আমেরিকান মাগা ও মেধাভিত্তিক সমাজ -এর বিরোধ কতদূর যাবে?

"মাগা ধারা" মানে "Make America Great Again" (MAGA) স্লোগানটি ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক আদর্শ ও সমর্থকদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। স্লোগানটি আমেরিকান জাতীয়তাবাদ ও রক্ষণশীল গোষ্ঠি বুঝাতে ব্যবহৃত হয়।

গত এক শ বছরে পশ্চিমা সমাজে, বিশেষ করে আমেরিকায়, মেধাভিত্তিক সমাজ বা ‘মেরিটোক্রেসি’ গড়ে উঠেছে। সেখানে এখন শুধু ধনী পরিবার বা টাকাকে নয়, বরং কে কতটা শিক্ষিত, মার্জিত; সেটাই সমাজে উচ্চমর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে। কেবল ডিগ্রিধারী হলে হবে না, শিল্পকলায় রুচি থাকা, বই পড়ার প্রতি ঝোঁক থাকা এবং জ্ঞান অর্জনের ইচ্ছা থাকাও এই ‘শিক্ষিত শ্রেণির’ বৈশিষ্ট্য।

ট্রাম্প অনেক ধনী এবং তিনি নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়—ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার হোয়াটন স্কুল থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি পেয়েছেন। কিন্তু তিনি বইপত্র পড়েন না, বড় কোনো জ্ঞানেও দক্ষ নন। ফলে মেধাভিত্তিক সমাজ-এর লোকেরা ট্রাম্প-এর মত এইসব মাগা ধারার লোকেদের অযোগ্য মাথা মোটা বলে ঘৃণা করেন। মেধাভিত্তিক সমাজ নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

সাম্প্রতিক সময়ে আমেরিকা সমাজে উচ্চমর্যাদা পেতে হলে নৈতিক উৎকর্ষতা, লিঙ্গ বা যৌনতা নিয়ে উদাদতা এবং ‘প্রগতিশীল’ দৃষ্টিভঙ্গি থাকাও দরকার হয়। ফলে, যারা এই মানদণ্ডে পৌঁছাতে পারেনি বা স্বীকৃতি পায়নি, তারা এখন এই ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করতে রক্ষণশীল মতাদর্শ বা মাগা ধারার সমর্থক হয়ে উঠেছে।  

আমেরিকান শহুরে শিক্ষিত অভিজাত মানুষ মনে করেন, যাঁরা গ্রামে থাকেন, বন্দুক রাখেন, ধর্মে বিশ্বাস করেন বা ভালো বই পড়েন না, তাঁরা নিচু শ্রেণির মানুষ। এই শিক্ষিত শ্রেণির ধারণা রক্ষণশীলদের আহত করে; তাঁরা অপমান বোধ করেন। এ অপমানবোধের কারণে  তাঁদেরকে প্রগতিশীলদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন করে তোলে। এটিকেই ট্রাম্প রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সরকারী অনুদান বন্ধ করার মাধ্যমে।

========

শিশুকে মানুষ হয়ে ওঠার রসদ ও পরিবেশ দিতে হবে।

এক গবেষণায় শহরের বিভিন্ন ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞাসা করা হয়, তাদের মধ্যে কতজনের মাঠে গিয়ে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। দেখা গেল, সিংহভাগ শিক্ষার্থীই জীবনে কখনো মাঠে গিয়ে খেলেনি। অধিকাংশ শিক্ষার্থী স্কুলজীবনে শিক্ষাসফর ও পিকনিকে যাওয়ার সুযোগ পায়নি, প্রতিযোগিতামূল কোনো অনুষ্ঠান দেখেনি, নাটকে অংশ নেয়নি, পাঠাগার থেকে বই পড়েনি।

এসব বঞ্চনার ভেতর দিয়ে বড় হওয়া তরুণেরা ছেলে্তে-ছেলেতে কিংবা মেয়ে-মেয়ে পরস্পর বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলার স্বাভাবিক ক্ষমতার অভাব বেশ প্রকটভাবে দেখা যায়। ফলে তারা আবেগের বশবর্তী হয়ে সম্পর্ক যেমন দ্রুত গড়ে তুলে, তেমনি ভাঙেও তাড়াতাড়ি। সবচেয়ে বড় কথা, তাদের যৌবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্ব কেটে যায় জীবনের বৈচিত্র্যপূর্ণ রস গ্রহণ ছাড়া গতানুগতিক চক্রের আবর্তে। এতে তাদের কোনো খুব উচ্চ মানবিক প্রাপ্তি হচ্ছে না। অপ্রাপ্তি, অতৃপ্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে্র মধ্যে বড় হচ্ছে। তাদের জীবনে ভোজনই প্রধান বিনোদন। তাই তো শহরে শহরে নতুন নতুন রেস্তোরাঁর কমতি নেই। আর তাদের আছে ডিজিটাল ডিভাইসের আসক্তি। ফলে তারা মোবাইল ছাড়া অন্য কোনো দিকে না থাকানো ইনডোর  প্রাণীতে পরিণত হচ্ছে। মানবিকতা গড়ে না উঠার কারণে সংঘাত-প্রতিহিংসার ভাষা, ক্রোধের অশালীন বহিঃপ্রকাশসহ নানামুখী প্রকাশ ঘটতে দেখা যাচ্ছে।  এই হিংসারই জয়জয়কার চলছে ফেইসবুকে। মানুষে–মানুষে সন্দেহ, অবিশ্বাস, শত্রুতা-বিদ্বেষ, প্রতিশোধ-প্রতিহিংসার চর্চার প্ল্যাটফর্ম এটি । এর থেকে উত্তরণের জন্য মানুষ হওয়ার রসদ ও পরিবেশ তৈরি করা একান্ত জরুর

-------------

 প্রযুক্তি আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?

চীনের ডংগুয়ান শহরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান 'রিডমি' নিয়ে এসেছে বিতর্কিত একটি পণ্য- 'অ্যাপ নিয়ন্ত্রিত সেক্স রোবট'। এর দাম ১,৯০০ ডলার । রোবটটি ব্লুটুথের মাধ্যমে একটি মোবাইল অ্যাপের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়। মুটুয়াফান নামে একটি অ্যাপের মাধ্যমে এর ব্যবহারকারী এক একাধীক ব্যক্তি এ আই প্রযুক্তিসম্পন্ন এই রোবটটিকে দিয়ে সব করাতে পারবেন। এই অ্যাপ পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন প্লাটফর্মে। অ্যাপে একটি “রুম” তৈরি করা যায়। সেখানে ১০ জন পর্যন্ত মানুষ যোগ দিতে পারে এবং রোবটটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এতে আছে ১০টি কম্পন মোড, ১০টি সাকশন মোড, ৬টি শব্দ মোড....যা রোবটটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রয়োগ করতে পারে

======================


ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশনের তথ্য থেকে। গজলডোবা ব্যারাজ নির্মাণের আগে ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যায়ে মার্চের শেষ ১০ দিনে বাংলাদেশে তিস্তার গড় পানিপ্রবাহ ছিল ৬ হাজার ৭১০ কিউসেক, বাংলাদেশ শুকনো মৌসুমে গড়ে ১২০০   কিউসেক পানি পায় যা কোনো কোনো সময় ২০০-৩০০ কিউসেক পর্যন্ত নেমে যায়। চীনের তৈরি প্রকল্প পরিকল্পনা অনুসারে তিস্তা নদী খনন করে ও দুই পাশে বাঁধ দিয়ে নদীর প্রশস্ততাকমিয়ে ও গভীরতা বৃদ্ধি করে, ড্রেজিংয়ের মাটি দিয়ে নদীর দুই পাড়  ভরাট করে  ১৭০ বর্গকিলোমিটার ভূমি উদ্ধার এবং সেই ভূমিতে আবাসন, শিল্প পার্কসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে তিস্তা নদীর  গড় প্রস্থ ৩ দশমিক ১ কিমি। দুই পাশে বাঁধ দিয়ে নদীর এ প্রস্থ কমিয়ে   ১ কিমির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হলে শুষ্ক মৌসুমে  নদীর তলদেশে যে পানি দেখা যাবে তা আসলে নদীর দুই পাড়ের ভূগর্ভস্থ পানি ছাড়া অন্য কিছু নয়। নদীর এই পানি সেচের জন্য ব্যবহার করা হলে  আশেপাশের অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাবে, ফলে অগভীর নলকূপের মাধ্যমে যে পানি পাওয়া যায় তা কমে যাবে।


তাই ভারতের কাছ থেকে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় না করে যত মেগা প্রকল্পই করা হোক না কেন তিস্তা নদীর সংকটের সমাধান হবে না। গজলডোবাসহ সিকিমে অনেকগুলো জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মিত হয়েছে বা হচ্ছে যেগুলো তিস্তার পানিপ্রবাহের ওপর প্রভাব ফেলছে।

=============

আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) ক্যাটাগরি থেকে উত্তরণের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ শুল্ক সুবিধা হারানোসহ অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এবং এতে করে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ধারণা অনুসারে ১৪ শতাংশ রফতানি হ্রাস পেতে পারে।

তাই বাংলাদেশ যে আজ ২৩৭টি সবুজ কারখানার আবাসস্থল, তা বিশ্বব্যাপী আরো প্রচারণা দরকার। বাংলাদেশকে একটি পরিবেশগতভাবে টেকসই পোশাক উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে ব্র্যান্ডিং করা অপরিহার্য। বাংলাদেশের পোশাক শিল্প, দীর্ঘকাল ধরে সস্তা শ্রমের হলেও  এখন সস্তা শ্রম থেকে নজর সরিয়ে মনোনিবেশ করতে হবে উদ্ভাবন, ও গুণমানের দিকে।

==========

বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নিরক্ষর। তাদের অনেকেই ক্লাস থ্রি থেকে ফাইভ বা সিক্স-সেভেন পাস। আবার যারা উচ্চমাধ্যমিক এমনকি অনার্স-মাস্টার্স পাস করছে, তাদের মধ্যে এমন কোনো যোগ্যতা বা দক্ষতা তৈরি হচ্ছে না, যা দিয়ে তারা জীবিকা অর্জনে সাহায্য করবে। বিগত স্বৈরাচারী আমলে পাঠ্যপুস্তকগুলো হয়ে উঠেছিল সরকারি দলের প্রচারণা আর প্রোপাগান্ডার বাহক।  শ্বেতপত্র আর বিভিন্ন তদন্তে বের হয়ে এসেছে শিক্ষা খাতে গত দেড় যুগের মাত্রা ছাড়া দুর্নীতি।  কিন্তু এই  শিক্ষা দিয়ে আমাদের প্রশিক্ষিত দক্ষ কর্মী যেমন তৈরি হচ্ছে না,  তেমনি জ্ঞাননির্ভর মানুষ মানুষও তৈরি হচ্ছে না। 


টিই পদ্ধতিতে শিক্ষকরা মূলত নির্দিষ্ট কোর্সবিষয়ক জ্ঞান প্রদান করেন, যা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় সফলতার জন্য মুখস্থ নির্ভরশীল করে তোলে। অপরদিকে, ওবিই শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফলের ওপর গুরুত্ব দেয়—তারা যা শিখছে, তা বাস্তবে কতটা প্রয়োগ করতে পারছে, সেটিই মুখ্য। ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে যখন যুক্তরাষ্ট্রের কে-১২ বিদ্যালয়গুলোয় ওবিই প্রথম চালু করা হয়, তখন এটি অভিভাবক ও স্কুল কর্তৃপক্ষের তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়ে।  আমেরিকান সমাজবিজ্ঞানী ও ওবিইর পথপ্রদর্শক অধ্যাপক উইলিয়াম স্প্যাডি তার মূল মডেলকে আরো পরিমার্জন করেন। তার এ সংস্কার ওবিই আন্দোলনের ভিত্তিকে আরো সুসংহত করে, অন্যদিকে, টিই পদ্ধতিতে  শিক্ষার কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয় না, বরং কাঠামোগত বাধ্যবাধকতার ভিত্তিতে পরিবর্তিত হয়। 

বর্তমান বিশ্বের পরিবর্তনের গতি যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। উন্নত দেশগুলোই তার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হিমশিম খাচ্ছে। অথচ আমরা মান্ধাতা আমলের শিক্ষা ব্যবস্থা ও পদ্ধতি নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছি। শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিযোগিতা করে টিকতে হবে। তাই বিশ্ব যেসব প্যারামিটারকে ভ্যালু দেয় আমাদের সেগুলো অর্জনে মনোযোগী হওয়া জরুরি। শিক্ষার্থীদের অ্যাকটিভ লার্নার হিসেবে অংশগ্রহণমূলক শিক্ষা কার্যক্রম বাড়াতে হবে। তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করে দৈনন্দিন সমস্যার সমাধানে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।


