প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গুড ম্যানার্স প্রতিযোগিতা
প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান গুড ম্যানার্স প্রতিযোগিতা
এখানে ২টি অংশ আছে। প্রথম অংশ ৫০টি গুড ম্যানার্স । দ্বিতীয় অংশ জেন্টল প্যারেন্টিং ।
৫০ টি আদব কায়দা ও নৈতিকতা
খাবারের চারটি নিয়ম মেনে চলুন -
১। লবণ, চিনি মেশানো ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার, আলু, রুটি, ভাত, তেল, ঘি, চর্বি ইত্যাদি যতটা সম্ভব কম খাবেন, শাক-সবজি, ফলমূল লাইভফুড বেশি খাবেন। একটি ছোট প্লেটে ভাতের চেয়ে সবজি বা তরিতরকারি বেশি নিয়ে একটি ছোট চামচের মাধ্যমে খাবেন অতি ধীরে ধীরে কচ্ছপের গতিতে। হাত থেকে খাবারের দূরত্ব বজায় রাখবেন। হাত ভালোভাবে ওয়াশ না করে কোনো খাবারই হাত দিয়ে ধরবেন না।
২। মুখ বন্ধ করে খাবার ছিটাবেন, খাবারের সময় কারো সাথে বা মোবাইলে কথা বললে মুখের লালা তিন ফুট পর্যন্ত চারদিকে ছড়াতে থাকে; যা খালি চোখে দেখা যায় না। এতে একজনের রোগ জীবাণু অন্যজনের পেটে যায়।
৩। দিনের তিন বেলা খাবারকে ৬ থেকে ১০ ভাগে ভাগ করে খাবেন, দিনে দু’ঘন্টার বেশি না খেয়ে থাকবেন না, অন্তত পানি হলেও খেতে হবে। সন্ধ্যার পর বা রাতে শুধুমাত্র পানি ছাড়া সকল খাবার গ্রহণ ১৩ থেকে ১৬ ঘন্টা বন্ধ রাখুন।
৪। ডেড ফুড ও প্রসেস ফুড কম খাবেন। খাবারের সময় বা খাবারের পর পর পানি খাবেন না, অন্তত খাবারের আধা ঘন্টা পরে খাবেন। ক্ষিধে না লাগলে কেউ জোর করলেও খাবেন না।
মলত্যাগের নিয়ম:-সপ্তাহে তিনবার থেকে দিনে তিনবার মলত্যাগ করাটা আদর্শ। যখন একজন ব্যক্তির মলত্যাগ কম হয়, তখন মল তাদের অন্ত্রে দীর্ঘ সময় ধরে আটকে থাকে। ফলে তাদের অন্ত্রের জীবাণুগুলো তাজা খাবার পায় না,– তাই তারা ফাইবার এবং কার্বোহাইড্রেট খাওয়া থেকে প্রোটিন খাওয়ার দিকে চলে যায়। এতে ক্ষতিকর টক্সিন তৈরি হয়, যা রক্তে মিশে কিডনি ও হৃদযন্ত্রের মতো বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে। ফল ও শাক সবজিতে আছে ফাইবার। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ও পর্যপ্ত পানি পানে নিয়মিত মলত্যাগ হয়।
গোসলের নিয়ম:-শরীরের ভিতরের তাপমাত্রা বাইরের পানির তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগে। তাই প্রথমেই মাথায় পানি দিলে সঙ্গে সঙ্গে রক্তসঞ্চালনের গতি বহু গুণ বেড়ে যায়। ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি ও মস্তিষ্কের ধমনি ছিঁড়ে যেতে পারে। এজন্য স্ট্রোক সাধারণত বাথরুমেই বেশি হয়। প্রথমে পায়ের পাতা ভেজাতে হবে। এরপর ওপর দিকে কাঁধ পর্যন্ত তারপর মুখ, সবার শেষে মাথা। দুই বা তিন দিন পরপর গোসল করা স্বাস্থ্যসম্মত। অন্যসময় গামছা /তোয়ালে দিয়ে বগল এবং কুচকি মুছে সংক্ষিপ্ত গোসল হতে পারে। প্রতিদিন সাবান বা শাওয়ার জেল ব্যবহার করবেন না। আমাদের ত্বক থেকে এক ধরনের তেল নিঃসরিত হয়, যা ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল রাখে। এ ছাড়াও ত্বকের বাইরের স্তরে কয়েক ধরনের স্বাস্থ্যকর জীবাণু থাকে। যারা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে এবং শরীরে প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে। সাবান বা জেল ব্যবহারে ত্বকের নিঃসরিত তেল এবং ভালো জীবাণুও পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে ত্বক উজ্জ্বলতা হারায়।
ঘুমের নিয়ম:-মন-মেজাজ ভালো রাখার সঙ্গে শরীর ও মনকে কার্যকর রাখতে পরিমিত ঘুম দরকার। রাত ১০টা-১১টার মধ্যে শুয়ে পড়া এবং ভোর ৫টা-৭টার মধ্যে ওঠা স্বাস্থ্যসম্মত। শিশু (৬-১৩ বছর): ৯-১১ ঘন্টা; কিশোর (১৪-১৭ বছর): ৮-১০ ঘন্টা; এবং প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৬৫ বছর): ৭-৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। শোবার ঘর অন্ধকার এবং শান্ত হওয়া উচিত। শক্ত ও নরমের মাঝামাঝি গদি এবং নরম বালিশ ব্যবহার করুন। পিঠ বা বাঁ দিকে ফিরে শোয়া সর্বোত্তম; উপুড় বা পেটের উপর নয়। প্রস্রাবের বেগ এড়াতে ঘুমের ১ ঘন্টা আগে পানি কম পান করুন। ঘুম না এলে উঠে বই পড়ুন। সন্ধ্যার পর হাটা বা জগিং কিংবা ব্যায়াম করা উচিত নয়। দুপুরে ১০-২০ মিনিট হালকা ঘুমিয়ে নিতে পারেন।
১। কোনো কিছু চাওয়ার সময় ‘দয়া করে’ বলতে হবে এবং কোনো কিছু পাওয়ার সময় ‘ধন্যবাদ’। যে কোনো ভুলের জন্য নিঃসংকোচে ‘দুঃখিত’ বলতে হবে। কারো অনুমতি নেওয়ার আগে ‘আমি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি’ বলতে হবে।
২। যে কারও ঘরে প্রবেশ করার আগে দরজায় কড়া নাড়ানো এবং অনুমতি চেয়ে নিতে হবে। নিজেদের নয় এমন কোনও জিনিসে, এমনকি তার মা-বাবার জিনিসেও হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই তাদের অনুমতি নিতে হবে। অন্যের জিনিসকে নিজের দামী জিনিসের মতো ভেবে, যত্ন করে রাখতে হবে।
৩। সব সময় রাস্তার ডান পাশ দিয়ে হাঁটতে হবে। মোবাইল ব্যবহার, গান শোনা, বা অন্য কোন কিছুতে মনোযোগ দিয়ে হাঁটা থেকে বিরত থাকতে হবে। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে বাঁক বা মোড়ের রাস্তা ব্যাবহার করবেন না। রাস্তায় খেলা করা বা দৌড়াদৌড়ি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেউ আপনার দিকে আসছেন দেখে তার দিকে তাকিয়ে থাকা অভদ্রতা।
৪। যত অল্প খাবারই হোক না কেন, খাবারগুলি অপরের সাথে ভাগ করে নেবার অভ্যাস চর্চা করতে হবে। কখনো একা খাবেন না। যখন কোনো আত্মীয় বা বন্ধুদের বাড়িতে যাবেন, তখন সেখানে শান্ত, ভদ্র এবং নম্র হয়ে থাকবেন। তাদের পরিবেশিত খাবারের উপর কোনো খুঁতখুঁতে ভাব দেখাবেন না এবং আপনার পছন্দের খাবারের কথা বলবেন না।
৫। কেউ যদি আপনাকে খাওয়াতে নিয়ে যায় তবে অল্পদামি কোনো খাবার বাছাই করুন। ছুরি ডান হাতে এবং চামচ বা কাঁটা চামচ থাকবে বাম হাতে। স্যুপ গরম হলে তাতে ফুঁ না দিয়ে চামচ দিয়ে নেড়ে ঠাণ্ড্া করুন। পাস্তা, নুডলস, কাঁটা চামচ দিয়ে খেতে হয়।
৬। হাঁচি বা কাশির সময় বা হাই তোলার সময় মুখ হাত দিয়ে চাপা দিতে হবে। কারো সামনে নাকে,গালে, মুখে হাত দেওয়া বা খোঁটা থেকে বিরত থাকতে হবে। কথা বলার সময় হাত দিয়ে মুখ ঢাকার অর্থ আপনি নার্ভাস।
