অভ্যাস-৩০১  ▌ আপনার আসল শক্তি ও প্রতিভা কোথায়, খুঁজে বের করুন...

ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নের বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই। স্বপ্নের মত অতীতেরও বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই। এক সময়ে হয়তো ছিল, কিন্তু এখন অতীত মানে শুধুই কিছু স্মৃতি। বাস্তবে যার কোনো অস্তিত্ব নেই, তার কোনো ক্ষমতাও নেই। অতীত আপনার উপকার বা ক্ষতি কোনাটাই করতে পারবে না। শুধু স্বপ্নের মত আপনার মনকে প্রভাবিত করতে পারবে। অতীতের ব্যর্থতা আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে ফেলে। বিশেষ করে কোনো বড় কাজে ব্যর্থ হলে কারো কারো মনে হয়, তাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না। কিন্তু এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। একভাবে সফল না হলে, অন্যভাবে চেষ্টা করুন। কিন্তু চেষ্টা করা বন্ধ করবেন না। এক সময়ে গিয়ে নিজের আসল শক্তি ও প্রতিভা কোথায়, তা ঠিকই বুঝতে পারবেন।  


অভ্যাস-৩০  ▌  সংঘাত নয়, বন্ধুত্বই সবচেয়ে বড়-এটা প্রচার করুন


একবার স্কুলের ক্লাসে ‘সংখ্যা-৯’ তার পিছনের বেঞ্চে বসা ‘সংখ্যা-৮’কে থাপ্পড় মারল। সংখ্যা-৮ বলল—তুমি আমাকে থাপ্পড় মারলে কেন? সংখ্যা-৯ বলল—আমি বড়, তাই তোমাকে মারতে পারি। তখন সংখ্যা-৮ জ্যেষ্ঠতার অধিকার নিয়ে তার পিছনের বেঞ্চে বসা ‘সংখ্যা-৭’কে থাপ্পড় মারল! ‘সংখ্যা-৭’ ঘুরে ‘সংখ্যা-৬’কে মারল! এভাবে চলতে চলিতে শেষ পর্যন্ত ‘সংখ্যা-২’ যখন ‘সংখ্যা-১’-কে থাপ্পড় মারল ‘সংখ্যা-০’ (শূন্য) তখন ভাবল—এবার তো আমার পালা! আমার চেয়ে ছোট কেউ নাই। সে নিরাপত্তার আশায় একটু দূরে গিয়া বসল। ‘সংখ্যা-১’ তখন গিয়ে ‘০’ (শূন্য)-এর বাম পাশে বসে বলল—আমি তোমাকে থাপ্পড় মারব না। শূন্য হলেও তোমাকে আমি সম্মান করি; কিন্তু আমি তোমার পাশে বসাতে শুধু তোমার নিরাপত্তায় বাড়েনি আমার দশ গুণমান বেড়েছে, আমরা দুইয়ে মি্লে ১০ হয়ে গেলাম! অর্থাৎ সকলের চাইতে বড়। 


অভ্যাস-৩০  ▌ অভিজ্ঞতা ও অতীত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন


ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্নের বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই। স্বপ্নের মত অতীতেরও বাস্তবে কোনো অস্তিত্ব নেই। বাস্তবে যার কোনো অস্তিত্ব নেই, তার কোনো ক্ষমতাও নেই। অতীত আপনার উপকার বা ক্ষতি কোনাটাই করতে পারবে না। শুধু স্বপ্নের মত আপনার মনকে প্রভাবিত করতে পারবে। অতীতের ভুল আর ব্যর্থতার কারণে মানুষ নতুন করে কাজ শুরু করতে পারে না। কারণ, অতীতের ব্যর্থতা আত্মবিশ্বাস নষ্ট করে ফেলে। বিশেষ করে কোনো বড় কাজে ব্যর্থ হলে কারো কারো মনে হয়, তাকে দিয়ে আর কিছুই হবে না। কিন্তু এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। একটি কাজে ব্যর্থ হওয়া মানে সব কাজে ব্যর্থতা নয়। একভাবে সফল না হলে, অন্যভাবে চেষ্টা করুন। কিন্তু চেষ্টা করা বন্ধ করবেন না। এক সময়ে গিয়ে নিজের আসল শক্তি ও প্রতিভা কোথায়, তা ঠিকই বুঝতে পারবেন।  


অভ্যাস-৩০  ▌ . ‘ভিন্ন’ হওয়ার পথ খুঁজুন:

যেকোনো অর্জন, সফলতা শুরু হয় ভিন্ন চিন্তা-ভাবনা, পরিকল্পনা থেকে। অন্যদের থেকে ‘ভিন্ন’ হওয়ার সহজ পথ হচ্ছে অন্যরা যা করতে অস্বীকার করে, তেমন কাজ করা। প্রতিদিন অন্যরা করে না তেমন একটি কিছু করুন। সপ্তাহখানেক পর আপনি আনকমন হয়ে উঠবেন। (মনে রাখবেন দশজনের ভিড় থেকে আলাদা হওয়া চাট্টিখানা কথা নয়। সবার সে সাহস বা দৃঢ়তা থাকে না। কিন্তু সব সৃজনশীল, মহৎ মানুষের এই সাহস বা দৃঢ়তা থাকে।) আজ হোক কাল হোক, আপনি ‘ স্পেশাল’ হয়ে উঠবেন।



অভ্যাস-৩০  ▌  যেকোনো কাজের শুরুটা হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন :

আপনার রয়েছে কত পরিকল্পনা, কত লক্ষ্য, কত আইডিয়া। কিন্তু যে পর্যন্ত না বাস্তবে কিছু করছেন, ততক্ষণ এগুলো কিছুই না। প্রতিদিনই ইতস্তত ভাব, অনিশ্চয়তার ভয় আমাদের আইডিয়া, পরিকল্পনাকে কাজে রূপান্তর করতে বাধার সৃষ্টি করে। তাই অল্প করে যাত্রা শুরু করুন। মনে রাখবেন, যেকোনো কাজের শুরুটা হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন । পরবর্তী ধাপগুলো সহজ। তাই ‘শুরু’ করুন যেভাবেই হোক।



অভ্যাস-৩০ . সঠিকভাবে মূল্যায়িত করুন:

মূল্যায়িত নয়, প্রশংসিত নয় এমন কাউকে মূল্যায়ন করুন, প্রশংসা করুন। কিছু কাজ রয়েছে যেখানে মেধা নয়, শ্রম বেশি প্রয়োজন। যারা এগুলি করেন, তাদের চোখে চোখ রাখুন, আন্ত্ররিকতা মেশানো ভাষায় কথা বলুন। তাদের সঠিক মূল্যায়ন করুন, স্বীকৃতি দিন। সবচেয়ে ভালো উদাহরণ আমাদের নিজ ঘরেই। নারীরা যে শ্রম, যত্ন, ভালোবাসা দিয়ে সংসারকে আগলে রাখে; তাদের সে শ্রম, কাজের স্বীকৃতি বা মূল্যায়ন করুন। মনে রাখবেন, এ রকম শ্রদ্ধা দেখাতে পারলে আপনিও হয়ে উঠবেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়।



অভ্যাস-৩০  ▌. পাছে লোকে কিছু বলে:

অন্যরা কি ভাববে সেটি নিয়ে কেয়ার করবেন না: অন্যরা আপনাকে নিয়ে কি ভাববে, কি বলবে এ ভাবনায় নিজের মধ্যে গুটিয়ে থাকবেন না। মর্যাদাপূণ জীবনযাপন করতে চাইলে এ রকম হীনম্মন্যতা, ক্ষতিকর চিন্তা পরিহার করতে হবে। অন্যদের প্রশংসা, স্বীকৃতির যত মুখাপেক্ষি থাকবেন, তত তাদের গোলাম হয়ে থাকতে হবে। তারা কি আপনার উন্নতির জন্য ভাবে? তাহলে কেন তাদের মতামত, মন্তব্য, পছন্দকে আপনি এত গুরুত্ব দিবেন?


অভ্যাস-৩০  ▌  পারফেক্ট হওয়ার প্রত্যশা থেকে বেরিয়ে আসুন:

আমাদের সবার প্রত্যাশা হচ্ছে পারফেক্ট হওয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও এটি সত্য যে, পৃথিবীতে কোনোকিছুই পারফেক্ট নয়। বরং পারফেকশন চাওয়াটি হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। কঠোর পরিশ্রম করুন, বড় বড় কাজ করুন, আপনার সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে চেষ্টা করুন। নিজের যেকোনো ঘাটতি, অক্ষমতা কাটিয়ে উঠতে সর্বদা চেষ্টা চালাবেন।


অভ্যাস-৩০  পর্যালোচনা করুন:

আরও ভালো পারফরমেন্স করার চেষ্টা করুন। গতকালের কথা ভাবুন, কি কি ভালো হয়েছে। তারপর ভাবুন, কি কি ভালো হয়নি বা কি করলে বা কি করলে আরো ভালো হতে পারত। এরপর সব দায়িত্ব নিজের উপর নিন এবং প্রতিজ্ঞা করুন আগামীতে আরও ভালো করবেন। 


অভ্যাস-৩১০  ▌ সফল বার্ধক্য  তৈরিতে সহায়তা করুন


সফল বার্ধক্য সম্পর্কে ১৯৮৭ সালে বিজ্ঞানী জন ওয়ালিস রো ও রবার্ট কান প্রথম বহুমাত্রিক ধারণা দেন, একজন বয়স্ক ব্যক্তির সুস্থ, সক্রিয় এবং পরিপূর্ণ জীবনযাপন করার ক্ষমতা এবং উদ্ভূত যে কোনো ধরনের পরিবর্তন এবং চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতাকে সফল বার্ধক্য বোঝায়। সফল বার্ধক্য মূলত সুন্দর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বজায় রাখা, ইতিবাচক মনোভাব থাকা, অর্থপূর্ণ কাজে জড়িত থাকা, চারদিকে সহায়ক সম্পর্ক থাকা ইত্যাদিকে বোঝায়। সফল বার্ধক্য কেবল দীর্ঘজীবন লাভ নয় বরং এ সময়ে উচ্চ মানসম্পন্ন সার্বিক জীবনযাপন ও সেই সঙ্গে জীবনে সন্তুষ্টি ও পরিপূর্ণতা খুঁজে পাওয়াকে বুঝায়। পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং ‘লু গেহরিগ’ জনিত নিউরন রোগে হুইলচেয়ারে আবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু তার সামাজিক ও মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাবিত হয়নি বিন্দুমাত্র, বিধায় তার সন্তুষ্টি ও পরিপূর্ণতা ছিল আকাশছোঁয়া। তাই এই বার্ধক্যও অবশ্যই সফল বার্ধক্য।


উন্নত দেশ; যেমন :জাপান, আইসল্যান্ড, সুইডেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া। এরা সবাই সফল বার্ধক্য অর্জনকারী দেশ। এ দেশগুলো বিশ্বের সর্বোচ্চ গড় আয়ুসম্পন্ন দেশ—এটা সম্ভব হয়েছে সুষম খাদ্য, নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম, শক্তিশালী সামাজিক সংযোগসহ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের সংস্কৃতির জন্য। বয়স্করা স্বেচ্ছাসেবকের কাজ, পরামর্শদানসহ অন্য কার্যাবলির মাধ্যমে কমিউনিটিতে বড় অবদান রাখতে পারেন, যার মাধ্যমে সামাজিক সংযোগ শক্তিশালীকরণ এবং আন্তঃপ্রজন্মীয় বন্ধন তৈরির মাধ্যমে সফল বার্ধক্য অর্জন সম্ভব। 


অভ্যাস-৩১১  ▌ সৃজনশীল মানুষের বৈশিষ্ট্য জেনে রাখুন


১. একঘেঁয়েমি-সৃজনশীল মানুষেরা অধিকাংশ সময় একঘেঁয়েমি সমস্যায় ভুগে থাকেন। প্রথমে একটি বিষয়ে তাদের খুব আগ্রহ থাকে। কিছুদিন যাওয়ার পরই তাদের আগ্রহ চলে যায়। তারা নতুন ধরনের কাজ খুঁজতে থাকেন। তাই গৎবাঁধা বা এক ধরনের কাজ সৃজনশীল মানুষদের পক্ষে বেশিদিন করা অনেকটাই অসম্ভব হয়ে যায়।


২. স্বপ্ন দেখার রোগ-মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়- এই কথাটি সৃজনশীল মানুষদের ক্ষেত্রে খাটে। তারা স্বপ্নের মাঝেই থাকেন। সব স্বপ্ন হয়তো তাদের পূরণ হয় না। তবে তাদের স্বপ্ন কখনো শেষ হয় না।


৩. শিশুসুলভ-সৃজনশীল মানুষদের মধ্যে শিশুসুলভ বিষয়গুলো খুব বেশি দেখা যায়। তারা অল্পতেই বিরক্ত হয়, চিৎকার চেঁচামেচি করে। আবার হয়তো কৌতুক শুনে জোরে হেসে উঠে। আনন্দ-বেদনা-উচ্ছ্বাস সব ক্ষেত্রেই তারা কিছুটা বাড়াবাড়ি করে। মূলত আবেগী হওয়ার কারণেই এমনটা করে তারা।


৪. তারা ব্যর্থ হয়, তবে আবার চেষ্টা করে-একটা কথা আছে, ‘যখন আপনি মাটিতে পড়ে যান, তখন আপনি হেরে যান না। কিন্তু যখন আপনি উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা বাদ দেন, তখনই আপনি হেরে যান।’ সৃজনশীল মানুষদের ক্ষেত্রে এটা বরাবরই ঘটে। তারা হুট করে কোনো কিছুর পেছনে তাদের সব মনোযোগ দিয়ে বসেন। ব্যর্থ হলেও তারা বারবার সফল হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন।


৫. মনচালিত-সৃজনশীল মানুষেরা বেশিরভাগ সময়ই তাদের মনের ইচ্ছা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেন। মাথা দিয়ে তারা কম সময়ই সিদ্ধান্ত নেন। সবসময় মনের কথা শুনতেই তারা অভ্যস্ত। মন যা চায়, সেটা নিয়েই মেতে থাকেন তারা।


৬. সময়জ্ঞান থাকে না-কোনো কাজে মজা পেয়ে গেলে তখন তাদের আর সময়জ্ঞান থাকে না। নাওয়া-খাওয়া সব ভুলে সেই কাজের পেছনেই সারা দিন ব্যয় করেন। অনেক সময় ঘুমাতেও ভুলে যান তারা।


৭. রাত জেগে কাজ করা-এটা স্বাস্থ্যের জন ভালো না হলেও সৃজনশীল মানুষেরা এভাবেই অভ্যস্ত। সবাই যখন ঘুমায় তখন তাদের কাজ শুরু হয়, আবার সবাই যখন কাজ করে তখন তারা ঘুমায়।


৮. নিজের কাজ পছন্দ হয় না-এটাও এক ধরনের বিড়ম্বনা সৃজনশীল মানুষদের জন্য। তারা কখনোই নিজের কাজে সন্তুষ্ট হতে পারেন না। খুব আগ্রহ নিয়ে একটা কাজ শেষ করার কিছুদিন পরই তাদের মনে হবে, কাজটা কিছুই হয়নি। তখন আবারও নতুন কিছু নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।


৯. চারপাশের খেয়াল রাখা-মাটির একটা ছোট পিঁপড়া থেকে আকাশের বিশাল বিমান- কোনো কিছুই সৃজনশীল মানুষদের দৃষ্টি এড়ায় না। তারা সবকিছু খুব মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে।


১০. চাকরি অপছন্দ-সৃজনশীল মানুষদের দ্বারা কখনো দীর্ঘসময় চাকরি করা সম্ভব না। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পছন্দ করে এবং সেজন্যই আত্মকর্মসংস্থানের চেষ্টা থাকে তাদের মধ্যে। সুযোগ পেলেই চাকরি ছেড়ে নিজের মতো কাজ করা শুরু করার সাহস তারা রাখে। 


অভ্যাস-৩১২  ▌ কোনো কাজ ছোট নয়, এটা তুলে ধরুন 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনকে এক লোক তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বলেছিল, ‘মি. লিংকন, আপনার ভুলে যাওয়া উচিত হবে না যে, আপনার বাবা আমার পরিবারের জন্য জুতা তৈরি করত।’ উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘স্যার, আমি খুব ভালো করেই জানি আমার বাবা আপনার পরিবারের জন্য জুতা তৈরি করতেন। শুধু আপনার কেন, এখানে এ রকম অনেকেই আছেন, যাদের পরিবারের জন্য বাবা জুতা তৈরি করতেন। জুতা তৈরিতে তিনি ছিলেন একজন জিনিয়াস। তিনি এমন এক অদ্ভুত নির্মাতা ছিলেন যে, আজ পর্যন্ত তার নির্মাণ নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি বা কেউ অভিযোগ করেনি। আপনার কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে বলুন, আমি আপনার জন্য আরেক জোড়া জুতা তৈরি করে দেব। আমি নিজেও জুতা বানাতে পারি।’ লিংকন আরও বলেন, কোনো কাজ ছোট নয়। ছোট সে, যে কাজকে ছোট ভেবে অহেতুক বিদ্রুপ করে। 


অভ্যাস-৩১৩  ▌ দাতা হোন, গ্রহিতা নয়

আজ পর্যন্ত কোনো ভিক্ষুক, দাতা বা স্বাবলম্বী হতে পারেনি। যে হাত নিতে অভ্যস্ত, সে হাত কখনো দিতে পারে না।

পৃথিবীর বড় বড় দেশে হাজার রকমের ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি থাকে। ইয়োরোপ অনেক উন্নত আর আধুনিক মহাদেশ হলেও তারা তাদের পুরনো সংস্কৃতিগুলোকে টিকিয়ে রাখতে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউরো খরচ করে। শুধু তাই নয়, ভিন্ন দেশের মানুষেরা যেনো তাদের সংস্কৃতি চর্চা করতে পারে, সেজন্যও ইয়োরোপের "পৃষ্টপোষকতা আর আন্তরিকতার" অভাব নেই।

সভ্য মানুষেরা বোঝে,- নিজস্ব সংস্কৃতির চর্চা করা একজন মানুষ বা কোনো গোষ্ঠির মানুষের অধিকার, তারা বোঝে- জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অমানবিক আর বর্বর সংস্কৃতিগুলো এমনিতেই মানুষ ত্যাগ করবে, জন্ম নেবে নতুন নতুন মানবিক সংস্কৃতির। কিন্তু কট্টর ধর্মান্ধদেরকে এই কথাটি বোঝানো যাবে না। সংস্কৃতি হচ্ছে একটা দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ, সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য। 


অভ্যাস-৩১৪  ▌  সুখ ভবিষ্যতের জন্যে তুলে রাখা বড় ভুল


অসংখ্য মানুষ ভাবে "আমার এই ব্যাপারটা যদি শেষ হয়ে যায়, তাহলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে"। এটা একটা ঘোর (ডিলুশন)। যখন "ওই একটা জিনিস" ঠিক হবে, তখন "আরো একটা জিনিস” আপনার জীবনে বাকি থেকে যাবে। জীবনে কখনো সবকিছু একসাথে আপনার কাছে ধরা দিবে না। আমি খুব দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি জীবনে সুখী হওয়া শুধু একটা জিনিস ঠিক হয়ে যাওয়ার উপর নির্ভর করে না, এভাবে সুখী হওয়াও যায় না। এরচেয়ে এই মুহূর্তে আপনার যা আছে তা নিয়ে সুখী হোন, বর্তমানকে উপভোগ করুন এবং একই সাথে ভবিষ্যতের জন্যে কাজ করে যান। সাফল্য আসলে একটা ভ্রমণ, গন্তব্য নয়! কোন বড় কিছুর জন্যে কাজ করলেও নিজেকে সুখী হওয়া থেকে বঞ্চিত করবেন না, কাজটি শেষ হওয়া পর্যন্ত সুখী হওয়ার জন্যে অপেক্ষা করে থাকবেন না, কাজ করতে করতেই সুখী হওয়ার চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করুন এবং এই ভ্রমণ উপভোগ করুন। অনুষ্ঠানটি উপভোগ করুন, শেষ দৃশ্যের জন্যে তাড়াহুড়ো করবেন না।  



