এই পৃষ্ঠাটি শুধুমাত্র কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীর সহ বয়স্ক মানুষের জন্য 

কোন আর্টিকেল পড়া বা চর্চা করা বাধ্যতামূলক নয়; জানার স্বার্থে সবকিছু পড়তে পারেন , আবার নিজ ইচ্ছায় যে-কোন আর্টিকেল পড়া বাদও দিতে পারেন।

--------------------------------------------------------------------------------------------------------


আমেরিকার নিউইয়র্কে অবস্থিত স্ট্যাচু অফ লিবার্টি

অতীতে বৃটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে আমেরিকাকে সাহায্য করেছিল ফ্রান্স। আমেরিকার স্বাধীনতা অর্জনের ১০০ বছর পূর্তিতে দুই দেশের বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে ১৮৮৬ সালে ফ্রান্স ভাস্কর্যটি আমেরিকাকে উপহার দেয়। আমেরিকার নিউইয়র্ক পোতাশ্রয়ের মুখে লিবার্টি দ্বীপে ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি’ -কে স্থাপন করা হয়। কারণ তৎকালীন সময়ে বহু ইউরোপীয় অভিবাসী নিউইয়র্ক বন্দরের মাধ্যমে আমেরিকায় প্রবেশ করছিল। এই ভাস্কর্যটি সেইসব অভিবাসীদেরকে আমেরিকায় স্বাগত জানাতো।ভাস্কর্যটির নির্মাতা ফ্রেডরিক বার্থোল্ডি তার মায়ের চেহারার আদলে মূর্তিটির চেহারা নকশা করেছিলেন। ভাস্কর্যটির ডান হাতে রয়েছে প্রজ্বলিত মশাল, এবং বাম হাতে রয়েছে একটি বই। স্ট্যাচু অব লিবার্টির মুকুটে রয়েছে সাতটি কাটা, যা সাত মহাদেশ ও সাত সমুদ্রকে নির্দেশ করে। এর পায়ের কাছে পরে থাকা শেকল আমেরিকার মুক্তির প্রতীক। তামার তৈরি সমগ্র মূর্তিটির ওজন প্রায় আড়াই লক্ষ কেজি। স্ট্যাচু অব লিবার্টির ভেতরে ৩৫৪ টি সিঁড়ির ধাপ অতিক্রম করে মূর্তির মাথায় ওঠা যায়। মূর্তির মুকুটের কাছে রয়েছে ২৫ টি জানালা। যা অনেকটাই টওয়াচ-টাওয়ার’ হিসেবে কাজ করে ।লোহার ফ্রেমের উপর তামার পাত দিয়ে ৩০০ টি খন্ডে তৈরি হয়েছে মূর্তিটি। ১৮৮৫ সালে ২১৪ টি বাক্সে ভরে জাহাজে করে ভাস্কর্যটি আমেরিকায় পাঠানো হয়।


হিজরী চান্দ্র সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তর

ইসলামী শাসনামলে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হত। মূল হিজরী পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বৎসর সৌর বৎসরের চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বৎসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বৎসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর বঙ্গদেশে চাষাবাদ ও এজাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর। এজন্য মোগল সম্রাট আকবরের সময়ে প্রচলিত হিজরী চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।ফসল তোলার সময়ের সাথে রাজস্ব আদায়ের সময় সমন্বয় করার উদ্দেশ্যে ১৫৮৪ খ্রীস্টাব্দে মুঘল সম্রাট আকবরের নির্দেশে উদ্ভাবক ফতেহ্‌ উল্লাহ্‌ শিরাজী এই ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করেন। ইরান থেকে আগত বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরী চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব নেন। ফতুল্লাহ শিরাজীর সুপারিশে পারস্যে প্রচলিত ফার্সি বর্ষপঞ্জীর অনুকরণে ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আকবর হিজরী সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহণের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়।১৯৬৬ খ্রীস্টাব্দে বাংলা একাডেমির তরফ থেকে ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ এটি সংশোধন করেন।১৯৮৭ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে এই ক্যালেন্ডার গ্রহন করে। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য বাংলা একাডেমি’র ক্যালেন্ডার অনুসরণ হয় না।

কৃষ্ণচন্দ্র গোপাল ভাঁড়

বাংলা অঞ্চলের প্রবল প্রতাপশালী চরিত্র নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের (১৭১০-৮৩) রাজত্বকাল ৫৫ বছরের। ১৮ বছর বয়সে তিনি যখন সিংহাসনে বসেন, তখন ১৭২৮ সাল। শাক্ত ধর্মে বিশ্বাসী কৃষ্ণচন্দ্র ছিলেন বিদ্যোৎসাহী ও শিল্প-সাহিত্যানুরাগী। যদিও ১৭৫৭-তে পলাশীর প্রেক্ষাপটে ইংরেজদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে উৎখাতের দায়ে ইতিহাসে তিনি ‘বেইমান’ হিসেবে চিহ্নিত, তবু এতে শিল্প-সাহিত্যের প্রতি তাঁর অনুরাগের কাহিনি মুছে যায় না। তাঁর সভাসদ ছিলেন মধ্যযুগের কবি ভারতচন্দ্র, রামপ্রসাদ সেন, জগন্নাথ তর্ক পঞ্চানন, হরিরাম তর্কসিদ্ধান্ত প্রমুখ।

এই কৃষ্ণচন্দ্রের সভার অনেক রত্নের এক রত্ন ছিলেন গোপাল ভাঁড়—এমন বক্তব্য পণ্ডিতদের।গোপালের নাম জনপ্রিয় হয় প্রধানত উনিশ শতকের প্রথম দিকে। সে সময় কলকাতার বটতলায় গোপালের প্রথম বই প্রকাশিত হয়। ইতিহাসবিদ বলেন, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভায় গোপাল নামক কারো উপস্থিতির প্রমাণ কোনো দলিলে পাওয়া যায়নি। মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়’ বইটির লেখক নগেন্দ্রনাথ দাস গোপাল ভাঁড়ের একটি বংশ-লতা প্রকাশ করেছিলেন।, গোপাল ভাঁড় আসলে ছিলেন গোপালচন্দ্র নাই।‘নাই’ শব্দের অর্থ নাপিত। হতেই পারে গোপাল ছিল নাপিত বংশজাত।কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, গোপালের বিয়ে ও মৃত্যু নিয়ে ইতিহাস ভীষণ চুপচাপ।

আরাকান 

আরাকান এককালে এটি ছিল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যকেন্দ্র। বানিজ্যের কারণে বিশ্বব্যাপী ছিল রোহিঙ্গাদের পরিচিতি।পাশাপাশি রাখাইনরাও রয়েছে। তারা সংখ্যালঘু।রোহিঙ্গারা বাঙালির মতোই সংকর জাতি। তারা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, আরাকান ছিলো অসাম্প্রদায়িক মুসলিম রাষ্ট্র!এর সীমানা ছিলো ফেনী নদীর দক্ষিণ পাড় থেকে শুরু করে একদম আজকের রাখাইন (সাবেক আরাকান) রাজ্যের শেষ সীমানা পর্যন্ত।রোহিঙ্গাদের সাহিত্য বেশ সমৃদ্ধ। আলাওল, দৌলত কাজী, মাগন ঠাকুর, আব্দুল হাকিম সহ অনেক যুগশ্রেষ্ঠ কবিই আরাকানের। তাঁরা আরাকানে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছেন।

ম্রক-ইউ রাজ্যের সম্রাট নারামেখলার (১৪৩০-১৪৩৪) শাসনকালে বাঙালীদের আরাকানে বসবাসের প্রমাণ পাওয়া যায়। ২৪ বছর বাংলায় নির্বাসিত থাকার পরে সম্রাট বাংলার সুলতানের সামরিক সহায়তায় পুনরায় আরাকানের সিংহাসনে আরোহন করতে সক্ষম হন।১৪৩৩ সালে সম্রাট নারামেখলার উত্তরাধিকারীরা ১৪৩৭ সালে রামু এবং ১৪৫৯ সালে চট্টগ্রাম দখল করে নেন। ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম আরাকানের দখলে ছিল।১৭৮৫ সালে বর্মিরা আরাকান দখল করে। এরপরে ১৭৯৯ সালে পয়ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষ বর্মিদের গ্রেপ্তার এড়াতে আরাকান থেকে নিকটবর্তী চট্টগ্রাম অঞ্চলে চলে আসে। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলাকে আরাকান পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিল।১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টির সময় রোহিঙ্গারা পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল জিন্নাহের সাথে একাধিক বৈঠক করে পাকিস্তানের সাথে থাকার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। তাদের এই কাজটা আরাকানের অন্য জাতিগোষ্ঠিরা মেনে নিতে পারে নি। তাদের কপালে “বেঈমান” তকমা লেগে যায়। এদিকে জিন্নাহ রোহিঙ্গাদের প্রস্তাবে অস্বীকৃতি জানান। তখন তারা নিজেরাই রোহিঙ্গা মুসলিম পার্টি গঠন করে আরাকান স্বাধীন করার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে।


মাচু পিচুর কথা

পেরুর রাজধানী লিমা থেকে ৩৫৭ মাইল দূরে ইনকাদের রাজধানী কোস্কো। এর থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার ভিতরে, পাহাড়ের উপর তৈরী হয়, সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ২৪০০ মিটার উচুতে অবস্থিত এ শহর। প্রায় ১৪৫০ খ্রীষ্টাব্দে তাদের হাতেই গঠিত হয় একটি শহর। অনেকে আবার একে দূর্গ বলে। এর নাম মাচু পিচু ! স্পেনীয়দের আক্রমণ বেশিদিন এগোতে দেয়নি এই সাম্রাজ্যেঅনেকের ধারণা স্পেন নাগরিকদের থেকে গুটিবসন্ত ছড়িয়ে পরে ইনকা নগরীর মানুষের মধ্যে ফলে ইনকা নগরী  পরিত্যক্ত হয়ে পরে। মাচু পিচুর অধিবাসীগণ পাথর খোদাইয়ের কাজে খুবই দক্ষ ছিল। তাদের হাতে খোদাইকৃত এত বছর পরেও অবিকৃত অবস্থায় বিরাজমান রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে পাথরের এ কাজগুলোতে কোনরুপ চাকা, লোহার সরঞ্জাম বা মর্টার ব্যাবহৃত হয়নি।

প্রায় সম্পূর্ন শহরটিই তাদের হাতে খোদাই করা পাথর দিয়ে তৈরি।দেয়াল পাথরের হলেও মাচু পিচুর ঘরগুলোর ছাদ ছিল কাদা ও ঘাসের সংমিশ্রনে তৈরী। বাড়ীগুলো পাহাড়ের পাশ দিয়ে সুন্দর ভাবে ধাপে ধাপে তৈরী হয়েছিল। মাঝের অংশে ছিল কৃষি ক্ষেত্র। গঠনগত বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনায় নগরীর অংশ ও কৃষি অংশ এই দুই ভাগেই বিভক্ত ছিল শহরটি। উচু ধাপ ও ঘরের আকৃতি দেখে আন্দাজ করা হয়ছিল যে অভিজাত শ্রেনী ও সৈনিকরা কৃষি ক্ষেত্র থেকে দুরে বাস করত। কৃষি জমির পরিমান ছিল কম , মাত্র ৪.৯ হেক্টর।যেখানে একটির উপর আরেকটি আয়তাকার পাথর খন্ড বসানো হয়। দেয়ালগুলো উপরদিকে ক্রমাগত সরু। ঘর তৈরীর এ পাথরের মধ্যের ফাকা স্থান নেই বললেই চলে ।

এটা এতই সরু যে চিকন ছুড়ি পর্যন্ত পাথরের ফাকায় ঢোকানো সম্ভব না। এর ভেতরে প্রায় ১৪০ টা স্থাপনা রয়েছে। থাকার ঘর , মন্দির , ও বিভিন্নরকমের প্রতিষ্ঠান ছিল সেখানে। প্রায় ১০০ এর ও বেশি সিড়ি রয়েছে সেখানে। তবে পানির রয়েছে ব্যাবস্থা। ১৬ টি ঝড়না ব্যাবহার করে প্রায় ৮ মাইল দূর থেকে পানি প্রবাহকে কাজে লাগানো হয়েছে। ফলে মাচু পিচুতে উন্নত জলসেবা বিদ্যমান ছিল।সূর্য দেবতা ইন্টি ছিল তাদের মূল দেবতা । কিছুকিছু মানুষ আলাদা দেবতার পুজা করত। ইনকাতে দেবতাদের উদ্যেশ্যে মাঝে মাঝে বলির প্রচলন ছিল । দেবতাদের খুশি করার জন্য ছোট বাচ্চাদের নরবলি দেয়া হয়।

 

মেকআপ

৮ম শতাব্দীর “নারা” (৭১০-৯৪) যুগে জাপানিজ মেয়েরা তাদের মুখে ‘অসিরি‘ ন‍ামক সাদা পাউডার মাখত ‘ইডু’ (১৬০৩- ১৮৬৮) ফেসিয়াল ক্লিঞ্জিং, ফেসিয়াল প্যাক এসব প্রসাধনীজাপানিজ মেয়েরা খুব ভোরে উঠেই তাদের মুখের মেকআপ করে ফেলত এবং ঘুমানোর আগ পর্যন্ত সারাদিন এইরকম মেকআপ নিয়েই থাকত। লত তারা একে অন্যের সামনে মেকআপ ছাড়া আসত না। ভালোভাবে মেকআপ করাকে তারা আভিজ্যতের অংশ বলে মনে করত। ১৮৭০ সালেখুব গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করে এবং চোখের কোণেও টেনে লাল রঙ ব্যবহার শুরু করে। ২য় মহা বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে পশ্চিমাদের মেকআপ উপকরণ (যেমন- অয়েল বেইসড ফাউন্ডেশন, আই শ্যাডো, ফলস আইল্যাশ, মাসকারা) এরকম বিভিন্ন প্রোডাক্ট জাপানের মার্কেটে বিক্রি হওয়া শুরু হয়।1৯৮০ সালেই জাপানের মেয়েদের মানসিকতার একটি বিরাট পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার শুরু করে। এবং মেকআপ আর্টের ক্ষেত্রেও তারা ন্যাচারাল লুককেই প্রাধান্য দেয়।এখনো তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মুখে মেকআপ ব্যবহার করেন।


