাহলে সেই লোকটিকে খুনের বিধান ছিলো। আর যদি সেই লোকটিকে কোনো অবিবাহিতা নারীর সাথে দেখা যেত, তাহলে দুজনকেই চলে যেতে হতো পরপারে!, সমাধান একটাই, বিয়ে করা, তাই না? মঙ্গোলীয়রা যত খুশি তত বিয়ে করতে পারতো। তবে স্ত্রীর জন্য আলাদা একটি তাবুর ব্যবস্থা করে দেয়ার আর্থিক সঙ্গতিও থাকা লাগতো। বিয়ের এ স্বাধীনতায় কোনো কোনো মঙ্গোল পুরুষের ত্রিশজন করে স্ত্রীও থাকতো। ওদিকে তাদের নেতা খানদের তো থাকতো শতাধিক স্ত্রী!
সৎমায়ের সাথে বিয়ে
যখন কোনো মঙ্গোলীয় মারা যেত, তখন তার রেখে যাওয়া সব সম্পত্তি ভাগ করে দেয়া হতো তার ছেলেদের মাঝে। তবে সবচেয়ে বেশি ভাগ পেত ছোট সন্তান। বাবার বাড়ি ও দাস-দাসীদের পাশাপাশি সকল স্ত্রীর দায়িত্বও এসে পড়তো তার ঘাড়েই।
যদিও কখনোই সে তার নিজের মায়ের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়াতো না, কিন্তু তার বাবার অন্যান্য সকল স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব এসে পড়তো তার ঘাড়েই! একজন মঙ্গোলীয় পুরুষ চাইলেই তার সৎমায়েদেরই নিজের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে পারতো।
মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধকৌশল
মঙ্গোলীয়রা যে এককালে পৃথিবীর এত বিশাল অঞ্চল নিজেদের দখলে আনতে পেরেছিলো, এর পেছনে তাদের শারীরিক যুদ্ধকৌশলের পাশাপাশি মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধকৌশলও বিরাট ভূমিকা রেখেছিলো।
প্রতিপক্ষের সৈন্য সংখ্যা যদি তাদের চেয়ে বেশি হতো, তাহলে তারা বাড়তি ঘোড়ার উপর বসিয়ে রাখতো ডামি, রাতের বেলায় আগুন জ্বালাতো প্রয়োজনের চেয়ে বেশি যাতে করে তাদের সংখ্যা বেশি বলে মনে করে শত্রুপক্ষ। আবার মাঝে মাঝেই শত্রুকে পথভ্রান্ত করে দিতে ঘোড়ার লেজে গাছের শাখা বেঁধে দিতো তারা। তখন পেছনে উড়তে থাকা ধুলোর প্রভাবে কমে যেত প্রতিপক্ষের গতি।
গণহত্যা
যদি কোনো শহরের বাসিন্দারা তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতো, তাহলেই আর নিস্তার থাকতো না তাদের। একে একে খুন করা হতো নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সহ সকল বয়সের মানুষদেরই। মাঝে মাঝে এ আক্রমণ থেকে বাদ যেত না কুকুর-বিড়ালের মতো প্রাণীও। হত্যার পর মৃতদেহগুলোর শিরোচ্ছেদ করে তারা বানাতো বিশাল পিরামিড, যাতে করে এ পথ দিয়ে যাবার সময় শত্রুরা তাদের কথা স্মরণ করে ভয়ে কেঁপে ওঠে।
মঙ্গোলদের এ নৃশংসতা থেকে বাদ যেত না কোনো গর্ভবতী নারীও। এক আরব ঐতিহাসিকের বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, তারা মায়ের পেট চিরে বের করে আনতো সেই শিশুকে। এরপর খুন করতো তাকেও!
ডাকবিভাগ
বিশাল বড় মঙ্গোলীয় সাম্রাজ্য পরিচালনার জন্য এর বিভিন্ন অংশের মাঝে নিয়মিত যোগাযোগের দরকার হতো। আর এজন্য তারা অসাধারণ এক ডাক বিভাগ চালু করেছিল যার নাম ‘ইয়াম’।
অনেক পর্যটকই এই ইয়ামের বিশালতা ও নির্ভরযোগ্যতা দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন। ২৪-৬৪ কিলোমিটার দূরত্বে স্থাপন করা হতো সেসব পোস্ট অফিস। সবসময়ই তাতে কর্মচারীরা থাকতো। চিঠিপত্র, গোয়েন্দা সংবাদ ও রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তারা সবসময় নিষ্ঠার সাথে বহন করতো। একসময় শুধু চীনেই এমন ইয়াম ছিলো প্রায় ১,৪০০টি। আর কাজ চালানোর জন্য ছিলো প্রায় ৫০,০০০ এর মতো ঘোড়া।
মঙ্গোলদের দেশে
প্রাচীন মঙ্গোলীয় ইতিহাস খুব প্রশংসনীয় নয়। মধ্যযুগে এদের লুণ্ঠনকারী হিসাবে জানত সবাই। ৭ হাজার বছর আগে এরা শস্য উৎপাদন তথা কৃষির পত্তনও ঘটিয়েছিল অবশ্য। ৬ হাজার বছর আগে এরা লিপি ব্যবহার শিখেছিল।
বর্তমানে মঙ্গোলয়েড জনগোষ্ঠীর অধিবাসীরা এশিয়ার মঙ্গোলিয়া, চীন, তাইওয়ান, জাপান, কোরিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর অঞ্চলের প্রধান জনগোষ্ঠী। মালোয়েশিয়ায় এদের বিশাল অংশ বসবাস করে। সেই তুলনায় ইন্দোনেশিয়ায় তুলনমূলক কম। এছাড়া রাশিয়ার এশিয়া অংশে এদের দেখা যায়।
প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার বছর আগে ভারতবর্ষে এরা প্রবেশ করেছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া দিয়ে। এরা প্রথমে পূর্ব ও উত্তর ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। বিশেষত চীন-ভারতের সীমান্তবর্তী তিব্বত, ভুটান এবং হিমালয়ের ভারতবর্ষে অভিমুখী অঞ্চল নেপাল, সিকিম এবং তৎসলগ্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে মঙ্গোলদের একটি শাখা প্রবেশ করেছিল মায়ানমারের চীন প্রদেশের চীন পাহাড়ের বন্ধুর পথ পেরিয়ে।
