বিশ্ববিদ্যালয় গুড ম্যানার্স প্রতিযোগিতা
নিচের অংশটুকু শুধু অনার্স ও মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের জন্য
বিশ্ববিদ্যালয় গুড ম্যানার্স প্রতিযোগিতা
নিচের অংশটুকু শুধু অনার্স ও মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের জন্য
এখানে ২টি অংশ আছে। প্রথম অংশ ১০০টি গুড ম্যানার্স । + দ্বিতীয় অংশ ৫০টি গুড ম্যানার্স । প্রথম অংশ ১০০টি গুড ম্যানার্স লিংকে ক্লিক করে পড়ার পর দ্বিতীয় অংশ ৫০টি গুড ম্যানার্স পড়তে হবে। অনার্স ১ম বর্ষের জন্য ১১০ টি , অনার্স ২য় বর্ষের জন্য ১২০ টি , অনার্স ৩য় বর্ষের জন্য ১৩০ টি, এবং মাস্টার্স -এর জন্য ১৫০টি অর্থাৎ সকল প্রশ্ন উত্তর বাধ্যতামূলক। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ অনলাইনে। প্রত্যেককে আলাদা ডিভাইসে এবং একই সময়ে পরীক্ষা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
৫০ টি আদব কায়দা ও নৈতিকতা
১০০টি গুড ম্যানার্স পড়ার পর ক্রমশ:
১০১। অন্যের সাহায্য-সহযোগিতা প্রার্থনা করুন। কিছু মানুষ নিজ থেকে অন্যকে সাহায্য করার জন্য মুখিয়ে থাকেন আবার কিছু মানুষ সাহায্য চাইলেও মুখ ফিরিয়ে দেয় দেন। সত্যি কথা বলতে, আমাদের সবারই সাহায্য দরকার। যে কারো কাছ থেকে সাহায্য নিলে আমরা ছোট হয়ে যাব না,বরং ধীরে ধীরে আমরা উন্নতির পথে অগ্রসর হব। আমাদের জীবনে অনিশ্চিত থাকবেই। আপনি সবসময়-ই সঠিক হতে পারবেন না। সেজন্যই মাঝে মাঝে একটি বিরতি দেওয়া প্রয়োজন এবং অবশ্যই অন্যের সাহায্য নেয়া প্রয়োজন । আরো বেশি মুক্তমনা হোন এবং পরিবর্তনকে স্বাগত জানান। নিজের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করা বেশ দুষ্কর নয়। পরিবারের কোনো সদস্য, বন্ধু কিংবা সহকর্মীর সাহায্য নিন। সেজন্যে উদার হোন এবং সমালোচনা শোনা এবং গ্রহণ করার জন্য মনকে ইতিবাচকভাবে প্রস্তুত করুন।
১০২। জাপানীরা খুব সাধারন মানের জীবন যাপন করে। তাদের দেখে বোঝার উপায় নাই যে, কে কত ধনী বা কত জ্ঞানী। কারো বাসায় যাওয়ার আগে কমপক্ষে ১ সপ্তাহ আগে ফোন করে জিজ্ঞেস করে ওইদিন যেতে চাই সমস্যা আছে কিনা। যদিও এরা খুব কমই একজন আরেকজনের বাসায় যায়। যদি যায় সেখানে খুবই সামান্য পরিমানে জিনিস নেয় যেমন ২ পিস আপেল বা। ২০০ গ্রাম আংগুর অথবা যার বাসায় যাবে, তার পছন্দের কেক বা মিষ্টি। আবার যার বাসায় যায় সেও শুধুমাত্র চা বা রেডি বিস্কুট বা যেকোনো ফল দিয়েই আপ্যায়ন সারে।।সন্তান থাকলেও বাবা মা যেমন নিজে একা থাকতে পছন্দ করে। তাদের একমাত্র চাহিদাই হচ্ছে ভাল থাকা, সুখে শান্তিতে থাকা। জাপানীদের পরধান তিন নীতির একটি হচ্ছে- ইকিগাই নীতি: জাপানীদের মতে, প্রত্যেক মানুষেরই একটি Ikigai আছে – যা তাকে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা দেয়। যারা তাদের Ikigai খুঁজে পায়, তারা দীর্ঘ, সুখী এবং অর্থবহ জীবনযাপন করে। নিজের "Ikigai" খুঁজে বের করতে ৪টি প্রশ্নের উত্তর খুজেন তারা। ১)আমি কী ভালোবাসি? (Passion) ২)আমি কীসে দক্ষ? (Profession) ৩) আমার টার্গেট গোল কি? (Mission) ৪) আমি আমার এই তিন উত্তরের সমন্বয়ে কিভাবে অর্থ উপার্জন করতে পারি? (Vocation) আপনার জীবনের এই চারটি প্রশ্নের উত্তর লিখে ফেলুন। দেখবেন কেউ আপনার উন্নতি টেকাতে পারবে না। জাপানীদের "Hara Hachi Bu" নীতি: হারা-হাসিবো মানে ৮০% পেট ভরা পর্যন্ত খাওয়া। অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়ে চলুন। প্রসেসড খাবারের পরিবর্তে স্বাস্থ্যকর লাইভ ফুড খান। কাঁচা মানে বাচা। যতটা সম্ভব কম সিদ্ধ শাখ-সবজি ও ফল-শস্যবিজ খান। আর জাপানিদের "Moai" নীতি হল: ছোট একটি গোষ্ঠী তৈরি করুন, যেখানে সবাই একে অপরকে সাহায্য করবে। এই গোষ্ঠীর মাধ্যমে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হন এবং অর্থবহ সংযোগ গড়ে তুলুন। এভাবে নিজের চারপাশ ইতিবাচক মানুষ দিয়ে ভরিয়ে তুলুন। সপ্তাহে অন্তত একদিন এমন একটি কার্যক্রম করুন যেখানে আপনি পরিবারের সদস্যদের বা বন্ধুদের সঙ্গে মানসম্পন্ন সময় কাটাতে পারবেন।
১০৩। যেকোন সম্পর্ক গিভ-এন্ড-টেইক পলিসির উপরে চলে। কারো কাছে কিছু চাওয়ার আগে তাকে আগেই কিছু দিতে হবে । তখন দেখবেন আপনার চাওয়াটা খুব সহজেই পূরণ হয়ে যাচ্ছে। আমরা সবসময় জিততে চাই। নিজের বড়ত্ব জাহির করতে মরিয়া হয়ে উঠি। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করি আমার অনেক ক্ষমতা। কথায় কথায় রিকশাওয়ালার কলার ধরি। বাসের হেলপারের গায়ে হাত তুলি। গরিবকে হেয় করি। হাতছাড়া করি না মানুষকে অপমান করার ন্যূনতম সুযোগও। কেন যেন অন্যকে ছোট করে পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করি আমরা। যে মানুষ অন্যের কাছে ভালো ব্যবহার আশা করে, সে নিজেও অপরের সাথে বিনয়ী আচরণ করে না। সবার মাঝে কেমন একটা উগ্র উগ্র ভাব। সবসময় উঁচু মঞ্চের বাসনা তাদের কুরে কুরে খায়। সর্বত্র খবরদারি ফলানোর চেষ্টা তাদের সমাজ বিচ্ছিন্ন করে তোলে। অন্যদিকে যারা নম্রভাবে সমাজে চলাফেরা করে, না চাইতেই লোকে তাদের সম্মান করে। স্নেহ করে। বিনয়ী মানুষ কখনো জেতার জন্য তর্ক করেন না। বিনয়ী মানুষ অন্যায় কিছু করলে পরক্ষণে লজ্জিত হতে,ক্ষমা চাইতে এবং ভুল স্বীকার করেন। বিনয়ী মানুষ অন্যের প্রতি ঈর্ষান্বিত হন না। বিনয়ী মানুষ অন্যের সাথে সংযত,সহিষ্ণু ও মানবিক আচরণ করে। বিনয়ী মানুষ কখনো অন্যের সাথে অহংকারমূলক কথাবার্তা বলেন না। বিনয়ী মানুষ পরমতসহিষ্ণু হয়। মহান দার্শনিক উইল ডোরান্ট বলেছেন, কোনো জ্ঞানী মানুষের কাছে যখন বিনয়ের ভূষণ থাকে, তখন সে মহাজ্ঞানী হয়ে ওঠে। আর পণ্ডিতের কাছে যদি বিনয়ের ভূষণ থাকে তিনি মহাপণ্ডিত হন। সুন্দরীদের মধ্যে যদি বিনয় থাকে তারা বিশ্ব সুন্দরী হবেন। সহজ কথাঃ গলায় মালা পড়তে হলে মাথা নিচু করতে হয়।
১০৪। একটি সুপরিচিত কথা রয়েছে—‘আপনি যদি আপনার আরামের অঞ্চল থেকে বেরিয়ে না যান তবে আপনি সবসময় একই জায়গায় আটকে থাকবেন।’ পাশাপাশি একটি জনপ্রিয় আমেরিকান গল্প আছেঃ একবার একটি এরোপ্লেন তার পাশে থাকা একটি রকেটকে জিজ্ঞাসা করল- রকেটভাই, তুমি এত দ্রুত গতিতে কিভাবে উড়ে যাও বলতো? তখন রকেট বলল, আমার মত পাছায় আগুন ধরিয়ে দিলে তুমিও আবার মত দ্রুত যেতে পারবে। অর্থাৎ চাপে ও তাপে সবকিছুর অবস্থান পরিবর্তন হয়। লক্ষ কোটি বছরের চাপে ডায়মন্ড এবং গোল্ড তৈরি হয়েছে। জীবনে যে যত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়াতে পারে, সে তত সফল মানুষ। আর চ্যালেঞ্জ বাদ দিয়ে যে বা যারা কমফোর্ট জোনে পড়ে থাকে; তারা সব দিক থেকে ব্যর্থ মানুষ।
কমফোর্ট জোন হলো সেই আরামদায়ক জায়গা যেখানে মানুষ নিজের রুটিনমত কাজ নিরাপদে করতে পারেন। সাধারণত মানুষ আটে আটকায়। অর্থাৎ সে যা কিছু করে, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-অফিস, বিয়ে শাদি সবকিছু ৮ কিলোমিটার জায়গার মধ্যেই করে। যারা এই ৮কে অতিক্রম করতে পারেন, তারাই নেতা হিসেবে গড়ে উঠে। সর্বদা মনে রাখবেন, জীবনের চ্যালেঞ্জগুলি জেতার জন্য একটি বৃহত্তর ক্ষমতার সঙ্গে লড়াই করা ভীষণ জরুরি, আর তা হলো ‘ভয়’। এটি প্রায়শই আমাদেরকে কমফোর্ট জোন বা আরামের অঞ্চলের বাইরে যেতে বাধা দেয়। অথচ নিজের উন্নতির জন্য এই কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসার বিকল্প নেই। এটি এমন একটি যাত্রা, যার জন্য সাহস, দৃঢ়তা এবং পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করা জরুরি হয়ে পড়ে। ঠান্ডা বরফের মধ্যে পর্যাপ্ত গম উৎপাদন করতে না পেরে পশ্চিমারা না খেয়ে মরতে বসেছিল। ফলে বাধ্য হয়ে পালতোলা জাহাজে করে অজানা উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয় এবং আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি আবিস্কার করে। তারা ইউরোপের বরফের স্তুপ থেকে বের না হলে ডাইনোসরদের মত বিলুপ্ত হয়ে যেত। কাজেই আপনার উন্নতি তখনই ঘটবে, যখন আরাম বা কমফোর্ট জোন থেকে বের হতে পারবেন।
১০৫ । জার্মান ফিলোসফার নিটসে'র তত্ত্ব মতে পশ্চিমারা প্রিয়জনদের জন্য সবসময় কামনা করবেন দুর্ভোগ এবং দুর্দশা। কটিন দুর্ভোগ, চরম একাকিত্ব, অসুস্থতা, দুর্ব্যবহার ,অপমান এবং জীবনে অনেক সময় এই ধরনের সিচুয়েশন আসুক, যখন নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা হয়, এমনকি একটা অবস্থা আসুক যেখানে জীবনে বারবার পরাজিত হতে হতে তার পক্ষে যে, জীবনে কখনো জেতা সম্ভব সেটাই ভুলে যায় অর্থাৎ তিনি নিজের এবং প্রিয় মানুষগুলার জন্য এরকম তীব্র পরাজয়ের দুর্দশা কামনা করতে বলেছেন। অর্থাৎ প্রমাণ করুক তারা প্রকৃতিতে ঠিকে থাকার যোগ্য কিনা। তাদের উন্নতি ও সফলতা নির্ভর করবে তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া এসব দুর্বিষহ পরিস্থিতিগুলো হেন্ডল করতে পারে কি, পারে না। অর্থাৎ একটা মানুষ তার জীবনে কখনোই যোগ্য হবে না, তার ভিতরে কখনো শক্তি সঞ্চয় হবে না, যদি এরকম ভয়াবহ দুঃখ এবং দুর্দশার শিকার না হয়। মানুষ সফল হওয়ার এটাই হল মূল জ্বালানি। এটা না হলে সে, প্রতি পদে পদে হারতে হারতে একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে টিকে থাকার জন্য তিনি পরামর্শ দিয়েছেন একটাই " নিজের ভাগ্যকে ভালোবাসো"। কারণ আমাদের সাথে যা কিছু ঘটেছে এবং যা কিছু ঘটবে, এ সবকিছুই নেসেসারি বা আমাদের জন্য দরকারী। অর্থাৎ একটা মানুষের গ্রেট হয়ে ওঠার ফর্মুলা হচ্ছে, সে তার ভাগ্যকে ভালোবাসবে। তার অতীত ভবিষ্যৎ বা বর্তমানকালে তার সাথে যা কিছু ঘটবে সে কখনোই বলবে না যে আমার সাথে তো এরকমটা না হলেও পারতো। জীবনের কিছু গোল, কিছু অ্যাম্বিশন, কিছু স্বপ্ন হাতছাড়া হবেই। সেই জিনিসগুলোকে আমাদের হাসিমুখে ছেড়ে দিতে হবে । তার মতে আমাদের জীবনের এসব সাফারিং, স্ট্রাগল এ সবকিছুই কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের ডেভেলপমেন্ট এর জন্য নেসেসারি। সুতরাং যত বেশি আমরা স্ট্রাগল করব, তত বেশি যোগ্য নেতা হিসেবে গড়ে উঠতে পারব। জীবনে যেই পরিস্থিতি আসুক না কেন সব সময় ইয়েস বলতে হবে। যতটুকু আপনার কন্ট্রোলে আছে ততটুকু দিয়ে আপনি চেষ্টা করে যাবেন। যাকিছু কন্ট্রোলে নাই সেটাকে শুধুমাত্র আপনি এক্সেপ্ট করে নিবেন এবং ভালোবাসবেন।
