অভ্যাস-০১  ▌ কিভাবে পড়ালেখা করতে হবে।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার লার্নিং অ্যান্ড ফরগেটিং ল্যাবের গবেষক মাইকি গার্সিয়ার বিখ্যাত ফরমুলা হচ্ছে-এমনভাবে পড়–ন, ভবিষ্যতে তা যেন অন্য কাউকে শেখাতে পারেন। শুরু থেকেই এ বিষয় মাথায় রাখুন। যা শিখছেন, সেটা অন্যকে কীভাবে বোঝাবেন। এতে পড়ায় মনোযোগ বাড়বে আর মনোযোগ ধরে রাখলে পড়া আয়ত্বে আসবে। পড়া শেষে একটি কাগজ বা মোবাইলে লিখে ফেলুন কী কী পড়েছেন। অর্থাৎ পড়ার তথ্যগুলো সংক্ষেপে নোট করুুন। এবার ৮ ঘন্টার মধ্যে পড়াটি মনে আছে কিনা, আবার কল্পনা করার চেষ্টা করুন। এভাবে পড়াটি বারবার পুনরাবৃত্তি করলে  দীর্ঘস্থায়ী মেমোরিতে স্থান পাবে। পড়া পুরো ১ ঘণ্টা টানা না পড়ে মাঝখানে ১৫ মিনিটের বিরতি নিন। এই সময়টুকু রিলাক্স করুন বা অন্য কিছু করুন। একটানা কয়েকঘণ্টা এক বিষয় না পড়ে আলাদা আলাদা বিষয়ে অল্প অল্প পড়–ন। এতে বেশি পড়া মনে থাকে। শুধু পড়ার টেবিল বা নির্দিষ্ট একটি স্থানে নয়, বেলকনি, মাঠ, ছাদ এভাবে যত বেশি বৈচিত্র থাকবে, তত পড়াশোনা মনে থাকবে। কোনো কিছু মনে না পড়লে আমরা দ্রুত বই বা নোট বের করবেন না, মনে করার চেষ্টা করুন। এতে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়তে থাকবে।


অভ্যাস-৪০ আত্মবিশ্বাস ও নিজস্বতা বজায় রাখতে পরনির্ভরশীলতা থেকে দূরে থাকুন।

সবসময় অন্যের উপর ভরসা করলে আপনি নিজের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন। নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস  হচ্ছে আত্মনির্ভরশীলতা। অপরের উপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল হলে, তাতে স¤পর্কের আসল আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যায়। কারণ আপনার কাছে যা নির্ভরশীলতা, অপরজনের কাছে তা-ই বাড়তি দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে একটা সময় আপনাকে তার বোঝা মনে হতে পারে। জন্ম নিতে পারে বিরক্তি। যার ফলে স¤পর্কে শুরু হতে পারে টানাপোড়েন,অশান্তি আর ঝগড়াঝাটি। স্বামীর বা বাবার ভালো আয় আছে বলেই নিজে অকর্মণ্য থাকাটাও অপমানের। এতে নিজের যোগ্যতা মরে যায়। নিজের যোগ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে পরনির্ভরশীলতা থেকে দূরে থাকুন।


অভ্যাস-৪০ ▌অন্য কারো ব্যবহার এবং আপনি

অন্য লোক যখন আপানার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে ভাতে আপানার কোনো দোষ নেই। ঐ লোকটি তার বর্তমান ও অতীতের নানা ঘটনার শিকার হয়ে আপনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে— এটা বুঝতে হবে। লোকটি হয়তো আপনার কাছে যা প্রত্যাশা করছে , তা না পেয়েই, এমন ব্যবহার করছে। তাই খারাপ ব্যবহারের প্রত্যুত্তরে আপনিও অনুরূপ খারাপ ব্যবহার করে ব্যাপারটার নিষ্পত্তি করতে চাইবেন (যেমন সবাই করে থাকেন) কিন্তু মনে রাখবেন— এটা আপনার মানসিক দেওলিয়ত্বের একটা লক্ষণ । ভুলটা যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব সংশোধন করে দিন, যাতে ভুলের প্রভাব বেশি দূরে ছড়াতে না পারে । বলার ভাষা এবং বাচনভঙ্গি যেন সোজাসুজি হয়। তির্যকভাবে, কর্কশভাবে, রেগেমেগে, শ্লেষাত্মক ভঙ্গিতে বলবেন না ।


অভ্যাস-৪০৩  ▌সহানুভূতিশীল হোন

বন্ধু-বান্ধবরা যখন দেখবেন যে আপনি তাদের মতামতকে বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা দেখাচ্ছেন না, তখন তাঁরাও আপনাকে এড়িয়ে যেতে আরম্ভ করবেন। অন্যের প্রতি উদাসীন থাকার গুরুতর মূল্য আপনাকে দিতে হবে । আপনি সকলের থেকে ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন, একাকীত্বে ভুগবেন । কারো কাছ থেকে কোনো পরামর্শ বা সংবাদ পাবেন না। অন্যের জ্ঞান/অভিজ্ঞতার ভাণ্ডারের দরজা আপনার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে । এই রকমের উদাসীন লোকেরা কারো কাছ থেকে কিছু শিখতে পারেন না । কারণ কেউ তাঁর সঙ্গে একত্রে কাজ করতেই চান না ।


অভ্যাস-৪০টেনশন দূর করার টেকনিক শিখুন।

টেনশন দূর করতে হলে বাস্তবকে মেনে নিন। বিপদ বা সমস্যা আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। এমন কিছু হঠাৎ ঘটতে পারে, যা এড়ানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে পরিস্থিতিকে মেনে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ । সবচেয়ে নিকৃষ্ট অবস্থাকেও যে মেনে নিতে পারে, তার হারাবার কিছুই থাকে না। সমস্যা চিরস্থায়ী নয়। মনে করলে দেখতে পাবেন বিগত দিনে আপনি অনেক বড় বড় সমস্যায় দিশেহারা হয়েছিলেন, ভয়ে আতঙ্কে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিলেন। সে সব সমস্যাগুলো কি এখন আছে? নিশ্চয়ই নেই । আজকের সমস্যাও আগামীকাল থাকবে না । তখন হয়তো নতুন সমসা দেখা দিবে । কাজেই সমস্যায় বিচলিত হবেন না । ভেঙ্গে পড়বেন না । সমস্যাকে ধৈর্য্যের সাথে মোকাবিলা করুন । সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তা সময়ের উপর ছেড়ে দিন । দেখবেন সেটা নরম হতে হতে সমাধানের নাগালে এসে যাবে । মোট কথা, বাস্ত বকে মেনে নিন । প্রত্যেক মানুষের অন্ততঃ এমন একজন বন্ধু থাকা উচিত, যাকে মনের কথা বলে হালকা হওয়া যায় । রাগ-উত্তেজনা কখনো মনে পুষে রাখতে নেই। মনের মধ্যে কোন কথা চেপে রাখতে নেই। এতে কষ্ট ও উত্তেজনা বাড়ে । সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করাতে মন অনেক হালকা হয় এবং ভয় উৎকণ্ঠা কমে যায় । বড় বড় গভীর শ্বাস নেয়াতে টেনশন অনেকটা কমে যায়। রুদ্ধ উত্তেজনায় আমরা প্রায় নিশ্বাস বন্ধ করে রাখি নিজের অজান্তেই । বড় বড় শ্বাস নেয়াতে শরীরের ভার হালকা সাবলীলতা তৈরি হয় । তখন টেনশনও খানিকটা মুক্ত হয় । শরীর চর্চা বা এ ধরনের শ্রম সাপেক্ষ কাজে যেমন উত্তেজনা কমে আসে, তেমনি ক্লান্ত শিথিল পেশী ঘুমের সহায়ক হয় ।


অভ্যাস-৪০  ▌  যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট তাকতে চেষ্টা করুন 

জীবনের দাবি হচ্ছে চাহিদা। মানব জীবন চাহিদার শেষ নেই। একটা চাহিদা না মিটতেই আর একটা চাহিদার উদ্রেক হয়। একজন মানুষ জীবনে যা যা চায় তার সবকিছু পূর্ণ হওয়া উচিত নয়। শিশু এবং মূর্খ যারা তারাই সবকিছু চায় । কারণ চাওয়ার গুণাগুণ বিচারের ক্ষমতা এদের নাই। সাধারণ মানুষেরা সদাশয় সুখী হয়ে থাকে, কারণ তাদের চাওয়া অতি সাধারণ, যা সহজে পূর্ণ করা সম্ভব । মানুষের অনন্ত চাহিদা তাকে অশান্তির পথে টেনে নেয় । অল্পতে সন্তোষ্ট থাকতে পারলেই মন শান্ত ও সুখী হবে । আমরা সর্বদা ভাবি কী পেলাম না, কী নাই আমাদের? কী আছে, তা ভুলেও আমাদের ভাবনায় আসে না । কী পেলাম না তা নিয়ে হিসাব না করে যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট তাকতে চেষ্টা করুন । আনার থেকে বেশি যাদের আছে তাদের দিকে না তাকিয়ে আপনার থেকে যাদের কম আছে তাদের দিকে তাকিয়ে নিজের পার্থক্য করুন । 


অভ্যাস-৪০  ▌সুখ-শান্তি উন্নতি্র কৌশল জানুন। 

সুখ-শান্তি-আনন্দ মনের ভালো লাগা ভালোবাসার সাথে জড়িত। মনে ভালোবাসা থাকলে আনন্দের কোনদিন অভাব হয় না । ভালোবাসার অভাব ঘটলেই আনন্দ পালিয়ে যায় । একঘেঁয়ে সুখ বা আনন্দ লাভই যদি কারো উদ্দেশ্য হয়, তবে তা সফল হওয়া  কঠিন। কারণ নিরানন্দের পরেই শুধু আনন্দের । কর্মের পরেই বিশ্রামের, অসুন্দরের পাশে সুন্দরের এবং কষ্ট বা দুঃখের পরেই সুখের অনুভূতি আসে। যে লোক সব গাড়িতে চড়ে তার পক্ষে গাড়ি চড়ায় কোন সুখ নেই। যে রোজ ভাল খায় তার পক্ষে ভাল খাওয়া সুখের অংশ বলে মনে হবে না । কাজেই সুখের স্বাদ পেতে হলে আগে কিছুটা দুঃখের অভিজ্ঞতা থাকা চাই । সুখের মতো শান্তিও একটি মানসিক অনুভূতি । যখন কোনা বিপদ বা সম্ভাবানা মনে জাগে, তখনই অশান্তি অনুভূতি হয় । পুকুরের পানি শান্ত তার কোন চাঞ্চল্য নাই কিন্তু নদীর পানি স্থান পরিবর্তনশীল তাই তা অশান্ত এই অর্থে সব সময় শান্তি আদৌ আমাদের কাম্য নয় । কারণ মানুষ চায় অবস্থার পরিবর্তন করতে । যদি সে নাও চায়, প্রকৃতি থেকেই তার পরিবর্তন হবে । শিশু বালক হবে, বালক-বৃদ্ধ হবে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের স্থিরতা কোথায়? মনকে শান্ত রাখতে পারলেই শান্তি । মন যদি শান্ত না থাকে মানুষ নিজের ক্ষমতা অনুসারে কাজ করতে পারে না। সে সাফল্য তার ক্ষমতার মধ্যে তাও পাবে না । মানুষ আনন্দ ও সুখকে পেতে চায় ভোগ-বিলাসের মধ্যে । কিন্তু ওটা হলো স্ফূর্তি । স্ফূর্তির মাঝে আনন্দ নেই । থাকতে পারে আনন্দের দু'চারটি উচ্ছ্বাস তরঙ্গ । প্রকৃত আনন্দ থাকে কর্তব্য সম্পাদনের মাঝে । সুখ এমন একটি জিনিস, যাকে কম চাইলে বেশি পাওয়া যায় এবং বেশি চাইলে কম পাওয়া যায় । কারণ প্রকৃত সুখটা হল চাহিদা সীমাবদ্ধ করণের মধ্যে, চাহিদা পরিতৃপ্তির মধ্যে নয় । 


অভ্যাস-৪০৭  ▌আত্মবিশ্বাস দুর্বার শক্তি সঞ্চয় করুন।

প্রত্যেকে চেষ্টা করলে নিজের অবস্থার উন্নতি করতে পারেন। কিন্তু এই চেষ্টার প্রধান শুত্রু হল আত্মবিশ্বাসের অভাব। আত্মবিশ্বাসের একটা দুর্বার শক্তি আছে, যে শক্তি প্রাপ্তিকে সহজ করে দেয়। যদি কোন মানুষের এই ধারণা থাকে যে, তার মাঝে আরো অনেক লুকানো শক্তি আছে; তাহলে সে যা কাজ করছে, প্রয়োজনে তার থেকে বহুগুণ বেশি কাজ সে অবশ্যই করতে পারবে। আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে কোন কাজে কৃতিত্ব লাভ করা যায় না। যার যত বেশি আত্মবিশ্বাস সে তত বেশি কাঙ্খিত লক্ষ্য পৌঁছাতে পারে। আত্মবিশ্বাসী লোকেরা কখনো উদ্যোগহীন হয় না। প্রতিবারই তারা আত্মবিশ্বাসের অস্ত্র দিয়ে প্রতিবন্ধকতার শৃঙ্খল খণ্ড-বিখণ্ড করে থাকে ।  আত্মবিশ্বাসে কর্মক্ষমতা দিন দিন বাড়তে থাকবে । আত্মবিশ্বাসে নিজের মেধা ও যোগ্যতার উপর আস্থা জন্মাবে,মোট কথা : আত্মবিশ্বাসহীন ব্যক্তি আশ্রয়হীন লতার মতো শোচনীয় অবস্থায় বেড়ে উঠে কিন্তু সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারে না । কারণ আত্মবিশ্বাসের অভাব ঘটলে দুর্বলতা প্রবল আকারে দেখা দেয়। এই দুর্বলতাই সকল উন্নতির পথে প্রধান অন্তরায়। যার আত্মবিশ্বাস নেই, সে পদে পদে দ্বিধা ও শঙ্কায় জড়িত হয়ে পড়ে। কোন কাজ আরম্ভ করার পূর্বে তার সন্দেহ হয়, বুঝি কাজটা সফল হবে না । নানারূপ দুঃখ, হতাশা, চিন্ত ায় তার কাজ বিনাশ হয়ে যায় ৷


অভ্যাস-৪০আ্পনার কাজের চেহারাটি আপনার আত্মবিশ্বাসের অনুরূপ হবে ।

 যারা ছোটদের কাজ বা কথাকে বিদ্রূপ করে এবং তাদের বিশেষ কোন অক্ষমতা নিয়ে উপহাস করে। ফলে বাল্যেই ছোটদের মনে আত্মবিশ্বাসহীনতার বিষবৃক্ষ রোপণ করে দেওয়া হয়। তাতে তারা নিজের যোগ্যতার উপার আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং হতাশার ফলে অকর্মণ্যে রূপান্তরিত হয় । 

মোট কথা- জীবন থেকে সুখ-আনন্দ পেতে হলে হাসিমুখে জীবন সংগ্রাম করে যেতে হবে। স্মরণ রাখবেন, যে মন পরিশ্রম করে সুখ পায় না, আনন্দ পায় না- সে মন পশুবিত্তি পরিপূর্ণ । কি পেলাম, আর কি পেলাম না, সে হিসাব কষে সময় নষ্ট না করে কাজ করে যেতে হবে । দেখবেন, পরম প্রাপ্তি একসময় জীবনকে ভরিয়ে দেবে সারাদিনের কাজের শেষে পিছনের দিকে তাকিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন- আজ আমি কী শিখেছি? আপানার শেখা প্রতিদিনের তথ্যগুলি কোথাও নোট করে রাখুন । তারপর মনে মনে আত্মশুদ্ধির জন্য চিন্তাশক্তিকে সার্চ করুন । নিজেকে প্রশ্ন করুন আজ আমার কী কী ভুল হয়েছে? কী করলে ভাল হতো। সব বিচার-বিশেষণ করার পর আগামীকালের জন্য সংশোধিত পরিকল্পনা করুন । 


অভ্যাস-৪০▌মনোবলই প্রতিভা তৈরি করে।

সমস্ত অসাধ্যকে আয়ত্ব করার জন্য অসীম ধৈর্য ও পরিশ্রমের প্রয়োজন । আর এই ধৈর্য ও শ্রমের যোগান দিতে যে দুর্বার শক্তি কাজ করে, তার নাম মনোবল । মনিষী উইল মট বলেন- যার মধ্যে কাজ করার মতো যথেষ্ট মনোবল রয়েছে - তার মধ্যে ঐ কাজের বিজয় লাভের সমস্ত উপকরণ রয়েছে। মানুষ তার জীবনের কতটা পথ তা নির্ভর করবে তার মনোবলের উপর। যেমন, আপনার জীবন নামক গাড়িটা ততখানি চলবে – তাতে যতখানি পেট্রোল থাকবে । মনে রাখবেন , মনোবল সমস্ত অসুবিধার হ্রাস ঘটায় । মনোবলই প্রতিভার উদ্রেক করে। যার মনোবল নেই, সে দুর্বল অসহায়। আর মনের দিক দিয়ে যে দুর্বল কর্মক্ষেত্রে সে দুর্বল। যে শক্তিমান, পৃথিবীতে কেবল তারই ভোগ করার অধিকার আছে ৷ দুর্বলের কোন স্থান দুনিয়াতে নেই । এই বিশ্ব প্রকৃতি ভালবাসে শুধু মনোবল সম্পন্ন মানুষকে । তাই দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন মানুষ সর্বত্রই পায় সফলতার জয় ধ্বনি আর দুর্বলের জন্য - সঞ্চিত থাকে শুধু ঘৃণা ও ব্যর্থতা । পৃথিবীতে বিজয়ের ইতিহাস রচনা করেছে যে শক্তি – সেটা আসলে দৃঢ় মনোবলই বহিঃপ্রকাশ । মণীষী চেকোভ বলেছেন, তুমি যদি আমাকে একজন দৃঢ় মনোবল সম্পন্ন মানুষ দাও, তবে সেই লোককেই একটি সফল জীবনের ব্যক্তি হিসেবে তোমার কাছে ফেরত দেব । 


অভ্যাস-৪১০▌যে কাজে আগ্রহটা যত বেশি, সেই কাজটি তত বেশি এগুবে।

আগ্রহ হলো বাড়তি শক্তির উৎস। যে কাজে আপনার আগ্রহটা যত বেশি থাকবে, সেই কাজটি তত বেশি এগুবে, আর যে কাজে আগ্রহ কম, সে কাজ কম এগুবে। মোট কথা হলো- আপনার কোন কাজের গতি ও পরিমাণটা ঐ কাজের প্রতি আপনার আগ্রহের পরিমাণের উপর নির্ভরশীল । কাজ যত মনের মতো হয়- আগ্রহও তত বাড়ে, খুশি মনে কাজ করা যায়, একটুও ক্লান্তি আসে না। কাজকে মনের মতো করা কিংবা মনের কমজোরি ইচ্ছাকে বাড়িয়ে তোলার প্রধান উপায় হলো- মনের মধ্যে লাভের ঘি ঢালা। নিজেকে ক্রমাগত লোভ দেখিয়ে যেতে হবে । আপনার কাজ সফল হলে, উদ্দেশ্য পূর্ণ হলে, কতটুকু আপনি লাভবান হতে পারেন- তার একটা বাস্তব সম্মত তালিকা করে ফেলতে হবে মনে মনে। লোভের রিপু আপনাকে একবার পেয়ে বসলে মনের আগ্রহ আলৌকিকভাবে বেড়ে যাবে । 


অভ্যাস-৪১ কাজের বিষয়ে যিনি উৎসাহী নয়, কাজটা তার কাছে ঝঞ্জাট 

উৎসাহ কাজের মধ্যে গতি সঞ্চয় করে, কাজকে সমনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে । যে-লোক নিজের কাজের বিষয়ে উৎসাহী নয়, কাজটা তার কাছে নিত্যদিনের ঝঞ্জাটি বলে মনে হয় । গোমরা মুখে, ক্লান্ত পায়ে সে এলোমেলো চলে । তার মেজাজটা থাকে খিটখিট । সে লোক ঘরে দেওয়া মাত্রই সমস্ত ফূর্তির বাতিগুলো দপ করে নিভে যায় । খুঁজে বের করুন। কাজের মাঝে রসের যোগান দিয়ে ক্লান্তিকে দূর করা যায়। কাজ যে কাজে নেনেছেন, সেটা উৎসাহের সঙ্গে করুন এবং কাজটার আকর্ষণীয় দিকগুলো করার সময় নিজেকে খোশ মোজাজা রাখর চেষ্টা করুন -দেখবেন কি সুন্দরভাবে কাজটা এগিয়ে চলছে, একটুও ক্লান্তি আসবে না । কাজে ভুল-ভ্যাক্তি যেমন কমে হবে, তেমনি মনের সংকীর্ণতাও দুর হবে । 


অভ্যাস-৪১ বিশ্রাম জীবনী শক্তি যোগায় । 

কাজের সঙ্গে বিশ্রামের সম্পর্ক অবিচ্ছিন্ন । বিশ্রাম মানে মেরামত করা । বিশ্রামের শক্তি এত বেশি যে পাঁচ মিনিটের ঘুমও শরীরের সমস্ত অবসদ দূর করে দিতে পারে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রধান নায়ক চার্চিল সত্তর বৎসরেও ষোল ঘন্টা কাজ করতেন । মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এভাবে কাজ করে ছিলেন । এই কর্ম ক্ষমতার রহস্য সম্পর্কে কোন ক্লান্তি তাকে ঘিরে ধরতে পারতো না। বিশ্রামের পর কাজ করতে তিনি নতুন করে প্রেরণা পেতেন । 

