আত্মার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি


একটা গরুকে জবাই করার পর যখন এর মাংশগুলোকে টুকরো করা হয়, তখন খন্ডিত টুকরোগুলোকে আমরা লাফাতে দেখি। একটা  সাপ, কেঁচো, টিকটিকি ইত্যাদির লেজ কেটে বা ছিঁড়ে ফেললে, ঐ ছিঁড়া অংশকেও আমরা কিছুক্ষণ লাফাতে দেখি, তার মানে সেখানেও প্রাণ আছে। তাহলে শরীর টুকরো করার সাথে সাথে প্রাণও কি টুকরো হতে থাকে? প্রতিটা জীবকোষেই কি তাহলে প্রাণ থাকে? কিংবা কোন গাছের একটা থেকে দশটি শাখা কেটে রোপণ করলে তা থেকে পৃথক পৃথক দশটি জীবিত গাছ উৎপত্তি হয়। এই দশটি গাছের যে দশটি জীবন, এটা কোথা থেকে আসে? 

এইসব প্রশ্ন শুধু সংচয়বাসীদের মাথায় আসে, সাধারণ মানুষ মনে করে প্রাণ হচ্ছে বাতাসের মত একটা কিছু।  শরীর যখন মরে যায় তখন এই প্রাণ মরে না,অনন্তকাল টিকে থাকে। এটাই মানুষের কল্পিত আত্মা। 


আসলে আত্মার ধারণা অনেক পুরোনো। যখন থেকে মানুষ নিজের জীবন ও মৃত্যু নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে, - তখন থেকে আত্মার ধারণা এসেছে। আত্মা নিয়ে জীবন মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করার করার প্রচেষ্টা প্রথম শুরু হয়েছিলো ইউরোপের আদি মানুষ নিয়ান্ডার্থাল এর মনে। তারা  মৃতদেহ কবর দেয়ার সময় সাথে খাদ্যদ্রব্য, অস্ত্র সামগ্রী, অন্যন্য সম্পদ, এমনকি গলার অলংকার মাদুলীসহ সব কিছুই রেখে দিত, যাতে তাদের আত্মা শান্তিতে থাকতে পারে আর সঙ্গে থাকা জিনিসগুলো ব্যবহার করতে পারে।  


অনেক সময় ঘুমন্ত মানুষের স্বপ্নদেখাকেও আত্মার চলাফেরা ও কাজকর্ম বলে ব্যাখ্যা করতেন প্রাচীন মানুষেরা। এখনো জাপানীরা বিশ্বাস করে একজন মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন তার ভেতরের আত্মা মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। তারপর যখন ওই আত্মা আবার দেহের ভিতরে প্রবেশ করে তখনই ওই মানুষটি ঘুম থেকে জেগে উঠে। আফ্রিকার মানুষরা মনে করেন, তাদের  আত্মার রং কালো তাই তাদের গায়ের রং-কালো। 

তবে   খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০ বছর আগেকার  একজন পারশিয়ান ধর্মগুরু জরথ্রুস্ট্র ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যার আত্মা সংক্রান্ত চিন্তা ভাবনা, আধুনিক মানুষের অনেকটা কাছাকাছি ছিল। তার মতানুযায়ী, প্রতিটি মানুষ তৈরি হয় দেহ এবং আত্মার সমন্বয়ে।  মানুষের ভাল কাজ কিংবা মন্দকাজের উপর ভিত্তি করে পরকালে তার আত্মাকে পুরষ্কৃত করা হবে কিংবা শাস্তি প্রদান করা হবে। জরথ্রুস্ট্রের দেওয়া আত্মার ধারণাই পরবর্তীকালে গ্রীক দার্শনিকেরা তাদের দর্শনের অংগীভুত করে নেয়। পিরামিড-মমি থেকে শুরু করে  আমাদের রাখাইন জমিদারদের সমাধীসৌধ পর্যন্ত যার ভিতর অনেক সম্পদ রেখে দেতা হয়, এই সবি হচ্ছে আত্মা বিশ্বাসের স্বাক্ষর। 

 

প্ল্যানচ্যাটের মাধ্যমে আত্মাদের ডেকে আনার ধারণাটি বেশ পুরনো। মূলত আঠারো শতক থেকেই প্ল্যানচ্যাট নামে এক পাগলামীর মাধ্যমে মৃতদের আত্মাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু হয়। ১৮৫৩ সালে অ্যালান কারডেক নামে এক ফরাসি ব্যক্তি সর্বপ্রথম এই পদ্ধতিতে আত্মাকে ডেকে আনার উপায় আবিষ্কার করেন বলে দাবি করেন। ফলে আত্মা নিয়ে  যথেষ্ট কৌতূহল ছিলো বিধায় এ সময় আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গঠিত হয়েছিল একাধিক আত্মিক অনুসন্ধান কমিটি। ১৮৮২ সালে লন্ডনে যে আত্মিক অনুসন্ধান কমিটি গঠিত হয়েছিল, তার সভাপতি ছিলেন কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত প্রফেসর হেনরি সি জুইক, তার সহকারীদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আর্থার জ়ে ব্যালফুর। যতদূর জ়ানা যায় বাংলাদেশেও ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ‘আত্মিক অনুসন্ধান সমিতি’ গঠিত হয়, এর প্রসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডঃ অলক দেওয়ারী।


১০০ বছরেরও বেশি সময় পূর্বে ম্যাকডোগাল নামক একজন ডাক্তার অদ্ভুত একটি গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন মানবদেহে আত্মার অস্তিত্ব আছে। রোগীর মৃত্যুর আগে ও মৃত্যুর পরে ওজন নিয়ে তিনি দেখেছেন, মৃত্যুর পরে মানুষের ওজন ১০ গ্রাম থেকে ২১ গ্রাম কমে যায়! সুতরাং তিনি বলতে ছেয়েছেন এই ১০ থেকে ২১ গ্রাম হল আত্মার ভর বা ওজন। বিজ্ঞানসম্মত গবেষণায় এই ধোঁকাবাজি ধরা পড়ে। আসল ঘটনা হল  মৃত্যুর পরপরই ফুসফুস রক্তকে শীতল করা বন্ধ করে দেয়। ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়ন এ্বং শরীর থেকে ঘাম নিঃসরণ হয়। মৃতের শরীর থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে পানি বের হয়ে যাওয়ার কারণেই ভর কমে যায়। কিন্তু কুকুরের কোনো ঘর্ম গ্রন্থি নেই, তাই মৃত্যুর পর তাদের ভর কমে যায় না। তাদের ওজন একই থাকে।

 

নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিক তাঁর ‘The Astonishing Hypothesis: The Scientific Search for the Soul’ গ্রন্থে পরিস্কার করেই বলেছেন: প্রাণ বা আত্মা হল মস্তিস্কের কোটি কোটি নিয়োরণ ও স্নায়ুকোষ থেকে উদ্ভুত অণুগুলোর  বিবিধ ক্রিয়া কলাপ। আসলে মস্তিষ্কের এই স্নায়ুকোষগুলির ক্ষমতা শেষ হওয়া মানে মৃত্যু মানেই তথাকথিত আত্মার মৃতু।

 আমরা অনেক সময় দেখি, দেহের অন্যান্য অংগ প্রত্যংগ ঠিকমত কর্মক্ষম আছে, কিন্তু মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হারিয়ে গেছে। এ ধরনের অবস্থাকে বলে কোমা। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হারানোর ফলে জীবিত দেহ তখন অনেকটা জড়পদার্থের মত থাকে । একবার কেউ কোমায় চলে গেলে তাকে পুনরায় জীবনে ফেরৎ আনা অনেক ক্ষেত্রেই  অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। কিন্তু যারা চেতনা ফিরে পান, তারা সাধারণতঃ ২/১ দিনের মধ্যেই তা ফিরে পান,আবার একমাস পরও কোমা থেকে ফিরে আসার নজির রয়েছে।


ব্রাইন শ্রিম্প (brine shrimp), গোলকৃমি বা নেমাটোড, কিংবা টার্ডিগ্রেডের মত কিছু প্রাণি আছে যারা মৃত্যুকে ফাঁকি দিতে পারে। যেমন, ব্রাইন শ্রিম্পগুলো লবনাক্ত পানিতে বংশবৃদ্ধি করতে থাকে, কিন্তু পানি যখন শুকিয়ে যায়, তখন তারা ডিম্বানু উৎপাদন, এমনকি নিজেদের দেহের বৃদ্ধি কিংবা মেটাবলিজম পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়।  শ্রিম্পগুলোকে দেখতে তখন মৃত মনে হলেও এরা আসলে মৃত নয় – বরং এদের এই মরণ অবস্থাটিকেই বলে ‘ক্রিপ্টোবায়টিক স্টেট’। আবার কখনো তারা পানি খুঁজে পেলে তখন নতুন করে ‘নবজীবন প্রাপ্ত’ হয়। এর আর একটি জলন্ত উদাহরন লাং ফিস । এদের  ব্যাপার স্যাপার অনেকটা ভাইরাসের মত।  ভাইরাস জীবন ও জড় পদার্থের মাঝামাঝি স্থানে থাকে। ভাইরাসকে কেউ জড় বলতে পারেন, আবার কেউ জীবিত । এমনিতে ভাইরাস ‘মৃত’,  (‘ক্রিপ্টোবায়টিক স্টেট’-এ থাকে) তবে তারা ‘বেঁচে’ ওঠে অন্য জীবিত কোষের আশ্রয় পেলে। 

"আসলে মানব দেহের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংগ রয়েছে - মস্তিস্ক, হৃৎপিন্ড, আর ফুসফুস। যে কোন একটির বা সবগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট হলে মৃত্যু হতে পারে। যেমন, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বন্ধ হলে কোমা হয়, হৃৎপিন্ডের কার্যকারিতা বন্ধ হওয়াকে বলে সিনকোপ, আর ফুসফুসের কার্যকারিতা বন্ধ হওয়াকে বলে আসফিক্সিয়া।" মস্তিস্ক, হৃৎপিন্ড, আর ফুসফুস এর যে কোন একটির কার্যকারিতা বন্ধ হলে ধীরে ধীরে মস্তিস্কে অক্সিজেন সরবরাহ বন্দ হয়ে যাওয়ায় মস্তিস্কের কোটি কোটি  নিয়োরণ-এর বিবিধ ক্রিয়া হয়ে যায়, যাকে আমরা  মৃত্যু বলি।

 

 মৃত্যুর.২টি স্তর। প্রথম স্তরকে বলা হয় ক্লিনিকাল ডেথ । এই প্রথম স্তরটি শুরু হয় শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাবার ঠিক চার থেকে ছয় মিনিট পর । ঐ সময়টাতেও অনেকটা অক্সিজেন জমা থাকে মানুষের মস্তিষ্কে , যার ফলে তখনও মস্তিষ্ক পুরপুরি এর কার্যকারিতা হারায় না অর্থাৎ মস্তিষ্কের নেটওয়ার্ক সিস্টেম ক্লিনিকালি মৃত্যু ঘোষণা করার পরও সচল থাকে । তার মানে মানুষ ঐ সময়গুলোতে উপলব্ধি করতে পারে পারিপার্শ্বিকতা, কিন্তু অঙ্গপ্রত্যঙ্গের চালিকা শক্তি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে প্রকাশ করার ক্ষমতা হারায় । দ্বিতীয় স্তরকে বলা হয়  বায়লজিকাল ডেথ। এই স্তরে মানুষের হৃৎপিণ্ডের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শরীরে  রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় ফলে অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের ক্রিয়া কর্ম সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে যায় । 


সে যাই হোক, আধুনিক জেনেটিজ তত্ত্ব না জানা সত্ত্বেও প্রাচীন ভারতের যুক্তিবাদী চার্বাকেরা সেই খ্রীষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে তাদের সময়কার অর্জিত জ্ঞানের সাহায্যে আত্মার অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছিলেন।  আত্মা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে করতে শেষ পর্যন্ত চার্বাকেরা ঈশ্বর-আত্মা-পরলোক-জাতিভেদ-জন্মান্তর সব কিছুকেই নাকচ করে দিয়েছিল। তারাই প্রথম বলেছিলেন বেদ একদল স্বার্থান্নেষী মানুষেরই রচিত।  জনমানুষের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া সেই সব স্বার্থান্নেষী ব্রাক্ষ্মণদেরকে ভন্ড, ধূর্ত, চোর, নিশাচর বলে অভিহিত করেছিলেন চার্বাকেরা. তারা বাতিল করে দিয়েছিলেন  আত্মার অস্তিত্ব। চার্বাকেরা একটি চমৎকার উপমা দিয়ে ব্যাপারটি বুঝিয়ে ছিলেন। বলেছিলেন, আঙ্গুর এবং মদ তৈরির অন্যান্য উপাদানগুলোতে আলাদা করে কোন মদশক্তি বা মাথাল হবার মত শক্তি নেই।  কিন্তু সেই উপকরণগুলোই এক ধরণের বিশেষ  প্রক্রিয়ায়র মাধ্যমে কোন পাত্রে মিলিত করার পরে এর একটি নতুন গুণ পাওয়া যাচ্ছে, যাকে আমরা বলছি মদ।  আত্মা বা চৈতন্যও তেমনি ।


 

পাকিস্তানঃ মোল্লাতন্ত্র বনাম সেনাতন্ত্র

 

পাকিস্তান সৃষ্টির দুবছরের মাথায় ১৯৪৯ সালে, লাহোরে কাদিয়ানি বিরোধী দাঙ্গা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। নেপথ্যে ছিলেন আবুল আলা মওদুদী।  এই মওদুদী ও তার দল পাকিস্তান সৃষ্টির বিরুদ্ধাচরণ করে জিন্নাহকে 'কাফির-এ-আজম' উপাদী দিয়েছিল। পাকিস্তান সৃষ্টির পর কোণঠাসা মওদুদী তাই কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণার দাবি তুলে দেশের রাজনীতিতে ফিরে আসতে চাইছিল। এই দাঙ্গা প্রথমে পাঞ্জাবে, পরে সিন্ধুতে  ছড়িয়ে পড়ে এবং চার বছর স্থায়ী হয়। এই দাঙ্গায় লাহোরের পরিস্থিতি এতটা জটিল হয়ে পড়ে যে, শেষ পর্যন্ত সেখানে ১৯৫৩ সালে সামরিক আইন জারি করতে হয়। সেই সময়, পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সে দেশের রাজনীতিতে প্রবেশ করে, আজও তারা পরোক্ষভাবে রাজনীতির মঞ্চ দখল করে রেখেছে। একইভাবে মোল্লাতন্ত্রও পাকিস্তানের রাজনীতির মঞ্চ ছেড়ে যায়নি। এসবের ফল দাঁড়িয়েছে এই,, ধর্মের নামে উগ্র সাম্প্রদায়িক হানাহানি ও রক্তপাত সেখানে এখন দৈনন্দিন ঘটনা।


প্রথম ভুলটি করেন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলি খান। তার পূর্বসূরি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর মতো তিনিও ছিলেন উদার গণতন্ত্রী। ধর্মকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছিলেন বটে, কিন্তু দেশটি ধর্মব্যবসায়ীদের কবলে চলে যাক, তা তিনিও চাননি। কিন্তু মওদুদী গংদের আন্দোলনের মুখে কোণঠাসা হয়ে পড়লে তিনি প্রথম আপোসটি করেন সংবিধান প্রশ্নে জামায়াতিদের ছাড় দিয়ে। এতে ধর্মকে নবগঠিত রাষ্ট্রটির ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্রের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। মওদুদীর দাবি ছিল, পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র হবে ‘শুদ্ধ ইসলামিক, শরিয়তি আইননির্ভর। কিন্তু পাকিস্তানের প্রথম পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা ছিলেন রাজনৈতিকভাবে পশ্চিমাঘেঁষা, ওয়েস্ট মিনস্টার ধাচের পার্লামেন্টারি ব্যবস্থার সমর্থক। কিন্তু তা সত্ত্বেও ধর্মবাদীদের ঠেকানোর বদলে তাদের সঙ্গে সমঝোতা করার সিদ্ধান্ত নিলেন তারা। শরিয়তবিরোধী আইন নির্ধারণের দায়িত্ব দেওয়া হয় পাঁচ সদস্যের একটি উলেমা বোর্ডকে।


পাকিস্তানের রাজনীতিকরা ক্ষমতায় টিকে থাকার সহজ পথ হিসেবে একজোট হয়ে ১৯৫৬ সালে গৃহীত শাসনতন্ত্রে পাকিস্তানকে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করে বসলেন। পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালে রাজনীতিকদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেন তারা অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ, এই যুক্তিতে। সে সময় তিনি যে শাসনতন্ত্র ঘোষণা করেন, তাতে পাকিস্তানের নামের আগে ইসলামি নামটি বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু আইয়ুবের মোল্লাতন্ত্র বিরোধিতা খুব বেশিদিন টিকে থাকেনি। ফলে পাকিস্তানের নামের আগে ওই ইসলামি নামটি আবার ফিরে এল। কারণ, ১৯৬৫-র নির্বাচনে বিরোধী দলের সম্মিলিত প্রার্থী ছিলেন জিন্নাহর ছোট বোন ফাতেমা জিন্নাহ । বিপদ টের পেয়ে আইয়ুব খান মোল্লাদের দিয়ে ফতোয়া ছাড়লেন যে, ফাতেমা জিন্নাহকে ভোট দেওয়া অনৈসলামিক হবে। কারণ ইসলামি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান মহিলা হতে পারেন না।  এবার আইয়ুব খানের বিজয়ের আসল ফায়দা নিল মোল্লারা।


এদিকে জুলফিকার আলী ভুট্টো সমাজতান্ত্রিক দাবি-দাওয়া রেসিফি বানিয়ে খাওয়ালেন জনগণকে। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার ছয় বছরের মাথায় মোল্লাদের বিরোধিতার মুখে, হাত বাড়ালেন সেই ধর্মের দিকে। প্রথমবারের মতো শরিয়াভিত্তিক কিছু আইন চালু করলেন তিনি। ১৯৭৭ সালে কাদিয়ানিদের ধর্মীয় সংখ্যালঘু  ঘোষণা করলেন তিনি। পরবর্তীতে জিয়াউল হক ক্ষ্মতায় এসে তাদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করলেন। তার ক্ষমতা দখলকে আইনসিদ্ধ করতে দেশে পুরো মাত্রায় শরিয়তি আইন চালু করেন। তার পক্ষে কথা বলার জন্য জিয়াউল হক এ সময় একটি 'ইসলামি পরিষদ' গঠন করেছিলেন। তার সংগে গাঁট বাঁধে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান। তাদের কথায় সরকারি চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয় কাদিয়ানিদের, মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং তাদের ওপর বিশেষ কর চালু করা হয়। ইসলামিকরণের সেই যে গাড়ি জিয়াউল হক  চালু করে দেয়, তার পরবর্তী সরকারপ্রধান বেনজির ভুট্টো, নওয়াজ শরিফ, ইমরান খান কারো পক্ষেই তার গতি রুদ্ধ করা সম্ভব হয়নি।


 

বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তান এগিয়েছে, না পিছিয়েছে?