৭। যে কেউ ঘরে প্রবেশ করার সময় বা বের হবার সময় দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে বা হাতলটা টেনে ধরে ঢুকতে/বেরুতে সাহায্য করতে হবে। অতিথি যাবার সময় অবশ্যই বাড়ির গেট পর্যন্ত এগিয়ে দেয়া এবং তিনি অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকা উচিত।
৮। কারো সাথে পরিচয় হওয়া মাত্রই তার গ্রামের বাড়ি বা ব্যক্তিগত পরিচয় জানতে চাওয়া মূর্খতা ও অভদ্রতা। নিজে থেকে না বললে কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে জানতে চাওয়া বা আলোচনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। নিজের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় ও সমস্যাদি শেয়ার করবেন না।
৯। কোনো কক্ষে প্রবেশের সময় সবাইকে সালাম। কাউকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় তার স¤পর্কে ছোট একটা কথা যোগ করে দিন। ইনি আমার ভাই/বন্ধু রাসেদ, ও ভাল ক্রিকেট খেলে..। যখন কোন ব্যক্তি কক্ষে প্রবেশ করে, সে প্রথম বসে থাকা মানুষটার দিকে হাত বাড়াবে এবং বসে থাকা মানুষটি দাঁড়িয়ে হাত মেলাবে। বসে থেকে হাত মেলালে অভদ্রতা।
১০। রেস্তোরাঁ বা বাড়ীতে নিজের খাবারের ওয়েস্টিজ নিজেই ডাস্টবিনে ফেলবেন। অন্যের ওয়েস্টিজও নিজের মনে করে সংরক্ষণ করে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। আপনার ওয়েস্টিজ ও প্লেট অন্য কেউ পরিষ্কার করাটা অসভ্যতা।
১১। কখনো কাউকে কাজের লোক বা বুয়া বলে ডাকা যাবে না। মনে রাখতে হবে তারাও কারো না কারো ভাই, বোন, মা, বাবা। তাদেরকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে।
১২। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে বা কোথাও কোনো বয়স্ক ব্যক্তি বা মহিলা চোখে পড়লে, তাকে নিজের বসার স্থানটি ছেড়ে দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করা উচিত।
১৩। কোথাও গিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসা, পা নাচিয়ে চলা, হেলাল দিয়ে বাঁকিয়ে বসা কিংবা টেবিলে সামনে ঝুঁকে কারো সাথে কথা বলা অভদ্রতা। এছাড়া ২পরিবার, বন্ধু-বান্ধব বা অতিথির সাথে কথা বলার সময় বা যে-কারো সামনে বসে’ মোবাইল ফোন টিপা কিংবা কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না একা থাকা যাবে।
১৪। অন্যের অনুপস্থিতিতে কখনো তার সমালোচনা করবেন না। এই ধরণের আলাপ আলোচনা থেকে দূরে থাকুন। কেউ অন্যে কারো সমালোচনা করলে আপনি তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে সবার কাছে আপনি সম্মানিত হবেন।
১৫। প্রকাশ্যে চেঁচিয়ে, চিৎকার করে এবং অট্টহাসির সাথে জোরে জোরে কথা বলাটা প্যুয়র মেন্টালিটি বা কাঙ্গালি মানসিকতার লক্ষণ। কারো অগোচরে তার সমালোচনা করা, গোপনে অন্যের ক্ষতি করা, যেমন-আপনি যে-কোন পাবলিক প্লেসে গেলে দেখবেন, সেখানে এটা ভাঙ্গা, উঠা ছিরা বা কাটা; বাথরুম বা কোনো দেওয়ালে এটা ওটা লিখা-আঁকা, কারো বাড়ী বা গাড়ীর দিকে ঢিল মারা ইত্যাদি হলো কাঙ্গালি মানসিকতারই অবদমিত প্রতিক্রিয়া।
১৬। অপরিচিতজনের সঙ্গে কথাবার্তার সময় প্রথমে নিজের পরিচয় দিয়ে আলাপ শুরু করুন। কোনো প্রতিষ্ঠানে গেলে অপরিচিত সবাইকে স্যার, ম্যাম বলে সম্বোধন করা নিয়ম। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের বাইরে সবাইকে ভাইজান / আপামনি / বড়ভাই / ছোটভাই / মামা /আংকেল-আন্টি ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত।
১৭। শিক্ষক ও গুরুজনদের নিয়ে উপহাস/হাসাহাসি করা নিম্ন শ্রেণির বর্বর কাজ। এই আচরণ যারা করে, এমন জঘন্যদের বর্জন করুন। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজনসহ চেনা-পরিচিতদের ভাল গুণগুলোর প্রশংসা করতে হবে এবং খাবাপ গুণ বা সমালোচনা এড়িয়ে চলতে হবে।
১৮। পরিবারের সদস্য, আত্মীয় বা অন্য যে-কোনো নারী-পুরুষ, কে কী পোষাক পরেছে, হিজাব না টপলেস, স্কাট না বিকিনি, তা নিয়ে উৎসুখ থাকা এবং মন্দ মন্তব্য করা জঘন্য অপরাধ। কে কি পরবে, তা তার রুচি ও পছন্দের ব্যাপার।
১৯। বাড়িতে অতিথি এলে প্রথমে অতিথিদের ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিন, তার পরে অন্যরুম দেখান। আপনি কোথাও অতিথি হলে আয়োজকের জন্য অপেক্ষা না করে খাবার খাওয়া শুরু করবেন না। আপনার যদি আগে চলে যেতে হয়, তবে অনুমুতি নিন। কারো বাড়িতে অনুমতি না নিয়ে কোন জিনিসে হাত দিবেন না।
২০। কারো মতামতে কিংবা কাজে ভুল ধরা উচিত নয়। এতে তার হীনমনোবৃত্তি দেখা দেয়। তাই কখনো বলবেন না “আপনার কাজ কিছুই হয় নাই।” বরং বলুন- “ঠিক আছে আপনি এভাবে করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয় অন্যভাবে চেষ্টা করা যেতে পারে। যেমন..অর্থাৎ ভুল না ধরে তাকে প্রসংসা ও উৎসাহপূর্ণ পরামর্শ দিন।
২১। কখনো মুখটাকে হাঁড়ি করে রাখা যাবে না। সৌন্দর্য ও নের্তৃত্বের মূল শর্ত হল: মধুর স্বভাব, হাস্যোজ্জ্বল মুখ। তাই রাস্তাঘাটে পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে সৌজন্যমূলক স্মাইল দেয়া শুরু করতে হবে এবং সব সময় স্মাইলির সংগে কথা বলা চর্চা করতে হবে।
২২। নিজে কম বলে অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার অভ্যাস চর্চা করতে হবে। যত বেশি শুনবেন, ততবেশি তথ্য পাবেন। অন্যকে এমন কোনো কথা বলা যাবে না, যাতে সে বিরক্ত হয়ে উঠে। যে কথা বলা দরকার, সেটা বলার আগে মনে মনে কয়েকবার গুছিয়ে নিতে হয়।
২৩। সুন্দর করে কথা বলা এক ধরনের আর্ট। অন্যদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। কথার মাঝে কথা বলা যাবে না। যখন কিছু বলার থাকে না, তখন চুপ করে থাকত হবে। নম্রতার সাথে আন্তরিকতা মিশিয়ে কথা বলা চর্চা করতে হবে।
২৪। কথা বলতে বলতে অযথা বা অপ্রয়োজনীয় তর্কে মেতে উঠবেন না। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে না বাড়িয়ে সে জায়গা থেকে সরে যেতে হবে। তর্কে জেতা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। নির্বোধের কথার উত্তর না দেয়াই তার যথার্ত উত্তর।