মঙ্গোল জাতির প্রতিষ্ঠাতা বলা হয় চেঙ্গিস খানকে। চেঙ্গিস খান আক্ষরিক অর্থে নিরক্ষর ছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে চেঙ্গিস খান একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী যোদ্ধা এবং সেনানায়ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। মঙ্গোলিয়ার বর্তমান রাজধানী উলানবাটোরে চেঙ্গিস খানের একটি প্রতিকৃতি ছাড়া আর কিছু দৃশ্যমান নেই। বর্তমান প্রজন্ম তাকে ভুলে যেতে চায়।
বাংলাদেশে মঙ্গোলদের একটি শাখা মগ ইতিহাসে বিশেষ আলোচিত। মগদের দস্যু বলা হয় এখানকার ইতিহাসে। চট্টগ্রাম এবং সংলগ্ন পাহাড়ি অঞ্চলে তারা প্রভাব বিস্তার করে থাকত। শরীরের কাঠামো ও শক্তিতে তারা ছিল বলশালী। পাহাড় কাটা থেকে শুরু করে ভারী সব কাজ তারা অবলীলায় করে ফেলত। ডাকাতিও তারা করত বলে ইতিহাসে উল্লেখ রয়েছে। তবে এই মগরা এখন মূল জনস্রোতের
মঙ্গোলিয়া এখন পর্যটনের জন্য অন্যতম লোভনীয় স্থান। বিশেষত এখানকার বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা আধুনিক মানুষদের জন্য এক রহস্যই বটে। দেশটির রাজধানী উলানবাটোর অনেক উন্নত ও ব্যবসাবান্ধব। চীন এবং রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশটি রাজনৈতিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে চীন-রাশিয়ার মধ্যে বিরোধ না থাকায় দেশটিতেও শান্তি বিরাজ করছে। রাজনৈতিক পরিবেশও সেখানে গণতান্ত্রিক। তাদের আতিথেয়তার সুনাম রয়েছে। ইতিহাসের মহাপরাক্রমশালী একটি জাতি আজ কেমন শান্ত ও উন্নত তা ভাবতেই অবাক লাগে।
লেখক : মোহনা খানম, শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
============
নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে
যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড শহরে বসবাসকারী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এক গবেষণা চালিয়ে দেখা যায়, নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের জিনগত অস্বাভাবিকতার হার সাধারণ শিশুদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। এসব অস্বাভাবিকতার মধ্যে নবজাতকের অতিরিক্ত আঙুল গজানোর মতো সমস্যা থেকে শুরু করে হূ ৎপিণ্ডে ছিদ্র বা মস্তিষ্কের গঠন-প্রক্রিয়ায় ত্রুটি দেখা দিতে পারে।
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও সাম্প্রদায়িকতা
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৪ খ্রীস্টাব্দে বঙ্গদর্শনে লিখেছেন, "বাঙ্গালা হিন্দু-মুসলমানের দেশ- একা হিন্দুর দেশ নহে। কিন্তু হিন্দু-মুসলমানে এক্ষণে পৃথক, পরস্পরের সহিত সহৃদয়তাশূন্য। বাঙ্গালার প্রকৃত উন্নতির জন্য নিতান্ত প্রয়োজনীয় যে’ হিন্দু-মুসলমানে ঐক্য জন্মানো। যতদিন উচ্চশ্রেণীর মুসলমানদিগের মধ্যে এরকম গর্ব্ব থাকিবে যে, বাঙ্গালা তাঁহাদের ভাষা নহে, তাঁহারা বাঙ্গালা লিখিবেন না বা বাঙ্গালা শিখিবেন না, কেবল উর্দ্দু-ফারসীর চালনা করিবেন, ততদিন সে ঐক্য জন্মিবে না, জাতীয় ঐক্যের মূল হল ভাষার একতা।"
বঙ্কিমচন্দ্র কর্তৃক ভাষাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবোধের এমন আধুনিক ব্যাখ্যা প্রদানের পরও কাজী আবদুল্ ওদুদ থেকে শুরু করে বদরউদ্দিন উমর পর্যন্ত বহু তাত্ত্বিক বঙ্কিমকে সাম্প্রদায়িক ভাবাপন্ন মানুষ মনে করেন।এ সংখ্যায় সলিমূল্লাহ খানের লেখায়ো সম্ভবত তা-ই থাকবে। কিন্তু আমার কাছে এটা স্পষ্ট, যে বা যারা বঙ্কিমকে সাম্প্রদায়িক মনে করেন, তারা নিজেরাই সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন! লিখেছেন Abul Khayer.
আরব, অনারব বিবাহ
আমাদের অফিসে একজন কম্পিউটারের ডাক্তার আসতেন। উনার ছাটা দাড়ি, মুখে অমায়িক হাসি। ছোট খাট মানুষ; চেয়ারে বসতেন একদম সটান হয়ে আর কথা বলার সময় যা বলতেন তা খুব আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতেন। উনি মনে করতেন উনি একজন ব্যতিক্রমী চিন্তাবিদ। আমার সাথে দুই একটা কথা বলেই উনার প্রথমে ধারণা হলো, আমার চিন্তাও ব্যতিক্রম। ফলে প্রায়ই আমার সাথে কথা বলতেন। উনি কথায় কথায় গোল্ডেন যুগের আরব বীরদের প্রসঙ্গ নিয়ে আসতেন। সম্ভবত আমার বাইসেপ দেখে উনার ধারণা হয়েছিলো এসব গল্প আমি পছন্দ করবো। আমি অবশ্য অপছন্দও করতাম না; তবে একই সাথে আমি নেপোলিয়ন, আলেকজান্ডার, চন্দ্রগুপ্ত, আশোক এদের প্রসঙ্গও টেনে আনতাম। এটা আবার উনার পছন্দ হতো না। উনি মুখে প্রকাশ না করলেও উনার মুখ দেখেই বুঝতাম এটা উনার পছন্দ হয়নি। যাইহোক, এমন এক সময় আমাদের পহেলা বৈশাখ চলে এলো। আমি