ইতিহাসে আলোড়ন সৃষ্টিকারী একটি নাম সুলতানা রাজিয়া। তিনি ছিলেন ভারত বর্ষের প্রথম নারী শাসক। যুদ্ধক্ষেত্রে একজন দক্ষ সৈনিক হিসেবে তার ছিল সুখ্যাতি।
সুলতানা রাজিয়া জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১২০৫ সালে। দৃপ্ত কঠিন ক্ষণজন্মা এই নারীর জীবন প্রদীপ নিভে গিয়েছিল ১২৪০ সালে। রাজকার্য পরিচালনার জন্য নামের আগে সুলতানা না হয়ে সুলতান হওয়াই হয়তো যুক্তিযুক্ত ছিল।
সুলতানা রাজিয়ার বাবা শামস-উদ-দীন ইলতুিমশ ছিলেন দিল্লির সুলতান। ১২১০ সাল থেকে ১২৩৬ সাল পর্যন্ত সুলতানি আমলে ইলতুিমশ নিজেও একজন দক্ষ শাসকের খ্যাতি অর্জন করেন। বিভিন্ন অঞ্চলের বিক্ষোভ, বিদ্রোহ দমন করা ছিল তার কাজ। মৃত্যুর আগে নিজের উত্তরাধিকারী মনোনয়নের বিষয়ে সুলতান ইলতুিমশ চিন্তায় পড়ে যান। কারণ ইতিমধ্যে তার বড় ছেলে নাসিরুদ্দিন মাহমুদ মারা গেছেন। সুলতান নিজ সন্তানদের মধ্যে নাসিরুদ্দিনের ওপর বেশি ভরসা করতেন। বাকি যে দুই ছেলে আছেন তাদের কেউই সিংহাসনে বসার যোগ্য ছিলেন না। এমন অবস্থায় চিন্তায় পড়ে গেলেন সুলতান। এরই মধ্যে তার জ্যেষ্ঠ মেয়ে রাজিয়া বেশ বুদ্ধিমতী, চৌকস, প্রজাপ্রীতি ও যুদ্ধকৌশল শিখে গেছেন। তখন রাজ্য চালানোর দায়িত্ব মেয়ে সুলতানার ওপর দিয়ে নির্ভরশীল হন।
ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর নারীবিদ্বেষী আমির-ওমরাহগণ রাজিয়ার বিরোধিতা শুরু করেন। তাদের যুক্তি হলো, ইলতুৎমিশের পুত্র থাকার কারণে কন্যা উত্তরাধিকারী হতে পারে না।
উত্তরাধিকারসূত্রে জেষ্ঠ্য পুত্র সিংহাসনে স্থলাভিষিক্ত হন। কিন্তু সুলতান ইলতুৎমিশ উইলে রাজিয়াকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করায় তার ভাইয়েরা কোন আপত্তি করতে পারেননি। কিন্তু নারী শাসনের বিরোধী আমির-ওমরাহগণ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন। ফলে রাজিয়া তার অধিকার ছেড়ে দেন। তার সৎভাই রুকুনুদ্দিনকে সুলতান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
রুকুনুদ্দিন রাজকার্যে অবহেলা করে বিলাসিতায় দিন যাপন করতে থাকেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতি হলে আমির-ওমরাহগণ রাজিয়াকে সুলতানা হিসেবে মেনে নিতে রাজি হলেন। কিন্তু প্রাসাদ ষড়যন্ত্র করে রুকুনুদ্দিনের মা রাজিয়াকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। এই ষড়যন্ত্রের কথা জানার পর সভাসদেরা রাজিয়া সুলতানার প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করেন।
১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজিয়া সুলতানা সিংহাসনে বসেন। রাজিয়া একজন বিচক্ষণ ও দক্ষ শাসক ছিলেন। তার সময়ে দাসবংশের শাসনকাল খুব সুদৃঢ় হয় এবং রাজ্যের সর্বত্র শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করে। তার সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি সাধিত হয়। তিনি যাতায়াতের সুবিধার্থে রাস্তা-ঘাট নির্মাণ করেন। রাস্তার দুই পাশে বৃক্ষ লাগানো হয় এবং পানি সরবরাহের জন্য অসংখ্য কুয়ো খনন করা হয়। তিনি সাহিত্যিক, শিল্পী ও কারিগরদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তার শাসনামলে সঙ্গীত ও চিত্রকলারও প্রভূত বিকাশ সাধিত হয়। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি বিদ্যোৎসাহী ছিলেন এবং নারীদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তিনি কবি ছিলেন এবং কুরআন পাঠ করতে পারতেন।
রাজিয়া সুলতানা অন্তঃপুরিকা ছিলেন না। তিনি প্রকাশ্য দরবারে রাজকীয় পোশাক পরিধান করে সিংহাসনে আরোহন করতেন। তিনি কোন ঘোমটা ব্যবহার করতেন না। পুরুষের বেশে তিনি আলখাল্লা এবং পাগড়ি পরে জনসম্মুখে আসতেন। তিনি সভাসদ, আমির-ওমরাহদের রাজ্য শাসন প্রসঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতেন এবং তাদের পরামর্শ গ্রহণ করে আইন বা নির্দেশ জারি করতেন।
তিনি দক্ষ অশ্বারোহী ছিলেন এবং বর্ম ও শিরস্ত্রাণ পরে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতেন। দুর্ভাগ্যবশত রাজিয়া সুলতানার খোলামেলা রাজকীয় আচার-আচরণ রক্ষণশীল আমিরগণ মোটেই পছন্দ করতেন না। তিনি খুবই উদার ও জনদরদি শাসক ছিলেন। তিনি হিন্দুদের ওপর অর্পিত বর্ধিত কর বিলোপ করেন; কিন্তু তার এই পদক্ষেপ অনেক আমির মোটেও পছন্দ করেননি।
রাজিয়া সুলতানা জামালুদ্দিন ইয়াকুত নামের অতুর্কি বংশোদ্ভুত এক ব্যক্তিকে পছন্দ করতেন এবং তাকে আস্তাবলের প্রধান নিযুক্ত করেন। এই পদটি তুর্কি বংশোদ্ভূত কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্ট ছিল।
ঐতিহাসিকগণ বলেন যে, জামালুদ্দিনের প্রতি রাজিয়ার এমন দুর্বলতা ছিল যে, তিনি শাসনকার্য পরিচালনায় কেবলই তার পরামর্শ গ্রহণ করতেন। অনেকে তাকে রাজিয়া সুলতানার প্রেমিক বলে অভিহিত করেন।
জামালুদ্দিন ইয়াকুতের প্রতি মাত্রাধিক দুর্বলতা ও তাকে অধিক সুযোগ-সুবিধা দানের জন্য আলতুনিয়া নামের একজন গভর্নর রাজিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেন। জামালুদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে রাজিয়া সুলতানা অশ্বপৃষ্ঠে চেপে যুদ্ধযাত্রা করেন। কিন্তু বিদ্রোহী দলে অধিকসংখ্যক সৈন্য জামালুদ্দিন ও রাজিয়া পরাজিত হন।
জামালুদ্দিন যুদ্ধে নিহত হন এবং রাজিয়া আলতুনির হাতে বন্ধি হন। দিল্লিতে আমির-ওমরাহগণ রাজিয়ার এই বিপর্যয়ের সংবাদ পেয়ে তার সৎভাইকে সুলতান হিসেবে ঘোষণা দেন। এদিকে বন্ধি অবস্থায় রাজিয়া আলতুনিয়াকে বিয়ে করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
১২৪০ খ্রিষ্টাব্দে নিজের এবং আলতুনিয়ার সৈন্যবাহিনীসহ রাজকীয় বাহিনী দিল্লি অভিমুখে যাত্রা করেন। কিন্তু দিল্লির উপকণ্ঠে নতুন সুলতানের বাহিনীর সঙ্গে আলতুনিয়া ও রাজিয়ার বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে রাজিয়া পরাজিত ও নিহত হন। এজন্য রাজিয়াকে বীর রানী বলা যায়। দিল্লির উপকণ্ঠে একটি সমাধি নির্মাণ করে সুলতানা রাজিয়াকে সমাহিত করা হয়।
১২৩৬ সাল থেকে ১২৪০ সাল পর্যন্ত মোট চার অথবা সাড়ে চার বছর রাজিয়া ভারতবর্ষ শাসন করেছিলেন।
ভারতবর্ষের সমৃদ্ধ ইতিহাসের ভিড়ে এই সময়টুকুর কথা হয়তো তেমন আলোচনাতেই আসতো না। কিন্তু সম্রাজ্ঞী রাজিয়া সুলতানা নিজ যোগ্যতাবলেই এই সময়টুকুকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে পেরেছিলেন।
ভারতবর্ষের প্রথম নারী সুলতান হিসেবে অবশ্যই তিনি নিজেকে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছেন। কারণ একজন নারী হিসেবে তিনি যে সময় সিংহাসনে বসেছিলেন, সে সময় তা কল্পনাও করা যেতো না।
ইসলাম ও ভারতবর্ষের ইতিহাসে যে কয়জন নারী খুব বেশি আলোচিত হন, রাজিয়া সুলতানা তাদের মধ্যে অন্যতম। যিনি শুধুমাত্র নিজ যোগ্যতাবলে ভারতবর্ষের পরাক্রমশালী সব রাজা, মহারাজা, বাদশাহ আর সম্রাটদের পাশে নিজের অবস্থান গড়ে নিতে পেরেছিলেন। আর তাই ভারতবর্ষের শাসকদের তালিকায় আজও তার নামটি নক্ষত্রের মতই জ্বলজ্বল করছে।
শাসক হিসেবে কেমন ছিলেন রাজিয়া? এ প্রশ্নের উত্তরে দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়, তিনি একাধারে একজন দক্ষ প্রশাসক আর সেনাপতি হিসেবে নিজের গুরুত্ব তুলে ধরতে পেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মেধাবী, বুদ্ধিমতী, রূপবতী এবং পরিশ্রমী।
পিতা ইলতুৎমিশ যখন যুদ্ধের জন্য রাজধানী ত্যাগ করতেন, তখন মূলত রাজ্য পরিচালনা করতেন তার কন্যা এই রাজিয়াই। সত্যিকার অর্থে রাজপরিবারে সেই সময় রাজিয়ার চেয়ে যোগ্য আর দক্ষ কেউ ছিলেন না। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রেও নিজের সাহসিকতা প্রদর্শন করতে পেরেছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে হাতির পিঠে চড়ে একেবারে সামনে থেকে তিনি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিতেন।
তার মৃত্যু নিয়ে বেশ কয়েকটি কথা রয়েছে। একটি পক্ষ দাবি করেছেন, ১২৪০ পলায়নকালে তার একজন ভৃত্য যে কিনা এই চক্রের অন্তর্ভুক্ত ছিল, তাকে খাদ্যে বিষ দিয়ে হত্যা করে। এই ভৃত্যই তাকে আশ্রয় দিয়েছিল।
আরেকটি পক্ষ দাবি করেছেন, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাজিয়া এক কৃষকের বাড়িতে আশ্রয় নেন। খাওয়া-দাওয়ার পর তিনি ঘুমালে কৃষক তার শরীরে রাজকীয় পোশাক দেখতে পায়। পোষাকে প্রচুর রত্ন লাগানো ছিলো। কৃষক সহজেই বুঝে যায় তাঁর সামনে ঘুমিয়ে থাকা নারী সাধারণ কেউ নন। কৃষকটি ধন-সম্পদের লোভে পড়ে ঘুমন্ত রাজিয়াকে হত্যা করে এবং রত্ন নিয়ে পালিয়ে যায়।
সৌজন্যে: – ইতিহাসের পাতা।
=====
ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুপাতে চোখের পলকেই ভস্ম হয়ে যাওয়া রোমান ঐতিহ্যের 'পম্পেই’ নগরী।
ইতালির কাম্পানিয়া অঞ্চলে মাউন্ট ভিসুভিয়াসের কোল ঘেষে গড়ে উঠেছিল রোমান সাম্রাজ্যের প্রাচীন নগরী পম্পেই। প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যের নগরী হিসেবেই পম্পেই পরিচিতি লাভ করে। নগরীর অবস্থান দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চলে হওয়ায়, প্রায়ই এখানে ভূমিকম্প হানা দিত। ০০৬২ সালের শক্তিশালী ভূমিকম্পে পম্পেই কেঁপে উঠে। এর ধাক্কা সামলে না উঠতেই নেমে আসে চূড়ান্ত বিপর্যয়। জেগে ওঠে আগ্নেয়গিরি ‘ভিসুভিয়াস’। ভিসুভিয়াসের আগুন ও উত্তপ্ত লাভায় মাত্র ১৮ ঘণ্টায় পুরো পম্পেই ঢেকে গিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। বুঝে উঠার আগেই থেমে যায় প্রতিটি প্রাণের স্পন্দন।