মোট কথা হল - অনেক কাজের ভিড় থেকে একটু ছুটি নিয়ে বিশ্রাম নেওয়া খুবই ভাল । তাতে কাজের একঘেয়েমি এবং চাপ থেকে মন ফ্রি হবার সুযোগ পাবে । ফলে ফিরে পাওয়া যাবে ইচ্ছা ও মানসিক শক্তি নতুন করে কাজ করতে । পৃথিবীর বড় বড় কর্মবীরদের জীবন পড়ে জানা যায়, তারা কাজের ফাঁকে ফাঁকে দু'একবার (বিছানায়) বিশ্রাম নিতেন ৷ এডিসন বলেছেন- তার অদ্ভুত শক্তি এবং সকল ক্ষমতার মূলে রয়েছে যখন তখন ঘুমিয়ে নেবার ক্ষমতা। একজন খেটে খাওয়া মজুর আরো বেশি কাজ করতে পারে, যখন সে একটু বিশ্রাম করে নেয় । জাপানের Okinawa দ্বীপের মানুষদের গড় আয়ু বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি। তাদের জীবনযাত্রা ও অভ্যাস দীর্ঘ জীবন ও সুখের মূল চাবিকাঠি। তারা বাস্তবে কি প্রয়োগ করবেন? তারা কাজ ও বিশ্রামের ভারসাম্য বজায় রাখেন 


অভ্যাস-৪১ জীবনটা সময়ের সমষ্টি মাত্র ।

যদি জীবনে উন্নতি করতে চান, প্রতিষ্ঠিত হতে চান, তবে সময় অপচয় করবে না । একটা দিন চলে যাওয়া মানে জীবন থেকে চব্বিশটা ঘণ্টা ঝরে যাওয়া। এডিসন বলেছিলেন - ঈশ্বর যদি আমাকে জন্মভূমি বেছে নেবার অধিকার দিতেন, তাহলে আমি মঙ্গল গ্রহই বেছে নিতাম । কারণ মঙ্গল গ্রহের দিন পৃথিবীর চেয়ে চল্লিশ মিনিট বড়। অন্তঃত সে সময়টা বেশি কাজ করা যেত। মোট কাজ হলঃ সাফল্যের রহস্য লুকিয়ে আছে সময় বিভাজনে । চব্বিশ ঘণ্টার দিনটা আপনার কাছে আট ঘণ্টা না বাহাত্তর ঘণ্টার হবে, সেটা নির্ভর করে- আপনি কিভারে সময় ব্যয় করছেন তার উপর । কেউ সারাদিনও কাজ করে কুলিয়ে উঠতে পারে না, আবার কেউ অত সময় নিয়ে কী করবেন ভেবে উঠতে পারে না । এই দু'পক্ষের কাছে সময় একটা বিড়ম্বনা । সময়ের সদ্ব্যবহার কী করে করবেন, তা না জানার জন্য এদের এমনটি হয় । সময় নষ্ট হওয়ার কারণ প্রধানত তিনটি  ১) অমনযোগ: কোন কাজ করতে যতটা সময় লাগা উচিত, আপনি অমনযোগি হয়ে সেটা সারতে দেরি করছেন । অথবা প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে দেরি হচ্ছে । ২) দক্ষতা বা যোগ্যতার অভাব: মনযোগ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ থাকা সত্ত্বেও দক্ষতা ও যোগ্যতার অভাবে কাজটি সারতে বেশি সময় নিছে । ৩)ব্যঘাত সৃষ্টি: অন্য কেউ বা কোনো মোহ আপানার কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছেন।


অভ্যাস-৪১ আপনার চিন্তাই আপনার  ভবিষ্যত।

আপনি ভবিষ্যতে কী হবেন? আপনার বৈশিষ্ট্য ব্যক্তিত্ব কেমন হবে, তা নির্ভর করবে আপনি প্রতিদিন কী চিন্তা করেন তার উপর । সোজা কথাঃ চিন্তাই কাজ । কোনো কাজ করার পূর্বে তা প্রথমে আমাদের মাথায় আসে । মাথার মধ্যেই কল্পনা সৃষ্টি হয় এবং এই কল্পনাই ক্রমে বিকশিত হয়ে পরিকল্পনায় রূপ নেয় । তারপর পরিকল্পনা অনুযায়ী হাত- পা চলে । একজন শিল্পী যখন একটা গৃহ নির্মণ করেন, তখন প্রস্তুত করার পূর্বই সে তার মনে মনে চিন্তার জগতে প্রথমে একটা গৃহের কল্পনা করে নেয় । গৃহটার প্রতিচ্ছবি সে তার মনে এঁকে নেয়, পরে সে গৃহটা তার মানসিক প্রতিকৃতির বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কাজেই বুঝা যায় যে, মানুষের স্বভাব ও কার্য তার চিন্তা অনুযায়ী গঠিত হয় । অর্থাৎ সে যেটা চিন্তা করবে, তার স্বভাব ক্রমশঃ তার মধ্যে সংক্রামিত হবে। এজন্যই বলা হয়- মানুষের কাজ হচ্ছে তার চিন্তার প্রতিফল মাত্র। এই কথাটাই নেপলিয়ান ঘুরিয়ে বলেছেন এইভাবে- মানুষ তার চিন্তা দ্বারা শাসিত হয় । মনিষী ভয়াল বলেছেন- আমি যদি বুঝতে পারি, আপনি প্রতিদিন কী চিন্তা করেন— তাহলে বলে দিতে পারবো- আপানি কে? আপনার ভবিষ্যৎ কি?  পৃথিবীতে ভাল-মন্দ বলে কিছুই নেই। আমাদের চিন্তাই ভাল মন্দের সৃষ্টি করে । আপনি যদি প্রতিদিন যৌন চিন্তা করেন (সেক্স যদি কেবল আপনার মাথার ঘুরপাক খায়) তাবে যৌন বিকৃতি কিংবা যৌন আপরাধ করতে আপনি বাধ্য । আর যদি উন্নত, গঠনমূলক চিন্তাধারা সর্বদা মাথায় থাকে, তাহলে আপনার উন্নতি, সাফল্য অবধারিত । মোট কথা হলঃ মানুষের চিন্তাধারা বদল করে তার গোটা জীবন বদলানো যায় । মনে রাখবেন, পৃথিবীতে সবচাইতে বিপজ্জনক জিনিস হচ্ছে মন্দ চিন্তা। শরীর থেকে মারাত্মক রোগের জীবাণু তাড়াবার আগে দূর করা দরকার মন্দ চিন্তা । সুচিন্তা থেকেই সদিচ্ছা আর সদিচ্ছারই ফল হচ্ছে ভাল কাজ । সুচিন্তা জাগ্রত করতে দুটি পথ আছে । একটি হলো উত্তম কিছু পড়া শুনা-দেখা, অন্যটি হলো সৎসঙ্গ ।


অভ্যাস-৪১ ▌লক্ষ্য স্থির করুন এবং লক্ষ্যে অবিচল থাকুন। 

লক্ষ্যহীন যাত্রা পথিককে শুধু ক্লান্ত করে কিন্তু পথের দূরত্ব কমায় না। লক্ষ্যহীন এলোমেলো ভাবে জীবন কাটালে সফলতা আসবে না কিছুতেই । পরিকল্পিত উদ্দেশ্যময় প্রচেষ্টা থাকতে হবে । যে মানুষ লক্ষ্যে পৌঁছাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সে সব-সময় মূল লক্ষ্যকে মনে গেঁথে রাখেন । চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাময়িক অনেক কিছু সে ত্যাগ করতে পারেন অধিকাংশ লোকেরই দেখা যায় জীবনে কোনো উদ্দেশ্যে থাকে না। ঠিক কী করতে চেয়েছিলেন, কী হতে চেয়েছিলেন— তা নিয়ে তাদের ভাবনা, তাদের নিজের কার ধোঁয়ার মতো, অবয়বহীন । অনেককেই বলতে শোন যায়- ইছে ছিল ডাক্তার হবার কি কপাল । যারা এই কপালের উপর দায়-দায়িত্ব চাপিয়ে হাত গুছিয়ে বসে থাকেন তাদের অবস্থা কখনো ভালোর দিকে যায় না। যোগাযোগের অভাব, অর্থ কষ্ট, হঠ দুর্যোগ বা দুর্ঘটনা অনেকের জীবনের গতি রুদ্ধ করে দিতে পারে । জীবনের ধারা বই দিতে পারে অন্যখাতে । তা সত্ত্বেও একটা উদ্দেশ্য ঠিক রেখে মনের জোরে ক্রমাগ এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সকল কঠিন বাধা বা সমস্যাই শেষ পর্যন্ত আর টিকে ন আপনার যা করণীয় : একটা কাগজে আপনার উদ্দেশ্য লিখুন । তারপর লি আপনার উদ্দেশ্যে পৌঁছতে হলে বা সেটি পেতে হলে আপনার কী কী করা প্রয়োজ যেমন— কী যোগ্যতা প্রয়োজন, অর্থের প্রয়োজন হলে সে অর্থ কোথা থেকে আস কতটা সময় দিতে হবে ইত্যাদি । তারপর কাজে ধীরে ধীরে অগ্রসর হউন ।


অভ্যাস-৪১ খুঁতখুঁতে অস্থির স্বভাবের মানুষ এডিয়ে চলুন ।

এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যারা ভয়ানক খুঁতখুতে । সব কিছু একেবারে নিখুঁত না হলে তাদের মন ভয়ে না, নিজের সব কিছুতে খুঁতহীন একটি অবস্থায় নিয়ে যেতে চান । এ রকম মানুষ সমাজ জীবনে, কর্মজীবনে, ব্যক্তিজীবনে একটা অস্থির হিসেবে গণ্য হয় । আবার আনেক লোক আছেন- যারা সামানে দিয়ে মশা গেলেও ধরে ফেলেন কিন্তু পিছন দিয়ে হাতি গেলেও টের পায় না । এরা শ্রমিকের পেটে লাথি মেরে হুজুরের কাছে সিন্নি পাঠায়, মজুরকে শোষণ করে মাজারে দান করে । এরা শ্রমিকের ন্যায্য পাওনার বেলায় খুব হিসাবী অথচ ভোগ-বিলাসিতার বেলায় হিসাবী নয় মোটেই । এই মনোভাব ভুল জঘন্য । তাদের মনে রাখা উচিত একজন কর্মী যদি তার কাজের যথার্থ পুরস্কার পায়, তাহলে তার হত উদ্যম অবশ্যই শতগুণে বেড়ে যায় । 


অভ্যাস-৪১ একঘেয়ে কাজ এড়ানোর জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি করুন।

প্রতিদিন একই জায়গায় একই কাজ করতে গিয়ে যারা হাঁফিয়ে উঠেন, তারা পরিবর্তন চান । তারা সুখীও নয়, সফলও নয়, কাজের একঘেয়েমি থেকে মুক্ত হওয়ার একমাত্র উপায় হলো নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। এ দক্ষতা বৃদ্ধি যে-কোনো কাজ সম্পর্কে নতুন করে ভাবনার জন্ম দেয় । অনুভতিকে করে প্রশস্ত, দৃষ্টিকে করে তীক্ষ্ণ এবং চারদিকে কী ঘটছে তা সঠিকভাবে ভাবতে সাহায্য করে । একই পুরাতন কাজ, বিচিত্রভাবে আগ্রহ উদ্দীপক হতে পারে। মস্তিষ্ককে চালনা করতে পারলে জীবন বিচিত্র স্বাদে পূর্ণ হয়ে উঠবে । 


অভ্যাস-৪১ বেশি আশা করবেন না 

আশা ছাড়া মানুষ বাঁচে না । আশা আছে বলেই না আছে উদ্যম, আছে উদোগ । কথা আছে— আশা সবাই করে, দুরাশা বোকারাই করে । তাই আশা করবেন অবশ্যই, তবে বেশি নয়। যতো বেশি আশা করবেন, ততো বাড়বে আশাহত হবার আশঙ্কা থাকবে । বাড়বে উদ্বেগ ।  আশাকে বাঁধতে শিখুন । কোনো কোনো ব্যাপার এড়িয়ে চলতে শিখুন । আশা না করেও কিছু পেয়ে গেলে আনন্দে কানায় কানায় ভরে ওঠে মন; আশা করে পেলে যা হয় না এতো বেশি । তাই বেশি আশা করবেন না । না পাওয়ার যন্ত্রণা কমবে । কমবে মনের চাপ ও টেনশন । 


অভ্যাস-৪১ সম্পর্ক সুস্থ আর স্বচ্ছ রাখুন  

নিজের অধিকারকে বুঝে নিন । অন্যের অধিকারকে মর্যাদা দিন । অন্যকে বুঝিয়ে দিন কোনটা আপনি পছন্দ করেন, কোনটা করেন না । সব সময় লজ্জায় বা দ্বিধায় চুপ করে থাকা আসলে নিজেকে অপমান করা । আপনার ব্যক্তিগত অধিকারগুলোকে সুরক্ষিত করতে উদ্যোগ নিতে হবে আপনাকেই । শিখতে হবে প্রয়োজনে শক্ত হতে, নিজেকে প্রমাণ করতে । এটা না পারলে অন্যের অন্যায় দাবি বা আবদার মেটাতে বাধ্য হবেন আপনি ৷ যা মানতে পারছেন না সরাসরি বলুন । মনের ওপন চাপ বাড়িয়ে একটানা কোনো কিছুকে মেনে নিতে যাবেন না । 

রাগ গোপন করে হাসতে যাবেন না । রাগ বা বিরক্তির মতো অনুভূতি বেশি চেপে রাখতে যাবেন না । সরাসরি বলুন, ‘এটা আমার ভালো লাগছে না” বা ‘আমার এতে বিরক্ত লাগছে' মনের ওপর চাপ কমবে, কমবে টেনশন । সব সময় ঝামেলা এড়িয়ে যেতে চাইলে অন্যদের সঙ্গে আপনার যোগাযোগ বাড়বে না, কমবে ।  প্রয়োজন হলেই ঝামেলার মুখোমুখি হতে শিখুন সরাসরি। চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিন। সমস্যা দেখা দিলে এড়িয়ে যাবেন না । সরাসরি কথা বলুন । যা পারবেন না বা করবেন না সরাসরি বলুন, ঝুলিয়ে রাখবেন না । কারোকোনো ব্যবহারে আহত হলে সরাসরি জানিয়ে দিন । 


অভ্যাস-৪২০ আপনার কলাকৌশলগুলো প্রয়োগ করুন।

চুপচাপ বসে থাকার জন্য অনেক সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়। এভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা ক্রমে ক্রমে অভ্যাসে পরিণত হয় । আপনার চিন্তা ও কলাকৌশল কোনোই কাজে আসে না যতোক্ষণ না সেগুলো প্রয়োগ করা হয় । জ্ঞানের কোনোই মূল্য নেই যতোক্ষণ না বাস্তবে তার যথার্থ প্রয়োগ হয় । অসফল হওয়া দোষের কিছু নয়, কিন্তু চেষ্টার অভার একটি বড় ধরনের বিচ্যুতি । আপনি কতোটা কী করতে পারেন তার জোরে জীবনে কিছুই পাবেন না, আপনি কতোটা কী করলেন তার ভিত্তিতেই আপনার লাভক্ষতির হিসাব হবে । কলাকৌশলগুলোর নিপুণ প্রয়োগর ফলে আরো উঁচু দরের জীবনযাত্রা, আরো বেশি বন্ধুভাগ্য, আরো সাফল্য, আরো সুখের চাবিকাঠি । তাই সেগুলোকে কাজে লাগাতে শুরু করে দিন এখনই ।   যতোই বড় বড় চিন্তা করুন না কেন কাজে না নামলে ফলাফল শূন্য । চীনাদের ভাষায় একটা কথা আছে “কেউ যদি আপনার কাছে ভালো কিছু শেয়ার করে তবে আপনার দায়িত্ব এসে যায় তা অন্যের সাথে শেয়ার করার জন্য” । আমার মনে হয় আপনিও বলবেন— কোনো বিষয়ে জেনে অন্যের সাথে শেয়ার না করাটা স্বার্থপরতা । 


অভ্যাস-৪২১ নেতিবাচক ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসুন।

কী কী কারণে অন্যের প্রতি আপানার ব্যবহার নেতিবাচক বা নিরাশাব্যঞ্জক হচ্ছে—সেগুলো স্পষ্টাক্ষরে লিখুন। এর মধ্যে আপনার ভাগ কতোটা, অন্যের ভাগ কতোটা— তা-ও লিখুন । ভাবুন, কীভাবে তা পালটাতে পারেন । যদি কোনো নিকটজনের ব্যবহারে আহত হন তাহলে সোজাসুজি তাঁকে বলুন । নির্দিষ্টভাবে ঘটনার উল্লেখ করে বলুন যে,  'তুমি যখন অন্যের কাছে আমার আমুক বিষয়ে বলেছিলে, তখন  আমি কষ্ট পেয়েছিলাম । যাঁরা এতেও পালটাবেন না তাঁদের এডিয়ে চলুন! 

 

অভ্যাস-৪২২ আশাবাদী মানুষের মধ্যে থাকুন। 

আশাবাদী লোকজনের মধ্যে থাকলে প্রতিটি কাজে উৎসাহ-উদ্দীপনা পাবেন । নিরাশাবাদী লোকজনের মধ্যে থাকলে মনে হবে যেন সমস্ত শক্তি নিঃশেষ হয়ে গেছে । তাই যে পরিবেশের মধ্যে আপনি রয়েছেন তার সম্বন্ধে সচেতন হওয়া খুবই দরকার । এই কথাটা সর্বদা মনে রাখবেন যে, আপনার চারপাশে যে অপরিবেশ রয়েছে তার জন্য আপনিই দায়ী । আপনি যদি নিজের ওপর দায়িত্ব না নিয়ে কেবল পরিবেশকেই দোষ দিতে থাকেন, পরিবেশের ব্রাশ নিজের হাতে নিয়ে তাকে পালটাবার চেষ্টা না করেন, তাহলে সাফল্য লাভ করতে পারবেন না। নেতিবাচক পরিবেশ সর্বদাই আপনাকে পেছনে টেনে ধরবে । 


অভ্যাস-৪২৩ বিনীত কিন্তু দৃঢ়ভাবে কথা বলুন।

 কথা বলার সময় নিজের ব্যক্তিত্ব বা গাম্ভীর বজায় রাখুন । অহেতুক ছ্যাবলামি করে নিজেকে তরল করে তুলবেন না। নিজের বক্তব্য দৃঢ়ভাবে  এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে  প্রকাশ করুন। এমনভাবে কোনো কথা বলবেন না, যাতে অপরপক্ষ তেলে-বেগুনে ওঠেন । তাতে সুস্থ ভাব-বিনিময়ের পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে যাবে। যদি 'না' বলতে হয় ‘না’-ই বলুন; 'হ্যাঁ' বলে কাউকে মিথ্যা আশা দেবেন না। অবশ্য ‘না’-টা ভদ্রভাবে বলতে পারেন । মনে রাখবেন— কখনো রুক্ষ বা উগ্র হবেন না, দৃঢ় হোন । ভদ্রতা বজায় রেখেও দৃঢ় হওয়া যায়, নিজের মনোভাব পরিষ্কারভাবে বলা যায় । 


অভ্যাস-৪২৪ ▌ কাজ  কথার মহড়া দিন 

যে কাজটা করতে যাচ্ছেন বা যে কথা বলতে যাচ্ছেন সেটা কাজের বা কথা বলার আগে একবার সেটার মহড়া দিয়ে নিন। এতে খুব বেশি সময় লাগবে না, খুব জোর মাত্র কয়েক সেকেণ্ড থেকে কয়েক মিনিট। কিন্তু দেখবেন এর দ্বারা আপনার সাফল্যের একটা মৌলিক পরিবর্তন হবে।  কোনো কাজ করার আগে (বা কোনো কথা বলার আগে) কল্পনা করার চেষ্টা করুন এর সম্ভাব্য প্রতিক্রিয় কেমন হতে পারে । ঝোঁকের মাথায় বা হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে কাজ করলে বা কথা বললে তার ফলাফল যে কতো মারাত্মক হতে পারে, তা আমরা সকলেই অল্পবিস্তর জানি। বহু কলহের সূত্রপাত এর থেকে, বহু সম্পর্ক ভেঙে গেছে এজন্যে, রাতারাতি সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেক এ চিন্তাহীন কথা ও কাজের জন্যে। নিজের এই আবেগপ্রবণতার সঙ্গে আপনাকে লড়তে হবে । মহড়া দিন মানে মনে মনে কাজটা করা  বা কথাটা বলার আগে।  


অভ্যাস-৪▌ নিজের দুর্বলতা চিহ্নিত করুন

অকারণ ভাবপ্রবণ নয়, সংযত আচরণ করুন। জীবনে শৃঙ্খলা আনতে গেলে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে আপনার দুর্বলতা কোথায়; বিশেষ করে দুটি দুর্বলতা। প্রথমত- যেসব কাজ আপনি শুরু করেন কিন্তু শেষ করেন না । দ্বিতীয়ত- যেসব ক্ষেত্রে আপনি ঝোঁকের মাথায় অবিবেচকের মতো কাজ করে ফেলেল । অনেক শক্ত কাজ আপনি ভয়ে ভয়ে এড়িয়ে যান, যদিও জানেন এড়িয়ে গিয়ে কিছু লাভ হচ্ছে না। কাজটা আজ, না হলে কাল করতেই হবে । তখন কী করবেন? নিজেকে একটা পুরস্কার দেবেন । মনকে বলুন, তুমি যদি অমুক কাজটা অমুক সময়ের মধ্যে করতে পারো, তাহলে তোমাকে আমি একটা বিশেষ পুরস্কার দেবো । এই ‘বিশেষ পুরস্কার'টা আপনার পছন্দমতো যে কোনো জিনিস  হতে পারে। মোটকথা—সেটা যেন আপনার কাছে বেশ লোভনীয় হয় । তারপর কাজটা হয়ে গেলে নিজেকে সত্যিই ঐ বিশেষ পুরস্কারটা দিন। 

 