ফোনে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি কাউকে। উনি এসে বললেন, এটা হিন্দুয়ানি, এটা করা যাবে না। আমি বললাম, খলিফা ওমর আইন করে গেছেন আরব, অনারব বিবাহ নিষিদ্ধ। আইনটা আরব রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সৌদিতে এখনো বহাল আছে। খলিফা ওরম জাতীয়তাবাদি ছিলেন। উনি নিজের ভাষা ও ভাষার মানুষকে এলিট শ্রেনী মনে করতেন, ভালবাসতেন। আমাদেরও নিজেদের মাতৃভাষাকে ও সেই ভাষায় কথা বলা মানুষকে শ্রদ্ধা করতে হবে, ভালবাসতে হবে। উনি বললেন, এই কথা যদি ওমর(রঃ) বলে গিয়ে থাকেন তাহলে তো তা সরাসরি রিসালাতের অংশ। আমি বললাম, নবী-রাসুলের পরম্পরা ও তাদের দায়িত্ব কে রিসালাত বলে। ওমর তো নবী-রাসুল না, একজন খলিফা। তো তিনি কীভাবে রিসালাতের অংশ হবেন?? Atique Bangal
===
আত্মপরিচয় সংকট
মঙ্গল ও শোভা হিন্দুদের নাম, আর যাত্রা তো গীতা থেকে নেওয়া শব্দ। তাই 'মঙ্গল শোভাযাত্রা' অবশ্যই হিন্দুয়ানি সংস্কৃতি। একটা জাতীয় উৎসবকে এভাবে একপেশে করে ফেলার মনগড়া ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে।
মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম উদযাপিত হয় ১৯৮৯ সালে, চারুকলার ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগে। ১৯৮৮ সালে জয়নুল আবেদীনের জন্মবার্ষিকীতে জয়নুল উৎসব নামে একটি অনুষ্ঠান হয়। সেই অনুষ্ঠানে চারুকলার একদল ছেলে-মেয়ে বিশাল বিশাল রঙ তুলি, রঙের টিউব ইত্যাদি তৈরি করে। সেখান থেকেই মঙ্গল শোভাযাত্রার আইডিয়ার জন্ম হয়,বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির মোটিফগুলোকে বৃহৎ আকারে তৈরি করে উপস্থাপন করাই ছিল মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্দেশ্য।
শুরু থেকেই এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়তা পায় এবং নববর্ষের অবিচ্ছেদ্য সার্বজনীন উৎসব হিসেবে জায়গা করে নেয়। দেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য গুলোকে তুলে ধরে আনন্দ উৎসবের মাধ্যমে পুরানো বছরের জঞ্জাল গুলোকে ধুয়েমুছে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতেই এই আনন্দ শোভাযাত্রা।
২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে ইউনেস্কো। জাতিসংঘের এই তালিকার অন্তর্ভুক্ত হলে সেই আচার বা ঐতিহ্যকে রক্ষার দায় বর্তায় সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের ওপর! যেকোন লোকাচার, ঐতিহ্যে পরিণত হয় বহু বছরের ক্রমাগত চর্চার ফলে। যদিও মঙ্গল শোভাযাত্রা পালন করা শুরু হয়েছে অপেক্ষাকৃত বর্তমানে, তাই বলে কি এটা আমাদের 'ঐতিহ্য' নয়? এখানে প্রদর্শীত পাপেট, পুতুলগুলো কি আমাদের ঐতিহ্য গুলোকে প্রকাশ এবং ধারণ করেনা?
বাঙালি যেকোন উপলক্ষকে 'হিন্দুয়ানী' বলে বাতিল করে দেয়াটা নতুন কিছু নয় । ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোটাও এদের কাছে 'হিন্দুয়ানী'। শিক্ষার অভাব এর পিছনের কারণ নয়। অনেক শিক্ষিত মানুষজনও মনে করে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া পাপ, পহেলা বৈশাখ উদযাপন হিন্দুয়ানী ব্যাপার। এর মূলে রয়েছে আত্মপরিচয় সংকট।
আমাদের প্রায় সকলের বংশ লতিকা অনুসরণ করে পিছনের দিকে যেতে থাকলে দেখা যাবে আমাদের পূর্ব পুরুষেরা ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। হিন্দু ধর্মের পার্বণ গুলো আসলে গ্রামীণ কৃষিজীবী সমাজের বিভিন্ন উপলক্ষের পরিবর্তিত পরিবর্ধিত রূপ।ফলে এখানে বহু বছর ধরে বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন সংস্কৃতির যোগসাজশে বাঙালিদের নিজস্ব কিছু লোকাচার তৈরি হয়েছে। এই লোকাচার গুলো মোটেও কঠিন কিছু ছিলনা, ছিল সহজীয়া ধরণের। সুফি সাধকদের দ্বারা প্রচারিত ইসলাম তাই সহজেই প্রবেশ করেছে সাধারণের জীবনে,পরিণত হয়েছে লোকাচারের অংশ হিসেবে।
যখন এদেশে ওয়াহিবিজমের চর্চা শুরু হল সৌদি পেট্রোডলারের আশীর্বাদে, গ্রামে গ্রামে ওয়াজেযেনামে শুরু হল সাধারণের মগজ ধোলাই, তখনই সূত্রপাত সমস্যার। ধর্ম বিষয়ে অজ্ঞ মানুষ, নূরানী চেহারার মোল্লাদের ধর্মীয় ছবক পেয়ে ভীত হয়ে পড়লো।একদিকে নিজেদের হাজার বছরের লালিত পালিত লোকাচার, অন্যদিকে পরকালের ভয়ে ভীত হয়ে পালিত আচার সমূহের মাঝে জন্ম নিল নতুন প্রশ্ন - আমরা বাঙালি না মুসলমান? এই প্রশ্নের উত্তরে কেউ যদি আবেগের বশে বলে বসে 'আমি বাঙালি' তাহলে তাকে কাফির,মুরতাদ ঘোষণা দেয়াটাও নতুন কিছু নয়।
