ভালো ব্যাকটেরিয়া, পান্তা ভাত, টক দই, 'চ্যাঁপা', 'সিদল  শুঁটকি

প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে কোষ আছে গড়ে প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন। আর, অণুজীব আছে গড়ে প্রায় ৩৯ ট্রিলিয়ন! শরীরের এই অণুজীবের প্রায় ৮০–৯০ ভাগই বাস করে আপনার অন্ত্রে ! বাকিটা মুখগহ্বর, ত্বক, যোনি ইত্যাদি স্থানে। এগুলো প্রধানত- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাই, প্রোটোজোয়া এবং অন্যান্য অণুজীব। এই অণুজীবদের ৯০–৯৫ ভাগই হলো ব্যাকটেরিয়া! এদের মধ্যে কিছু আছে আপনার শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী! তারা সবরকম ক্ষতিকর অণুজীবকে কন্ট্রোলে রাখে, হজম, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, পুষ্টি শোষণ ইত্যাদিতে সাহায্য করে! কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রা, প্রসেসড ফুড, চিনি, অ্যান্টিবায়োটিক, ফার্মার ওষুধ, দূষণ ইত্যাদি এই ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমায়, আর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়। ফলে এটা পুরো শরীরের ইমিউন, হরমোন, মস্তিষ্ক, হজম ও বিপাক ক্রিয়াকে নষ্ট করতে পারে! তাই প্রোবায়োটিক ফুড কেতে হবে নিয়মিত। প্রোবায়োটিক ফুড মানে এমন সব খাবার যেগুলো তৈরি করার সময় তাতে প্রচুর জীবিত উপকারী ব্যাকটেরিয়া ও ইস্ট জন্মায় এবং খাবারে থেকে যায়। যেমন-- 


টক দই, বাড়িতে তৈরি টক দইয়ে জীবিত ভালো ব্যাকটেরিয়া বেশি থাকে।

- গাঁজানো আচার, লবণ-পানিতে ফারমেন্ট করে তৈরি আচার প্রোবায়োটিকে সমৃদ্ধ।

- ঘরে তৈরি ভিনেগার, আপেল সাইডার ভিনেগার প্রোবায়োটিক খরচ বাড়াতে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, কোলেস্টেরল কমাতে, ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়াতে এবং এমনকি ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। সর্বোত্তম সুবিধা পেতে, প্রতিদিন অল্প পরিমাণে খান বা সালাদ ড্রেসিং হিসাবে এটি ব্যবহার করুন।  

- ফারমেন্টেড সবজি,  বাঁধাকপি, টমেটো, শসা, গাজর, এবং রসুনের মতো অনেক সবজি ফার্মেন্ট করা যায়।  

- পান্তা ভাত, বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী ফারমেন্টেড ফুডে ল্যাকটিক অ্যাসিড ব্যাকটেরিয়া প্রচুর থাকে।

- কেফির, কেফির তৈরি হয় দুধ এবং কেফির দানা গাঁজন করার মাধ্যমে। এটি দেখতে ঘন এবং কিছুটা আঠালো দইয়ের মতো, কিন্তু এর স্বাদ দইয়ের চেয়ে বেশি টক ও হালকা ফিজি বা ঝাঁঝালো  

- ফারমেন্টেড আখের রস, আখের রসে খামির (yeast) যোগ করার মাধ্যমে করা হয়, যা আখের রসের প্রাকৃতিক চিনিকে অ্যালকোহল এবং অন্যান্য উপাদানে রূপান্তরিত করে। এর ফলে এটি একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় তৈরি করে যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হয়।  

- ঘরে তৈরি পনির, বিশেষ করে যেগুলো পাস্তুরাইজড নয়।

- কাঁচা দুধ,  গরু, ছাগল এবং ভেড়ার পনির, কাঁচা দুধ,  কাঁচা দুগ্ধজাত খাবার যা পাস্তুরাইজ করা হয়নি। 

- পনির, পনির সহজেই বাড়িতে নষ্ট দুধ থেকে তৈরি করা যেতে পারে, অথবা আপনি এটি দোকান থেকে কিনতে পারেন। 

- ফারমেন্টেড শুঁটকি, এক ধরনের বিশেষ প্রক্রিয়াজাত শুঁটকি যা সাধারণত 'চ্যাঁপা', 'সিদল', 'সিধল' বা 'হিদল' নামে পরিচিত। প্রচলিত শুঁটকিকে শুধু রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হলেও, এটি বিশেষ পদ্ধতিতে গাঁজন বা ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়, যেমন মলা, পুঁটি, বা টাকি মাছের সাথে কচু বা মানকচুর ডাঁটা মিশিয়ে। এটি বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় স্থানীয় খাদ্য।   


 সকালে খালি পেটে প্রোবায়োটিক ফুড খাওয়া সবচেয়ে উত্তম। খালি পেটে খেলে প্রোবায়োটিকস দ্রুত অন্ত্রে পৌঁছে যায়। কিংবা হালকা খাবার খাওয়ার ১৫–৩০ মিনিটের মধ্যে খাওয়া যেতে পারে।  প্রোবায়োটিক ফুড, যেমন দই, টক দই, পান্তা ভাত, কেফির, গাঁজানো সবজি ইত্যাদি ঠান্ডা অবস্থায় বা রুম টেম্পারেচারে খেতে হবে। একসাথে বেশি না খেয়ে প্রতিদিন অল্প পরিমাণে নিয়মিত খাওয়াই উত্তম।  পানি পর্যাপ্ত খেতে হবে, কারণ প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়ার কাজ করতে হাইড্রেশন লাগে। নতুন নতুন ২–৩ দিনে হালকা গ্যাস বা পেট ফাঁপা হতে পারে, এটা স্বাভাবিক।

প্রোবায়োটিক ফুড সবচেয়ে বেশি উপকার করে— অ্যান্টিবায়োটিক কোর্সের পর গাট ব্যাকটেরিয়া পুনর্গঠনের জন্য, হজমের সমস্যা থাকলে, যেমন গ্যাস, ফাঁপা, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, দুশ্চিন্তা, হতাশা, ঘুমের সমস্যা থাকলে,ত্বকের সমস্যা, এলার্জি থাকলে, বাচ্চা, বয়স্ক ও দুর্বল মানুষদের ক্ষেত্রে হজম ও রোগপ্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে।


প্রিবায়োটিকস সাধারণত ২ প্রকার- ফারমেন্টেবল ফাইবার ও রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ।

ফারমেন্টেবল ফাইবার সাধারণত ৩ প্রকার- বিটা গ্লুকান, ইনুলিন এবং পেকটিন।

এই অনুযায়ী প্রিবায়োটিক ফুডগুলোকে ৪টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়—

১। রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ সমৃদ্ধ খাবার

যেমন- সবুজ কলা, বাসি/ঠান্ডা ভাত, ঠান্ডা সেদ্ধ আলু, ঠান্ডা সেদ্ধ মিষ্টি আলু, ছোলা, মসুর, মুগ, মাষকলাই, ডাল, কাঁচা কাঁঠাল বীজ, ভুট্টা, ওটস, শস্যের গুঁড়ার ঠান্ডা জাউ ইত্যাদি।

২। বিটা গ্লুকান সমৃদ্ধ খাবার

যেমন- যব, ওটস, গম, রাই, বাজরা, ভুট্টা, তিসি, চিয়া বীজ, রাগি, সরঘাম, ছোলা ইত্যাদি।

৩। ইনুলিন সমৃদ্ধ খাবার

যেমন- রসুন, পেঁয়াজ, ছোট পেঁয়াজ, দেশি পেঁয়াজপাতা, ঢেঁড়স, বাঁধাকপি, মিষ্টি কুমড়া, মুগডাল, মসুরডাল, কাঁচা কলা ইত্যাদি।

৪। পেকটিন সমৃদ্ধ খাবার

যেমন- আপেল, পেয়ারা, পাকা পেঁপে, কাঁচা আম, বেল, আমলকি, টমেটো, গাজর, বিটরুট, পীচ, এপ্রিকট, তরমুজের সাদা অংশ, আনারস, কমলা, বাতাবি লেবু ইত্যাদি।


এসব খাবারের প্রিবায়োটিক উপাদানগুলো (যেমন ইনুলিন, পেকটিন, রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ) ভুল রান্নার ধরণে নষ্ট হতে পারে।  

- কাঁচা বা হালকা রান্না করে খেতে হবে। অতিরিক্ত গরম করলে প্রিবায়োটিক ফাইবার নষ্ট হয়! রসুন, পেঁয়াজ, পেঁয়াজপাতা, পেয়ারা, আপেল, পেঁপে, টমেটো ইত্যাদি কাঁচা বা হালকা রান্না করে খেলে ইনুলিন ও পেকটিন নষ্ট হয় না।

- পেকটিন সবচেয়ে বেশি থাকে ফলের খোসা, বীজের আশেপাশের অংশ ও হালকা কাঁচা অবস্থায়। তাই ফল খোসাসহ এবং কাঁচা অবস্থায় খেলে বেশি উপকার মেলে।

- সিদ্ধ ভাত, আলু, মিষ্টি আলু ঠান্ডা করলে রেজিস্ট্যান্ট স্টার্চ তৈরি হয়। রাতভর ফ্রিজে রেখে ভাত বা আলু খেলে খুবই উত্তম।

- টকদই, কেফির, কিমচি, সাওয়ারক্রাউট এগুলোতে প্রোবায়োটিক থাকে। প্রিবায়োটিক খাবার প্রোবায়োটিক খাবারের সঙ্গে মিশালে হয় সিনবায়োটিক কম্বিনেশন। তখন তা খুবই উত্তম খাবার হয়। যেমন- যবের ছাতু + টকদই + কাঁচা মধু; টকদই + কলা + ওটস; টকদই + পেঁয়াজ + টমেটো সালাদ; খেজুর + কলা + কেফির ইত্যাদি।

- রিফাইন্ড চিনি, রিফাইন্ড তেল, রিফাইন্ড নুন সম্পূর্ণ বাদ দিতে হবে! এগুলো ভাল ব্যাকটেরিয়াদের গণহত্যা করে! নয়তো আপনার প্রিবায়োটিকস খাওয়াই বৃথা!