০০৭৯ সালের কথা, প্রতিদিনের মতোই সেদিনও নগরী কর্মচঞ্চল। বিরামহীন ব্যস্ততা আর লোক সরাগমে মুখরিত পম্পেইর আনাচে কানাচ। বাসায় গৃহিণী ও দাসদাসিরা নিজ কাজে ব্যস্ত। সরাইখানাগুলোতেও মানুষের ভিড়। সৈন্যরা যুদ্ধের অনুশীলন করছে। হটাৎই বিস্ফোরণে দীর্ঘদিন সুপ্ত থাকা ভিসুভিয়াস ভয়ংকর রূপে জেগে উঠে। আগ্নেয়শিলা, উত্তপ্ত লাভা ও আগ্নেয় গ্যাসের মেঘ প্রায় ৩৩ কিমি উচুতে ছড়িয়ে যায়। মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয় নগরী। ধারণা করা হয় পম্পেই ও হার্কুলেনিয়ামে ১৬,০০০-২০,০০০ মানুষের বাস ছিল। যারা বাড়িতে ছিলেন তারা বাড়িতে আটকা পরে মারা যায়। আগুনের তাপে সাথে সাথে মারা যায় রাস্তার অনেকে। যে যেভাবেই ছিল সেভাবেই তার মৃত্যু হয়। আগ্নেয়গিরির বিকট শব্দে মিলিয়ে যায় অসহায় মানুষের আর্তচিৎকার।
পম্পেই দীর্ঘদিন ২০ফুট ছাইয়ের নিচে ঢাকা পড়ে ছিল। ১৮৬৩ সালে আবিষ্কৃত হয় নগরীর ধ্বংসাবশেষ ও নগরবাসীর দেহাবশেষ। দেহগুলো পাথরে পরিণত। এদের মাংসপেশি গলে গেছে, পুড়ে গেছে ফুসফুস। বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের শ্রমের পর দেহগুলো গবেষণার উপযোগী হয়ে ওঠে। উঠে আসে ২০০০ বছরের প্রাচীন জনপদের দেহের আকৃতি ও মৃত্যুর করুণ ইতিহাস। দেহাবশেষগুলো পাওয়া যায় দলবদ্ধ ভাবে। ধারণা যে, তারা একে অপরকে সাহায্য করতে চেয়েছে। কিন্তু ভয়ংকর মৃত্যুর কাছে সবাইকেই পরাজিত হতে হয়। এখন পর্যন্ত ১১৫০টি দেহাবশেষ পাওয়া গেছে। তবে মৃতদেহের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।
পম্পেই নগরীর স্থাপনার মোজাইক থেকে জানা যায়, এখানকার মানুষ ওয়াইন খুব পছন্দ করতো। নগরীতে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ হলেও কঠোর আইন না থাকায় মানুষ সেভাবে মানতো না। পম্পেই ছিল জাঁকজমকপূর্ণ। এর পাথরের অ্যাম্ফিথিয়েটার বিশ্বের অন্যতম স্থাপনা। অ্যাম্ফিথিয়েটার ছিল ইতালির বিখ্যাত আবিষ্কার। এ থিয়েটারে যেকোনো কর্নারে বসেই ভালোভাবেই খেলা বা লড়াই উপভোগ করা যেতো। বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এখানে বাণিজ্য করতে আসতো। রোম, প্রাচীন গ্রীকসহ বিভিন্ন দেশের ব্যবসায়ী, নাবিকদের ছিল অবাধ চলাচল। কথিত, এই ব্যবসায়ীদের মনোরঞ্জনের জন্য অনেক পতিতালয় স্থাপিত হয়েছিল।
পম্পেই নগরীতে পানি ও ড্রেনেজের সুব্যবস্থা ছিল। বিশ্বের প্রাচীনতম অভিজাত জনপদগুলোর একটি ছিল এ পম্পেই নগরী। রোমান আর গ্রিক বণিকদের ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র ছিল এই পম্পেই। ব্যবসা ছাড়াও পম্পেই বিখ্যাত ছিল গ্যালাডিটরিয়াম স্টেডিয়ামের জন্য। এখানে দুজন লোককে ছেড়ে দেওয়া হতো লড়াইয়ের জন্য। যে বেঁচে থাকত সে মুক্তি পেত। এই নিষ্ঠুর খেলা দেখতে দেশ বিদেশের মানুষের সমাগম হতো।
সারনো নদীর গতিপথ পরিবর্তন করতে গিয়ে এর সন্ধান পান ডমিনিক ফোন্তানা। তারপর ১৮৬৩ সালে ছাইয়ের ভেতর থেকে আবিষ্কার হয় নগরীর বাসিন্দাদের দেহাবশেষ। কয়েকদিন পর আগ্নেয়গিরি লাভা শক্ত হয়ে গেলেও ভেতরে থাকা দেহগুলো ধীরে ধীরে পচতে শুরু করে। পুরোপুরি পচে যাওয়ার পর সেখানে তৈরি হয় বাতাস ও হাড় মিশ্রিত জায়গা। সে দেহাবশেষগুলো এয়ারপকেট আকারে থাকায় তা নিয়ে গবেষণা সম্ভব ছিল না। তাই বিজ্ঞানীরা সেই ফাকা জায়গাগুলো প্লাস্টার দিয়ে পূর্ণ করেন। ৪৮ ঘণ্টা পর সেই প্লাস্টার শুকিয়ে গেলে বেড়িয়ে আসে ২০০০ বছর আগের সেই নগরীর মানুষের আকৃতি। বডিগুলোকে স্ক্যানিং করে আরও বিস্তারিত জানা যায়। এমনকি হাড়গুলোর এক্স-রেও করা হয়। ডিএনএ টেস্টে তাদের বয়স ও লিঙ্গ সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়।
১৯৭৭ সালে ইউনেস্কোর "বিশ্ব ঐতিহ্য" হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে পম্পেই নগরী। গত তিনশ’ বছর ধরে পম্পেই নগরীর ভগ্নাবশেষে চলছে খনন এবং অনুসন্ধান। হয়তো এখনও অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে এ ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রাচীন নগরীতে যা ভবিষ্যতে জনসমক্ষে বেরিয়ে আসবে।
ছবি: বর্তমান পম্পেই নগরী, পিছনে ভিসুভিয়াস।
দেকার্তে, যিনি বিশ্বাসকে সিংহাসনচ্যুত করেছিলেন
উনিশশো ছিয়ানব্বই সালের প্রথমদিকে ফ্রান্স তার শ্রেষ্ঠ সন্তানদের একজন, রেনে দেকার্তের (১৫৯৬-১৬৫০) চারশোতম জন্মবার্ষিকী সাড়ম্বরে উদ্যাপন করেছে। বার্ষিকীটি পালিত হয়েছে বক্তৃতা-বিতর্ক,
সেমিনার-সিম্পোজিয়াম, প্রদর্শনী ও পুস্তক প্রকাশনার মধ্য দিয়ে। এ-সময়ে ফ্রান্স জুড়ে যে ‘দেকার্তে উৎসব’ চলেছে, তা পরিণত হয়েছিল দেকার্তে ক্রেজে এবং দেকার্তে ফ্যাশনে। সে-বছর তাঁর ওপর ফ্রান্সে প্রকাশিত কয়েক ডজন বইপত্রের মধ্যে রয়েছে নবপ্রজন্মের দার্শনিক আদ্রেঁ গ্লুকস্মানের বহুল সমাদৃত বই দেকার্তে মানে ফ্রান্স।
বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদের (Scientific reasoning) অন্যতম প্রবক্তা রেনে দেকার্তের জন্ম খ্রিষ্টীয় চার্চের অনুশাসনে আবদ্ধ ফ্রান্সের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। দেকার্তে জন্মেছিলেন ১৫৯৬ সালে, যখন ইংল্যান্ডে শেক্সপিয়র তাঁর হ্যামলেট লিখছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন ব্রিটানি পার্লামেন্টের একজন কাউন্সিলর এবং বেশ কিছু ভূসম্পত্তির মালিক। দেকার্তে অবশ্য তাঁর পিতার মৃত্যুর পর সে ভূসম্পত্তি বিক্রি করে তা বিনিয়োগ করে কিছুটা আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। দেকার্তের জন্ম যে-সমাজে, তা পরিচালিত হতো ধর্মীয় গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসকে ভিত্তি করে। মুক্তবুদ্ধি ও বৈজ্ঞানিক যুক্তির কোনো মূল্য তো সেখানে ছিলই না, অধিকন্তু তাকে চিহ্নিত করা হতো অত্যন্ত বিপজ্জনক বলে। রোমান ক্যাথলিক চার্চের বিধান অনুযায়ী এ-ধরনের বিপজ্জনক চিন্তাবিদদের ইনকুইজিশনের আগুনে পুড়িয়ে মারাই ছিল একমাত্র উপায়। এরকম সমাজব্যবস্থার মধ্যেই দেকার্তে শুরু করেন তাঁর শৈশব ও কৈশোরের শিক্ষা এবং ক্রমশ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন গণিত, জ্যামিতি, দর্শন ও কয়েকটি প্রাচীন ভাষায়। এভাবেই তিনি পরিণত হন একজন প্রথম শ্রেণির গণিতজ্ঞে, যাঁর জ্যামিতি আজো ‘কার্তেসীয় জ্যামিতি’ নামে সুপরিচিত।
ষোলোশো ষোলো সালে আইনে ডিগ্রি নেওয়ার পর তিনি সেই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন, যে-যুদ্ধ ধর্মের ভিত্তিতে সারা ইউরোপকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছিল। নিজে ক্যাথলিক হলেও তিনি অবশ্য সেই যুদ্ধে উভয় পক্ষেই যুদ্ধ করেছেন – প্রথমে বিনা বেতনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে প্রোটেস্ট্যান্ট ‘প্রিন্স অব অরেঞ্জ’ এবং পরে ক্যাথলিক ডিউক ব্যাভেরিয়ার ম্যাক্সিমিলানের সেনাদলে। যুদ্ধ চলাকালেই তিনি একদিন রাতে স্বপ্ন দেখেন যে, ‘দর্শন’ তাঁকে ডাকছে, যে-স্বপ্ন তাঁর কাছে ছিল ঈশ্বরের বার্তাপ্রচারকের কাছে আসা ঐশী বাণীর মতো। যুদ্ধের পর তিনি জার্মানি, হল্যান্ড ও ইতালি ভ্রমণ করেন – যেখানে তিনি হরেকরকম অভিজ্ঞতা লাভ করেন, যেমন জুয়া খেলা, পতিতাগমন এবং একটি ঘটনায় প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে ডুয়েল লড়া। ফ্রান্সে ফিরে আসার কিছুদিন পর ধর্মীয় গোঁড়ামি ও পশ্চাৎপদতার প্রতিনিধি খ্রিষ্টীয় চার্চের বিরুদ্ধবাদিতার মুখোমুখি হয়ে দেকার্তে আবিষ্কার করেন যে, তিনি স্বদেশ ফ্রান্সে তাঁর কাজকর্ম চালাতে অক্ষম। সুতরাং তাঁকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় অপেক্ষাকৃত মুক্ত সমাজে স্বেচ্ছানির্বাসনের। এজন্যে তিনি বেছে নিলেন ইউরোপের সবচেয়ে প্রগতিশীল ও মুক্ত সমাজের একটি হল্যান্ডকে। তিনি ১৬২৮ সালে হল্যান্ডে চলে যান এবং তাঁর জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার একটা বড় অংশ তিনি সেখানে অবস্থানকালেই করেছেন। তিনি প্রায় আমৃত্যু, ১৬৪৯ সাল পর্যন্ত সেখানেই থাকেন, কিছুদিনের জন্য সুইডেনের রানী ক্রিস্টিনার আমন্ত্রণে বেড়াতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে দুঃখজনকভাগে মৃত্যুবরণ করার আগে পর্যন্ত। হল্যান্ডেই তাঁর একটি অবৈধ কন্যা, ফ্রাঙ্কিন, জন্ম নেয় – মাত্র পাঁচ বছর বয়সে যার মৃত্যুতে তিনি তীব্র শোকাহত হন। প্যারিস থেকে হল্যান্ডে আসার সময় তিনি অল্প কয়েকটি বই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন, যার মধ্যে ছিল থমাস একুইনাসের সুম্মা থিয়োলগিয়া। তবে তিনি গর্ব করে বলতেন যে, এসব বই তিনি বিশ বছরেও একবার ছুঁয়ে দেখেন না। তাঁর বাসায় আগেও কোনো এক অতিথি তাঁর লাইব্রেরিটি দেখতে চাইলে তিনি তাঁকে একটি ঘরে নিয়ে যান, যেখানে একটি বাছুরের অর্ধ-ব্যবচ্ছেদকৃত শবদেহ রয়েছে। সেটি দেখিয়ে তিনি বলেন যে, এটিই হচ্ছে আমার লাইব্রেরি। আলোকবিদ্যা বিষয়ে তাঁর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর জন্য তিনি নিজেই কাচ ঘষে পরকলা বানিয়ে নিতেন।
রেনেসাঁস-পরবর্তী দার্শনিকরা পুরনো যুগের, মূলত গ্রিক দার্শনিকদের চিন্তা-চেতনাকেই পুনঃআবিষ্কার করেন। কিন্তু দেকার্তেই সম্ভবত প্রথম দার্শনিক, যিনি সে-পথ অনুসরণ না করে সচেষ্ট হন নতুন কিছু আবিষ্কার করতে এবং মানুষ ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে কিছু সত্য আবিষ্কারও করেন। দেকার্তে বিশ্বাস করতেন, মানুষের জ্ঞানে সন্দেহাতীত স্বতঃসিদ্ধ বলে কিছু নেই – জ্ঞান লাভ সম্ভব একমাত্র বৈজ্ঞানিক যুক্তির মাধ্যমে। যে-কোনো ধরনের প্রতিপাদ্য বৈজ্ঞানিক যুক্তির মাধ্যমে সিদ্ধ না হলে তাকে পরিত্যাগ করা উচিত। চতুর্থ ও পঞ্চম শতকের খ্রিষ্টান ধর্মযাজক সেন্ট অগাস্টিনের মতো তিনিও সন্দিগ্ধচিত্তে দর্শন নিয়ে চিন্তা শুরু করেন – আমি সকল জাগতিক বস্তুকেই সন্দেহযোগ্য বলে মনে করি, কিন্তু আমার নিজেকে নয়। কেননা, আমি চিন্তা করছি, সুতরাং আমি আছি। Cogito, ergo sum! সুতরাং আমরা যাকে সন্দেহাতীত ও স্পষ্টরূপে প্রমাণ করতে পারি, একমাত্র তাই সত্য। দেকার্তের মতে, সেরকম সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণযোগ্য ও স্বতঃসিদ্ধ সিদ্ধান্ত সংখ্যায় অতি নগণ্য। তিনি শিক্ষা দিয়েছিলেন, যে-কোনো প্রতিপাদ্য, যাকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যায় না – তাকে বর্জন করতে, অন্ততপক্ষে তাকে সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে। এভাবেই দেকার্তের শিক্ষণ সাহায্য করেছিল ‘বিশ্বাস’কে সিংহাসনচ্যুত করে সেখানে ‘যুক্তি’কে অভিষিক্ত করতে। সারাজীবন তিনি কাটিয়ে গেছেন লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা একটি ভদ্র ও শান্ত জীবন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করেননি – যদিও তাঁর সেই যোগ্যতা নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না। তাঁর গুরুত্বপূর্ণ রচনাগুলোও অন্য বিদগ্ধ বুদ্ধিজীবীদের মতো ল্যাটিনে নয় – সহজ ঝরঝরে ফরাসি ভাষায় লেখা। দেকার্তে যা লিখেছেন, তা একজন শিক্ষক হিসেবে নয়, বরং একজন ভ্রমণকারী আবিষ্কারক হিসেবে, যিনি উৎসুক ছিলেন তাঁর আবিষ্কার সবাইকে অবহিত করতে।