অভ্যাস-৩১৫  ▌ পৃথিবীর এযাবৎ কালের শ্রেষ্ঠ গবেষণাটি সবাইকে বলুন


যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া স্টেটের স্কুলশিক্ষক ‘জেন এলিয়ট’ তার ছাত্র-ছাত্রীদের বর্ণবাদ, বৈষম্য’ এই ব্যাপারগুলো বোঝাতে চেষ্টা করেন। কিন্তু তা কিছুতেই ফলপ্রসূ হচ্ছিলো না। শহরের শিক্ষার্থীরা মফস্বল শিক্ষার্থীদের এবং শ্বেতাঙ্গ শিক্ষার্থীরা কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের অবজ্ঞার চোখেই দেখে যাচ্ছিল।

এলিয়ট তার শিক্ষার্থীদের উপর দুইমাসব্যাপী একটি এক্সপেরিমেন্ট চালালেন। প্রথমে তিনি তার ক্লাসের ২৬৮ছাত্র-ছাত্রীকে দুটি গ্রুপে ভাগ করলেন। প্রথম গ্রুপে রাখলেন যাদের চোখের রং নীল এবং দ্বিতীয় গ্রুপে রাখলেন যাদের চোখের রং বাদামী।

তিনি প্রথম গ্রুপ অর্থাৎ যাদের চোখের রঙ নীল তাদেরকে বাদামী চোখের শিক্ষার্থীদের চেয়ে উঁচু মর্যাদার বলে ধরে নিলেন এবং বেশি সুযোগ-সুবিধা দিতে শুরু করলেন। দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যদের কোণঠাসা করার জন্য তিনি তাদের বিভিন্ন দোষ-গ্রুটি সবার সামনে বর্ণনা করতে লাগলেন।

এর ফলাফল হলো খুবই চমকপ্রদ। প্রথম গ্রুপের শিক্ষার্থীরা অর্থাৎ যারা নিজেদেরকে সুপিরিয়র ভাবছে, তাদের আচরণ খুব গ্রুপের পরিবর্তিত হতে লাগল। তারা ক্লাসে এখন সবচেয়ে বেশি মনোযোগী এবং কোনো কিছু না বুঝলে তারা সাথে সাথে প্রশ্ন করে। ক্লাস টেস্টেও তারা দ্বিতীয় গ্রুপের সদস্যদের চেয়ে অনেক ভাল করলো। সবথেকে মন খারাপ করা যে ব্যাপারটা ঘটল তা হলো, তারা তাদের দ্বিতীয় গ্রুপের বন্ধুদের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করল এবং তাদের উপর এক ধরনের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করতে লাগল। অন্যদিকে দ্বিতীয় গ্রুপের শিক্ষার্থীরা হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকলো এবং সবদিক থেকে পিছিয়ে পড়তে লাগল।


পরের মাসে ‘এলিয়ট’ গ্রুপ ঠিক রেখে একই এক্সপেরিমেন্ট চালালেন। কিন্তু এবার যাদের চোখের রঙ বাদামী তাদেরকে নীল চোখের শিক্ষার্থীদের চেয়ে সুপিরিয়র হিসেবে ধরে নিয়ে অনুপ্রেরণা দিতে লাগলেন। তখন ফলাফলও উল্টে গেল। অর্থাৎ নীল চোখ যাদের তারা সবকিছুতে পিছিয়ে পড়তে লাগল।


এই এক্সপেরিমেন্টটি খুবই আলোচিত হয়। পরীক্ষাটি করার সময়কার ভিডিওগুলো নিয়ে ২৫ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করা হয়, যার নাম । এছাড়া - নামে আরও একটি ডকুমেন্টারি আছে একই বিষয়ের উপর।


এই এক্সপেরিমেন্টটির মাধ্যমে আমরা বুঝতে সক্ষম হয়েছি যে, সমাজে যারা অবহেলিত তারা কেন পিছিয়ে পড়ে এবং নানা অপরাধের সাথে যুক্ত হয়। আর যারা সুপার পাওয়ার হয়, তারা কিসের জোরে দুনিয়াটা শাসন করে। পরিবারে বা সমাজে যদি কাউকে সমালোচনা বা অবহেলা কিংবা দমিয়ে রাখা হয়, তাহলে তার পক্ষে পাওয়ার হিসাবে গড়ে উঠা খুবই কঠিন, পক্ষান্তরে যদি কাউকে প্রশংসা ও উৎসাহিত করা হয়, তাহলে তাকে অনেকদূর নিয়ে যাওয়া সম্ভব। পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই সম্ভাবনাময়, শুধু দরকার তার ভিতরের ঘুমন্ত শক্তিকে জাগিয়ে তোলা। নিজের পরিবার, সন্তান বা কর্মচারী কিংবা অন্য কেউ থাকলে , সর্বদা তাদেরকে প্রশংসা ও উৎসাহের মধ্যে রাখুন, দেখবেন সে সত্যিই জ্বলে উঠবে এবং তার কারণে আপনি বেশি সুখী হবেন। আর সন্তানকে কড়া শাসনে রাখার ফল ভালো হওয়ার বদলে উল্টো বখাটে হয়ে যায়। সন্তানকে মিথ্যা বলায় পটু করে তুলে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। উদ্ধত আচরণ করে। আত্মবিশ্বাসের অভাব তৈরি হয়। ফলে জীবনে প্রতি পদক্ষেপে তাদের হোঁচট খেতে হয়। 


অভ্যাস-৩১৬  ▌ সারাক্ষণ ব্যস্ত থকবেন না  

সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকা মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। আপনি কি সারাক্ষণ নানাকাজে ব্যস্ত দিন পার করেন? দম ফেলার ফুসরতই পান না? তাহলে জেনে রাখুন, আপনার মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করছেন আপনি। এতে বাস্তবে আপনার কর্ম¯পৃহাও সৃজনশীলতাও নষ্ট হচ্ছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় এমনটাই প্রমাণিত হয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নিবন্ধ অনুসারে এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে ব্যস্ততার মাঝেও সামান্য পরিমাণে ঘুম। ঘুমের ফলে মানুষের কর্মোদ্যম বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্কের বিশ্রাম হয়। ঘুম ছাড়াও কর্মব্যস্ততার মাঝে কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়ার কথা উল্লেখ করছেন বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি প্রকাশিত 'হোয়াই ইওর ব্রেন নিডস মোর ডাউনটাইম' শিরোনামের রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'বিশ্রাম বা অলস সময় বিষয়টি মস্তিষ্কের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানসিক প্রক্রিয়ায় দরকার হয়। এ সময়টি মস্তিষ্কের মনযোগ ও উৎসাহের বিষয়গুলো সংরক্ষণ করে। এটি উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতায় উৎসাহ দেয়- এবং দৈনন্দিন জীবনে আমাদের সর্বোচ্চ কৃতিত্ব ও স্থিতিশীল মস্তিষ্ক তৈরিতে সাহায্য করে।' 


অভ্যাস-৩১৭  ▌ দরবেশি মানসিকতা ছাড়ুন, বাস্তববাদী হোন

"একদিন আমার সময় আসবে আর আমি সুখী হবো" -এটা একটা ফালতু চিন্তা। অনেকের ভাগ্য নিয়ে এরকম একটা অদ্ভুত ধারণা আছে- আল্লাহ/ঈশ্বর/ভগবান/দেবতা কেউ একদিন কোনোভাবে তাদের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিবেন। কেউ কেউ ভাবেন একদিন তারা লটারি জিতবেন কিংবা ভালো একটা সুযোগ আসবে তাদের জীবনে। অনেক মেয়ে ভাবেন, একদিন তার রাজপুত্র এসে তাকে নিয়ে যাবে স্বপ্নের দেশে! এই ধরনের ভাবনা আসে বাস্তবতা সম্পর্কে ভুল ধারণা থেকে। ভালো থাকার জন্য কঠোর পরিশ্রম ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে ধীরে ধীরে এগুতে হবে। জাদু-টোনা, জ্বীন-পরী, জ্যোতিষবিদ্যা, কিংবা কোনো অদৃশ্য সত্ত্বা বা কল্পিত অদৃশ্য দেবতারা এই বিশ্বজগতে আপনাকে ফ্রিতে কিছু দেবার জন্যে পণ করে বসে নেই। আপনাকেই আপনার জীবন গুছিয়ে তোলার জন্যে কাজ করে যেতে হবে।  


অভ্যাস-৩১৮  ▌ অকারণে চুরি করার রোগ থেকে সাবধান হোন


মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, তুচ্ছ জিনিস চুরি করার এই বাতিক একটি রোগ, যার নাম ক্লেপটোম্যানিয়া। অনেকে এই রোগটি উত্তরাধিকার সূত্রে পায়, যদি তার পিতামাতা বা ভাইবোনের পারিবারিক ইতিহাসে ক্লেপ্টোম্যানিয়া থাকে। এটা এক ধরনের মানসিক ডিসঅর্ডার, যার কারণে একজন মানুষ নিজেকে চুরি করা থেকে বিরত রাখতে পারে না। চুরির একমাত্র কারণ ব্যক্তির চুরি করার আকাঙ্ক্ষা দমনে ব্যর্থতা।


অনেক চুরি মানব সভ্যতা বিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। যেমন-রাবারের উৎপত্তি ব্রাজিলে। বিশ্বে যখন শিল্প বিপ্লব শুরু হয়, রাবারের চাহিদা প্রচুর বৃদ্ধি পায়, আর এর দামও বেড়ে যায়। ব্রাজিল সরকার সিদ্ধান্তে নেয় কোন ভাবেই রাবারের বীজ যেন কোনো দেশে যেতে না পারে। তখন এক ইংরেজ এই রাবারের বীজ চুরি করে ইংল্যান্ডের নিয়ে আসে। পরে ব্রিটিশরা ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াতে এর চাষ শুরু করে। ব্রিটিশ সরকার সেই ইংরেজেকে নাইট উপাধী দিয়ে পুরস্কৃত করে।

আরো একটি উদাহরণ দিইঃ এখনকার এত জনপ্রিয় আলু যখন দক্ষিন আমেরিকার পেরুর পাহাড় হতে স্প্যানিসরা প্রথম ইউরোপে এনেছিল, তখন দির্ঘদিন মানুষ এগুলো কেউ খেত না। ফ্রান্সের রাজা আলুকে জনপ্রিয় করার জন্য একটা কৌশল বের করল। বিভিন্ন রকম আলু জমিতে লাগিয়ে সারাদিন খুব পাহারা দিত যেন রাজার জন্য তৈরি ফসল কেউ হাত দিতে না পারে। কিন্তু রাত হলে সব পাহারাদার উঠিয়ে নিত। এই সুযোগে মানুষ ক্ষেত থেকে আলু চুরি করে নিয়ে খাওয়া শুরু করল। তৈরি হল অভ্যাস। 


অভ্যাস-৩১৯  ▌ ভিন্ন বিশ্বাস ও মতের মানুষের সাথে কথা বলুন এবং তাদের বক্তব্য বোঝার চেষ্টা করুন।


আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাসের সাথে পৃথিবীর অনেক মানুষের বিশ্বাসের কোনো মিল নাই। কিন্তু মানুষ এই ভিন্ন বিশ্বাসে থেকেও জীবনের তাৎপর্য খুঁজে পায়। যদি সবাই আমার মতো বিশ্বাস করতো এবং ভাবতো তাহলে পৃথিবীটা একটা রসকষহীন জায়গায় পরিণত হতো। অতএব আমি যখন আমার থেকে ভিন্ন বিশ্বাসের কোনো মানুষের সাথে মিশি, তখন তাদেরকে আমার বিশ্বাসে নিয়ে আসার চেয়ে তাদের বিশ্বাস তাদের কাছে রেখে একসাথে মিলে চলার চেষ্টা করাই ভালো।

সবাই কিছু কিছু ব্যাপারে বদ্ধ মনের মানুষ। কেউ যদি নিজে নিজের বদ্ধ মন থেকে বের হতে না পারে, তাহলে তাকে সেটাই বিশ্বাস করতে দেওয়া উচিত। আপনিই ঠিক আর অন্যরা ভুল, পৃথিবীকে এটা বোঝানোর দায়িত্ব নেওয়ার দরকার নাই। কখনো কখনো হয়তো আপনার বিশ্বাসটিই ভুল! আপনি যদি শুধুমাত্র যারা আপনার সব কথায় হ্যাঁ বলে এমন মানুষদের সাথে মিশেন তাহলে আপনি কখনো ভুল করছেন কিনা এটা জানার সুযোগ পাবেন না এবং নতুন কিছু শিখতেও পারবেন না। 


অভ্যাস-৩২০  ▌ হাসি পৃথিবীর সবচেয়ে মানবিক ভাষা, মানুষকে আকৃষ্ট ও বশ করার সহজ অস্ত্র। এটি প্রয়োগ করুন।


কথার বলে, সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। কিন্তু অনেকেই জানেন না মুখের সৌন্দর্যের প্রথম এবং প্রধান উৎস হল স্নিগ্ধ হাসি। যে মুখ হাসতে জানে না, সে মুখ কখনোই সুন্দর নয়। যে মন খুলে হাসতে পারে না, সে-ই হছে পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী ব্যক্তি। মাত্র সামান্য কিছু লোক আছেন, যারা ঘুম থেকে উঠে সুন্দর করে একটু মিষ্টি করে হাসেন কিন্তু বেশির ভাগ লোকই হাসার মত কোন সুড়সুড়ি না পাওয়া পর্যন্ত মুখটাকে হাড়ি করে রাখেন। সারাক্ষণ টাকার চিন্তা আর ভবিষ্যতের উদ্বিগ্নতা তাদেরকে কাবু করে রাখে। তারা জানেন না সুখ-শান্তি ও প্রভাব-প্রতিপত্তির মূল রহস্য হল মিষ্টি স্বভাব,হাস্যউজ্জ্বল মুখ। 


অভ্যাস-৩  ▌ কখনোই লটারির আশায় থাকবেন না। বাস্তববাদী হোন।

"একদিন আমার সময় আসবে আর আমি সুখী হবো" -এটা একটা ফালতু চিন্তা। অনেকের ভাগ্য নিয়ে এরকম একটা অদ্ভুত ধারণা আছে- আল্লাহ/ঈশ্বর/ভগবান/দেবতা কেউ একদিন কোনোভাবে তাদের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিবেন। তারা ভাবেন "হঠাৎ কোনো সে সৌভাগ্য তার জীবন ভরে উঠবে"। কেউ কেউ ভাবেন একদিন তারা লটারি জিতবেন কিংবা ভালো কিছু একটা ঘটবে তাদের জীবনে। অনেক মেয়ে ভাবে, একদিন তার রাজপুত্র এসে তাকে নিয়ে যাবে স্বপ্নের দেশে! এই ধরনের ভাবনা আসে বাস্তবতা স¤পর্কে একটা ভুল ধারণা থেকে। ভালো থাকার জন্য কঠোর পরিশ্রম ও সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে ধীরে ধীরে এগুতে হবে। জাদু-টোনা, জ্বীন-পরী, জ্যোতিষবিদ্যা, কিংবা কোনো অদৃশ্য সত্ত্বা বা কল্পিত অদৃশ্য দেবতারা এই বিশ্বজগতে আপনাকে ফ্রিতে কিছু দেবার জন্যে পণ করে বসে নেই। আপনাকেই আপনার জীবন গুছিয়ে তোলার জন্যে কাজ করে যেতে হবে।  


অভ্যাস-৩২২  ▌  সম্পর্ককে  পারস্পরিক শ্রদ্ধা, বিশ্বাস ও সহানুভ‚তি  রাখুন

আপনি কারো সঙ্গে সম্পর্কে আছেন বলেই তার সমস্ত সময় শুধু আপনার জন্যই, এই ভাবনা একেবারেই ভুল। সম্পর্কের বাইরে আপনার যেমন একটা বন্ধুদের জগৎ আছে, তেমনি আপনার সঙ্গীরও আছে। তাই একে অপরকে স্পেস দিতে হবে নিজে্দের বন্ধুদের সঙ্গেও সময় কাটানোর জন্য। সব সময় একে অপরের সঙ্গে আটকে থাকলে সম্পর্কে অস্বস্তি বাড়বে, মধুরতার পরিবর্তে দম বন্ধ অবস্থা তৈরি হবে । সঙ্গীর সঙ্গে আপনি কত ঘণ্টা পার করলেন সেটি কিন্তু মোটেও দেখার বিষয় নয়, যতক্ষণই কাটাবেন, সে সময়টুকু কোয়ালিটিফুল করুন, আগে থেকে প্ল্যান করে প্রস্তুতি নিয়ে।

আপনার সঙ্গীর অনুমতি না নিয়ে তার ব্যক্তিগত কোন জিনিস ধরবেন না। প্রত্যেকেরই নিজস্ব জগৎ আছে এবং গোপনীয়তাও রয়েছে। সে নিজে থেকে না বললে তার ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ে নাক গলাবেন না; এতে আপনার প্রতি তার সম্মান বাড়বে। তার অতিত বা প্রাক্তনকে নিয়েও কোনো প্রসঙ্গ তুলবেন না, এতে তার আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগবে, সে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। শারীরিক সম্পর্ক কিভাবে উন্নত করা যায় প্রতিনিয়ত সেদিকে মনো্যাগ দি্তে হবে।  


অভ্যাস-৩২৩  ▌ আরো বেশি টাকা কখনোই আপনার সব সমস্যার সমাধান করবে না।  


আপনার যদি খাবার এবং থাকার জন্যে পর্যাপ্ত টাকা থাকে, তাহলে এরচেয়ে বেশি টাকা ছাড়াও আপনি জীবন চালিয়ে নিতে পারবেন। এটা আরো ভালো করে বুঝতে পারবেন যদি আপনি অসচ্ছল অথচ মোটামুটি সুখী এমন মানুষদের সাথে মিশেন। যখন আপনি জীবনে দামী জিনিসপত্র ছাড়া চলতে পারবেন না, তখন এই জিনিসপত্রগুলিই আপনার জীবনকে পরিচালিত করবে। আপনার দামী বাড়ি বা ফ্ল্যাট এবং ঘরের দামী ফার্নিচার থাকার কারণে আপনি অন্য জায়গায় সহজে চলে যেতে পারবেন না এবং এ রকম আরো দামী জিনিস পাওয়ার জন্যে আপনাকে সবসময় অনেক বেশি উপার্জন করা নিয়ে চিন্তা করতে হবে, নয়তো অনৈতিকতার আশ্রয় নিতে হনে। অথচ এইসব দামী সম্পদ আপনার জীবনকে খুব বেশি সমৃদ্ধ করে না। জীবনে যতো কম সম্পদ থাকবে আসলে ততোই ভালো থাকবেন, সুখি থাকবে্ন, ভোগবেন কম।  


অভ্যাস-৩২৪ কেউই সবকিছু জেনে বা পেয়ে বসে আছে...এমন ভাববেন না

সবারই কিছু না কিছু সমস্যা আছে, কিন্তু তারা সেটা গোপন করে চলে। আপনি যখন একজন মানুষকে দেখেন, তখন শুধু সে তাকে যেভাবে বাইরের পৃথিবীর কাছে দেখাতে চায় সেটাই দেখেন। আপনি হয়তো ভাবতেও পারবেন না তারা কীসের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, কিংবা যে সুখী অবস্থায় তাদের দেখছেন সে অবস্থায় আসতে তাদের কীসের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। এটা সবার জন্যে সত্যিÑ কোটিপতি, ছাত্রছাত্রী, স্মার্ট তরুণ-তরুণী, লাজুক মানুষটি এবং আর যেকোনো ধরনের মানুষই বলুন না কেনো, তাদের সবারই ভেতরের একটা জগৎ আছেÑ বাইরে থেকে তাদেরকে যেমনই মনে হোক না কেনো। কারো স¤পর্কে সবকিছু জানার আগে কখনোই ভাববেন না সে খুব সহজে জীবনে সবকিছু পেয়ে গেছে।  


অভ্যাস-৩২৫  ▌ শৈশবে বিভিন্ন ভয়ের কল্পকথা, ধর্মীয় ভীতিকর কাহিনী দিয়ে কারো মনে ভয়ের জায়গা তৈরি করবেন না। 