চিয়া সিড - প্রাকৃতিক শক্তির ভান্ডার 


চিয়া সিড (Chia Seeds) ছোট আকারের হলেও এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও শক্তিবর্ধক খাদ্য। নিচে বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো—

চিয়া সিডে কী কী থাকে:

চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে —

1. ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (হৃদপিণ্ডের জন্য ভালো)।

2. প্রোটিন।

3. ফাইবার (আঁশ)।

4. ক্যালসিয়াম।

5. ম্যাগনেসিয়াম।

6. আয়রন।

7. জিঙ্ক।

8. অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

9. ভিটামিন বি গ্রুপ (B1, B2, B3)।

চিয়া সিডের উপকারিতা:

1. হজমে সাহায্য করে – এতে থাকা ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়।

2. ওজন কমাতে সাহায্য করে – এটি পেটে ফুলে পানি শোষণ করে, ফলে ক্ষুধা কম লাগে।

3. হার্টের জন্য ভালো – ওমেগা–৩ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে।

4. রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে – ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উপকারী।

5. হাড় ও দাঁত মজবুত রাখে – ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম সরবরাহ করে।

6. ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বাড়ায় – অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে উজ্জ্বল রাখে।

7. শরীরের শক্তি বাড়ায় – এটি প্রাকৃতিক এনার্জি বুস্টার।

8. ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।

কখন ও কতটুকু খাওয়া যাবে:

প্রতিদিন পরিমাণ: ১ থেকে সর্বোচ্চ ২ চা চামচ (প্রায় ২০ গ্রাম)।

খাওয়ার সময়:

সকালে খালি পেটে ভিজিয়ে খাওয়া সবচেয়ে ভালো।

১ গ্লাস পানিতে ১ চা চামচ চিয়া সিড ভিজিয়ে ৩০ মিনিট রাখলে এটি জেলি মতো হবে — তখন খেতে হয়।

স্মুদি, দুধ, দই, ফলের জুস বা সালাদের সাথেও মিশিয়ে খাওয়া যায়।

যাদের জন্য উপকারী:

ডায়াবেটিস রোগী।

ওজন কমাতে চান যারা।

হার্টের সমস্যা প্রতিরোধে সচেতন ব্যক্তি।

হাড় দুর্বল যারা।

কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন এমন মানুষ।

গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্যও (পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রেখে) উপকারী।

যাদের জন্য ক্ষতিকর বা সাবধানতা প্রয়োজন:-

1. অতিরিক্ত খেলে পেট ফাঁপা, গ্যাস, বা ডায়রিয়া হতে পারে।

2. লো ব্লাড প্রেসার বা ব্লাড থিনার (রক্ত পাতলা ওষুধ) সেবনকারীদের চিকিৎসকের পরামর্শে খাওয়া উচিত।

3. শিশুদের জন্য দিনে অল্প পরিমাণ (½ চা চামচ) যথেষ্ট।

4. অ্যালার্জি থাকলে প্রথমে সামান্য পরিমাণে খেয়ে দেখা উচিত।

5. খাওয়ার আগে অবশ্যই ভিজিয়ে নিন — না ভিজিয়ে খেলে গলায় আটকে যেতে পারে।

6. দিনে মোট ১–২ চা চামচের বেশি খাবেন না।

7. প্রচুর পানি পান করুন, কারণ চিয়া সিড শরীরে পানি টেনে নেয়।

প্রাকৃতিক উপায়েই শরীরকে রাখুন ফিট ও ফ্রেশ!


দুর্দান্ত কিছু ফ্যাক্ট

১. মস্তিষ্ক এটি দিনে ৬০,০০০-এরও বেশি চিন্তা তৈরি করে!

২. হৃদপিণ্ড এটি দিনে প্রায় ১ লাখ বার ধড়ফড় করে!

৩ রক্তনালী শরীরের সব রক্তনালী একসাথে ছড়ালে প্রায় ১ লক্ষ কিলোমিটার লম্বা হবে!

৪. দাঁত দাঁতের এনামেল হলো শরীরের সবচেয়ে শক্ত পদার্থ।

৫. চোখ ও হাঁচি চোখ খোলা রেখে হাঁচি দেওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব!

৬. হাড় মানুষের হাড় সাধারণ কংক্রিটের চেয়েও মজবুত!

৭. আঙুলের ছাপ প্রতিটি আঙুলের ছাপ আলাদা — এমনকি যমজদেরও।

৮. হাড়ের সংখ্যা প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে ২০৬টি হাড় থাকে, কিন্তু শিশুর জন্মের সময় থাকে প্রায় ৩০০টি!

৯. ঘুম ও স্মৃতি ঘুমের সময়ও তোমার মস্তিষ্ক কাজ করে — এই সময় এটি স্মৃতি ঠিক করে রাখে!

১০. শ্বাস-প্রশ্বাস একজন মানুষ এক দিনে প্রায় ২০,০০০ বার শ্বাস নেয়!



আলাস্কার কাঠ ব্যাঙ


আলাস্কার কাঠ ব্যাঙ  হলো উত্তর আমেরিকার একটি উভচর প্রাণী, যার বৈজ্ঞানিক নাম Lithobates sylvaticus। এদের বিশেষ পরিচিতি হলো আর্কটিক অঞ্চলের চরম ঠাণ্ডায় বেঁচে থাকার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা।

​এরা অন্যান্য প্রাণীদের মতো শীতকালে মাটির নিচে বা জলের নিচে গিয়ে সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত থাকে না, বরং বরফের মধ্যে জমে কঠিন হয়ে গিয়ে শীতকাল কাটায়।

যখন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়, তখন এরা স্বেচ্ছায় তাদের শরীরের ৭০% পর্যন্ত জলীয় অংশকে বরফে পরিণত হতে দেয়।

​ বরফ জমা শুরু হলে এদের হৃৎপিণ্ড স্পন্দন করা বন্ধ করে দেয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসও থেমে যায়। এই অবস্থায় তারা কয়েক মাস ধরে স্থবির  হয়ে থাকে।

​এদের কোষের অভ্যন্তরে বরফ জমা রোধ করার জন্য তারা প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ  এবং ইউরিয়া তৈরি করে। এই উপাদানগুলো জৈবিক অ্যান্ট্রিফ্রিজ বা বরফ-রোধক হিসেবে কাজ করে এবং কোষকে বরফের স্ফটিকে ফেটে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।

​বসন্তের উষ্ণতা ফিরে এলে, এরা ধীরে ধীরে বরফ মুক্ত হতে থাকে। প্রথমে তাদের হৃৎপিণ্ড আবার চলতে শুরু করে, এরপর মস্তিষ্ক সচল হয় এবং শেষে তারা স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করতে শুরু করে। যেন কিছুই ঘটেনি, তারা আবার খাবার খোঁজা এবং প্রজনন শুরু করে।এরা বিশ্বের একমাত্র ব্যাঙ যা সুমেরু বৃত্তের উত্তরেও টিকে থাকতে পারে।

​এই অসাধারণ অভিযোজন কাঠ ব্যাঙকে পৃথিবীর অন্যতম প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে


শিশুর কান্না


শিশুকে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়তে দেওয়া—যা অনেক বাবা-মা “স্বাভাবিক অভ্যাস” মনে করেন—আসলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, বারবার কাঁদলেও সাড়া না পেলে শিশুর শরীরে কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের স্নায়ু ও আবেগের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।

জীবনের প্রথম কয়েক মাসে শিশুর মস্তিষ্ক দ্রুত গড়ে ওঠে, আর সেই সময়েই নিরাপত্তা ও সান্ত্বনার অনুভূতি তার মানসিক ভারসাম্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কাঁদলে প্রতিক্রিয়া না পাওয়া শিশুর মধ্যে অনিশ্চয়তা, ভয়, ও একাকিত্বের বোধ জন্মায়—যা পরবর্তী জীবনে আত্মবিশ্বাস ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

শিশুর কান্না শুধু অস্বস্তি কিছু নয়, বরং যোগাযোগের ভাষা। সেই আহ্বানে সাড়া দেওয়া মানে শুধু শান্ত করা নয়, তার ভেতরের বিশ্বাস গড়ে তোলা—যে এই পৃথিবী নিরাপদ, আর সে একা নয়।


হাতির পরিবার মাতৃতান্ত্রিক


স্ত্রী হাতিকে শুধু “দলের সদস্য” বললে ভুল হবে। পুরো হাতির সমাজ যেন ঘুরে বেড়ায় তার অভিজ্ঞতা স্মৃতি ও সিদ্ধান্তের ওপর। এই কারণেই একটি হাতির পরিবারকে বলা হয় মাতৃতান্ত্রিক দল। যেখানে নেতৃত্ব দেন সবচেয়ে বয়স্ক সবচেয়ে জ্ঞানী স্ত্রী হাতি  যাকে বলে ম্যাট্রিয়ার্ক।

এই ম্যাট্রিয়ার্কই ঠিক করে দেয় দল কখন চলবে কোথায় পানি পাওয়া যাবে কোন পথ নিরাপদ আর কোন জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে।

হাতিদের অসাধারণ স্মৃতিশক্তি থাকে বছরের পর বছর ধরে খরা  নদীর পথ, শিকারির আক্রমণ

সবকিছু তার মস্তিষ্কে জমা থাকে মানচিত্রের মতো।

বিপদের মুহূর্তে পুরো দল তার দিকে তাকিয়ে থাকে আর সে এক বিশেষ ধরনের ডাক বা শরীরভঙ্গি দিয়ে সবাইকে দিকনির্দেশনা দেয়।

শিশু হাতিদের লালনপালনেও এই ম্যাট্রিয়ার্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। দলের অন্য স্ত্রী হাতিরাও যুক্ত হয় যেন পুরো দলটাই শিশুদের “সমষ্টিগত মা”।

এই ব্যবস্থাটাই হাতির সমাজকে দেয় টিকে থাকার শক্তি ঐক্যের শিকড়  আর বেঁচে থাকার বহু প্রজন্মের অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতা।



