শিক্ষক শিক্ষা

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় অনবদ্য অবদান রাখে ‘”বার আঙ্খ “ নামক একটি স্কুল  যা পৃথিবীর প্রথম স্কুল নামে পরিচিত।  এ স্কুল  থেকেই শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সভ্যতা মহান শিক্ষকগণের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

পশ্চিমা দর্শনের গুরু গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস ছিলেন একজন পেশাদার শিক্ষক যিনি যুব সমাজকে  শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য জ্ঞানের ফেরি করে বেড়াতেন।তাঁর শিষ্য প্লেটো গুরুর পথধরেই শিক্ষার আলো বিতরণে গড়ে তুলেন একাডেমি।

প্রাণী ও রাষ্ট্র বিজ্ঞান এর জনক গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল ছিলেন একজন পেশাদার শিক্ষক। তিনি  বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে  পদার্থ বিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান, প্রাণী বিজ্ঞান, নীতিশাস্ত্র, যুক্তি বিদ্যা,  রাষ্ট্র বিজ্ঞানসহ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় আলো বিতরণে গড়ে তুলেন ‘লাইসিয়াম’। এ মহান শিক্ষক এর শিক্ষা পদ্ধতি ও রাষ্ট্র পরিচালনা রীতিনীতি আধুনিক যুগেও অনুশীলন করা হয়। এ জ্ঞান পিপাসু ১৩ বছর পড়েয়েছিলেন আলেকজান্ডারকে।

ভারত বর্ষের অন্যতম প্রধান পণ্ডিত ও শিক্ষক ছিলেন কৌটিল্য। এ মহান শিক্ষক দার্শনিক ও অর্থনীতিবিদ তার অমর সৃষ্টি “অর্থশাস্র”  সরকারের বিজ্ঞান  ও অর্থনীতির বিজ্ঞান নামে দুটি বিজ্ঞানের কথা বলেন যা আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় অনস্বীকার্য।

মারিয়া ত্যাকলা আর্তেমেসিয়া মন্টেসরি  একজন ইতালীয় শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসক।এ মহান শিক্ষকের জীবনের পরতে পরতে আছে নানা অপমান ও বঞ্চনার গল্প। চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তিনি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু  অবহেলিত জনগোষ্ঠীর জন্য নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে তুলে ধরেন বিশ্ব পরিমণ্ডলে।তাঁর প্রবর্তিত শিক্ষা পদ্ধতি “ মন্টেসরি শিক্ষা পদ্ধতি “ নামে পরিচিত। এ পদ্ধতি আজ সারা বিশ্বে কার্যকর   টিচিং ম্যাথড।

অ্যান সুলিভান মেসি একজন আমেরিকান শিক্ষক। তিনি দৃষ্টি  প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে একজন  শিক্ষক হয়ে উঠেছিলেন।তিনিই বাক,শ্রবন ও দৃষ্টিপ্রতিবনদ্ধী হেলেন কেলার বা হেলেন অ্যাডামস কেলার এর শিক্ষক ছিলেন।  বাক-শ্রবণ ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে হেলেনের স্নাতক ডিগ্রি অর্জন  এবং পরবর্তীতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করার পিছনে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল এ মহান শিক্ষকের । 

জন ফ্রেডরিক ওবারলিন ছিলেন একজন ফরাসি শিক্ষাবিদ  যিনি ১৮শ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং ১৯শ শতাব্দীর প্রথম দিকে ফ্রান্সের একটি দরিদ্র গ্রামে প্রথম প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন এবং গ্রামের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। 

তিনি দারিদ্র্যপীড়িত গ্রামের শিশুদের জন্য প্রথম প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরবর্তীতে অন্যান্য দেশেও একই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রেরণা জোগায়।


গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর মতে, রাষ্ট্রগঠনের জন্য প্রথম শর্ত হলো সুশিক্ষিত নাগরিক। তার দৃষ্টিতে শিক্ষা কেবল জ্ঞানার্জনের উপায় নয়, বরং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নির্মাণের ভিত্তি। একইভাবে মুসলিম সমাজতত্ত্ববিদ ইবনে খালদুন শিক্ষা ও সভ্যতার সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দেখিয়েছেন যে জ্ঞান উৎপাদন ও তার সঠিক প্রয়োগ ছাড়া কোনো সমাজ অগ্রসর হতে পারে না। ইতিহাস সাক্ষী যে যেখানে জ্ঞানচর্চা অবহেলিত হয়েছে, সেখানে সমাজ কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে। আর যেখানে জ্ঞানকে রাষ্ট্রীয় নীতির কেন্দ্রে রাখা হয়েছে, সেখানে সভ্যতা বিকশিত হয়েছে। আজও বিশ্বব্যাপী সেই সত্য অক্ষুণ্ণ রয়েছে। 

 বিশ্বের উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থাগুলো দেখিয়েছে যে কেবল শ্রমবাজারের জন্য দক্ষতা নয়, বরং সৃজনশীল, সমস্যা সমাধানে সক্ষম ও নৈতিক মানুষ তৈরি করাই শিক্ষানীতির কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত। মোতাহের হোসেন চৌধুরী তার কালজয়ী ‘শিক্ষা ও মনুষ্যত্ব’ প্রবন্ধে শিক্ষার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে স্পষ্ট করে বলেছেন, শিক্ষার কাজ কেবল পেশার প্রস্তুতি নয়, বরং মানুষকে পূর্ণ মানুষ করে তোলা।  মার্কিন দার্শনিক জন ডিউইয়ের কথা মনে রাখা যায়। তিনি বিশ্বাস করতেন শিক্ষা হলো সমাজ পুনর্গঠনের প্রধান হাতিয়ার। যদি শিক্ষা শুধুই চাকরির প্রস্তুতিমূলক হয়, তবে সমাজ থাকবে স্থবির ও সংকীর্ণ।