১০৬। স্বনামধন্য ফরাসি পণ্ডিত মন্টেস্কু তার ‘দ্য স্পিরিট অব দ্য লজ’ গ্রন্থে বলেছেন—‘ প্রত্যেক ব্যক্তি, যার হাতে ক্ষমতা আছে, তিনি তা সুকৌশলে অপব্যবহার করে চলেন এবং তাকে রুখে না দেয়া পর্যন্ত তিনি তার কর্তৃত্বপরায়ণতা বজায় রেখে চলেন।’
পৃথিবীতে বৈধ পথে সচ্ছল হওয়া যায়, কিন্তু বিপুল পরিমাণে অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়া কখনো সম্ভব নয়। ধনীরা অধিকাংশ মানুষকে ঠকিয়ে কখনো কখনো বোকা বানিয়ে, ধোঁকা দিয়ে, প্রতারনা করে সম্পদের মালিক হয়েছেন। নিয়মানুযায়ী ১৫ শতাংশের বেশি মুনাফা করা অন্যায় বা অবৈধ। কিন্তু ধনী ব্যবসায়ীরা সুযোগ বুঝে ৫০০ থেকে ১০০০ শতাংশ মুনাফা করে থাকেন। এ ব্যাপারে তাদের কেউ কিছু বলতে পারবে না। কারণ তারা রাষ্ট্র ও সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করে তারা রাতারাতি শতকোটি টাকার মালিক বনে যান। পৃথিবীতে শান্তিপ্রিয় ভাল মানুষের সংখ্যা বেশি হলেও এরা ঐক্যবদ্ধ নয়। এদের ঐক্যবদ্ধ করতে যারা নেতৃত্ব দেয়, সেই নেতারা ছলে-বলে-কৌশলে একবার ধন কামানোর সুযোগ পেলে নিজেদের আখের ঘুছিয়ে সরে পড়ে। এটা কেবল আমাদের দেশের চিত্র নয়, পৃথিবীর অনেক দেশের চিত্র। তাই ক্ষমতা অপব্যবহার রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ হউন।
১০৭। ইন্টারনেট একটি দারুণ বিষয়; কিন্তু আপনাকে বাস্তব জীবন ও ইন্টারনেটের মধ্যে সমতা আনতে হবে। দিনে অনেকটুকু সময় আপনি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটস অ্যাপে ব্যয় করেন। তাহলে আজই কয়েকটি কাজ করুন- *মোবাইলের ইন্টারনেট বন্ধ করে দিন। শুধুমাত্র বাসা এবং অফিসে ব্যবহার করুন। তাহলে রাস্তায় ব্যয় করা সময়টুকু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে কাটাতে পারবেন, নোটিফিকেশনের আওয়াজ শুনে বার বার ফোন বের করে দেখতে হবে না। *বন্ধুদের বাসায় দাওয়াত দিন এবং তাদের অনুরোধ করুন ফোনগুলো পকেট এবং হ্যান্ডব্যাগে রেখে দেওয়ার জন্য। *প্রতিদিন ফেসবুক, মেসেঞ্জার কিংবা হোয়াটসঅ্যাপে ছোট ছোট শব্দ কিংবা বাক্যে মেসেজ আদান-প্রদান না করে সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলুন।*কাউকে চিঠি কিংবা কার্ডে লিখে মনের ভাব প্রকাশ করুন। আপনার হাতের লেখা যেমনই হোক না কেন, সেটি খুব আন্তরিক হয়ে ধরা দিবে অপর পার্শ্বে। *কোনো বই এবং ম্যাগাজিনের মধ্যে কিছু সময় অতিবাহিত করুন। *কোনো রকম ইন্টারনেটের স্পর্শ ছাড়া ছুটি কাটিয়ে আসুন মাসে একবার। ছবি তুলুন কিন্তু সেগুলো সোশ্যাল মিডিয়ায় সেদিনই পোস্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের জীবন একটাই এবং এটি খুবই সংক্ষিপ্ত। সেজন্য অনলাইনে অতিবাহিত সময় কমিয়ে আনুন; পুরোদমে সময়গুলো উপভোগ করুন।
১০৮। ভয় ও লজ্জা এই মানবীয় বৈশিষ্ট্যদ্বয় মানব জীবনে উন্নতির এভারেস্ট পর্বতে আরোহণের জন্য সবচেয়ে বড় মানসিক বাধা। একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ জীবনের পথে এটি মারাত্মক রকম অন্তরায়ও। কোনো কাজে নামতে গেলে মনে উঁকি দেয়, এ কাজ লোকে কি বলবে! লোকে আমাকে নিয়ে কী ভাববে! সমাজে মাছি চরিত্রের কিছু মানুষ আছে, যাদের দিনের শুরুটাই হয় অন্যের খারাপ সমালোচনার মধ্য দিয়ে আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তা চলতে থাকে। মাছি যেমন ক্ষত, ময়লা, বিষ্ঠায় স্বাদ খোঁজে—এসব লোক অনুরূপ অন্যের দোষ খোঁজে। আসলে এরা অন্যের সমৃদ্ধি দেখে হিংসার দাবানলে জ্বলতে থাকে। এসব লোকের পাহাড়সম দোষ থাকা সত্ত্বেও এরা নিজের দোষ দেখে না, অন্যের দোষ জনে জনে বলে বেড়ায় এবং অন্যের শুভ যাত্রায় অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি করতে সদা ব্যস্ত থাকে। বুদ্ধিমান ব্যক্তি কখনো অন্যের দোষ খুঁজে না, তারা সর্বদা নিজেকে সংশোধনের কাজে ব্যস্ত থাকে। যারাই সাফল্যের শীর্ষ চূড়ায় উঠেছেন, প্রত্যেকেই কটু কথা আর সমালোচনা শুনে শুনেই উঠেছেন। যারা সর্বদা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করে যায়, তারা দিন শেষে সাফল্যের হাসি হাসে। তারা ভুল করে ভুল শোধরায়, কিন্তু তারা থেমে যায় না। অন্যের কটু কথা তাদের দৃঢ়তাকে টলাতে পারে না। তাই মনের মধ্যে সদা সাহস এবং সুন্দর চিন্তার আবাদ করতে হবে। অন্যের দূষিত বাক্যকে উপেক্ষা করে চলতে পারলে জীবনটা অনেক মসৃণ হবে।
১০৯। জ্ঞান বিনির্মাণের কাঁচামাল হলো তথ্য। তথ্য থেকে সৃষ্টি হয় জ্ঞান; জ্ঞান পরিচর্যায় আসে প্রজ্ঞা এবং প্রজ্ঞাবানের কর্মের ফসল হলো সৃজনশীলতা। মুসলিম শাসকদের স্বর্ণযুগে নবম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে মধ্য এশিয়া, ইরান, স্পেনের দক্ষিণাঞ্চলে ও উত্তর আফ্রিকার কিছু দেশে জ্ঞানচর্চার জোয়ার এসেছিল। এরই সূত্র ধরে ইউরোপের রেনেসাঁয় তা পরিপূর্ণতা পায়। এ সময় জ্ঞানচর্চার সূত্র ধরেই পশ্চিমে উচ্চতর গবেষণা ও পঠনপাঠনের সহায়ক নানা প্রতিষ্ঠান যেমন গড়ে উঠেছিল, তেমনি আবিষ্কৃত হয়েছিল জ্ঞানচর্চার উপযোগী সহায়ক অনেক যন্ত্রপাতি। আড়াই শ বছর আগে ইংরেজদের মাধ্যমে রেনেসাঁ-পরবর্তী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে আমাদের সংযোগ ঘটতে শুরু করে। বর্তমানে বৈশ্বিক জ্ঞান সূচকে বরাবরই ভালো করছে উন্নত দেশগুলি। মূলত প্রশিক্ষণ ও গবেষণার পর্যাপ্ত সুবিধা, মানসম্পন্ন ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা দেশগুলোকে এগিয়ে রেখেছে। বৈশ্বিক দৃশ্যপটে সবকিছু দ্রুত বদলে যাচ্ছে, এই দেশগুলো দ্রুততার সাথে প্রবেশ করছে জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে। দুর্বল মানবসম্পদ দিয়ে আমরা ওই প্রতিযোগিতায় পেরে উঠব না। কাজেই মানবসম্পদের উত্পাদনশীলতা ও দক্ষতা অনেক বাড়াতে হবে।
আমাদের জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রক্রিয়া প্রকৃত সমাজসংস্কারকের অভাবে গড়ে উঠছে না। এর প্রধান কারণ হলো, মানুষ এখন সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতার চেয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বার্থকে গুরুত্ব দিচ্ছে। শিক্ষার গুণগত মান যত শক্তিশালী হবে, জ্ঞানভিত্তিক সমাজের ভিত্তি তত দৃঢ় হবে। তিন রকম মানুষ সামাজিক জীবনে পরিবর্তন আনতে পারেন। তাঁরা হলেন- পিতা-মাতা, সমাজ কর্মী ও ছাত্র-শিক্ষক।’ কাজেই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে কাজ করে যান।
১১০। ফ্লাডলাইটিং-এর ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।ফ্লাডলাইটিং হলো সম্পর্কের একেবারে প্রাথমিক অবস্থায় নিজের অনেক ব্যক্তিগত, সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করার মাধ্যমে অপর পক্ষকে দ্রুত গভীর সম্পর্কে জড়াতে প্রভাবিত করে। ধরুন, প্রথম ডেটেই একজন তার অতীতের সম্পর্কে সে কতটা অবহেলিত, মানসিক বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সেই গল্প করল। আর আপনি সেসব শুনে তার প্রতি গভীর সহানুভূতিশীল হয়ে উঠলেন। তাকে আবেগপ্রবণভাবে সমর্থন জোগানোর জন্য, সেরে ওঠার জন্য, ভালো বোধ করানোর জন্য মনে মনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে উঠলেন। সে অনুযায়ী কর্মকাণ্ডও করতে শুরু করলেন। এভাবে সে সম্পর্কে খুব অল্প সময়ে প্রভাবশালী ও সুফলভোগী হয়ে উঠল। আর নিজের আবেগময় সমর্থনের জন্য আপনাকে ব্যবহার করতে শুরু করল। আপনাকে ভালো রাখার দায়িত্ব না নিয়েই সে নিজে ভালো থাকার জন্য আপনাকে ব্যবহার করতে চাইছে। সে সম্পর্কে সময় না দিয়ে দ্রুত অপর পক্ষকে তার পক্ষে আনতে চায় । সে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকেও একই ধরনের সহানুভূতি বা আবেগময় সমর্থন নিতে চায়। ফ্লাডলাইটিংয়ে প্রাথমিকভাবে আপনার মনে হতে পারে, আপনাকে অপর পক্ষ এতটা বিশ্বাস আর ভরসা করছে, আপনি নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে এর প্রতিদান দেবেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আপনি বুঝতে পারবেন, সম্পর্কে ফ্লাডলাইটিং ।
১১১। কোনো প্রতিষ্ঠান বা সমাজে যদি উচ্চ–নিচ বিভাজনটি থাকে, ইংরেজিতে তাকে হায়ারার্কি বলা হয়। এই উচু নিচু বিভাজনটি ইহুদী সংস্কৃতিতে একদম নাই। তাদের সমাজে বা প্রতিষ্ঠানে ‘চুটজপাহ’ সংস্কৃতি চালু আছে। চুটজপাহ সংস্কৃতি হচছে: মনে করুন একটি প্রতিষ্ঠানে ১০জন মানুষ আছে। এই দশজনের কেউ দারোয়ান আবার কেউ কর্মী বা কর্মকর্তা। সেখানে কেউ কাউকে স্যার বা ম্যম বলবে না। সবাই সবাইকে নাম ধরে কিংবা ভাইজান বলে ডাকবে। সার্টিফিকেট বা টাকার জোরে কেউ নেতা হবে না, কাজে যোগ্যতার ভিত্তিতে পদ মর্যদা হবে। সবাই মিলে আনন্দ আর সুবিধা-অসুবিধা ভাগাভাগি করে কমিউনাল বা কৌম সমাজ গড়ে তুলে। অপরদিকে হিন্দু সমাজ হচ্ছে জাত-পাত ভেদাভেদ-এর সমাজ। এ সমাজের ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়রা নিজেদেরকে উঁচু জাত বলে মনে করে। এভাবে বংশ পরস্পরায় নিজেদেরকে সেরা বলে মনে করার কারণে তাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে এক ধরনের অহংকার এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। যার ফলাফলে তারা সর্ব ক্ষেত্রে উন্নতি করে। তারাই হয়ে উঠে নেতা বা কর্তা। আপনি হিসাব করলে দেখবেন, ভারতে যত সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী কিংবা প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি দেখা যায়, তারা প্রায় সবাই এই দুই বর্ণের লোক। কাজেই আপনার প্রজন্ম বা আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধবকে অন্য অনেক মানুষ থেকে সেরা হিসেবে আখ্যা দিন এবং তাকে এগিয়ে যেতে সর্বদা উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করুন।