অথচ অত্যন্ত সহজ এই প্রশ্নের উত্তরটি কেউ বুঝতে চাচ্ছেনা। মানুষ চাইলেই ধর্ম বদলাতে পা্রে, ধর্ম ত্যাগও করতে পারে। কিন্তু চাইলেই বাঙালি থেকে ইংরেজ বা চাইনিজ হয়ে যেতে পারবে না। বাঙালি আমার শেকড়ের পরিচয়, যাকে আমি কখনো অস্বীকার করতে পারব না। বাঙালিয়ত্ব আমার জাতীয় পরিচয়, আন্যদিকে মুসলমানিয়ত্ব আমার ধর্মীয় পরিচয়। মোল্লারা যখন বলে- 'এটা মুসলমানের দেশ, এখানে এটা হতে পারবেনা,সেটা থাকতে পারবেনা...' তখন একটা প্রশ্ন মাথায় আসে-এটা 'মুসলমানের দেশ' না, এটা বাঙালিদের দেশ। জাতীয়তা(বাঙ্গলা) আমার শরীর, আর ধর্ম(মুসলমানিয়ত্ব)হচ্ছে আমার মন। দুটোকে এক করে ফেলে ‘বাঙ্গালিত্বের মুছে ফেলার চেষ্টার ফলশ্রুতিতে উগ্রবাদের বিষ আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে।-Rafee Shams
===========
অন্ধকার ব্ল্যাকহোল
------------------------------------------------------------------------------------
মানুষ আদিকাল থেকে বহু সংর্ঘষ, মারামারি আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আজ এই বিজ্ঞানের যুগে এসছে। একটা সময় যোদ্ধাদের মধ্যে বিশ্বাস ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল, যে যোদ্ধারা সাহসের সাথে যুদ্ধ করে মারা যাবে, তারা পরকালে পাবে অফুরন্ত সুখ, আর যারা বেঁচে থাকবে তারা জাতীয় বীর, তাদের বিশাল সন্মান আর পুরষ্কার। মানুষের এই যুদ্ধংদেহী জিন পরর্বতী প্রজন্মে্ বিস্তৃত করতে সহায়তা করেছে।
গুহাবাসী মানব যখন আগুন আবিষ্কার করেছে- আগুনের সংহার রূপ দেখে ভীত ও অভিভূত হয়ে এর উপাসনাও করেছে। প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষ" দৃশ্য-অদৃশ্য বহু শক্তি ও প্রকৃতির উপাসক ছিল। অগ্নি, বায়ু, বৃষ্টি, নদী, সমুদ্র, পর্বত, সূর্য, চন্দ্র,পাহাড় সবই ছিল মানুষের উপাস্য। মানব সভ্যতার সুচনা পর্বে ধর্ম ছিল যাদু বিদ্যা কেন্দ্রিক। আদিম মানুষদের সামনে একজন হয়তো জলন্ত আগুনে ছুড়ে দিল একমুঠো কালো বারুদগুড়ো। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র বিষ্ফোরনে আগুনের শিখা আরো উপরে উঠে গেল। উপস্থিত দর্শকদের কাছে ব্যক্তিটি অসীম ক্ষমতাধর হিসাবে স্বীকৃতি পেল। ফলে গোত্রভুক্তরা তাদের মনে জমে থাকা অসখ্য প্রশ্ন ও বিভিন্ন ঘটনা কে ঘটাচ্ছেন, তা জানতে এই ক্ষমতাধরের কাছে ভিড় জমাতে লাগলো।তাদের উদ্দেশ্য ছিল শক্তিমান ব্যাক্তিটিকে খুঁজে বের করা, যার ইশারায় ঝড় হয়, যার রাগের কারনে তাদের রোগ বালাই হয়। কিন্তু ক্ষমতাধর ব্যক্তিটি নিজের ক্ষমতা ও মর্যদা অক্ষুন্ন রাখার জন্য বানিয়ে বানিয়ে এসব প্রশ্নের মনগড়া উত্তর দিতেন। গোত্রের সবাই তার অথা মেনে নিয়ে কখনো সূর্যকে, কখনো দুরের পাহাড়কে, কখনো সমূদ্রকে পুজা করত। এই পুজা কখনো ফুল, ফল, নানা খাবার থেকে শুরু করে জীবন্ত কিছু বলি দেয়া পর্যন্ত। কৃষি কাজের ব্যাপক অগ্রগতির ফলে গোত্রভুক্ত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেল। তখন সমাজের এইসব শক্তিমান ব্যক্তিরা সবাইকে সংঘবদ্ধ ও অধীনস্ত রাখার প্রয়োজনে আরো কিছু নিয়ম-কানুন যুক্ত করা শুরু করলো। তারা ভাবলো, কেউ আইন করলেই তো আর মানুষ তা মানবে না, এই ভয়ে কেউ কেউ সে আইনকে ঈশ্বরের আইন বলে প্রচার করলেন। এতে কাজ হল ম্যাজিকের মত। ফলে আদিম সমাজের এইসব ঠকবাজ ব্যাক্তিরা সাধারন সরল বিশ্বাসী ব্যক্তিদের মাঝে নিজেকে ইশ্বরের মাধ্যম, ইশ্বরের প্রতিনিধি বা বন্ধু কিংবা পুত্র বলে আরো ক্ষমতায়িত হলো। এভাবে ক্ষমতাবান মানুষকে বা রাজাকে স্বর্গের প্রতিনিধি হিসাবে ভেবে তার জন্য শ্রম, জীবন সবি দিলো সরল মানুষের দল।
আসলে প্রকৃতিতে মানুষই একমাত্র প্রাণী, যারা জানতে চয়েছে জগতের রহস্য? বুঝতে শিখার পর তার মৌলকি প্রশ্ন হলো, আমি কে? আমি কোথা থেকে এসেছি, মরনের পর কোথায় যাব? ইত্যাদি? প্রাচীন দার্শণিকরা জানার এই নেশাটির এক সরল সংজ্ঞা দিয়েছিল, অন্ধকার মাঠে একজন অন্ধ মানুষ একটি কালো বেড়ালের সন্ধান পাওয়ার জন্য হাতড়িয়ে মরছে। কিন্তু তারা কেন ধরে নিচ্ছে একটি বেড়াল আছে সেখানে?
আসলে ইশ্বর হচ্ছে একটা অন্ধকার গুহা। কেঊ বলছে ঐ গুহায় অদৃশ্য কেউ আছেন, যিনি আমাদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন; আরেকদল বলছে একজন নয়, সেখানে অসংখ্য শক্তিধর-রা আছেন, আবার অন্য একদল বলছেন, আমরা আলো জ্বালিয়ে তন্ন তন্ন করে দেখেছি, ওটা আসলে খালি ঘর।
বিভিন্ন সভ্যতার দিকে তাকালে দেখা যায়, র্ধম এবং র্ধমগুরুরা - সবাই নিজেদের মতো করে মানুষ এবং বিশ্বসৃষ্টির ব্যাখ্যা দিয়ে এসেছে। এখনো আফ্রিকা কিংবা আমাজনের জঙ্গলে বিভিন্ন গোত্র পাওয়া যাবে, যারা বিভিন্ন গাছপালা কিংবা চাঁদ-সূর্যকে তাদের ঈশ্বর মনে করে এবং তারা তাদের এই বিশ্বাসের জন্যে জীবন দিতেও প্রস্তুত!