বিভিন্ন খাতের চাহিদা অনুযায়ী পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হলে শিক্ষার্থীরা প্রাসঙ্গিক দক্ষতা অর্জন করতে পারবে এবং চাকরির বাজারে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। উন্নত বিশ্বে শিক্ষা ব্যবস্থা ও বিভিন্ন খাতের মধ্যে কার্যকর সমন্বয়ের বহু সফল উদাহরণ রয়েছে। যেমন জার্মানির ‘ডুয়াল এডুকেশন সিস্টেম’ শিক্ষার্থীদের একযোগে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেয়। এ ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি সরাসরি শিল্প-কারখানায় বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করে। ফলে তারা শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে না। এমনকি ভারতেও শিল্প-কারখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের বিভিন্ন উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে, যেখানে প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় শিল্প খাতের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশেও শিল্প ও ব্যবসা খাতের সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থার এ সংযোগ স্থাপন করা গেলে তরুণদের জন্য শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের পথ সুগম হবে 


=====

লর্ড অ্যাক্টনের ইতিহাসের একটি শিক্ষ 

‘সব ক্ষমতা দুর্নীতিপ্রবণ করে তোলে, নিরঙ্কুশ ক্ষমতা সম্পূর্ণরূপে দুর্নীতিগ্রস্ত করে’। (All Power Corrupts and Absolute power corrupts absolutely)

---------------------

বিশ্বব্যাপী অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়, প্রতিনিধিত্বমূলক ও দলকেন্দ্রিক গণতন্ত্রে রাজনৈতিক এলিটরা নিজেদের চেক অ্যান্ড ব্যালান্স করার বদলে একধরনের অশুভ আঁতাত তৈরি করে সুবিধা ভাগাভাগি করে থাকেন। কারণ, এ ব্যবস্থায় অলিগার্কি বা গোষ্ঠীতন্ত্র সৃষ্টি হবেই। যেহেতু রাজনৈতিক এলিটরা সংখ্যায় কম, তাই তাঁরা নিজেদের মধ্যে সহজেই বোঝাপড়া করতে পারেন। 

ক্যাশলেস সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যবসার লেনদেন চালু করা গেলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে আরো স্বচ্ছতা আসবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনীতির আকার বড় হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসে ক্যাশলেস সিস্টেমের উদ্যোগ নিতে হবে। ক্যাশলেস অর্থনীতি বাস্তবায়নের জন্য তথ্যপ্রযুক্তিগত অবকাঠামোর উন্নয়নে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে হবে। প্রতিবেশী দেশ ভারত এবং পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশ মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও ভিয়েতনামের মতো ইউনিফায়েড পেমেন্ট ইন্টারফেস (ইউপিআই) নিশ্চিত করা গেলে সহজেই একটা প্লাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক ও এমএফএসের মাধ্যমে লেনদেন নিশ্চিত করা যাবে। কিন্তু শুধু ক্যাশলেস অর্থনীতি নিশ্চিত করলে কি কর সংগ্রহ বেড়ে যাবে? 

===============

 জ্যাকি চান নিজের ৪ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি দান করেছেন ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার উদ্দেশ্যে।এমনকী নিজের বিপুল সম্পত্তির একটা কানাকড়িও নিজের সন্তানকে দেননি এ অভিনেতা। জ্যাকি চানের নিজের এক অলাভজনক সংস্থা রয়েছে। যেখানে সমাজের প্রান্তিক মানুষ ও শিক্ষার্থীদের অর্থসাহায্য করা হয়ে থাকে। কিন্তু নিজের সন্তানকে বঞ্চিত করলেন কেন? তাঁর নেপথ্যে যুক্তি দিয়েছিলেন জ্যাকি। তিনি বলেন, ‘যদি আমার ছেলের মধ্যে মেধা থাকে তবে ও নিজেই পয়সা রোজগার করতে পারবে। নয়তো আমার সম্পত্তি পেলে তা সে শুধুই নষ্ট করবে।’জ্যাকি চ্যানের ছেলের নাম জ্যাসি চ্যান। এই মুহূর্তে ৪৩ বছর বয়স তার। বাবার মতো তিনিও যুক্ত ফিল্মি দুনিয়ার সঙ্গে। গায়ক, অভিনেতা, পরিচালক- এই সব ভূমিকাতেই দেখা গিয়েছে তাকে। 

============

কুড়িগ্রাম জেলায় গরিব মানুষ বৃদ্ধির প্রধানতম কারণ ছিল নদীভাঙন। প্রতিবছর এ জেলায় যে নদীভাঙনে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়। কোটি টাকার মালিকেরো ঠাঁই হয় বাঁধের ওপর।  মাঝারি এবং ছোট মিলে প্রায় অর্ধশত নদী এ জেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই জেলায় কয়েক শ চর আছে। যেগুলোতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। চরাঞ্চলে সব মেয়ের বিয়ে অল্প বয়সেই হয়। প্রবাসীর সংখ্যা খুবই কম থাকায় বৈদেশিক আয় এ জেলায় তেমন নেই বললেই চলে। দেশের সবচেয়ে গরিব উপজেলা কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুর। সেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৮০ শতাংশ। 

===========

সার্ভে ২০১৯’ অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৮৯ শতাংশ শিশু শারীরিক শাস্তির শিকার হয়েছে। জরিপে আরও দেখা যায়, ৩৫ শতাংশ অভিভাবক মনে করেন, শিশুকে শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন আছে।  ৩০০টির বেশি গবেষণা শাস্তির সঙ্গে অসংখ্য নেতিবাচক ফলের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করেছে। কোনো গবেষণায় শাস্তির কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। শেখানোর কৌশল হিসেবে শাস্তি একটি অকার্যকর পদ্ধতি। গবেষণায় প্রমাণিত যে শিশুদের বেড়ে ওঠায় শাস্তি নয়, প্রয়োজন ভালোবাসা এবং বয়স অনুযায়ী নির্দেশনা। 

==============

এবারের গণ-অভ্যুত্থানেও কোনো দলীয় নেতৃত্ব ছিল না। ক্ষুব্ধ বিভিন্ন শ্রেণি, ধর্ম, জাতি, পেশা, বয়সের নারীর অংশগ্রহণ এই আন্দোলনকে অপ্রতিরোধ্য শক্তি দিয়েছিল। মানুষের ওপর গুলি চালানোর জন্য সেনাবাহিনীকে সর্বশক্তি প্রয়োগের যে নির্দেশ শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন, সেনাবাহিনী সেটি না মানায় পুরো ঘটনার মোড় বদলে গিয়েছিল। এর পরিণতিতে ৫ আগস্ট ৪৫ মিনিটের নোটিশে তাঁকে গণভবন ছাড়তে হয়। ১৯৯০ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতনের সময়ও একই ঘটনা ঘটেছিল। তখন সেনাপ্রধান নুরুদ্দিন খান  রাষ্ট্রপতি সমর্থনে সেনা মোতায়েন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে বিএনপির প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিনের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে রক্ষায় সেনা মোতায়েনের প্রস্তাব খারিজ করে দেন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ। এর মধ্য দিয়ে  আসে ফখরুদ্দীন আহমদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। 

============

বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্যবাদী প্রভাব ঠেকাতে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।  গত দুই দশকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার ক্ষমতার ভারসাম্য পুরোপুরি পাল্টে গেছে। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ; বিপরীতে পাকিস্তানের অর্থনীতি এখন একপ্রকার ‘লাইফ সাপোর্টে’। বর্তমানে অর্থনৈতিক ও মানব উন্নয়নের সূচকগুলোতে পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে আছে। ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক পরস্পরসাপেক্ষ হওয়ার প্রয়োজন নেই; বরং তা দ্বিপক্ষীয় এবং স্বতন্ত্র রাখা উচিত। 

===============


অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে চারবারের মধ্যে তিনবার সেরা তিনে ছিলেন। তাঁকে উপাচার্য হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সরকারি চাপে নতিস্বীকার করবেন না বলে এরশাদ আমলে সেই পদ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। অথচ ক্ষমতার স্বাদ পেতে ও ক্ষমতাবানের পূজারি হওয়ার কী আপ্রাণ চেষ্টা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা করে থাকেন! 

===========

১৮৪০ সালে ব্রিটিশরা এবং ১৮৫৬ সালে কিছু পশ্চিমা শক্তি চীনের সঙ্গে আফিম বাণিজ্য চালু রাখতে যুদ্ধ করে। ইতিহাসে তা ‘আফিম যুদ্ধ’ নামে পরিচিত। ফলে সেসময় চীন আফিম আসক্তিতে ধ্বংসের মুখে পড়েছিল, আমেরিকা তেমনভাবেই এখন একটি ভয়াবহ মাদকসংকটে ভুগছে।  আমেরিকার জনসংখ্যা বিশ্বের মাত্র ৫ শতাংশ, কিন্তু তারা পুরো বিশ্বের ৮০ শতাংশ আফিমজাত মাদক ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্র ফেন্টানিল নামের ভয়াবহ এক সিনথেটিক ড্রাগে আক্রান্ত। এই ড্রাগের মূল উপাদান চীন থেকে রপ্তানি হয়। এই উপাদান অনেক সময় বৈধ ওষুধ তৈরিতেও লাগে। তবে এর অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করতে চীন যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে না বলে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করছে। অন্যদিকে চীন বলছে, চাহিদা থাকলে যোগান কোনো না কোনভাবে হবে—শুধু চীনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। 

=============

ঢাকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি মানুষ। এখানে নির্মল বায়ুর জন্য যে পরিমাণ গাছপালা থাকা দরকার, তার সিকি ভাগও নেই। এসব কারণে ঢাকার বাসিন্দাদের অনেকে শ্বাসজনিত রোগে ভোগেন। চিকিৎসকেরা তাঁদের বায়ু পরিবর্তনেরও পরামর্শ দেন। ঢাকার চারপাশে বিস্তীর্ণ এলাকা উন্মুক্ত পড়ে আছে। সেখানেও সবুজের কোনো আচ্ছাদন নেই। অতএব বায়ূদূষণ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সবুজ আচ্ছাদন তৈরি করতে হবে। ঘরের বেলকনি বাড়ীর ছাদসহ শহরে যত বেশি গাছ লাগানো হবে, তত বেশি বায়ু নির্মল হবে। দ্বিতীয়ত, কলকারখানার ধোঁয়া বন্ধ করতে হবে। উন্মুক্ত স্থানে নির্মাণকাজ করা যাবে না। সড়কে ময়লা–আবর্জনা ফেলে রাখা যাবে না।  এসব ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

=============

বিনিয়োগ থেকে আসে কর্মসংস্থান, বাড়ে রাজস্ব আয়, কমে দারিদ্র্য। তাই বিশ্বের সব দেশের সরকারই বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করে থাকে।

বিশ্বের ৩৫তম অর্থনীতির আমাদের এই দেশ, আশির দশক-থেকে ভিয়েতনাম, চীন, মেক্সিকো ও ভারতের মতো আমাদের দেশো অর্থনৈতিকভাবে বিকাশ লাভ করে। কিন্তু মালয়েশিয়াতে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের বহুজাতিক কোম্পানিগুলো প্রচুর বিনিয়োগ করে। থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের ক্ষেত্রেও একই। অন্যদিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগ কমেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়  ১)আমলা তান্ত্রিক জটিলতা, ২}দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শ্রমিকের অভাব। ৩)ডলার-সংকট, ৪)জ্বালানিসংক।

=====================


এক দল সরকারে গেলে অন্য দল তার পতন চায়, সংসদে যায় না। একটানা ৯০ কার্যদিবস সংসদ অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকলে সদস্যপদ আপনা–আপনি বাতিল হয়ে যায় বলে ৯০ দিন পার হওয়ার এক-দুই দিন আগে সংসদে এসে চাঁদমুখখানি দেখিয়ে আবার ওয়াকআউট। এতে সদস্যপদ টিকে যায়, পকেটে- বেতন-ভাতাও আসে। দিনের পর দিন চলেছে এই মিউজিক্যাল চেয়ার।

আওয়ামী লীগের মতো  বিএনপি চলে পারিবারিক মালিকানায়, এক ব্যক্তির কথায়। ফলে যিনি চোর, তাঁকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে উঁচু স্বরে কথা বলতে দেখি। 

বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যার ৬৮ শতাংশ বা দুই-তৃতীয়াংশই এখন কর্মক্ষম। এ কর্মক্ষম বিশাল জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগাতে দরকার প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলা। এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং বাজেট বাড়াতে হবে। 

বিশ্বের প্রায় সব দেশেই প্রাথমিক পর্যায়ে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। দেশে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে অন্তত ১১ ধরনের। স্বাধীনতার এত বছর পরও ইংরেজি, বাংলা আর মাদ্রাসাশিক্ষার মধ্যে আমরা ন্যূনতম সমন্বয় সাধন করতে পারিনি। 

