ভয়ানক একটি গবেষনা 'ইউনিভার্স ২৫'
ইদুঁরের কলোনির উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপর ভিত্তি করে মানব সভ্যতাকে বোঝার চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা। যা 'ইউনিভার্স ২৫' নামে বিখ্যাত। এতে ইদুঁরের জন্য একটি 'আদর্শ দুনিয়া' নির্মাণ করেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে ইঁদুরেরা থাকবে এবং বংশবৃদ্ধি করবে। যাকে ইদুরের স্বর্গও বলা যায়। অঢেল খাবার, পানি ও থাকার জন্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জায়গা। শুরুতে সেখানে তিনি চার জোড়া ইঁদুর রাখা হয়, যেগুলা অল্প সময়ের মধ্যে বংশবৃদ্ধি শুরু করে।
অবাক করা ব্যাপার হল, ইঁদুরদের সেই স্বর্গে মাত্র ৩১৫ দিন পরেই বংশবৃদ্ধির হার কমে যায়। যখন ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে ৬০০ তে পৌছালো, তখন সেখানে দুটি জাত তৈরি হয়ঃ ভালো ও 'বিকৃত'। এর পর থেকে দূর্বল ইঁদুরগুলো সবলদের আক্রমণের শিকার হয় এবং কোণঠাসা হয়ে পড়ে'।
নারী ইঁদুররা বেশি সন্তান জন্ম দেবার পরিবর্তে জন্ম নেয়া সন্তানদের প্রতি আক্রমনাত্মক হয়ে উঠে এবং জন্মহার ক্রমেই কমতে শুরু করে । পুরুষদের মাঝে একটি নতুন জাতের ইঁদুরের উৎপত্তি হয়, যারা নারীদের সাথে বংশবৃদ্ধি ও জায়গার জন্য 'লড়াই' করতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা শুধু খাদ্য ও ঘুম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
বিজ্ঞানী জন ক্যালহোনের মতে, আগামীতে সমৃদ্ধ পৃথিবীর মানব জাতীর জন্য দুটি ধাপ আসছে। 'প্রথমত হচ্ছে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়া এবং বংশবৃদ্ধির ইচ্ছার অভাব তৈরি হওয়া, সন্তান প্রতিপালনের প্রতি অনিহা। ক্যালহোনের এই বৈজ্ঞানিকপরীক্ষার মাধ্যমে নাগরিক সমাজ ও সভ্যতার অবক্ষয় টের পাওয়া যায় । 'দ্বিতীয়্ত হচ্ছে মৃত্যু'। কারণ সমৃদ্ধির পরিনাম হচ্ছে মৃত্যু। তাই স্টিভ জবসের সূত্র মেনে চলুনঃ "ক্ষুধার্ত থাকুন ভালো থাকুন।"
প্রাচীন গ্রিসে রাষ্ট্র ব্যবস্থা
প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের কথা। প্রাচীন গ্রিসে তখন প্রধানত দুই ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থা ছিল। এর মধ্যে একটি হলো অলিগার্কি, আর অন্যটি হলো ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্র। অলিগার্কি মানে অল্প কয়েকজন লোকের শাসন। এই অল্প কয়েকজন লোক হচ্ছেন সমাজের সবচেয়ে উঁচু বংশ এবং সম্পদশালী পরিবারের লোক। প্রাচীন গ্রিসের স্পার্টা রাষ্ট্রে ছিল এই অলিগার্কি শাসনব্যবস্থা।
স্পার্টার মূলত যুদ্ধ এবং সামরিক শক্তির বিষয়েই তাদের বেশিরভাগ সম্পদ খরচ করত। স্পার্টা ছিল তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী নগর রাষ্ট্র। স্পার্টা মত আরেক শক্তিশালী রাষ্ট্র ছিল এথেন্স। এথেন্সে আবার চলত ডেমোক্রেট্রিক বা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে। এথেন্সের মূল ফোকাস ছিল সংস্কৃতি ও জ্ঞান চর্চার দিকে। এক পর্যায়ে এথেন্সও স্পার্টার মত শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পায়। তবে স্পার্টা ছিল প্রতিষ্ঠিত শক্তি, অন্যদিকে এথেন্স ছিল উঠতি শক্তি। এথেন্স সবেমাত্র শক্তিশালী হয়ে উঠছিলো এবং সে সময়ের ভূ-রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করছিল। কিন্তু এই অবস্থা বেশিদিন চলতে পারেনি। একসময় গিয়ে এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। ইতিহাসে এই যুদ্ধ “পেলোপনেশিয়ান যুদ্ধ” নামে পরিচিত। আর এই যুদ্ধের মাধ্যমেই গ্রীক সভ্যতার সোনালী যুগের ধ্বংস শুরু হয়ে যায়।
এথেন্সের সাথে স্পার্টার এই যুদ্ধের কারণ সম্পর্কে অনেক বিশেষজ্ঞই অনেক ব্যখ্যা দিয়েছেন। এদের মধ্যে গ্রিক ইতিহাসবিদ থুসিডাইডিসের ব্যখ্যায় একদম মূল কথাটা উঠে আসে। তাঁর মতে, এথেন্স যে নতুন শক্তি হিসেবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছিল, এতে স্পার্টার ভয় হচ্ছিলো। এথেন্স যেন স্পার্টাকে ছাড়িয়ে না যেতে পারে সে ব্যবস্থা করাটাই তখন স্পার্টার একমাত্র মাথাব্যথা। স্পার্টার এই ভয় থেকেই দুই রাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। এই ঘটনাটা শুধু প্রাচীন গ্রীসেই সীমাবদ্ধ নয়। ইতিহাসে বার বার এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
। চীনের ঘুম সত্যি ভেঙেছে।
সেই উনিশ শতকের শুরুতে নেপোলিয়ন বলেছিলেন, “চীন ঘুমাচ্ছে, তাকে ঘুমাতে দাও। যদি এই ঘুম ভাঙে, সে পুরো পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিবে।” নেপোলিয়নের সেই কথার পর কেটে গেছে বহু বছর। এখন ২০২৩ সাল। চীনের ঘুম সত্যি ভেঙেছে। বর্তমান পৃথিবীতে শিল্প ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের চরম মুহুর্ত চলছে। আর এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে আমরা স্পার্টা-এথেন্সের মতো একই ধরনের বৈশিষ্ট্য দেখতে পাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং প্রতিষ্ঠিত শক্তি। অন্যদিকে চীন হলো উঠতি শক্তি। শক্তিশালী দেশ হিসেবে চীনের উত্থান ছিলো আশ্চর্যজনকভাবে দ্রুতগতি সম্পন্ন এবং নাটকীয়। এই নব্বইয়ের দশকেই চীন ছিল একটা গোবেচারা রাষ্ট্র। কিন্তু মাত্র কয়েক দশকের ভেতর চীন কৃষিপ্রধান সমাজ থেকে শিল্পোন্নত জাতিতে এবং বিশ্বের শীর্ষ শিল্প-উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্ব রাজনীতির মঞ্চে চীন এখন একটি মুখ্য চরিত্র।
চীনের এই বিস্ময়কর উত্থান তাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত করেছে। আর যুক্তরাষ্ট্র অবশ্যই বিশ্ব শক্তির ভারসাম্যের এই বিশাল পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন একটি শক্তি। চীনের বিভিন্ন কার্যকলাপ থেকেই বোঝা যায় চীন নিজেও ক্ষমতার জন্য মরিয়া। নিজেদের প্রভাব বজায় রাখার পথে যত প্রতিবন্ধকতা, সেসব কিছুর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে কিংবা আগ্রাসী হুমকি দিতে চীন দ্বিধা করে না।
একটা নতুন রাষ্ট্র যখন নতুন করে শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে তখন সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র তাকে হুমকি মনে করে। ধীরে ধীরে তারা যুদ্ধের দিকে ঝুকে পরে, আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই যুদ্ধ এড়ানো যায় না। এই পরিস্থিতিকে বলা হয়, “থুসিডাইডস ট্র্যাপ”। আর এই থুসিডাইডস ট্র্যাপ আমাদের বলে দেয়, যখন কোনো উঠতি শক্তি প্রতিষ্ঠিত শক্তির আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে, তখন যুদ্ধই হলো সম্ভাব্য ফলাফল। চতুর্থ শতাব্দীর গ্রীক ইতিহাসবিদ থুসিডাইডস হলেন এই তত্ত্বের প্রবক্তা। এই তত্ত্ব অনুসারে চীন আর যুক্তরাষ্ট্রও এখন সেই থুসিডাইসের ফাদে আটকা পড়েছে।
বর্তমান বিশ্বে আমেরিকার উপর চীনের ভূমিকা কী প্রভাব ফেলতে পারে তা এখনও দেখার বাকি আছে। রাজনৈতিক, বিশ্লেষকসহ বিশ্বের বড় বড় থিংক ট্যাংকরা এই ভবিষ্যৎ আঁচ করার চেষ্টা করে চলেছে। এই ভবিষ্যৎকে আঁচ করতে চাইলে আমাদের অতীতের আরও এমন ঘটনার উপর নজর দিতে হবে।