কাউকে হেয়, তুচ্ছ বা ছোট করা বা দমিয়ে রাখবেন না। তাহলে তার মানসিক ও শারিরীক বৃদ্ধি ব্যাহত হবে এবং তার সৃষ্টিশীল চেতনা শক্তির ধীরে ধীরে মৃত্যু হবে।


অভ্যাস-৩২৬  ▌ ভালোবাসার অপর নাম প্রয়োজন, মানুষ তার প্রয়োজনে আপনাকে ভালবাসবে।

আমরা যা করি তা নিজের জন্য করি। আমাদের নিজস্ব লক্ষ্য আছে, স্বপ্ন আছে, উচ্চাকাক্ষা আছে। আছে নিজস্ব বলয়, বন্ধুবান্ধব, পরিবার ইত্যাদি। প্রতিটি ব্যক্তির নিজস্ব বলয় থাকে। আপনি চাইলেই কারো অগ্রাধিকারের তালিকায় নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারবেন না। হ্যাঁ, কিছু সময়ের জন্য সফল হতে পারেন। যদি আপনাকে তার প্রয়োজন হয়। কারণ ভালোবাসার অপর নাম প্রয়োজন। কাজেই অন্যের অগ্রাধিকারের তালিকায় নিজেকে রাখতে হলে তার প্রয়োজনীয় বিষয়ে সাপোর্ট দিন। পৃথিবী বিখ্যাত একটা গল্প বলি।

দুটি ঘোড়া দুটি বোঝা বইছিল। একটি ঘোড়া বোঝা নিয়ে খুব ভালোভাবে যাচ্ছিল, কিন্তু অন্য ঘোড়াটি খুব অলস ছিল। অলস ঘোড়াটি বোঝা নিয়ে এতো ধীরে যাচ্ছিল যে, সামনের ঘোড়ার চেয়ে সে অনেক পিছনে পড়ে যায়।এই অবস্থা দেখে ঘোড়া দুটির মালিক অলস ঘোড়ার পিঠ থেকে বোঝা নামিয়ে ফেলল এবং সে বোঝা সামনের ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে দিল। এই দেখে অলস ঘোড়া খুব খুশি হলো এবং সামনের ঘোড়াকে উপহাস করে বলল,‘বেশি বেশি খাটুনি কর এবং মর’। যখন তারা বাড়িতে পৌঁছল তখন মালিক ভাবল, এক ঘোড়া দিয়েই তো বোঝা বহন করা যায়, তাহলে অন্য ঘোড়াকে এত খাবার দেবার প্রয়োজন কি! যেই ভাবা সেই কাজ। এরপর থেকে ঘোড়ার মালিক অলস ঘোড়াটিকে খাবার দেওয়া প্রায় বন্ধই করে দিলো এবং পরিশ্রমী ঘোড়াটিকে বেশি বেশি খাবার দিতে লাগলো। উপরের যে গল্পটি এতক্ষণ পড়লে সেটি লিও টলস্টয়ের উপকথা। গল্পে আমরা দেখেছি অলস ঘোড়াটি শুধু তার অলসতার কারণে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর পরিশ্রমী ঘোড়াটি পরিশ্রমের কারণে তার প্রাপ্য থেকেও বেশি পেয়েছে। 


অভ্যাস-৩২  ▌ "Less is more" বা "কমই বেশি" ; অপ্রয়োজনীয় জিনিস ছেড়ে দিন

মিনিমালিজম-এ কম জিনিসপত্র ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়। জাপানের জেন বৌদ্ধধর্মের সরলতা, শান্তি এবং সামঞ্জস্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়—যা মিনিমালিজমের মূলভিত্তি।

মিনিমালিস্ট জীবনধারায় নতুন কিছু কেনার আগে , নিজেকে জিজ্ঞাসা করতে হয়, "এটি কি আমার জন্য সত্যিই প্রয়োজনীয়?"

এই দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে মিনিমালিস্টরা অপ্রয়োজনীয় খরচ থেকে বিরত থাকেন এবং শুধুমাত্র সেই জিনিস কেনেন যা তাদের জীবনে সত্যিকার অর্থে কাজে লাগবে। এভাবে, মিনিমালিস্টরা তাদের সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহার করেন এবং ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করেন।

অপ্রয়োজনীয় জিনিস ছেড়ে দিন। আপনার সময় এবং শক্তি শুধুমাত্র সেই কাজগুলিতে ব্যয় করুন যা আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। একটি বাসা বা স্থানকে পরিষ্কার, ফাঁকা জায়গা এবং আকর্ষনীয় রঙের ব্যবহার করে, কার্যকরভাবে সাজানো। যা সত্যি সৌন্দর্য বাড়ায়। 


অভ্যাস-৩২  ▌ খুব কম মানুষই হাসি দিয়ে দিনটা শুরু করতে পারেন।  

মানুষের সাথে মানুষের সংযোগ তথা সম্পর্ক শুরু হয় হাসি দিয়ে। জীবন হল উপভোগের জন্য। কিছু মানুষ এটা বুঝতেই চান না। তারা গম্ভীর থেকে থেকে বৃদ্ধ হয়ে যায়। কাজের একটা সূত্র মনে রাখা দরকারঃ একঘেঁয়ে, গম্ভীর পরিবেশে যে পরিমাণ কাজ হয়, হাস্যময় পরিবেশে তার চেয়ে দ্বিগুণ কাজ সম্পাদন করা যায়।

একজন মনোবিজ্ঞানী স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট পড়ানোর সময় রুমে চারপাশে হাঁটতে হাঁটতে এক সময় শ্রোতাদের সামনে এক গ্লাস পানি উপরে তুলে ধরলেন। তখন সবাই ভেবে ছিল হয়তো তিনি গ্লাস অর্ধেক খালি না অর্ধেক ভর্তি এই প্রশ্নটি করবেন। কিন্তু তিনি তা করলেন না। তিনি হাসিমুখে প্রশ্ন করলেন “ এই এক গ্লাস পানি কত ভারী”। উত্তর আসল আট আউন্স থেকে বিশ আউন্সের ভেতর হবে হয়তো।

তিনি বললেন এর আসল ওজন এখানে কোনো ব্যাপার না। ব্যাপার হলো আমরা এটাকে কতক্ষণ ধরে রাখছি। যদি আমি এটাকে এক মিনিটের জন্য ধরে রাখি, তবে কোনো সমস্যা হবে না। যদি এটাকে এক ঘন্টা ধরে রাখি তবে আমার হাতে ব্যথা অনুভূত হবে। আর যদি একদিনের জন্য এভাবে ধরে থাকি, তবে আমি অসাড় এবং পক্ষঘাতগ্রস্থ বোধ করব। ধরে রাখার সময় বাড়ার সাথে সাথে এটি ভারী থেকে ভারী লাগতে শুরু করে। 


অভ্যাস-৩২  ▌ আলতু-ফালতু কাজে সময় অপচয় করে... স্বপ্ন পূরণ অবাস্তব।

আমাদের একটা কমন সমস্যা হচ্ছে- সমাধান জেনেও সেটা ফলো না করা। ঢিলামি আর ফাঁকিবাজি করে, আলতু-ফালতু কাজে প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা সময় অপচয় করেও, নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য আশা করা। আশা করি যে, একদিন আচমকা ঘুম থেকে উঠে দেখব, আলাদীন চেরাগ দিয়ে গেছে। কল্পনার এই পাগলামি বাদ দিয়ে বরং নিজের ভিতরের ইচ্ছাটাকে পাকাপোক্ত করুন। নিজেই নিজেকে কঠিন ডেটলাইন দিন। আধা ঘন্টা না পারলে, অন্তত পনের মিনিট সময় বের করুন। টার্গেটে পৌঁছানোর রাস্তা বা সময় পরিবর্তিত হলেও লাইনে থাকুন প্রতিটা দিন।

একটা বাস্তব সত্য ঘটনা বলি- একটা সময়ে হাত ধোয়ার প্রচলনটা ছিল না। এমনকি ডাক্তাররাও হাত ধুতো না কোনো অপারেশন করার আগে। 'ডক্টর ইগনাজ স্যামেল ওয়াইজ' নামে হাঙ্গেরিয়ান এক ডাক্তার চাইন্ড বেড ফিভার নিয়ে ভাবতে শুরু করলেন। ১৮৪৬ সালে তিনি একজন ফিজিশিয়ানের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং পিউপেরাল সেপসিস-এর মধ্যে কানেকশন খোঁজ পেলেন। তিনি দেখেন, যে সব ডাক্তাররা হাত ধোয়া নীতি মেনে চলছেন, তাদের অধীনে থাকা গর্ভকালীন মায়ের মৃত্যুর হার কমছে। তিনি তার ইন্টার্নদের জানিয়ে দিলেন, সবার হাত ধুয়ে নিতে হবে যে-কোনো ডেলিভারির আগে। আর ডেলিভারিতে ব্যবহৃত ইন্সট্রুমেন্ট ক্লোরিনেটেড লাইমে ধুতে হবে। তখনও জীবাণু তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি। সায়েন্টিফিক সোসাইটির লোকজন তখনও বিশ্বাস করতো রোগ - বালাই হয় খারাপ আত্মা দিয়ে বা রোগীর উপর কিছু ভর করলে ইত্যাদিতে। সেখানে ডক্টর ইগনাজ স্যামেলওয়াইজ শুধুমাত্র তার ডাক্তারদের হাত ধুইয়ে গর্ভকালীন মৃত্যুর হার অর্ধেক-এ নামিয়ে ফেললেন।

এবার তিনি মরিয়া হয়ে সকল গাইনি অ্যান্ড অবসের ডাক্তারদের চিঠি পাঠাতে শুরু করেছিলেন যেন, তারা হাত ধুয়ে, ইনস্ট্রুমেন্টস ধুয়ে কাজ করেন। তখন সবাই বিরক্ত হয়ে তাকে পাগল মনে করে দেয়া হলো মেন্টাল এসাইলামে। কেউ বললো তার উপর বদ আত্মা ভর করেছে।

মেন্টাল এসাইলামের গার্ডরা তাকে প্রচণ্ড পেটালো। পেটানোর ফলে তার হাতে-শরীরে ক্ষত থেকে পচন ধরে যায়। সেখান থেকে তার মৃত্যু হয় মাত্র ৪৭ বছর বয়সে। জীবাণু তত্ত্ব, অর্থাৎ রোগের উৎপত্তি জীবাণু থেকে হয় এমন তত্ত্ব আবিষ্কারের অনেক বছর পর তার স্বীকৃতি মেলে। তাকে আজ এন্টিসেপসিসের পাইওনিয়ার বলা হয়। তার জীবন থেকে একটা বিষয়ে আমরা শিক্ষা পাই, তা হলো-একা মানে বোকা, আপনাকে সংগঠিত হতে হবে। আপনার আইডিয়া বা আবিস্কার যতই ইউনিক এবং বৈজ্ঞানিক সত্য হিসাবে প্রমাণিত হোক, তা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে অরগানাইজিং হতে হবে। সুতরাং সেচ্ছাসেবক হিসেবে যেকোনো সংগঠনের সঙ্গে থাকুন 


অভ্যাস-৩৩০  ▌ টাইমকে ওয়েস্ট না করে রিস্ট করে তুলুন। আপনার নাগাল কেউ পাবে না।

আমাদের দিনের বেশিরভাগ ফোন কলই দেখবেন জরুরি নয়। তারপরও বেশিরভাগ মানুষই ফোনে কথা বলতে থাকেন এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো গুরুত্বহীন। কবি শামসুর রহমানকে দেখেছি, অতি প্রয়োজনীয় কথাটুকু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শেষ করে গুড়ভাই, থ্যা্কং ইউ বলে বিদায়ের সংকেত দিচ্ছেন তিনি। ৩০ সেকেন্ড এর বেশি ফোনে কথা বলাকে তিনি গুরুত্বহীন, এনার্জির অপচয় মনে করতেন।

অনেককে দেখবেন, প্রতি মুহূর্তে চ্যাট করছেন, স্ট্যাটাস দিচ্ছেন যা অতি গুরুত্বপূর্ণ নয়। আপনি যাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে। তখন মোবাইল ফোনে এক বন্ধু জানাল, এক্ষুণি ক্যান্টিনে চলে আয়, শিলা এসেছে। বন্ধুর ফোন পেয়ে আপনি ক্লাসে না গিয়ে চলে গেলেন ক্যান্টিনে। এভাবে জরুরি সময়গুলো গিলে খেয়ে ফেলছে গুরুত্বহীন কাজ । আপনি যদি এইভাবে সময় নষ্ট করেন, তাহলে জীবনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়াটাকে গুরুত্বহীন মনে হবে। প্রায়শই মনে হবে আপনি পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। এই পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই এভাবে তুচ্ছ বিষয়ে সময় কাটায় বেশি। সারাদিন দেখবেন প্রচণ্ড ব্যস্ত। কিন্তু কোনোটাই গুরুত্বপূর্ণ নয়। সময় শেষে তারা মনে করে যে, তারা জীবনে কোনো সুযোগ পায়নি।

একটি পরিবারে অনেককে দেখবেন, তারা কোনো কাজ করবে না। মা-বাবা কিংবা ভাই-বোনের উপার্জন মহাআনন্দে ভোগ করছেন। আবার অসংখ্য সরকারি চাকরিজীবী আছেন যারা অফিসের কাজ না করে গল্প-গুজব আর আড্ডায় সময়টা ব্যয় করে। তারাও দায়িত্বজ্ঞানহীন জীবনযাপনে অভ্যস্ত।

গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে, আপনি যত দ্রুত চলবেন, সময় তত ধীরে চলবে। কোনো বস্তু যত দ্রুত চলে, সময় সেই বস্তুর জন্যে তত আস্তে চলে। আইনস্টাইন-এর কল্যাণে আমরা সবাই এই আপেক্ষিক তথ্যটা এখন জানি। তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ও প্রতিটি সেকেন্ডকে গুরুত্ব দিতে হবে। একটা দিন চলে যাওয়া মানে জীবন থেকে চব্বিশটা ঘণ্টা ঝরে যাওয়া। এডিসন বলেছেন- ঈশ্বর যদি আমাকে জন্মভূমি বেছে নেবার অধিকার দিতেন, তাহলে আমি মঙ্গল গ্রহই বেছে নিতাম। কারণ মঙ্গল গ্রহের দিন পৃথিবীর চেয়ে চল্লিশ মিনিট বড়। অন্তত সে সময়টা বেশি কাজ করা যেতো।

মোট কথা হলো : সাফল্যের রহস্য লুকিয়ে আছে সময় বিভাজনে। চব্বিশ ঘণ্টার দিনটা আপনার কাছে আট ঘণ্টা, না বাহাত্তর ঘণ্টার হবে, সেটা নির্ভর আপনি কিভাবে সময় ব্যয় করছেন তার উপর। কেউ সারাদিনও কাজ করে কুলিয়ে উঠতে পারে না, আবার কেউ অত সময় নিয়ে কি করবেন ভেবে উঠতে পারে না। এই দু’পক্ষের কাছে সময় একটা বিড়ম্বনা। সময়ের সদ্ব্যবহার কি করে করবেন, তা না জানার জন্য এদের এমনটি হয়। সময়কে নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যয় করতে পারলে সব কিছুই আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে 


অভ্যাস-৩৩১  ▌ সময় ব্যবস্থাপনা কিছু নিনজা কৌশল


১.তালিকা তৈরি করুন: আপনি তিন ধরনের তালিকা তৈরি করুন- ব্যাক্তিগত, ঘরের ও চাকরী বা ব্যবসার । কোন কাজে কতক্ষণ সময় ব্যয় করবেন তার পরিকল্পনা করে সে অনুযায়ী মোবাইলে রিমাইন্ডার সেট করুন। প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন করার অগ্রিম পরিকল্পনা করুন, কাজের তালিকা চোখের সামনে রাখুন।


২.একসাথে অনেক কাজ করা বন্ধ করুন: প্রায়ই দেখা যায় যারা বহু কাজ একসাথে করেন। তারা ভাবেন যে তারা বেশি কাজ স¤পন্ন করেছেন। কিন্তু মন্র রাখবেন, আমাদের মন তখনই ভালো কাজ করে, যখন আমরা একটি কাজের দিকে মনোযোগ দিতে সক্ষম হই।


৩.অন্যকেও দায়িত্ব দিন: আপনি সবকিছু একা করতে যাবেন না। আপনার সীমাবদ্ধতার কথা মনে রাখুন। দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি খুঁজুন এবং তাকেও কিছু দায়িত্ব দিন। এটি আপনার চাপ কমাবে এবং আরও কার্যক্ষম করবে।


৪.নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা করা বন্ধ করুন: পৃথিবীতে কেউই নিখুঁত নয়। কাজের যৌক্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। এবং যেনো-তেনোভাবে না করে নিজের সর্বোত্তম চেষ্টা করুন।


৫.নিজেকে পুরস্কৃত করুন: যখন কোনো কাজ সম্পন্ন করেছেন, তা উদযাপন করুন। যাতে আপনি আনন্দ পান তাই করুন।


৬.কাজগুলোকে ভাগ করে নিন: বড় বড় কাজগুলোকে ছোট ছোট করে ভাগ করুন এবং একটা একটা করে করুন।


৭.বিশ্রাম নিন: বিশ্রাম আপনাকে যে শক্তি ক্ষয় হয়েছে তা ফিরে পেতে সাহায্য করবে এবং কাজে উদ্যমী হবেন। 


অভ্যাস-৩৪২  ▌ লোকের কথায় কান দিয়ে পিছিয়ে যাবেন না ।

কিছু মানুষ আছে, যারা দু’একবেলা অনাহারে থাকতে রাজি; কিন্তু অন্যের হাসিঠাট্টার পাত্র হতে রাজি নয়। কে কী বলবে, কে কী ভাববে- এই নিয়ে তটস্থ থাকে তারা। তাদের হাজারও সংকল্প ব্যর্থ হয়, স্বপ্ন হারিয়ে যায়, তারা নিজেকে আড়াল করতে তৎপর থাকে, মানুষের মাঝখানে অবস্থান করতে কিংবা নিজেকে প্রকাশ করতে অনিচ্ছা পোষণ করে।

অনেক সময়েই নিজের পছন্দের কাজটা করিনা এই ভেবে যে, ঠিকমতো না করতে পারলে হয়তো লোকে হাসবে, পিছে কানাঘুষো করবে। অথচ লোকের কথা না ভেবে কাজটা করে ফেললে হয়তো দারুণ কিছু হয়ে যেতে পারতো। এই যে লোকের কথা ভেবে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা, এটাই আমাদের জাতি হিসেবে পিছিয়ে পড়ার অন্যতম একটি কারণ।

কে কী বলল, মন্তব্য করল, সমালোচনা করল- সেদিকে কর্ণপাত না করে নিজ উদ্যমে, আপন শক্তিতে বলীয়ান হয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যেখানে ব্যর্থতা আসবে, সেখান থেকেই পুনরায় পথ চলতে হবে, হার মানা যাবে না। একবার না পারলে শতবার চেষ্টা করতে হবে।

চলুন ছবিতে দেয়া কবিতাটি এভাবে পড়ি- করিতে পারি সকল কাজ, নাহি ভয়,নাহি লাজ, সংশয়ে সংকল্প নাহি টলে,পাছে লোকে যাই বলে। 


অভ্যাস-৩৪৩  ▌ আবেগ নয় বিবেক ও জ্ঞান দিয়ে বিচার করুক

আবেগ সর্বস্বতা সাফল্যের পথে বাধাআবেগ-সর্বস্ব মানুষদের কোনো কাজে নিষ্ঠা ও দৃঢ়তা থাকে না। এঁরা সর্বদাই একটি কাজ অসমাপ্ত রেখে আরেকটা কাজ ধরেন; আজ একটা নিয়ে চর্চা করছেন তো কাল আরেকটা। এঁদের পক্ষে বেশিদিন একটা লক্ষ্যে স্থির থেকে কাজ করে যাওয়া দুঃসাধ্য। যখন এঁরা শুরু করেন, তখন বেশ উৎসাহ নিয়েই করেন। কিছুদিন পরই তাঁদের আশাভঙ্গ হয়। সমস্ত উৎসাহ উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলেন তাঁরা। তাই আবেগ নয় বিবেক দ্বারা পরিচালিত হতে সচেতন থাকুন। আপনি যদি কোনো কাজে সফল হতে চান, তাহলে সেই বিষয়ে আপনাকে যথাসম্ভব তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। আপনি যে বিষয়ে জানেন না, তা অন্যকে প্রশ্ন করে জেনে নিন।  


অভ্যাস-৩৪  ▌ “নো মানি নো হানি”?