==================


এই দেশে কোথাও একটা সেবা নিতে যান, দেখবেন- আপনাকে কিভাবে নাকানি চুবানি খাওয়াবে। এই দেশের রিক্সাওয়ালারও রাজনীতি নিয়া যে চিন্তা, সে তার জীবন মান উন্নত করা নিয়ে ততটা ভাবে না। একজন চায়ের দোকানদার রাজনীতি নিয়ে যেমন ভাবে, তার ছেলেমেয়ের ভবিষ্যত নিয়েও সে অতটা ভাবে না। আমাদের সবই আছে, শুধু নেই শিক্ষিত মার্জিত সৎ মানুষ। 

==============


কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষকরা বলছেন, শৈশবে অবহেলা, বঞ্চনা ও প্রতিকূলতায় ভরা জীবন মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এমন শিশুর মস্তিষ্কের আকার ছোট হয়। গবেষকরা ‘রোমানিয়ান হেল হোল’ বা রোমানিয়ার নরকের গহ্বর খ্যাত অনাথাশ্রম থেকে দত্তক নেয়া শিশুদের (বর্তমানে প্রাপ্তবয়স্ক) একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। তারা জানান, অনাথাশ্রমের এই শিশুদের মস্তিষ্ক অন্য কোথাও থেকে দত্তক নেয়া শিশুর মস্তিস্কের তুলনায় ৮ দশমিক ৬ শতাংশ ছোট। ৬৭ রোমানীয় দত্তক শিশুর মস্তিষ্ক স্ক্যান করে অন্য ২১ জন দত্তক শিশু যারা কখনো অবহেলার শিকার হয়নি তাদের মস্তিষ্কের সঙ্গে তুলনা করা হয়। তাতে দেখা যায়, শৈশবে অবহেলার শিকার রোমানীয় দত্তক শিশুদের মস্তিষ্ক অন্যদের তুলনায় ৮ দশমিক ৬ শতাংশ ছোট। এমনকি রোমানীয় যে শিশু ওইসব এতিমখানায় যতো বেশি সময় অবস্থান করেছিল তার মস্কিষ্কের আকার ততো ছোট।


অস্ট্রিয়ার নোচিকিৎসক আলফ্রেড অ্যাডলার তত্ত্ব মতে, ব্যক্তির আইকিউ এমনকি জীবনে সফলতা ও ব্যর্থতার শর্তও তৈরি হয় পরিবারেই। যাদের কোনো ভাইবোন নেই, অর্থাৎ বাবা-মার একমাত্র সন্তান তারা হয় আত্মকেন্দ্রিক, স্বাধীনচেতা এবং পরিপক্ব। 

===============

ক্লেপটোম্যানিয়া হচ্ছে এক ধরনের মানসিক রোগ । এ রোগে আক্রান্তরা সবসময় কিছু না কিছু চুরির তাড়না বোধ করে। যতক্ষণ পর্যন্ত চুরি করতে না পারে, ততক্ষণ অস্বস্তি যায় না। খুব কাছের মানুষের জিনিস চুরি করতেও তারা দ্বিধা বোধ করেন না। সাধারণ চুরির সঙ্গে এর পার্থক্য হলো, এক্ষেত্রে রোগী টাকার অভাবে চুরি করেন না, চুরি করা জিনিস কখনো বিক্রি তো করেন-ই না; নিজেও কখনো ব্যবহার করেন না। চুরি করার পর তিনি খুব মানসিক অস্বস্তি ও গ্লানিতে ভুগতে থাকেন। এমনকি চুরি করা জিনিসটি ঠিক জায়গায় পৌঁছে দেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করতে থাকেন।বিখ্যাত বিত্তবানদের তুচ্ছ জিনিস চুরির বাতিকও এই ক্লেপটোম্যানিয়ার ফসল। বিশ্বখ্যাত অভিনেতা, রাজনীতিক, খেলোয়াড়, গায়ক, ব্যাংকার সব পেশার মানুষই এ তালিকায় আছেন। 

================

মহাভারতে দ্রৌপদীর যে বস্ত্রহরণের বর্ণনা পাওয়া যায়, সেটিও শাড়িই ছিল বলে অনুমেয়। ঐতিহাসিকদের মতে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ বছর আগে আর্যরা শাড়ি পরার প্রচলন শুরু করে। তবে শাড়ির মতো পোশাকের তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায় সিন্ধু সভ্যতায়, যা উত্তর-পশ্চিম ভারতের ২৮০০-১৮০০ খ্রিস্টপূর্বার্ব্দে বিকাশ লাভ করেছিল। শাড়ি শব্দটি সংস্কৃত থেকে এসেছে বলেই মনে করা হয়, যার অর্থ টুকরো কাপড়। সিন্ধু ও মেহের গড়ের মতো অনার্য সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত চিত্রে নারীদের পরনে শাড়ির মতো কাপড়ের ব্যবহার দেখা যায়। ধারণা করা হয়, ভারতের অনার্যরা সেলাই জানত না বলেই নারী, পুরুষ সবাই অখণ্ড বস্ত্র হিসেবে শাড়ি পরিধান করত।  এ অখণ্ড বস্ত্রটি পুরুষের পরনে থাকলে হতো ধুতি এবং নারীর পরনে থাকলে শাড়ি। টুকরো কাপড় হিসেবে ব্যবহৃত এ শাড়ি আগে বুদ্ধর ভাস্কার্যগুলোয়ও দেখা গেছে। সে অর্থে, মহেঞ্জোদারোর একটি মূর্তির ক্ষেত্রেও শাড়ির ব্যবহার দেখা যায়। 

========

ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলের লাগুনা অঞ্চল। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এখানে মানুষের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে মাছ শিকার করে ডলফিনের দল।

কাদাময় লেগুনের পানিতে ডলফিনেরা মাছের ঝাঁককে তীরের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যায়। জেলেরা ডলফিনের সংকেতের অপেক্ষায় থাকে। ডলফিন কর্তৃক পানিতে পুচ্ছের আঘাত বা হঠাৎ ডুব দেয়ার মুহূর্তে জাল ছোড়ে জেলেরা। এতে মানুষের জালে মাছ ওঠার পাশাপাশি ডলফিনেরা জালের বাইরে আটকে যাওয়া মাছ শিকার করে। নের বোটলনোজ ডলফিন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জীববিজ্ঞানী ব্রুনো ডিয়াজ লোপেজ বলেন, এটি প্রজাতিগত সমন্বয়ের জটিল নমুনা, যা ডলফিনদের মানবসৃষ্ট পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার দক্ষতা প্রমাণ করে। 

==============

ধাতব মুদ্রা প্রচলনের আগের সময়টা ছিল কড়ির সময়। কেবল উড়িষ্যাতেই নয়, বাংলাতেও মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হতো কড়ি। ৯৪৩ থেকে ১৮৩৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৯০০ বছর ধরে বাংলা মালদ্বীপের সঙ্গে বাণিজ্য করতো কেবল কড়ি সংগ্রহের জন্য। মালদ্বীপ ছিল এই অঞ্চলের কড়ি উৎপাদনের বৃহত্তম কেন্দ্র এবং বাংলাসহ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এই কড়ি পাওয়ার বিনিময়ে তাদের কাছে চাল, মশলা এবং রেশম বিনিময় করতো। ব্যবহৃত হত প্রশান্ত মহাসাগরে পাওয়া সাইপ্রিয়া জাতের শামুক যা কড়ি হিসেবেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। শক্ত, বহনযোগ্য, অনেকাংশে অভিন্ন এবং নকল করা কঠিন হওয়ার ফলে প্রাচীনকাল থেকেই পূর্ব আফ্রিকা এবং ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে মুদ্রা হিসেবে কড়ি ব্যবহৃত হতো। ধাতব মুদ্রা প্রচলনের পরও বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার হতো সাইপ্রিমোনেটা বা অর্থকড়ি। এমনকি ধাতব মুদ্রার পাশাপাশি একটি সমান্তরাল মুদ্রা ব্যবস্থা গঠন হয়েছিল এই কড়ি দিয়েই।

উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়টাতে ভারতে ব্যাপকভাবে বিস্তৃত ছিল কড়ির আর্থিক ব্যবহার। ১৮০৫ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একে বিলুপ্ত ঘোষণা করার আগ পর্যন্ত ভারতের পূর্ব উপকূলে ছড়িয়ে থাকা বাণিজ্য বন্দরগুলোতে কড়িই ছিল প্রধান মুদ্রা। মুদ্রা হিসেবে কড়িকে বিলুপ্ত করার ফলে বেঁধেছিল বিদ্রোহও। ১৮১৭ সালে কড়ি বিলুপ্ত করার বিরুদ্ধেই গড়ে উঠেছিল উড়িষ্যার পাইকা বিদ্রোহ।

১৮২১ খ্রিস্টাব্দে ১ রুপির সমান ছিল ২ হাজার ৫৬০টি কড়ি। তবে এই কড়ির মূল্য বা মান একেক অঞ্চলে ছিল একেক রকম। বাংলা থেকে বহুদূরে, ভারতে কয়েকটি কড়ি দিয়েই একটি গরু কেনা যেত, অন্যদিকে কড়ি উৎপাদনের কেন্দ্রস্থল মালদ্বীপে কয়েক লক্ষ কড়ির দাম ছিল মাত্র একটি সোনার দিনারের সমান।

ষোড়শ শতকে ইউরোপীয়রা যখন ভারতীয় উপকূলে দাস ব্যবসা শুরু করে তখন কড়ির চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। পর্তুগিজ, ওলন্দাজ, ফরাসি এবং ইংরেজদের আফ্রিকার দালালদের কাছ থেকে ক্রীতদাস কেনার জন্য মালদ্বীপের কড়ির প্রয়োজন ছিল। লাভজনক সুযোগ খুঁজে পেয়ে বাংলার ব্যবসায়ীরা ইউরোপীয়দের কাছে বিক্রির জন্য মালদ্বীপ থেকে কড়ি সংগ্রহ শুরু করে। ক্রীতদাস ব্যবসায়ীরা একজন আফ্রিকান ক্রীতদাস কেনার জন্য প্রায় ২৫ হাজার কড়ি প্রদান করতো।

===============


উনবিংশ শতাব্দীর গড়ার দিকে কলকাতার চিৎপুর রোড আর চব্বিশ পরগণার বাজবাজে ‘দাসবাজার’ ছিল। চিৎপুরের নদীর তীর জুড়ে ক্রীতদাস ক্রয়-বিক্রয় করা।

ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো এশিয়া জুড়েই অভিজাত এবং রাজপরিবারগুলোতে কাফ্রি নামে পরিচিত আফ্রিকান ক্রীতদাস, বিশেষ করে ‘হাবশি’ নামে পরিচিত ইথিওপীয় বা আবিসিনীয় ক্রীতদাসদের প্রচুর চাহিদা ছিল। কলকাতা ছাড়াও তৎকালীন বাংলার অন্যান্য বন্দর, যেমন- চট্টগ্রাম এবং উড়িষ্যার বালাসোরও ছিল দাসব্যবসার আঞ্চলিক কেন্দ্র।

বাংলা অঞ্চলে পুরুষ ক্রীতদাসদের দিয়ে জমিতে কৃষক হিসেবে আর গৃহস্থালির কাজ করানো হতো। অন্যদিকে, নারী ক্রীতদাসদের প্রায়ই তাদের মালিকদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বাধ্য করা হত। যত বেশি দাস, তত বেশি সম্পদ এবং সমৃদ্ধির চিহ্ন।

============


মাউন্ট অগাস্টাস শামুক

সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডে শামুকের বিরল একটি প্রজাতির অদ্ভুত প্রজনন প্রক্রিয়া ক্যামেরাবন্দি হয়েছে, যা এর আগে কখনও প্রত্যক্ষ করা যায়নি। শামুকের ওই প্রজাতিটি গলা দিয়ে ডিম পাড়ে। শুনতে অবাক লাগলেও বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি তাদের স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যের অংশ।

বিশ্বের বৃহত্তম স্থলশামুকের একটি, এই শামুকগুলো ধীরে বড় হয় এবং প্রায় ৮ বছর বয়সে প্রজননে সক্ষম হয়। প্রতিবছর তারা গড়ে পাঁচটি মুরগির ডিমের মতো আকারের ডিম দেয়, যা ফোটাতে এক বছরের বেশি সময় লাগে।

শামুকটির গলার দিকে একটি বিশেষ ছিদ্র (জেনিটাল পোর) থাকে, যেখান দিয়ে তারা মিলন ও ডিম পাড়ার কাজ সম্পন্ন করে। এই প্রজাতি উভলিঙ্গ, অর্থাৎ প্রতিটি শামুক একই সঙ্গে স্ত্রী ও পুরুষ। মিলনের সময় উভয়েই একে অপরকে শুক্রাণু সরবরাহ করে, যা পরে ডিমে রূপান্তরিত হয়।