অভ্যাস-৪২৬ কাজ ভাগ করে নিন  

  লোকের দক্ষতাকে বুদ্ধিমানের মতো কাজে লাগান ৷ যখন কাজের দায়িত্ব অন্য লোককে দিচ্ছেন তখন কাজটা তাঁকে স্বাধীনভাবে করার সুযোগও দিন । তাহলে দেখবেন তিনি মাথা খাটিয়ে নতুন নতুন পথ বের করছেন। এতে আপনারই সুবিধে । আপনি কেবল অন্য লোকের ‘হাত’ নয়, ‘মাথাটাও কাজে লাগাচ্ছেন একই সঙ্গে। এতে আপনারও সৃজনশীলতা বাড়ছে । জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অন্যের সঙ্গে কর্তব্য বা দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া জরুরি। যেসব পরিবার বাড়িতে বাবা-মা তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে নানা রকম পারিবারিক কাজকর্ম ভাগ করে নেন, সেখানে দু'রকম ভালো ফল দেখা যায়। প্রথমত, বাবা-মায়ের কাজের চাপ কমে যায়; ফলে তাঁরা হাতে যে উদ্বৃত্ত সময়টুকু পান, সেটি বিনোদনমূলক কাজে লাগাতে পারেন । দ্বিতীয়ত, এর দ্বারা সন্তানরাও ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হয়, তাদের কর্মদক্ষতা এবং দায়িত্বজ্ঞান বাড়ে ।  যদি কোনো পরিবারে শিশুদের শৈশব থেকেই বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে তাদের দায়িত্বজ্ঞান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে পরিবারের সঙ্গে একাত্মবোধ । এসব পরিবারে একের প্রতি অন্যের মায়া-মমতাও অনেক বেশি হয় ।


অভ্যাস-৪২৭ সব কাজ নিজে করব’– এই মানসিকতা ছাড়ুন।

আপনি সফল হতে চাইলে কাজের খুঁটিনাটি দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন ঠিকই কিন্তু সব কাজ একা করতে যাবেন না । আপনি যদি ছোটোখাটো কাজে (যা আসলে আপনার জন্য অপ্রয়োজনীয়) সারাক্ষণ বাস্ত থাকেন। তাহলে প্রয়োজনীয় কাজ করবেন কখন? যেসব নিত্য-নৈমিত্তিক কাজকর্ম অন্য লোকে করতে পারে। সেসব কাজ তাদেরকে দিয়েই করিয়ে নেবেন । কারণ একা সব কাজ করলে কাজ নিখুঁত হয় ঠিক-ই কিন্তু এর ফলে সময় ও শক্তি খরচ হয় বেশি । ফলে লাভের বদলে ক্ষতির অংশ বেশি, তাই কাজ অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিন । তাহলে কঠিন কাজও সহজ হয়ে যাবেসব কাজ নিজে করব’– এই মানসিকতা কিন্তু মারাত্মক। অবিলম্বে এর কবল থেকে নিজেকে মুক্ত করুন । এই মানসিকতা আপনার সমস্ত সৃজনশীলতা হরণ করে আপনাকে একটা ভারবাহী পশুতে পরিণত করে দিবে অথবা আপনাকে এতো ক্লান্ত করে দিবে যে আপনি আর সাফল্যের জন্য চেষ্টাও করতে পারবেন না। ফলে আপনি কেবলই পিছিয়ে পড়বেন ।  কেবলমাত্র কর্মক্ষেত্রেই নয়,


অভ্যাস-৪২৮ গোছানো স্বভাবের হোন 

সাফল্য লাভের অন্যতম প্রধান শর্ত হচ্ছে গুছিয়ে কাজ করা। নিজের সব কাজকর্মকে গুছিয়ে একটা কাঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে হবে । সাফল্য লাভের জন্য প্রচুর সময় ও শক্তি প্রয়োজন। যদি আপনি সমরের অপব্যয় করেন (যেমন যখনই সময় গান, টিভির সামনে বসে পড়েন) তাহলে কাজ করবেন কখন? সফল মানুষেরা কিন্তু কখনো এ রকম করে অকারণে সময় নষ্ট করেন না । যখনই তাঁরা হাতে একটু বাড়তি সময় পান, তাঁরা কোনো না কোনো প্রয়োজনীয় কাজে লাগিয়ে দেন । গোছানো স্বভাব হচ্ছে এক ধরনের বিনিয়োগ । বিভিন্ন প্রকল্পে আপনি যেমনভাবে টাকা লগ্নি করেন, সেভাবেই মনে করুন আপনি কিছুটা বাড়তি সময় এবং শক্তি বিনিয়োগ করছেন নিজের স্বভাবকে আরো বেশি গোছানো বা শৃঙ্খলাবদ্ধ করতে । আপনি যদি অগোছালো স্বভাবের হন অথবা দৈনন্দিন কাজকর্মের জন্য কখনোই প্রস্তুত না থাকেন তাহলে জানবেন, সর্বত্রই আপনি এক বিরক্তিকর বা অবাঞ্ছিত ব্যক্তি অফিসে বস এবং সহকর্মীদের কাছে, পরিবারে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে, সমাজে বন্ধু বান্ধবদের কাছে । 


অভ্যাস-৪২৯ সব রকম খবর রাখার চেষ্টা করুন 

সব বিষয়ে যথাসম্ভব জ্ঞানলাভ করে রাখা সাফল্যের অন্যতম প্রধান শর্ত । যখন আপনি সমস্ত রকম তথ্য সংগ্রহ করেছেন তখন আপনি যে লক্ষ্য স্থির করবেন তা অর্জন করা আপনার ক্ষমতার বাইরে হবে না। আপনি তখন এমন পরিকল্পনা করবেন যা বাস্তবে কার্যকর হবে এবং কাজ করতে গিয়ে যদি আপনাকে কখনো ঝুঁকি নিতে হয় তাহলে সে ঝুঁকি হবে যুক্তিসঙ্গত ঝুঁকি । কোনো বিষয়ে যথাযথ জ্ঞানই হচ্ছে শক্তির উৎস । জ্ঞান মানে হলো পরিস্থিতির ওপর অধিক নিয়ন্ত্রণ এবং সমস্যা সমাধানের আরো বেশি বিকল্প পথের সন্ধান। বর্তমান যুগে জ্ঞান এবং তথ্যসংগ্রহই আসল শক্তির উৎস । আপনি যদি কোনো কাজে সফল হতে চান, তাহলে সেই বিষয়ে আপনাকে যথাসম্ভব তথ্যসংগ্রহ করতে হবে।  


অভ্যাস-৪৩০ ব্যর্থতাই সফলতার চাবিকাঠি

একটি ছেলে তার বাবার সাথে ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল । ছেলেটি বাবাকে জিজ্ঞেস করলো ঘুড়িটি কীসের জোরে ওপরে উঠেছে। বাবা জবাব দিলেন— ‘সুতোর জোরে’। ছেলেটি বললো— ‘কিন্তু বাবা, সুতো তো ঘুরিটিকে নিচের দিকে টেনে রেখেছে'? বাবা তখন ছেলেকে ভালো করে লক্ষ্য করতে ব'লে সুতোটি ছিঁড়ে দিলেন । ঘুড়িটির কী হলো? অবশ্যই মাটিতে নেমে এলো । জীবনের ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য। কখনো কখনো যা আমাদের নিচের দিকে টেনে নামাচ্ছে বলে মনে হয়, সেইটিই কিন্তু আমাদের ওপরে উঠতে সাহায্য করে ।


অভ্যাস-৪৩১ পরিবেশ-পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলুন 

যতো বেশি বেড়াবেন, নানা ধরনের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা ততো বাড়বে। ভ্রমণ শেখায় অনেক, বাড়ায় কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা। শেখায় প্রতিকূল পরিবেশেকে নিজগুণে অনুকূল করে নিতে। কোনো পরিবেশ অসহ্য মনে হলে ভাববেন আপনার চাইতেও খারাপ পরিবেশে কতো মানুষ দিন কাটাচ্ছেন অবলীলায়। ওরা যখন পারছে, আপনিও পারবেন অবশ্যই। পরিবেশ-পরিস্থিতি যতোই কষ্টকর হোক, কষ্ট নিয়ে যতো বেশি ভাববেন, ততো বাড়বে কষ্টের অনুভূতি । তার চেয়ে পরিবেশের মধ্যে থেকেই আনন্দ খুঁজে নিতে শিখুন । কষ্ট কমবে, কমবে কষ্ট নিয়ে টেনশন। চলে যাবে প্রতিকূল পরিবেশ-পরিস্থিতির দম বন্ধ করা অনুভব ।


অভ্যাস-৪৩২ ▌মাটি কামড়ে পড়ে থাকার অভ্যাস করুন। 

আপনি জীবনে কী হবেন তা আপনার বুদ্ধির উপর নির্ভর করে না, নির্ভর করে না  আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, পারিবারিক পটভূমিকা, আর্থিক অবস্থা বা সৌভাগ্যের উপরেও। শুধুমাত্র একটি গুণের ওপরে সবকিছু নির্ভর করছে— অধ্যবসায় বা মাটি কামড়ে পড়ে থাকার অভ্যাস। যদি এই গুণটি আপনার থাকে, তাহলে পৃথিবীতে কোনো কিছুই আপনার অসাধ্য নয় । আর যদি এই গুণটি না থাকে, তাহলে জানবেন সাফল্য চিরকালই আপনার কাছে অধরা থেকে যাবে । তবে অধ্যবাসায়ের সঙ্গে চাই নমনীয়তাও। কোনো ফললাভ হচ্ছে না যেখানে, সেখানেও বোকার মতো চেষ্টা করে যাওয়ার নাম কিন্তু অধ্যবসায় নয় কখনই। এর নাম গোঁয়ার্তুমি, যা মূর্খতারই নামান্তর । যদি দেখেন যে কোনো লাভ হচ্ছে না, তাহলে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করুন।  চিনে এক ধরনের বাঁশ আছে, যাদের লাগানোর প্রথম চার বছর পানি, সার ইত্যাদি দিতে হয় । তবে এসময় বাঁশ গাছটি বাড়ে না । কিন্তু পঞ্চম বছরে বাঁশগাছটি হঠাৎ ছয় সপ্তাহে ৯০ ফুট লম্বা হয়ে যায়। তাহলে কি বলা যাবে যে বাঁশ গাছটি বাড়তে পাঁচ বছরই লেগেছে ? বাহিরে অবশ্য কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন ছিলো না । কীভাবে শিকড় চালিয়ে শক্তি সংগ্রহ করেছে তা দেখা যায় নি; আবার পানি এবং সার না দিলেও গাছটি বাঁচতো না । প্রকৃতি থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। ধৈর্য ধরুন, এবং সঠিকভাবে কাজ করে যান । ফলাফল দৃশ্যমান না হলেও কিছু ঘটবেই । 


অভ্যাস-৪৩৩ ▌ড্রেস কোড মেনে চলুন।

আপনি কতোটা রুচিশীল তার অনেকটাই বলে দেবে আপনার পোশাক। পোশাক আপনাকে উপযুক্ত মোড়ক দিয়ে বাজারের উপযোগী করে দেবে। মনে রাখবেন— আপনার পোশাক যদি ভালো (পরিচ্ছন্ন/ পরিপাটি) না হয় তাহলে বহুক্ষেত্রে অবমূল্যায়িত হবেন, যা আপনার কার্যসিদ্ধিতে সহায়ক হবে না। এজন্য আপনাকে অবশ্যই পুরুষ হলে মানানসই শার্ট, প্যান্ট, বেল্ট, জুতো, ঘড়ি ইত্যাদি পড়তে হবে। পোশাকের রং নির্বাচনে সতর্ক হোন । এছাড়া নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বা পরিপাটি হতে হবে, টিপ, টপ থাকতে হবে, সুন্দর করে চুল কাটতে হবে, নিয়মিত শেভ করতে হবে। মুখে সুগন্ধ বা চুইংগাম ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখুন— শার্ট-এর বোতাম, প্যান্টের জিপ খোলা আছে কি-না।  একটা কথা মনে রাখুন, একটা ভাল ড্রেস পরা লোককে রাস্তায় কথা বলার ক্ষেত্রে অন্য লোকেরা যে মানসিকতা দেখাবে, ময়লা এলোমেলো পোশাকের মানুষকে একই রকম আচরণ করবে না।


অভ্যাস-৪৩৪ যুক্তিসঙ্গত ঝুঁকি নিতে সর্বদাই প্রস্তুত থাকুন । 

   জীবনে সত্যিকারের কিছু পেতে গেলে ঝুঁকি নিতেই হবে । কিন্তু কতোটা ঝুঁকি আছে এবং তা নিলে কী লাভ হতে পারে তা সিদ্ধান্তের আগে ভেবে দেখুন ।  সেইসব ঝুঁকিই নিন যা আপনার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যসিদ্ধির জন্য সহায়ক । সিদ্ধান্তে নেবার আগে ভেবে দেখুন, কাজটির ঝুঁকি কতোটুকু আর সম্ভাব্য লাভ কতোটুকু । এই ঝুঁকি আপনার মূল লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কি-না? ঝুঁকিটা কীভাবে কমানো যায়? 


অভ্যাস-৪৩▌কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করুন।

যে কোনো পেশায় সফলতার ৮৫% নির্ভর করে সঠিক কর্ম-পরিকল্পনার ওপর। কর্ম-পরিকল্পনা জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রে সাফল্য লাভের পথে অনেকটাই এগিয়ে দেয়। তাই প্রতিটি কাজের একটি পরিকল্পনা থাকা দরকার; পরিকল্পনা ছাড়া কাজ করলে শক্তি, সময় ও অর্থের অপচয় হয়। তাছাড়া পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজই সহজ ও সুন্দরভাবে সমাধা তথা সাফল্য লাভ করা যায় না। যেমন ধরুন, কেক তৈরী করার  ক্ষেত্রে যথাযথ মাত্রায় তাপ দেওয়ার পর যথা সময়ে ওভেন থেকে কেক বের করে যদি দেখা যায় যে, চিনি মেশানো হয়নি, তাহলে পুরুটাই পন্ড। তেমনি পরিকল্পনা ছাড়া কাজ করলে সর্বক্ষেত্রে যেকোনো সময় এধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থেকে যায় এবং ঘটে গেলে তখন আর উত্তরণের কোনো উপায় থাকেবে না। তাই শুরুতেই কাজের পরিকল্পনা তৈরী করুন; অতঃপর কাজে নামুন । পরিকল্পনা ছাড়া কাজে নামলে মনের ওপর চাপ বাড়ে; মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হতে হয় । 


অভ্যাস-৪৩৬ ▌আবেগ থেকে মানসিক রোগ হয়, সতর্ক থাকুন। 

নিজের আবেগকে বশে রাখতে না পারা একটি মানসিক ব্যাধি (Attention Deficit Disorder ) হতে পারে। এর দ্বারা মানুষের নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা হ্রাসপ্রাপ্ত হয় এবং আস্তে আস্তে এটি জীবনের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করে । যাঁরা এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হন আবেগপ্রবণ হওয়া তাঁদের সাধারণ লক্ষণ। তাছাড়া তাঁরা সহজে মনোসংযোগ করতে পারেন না। তাঁদের মন সর্বদা একবিষয় থেকে অন্যবিষয়ে বিচরণ করে এবং সর্বদাই আগোছালো থাকে । সামান্য কারনেই তাঁরা রাগে জ্বলে ওঠেন। এই ধরনের আবেগ-সর্বস্ব মানুষদের কোনো কাজে প্রকৃত নিষ্ঠাও থাকে না। এঁরা দেখবেন সর্বদাই একটি কাজ অসমাপ্ত রেখে আরেকটা কাজ ধরেন; আজ একটা হবি নিয়ে চর্চা করছেন তো কাল আরেকটা । এঁদের পক্ষে বেশিদিন একটা লক্ষ্যে স্থির থেকে কাজ করে যাওয়া দুঃসাধ্য। যখন এঁরা শুরু করেন, তখন বেশ উৎসাহ নিয়েই করেন। কিছুদিন পরই তাঁদের আশাভঙ্গ হয় । সমস্ত উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলেন তাঁরা । এদের কোনো কাজেই দৃঢ়তা নেই ।


অভ্যাস-৪৩৭ ▌ স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করুন মনের ওপর চাপ কমান

চার পাশের লোকজন, অবস্থা বা ঘটনার ওপর নিজের মানসিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখাই হলো স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের এর কৌশলগুলো কী? চারদিকে তাকান ভালো করে। অবস্থা নিয়ন্ত্রণ বা পরিবর্তন করার মতো আসলেই কিছু আছে কি-না দেখুন । সম্ভব হলে মানসিক চাপের অবস্থান থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখুন । প্রতিদিন অল্প করে হলেও ফাঁকা সময় রাখুন, বিরাম দিন নিজেকে ।  খুব ছোটো বিষয়ে মাথা ঘামিয়ে অস্থির হবেন না। চেষ্টা করুন প্রকৃতই গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে, বাকি বিষয়গুলো পাশে সরিয়ে রাখুন । পর্যাপ্ত সময় ঘুমান। বিশ্রামের স্বল্পতা আসলে মানসিক চাপকে বাড়িয়েই দেয় । অত্যধিক কাজের ভারে ডুবিয়ে নিজেকে অস্থির করে তুলবেন না । কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাছাই করুন কোন কাজের পর কোনটি করবেন ঠিক করে নিন


অভ্যাস-৪৩৮ ▌যে কাজে যতো ভয়, সে কাজ বেশি বেশি করতে হয়' ।

হাজার মাইলের পথচলা একটি মাত্র পদক্ষেপ দিয়েই শুরু হয় । তাছাড়া যারা সফল হয়েছেন, তাদের দিকে তাকিয়ে দেখুন- সবারই কিন্তু আপনার মতো মাথা, চোখ, মুখ, হাত, পা সবকিছুই আছে। সুতরাং তারা পারলে আপনিও পারবেন। অবশ্যই পারবেন। আত্মবিশ্বাস রাখুন। ‘আমি পারবো না' বা 'আমার দ্বারা হবে না’ এমন কথার কোনো মানে নেই । বরং ‘আমি পারবো’ এটাই সত্য। মন থেকে ‘আমি পারবো না" এই ধারণা মুছে ফেলুন।   বার বার স্মরণ করুন— ' যে কাজে যতো ভয়, বেশি করতে হয়' । প্রথম প্রথম আপনি পারবেন না। তবে সাহস করে কাজটা শুরু করুন। মনে রাখবেন- কলম না ধরলে কখনো লেখা আসে না; কলম ধরুন, দেখবেন যা লিখতে চান লেখা হয়ে যাবে । তেমনি কাজে নেমে পড়ুন, দেখবেন ঠিকই কাজ হয়ে যাবে । 


অভ্যাস-৪৩৯ ▌স্বপ্ন দেখুন এবং স্বপ্নকে আঁকড়ে থাকুন

মানুষের জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে অধিকাংশ মানুষই মৃত্যুবরণ করে তাদের মেধা কাজে না লাগিয়েই । তারা জানতেও পারেন না মহান কিছু করার শক্তি তাদেরও ছিলো । অথচ মানুষ চায় সাফল্য। “কিছু না করে সাফল্য পাওয়া যায় না'। 'শর্টকার্ট সাফল্য পাওয়া যায় না'; ‘চাওয়া মাত্রই পাওয়া যায় না'। যখন আপনি কোনো কাজের ইচ্ছা প্রকাশ করবেন তখন বাস্তবে সেই কাজটা করার আগে বারবার কল্পনার মাধ্যমে সেই কাজটার সফলতা দেখেন  আকাশ-কুসুম কল্পনা করে দিবাস্বপ্নে অনেকেই মশগুল থাকেন। কিন্তু তাতে মানুষ বাস্তবতা থেকে পালিয়ে স্বপ্নের জগতে গিয়ে আশ্রয় নেন। সেটা মারত্মক কাজ।  স্বপ্নের জগৎ থেকে বাস্তবে আসতে হবে । বাস্তবে যে কাজটা আপনার শীঘ্রই করতে হবে সেটারই  সমস্ত বাস্তব খুঁটিনাটির দিকে নজন রাখুন । এভাবেই অনেক সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে আমাদের চোখের সামনেই সুখ-সমৃদ্ধি-সাফল্যের চূড়ায় উঠে গেছেন বহু সাধারণ মানুষ। কোনো যাদু মন্ত্র বলে তা সম্ভব হয়নি। আসল ব্যাপার হলো- তারা সবাই স্বপ্ন দেখতেন কিন্তু বাস্তবসম্মত ছিল



অভ্যাস-৪▌  নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখুন।

অতীতের ভুল আর ব্যর্থতার কারণে মানুষ নতুন করে কাজ শুরু করতে পারে না।  কারণ, অতীতের ব্যর্থতা আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে ফেলে।  বিশেষ করে কোনো বড় কাজে ব্যর্থ হলে কারো কারো মনে হয়, তাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না। কিন্তু এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা।  একটি কাজে ব্যর্থ হওয়া মানে সব কাজে ব্যর্থতা নয়।  স্টিভ জবস পড়াশুনায় চরমভাবে ব্যর্থ।  কিন্তু কেউ তাঁকে ব্যর্থ মানুষ বলবে না। আলিবাবা ডট কম এর প্রতিষ্ঠাতা ও চীনের সবচেয়ে ধনী মানুষ জ্যাক মা জীবনে বিভিন্ন কাজে ৩০বার ব্যর্থ হয়েছিলেন।  কিন্তু এতবার ব্যর্থ হয়েও তিনি আত্মবিশ্বাস হারাননি।  কাজেই, অতীতের ব্যর্থতার কথা ভেবে আত্মবিশ্বাস হারাবেন না।  একভাবে সফল না হলে, অন্যভাবে চেষ্টা করুন কিন্তু চেষ্টা করা বন্ধ করবে্ন না।  এক সময়ে গিয়ে নিজের আসল শক্তি ও প্রতিভা কোথায়, তা ঠিকই বুঝতে পারবেন।  ব্যর্থতার ভয় কাটানোর জন্য এক মনে ভবিষ্যতে সফল হওয়ার দৃশ্য কল্পনা করুন, আর মনে মনে পজিটিভ কথা বলুন।  অতীত নিয়ে লেখক চাক পালানিউক-এর এই উক্তি মনে রাখবে্ন: “ আপনি যদি ভবিষ্যৎকে স্বপ্নে-কল্পনায় না দেখতে পান, তবে অতীত  আপনাকে পিছু ছাড়বে না”।   বর্তমানকে ঠিকমত ব্যবহার করতে না পারলে ভবিষ্যৎ অন্ধকারই থেকে যাবে। অতীতের প্রতিটি ব্যর্থতার কারণগুলো আলাদা করে লিখে রাখুন। বর্তমানে একই রকম পরিস্থিতিতে পড়লে, অতীতের ভুলগুলো দেখে  নিন, যাতে সেগুলো এবার না হয়।  নিজের বুদ্ধি আর শক্তির সবটুকু খাটিয়ে বর্তমানকে সফল করো।    বিখ্যাত লেখক বিল কেন-এর একটি উক্তি সব সময়ে মনে রাখবে : “অতীত একটি ইতিহাস, ভবিষ্যৎ একটি রহস্য, বর্তমান হলো ইশ্বরের দেয়া উপহার”।