১১২। প্রথমেই কোন ব্যাপারে রাজি হয়ে যাবেন না। আপনি যদি জানেন যে, সেই কাজটি করতে পারবেন না, তাহলে সরাসরি না বলুন। আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, আমরা যা করতে পারবো না, সে বিষয়ে কথা দেওয়া একেবারে অযৌক্তিক, তাতে করে আমাদের এমন কাজের দায়িত্ব দেওয়া হবে, যাতে আমরা ব্যর্থ হব। আপনি অনিশ্চিত থাকলে 'না' বলে দিন। দ্বিতীয়বার কাউকে হতাশ করার চাইতে প্রথমবার না বলে দেওয়াই শ্রেয়। জীবনে অন্যদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সুন্দর করে না বলতে পারাটা খুবই জরুরী। যদি তা না পারেন তাহলে আপনাকে সবাই ভাঙ্গিয়ে খাবে এবং এক সময় কথা রাখতে না পারার কারণে আপনি সবার কাছে ছোট হয়ে যাবেন।
কখনো কি এমন হয়েছে যে, আপনি কোনো কাজ করতে চাচ্ছেন না, অথচ শুধু ‘না’ বলতে পারার কারণে ঠিক সেই অপছন্দের কাজটিই করতে হয়েছে আপনাকে? ঠিক একই ব্যাপার খাওয়ার ক্ষেত্রেও সত্য। আমরা ভ্রদ্রতার তাগিদে ‘না’ বলার অভ্যাস হারিয়ে ফেলি। যেটা পরবর্তীতে সমস্যাগুলোর জন্ম দেয়। হয়তো না বলাটা ঠিক হবে কিনা দ্বিধায় ভোগেন বলে ‘না’ বলতে পারেন না আপনার অপছন্দের ব্যাপারেও। অনেক সময় শুধু ভয় কিংবা সম্মানের জায়গা থেকেও কাউকে ‘না’বলাটা সম্ভব হয় না। আপনিযদি নিশ্চিত জানেন যে, আপনার কাজটি করতে ভালো লাগছে না। তাহলে বেশি না ভেবে দ্রুত ‘না’ বলে দিন। অন্যথায়, ব্যাপারটি মানসিকভাবে আপনাকে আরো সমস্যায় ফেলে দেবে।
১১৩। 'আপনি যদি সকল বিষয়ে দক্ষ হয়ে থাকেন তবে একটু থামুন। নিজেকে পুনরায় বিচার করুন। আপনার আভ্যন্তরীণ শক্তি ও মননশীলতার দিকে নজর দিন। যে সকল বিষয়ে আপনি গর্ববোধ করতে পারবেন, সেগুলো নিয়ে ভাবুন। এদের মধ্য থেকে আপনি যেকোন একটি বিষয়ে দক্ষ হবার জন্যে কিংবা দক্ষতা বাড়ানোর জন্যে কাজ করতে পারেন। কোন কিছুতে অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে চলে প্রচুর সময় ও কর্মশক্তির প্রয়োজন হয়। ডব্লিউ স্টোনের ভাষ্যমতে, চেষ্টা করো, চেষ্টা করো এবং চেষ্টা করতেই থাকো যতোক্ষণ না পর্যন্ত সফল হতে পারো। রাতারাতি কোন কিছু শিখে উঠতে পারবেন না, প্রতি মুহুর্তে আপনাকে কাজ করে যেতে হবে, ব্যর্থ হলেও আবার উঠে দাঁড়াতে হবে। কোনভাবেই হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ভুল থেকেই শিখতে হবে। আপনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে চান, তা অন্যকেও শেখান। নিজস্ব মতবাদ, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান অন্যকে শেখালে সেগুলোতে দক্ষতা দিনদিন বৃদ্ধি পাবে।
১১৪। কোনো অবান্তর বিষয়ের অবতারণা ঘটে তখনি, যখন তর্ক-বিতর্ক করতে করতে কেউ কোণঠাসা হয়ে পড়েন । তখন তিনি আত্মরক্ষা করতে অকারণে আক্রমণাত্মক ভঙ্গি গ্রহণ করেন । অতীত থেকে এমন সব দৃষ্টান্ত তুলে আনতে থাকেন, যা বর্তমান আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ সঙ্গতিহীন। এর দ্বারা হয়তো তিনি নিজেকে বাঁচাতে চান। অতএব মূল বিষয় থেকে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হচ্ছে ততোক্ষণ বিচ্যুত হবেন না । তর্ক-বিতর্ক করার ক্ষেত্রে তিন ধরনের মানুষ চিনুন- ১) Strawman Fallacy স্ট্রোম্যান: আক্রমণ করা সহজ করার জন্য এরা প্রতিপক্ষের যুক্তিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেন, যা আসল বিষয়টি থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। যেমন আপনি বলেছেন, রাস্তায় হাটতে হাটতে অশিক্ষিত লোক ধুমপান করেন, কিন্তু শিক্ষিতরাও যদি একই কাজ করেন, তাহলে সেটার মধ্যে পার্থক্য রইল কি? তখন স্ট্রোম্যান হয়তো বললেন, ধূমপান না করে কি আপনি কি মহাভারত অর্জন করেছেন তা আমাদের জানা আছে। ২) Ad Hominem অ্যাড হোমিনেম: এরা যুক্তির পরিবর্তে যুক্তিকারীর ব্যক্তির চরিত্রের উপর আলোকপাত করেব, যা গঠনমূলক সংলাপকে লাইনচ্যুত করে। ৩) Red Herring:রেড হেরিং: মূল বিষয় থেকে মনোযোগ সরিয়ে নেওয়ার জন্য অপ্রাসঙ্গিক তথ্য উপস্থাপন করা, যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করতে পারে এবং মূল যুক্তি থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারে।
.১১৫। আগে মানুষ সমাজ বা দায়িত্বের কথা ভেবে সম্পর্ক বা বিয়ে করতেন। তখন মনের মিল বা ভালোবাসার গভীরতার মতো বিষয়কে অতটা গুরুত্ব দেওয়া হতো না। কিন্তু এখন সবাই এমন সম্পর্কে বোঝাপড়া চায়। অনেক সময় আবেগের ঘাটতি দেখা দিলে একাকীত্ব অনুভব করে। মধ্য বয়স বা শেষ বয়সে মানষিক শূন্যতা, মনোবেদনা আর আবেগগত জটিলতা তৈরি হয়ে, দুজনের মধ্যে অবিশ্বাসের ঘেরাটোপ ও দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। ফলাফল ডিভোর্স। যার নাম গ্রে ডিভোর্স। অনেক সময় ডিভোর্সিদের সমাজের খারাপ মন্তব্য সহ্য করতে হয়। এতে মানুষ আরও একা হয়ে পড়ে। পাড়াপ্রতিবেশী বা আত্মীয়স্বজনেরা বলাবলি করেন, ‘এই বয়সে ডিভোর্স?’, ‘এখন তো জীবন শেষের পথে!’ । এতে যিনি স্বাধীনচেতা বা যাঁর জীবন আনন্দে ভরা, তিনি নতুন আশা নিয়ে ভালো থাকতে পারেন। কিন্তু যাঁর পাশে কেউ নেই; না বন্ধু, না পরিবার, না টাকার জোর, তাঁরা দুঃখ, হতাশা, একাকিত্ব আর মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে যেতে পারেন। আপনার পরিবার বা পরিচিতদের মধ্যে যদি কেউ এইরকম গ্রে ডিভোর্স এর সম্মুখীন হন, তবে তাকে মেনে নিন এবং নতুন সঙ্গী তৈরিতে সহায়তা করুন ।
১১৬। সৃজনশীল মানুষের জন্য ১৩পরামর্শ।
১. স্ট্যাটার্স লেখার সময় সংক্ষেপে তথ্যপূর্ণ লেখা দিন, তবে খেয়াল রাখুন, আপনার স্ট্যাটার্স বা বক্তব্য যেন কাউকে আহত না করে।
২.নিজের সমস্যার কথা বাইরের কাউকে বলার দরকার নেই। মনে রাখবেন, ২০% লোক ভাল করে সমস্যা শোনেই না, আর বাকী ৮০% লোক আপনার সমস্যা আছে দেখে মনে মনে খুশী হয়।
৩. অভিযোগ/দোষারোপ জিরোরাই করে হিরোরা নয়। তাই কাউকে অভিযোগ/দোষারোপ করবেন না।
.৪. প্রত্যেকেরই একটি করে সুন্দর নাম রয়েছে। কিন্তু আপনি যদি তার এ নামটি ভুলে যান তাহলে তা খুবই দুঃখজনক বিষয়। সম্বোধনের সময় প্রত্যেকের নাম উল্লেখ হতে পারে তাদের প্রতি আপনার ‘বিশেষ’ দৃষ্টি রাখার একটি প্রমাণ।
৫. মনের ভাব প্রকাশের জন্য স্নিগ্ধ একটি হাসির তুলনা হয় না। তবে খেয়াল রাখবেন হাসিটি যেন হয় আন্তরিকতাপূর্ণ হয়।
৬. অন্যের কথা না শুনে আপনি যদি শুধু বলতে থাকেন তা বাজে মানুষের লক্ষণ। পাওয়ার হতে হলে অন্যের কথা শুধু শুনলেই চলবে না, এসব কথা হৃদয়ে আত্মস্থ করতে হবে।
৭. আপনি কারো কথা শুধু শুনলেই হবে না, তার কথাটি যে বুঝেছেন তার প্রমাণস্বরূপ পাল্টা কোনো মন্তব্য বা প্রশ্ন জুড়ে দেবেন। আপনি তাকে কথার ফাঁকে ফাঁকে আন্তরিক প্রশংসা করুন।
৮. প্রত্যেক মানুষেরই ‘আত্মমর্যাদা’ বা অহংবোধ রয়েছে। তাই কেউ আঘাত পায় এমন সমালোচনা সাক্ষাতে বা অগোচরে করবেন না।
৯. উৎসাহ পেলে মানুষের কাজ করার ক্ষমতা বহুগুন বেড়ে যায়। আপনার আচরণে যেন অন্যকে উৎসাহ দেওয়ার প্রবণতা থাকে। ফেজবুকে লাইক দেয়া, কমেন্ট করা হচ্ছে অন্যকে উৎসাহ দেওয়ার প্রবণতা।
১০. কারো পরামর্শ চাওয়ার অর্থ আপনি তার মতামতকে গুরুত্ব দেন। আর এতে পরামর্শদাতাও নিজেকে মূল্যবান বলে মনে করে।
১১. একজন মানুষ সুখী......কত তার আছে' তার উপর নয়, কত কম তার প্রয়োজন' তার উপর নিরর্ভর করে। সুতরাং সুখী জীবন-যাপন করতে হলে অল্পতে সন্তুষ্ট থাকুন।
১২. ক্ষতিকর বন্ধুকে আঁকড়ে ধরে রাখলে একদিন না একদিন সে তার রূপ দেখাবেই। এতে প্রতারিত হবেন, ক্ষতিগ্রস্থ হবেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। তাই যে মানুষগুলো আপনাকে পেছনে টেনে ধরে রাখছে, তা এড়িয়ে চলুন।
১৩. সময় ব্যবস্থাপনা শিখুন। দিনের ২৪ঘন্টা সময়কে ভাগ করে নিন। কোন কাজের পর কোন কাজ কতক্ষণ ধরে করবেন, তা ঠিক করে নিন। যে কাজটা আজ করতে পারেন, তা কালকের জন্য ফেলে রাখবেন না।
১১৭। আপনি কম স্ট্রেস অনুভব করবেন, যখন প্রকৃতির কাছাকাছি থাকবেন। জাপানিরা এটিকে 'ফরেস্ট বাথিং' বলে থাকে। যদি আপনি গাছগাছালি এবং জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হেঁটে যান তাহলে আপনার রক্তচাপ এবং স্ট্রেস অনেকাংশে কমে যাবে।- প্রাকৃতিক সূর্যালোক আপনাকে ভিটামিন ডি সরবরাহ করে, এটি আপনার ত্বক ও স্বাস্থ্যের উপর বেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। প্রাকৃতিক নির্মল বাতাস থেকে আপনার ফুসফুস সতেজ হাওয়া পায় এবং এতে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটালে আপনার মানসিকতা এবং চিন্তাধারা প্রসারিত হয়। প্রকৃতি আপনাকে শান্ত, ধৈর্যশীল এবং সহনশীল হতে শেখায়।
মাঝে মধ্যে দূরে কোথাও ঘুরে আসলে আপনার হৃদয় ও মন দুই-ই প্রসারিত হবে। অচেনা জায়গায় কিছু দিন কাটালে আপনি নতুন নতুন মানুষকে জানতে পারবেন, পৃথিবীকে অন্য নজরে দেখতে পারবেন এবং বিভিন্ন ইস্যু খুব সহজে আবিষ্কার করতে পারবেন। জাগতিক কিছু জিনিস কেনাকাটা না করে ঘোরাঘুরি করতে কাজে লাগান। পৃথিবীটা চষে ফেলুন, এবং জীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করুন।