=====================


গবেষকরা মনে করেন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সুখের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক নেই। শুধু সুখী হওয়াই যথেষ্ট নয়, বরং 'ফ্লোরিশিং' বা সমৃদ্ধি অর্জনের জন্য প্রয়োজন বহুমাত্রিক সুস্থতা, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, জীবন সার্থকতা ও সুস্থ সামাজিক সম্পর্ক।

তারা বলছেন, সুখ একটি অনুভূতি। কিন্তু ‘ফ্লোরিশিং’ হল সমৃদ্ধ জীবনযাপন , যাতে থাকে  তৃপ্তির জীবনযাপন, আনন্দময় সামাজিক সম্পর্ক, বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা। খুব কঠিন অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতেও মানুষ ‘ফ্লোরিশিং’ বা সমৃদ্ধ জীবনযাপন করতে পারে— এমন তথ্যই উঠে এসেছে একটি গবেষণায়।

এ গবেষণায় সবচেয়ে বেশি তৃপ্তির জীবনযাপন করে প্রথমে ইন্দোনেশিয়ায়, এরপর মেক্সিকো ও ফিলিপাইনের মানুষকে। অথচ এ দেশগুলো বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশগুলোর তালিকায় নাই। অন্যদিকে সুইডেন বা যুক্তরাষ্ট্র সুখী দেশের মধ্যে থাকলেও ফ্লারিশিংয়ের স্কোর তাদের খুব কম। এর কারণ হিসেবে গবেষকেরা বলছেন, আর্থিক নিরাপত্তা কিংবা জীবনের সচ্ছলতা থাকলেও সম্পর্ক দুর্বল কিংবা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি কম ।

======================


দেশে বর্তমানে মূলধারার মাদ্রাসা রয়েছে দুই ধরনের—আলিয়া ও কওমি। এর মধ্যে আলিয়া মাদ্রাসাগুলো সাধারণত সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হয়। তাদের শিক্ষাক্রমে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সরকারি কারিকুলাম অন্তর্ভুক্ত থাকে।অপরদিকে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা পরিচালিত হয় সম্পূর্ণ বেসরকারিভাবে এবং শিক্ষাক্রমও পুরোপুরি নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি। বর্তমানে সারা দেশে প্রায় ২৯ হাজার কওমি মাদ্রাসা রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত প্রায় ৫০ লাখ শিক্ষার্থী। অন্যদিকে সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলোতে দেখা যায় এর ঠিক উল্টো চিত্র, এখানে প্রতিনিয়তই কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। 

প্রাথমিক শিক্ষা পরিসংখ্যান-২০২৩-এর তথ্য অনুযায়ী, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বাড়লেও ২০২২ সালের তুলনায় ওই বছর কেবল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই কমে ১০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী।

‘দেশে প্রান্তিক পর্যায়ে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী বৃদ্ধির অন্যতম কারণ দরিদ্রতা। দরিদ্রতার কারণে  অভিভাবকরা মাদ্রাসাকে বেছে নিচ্ছেন। বেশির ভাগ কওমি মাদ্রাসায় বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে পড়ানোর সুযোগ থাকে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোয় রয়েছে আবাসিক সুবিধাও। আমাদের দেশের মানুষদের একটি বড় অংশ দরিদ্র,এছাড়া শ্রমজীবী মানূষের পক্ষে কাজের পাশাপাশি সন্তানের দেখভালও কষ্টসাধ্য। ফলে তারা সন্তানের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানকেই বেছে নিচ্ছেন।

============

জাপানে ‘রুই’ শব্দের অর্থ হচ্ছে— কান্না। ‘কাতসু’ মানে এমন কাজ যাতে নিজের উন্নতি হয়। একসঙ্গে 'রুইকাতসু' মানে— নিজের উন্নতির স্বার্থে কাঁদা। জাপানে কান্নার মাধ্যমে ভালো থাকার যে পদ্ধতি তাকে 'রুইকাতসু' বলে।যার মূল মন্ত্র হচ্ছে— কাঁদো, কাঁদা অভ্যাস কর।

মনোবিদরা বলছেন, কান্না মানুষের শরীরের চাপমুক্তি করার নিজস্ব পদ্ধতি। চোখের পানিতে থাকে কর্টিসল নামের হরমোন, যা স্ট্রেস হরমোন নামে পরিচিত। কান্নার মাধ্যমে স্ট্রেস হরমোন শরীর থেকে বেরিয়ে গেলে মানুষ মানসিকভাবে ভালো থাকে।

রুইকাতসুর কর্মশালা প্রায়ই হয় জাপানে। শান্ত নিরিবিলি কোনো জায়গায় ঘরের মধ্যে নিভু নিভু আলোয় হাতে রুমাল নিয়ে অনেক মানুষ একসঙ্গে কেঁদে আকুল হয়। কোনো কষ্ট নেই, তবুও শুধু শুধু কাঁদা, শরীরের রিলাক্সের জন্য। শিশু থেকে বৃদ্ধ যে-কাউকে কাদতে দেখলে তারা খুশি হয়, ভাবে লোকটি শরীরের চাপ থেকে মুক্তি চাইছে।

==================


সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার তরুণ প্রজন্ম বুঁদ হয়ে আছে আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন গ্যাজেটের মধ্যে। তারা ভিডিও গেম কিংবা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাল্লায় পড়ে সারাদিন হাহা-হি হি- তে আসক্ত হয়ে আছে । সোশ্যাল মিডিয়ার প্ল্যাটফর্মগুলি আমাদের তরুণ প্রজন্মের মনোযোগ আর মূল্যবান সময় কেড়ে নিচ্ছে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে, তাদের ব্যবসার জন্য। এই ফাদে পড়ে আমাদের তরুণ প্রজন্ম নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করে, কিন্তু তারা বেকার অবস্থা হতে উত্তরণের নূতন কোনো প্রচেষ্টা বা কোয়ালিটি টাইম দিতে ইচ্ছুক নয়।

সত্যি কথা বলতে আমাদের এই তরুণ প্রজন্ম সূর্যোদয় দেখে না, এরা দুপুর পর্যন্ত বিছানায় থাকে আর গভীর রাত পর্যন্ত মোবাইলে থাকে। এরা ফার্স্টফুডে আসক্ত। এরা আউটডোর খেলা পছন্দ করে না। ইনডোরে স্বস্তি পায়। এক অস্থির জেনারেশন তৈরি করছি আমরা। এদের স্পেসিফিক কোনো লক্ষ্য নাই। আদর্শিক কোনো এমবিশান নাই। এরা বই পড়ে না,এরা হাঁটতে পছন্দ করে না। আধা কিলোমিটার গন্তব্যে যেতে আধা ঘন্টা রিক্সার জন্য অপেক্ষা করে। এরা অনর্থক তর্ক জুড়ে দেয়। এদের নেই বিনয়, নেই কৃতজ্ঞতাবোধ। এদের উদ্ধত আচরণে আপনি ভয়ে কুকড়ে যাবেন।

আমাদের তরুণ প্রজন্মের বুঁদ হয়ে থাকার আর একটা বিষয় হচ্ছে ক্রিকেট খেলা। ইউরোপে ইংল্যান্ড বাদে বাকি দেশগুলোর মানুষ ক্রিকেট কী, সেটা জানেই না। যে নেদারল্যান্ডস দল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেট খেলে, তাদের দেশের নারীরা এক টিভি শোতে বলছিলেন, ক্রিকেট একধরনের পোকা। আমেরিকায় বেস বল, ভলিবল—এসবের দাপট দেখার মত। বেশিরভাগ আমেরিকান ক্রিকেট-নামে নামে একটি খেলা আছে, তা জানে না। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, আমাদের দেশে জ্ঞানবিজ্ঞান, আর্ট-কালচার সব ছাপিয়ে এই ক্রিকেটাররা হয়ে গেলেন জাতীয় হিরো। এদের ফলোয়ার অনুগামীর সংখ্যা লাখে লাখে। একসময় ফুটবল ছিল আমাদের দেশে আকাশ সমান জনপ্রিয় খেলা। ধীরে ধীরে সে খেলা আমাদের দেশে ইতিহাসে ঠাঁই নিতে চলেছে। সত্যি কথা বলতে কি, সনাতন সমাজব্যবস্থা হতে আমরা আধুনিক সমাজব্যবস্থায় পদার্পণ করেছি বটে; কিন্তু মডার্ন সোসাইটির রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন আমরা ফলো করি না।

==============


স্বনামধন্য ফরাসি পণ্ডিত মন্টেস্কু তার ‘দ্য স্পিরিট অব দ্য লজ’ গ্রন্থে বলেছেন—‘ প্রত্যেক ব্যক্তি, যার হাতে ক্ষমতা আছে, তিনি তা সুকৌশলে অপব্যবহার করে চলেন এবং তাকে রুখে না দেয়া পর্যন্ত তিনি তার কর্তৃত্বপরায়ণতা বজায় রেখে চলেন।’

মানবসমাজে ছয়টি স্তর আছে।এই ছয়টি স্তর হচ্ছে—(১) অতি উচ্চবিত্ত বা উপচে পড়া ধন-সম্পদের মালিক; (২) উচ্চবিত্ত (৩) উচ্চ মধ্যবিত্ত বা প্রয়োজনীয় ধন-সম্পদের মালিক; (৪) মধ্যবিত্ত বা চাহিদার তুলনায় কিছু কম সম্পদের মলিক; (৫) নিম্ন-মধ্যবিত্ত বা কোনো রকম জীবন ধারণ করার মতো সম্পদের মালিক; (৬) নিম্নবিত্ত বা চাহিদার তুলনায়  অনেক কম আয় থাকা   মানবেতর জীবন যাপনকারী মানুষ। আমাদের দেশে অতি উচ্চবিত্ত ২ ভাগ, উচ্চবিত্ত ১০ ভাগ, উচ্চমধ্যবিত্ত ২০ ভাগ, মধ্যবিত্ত ৩০ ভাগ, নিম্নমধ্যবিত্ত ৩৫ ভাগ, নিম্নবিত্ত ১৩ ভাগ।

পৃথিবীতে বৈধ পথে সচ্ছল হওয়া যায়, কিন্তু বিপুল পরিমাণে অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়া কখনো সম্ভব নয়। ধনীরা  অধিকাংশ মানুষকে ঠকিয়ে কখনো কখনো বোকা বানিয়ে, ধোঁকা দিয়ে সম্পদের মালিক হয়েছেন। নিয়মানুযায়ী ১৫ শতাংশের বেশি মুনাফা করা অন্যায় বা অবৈধ। কিন্তু বিশ্বের ধনী ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে ৫০০ থেকে ১০০ শতাংশ মুনাফা করে থাকেন। এ ব্যাপারে তাদের কেউ কিছু বলতে পারবে না। কারণ তারা রাষ্ট্র ও সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করে তারা রাতারাতি শতকোটি টাকার মালিক বনে যান।  পৃথিবীতে শান্তিপ্রিয় ভাল মানুষের সংখ্যা বেশি হলেও এরা ঐক্যবদ্ধ নয়। এদের ঐক্যবদ্ধ করতে যারা নেতৃত্ব দেয়, সেই নেতারা ছলে-বলে-কৌশলে একবার ধন কামানোর সুযোগ পেলে তারা নিজেদের আখের ঘুছিয়ে সরে পড়ে। এভাবে এক শ্রেণির কাছে উপচে পড়া ধন-সম্পদ যাচ্ছে, আরেক শ্রেণি আছে ঠিকমতো পেট পুরে খেতেও পাচ্ছে না। এটা কেবল আমাদের বাংলাদেশের চিত্র নয়, পৃথিবীর অনেক দেশের চিত্র।

পৃথিবীতে একেক দেশের সরকার ও শাসনব্যবস্থা একেক রকম। মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে রাজতন্ত্র বংশানুক্রমিকভাবে চালু থাকলেও সাধারণ মানুষ অধিকারবঞ্চিত নয়। রাষ্ট্রীয় সম্পদের ভাগিদার সবাই। আবার যুক্তরাজ্য ওয়েস্টমিনস্টার পদ্ধতি দ্বারা চালিত একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্র ও সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশ। এখানে দরিদ্রের সংখ্যা নেই বললেই চলে। সুতরাং ধনী-দরিদ্রের বিষয়টি আপেক্ষিক।  কোন জাতি যদি মনে করে দেশে দরিদ্র থাকবে না, তবে সেটা হতে বাধ্য। তবে জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে হয়। একজন মানুষ কী পরিমাণ অর্থ-সম্পদের মালিক হতে পারবে, তারও একটি সীমারেখা বিধি থাকা  দরকার হয়।