অ্যামিশ ধর্ম: 

প্রকৃতি নির্ভর মৌলবাদী এক খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী সুইজারল্যান্ডের অ্যানাব্যাপটিস্ট ক্যাথলিক চার্চ থেকে মূলত অ্যামিশদের উৎপত্তি। এদের প্রথম গোড়া পত্তন হয় ১৬৯০ সালের প্রথম দিকে সুইজারল্যান্ডে জ্যাকব আম্মানের (Jakob Ammann) হাত ধরে। এই অ্যানাব্যাপটিস্টরা মূলত প্রটেস্ট্যান খ্রিষ্টান। সুইস খ্রিষ্টান সমাজ অ্যানাব্যাপটিস্টদের বাইবেলবিরোধী এধরনের কথাবার্তা খুব ভালো চোখে দেখতে পারেনি। ওপর চড়াও হয়। প্রথমে এদের ঘরবাড়ি, সম্পত্তি সরকারীভাবে বাজেয়াপ্ত করে. বিতাড়িত হয়ে অ্যামিশরা , ধীরে ধীরে উত্তর আমেরিকার ওহাইও, কানাডা, পেনসিলভানিয়া সহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে পাড়ি দেয়অ্যামিশ (Amish)আমেরিকার পেনসিলভানিয়ার ল্যানকাস্টার কাউন্টিতে প্রধানত এদের বসবাস।এদের জীবন সম্পূর্ণভাবে প্রকৃতি নির্ভর। প্রযুক্তি বহির্ভূত জীবনযাপন করে এরা। গাড়িতে চড়ে না, বিদ্যুৎ ব্যবহার করে না; এদের জীবনে টিভি, কম্পিউটারেও খুব একটা প্রয়োজন নেই।তাদের ধারণা, এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষকে প্রকৃতি আর ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে।আমিশরা তাদের কাজকর্ম নিয়ে মহাব্যস্ত।অর্থ আর ক্ষমতায় এদের কোনো লোভ নেই। কৃষিকাজ করে জীবনযাপনে এরা বেশি আগ্রহী। পুরুষ অ্যামিশরা মাঠে ভুট্টা, তামাক, সয়াবিন, বার্লি আলুসহ বিভিন্ন শাকসবজি চাষ করেন। আর নারী অ্যামিশরা কাপড় বোনে, মধু তৈরি করে, ফুল আর ফলের চাষ করেন।আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে অ্যামিশদের তেমন আস্থা নেই। এদের বিশ্বাস, শারীরিক সুস্থতার পূর্ব শর্ত হচ্ছে মানসিকভাবে সুস্থ থাকার পূর্ণ নিশ্চয়তা।শিশুর বয়স যখন ষোলোতে পড়বে এবং যখন সে পৃথিবীর পাপ-পুণ্যের অঙ্ক কষতে শিখবে, শুধুমাত্র তখনই তার ব্যাপটিজম হতে পারে।অ্যামিশ পুরুষেরা ১৬ বছর বয়সের পর থেকে আর দাঁড়ি কাটেনা।সাধারণত ২০-২২ বছর বয়সেই এরা বিয়ের কাজটি সেরে ফেলেন।


ইউরোপিয়ানদের গোসল 

ইউরোপিয়ানদের শরীরের দুর্গন্ধ এতোটাই প্রকট ছিল যে, তা সহ্য করা মুশকিল ছিল! সহ্য করা কীভাবে সম্ভব? ইউরোপিয়ানরা যে গোসল কী জিনিস- তা আদৌ জানত না! এজন্যই ইউরোপিয়ান যোদ্ধাদের নাকে রেড ইন্ডিয়ানরা গোলাপফুল শুঁকাতো। কারণ, তারা জানত যে, ইউরোপিয়ান যোদ্ধারা গোলাপের সুগন্ধি সহ্য করতে পারে না! কথায় আছে না, মেথর শুঁকতে পারে না আতরের ঘ্রাণ?!

ইউরোপিয়ান ইতিহাসবেত্তা সেন্ডর মারাই বলেন, ইউরোপিয়ান বারজিউসরা উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকেও জীবনে মাত্র দুইবার গোসল করতো। অসুস্থতার সময়ে ও বিয়ের সময়ে! ইউরোপে গোসলখানা নির্মাণ আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ ছিল! স্পেনসম্রাট দ্বিতীয় ফিলিপ তার রাজ্যে গোসলখানা নির্মাণের নিষেধ জারি করেছিলেন! স্পেন সম্রাজ্ঞী ১ম ঈসাবেলা গ্রানাডা দখলের পর যেসব আইন জারি করেছিলেন, তন্মধ্যে একটি আইন ছিল- আন্দালুসীয় মুসলমানদের সবগুলো গোসলখানা ভেঙ্গে ফেলা! কারণ, তিনি নিজেও গোসল করতেন না! মুসলমানরা গোসল করে ঝকঝকে থাকবে- সেটা তার কাছে একদম অসহ্য লাগত!

আমেরিকান রাইটার জুসেফ ম্যাক ক্যাপ' বলেন, স্পেন সম্রাজ্ঞী ১ম ঈসাবেলা  জীবনে মাত্র দুইবার গোসল করেছেন। তার জন্মের দিনে ও মরণের দিনে! আল্লামা তাকিউদ্দিন আল-হিলালি আল-মাগরিবি বলেন, প্রকৃতার্থে রাণী ঈসাবেলা তার জীবনে মাত্র একবার গোসল করেছেন! আর তা তার বিয়ের রাতে! রাজা ফিলিপের কন্যা;২য় ঈসাবেলা; কসম করেছিলেন যে, অমুক দূর্গ বিজয় করা ব্যতিত তার দেহের পরিধেয় বস্ত্র খুলবেন না। এই অবস্থায়ই তিন বছর পেরিয়ে যায়। দেহের নাজুক অবস্থার কারণেই তিনি শেষ পর্যন্ত মারা যান! ফরাসী ইতিহাসবেত্তা;জর্জ ফেগারেল  বলেছেন, ফ্রান্স সম্রাট চৌদ্ধতম লুইসজীবনে মাত্র ৩ বার গোসল করেছে!

রূশ প্রতিনিধি লুইসের ব্যাপারে বলেছেন, লুইসের দেহের দুর্গন্ধ ভূচর প্রাণীর দুর্গন্ধের চেয়েও ছিল অসহ্যকর! লুইসের এক দাসী ছিল, ডি ম্যান্টিসবাম' নামে। সে আতরের হাউজে গোসল করে দেহকে সুগন্ধিত করত; যাতে করে লুইসের দুর্গন্ধ না শুঁকতে পারে!

তিনি আরও বলেন, এই লুইসের হেরেমের রমণীগণ তাদের দেহ ও দেহের পবিত্রতার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি যত্নবান ছিল। তারা বছরে মাত্র ২ বার গোসল করত! ফ্রান্সের বর্তমান বিখ্যাত পারফিউম আবিষ্কারই হয়েছিল ফরাসীদের দেহের দুর্গন্ধ দূরীভূত করার জন্য!

ইউরোপীরা সভ্যতা শিখলে মুসলিমদের থেকেই শিখেছে। এটা তাদের ঘরানার ব্যক্তিরাই অকপটে স্বীকার করেছে। প্রসিদ্ধ ফরাসী ঐতিহাসিক 'ড্রেভার' বলেন, আমরা ইউরোপিয়ানরা সভ্য হয়েছি আরবদের (মুসলিমদের) মাধ্যমেই।

মুসলিমরা আমাদেরকে শিখিয়েছে- কীভাবে দেহের যত্ন নিতে হয়। কেননা মুসলিমরা ইউরোপীদের বিপরীত ছিল। ইউরোপীরা তাদের দেহের বস্ত্র তৎক্ষণ পর্যন্ত খুলত না, যতক্ষণ পর্যন্ত তা ময়লাযুক্ত হত না এবং মারাত্নক দুর্গন্ধ ছড়াত না! দেহের বসন খোলা ও ধৌত করার ক্ষেত্রে আমরা মুসলিমদেরই অনুসরণ করেছি। মুসলিমরা অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করতো। এমনকি তারা কাপড়কে বিভিন্ন ধরণের মূল্যবান পাথর, যেমন: যুমরূদ, ইয়াক্বূত ও মারজান দ্বারা সজ্জিত করত!

ড্রেভার আরও বলেন, তখন কর্ডোভায় প্রায় তিনশ গোসলখানা পর্যাপ্ত ছিল, যখন ইউরোপের গীর্জাগুলো গোসলখানাকে অপরাধের দৃষ্টিতে দেখত!

----------শীতের দেশে সাধারন পানি দিয়ে গোসল করা যায় না।গরম পানির প্রয়োজন। সেটি অনেক শ্রমসাধ্য ও ব্যয়বহুল ছিল। তাই গোছলের কালচার গড়ে উঠেছিল না। তারপরে শীতের দেশে মানুষের ঘাম হয় না।

শীতের মাঝে ঠান্ডা পানিতে গোছল করলে ঠান্ডা লাগতো। এসব বিবেচনায় নেন বুঝবেন যে কেন গোছল করতো না। পরে ইলেকট্রিসিটির বিস্তার , গ্যাসের ব্যবহার আসবার পর এখন ওরা আমাদের চেয়ে বেশী গোছল করে।আব্বা রেলওয়ে কলোনীতে বিহারীদের সাথে প্রতিবেশী ছিল। ছোটবেলায় দেখতাম যে বিহারীরা শুধু শুক্রবারে গোসল করতো। টিউব ওয়েল হতে মটর দিয়ে পানি উঠানো মাত্র সেদিনের কথা। তাহার পূর্বে পানির অভাব ছিল আরবে। তাহারা কি প্রাত্যহিক গোছল করতো? বিষয়টি অনুধাবন করুন। ভারতের অনেক জায়গায় নিয়মিত গোছলের চল নেই।


পৃথিবীর নানা রোগ ব্যাধি ও মহামারি

 মানুষ যখন থেকে জাহাজে করে সমুদ্র পাড়ি দিতে শিখলো তখন থেকেই মানব সভ্যতায় বিরাট এক আপদের সূচনা হলো। তার আগে ভৌগলিকভাবে আলাদা মানুষের সমাজগুলির রোগবালাই ভিন্ন ভিন্ন ছিলো। যেমন, ইউরোপের রোগবালাই ছিল এক রকম আবার আমেরিকা মহাদেশের রোগের ধরণ ছিলো ভিন্ন রকম।

১৪৯৩ সালে আমেরিকা মহাদেশে প্রথম সোয়াইন ফ্লু বা শুকরবাহিত সর্দিজ্বর মহামারি রূপে দেখা দেয় তা দখলদার কলম্বাসের জাহাজে করে যেই শুকরেরা আমেরিকায় এসেছিলো, সেখান থেকেই এই মহামারি সূচনা হয় যা ইতিহাসে নিউ ওয়ার্ল্ড মহামারি বলে পরিচিত। আবার ১৫১৮ সালে আরাওয়াক ও হিসপানিওয়ালার প্রায় অর্ধেক মানুষ সাফ হয়ে যায় দখলদারদের আগমনের সাথে গুটিবসন্ত চলে আসায়।

ভিনদেশি রোগের সংক্রমণের কারণে আজকের দক্ষিণ আমেরিকাকেও চরম মূল্য দিতে হয়েছিল। স্পেনীয় দখলদার কর্তেসের মাধ্যমে গুটিবসন্ত মেক্সিকোতে ছড়ায় ১৫২১ সালে। সাথে করে গুটিবসন্ত নিয়ে আসায় সেই সভ্যতার ৩ লাখ মানুষ মারা যায়।

এরপর একে একে আসে সর্দিজ্বর, হাম, ও টাইফাস জ্বরের মহামারী। অনেক বছর পরে মেক্সিকো এবং আন্দিজ কিছুটা সামলে নিলেও ব্রাজিলের জনসংখ্যা প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে যায়। ফলে ভয়াবহ জনসংখ্যার অভাব দেখা দেয়। জনসংখ্যার এই ঘাটতি পূরণে স্পেনীয় ও পর্তুগিজরা আফ্রিকা মহাদেশ থেকে ধরে নিয়ে আসে দাস। এই দাসরা তাদের সাথে করে আমেরিকায় নিয়ে আসে ম্যালেরিয়া ও পীতজ্বর।

কলম্বাস যখন আমেরিকা থেকে ইউরোপে ফিরে গেলো, তখন সাথে করে নিয়ে গেলো এক ভয়াবহ রোগ। ১৪৯৩-৯৪ তে ফরাসি-স্পেনীয় যুদ্ধে নেপলসে ছড়ায় এই বীভৎস রোগ। সেখান থেকে ছড়ায় সারা ইউরোপে। এ রোগে প্রথমে যৌনাঙ্গে ঘা দিয়ে উপসর্গ দেখা দেয়। তারপরে শরীরে বীজকুড়ি আসে এবং পঁচে যাওয়া শুরু করে, শেষ হয় একেবারে হাড়ের ক্ষয় দিয়ে। রোগটির নাম সিফিলিস। ইউরোপের লক্ষ লক্ষমানুষ এই বীভৎস রোগে ভুগে মরেছে কলম্বাসের কারণে।

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর ফরাসি সৈন্যদল যখন ১৮১২ সালের জুন থেকে সেপ্টেম্বরে রাশিয়া আক্রমণে মস্কো পর্যন্তই চলে গিয়েছিলো, তখন নেপোলিয়ন দেখতে পায় যে পুরো মস্কো শহর পরিত্যজ্য নগরী। কোন জনমানব নেই পুরো শহর শুধু খাঁ খাঁ করছে। পরের ৫ সপ্তাহে ফরাসি সৈন্যরা টাইফাস রোগের

মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে পরে। ৬ লাখ সৈন্যের প্রায় সবাই মারা পড়ে সেই মহামারীতে। রাশিয়ার টাইফাস মহামারীর একশত বছর পর ১৯১৮ সালের শেষের দিকে ভয়ঙ্কর এক মহামারি সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। যার নাম স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জা। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী এই ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল পাঁচ কোটিরও বেশি মানুষের। এই সংখ্যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত মানুষের সংখ্যার চাইতেও বেশি। সেসময় সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশেরই মৃত্যু হয়েছিল এই ভাইরাসে।

স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর একশত বছর পর করোনাভাইরাস আতঙ্ক: অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বের একের পর এক শহর। এই মহামারি সামলাতে বড় বড় উন্নত দেশও খুবই হিমশিম খেয়েছে। এই ভাইরাস স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, জড়বাদী, ভোগবাদি আর বিলাসের সমাজই আমরা তৈরি করেছি। সংকটময় মুহূর্তে বোঝা যায়, পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বাড়ি, গাড়ী একজন মানুষকে বাঁচাতে পারেনা। যেমন পারে- ঔষধ, খাবার আর পানি।


জনসংখ্যা কমছে না বাড়ছে?