বিনিময়ের প্রধানত ২টা মাধ্যম। টাকা ও বিনয়। টাকা ছাড়াও অনেক কিছু আপনি অর্জন করতে পারেন শুধুমাত্র বিনয়ের মাধ্যমে। এমনকি, কিছু কিছু বিষয় আছে- যা টাকা দিয়েও অর্জন করা যায় না, সেখানে বিনয় অতি চমৎকার ও অলৌকিকভাবে কাজ করে। বিনয় মানে অন্যকে জিতানোর মাধ্যমে নিজের জয় ছিনিয়ে আনা। অর্থাৎ গলায় মালা পড়তে হলে মাথা নিচু করতে হয়, এটাই বিনয়।

আর বিনিময়ের অন্য মাধ্যম টাকা হলো আগুনের মত, আপনার দরকার অনুযায়ী ব্যবহার করে, বাকীটুকু নিভিয়ে রাখতে হয়। নয়তো তা কোন না কোনভাবে আপনার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।  


অভ্যাস-৩৪  ▌আসল উদ্দেশ্য গোপন করে অন্যকে অন্ধকারে রাখুন

আপনি সত্যিকার কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছেন সেটা জানতে না দিয়ে অন্যদের অপ্রস্তুত এবং অন্ধকারে রাখুন। তাদের চারপাশে যথেষ্ট ধোঁয়াশা সৃষ্টি করুন। এমনভাবে করবেন, যাতে তারা আপনার সঠিক উদ্দেশ্য যখন জানবে, তখন তাদের অনেক দেরি হয়ে গেছে।

অধিকাংশ লোক খোলা বইয়ের মতো। তারা যা ভাবে তাই বলে, সুযোগ পেলেই মতামত দিয়ে ফেলে এবং ক্রমাগত তাদের পরিকল্পনা প্রকাশ করতে থাকে। সরলতা আসলে একটি ভোঁতা অস্ত্র, যা কাটার থেকে বেশি রক্ত ঝরায় বেশি। আপনি একদম খোলামেলা হয়ে নিজেকে এত বেশি সহজবোধ্য করে ফেলেন যে, শ্রদ্ধা বা ভয় করা প্রায় অসম্ভব।

যদি ক্ষমতার আকাঙ্খা করেন, তাহলে সরলতাকে সরিয়ে রেখে নিজের উদ্দেশ্যকে লুকিয়ে রাখতে শিখুন। আপনি জয়ী হবেন। লোকের সামনে টোপ ঝুলিয়ে দিন এবং লোক সেটাকে বাস্তব করে মেনে নেবে।

নিজের উদ্দেশ্যকে গোপন রাখার অন্যতম উপায় হলো, আপনার ভুয়া ইচ্ছা এবং লক্ষ্য সম্পর্কে অনবরত আলোচনা করুন; আসল উদ্দেশ্য ভুলেও নুখে আনবেন না । এতে আপনি এক ঢিলে তিন পাখি মারবেন। অন্যের বন্ধুভাবাপন্ন হবে, সরল,খোলামেলা এবং বিশ্বস্ত হবেন। 


অভ্যাস-৩৪  ▌ বেশি বেশি "*নতুন বন্ধু " তৈরী করুন।

ভিড়ের মধ্যে থেকেও দিনশেষে আমরা একাস্টাডি বলছে, বর্তমান পৃথিবীতে ৩৩% মানুষ একাকিত্বে ভোগেন - মানে প্রত্যেক তিনজনের একজন। তারা কিন্তু সবাই বয়স্ক নন। মধ্য বয়সের যুবক-যুবতীরা চারিদিকে মানুষের ভিড় থাকলেও মানসিকভাবে একা থাকেন বেশি। সাইকোলজিস্টরা বলছেন একাকিত্ব মানে কিন্তু একা থাকা নয়। *একাকিত্ব একটি "মনের অবস্থা" যেখানে মানুষটির মনে হচ্ছে সে একা, নির্বান্ধব*, অতি কাছের কেউ নেই।

মানুষ মূলত সামাজিক জীব। শিকারের প্রয়োজনে এক সময় মানুষ দল বেঁধে থাকতো। একা বাছার কোন জিনগত সাপোর্ট মানুষের নেই। কাজেই মানুষ কোনো কারণে একা হয়ে গেলে, প্রকৃতি শরীরবৃত্তীয়ভাবে মানুষকে ফাইটিং মোডে নিয়ে যায়। একাকিত্বে ভোগা মানুষের উপর স্টাডি করে দেখা গেছে যে, *তাদের প্রেসার বেশি, সুগার লেভেল বেশি এবং হার্টবিটও বেশি*। মানুষ তখন অপরিচিতদের থ্রেট হিসেবে দেখতে শুরু করে। তার মধ্যে একটি ভিসিয়াস সাইকেল তৈরী হয়। মানুষের ইমিউনিটি কমে যায়, ইনফ্লামেশন বেড়ে যায়, হার্ট ডিসিস, স্ট্রোক এবং প্রিম্যাচিওর ডেথের চান্স বেড়ে যায় *প্রায় ৫৮%* ! ডিমেনশিয়া, আলজাইমার, ডিপ্রেশন যে প্রায় মহামারীর আকার ধারণ করেছে তার অন্যতম কারণ এই একাকিত্ব।

তাহলে উপায়? আরো বেশি বেশি "*নতুন বন্ধু " তৈরী করা।ছেলে-বুড়োদের সকাল-সন্ধেতে *বন্ধুদের সাথে আড্ডা বা পাড়ার কাকিমা-জ্যেঠিমাদের "পাড়া বেড়ানো"* এটিই সুস্থ থাকার চাবিকাঠি ! 


অভ্যাস-৩৪  ▌"শিষ্টাচার সমস্যা" কাটিয়ে উঠুন

বেশিরভাগ বাঙালি এখনো টয়লেট ব্যবহার করতে জানেন না। টয়লেটটা ব্যবহার করার পর যে তা পরবর্তী ব্যক্তির জন্য পরিস্কার করে রাখতে হয়- এটা এরা শেখেন নাই। এরা মুখ বন্ধ করে নিঃশব্দে খেতে জানেন না। খেতে খেতে মোবাইলে কথা বলে। খাবারের সময় কথা বললে মুখের লালা ৩ফুট পর্যন্ত চারপাশে ছড়ায়, যা খালি চোখে দেখা যায় না এবং এভাবে একজনের রোগ-জীবানু অন্যের পাটে যায়; তা তারা জানে না। খাওয়ার পর নিজের খাবারের প্লেট বা উচ্ছিষ্ট খাবার টেবিলে ছড়িয়ে রাখে, ওয়েটার বা বাডীর চাকর-বাকর পরিষ্কার করবে বলে। এরা রান্না করে খেতে জানেন না। নিজের কাপড়-চোপড় নিজে ধুতে পারেন না। যেখানে সেখানে ধুমপান করেন। রাস্তায় কারো সামনে বা বাড়ির ভেতরে কিংবা বাচ্চাদের সামনে যে ধুমপান করাটা অশোভন- এটা এরা বোঝেন না। জীবনের এরকম আরো অসংখ্য প্রাথমিক জ্ঞান বা আচরণ আছে- যা এই উচ্চ শিক্ষিত প্রগতিশীল বাঙ্গালিরাও শিখতে পারেননি। কারণ, বাঙালির এই কাজগুলো করে দেন আমাদের 'মায়েরা'। আর ধনীদের বেলায় করে দেন তাদের 'বুয়া'।  


অভ্যাস-৩৪  ▌সুনামের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে, প্রাণ দিয়ে একে রক্ষা করুন...

শুরুতে আপনাকে উদারতা, সততা বা চতুরতার মতো একটা বিশিষ্ট গুণের মাধ্যমে খ্যাতি প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে। এই গুণ আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করতে এবং অন্যদের আপনার ব্যাপারে আলোচনা করতে বাধ্য করবে। এরপর আপনার খ্যাতি যত সম্ভব বেশি সংখ্যক মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিন। অবশ্যই সূক্ষ্মভাবে; যত্ন নিয়ে ধীরে ধীরে কৌশলে ছড়াতে হবে । এটা আপনার চারিদিকে একটা প্রভাব বলয় সৃষ্টি করবে। খ্যাতি একরকমই একটি সম্পদ, যা সতর্কতার সঙ্গে সংগ্রহ এবং মজবুত করতে হয়।

মনে রাখবেন-সুনাম ক্ষমতার প্রধান ভিত্তিপ্রস্তর। কিন্তু পা পিছলালেই আপনি অরক্ষিত। তখন সবদিক থেকে আক্রমণ আসবে। কাজেই আপনার সুনামকে এমনভাবে পোক্ত করুন, যাতে আপনি ভেসে না যান। প্রতিপক্ষের সম্ভাব্য আক্রমণ সম্বন্ধে সর্বদা সজাগ থাকুন এবং তা থেকে আঘাতের আগেই প্রতিহত করুন। এর জন্য তাদের সুনামে ছিদ্র খুঁজে বের করে কৌশলে গা বাচিয়ে তা ছড়িয়ে দিন। মনে রাখবেন-"সব সুন্দরীদের মধ্যে একটি গন্ধযুক্ত পায়ুপথ থাকে"। 


অভ্যাস-৩৪  ▌ যে কোনো মূল্যে মনোযোগ আকর্ষণ করার চেষ্টা করুন।

সব কিছুই চেহারা দ্বারা বিচার্য হয়; যা দেখা যায় না তা দিয়ে কিছু হয় না। তাই নিজেকে কখনও ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যেতে দেবেন না। অথবা স্রোতে তলিয়ে যেতে দেবেন না। উঠে দাঁড়ান। যে কোনো মূল্যে চোখ পড়ার মতো হোন। নিজেকে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু করুন।

গ্রীক উপকথা : ‘পিন টেল’ নামে এক বোলতা এমন কোনো কাজ করার খোঁজে ছিলো, যা তাকে বিখ্যাত করবে। সুতরাং একদিন সে রাজপ্রাসাদে ঢুকলো এবং বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা ছোট্ট রাজকুমারকে হুল ফুটালো। রাজকুমার জোরে চিৎকার করে কেঁদে উঠে পড়লো। রাজা এবং তার সভাসদরা কি হয়েছে দেখতে ছুটে এলেন। বোলতাটা বারবার হুল ফুটাচ্ছিলো বলে রাজকুমার কাতরাচ্ছিলো।

সভাসদরা বোলতাকে ধরতে গেলেন এবং তা করতে গিয়ে প্রত্যেকেই হুলে আক্রান্ত হলেন। রাজপ্রাসাদের সমস্ত লোক ছুটে এলেন। ক্রমে খবর ছড়িয়ে পড়লো। লোকেরা প্রাসাদে ভিড় করলেন। নগরে সাড়া পড়ে গেলো। অতিকথনে লোকমুখে ছড়াল ‘পিন টেল’ এর কামড়ে পুরো রাজপ্রসাদ আহত। মায়েরা ‘পিন টেল’ -এর ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়াতে লাগল। মৃত্যুর আগে বোলতা বলল, ‘খ্যাতি হচ্ছে শিখা ছাড়া আগুনের মতো’ যা দেখা না গেলেও জ্বলতে থাকে। কাজেই যে কোনো মূল্যে দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো কিছু করুন, কিন্তু তা যেন হয় পজেটিভ। 


অভ্যাস-৩৫০  ▌ উজ্জ্বলভাবে জ্বলে উঠার দক্ষতা অর্জন করুন।

লোককে আকর্ষিত করার কৌশল আপনাকে শিখতে হবে। জীবনের গতি পরিবর্তন শুরু করার সময় আপনাকে অবশ্যই আপনার নামকে একটি উপমার সাথে জুড়ে দিতে হবে, যা আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে। যেমন -আপনার নাম নাসির, কোথাও নাম লেখার সময় লিখলেন স.ম. নাসির। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবেন এর অর্থ 'সহজ মানুষ নাসির'। একবার এই উপমা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে, আপনি অন্যদের থেকে আলাদা একটা চেহারা পেয়ে গেলেন। এবার নিজেকে আকাশে তুলেএকটা জায়গা অর্থাৎ তারকা খ্যাতি অর্জনের জন্য অন্যদের থেকে বেশি কিছু জানার তথ্য জানার চেষ্টা করুন। যারা বেশি জানে বা যেসব পেইজ /প্রোফাইল জ্ঞানের সাথে সম্পর্কযুক্ত সেইসব নিয়মিত দেখে ভিন্ন কিছু বলার জন্য চেষ্টা করুন।

ষোড়শ লুইয়ের সভায় অনেক প্রতিভাবান লেখক, শিল্পী, প্রচণ্ড সুন্দরী মহিলাও ছিলেন। কিন্তু ডিউক লৌজুনের মতো কাউকে নিয়ে এতো আলোচনা হতো না। ডিউক বেঁটে ছিলেন এবং দেখতেও ভালো ছিলো না। কিন্তু লুই এবং অন্যান্য সবাই এতো আহ্লাদিত ছিলেন যে, সভায় কেউই তাঁর অনুপস্থিতি সহ্য করতে পারতেন না। অর্থাৎ আপনি দেখতে কেমন, পোশাক কেমন এসব কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। দরকার হচ্ছে আপনার চিন্তা-চেতনার বিকাশ, মানসিকতা্র ইতিবাচক পরিবর্তন এবং গুছিয়ে কথা বলার চর্চা করা। 


অভ্যাস-৩৫  ▌ আপনার সাফল্যের পথে বাধা শুধুমাত্র একজন ব্যাক্তি, তাকে চিনুন

অনেক বড় এক কোম্পানি ব্যবসায় লোকসান করে যাচ্ছিল। অনেক স্ট্যাপ ছাটাই করা হল। নতুন পরিচালক এসে এক দুপুরে কোম্পানির কর্মচারীরা বাইরের ক্যান্টিনে লাঞ্চ করে ফেরার সময় অফিসের প্রবেশমুখে একটি নোটিশ লাগিয়ে দিল। নোটিশে লেখা ছিল, 'আমাদের কোম্পানির লোকসানের জন্য যে ব্যক্তিটি দায়ী, সে গতকাল মারা গেছে। সেমিনার রুমে একটি কফিনে তার লাশ রাখা হয়েছে। যে কেউ তা দেখতে চাইলে আমন্ত্রিত।'

একজন সহকর্মীর মৃত্যুর খবর শুনে প্রথমে লোকেরা দুঃখ পেল। তবে এরপর তারা কৌতুহলী হয়ে উঠলো এই ভেবে যে, যে আমাদের সাফল্যের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল? একে একে তারা যখন কফিনের কাছে গেল এবং কফিনের ভেতরে তাকাতেই হঠাৎ তারা কেমন যেন বাকশূন্য হয়ে গেল, হতভম্ভ হয়ে গেল। যেন তাদের খুব আপন কারো লাশ সেখানে রাখা ছিল।


কফিনের ভেতর আসলে রাখা ছিল একটা আয়না। যে-ই ভেতরে তাকিয়েছিলো সে তার নিজে চেহারাই দেখতে পাচ্ছিলো। আয়নার নিচে একটা কাগজে লেখা ছিল, তোমার সাফল্যের পথে বাধা দিতে সক্ষম শুধুমাত্র একজনই আছে গোটা পৃথিবীতে, আর সে হচ্ছো 'তুমি' নিজে। তুমিই সেই একমাত্র ব্যক্তি যে তোমার জীবন পরিবর্তন আনতে পারে, তোমাকে সুখী করতে পারে, তোমাকে সাহায্য করতে পারো। তোমার জীবন তখন বদলে যায় না, যখন তোমার অফিসের বস বদলায়, যখন তোমার অভিভাবক বদলায়, তোমার বন্ধুরা বদলায়। তোমার জীবন তখনই বদলায়, যখন তুমি নিজে বদলাও। তোমার সক্ষমতা সম্পর্কে তোমার নিজের বিশ্বাসের সীমাটা যখন তুমি অতিক্রম করতে পারো, শুধু তখনই তোমার জীবন বদলায়, পূরণ হয় জীবনের লক্ষ্যগুলো।  


অভ্যাস-৩৫  ▌প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির প্রায়ই মিলন হয় না। তাই প্রত্যাশা করবেন না।


আপনি চাইছেন একরকম, হচ্ছে আরেক রকম্‌। আপনি সঙ্গীকে নিয়ে অনেক কিছু কল্পনা করেছেন কিন্তু বাস্তবে আপনি হতাশ হবে্ন। যেমন-


একসময় কলেজের পাঠ্য ছিল ও. হেনরির ছোটগল্প, "The Gift of the Magi" যা 1905 সালে প্রকাশিত হয়েছিল৷ গল্পটি নিউ ইয়র্ক সিটির একটি ছোট অ্যাপার্টমেন্টে বসবাসকারী দুইজন দরিদ্র ্তরুণ-তরুণী "জিম" এবং "ডেলা"কে ঘিরেই তৈরি হয়েছে ৷ তাদের আর্থিক সক্ষমতা না থাকলেও, তারা গভীরভাবে একে অন্যকে ভালবাসতেন এবং সর্বদা একে অপরকে খুশি করার উপায় খুঁজতেন।


ক্রিসমাস ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তারা দুজনেই একে অপরকে একটি বিশেষ উপহার দিতে চায়, কিন্তু দামী কিছু কেনার সামর্থ্য তাদের নেই। ডেলা নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করে যে, তার জিমকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই। কিন্তু তার লম্বা সুন্দর চুল আছে। জিমকে তার দাদা একটি সোনালী ঘড়ি দিয়েছিল। ডেলা উপহার হিসেবে ওই ঘড়ির একটি সুন্দর চেইন কেনে দেবার জন্য তার লম্বা চুল বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে একটি হেয়ার সেলুনে তার চুল $20-এ বিক্রি করে একটি সুন্দর ঘড়ি চেইন কিনে। অন্যদিকে, জিম ডেলাকে ক্রিসমাসের উপহার দেবার জন্য তার লম্বা সুন্দর চুল সাজিয়ে রাখার জন্য একটি চুলের বিনুনি সেট কিনতে তার ঘড়ি বিক্রি করে দেয়। বড়দিনে তারা উভয়েই উত্তেজিতভাবে তাদের উপহার বিনিময় করতে উদ্যত হয়। দুজনেই রোমাঞ্চিত। কিন্তু যখন তারা উভয়েই উপহার খুলে, তারা উভয়েই বুঝতে পারে যে, তাদের উপহারগুলি এখন অকেজো। ডেলার বিনুনি ব্যবহার করার মতো লম্বা চুল নেই আর জিমের চেইনের জন্য আর ঘড়ি নেই। 


অভ্যাস-৩৫ অন্যদের দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নিতে শিখুন।

অন্যরা যেটা আপনার জন্য করতে পারে, সেটা নিজে কখনও করবেন না। অন্যদের বুদ্ধি, জ্ঞান এবং কায়িক শক্তি নিজের স্বার্থে ব্যবহার করুন। এটা শুধু যে আপনার সময় ও শক্তি বাঁচাবে তাই নয়, এটা আপনার চারিদিকে প্রভাব প্রতিপত্তির বলয় সৃষ্টি করবে। পরিশেষে আপনার সাহায্যকারীদের কথা লোকে ভুলে যাবেন এবং আপনাকে স্মরণ করবে।

আপনার নিজের যে গুণে ঘাটতি, সে গুণে দক্ষতাসম্পন্ন লোক খুঁজে বের করুন। তাদের কাজ গুছিয়ে নিয়ে নিজের কাজে পরিণত করুন। এই কাজের জন্য অতীতের বুকে অনেক জ্ঞান এবং বুদ্ধির ভাণ্ডার গচ্ছিত আছে; সেগুলিকে ব্যবহার করুন।

আপনি নিজের কাজ নিজে করার চেষ্টা করে, অসংখ্য ভুল করে, সময় ও শক্তির অপচয় করে জীবন কাটিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু এতে সাফল্য আসবে না। সবার কাছ থেকে জ্ঞান ও কর্ম দক্ষতা-অভিজ্জতা আহরণ করে আপনি সাফল্য অর্জন করবেন। 

 

অভ্যাস-৩৫  ▌সুবাস আশা করলে বাড়ির পাশে ময়লা ফেলবেন না।

আজীবন সময় দিয়েছেন নিম গাছের নিচে। আর এখন বলছেন, জীবন এত তিতা কেন?