বর্তমানে জনসংখ্যার বিচারে চারটি প্রধান ধর্মীয় বিশ্বাসের ভেতর হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে ভারতবর্ষ থেকে এবং খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মের উৎপত্তি হয়েছে আরব উপদ্বীপ থেকে। সংখ্যার দিক থেকে সর্বাধিক হচ্ছে খ্রিস্টান_ ২১০ কোটি, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৩১.৫%। মুসলমান ও হিন্দু হচ্ছে প্রায় সমান সমান; ১৫০ কোটি_ বিশ্ব জনসংখ্যার ২৫% মুসলমান ও ২৫% হিন্দু। বৌদ্ধ হচ্ছে ৭১ কোটি, বিশ্ব জনসংখ্যার ৭ দশমিক ১%। ধর্মে বিশ্বাসী নয়, নাস্তিক ও অজ্ঞেয়বাদীর সংখ্যা হচ্ছে ১১০ কোটি। এদের ভেতর বৌদ্ধদের একটি অংশ আছে, যারা ঈশ্বর ও পরকালে বিশ্বাস করে না। [সূত্র :উইকিপেডিয়া] বিশ্বের এই চারটি প্রধান ধর্মবিশ্বাসের মানুষই বাংলাদেশে আছে, যাদের ভেতর বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ হচ্ছে মুসলিম, মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৯%। এ চারটি ধর্মের কোনোটি বাংলাদেশের আদি ধর্ম নয়। হিন্দু ধর্মের সঙ্গে এ দেশের মানুষের পরিচয় ঘটেছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে। এরপর বৌদ্ধ ধর্ম এসেছে আড়াই হাজার বছর আগে, ইসলাম ধর্ম এসেছে প্রায় এক হাজার চার'শ বছর আগে এবং খ্রিস্টধর্ম এসেছে প্রায় দুই হাজারেরও বেশী বছর আগে।
এখনো পৃথিবীর অনেক জায়গায় এমনো জাতি আছে, যারা কাপড় কি জিনিস তা এখনো চোখে দেখেনি, তীর-ধনুক নিয়ে পশুপাখি শিকার করে খাবার জোগাতে হয় তাদের। সহজ কথা হচ্ছে, পৃথিবীর সব যায়গায় একই গতিতে মানুষের দল সভ্য হয়নি ।
পরকাল নিয়ে প্রাচীন পৃথিবীর মানুষদের যত ভাবনা
প্রাচীন পৃথিবীর মানুষেরা মৃত্যুর পরবর্তী অজানা জীবন সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করতো চলুন দেখি-
মেসোপটেমীয় সভ্যতা
মেসোপটেমিয়ার বিস্তৃতি ছিলো টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস নদীর তীরবর্তী অঞ্চল জুড়ে। আধুনিক কালের হিসেবে ইরাকের অধিকাংশ এলাকা, কুয়েত, সিরিয়ার পূর্বাঞ্চল, তুর্কীস্তানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং তুর্কী-সিরীয় ও ইরান-ইরাক সীমান্তবর্তী এলাকাজুড়েই ছিলো এ সভ্যতার মানুষগুলোর বসবাস।
তাদের সৃষ্টিকর্তার নাম উই-ইলু। তিনি মাটি এবং আরেক দেবতার রক্ত একসাথে মিশিয়েই সৃষ্টি করেছেন মানবজাতি। শরীরে ঈশ্বরের রক্ত থাকায় মানুষ হয়ে উঠেছিলো অমর। তাই মৃত্যুর পর সেই অমর দেহ আবার মাটিতে ফিরে যায়। পাতালপুরীতে যাওয়ার আগে সাময়িকভাবে মানবদেহের অমর সেই অংশ প্রেতাত্মা হিসেবেই মাটিতে থাকে কিছুটা সময়। এরপর তার যাত্রা শুরু হয় পাতালপুরীর উদ্দেশ্যে। পাতালপুরীর প্রহরী বিদুর অনুমতি নিয়ে এরপর তারা পার হয় একে একে সাতটি দরজা।
পাতালপুরীতে পৌঁছানোর পরই অমর সেই অংশের বিচার শুরু করতেন একদল দেবতা। এর উপরই নির্ভর করতো মানুষটি স্বর্গে যাবে, নাকি নরকে।
অ্যাজটেক সভ্যতা
মোটামুটি চতুর্দশ থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত মেসোআমেরিকার বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে বসবাস ছিলো অ্যাজটেক সভ্যতার লোকেদের। মধ্য মেক্সিকো থেকে বেলিজ, গুয়াতেমালা, এল সালভাদর, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, কোস্টারিকার উত্তরাঞ্চল জুড়ে ছিলো এ মেসোআমেরিকার বিস্তৃতি।
অন্যান্য সভ্যতার তুলনায় মৃত্যু পরবর্তী জীবন নিয়ে অ্যাজটেকদের ধারণা ছিলো আলাদা। কারণ অন্য সব সভ্যতায় যেখানে স্বর্গ-নরক প্রাপ্তির ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া হতো এবং এখনও দেয়া হয় কর্মফলকে, অ্যাজটেকরা সেখানে গুরুত্ব দিতো সেই মানুষটি কীভাবে মারা গিয়েছে তার উপর।
একজন নারী, যার কিনা সন্তান জন্মদানের সময় মৃত্যু হয়েছে, তার স্থান হতো পূর্বদিকে। তখন তাদের মূল কাজ থাকতো পাতালপুরী থেকে প্রতিদিন সূর্যের উদয়ে সাহায্য করা।
যেসব মানুষ কুষ্ঠ রোগ, বজ্রপাত কিংবা পানিতে ডুবে মারা গিয়েছে, তাদের স্থান হতো দক্ষিণে। সেখানে খাবারদাবারের কোনো অভাব হতো না।
স্বাভাবিকভাবে মৃত্যু বরণকারী মানুষগুলোর স্থান হতো উত্তরে। সেখানে মোট চার বছর সময়ে তাদেরকে আটটি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হতো পাতালপুরীতে। সেই চ্যালেঞ্জগুলো জয় করতে পারলেই নবম স্তরে গিয়ে আত্মা পেত তার কাঙ্ক্ষিত শান্তি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ছিলো যোদ্ধাদের, মৃত্যুর পর যাদের ঠিকানা হতো পশ্চিমে। অ্যাজটেকরা বিশ্বাস করতো যে, এমনও একদিন আসতে পারে যেদিন সূর্য অস্ত যাবার পর আর কখনোই উদীত হবে না। মৃত্যুর পর একজন যোদ্ধা তাই চলে যেত পশ্চিমে থাকা স্বর্গে। সেখানে তাদের ঈশ্বর -এর সাথে মিলিত হয়ে অশুভ শক্তির সাথে লড়াই করে তারা সূর্যের উদীত হবার ব্যাপারটি নিশ্চিত করতো। এভাবেই চারটি বছর কাটিয়ে দিতো যোদ্ধারা। এরপর তারা পৃথিবীতে আবারো ফিরে আসতো; তবে মানুষ হয়ে নয়, হামিংবার্ডের বেশে!
মাওরি সভ্যতা
১২৫০-১৩০০ সালের মাঝামাঝি সময়টুকুতে পলিনেশিয়ার পূর্বাঞ্চল থেকে ডিঙি নৌকায় চড়ে নিউজিল্যান্ডে এসে বসতি গড়েছিলো মাওরি সভ্যতার লোকেরা।
এ সভ্যতার লোকেরা বিশ্বাস করতো যে, মৃত্যুর পর একজন কোনো মানুষের আত্মা হাঁটতে হাঁটতে চলে যায় নিউজিল্যান্ডের নর্থ আইল্যান্ডের উত্তর দিকে একেবারে শেষ মাথায়, যার নাম কেপ রেইঙ্গা ।সেখানে গিয়ে পহুতুকাওয়া নামক একটি গাছ বেয়ে প্রথমে নিচে নামতো আত্মাটি। তারপর সমুদ্রে নেমে চলে যেত পাতালপুরীতে, তার পূর্বপুরুষদের সাথে যোগ দিতে। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে ‘শাস্তি’ বলে কোনো শব্দ তাদের অভিধানে ঠাই পায় নি!