একদল বিশেষজ্ঞ মানবজাতি বিলুপ্ত হতে চলেছে বলে ক্ষান্ত হচ্ছেন না। তাঁরা ‘লাল কার্ড’ বের করে মহাবিপদ সংকেত দিতেও দ্বিধা করছেন না। তাঁদের কথা হলো, ২০৫০ সাল থেকে ১৯৫টি দেশের মধ্যে ১৫১টি দেশের জন্মহার হ্রাস পেতে শুরু করবে।

প্রায় তিন লাখ বছর পূর্বে আফ্রিকায় আধুনিক মানুষ হোমো সেপিয়েন্স-এরনিদর্শন পাওয়া যায়। অসংখ্য প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতাকে সুনিপুন দক্ষতায় অতিক্রম করে মানুষ নামক উন্নত প্রজাতির প্রাণীটি আজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে প্রবেশ করেছে। পৃথিবী একটাই। চমৎকার এ নীল গ্রহটি কোনো একক জাতির বা গোষ্ঠীর নয়, শুধু ৮০০ কোটি মানুষেরও নয়। সহস্র হাজার বছর ধরে আণুবীক্ষণিক জীব, লতাপাতা, জন্তুজানোয়ারের সাথে ভাগাভাগি করে থাকা ৮০০ কোটি মানুষের। মানুষ কি পারবে প্রকৃতিকে রক্ষা করতে? মানুষ কি পারবে একটি মানবিক পৃথিবী গড়ে তুলতে? মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে?

ভারতের জনসংখ্যা ১৪২ কোটি। চিনের ১৪৫ কোটি। কয়েক বছর আগেও ভারতের ছিল ১২৫ কোটি, চিনের ১৩৭ কোটি। ভারত শীঘ্র চিনকে ছাড়িয়ে যাবে।

যেখানে ধর্মের প্রকোপ বেশি সেখানে জনসংখ্যা ও দারিদ্রতা বেশি। আরব দেশ বলবেন? তেল না পেলে বুঝতেন। তেল কেবল মুসলিম দেশ পায়নি রাশিয়া, আমেরিকা, ভেনেজুয়েলাও বিশাল পেয়েছে। আবার বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া পায়নি।

পাকিস্তানে জনসংখ্যা ২৪ কোটি। ইন্দোনেশিয়ার পর সবচাইতে বেশি মুসলিমের রাষ্ট্র। আমাদের ১৭ কোটির নীচে। পাকিস্তানীদের একটা প্রধান কাজ মনে হলো জনসংখ্যা প্রডাকশন। ষাটের দশকে তারা পুর্ব পাকিস্তান থেকে বেশি জনসংখ্যার হলে আর আমরা স্বাধীন হতাম কি না সন্দেহ। বঙ্গবন্ধু সময়মত দেশ স্বাধীন করলেন। না হলে কি যে হতো!

জাপানীদের জনসংখ্যা কমছে বহুকাল। প্রকৌশলী জামিল (কানাডা) তো বললো, জাপানে যে মেটার্নিটিতে তার একটা সন্তান হয়, সেটা এখন বন্ধ। কারণ ঐ এলাকায় কেউ এখন সন্তান নিচ্ছে না।

 যত উন্নতি তত জনসংখ্যা কমবে। ডিভোর্স বাড়বে, কারণ নারী স্বাধীন হয় বেশি, দাস মনোবৃত্তি কমে। বিবাহ প্রথা কমবে। লিভ টুগেদার বাড়বে। সমাজ নতুন নিয়ম নীতিতে পৌছবে। অবশ্য অবকাঠামো কেবল উন্নয়নের মাপকাঠি না। আরবদের বিশাল অবকাঠামো, সামগ্রীক উন্নয়ন হয়নি।

 

চুটজপাহ সংস্কৃতি: 

ইহুদি সংস্কৃতিতে Chutzpah শব্দ দিয়ে ইতিবাচক গুণ চর্চা বুঝায়।এটির কোনো বাংলা শব্দ নেই, তবে এর কাছাকাছি অর্থ হচ্ছে- অহংকার,লোভ্‌ নির্ভরতা,

“ক্ষমতা” এবং আত্মকেন্দ্রীকতাকে সম্পূর্ণ  অস্বীকার করা। উদাহরণস্বরূপ, একজন উদ্যোক্তা যিনি একটি ছোট স্টার্টআপ চালাচ্ছেন তিনি একটি বড় কোম্পানির সিইওকে সরাসরি কল করে চুটজপাহ প্রদর্শন করতে পারেন, তা করার জন্য আমন্ত্রণ না থাকা সত্ত্বেও।


 উত্তম পরামর্শঃ-

যারা রাত্রে বা ভোরে বাথরুমে যাবার জন্য ঘুম থেকে ওঠেন তাদের জন্য ডাক্তারদের একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ: আমরা প্রায়ই শুনতে পাই একেবারে সুস্থ একজন মানুষ রাতের বেলা হঠাৎ মারা গেছেন। এটার একটা কারন হচ্ছে রাতে বাথরুমে যাবার জন্য ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমরা তাড়াহুড়ো করে হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে পড়ি, যা ব্রেইনে রক্তের প্রবাহ হঠাত কমিয়ে দেয়। এটা আপনার ইসিজি প্যাটার্নও বদলে দেয়।

হুট্ করে ঘুম থেকে উঠেই দাঁড়িয়ে পড়ার দরুন আপনার ব্রেইনে সঠিক ভাবে অক্সিজেন পৌছাতে পারেনা, যার ফলে হতে পারে হার্ট এ্যাটাকের মত ঘটনাও। ডাক্তাররা ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে যাবার আগে সবাইকে দেড় মিনিট সময় নেয়ার একটি ফর্মুলা দিয়েছেন।

এই দেড় মিনিট সময় নেয়াটা জরুরি কারন এটা কমিয়ে আনবে আপনার আকস্মিক মৃত্যুর সম্ভাবনা। হঠাৎ এই উঠে পড়ার সময়ে এই দেড় মিনিটের ফর্মুলা বাঁচিয়ে দিতে পারে আমাদের জীবন।

১। যখন ঘুম থেকে উঠবেন, হুট করে না উঠে মিনিমাম তিরিশ সেকেন্ড বিছানায় শুয়ে থাকুন।

২। এরপর উঠে বিছানায় বসে থাকুন তিরিশ সেকেন্ড।

৩। শেষ তিরিশ সেকেন্ড বিছানা থেকে পা নামিয়ে বসুন।

এই দেড় মিনিটের কাজ শেষ হবার পর আপনার ব্রেইনে পর্যাপ্ত পরিমানে অক্সিজেন পৌছাবে যা আপনার হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি একদম কমিয়ে আনবে।

 



লুটতরাজ রাজনীতির শিকল থেকে মুক্তি চাই

বর্তমানে এদেশে যারা রাজনীতি করেন তারা মূলত প্রায় সবাই হচ্ছে বখাটেছাত্র এবং বেকার অকর্মা প্রকৃতির লোক, যারা এক সময় কয়েকজন সঙ্গবদ্ধ হয়ে মহল্লায় বা রাস্তাঘাটে মাস্তানি, চাঁদাবাজি বা ক্ষমতাবানদের পা চেটেচলত।এদের মধ্যে যারা চুরি দুর্নীতি বা প্রতারণা করে টাকা ইনকামের সুযোগ পেয়েছে, তারা টাকা দিয়ে বিভিন্ন দলীয় পদ পদবী কিনে নেতা বনে গেছেন।ফলে রাজনীতিকে তারা ফাও ব্যবসা হিসাবে নিয়েছেন। দুর্নীতি বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে যত টাকা ফাও আসলো তার কিছু টাকা কর্মীদের বিতরণ করে বড় নেতা হওয়াযায়।এদের থেকে সাধারণ মানুষের আশা করার কিছু নেই।,

তাই কোন মানুষ আর রাজনীতিকেভালো পেশা হিসেবে মনে করে না এবংকোনরাজনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হতে চায় না।এখনলুটপাট আর রাজনীতি একসঙ্গে মিশিয়ে হয়ে গেছে লুটরাজনীতি; আর রাজনীতিবিদ বলতে বুঝায় লুটরাজবিদ।

চুপ থাকলে চলবে না, নতুন নেতৃত্বতৈরির পাশাপাশিদরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্যসৃজনশীলপরিকল্পনা এবং প্রযুক্তির ব্যবহার।দায়িত্ববানরা আসুন, হাতে হাত রেখে আমরা সংগবদ্ধ হই।


প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী নয়, প্রয়োজন মনের জোর  

--পল অ্যালেনঃ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ করার মাত্র দুই বছরের মাথায় পড়া লেখাকে গুডবাই জানিয়ে বিল গেটসের সাথে এক হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন মাইক্রোসফট !

--রিচার্ড ব্রান্সনঃ ১৬ বছর বয়সে লেখাপড়া ছেড়ে দেন। শুরু করেন ব্যবসা  ভার্জিন  নামের কোম্পানি দিয়ে এবং বর্তমানে একশো এর অধিক কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ও মালিক তিনি!

--ল্যারি এলিসনঃ সার্টিফিকেট এর আশায় একটি ছেড়ে আরেকটি মোট দুটি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন কিন্তু পড়ালেখা আর শেষ করতে পারেননি, ফলে সার্টিফিকেটও আর পাওয়া হয়নি। এর কিছুদিন পর তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সফটওয়্যার কোম্পানি ওরাকল!

--ডেভিড গেফেনঃ স্কুল পর্যন্তই পড়ালেখা, কলেজে পড়ার আর সুযোগ হয়নি ! বেকার বসে না থেকে প্রতিষ্ঠা করেন ড্রিমওয়ার্কস নামক আজকের নামকরা এনিমেশন ও ইফেক্ট তৈরির প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যন্ত হলিউড এর সর্বোচ্চ আয় করা ব্যক্তি তিনি !

--মার্ক জুকারবার্গঃ তিনি কে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না ! ইউনিভার্সিটি থেকে পড়া শেষ না করেই বেরিয়ে আসতে হয় এবং তার প্রতিষ্ঠিত ফেসবুকের দাপট কারও অজানা নয় !

এভাবেই একে একে নাম বলা যাবে লক্ষ লক্ষ সফল উদ্যোক্তার যাদের অক্লান্ত শ্রমের বদৌলতেই আজকের নব নব আবিষ্কার আর সফল সব

প্রতিষ্ঠান !

প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রী নয়, নয় কোনও মূল্যবান সার্টিফিকেট, ইচ্ছে থাকলে যে শুধু সফল হবার তাগিদেই অক্লান্ত শ্রমে পাওয়া যায় সফলতা- তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আজকের দিনের সফল ব্যক্তিবর্গ !