আপনি যখন রাত জেগে দুনিয়ার হতাশা লিখে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কমেন্টে সিমপ্যাথি আদায় করছেন, তখন হয়তো অপরপ্রান্তে কেউ রাত জেগে আউটসোর্সিং করছে। আপনি কমেন্টে প্রচুর সিমপ্যাথি পাবেন, আর সে পাবে একাউন্টে টাকা। হিসেবটা খুব সিম্পল- যে যেটার জন্য কাজ করেছে সে সেটাই পেয়েছে। দিন শেষে হতাশ হয়ে বলেন -'শালার, ভাগ্যটাই খারাপ'! না বন্ধু, আপনার ভাগ্য আজ আপনাকে এখানে আনেনি, আপনিই আপনার ভাগ্যকে এতো নিচে নিয়ে এসেছেন। বাড়ির পাশে ময়লা ফেলে তা থেকে কিভাবে ফুলের সুবাস আশা করেন? কাজ যা করেছেন রেজাল্টও তাই। 


অভ্যাস-৩৫১  ▌আপনি সুখী এবং ভাগ্যবানদের সঙ্গে মিশুন। অসুখী এবং ভাগ্যহীনদের বর্জন করুন।

এমন অনেকে আছেন যারা হতভাগ্য বা অসুখী হয়ে জন্মাননি, কিন্তু তাদের ধ্বংসাত্মক ভুল কাজের জন্য নিজেদের দুর্দশা তৈরি করেছে। এটা একটা মহান কাজ হবে, যদি আমরা তাদের টেনে তুলতে পারি, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তাদের প্রভাব আমাদের মধ্যে ঢুকে’ আমাদেরই পরিবর্তিত করে দেয়। কারণটা খুবই সহজ, যাদের সঙ্গে আমরা সময় কাটাই, তাদের মেজাজ, আবেগ এবং এমনকি চিন্তাধারার প্রতি আমরা অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ি নিজের অজান্তে। জীবনে অবস্থার উন্নতির জন্য ‘কার সঙ্গে আপনি মিশবেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ’। মেধা শূন্য লোকদের সঙ্গে মেশার ঝুঁকি হচ্ছে, এদের থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য আপনাকে প্রচুর মূল্যবান সময় এবং শক্তির অপচয় করতে হবে। অন্যদের চোখে আপনার ভাবমূর্তি মার খাবে। কাজেই এদের কাছ থেকে পালান, না হলে ফল ভোগ করতে হবে।

উদাহরণস্বরূপ যদি আপনি কৃপণ স্বভাবের হোন, তাহলে যাঁরা মুক্তহস্ত, তাঁদের সঙ্গে মিশুন। তাঁদের স্¦ভাব আপনার সীমাবদ্ধতাকে খুলে দেবে। যদি আপনি গুমড়োমুখো হোন, তাহলে হাসিখুশিদের কাছাকাছি থাকুন। যদি আপনি বিচ্ছিন্নতাপ্রবণ হোন, তাহলে সঙ্গপ্রিয়দের সঙ্গে মিশুন। আপনার একই দোষ যাদের মধ্যে আছে, তাদের সঙ্গে মিশবেন না, তাঁরা আপনার মধ্যে সেগুলোকেই সমৃদ্ধ করবে, যার জন্য আপনি পিছিয়ে পড়ছেন।   অসুখী এবং ভাগ্যহীনদের বর্জন করুন।


এমন অনেকে আছেন যারা হতভাগ্য বা অসুখী হয়ে জন্মাননি, কিন্তু তাদের ধ্বংসাত্মক ভুল কাজের জন্য নিজেদের দুর্দশা তৈরি করেছে। এটা একটা মহান কাজ হবে, যদি আমরা তাদের টেনে তুলতে পারি, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, তাদের প্রভাব আমাদের মধ্যে ঢুকে’ আমাদেরই পরিবর্তিত করে দেয়। কারণটা খুবই সহজ, যাদের সঙ্গে আমরা সময় কাটাই, তাদের মেজাজ, আবেগ এবং এমনকি চিন্তাধারার প্রতি আমরা অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে পড়ি নিজের অজান্তে। জীবনে অবস্থার উন্নতির জন্য ‘কার সঙ্গে আপনি মিশবেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ’। মেধা শূন্য লোকদের সঙ্গে মেশার ঝুঁকি হচ্ছে, এদের থেকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য আপনাকে প্রচুর মূল্যবান সময় এবং শক্তির অপচয় করতে হবে। অন্যদের চোখে আপনার ভাবমূর্তি মার খাবে। কাজেই এদের কাছ থেকে পালান, না হলে ফল ভোগ করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ যদি আপনি কৃপণ স্বভাবের হোন, তাহলে যাঁরা মুক্তহস্ত, তাঁদের সঙ্গে মিশুন। তাঁদের স্¦ভাব আপনার সীমাবদ্ধতাকে খুলে দেবে। যদি আপনি গুমড়োমুখো হোন, তাহলে হাসিখুশিদের কাছাকাছি থাকুন। যদি আপনি বিচ্ছিন্নতাপ্রবণ হোন, তাহলে সঙ্গপ্রিয়দের সঙ্গে মিশুন। আপনার একই দোষ যাদের মধ্যে আছে, তাদের সঙ্গে মিশবেন না, তাঁরা আপনার মধ্যে সেগুলোকেই সমৃদ্ধ করবে, যার জন্য আপনি পিছিয়ে পড়ছেন।  


অভ্যাস-৩৫  ▌অন্য লোকেরা আপনার কাছে আসুক, দরকার হলে টোপ দিন

ক্ষমতার সারকথা হলো উদ্যোগ নেয়া। পারিপার্শ্বে যারা আছেন তাদের উজ্জীবিত রাখা। যখন আপনি অন্য লোকদেরকে আপনার কাছে আসতে সুযোগ করতে পারেন, তখন হঠাৎ করে দেখবেন, ক্ষমতাকে আরো গতিশীল আরো শক্তিশালী করার নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে এবং আপনি ঠান্ডা মাথায় নিয়ন্ত্রণ করতে জানলে, আপনি ক্ষমতায় ছাড়লেও ক্ষমতা আপনাকে ছাড়বে না। কাজেই অন্যদের আক্রমণ করা থেকে বিরত থেকে তাদেরকে আপনার কাছে আসতে সুযোগ করে দেয়া অনেক বড় ক্ষমতাশালী অস্ত্র। 


অভ্যাস-৩৫  ▌লোককে আপনার ওপর নির্ভরশীল করুন

যার তৃষ্ণা মিটে যায়, তিনি আর দরকার না থাকায় কুয়ো থেকে দূরে চলে যান। তখন তার নির্ভরতা শেষ হয়ে যায়। তাই সেরা কৌশল হলো- আশা জিইয়ে রাখা, কখনো সম্পূর্ণ পরিতৃপ্ত না করা, যাতে করে একজন রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকেরও আপনাকে প্রয়োজন হয়। লোককে বলপ্রয়োগ না করে বা আঘাত না করে তাদের বশীকরণের সর্বোত্তম তাবিজ হলো “একটা নির্ভরতার সম্পর্ক গড়ে তোলা”। আপনি তার কাজে এমনভাবে নিমজ্জিত হন, তাকে এমন স্বপ্নের ফাঁদে আটকে রাখুন, যাতে আপনাকে তার হিসাব থেকে বাদ দিলে তার অনেক অসুবিধা হয়। যখনই এরকম সম্পর্ক স্থাপিত হবে, আপনি তার উচ্চাসন পাবেন, তাকে আপনি যা বলবেন, সে সেরকমই করবে। উদাহরণ, সিংহাসনের পিছনের মানুষটি(মাস্টার মাইন্ড) রাজাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি যদি আপনার জন্য কোনো প্রয়োজন সৃষ্টি করতে না পারেন, তাহলে আপনাকে প্রথম সুযোগেই বাদ দিয়ে দেওয়া হবে।


অভ্যাস-৩৫৪  ▌ ভালোবাসার অপর নাম প্রয়োজন, মানুষ তার প্রয়োজনে আপনাকে ভালবাসবে।

আমরা যা করি তা নিজের জন্য করি। আমাদের নিজস্ব লক্ষ্য আছে, স্বপ্ন আছে, উচ্চাকাক্ষা আছে। আছে নিজস্ব বলয়, বন্ধুবান্ধব, পরিবার ইত্যাদি। প্রতিটি ব্যক্তির নিজস্ব বলয় থাকে। আপনি চাইলেই কারো অগ্রাধিকারের তালিকায় নিজেকে এগিয়ে রাখতে পারবেন না। হ্যাঁ, কিছু সময়ের জন্য সফল হতে পারেন। যদি আপনাকে তার প্রয়োজন হয়। কারণ ভালোবাসার অপর নাম প্রয়োজন। কাজেই অন্যের অগ্রাধিকারের তালিকায় নিজেকে রাখতে হলে তার প্রয়োজনীয় বিষয়ে সাপোর্ট দিন। পৃথিবী বিখ্যাত একটা গল্প বলি। দুটি ঘোড়া দুটি বোঝা বইছিল। একটি ঘোড়া বোঝা নিয়ে খুব ভালোভাবে যাচ্ছিল, কিন্তু অন্য ঘোড়াটি খুব অলস ছিল। অলস ঘোড়াটি বোঝা নিয়ে এতো ধীরে যাচ্ছিল যে, সামনের ঘোড়ার চেয়ে সে অনেক পিছনে পড়ে যায়।এই অবস্থা দেখে ঘোড়া দুটির মালিক অলস ঘোড়ার পিঠ থেকে বোঝা নামিয়ে ফেলল এবং সে বোঝা সামনের ঘোড়ার পিঠে চাপিয়ে দিল। এই দেখে অলস ঘোড়া খুব খুশি হলো এবং সামনের ঘোড়াকে উপহাস করে বলল,‘বেশি বেশি খাটুনি কর এবং মর’। যখন তারা বাড়িতে পৌঁছল তখন মালিক ভাবল, এক ঘোড়া দিয়েই তো বোঝা বহন করা যায়, তাহলে অন্য ঘোড়াকে এত খাবার দেবার প্রয়োজন কি! যেই ভাবা সেই কাজ। এরপর থেকে ঘোড়ার মালিক অলস ঘোড়াটিকে খাবার দেওয়া প্রায় বন্ধই করে দিলো এবং পরিশ্রমী ঘোড়াটিকে বেশি বেশি খাবার দিতে লাগলো। উপরের যে গল্পটি এতক্ষণ পড়লে সেটি লিও টলস্টয়ের উপকথা। গল্পে আমরা দেখেছি অলস ঘোড়াটি শুধু তার অলসতার কারণে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আর পরিশ্রমী ঘোড়াটি পরিশ্রমের কারণে তার প্রাপ্য থেকেও বেশি পেয়েছে। 


অভ্যাস-৩৫  ▌মুড নাই বলে এড়িয়ে যাবেন না, মুড তৈরি করুন। 

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পড়তে বসুন। পুরনো পড়া রিভাইস দিন মাঝে মাঝে। আজকে যা পড়তে পারেন বা করতে পারেন, তা কখনো কালকের জন্য ফেলে রাখবেন না। প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করতে হবে। নেটে পত্রিকা পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরী। কিছুটা সময় শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট ভিজিট করা বা ভিডিও দেখে কিছু শেখা দরকার এবং এই শিক্ষার সারাংশ নোট করে লিখে রাখা, তা মাঝে মাঝে পড়া শিক্ষার অংশ।

নতুন দক্ষতা শেখা এবং এই দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিতে হবে। যেমন: একাধিক ভাষা শেখার চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত প্রতিদিন চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখবেন, মানুষের সাথে চোখে চোখ রেখে হেসে  আন্তরিকতার সাথে কথা বলা কিংবা শুদ্ধ উচ্চারণে কম কথা গুছিয়ে বলাটাও একটা দক্ষতা। শেখার জন্য অনলাইন কোর্স, বই বা ভিডিও দেখতে পারেন। নতুন কিছু শেখা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়।


অভ্যাস-৩৫  ▌নিজের আবেগ ও কল্পনা  নিয়ন্ত্রণ করুন।  

মস্তিষ্ক কোনো সময় ফাঁকা থাকে না, কোনো না কোনো চিন্তা এসে ভিড় করবে। আপনি যদি বার বার নিজেকে দুর্বল ভাবেন। কখনো জয়  ছিনিয়ে নিতে পারবেন না। তেমনিভাবে যদি বারবার অন্যকে উচিত শিক্ষা দেওয়্,া প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের কথা ভাবতে থাকেন,  তাহলে আপনি কখনো উন্নত মানবিক মানুষ হতে পারবেন না। কাজেই সব সময় ইতিবাচক মন-মানসিকতা বজায় রাখতে হবে। নিজের ভুল থেকে শেখতে হবে। নিজের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো দূর করার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন ঘুমোতে যাওয়ার আগে কিংবা ঘুম থেকে উঠে, বিছানায় শুয়ে নিজের নিত্যদিনের  ভুল ত্রুটিগুলি পর্যালোচনা করুন। অন্যের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করে দিয়ে নিজের ভুল-ত্রুটির গলা চেপে ধরুন। কেউ আপনার সমালোচনা করলে সে বিষয়ে আপনার করণীয় আছে কিনা বারবার পর্যালোচনা করুন।


অভ্যাস-৩৫  ▌সবার সাথে বিনয়ী ও শ্রদ্ধাশীল আচরণ করতে হবে। 

যিনি যত বড় নেতা, তিনি তত মাটির মানুষ, মাটির ভাষায় কথা বলেন। হঠাৎ রেগে যাওয়া, অনেকক্ষণ নিজের ভিতরে রাগ ধরে রাখা, খুব নিচু মানুষের লক্ষণ। সব সময় নিজেকে একজন বড় নেতা হিসাবে কল্পনা করবেন এবং বড় নেতার মধ্যে রাগ, অহংকার, ঘৃণা এইসব বাসা বাঁধতে পারে না এটা মনে রাখবেন। 

অন্যদের সাহায্য করুন ও  অন্যের কাজে সহযোগিতা করুন। কোনো কিছু দেবার জন্য বা করার জন্য কাউকে অনুরোধ, জোরাজুরি কিংবা বাধ্য করবেন না বরং সেচ্ছাসেবি হয়ে তার কাজে বা তাকে কিভাবে সহযোগিতা করা যায়, সেই রাস্তাটি খুঁজে বের করুন। প্রতিদানের আশা না করে নিস্বার্থ ও আন্তরিকভাবে তাকে সহযোগিতা করুক। এছাড়া যেখানে স্বেচ্ছাচারী হয়ে ভালো কিছু করা যায়, সেইখানে নিজেকে নিয়োজিত করুন।


অভ্যাস-৩৫  ▌ধৈর্য ও সহনশীলতা বজায় রাখতে হবে। 

প্রতিক্রিয়াশীলতা ও উগ্রতা পরিহার করে ধৈর্য ও সহনশীলতা চর্চা করতে হবে। কেউ জঘন্য কাজ করলে কিংবা কথা বললেও আপনি কোনো রকম উত্তেজিত হবেন না,  প্রতিক্রিয়া কিংবা উগ্র আচরণ করবেন না। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বা জঘন্য কিছুকে যিনি মেনে নিতে পারেন, তার হারাবার কিছুই থাকে না এবং  তিনিই সবার নেতা হন। 

 সবার সাথে সুস¤পর্ক বজায় রাখুন। প্রথমে পরিবার ও প্রতিবেশী দিয়ে শুরু করুন। পরিবারের সবার প্রতি যতœ আত্তি করার পাশাপাশি প্রতিবেশী ছোট-বড় সবার সাথে সুস¤পর্ক তৈরি করুন। মনে রাখবেন, পৃথিবীতে যত ঝগড়া-যুদ্ধ-বিগ্রহ সবকিছুর মূলে প্রধানত “প্রতিবেশী সমস্যা”। অহমিকা,আমিত্ব ত্যাগ করে প্রতিবেশীর স্বার্থ রক্ষায় সহযোগিতা করুন। প্রতিবেশী যত ক্ষুদ্র, জঘন্য কিংবা ক্ষমতাশালী হোক’ তার সাথে শ্রদ্ধাশীল ভালো আচরণ করুন। 


অভ্যাস-৩৫  ▌সরি বলতে শিখুন। 

গুড মর্নিং/গুড নাইট দিয়ে শুরু করে বিদায়টা যেন গুড হাই হয়, সেটা চর্চা করা। কারো প্রতি কোনো রকম অভিযোগ করবেন না। মনে রাখবেন, অভিযোগ, প্রতিক্রিয়া, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ এইসব শুধুমাত্র বোকা লোকেরাই করে। চালাক লোকেরা কৌশলে স্বার্থ আদায় করে। কেউ আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ কিংবা ক্ষোভ প্রদর্শন করলে, সে বিষয়ে আপনি নিজে সঠিক থাকলেও সরি বলে ক্ষমা চেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনুন। এই পরিস্থিতিতে নিজ পক্ষ / আত্মপক্ষ ত্যাগ করে অভিযোগ কারীর পক্ষে অবস্থান নিন এবং তার হয়ে নিজেকে বা নিজের পক্ষকে দোষারোপ করুন। দেখবেন প্রতিপক্ষের অভিযোগ, ক্ষোভ প্রায় নিরাময় হয়ে গেছে।


অভ্যাস-৩৬০  ▌ মিথ্যা না বলা ও সততা বজায় রাখা জরুরী। 

প্রথমে মনে রাখবেন, একটা মিথ্যা, হাজারো মিথ্যা বের হবার রাস্তা তৈরি করে, যা আপনার সকল গুণাবলীকে হত্যা করে মানুষ থেকে পশুতে নামিয়ে দিবে। একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ মানুষ হিসেবে সবার কাছে নিজের ইমেজ তৈরি করুন। যেকোনো মূল্যে নিজের সততা বজায় রাখুন।  কাউকে কথা দিলে, সে কথা রাখতে চেষ্টা করুন; অপারগ হলে ক্ষমা চেয়ে নিন। অন্যদের  কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। প্রতিটি মানুষের প্রধান ও মৌলিক চাহিদা হল  ‘প্রশংসা পাবার আকুতি’।   তার ছোট-বড় কাজের কিংবা ভালো গুণগুলির উচ্চ বাক্যে প্রশংসা করুন এবং তার প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করুন। আপনার প্রশংসা যেমন তার প্রতিভার বিকাশ ঘটাবে, তেমনিভাবে আপনার প্রতি তার দুর্বলতা ও আনুগত্য তৈরি হবে।


অভ্যাস-৩৬১  ▌অন্যের প্রতি ক্ষমাশীল হওয়া এবং ক্ষমা করার মানসিকতা চর্চা করুন। 

অন্যের প্রতি উদার হোন, সেটা মানুষ কিংবা পশু-পাখি যেই হোক, সে যত বড় অপরাধ করুক;  তার প্রতি অমানবিক, কঠিন শাস্তির বিপক্ষে দাঁড়ান এবং তার প্রতি যতœশীল হোন। যে-কোনো ভুলের জন্য অন্যকে ক্ষমা করে দিয়ে তাকে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ দিন।

  সামাজিক কাজে-অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করুন। একা মানে বোকা; অনেকের অন্তর্ভুক্তি মানেই শক্তি। আমরা কেউ একা স্বয়ংস¤পূর্ণ নয় বলেই প্রত্যেকেই পর¯পরের মুখাপেক্ষী। তাই প্রতিযোগিতার পাশাপাশি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে একত্রে যেসব কাজ করা যায়, তাতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।