এরপরও একটা দুশ্চিন্তার বিষয় থেকে গিয়েছিলো তাদের মাঝে, আর সেটি হলো গাছ বেয়ে নামা। তারা বিশ্বাস করতো যে, মৃত আত্মা যদি ঠিকমতো সেই গাছটি বেয়ে নামতে না পারে, তাহলে তা জীবিতদের জন্য বয়ে আনবে দুর্যোগ।
গ্রীক ও রোমান
গ্রীক মিথোলজি অনুসারে, মৃত্যুর পর একজন ব্যক্তির যাত্রা শুরু হয় পাতালপুরীর উদ্দেশ্যে যার শাসক হিসেবে আছেন দেবতা হেড্স ও তার স্ত্রী পার্সিফোন। মৃত ব্যক্তির আত্মাকে পাতালপুরীতে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবার দায়িত্ব ছিলো দেবতা জিউসের পুত্র হার্মিসের। অ্যাকাইরন, ককেটাস, ফ্লেগেথন, স্টাইক্স ও লেথ- এ পাঁচটি নদী ঘিরে ।
পাতালপুরীতে প্রবেশের জন্য সবাইকে স্টাইক্স নদী পার হতে হতো। নৌকার মাঝির নাম ছিলো কারো, যাকে নদী পার করে দেয়ার জন্য ভাড়াও দেয়া লাগতো। এ ভাড়ার অর্থ একজন মৃতব্যক্তির ঠোঁটের উপর রেখে দিতো তার আত্মীয়রা। যদি কেউ সেই অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হতো, তাহলে পৃথিবী ও পাতালপুরীর মধ্যবর্তী এক জায়গায় শোচনীয় অবস্থায় দিন কাটাতে হতো তাকে।
নদী পার হলেই দেখা মিলতো দেখা মিলতো তিন বিচারকের- হ্যাডামেন্থাস, মিনোস ও ঈকাস। মৃত লোকটি এরপর তার জীবদ্দশায় যা যা করেছে তা একে একে বর্ণনা করতো সেই বিচারক তিন জনের কাছে। তার কাজকর্মের উপর ভিত্তি করে তিন রকমের ফলাফল আসতে পারতো।
১) তাকে পাঠানো হবে অ্যাসফোডেল প্রান্তরে। ধূসর বর্ণের মন খারাপ করা সেই প্রান্তরেই শেষ ঠিকানা হতো অধিকাংশ মৃত ব্যক্তির। সেখানে উদ্দেশ্যহীনভাবে পায়চারি করে বেড়াতো তারা!
২) বীর ও ভালো মানুষদের জায়গা হতো এলিসিয়ামে। সেটাই ছিলো প্রকৃত স্বর্গ।
৩) পাপাত্মাদের পাঠানো হতো তার্তারুসের গর্তে, যার অবস্থান পাতালপুরীর একেবারে নীচে। অন্ধকার ও মেঘাচ্ছন্ন সেই জায়গায় অনেক রকম শাস্তির মধ্য দিয়ে যেতে হতো তাদের। এমনকি মাঝে মাঝে সেখানে কিছু ঝড় হয় যা একজন মানুষকে উড়িয়ে নিলে পরবর্তী এক বছর পর্যন্ত সে আর মাটির দেখা পায় না বলেই বিশ্বাস ছিলো গ্রীকদের।
মিশর
প্রাচীন মিশরের লোকেরা বিশ্বাস করতো যে, মৃত্যুর পর আত্মার পরকাল ভ্রমণ শুরু হয়। তখন তাকে দেব-দেবীদের পাহারা দেয়া অনেকগুলো গেট পেরিয়ে যেতে হয়। সবগুলো গেট পার হলে বা প্রবেশ করে বিশাল বড় এক প্রাসাদে।
সেই প্রাসাদের একেবারে শেষ প্রান্তে বসে থাকতেন পাতালপুরীর দেবতা ওসাইরিস। এছাড়া আশেপাশে থাকতো আরো ৪২ জন দেবতা। তাদের সবার কাছে গিয়েই একে একে নিজের কৃতকর্মের ব্যাপারে জানাতে হতো আত্মাকে ।
এ প্রাসাদ পার হলে এরপর আত্মাকে যেতে হতো আরেক জায়গায় যেখানে তার হৃদয়ের পরিমাপ করা হতো! প্রাচীনকালে মিশরের অধিবাসীরা বিশ্বাস করতো যে, মানুষের হৃদয়ে তার সব কার্যাবলী লিপিবদ্ধ করা থাকে। এজন্য দাঁড়িপাল্লার একপাশে সেই মৃত মানুষটির হৃদয় এবং অন্য পাশে সত্য ও ন্যায়বিচারের দেবী মা’আতের একটি পালক রাখা হতো। যদি পালকটি ভারী হতো, এর অর্থ দাঁড়াত যে, মানুষটি দোষী। তখন সেই হৃদয় খেয়ে ফেলতো আম্মিত নামক পিশাচ। নারী এ পিশাচের শরীর ছিলো কুমির, জলহস্তী ও সিংহের সমন্বয়ে গঠিত।
যদি পালক ও হৃদয় ওজনে সমান হতো, তাহলে সৌভাগ্যবান সেই লোকটিকে নিয়ে যাওয়া হতো ওসাইরিসের কাছে, দান করা হতো অমরত্ব। এরপর তাকে একটি জমি দেয়া হতো যেখানে চাষাবাদ করে বাকি কালটুকু পার করে দিতো সে!
চিলির আটাকামা মরুভূমির দানবীয় হাতের রহস্য!