মহাভারতে বর্ণিত অস্ত্রশিক্ষাগুরু দ্রোণাচার্যের প্রিয়পুত্র অশ্বত্থামা ছোটবেলায় ধনীপুত্রদের দেখাদেখি দুধ খাইতে চাইতেন; কিন্তু দরিদ্র দ্রোণাচার্যের পক্ষে সম্ভব ছিল না; কিন্তু পুত্রের আশা মিটাতে তিনি দুগ্ধের পরিবর্তে চালবাটা পিটুলি গোলা দিয়ে পুত্রকে বলতেন—ইহাই দুধ। তার গরিব পুত্রও চালবাটা খেয়েই ‘দুধ খাচ্ছি’ ভেবে আনন্দ করতেন এবং নিজেকে ধনীপুত্রদের সমতুল্য মনে করতেন। আমরাও ধনী হচ্ছি বলে জিকির তোলে আত্মতৃপ্তি নিয়ে এভাবেই বেঁচে আছি।

=====================


মুসলিম শাসকদের স্বর্ণযুগে নবম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে মধ্য এশিয়া, ইরান, স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে ও উত্তর আফ্রিকার কিছু দেশে জ্ঞানচর্চার জোয়ার এসেছিল। এরই সূত্র ধরে ইউরোপের রেনেসাসে তা পরিপূর্ণতা পায়। এ সময় জ্ঞানচর্চার সূত্র ধরেই পশ্চিমে উচ্চতর গবেষণা ও পঠনপাঠনের সহায়ক নানা প্রতিষ্ঠান যেমন গড়ে উঠেছিল, তেমনি আবিষ্কৃত হয়েছিল জ্ঞানচর্চার উপযোগী সহায়ক অনেক যন্ত্রপাতি। আড়াই শ বছর আগে ইংরেজদের মাধ্যমে রেনেসাঁ-পরবর্তী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে আমাদের সংযোগ ঘটতে শুরু করে। 

বর্তমানে বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকে বরাবরই ভালো করছে স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলো। এবারো শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে সুইজারল্যান্ড। দ্বিতীয় অবস্থানে সুইডেন। তৃতীয় অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম পাঁচে আছে স্ক্যান্ডিনেভীয় আরো দুটি দেশ: ফিনল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো করেছে সিঙ্গাপুর। দেশটির বৈশ্বিক অবস্থান ষষ্ঠ। ভালো অবস্থানে আছে ইসরায়েল, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও চীন। 

মূলত প্রশিক্ষণ ও গবেষণার পর্যাপ্ত সুবিধা, মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা দেশগুলোকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে।বৈশ্বিক দৃশ্যপটে সবকিছু দ্রুত বদলে যাচ্ছে, এই দেশগুলো দ্রুততার সাথে প্রবেশ করছে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে। দুর্বল মানবসম্পদ দিয়ে আমরা ওই প্রতিযোগিতায় পেরে উঠব না। কাজেই মানবসম্পদের উত্পাদনশীলতা ও দক্ষতা অনেক বাড়াতে হবে।

ইউনেস্কোর মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষা খাতে ন্যূনতম জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে  বাংলাদেশ ব্যয় করে ২ শতাংশেরও কম। এমনকি তা আফ্রিকার দক্ষিণ সুদান, নাইজেরিয়া ও সোমালিয়ার মতো দারিদ্র্য ও সংকটপীড়িত দেশের চেয়েও কম। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের মাধ্যমে উন্নত ও শক্তিশালী রাষ্ট্র কিভাবে গড়ে তোলা যায় তার কোনো জাতীয় নীতিমালা এখন পর্যন্ত আমাদের তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

 

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রক্রিয়া প্রকৃত সমাজসংস্কারকের অভাবে গড়ে উঠছে না। এর প্রধান কারণ হলো, মানুষ এখন সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার চেয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থকে গুরুত্ব দিচ্ছে।


==============


সমাজে মাছি চরিত্রের কিছু মানুষ আছে, যাদের দিনের শুরুটাই হয় অন্যের খারাপ সমালোচনার মধ্য দিয়ে আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তা চলতে থাকে। মাছি যেমন ক্ষত, ময়লা, বিষ্ঠায় স্বাদ খোঁজে—এসব লোক অনুরূপ অন্যের দোষ খোঁজে। আসলে এরা অন্যের সমৃদ্ধি দেখে হিংসার দাবানলে জ্বলতে থাকে। এসব লোকের পাহাড়সম দোষ থাকা সত্ত্বেও এরা নিজের দোষ দেখে না, অন্যের দোষ জনে জনে বলে বেড়ায় এবং অন্যের শুভ যাত্রায় অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি করতে সদা ব্যস্ত থাকে। বুদ্ধিমান ব্যক্তি কখনো অন্যের দোষ খুঁজে না, তারা সর্বদা নিজেকে সংশোধনের কাজে ব্যস্ত থাকে। তাই মনের মধ্যে সদা সাহস এবং সুন্দর চিন্তার আবাদ করতে হবে। সর্বদা ইতিবাচক চিন্তার  আবাদ করিতে পারাটা বিশাল এক শক্তি। 

========


চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মতো অমানবিক জমিদারী ব্যবস্থায় বাংলার কৃষক ছিল আসহায়। কেননা হাল টেনে, ঘাম ঝরিয়ে ফসল ফলানো কৃষকদেরই ওপর চাপানো হতো অযৌক্তিক হারে খাজনা। সেই খাজনা দিতে না পারলে ছিল জমি হারানোর ভয়। ফলে জমিদারি প্রথা বন্ধ করার লক্ষ্যে শেরেবাংলার নেতৃত্বে বাংলায় শক্তিশালী প্রজা আন্দোলন গড়ে ওঠে। এ প্রেক্ষাপটে ১৯২৯ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘নিখিল বঙ্গ প্রজা সমিতি’, যা পরবর্তী সময়ে ১৯৩৬ সালে ‘কৃষক প্রজা পার্টি’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। 

১৯৩৭ সালে ভারতে থমবারের মতো নির্বাচনের আয়োজন হয়। বিপুল জনসমর্থনে অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন এ কে ফজলুল হক। দায়িত্ব নেয়ার পর  জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য ১৯৩৮ সালে তিনি ফ্লাউট কমিশন গঠন করেন। জমিদাররা যাতে বিনা কারণে প্রজাকে উচ্ছেদ করতে না পারে, সেই জন্য তিনি প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধন করে জমিদারের অধিকার হ্রাস এবং কৃষকদের অধিকার বৃদ্ধি করেন। এটি ছিল জমিদার শাসনের বিরুদ্ধে এক সাহসী পদক্ষেপ।

১৯৩৮ সালে তিনি গঠন করেন ঋণ সালিশি বোর্ড, যা ছিল কৃষকের ঋণ সমস্যা সমাধানে আদালতের বিকল্প একটি মানবিক পথ।  তার প্রত্যক্ষ উদ্যোগে ১৯৩৮ সালে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে প্রতিষ্ঠিত হয় বেঙ্গল এগ্রিকালচার ইনস্টিটিউট, যা ছিল পূর্ব বাংলার প্রথম কৃষি শিক্ষার উচ্চতর প্রতিষ্ঠান। এ ইনস্টিটিউটই পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করে,অন্যদিকে ১৯৫৪ সালে তিনি জমির সর্বোচ্চ মালিকানা সীমা নির্ধারণ, খাজনা হ্রাস, বর্গাদারদের সুরক্ষা এবং কৃষকদের জন্য ঋণ সুবিধা নিশ্চিতকরণের মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ সংস্কার কর্মসূচি  জমিদার প্রথাকে দুর্বল করে কৃষকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এক নতুন দিক উন্মোচন করে।

=====================================


186 টি দেশ রয়েছে এখানে অথচ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ আছে মাত্র ১ টি। হ্যাঁ, ঠিকই দেখেছেন— খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ মাত্র একটি। আর এই দেশের নাম গায়ানা। আমেরিকার এই ছোট্ট দেশটি একমাত্র এমন দেশ, যেখানে সব ধরনের খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনের মাধ্যমে নিজ দেশের জনগণের চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।সবচেয়ে সংকটাপন্ন অবস্থানে রয়েছে আফগানিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরাক, ম্যাকাও, কাতার ও ইয়েমেন—যাদের একটিও খাদ্য উপাদানে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় বলে গবেষণায় জানানো হয়েছে। 

============

বাংলাদেশের অনেকের কোন কাজ নাই । দেখে থাকবেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীরা গিয়ে ফিরে আসে না , কারণ দেশে কাজের ক্ষেত্র খুব সীমিত । ভারতেও একই কারণে ঢুকে যায় । ভারত সরকার তাদের জনগণকে রেশন দেয়, কোন বাংলাদেশী ভারতের আধার কার্ডসহ অন্যান্য কাগজপত্র করতে পারলে ঐ রেশন পেতে পারে - মানে বসে বসে খাওয়া !

ভারতে ঢুকার আরেকটা কারণ হলো, ভারতের পাসপোর্ট পেলে ওটা দিয়ে ইউরোপ আমেরিকারসহ অন‍্যান‍্য দেশের ভিসা পাওয়া সহজ হয়।

==============

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কিছু ব্যাচের তথ্য বিশ্লেষণ করলে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, এক সময়ের সীমিত যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও কত বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। একটি পত্রিকার তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালের ব্যাচের ৩১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ জন এখন বিদেশে অবস্থান করছেন, ১৯৯৪ সালের ব্যাচের ৪৫ জনের মধ্যে ৩৫ জন বিদেশে চলে গেছেন এবং ১৯৯৮ সালের ব্যাচের ৬৫ জনের মধ্যে ৩০ জন বিদেশে গেছেন 

=========


শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনকালে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জিত হয়েছিল সেটা ছিল ঋণ করে ঘি খাওয়ার ক্ল্যাসিক উদাহরণ, ঋণের সাগরে জাতিকে ডুবিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারকে কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন। শেখ হাসিনা স্বৈরশাসনামলে তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, দলীয় নেতাকর্মী, কতিপয় অলিগার্ক-ব্যবসায়ী এবং পুঁজি-লুটেরাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সরকারি খাতের প্রকল্প থেকে যে লাখ লাখ কোটি টাকা লুণ্ঠনের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন তার ভয়াবহ কাহিনী তার পতনের পর উদ্ঘাটন হতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মোট ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অথচ ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার দিনে বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল মাত্র ২ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। 


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘ওয়েলথ এক্স’-এর প্রতিবেদন ওয়ার্ল্ড আল্ট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট ২০১৮-এর গবেষণা মোতাবেক ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ এ পাঁচ বছরে অতি ধনী বা ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির দিক দিয়ে বিশ্বের বড় অর্থনীতির দেশগুলোকে পেছনে ফেলে সারা বিশ্বে এক নম্বর স্থানটি দখল করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছিল ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ হারে।


যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ইতিহাসের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ১৮৭০ থেকে ১৯১৪ সালের পুঁজিবাদী বিকাশে ‘রবার ব্যারন’দের ভূমিকার বর্ণনা পাওয়া যাবে, যার সঙ্গে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-উত্তর ৫৪ বছরের রাঘববোয়াল পুঁজি লুটেরাদের অবিশ্বাস্য ধনসম্পদ আহরণের পদ্ধতির আশ্চর্যজনক মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। কিন্তু ধনকুবের হয়ে যাওয়ার পর তাদের অনেকেই শেষ জীবনে ধনসম্পদ বিভিন্ন জনহিতকর কাজে দান করে গেছেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে গেছেন, ট্রাস্ট স্থাপন করে ধনসম্পদ দাতব্য কর্মে ব্যয়ের ব্যবস্থা করে গেছেন। 

১৯৭০ সালের পাকিস্তানে ২২টি কোটিপতি পরিবারের কথা বলা হতো, যারা রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় পাকিস্তানের শিল্প-বাণিজ্যে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। ওই ২২ পরিবারের মধ্যে দুটো পরিবার ছিল পূর্ব পাকিস্তানের, তা-ও একটি ছিল অবাঙালি। ২০২৫ সালে ১ কোটি টাকার বেশি অর্থ অ্যাকাউন্টে থাকা ব্যাংকের আমানতকারীর সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার অতিক্রম করেছে। 

============

আমাদের দেশে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে গণহারে মাস্টার্স করার প্রবণতায় লাগাম দেয়া দরকার। চার বছরের অনার্সকে টার্মিনাল ডিগ্রি হিসেবে সর্বত্র গ্রহণ করা হয়। তাই সবার মাস্টার্স করা খুব কি দরকার? বরং রিসার্চ বেজড মাস্টার্স ডিগ্রির প্রসার জরুরি। প্রতি বছর উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে রিসার্চ প্রপোজাল আহ্বান করা যেতে পারে। প্রত্যেক ডিপার্টমেন্টে ১০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে মাসে ৫০ হাজার টাকা করে ফেলোশিপ দিলে মেধাবীরা চাকরির চেয়ে গবেষণাকে অগ্রাধিকার দেবে।সেটা সম্ভব হলে আমাদের তরুণরাই নিজেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ছুটতে শুরু করবে। বর্তমান সিস্টেমে ক্লান্ত ও ঝিমিয়ে পড়া ছেলে-মেয়েরা বিদ্যমান ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করতে রাত-দিন একাকার করে পরিশ্রম করবে।


 বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের হার অল্পশিক্ষিত বেকারের তুলনায় বেশি, যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বাস্তবমুখিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। অন্যদিকে প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও কারিগরি শিক্ষার অভাবে বিভিন্ন শিল্প, বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং সেবা খাতগুলো কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারছে না। ফলে একদিকে শিক্ষিত বেকারত্ব বাড়ছে, অন্যদিকে দক্ষ জনশক্তির অভাবে উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হচ্ছে। এ বাস্তবতায় পরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে না তুললে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগাতে পারবে না। তাই জীবনমুখী সময়োপযোগী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। 

-------------------------

আমাদের দেশে আমলারা তাদের ৫০-৬০ বছর আগের ধ্যানধারণা থেকে একের পর এক ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করেন, মানুষ পার হয় তার নিচে দিয়ে। নিউইয়র্ক ও টোকিওর মতো ব্যস্ত শহরের কোথাও ফুট ওভারব্রিজ নেই। তারা ৫০-৬০ বছর আগেই ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ বাদ দিয়েছে।  বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ডিজিটালি সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পথচারীরা রাস্তা পার হয়হাতিরঝিলে ট্রাফিক পুলিশ ছাড়াই প্রত্যেকে নিয়ম মেনে গাড়ি চালাচ্ছে। এটি খোদ ঢাকার বুকেই। তাহলে অন্য জায়গায় কেন সেটা সম্ভব হচ্ছে না?বাংলাদেশে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নৌবন্দর হয়, টার্মিনাল হয় এবং ড্রেজিংয়ের কাজ হয়। কিন্তু সড়কপথের সঙ্গে সংযোগ করা হয় না নৌবন্দরের। ফলে ভোরে/রাতে যাত্রীরা টার্মিনালে পৌঁছার পর সিএনজি দিয়ে অধিক ব্যয়ে যাতায়াত করতে হয়। কারণ সকালে মানুষের চলাচল কম থাকায় বা বাস না থাকায় তখন মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ে রিকশা বা সিএনজিচালকদের কাছে। আমাদের দেশে পেশাদার লোকের অভাব। নৌপথ তো আলাদা কিছু নয় এবং নৌপথের দুই প্রান্তে সংযোগ সড়ক সরকারকেই দিতে হবে। এ ধরনের সুবিধা না থাকায় রেল বা নৌ টার্মিনালে যাওয়া-আসার পথে যাত্রীদের সময়, ব্যয় ও বিড়ম্বনা বেড়ে যায়।


একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরকার থাকলে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের প্রবণতা কমে যাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ যত কমানো যাবে, স্থানীয় সরকার ততই তার নিজস্ব ক্ষমতা ও দায়িত্ববোধের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। ফলে স্থানীয় সরকারের বাজেট, আয়-ব্যয়ের হিসাব এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতার কারণে জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থের সংঘাত হ্রাস পাবে। 


স্থানীয় সরকার যদি প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তবে জাতীয় রাজনীতি অলাভজনক একটি ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হবে, যার ফলে ক্ষমতা দখলের লড়াইও কমে আসবে এবং ক্ষমতা হস্তান্তর হবে অনেকটাই শান্তিপূর্ণভাবে। স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হলে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠতে পারবে না

যে সেবা ইউনিয়ন পর্যায়ে দেয়া সম্ভব, তার জন্য যেন উপজেলায় যেতে না হয় এবং যে সেবা উপজেলা পর্যায়ে দেয়া সম্ভব, তার জন্য যেন জেলা পর্যায়ে যেতে না হয়। 


বাংলাদেশের বৈদেশিক শ্রমবাজারে যারা কাজ করতে যান, তাদের সিংহভাগই গ্রামীণ অঞ্চল থেকে আসেন। স্থানীয় সরকারকে তাই প্রতিটি অঞ্চলের কর্মসংস্থানের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর পরিকল্পনা নিতে হবে।  নির্বাচনে দলীয় পরিচয় ও প্রতীক ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে, যাতে জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে দলীয় স্বার্থের পরিবর্তে জনস্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়া যায়।

স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হওয়া উচিত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনের পদ্ধতিতে। সরাসরি জনপ্রতিনিধিদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরিবর্তে পরিষদের সদস্যদের রোটেশন বা ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেয়া হলে স্থানীয় পর্যায়ে একনায়কতন্ত্রের ঝুঁকি হ্রাস পাবে।

=================


ফিলিপাইন দক্ষ কর্মী গঠনে সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, বিশেষত নার্সিং, কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে। ফলে ফিলিপিনোরা উন্নত বিশ্বে উচ্চ বেতনের চাকরি পেয়ে তাদের দেশে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফিনল্যান্ডসহ অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোয় শিক্ষাজীবনের শেষ পর্যায়ে বাধ্যতামূলক শিক্ষানবিশি ব্যবস্থা চালু রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে এবং কর্মসংস্থানের জন্য আরো প্রতিযোগিতাপূর্ণ করে তোলে। 


===========================

ক্যাশলেস সিস্টেম চালু করা গেলে লেনদেন শনাক্ত করা যাবে। একজন ব্যবসায়ী মূসকের সীমা অতিক্রম করলে সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করবে এবং নিকটস্থ মূসক অফিসকে নোটিফিকেশন পাঠাবে। আমরা প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে দেখি অমুক ব্যক্তি ৩০০ একর জমি, ১০টি ফ্ল্যাট, অসংখ্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা এবং অন্যান্য সম্পদ আছে যা কর কর্মকর্তার কাছে দাখিলকৃত হিসাবে অপ্রদর্শিত রেখেছেন। আমাদের কর ব্যবস্থার বড় দুর্বলতা এই ইন্টারঅপারেবিলিটির অভাব।

বর্তমানে গাড়ি এবং সঞ্চয়পত্র একজন করদাতা লুকাতে পারেন না যেহেতু এগুলো অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) দিয়ে সংযুক্ত। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের বাস্তবতা মাথায় রেখে তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব।

===========


চীনের মতো দেশগুলোয় নারী শ্রমশক্তির ৬০ শতাংশ এবং যেখানে ভারতে মাত্র ২৫ শতাংশ নারী শ্রমশক্তি। বাংলাদেশে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের হার ৪২ দশমিক ৬৮ শতাংশ। ২০২৪ সালের জানুয়ারি-জুনে ৬১টি ব‍্যাংকের জেন্ডার ইক‍্যুয়ালিটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ব‍্যাংকিং খাতে কর্মরত ২ লাখ ৭ হাজার ৯৬৬ জন জনবলের মধ‍্যে মাত্র ৩৪ হাজার ৩৬৮ জন বা ১৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ নারী। সিইও ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিনের সেরা শিক্ষা ব্যবস্থাপনার দেশের তালিকায় ৯৩টি দেশের মধ্যে ভারত ও মিয়ানমার থাকলেও বাংলাদেশ নেই।  শত শত বিশ্ববিদ্যালয় এবং হাজার হাজার স্নাতক থাকা সত্ত্বেও কর্মক্ষেত্রে দক্ষ ও যোগ্য লোকের অভাব। নানা পদের জন্য অনেক সময় আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোয় লোক খুঁজতে হয়। সুতরাং দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা, মনোভাব গঠন এবং একটি সুস্থ শিক্ষা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যক্রমকে ঢেলে সাজানো দরকার। 

==============

সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি ও অনিয়ম কমাতে   ইজিপি পদ্ধতি চালু হয় ২০১১ সালে। ইজিপি পদ্ধতি চালু হলেও অনিয়ম-দুর্নীতি কমেনি বরং আমলাতন্ত্র, ঠিকাদার ও রাজনৈতিক শক্তির ত্রিপক্ষীয় আঁতাতে সরকারি ক্রয়ের বাজার দখল প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাতিষ্ঠানিক ক্রয় খাতের দুর্নীতি-অনিয়মের জন্য মোট ক্রয় বাজেটের ২৭ শতাংশ পর্যন্ত অপচয় হয়। বাস্তবে সরকারি কেনাকাটায় আমলা, ঠিকাদার ও রাজনৈতিক শক্তির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। সরকারি কেনাকাটায় ই-টেন্ডারেও দুর্নীতি হচ্ছে, ঘুরেফিরে কাজ পাচ্ছে গুটিকয়েক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। টেন্ডারের প্রাক্কলিত মূল্য ফাঁসের মাধ্যমে এ সুযোগ করে দিচ্ছে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গবেষণা বলছে, ২০১২ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ৫ লাখ কোটি টাকারও বেশি সরকারি ক্রয় খাতে ব্যয় করেছে শীর্ষ ১০টি মন্ত্রণালয়। এর সিংহভাগ, ৬১ শতাংশ কার্যাদেশ পেয়েছে শীর্ষ ৫ শতাংশ ঠিকাদার। মন্ত্রণালয় বা সরকারি সংস্থার নেতৃত্বের পরিবর্তন হলে শীর্ষ কার্যাদেশগুলো হাতবদল হয়েছে, কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থেকেছে, যা ক্রয় খাতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের অকাট্য প্রমাণ। 

===========

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোয় বায়ুদূষণের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা সাধারণ জনগণের শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত নানা রোগসহ হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ক্যান্সারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। 

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আইকিউ এয়ারের তথ্যমতে, গত ফেব্রুয়ারির অনেক দিনই দূষিত নগরীর তালিকায় ঢাকা ছিল ১ নম্বরে। বায়ুদূষণে ঢাকা তার শীর্ষ পাঁচে অবস্থান প্রায় প্রতিদিনই ধরে রাখছে। শীতকালে বৃষ্টি না থাকার কারণে বাংলাদেশে বায়ুদূষণ সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছে যায়। 

এক গবেষণায় দেখা যায়, শহরাঞ্চলে বায়ুদূষণের ৫০ শতাংশেরও বেশি ঘটে শিল্প-কারখানা থেকে। গবেষণা অনুযায়ী, এ শহরের আশপাশে প্রায় ১ হাজার ২০০টি ইটভাটা রয়েছে। আর কলকারখানা তো জালের মতো ছড়িয়ে আছে ঢাকা শহরে। বাংলাদেশে প্রচলিত পুরনো প্রযুক্তির ইটভাটা ও বিভিন্ন কলকারখানা বিপুল পরিমাণ ধোঁয়া ও ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত করে। যা বাতাসকে দূষিত করে। এছাড়া ফিটনেসবিহীন যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া যেমন বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বায়ুদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। তেমনি নির্মাণকাজ থেকে প্রচুর ধূলিকণা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।  

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, শীতকালে ঢাকায় প্রতিদিন ৫০০ টন ধুলা সড়কে জমে এবং দুই হাজার টন বাতাসে ওড়ে। পৃথিবীর প্রায় ৮৯টি শহর প্রায় সব দিনই তাদের বায়ুমান ঠিক রাখতে পারছে। পৃথিবীর সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো প্রায় সব সময় শীর্ষে অবস্থান করছে। বায়ুদূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের গবেষণা অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ঢাকার মানুষ মাত্র ৪৯ দিন নিরাপদ বাতাসে শ্বাস নিতে পেরেছে। গত বছরের নভেম্বরে ঢাকার মানুষ একদিনও স্বাস্থ্যকর বাতাসে শ্বাস নিতে পারেনি। বায়ুমণ্ডলের অতিক্ষুদ্র ধূলিকণা সহজেই মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে এবং তা নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করে। অতিরিক্ত বায়ুদূষণের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ছে মানুষের প্রজননক্ষমতায়। এতে পুরুষের শুক্রাণু তৈরিতে ব্যাঘাত ঘটছে, শুক্রাণুর মান কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে মেয়েদের ডিম্বাণু কমে যাচ্ছে কিংবা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে গর্ভপাত, জন্মগত ত্রুটি ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এছাড়া বাতাসে সিসার পরিমাণ বেশি হলে তা মস্তিষ্কের ক্ষতি সাধন করে। শিশুদের বুদ্ধিমত্তা লোপ পায় এর ফলে। 

সমাধান হল-ব্যক্তিগত পর্যায়ে মাস্ক ব্যবহার, গাছ লাগানো ও দূষণ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।  বড় সড়কে কমপক্ষে দুবার পানি ছিটানোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের (এসওজিএ) ২০২৪ সালের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী,শুধু ২০২১ সালেই বাংলাদেশে ২ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি মৃত্যুর কারণ ছিল এই বায়ুদূষণ, যা জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশে বায়ুদূষণের কারণে ১৯ হাজারেরও বেশি পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যু হয়।