পাকিস্তানের জাতীয় ব্যয়ের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ খরচ হয় সেনাবাহিনীর পেছনে, আর কৃষি থেকে শিল্প উৎপাদন ,সব খাতে সেনাবাহিনী শত শত ধরনের ব্যবসা আছে। এছাড়া বেসরকারি ব্যবসা-বাণিজ্যেও জড়িয়ে আছে সেনাবাহিনী। । তাই সেনাবাহিনীতে চাকরি পাওয়া সে দেশের তরুণদের কাছে স্বপ্নের মতো। ১৯৫৪ সালে জেনারেল আইয়ুব খান আর মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জা মিলে ফৌজি ফাউন্ডেশন তৈরির করে। বর্তমানে এই ফাউন্ডেশনের বাইরে আছে বিমান বাহিনীর শাহিন ফাউন্ডেশন, নৌ বাহিনীর বাহারিয়া ফাউন্ডেশন, আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট, ডিফেন্স হাউজিং অথোরিটি (ডিএইচএ)। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ৫০টিরও বেশি আলাদা আলাদা সংস্থার মালিক। সার, সিমেন্ট, কসমেটিকসের মতো বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যও তাদের দখলে। তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে জ্বালানি খাত, স্টিল তৈরির কারখানা; ফার্নিচার, ফার্মাসিউটিক্যালস, খাদ্যদ্রব্যসহ আরো অনেক খাতে রয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণ।


সামরিক বাহিনীর আছে নিজস্ব পাঁচটি ব্যাংক,। তাদের মধ্যে কেবল আসকার ব্যাংক আর ফৌজি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমেই সেনাবাহিনী প্রতিবছর ১৩ বিলিয়নের বেশি অর্থ উপার্জন করে।  আরো ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে,

 পাক সেনার অধীনে রয়েছে সে দেশের মোট ভূখণ্ডের ১৭ শতাংশ জমি। পাকিস্তানের কোনও মেজর জেনারেল অবসর গ্রহণ করলে তাঁকে সামরিক বাহিনীর তরফে উপহার হিসাবে ২৪০ একর চাষযোগ্য জমি দান করা হয়। সাধারণত সেনা আধিকারিকদের সন্তানেরা সাধারণত বিদেশে গিয়ে পড়াশোনা করেন। তারপর দেশে ফিরলে সেনা বাহিনীর অধীন কোনও সংস্থাতেই তাঁদের চাকরি দেওয়া হয়।

 বিভিন্ন সময়ে সরকার  নামমাত্র মূল্যে খাস জমি হস্তান্তর করে সেনা সংস্থাকে, সেনারা কখনো আবার স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে গড়ে তুলেছে নিজেদের এস্টেট। এরকম একবার করাচিতে  এক বিধবার সম্পত্তি দখলের মামলায় ডিফেন্স হাউজিং অথোরিটির কর্মকাণ্ডে বিরক্ত হয়ে পাকিস্তানের সাবেক প্রধান বিচারপতি বিদ্রূপের সুরে বলেছিলেন- আপনারা পুরো সাগর দখল করে নিন, সাগরে আমেরিকা পর্যন্ত আপনাদের দখল চালাতে থাকুন, এবং পুরো জায়গায় আপনাদের পতাকা লাগিয়ে দিন।


 

 

চট্টগ্রাম কক্সবাজার সডককে কেন আরকান রোড বলা হয়

 

শুরুতে রাখাইন, রোহিঙ্গা ও আরাকান এই ৩টি শব্দকে জানি। রাখাইন শব্দটি এসেছে প্রাচীন  পালি ভাষা থেকে, যার অর্থ রাক্ষসপুরি। এটা কেন রাক্ষসপুরী?কারণ এখানে আছে রোহাং পাহাড নামে বিশাল একটি পর্বতমালা, যা বার্মা থেকে যায়গাটি বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। এই রোহাং পাহাডের পাদদেশের অধিবাসীদের রোহিঙ্গা বলে ডাকা হয়।এই রাক্ষসপুরি বা রাখাইন রাজ্যটির আদি নাম হল আরাকান। এমন ইসলামী আরবী নাম কেন?  মুসলমানরা যখন যায়গাটি শাসন করে তখন নাম দেয় আরাকান। কারণ ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তিকে একত্রে বলা হয় আরকান।  পুরু চট্টগ্রাম অঞ্চল শুরু থেকেই এই আরাকান রাজ্যের অংশ ছিল। ১৪২৯ থেকে ১৭৮৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ বছর ধরে আরাকান  রাজ্যটি ছিল, মিয়ানমা্রের রাখাইন রাজ্য,  এবং বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ নিয়ে। আলাওল, দৌলত কাজী, মাগন ঠাকুর, আব্দুল হাকিমসহ অনেক যুগশ্রেষ্ঠ লেখক কবিই আরাকানের। তাঁরা আরাকানে বাংলা ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছেন।


 আরাকানি শাসনামলে চট্টগ্রামের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য ত্রিপুরা, কুমিল্লা, মীরসরাই, ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীতে আরাকানিরা বেশ কিছু মাটির কোট বা দুর্গ নির্মাণ করেন। সীতাকুন্ড ও সন্দ্বীপ নির্মাণ করেন কাঠের দুর্গ। ১৫৩১ সালে আরাকানের রাজা জেবুক শাহ পর্তুগিজ নৌসেনাদের সহায়তায় আরাকান নৌবাহিনী গঠন করেন। উদ্দেশ্য ছিল, মোগলদের থেকে আরাকানকে রক্ষা করা। তাই জেবুক শাহ তার নৌবাহিনীতে আরাকানের মুসলমানদের পরিবর্তে মগদের স্থান দেন। কিন্তু পরে এই মগরা হিংস্র জলদস্যুতে পরিণত হয়। এই ‘মগ জলদস্যুরা জলপথে বাঙলাদেশের ভোলা,, সন্দ্বীপ, বিক্রমপুর, সোনারগাঁ, বাকলা, এমনকি হুগলী পর্যন্ত লুণ্ঠন শুরু শুরু করে।


১৭৮৫ সালে বার্মার রাজা ভোধাপোয়া আরাকান আক্রমণ করে দখল করেন। সে সময় দুই লক্ষাধিক রাখাইনকে হত্যা করা হয়। বর্মি বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মগ-মুসলিম-নির্বিশেষে আরাকানের জনগণ রাখাইন অঞ্চল থেকে পালিয়ে এসে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে বসবাস শুরু করে।এই কারণে প্রায় দশ লাখ মগ ও বৌদ্ধ চট্টগ্রাম-কক্সবাজারে স্থায়ী বসত গড়ে। ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম আরাকানের  অংশ ছিল। সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনকালে চাটিগাঁও, বা চট্টগ্রাম মুঘলদের অধীনে আসে। এবং এ সময় মগ জলদস্যুদেরকে চট্টগ্রামের উপকূলে লুন্ঠন থেকে বিরত রাখেন সুবেদার শায়েস্তা খান। মগদের সর্বশেষ বড় পরাজয় হয় সন্দ্বীপের যুদ্ধে শায়েস্তা খানের হাতে। সন্দ্বীপের একটা ইউনিয়নের নাম মগধরা। এখানেই তিনি মগ রাখাইনদের পরাজিত করেছিলেন। বার্মিজরা আরাকানের রাখাইন অংশ দখল করেছে ১৭৮৪ সালে আর ১৮২৬ সালে ইংরেজরা  এখানে দখল নেয়। এখানে উল্লেখ্য যে, ইংরেজ ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স  রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা লোকজনের জন্য পালংকী নামক স্থানে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। যা ‘কক্স সাহেবের বাজার’ বা কক্সবাজার নামে পরিচিত। সুতরাং আরাকানের রাখাইন অংশে বর্মীরা ছিল মাত্র ৪২ বছর। অর্থাৎ ঐতিহাসিকভাবে আরাকান মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ডের অংশ ছিল না। তাই ভারত-পাকিস্থান স্বাধীন হবার সময়ে আরাকানের রাখাইন অংশ মিয়ানামার থেকে আলাদা হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হতে মত দেয় রাখাইন নেতৃত্ব। ১৯৪৬ সালে ‘আরাকান মুসলিম লীগ’ গঠন করে তারা। কিন্তু জিন্নাহর ঐতিহাসিক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে রাখাইন বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি। কাশ্মীরি স্বাধীনতাকামীদের আক্রমণে দিশেহারা ভারত যেমন কাশ্মীরীদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দেবে বলে জাতিসংঘে অঙ্গীকার করে কাশ্মীরকে ভারতভুক্তই রাখে, তেমনি বার্মাও রোহিঙ্গা জাতি ও আরাকানবাসীদেরকে ১৯৫৮ সালে গণভোট প্রদানের অঙ্গীকার দিয়ে তাদের শাসনাধীন রেখে দেয়। 



রাখাইন রোহিঙ্গাদের জীবন-যাপন


মংডো রাখাইন রাজ্যের উত্তরে অবস্থিত বড় শহর আর আকিয়াব শহরটি কালাদান নদীর মোহনায় অবস্থিত। বর্তমানে এটি উত্তর রাখাইনের প্রধান সমুদ্র বন্দর। আরাকানের পরিবহন ও যোগাযোগের জন্য নদী পথই প্রধান। সকল মৌসুমে গাড়ি চলাচলের উপযোগী মাত্র ২টি রাস্তা আছে। একটি আকিয়াব থেকে ইয়ানবিয়েন পর্যন্ত; যা মাত্র ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। অন্যটি মংভু থেকে বুচিদং পর্যন্ত যা ২৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত; কয়েকটি দুর্গম গিরিপথ রাখাইন ও বার্মার মধ্যে একমাত্র স্থল পথ; যা সর্বসাধারণের পক্ষে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। রাখাইনের মোট আয়তনের প্রায় ৭০% পাহাড় ও বনাঞ্চলসমৃদ্ধ। মোট জনসংখ্যা ৪০ লক্ষ, তন্মধ্যে ২০ লক্ষ মগ-বৌদ্ধ, ১৪ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমান, ৬   লক্ষ হিন্দু  খ্রিস্টান ও অন্যান্য।


রোহিঙ্গাদের ভুল

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মূলত ইসলাম ধর্মের অনুসারী। যেহেতু বার্মা সরকার তাদের পড়াশুনার সুযোগ দেয় না, তাই অনেকেই ইসলামী শিক্ষাকেই একমাত্র পড়াশুনার বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছে। দেশ ভাগ হওয়ার পর থেকে স্বাধীনতাকামীরা রাখাইনকে মিয়ানমার থেকে আলাদা করার সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে যায়। ওরাই এক সময় রাখাইনের পুর্বাঞ্চল শাসন করতে শুরু করে। এ সময় তাদের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর মুসলিম রাখাইনে বসত শুরু করে। প্রতিক্রিয়ায় রাখাইন অঞ্চলের শত শত বৌদ্ধ ভিক্ষু মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে। এরপরই মুজাহিদিনদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নেয় মিয়ানমার (বর্মি)আর্মি। নেতাদের অনেকেই মরেছে, কেউ পালিয়েছে। এসব ঘটেছে এক দশকের মধ্যেই।  লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা মুসলমান নির্যাতনের মুখে রাখাইন থেকে বিতাড়িত হয়েছে।  


  মায়ানমারের বর্মি সেনা

দেশটির সব রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসহ প্রাকৃতিক সম্পদ সেনা মালিকানাধীন । দেশটির সংবিধানে পর্যাপ্ত সংসদীয় আসন দেয়া আছে সেনাদের, যাতে তাদের পাশ কেটে শাসনগত কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে না পারে রাজনৈতিক দল। মিয়ানমারের শাসক জেনারেলরা লুটেপুটে খাচ্ছে দেশের সম্পদ। যেমন-গত বছর কাচিন প্রদেশের পান্না পাথর বিক্রি করে ৩১ বিলিয়ন ডলার আয় করেছেন জেনারেলরা। মজার বিষয় হল- কাচিন প্রদেশটি একদা স্বাধীন ছিল। গণভোট ছাড়াই তাদের মিয়ানমারের অঙ্গরাজ্যে পরিণত করা হয়েছিল ভারতের সিকিম দখলের মতো।


রোহিঙ্গারা কেন বর্মি শাসকদের চক্ষুশোল

১৯৬২ সালের আগে মিয়ানমার ছিল এশিয়ার সবচেয়ে ধনী দেশ। ফলে বার্মায় আসা ভারতীয়দের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। রেঙ্গুন নিউ ইয়র্ককেও অতিক্রম করে বিশ্বের বড় অভিবাসন বন্দর হিসেবে। মোট অভিবাসীদের সংখ্যা ছিল প্রায় ১.৩ কোটি (১৩ মিলিয়ন)। " তখন বার্মার রেঙ্গুন, আকিয়াব, বেসিন, প্যাথিন এবং মৌমেইনের মত অধিকাংশ বড় শহরগুলোতে ভারতীয় অভিবাসীরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। এতে করে ব্রিটিশ শাসনে বার্মিজরা অসহায়ত্ব বোধ করত এবং দাঙ্গা-হাঙ্গামার মাধ্যমে তারা অভিবাসীদের উপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে। ১৯৬২ সালে বর্মি সামরিক জান্তারা বিদেশীদের বাদ দিয়ে নিজেরা লুটেফুটে খেতে, সারা বিশ্ব থেকে নিজেদের দরজা বন্ধ করে দেয় এবং ফলে তারা হয়ে যায় এশিয়ার দরিদ্রতম একটি দেশ।

 



কারো সর্বনাশে কারো পৌষ মাস হয়।


পৃথিবীর সকল যুদ্ধে আমেরিকা কেন জড়িয়ে থাকে?


প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলেছিল চার বছরেরও বেশি সময় ধরে। এ যুদ্ধের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল ইউরোপ। ইউরোপের কৃষি এবং শিল্প-কারখানাগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর ফলে দেখা দেয় তীব্র খাদ্য সংকট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের। আর এই সুযোগটাই কাজে লাগায় অ্যামেরিকা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউরোপে তখন অ্যামেরিকা একচেটিয়াভাবে খাদ্য, অস্ত্র ও অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় জিনিস  রপ্তানি করতে থাকে। রপ্তানির পাশাপাশি অ্যামেরিকা তখন ঋণ দিয়েও লাভবান হচ্ছিল। অ্যামেরিকার কাছে স্বর্ণ বন্ধক রেখে ইউরোপ তখন প্রচুর পরিমাণ ঋণ সহায়তা নিতে থাকে। দখলদার ইউরোপীয় দেশগুলো সারা দুনিয়া থেকে যে স্বর্ণগুলো এনে নিজেদের দেশে জমা করেছিল, তা তখন অ্যামেরিকার কাছে গিয়ে জমা হয়। তখন ইউরোপের বাজারে পণ্য রপ্তানির জন্্‌ অ্যামেরিকাতে হাজার হাজার কল-কারখানা গড়ে উঠেছিল। সব মিলিয়ে অ্যামেরিকার অর্থনীতি এক লাফে ফুলে ফেঁপে উঠে। 


এই সময়টা হয়ে উঠে অ্যামেরিকার ইতিহাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধির  সময়। এ সময় অ্যামেরিকানরা দুই হাতে খরচ শুরু করে । ঘরে ঘরে বিলাসবহুল পণ্যের ছড়াছড়ি শুরু হয়। রেডিও, গাড়ি, রেফ্রিজারেটর এগুলো তখন অ্যামেরিকানদের কাছে মামুলি ব্যাপার হয়ে উঠে। অনেকেই তখন নতুন নতুন গাড়িও কি্নে। ব্যাংকগুলো খুব সহজ শর্তে ঋণ দিতে শুরু করে। এই এক দশকের মধ্যে অ্যামেরিকাতে প্রায় ২৫০০০ নতুন ব্যাংক গড়ে উঠেছিল। ফলে অ্যামেরিকায় মোট ব্যাংকের সংখ্যা দাডায় প্রায় ২৯ হাজা্রে। শুধুমাত্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কল্যাণে ইউরোপের বাজারে রপ্তানি করে এভাবেই আমেরিকার সমৃদ্ধ হয়ে উঠে। 


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগ দেওয়ার পর, চার বছরে ৩১ লক্ষ জাপানী সৈন্য ও সাধারণ জনগণ মারা গিয়েছে, আহত এবং পঙ্গু হয়েছে আরো কয়েক লক্ষ মানুষ, ধসে পড়েছে জাপানের অর্থনীতি, মজুদ করে রাখা সম্পদ তলানিতে ঠেকেছে, কারখানাগুলোও বন্ধ হয়ে রয়েছে।  আমেরিকা জাপানের সামরিক শক্তি কমিয়ে নির্দিষ্ট করে দিল, এইসময় আমেরিকা  আর সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হওয়ায় মার্কিনীরা আশঙ্কা করেছিলো গরীব অর্থনীতির দেশ জাপান সমাজতান্ত্রিক দলে ভিড়তে পারে। তখন তারা  জাপানকে অর্থনৈতিক সহায়তা হিসেবে ২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দান করলো। জাপানিরা কয়লা, স্টিল, বিদ্যুৎ উৎপাদন আর রাসায়নিক শিল্পে বড় ধরনের বিনিয়োগ করলো। যুক্তরাষ্ট্রের তখন এশিয়ায় সামরিক ঘাঁটি তৈরি করার জন্য জায়গা প্রয়োজন এবং জাপানে সামরিক ঘাঁটি তৈরি হলো।  ঠিক এমন সময়ই কোরিয়া যুদ্ধ শুরু হলো। কোরিয়ান যুদ্ধে চাহিদা তৈরি হওয়ায় জাপানের পুরানো শিল্পকারখানাগুলো আবার রূপ নিলো সামরিক কারখানায়। কোরিয়ান যুদ্ধের জন্য সামরিক অস্ত্র তৈরি এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে জাপানের অর্থনীতি আবার চাঙ্গা হয়ে উঠলো । অর্থাৎ কোরিয়া যুদ্ধ জাপানের জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদ হয়ে এলো।  ১৯৮০ সালের মধ্যেই জাপানের বেকারত্বের হার নেমে এলো ৫%-এর নিচে।

 

