এক্সপ্লোর করা মন-মানসিকতা ও ব্রেনের জন্য ভালো

নানা জায়গায় ঘোরা এবং এক্সপ্লোর করা আমাদের মন-মানসিকতা ও ব্রেনের জন্য ভালো। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ নতুন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেলামেশা ও কথা বলা আমাদের ব্রেনের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। যে লোক সমাজের নানা লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করে, দেখা যায় তাদের স্মরণশক্তি অনেকখানি বেড়ে গেছে, তার এডজাস্টমেন্ট করার ক্ষমতা এবং নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা বেড়ে যায়। যে শিশু বাড়িতে একা বড় হয়,; তার সঙ্গে যে শিশু স্কুলে যায়, বাজারে যায়; তাদের পার্থক্য তৈরি হয়। 

মানুষ বেঁচে থাকলে বদলায়

কথায় আছে, মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়। সকালে বদলায়, বিকেলে বদলায়—কারণে বদলায়, অকারণে বদলায়। এই বদলানোটা দোষের নয়। সময়ের এই বহমান স্রোতোধারা মানুষকে বদলানোর মাধ্যমে পরিণত হতে সাহায্য করে। 


দুশ্চিন্তা

উদ্বেগের ক্ষেত্রে উইনস্টন চার্চিল বলেছেন, ‘যখন আমি আমার সমস্ত উদ্বেগের দিকে ফিরে তাকাই, তখন আমার সেই বৃদ্ধের গল্পটি মনে পড়ে, যে বৃদ্ধে তার মৃত্যুশয্যায় বলেছিলেন—তার জীবনে যত দুশ্চিন্তাজনিত আতংকে জর্জরিত ছিল, যেই সব দুশ্চিন্তার প্রায় কোনোটাই, কখনো ঘটে নাই।’

আমরা কখনোই আমাদের ‘ভবিষ্যত্’ জানি না। আমরা যা যেইভাবে ভাবি, কখনই তান সেইভাবে হয় না। অতীতেও হয় নাই, ভবিষ্যতেও হবে না। সুতরাং টানেলের শেষপ্রান্তে অবশ্যই আলো আছে। শুধু প্রশ্নটা হল, টানেলটা কতখানি লম্বা এবং আপনি সেই লম্বা টানেল পাড়ি দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন কি-না, কিংবা ভয় পাচ্ছেন কি-না। কখনো না কখনো আলো আসবেই—এই বিশ্বাস রেখে এগিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।


ব্রেইন-ড্রেইন’ : আমাদের অগ্রগতির পথে বড় অন্তরায়

 

উচ্চশিক্ষিত মানুষেরা কম সন্তান নেন। একারণে ক্রমেই বিশ্বে বুদ্ধিমান মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি “ব্রেইন ড্রেইন” বা মেধা পাচারের কারণেও আমরা মাথামোটা জাতিতে পরিণত হচ্ছি।

 তৃতীয় বিশ্বের মেধাবী ছাত্র, দক্ষ এবং উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা তাদের দেশ হতে তুলনামূলক উন্নত দেশে অভিবাসন করতে চান, যাতে তার দক্ষতা ও মেধা আরও ভালোমতো কাজে লাগাতে পারেন।

অদক্ষ শ্রমিকদের কোনো উন্নত দেশ নাগরিকত্ব দেয় না। কিন্তু দক্ষ, মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিতদের প্রয়োজন সব উন্নত দেশেই আছে। এটা যেন অনেকটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কণিকার কবিতার মতো—‘

কেরোসিন-শিখা বলে মাটির প্রদীপে,/

ভাই ব’লে ডাক যদি দেব গলা টিপে।/

হেনকালে গগনেতে উঠিলেন চাঁদা—/

কেরোসিন বলি উঠে, এসো মোর দাদা!’

 

এইখানে উন্নত বিশ্ব হল কেরোসিনের শিখা, আর মাটির প্রদীপ হল অদক্ষ অশিক্ষিত শ্রমিক। অন্যদিকে আকাশের চাঁদ হল দক্ষ মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি। সুতরাং গগনের চাঁদ অর্থাৎ দক্ষ মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিতদের তাদের দরকার। এভাবেই আমাদের আকাশের চাঁদগুলি বিদেশেই স্থায়ী হয়ে যান আর আমরা চাঁদহারা অন্ধকারের ডুবে আছি।

বেশ নীরবেই দেশ থেকে ‘মেধা পাচারের বিপ্লব’ ঘটে যাচ্ছে। অথচ সেদিকে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই! সবাই শুধু ক্ষমতা দখলের চিন্তা আর দেশকে লোপাট করার চিন্তায়। মেধাবী প্রজন্মের সঠিক পরিচর্যা ও তাদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ ও মূল্যায়নের ওপরই নির্ভর করে একটা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কেমন হবে। এদেশে মেধাবীরা তাঁদের মেধার মূল্যায়ন পায় না। অথচ তাঁর চেয়ে কম যোগ্যতার কেউ একজন রাজনৈতিক চেষ্টা-তদবির বা ঘুষ–বাণিজ্যের মাধ্যমে তাঁর কাঙ্ক্ষিত যোগ্য আসনটি দখল করে নিচ্ছেন। ফলে সিস্টেমের প্রতি, সার্বিকভাবে দেশের প্রতি তার একটা অনীহা জন্মে যায়। তখন তিনি দেশত্যাগে মরিয়া হয়ে ওঠেন। 


সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তির জায়গায় রেখে চিন্তা করুন

রোমান সেনাপতি ও একনায়ক জুলিয়াস সিজার ৫৮-৫০ খ্রিষ্টাপূর্বাব্দের গ্যালিক যুদ্ধের কথা লেখার সময় ‘আমি বদলা নিয়েছি’ না লিখে লিখেছিলেন ‘সিজার বদলা নিয়েছে’। নিজের নাম নিয়ে নিজেকে সম্বোধনের এই কৌশলকে বলে ইলিয়েজম। কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তির জায়গায় রেখে চিন্তা করলে, আবেগ অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায় এবং নিরপেক্ষ হয়ে ভাবা যায়। জানেন তো সোলেমানস প্যারাডক্স বলে একটি গবেষবা আছে। ‘বাইবেল’ বর্ণিত প্রাচীন রাজা সোলেমান রাজ্যের সবাইকে বিজ্ঞ পরামর্শ দেওয়ার জন্য জনপ্রিয় রাজা ছিলেন । কিন্তু নিজের জীবনে কোনো সঠিক সিদ্ধান্তই নিতে না পারার কারণে শেষ পর্যন্ত রাজ্য ছেড়ে তাঁকে পালাতে হয়েছিল। অর্থাৎ, ‘আমরা নিজেদের ব্যক্তিগত সমস্যায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগি; কিন্তু অন্যেকে সিদ্ধান্ত বা পরামর্শ দেয়া সহজ হয়ে যায়। পুরো ব্যাপারটি ঘটে মনের ভিতর আবেগের জন্য। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় নিজেকে তৃতীয় ব্যক্তির জায়গায় রেখে চিন্তা করলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে


আইনস্টাইন হওয়ার চক্করে "ওভার প্যারেন্টিং "

 

যখন সন্তানের জন্য অতিরিক্ত ভালো চাইতে শুরু করবেন, বিপত্তি ঘটে তখনই। তাকে ওভার প্যারেন্টিং বলে। আমরা নিজেদের জীবনের না পাওয়াগুলো সন্তানের প্রাপ্তির খাতায় যোগ করতে গিয়ে মনের অজান্তেই সন্তানের ওপর কত ধরনের যে চাপ প্রয়োগ করি, তার ইয়ত্তা নেই। শুধু পুথিগত বিদ্যার পেছনে ছুটতে গিয়ে জীবনের অনেক জরুরি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমাদের সন্তানরা। সন্তানদের মানুষ করার নামে যে অতিরিক্ত অভিভাবকত্ব ফলাচ্ছি আমরা, তার ফলাফল অনেক ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হচ্ছে। অমুক আর তমুকের সন্তানের সাফল্য দেখে বার বারই নিজের সন্তানকে হেয় করতে থাকেন। আপনার এ ধরনের তুলনা সন্তানকে শুধু অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকেই ঠেলে দেয় না, আত্মবিশ্বাসকেও গুঁড়িয়ে দেয়, যার পরিণতি আরো ভয়ংকর। অথচ সন্তানদের শেখানো উচিত প্রতিযোগিতা যদি করতেই হয়, তা হবে কেবল নিজের সঙ্গে। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা।

 

আধুনিক সমাজে সবাই বিচ্ছিন্ন। নিউক্লিয়ার পরিবারে বেড়ে উঠছে সন্তানেরা। বাবা-মায়ের বাইরে দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা-ফুফু, মামা-খালাদের সংস্পর্শ নেই বললেই চলে। এ বিচ্ছিন্ন বিলাসিতা আমাদের এবং পরবর্তী প্রজন্মকে মানসিক ভাবে পঙ্গু করে দিচ্ছে। দেখা যায়, আমাদের দেশে সন্তানকে ঝুট-ঝামেলামুক্ত জীবন দিতে চান অনেক বাবা মা-ই। অতি আরাম-আহ্লাদ, ফুলের টোকাটি গায়ে না যেন লাগে প্রেক্ষিত তৈরি করে সন্তানদের বড় করতে চান। এভাবে তারা হয়ে ওঠে ননির পুতুল। কিন্তু সন্তানকে যতই আপনার শীতল ছায়ায় রেখে আরাম দেন না কেন, বাইরের কঠিন পৃথিবীর সঙ্গে লড়াইটা কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে একাই লড়তে হয়। নিজের ঘর পরিষ্কার করা, মেহমান আপ্যায়ন, ছোটখাটো রান্না, বিভিন্ন বিল দেওয়াসহ নানা কাজে সন্তানদের অংশ নিতে দিন। এই ছোট ছোট অংশগ্রহণই একদিন বড় কাজ করার রসদ জোগাবে। এতে করে চারদিক সামলিয়ে জীবনে কীভাবে এগিয়ে যেতে হয় এবং নেতৃত্বের মৌলিক গুণাবলির দীক্ষা ছোটবেলা থেকেই পাবে সন্তানরা।

 

অল্পতে তুষ্ট থাকা, সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত থাকার চেষ্টা, নিজের শখগুলোর যত্ন নেওয়া, মানুষের বিপদে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা পরিবার থেকেই শুরু হওয়া প্রয়োজন। জীবনে কেবল ভালো ছাত্র হওয়ার পেছনে না দৌড়িয়ে ভালো মানুষ হওয়ার চর্চা জারি রাখা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারকে হতে হবে এসব শুভচর্চার সূতিকাগার।মনে রাখা দরকার, সন্তানের প্রথম বিদ্যালয় হচ্ছে পরিবার। নৈতিক শিক্ষা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীল আচরণবিষয়ক শিক্ষা সন্তান বাবা-মায়ের কাছ থেকেই শেখে। বউকে আমরা যে আচরণ করব, আমাদের সন্তানরা সেটাই শিখবে। 


বিপদ কেটে গেলে

বিপদ কেটে গেলে আমাদের অবস্থা হয় উপকথায় কথিত কাকের মতো। কাক যেমন গাব খাইতে খুব পছন্দ করে; কিন্তু গলায় আটকে গেলে জপ তোলে—‘আর গাব খাব না/ গাবতলা দিয়ে যাব না।’ কিন্তু গলা হতে গাবের আঁটি নেমে গেলেই কাক পুনরায় রব তোলে—‘গাব খাব না, খাব কী?/ গাবের তুল্য আছে কী?’