গ্রাউন্ডিং বা আর্থিং 


গ্রাউন্ডিং বা আর্থিং হলো এমন একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যেখানে মানুষ সরাসরি পৃথিবীর মাটির সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে—যেমন খালি পায়ে মাটিতে হাঁটা, ঘাসে বসা, নদীর ধারে বা বালিতে সময় কাটানো। পৃথিবীর মাটিতে প্রচুর নেগেটিভ ইলেকট্রন থাকে, যা আমাদের শরীরের পজিটিভ চার্জযুক্ত ফ্রি র‍্যাডিক্যালকে নিরপেক্ষ করে। ফলে শরীরের ইলেকট্রিক ব্যালান্স ঠিক থাকে এবং বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক উপকার পাওয়া যায়।

গ্রাউন্ডিং মানসিক প্রশান্তি আনে, স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমায় এবং কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা হ্রাস করে। এটি ঘুমের মান উন্নত করে, কারণ শরীরের বায়োলজিকাল ক্লক বা ঘড়ি ঠিক রাখে। নিয়মিত আর্থিং শরীরে প্রদাহ কমায়, ব্যথা উপশম করে ও ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলে। পাশাপাশি এটি রক্ত চলাচল উন্নত করে, ফলে শরীর থাকে সতেজ ও প্রাণবন্ত।

গ্রাউন্ডিং করা খুব সহজ—প্রতিদিন অন্তত ২০ থেকে ৩০ মিনিট খালি পায়ে মাটিতে হাঁটলেই যথেষ্ট। ঘাস, বালি বা নদীর ধারে বসে থাকলেও একই উপকার মেলে। কেউ চাইলে ঘরে বসে গ্রাউন্ডিং ম্যাট বা শীট ব্যবহার করতে পারেন, যা বিদ্যুতের গ্রাউন্ড পয়েন্টের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।

সুতরাং, গ্রাউন্ডিং বা আর্থিং শুধু একটি প্রাকৃতিক অভ্যাস নয়, এটি আমাদের শরীর ও মনের ভারসাম্য বজায় রাখার একটি কার্যকর উপায়।



 কিছু মাছ বাতাস থেকেও কিছুটা শ্বাস নিতে পারে


রুই, কাতলা, তেলাপিয়া, ইলিশ — এদের গিলস শুধুমাত্র পানির অক্সিজেন ব্যবহার করতে পারে। এরা ২–৫ মিনিটেই শ্বাসরোধে মারা যায়। ৫ মিনিটের পর থেকেই গিলস শুকিয়ে যায়, শরীরে অক্সিজেনের অভাব তীব্র হয়, মস্তিষ্ক কাজ বন্ধ করে দেয়।

কিছু মাছ, যেমন ক্যাটফিশ (শিং, মাগুর), লাঙ ফিশ, মাডস্কিপার, এমনকি ইল মাছ, বাতাস থেকেও কিছুটা সময় শ্বাস নিতে পারে। এদের শরীরে ত্বক বা বিশেষ অঙ্গ থাকে যা কিছুটা অক্সিজেন শোষণ করতে পারে। এসব মাছ ২০–৩০ মিনিট, কখনও ঘণ্টাখানেক পর্যন্তও পানির বাইরে বাঁচতে পারে, কিন্তু তারা তখনও কষ্ট পায়—শুধু “বেঁচে” থাকে, আরামদায়কভাবে নয়।


পশ্চিম আফ্রিকার লাংফিশ (West African lungfish) প্রকৃতির এক বিস্ময়কর জীব, যা খাবার বা পানি ছাড়াই প্রায় তিন বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের তথ্য অনুযায়ী, এই মাছটি অ্যাভিস্টেশন নামে অনন্য এক অভিযোজন কৌশল তৈরি করেছে, যা তাকে দীর্ঘ খরার সময়েও বাঁচিয়ে রাখে। যখন নদী শুকিয়ে যায়, তখন লাংফিশ কাদার ভেতর গর্ত খুঁড়ে ঢুকে পড়ে এবং নিজের শরীর থেকে এক ধরনের শ্লেষ্মা (mucus) নিঃসরণ করে, যা পরে শক্ত হয়ে তার চারপাশে এক ধরনের কোকুন তৈরি করে। এই কোকুনে কেবল মুখের কাছে একটি ছোট ছিদ্র থাকে, যাতে সে বাতাস নিতে পারে। কারণ এই মাছের ফুসফুস আছে, যা মাছেদের মধ্যে খুবই বিরল বৈশিষ্ট্য। এই কোকুনের ভেতরে ঢুকে লাংফিশ অচেতন বা নিদ্রিত অবস্থায় চলে যায়। তখন তার দেহের বিপাক ক্রিয়া খুব ধীর হয়ে যায়। বেঁচে থাকার জন্য সে নিজের দেহের পেশি, বিশেষ করে লেজের অংশের মাংস, ধীরে ধীরে ভেঙে খায়। এই নিজের দেহ খেয়ে টিকে থাকার কৌশল তাকে মাসের পর মাস, এমনকি সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত খাবার ও পানি ছাড়াই বাঁচিয়ে রাখে। কোকুনটি আবার তার শরীর থেকে পানির অপচয় রোধে প্রাকৃতিক দেয়ালের মতো কাজ করে।

বৃষ্টির পর নদী আবার ভরে ওঠলে, লাংফিশ কোকুন থেকে বেরিয়ে আসে এবং তার স্বাভাবিক জলজ জীবনে ফিরে যায়। বিজ্ঞানীরা টিকে থাকার এই প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করছেন, কারণ এটি বিবর্তন ও জীববিজ্ঞানের সহনশীলতা বোঝার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। এমনকি এর অনুপ্রেরণায় চিকিৎসা গবেষণাও চলছে। 


আপনার পেট আপনার 'দ্বিতীয় মস্তিষ্ক'! 

মন-মেজাজ, চিন্তা, সিদ্ধান্ত, ঘুম সবকিছুতেই পেটের ভূমিকা আছে। আপনার পেটেই তৈরি হয় শরীরের ৯০% সেরোটোনিন, যাকে বলে 'হ্যাপিনেস হরমোন'। পেটের অবস্থা ভাল নেই, তো মুডের অবস্থাও ভাল নেই!

চলুন, পেটের শত্রুদের চেনা যাক—

 খাদ্য-পানীয়

পেটের  সবচেয়ে বড় এক শত্রু আপনারই খাবারের প্লেট! পেটের উপকারী ব্যাকটেরিয়াদের প্রধান খাবার হলো 'ডায়েটারি ফাইবার' বা আঁশ, যা শাকসবজি, ফলমূল, ডাল, বীজ, বাদাম, হোলগ্রেইনে থাকে। কিন্তু আপনার প্লেট দখল করে আছে সাদা চাল, সাদা আটা, চিনি-ভর্তি খাবার, প্রসেসড খাবার ইত্যাদি, যাতে ফাইবার নেই। ডায়েটের বড় অংশ দখল করে রেখেছে ফাইবারহীন, ক্যালোরি-সমৃদ্ধ, অ্যাডিটিভ-ভরা রেডিমেড খাবার।  

অতিরিক্ত চিনি ও কৃত্রিম সুইটেনার পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ইস্টের বংশবৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

প্রসেসড খাবারে ব্যবহৃত প্রিজারভেটিভ, কালার, ফ্লেভার, ইমালসিফায়ার সরাসরি অন্ত্রের দেয়ালকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং ভালো ব্যাকটেরিয়াদের ব্যালেন্স নষ্ট করে দেয়।

- মানসিক ওভারলোড

আধুনিক জীবন মানেই এক অন্তহীন দৌড়। এই ক্রনিক স্ট্রেস আপনার পেটের জন্য সাক্ষাৎ যম! স্ট্রেস বাড়লে শরীর 'কর্টিসল' হরমোন ছাড়ে। এই হরমোন পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়াদের মেরে ফেলে, হজম প্রক্রিয়া ধীর করে দেয় এবং অন্ত্রের দেয়ালকে 'লিকি' করে তুলতে পারে। স্ট্রেস আজ এমন একটি উপাদান, যা খাবারের থেকেও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

স্ট্রেস মানে শুধু অফিস বা জব নয়, স্মার্টফোনও দায়ী! রিলস এর ইন্সট্যান্ট ডোপামিন, ঘুমানোর আগে স্ক্রিন, সারাদিন নোটিফিকেশন থেকে মস্তিষ্কে অতি উত্তেজনা, শরীরে কর্টিসল বৃদ্ধি পায়, ফলে পেটে প্রদাহ + মাইক্রোবায়োম ভাঙন শুরু হয়। আধুনিক স্ট্রেস মানে শুধু ব্যস্ততা নয়। এটা ডোপামিন ওভারলোড + ঘুমের অভাব + মাইন্ডফুলনেসের অভাব কেও বুঝায়!

- অতি-পরিচ্ছন্নতার বাতিক

আমরা জীবাণুদের এত ভয় পাই যে, সবকিছুতেই অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল প্রোডাক্ট, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করি। অতিরিক্ত জীবাণুনাশক ব্যবহার এবং মাটির সংস্পর্শে একদম না আসাটা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করছে। শিশুরা মাটিতে না খেললে তাদের মাইক্রোবায়োম সমৃদ্ধ হয় না।

‘হাইজিন হাইপোথিসিস’ অনুযায়ী, খুব বেশি জীবাণুমুক্ত পরিবেশে বড় হওয়া শিশুরা ভবিষ্যতে বেশি অ্যালার্জি, অটোইমিউন ও অন্ত্রজনিত রোগে আক্রান্ত হয়! হাইজিন গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সবকিছু জীবাণুমুক্ত করতে গিয়ে আমরা মাটির ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। অথচ শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে প্রাকৃতিক জীবাণুর সংস্পর্শে!