-------------

গরমকালে সবজির দাম চড়া থাকে। তখন ভোক্তারা থাকেন হতাশার মধ্যে। আবার শীতকালে ভরা মৌসুমে ভোক্তারা স্বস্তিতে থাকেন। অস্বস্তিতে থাকেন উৎপাদনকারী কৃষক। বাংলাদেশের চাষকৃত সবজির সংখ্যা প্রায় ৯৫। প্রধান সবজির সংখ্যা ৩০-৩৫টি। শীতকালে প্রায় ৬০ শতাংশ সবজির উৎপাদন হয়। বাকি ৪০ শতাংশ সবজি হয় গ্রীষ্মকালে। পৃথিবীর ৩৫টি দেশে বর্তমানে বাংলাদেশের ফল ও সবজি রফতানি হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় শাকসবজির উৎপাদন ব্যয়বহুল। সে তুলনায় বাংলাদেশ থেকে সবজি আমদানি সুবিধাজনক। এক্ষেত্রে কোল্ডস্টোরেজ এবং ‘শীতল চেইন পরিবহনের সুবিধা’ বৃদ্ধি করে উৎপাদনকারী থেকে ভোক্তা পর্যন্ত নিরাপদ সবজি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, কৃষক কীভাবে বাজারে সংযুক্ত হবে, যেখানে ভোক্তা যায়? এখানে কৃষক সমবায় পদ্ধতিতে কাজ করতে পারেন। আগে কৃষকদের সমবায় পদ্ধতি ছিল। সেখানে ভোক্তার কাছে কৃষকের উৎপাদিত পণ্য পৌঁছে দেয়া সহজ হতো। কিন্তু কোল্ডস্টোরেজ, করপোরেট এবং অন্যান্য প্রযুক্তিগর কারণে সে সমবায় পদ্ধতিএখন নেই। মন্ত্রণালয় সেক্ষেত্রে নজর দিতে পারে। আবারো ‘কৃষক সমবায়’ ভোক্তার কাছে উপযুক্ত মূল্যে তার পণ্য পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

 আমরা যদি উৎসে দেখি, অনেক সময় কৃষকরা ২ টাকাতেও তাদের পণ্য বিক্রি করেন, কখনো-বা রাস্তায় ফেলে দেন। কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন কিনা আরেকটা উদাহরণ দিতে পারি, একজন কৃষক ৫০ হাজার টাকায় গরু কেনেন এবং কোরবানির সময় ১ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। অনেকেই মনে করেন তিনি ৫০ হাজার টাকা লাভ করেছেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি ৪০ হাজার টাকা গরুর খাবার ও অন্যান্য খরচে ব্যয় করেছেন। ফলে তার প্রকৃত লাভ মাত্র ১০ হাজার টাকা, যা আসলে তার শ্রমের মূল্য। 

গবেষণায় দেখা গেছে, মধ্যবিত্তের ৮ শতাংশ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৩৬ শতাংশ পুষ্টিহীনতার কারণে খর্বাকায় হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কৃষি খাতে উৎপাদন খরচ কমানো গেলে বাজারে ন্যায্যমূল্য বজায় রাখা সম্ভব। ধান উৎপাদনে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য ব্যয় শুধু ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণে ব্যয় হয়, যা আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে কমানো যেতে পারে। বাজারে কিছু অংশের নিয়ন্ত্রণ একশ্রেণীর ব্যবসায়ীর হাতে রয়ে গেছে, যারা মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে অধিক মুনাফা নিচ্ছে। 

===================


বাংলাদেশের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা সীমিতসংখ্যক আন্তর্জাতিক বাজার ও সামান্য কিছু পণ্যের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর হয়ে রফতানি কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ২০০ পণ্য বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। এর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি পণ্য থেকে আসে মোট রফতানি আয়ের ৯০ শতাংশেরও বেশি। 

যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় হয়েছে মাত্র ৪৫ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার, সেখানে ভিয়েতনাম রফতানি করেছে ৩৭৪ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় আট গুণ বেশি। অথচ দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি ১০ লাখ, যেখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ৩৬ লাখ। ভিয়েতনামের এ সাফল্যের অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে দক্ষ জনশক্তি, যার ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশে। 

 রফতানি শুধু পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় অন্য কোনো সম্ভাবনাময় খাত অনুসন্ধান করা হয়নি। রফতানি বাড়ানোরও তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। জনসংখ্যাকে কীভাবে জনসম্পদে রূপান্তরিত করা যাবে, সেটিই মুখ্য। কারণ জনগণ দক্ষ না হলে প্রযুক্তি ও অটোমেশনের যুগে সস্তা শ্রম দিয়ে বিশ্বে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। পাশাপাশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

দেশের শিল্প খাত পুরোপুরি ব্যক্তিনির্ভর একটি খাত। এ খাতের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে প্রয়োজন দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও মূলধন। দেশী বিনিয়োগ ও মূলধনের অন্যতম উৎস ব্যাংক ঋণ। কয়েক বছর ধরেই দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহার বাড়িয়েছে। ফলে শিল্প উৎপাদন খাতে ব্যাংক ঋণের চাহিদা কমেছে এবং নতুন শিল্প তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি। বেসরকারি খাত বা শিল্প উৎপাদনের সঙ্গে কর্মসংস্থানের নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। এ খাত যত সম্প্রসারণ হবে ততই কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। বিগত সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের নামে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি করেছে। এ কারণে সরকারের বিপুল অর্থের জোগান দিতে সরকার ব্যাংক খাত থেকে বেশি সুদে ঋণ নিচ্ছে এবং সে সুদের জোগান দিতে নানামুখী কর আরোপ করছে। 

মানুষের করের টাকার যথেচ্ছ অপব্যয়ে এবং প্রকল্পের নামে পকেট ভারী করেছে সরকারঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও অলিগার্ক শ্রেণী। এরপর রয়েছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিতে আইনের দ্রুত প্রয়োগের অভাব, সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও মাত্রাতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ, দুর্বল অবকাঠামো ও গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, জমির অভাব ও ক্রয়ে জটিলতা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় অংকের ঋণ জোগানে সক্ষমতার অভাব এবং স্থানীয়দের সঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের যোগসূত্র ও সমন্বয়ের অভাব। এগুলোর বাইরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও সুশাসনের অভাবও দায়ী।


২০ জানুয়ারি এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য উপদেষ্টাও বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। আমরা ফাঁদে পড়ে গেছি, এখন এখান থেকে বের হতে পারব না। বাণিজ্য উপদেষ্টার বক্তব্য থেকে সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দেশের অর্থনীতি আরো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে অনেক ধরনের সুবিধাপ্রাপ্ত হয়। এক. শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা। দুই. বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার আওতায় বিভিন্ন অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা, প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, নানা ধরনের ছাড়, দীর্ঘ বাস্তবায়ন কাল ইত্যাদি। তিন. আনুষ্ঠানিক উন্নয়ন সহযোগিতা। চার. বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন ও প্রযুক্তিগত সাহায্য। তাছাড়া স্বল্পোন্নত দেশের জন্য জাতিসংঘে চাঁদার পরিমাণ অনেক কম থাকে, সেটা আর থাকবে না। আইএলও ও জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য জাতীয় আয়ের শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ হারে বার্ষিক চাঁদা পরিশোধ করতে হবে।ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারের শুল্ক সুবিধা না থাকলে কেবল পোশাক খাত নয়, সব রফতানি খাত হুমকির মধ্যে পড়বে। তাই প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থাগুলো দ্রুত শুরু করা উচিত। বাংলাদেশের বাণিজ্য সহযোগীদের সঙ্গে এখন থেকেই আলাপ-আলোচনার মধ্যে যাওয়া দরকার। যেমন ২০২৬ সালের পরে আমরা কী কী পণ্য রফতানি করব, তার ওপর শুল্ক কাঠামোটা কী হবে তা ঠিক করতে হবে।  রফতানি পণ্যের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি গুণগত মানও নিশ্চিত করতে হবে।

গত এক বছরে দেশের ১০০ গার্মেন্ট কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আরো ২০০ কারখানা বন্ধ হওয়ার পথে। আমাদের রফতানি গুটিকয়েক পণ্যের ওপর নির্ভরশীল। তৈরি পোশাক ছাড়া পাট, চামড়া ও চা প্রভৃতি পণ্যের রফতানি তেমন উল্লেখজনক নয়। এ মুহূর্তে ব্যবসা পরিচালন ব্যয় হ্রাস করতে না পারলে আমাদের উদ্যোক্তারা সক্ষমতা হারাবেন। তৈরি পোশাক, ওষুধ, চামড়া ও পাদুকা, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, পাট ও পাটপণ্যের মতো শিল্পগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশকে এলডিসি উত্তরণ-পরবর্তী সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্লাস্টিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল, হালাল পণ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রফতানি বৃদ্ধিতে মনোযোগী হতে হবে ।সেই সঙ্গে রফতানিমুখী শিল্পের জন্য স্বল্প সুদে অর্থায়ন এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে একটি সহায়ক বিনিময় হার নির্ধারণ করার ওপর গুরুত্ব দেয়া উচিত।



=============

ভারত রাষ্ট্র যে শুধু বাংলাদেশের ওপরই আধিপত্য তৈরি করতে কাজ করে তা নয়, তারা নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলংকার ওপরও আধিপত্য জারি রাখতে চেষ্টা করে। এ কারণে সেসব দেশের সঙ্গেও ভারতের নানা সমস্যা ও সংকট তৈরি হয়েছে।এগুলো হিন্দু-মুসলমান বা সাম্প্রদায়িক কোনো সমস্যা নয়। এগুলো প্রধানত বৃহৎ পুঁজির আধিপত্যের সমস্যা।  উপমহাদেশে ব্রিটিশ আমলে যেসব পুঁজি বিনিয়োগ করা হয়েছিল তাতে ভারতে একটি পুঁজিপতি শ্রেণী তৈরি হয়, নেহেরুর নেতৃত্বে যে উন্নয়ন নীতিমালা তৈরি হয় তাতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ পুঁজির বিকাশ শুরু হয়। পরের সরকারগুলোর আমলেএ বিকাশে ধারাবাহিকতা ছিল। সেজন্য ভারতে বড় বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠী তৈরি হয়। 

ভারত হলো এমন একটি দেশ যেখানে বিশ্বের দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর বাস, আবার একই সঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে ধণিক শ্রেণীরও বাস.

বৃহৎ পুঁজির যে বিকাশ ভারতে ঘটেছে তার সম্প্রসারণের একটা চাপ আছে । তাদের আরো বেশি বাজার দরকার, কাঁচামাল দরকার। সুতরাং আরো বেশি আধিপত্য দরকার। গত এক দশকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত কিছু চুক্তি করতে সক্ষম হয়েছে যেগুলো বিগত সরকারের শর্তহীনভাবে আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কিছু নয়। শেখ হাসিনার দরকার ছিল নির্বাচন ছাড়া চিরস্থায়ী ক্ষমতা নিশ্চিত করা, সে কারণে তার ভারতের ওপর নির্ভরতা।

======

'অ্যাচিলিসের গোড়ালি' বা Achilles heel নামক প্রবাদবাক্যটি এই চিরন্তন সত্যকেই প্রতীকীরূপে প্রকাশ করে। গ্রিক পুরাণ অনুসারে, বীর অ্যাচিলিস ছিলেন ট্রয় যুদ্ধের এক অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধা। তাহার মা থেটিস তাহাকে অমর করিবার আশায় স্টাইক্স নদীতে চুবাইয়াছিলেন; কিন্তু চুবাইবার সময় যেই হেতু তিনি তাহাকে গোড়ালি ধরিয়া রাখিয়াছিলেন, অতএব সেই স্থানটি অমর হইল না। ইহার পরে ট্রয় যুদ্ধের এক ক্রান্তিলগ্নে অ্যাচিলিসের গোড়ালিতে বিদ্ধ হইল পারিসের ছোড়া একটি তির-আর সেইখান হইতেই তাহার মৃত্যু হইল। এই কাহিনি বুঝাইয়া দেয়, একজন মানুষ যতই শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান হউক না কেন, তাহার একটি দুর্বল স্থান থাকিবেই। এই জগতের প্রত্যেকের একটি 'অ্যাচিলিসের গোড়ালি' রহিয়াছে। সেই দুর্বল জায়গাটিই কোনো এক ক্ষণে তাহার সর্বনাশ ডাকিয়া আনে।

=============

  পেশোয়ারে জন্ম নেওয়া বিখ্যাত কবি রহমান বাবা প্রায় ৩৫০ বৎসর পূর্বে অসাধারণ কিছু কবিতা লিখিয়া গিয়াছেন। 'ফুল বপন করো, যেন চারিদিকে বাগান ফুটিয়া উঠে; কাঁটা বপন করিলে কেবল তোমারই পায়ে বিঁধিবে।'কবিতাটির মর্মার্থ হইল-জীবন হইতেছে আমাদের কর্ম প্রতিফলনের এক অবিরাম প্রক্রিয়া: যাহা বপন করা হয়, তাহাই একদিন ফলায়। ভালোবাসার বীজ বপন করিলে তাহা যেমন ফুলে ফলে উদ্ভাসিত হইয়া উঠে, তেমনি ঘৃণা ও প্রতিহিংসার বীজ বপন করিলে একদিন তাহা নিজেকেই যন্ত্রণায় জর্জরিত করে। 


