ড.গিলবার্ট হ্যাডো ১৮৫৭ সালে তার বোনকে ইংল্যান্ড একটি চিঠি লিখেন যে চিঠির বিষয়বস্তু ভারি অদ্ভুত। তিনি লিখেছেন-ভারতে এই সময়ে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে চলেছে। কেউ জানে না এটা কারা শুরু করেছে বা এই ঘটনার লক্ষ্য কি? কেউ কেউ বলছে এটা একটি ধর্মীয় প্রথা আবার কেউ বলছে ভারতে লুকিয়ে থাকা গুপ্ত সমিতির কাজ এটা। কেউ জানে না এই ঘটনায় আসলে হচ্ছে টা কি? ভারতের সমস্ত খবরের কাগজ এই ঘটনার মর্ম নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করছে, তারা এটার নাম দিয়েছে ‘’দ্যা চাপাতি মুভমেন্ট’’। ডঃ গিলবার্ট হ্যাডো এই বিষয়টা নিয়ে লিখলেও ভারতের অনেক মানুষের মতন তিনিও তখন জানতেন না-এই আন্দোলনে আসলে হচ্ছেটা কি? চারদিক থেকে খবর আসছে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে রুটি। একটা দুটো নয় হাজার হাজার হাতে গড়া রুটি। কেউ জানে না কারা এটা বিতরণ করছে কেনইবা এটা গ্রাম থেকে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে।
কেউ বলছে ভারতে বসবাসকারী বিভিন্ন ইংরেজ বিরোধী লোকের কাজ এটা, কেউ আবার বলছে ইংরেজ সরকার নিজেই এটা করছে। এত আরগুমেন্ট, কাউন্টার আরগুমেন্ট সবকিছু মিলিয়ে একটা জগা খিচুড়ি অবস্থা। আর এই রুটি গুলো এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে পৌঁছেই থেমে থাকছে না। যাদেরকে এই রুটিগুল দেয়া হচ্ছে তাদের সবাই কে বলা হচ্ছে একটাই কথা আরো অনেক রুটি তৈরি করতে হবে এবং পৌঁছে দিতে হবে আরো বেশি মানুষের মধ্যে। আর এই রুটিগুলো বিতরণের পরিসীমা ভারতের একটা ছোট্ট অঞ্চল গ্রামের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলনা। মেজর থরনি যিনি মাথুরার ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন সেই সময়, তিনি লক্ষ্য করেছিলেন এই হাজার হাজার রুটি একটা রাতে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব অতিক্রম করে। সাউথের নম্রদারিভার থেকে নেপাল যেটা কিনা হাজার হাজার লাইন উত্তরে অবস্থিত সেখানেও পৌঁছে গিয়েছিল এই চাপাতি চালাচালি।
সেইসময় ১৮৫৭ সালে ইংরেজরা একদলের সিপাহী বিদ্রোহ নিয়ে জেরবার আরেক দিকে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চলছে এই চাপাতি আন্দোলনের খবর। প্রথম বার ইংরেজরা ভয় পেলেও তাদের মনে হল তারা এমন একটা শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই করছে যার হদিস পাওয়া মুশকিল। আর যদি কোন মোটিভ থেকেও থাকে সেটা কোনভাবেই সামনে আসছে না। ইংরেজরা সেই সময় এই রুটি বিতরণ কারীদের অনেক সময় গ্রেফতার করত কিন্তু তারও কেউ বলতে পাড়ত না এই রুটি বিতরণ কারা শুরু করেছে কিংবা এই রুটিগুলো কোথায় গিয়ে থামবে। ইংরেজদের মাঝে মাঝে মনে হত যে, এই রুটি নিয়ে হয়তো গোপন কোন বার্তা চলাচল করা হচ্ছে এবং সেটা যদি সত্য হয় তাহলে এটা একটা ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া। একজন একটা রুটির উপর কোন খবর লিখে সেটাকে পৌঁছে দিবে আরেক জনের কাছে সেই লোকটা আবার আরো চারটে রুটির উপর সে খবর লিখে পৌঁছে দিবে আরও ৪ জনের কাছে। এইভাবে ৪ থেকে ১৬ এবং তারপর লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে একটাই বার্তা। কিন্তু কী এমন জরুরী বার্তা যেটা লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার দরকার ছিল। অথবা যদি এরকম কোন বার্তা থেকেই থাকে তাহলে সেইগুলো সেই রুটি গুলকে কেন নেই যেগুল ইংরেজ সরকার বাজেয়াপ্ত করেছে। চাপাতি আন্দোলন যেভাবে ভারতে শুরু হয়েছিল সেইভাবে নিজের মধ্যে শেষও হয়ে যায় কিন্তু আন্দোলনের মানে কি ছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে আজও ধোঁয়াশা আছে। কেউ মনে করেন, এই আন্দোলনের আসলে কোন মানে কোন মানেই ছিল না। এটা ছিল একটা সাইকোলজিক্যাল ওয়ার্ক ফেয়ার এবং তার প্রধান দুটো এমন এইম ছিল। এক ভারতে যেহেতু সমস্ত এলাকায় সমস্ত ধর্মের মানুষ যেহেতু রুটি খান তাই রুটিকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে এটা বুঝিয়ে দেয়া যে সমস্ত ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ভারতের মানুষই ইংরেজদের কাছে নিপীড়িত। আর দ্বিতীয় ইংরেজদের সামনে এমন একটা ধাঁধা রেখে দেয়া যা হাজার চেষ্টা করলেও ইংরেজদের পক্ষে সলভ করা সম্ভব নয় কারণ এই আন্দোলনের কোনো মুখপাত্র নেই, কোনো অবয়ব নেই যাকে তারা এরেস্ট করতে পারবে। তাই একটা অজানা শত্রুর ভয়ে ইংরেজ সরকার সব সময় চিন্তিত থাকবে। ভারতের চাপাতি আন্দোলনের কি মানে ছিল সেটা আজও আমাদের সামনে আসেনি । ভারতে যে এরকম একটা ঘটনা ঘটেছিল সেটা জানাই বা কম কি।
কোমা
কোমা হচ্ছে মস্তিস্কের মৃত্যু।সেখানে চিৎকার করেও সেই মানুষটিকে জাগ্রত করা সম্ভব নয়।তিনি আলো , অন্ধকার , শব্দ কোনকিছুই বুঝতে পারেন না।আমাদের ভাষায় তিনি হচ্ছেন সম্পূর্ণ মৃত একজন মানুষ।অথচ আধুনিক বিজ্ঞান এমন অসংখ্য মানুষকে মৃত্যুর দূয়ার থেকে ফিরিয়ে এনেছে।কিন্তু এই কোমার পেছনে যে হাজার হাজার কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে এরা গবেষণা করেনা।মৃত মানুষটিকে হয় তারা সমুদ্রে ভাসিয়ে দিবে নয়তো আগুনে পুড়ে ফেলবে।এই সংজ্ঞাহীন দেহ যে আবার প্রাণ ফিরে পেতে পারে তা লিউকোমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার চিকিৎসায় বিজ্ঞানীরা একটি কৃত্রিম উপাদান আবিষ্কার করেছেন যার মধ্যে রক্তের স্টেমসেল বৃদ্ধি পায়।
ডিএনএ
ডিএনএ হচ্ছে ডিঅক্সিরাইবো নিউক্লিক এসিড। ডিএনএ নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকে। নিউক্লিয়াস একটি ল্যাটিন শব্দ যার অর্থ হচ্ছে বীজ। ১৮৩১ সালে রবার্ট ব্রাউন কোষে নিউক্লিয়াস আবিস্কার করেন। নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকে রাইবোজম। মানবদেহের প্রতিটি কোষে রাইবোজম থাকে। এই রাইবোজম থেকে আরএনএ গঠিত হয়। দুজন মানুষের ডিএনএ থেকে নয় বরং তিনজন মানুষের ডিএনএ থেকে মানব শিশুর জন্মদান প্রক্রিয়াকে ২০১৬ সালে বৈধতা দিয়েছে ব্রিটেনের আদালত। মানবকোষের মাইটোকন্ড্রিয়া সম্পর্কে যাদের ধারণা আছে তারা বিষয়টি বুঝবেন। মাইটোকন্ড্রিয়া হচ্ছে মানব শরীরের পাওয়ার হাউস, যা আমাদের খাদ্য গ্রহণ করি তা জ্বালানিতে রূপান্তরিত করে। আইভিএফ পদ্ধতিতে শিশুদের এই জন্মদানকে বিজ্ঞানের ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন নিউ ক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিএনএ নিয়ে গবেষণা করা বিজ্ঞানীরা। মানবদেহের একটি কোষে প্রায় ৩.২ বিলিয়ন বেইসপেয়ার আছে এবং এখানেই আমাদের তথ্য লুকিয়ে আছে। আর দোকানের ইটগুলো হচ্ছে মানবশরীরের ডিএনএ।
মূলত বংশগতির একটি উপাদান- জিন। জিন হলো বংশগতির আণবিক একক যা ডিএনএ-তে লিপিবদ্ধ থাকে। আমরা কেন মা-বাবার মতো দেখতে, বিভিন্ন রোগ কীভাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বাহিত হয়- এ সব কিছুর উত্তর লুকায়িত আছে বংশগতির ধারণায়। মটরশুঁটি নিয়ে গবেষণায় মেন্ডেলের পর্যবেক্ষণকৃত ‘ফ্যাক্টর’ পরবর্তীতে ‘জিন’ নামে পরিচিত হয়েছে আমাদের কাছে। ৬০/৭০ বছর পূর্বেও যে ডিএনএ-র কাঠামোই আমরা জানতাম না কীভাবেই বা সেখানে আজ ইচ্ছামতো পরিবর্তন করা সম্ভব হচ্ছে? আশ্চর্যের বিষয়, আমাদের দেহে ভিটামিন সি তৈরির জিন থাকলেও আমরা এই ভিটামিনটি তৈরি করতে পারি না। বাইরে থেকে তা গ্রহণ করতে হয়।
জীববিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত ২,৭০,০০০ ভাস্কুলার উদ্ভিদ ও ১৫ লক্ষেরও বেশি প্রাণী প্রজাতি শনাক্ত করেছেন। এক প্রজাতির জীব অন্য প্রজাতির জীব হতে ভিন্নতর। পিতামাতার আকার-আকৃতিআচার- আচরণ, চেহারা, শরীরের গঠন , রোগ-ব্যাধী, ইত্যাদি নানাবিধ বৈশিষ্ট্য বংশানুক্রমিকভাবে সন্তান সন্ততির দেহে সঞ্চারিত হয় যে মাধ্যমে তাকে বংশগতি বলে। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষা করেই কে কার সন্তান? অপরাধী কে? মৃতদেহটি কার ? কত বছর আগে মরেছে কিভাবে বলে দেয়া যায়?
কিভাবে মানুষ বংশগতিবিদ্যা এবং ডিএনএর সন্ধান পায়?