এজন্য আমরা চলে যাব বিশ শতকের জাপানে। জাপানের তখন সবেমাত্র শক্তিশালী দেশ হিসেবে উত্থান শুরু হয়েছে। তার আগে অর্থাৎ ১৮৫৩ সাল পর্যন্ত বিশ্ব রাজনীতিতে জাপানের তেমন কোন ভূমিকা ছিলোনা। কিন্তু এরপর এমন একটা ঘটনা ঘটে যা জাপানের অর্থনীতিকে ফুলে ফেপে উঠতে সাহায্য করেছিল। ঐ সময় মার্কিন নৌবাহিনীর কমোডোর ম্যাথিউ পেরি এদো উপসাগরে সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের জন্য গানবোট জাহাজের একটি বহর নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। সেখানে গিয়ে তিনি জাপানের সম্রাটকে বাণিজ্যের জন্য জাপান সীমান্ত খুলে দিতে কিছুটা জোরপূর্বকই রাজি করান। লোভি জাপান তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং রাশিয়ার মতো বড় বড় দেশের সামরিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতার সাথে পাল্লা দিতে ছুটে যায়। ১৮৮৫ থেকে ১৮৯৯ সালের মধ্যে দেশটির জিডিপি প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু জাপান তখন কেবলমাত্র বড় বড় দেশগুলোর সমান পদমর্যাদা অর্জন করেই সন্তুষ্ট হয়নি। জাপান তখন আশেপাশের অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারেরও প্রবল চেষ্টা চালাচ্ছিলো।
জাপানের প্রতিবেশী দেশ কোরিয়ায় যখন বিদ্রোহ শুরু হয়, তখন জাপানের শক্তি প্রদর্শন করার সুযোগ আসে। তখন জাপান এবং চীন দুই দেশই সেখানে সৈন্য পাঠানোর সুযোগ নেয়। অতি শীঘ্রই তারা নিজেদের মধ্যে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এই যুদ্ধে জাপান জয়ী হয়। ফলে কোরিয়া, তাইওয়ান এবং মঞ্চুরিয়ার নিয়ন্ত্রণ জাপানের হাতে চলে আসে। এই অঞ্চলগুলোর মধ্যে মঞ্চুরিয়াতে আবার রাশিয়ার কৌশলগত স্বার্থ ছিল। ফলে এই ঘটনায় রাশিয়া স্বভাবতই নাক গলাতে আসবে। জাপান ঐ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়ার ছয় দিন পর রাশিয়ার অনুরোধে ইউরোপ জাপানের উপর চাপ প্রয়োগ করা শুরু করে। ফলে জাপান বাধ্য হয়ে মঞ্চুরিয়া থেকে সরে আসে। অবশ্য জাপান আশা করেছিল যে এই পদক্ষেপের ফলে রাশিয়া হয়ত কোরিয়াকে জাপানের অংশ হিসাবে স্বীকৃতি দেবে। কিন্তু রাশিয়া স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার জানায়। রাশিয়া কোরিয়ায় একটি নিরপেক্ষ অঞ্চল তৈরির প্রস্তাব দেয়। মঞ্চুরিয়া ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে জাপান তখন নিজেদের জন্য ক্ষতি হিসেবে দেখা শুরু করে। এর ফলে জাপান রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধে জাপানই জয়ী হয়।
জাপানের এই মনোভাব বিশ্ব-রাজনীতির ইতিহাসে আমরা বার বার দেখতে পাই। জাপানের দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণেই সে তখন বিশ্ব দরবারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিল। কিন্তু চীনের সাথে দ্বন্দ্বে রাশিয়া এবং ইউরোপের হস্তক্ষেপে জাপান বেশ অপমানিত বোধ করে। এই ঘটনায় জাপানের যে মনোভাব দেখতে পাওয়া যায়, অর্থাৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির ফলে প্রভাব বিস্তার করা, আগ্রাসী ভূমিকা, প্রতিষ্ঠিত শক্তির হস্তক্ষেপে অপমানিতবোধ হওয়া- সবই একটি উঠতি শক্তির বৈশিষ্ট্য। আর এসব বৈশিষ্ট্য সামরিক আগ্রাসনের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে।
ঠিক একই ঘটনা লক্ষ করা যায় বর্তমান সময়ের চীনের মধ্যে। ঐ সময় জাপান যা যা করেছিল এবং জাপানের যে ধরনের মনোভাব ছিল তার সবই এখন চীনের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। চীনের পাগলা ঘোড়ার মত অগ্রগতি চীনকে সেই একই অবস্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে বর্তমানের প্রতিষ্ঠিত শক্তি অ্যামেরিকার সাথে তার ইতোমধ্যে বিভিন্ন বিরোধে জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। কিন্তু এই বিরোধ আর প্রতিযোগিতা কোথায় গিয়ে থামবে? চীন আর অ্যামেরিকা কি শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে? চীন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন মূলত থুসিডাইসের ট্র্যাপের মধ্যে পরে গেছে। এই ট্র্যাপ থেকে বের না হতে পারলে আরেকটা বড় যুদ্ধ বা বিশ্বযুদ্ধ এড়ানোর খুব কঠিন।
সেমিকন্ডাক্টর ইন্ড্রাস্ট্রি
একটা সময়ে সেমিকন্ডাক্টর ইন্ড্রাস্ট্রি ছিল একচাটিয়া অ্যামেরিকার দখলে। কিন্তু এখন তাইওয়ান, কোরিয়া, ইউরোপ এবং সর্বোপরি চীনের প্রতিযোগীতার কারনে আমেরিকার হাত থেকে এই ইন্ড্রাস্ট্রির আধিপত্য চলে যেতে বসেছে। এই চিপ তৈরির প্রযুক্তিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রীতিমত এক ভু-রাজনৈতিক যুদ্ধ। অনেকেই এটাকে বলেন চিপ ওয়ার। চীন এখন তেল আমদানির চেয়ে চিপ আমদানিতে বেশি অর্থ ব্যয় করে। কিন্তু চীনের লক্ষ সবাইকে ছাড়িয়ে যাওয়া। এখন চীনকে যদি এই চিপ আমদানীই করতে হয়, তাহলে চীন কখনোই যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়াতে পারবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য চীন চিপ তৈরির উদ্যোগে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢেলে দিচ্ছে। ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে আমেরিকার সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি।
সিলিকন দিয়ে তৈরি মাইক্রোচিপ আজকের দিনে আর শুধুমাত্র ইলেক্ট্রনিক্সেই সীমাবদ্ধ নেই। এই সেমিকন্ডাক্টর চিপ আগামী দিনে জ্বালানী তেলের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হতে চলেছে। তেল নিয়ে যে বিখ্যাত ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রয়েছে, হয়ত তার থেকেও ভয়াবহ হবে এই সেমিকন্ডাটরের রাজনীতি। কারন আজকের এই আধুনিক পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চালিকা শক্তি হলো ইলেক্ট্রনিক্স বা সেমিকন্ডার চিপ। এমনকি সামরিক শক্তি, অর্থনীতি, বা ভূ রাজনৈতিক ক্ষমতার সবচেয়ে বড় ভিত্তি হলো এই সেমিকন্ডাকটর। মিসাইল হোক বা মাইক্রোওয়েব ওভেন, সেটা তৈরি করতে শেষ পর্যন্ত এই চিপ ছাড়া গতি নেই। ফলে পৃথিবী যত আধুনিক হচ্ছে এই সেমিকন্ডাক্টরের চাহিদা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে, দেশগুলোও তাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে বা অন্য দেশের উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে এই প্রযুক্তি আয়ত্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠছে।
অর্থনৈতিক ইতিহাসবিদ ক্রিস মিলার ব্যাখ্যা করেছেন যে সেমিকন্ডাক্টর কীভাবে আধুনিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং কীভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চিপ ডিজাইন এবং উত্পাদনে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেছিল। আর এই চিপ তৈরির কারনেই কিভাবে দেশটি সামরিক শক্তিতে মারাত্মক অগ্রগতি লাভ করেছিল। স্নায়ুযুদ্ধে আমেরিকার বিজয় এবং এর বৈশ্বিক সামরিক আধিপত্যের পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল অ্যামেরিকার কম্পিউটিং শক্তি। কিন্তু এখন চীন তার চিপ তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সামরিক আধুনিকীকরনের হাত ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আগামী দিনে কি হতে চলেছে? চীন কি অ্যামেরিকাকে ছাড়িয়ে যাবে। এই বইতে ক্রিস মিলার সেই বিষয়টাই বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন।