এরিমধ্যে ভিয়েতনামের যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ১০ বছর এই যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধটাও আমেরিকা ও জাপানের মত দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য আশীর্বাদ হয়ে  আসলো। এই যুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার যুদ্ধরত ভাড়াটে সেনারা   বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দেশে প্রেরণ করে, যা এই দেশের আয় বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। সেনাদের প্রেরিত অর্থের দ্বারা দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জাতীয় আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় পাঁচ গুন। আবার ১৯৬৩ সালে পূর্ব জার্মানির সাথে দক্ষিণ কোরিয়া একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। এই চুক্তির ফলে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে অসংখ্য নারী এবং পুরুষ পূর্ব জার্মানিতে গিয়েছিলেন নার্স এবং খনি শ্রমিক হিসেবে। তারাও টাকা পাঠাতে থাকে। ১৯৭০ সালের আগেই দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলি বাইরের দেশে ব্যবসার ছড়ানো্র দিকে খুব বেশি নজর দেয়। তারা তৈরি পোষাক, জুতো ইত্যাদি রফতানির পাশাপাশি ইলেকট্রোনিক্স সামগ্রী, যেমন স্যামসাং নিয়ে আসে টেলিভিশন, রেডিও এবং ওয়াশিং মেশিনের মতো কিছু প্রোডাক্ট। ১৯৭৫ সালে তাদের Hyundai কোম্পানিগাড়ি নির্মাণ শুরু করে। আন্তর্জাতিক বাজারে এই পণ্যগুলির বিশাল চাহিদা তৈরি হওয়ার ফলে বিনিয়োগ  বাড়তে থাকে।

 

সারমর্ম হচ্ছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লাভবান হয় আমেরিকা, কোরিয়ার যুদ্ধে লাভবান হয় জাপান আর ভিয়েতনামের যুদ্ধে লাভবান হয় দক্ষিণ কোরিয়া।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অস্ত্রের ব্যবসা করে আমেরিকা ফুলে ফেপে উঠতে থাকে। তারপর থেকে তাদের পুঁজিপতিরা এই খাতেই বেশি বিনিয়োগ করে চলেছে । ১টাকার পুজিতে হাজার টাকা লাভ। ফলে মার্কিন অস্ত্র ব্যবসায়ী পুজিপতিরা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার রাজনীতিকদের চাঁদা দিতে থাকে, যাতে তারা তাঁদের অনুকূলে আইনকানুন তৈরি করতে পারে। ঠিক এই কারণেই, বন্দুক বিক্রি বন্ধের আইন আমেরিকা সরকার পাস করতে পারে না। এই অস্ত্র ব্যবসায়ীরাই পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির প্রণয়ণ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে যত যুদ্ধ হয়েছে, তার সবগুলোতে কোন না কোনভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট জড়িত।


২০২২ সালের হিসাব অনুযায়ী, ৮০টি দেশে যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫০ সামরিক ঘাঁটি এবং ১৫৯ দেশে মোট ১ লাখ ৭৩ হাজার সেনা মোতায়েন আছে। এতে যে বিপুল পরিমাণ মানববিধ্বংসী অস্ত্রের ব্যবহার হয়, তার জোগানদাতা  এই অস্ত্র প্রস্তুতকারী শিল্পমালিকেরা। বিশ্বের ১০৩টি দেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।  যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ৪২টি প্রতিষ্ঠান বিশ্বের মোট অস্ত্র-বাণিজ্যের ৫১ শতাংশ আয় করে। সুতারাং দেশটির অর্থনীতির ভিত্তি যখন অস্ত্রের ব্যবসা, তখন পৃথিবীব্যাপী যুদ্ধ লাগাতে তারা তো সস্ক্রিয়  থাকবেই। দেশে দেশে যুদ্ধ না হলে তো আর অস্ত্র কেনার প্রয়োজন পড়ে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ না বাধলে আজকে ন্যাটোর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠত। কিন্তু এখন ন্যাটোতে কে কার আগে যোগ দেবেদেশ রক্ষার জন্য কে কত ধরনের অস্ত্র কিনবে, প্রতিযোগিতা হচ্ছে । কারণ একটাইকে কখন কাকে আক্রমণ করে বশে।   এখন প্রত্যেকেই একে অপরের শত্রু।   আর এ অস্ত্রের কারণে প্রতিনিয়ত হত্যা  আর পঙ্গুত্ব বরণ করছে হাজার হাজার মানুষ, অসহায় এই মানুষের কান্না শোনার কেউ নেই। 




সরকার কি ইচ্ছেমত টাকা ছাপিয়ে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখ্তে পারেন

 

Money বা ‘টাকা’কে সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। ‘কমোডিটি মানি’ (Commodity Money), ‘রিপ্রেজেন্টেটিভ মানি’ (Representative Money) এবং ফিয়াট মানি (Fiat Money)। ‘কমোডিটি’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে  টাকাটা নিজেই একটা পণ্য।  অর্থাৎটাকা হিসেবে ছাড়াও অন্যভাবে এটি ব্যবহার করা যায় । যেমন:  আগে্র আমলে  স্বর্ণ ও রৌপ্য  মূদ্রা ছিল। এই স্বর্ণমুদ্রা বা রৌপ্যমুদ্রাকে গলিয়ে ফেলা হলেও এর মূল্য পাওয়া যায়। এজন্য এগুলো হলো কমোডিটি মানি। মুঘল সাম্রাজ্যেও স্বর্ণমুদ্রা ব্যবহার হতো। কিন্তু পরবর্তীতে ইউরোপে কাগুজে মুদ্রার প্রচলন ঘটে এবং ক্রমশ তা বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। কাগুজে মুদ্রার কোনো অন্তর্নিহিত মূল্য নেই। কিন্তু এই কাগুজে মুদ্রাগুলো স্বর্ণ ও রূপার সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল। অর্থাৎ, এই ব্যবস্থায় স্বর্ণের মূল্য নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়, এবং এইমূল্যে যেকোনো সময় কাগুজে মুদ্রাটি দিয়ে  ঐ নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ পাওয়া যেত । এই ‘অর্থ’কে বলা হয় ‘রিপ্রেজেন্টেটিভ মানি।  


ঊনবিংশ শতাব্দীতে ব্রিটেন ছিল বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি এবং সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য। তখন তাদের স্বর্ণের মজুদ ছিল সবচেয়ে বেশি, এবং লন্ডন ছিল বিশ্ব ব্যাংকিংয়ের কেন্দ্র। এজন্য ব্রিটিশ মুদ্রা ‘পাউন্ড স্টার্লিং’ কে স্বর্ণের   ‘রিপ্রেজেন্টেটিভ মানি  হিসেবে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু  প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে এক ধ্বংসাত্মক সংগ্রামে লিপ্ত হয়। যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহের জন্য রাষ্ট্রগুলো তাদের স্বর্ণ মজুদের ভিত্তিতে যে পরিমাণ মুদ্রা ছাপানো যেত, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে কাগুজে মুদ্রা ছাপাতে শুরু করে।  অন্যদিকে,  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে বিরত ্থাকে, তারা ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর নিকট স্বর্ণের বিনিময়ে সামরিক সরঞ্জাম ও রসদপত্র রপ্তানি করে নিজেদের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে তোলে।

 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষে ব্রিটেনসহ অধিকাংশ রাষ্ট্র ‘স্বর্ণমান’ পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয় এবং মুদ্রার মানকে বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়,স্বর্ণের দামের সাথে মুদ্রার সুনির্দিষ্ট মূল্য না থাকায় সেগুলোকে বলা হয় ‘ফিয়াট মানি’। অর্থাৎ, এখন আর স্বর্ণের মূল্য নির্দিষ্ট রইল না, বরং সেটি চাহিদা ও যোগানের ওপর দাম কম-বেশি হতে থাকল। কিন্তু মার্কিন ডলার যেহেতু তখনো স্বর্ণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল, তাই ডলারকে বিশ্বের অন্যন্য দেশ বেশি নির্ভর‍যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে এবং এটিকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অধিক হারে ব্যবহার করতে শুরু করে।   


তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার রপ্তানিকৃত দ্রব্যাদির বিনিময়ে স্বর্ণ ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়, এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণের মজুদ বাড়তে থাকে, আর অন্য রাষ্ট্রগুলোর স্বর্ণের মজুদ কমতে থাকে। এভাবে ১৯৪৭ সালে বিশ্বের মোট মজুদকৃত স্বর্ণের ৭০% মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চলে যায়। কিন্তু তারা আমদানী করার সময় স্বর্ণের ‘রিপ্রেজেন্টেটিভ মানি হিসেবে নিজেদের ডলারকে দিতে থাকে। ফলে অনেক রাষ্ট্র তাদের নিজস্ব ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ’ও ডলার হয়ে উঠে। মার্কিন ডলার পরিণত হতে থাকে বিশ্ব বাণিজ্যের মাধ্যমে। কিন্তু  ১৯৫০ ও ১৯৬০–এর দশকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো এবং জাপান দুর্দশা কাটিয়ে উঠে তাদের মজুদকৃত ডলারের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে স্বর্ণ কিনতে শুরু করে। এর ফলে মার্কিন স্বর্ণ মজুদ ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে এবং মার্কিন ডলারের সঙ্গে স্বর্ণের সংযোগ বজায় রাখা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠতে থাকে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র তখন নড়েচড়ে বসে। 

 

১৯৭১ সালে মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন ঘোষণা করেন যে, এখন থেকে আর মার্কিন ডলারের সঙ্গে স্বর্ণের কোনো সংযোগ থাকবে না। অর্থাৎ, এখন আর রাষ্ট্রগুলো চাইলেই নির্দিষ্ট মূল্যে মার্কিন ডলারের বিনিময়ে স্বর্ণ কিনতে পারবে না। ফলে মার্কিন ডলারও অন্যান্য রাষ্ট্রের মুদ্রাগুলোর মতো ‘ফিয়াট মানি’তে পরিণত হয়। এতে করে কিছু সময়ের জন্য ডলার মান কমে গেলেও মার্কিনদের সামনে আরেকটা সুযোগ এসে হাজির হয়। ১৯৭৩ সালে সৌদি আরবের সাথে আমেরিকা একটি গোপন চুক্তি করে। সেই চুক্তিতে ঠিক হয় সৌদি আরব এখন থেকে কেবল মাত্র অ্যামেরিকান ডলারেই তাদের তেল বিক্রি করবে এবং এর বিনিময়ে অ্যামেরিকা সৌদিকে সামরিক নিরাপত্তা দিবে। ১৯৭৫ সালে অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী রাষ্টগুলোও একই নীতি অনুসরণ করে। অর্থাৎ তেলে বিক্রি হবে কেবল মার্কিন ডলারে। এভাবে মূলত সৌদি আরবের সহায়তায় ডলার হয়ে উঠে পেট্রোডলার। এবং এভাবেই ধীরে ধীরে সমগ্র বিশ্বেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে ডলারের আধিপত্য সৃষ্টি হয়। ফলে এখন ফেডারেল রিজার্ভ চাইলেই ইচ্ছেমত ডলার ছাপতে পারছে। আবার সেই টাকা বিশ্বের সব দেশের মানুষই গ্রহণ করছে। তবে অনিয়ন্ত্রিত ডলার ছাপার কারনে দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি চলতেই থাকে।  এজন্য  আমেরিকান সরকার  ‘কেইনসিয়ান নীতি’ অনুসরণ করে। 


‘কেইনসিয়ান নীতি’ কি চলুন জেনে নিই।  মন্দা থেকে বাচতে একদল অর্থনীতিবিদ আধুনিক অর্থনীতির একটি ফরমূলা তৈরি করেন। যা “অস্ট্রিয়ান স্কুল” নামে পরিচিত ছিল। তারা মনে করেন- দেশের অর্থনীতির উত্থানের সময়টা খুব জটিল। এই সময় সরকারকে খুব হিসাব করে সিদ্ধান্তগুলি নিতে হয়। বেহিসাবী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে মন্দা তৈরি হয়। তাই তারা অর্থনীতিতে কৃত্রিম উত্থান রোধ করার দিকেই বেশি নজর দিতে বলেন। এই অস্ট্রিয়ান স্কুলের অর্থনীতিবিদদের ঠিক বিপরীত চিন্তা করেন “কেইনসিয়ান স্কুলের” অর্থনীতিবিদরা। ্তারা মনে করেন দেশের অর্থনীতিকে সবসময় চাঙ্গা রাখতে হবে। আর এই চাঙ্গা রাখার জন্য সরকারের নৈতিক-অনৈতিক যা যা করা দরকার সরকার ্সবই করবে। দরকার হলে সরকার সহজ শর্তে ঋণ দেবে, সুদের হার কমিয়ে দেবে, কর মওকুফ করবে, ব্যাংক বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বড় অংকের প্রণোদনাও দিবে। কেইনসিয়ানদের নজর যেখানে ছিল অর্থনৈতিক পতনকে আটকে দেওয়ার দিকে, সেখানে অস্ট্রিয়ান স্কুলের” অর্থনীতিবিদরা কৃত্রিম অর্থনৈতিক উত্থান রোধ করার পক্ষে।


অ্যামেরিকার সরকার কেইনসিয়ানদের নীতি অনুসরণ করে। কারণ এই নীতির ফলে সরকার যেহেতু নিজের ইচ্ছেমত টাকার সরবরাহ বৃদ্ধি করতে পারে, তাই কর বৃদ্ধি না করেও দেশের উন্নয়ন করা যায়। জনগণকে সহজ শর্তে এবং কম সুদে ঋণ দেওয়া যায়। এতে জনগণও খুশি হয়। কিন্তু অস্ট্রিয়ান স্কুলের অর্থনীতিবিদরা বলেন এভাবে কৃত্রিম উত্থান ঘটানো দীর্ঘমেয়াদে একটা দেশের অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ ব্যাপার হবে। এতে দেশটির অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। 


কেইনসিয়ানদের নীতি অনুসরণ করে ইচ্ছেমত টাকা ছাপিয়ে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করে জিম্বাবুয়ে । এতে ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি জিম্বাবুয়ের অর্থনীতি প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। বাজারে যেতে হয় টাকার বস্তা কাধে নিয়ে। সেখানে এই ভয়াবহ অবস্থা এখনও ঠিক হয়নি। অথচ অ্যামেরিকা বছরের পর বছর ইচ্ছামতো ডলার ছাপছে কিন্তু তাদের অর্থনীতি এখনও টিকে আছে খুব ভালোভাবেই। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব? আসলে অ্যামেরিকার এমন অগ্রগতি ধরে রাখার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে আমেরিকার ডলার-এর রিজার্ভ স্ট্যাটাস। অ্যামেরিকান ডলার তার রিজার্ভ স্ট্যাটাস হারালে পতন অনিবার্য। ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই যে, কোনো বিশেষ ব্যবস্থাই চিরকাল স্থায়ী হয় না। ইতোমধ্যে ডলারের আধিপত্য রুখে দেওয়ার জন্য চীন, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, ইরান, ভারতসহ অনেক দেশ চেষ্টা চালাচ্ছে। সমস্যা হলো ডলারের বিকল্প রাতারাতি তৈরি কঠিন। ডলারের বিকল্প মুদ্রা খুঁজতে গিয়ে ব্রিকস সদস্য দেশগুলো স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহারের দিকেই হাঁটছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ডলারের বিক্লপ হিসেবে সোনা কেনার পরিমাণ বাড়াচ্ছে। ফলে বর্তমানে এক ধরনের ত্রিমুখী মুদ্রাব্যবস্থা গড়ে উঠছে। হয়তো আগামী দিনে ডলারের পাশাপাশি ইউরো ও ইউয়ান প্রায় সমান জায়গা চলে আসতে পারে।


নকার আপার্স

যখন এলার্ম ঘড়ি আবিস্কার হয়নি কিংবা সাধারণ মানুষের কেনার সাধ্য ছিল না, তখন সাধারণ খেটে খাওয়া অফিস কিংবা কলকারখানায় কাজ করা লোকদের সময় মতো ঘুম ভাঙাত কে? তাদের ঘুম থেকে তুলে দিত "নকার আপার্স"রা। এরা ছিল ভাড়া করা জ্যান্ত এলার্ম । ঠক ঠক ঠক, উঠে পড়ো সাহেব, ভোর হয়ে গেছে... এটাই ছিল তাদের পেশা। ঊনবিংশ শতকে ও বিংশ শতকের প্রথম দিকে ইংল্যান্ডে আর আয়ারল্যান্ডে এদের দেখা যেত। শিল্প বিপ্লবের পর যখন কলকারখানা তৈরি হল তখন মানুষেরও সকাল সকাল কাজে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ল। ফলে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠতে হত। ইংল্যান্ডের ঠান্ডা আবহাওয়ায় সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনির পর খুব ভোরে কম্বলের তলায় সহজে ঘুম ভাঙার কথা নয় কিংবা ভাঙতও না। কাজে যেতে দেরি হয়ে যেত ফলে মাইনে কাটা যেত কিংবা চাকরিও চলে যেত। তখনই সৃষ্টি হল নকার আপার্স পেশার। এদের বেশি দেখা যেত উত্তর ইংল্যান্ডে শিল্পাঞ্চলে যেখানে মানুষ কলকারখানায় শিফটে কাজ করত। সাধারণতঃ বয়স্ক লোকজন, ভারী কাজের ক্ষমতা নেই কিন্তু রোজগারের দরকার এমন মানুষ। ভোর হলেই এরা লোকজনের ঘুম ভাঙাতে বেরিয়ে পড়ত। হাতে থাকত লগির মতো লম্বা লাঠি বা বাঁশির মতো একটা পাইপ বা নরম হাতুড়ি। তখন বেশিরভাগ লোক দোতলায় ঘুমাত তাই এরা সেই লম্বা লাঠি দিয়ে সাহেবদের শোবার ঘরের জানলায় ঠক ঠক করে ৩/৪ বার আওয়াজ করত।

 

আট কোটি বছরের লড়াই

 

মঙ্গোলিয়ার আজ যেখানে গোবি মরুভূমি আট কোটি বছর আগেও সেখানে ছিল মরুভূমি। এমন দীর্ঘকালীন স্থিতিশীল আবহাওয়া খুবই দুর্লভ। মঙ্গোলিয়ার গোবি মরুভূমির জাদোচতা হলো এমন একটি অঞ্চল যা জীবাশ্মের খনি বিশেষ। অসংখ্য জীবাশ্ম উদ্ধার হয়েছে এই ভূমিরূপ থেকে। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭১ সাল অবধি কয়েকজন প্রত্নজীববিদ ডঃ টমাজ জার্জিকিজের নেতৃত্বে এই গোবি মরুভূমিতে জীবাশ্মের সন্ধানে  অভিযান করেন। মোটামুটি ২ফুট উচ্চতার তৃণভোজী প্রোটোসেরাটপ আর  প্রায় ৬ফুট উচ্চতার মাংসাশী ভেলোসিরাপটর ছিলো এই অঞ্চলের দুই প্রধান ডাইনোসর প্রজাতি। বিভিন্ন ডাইনোসর সংক্রান্ত সিনেমায় এই ভেলোসিরাপটরকে দেখানো হয়।


যাইহোক গোবি মরুভূমির জাদোচতা (Djadochta) অঞ্চলে অনুসন্ধান চলাকালীন হঠাৎ একটি চাপা ৮-১০ কোটি বছরের পুরাতন বেলেপাথরে জীবাশ্মের অংশ লক্ষ্য করেন প্রত্নজীববিজ্ঞানীর দলটি। যথাযথ প্রক্রিয়ায় জীবাশ্মটি উদ্ধার করার পরে নিজেরাই আশ্চর্য হয়ে যান, কারন এটা ছিল তাঁদের দেখা অন্যতম সেরা জীবাশ্ম। কি ছিলো জীবাশ্মটিতে? ছিল যুদ্ধরত একটি প্রোটোসেরাটপ ও ভেলোসিরাপটরের যুগ্ম জীবাশ্ম।