১১৮। পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠুন। ঘরের জন্য নতুন কোন জিনিস কিনলে পুরনো কিছু দান করে দিন। পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিদিন কিছু সময় ব্যয় করুন। জীবনযাপনে এবং ভ্রমণে সবুজের সমন্বয় গড়ে তুলুন। প্লাস্টিকের বোতল, ওয়ানটাইম প্লেট, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল ইত্যাদির ব্যবহার কমান।পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ, বোতল ইত্যাদি ব্যবহারের চেষ্টা করুন। প্লাস্টিক ব্যাগ ফেলে দেওয়ার আগে কয়েকবার ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। খাদ্যের উচ্ছিষ্ট ফেলে না দিয়ে কাউকে দান করে দিন, পশুপাখিকে খাওয়ান, এ ছাড়া সার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
গোসল, কাপড় কাচা, দাঁত ব্রাশ, থালাবাসন ধোয়ার সময় শুধু শুধু পানির কল চালু করে রাখবেন না। নষ্ট কোনো কল থেকে অনবরত পানি পড়লে সেটি বদলে ফেলুন। তেমনিভাবে গ্যাস বা বাতি জ্বালিয়ে রাখবেন না। আপনার এলাকায় বসবাসরত কোনো ব্যক্তি যদি কৃষিকাজে নিয়োজিত থাকেন, তাঁর কাছ থেকে সরাসরি শাকসবজি, ফলমূল ও খাদ্যদ্রব্য কেনার চেষ্টা করুন। শরীর ভালো রাখতে মাছ, মাংস ও দুগ্ধজাত খাদ্যের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। তবে অতিরিক্ত মাংস ও দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে শাকসবজি ও অর্গানিক খাবার খাওয়ার প্রতি আরও জোর দিন।
১১৯। এই পৃথিবীতে সবচেয়ে মারাত্মক জিনিস হল ভয়। ভয় আপনাকে হিরো থেকে জিরো বানিয়ে দিতে পারে। ধরুন,আপনি কোথাও কোনো প্রেজেন্টেশন দিচ্ছেন,আপনি অনেক ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছেন। কিন্তু আপনার মনের মধ্যে এক ধরণের ভয় কাজ করছে। দেখবেন এই ভয় থেকে একটু পরে কনফিউশনের সৃষ্টি হবে। তারপর হাত-পা ঘামতে থাকবে। তারপর আপনি আস্তে আস্তে সব ভুলে যাবেন। এত ভালভাবে প্রেজেন্টেশনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার পরও, শুধুমাত্র ভয়ের জন্য সব প্রস্তুতি ভেস্তে গেল। শুধু প্রেজেন্টেশনের ক্ষেত্রে নয়, জীবনের ছোট-বড় যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে ভয় অনেক বড় একটি বাঁধ। আপনার খুব ভালভাবে জানা জিনিসও আপনি ভুলে যেতে পারেন এই ভয়ের কারণে। তাই আপনার জীবনের প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিত, "ভয়কে জয় করা"। কারণ ভয়কে যদি আপনি জয় না করেন, তাহলে আপনার শত পরিশ্রম,শত প্রস্তুতি, শত কষ্ট কোনো কাজে আসবে না। জীবনের প্রতিটি ধাপ সফলতার সাথে পেরোতে চাইলে প্রথমে ভয়কে জয় করুন।
১২০। একটি জার্মানী প্রবাদ আছে-কাউকে প্রপোজ করতে চাইলে আজকেই করুন, কারণ কাল সে অন্য কারো হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ “সবকিছু ঠিকঠাক হলে শুরু করব” — এই ধারণা ভয়ানক। কারণ জীবন কখনোই নিখুঁত হবে না। এই অপেক্ষার মানে হলো, আপনি ভয় পাচ্ছেন। আপনি কি এমন একজন, যিনি ভাবেন একদিন আমি সব ঠিকঠাক করে নেব। এই যেমন—❍ আগামীকাল থেকে সকালে উঠে দৌড়াব। ❍ পরের মাস থেকে নতুন কিছু শিখব। ❍ আগামী বছর একটা বিজনেস শুরু করব বা চাকরি পাব। কিন্তু ওই "একদিন" কখনো আসে না আপনার জীবনে। আর এই "অপেক্ষা", এই "আগামীকাল" আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় প্র*তারক। পরিকল্পনা করা সহজ, কিন্তু সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করা কঠিন। আমাদের মস্তিষ্ক পরিকল্পনার সময় সাময়িক আনন্দ পায়, এবং মনে করে কাজ শেষ। কিন্তু বাস্তবে কাজ শুরু না করলে সেটি শুধু একটা কল্পনা। বড় কিছু করার জন্য ছোট কিছু শুরু করাটা জরুরি। জীবন কখনোই "পরে" বা "কাল" বলে আপনার জন্য অপেক্ষা করবে না। সময় তার মতো এগিয়ে যাবে। জীবন বড়ই নিষ্ঠুর। সে আপনার জন্য একদিনও অপেক্ষা করতে রাজি নয়। যতদিন না আপনি শুরু করছেন, ততদিন সবকিছুই অবাস্তব। আর একবার শুরু করলে সবকিছুই সম্ভব। আজকের ছোট পদক্ষেপটাই হতে পারে আপনার আগামীকালের সাফল্যের ভিত্তি।
১২১। জীবনে নতুনত্ব ও বৈচিত্র খুঁজুন। নানা জায়গায় ঘোরা এবং এক্সপ্লোর করা আমাদের মন-মানসিকতা ও ব্রেনের জন্য ভালো। নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ নতুন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মেলামেশা ও কথা বলা আমাদের ব্রেনের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। যে লোক সমাজের নানা লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করে, দেখা যায় তাদের স্মরণশক্তি অনেকখানি বেড়ে গেছে, তার এডজাস্টমেন্ট করার ক্ষমতা এবং নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা বেড়ে যায়। যে শিশু বাড়িতে একা বড় হয়,; তার সঙ্গে যে শিশু স্কুলে যায়, বাজারে যায়; তাদের পার্থক্য তৈরি হয়।
সুখ নিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৫ বছরের এই গবেষণার ফলাফল হলো, সুখ আপনি ক্যারিয়ার, সফলতা বা অর্থ সম্পদের মধ্যে খুঁজে পাবেন না, বরং সুখে থাকার জন্য আমাদের দরকার হয় ‘সঠিক মানুষ’। আমাদের দরকার চারপাশে ‘সামাজিক সুস্থতা’ তৈরি করা। প্রিয়জনের সঙ্গে ঠুনকো ঝগড়া হলে যখন আপনি রাতে ঘুমাতে পারেন না, তখন বুঝবেন, সমস্যাটা আপনার ঘুমে নয়; সমস্যাটা আপনার সম্পর্কে। সুখ আভ্যন্তরীণ শান্তি অর্থাৎ ‘ডোপামিন হরমোনের’ উপর নির্ভরশীল। এই হরমোন ধরে রাখার উপায় হচ্ছে-‘পরিবর্তন’। অর্থাৎ নতুনভাবে কিছু করতে পারলে ডোপামিনের মাত্রা বাড়ে। কারণ মস্তিষ্ক নতুনত্ব পছন্দ করে। তাই সম্পূর্ণ নতুন কোনো দক্ষতা অর্জনের চেষ্টাও করুন। যা কিছু মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করবে, তাতেই তৈরি হবে টাটকা ডোপামিন। ভুল ও টক্সিক মানুষকে দূর করে সঠিক মানুষদের নিজের আশপাশে রাখুন।
১২২। কাউকে বদলানোর চেষ্টা করা বাদ দিন। প্রিয় মানূষ্টির অভ্যাস, তার পছন্দ, ইচ্ছা, শখ অথবা অভ্যাস হুট করে মানসিক চাপ দিয়ে বদলানোর চেষ্টা করলে সেক্ষেত্রে সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হবে। দুইজনে মিলেই দুইজনের পছন্দ-অপছন্দকে জানুন, গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করুন। একে অন্যের ভালো লাগাগুলোকে সম্মান করতে শিখুন। আপনি যদি মনে করে থাকেন যে, আপনার ভালোবাসার মানুষটিকে বদলালে আপনার সম্পর্কের ক্ষেত্রে উন্নতি হবে, তবে সেক্ষেত্রে আপনার নিজের চিন্তাধারাই সবার আগে বদলাতে হবে! কথায় আছে, মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়। সকালে বদলায়, বিকেলে বদলায়—কারণে বদলায়, অকারণে বদলায়। এই বদলানোটা দোষের নয়। সময়ের এই বহমান স্রোতোধারা মানুষকে বদলানোর মাধ্যমে পরিণত হতে সাহায্য করে। “ আমরা অনেকেই নিজেদের সংশোধন পছন্দ করিনা। সবাই শুধু অন্যের সংশোধন নিয়ে ব্যস্ত থাকি। এমনকি কেউ যদি আমাদের দোষগুলো ধরিয়ে দেয়, তখন নিজেও তার উপরে হয়ে যাই মহাক্ষ্যাপা।আসলে আপনি যদি নিজের ভেতরে পরিবর্তন না করেন, তাহলে আপনার চারপাশের পৃথিবী কোনোদিন পরিবর্তিত হবে না।” যেসব বিষয় আপনাকে এগুতে দিচ্ছেনা বা দমিয়ে রাখছে সেগুলোর মুখোমুখি হোন। হয়তো বিষয়টি সুখকর নাও হতে পারে। তারপরেও মোকাবেলা করুন। দেখবেন শেষ পর্যন্ত জয় আসবেই।
১২৩। আপনি নিজস্ব নীতি দিয়ে নিজেকে পরিচালিত করুন।
ড. স্টিফেন কোভে তার বই দি সেভেন হ্যাবিট অফ হাইলি এ্যাবফেক্টিভ পিপল-এ লিখেছেন, আমাদের জীবন পরিচালিত দশটি কেন্দ্রের উপর।
১. স্বামী/স্ত্রীকেন্দ্রিক: আমাদের ভেতর অনেক মানুষ আছেন যারা পরিচালিত হন স্বামী কিংবা স্ত্রী দ্বারা। তাদের সব কিছুর সাথেই তাদের স্বামী কিংবা স্ত্রী জড়িয়ে রয়েছে। এই ধরনের কেন্দ্রবিন্দুতে প্রজ্ঞা এবং ক্ষমতা দুটোই বিলুপ্ত হয়।
২. পরিবারকেন্দ্রিক: যারা পরিবারকেন্দ্রিক, তাদের নিরাপত্তা ঘিরে থাকে পারিবারিক ট্রেডিশন দিয়ে। এটা করা যাবে না, ওটা করলে পরিবারের সম্মান নষ্ট হয়ে যাবে,এমন সব অদ্ভুত বিষয়ে আবদ্ধ হয়ে আপনি পড়ে যাবেন মহাসাগরে।
৩. টাকা কেন্দ্রিক: অনেকেই আছেন যাদের ধ্যান-জ্ঞান হলো টাকা। তাদের কাছে আর কোনো কিছুর মূল্য নেই। সারাক্ষণ টাকার পিছনে ছোটে। তারা রীতিমত অন্ধই বলা চলে। তাদের সন্তানদের শৈশব থাকে না, পরিবারে সদস্যদের সাথে সম্পর্ক থাকে না। ফলে একসময় তার টাকা সবাই ভোগ করে, কিন্তু তাকে সময় দেওয়ার মতো কেউ থাকে না।
৪. কাজকেন্দ্রিক: যারা কাজকেন্দ্রিক মানুষ, তারা একটা সময়ে নিজের শরীর এবং মানুষের সাথে সম্পর্ককে উৎসর্গ করে কাজে মেতে থাকেন। কাজ দিয়েই তাদের পরিচয়- যেমন আমি একজন ডাক্তার, আমি একজন লেখক, আমি একজন অভিনেতা ইত্যাদি। তারা মূলত আত্মকেন্দ্রিক মানুষ।
৫. দখলকেন্দ্রিক: অনেকেরই দখল মনোবৃত্তি রয়েছে। তারা ঘর, বাড়ি, গাড়ি, গয়না, দামি জিনিসপত্র ইত্যাদি বিষয়গুলো নিজেদের দখলে রাখার পাশাপাশি অনেকেই আবার নাম, খ্যাতি, সামাজিক প্রতিপত্তি ধরে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন। তারা বুঝতেই পারেন না যে, এগুলো যেকোনো সময় হারিয়ে যেতে পারে এবং তখন তারা দিশেহারা হয়ে ওঠে। একসময় হতাশায় পতিত হন।
৬. বিনোদনকেন্দ্রিক: একদল মানুষ আছে যাদের কাছে বিনোদন ছাড়া জীবন বোর হয়ে যায়। কিন্তু বিনোদন হলো এমন একটা বিষয় যা পরেরবার এর চেয়েও বেশি কিছুর প্রয়োজন হয়। আপনি যদি মাত্রারিক্ত বিনোদনকেন্দ্রিক হন, তাহলে আপনার ভেতর অন্য যে ক্ষমতাগুলো ছিল তা আর বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে না।