গ্যালিলিও যখন তাঁর সূর্যকেন্দ্রিক বিশ্বদৃষ্টি নিয়ে লেখা বই Dialogue on Two World System ১৬৩২ সালে প্রকাশ করেন, তখন তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই চার্চ কর্তৃক সমালোচিত হয়ে ইনকুইজিশনের সামনে হাজির হন। গ্যালিলিও যদিও চার্চের কাছে ক্ষমা চেয়ে এবং ভুল স্বীকার করে তাঁর নিজের জীবন রক্ষা করতে সক্ষম হন; কিন্তু এই উদাহরণ দেখে দেকার্তে সতর্ক হয়ে যান। একই বছরে দেকার্তেও তাঁর একই সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বদৃষ্টি নিয়ে লেখা বই The World নামে পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেছিলেন; কিন্তু বিপদ বুঝতে পেরে তিনি তা প্রেস থেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। সেটি কখনো আর ছাপার মুখ দেখেনি, যদিও তার অংশবিশেষ তিনি তাঁর পরবর্তী বই Principles of Philosophy-তে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এরপর জ্যামিতি, আলোকবিদ্যা ও আবহাওয়াতত্ত্ব নিয়ে তাঁর বই Discourse on Method প্রকাশিত হয় ১৬৩৭ সালে, যা দর্শনের ওপর একটি অতি জনপ্রিয় ধ্রুপদী পুস্তক। এই বইটিকে অনেকে প্লেটোর রিপাবলিক, অথবা কান্টের ক্রিটিক অব পিওর রিজন – দর্শনশাস্ত্রের এ-দুটো যুগান্তকারী বইয়ের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। তবে দেকার্তের এই বইটি আরো সংহত ও সহজপাঠ্য – দেকার্তে নিজেও বলতেন যে, তাঁর বই ‘উপন্যাসের মতো সুখপাঠ্য’।
এরপর ১৬৪১ সালে প্রকাশিত হয় দেকার্তের অধিবিদ্যাবিষয়ক বই Meditation বা ‘অনুধ্যান’। ‘অনুধ্যান’ ছাপা হওয়ার আগেই তিনি বন্ধুবান্ধবকে এর কপি দিয়ে তাঁদের কাছ থেকে সমালোচনা আহ্বান করেন। বন্ধুদের কাছ থেকে ছয়টি সমালোচনা পেয়ে দেকার্তে সেগুলোর উত্তর প্রস্তুত করেন এবং বইটি ছাপার সময় তাতে অন্তর্ভুক্ত করেন। তাই এটিই ইতিহাসে Peer-review হয়ে ছাপা হওয়া দর্শনবিষয়ক প্রথম গ্রন্থ। উট্রেকট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর গিসবার্ট ভয়েসিয়াস বইটি পড়ে এটিকে বিপজ্জনক বলে চিহ্নিত করেন এবং মারাত্মক নাস্তিকতা ছড়ানোর অভিযোগে দেকার্তেকে গ্রেফতার করার সুপারিশ করেন। ক্ষমতাবান কিছু প্রগতিমনস্ক ব্যক্তির সহযোগিতাতেই দেকার্তে সেই বিপদ থেকে রক্ষা পান। এরপর ১৬৪৪ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর Principles of Philosophy এবং ১৬৪৯ সালে তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগে প্রকাশিত হয় Treaties on the Passion, যা ‘ইথিক্যাল ট্রিটিজ’ নামেও পরিচিত। এর মধ্যে তাঁর Passions বইটি তিনি উৎসর্গ করেছিলেন বোহেমিয়ার প্রিন্সেস এলিজাবেথকে এবং Passions করেছিলেন সুইডেনের রানী ক্রিস্টিনাকে।
প্যারিসের রাস্তায় অটোমাটন বা স্বতশ্চল যন্ত্র দেখে মন ও দেহ – এ দুটোর মধ্যে সম্পর্ক কী, তা আবিষ্কার করতে দেকার্তে আকৃষ্ট হন। দেহ ও মন পরস্পরের যোগসাজশে কীভাবে কাজ করে, সেই রহস্যও তিনি উদ্ঘাটন করতে চান। এভাবেই তাঁর মাধ্যমে বেরিয়ে আসে দেহ ও মনের দ্বৈতক্রিয়া, যা কার্তেসীয় ডুয়ালিজম নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীদের মধ্যে যাঁরা প্রথম এই বিশ্বাস স্থাপন করেন যে, আত্মাকেও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা যায়, দেকার্তে ছিলেন তাঁদেরই একজন। এর ফলে ধর্মযাজকরা দেকার্তের বইকে বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করেন। দেকার্তে বিশ্বাস করতেন যে, আমাদের মস্তিষ্ক একটি যন্ত্রের মতোই কাজ করে এবং তাঁর সমসাময়িক অধিকাংশ দার্শনিকের মতের বিপরীতে তিনি মনে করতেন যে, গণিত ও বলবিদ্যা মিলে আমাদের মনের অভ্যন্তরের রহস্যজনক ক্রিয়াকলাপও ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। পরবর্তীকালে বিংশ শতাব্দীতে অ্যালান ট্যুরিং পরিগণন বিজ্ঞান বা Computer Science-কে গাণিতিক জীববিদ্যা (Mathematical Biology) হিসেবে উন্নীত করেন – যে-ধারণাটি তিনি দেকার্তের লেখা থেকেই পেয়েছিলেন। শারীরবিদ্যায় তাঁর কাজ থেকেই প্রায় দুশো বছর পর জন্ম নেয় পরাবর্ত ক্রিয়া বা জবভষবী-এর ধারণা। দেকার্তের শারীরবিদ্যাবিষয়ক রচনাগুলো পাঠ করেই প্রখ্যাত রাশিয়ান শারীরতত্ত্ববিদ ইভান পাভলভ হয়ে ওঠেন তাঁর ভক্ত। হার্ভে যখন রক্তসঞ্চালন পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন, তখন দেকার্তে তাকে স্বাগত জানান। চিকিৎসাবিদ্যায়ও তিনি আগ্রহ দেখিয়েছিলেন, কিন্তু তাতে তিনি সফল হননি।
তবে আসল প্রশ্ন – প্রকৃতি সম্বন্ধে সত্য কীভাবে প্রতিভাত হয়? সত্য উপলব্ধির এই প্রশ্নটি নিয়ে প্লেটো-অ্যারিস্টটল থেকে আরম্ভ করে প্রাচীন ও মধ্যযুগের বহু বিচক্ষণ দার্শনিক চিন্তা করেছেন। দেকার্তে নিজে এই বিষয়ে দীর্ঘ বারো বছর চিন্তাভাবনা করেছেন। এই দীর্ঘ চিন্তার ফল রয়েছে তাঁর বই Discourse on Method-এ, বৈজ্ঞানিক চিন্তার ইতিহাসে যা এক অমূল্য সম্পদ। কলেবরে একটি ছোট বই হলেও এর প্রভাব ইউরোপের চিন্তাজগতে সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়েছিল পরবর্তী অন্তত দুশো বছর ধরে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানকে যুক্তির ওপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে দেকার্তেই ছিলেন অগ্রণী দার্শনিক। পরবর্তীকালে নিউটন ও লাইবনিজ যে-ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেছিলেন, তার ভিত্তি ছিল দেকার্তে। দেকার্তে তাঁর Principles of Philosophy-তে গতির তিনটি সূত্রের কথাও উল্লেখ করেন, যার ওপর ভিত্তি করেই নিউটনের গতিসূত্র তিনটি গড়ে উঠেছিল। তাঁর হাত ধরেই আলোকবিদ্যা (Optics) এগিয়ে যায় – প্রতিফলন ও প্রতিসরণের সূত্র এবং সূর্যালোকের সঙ্গে রংধনু যে ৪২০ কোণে দৃশ্যমান হয়, তা-ও আবিষ্কার করেন দেকার্তে। তরুণ নিউটনের ওপর সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান ছিল দেকার্তে ও গ্যালিলিওর প্রভাব। অবশ্য মহাবিশ্বের গতি ও পদার্থের বিবিধ ধর্মব্যাখ্যায় দেকার্তে এক অতীন্দ্রিয় ঘূর্ণাবর্তের (Vortices) কল্পনা করেন, যা কোনো পরীক্ষায় নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
সুপ্রাচীন অতীতের গ্রিক দার্শনিকদের সঙ্গে তাঁর নিজের চিন্তাভাবনার সমন্বয় সাধন করে তিনি অস্তিত্বের গাণিতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। সর্বোচ্চ শিক্ষালাভ ও বিদ্যার্জনের পরও দেকার্তের মনে হলো যে, তিনি যতই পড়ছেন, ততই তাঁর সন্দেহ ও অবিশ্বাস বেড়ে যাচ্ছে। দর্শন সম্পর্কে তিনি বলেন যে, এই শাস্ত্রের সবকিছুই অনিশ্চিত ও বিতর্কমূলক, সুতরাং এর মাধ্যমে কোনো সত্য নিরূপণের চেষ্টা করা বৃথা। কেবল গণিতের অভ্রান্ততা নিয়ে তিনি ছিলেন নিঃসন্দেহ। বীজগণিত ও জ্যামিতির সমন্বয় সাধন করে তিনি গণিতের যে নতুন বিভাগ, ‘কো-অর্ডিনেট জ্যামিতি’ আবিষ্কার করেন, তা বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিশেষ সহায়ক হয়েছে। তিনি দেখালেন যে, এই বিশ্ব শুধু কিছু অধিবিদ্যাগত মূল্যবোধ দিয়ে পরিচালিত হয় না, বরং তার ভিত্তিমূলে রয়েছে সুশৃঙ্খল বৈজ্ঞানিক নিয়ম-কানুন। তাঁর যুক্তির পথ ধরেই পদার্থবিদ্যা জন্ম দিতে সক্ষম হয় নিউটন, ম্যাক্স প্লাঙ্ক, আইনস্টাইনের মতো বড়মাপের পদার্থবিদের। আধুনিক যুগে আধ্যাত্মিকতার যে ভগ্নস্তূপের ওপর বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের সৌধমালা গড়ে উঠেছে, তার মূলে অবদান রয়েছে দেকার্তের যুক্তিবাদী দর্শনের। যদিও অনেকের অভিযোগ রয়েছে যে, দেকার্তের দর্শন সহায়তা করেছে নৈরাজ্যবাদী ও নিহিলিস্ট চিন্তাভাবনাকে, যে দর্শন বিলুপ্ত করতে চেয়েছে ভালো-মন্দের সীমানা এবং স্বতঃসিদ্ধ বলে মেনে নিয়েছে একমাত্র অস্তিত্বের যান্ত্রিক ব্যাখ্যাকে। তবে তাদের সংখ্যা নগণ্য।
সুইডেনের তরুণী সম্রাজ্ঞী ক্রিস্টিনা, যাঁকে দেকার্তে তাঁর চধংংরড়হং ড়ভ ঃযব ঝড়ঁষ বইটি উৎসর্গ করেছিলেন – একদিন ভাবলেন যে, এই চিন্তাশীল মানুষটির চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে তাঁর সময় অপচয় করার অধিকার তাঁর রয়েছে। তাই তিনি তাঁকে পেতে চাইলেন, যাতে তিনি দেকার্তের কাছে দর্শন শিক্ষা করতে পারেন। দেকার্তের যাত্রাপথে তাঁকে এগিয়ে নিতে পুরোদস্তুর একটি নৌবহর পাঠিয়ে দিয়েছিলেন সম্রাজ্ঞী। তাঁর ব্যস্ত দৈনন্দিন কার্যসূচি বজায় রেখে দর্শন শিক্ষার জন্য সময় নির্ধারিত হয় ভোর পাঁচটা। সুইডেনের চরম শীতে এ-সময়েই দেকার্তে পড়াতে যেতেন রাজপ্রাসাদে এবং এভাবেই আক্রান্ত হন ফুসফুসের সংক্রমণে। এভাবেই অসুস্থ হয়ে কিছুদিন পর দেকার্তে ৫৪ বছর বয়সে দেহত্যাগ করেন ১৬৫০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। তবে মৃত্যুর আগেই তিনি তাঁর সমাধির জন্য এপিটাফ রচনা করে গিয়েছেন – ‘মৃত্যু তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না, সারা পৃথিবী যাকে চেনে – যদিও সে নিজে তাকে চিনতে শেখেনি।’ বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, তাঁর মৃত্যুর অব্যবহিত পরই তরুণী সম্রাজ্ঞী, দেকার্তে যাঁকে আমৃত্যু শিক্ষা দিয়েছিলেন জ্ঞানকে ধর্মবিশ্বাসের ওপরে স্থান দিতে, তাঁর প্রদত্ত শিক্ষা ভুলে খ্রিষ্টীয় ক্যাথলিক ধর্মমতে দীক্ষা গ্রহণ করেন।