একটি ভেলোসিরাপটর নীচে চেপে ধরেছে তুলনামূলক ছোটো প্রোটোসেরাটপকে আর প্রোটোসেরাটপটা আত্মরক্ষার জন্য ভেলোসিরাপটরের সামনের ডান পা কামড়ে ধরে আছে। জীবাশ্মটা এক্কেবারে অবিকৃত অবস্থায় আছে, বলতে গেলে প্রাণী দুটির একটি হাড়ও নষ্ট হয়নি।

ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক, কারন পৃথিবীতে প্রাণী সৃষ্টির প্রথম থেকেই খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। খাদক প্রাণীর আক্রমণ আর খাদ্য প্রাণীর আত্মরক্ষা কৌশলের বিবর্তন ঘটেছে নিরন্তর। কিন্তু যুদ্ধরত অবস্থায় দুটি সুস্থ প্রাণী কিভাবে একসাথে হঠাৎ মারা যেতে পারে! এবং সেই মৃত্যু এতটাই দ্রুত যে সামান্য নড়াচড়া করার সুযোগটাও পায়নি দুই যুদ্ধরত ডাইনোসর।


৮ কোটি বছর আগের পরিবেশ ও আবহাওয়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল বিশেষজ্ঞরা নানান ধরনের সম্ভবনার কথা তুলে ধরেন। আজ ৫২ বছর পরেও নিশ্চিত কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তবে যে মতটা বর্তমানে প্রায় সর্বজন স্বীকৃত তা হলো মরুঝড়ের কারনে মৃত্যু। ধারনা করা হয় প্রাণীদুটি কোনো বালিয়াড়ির ঢালে যুদ্ধ করছিলো। হঠাৎই মরুঝড়ের কারনে বিরাট সেই বালিয়াড়ি ধ্বসে যায় এবং চাপা পড়ে যায় দুজনে। হাজার হজার টন বালির চাপে তৎক্ষণাৎ মৃত্যু হয় তাদের তার অতটা চাপ থাকায় যেটুকু সময় বেঁচেছিল  তখন তারা নড়তেও পারেনি। নরম বালির তলায় চাপা পড়ায় হাড়গোড় অবিকৃতভাবে রয়ে গেছে। অপর একটি বহুজন স্বীকৃত মত হলো ভেলোসিরাপটরের আক্রমণে মৃত্যু হয় প্রোটোসেরাটপটির। জীবনের অন্তিম মুহূর্তে সে কামড়ে ধরে আক্রমণকারীর পা এবং পড়ে যায়। আকারে ছোটো হলেও গাট্টাগোট্টা ভারী প্রোটোসেরাটপটি গায়ের ওপর পড়ায় তার চাপে মৃত্যু হয় ভেলোসিরাপটরেরও। এরপর কালক্রমে বালির তলায় চাপা পড়ে যায় দুটি মৃতদেহ।

বর্তমানে ২০০০ সাল থেকে এই যুগ্ম জীবাশ্মটি 'আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি'তে সংরক্ষিত ও প্রদর্শিত আছে। এটি এখন মঙ্গোলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদের মধ্যে পরিগণিত হয়।


=========


”এক মিনিট আগে যে ব্যক্তিটি মারা গেলেন, তিনিও ভাবতেন মৃত্যু অনেক দূরে! 

একজন ধার্মীক ব্যাক্তি একজন শিক্ষিত অফিসারের দুয়ারে এসে আমাকে “কুপথ” থেকে “সুপথে” নিতে চাইলেন। অফিসার তাকে প্রশ্ন করলেন, আপনি যে পথ আমাকে দেখাতে চাইছেন; তা-’কি আপনার সুচিন্তিত নির্বাচিত পথ অথবা অন্য কারও নির্দেশিত পথ?

আপনার পথ যদি অন্য কেউ বেঁধে দিয়ে থাকে, আপনি অবশ্যই পথহারা। আপনি আমাকে কি পথ দেখাবেন? যে ব্যাক্তি নিজের পথ নিজে বেছে নিতে পারে না, সে বড় দুর্ভাগা। মানুষকে জ্ঞানের চোখ দিয়ে বিচার করুন। তার যেটুকু ভালো তাই নেবে্ন আর অনুকরণ করবেন আর বাকিটুকু ফেলে দিবেন।  নিজের মধ্যে থাকা ভালো গুণগুলি খুঁজে বের করুন; তা অন্যকে দেবার চেষ্টা করুন।  



ডিকশনারি.কম

ডিকশনারি.কম এর টুইটে ‘বছরের সেরা শব্দ’ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে ‘মিস-ইনফরমেশন বা ‘ভুল তথ্য’ শব্দটি।

টুইটে তারা আরও জানায়, ‘মিসইনফরমেশন’ ও ‘ডিসইনফরমেশন’ শব্দ দুটি পরস্পরের পরিপূরক নয়। এর মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। 

‘ডিসইনফরমেশন’ শব্দের অর্থ ‘নির্বিচারে ভুল তথ্য ছড়ানো, সত্যকে দূষিত করা, প্রোপাগান্ডা’। অন্যদিকে ‘মিসইনফরমেশন’ শব্দের অর্থ ‘ইচ্ছেকৃতভাবে, উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো।’

যখন কোন ব্যক্তি ‘ডিসইনফরমেশন’ দেখে বিশ্বাস করে এবং এটি শেয়ার করে তখনই সেটি ‘মিসইনফরমেশন’ বলে গণ্য হয়।

ডিকশনারি.কম এ আরও নির্বাচিত তিনটি রানার আপ শব্দ হল রিপ্রেজেনন্টেশন (প্রতিনিধিত্ব), সেলফ মেইড (স্বনির্মিত) এবং ব্ল্যাকলাশ (নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া)।

 


বাংলার প্রথম এবং একমাত্র নারী নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী


নবাব ফয়জুন্নেসার বাড়ি পশ্চিমগা,লাকসাম,কুমিল্লা। অনেকের মনে প্রশ্ন মহিলা নবাব? জ্বি তিনিই একমাত্র বাংলার নারী নবাব এবং প্রথম নারী নবাব।

নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী কেবল প্রথম নারী নবাব হিসেবেই নন, নারী শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং জনহিতকর কাজের জন্য ইতিহাসে পরিচিত হয়ে আছেন।

এর বাইরে তিনি সাহিত্যচর্চা করতেন। মুসলমান নারীদের লেখা প্রথম বাংলা সাহিত্যকর্ম 'রূপজালাল' এর লেখক ছিলেন নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরী।

বাংলাদেশের সরকার ২০০৪ সালে নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীকে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করে।

গবেষক এবং তাকে নিয়ে লেখা বইপত্রে তাকে একজন দৃঢ়চেতা নারী এবং প্রজা হিতৈষী জমিদার হিসেবে দেখা হয়েছে। শাসক হিসেবে তিনি দক্ষ ছিলেন, তার সময়ে স্থানীয়ভাবে কোন দাঙ্গা বা লোকসানের খবর শোনা যায় না।

১৮৩৪ সালে কুমিল্লার হোমনাবাদ পরগনা যা এখন লাকসাম উপজেলা, তার পশ্চিমগাঁওয়ে জন্ম গ্রহণ করেন।তিনি শিক্ষিত ছিলেন, আরবি, ফার্সি, সংস্কৃত এবং বাংলাসহ কয়েকটি ভাষা লিখতে, পড়তে এবং বলতে পারতেন।


নওয়াব উপাধি পাওয়া

নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী কবে থেকে জমিদারির দায়িত্ব নেন তা নিয়ে কিছুটা ভিন্নমত পাওয়া যায়।তবে বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়া বলছে, ১৮৮৩ সালে তিনি জমিদারি শুরু করেন। যদিও গবেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, ১৮৭০ সালের পর থেকেই ফয়জুন্নেসা জমিদারি দেখাশোনার কাজটি শুরু করেন। তার নবাব উপাধি পাওয়ার পেছনে একটি গল্প রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আরিফা সুলতানা বিবিসিকে বলেছেন, ১৮৮৯ সালে রানি ভিক্টোরিয়া তাকে নবাব উপাধি প্রদান করেন, কিন্তু তার আগে দুইবার ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী তাকে দেয়া ব্রিটিশ সরকারের 'বেগম' উপাধি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

বাংলাপিডিয়ায় বলা হয়েছে, "ফয়জুন্নেসার জনহিতৈষণার পুরস্কারস্বরূপ মহারানী ভিক্টোরিয়া ১৮৮৯ সালে তাঁকে 'নবাব' উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনিই বাংলার প্রথম মহিলা যিনি এই উপাধি লাভ করেন।"


রওশন আরা বেগমের লেখা 'নবাব ফয়জুন্নেসা ও পূর্ববঙ্গের মুসলিম সমাজ' নামে বইয়ে বলা হয়েছে, ওই সময় ত্রিপুরার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন মি. ডগলাস। স্থানীয় উন্নয়ন কাজে সরকারি অর্থ আসতে দেরি হওয়ায় তিনি স্থানীয় ১০জন জমিদারের কাছে ঋণ হিসাবে ১০ হাজার টাকা করে এক লাখ টাকা চেয়েছিলেন।কিন্তু স্বল্প সুদে কেউই যখন তাকে ঋণ দেয়নি, সেসময় ফয়জুন্নেসা চৌধুরী মি. ডগলাসকে এক লাখ টাকা দান করেন।তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওই অর্থ ফেরত দিতে হবে না।


বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত 'নবাব ফয়জুন্নেসা ও পূর্ববঙ্গের মুসলিম সমাজ' বইটিতে বলা হয়েছে, ফয়জুন্নেসার এই অবদানের কথা ম্যাজিস্ট্রেট ইংল্যান্ডে রানি ভিক্টোরিয়াকে লেখেন।এরপর জনহিতৈষী কাজের জন্য রানি ভিক্টোরিয়া জমিদার ফয়জুন্নেসাকে 'বেগম' উপাধি দেন।কিন্তু ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী দুইবার সেই উপাধি প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি ব্রিটিশ সরকারকে জানিয়েছিলেন, 'তার প্রজাদের কাছে এমনিতেই তিনি বেগম হিসেবে পরিচিত, সুতরাং নতুন করে ওই উপাধির প্রয়োজন নেই।'


এরপর রানি ভিক্টোরিয়ার মনোনীত এক প্রতিনিধিদল এসে অনুসন্ধান করে রিপোর্ট পাঠায় ইংল্যান্ডে। তার ওপর ভিত্তি করে ১৮৮৯ সালে রানি ভিক্টোরিয়া ফয়জুন্নেসাকে 'নওয়াব' উপাধি দেন।

কথিত আছে আড়ম্বরপূর্ণ এক সরকারিভাবে আয়োজনের মধ্য দিয়ে সেই উপাধি দেয়া হয়েছিল। অভিষেক অনুষ্ঠানে তাকে হীরাখচিত একটি পদক, রেশমি চাদর এবং সার্টিফিকেট দেয়া হয়।


নারী শিক্ষায় নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী

বাংলাপিডিয়া বলছে, ১৮৭৩ সালে তিনি নারীশিক্ষা প্রসারে প্রথম কুমিল্লায় একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন।এটি উপমহাদেশে বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত মেয়েদের প্রাচীনতম স্কুলগুলির অন্যতম, এমনকি বাংলায় নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মের আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই স্কুল। বেগম রোকেয়ার জন্ম ১৮৮০ সালে।পরবর্তীতে ওই বিদ্যালয়টি কলেজে রূপান্তরিত হয়।ওই স্কুলটি ছাড়াও হোমনাবাদ এবং লাকসামের বিভিন্ন এলাকায় তিনি স্কুল ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার জমিদারির অন্তর্ভুক্ত ছিল ১৪টি মৌজা, তার প্রত্যেকটিতে একটি করে মোট ১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেছিলেন নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী।


'নবাব ফয়জুন্নেসা ও পূর্ববঙ্গের মুসলিম সমাজ' বইয়ে বলা হয়েছে, নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী মেয়েদের পড়াশোনায় সহায়তা করার জন্য স্থানীয়ভাবে হোস্টেলের ব্যবস্থা করেছিলেন, যার খরচ বহন করা হত তার জমিদারির আয় থেকে।

এছাড়া পড়াশোনায় উৎসাহ দিতে মেয়েদের জন্য মাসিক বৃত্তিও দেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।অধ্যাপক আরিফা সুলতানা বলছেন, সেই সময়ে পশ্চাৎপদ মুসলমান সমাজে এ ধরণের পদক্ষেপ অত্যন্ত সাহস এবং দৃঢ়চিত্তের প্রমাণ।


ডাকটিকেট

বাংলাদেশে নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীর নামে ডাকটিকেট প্রকাশিতক হয়।


নারী স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবনা

১৮৯৩ সালে স্থানীয় পর্দানশীন, বিশেষত দরিদ্র মহিলাদের চিকিৎসার জন্য তিনি নিজ গ্রামে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। তিনি 'ফয়জুন্নেসা জেনানা হাসপাতাল' নামে একটি চিকিৎসালয়ও স্থাপন করেন। একই বছর নওয়াব বাড়ির কাছেই তিনি মেয়েদের জন্য একটি স্বতন্ত্র হাসপাতাল নির্মাণ করেছিলেন তিনি।


সাহিত্য কর্ম

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম মুসলমান সাহিত্যিক হিসেবে নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানীকে কৃতিত্ব দেয়া হয়। তার লেখা পদ্য ও গীতি আলেখ্য 'রূপজালাল' প্রকাশিত হয় ১৮৭৬ সালে। বলা হয়ে থাকে এটি বাংলায় কোন নারী মুসলমান লেখকের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ। 'রূপজালাল' বস্তুত রূপকের আশ্রয়ে একটি আত্মজীবনীমূলক রচনা।এরপরেও আরো দুইটি কবিতার বই প্রকাশিত হয় তার, 'সঙ্গীত লহরী' এবং 'সঙ্গীতসার'।এছাড়া কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকার পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও তার খ্যাতি ছিল।


জনহিতকর কাজ

দানশীল হিসেবে খ্যাতি ছিল নওয়াব ফয়জুন্নেসার। বাংলাপিডিয়ার তথ্য বলছে, ১৯০৩ সালে মারা যাওয়ার আগে নিজের জমিদারির বড় অংশটি ওয়াকফ্ করে দিয়ে যান নওয়াব ফয়জুন্নেসা, যা থেকে কুমিল্লার লাকসামের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা আজও বৃত্তি পায়।এছাড়া এলাকার রাস্তাঘাট নির্মাণ, দিঘি-জলাশয় খননসহ নানা ধরণের জনহিতকর কাজে তিনি অবদান রেখেছেন। এলাকায় মসজিদ, মাদ্রাসা ইত্যাদি নির্মাণেও তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। ১৯০৩ সালে ৬৯ বছর বয়সে তিনি কুমিল্লার লাকসামে মৃত্যুবরণ করেন।


বাড়িটির ভেতরে ঢুকতেই দক্ষিণ দুয়ারি দোতলা ভবন। পশ্চিম পাশে একতলা বৈঠকখানা। পুবে আরেকটি একতলা ভবন। মূল ভবনের পেছনে দোতলা রংমহল। ডাকাতিয়া নদীর তীরে পশ্চিমগাঁও এলাকার এই বাড়িটি নওয়াব ফয়জুন্নেসার। তিনি সভ্রান্ত এক মুসলিম জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বিয়ে করেন আরেক জমিদার গাজী চৌধুরীকে। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। আর ঐ বিবাহ বিচ্ছেদের সময় পাওয়া দেনমোহরের এক লক্ষ এক টাকা দিয়ে তিনি নিজে একটি বাড়ি তৈরি করেন। ঐসময় জমিদারীর প্রশিক্ষণ নেন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাফল্যের সাথে জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। তার জমিদারীর আওতায় প্রায় হোমনাবাদ পরগণার বর্তমান সময়ের কুমিল্লা জেলার মোট ১৪টি মৌজা ছিল। ১৪টি মৌজাতে রাজস্ব আদায়ের জন্য ১৪টি কাছারিঘর ছিল।


নবাব ফয়জুন্নেসার জমিদার বাড়ির সাথেই রয়েছে ১০ গম্বুজ বিশিষ্ট 'নবাব ফয়জুন্নেছা জামে মসজিদ'। নান্দনিক এই মসজিদটিতে পুরুষদের সাথে সাথে মেয়েদেরও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা আছে। এই মসজিদের পাশেই শায়িত আছেন, নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী ও তাঁর পরিবারের সদস্যগণ।



প্লেটোর বিখ্যাত ‘এলিগোরি অব দ্য কেভ’

সক্রেটিসের ছাত্র ছিল প্লেটু, প্লেটুর ছাত্র ছিল অ্যারিস্টটল এবং এরিস্টটলের ছাত্র আলেকজান্ডার। দুনিয়ায় বোধহয় এমন কোন শিক্ষিত মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা এই চাজনের নাম শুনেননি। https://youtu.be/R5IpfOrc63U

সক্রেটিসের ছাত্র ছিল প্লেটু, প্লেটুর ছাত্র ছিল অ্যারিস্টটল এবং এরিস্টটলের ছাত্র আলেকজান্ডার। দুনিয়ায় বোধহয় এমন কোন শিক্ষিত মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না, যারা এই চাজনের নাম শুনেননি। পৃথিবীতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে সক্রেটিসকে মানা হয়। অথচ মজার ব্যাপার হল, সক্রেটিস জীবনে একটা অক্ষরও লিখেননি। এই মহাজ্ঞানী সক্রেটিসের চিন্তা, কর্ম ইত্যাদি আমরা জানতে পারি তার ছাত্র প্লেটোর লেখা থেকে। প্লেটোর তত্ত্ব আনুসারে,সাধারণ শিক্ষা আপনি বাবা-মা, পরিবার-পরিজন, প্রতিবেশি কিংবা চিরায়ত সস্তা বই অথবা মক্তব, স্কুল-কলেজ থেকেও পাবেন কিন্তু প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে হলে আপনাকে সক্রেটিস-এর মত প্রশ্ন করতে শিখতে হবে।্প্রশ্ন ছাড়া কোন কিছু মেনে নেয়াকে বন্ধী দাস হিসেবে বর্ণ্না করতেন সক্রেটিস।  প্লেটো তার   ‘দ্য রিপাবলিক’ গ্রন্থের সপ্তম অধ্যায়ে বিষয়টা উপস্থাপন করেছেন ‘এলিগোরি অব কেভ’ বা গুহায় বন্ধী মানুষের বর্ণনা দিয়ে। চলুন বিষয়টা জেনে নিই।

 