৭. বন্ধুকেন্দ্রিক: বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরতা আপনাকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তুলে। তাদের সাথে কোনো মান-অভিমান আপনার যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে প্রভাবিত করতে পারে। আপনার বন্ধু-বান্ধব নির্ভরতা যেন কোনো অবস্থাতেই স্বামী/স্ত্রীর মতো অতিরিক্ত নির্ভরতায় চলে না যায়। নয়ত সবসময় আপনার মুড ওঠানামা করতে পারে।
৮. শত্রুকেন্দ্রিক: আমরা না বুঝেই কাউকে এমন শত্রু বানিয়ে ফেলি যে, সেই শত্রুটিকে নিয়ে দিন-রাত ভাবছেন, এই লোকটি না থাকলেই আপনার জীবন সুন্দর হয়ে যেত। কিভাবে তাকে উচিত শিক্ষা দেয়া যায়। এই ভাবনাতে দম দিতে গিয়ে আপনার জীবনের অনেক কিছু এলোমেলো হয়ে যায়।
৯. ধর্মকেন্দ্রিক: অনেকে আছেন যারা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন। তারা নিজেকে ধার্মিক হিসেবে তুলে ধরেন এবং অন্যদেরকেও সেই পথে নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। এতে তাদের ও অন্যদের স্বাভাবিক জীবন ব্যহত হয়।
১০. আত্মকেন্দ্রিক: আমাদের ভেতর সবচে বেশি পাওয়া যাবে আত্মকেন্দ্রিক মানুষ। এরা নিজেদের ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারে না। যখনই মানুষ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যায় তখন তার জ্ঞান, ক্ষমতা সবই খুব ক্ষুদ্র হয়ে যায়। এখন দেখে নিন, এই দশ ধরনের মানসিকতার মধ্যে যদি কোনোটি আপনার মধ্যে থাকে, তাহলে আপনি খুব বেশি পাওয়ার হতে পারবেন না। এই দশ কেন্দ্রিকতা নিয়ন্ত্রণ করে আপনাকে হতে হবে নৈতিকতা কেন্দ্রিক, উদার ও মানবিক।
১২৪। আমরা এমন একটি সমাজে বসবাস করছি, যেখানে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ হীনম্মন্যতায় ভুগছে, যার একটি বড় অংশ তরুণ প্রজন্ম। হীনম্মন্যতা এমন এক ধরনের মানসিক সমস্যা, যা নিজের ভালো দিকগুলোকে অস্বীকার করে অহেতুক অন্যের তুলনায় নিজেকে দুর্বল ভাবতে বাধ্য করে।
প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে কেউ এগিয়ে যাবে, কেউ পিছিয়ে পড়বে। পিছিয়ে পড়া মানুষটি ইচ্ছাশক্তি ও কর্মশক্তি দিয়ে আবার সামনের দিকে ধাবিত হবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত হয় তখন, যখন অন্য কারো সাফল্য আমরা সহজভাবে মেনে নিতে পারি না। অথবা অন্য কারো তুলনায় নিজেদের কম যোগ্যতাসম্পন্ন কিংবা কম আকর্ষণীয় মনে করতে শুরু করি। মনস্তত্ত্বের ভাষায় এটিই ‘ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স’।
মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সাধারণত ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স শৈশবের কোনো জটিল অভিজ্ঞতার কারণে তৈরি হয় বা এমন কোনো পরিবারে শিশুর বেড়ে ওঠে, যেখানে শিশুকে ক্রমাগত হেয় করা হয় কিংবা শিশুকে উত্সাহিত না করে বরং সাফল্য অর্জন করতে না পারায় কটাক্ষ বা বিদ্রুপ করা হয়।আমরা এমন একটি সমাজে বসবাস করছি, যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক বা সাফল্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক সৌন্দর্য, উচ্চতা এমনকি গায়ের রং দিয়ে সমাজে মানুষকে বিচার করা হয়। ফলে আমাদের আশপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা খুব অল্পতেই ভেঙে পড়েন। এইসব মানুষদের দুর্বলতায় প্রতিনিয়ত আঘাত করছি আমরা। কাজেই ‘ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স’ কাটিয়ে উঠুন এবং অন্যকে কাটাতে সহায়তা করুন।
১২৫। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়গুলোকে মূল্য দিন। যেকোনো সম্পর্কের গোপন কথা হচ্ছে- সম্পর্কে ক্ষুদ্র বিষয়গুলোই হয়ে ওঠে সবচে’ বড় বিষয়; আর বড় বিষয়গুলো হয়ে যায় গৌন। আপনি একজন মানুষকে খুব দামি একটি উপহার দিলেন। তাতে হয়তো তিনি সাময়িক খুশি হবেন। আবার আরেকটি মানুষকে আপনি তেমন কোনো উপহার দিলেন না, কিন্তু তিনি গাড়িতে ওঠার সময় ভদ্রতা করে দরজাটা খুলে দিলেন। কার কাছে আপনার প্রভাব বেশি হবে বলে মনে হয়? যার প্রতি আপনি ভালোবাসা দেখিয়েছেন তার কাছে। আপনি দাওয়াত দিয়ে খুব ভালো ভালো খাবার খাওয়ালেন, কিন্তু যাওয়ার সময় অতিথিকে সামান্য হাসিমুখে বিদায় দিলেন না, তাকে ঠিকমতো সময় দিলেন না, কিংবা অতিথির মনে হলো তাকে অবহেলা করা হয়েছে, সেই অতিথি কিন্তু নিজেকে গুটিয়ে নেবে। আপনার প্রতি তার আন্তরিকতা কমে যাবে। তাই ছোট ছোট বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখুন।
১২৬। আপনার কাছে কে কি প্রত্যাশা করে বসে আছে, কিংবা আপনি কার কাছে কি প্রত্যাশা করে বসে আছেন, সেটার চাওয়া-পাওয়ার গরমিল হলেই সেখানে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। এমনকি কর্মক্ষেত্রেও আপনি ভাবলেন এটা আপনার সহকর্মী করবে, আর উনি ভাবলেন আপনার নিজেরই তো সেটা করার কথা। তারপর তৈরি হলো দূরত্ব। সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনার প্রত্যাশা সে ঠিকমতো বুঝেছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করাটাও জরুরি। প্রত্যাশা এবং তা পূরণের ফারাক যদি থাকে যে-কোনো সম্পর্কে হতাশা তৈরি হতে বাধ্য। সম্পর্কের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য সঠিক প্রত্যাশাটা ঠিক করে নিন এবং তা অপর পক্ষকে বুঝিয়ে দিন। অনেক সময় মুখফুটে কথাগুলো বলা যায় না। কিন্তু সেই না-বলা কথাই হয়তো ভুল প্রত্যাশার জন্ম দেবে।
১২৭। পারসোনাল ইন্টিগ্রিটি বজায় রাখুন। ইন্টিগ্রিটি হলো, তাদের প্রতি অনুগত থাকা, যারা আপনার সামনে উপস্থিত নেই। ধরুন, আপনি আপনার সহকর্মী মিলে অপর একজন সহকর্মীকে নিয়ে কথা বলছেন, তাকে নিয়ে এমন কিছু বলছেন যা তার সামনে হয়তো বলতেন না। অর্থাৎ যে মানুষটি উপস্থিত নেই তার প্রতি আপনি অনুগত থাকছেন না; তাকে আপনি রক্ষা করছেন না। আপনি আপনার ইন্টিগ্রিটি হারাচ্ছেন। আপনার যদি ইন্টিগ্রিটি থাকে তাহলে আপনি সেই ব্যক্তিটিকে সামনে ডেকে এনে বলবেন, ঠিক কোন জায়গায় তিনি ভুলটি করেছেন কিংবা ঠিক কোথায় ঝামেলাটা হয়েছে। ইন্টিগ্রিটি হলো মানুষটির অনুপস্থিতিতে তার প্রশংসা করা, সমালোচনা নয়, তার প্রতি অনুগত থাকা।
১২৮। - আমি ভুল করেছিলাম, -- আমি তোমাকে সম্মান দেখাইনি, দুঃখিত। মন থেকে এই ধরনের কথা বলতে পারার জন্য প্রচণ্ড মানসিক চারিত্রিক শক্তির প্রয়োজন। যে মানুষটার গভীরের ভীত অনেক শক্ত, যার নীতি প্রচণ্ডরকম প্রখর, কেবল সেই মানুষটাই এভাবে ক্ষমা চাইতে পারে। এর বাইরে এভাবে ক্ষমা চাইবার মতো সৎ সাহস আর কেউ দেখাতে পারবে না। কেউ হয়তো অভিনয় করে ওভাবে দেখাতে পারবে। কিন্তু সত্যিকার অর্থেই দুঃখিত হয়ে এভাবে ক্ষমা চাইবে একমাত্র সেই ব্যক্তি, যে ভেতরে অনুভব করবে তার ইন্টিগ্রিটিতে একটু ঝাঁকুনি লেগেছিল; কিংবা বিশেষ কোনো মুহূর্তে খেয়াল না করে কাজটি করে ফেলেছেন। তিনি তৎক্ষণাৎ সেটা বুঝতে পেরেই ক্ষমা চাইবেন। সত্যিকার অর্থে ক্ষমা চাইলে আপনার গ্রহণযোগ্যতা ও সম্মান বাড়বে। আর বারবার ক্ষমা চাওয়ার মতো কাজ করলে আপনার ক্ষমা চাওয়াটাকে কেউ সিরিয়াসভাবে নেবে না; আপনার সম্পর্কে অবনতি ঘটবে।
১২৯। আচরণ আপনার মেধার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শক্তিশালী ইতিবাচক আচরণ আপনাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। এমনকি এটা কারো মেধার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ গুণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বহু ব্যক্তি খেলাধুলা, বিনোদন, রাজনীতি, বিজ্ঞান ও শিল্পে মেধাবী ছিলেন। কিন্তু তারা তাদের আচরণের জন্য বিফল হয়েছেন। মানুষ কখনোই সবদিক থেকে নিখুঁত কিংবা পরিপূর্ণ হয় না। সবাই একরকমও হয় না। তেমনি আপনাকেও মেনে নিতে হবে, আপনারও ভুল হতেই পারে। আপনার কাজেরও সমালোচনা হতে পারে, নিন্দা হতে পারে। নিজের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিন। আপনি চাইলে আপনার বদ অভ্যাস কিংবা ভুলগুলোর একটা তালিকা তৈরি করতে পারেন। সমালোচনাকে কখনো খারাপভাবে নিবেন না। মনে রাখবেন, সমালোচনাই আপনাকে ধীরে ধীরে নিখুঁত এবং পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
১৩০। বড় প্রাণীরা, যেমন হাতি, বাঘ, সিংহ, এরা যখন কোনো ছোট ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসবাস শুরু করে, তখন বংশপরম্পরায় এদের আকার ছোট হতে থাকে। তাদের শরীর, মগজ, সবই ধীরে ধীরে খর্বাকায় হয়। কারণ বড় শরীর ধারণের জন্য যে-পরিমাণ খাদ্য দরকার, তা ছোট দ্বীপ বা এলাকায় পাওয়া যায় না। ফলে টিকে থাকার তাগিদে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, প্রাণীগুলোর আকার খর্ব হয়ে আসে, যেন কম খাবারে বেশিদিন বাঁচা যায়। বড় অতিকায় প্রাণী তখন পরিণত হয় বেঁটে জন্তুতে। এটি হলো ডোয়ার্ফিজম; ডোয়ার্ফিজম, প্রাণিজগতের মতো সমাজেও প্রতিদিন ঘটে চলছে। কোনো এলাকায় সাহিত্য, দর্শন, শিল্পকলা, বৈজ্ঞানিক চিন্তা, উঁচু রাজনীতিক ভাবনা, এগুলোর গ্রাহক যদি কমে যায়, তাহলে ওই এলাকায় প্রতিভাবান মহৎ মানুষের সংখ্যা ধীরে ধীরে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, কমতে থাকে। জাতি টবের গাছের মতো বেচে থাকে,কিন্তু বড় গাছে পরিণত হয় না। তাই সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড , জ্ঞান চর্চা অসাম্প্রদায়িকতা , বিভিন্ন বর্ণ ও ধর্মের মানুষের মেলামেশা এইসবকে উৎসাহিত করুন এবং বিকশিত হতে সাপোর্ট দিন।
১৩১। মেয়েরা প্রজাতিগতভাবে পুরুষের থেকে আলাদা। মেয়েরা মানসিকভাবে অনেকটা শিশুর মতো। অল্পতে খুশি হয়, অল্পতে রাগ-অভিমান-কান্না করে। আবার আদর পেলে সব ভুলে যায়। এইজন্য ইংরেজিতে মেয়েদেরকেও ‘বেবি’ বলা হয়। মেয়েরা, তার প্রেমিক পুরুষকে নিজের মত করে সাজাতে পছন্দ করে।এর বিপরীত হলে রাগ-অভিমান করে। কিন্তু এসব ভালোবাসা তারা প্রকাশ করে না। নারীকে,তাদের মত করে,আপনাকে আগলে রাখার মত সুযোগ দিন। নারী ভালোবাসার জিনিস। নারীকে কড়া কথা, অযৌক্তিক শাসন, মিথ্যা অপবাদ-সন্দেহ-অবিশ্বাসের শিকল দিয়ে বাঁধবেন না। তাকে উৎসাহের মাধ্যমে তার আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিন; এতেই গড়ে উঠবে আপনার সুন্দর পরিবার এবং আগামীর সমৃদ্ধ প্রজন্ম ।