২৫। অন্যের সঙ্গে ফিসফিস করে বা ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলা যাবে না- যা তৃতীয় জনের পক্ষে বোধগম্য নয়। অনেকের মাঝে যদি কাউকে কিছু একান্তই বলতে হয় তাহলে নিচু স্বরে বা আড়ালে ডেকে নিয়ে বলতে হবে। একাধিকজন উপস্থিত থাকলে মাত্র একজনের সঙ্গে কথা বলা যাবে না, সবার সাথে কম/বেশি কথা বলতে হবে।
২৬। নতুন সম্পর্ক তৈরি করার ক্ষেত্রে, তার প্রশ্নের জবাব একলাইনে দেবেন না, ‘কথার হাত-পা বের হবার মত’ কিছু তথ্য বা ঘটনা বলতে হবে। যেমন: আপনি কোথায় থাকেন জানতে চাইলে; এক শব্দে না বলে এভাবে বলবেন- মোহাম্মদপুর, ঈদগাঁ মাঠের পাশে, আমাদের কাছেই জেনেভা ক্যাম্প। অন্য পাশে শিয়া মসজিদ।
২৭। যদি আপনি সামনের মানুষটির সাখে কথা আরো বাড়াতে চান, তাহলে সামনের মানুষটির কথার অংশ তোতা পাখির মত রিপিট করতে হবে। যেমন- এক ব্যক্তি বলল- সে একটা বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরছে। আপনি বলুন: বিয়ে? ব্যক্তি:-হ্যাঁ, আমার মামাত বোনের বিয়ে। আপনি:-মামাত বোন? ব্যক্তি:--হ্যাঁ, সে ডাক্তারি পড়ছে। আপনি:- ও ডাক্তার? এভাবে রিপিট করে করে চালিয়ে যান।
২৮। “সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি” সোজা হয়ে দাঁড়ানোর নিয়ম হল: আপনার কাঁধ কোমর, হাঁট, গোড়ালি একটি সরলরেখায় থাকবে। আর বসে থাকার সময় আপনার ঘাড় সোজা, কাঁধ শিথিল, কনুই চেয়ারের হাতলে,হাঁটু ফ্লোরের সাথে সমকোণে,পায়ের পাতা ফ্লোরের সাথে লাগানো থাকবে।
২৯। ভিন্ন মত এবং অন্য ধর্মের প্রতি সম্মান ও সহনশীলতা দেখাতে হবে। সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার জন্য বাড়াতে হবে অন্যের সাথে মেশার দক্ষতা। আপনি যতবেশি মানুষের সঙ্গে মিশবেন, ততবেশি আপনার সৌভাগ্যের দরজা খুলে যাবে। সুযোগ মিশুক মানুষের জন্য সর্বদা অপেক্ষামান থাকে।
৩০। কারো সাথে দেখা করতে গেলে খালি হাতে যাবেন না, সে যদি বলেও কিছু লাগবে না, তবুও ছোট কিছু (অন্তত একটা চকলেট কিংবা আপনার খাবারের ছোট্ট একটু অংশ) নিয়ে যান। মাঝে মাঝে প্রিয় মানুষদের কিছু না কিছু উপহার দিন।
৩১। মুড না থাকা অস্বাস্থ্যের লক্ষণ। মুড নেই বলে দরকারি কাজ থেকে হাত গুটিয়ে থাকলে পরে আর মুড আসতে চায় না। এর কারণ, কাজটা না করার জন্য আমাদের ব্রেন অসংখ্য অজুহাত তৈরি করে। ব্রেনের এ অজুহাত বন্ধ করার জন্য ৫ সেকেন্ডের মধ্যেই সচেতন হয়ে যান। নিজেকে বলুন, ইয়েস এক্ষুণি আমি এটা করবো এবং শুরু করে দিন; নয়তো ব্রেনের ড্রেনে পড়ে যাবেন।
৩২। কাউকে এমন কোনো মন্তব্য করতে যাবেন না- যা অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করে। তার কোনো অদক্ষতা, অক্ষমতার প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন না। আক্রমণাত্মক ঠাট্টা মসকারা, কাউকে কটাক্ষ বা ব্যঙ্গক্তি করা বা কাউকে নিয়ে ট্রল করার মধ্যে পরোক্ষভাবে কাউকে অপমান করা হয়।
৩৩। সর্বক্ষেত্রে আমাদের অথেনটিক হতে হবে। অথেনটিক অর্থ হচ্ছে খাঁটি, বিশুদ্ধ, সত্য, প্রকৃত, বিশ্বাসযোগ্য, আসল, নির্ভরযোগ্য, নির্ভেজাল, প্রমাণসিদ্ধ, অকৃত্রিম। যদি কাজে-কর্মে কোনো ভুল হয়ে যায় তবে তা সহজে মেনে নিন এবং স্বীকার করুন। প্রয়োজনে বিনয়ের সঙ্গে দুঃখ প্রকাশ করুন।
৩৪। নিজের বড়ত্ব জাহির করার জন্য আপনাকে কেউ ছোট করলে রেগে যাবেন না। তবে হাসিমুখে আপনি যে তাদের কথায় আঘাত পেয়েছেন সেটা বুঝিয়ে বলুন। প্রতিনিয়ত যারা আপনাকে অপমানের চেষ্টা করে তাদেরকে নিজ থেকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
৩৫। আপনি মনে মনে হয়তো ভালো কিছু করতে চেয়েছিলেন কিন্তু কথায় ও আচরণে সেটি ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে বা প্রকাশ করতে না পারলে, ফলাফল উল্টো হয়ে যাবে। কোনো বিষয় নিয়ে সঠিক সময়ে নীরব থাকা কিংবা স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করতে না পারলে সবকিছু আপনার বিরুদ্ধে চলে যাবে। কাজেই আপনি কি করেছেন বা করতে চাইছেন, তার ¯পষ্ট ব্যাখ্যা দিন, মনে মনে রাখবেন না।
৩৬। নিজের ঘরের সব কথা বন্ধুকে বলে দেবেন না। কোনো বিষয় নিয়ে পরিবারের মানুষদের সঙ্গে ঝগড়া হলে তা বন্ধুকে জানাবেন না। এতে আপনার পারিবারিক কলহের কথা সবাই জেনে যাবে। আপনাদের অর্থনৈতিক অবস্থা, অস্বচ্ছলতার কথা বন্ধুকে জানিয়ে নিজেকে ছোট করবেন না। কিন্তু কেউ যখন কোনো গোপন বিষয় আপনাকে জানায়, তা নিজ দায়িত্বে গোপন রাখুন।
৩৭। শরীরকে যা খাওয়ানো হয়, শরীর তেমনটি হয়ে ওঠে। অনুরূপ মনকে যে খোরাক দেওয়া হয়, মনও তেমন হয়ে ওঠে। মনের খোরাক হচ্ছে, ভাল বই, জ্ঞানী ব্যক্তি, ভাল চ্যানেল ইত্যাদি। আপনি যদি কিছুদিন হতাশাবাদী মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করেন, তাহলে আপনিও হতাশাস্থ মানুষ হয়ে যাবেন।
৩৮। অন্যের কাছে নিজের দক্ষতা জাহির করতে সবকিছু জানার ভান করে চুপ থাকবেন না। যে ব্যক্তি প্রশ্ন করে কিছু জানতে চায়, সে বোকা থাকে পাঁচ মিনিটের জন্য, আর যে জানার ভান করে প্রশ্ন করে না, সে বোকা থাকে সারা জীবন।
৩৯। কোন কাজ তাড়াহুড়া করে স্বল্প সময়ের মধ্যে করে ফেলার চেষ্টা করা ঠিক নয়। কাজের সংখ্যা নয়, কাজের মানই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাড়াহুড়া বিপদের কারন।
৪০। রাগের সময় অনেক বেফাস কথাও মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে; যা সর্বনাশ ডেকে আনে। জিহ্বার উপর কড়া শাসন চালান। রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন।
৪১। প্রতিশ্রুতি দিলে তা যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে। অপারগতায় ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। চরিত্রবান ব্যক্তিরা একবার কথা দিলে তা যত তুচ্ছ বা কঠিন হোক তা পালন করবেই।
৪২। আপনি পোশাক যদি পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি না হন, তাহলে বহুক্ষেত্রে আপনাকে অবমূল্যায়িত হতে হবে, যা কার্যসিদ্ধিতে সহায়ক হবে না।
৪৩। কোনো প্রয়োজনে কোথাও গেছেন, সেখানে সালাম দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা ভদ্রতা। বসতে আনুমতি চাওয়া, খুব সংক্ষেপে আপনার প্রয়োজন তুলে ধরা, প্রশ্নের সঠিক জবার দেয়া ইত্যাদি ভদ্রতা ও সভ্য আচরণের অংশ।