- ফার্মার ঔষধ

মানুষ সামান্য সর্দি-কাশিতেই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলে। অ্যান্টিবায়োটিক হলো পেটের অণুজীব শহরের ওপর পারমাণবিক বোমা ফেলার মতো! এটা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সাথে আপনার হাজার হাজার কোটি ভালো ব্যাকটেরিয়াকেও মেরে ফেলে! তবে ভিলেন শুধু অ্যান্টিবায়োটিক না, আরও কিছু ওষুধ আছে যা পেটের মাইক্রোবায়োম নষ্ট করে। নিয়মিত ব্যথার ওষুধ (যেমন এ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন) পেটকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এন্টাসিডের মত পেটের অম্লতা কমানোর ওষুধ খারাপ ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে ও পুষ্টি শোষণে বাধা দিতে পারে। গ্যাস/অ্যাসিডিটির ওষুধ (যেমন নেক্সিয়াম, ওমেপ্রাজল) পাকস্থলীর এসিড কমিয়ে দেয়, ফলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বেঁচে যায়।

- সিজারিয়ান বার্থ

নরমাল ডেলিভারিতে মায়ের জন্মনালী থেকে প্রাকৃতিক মাইক্রোব আসে। তারপর মায়ের বুকের দুধ শুধু খাবার নয়, দুধের মধ্যে থাকে 'হিউম্যান মিল্ক অলিগোস্যাকারাইডস', যা বাচ্চার পেটে ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়। কিন্তু সিজারিয়ানে শিশু মায়ের মাইক্রোবায়োম থেকে বঞ্চিত হয় + হাসপাতালের দেওয়াল/হাত/টুলস এসব থেকে নিম্নমানের ব্যাকটেরিয়া আসে। তারপর ফর্মুলা মিল্ক গাট ডাইভারসিটিকে কমায়, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়।

সব মিলিয়ে এক বি/ষা/ক্ত চক্র চলছে। আপনি আধুনিকতার নামে পেটের ওপর যত আঘাত করবেন, তার প্রতিদান আপনি রোগ, ক্লান্তি ও মানসিক অস্থিরতার মাধ্যমে পাবেন। এখন সময় এসেছে আধুনিকতার সুবিধাগুলো রেখে, বি/ষগুলো বাদ দেওয়ার। আপনার পেটের ভেতরের শহরটিকে বাঁচানোর দায়িত্ব আপনারই!

- প্লাস্টিকের প্যাকেট নয়, বাজার থেকে তাজা শাকসবজি, ফল, মাছ-মাংস কিনুন। সাদা চাল/আটার বদলে লাল চাল বা হোলগ্রেইন আটা কিনুন। রিফাইন্ড খাদ্যপন্য বর্জন করে প্রাকৃতিক খাবার বেছে নিন। প্লেটে জীবন্ত খাবার রাখুন, মৃত খাবার বর্জন করুন।  



অক্টোপাস


অক্টোপাস পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় ও বুদ্ধিমান সামুদ্রিক প্রাণীগুলোর একটি। আশ্চর্যের বিষয় হলো এর প্রতিটি বাহুর ভেতরেই থাকে একটি করে ‘ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক’!

বিজ্ঞানীরা জানান একটি পূর্ণবয়স্ক অক্টোপাসের মোট ৯টি মস্তিষ্ক থাকে একটি কেন্দ্রীয় মস্তিষ্ক এবং বাকি আটটি ছড়িয়ে থাকে প্রতিটি বাহুর ভেতরে। প্রতিটি বাহুর নিজস্ব স্নায়ুতন্ত্র (neural network) এতটাই উন্নত যে তা প্রায় স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে! অর্থাৎ, কোনো বাহু খাবার ধরতে গর্তে ঢুকতে বা বিপদ থেকে পালাতে পারে কেন্দ্রীয় মস্তিষ্কের সরাসরি নির্দেশ ছাড়াই।

আরও অবাক করা বিষয় হলো এই ক্ষুদ্র মস্তিষ্কগুলো একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় করে অক্টোপাসকে করে তোলে চূড়ান্ত বুদ্ধিমান  দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল এবং অভিযোজিত এক প্রাণী। এজন্যই অক্টোপাসকে বিজ্ঞানীরা বলেন “distributed intelligence”-এর শ্রেষ্ঠ উদাহরণ ।



 গরম দুধ বা পানি ঠান্ডা দুধ বা পানির চেয়ে দ্রুত জমে যায় কেন?


একই পরিবেশে রাখা গরম দুধ বা পানি ঠান্ডা দুধ বা পানির চেয়ে দ্রুত জমে যাচ্ছে। পরে বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং এই ঘটনাটির নামকরণ করা হয় “Mpemba Effect”।

এই প্রভাবটি এখনো পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয়নি, তবে বিজ্ঞানীরা কিছু সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করেছেন।

প্রথমত, বাষ্পীভবন (Evaporation): গরম পানি থেকে দ্রুত বাষ্প বেরিয়ে যায়, ফলে পানির পরিমাণ কমে যায় এবং অবশিষ্ট পানি সহজে ঠান্ডা হয়।

দ্বিতীয়ত, কনভেকশন (Convection): গরম পানিতে তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে ভেতরে ঘূর্ণি তৈরি হয়, যা ঠান্ডা হওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।

তৃতীয়ত, Supercooling: ঠান্ডা পানি প্রায়ই বরফে পরিণত না হয়ে আরও নিচু তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে, কিন্তু গরম পানি এই অবস্থায় না গিয়ে সরাসরি জমে যেতে পারে।

এছাড়াও, দ্রবীভূত গ্যাস (Dissolved gases)-এর পরিমাণ গরম ও ঠান্ডা পানিতে ভিন্ন হয়, যা জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।


মধু কেন হাজার হাজার বছর ধরেও মিষ্টি আর সতেজ থাকে? 


মধু কখনও নষ্ট হয় না! এর কারণগুলো খুবই সহজ আর অসাধারণ:

​১. জলের অভাব: মধুর মধ্যে জল প্রায় থাকেই না! ফলে পচন সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জলের অভাবে বাঁচতে পারে না, শুকিয়ে মারা যায়।

২. প্রাকৃতিক অ্যাসিড: মধু সামান্য টক বা অ্যাসিডিক। এই অ্যাসিডিক পরিবেশও জীবাণুদের বংশবৃদ্ধি করতে দেয় না।

৩. গোপন অস্ত্র: মৌমাছিরা মধু বানানোর সময় এতে এক প্রাকৃতিক জীবাণু-নাশক (হাইড্রোজেন পারক্সাইড) মিশিয়ে দেয়, যা মধুকে চিরকাল সতেজ রাখে!

​আশ্চর্যজনক তথ্য: প্রত্নতাত্ত্বিকরা মিশরের প্রাচীন পিরামিডের সমাধিতেও ভোজ্য মধু খুঁজে পেয়েছেন!



ভুলে যাওয়া রোগী ও  শাকসবজি 


একজন অস্ট্রেলিয়ান নারী হঠাৎ করে ভুলে যাওয়া, মাথাব্যথা আর ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন। প্রথমে সবাই ভেবেছিল মানসিক সমস্যা। কিন্তু এমআরআই করার পর দেখা গেল তার মস্তিষ্কে এক অদ্ভুত দাগ! অস্ত্রোপচারে বের হলো—একটি জীবিত ৮ সেন্টিমিটার লম্বা কৃমি!

ডাক্তাররা পরে জানলেন, কৃমিটা এসেছে Carpet Python নামের সাপের মল থেকে দূষিত ঘাসের মাধ্যমে। মহিলা বনে-জঙ্গলে সবজি তুলতেন, হাত না ধুয়ে রান্না করতেন—সেখান থেকেই ডিম শরীরে ঢুকে পরে মস্তিষ্কে চলে যায়।

কেন হয় :-

অপরিষ্কার বা আধা সেদ্ধ খাবার খেলে

দূষিত ঘাস, পানি বা কাঁচা শাকসবজি থেকে

বন্যপ্রাণীর সংস্পর্শে এলে

কিভাবে বাঁচবেন?

শাকসবজি ভালোভাবে ধুয়ে ও সিদ্ধ করে খাবেন

খাওয়ার আগে হাত ধুয়ে নেবেন

বন্য এলাকায় খাবার


নেগেটিভ বায়াস 

কেন ভালো কিছু নয়, খারাপটাই আগে মনে পড়ে? এক সময়ের মানুষ জঙ্গলে বাস করত। চারপাশে ছিল বন্য পশু, বজ্রপাত, আর অজানা বিপদ। তখন বেঁচে থাকার একটাই নিয়ম ছিল সতর্ক থাকা। তাই আমাদের মস্তিষ্ক তখন থেকেই শিখে নেয়, বিপদ আগে চিনো, ভালোটা পরে দেখো। এই পুরনো অভ্যাসই আজও আমাদের মধ্যে কাজ করে। এ কারণে মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা অংশ ভয় বা দুঃখের সিগন্যাল দ্রুত ধরতে পারে, কিন্তু আনন্দ বা শান্তি অনুভব করতে সময় নেয়। ফলে ভালো কিছু ঘটলেও সেটা আমরা দ্রুত ভুলে যাই, আর খারাপ কিছু ঘুরেফিরে মাথায় আসে। যেন মস্তিষ্ক বলছে, সাবধান! আবার যেন এমন না হয়। মনোবিজ্ঞানীরা এই প্রবণতাকে নেগেটিভ বায়াস বলে। তবে এটা বদলানো সম্ভব। প্রতিদিন একটু সময় নিয়ে কৃতজ্ঞতা লেখা, ধ্যান করা বা ইতিবাচক দিক খুঁজে দেখা এসব করলে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ভারসাম্য ফিরে পায়।



ভেনিস জলমগ্ন হওয়ার সত্ত্বেও কেন নষ্ট হয় না? 


উত্তরটা লুকিয়ে আছে জলাভূমির গভীর কাদামাটির নিচে! জানেন কি? সেখানে আছে লক্ষ লক্ষ কাঠের খুঁটি শতাব্দী এমনকি হাজার বছর ধরে যেগুলো মার্বেলের ভারী প্রাসাদ, গির্জা আর ঘরবাড়ি বহন করে চলেছে!!