অভ্যাস-৪৪১  ▌ ইচ্ছা শক্তিকে জাগ্রত করুন: 

আপনি হয়ত লক্ষ্য করবেন যে, অনেক ক্ষেত্রে আমাদের পড়ার সময় মন খারাপ লাগে, অর্থাৎ ভালো লাগে না। আপনি আপনার মনকে খারাপ লাগতে দিবেন না। -পুনরায় ফোকাস করার চেষ্টা করুন। প্রথম প্রথম আপনার কাজটি করতে কষ্ট হবে কিন্ত অভ্যাস হয়ে গেলে আর কোনো সমস্যা হবে না। আপনি কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন কি পারবেন না সেটা নির্ভর করে আপনার ইচ্ছার উপর। তাই, আগে নিজের ইচ্ছা শক্তিকে জাগ্রত করুন। দীর্ঘসূত্রতা নিঃসন্দেহে কাজের বা পড়ার মনোযোগ বিচ্যুত করার জন্য একটি শত্রু হিসাবে কাজ করে। তাই, দীর্ঘসূত্রতার অভ্যাস ত্যাগ করার চেষ্টা করুন। যখন একটি ছোট বাচ্চা কোনো একটি কাজ শেষ করে, তখন আপনি কি করেন? তাকে আপনি বিভিন্নভাবে প্রশংসা করেন এবং তাকে পুরস্কৃত করেন। আপনি নিজের সাথেও ঠিক একই ধরনের ব্যবহার করুন অর্থাৎ কোনো একটি কাজ শেষ করে কিছু উপহার নিজেকে প্রদান করুন। 



অভ্যাস-৪৪২  ▌ মানসিক চাপ কমাতে বন্ধুদের সাথে সময় কাটান : 

বহু পুরুষই স্ত্রী বা পরিবারের অন্যদের চাপে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। আর এর প্রভাব কমানোর জন্য তারা যদি পুরুষ বন্ধুদের সঙ্গে বেড়ায় তাহলে তা বেশ কাজে আসে। এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে টেলিগ্রাফ। জার্মান গবেষকরা জানিয়েছেন, পুরুষদের মানসিক চাপ কমাতে ও স্বাস্থ্যগত উন্নতির জন্য অন্য পুরুষদের সঙ্গে বেড়ানো বেশ কাজে দেয়। পুরুষ সঙ্গীদের সঙ্গে থাকলে তা মানসিক চাপের জন্য দায়ী স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা কমাতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু অন্য নারীদের সঙ্গে থাকলে এ মানসিক চাপ কমে না। ভাই মানসিক চাপ কমাতে পুরুষেরা পুরুষ বন্ধুদের সাথে সময় কাটান এবং মেয়েরা তাদের বান্ধবীদের সাথে ভালো টাইম অতিবাহিত করুন।


অভ্যাস-৪৪৩  ▌একসাথে হাঁটলে সম্পর্কের জটিলতা কেটে যায়: 

বোঝাপড়ার অভাব ঘটলেই হাঁটতে বেরোন সঙ্গীকে নিয়ে। একসঙ্গে হেঁটে যেতে পারেন মাইলের পর মাইল। সে সকালেই হোক কিংবা রোদ গড়ানো বিকেল। গ্লাসগো ব্যুরোর গবেষণানুযায়ী, যদি সঙ্গীকে নিয়ে একটু কষ্ট করে বেশি হাঁটেন তবে ফিরে পেতে পারেন সুন্দর স¤পর্কটিকে। মনোবিদদের মতে, চিড় ধরা স¤পর্ককে জোড়া লাগোনোর জন্য মাথায় রাখতে হবে কয়েকটি ফর্মুলা। তার মধ্যে প্রধান হলÑ একসঙ্গে হাঁটতে যাওয়া। অনেকটা পথ এক সঙ্গে চলতে চলতেই বেরিয়ে আসবে মনের কথা। সঙ্গীর সঙ্গে আপনি কত ঘণ্টা পার করলেন সেটি কিন্তু মোটেও দেখার বিষয় নয়। যতক্ষণই কাটিয়েছেন, সে সময়টুকু ভালো ছিলো কি না সেটিই দেখবার বিষয়। কোন জুটি যখন খুব বেশি সময় একত্রে কাটান তখন সে স¤পর্কের দম বন্ধ অবস্থা তৈরি হয় এবং অসুস্থ হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই গভীর স¤পর্কের জন্য বেশি সময় নয়, কোয়ালিটি টাইম অতিবাহিত করাই খুব দরকার।


অভ্যাস- ৪৪৪ ▌ক্রিয়েটিভ টাইম ম্যানেজমেন্টের সাতটি সূত্র:

D-Divide:পুরো কাজ একসঙ্গে না করে ছোটো ছোটো অংশে ভাগ করে ডেডলাইন ঠিক করুন।

O- Organise: কীভাবে কাজ করবেন তা সময় অনুযায়ী সাজিয়ে নিন।

I- Ignore: অল্পেই বিরক্ত হবেন না। তেমন জরুরি না হলে প্রতিক্রিয়া না করে উপেক্ষা করুন।

T- Take Time: সময় নিন। ভালো করে ভেবে কাজ করুন। 

N- Now: কাল নয়, আজ করুন। 

O- Opportuniy: সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন। 

W- Watch out: :  কোন কোন খাতে সময় ব্যয় করেছেন তার হিসাব রাখুন


অভ্যাস- ৪৪৫ ▌বিনীত কিন্তু দৃঢ়ভাবে কথা বলুন: 

যথোচিত গাম্ভীর্য রক্ষা করুন। কথা বলার সময় নিজের ব্যক্তিত্ব বা গাম্ভীর বজায় রাখুন। অহেতুক ছ্যাবলামি করে নিজেকে তরল করে তুলবেন না। নিজের বক্তব্য দৃঢ়ভাবে (এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে) প্রকাশ করুন। এমনভাবে কথা বলবেন না যাতে অপরপক্ষ তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন। তাতে সুস্থ ভাব বিনিময়ের পরিবেশটাই নষ্ট হয়ে যাবে। যদি ‘না’ বলতে হয় ‘না’-ই বলুন; ‘হ্যাঁ’ বলে শ্রোতাকে মিথ্যা আশা দেবেন না। অবশ্য ‘না’-টা ভদ্রভাবে বলতে পারেন। মনে রাখবেন, কখনো রুক্ষ বা উগ্র হবেন না, দৃঢ় হোন। কীভাবে ভদ্রতা বজায় রেখেও দৃঢ় হওয়া যায়, নিজের মনোভাব পরিষ্কারভাবে বলা যায়।   যে কথা বলতে যাচ্ছেন সেটা করবার বা বলার আগে একবার সেটার মহড়া দিয়ে নিন। এতে খুব বেশি সময় লাগবে না, খুব জোর মাত্র পাঁচ থেকে দশ সেকে- লাগবে। কিন্তু দেখবেন এর দ্বারা আপনার স্বভাবের একটা মৌলিক পরিবর্তন হবে। হঠকারিতা থেকে বিচক্ষণতায় উত্তরণ হবে আপনার।


অভ্যাস-৪৪৬  ▌মাটি কামড়ে পড়ে থাকার অভ্যাস: 

আপনি সফল হতে চাইলে কাজের খুঁটিনাটি দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন ঠিকই কিন্তু সব কাজ একা করতে যাবেন না। আপনি যদি ছোটোখাটো কাজে (যা আসলে আপনার জন্য অপ্রয়োজনীয়) সারাক্ষণ বাস্ত থাকেন।  তাহলে প্রয়োজনীয় কাজ করবেন কখন?  যেসব নিত্য-নৈমিত্তিক কাজকর্ম অন্য লোকে করতে পারে। সেসব কাজ তাদেরকে দিয়েই করিয়ে নেবেন। কারণ একা সব কাজ করলে কাজ নিখুঁত হয় ঠিক-ই কিন্তু এর ফলে সময় ও শক্তি খরচ হয় বেশি। ফলে লাভের বদলে ক্ষতির অংশ বেশি, তাই কাজ অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিন। তাহলে কঠিন কাজও সহজ হয়ে যাবে। আপনি কতোটা রুচিশীল তার অনেকটাই ব'লে দেবে আপনার পোশাক।  মনে রাখবেন, আপনার পোশাক যদি ভালো (পরিচ্ছন্ন/ পরিপাটি) না হয় তাহলে বহুক্ষেত্রে অবমূল্যায়িত হবেন, যা আপনার কার্যসিদ্ধিতে সহায়ক হবে না। এজন্য আপনাকে অবশ্যই পুরুষ হলে মানানসই শার্ট, প্যান্ট, বেল্ট, জুতো, ঘড়ি ইত্যাদি পড়তে হবে।



অভ্যাস-৪৪৭  ▌ সচেতনভাবে বিরত থাকুন: 

* অকারণে হাত-পা ঝাড়া দেয়া, বসে পা দোলানো, পা দিয়ে শব্দ করা থেকে বিরত থাকুন। * কোনো কিছু দামি এটা বোঝানোর জন্যে বারবার তা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করা উচিত নয়। * কেউ এদিকে আসছেন দেখে তার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকা অনুচিত। * যেখানে সেখানে হাত দিয়ে ‘তবলা’ বাজানোর মতো শব্দ করা বদ অভ্যাস। * কথা বলার সময় হাত নাড়া অনুচিত। * পরিচিত অন্যদের সামনে অনুমতি ছাড়া একা কিছু খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। * ‘আজ কী দিয়ে খেয়েছেন’ জিজ্ঞেস করবেন না। * মুখ হাত দিয়ে আড়াল না করে দাঁতের কোণের ময়লা বের করা থেকে বিরত থাকুন। * পিরিচে চা ঢেলে খাওয়া বা গ্লাসে চা ঢেলে খাওয়া কিংবা পেয়ালা থেকে খাবার অন্যত্র  রেখে খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। * কাছের লোকজনের প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হন। যখন তাঁদের সান্নিধ্যে থাকবেন তখন এটা-সেটা ভেবে অন্যমনস্ক হবেন না।  * যখন কোনো লোকের সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন তখন দেখুন কোনো দরকারি খবর বা তথ্য পাচ্ছেন কি-না।


অভ্যাস-৪৪৮ ▌কীভাবে বাধা অতিক্রম করবেন?: 

একজন যুবক সক্রেটিসকে জিজ্ঞেস করল, ‘কীভাবে আমি আমার জীবনের বাধাগুলো মোকাবেলা করতে পারি? উত্তর এল, ‘আগামীকাল বিকেলে সমুদ্রের পারে এসো।’পরের দিন যুবকটি যখন এল, সক্রেটিস তাকে নিয়ে সমুদ্রের পানিতে নামলেন। যুবককে অবাক করে দিয়ে হঠাৎ সক্রেটিস তার (যুবকের) মাথাটি পানির নিচে ডুবিয়ে দিলেন এবং জোরে চেপে ধরলেন, যাতে যুবকটি নিঃশ্বাস নিতে না পারে। যুবকটি যতই চেষ্টা করতে থাকল পানির ওপরে ওঠার জন্য, সক্রেটিসক আরো জোরে তাকে চেপে ধরলেন। যখন যুবকের শরীর নীল হতে শুরু করল, সেই মুহূর্তে সক্রেটিস তাকে ছেড়ে দিলেন। আধঘণ্টা যুবক নির্বাক হয়ে পড়ে রইল। এবার সক্রেটিস বললেন, তোমাকে যখন পানিতে ডুবিয়ে দিচ্ছিলাম, তুমি চেয়েছিলে একটু হাওয়া। তোমার জীবনে যখনই কোনো বাধা-বিপত্তি আসবে, যেভাবে তুমি হাওয়া চেয়েছিলে, সেভাবে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করবে, তাহলেই সব সমস্যার সমাধান করতে পারবে।


অভ্যাস-৪৪৯  ▌ ভাবপ্রবণ নয়, সংযত আচরণ করুন: 

* নিজের দুর্বলতা চিহ্নিত করুন ঃ জীবনে শৃঙ্খলা আনতে গেলে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে আপনার দুর্বলতা কোথায়; বিশেষ করে দুটি দুর্বলতা। প্রথমত- যেসব কাজ আপনি শুরু করেন কিন্তু শেষ করেন না। দ্বিতীয়ত- যেসব ক্ষেত্রে আপনি ঝোাঁকের মাথায় অবিবেচকের মতো কাজ করে ফেলেন।  নিজেকে পুরস্কৃত করুন ঃ  অনেক শক্ত কাজ আপনি ভয়ে ভয়ে এড়িয়ে যান, যদিও জানেন এড়িয়ে গিয়ে কিছু লাভ হচ্ছে না। কাজটা আজ, না হলে কাল করতেই হবে। তখন কী করবেন? নিজেকে একটা পুরস্কার দেবেন। মনকে বলুন, তুমি যদি অমুক কাজটা অমুক সময়ের মধ্যে করতে পারো, তাহলে তোমাকে আমি একটা বিশেষ পুরস্কার দেবো। এই ‘বিশেষ পুরস্কার’টা আপনার পছন্দমতো যে কোনো জিনিস (বই, ক্যাসেট, জামা-কাপড়) বা বিনোদন (সিনেমা যাওয়া, বেড়াতে যাওয়া) হতে পারে। মোটকথা  সেটা যেন আপনার কাছে বেশ লোভনীয় হয়। তারপর কাজটা হয়ে গেলে নিজেকে সত্যিই ঐ বিশেষ পুরস্কারটা দিন; নিজেকে ঠকাবেন না।  


অভ্যাস-৪৫০  ▌সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেসব সত্য মানতেই হবে: 

প্রথমেই মনে রাখা দরকার, জীবনের অন্যান্য কিছুর মতো  যে-কোনো সম্পর্ক ভেঙে পড়তে পারে। সে কারণে, অপরপক্ষ যদি স¤পর্কের ইতি টানতে চায়, কিংবা আপনারও যদি মনে হয় সেই স¤পর্কটা বোঝার মতো বয়ে বেড়াচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে স¤পর্কের ইতি টানার মানসিকতা রাখতে হবে। একে অন্যের কাছ থেকে শতভাগ কোনো কিছুই আশা করা বোকামি। নিজের যেমন কিছু না কিছু বিষয়ে দুর্বলতা আছে, তেমনি অন্যেরও কিছু ঘাটতি থাকতেই পারে। সেসব মেনে নিতে পারলে স¤পর্ক ভালো থাকে। স¤পর্কে জড়ানোর পর সারাক্ষণ কী পেলাম আর কী পেলাম না, সেসব নিয়ে চিন্তা করতে থাকলে স¤পর্ক দিনের পর দিন খারাপের দিকে যাবে। অপরপক্ষ যে সারা জীবন আপনার সঙ্গে থাকতে বাধ্য, সেটাও ভাববেন না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার চিন্তা-আবেগ পাল্টে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভিন্ন রকমের পরিস্থিতি ঘটলে নিজেকে সামলে নিন। অপরপক্ষ যে কোনো সময়ই আঘাত করবে না, এ ধরনের চিন্তা থেকে সরে আসা দরকার।


অভ্যাস-৪৫১  ▌যে সময় মুখ খুলবেন না: 

‘বেশি কথায় বেশি দোষ, ভেবে-চিন্তে কথা কস’- প্রবাদটি হয়তো সবাই জানি। তবুও মুখ ফসকে অনেক কথাই বেরিয়ে যায়। কিন্তু জীবনে কিছু পরিস্থিতিতে চুপ থাকাই ভালো। যেমন-১. কারো মৃত্যুর পরে তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে নীরবতা পালন করাই ভালো।  ২. নিজেকে যখন বিভ্রান্ত বলে মনে করছেন, তখন চুপ করে থাকুন। এ সময়ে কথা বলতে গেলে বরং বিড়ম্বনা বাড়বে। জটিলতা আপনাকে ঘিরে ধরবে। ৩. কোনো আলোচনা যদি মনোগ্রাহী হতে থাকে, তখন চুপচাপ শুনে যান। অযথা আলোচনার মাঝে কথা বলতে গিয়ে বিরাগভাজন হবেন না। ৪.মন একদম ভাল নেই। সবকিছুতেই যেন বিরক্ত লাগছে। এমন সময় যতটা পারবেন চুপ করে থাকুন। কারণ ভাল কারও সঙ্গেও আপনি অকারণে খারাপ ব্যবহার করে ফেলতে পারেন।  ৫. যেখানে সেখানে অযথা কথা, বাজে তর্ক, উড়ো ঝগড়া ইত্যাদির সময়ে মুখ না খোলাই ভালো।


অভ্যাস- ৪৫২ ▌তুলনার অভ্যাস বিষিয়ে দেয় স¤পর্ক: 

যত বেশি তুলনা আসবে, স¤পর্কে ততই টান পড়তে পারে। স্কুলে কার হাতের লেখা বেশি ভাল, তা নিয়ে শিক্ষর্থীদের মায়ের মধ্যে তুলনার লড়াই হয়। এ রেষারেষির ফলে দুই মায়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে যেতে পারে মুখ দেখাদেখি। তুলনা টানলে আসলে এক জনকে উপরে তুলতে গিয়ে অন্য জনকে নীচে নামানো হয়ে যায়। তা কারোর পক্ষেই ভালো লাগে না। অন্যদের সঙ্গে বারবার তুলনা করা যে কোনো মানুষের মধ্যে হিংসা ঢোকে। বড় হয়ে যা কর্মক্ষেত্রে এগোনোর সময়ে বড় বাধা হতে পারে। এই পৃথিবীতে প্রত্যেক মানুষ একে অপরের চেয়ে ভিন্ন। একজন মানুষের ভেতর সব গুণ মজুদ থাকে না। এটা যেমন আপনার বেলায় সত্যি, তেমনি সত্যি আপনার সঙ্গীর বেলায়ও। তাই কারো দোষগুণ নিয়ে কখনো অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে যাবেন না। আপনার পরিচিত কোনো দ¤পতি হাসিখুশিতে থাকা মুখ বা ছবি দেখে মনে করবেন না যে, তারা আসলেই সুখী। তাদের হাসির অন্তরালে অনেক কষ্ট থাকতে পারে। সেটা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তুলনা করা উচিত নয়।


অভ্যাস-৪৫৩  ▌ঝগড়ার পর যেভাবে গড়ে তুলবেন মধুর স¤পর্ক: 

স¤পর্কে থাকলে দুজনের মধ্যে ঝগড়া, কথা কাটাকাটি বা তর্ক হতেই পারে। কিন্তু সমস্যা তখনই শুরু হয় যখন দুপক্ষ তা ধরে নিয়ে বসে থেকে অনেকটা সময় পার করে দেন। বুকের ভেতর অভিমান জমিয়ে রেখে কষ্ট পেতে থাকেন এবং এভাবেই দূরত্বের সৃষ্টি হতে থাকে স¤পর্কে। তাই ঝগড়ার পর স¤পর্ক আবার নতুন করে মধুরতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে দুজনকেই। এতে করে দুজনের প্রতি শ্রদ্ধাও বাড়বে এবং স¤পর্কও হবে দীর্ঘস্থায়ী। * ঝগড়া যে ব্যাপারটি নিয়েই হোক না কেন তা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন সেখানেই। * দুজনের একসাথে কাটানো মধুর স্মৃতি মনে করে দেখুন। এতে করে ঝগড়ার পরও মানুষটির সাথে স¤পর্কে টানাপোড়ন সৃষ্টি হবে না। * সব চাইতে বড় বিষয় ইগো ধরে বসে থাকবেন না। ভুল যারই হোক না কেন স¤পর্কে পুনরায় মধুরতা আনতে দুজনেই দুজনের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিন।  কারণ ভুল যারই হোক না কেন ঝগড়া দুজনেই করেছেন। *জোরাজুরি করে কোনো কিছুই হয় না, তিনি যখন সহজ হবেন তখনই তার সাথে কথা বলে বিষয়টি মিমাংসা করে নিন। নতুবা নতুন করে ঝগড়ার সূচনা হবে। ঝগড়ার পর মনের মেঘ দূর করে ফেলার জন্য এমন কিছু করুন সঙ্গীর জন্য যা নিমেষেই মুখে হাসি ফুটিয়ে দেবে।


অভ্যাস-৪৫৪  ▌বুদ্ধিমান মানুষের ৫ বৈশিষ্ট্য: 

বুদ্ধিমত্তার সত্যিকারের লক্ষণ জ্ঞান নয় বরং কল্পনাশক্তি।  মনোবিজ্ঞানীদের মতে, দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা মানুষগুলোই বেশি বুদ্ধিমান হন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যারোলাইনার গবেষণা থেকে দেখা গেছে, যাদের বুদ্ধিমত্তা বা আইকিউ ৭০-এর চেয়ে কম এবং ১১০-এর চেয়ে বেশি ছিল, তাঁরা সবাই কুমার বা কুমারী (ভার্জিন)। গবেষণা করে দেখা গেছে, যে যত বেশি ধূমপান করে, তার বুদ্ধি তত কম। কেন রাজনৈতিকভাবে উদার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণকারী ব্যক্তিরাই বেশি বুদ্ধিমান সে বিষয়ে গবেষণা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, যে যত বুদ্ধিমান তাঁর মধ্যে রাজনৈতিক উদারতা তত বেশি। যারা যেকোন পরিস্থিতিতে মাথা গরম করেন এবং চিৎকার করতে থাকেন তারা বোকা নয়।  গবেষণা থেকে জানা যায়, যারা জিনিসপত্তর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখেন এবং রাগারাগি করে কথা বলেন, তারাই অন্যদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান।