=============


১৮২৫ সালে যখন প্রথম বাষ্পচালিত রেল চলিয়াছিল, তখন মানুষ ভাবিয়াছিল ইহার চাইতে দ্রুত আর কিছু সম্ভব নহে। আজ আমরা হাইপারলুপ আর মঙ্গল গ্রহে উপনিবেশের কথা ভাবিতেছি। ১৯৯০ দশকে ইন্টারনেট যখন সাধারণ মানুষের হাতে আসিয়াছিল, তখন কে ভাবিয়াছিল যে, ইহা একদিন আমাদের সমাজ, অর্থনীতি, এমনকি আমাদের চিন্তাকেও বদলাইয়া দিবে? আবার আজ আমরা ভবিষ্যতের যেই ছবি আঁকি, তাহার কতটুকু বাস্তবে সম্ভব হইবে? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়জয়কার, মহাকাশ জয়ের হাতছানি, জিন প্রযুক্তির বিস্ময়-ভবিষ্যৎ হিসাবে কত কিছুই না আমাদের চিন্তার জগতে জমা রহিয়াছে; কিন্তু ভবিষ্যৎ কি সত্যিই আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকিবে? নাকি আমরা অনিয়ন্ত্রিত এক ভবিষ্যতের দিকে ধাবমান?  ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়াছে, গত ২০ বৎসরে প্রযুক্তির অগ্রগতি পূর্ববর্তী ২০০ বৎসরের তুলনায় প্রায় ১০০ গুণ অধিক।  বিশেষজ্ঞরা বলিতেছেন, ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় ৮০ কোটি চাকুরি প্রযুক্তির কারণে বিলুপ্ত হইয়া যাইতে পারে। তবে ইহার বিপরীতে তৈরি হইবে ৯৭ কোটি নতুন পেশা পরিবর্তন আমাদের পক্ষে যাইবে, নাকি বিপক্ষে-তাহা নির্ভর করে আমরা সেই পরিবর্তনকে কীভাবে গ্রহণ করিব তাহার উপর। যদি আমরা প্রযুক্তির দাস না হইয়া তাহার সদ্ব্যবহার করিতে পারি, তাহা হইলে পরিবর্তনকে আমাদের পক্ষে কাজে লাগাইতে পারিব। আমাদের পূর্বপুরুষ যেমন আগুনকে নিয়ন্ত্রণ করিয়া সভ্যতা গড়িয়াছে, আমাদেরও তেমনি প্রযুক্তি ও পরিবর্তনকে নিয়ন্ত্রণ করিতে শিখিতে হইবে। 

==============

 আরব্য রজনির সিন্দবাদ ও এক বৃদ্ধের কাহিনি। সিন্দবাদ যখন জাহাজডুবির পর একটি দ্বীপে একা আশ্রয় গ্রহণ করেন, তখন একটা ছোট্ট জলপ্রপাতের কাছে প্রায় উলঙ্গ একজন মানুষকে দেখতে পান। লোকটি সিন্দবাদকে বুঝাচলেন, তার চ্লার শক্তি নাই। কিন্তু , তাহার খুব পানির পিপাসা পেয়েছে। সিন্দবাদ যেন তাকে কাঁধে তুলে   ঝরনার নিকট নিয়ে যায়। সমব্যথী হয়ে সিন্দবাদ তাকে কাঁধে তুললেন। এবং তার পরে ঐ লোকটি সিন্দবাদের কাঁধ হতে আর নামতে  চাইল না। সেই যে সিন্দবাদের কাঁধে উঠে  এমনভাবে তার গলা আঁকড়িয়ে রাখল যে, সিন্দবাদ যেন দমবন্ধ হয়ে মরার অবস্থা হল।  এই পৃথিবীতে অপ্রয়োজনে কেউ অন্য কারো ভার দীর্ঘ সময় পর্যন্ত বহন করতে চায় না।  একজন অযোগ্য ব্যক্তি যত পরিকল্পনাই করুন না কেন, যত সুযোগসন্ধানীই হউন না কেন, যদি শেষ পর্যন্ত তিনি অযোগ্য ও অদক্ষ থাকেন-তাহার ছাপ তিনি এড়াইতে পারিবেন না। সুতরাং নিজেকে প্রকৃত দক্ষ করিয়া গড়িয়া তুলিবারও বিকল্প নাই।

===============

ফিনল্যান্ডের একটি বহুল প্রচলিত হইল 'হউক ধীরে বা শীঘ্রই, গ্রীষ্ম সকলের জীবনেই আসিবে।' ফিনিশদের বিশ্বাস, জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটে, যাহা নিয়ন্ত্রণ করিবার ক্ষমতা মানুষের হাতে নাই। 'আমার হাতে যাহা নাই, তাহা লইয়া আমি কেন অস্থির হইব!' ফিনিশরা এই গোপন সূত্রও আত্মস্থ করিয়াছে যে, 'জীবন কখনো দেয়, কখনো কাড়িয়া লয়। আজ আমি ভালো অবস্থানে আছি, অন্য কেহ খারাপ অবস্থানে আছে: কাল হয়তো আমি খারাপ থাকিব, অন্য কেহ ভালো থাকিবে।'সকল সুখী দেশের নাম। টানা অষ্টম বারের মতো তালিকায় এক নম্বরে নিজের অবস্থান ধরিয়া রাখিয়াছে ফিনল্যান্ড।সুখী দেশের মানুষ যেইখানে মনে করেন, বাধাবিপত্তি জীবনেরই অংশ; চলার পথে ধাক্কা আসিবেই এবং তাহা সামলাইবার জন্য মনকে প্রস্তুত রাখিতে পারিলে সুখের দেখা মিলিবে; সেইখানে অসুখী দেশের মানুষ সর্বক্ষণ মনে 'অজানা ভয়' পুষিয়া রাখে! অথচ 'ভয়' এবং 'সুখ' পরস্পর বিপরীতমুখী। সুখী মানুষের যুক্তি হইল-নিজের কাছে কী নাই, সেই দিকে নজর না দিয়া বরং এখনো কী আছে-তাহা লইয়া ভাবিলে সামনে আগানো সহজ হয়। 'সুখ কেহ রুপার থালায় সাজাইয়া আপনার সামনে হাজির করিবে না; আপনার জীবনের সুখের দায়িত্ব আপনারই।

=========

প্রাচীনকাল হইতে বর্তমান পর্যন্ত ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে বারংবার দেখা গিয়াছে যে, যাহাদের হাতে কলম, তাহারাই ইতিহাসকে আপন সুবিধামতো রচনা করিয়াছেন। পরাজিতদের কথা, তাহাদের বেদনা, তাহাদের যুক্তি—ইতিহাসে স্থান পায় না, বা যদি স্থান পায়ও, তাহা বিজয়ীদের দৃষ্টিভঙ্গির আলোকেই লেখা হয়। পশ্চিমা ইতিহাসবিদ অ্যাডওয়ার্ড সাইদ ‘ওরিয়েনটালিজম’ গ্রন্থে দেখাইয়াছেন কীভাবে উপনিবেশবাদী শক্তিগুলি ইতিহাসকে আপন স্বার্থে রচিত করিয়াছে। ঔপনিবেশিক শাসকেরা নিজেদের সভ্য ও উন্নত প্রমাণ করিবার জন্য নেটিভ জাতিগুলিকে বর্বর ও অনগ্রসর বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। বস্তুত, এই ইতিহাস একচোখা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ইতিহাস রচনার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হইল বিজয়ীদের দ্বারা পরাজিতদের কাহিনির অপলাপ। জার্মান দার্শনিক ফ্রিডরিখ নিেশ বলিয়াছেন,বিজয়ীরা যেইভাবে ইতিহাস ব্যাখ্যা করেন, তাহাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসাবে গৃহীত হয়। ইতিহাসের এই সকল দৃষ্টান্ত প্রমাণ করে যে, যাহাদের হাতে লেখার ক্ষমতা রহিয়াছে, তাহারাই নিজেদের পছন্দের ইতিহাসকে ‘সত্য’ বলিয়া নিয়ন্ত্রণ করিতে পারেন।

============

অনিয়ম, দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের কারণে জনশক্তি রফতানির নিরিখে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ শ্রমবাজার মালয়েশিয়ায় গত বছরের ৩১ মে বন্ধ হয়েছে। এর আগেও একই অভিযোগে দুবার তা বন্ধ হয়েছিল। একই অভিযোগে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপের বড় বড় শ্রমবাজার থেকেও একাধিকবার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সিন্ডিকেট চক্র ও দালালদের বিরোদ্ধে কোনো সরকারের আমলেই কঠোর কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। দকর্মসংস্থানের জন্য প্রতি বছর বিদেশে পাড়ি দেন গড়ে অন্তত ১০ লাখ মানুষ।

আওয়ামী লীগের আমলে মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে খোদ সরকারি দলের নেতাকর্মী, এমপি-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে। বিগত সরকারের আমলের শেষ চার বছরে (২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত) ১ হাজার ৩১টি রিক্রুটিং লাইসেন্স অনুমোদন করে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। যেখানে এর আগের ৩০ বছরে অনুমোদন দেয়া হয়েছিল ৯৯১টির। এসব রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্স নিয়ে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রভাব খাটিয়ে বিদেশে কর্মী পাঠানোর নামে বিপুলসংখ্যক মানব পাচার করা হয়েছে।


—-------------


মিনিকেট নামে কোনো ধান নাই, এই চাউল সম্পূর্ণটাই কারসাজির ফসল। বিভিন্ন প্রকার মোটা চাউলকে মেশিনে কাটিয়া-ছাঁটিয়া চিকন করা হয়, যাহার ফলে ইহার পুষ্টিগুণ কমিয়া যায়। আর তুলনামূলকভাবে অপুষ্টিকর ও দামে চড়া এই চাউলের চাহিদা কীভাবে বাড়ে?ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-২৯, ব্রি হাইব্রিড ধান ও কাজল লতার মতো মোটা জাতের ধান হইতে উত্পাদিত চাউল পলিশ করিয়া মিনিকেট নামে চালাইয়া দেওয়া হইতেছে। চাউল সাদা করিতে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড দেওয়া হইতেছে। আবার চাউলের মধ্যে পুরাতন নষ্ট ময়দা ব্যবহার করিয়া সাদা করা হইতেছে। চাউলের মধ্যে ক্ষতিকর অ্যারারুট দেওয়া হইতেছে। 

========

‘আমলা’ আরবি শব্দ। এর অর্থ আদেশ পালন ও বাস্তবায়ন। শব্দগতভাবে তাই যেসব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারের আদেশ পালন ও বাস্তবায়ন করেন তাদেরকে আমলা বলে। আমলাদের সংগঠনকে বলে ‘আমলাতন্ত্র’। অন্যদিকে আমলাতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ Bureaucracy, তবে ফরাসি ব্যুরো আমলাদের বিষয়ে কার্ল মার্ক্স প্রদত্ত মন্তব্যই যেন অনেকখানি যুক্তিযুক্ত।  তিনি বলেছিলেন—‘নিজেদের নাককেই তারা কর্তব্যের অস্ত্র মনে করেন এবং সব ব্যাপারেই সেসব অস্ত্রের প্রয়োগ ঘটান। এই নাক গলানোর কর্মকাণ্ডই তাদের কাছে জাতীয় স্বার্থ এবং নিয়মের অর্থ।’

=============


ধরুন, একজন পুরুষ রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরাল। এতে কেউ কিছু বলবে না। বরং তার সঙ্গীরা হয়তো জিগ্যেস করবে-দে তো, একটা টান দিই।' কিন্তু যদি একজন নারী একই কাজ করেন, তখন ব্যাপারটা হয়ে যাবে 'নৈতিকতার সংকট'। যদিও ধূমপান কারো জন্যই ভালো না, তা সে পুরুষ হোক কিংবা নারী। বিশ্ব জুড়ে গবেষণায় দেখা গেছে, বিষণ্ণতা বা মানসিক অবসাদে ভোগা মানুষের মধ্যে ধূমপান ও মাদক গ্রহণের প্রবণতা বেশি থাকে। ধূমপানের নিকোটিন সাময়িক প্রশান্তি দেয়, অ্যালকোহল মস্তিষ্কের ব্যথা অনুভব কমিয়ে দেয়, গাঁজা স্নায়ুকে শিথিল করে। কিন্তু এই স্বস্তিগুলো সাময়িক এবং দীর্ঘ মেয়াদে এগুলো আরো বেশি মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি ডেকে আনে।