পঞ্চম শতাব্দী থেকে শুরু করে ভেনিসের নির্মাতারা জানতেন যে নরম মাটিতে পাথরের ভিত্তি রাখা যাবে না। তাই তারা বেছে নিয়েছিলেন অ্যাল্ডার, ওক, এলম, লার্চের মতো শক্তিশালী কাঠ। এই কাঠগুলো পানিতে ডুবে থাকলেও পচে না। কারণটাও বেশ ইন্টারেস্টিং।

লাগুনের পানি আর কাদামাটিতে অক্সিজেন প্রায় শূন্য। পচনকারী ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকের জন্য অক্সিজেন অপরিহার্য। অক্সিজেন না থাকলে তারা বাঁচতে পারে না। ফলে কাঠ ধীরে ধীরে খনিজে ভরে পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় পেট্রিফিকেশন।

প্রতি বর্গমিটারে নয়টিরও বেশি খুঁটি গভীর কাদায় ঢুকিয়ে তার ওপর কাঠের প্ল্যাটফর্ম বসানো হতো। তারপর ইস্ট্রিয়ান পাথরের ভিত্তি। এভাবেই গড়ে উঠেছে ভেনিসের প্রতিটি ভবন। সবকটি বললে অবশ্য ভুল হবে, কারণ সেই ৪২১ খ্রিস্টাব্দে প্রাচীন মানবের থেকে ১৯ শতকের আগে পর্যন্ত এখানে স্থানীয়রা যে সকল বাড়িঘর তৈরি করেছে তাদের স্ট্রাকচার এমন উডেন ভিত্তির ওপর নির্মিত। মডার্ণ স্ট্রাকচারগুলো কংক্রিটের শক্ত ভিত্তির উপর তৈরি করা হয়।

যাইহোক যখন আপনি সান মার্কো স্কয়ারে দাঁড়ান, তখন আপনার পায়ের নিচে সেই প্রাচীন কাঠের খুঁটি ভার করে চলেছে। হাজার বছর ধরে সময়ের স্রোতে ভেসে আসা এই শহর এখনো অটুট। যেন এক রূপকথার শহর!



যখন আপনি দীর্ঘ সময় (১৪-২৪ ঘণ্টা) না খেয়ে থাকেন, 


তখন আপনার শরীর একটি আশ্চর্যজনক বায়োলজিক্যাল মোডে প্রবেশ করে। সে সময় শরীর নিজের পুরনো, নষ্ট, কিংবা অসুস্থ কোষগুলো “খেয়ে ফেলে” অর্থাৎ ভেঙে পুনর্ব্যবহার করে!

আর এই প্রক্রিয়ার নাম “অটোফ্যাজি” যার অর্থই হলো “নিজেকে খাওয়া”!

এতে কী হয় জানেন?

বয়সজনিত কোষ দূর হয়

প্রদাহ সৃষ্টিকারী কোষ পরিষ্কার হয়

এমনকি ক্যান্সার বা অ্যালঝেইমারের মতো রোগের কোষও নষ্ট করতে শুরু করে!

এই পুরো প্রক্রিয়াটা শরীরের একটা প্রাকৃতিক ডিটক্স সিস্টেম। কোষের ভেতরের আবর্জনা, খারাপ প্রোটিন, নষ্ট মাইটোকন্ড্রিয়া সব পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে শরীর ভিতর থেকে সতেজ হয়, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে।

এই অসাধারণ প্রক্রিয়াটি আবিষ্কার করেন জাপানের বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওসুমি, যিনি ২০১৬ সালে পেয়েছিলেন নোবেল পুরস্কার।

আর সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে আপনি চাইলেই এই শক্তিশালী প্রক্রিয়াটি শুরু করতে পারেন শুধুই ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করে!

শরীরকে ভিতর থেকে সারাতে চান? রোগ প্রতিরোধ বাড়াতে চান?

তাহলে মাঝে মাঝে না খাওয়াটাই হতে পারে আপনার সুস্থতার চাবিকাঠি।

(সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে রোজা রাখা।)


জাপানের কৃষি বাজার পদ্ধতি 

জাপানে অনেক সুপারমার্কেট ও কৃষি বাজারে এবং অনলাইন সাইটে  ফল ও সবজি বিক্রির সময় বাক্স বা প্যাকেটে উৎপাদনকারীর নাম, ছবি এবং কখনও সংক্ষিপ্ত বার্তা দেওয়া থাকে।

এই প্রথার মূল উদ্দেশ্য হলো ক্রেতাকে জানানো যে পণ্যটি কে উৎপাদন করেছে এবং কোথায় উৎপাদিত হয়েছে। এটি খাদ্যের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং স্থানীয় কৃষিপণ্যের প্রতি আস্থা বাড়ায়। এমন তথ্যযুক্ত প্যাকেজিং সাধারণত JA Farmers Market, Aeon, Ito-Yokado প্রভৃতি বিপণন কেন্দ্রে দেখা যায়। জাপানে এই পদ্ধতিকে “traceability system” বলা হয়, যার মাধ্যমে প্রতিটি কৃষিপণ্যের উৎপাদক, উৎপাদন এলাকা ও তারিখ সহজে শনাক্ত করা যায়।



নানি-দাদির (বা পূর্বপুরুষদের) খাদ্যাভ্যাস


নানি-দাদির (বা পূর্বপুরুষদের) খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব আপনার মস্তিষ্কে “জিনের মাধ্যমে” পৌঁছাতে পারে, যাকে বলা হয় “Epigenetic inheritance”।

গবেষণায় দেখা গেছে, একজন নারী গর্ভবতী অবস্থায় যা খান, তা শুধু তার সন্তান নয় — তার নাতি-নাতনির জিনেও প্রভাব ফেলতে পারে।

নানি-দাদির খাদ্য যদি অধিক পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত রেড মিট, অতিরিক্ত সাদা চিনি, বাড়তি কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার, কম সবজি ও ফল হয় তবে এতে আপনার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে।

নানি-দাদির খাদ্য যদি অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত বা পুষ্টিহীন হয়, তাহলে নাতি-নাতনির মধ্যে দেখা যায় :: শেখার সমস্যা, নিউরন সংযোগে দুর্বলতা।

আবার নানি-দাদির সুষম খাদ্যাভ্যাস (যেমন প্রচুর ফল, সবজি, ওমেগা-৩ ফ্যাট ইত্যাদি) থাকলে নাতি-নাতনির মস্তিষ্কে ভালো নিউরোনাল গ্রোথ, স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যায়।

University of Adelaide (Australia)–এর একটি গবেষণায় (Nature Communications, 2023) দেখা গেছে — গর্ভবতী ইঁদুরের অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার তাদের নাতি-নাতনির মস্তিষ্কে আচরণগত পরিবর্তন ঘটায়। Harvard এবং Cambridge গবেষকরা দেখিয়েছেন, মানব-এপিজেনেটিক পরিবর্তন (যেমন DNA methylation) প্রজন্মান্তরে স্থায়ী হতে পারে, বিশেষ করে গর্ভকালীন খাদ্যাভ্যাসের কারণে। আপনার নানী-দাদির কী খাওয়া-দাওয়া ছিল, তা তার গর্ভের শিশুর কোষে প্রভাব ফেলেছে, সেই শিশুর ডিম্বাণু থেকে আপনি তৈরি হয়েছেন,


  লিভার সুস্থ রাখতে পানির প্রয়োজনীয়তা! 


আমাদের লিভার প্রতিদিন নিরবভাবে কাজ করে, রক্তকে পরিষ্কার রাখে, টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ ভেঙে শরীর থেকে বের করে দেয়। কিন্তু এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি তার কাজ ঠিকভাবে করতে পারে কেবল তখনই, যখন শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকে। পানি লিভারের সবচেয়ে সহজ ও প্রাকৃতিক সহায়ক। এটি রক্তকে পাতলা রাখে, ফলে লিভারের উপর চাপ কমে যায়। যখন আমরা পর্যাপ্ত পানি খাই, তখন শরীর সহজে টক্সিন দূর করতে পারে এবং হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে।

অন্যদিকে, পানি কম খেলে লিভারের কাজ ধীর হয়ে যায়, ফলে চর্বি জমে ফ্যাটি লিভার বা অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়। গরম আবহাওয়ায় বা ব্যস্ত জীবনে অনেকেই পানি খেতে ভুলে যায়, কিন্তু এটি ধীরে ধীরে শরীরের ভেতরে বিষের মতো কাজ করে। তাই প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস পানি খাওয়া শুধু অভ্যাস নয়, এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক চিকিৎসা।

পানি খাওয়ার সঠিক নিয়ম হলো সারাদিনে অল্প অল্প করে খাওয়া। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস উষ্ণ পানি খেলে লিভার সক্রিয় হয় এবং শরীর সতেজ থাকে। মনে রাখবেন, সুস্থ লিভার মানেই সুস্থ জীবন, আর সেই জীবনের চাবিকাঠি একটাই — পর্যাপ্ত পানি।


সমুদ্রের পানি লোনা হয় কেন?

আসলে লবনাক্ত পানিই লোনা পানি। আমরা সাধারণত সমুদ্র থেকে লবণ আহরণ করি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সমুদ্রই লবনের একমাত্র উৎস। বিভিন্ন খনি থেকেও লবণ পাওয়া যায়। সেগুলোকে আমরা বলি সৈন্ধবলবণ। আর সমুদ্র থেকে উত্তোলিত লবনেরও একটা চমৎকার নাম আছে।তা হলো কড়কচ লবণ। যাকগে এসব কথা। আসল কথায় আসি।

আসলে পৃথিবীর সব নদীগুলোর পানি একসময় এসে সমুদ্রে মিলিত হয়। তাছাড়া বৃষ্টিতে বিভিন্ন জনপদ ধুয়ে মুছে তার পানিও একসময় কোন না কোন ভাবে সাগর মহাসাগরে এসে ভীড় জমায়। আর যখন এইসব পানিগুলো আসে তখন এরা শুধু পানি হিসেবেই সমুদ্রে আসে না বরং সঙ্গে করে নিয়ে আসে বিভিন্ন রকমের খিনিজ পদার্থ। এর মধ্যে লবণও অন্যতম।

তারপর সূর্যের তাপে সমুদ্রের পানিগুলো বাষ্পীভূত হয়ে উড়ে যায়। আর সাগরের বুকে পড়ে থাকে লবণগুলে।

এই প্রক্রিয়াটা কিন্তু আজ বা কাল থেকে চলছে না। বহু কাল ধরে চলছে। আর বহু কালের চলমান প্রক্রিয়ায় একটু একটু করে লবণ জমতে জমতে আজ সমুদ্র লবনাক্ত হয়ে উঠেছে।

মজার ব্যাপার হলো বর্তমানে সাগর মহাসাগরে যে পরিমানের লবণ আছে তা দিয়ে সমগ্র বিশ্বকে নিরক্ষরেখা বরাবর বেড় দেওয়া যাবে।

আর সমুদ্রের সকল লবণের মাধ্যমে ২৮৮ কি.মি. উঁচু ও ১.৬ কি.মি. চওড়া দেওয়াল তৈরি করা যাবে!



কিছু মানুষ আছে, যাদের ওজন বাড়া শুরু করলে আর থামে না কেন?