৪৪। প্রতিযোগিতায় নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্য প্রতিযোগিতাকে প্রতিহিংসায় পরিণত করা যাবে না। কারো সঙ্গে অন্যায় করে, শত্রুতা করে বা জোর করে আসন ছিনিয়ে নিলে, সে হয় ছিনতাইকারী প্রতিযোগী নয়।
৪৫। নিজের কাজ নিজে করার অভ্যাস হচ্ছে আত্মনির্ভরশীলতা। অপরের উপর অধিক মাত্রায় নির্ভরশীল হলে, তাতে স¤পর্কের আসল আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যায়। কারণ আপনার কাছে যা নির্ভরশীলতা, অপরজনের কাছে তা-ই বাড়তি দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব সামলানো তার বোঝা হয়ে দাঁডায়।
৪৬। একজন ২৫ বছরেই মন্ত্রী হয়েছিলেন, তিনি বেঁচেছিলেন ৫০ বছর। আরেকজন ৬৮বছর বয়সে চাকরি পেলেন। মানুষটা বেঁচে ছিলেন ৯০বছর! বেঁচে থাকাই হলো সার্থকতা। অল্পতেই কেউ সব পেয়ে গেলো মানে সে আপনার চেয়ে ভালো আছে এমন নয়। আবার আপনি যা চান সেটা পাননি বলে আর কখনো পাবেন না, এমনও নয়। নিজের মতো করে মনোযোগ দিয়ে কাজ করে যান, আপনার টাইম জোনে সুযোগ আসবেই।
৪৭। কোকের ক্যানে বা এনার্জি ড্রিংকসে প্রচুর চিনি থাকে। যা দেহে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এনার্জি ড্রিংকসে থাকা ‘টাউরিন’ ও কোমল পানীয়ের ‘অ্যাসিড লোড’ হিসেবে কাজ করে। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিডিটির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
৪৮। দ্বিতীয়বার রিং হওয়ার পরেও যদি কল না ধরে তবে কল কেটে দিন। যদি অপরিচিত কাউকে কল দেন, তাহলে আপনার পুরো নাম/পরিচয়টা প্রথমে বলুন।
৪৯। কাছের লোকজনের প্রতি প্রতিদিন আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। তাঁদের সান্নিধ্যে থাকা অবস্থায় কিছুতেই অন্যমনস্ক হওয়া যাবে না।
৫০। যত বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন, ভাল ভাল খাবেন, ততবেশি দেখা দেবে লাইফস্টাইল অসুখ।
দ্বিতীয় ভাগ
জেন্টল প্যারেন্টিং (অভিবাবকদের কোমল আচরণ)
প্রত্যেক বাবা-মাকে এই লেখাটা অবশ্যই পড়তে হবে
যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেটের স্কুলশিক্ষক ‘জেন এলিয়ট’ তার শিক্ষার্থীদের উপর এই এক্সপেরিমেন্টটি চালান। মার্টিন লুথার কিংয়ের চিন্তাধারা তাকে সবসময় প্রভাবিত করত। ১৯৬৮ সালে যখন মার্টিন লুথার কিংকে খুন করা হয় তারপর থেকেই তিনি তার ছাত্র-ছাত্রীদের বর্ণবাদ, বৈষম্য এই ব্যাপারগুলো বোঝাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তা কিছুতেই ফলপ্রসূ হচ্ছিলো না। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা আগের মতোই মফস্বল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের অবজ্ঞার চোখেই দেখে যাচ্ছিল। এলিয়ট তার শিক্ষার্থীদের উপর দুই মাসব্যাপী একটি এক্সপেরিমেন্ট চালালেন। প্রথমে তিনি তার ক্লাসটিকে দুটি গ্রুপে ভাগ করলেন। প্রথম গ্রুপে রাখলেন যাদের চোখের রং নীল এবং দ্বিতীয় গ্রুপে রাখলেন যাদের চোখ বাদামী।
তিনি প্রথম গ্রুপ অর্থাৎ যাদের চোখের রঙ নীল তাদেরকে বাদামী চোখের শিক্ষার্থীদের চেয়ে উঁচু মর্যাদার বলে ধরে নিলেন এবং বেশি সুযোগ-সুবিধা দিতে শুরু করলেন। দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যদের কোণঠাসা করার জন্য তিনি তাদের বিভিন্ন দোষ-ত্রুটি সবার সামনে বর্ণনা করতে শুরু করলেন। এর ফলাফল হলো খুবই চমকপ্রদ। প্রথম গ্রুপের শিক্ষার্থীরা অর্থাৎ যারা নিজেদেরকে সুপিরিয়র ভাবছে, তাদের আচরণ খুব দ্রুত পরিবর্তিত হতে লাগল। তারা ক্লাসে এখন সবচেয়ে মনোযোগী এবং কোনো কিছু না বুঝলে তারা সাথে সাথে প্রশ্ন করে। ক্লাস টেস্টেও তারা দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যদের চেয়ে অনেক ভাল করলো। সবথেকে মন খারাপ করা যে ব্যাপারটা ঘটল তা হলো, তারা তাদের দ্বিতীয় গ্রুপের বন্ধুদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করল এবং তাদের উপর এক ধরনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করতে লাগল। অন্যদিকে দ্বিতীয় গ্রুপের শিক্ষার্থীরা হীনম্মন্যতায় ভুগতে লাগল এবং সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়তে লাগল।
পরের মাসে ‘এলিয়ট’ একই এক্সপেরিমেন্ট চালালেন। কিন্তু এবার যাদের চোখের রঙ বাদামী তাদেরকে নীল চোখের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সুপিরিয়র হিসেবে ধরে নিয়ে অনুপ্রেরণা দিতে লাগলেন। তখন ফলাফলও উল্টে গেল। অর্থাৎ নীল চোখ যাদের তারা সবকিছুতে পিছিয়ে পড়তে লাগল।
এই এক্সপেরিমেন্টটি আমাদেরকে বোঝাতে পারে যে, সমাজে যারা অবহেলিত তারা কেন পিছিয়ে পড়ে এবং নানা অপরাধের সাথে যুক্ত হয়। আর যারা সুপার পাওয়ার হয়, তারা কিসের জোরে দুনিয়াটা শাসন করে। পরিবারে বা সমাজে যদি কাউকে সমালোচনা বা অবহেলা কিংবা দমিয়ে রাখা হয়, তাহলে তার পক্ষে পাওয়া হিসাবে গড়ে উঠা খুবই কঠিন, পক্ষান্তরে যদি কাউকে প্রশংসা ও উৎসাহিত করা হয়, তাহলে তাকে অনেকদূর নিয়ে যাওয়া সম্ভব। পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই সম্ভাবনাময়, শুধু দরকার তার ভিতরের ঘুমন্ত শক্তিকে জাগিয়ে তোলা। নিজের পরিবার, সন্তান বা কর্মচারী কিংবা অন্য কেউ, সর্বদা তাদেরকে প্রশংসা ও উৎসাহের মধ্যে রাখুন, দেখবেন সে সত্যিই জ্বলে উঠবে এবং তার কল্যাণে আপনি বেশি সুখী হবেন।
এখানে সন্তানের প্রতি অভিবাবক হিসেবে আপনার করণীয় কিছু দিক নির্দেশনা পরামর্শ রইল:
✅ সন্তানের প্রতি আপনার ভালোবাসা প্রকাশ করুন। তাকে ভালোবাসছেন অথচ তা প্রকাশ করছেন না, এমনটা যেন না হয়। সন্তানের কথাগুলো যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে শুনুন। তাকে তাচ্ছিল্য করবেন না।
✅ ‘গুণগত সময় দিন। অর্থাৎ যতটুকু সময়ই তার সঙ্গে থাকছেন না কেন, সে সময়টুকু শুধু তাকেই দিন।