এই জীবন হচ্ছে সুখ-দুঃখের পালাবদলের এক মঞ্চ... এখানে সুখ কিংবা দুঃখ কোনোটাই স্থায়ী না আপনাকে কেউ কখনো ভালো রাখবে না, রাখতে পারবেও না... যদি না আপনি আপনাকে ভালো রাখেন, নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্বটা আসলে নিজেকেই নিতে হয়, যা অন্য কেউ নেয় না আমাদের ভালো না থাকার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম কয়েকটি কারণ হচ্ছে-- আমরা অন্যের দ্বারা ভালো থাকতে চাই, আমরা আশা করি কেউ একজন আমাদের ভালো রাখবে, ভালো-বাসবে, বাস্তবতায় যার কখনো প্রতিফলন ঘটে না;লো থাকতে চাইলে... নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিন,অন্যের কাছে প্রত্যাশা করা ছেড়ে দিন,

সহজে পেয়ে গেলে মানুষ হিরাকেও কয়লা ভাবতে শুরু করে 

 ১২০ বছর আগে, খাজা সলিমুল্লাহ ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা দান করেছিলেন বুয়েটের (BUET) জন‍্য। তখন সেটার নাম বুয়েট ছিলো না। ছিলো ঢাকা সার্ভে স্কুল। সেটাকে তিনি রূপ দিলেন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে। (খাজা সলিমুল্লাহার বাবার নাম ছিলো আহসানউল্লাহ)পূর্ব বাংলায় কোন ইউনিভার্সিটি নেই। সলিমুল্লাহ সেটা মানতে পারলেন না। কি করা যায়, সে নিয়ে ভাবতে থাকলেন। ১৯১২ সালের ২৯ জানুয়ারি, তখনকার ভাইস রয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ঢাকায় আসেন। হার্ডিঞ্জের সামনে দাবি নিয়ে দাঁড়ানোর মতো সাহস পূর্ব বাংলায় যদি কারো থাকে, সেটা একমাত্র সলিমুল্লাহর। তার বয়স তখন চল্লিশ বছর। সে সময়ের ১৯ জন প্রখ‍্যাত মুসলিম লিডার নিয়ে তিনি হার্ডিঞ্জের সাথে দেখা করেন। বিশ্ববিদ‍্যালয়ের দাবি তুলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয় প্রতিষ্ঠার অন‍্যতম অগ্রদূত তিনি।

সলিমুল্লাহ ছিলেন আদ‍্যোপান্ত শিক্ষানুরাগী। পূর্ব বাংলায় শিক্ষার বিস্তারের জন‍্য, পিছিয়ে পড়া মুসলিম জনগোষ্ঠিকে শিক্ষিত করার লক্ষ‍্যে তিনি বহু বৃত্তি, বহু প্রকল্প চালু করেন। Indonesia দেশটি স্বাধীন হয়েছিলো ১৯৪৫ সালে ১৭ আগষ্ট। ভারত স্বাধীন হবার আরো দুই বছর আগে। দেশটির বয়স প্রায় ৮০ ছুঁই ছুঁই হলেও, এই পর্যন্ত মাত্র ৭ জন মানুষ প্রেসিডেন্ট হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রাম এর নেতা Sukarno হয়েছিলেন প্রথম প্রেসিডেন্ট, ১৮-০৮-১৯৪৫ তারিখে। তিনি দীর্ঘ ২১ বছর ক্ষমতায় ছিলেন।

স্বৈরাচারী হিসাবে তার একটি বদনাম ছিলো। কিন্তু তার আমলে দেশটি খুব উন্নতি করেছিলো। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট Suharto ক্ষমতায় এসেছিলেন ১২-০৩-১৯৬৭ তারিখে। তাকে দেখে শান্ত মনে হলেও, তিনি ক্ষমতায় ছিলেন ৩১ বছর !! এর পরে বিভিন্ন প্রেসিডেন্ট স্বল্প মেয়াদের ক্ষমতায় থেকেছেন। এদের মধ্যে একজন ছিলেন প্রথম প্রেসিডেন্ট এর কন্যা Meghawati, যিনি ২৩-০৭-২০০১ তারিখে ক্ষমতায় এসে ৩ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট Susilo Banmbang ক্ষমতায় ছিলেন ১০ বছর। বর্তমান প্রেসিডেন্ট Joko Widodo ক্ষমতায় আসেন ২০-১০-২০১৪ তারিখে। ইতিমধ্যে প্রায় ৮ বছর হয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিনিও দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকবেন।


নতুন কলম দিয়ে কিছু লিখতে বললে ৮০% লোক তাদের নাম লিখবে।

90% ক্ষেত্রে যাদের হাতের লেখা খারাপ তারা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সৃজনশীল।

 

রেনেসাঁস বা নবজাগরণ কী?

রেনেসাঁ হলো গ্রিস এবং রোমের প্রাচীন সভ্যতার পুনঃআবিষ্কার / পূর্ণজন্ম / নবজীবন। এটি গ্রীস থেকে শুরু হয় ইতালি থেকে ইংল্যান্ড সহ ইউরোপ এর দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ১৫০০ -১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত, ১৬০ বছরের সময়কালকে রেনেসাঁ এর সময় ধরা হয়।

মূলত ১৫৫৮ খ্রিস্টাব্দে রাণী প্রথম এলিজাবেথ সিংহাসনে আরোহণ পর থেকে রেনেসাঁ এর বিস্তার শুরু হয়। রেনেসাঁ একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন।

এর চারটি বৈশিষ্ট্য দেখা যায়- মানবতাবাদ, ব্যক্তিস্বাতন্ত্রা, মুক্ত চিন্তা ও শেখার কৌতূহল।


আসল কলম্বাস

ক্রিস্টোফার কলম্বাসকে আমরা চিনি একজন অভিযাত্রী ও আমেরিকা মহাদেশের আবিষ্কারক হিসেবে। প্রায় পাঁচশত বছর ধরে তিনি একজন মহান অভিযাত্রী হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন, কিন্তু আসলেই কি তিনি আমেরিকা মহাদেশের আবিষ্কারক ও নতুন দিগন্ত উন্মোচনকারী? নতুন করে ভাবার সময় এসেছে এই ব্যাপারগুলো। বিভিন্ন গবেষক কলম্বাসের এই মহান রূপের আড়ালের আসল রূপ বের করতে সচেষ্ট হয়েছেন।

কলম্বাসের সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি আমেরিকার আবিষ্কারক ও প্রথম ইউরোপীয় মানুষ যিনি আমেরিকায় পা রাখেন, কিন্তু কলম্বাসের জন্মেরও প্রায় পাঁচশত বছর পূর্বে লিয়েফ এরিকসন নামের একজন আইসল্যান্ডিক মানুষ আমেরিকায় গিয়েছেন এমন উল্লেখ রয়েছে আইসল্যান্ডের  Saga of Erik The এ। কলম্বাস জাতিতে একজন ইতালীয় নাগরিক, তাঁর জন্ম জেনোয়াতে, তিনি একজন দক্ষ নাবিক ছিলেন। সমুদ্রের প্রতি তাঁর প্রবল আকর্ষণ কাজ করতো।

তিনি স্পেনের রাজা ও রানির আনুকুল্যে তিনটি জাহাজ নিয়ে প্রাচ্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তাঁর নৌযাত্রার অন্যতম কারণ তূর্কিদের দ্বারা কনস্টান্টিনোপল অধিকার, তূর্কিরা কনস্টান্টিনোপল দখল করলে প্রাচ্যের সাথে ইউরোপের স্থলপথে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়, ইউরোপীয়দের বাণিজ্য

টিকিয়ে রাখতে হলে প্রাচ্যের সাথে যোগাযোগ লাগবেই, তাই তারা জলপথে বাণিজ্যের প্রতি মনোযোগী হয়, কিন্তু ইউরোপ থেকে প্রাচ্যের জলপথের ঠিকানা জানা ছিল না কারোর তখন পর্যন্ত। এই জলপথ আবিষ্কার ও প্রাচ্যের সিল্ক, স্বর্ণ, মসলার কথা বলে কলম্বাস স্পেনের রাজানুগ্রহ লাভ করেন; কলম্বাস মোট স্বর্ণ,মসলার ১০ ভাগ পাবেন ও Admiral of The Ocean Sea খেতাব পাবেন, পাশাপাশি নতুন ভূমির শাসকের ভূমিকা পালন করবেন এই মর্মে কলম্বাস তাঁর যাত্রা শুরু করেন। কলম্বাসের এই নতুন অভিযান পরিচালনা সময় থেকেই ইউরোপে ইহুদি, মুরদের উপর অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে,তাদের অনেককেই বিতাড়িত করা হয়, ধনী ইহুদিদের তাদের সম্পদের মালিকানা হস্তান্তর করতে বাধ্য করা হয়।

কলম্বাস ১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবর বাহামায় অবতরণ করেন। কলম্বাস ভেবেছিলেন তিনি ইন্ডিয়াতে এসেছেন কিন্তু ইউরোপ থেকে সোজা পথে যে আমেরিকা নামে মহাদেশ রয়েছে তখন তা ছিল ইউরোপীয়দের কাছে অজানা। কলম্বাস পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন যে প্রথম ভূমি দেখতে পাবে সে দশ

হাজার ম্যারাভেদিস পাবে, কলম্বাসের জাহাজের একজন নাবিক রোড্রিগো প্রথম ভূমি দেখার দাবি করেন কিন্তু কলম্বাস বলেন তিনি বরং আগে দেখেছেন, সুতরাং পুরস্কার তারই প্রাপ্য!

কলম্বাস ও তাঁর সঙ্গীরা তীরে নামলে স্থানীয় আরাওয়াক গোষ্ঠীর লোকজন তাদের অভ্যর্থনা জানায়। কলম্বাস লক্ষ করেন তারা স্বর্ণের কানের দুল পরা, কলম্বাসের মূল উদ্দেশ্যই ছিল স্বর্ণ,সুতরাং তিনি বেশ খুশি হলেন এই ভেবে যে স্বর্ণের জায়গা তিনি পেয়ে গেছেন। আরাওয়াক লোকজনদের অনেককে বন্দী করে কলম্বাস স্বর্ণের উৎস সন্ধানে ব্রতী হন। এরপর তিনি কিউবা, হাইতি, ডোমিনিকান রিপাবলিকে যান।

কলম্বাস হিসপানিওলায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করেন, যা আমেরিকায় প্রথম ইউরোপীয় ঘাঁটি। তিনি তাঁর সঙ্গীদের একাংশ এখানে রেখে ইউরোপে ফিরে যান,সাথে নিয়ে যান আমেরিকা হতে দাস। সেখানে গিয়ে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করেন তার ইন্ডিয়া যাবার জলপথ আবিষ্কারের কথা, সে অঞ্চলের সমৃদ্ধির কথা, স্বর্ণের ভাণ্ডারের কথা। পাশাপাশি তাঁর আরো সহযোগিতা দরকার এটাও বলেন, ফলে এবার তিনি সতেরটি জাহাজ ও বারোশত লোকের একটি বহর নিয়ে রওনা দেন আমেরিকার উদ্দেশ্যে।

কলম্বাস ১৫৯৫ সালে আরাওয়াক গোষ্ঠীর ১৫০০ লোক থেকে বেছে বেছে ৫০০ জনকে দাস হিসেবে নেন,ইউরোপে যাবার পথে তাদের মধ্যে ২০০ জন মারা

যায়। হাইতির সিকাও প্রদেশে কলম্বাস ১৪ বছরের ঊর্ধ্বে সবার জন্য তিন মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ সংগ্রহ করে দেবার নির্দেশ দেন৷ যারা দিতে পারতো না তাদের হাত কেটে ফেলে রাখা হতো, রক্তক্ষরণে মারা যাবার জন্য। ৯ বছরের ঊর্ধ্বে মেয়েদের যৌনদাস হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে কলম্বাস ও তাঁর সঙ্গীরা। আরাওয়াকরা এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়,তারা স্পানিয়ার্ডদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যায়, কিন্তু পরাজিত হয় স্বাভাবিকভাবেই। বন্দীদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় আরাওয়াকরা গণ-আত্মহত্যা শুরু করে কাসাভা বিষ খেয়ে।

এমনকি পিতা-মাতা তাদের শিশুসন্তানদের মেরে ফেলেন স্পানিয়ার্ডদের হাত থেকে বাঁচাতে! হাইতির জনসংখ্যা দুই বছরে আড়াই লাখ হতে অর্ধেক হয়ে যায় কলম্বাসের কারণে। ১৫১৫ সালে আরাওয়াক জনসংখ্যা ৫০ ০০০,১৫৫০ সালে ৫০০, ১৬৫০ সালে আরাওয়াকরা বিলুপ্ত হয়ে যায়! কিউবাতে প্রায় ৭০০০ শিশু মারা যায় ৩ মাসে, এ সম্পর্কে পাদ্রী বার্তোলমিও ডি লা কাসাস লিখেছেন -In this way. Husband died in mines wives died at works, child died from lack of milk.  স্যামুয়েল এলিয়ট মরিসন তাঁর "Christopher Columbus Mariner" বইতে কলম্বাসের দস্যুপনা ও নিষ্ঠুরতার বিবরণ তুলে ধরেছেন সবিস্তারে। তিনি কলম্বাসকে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।

সর্বোপরি, কলম্বাসকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয় যে তিনি নবদিগন্তের উদগাতা, নতুন মহাদেশ আবিষ্কারক, প্রকৃতপক্ষে তা নয়। তিনি স্পানিয়ার্ডদের দ্বারাই অভিযুক্ত হয়েছেন হত্যা,ধর্ষনের মত অপরাধে। কলম্বাস নিষ্ঠুর হলেও কলম্বাসের যে গুণের প্রশংসা প্রত্যেকেই করেছেন তা হলো সমুদ্র সম্পর্কে গভীর জ্ঞান ও নাবিক হিসেবে দক্ষতা।

 

ইংরেজ জাতি 

বর্তমান ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সূচনা হয়েছিল ১০৬৬ সালে। এই বছর নরমান্ডির (বর্তমান ফ্রান্সের একটি অংশ) ডিউক William the Conqueror ইংল্যান্ড আক্রমন করেন এবং যুদ্ধ জয় করে সিংহাসনে বসেন। নরমানরা শুধু রাজ্যই জয় করেনি, তারা সেখানে বাস করতে শুরু করে, নিজেদের দেশ থেকে প্রচুর লোক ইংল্যান্ডে নিয়ে আসে এবং স্থানীয়দের সাথে মিশে যায়। একটি সময়ের পর এখন আর তাদের আলাদা করে নরমান বলে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। স্থানীয় এবং নরমানরা মিলে মিশে এক নতুন জাতির জন্ম দেয়। সেই জাতিকেই এখন আমরা ইংরেজ জাতি বলি।