কিছু মানুষ আছে যাদের ওজন ৭০-৮০ কেজির রেঞ্জে এসে আর ওজন বাড়ে না। কিন্তু তাদের কোলেস্টেরল বাড়তে থাকে, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়তে থাকে, ডায়বেটিস হয়, মেয়ে হলে হরমোন লেভেল ছারখার হয়ে পিসিওএস হয়ে যায়, ছেলে হলে হার্টের অবস্থার বারোটা বাজে। ওদিকে, তার ওজন কিন্তু অতটাও বেশি না।

আবার, কিছু মানুষ আছে, যাদের ওজন বাড়া শুরু করলে আর থামে না। ১২০, ১৩০, ১৫০, ১৭০ কেজি তো প্রায়ই দেখি আমরা।

কিন্তু তাদের অনেকেরই ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট খুব স্বাভাবিক থাকে, কেউ কেউ আছে মোটামুটি সুস্থই আসলে। কিন্তু ওজন তার বাড়তেই থাকে।

এইটা কেন ঘটে??

আসলে প্রথম গ্রুপের মানুষের ফ্যাট সেলগুলো বড় হওয়ার পর একটা লেভেলে গিয়ে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হতে থাকে, আর বাড়ে না। ফলে সে যতই উল্টাপাল্টা খাবে, হয়তো তার আর ওজন বাড়বে না, কিন্তু মৃত্যুঝুকি বাড়তে থাকবে। বলা নেই কওয়া নেই দেখবেন হুট করে হার্ট এটাক/স্ট্রোক করে বসে আছেন।

পক্ষান্তরে সেকেন্ড গ্রুপের লোকদের ফ্যাট সেল ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট না হয়ে ভেঙ্গে একটা থেকে দুইটা, দুইটা থেকে চারটা, চারটা থেকে আটটা হতে থাকে। ফলে তাদের ওজন বাড়তে থাকে, কিন্তু তারা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট হন না। টেস্ট করালে রিপোর্টও প্রায়ই নরমাল আসে। পুষ্টিবিদ / ডাক্তার'রা মাঝে মাঝে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই, কিরে ভাই এই লোকের ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স রিপোর্ট এত নরমাল কিভাবে, কোলেস্টেরল এত নরমাল কিভাবে!!

আসলে ব্যাপারটা তার ব্রেইনের নেয়া একটা ডিসিশানের ফল। ব্রেইন সিদ্ধান্ত নেয় সে আপনাকে ফুলাবে, অথবা অসুস্থ বানাবে, অথবা দুইটাই করবে।

আর এই সিদ্ধান্ত ব্রেইন নেয় কয়েকটা সিগন্যালের ভিত্তিতে।

১)আপনার জিনেটিক্স-আপনার ডিএনএতে যদি থাকে অল্প ওজনেই আপনার শরীরের সর্বনাশ হবে, সেটা হবেই। এটা ঠ্যাকানো বড়ই মুশকিল। ডিএনতে যদি থাকে আপনি ওজনের দিক দিয়ে সেঞ্চুরি করে ডাবল সেঞ্চুরির পথে হাটবেন, এটাও ঠ্যাকানো বড়ই কঠিন।

২)আপনি গর্ভে থাকা ও দুধ পানরত অবস্থায় আপনার মা কি করেছেন। এটা আপনার সারাজীবনের গতিপথ ঠিক করে দিতে সক্ষম।

৩)আপনি ধারাবাহিকভাবে উল্টাপাল্টা খেয়ে এবং সারাদিন বসে কাটান কিনা। এইটা যদি ঠিক থাকে, ওপরের ২টা ফ্যাক্টর থেকে হওয়া ক্ষতির অন্তত ৫০% এড়ানো সম্ভব।

 


পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার, যা সোমপুর মহাবিহার 

বাংলাদেশের নওগাঁ জেলায় অবস্থিত এই প্রাচীন বিহারটি গড়ে ওঠে ৮ম শতাব্দীতে পাল রাজবংশের মহান শাসক ধর্মপাল-এর শাসনামলে। এটি শুধু একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানই ছিল না বরং এক সময় এশিয়ার অন্যতম শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিল।

এই বিশাল স্থাপনাটির আয়তন প্রায় ২৭ একর এবং এতে রয়েছে ১৭৭টি ছোট কক্ষ যেখানে সন্ন্যাসীরা বাস করতেন ও ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করতেন। কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত বিশাল স্তূপাকৃতি মূল মন্দির যা এখনো আমাদের গৌরবময় অতীতের নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো এই স্থাপনাটিকে ঘোষণা করে “বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ” (UNESCO World Heritage Site)  যা বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মর্যাদাকে বিশ্বে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।



নির্দিষ্ট নিউরন অ্যাক্টিভেশন ব্যবহার করে মস্তিষ্কে তথ্য ঢোকানো যায়।


বিজ্ঞানীরা এমন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে যেটায় মানুষের স্মৃতি "ইউএসবি-ড্রাইভের" মতো করে অন্য মানুষের মস্তিষ্কে কপি করা যায়!

 ২০২3 সালে MIT এবং Caltech-এর গবেষকরা ইঁদুরের ওপর সফলভাবে একটি স্মৃতি ট্রান্সফার করেছেন — এক ইঁদুর কীভাবে গোলক খুঁজে পেয়েছিল, তা অন্য ইঁদুর জানতই না, কিন্তু ট্রান্সফার করার পর সে একদম ঠিক পথে চলেছে!

 এই প্রযুক্তিকে বলা হয় Memory Implantation — যেখানে নির্দিষ্ট নিউরন অ্যাক্টিভেশন ব্যবহার করে মস্তিষ্কে তথ্য ঢোকানো যায়।

 ভবিষ্যতে কী হতে পারে ভাবুন:

আপনি যদি কোনো কিছু শিখতে চান, শুধু “স্মৃতি ফাইল” কপি করলেই হবে

পাইলট বা সার্জনরা এক মিনিটেই বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে

এমনকি কোনো ভাষা শিখতে মাস নয়, সময় লাগবে মাত্র মিনিট!

 মেট্রিক্স সিনেমার মতো স্মৃতি লোড করা যদি সত্যি হয়ে যায়?


আপনার ব্যক্তিত্বের জন্য কিছু অভ্যাস, ও চর্চা  

 ১. নিজেকে ব্যাখ্যা করা বন্ধ করুন ‘ওভার এক্সপ্লেইনিং’ করে আপনি মানুষকে আপনার অবস্থান বা উদ্দেশ্য বোঝাতে পারবেন না। বরং কর্মের ভেতর দিয়ে কথা বলুন। প্রয়োজনীয় কথা বলুন। যে যত কম কথা বলে, মানুষ তার কথা তত গুরুত্ব দিয়ে শোনে। 

২. আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখুন আপনি যখন প্রতিনিয়ত নিজের হতাশা, রাগ, দুঃখ ইত্যাদি প্রকাশ করতে থাকেন, তখন আপনাকে ‘পড়ে ফেলা’ সহজ হয়। আর যাঁদের পড়ে ফেলা কঠিন, যাঁরা রহস্যময়, আবেগ নিয়ন্ত্রণে দক্ষ, তাঁরাই অধিক সম্মানিত হন। ফলে কথা বলে রাগ উগরে না দিয়ে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করুন। 

৩. অন্যের সমর্থন খুঁজতে যাবেন না যাঁরা দুর্বল ব্যক্তিত্বের মানুষ, তাঁরাই প্রতিনিয়ত অন্যের সায়, অনুমোদন, সমর্থন খোঁজেন। আত্মবিশ্বাস কম থাকলে তাঁরা আশপাশে ‘ইয়েস ম্যান’দের রাখেন। এটা আত্মবিশ্বাসের অভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। 

৪. দেয়াল তুলে দিন নিজেকে সহজলভ্য করে তুলবেন না। আপনার ব্যক্তিত্বের দেয়াল এমন হতে হবে, সবাই যেন সেটা বেয়ে আপনার পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারেন। নিজের মানসিক শান্তি রক্ষার জন্যও দেয়াল তোলার কোনো বিকল্প নেই। ‘না’ বলার অভ্যাস রাখুন। 

৫. শান্তভাবে সামাল দিন যেকোনো পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে মোকাবিলা করার কোনো বিকল্প নেই। খুব কম মানুষই তা পারেন। আর এ কারণেই তাঁরা অন্যের চোখে সম্মানের পাত্র। অল্পতেই যাঁরা খেই হারিয়ে ফেলেন, তাঁদের সম্মান অর্জন কঠিন হয়ে যায়। 

৬. যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের কথা রাখুন ভালোবাসা অর্জনের চেয়ে বিশ্বাস ও আস্থা অর্জন বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বেশি চ্যালেঞ্জিং। আর সে জন্য কথা দিয়ে কথা রাখার কোনো বিকল্প নেই। কাউকে যদি আপনি কিছুর আশ্বাস দিয়ে থাকেন, সেটা পূরণের চেষ্টা করুন। সেই সময়ে যদি তার চেয়ে বড় সাফল্য হাতছানি দেয়, তবু আপনি আগের কথা রাখার চেষ্টা করুন। এতেই আপনার সম্মান অক্ষুণ্ন থাকবে। 

৭. সহানুভূতির চর্চা অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, অন্যের মতামতকে সম্মান জানানো, অন্যের কথা মন দিয়ে শোনা মানুষের চরিত্রের অন্যতম শক্তিশালী দিক। 