 অভ্যাস-৩৬২  ▌সমস্যা সমাধানে সৃজনশীল হতে হবে। 

সৃজনশীলতা হলো প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে নতুন কিছু চিন্তা করার ক্ষমতা। নতুন চিন্তা করে এবং সঠিক কৌশল ব্যবহার করলে যে-কোনো সমস্যার অভিনব সমাধান বের করা সম্ভব।  সৃজনশীল সমাধানের জন্য প্রথমে সমস্যার মূল কারণ ও প্রভাব বুঝতে হবে। তারপর কি কি উপায়ে এর সমাধান করা যায়, তার সব ধরণের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। সৃজনশীলতা আমাদের চিন্তাভাবনাকে প্রসারিত করে এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। 

 নেতৃত্ব কোনো সহজ দক্ষতা নয়, তবে সঠিক কৌশল ও চর্চার মাধ্যমে যে কেউ দক্ষ বড় নেতা হয়ে উঠতে পারেন! প্রতিদিন নতুন কিছু অতি সহজভাবে অন্যের কাছে উপস্থাপন করুন। মেন্টর খুঁজুন অর্থাৎ পক্ষে বিপক্ষের ভালো ভালো নেতাদের ফলো করুন, তাদের গুরুত্বপূর্ণ কথা শুনুন এবং আপনার মতামত তুলে ধরুন।  নিজের দুর্বলতা খুঁজে তা সংশোধনের চেষ্টা করুন।  

  আপনি যদি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার মাধ্যমে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করেন, তখন তাদের কর্মক্ষমতা, সৃজনশীলতা ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। অন্যদের নতুন ধারণা ও উদ্যোগে সমর্থন দিন। তাদের সাথে সবসময় আশাবাদী ও ইতিবাচক কথা বলুন। তারা  ভুল করলে দোষারোপ না করে শেখার সুযোগ দিন। তাদের  আবেগ, চাহিদা ও সমস্যা বুঝতে চেষ্টা করুন। তাদের সাফল্য উদযাপন করুন। 


অভ্যাস-৩৬৩  ▌পরিবর্তনকে ভয় না পেয়ে সুযোগ হিসেবে দেখুন। 

নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়  সৃজনশীল সমাধান ও আইডিয়া চিন্তা করুন। ব্যর্থতাকে অভিজ্ঞতা ও শেখার অংশ হিসেবে গ্রহণ করুন। আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য ছোট ছোট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হোন। অনুপ্রেরণাদায়ক বন্ধু, মেন্টর বা সহকর্মীদের সাথে সময় কাটান। সামনে সবচেয়ে খারাপ কী আসতে পারে, তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে রাখুন।

নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন। নেটওয়ার্ক আপনাকে নতুন নতুন সুযোগ এনে দিবে, কাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে আপনার উন্নতি হবে তা ভাবুন, তাদের সাথে ধীরে ধীরে নিজেকে কানেক্ট করুন। প্রশিক্ষণ, ইভেন্ট, সেমিনার, কর্মশালা ইত্যাদিতে অংশগ্রহন করুন। এখান থেকে সমমনা মানুষদের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পাবেন। নেটওয়ার্কের সদস্যদের সাহায্য এবং সহযোগিতা করুন। 

কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখুন। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির জন্য আস্থা ও বিশ্বাসের ইমেজ গড়ে তোলে, যা দীর্ঘমেয়াদি সাফল্যের ভিত্তি। কাজের অগ্রগতি ও পরিবর্তন স¤পর্কে সবাইকে অবহিত করুন। কর্মীদের মতামত ও ফিডব্যাক গ্রহণ করুন। অভিযোগ জানানোর সহজ ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং দ্রুততার সাথে অভিযোগ নি®পত্তি করতে হবে।

দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ নিন। সঠিক প্রশিক্ষণ আপনাকে নতুন জ্ঞান অর্জন, কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে সহায়তা করবে। নিজের দুর্বলতা ও উন্নতির সুযোগ চিহ্নিত করুন। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আপনার অজানা বিষয়ের উপর অসংখ্য ফ্রি কোর্স আছে, যা ঘরে বসেই শেখা যায়। প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর তা ধরে রাখার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ করে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করুন।


অভ্যাস-৩  ▌সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরী। 

সঞ্চয় মানসিক চাপ কমায়। আপনার আয় এবং ব্যয়ের একটি তালিকা তৈরি করুন। অপ্রয়োজনীয় খরচ চিহ্নিত করুন এবং সেগুলো কমানোর চেষ্টা করুন। প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সঞ্চয়ের জন্য আলাদা করে রাখুন। প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে অল্প পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করুন। সঞ্চয়ের জন্য ৫০/৩০/২০ নিয়ম অনুসরণ করুন: ৫০% প্রয়োজনীয় ব্যয়, ৩০% ইচ্ছামতো ব্যয়, ২০% সঞ্চয়। সপ্তাহে একদিন নো-¯েপন্ড ডে পালন করুন।

বাজেট অনুযায়ী খরচ করুন। প্রয়োজনীয় ব্যয় (যেমন: ভাড়া, বিল, খাদ্য) অগ্রাধিকার দিন। ইচ্ছামতো ব্যয় (যেমন: বিনোদন, শপিং) নিয়ন্ত্রণ করুন। প্রতিদিনের খরচ একটি নোটবুক বা অ্যাপের মাধ্যমে র্ট্যাক করুন।  বাকি ব্যয় শুরু করার আগে সঞ্চয় অংশটিকে আলাদা করে নিন। প্রতিমাসে আপনার সঞ্চয় ও খরচের হিসাব দেখুন এবং কোথায় উন্নতি করা যায় তা মূল্যায়ন করুন।


অভ্যাস-৩৬৫  ▌সঞ্চয়কে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত আয় অর্জন করুন।

 বিনিয়োগের মাধ্যমে আপনি আপনার সঞ্চয়কে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত আয় অর্জন করতে পারেন। ব্যাংক, পোস্টঅফিস বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অর্থ ডিপোজিট রাখা যায়। আবার কোনো মেলা বা অনুষ্ঠান উপলক্ষে বা অনলাইনে পরিচিতদের থেকে কিছু পাইকারী কিনে, খুচরা বিক্রি করা বা সার্ভিস দেয়া যায়। এই ধরনের কম ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ বাছাই করে করে টাকা রোলিং করতে হবে।

ঋণ এড়িয়ে চলুন। ঋণ নেওয়ার মাধ্যমে আপনি স্বল্পমেয়াদি সমস্যার সমাধান করতে পারেন, কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক চাপ ও সমস্যা সৃষ্টি করে। ঋণ এড়িয়ে চলতে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ও বিলাসিতা চিহ্নিত করুন এবং তা কমিয়ে দিন বা  এড়িয়ে চলুন। অপ্রত্যাশিত খরচ মোকাবিলার জন্য একটি তহবিল তৈরি করুন। প্রতি মাসে অল্প কিছু অর্থ এই তহবিলে জমা করুন।


অভ্যাস-৩৬৬  ▌ বাজেট তৈরির মাধ্যমে আর্থিক পরিকল্পনা করুন। 

এটি  ব্যক্তি, পরিবার, অথবা প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। বাজেট তৈরির প্রথম ধাপ হচ্ছে: প্রতি মাসে আপনার মোট আয় কত তা আগে নির্ধারণ করুন। এরপর প্রতি মাসে প্রতিটি খাতে আপনার কত খরচ হয় তা নির্ধারণ করুন। এবার  আয় থেকে ব্যয় বাদ দিন। যদি আপনার ব্যয় আয়ের চেয়ে বেশি হয়, তবে আপনাকে খরচ কমাতে হবে।

শুধু শখের বসে খরচ করার প্রবণতা এড়িয়ে চলুন। বাজারে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর তালিকা তৈরি করুন। ডিসকাউন্ট বা অফারের ফাঁদে পড়ে, সুন্দরের মোহে পড়ে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা থেকে বিরত থাকুন। তেমনিভাবে  অপ্রয়োজনে পানির কল খোলা রাখবেন না, গ্যাস জ্বালিয়ে রাখবেন না এবং লাইট-পাখা অন করে রাখবেন না। 

প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার আগে গবেষণা করুন। কেনার আগে প্রথমে অপ্রয়োজনীয় কিছু লোভ বা প্ররোচনার কারণে কিনছেন কিনা, তা বিবেচনা করুন। একই কাজে ব্যবহারের জন্য অন্য কোনো বিকল্প আছে কিনা চিন্তা করুন। যদি একান্তই প্রয়োজন হয়, বাজারে একই ধরনের অনেক পণ্য পাওয়া যায়। ব্যবহারকারীদের মতামত ও রিভিউ দেখে, পেশাদার বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে পণ্যের গুণগত মান  স¤পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা নিন। 


অভ্যাস-৩৬৭  ▌আর্থিক লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। 

আর্থিক লক্ষ্য হলো এমন নির্দিষ্ট পরিকল্পনা, যেখানে আপনি একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোন পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় বা অর্জন করতে চান। যেমন: উচ্চশিক্ষার জন্য বা ব্যবসা শুরু করার জন্য  সঞ্চয়, শখের কিছু কেনা বা কোথাও বেড়ানোর জন্য পরিকল্পনা ইত্যাদি। প্রত্যেকটি লক্ষ্য পূরণের জন্য কত টাকা লাগবে, সেটি নির্ধারণ করুন।  এবার কত টাকা সপ্তাহে বা মাসে সঞ্চয় করবেন তা ঠিক করুন।  

 আয়ের উৎস বৃদ্ধির মাধ্যমে আপনি আপনার আর্থিক অবস্থা উন্নত করতে পারেন, সঞ্চয় বৃদ্ধি করতে পারেন । যেমন ছাত্র-ছাত্রীরা টিউশনি করে বা কোথাও পার্টটাইম কাজ করে আয় বৃদ্ধি করতে পারেন। বিশেষ দক্ষতা থাকলে অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। অনলাইন বিভিন্ন পণ্য (যেমন: হস্তশিল্প, খাবার, পোশাক) রিসেল, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন।  বিভিন্ন কৃষি পণ্য উৎপাদন থেকে আয় করতে পারেন। নিজ হাতে তৈরি জিনিসপত্র অনলাইনে বিক্রি করতে পারেন। দান করার মানসিকতা রাখুন। দান করা সহানুভূতি, উদারতা ও মানবিকতা বিকাশে সাহায্য করে এবং ব্যক্তিগত আত্মতৃপ্তিও প্রদান করে। দান শুধু আর্থিকভাবে নয়, সময়, শ্রম, জ্ঞান বা সহানুভূতিশীল আচরণের মাধ্যমেও করা যায়। যেমন-স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সামাজিক কাজে সময় দিন, এটাও দান। অন্যদেরকে আপনার জ্ঞান ও দক্ষতা শেয়ার করুন। শিক্ষার্থীরা তার বন্ধুদের পড়াশোনায় সাহায্য করুন। 


অভ্যাস-৩৬৮  ▌মানসিক চাপ কমানোর উপায় শিখুন। 

নাক দিয়ে ধীরে শ্বাস নিন, কিছুক্ষণ ধরে রাখুন, তারপর মুখ দিয়ে ছেড়ে দিন; ৫/১০বার। আপনার অনুভূতিগুলো প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন। এতে মন হালকা হবে এবং সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া সহজ হবে। আপনার পছন্দের কাজগুলো করুন,  সকালে বা বিকালে কিছুক্ষণ সূর্যালোক গ্রহণ করুন। পার্কে হাঁটুন বা গাছের ছায়ায় প্রকৃতির সাথে সময় কাটান। প্রিয় সঙ্গীত শুনুন। প্রতিটি সমস্যার সমাধান আছে, নতুন আইডিয়া-কৌশল বের করুন। যে বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সেগুলো নিয়ে বেশি ভাববেন না, সময়ের উপর ছেড়ে দিন। সময়ে সমস্যাটি নরম হতে হতে আপনার সমাধানের নাগালে চলে আসবে, শুধু ধৈর্য ধরুন।

আনন্দের মধ্যে জীবনযাপন করুন। আনন্দ মানে শুধু হাসিখুশি থাকা নয়, বরং জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো উপভোগ করা, ইতিবাচক চিন্তা করা, এবং কৃতজ্ঞতায় মন ভরিয়ে রাখা। পরিবার, বন্ধু, এবং প্রিয়জনদের সাথে আড্ডা দিন বা ছোট খাটো ভ্রমণে যান।  অতীত বা ভবিষ্যতের চিন্তা কমিয়ে বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ দিন। ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেগুলো অর্জনের চেষ্টা করুন। হাসি এবং আনন্দ হচ্ছে সংক্রামক। এটি আপনার এবং আশেপাশের মানুষের মন ভালো রাখে।

জীবনের প্রকৃত আনন্দ উপভোগ করতে ডিজিটাল ব্যস্ততা থেকে মুক্ত থাকুুন।  প্রিয়জনদের সাথে গুণগত সময় কাটান।  ঘরে “নো স্ক্রিন জোন” নির্ধারণ করুন, যেমন- ডাইনিং টেবিল বা শোবার ঘর, পড়ার টেবিল। নিজের যতœ নিন। সেলফ-কেয়ার রুটিন অনুসরণ করুন, যেমন ফেসপ্যাক লাগানো, গরম পানিতে গোসল করা বা ম্যাসাজ করা। নতুন অভিজ্ঞতা নিন। নতুন কোনো জায়গায় ঘুরতে যান বা নতুন কোনো রেস্টুরেন্টে খাবার খান। নতুন বন্ধু তৈরি করুন। এমন কিছু করুন যা আপনি আগে কখনো করেননি।


অভ্যাস-৩৬৯  ▌মাইক্রো প্লাস্টিক থেকে বাঁচুন।

 প্লাস্টিকের দূষণ আমাদের পরিবেশ, প্রাণিকুল এবং স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। প্লাস্টিক সহস্রাধিক বছরেও পূর্ণরূপে পচে না। প্লাস্টিক পোড়ালে বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা বায়ুদূষণ ঘটায়। কাগজ, বাঁশ, পাট, কাপড়, ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি পণ্য ব্যবহার করুন। যা প্রাকৃতিকভাবে পচে যায়। প্লাাস্টিকের বোতল বা প্লাস্টিকের কোনো প্লেটে খাবার খাবেন না কারণ এর মাধ্যমে ছোট ছোট মাইক্রো প্লাস্টিক আমাদের শরীরে জমা হয়, যা খালি চোখে দেখা যায় না। গাছ শুধু কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে আমাদের অক্সিজেনই দেয় না, বরং জীববৈচিত্র রক্ষা, মাটির ক্ষয় রোধ, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার কাজেও সাহায্য করে। বন্ধু বা নিজ বাড়ির আশেপাশে এবং খালি জায়গায় গাছ লাগিয়ে তাতে বন্ধু ও আপনার নাম এবং উপলক্ষ্য লিখে লেমনেটিং করা কাগজ ঝুলিয়ে দিন। এভাবে রাস্তার পাশে মা-বাবা কিংবা কোনো প্রিয় ব্যাক্তির স্মরণে গাছ লাগান। নিয়মিত পানি দিন, বিশেষ করে প্রথম কয়েক মাস।


অভ্যাস-৩৭০  ▌পরিবেশ দূষণ রোধে সচেতন হোন।

পাবলিক  ট্রান্সপোর্টের জন্য অপেক্ষা করার সময় ধৈর্য ধরুন এবং লাইনে সঠিকভাবে দাঁড়ান। ধাক্কাধাক্কি বা তাড়াহুড়ো করে ওঠার চেষ্টা করবেন না। নির্ধারিত স্টপেজ থেকে ওঠানামা করুন। চলন্ত গাড়িতে ওঠানামা করা বিপজ্জনক। ভিড়ের মধ্যে সাবধানে চলুন, ব্যাগ, মোবাইল, মানিব্যাগ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখুন। বয়স্ক, প্রতিবন্ধী বা গর্ভবতী নারীদের জন্য সিট ছেড়ে দিন। মোবাইল ফোনে জোরে কথা বলা বা উচ্চ শব্দে গান শোনা এড়িয়ে চলুন। গণপরিবহনে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না। অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে বেশি কথা বলা, কিছু খাওয়া বা দেখা থেকে বিরত থাকুন।  নামার পর সঙ্গে রাখা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিষ্কার রাখুন।  

পরিবেশ দূষণ রোধে সচেতন হোন। বর্জ্য সঠিকভাবে ফেলুন। সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আমাদের পরিবেশ রক্ষা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, এবং টেকসই উন্নয়নের সহায়ক। দূষিত বর্জ্য বিভিন্ন রোগের কারণ হতে হবে। বর্জ্য সংরক্ষণের জন্য আলাদা আলাদা পাত্র ব্যবহার করুন এবং সেগুলো লেবেল করুন। ভেজা ও শুষ্ক বর্জ্যে আলাদা পাত্রে রাখুন। জৈব বর্জ্য (ফলের খোসা, খাবারের উচ্ছিষ্ট) দিয়ে ক¤েপাস্ট সার তৈরি করুন। পুরানো জিনিস পুনর্ব্যবহার করুন। যেমন, পুরানো কাপড় দিয়ে মোড়ক বা ব্যাগ তৈরি করুন।


অভ্যাস-৩৭১  ▌চিরাচরিত চিন্তা নয়, সৃষ্টিশীল চিন্তা করুন 

‘যে পদ্ধতিটা এতদিন ধরে চলে আসছে; তার মানে এটা নিশ্চয় ভালো এবং এই পদ্ধতিই থাকা উচিত । এটাকে পালটানোর জন্য খামোকা ঝুঁকি নেবার দরকারটা কী? –এ ধরনের চিন্তাই হচ্ছে চিরাচরিত। বরফে কিছুই জন্মায় না। যদি চিরাচরিত চিন্তা মনকে বরফের মতো জমিয়ে দেয়, তাহলে তা উন্নতিকে বাধা দেয় এবং সৃষ্টিশীল ক্ষমতার বিকাশকে আটকে রাখে । 


অভ্যাস-৩৭২ ▌সন্দেহ ও অবিশ্বাস 

অবিশ্বাস ব্যর্থতার জন্ম দেয়। অবিশ্বাস হলো নেতিবাচক শক্তি । মন যখন কোনো বিষয়ে অবিশ্বাস বা সন্দেহ  আসে, তখন সেই অবিশ্বাসকে সমর্থন করার জন্য মন যুক্তি টেনে নিয়ে আসে। সন্দেহ, অবিশ্বাস- ব্যর্থ হওয়া এসব মনের অবচেতন ইচ্ছা। 'ঠিক আছে, আমি একবার চেষ্টা করে দেখি, কিন্তু মনে হয় না তাতে কোনো ফল হবে' –এই মনোভাবই ব্যর্থতার জন্ম দেয় । 


অভ্যাস-৩৭৩ ▌কাজকে আপনার জীবনের সঙ্গে বেঁধে নিন । 

যে কাজ আপনার জীবনের সঙ্গে জড়ানো, সে কাজ আপনাকে সামনের দিকে টেনে নিয়ে যাবে, অন্যথায় কাজকে আপনার টেনে নিয়ে যেতে হবে । ব্যাপারটা হলো— মটরগাড়ি ও যাত্রীর মতো । মোটরগাড়ি যাত্রীকে টেনে তার লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়, কিন্তু বিকল মটরকে টানতে হয় যাত্রীকে । যে কাজ একজন লোক করতে গিয়ে মহা ঝামেলা বাঁধিয়ে ফেলে আবার সে কাজটি আরেকজন গাল-গল্প করতে করতে অনায়সে করে ফেলে।  যদিও প্রতিটি মানুষের সকল কাজের কম-বেশী যোগ্যতা থাকে, তবুও একজন মানুষের এক একটি কাজের বিশেষ যোগ্যতা থাকে । যে বিষয়ে বা কাজে তার ঐ যোগ্যতাটি নেই, সে কাজটি তার কাছে জটিল ও সমস্যা বহুল । মোট কথা হলঃ কোনো কাজ কঠিন নয়, ঐ কাজের জন্য যে দক্ষতা, কৌশল প্রয়োজন- তা না থাকলেই কঠিন বা জটিল হয়ে দাঁড়ায়। কাজ করার পদ্ধতি আয়ত্ত করতে পারলে কোনো কাজই কঠিন নয় । 