অভ্যাস-৪৫৫  ▌পক্ষপাতমূলক আচরণ এড়িয়ে চলুন

অন্যদের দেখলেই  আপনি বুঝতে পারবেন না, কে কোন মাপের মানুষ। অন্যদের খারাপ ও নিচ হিসেবে ধরে নিলে  আপনার পৃথিবী ছোট হয়ে আসবে, পক্ষান্তরে অন্যদেরকে ভালো, জিনিয়াস ভাবলে তাদের দোষ-ত্রু-টি ক্ষমা করে দেওয়া সহজ হয়ে যায়। মনে রাখবেন, প্রতিটি মানুষ নিজ নিজ ক্ষেত্রে জিনিয়াস। বাড়ীর বুয়াও মুনিবের উলটাপালটা বেখেয়ালি জিনিসপত্রের ব্যবহার দেখলে মৃদুস্ববে মদন বলে বিরক্ত হয়। অর্থাৎ পেশাগত জীবনে সফল মানুষটিও তার কাজের বুয়ার কাছে মদন যার যার পেশায় সে সে জিনিয়া এই কথাটা মাথায় নিয়েই আমাদেরকে আচরণ করতে হবে।


  অভ্যাস-৪৫৬  ▌পরিবর্তনের জন্য তৈরি থাকুন

উত্থান এবং পতন স্বাভাবিক ব্যাপার। সংস্কার বা পরিবর্তনের কথা শুনলে সবার মনেই একটা অজানা আশঙ্কা কাজ করে। সাধারণত বয়স্ক মানুষ প্রাচীনপন্থী হয় এবং সহজেই পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারে না কিন্তু আপনি যদি সংস্কার বা পরিবর্তনকে সহজভাবে নিতে পারেন তাহলে  আপনার খারাপ লাগা কমবে এবং  আপনার অবচেতন মন  আপনাকে আস্তে আস্তে পরিবর্তনের জন্য তৈরি করবে। তখন সংস্কার বা পরিবর্তন আপনার  জন্য সহজও হবে। সব সময় মনে রাখতে হবে জীবনের সুখ শান্তি এবং উন্নতির প্রধান বাহন পরিবর্তন পরিবর্তন মানে নতুন সম্ভাবনা এই সম্ভাবনাকে সুযোগ হিসেবে দেখুন।


 অভ্যাস-৪৫৭  ▌ যাতায়াতের সময়কে কাজে লাগান।

বেশিরভাগ সময় আমরা যাতায়াতের সময় নষ্ট করি চুপচাপ বসে থেকে। সত্যিকার অর্থে যাতায়াতের সময়টাই হল  আপনার  শক্তি সঞ্চয়ের সবচেয়ে ভালো সময়, আর এই জন্য গান বা মিউজিক শুনার চেয়ে অন্য একটি ভাষার শব্দ শেখার চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না।  এভাবে এই  সময়কে কাজে লাগিয়ে আপনি অনায়াসে ইংরেজি বা অন্য একটি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।


 অভ্যাস-৪৫  ▌পৃথিবীতে অসুন্দর বলে কিছু নেই।

 আপনি দেখতে যেমনই হ, এ নিয়ে মনে অতৃপ্তি রাখা বোকামির নামান্তর। নিজের চেহারা, নিজের কন্ঠ, নিজের রঙ, নিজের সাইজ ইত্যাদি নিজের কাছে অপছন্দের হলেও, অন্যের চোখে  আপনি পছন্দসই হতে পারেন। আসলে কাউকে ভালো লাগার বিষয়টি যার যার রুচির ওপর নির্ভর করে। তাই এ নিয়ে অসুখী হয়ে পড়ার কিছু নেই।  আসলে সুন্দর্যের কোন মাপকাঠি নেই । কালোর মধ্যেও আলো দেখতে পাবেন যদি আপনার দেখার চোখ বা মন থাকে।


অভ্যাস-৪৫৯  ▌সুযোগ খুঁজতে থাকুন।

 কার ভাগ্য কখন কোন দিক দিয়ে খুলে যায় তা কেউ বলতে পারে না। তাই সদা চোখ-কান খোলা রাখুন এবং সুযোগ খুঁজতে থাকুন। অধিকাংশ মানুষ যা ভালোবাসেন, তা করে জীবন কাটাতে পারে না। তারা সেটা করে, যেটা তাদের মা-বাবা, বন্ধু-বান্ধব, সঙ্গী-সঙ্গিনীর পরামর্শ দেয়। কিন্তু আপনি যদি  আপনার ভালোগার কাজটিই করতে চা, তবে সুযোগ খুঁজতেবে।  আপনি যাআসলেই করতে চান, তা “এখনই” কাজে লাগতে পথ বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে-কোনো সুযোগ চিরস্থায়ী হয় না”। দেখা যায় এমন এক সময় গিয়ে আপনি শুরু করলেন, যখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাই সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজে নেমে পড়ুন এবং লেগে থাকুন ছায়ার মতো। যত বাধা বা অসুবিধা আসুক, প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করে করে এগিয়ে যা


অভ্যাস-৪৬০  ▌শুদ্ধ বাংলায় সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলা চর্চা করুন।

হাসিমুখে কথা বলা শিখুন আর শরীরী ভাষার দিকে নজর দিন। কথা বলার সময় হাত কোথায় রাখছেন, ঘাড় কতটুকু বাঁকাচ্ছেন কিংবা ভ্রু কতটুকু ব্যবহার করছেন-সবটাই খেয়াল রাখুন। চোখে চোখ রেখে কথা বলা শিখুন। যাঁর সঙ্গে কথা বলঞ্ছেন, তাঁর দিকে না তাকিয়ে কথা বলা অসম্মান ও অভদ্রতা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের শরীরী ভাষা সংশোধনে সময় দিন। টানা পাঁচ সপ্তাহ এমন চেষ্টা করলে নিজের মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পাবেন। যেকোনো কাজে  নিজের আঞ্চলিকতা পরিহার করে শুদ্ধ বাংলায় সুন্দর করে কথা বলতে চেষ্টা করুন। শুরুতে হয়তো সমস্যা হবে কিন্তু আঞ্চলিকতা অবশ্যই পরিহার করা যায়। টানা ছয়-সাত সপ্তাহ সময় দিলে আঞ্চলিক টান কথায় কমিয়ে আনতে পারবেন।  কথার মধ্যে কখন, কিভাবে, কতটুকু বিরতি নিতে হয়, তা নিজেই উপলব্ধি  করুন।  আপনি যাঁর সঙ্গে কথা বলছেন, সে লোক কথা বুঝতে পারছে কি না, সেদিকে মনোযোগ  দিন।  আপনি কি বলছেন, তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো  আপনার শ্রোতা কি শুনছে বা কি বুঝছে।  আপনার কথায় আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। শ্রোতার মুখ ও শরীরের অভিব্যক্তি দেখে শ্রোতাকে বুঝতে চেষ্টা করুন। 


অভ্যাস-৪৬  ▌'এলিভেটর পিচ' তৈরি করুন।

কথা বলার আগে কি বলবেন, তা অবশ্যই গুছিয়ে নেবেন। অন্তত একটা ছক  তৈরি করে  ্নিবেন। প্রথম মিনিটে কি বলবে্ন, দ্বিতীয় মিনিটে কি আলোচনা করবে্ন  আর বক্তব্য শেষ করবেন কিভাবে সাজিয়ে নিন। কথা বলার সময় জটিল বাক্য ব্যবহার করবে না। বিদ্যার দৌড় কখনোই কথার মধ্যে প্রকাশের চেষ্টা করবেন না। সরল ও সাধারণ শব্দ ও বাক্যে কথা বলার চেষ্টা করুন। ধরুন,  আপনি একজন নেতা বা বিনিয়োগকারীর সঙ্গে লিফটে উঠেছেন। ত্রিশ সেকেন্ডের জন্য তাঁর সঙ্গে নিরিবিলিতে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে তাঁর সামনে কোনো ‘আইডিয়া’ উপস্থাপন করবে্ন?  ২০-৩০ সেকেন্ডের মধ্যে কার্যকরভাবে একটা ভাবনা উপস্থাপন করাকে বলা হয় ‘এলিভেটর পিচ’। এসব ক্ষেত্রে সমস্যা নয়, সমাধান বলুন। শ্রোতার আগ্রহের জায়গা সম্পর্কে আগে জেনে নিন, সেভাবেই তোমার বক্তব্য  তৈরি করুন। ‘আরেকটু সময় পেলে বোঝাতে পারতাম,’ এই মনোভাব রাখবে না।


অভ্যাস-৪৬  ▌'পড়ার বিকল্প নেই

যাঁরা সুন্দর করে কথা বলেন, তাঁরা কিন্তু ব্যক্তিজীবনে অনেক পড়াশোনা করে্ন। পড়ার কিন্তু বিকল্প নেই। ফিকশন, নন-ফিকশনসহ সব ধরনের বই পড়ুন। নানা ধরনের বই পড়লে নিজের মধ্যে নানা বিষয়ে জ্ঞান ও তথ্য জমা হয় তাতে কথা বলার সময় গুছিয়ে বলে ফেলার শিল্প রপ্ত করা সহজ হয়।  একটি ভালো বই পড়া, সেমিনারে অংশ নেয়া এবং নতুন কিছু শেখা মানে প্রতিনিয়ত নিজের বিকাশ ঘটার পথ খোলা রাখা। যারা কিছু না কিছু শেখায় মনোযোগী থাকেন তাদের মানসিক ভাবে সুখী ও সুস্থ বলে জানাচ্ছে গবেষণা। শেখার প্রবল আগ্রহ ধরে রাখা এবং শিখতে থাকা বলে দেয় সাফল্য ওই ব্যক্তির দোরগোড়ায় কড়া নাড়বেই।


অভ্যাস-৪৬  ▌'নিজেকে ভালোবাসুন, নিজেকে গড়ুন।

জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না, আর অন্য কেউ এসে তোমার স্বপ্নগুলো গড়ে দেবে— এমন আশা করাও বোকামি।  আপনি যদি নিজেকে আপন করে নিতে না পারেন, তবে অন্য কেউ  আপনাকে আপন করবে না।  তাই নিজের শক্তিকে চিনতে শিখুন, নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য নিজেই নিজেপথ তৈরি করুন

অন্যের মতো হতে গিয়ে নিজের অস্তিত্বকে ভুলে  ডুবিয়ে দিবেন না। মন কিছু করুন, যাতে সমাজ  আপনার নাম ধরে চিনতে বাধ্য হয়। সফলতা  কেউ  আপনাকে দেবে না— সেটা  আপনাকেই অর্জন করতে হবে। যারা নিজের স্বপ্নের পেছনে সময় দেয়, তারা-ই একদিন গন্তব্যে পৌঁছেন। তাই অন্যের মতামত নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে, নিজের উন্নতির  জন্য সময় দিন মনে রাখুন— জীবনের কঠিন সময়ে  আপনি একাই থাকবেন। দুঃসময়ে নিজেকেই নিজের শক্তি হতে হবে। নিজের লড়াই নিজেকে একাই লড়তে হবে। আপনি যদি নিজেকে মূল্য  দেন, তবে দুনিয়াও  আপনাকে মূল্য দেবে। 


অভ্যাস-৪৬  ▌সফলতা তাদেরই জন্য, যারা থেমে থাকে না

জীবন মানেই যুদ্ধ। কখনো পথ সহজ হয় না, কখনো পায়ের নিচে থাকে কাঁটা। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনার সাহস আর অদম্য ইচ্ছাই সেই কাঁটাকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারে। জীবনের প্রতিটি ব্যর্থতা শুধুমাত্র আপনাকে শক্তিশালী করার জন্য আসে। একটি গাছ যেমন ঝড়ে নত হয়, কিন্তু শেকড় আঁকড়ে ধরে রাখে—ঠিক তেমনই আপনাকেও জীবনযুদ্ধের ঝড় সহ্য করতে হবে। পড়ে গেলে দুঃখ নেই, থেমে গেলে সমস্যা।

নিজের স্বপ্নকে কখনো ছোট ভাববেন না। বড় স্বপ্ন দেখুন, কারণ বড় স্বপ্নই আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজকের আপনার কঠোর পরিশ্রম, আপনার ঘাম ঝরানো সংগ্রাম—এই সবই একদিন আপনার বিজয়ের গল্প হয়ে  উঠবে।  কঠিন সময়গুলোই আপনার আসল পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় যারা টিকে যায়, তাদেরই নাম লেখা হয় সাফল্যের ইতিহাসে। 


অভ্যাস-৪  ▌প্রিয়জনদের কিছু না কিছু উপহার দিন।

এই উপহার মানে কিন্তু  ফর্মাল মোড়কযুক্ত কোনো উপহার নয়। উপহার হতে পারে তোমার সামান্য হাসি, ধন্যবাদ জ্ঞাপন, বিনয় প্রদর্শন কিংবা একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্মতি। আর রাস্তায় ভিখারিদের দেখলে কিছু না দিয়ে যাবে  না, খুচরা টাকা দান করার মাধ্যমেও তুমি মনের সুখ লাভ করতে পারেন।


অভ্যাস-৪৬  ▌আপনি আজ শুরু করুন, নয়তো পিছিয়ে পড়বেন।

 একটি জার্মানী প্রবাদ আছে-কাউকে প্রপোজ করতে চাইলে আজকেই করুন, কারণ কাল সে অন্য কারো হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ “সবকিছু ঠিকঠাক হলে শুরু করব” — এই ধারণা ভয়ানক। কারণ জীবন কখনোই নিখুঁত হবে না। এই অপেক্ষার মানে হলো, আপনি ভয় পাচ্ছেন। আপনি কি এমন একজন, যিনি ভাবেন একদিন আমি সব ঠিকঠাক করে নেব। এই যেমন—❍ আগামীকাল থেকে সকালে উঠে দৌড়াব। ❍ পরের মাস থেকে নতুন কিছু শিখব। ❍ আগামী বছর একটা বিজনেস শুরু করব বা চাকরি পাব। কিন্তু ওই "একদিন" কখনো আসে না আপনার জীবনে। আর এই "অপেক্ষা", এই "আগামীকাল" আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় প্র*তারক। পরিকল্পনা করা সহজ, কিন্তু সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করা কঠিন। আমাদের মস্তিষ্ক পরিকল্পনার সময় সাময়িক আনন্দ পায়, এবং মনে করে কাজ শেষ। কিন্তু বাস্তবে কাজ শুরু না করলে সেটি শুধু একটা কল্পনা। বড় কিছু করার জন্য ছোট কিছু শুরু করাটা জরুরি। জীবন কখনোই "পরে" বা "কাল" বলে আপনার জন্য অপেক্ষা করবে না। সময় তার মতো এগিয়ে যাবে। জীবন বড়ই নিষ্ঠুর। সে আপনার জন্য একদিনও অপেক্ষা করতে রাজি নয়। যতদিন না আপনি শুরু করছেন, ততদিন সবকিছুই অবাস্তব। আর একবার শুরু করলে সবকিছুই সম্ভব। আজকের ছোট পদক্ষেপটাই হতে পারে আপনার আগামীকালের সাফল্যের ভিত্তি।



অভ্যাস-৪৬  ▌সবকিছুর উত্তর দিতে নেই, সবকিছুতে রিয়েক্ট কররেন না।


চারপাশে প্রচুর মানুষের সাথে দেখা হবে, অনেক ভিড় ঠেলে এগোতে হবে, অনেক রকম কথা কানে আসবে শুধু আপনাকে যেটা করতে হবে সেটা হলো ইগনোর। জীবনে কিছু মানুষ আবর্জনা ছড়াতে আসবে, তাদেরকে আগাছার মতো উপড়ে ফেলে দিতে হবে, লাইফ আপনার বাউন্ডারি আপনাকেই সেট করতে হবে, নেগেটিভিটি যেখানে দেখবেন সটান সেখান থেকে দূরে সরিয়ে নেবেন নিজেকে। শুনতে খারাপ হলেও আপনার কাছের অনেক মানুষ আপনাকে খারাপ দেখতে চায়, তারা চায় সহানুভূতি নামক মলমের তলে একটু কাটা ঘায়ে নুন ছিটাতে, আপনি সিম্পলি সেই সুযোগ টাই দেবেন না, তাদের বোঝাতে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, আপনার সামনে কেউ যদি বলে আপনি মুর্খ, তাই মেনে হেসে বেরিয়ে আসুন, ওই যে সময় আর এনার্জি বাঁচিয়ে নিলেন, ব্যাস কেল্লাফতে। যে যা বলছে শুনে নিন, আর মুচকি হেসে শিরদাঁড়া সোজা করে নিজের সিদ্ধান্তটা নিজেই নিন, যারা নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে তারা আসলেই জীবন চেনে, বোঝে..আপনাকে নিয়ে যখন বাকিরা সমালোচনা করতে ব্যস্ত থাকবে আপনি ঠিক সেই সময় গাছ লাগান, ঘুরে আসুন, রং তুলি নিয়ে ক্যানভাস সাজান, বাড়ি গোছান, গল্প পড়ুন, আরো দুটো সাহিত্য পড়ুন, নিজের পুরোনো ফটো দেখুন, ব্যাডমিন্টন খেলুন, ফটো তুলুন, চা খেতে বেরিয়ে পড়ুন, নামাজ পড়ুন, পুজো করুন।

মোটকথা তাদের কথায় রিয়েক্ট করবেন না, যা বলছে বলুক, আপনার কানে এলেও ফেলে দিন, দিনশেষে আপনি জানেন আপনি কি, কেমন, আর এটাও জানেন যারা বলছে তারা আপনার কাছে  জাস্ট ম্যাটার করেনা।


অভ্যাস-৪৬  ▌হাত আর মাথার উপর নির্ভর করুন , ভাগ্য বা জোয়ার উপর নয়।

নেটে খালি ক্রিকেট জুয়ার এড!! আগে ছিল অনলাইন লটারি। হাজার হাজার সংসার শেষ হয়ে গেছে, শত শত মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। রাশিয়ার লেখক তলস্তয় সাহেব একটি ছোট গল্প লিখেছিলেন। "How much land does a man need?"  তাতে পাহম (Pahom) নামে একজন কৃষকের খুব জমির লোভ ছিল। কোথাও কারুর কাছে সস্তায় জমি পাওয়া যাচ্ছে শুনলে, ব্যাস দৌড়োলো নিজের জমি বেচে সেই তালুকে আর একটু বেশি জমি কিনতে। আবার পরে শুনলো আরো কোথায় সস্তায় জমি বিক্রি হচ্ছে । আবার এই জমি বিক্রি করে সেই জমি কিনতে দৌড়াল।  সারা জীবন জমি, জমি করেই লোকটা কাটালো। এই সময় হঠাৎ একদিন একটা আজব জমি কেনা বেচার গল্প শুনলো। "একদিনের জন্য জমি!"

সেই জায়গায় গিয়ে জমিদারের কাছে হাজির। "হুজুর , আপনি শুনেছি এক দিন হিসাবে জমি বিক্রি করেন। সেটা একটু বলবেন?" "সোজা হিসাব, বাপু। আমার জমির শেষ নেই। এখান থেকে চারদিকে তাকালে যতদূর চোখ যাবে, সব জমিই আমার। তা, ওই বিঘা, কাঠায় বেচা আমার পোষায় না। বড় ঝঞ্ঝাট। তাই আমি এই "একদিন" হিসাবে জমি বেচি।  তোমাকে ভোর বেলায় হাঁটা শুরু করতে হবে। তুমি সূর্য অস্ত যাওয়ার আগে যতটা জমি ঘুরতে পারবে সব তোমার। আমার লোক তোমার সাথে সাথে যাবে, সেই খুঁটি বসিয়ে দেবে। কিন্তু সূর্য ডোবার আগে তোমায় ফিরে আসতে হবে। নয়ত, তুমিও জমি পাবে না।" পাহমের তো মহা আনন্দ।  ওর খালি চিন্তা কত তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারবে পরের দিন। পরের দিন  ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই বেরিয়ে পড়ল। খাবার জিনিস, পানি এইসব আর নিল না। বোঝা বাড়লে যদি দ্রুত হাঁটতে না পারে?   হেঁটেই চলেছে, হেঁটেই চলেছে। মাথার ওপর সূর্য গনগণ করে জ্বলছে। শরীর দিয়ে ঘাম বের হচ্ছে, কিন্তু কোথাও দাঁড়াবার কথা পাহম ভাবতে পারছে না। যতক্ষণ দাঁড়াবে, ততক্ষণ হাঁটলে আরো দু'বিঘা জমি হাঁটা হয়ে যাবে। বিকাল হয়ে  সন্ধ্যা প্রায় নেমে আসছে। এখন ফিরতে না পারলে সব বৃথা যাবে।  প্রায় দৌড়োতে শুরু করল। কিন্তু সারাদিন না খাওয়া, না পানি খাওয়া শরীর আর টানতে পারছে না।  দূরে দেখা যাচ্ছে জমিদারের বাড়ি। আর একটু খানি, আর একটু খানি ...পা ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো পাহম। জমিদারের বাড়ির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। পরের দিন সাড়ে চার হাত গর্ত খুঁড়ে ওকে কবর দেয়ার সময়, জমিদার বললো, " ওই টুকু জমিই ওর দরকার ছিল।" চারিদিকে খালি খাই, খাই, খাই। মরলে তো সেই সাড়ে তিন হাত মাটি।


অভ্যাস-৪৬  ▌কেউ যদি কথা রাখে না...