✅তার সামনে কোনো অপরাধ করা বা অপরাধের পক্ষ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। তাকে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হলে বাবা-মা নিজেরা মিথ্যা বলবেন না, আইন ও নিয়ম ভাঙবেন না। সন্তানের সামনে পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্য বা তার শিক্ষকের সমালোচনা করা থেকে বিরত থাকুন; বাবা-মা একে অপরকে ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ বা নিন্দা করবেন না, তর্কে জড়াবেন না।
✅সন্তানের উপর অযথা চাপ তৈরি করবেন না-‘তোমাকে এটা পারতেই হবে’, এ ধরনের লক্ষ্য নির্ধারণ তাকে দেবেন না। সন্তানকে কোনো অবস্থাতেই মারবেন না, তীব্র কটাক্ষ করে বকবেন না, প্রয়োজনে বুঝিয়ে বলুন। অন্য কারও সঙ্গে সন্তানের তুলনা করবেন না, তাকে অহেতুক সন্দেহ করবেন না।
✅ গোপন নজরদারি করবেন না, প্রয়োজনে তার সঙ্গে সরাসরি কথা বলুন।
✅ তার ভালো কাজের প্রশংসা করুন, অপছন্দের কাজ করলে একটা পর্যায় পর্যন্ত সেটির প্রতি গুরুত্ব দেবেন না।
✅ সন্তানের প্রতিভা বা আগ্রহের দিক বুঝে তা বিকাশের জন্য তাকে সুযোগ করে দিতে হবে।
✅ সন্তানের কোনো ব্যর্থতাকে সমালোচনা-বিদ্রƒপ করবেন না। সন্তানের ছোটখাটো সফলতার জন্য তাকে উৎসাহ দিতে হবে এবং কোনো কাজে ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করে তা নিরসনের চেষ্টা করতে হবে।
✅ সন্তানের সঙ্গে একত্রে বিভিন্ন খেলা খেলুন। সপ্তাহে অন্তত একদিন সন্তানকে নিয়ে বেড়াতে যান। সামাজিক, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, স্বেচ্ছাসেবা এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে দিন। বিকালে তাকে একটু বেড়াতে ও খেলতে দিন, একটু দৌড়-ঝাঁপ করতে দিন। শারীরিক শ্রম করতে উৎসাহিত করুন।
✅ সন্তানের মোবাইল ফোন বা ট্যাব ব্যবহার সীমিত করুন। প্রয়োজনে আপনি নিজেও মোবাইল ফোন বা ট্যাব ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ ব্যবহার কমিয়ে দিন। * পরিবারে সবাই অন্তত একবেলা একসঙ্গে বসে খাদ্য গ্রহণ করুন।
✅ সন্তানের বন্ধুদের গুরুত্ব দিন। ভালো বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে উৎসাহিত করুন। তবে পরিষ্কার ধারণা রাখুন, সে কাদের সঙ্গে যাচ্ছে, কোথায় সময় কাটাচ্ছে। নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছে কিনা?
✅ সন্তানের বই-ব্যাগ, নিজের জামা, নিজের রুম, নিজের বিছানা তাকে পরিষ্কার করতে উৎসাহিত করুন। বাজার করা থেকে শুরু করে কোনো পাবলিক যোগাযোগের কাজে তাকে সংপৃক্ত করুন।
✅ চিৎকার, বকাঝকা বা শাস্তির মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরিবর্তে কোমল অভিভাবকরা ইতিবাচক শৃংখলা শেখার কৌশলগুলোতে মনোযোগ দেয়। এতে শিশু লজ্জা বা ভয় সৃষ্টির পরিবর্তে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে।
✅ ‘জেন্টল প্যারেন্টিং’ মানে এই নয় যে, শিশুর বিশৃংখলাকে প্রশ্রয় দেবেন বা শিশুর সব আব্দার মেনে নিবেন বরং তাকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা,শাসণ ও নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা। অতি আদর বা অতি শাসন নয় সন্তানকে দিক নির্দেশনায় মধ্যপন্থা অবলম্বন করতে হবে।
✅ বেডরুম ও রিড়িং রুমে “নো কানেকশন জোন” তৈরি করুন। টিভিসহ কোনো ডিভাইস রাখবেন না। * সন্তানকে কখনো আড়ালে লুকিয়ে খেতে দেবেন না, এতে তার লুকিয়ে খাবার অভ্যাস তৈরি হবে। তাহলে ভবিষ্যতে সে আপনাকেও লুকিয়ে খাবে। বাচ্চা যাতে খাবার অন্যদের সাথে শেয়ার করে,সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
✅ সন্তানকে যতই শাস্তি দেবেন ততই সে অসামাজিক হবে এবং শারিরিক-মানসিক বৃদ্ধি ব্যহত হবে। কাজেই শাস্তি দেয়া থেকে বিরত থাকুন।
যেসব কথা ও কাজ সন্তানের আত্মবিশ্বাস ভেঙে দিতে পারে
বিভিন্নভাবে সন্তানের আত্মবিশ্বাস ভেঙে যাচ্ছে। যেমন:
বাঁকা কথা বলা: কথা বলার সময় বাবা-মা একে অপরের সঙ্গে বা সন্তানের সঙ্গে বাঁকা কথা বলার চর্চা একেবারেই সুস্থ চর্চা নয়। এতে বাবা-মাসহ শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যে এর ভালো প্রভাব পড়ে এবং পারিবারিক পরিবেশে বিষাক্ত বাতাস বয়ে যায়। কখনো যদি রাগের বশে এমন কথাবার্তা চলেও আসে, বাবা-মায়ের উচিত হবে সেটি বাচ্চাদের আড়ালে গিয়ে বলা।
দোষারোপ করা: শিশু অবস্থায় বা বেড়ে ওঠার সময়টায় অনভিজ্ঞতা বশত এসব ভুলের মাত্রা বেশি হবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে সেই সব ভুলে নিয়ে অবিরাম দোষারোপ করতে থাকলে সে কখনোই কোনো ঠিকভাবে করতে পারবে না, এমন ভুল ধারণা শিশুমনে বাসা বাঁধে। আর তা থেকে জন্ম নেয় আত্মবিশ্বাসের অভাব।
অতীতকে টেনে আনা: বারবার অতীতের ঘটনা উল্লেখ করে, কার কী ভুল হয়েছিল, কার কী মনে রাখা উচিত ছিল ইত্যাদি ধরনের কথাবার্তা না বলাই ভালো। এতে শিশুটি অতীতচারী বা অতীত নিয়ে ভাবনার শিকার হতে পারে, যা তাকে কখনোই সম্পূর্ণরূপে আত্মবিশ্বাসী হতে দেবে না।
অন্য বাচ্চাদের উদাহরণ দেওয়া: অনেক বাবা-মা বাচ্চাকে প্রতিবেশি বা সহপাঠীর পা ধোয়া পানি খেতে বলে। পড়াশোনা, পুরস্কার প্রাপ্তি, এমনকি কোনো ঘটনার উদাহরণ টেনে এনে বাবা-মায়েরা মূলত সন্তানকে উৎসাহী করে তুলতে এমনটি বলেন। কিন্তু এতে সন্তানের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সন্তানটির মধ্যে সেই প্রতিবেশী বা সহপাঠীটির চেয়ে অধঃস্তন মনে করার প্রবণতা জন্ম নেয়। যা তার ভবিষ্যতের জন্য খুবই খারাপ।
মনোযোগ দেওয়া: ছোটরা ভীষণ ভাবে মনোযোগ চায়। ছোটরা বুঝতে পারে কে তাদের গুরুত্ব দিচ্ছে, আর কে গুরুত্ব দিচ্ছে না। তাই শিশুরা যখন কথা বলছে বা নতুন কিছু করছে, তখন তাদের প্রতিই স¤পূর্ণ মনোযোগ দিন। সেই সময় অন্য কোনও কাজ করবেন না।
প্রতিশ্রুতি রাখা: শিশুকে কোনো বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে, দু'বার ভাবা জরুরি। আদৌ সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবেন কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত না হলে কোনও আশা দেখানো উচিত নয়। বেড়াতে নিয়ে যাব বলে যদি শিশুকে পড়তে বসান বা অন্য কোনও কাজে যুক্ত করেন, কাজ শেষের পর যদি কথা না রাখেন, তা হলে শিশুর মনে বাবা-মায়ের প্রতি বিরুপ মনোভাব তৈরি হতে পারে।
আপনার শিশুকে কিভাবে বড় করবেন