দেকার্তের মৃত্যুর পর তাঁকে সমাহিত করা হয়েছিল স্টকহোমের এক সাধারণ সমাধিক্ষেত্রে। কিন্তু ১৮১৯ সালে তাঁর সমাধি খুঁড়ে দেহাবশেষ স্থানান্তর করা হয় ফ্রান্সে, এবং তাঁর দেহাস্থি আবার সেখানে সমাহিত করা হয়। সেখান থেকে তাঁর কোনো এক অনুরাগী সংগ্রহে রাখার জন্য দেকার্তের করোটি সংগ্রহ করেন, যা বেশ কয়েকবার হাতবদল হয়ে মূল্যবান অ্যান্টিক হিসেবে ইউরোপে সমাদৃত হয়েছিল। এরপর ১৮২৫ সালে ফরাসি সরকার তা একজন সংগ্রাহকের কাছ থেকে কিনে নেয় পাঁচশো ডলারের বিনিময়ে। বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদের জনক দেকার্তের সেই করোটি এখনো শোভা পাচ্ছে প্যারিসের মানবজাতি মিউজিয়ামে।
বাংলার প্রাচীন জনপদসমূহের বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত জনপদগুলো✔️✔️
১. পুণ্ড্রঃ
বৃহত্তর বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার অংশ বিশেষ।
প্রাচীন বাংলার জনপদগুলাের মধ্যে অন্যতম হলাে পুন্ড্র। বলা হয় যে, পুন্ড্র বলে একটি জাতি এ জনপদ গড়ে তুলেছিল।
বর্তমান বগুড়া, রংপুর, ও দিনাজপুর অঞ্চল নিয়ে এ পুন্ড্র জনপদটির সৃষ্টি হয়েছিল।পুন্ড্রদের রাজ্যের রাজধানীর নাম ছিল পুণ্ড্রনগর। পরবর্তীকালে এর নাম হয় মহাস্থানগড়। মহাস্থানগড় প্রাচীন পুন্ড্র নগরীর ধ্বংসাবশেষ বলে পণ্ডিতেরা মনে করেন।
প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শনের দিক দিয়ে পুন্ড্রই ছিল প্রাচীন বাংলার সবচেয়ে সমৃদ্ধ জনপদ। পাথরের চাকতিতে খােদাই করা লিপি এখানে পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে প্রাপ্ত এটিই প্রাচীনতম শিলালিপি।
২. বরেন্দ্ৰঃ
,পাবনা, রাজশাহী বিভাগের উত্তর পশ্চিমাংশ, রংপুর ও দিনাজপুরের কিছু অংশ।
বরেন্দ্রী, বরেন্দ্র বা বরেন্দ্রভূমি নামে প্রাচীন বাংলায় অপর একটি জনপদের কথা জানা যায়।
এটিও উত্তরবঙ্গের একটি জনপদ। অনুমান করা হয়, পুরো একটি অংশ জুড়ে বরেন্দ্রর অবস্থান ছিল। বগুড়া, দিনাজপুর ও রাজশাহী জেলার অনেক অঞ্চল এবং সম্ভবত পাবনা জেলাজুড়ে বরেন্দ্র অঞ্চল বিস্তৃত ছিল।
৩. বঙ্গঃ
ঢাকা, ফরিদপুর, বিক্রমপুর, বাকলা (বরিশাল)।
‘বঙ্গ একটি অতি প্রাচীন জনপদ। বর্তমান বাংলাদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বঙ্গ জনপদ নামে একটি অঞ্চল গড়ে উঠেছিল। অনুমান করা হয়, এখানে বঙ্গ’ বলে একটি জাতি বাস করতাে। তাই জনপদটি পরিচিত হয় ‘বঙ্গ’ নামে।
প্রাচীন শিলালিপিতে বঙ্গের দুইটি অঞ্চলের নাম পাওয়া যায়—একটি বিক্রমপুর, আর অন্যটি নাব্য। বর্তমানে নাব্য বলে কোনাে জায়গার অস্তিত্ব নেই।
ধারণা করা হয়, ফরিদপুর, বাখেরগঞ্জ ও পটুয়াখালীর নিচু জলাভুমি এ নাব্য অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রাচীন বঙ্গ জনপদ ছিল খুব শক্তিশালী অঞ্চল। ‘বঙ্গ থেকে বাঙালি জাতির উৎপত্তি ঘটেছিল।
৪. গৌড়ঃ
মালদহ, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমান ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ।।
গৌড়’ নামটি সুপরিচিত হলেও প্রাচীনকালে ঠিক কোথায় গৌড় জনপদটি গড়ে উঠেছিল তা জানা যায়নি। তবে ষষ্ঠ শতকে পূর্ব বাংলার উত্তর অংশে গৌড় রাজ্য বলে একটি স্বাধীন রাজ্যের কথা জানা যায়।
সপ্তম শতকে শশাঙ্ককে গৌড়ের রাজ বলা হতাে। এ সময় গৌড়ের রাজধানী ছিল কর্ণসুবর্ণ। বর্তমান মুর্শিদাবাদ জেলায় ছিল এর অবস্থান। বাংলায় মুসলমানদের বিজয়ের কিছু আগে মালদহ জেলার লক্ষণাবতীকেও গৌড় বলা হতাে।
৫. সমতটঃ
বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চল।
পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় বঙ্গের প্রতিবেশী জনপদ হিসেবে সমতটের অবস্থান। কেউ কেউ মনে করেন, সমতট বর্তমান কুমিল্লার প্রাচীন নাম। গঙ্গা-ভাগীরথীর পূর্ব তীর থেকে শুরু করে মেঘনার মােহনা পর্যন্ত সমুদ্রকূলবর্তী অঞ্চলকেই সম্ভবত বলা হতাে সমতট।
কুমিল্লা শহরের ১২ মাইল পশ্চিমে বড় কামতা এর রাজধানী ছিল। কুমিল্লার ময়নামতিতে কয়েকটি প্রাচীন নিদর্শনের সন্ধান পাওয়া গেছে। শালবন বিহার এদের অন্যতম।
৬. রাঢ়ঃ পশ্চিম বাংলার দক্ষিণাঞ্চলের বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং মেদিনীপুর জেলা।
৭. হরকূল বা হরিকেলঃ
চট্টগ্ৰাম, পার্বত্য চট্ৰগ্ৰাম, ত্ৰিপুরা, সিলেট। সপ্তম শতকের লেখকরা হরিকেল নামে অপর একটি জনপদের বর্ণনা করেছেন। এ জনপদের অবস্থান ছিল বাংলার পূর্ব প্রান্তে। মনে করা হয়, আধুনিক সিলেট থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত এই জনপদ বিস্তৃত ছিল।
৮. চন্দ্ৰদ্বীপঃ
বরিশাল, বিক্ৰমপু্র, মুন্সীগঞ্জ জেলা ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল।
প্রাচীন বাংলায় আরও একটি ক্ষুদ্র জনপদের নাম পাওয়া যায়। এটি হলাে চন্দ্রদ্বীপ। বর্তমান বরিশাল জেলাই ছিল চন্দ্রদ্বীপের মূল ভূখণ্ড ও প্রাণকেন্দ্র। এ প্রাচীন জনপদটি বালেশ্বর ও মেঘনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ছিল।
৯. সপ্তগাঁওঃ খুলনা এবং সমুদ্ৰ তীরবর্তী অঞ্চল।
১০. তাম্ৰলিপ্তঃ
মেদিনীপুর জেলা। হরিকেলের দক্ষিণে অবস্থিত ছিল তাম্রলিপ্ত জনপদ। বর্তমান মেদিনীপুর জেলার তমলুকই ছিল তাম্রলিপ্তের প্রাণকেন্দ্র। সপ্তম শতক থেকে এটি দণ্ডভুক্তি নামে পরিচিত হতে থাকে।
১১. রূহ্ম/ আরাকানঃ কক্সবাজার, মায়ানমারের কিছু অংশ, কর্ণফুলি নদীর দক্ষিণা অঞ্চল।
১২. সূহ্মঃ গঙ্গা-ভাগীরথীর পশ্চিম তীরের দক্ষিণ ভূভাগ, আধুনিক মতে বর্ধমানের দক্ষিণাংশে, হুগলির বৃহদাংশ, হাওড়া এবং বীরভূম জেলা নিয়ে সূহ্ম দেশের অবস্থান ছিল।
১৩. বিক্রমপুরঃ মুন্সীগঞ্জ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল।
১৪. বাকেরগঞ্জঃ বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট।
রবীন্দ্র বিদ্বেষ ও রবীন্দ্রনাথের সুশৃঙ্খল সমালোচনা
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে যা বলেন তার সবটাই রবীন্দ্র বিদ্বেষ। এই রবীন্দ্র বিদ্বেষের একটা পরম্পরা আছে। পাকিস্তানি আমলে মুসলিমলীগ এবং পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সাম্প্রদায়িক মানসিকতা থেকে রবীন্দ্র বিদ্বেষ প্রচার করতেন। স্বাধীন বাংলাদেশেও সেই ধারার অনুগামী অনুসারীদের সংখ্যা কম নয়। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক মগজে কেবল স্বসম্প্রদায়ের লোকই উৎকৃষ্ট ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক সে যতই মেধাবী হোক, যতই মহত হোক, সততই সে পরিত্যাজ্য।
আমি বহুবার মুম্বাই গিয়েছি। অনেক বার যাওয়াতে সেখানকার কিছু স্থানীয় লোকজনের সাথে আমার সখ্য তৈরি হয়েছে। সেরকমই একজন, আনিস ভাই। প্রবীণ লোক। শিক্ষিত, ভদ্র, মার্জিত ও পুরোদস্তুর ধার্মীক। তিনি বংশ পরম্পরায় হেকিমি ধারার উত্তর পুরুষ। তার দোকানে পূর্ব পুরুষদের দু-তিন খানা তৈলচিত্র কাঠের ফ্রেমে শোভা পাচ্ছে। যারা সবাই নামজাদা হেকিম ছিলেন। আনিস ভাই আমার সাথে হিন্দি ইংরেজি মিলিয়ে কথা বলতেন। নানা প্রকার আতর সুরমা তার দোকানে বিক্রি হয়। আমাকে দেখলেই তার দোকানে ডেকে বসাতেন এবং প্রায় সময়ই দুধের মালাই খাবার অনুনয় করতেন, আমি সবিনয়ে তা প্রত্যাখ্যান করতাম। অবশ্য দু'একবার যে তার কথা রাখিনি তা কিন্তু নয়। বোধ করি, আমাকে পছন্দ করার অন্যতম কারণ, আমি মুসলিম বিধায়। তিনি আমাকে সব সময় ফুলহাতা শার্ট পরবার পরামর্শ দিতেন এবং হাফহাতা শার্ট যেন না পরি সেই পরামর্শও দিতে ভুলতেন না। একদিন আনিস ভাই আমাকে বললেন, মামুন, নজরুল অনেক বড়ো কবি? আমি তাকে বললাম, আপনি নজরুলকে চেনেন? তাঁর নাম যে আপনি জানেন তাতে আমি বিস্মিত ও একইসাথে আনন্দিত। তাকে আমি বললাম, বাঙলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথও খুব বড়ো কবি। আমার মুখ থেকে এই কথা শোনার সাথে সাথে আনিস ভাই বললেন, নানা, সে-তো হিন্দু! আমি তার কথায় অবাক হয়ে গেলাম! আর বুঝে নিলাম, আনিস ভাই ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতায় আচ্ছন্ন। শুধু হিন্দু পরিচয়ে (যদিও রবীন্দ্রনাথ পারিবারিকভাবে ব্রাহ্মধর্মের অনুসারী ছিলেন ) যারা রবীন্দ্রনাথকে বর্জন করে আসলে তারা কোনো বড়ো কবি বা লেখক বা মনীষীকে সন্ধান করে না, তারা খোঁজে কোনো সধর্মীকে যাকে নিয়ে তারা সাম্প্রদায়িক অহংকার করতে পারে। আমাদের এই বাংলাদেশেও আনিস ভাই এর মতো সাম্প্রদায়িক লোকের অভাব নেই। যারা রবীন্দ্রনাথকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতাকারী হিসেবে সাব্যস্ত ক'রে কোনো প্রকারের প্রমাণ ও যুক্তিহীনভাবে, তারা ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক। তৎকালীন পূর্ব বঙ্গের মুসলিম সম্প্রদায়ের একটা অংশও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলো, কিন্তু যেহেতু তারা ধর্ম পরিচয়ে মুসলিম তাই সেই সব বিরোধিতাকারীরা তাদের নামনিশানা পর্যন্ত নেন না। এই লেখাটির ইতি টানবো হুমায়ুন আজাদের নারী গ্রন্থে রবীন্দ্র বিষয়ক তাঁর মতামত দিয়ে :