  

দুষ্ট চক্রাবর্তে আটকে আছে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্ব


উন্নয়নশীল প্রায় সকল দেশে বারংবার পরিবর্তনের কথা বলে ছাত্র-জনতা বা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। এরপর কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন যে আসে না তা নয়; কিন্তু কিছুদিন না যেতেই নূতন শাসকরা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে একই কাজ শুরু করেন এবং অর্থ পাচারসহ দেশে সৃষ্টি করেন দুঃসহ পরিস্থিতি। সরকারি দল প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিচার বিভাগকে কবজা করে ফেলেন তারা। এভাবে এই সব দেশে যারা ক্ষমতায় থাকেন, শেষপর্যন্ত তাদের আরাধনা হয়ে দাঁড়ায়- ‘এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই’।

 

এইভাবে সংস্কার বা পরিবর্তনের ধুয়া তুলে ক্ষমতা গ্রহণ করলেও তারা দুর্নীতি ও অপশাসনের ক্ষেত্রে অনেক সময় পূর্ব শাসনামলকেও ছাড়িয়ে যান। এই চক্রাবর্তে আটকে আছে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্ব।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, যেই সহ দেশের হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেস্ক (এইচডিআই) তথা মানব উন্নয়ন সূচক খুব কম থাকে, সেই সব দেশে ছাত্র-জনতা বা সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা বেশি থাকে। মূলত বেকারত্ব, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, মূল্যবৃদ্ধি, নৈরাজ্য, দুর্নীতি বা লুটপাটের হাত ধরেই ঘটে এইসব অভ্যুত্থান। এই সব দেশে অভ্যুত্থান সফল হয় দুর্বল রাষ্ট্র ও দুর্বল নাগরিক সমাজের কারণে। যেমন- লাতিন আমেরিকা সোনা, তামা, কটন ও চিনি সম্পদে সমৃদ্ধ। তারপরও এই সহ দেশের নাগরিকরা দরিদ্র ও পশ্চাত্পদ।

 

বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯০ সাল হতে আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের দেশগুলোতে মোট ২৭ বার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। আবার ১৯৫০ হইতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে মোট ৪৮৮টি অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে আফ্রিকাতেই ঘটেছে ২১৬টি। এর মধ্যে ১০৮টি অভ্যুত্থান ছিল সফল। এই সকল দেশের জনগণ দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও অপশাসনে ছিলেন নিষ্পেষিত ও অসন্তুষ্ট। এই অনিয়ম ও অপশাসনের কবল থেকে এখনো তারা মুক্ত হতে পারেনি । কারণ ঐ একটাই-যে যায় লঙ্কায় সে হয় রাবন। 


কুড়ি মানে বুড়ি নয়?

 

আগের আমলে কলেরা, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, প্লেগ, কালাজ্বরের মতো মহামারি, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃত্যু গড় আয়ু কমিয়ে রেখেছিল। ফলে মানুষ প্রবীণ হওয়ার সুযোগ তেমন একটা পেত না। অল্প কিছুসংখ্যক মানুষ যারা প্রবীণ হতেন, তাদের বেশির ভাগই নারী। এই প্রবীণ নারীরা সমাজে, পরিবারে খানিকটা অসম্মান-অপমানের শিকার হতেন। তাদের সবাই বুড়ি হিসেবে সম্বোধন করতো। কানা বুড়ি, চরকা বুড়ি, কুটনি বুড়ি, কুঁজো বুড়ি, উকুনে বুড়ি, পেত্নি বুড়ি, ডাইনি বুড়ি—এসব বলে প্রবীণ নারীর চলাফেরা, আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা হতো। নেতিবাচক পরিচিতি দিতে বলা হতো—চাল নষ্ট মুড়ি আর পাড়া নষ্ট বুড়ি। ফলে প্রবীণ নারীরা রাগে-দুঃখে, অসম্মান, অপমানে অভিযোগ, নালিশ, অভিশাপ দিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তবে প্রবীণ পুরুষদের হাতে জমিজমা, সহায়-সম্পদ থাকায় তারা তেমন একটা বিড়ম্বনার শিকার হতে হতো না।

 

নোবেল বিজয়ী আমেরিকান লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ১৯৫২ সালে রচনা করলেন ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ নামের কালজয়ী উপন্যাস। উপন্যাসের নায়ক সান্তিয়াগো ৮৫ বছর বয়সি কিউবান মৎস্য শিকারি। স্ত্রী বেঁচে নেই। একাকী থাকেন। যিনি প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে বিজয়ীর বেশে ফিরে আসেন। নিঃসঙ্গতা, হতাশা, সমালোচনা, ক্লান্তি তার কাছে পাত্তা পায় না। এতে সারা পৃথিবী প্রবীণদের স্পেস দিতে শুরু করে।

 

আমাদের দেশে প্রবীণদের জন্য আলাদা করে বিনোদন নেই। আছে বিক্ষিপ্তভাবে। প্রবীণের মন-মানসিকতা, চাহিদা, বিনোদন বিবেচনায় নিয়ে প্রবীণ ক্লাব,সমিতি তৈরি করা সময়ের দাবি। বাংলাদেশে প্রায় ২ কোটি প্রবীণের বসবাস। তাদের জীবনের নানান চ্যালেঞ্জ, সংকট, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, প্রেম-বিরহ, ব্যথা-বেদনা, নিঃসঙ্গতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ বার্ধক্যকে উপভোগ করার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হোক। 


 ‘চিন্তা’ করার ধীশক্তি

আসলে আমাদের বেশির ভাগ মানুষই খুব বেশি ‘চিন্তা’ করার ধীশক্তি রাখেই না। বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন মনে করতেন—‘৫ শতাংশ মানুষ চিন্তা করতে পারেন। ১০ শতাংশ মানুষ মনে করেন যে, তারা চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা রাখেন। অন্যদিকে ৮৫ শতাংশ মানুষ যেন পণ করেছে, তারা বরং মারা যাবেন তবু চিন্তাভাবনার ধার ধারবেন না।’ তারা আসলে অবোধ শিশুর মতো। যেই শিশু জানে না—আগুনে হাত দিলে হাত পুড়বে—সে তো আগুনের উজ্জ্বল জ্যোতি দেখে তাকে ধরতে ব্যাকুল হবেই।


একা মানে বোকা

আপনি পৃথিবীতে যখন এসেছিলেন তখন এত দুর্বল ছিলেন যে, মায়ের সাহায্য ছাড়া নড়া-চড়া বা খাবারটুকুও মুখে নিতে পারতেন না। আপনি যখন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন, তখনও এরকম অত্যন্ত দুর্বল ও অসহায় থাকবেন। তার অনেক আগে থেকেই অর্থাৎ মধ্য বয়সের পর থেকেই একাকিত্বের মাধ্যমে শুরু হবে এই বিরক্তিকর পথ চলা। বয়স যত বাড়বে, তত একা হতে থাকবেন আর সুত্র অনুযারী একা মানে বোকা।

একটাই জীবন! আমার এই জীবনের দৈর্ঘ্য কত, তা আমরা কেউ জানি না। অর্থাৎ একই সময় জন্ম নেয়া এই মানুষগুলোর একসাথে থাকার এই পরিসর খুবই ছোট। তারপরও ক্ষণিকের এই যাত্রায় নিজেদের মধ্যে কেন এত হানাহানি, এত মারামারি, এত হিংসা, এত বিদ্বেষ, এত সংঘাত, এত বেঈমানী। 


'প্রযুক্তিকে আপন করতে হবে সিমুলাক্রাম’ রক্ষা করে...

 

প্রযুক্তির টুকিটাকি ক্ষেত্রগুলো রপ্ত করে নিলে আপনার জীবনযাপন খুব সহজ হয়ে যাবে। দিনের পর দিন প্রযুক্তির ক্ষেত্রসমূহ উন্নত থেকে উন্নততর হতে থাকবে। তবে , 'প্রযুক্তি একটি আশ্চর্জজনক ব্যাপার। এটি যেমন আমাদের স্বাধীনতা দান করে ঠিক, তেমনিভাবে আমাদের পায়ে শিকলও পরিয়ে দেয়। ফরাসি দার্শনিক জাঁ বদ্রিয়ারের ভাষায় ‘সিমুলাক্রাম’। যখন নকল চর্চার হতে হতে মূল বিষয়টাই হারিয়ে যায়।

একসময় কিছু মূল্যবোধ অন্তত আমরা লালন করতাম। এখন সেসবের একটা বড় অভাব দেখতে পাই। বয়স্কদের সম্মান দেখানো, সৌজন্যবোধের চর্চা, পরার্থপরতা, অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকা, ঘুষ-উৎকোচ থেকে দূরে থাকা, ধর্মটাকে পোশাকে-আস্তিনে বয়ে না বেড়িয়ে হৃদয়ে ধারণ করা, ধর্মের নামে বিভেদ সৃষ্টি না করা, সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের নিপীড়ন না করা, নিজের চর্চা অন্যের ওপর চাপিয়ে না দেওয়া, সংবেদনশীল বিষয়ে কোনো বিতর্ক সহিংসতায় সমাধান না করে যুক্তি দিয়ে তার সমাপ্তি ঘটানো। এসবের চর্চা আমি শৈশবে দেখেছি, কিন্তু এখন দেখছি খুবই কম। আগামী ত্রিশ-চল্লিশ বছর পর ভিনদেশের কেউ বাংলাদেশে বেড়াতে এলে যা দেখতে পাবেন, তা্তে কোনো সংস্কৃতি হয়তো থাকবে না, থাকবে শুধু প্রযুক্তির বাড়াবাড়ি।  


গুজবপ্রিয় বাঙালি 


বাঙালি গুজবপ্রিয় জাতি বলেই বাংলা ভাষায় “গল্পগুজব” একটি সমার্থক শব্দ।

কবি শামসুর রাহমান-এর ‘পণ্ডশ্রম’ নামে একটি ছড়া আছে, এই ছড়াটির প্রথম এবং শেষ দুই লাইন এইরকম:

 

‘এই নিয়াছে ঐ নিল যা! কান নিয়েছে চিলে,

চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে’।

 

নেইকো খালে, নেইকো বিলে, নেইকো মাঠে গাছে;

কান যেখানে ছিল আগে, সেখানটাতেই আছে।’

 

গুজবের পিছনে ছুটতে ছুটতে আমাদের দশাও হয়েছে এরকম। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য দ্রুত ছড়ানো হচ্ছে।

কেউ কেউ বলেন, গুজব বাতাসের চেয়েও দ্রুত গতিতে ছড়ায়। আগে গুজব ছড়াত মূলত মুখে মুখে। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

বাঙালি গুজবপ্রিয় জাতি। এজন্য বাংলা ভাষায় “গল্পগুজব” একটি সমার্থক শব্দ। এখনো বাঙালি গ্রামীণ বৌ-ঝি-রা ঘরে আর কর্তারা চায়ের দোকানে গল্পগুজব করে সময় কাটায়।

 