প্রাকৃতিক নির্বাচনে মূল সূত্র হচ্ছে সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট—অর্থাত্ যোগ্যতমরাই টিকে থাকবে। এই পৃথিবীতে কত ধরনের ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে! আমরা সেই ‘খেলা’র খুব সামান্যই বুঝতে পারি। অনেকের মতে, আমরা আসলে দেখতে পাই সাগরে ভাসমান হিমবাহের উপরের সামান্য অংশটুকু। হিমবাহের নিচে যে সিংহভাগ অংশ আছে, আমরা তাহ দেখতে পাই না। অন্যদিকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার মতো যারা ‘কথা’ দিয়াছে, সকল সময় তারা ‘কথা’ না-ও রাখতে পারে। ‘  তখন কী হবে? তবে এটাও সত্য যে, স্বার্থ ও প্রয়োজন যতক্ষণ থাকলে মানুষ কথা রাখে, নয়তো কেউ কথা রাখে না।


অভ্যাস-৪৭০  ▌ স্বীকৃতি খুঁজবেন না

যিনি ভেতরে-ভেতরে অখুশি, তিনি প্রায়ই আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিতে ভোগেন এবং সেই ঘাটতি পূরণ করতে অন্যের স্বীকৃতি ও প্রশংসা খুঁজে বেড়ান। যাঁরা ভেতর থেকে অসন্তুষ্ট থাকেন, তাঁদের মুখে প্রায়ই বিরক্তি ও অস্বস্তির ছাপ দেখা যায়। আবেগ ধরে রাখতে পারেন না। ফলে খিটখিটে হয়ে পড়েন, হঠাৎ রেগে যান বা সহজেই কেঁদে ফেলেন। এমনকি খুব ছোট বিষয়েও তাঁরা আহত বোধ করতে পারেন কিংবা সামান্য পরিবর্তনেই মন খারাপ করে দূরে সরে যান। যে ব্যক্তি ভেতরে-ভেতরে অসুখী, তিনি নিজের আনন্দ উপভোগ তো করতে পারেনই না, অন্যের আনন্দেও খুশি হতে পারেন না। কারও পদোন্নতি, বার্ষিকী, অর্জন বা বিয়ের খবরেও তাঁর মনে প্রশংসা বা ভালোবাসা আসে না। বরং একধরনের হিংসা বা ঈর্ষা নিঃশব্দে কাজ করে। অন্যদিকে যে মানুষ ভেতর থেকে সত্যিকারের সুখী, তিনি অন্যের প্রশংসা বা স্বীকৃতির ওপর নির্ভর করেন না। তিনি নিজের ভালো লাগা, নিজের লক্ষ্য এবং প্রিয় মানুষদের জন্য কাজ করতেই বেশি মনোযোগী থাকেন।  নিজে আরও সঠিক মানুষ হওয়ার ওপর গুরুত্ব দিন। নিজেকে ‘ফিক্স’ করুন। প্রতিনিয়ত নিজের ‘বেটার ভার্সন’ হয়ে উঠুন। 

অভ্যাস-৪৭  ▌সঙ্গী বা বন্ধুকে শতভাগ বিশ্বাস করুন।

কেউ কাউকে নিয়ন্ত্রণ না করে যখন সমর্থন করেন, তখনই একটা স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিজের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক স্বাস্থ্যকর না হলে আপনি কখনোই একটা স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক তৈরি করতে পারবেন না। তাই সবার আগে নিজের সঙ্গে নিজের বোঝাপড়া ঝালিয়ে নিন।  সঙ্গী বা বন্ধু একটা ভুল করলে আপনিও যদি আরেকটা ভুল করে সমতায় আসতে চান, সেই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। ধরুন, সঙ্গী বা বন্ধু আপনাকে একটা গালি দিল। আপনিও আরেকটা গালি দিলেন। এ রকম ছোট ছোট অভ্যাস থেকে সম্পর্ক গড়াবে ব্র্যাহোলের অতল গহ্বরে। তাই কেউ একটা ভুল করলেই আপনি সেটার প্রতিশোধ নিতে উঠেপড়ে লাগবেন না। সেই ‘চেইন রিঅ‍্যাকশন’-এ সম্পর্কই শেষ হয়ে যাবে! সম্পর্কে ‘ফিফটি-ফিফটি’ বলে কিছু হয় না, বরং সেটা ১০০-১০০। দুজনকেই প্রতিদিন নিজেদের শতভাগ দিয়েই স্বাস্থ্যকর, সুখী সম্পর্ক গড়তে হয়।  কোনো ‘ইনসিকিউর’ সম্পর্ক সারা জীবন টেনে বেড়াবেন না, তাতে জটিলতা কেবলই বাড়বে। হয় সঙ্গীকে শতভাগ বিশ্বাস করুন, নাহলে ওই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসুন।



অভ্যাস-৪৭ ▌ কারো আচরণে খারাপ থেকে মন সরিয়ে নিন।

র্মক্ষেত্রে কিংবা পারিবারিক আয়োজনে এমন মানুষের মুখোমুখি আপনি হতেই পারেন, যিনি আপনাকে ঠিক পছন্দ করেন না। রেগে গিয়ে যা হোক একটা কিছু বলে দিতে পারেন আপনিও। তবে তা মোটেও ‘স্মার্টনেস’ নয়। অহেতুক তর্কে না জড়িয়ে, মাথা ঠান্ডা রেখে কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেবেন?কারও আচরণে কষ্ট পেলে ভাবনার গতিপথ অন্যদিকে সরিয়ে নিন। পছন্দের একটা অডিও ক্লিপ শুনুন, প্রিয় কোনো বইয়ের পাতা ওলটান কিংবা কিছুক্ষণের জন্য ভিন্ন পরিবেশে ঘুরে আসুন। অন্য মানুষ যতটা খারাপ আচরণই করুক না কেন, আপনি নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যাবেন না। কাজের সময় তাতেই গভীরভাবে মনোনিবেশ করুন। কেউ যদি আপনার সঙ্গে ঘৃণার চর্চা করলেও তাতে দমে যাবেন না। আপনি ভালোবাসার চর্চা চালিয়ে যান। আপনি নম্রভাবে কথা বলা সত্ত্বেও যদি ওই ব্যক্তি ক্রমাগত খারাপ আচরণ করতে থাকেন, তাহলে তাঁকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। তাঁর মুখোমুখি হতে হলেও কেবল কুশল বিনিময় করুন। তাঁর খারাপ কথার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কখনো কখনো এই নীরবতাই হতে পারে আপনার শক্তি।


অভ্যাস-৪৭সবুজ পরিবার তৈরি করুন।

পরিবেশ নিয়ে সচেতন পরিবারকে বলা হয় সবুজ পরিবার। এ ধরনের পরিবারের সদস্যরা ঘরে  এনার্জি সেভিং এলইডি লাইট এবং ডেক্স প্লেন্টব্যবহার করে।  পারতপক্ষে এসি ব্যবহার করে না। তাদের আশপাশে যথেষ্ট গাছপালা থাকায় এসির প্রয়োজন হয় না। তারা  নিত্যনতুন পোশাক না কিনে পুরোনোগুলোই যত্ন করে রাখে এবং ব্যবহার করে।   এ ধরনের পরিবার প্লাস্টিকের একই  বোতল বা ব্যাগ বারবার ব্যবহার করে। সম্ভব হলে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনে। পুরোনো বা অব্যবহৃত জিনিসগুলো ফেলে না দিয়ে এমন কাউকে দেয়, যার কাজে লাগে। অথবা সেসব অন্য কাজে ব্যবহার করে। যেমন জিনস দিয়ে ফ্যাশনেবল টোটব্যাগ বানিয়ে ফেলে। ফেলনা জিনিসপত্র দিয়ে বানিয়ে ফেলে শিল্পকর্ম। এককথায় যেকোনো জিনিসের ব্যবহারের সময় বা আয়ু বাড়ায়। সবুজ পরিবার যথাসম্ভব প্যাকেট ও বোতলজাত খাবার পরিহার করে। টাটকা ও মৌসুমি খাবার খায়। প্রতিদিন, প্রতিবেলার খাবারের তালিকায় মৌসুমি শাকসবজি ফল রাখে। মাংস খাওয়া কমায়। সবুজ পরিবারের সদস্যরা প্রচুর হাঁটে। হেঁটে হেঁটে বাজার করে আশেপাশে চলাচল করে। সাইকেল তাদের প্রিয় বাহন। দুরে যেতে গণপরিবহনও বেছে নেয়।  শখের বশে, কেবল জিনিসটা পছন্দ হয়েছে বা ‘শো অফ’–এর খাতিরে কিছু কেনে না। নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া জিনিস কেনা বাদ দেয়।  ঘরে, বারান্দায়, ছাদে, বাইরে যেখানে পারে গাছ লাগায়। ঘরে বা আঙিনায় যদি যথেষ্ট গাছ থাকে।

অভ্যাস-৪৭৩সামর্থের চেয়ে কম মানের জীবনযাপন করুন।

আপনার যা সামর্থ্য, তা কাউকে বুঝতে দিবেন না। কর্মজীবনের শুরু থেকেই একটা শক্তিশালী অর্থনৈতিক সঞ্চয় গড়ে তোলা। আয়ের অন্তত এক–তৃতীয়াংশ জমানো ও পরবর্তী সময়ে জমানো অর্থ বিনিয়োগ করুন। দ্বিতীয় একটা উপার্জনের উৎস রাখুন। জমানো অর্থ দিয়ে এমন সম্পদ কিনুন, যা থেকে অর্থ আসে। পেশাজীবনে এমন কাজ করুন, যেটি আপনার এমনিতেই ভালো লাগে। কথায় বলে, আপনি যখন শখটাকে পেশা বানিয়ে নেন, তখন আপনার অর্থ উপার্জনের জন্য আলাদা করে কাজ করার প্রয়োজন নেই।



অভ্যাস-৪৭ফ্লাডলাইটিং-এর ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

ফ্লাডলাইটিং হলো সম্পর্কের একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় নিজের অনেক ব্যক্তিগত, সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করার মাধ্যমে অপর পক্ষকে দ্রুত গভীর সম্পর্কে জড়াতে প্রভাবিত করে। ধরুন, প্রথম ডেটেই একজন তার অতীতের সম্পর্কে সে কতটা অবহেলিত, মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সেই গল্প করল। আর আপনি সেসব শুনে তার প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল হয়ে উঠলেন। তাকে আবেগপ্রবণভাবে সমর্থন জোগানোর জন্য, সেরে ওঠার জন্য, ভালো বোধ করানোর জন্য মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে উঠলেন। সে অনুযায়ী কর্মকাণ্ডও করতে শুরু করলেন। এভাবে সে সম্পর্কে খুব অল্প সময়ে প্রভাবশালী ও সুফলভোগী হয়ে উঠল। আর নিজের আবেগময় সমর্থনের জন্য আপনাকে ব্যবহার করতে শুরু করল। আপনাকে ভালো রাখার দায়িত্ব না নিয়েই সে নিজে ভালো থাকার জন্য আপনাকে ব্যবহার করতে চাইছে।  সে সম্পর্কে সময় না দিয়ে দ্রুত অপর পক্ষকে তার পক্ষে আনতে চায় । সে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকেও একই ধরনের সহানুভূতি বা আবেগময় সমর্থন নিতে চায়। ফ্লাডলাইটিংয়ে প্রাথমিকভাবে আপনার মনে হতে পারে, আপনাকে অপর পক্ষ এতটা বিশ্বাস আর ভরসা করছে, আপনি নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে এর প্রতিদান দেবেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনি বুঝতে পারবেন, সম্পর্কে ফ্লাডলাইটিং ।

অভ্যাস-৪৭সব বন্ধুত্বের ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত সীমারেখা বজায় রাখুন।

 যে প্রয়োজনের সময় আপনাকে সমর্থন দেয়, আপনার জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করে, আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সহায্য করে, মানসিকভাবে শক্তি জোগায়, যে সৎ, যে আপনাকে কোনো ধরনের প্রতিদানের প্রত্যাশা ছাড়াই ভালোবাসে; সে-ই আপনার বন্ধু। কিন্তু নিজের গোপন কথা কাউকে বলার আগে সব সময় এটা মাথায় রাখা উচিত যে, এই কথা পরবর্তী সময়ে দুজনের সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে কি না। কারণ, মানুষ সব সময় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়।  ১০ মাস আগের জীবনের সঙ্গে পরের জীবন মেলানো যায় না। স্বাভাবিকভাবেই সম্পর্কগুলোও পরিবর্তিত হয়। তাই নিজের, পরিবারের বা অন্য কারও গোপন কথা বলার আগে, নিজের দুর্বলতা প্রকাশের আগে সম্পর্কের সীমারেখাটুকু বুঝে নিন। ‘খুব মনঃকষ্টের সময় যদি আমরা মনে করি যে প্রিয়জন কিংবা বন্ধু আমার থেরাপিস্টের মতো কাজ করবে;  আসলে সেটা ভুল । এর জন্য অনেক ক্ষেত্রে প্রফেশনাল হেল্প নিতে হবে। এতে গোপন কথা প্রকাশ হওয়ারও ভয় থাকবে না, আবার সমস্যার সমাধানের পথও পারবেন।’

অভ্যাস-৪৭ একা সময় কাটানোর মাধ্যমে নিজেকে ভালোবাসা এবং আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন।

বেশির ভাগ মানুষের কাছেই একদম একা কোথাও যাওয়া অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। তবে যুক্তরাজ্যের মনোবিজ্ঞানী নাটালি বেইলি বলছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে একা কোথাও ঘুরতে যাওয়া আদতে নিজেকে চেনার এবং নিজের সঙ্গ উপভোগ করার এক অন্যতম উপায়। যাকে  ‘একাকী ডেট’ বলা হয়।  নিজেকে ডেটে নিয়ে যাওয়া মানে হলো আমি নিজের সঙ্গ উপভোগ করতে পারি অর্থাৎ নিজেকে নিজেই ভালো রাখতে পারি। নিজের মূল্যবোধ, সময় এবং রুচির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একটি উপায়ও এটি। আপনি যখন একা কোথাও যান, তখন নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারেন। কোন রেস্তোরাঁয় খাবেন, কোথায় ঘুরবেন, কত সময় থাকবেন ইত্যাদি। এই স্বাধীনতা আপনাকে আরও আত্মনির্ভরশীল করে তোলে।  আপনার সুখের নিয়ন্ত্রণ আপনারই হাতে। এখানে আপনি শুধু নিজের জন্য সময় দেন, কাউকে দেখানোর জন্য নয়। এটি আপনার মধ্যে একধরনের আত্মতুষ্টি তৈরি করে এবং আপনার আত্মসম্মান বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে। ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতেও এটি সহায়ক। কোনো সম্পর্কে মূল্য না পেলে, তা থেকে বেরিয়ে আসাও হয়ে ওঠে সহজ। একা কোথাও যাওয়া শুরুতে কঠিন মনে হয়, তাই ছোট ছোট ধাপ থেকেই শুরু করুন।  কাছের কোনো ক্যাফেতে বসুন। হেডফোনে পছন্দের গান বা পডকাস্ট শুনতে শুনতে পার্কে হাঁটার অভ্যাস করতে পারেন।  একাকিত্বকে দুর্বলতা না ভেবে শক্তি হিসেবেই গ্রহণ করুন। দেখবেন, জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আপনি নিজেকে আরও পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলছেন।

অভ্যাস-৪৭গ্রে ডিভোর্স  মেনে নিন।

আগে মানুষ সমাজ বা দায়িত্বের কথা ভেবে সম্পর্ক বা বিয়ে করতেন। তখন মনের মিল বা ভালোবাসার গভীরতার মতো বিষয়কে অতটা গুরুত্ব দেওয়া হতো না। কিন্তু এখন সবাই এমন সম্পর্কে বোঝাপড়া চায়।  অনেক সময় আবেগের ঘাটতি দেখা দিলে একাকীত্ব অনুভব করে। মধ্য বয়স বা শেষ বয়সে মানষিক শূন্যতা, মনোবেদনা আর আবেগগত জটিলতা তৈরি হয়ে,  দুজনের মধ্যে অবিশ্বাসের ঘেরাটোপ ও দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। ফলাফল ডিভোর্স।  যার নাম গ্রে ডিভোর্স। অনেক সময় ডিভোর্সিদের সমাজের খারাপ মন্তব্য সহ্য করতে হয়। এতে মানুষ আরও একা হয়ে পড়ে। পাড়াপ্রতিবেশী বা আত্মীয়স্বজনেরা বলাবলি করেন, ‘এই বয়সে ডিভোর্স?’, ‘এখন তো জীবন শেষের পথে!’ । এতে যিনি  স্বাধীনচেতা বা যাঁর জীবন আনন্দে ভরা, তিনি নতুন আশা নিয়ে ভালো থাকতে পারেন। কিন্তু যাঁর পাশে কেউ নেই; না বন্ধু, না পরিবার, না টাকার জোর, তাঁরা দুঃখ, হতাশা, একাকিত্ব আর মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে যেতে পারেন। আপনার পরিবার বা পরিচিতদের মধ্যে যদি কেউ এইরকম গ্রে ডিভোর্স এর সম্মুখীন হন,য তবে তাকে মেনে নিন এবং সহায়তা করুন ।


অভ্যাস-৪৭ ▌প্রিয়জনদের রেইকি বা স্পর্শ চিকিৎসা পরিসেবা দিন।

শারীরিক স্পর্শ দ্বারাও যে স্নেহ-ভালোবাসা প্রকাশ করা যায়, সেটা তো আমরা জানি। তবে সেটি যে বরং বেশি কার্যকর, তা হয়তো অনেকে উপলব্ধি করি না। মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ানো বা গায়ে হাত বুলিয়ে আদর করা মানেই তো ভালোবাসার প্রকাশ। উষ্ণ আলিঙ্গন, হাত ধরা বা কাঁধে হাত রাখার মতো স্পর্শ আমাদের বন্ধনকে করে তোলে শক্তিশালী এবং সৃষ্টি করে ইতিবাচক শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, শারীরিক স্পর্শ কেবল আনন্দের মুহূর্তই তৈরি করে না; বরং এটি মানসিক অস্থিরতা কমানো থেকে শুরু করে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে প্রিয়জনের সঙ্গে আলিঙ্গন বা তাঁর হাত ধরায় রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়। কোমল স্পর্শ বা মালিশ মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ব্যথা নিবারণকারী কার্যক্রমকে উদ্দীপিত করে ব্যথা কমাতে পারে। প্রিয়জনকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো বা ঘুমানোর আগে আলিঙ্গন করা চাপ কমিয়ে বিশ্রাম ও আরামের অনুভূতি বাড়িয়ে তোলে। আবেগের সম্পর্ক হোক বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে স্নেহ-ভালোবাসার সম্পর্ক, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য স্পর্শের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ অতি গুরুত্বপূর্ণ। 

অভ্যাস-৪৭অর্জনই গর্জন। যার জীবনে অর্জন যত বেশি, সে তত বেশি এগিয়ে যায়। 

ট্যালেন্ট বা যোগ্যতা দিয়ে জীবনে কিছু একটা করে ফেলবো- এমনটা আশা করে কোন লাভ নাই। কারণ দুনিয়াতে ট্যালেন্ট বা যোগ্যতা দিয়ে কাউকে বিচার করা হয় না। বিচার করা হয় অর্জন দিয়ে।  আপনার চারপাশে তাকালেই দেখতে পাবেন- একজন মানুষের সাথে আরেকজন মানুষের আর্থিক, সামাজিক, পারিবারিক স্ট্যাটাসের ডিফারেন্স তৈরি হয় তাদের অর্জনের ডিফারেন্স দিয়ে। এইজন্যই চাকরি দেয়ার সময় কোয়ালিটি দেখার আগে কোয়ালিফিকেশন দেখে।  যে কাজটা শুরু করি করি বলে শুরু করা হয়ে উঠছে না। সেটা শুরু করে দিতে হবে। কনফিউশন, ভয়, আর মাইনসের কাছ থেকে গাইডলাইন পাওয়ার জন্য যতদিন অপেক্ষা করবে্ন, জীবনে কিছু একটা করার সম্ভাবনা তত বেশি কমবে। বিজনেস শুরু না করে, বিজনেস আইডিয়া নিয়ে যত বেশি দিন চিন্তা করবেন, একই আইডিয়া নিয়ে অন্য কেউ বিজনেস শুরু করার চান্স তত বেশি বাড়বে।  যে কাজটা শুরু করছন, সেটা ফিনিশ করতে হবে।শেষ করতে হবে। ভালো না লাগলে, নিজের উপর জোর করে হলেও ফিনিশ করতে হবে।  শুধু তিনটা গান সুর করে মিউজিশিয়ান হতে পারবেন না। চারদিন ইট গেঁথে বিল্ডিং বানানো যায় না। দুই সপ্তাহ ক্রিকেট খেলে ন্যাশনাল টিমে চান্স পাওয়া যায় না। কাজটার পিছনে লেগে থাকতে হবে। লেগে থাকলেই উন্নতি হবে। দক্ষতা আসবে। নতুন নতুন কৌশল  আপনার নিজের ভিতর থেকেই উদ্ভব হবে। হতাশ হয়ে ছেড়ে দিলে, যে কয়দিন ট্রাই করছেন, সেই কয়দিন সময় অপচয় ছাড়া আর কিছু হবে না। তাই ভালো হচ্ছে, না খারাপ হচ্ছে। ভবিষ্যতে লাভ হবে কি, হবে না- বিচার না করেই লেগে থাকুন। আপনার যতটুকু আছে ততটুকুই যথেষ্ট।  আপনি যে সিচুয়েশনে আছো, সেই সিচুয়েশনটাই শুরু করার জন্য পারফেক্ট। আর চেষ্টা যখন করতেই হবেই, আজকেই থেকেই শুরু করবেন।  

অভ্যাস-৪৮০চেষ্টার নেশা, সফলদের একমাত্র পেশানন স্টপ চেষ্টা চলতেই থাকবে। 

যেই রাস্তা কঠিন সেই রাস্তায় চেষ্টার পরিমাণ চারগুণ করতে হবে। যে জিনিস বুঝতে পারো না, সেই জিনিস চৌদ্দবার পড়লে না বুঝার মতো কিচ্ছু থাকবে না। একভাবে কাজ না হলে দশভাবে ট্রাই করতে হবে। ক্রিকেট খেলার বোলারদের মতো। প্রত্যেকবার ব্যাটসম্যানকে আউট করার টার্গেট নিয়ে ক্রিজের কাছে ছুটে আসতে হবে। প্রথম বলে আউট না হলে পরের বল করার জন্য আবারো দৌড় দিতে হবে। ওভারের পর ওভার বল ফেলতে হবে। ইয়র্কারে কাজ না হলে, স্লো ডেলিভারি দিতে হবে। সুইং এ কাজ না হলে, বাউন্সার মারতে হবে।  আপনাকেও আপনার টার্গেটের প্রতি ওভারের পর ওভার বল করে যেতে হবে। এক ভাবে কাজ না হলে দশভাবে ট্রাই করতে হবে। টায়ার্ড হলে দুই মিনিট রেস্ট নিয়ে আবার শুরু করতে হবে।  বৃষ্টি একদিন হলে তাকে বর্ষাকাল বলে না। অফিসে দুইদিন হাজিরা দিলে, সারা মাসের বেতন পাওয়া যায় না। বেতন পেতে হলে অফিসের কাজ প্রতিদিন করতে হবে। বোলার হতে হলে ম্যাচের পর ম্যাচ বলে করে যেতে হবে।   নিজেকে ট্যালেন্টেড, জিনিয়াস মনে করে নাকে তেল দিয়ে ঘুমালে- ঘুমের মধ্যে সফল হয়ে যাবে না। কারো লাইফকে ঘুরিয়ে দেয়ার জন্য যদি একটা জিনিসের প্রয়োজন হয়, সেটা হচ্ছে- মরিয়া হয়ে চেষ্টা। যখন মরিয়া হয়ে কিছু অর্জন করতে চাইবেন, তখন সব ডিস্ট্রাকশন জানালা দিয়ে পালাবে। ফোকাসনেস আপনা-আপনি গজিয়ে উঠবে। কনফিডেন্সের আবির্ভাব হবে।  ফিউচার নিয়ে কনফিউশন একটু একটু করে কেটে যাবে।