ইউরোপে অস্ট্রিয়া নামে ছোট্ট একটি দেশ আছে। এই অস্ট্রিয়াবাসী একজন ধর্মযাজক জোহান মেন্ডেলকে বংশগতিবিদ্যার জনক বলে অভিহিত করা হয়। তাঁর স্বপ্ন ছিল শিক্ষক ও বিজ্ঞানী হবেন। কিন্তু দারিদ্র্যের কষাঘাতে তাঁর সেই স্বপ্ন আর পুরণ হয়নি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাগ্রহণ ত্যাগ করে অস্ট্রিয়ার ব্রুন শহরে অবস্থিত গির্জায় যোগ দেন। ১৮৫৭ সালে মেন্ডেল ৩৪ প্রকার মটরশুঁটি সংগ্রহ করে গির্জা সংলগ্ন বাগানে উদ্ভিদের বংশগতির রহস্য উদঘাটনের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। মেন্ডেল দেখেন একই প্রজাতির মটরশুঁটি গাছ হলেও কোন গাছ লম্বা, কোন কাজ খর্বকায়, কোন গাছের মটরদানা হলুদ, কোন গাছের মটরদানা সবুজ, কোন গাছের মটরদানা একদম গোল, কোনটার আবার লম্বাটে, কোন গাছের ফুলটা হলুদ আবার কোন গাছের বেগুনি। গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো একই গাছে কোন দুটি বৈশিষ্ট্য একসাথে দেখা যায় না, অর্থাৎ একই গাছের মটরদানা গুলো অথবা ফুলগুলো একই সাথে সবুজ এবং হলুদ হয় না। দীর্ঘ সাত বছরের কঠিন ও শ্রমসাধ্য পরীক্ষা শেষে তিনি বংশগতির ৩টি সূত্র আবিষ্কার করেন। যা আমরা প্রায় সবাই স্কুলে পড়েছি। তাঁর মৃত্যুর ১৬ বছর পর, ১৯০০ সালে নেদারল্যান্ডের উদ্ভিদবিজ্ঞানী হিউগো ডে ভ্রিস,জার্মানির উদ্ভিদবিজ্ঞানের অধ্যাপক কার্ল করেন্স এবং অস্ট্রিয়ার কৃষিবিজ্ঞানী এরিক শ্চের্মেক মেন্ডলের সূত্রগুলোর উপর কাজ শুরু করে জীবদেহে বংশগতি ধারার পূর্ণাঙ্গ প্রকৃয়া বের করেন। ১৯৫০-এর দশকে আমেরিকায় ডিএনএ আবিষ্কারের পর মানব দেহের বংশগতি ধারা রহস্যের সমাধান পেয়ে যায় বিজ্ঞানীরা ? মানবদেহের প্রতিটি কোষের মধ্যে ২৩ জোড়া ক্রোমোজম থাকে।
একটি সন্তান তার পিতার এই ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থেকে ১টি আর মায়ের ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থেকে ১টি মোট দুটি ডিএনএ পায় এবং এই ডিএনএ দুটি একে অপরকে সাপের মত জড়িয়ে থাকে। এই ডিএনএ এর একটি অংশকে জিন বলে। মনে করুন আপনার শরীর হচ্ছে ২০ তলা একটি কমপ্লেক্স। এই ২০ তলা কমপ্লেক্সটি আপনার বাবার ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম ও মায়ের ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম দিয়ে তৈরী। এর প্রতি তলায় যে রুমগুলো আছে তা হচ্ছে আপনার শরীরের জিন। আপনার শরীর থেকে পাওয়া সব কোষের ডিএনএ এর কুন্ডলিকে যদি সোজা করে দেওয়া হয় তবে তার দৈর্ঘ্য হবে সূর্য থেকে পৃথিবীতে ৬৭ বার আসা ও যাওয়ার সমান। কিন্তু একটা মানুষের শরীরের কোষে প্রায় ২০ হাজার জিন থাকে। এই ডিএনএ পরীক্ষা করেই বিজ্ঞানীরা এখন খুব সহজেই অপরাধীদের সনাক্ত করতে পারেন, মৃতদেহটি কার কিংবা আজ থেকে কত বছর আগে তার মৃত্যু হয়েছে। অথবা কে কার সন্তান বলে ইত্যাদি বলে দিতে পারেন। শুধু তাই নয়, বর্তমানে মানব দেহের সম্পূর্ণ জিনোমের রহস্যভেদ করেছেন বিজ্ঞানীরা। আমেরিকার জিনোম রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যাডাম ফিলিপি জানিয়েছেন, লং রিড সিকোয়েন্সিং টেকনোলজি গত এক দশকে বিজ্ঞানের অন্যতম সেরা আবিস্কার।
মানব কোষের ডিএনএ নিয়ে গবেষণা করতে করতে বিজ্ঞানীরা মানব কোষের জিনোমের কারেকশন বা সংশোধন করে ফেলেছেন। অর্থাৎ আপনার সন্তান লম্বা হবে নাকি ফর্সা হবে, তার চোখের মনি কেমন হবে এগুলো এখন কারেকশন করা যায়। শরীরে বংশগত বিভিন্ন রোগ-ব্যাধী ডিএনএ থেকেই মুছে ফেলা যায়। অথচ কিছুকাল আগেও স্পেনের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের মৃত্যুর সাথে সাথে পুরো রাজবংশই বিলুপ্ত হয়ে যায়। সতেরো প্রজন্ম ধরে নিজেদের বংশের মধ্যে বিয়ের ধারা বজায় রাখার কারণে। বংশগতির রোগের কারণে এ রাজবংশের বিলুপ্ত হয়! এই বংশগতি রোগ সম্পর্কে জানার কারণে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পায় অনেক বংশ ও গোত্র। যেমন- প্রায় চারশ বছর পর মহীশুর (Mysore অথবা Mysuru) রাজ পরিবারে কোন রাজার ঔরসে একটি সুস্থ পুত্র সন্তান জন্ম নেয় ২০১৭ সালে । এর আগে পর্যন্ত রাজ সিংহাসনে অভিষিক্ত কোন রাজার পুত্র সন্তান জন্মালেও তারা হত স্বল্পায়ু, মানসিক বিকারগ্রস্ত, বিকলাঙ্গ অথবা কোন জটিল জন্মগত রোগে আক্রান্ত; এক কথায় সিংহাসনে বসার অযোগ্য। এই ঘটনার কারণ হিসাবে জনসাধারণের মধ্যে প্রচলিত ছিল বহু কল্পকাহিনী, যা কোনো এক অত্যাচারিত নারীর অভিশাপের কারণ বলে মনে করা হতো। কিন্তু এর বৈজ্ঞানিক কারন হল রক্তের বিশুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য রাজপরিবারের সদস্যরা নিজেদের মধ্যেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতেন। এই নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিবাহের ফলে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে নানা রকম জন্মগত রোগ বাড়তে থাকে। আর এই ভাবে Genetic Variation কমে যাবার জন্য পরবর্তী প্রজন্ম ধীরে ধীরে বিভিন্ন রোগ অসুখের কবলে পতিত হয়। কিন্তু এবার মহীশুরের বর্তমান রাজা যদুবীর (Yaduveer Krishnadatta Chamaraja) প্রচলিত প্রথা ভেঙ্গে বিবাহ করেন যোধপুরের রাজকুমারী তৃষিকা দেবী (Trishika Kumari Devi)-কে। ফলে জন্ম হয় একটি ফুটফুটে শিশুর। যে সমস্ত মানব গোষ্ঠীতে, সমাজে বা সম্প্রদায়ে নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিবাহের রীতি প্রচলিত আছে তাদের মধ্যে এই রকম নানা রকম জন্মগত রোগ ব্যাধি দেখা যায়। বিভিন্ন জন্মগত রোগ ও জন্মগত বিকলাঙ্গ শিশুর জন্মের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
Blood cancer থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফুসফুসের অসুখ ও শ্বাস রোগ, বধিরতা, অপরিনত শিশুর জন্ম, মৃত সন্তান প্রসব, বন্ধ্যাত্ব, মৃগীরোগ, ডায়বেটিস, কিডনি রোগস, হৃদরোগসহ প্রতিবন্ধী সন্তান জন্মানোর সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় । ইতিহাস পর্যালাচনা করলে দেখা যায় প্রাচীন মিশরে আপন ভাইবোনের মধ্যে বিবাহ প্রথার চল ছিল, যা মূলত ফিরাউনরা তাদের রাজকীয়তা এবং বিশুদ্ধতা বজায় রাখার জন্য করতো। ফিরাউনরা তাদের রাজবংশ ধ্বসের মূল কারণ । ক্লিওপেট্রা সাথে তার ছোটভাই টলেমির বিবাহ হয়েছিল । প্রাচীন রোমেও এ প্রথার চল ছিল। সম্রাট ক্লওডিয়াস আপন ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করেছিল । বর্তমানে শুধু বাংলাদেশেই নয়, মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ের সংখ্যা মোট বিবাহের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০.৪ শতাংশ হয় কোন নিকটাত্মীয়ের সাথে হয় । বহু জনগোষ্ঠীতে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ বিবাহ নিকটাত্মীয়ের মধ্যে হয়; জম্মু কাশ্মীরের মুসল্মানদের মধ্যে নিকটাত্মীয়ের বিবাহের হার প্রায় ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ । ভারতে কেরালা রাজ্যের Palakkad জেলার মুধুগর ও ইরূলার Mudugar and Irular উপজাতির মধ্যে সমগোত্রীয় বিবাহ ৮৯% । এই উপজাতির মধ্যে শিশুমৃত্যু বা কম বয়সে মৃতুর হার যেমন বিশ্বে সবচেয়ে বেশী, তেমনি বিভিন্ন রোগ-বালাই তাদের নিত্যসঙ্গী, সুস্থ সন্তান বা মানুষ হাতে গোনা। যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড শহরে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের বড় একটি অংশ বসবাস করে। সেখানে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৩৭ শতাংশই রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে। ব্র্যাডফোর্ড শহরে বসবাসকারী এই পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর মধ্যে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের জিনগত অস্বাভাবিকতার হার সাধারণ শিশুদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি এবং জন্মগত বৈকল্য শিশু জন্মদানের ঝুঁকি দ্বিগুণ।
বলা হয় ফার্স্ট কাজিন অর্থাৎ (সরাসরি খালাতো, মামাতো, চাচাতো বা ফুফাতো ভাইবোন) দের মধ্যে জীনগত মিল প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ, অর্থাৎ তারা বংশপরম্পরায় অনেক জীন একইভাবে বহন করে চলেছেন। এ কারণে যে সব রোগবালাই তাদের বংশে রয়েছে, সে সব তাদের সন্তানদের মধ্যে আরও প্রকটভাবে দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। আব্রাহামিক ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে, আদম এবং হাওয়ার ছেলেরা নিজ বোনকে বিবাহ করেছেন। এর অর্থ হচ্ছে, এই ধর্মগুলো অনুসারে মানব সমাজ হচ্ছে ভাই বোনের বিয়ের মাধ্যমে জন্ম নেয়া জাতি। সেইসাথে, আব্রাহাম অর্থাৎ নবী ইব্রাহিমের স্ত্রী ছিল একইসাথে বোন । আব্রাহামিক আর একটি ধর্ম খ্রিস্টান বাইবেল অনুসারে, নবী লুত তার দুই কন্যাকে গর্ভবতী করে ফেলেন। আদিপুস্তকে তার বেশ রগরগে বর্ণনা রযেছে।
মুসলমানদের সামাজিক রীতি নীতি মূলত মরুভূমি অঞ্চলের মানুষের রীতি নীতি। হারেম প্রথার কারণে সেখানে বিবাহ বিষয়ক নীতিগুলি শিথিল করা আছে। তাছাড়া মুসলিমদের যুক্তি দেখানো হয় যে, কাজিনদের মধ্যে বিবাহ হলে সম্পর্ক মজবুত হয়। কারণ এরা পরস্পরের আত্মীয়, অচেনা কেউ নয়। জয়নব বিনতে জাহশ ছিলেন মুহাম্মদ স.এর ফুফাতো বোন এবং একইসাথে তার স্ত্রী। তার মা ছিলেন উমামা বিনতে আবদুল মুত্তালিব, মুহাম্মদের পিতা আবদুল্লাহর আপন বোন। খলিফা হযরত আলী ছিলেন নবী মুহাম্মদের আপন চাচাতো ভাই। নবী মুহাম্মদ তার সাথে আপন মেয়েকে বিবাহ দিয়েছিলেন। এমন কি মুহাম্মাদের কন্যা জয়নব বিনতে মুহাম্মাদ এর কন্যা ছিলেন উমামা একইসাথে হযরত আলী বিয়ে করেছিলেন। এর অর্থ হচ্ছে, হযরত আলী একই সাথে নবী মুহাম্মদের আপন চাচাতো ভাই, মেয়ের জামাই এবং নাতনীর জামাই। কম বয়সে বিয়ে দেয়া এবং নিকট আত্মীয়কে বিয়ে করা তৎকালীন আরবের সংস্কৃতি ছিল।
নিজ বংশ এবং নিজ গোত্রে বিবাহরীতির কারণে থ্যালাসেমিয়া ও জিনগত রক্তরোগ আরবে একসময় এত প্রকট আকার ধারণ করেছিল যে, আরব সরকার বিয়ের আগে বর-কনের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক করে দেয়। এখনো আরব দেশে সুস্থ সন্তান জন্মহার কম। ফলে সরকার বাধ্য হয়ে অনা্রব বিয়ে করার অনুমতি দিয়েছে।বিশ্বের অনেক দেশ যেমন কোরিয়া, চায়না, ফিলিপিন্স আমেরিকার 24 টি স্টেট-এ এবং আরো অনেক দেশে কাজিনদের মধ্যে বিবাহ আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।
হিন্দু সংস্কৃতিতে রক্ত-সম্পর্কের আত্মীয়র সঙ্গে বিয়েতে বিধিনিষেধ রয়েছে।হিন্দুরা অন্তত তিনটি গোত্র বাদ রেখেই বিয়ে করা হয়। এমনটি দেখা যায়, হিন্দুদের শাখা ধর্ম শিখ ,বৌদ্ধ , জৈন ইত্যাদিতেও কিন্তু এর উল্টোটা দেখা যায় দক্ষিণ ভারতের হিন্দুদের মধ্যে।সেখানে নিকটাত্মীয়ের সাথে বিয়ের রেওয়াজ প্রথা হয়ে আছে।
উপসংহার
বহুকাল পূর্বে মানুষ নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হতেই অভ্যস্ত ছিল। তখন মানুষ ছোট ছোট জনগোষ্ঠীতে বিভক্ত ছিল, তাদের যোগাযোগের সুবিধা কম ছিল, তাদের জ্ঞান বুদ্ধি কম ছিল। কিন্তু আজ সেই পরিস্থিতি বদলেছে। আজ বিভিন্ন দেশ এই সমস্যার গুরুত্ব অনুধাবন করে নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হয় নিষিদ্ধ করেছে । আমরাও জেনেটিক সমস্যা কাটাতে নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে পরিহার করে সমস্যামুক্ত জীবন-যাপন করতে জন-সচেতনতা তৈরি করতে সহযোগিতা করব।
রামস্বামী পেরিয়ার
:আত্মনিয়ন্ত্রণ আন্দোলনের এক অবিসংবাদিত নেতাপেরিয়ার রামস্বামী দ্রাবিড় আন্দোলনের তামিল নেতা,আমরা যেমন গুরুজী বলি, তেমনি তামিল ভাষায় শ্রদ্ধা করে মানুষ তাকে বলে পেরিয়ার, তার আসল নাম ভেঙ্কেটাপ্পা রামস্বামী আর তার জাত বা বংশের নাম হল নাইকার। পুরো নাম দাড়ায়- পেরিয়ার রামস্বামী নাইকার। জাতিভেদ বিরোধী দ্রাবিড় আন্দোলনের তামিল নেতা ইরোদ ভেঙ্কেটাপ্পা রামস্বামী তামিলনাড়ুতে শ্রদ্ধা করে যাকে ‘পেরিয়ার’ বা ‘বয়োজ্যেষ্ঠ’ নাকে ডাকা হয়।নিজের জাতি-পরিচয় ‘নাইকার’ আর লেখেন না তিনি। সবাই পেরিয়ার নামেই তাঁকে চেনে।
পেরিয়ার রামাস্বামী নাইকার (১৮৭৯-১৯৭৩)কে এশিয়ার সক্রেটিস বলা হয়। ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে ভারতবর্ষে সবথেকে শক্তিশালী লড়াই লড়েছিলেন এই পেরিয়ার সাহেব। একশ বছর আগে তিনি ব্রাহ্মণ্যবাদী কাল্পনিক দেব-দেবীর মূর্তিতে প্রকাশ্য জুতো পেটা করেছিলেন এবং সবার সামনে বলেছিলেন, যে এই মূর্তিগুলোর যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে এরা আমার উপর অভিশাপ দিক, যেন এখুনি আমার মৃত্যু হয়। শুধু তাই নয়। পেরিয়ার সাহেব বলতেন রাস্তায় যদি একটা বিষাক্ত সাপ আর একটা ব্রাহ্মণকে একসঙ্গে দেখতে পাও, তাহলে আগে ব্রাহ্মণকে ডান্ডা দিয়ে পিটাই করো। কারণ সাপের একটাই বিষ থলি, আর ব্রাহ্মণের প্রতিটা লোমকূপ বিষাক্ত।; এ কথাটা আমি এমনি এমনি বলছি না। ব্রাহ্মণ এমন একটা জাত, যারা হাজার হাজার বছর ধরে মানুষকে ঠকিয়ে আসছে ধর্মের নামে। এরা এতটাই নৃশংস যে, মানুষকে বোকা বানিয়ে বলি দিতেও দ্বিধা করেননি। সমাজে জাত-বেজাতের মত ঘৃণ্য প্রথার জন্ম দিয়েছে ।
