ইতিহাস ৪০১  ▌জালাল-আল-দীন:  

মোঙ্গল শাসনের ইতিহাস মানেই মামলুক সুলতান বাইবার্সের পাশাপাশি জালাল-উদ-দীনের আত্মত্যাগ স্বরণীয়। মোঙ্গল বাহিনী যখন মধ্য এশিয়া থেকে পশ্চিমে অগ্রসর হতে শুরু করে, তাদের প্রথম প্রতিরোধ আসে খাওয়ারিজম শাহদের পক্ষ থেকে। খাওয়ারিজমের বিভিন্ন শহরের শাসনভার ছিল এসব শাহদের নিয়ন্ত্রণে, যার বিস্তৃতি ছিল পূর্ব ইরান থেকে ভারত পর্যন্ত। সেলজুকদের পক্ষ থেকে এসব শাহরা প্রায় বারো শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত শাসনকাজ পরিচালনা করে। সেলজুক শাসন যখন দুর্বল হয়ে পড়ে তখন এসব অঞ্চলের শাহরা স্বাধীনভাবে নিজেদের এলাকা শাসন করতে থাকে, যে এলাকাগুলোর কেন্দ্রবিন্দু ছিল উরগঞ্জ(উজবেকিস্তান) খাওয়ারিজমদের শেষ শাসক ছিলেন জালাল-আল-দীন, যিনি মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।  এক বাহিনী নিয়ে জালাল-আল-দীন ১২২১ সালে চেঙ্গিস খানের মুখোমুখি হন।  সিন্ধু নদীর তীরে এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংগঠিত হয়। যুদ্ধের চেঙ্গিস খানের সেনাবাহিনীক দ্রুত পিছু হঠতে বাধ্য করে জালালের বাহিনী। কিন্তু মোঙ্গল সেনাবাহিনী আরো দ্বিগুণ সৈন্য নিয়ে আক্রমণ করে, ফলে পরাজিত হন। ১২৩১ সালে তুরস্কের মৃত্যুবরণ করেন। 


ইতিহাস-৪০২  ▌ইবনে আল-হাইথাম: 

তাকে আলোকবিজ্ঞানের কান্ডারি বলা হয়। এর বাইরেও তার ছোট-বড় অবদান রয়েছে অ্যানাটমি বা অঙ্গব্যবচ্ছেদবিজ্ঞান, জোতির্বিজ্ঞান, গণিত, চিকিৎসাবিজ্ঞান, প্রকৌশলবিদ্যা, চক্ষুবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি, দর্শন এবং সর্বোপরি বৈজ্ঞানিক গবেষণার পদ্ধতিগত উন্নয়নে! ইবনে আল হাইথাম, ৯৬৫ সালে ইরাকের বসরা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। সম্ভবত প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা, সবই তিনি বাগদাদে লাভ করেন। তিনি ছিলেন ধনী পরিবারের সন্তান। তার জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে কায়রোতে তৎকালীন খলিফা হাকিমের রাজ্যে ভ্রমণ। খলিফা হাকিম তাকে নীলনদের বন্যা নিয়ন্ত্রণের উপায় বের করার দায়িত্ব দেন। উচ্চাভিলাষী এক পরিকল্পনা তৈরি করে কাজ শুরু করার পর ইবনে আল হাইথাম বুঝতে পারেন যে, তখনকার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা দিয়ে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। অগত্যা সে পরিকল্পনা থেকে তাকে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল। গৃহবন্দী হয়ে থেকেছিলেন একেবারে খলিফা হাকিমের মৃত্যু পর্যন্ত! আর এই গৃহবন্দী অবস্থায়ই তিনি লিখেছিলেন তার সেরা বই, ‘বুক অব অপটিকস’, যাকে কিনা নিউটনের প্রিন্সিপিয়া ম্যাথম্যাটিকার সাথে পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী বই গণ্য করা হয়। ১০৪০ সালে কায়রোতেই মৃত্যুবরণ করেন ইবনে আল হাইথাম।  বুক অব অপটিকস ছাড়াও তিনি আলোকবিজ্ঞানের উপর ‘রিসালা ফিল-দাও’ বা ট্রিটিজ অব লাইট রচনা করেন। এখানে তিনি আলোর প্রতিসরণ, বিচ্ছুরণ, গ্রহণ, রংধনু, অধিবৃত্তিক কাঁচ, বিবর্ধন কাঁচ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন। তার ‘মাকালা ফি’ল কারাস্তুন’ নামক গ্রন্থে তিনি বিভিন্ন বস্তুর আকর্ষণ কেন্দ্র নিয়ে আলোচনা করেছেন যা আমরা ‘সেন্টার অব গ্রাভিটি’ নামে জানি।