" রবীন্দ্রনাথ, রুশো-রাসকিনের মতোই, পুরুষতন্ত্রের মহাপুরুষ ; এবং প্রভাবিত ছিলেন ওই দু'জন ও আরও অনেককে, দিয়ে। রোম্যান্টিক ছিলেন তিনি, এবং ছিলেন ভিক্টোরীয়; নারী, প্রেম, কবিতা, সমাজ, সংসার, রাজনীতি, জীবন, এবং আর সমস্ত কিছু সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিলেন তিনি পশ্চিমের রোম্যান্টিকদের কাছে; এবং সে- সবের সাথে মিশিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ভারতীয় ভাববাদ বা ভেজাল। রবীন্দ্রনাথের চিন্তায় মৌলিকতা খুবই কম; তাঁর সমাজ ও রাজনীতিবিষয়ক চিন্তার সবটাই বাতিল হওয়ার যোগ্য। রুশো ও রাসকিনের নারীবিষয়ক লেখার সাথে পরিচিত ছিলেন তিনি, বোঝা যায়; নারী সম্পর্কে তাঁর অনেক উক্তিই রুশো-রাসকিনের প্রতিধ্বনি। মিলের সাথেও পরিচিত ছিলেন, যদিও মিলের সাথে তাঁর মিল ছিলো না। ; তাঁর মিল ছিলো টেনিসনের সাথে এবং প্রিন্সেস এর নারীবিষয়ক ধারণা তিনি কাজে লাগিয়েছেন চিত্রাঙ্গদায়। তাঁর নারী ধারণা রোম্যান্টিক ; বাস্তব নারী তিনি দেখেছেন, তবে অনেক বেশি দেখেছেন স্বপ্নের নারী। রোম্যান্টিকের চোখে নারীমাত্রই তরুণী, রূপসী, মানসসুন্দরী,দেবী; আর তারা নিজেরা দেবতা। তারা অবাস্তব নারীর উপাসক, তারা জন্মজন্মান্তর ধ'রে স্তব ক'রে যেতে পারে লোকোত্তর নারীর; তবে বাস্তবে নারী তাদের কাছে গৃহিণী, সুন্দর ক'রে যাকে বলা হতো 'গৃহলক্ষ্মী'। রোম্যান্টিকেরা অহমিকায় ছাড়িয়ে যায় বিধাতাকেও, তারা মানসসুন্দরীর স্তব করলেও নিজেদের দেখে নারীর স্রষ্টা রূপে। রবীন্দ্রনাথও তাই দেখেছেন। রবীন্দ্রনাথ অপরূপ রূপসী নারীর স্তবগান করেছেন, কিন্তু নারীর বাস্তব অস্তিত্বও অনেক সময় স্বীকার করেন নি। রবীন্দ্রনাথ নারীকে দেখতে পছন্দ করতেন স্বপ্নে ও ঘরে, নারী স্বপ্নে থাকবে নইলে থাকবে ঘরে ; বাস্তবের অন্য কোথাও থাকবে না। দুই বোন ( ১৩৩৯ ) উপন্যাসের শুরুতে তিনি মন্তব্য করেছেন, 'মেয়েরা দুই জাতের, কোনো কোনো পণ্ডিতের কাছে এমন কথা শুনেছি। এক জাত প্রধানত মা, আর-এক জাত প্রধানত প্রিয়া।' কোনো কোনো পণ্ডিতের কাছে এটা তাঁর শোনার দরকার ছিলো না, এটা তাঁর নিজেরই কথা ; একটি পুরো উপন্যাস লিখেছিলেন তিনি একথা প্রমাণ করার জন্যেই। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাসী ছিলেন না নারীমুক্তিতে, যদিও তাঁর কোনো কোনো পংক্তি নারীবাদের ইশতেহারের মতো শোনায় ; তিনি বিশ্বাসী ছিলেন পুরুষতন্ত্রে ও পুরুষাধিপত্যে। ভিক্টোরীয় ঘরেবাইরে তত্ত্বে তাঁর আস্থা ছিলো দৃঢ় এ-নামে একটি উপন্যাস লিখে তিনি তা দেখিয়েছেন ; এবং নারীপ্রকৃতি ব'লে পুরুষতন্ত্র যে-উপকথা তৈরি করেছিলো, তিনি ছিলেন তাতে অন্ধবিশ্বাসী। রবীন্দ্রনাথের নারীধারণা রুশো-রাসকিন-টেনিসনের নারীধারণারই বাঙালি রূপ ; তাঁদের মতোই তিনি ভিন্ন ভাষায় কিছুটা ভারতীয় ভাবাবেগ মিশিয়ে প্রকাশ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ মিত্র ছিলেন না নারীর, ছিলেন নারীর প্রতিপক্ষের এক বড়ো সেনাপতি। তিনি চেয়েছিলেন নারীরা ঘরে থাকবে, স্বামীর সেবা করবে, সন্তান পালন করবে; তবে কিছু নারী থাকবে, যারা কবিতা পড়বে, আর হবে তাঁর মতো কবির একান্ত অনুরাগিণী। "
( নারী, পৃষ্ঠা ১১৬-১১৭ হুমায়ুন আজাদ )
কেন মুসলিম সভ্যতা গত ৭৫০ বছরে বিশ্বমানের একজনও সুপণ্ডিত সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়েছে? বিষয়টি নিয়ে মুসলমানেরা কি কখনও ভেবেছেন?
শুনে অবাক হতে হয় যে ইউরোপের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়া মুসলমানদের হাতে। কী আশ্চর্য তাই না? মুসলমানেরা যখন স্পেনের কর্ডোবা দখল করেছিল তখন তারা সেখানে আজহারের অনুকরণে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ল। যাঁরা সেখানে পড়ালেখা করল তাঁদের অনেকেই পরবর্তীতে প্যারিস য়ূনিভার্সিটির গোড়াপত্তন করল। এবং প্রথম দিককার পাঠ্যপুস্তক গুলো পর্যন্ত আরবী বই থেকে লাতিনে অনুবাদ করা। আজ আর আজহারের নাম কেউ করে না, করে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের। কারণ মুসলমানদের সৃজনী শক্তি খুব দ্রুত ফুরিয়ে গেল। তারা একসময় বুঝে গেল, তাঁদের সব কিছু করা হয়ে গেছে, নতুন করে কিছুই আর করবার নেই। তারা পুরানো পুঁজি ভেঙে খেতে শুরু করল। তারা নতুন করে কিছু শিখতেও অস্বীকৃতি জানালো। তারা অহংকারী হয়ে উঠলো। নিজেকে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ভাবা শুরু করল। পরকালের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইহকালকে অবজ্ঞা করতে লাগলো। তাই ইহকালের জ্ঞান বিজ্ঞান থেকে ক্রমেই পিছিয়ে গেল। ধর্মকর্ম পালনের মাধ্যমে নিশ্চিত ক্ষমা পাবার স্বপ্নে বিভোর হল।
নবম থেকে ত্রয়োদশ শতকে ইসলামের স্বর্ণযুগে বিজ্ঞান, দর্শন অথবা চিকিৎসা বিজ্ঞানে একমাত্র যারা বিশ্বমানের কাজ করেছিলেন তারা ছিলেন মুসলিম। মধ্যযুগের শক্তিশালী মুসলিম সভ্যতাই প্রাচীন জ্ঞানকে সংরক্ষন করে আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি বানিয়ে দেয়। মুসলমানেরা শুধু প্রাচীন জ্ঞানের সংরক্ষণই করে নি তারা বিপুল পরিমাণ উদ্ভাবনও করেছেন। সেই স্বর্ণালী ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলা মুসলমানদের জন্য আজ এক ট্রাজিক ঘটনা।
আজ এটাই কঠিন বাস্তবতা, আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি থেকে মুসলিম সভ্যতা অনেক পিছিয়ে। ১৩ শতকে আব্বাসী ডাইনাস্টি পতনের পর তারা নিস্তব্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকেই মুসলিম রক্ষণশীলতার পুনর্জাগরণ ঘটে। মুসলমানেরা অলৌকিকভাবে প্রকাশিত বিষয়কে যুক্তির উপরে এবং নিয়তিবাদকে মুক্তচিন্তার উপরে স্থান দেয়। তারা গণিত শাস্ত্রকে ইসলামবিরোধী বলে চিহ্নিত করে, নিশ্চিত করে বিষয়টি মনে উন্মত্ততা জাগিয়ে বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেয়। তারপর থেকেই লেখক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী সহ অন্যান্য পণ্ডিতদের বন্ধ হয়ে যায় সমস্ত সৃষ্টিশীল চিন্তা ও কাজ। ফলে মুসলমানেরা ক্রমেই পিছিয়ে যায় পশ্চিমা সভ্যতা তথা আধুনিক দুনিয়া থেকে।
চিন্তার এই বন্ধ্যাত্বের কারণেই আজ সারা পৃথিবীতে মুসলমানদের অবস্থা শোচনীয়। তারা দরিদ্র, অশিক্ষিত ও কান্ডজ্ঞানহীন। ১৫০ কোটি মুসলমানদের জন্য বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যদিও এদের দম্ভ দেখে স্তম্ভিত হতে হয়।
“আন্তর্জাতিক হিফজ কোরান প্রতিযোগিতায় সারা পৃথিবীতে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে বাংলাদেশের শিশু "তাকরীম”— এমন একটি খবর গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে। শঠ মানুষেরা নানা শঠ মতলবে শিশুটির এ অর্জনকে ওয়েপোনাইজ করেছে। কৌতুহল থেকে সামান্য অনুসন্ধান করে দেখলাম, এখানে একটি বিরাট শুভঙ্করের ফাঁকি লুকিয়ে আছে। বলা যায় এটি একটি গুরুতর মিডিয়া প্রতারণা।
আমাদের শিশুটি ওই প্রতিযোগিতায় একটি পুরস্কার পেয়েছে, কিন্তু এটি মোটেও ‘হিফজুল কোরান প্রতিযোগিতায় সারা পৃথিবীতে তৃতীয় স্থান’ অর্জনের পুরস্কার নয়।
কেন এই মিডিয়া প্রতারণা? উত্তর হল হীনমন্যতা থেকে। সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের নিয়ে জনগণের সর্বব্যাপ্ত উল্লাস দেখে ওরা ভীত হয়েছে। নিজেদের পরাজিত ভেবেছে।
তাহলে এটা কি পরাজয়ের প্রতিশোধ? দুটো প্রতিযোগিতা তো কোন মাপকাঠিতেই এক নয়। তাহলে ? উত্তর হল এটা ওদের হীনমন্যতায় ভোগার ফল। তারা জানেনা এভাবে কখনো মানসিক দীনতা ঘোচেনা। গ্লানি মোচন তো দূরের কথা। হীনতা নিয়ে বসবাস যাদের তারা কিভাবে মহৎ গৌরবের অংশীদার হবে ? মহত্ত্ব / গৌরব এই দুটো উপলব্ধি মোল্লতন্ত্রীদের থাকতে নেই। থাকার কথাও নয়।
নব জাগরণ, সংশোধন এবং বোধোদয় বা এনলাইটমেন্ট এই তিনটি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে মুসলমানরা যতদিন না যাবে, কোন আশায় নেই তাদের এই দুরাবস্থার পরিবর্তনের।
সম্ভব নয় উর্দুমে এক বাত হে “ পাহাড় কু ছাত টক্কর মত লে লিয়ে আজু বাজু দুছরা রাছ্তা মে জোর কদমমে নিকাল যাও ”
আকলমন্দ কে লিয়ে ইশারা কাফি! এ এক জগদ্দল পাথুরে বিশ্বাস ।
আধুনিক শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞান বঞ্চিত থাকার কারণে ১৫ শতক হতে মুসলমানেরা পশ্চিমা দুনিয়ার পদতলে, যখন থেকে অটোম্যানদের পতন ঘটে পশ্চিমা দুনিয়ার কাছে।
সহজেই অনুমান করা যায়, একই কারণে মুসলমানেরা পুনরায় বর্তমান দুনিয়ার রাইজিং সুপার পাওয়ারের আধিপত্যের অধীন হতে চলেছে পরবর্তী ৫০০ থেকে ১০০০ বছরের জন্যে।
রাজিক হাসান…
=====
সন্ধিপদ প্রাণী বলতেই আমরা যেন পতঙ্গ বা সাদা বাংলায় যাকে পোকামাকড় বলি তাদের কথা ভেবে বসি। আর মনে হয় যে এগুলি আর কি এমন প্রাচীন। কিন্তু ভাবলে অবাক হবেন যে ডাইনোসরদের যুগের আগেও এই ধরনের প্রাণীর দাপট ছিল পৃথিবীতে। আজ এমনই এক প্রাণীর কথা। যার নাম ট্রাইলোবাইট।
আজ থেকে প্রায় ৫২ কোটি বছর আগে অর্থাৎ প্রাক ক্যামব্রিয়ান যুগে উৎপত্তি হয়েছিল শক্ত খোলার ট্রাইলোবাইটের। ৪৫ কোটি বছর আগে অর্ডোভেসিয়ান যুগে এদের ভয়ঙ্কর প্রাচুর্য দেখা দিয়েছিল। সেই থেকে প্রায় ২৫ কোটি বছর এরা পৃথিবীতে টিকে থাকলেও আজ থেকে প্রায় ২৫ কোটি বছর আগে পার্মিয়ান যুগের মহা বিলুপ্তিতে পৃথিবীর প্রাণীজগতের একটি বড় অংশ যখন বিলীন হয়ে গিয়েছিল তখন ট্রাইলোবাইটের শেষ প্রজাতি পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। এইজন্য প্যালিওজোয়িক উপকল্পের নির্দেশক জীবাশ্ম বা index fossil হিসেবে ট্রাইলোবাইটকে ধরা হয়।
শালগ্রাম শিলার মতোই এই ফসিলটিও অতীতের মুনি ঋষিদের নজর এড়ায়নি বলেই মনে হয়। গরুর গাড়ির কাঠামোর মতো দেখতে শিলার বর্ণনা এই ফসিলকে কেন্দ্র করেই বলে ধারণা। যদিও এই ফসিল রাখলে ফলাফল ভালো হবে না বলে অভিমত 😁
"দুঃখঞ্চ শকটাকারে শূলাগ্রে মরনং ধ্রুবম"
খুব সুন্দর এবং দূর্লভ এই নমুনাটি সংগ্রহ করেছি Jyotirmoy এর সৌজন্যে। শকটাকার শিলা আজ দেখলেন আর ' নিশ্চয় -মরণের - কারণ' স্বরূপ শূলাগ্র শিলা বরং আরেকদিন দেখাব। সঙ্গের ছবিটি আমারই আঁকা, ট্রাইলোবাইট প্রানীটি যদি জীবন্ত থাকতো তাহলে তাকে দেখতে অনেকটা এমন লাগতো।