 একটি গুহায় একদল মানুষ বন্দী হয়ে আছে একেবারে বাচ্চা কাল থেকে। তাদের হাত-পা শিকল দিয়ে বাধা, গলায় বেরি। যে-জন্য তারা ডানে-বামে বা পিছনে ঘুরতে-ফিরতে পারে না। তাদের সামনে আছে শুধু গুহার দেয়াল। আর পিছনে আছে একটি আগুনের মশাল।  এই মশালের আলোতে বন্দীদের  সামনের গুহার দেয়ালেটি আলোকিত হয়েছে। বন্ধী এই মানুষগুলো আর আগুনের মশাল-এর ঠিক মাঝ বরাবর আঁকাবাঁকা একটি রাস্তা আছে।  গ্রামের লোকেরা এই পথ দিয়েই মাঠে-ঘাটে কাজকর্মের জন্য যখন যাতায়ত করে, তখন বন্ধীরা  গুহার দেয়ালে ওই গ্রামের লোকদের এবং অন্যান্য জিনিসপত্রের বড় বড় ছায়াকে চলমান দেখে ভয়ে শিখরে উঠত এবং নানা রকম  আনুগত্যমূলক মন্ত্র পড়ত । হঠাৎ একদিন কোনো লোক এসে ঐ বন্ধীদের মধ্য থেকে একজনকে গুহার বাইরের মুক্ত পৃথিবীতে নিয়ে আসে।  বন্ধীটি তখন বাহিরের জগত সম্পর্কে একটা বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা লাভ করবে। সে বুঝতে পারে, দেয়ালে দেখা ছায়াগুলো আসলে বাস্তব নয়। এতদিন সে যা জানতেন, তা সবি ভুল।  তখন সে এই নতুন আবিষ্কারটি সম্পর্কে জানাতে গুহায় তার পুরাতন বন্ধুদের কাছে ফিরে আসে? কিন্তু বোবারা যেমন গলা, কন্ঠস্বর সবকিছু ঠিক থাকার পরও, কানে না শোনার কারনে কোন শব্দ শিখতে পারে না বলে কথা বলতে পারে না; তেমনি নিজের কম্পোট জোন ছেড়ে বাস্তব পৃথিবীকে দেখার  ইচ্ছা না থাকার  কারণে, গুহার অন্য বন্ধীরা লোকটির কথাগুলো বিশ্বাস করে না। তারা তাদের ছোটকাল থেকে শোনা-জানা বিশ্বাস নিয়ে কম্পোট জোনেই পড়ে থাকে। 

 

সমাজের অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত বা সাধারণ শিক্ষিত লোকদেরকে, এই গুহার ভিতর  শিকলে বাধা বন্দীদের সাথে তুলনা করেছেন প্লেটো । তারা যা দেখতে পায়, তা হল গুহার দেয়াল। তারা পিছনের কিছুই দেখ্তে পায় না, কারণ তারা মাথা ঘুরাতে অক্ষম।  এই এলিগোরির মাধ্যমে প্লেটো বুঝাতে চেয়েছেন,গুহার দেয়ালে যা দেখা যায়, তা হল আমরা ছোটকাল থেকে যা শুনি বা দেখি।; তার সবকিছু আমরা কোন প্রশ্ন ছাড়াই চোখ বন্ধ করে এই গুহার বন্ধীদের মত মেনে নিই। কিন্তু প্রশ্ন না করায় নিজ পরিবার-পরিবেশের লালিত প্রাচীন বিশ্বাসের এই বলয় থেকে বের হয়ে আসল সত্যটা জানতে পারে না আমাদের চারপাশের মানুষরা।  কমফোর্ট জোন থেকে বের না হওয়ার কারণে আফ্রিকার নিগ্রোরা এই বন্ধীদের মতো আজ অশিক্ষিত ও গরীব জাতি, অথচ আফ্রিকার কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে উদ্ধাস্ত ইউরোপীয়া পৃ্থিবীর সভ্যতার নির্মাতা। মূল কথাঃ আগকার মানুষের জানার জগতটা খুব সীমিত ছিল। তখন বাপ-দাদার লালিত বিশ্বাস প্রকৃত সত্য বলে মেনে নিয়ে এ পৃথিবীর প্রায় সকল সাধারণ মানুষ জ্ঞান ও অজ্ঞানের মাঝামাঝি প্যারাবল অবস্থার বাস করে । কিন্তু প্রকৃত সত্য জানতে হলে আপনাকে নেট সার্চ  করে বের করতে হবে।   প্রকৃত বিষয়টা কি? 

এখানে প্লেটো সম্পর্কে দুটি কথা না বললেই নয়, তার প্রকৃত নাম ‘অ্যারিসটোক্লিস’। চওড়া কাঁধের অধিকারী ছিলেন বলেই সবাই তাকে প্লেটো নামে ডাকতো। তার জন্ম হয়েছিল সম্ভান্ত ধনী পরিবারে খ্রিষ্টপূর্ব ৪২৮-৪২৭ অব্দে। সুস্বাস্থের অধিকারী, সুমিষ্ট কণ্ঠস্বর, অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞানের প্রতি প্রচন্ড আকর্ষণ, সক্রেটিসের মতো গুরুর শিষ্যত্ব লাভ করা, সবকিছুতেই তিনি ছিলেন সৌভাগ্যবান।

সক্রেটিসের মৃত্যুর ঘটনার পর তিনি আর এথেন্সে থাকা নিরাপদ নয় মনে করে বেরিয়ে পড়লেন ২৮ বৎসর বয়সে। এসময় প্লেটো তিন বিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক ফিলোনাস, আরকাইটাস ও ইউরাইটাস-এর কাছে দীর্ঘদিন দর্শনের পাঠ নেন। এরপর তিনি ইটালি, সিসিলি, মিশর, সাইরিন ইত্যাদি এলাকা ঘুরে বেড়ান। ৪০ বৎসর বয়সে তিনি আবার এথেন্সে ফিরে আসেন। এথেন্সের নগর দেয়ালের বাইরে নির্জন স্থানে তিনি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এর নাম দেন এ্যাকাডেমি।  প্লেটোর এই এ্যাকাডেমিকে— আধুনিক স্কুল-কলেজের প্রাথমিক রূপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কারণ এই বিদ্যালয়ে দর্শন ছাড়াও বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি ইত্যাদি অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হতো।

প্লেটো যা কিছু লিখেছেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তার প্রধান নায়ক সক্রেটিস। অর্থাৎ সক্রেটিসকে কেন্দ্র করে প্লেটো তার সব সংলাপ তত্ত্বকথা প্রকাশ করেছেন।  পারবেন-https://www.youtube.com/watch?v=69F7GhASOdM

 

 

মিশেল ফুকোর ডিসকোর্স


 

মিশেল ফুকো’র পাগলবন্দনা

সাম্প্রতিককালের জ্ঞানচর্চায় মিশেল ফুকো এক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। কে পাগল? কারা পাগল? কেন এবং কোন স্বার্থে সভ্যসমাজ কাদের পাগল বলে? এর সঙ্গে মানসিক ব্যাধির সম্পর্কই-বা কতটুকু? এই বিষয়গুলির উত্তর খুঁজে অর্থাৎ পাগলামির -ইতিহাস এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা  লিখে আলোচনায় আসেন ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকো। ফুকো লিখেছেন- প্রাচিন গ্রীসে সক্রেটিস পাগলদের ২টি ভাগে ভাগ করেছিলেন। প্রথমটি সম্পূর্ণভাবে জৈবগত অর্থাৎ মাথায় সমস্যার কারণে পাগল আর দ্বিতীয়টি মূলত সামাজিক রীতিনীতির বাইরে আচার আচরণের জন্য পাগল শ্রেণিভুক্ত হয়। সক্রেটিস এই দ্বিতীয় ভাগটিতে শিল্পী,কবি, প্রেমিক, ধর্মান্ধ, ভাববাদী অথবা  ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী, ইশ্বরের সন্তান,ভাই বা বন্ধু দারিকারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে প্লেটো বললেন,দ্বিতীয় এই ভাগটির উন্মাদনা বা পাগলামী যতক্ষণ পর্যন্ত না ধ্বংসাত্মক হিসেবে বিবেচিত হয়, তার আগ পর্যন্ত এটি বরং সামাজিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতেই সাহায্য করে। অর্থাৎ মানব সভ্যতা বিকাশে এই পাগলদের ভূমিকাই মূখ্য…। তাই মিশেল ফুকোর সিদ্ধান্ত হল পাগলামীর মিশ্রণ ছাড়া বড় প্রতিভার জন্ম হয় না।

   ফুকো তার যৌনতার ডিসকোর্স প্রবন্ধ আকারে প্রকাশ করে গোটা পৃথিবীর মানুষের মনোভাবের গোড়া নড়বড়ে করে দেন। 

প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে সমাজের মানুষের যৌনচর্চার বিভিন্ন ধরণ নিয়ে মিশেল ফুকো’ আলোচনা করে এই সারমর্মে উপনীত হন যে, যৌনতা বিষয়টি মূলত ক্ষমতাবানদের চাপিয়ে দেওয়া। সমাজের উঁচু শ্রেণি মানুষরা নিজেদের ক্ষমতাবলেই সুন্দরী মেয়েদের অধিকারে রাখতে যৌনতাকে ‘বিয়ে এবং পরিবার’ এর মধ্যে আবদ্ধ করে সমাজে চাপিয়ে দিয়েছে। পরিবার আর বিয়ের মোড়কে যৌনতার বিষয়টি হয়ে পড়ে একান্তই ব্যক্তিগত বা ‘প্রাইভেট’ । বিবাহ বহির্ভূত যৌনচর্চাকারী গোষ্ঠী, যেমন সমকামী  বা বেশ্যারা হয়ে পড়ে প্রান্তিক । তবে এ কথাটিও চরমভাবে সত্য যে, ‘যৌনতার প্রশ্নে’ বিয়ে এবং পরিবার প্রথার বাইরে এখন পর্যন্ত কোনো শ্রেষ্ঠ বিকল্প ইন্সটিটিউশন পৃথিবীতে তৈরি হয় নাই। তাই পশ্চিমা সমাজ বিয়ে প্রথাকে আড়াল করতে  " একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্তু প্রেম করতেই হবে, এরকম চিন্তা মাথায় ডুকিয়ে দিচ্ছে নতুন প্রজন্মের মধ্যে। ফলে  সেখানে গার্লফ্রেন্ড না থাকা ছেলেরা আজ "বোকা"। আর   "বয়ফ্রেন্ড" না থাকা মেয়েরা "আনস্মার্ট" এখন হিসেবে গণ্য হচ্ছে। ফুকো চেয়েছিলেন, যৌনতার প্রশ্নে একটি প্রথা তৈরির মাধ্যমে এই প্রেমের সিস্টেমকে পরিবারকেন্দ্রিক ইন্সটিটিউশনালাইজড করা হোক।


ফুকোর দর্শন অনুসারে, আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম যৌনতার প্রশ্নে স্বাভাবিক-ই ছিলেন এবংআমাদের পরবর্তি প্রজন্মও যৌনতা বিষয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে । মাঝখানে আমাদের এখনকার প্রজন্মটা যৌন সংস্কৃতির ‘কঠিন নিয়মরীতির ভিতর' অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে । ফলে মানসিক সমস্যা বাড়ছে  বহুগুণ, অবদমিত যৌন ইচ্ছা রোগ হিসেবে ধরা দিচ্ছে; ‘ধর্ষণ’ আর যৌন হতাশায় কমে যাচ্ছে এই প্রজন্মের প্রোডাক্টিভিটি । ইন্টারনেটের কল্যাণে অল্প বয়স থেকেই ছেলে-মেয়েরা না্টক-সিনেমার পরিবর্তে পর্ণ-এ বেশি মনযোগী হচ্ছে। কিন্তু বাস্তব জীবনে, সমাজের অবদমনের রোসানলে পড়ে, গোপনে স্বাধ মেটানোর জন্য অস্থির হয়ে দিক-বেদিক ছুটছে। শহরের পতিতালয়গুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের চাহিদা বিকৃত হয়ে ধর্ষণের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অন্যদিনে যৌনতায় বৈচিত্র খুঁজতে তরুন-তরুনীরা অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। বেইজ লাইন সার্ভে শীর্ষক এক গবেষণায় জানা যায়, বাংলাদেশের শহর ও গ্রামাঞ্চলে ষাটের দশকের তুলনায় বর্তমানে বিবাহবহির্ভূত ও বিবাহপূর্ব অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার পরিমাণ তিনগুণ বেশি । বর্তমানে প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৩জনই অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। প্রেমের বিয়েও টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। সংসার বাচাতে এবং অনাগত ভবিষয্যত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শিক্ষিত মেয়েরা আনস্মার্ট, স্বল্প শিক্ষিত কিংবা বয়স্ক পুরুষকে বিয়ে করার দিকে ঝুকছে। আবার অনেক নারী-পুরুষ যৌন-স্বাতন্ত্রের কারণেও প্রচলিত যৌনধারা-র বাইরে চলে যায়।  জুডিথ বাটলার -বলেছেন ,নারী-পুরুষের  লিঙ্গ শুধু জৈবিক বিষয় নয়। বরং লিঙ্গ হচ্ছে আপনি কেমন আচরণ করেন, কেমন পোশাক পরেন এবং কোন স্টাইলে কথা বলেন, তাও লিঙ্গ। এই যে মানুষ ঝুটিবদ্ধ চুল রাখেন, কানে দুল পরে্ন, বড় গোফ রাখেন এগুলি হল তার যৌন স্বাতন্ত্রের বহিঃপ্রকাশ। নিজেদের যৌন-স্বাতন্ত্রের জন্য লড়তে থাকা সমকামী, উভকামী,  ট্র্যান্সজেন্ডার এবং সর্বশেষ এসেক্সুয়াল বা অযৌনচিত্ত  শ্রেণি  হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। 


মিশেল ফুকো সম্পকে কিছু তথ্য -

ফরাসি দার্শনিক ও ইতিহাসবিদ মিশেল ফুকোর জ্নম ১৯২৬ সালে । ১৯৬৯ সালে ফ্রান্সের সবচে সম্মানিত কলেজ ডি-ফ্রান্সসহ ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলসহ বিভিন্ন নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন এই মহা পন্ডিত। ১৯৬৮ সাল থেকে ফুকো জেলবন্ধী কয়েদীদের অধিকার আদায়ের জন্য একটা সংগঠন গড়ে তোলেন এবং সমকামী ও অন্যান্য প্রান্তীক গোষ্ঠীগুলোর পক্ষ হয়ে নিয়মিত প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠেন। এই সময়েই তিনি এইডস আক্রান্ত হয়ে ১৯৮৪ সালের জুন মাসে অকালমৃত্যু বরণ করেন।

তাঁর রচনাবলী প্রচলিত চিন্তাভাবনার প্রায় বিপরীতে দাঁড়িয়ে আমাদের জ্ঞানচর্চার ফাঁক-ফোকর দেখিয়ে দেয়।

\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\


 ইউজেনিক্স ও ম্যাডিসন গ্রান্ট


ইউজেনিক্স ও ম্যাডিসন গ্রান্ট-এর কারণে- হিটলার কেন ৬০ লাখ ইহুদীদের "বেঁচে থাকার অনুপযুক্ত" ঘোষণা করে হত্যা করে।

জেনেটিক্সের তত্ত নিয়ে গবেষণা ঊনবিংশ শতাব্দীতে শুরু হলেও ‘বংশগতি’ বলে কিছু যে আছে, তা আদিম যুগ থেকেই মানুষ পর্যবেক্ষণ করে এসেছে। পশুপালন আর কৃষিকাজ করতে গিয়ে মানুষ দেখেছে,  যে গাভী বেশী দুধ দেয় তার বাচ্চাও বড় হলে বেশী দুধ দিতে পারে বা যে গাছের ফল বড়বড় হয় তার বীজ থেকে জন্মানো গাছের ফলও বড় হয়। কিন্তু কি কারণে বাবা-মায়ের এই গুণ সন্তানরা পায়? তা তারা জানত না। জেনেটিক্স বা জিনতত্ত আবিষ্কার পর ইউরোপ-আমেরিকায় একটা নতুন বিতর্ক শুরু হয়ে যায়।  একপক্ষ বললেন, "দুর্বলকে সাহায্য করা ভাল, কিন্তু দুর্বল যদি বেঁচে থেকে বংশবৃদ্ধি করতে থাকে, তাহলে সমাজে দুর্বলের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এর একমাত্র প্রতিরোধের উপায় হল- দুর্বলদের বিবাহ নিয়ন্ত্রণ করা। সমাজের নিচুতলায় মানুষ বেশী করে সন্তান উৎপাদন ্করলে, সমগ্র সমাজে আস্তে আস্তে 'খারাপ জিন'-ওয়ালা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে। ফলে সমাজের অবনতি অনিবার্য।  ১৮৮৩ সালে গাল্টন এক সামাজিক বিপ্লবের ডাক দেন। ইউজেনিক্স নামেএকটা নতুন টার্ম ব্যবহার করেন তিনি। ইউরোপে সে সময়ে গাল্টনের মত মেনে উঁচুতলার মানুষরা বেশী করে সন্তান নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সেই একই সময়ে আমেরিকা, সমাজের নিচুতলার মানুষদের সন্তান উৎপাদন কমানোর দিকে জোর দেয়। 


আমেরিকায় ইউজেনিক্স ক্রমাগত জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। স্থানীয় ইউজেনিক সোহাইটি তৈরী হয় - যারা "উন্নত পরিবার"দের পুরস্কৃত করত, উৎসাহ দিত আরো বেশী করে সন্তান উৎপাদনে। অপরদিকে "অনুন্নত"দের জোর করে জন্ম-নিয়ন্ত্রণে বাধ্য করা হত। ১৯০৭ সালে আমেরিকা্র ইন্ডিয়ানা স্টেটে প্রথম পাশ করা হয় বন্ধ্যাত্বকরণ আইন, যার ফলে অপরাধী, জড়বুদ্ধি, বোকাদের বন্ধ্যাত্বকরণ করানো বাধ্যতামূলক করা হল। এই আইনের বিরুদ্ধে কোর্টে মামলাও হল, কিন্তু ১৯২৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায় দিল যে, - "যারা সমাজের বোঝা , তাদের বাচ্চারাও সমাজের বোঝাই হবে। সুতরাং তাদের পৃথিবীতে না আসার ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের কর্তব্য"। এর ফলে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত আমেরিকায় ষাট হাজার নিম্নবিত্তকে বন্ধ্যাত্বকরণ করানো হয়েছিল। এই ঢেউ গিয়ে লাগে নাৎসি জার্মানী ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলোতেও। সেখানেও চলে আইন করে নিচুতলার মানুষদের বলপূর্বক বন্ধ্যাত্বকরণ। 