পেরিয়ার রামস্বামীর জন্ম তৎকালীন ব্রিটিশ শাসিত মাদ্রাজে ১৮৭৯ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। তারা ছিলেন এক ভাই ও দুই বোন। ছোটবেলায় স্থানীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও মাত্র ১২ বছর বয়সে বিদ্যালয় ত্যাগ করে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দেন। কারণ, স্কুলে হিন্দু এবং মুসলিম ছাত্রদের পৃথক জায়গায় জল খাওয়ার ব্যবস্থা নিয়ে দ্বন্ধ। তবে স্বশিক্ষার ফলে ছেলেবেলা থেকে তার অন্তর্দৃষ্টি নির্মাণে সাহায্য করে। দ্রাবিড় জাতির মানুষ হিসেবে দক্ষিণ ভারতের তিনটি ভাষা কন্নড়, তেলুগু এবং তামিল ভাষা তিনি ভালোভাবে শিখেছিলেন।
১৯০৪ সালের একটি ঘটনা তার জীবনের মোড় পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এসময় তিনি কাশীতে তীর্থদর্শন করতে বিশ্বনাথ শিবমন্দিরে যান। এসময় ক্ষুধার্ত অবস্থায় মন্দিরের ভোজে অংশগ্রহণ করতে চাইলে ব্রাহ্মণ না হবার কারণে তিনি লাঞ্ছিত হন। পরিস্থিতির ফলে তাকে নিরুপায় হয়ে রাস্তার পরিত্যক্ত খাবার তুলে খেতে হয়। এ ঘটনার পর জাতিভেদ ও ব্রাহ্মণ-শূদ্রের অমানবিক ভেদাভেদ তার মনকে বিষিয়ে তোলে। এভাবেই তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।
তার জনকল্যাণমূলক কাজ তাকে ক্রমান্বয়ে জাতীয় রাজনীতির দিকে নিয়ে আসতে থাকে। ১৯১৯ সালে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন এবং সক্রিয়ভাবে মহাত্মা গান্ধীর সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। খাদি কাপড়ের প্রচার, বিদেশী পণ্যের দোকানে পিকেটিং, জাত-পাত দূর করা, এসব ছিলো তার লক্ষ্য। তবে ‘বৈকম সত্যাগ্রহ’ তার জীবনে সাড়া জাগানোর মতো অন্যতম একটি ঘটনা। ‘বৈকম সত্যাগ্রহ’ হল-বর্তমান কেরালা রাজ্যের বৈকম শিবমন্দির ছিল জাতিভেদ প্রথার জঘন্য এক দৃষ্টান্ত। ব্রাহ্মণ ও উচ্চবর্ণ ছাড়া নিম্নবর্ণের মানুষের জন্য মন্দিরে প্রবেশ তো দূরের কথা, মন্দিরের রাস্তা দিয়ে চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা ছিলো। সত্যাগ্রহ আন্দোলনের কিছু নেতা এই অমানবিক প্রথার বিরুদ্ধে অহিংস আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯২৪ সালের ৩০ মার্চ এই আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের নেতাগণ নিম্নবর্ণের বহুসংখ্যক মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা করলে মন্দির কর্তৃপক্ষ বাধা দেয় এবং পুলিশ নেতাদের গ্রেফতার করে। পেরিয়ার রামস্বামী বৈকম মন্দিরে এলে ১৯২৪ সালের ১ অক্টোবর গ্রেফতার হন। এর ফলে দেশব্যাপী এ আন্দোলনে সমর্থন বাড়তে থাকে। কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের মধ্যে মহাত্মা গান্ধী প্রথমে এ আন্দোলনে সমর্থন দিলেও পরে দ্বিমত পোষণ করেন। পেরিয়ার রামস্বামী বুঝতে পারলেন, রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কংগ্রেস কায়েমী স্বার্থের বাইরে আসতে পারবে না। ১৯২৫ সালে তিনি কংগ্রেস ত্যাগ করেন।
দক্ষিণ ভারতে ‘সাউথ ইন্ডিয়ান লিবারেশন ফেডারেশন’ নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠন ১৯১৬ সাল থেকে প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতিভেদ ও ব্রাহ্মণ আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছিলো। পেরিয়ার রামস্বামী এই আন্দোলন বেগবান করতে সাহায্য করেন। তিনি ১৯৩৯ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন সহ পৃথিবীর অনেক দেশ পরিভ্রমণ করেন।
১৯৩৭ সালে মাদ্রাজে কংগ্রেস নেতা রাজাগোপালাচারী মুখ্যমন্ত্রী হলে হিন্দিকে প্রদেশের আবশ্যিক ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেন। পেরিয়ার রামস্বামীসহ জাস্টিস পার্টির আরো অনেক নেতা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। সরকার এ আন্দোলনের অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। পেরিয়ায় তামিলনাড়ুতে হিন্দির প্রচলনকে অতীতে ভারতবর্ষে আর্য আক্রমণের সাথে তুলনা করেন এবং ‘তামিলনাড়ু শুধু তামিলদের জন্য’ স্লোগান তোলেন। এভাবে তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে ক্রমান্বয়ে তিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন ।
১৯৪৪ সালে পেরিয়ার রামস্বামী জাস্টিস পার্টির প্রধান হিসেবে এই দলের নাম বদলে ‘দ্রাবিড়ার কাঝাগম’ বা ‘দ্রাবিড়িয়ান এসোসিয়েশন’ রাখেন। এই সংগঠনের কর্মক্ষেত্র শহর ও গ্রাম সবক্ষেত্রে বিস্তৃত হয়ে যায়। এ সংগঠনের অন্যতম প্রধান কাজ ছিলো দ্রাবিড় সংস্কৃতির প্রচার, হিন্দির আক্রমণ প্রতিরোধ, তামিলদেরকে ব্রাহ্মণদের প্রভাবমুক্ত করা, জাতিভেদের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা ও দ্রাবিড়ভাষীদের মধ্যে সংহতি বৃদ্ধি করা।
১৯৫৬ সালে তামিলনাড়ুতে এক মিছিলে তিনি হিন্দু অবতার রামচন্দ্রের ছবিতে অগ্নিসংযোগের ঘোষণা দেন। তামিলনাড়ুর প্রাদেশিক সরকার এই মিছিলে নিষেধাজ্ঞা দিলেও তিনি অটল থাকেন। ফলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। সনাতন ধর্ম এবং দ্রাবিড় ও তামিল সংস্কৃতিকে ব্রাহ্মণের আধিপত্য থেকে মুক্ত করাকে তিনি জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়েছিলেন।
নারী স্বাধীনতার ব্যাপারে পেরিয়ার রামস্বামী আজীবন সোচ্চার ছিলেন। বর্ণাশ্রম ও অন্যান্য সামাজিক অন্যায়ের ফলে নারীদের অবস্থা নিজ চোখে দেখার অভিজ্ঞতা তার হয়েছিলো। তার অভিমত ছিলো, যুগ যুগ ধরে ব্রাহ্মণ-ধর্মের কারণে অনাচার ও কুসংস্কার সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জালের মতো ছড়িয়ে গেছে। যার অন্যতম বিষফল হল পুরুষতন্ত্রের মাধ্যমে নারীকে শোষণ করার বৈধতা সমাজে তৈরি হওয়া। পেরিয়ার রামস্বামী এসব অনাচারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে গ্রামে গ্রামে গিয়েছেন, সমাজের বঞ্চিত অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তার এই আন্দোলন তামিল ও দ্রাবিড় সমাজে নারী জাগরণ ও ক্ষমতায়নে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলো।
পেরিয়ার রামস্বামী দুই বিয়ে করেন। ১৯ বছর বয়সে তার পিতা তাকে বিয়ে দেন পারিবারিক নিয়মে তার ভাগিনির সাথে। দক্ষিণ ভারতে আপন ভাগিনিকে বিয়ে করার রেওয়াজ আছে। তার প্রথম স্ত্রী ১৯৩৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৪৮ সালে পেরিয়ার রামস্বামী তার রাজনৈতিক সহযোদ্ধা মানিয়াম্মাইকে বিয়ে করেন। পেরিয়ার রামস্বামী ১৯৭৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাকে আধুনিক তামিলনাড়ুর ‘জনক’ এর মর্যাদা
দেওয়া হয়। তখন বক্তৃতার মাঝে রীতিমত উত্তেজিত হয়ে বলতেন, ‘‘এই তো, আমি নিজে ঠাকুরের মূর্তি ভাঙছি। দেখুন, আমার কিছু হচ্ছে না।’’—সেই জনসমাবেশেই হাতে তুলে পটপট করে মাটির মূর্তি ভাংতেন তিনি। তামিলনাড়ুর ইরোড শহরে তাঁর পৈত্রিক বাগান বাড়ীর প্রায় ৫০০ তালগাছ ছিল, তিনি যখন জানতে পারলেন, তালের রস থেকে তাড়ি তৈরি হত। ১৯১৯ সালে পেরিয়ার রামস্বামী সব ক’টা গাছই কেটে দিলেন।
তামিলনাড়ুর সমাজে তখন নবজাগরণ ঘটেনি। ব্রাহ্মণরা সংখ্যায় অল্প হলেও জাতিভেদের সুযোগ নিয়ে ছড়ি ঘোরাত। চাকরিবাকরি বেশির ভাগ ওঁদেরই হাতে ছিল। পেরিয়ার এই সমাজটার গণতন্ত্রীকরণ ঘটাতে চেয়েছিলেন।’’ মেয়েদের বলেছিলেন, ‘‘বিয়ের সময় স্বামী আপনাকে যে থালি (মঙ্গলসূত্র) পরিয়ে দেন, সেটিও দাসত্বের প্রতীক।’’ পেরিয়ারের শিষ্য আন্নাদুরাই, করুণানিধি, এম জি রামচন্দ্রনরাই তামিল রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। তিনি স্বাধীন মেয়ের কথা না বললে জয়ললিতারা উঠে আসতেন তামিল জনসমাজে?
বিংশ শতাব্দীতে যে কয়েকজন যুক্তিবাদী সমাজ সংস্কারক ও চিন্তক জন্মেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম এরোড রামাসামী নায়কার। শুধু সমাজ সংস্কারই নয় একইসঙ্গে তিনি ছিলেন সমস্ত রকম আর্থসামাজিক বৈষম্যের প্রবল বিরোধী একজন অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
১৯৭০ এ তার বয়স যখন ৯০ এর বেশি তখন তিনি তামিল ভাষায় একটি দ্বি-মাসিক পত্রিকা উন্ময় বা সত্য প্রকাশ করেন এবং তার সঙ্গে তৈরি করেন রেশনালিস্ট ফোরাম নামে একটি সামাজিক সংগঠন। যে কোনো যুক্তিবাদী বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ এই সংগঠনের সদস্য হতে পারতেন। ১৯শে ডিসেম্বর ১৯৭৩ এ চেন্নাইয়ের সমাজে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস দূরীকরণ নিয়ে একটি সভায় উপস্থিত ছিলেন ৯৪ বছরের পেরিয়ার রামাস্বামী। এই সভায়ও তিনি স্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করেন, আমাদের ব্রাহ্মণ্যবাদী জাতপাত ব্যবস্থার বিলোপ করা সবার আগে দরকার । এটাই ছিল তার শেষ বক্তৃতা। ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭৩ সাল ৯৪ বছর বয়সে রামাসামী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিংশ শতকের শ্রেষ্ঠ চিন্তকদের মধ্যে পেরিয়ার ছিলেন এক আশ্চর্য ব্যতিক্রম।
হাইড্রোজেন
আমরা সবাই জান যে, পানিতে একটি অক্সিজেনের পরমাণুর সঙ্গে দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত থাকে। এই হাইড্রোজেন একটি বর্ণহীন, স্বাদহীন মৌলিক পদার্থ।এই গ্যাস মানুষ খালি চোখে দেখতে পায় না। গ্যাসটি বাতাস অর্থাৎ অক্সিজেনের সংস্পর্শে জ্বলে ওঠে বলে অনেকে এটাকে সবাই ‘দাহ্য বাতাস’ নামেই চিনে। হাইড্রোজেন একটি গ্রিক শব্দ। হাইড্রো অর্থ পানি, আর জেন অর্থ সৃষ্টিকারী।অর্থাৎ, হাইড্রোজেন শব্দের মানে পানি সৃষ্টিকারী।
মহাবিশ্বে যত পরমাণু আছে, তার নব্ব শতাংশেরও বেশি হাইড্রোজেন। শুধু তাই নয়, এই মহাবিশ্বের প্রায় সব জীবিত প্রাণীর মধ্যে হাইড্রোজেন-এর উপস্থিতি আছে , এমনকি নক্ষত্র ও সূর্যেও হাইড্রোজেন আছে। এই হাইড্রোজেন দিয়েই মানুষ আবার হাইড্রোজেন বোমা বানিয়েছে।
মানুষের শরীরের নব্বই ভাগ মাত্র তিনটি উপাদান দিয়ে তৈরি । তার মধ্যে হাইড্রোজেন ষাট ভাগ, অক্সিজেন বিশ ভাগ, কার্বন দশ ভাগ বাকী দশ ভাগ হল নাইট্রোজেন, ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস। একজন মানুষের মস্তিস্কের সত্তোর ভাগ হচ্ছে পানি, আমাদের শরীরে যত মাসল আছে তার পচাত্তর ভাগ হচ্ছে পানি, হাড়ের ত্রিশ ভাগ পানি, ফুসফুসের আশি ভাগ পানি, চামড়ার ষাট ভাগও পানি। আর পানি মানে হাইড্রোজেন। এই পৃথিবী বিরানব্বইটি উপাদান দিয়ে গঠিত যার একষট্টিটি উপাদান মানব শরীরে আছে।
আমরা জানি,নাইট্রোজেন ও হাইড্রোজেন বিক্রিয়া করে কৃষকের সার উৎপাদন করা হয়। কিন্তু হাইড্রোজেনের আরও নানা ধরনের ব্যবহার আছে। যেমন-গ্যাস বেলুনও হাইড্রোজেন দিয়ে ফুলানো থেকে রকেটের জ্বালানি অনেক কিছুতে ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে গবেষকেরা হাইড্রোজেন ফুয়েল সেল প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন। এই পদ্ধতিতে গ্রিস বৈদ্যুত উৎপাদন করে ইউরোপে বিক্রি শুরু করে দিয়েছে।এটাকে গ্রিন এনার্জি বলা হচ্ছে। আগামী দিনে বিভিন্ন যানবাহন, কল-কারখানা, বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রভৃতি খাতে হাইড্রোজেনের ব্যবহার জোরালো হয়ে উঠছে পৃথিবীকে উষ্ণায়নের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই প্রক্রিয়ায় এক কিলোগ্রাম হাইড্রোজেন তৈরি করতে সাধারনত দশ লিটার পরিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন হয়। অস্ট্রেলিয়া সরকার এখন পর্যন্ত এই খাতে এক দশমিক দুই বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। ইউরোপ, কানাডা, আমেরিকাসহ এমন কোনো দেশ নেই যারা এই হাইড্রোজেন এনার্জি নিয়ে গবেষনা করছে না। আগামী দশক এই এনার্জি লাইম লাইটেই থাকবে। এ এনার্জি নিয়ে গবেষনার জন্য রসায়ন নোবেল পুরষ্কারও পাবে।
চুরাল মুরিয়াল
সনাতনী ধর্মের ভয়ংকর আর বিভৎস একটি প্রথা হচ্ছে ;চুরাল মুরিয়াল কেরলের মেভেলিক্কারার ছেত্তিকুলাঙ্গারা মন্দিরে যুগ যুগ ধরে চলে আসা একটি
প্রথা। ওই মন্দিরে মার্চ মাস নাগাদ অনুষ্ঠিত হয় কুম্বাভারানি উৎসব। সেই উৎসবের অঙ্গ হিসাবেই গত ২৫০ বছর ধরে চলে আসছে চুরাল মুরিয়াল প্রথাটি।
দক্ষিণ ভারতের কেরলে মানুষ বলি দেওয়ার এক ভয়ংকর ধর্মীয় রীতি। ২০১৬ সালে এই প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কেরল স্টেট কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ডস। এ নিয়ে মামলাও শুরু হয় উচ্চ আদালতে। সেই মামলায় কেরল হাইকোর্ট এই প্রথাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।` তবে বাস্তবে সে নিয়মে কিছুই এসে যাচ্ছে না;অতি ধর্মপ্রাণ; কিছু মানুষের! আদালতের নির্দেশকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ছেত্তিকুলাঙ্গারা মন্দিরের আরাধ্য বিগ্রহ ভদ্রকালীর উদ্দেশে কেরলের চেট্টিকুলাঙ্গারা মন্দিরে ফের পালিত হয়েছে চুরাল মুরিয়াল।
এই রীতি অনুযায়ী ১০ বছরের কম বয়সি বাচ্চা ছেলেদের বলি দেওয়া হয় মন্দিরের ভগবানের কাছে। সুচে সোনার সুতো ঢুকিয়ে তা দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করা হয় তাদের দেহ। এই শিশুদের রক্তে নাকি তুষ্ট হন দেবতা!` যে পরিবার এই প্রথা মেনে পুজো দিচ্ছে তাঁদের উপর নাকি বর্ষণ করেন আশীর্বাদ! আর এখানেই আছে আরও একটি ভয়ানক টুইস্ট। এই পুজো সাধারণত করে থাকেন ধনী পরিবারগুলি। আর তাঁরা কিন্তু এই রীতির জন্য কখনওই এগিয়ে দেন না নিজেদের বাড়ির ছেলেকে। বরং পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে একেবারে গরিব পরিবারগুলির থেকে তাঁদের শিশু পুত্রদের কিনে আনেন তাঁরা! এই নিষিদ্ধ প্রথা যাতে থামানো যায় সে জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেরলের কিছু সংস্থা।
400 বছর পর ফিরতে চলেছে ‘বিলুপ্ত’ ডোডো পাখি, কীভাবে হবে এই অসাধ্য সাধন?
বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী ও পাখির কথা উঠলে ডোডোর উল্লেখ অবশ্যই আসে। উচ্চতা 1 মিটার। ওজন 23-15 কেজি। পাখি হয়েও উড়তে পারত না। বিভিন্ন সময়ে নানান গল্প-কবিতায় ফিরে ফিরে এসেছে এই আশ্চর্য পাখিটি। 1507 সালে একজন পর্তুগিজ নাবিক এটি প্রথম দেখেছিলেন এবং সেটিকে শিকার করেছিলেন। এর মাংস এতই সুস্বাদু ছিল যে, মানুষ শিকার করতে শুরু করেছিল। 1590-এর শেষে মরিশাসে আসে একদল মানুষ। তাদের দেখে ঘাবড়ে যায়নি ডোডো পাখি। বরং পোষ মেনেছিল। আর তারই খেসারত দিতে হয় পাখিগুলিকে। সমস্ত ডিম যেতে থাকল মানুষের পেটে।
এইভাবে বিলুপ্তির পথে এগিয়ে গেল ডোডো এবং 17 শতকে তারা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। এখন ডোডোপাখি (Dodo Bird) ইতিহাসের একটি অধ্যায় মাত্র। তবে সম্প্রতি কলোসেল বায়োসায়েন্স নামক এক সংস্থা ফের তাদের ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে। ভারত মহাসাগরের দ্বীপগুলিতে পাওয়া এই বিশাল পাখিটি 17 শতকের মাঝামাঝি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল, যার কারণ আমরা মানুষ। এখন প্রায় 400 বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই পাখিটিকে ডিএনএ গবেষণার মাধ্যমে এই অসম্ভবকে সম্ভব করার কাজে লেগে পরেছেন,গবেষকের দল। সংস্থাটি ইতিমধ্যে জিন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ম্যামথ ও থাইসিনদের পুনরায় ফিরিয়ে আনার কাজও শুরু করেছে।
জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে কাজ করা আমেরিকান কোম্পানি কলোসাল বায়োসায়েন্সেস এই প্রচেষ্টা শুরু করে দিয়েছে। সম্প্রতি সংস্থাটি আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ঘোষণা করেছে। গবেষকরা বলেছেন, “আমরা ডোডো ছাড়াও ভবিষ্যতে ডাইনোসরদের রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখতে পারি। যদিও এই মুহুর্তে এটি অনেক দূরের বিষয় এবং জিন প্রযুক্তির কারণে যে প্রাণীগুলি অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে তারা পৃথিবীতে ফিরে আসতে সক্ষম হবে কি-না তাও নিশ্চিত নয়, তবে চেষ্টা চলছে। এই প্রকল্পে 15 কোটি মার্কিন ডলারের অর্থায়ন হয়েছে।”
ব্রিটানিকা ওয়েবসাইট অনুসারে, শেষ ডোডো পাখিটি 1681 সালে মরিশাসে মারা হয়েছিল। তারপরে যাদুঘরে কেবল তার অবশিষ্টাংশ দেখা যায়। এই গবেষণা সফল হলে, জীববিদ্যার এক নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, বিলুপ্ত প্রাণীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টার পাশাপাশি বর্তমানে বিলুপ্তির দোরগোড়ায় চলে যাওয়া প্রাণীদের সংরক্ষণেও জোর দেওয়া প্রয়োজন।
বাথরুমে কেন মানুষ স্ট্রোক করে মৃত্যু বরণ করে
শীতের দেশে গোছলের কালচার গড়ে উঠেছিল না। তার উপর শীতের দেশে মানুষের ঘাম হয় না। শীতে গরম পানির প্রয়োজন। সেটি অনেক শ্রমসাধ্য ও ব্যয়বহুল ছিল। ইলেকট্রিসিটির বিস্তার , গ্যাসের ব্যবহার আসবার পর এখন ওরা আমাদের চেয়ে বেশী গোছল করে। টিউব ওয়েল হতে মটর দিয়ে পানি উঠানো মাত্র সেদিনের কথা। পানি সংকটের কারণে ভারতের অনেক জায়গায় নিয়মিত গোছলের চল নেই এখনো।
ইউরোপিয়ান ইতিহাসবেত্তা সেন্ডর মারাই; বলেন, ইউরোপিয়ান বারজিউসরা উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকেও জীবনে মাত্র দুইবার গোসল করতো। অসুস্থতার সময়ে ও বিয়ের সময়ে! ইউরোপে গোসলখানা নির্মাণ আইনতঃ দণ্ডনীয় অপরাধ ছিল! স্পেনসম্রাট ;দ্বিতীয় ফিলিপ; তার রাজ্যে গোসলখানা নির্মাণের নিষেধ জারি করেছিলেন! স্পেন সম্রাজ্ঞী ;১ম ঈসাবেলা' গ্রানাডা দখলের পর যেসব আইন জারি করেছিলেন, তন্মধ্যে একটি আইন ছিল- আন্দালুসীয় মুসলমানদের সবগুলো গোসলখানা ভেঙ্গে ফেলা! আমেরিকান রাইটার;জুসেফ ম্যাক ক্যাপ' বলেন, স্পেন সম্রাজ্ঞী;১ম ঈসাবেলা; জীবনে মাত্র দুইবার গোসল করেছেন। তার জন্মের দিনে ও মরণের দিনে!
ফ্রান্সের বর্তমান বিখ্যাত পারফিউম আবিষ্কারই হয়েছিল ফরাসীদের দেহের দুর্গন্ধ দূরীভূত করার জন্য! কিন্তু গোসল করার নিয়ম কি, কেন মানুষ ওয়াশ রুমে মারা যায়? সমাধান কি? তা আছে এই ভিডিওতে-তিন বেলা ভারি খাবারের পরিবর্তে পাঁচ-ছয়বার অল্প খাবার খেতে হবে। খাবার খেতে হবে নিঃশব্দে। শব্দ করে খাবার গ্রহণ বা চা-কপি পান করা চরম অভদ্রতা। মুখ বন্ধ করে খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাবেন, শব্দ হয় এমনভাবে চা-কপিও পান করা যাবে না। খাবার সময় মোবাইলে বা কারো সাথে একদম কথা বলবেন না। এতে মুখের লালা তিনফুট পর্যন্ত চারিদিকে ছড়াতে থাকে; যা খালি চোখে দেখা যায় না। এতে একজনের রোগজীবানু অন্য মানুষের পেটে যায়। মনে রাখবেন, খাবার বেশি খাওয়ার সাথে ক্ষুধে প্রশমিত হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত ক্ষিধে পেটে লাগে না, ক্ষিধে লাগে রক্তে, তাই স্যালাইন পুশ করে রুগীকে যতদিন ইচ্চা না খাইয়ে রাখা যায়। পেটের মাধ্যমে খাবারের উপাদান রক্তে যায়। ক্ষিধে কখন মিটবে তা নির্ধারণ করে মস্তিষ্ক। যে সময়টায় যতক্ষণ ধরে আপনি রোজ খাবার খান, সে সময়টায় একটা রাবার চিবালে বা কিছু না খেলেও ক্ষিধে মিটে যাবে। তাই ক্ষিধের সময় খুবই অল্প খাবার অতি ধীরে ধীরে খেয়ে সময়টা পার করবেন। খাবারের আধঘন্টা পরে পানি পান করা উত্তম। তিন বেলা ভারি খাবারের পরিবর্তে পাঁচ-ছয়বার অল্প খাবার খেতে হবে। আর সন্ধ্যার পর থেকে রাতে (১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা ) একদম খাবেন না। মিষ্টি খাবার এবং তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। লোভে পড়ে অতিরিক্ত খেয়ে ফেলবেন না।
গ্রিক পূরানের ফিনিক্সের মতো পারস্য উপকথায় হুমা পাখি বলে একটি পাখির কথা আছে। ফারসি কবি ফরিদ উদ্দিন আত্তারের ‘মানতিক–উত– তায়ের’ (‘পাখি সম্মেলন’) মহাকাব্যে এই পাখির উল্লেখ আছে। কথিত আছে, হুমা পাখি কখনো মাটিতে নামে না। সে থাকে মেঘের ওপরে। কেউ তাঁকে দেখতে পায় না। তবে কারও মাথায় যদি কোনো দিন হুমা পাখির ছায়া পড়ে, তাহলে সে নির্ঘাৎ বাদশাহ হয়ে যায়।
স্মৃতিশক্তি
৭৪ বছর বয়সে জীর্ণ-শীর্ণ শরীরের মহাত্মা গান্ধী একবার অনশনে ২১ দিন পর্যন্ত না খেয়ে ছিলেন! কোনো রকম খাবার ও পানি ছাড়া সর্বোচ্চ এক সপ্তাহের মতো বেঁচে থাকা সম্ভব। তবে শুধু খাবার খাওয়া বাদ রেখে শুধু পানি পান করে দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকা সম্ভব হতে পারে। শর্করা জাতীয় খাবার হজমের পর তা গ্লুকোজে পরিণত হয়, যা দেহে শক্তির জোগান দেয়। প্রয়োজনমাফিক শক্তির জোগান দেওয়া শেষে অতিরিক্ত গ্লুকোজ যকৃতে গ্লাইকোজেন রূপে জমা থাকে। মোটামুটি ২৪ ঘণ্টার মতো না খেয়ে থাকার পর দেহের স্বাভাবিক কার্যকলাপে বিঘ্ন ঘটে। দেহে গ্লুকোজের সরবরাহ না থাকায় এক সময় যকৃতে জমা থাকা গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়।কিন্তু একসময় যকৃতের সঞ্চয়ও শেষ হয়ে যায়। এরপর দেহ চর্বি ভেঙে শক্তির চাহিদা মেটায়।এভাবে প্রথম পাঁচ দিনে ব্যক্তির ১-২ কেজি ওজন কমে যায়। দেহে পানিশূন্যতা এই ওজন কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ।
এরপর শক্তির শেষ ভরসাস্থল হিসেবে দেহ মাংসপেশীর ক্ষয় করতে শুরু করে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ না খেয়ে থাকার পর প্রত্যেক দিন ব্যক্তির প্রায় ৩০০ গ্রাম করে ওজন কমতে থাকে। এভাবে ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চরম ঘাটতি একপর্যায়ে ব্যক্তির মৃত্যু ঘনিয়ে আনে।
আমাদের স্মৃতিশক্তি তিন ধরনের, কেউ বলেন চার ধরনের। এগুলো হলো : কাজের জন্য প্রয়োজনীয় স্মৃতিশক্তি, সংবেদনশীল স্মৃতিশক্তি, এবং ক্ষণস্থায়ী বা দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি।
ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি
ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি হলো এমন একটি অবস্থা যেটা কম-বেশি মাত্র ৩০ সেকেন্ডের জন্য আমাদের মস্তিষ্কে থাকে। আমরা মোটে ৭টি বিষয় একসাথে ক্ষণস্থায়ী মস্তিষ্কে ধরে রাখতে পারি। কখনও কখনও আমাদের এই ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি কিছুটা স্থায়ী করবার দরকার পড়ে।
যেমন- কারো নাম মনে রাখা, আমাদের চশমা কিংবা কলম কোথায় রেখেছি, রান্না ঘরে কী কাজে ঢুকেছি এসব মনে রাখা। তবে শুধু শুনে রাখলেই তা মনে থাকবে না। মনে মনে আওড়ালে হয়তো কাজটা মনে থাকবে।
১) অনেকের মতে, চা বা কফি পানে নানা ধরনের অসুবিধা দেখা দেয়। কিন্তু সকালটা যদি চা বা কফি অর্থাৎ ক্যাফেইন দিয়ে শুরু হয়, তবে এটা আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ ৩০ সেকেন্ড থেকে প্রায় ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী করতে চা বা কফির তুলনা নেই। মস্তিষ্কের
চালিকাশক্তি হিসেবে গ্রীন টির ভূমিকাও বেশ কার্যকর।
২) পানি পান করুন। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারলে সেটা ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। অপর্যাপ্ত পানি পানের কারণে মস্তিষ্কের ক্রমশ ক্ষয় হয়। ফলে নানা ধরনের সমস্যা হয়, যার মধ্যে ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি অন্যতম।
৩) সাদা চিনি পরিহার করুন। সাদা চিনিকে সাদা বিষ বলা হয়। ব্লাড গ্লুকোজ বাড়ানোর সাথে সাথে এটা আমাদের মানসিক অবস্থা, মুড সুইংসহ নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করে। এসবের মধ্যে অন্যতম হলো স্মৃতিশক্তির স্থায়িত্ব কমিয়ে দেয়।
৪) নানা ধরনের সুডোকু, ক্রসওয়ার্ডস, পাজল গেম খেলতে পারেন। এটা মস্তিষ্কের ব্যায়াম হিসেবে কাজ দেয়। গেম, বইপড়া, আর্ট-ক্রাফটের কাজ করা- এগুলো করলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। টানা চার মাস যদি করতে পারেন নিয়মিত, তাহলে দেখবেন আপনার ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি সংরক্ষণের সময়সীমা বৃদ্ধি পাবে।
৫) পর্যাপ্ত ঘুমান। অল্প ঘুমের কারণে একদিকে যেমন শরীরের অবস্থার অবনতি ঘটে, তেমনি মনোযোগ কমে যায় কাজে, ক্ষণস্থায়ী স্মৃতিশক্তি ঘটে; বিষণ্নতা ও উদ্বিগ্নতা ঘিরে ধরে। এছাড়াও আরো দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা সৃষ্টি করে শরীর এবং মনে।
শিশুর প্রতি সহিংসতার
বিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীকে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ নিরক্ষরতা একটি সামাজিক অভিশাপ। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়ে শিশুদের যে বয়সে শিশুদেরকে স্কুলে যাওয়ার কথা সেই বয়সে তারা কঠিন কাজে নিয়োজিত থাকে। তাদের হাতে ইট পাথরের পরিবর্তে বই খাতা তুলে দিতে হবে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিশুর পরিপূর্ন বিকাশে জাতীয় সমৃদ্ধি মানবতার বিকাশ মায়ের স্নেহ-আদর-ভালোবাসা বঞ্চিত পথশিশুরা যেন ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত না হয় এবং মাদকাসক্ত না হয়।হাজার হাজার পথশিশু রয়েছে। রাস্তাঘাট, রেলস্টেশন, বাস টার্মিনাল, অফিস চত্বর, পার্ক ও খোলা আকাশের নিচে তাদের বাস। বড় অসহায় তারা।