রবিন ডানবার নামের একজন নৃতাত্ত্বিক ১৯৯৮ সালে একটা বই লেখেন। নাম গ্রুমিং, গসিপ অ্যান্ড দ৵ ইভল্যুশন অব ল্যাঙ্গুয়েজ। এই বইতে তিনি দেখিয়েছেন প্রাণিজগতের মধ্যে সবচেয়ে বড় মগজ মানুষের। এই মানুষ দিন-রাত ছোট ছোট জিনিস নিয়ে বকবক করে সময় নষ্ট করে! এই ছোট কথা ও গুজবের একটা বড় ভূমিকা আছে মানুষের উন্নতির পেছনে। কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে ফেসবুকে মানুষ পরষ্পরের সাথে আলাপ করে; তবে সেখানে মানুষ থাকে না। থাকে মানুষের একটা আরোপিত চরিত্র। আসল মানুষ নিজেকে রাখে লুকিয়ে। আর লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিদিন অজস্র অডিও–ভিডিও ফাঁস করে, যার এক বিরাট অংশই ফেক বা গুজব। তারপরো মানুষ তাতে আগ্রহ নিয়ে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে।

 

বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষ করে টিকটক, ফেসবুক ও ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে যেভাবে মিথ্যা ও ঘৃণা ছড়ানো হয়, তা একটি সভ্য সমাজের জন্য খুবই উদ্বেগজনক। এমনকি এসব গণমাধ্যমে বহু ক্ষেত্রে চলে অশ্লীলতার বেসাতি। ভাষা ব্যবহারে ভদ্রতা, নম্রতা ও শালীনতার নেই বললেই চলে। গুজবকে রাজনৈতিক প্রচার, ব্যক্তিগত রাগ, ঘৃণা ও ব্যাবসায়িক স্বার্থ হাসিলে কারসাজি এবং সাম্প্রদায়িক উসকানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এরা। বর্তমানে এআই দিয়ে ছবি ও ভিডিও এডিট করে অহরহ গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এছাড়া পুরোনো ভিডিওতে ডিপ ফেইক প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন একটি ভুয়া ভিডিও তৈরি করে গুজব ছড়ানো হয়। 


ফরেস্ট বাথিং বা ''প্রকৃতির সঙ্গে অধিক সময় কাটান'

 

আপনি কম স্ট্রেস অনুভব করেন যখন প্রকৃতির কাছাকাছি থাকেন। জাপানিরা এটিকে 'ফরেস্ট বাথিং' বলে থাকে। যদি আপনি গাছগাছালি এবং জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হেঁটে যান তাহলে আপনার রক্তচাপ এবং স্ট্রেস অনেকাংশে কমে যাবে।

- প্রাকৃতিক সূর্যালোক আপনাকে ভিটামিন ডি সরবরাহ করে, এটি আপনার ত্বক ও স্বাস্থ্যের উপর বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। প্রাকৃতিক নির্মল বাতাস থেকে আপনার ফুসফুস সতেজ হাওয়া পায় এবং এতে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটালে আপনার মানসিকতা এবং চিন্তাধারা প্রসারিত হয়। প্রকৃতি আপনাকে শান্ত, ধৈর্যশীল এবং সহনশীল হতে শেখায়। 


মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা

সম্প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা চালান একদল বিজ্ঞানী। নিউ সায়েন্টিস্ট পত্রিকায় এ বিষয়ে একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন লিখেছেন সাংবাদিক বব হোমস।

যুদ্ধপরবর্তী জাপান ও ডেনমার্কে আইকিউ বেড়েছিল। এই বৃদ্ধি প্রব্ণতাকে ‘ফ্লিন প্রভাব’ বলে। ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জেমন ফ্লিন বলেছিলেন, যুদ্ধপরবর্তী সময়ে ঐসব দেশে খবাবের পুষ্টিমান বাড়া এবং জীবনযাত্রার উন্নতি ও শিক্ষার সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার উন্নতি সম্পর্কযুক্ত, হয়। এ থেকেই ওই প্রবণতাকে ‘ফ্লিন প্রভাব’ বলে।

তবে একুশ শতকে এসে ফ্লিন প্রভাবের উল্টোটা ঘটছে বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা। অনেকে মনে করেন, ফ্লিন প্রভাব অনেকটা বংশগতির ব্যাপার। উচ্চশিক্ষিত মানুষেরা কম সন্তান নেন। একারণে ক্রমেই বিশ্বে বুদ্ধিমান মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্ববিদ রিচার্ড লিন মানুষের জিনের সক্ষমতা কমে যাওয়ার হার হিসাব করে বলেছেন- এই প্রবণতা অব্যহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে মানুষ আরো ১.৩ পয়েন্ট আইকিউ হারাবে।

আমস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তত্ত্বের অধ্যাপক জ্যাঁ তি নিজেনহিস বলেন, পশ্চিমারা ভিক্টোরীয় যুগের পর থেকে এ পর্যন্ত গড়ে ১৪ পয়েন্ট আইকিউ হারিয়েছে। তিনিও বিশ্বাস করেন, শিক্ষিত জ্ঞানী মানুষেরা এবং বুদ্ধিমতি নারীরা কম সন্তান নেয়ার কারণেই এটি ঘটছে।  


টাকা যখন সামাজিক স্ট্যাটাস

 

একটা সময় ছিল, যখন মানুষ স্যান্ডেল বা জুতা খুবই কম পায়ে দিতেন । স্রেফ অনুষ্ঠানে গেলে কেউ কেউ জুতা পরে যেতেন। যারা জুতা পরতেন ঐ ‘জুতা’ই ছিল তাদের আভিজাত্য। একসময় জুতা হয়ে গেল নিত্যপণ্য, খুবই প্রয়োজনীয়। জুতা তার আভিজাত্য হারাল।

২০ বা ৫০-এর দশকে স্ট্যাটাস ছিল স্কুলের গণ্ডি পার হয়ে পাবলিক পরীক্ষায় পাশ করা মানে বিশাল ব্যাপার। এই শিক্ষিতদেরকে মহান পাওয়ার হিসেবে শ্রদ্ধার চোখেই দেখত সবাই। কিছু বছর আগেও একজন চিকিত্সক, প্রকৌশলী, ব্যারিস্টার, ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিভিন্ন পেশায় যে পরিবারের সন্তানরা ছিলেন, তাদের নিয়ে পুরো এলাকা গর্ব করতেন, শ্রদ্ধা করতেন। সময়ে সময়ে স্ট্যাটাস পরিবর্তন হয়। এখন টাকার যুগ। কার কত আছে, তা দেখে সামাজিক স্ট্যাটাস তৈরি হয়।

টাকা না থাকলে জীবনের সকল গন্ধ-বর্ণ-রং-রস ফ্যাকাশে হয়ে যায়। বলা হয়ে থাকে, টাকা দেখলে নাকি কাঠের পুতুলও হাঁ করে ফেলে। টাকা মানুষের শরীর ও মনকেও উজ্জীবিত করে। মানুষের কত টাকা প্রয়োজন—তার কোনো ঊর্ধ্বসীমা নাই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাহার ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় যেমন বলেছেন—‘এ জগতে, হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি—।’ অর্থাত্ মানুষের অর্থ উপার্জনের তৃষ্ণা কখনো ফুরায় না। 


জিবের ডগায় মধু রাখা

কৌটিল্য বা চাণক্য তাঁর অর্থশাস্ত্র গ্রন্থে এক ব্যাখ্যায় বলেছেন। ‘রাজার কাজ পারিষদদের হাত থেকে চুরি ঠেকানো। তবে জিবের ডগায় মধু রাখা হলে তা না-চেখে থাকা যেমন কঠিন, ঠিক সেই রকম সরকারি অর্থ হাতের নাগালে এনে রাখলে, তা না হাতিয়ে স্থির থাকা খুব কঠিন।’ প্রাচীন গ্রিসের স্পার্টা নগরে নাকি কেউ চুরি করে ধরা পড়লে চুরির জন্য নয়, বরং ধরা পড়ার বোকামির জন্য তার শাস্তি হতো। বাংলাদেশেনও এই ব্যবস্থার প্রচলন শুরু হয়ে গেছে। আপনি চাকরি বা ব্যবসা করে যদি দু চারটা বাড়ি কিংবা জমি জমা করতে না পারেন, তাহলে লোকজন আপনাকে সৎ বলছে না, বলছে বোকা। 

 

"কমই বেশি"

"Less is more" বা "কমই বেশি"- এই নীতিই হচ্ছে সহজ জীবনের মূলমন্ত্র। এটি এমন এক ধরনের জীবনধারা, যেখানে দৈনন্দিন জীবনে সরলতা এবং কম জিনিসপত্র ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হয়। জাপানের যেমন সিন্তো ধর্মের সরলতা, ভাতৃত্ব এবং শেয়ারিং-এর উপর গুরুত্ব দিয়ে জেন সোসাইটি করা হয়-- সহজ জীবন-আচারন অনেকটা সেরকম । 

জ্ঞানের চোখ

মানুষের দুই ধরণের চোখ আছে। শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জ্ঞানের চোখকে বিস্তৃত করা। সাধারণ মানুষ যা দেখছেন, আপনি যদি তা-ই দেখেন; তাহলে বলতে হবে, শিক্ষা আপনার দ্বিতীয় চোখে আলো জ্বালাতে পারেনি। একজন অন্ধ যেমন পৃথিবীর কোনো সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে না, জ্ঞানের আলো ছাড়া আপনিও তা-ই, 

আপনি আপনার টাইম জোনে আছেন

শুনেছি, যে মানুষটা মাত্র ২৫ বছরেই বড় এক কো¤পানির সিইও হয়েছিলেন, তিনি বেঁচেছিলেন মাত্র ৫০ বছর। এর বেশি আর থাকা হলো না এই সুন্দর পৃথিবীতে। আরেকজন আছেন, যিনি সিইও যখন হলেন, তখনই তার বয়স ৫০। মানুষটা বেঁচে ছিলেন ৯০টা বছর! বেঁচে থাকাই তো বড় কথা।

বেঁচে থাকলে আপনার টাইমজোন আসবেই। অল্পতেই সব কেউ পেয়ে গেলো মানে সে আপনার চেয়ে ভালো আছে এমন তো নয়। আবার আপনি যা চান সেটা পাননি বলে আর কখনো পাবেন না, এমনও নয়।

আপনি আপনার মতোই থাকেন; আপনার মতো করে আপনার গতিতেই কাজটুকু মন দিয়ে করে যান। দেখেন কি হয়! যাদের দেখে আপনি শুধু আফসোস করেন, জেনে রাখেন তারা তাদের টাইমজোনে কাজগুলো করছে। আপনার সাথে নাও মিলতে পারে কিংবা আপনি তাদের সাথে তাল না-ই মিলাতে পারেন। আপনি শুধু আপনার টাইমজোনে থাকেন। সময় আসবেই।

আপনি খুব পিছিয়ে নেই, আবার আপনি কারো চেয়ে খুব বেশি এগিয়েও নেই। আপনি আপনার সময়ে আছেন। আর এটাই আপনার টাইম জোন।  


পারসোনাল ইন্টিগ্রিটি বজায় রাখুন

 

ইন্টিগ্রিটি হলো, তাদের প্রতি অনুগত থাকা, যারা আপনার সামনে উপস্থিত নেই। বিষয়টি আরেকটু খুলে বলা যেতে পারে। ধরুন, আপনি আপনার সহকর্মী মিলে অপর একজন সহকর্মীকে নিয়ে কথা বলছেন, তাকে নিয়ে এমন কিছু বলছেন যা তার সামনে হয়তো বলতেন না। অর্থাৎ যে মানুষটি উপস্থিত নেই তার প্রতি আপনি অনুগত থাকছেন না; তাকে আপনি রক্ষা করছেন না। আপনি আপনার ইন্টিগ্রিটি হারাচ্ছেন। আপনার যদি ইন্টিগ্রিটি থাকে তাহলে আপনি সেই ব্যক্তিটিকে সামনে ডেকে এনে বলবেন, ঠিক কোন জায়গায় তিনি ভুলটি করেছেন কিংবা ঠিক কোথায় ঝামেলাটা হয়েছে।

ছোটবেলায় সিনেমায় দেখেছিলাম, একজন ভদ্র নারী আরেকজনকে বলছেন,‘খালা গো, আপনাকে একটা গোপন কথা কই, আর কাউরে কইয়েন না। আপনে আপন মানুষ বইল্যা কইতাছি। ওই বাড়ির বউ কিন্তু পোয়াতি...’। এটা শুনে খালার চোখ বড় বড় হয়ে যায় এবং সেই ভদ্র নারী আবারও বলেন, ‘কাকপক্ষীও যেন না জানে গো’ এবং তিনি একই কথা পাড়ার সবাইকে বলে বেড়াচ্ছেন। এমন দৃশ্য নিশ্চয়ই আপনারাও দেখেছেন। ইন্টিগ্রিটি হলো মানুষটির অনুপস্থিতিতে তার প্রশংসা করা, সমালোচনা নয়, তার প্রতি অনুগত থাকা।



জরিপে উঠে এসেছে, ৮৩শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ সুযোগ পেলে দেশ ছাড়তে চায়...