অভ্যাস-৩৭৪ ▌আত্মঘাতি কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকুন।

কাজ করতে করতে সহসা কেন জেদের বশে কাজটি নষ্ট করা আত্মঘাতিক কাজ । কোনো ছোট কথায় আহত হয়ে নিজের মহান দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে সরে দাঁড়ানো আত্মঘাতি কাজ । ভুল বুঝাবুঝির ফলে কাজ পণ্ড করে ফেলাটাও আত্মঘাতি কাজ । আত্মঘাতি কাজ কেবল আমাদের নিজের মনের শান্তিকেই বিনষ্ট করে না বরং তা আত্ম-উন্নতির পথেও অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। কাজেই সব ধরনের আখ্যাতি কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। জেদের বশে বা রাগে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে কখনো নিজের পায়ে কুড়াল মারবেন না । 


অভ্যাস-৩৭৫ ▌  ভালো কিছু সৃষ্টি করতে উদ্যোগী হতে হবে।

আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ অশিক্ষিত এবং প্রাচীন পন্থী। এজন্যই অন্যান্য জাতির নিকট আমরা ঘৃণিত, উপেক্ষিত। দেশের সব ক্ষেত্রেই বিশৃঙ্খলা, অসন্তোষ ও দুর্নীতি বিরাজ করছে। শিক্ষাব্যবস্থারও একই দশা। উন্নত রাষ্ট্রের ছাত্রছাত্রীরা শুধু পাঠ্যপুস্তক অধ্যায়নে তাদের মুল্যবান সময় নষ্ট করে না, তারা স্বাধীনভাবে জীবিকা অর্জনের জন্য বাস্তব জ্ঞান ও কারিগরী শিক্ষা লাভে সর্বদাই তৎপর থাকে । শিক্ষা লাভের সঙ্গে সঙ্গে তারা কৃষিক্ষেত, কল-কারখানা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে কায়িক পরিশ্রম করে । পরমুখাপেক্ষী বা পর প্রত্যাশী হওয়া তারা নিতান্ত ঘৃণা মনে করে ।  আমাদেরও উন্নত রাষ্ট্রের অনুকরণে কার্মদক্ষতা  অর্জন করতে হবে, কিছু সৃষ্টি করতে উদ্যোগী হতে হবে । ভেজাল ও ফাঁকি দিয়ে আমরা কিছু সৃষ্টি করতে চাই বলেই আমাদের তৈরী জিনিস ভাল হতে পারে- একথা কেউ বিশ্বাস করতে চায় না । কোনো জিনিস মেড-ইন জাপান, জার্মান,দেখলেই তা চার- পাঁচ গুণ দাম দিয়ে কিনতে একটুও দ্বিধাবোধ  করি না । এই ধারা থেকে বেরিয়ে ভালো কিছু সৃষ্টি করতে উদ্যোগী হতে হবে।


অভ্যাস-৩৭৬ ▌  ক্রমাগত ত্রুটি সংশোধন করে অসীম ধৈর্য্য ও প্রচন্ড উদ্যমী হয়ে কাজ করতে হবে।

বিজ্ঞানী নিউটন সুদীর্ঘ বারো বছর কঠোর পরিশ্রম করে ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুয়াস থিউরী রচনা করেছিলেন। কিন্তু একবার তার পোষা কুকুরটি টেবিলের উপর লাফ দেওয়াতে হারিকেনটি উল্টে যাওয়ার তার গবেষণালব্দ মূল্যবান থিউরীর পান্ডুলিপিটা পুড়ে যায় । কিন্তু তাতে নিউটন একটুও দমেননি, মানসিক ভারসাম্য হারাননি । তিনি শুধু কুকুরটিকে আদর করে বললেন— দুষ্ট, তুই যে আমার কী ক্ষতি করেছিস তা যদি বুঝতি, তাহলে এভাবে আদর পাওয়ার জন্য লেজ নাড়তি না । এটুকু বলে তিনি কাগজ কলম নিয়ে পুনরায় থিউরী লেখা শুরু করলেন । তার বারো বছরের সাধনা এক মিনিটে ধ্বংস হয়ে যাবার পরও আবার থিউরী রচনা করতে পেরেছিলেন- অসীম ধৈর্য্য ও প্রচন্ড উদ্যম থাকার জন্য । অনেকে বলেন যে, চেষ্টার দ্বারাই মানুষ জয় করতে পারে । কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়, বাধা সরিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনার মূলে সত্যটি হচ্ছে- ক্রমাগত ত্রুটি সংশোধনে মনোযোগী না হলে এজন্য ফলাফল কোনো পরিবর্তন হয় না । ব্যর্থ হবার পরবর্তীতে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা কোথায় । 

 

অভ্যাস-৩৭৭ ▌ নেতিবাচক মনোভাব মন থেকে দূর করুন। 

নেপোলিয়ান বলেছিলেন- কাজ বা সমস্যা যত জটিল ও বিশাল হউক- তা অসম্ভাব বলে আমি স্বীকার করি না । কারণ অসম্ভব শব্দটা আমার অভিধানে নেই। স্কটল্যান্ডের রাজা রবাট বুম ও মাকড়াসার গল্প আনেকের জানা। রাজা বুম একবার, দু'বার নয়, পর পর ছয় বার নিজ দেশ স্বাধীন করার জন্য ইংল্যান্ডের রাজা এডওয়ার্ডের সাথে যুদ্ধ করেন । কিন্তু একবারও জয়লাভ করতে পারেননি । ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে তিনি যখন ধ্যানমগ্ন হয়ে রইলেন, ঠিক সেই সময় দেখলেন একটা মাকড়সা পর পর সাতবার চেষ্টা করার পর দু'টি কাঠের মধ্যে সুতা জড়াতে সমর্থ হয়েছে। এ ঘটনা দেখে রাজা ব্রুসের মন অদম্য উৎসাহে ভরে গেল। সে বিপুল বিক্রমে পুনরায় অভিযান পরিচালনা করে জয় লাভ করেন । সুতরাং নেতিবাচক মনোভাব মন থেকে দূর করুন।


অভ্যাস-৩৭৮ ▌ ইচ্ছা থাকলে উপায় হবেই। 

মানুষের সাধ-স্বপ্ন, তার ইচ্ছে শক্তিকে জ্বালিয়ে তোলে । যার আশা-আকাঙ্খা যতো বেশি প্রকট, তার ইচ্ছে শক্তিও ততোটা প্রবল । যে কোন বড় সৃষ্টিশীল কাজগুলো আসে বড় বড় স্বপ্ন আশা-আকাঙ্খা থেকেই । সহজ কথায়— আপনার কোনো একটি কাজ দশ দিনে শেষ হবে, না পাঁচ দিনে শেষ হবে, সেটা নির্ভর করবে - সেই কাজটির প্রতি আপনার ইচ্ছা শক্তি কি পরিমাণ কাজ করছে সেটার উপর । প্রবল ইচ্ছা শক্তি আপনাকে দ্রুত সাফল্য এনে দেবে । কাজে যত বাধাই থাকুক, দৃঢ় ইচ্ছা থাকলে উপায় একটা হবেই । যদি আপনার জোরালো ইচ্ছা থাকে যে, আপনি অমুক হবেন, তাহলে আপনি অর্ধেক এগিয়ে গেছেন । বাকী অর্ধেক নির্ভর করবে আপনার অধ্যবসায় ও সাধনার উপর । কাজটি ধরে থাকুন, দেখবেন ক্রমশঃ আপনার শক্তি ও সুবিধা বেড়ে যাবে এবং তা বাড়তে থাকবে। যদি প্রথম প্রথম ব্যর্থ মনোরথও হন, তবে পরাংমুখ হবেন না - কাজের খুঁতগুলি খুঁজে বের করুন এবং সংশোধন করুন । তারপর পুনরায় এগুতে থাকুন । মনে রাখবেন, ব্যর্থতা আসে সফলতার সঙ্গে সঙ্গে ছায়ার মতো । সাফল্যের চেষ্টা করে যাবেন অথচ ব্যর্থ হবেন না, এরকম আশা করা শুধু বালক সুলভই নয়, রীতিমতো অন্যায়। ব্যর্থতাকে স্বীকার করে নেওয়ার মতো মনের জোর থাকা দরকার । 

মোট কথা হল - কোনো কাজে যদি আপনার জোরালো ইচ্ছা শক্তি কাজ করে থাকে, তাহলে আপনি সফল হবেন । 


অভ্যাস-৩৭৯ ▌লজ্জা সংকোচ ত্যাগ করুন

লজ্জায় পড়ে অজ্ঞতাকে লুকিয়ে না রেখে সব সময় যে কোন উপায়ে তা জানতে চেষ্টা করা উচিত । কাজে ভুল ধরা পড়লে তার উপর অসন্তুষ্ট না হয়ে ধন্যবাদ জানান । মনে রাখবেন, যে ব্যক্তি প্রশ্ন করে কিছু জানতে চায়, সে বোকা থাকে পাঁচ মিনিটের জন্য, আর যে জানার ভান করে কখনো প্রশ্ন করে না, সে বোকা থাকে সারা জীবন । কাজেই লজ্জা-সংকোচ ত্যাগ করুন, নয়তো অনেক কিছু আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যাবে । মানসিক অশান্তিগ্রস্ত লোকেরা অনেক সময় মনে হয় যে, সে অবহেলিত, ঘূর্ণিত । কেউ তাকে দাম দেয় না । এই ধারণা কাল্পনিক । অপর সকলের কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে না নিয়ে সকলের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া সুস্থ সজিব মনের লক্ষণ । 


অভ্যাস-৩৮০ ▌উদ্ভাবনী শক্তি  কাজে লাগান।

অনেক সময় জরুরি মুহূর্তে কাজের সময় হাতের কাছে প্রয়োজনীয় উপকরণ পাবেন না । সে সময় আপনার উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমস্যাটা সমাধান করতে চেষ্টা করুন । মনে রাখবেন, প্রত্যেক সমস্যার বিকল্প সমাধান অবশ্যই লুপ্ত থাকে। উদ্ভাবনী শক্তির মাধ্যমে তাকে খুঁজে বের করুন । বিজ্ঞানীরা বলেন— ভ্রমরের শরীর বেশ ভারী; কিন্তু সে তুলনায় ডানার বিস্তৃতি অনেক কম । বায়ু গতিশাস্ত্র অনুসারে ভ্রমরের উড়তে পারার কথা নয় । কিন্তু ভ্রমর এই তত্ত্ব জানে না। সে দিব্যি উড়ে বেড়ায় । মানুষ সীমাবদ্ধতার ধারণাও নিজেই তৈরী করে । 


অভ্যাস-৩৮১ ▌তর্ক এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ

প্রত্যেক মানুষই নিজের জ্ঞান, ধারণা এবং মতকে নির্ভুল এবং বড় মনে করে। মানুষ তার চিন্তা, বিশ্বাস ও ধারণাকে সত্য ও নির্ভুল হিসাবে প্রমাণ করার জন্য অপরের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়। আসলে তর্কে লিপ্ত হওয়া নির্বোধের কাজ। প্রতিপক্ষ যদি বুঝতেও পারে যে, তার তথ্য ভুল তবুও তার মন সেটাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারবে না। নিজের মত-বিশ্বাস-চিন্তা বা ধারণা পরাজিত হওয়ায় তার ব্যক্তিস্বাতন্ত্রে আঘাত লাগে। ফলে তার মন বিরোধিতায় ভরে উঠে। এক্ষেত্রে নিজের তথ্য সঠিক এবং নির্ভুল হলেও ভুল বলে স্বীকার করে নেওয়া, কিংবা কৌতুক করে হেসে প্রসঙ্গ পাল্টানো বা কৌশলে তর্ক এড়িয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ । সোজা কথা : কারো কোনো কথা-কাজ-মত কিংবা সিদ্ধান্তের সাথে যদি আপনি একমত হতে না পারেন- তবে সেজন্য তার মুখের উপর জবাব দেবেন না। অন্যের ্মতকে গুরুত্ব দিয়েও কথা বলা যায় । কাজ করা যায় । 


অভ্যাস-৩৮২ ▌ স্বাধীনতা উন্নতির সহায়ক।

যারা বাল্যকালে স্নেহ- ভালবাসা কম পায়, বাল্যে যাদের কেউ পছন্দ করেনি, তারা আনেক সময় বড় হয়ে ভীতু হয় এবং পরাজিত মনোবৃত্তি লাভ করে । এরা তিলকে তাল করে দেখে ৷ বাল্যে স্নেহ-ভালবাসা পেলে সে মানুষকে বিশ্বাস করতে শিখে । যে সব পরিবারের পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদেরকে নিজের পথ নিজেকে চিনে নিতে বলে এবং উৎসাহ দেন, নিজেদের খেয়াল খুশী মত গড়ে উঠতে প্রেরণা যোগান, প্রতিযোগিতা মূলক মনোভাব তৈরি করতে সহয়তা করেন, সে সব ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে জয় করতে পারে । আর যে সব বাবা-মা ছেলে-মেয়েদের করা নিড়াপত্তার মধ্যে রাখেন, সব কিছু পিতামাতার অনুমতি নিয়ে করতে বলেন । ছেলে মেয়েদের নিজস্ব মতামতকে প্রশ্রয় না দিয়ে তাদের ইচ্ছা ও মতকে চাপিয়ে দেন, সে সব ছেলে মেয়েরা বড় হয়ে ভিতু দুঃচিন্তাগ্রস্ত ও অপ্রকৃতিয়স্থ হয় । ,মোট কথা: স্বাধীনতাতেই উন্নতি। নির্মল বাতাস কেমন স্বাধীন, কোন বাধা নেই, হু হু করে প্রবাহিত হয় কিন্তু উহাকে আবদ্ধ করুন, দূষিত হয়ে যাবে । স্রোতের পানি কেমন স্বচ্ছ উহার গতিপথ বন্ধ করুন, পছে পুকুরের পানি মানে দুর্গন্ধ হবে । সুতরাং সিদ্ধান্ত হল -  কারো স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবেন না, তাকে নিজের মত বেড়ে উঠতে উৎসাহিত করুন । 

 

অভ্যাস-৩৮৩ ▌ অলস্য হলো যাবতীয় ব্যর্থতার মূল 

কথায় বলে- অলস ও কর্মবিমুখ জীবন সর্বদাই পতন মুখ । কর্মহীন জীবন হতাশার কাফনে জড়ানো একটা জীবন্ত লাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। সামাজ ও রাষ্ট্রে যে যতটা চেষ্টা করলে দেখা যাবে--তারা কর্মের বিনিময় ছাড়া আর কিছুই পাননি । জজ ইলিয়াট বলেছেন-আমরা আমাদের কর্মকে যতটা নির্ধারণ করি, আমাদের কর্মও ঠিক ততটাই আমাদের নির্ধারণ করে থাকে । অলসতা একটি বদ অভ্যাস । নিজের অজান্তেই মানুষ এ অভ্যাসের দাস হয়ে পড়ে । যারা কাজ করেন না, কাজ করতে তাদের খারাপ লাগে । আবার যারা কর্মচঞ্চল, তারা কাজ ছাড়া বসে থাকতে পারেন না । যদি সে আলস্যের শিকার হন তাহলে বুঝতে হবে যে, তার অলস্য এসেছে শারীরিক বা মানসিক কোন গন্ডগোল থেকে । দীর্ঘদিন বা দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত কাজ করার ফলে এক ধরনের অবসাদ ও অলস্য আসতে পারে। এর থেকে বাঁচার উপায় হল কাজের মাঝে বিশ্রাম নেবার কৌশল রপ্ত করা । 

অভ্যাস-৩৮৪ ▌ প্রতিভা বলতে কিছু নেই । প্রতিভার অপর নাম হলো পরিশ্রম

প্রতিভা সম্পন্ন সকল লোকের মধ্যে যে-সব গুণ থাকে, তৎমধ্যে প্রধান গুণটি হল যে, কোন একটি কাজ বা চিন্তায় সমস্ত মন-প্রাণ ঢেলে দিয়ে নিবিষ্ট মনে কাজ করার ক্ষমতা এদের সকলের মধ্যে দেখা যায়। পৃথিবীর আর সবকিছু ভুলে গিয়ে নিজের কাজে এই তন্ময় হবার বা মনযোগ দেওয়ার ক্ষমতা আছে বলে এদের পক্ষে বিরাট কর্মের আবিষ্কার সম্ভব হয়। এডিসনের ভাষায়— সাধনা করে যাও । তাহলে প্রতিভাকে অগ্রাহ্য করতে পারবে । নিউটন বলেন, আমার আবিষ্কারের কারণ আমার প্রতিভা নয়, বহু বছরের চিন্তাশীলতা ও কঠোর পরিশ্রমের ফল । বালটোনের ভাষায়— আমাকে লোকে প্রতিভাবান বলে কিন্তু আমি পরিশ্রম ছাড়া আর কিছুই জানি না । কাজেই, সিদ্ধান্ত এই— প্রতিভার অপর নাম হলো পরিশ্রম । 


অভ্যাস-৩৮৫ ▌ ব্যক্তিত্বকে ছোট করতে পারে এমন কাজ থেকে বিরত থাকুন।

মানুষের জ্ঞান, বিশ্বাস, আচার আচরণ, রুচি, অভ্যাস ইত্যাদি মিলিয়ে তার ব্যক্তিত্ব। যাদের মধ্যে মানবিক গুণের চেয়ে পাশবিক গুণ বেশি অর্থাৎ যারা চরিত্রহীন তাদেরকে ব্যক্তিত্বহীন বল যায়। ‘অ্যাড লারের' মতে, ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। ব্যক্তির প্রধান উপাদান হচ্ছে তার চরিত্র। কুপরিবেশকে জয় করে যদি চরিত্রকে অক্ষত রাখা যায়, সেখানে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব সুন্দর হয়ে ফুটে উঠে । চরিত্র বলতে বুঝায় মানবীয় ও নৈতিক গুনাবলী সমৃদ্ধ আচার-ব্যবহার চাল-চলন। ব্যক্তির মূল উৎস হচ্ছে মানসিকতা । বুদ্ধি ও আবেগ দ্বারাই মানসিকতা গড়ে উঠে । মানসিকতা আবার নিয়ন্ত্রিত হয় জ্ঞান দ্বারা । জ্ঞান হচ্ছে ব্যক্তিত্বের মূল উপাদান । যার মধ্যে জ্ঞান আছে তার মধ্যে ব্যক্তিত্ব অবশ্যই থাকবে । একারণে ব্যক্তিত্বকে সুন্দর করতে হলে জ্ঞানের সাধনা করা প্রয়োজন । 

 

অভ্যাস-৩৮৬ ▌বক্তব্য ততই প্রাঞ্জল হবে, বলার ক্ষেত্রে মনের সাহস যতই বেশি থাকবে ।   

মনে রাখবেন, কে কতটা ভাল বক্তা, সেটা বিচার করা যায়— শ্রোতা সম্পর্কে কতটা ভয়- ভীতি ও সংকোচ কাটাতে পেরেছে তার ভিত্তিতে । প্রথমে কোনো বিষয় নির্বাচন করুন, তারপর সে-বিষয়ে যত বেশী পারেন পড়াশুনা করুন এবং ভাবুন । যত বেশি জানবেন, ততবেশী ভাল বলতে পারবেন।  বক্তব্যের সময় শ্রোতার সঙ্গে মত বিনিময় করুন। এতে তাদের মতামতকে দাম দেওয়া হবে। যে বিষয় তারা জানতে আগ্রহী, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলুন । শ্রোতারা কতটা আগ্রহের সঙ্গে বক্তব্যে শুনছে, তা লক্ষ্য করুন । মনে রাখবেন, বক্তা যদি নিজের কথাতেই নিজে প্রভাবিত না হয়, তাহলে শ্রোতা কিছুতেই প্রভাবিত হবে না । ভাল বক্তার প্রথম কাজ হলো— প্রথমে এমন কিছু বলা, যা শ্রোতার মনে তৎক্ষণাৎ আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে । 

 

অভ্যাস-৩৮৭ ▌বিভিন্ন স্মরণীয় ঘটনা এবং প্রাসঙ্গিক ঘটনা থেকে উদাহরণ টেনে বক্তব্য রাখুন । 