এরপরে এই ইউজেনিক্সের সাথে আরো একটি মাত্রা যোগ করলেন আইনজীবি ম্যাডিসন গ্রান্ট । ১৯১৬ সালে প্রকাশিত "দ্য পাসিং অব গ্রেট রেস" বইতে তিনি দাবী করলেন নর্ডিকরা জাতিগতভাবে শ্রেষ্ঠ, নিগ্রো, এশিয়ান, এমনকি বাকি ইউরোপিয়ানদের চেয়েও। উনি নর্ডিক নয় যারা, তাদের আমেরিকায় অভিবাসনের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করলেন।  গ্রান্টের বই ১৯২৫ সালে জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়। বইটি প্রভাবিত করে হিটলারকে। হিটলার লেখক গ্রান্টকে  এক চিঠিতে লেখেন - "এই বইটি হল আমার বাইবেল"।


১৯৩৩ সালে হিটলার ক্ষমতায় আসার পরেই আমেরিকানদের অনুকরণে আইন প্রবর্তন করলেন "জিনগত ক্রটি নির্ম‚ল" করার জন্য। মাত্র তিন বছরের মধ্যেই ২,২৫,০০০ মানুষের বন্ধ্যাত্বকরণ করানো হল। তৈরি করা হল - হেরিডিটি কোর্ট। এর সাথে সমাজের 'ধনী ও বিজ্ঞ লোকদেরকে আরো বেশী করে সন্তান নিতে উৎসাহী করে তোলা হল। ১৯৩৬ সালে আইন করে ধনীদের সন্তানসম্ভবা স্ত্রীদের জন্য ভাল থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হল। ইহুদীরা যেহেতু নর্ডিক  ছিল না, তাই তাদের সাথে মুল জার্মানদের বৈবাহিক সম্পর্ক নিষিদ্ধ করা হল - যাতে জার্মান জিন ইহুদীদের সাথে মিশে অনুন্নত সন্তানের জন্ম না দিতে পারে। নাৎসীদের রাজত্বের শেষদিকে দেখা গেল মোট ৪ লক্ষ মানুষের বন্ধ্যাত্বকরণ করা হয়েছে আর স্থাপিত হয়েছে ২০০ হেরিডিটি কোর্ট।


 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে দেখা গেল এভাবে একটা বড় দল তৈরী হয়ে গেছে যাদের বন্ধ্যাত্বকরণ করা হয়েছে অথচ তারা কারাগারে রাষ্ট্রের পয়সায় খেয়ে চলেছে। । তাই যাদের বন্ধ্যাত্বকরণ করা হয়েছে,তাদের মধ্যে পরীক্ষা নেবার জন্য কিছু প্রশ্নপত্র বিলি করে নাৎসীরা। পরীক্ষায় ৭৫,০০০ লোক পাশ করতে পারল না। তাদের চিহ্নিত করা হল "খাদ্য ধ্বংসকারী" বা "বেঁচে থাকার অনুপযুক্ত" বলে। কিছুদিনের মধ্যেই নাৎসীরা এর পরিধি বিস্তৃত করে সমস্ত ইহুদী আর জিপসীদেরকে এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করলেন। এবার এদের পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিতে তৈরী হল গ্যাস চেম্বার - গণহত্যার মারণাস্ত্র। দেশের মধ্যেকার 'অনুন্নত'দের সরিয়ে দেবার এই মৃত্যুছকই ইউজেনিক্সের শেষ "অবদান"।

ইহুদি এবং সমাজের নিচু তলার লোক নিধনের এই ঘটনা ইতিহাসে “হলোকষ্ট” নামে পরিচিত। হলোকাস্টের আগে ইউরোপে ৯০ লাখ ইহুদি বসবাস করত।  এদের মধ্য থেকে ৬০ লাখ ইহুদী এবং ৫০ লাখ অ-ইহুদি অর্থাৎ নিচু তলার লোক হত্যা করা হয়। এই হলোকাস্টে নিহতের সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ।


ষাটের দশকে ইউজেনিক্সের এই ঢেউ এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ এমনকি গরিব চিন দেশকেও প্রভাবিত করে। চীন ১৯৭৯ সালে কঠোর এক সন্তান নীতি চালু করে।  এই নীতি ভঙ্গের কারণে অনেক দম্পতিকে গুনতে হয় জরিমানা, অনেকে হারিয়েছেন চাকরি, এমনকি জোরপূর্বক গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটেছে। চীন সরকারের হিসাব অনুযায়ী, এক সন্তান নীতির ফলে গত চার দশকে ৪০ কোটি জন্ম রোধ করা গেছে। অনেকের মতেএই সময়ে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো এক সন্তান নীতি। এই নীতির ফলে নারীদের একটি বড় অংশ সন্তান লালনপালনের কাজে নিয়োজিত থাকার পরিবর্তে শ্রমশক্তির অংশ হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। তারা উপলব্দি করে যে,   ‘‘কোনো দেশই তার সর্বশক্তি কাজে লাগাতে পারবে না, যদি না মেয়েদের এতে সম্পৃক্ত করা যায়৷'' । দেশের শ্রমবাজারে আরও ৩ কোটি শ্রমিক বাড়ানোর উদ্দেশ্যে একাধীক সন্তানের পরিবার পরিকল্পনার নতুন এ নীতি গ্রহণ করে দেশটি।   সরকারের এই নতুন নীতির ফলে জন্মহার বাড়ে। ২০১৬ সালে দেশটিতে ১ কোটি ৮০ লাখ শিশুর জন্ম হয়। পরবর্তী বছরগুলিতেও এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে।   


জাতীয় সংঘের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় আট কোটি ৩০ লক্ষ অতিরিক্ত জনসংখ্যা যোগ হয় দুনিয়ায়। এতে একদিকে শিল্পোন্নত দেশগুলিতে জনসংখ্যা কমতেই  আছে৷ কারণ সেখানে তরুণরা বিয়ে করতে চান না। আর যারা বিবাহিত এবং শিক্ষিত তরুণীরা  অনেকেই সন্তান চান না। অন্যদিকে গরীব মানুষের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অকল্পনীয় হারে বাড়ছে। এই বৃদ্ধির আফ্রিকা মহাদেশেই সবচেয়ে বেশি৷ আজ সেখানে প্রায় ১১০ কোটি মানুষের বসবাস৷ চলতি শতাব্দীর শেষে, সেখানে বেড়ে দাঁড়াবে ৪২০ কোটি ৷


আমাদের দেশেও বিত্তবান ও সুশিক্ষিত পরিবারে সন্তানের সংখ্যা একেবারে কম। অথচ একজন রিকশাওয়ালা বা খেটে খাওয়া মানুষের ঘরে সন্তানের সংখ্যা অধিক। এই খেটে খাওয়া বা বস্তির মানুষের ঘরে অধিক সন্তান জন্মের কারণে দেশে খাদ্য ঘাটতি যে শুধু বাড়বে তা নয়, বিঘ্নিত হচ্ছে শান্তি। খেটে খাওয়া মানুষ ছেলেমেয়েদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থা, ও শিক্ষার মত মৌলিক চাহিদার যোগান দিতে পারে না বলেই পরবর্তীকালে তাদের সন্তানরা সন্ত্রাস, চুরি, ছিন্তাই, চাদাবাজি, নানা প্রতারণাসহ দ্রুত বিপথে যায়। তাদের অল্পবয়সী মেয়েদের বিয়ে দিয়ে আবার তাদের ঘরে দ্রুত সন্তান জন্ম দিয়ে আরো জাতীয় সমস্যা তৈরি করে। প্রকৃত শিক্ষা ব্যয়বহুল হবার কারণে এইসব গরীব মানুষরা তাদের সন্তানদেরকে মক্তব কিংবা কোনো দাতা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার নামে —--। এতে সে শিশুরা জ্ঞান ও অজ্ঞানতার মাঝামাঝি প্যারাবল অবস্থায় বেড়ে উঠে। এরা সংখ্যায় বেশি হবার কারণে জ্ঞানহীন, সংস্কৃতিহীন একটা মধ্যযোগীয় সমাজ তৈরি হয়। ফলে শিক্ষিত ও সমাজের উচু শ্রেণির লোকেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেটাকা ও সন্তান নিয়ে উন্নত দেশে পাড়ি জন্মায় অথবা সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। অন্যদিকে জন্সংখ্যা নিম্নগতির কারণে গরীব মেধাবী ছাত্রদের শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে নিজেদের কাছে টেনে নেয়। এভাবেই আমরা প্রতিনিয়ত মেধা আর পুজি হারিয়ে মন-মনন ও আর্থিকভাবে গরীব্ত্ব লালন করে চলেছি।

 

১৯৭৯ সালে কঠোর এক সন্তান নীতি চালু করে। চীন সরকারের এই নীতি অনেক বিতর্কের জন্ম দেয়। এই নীতি ভঙ্গের কারণে অনেক দম্পতিকে গুনতে হয় জরিমানা, অনেকে হারিয়েছেন চাকরি, এমনকি জোরপূর্বক গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটেছে। চীন সরকারের হিসাব অনুযায়ী, এক সন্তান নীতির ফলে চার দশকে ৪০ কোটি জন্ম রোধ করা গেছে। অনেকের মতে, গত তিন দশকে চীনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি হলো এক সন্তান নীতি। এই নীতির ফলে নারীদের একটি বড় অংশ সন্তান লালনপালনের কাজে নিয়োজিত থাকার পরিবর্তে শ্রমশক্তির অংশ হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে।সন্তান জন্মের হার উদ্বেগজনকভাবে কমে যাওয়ায় এবং ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের শ্রমবাজারে আরও ৩ কোটি শ্রমিক বাড়ানোর উদ্দেশ্যে পরিবার পরিকল্পনার নতুন এ নীতি গ্রহণ করে দেশটি।নতুন এই নীতির ফলে ৯ কোটি নারী সন্তান নেওয়ার সুযোগ পান। তবে সরকারের এই নতুন নীতির ফলে পরপর দুই বছর জন্মহার বাড়লেও পরে আবার কমতে শুরু করে। ২০১৬ সালে দেশটিতে ১ কোটি ৮০ লাখ শিশুর জন্ম হয়। ২০২০ সালে জন্ম নেয় ১ কোটি ২০ লাখ শিশু। অনেক ক্ষেত্রে প্রথমবার কন্যাসন্তান হওয়ায় দম্পতিরা দ্বিতীয় সন্তান গ্রহণ করেছেন।২০২১ সালে চীন সরকার ঘোষণা করে, এখন থেকে দম্পতিরা তিনটি সন্তান নিতে পারবেন।

 

গ্রিনল্যান্ডে ক্রমেই বাড়তে থাকা আদিবাসী জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ষাট ও সত্তরের দশকে ডেনমার্ক এক কর্মসূচির আওতায় তা করেছে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৪, এই আট বছরে নারী সাতটি সন্তান থেকে নেমে এসেছিল দুই দশমিক তিন সন্তানে।কয়েল ক্যাম্পেইননামে ওই পডকাস্ট অনুসারে, ১৯৬৬ থেকে ১৯৭০ সালে গ্রিনল্যান্ডের সাড়ে চার হাজার নারী ও কিশোরীর শরীরেলিপিস লুপবসানো হয়। গ্রিনল্যান্ডে ওই সময় নয় হাজার প্রজনন সক্ষম নারীর মধ্যে অর্ধেকের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটে


যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে লাখ লাখ মাছি


স্ক্রুওয়ার্ম , ২০২৩ সাল থেকে প্যানামা, কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস, গুয়াতেমালা, বেলিজ ও এল সালভাদর—এই সাতটি দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এই পরজীবী। সম্প্রতি মাছিটির উপস্থিতি ধরা পড়েছে দক্ষিণ মেক্সিকোতেও। এতে সমস্যাটি যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।এই মাছিগুলো মৃতদেহে নয়, বরং জীবিত প্রাণীর ক্ষতস্থানে ডিম পাড়ে। একটি স্ত্রী মাছি একবারে ২০০ থেকে ৩০০টি ডিম দিতে পারে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই ডিম ফুটে বের হয় মাংসখেকো লার্ভা, যা ক্ষতের ভেতর ঢুকে প্রাণীর টিস্যু খেতে থাকে। কয়েকদিন পর এই লার্ভারা মাটিতে পড়ে গিয়ে গুটি (পিউপা) আকারে রূপান্তরিত হয় এবং পরে পূর্ণবয়স্ক মাছিতে পরিণত হয়। যথাসময়ে চিকিৎসা না হলে, আক্রান্ত পশু দুয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মারা যেতে পারে।২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এ ধরনের ৩৫ হাজারের বেশি সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। আক্রান্ত প্রাণীর মধ্যে ৮৩ শতাংশই গরু। শুধু গৃহপালিত পশুই নয়, হরিণ, পাখি ও ইঁদুরের মতো বন্যপ্রাণীরাও এই সংক্রমণের শিকার হতে পারে। স্ক্রুওয়ার্ম প্রজাতির পুরুষ মাছিকে গামা রশ্মি দিয়ে বন্ধ্যা করে তোলা হয়। এসব পুরুষ মাছি স্ত্রী মাছিদের সঙ্গে মিলিত হলেও, নিষ্ক্রিয় শুক্রাণুর কারণে ডিম নিষ্ফলা থাকে, ফলে নতুন লার্ভার জন্ম হয় না। যেহেতু স্ত্রী স্ক্রুওয়ার্ম মাছি জীবনে মাত্র একবারই প্রজননে অংশ নেয়, তাই একবার বন্ধ্যা পুরুষ মাছির সঙ্গে মিলনের পর আর কোনো কার্যকর প্রজনন সম্ভব হয় না। যত বেশি বন্ধ্যা পুরুষ ছেড়ে দেয়া হয়, তত দ্রুত প্রাকৃতিক জনসংখ্যা হ্রাস পায়। নিয়মিত বন্ধ্যা মাছি ছাড়লে স্ক্রুওয়ার্মের প্রাকৃতিক সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। প্যানামায় একটি মাত্র ‘ফ্লাই ফ্যাক্টরি’ রয়েছে, যেখান থেকে সপ্তাহে প্রায় ১০ কোটি মাছি উৎপাদন করে মধ্য আমেরিকায় ছড়িয়ে দেয়া হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে হুমকি বাড়ায় টেক্সাস-মেক্সিকো সীমান্তের কাছাকাছি মুর এয়ারবেসে তৈরি করা হবে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব ফ্লাই ফ্যাক্টরি।পুরো প্রকল্পের সম্ভাব্য খরচ প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার। 


বোগং মথ


অস্ট্রেলিয়ার এক ক্ষুদ্র পতঙ্গ— বোগং মথ, প্রতি বছর বসন্তে এই বাদামি রঙের পতঙ্গ প্রায় এক হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল থেকে ঠান্ডা পাহাড়ি গুহার খোঁজে।অস্ট্রেলিয়ান আল্পসের গুহায় পৌঁছে তারা দল বেঁধে নিশ্চল থাকে পুরো গ্রীষ্মে। শরতের শুরুতে ফেরার পথে প্রজনন সম্পন্ন করেই জীবনচক্র শেষ করে এরা।সেই দীর্ঘ পথচলার স্মৃতি— যা তাদের কোনো শিক্ষক শেখায় না  সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এরিক ওয়ারান্টের নেতৃত্বে এক গবেষণায় উঠে এসেছে, এই মথরা শুধু আকাশের তারা দেখেই তাদের গন্তব্য ঠিক করে।  মানুষের চেয়ে প্রায় ১৫ গুণ বেশি আলো দেখতে পায় এই পতঙ্গ, যা মিল্কিওয়ে পর্যন্ত দেখতে সক্ষম করে। সেই আকাশই যেন তাদের জন্য এক জীবন্ত দিকনির্দেশক। 


ডিম পাড়ে, দুধ দেয়!

পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত স্তন্যপায়ী বলে পরিচিত অস্ট্রেলিয়া ও নিউগিনিতে পাওয়া প্ল্যাটিপাস ও ইকিডনা একমাত্র ডিম পাড়া স্তন্যপায়ী, যাদের মনোট্রিম বলা হয়। প্ল্যাটিপাসের মতো চ্যাপ্টা ঠোঁট, জালযুক্ত পা আবার বীভরের মতো লেজ। এদের শরীর কাটাযুক্ত ও এর পা পেছনের দিকে ঘোরানো, যা মাটি খোঁড়ার কাজে লাগে। সম্প্রতি ‘ক্রাইরোরিকটিস ক্যাডবুরি’ নামে ১০ কোটি বছরের পুরনো একটি মনোট্রিম জীবাশ্মের হিউমারাস বা বাহুর ওপরের হাড় স্ক্যান করেছেন বিজ্ঞানীরা। এতে দেখা যায়, এ গোত্রীয় প্রাণীদের হাড়ের গঠন আধা-পানির প্রাণীর মতো— ত্বকের দেয়াল মোটা ও কেন্দ্রীয় গহ্বর ছোট। 




ভারতে কেরেলা রাজ্যের কালিকট বন্দর


১৪ থেকে ১৬ শতকের সময়টা ছিল ‘কালিকটের স্বর্ণযুগ’। কলিকট শহরকে বর্তমানে কোঝিকোড় বলা হয়। দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত কেরল রাজ্যের  বৃহত্তম মহানগর অঞ্চল।কালিকট "গরম মশলার শহর" এবং "ইউনেস্কোর সাহিত্যের শহর" হিসাবেও পরিচিত। এটি বালুকাময় সৈকতের একটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় স্বর্গ হিসাবে পরিচিত। বন্দরটি কল্লাই নদী (Kallayi River) এবং আরব সাগরের তীরে অবস্থিত। এটি কেরালা রাজ্যের মালাবার উপকূলে অবস্থিত একটি প্রাচীন বন্দর শহর। কালিকট একসময় দক্ষিণ ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল এবং এখানে দেশি-বিদেশি জাহাজ চলাচল করত। আগে বহু দশক ধরে বহু মানুষ চেষ্টা করেছে ‘মশলার দেশ’ ভারতে পৌঁছানোর। আর এ যাত্রায় বহু নাবিক হারিয়েছে প্রাণ। বহু দেশ হারিয়েছে জাহাজ ও তাদের বিনিয়োগ।ভাস্কো দা গামা ১৪৯৮ সালে কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছান, যা ইউরোপ থেকে ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৭৬৫ সালে মহিশুরের সুলতান হায়দার আলী কালিকট আক্রমণ করেন। তখন শহর ও বন্দরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ভারতের দক্ষিণে কেরালা রাজ্যের এই বন্দরটি বর্তমানে অনেকটাই ব্যবহারের অনুপযোগী।এই অঞ্চলে সে সময় আবররা ব্যবসা করতে যেত। ফলে কলিকট অচিরেই আরব বংশোদ্ভূত বণিকদের একটি ঘনবসতিপূর্ণ শহরে পরিণত হয়। ভাস্কো দা গামা ১৪৬৯খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগালের সাইনিসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা সে সময়ে একজন প্রখ্যাত নাবিক ছিলেন।তাঁর পিতার উৎসাহে তিনি জ্যোতির্বিদ্যা এবং নৌচালনবিদ্যায় শিক্ষা গ্রহণ করেন।১৪৯২ সালে পর্তুগালের নৌ অফিসার পদে যোগদেন।১৪৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ৮ই জুলাই, গামা ১৭০জন নাবিক ও চারটি জাহাজ নিয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে পর্তুগালের লিসবনের নিকটবর্তী টেগাস নদী থেকে যাত্রা শুরু করেন।২৪শে এপ্রিল এঁরাভারত মহাসাগরে পাড়ি দেওয়ার জন্য জাহাজ ছাড়েন।ভারত মহাসাগর অতিক্রম করে ২০শে মে তিনি ভারতের কালিকট বন্দরে এসে পৌঁছান।কালিকট ছিল সে সময়ে আরব সাগরের তীরবর্তী দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত বন্দর।ত্রয়োদশ থেকে চতুর্দশ শতকের মধ্যে এই শহর নির্মিত হয়। 