স্কুলে ভর্তির পর থেকেই প্রতি রাতে ওর জামা, জুতা ও স্কুলব্যাগ গোছানো ওকে দেখিয়ে দিন। একটু বড় হলেই আর সাহায্য না করে একা কাজ করতে শেখাতে হবে। তবে মন খুলে কাজের প্রশংসা করতে ভুলা যাবে না। বাচ্চার বয়স সাত-আট বছর হলেই ওকে ঘরের টুকটাক কিছু কাজ করতে দিতে হবে। ওর মনোবল ভেঙে যায় এমন কিছু বলা যাবে না। তবে কোনোরকম দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে জন্যে প্রথম প্রথম কাজের সময় ওর আশপাশে থাকতে হবে।
কাজ শুরুর দিকে ভুল হতেই পারে। ওর করা কাজটা হয়তো আপনাকে আবার করতে হবে। রেগে যাওয়া যাবে না। ধৈর্যের সঙ্গে ওর পাশে থেকে ওকে সাহায্য করতে হবে। যতদিন না পর্যন্ত নিজেই কাজটা করতে পারে ততদিন বারবার দেখিয়ে দিতে হবে। ওকে বকাঝকা করলে ও কাজের উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে। ও যেমনই করুক তার চেষ্টার প্রশংসা করতে হবে। বাচ্চাকে দায়িত্ব দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু স্বাধীনতাও দিতে হবে। ও কোন জামা পরবে ও টিফিনে কী খাবে ওকেই সিদ্ধান্ত নিতে দিতে হবে। সবসময় নিজের মতামত তার উপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না। এতে করে সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি বাজেট করাটাও ও শিখে যাবে।
বাচ্চাদের মস্তিষ্ক বিকাশে আপনি কী করবেন?
ওদের সাথে সময় কাটান: বাচ্চারা মা-বাবার সাথে সময় কাটানোর মধ্য দিয়ে ভাষা, মুখভঙ্গি এবং আবেগের প্রকাশ শেখে। এমনকি আপনার ছোঁয়াও আপনার সন্তানের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ছোট ছোট কাজ, যেমন- হাত ধরে হাঁটা, হাত ধরে লেখা শেখানো, খেলাধুলার সময় পর¯পরের সাথে ¯পর্শও এই বিষয়ে কার্যকরী হতে পারে। পড়ার সাথে পরিচিত করান: বই পড়ার অভ্যাসটি বাচ্চাদের মনে গেঁথে দেয়াটা খুব জরুরি। পড়লে বাচ্চাদের শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে। এছাড়াও ওদের কল্পনাশক্তি বিকশিত হয়। যার ফলে কথাবার্তা সুসঙ্গত হয়।
অনুসন্ধিৎসু বা কৌতূহলী হতে অনুপ্রাণিত করুন: বাচ্চারা প্রাকৃতিকভাবেই কৌতূহলী হয়ে থাকে। কিন্তু যখন প্রতিটি বিষয়ে ওদের অনবরত প্রশ্ন করার জন্য ওদেরকে থামিয়ে দেয়া হয় বা প্রশ্নগুলো অবহেলা করা হয়; কৌতূহলের এই প্রবণতাটি ওদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাবে।
স্ক্রিন টাইম কম করুন বা এড়িয়ে চলুন: যদি আপনার বাচ্চা টিভি বা ইন্টারনেটে শিক্ষণীয় কিছু দেখেও থাকে তবে অবশ্যই আপনি ওর পাশে থাকবেন। বাচ্চাদের দিনে সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টার বেশি টিভি বা ক¤িপউটার দেখতে দেয়া ঠিক নয়।
সামাজিক দক্ষতা বিকশিত হতে সাহায্য করুন: বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাইরের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ার বিষয়টি ওকে রপ্ত করতে হবে। খেলাতে রয়েছে হার-জিতের ব্যাপার। হেরে গেলে থেমে না থেকে অন্যদের সাথে পাল্লা দিয়ে কীভাবে আবারও সামনে এগিয়ে যেতে হবে তা-ও শেখে বাচ্চারা। এছাড়াও জিতে গেলে নিজের খুশি অন্যদের সাথে কীভাবে ভাগাভাগি করে নিতে হয় সেটাও শেখান।
গান বা বাজনা মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলি সত্রিয় করে: বিভিন্ন ধরনের ইন্সট্রুমেন্ট বাজানো শিখান। গবেষক কলিন্স বলেছেন, “গান বা বাজনা শোনার সময় আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ সাড়া দেয়। কেউ যখন কোনো ইন্সট্রুমেন্ট বাজায় বা শোনে, তখন তার মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলি স¤পৃক্ত হয়ে কাজ করে।”
ঘারাঘুরি করলে মনটা ফ্রেশই হয় এবং জ্ঞানও বাড়ে: মাঝে মাঝে বাচ্চাকে নিয়ে কাছাকাছি কোথাও ঘুরে আসুন। বাইরে কোথাও ঘুরে আসলে বাচ্চার একঘেঁয়েমি কাটবে এবং জ্ঞানও বাড়বে।
সুন্দর পরিবেশ শিশুর মনকে প্রফুল্ল রাখে: বাসার ছাদে অথবা ঘরের ভেতর ছোট ছোট টবে বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগান। চারপাশে গাছপালা থাকলে আপনার মন যে শুধু প্রফুল্ল হবে তা-ই নয়, বরং এতে করে আপনি প্রাকৃতিক পরিবেশের অনেকটা কাছাকাছিও থাকবেন।
বাচ্চাদের বুদ্ধি বিকাশের উপায়
বাচ্চাকে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে করে আপনি ও আপনার বাচ্চা শুধু ফিটনেসই পাবেন না, বরং হাঁটলে আপনার মন-মেজাজ ভালো থাকবে, আপনারা সৃজনশীল হয়ে উঠবেন, ব্লাড সার্কুলেশন বাড়বে, শরীর সুস্থ থাকবে এবং বাচ্চার গঠন দ্রুত হবে। এছাড়া ঘুম না হওয়ার সমস্যাটাও আর থাকে না, ক্ষিধেও বাড়বে। তাই নিয়ম করে প্রতিদিন বাসার আশেপাশে যেখানে আপনার ভালো লাগে, সেখানে বাচ্চাকে নিয়ে হাঁটার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন বইয়ে মুখ গুঁজে রাখলে বুদ্ধি বাড়ে না। টিভির পর্দা বা গেমস খেললেও বুিদ্ধ বাড়ে না। শিশুর বুদ্ধি বিকাশের অন্যতম পথ, দৌড়। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এজিং-এর গবেষণায় দেখা গেছে, দৌড়ালে শিশুর শরীর থেকে ক্যাথাপসিন বি নামে একটি প্রোটিন বেরোয়। এই প্রোটিন সরাসরি মস্তিষ্কে প্রবাহিত হয়। এই ক্যাথাপসিন বি প্রোটিনেই লুকিয়ে আছে বুদ্ধি বাড়ার রহস্য। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, কম পক্ষে ৪ মাস ধরে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ২০ মিনিট করে দৌড়ালে শরীরে ক্যাথাপসিন বি প্রোটিনের নিঃসরণ বাড়তে থাকে। ফলে বুদ্ধি বিকাশিত হয় এবং খুব সহজে কেউ জটিল কাজ করতে পারে।
বাচ্চাকে কখনো আড়ালে লুকিয়ে খেতে দেবেন না, এতে তার লুকিয়ে খাবার অভ্যাস তৈরি হবে।
বাচ্চাকে কখনো প্রতিবেশী বাচ্চাদের থেকে আড়ালে লুকিয়ে খেতে দেবেন না, এতে তার লুকিয়ে খাবার অভ্যাস তৈরি হবে। তাহলে ভবিষ্যতে সে আপনাকেও লুকিয়ে খাবে। বাচ্চা যাতে তার খাবার অন্যদের সাথে শেয়ার করে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। শিশু খেতে না চাইলেও তাদের বাবা-মা রাগ করেন। কিন্তু‘ শিশুকে খেলাধূলা, হাঁটা, দৌঁড়ানো করতে দিন, তাহলে তার শরীরে খাবারের চাহিদা তৈরি হবে। রাস্তার পাশের ডাস্টবিনের দিকে চোখ দিয়ে দেখেন, ময়লার স্তূপের মধ্যখানে বসে অন্য একটি শিশু খাবার খুঁজছে। দরিদ্র শিশুরা হাঁটে, দৌড়ায়, ফলে তাদের ক্ষিধে বেশি হয়। তাদের কঠিন জীবনের বেশিরভাগই কাটায় অনাহার আর ক্ষুধায়। পৃথিবীতে যদি আসলেই সত্যিকারের ন্যায়বিচার থাকতো, তাহলে কোনো শিশুই অভুক্ত থাকতো না।