 অভ্যাস-৪৮১ মোবাইলকে  সময় হত্যাকারী হতে দিবেন না।

 দিনে ২০০বার মোবাইল চেক করার নেশা ধরিয়ে দিয়ে, গড়ে প্রতিদিন সাড়ে চার ঘন্টা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যয় করিয়ে, ফ্রি নিউজ, মজার ট্রেলার দেখিয়ে  আপনাকে আনন্দ দিচ্ছে না। বরং আপনার সময় কেড়ে নিচ্ছে। আপনার  স্বপ্নটা হাতছাড়া করে দিচ্ছে।   দিনে দিনে তথ্য-প্রযুক্তি যত সহজলভ্য হচ্ছে, মূল লক্ষ্য থেকে সরে যাওয়া তত ইজি হচ্ছে। কানেক্টেড থাকার নাম করে, সময় নষ্ট করার নেশা ধরিয়ে দিয়ে, স্বপ্নগুলিকে গলা টিপে হত্যা করছে। এখন টিকে থাকতে হলে- এই নেশা আর ইচ্ছার মধ্যে ছোট্ট একটা সংগ্রাম চালাতে হবে। ফেইসবুকিং, খেলা দেখার নেশা যখন ডাক দিবে, তখন নেশাটাকে জোর করে ৩০ মিনিট পিছিয়ে দিতে হবে। জাস্ট ৩০ মিনিট পিছিয়ে দিবেন। তারপর সেই ৩০ মিনিটে আপনার ইচ্ছা বা স্বপ্ন রিলেটেড কাজ করবেন। এই রকম নেশা আর ইচ্ছার যুদ্ধ এক সপ্তাহ চালিয়ে যদি ৬০% সফল হতে পারলে, আপনার  লাইফ আবার লাইনে আসা শুরু হবে। 

অভ্যাস-৪৮২কাজকে নেশায় পরিণত করে জীবনে আশীর্বাদ করুন।

সিগারেট খাওয়া কিভাবে শুরু হয় সেটা সবাই জানে। প্রথম প্রথম, বন্ধুদের সাথে এক টান, দুই টান। তারপর আসে, কে কতক্ষণ ধুয়া ধরে রাখতে পারে, গিলে খাইতে পারে। কে কত বেশি ধোঁয়া- নাকে দিয়া, পশ্চাদ অঙ্গ দিয়া বের করতে পারে, সেই কম্পিটিশন। আস্তে আস্তে অভ্যাস তৈরি হয়। তারপর, দুপুরে ভাত খাওয়ার পর একটা না খাইলে ভালো লাগে না। চা খাওয়ার পর একটা না হইলে ঝমে না, গা ম্যাজম্যাজ করে। কয়েকদিন পরে দেখা যায় দিনে মোটামুটি পাঁচটা লাগে। আরো কিছুদিন পরে দেখা যায় আধা প্যাকেট কাজ হয় না। এই থিউরিটা মনে গেথে রাখুন।, যাতে কারো সিগারেট খাওয়া দেখলে মনে পড়ে কিন্তু ক্যারিয়ারের ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারেন। এইভাবে রাতে বা সকালে কোন ক্যারিয়ারের  নেশার জগতে আস্তে আস্তে প্রবেশ করে ফেল্লে, সারাদিন কোনো কিছুতে দক্ষতা কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু হুট করে সারাদিন করার প্ল্যান করলে, এক চিমটিও লাভ হবে না। তাই ধীরে ধীরে শুরু করতে হবে। একটু একটু করে বাড়াতে থাকুন। দেখবে নিজের অজান্তেই স্কিল ডেভেলপ করার নেশার জগতে ঢুকে গেঞ্ছেন। সেই ইফেক্টিভ নেশাগ্রস্থ  হওয়াটাই  জীবনে আশীর্বাদ হয়ে থাকবে।

অভ্যাস-৪৮৩ ▌ সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে অসময়ে নয়।

একটা পাকা আম, এক সপ্তাহ পরে খাবেন মনে করে আলমারিতে উঠায় রাখলে, এক সপ্তাহ পরে, আম খাওয়ার মজাতো পাবেনই না বরং পচা গন্ধে পেট খারাপ হয়ে যাবে। একইভাবে, এক দেড় ঘন্টা সময় পাইলে, নিজের স্বপ্নটাকে আলমারিতে তুলে রেখে, ফেইসবুকিং করতে থাকলে, ধীরে ধীরে আপনার স্বপ্নটাতেও পচন ধরে যাবে আপনার সময় গুলো তাজা গোলাপের মত, ঠিক সময়ে ফুলের ঘ্রাণ না নিলে, সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কাজে না লাগালে, ফুল ঠিকই ঝড়ে যাবে। হারিয়ে যাবে। দুনিয়ার কোথাও না কোথাও, কিছু না কিছু ইন্টারেস্টিং ঘটনা সবসময়ই ঘটতে থাকবে। এত কিছুর মাঝখানে নিজের জন্য টাইম করে নিতে হবে এবং যথা সময়ে সব কাজ শেষ করতে হবে।




অভ্যাস-৪৮৪  ▌আমরা একটা জিনিস কতক্ষণ ধরে রাখছি, ওজনটাও তার উপর নির্ভর করে।

 সম্পর্ক  হল উপভোগের জন্য। কিছু মানুষ এটা বুঝতেই চায় না। তারা গম্ভীর থেকে থেকে বৃদ্ধ হয়ে যায়। কাউকে আজীবন ধরে রাখা মানে সুখের জীবন নয়। কতটা সময় একসাথে থাকবে কতটা সময় বিরতি নিবে ইত্যাদি একটা নিয়ম করে চলতে হয়। একজন মনোবিজ্ঞানী স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট পড়ানোর সময় রুমে চারপাশে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় শ্রোতাদের সামনে এক গ্লাস পানি উপরে তুলে ধরলেন।  তখন সবাই ভেবে ছিল হয়তো তিনি গ্লাস  অর্ধেক খালি না  অর্ধেক ভর্তি এই প্রশ্নটি করবেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। তিনি হাসিমুখে প্রশ্ন করলেন “ এই এক গ্লাস  পানি কত ভারী”। উত্তর আসল আট আউন্স থেকে বিশ আউন্সের ভেতর হবে হয়তো। তিনি বললেন এর আসল ওজন এখানে কোনো ব্যাপার না। ব্যাপার হলো আমরা এটাকে কতক্ষণ ধরে রাখছি, ওজনটাও তার উপর নির্ভর করছে। যদি আমি এটাকে এক মিনিটের জন্য ধরে রাখি, তবে কোনো সমস্যা হবে না। যদি এটাকে এক ঘন্টা ধরে রাখি তবে আমার হাতে ব্যথা অনুভূত হবে। আর যদি একদিনের জন্য এভাবে ধরে থাকি, তবে আমি অসাড় এবং পক্ষঘাতগ্রস্থ বোধ করব। প্রতিটা ক্ষেত্রে এর আসল ওজনে কোনো পরিবর্তন হয় না। কিন্তু ধরে রাখার সময় বাড়ার সাথে সাথে এটি ভারী থেকে ভারী লাগতে শুরু করে। তিনি আরো বিশদে গিয়ে বলেন, আমাদের জীবনের সুখ, আনন্দ, চাপ এবং উদ্বেগগুলো এই গ্লাসের পানির মত। যা নিয়ে কিছুক্ষণ হলে তেমন কোনো কিছু হবে না। কিন্তু তা যদি আমরা অনেকদিন ধরে রাখি। তবে তা আমাদের অসাড় ্করে দেবে। তাই সবকিছুতে  মাঝে মাঝে বিরতি দিতে হবে।


অভ্যাস-৪৮৫ ▌ তর্ক-বিতর্ক করতে গিয়ে তিন ধরনের মানুষ চিনে রাখুন।

অবান্তর বিষয়ের অবতারণা ঘটে তখনি, যখন তর্ক-বিতর্ক করতে করতে কেউ কোণঠাসা হয়ে পড়েন । তখন তিনি আত্মরক্ষা করতে অকারণে আক্রমণাত্মক ভঙ্গি গ্রহণ করেন । অতীত থেকে এমন সব দৃষ্টান্ত তুলে আনতে থাকেন, যা বর্তমান আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিহীন। এর দ্বারা হয়তো তিনি নিজেকে বাঁচাতে চান। অতএব মূল বিষয় থেকে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হচ্ছে ততোক্ষণ বিচ্যুত হবেন না ।  তর্ক-বিতর্ক করার ক্ষেত্রে তিন ধরনের মানুষ চিনুন-   ১) Strawman Fallacy স্ট্রোম্যান: আক্রমণ করা সহজ করার জন্য এরা প্রতিপক্ষের যুক্তিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেন, যা আসল বিষয়টি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যেমন আপনি বলেছেন,  রাস্তায় হাটতে হাটতে অশিক্ষিত লোক ধুমপান করেন, কিন্তু শিক্ষিতরাও যদি একই কাজ করেন, তাহলে সেটার মধ্যে পার্থক্য রইল কি?  তখন স্ট্রোম্যান হয়তো বললেন, ধূমপান না করে কি আপনি কি মহাভারত অর্জন করেছেন তা আমাদের জানা আছে। ২) Ad Hominem অ্যাড হোমিনেম: এরা যুক্তির পরিবর্তে যুক্তিকারীর ব্যক্তির চরিত্রের উপর আলোকপাত করেব, যা গঠনমূলক সংলাপকে লাইনচ্যুত করে। ৩) Red Herring:রেড হেরিং: মূল বিষয় থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার জন্য অপ্রাসঙ্গিক তথ্য উপস্থাপন করা, যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করতে পারে এবং মূল যুক্তি থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারে।


অভ্যাস-৪৮৬▌ টক্সিক মানুষ চিনুন।

আপনাকে ডুবানোর ইচ্ছা নিয়ে কিছু লোক বসে আছে যারা সামনে প্রশংসা করে পিছনে কুয়া কুড়ে। আপনার খুব ক্লোজ সে আছে, যাকে দেখে মনে হয় সবকিছু ঠিকঠাক, কিন্তু ভিতরে ভিতরে তিনি আপনাকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই টক্সিক মানুষের উপস্থিতি ধীরে ধীরে আপনার জীবনে বিষের মতো কাজ করে। প্রথমে হয়তো টের পাবেন না, কিন্তু একটা সময় বুজতে পারবেন। পরের ক্ষতি করার নেশা যদি কাউকে একবার পেয়ে বসে, নিজের অস্তিত্ব ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত তার হুঁশ ফেরে না। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন যে কেউ টক্সিক? চলুন, বিশ্লেষণ করি। ১. সবকিছুতে খুঁত ধরার অভ্যাস থাকবে তার। টক্সিক মানুষ এমনভাবে সমালোচনা করে,যেন আপনি কিছুই জানেন না,পারেন না। আপনার ভালো কাজেও তারা ভুল খুঁজে পায়। মজার ব্যাপার হলো,এই সমালোচনা মোটেও গঠনমূলক নয়। বরং,তারা আপনাকে ছোট করার জন্যই এটা করে। ২.তারা এমনভাবে কথা বলে বা কাজ করে যে, আপনি নিজের ওপর বিশ্বাস হারাতে শুরু করেন। মনে হবে আপনি তাদের ইচ্ছার ক্রীড়নক হয়ে গেছেন। ৩. কথায় কথায় সবকিছুতে তারা অভিযোগ করে। এই নেতিবাচক মানসিকতা ধীরে ধীরে আপনার জীবনেও ছাপ ফেলে। ৪. শুধু নেওয়ার অভ্যাস, কিছুই না দেওয়া। টক্সিক মানুষের কাছে সম্পর্ক মানে শুধু নেওয়া। তারা আপনাকে ব্যবহার করবে,আপনাকে থেকে সুবিধা নেবে,কিন্তু বিনিময়ে কিছু দেবে না। আপনার সময়,মতামত বা আরামের কোনো মূল্যই তাদের কাছে নেই। মনে রাখবেন,যারা আপনাকে ভালোবাসে,তারা কখনো আপনাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলবে না।।



অভ্যাস-৪৮৭ ▌ সফলতা পেতে হলে আগে নিজেকে ডেভলপ করতে হবে ।

হয়তো আপনার আশেপাশে অনেক মানুষ, বা আপনার নিজের বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন  সফল হয়েছে, আপনি তাদের ধারে কাছে যেতে পারছেন না । এজন্য পরিচিত সার্কেল থেকে বের হয়ে এসে নিজের একটা জায়গা তৈরি করতে হবে । আপনি জেনে অবাক হবেন যে জাপানে প্রতিবছর ৮০ হাজার থেকে এক লক্ষ লোক হারিয়ে যায়। যা  "দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড"। নামে পরিচিত।  দেশটিতে অনেকগুলি সংস্থা আছে যারা তরুণ-তরুণীদের হারিয়ে যেতে সহায়তা করে । তাদের মতে, অনেক বড় গাছের নিচে কখনো ছোট গাছ বেড়ে ওঠে না । এজন্য কারো ছায়ায় না থেকে, নিজের জন্য একটা পরিবেশ তৈরি করতে হবে । প্রয়োজনে নিজের হোম টাউন ( নিজের শহর)  ছেড়ে নতুন কোন শহরে থাকা উচিত, নিজের শহরে ছেড়ে যাওয়া সম্ভব না হলে, সেই সকল সার্কেল থেকে বের হয়ে আসা উচিত, যেখানে থেকে বিগত বছরগুলোতে আপনার তেমন কোন ডেভেলপ হয়নি।


অভ্যাস-৪৮৮ ▌ সফলতা পেতে হলে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হয়, মাঝে মাঝে পিছিয়ে যেতে হয় ।

দেখবেন যারা পেস ( ক্রিকেটে ফাস্ট বল করে ) বল করে তারা কিন্তু বল করার আগে অনেকটা পিছিয়ে যায়, যেন তারা আরও বেশি গতি নিয়ে বল করতে পারে । জোরে ঘুসি মারতে হলে হাতকে পিছনে নিতে  হয়। সাময়িক পিছিয়ে যাওয়া কিংবা নিজেকে লুকিয়ে রাখাটা ব্যর্থতা নয় বরং সফলতার জন্য ভিত্তি প্রস্তুত করা । হয়তো অনেকে আপনাকে নিয়ে সমালোচনা করবে, আপাতত মুখ বুঝে সমালোচনা সহ্য করুন । আপনি সফল হলে সেই সকল সমালোচনাকারীরাই একদিন আপনাকে বাহবা দিবে । এজন্য কারো সফলতার দিকে না তাকিয়ে, নিজে যা জানেন, তার মধ্যে বাছাই করে যেকোনো একটা স্কিল ডেভেলপ করতে হবে । হোক সেটা রান্নাবান্না বা দালালি । মনে রাখতে হবে একটা ডিগ্রির চেয়ে একটা স্কিল লক্ষগুণ বেশি প্রোডাক্টিভ। ছয় মাস সময় নিয়ে টানা লেগে থাকুন, যেকোনো একটা গাইডলাইন অনুযায়ী চলুন । সে বিষয়ে ইউটিউবে নতুন নতুন ভিডিও দেখুন । পরিচিত সার্কেল থেকে বের হয়ে এসে, প্রোডাক্টিভ মানুষের সাথে পরিচিত হোন । যারা উদ্যমী এবং পরিশ্রমী এবং সৎ ।


অভ্যাস-৪৮৯ ▌ডেড হর্স থিওরি (Dead Horse Theory) মেনে চলুন।

বাংলা একটা প্রবাদ আছে, অসুস্থ ঘোড়াকে চাবুক মেরে রেসে জেতা যায় না। যদি আপনি জানতে পারেন যে, আপনি একটি অসুস্থ বা মরা ঘোড়ার পিঠে চড়ে আছেন তবে এর সহজ সমাধান হলো তার পিঠ থেকে নেমে যাওয়া। কিন্তু সেটা না করে যদি আপনি ঘোড়ার জন্য খাবার নিয়ে আসেব। ঘোড়ার যত্ন নেওয়া কর্মীকে বদল করে নতুন কর্মী নিয়োগ করেন। ঘোড়ার স্বাস্থ্য ও গতি বাড়ানোর জন্য নানা রকমের আয়োজন করে এবং বিদেশ থেকে প্রশিক্ষণ আনেন। সবকিছু হারিয়ে শেষমেশ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে সব নিরর্থক, "ঘোড়াটি আসলে মরা।" তবে সমস্ত প্রচেষ্টা, সম্পদ এবং সময় নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর আত্মতৃপ্তি খোজেন যে,ঘোড়াটি কত ভালো ছিলো।  এই তত্ত্ব থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা হলো- অনেক মানুষ বাস্তবতা জেনেও অস্বীকার করে এবং ভুল মানুষ আর ভুল সিদ্ধান্তের পিছনে অর্থ ও শক্তি দুটোই নষ্ট করে।


অভ্যাস-৪৯০ ▌তিন জাপানী নীতি অনুসরণ করুন

জাপানীদের ইকিগাই নীতি: জাপানীদের মতে, প্রত্যেক মানুষেরই একটি Ikigai আছে – যা তাকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়। যারা তাদের Ikigai খুঁজে পায়, তারা দীর্ঘ, সুখী এবং অর্থবহ জীবনযাপন করে। নিজের "Ikigai" খুঁজে বের করতে ৪টি প্রশ্নের উত্তর খুজেন তারা। ১)আমি কী ভালোবাসি? (Passion) ২)আমি কীসে দক্ষ? (Profession) ৩) আমার টার্গেট গোল কি? (Mission) ৪) আমি আমার এই তিন উত্তরের সমন্বয়ে কিভাবে অর্থ উপার্জন করতে পারি? (Vocation) আপনার জীবনের এই চারটি প্রশ্নের উত্তর লিখে ফেলুন। দেখবেন কেউ আপনার উন্নতি টেকাতে পারবে না। জাপানীদের "Hara Hachi Bu" নীতি: হারা-হাসিবো মানে ৮০% পেট ভরা পর্যন্ত খাওয়া। অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন। প্রসেসড খাবারের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর লাইভ ফুড খান। কাঁচা মানে বাচা। যতটা সম্ভব কম সিদ্ধ শাখ-সবজি ও ফল-শস্যবিজ খান। জাপানিদের "Moai" নীতি: ছোট একটি গোষ্ঠী তৈরি করুন, যেখানে সবাই একে অপরকে সাহায্য করবে। এই গোষ্ঠীর মাধ্যমে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হন এবং অর্থবহ সংযোগ গড়ে তুলুন। এভাবে নিজের চারপাশ ইতিবাচক মানুষ দিয়ে ভরিয়ে তুলুন। সপ্তাহে অন্তত একদিন এমন একটি কার্যক্রম করুন যেখানে আপনি পরিবারের সদস্যদের বা বন্ধুদের সঙ্গে মানসম্পন্ন সময় কাটাতে পারবেন।


অভ্যাস-৪৯১ সুন্দর পরিকল্পনা আপনাকে পৌঁছে দিবে সাফল্যের স্বর্ণদুয়ারে।

আমাদের হাতে যখন কাজের চাপ থাকে, তখন আমরা শুধুই তাড়াহুড়ো করে কাজটি দ্রুত শেষ করতে চাই । তখন একটি সুন্দর পরিকল্পনা করে কাজটি করার চিন্তা মাথায় আসে না। কিন্তু আমাদেরকে সব সময় মনে রাখতে হবে যে, “একটি ভাল পরিকল্পনা হল কাজের অর্ধেক”। অনেকে মনে করে, বড় কোন কাজে পরিকল্পনা করতে হয় কিন্তু তা সত্য নয় জীবনের প্রতিটি ছোট-বড় কাজ পরিকল্পনা করে করা উচিত  কোন কাজ করার আগে পরিকল্পনা করলে আমাদের মস্তিস্কের চর্চা হয় এবং ভাল ভাল আইডিয়া জেনারেট হয়। 

মানুষ স্বভাবতই নতুন কোনো বিষয়ে সহজে আকৃষ্ট হয়ে যায়। এই আগ্রহ থেকেই হঠাৎ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। তবে তার সেই সিদ্ধান্তে বেশি সময় টিকে থাকতে পারে না। কতদিনে সাফল্য আসবে বা আদৌ আসবে কি-না এই সংশয় মনের মধ্যে থাকায় অনেকে হাল ছেড়ে দেয়। কিন্তু মনে রাখবেন, আপনি যদি সঠিক পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন, তাহলে একদিন সফলতা আসবেই। যেকোনো কাজের পূর্বে এটা মাথায় রাখতে হবে, সফলতা কোনো রাতারাতি হওয়া বিষয় না। তাই জলদি সফল হতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করে কাজ করলে কাজ সাধারণত খারাপ হয়। এছাড়া যদি কেউ এতে সফলতা পেয়েও যায়, তাহলেও তা বেশি দিন ধরে রাখা যায় না। এজন্য তাড়াহুড়ো না করে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যেতে হবে।  