নিউরোলজিক্যাল ব্যাখ্যা
১৯৮০-র দশকের শেষ দিকে একজন মার্কিন নারীকে নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহলে তোলপার শুরু হয়। ডাক্তারের পরীক্ষা থেকে জানা যায়- এই ভদ্রমহিলার মধ্যে কোনো প্রকার ভয় নেই। বিজ্ঞানীরা দেখতে পেলেন যে সাপ, মাকড়সা, ভয়াবহ সিনেমা, অন্ধকার ঘর—কোনো কিছুতেই তিনি ভয় পান না। একবার তাকে একটি হন্টেড হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে তাকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখানো হয়। এই ভয়ংকর পরিবেশেও তিনি হাসছিলেন এবং বলেছিলেন, “It was fun!”।
নিউরোসায়েন্সের ইতিহাসে এই নারী ছিলেন অন্যতম বিখ্যাত কেস স্টাডি। কেস স্টাডিতে তার ছদ্মনাম ছিল SM। তিনি মূলত একটি বিরল জেনেটিক রোগে ভুগছিলেন। এই রোগ হলে মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা নামের একটি অংশ ধীরে ধীরে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। অ্যামিগডালা নিয়ে অবশ্য এটাই প্রথম পরীক্ষা নয়। ১৯৩০-এর দশকে দুইজন বিজ্ঞানী মস্তিষ্কের কার্যকলাপ নিয়ে একটি সিরিজ গবেষণা পরিচালনা করেন। সেই পরীক্ষাতে তারা বানরের মস্তিষ্ক থেকে অ্যামিগডালা অংশ পুরোটাই কেটে ফেলেন। সেই গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, অ্যামিগডালা কেটে ফেলে দিলে শুধু যে ভয় কমে তা’ই নয়। বরং প্রাণীটির আচরনই পুরো পাল্টে যায়। অ্যামিগডালা না থাকলে প্রাণীটির আগ্রাসী মনোভাব পুরোপুরি চলে যায়, যৌন আচরণ হয়ে উঠে খুবই অদ্ভুত, মুখ দিয়ে সবকিছু পরীক্ষা করে দেখার প্রবণতা তৈরি হয়।
এইসব পরীক্ষা থেকে এই বিষয়টা স্পষ্ট বোঝা যায় যে- মানুষের আগ্রাসী মনোভাব, ভয় পাওয়া, কোনকিছুকে হুমকি মনে করা ইত্যাদি আচরণের সাথে মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা নামের একটি অংশের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। নিউরোসায়েন্সের গবেষকরা তাই অ্যামিগডালাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। মানুষের আচরণ বোঝার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আমাদের মস্তিষ্কের অ্যান্টেরিয়র সিঙ্গুলেট কর্টেক্স বা ‘ACC’ নামের আরেকটি অংশ। মস্তিষ্কের এই অংশের কাজটা আরও বেশি ইন্টারেস্টিং।
কোনটি আপনার ‘নিজের মত’, আর কোনটি ‘তথ্য’ এই বিষয়টা সবাই সমানভাবে বুঝতে পারে না। যারা এই বিষয়টা ভালমতো বুঝতে পারে, তারা তাদের নিজের মতের সাথে না মিললেও কোন তথ্য মেনে নিতে পারেন। যেসব লোকের মস্তিষ্কের ACC নামের অংশটি বেশ সক্রিয়, এইসব লোক সাধারণত ‘নিজের মত’ আর ‘তথ্য’-এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। কিন্তু যেসব লোকের ACC অংশটা খুব বেশি সক্রিয় না, তারা সাধারণতো একটু গোয়ার টাইপের হয়। নিজের মত দিয়েই সারা দুনিয়াকে বিচার করতে চায়, কোনটি সত্য সেটা তারা বুঝতে পারে না।
এই একই ধরনের কাজ করে মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্ট্রাল কর্টেক্স নামের আরেকটি অংশ। যেসব মানুষের মস্তিষ্কের এই অংশটি বেশি সক্রিয়, তারা চিন্তা করার সময় যুক্তি ব্যবহার করেন। ফলে তাদের মধ্যে যুক্তি দিয়ে কোনকিছু বোঝার ক্ষমতা থাকে, অন্যের মতামত তারা বিবেচনা করেন, তাদের cognitive flexibility বেশি থাকে।
মানুষের আচরণের সাথে সম্পর্কিত এইসব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেছেন ড. লেওর জ্মিগ্রড। তার গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, আমাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ বা ব্যক্তিগত বিশ্বাস কেবল পরিবেশগত নয়। বরং এইসব বিষয় সরাসরি আমাদের মস্তিষ্কের সাথে সম্পর্কিত। আগ্রাসী আচরণ, উগ্র মতাদর্শে বিশ্বাস ইত্যাদি বিষয়ের শক্তপোক্ত স্নায়ুবৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। কিছু মানুষ কেন সহজেই কট্টোর মতাদর্শে আকৃষ্ট হয় সেই বিষয়গুলো তিনি ব্যাখ্যা করেছেন। এই বিষয়ে নিয়ে লেখা তার বইয়ের নাম The Ideological Brain: The Radical Science of Flexible Thinking।
বর্তমান সময়ে বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজন বাড়ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে উগ্র ও কট্টোর ডানপন্থী মতবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। এই বইটি আমাদেরকে বুঝতে সাহায্য করবে- কিভাবে আমাদের মস্তিষ্ক বিভিন্ন ধরেনের মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয়। পাশাপাশি কিভাবে আমরা আরও নমনীয় ও সহনশীল চিন্তাভাবনা গড়ে তুলতে পারি সেই বিষয়েও এই বইতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আপনি যদি মানুষের রাজনৈতিক চিন্তা, আগ্রাসী আচরণ, উগ্র মতবাদ এইসব বিষয়ের নিউরোলজিক্যাল ব্যাখ্যা জানতে চান, তাহলে এই বইটি আপনার জন্য একদম আদর্শ।
টিপটপ লাইফস্টাইল, গুছালো সংসার!
মানুষের লাইফ স্টাইল কেমন হবে, সেটা তার পারিবারিক শিক্ষা এবং আশেপাশের পরিবেশের উপরে নির্ভরশীল। ছোটবেলায় যে পরিবার ও পরিবেশে মানুষ বড় হয়, সেটাই তার ভেতরে পাকাপাকিভাবে একটা ছাপ রেখে যায়। যে শিক্ষিত মা সীমিত উপার্জনের মাঝেও খুব সুন্দর করে গুছিয়ে ছেলেমেয়েদের বড় করেন। তাদের ঘরদোর বলেন আর লাইফস্টাইল, সবকিছুই খুব টিপটপ থাকে।
স্পেন্ট গেম
আমি আপনাকে স্পেন্ট নামক একটি গেম-এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। যুক্তরাষ্ট্রের রয়েল সোসাইটির অধীনে এই গেমটি পরিচালিত হয়। এটি ধনী পরিবারের সন্তানদেরকে এমন একটি পরিস্থিতিতে ফেলে, যেখানে তাকে একজন দরিদ্র ব্যক্তি হিসাবে এক মাস বেঁচে থাকতে হবে। খাবারের কষ্ট, থাকার কষ্টসহ একজন দরিদ্র ব্যক্তি্র প্রতিদিন কি অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন-রাত কাটে তা তাকে ভোগ করতে হয়। কিন্তু গরিব হলেও তার আচরণ যদি রয়েল ফ্যামিলির মানুষের মত বজায় থাকে, তবেই সে উপযুক্ত সার্টিফিকেট পায়; যা তার রয়েল ফ্যামিলিতে গেইট বা সিঁড়ির সঙ্গে ঝুলানো থাকে।
সম্পদ মানে কি? ধনী কে? গরীব কে?
এক প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বের সেরা ধনী বিল গেটস বলেছিলেনঃ সম্পদ মানে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা থাকা নয়! সম্পদ হচ্ছে মূলত সম্পদ তৈরি করার ক্ষমতা। উদাহরণস্বরূপ: একজন ব্যক্তি লটারি বা জ্যাকপট জিতল। যদিও সে 100 মিলিয়ন ডলার জিতেছে, সে আসলে একজন ধনী মানুষ নয়: সে প্রচুর টাকাসহ একজন গরিব মানুষ, এবং এ কারণে 90% লটারি বিজেতা 5 বছরের মধ্যে আবার গরিব হয়ে যায়।
ধনীরা মূলত টাকায় নিঃস্ব। উদাহরণস্বরূপ, অধিকাংশ উদ্যোক্তাই হচ্ছে ধনী। তারা আসলে সম্পদের পথে আছেন, যদিও তাদের কাছে টাকা নেই, কারণ তারা তাদের টাকা-বুদ্ধি বিনিয়োগ করছেন এবং সেটাই হলো সম্পদ।
যদি আপনি একটি যুবককে দেখেন যে, সে নতুন জিনিস শিখতে চায় এবং সবসময় নিজেকে উন্নত করতে চায়, তবে জানবেন সে একজন ধনী ব্যক্তি। কিন্তু যদি আপনি একটি যুবককে দেখেন যে, সে বিশ্বাস করে ধনী হতে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হয়; টাকাওয়ালাদেরই টাকা আসে, চুরি দুর্নীতি ছাড়া টাকা ইনকাম সম্ভব নয়, সব ধনীরা চোর, তবে জানবেন সে একজন গরিব, কারণ তার চিন্তাভাবনা গরিব!