সুপার ফুড আমলকী 

আমলকী শুধু রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় না, হৃদ্‌যন্ত্রের যত্ন নেয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে, এমনকি ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক সমস্যায়ও সহায়তা করে। এতে থাকা পলিফেনল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষ পুনরুজ্জীবিত করে, ত্বক ও চুলে আনে তারুণ্যের ছোঁয়া। এটি প্রকৃতির এমন এক অ্যান্টি-এজিং উপাদান, যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। প্রতিদিন মাত্র একটি ছোট্ট আমলকী খেলে মিলবে অ্যাভোকাডোর চেয়েও বেশি উপকার সুস্থ জীবনযাপনের মানেই এখন যেন অ্যাভোকাডো, চিয়া সিড, কেল বা মাচা। কিন্তু এই বিদেশি ‘সুপার ফুড’-এর ভিড়ে আমরা প্রায়ই ভুলে যাই আমাদের দেশীয় সুপার ফুডগুলোর কথা। যেমন আমলকী। দেশীয় বিশেষজ্ঞরা অনেকেই বর্তমানে নানা মাধ্যমে বলে থাকেন, যদি আমলকী অর্ধেক পরিমাণেও অ্যাভোকাডোর মতো প্রচার পেত, তাহলে এর সুপারপাওয়ারে দেশ সুপার হেলদি হয়ে উঠত। এক ছোট্ট আমলকিতেই এক দিনের ভিটামিন সি প্রতিদিন মাত্র একটি ছোট আমলকী খেলেই শরীরের প্রয়োজনীয় পুরো দিনের ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মৌসুমি সংক্রমণ দূরে রাখে এবং শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে। অ্যাভোকাডো হয়তো আধুনিকতার প্রতীক, কিন্তু প্রকৃত স্বাস্থ্যরস খুঁজতে হলে ফিরে যেতে হবে আমলকীর কাছে। হৃদ্‌যন্ত্র ও রক্তচাপের জন্য দারুণ উপকারী আমলকীতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রক্তের খারাপ কোলেস্টেরলকে অক্সিডাইজ হতে বাধা দেয়। ফলে ধমনি পরিষ্কার থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত আমলকী খেলে হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়, যা অনেক সময় দামি সাপ্লিমেন্টও করতে পারে না। ডায়াবেটিস ও মেটাবলিক স্বাস্থ্যে ভূমিকা যাঁরা রক্তে শর্করা বা মেটাবলিক সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের জন্যও আমলকী এক অনন্য প্রাকৃতিক সহায়। এর মধ্যে থাকা পলিফেনল রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে, এমনকি শরীরে অ্যান্টি-ক্যানসার প্রভাবও ফেলে। এটি ডিএনএ ক্ষয় ধীর করে, শরীরের কোষ গুলিকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে। ত্বক ও চুলে তারুণ্যের ছোঁয়া আমলকী শুধু অন্ত্রের যত্নই নেয় না, বাইরের সৌন্দর্যেও এনে দেয় প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা। এতে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে টান টান রাখে, সূক্ষ্ম রেখা ও বলিরেখা কমায়, আর চুলে আনে প্রাকৃতিক ঘনত্ব ও দীপ্তি। এটি প্রকৃতির এমন এক অ্যান্টি-এজিং উপাদান, যার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। গ্লোবাল ‘ওয়েলনেস ট্রেন্ড’ যতই বদলাক, স্থানীয় খাবারগুলো যুগের পর যুগ প্রমাণ করে এসেছে তাদের কার্যকারিতা, এমন কথা বলছে জন হপকিন্সের গবেষকেরা। আমলকী তেমনই এক উপাদান যা একদিকে শক্তিশালী রোগপ্রতিরোধ দেয়, আবার অন্যদিকে ত্বক ও চুলে রাখে তারুণ্যের ছোঁয়া। প্রতিদিন মাত্র একটি বা এক চামচ পরিমাণ আমলকী খেলে, তা হতে পারে কাঁচা, শুকনো বা জুস আকারে। আপনার শরীর ও সৌন্দর্য দুটোই পাল্টে দিতে পারে। অ্যাভোকাডো নয়, এক মুঠো দেশীয় সুপার ফুডেই লুকিয়ে আছে প্রকৃত সুস্থতার রহস্য। আজ থেকেই তাই সকালের অভ্যাসে যুক্ত হতে পারে একটি বা এক চামচ টক-মিষ্টি আমলকী। 


দুপুরে খাওয়ার পর ক্লান্তি?  

দুপুরে খাওয়ার পর কাজের টেবিলে বসে মনোযোগ ধরে রাখা যেন এক কঠিন যুদ্ধ। চোখ ঢুলুঢুলু, মাথা ঝিমঝিম, আর চা-কফিও যেন কাজ করে না। আপনি একা নন—এই অভিজ্ঞতা আমাদের অনেকেরই। কিন্তু এটা অলসতার ফল নয়, বরং শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।

খাবারের পর শরীরে কী হয়? আমরা যখন ভাত, রুটি, মিষ্টি বা কোমল পানীয় খাই, তখন রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ বেড়ে যায়। শরীর তখন ইনসুলিন নিঃসরণ করে গ্লুকোজ কমাতে চেষ্টা করে। এই ওঠানামার ফলেই আসে ক্লান্তি, মনোযোগে ঘাটতি, এমনকি মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছাও। এর সঙ্গে যোগ হয় হজমের চাপ—ভরপেট খাওয়ার পর শরীরের রক্ত হজমে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ফলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে যায়। আর দুপুর ১টা থেকে ৩টার মধ্যে শরীরের জৈব ঘড়িও ঘুমঘুম ভাবের জন্য দায়ী।

তাহলে সমাধান কী? খুব সহজ কিছু অভ্যাসই পারে এই ক্লান্তি কমাতে এবং দুপুরের পরের সময়টাকে আরও ফলপ্রসূ করে তুলতে।

খাবার শুরু করুন সবজি বা প্রোটিন দিয়ে—সালাদ, ডাল, মাছ বা ডিম খাবারের পর মাত্র ৫ মিনিট হাঁটুন কোমল পানীয় বাদ দিয়ে পানি, লেবুপানি বা চিনি ছাড়া চা খান ফলের সঙ্গে খান প্রোটিন বা চর্বি—যেমন আপেলের সঙ্গে বাদাম অল্প অল্প করে খান, যাতে হজমে চাপ না পড়ে

আগামীকাল দুপুরে এই অভ্যাসগুলোর যেকোনো একটি চেষ্টা করুন। দেখবেন, দুপুরের ক্লান্তি অনেকটাই কমে গেছে, আর দিনের বাকিটা সময় আপনি থাকবেন এনার্জিতে ভরপুর।

আপনি কীভাবে দুপুরের ক্লান্তি সামলান? আপনার অভ্যাসগুলো কি এই তালিকার সঙ্গে মেলে? কমেন্টে জানাতে পারেন, আর পোস্টটি শেয়ার করে অন্যদেরও জানাতে পারেন এই সহজ কিন্তু কার্যকরী টিপসগুলো।



এলার্জিতে জীবন অতিষ্ঠ? এবার জেনে নিন মুক্তির গোপন রহস্য!

একবিংশ শতাব্দীতে পরিবেশ দূষণ, খাদ্যে কেমিক্যালের ব্যবহার ও জীবনযাত্রার দ্রুত পরিবর্তনের ফলে এলার্জি একটি সাধারণ ও বিরক্তিকর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাঁচি, চোখ ও ত্বকে চুলকানি, শ্বাসকষ্ট কিংবা ত্বকে ফুসকুড়ি—এসবই এলার্জির বহিঃপ্রকাশ। অনেকেই জানেন না, এলার্জি থেকে পুরোপুরি মুক্তি সম্ভব না হলেও নিয়মিত সতর্কতা ও কিছু ঘরোয়া অভ্যাস পালনের মাধ্যমে এলার্জিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

চলুন জেনে নেওয়া যাক এলার্জি থেকে মুক্তির কার্যকর কিছু উপায়।

১. এলার্জির উৎস চিহ্নিত করুন

প্রথম ধাপ হচ্ছে আপনার এলার্জির কারণ বা ‘ট্রিগার’ শনাক্ত করা। এটি হতে পারে ধুলাবালি, পোলেন, কিছু নির্দিষ্ট খাবার, পশুর লোম, অথবা কোনো ওষুধ। চিকিৎসকের পরামর্শে এলার্জি টেস্ট করিয়ে নিলে এটি সহজেই জানা সম্ভব।

২. ঘর-বাড়ি পরিষ্কার রাখুন

ধুলাবালি ও ছাঁচ (mold) এলার্জির বড় উৎস। ঘর নিয়মিত ঝাড়ু ও মপ দিয়ে পরিষ্কার করা, বিছানার চাদর ও পর্দা গরম পানিতে ধুয়ে ফেলা, এয়ার ফিল্টার ব্যবহার করা ইত্যাদি খুব কার্যকর পদ্ধতি।

৩. খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন

অনেক সময় কিছু খাবার এলার্জির কারণ হতে পারে—যেমন বাদাম, দুধ, ডিম, সয়াবিন, চিংড়ি ইত্যাদি। এলার্জির লক্ষণ দেখা দিলে ডায়েরি রাখুন এবং কোন খাবারের পর সমস্যা বাড়ছে তা লক্ষ্য করুন।

৪. ঘরোয়া উপায় ও হারবাল চিকিৎসা

কালোজিরা: কালোজিরার তেল বা গুঁড়া নিয়মিত গ্রহণ করলে এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

মধু: বিশেষ করে স্থানীয় মৌচাষের মধু এলার্জি কমাতে সহায়তা করতে পারে।

তুলসীপাতা ও আদা চা: এটি শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা ও সর্দিজনিত এলার্জির বিরুদ্ধে কার্যকর।

৫. ওষুধ গ্রহণ ও চিকিৎসকের পরামর্শ

অ্যান্টিহিস্টামিন, ইনহেলার, বা অন্য ওষুধ প্রয়োগে এলার্জির উপসর্গ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে এসব ওষুধ দীর্ঘমেয়াদে না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করা উচিত।

৬. ইমিউনোথেরাপি (Allergy Shots)

যাদের এলার্জি দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র, তাদের জন্য ইমিউনোথেরাপি বা অ্যালার্জি শট একটি কার্যকর সমাধান হতে পারে। এটি ধীরে ধীরে শরীরকে নির্দিষ্ট এলার্জেনের সঙ্গে অভ্যস্ত করে তোলে।

এলার্জি যেহেতু একপ্রকার শারীরিক প্রতিক্রিয়া, তাই একে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে নিজের শরীর সম্পর্কে সচেতনতা, নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা গ্রহণই হতে পারে একমাত্র পথ। এলার্জিকে অবহেলা না করে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে প্রয়োজন সচেতনতার!