আমাদের DNA 

আমাদের DNA এর ক্ষেত্রেও ঠিক এমন অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে আমাদের DNA এর মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির জীবের DNA প্রবেশ করেছে। এরপর সেগুলো প্রচুর পরিমানে ফটোকপি হয়েছে, কিছু অংশ বাদ পরেছে, কিছু অংশ পরিবর্তিত হয়েছে, আর শেষ পর্যন্ত কিছু অংশ আমাদের DNA এর স্থায়ী অংশ হিসেবে রয়ে গেছে। আমাদের DNA এর প্রায় ৪০ % তৈরি হয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিন্ন প্রজাতির জীবের DNA থেকে। এটা শুনে হয়ত অনেকের চোখ কপালে উঠতে পারে যে- আমাদের DNA এর প্রায় ৮% তৈরি হয়েছে রেট্রোভাইরাস নামে এক ধরনের ভাইরাসের কোড থেকে। মিলিয়ন বছর আগে এই ভাইরাসগুলো আমাদের দেহকে আক্রান্ত করেছিল। তারপর এখন তারা আমাদের অংশ হয়ে গেছে।


কোন বয়সে নারী-পুরুষের বিয়ে করা উচিত


একজন পুরুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা সবচেয়ে বেশি থাকে ১৪ থেকে ২৮ মাত্র । একজন নারীর আকাঙ্ক্ষা বেশি থাকে ১৩ থেকে ২৬ মাত্র । তারপর কমতে থাকে একটু একটু করে । কিন্তু কমার রেশিও কম থাকে বলে এটি বোঝা যায় না সহজে ।

৩০বছরের পর থেকে যত দিন বেঁচে থাকে, নারী ও পুরুষ উভয়ের, প্রতিবছর আকাঙ্ক্ষাএন্ড ডিজায়ারের ১% করে কমতে থাকে । তার মানে আপনার যখন ৫০ বছর হয়, নারী হোক, পুরুষ হোক, স্বাস্থ্য ভালো থাকলে, শরীরে হরমোনজনিত কোন সমস্যা না থাকলে, আপনার সক্ষমতার মাত্র ২০% হারান । বাকি ৮০% অক্ষত থাকে ।

নারীদের এই বয়সে মেনোপজ হয় । অনেকের ধারনা এরপর আকাঙ্ক্ষা থাকে না বা কমে যায় । এটি ভুল ।নারীদের এমন ধারনার কারণ : সামাজিক চাপ, দাম্পত্য মানসিক চাপ, পার্টনারের সাথে দূরত্ব এবং নতুন করে কারও সাথে সম্পর্কের সুযোগের অভাব, শরীরে বিভিন্ন রোগ বাঁধিয়ে ফেলা, সন্তানরা বড় হয়ে

যাওয়ায় সামাজিক লজ্জায় চেপে রাখা, ধর্মীয় শাসনে নিজেকে বন্দি করে ফেলা, এমনসব কারণে আকাঙ্ক্ষা কমে যায় ।

তুলনামূলকভাবে পুরুষদের উপর এসব চাপ কম বলে তাদের একটিভ মনে হয় । বাস্তবে নারী ও পুরুষ, দুজনেরই একই সেক্স ডিজায়ার এন্ড ড্রাইভ থাকে ।

প্রজনন সক্ষমতার সাথে আকাঙ্ক্ষা কোন সম্পর্ক নেই । বয়স যখন কম থাকে, আকাঙ্ক্ষার বড় অংশ জুড়ে থাকে ফিজিক্যাল ডিমান্ড । বয়স যত বাড়তে থাকে আকাঙ্ক্ষা বড় একটি অংশ থাকে মেন্টাল ডিমান্ড । মনে রাখবেন - আকাঙ্ক্ষা হলো ফিজিকেল এবংমেন্টাল ডিমান্ডের সমন্বয় ।

এই মেন্টাল এবং ফিজিক্যাল প্রপোরশান যখন সমান থাকে, তখন প্লেজার তার সবচেয়ে পিক পয়েন্টে থাকে । প্লেজারের ক্ষেত্রে পুরুষদের উত্তম বয়স ২২ থেকে ২৭ । নারীর উত্তম বয়স ২০ থেকে ২৫ ।

দুঃখজনক যে, আমাদের দেশে নারী-পুরুষ বিয়ে করে যখন ড্রাইভ তার কমতির দিকে যায় । আর যখন উপভোগের উত্তম সময়, তখন ওনারা জিকির করেন !

নারীদের আকাঙ্ক্ষা সময়সীমা :

১. মেয়েদের চাহিদা ছেলেদের ৪ ভাগের এক ভাগ। কিশোরী এবং টিনেজার মেয়েদের আকাঙ্ক্ষা সবচেয়ে বেশী। ১৮ বছরের পর থেকে মেয়েদের চাহিদা কমতে থাকে, ৩০ এরপরে ভালই কমে যায়।

২. ২৫ এর উর্দ্ধে মেয়েরা স্বামীর প্রয়োজনে যৌনতা করে ঠিকই কিন্তু একজন মেয়ে মাসের পর মাস যৌনতানা করে থাকতে পারে কোন সমস্যা ছাড়া।

৩. মেয়েরা রোমান্টিক কাজকর্ম যৌনতার চেয়ে অনেক বেশী পছন্দ করে। বেশীরভাগ নারীরা গল্পগুজব হৈ হুল্লোড় করে যৌনতার চেয়ে বেশী মজা পায়।

৪. মেয়েরা অর্গ্যাজম করে ভগাংকুরের মাধ্যমে। যার জন্য যৌনকর্মের কোন দরকার নেই।

৫. শারীরিক মিলনে নারীরা উত্তেজিত আর আনন্দিত হন ঠিকই কিন্তু অর্গ্যাজম হওয়ার সম্ভাবনা ১% এর চেয়েও কম।

যৌবনের গোড়া থেকেই পুরুষরা যৌনতার দিকে ঝুঁকে থাকে বেশি৷ নারীরা যেন এ ব্যাপারে নিজেদের একটু আড়াল করেন৷ আসলে টেস্টোস্টেরন হরমোনের কারণে পুরুষের যৌনতার ইচ্ছে একটু বেশিই হয়৷ নারীরা আবেগপ্রবণ হওয়ায় যৌনতার ক্ষেত্রে তাঁদের প্রতিক্রিয়া শারীরিক হয় না সবসময়৷


গৌরীদান ও সুন্নতি বিয়ে

রামায়ণ ও মহাভারতে বাল‍্যবিবাহ প্রথার উদাহরণ নেই, তবে স্বয়ংবর প্রথার বিবরণ আছে। এই স্বয়ংবর সভা থেকে মেয়েরা স্বাধীনভাবে নিজেদের জীবনসঙ্গী বেছে নিতে পারতেন। এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে যে আট-নয় বছরের মেয়েদের বিয়ে দেবার যে গৌরীদান প্রথা উনিশ শতকের বাঙালি শিক্ষিত সমাজেও ব্যাপকভাবে ছিল? এই গৌরীদান প্রথা এলো কোথা থেকে? এর উত্তরে অনেক হিন্দুরা বলে থাকেন, ভারতে মুসলমান শাসনের আমলে এটি প্রচলিত  হয়েছিল। এর মূলে ছিল  সিন্ধুকী  প্রথা। সিন্দুকী আবার কি? সিন্দুকী হল, মুসলমান আমলে সুন্দরী মেয়েদের খোঁজে সিন্ধুকী লাগানো হতো। ময়মনসিংহ জেলায় মুসলমান নবাবের নিযুক্ত এক শ্রেনীর লোক ছিল, যাদের উপাধি ছিল “সিন্ধুকী”। হিন্দু ঘরের রূপবতী ও গুনবতী রমনীদের ঠিকানা নবাব সরকারে জানিয়ে দেওয়াই ছিল তাদের কাজ । এর বিনিময়ে তারা বিস্তর জায়গীর পাইতেন” । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে,  সিন্ধুকী নামে কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনার অপপ্রচার হয়তো ময়মনসিংহের কোন স্থানকে ঘিরে হতে পারে, কিন্তু গৌরীদান প্রথার বিকাশ তো পশ্চিমবঙ্গে? আদতে মুল ব্যাপারটা হলো, ব্রাহ্মণ পরিবারে কন্যা সন্তান ঋতুমতী হওয়ার আগে তার বিবাহ দেওয়া হতো...কিছু ক্ষেত্রে বরের বয়স পর্য্যন্ত দেখা হতো না...নয় বছর বয়সের আগে মেয়ের বিয়ে না হলে সেই পরিবারকে একঘরে পর্য্যন্ত করা হতো...অনেক ক্ষেত্রে বিবাহ হয়তো পাঁচ বা সাত বছরে হয়ে গেলেও মেয়ে বাপের বাড়িতে থাকতো...তারপর বারো তেরো বছর বয়সে ঋতুমতী হলে তাকে শ্বশুর বাড়ি পাঠানো হতো...ব্রাহ্মণ পরিবারের এই প্রথা ক্রমে হিন্দুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু হিন্দু নয়, মুসলমান সমাজে কম বয়সী বালিকা কন্যা বিয়ে দেবার প্রচলন সবসময় ছিল। 

আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগেও আমাদের মা- চাচীদের বিয়ের বিয়ে হতো অল্প বয়সেই। কারণ আমাদের প্রিয় নবী নিজে যেমন কম বয়সী হযরত আয়েশা(রাঃ)কে সুন্নতি বিয়ে করেছিলেন, তেমনি নিজের মেয়েদেরও কম বয়সেই বিয়ে দিয়েছিলেন। এটা মুসলিম সমাজকে প্রভাবিত করে। এখন কথা হচ্ছে, এই ধর্মীয় কারণ ছাড়াও আরো ৩টি কারণে আমাদের সমাজে গৌরীদান ও সুন্নতি বিয়ে হতো। প্রথম কারণ হলো- মানুষের গড় আয়ু ছিল কম, অর্থাৎ ৩৫ থেকে ৫০ বছর, কুড়িতে মেয়েদের বুড়ি বলা হতো । দ্বিতীয় কারণট হলো মানুষ অভিজ্ঞতায় দেখেছেন, নয়-দশ বছর বয়স থেকে মেয়েদের চেহেরায় লাবণ্যতা আসে, শরীরও ভারী হতে শুরু করে। এই বয়সে অর্থাৎ বয়সন্ধীকালে মেয়েদের ডিমান্ড থাকে প্রচুর, এই বয়সটা পার হলে বাবা-মাকে মেয়ের বিয়ে নিয়ে হতাশায় দিন কাটাতে হয়, সমাজেও মুখ লুকাতে হয়। আর সবশেষ অর্থাৎ তৃতীয় কারণটি হল-মানুষ প্রকৃতির কাছ থেকে শিখেছে যে, মাসিক শুরু হওয়া মানে একটি মেয়ে বা প্রাণী যৌনতা ও সন্তান ধারনের উপযুক্ত হওয়া। সুতরাং এসময় তাকে ঘরে আবদ্ধ রাখা মানে, প্রকৃতি বা ইশ্বরের ইচ্ছার বিরোদ্ধাচরণ করা, এ কারণে হিন্দু সমাজে ভ্রুণহত্যার পাপে পাপীস্ট হয় বাবা-মা। সাম্প্রতিককালে এক পরিসংখ্যান বলছে করোনাকালে আমাদের দেশে যত বিবাহ হয়েছে, এর প্রায় ৭০ ভাগ হয়েছে বাল্যবিবাহ তথা বালিকা বিবাহ।  ন্যাটস্যাল সার্ভের প্রতিষ্ঠাতা কায়ে উইলিংস মনে করেন কোনো ব্যক্তি যৌনমিলনের জন্য প্রস্তুত কিনা তা বয়সের মানদণ্ডে যাচাই করা সঠিক নয়।  প্রত্যেক তরুণ-তরুণী আলাদা - কেউ ১২/১৩ বছর বয়সেও যৌনমিলনের জন্য প্রস্তুত হয়, আবার অনেক ১৮ বছর বয়সেও প্রস্তুত নাও থাকতে পারেন । বিষয়টা বিবেচনায় রেখেই আমাদের সংসদে বাল্যবিবাহ নিরোধ বিল ২০১৭ -এ ক্ষেত্রবিশেষে কম বয়সে ছেলেমেয়েদের বিয়ের বিধান রাখা হয়েছে ।

কারণ নির্দিষ্ট একটি বয়সের পরে আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য প্রত্যেকেরই একজন যৌন সঙ্গীর প্রয়োজন হয়। তাই আমাদের প্রিয় নবি নিজে বলেছেন, বিয়েকে এতোটাই সহজ করে দাও, যেন জিনা করা কঠিন হয়ে যায়।চলুন এ বিষয়ে আধুনিক বিজ্ঞা্নের মতামত কি শুনে আসি- অবাক করা তথ্য হলো- টিন হলে অর্থাৎ থার্টিন থেকে নাইনটিন ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সেই মেয়েদের যৌন উত্তেজনা ও যৈন চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। ওই সময়ই জীবনের এই নতুন সাধ পেতে টিনেজারদের শরীরের ভিতরটা ছটপট করে। একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদের মধ্যে সঙ্গমের ইচ্ছা সবচেয়ে বেশি থাকে। বিদেশে এই বয়সে কোনও মেয়ে ভার্জিন হলে, তাকে নিয়ে রীতিমতো ঠাট্টা করা হয়। মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জানিয়েছে, তাদের ৩৩ শতাংশ কিশোর-কিশোরী ১৪ বছর বয়সে পৌঁছানোর আগেই যৌন কাজে লিপ্ত হচ্ছে। মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড মর্বিডিটি সার্ভে দেখা যায়। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১১ শতাংশ টিনেজারদের একাধিক যৌন সঙ্গী রয়েছে, যদিও মালয়েশিয়ায় আইন অনুযায়ী যৌন কার্যকলাপে জড়িত হওয়ার সর্বনিম্ন সম্মতির বয়স ১৬ বছর। ১৬ বছরের মেয়েদেরকে ইংরেজরা সুইট সিক্সটিন বলে, ২০ বছরের পর মহিলাদের মধ্যে যৌন চাহিদা থাকে টিনেজারদের তুলনায় অনেকটাই কমে যায়। এই বয়সের মহিলারা মিলনের থেকে বেশি ভালবাসায় বিশ্বাসী হয়।