সম্রাট আওরঙ্গজেব ৪৯ বছর ধরে ভারত শাসন করেছেন। তাঁর সাম্রাজ্যের আয়তন ছিল ৪০ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার। বলতে গেলে, ভারতবর্ষের প্রায় সম্পূর্ণ এলাকা ছিল তার রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত। প্রজার সংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৮০ লক্ষ।
আওরঙ্গজেব বছরে রাজস্ব আদায় করতেন ৪৫০ মিলিয়ন ইউ এস ডলার। ঐ সময়ে ফ্রান্সের সম্রাট ছিলেন চতুর্দশ লুই। লুই এর চেয়ে আওরঙ্গজেব এর রাজ্যে দশগুণ বেশি রাজস্ব আদায় হত।
তাঁর অধীনে ভারতবর্ষের অর্থনীতি ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। ১৭০০ সালে তিনি ভারতবর্ষের অর্থনীতিকে ৯০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করেন। ভারতবর্ষের জিডিপি ছিল পুরো পৃথিবীর জিডিপির চার ভাগের এক ভাগ।
১৭০৭ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান আওরঙ্গজেব ৮৮ বছর বয়সে নিজের সম্পত্তির একটা উইল তৈরী করলেন। মৃত্যুর পরে উইলে দেখা গেল- তাঁর কাছে ১৪ রুপি আর নিজ হাতে বোনা কিছু টুপি আছে। এগুলো বিক্রি করে তাঁর জানাযা আর দাফনে খরচ করতে বলেছেন। আর সারাজীবন কুরআন শরীফ কপি করে ৩০০ রূপি জমিয়েছেন। এই টাকাগুলো
গরীবদের মাঝে দান করে দিতে বলেছেন।
দরবার আর রাজকোষে খোঁজ নিয়ে দেখা গেল- উইলের বাইরে সম্রাটের কোথাও কোনো সম্পদ নেই।
-সংগৃহীত
===========
বাংলাদেশ ভূখণ্ডে 'ইসলাম' আসার পূর্বে নিশ্চই এখানে সবাই হিন্দু এবং সনাতনী ধর্মের ছিল? আর হিন্দু বা সনাতনীরাই ছিল বাঙালি সংস্কৃতির মূল ধারক বাহক একটি জাতি গোষ্ঠী! পরে বখতিয়ার খলজির আক্রমণের মাধ্যমে যখন এই অঞ্চলে 'মুসলমানাইজেশন' প্রক্রিয়া শুরু হয়! তখন ধীরে ধীরে সনাতনী হিন্দু বাঙালিরা শুধু ধর্মটাই 'পরিবর্তন' করে 'মুসলমান' হয়েছে মাত্র! কিন্তু নিজস্ব 'বঙ্গীয় সংস্কৃতি' তারা আদৌ ত্যাগ করেনি! বা করতে পারেনি!
কারণ জাতিগত 'সাংস্কৃতিক' পরিচয় কোনো শাসকের তলোয়ারের কোপাকুপি দ্বারা তৈরী হয়না! ঠিক তেমনি এটি তলোয়ারের ভয়ে বিলুপ্তও হয়না! 'সংস্কৃতি' হলো একটা জাতির নৃ গোষ্ঠীও পরিচয়ের সাথে কানেক্টেড একটি ফেনোমেনা! এটির সাথে ধর্মের কুনু সম্পর্ক নেই! পৃথিবীতে হাজার হাজার ধর্ম 'বাটপার'রা তৈরী করেছে নিজ ক্ষমতার স্বার্থে! অতঃপর অসংখ্য ধর্ম বিলুপ্তও হয়েছে! কিন্তু 'সংস্কৃতি' কুনু ধর্মগুরুরা বা 'আইডিওলোজি' দ্বারা তৈরী হওয়ার বিষয় নয়! 'সংস্কৃতি' ধীরে ধীরে গড়ে উঠে মানুষের নৃতাত্বিক বৈশিষ্ট, মনন, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও অভ্যাসের অনুষঙ্গ দ্বারা বিভিন্ন জাতি ও উপজাতী পরিচয়ে!
আরব জাতি খুবই 'ভাগ্যবান' এই অর্থে যে, তারা 'ইসলাম' ধর্মে রূপান্তরিত হওয়ার পরেও! তাদের হাজার বছরের পুরোনো আরবীয় সংস্কৃতির এক চুল পরিমানও 'পরিবর্তন' করতে হয়নি! কারণ ইসলাম ধর্ম তৈরী হয়েছে আরব সংস্কৃতির ভিতর থেকেই! ঠিক একইভাবে, আল্লাফাক যদি নবীকে বাংলাদেশে পাঠাইতেন! তাহলে কোরানের ভাষা হতো বাংলায়! পবিত্র ফল হতো আম অথবা কাডল! বেহেস্তি মাছ হতো পদ্মার ইলিশ! জান্নাতের হুরদের পরনে থাকতো সোনা রুপার সুতা দিয়ে তৈরী ঢাকার মসলিন শাড়ি, ইত্যাদি কাহিনী!
আর পয়লা বৈশাখ বা মঙ্গল শোভাযাত্রাকে হয়তো আল্লাহ একটি 'বেহেস্তি' উৎসবের মর্যাদাও দিয়ে দিতেন! আর এতে নবীপাক থাকতেন মঙ্গল শোভাযাত্রার পুরোভাগে, এগারো বিবি সমেত (অবশ্য বোরকা পরিয়ে) দাসী সহ, হাতে থাকতো লেম (কুপি) অথবা মশাল বাত্তি!
-----------
বদমেজাজি লোকের সাথে থাকলে মনে হবে রেগে যাওয়াটাই বাহাদুরি। মূর্খের সাথে থাকলে মনে হবে হাতে বই থাকার চেয়ে আইফোন রাখাটাই বেশি জরুরি। শান্ত মানুষের সান্নিধ্য আপনাকে শিখাবে কিভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে হাসিমুখে নিজেকে কন্ট্রোল করতে হয়। জ্ঞানী মানুষের সাথে থাকলে আপনি হয়ে উঠবেন একজন বিনয়ী, মার্জিত, ভদ্র ও কৃতজ্ঞতাবোধ সম্পন্ন ভালো মানুষ।
নেগেটিভ মানুষের সঙ্গ আপনাকে সবকিছুকে খারাপ ভাবতে শিখাবে। হতাশাবাদী মানুষের পাশে থাকলে দুনিয়াটা বিষাক্ত মনে হবে। পজিটিভ মাইন্ডের মানুষ আপনাকে শিখাবে সমস্যার মাঝেও কিভাবে সম্ভাবনা তৈরি করতে হয়, জীবনের সুখগুলো কোথায় তৈরি হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া এডিক্টেট কারো কাছে থাকলে মনে হবে লাইক কমেন্ট পাওয়াটাই পপুলারিটি। ভালো মানুষের কাছে থাকলে মনে হবে ভালো কাজ করতে পারাটাই আসল পরিচিতি।
একজন মানুষ যতবার প্রার্থনা করে, ততবার সে তার ভাগ্যকে বদলে ফেলে - এই উপলব্ধি আসবে একজন ধার্মিক মানুষের কাছে থাকলে। কার সাথে মিশবেন সিদ্ধান্ত আপনার। (
ঘসেটি বেগমের ঢাকার দিনগুলো এবং বেঈমানীর অনুশোচনা।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পেছনে দায়ী তাঁর সেনাপতি মীর জাফর ও খালা ঘসেটি বেগম। ঘসেটি বেগমের জীবনের শেষ দিনগুলো কেটেছে ঢাকার কেরানীগঞ্জে অবস্থিত জিঞ্জিরা প্রাসাদে। ঘসেটি বেগম ইতিহাসবিদদের মনোযোগ তেমন পাননি, যে কারণে তার ঢাকা জীবন সম্পর্কে তেমন তথ্য পাওয়া যায় না।
ঘসেটি বেগম দেখতে কেমন ছিল তার সচিত্র উল্লেখ তেমন নেই। 'আমি সিরাজের বেগম' গ্রন্থে সিরাজের স্ত্রী লুৎফার বয়ানে তাকে 'সুন্দরী, চতুর, আভিজাত্যপূর্ণ, বদমেজাজি ও উচ্চাভিলাষী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পলাশী যুদ্ধের পর তিনি নিজেও শিকার হয়েছেন প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের। মীর জাফর নবাব হয়ে ঘসেটি বেগমকে বন্দি করেন। কিছুদিন হীরাঝিলে রেখে ঢাকার জিঞ্জিরা প্রাসাদে স্থানান্তর করেন। সেখানে তার সঙ্গে সিরাজের মা, স্ত্রী, কন্যাসহ অনেকজন নারীকেই রাখা হয়। ১৭৬০ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এখানেই বন্দি ছিলেন ঘসেটি বেগম।
তার মৃত্যু নিয়ে দুই রকম তথ্য প্রচলিত। কোথাও বলা হয়, মুর্শিদাবাদে ফিরিয়ে নিয়ে তাকে হত্যা করা হয়, তার কবরও সেখানেই। বাংলাপিডিয়া মতে, ১৭৬০ সালে মীর জাফরের ছেলে মীরনের পরিকল্পনায় ঘসেটি বেগম ও আমিনাকে মুর্শিদাবাদে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলে, বুড়িগঙ্গায় একটি বজরায় তুলে যাত্রা শুরুর কিছু পরে মাঝনদীতে বজরাটি ডুবিয়ে দেয়া হয়।
তার আসল নাম মেহের-উন-নিসা বেগম। তিনি আলীবর্দী খানের তিন মেয়ের মধ্যে প্রথম। তার বিয়ে হয় চাচাতো ভাই নওয়াজিস মুহাম্মদ শাহমাত জং এর সঙ্গে, যিনি ঢাকার নায়েবে নাজিম ছিলেন। আলীবর্দী খানের প্রাসাদে তিনি এত প্রভাবশালী ছিলেন যে আলীবর্দী খানের তিন মেয়ের মধ্যে একমাত্র তারই আলাদা প্রাসাদ ছিল। হীরাঝিলের মতোই প্রাসাদের নাম ছিল মতিঝিল। তার ছিল রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা, প্রবল ব্যক্তিত্ব এবং রাজনৈতিক প্রভাব।
আলীবর্দী খানের কোন ছেলে ছিল না। তিনি ছোট মেয়ে আমিনার বড় ছেলে সিরাজউদ্দৌলাকে তাঁর উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। কিন্তু ঘসেটি চেয়েছিলেন তার পালকপুত্র এবং সিরাজের ভাই ইকরামউদ্দৌলাকে যিনি অল্প বয়সে গুটিবসন্তে মারা যান।পরে তিনি মেজবোনের ছেলে শওকত জংকে সিংহাসনে বসাতে চেষ্টা করেন। উত্তরাধিকার বিষয়ে তার মতামত গুরুত্ব না পেলেও বড় মেয়ে হিসেবে আলীবর্দী খানের কাছে তিনি গুরুত্ব পেতেন। তার সুপারিশে কেউ পদ হারিয়েছে, কেউ ক্ষমতার কেন্দ্রে এসেছে। ১৭৫৫ সালে স্বামীর মৃত্যুর হলে প্রচুর অর্থের মালিক হোন। তার স্বামী ঢাকার নায়েবে নাজিম থাকলেও ঢাকা পরিচালনা করতেন তিনি। ঢাকার শাসনভার ছিল প্রকৃতপক্ষে ঘসেটি বেগম ও বিশ্বস্ত দেওয়ান, অনেকের মতে প্রণয়ী, হোসেন কুলি খানের হাতে। কারণ নওয়াজিস ছিলেন দুর্বল প্রকৃতির লোক।
সিরাজউদ্দৌলার সেনাপতি মীর জাফর ছিলেন আলীবর্দী খানের সেনাপতি। তরুণ নবাবের সঙ্গে ব্যক্তিত্বের সংঘাতে তাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্রে নামে সে। সঙ্গে যোগ দেয় ঘসেটি বেগম, ব্যবসায়ী জগৎ শেঠ ও উমিচাঁদ। সবারই ছিল অভিন্ন উদ্দেশ্য, নবাবকে উৎখাত। অবশেষে ১৭৫৭ এর ২৩শে জুন পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের কাছে হেরে যান সিরাজউদ্দৌলা
শ্রী পারাবাতের লেখা 'আমি সিরাজের বেগম' গ্রন্থে বলা হয়, পলাশীর যুদ্ধ শেষ হওয়ার খবর মুর্শিদাবাদে পৌঁছার পরই ঘসেটি বেগম 'নিজের ভুল' বুঝতে পারেন। পরাজিত নবাব তখনো হীরাঝিলে এসে পৌঁছাননি। সে সময় ঘসেটি বেগম নবাব-পত্নী লুৎফাকে সতর্ক করেছিলেন, 'যেভাবে, যে পথেই তাঁরা পালান, যেন নদীপথে তাঁরা না যান।' লুৎফা প্রথমবারের মত ঘসেটি বেগমের চোখে মাতৃত্বের ছায়া দেখেছিলেন। তার বয়ানে তিনি বলছেন, 'হয়ত নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন ঘসেটি বেগম'।
ফ্রেডারিক হার্বাট (J.F Herbart) শিক্ষানীতি :
জন ফ্রেডারিক হার্বাট ১৭৭৬ সালে জার্মানির ওল্ডেনবার্গ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন আইনজ্ঞ ও তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ১৬ বছর বয়সেই তিনি কান্টের দর্শন আয়ত্ত করেন।
হার্বাট বস্তুত হেগেলের দর্শনে অনুপ্রাণিত ছিলেন। তাই শিশুর ভবিষ্যত নির্ধারণের জন্য সমাজে অতীতকে জানার ভীষণ প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করেন। বিচিত্র অভিজ্ঞতা পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষাক্রম রচনা ও শিক্ষাদানকে তিনি কৃষ্টিতত্ত্ব নামে অভিহিত করেছেন।
তিনি অন্যান্য শিক্ষাবিদদের মতো মনে করতেন যে আগ্রহ ছাড়া শিক্ষা হয় না। তাই শিক্ষাদান পদ্ধতিতে আগ্রহ সৃষ্টি করা অতীব জরুরি যা মোটেই সহজ নয়। যে শিক্ষক শিক্ষার্থীর পাঠের প্রতি যত আগ্রহ তৈরি করতে সক্ষম তিনি ততো বেশি সার্থক শিক্ষক। শিক্ষাদান ঘটলেই মেধার বিকাশ পরিপূর্ণ হয় না উদ্বুদ্ধ হবার অভাবে প্রচেষ্টায় ভাটা পড়লেই শিক্ষার্থী পিছিয়ে যাবার সম্ভবনা নিশ্চিত।