তাহলে গত পঞ্চাশ বছরে আমরা কেমন সমাজ তৈরি করলাম—যেখান থেকে সবাই পালাতে চায়!? মানুষের ভিতর হতাশা আর দীর্ঘশ্বাস উর্ধ্বমুখী কেন? দেশান্তর হওয়ার এই নিরন্তর চেষ্টা কেন? কেন প্রতিবেশী রাষ্ট্র কাঁটাতারের বেড়া, ইলেকট্রিক ফাঁদ আর গুলি করে প্রতিনিয়ত আমাদের মারছে?

আসলে গত পঞ্চাশ বছরে আমরা একটা জনকল্যাণকর রাষ্ট্র বা সমাজ কোনটাই গড়ে তুলতে পারিনি। চলুন পাল্টে যাই, নিজেকে দিয়ে শুরু করুন। নিজেকে এমনভাবে তৈরি করুন, যেন কেউ একজন আপনাকে পেয়ে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কিছু পেয়েছি বলে মনে করে; আপনার পাশে থাকতে চায়।' 

সমালোচনাকে কখনো খারাপভাবে নিবেন না

মানুষ কখনোই সবদিক থেকে নিখুঁত কিংবা পরিপূর্ণ হয় না। সবাই একরকমও হয় না। তেমনি আপনাকেও মেনে নিতে হবে, আপনারও ভুল হতেই পারে। আপনার কাজেরও সমালোচনা হতে পারে, নিন্দা হতে পারে। নিজের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিন। আপনি চাইলে আপনার বদ অভ্যাস কিংবা ভুলগুলোর একটা তালিকা তৈরি করতে পারেন। সমালোচনাকে কখনো খারাপভাবে নিবেন না। মনে রাখবেন সমালোচনাই আপনাকে ধীরে ধীরে নিখুঁত এবং পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। 


 

ইহুদীদের ৫টি আলাদা বৈশিষ্ট্য, যে কারণে কারণে পৃথিবীর প্রায় সব বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তাদের দখলে।

 

.১) ইহুদীদের গর্ভবতী মায়েরা সবসময় গান বাজনা এবং তাদের স্বামীদেরকে নিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্যের বিভিন্ন বই পড়েন এবং গণিতের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেন। জন্মের পর সন্তান যাতে আরো বেশি মেধাবী হয়ে বেড়ে উঠতে পারে, সেজন্য আত্মীয়-স্বজনরা নিজেদের বাসায় নয় মাস জুড়ে অনুষ্ঠান করেন এবং বিভিন্ন জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোচনা শেয়ার করেন।

 

২) শিশুরা ইহুদীদের কাছে যেন ঈশ্বর। যার যত ব্যস্ততা থাকুক, পাশে কোনো শিশু দেখলে তাকে আদর না করে, বা তার সাথে কুশল বিনিময় না করে সে পা ফেলবে না। আর পরিচিত করো সাথে দেখা হলে প্রথমেই তার পরিবারের জুনিয়রদের কথা আগে জিজ্ঞেস করবে। শিশু ছাড়া পারিবারিক ভ্রমণ তারা খুব খারাপ চোখে দেখে।

 

৩) ইহুদীদের পরিবারে ধুমপান নিষিদ্ধ। অথচ পৃথিবীর বড় বড় সিগেরেটের কো¤পানিগুলো সবই ইহুদীদের। যদি আপনি তাদের বাসার অতিথি হয়ে ধুমপান করতে চান, তারা খুব বিনিতভাবে আপনাকে পাবলিক টয়লেটে গিয়ে ধুমপান করবার অনুরোধ জানাবে। তাদের মতে, ধুমপান মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয় এবং বংশ পর¤পরায় ত্রুটিযুক্ত মস্তিষ্কের মাথা মোটা বাচ্চা জন্মগ্রহণ করবে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে সব দেশে বা সমাজে মোটামুটি সবাই ধুমপান করেব এবং সিগেরেটের দাম খুবই সস্তা। সেখানে জনসংখ্যার খুব কমসংখ্যক মানুষ মেধাবী! বাংলাদেশের অলি-গলিতে সিগারেটের দোকান। কোনো জায়গায় বসে আড্ডা দিচ্ছেন, সেখানেও সিগারেট বিক্রেতা হাজির। বড় স্টেশনেও আপনি পুষ্টিকর কোনো খাবার না পেতে পারেন, চায়ের নামে চিনি খাওয়া আর সিগারেট পাবেনই। আমাদের নতুন প্রজন্ম এ ভিত্তির উপর বেড়ে উঠলে তার থেকে শ্রেষ্ঠ কিছু কিভাবে আশা করবেন?

 

৪) ইহুদীদের বাচ্চারা কি খাবার খাবে, কি পড়বে, সেটা সবসময় তাদের সোসাইটি ঠিক করে দেয়। বাচ্ছারা খাবার ও খেলাধুলার মাধ্যমে সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠছে কিনা, তাদের সোসাইটি তা নজরদারী রাখে। আইকিউ লেভেল এর বৃদ্ধির জন্য। শিশুকাল থেকেই প্রত্যেকটি বাচ্চাকে ভায়োলিন এবং পিয়ানো বাজানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাদের মতে, সঙ্গীতের ক¤পন মস্তিষ্কের কোষগুলোকে উদ্দীপিত করে। শিশুদের উপর শারিরীক বা মানসিক নির্যাতন বলে কোনো শব্দের সাথে তারা পরিচিত নন।

 

৫) ইহুদীদের এলাকাভিত্তিক তাদের একটি বাণিজ্য কেন্দ্র থাকে। যদি কোনো ইহুদী ব্যক্তির লাভজনক কোনো ব্যবসা আইডিয়া থাকে, তাহলে সেই বাণিজ্যিক কেন্দ্র হতে সুদবিহীন মূলধনের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় এবং সেটাকে সফল করতে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করে থাকে।

তাদেরকে বিশ্বব্যাপী যে সকল ইহুদী প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারা স্পন্সারশিপ দেওয়া হয়। যেমনÑ ডাক্তারী পাস করে যে সকল ইহুদী ছাত্র-ছাত্রী বের হয় তাদেরকে এই বাণিজ্যিক কেন্দ্রের আওতায় নিবন্ধন করে বেসরকারীভাবে প্র্যাকটিস করতে ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। ফলাফল সব স্পেশালিস্ট বড় ডাক্তার তারাই এবং এই কারণে পৃথিবীর প্রায় সব বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইহুদীদের দখলে।

আমরা কি ইহুদীদের মতন এমন একটা বুদ্ধিমান প্রজন্ম তৈরি করতে পারবো? উত্তর হ্যাঁ, এইজন্য পরিকল্পিত উদ্যোগ দরকার। 


মিনিটের যত্ন নিন, ঘন্টাগুলো নিজের যত্ন নেবে।

সময় ব্যবস্থাপনা হল জীবনের শ্রেষ্ট মন্ত্র। কারণ এটি ছাড়া সাফল্য অসম্ভব। আপনাকে কেউ সময় দিচ্ছে, তার মানে সে আপনাকে তার জীবন থেকে কিছু অংশ আপনায় দিচ্ছে। তাই তার জীবনের সেই অংশটুকুকে মুল্যায়ন করতে শিখুন। আপনি নিজেও কাউকে সময় দিচ্ছেন মানে আপনার জীবনের একটু অংশ তাকে দিচ্ছেন। তাই জীবনটা এতটা সস্তা নয় যে, কেউ একজন আসলো এবং আপনার জীবনের অংশ সে বিনামূল্যে নষ্ট করে দিয়ে গেলো। আবার আপনি যদি " আপনার অনুকুলে সময় আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন, তাহলে আপনার জীবনটাই নষ্ট করবেন। কারণ কখনো পারফেক্ট সময় আসে না, তৈরি করে নিতে হয়। 


মতৈক্যে পৌঁছানো বাঙালির জন্য ভীষণ কষ্টসাধ্য

বহুল প্রচলিত একটি কথা, যখন দুইজন ইংরেজ একত্রিত হন – তারা গঠন করেন একটি ক্লাব, দুইজন স্কটিশ যদি এক হন – তৈরি হয় একটি ব্যাংক, দুইজন জাপানি একত্রিত হলে জন্ম নেয় একটি গোপন সংগঠনের আর দুইজন বাঙালি একসাথে হলে সেখানে সৃষ্টি হয় তিনটি দলের! তার মানে? কোনো বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছানো বাঙালির জন্য ভীষণ কষ্টসাধ্য বা বিরল একটা ব্যাপার। 


সুখের জন্য দরকার সঠিক মানুষ।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা গবেষণা দাবি করছে, সুখ আমাদের ক্যারিয়ার, সফলতা বা অর্থসম্পদের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সুখের জন্য দরকার সঠিক মানুষ। ভুল ও টক্সিক মানুষকে দূর করে সঠিক ইতিবাচক মানুষদের খুঁজে বের করে নিজের আশপাশে রাখুন। সম্পর্ক একটা গাছের মতো। নিয়মিত যত্ন নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তবেই সেখানে গজাবে নতুন নতুন কুড়ি, ফুল আর ফল


পরাজিতরা কোন কিছু ঘটার অপেক্ষায় থাকে। তারা কখনই কোন কিছু ঘটাতে পারে না। যে সবকিছু তৈরি পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে, সে জীবনে কিছু করতে পারে না।


 পড়ে যাওয়ার পর কতবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন

ভয় হলো জীবনের লক্ষ্য অর্জনের সবচেয়ে বড় বাধা। ব্যর্থতা এবং ‘অজানা ভয় পেয়ে’ সফলতার পথে আমরা এগোতে পারি না। জীবনে সফল হতে হলে অজানা ভয়কে সবচেয়ে আগে বিদায় করতে হবে। স্বপ্ন পূরণ করতে গেলে চ্যালেঞ্জ, বাধা, সমস্যা আসবেই। আপনি কী অর্জন করেছেন, সাফল্য মাপার মানদন্ড সেটা নয় বরং আপনি পড়ে যাওয়ার পর কতবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন সেটাই আপনার মানদন্ড। প্রতিটা মুহুর্ত পূর্ণ উদ্যম নিয়ে বাঁচুন, কখনো হাল ছাড়বেন না, কখনো আত্মসমর্পণ করবেন না।