সাধারণত মহিলাদের যৌন চাহিদা পুরুষদের থেকে অনেকটাই কম। সেই চাহিদার মেয়াদও কম হয়। গবেষণাসমৃদ্ধ এবিসি’র একটি রিপোর্টে জানা যায়, ইন্টারনেটে যারা অশ্লীল সাইট দেখেন তাদের ৮০ শতাংশই কম বয়সের পুরুষ৷ মুলত টেস্টোস্টেরন হরমোন রিলিজের গতি বাড়ার কারণে তরুণ বয়সেই পুরুষদের যৌন উত্তেজনা তুঙ্গে থাকে। এই সময় যৌনতাকে দমন করে পড়ালেখায় মনোযোগী হবার নীতি প্রকৃতি বিরোদ্ধ হয়। এই অবদমিত যৌনইচ্ছা তাকে সারাক্ষণ তাড়িত করে, অস্থিরতা আর সুযোগের সন্ধানে মরিয়া হয়ে উঠে সে। ফলে বর্তমানে আমাদের শহরাঞ্চলেও টিনেজারদের মধ্যে কন্ডোম ব্যবহার করে সেক্স করার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে উচ্চবিত্ত সমাজে তথা নামীদামী সহশিক্ষার স্কুল-কলেজের ছাত্র/ছাত্রীদের মধ্যে। অল্প বয়সে বিয়ে করলে এইসব ব্যাভিচার এবং অবদমিত যৌনইচ্ছা্র বাজেচিন্তা তাকে কাবু করে না। জৈবিক চাহিদা পূরণে বিভিন্নভাবে অর্থ অপচয় করা কিংবা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ভীষণ ডিপ্রেশনে ভুগে জীবন নষ্ট করা থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।

১/ সাস্থ্যগত এবং মেধাগত। কম বয়স থেকে যৌনতা শুরু করলে শরীরের হাড়, মাংসপেশি, গঠন এমন কি মস্তিষ্ক উন্নত থেকে উন্নততর হয়। ইউরোপীয়দের উন্নত শারীরিক গঠন ও মেধাগত উৎকর্ষতার পেছনে বাল্যকালে যৌনক্রিয়ার প্রভাব প্রমাণিত।

২/অল্প বয়সে বিয়ে করলে ইমুনোগ্লোবুলিন এ নিঃসরন বৃদ্ধি হয়। এই অ্যান্টিজেনটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখে। বড় কোনো জটিল রোগ হয় না , চেহেরায় লাবণ্যতা থাকে, মন শান্ত থাকে।

৩/কম বয়সে বিয়ে করলে বিয়ের ২/৩ বছরের মধ্যে সন্তান জন্মদানের কোনো চাপ থাকে না। স্বামী-স্ত্রী ২/৩টা বছর একান্ত নিজেদের নিয়ে কাটাতে পারে। অপরদিকে একটু বেশি বয়সে বিয়ে করলে, বিশেষত মেয়েদের বেলায় দ্রুত সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। তা নাহলে সন্তান জন্মদানে বিভিন্ন সমস্যার দেখা দিতে পারে।

৪/বেশি বয়সে বিয়ে করলে স্বামী স্ত্রী নিজেদের জন্য খুব বেশি সময় পান না। বরং বছর ঘুরতেই সন্তান দায়িত্ব এসে কাঁধে এসেপরে, আর একবার সন্তান হয়ে গেল দু'জনে একান্তে কাটানোর মতো সময় হয়ে উঠে না,

৫/বেশি বয়সে বিয়ে করলে স্বাভাবিকভাবেই বয়সের কারণে যে গাম্ভীর্য চলে আ্সে, তারজন্য সম্পর্ক খুব বেশি রোমান্টিক ও ঘনিষ্ঠ হয় না। ব্যাপারটি বরং এমন হবে যে, মানুষ বাজে মন্তব্য করবে তাই বিয়ে করা।

৬/ একজনের চেয়ে দুজন ভালো  । অল্প বয়সেই বিয়ে করলে দুজনের জীবনের সুখ দুঃখ সবকিছুই ভাগ করে নেওয়া যায় বলে মানসিক চাপটাও কম পড়ে। যৌবনের প্রথম দিকে যৌন মিলনের সময় মন ভালো রাখার ডোপামেইন হরমোনসহ সবগুলো হরমোন শরীর থেকে বেশি নিঃসরিত হয় বলে সারা জীবন মন মানসিকতা চাঙ্গা থাকে।এ ছাড়া কম বয়সে শারীরিক মিলনের সময় প্রচুর অক্সিটোসিন নিঃসরণ হয়। যার প্রভাবে দম্পতির আত্মবিশ্বাস এবংআবেগের বন্ধন মজবুত হয়।

৭/ কল বয়সে বিয়ে করলে যৌনতা উপভোগের সময় অনেক পাওয়া যায়। দেরিতে বিয়ে করলে উপভোগের সময়টাও কমে আসে। এছাড়া কম বস থেকে

নিয়মিত যৌন মিলনের মাধ্যমে নারীদের পিরিয়ড নিয়মিত রাখার হরমোন নিঃসরণ স্বাভাবিক থাকে। বেশি বয়সে গোলযোগ দেখা দিতে পারে।

৮/ ) যদি অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে অল্পতেই ভেঙে যায় তাহলে জীবনটাকে নতুন করে গুছিয়ে নেওয়ার দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়া যায় যা দেরিতে বিয়ে করলে পাওয়া সম্ভব হয় না।

৯/একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর সঙ্গম স্বাস্থ্যকর। দীর্ঘ যৌন বিরতি যৌন আকাঙ্ক্ষায় ভাটা পড়তে দেখা যায়। অদমনের ফলে হরমোনের মাত্রা, যেমন টেস্টোস্টেরন ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন মাত্রা কমতে শুরু করে, যা আমাদের যৌন আকাঙ্ক্ষা উত্তেজনা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


তরুণ বয়স হল শরীরে তখন হরমোন পরিবর্তনের সময়। সে সময়কার প্রেম যতটা মানসিক তার চেয়েও বেশি শারীরিক। প্রি-টিন, টিন এবং পোস্ট টিন-এজের প্রেম মিডলাইফ পর্যন্ত প্রায় সমান্তরাল ধাচে চলতে থাকে। মনে হয় এই অনুভূতি চিরকালের। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সংসারে একটি সন্তান আসার সঙ্গে সঙ্গেই সেই ভালোবাসা ভাগ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন একসঙ্গে থেকে এককালের লাইলী-মজনু হয়ে থাকা সম্পর্ক অনেকটা ভাইবোনের মতো হয়ে যায়। বিয়ের চার’বছর পর তারা বিছানায় শোয় একে অন্যের দিকে পিঠ ফিরিয়ে। তখন তারা দুটো যন্ত্র, সংসার তাদের যুদ্ধক্ষেত্র। তখন প্রেম কোথায় যেন পালিয়ে যায়।

তিরিশ থেকে চল্লিশের কোঠায় শ্লথ হয়ে পড়ে যৌবন-ঘড়ির কাঁটা। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই সময় যেমন দেখা দেয় মিড- লাইফ ক্রাইসিস, নারীমনে হয়, তখন ২৮% নারী তীব্র যৌনতৃষ্ণায় ভোগে য়াবার ২৭% নারীর কাম শিতিলতা উদয় হয়। বাকীদের যৌনতা স্বাভাবিক থাকে। এই মিড-লাইফ ক্রাইসিসে নিষিদ্ধ সম্পর্কের ফাঁদেও অনেকেই পা দেন।

বিবাহিত স্বামী- স্ত্রীর বাইরে একেবারেই অন্য কাউকে ভালোবেসে। শুকিয়ে যাওয়া ফুল গাছটায় নতুন করে ফুল ফুটে। তাকে দেখলেই বোঝা যায় যে সে প্রেমে পড়েছে। চার বছর আগে যাকে ভালো লেগেছিল তাকে আর ভালো লাগে না। শারীরিক ক্ষুধা তাকে দেখলে আর জাগে না। তবে তা জাগে, তা অন্য কাউকে দেখলে। তার গন্ধ পেলে। যেখানে পৃথিবীর সবরকম যুক্তিই তুচ্ছ। মানুষ বলে ভীমরতি ধরেছে। তাকে বলা হয় অবৈধ। ট্যাবলয়েডের ভাষায় পরকীয়া প্রেম। এই ক্রাইসিস-এ ভোগে  কেউ কেউ অন্য বিয়েও করেন।


কিন্ত এই মিডলাইফ ক্রাইসিস কি? জেনে নিই-

মোটামুটি ৪০ থেকে ৬৫ বছর-এ এসে মানুষ মিডলাইফ ক্রাইসিসে ভোগে, এর প্রধান ভুক্তভোগী পুরুষরা।, পুরুষরা ৮ থেকে ১০ বছর ভোগে, আর মহিলারা২ থেকে ৩ বছর। এই সময় ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তুষ্ট না হওয়া, বার্ধক্যের ভয়, অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাববোধ, জীবনে যা করার ইচ্ছে ছিল, তা করতে না পারার ব্যর্থতাবোধ, সঙ্গীর সাথে যৌনজীবনের বিচ্ছেদ ইত্যাদি হাতাশা মধ্যবয়সে মানুষকে কাবু করে ফেলে। কাজে স্পৃহা কমে যাও, খিটখিটে স্বভাব, যৌনইচ্ছার অভাব- বয়স বেড়ে যাচ্ছে, শরীরের ওজন কমছে না- বাজে দেখাচ্ছে, ভবিষ্যতের সঞ্চয় নেই, সন্তান প্রতিষ্ঠিত নয়- ইত্যাদি সমস্যায় হতাশ হয়ে যৌবনের হারানো দিনগুলো ফিরে পেতে চাওয়ার নাম হল মিডলাইফ ক্রাইসিস। এই সময় পুরুষেরা চেষ্টা করেন কিশোরী, তরুণীদের মন পেতে; শুরু হয় অসমবয়সী প্রেম এবং কিছু ক্ষেত্রে যৌনসম্পর্ক। আমরা অনেক সময়েই দেখি বয়স্ক পুরুষেরা মিডলাইফ ক্রাইসিস(Midlife crisis) কাটানোর জন্য় অল্পবয়সী  মেয়েদের সঙ্গে প্রেম করতে চান। এর কারণ হচ্ছে

১/কম বয়সী মেয়েদের উপর জীবন ও সংসারের সেরকম চাপ থাকে না। তাঁরা কোনও কিছুর কথা না ভেবে জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করতে চান। বয়স্ক পুরুষদের সেই বিষয়টিই ভালো  লাগে। তাঁরা মনে করেন, এতে তাঁদের দুশ্চিন্তা ও দায়ভার অনেকটাই কম হবে। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরুষদের অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। সেসব সমস্যা নিয়েই চলতে হয়।

২/কৈশোর বা যৌবনের সুন্দর স্মৃতি উপভোগের মুহুর্ত, সবাই অচেতন মনে লালন করেন। জীবনের সেই সুন্দর সময়টি ফিরে পেতে, সেই যৌবনের আনন্দ ও স্বাদ প্রতে অল্প বয়সী প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে চান.