কথা বলার শুরুতে প্রাণ ভরে পুরোদমে মুক্ত বাতাস টেনে নিন। এতে শরীর হালকা লাগবে । প্রত্যেক কথা শুরু করার আগে এবং শেষ হলে কয়েক মুহূর্তে থেমে থাকুন । এতে কথাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে শ্রোতার মনে আলাদা আসন করে নেবে । কথা হবে কম অথচ বেশি প্রভাবশালী শব্দে সমৃদ্ধি হওয়া চাই । ছোট ছোট উদ্ধৃতি, প্রবাদ প্রবচন, বাণী এবং হাস্যকর সংলাপযুক্ত করে বক্তব্যকে নাট্যরসে সমৃদ্ধি করে তুলুন । গলার সুর ও প্রকাশভঙ্গী উঠানামা করুন। গুরুত্ব অনুসারে শব্দের ওপর জোর বাড়ান-কমান । সুন্দর গল্প, স্মৃতি, অভিজ্ঞতা গুছিয়ে বললে চমৎকার ফল পাবেন । বক্তব্যের বিষয়ের সঙ্গে সাদৃশ্যমূলক উপমা দিন । 


অভ্যাস-৩৮৮ ▌কৃতজ্ঞতা নয় অকৃতজ্ঞতাই আশা করেন 

উপকারীর নিকট সব সময় কৃতজ্ঞ থাকুন কিন্তু পরের উপকার করে আপনি তা মনে রাখবেন না । কৃতজ্ঞতা পাওয়ার আশায় কোনো কিছু করা বা দেওয়া উচিত নয়, বরং দেবার আনন্দেই দেয়া উচিত । উপকারীর কাছে অকৃতজ্ঞতাই আশা করেন এবং তা না পেলে নিরাশ হয়ে পড়েন এটা উচিত নয়। অপরের কাছ থেকে যত কম আশা করা যায়, হতাশাও তত কমে যাবে । 

 

অভ্যাস-৩৮৯ ▌ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে অন্যের হৃদয় জয় করার শক্তিশালী অস্ত্র।

যখনই বুঝবেন যে, আপনি কোনো ভুল করে ফেলেছেন অথবা আপনার ব্যবহারে কেউ দুঃখ পেয়েছে— তখনই সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নিবেন । 

সরি, একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ সভ্য মানুষের কাছে । অপরাধের মাত্রা যত বড়ই হউক, অনুতপ্ত হয়ে সরি বললে সভ্য মানুষেরা সেটাকে অনুচুচনামূলক শাস্তি হিসাবেই দেখে । মনে রাখবেন, নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া হচ্ছে অন্যের হৃদয় জয় করার একটি শক্তিশালী অস্ত্র । 

 

অভ্যাস-৩৯০ ▌প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কারো কোনো সমালোচনা করবেন না।

সমালোচনা হচ্ছে পোষা পায়রার মতো, তাকে যেখানে যত দূরে ছেড়ে দেয়া হোক, ঠিক নিজের ঘরে ফিরে আসবেই। সহজ কথায়, আপনি যতটুকু অপরের সমালোচনা করবেন নিজেই (প্রকাশ্যে-গোপনে) ততটুকু অপরের সমালোচনার সম্মুখীন হবেন । নিজের দোষ ত্রুটির সমালোচনা করতে শিখুন । অযথা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা ভাল । যার বাসায় সাদা-কালো টিভি আছে, তাকে রঙ্গিন টিভির গুণ বর্ণনা ঠিক নয় । এক কথায়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কারো কোনো বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করবেন না । কিংবা অপেক্ষাকৃত উন্নত কিছুর সাথে তুলনা করবেন না । 

কাউকে যদি কথা দিতে হয়, তবে খুব ভেবে-চিন্তে কথা দিন। কথা দিয়ে কথা যেন রাখতে পারেন সেদিকে যতেষ্ট খেয়াল রাখবেন। সভা-অনুষ্ঠানে সময় মতো উপস্থিত হউন । হেলে দুলে দেরি করে যাবেন কিংবা তাড়াহুড়া করে চলে যাবেন দু'ঘন্টা আগে-- -তা ঠিক নয় । 

 

অভ্যাস-৩৯১ ▌ যে ভদ্র, কথায় সে নম্র 

কোন বিশেষ অবস্থায় একটি লোক কোমন ব্যবহার করবে তা বুঝতে হলে-তার স্বভাব ছাড়াও তার উদ্দেশ্য ও অভিজ্ঞতা বুঝতে হবে । লোকের সাথে চলতে গিয়ে প্রথমেই দেখতে হবে আপনাকে সাহায্য-সহযোগিতা ও সৌজন্যমুলক ব্যবহারের পিছনে তার স্বার্থ কি। শুধু নিজের লাভের হিসাবে করবেন না। বরং উভয়ের স্বার্থ বিবেচনা করতে হবে। যাতে উভয়ের দ্বারা উভয়ের উপকার হয়। মনে রাখবেন, অপরের সমস্যা সমাধানের দ্বারাই নিজের উন্নতি সাধন করা যায় । স্বার্থপর লোভী ব্যক্তি বোকা ছাড়া কিছুই নয় । ভোগ নয়, ত্যাগেই সুখ। ত্যাগ মানে বর্জন নয় বরং বড় কিছুকে পাওয়া বা চাওয়ারই প্রমাণ বহন করে ত্যাগ। ফুল ফলে পরিণত হয় তার সুন্দর পাপড়ীকে ঝরিয়ে দিয়ে । 

মোট কথা হলো— আপনার জনপ্রিয়তা, আপনার সুখ নির্ভর করবে আপনি কেমন করে লোকদের সাথে ব্যবহার করেন তার উপর । অন্যকে যারা প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান করে, কেবল তারাই প্রাপ্য সম্মান ও মর্যাদা পেয়ে থাকেন । ব্যাপারটা ঠিক আয়নার মতো । আপনি আয়নার মধ্যে নিজের হাসিমুখ দেখতে চাইলে অবশ্যই নিজের মুখটা হাসি দিয়ে ভরতে হবে। অন্যের কাছ থেকে যে-রকম ব্যবহার আশা করেন না, ভুলেও অন্যের সঙ্গে সেরকম ব্যবহার করবেন না ।  

 

 অভ্যাস-৩৯২ ▌ স্বভাবের গঠবের মূল ক্ষেত্র হল পরিবার ও পরিবেশ। 

প্রত্যেক মানুষের চরিত্রে কতগুলি প্রধান গুণ ও স্বভাব থাকে । যেমন- কেউ মন খোলা, সদা প্রফুল্ল আবার কেউ চটপটে, বাস্তববাদী আবার কেউ বিনয়ী, মিশুক আবার কেউ লাজুক, আত্মকেন্দ্রিক। আবার কেউ বোকা, কল্পনাবাদী। কেউ অস্থিরমনা কেউবা খুতখুতে, কেউ হিংসুটে, কেউ নারীকামী, কেউ নারীতে অনাসক্ত । এরিস্টটল, গল প্রমুখ দার্শনিকরা বলেছেন— মুখের আকৃতি, মাথার ভেতরের ও বাইরের গঠন  ইত্যাদির সাথে মন মানসিকতা ও ব্যক্তিত্বের যোগ আছে । এজন্য বলা হয় যে, মুখ হচ্ছে মনের আয়না । কারণ মুখের মধ্যেই পাঁচ ইন্দ্রিয়ের অবস্থান রয়েছে । অবশ্য স্বভাবের সবচেয়ে ভাল গঠন ক্ষেত্র হল পরিবার ও পরিবেশ। যোগ্য পরিবারের বোকা ছেলে আর বোকা পরিবারের বোকা ছেলে হওয়া এক কথা নয় । দু'জনের দু'ধরনের ব্যক্তিত্ব হবে । 

 

অভ্যাস-৩৯৩ ▌ কাউকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য বা হেয় করবেন না।

প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাউকে এমন কোন মন্তব্য করতে যাবেন না-- যা অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করে । তার কোনো অদক্ষতা বা অক্ষমতার প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন না। কারণ এই আচরণ দ্বারা আপনি শুধু তাকে আঘাতই করবেন- যদিও সে কিছুই মনে না করার ভান করতে পারে । এমনভাবে দ্বিতীয় কারো সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় করবেন না, যাতে তৃতীয়জন ভাবতে পারেন, তাকে নিয়ে হাসি তামাসা বা টিপন্নি কাটা হচ্ছে । অন্যের সঙ্গে ফিসফিস করে বা ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলবেন না— যা তৃতীয় পক্ষে বোধগাম্য নয়, আর মাত্র একজনের সঙ্গে কথা বলবেন না । 


অভ্যাস-৩৯৪ ▌ নিজে থেকে না বললে কাউকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করবেন না।

কোন গল্প হাসির টিপ্পনি যদি বলেন, তা হওয়া চাই সংক্ষিপ্ত, অথচ জোরালো এবং চিত্ত আকর্ষক। যদি অপর কেউ কোন কৌতুক-রহস্যের অবতারণা করেন, সেটা আপনার জানা থাকলেও তা অপরকে বলতে বাধা দেবেন না বরং খুব উৎসাহ নিয়ে শুনবেন এবং প্রয়োজন মতো অভিনয় করে মুখের রং পাল্টাবেন । কিছুতেই তাকে বুঝতে দেবেন না যে, গল্পটা আপনি আগে থেকে জানতেন । অপরের দুর্বলতায় খোচা দিবেন না । যে কথা বা যে কাজ অন্যজনে দেখাতে চায় না, সে কথা ও কাজের প্রতি উৎসাহী হবেন না । মনে রাখবেন- প্রতিটি মানুষই চাঁদের মতো-যার একটা অন্ধকার দিক আছে । সে দিক সে কাউকে দেখাতে চায় না । 

 

অভ্যাস-৩৯৫ ▌ মনোযোগী হয়ে অন্যের কথা শুনুন।

মনোযোগী শ্রোতা পেলে সবাই আরামবোধ করে । কারণ মানুষ নিজেই মনের ভার অন্য মনে নামিয়ে দিয়ে হালকা হতে চায়। এ পৃথিবীর প্রায় সবাই বলনেওয়ালা, শোনার মানুষ নেই বললেই চলে। করণ সবজান্তা মনোভাব আমাদের রক্তে । জানার স্পৃহা যাদের, কেবল তারাই অন্যকে গুরুত্ব দেয় । তারা জানে, প্রতিটি মানুষের কাছে শেখার কিছু-না-কিছু আছে । তারা মৌমাছির মতো। মৌমাছি যেমন ফুলের বুকে হুল ফুটিয়ে মুধুটুকু সংগ্রহ করে— জ্ঞান প্রত্যাশী, উন্নতিকামী মানুষেরাও তেমনি মানোযোগী হয়ে প্রতিটি মানুষের জ্ঞান অভিজ্ঞতাকে সঞ্চয় করে এবং প্রয়োজন মত কাজে লাগায় । কাজেই অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তাকে নিজের সম্পর্কে বলতে উৎসাহিত করুন। কথার মাঝে কথা বলবেন না । যখন আপনার কিছু বলার থাকে না, তখন অবশ্যই চুপ করে থাকবেন। বিভিন্ন বিষয়ে অন্যের কাছে পরামর্শ চান এবং তার মতামত মনোযোগ দিয়ে শুনুন । 

 

অভ্যাস-৩৯৬ ▌ সবসময় হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করুণ।  

কথার বলে, সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। মুখের সৌন্দর্যের প্রথম এবং প্রধান উৎস হল স্নিগ্ধ হাসি । যে মুখ হাসতে জানে না, সে মুখ কখনো সুন্দর নয় । যে মন খুলে হাসতে পারে না, সে-ই হছে পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী ব্যক্তি। মাত্র সামান্য কিছু লোক আছেন, যারা ঘুম থেকে উঠে সুন্দর করে একটু মিষ্টি করে হাসেন কিন্তু বেশির ভাগ লোকই নাস্তা সারা পর্যন্ত মুখটাকে হাড়ি করে রাখেন । তারা জানেন না সুখ-শান্তি ও প্রভাব - প্রতিপত্তির মূল রহস্য হল মধুর স্বভাব, হাস্যউজ্জ্বল মুখ । দৈনন্দিন কাজে হাজারো বাধা-বিপত্তি আর ঝামেলাকে আপনি হাসিমুখে (রসিকতার মধ্য দিয়ে) দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারলে আপনার জীবন হয়ে উঠবে আরো আনন্দময় । পরিবেশটাও হবে ঝলমলে আনন্দমুখর । 

সদাহাস্য বিনম্রভাব ইচছা করলে কিন্তু রপ্ত করা যায় না। রপ্ত করার জিনিস হলো অনুশীলন । সদাহাস্য বিনম্র ভাবটা জন্মায় বিদ্যাবুদ্ধি আর জ্ঞান থেকে । আপনি যত নামজাদা ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষ হবেন, ততবেশী নম্র, মধুর ও জাগ্রত চিত্তের অধিকারী হবেন । মনে রাখবেন- একটি হাস্যউজ্জ্বল মুখ পৃথিবীর হাজারো দামী সুপারিশ পত্রের চেয়েও বেশি শক্তিশালী । 

 

অভ্যাস-৩৯৭ ▌  জিহ্বার উপর কড়া শাসন চালাতে হবে ।

ভালোবাসা ও আন্তরিকতা শেষ করতে কড়া বা রূঢ় ব্যবহার হচ্ছে ক্যানসারের মতো। যে দুর্বাক্য ব্যবহার করে সে কখনো কারো প্রিয় হয় না।  অন্যে যত বড় ক্ষতি কিংবা অন্যায় কাজ করুক না কেন, ভুলেও অভদ্র হতে যাবেন না । নিজেকে সংযত রাখুন মেজাজ ঠাণ্ডা রাখুন। তাহলে সবাই আপনার বশে থাকবে, সবাইকে শাসন করতে পারবেন। কোন কারণে আপনার মন ভাল না থাকলে কিংবা কারো কোন কথা বা ব্যবহার খারাপ লাগলে তা অন্যকে বুঝতে না দিয়ে হালকা মনে সহজভাবে কথা বলুন। আপনার মনে যতই উত্তেজনা আসুক না কেন আপনার আচরণে বা বাক্যে তা কিছুতেই প্রকাশ করবেন না । কোন অবস্থায় মন হঠাৎ উত্তেজিত হলে কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থাকুন- এতে মাথা ঠাণ্ডা হবার সুযোগ পাবে। ফলে যথার্থ পরিকল্পনা গ্রহণ করা যাবে । রাগের সময় অনেক অশোভন বেফাস কথাও মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে, আর বলেফেলা কথাটা ধনুকের ছুটে যাওয়া তীরের মতো- যা ফেরানো আর সম্ভব নয়। অথচ রাগের সময় সামান্য একটা মুখ ফসকানো কথাই সবনাশ ডেকে আনতে যথেষ্ট। ক্রোধকে দমন করার একমাত্র উপয় হলো- যা নিয়ে ক্রুদ্ধ হচ্ছেন তা হাস্যরসের তীক্ষ্ণ বাণীতে উপেক্ষা করুণ । দেখা যায় কাউকে গালি গালাজ দেওয়ার চেয়ে রসিয়ে দু'একটা সাধু বাক্যেই বেশি ঘায়েল করা যায় । 


  অভ্যাস-৩৯৮ ▌ কম কথা গুছিয়ে এমনভাবে বলুন যাতে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়। 

প্রবাদ আছে- কম চিন্তাশীল ব্যক্তিরাই অধিক কথা বলেন । সত্যিই, ব্যক্তিত্বহীন মানুষের একটাই মারাত্মক অভ্যাস, তা হল— অকারণে বকে যাওয়া। আলাপ শুরু করলে আর শেষ করতে চায় না । এরা অন্যের বিব্রতবোধ নিয়ে মাথা ঘামায় না । এটা কখনো ঠিক পাওয়া যায়। বেশি বলাতে যেমন বোকামী প্রকাশ পায়, তেমনি শ্রোতারও বিরক্ত হয় ।  হ্যাঁ এবং না এই শব্দ দু'টো যদিও ভাষার সবচেয়ে আদি ও ছোট শব্দ এবং সব সময় ব্যবহার করতে হয়, অথচ এই শব্দ দু'টো ব্যবহারের বেলায়ও অনেকক্ষণ ভাবতে হয় । কারণ শব্দের সঠিক ব্যবহারে আপনি যেমন বন্ধু লাভ করবেন, তেমনি শব্দের অযথা- অযোগ্য ব্যবহারে বাড়িয়ে তুলবেন শত্রু । মোট কথা হল - বাজে কথা এবং বেশি কথা চিন্তাকে ঘোলাটে এবং ব্যক্তিত্বকে হালকা করে দেয়। যারা সারাক্ষণ শুধু বকবক করে নিজের কথাই বলে চলেন এবং যারা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা বার বার বলেন, তাদের কেউ পছন্দ করে না । কাজেই কম কথা এমনভাবে গুছিয়ে বলতে হবে --যাতে আন্তরিকতার পরশ থাকবে । নইলে কোকিলকণ্ঠের মানুষটিও কাক বনে যাবে । 

 

অভ্যাস-৩৯৯ কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ স্মরণী মাথায় রাখুন-১

১. প্রিয়জনের কাছে মূল‍্যহীন হয়ে গেলে নিজে থেকেই সরে আসুন, ভিতরে সাময়িক যন্ত্রণা হলেও এটা অনেক সম্মানের।

২. যদি বুঝতে পারেন কেউ হতাশায় ভুগছে তাকে জ্ঞান বা উপদেশ দিতে যাবেন না। সে কি বলতে চায় সেটা শুনুন। এই সময় মানুষ উপদেশ শুনতে চায় না, সে চায় আগে তার ভেতরের কথাগুলো কেউ মন দিয়ে শুনুক।

৩. কাউকে অকারণে কষ্ট দেবেন না। এই মুহূর্তে আপনি যার সাথে ইচ্ছাকৃত অন্যায় করে নিজেকে জয়ী ভেবে বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন, মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছেন - সে হয়তো প্রতিবাদ করবে না, কিন্তু তার নীরবতা, কষ্ট থেকে উঠে আসা দীর্ঘশ্বাস আপনার সাথে বোঝাপড়াটা সঠিক সময়ে করে নেবে।

৪. অন্যের চোখে ভালো সাজার জন্য নিজের ভালোলাগাগুলো বিসর্জন দেবেন না। যে আপনাকে আপনার মতো করে গ্রহণ করতে পারে না, তার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার চেয়ে একা থাকাই ভালো। পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম সত্য হলো আপনার উপকারের কথা মানুষ বেশিদিন মনে রাখবে না। কার কাছে আপনি কতদিন গুরুত্ব পাবেন, সেটা নির্ভর করবে কার জন্য কতদিন কিছু একটা করার সামর্থ্য আপনার আছে তার ওপর।

৫. যা হাতছাড়া হয়ে গেছে তা নিয়ে কখনো আফসোস করবেন না।


অভ্যাস-৪কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ স্মরণী মাথায় রাখুন-২

১. বয়স, শিক্ষা, পদ বা পদবীর দিক দিয়ে কেউ ছোট হলেও কাউকে ছোট করে দেখবেন না, তাহলে আপনি ছোট হয়ে যাবেন।

২. নিজের অবস্থান নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের আত্মবিশ্বাসী বা অহংকারী হবেন না। কারণ সময় যখন বদলায় উত্তাল সাগরও শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে যায়।

৩. সমালোচনাকারীদের সাথে যুদ্ধে করে নিজের সময় ও শক্তির অপচয় করবেন না। নিজেকে উন্নত করুন, তারা এমনিতেই চুপ হয়ে যাবে।

৪. গাধার সাথে তর্ক করতে বা গাধাকে কিছু শেখাতে যাবেন না। গাধার পিঠে ঐশী কিতাব চাপালেও গাধা গাধাই থাকে। ভুল জায়গায় স্যাক্রিফাইস আর ভুল মানুষের সাথে কম্প্রোমাইজ আপনাকে না দিবে সুখ, না দিবে সফলতা।

৫. সন্তানের জন্য বেশি বেশি সম্পদ জমা না করে সন্তানকেই সম্পদ বানিয়ে ফেলুন। একজন আদর্শ সন্তান আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। জীবন মানেই বেশি আয় বা ভালো বেতনের চাকরি নয়। আপনার জানাশুনা অনেককেই পাবেন, যাদের জীবন সম্পর্কে জ্ঞান অসম্পূর্ন কিন্তু ঠিকই ভালো আয় কবছেন বা ভালো চাকরি পেয়েছেন।