মানুষের আছে জ্ঞান-বুদ্ধি

সব প্রাণী বা পশুর মধ্যে কারও লম্বা দাঁত আছে, কারও লম্বা নখর আছে, কারও শুঁড় আছে, কারও লেজ আছে, লেজের মধ্যে কাঁটা আছে, কেউ রঙ পাল্টে ফেলতে পারে, সবারই একটা না একটা প্রতিরক্ষার অস্ত্র আছে। কিন্তু মানুষের সেরকম কিছুই নাই। মানুষের আছে জ্ঞান-বুদ্ধি। এই জ্ঞান-বুদ্ধির কাছে সব প্রাণীর অস্ত্র বেকার। এখন মানুষ যদি এই জ্ঞান-বুদ্ধি বাদ দিয়ে পশুর মত অস্ত্র নিয়ে অন্যকে শাসন করতে চায়, তাহলে আমরা একটা পশু সমাজ গড়তে পরব, জ্ঞান ভিত্তিক সমাজ গড়তে হলে জ্ঞানের চর্চা অত্যাবশ্যক। আমরা সেটা গড়তে পারবো। কারণ আমাদের তরুণ প্রজন্ম আগের চেয়েও বেশি স্মার্ট, বুদ্ধিমান, প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন ও আত্মবিশ্বাসী। তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে। তাদের মন ও মনন জিতে নিতে হবে, তবে মাথায় আঘাত নয়।  

অবকাঠামোগত উন্নয়ন

শুধু ইনফ্রাস্ট্রাকচার বা অবকাঠামোগত উন্নয়ন কোনো কাজেই আসবে না, যদি সুপার ইনফ্রাস্ট্রাকচার অর্থাৎ তার ভিতর প্রাণ না থাকে। সুপার ইনফ্রাস্ট্রাকচার হল সামাজিক ও সাংস্কৃতি উন্নয়ন। কোন দেশকে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হতে হলে, তাকে অবশ্যই সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে উন্নত হতে হয়। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে এই তিন স্রোত একই তালে এগিয়ে নিতে না পারলে কখনই স্থায়ী উন্নয়ন আসে না। বাংলাদেশ এখনও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশকে একই স্রোতে প্রবাহিত করতে পারেনি। যা আমাদের দেশ ও সমাজের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের কারণ। 


আলতু-ফালতু কাজে সময় অপচয় করে... স্বপ্ন পূরণের কল্পনা

 

আমাদের একটা কমন সমস্যা হচ্ছে- সমাধান জেনেও সেটা ফলো না করা। ঢিলামি আর ফাঁকিবাজি করে, আলতু-ফালতু কাজে প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা সময় অপচয় করেও, নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য আশা করা। আশা করি যে, একদিন আচমকা ঘুম থেকে উঠে দেখব, আলাদীন চেরাগ দিয়ে গেছে। কল্পনার এই পাগলামি বাদ দিয়ে বরং নিজের ভিতরের ইচ্ছাটাকে পাকাপোক্ত করুন। নিজেই নিজেকে কঠিন ডেটলাইন দিন। আধা ঘন্টা না পারলে, অন্তত পনের মিনিট সময় বের করুন। টার্গেটে পৌঁছানোর রাস্তা বা সময় পরিবর্তিত হলেও লাইনে থাকুন প্রতিটা দিন।

একটা বাস্তব সত্য ঘটনা বলি- একটা সময়ে হাত ধোয়ার প্রচলনটা ছিল না। এমনকি ডাক্তাররাও হাত ধুতো না কোনো অপারেশন করার আগে। 'ডক্টর ইগনাজ স্যামেল ওয়াইজ' নামে হাঙ্গেরিয়ান এক ডাক্তার চাইন্ড বেড ফিভার নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। ১৮৪৬ সালে তিনি একজন ফিজিশিয়ানের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং পিউপেরাল সেপসিস-এর মধ্যে কানেকশন খোঁজ পেলেন। তিনি দেখেন, যে সব ডাক্তাররা হাত ধোয়া নীতি মেনে চলছেন, তাদের অধীনে থাকা গর্ভকালীন মায়ের মৃত্যুর হার কমছে। তিনি তার ইন্টার্নদের জানিয়ে দিলেন, সবার হাত ধুয়ে নিতে হবে যে-কোনো ডেলিভারির আগে। আর ডেলিভারিতে ব্যবহৃত ইন্সট্রুমেন্ট ক্লোরিনেটেড লাইমে ধুতে হবে। তখনও জীবাণু তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সায়েন্টিফিক সোসাইটির লোকজন তখনও বিশ্বাস করতো রোগ - বালাই হয় খারাপ আত্মা দিয়ে বা রোগীর উপর কিছু ভর করলে ইত্যাদিতে। সেখানে ডক্টর ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ শুধুমাত্র তার ডাক্তারদের হাত ধুইয়ে গর্ভকালীন মৃত্যুর হার অর্ধেক-এ নামিয়ে ফেললেন।

এবার তিনি মরিয়া হয়ে সকল গাইনি অ্যান্ড অবসের ডাক্তারদের চিঠি পাঠাতে শুরু করেছিলেন যেন, তারা হাত ধুয়ে, ইনস্ট্রুমেন্টস ধুয়ে কাজ করেন। তখন সবাই বিরক্ত হয়ে তাকে পাগল মনে করে দেয়া হলো মেন্টাল এসাইলামে। কেউ বললো তার উপর বদ আত্মা ভর করেছে।

মেন্টাল এসাইলামের গার্ডরা তাকে প্রচণ্ড পেটালো। পেটানোর ফলে তার হাতে-শরীরে ক্ষত থেকে পচন ধরে যায়। সেখান থেকে তার মৃত্যু হয় মাত্র ৪৭ বছর বয়সে।

জীবাণু তত্ত্ব, অর্থাৎ রোগের উৎপত্তি জীবাণু থেকে হয় এমন তত্ত্ব আবিষ্কারের অনেক বছর পর তার স্বীকৃতি মেলে। তাকে আজ এন্টিসেপসিসের পাইওনিয়ার বলা হয়।

তার জীবন থেকে একটা বিষয়ে আমরা শিক্ষা পাই, তা হলো-একা মানে বোকা, আপনাকে সংগঠিত হতে হবে। আপনার আইডিয়া বা আবিস্কার যতই ইউনিক এবং বৈজ্ঞানিক সত্য হিসাবে প্রমাণিত হোক, তা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে অরগানাইজিং হতে হবে। সুতরাং সেচ্ছাসেবক হিসেবে যেকোনো সংগঠনের সঙ্গে থাকুন 


টাইমকে ওয়েস্ট না করে রিস্ট করে তুলুন। আপনার নাগাল কেউ পাবে না।

 

আমাদের দিনের বেশিরভাগ ফোন কলই দেখবেন জরুরি নয়। তারপরও বেশিরভাগ মানুষই ফোনে কথা বলতে থাকেন এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো গুরুত্বহীন। কবি শামসুর রহমানকে দেখেছি, অতি প্রয়োজনীয় কথাটুকু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শেষ করে গুড়ভাই, থ্যা্কং ইউ বলে বিদায়ের সংকেত দিচ্ছেন তিনি। ৩০ সেকেন্ড এর বেশি ফোনে কথা বলাকে তিনি গুরুত্বহীন, এনার্জির অপচয় মনে করতেন।

 

অনেককে দেখবেন, প্রতি মুহূর্তে চ্যাট করছেন, স্ট্যাটাস দিচ্ছেন যা অতি গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনি যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে। তখন মোবাইল ফোনে এক বন্ধু জানাল, এক্ষুণি ক্যান্টিনে চলে আয়, শিলা এসেছে। বন্ধুর ফোন পেয়ে আপনি ক্লাসে না গিয়ে চলে গেলেন ক্যান্টিনে। এভাবে জরুরি সময়গুলো গিলে খেয়ে ফেলছে গুরুত্বহীন কাজ । আপনি যদি এইভাবে সময় নষ্ট করেন, তাহলে জীবনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়াটাকে গুরুত্বহীন মনে হবে। প্রায়শই মনে হবে আপনি পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। এই পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই এভাবে তুচ্ছ বিষয়ে সময় কাটায় বেশি। সারাদিন দেখবেন প্রচণ্ড ব্যস্ত। কিন্তু কোনোটাই গুরুত্বপূর্ণ নয়। সময় শেষে তারা মনে করে যে, তারা জীবনে কোনো সুযোগ পায়নি।

একটি পরিবারে অনেককে দেখবেন, তারা কোনো কাজ করবে না। মা-বাবা কিংবা ভাই-বোনের উপার্জন মহাআনন্দে ভোগ করছেন। আবার অসংখ্য সরকারি চাকরিজীবী আছেন যারা অফিসের কাজ না করে গল্প-গুজব আর আড্ডায় সময়টা ব্যয় করে। তারাও দায়িত্বজ্ঞানহীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত।

 

গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, আপনি যত দ্রুত চলবেন, সময় তত ধীরে চলবে। কোনো বস্তু যত দ্রুত চলে, সময় সেই বস্তুর জন্যে তত আস্তে চলে। আইনস্টাইন-এর কল্যাণে আমরা সবাই এই আপেক্ষিক তথ্যটা এখন জানি। তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ও প্রতিটি সেকেন্ডকে গুরুত্ব দিতে হবে। একটা দিন চলে যাওয়া মানে জীবন থেকে চব্বিশটা ঘণ্টা ঝরে যাওয়া। এডিসন বলেছেন- ঈশ্বর যদি আমাকে জন্মভূমি বেছে নেবার অধিকার দিতেন, তাহলে আমি মঙ্গল গ্রহই বেছে নিতাম। কারণ মঙ্গল গ্রহের দিন পৃথিবীর চেয়ে চল্লিশ মিনিট বড়। অন্তত সে সময়টা বেশি কাজ করা যেতো।

 

মোট কথা হলো : সাফল্যের রহস্য লুকিয়ে আছে সময় বিভাজনে। চব্বিশ ঘণ্টার দিনটা আপনার কাছে আট ঘণ্টা, না বাহাত্তর ঘণ্টার হবে, সেটা নির্ভর আপনি কিভাবে সময় ব্যয় করছেন তার উপর। কেউ সারাদিনও কাজ করে কুলিয়ে উঠতে পারে না, আবার কেউ অত সময় নিয়ে কি করবেন ভেবে উঠতে পারে না। এই দু’পক্ষের কাছে সময় একটা বিড়ম্বনা। সময়ের সদ্ব্যবহার কি করে করবেন, তা না জানার জন্য এদের এমনটি হয়। সময়কে নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যয় করতে পারলে সব কিছুই আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে 


লোকের কথায় কান দিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন নাতো?