ধনীরা বিশ্বাস করে যে, তাদের শুধু তথ্য এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ধনী হওয়ার জন্য। আর গরিবরা মনে করে তাদের প্রচুর টাকা লাগবে, ব্যবসা শুরু করার জন্য।
নিজেকে একটু ছেঁটে নিন
সাধারণত মানুষের ক্ষমতা ও অর্থবল বেড়ে গেলে তার অপরিকল্পিত কাজ বৃদ্ধি হয়। সোজা বাংলায় বলে অতি বাড় বাড়া। গরিব যদি ধনী হয়ে উঠে তাহলে তারা পুরনো বন্ধু-বান্ধব পরিচিতদের ধীরে ধীরে চিনতে পারে না। ক্ষমতায়িত লোকেরা তার চেয়ে বেশি ক্ষমতাবানদের সাথে মেশে। গণতান্ত্রিক সুশীল নেতা বা নেত্রীও একচ্ছত্র ক্ষমতা পেলে স্বৈরাচারিতে পরিণত হয়।
বহু জাদরেল অফিসার রিটায়ার করার পর সাপ থেকে কেঁচোয় পরিণত হন। নামের আগে যতক্ষণ না একটা এক্স বা প্রাক্তন বসছে ততক্ষণ আর তিনি এ পৃথিবীর মানুষ থাকেন না।
আমার এক প্রতিবেশির যখন টাকা-পয়সা বেশি ছিলো না, তখন তিনি আমাকে দাদা বলে ডাকতেন। যেই তাঁর আঙুল ফুলে কলাগাছ হলো, অমনি তিনি আমাকে দেখলে মুখ ঘুরিয়ে নিতেন। আড়ালে দাদার বদলে গাধা বলতেন।
যার যত অর্থ জমে তার তত স্বার্থ বিনাশ হয়। ক্ষমতায়িত ব্যক্তি তার কাজকর্মের জন্যই প্রতিদিন শত্রু তৈরি করে। এই শত্রুরা তার পতন ডেকে আনে। যখন অর্থ যশ একনাগারে চলতে থাকে; তখন নিজেকে কন্ট্রোল করতে শিখুন। কোথায় থামতে হবে তা উপলব্ধি করুন। অতিরিক্ত আশা, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, অতিরক্তক কল্পনা ছেঁটে নিন। নয়তো আপনাকে স্থায়ীভাবেই থেমে যেতে হবে।
নিজেকে পরাজিত ভাববেন না
গত মহাযুদ্ধে জার্মানি ও জাপান পরাজিত হয়েছিলো। কিন্তু জার্মান ও জাপানিরা নিজেদের পরাজিত ভাবেনি। তাই এই দুই জাতি আবার কিছুদিনের মধ্যেই অসাধারণ উন্নতি করেছে।
জিতবার মতো, হারার জন্যও তৈরি থাকতে হয়; হারা মানে আবার আরও বড় ধরনের প্রস্তুতি। পরাজিত মানসিকতা, বিপর্যস্ত মানসিকতার চেয়ে ক্ষতিকর।
মনে রাখবেন,সাফল্য ও ব্যর্থতা হাত ধরাধরি করে চলে। একটি বিখ্যাত উক্তি মনে রাখুন: সফল হবার জন্য বুদ্ধিমান, বিদ্বান, বিত্তবান ও ভাগ্যবান হবার প্রয়োজন নেই। এমন মানুষের দরকার, যে কখনও নিজেকে পরাজিত মনে করে না; পরাজয় মেনে নেয় না। মিলটন অন্ধ হয়ে যাবার পর অমর মহাকাব্য প্যারাডাইস লস্ট লেখেন।
নিজেকে দীন-হীন ভাববেন না। নিজেকে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলে ভাবতে শিখুন। তুচ্ছ মানুষেরা আপনাকে তুচ্ছ প্রমাণ করার চেষ্টা করবে, কিন্তু বড় মাপের মানুষেরা আপনার ভেতরের গুণগুলি খুঁজে বার করার চেষ্টা করবে।
সুযোগ পেলে অন্যের অসাক্ষাতে অন্যের প্রশংসা করুন। সর্বদা মনে রাখুন, আত্মবিশ্বাসের অভাব থেকে লোকে অন্যের নিন্দা করে।
পরিকল্পনাহীন জীবনযাপন করবেন না। আগামী বছর আপনি কী করবেন এই বছর পরিকল্পনা করুন। আগামী মাসের পরিকল্পনা এই মাসে করুন। আগামীকালের পরিকল্পনা আজ রাতে ঘুমোবার আগে সেরে ফেলুন।
আমরা কি আমাদের পরাজয় টের পাচ্ছি?
আমাদের পূর্বপুরুষরা কৃষক ছিলেন, শ্রমিক ছিলেন। থাকতেন মাটির কাঁচা ঘরে। অর্থাভাবে-অন্নাভাবে কখনও-সখনও উপোসও করতেন। পরতেন মলিন পোশাকপরিচ্ছদ। আমাদের বাবারা চাইলেন আমরাও যেন পূর্বসূরিদের মতো শ্রমিক না হই, আমরা যেন পাকা ঘরে থাকি, যেন পেট পুরে তিনবেলা খেতে পাই। বাবারা আমাদেরকে মফস্বলে এনে পড়াশোনা করালেন, উচ্চশিক্ষার্থে মহানগরে এলাম, কায়িক পরিশ্রম থেকে মুক্ত হলাম, বুদ্ধিবৃত্তিক কাজকর্ম (আসলে কেরানিগিরি) করে জীবিকা নির্বাহ করা শুরু করলাম,কায়িক পরিশ্রম না-করতে না-করতে আমাদের দেহে পুরু চর্বি জমল, সার্বক্ষণিক রোগবালাই বাসা বাঁধল, ডায়াবেটিস হানা দিলো। চিকিৎসকরা আমাদের খাবারের পরিমাণ বেঁধে দিলেন— দিনে ছয় কাপ ভাত, চারটা রুটি, এক কাপ শবজি, একটা শশা। চিকিৎসকরা আমাদেরকে প্রতিদিন দৌড়াতে বলে দিলেন। আমরা স্টপওয়াচ চালু করে হাফপ্যান্ট পরে ভুঁড়ি নাচিয়ে রাজপথে দৌড়াতে লাগলাম, জিমনেশিয়ামে গিয়ে বাঁদরের মতো এ-ডাল ও-ডাল ঝুলতে লাগলাম, বুকডনের নামে নাকে খত দিতে লাগলাম; আমরা সেসবের গালভরা নাম দিলাম— 'ওয়ার্ক আউট', 'ক্যালরি বার্ন'।
কুঁড়েঘরে থাকব না বিধায় আমরা গ্রাম ছেড়েছিলাম, শহরে থাকতে-থাকতে ক্লান্ত হয়ে আমরা দু-তিন মাস পরপর ছুটতে লাগলাম রিসোর্টে। একটু গাছপালা আর ডোবার মতো পুকুরে। শ্রমিকদের মতো দৌড়াব না বলে আমরা সুট-বুট পরে দালানে ঢুকেছিলাম, আমরা এখন মেসিন কিনে সেই একই দালানের ভেতরই দৌড়াচ্ছি। গায়ে মাটি লাগাব না বলে আমরা গ্রাম ছেকিংবা ছাদবাগান করছি। 'চাষাভুষা' শব্দটাকে আমরা গালি বানিয়েছিলাম, এখন ছাদবাগানে এক ডজন টমেটো ফলাতে পারলে গর্বিত 'নগরচাষি' হিশেবে বুক ফুলিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তা প্রচার করছি। মাছধরা মানুষদের জাইল্লা বলে তাচ্ছিল্য করা আমরাই লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে বড়শি পেতে বসে থাকছি সরকারি দিঘিতে সেই মাছই ধরার জন্য। শবজি খাব না বলে আমরা বড়লোক হয়েছিলাম; এখন বাজারে শবজির দামই বেশি, শবজি এখন বড়লোকদেরই খাবার। যে শবজি বেড়ে উঠত বাড়ির পেছনের ঝোপঝাড়ে অনাদরে-অবহেলায়; শহরে আমরা এখন সেই শবজিই কিনে খাচ্ছি ।
আমাদের পূর্বপুরুষরা ছেঁড়া কাপড় পরতেন অর্থাভাবে, এখন আমরা চড়া দামে ছেঁড়া-খোঁড়া জিন্স কিনে পরি। স্বাবলম্বনের দাপটে আমাদের মা-বাবারা বার্ধক্য কাটাচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রমে, সন্তানরা শৈশব কাটাচ্ছে চাইল্ড কেয়ারে, আমরা যৌবন কাটাচ্ছি ডেস্কটপে। সময় বাঁচানোর জন্য আমরা ফোন কিনেছিলাম। পরে, দেখলাম— ফোনই আমাদের জীবনের সিংহভাগ সময় খেয়ে ফেলেছে। ফেইজবুকে শত-সহস্র বন্ধু-অনুরাগী; কিন্তু মন খুলে কথা বলার মতো এখন আমরা কাউকেই খুঁজে পাই না, মানুষ খুঁজে পেলেও কথা খুঁজে পাই না। গাঁয়ের বিঘা-বিঘা জমি বেচে শহরে এসে আমরা ফ্ল্যাট নামক সাড়ে সাতশো বর্গফুটের খোপ কিনছি।
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিয়ে করব না ভেবে আমরা কেউ-কেউ ত্রিশেও বিয়ে করছি না, পঁয়ত্রিশে বা চল্লিশের পরে করছি । অথচ পূর্বপুরুষরা চল্লিশে দিব্বি নাতি-নাতনির মুখ দেখতেন। কিসের জন্য যেন অপেক্ষা করতে-করতে আমরা যৌবনেই বুড়িয়ে যাচ্ছি, আর বুড়ো বয়সে যুবকের ভূমিকায় অভিনয় করছি।; কোনোকিছুই শুরু বা শেষ করছি না যথাসময়ে। আমরা কি আমাদের পরাজয় টের পাচ্ছি?(সংক্ষেপিত)
পরিবর্তনের বিরোধিতা করবেন না
পরিবর্তন ইতিহাসের অনিবার্য গতি। আপনি কিছুদিন তার গতিরোধ করতে পারেন, কিন্তু চিরদিন পারেন না। পরিবর্তনের বিরোধিতা করলে পরিবর্তনের ঝড়ে ও বৃষ্টিতে আপনি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবেন। পরিবর্তনের পক্ষে থাকুন। নতুন ভাবনা-চিন্তা উপেক্ষা করবেন না। একসময় যা প্রাসঙ্গিক ছিলো আজ তার প্রাসঙ্গিকতা নেই। পুরুষের সবচেয়ে ভালো এবং বোকামীর দিক হলো সে কোনোদিন পরিবর্তন হয় না।