তাঁর মতে শিক্ষার্থীর কাছে পাঠ এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে তার মানসিক প্রকৃতি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তা গ্রহণ করে পূর্ব অভিজ্ঞতার সাথে যোগসূত্র স্থাপন করতে পারে। তার জন্য প্রয়োজন বিষয়বস্তুর সঠিক নির্বাচন ও সঠিক পদ্ধতিতে উপস্থাপন।
শিক্ষাক্রমে বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও তাদের কিছু না কিছু মৌলিক ঐক্য ও যোগসূত্র রয়েছে। এই যোগসূত্রগুলো চিহ্নিত করে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে দেয়াই অনুবদ্ধ তত্ত্ব। এটি অত্যন্ত কার্যকরী মতবাদ, পদ্ধতি। এজন্যই দেড় শতাব্দী ধরে এগুলো বিভিন্ন দেশে অনুসৃত হয়ে আসছে।
মিউজিক থেরাপি/ আর্ট থেরাপি
বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা যায় যেসব শিশুর ১১ বছরের আগে যদি বাবা বা মাকে হারায়, বড় হয়ে তার বিষণ্ণতা বা অবসাদে ভোগার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেক বেশী। এ ছাড়াও বড় ধরণের কোন লোকসান হলে বা খুব কাছের কেউ মারা গেলে, অবসর নিলে, চাকুরী থেকে বরখাস্ত হলে, ভালোবাসায় বিচ্ছেদ বা রেজাল্ট আশানুরূপ না হলেও মানুষ বিষাদগ্রস্ত হয়। একজন ব্যক্তি কেন এই বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হবে তা নির্ভর করে সে কোন কারণটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে তার উপর।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, দু:খ - বেদনা, মানসিক আঘাত দেহের মধ্যে বিষাক্ত অনু বা টক্সিন তৈরি করে, এই অনুগুলোকে শরীর থেকে বের করে দেয়া জরুরি। "কান্না"র মাধ্যমে এই বিষাক্ত অনুগুলোকে শরীর থেকে বের করে দেয়া যায়। মানসিক চাপ মানুষের শরীরে ভারসাম্য নষ্ট করে, আর কান্নার মধ্য দিয়ে সেই ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করা সম্ভবপর হয়। যিনি কাঁদতে পারেন না, মানসিক চাপ তার শরীরেই রয়ে যায়।
যদিও অনেকে কান্নাকে দুর্বলতা মনে করেন, লজ্জাজনক ব্যাপার বলে আখ্যায়িত করেন। কেউ কেউ কান্নাকে মেয়েলী আচরণের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন। পৌরুষদীপ্ত পুরুষ কান্নাকে কোমল ব্যক্তিত্বের আধার মনে করেন। যা সম্পূর্ণ ভুল। কান্না হচ্ছে একটি মানবিক বৈশিষ্ট্য যা সহানুভূতি ও মমত্বকে আকর্ষণ করে। আর অশ্রু মমত্ব বাড়ায়। তাই মন খুলে কাঁদা উচিত কষ্ট পেলে, আঘাত পেলে। এর তীব্রতা যত বেশী হয়, দু:খ তত লাঘব হয়। আর যে কাঁদতে পারেন, তার কষ্ট তত কম স্থায়ী হয়।
অন্তর্মুখী ব্যক্তিদের দেখা যায়, তারা নিজের কষ্ট বা মনখারাপ করা অবস্থা অন্যদের সাথে শেয়ার করতে কুণ্ঠাবোধ করে, নিজেদের একটি বলয়ের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখে।
তারা যদি নিজেদের কারো সাথে শেয়ার করতে পারেন তবে এই বিষাদ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারেন।
বর্তমানে বিষাদ বা অবসাদ থেকে মুক্তি পেতে আর্ট থেরাপি অত্যন্ত ফলপ্রসূ। এইক্ষেত্রে ব্যক্তি ছবি আঁকার মধ্য দিয়ে তার কষ্টগুলোকে দূর করতে পারেন। এটি ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির একটি উপায় বলা যেতে পারে।
যত বেশী একাগ্রতা নিয়ে তিনি কাজ করবেন, ততোই তার মধ্য থেকে বিষন্ন অনুভূতিগুলো দূরীভূত হবে। সম্প্রতি বেশকিছু গবেষণায় দেখা গেছে সঙ্গীত বা মিউজিক বিষণ্ণতা কমাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে ইন্সট্রুমেন্টাল মিউজিক খুবই কার্যকর।
মিউজিক মস্তিষ্কের অকেজো কোষগুলোকে চনমনে, স্বাভাবিক করে তোলে, মনকে ভালো করে দেয়। নিয়মিত ২৫ মিনিট গান শুনলে ব্যাক পেইন কমে যায়। ডেনমার্কের আরহাস বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক গবেষণা বলেছে মেজাজ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে মিউজিক। মূলত মস্তিষ্কের ডোপামিনের প্রভাবে এটি ঘটে থাকে। উচ্চ রক্তচাপ, ডিপ্রেশন, ঘুমে জড়তা বা স্মৃতি লোপের মতো অসুখ সারাতে মিউজিকের বিকল্প নেই।
মনোযোগের স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়। এমন কি অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা যদি নিয়মিত মিউজিক শোনেন তাহলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ সুন্দর হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, গান শোনার পর ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ও মনোযোগ বেড়ে গেছে।
পেষ্টালৎসী(J.H. Pestalozzi)-এর শিক্ষাক্ষেত্রে অবদান :
হেনরিক পেষ্টালৎসী। যিনি ১৭৪৬ সাথে সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরে জন্মেছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন ডাঃ, যাকে খুব ছোটবেলায় তিনি হারান। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে তিনি কলেজে ভর্তি হন আর এখানেই রুশোর ভাবধারায় সাথে পরিচিত হন। প্রথম জীবনে তিনি আইন ব্যবসায়, পরে কৃষি- খামার স্থাপন করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনটাতেই থিতু হতে পারেননি। পরে তিনি শিক্ষকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন। ১৭৭৪ সালে অবহেলিত শিশুদের নিয়ে নিউহোফে একটি স্কুল স্থাপন করেন, যা আর্থিক সংকটের দরুণ বেশীদিন চলেনি।
কিন্তু মানব সন্তানকে মানুষে পরিণত করার চিন্তা তাকে সবসময় তাড়া করতো। তিনি তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুপ্রেরণায় বই লিখতে শুরু করেন। তাঁর লিখিত বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো Evening House of a Hermit এবং Leonardo and Gertrude তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়। তাঁর মতে, সন্তানদের শিক্ষার ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর সঠিক লালন-পালন ও বেড়ে উঠা যদি ঠিকমতো হয়, তবেই শিশুর মেধার বিকাশ হবে দ্রুত ও তাৎপর্যপূর্ণ।
শিশুর বিকাশের প্রতিটি স্তরের ধারাবাহিক পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে তিনি শিশুর শিক্ষার ব্যবস্থা করার উপর জোর প্রদান করেন। তিনি মনে করতেন শিশুর প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে তার শিক্ষালাভ হবে। তিনি শিশুদের শাস্তিদানের ঘোরবিরোধী ছিলেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষাদানকে তিনি আদর্শ পদ্ধতি মনে করতেন।তিনি শিশুকে চারাগাছ আর শিক্ষককে মালির সাথে তুলনা করেছেন, এই নীতিকে ভিত্তি করেই তিনি সারাজীবন কাজ করে গেছেন।
------------================
স্বপ্ন সমাচার
প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড বলেছেন, আমাদের মনের এক তৃতীয়াংশ থাকে মনের সজ্ঞান স্তরে, আর বাকী দুই তৃতীয়াংশ নিমজ্জিত থাকে মনের নির্জ্ঞান স্তরে যার কথা আমরা জানতেও পারি না। এই স্তরে আমাদের এমন সব জন্মগত প্রবৃত্তি বা ইচ্ছাসমূহ অবস্থান করে যা অতি কুৎসিত, জঘন্য এবং এগুলো কখনোই সজ্ঞান স্তরে গ্রহণযোগ্য নয়। আর স্বভাবতই এগুলো সজ্ঞান স্তরে প্রবেশের কোন সুযোগ পায় না। তাই আমাদের অবদমিত কামনা- বাসনা, ভয় স্বপ্নের ভেতরে কোন সাংকেতিক আকারে হাজির হয়। ফলে স্বপ্নের চরিত্র ও ঘটনা তাই অনেক সময় বাস্তবতা বিবর্জিত হয়। আমাদের ইচ্ছেগুলো ছদ্মবেশী রূপে আত্মতৃপ্তির জন্য স্বপ্নের সৃষ্টি করে। ফলে স্বপ্নের অনেক ঘটনা ও চরিত্রই আমাদের কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে হয় না।
আপনি যখন মনে প্রাণে কারো কথা ভাবছেন বা মিস করছেন, দেখা গেল সে আপনাকে কল করেছে বা সে আপনার বাসায় এসেছে, তো কী বলবেন কাকতালীয়? এমনও হয়েছে কোন এক জায়গায় আপনি প্রথম গেছেন, অথচ কেনো যেন মনে হয়েছে, এই জায়গা আপনার ভীষণ চেনা, মনে হয় কতোবার এখানে আসা হয়েছে। তো কী বলবেন? জীবনে ব্যাখ্যারও অতীত কিছু জিনিস আছে। যা সম্পর্কে সত্যিই কোন ব্যাখ্যা নেই। আপনার নতুন বন্ধু যে আপনার সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না, অথচ এমন কিছু কথা বললো যা তার জানার কথা নয়, যা শুধু আপনি জানেন। আপনি কারো সাথে শেয়ারও করেননি। কিভাবে সম্ভব? এটাই হচ্ছে টেলিপ্যাথি। কিছু মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই এই প্রবণতা নিয়ে জন্মায়। মনের কথা জানা বা অনুমান করার এই অদ্ভুত ক্ষমতাই হচ্ছে টেলিপ্যাথি। এরা এই ক্ষমতাবলে বুঝে নিতে পারে পাশের মানুষের মানসিক অবস্থা, বলে দিতে পারে তার না বলা কথাটি। অনায়সে ঢুকে যেতে পারে অন্যের চিন্তা ভাবনার মধ্যে। আর আমি মনে করি প্রত্যেকের মধ্যে অল্প বিস্তর এই প্রবণতা আছে, যে ব্যাপারে আমরা সচেতন নই।
মৃত্যুদণ্ড খুবই নিম্নমানের একটা শাস্তি। কারণ সেটা অপরাধীকে মুক্তি দেয় আর শাস্তি দেয় কিছু নিরপরাধ মানুষদের। যেমনঃ মা,বাবা,ভাই,বোন, বউ, ছেলেমেয়ে আত্মীয়স্বজন।
গুড ফ্রাইডে হোলি ফ্রাইডে ::-----
গুড ফ্রাইডে বা হোলি ফ্রাইডে মূলত খ্রিষ্টানদের দ্বারা পালিত একটি ধর্মীয় ছুটির দিন। (ইংরেজি: Holy Friday, "পবিত্র শুক্রবার"), ব্ল্যাক ফ্রাইডে (ইংরেজি: Black Friday, "কালো শুক্রবার") বা গ্রেট ফ্রাইডে (ইংরেজি: Great Friday, "মহান শুক্রবার")। যিশু খ্রিষ্টের ক্রুসবিদ্ধকরণ, মৃত্যু ও সমাধিমন্দির থেকে তাঁর পুনরুজ্জীবনের স্মরণে এই উৎসবটি পালিত হয়। ইস্টার রবিবারের পূর্ববর্তী শুক্রবারে এই উৎসব পালিত হয়। যিশুর বিচারের শাস্ত্রীয় বিবরণীগুলি থেকে অনুমিত হয় যে তাঁকে সম্ভবত শুক্রবারে ক্রুসবিদ্ধ করা হয়েছিল।
==
=======
হেরাক্লিটাস ছিলেন একজন সক্রেটিস-পূর্ব গ্রিক দার্শনিক। হেরাক্লিটাসের একটি চমৎকার উক্তি আছে, “Dogs bark at what they cannot understand.” জীবনে চলার পথে মানুষ আপনাকে নিয়ে নিন্দা করবে, সমালোচনা করবে। তারা চাইবে আপনাকে প্রতিহত করতে, বিরক্ত করতে। এসব মানুষের দ্বারা আপনি বার বার ঝুকির সম্মুখীন হবেন। কুকুররা যখন কোন কিছু বুঝতে অক্ষম হয়, তখন ঘেউ ঘেউ করে।
=====
বাঙলা সংস্কৃতির পোশাক?