 

কিছু মানুষ আছে, যারা দু’একবেলা অনাহারে থাকতে রাজি; কিন্তু অন্যের হাসিঠাট্টার পাত্র হতে রাজি নয়। কে কী বলবে, কে কী ভাববে- এই নিয়ে তটস্থ থাকে তারা। তাদের হাজারও সংকল্প ব্যর্থ হয়, স্বপ্ন হারিয়ে যায়, তারা নিজেকে আড়াল করতে তৎপর থাকে, মানুষের মাঝখানে অবস্থান করতে কিংবা নিজেকে প্রকাশ করতে অনিচ্ছা পোষণ করে।

 

অনেক সময়েই নিজের পছন্দের কাজটা করিনা এই ভেবে যে, ঠিকমতো না করতে পারলে হয়তো লোকে হাসবে, পিছে কানাঘুষো করবে। অথচ লোকের কথা না ভেবে কাজটা করে ফেললে হয়তো দারুণ কিছু হয়ে যেতে পারতো। এই যে লোকের কথা ভেবে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা, এটাই আমাদের জাতি হিসেবে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম একটি কারণ।

 

কে কী বলল, মন্তব্য করল, সমালোচনা করল- সেদিকে কর্ণপাত না করে নিজ উদ্যমে, আপন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যেখানে ব্যর্থতা আসবে, সেখান থেকেই পুনরায় পথ চলতে হবে, হার মানা যাবে না। একবার না পারলে শতবার চেষ্টা করতে হবে।

চলুন ছবিতে দেয়া কবিতাটি এভাবে পড়ি-

 

করিতে পারি সকল কাজ,

নাহি ভয়,নাহি লাজ

সংশয়ে সংকল্প নাহি টলে,

পাছে লোকে যাই বলে। 



চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং-এর জীবন থেকে শিক্ষা

 

শি জিন পিং -কে চীনের আজীবন প্রেসিডেন্ট বলা হয়। শি জিন পিং ১৯৫৩ সালে বেইজিংয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শি-ঝং-জুন ছিলেন মাও-সে-তুং এর অধীনে চায়না কমিউনিস্ট পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান। ফলে প্রভাবশালী পরিবারে শি-জিন-পিং-এর জন্ম হওয়ায় বেইজিংয়ে তার শৈশবও ভালো কাটছিল। কিন্তু তার সে সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। তার বাবা ছিলেন মুক্তমনা ঘরানার। ১৯৬২ সালে তিনি মাও-সে-তুং এর কিছু নীতির সমালোচনা করে লেখা একটি বইয়ের পক্ষে কথা বলায় মাও-সে-তুং তাকে জেলে পাঠিয়ে দেন। এদিকে ১৯৬৮ সালে মাও সে তুং ডিক্রি জারি করেন, শহুরে তরুণদের গ্রামে গিয়ে গরিব চাষীদের সাথে থেকে জীবন ধারণের শিক্ষা নিয়ে আসতে হবে। ১৫ বছর বয়সী শি-জিন-পিংকেও বেইজিং ছেড়ে চলে যেতে হলো। চীনের উত্তর-পশ্চিমের শিয়ানজি প্রদেশের একটি দরিদ্র গ্রামে। স্বাভাবিকভাবেই তিনি গ্রামের দরিদ্র লোকদের পরিশ্রমী জীবনের সাথে অভ্যস্ত ছিলেন না। তাই তিন মাস পরেই তিনি বেইজিংয়ে পালিয়ে আসেন। কিন্তু এতে তাকে ছয় মাস জেল খাটতে হয়। এরপর তাকে আবার পাঠানো হয় ইয়ানান শহরের লিয়াংজিয়াহ গ্রামে। এবার তিনি নতুন জীবনধারা মেনে নিলেন। সেখানে তাকে ছয় বছর থাকতে হয়।

 

ষাটের দশকে চীনের গ্রামীণ জীবন ছিল খুবই কঠিন। সেখানে বিদ্যুৎ ছিল না, কৃষিকাজের যন্ত্রপাতিও ছিল না। শি জিন পিং তখন পিঠে সার বহন করতেন, বাঁধ নির্মাণের কাজ করতেন, রাস্তা সংস্কারের কাজ করতেন। তাকে থাকতে হতো একটি গুহার মধ্যে আরো তিনজনের সাথে। তাদের জাউ, লতাপাতা আর বান খেয়ে থাকতে হতো। অনেক প্রতিকৃলতার মধ্যেও শি জিন পিং গুহায় রাতের বেলা কেরোনসিনের ল্যাম্পের আলোয় পড়াশোনা করতেন। তিনি সেই সময়ের স্মৃতি নিয়ে বলেন, ‘১৫ বছর বয়সে যখন গ্রামে আসি, তখন আমি ছিলাম খুবই উদ্বিগ্ন ও বিভ্রাস্ত। ২২ বছর বয়সে যখন এই গ্রাম ছেড়ে যাই, তখন আমার লক্ষ্য ছিল সুনির্দিষ্ট। একই সাথে আমি ছিলাম আত্মবিশ্বাসী’।

 

১৯৭৩ সালে তিনি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেয়ার আবেদন করা শুরু করেন। কিন্তু তার বাবার জেলে যাওয়ার ঘটনার কারণে দশবার আবেদন করেও ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৪ সালে পার্টিতে যোগ দিতে সক্ষম হন। ১৯৭৬ সালে মাও সে তুং মারা যান। জিন পিং এর বয়স যখন ২৫, তখন তার বাবা জেল থেকে মুক্তি পান। তাকে রাজনৈতিকভাবেও পুনরায় পার্টিতে স্থান দেয়া হয়। বাবা মুক্তি পাওয়ায় তার পৃষ্ঠপোষকতায় শি-জিন-পিং এর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে অনেক উন্নতি হয়। তিনি বিভিন্ন প্রাদেশিক নেতৃস্থানীয় পদে কাজ করেন এবং পদোন্নতি পেতে থাকেন।

শি-জিন-পিং তার বাবার ঘটনা খুব ছোটবেলায়ই কাছ থেকে দেখেছেন। এটি থেকে তিনি অনেক কিছু শিখতে পেরেছেন। তিনি চাইতেন পার্টির পদোন্নতিতে কারো সাথে যেন তার শত্রুতা তৈরি না হয়। ২০০২-০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ঝেজিয়াং প্রদেশের পার্টি প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় স্থানীয় বেসরকারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রচুর প্রশাসনিক সহায়তা করেন তিনি। এতে ওই প্রদেশ আর্থিকভাবে অনেক উন্নত হয়। ঝেজিয়াংয়ে তার অর্জন প্রভাবশালী নেতাদের সুনজরে আসতে সাহায্য করে।

 

২০০৬ সালে দুর্নীতির দায়ে শাংহাইয়ের পার্টি প্রধান চেন লিয়াংইউকে পদচ্যুত করা হয়। তার জায়গায় ক্ষমতায় আসেন শি-জিন-পিং। শি-জিন-পিং শাংহাইয়েও কোনো শত্রুতা সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকেন। পরিবর্তে ব্যবসায়ীদের নিয়ে নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন। তার চেষ্টায় শাংহাইয়ে ব্যবসা বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হয়। ফলে ২০১২ সালের ১৫ নভেম্বর কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান শি-জিন-পিং। এবার তিনি শুরু করেন দেশব্যাপী দুর্নীতি বিরোধী অভিযান। ২০১৩ সালের ১৪ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বছরেই প্রায় ২,৬৬,০০০ পার্টি সদস্যদের জেলে পাঠান দুর্নীতির অভিযোগে। এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন পার্টির প্রভাবশালী নেতা। শি-জিন-পিংয়ের দুর্নীতি বিরোধী অভিযান চীনের জনগণের মাঝে খুব জনপ্রিয়তা পায়। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতা গ্রহণের শতবার্ষিকীতে চীনের অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের তিন গুণ ছাড়িয়ে যাবে। চীন সুপার পাওয়ার হবে শি-জিন-পিং এর ব্যবসা নীতি এবং দুর্নীতির বিরোদ্ধে জিরো টলারেন্সের কারণেই।

 

শি-জিন-পিং-এর জীবন থেকে আমাদের অনেক কিছু শিখার আছে। প্রথমত তিনি প্রতিযোগিতার পাশাপাশি, সহযোগিতার নীতিতে তার দলের নেতাদের সাথে সহঅবস্থান বজায় রেখে চলতেন। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের সহযোগিতা ও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে উৎসাহিত করতেন। তার এই সহযোগিতামূলক মনোভাবের কারণে তিনি সবার সেরা ব্যক্তিতে পরিণত হতে পেরেছেন। 



ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের দিকেই তাকিয়ে আছে পিছিয়ে পরা বঞ্চিত মানুষ

 

প্রীতিলতা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিলেন। ১৯২৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মিলিত মেধা তালিকায় পঞ্চম স্থান এবং মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে আইএ পাশ করেন তিনি। কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে ১৯৩২ সালে তিনি দর্শনে স্নাতক পাশ করেন। ১৯৩২ সালে চট্টগ্রামে ফিরে এসে নন্দনকানন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসাবে যোগদান করেন। পড়াতে যাচ্ছি বলে একদিন বাড়ি ছাড়েন। ইতোমধ্যে এনকাউন্টারে তার দলের অন্যেরা মারা গিয়েছে, মেয়েটি ইওরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণে নেতৃত্ব দেন। তার সহযোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জীবিত ধরা পড়ার প্রাক্কালে পটাশিয়াম সায়ানাইড ক্যাপসুল মুখে ভরে মৃত্যুবরণ করেন।

ভালো ছাত্র হওয়া মানেই দেশ ও জনগণ সম্পর্কে উদাসীন হওয়া নয়, ঘুষখোর আমলা হওয়া নয়। প্যাকেজলোভী কর্পোরেট কিংবা গরিবের পকেট কাটা ডাক্তার হওয়াও নয়। ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের দায়িত্ব অনেক বেশি। তাদের দৃষ্টি প্রসারিত হওয়া দরকার। তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে পিছিয়ে পরা নানাভাবে বঞ্চিত মানুষ। 


মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কোমড় ভেঙে যাচ্ছে।

 

রাস্তার হকার মাসে কামায় ৭০-৮০ হাজার! বাজারে মাছ কেটে দেয়া শ্রমিক কামাই করে মাসে ষাট হাজার! চা দোকানদার প্রতি বছর জমি রাখে। গ্রামে পাকা ঘর বানায়। এরা দরিদ্র শ্রেণী হিসেবে পরিচিত। একজন রিক্সাওয়ালা মাসে ২০ হাজার টাকা কামায়। একজন কাজের বুয়াকে চিনি তার মাসিক আয় ২৫ হাজারের মত। আর একজন ইন্টার্ন ডাক্তার কিংবা একজন এমবিএ কিংবা একজন ইঞ্জিনিয়ার ১৭ বছর পড়াশুনা করে চাকরি শুরু করে ১৫/২০ হাজার টাকা বেতনে।

এটা কিন্তু শুধু আমাদের দেশেই নয়। এমেরিকাতেও একজন উবার চালক একজন গ্রাজুয়েটের চেয়ে অনেক বেশী উপার্জন করে। সারা পৃথিবীতে দক্ষ প্রশিক্ষিত পেশাজীবীর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। সুতরাং গড্ডালিকার শ্রোতে গা ভাসিয়ে না দিয়ে কোন একটি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করুন। 



আবেগ সর্বস্বতা সাফল্যের পথে বাধা

 

আবেগ-সর্বস্ব মানুষদের কোনো কাজে নিষ্ঠা ও দৃঢ়তা থাকে না। এঁরা সর্বদাই একটি কাজ অসমাপ্ত রেখে আরেকটা কাজ ধরেন; আজ একটা নিয়ে চর্চা করছেন তো কাল আরেকটা। এঁদের পক্ষে বেশিদিন একটা লক্ষ্যে স্থির থেকে কাজ করে যাওয়া দুঃসাধ্য। যখন এঁরা শুরু করেন, তখন বেশ উৎসাহ নিয়েই করেন। কিছুদিন পরই তাঁদের আশাভঙ্গ হয়। সমস্ত উৎসাহ উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলেন তাঁরা। তাই আবেগ নয় বিবেক দ্বারা পরিচালিত হতে সচেতন থাকুন। আপনি যদি কোনো কাজে সফল হতে চান, তাহলে সেই বিষয়ে আপনাকে যথাসম্ভব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। আপনি যে বিষয়ে জানেন না, তা অন্যকে প্রশ্ন করে জেনে নিন।  


“নো মানি নো হানি”?