১৩২। তথাকথিত প্রেম পড়ে কত তরুণ-তরুণী যে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জীবনের সম্ভাবনাকে নষ্ট করেছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, প্রেমে পড়লে মানুষ আর মানসিকভাবে সুস্থ থাকে না । তার বিচার বুদ্ধি লোপ পায় এবং সে অন্ধ আবেগে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এ আবেগের স্থায়িত্ব আবার খুবই কম । আজকে যাকে না পেলে বাঁচবো না বলে মনে হচ্ছে, বছর না ঘুরতেই মনে হতে পারে যে, তাকে না ছাড়লে বাঁচবো না । ৬ মাস আগেও যে চেহারাটা দেখার জন্যে অস্থির হতো মন, এখন সে চেহারাটাই হতে পারে সবচেয়ে অসহ্য দৃশ্য। এর কারণ কি ? একজন মনোবিজ্ঞানী স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট পড়ানোর সময় রুমে চারপাশে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় শ্রোতাদের সামনে এক গ্লাস পানি উপরে তুলে ধরলেন। তখন সবাই ভেবে ছিল হয়তো তিনি গ্লাস অর্ধেক খালি না অর্ধেক ভর্তি এই প্রশ্নটি করবেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। তিনি হাসিমুখে প্রশ্ন করলেন “ এই এক গ্লাস পানি কত ভারী”। উত্তর আসল আট আউন্স থেকে বিশ আউন্সের ভেতর হবে হয়তো। তিনি বললেন এর আসল ওজন এখানে কোনো ব্যাপার না। ব্যাপার হলো আমরা এটাকে কতক্ষণ ধরে রাখছি। যদি আমি এটাকে এক মিনিটের জন্য ধরে রাখি, তবে কোনো সমস্যা হবে না। যদি এটাকে এক ঘন্টা ধরে রাখি তবে আমার হাতে ব্যথা অনুভূত হবে। আর যদি একদিনের জন্য এভাবে ধরে থাকি, তবে আমি অসাড় এবং পক্ষঘাতগ্রস্থ বোধ করব। ধরে রাখার সময় বাড়ার সাথে সাথে এটি ভারী থেকে ভারী লাগতে শুরু করে।
যে আকর্ষণ শরীর থেকে তৈরি হয়, তার স্থায়িত্ব খুব কম। বেশ কিছুদিন তা পেলেই আর কোনো আকর্ষণ থাকে না। কিন্তু প্রিয় মানুষটির চেহারা যদি আকর্ষণীয় হয়। তাহলে এই সম্পর্কের স্থায়িত্ব একটু বেশি থাকে। চেহারা সুন্দরের পাশাপাশী সঙ্গী যদি বিশ্বাসী হয়, তাহলে অনেকটা সময় পর্যন্ত তার প্রতি আকর্ষণ থেকেই যায়। এর উপর প্রিয় মানুষটি যদি ব্যক্তিত্ববান ও যোগ্যতা সম্পন্ন হয়, তাহলে আকর্ষণের স্থায়িত্ব হয় আরো বেশি। কিন্তু সব আকর্ষণই এক সময় কমে যায় বা নিভে যায়। হুমায়ুন আজাদের ভাষায়, সবকিছু ভেঙে পড়ে।
কিন্তু কেন আকর্ষণ কমে যায়, প্রেমে পরলে আমাদের মস্তিস্কের পিটুইটারি গ্লান্ড হতে এমফিটামিন নামক একটি হরমোন সিক্রেশন হয়। যা অকারণ আনন্দ অনুভুতি সৃষ্টি করে। কিন্তু এই এমফিটামিন উৎপন্ন হওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে, যা প্রায় ৩ বছর ৯ মাস ২৬ দিন। ফলে চার বছরে্র আগেই শেষ হয় প্রেম। তখন নতুন আনন্দের উৎস হিসাবে তৃতীয় কেউ এসে যেতে পারে। এভাবেই চলতে থাকে এমফিটামিন-এর সার্কেল।
১৩৩। সুখ ভবিষ্যতের জন্যে তুলে রাখা বড় ভুল। অসংখ্য মানুষ ভাবে "আমার এই ব্যাপারটা যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে"। এটা একটা ঘোর (ডিলুশন)। যখন "ওই একটা জিনিস" ঠিক হবে, তখন "আরো একটা জিনিস” আপনার জীবনে বাকি থেকে যাবে। জীবনে কখনো সবকিছু একসাথে আপনার কাছে ধরা দিবে না। আমি খুব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি জীবনে সুখী হওয়া শুধু একটা জিনিস ঠিক হয়ে যাওয়ার উপর নির্ভর করে না, এভাবে সুখী হওয়াও যায় না। এরচেয়ে এই মুহূর্তে আপনার যা আছে তা নিয়ে সুখী হোন, বর্তমানকে উপভোগ করুন এবং একই সাথে ভবিষ্যতের জন্যে কাজ করে যান। সাফল্য আসলে একটা ভ্রমণ, গন্তব্য নয়! কোন বড় কিছুর জন্যে কাজ করলেও নিজেকে সুখী হওয়া থেকে বঞ্চিত করবেন না, কাজটি শেষ হওয়া পর্যন্ত সুখী হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করে থাকবেন না, কাজ করতে করতেই সুখী হওয়ার চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন এবং এই ভ্রমণ উপভোগ করুন। যখন আপনি জীবনে দামী জিনিসপত্র ছাড়া চলতে পারবেন না, তখন এই জিনিসপত্রগুলিই আপনার জীবনকে পরিচালিত করবে। আপনার দামী বাড়ি বা ফ্ল্যাট এবং ঘরের দামী ফার্নিচার থাকার কারণে আপনি অন্য জায়গায় সহজে চলে যেতে পারবেন না এবং এ রকম আরো দামী জিনিস পাওয়ার জন্যে আপনাকে সবসময় অনেক বেশি উপার্জন করা নিয়ে চিন্তা করতে হবে, নয়তো অনৈতিকতার আশ্রয় নিতে হনে। অথচ এইসব দামী সম্পদ আপনার জীবনকে খুব বেশি সমৃদ্ধ করে না। জীবনে যতো কম সম্পদ থাকবে আসলে ততোই ভালো থাকবেন, সুখি থাকবে্ন, ভোগবেন কম।
১৩৪। সারাক্ষণ ব্যস্ত থকবেন না। কারন, সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। আপনি কি সারাক্ষণ নানাকাজে দম ফেলার ফুসরতই পান না? তাহলে জেনে রাখুন, আপনার মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করছেন আপনি। এতে বাস্তবে আপনার কর্মস্পৃহা ও সৃজনশীলতাও নষ্ট হচ্ছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় এমনটাই প্রমাণিত হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নিবন্ধ অনুসারে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে ব্যস্ততার মাঝেও সামান্য পরিমাণে ঘুম। ঘুমের ফলে মানুষের কর্মোদ্যম বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের বিশ্রাম হয়। ঘুম ছাড়াও কর্মব্যস্ততার মাঝে কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়ার কথা উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা। 'বিশ্রাম বা অলস সময় আমাদের মস্তিষ্কের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানসিক প্রক্রিয়ায় দরকার হয়। এটি উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতায় উৎসাহ দেয়- এবং দৈনন্দিন জীবনে আমাদের সর্বোচ্চ কৃতিত্ব ও স্থিতিশীল মস্তিষ্ক তৈরিতে সাহায্য করে।' কাজেই দিনের কিছুটা সময় একাকীত্বের মধ্যে কাটান।
১৩৫। দরবেশি মানসিকতা ছাড়ুন, বাস্তববাদী হোন। "একদিন আমার সময় আসবে আর আমি সুখী হবো নেতা হবো" -এটা একটা ফালতু চিন্তা। অনেকের ভাগ্য নিয়ে এরকম একটা অদ্ভুত ধারণা আছে- আল্লাহ/ঈশ্বর/ভগবান/দেবতা কেউ একদিন কোনোভাবে তাদের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিবেন। কেউ কেউ ভাবেন একদিন তারা লটারি জিতবেন কিংবা ভালো একটা সুযোগ আসবে তাদের জীবনে। অনেক মেয়ে ভাবেন, একদিন তার রাজপুত্র এসে তাকে নিয়ে যাবে স্বপ্নের দেশে! এই ধরনের ভাবনা আসে বাস্তবতা সম্পর্কে ভুল ধারণা থেকে। ভালো থাকার জন্য কঠোর পরিশ্রম ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে ধীরে ধীরে এগুতে হবে। জাদু-টোনা, জ্বীন-পরী, জ্যোতিষবিদ্যা, কিংবা কোনো অদৃশ্য সত্ত্বা বা কল্পিত অদৃশ্য দেবতারা এই বিশ্বজগতে আপনাকে ফ্রিতে কিছু দেবার জন্যে পণ করে বসে নেই। আপনাকেই আপনার জীবন গুছিয়ে তোলার জন্যে কাজ করে যেতে হবে।
১৩৬। "Less is more" বা "কমই বেশি"। মিনিমালিজম-এ কম জিনিসপত্র ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়। মিনিমালিস্ট জীবনধারায় নতুন কিছু কেনার আগে , নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হয়, "এটি কি আমার জন্য সত্যিই প্রয়োজনীয়?" এই দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে মিনিমালিস্টরা অপ্রয়োজনীয় খরচ থেকে বিরত থাকেন এবং শুধুমাত্র সেই জিনিস কেনেন, যা তাদের জীবনে সত্যিকার অর্থে কাজে লাগবে। এভাবে, মিনিমালিস্টরা তাদের সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করেন এবং ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করেন। অপ্রয়োজনীয় জিনিস ছেড়ে দিন। আপনার সময় এবং শক্তি শুধুমাত্র সেই কাজগুলিতে ব্যয় করুন যা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একটি বাসা বা স্থানকে পরিষ্কার, ফাঁকা জায়গা এবং আকর্ষনীয় রঙের ব্যবহার করে, কার্যকরভাবে সাজানো। যা সত্যি সৌন্দর্য বাড়ায়।
১৩৭। সবসময় হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করুণ। কথার বলে, সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। মুখের সৌন্দর্যের প্রথম এবং প্রধান উৎস হল স্নিগ্ধ হাসি । যে মুখ হাসতে জানে না, সে মুখ কখনো সুন্দর নয় । যে মন খুলে হাসতে পারে না, সে-ই হছে পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী ব্যক্তি। মাত্র সামান্য কিছু লোক আছেন, যারা ঘুম থেকে উঠে সুন্দর করে একটু মিষ্টি করে হাসেন কিন্তু বেশির ভাগ লোকই নাস্তা সারা পর্যন্ত মুখটাকে হাড়ি করে রাখেন । তারা জানেন না সুখ-শান্তি ও প্রভাব - প্রতিপত্তির মূল রহস্য হল মধুর স্বভাব, হাস্যউজ্জ্বল মুখ । দৈনন্দিন কাজে হাজারো বাধা-বিপত্তি আর ঝামেলাকে আপনি হাসিমুখে (রসিকতার মধ্য দিয়ে) দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারলে আপনার জীবন হয়ে উঠবে আরো আনন্দময় । পরিবেশটাও হবে ঝলমলে আনন্দমুখর। সদাহাস্য বিনম্রভাব ইচছা করলে কিন্তু রপ্ত করা যায় না। রপ্ত করার জিনিস হলো অনুশীলন । সদাহাস্য বিনম্র ভাবটা জন্মায় বিদ্যাবুদ্ধি আর জ্ঞান থেকে। আপনি যত নামজাদা ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষ হবেন, ততবেশী নম্র, মধুর ও জাগ্রত চিত্তের অধিকারী হবেন । মনে রাখবেন- একটি হাস্যউজ্জ্বল মুখ পৃথিবীর হাজারো দামী সুপারিশ পত্রের চেয়েও বেশি শক্তিশালী । হাসি পৃথিবীর সবচেয়ে মানবিক ভাষা, মানুষকে আকৃষ্ট ও বশ করার সহজ অস্ত্র। এটি প্রয়োগ করুন।