কনফুসিয়াস বলেছিলেন— পুরুষের সবচেয়ে খারাপ এবং বোকামীর দিক হলো সে সহজে পরিবর্তন মেনে নেয় না। আর রুমি বলেছিলেন-গতকাল আমি চালাক ছিলাম তাই পুরো পৃথিবীটাকে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম। আজ আমি জ্ঞানী তাই নিজেকে পরিবর্তন করছি।
সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করবেন না।
যদি আপনি খুব বলবান হন, সমালোচকদের পিটিয়ে ঠাণ্ডা করতে চাইবেন। যদি ধনবান হন, তাহলে টাকা দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করতে চাইবেন আর যদি আপনি কমজোরি হন তাহলে ধুত্তোর নিকুচি করেছে বলে কাজটা ছেড়ে দেবেন। কিন্তু কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে নিজের কানে ছিপি দেবেন। সমালোচনায় আপনার কান বন্ধ রাখুন।
কোনোমতেই সমালোচকদের কণ্ঠরুদ্ধ করবেন না। তাহলে বড় কাজ করার চ্যালেঞ্জটা নষ্ট হয়ে যাবে। পৃথিবীতে এমন কোনো দার্শনিক বা তাত্ত্বিক নেই যাদের দর্শন-তত্ত্ব সমাজ নির্বিবাদে মেনে নিয়েছে।
তবে, মাঝে মাঝে কানের কুলুপটা খুলে একবার একঝলকে শুনে নিন সমালোচকদের মোদ্দা কথাটা কি। যদি দেখেন রাবিশ তাহলে আবার কানের ছিপি বন্ধ করে যে কাজ করছিলেন দ্বিগুণ উৎসাহে তাতে লেগে পড়ুন।
নিজের বিপদকে সম্পদে পরিণত করতে শিখুন।
প্লেপন নামে এক চীনা ব্যবসায়ীর ১৭ বছর বয়সে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। ২০ বছর বয়সে তিনি পারিবারিক ব্যবসায়ে যখন যোগ দেন তখন ব্যবসা পড়তির মুখে। এক পয়সা লগ্নি করার মতো কোম্পানির ফান্ডে নেই। কিন্তু প্লেপন এই পড়ে যাওয়া পৈত্রিক ব্যবসাকে রমরমা করে তোলেন।
ডায়াবেটিসের রোগী বলে তার বিয়ে হচ্ছিলো না। তিনি অনেক কষ্টে চুক্তিভিত্তিক বিয়ের পাত্রী জোগাড় করেন। যে ডায়াবেটিস প্লেপনের জীবনে অভিশাপ ছিলো, তিনি ডায়াবেটিস কনট্রোলে করে শান্তিতে সাফল্যের সাথে জীবন-যাপন করছেন। তার বিশ্বাস আগামী এক দশকের মধ্যে ডায়াবেটিসের নিরাময়যোগ্য ঔষধ আবিষ্কার হবে। তথন সে সন্তান নেবে। কাজেই 'সব সময় একটা কথা মনে রাখবেন, 'রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে। কোন বিপদ বা সমস্যাকে ভয় পাবেন না। বিপদ বা ভয়কে সম্ভাবনা হিসেবে তৈরি করার চ্যালেঞ্জ নিন।
অন্যকে দুঃখ দেবেন না
আমাদের জীবনে অর্ধেক দুঃখ আসে আমরা অপরকে দুঃখ দেই বলে। বাকি অর্ধেক দুঃখ আসে অন্যেরা আমাদের দুঃখ দিতে চায় বলে। অন্যকে দুঃখ না দিলে আমাদের অন্তত অর্ধেক দুঃখ কমে যায়।
মানবসমাজ ব্যক্তিস্বার্থের প্রশ্নে পশুকেও হার মানিয়ে দেয়। কোথাও উৎস নারী, কোথাও অর্থ। যে প্রেমিক এতদিন প্রেমের কথা শোনাতো, একদিন সে আর একজনকে পেয়ে আপনাকে নির্মমভাবে ত্যাগ করে চলে গেলো।
অথবা প্রাণের বন্ধু বিশ্বাসঘাতকতা করলো। এভাবে কাছের মানুষগুলো দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আপনি অসুস্থ জেনেও আমার নিকট-আত্মীয় দেখতে এলো না। ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে কথা বললো। এভাবে মানুষ ক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে। সে যেন এক জনবহুল প্লাটফর্মে একা দাঁড়িয়ে আছে। প্রাথমিক সম্পর্কগুলো একে একে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আপনি অপরকে সুখী করার আন্তরিক চেষ্টা না করলে নিজে সুখি হতে পারেন না। দেশে এখন প্রচুর বিত্তবান মানুষ আছে, কিন্তু চিত্তবান মানুষ কমছে। তাই সুখও কমছে।
নিজেকে অভ্রান্ত ভাববেন না, অন্যদের তো নয়ই।
যখন টাকা নেবেন, অন্যে গুনে দিলেও নিজে দুবার গুনে নেবেন। দিন বদলায়, যুগ বদলায়, সমাজও বদলায় ও নতুন সমাজ পুরনো দিনের ধ্যান-ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে অথবা নতুন দিনের ভোরে পুরনো দিনের ভাবনা-চিন্তা ভুল ছিলো বলে প্রমাণ হয়।
তাই কখনো ভাববেন না, যা ভাবছেন, যা বলছেন সেটাই শেষ কথা। অথবা আপনার গুরু বা আপনার নেতা আপনাকে যা বুঝিয়েছেন সেটাই সত্যি। আবার বিপরীতটাও সত্যি নয়। বলতে পারেন তখনকার মতো সত্যি, কিন্তু চিরকালের জন্য নয়।
পৃথিবীতে যুগ যুগ ধরে বহু মানুষ তাঁদের বিশ্বাসের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। প্রাণ দানটা সত্যি। কিন্তু বিশ্বাসটা সত্যি নাও হতে পারে। দুটি পরস্পরবিরোধী বিশ্বাসের পক্ষে বহু লোক থাকে। সেই বিশ্বাসের জন্য দুপক্ষের লোকই প্রাণ দেয়। বার্টান্ড রাসেলকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিলো আপনার বিশ্বাসের জন্য আপনি কি প্রাণ দিতে পারেন? রাসেল বলেছিলেন, না। আমার বিশ্বাসটা তো ভুল হতে পারে। সময়ই একমাত্র বিচার করতে পারে কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক।
অতিরিক্ত অর্থ আপনাকে অহংকারী ও বিচ্ছিন্ন করে তুলবে।
আপনি যত বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন তত বেশি খাদ্যদূষণে আপনার শরীর ব্যাধিতে ভরে উঠবে। দেখা দেবে নানা লাইফস্টাইল অসুখ। প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ নানা মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করবে। সবচেয়ে যে ক্ষতিটা করবে, মানুষের সঙ্গে সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্ক নষ্ট করে দেবে। দৃষ্টিভঙ্গি এমনভাবে আচ্ছন্ন করবে যে মনে হবে টাকা দিয়ে আপনি সবই কিনতে পারেন। আপনার ধারণা হবে একমাত্র আপনিই এ পৃথিবীতে যোগ্যতম ব্যক্তি ।
আমি জীবনে খুব কমই মানুষ দেখেছি, যারা বিদ্বান অথচ বিনয়ী, ধনী অথচ স্থিতধী, রূপসী অথচ সরল। মনে রাখবেন আপনার বংশগতি, জন্ম মেধা রূপ এমনকি বহু ক্ষেত্রে অর্থও দৈব বশে পেয়েছেন। কিন্তু আপনার পৌরুষ, চিন্তাধারা, মূল্যবোধ, আপনার নিজস্ব অর্জন। ।
কারও অভদ্র আচরণে দুঃখ পাবেন না
ভদ্রতা অনেকটা জন্মগত। ভদ্রলোকের ছেলেরাই সাধারণ ভদ্রলোক হয়। এটি একটি জেনেটিক উত্তরাধিকার। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ছেলে-মেয়েরা খুবই ভদ্র। রাজনীতিকদের ছেলেরা সাধারণত অভদ্র হয় কারণ রাজনীতিকদের মধ্যে খুব কম লোকই ভদ্র। পরিবেশগত কারণে ভদ্রলোকদের সংখ্যা কমছে। কারণ নিজে সুখীবোধ না করলে লোকে ভদ্র আচরণ করতে পারে না। আজকাল নানা কারণে লোকের মেজাজ খিঁচড়ে থাকে। ভেতরে ভেতরে থাকে অভাববোধ, অপারাগতাবোধ, হীনম্মন্যতা। তাই মন বিক্ষিপ্ত হলে চিত্তও হতাশগ্রস্ত ও বিষাদগ্রস্ত হয়ে থাকে।
অন্যের কাছ থেকে ভদ্র ব্যবহার চাইলে নিজে ভদ্র ব্যবহার করুন। অন্যের অভদ্রতার দ্বারা প্রভাবিত হবেন না। আপনি নিজে ভদ্র না হলে অন্যের কাছ থেকে ভদ্র ব্যবহার দাবি করতে পারেন না। ভদ্র হতে গেলে রাগ ক্ষোভ দমন করুন। হেসে কথা বলুন। একশো জনের মধ্যে একজন ভদ্রলোক দেখতে পেলে তাকে সম্মান করুন।
সমাজতন্ত্র কি একটা ইউটোপিয়া?