বাচ্চা ঘুমাচ্ছে না? কাঁদলেই ভালো ঘুম হবে
অনেক শিশু রাতে ঘুমাতে চায় না। কোলে কাধে নিয়ে দুলিয়ে দুলিয়েও কাজ হয় না। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এ অবস্থায় উদ্বিগ্ন না হয়ে শিশুকে কাঁদতে দিন। এতে শিশুর ‘ইমোশনাল ড্যামেজ’ হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই। বরং শিশুর ঘুম তুলনামূলক ভালো হবে।
দুষ্টু শিশুরা তাড়াতাড়ি শেখে
আপনার শিশু দুষ্টু হলে হতাশ হবেন না। দুষ্টু শিশুরা খুব তাড়াতাড়ি অনেক কিছু শিখে ফেলে। আপনার শিশু যত বেশি দুষ্টুমি করবে তত বেশি নতুন বিষয় শিখবে।
বাবা-মাই সন্তানকে নির্যাতন করেন সবচেয়ে বেশি
কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি কথা। কখনও জেনেশুনে, কখনও অজান্তে, আবার কখনও অনিচ্ছাসত্ত্বে বাধ্য হয়ে বাবা-মা সন্তানদের সাথে অহরহ এমন কিছু আচরণ করেন, যার মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের সন্তানদের উপর নির্যাতন করেন। কখনও শারীরিক, কখনও মানসিক নির্যাতন। বাবা-মার নানা নির্যাতনের উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। যেমন -
✅ ক) কলহপূর্ণ পারিবারিক পরিবেশ: অনেক বাবা-মা সন্তানের সামনে কলহ করেন। শিশু এ কলহ দেখে নিরাপত্তাহীনতা ও হীনম্মন্যতায় ভোগে। এ কলহের কারণে শিশু দুশ্চিন্তা নিয়ে বড় হয়। সে ভীরু হয় ও তার আত্মবিশ্বাস কমে যায়। বাবা-মার মধ্যে কলহপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে বড় হলে শিশুদের নানারকম মানসিক সমস্য যেমন- দুর্বল ব্যক্তিত্ব, পরনির্ভরশীল, নানা মানুষের সাথে মেশার অক্ষমতা, কাউকে বিশ্বাস করতে না পারা, ট্রমা, এংজাইটি, ক্রনিক ডিপ্রেশন, ফোবিয়া, ডিজঅর্ডার... ইত্যাদিতে ভুগতে পারে।
বাংলাদেশে শতকরা ৮৪ ভাগ নারী তার নিজ গৃহে অতি আপনজন দ্বারা নির্যাতিত হয়। তার মানে এই চুরাশি ভাগ নারীর সন্তানেরা মাকে নির্যাতিত হতে দেখে। এসব কলহপূর্ণ পরিবারে বেড়ে ওঠে আর ভয়, দুশ্চিন্তা, কষ্ট নিয়ে বড় হয়। যেসব পরিবারে বাবা প্রায় সবসময় মাকে নানা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে, সেসব পরিবারের শিশুরাপরে দা¤পত্য জীবনে তারাও একই আচরণ করে। এভাবে বংশ পর¤পরায় নারীর প্রতি বৈষম্য ও নির্যাতন চলতে থাকে।
✅ খ) বাবা-মার অতিরক্ষণ : কিছু বাবা-মা সন্তানদের অতিরিক্ত আগলে রেখে বড় করেন। তাদেরকে নিজে নিজে কোনো কিছু করার স্বাধীনতা দেন না। সবসময় বাবা-মার হুকুম মেনে চলতে বাধ্য করেন। হুকুম না মানলে বাবা-মা দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন করেন।
✅ গ) অরক্ষণ : কেনো কোনো বাবা-মা নিজেদের ব্যস্ততার কারণে সন্তানের প্রতি যথেষ্ট খেয়াল করতে পারেন না। সন্তানের দেখাশোনা কাজের লোকের উপর দিয়ে রাখেন। সন্তান কখন কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কার সাথে মিশছে, এসব কিছুই খেয়াল করেন না। এসব শিশুকে অরক্ষিত শিশু বলে। বস্তির শিশুরা অরক্ষিত বলেই নানা অপরাধে জড়ায়।
✅ ঘ) সন্তানের প্রতি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ : বাবা-মার কোনো কোনো সন্তানের প্রতি (ছেলে সন্তান, পড়ালেখায় ভাল সন্তান, ছোট সন্তান ইত্যাদি) পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ অন্য সন্তানদের প্রতি, বিশেষ করে মেয়ে সন্তানের প্রতি মানসিক নির্যাতনের কারণ।
✅ ঙ) অতিরিক্ত পড়ার চাপ : বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় তীব্র প্রতিযোগিতা ইত্যাদি কারণে আমরা ছেলে-মেয়েদের সারাক্ষণ পড়তে বাধ্য করি, যা ওদের প্রতি মানসিক নির্যাতন। আমরা ওদের খেলার, বিনোদনের সময় দেই না। আগে পরীক্ষার পর ছেলে-মেয়েরা আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে যেত। এতে তাদের বিনোদন, আবেগিক, মানসিক, সামাজিক বিকাশ হতো। এখন ওরা পরীক্ষার পরের দিন থেকেই প্রাইভেট পড়ে। ফলে ওরা আত্মকেন্দ্রিক ও অমানবিক হয়ে গড়ে উঠছে।
✅ চ) অন্য বাচ্চার তুলনা করা: আমরা সবসময় পড়ার বিষয়ে সন্তানদের সামনে অন্য বাচ্চার তুলনা করি, নিজের সন্তানের দোষ ধরি, সমালোচনা করি, জোর করে নিজের মত ওদের উপরে চাপাই, পারিবারিক কোনো বিষয়ে ওদের মত নেই না... এগুলো সবই ক্ষতিকারক ও নির্যাতন।
✅ ছ) বাবা-মার অতি প্রশ্রয় : কেনো কোনো বাবা-মা অতি প্রশ্রয়, অতিরিক্ত টাকা, মোবাইল, এসব দিয়ে সন্তানকে উচ্ছৃংখল বানান। সন্তানের অপরাধকে উপেক্ষা করেন। এতেও সন্তানের ক্ষতি হয়। বাবা-মার উচিত, তাঁদের যা আছে, সন্তানকে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে শেখানো। অপচয় না করতে শেখানোও দরকার। তার কেনো কথা মানা সম্ভব না হলে তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে।
✅ জ) বাবা-মার চরিত্র : বিজ্ঞানীররা প্রমাণ করেছেন যে, মানুষের আচরণের জন্য দায়ী তার জিন ও পরিবেশ। বাবা-মা ও শিশুর চারপাশের পরিবেশ ভালো হলে সন্তান ভালো হবে। আর বাবা-মা অপরাধী হলে শিশুও অপরাধী বা খারাপ হবে।
বাবা-মা ঘুষখোর, দুর্নীতিপরায়ণ, অপরাধী হলে, বাবা একাধিক বিয়ে করলে, নিকট আত্মীয়দের দেখাশোনা না করলে, বৃদ্ধ বাবা-মাকে অবহেলা করলে সন্তানরাও তাই শেখে। ওদের সামনে কোনো গুরুজনদের সমালোচনা বা মিথ্যে বদনাম করলে শিশুরা আপনার প্রতিও শ্রদ্ধা হারাবে।
✅ ঝ) সন্তানের মূল্যবোধ: অনেক বাবা-মা সময় অভাবে বা টাকা অপচয় হবে বলে পরিবারকে বেড়াতে নিয়ে যান না। বাচ্চার পড়ার ক্ষতি হবে বলে অতিথি এ্যালাও করেন না, গরীব আত্মীয়কে সাহায্য করেন না, অসুস্থ হলে সময়ের অজুহাতে দেখতে যান না। সন্তানকে সামাজিকতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, নৈতিকতা, মানবতা শেখাতে হলে নিজে এগুলোর চর্চা করুন। কারণ আপনাকে দেখেই শিশু শিখবে।
যে কথাগুলো শিশুকে কখনোই বলবেন না!