৩/বয়স্ক পুরুষরা বিশ্বাস করেন যে, কমবয়সী মেয়েরা বিছানায় দারুণ পারদর্শী হয়ে থাকেন। তাঁরা যৌনতায় চার চক্কা তুলতে পারেন । প্রত্যেক মুহূর্ত রঙিন করে তুলতে পারেন।

 

মিডলাইফ ক্রাইসিস-এ মেয়েদের বেলায় দেখা যায়, ঋতুতে অনিয়ম। যৌনাঙ্গে শুষ্কতা। হাঁটুতে ব্যথা, মেরুদণ্ডে ব্যথা। ব্যথা সর্বত্রই। কেমন যেন ভালো না লাগার একটা সার্বক্ষণিক শিথিল হয়ে আসে শরীরের চামড়া। ত্বক হারায় তার লাবণ্য। নারীকে হিসেব করে সংসার করার লাভ ও ক্ষতি। পৃথিবীতে সংসার ছাড়াও করার কত কিছু ছিল। কিন্তু সংসার ও সন্তান তাকে সে সময়, বা সুযোগ, কোনওটাই দেয়নি।

স্বামীও তাকে যথেষ্ট সময় দেয়নি। কথায় কথায় সে করেছে অপার সন্দেহ, মৌখিক আর শারীরিক নির্যাতন। ফলে অনেক নারীরাও এ বয়সে এসে অন্য পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হন। যেসমস্ত মহিলাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে তারা যৌনমিলনে বেশি আগ্রহী হন। অরগ্যাজমের ফলে মাথা যন্ত্রণা অনেকটা কমে যায়। তবে সব কিছু নির্ভর করে সংস্কৃতির ভিন্নতা আর বয়সের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বিষয়গুলোর উপর। ডা. থমাসের ভাষায়, নারীর বিষয়টা আসলে

যতটা না জৈবিক তার চেয়েও বেশি প্রভাব রাখে সামাজিক-সাংস্কৃতিক। কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন নারীরা মধ্য বয়সে যৌনতা উপভোগ করেন বেশি, অন্যদিকে ভারতীয় কিংবা চীনা ও জাপানি নারীরা মধ্য বয়সে যৌনতা উপভোগ করেন কম।  


বছর ৪০ বা এর উপরে যৌন জীবন

বছর ৪০-এর পর পুরুষদের ইরেকটাইল ডিজফাংশন সাধারণ বিষয় হয়ে ওঠে। এই বয়সে স্বাস্থ্য সমস্যাও প্রকট হতে থাকে, যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, স্থূলতা, ইত্যাদি . ৬০ বছর বয়সী প্রতি আটজন পুরুষের মধ্যে প্রায় সাতজন এবং প্রতি পাঁচজন মহিলার মধ্যে তিনজন নিয়মিত যৌনতা উপভোগ করেন। তবে ৭০-এ পৌঁছেও যৌনমিলন এভাবে চালিয়ে যান। এমনকী আশি পেরনো প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন নিয়মিত যৌনতা করেন। মহিলাদের জন্যও এই পরিসংখ্যান প্রায় অর্ধেক। তবে এ বয়সে অর্গাজম অনুভব করার চেয়ে সঙ্গীর সঙ্গে মানসিক এবং শারীরিক ঘনিষ্ঠতা আরও গুরুত্বপূর্ণ,  বলছেন বিজ্ঞানীরা।

পরিশেষে বলা যায়, খাবার, যৌনতা এবং ঘুম এই তিনটি জিনিষ মানব জাতির সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।  নারীকে সম্পূর্ণভাবে পর্দার মধ্যে রাখা হয়েছে শুধুমাত্র পুরুষের যৌন চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। তারপরও দেখা যায়, পর্দাবান দেশে ধর্ষক সচেয়ে বেশি। যৌনতার বিনোদন জোর করে হয় না। তা পারস্পারিক সমঝোতার এবং  নির্ভরশীলতার ওপর হয়ে থাকে।

ব্যতিক্রম হলে তা হয় ধর্ষণ। আবার এমন কিছু নারী যারা কোন যৌ উত্তেজনাই উপলব্দি কনেন না। বিয়ের কয়েক মাস পর এসব নারী নুভব করেন, যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো আনন্দই পাচ্ছেন না তিনি। না পুরুষের প্রতি, না কোনো নারীর প্রতি কারো প্রতি কোন চাহিদা নেই তার। তাই যৌনসম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি তার কাছে ধর্ষণের মতো। এমন মহিলাদের অ্যাসেক্সুয়াল বা অযৌনচিত্ত হিসেবে অভিহিত করেন বিজ্ঞানীরা।

>>>প্রেমহীন মন মরুভূমিতে শুকিয়ে পড়ে থাকা মৃত ক্যাকটাসের মতো। প্রেমই মানুষকে চিরসবুজ রাখতে পারে।

আশ্চর্য হওয়ার কথা যে, বাবা-মায়ের যখন জানতে পারেন যে, তার নাবালক সন্তান সহবাসে লিপ্ত, তখন তারা হয় তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে্‌ন, নয়ত সব জেনে বুঝেও চুপ করে থাকেন৷ কেবল মাত্র এক তৃতীয়াংশ বাবা-মা তাদের সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের সাথে বোঝাপড়া করেন৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মা-বাবা ও সন্তানদের মধ্যে যৌনতা নিয়ে খুব সীমিত আলোচনা হতে দেখা যায়৷ এই কারণে কৈশোরের একটি বড় সংখ্যা যৌনতাকে ট্যাবু ভাবতে শুরু করে এবং যৌনতা নিয়ে ঠিক কি করা উচিত তা বুঝতে পারেন না৷ 

 

নারীকে বেবি বলা হয় কেন?

ইংরেজিতে নারীকে আদর করে বেবি বলা হয়, এর কারণ হচ্ছে, মেয়েরা শারীরিক ও মানসিক ভাবে অনেকটা শিশুর মতন যেমন-তারা অল্পতেই কাঁদে, অল্পতে হাসে, সামান্যতেই অভিমান করে ইত্যাদি। তেমনি খারারের ক্ষেত্রেও শিশু খাবার মেয়েদের জন্য উপযুক্ত। যেমন দুধ এবং দুধ থেকে তৈরি দুগ্ধজাতীয় খাবার; দুধ, ঘি, মাখন, পনির, মালাই ইত্যাদি খাবার পুরুষত্বের জন্য চরম ক্ষতিকর কিন্তু নারীত্বের জন্য আদর্শ খাবার।

মেয়ে শিশুর জন্ম

জিনগত কারণে সারা বিশ্ব জুড়ে, পুরুষের চেয়ে নারীদের আয়ুষ্কাল বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হিসাব মতে মানুষের মোট গড় আয়ু ৭২ বছর। কিন্তু এর মধ্যে নারীদের গড় আয়ু ৭৪ বছর দুই মাস, অন্যদিকে পুরুষদের গড় আয়ু ৬৯ বছর আট মাস। এর সম্ভাব্য কারণ লুকিয়ে আছে আমাদের ক্রোমোজোমগুলোর ভিতর। XX হল নারী ক্রোমোজোম এবং XY হল পুরুষ ক্রোমোজোম। এই ক্রোমোজোমগুলো আমাদের শরীরে জিন ধারণ করে থাকে।  যদি নারীর X ক্রোমোজোমে জেনেটিক ত্রুটি হয়, তাহলে নারীর শরীরে ব্যাকআপ হিসেবে আরেকটা X ক্রোমোজোম থাকে। কিন্তু পুরুষের X ক্রোমোজোম একটাই থাকায় তাদের ব্যাকআপের কোন সুযোগ নেই। এ কারণে তারা মেয়েরা বেশিদিন বাঁচে। প্রসঙ্গত বলা দরকার যে, পুরুষের X ক্রোমোজোমের অনুপস্থিতির কারণে মেয়ে শিশুর জন্ম হয় এবং বেশি বয়সে গর্ভধারণের সময় মেয়ে শিশুদের জন্মানোর হার ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি থাকে। সুতরাং মেয়ে জন্ম হবার

জন্য বাবা দায়ী, মা নয়।

নারী ও পুরুষের পার্থক্য 

আপনি জানেন কি? পুরুষ এবং নারীদের ডিএনএ ৯৮.৫ শতাংশই অভিন্ন। কিন্তু সেই হরমোনের অনুপাত কম-বেশি হবার কারণেপুরুষ ও নারীদের মধ্যে কিছু পার্থক্য তৈরি হয়। এইজন্যই বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন যে, নারীরা প্রজাতিগভাবে পুরুষ থেকে আলাদা, অর্থাৎ নারীরা আলাদা প্রজাতির মানুষ। আজ আমরা নারীর যৌনতা থেকে শুরু করে শারীরিক মানসিক গঠনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবো।

পুরুষের চর্বি জমে পেটে, আর নারীদের প্রাথমিক চর্বি জমে নিতম্ব ও উরুতে। ব্যায়ামের সময় নারীদের চর্বি গলে। আর পুরুষদের গলে কার্বোহাইড্রেট।

নারীদের তুলনায় পুরুষদের সাধারণত ঘন ত্বক থাকে। প্রায় ২৫ শতাংশ।

পুরুষদের তুলনায় নারীদের স্মৃতিশক্তি বেশি হয়।

সাধারণত পুরুষদের তুলনায় বেশি আয়রনের প্রয়োজন হয়। ক্যালসিয়ামও বেশি প্রয়োজন।

জীবনে স্ট্রেস বাড়লে, পুরুষদের শারীরিক চাহিদা বাড়ে। যা একেবারেই উল্টো মেয়েদের ক্ষেত্রে।

মানুষ বিচার করার ক্ষমতা পুরুষদের তুলনায় অনেকটাই বেশি হয় মেয়েদের।সমস্যার কথা সাধারণত কারোর সঙ্গে আলোচনা না করেই মেটানোর চেষ্টা করে ছেলেরা। কিন্তু, মেয়েরা তা আলোচনা না করতে পারলে বেশি সমস্যায় পড়েন।

একজন মহিলার প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার প্রথম কারণ তার সৌন্দর্য। অন্য দিকে, অন্যদিকে শারীরিক সৌন্দর্যের চেয়ে আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব আর সামর্থ্যবান পুরুষ আকর্ষণ করে মহিলাদের।

প্ৰায় সমস্ত পুরুষই কামস্বপ্ন দেখে, এবং তাতে স্বপ্নদোষ হয় কিন্তু নারীর তা হয় না।

কোন পর্ন বা যৌন-ক্রিয়াকলাপ দেখলে বা শুনলে পুরুষ সহজেই উদ্দীপিত হয়, কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে এটা কৌতুহল মেটায় মাত্র।

তাই দেখা যায় নারীদেহ নিয়ে তৈরি ম্যাগাজিন প্লেবয় সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে সমাদৃত কিন্তু প্লেগার্ল বলে কিছু নেই।

শহর-গ্রাম, দেশে-বিদেশে সব জায়গায় পুরুষদের জন্য নারী পতিতালয় আছে কিন্তু নারীদের জন্য পুরুষ পতিতালয় হয় না, আমেরিকায় ধনী ও স্বাবলম্বী নারীদের বিভিন্ন ক্লাবেও দেখা গেছে, সেখানে মেয়েরা প্রফেশনাল পুরুষ ভাড়া করে থাকে, তবে তাদেরকে বেশি ব্যবহার করা হয় শরীর মেসেজ, কথা বলা বা সঙ্গ দেওয়ার কাজে।

যৌনতা চেয়ে মেয়েরা ভালো সিনেমা দেখতে বা রোমান্টিক গল্প শুনতে/পড়তে বেশি পছন্দ করে। এইজন্য পাশ্চাত্যে বলা হয় যে, কথা বলার মত একজন সঙ্গী পেলে মেয়েরা অনায়াসে যৌনতা ছাড়া বছরের পর বছর কোন সমস্যা ছাড়াই কাটিয়ে দিতে পারে।

পুরুষ সমকামিতা ‘গে’ এবং নারী সমকামিতা নলেসবিয়ান এর মধ্যেও পার্থক্য আছে। দুইটি যুবতী নারী একত্ৰে শয়ন করে পরস্পরকে চুম্বন করে যে আনন্দ পায়, ঐ আনন্দ যৌনবোধজাত, কিন্তু তা যৌনক্রিয়ার বিকল্প নয়। কারণ, এ যৌনবোধ মূলতঃ শারীরিক নহে–মানসিক। কিন্তু পুরুষের গে আনন্দ তার বিপরীত।

পুরুষ তার প্ৰাণ দিয়া ভালবাসা প্রেমিকা বা স্ত্রীর সঙ্গে মিলনে পরম তৃপ্তি লাভ করা সত্ত্বেও অনায়াসে পরনারী কিংবা বেশ্যাগমন করিতে পারে। নারীর পক্ষে সাধারণতঃ তা সম্ভব নয়। নারী যাকে ভালবাসে না, সাধারণতঃ তার সঙ্গে স্বেচ্ছায় সহবাস করতে পারে না। অবশ্য বারবণিতাদের জন্যই টাকার বিনিময়ে দেহদান আলাদা বিষয়।

নারী স্বভারত এক স্বামীতে সন্তুষ্ট থাকে। সে অনায়াসে এক স্বামী নিয়ে ঘর করতে পারে; মাতৃত্বের কারণে সে একাধিক পুরুষের প্ৰযোজনই বোধ করে না। আজীবন কুমারী থেকে যাওয়াও নারীর পক্ষে তেমন কষ্টদায়ক নয়। অথচ পুরুষ সম্পূর্ণ বিপরীত। ডাঃ ফোবেলের মতে “সাধারণত পুরুষ প্রতিদিন যতজন যুবতি নারীকে দেখে, নিকটাত্মীয় ছাড়া প্রত্যেকের সঙ্গে তার মিলনের ইচ্ছা হয়।

পুরুষ ও নারীর যৌনতার পার্থক্য

মানুষের যৌন তাড়ণা নির্ভর করে ‘টেস্টোস্টেরণ’ হরমোনের উপর, যা এক ধরণের ‘অ্যান্ড্রোজেন। পুরুষদের এই হরমোন তৈরীর আলাদা একটি অঙ্গই আছে, যা হল টেষ্টিস বা অন্ডকোষ। কিন্তু নারীদের ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরণ তৈরী হওয়ার কোন অঙ্গ নেই । যতটুকু যৌন তাড়না নারীদের আছে, তা তাদের এড্রেনাল কর্টেক্স-এর জোনা ফ্যাসিকুলাটা থেকে নি:সৃত এন্ড্রোজেন এর কারণে। এজন্য নারীদের যৌন তাড়না পুরুষের চেয়ে অনেক কম। পুরুষদের টেস্টোস্টেরন স্তর মহিলাদের চেয়ে ২০ থেকে ৩০ গুণ বেশি থাকে এবং এই কারণেই পুরুষরা বেশি আক্রমণাত্মক এবং যৌন নির্ভর। আরও সহজভাবে বলতে গেলে, পুরুষের অন্ডকোষে প্রতিদিন মিলিয়ন মিলিয়ন শুক্রানু তৈরি হয়। এই শুক্রাণুগুলো বের হওয়ার জন্য, বা পৃথিবীতে জায়গা করে নেওয়ার জন্য প্রচন্ড প্রেশার তৈরি করেন টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাধ্যমে। তখন পুরুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে শিশু থেকে বৃদ্ধা যে কাউকে আক্রমন করতে বা শিকার বানাতে পিছপা হয় না । এইজন্য সামর্থবান পুরুষের একাধিক বিবাহ করা ইসলামে জায়েজ। অন্যদিকে নারীদের যৌন হরমোন এস্ট্রোজেন পুরুষদের পুরোই বিপরীত। এস্ট্রোজেনকে "অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট" হিসাবেও দেখা হয়।