প্রজেটিভ অ্যাটিটিউড
আমি পারব এই কথাটা আপনার মধ্যে একটা প্রজেটিভ অ্যাটিটিউড তৈরি করবে কিন্তু আমি পারি না এই কথাটা আপনার মধ্যে নেগেটিভ অ্যাটিটিউড তৈরি করবে। কিভাবে পজিটিভ করা যায়? এর জবাব হচ্ছে, নিজের মধ্যে পজিটিভ অ্যাটিটিউড রাখুন। পজিটিভ অ্যাটিটিউড রেখে চললে পৃথিবীটা মনে হবে যেমনটা আপনি দেখতে চান, তেমনি। সমস্যাগুলোকে পজিটিভ মনোভাবের সাথে গ্রহণ করবেন। সমস্যা স্বাভাবিক একটি ব্যাপার।
মৃত্যুর আগে পর্যন্ত জীবনের সমস্যা থাকবে। একটা যাবে তো একটা আসবে, তাই সমস্যা থেকে শিক্ষা নিয়ে সেগুলোকে সুযোগে পরিণত করতে হবে। আর সেটার জন্য নিজের অ্যাটিটিউড সেটিং করতে হবে। যে ভুলই করুন না কেন, সেই একই ভুল বারবার রিপিট করে জীবনকে দুর্বিসহ বানিয়ে ফেলবেন না। সবচেয়ে বড় সমস্যায় আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে, সময়কে সময় দিন দেখবেন সময়ের সাথে সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
কথা বলার ধরন, আপনি কিভাবে শব্দ উচ্চারণ করেন সবকিছু আপনার ব্যক্তিত্বকে প্রকাশ করে। আপনার কথা আপনাকে উপরে তুলতে পারে আবার নিচে নামাতে পারে। তাই জীবনে সফল হতে চাইলে সঠিকভাবে সঠিক শব্দ ব্যবহার করে কথা বলুন।
চিন্তাভাবনা আপনার অনুভূতি আপনার কর্ম এবং ফলাফল এগুলি সবই একে অপরের সাথে জড়িত। আপনার চিন্তাভাবনা যদি সঠিক হয় তবে আপনার অনুভূতি পজেটিভ হবে এবং অনুভূতির কারণে কাজের প্রতি আগ্রহ থাকবে আর তার ফলে ফলাফল পজেটিভ হবে।
নেক্সট লেখক একটা প্রশ্নের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এর ভূমিকা কি এবং এটা কিভাবে জীবনে প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে লেখকের আলোচনা করেছেন যখন কেউ আপনাকে জিজ্ঞাসা করে হাউ আর ইউ এর উত্তর যদি হয় তবে তা আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজই প্রতিফলিত হবে এবং আপনার সামনে থাকা লোকটি আপনার দিক থেকে একটা পজিটিভ রেসপন্স পাবে সেই ব্যক্তির রিলেশন করে তুলবে তাই কেউ আপনাকে কোন প্রশ্ন করলে আপনার উত্তর দেয়ার মনোভাব পজেটিভ হওয়া উচিত তবেই আপনি অন্য কাউকে পাশে থাকলে মোটিভেট করতে পারবেন অভিযোগ করা বন্ধ করুন এই প্রসঙ্গে অভিযোগ না করার পরামর্শ দিয়েছেন জীবনে কোন সমস্যা হয় যখন আমরা ব্যর্থ হই আমরা অভিযোগ করতে শুরু করে লেখক বলেছেন যোগ করার পরিবর্তে সমস্যার সমাধানের দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং লোকের সাথে সমস্যা নিয়ে আলোচনায় কোনো ক্ষতি নেই প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া প্রায় সব মানুষের মধ্যেই দেখা যায় তবে অভিযোগ করা ঠিক নয় অবলম্বন করে সমস্যার সমাধান খোঁজে অনেক বেশি উত্তম হলো মানুষের সাথে মেলামেশা করুন যেমন তার প্রভাব ও তাই ভালো মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে আপনাকে উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে অন্যদিকে মানুষের সঙ্গ আপনাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে তাই চিন্তা ভাবনা করে সঠিক পথ নির্বাচন করা উচিত আর তখনই পাবেন যখন আপনার মধ্যে পজিটিভ অ্যাটিটিউড থাকবে এ বিষয়টা আপনাকে বুঝতে হবে সেটা হল আপনার মোকাবেলা করুন এবং লেখক মনে করেন আপনার জীবনের যেকোনো ধরনের মুখোমুখি হওয়া উচিত সমস্যা থেকে পালানোর পরিবর্তে সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে আপনার ব্যর্থতা প্রধান কারণ হলো যে আপনার বৃদ্ধিতে বাধা দেয় আপনাকে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে দেবেন না সমস্যাকে বা ব্যর্থতার ভয় কে আপনার লক্ষ্য থেকে আপনাকে পিছিয়ে রাখতে দেবেন না।
আপনি যদি আপনার লক্ষ্য অর্জন করতে চান আপনি যদি আপনার জীবনকে উন্নত করতে চান তবে আপনাকে নির্ভয় নিষ্ঠার সাথে এগিয়ে যেতে হবে নিজের মনে ভয় এর পরিবর্তে পজেটিভ মনোভাবকে স্থান দিতে হবে নেক্সট সানডে হল গেট আউৎ এ আর এম ফ্রেন্ড এর মাধ্যমে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন আপনার ব্যর্থতা ঝামেলা সমস্যা এবং নিজের ভুলকে ভয় না পেয়ে এগুলো দেখে শেখা উচিত যাতে একই পরিস্থিতি আসলে আপনি এগুলোর মুখোমুখি হতে পারেন এবং সমাধান করতে পারেন এটা ব্যর্থতা সাফল্যের পথ প্রশস্ত করে আপনি যদি কোনো কাজ সম্পন্ন করতে না পারেন তাহলে হাল ছেড়ে না দিয়ে চেষ্টা করলে আপনি সঠিকভাবে করতে পারবেন ব্যর্থতা খারাপ নয় তবে ব্যর্থ তার ভয় কিছু না করা অবশ্য জীবনে কি প্রভাব ফেলে তাই ব্যর্থতার সময় ও পজিটিভ অ্যাটিটিউড রাখতে হবে তবে সফলতা পাওয়া যাবে এবং সেই নেটওয়ার্ক তৈরি করা থেকে ভালো ফল পাওয়া যায় একে অপরকে সাহায্য করার গুরুত্ব সফলতা পাওয়া যাবে সেই নেটওয়ার্ক তৈরি করা থেকে ভালো ফল পাওয়া যায় কিভাবে সাহায্য করবে এমন আচরণ আপনার সাথে করবে তাই আরো বেশি করে পজেটিভ মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে কারণ একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ একার ক্ষমতায় সফলতা অর্জন করতে পারে না নিজের পরিবারের বা বন্ধু বাহ খুব কাছের লোকের সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন লক্ষ্য অর্জনের প্রয়োজন তাই আপনি যদি সবার সাথে ভালো ব্যবহার করেন অন্যকে সাহায্য করেন তাহলে আপনিও অন্যের কাছ থেকে সাহায্য পাবেন এই আলোচনা থেকে বুঝতে পারলেন যে অ্যাটিটিউড ইজ এভরিথিং ধারণা হলো আপনার অ্যাটিটিউড আপনার সবকিছু।
মৃতদেহকে শকুন দিয়ে খাওয়ানো ধর্মের অংশ
আমাদের সমাজে আমরা মৃতদেহকে কবর দিতে কিংবা শ্মশানে চিতায় পোড়ানোতেই বেশি অভ্যস্ত। কিন্তু পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মৃতদেহ সৎকার নিয়ে রয়েছে নানান অদ্ভুত রীতিনীতি। এর বেশ কিছু যেমনই অদ্ভুত, তেমনই বীভৎসও বটে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ সুলাওয়েসির তোরাজা গ্রামের লোকেরা মারা যাওয়ার পর মৃতদেহকে বিশেষ উপায়ে মমি করে সমাহিত করে থাকে। আবার, ভেনেজুয়েলার ইয়ানোমামি গোত্রের লোকেরা মৃতদেহকে সিদ্ধ করে স্যুপ হিসেবে খেয়ে থাকে। ফিলিপাইনের ইফুগাও অঞ্চলের মানুষেরা মৃতদেহকে বাড়ির সামনে সাজিয়ে রাখে।
মৃতদেহ নিয়ে এমনই এক অদ্ভুত প্রথা প্রচলিত রয়েছে পার্সি সমাজের মানুষের মাঝে। পার্সি ধর্মাবলম্বীদের প্রথা অনুসারে, তাদের কোনো প্রিয়জনের মৃত্যু হলে তারা মৃতদেহের সৎকার করেন না। বরং মৃতদেহকে খোলা আকাশের নিচে রেখে দেয়, চিল-শকুনে যাতে মৃতদেহ ছিঁড়ে খেতে পারে।
পার্সিদের বিশ্বাস, এর মধ্য দিয়ে জগতের মাঝে মৃতদেহকে উৎসর্গ করা হয়৷ তারা বিশ্বাস করে, মারা যাওয়ার পরও পৃথিবীর খানিকটা উপকারে নিজেদের নিয়োগ করার মধ্যেই নিহিত মানব জীবনের পরিপূর্ণতা। যুগ যুগ ধরে তাই এই রীতি পালন করে আসছে পার্সি ধর্মাবলম্বী লোকেরা।
পার্সিরা যে স্থানটিতে মৃতদেহ রেখে আসে, সেই সৎকার স্থানটিকে বলা হয় ‘টাওয়ার অফ সাইলেন্স’৷ জায়গাটি একটি ছাদবিহীন সুউচ্চ কাঠামো, নিচে একটি দরজা রয়েছে । ঐ স্থানে মৃতদেহ রেখে দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। খোলা ছাদ দিয়ে চিল, শকুন ইত্যাদি পাখি ভিতরে প্রবেশ করে মৃতদেহ খেতে আরম্ভ করে।
মূলত এই পার্সিয়ানরা জরথ্রুস্ট ধর্মে বিশ্বাসী। ধর্মটি বহু প্রাচীন। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪৫৮ সাল থেকে এই ধর্মের প্রচলন শুরু হয়। এটি একসময় প্রাচীন ইরানের একামেনিড, পার্থিয়ান, সাসানিয়ান সাম্রাজ্যের জাতীয় ধর্ম ছিল। বর্তমানে ধর্মটি ইরানের জরথ্রুস্ট সম্প্রদায় এবং ভারতের পার্সি সম্প্রদায় কর্তৃক পালিত হয়। মৃতদেহকে কবর দেওয়া বা পোড়ানো অর্থ প্রকৃতিকে দূষিত করা বলেই পার্সিদের বিশ্বাস। ভারতের মুম্বাইয়ের মালাবার পাহাড়ের কাছে পার্সিদের এমনি এক টাওয়ার অফ সাইলেন্স রয়েছে । কারণ ভারতের বেশিরভাগ পার্সি সম্প্রদায় মুম্বাইয়ে থাকেন।
ঈশপের কথা
নীতিবাক্য কীভাবে ছোট গল্পের ঢঙে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়, তার এক সার্বজনিন দ্রষ্টা এই ঈশপ। মানুষের পরিবর্তে বিভিন্ন পশু পাখির অলংকারে কল্পনার আশ্রয়ে সমাজের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা ঈশপের প্রতিটি গল্পের মূল আখ্যান।
এই ঈশপ আসলে একজন গ্রীক গল্পকার ছিলেন। ধারণা করা হয় আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬২০ সালে এক কৃতদাস পরিবারে তার জন্ম। মনে করা হয় যে, তিনি দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের থ্রেস অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছেন যা বর্তমান গ্রিস ও তুরস্কের মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত। তিনি জীবনের অধিকাংশ সময়ই এশিয়া মাইনর উপকূলের নিকটবর্তী সামোস দ্বীপে দাসত্বজীবনে আবদ্ধ ছিলেন। প্রথম মনিব ছিলেন জানযুস এবং পরবর্তীতে লোডম্যানের দাসত্বে ছিলেন। দুই মনিবই ঈশপের উপর বেশ খুশি ছিলেন। ঈশপের গল্প বলার ভঙ্গি এবং দর্শন দেখে লোডম্যান তাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দেন।
মুক্ত জীবন পেয়ে ঈশপ বিভিন্ন দেশ বিদেশে ঘুরতে লাগলেন। যেখানেই যান, সেখানেই গল্প বলার আসর জমিয়ে ফেলেন। এই গুণতো তার রক্তে মিশে আছে, এর থেকে মুক্তি কোথায়? তার মুখনিঃসৃত গল্প চারদিক ছড়িয়ে যেতে লাগল। ধীরে ধীরে ঈশপ লাইডিয়া নামক একটি নগর রাজ্যে পৌঁছলেন। ক্রোসাস ছিলেন সেখানকার রাজা। লোকমুখে ততদিনে রাজার কান পর্যন্ত চলে গিয়েছে ঈশপের কথা। তাই ঈশপকে দেখার আগ্রহ রাজার মনে বেশ ভালভাবেই তেঁতে উঠেছিল। ডাক পড়ল ঈশপের। ঈশপের সাথে কথা বলে মুগ্ধ হয়ে গেলেন রাজা। রাজার মাথায় তখন এক বুদ্ধি খেলে গেল। ভাবলেন, ঈশপকে দিয়ে রাজ্যে নীতিবাক্য ছড়িয়ে দিবেন। লোকের মাঝে সমাজ সচেতনতা গড়ে তোলাটা যে খুব দরকার হয়ে পড়েছিল সেই সময়। ক্রোসাস তখন ঈশপকে নিজের সভাসদ হিসেবে নির্বাচিত করলেন। রাজসভায় বিভিন্ন নীতিবাক্যের গল্প বলে রাজাকে বেশ প্রভাবিত করেছিলেন ঈশপ। দিনে দিনে রাজার প্রিয়পাত্র হয়ে উঠলেন তিনি। রাজ্যের বুড়ো থেকে বাচ্চারা ঈশপের কাছে নতুন নতুন গল্প শোনার জন্য অস্থির হয়ে থাকত।
কিন্তু সুখের দিন ঈশপের জন্য খুব বেশি দিন স্থায়ী হলো না। রাজ্যের কিছু প্রভাবশালী লোক ফন্দি করে তঈশপকে ডেলফিতে পাঠায়। ডেলফিতে দেবতা এপোলোর মন্দির ছিল। ষড়যন্ত্রকারীরা গোপনে এপোলো মন্দিরের একটি সোনার পাত্র ঈশপের মালপত্রের মধ্যে রেখে দিল। দেবতার মন্দিরের পবিত্র দ্রব্য চুরি! সোনার পাত্র চুরের অপরাধে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলো। এটাই নাকি এই সোনা চুরির অপরাধের প্রকৃত শাস্তি।