১। “তুমি পচা”
শিশুরা অবুঝ। কিন্তু তাই বলে তাদের আত্মসম্মানবোধের কোনো কমতি নেই। তারা ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক। তার জন্যে তিরস্কারও করা যেতে পারে, তবে তা মোটেও নেতিবাচক ভঙ্গিতে নয়। “তুমি খারাপ”, এই সাধারণ কথাটাও তার মধ্যে হীনম্মন্যতা সৃষ্টি করতে পারে। নেগেটিভ কথা বলতে হবে পজেটিভ ভঙ্গিতে। যেমন, “তুমি তো অনেক ভালো। ভালো বাবুরা কি অমন আচরণ করে? এতে অন্যেরা কষ্ট পায় না?”। এতে তার প্রশংসা করে উৎসাহও দেয়া হলো, এবং অন্যকে কষ্ট দেয়া ঠিক নয়, এই বোধও তার মাঝে জাগ্রত হলো।
২। “এই মুহূর্তে কান্না বন্ধ করো”
বাচ্চা হয়তো একেবারেই অকারণে কান্নাকাটি করছে এবং কোনভাবেই তার কান্নাকাটি বন্ধ করা যাচ্ছে না। তবুও তাকে কখনোই এই কথাটি বলা যাবে না। বিশেষ করে কঠিন স্বরে একেবারেই নয়। কারণ, একজন শিশু তার অনুভূতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে জানে না। তাকে বারবার এই কথা বলে ধমক দিলে বা ভয় দেখালে সে হয়তো কিছু সময় পরে কান্নাকাটি বন্ধ করে ফেলবে। কিন্তু, তার মনের মাঝে আবেগ অনুভূতি কোনটাসা হতে শুরু করবে। তাই উক্ত কথা বলার পরিবর্তে তাকে বলা যেতে পারে- 'আমাকেও বল কেনো কান্নাকাটি করছ। তোমার জন্য কী করতে পারি?'
৩। “তুমি খুব খারাপ/ দুষ্টু বাচ্চা”
শিশুরা চঞ্চল হবে, দুষ্টামি করবে। কারণ তাদের বয়সটাই তো এমন। কিন্তু সেটার জের ধরে তাকে কোনভাবেই এমন কথা শোনানো যাবে না, যে কথার দ্বারা তাকে হেয় প্রতিপন্য করা হয়। শিশু সন্তান হয়তো ভুল কোন কাজ করে ফেলতে পারে। তার জন্যে তাকে বোঝাতে হবে কেন কাজটি ভুল। কেন কাজটি করা উচিৎ নয়।
৪। “তুমি কেন ওর মতো হতে পারো না?”
-এটা খুব কমন এবং মারাত্মক ক্ষতিকর একটা বাক্য। এতে যার সাথে তুলনা করে বলা হচ্ছে, তার প্রতি সে ঈর্ষান্বিত হবে এবং নিজেকে সে ব্যর্থ মনে করবে। তার আত্মবিশ্বাস কমে যাবে।
৫। “যাও তো এখান থেকে!”
আপনার শিশুর আপনার কাছ থেকে ভালোবাসা চায়, মনোযোগ চায়। তাকে চলে যেতে বলা, অথবা তার কাছ থেকে চলে যেতে চাওয়া, এসব তার কোমল মনে গভীর প্রভাব ফেলে।
৬। “কেউ তোমার মতো বাচ্চা চায় না”
সমস্যাগ্রস্ত শিশুরা কিন্তু আমাদের আচরণেরই বাইপ্রোডাক্ট। তারা যদি ভালো আচরণ শিখতে না পারে, তবে তার দায় আমাদেরই। তাই কোনোভাবেই তাদেরকে এমন কথা বলা উচিত নয়।
৭। “তুমি এটা পারবে না”
অনেক সময় তারা সাধ্যের অতীত কিছু করতে চায়। সেক্ষেত্রে সরাসরি না বলে ব্যাপারটা অন্যভাবে সমাধা করতে পারেন। ধরুন, সে একটি ভারী চেয়ার তুলতে চাইলো। তাকে এভাবে বলুন, “দেখো পারো কি না”, অথবা “তুমি ব্যথা পাবে সোনা, আমি করে দিই”। সবচেয়ে ভালো হয় যদি বলেন, “চলো দুজনে মিলে করি”। এতে করে চেয়ারও তোলা যাবে, সাথে সে দলগতভাবে কাজ করার শিক্ষাও পাবে।
৮। “ছেলেরা/মেয়েরা এটা করে না”
শিশুরা তো শিশুই। তাদের মধ্যে লিঙ্গবিভেদ করা ঠিক না। সে তার মত করে চলুক। বাধা দিলে সে বরং জীবনের নব নব রূপ দেখা থেকে বঞ্চিত হবে। তারা হোক আরো কৌতুহলী, জিজ্ঞাসু এবং দক্ষ।
৯। “দাঁড়াও, তোমার বাবা/মা আসুক!”
এটা বহুলচর্চিত একটি ভুল। এতে শিশুরা উদ্বিগ্ন এবং শঙ্কিত হয়ে পড়ে, বিশেষ করে বারবার যদি এমন বলা হয়। যদি সে বারবার কোনো একটা ভুল করতেই থাকে তাহলে বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করুন, “তোমার বাবা/মা’কে তুমি বলবে নাকি আমি তাকে ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলবো?” । এভাবে আপনার শিশুকে তার ভুলের দায়ভার নিতে শেখান।
১০। “এটা করো না, তুমি বড় হয়ে গেছ”
শৈশব তো একবার গেলে আর ফিরে আসবে না। তাই তাকে উপভোগ করার স্বাধীনতা দিন। সময় হলে বয়সের ভার সে নিজেই উপলব্ধি করবে। তার ওপর বয়স চাপিয়ে দেয়ার দরকার নেই। চাইলে আপনিও তার সাথে খেলায় মেতে উঠুন। আপনার শিশুকে আনন্দে রাখার দায়িত্ব তো আপনারই, তাই না?
১১। জীবনে জিততেই হবে:
একবার হারলে মানুষ হারকে মোকাবেলা করার শক্তি পায়। বিপদে পড়ার মাধ্যমে মানুষের আরো বেশি মানসিক শক্তি বাড়ে সামনের বিপদকে সরিয়ে দেওয়ার। আর তাই সন্তান কষ্ট পেয়ে কাঁদলে বা হেরে গিয়ে মন খারাপ করলে তাকে সেখান থেকে সরে আসতে না বলে মুখোমুখি হবার সাহস দিন।