প্রাচীন ভারতের অন্যতম প্রধান বন্দর ছিল মুজিরিস। কলিকট থেকে এটি প্রায় ১৪০ কিমি দক্ষিণে। বন্দরটি ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দে পেরিয়ার নদীর মোহনায় পলি জমে যাওয়ার ফলে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে। বণিকেরা নতুন সুযোগ ও সুবিধার খোঁজে জামোরিনের অধীনস্থ অঞ্চলে চলে আসেন। , ব্যবসায়িরা কলিকটের বর্ধিষ্ণু বন্দরে ভিড় করতে থাকেন এবং অচিরেই এটি ভারতের পশ্চিম উপকূলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হয়ে ওঠে।

কলিকট কেবল একটি প্রধান বন্দর হিসেবেই নয়, বরং পূর্ব এশিয়া থেকে আগত পণ্য ও অন্য মসলা যেমন লবঙ্গ, দারুচিনি ইত্যাদির জন্য একটি ‘ট্রান্স-শিপমেন্ট পয়েন্ট’-এ পরিণত হয়। আরব বণিকেরা মূলত ইউরোপীয় বাজারের জন্য পণ্য সরবরাহ করতেন। এ সময় তারা শুধু কলিকটেই এসে মালাবার থেকে মরিচ ও আদা, তামিলাকাম অঞ্চল থেকে পুঁতি, গয়না, তুলা ও লিনেন, পূর্ব এশিয়া থেকে দারুচিনি ও লবঙ্গ এবং চীন থেকে রেশম ও চীনামাটির পাত্র সংগ্রহ করতেন। এরপর তা বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে দিতেন।চীনের বিশাল বাজারগুলো কলিকট থেকে সেবা পেত এবং বর্তমান কম্বোডিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বেড়ে যায়। কলিকটে নিয়মিত বড় বড় চীনা জাহাজের আগমণ হতো। এগুলোকে ‘ধনরত্ন ভর্তি জাহাজ’ বলা হতো।আরবদের ওপর ইউরোপীয়দের বিরাগ ছিল নানা কারণে। প্রথমত তারা দ্রব্যের উচ্চ মূল্য রাখত। ধর্মীয় দ্বন্দ্বের কারণেও তারা বিরূপ ছিল কেননা সে সময় ইউরোপে খ্রিস্টানরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রুসেডে লিপ্ত ছিল।কলিকট থেকে রপ্তানিকৃত পণ্য আরব সাগর পেরিয়ে ধৌ (বিশেষ ধরনের পালতোলা নৌকা) দ্বারা পৌঁছে যেত লাল সাগর ও পারস্য উপসাগরের বন্দরগুলোতে। সেখান থেকে উটের কাফেলার মাধ্যমে এই পণ্য মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরে নিয়ে যাওয়া হতো। তারপর সেগুলো ভেনিসে পাঠিয়ে ইউরোপীয় ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হতো।কলিকটে আরবদের পক্ষে চীনা সম্প্রদায়ের সঙ্গে সহাবস্থান কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। পঞ্চদশ শতকের শেষভাগে কলিকটে থাকা চীনা বণিক ও জনবসতিকে আরবদের দ্বারা সহিংসভাবে উৎখাত করা হয়। 

==========


যদি আপনার একটি ক্ষুব্ধ সমর্থকগোষ্ঠী থাকে এবং আপনি তাদের সামনে কাউকে ভয়ানক ‘শত্রু’ হিসেবে কাউকে হাজির করতে পারেন, তাহলে নীতির ধার ধারতে হবে না। শুধু তাদের ভয় আর ক্ষোভকে উসকে দিতে পারলেই চলে।



মন খারাপ ?

মন খারাপ অবস্থায় কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে সবকিছু স্বাভাবিক আছে এমন ভাব দেখালে সেটা সাময়িক সমাধান। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী ফলাফল পেতে সবকিছু থেকে একটু বিশ্রাম নিন। পারলে দূরে কোথাও ঘুরে আসুন। বই পড়ুন, গান শুনুন, নিজেকে সময় দিন। নিজের ভেতরে ডুব দিন। তুলে নিয়ে আসুন আপনার ভেতর লুকিয়ে থাকা না বলা ভাবনাগুলো, ডায়েরিতে লিখে ফেলুন।মন খারাপের সময় না ঘুমিয়ে জেগে থাকলে মন আরো খারাপ হবে। তাই রাত না জেগে ঘুমিয়ে পড়ুন, এতে মন ফ্রেশ হবে। ঘুম থেকে উঠে হালকাবোধ করবেন।


প্রজনন হার কমে এসেছে

১৯৭৭ সালের মার্চ পর্যন্ত, ভারতের প্রায় ৮০ লাখ পুরুষকে জোর করে বন্ধ্যাকরণ করা হয়। শুধু ১৯৭৬ সালেই ৬০ লাখ পুরুষকে বাধ্য করা হয় অস্ত্রোপচারে। এই সময়ে ব্যর্থ অস্ত্রোপচারে মৃত্যু হয় প্রায় ২ হাজার মানুষের। উত্তাওয়ার মতো মুসলিমপ্রধান এলাকাগুলো, হরিয়ানার মেওয়াট অঞ্চলের উত্তাওয়ার গ্রামটি শুরু হয়েছিল এক ভয়াবহ কর্মসূচি—জোরপূর্বক বন্ধ্যাকরণ।মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্মহার বেশি হওয়ায় তাদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছিল ।গ্রামের অনেক পুরুষ পালিয়েও সপ্তাহের পর সপ্তাহ বাড়ি ফেরেনি। ভারতে আজ আর জোরপূর্বক জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি নেই। প্রজনন হার কমে এসেছে। তবে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, জরুরি অবস্থার সময়ের সেই দমনমূলক সংস্কৃতি আবার ফিরে এসেছে এক ভিন্ন রূপে, জীবনকে উপভোগ করুন। 



নারীর পেশিবহুল শরীর হওয়া ঠিক, না বেঠিক? উপকারিতা অপকারিতা কি কি?


‘অতিরিক্ত পেশিবহুল’ বলে ট্রান্সজেন্ডার নারী অ্যাথলেটদেরও আক্রমণ করা হয়ে থাকে—বিশেষ করে যাদের টেস্টোস্টেরন প্রাকৃতিকভাবেই বেশি।‘অতিরিক্ত পেশিবহুল’ মানে ‘পুরুষালি’। নারীরা এখনো পুরুষের মতো দেখতে হওয়ার ভয়ে কাঁপে, এবং এই ভয় আজও নারীদের ব্যায়াম বা শরীরচর্চার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। আমরা পুরুষদের ক্ষেত্রে পেশিবহুল সৌন্দর্যের বহু রূপ স্বীকার করি—দীর্ঘদেহী ম্যারাথন দৌড়বিদ থেকে শুরু করে বিশালদেহী কুস্তিগির পর্যন্ত। নারী অ্যাথলেটদের মধ্যেও একধরনের দ্বিচারিতা থাকে—একদিকে পারফরম্যান্সের জন্য প্রয়োজনীয় দেহ, অন্যদিকে সমাজে ‘সুন্দর’ দেহের মাপকাঠি। ফলে অনেকেই ব্যায়ামে সংযমী থাকেন, ‘অতিরিক্ত পেশিবহুল’ হয়ে যাওয়ার ভয়ে,তাই একজন নারীর পেশিবহুল শরীরকে অনেকে 'পুরুষালী' বা 'অস্বাভাবিক' মনে করতে পারেন। তবে আধুনিক বিশ্বে স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং ফিটনেসের প্রবণতা বাড়ার সাথে সাথে নারীর পেশিবহুল শরীরকে শক্তি, আত্মবিশ্বাস এবং সুস্বাস্থ্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে এবং ক্রীড়া জগতে এটি অত্যন্ত প্রশংসিত।পেশিবহুল শরীর মানেই বেশি শক্তি। দৈনন্দিন কাজকর্মে সুবিধা হয়, খেলাধুলা বা শারীরিক পরিশ্রমে ভালো পারফরম্যান্স আসে। হাড় ও পেশির ঘনত্ব বাড়লে দৈনন্দিন কাজ (যেমন: ভারী জিনিস তোলা, শিশু লালনপালন) সহজ হয়। হাড় ও বার্ধক্যে পেশি ক্ষয় রোধ করে স্বাধীন চলাচল ক্ষমতা বজায় রাখে। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে।প্রাকৃতিকভাবে নারীর শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা পুরুষের চেয়ে অনেক কম থাকে,তাই অতিরিক্ত পেশি অর্জনের জন্য অনেক সময় কঠোর ডায়েট বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়, যা কিছু ক্ষেত্রে হরমোনের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে, প্রাকৃতিক উপায়ে ব্যায়াম করলে সাধারণত এর ঝুঁকি থাকে না।পেশিবহুল চেহারা পেতে প্রায়ই অনিয়ন্ত্রিত পরিমাণে সাপ্লিমেন্টারি প্রোটিন নিতেন দেবরাজ। শরীরে প্রোটিনের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত হওয়ার কারণেই মূলত সমস্যার সূত্রপাত।দেবরাজের দুটি কিডনিই ৯০ শতাংশ বিকল হয়েছে। পাশাপাশি সমস্যা রয়েছে তার ফুসফুসেও।




বাফেল ঘাস— অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় আগাছা না জাতীয় সম্পদ?

তুলার মতো ফুল ফোটা লম্বা ঝোপযুক্ত এই ঘাসটি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার অন্তর্দেশীয় শুষ্ক ও আধাশুষ্ক এলাকাগুলোতে বিস্তৃত পরিসরে ছড়িয়ে পড়েছে।কৃষকরা বাফেল ঘাস পছন্দ করেন। কারণ এটি তাদের গবাদি পশুর জন্য পুষ্টিকর, খরা সহনশীল এবং আগুনের পরও দ্রুত পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। এছাড়া এটি পতিত জমি ঢেকে মাটি ক্ষয় ও ধুলাবালি প্রতিরোধ করে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বাফেলকে ‘জাতীয় আগাছা’ হিসেবে তালিকাভুক্তির ভিত্তি তৈরি করে।তবে কুইন্সল্যান্ডের কিছু কৃষক মনে করেন, বাফেল ঘাস আসলে ‘জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য’ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।এটি লাখ লাখ কেজি গরুর মাংস উৎপাদনের ভিত্তি,


টোকিওডিমেনশিয়া রেস্তোরাঁ

টোকিওতে এমন একটি রেস্তোরাঁ আছে, যেখানে ভুল করা মানে ভুল নয়। বরং ভুলই এখানকার বৈশিষ্ট্য। রেস্তোরাঁয় গিয়ে আপনি ডাম্পলিং অর্ডার করলে পেতে পারেন মিসো স্যুপ। গ্রিলড ফিশ অর্ডার করলে হয়তো চলে আসবে সুশি। এখানকার ৩৭ শতাংশ টেবিলে পরিবেশন করা হয় অর্ডারের চেয়ে ভিন্ন খাবার। তবুও ৯৯ শতাংশ গ্রাহকই সন্তুষ্ট। ভুলই স্বাভাবিক এখানে—কারণ এই রেস্তোঁরার পরিবেশনকারীরা সকলেই ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত।তারা ভুলে যাওয়ার রোগে আক্রান্ত। রেস্তোরাঁটির প্রতিষ্ঠাতা জাপানি টেলিভিশন পরিচালক শিরো ওগুনি। ডিমেনশিয়া নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় এর শাখা খোলা হয়।২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ডিমেনশিয়া আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১১ কোটির বেশি হতে পারে। 


মোসুরা ফেন্টোনি

প্রায় ৫০ কোটি বছর আগের এক অদ্ভুত সামুদ্রিক শিকারির জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। মোসুরা ফেন্টোনি নামের এই ক্ষুদ্র অথচ ভয়ংকর প্রাণীটি লম্বায় ছিল মাত্র ছয় সেন্টিমিটার। কিন্তু এর মাথায় ছিল তিনটি তীক্ষ্ণ চোখ—দুই পাশে দুটি ও একটি ঠিক মাঝখানে। যেন কোনো রহস্যময় অতীত থেকে উঠে আসা ত্রিলোচনের দানব, যা গভীর সমুদ্রের বুকে শিকার খুঁজে বেড়াত। সম্প্রতি কানাডার বার্গেস শেল অঞ্চলে পাওয়া ৬১টি জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে এই নতুন প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এর মুখের গঠনও ছিল বিস্ময়কর। মাত্র ছয় সেন্টিমিটার লম্বা হলেও প্রাণীটির শরীরজুড়ে ছিল শিকারের নিখুঁত প্রস্তুতি—তিনটি চোখ, ধারালো দাঁতযুক্ত গোলাকার মুখ ও কাঁটাযুক্ত পাখনা। মোসুরা ফেন্টোনি আসলে বিলুপ্ত আর্থ্রোপড গোষ্ঠী রেডিওডন্টের সদস্য। এদের শরীর ছিল ২৬ খণ্ডের, যার মধ্যে ১৬টি খণ্ডে ছিল শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য গিলস। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের এই জটিল গঠন কাঁকড়া বা কিছু জলজ পোকামাকড়ের মতোই।মোসুরা ফেন্টোনি সম্ভবত সাগরের বুকে অনেকটা রশির মতো এঁকেবেঁকে সাঁতার কাটত। এরা অপেক্ষাকৃত ছোট প্রাণীদের শিকার করত। এদের চোখের বিশেষ গঠন আধুনিক ড্রাগনফ্লাইয়ের চোখের মতো, যা দ্রুত নড়াচড়া করা শিকারকে নির্ভুলভাবে ধরতে সাহায্য করত।মোসুরা ফেন্টোনি এখন প্রদর্শিত হচ্ছে টরন্টোর রয়্যাল অন্টারিও মিউজিয়ামের ‘ডন অফ লাইফ’ গ্যালারিতে।


হাত-পা কাটা গেলে আবার গজাবে?

হাত-পা কাটা গেলে আবার গজাবে— এ ধারণা এখনো আমাদের কাছে রূপকথার মতো। কিন্তু মেক্সিকোর জলাধারে ছোট্ট এক প্রাণী অ্যাক্সোলটলের কাছে এটি একেবারে বাস্তব। ছোট শরীরের এই প্রাণীটি আমাদের অক্ষমতার চোখে আঙ্গুল রাখে— সে যা পারে, আমরা তা পারি না।সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা অ্যাক্সোলটলের দেহে এমন একটি রাসায়নিক সংকেত শনাক্ত করেছেন, যা শরীরে কাটা অঙ্গ কোথায় ও কীভাবে গজাবে, সে নির্দেশ দেয়। সংকেতটির নাম রেটিনয়িক অ্যাসিড— যা মানব ভ্রূণের হাত-পা বা মাথা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু জন্মের পর মানুষ আর এ সংকেত গ্রহণ করতে পারে না। অ্যাক্সোলটল ব্যতিক্রম। তার শরীর এই সংকেত গ্রহণ করে জীবনভর।বিজ্ঞানীরা যখন প্রাণীর শরীরে উজ্জ্বল জিন ঢুকিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন, তখন দেখা যায়, এই প্রাণীর কোষ নিজের পরিচয় ভুলে গিয়ে আবার ভ্রূণ-অবস্থায় ফিরে যায়। এরপর আবার নতুন করে অঙ্গ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করে।গবেষণার অন্যতম সদস্য ক্যাথরিন ম্যাকাসকার বলেন, অ্যাক্সোলটলের ক্ষেত্রে অঙ্গ গজাতে কয়েক দিন লাগে, মানুষের ক্ষেত্রে হতে পারে কয়েক বছর। কিন্তু এই গবেষণাগুলোই ভবিষ্যতের চিকিৎসাব্যবস্থা বদলে দিতে পারে। আজ যার হাত নেই, কাল তার হাতে হয়তো আবার কলম ধরা সম্ভব হবে। 



 ‘কখনো হাল ছেড়ো না, আজকের দিনটি  অন্ধাকার কিন্তু কাল বা পরশু মেঘলা আকাশে সূর্য উঠবে।’


‘ব্যর্থতা’ ও ‘জ্যাক মা’ শব্দ দুটো এক সময় পরিপূরক মনে হলেও অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং লেগে থেকে সক্রিয় চেষ্টার মাধ্যমে তিনি সারা পৃথিবীতেই একজন সফল ব্যবসায়ী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচিত করেছেন। জ্যাক মার প্রকৃত নাম মা ইউন। তিনি জন্মেছেন ১৫ অক্টোবর ১৯৬৪ সালে চায়নার দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চল হোয়াং ঝুতে। জ্যাক মার দাদা ছিলেন চায়নিজ কমিউনিস্ট পার্টির বিরোধী । কমিউনিস্টরা এক সময় জ্যাক মার দাদাকে শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করে ফাঁসি দেয়। তাদের ছয় সদস্যের পরিবারের এত গরীব ছিল যে, বছরে একবার মাত্র মুরগি খাওয়ার সুযোগ হতো তাদের। ১৯৭২ সালে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন চায়নায় এলে হোয়াং ঝু এলাকায় আসেন। এতে করে এই এলাকায় পর্যটক বেড়ে যায়। প্রচুর বিদেশি অতিথি সেখানে ঘুরতে আসতেন। এই সুযোগটি কাজে লাগাতে তিনি ইংরেজি শিখতে চাইতেন। তিনি তার সাইকেল নিয়ে সকালে বেরিয়ে পড়তেন। পার্কে গিয়ে দেখতেন কোনো বিদেশি আছেন কি না। তিনি বিনা পয়সায় তাদের গাইড হিসাবে কাজ করতেন। তিনি হোটেলগুলোতে যেতেন। বিদেশি অতিথিদের আমন্ত্রণ জানাতেন এলাকা ঘুরিয়ে দেখার জন্য। তার লক্ষ্য ছিল বিদেশিদের সঙ্গে কথা বলে তার ইংরেজি বলার দক্ষতা বৃদ্ধি করা। তার এই আগ্রহ দেখে অনেকেই তাকে পছন্দ করতেন। তার ইউন নামটি উচ্চারণ করতে কঠিন মনে হয় বলে এক বিদেশি মেয়ে তাকে ‘জ্যাক’ নামে ডাকা শুরু করে। তিনি তখন থেকে নিজেকে জ্যাক হিসাবে পরিচয় দিতে থাকেন। 