‘হ্যান্ড অফ দ্য ডেজার্ট’ ৩৬ ফুট উঁচু একটি ভাস্কর্য। চিলির প্রখ্যাত ভাস্কর মারিও ইররাজাবাল ১৯৯২ সাল এটিকে তৈরি করেন। মহাবিশ্বের কাছে মানুষের ক্ষুদ্রতাকে বোঝানোর জন্যই ইররাজাবাল এই হাতটি তৈরি করেন। দিকচিহ্নহীন মরুর প্রান্তরে এই হাতটি মানুষকে যেন জানিয়ে দেয় তার ক্ষণস্থায়িত্ব, মহাপ্রকৃতির সামনে তার অসহায় অবস্থান। সেই সঙ্গে এটি যেন থামতে বলে অন্যায়কে, একাকীত্বকে, নির্যাতনকে। বিপুল পরিমাণ পর্যটক ভিড় জমান এটি দেখতে। নিকটবর্তী শহর আন্তোফোগোস্তা থেকে প্যান-আমেরিকান হাইওয়ের পথে এই ভাস্কর্যের অবস্থান।
বিক্রমপুরের দাস বেচাকেনার হাট
নারী-পুরুষের মূল্য ২০ থেকে ৫০ টাকা
খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ থেকে ৩০০০ সালে মেসোপটেমিয়ায় প্রথম ক্রীতদাস প্রথার চালু হয়। তারও হাজার খানেক বছর পর থেকে এই প্রথা ছড়িয়ে পড়ে মিশর আর ভারতে। ইতিহাসে বিক্রমপুরে দাস বিক্রয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রায় ২০০ বৎসর পূর্বেও বিক্রমপুরে অভাবের তাড়নায় পড়ে মানুষ দাসরূপে বিক্রয় হতো এবং ঋণ গ্রহণ করেও অনেকে দাসত্ব স্বীকার করতো।
বাংলায় মানুষ বিক্রি বা দাস বেচা-কেনার অনেক উল্লেখ বিদেশি পর্যটকদের বিবরণে রয়েছে। মরক্কোর পর্যটক ইবনে বতুতা (১৩০৪-১৩৭৭ খ্রি.) প্রায় দুই মাস বাংলায় সফর করার সময় মানুষ বেচা-কেনার ঘটনা নিজ চোখে দেখেছেন, যা তিনি তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্তে লিপিবদ্ধ করেছেন।
মসলিন কাপড়, মিহি সুতি বস্ত্র, মসলা প্রভৃতি কেনাবেচার হাটে দাস-দাসী বিক্রি করা হতো বলে বিভিন্ন পর্যটক তাঁদের বিবরণীতে তুলে ধরেছেন। মানুষ কিংবা দাস-দাসী বিক্রির চুক্তিপত্রের অধিকাংশই রেজিস্ট্রি করা হতো। বিক্রমপুর, শ্রীহট্ট (সিলেট), চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, কালাইয়া বন্দর (বরিশাল), মহেশ্বরদী (নরসিংদী) ও ধামরাই এলাকায় মানুষ বিক্রি ও দাস বেচা-কেনার ঘটনা ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে শিশু ও বৃদ্ধদের বাজার দর ছিল পাঁচ থেকে সাত টাকা। স্বাস্থ্যবান নারী-পুরুষের মূল্য ছিল ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
কলকাতা জাদুঘরে রক্ষিত একট প্রাচীন দলিল থেকে জানা যায়, ১৮০৩ সালে ঢাকার নিকটবর্তী ধামরাই গ্রামের বদন চান্দ নামে এক ব্যক্তি মহাজনের ঋণ শোধ করতে না পেরে তাঁর স্ত্রী সরস্বতী এবং তিন বছরের শিশুপুত্র ডেঙ্গুচন্দকে বিক্রয় করে দেন কৃষ্ণরাম মৌলিকের কাছে। সংবাদটি ‘সমাচার দর্পণ’-এর ১৮২৫ সালের ১৮ জুন সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। মানসী পত্রিকার ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের আষাঢ় সংখ্যা থেকে জানা যায়, প্রাচীন বাংলা ভাষায় লিখিত একটি দলিল বিক্রমপুরের মালপদিয়া গ্রাম থেকে পাওয়া যায়।
পূর্বপুরুষদের স্মৃতি হিসেবে দরিদ্র এক কৃষকের কাছে সেটি ছিল। ওই দলিলে অভাবের তাড়নায় নিজেকে বিক্রির বিবরণ রয়েছে। দলিলে গোকুল ঢুলি বকলম দাতা হিসেবে টিপসই দিয়েছেন। দলিলগ্রহীতা ছিলেন কালীকৃষ্ণ দেবশর্মা।
দলিল সূত্রে জানা যায়, আর্থিক দৈন্যের কারণে ভরণ-পোষণের বিনিময়ে গোকুল ঢুলি মাত্র ২০ টাকায় নিজেকে বিক্রি করেন। দলিল সম্পাদনের তারিখ ২ বৈশাখ ১১২১ বঙ্গাব্দ। দলিল লেখকের নাম শ্রীরামচন্দ্র বৈতজ্ঞ।
এ কাহিনি রেকর্ডরুমের দলিলে রয়েছে। একসময় বিক্রমপুর দাস বিক্রি এবং নারী বেচাকেনার হাটে পরিণত হয়েছিল। মুদি ও মনিহারি পণ্যের মতো সুন্দরী রমণী নৌকায় করে গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে ক্রয়-বিক্রয় করা হতো।
আরও একটুখানি মনোবিজ্ঞান এবং সিগমুন্ড ফ্রয়েড
শৈশবকালে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী
ভয়ের উৎপত্তি কোথায়? আমরা কেন কোনো নির্দিষ্ট কিছু দেখে ভয় পাই? জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়াটসন এবং রেয়নার ১৯২০ সালে এই পরীক্ষাটি করেন নয় মাস বয়সী অ্যালবার্টের উপর। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো মানসিকভাবে স্বাভাবিক একটি শিশুকে কীভাবে নানা ধরনের ফোবিয়া গ্রাস করে তার কারণ অনুসন্ধান করা।
এজন্য তারা স্বাভাবিক অ্যালবার্টের মধ্যে কীভাবে ভয়ের বীজ রোপণ করা যায় তা বের করার চেষ্টা করতে থাকেন। প্রথমে তারা একটি সাদা ইঁদুর শিশুটির সামনে আনেন। প্রথমে শিশুটির অন্য কোনো প্রানীতে কোনো প্রকার ভয় ছিলো না। তাই সে স্বাভাবিক আচরণ করতে লাগলো। এরপর তারা অ্যালবার্টের পিছনে বসে ধাতব কোনো কিছু দিয়ে শব্দ তৈরি করেন। যার কারণে ছোট্ট অ্যালবার্ট ভয় পয়ে কেঁদে ওঠে।
এরপর তারা বেশ কয়েকবার ধাতব শব্দ এবং একটি নিরীহ সাদা ইঁদুর এই দুইয়ের মিশেলে অ্যালবার্টকে ভয় পাইয়ে দেন। এরপর যে ব্যাপারটি ঘটলো তা মোটামুটি ভয়াবহ। নিরীহ সাদা ইঁদুরটি এরপর যতবারই অ্যালবার্টের সামনে আসলো, ততবারই সে ভয় পেয়ে কেঁদে উঠলো, যদিও এবার কোনো শব্দ ছিল না। শুধু তাই নয়, সে ইঁদুরের মতো দেখতে যেকোনো কিছুতেই ভীতি প্রদর্শন করতে লাগলো। তার মধ্যে ছিলো লোমশ কুকুর, এমনকি সান্টা ক্লজের লোমশ মুখোশ!