জারের সময় রাশিয়ায় লেখকদের স্বাধীনতা ছিল না। সাইব্রেরিয়ার কারাগার জারের সময় নরক ছিল। দস্তয়ভস্কি সেখানে জেল খেটে এসে জেল স্মৃতি নিয়ে বই লিখলেন। জার সে বই পড়ে কাঁদলেন। সাইব্রেরিয়ার কুখ্যাত জেলখানা জার বন্ধ করলেন। ১৯১৭ সালে লেনিন রাশিয়াতে শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লব করে জারের রাশিয়া দখল করে নিলো। কমিউনিস্ট আমলে সে জেলখানা আবার চালু হলো। লেনিনের কমিউনিস্ট রাশিয়ায় কত লেখক জেলে পঁচল, মরে গেলো; দেশ ছেড়ে পালালো। স্তালিন হিটলারের সঙ্গে মিলে পোল্যান্ড দখল করে নিলো। শুরু হলো শ্রমিক শ্রেণীর সাম্রাজ্যবাদ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিকে আমেরিকা রাশিয়া ভাগাভাগি করে নিলো। পশ্চিম জার্মানি আমেরিকার মত পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক হলো। পূর্ব জার্মানি সোভিয়েত রাশিয়ার মত কমিউনিস্ট হলো। দুই জার্মানি হলো দু রকম। পশ্চিম জার্মানি ধনী। খাদ্য চাকরি কোন কিছুর অভাব নেই। পূর্ব জার্মানিতে কিছুই ছিল না কমিউনিজম ছাড়া। পূর্ব জার্মানি একদিন ইতিহাস খ্যাত বার্লিন দেয়াল ভেঙে ফেলল।
অর্থনৈতিকভাবে কারো ওপর নির্ভরশীল হবেন না।
ছেলে-মেয়েরা একটু বড় হলেই তাদের বলে দিন বাবা-মা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব তোমাদের সাধ্যমত লেখাপড়া শেখানো। তারপর তোমরা আমার ওপর আর্থিকভাবে নির্ভর করো না। আমরাও বৃদ্ধ বয়সে তোমাদের ওপর নির্ভর করবো না।
যতক্ষণ ছেলে-মেয়েরা জানবে আমাদের পিছনে বিত্তশালী বাবা আছে, ততদিন ছেলে-মেয়েরা স্বাবলম্বী হবে না। যুদ্ধে সৈনিকদের মনোবল বাড়াবার শেষ উপায় আপনাদের জাহাজটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া। তখন আর সৈন্যদের যুদ্ধ করা ছাড়া উপায় থাকে না। বৃদ্ধ বয়সে সম্পদ খুইয়ে ছেলে-মেয়েদের পিছনে খরচ করবেন না। বৃদ্ধ বয়সে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার পদে পদে যন্ত্রণা।
সাফল্যের জন্য আত্মহারা হবেন না।
ব্যর্থতার জন্যও খুব বেশি ভেঙে পড়বেন না। সাফল্য এলে দায়িত্ব বেড়ে যায়। লোকের প্রত্যাশা বেড়ে যায়। লোকে অকারণে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে ওঠে। তাই সফল লোকের ওপর সাফল্য ধরে রাখার জন্য চাপ বাড়ে। এই চাপ থেকে সাফল্যকে ধরে রাখার জন্য হয় সে সাধ্যাতিরিক্ত পরিশ্রম করে, নয় তো আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। সফল ব্যক্তির শত্রুর সংখ্যা বাড়ে। কার্যসিদ্ধির জন্য বন্ধুর ছদ্মবেশে প্রচুর স্বার্থপরায়ণ লোক এসে তাকে কুপরামর্শ দেয়। সেই হিতৈষীদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য সে অনেক সময় অন্যায় ও অসঙ্গত কাজ করে। সে আরো সাফল্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার চেষ্টা করে না। ফলে আবার ব্যর্থতা আসে। হতাশা। হতাশা থেকে ডিপ্রেশন। ডিপ্রেশন সমস্ত কর্মপ্রচেষ্টা বন্ধ করে দেয়।
সাফল্য আপনাকে বসিয়ে দেয়। আপনাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে। কিন্তু ব্যর্থতাই আপনার চালিকাশক্তি। সে আপনাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। আমি জীবনে বারবার ব্যর্থ হয়েছি বলেই বারবার নতুন অভিজ্ঞতার সামনাসামনি হতে পেরেছি।
========
বাড়িতেও আদবকায়দা অনুশীলন করা দরকার, বেশিরভাগ লোকই এটা এড়িয়ে চলে। বাচ্ছাদেরও অল্প বয়সে সৌজন্যবোধ শিক্ষা দেওয়া উচিত, একবার শিখলে তা সারা জীবন থাকবে। স্মরণ রাখা দরকার, ভদ্র ব্যবহার অন্যকেও ভদ্র ব্যবহারে অনুপ্রাণিত করে। সেজন্য ভদ্র ব্যবহার অনুশীলন করা দরকার। অন্য কেউ আপনার সাথে যত অভদ্র আচরণ করুক না কেন আপনি ভদ্র ব্যবহারের মাধ্যমে এই জঘন্য রুচিকে প্রতিহত করুন।
আপনি কি হেরে যাচ্ছেন কিছু মানুষের সমালোচনার তোপে?
কিছু মানুষ কি আপনার সব কিছুকেই নেগিটিভলি নিচ্ছে এবং আপনার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে অযথাই? আসুন জেনে নিই কেমন করে জীবনে তাদের সহ্য করবেন ?
# নির্লিপ্ত থাকুনঃ যখন কেউ আপনার স¤পর্কে নেতিবাচক কথা বলবে সবসময় তখন পাল্টা জবাব না দিয়ে নির্লিপ্ত থাকুন। ঠিক তার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসুন। সে নিজেই লজ্জা পেয়ে যাবে আপনার নির্লিপ্ততায়।
# প্রশংসা করুনঃ তার ব্যক্তিগত জীবনের ছোট ছোট অর্জনগুলোর প্রশংসা করুন। দেখবেন সে দ্বিধাবোধ করছে পরের বার আপনার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করতে ।
# সঠিক সময়ে না বলতে শিখুন। কোন আড্ডায় আপনাকে ছোট করা হচ্ছে? খুব শান্ত স্বরে বলুন "আমরা কি ভিন্ন কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারি? নয়তো আমার এখন চলে যাওয়া উচিত"।
মোট কথাঃ আপনি যখন অন্যের ব্যাপারে নেতিবাচক কথা শুনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করবেন। তখন আপনার বন্ধুটিও আপনার ব্যপারে নেতিবাচক কথপোকথনে প্রতিবাদ করবে। এভাবেই গড়ে তুলতে হবে একটি সভ্য সমাজ।
ব্রিটিশ নাট্যকার ইসরাইল জাংউইল-এর "দ্য মেন্টিং পট'
১৯০৮ সালে একটি মঞ্চনাটক বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে। দ্য মেন্টিং পট নামের এ নাটকে মূলত অভিবাসী সম্প্রদায়গুলোর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে একটি নতুন জাতির উদ্ভবের কাহিনী বলা হয়। মেন্টিং পটে বিভিন্ন ধরনের ধাতুকে একত্রে রাখা হয় এবং তারপর উত্তপ্ত করে গলানো হয়। এই উত্তাপে প্রতিটি ধাতু তার নিজস্ব গঠনতন্ত্র হারিয়ে ফেলে এবং অন্য ধাতৃগুলোর সঙ্গে মিশে একক, সমন্বিত ধাতু তৈরি করে। এতে প্রতিটি ধাতুর বৈশিষ্ট্য এবং রং আলাদা থাকলেও গলিত সবগুলো ধাতু মিশে গিয়ে একটি একক পদার্থে পরিণত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রেও তেমন ব্যাপারটি ঘটেছে। সেখানে বিভিন্ন জাতি, সংস্কৃতি এবং ধর্মের মানুষ একত্রে মিশে একটি অভিন্ন সামাজিক পরিচয় তৈরি করেছে।
মেন্টিং পটের মাধ্যমে একটি বহুমুখী, সহনশীল এবং সংহত সমাজ গড়ে ওঠে যেখানে সকল সংস্কৃতি মিলেমিশে একটি বৃহত্তর সম্প্রদায়ের জন্ম হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এমনিভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষজন একত্রে মিলিত হয়ে একটি বৃহত্তর সংস্কৃতির সৃষ্ট করেছে। এই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র দেশটাকে চিন্তার নতুন দিগন্তে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে। সমাজে মুক্তভাবে মতামত বিনিময়ের সুযোগ থাকায় নতুন আইডিয়া এবং উদ্ভাবনের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, যা প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং শিল্পকলায় বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই জন্যই যুক্তরাষ্ট্র সকলের কাছে এখনো স্বপ্ন পূরণের দেশ হিসেবে পরিচিত৷