তারপর বিধান অনুযায়ী ঈশপকে পাহাড় চূড়া থেকে নিক্ষেপ করে হত্যা করা হলো। এটা খ্রিস্টপূর্ব ৫৬৪ সালের দিকের কথা। এভাবে ঈশপের জীবনের করুণ পরিসমাপ্তি ঘটল। কিন্তু ঈশপের মৃত্যু হলেও তার বলা গল্পগুলো তো আর হারিয়ে যায় নি। গল্পগুলো ছড়িয়ে পড়ল দেশ-দেশান্তরে। দিন দিন গল্পগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়তে লাগল। এক জনপদ থেকে অন্য জনপদ, এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চল, এভাবেই ছড়িয়ে গেল ঈশপের গল্পগুলো। যেন পাখায় ভর করে উড়ে চলল গল্পগুলো।
চতুর্দশ শতকে পাদ্রী প্লানুদেশ প্রথম ঈশপের গল্পের সংকলন প্রস্তুত করেন। এই পাদ্রীই প্রথম ঈশপের জীবনী রচনা করেন। ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে ব্যাবিআসের লেখা ঈশপের একটি দুষ্প্রাপ্য সঙ্কলন মাউন্ট এথেসের মঠ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।
গ্যালিলিও গ্যালিলি
গ্যালিলিও পূর্ববর্তি বিজ্ঞানীদের দর্শন ছিলো জগতরহস্য শুধুমাত্র পর্যবেক্ষন করেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব, আমরা যা কিছু দেখি, যা কিছু অনুভব করি তাই বাস্তব, তাইা সত্য, আমাদের ভ্রান্ত উপলব্ধি কখনও আমাদের বিভ্রান্ত করতে পারে বা সত্যের ভ্রান্ত উপলব্ধি দিতে পারে এটা গ্যালিলিও পূর্ববর্তি বিজ্ঞানীদের কখনও মানে হয় নি, তাই আমরা অনেক কিছুই বিশ্বাস করেছি চোখের দেখায় কখনও আরেকটু যাচাই করে দেখি নি আসলে আমরা যা বিশ্লেষন করছি তা আদৌ সত্য ভাষন কিনা। কথাটা 500 বছর আগে যেমন সত্য ছিলো এখনও ততটাই সত্য, আমরা এখন বিজ্ঞানের প্রয়োগ করছি প্রতিদিন কিন্তু কেন এবং কিভাবে এই প্রায়োগিক বিজ্ঞানে বিজ্ঞানের তত্ত্ব প্রয়োগ হচ্ছে তা বুঝার চেষ্টা করছি না। অনেক খুব সাধারন সাধারন বিষয় আমরা যা একটু খতিয়ে দেখলেই বুঝতে পারি আমাদের দেখার ভুলটা, তা দেখার চেষ্টা করছি না।
যন্ত্র তৈরি এবং যন্ত্রের ব্যাবহার 2টা ভিন্ন বিষয়, যারা যন্ত্রের ব্যাবহারকারী তারা যন্ত্র ব্যাবহারে ক্রামাগত পারদর্শি হয় এবং যন্ত্র নির্ভর হয়ে উঠে কিন্তু যন্ত্রের উৎকর্ষসাধন সম্ভব হয় না তাদের পক্ষে। এমন কিছু কিছু উদাহরন হয়তো লেখার সাথে সাথে সামনে আসবে কিন্তু আপাতত গ্যালিলিও এবং তার পরবর্তি বিজ্ঞানের দর্শন নিয়ে কথা বলা যাক।
গ্যালিলিও প্রথম এই দাবিটা সামনে আনেন যে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব শুধুমাত্র উপলব্ধির বিষয় না, একটা তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে হলে তাকে প্রমান বা অপ্রমান করার জন্য পরীক্ষণ প্রয়োজন। ( এখানে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা এই ধারায় বিশ্বাসি নয়, বিজ্ঞান বইয়ের কভার ফ্লাপে পড়া লেখা মুখস্ত করে বিজ্ঞান আলোচনায় নেমে যায়, ওদের বুঝানো কঠিন কাজ)
গ্যালিলিও প্রথম ধারনা দেন যে কোনো কিছুকে গতিশীল করার জন্য আমাদের বলপ্রয়োগ করতে হয়, "বল " এর ধারনাটা প্রথম আনেন গ্যালিলিও, পরে নিউটন 3টা গতিসুত্র দিয়ে বলের ধারনাকে সম্পুর্ন করেন। নিউটনের গতিসূত্র শুধুমাতর বল কে ব্যাখ্যা করে। খুব সাধারন কয়েকটা কথা যা এত সাধারন প্রথম পড়ার পর মনে হয় তেমন বিশাল কিছুই বলা নেই অথচ এই 3টা সূত্র এখনও কেউ অস্ব ীকার করতে পারে নি।
প্রথম সূত্রটা দর্শক এবং গতিশীল বস্তুর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের।
দর্শক এখানে যে পরীক্ষাটা করছে সে। বলা আছে, যদি কোনো বাহ্যিক 'বল' না থাকে তবে বস্তুর গতির অবস্থার পরি বর্তন হবে না। স্থির বস্তু স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সুষম গতিতে চলতে থাকবে। অনেক ভাবেই বলা যায় বিষয়টাকে। সবচেয়ে সহজ ভাবে বললে-
যদি কেউ টেবিলের উপর একটা বই রেখে দেয় তবে সে যেখান থেকেই বইটা দেখার চেষ্টা করুক না কেনো টেবিলের উপর বইয়ের অবস্থান পরিবর্তন হবে না, যদি আমরা কেউ গিয়ে ধাককা দিয়ে বইটা সরিয়ে না দেই। এটা কিভাবে দেখবো আমরা তার উপর বইয়ের অবস্থান নির্ভর করে না।
আমরা যদি টেবিলের চারপাশের দৌড়াতে দৌড়াতে বইটা দেখি তবে বইটা স্থির থাকবে, যদি টেবিলের সামনে ধ্যানী বুদ্ধ হয়ে বসে থাকি বইটা স্থির থাকবে। যদি আমরা বস্তুটার গতির অবস্থা পরিবর্তন করতে চাই তবে বল প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম গতিসুত্রের ব্যাখ্যা এটাই।
2য় সুত্র বলছে যদি আমরা বস্তুর গতির অবস্থা পরিবর্তিত হতে দেখি তবে সেখানে যে বল ক্রিয়াশীল সেটাকে আমরা পরিমাপ করতে পারবো। এই বলের পরিমান হবে বস্তুর ভর বেগের পরিবর্তনের সমানুপাতিক। অনেক পরে আইনস্টাইন এটা প্রমান করেছেন যে বস্তুর সর্বোচ্চ বেগ সসীম, বস্তুর সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে আলোর গতিবেগের সমান, সেকেন্ডে 3 লক্ষ কিলোমিটার। এটাই সর্বোচ্চ গতি যা কোনো বস্তুর পক্ষে ধারন করা সম্ভব।
নিউটনের সমসাময়িক কিছু দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী এই প্রশ্নটা তুলেছিলেন, যদি আমরা ক্রমাগত বল প্রয়োগ করতে থাকি বস্তুর বেগ বাড়তে থাকবে, এবং আমরা যদি অনন্ত কাল ধরে বল প্রয়োগ করতে থাকি তাহলে বস্তুর পক্ষে অসীম বেগ অর্জন করা সম্ভব। নিউটনের সূত্র এই বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারে না। তার ভাষ্যমতে এটা অসীম হয়ে যাওয়াটা খুবই সম্ভব। আইনস্টাইনের অবদান কি তবে এই সূত্রের পক্ষে?
আইনস্টাইনের মতবাদ বা সূত্র বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের বক্তব্য 2টা।
1।বস্তুর গতিবেগ সসীম এবং সর্বোচ্চ গতিবেগ আলোর গতির সমান
2। আমরা স্থির এবং সুষমবেগে চলমান যেভাবেই ঘটনা পর্যবেক্ষন করি না কেনো গতির সূত্রগুলো অপরিবর্তিত থাকবে। বা আমাদের বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলোর কোনো পরিবর্তন হবে না। এর ফলশ্রুতিতে আমরা নতুন কিছু সীমাবদ্ধতা পাই বস্তুর।
প্রথম সীমাবদ্ধতা: বস্তুকে অসীম সময় বল প্রয়োগ করলে তার গতিবেগ অসীম হবে না, বরং তা ক্রমাগত আলোর গতির কাছাকাছি যাবে।
2য় সীমাবদ্ধতাঃ প্রতঃমটার ধারাবাহিকতায় বলা যায় যখন আমরা আলোর কাছাকাছি গতি অর্জন করবো তখন আমাদের প্রয়োগকৃত বল কি বস্তুর ভরবেগ পরিবর্তন করবে না? নিউটনের এই সূত্র কি তবে ভ্রান্ত? উত্তর যখন বস্তুর গতিবেগ আলোর কাছাকাছি হয়ে যাবে তখন বস্তুর বেগ পরিবর্তন হতে পারবে না এটা আইনস্টাইন বলেই দিয়েছে কিন্তু বস্তুর ভর পরিবর্তন হতে কোনো বাধা নেই, তাই বস্তুর ভর বেগ পরিবর্তিত হবে এবং প্রয়োগকৃত বল বস্তুর ভর পরিবর্তনে ব্যাবহৃত হবে।
3য় সীমাব্ধতাঃ আমরা অসীম সময় ধরে বল প্রয়োগ করছি, তখন বস্তুর ভর কি হবে? বেগও সসীম, সুতরাং বস্তুর ভর একটা সময় অসীম হয়ে যাবে, বস্তুর ভর বাড়ার অর্থ বস্তুর বেগ পরিবর্তনের জন্য আরও বেশী বলের প্রয়োজন, কারন বল এবং ভরবেগ সমানুপাতিক এটাই নিউটনের 2য় সূত্র। যখন বস্তুর ভর অসীম হয়ে যাবে তখন আমরা যতই বলপ্রয়োগ করি না কেনো বস্তুর গতির কোনো পরিবর্তন হবে না।
সুতরাং আইনস্টাইনের মতে।
বস্তুর গতির এখটা সর্বোচ্চা মান আছে এবং যেকোনো বস্তু যার ভর আছে তার গতিবেগ কখনই আলোর গতিবেগের সমান হতে পারবে না।
3য় সূত্রঃ প্রতেকটি ক্রিয়ারই সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে, এই একটা সূত্রের দার্শনিক ব্যাবহার হয়েছে সবচেয়ে বেশী।
হালের বস্তুবাদ এবং ফ্রয়ডের মনোসমীক্ষণে এই সমান এবং বীপরীত প্রতিক্রিয়াই মূল ভিত্তিএই ক্রিয়া প্রতিক্রিয় ভিত্তিক অনেক দর্শন আমরা নিজেরাই তৈরি করে নিতে পারি, যেমনটা আর দশজন করছে, যেমন হলো, আমরা যদি যন্ত্র নির্ভর হই তাহলে যন্ত্রব্যাবহারের প্রতিক্রিয়ায় আমরা অধিক যন্ত্রনির্ভর হয়ে যাবো এবং যন্ত্র আমাদের উপর কতৃত্ব করবে। আমরা যন্ত্রশাসন করলে একটা পর্যায়ে যন্ত্র আমাদের পালটা শাসন করা শুরু করবে। আমরা ক্রমাগত একটা কিছু অন্য সবার উপর চাপিয়ে দিতে থাকলে একটা পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা আমদের পালটা ধাওয়া করবে। আমি ধর্ম নিয়ে বেশী কথা বলতে থাকলে আমকে ধর্ম শেখানো জন্য লোকজন মরিয়া হয়ে যাবে।
নিউটনের প্রথম 2টা সুত্রের সূচনা হয়েছিলো গ্যালিলিওর হাতে। গ্যালিলিও প্রমান করেছিলেন যদি বস্তুর উপর কোনো বল ক্রিয়াশীল না থাকে তবে তা সুষম গতিতে অনন্তকাল চলতে থাকবে। স্থির বস্তুর বর্ননাটা দিয়েছি এবার সুষম গতির কল্পনা এবং প্রমান কিভাবে গ্যালিলিও করেছিলো তার একটা ধারনা দেই।
এরিস্টটলের মতে বস্তুর চুরান্ত অবস্থা স্থিতি, অর্থাৎ আমরা যদি ক্রমাগত বল প্রয়োগ না করি তবে একটা সময় বস্তু স্থির হয়ে যাবে। আমাদের পর্যবেক্ষন এই ভ্রান্ত ধারনাই দেয় আমাদের। আমরা কোনো কিছু ঠেলে সরালে একটা পর্যায়ে বস্তুটা থেমে যায়, এরিস্টটলের পর্যবেক্ষংত সত্য এটাই। গ্যালিলিও এখানে থেমে থাকলে আমরা নিউটনের সূত্রগুলো পেতাম না এবং এতসব যন্ত্র ব্যাবহারে কোনো সুযোগও পেতাম না।
গ্যালিলিও অন্য একটা গুরুত্বপূর্ন আবিস্কার করেছিলেন, বিনা বাধায় পতনশীল যেকোনো বস্তুর গতি পতনের সময়কালের বর্গের সমানুপাতিক, এবং তার মত ছিলো যদি বিনা বাধায় পড়তে দেওয়া হয় তবে সকল বস্তুই একই সময়ে একই দুরত্ব অতইক্রম করবে। এটাও আমাদের পর্যবেক্ষনের ভুলে আমাদের ভুল সত্য দেয়। একটা কাগজের টুকরা এবং একটা মার্বেল ছেড়ে দিলে তা ভিন্ন ভিন্ন গতিতে মাটিতে পড়ে, এটাই আমরা পর্যবেক্ষন করে এসেছি। কিন্তু গ্যালিলিওর বক্তব্য মুক্তভাবে পতনশীল কোনো বস্তুর গতিবেগ তার উপাদানের উপর নির্ভর করে না। গ্যালিলিও একটা পরীক্ষায় গতির প্রথম সূত্র এবং এই মুক্তভাবে পতনশীল বস্তুর গতির উপাদান অনির্ভরতা প্রমান করেছিলেন, সেই পরীক্ষাটা সংক্ষেপে বলি। এবং এই পরীক্ষার ফলে গৃহীত সিদ্ধান্ত বলি। যারা আগ্রহী তারা নিজেরাই এই পরীক্ষাটা করে দেখতে পারেন গ্যালিলিও কতটা মুক্তভাবে চিন্তা করতে সক্ষম ছিলেন।
একটা হেলানো তল নিয়ে সেখানে বিভিন্ন উপাদানে তৈরি গোলক স্থাপন করে সেগুলো হেলানো তলের নীচে পৌছাতে কতটা সময় নিচ্ছে তা নির্ধারন করি।
প্রথম ক্ষেত্রে যদি হেলানো তলের উচ্চতা হয় *1 তাহলে তা বাড়িয়ে পরের বার *2 করি এবং আবার সময় নির্ধারন করি। এই ভাবে উচ্চতা বাড়াতে থাকি, করে যখন আমরা এইটুকু বিশ্বাস অর্জন করবো যে হেলানো তলের প্রান্তে পৌছাতে সময়টা বস্তুর উপাদানের উপর নির্ভর করে না তখন আমরা একটা সমাধানে আসতে পারি যে যদি হেলানো তলটা সম্পুর্ন উলম্ব হয়( মানে যদি আমরা হেলানো তলটাকে একেবারে খাড়া করে ধরি তাহলেও গোলকগুলো পড়তে একই সময় নিবে, অর্থ্যাৎ বস্তুর পতনকাল উচ্চতার উপর নির্ভর করে উপাদানের উপর নয়। এবং এর পরবর্তি অংশটা আরও মজার। গ্যালিলিও হেলানো তলে বলগুলো ছেড়ে দিয়ে তা যখন ভুমির উপরে গতিশীল হলো তা পরিমাপ করলেন, উচ্চতা যত বেশী তত বেশী গতিতে তা ভূমির উপর দিয়ে গড়িয়ে যায়, কিন্তু একটা পর্যায়ে থেমে যায়।