১৩৮। জীবনটা সময়ের সমষ্টি মাত্র । যদি জীবনে উন্নতি করতে চান, প্রতিষ্ঠিত হতে চান, তবে সময় অপচয় করবে না । একটা দিন চলে যাওয়া মানে জীবন থেকে চব্বিশটা ঘণ্টা ঝরে যাওয়া। এডিসন বলেছিলেন - ঈশ্বর যদি আমাকে জন্মভূমি বেছে নেবার অধিকার দিতেন, তাহলে আমি মঙ্গল গ্রহই বেছে নিতাম । কারণ মঙ্গল গ্রহের দিন পৃথিবীর চেয়ে চল্লিশ মিনিট বড়। অন্তঃত সে সময়টা বেশি কাজ করা যেত। মোট কাজ হলঃ সাফল্যের রহস্য লুকিয়ে আছে সময় বিভাজনে । চব্বিশ ঘণ্টার দিনটা আপনার কাছে আট ঘণ্টা না বাহাত্তর ঘণ্টার হবে, সেটা নির্ভর করে- আপনি কিভারে সময় ব্যয় করছেন তার উপর । কেউ সারাদিনও কাজ করে কুলিয়ে উঠতে পারে না, আবার কেউ অত সময় নিয়ে কী করবেন ভেবে উঠতে পারে না । এই দু'পক্ষের কাছে সময় একটা বিড়ম্বনা । সময়ের সদ্ব্যবহার কী করে করবেন, তা না জানার জন্য এদের এমনটি হয় । সময় ব্যবস্থাপনা কিছু কৌশলঃ
১.তালিকা তৈরি করুন: আপনি তিন ধরনের তালিকা তৈরি করুন- ব্যাক্তিগত, ঘরের ও চাকরী বা ব্যবসার । কোন কাজে কতক্ষণ সময় ব্যয় করবেন তার পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী মোবাইলে রিমাইন্ডার সেট করুন। প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন করার অগ্রিম পরিকল্পনা করুন, কাজের তালিকা চোখের সামনে রাখুন।
২.একসাথে অনেক কাজ করা বন্ধ করুন: প্রায়ই দেখা যায় যারা বহু কাজ একসাথে করেন। তারা ভাবেন যে তারা বেশি কাজ স¤পন্ন করেছেন। কিন্তু মন্র রাখবেন, আমাদের মন তখনই ভালো কাজ করে, যখন আমরা একটি কাজের দিকে মনোযোগ দিতে সক্ষম হই।
৩.অন্যকেও দায়িত্ব দিন: আপনি সবকিছু একা করতে যাবেন না। আপনার সীমাবদ্ধতার কথা মনে রাখুন। দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি খুঁজুন এবং তাকেও কিছু দায়িত্ব দিন। এটি আপনার চাপ কমাবে এবং আরও কার্যক্ষম করবে।
৪.নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা করা বন্ধ করুন: পৃথিবীতে কেউই নিখুঁত নয়। কাজের যৌক্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। এবং যেনো-তেনোভাবে না করে নিজের সর্বোত্তম চেষ্টা করুন।
৫.নিজেকে পুরস্কৃত করুন: যখন কোনো কাজ সম্পন্ন করেছেন, তা উদযাপন করুন। যাতে আপনি আনন্দ পান তাই করুন।
৬.কাজগুলোকে ভাগ করে নিন: বড় বড় কাজগুলোকে ছোট ছোট করে ভাগ করুন এবং একটা একটা করে করুন।
৭.বিশ্রাম নিন: বিশ্রাম আপনাকে যে শক্তি ক্ষয় হয়েছে তা ফিরে পেতে সাহায্য করবে এবং কাজে উদ্যমী হবেন।
১৩৯। সুনামের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে, প্রাণ দিয়ে একে রক্ষা করুন...। শুরুতে আপনাকে উদারতা, সততা বা চতুরতার মতো একটা বিশিষ্ট গুণের মাধ্যমে খ্যাতি প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে। এই গুণ আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে এবং অন্যদের আপনার ব্যাপারে আলোচনা করতে বাধ্য করবে। এরপর আপনার খ্যাতি যত সম্ভব বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিন। অবশ্যই সূক্ষ্মভাবে; যত্ন নিয়ে ধীরে ধীরে কৌশলে ছড়াতে হবে । এটা আপনার চারিদিকে একটা প্রভাব বলয় সৃষ্টি করবে। খ্যাতি একরকমই একটি সম্পদ, যা সতর্কতার সঙ্গে সংগ্রহ এবং মজবুত করতে হয়। মনে রাখবেন-সুনাম ক্ষমতার প্রধান ভিত্তিপ্রস্তর। কিন্তু পা পিছলালেই আপনি অরক্ষিত। তখন সবদিক থেকে আক্রমণ আসবে। কাজেই আপনার সুনামকে এমনভাবে পোক্ত করুন, যাতে আপনি ভেসে না যান। প্রতিপক্ষের সম্ভাব্য আক্রমণ সম্বন্ধে সর্বদা সজাগ থাকুন এবং তা থেকে আঘাতের আগেই প্রতিহত করুন।
১৪০। আজীবন সময় দিয়েছেন নিম গাছের নিচে। আর এখন বলছেন, জীবন এত তিতা কেন? আপনি যখন রাত জেগে দুনিয়ার হতাশা লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কমেন্টে সিমপ্যাথি আদায় করছেন, তখন হয়তো অপরপ্রান্তে কেউ রাত জেগে আউটসোর্সিং করছে। আপনি কমেন্টে প্রচুর সিমপ্যাথি পাবেন, আর সে পাবে একাউন্টে টাকা। হিসেবটা খুব সিম্পল- যে যেটার জন্য কাজ করেছে সে সেটাই পেয়েছে। দিন শেষে হতাশ হয়ে বলেন -'শালার, ভাগ্যটাই খারাপ'! না বন্ধু, আপনার ভাগ্য আজ আপনাকে এখানে আনেনি, আপনিই আপনার ভাগ্যকে এতো নিচে নিয়ে এসেছেন। বাড়ির পাশে ময়লা ফেলে তা থেকে কিভাবে ফুলের সুবাস আশা করেন? কাজ যা করেছেন রেজাল্টও তাই হবে। পৃথিবীতে যত যুদ্ধ বিদ্রোহ অশান্তি তার মূলে হলো প্রতিবেশী সমস্যা। বাড়ির দারোয়ান থেকে শুরু করে পাড়া প্রতিবেশীর সঙ্গে যদি আপনি ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে না পারেন, তাহলে কিন্তু আপনি সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন না।
১৪১। অনেকে আছেন যারা হতভাগ্য বা অসুখী হয়ে জন্মাননি, কিন্তু তাদের ধ্বংসাত্মক ভুল কাজের জন্য নিজেদের দুর্দশা তৈরি করেছে। এটা একটা মহান কাজ হবে, যদি আমরা তাদের টেনে তুলতে পারি, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তাদের প্রভাব আমাদের মধ্যে ঢুকে’ আমাদেরই পরিবর্তিত করে দেয়। কারণটা খুবই সহজ, যাদের সঙ্গে আমরা সময় কাটাই, তাদের মেজাজ, আবেগ এবং এমনকি চিন্তাধারার প্রতি আমরা অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ি নিজের অজান্তে। জীবনে অবস্থার উন্নতির জন্য ‘কার কার সঙ্গে আপনি মিশবেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ’। মেধা শূন্য লোকদের সঙ্গে মেশার ঝুঁকি হচ্ছে, এদের জন্য আপনাকে প্রচুর মূল্যবান সময় এবং শক্তির অপচয় করতে হবে। কাজেই এদের কাছ থেকে পালান, না হলে ফল ভোগ করতে হবে।
আপনি সুখী এবং ভাগ্যবানদের সঙ্গে মিশুন। অসুখী এবং ভাগ্যহীনদের বর্জন করুন।
১৪২। মানসিক চাপ কমানোর উপায় শিখুন। নাক দিয়ে ধীরে শ্বাস নিন, কিছুক্ষণ ধরে রাখুন, তারপর মুখ দিয়ে ছেড়ে দিন; ৫/১০বার। আপনার অনুভূতিগুলো প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন। এতে মন হালকা হবে এবং সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। আপনার পছন্দের কাজগুলো করুন, সকালে বা বিকালে কিছুক্ষণ সূর্যালোক গ্রহণ করুন। পার্কে হাঁটুন বা গাছের ছায়ায় প্রকৃতির সাথে সময় কাটান। প্রিয় সঙ্গীত শুনুন। প্রতিটি সমস্যার সমাধান আছে, নতুন আইডিয়া-কৌশল বের করুন। যে বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সেগুলো নিয়ে বেশি ভাববেন না, সময়ের উপর ছেড়ে দিন। সময়ে সমস্যাটি নরম হতে হতে আপনার সমাধানের নাগালে চলে আসবে, শুধু ধৈর্য ধরুন।
আনন্দের মধ্যে জীবনযাপন করুন। আনন্দ মানে শুধু হাসিখুশি থাকা নয়, বরং জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো উপভোগ করা, ইতিবাচক চিন্তা করা, এবং কৃতজ্ঞতায় মন ভরিয়ে রাখা। পরিবার, বন্ধু, এবং প্রিয়জনদের সাথে আড্ডা দিন বা ছোট খাটো ভ্রমণে যান। অতীত বা ভবিষ্যতের চিন্তা কমিয়ে বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ দিন। ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেগুলো অর্জনের চেষ্টা করুন। হাসি এবং আনন্দ হচ্ছে সংক্রামক। এটি আপনার এবং আশেপাশের মানুষের মন ভালো রাখে।জীবনের প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করতে ডিজিটাল ব্যস্ততা থেকে মুক্ত থাকুুন। প্রিয়জনদের সাথে গুণগত সময় কাটান। ঘরে “নো স্ক্রিন জোন” নির্ধারণ করুন, যেমন- ডাইনিং টেবিল বা শোবার ঘর, পড়ার টেবিল। নিজের যতœ নিন। সেলফ-কেয়ার রুটিন অনুসরণ করুন, যেমন ফেসপ্যাক লাগানো, গরম পানিতে গোসল করা বা ম্যাসাজ করা। নতুন অভিজ্ঞতা নিন। নতুন কোনো জায়গায় ঘুরতে যান বা নতুন কোনো রেস্টুরেন্টে খাবার খান। নতুন বন্ধু তৈরি করুন। এমন কিছু করুন যা আপনি আগে কখনো করেননি।
১৪৩। ইচ্ছা থাকলে উপায় হবেই। মানুষের সাধ-স্বপ্ন, তার ইচ্ছে শক্তিকে জ্বালিয়ে তোলে । যার আশা-আকাঙ্খা যতো বেশি প্রকট, তার ইচ্ছে শক্তিও ততোটা প্রবল । যে কোন বড় সৃষ্টিশীল কাজগুলো আসে বড় বড় স্বপ্ন আশা-আকাঙ্খা থেকেই । সহজ কথায়— আপনার কোনো একটি কাজ দশ দিনে শেষ হবে, না পাঁচ দিনে শেষ হবে, সেটা নির্ভর করবে - সেই কাজটির প্রতি আপনার ইচ্ছা শক্তি কি পরিমাণ কাজ করছে সেটার উপর । প্রবল ইচ্ছা শক্তি আপনাকে দ্রুত সাফল্য এনে দেবে । কাজে যত বাধাই থাকুক, দৃঢ় ইচ্ছা থাকলে উপায় একটা হবেই । যদি আপনার জোরালো ইচ্ছা থাকে যে, আপনি অমুক হবেন, তাহলে আপনি অর্ধেক এগিয়ে গেছেন । বাকী অর্ধেক নির্ভর করবে আপনার অধ্যবসায় ও সাধনার উপর । কাজটি ধরে থাকুন, দেখবেন ক্রমশঃ আপনার শক্তি ও সুবিধা বেড়ে যাবে এবং তা বাড়তে থাকবে। যদি প্রথম প্রথম ব্যর্থ মনোরথও হন, তবে পরাংমুখ হবেন না - কাজের খুঁতগুলি খুঁজে বের করুন এবং সংশোধন করুন । তারপর পুনরায় এগুতে থাকুন । মনে রাখবেন, ব্যর্থতা আসে সফলতার সঙ্গে সঙ্গে ছায়ার মতো । সাফল্যের চেষ্টা করে যাবেন অথচ ব্যর্থ হবেন না, এরকম আশা করা শুধু বালক সুলভই নয়, রীতিমতো অন্যায়। ব্যর্থতাকে স্বীকার করে নেওয়ার মতো মনের জোর থাকা দরকার । মোট কথা হল - কোনো কাজে যদি আপনার জোরালো ইচ্ছা শক্তি কাজ করে থাকে, তাহলে আপনি সফল হবেন ।
১৪৪। তর্ক এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ। প্রত্যেক মানুষই নিজের জ্ঞান, ধারণা এবং মতকে নির্ভুল এবং বড় মনে করে। মানুষ তার চিন্তা, বিশ্বাস ও ধারণাকে সত্য ও নির্ভুল হিসাবে প্রমাণ করার জন্য অপরের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়। আসলে তর্কে লিপ্ত হওয়া নির্বোধের কাজ। প্রতিপক্ষ যদি বুঝতেও পারে যে, তার তথ্য ভুল তবুও তার মন সেটাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারবে না। নিজের মত-বিশ্বাস-চিন্তা বা ধারণা পরাজিত হওয়ায় তার ব্যক্তিস্বাতন্ত্রে আঘাত লাগে। ফলে তার মন বিরোধিতায় ভরে উঠে। এক্ষেত্রে নিজের তথ্য সঠিক এবং নির্ভুল হলেও ভুল বলে স্বীকার করে নেওয়া, কিংবা কৌতুক করে হেসে প্রসঙ্গ পাল্টানো বা কৌশলে তর্ক এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ । সোজা কথা : কারো কোনো কথা-কাজ-মত কিংবা সিদ্ধান্তের সাথে যদি আপনি একমত হতে না পারেন- তবে সেজন্য তার মুখের উপর জবাব দেবেন না। অন্যের ্মতকে গুরুত্ব দিয়েও কথা বলা যায় ,কাজ করা যায় । সেটা চর্চা করুন।