এর মানে হল, এটি নারী শরীরের বিষাক্ত রাসায়নিকগুলিকে সরিয়ে দেয় এবং কোষের ওপর চাপ কমায়। অর্থাৎ মিলিয়ন মিলিয়ন শুক্রাণুকে মেরে মাত্র একটি যোগ্য শুক্রাণুকে ডিম্বাণুতে মিলিত হতে অনুমুতি দেয়। আরও সহজভাবে বলতে গেলে, পুরুষের মতো মিলিয়ন মিলিয়ন শুক্রাণুর চাপ তার নাই, বরং মাসে একটি মাত্র ডিম্বাণু সে রিলিজ করে এবং সে চায় একমাত্র যোগ্য শুক্রাণুটি তাতে নিষিদ্ধ হোক। আর সেই জন্যে নারী তার পছন্দ ভালোলাগা ইত্যাদি বাদ দিয়ে যৌনতা করতে পারে না। তাই নারী-পুরুষ উভয়কে সব সময় একটা কথা মাথায় রাখতে বলা হয় যে, পুরুষ শারীরিক আর নারী হল সামাজিক। পুরুষকে সব সময় মাথায় রাখতে হবে নারীকে ভালবাসায় মায়া মমতায় আদরে সমৃদ্ধ করতে, আর নারীকে মাথায় রাখতে হবে পুরুষকে শারীরিকভাবে প্রশমিত করতে, যাতে তার বীর্যথলিতে বীর্য চাপ তৈরি করতে সুযোগ না পায়। মূলত পুরুষের বহু-ভোগ বাসনা হচ্ছে যৌনবাসনার অতৃপ্তি। পুরুষের এই ভোগস্পৃহার কারণে বহুপত্নীত্ব ও গণিকাবৃত্তির উৎপত্তি।  অন্যদিকে নারী সাধারণত এক পতিতেই তৃপ্ত।

নারীর যৌনবোধ পুরুষের যৌন-উত্তেজনার মত অতি তীব্র নয়। বরং পুরুষ অপেক্ষা অনেক ধীরগতি সম্পন্ন। তাদের ভগাঙ্কুর ও স্তনবৃন্ত পুরুষের লিঙ্গের পুরুষের লিঙ্গোত্থানের ্মত হঠাৎ উত্তেজিত হয় না ন। তাদের কাম বাসনা ধীরে ধীরে তীব্র হতে থাকলে ভগাঙ্কুর ও স্তনবৃন্ত অল্প দৃঢ় ও উত্থিত হয়ে উঠে। অর্থাৎ মিলনে নারী অল্পবিস্তুর অকৰ্মক থাকে, তবে উত্তেজিত হবার পারে তাদের সকর্মকতা প্রকাশ পায়।

পুরুষের যৌনবোধ যেমন তার লিঙ্গের মধ্যে সীমাবদ্ধ, কিন্তু নারীর কামকেন্দ্রগুলি বিস্তৃত থাকে তাদের সারা শরীরে।

মিলনের সময় নারীকে কিছুটা অনিচ্ছুক অথবা উদাসীন দেখা গেলেও, এ কাৰ্যে পুরুষের নিকট সে খানিকটা জবরদস্তি আকাঙ্ক্ষা করে থাকে। অধ্যাপক বাবার্ট মিচেলসি নারীর এই আকাঙ্ক্ষাকে দ্বৈত মনোভাব নাম দিয়াছেন। তিনি বলিয়াছেন, নারীর প্রেমিক পুরুষ বা স্বামী নারীর ঐ কৃত্রিম অনিচ্ছা ঠেলে যদি তার সঙ্গে মিলিত না হয়, তবে স্ত্রী অসন্তুষ্ট হয়ে থাকে। এই অসন্তোষের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে। তবে অনেক সময় স্ত্রী হয়ত সত্য-সত্যই শরীর বা মনের কারণে অনিচ্ছুক হলে সহজে তা বোঝা যায়। নারীর এই কৃত্রিম অনিচ্ছা—যাকে গ্রাম্য ভাষায় ‘ছিনালী’ বলা হয়, তা পুরুষের আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দেয়। এভাবে নারী স্বভারতই পুরুষের দ্বারা আক্রান্ত হতে চায়। অধ্যাপক মিচেলসি একজন সুশিক্ষিত মহিলার কথা বলিতে গিয়া লিখিয়াছেন যে, উক্ত মহিলা তার কাছে বলেছেন, ‘যে পুরুষকে ভালবাসি তাহার দ্বারা জবরদস্তি হওয়ার ন্যায় আনন্দ আর কিছুতেই নাই।

 

লিলিথ উপাখ্যান

লিলিথ উপাখ্যানের উৎপত্তি হয়েছিল যিশু খ্রিস্টের জন্মের তিন হাজার বছর আগে। প্রাচীন সুমেরীয় রূপকথায়, প্রাচীন মেসোপটেমীয় তাকে বলা হত ‘অন্ধকারের নারী’ বা ডাইনী। আজও লিলিথকে নিয়ে বিতর্ক । কারও কাছে তিনি অশুভ। আবার কারও কাছে তিনি নারী স্বাধীনতার প্রথম সৈনিক। ইহুদিদের হিব্রু ‘বাইবেল’-এর ‘বুক অব ইসাইয়া’ অনুসারে, লিলিথ অ্যাডম বা আদমের প্রথমা পত্নী। অর্থাৎ ইভের আগে লিলিথই ছিলেন অ্যাডম বা আদমের স্ত্রী। কিন্তু ঈশ্বর তাঁকে আদমের আনুগত্য স্বীকারের নির্দেশ দিলে তিনি সেই আদেশ অমান্য করে নিজেই স্বর্গোদ্যান ছেড়ে চলে যান। ঈশ্বর তাঁর খোঁজে ৩জন দেবদূত পাঠান। মরু সাগরের বুকে লিলিথ প্রতিদিন শতাধিক দানবের জন্ম দিয়ে তার বাহিনীর শক্তি বাড়ান এবং যুদ্ধ করে দেবদূতদের হঠিয়ে দেন। এরপর ঈশ্বর আদমমের অধীনতা মেনে নেবে এমন আরেকটা নারীকে সৃষ্টি করলেন আদমের পাঁজরের হাড় থেকে, যার নাম ইভ বা হাওয়া। ইভের প্রতিহিংসায় জ্বলেপূড়ে ছাড়খাড় হয়ে যায় লিলিথের হৃদয়। সুতীব্র ক্রোধে সিদ্ধান্ত নেয় লিলিথ যে, এডাম আর ইভকে কোনভাবেই আর স্বর্গের উদ্যানে থাকতে দেবে না। ঠিকই একটা কুবুদ্ধি বের করে ফেললো লিলিথ। লিলিথ' লুকিয়ে এডেনে প্রবেশ করেন। কিছুদিন পরেই লিলিথ একটা সাপের রূপ ধরে ইভের সাথে বন্ধুত্ব বানিয়ে গন্ধম ফল খাবার জন্য প্ররোচিত করে। লিলিথের কুট বুদ্ধিতে সেই চির নিষিদ্ধ ফল ইভ নিজেও খেলেন আর এডাম বাসায় ফিরলে তাকেও খাওয়ান।

ইভ এবং এডামের এই ভয়ংকর অবাধ্যতা ঈশ্বর কোনভাবেই মেনে নিলেন না। সোজা দুইজন কেউ এই পৃথিবীতে আলাদা করে শাস্তিস্বরূপ নামিয়ে দিলেন।

ঠিক কোন কারণে এডাম বা আদম তার প্রথম সঙ্গিনী লিলিথ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল । এই প্রশ্নের উত্তর ইহুদিদের জেনেসিস রাব্বাহতে পাওয়া যায়- লিলিথের সাথে এডামের দ্বন্দ্ব শুরু হয় মূলত সঙ্গমের সময়। এডাম লিলিথকে বোঝাতে চায় তার জায়গা উপরে নয়, নীচে। লিলিথ তা মানতে অস্বীকার করে। আবার এডাম সর্বদাই আরোহনে ইচ্ছুক এবং এজন্য তিনি বল প্রয়োগেও পিছ-পা হন না। আদমের এই ভোগের কর্তৃত্ব নিয়ে সে তার যুক্তি উপস্থাপন করে। যেহেতু একই মাটি থেকে স্রষ্টা তাদের তৈরী করেছে, সেহেতু দুজনই শ্রেষ্ঠ, আদম তার উপর কর্তৃত্ব করতে পারে না।

ইহুদি ধর্মানুসারে,আদমের সঙ্গে মিলনে লিলিথ-এর গর্ভে জন্ম নেয়া পুত্ররা স্বর্গ থেকে বের হবার পর ঘুমন্ত মানব নারীদের সঙ্গে মিলিত হয়, আর কন্যারা ঘুমন্ত মানব পুরুষের সঙ্গে মিলিত হয় । এমন মিলনে জাদুকর, ডাইনি ইত্যাদির জন্ম হয়। সৃষ্টিকর্তা প্রতিদিনই বেশ কিছু অশুভ শক্তিসম্পন্ন লিলিথ সন্তানকে হত্যা করেন। এর প্রতিশোধ নিতে লিলিথও সদ্যোজাত মানবশিশুদের প্রতি রাতে হত্যা করেন।

এইজন্য অষ্টাদশ শতকে ইউরোপে আদম ও ইভের ছবি সম্বলিত এক প্রকার তাবিজ সদ্যোজাত শিশুদের গলায় পরিয়ে দেয়া হতো। বিশ্বাস ছিল, এর ফলে ‘দুষ্ট’ লিলিথ ও তাঁর অশুভ অনুচররা শিশুদের কোনও ক্ষতি করতে পারবে না।

মধ্যযুগ পরবর্তী সময়ে রোগ বালাই মহামারী হলে গোটা যুক্তরাজ্য তথা ইউরোপ থেকেই হাজার হাজার নারীকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে ফাঁসি, আগুনে পুড়িয়ে কিংবা অন্যান্য মধ্যযুগীয় বর্বর কায়দায় হত্যা করা হয়েছে। এমনো হয়েছে, প্রেম বা যৌনতায় অবাধ্য নারী কিংবা অবৈধ সন্তান গর্ভধারণ করা নারীদের এভাবে অপবাদ দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। কোনো কিছু যাচাই না করেই। এভাবেই নারীকে শৃঙ্খলিত করার ইতিহাস তো আজকের নয়। কয়েক হাজার বছর ধরেই চলে আসছে। ব্যাবিলনীয় তালমুদে (শাবাত ৫) এ বলা আছে, লিলিথ কামুক, লিলিথ শিশু ভক্ষণকারী ডাইনি। রাতজাগা প্যাঁচার রূপে রাতে সে ঘুরে বেড়ায়। সেসময় কোনো যুবক পুরুষের জন্য রাতের বেলায় ঘরে একা একা ঘুমানো নিষিদ্ধ, কারণ লিলিথ তাকে ছলে বলে গ্রাস করবে। 

যদিও ধর্মের এই লিলিথ উপখ্যান একটি রূপকথার মিথ, তথাপি আধুনিক নারীবাদীরা লিলিথকে আদম থেকে মুক্তিকামী এক নারী হিসেবে কল্পনা করেন। তাঁদের মতে লিলিথ পুরুষতান্ত্রিক ধর্মের একতরফা অনুশাসনের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ। তিনি আদমের আনুগত্য ও কর্তৃত্ব অস্বীকার করে নারীর স্বাতন্ত্র্যকে ব্যক্ত করেছিলেন।

কাহিনী অনুসারে লিলিথ এর বুদ্ধি ছিল আদম এর চেয়েও অনেক বেশী। ইহুদি গ্রন্থে লিলিথ একজন শয়তান চরিত্রের অধিকারী হলেও ইহুদি নারীবাদীরা লিলিথ’কে একটি বিপ্লবী চরিত্র হিসেবে দেখেন। তারা মনে করেন লিলিথ সেই নারী যিনি নিজের জন্য পুরুষের সমান অধিকার দাবি করেছিল। যে নারী জ্ঞানী, সাহসী, স্পষ্টবাদী সমাজ তাকে খুব ভালোভাবে নেয়নি কখনো, হয়নি তার ভালো পরিণাম। খনাই তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। খনা ছিলেন জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এক বিদুষী নারী। কথিত আছে তার আসল নাম লীলাবতী। মূলতঃ খনার ভবিষ্যতবাণীগুলোই ‘খনার বচন’ নামে বহুল পরিচিত। জ্ঞানী এবং স্পষ্টবাদী বিধায় খনা’র জিভ কেটে নেয়া হয়েছিল সে গল্প প্রায় সবারই জানা। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসের সর্বকালেই যেসব নারী পুরুষের আরোপিত নিয়ম ভেঙেছেন, বাক্ স্বাধীনতা চেয়েছেন, দেহের স্বাধীনতা চেয়েছেন বা জ্ঞানলাভ করেছেন, বিদুষী হয়েছেন, সমাজ তাদের প্রায় দমিয়ে রাখতে উদ্যত হয়েছে নানাভাবে। এখনো চলছে এই ধারাবাহিকতা।