 

বিনিময়ের প্রধানত ২টা মাধ্যম। টাকা ও বিনয়। টাকা ছাড়াও অনেক কিছু আপনি অর্জন করতে পারেন শুধুমাত্র বিনয়ের মাধ্যমে। এমনকি, কিছু কিছু বিষয় আছে- যা টাকা দিয়েও অর্জন করা যায় না, সেখানে বিনয় অতি চমৎকার ও অলৌকিকভাবে কাজ করে। বিনয় মানে অন্যকে জিতানোর মাধ্যমে নিজের জয় ছিনিয়ে আনা। অর্থাৎ গলায় মালা পড়তে হলে মাথা নিচু করতে হয়, এটাই বিনয়।

আর বিনিময়ের অন্য মাধ্যম টাকা হলো আগুনের মত, আপনার দরকার অনুযায়ী ব্যবহার করে, বাকীটুকু নিভিয়ে রাখতে হয়। নয়তো তা কোন না কোনভাবে আপনার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।  


ভিড়ের মধ্যে থেকেও দিনশেষে আমরা একা

 

স্টাডি বলছে, বর্তমান পৃথিবীতে ৩৩% মানুষ একাকিত্বে ভোগেন - মানে প্রত্যেক তিনজনের একজন। তারা কিন্তু সবাই বয়স্ক নন। মধ্য বয়সের যুবক-যুবতীরা চারিদিকে মানুষের ভিড় থাকলেও মানসিকভাবে একা থাকেন বেশি। সাইকোলজিস্টরা বলছেন একাকিত্ব মানে কিন্তু একা থাকা নয়। *একাকিত্ব একটি "মনের অবস্থা" যেখানে মানুষটির মনে হচ্ছে সে একা, নির্বান্ধব*, অতি কাছের কেউ নেই।

 

মানুষ মূলত সামাজিক জীব। শিকারের প্রয়োজনে এক সময় মানুষ দল বেঁধে থাকতো। একা বাছার কোন জিনগত সাপোর্ট মানুষের নেই। কাজেই মানুষ কোনো কারণে একা হয়ে গেলে, প্রকৃতি শরীরবৃত্তীয়ভাবে মানুষকে ফাইটিং মোডে নিয়ে যায়। একাকিত্বে ভোগা মানুষের উপর স্টাডি করে দেখা গেছে যে, *তাদের প্রেসার বেশি, সুগার লেভেল বেশি এবং হার্টবিটও বেশি*। মানুষ তখন অপরিচিতদের থ্রেট হিসেবে দেখতে শুরু করে। তার মধ্যে একটি ভিসিয়াস সাইকেল তৈরী হয়। মানুষের ইমিউনিটি কমে যায়, ইনফ্লামেশন বেড়ে যায়, হার্ট ডিসিস, স্ট্রোক এবং প্রিম্যাচিওর ডেথের চান্স বেড়ে যায় *প্রায় ৫৮%* ! ডিমেনশিয়া, আলজাইমার, ডিপ্রেশন যে প্রায় মহামারীর আকার ধারণ করেছে তার অন্যতম কারণ এই একাকিত্ব।

 

তাহলে উপায়? আরো বেশি বেশি "*নতুন বন্ধু " তৈরী করা।ছেলে-বুড়োদের সকাল-সন্ধেতে *বন্ধুদের সাথে আড্ডা বা পাড়ার কাকিমা-জ্যেঠিমাদের "পাড়া বেড়ানো"* এটিই সুস্থ থাকার চাবিকাঠি ! 


বাঙালির প্রধান সমস্যা হল "শিষ্টাচার সমস্যা"

 

বেশিরভাগ বাঙালি এখনো টয়লেট ব্যবহার করতে জানেন না। টয়লেটটা ব্যবহার করার পর যে তা পরবর্তী ব্যক্তির জন্য পরিস্কার করে রাখতে হয়- এটা এরা শেখেন নাই। এরা মুখ বন্ধ করে নিঃশব্দে খেতে জানেন না। খেতে খেতে মোবাইলে কথা বলে। খাবারের সময় কথা বললে মুখের লালা ৩ফুট পর্যন্ত চারপাশে ছড়ায়, যা খালি চোখে দেখা যায় না এবং এভাবে একজনের রোগ-জীবানু অন্যের পাটে যায়; তা তারা জানে না। খাওয়ার পর নিজের খাবারের প্লেট বা উচ্ছিষ্ট খাবার টেবিলে ছড়িয়ে রাখে, ওয়েটার বা বাডীর চাকর-বাকর পরিষ্কার করবে বলে। এরা রান্না করে খেতে জানেন না। নিজের কাপড়-চোপড় নিজে ধুতে পারেন না। যেখানে সেখানে ধুমপান করেন। রাস্তায় কারো সামনে বা বাড়ির ভেতরে কিংবা বাচ্চাদের সামনে যে ধুমপান করাটা অশোভন- এটা এরা বোঝেন না। জীবনের এরকম আরো অসংখ্য প্রাথমিক জ্ঞান বা আচরণ আছে- যা এই উচ্চ শিক্ষিত প্রগতিশীল বাঙ্গালিরাও শিখতে পারেননি। কারণ, বাঙালির এই কাজগুলো করে দেন আমাদের 'মায়েরা'। আর ধনীদের বেলায় করে দেন তাদের 'বুয়া'।  


মাথায় কত প্রশ্ন আসে, দিচ্ছে না কেউ জবাব তার

 

প্রতিদিন ঘটে যাচ্ছে কত ঘটনা। সার্কাসের মত কত চিত্র, কত ক্যারিশমা বিনে পয়সায় দেখে বুঁদ হয়ে থাকছে এ মন। ভালোবাসার নামে ধোকাবাজী, নীতি-নৈতিকতার নামে বাটপারির কত মহড়া দেখছি আজকাল। দেখে-শুনে মাথায় কত শত প্রশ্ন জাগে। কোন উত্তর পাওয়া যায় না।

রেল লাইন বেঁকে যাচ্ছে। রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে। রেলপাত থেকে ট্রেন ছোট্ট শিশুর মত যখন তখন পড়ে যাচ্ছে। রেলের টিকেট কেন নিমিষেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে, বিমানের টিকেট কেন পাওয়া যায় না অথচ সীট কেন ফাঁকা থাকে? সড়কে কেন ফিটনেস বিহীন বাস সড়কে সদর্পে চলাচল করে? বিচারের বাণী নিরবে-নিভৃতে কাঁদে, কেন সাংবাদিকেরা বাছাবাছি করে নিউজ করে, ব্যাংকের টাকা কারা, কিসের বলে সাবাড় করে দেয়, ভল্টের স্বর্ণ ব্যাংকের লোকেরাইবা কেন নিজের মনে করে সরিয়ে নিয়ে যায়? অর্ধশিক্ষত-অশিক্ষিত ইউটিউবার, রীল মেকার, টিকটকারদের কেন এত দাপট? তাই, সুকুমার রায়ের সেই বিখ্যাত কবিতার মত হাজারো প্রশ্ন নিয়ে মাথা কুটে মরলেও একটিরও উত্তর মেলে না।



প্রাচীন চীনে চেং-এর ডিউক

প্রাচীন চীনে চেং-এর ডিউক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, ক্রমবর্ধমান ক্ষমতাশীল ও উন্নত ‘হু রাজ্য’ কেড়ে নিতে হবে। কাউকে এটা না বলে হু-র বৃদ্ধ শাসকের সঙ্গে তার যুবতি মেয়ের বিয়ে দিলেন। তারপর তিনি পরিষদ সভা ডেকে মন্ত্রীদের বললেন, ‘আমি একটা সামরিক অভিযানের কথা ভাবছি। কোন দেশ আক্রমণ করা যায়?’ তার প্রত্যাশা মতোই একজন মন্ত্রী বললেন, ‘হু রাজ্য ছাড়া আমরা সেরা হতে পারব না।’ ডিউক ক্ষোভ দেখানোর ভান করে বললেন, ‘হু এখন আমার আত্মীয় দেশ। আপনি কেন তা আক্রমণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন?’ অনৈতিক মন্তব্যের জন্য তিনি ঐ মন্ত্রীর সাজার ব্যবস্থা করলেন। হু-র শাসক এ কথা শুনলেন। হু-র সততার অনন্য দৃষ্টান্ত এবং তার মেয়ের সঙ্গে নিজের বিয়ের কথা ভেবে আত্মকের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তিনি কোনো সতর্কতা অবলম্বন করলেন না। কয়েক সপ্তাহ পরে ডিউক বাহিনী হু-রাজ্য দখল করে নিলো।


নিজেকে রক্ষা করার জন্য চারিদিকে দুর্গ নির্মাণ করবেন না

রাজা [ষোড়শ লুই]। উচ্চ আভিজাতরা যাতে তার সভায় থাকেন শুধু তাই খেয়াল রাখতেন না, তিনি নিম্ন অভিজাতদের সর্বদা খুঁজতেন। সবকিছু খেয়াল করতেন। অভিজাতরা স্থায়ীভাবে সভায় না থাকলে তিনি অসন্তুষ্ট হতেন এবং যাদের খুব কম দেখা যেতো তারা তার রোষে পড়তেন।

তিনি তার কাছে আসার সমস্ত মানুষ জনকে আন্তরিকতা দিয়ে কাছে টেনে রাখতেন, কখনো কাউকে খবরদারি, কটু কথা বলা, রাগ দেখানো কিংবা অভদ্রতা দেখাতেন না। তিনি মনে করতেন, নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত দুর্গ তৈরি করা আসলে আপনাকে সাহায্য পাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে।

 

পরিবর্তে নিজেকে অন্যের কাছে মেলে ধরুন। পুরনো বন্ধু খুঁজুন, নতুন বন্ধু করুন, নিজেকে আরো বিভিন্ন মহলে প্রবেশ করান। শত শত বছর ধরে এটাই যোগ্য নেতাদের কৌশল। আপনি অন্যদের সঙ্গে যত মিশবেন, আপনি তত উদার ও সহজ হতে পারবেন। আপনাকে যত্রতত্র যেতে হবে, বিভিন্ন মহলে ও বিভিন্ন ধরনের লোকের সঙ্গে মিশতে হবে।

কোথাও স্থায়ী না হয়ে আপনি সর্বদা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ্রুঘুরে বেড়ান। দেখা গেছে যেসব ব্যক্তি শৈশবে বাবার কর্মসূত্রে বা অন্য কারনে বিভিন্ন জায়গায় বেড়ে উঠেছেন, তারাই পরবর্তীতে সফলতা পেয়েছেন। যেসব ভাড়াটিয়া ঘুরে ঘুরে বাসা পাল্টিয়ে থাকেন, তাদের সন্তানরা বাস্তব ক্ষেত্রে হিরো হয়। 


কারোর পক্ষ অবলম্বন করে বসে থাকবেন না

বোকারা সব সময় পক্ষ অবলম্বন করার জন্য ছোটেন। নিজের স্বতন্ত্রতা রক্ষা করে আপনি অন্যদের প্রভু হোন। আপনার স্বতন্ত্রতার খ্যাতি যত ছড়াবে, আপনাকে পক্ষে টানার জন্য তত বেশি লোক আপনার কাছে আসবেন। চাওয়া একটা ভাইরাস। আমরা যদি দেখি যে একজন লোককে অন্যরা চাইছেন, আমরাও তাকে চাওয়ার আগ্রহ দেখাই। পক্ষ অবলম্বনের চেয়ে প্রয়োজনে দু’পক্ষের কাছে নতি স্বীকার করুন। নতি স্বীকার আপনাকে পাওয়ারে পরিণত করবে।

ইংরেজি প্রবাদ আছে যে, একটি ওক গাছ যখন ঝড়কে বাধা দেয়, একে একে তার শাখাগুলোকে হারায়, তাকে রক্ষা করার কিছুই থাকে না। গুঁড়িটাও মট করে ভেঙে পড়ে। কিন্তু যে ওক গাছ ঝড়ের সামনে ঝুঁকে পড়ে, সে দীর্ঘদিন বাঁচে, তার গুঁড়ি মোটা হয়, শিকড় গভীরে যায়।  



জীবনটা রেস নয়, জীবনটা জার্নি!