১৪৫। স্বাধীনতা উন্নতির সহায়ক। যারা বাল্যকালে স্নেহ- ভালবাসা কম পায়, বাল্যে যাদের কেউ পছন্দ করেনি, তারা আনেক সময় বড় হয়ে ভীতু হয় এবং পরাজিত মনোবৃত্তি লাভ করে । এরা তিলকে তাল করে দেখে ৷ বাল্যে স্নেহ-ভালবাসা পেলে সে মানুষকে বিশ্বাস করতে শিখে । যে সব পরিবারের পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদেরকে নিজের পথ নিজেকে চিনে নিতে বলে এবং উৎসাহ দেন, নিজেদের খেয়াল খুশী মত গড়ে উঠতে প্রেরণা যোগান, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব তৈরি করতে সহয়তা করেন, সে সব ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে জয় করতে পারে । আর যে সব বাবা-মা ছেলে-মেয়েদের করা নিড়াপত্তার মধ্যে রাখেন, সব কিছু পিতামাতার অনুমতি নিয়ে করতে বলেন । ছেলে মেয়েদের নিজস্ব মতামতকে প্রশ্রয় না দিয়ে তাদের ইচ্ছা ও মতকে চাপিয়ে দেন, সে সব ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে ভিতু দুঃচিন্তাগ্রস্ত ও অপ্রকৃতিয়স্থ হয় । ,মোট কথা: স্বাধীনতাতেই উন্নতি। নির্মল বাতাস কেমন স্বাধীন, কোন বাধা নেই, হু হু করে প্রবাহিত হয় কিন্তু উহাকে আবদ্ধ করুন, দূষিত হয়ে যাবে। স্রোতের পানি কেমন স্বচ্ছ উহার গতিপথ বন্ধ করুন, পছে দুর্গন্ধ হবে । সুতরাং সিদ্ধান্ত হল - কারো স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবেন না, তাকে নিজের মত বেড়ে উঠতে উৎসাহিত করুন ।
১৪৬। মনোযোগী হয়ে অন্যের কথা শুনুন। মনোযোগী শ্রোতা পেলে সবাই আরামবোধ করে । কারণ মানুষ নিজেই মনের ভার অন্য মনে নামিয়ে দিয়ে হালকা হতে চায়। এ পৃথিবীর প্রায় সবাই বলনেওয়ালা, শোনার মানুষ নেই বললেই চলে। করণ সবজান্তা মনোভাব আমাদের রক্তে । জানার স্পৃহা যাদের, কেবল তারাই অন্যকে গুরুত্ব দেয় । তারা জানে, প্রতিটি মানুষের কাছে শেখার কিছু-না-কিছু আছে । তারা মৌমাছির মতো। মৌমাছি যেমন ফুলের বুকে হুল ফুটিয়ে মুধুটুকু সংগ্রহ করে— জ্ঞান প্রত্যাশী, উন্নতিকামী মানুষেরাও তেমনি মানোযোগী হয়ে প্রতিটি মানুষের জ্ঞান অভিজ্ঞতাকে সঞ্চয় করে এবং প্রয়োজন মত কাজে লাগায় । কাজেই অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাকে নিজের সম্পর্কে বলতে উৎসাহিত করুন। কথার মাঝে কথা বলবেন না । যখন আপনার কিছু বলার থাকে না, তখন অবশ্যই চুপ করে থাকবেন। বিভিন্ন বিষয়ে অন্যের কাছে পরামর্শ চান এবং তার মতামত মনোযোগ দিয়ে শুনুন ।
১৪৭। আপনার চিন্তাই আপনার ভবিষ্যত। আপনি ভবিষ্যতে কী হবেন? আপনার বৈশিষ্ট্য ব্যক্তিত্ব কেমন হবে, তা নির্ভর করবে আপনি প্রতিদিন কী চিন্তা করেন তার উপর । সোজা কথাঃ চিন্তাই কাজ । কোনো কাজ করার পূর্বে তা প্রথমে আমাদের মাথায় আসে । মাথার মধ্যেই কল্পনা সৃষ্টি হয় এবং এই কল্পনাই ক্রমে বিকশিত হয়ে পরিকল্পনায় রূপ নেয় । তারপর পরিকল্পনা অনুযায়ী হাত-পা চলে । কাজেই বুঝা যায় যে, মানুষের স্বভাব ও কার্য তার চিন্তা অনুযায়ী গঠিত হয় । অর্থাৎ সে যেটা চিন্তা করবে, তার স্বভাব ক্রমশঃ তার মধ্যে সংক্রামিত হবে। এজন্যই বলা হয়- মানুষের কাজ হচ্ছে তার চিন্তার প্রতিফল মাত্র। এই কথাটাই নেপলিয়ান ঘুরিয়ে বলেছেন এইভাবে- মানুষ তার চিন্তা দ্বারা শাসিত হয় । মনিষী ভয়াল বলেছেন- আমি যদি বুঝতে পারি, আপনি প্রতিদিন কী চিন্তা করেন— তাহলে বলে দিতে পারবো- আপানি কে? আপনার ভবিষ্যৎ কি? পৃথিবীতে ভাল-মন্দ বলে কিছুই নেই। আমাদের চিন্তাই ভাল মন্দের সৃষ্টি করে । আপনি যদি প্রতিদিন যদি উন্নত, গঠনমূলক চিন্তা করেন, তাহলে আপনার উন্নতি, সাফল্য অবধারিত । মোট কথা হলঃ মানুষের চিন্তাধারা বদল করে তার গোটা জীবন বদলানো যায় । মনে রাখবেন, পৃথিবীতে সবচাইতে বিপজ্জনক জিনিস হচ্ছে মন্দ চিন্তা। শরীর থেকে মারাত্মক রোগের জীবাণু তাড়াবার আগে দূর করা দরকার মন্দ চিন্তা । সুচিন্তা জাগ্রত করতে দুটি পথ আছে । একটি হলো উত্তম কিছু পড়া শুনা-দেখা, অন্যটি হলো সৎসঙ্গ ।
১৪৮। কাজ ভাগ করে নিন । লোকের দক্ষতাকে বুদ্ধিমানের মতো কাজে লাগান ৷ যখন কাজের দায়িত্ব অন্য লোককে দিচ্ছেন তখন কাজটা তাঁকে স্বাধীনভাবে করার সুযোগও দিন। তাহলে দেখবেন তিনি মাথা খাটিয়ে নতুন নতুন পথ বের করছেন। এতে আপনারই সুবিধে । আপনি কেবল অন্য লোকের ‘হাত’ নয়, ‘মাথাটাও কাজে লাগাচ্ছেন একই সঙ্গে। এতে আপনারও সৃজনশীলতা বাড়ছে । জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই অন্যের সঙ্গে কর্তব্য বা দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া জরুরি। যেসব পরিবার বাড়িতে বাবা-মা তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে নানা রকম পারিবারিক কাজকর্ম ভাগ করে নেন, সেখানে দু'রকম ভালো ফল দেখা যায়। প্রথমত, বাবা-মায়ের কাজের চাপ কমে যায়; ফলে তাঁরা হাতে যে উদ্বৃত্ত সময়টুকু পান, সেটি বিনোদনমূলক কাজে লাগাতে পারেন । দ্বিতীয়ত, এর দ্বারা সন্তানরাও ধীরে ধীরে স্বাবলম্বী হয়, তাদের কর্মদক্ষতা এবং দায়িত্বজ্ঞান বাড়ে । যদি কোনো পরিবারে শিশুদের শৈশব থেকেই বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে তাদের দায়িত্বজ্ঞান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে পরিবারের সঙ্গে একাত্মবোধ । এসব পরিবারে একের প্রতি অন্যের মায়া-মমতাও অনেক বেশি হয় । সব কাজ নিজে করব’– এই মানসিকতা ছাড়ুন। আপনি যদি ছোটোখাটো কাজে (যা আসলে আপনার জন্য অপ্রয়োজনীয়) সারাক্ষণ বাস্ত থাকেন। তাহলে প্রয়োজনীয় কাজ করবেন কখন? যেসব নিত্য-নৈমিত্তিক কাজকর্ম অন্য লোকে করতে পারে। সেসব কাজ তাদেরকে দিয়েই করিয়ে নেবেন । কারণ একা সব কাজ করলে কাজ নিখুঁত হয় ঠিক-ই কিন্তু এর ফলে সময় ও শক্তি খরচ হয় বেশি। ফলে লাভের বদলে ক্ষতি বেশি হয়, তাই কাজ অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নিন ।
১৪৯। নিজের আবেগকে বশে রাখতে না পারা একটি মানসিক ব্যাধি (Attention Deficit Disorder ) হতে পারে। এর দ্বারা মানুষের নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা হ্রাসপ্রাপ্ত হয় এবং আস্তে আস্তে এটি জীবনের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করে । যাঁরা এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হন আবেগপ্রবণ হওয়া তাঁদের সাধারণ লক্ষণ। তাছাড়া তাঁরা সহজে মনোসংযোগ করতে পারেন না। তাঁদের মন সর্বদা একবিষয় থেকে অন্যবিষয়ে বিচরণ করে এবং সর্বদাই আগোছালো থাকে । সামান্য কারনেই তাঁরা রাগে জ্বলে ওঠেন। এই ধরনের আবেগ-সর্বস্ব মানুষদের কোনো কাজে প্রকৃত নিষ্ঠাও থাকে না। এঁরা দেখবেন সর্বদাই একটি কাজ অসমাপ্ত রেখে আরেকটা কাজ ধরেন; আজ একটা হবি নিয়ে চর্চা করছেন তো কাল আরেকটা । এঁদের পক্ষে বেশিদিন একটা লক্ষ্যে স্থির থেকে কাজ করে যাওয়া দুঃসাধ্য। যখন এঁরা শুরু করেন, তখন বেশ উৎসাহ নিয়েই করেন। কিছুদিন পরই তাঁদের আশাভঙ্গ হয় । সমস্ত উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলেন তাঁরা । এদের কোনো কাজেই দৃঢ়তা নেই । স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট করুন মনের ওপর চাপ কমান । চার পাশের লোকজন, অবস্থা বা ঘটনার ওপর নিজের মানসিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখাই হলো স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট। খুব ছোটো বিষয়ে মাথা ঘামিয়ে অস্থির হবেন না। চেষ্টা করুন প্রকৃতই গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে, বাকি বিষয়গুলো পাশে সরিয়ে রাখুন । পর্যাপ্ত সময় ঘুমান। বিশ্রামের স্বল্পতা আসলে মানসিক চাপকে বাড়িয়েই দেয় । অত্যধিক কাজের ভারে ডুবিয়ে নিজেকে অস্থির করে তুলবেন না । কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাছাই করুন কোন কাজের পর কোনটি করবেন ঠিক করে নিন ।
১৫০। এলিভেটর পিচ' তৈরি করুন। কথা বলার আগে কি বলবেন, তা অবশ্যই গুছিয়ে নেবেন। অন্তত একটা ছক তৈরি করে নিবেন। প্রথম মিনিটে কি বলবে্ন, দ্বিতীয় মিনিটে কি আলোচনা করবে্ন আর বক্তব্য শেষ করবেন কিভাবে সাজিয়ে নিন। কথা বলার সময় জটিল বাক্য ব্যবহার করবে না। বিদ্যার দৌড় কখনোই কথার মধ্যে প্রকাশের চেষ্টা করবেন না। সরল ও সাধারণ শব্দ ও বাক্যে কথা বলার চেষ্টা করুন। ধরুন, আপনি একজন নেতা বা বিনিয়োগকারীর সঙ্গে লিফটে উঠেছেন। ত্রিশ সেকেন্ডের জন্য তাঁর সঙ্গে নিরিবিলিতে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছেন। এই অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে তাঁর সামনে কোনো ‘আইডিয়া’ উপস্থাপন করবে্ন? ২০-৩০ সেকেন্ডের মধ্যে কার্যকরভাবে একটা ভাবনা উপস্থাপন করাকে বলা হয় ‘এলিভেটর পিচ’। এসব ক্ষেত্রে সমস্যা নয়, সমাধান বলুন। শ্রোতার আগ্রহের জায়গা সম্পর্কে আগে জেনে নিন, সেভাবেই তোমার বক্তব্য তৈরি করুন। ‘আরেকটু সময় পেলে বোঝাতে পারতাম,’ এই মনোভাব রাখবে না।
প্রিয়জনদের কিছু না কিছু উপহার দিন।
এই উপহার মানে কিন্তু ফর্মাল মোড়কযুক্ত কোনো উপহার নয়। উপহার হতে পারে তোমার সামান্য হাসি, ধন্যবাদ জ্ঞাপন, বিনয় প্রদর্শন কিংবা একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্মতি।
হহহ