তিনি ভুমির ঘর্ষন কমালেন তেল ব্যাবহার করে, এর পর বস্তুগুলো আরও অনেক দুর গড়ানোর পর থামলো। এর পর আরও মসৃন ভূমি ব্যাবহার করে এবং আরও বেশী ঘর্ষন কমিয়ে অবশেষে তার সিদ্ধান্ত যদি আমরা ঘর্ষন একেবারে শুন্য করে দিতে পারি তবে বস্তু অসীম দুরত্ব অতিক্রম করতে পারবে কোনো রকম গতিক্ষয় না করেই। অর্থাৎ সুষম গতিতে চলমান যেকোনো বস্তুই সুষম গতিতে চলতে থাকবে ।
গ্যালিলিও প্রথম আলোর গতিবেগ মাপার চেষ্টা করেন। এবং কিছুটা সফল হন। গ্যালিলিও নিজে টেলেস্কোপ আবিস্কার করেন এবং তা দিয়ে বৃহস্পতির উপগ্রহ পর্যবেক্ষন করেন। এই আবিস্কারের আঘাতে কিভাবে মধ্যযুগীয় একেশ্বরবাদী ধর্ম ভেঙ্গে পড়ে তা আলোচনা করেছি গ্যালিলিও এবং ধর্মের মৃতু্য নামক পোষ্টে সুতরাং পুনরায় একই চর্বিত চর্বন করে লাভ নেই। যারা এ বিষয়টা জানতে আগ্রহী তা সেই পোষ্টটা কষ্ট করে পড়ে নিলে ভালো হয়।
একটা মজার ঘটনা প্রচলিত আছে, আিগ জানি নাবীষয়টা সত্যি কি মিথ্যা তবে আমার কাছে অত্যন্ত কৌতউককর মনে হয় ঘটনা টা
ইংল্যান্ডের কেমব্রিজে সম্ভবত 1400 সালের দিকে কোনো একজন ব্যাক্তি( কথিত ফ্রান্সিস বেকন) আতশী কাঁচ তৈরি করেন 2টা। উত্তল লেন্স, যার বৈশিষ্ঠ হলো এটা যেকোনো বস্তুর বাস্তব প্রতিবিম্ব তৈরি করতে পারে। এই কথাটার অর্থ হলো যদি কোনো বস্তুর সামনে আতশী কাঁচ রাখা হয় তবে দেখালে সেই বস্তুর উলটা প্রতিবিম্ব দেখা যাবে। আমরা বাংলাদেশের সিনেমা হলে কিংবা যেকোনো দেশের সিনেমা হলেই একই পদ্ধতিতে সিনেমা দেখে থাকি, যারা প্রজেক্টর ব্যাবহার করে অভ্যস্ত তারা লেন্সটা দেখলেই বুঝতে পারবে এটা উত্তল লেন্স। কিন্তু এই লেন্স নিয়ে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা ছেলেখেলায় মত্ত হয়ে যায়। সবাই লেন্স দিয়ে প্রতিবিম্ব তৈরি করে সারাদিন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃংখলা নষ্ট হয়ে যায়। পরে তৎকালীন উপাচার্যের আদেশে সেই লেন্স 2টা ধ্বংস করে ফেলা হয়।
পিডগিন ভাষা
কোন একটা অঞ্চলে দুই/তিনটি আলাদা অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘকাল একসাথে বাস করতে থাকলে, তারা তাদের দুই বা তিন ভাষা থেকে কিছু কিছু শব্দ মিলিয়ে একটা অদ্ভুত ভাষা তৈরি হয়। প্রত্যেক ভাষার সহজ শব্দগুলো সহজেই অন্যরা শিখে ব্যবহার করে। ফলে এক প্রজন্মের মধ্যেই একটা জগাখিচুরি মার্কা অদ্ভুত ভাষা তৈরি হয়। এই ধরণের ভাষাকে বলা হয় পিডগিন ভাষা। কিন্তু আশ্চর্য একটা ঘটনা ঘটে দ্বিতীয় প্রজন্মে এসে। এই পিডগিন ভাষায় কথা বলা লোকগুলোর বাচ্চারা যখন বড় হয়, তখন তারা কথা বলার মধ্যে নিজেদের অজান্তেই সেই ভাষার গ্রামার তৈরি করে ফেলে। নতুন প্রজন্মের এই ব্যকরন যুক্ত ভাষাকে বলা হয় ক্রিওল ভাষা। অ্যামেরিকার লুইসিয়ানা প্রদেশের আফ্রিকান বংশদ্ভুদ মানুষরাত ১৭৯২ সাল থেকে ফ্রেন্স এবং স্প্যানিশ ভাষার মিশ্রনে একটা ক্রিওল ভাষা ব্যবহার করে আসছে।
যদি বাচ্চাটির বাবা মা বাসায় বাংলায় কথা বলে, আর সে স্কুলে গিয়ে অন্য একটি ভাষা শিখে, তাহলে- বাচ্চাটি অনায়াসেই দুইটি ভাষাতেই কথা বলবে। কিন্তু চেষ্টা করলেও এই বাচ্চাদের মত দ্রুত এবং নিখুত ভাষায় কথা বলা বড়দের জন্য খুবই কঠিন হয়। কারণ বাচ্চাদের মস্তিষ্কের এমন একটি অংশ সক্রিয় থাকে যার কারনে বাচ্চারা সহজেই অন্য একটি ভাষা শিখে ফেলতে পারে। নোয়াম চমস্কি এবং তার গবেষক দল এই বিষয়টার নাম দিয়েছেন, “ইউনিভার্সারল গ্রামার মেশিন”। মানুষের এই ইউনিভার্সাল গ্রামার মেশিন বয়স বাড়ার সাথে সাথে দুর্বল হতে থাকে। ফলে বেশি বয়সে ভাষা শেখাটা খুবই কঠিন কাজ। কাজে ছোট বয়সে আপনার বাচ্ছাকে একাধীক ভাষা রপ্ত করার প্রশিক্ষণ দিন।
মুসলিমদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল গ্রানাডা,
আয়তনে প্রায় ছয় লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের এই উপদ্বীপটি
উমাইয়াদের হিস্পানিয়া বিজয়ের পর আন্দালুসকে পাঁচটি প্রশাসনিক ইউনিটে ভাগ করা হয়। উমাইয়া খিলাফতের পতনের পর আন্দালুস কয়েকটি রাজ্যে বিভক্ত হয়ে পড়ে যার মধ্যে গ্রানাডা আমিরাত উল্লেখযোগ্য।
৭৫০ খ্রিস্টাব্দে, উমাইয়া খিলাফতের পতনের পর মুসলিম বিশ্বে শুরু হয় আব্বাসীয় যুগ। গণহত্যার সময় উমাইয়া পরিবারের বেঁচে যাওয়া রাজপুত্র আবদ আল-রহমান পালিয়ে আন্দালুসে চলে আসেন। সেখানেই শুরু হয় তার নতুন রাজ্য-শাসন, আল-আন্দালুসকে ঘোষণা করেন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে।
৭১১ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি তারিক ইবনে জিয়াদের নেতৃত্বে স্পেনের ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করে। তারপর ধীরে ধীরে বর্তমান স্পেন ও পর্তুগাল-এর অধিকাংশ ভূখণ্ডই তাদের অধীনে চলে আসে। এরপর সাতশো বছরের বেশি সময় মুসলমান এই ভূখণ্ড শাসন করে। এত সময়ে ৪০-৫০% স্পেনবাসি মুসলিম হয়। তখন স্পেনের লোকসংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি।
স্পেনের সরকারী ভাষাও আরবী করা হয়। ৭০০ মসজিদ, ৮০০ শিক্ষাকেন্দ্র, ৭০টি সুবিশাল লাইব্রেরি ও কর্ডোভাতে গড়ে উঠলো বিশ্ববিদ্যালয়। নির্মিত হলো ৯০০ পাবলিক গোসলখানা ও ৬০০০০ প্রাসাদ। এখানেই জন্ম নেন ইবনে রুশদ, ইবনে ফিরনাস, ইবনে তোফায়েলসহ অসংখ্য মুসলিম বিজ্ঞানী। এইসময় সমগ্র ইউরোপ ঐক্যবদ্ধ হলো মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ করার জন্য। তখন মুসলিমরা ছিল বিভিন্ন তরিকায় বিভক্ত। নিজের মধ্যে কন্দোল আর মতপার্থ্যকের কারনে তারা ঐক্যবদ্ধ হতে পারল না। ফলেভখ্রীষ্টান রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানী ইসাবেলা ১৪৯২তে স্পেন জয় কর্ল এবং ১৫০২তে সব মুসলমানকে ইসলাম ত্যাগ করে খ্রীষ্টান হতে নির্দেশ দেয়া হয়। ১৬১০ পর্যন্ত ৩০ লাখ মুসলিম যারা ইসলাম ত্যাগ করতে সম্মত হয়নি তাদেরকে স্পেন ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হল। ১৪৯২ সালে আন্দালুসিয়ার নাম পরিবর্তন করে স্পেন রাখা হয়।
৭/৮শ বছর মুসলিমরা যে স্পেন শাসন করেছে, সেখানে মুসলমান আছে শতকরা ৪জন মাত্র।
স্পেনে যখন সকল শহর খ্রিস্টানদের হাতে চলে গিয়েছিল। তখনো মুসলিমদের হাতে ছিল গ্রানাডা। দক্ষি্ণ স্পেনের সিয়েরা নেভদার পাহাড়ী অঞ্চলে রাজ্যটি অবস্থিত থাকার কারণে এখানে সেনা অভিযান ছিলো কঠিন।
নিঃসঙ্গ গ্রানাডার ঔজ্জ্বল্যও ম্লান হতে শুরু করলো। গ্রানাডার শাসক তখন আবুল হাসান (১৪৬৫-১৪৮২)। হাসানের পুত্র আবু আব্দুল্লাহ পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহে লিপ্ত হলেন। বাদশা হাসান ১৪৮৫ সালে তার ভাই আল জাগালের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করলেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আবু আব্দুল্লাহ চাচা জাগালের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন। চাচা-ভাতিজার দ্বন্দ্বের সুযোগে ফার্দিনান্দ ও ইসাবেলা গ্রানাডার বিভিন্ন এলাকা দখল করতে থাকলেন। এমনি এক দখলদারী যুদ্ধে আল-জাগাল ১৪৮৭ সালে আত্মসমর্পণে বাধ্য হলেন। অতঃপর বাদশা আল জাগাল গ্রানাডা ত্যাগ করলেন। ঐতিহাসিক লেনপুল বলেন: ‘বাদশা আল জাগাল ছিলেন গ্রানাডার সর্বশেষ শাসক। ছিলেন সাহসী যোদ্ধা, যথার্থ শাসক ও খ্রিস্টশক্তির বিরুদ্ধে অটল প্রতিদ্বন্দ্বী। চাচা আর ভাতিজা যদি দ্বন্দ্বে না জড়াতেন তাহলে গ্রানাডা তাবৎ কাল ধরে জাগালের হাতেই থাকতো।
মায়া সভ্যতা ও রাজনৈতিক কাঠামো
প্রাচীনকালে কৃষিকাজ যে শুধু মধ্যপ্রাচ্যের একটি জায়গায়ই শুরু হয়েছিল তা কিন্তু নয়। আধুনিক গবেষণা অনুযায়ী প্রাচীন পৃথিবীর অন্তত ১১টি জায়গায় স্বাধীনভাবে কৃষিকাজ শুরু হয়েছিল। তার মধ্যে একটি ছিল অ্যামেরিকা মহাদেশ। বর্তমান মেক্সিকোতে আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগে কৃষিভিত্তিক সমাজের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়ে এক নগর সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি এখন মায়া সভ্যতা নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। মায়ানরা প্রথম নগর তৈরি করেছিল প্রায় ২৫০০ বছর আগে। কিন্তু প্রথমদিকের এই নগরগুলো সফলতার মুখ দেখেনি। এর প্রায় ৭৫০ বছর পর মায়ানদের মধ্যে নতুন এক ধরণের সামাজিক ও রাজনৈতিক ধারা বিকাশ লাভ করে, এবং এর ফলে শুরু হয় মায়ানদের ক্লাসিক্যাল যুগ। এই ধারাটা ২৫০ থেকে ৯০০ সাল পর্যন্ত। এই সময়টাই ছিল মায়া সভ্যতার স্বর্ণযুগ। এই সময়ের মধ্যে ওরা খুবই সমৃদ্ধশালী ও জটিল এক সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করেছিল।
কিন্তু এই উন্নত ও জটিল সভ্যতাও টিকে থাকতে পারেনি। পরবর্তী ৬০০ বছরে মায়ানদের এই ধারাটাও শেষ পর্যন্ত কলাপ্স করে। মায়ানদের সভ্যতা কোন সাম্রাজ্য তৈরি হতে পারেনি। ওদের ছিল গ্রিকদের মত নগরকেন্দ্রিক সংস্কৃতি। এই নগরগুলোর নিজেদের মধ্যে ভালো যোগাযোগ ছিল। ছিল আলাদা আলদা সিলমোহর ও বর্ণমালা। ওদের ছিল প্রায় ৩১ টির মত আলাদা ভাষা। তবে এই ভাষাগুলো ছিল প্রায় একই ধরণের। ওরা বাণিজ্য শুরু করেছিল, এমনকি কোকোবিনের সাহায্যে ওরা মুদ্রারও প্রচলন করেছিল। অর্থাৎ, ওদের সামাজিক কাঠামো প্রায় আধুনিক সমাজের মতই জটিল পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।
প্রতিবছর কি ঘটছে তা রেকর্ড রাখার জন্য ওদের ছিল বিশেষ এক ধরণের ক্যালেন্ডার। এর নাম ছিল 'Long Count।' এই জিনিসটা থাকার কারণে মায়া সভ্যতার অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক দিকগুলো নিয়ে অনেক নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব। মায়ানদের ছিল বেশ ভালো মানের সেচব্যবস্থা এবং স্থাপত্য প্রযুক্তি। কিন্তু মায়ানদের এই জটিল সভ্যতা তৈরি এবং দারুণ উন্নতির পেছনের কারনও ছিল সেই- Extractive Political Institutions। এটা নাটুফিয়ানদের থেকে অনেক জটিল এবং উন্নত। কিন্তু তবুও মূলগত দিক থেকে এটাও তৈরি হয়েছিল এক ধরনের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা ভিত্তিক কাঠামোর উপর ভর করে। ফলে এখানেও অল্পকিছু এলিট শ্রেণিই বেশিরভাগ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করত।
মায়াদের অর্থনীতি যেভাবে উন্নতি করেছিল তার সাথে মিল দেখা যায় আফ্রিকার Bushong দের সমাজের। দুই জায়গাতেই নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর কারণে বেশ ভালো অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়, কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই এই লাভের গুড় খেয়ে ফেলে অল্পকিছু এলিট শ্রেণির মানুষ। মায়ানদের ক্ষেত্রে যেটা হয় সেটা হলো- ৩০০ সালের দিকে ওদের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠে, তখন ওরা অল্পকিছু প্রযুক্তিগত উন্নতি করে। কিন্তু এরপর সেচ ব্যবস্থাতে সামান্য উন্নতি করা ছাড়া ওরা আর কোনো নতুন জিনিস বা নতুন প্রযুক্তির দিকে আগায়নি। ওদের সভ্যতা যেন ঐ জায়গাতেই থেমে গিয়েছিল!