অভ্যাস-৪৯২ উদ্বিগ্নতা কাটাতে হালকা মেজাজে থাকুন।

মানুষের খারাপ আচরণের মূলে হচ্ছে উদ্বিগ্নতা পরিবার বা কর্মক্ষেত্রে সমস্যা, সম্পর্কে অবনতি, অর্থনৈতিক সংকট, খারাপ স্বাস্থ্য-এসব বিভিন্ন কারণে অতিরিক্ত স্ট্রেস বা মানসিক চাপ থেকেই উদ্বিগ্নতা তৈরি হচ্ছে। আশপাশের মানুষকে অনৈতিকভাবে বড়লোক হতে দেখেও তার ভিতর হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।  নিজের অক্ষমতা বা সুযোগ না পাওয়া এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপত্তাহীনতা তার ভিতর উদ্বিগ্নতা তৈরি করে।  ফলে তার কথাবার্তা ও চলাফেরায় অস্থিরতা দেখা দেয়,  মন মেজাজ খিটখিটে ও আক্রমণাত্মক অবস্থায় থাকে। এমতাবস্থায় অন্য কারো সঙ্গে তার সাময়িক বিদায় টা গুডবাই না হয়ে ব্যাড বাই এ পরিণত হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, মানুষের জীবন কখনো একই সরলরেখায় চলে না। সব সময়ই আমাকে সেরা পজিশন ধরে রাখতেই হবে, এ মনোভাব বাদ দিন। নিজেকে নিয়ে হালকা মেজাজে থাকুন, চাপ নেবেন না। প্রিয় মানুষ-বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটান।  মনের কথা বলে কিছুটা ভার লাঘব করেন এবং দু’জনে মিলে প্রচুর হাসুন। আমরা যে শুধু রোগব্যাধিতেই সংক্রমিত হই না,আনন্দেও সংক্রমিত হই। ভালো ব্যবহার ও সদয় আচরণের বিষয়টিও সেরকম। আপনার ভালো ব্যবহার ও হাসিখুশি জীবনধারা অন্যকে প্রভাবিত করবে। খুব কঠোর কথা বলতে হলেও কারো ওপর রাগ না ঝেড়ে, তেড়ে না উঠে তার সঙ্গে এক কাপ চা খেতে খেতে বিষয়টি বুঝিয়ে বলা যায়। বরং এভাবে বললেই সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যে ধরনের সম্পর্কই হোক না কেন, ভালো ব্যবহার ও ইতিবাচক যোগাযোগ চর্চা করলে তাতে বোঝাপড়া   ও সাফল্য বৃদ্ধি পায়। বাসের সিট ছেড়ে দেওয়া, লিফটের দরজা ধরে রাখা, মন দিয়ে কারো মন খারাপের কথা শোনা, ইত্যাদি বিনয়ের চর্চার কোন সীমাবদ্ধতা নাই। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের পরিচয় তৈরি করা যায় ভালো কিছু কাজের মাধ্যমে।  সব সময় মনে রাখতে হবে, সুন্দর ব্যবহার ও আচরণ মানুষকে সম্মানিত করে


অভ্যাস-৪৯৩ ▌ গলায় মালা পড়তে হলে মাথা নিচু করতে হয়।

 খুব সফল মানুষদের মধ্যে তিনটি গুণ দেখা যায়- আকাংখা, যোগ্যতা ও সুযোগ। কিন্তু এর সাথে আরও একটি প্রয়োজনীয় উপাদান দরকার হয় যার নাম গিভ এন্ড টেক  যেকোন সম্পর্কত সারা দুনিয়ায় গিভ-এন্ড-টেইক পলিসির উপরে চলে। কারো কাছে কিছু চাওয়ার আগে তাকে আগেই কিছু দিতে হবে । তখন দেখবেন আপনার চাওয়াটা খুব সহজেই পূরণ হয়ে যাচ্ছে। আমরা সবসময় জিততে চাই। নিজের বড়ত্ব জাহির করতে মরিয়া হয়ে উঠি। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করি আমার অনেক ক্ষমতা। কথায় কথায় রিকশাওয়ালার কলার ধরি। বাসের হেলপারের গায়ে হাত তুলি। গরিবকে হেয় করি। হাতছাড়া করি না মানুষকে অপমান করার ন্যূনতম সুযোগও। কেন যেন অন্যকে ছোট করে পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করি আমরা।  যে মানুষ অন্যের কাছে ভালো ব্যবহার আশা করে, সে নিজেও অপরের সাথে বিনয়ী আচরণ করে না। সবার মাঝে কেমন একটা উগ্র উগ্র ভাব। সবসময় উঁচু মঞ্চের বাসনা তাদের কুরে কুরে খায়। সর্বত্র খবরদারি ফলানোর চেষ্টা তাদের সমাজ বিচ্ছিন্ন করে তোলে। অন্যদিকে যারা নম্রভাবে সমাজে চলাফেরা করে,  না চাইতেই লোকে তাদের সম্মান করে। স্নেহ করে। বিনয়ী মানুষ কখনো জেতার জন্য তর্ক করেন না। বিনয়ী মানুষ অন্যায় কিছু করলে পরক্ষণে লজ্জিত হতে,ক্ষমা চাইতে এবং ভুল স্বীকার করেন। বিনয়ী মানুষ অন্যের প্রতি ঈর্ষান্বিত হন না। বিনয়ী মানুষ অন্যের সাথে সংযত,সহিষ্ণু ও মানবিক আচরণ করে। বিনয়ী মানুষ কখনো অন্যের সাথে অহংকারমূলক কথাবার্তা বলেন না। বিনয়ী মানুষ পরমতসহিষ্ণু হয়। মহান দার্শনিক উইল ডোরান্ট বলেছেন, কোনো জ্ঞানী মানুষের কাছে যখন বিনয়ের ভূষণ থাকে, তখন সে মহাজ্ঞানী হয়ে ওঠে। আর পণ্ডিতের কাছে যদি বিনয়ের ভূষণ থাকে তিনি মহাপণ্ডিত হন। সুন্দরীদের মধ্যে যদি বিনয় থাকে তারা বিশ্ব সুন্দরী হবেন


অভ্যাস-৪৯৪ জীবন মানেই শেয়ারিং

‘সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।’ সহযোগিতা সবার সাথে, প্রতিযোগিতা নিজের সাথে।’ প্রতিযোগিতা না থাকলে সেইখানে যোগ্যতা অর্জনের প্রশ্ন থাকে না। তাই প্রতিযোগিতা সব ক্ষেত্রেই থাকবে। এই প্রতিযোগিতা মাতৃগর্ভে শুক্রকীটের স্থান দখল থেকে শুরু হয়। অর্থাৎ আমরা প্রকৃতিগতভাবেই প্রতিযোগিতার অংশ। কিন্তু প্রতিযোগিতায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্য প্রতিযোগিতাকে প্রতিহিংসায় পরিণত করা যাবে না। প্রতিযোগিতায় কাউকে আঘাত করে, কারো সঙ্গে অন্যায় করে, শত্রুতা করে বা জোর করে আসন ছিনিয়ে নিলে, সে হয় ছিনতাইকারী প্রতিযোগী নয়। কাজেই মনোভাবটা রাখতে হবে আমি জিতব, কিন্তু আমার প্রতিদ্বন্দ্বী যেন না হারে। অর্থাৎ আমিও জিতব, সেও জিতবে। উইন উইন সিচুয়েশন। আমার অগ্রযাত্রায় যেন অন্যায়ভাবে কারো কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে বিশেষ সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সংকীর্ণমনা মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন। খোলা মনের অধিকারী হলে সেটা আপনাকে আরো বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলবে। 



অভ্যাস-৪৯৫ নিজের সমস্যা কখনো অন্যের সাথে শেয়ার করবেন না। 


কাউকে আপনি নিজের গোপন কথা শেয়ার করবেন? তার অর্থ হল-আপনি নিজেই যদি নিজের গোপন কথা গোপন না রাখতে পারেন, তাহলে যাকে বলছেন, সে কিভাবে গোপন রাখবে? একই রকমভাবে নিজের প্ল্যানিং বা ইচ্ছেকেও কখনো সম্পুর্নরুপে প্রকাশ করবেন না। কারণ, মানুষ হাজারো বিভিন্ন নেগেটিভ কারণ দেখিয়ে আপনাকে সেই প্ল্যানিং বা ইচ্ছে থেকে ছিটকে ফেলে দিবে। অথচ আপনার সেই প্ল্যানিং বা ইচ্ছেটার সাথে তাদের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। কারও কারও সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা একটু বেশি হওয়ায় অনেক সময় পারিবারিক ও একান্তই ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কথা হওয়া উচিত নয়।  নিজের সমস্যা কখনো অন্যের সাথে শেয়ার করবেন না। কিছু লোক থাকবে, যারা আপনার সমস্যার কথা শুনে বরং আরো খুশি হবে, আরো সুযোগ নিবে। কেবল পরিবারের বিশ্বস্ত মানুষেরা জানবে  অর্থসম্পদের নিরাপত্তাজনিত কারণে। কেউ যদি আপনার দৈনিক, মাসিক কিংবা বার্ষিক আয় বা অর্থ উপার্জন নিয়ে প্রশ্ন করে, তাহলে অবশ্যই বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন বা মজার ছলে অস্পষ্ট উত্তর দেবেন। সমাজে বিভিন্ন ধরনের মানুষের সঙ্গে আপনার সম্পর্কের গভীরতা বিভিন্ন রকম হতে পারে। সময়ের ব্যবধানে তাদের সঙ্গে সম্পর্কে কিছুটা সমস্যা হওয়াটাও স্বাভাবিক। আমাদেরকে সব সময় মনে রাখতে হবে, বন্ধু যে-কোনো সময় শত্রুতে পরিণত হতে পারে আবার শত্রু যে কোন সময় বন্ধুতে পরিণত হতে পারে। তাই কোন বিশেষ গোপনীয়তা শেয়ার করা পরিহার করতে হবে।  শক্তিশালী মতামতগুলো প্রায় সময়ই অপ্রয়োজনীয় বিরোধের উৎস হয়ে উঠার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাসের ক্ষেত্রে। তাই নিজের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিশ্বাস শুধু নিজের মধ্যেই রাখার চেষ্টা করুন।


অভ্যাস-৪৯৬ সুখে থাকার জন্য আমাদের দরকার অন্য মানুষ। 

আমাদের  প্রিয়জন-বন্ধু মিলিয়ে চারপাশে সুন্দর একটা ‘সামাজিক সম্পর্কই পারে আপনাকে সুখী করে তুলতে। আমাদের সম্পর্কগুলোর যত্ন নেওয়ার কথা আমরা বেমালুম ভুলে যাই। আমরা মনে করি, একবার সম্পর্ক হয়ে গেলেই তো শেষ, সেই সম্পর্ক এমনি এমনিই সামনে এগোতে থাকবে। আলাদা কোনো মনোযোগ না দিলেও চলবে, যাকে বলে ‘টেকেন ফর গ্রান্টেড’। গবেষণা বলছে, বেশি আয় হয়তো একজনের জীবনযাপন কিংবা স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে পারে কিন্তু এটা কারও জীবনে অতিরিক্ত বেশি সুখ দিতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা একটু বেশি উপার্জন  করেন  তাদের  মধ্যে অহংকার করার এবং স্বার্থপর  হওয়ার  মানসিকতা  দেখা দেয়। অন্যদিকে যাদের আয় তুলনামুলকভাবে কম, তাদের মধ্যে সহমর্মী হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে তাই সুখও বেশি।  ক্যালিফোর্ণিয়া ইউভার্সিটির গবেষণা বলছে, যারা বেশি টাকা উপার্জন করেন,  তাদের জীবনে তখন টাকাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কোনো আয়েই তখন তারা সন্তুষ্ট হতে পারেন না। আরও বেশি পরিমাণ টাকার পেছনে ছোটেন। তাদের জীবনটা আবর্তিত হয় নিজেকে নিয়েই। অন্যদিকে তুলনামূলকভাবে কম উপার্জনকারীরা অন্যদের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের মধ্যে সুখ খুঁজে নেন।  যারা সম্পদশালী তারা তাদের সামাজিক মর্যাদা এবং ব্যক্তিগত সাফল্য নিয়ে খুশি থাকেন। সম্পদশালীরা একটা অহংকার নিয়ে কম উপার্জনকারদের সাথে মিশেন।



অভ্যাস-৪৯৭ সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলার চর্চা করুন। 

 রোজ কথার পিঠে কত-না কথা বলি আমরা। কিন্তু একটা কথার প্রভাব কত দূর গড়াতে পারে, অনেক সময়ই তা আমরা ভেবে দেখি না। অথচ কথা, কণ্ঠস্বর ও বাচনভঙ্গির ইতিবাচকতা জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যাঁর সঙ্গেই কথা বলুন না কেন! কথা দিয়েই আপনি মানুষের মন জয় করতে পারেন, এমনকি কেবল কথার কারণে আপনি অনেক ক্ষেত্রে পেতে পারেন বাড়তি সুবিধাও। অফিসের বড় কর্মকর্তার সঙ্গেই হোক কিংবা হোক একজন রিকশাচালক, নিজের কথার ধরন একেবারে উল্টে ফেলবেন না। অপর পক্ষের মানুষটা বদলালেও আপনি কিন্তু ‘আপনি’ই থাকছেন। 

যেকোন পরিস্থিতিতে অন্যদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে বিচার করার অভ্যাস রাখুন। আমার কথাই শেষ কথা, আমার ভাবনাই সঠিক, আমিই সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্য, এই রকম চিন্তাধারা থেকে থাকলে আজই পাল্টান। দুনিয়ার সব বোঝা নিজের কাঁধে নেবেন তো জীবন একটু বেশি ভারী হবেই!  উদার হন মানুষের প্রতি, দেখবেন জীবনও আপনার প্রতি উদার হচ্ছে বড় বড় বাজে ঘটনা যা আমাদের সাথে ঘটে, সেসব মন থেকে সহজে মোছার নয়। আমরা প্রায় সময় সামান্য সব বাজে ঘটনাও মনে চেপে রাখি। অথচ আপনার রাগ বা ঘৃণায় তার কিছুই হবে না কিন্তু আপনার মনটা যে বিষিয়ে থাকছে, তা কি আপনার পক্ষে ভালো? ক্ষমা করে দেখুন তাকে, নিজের মন একদম হালকা হয়ে যাবে। 



 অভ্যাস-৪৯৮ সবকিছু ভেঙে পড়ে, এটাই বাস্তবতা মনে রাখুন।


যে আকর্ষণ শরীর থেকে তৈরি হয়, তার স্থায়িত্ব খুব কম। বেশ কিছুদিন তা পেলেই আর কোন আকর্ষণ থাকে না। কিন্তু প্রিয় মানুষটির চেহারা যদি আকর্ষণ হয়। তাহলে এই যৌনতার স্থায়িত্ব একটু বেশি থাকে। চেহারা সুন্দরের পাশাপাশী সঙ্গী যদি বিশ্বাসী হয়, তাহলে অনেকটা সময় পর্যন্ত তার প্রতি আকর্ষণ থেকেই যায়। এর উপর প্রিয় মানুষটি যদি ব্যক্তিত্ববান ও যোগ্যতা সম্পন্ন হয়, তাহলে আকর্ষণের স্থায়িত্ব হয় অনেক বেশি। কিন্তু সব আকর্ষণই এক সময় কমে যায় বা নিভে যায়। হুমায়ুন আজাদের ভাষায়, সবকিছু ভেঙে পড়ে। কেউ স্বীকার করুক বা না করুক, এটাই বাস্তবতা। তবে এর সাথে সাথে সময়ের প্রেক্ষিতে ব্যালান্সও তৈরি হয়ে যায়। আকর্ষণ একসময় অভ্যাস, মায়া মমতা আর, দায়িত্বে পরিণত হয়।

কিন্তু কেন আকর্ষণ কমে যায়, কেন মানুষ একঘেয়েমিতে ক্লান্ত হয়? চলুন এর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।

প্রেমে পরলে আমাদের মস্তিস্কের পিটুইটারি গ্লান্ড হতে এমফিটামিন নামক একটি হরমোন সিক্রেশন হয়। যা প্রেমে পড়ার অকারণ আনন্দ অনুভুতি সৃষ্টি করে। কিন্তু এই এমফিটামিন উৎপন্ন হওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে, যা প্রায় ৩ বছর নয় মাস ২৬ দিন। ফলে চার বছরে্র আগেই শেষ হয় প্রেম। তখন নতুন আনন্দের উৎস হিসাবে তৃতীয় কেউ এসে যেতে পারে। এভাবেই চলতে থাকে এমফিটামিন-এর সার্কেল।  

আবার ভালবাসা সব সময় নিম্নগামী হয়। যেমন আপনি আপনার সন্তানদেরকে ভালোবাসবেন সবচেয়ে বেশি। আবার  আপনার সন্তানেরা তাদের নিজেদের সন্তানদের জন্য সবকিছু করবেন, এভাবেই চলতে থাকে।


  অভ্যাস-৪৯৯ প্রিয় মানুষ বা বন্ধুর উপস্থিতি মনের চাপ কমায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় ।

আধুনিক সভ্য সময়ে এরেঞ্জ ম্যারেজ একটা অগ্রহণযোগ্য বিষয়। আপনি নিজে জীবনে রিলেশন তৈরি করতে পারেন নি, নিজের জীবন-সঙ্গী নিজে খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয়েছেন, এটা আপনার অনেক বড়ো অযোগ্যতা এবং লজ্জার বিষয়। আবার কারো সাথে আপনার প্রেম বা বিয়ে হলে তিনি আপনার কেনা সম্পত্তিতে পরিনত হয়ে যান না। বিয়ের আগে বা পরেও সেই মানুষটি অন্য কারো সঙ্গে কিরকম সম্পর্ক রাখবেন, এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। আপনার সঙ্গী শুধুই আপনাকে ভালোবাসবে এবং আপনার প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে- এই বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি করা এবং তা রক্ষা করার দায়িত্ব আপনার এবং এটার জন্য নিজের সঙ্গীর কাছে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হয়। অভিযোগ, কৈফিয়ত কিংবা অধিকারবোধ চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। তবে, বন্ধুত্ব হোক বা প্রেম আপনার জীবনে প্রিয় মানুষ বা প্রিয় বন্ধুর উপস্থিতি মনের চাপ কমায়, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা এড়ানো সহজ করে তোলে। তাই প্রিয়জন বা বন্ধুকে সম্মান করতে শিখুন। এতে আপনার প্রতি আস্থা, বিশ্বাস, ভরসা বাড়বে। কোনো সম্পর্ককে তখনই হেলদি রিলেশনশিপ বলা যায়, যখন এতে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও সহানুভূতি থাকে।


  অভ্যাস-.৫০০ গরীব মানসিকতার সংস্কৃতি  থেকে বেরিয়ে আসুন।

 গরিব মানুষিকতা হচ্ছে- আমি এবং আমার পরিবার, আর বাকি সবাই হচ্ছে ওরা বা তারা।  আপনি গ্রামে গেলে দেখবেন, সেখানে আপন ভাইয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক নাই। একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনের অভিযোগ, ঈর্ষা, দলাদলি,প্রতিহিংসা, কোন্দল আর রেষারেষি। ফলে বাঙালির কোনো ভাল প্রতিবেশী নেই । গ্রামে বেশিরভাগ মানুষ এতই টক্সিক যে, তারা তাদের ব্যাক্তিগত জীবনের থেকে অন্যের জীবন নিয়ে বেশি চিন্তিত। আপনি দাড়ি রাখেন না কেন, আপনার মা-বোন বোরকা পড়েন না কেন, বয়স হয়ে যাচ্ছে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন না কেন, আপনার আপনার আশেপাশের মানুষ বিদেশে গিয়ে লাখ লাখ টাকা কামায় আপনি বেকার কেন? এসব আজগুবি বিষয় নিয়ে তাদের অনেক টেনশন।

গ্রামের আপনি এমন কোনো বাড়ি খুজে পাবেন না যেখানে জায়গা-জমি বা অন্য বিষয় নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই ফ্যামিলি সেই ফ্যামিলির সাথে কোনো একভাবে ঝগড়া লেগেই থাকে। কাউকে পছন্দ নাহলে তার নামে জায়গায় অজায়গায় বদনাম রটিয়ে দেওয়া গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের যেনো একটি নিত্যদিনের কাজ। আর সবচেয়ে ভয়াবহ হচ্ছে গ্রামের প্রতিটি চায়ের দোকানে চায়ে চুমুক উঠেই গীবত দিয়ে। যেখানে কার বৌয়ের বাচ্চা হচ্ছেনা,কার বৌ প্র‍্যাগন্যান্ট থেকে শুরু করেকোনোটারই গবেষণা বাকি থাকে না। যার অধিকাংশই আবার গুজব।

 এগুলো সবই গরিব মানসিকতার এফেক্ট। এই গরীব মানসিকতার কিছু বৈশিষ্ট্য হচ্ছে - চিৎকার-চেঁচামেচি, আর গলাবাজী, মুখে রাজা উজির মারা যাকে বলে। কারো অগোচরে তার সমালোচনা করা, কাউকে দমিয়ে রাখা বা ধ্বংস করার পরিকল্পনা করা, গোপনে অন্যের ক্ষতি করা,  যেমন- আপনি যে-কোন পাবলিক প্লেসে গেলে দেখবেন, সেখানে এটা ভাঙ্গা, উঠা ছিরা বা কাটা, বাথরুম বা কোনো দেওয়ালে এটা ওটা লিখা-আঁকা, চলন্ত ট্রেনের দিকে ঢিল মারা ইত্যাদি হলো গরিব মানসিকতারই অবদমিত প্রতিক্রিয়া। ‘আমরা বনাম তারা’ নামের এই যে গরীব মানসিকতার সংস্কৃতি  আমরা বংশ পরস্পরায় বয়ে চলেছি; তা আমাদেরকে মানুষ থেকে পশুর পর্যায় নামিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। 

কে কি করে ফেলছে সে দিকে নজর না দিয়ে নিজের কাজের প্রতি অলয়েজ ফোকাস রাখবেন । লাইফে আশা , প্রত্যাশা, চাহিদার লিস্টটা অলয়েজ ছোট রাখবেন। মানসিক ভাবে অশান্তিতে ভোগেন এমন নিউজ, সামাজিক সাইটগুলা এড়িয়ে চলুন