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনকে (১৭৮৯-১৭৯৭) কোনো রাজনৈতিক দলে যোগদান করেননি এবং দলগত রাজনীতিকে তিনি ক্ষতিকর বলে মনে করতেন ৷ তিনি মনে করতেন, রাজনৈতিক দলগুলো ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থকে সামনে রেখে কাজ করে, যা গণমানুষের উন্নতি, দেশের স্থিতিশীলতা ও শান্তির জন্য ক্ষতিকর।
স্ফুলিঙ্গ এক জায়গা থেকে শুরু হয় কিন্তু ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র
সত্তরের দশকের আগে মহিলাদের গৃহবন্দী করে রাখত আমাদের সমাজ। খাওয়া পরার জন্য রীতিমতো হাত পাততে হত স্বামী, বাবা অথবা সন্তানের কাছে। পুরুষ মানুষের মূল্য বুঝাতে লোকে বলতো সোনার আংটি বাঁকা হলেও দাম কমে না। আর নারীর মূল্য বুঝাতে লোকে বলত: মেয়ের নাম ফেলি; পরে নিলেও গেলি, যমে নিলেও গেলি। অর্থাৎ কোনরকম ফেলতে পারলেই বাঁচে। মেয়েদের উপনাম ছিল তিনটা- আপদ, বিপদ ও মুসিবত।
১৯৫৯ সালে ভারতে ৭জন গুজরাটি গৃহবধূ ঘরের মধ্যে থেকেই স্বাবলম্বী হয়ে নিজেদের স্বাধীন করতে স্বপ্ন দেখলেন। যশয়ন্তী, পার্বতী, উজাম, ভানু, লাগু, দিওয়ালী ও জয়াবেন নামের সাত গৃহবধূ তৎকালীন ৮০ টাকা (বর্তমান প্রায় ১০,০০০) ঋণ করে পাপড়ের ব্যবসায় নামেন।
তাদের উদ্যোগ ছিল এমন একটি ব্যবসা, যেটা ঘরের মধ্যেই তৈরি করা যায়, ঘরের বাইরে বেরোতে হবে না। প্রথমে মাত্র চার প্যাকেট পাঁপড় তারপর আস্তে আস্তে ব্যবসা বাড়ে। কিন্তু তারা কর্মচারী নিয়োগ করেননি বরং অন্যান্য পরিবার থেকে যুক্ত হওয়া মহিলাদের পার্টনারশিপ নিয়েছিলেন। নাম দিলেন "লিজ্জত পাঁপড় ", ভারতে লিজ্জতের বর্তমান রেভেনিউ ১৬০০ কোটি, লিজ্জত পরিবার ৪৫০০০! তারা হাজার হাজার নারীকে সাবলম্বী করেছেন! ২০২১ সালে ভারত সরকারের পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় শ্রীমতী যশয়ন্তীকে।
মোট কথা হল: আপনি যা-ই করেন, তা যদি সংঘবদ্ধভাবে করতে পারেন, তাহলে জয় সুনিশ্চিত হয়। সুতরাং যেকোনো ক্লাব, ফোরাম, সংঘ বা দলের সাথে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে হলেও সঙ্গে থাকুন,সঙ্গবদ্ধ থাকুন। সংগৃহীত।
নিজেকে প্রতিপক্ষের যায়গায় কল্পনা করুন
কখনো কি না ভেবে কথা বলে কিংবা অতিরিক্ত রেগে গিয়ে পরে অপরাধবোধ হয়েছে আপনার? আপনি নিশ্চয় দেখে থাকবেন, চারপাশে মানুষ চিৎকার করে কলহ করছে, এমনকি কোনো কর্মী বসের সঙ্গে ঝগড়া করে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। একটি সফল বৈবাহিক সম্পর্ক, ক্যারিয়ার, এমনকি ব্যাবসায়িক সম্পর্কও উত্তেজনার কারণে নষ্ট হতে পারে। তাই সাফল্যময় পরিপূর্ণ একটি জীবন পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই অন্য কাউকে মনঃক্ষুণ্ন করে এমন কথা বলা, বা সমালোচনা কিংবা তর্ক-বিতর্ক অথবা কাজ করা বন্ধ করতে হবে। নিতান্তই কারো সঙ্গে যদি রেগে যান’ তাহলে ধীরস্থির হয়ে তাকে বোঝান ব্যাপারটা এবং বিনয়ের সঙ্গে সরি বলে ক্ষমা চেয়ে নিন। তার জায়গায় নিজেকে চিন্তা করুন। এমনটি করতে পারলে আপনি কদাচিৎ নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারাবেন।
প্রথমে আপনি যেমন ইচ্ছা তেমন ব্যবহার করে ফেললেন এবং পরবর্তীতে কষ্ট পেলেন, এমন করা বন্ধ করুন। প্রচণ্ড রাগ, হিংসা কিংবা দুঃখ পেলে অন্য কারো সঙ্গে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। দাঁড়িয়ে থাকলে বসে পড়ুন এবং নিস্তব্ধ থাকুন। অন্য কেউ যদি আপনার থেকে কিছু শোনার আগ্রহ পোষণ করে, তবে তাকে বলুন ‘আমাকে ভাবার জন্য একটু সময় দিন’।
শিক্ষার্থী হোন, তা না হলে আপনি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন না।
শেখা এবং সাফল্য লাভ ব্যাপার দুটো অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ‘মানুষের শেখা কখনো শেষ হয় না। এটি একটি চিরন্তন প্রক্রিয়া’। জীবনের কোন কোন পর্যায়ে আপনার শিক্ষাগ্রহণ জরুরি। আমাদের জীবন একটি বিশ্ববিদ্যালয়। আপনি যা-ই করেন কিংবা যে-ই অভিজ্ঞতা হোক না কেন আপনার, আপনি কিছু একটা শিখবেন। এটিই আমাদের জীবন। প্রতিদিনই আপনি নতুন চিন্তা-ভাবনা, অনুভূতি এবং মনোবল সঞ্চার করবেন।
প্রতিদিন নিত্যনতুন জিনিস শেখাও কিন্তু এক ধরনের সাফল্য। আপনার জ্ঞানকে প্রসারিত করার জন্য শেখার জন্য হাত বাড়িয়ে দিন। বিরক্তিকর কোনো কাজ থেকেই আনন্দময় কিছু নেওয়ার চেষ্টা করুন।
আপনাকে নতুন নতুন জিনিস শিখতেই হবে, তা না হলে আপনি প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবেন না।
প্রতিদিন শেষে নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আজ আমি কী শিখলাম? জীবনে সফলতা অর্জন করার জন্য আমাকে আর কী কী করতে হবে?। কখনো আপনার উত্তরগুলো হবে ¯পষ্ট, আবার কখনো হবে অ¯পষ্ট। কিন্তু নিয়মিত প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করলে আপনি নিজেকে আরো ভালো করে বুঝতে ও জানতে পারবেন। মাঝে মাঝে আবার এমন হবে যখন আপনার দিন পুরোটাই বৃথা যাবে। এমন দিনগুলো থেকেও কিছু শেখার চেষ্টা করুন। মুহূর্তগুলোকে কাজে লাগান।
কথায় আছে, নিজে চেষ্টা না করলে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও কাউকে সহযোগিতা করেন না।
সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার তরুণ প্রজন্ম বুঁদ হয়ে আছে আধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন গ্যাজেটের মধ্যে। তারা ভিডিও গেম কিংবা ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বুঁদ হয়ে থাকে। অথচ নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করবার বিনিময়ে তারা বেকার অবস্থা হতে উত্তরণের নূতন কোনো প্রচেষ্টায় বা কোয়ালিটি টাইম দিতে ইচ্ছুক নয়।
সত্যি কথা বলতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম সারা রাত ধরে অনলাইনে থাকে, সারা সকাল ঘুমায়। এরা সূর্যোদয় দেখে না, সূর্যাস্ত দেখে না। সূর্যোদয়ে বিছানায় থাকে, সূর্যাস্তে মোবাইলে থাকে। এরা ফার্স্টফুডে আসক্ত। এরা আউটডোর খেলা পছন্দ করে না। ইনডোরে স্বস্তি পায়। এক অস্থির জেনারেশন তৈরি করছি আমরা। এদের স্পেসিফিক কোনো লক্ষ্য নাই। আদর্শিক কোনো এমবিশান নাই। এরা বই পড়ে না, নিউজপেপার পড়ে না। এরা হাঁটতে পছন্দ করে না। আধা কিলোমিটার গন্তব্যে যেতে আধা ঘন্টা রিক্সার জন্য অপেক্ষা করে। এরা অনর্থক তর্ক জুড়ে দেবে। এদের নেই বিনয়, নেই কৃতজ্ঞতাবোধ। এদের উদ্ধত আচরণে আপনি ভয়ে কুকড়ে যাবেন।
তাদের বুঁদ হয়ে থাকার আর একটা বিষয় হচ্ছে ক্রিকেট খেলা। ইউরোপে ইংল্যান্ড বাদে বাকি দেশগুলোর মানুষ ক্রিকেট কী, সেটা জানেই না। যে নেদারল্যান্ডস দল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেট খেলে, তাদের দেশের নারীরা বলছিলেন, ক্রিকেট একধরনের পোকা। আমেরিকায় বেস বল, ভলিবল—এসবের দাপট দেখার মত। বেশিরভাগ আমেরিকান ক্রিকেট-নামে নামে একটি খেলা আছে, তা জানে না। অথচ আশ্চর্যের বিষয়, আমাদের দেশে জ্ঞানবিজ্ঞান, আর্ট-কালচার সব ছাপিয়ে এই ক্রিকেটাররা হয়ে গেলেন জাতীয় হিরো। এদের ফলোয়ার অনুগামীর সংখ্যা লাখে লাখে। একসময় ফুটবল ছিল আকাশ সমান জনপ্রিয় খেলা। ধীরে ধীরে সে খেলা ইতিহাসে ঠাঁই নিতে চলেছে। সত্যি কথা বলতে কি, সনাতন সমাজব্যবস্থা হতে আমরা আধুনিক সমাজব্যবস্থায় পদার্পণ করেছি বটে; কিন্তু মডার্ন সোসাইটির রুলস অ্যান্ড রেগুলেশন আমরা ফলো করি না।
মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা
জ্ঞান বিনির্মাণের কাঁচামাল হলো তথ্য। তথ্য থেকে সৃষ্টি হয় জ্ঞান; জ্ঞান পরিচর্যায় আসে প্রজ্ঞা এবং প্রজ্ঞাবানের কর্মের ফসল হলো সৃজনশীলতা।
মুসলিম শাসকদের স্বর্ণযুগে নবম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে মধ্য এশিয়া, ইরান, স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে ও উত্তর আফ্রিকার কিছু দেশে জ্ঞানচর্চার জোয়ার এসেছিল। এরই সূত্র ধরে ইউরোপের রেনেসাসে তা পরিপূর্ণতা পায়। এ সময় জ্ঞানচর্চার সূত্র ধরেই পশ্চিমে উচ্চতর গবেষণা ও পঠনপাঠনের সহায়ক নানা প্রতিষ্ঠান যেমন গড়ে উঠেছিল, তেমনি আবিষ্কৃত হয়েছিল জ্ঞানচর্চার উপযোগী সহায়ক অনেক যন্ত্রপাতি। আড়াই শ বছর আগে ইংরেজদের মাধ্যমে রেনেসাঁ-পরবর্তী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে আমাদের সংযোগ ঘটতে শুরু করে।
বর্তমানে বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকে বরাবরই ভালো করছে স্ক্যান্ডিনেভীয় দেশগুলো। এবারো শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে সুইজারল্যান্ড। দ্বিতীয় অবস্থানে সুইডেন। তৃতীয় অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম পাঁচে আছে স্ক্যান্ডিনেভীয় আরো দুটি দেশ: ফিনল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডস। এশিয়ায় সবচেয়ে ভালো করেছে সিঙ্গাপুর। দেশটির বৈশ্বিক অবস্থান ষষ্ঠ। ভালো অবস্থানে আছে ইসরায়েল, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও চীন।
মূলত প্রশিক্ষণ ও গবেষণার পর্যাপ্ত সুবিধা, মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা দেশগুলোকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে।বৈশ্বিক দৃশ্যপটে সবকিছু দ্রুত বদলে যাচ্ছে, এই দেশগুলো দ্রুততার সাথে প্রবেশ করছে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে। দুর্বল মানবসম্পদ দিয়ে আমরা ওই প্রতিযোগিতায় পেরে উঠব না। কাজেই মানবসম্পদের উত্পাদনশীলতা ও দক্ষতা অনেক বাড়াতে হবে।
ইউনেস্কোর মানদণ্ড অনুযায়ী শিক্ষা খাতে ন্যূনতম জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ থাকতে হবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যয় করে ২ শতাংশেরও কম। এমনকি তা আফ্রিকার দক্ষিণ সুদান, নাইজেরিয়া ও সোমালিয়ার মতো দারিদ্র্য ও সংকটপীড়িত দেশের চেয়েও কম। জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের মাধ্যমে উন্নত ও শক্তিশালী রাষ্ট্র কিভাবে গড়ে তোলা যায় তার কোনো জাতীয় নীতিমালা এখন পর্যন্ত আমাদের তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রক্রিয়া প্রকৃত সমাজসংস্কারকের অভাবে গড়ে উঠছে না। এর প্রধান কারণ হলো, মানুষ এখন সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার চেয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
জ্ঞান আহরণের অনেক বিকল্প বের হলেও শিক্ষকরা জ্ঞান বিতরণের চেয়ে জ্ঞান বাণিজ্যিকীকরণের বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছে।
শিক্ষার গুণগত মান যত শক্তিশালী হবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজের ভিত্তি তত দৃঢ় হবে। তিন রকম মানুষ সামাজিক জীবনে পরিবর্তন আনতে পারেন। তাঁরা হলেন- পিতা, মাতা ও শিক্ষক।’
================
সক্রেটিস বলেছেন, তোমার যা আছে তা নিয়ে তুমি যদি সুখী না হও, তবে যা তুমি পেতে চাও তা নিয়ে সুখী হবে না। প্লেটোর মতে, সুখ, প্রকৃতি, সৌন্দর্য ও সমাজ পরস্পর সম্পর্কিত। সুখী হওয়ার অর্থ একজন প্রতিদিন প্রতিক্ষণ নির্মল আনন্দ ও প্রফুল্লতা উপভোগ করবেন—এই ধারণাও সঠিক নয়। সুখী হওয়ার পন্থা একেক জনের কাছে একেক রকম হলেও সুখী থাকার ব্যাপারে কতগুলো সাধারণ বিষয়ে সবাই একমত প্রকাশ করেছেন—কৃতজ্ঞতা ও মননশীলতার চর্চা করা, মানসিকতার উন্নয়ন করা, নিজের পছন্দসই বা শখের কাজে যুক্ত থাকা, প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটানো, চ্যালেঞ্জকে আলিঙ্গন করা, মানবিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়া এবং অন্যের প্রতি দয়ালু হওয়া ও সাহায্য করা, মানুষের সঙ্গে সম্পর্ককে প্রতিপালন দ্বারা সামাজিক বন্ধন জোরদার করা, পর্যাপ্ত ঘুম, ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে নিজের প্রতি যত্নশীল থাকা, নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করা, স্ব-আলাপে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা ইত্যাদি। তবে অন্যের সঙ্গে যুক্ত থাকা এবং বৃহত্তর কিছুর অংশ হওয়ার বোধ থেকেই আসে স্থায়ী সুখ।
কমফোর্ট জোন কী। কেন মানুষ আটে আটকায়?
একটি সুপরিচিত কথা রয়েছে—‘আপনি যদি আপনার আরামের অঞ্চল থেকে বেরিয়ে না যান তবে আপনি সবসময় একই জায়গায় আটকে থাকবেন।’ পাশাপাশি একটি জনপ্রিয় গল্প আছেঃ একবার একটি এরোপ্লেন তার পাশে থাকা একটি রকেটকে জিজ্ঞাসা করল- রকেটভাই, তুমি এত দ্রুত গতিতে কিভাবে উড়ে যাও বলতো? তখন রকেট বলে, আমার মত পাছায় আগুন ধরিয়ে দিলে তুমিও আবার মত দ্রুত যেতে পারবে। অর্থাৎ চাপে ও তাপে সবকিছুর অবস্থান পরিবর্তন হয়। লক্ষ কোটি বছরের চাপে ডায়মন্ড এবং গোল্ড তৈরি হয়েছে। জীবনে যে যত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে, সে তত সফল মানুষ। আর চ্যালেঞ্জ বাদ দিয়ে যে বা যারা কমফোর্ট জোনে পড়ে থাকে; তারা সব দিক থেকে ব্যর্থ মানুষ।
কমফোর্ট জোন হলো সেই আরামদায়ক জায়গা যেখানে মানুষ নিজের রুটিনমত কাজ নিরাপদে করতে পারেন। সাধারণত মানুষ আটে আটকায়। অর্থাৎ সে যা কিছু করে, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-অফিস, বিয়ে সাদি সবকিছু ৮ কিলোমিটার জায়গার মধ্যেই করে। যারা এই ৮কে অতিক্রম করতে পারেন, তারাই নেতা হিসেবে গড়ে উঠে।
সর্বদা মনে রাখবেন, জীবনের চ্যালেঞ্জগুলি জেতার জন্য একটি বৃহত্তর ক্ষমতার সঙ্গে লড়াই করা ভীষণ জরুরি, আর তা হলো ‘ভয়’। এটি প্রায়শই আমাদেরকে কমফোর্ট জোন বা আরামের অঞ্চলের বাইরে যেতে বাধা দেয়। অথচ নিজের উন্নতির জন্য এই কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসার বিকল্প নেই। এটি এমন একটি যাত্রা, যার জন্য সাহস, দৃঢ়তা এবং পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করা জরুরি হয়ে পড়ে।
ঠান্ডা বরফের মধ্যে পর্যাপ্ত গম উৎপাদন করতে না পেরে পশ্চিমারা না খেয়ে মরতে বসেছিল। ফলে বাধ্য হয়ে পালতোলা জাহাজে করে অজানা উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয় এবং আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি আবিস্কার করে। তারা ইউরোপের বরফের স্তুপ থেকে বের না হলে ডাইনোসরদের মত বিলুপ্ত হয়ে যেত। কাজেই আপনার উন্নতি তখনই ঘটবে, যখন আরাম বা কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে অজানায় পা রাখতে পারবেন।