 

একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরেই এদেশের ছেলেমেয়েদের একটা বড় অংশ বলতে থাকে: আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা। এখন আর বয়স নেই? অনেক সময় আমাদের এমনটা মনে হতে পারে। বাস্তবতা হল, লক্ষ্য পূরণ করা আসলে যেকোনো বয়সে সম্ভব। আপনার বয়স ২০,বা ৯০ যাইহোক না কেন লক্ষ্য পূরণ করা নির্ভর করে আপনার মানসিক প্রস্তুতি, আগ্রহ এবং সঠিক কৌশলের ওপর।

 

লিও তলস্তয় সাইকেল চালানো শিখেছিলেন ৬৭ বছর বয়সে, আর্টিস্ট পাবলো পিকাসো বিয়ে করেছিলেন ছিয়াত্তর বছর বয়সে। লিওনিদ হুরউইজ, ৯০ বছর বয়সে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন! সবচেয়ে বেশি বয়সী যে মানুষটি এভারেস্টে উঠেছেন তাঁর নাম ইউকিরো মুইরা, ৮১ বছর বয়সে! হাল ছেড়ে দিবেন না। সফলতার মার্কশিট বলে কিছু নাই। যদি থাকতো তাহলে ড্রপ আউট স্টুডেন্ট বিল গেটস বিশ্বের সবচেয়ে ধনী হতেন না, মার্ক জুকারবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্তফা দেওয়ার দশ বছর পর অনারারি ডক্টরেট পেতেন না ।

লক্ষ্য পূরণ করতে সঠিক মানসিক প্রস্তুতি, আত্মবিশ্বাস এবং ধারাবাহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে আপনি যেকোনো বয়সেই সফল হতে পারবেন। বয়স একটা সংখ্যা মাত্র।  


নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করুন, গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন

 

যে হীনম্বন্যতায় ভোগে, তার যতই যোগ্যতা থাক, সে তুচ্ছ নগণ্যই রয়ে যায়। কারণ মনের অবস্থা থেকেই ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার উৎপত্তি হয়। কেউ নিজেকে তুচ্ছ মনে করলে, সে অনুরূপ হতে বাধ্য। তাই নিজেকে যে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না, সে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পার না, গুরুত্ব পায় না।

 

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চেহারা ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার নয়। সঠিক পোশাক পরুন, ভালো ফল পাবেন। মনে রাখবেন আপনার নিজেকে দেখে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে, আপনি নিজের গুরুত্বটা অনুভব করবেন।

মন মেজাজ ভালো করতে, আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে, পোশাক-পরিচ্ছদকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করুন। নিজেকে চটপটে সপ্রতিভ দেখালে আপনি নিজেও বুদ্ধিমান মানুষের মত চিন্তা করতে পারবেন।

 

বড় বড় বিক্রি করতে গেলে নিজেকে বিত্তবান দেখানো খুব জরুরি। আপনার বাইরের চেহারাটা আপনার সঙ্গে কথা বলে এবং অন্যদের সঙ্গেও কথা বলে। মানুষ কিন্তু আপনার বাইরের চেহারা দেখেই আপনার মূল্যায়ন করে। অর্থাৎ আপনাকে মূল্যায়নের প্রথম ভিত্তি আপনার চেহারা ও পোশাক। আর যে কোনো ধারণা গড়ে তুলতে যতটা সময় লাগে; তাতে প্রথম দর্শনে যে ধারণাটা সৃষ্টি হয় তা-ই সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়। জীবনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোর একমাত্র পথ হলো নিজের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠা। 


এমন কিছু বন্ধু তৈরি করুন যাদের মতামত আপনার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

 

আজকালকার জগতে সঙ্কীর্ণ মনোভাবাপন্ন মানুষের ভবিষ্যৎ অন্ধকারময়। যে মানুষটা সবদিক বিচার করে দেখতে পারে, সেই কাজে দায়িত্বভার ও পদমর্যাদা পায়। যদি আপনি বিএনপি পার্টিকে সমর্থন করেন তাহলে আপনার কয়েকজন বন্ধু যেন আওয়ামিলীগার হয়। এভাবে উল্টোটাও প্রযোজ্য (নারী হলে পুরুষ)। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করুন। বিপরীতমুখীদের সঙ্গে আলাপ করুন। তবে লক্ষ্য রাখবেন এরা সবাই যেন সম্ভাবনাময় বিচক্ষণ ব্যক্তি হয়। 


ফ্যাসিবাদ বনাম জাতীয়তাবাদ

 

ধরা যাক আমি একটা সরকারী মন্ত্রণালয়ের লোক, আর আমার দপ্তরে একটা চাকরি আছে। আমি মানুষের সাক্ষাৎকার নিচ্ছি, আর আমি সিদ্ধান্ত নেবো কে চাকরিটা পাবে। দুইজন চাকরি প্রত্যাশীর মধ্যে একজন যোগ্য নারী যাকে আমি কখনো দেখি নি, আরেকজন অযোগ্য কিন্তু সে আমার আত্মীয়। আমার কী করা উচিত? সবাই বলছে, আমার আত্মীয়কে চাকরিটা দিতে; কারণটা পরিষ্কার– সে আমার আত্মীয়। কিন্তু জাতীয়তাবাদ আমাকে বলছে যোগ্য অপরিচিত নারীটিকে চাকরিটা দিতে, কারণ একজন দেশপ্রেমিক নিজের পরিবারের চেয়ে জাতির স্বার্থকে প্রাধান্য দেবে। আর জাতির প্রয়োজন ভালো কর্মকর্তা, আমি যদি আমার আত্মীয়কে যোগ্য ব্যক্তির উপর নির্বাচিত করি তাহলে সেটা হবে জাতির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।

 

জাতীয়তাবাদ বাদ দিয়ে দিলে আমরা পতিত হবো একটা গোত্রবাদী বিশৃঙ্খলায়। যদি একটা রাষ্ট্রে জাতীয়তাবোধ না থাকে সেটা হয়তো স্বৈরতন্ত্র হতে পারে, অথবা গৃহযুদ্ধের দিকে চলে যেতে পারে।কঙ্গো, আফগানিস্তান আর দক্ষিণ সুদানে আমরা সেটাই দেখতে পাচ্ছি। ইরাক, সিরিয়া আর ইয়েমেনে এমন গোত্রবাদ বেড়ে জাতীয় ঐক্য নষ্ট হয়ে দু’টো ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে রূপ নিয়েছে।

আপনি যে দেশেই থাকুন না কেন, নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে, ভিনদেশের আবিষ্কার, পণ্য বর্জন করে চললে, আপনাদের জীবন ভীষণ একঘেয়ে আর অসম্ভব হয়ে যাবে। সারাজীবন শুধু নিজেদের তৈরি খাবার খেলে আপনি জানবেন না জাপানি সুশি বা তরকারি খেতে কেমন। সব বাদ দিয়ে শুধু ্বাংলা সাহিত্য পড়লে পবিত্র কোরানও বাদ দিতে হবে, কারণ তা মধ্যপ্রাচ্যে লিখা, আর এভাবেই ফ্যাসিবাদের জন্ম। আমার জাতিই পৃথিবীর সেরা জাতি, আর আমি নিজের জাতি ছাড়া অন্য কোনো জাতির সাথে মিশব না। এমন ধারণাটাই হচ্ছে ফ্যাসিবাদ, জাতীয়তাবাদ নয়। জাতীয়তাবাদ মানে বিদেশীদের ঘৃণা করা নয়। জাতীয়তাবাদ মানে নিজের দেশের মানুষকে ভালোবাসা। 


যে কাজে থাকে বেশি ভয়, সেটিই বেশি সাকসেসফুল হয়।

 

মানুষের জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে- অধিকাংশ মানুষই মৃত্যুবরণ করে তাদের মেধা কাজে না লাগিয়েই। তারা জানতেও পারে না মহান কিছু করার শক্তি তাদেরও ছিলো। যখন আপনি কোনো কাজের ইচ্ছা প্রকাশ করবেন, তখন বাস্তবে সেই কাজটা করার আগে বারবার কল্পনার মাধ্যমে সেই কাজটার ‘মহড়া’ দিন। কাজের সমস্ত খুঁটিনাটির দিকে নজর রাখুন। এর ফলে বাস্তবে কাজটা করা আপনার কাছে অনেক সহজ হয়ে যাবে।

 

মন থেকে ‘আমি পারবো না’ বাক্যটি মুছে ফেলুন। যে কাজে ভয় সেটিই বেশি সাকসেসফুল হয়। সাহস করে কাজটা শুরু করুন। মনে রাখবেন কলম না ধরলে কখনো লেখা আসে না। তেমনি কাজে নেমে পড়ুন, দেখবেন ঠিকই কাজ হয়ে যাবে।

 

যা করবেন না:

# প্রয়োজনের সময় সাহায্য না চেয়ে চুপ করে থাকবেন না। ।

# কোনো বিষয় না বুঝলেও চুপ করে থাকবেন না।

# অহেতুক শুয়ে সময় নষ্ট করবেন না।

# কোনো ব্যাপার অসহ্য মনে হলে বিরক্ত হবেন না।

# আপনাকে নিয়ে অন্যের বিরূপ মন্তব্য শুনতে গিয়ে রেগে যাবেন না।

 

যতো বেশি বেড়াবেন, নানা ধরনের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা ততো বাড়বে। ভ্রমণ শেখায় অনেক, বাড়ায় কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা। শেখায় প্রতিকুল পরিবেশে নিজেকে অনুকুল করে নিতে। তাই ঘরে বসে থাকবেন না 


৩০বছর শিক্ষার নামে কেড়ে নিয়ে "সিভি ডাস্টবিনে "

 

সিলেট শহরের রাস্তায় যদি আপনি হাঁটাহাঁটি করেন তাহলে ২০-২৫ বছরের ছেলেদের খুব কমই দেখবেন। বর্তমানে পুরো ইউরোপের আনাচে কানাচে সিলেটিদের পাবেন। যেসব তরুণ-তরূণী সিলেটে আছে, এদের প্রায় সবার বিদেশে প্রসেসিং চলতেছে অথবা এরা IELTS এর একটা ভালো স্কোর পেয়ে দেশ ছাড়তে চাচ্ছে।

সিলেটি সব তরুণ-তরূণীদের রাস্তায় আন্দোলনে পাবেন না, এদের রাজনীতি বা খেলার মাঠেও পাবেন না। এরা শুধু লন্ডন বুঝে, ইউরোপ বুঝে। ৭০ বছরের ছোট্ট একটা জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ৩০বছর শিক্ষার নামে কেড়ে নিয়ে তার সিভি ডাস্টবিনে ফেলে দিবেন, একজন সিলেটি এই সুযোগই দিতে চায় না।