পরবর্তীতে ওয়াটসন তার এই গবেষণাটির উপরে বেশ কয়েকটি লেকচার দেন। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ সাধারণত যেসব ফোবিয়াতে আক্রান্ত থাকেন, সেসবের সাথে ঘনিষ্ট যোগসূত্র থাকে তার শৈশবকালে ঘটে যাওয়া কোনো ভীতিকর ঘটনার, যার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী।
=========
একই সাথে একাধিক বিষয়ের উপর মনোযোগ দেওয়া মস্তিষ্কের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব।
১৯৯৯ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিস্টোফার ক্যাব্রিস এবং ইলিনয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যানিয়েল সাইমন্স এই এক্সপেরিমেন্টটি করেন।
এই এক্সপেরিমেন্টে অংশগ্রহণকারীদেরকে একটি ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয় যেখানে কিছু মানুষ দুটি দলে বিভক্ত হয়ে (সাদা এবং কালো টি-শার্ট পরিহিত) একে অপরকে একটি বাস্কেটবল পাস করছেন। তাদের কাজ ছিলো বাস্কেটবলটি ঠিক কতবার পাস হয়েছিলো সেই সংখ্যাটি গণনা করে বলা। ভিডিওটির গতি ছিলো স্বাভাবিক এবং গণনাকার্য খুব কঠিন নয় সেক্ষেত্রে। কিন্তু এই ভিডিও ক্লিপটির মধ্যে আরও একটি ব্যাপার ছিলো যা স্বাভাবিক অবস্থায় যে কারও চোখে ধরা পড়বে। তা হলো একটি লোক গরিলার মতো স্যুট পরে একেবারে বাস্কেটবল পাস করতে থাকা দলগুলোর মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন এবং পথিমধ্যে একদম মাঝখানে এসে দাঁড়িয়েও ছিলেন। ভিডিওটি দেখা শেষ করার পর তাদের সবাইকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে তারা অস্বাভাবিক কিছু দেখেছিলেন কিনা, তখন দেখা গেল ৫০ শতাংশ অংশগ্রহণকারীই গরিলাটিকে খেয়াল করেননি। ২২৮ জনের মধ্যে ১৯৪ জন সঠিকভাবে পাস সংখ্যা বলতে পেরেছিলো।
বাস্কেটবলটি কতবার একজন থেকে আরেকজনে পাস হয়েছিলো এটা বের করতে বলটির প্রতি অনেক বেশি মনোযোগের দরকার হয় এতে কোনো সন্দেহ নেই। এটি প্রমাণ করে আমাদেরকে যখন তুলনামুলকভাবে একটু কঠিন কোনো কাজ করতে দেওয়া হয়, তখন আমরা একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের প্রতি এতই মনোযোগ দেই যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। একই সাথে একাধিক বিষয়ের উপর মনোযোগ দেওয়া আমাদের মস্তিষ্কের কাছে মোটামুটি অসম্ভব।
নরখাদক আঘোরীদের ইতিকথা
ভারতীয় জনগোষ্ঠীর উপর বেশ বড় রকমের প্রভাব রয়েছে এই আঘোরী সম্প্রদায়ের সাধুদের, বেনারাসসহ ভারতের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা এ সাধুদের লোকজন যেমন শ্রদ্ধা-ভক্তি করে, ঠিক তেমনভাবে তাদেরকে ভয় পাওয়া লোকসংখ্যাও কম নয়। আঘোরীদের সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে কীভাবে একজন আঘোরী সাধু হওয়া যায়।
আঘোরীদের বিশ্বাস
আঘোরীরা মূলত দেবতা ‘শিব’-এর পূজারী। তারা বিশ্বাস করে শিবই সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, ধ্বংসকারী এবং সবকিছুর পরিচালনাকারী। শিবের মহিলা রূপ মৃত্যুর দেবী মহাকালী’-এর উদ্দেশ্যই তারা প্রার্থনা করে আঘোরীদের মতে, হিন্দুধর্মের সব দেবতাই শিবের কোনো না কোনো রূপ। তাই আঘোরীরা শিবকে সন্তুষ্ট করার দায়িত্ব নিয়েছে।”
আঘোরীদের বাসস্থান
কালো চুলের বিশাল জটাধারী আঘোরী সাধুদেরকে সহজেই চোখে পড়ে। ধ্যান করার জন্য সাধারণত তারা শ্মশানের মতো নির্জন জায়গাকেই বেছে নেয়। এছাড়াও হিমালয়ের ঠান্ডা গুহা, গুজরাটের নিষ্প্রাণ মরুভূমি এমনকি বাংলার ঘন জঙ্গলেও তাদের দেখা মেলে। তবে বেনারাস শিবের প্রিয় জায়গা হওয়ায় গঙ্গার তীরেই আঘোরী সাধুদের সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।
আঘোরীদের পোষাক
আঘোরীদের জন্য চুল বা গোফ-দাড়ি কাটা নিষিদ্ধ। সাধারণত কালো পোষাক পরতে দেখা গেলেও অনেক সময় তাদেরকে দেখা যায় অর্ধনগ্ন অবস্থায়। শ্মশানে ধ্যান করার সময় তারা পোড়ানো মৃতদেহের ছাই সারা শরীরে মেখে তার উপরে বসেই ধ্যান করা শুরু করেন, এ সময় তাদের পরনে থাকে শুধুমাত্র একটি কৌপিন। এছাড়া মানুষের খুলি তো গলায় রয়েছেই। মাঝেমধ্যে তাদেরকে দেখা যায় সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায়, পার্থিব সবকিছু ঝেড়ে ফেলার উদ্দেশ্যে তারা এটি করে থাকেন!
আঘোরীদের খাবার
অন্যান্য সাধুদের চেয়ে আঘোরীদের একটি বড় পার্থক্য হলো খাবার। অন্যান্য সাধুরা যেখানে নিরামিষাশী, সেখানে আঘোরীরা খেতে পারে যেকোন কিছুই। আবর্জনা থেকে শুরু করে মানুষের মাংস এমনকি মানুষের মলমূত্র পর্যন্তও তারা খায়! কারণ? কারণ তারা বিশ্বাস করে শিব সবচেয়ে খারাপের মধ্যেও বিদ্যমান।
তাদের কাছে খাবারের স্বাদ বা চেহারা কোনো বিষয় নয়। তবে বেনারাসের মতো জনবহুল শহরেও কেউ তাদেরকে নরমাংস খেতে বাঁধা দেয় না, কারণ তাদের খাওয়ার জন্য শ্মশানের পোড়ানো মৃতদেহ রয়েছেই।
অমাবস্যার মধ্যরাতে তারা কালীকে খুশি করার জন্য মৃতদেহের সাথে মিলিত হয়! তারা বিশ্বাস করে, এর ফলে তাদের মধ্যে অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার সৃষ্টি হয়! মিলিত হবার সময় অন্যান্য সাধুরা বৃত্তাকারে ঘুরতে ঘুরতে মন্ত্র জপতে থাকে এবং শ্মশানে বাজতে থাকে ঢাকের বাজনা!