ছেলেবেলায় প্রাইমারি স্কুল পরীক্ষায় জ্যাক মা ফেল করেন। একবার নয়,দুইবার! উচ্চ মাধ্যমিকে এসে ফেল করলেন তিনবার। উচ্চ শিক্ষার আশায় তিনি হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করেন মোট দশবার। কিন্তু দশবারই ফেল।তিন বছরে তিনি কমপক্ষে ত্রিশ বার চাকরির আবেদন করে ব্যর্থ হন। সবখান থেকে তাকে বলা হত, ‘তুমি ঠিক যোগ্য নও।’তবে কোনো অবস্থাতেই জ্যাক মা হাল ছেড়ে দেন নি। তিনি যা করে গিয়েছেন তা হলো চেষ্টা।  উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি প্রথমে একটি অনুবাদ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন কিন্তু সেখানে তেমন সুবিধা করতে পারেননি। তবে তার অনুবাদ অগ্রহের কারণে একজন অনুবাদক হিসাবে চায়নিক কোম্পানির প্রতিনিধি হিসাবে আমেরিকা যাওয়ার সুযোগ পান। সেখানে এক বন্ধুর মাধ্যমে ইন্টারনেটের সঙ্গে পরিচিত হন জ্যাক মা। প্রবল আগ্রহ তিনি ইন্টারনেটে চায়না সম্পর্কে খুঁজতে গিয়ে কিছুই পেলেন না। কারণ চায়না তখন জগত থেকে আলাদা। এই ঘটনা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তিনি চায়নায় এসে ইন্টারনেট ভিত্তিক ব্যবসা শুরু করতে চাইলেন। দেশে এসে ইয়োলো পেজ জাতীয় একটি ওয়েবসাইট শুরু করেন। সেটিও বিক্রি করে দেন।নিজ এলাকায় ফিরে আসেন এবং ইন্টরনেটের মাধ্যমে দ্রব্য কেনাবেচার চিন্তা করেন। শুরু করেন আলিবাবা ডট কম। সবাই বলেছিল এটা হচ্ছে এ যাবৎকালের সবচেয়ে স্টুপিড আইডিয়া। কিন্তু সে হাল ছাড়েনি।’ নতুন উদ্যাক্তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অনেকেই উদ্যোক্তা হতে চান। কিন্তু উদ্যোক্তা হতে যে চেষ্টা সেটা তারা করেন না। তারা চমৎকার একটি আইডিয়া নিয়ে রাতে ঘুমাতে যান কিন্তু পরদিন সকাল বেলা আবার পুরানো কাজে অফিসে রওনা হন।’


তরুণদের প্রতি জ্যাক মার পরামর্শ, ‘আমি তরুণদের বলবো, বিশ বছরের আগে একজন ভালো ছাত্র হও। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক হয়ে কাজ করে কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করো।ছোট একটি কোম্পানিতে কাজ কর।বড় কোম্পানিতে কাজ করলে সেখান থেকে শেখার সুযোগ কম থাকবে। বরং ছোট কোম্পানিতে কাজ করলে তার খুঁটিনাটি যেমন জানতে পারবে । এই সময় কোন কোম্পানিতে তুমি কাজ করলে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কোন বসকে তুমি অনুসরণ করছো সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কর্মজীবনে  তোমাকে এমন সব কাজ করতে হবে যেটাতে তুমি ভালো। সেখানে ব্যর্থও হতে পারো। তাই এই সময় দেখতে হবে যে জিনিসটি তুমি পারো সেটাকে কীভাবে আরো বড় অবস্থানে নিয়ে যাওয়া যায়। বয়স ষাটের পর তরুণদের পেছনে বিনিয়োগ করো। তাদেরকে কাজে লাগাও।’কারণ তারা তখন তোমার চেয়ে ভালো করবে। তবে ‘কখনো হাল ছেড়ো না, আজকের দিনটি কঠিন হতে পারে, কাল হয়তো আরো খারাপ কিছু ঘটতে পারে কিন্তু পরশু ঠিক মেঘলা আকাশে সূর্য উঠবে।’


লবণাক্ত খাবার যখন ছিল আভিজাত্যের প্রতীক, লবণ ছিল টাকার বিকল্প

পৃথিবীতে মুদ্রার ধারণা উদ্ভাবনের আগে প্রচলন ছিল বিনিময় প্রথার। এক পণ্য বা সেবার বিনিময়ে আরেকটি পণ্য বা সেবা পাওয়া যেত।  রোমান সাম্রাজ্যে মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করা হতো লবণ।সেই সময় লবণ ছিল অপ্রতুল, ফলে মূল্যবানও ছিল।লাতিন শব্দ ‘স্যালেরিয়াম’ থেকে ইংরেজি ‘স্যালারি’ (বেতন) শব্দটি এসেছে। স্যালেরিয়াম শব্দটির মূলে রয়েছে ‘sal’ যার অর্থ লবণ। সে সময় লবণ এত মূল্যবান কেন ছিল,শুধু খাবারের স্বাদ বাড়াতেই লবণ ব্যবহার করা হতো না। এটি খাবার সংরক্ষণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো।সেনারা রেশন সংরক্ষণে লবণ ব্যবহার করতেন। এটি খাবারের পচন রোধ করত।বিশেষ করে মাংস ও মাছ সংরক্ষণের জন্য লবণ ব্যবহার করা হতো। 


পাশাপাশি বিলাসিতারও প্রতীক ছিল। ধনী ব্যক্তিরা প্রায়ই সামাজিক মর্যাদা ও সম্পদ প্রদর্শন করার জন্য অস্বাভাবিক লবণাক্ত ভোজের আয়োজন করতেন।বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এই উপাদান। যেমন—খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের আশীর্বাদের সময় লবণের ব্যবহার 

দুটি প্রধান "লবণের যুদ্ধ" : একটি হল ১৮৭৭ সালে আমেরিকার টেক্সাসের এল পাসো অঞ্চলের লবণ হ্রদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুদ্ধ এবং অন্যটি হল ইতালির ভেনিস ও জেনোয়া শহরের মধ্যে লবণের ব্যবসা নিয়ে হওয়া যুদ্ধ, এছাড়াও, "লবণ আইন অমান্য আন্দোলন" নামে ভারতের স্বাধীনতার সময় একটি আন্দোলন হয়েছিল , যেখানে মহাত্মা গান্ধী ব্রিটিশদের লবণের ওপর কর আরোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন।




এল সালভাদরের অর্থনৈতিক বিপ্লব


মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদরে ঘটে গেছে নতুন এক অর্থনৈতিক বিপ্লব। এই দেশের “এল জোন্তে” নামের সমুদ্র তীরবর্তী এলাকাটি বিশ্বের প্রথম গ্রাম, যেখানে দৈনন্দিন কেনাকাটা থেকে হোটেল বিল পরিশোধ—সবই হয় বিটকয়েনে। তাই বিশ্ববাসী একে ডাকে “বিটকয়েন বিচ” নামে। এখানে আপনার যা কিছু প্রয়োজন হবে, সবই ডলারের পরিবর্তে বিটকয়েন মুদ্রায় কেনা যায়। পর্যটকরা এই গ্রামে গিয়ে ‘ব্লিঙ্ক বিটকয়েন ওয়ালেট’ অ্যাপ ডাউনলোড করেন। ডলার দিয়ে বিটকয়েন কিনে ওয়ালেটে ট্রান্সফার করে নেন। ইউএন ট্যুরিজমের তথ্য অনুযায়ী, এই বিটকয়েনের কারণে এল সালভাদরে আন্তর্জাতিক পর্যটক আগমনের হার বেড়েছে ৯০ শতাংশ। স্থানীয় অর্থনীতিবিদ মাইক পিটারসন ও সমাজকর্মী রোমান মার্টিনেজ এই অর্থনৈতিক বিপ্লবের উদ্যোক্তা। ২০১৯ সালে অজানা একজন দাতা বিশাল পরিমাণ বিটকয়েন দান করেন সৈকত পরিষ্কারের কাজের বিনিময়ে তাঁদের মজুরি দেবার জন্য। করোনা মহামারিতে যখন চাকরি হারালেন শত শত মানুষ লেগে গেল কাজে। তারা প্রথমবার বিটকয়েনে পারিশ্রমিক পান। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বিটকয়েন ও ব্লক চেইনের ব্যবহার শিখতে শুরু করেন। ২০০১ সাল থেকে আমেরিকান ডলার এল সালভাদরের সরকারি মুদ্রা। বিটকয়েনের সাফল্য দেখে ২০২১ সালে দেশটির তখনকার প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বিটকয়েনকে বৈধ মুদ্রা ঘোষণা করেন।এল সালভাদর দেখিয়েছে, প্রযুক্তি শুধু বড় শহর বা ধনীদের বিষয় নয়। এটি হতে পারে গ্রাম উন্নয়নের হাতিয়ারও।


২০২৫ সালের এ জুলাইয়ে বিটকয়েনের মূল্য প্রথমবারের মতো ১ লাখ ২০ হাজার ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৪ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।বিশ্ব অর্থনীতি যখন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যেমন যুদ্ধ বা মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি সংকটের সময়ে মানুষের কাছে স্বর্ণ হয়ে ওঠে আশ্রয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সম্পদ। তাই সোনাকে বলা হয়ে থাকে ‘সেফ হ্যাভেন অ্যাসেট’। বর্তমানে বিশ্ব কিছুটা সেই রকমই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে গতানুগতিক সোনার পাশাপাশি ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগের দিকে সবাই ঝুঁকছে।ক্রিপ্টোকারেন্সি কী? এটি হলো ডিজিটাল মুদ্রা, যা একক কোনো সংস্থা বা সরকার নয়, বরং গণিতের জটিল শৃঙ্খল পদ্ধতি, যা ব্লকচেইন নামে পরিচিত সেই পদ্ধতি দ্বারা সুরক্ষিত। এর সূচনা হয় ২০০৯ সালে যখন বিশ্ব এক বিশাল আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। তখন ‘সাতোশি নাকামোটো’ ছদ্মনামধারী একজন ব্যক্তি প্রথমবার বিটকয়েন নামে ডিজিটাল মুদ্রা চালু করেন। মজার ব্যাপার হলো, এ ছদ্মনামধারী ব্যক্তিটিকে এখন পর্যন্ত কেউ শনাক্ত করতে পারেনি। ব্লকচেইন একটি অদলবদলহীন বা পরিবর্তনহীন লেজার পদ্ধতি। এর প্রতিটি লেনদেন গ্রুপ করে ‘ব্লক’ আকারে যুক্ত হয় ও ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করে সুরক্ষিত থাকে।  এ ব্লকচেইন প্রযুক্তিটি বিটকয়েনের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। 


২০২২ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ভার্চুয়াল অ্যাসেট রেগুলেটরি অথরিটি (ভিএআরএ) গঠন করে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করেছে, যা আন্তর্জাতিক ক্রিপ্টো কোম্পানিগুলোকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। এশিয়ায় সিঙ্গাপুর ফাইন্যান্সিয়াল কর্তৃপক্ষ (এমএএস) এটিকে অনুমোদন দিয়ে দেশটিকে এশিয়ার ক্রিপ্টো হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।ধারণা করা হয়, বর্তমানে বিশ্বের মোট ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করছে।  বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সার, আইটি কর্মী এবং উদ্ভাবনমূলক উদ্যোক্তাদের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি হতে পারে অর্থনৈতিক উন্নতির অন্যতম মাধ্যম। ব্লকচেইন প্রযুক্তি আর্থিক সেবার পাশাপাশি সরবরাহ ও পরিবহন ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য খাত ইত্যাদিতে বিপ্লব ঘটাতে পারে। সূত্র: বিবিসি



ডাচ ব্রিটিশ 


 ১৬শ শতাব্দীতে ডাচ প্রজাতন্ত্র থেকে শুরু হয়। ডাচরা আধুনিক লাভ লক্ষ্যকারী সংস্থা আবিষ্কার করেছিলেন। ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, হোলি রোমান সাম্রাজ্য, স্পেন এবং পর্তুগালের নৌবহরের মোট বহন ক্ষমতার চেয়ে ডাচ বাণিজ্যিক জাহাজ বহরের বহন ক্ষমতা বেশি ছিল। ১৮শ শতাব্দীতে, আমস্টারডামের মাথাপিছু আয় প্যারিসের চারগুণ ছিল।ডাচ সাফল্য শুধু অর্থনৈতিক ছিল না। সমাজে একটি  সমতাবাদী সংস্কৃতিও ছিল। জেমস ওয়াট এর মত ব্রিটিশ আবিষ্কারক এবং টিঙ্কারাররা স্টীম ইঞ্জিন নির্মাণ করেছিলেন। ১৭৭০ থেকে ১৮৭০ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ মজুরির বাস্তব মূল্য ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল, এবং ১৯শ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ব্রিটিশ জীবনপ্রত্যাশা প্রায় ৩.৫ বছর বেড়েছিল। ২০শ শতাব্দী জুড়ে, আমেরিকান সংস্কৃতি বিশ্ব জুড়ে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। যুদ্ধোত্তর আমেরিকার উদার অর্ডারের কারণে, জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। 


পর্যটনবান্ধব অবকাঠামো

 বর্তমানে কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা নেই। নাইটলাইফ, নিরাপত্তা, অবকাঠামোসহ পর্যটকদের সুবিধার দিক থেকে আমরা পিছিয়ে রয়েছি। আমাদের প্রতিবেশী কয়েকটি দেশে সমুদ্রসৈকত নেই, যেমন—কুনমিং, ভুটান, নেপালসহ এশিয়ার কিছু দেশ থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সরাসরি ফ্লাইট চালু হলে অনেকেই ‘হলিডে’ কাটাতে কক্সবাজার আসতে পারে। তাদের ভ্রমণ শুধু কক্সবাজারে সীমিত না রেখে পর্বত্য এলাকায়ও ছড়িয়ে দিতে হবে। এ জন্য সমন্বিত ট্যুর প্যাকেজ তৈরি, আনুষঙ্গিক সুবিধা সৃষ্টি, ব্র্যান্ডিং ও মার্কেটিং করতে হবে। সরকারকে বিদেশি পর্যটনবান্ধব অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এবং বিনোদনমূলক ও নাইটলাইফ প্রস্তাবগুলো সম্প্রসারণ করতে হবে।আমরা যদি কুনমিং থেকে পর্যটক আনতে চাই, তাহলে চীনা খাবার, তাদের ভাষা জানা ট্যুর গাইড, তাদের উপযোগী নাইটলাইফের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।পর্যটকরা কমফোর্ট জোন চায়। তারা স্বাধীনভাবে প্রকৃতি উপযোগ করতে চায়। বিচে বিকিনি পরে সানবাথ করতে গেলে যদি হাজারো মানুষ তাকিয়ে থাকে, তাহলে ওই পর্যটক আর আসবে না। কক্সবাজারে এখনো অনেক জায়গা পড়ে আছে। সেখানে বিদেশিদের জন্য পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা যায়। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে সেখানে বিপুল বিনিয়োগ পাওয়া সম্ভব। 

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট

একটি ভালো সঙ্গীত সৃষ্টিতে গীতিকার সুরকার গায়ক ও বাদ্যযন্ত্রীর সমন্বিত প্রয়াস যেমন অপরিহার্য, তেমনি দেশ বা সংসারের সামষ্টিক অর্থনীতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাও সব পক্ষের সহযোগিতা ছাড়া সুচারুরূপে সম্পাদন সম্ভব নয়। একজন কর্মচারীর পারিতোষিক তার সম্পাদিত কাজের পরিমাণ বা পারদর্শিতা অনুযায়ী না হয়ে কিংবা কাজের সফলতা-ব্যর্থতার দায়-দায়িত্ব বিবেচনায় না এনে যদি দিতে হয় অর্থাৎ কাজ না করেও সে যদি বেতন পেতে পারে, কিংবা তাকে বেতন দেয়া হয় তাহলে দক্ষতা অর্জনের প্রত্যাশা আর দায়িত্ববোধের বিকাশভাবনা মাঠে মারা যাবেই। এ ধরনের ব্যর্থতার বজরা ভারী হতে থাকলেই যেকোনো উৎপাদনব্যবস্থা কিংবা উন্নয়ন প্রয়াস ভর্তুকির পরাশ্রয়ে যেতে বাধ্য।

 ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক বিরাট অংশ সৃজনশীল কর্মক্ষম জনসমষ্টির আওতায় চলে এসেছে, যা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট নামে পরিচিত। সনাতন শর্তানুযায়ী ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট মূলত তিন দশক পর্যন্ত সৃজনশীল এবং উন্নয়ন অভিসারী অভিযাত্রায় থাকে। ইতোমধ্যে তার এক দশকের বেশি সময় চলে গেছে, সামনে আরো দেড় দুই দশক বাকি আছে। এই সময়ের মধ্যে বিদ্যমান কর্মোপযোগীদেরকে উৎপাদনশীল কাজে নিয়োজিত করতে না পারলে বা তাদেরকে উপযুক্ত কর্ম সম্পাদনে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে না পারলে কিংবা তাদের জন্য উপযুক্ত কাজ এবং পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে তারা অলসতায় শয়তানের কর্মশালায় যোগ দিতে পারে কিংবা অকর্মণ্যতায় হতাশায় নিমজ্জিত হতে পারে, যে পরিস্থিতিতে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ডিজাস্টারে পরিণত হতে পারে।


বিগত এত বছরে বাংলাদেশের বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থা জনগণকে বিশেষ করে যুবসমাজকে পর্যাপ্ত যথাযথ দক্ষ জনসম্পদ বা প্রশিক্ষিত লোকবল হিসেবে গড়ে তুলতে পারেনি। যার জন্য এ দেশ থেকে বিদেশে যাচ্ছে অদক্ষ শ্রমিক আর বিদেশের দক্ষ জনবল এ দেশের মধ্য ও উচ্চতর পদগুলোতে বেশি বেতনে নিয়োজিত হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রচুর বিশ্ববিদ্যালয় সমাপনকারী ডিগ্রিধারী শিক্ষিতের সংখ্যা বেড়েছে; কিন্তু তাদেরকে দেশের উদীয়মান শিল্পে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগযোগ্য হিসেবে পাওয়া যাচ্ছে না। স্যামুয়েল টেইলর কোলরিজের সেই বিখ্যাত চরণের মতো-Water water everywhere nor any drop to drink. সর্বত্র জল, পান করার জন্য এক ফোঁটাও নেই। দেশে উপযুক্ত পরিবেশ প্রণোদনা সৃষ্টিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অদক্ষতা-অক্ষমতার জন্য বিদেশে শিক্ষিত দক্ষ উদ্যোক্তারা দেশে ফিরতে চাচ্ছে না। দেশ উদ্যোক্তা ও মেধাশূন্য হয়ে যাচ্ছে।