ভালো অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে জনসংখ্যা বেড়ে যায়। কিন্তু ঐ সময়টাতে ঐ অঞ্চলের আবহাওয়া রুক্ষ হতে থাকে। ফলে ফসল উৎপাদন কমে যায়। কিন্তু ওরা সেচ ব্যবস্থা উন্নত করার দিকে পরের দিকে আর তেমন একটা মনোযোগ দেয়নি। কারণ, একপর্যায়ে ওরা বিভিন্ন কুসংস্কারভিত্তিক কাজে অংশ নিয়ে বাস্তব প্রয়োজনে প্রযুক্তির দরকার এটা হয়ত ভুলে গিয়েছিল। ওদের সংস্কৃতিতে শুক্রগ্রহ বা শুক্রদেবতা ছিলেন যুদ্ধের দেবতা। ওরা এক পর্যায়ে আকাশে তারার অবস্থান দেখে যুদ্ধ করা শুরু করেছিল। এই যুদ্ধের কারণেই হয়ত এক পর্যায়ে ওদের সমাজ রাজা শূন্য হয়ে পড়েছিল। আর রাজা শূণ্য হওয়া মানেই হলো প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক কাঠামোর অভাব। যে কাঠামোর উপর ভিত্তি করে ওদের কৃষির সম্প্রসারণ হয়েছিল, তারপর সেটা থেকে বাণিজ্য শুরু হয়েছিল, সেগুলো এখন আর সম্ভব নয়। এক পর্যায়ে যেভাবে ওদের উন্নতি হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই আবার অর্থনীতির আকার ছোট হতে থাকে, মানুষ কমতে থাকে। মায়া সভ্যতা কলাপ্স করে।
মায়া সভ্যতা কলাপ্স করার বেশ কিছু কারণ ছিল। এর মধ্যে একটি ছিল খরা। খরা ছিল প্রাকৃতিক কারণ। খরার কারণেই খাদ্যাভাব দেখা দেয়, যা ধীরে ধীরে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয় মায়ানদের। প্রাকৃতিক কারণ বাদ দিলে আমরা দুইটা বিষয় দেখতে পাব যার কারণে মায়া সভ্যতা টিকতে পারেনি। তার একটি হলো Extractive Political Institutions এবং আরেকটি হলো নতুন প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ না দেওয়া। আধুনিক রাষ্ট্রের আলোচনায় আমরা দেখতে পাব যে- এই দুইটি জিনিস উপস্থিত থাকলে একটি আধুনিক রাষ্ট্র কখনোই উন্নতি করতে পারে না। মায়া সভ্যতা এতই উন্নতি ও জটিল হয়েছিল যে তা প্রায় আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার মতই। প্রাচীনকালের এক সভ্যতা এত জটিল অবস্থায় পৌছে গেলে, তারা যদি প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ না দেয়, তবে সে সভ্যতা যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখেই কলাপ্স করতে পারে।
নাটুফিয়ান এবং মায়ানদের সমাজের কলাপ্স থেকে বোঝা যায় যে, সামাজিক এবং রাজনৈতিক কাঠামো একটি সভ্যতার উন্নতি এবং টিকে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এই বিষয়টা আরও ভালো বোঝা যায় অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী সমাজের একটি ঘটনা থেকে।
১০০ বছর আগ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার Yir Yoront গোষ্ঠীর লোকেরা মূলত প্রস্থর যুগের পাথরের হাতিয়ার দিয়েই তাদের জীবন চালাতো। কিন্তু ইউরোপিয়ানরা অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে স্টিলের কুঠারের প্রচলন হয়। সাধারণত নতুন প্রযুক্তি একটি জাতি বা সমাজকে উন্নতি এনে দেয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ঘটে ঠিক উল্টো ঘটনা। এই স্টিলের কুঠার পাওয়ার পর এই আদিবাসীরা দেখল- এই নতুন কুঠার খুবই কাজের জিনিস। অল্প সময়েই খাবার সংগ্রহ করা যাচ্ছে। ফলে ওরা হয়ে গেল অলস। আদিবাসীদের মধ্যে ঘুমের প্রবণতা বেড়ে গেল। ফলে নতুন প্রযুক্তি পেয়ে উন্নতির বদলে হতে লাগল অবনতি! এই ঘটনা থেকে এটা বোঝা যায় যে, উন্নতির জন্য নতুন প্রযুক্তি বা সম্পদের চেয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বা সংগঠন বেশি জোরালো বেশি ভূমিকা পালন করে।
যেসব রাষ্ট্র দীর্ঘ সময়ের জন্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রেখেছে এইসব রাষ্ট্রের উন্নয়নকে বলা হয়, Sustainable Development বা “টেকসই উন্নয়ন”। টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি রাষ্ট্রকে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করে যেতে হয়। এই দুই অর্থনীতিবিদ তাদের দীর্ঘ দিনের গবেষণায় দেখেছেন যে- একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন হয় প্রতিনিয়ত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন; আর এই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য দরকার হয় ইন্টিলেকচুয়াল প্রপার্টির রিজার্ভ বা মেধাসত্ত্ব আইন।
একজন গবেষক যখন একটি নতুন জিনিস তৈরি করেন, বা একটি নতুন পদ্ধতির আবিষ্কার করেন তখন সেই জিনিসটার কৃতিত্ব সেই গবেষকে দেওয়া হয়। যদি একজন বিজ্ঞানী একটি ফল থেকে একটি ভিটামিন তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, তবে সেই আবিষ্কারের কৃতিত্ব ঐ বিজ্ঞানীরা নামে নিবন্ধন করা হবে। পরবর্তীতে কোন কোম্পানি যদি এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ভিটামিন তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে, তবে লাভের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ঐ বিজ্ঞানীকে দিতে হবে। এই বিষয়টাকে বলা হয় পেটেন্ট রাইট, বা মেধাস্বত্ত্ব আইন। গবেষণা থেকে দেখা যায় যে- একটি রাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হবে কিনা সেটা এই পেটেন্ট রাইটের প্রয়োগের উপর নির্ভর করে।
একজন মানুষ যখন একবার কোনো আবিষ্কারের পেটেন্ট পেয়ে যায়, তখন সে চায় এই আবিষ্কারের ফল যেন তিনি আজীবন ভোগ করে যেতে পারেন। কিন্তু অন্য কেউ যদি ঐ জিনিসের থেকেও ভালো কোনোকিছু আবিষ্কার করে ফেলে, তাহলে কিন্তু তিনি আর ঐ পেটেন্ট থেকে কোন আয় করতে পারবেন না। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তিনি তার প্রভাব খাটিয়ে এই ঘটনাটা যেন না ঘটতে পারে সেই ব্যবস্থা করেন। যারা কোন গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেন, তারা অল্প সময়ের মধ্যেই প্রচুর ধন সম্পদ ও ক্ষমতার অধিকারী হয়ে পড়েন। ফলে, এই প্রভাব খাটানো খুবই সহজ হয়। এখন, এই অবস্থা হলে তো প্রযুক্তির কোন অগ্রগতি হবে না। আর প্রযুক্তির অগ্রগতি না হলে টেকসই উন্নয়নও সম্ভব নয়।
তাই, টেকসই উন্নয়নের জন্য এমন একটা ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন যেখানে কেউ এভাবে প্রভাব খাটাতে পারবে না। এমন একটি ব্যবস্থা হলো Pluralistic political institutions। এই রাজনৈতিক কাঠামো হলো Extractive Political Institutions এর ঠিক উল্টো। এই পদ্ধতিতে অল্পকিছু মানুষ তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনভাবেই প্রভাব খাটতে পারবে না। যা দেশের সর্বসাধারণের জন্য ভালো, Pluralistic রাজনৈতিক কাঠামোতে শুধু সেই সিদ্ধান্তটাই নেওয়া হয়।
এই প্লুরালিস্টিক রাজনৈতিক কাঠামো থাকলে সব সময় নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি হবে। কেউ যদি আগের প্রযুক্তির চাইতে ভালো প্রযুক্তি তৈরি করতে না পারে তবে আগের আবিষ্কারকই মেধাস্বত্ত্বের ফল ভোগ করবে। ফলে দেশের মেধাবী মানুষরা আগের প্রযুক্তির চাইতে ভালো প্রযুক্তি তৈরি করার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যায়। পলিটিক্যাল ইকোনোমিস্ট Joseph Schumpeter এই বিষয়টার নাম দিয়েছেন 'creative destruction' । একটি রাষ্ট্রে যখন এই ক্রিয়েটিভ ডিস্ট্রাকশন প্রক্রিয়াটা চলতে থাকে, তখন সেখানে নিয়মিত আরও উন্নতমানের প্রযুক্তি এবং পণ্য তৈরি হতে থাকে। একমাত্র pluralistic political institutions ই এই ক্রিয়েটিভ ডিস্ট্রাকশনের গ্যারান্টি দিতে পারে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রে যদি pluralistic এর বদলে Extractive রাজনৈতিক কাঠামো থাকে তবে কোনভাবেই ক্রিয়েটিভ ডিস্ট্রাকশনের মাধ্যমে বেটার টেকনোলজি এবং বেটার প্রোডাক্ট তৈরি করা সম্ভব নয়।
তবে এখানে আরেকটি কথা আছে। প্লুরালিস্টিক পলিটিক্যাল কাঠামোর পাশাপাশি ওই রাষ্ট্রে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণও লাগবে। কারণ, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কেন্দ্রীকরণ ছাড়া pluralistic political institutions আবার সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ফেলবে।
তার মানে একটি রাষ্ট্রে pluralistic political institutions লাগবে, পাশাপাশি লাগবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ। এটা থাকলে তখন রাষ্ট্রে ক্রিয়েটিভ ডিস্ট্রাকশনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি হবে। এবং এই নতুন নতুন প্রযুক্তিই মূলত দেশের টেকসই উন্নয়ন ঘটাবে।
তাহলে একটি রাষ্ট্র কেন ব্যর্থ হয়? যদি এই দুই অর্থনীতিবিদের তত্ত্বকে অল্পকথায় ব্যাখ্যা করি তাহলে বলা যায়- কোন এলাকার স্থানীয় সম্পদ যত বেশিই থাকুক না কেন, সেই সম্পদ দিয়ে আসলে একটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন সম্ভব নয়। একটি সমাজ বা দেশ টিকে থাকতে হলে তাদের প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করতে হয়। আর এই উন্নয়নই একটি দেশকে অর্থনৈতিক অগ্রগতি এনে দেয়। আর এই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য যা সবথেকে বেশি প্রয়োজনীয় তা হলো দেশটির রাজনৈতিক কাঠামো। দেশে যদি সঠিক রাজনৈতিক কাঠামো না থাকে, আইনের প্রয়োগ না থাকে, তবে সেই দেশে অল্পকিছু মানুষ সুবিধা ভোগ করে ধনী হয়। আর এক পর্যায়ে সেই সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়ে পড়ে বা কলাপ্স করে। তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো।
----------