পাঞ্জাবী পাঞ্জাবের পোশাক। আফগানিস্তান, পাকিস্তান ঘুরে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি ৫০০ বছরের অধিক সময় বাংলায় পরিধেয় হয়ে আসছে। পূর্বে পাঞ্জাবীর সাথে ধুতি পরা হতো। কারণ ধুতি ছাড়া পরিধেয় কোন পোশাক ছিলো না।পরবর্তিতে পায়জামা আসার পর পায়জামা ধুতির স্থান দখল করে। হিন্দু দাদারা যেহেতু ধুতি পরে, তার বিপরিতে পায়জামার চল মুসলিম সমাজে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। কিন্তু পাকিস্তান হওয়ার আগ পর্যন্ত মুসলিমদের আনেকেই ধুতি পড়ত। যেমন-কবি কাজী নজরুল ইসলাম পাঞ্জাবীর সাথে সর্বদা ধুতি পরতে পছন্দ করতেন। উল্লেখ্য, পায়জামা হল ইরানী পোশাক।
.
লুঙ্গি তামিল নাড়ুর পোশাক। শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া সব ঘুরে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে ১০০ বছরের কিছু বেশিকাল লুঙ্গি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সে সময় রেঙ্গুন থেকে লুঙ্গি আমদানি হতো। লুঙ্গির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে বাঙালী মুসলমান সমাজ হিন্দুদের সাথে বেশভূষার পরিবর্তন ঘটাতে ধুতি পরিত্যাগ করে লুঙ্গীকে নিজেদের পরিধেয় হিসেবে গ্রহণ করে।
তাহলে চার হাজারের বেশি সময় ধরে যে "বঙাল" বা "বাঙ্গালা" জনপদ গড়ে উঠেছিলো তাদের পোশাক কি ছিলো!
বাঙ্গালীরা সেলাই বিহীন পোশাক পরতো। এর কারণ তখনো সুঁই নামক বস্তু আবিষ্কৃত হয়নি। চরকায় বোনা সুতো আর তাঁতে বোনা সেলাইবিহীন মোটা কাপড় ছিলো তাদের পরিধেয়। পুরুষদের পোশাক ছিলো খাটো ধুতি, কাধে গামছা, কখনোবা চাদর, শাল, আর নারীদের শাড়ি। এগলো সব সেলাইহীন পোশাক। বাংলার সহজিয়া সম্প্রদায়সহ আনেক ধর্মীয় গোষ্ঠী (আমাদের সহজিয়া কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ) এখনো সেলাহীন পোশাক পরে।
এদেশে লুঙ্গী আসার পর থেকে ধুতি হিন্দুয়ানী পোশাক আর লুঙ্গি মুসলমানদের পোশাক বলে মগজে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। এখনও ধুতির নাম শুনলে বাংলাদেশের মুসলিমরা এটাকে শুধু দাদাবাবুদের পোশাক বলে মনে করে, নিজেদের পোশাক বলে কল্পনাও করতে পারে না। তবে মজার ব্যাপার হল বাঙালী হিন্দুসমাজেও ধুতি হারিয়ে গেছে। শ্রাদ্ধ, বিয়ে, পূজা ছাড়া এখন আর কাউকে ধুতি পরতে দেখা যায় না। বাংলা সংস্কৃতির সবচেয়ে পুরোনো পোশাকটিই হারিয়ে গেছে ধর্মীয় বিভেদের জালে পড়ে।
.
পহেলা বৈশাখে যারা বাঙালীয়ানা দেখাতে পায়জামা, পাঞ্জাবী, ফতুয়া, লুঙি পরে বেরুন, তাদের পোশাক কি আদৌ বাঙালী পোশাক? নাকি ধার করা সংস্কৃতি?
একইভাবে বিদেশী বণিকরা এসে বাংলার মানুষকে কোট-প্যান্ট পরতে শিখিয়ে গেছে, তবে সেগুলোকেই আজও বাঙালীরা নিজেদের পোষাক বলে মনে করে না।.
বাঙালি মেয়েদের আদি পোষাক শাড়িও হচ্ছে সেলাইহীন পোষাক।
সুতা এবং কাপড় বোনার শিল্প ভারতবর্ষে এসেছিল মেসোপটেমিয়ান সভ্যতা থেকে। সিন্ধু উপত্যকার নারী-পুরুষ সুতা বুনত । ভারতে সুতা প্রথম চাষ ও বুনন শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে। ঐ সময় সুতায় যে রঙ ব্যবহার হতো, তা এখনো ব্যবহার করা হয়; যেমন- নীল গাছ বা হলুদ থেকে পাওয়া রং।
শাড়ির সর্বপ্রথম চিত্রায়ন পাওয়া যায় সিন্ধু প্রদেশের এক পুরোহিতের প্রস্তর মূর্তিতে। সিন্ধু উপত্যকার লোকেরা দীর্ঘ কাপড়ের টুকরা কোমরবন্ধ হিসেবে ব্যবহার করতো।
আর্যরা যখন প্রথম দক্ষিণ ভারতের নদী অববাহিকায় আসে, তখন স্থানীয় অধিবাসীদের থেকে তারা প্রথম সুতায় বোনা লম্বা কাপড় পরিধানের অভ্যাস শুরু করে।
সিন্ধু এলাকার মহিলাদের এই কটিবন্ধ কাপড়ের নাম ছিল নিভি (Nivi)। মহিলাদের এই কটিবন্ধ নিভি-ই হল শাড়ির অগ্রদূত। পরবর্তীতে কাঁচুকি (Kanchuki) নামে এক টুকরা কাপড় শরীরের উপরের অংশে জড়িয়ে পরার প্রচলন নারীদের মধ্যে ছিল, যা থেকে ব্লাউজের প্রচলন শুরু হয়।
পরবর্তীতে কারুকাজ ও নকশার উন্নতি এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই এই সেলাইবিহীন কাপড়ের দীর্ঘ তিন খন্ডে বিভক্ত হয়- নীভি কোমর ও নিম্নাংশ জড়িয়ে থাকতো এক টুকরো, কাচুকি উপরের অংশে থাকতো আর এক টুকরো এবং তৃতীয় টুকরো শালের মতো দীর্ঘ কাপড়টাকে বলা হত উত্তরীয়।
পুরাণের যুগে এবং সাহিত্যের যুগে মেয়েদের মধ্যে শাড়ির একটা অংশ মাথায় তোলার কোনো প্রচলন ছিলনা।
শাড়ির এই পথ চলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে মোঘল শাসনামলে। মোঘল ছেলেরা দীর্ঘ কোর্তা পরতো, সাথে সরু সালোয়ার। এই সময়েই প্রথম শাড়ির শেষ অংশ আঁচল বা পাল্লু হিসাবে পরিচিত হয় এবং মহিলারা তা মাথা ঢাকতে বা ওড়না হিসাবে ব্যবহার করতে শুরু করে, যেহেতু সেই সময় মুসলিম শাসনাধীন অবস্থায় মহিলাদের মাথা ঢাকার রেওয়াজ চালু হতে শুরু করে। বর্তমানে শাড়ির যে দীর্ঘ আঁচল রাখা হয় এবং তা মাথা ও ঘাড়ে ঘুরিয়ে নেয়া হয়, তা ওই সময় থেকেই চালু হয়।
ভারতবর্ষের বিভিন্ন এলাকা বিভিন্ন ধরনের শাড়ির উৎপাদনের জন্যে বিখ্যাত; যেমন ঢাকাই জামদানী, কাশ্মিরী রেশমী সিল্ক, টাংগাইলের তাঁত বা মধ্য প্রদেশের মহেশ্বর শাড়ী।
যে সাতটি তথ্য আমরা ভুল জানি
সজীব মিয়া
ছোটবেলা থেকে বড়দের কাছ থেকে আমরা রোজকার নানা অভ্যাসের কথা শুনি। এই যেমন ‘যত ঘুম, তত ভালো’ কিংবা ‘দাঁত সুস্থ রাখতে প্রতিবার খাবার পর ব্রাশ করো’। কিন্তু আদতে এগুলো কতটা সত্য? চলুন, এমন কিছু প্রচলিত ধারণার সঙ্গে প্রকৃত তথ্যটিও জেনে নিই।
১.
প্রচলিত ধারণা: সপ্তাহজুড়ে ঘুমের ঘাটতি হলে তা সপ্তাহের ছুটির দিনটায় ইচ্ছেমতো ঘুমিয়ে পুষিয়ে নেওয়া যায়।
আসলে যা হওয়া উচিত: একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের শারীরিক সুস্থতার জন্য প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো দরকার।
২.
প্রচলিত ধারণা: মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার গরম করলে খাবারের পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
আসলে যা হওয়া উচিত: মাইক্রোওয়েভ ওভেনের বিকিরণ অণু ও পরমাণু ভাঙতে পারে না। তাই খাবারের পুষ্টিগুণও নষ্ট হয় না।
৩.
প্রচলিত ধারণা: প্রতিদিন এক থেকে দুবার গোসল করা উচিত।
আসলে যা হওয়া উচিত: আপনার যখন গোসল করা উচিত বলে মনে হবে, তখনই গোসল করুন।
৪.
প্রচলিত ধারণা: প্রতিবার খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করতে হবে।
আসলে যা হওয়া উচিত: প্রতিদিন নিয়ম করে দুবার দাঁত ব্রাশ করুন।
৫.
প্রচলিত ধারণা: দুপুরে খাওয়ার পর ভাতঘুম স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।
আসলে যা হওয়া উচিত: খাওয়ার পরপরই ঘুমানোর অভ্যাস পরিহার করা উচিত। এতে ওজন বাড়ে।
৬.
প্রচলিত ধারণা: যেকোনো ধরনের সানগ্লাস বা রোদচশমাই সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে চোখকে সুরক্ষা দেয়।
আসলে যা হওয়া উচিত: শুধু উচ্চমানসম্পন্ন রোদচশমা সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে আপনার চোখ সুরক্ষা করতে পারে।
৭.
প্রচলিত ধারণা: সময়মতো ঘুম থেকে উঠতে অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যবহার করুন।
আসলে যা হওয়া উচিত: কোনো কিছুর জোরালো শব্দে আচমকা ঘুম থেকে ওঠা ক্ষতির কারণ হতে পারে।