আমাদের দেশে বর্তমানে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম বড় সংকট হলো চাহিদা ও জোগানের মধ্যে গুরুতর অমিল। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তরুণদের মধ্যে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনার প্রতি বিপুল আগ্রহ থাকলেও দেশে চিকিৎসা কলেজে আসন সংখ্যা সীমিত। ফলে অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। অথচ দেশের হাসপাতালগুলোয় ডাক্তার সংকট দীর্ঘদিন ধরেই প্রকট; গ্রামীণ ও প্রান্তিক অঞ্চলে চিকিৎসক সংকট যেন এক অব্যাহত অভিশাপ।

চৈনিক দার্শনিক কনফুসিয়াসের মতে, ‘আপনি আগামী বছরের জন্য পরিকল্পনা করেন তবে ধান রোপণ করুন; যদি দশ বছরের জন্য পরিকল্পনা করেন তবে গাছ লাগান; কিন্তু যদি আজীবনের জন্য পরিকল্পনা করেন তবে মানুষকে শিক্ষা দিন।’ এ চিরন্তন উক্তি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শিক্ষা হলো দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ, যা একটি জাতির সামগ্রিক ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে। 



 ফ্ল্যাটে বসবাসকারী শিশুদের সমস্যাঃ মায়োপিয়া


মায়োপিয়া হলো ক্ষীণদৃষ্টি।  যেখানে কাছের জিনিস দেখতে অসুবিধা না হলেও দূরের জিনিস আবছা আবছা লাগে। যেমন লেখা পড়তে না পারা বা  সাইনবোর্ড বা ব্ল্যাকবোর্ড স্পষ্ট দেখা না যাওয়া ইত্যাদি। এটা সাধারণত স্কুলজীবনে শুরু হয় এবং প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত বাড়তে থাকে। মাঝারি বা উচ্চ স্তরের মায়োপিয়া থাকলে পরবর্তী সময়ে গ্লুকোমাসহ নানা মারাত্মক  চোখের রোগের উতপত্তি হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মায়োপিয়া সারানো যায় না, তবে সঠিক পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলে রোগ বাড়ার গতিটা কম হবে।


সম্প্রতি পৃথিবীর তিন দেশে পরিচালিত সব গবেষণায় প্রায় একই ফল মিলেছে, গ্রামের বিদ্যালয়ের শিশুদের চোখের দৃষ্টি সমস্যা শহরের শিশুদের তুলনায় নেই বললে চলে। শহরে বসবাসকারীদের বিশেষ করে অ্যাপার্টমেন্টে বসবাসকারী শিশুদের মধ্যে মায়োপিয়ার হার বেশি। তাই ফ্ল্যাট যত ছোট বা বড় হোক, শিশু যেন চাইলেই দিনের আলোতে আসতে পারে  এবং রাতের তারাভরা আকাশ দেখতে পারে, এমন ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুদের স্ক্রিনটাইম কমানো এবং বাইরে খোলা পরিবেশে খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করতে হবে। কম আলোয় পড়া বা কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শিশুকে দৈনিক এক ঘণ্টা দিনের আলোয় বাইরে থাকার সময় করে দিন।



পাকিস্তানীদের অদ্ভুত বিয়ে

ইংল্যান্ডে 'ফার্স্ট কাজিন' অর্থাৎ চাচাতো-মামাতো ভাই বোনদের মধ্যে বিয়ে দেবার প্রথাকে বাতিল করা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে! ব্রিট্রেনে বসবাসরত পাকিস্তানীদের মধ্যে ৩৭ পার্সেন্ট দম্পতি হলো ফার্স্ট কাজিন অর্থাৎ চাচাতো-মামাতো ভাই বোন! তাই একটি পাকিস্তানী ফ্যামিলিতে যদি ৩টি বাচ্চা থাকে, এরমধ্যে ১টি বাচ্চা প্রতিবন্ধী হয় এবং বাকি বাচ্চাদের নানা ও রোগ ব্যাধি হয়!

ইংল্যান্ডের ব্রাডফোর্ড শহরে প্রায় ৯০% পাকিস্তানিরা বাস করে! এদের মধ্যে ৪৬% পাকিস্তানীরা বিয়ে করেছে, নিজের চাচাতো-মামাতো ভাই বোনকে! তাই প্রতিবন্ধী সবচেয়ে বেশি দেখা যায় ব্রাডফোর্ডে!

একটা বাচ্চা যদি জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী হয়! তখন পাকিস্তানীরা  দারুন 'খুশি' হয়! কারণ এতে সারাজীবন কাড়িকাড়ি পাউন্ডস একাউন্টে এসে ঢুকতে থাকে! এভাবে প্রতিবন্ধী বাচ্চা জন্ম দিয়ে’ পাকিস্তানিরা কোনো কাজ না করেও, অট্টালিকা ক্রয় করতে পারে!