অমর জেলিফিশ

অমর জেলিফিশ” নামে পরিচিত Turritopsis dohrnii হলো এক আশ্চর্য সামুদ্রিক প্রাণী, যার বৈশিষ্ট্য হলো—এটি বয়স বাড়লেও আবার নিজের জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে ফিরে যেতে পারে। স্পেনের University of Oviedo–এর জেনেটিসিস্টরা সম্প্রতি এই জেলিফিশের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন করেছেন এবং আবিষ্কার করেছেন সেই নির্দিষ্ট DNA অংশগুলো, যা তাকে কোষের বয়স উল্টে দিতে সক্ষম করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই জেলিফিশের মধ্যে এমন কিছু বিশেষ জিন রয়েছে যা DNA মেরামত, টেলোমেয়ার রক্ষণাবেক্ষণ, স্টেম সেল পুনর্নবীকরণ, এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোতে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। এর ফলে এটি “বৃদ্ধ” কোষগুলোকে আবার “তরুণ” কোষে রূপান্তর করতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই কোষীয় “রিসেট” বা পুনর্জন্ম প্রক্রিয়াটি বোঝা গেলে ভবিষ্যতে মানব বার্ধক্য গবেষণায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে। যদিও মানুষে এই প্রক্রিয়া সরাসরি প্রয়োগ করা এখনো সম্ভব নয়, তবুও এটি aging এবং regenerative medicine–এর ক্ষেত্রে এক বিশাল পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। 


লেবু পানি 

একটা দীর্ঘমেয়াদি গবেষণায় দেখা গেছে  প্রতিদিন লেবু পানি খাওয়া কিডনিতে স্টোন গঠনের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিতে পারে!  লেবুতে থাকে সাইট্রিক অ্যাসিড, যা কিডনিতে ক্যালসিয়াম জমে স্ফটিক (স্টোন) তৈরি হওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে শরীরে ক্ষতিকর পদার্থ সহজেই বেরিয়ে যায়, আর কিডনি থাকে অনেক বেশি সুস্থ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন  সকালে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি ও আধা লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া কিডনির জন্য দারুণ উপকারী।  এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে, ইউরিনের pH ব্যালেন্স করে এবং শরীরের টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।  যারা প্রতিদিন লেবু পানি খেতেন, তাদের কিডনি স্টোন হওয়ার হার ছিল অনেক কম তাদের তুলনায় যারা খেতেন না।  ফলমূল, শাকসবজি আর প্রচুর পানি খাওয়ার সঙ্গে যদি লেবু পানি যোগ হয়, তাহলে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।  তাই প্রতিদিনের শুরু হোক এক গ্লাস লেবু পানি দিয়ে সহজ অভ্যাস, সুস্থ কিডনির নিশ্চয়তা!  


আপনি কি জানেন?

পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি দ্বীপ রয়েছে সুইডেনে, যার মোট দ্বীপসংখ্যা ২,৬৭,৫৭০টি। এই বিপুল সংখ্যক দ্বীপের কারণে সুইডেনকে দ্বীপের দেশ বলা হয়। তবে এত দ্বীপের মধ্যে খুব অল্প কিছুতে মানুষের বসবাস আছে—প্রায় ১,০০০টির মতো দ্বীপে মানুষ বসবাস করে। বেশিরভাগ দ্বীপই ছোট, নির্জন এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। সুইডেনের স্টকহোম আর্কিপেলাগো অন্যতম বিখ্যাত দ্বীপপুঞ্জ, যেখানে অসংখ্য দ্বীপ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এই বিপুল দ্বীপসংখ্যা সুইডেনকে বিশ্বে এক নম্বরে রেখেছে দ্বীপের দিক থেকে।

যদি কেউ সুইডেনের সবগুলো দ্বীপ (প্রায় ২,৬৭,৫৭০টি) ঘুরে দেখতে চায়, সেটা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব।কেউ যদি থেমে থেমে দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখে, তাহলে কমপক্ষে ১৫–২০ দিন দরকার হয়।যদি কেউ সুইডেনের সবগুলো দ্বীপ (প্রায় ২,৬৭,৫৭০টি) ঘুরে দেখতে চায়, সেটা বাস্তবে প্রায় অসম্ভব। তবে একটা কল্পনাভিত্তিক ও গাণিতিক বিশ্লেষণ দিয়ে বোঝানো যায় এতে কত সময় লাগতে পারে।

ধরুন:

প্রতিদিন গড়ে আপনি ৫টি দ্বীপ ঘুরলেন (যাতায়াত, দেখা ও বিশ্রামসহ বাস্তবসম্মত গতি)।

তাহলে পুরো দ্বীপগুলো ঘুরে দেখতে সময় লাগবে:

> ২,৬৭,৫৭০ ÷ ৫ = ৫৩,৫১৪ দিন

অর্থাৎ প্রায় ১৪৬.৬ বছর!

এমনকি আপনি যদি প্রতিদিন ১০টি দ্বীপও ঘুরে দেখেন, তবুও সময় লাগবে:

> ২,৬৭,৫৭০ ÷ ১০ = ২৬,৭৫৭ দিন = প্রায় ৭৩.৩ বছর

--২য় স্থান: ফিনল্যান্ড (Finland) – প্রায় ১,৭৮,০০০-এর বেশি দ্বীপ

--৩য় স্থান: নরওয়ে (Norway) – প্রায় ১,১৭,০০০-এর বেশি দ্বীপ!



  খাওয়ার সময় ফোন দেখার অভ্যাস  

খাওয়ার সময় মোবাইল ব্যবহার করা শুধু আচরণগত সমস্যা নয়, এটি জৈবিক (biological) ও বৈজ্ঞানিক (scientific) দিক থেকেও হজমে বাধা সৃষ্টি করে। যখন আমরা খাবার খাই, তখন শরীরের parasympathetic nervous system সক্রিয় হয়, যাকে বলা হয় “rest and digest mode।” এই অবস্থায় পাকস্থলীতে হজমরস, এনজাইম ও ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। কিন্তু যদি আমরা ফোন দেখি বা কথা বলি, তখন মস্তিষ্ক sympathetic mode-এ চলে যায়, অর্থাৎ “fight or flight” অবস্থায়। ফলে শরীরের হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, কারণ রক্তপ্রবাহ পাকস্থলী থেকে সরে মস্তিষ্ক ও পেশিতে চলে যায়।

খাওয়ার সময় মনোযোগ খাবারে না থাকলে আমাদের মুখ থেকে salivary amylase নামক এনজাইম কম নিঃসৃত হয়, যা মুখে খাবার ভাঙার প্রথম ধাপ। এর ফলে কার্বোহাইড্রেট ঠিকভাবে ভাঙতে পারে না, এবং পাকস্থলীতে বেশি সময় লাগে হজম হতে। একইসাথে, ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখ ও মস্তিষ্ক ক্রমাগত ডোপামিন নির্গত করে, যা ক্ষুধা ও পরিতৃপ্তির সংকেতকে দমন করে দেয়। এই নিউরোকেমিক্যাল ভারসাম্যহীনতা hypothalamus-এর উপর প্রভাব ফেলে, যা আমাদের ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রণ করে।

এছাড়া, ফোন ব্যবহার করার সময় সাধারণত আমরা কুঁজো হয়ে বসি, এতে পাকস্থলী ও অন্ত্রের উপর চাপ পড়ে, ফলে peristaltic movement ধীর হয়ে যায়। এটি খাবারকে অন্ত্রের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে বাধা দেয়, ফলে গ্যাস, অম্বল ও ফাঁপাভাব দেখা দেয়।

বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, শরীর যখন খাবার গ্রহণ করে, তখন মস্তিষ্ক, হরমোন ও পরিপাক অঙ্গগুলো একসাথে কাজ করে — এটি একধরনের neuro-gastro-endocrine এর coordination। ফোনে মনোযোগ দিলে এই সমন্বয় ভেঙে যায়। তাই, জৈবিকভাবে সুস্থ ও কার্যকর হজমের জন্য প্রয়োজন মনোযোগপূর্ণ খাওয়া — কোনো স্ক্রিন নয়, শুধু খাবার ও নিজের শরীরের সঙ্গে সংযোগ।


গরুর নেহারি

বর্তমানে একটি মিথ প্রচলিত আছে—অনেকে মনে করেন, গরুর নেহারির তেলতেলে অংশটাই ক্যালসিয়াম এবং এটি খেলে শরীরে ক্যালসিয়াম বাড়ে। কিন্তু এ ধারণা একেবারেই ভুল।

নেহারি সাধারণত গরু বা ছাগলের পা দিয়ে তৈরি হয়, যেখানে হাড় থেকে বের হয় একটি হলুদাভ, নরম পদার্থ—যা আসলে অস্থিমজ্জা বা বোন ম্যারো। এটি মূলত চর্বিজাত উপাদানে ভরপুর, যেমন: কোলাজেন, গ্লুকোসামিন, কনড্রয়েটিন ও ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিডস। এগুলো শরীরের জন্য উপকারী হলেও এতে ক্যালসিয়াম প্রায় নেই বললেই চলে। কোলাজেন, গ্লুকোসামিন, কনড্রয়েটিন ও ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিডস এগুলো তো হাঁটু ব্যাথা ও হারের জন্য বেশ উপকারী। এগুলো ট্যাবলেট আকারেও বিক্রি হয়। ডাক্তারের কাছে গেলেই এই ওষুধ গুলো লিখে দেয় 

ক্যালসিয়াম হলো একটি খনিজ, যা থাকে হাড়ের শক্ত অংশে—গুঁড়া বা কঠিন আকারে। রান্নার সময় এতে অল্প কিছু ক্যালসিয়াম ঝোলে আসতে পারে, তবে তা এতই কম যে শরীরের চাহিদা পূরণে কোনো কাজ দেয় না।

তাই নেহারির হলুদ অংশকে ক্যালসিয়াম ভাবা যেমন ভুল, তেমনি এটি খেয়ে ক্যালসিয়াম বাড়ে মনে করাও বিভ্রান্তিকর। ক্যালসিয়াম পেতে নেহারি নয় দুধ, দই, পনির, সাদা মাছ ও অন্যান্য ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান।



গোল্ডেন রেশিও

গোল্ডেন রেশিও (Golden Ratio) হলো এক বিস্ময়কর গাণিতিক অনুপাত, যার মান প্রায় 1.618... (অসীম দশমিক পর্যন্ত যায়)। এই অনুপাতকে প্রাচীনকাল থেকেই বলা হয় সৌন্দর্য ও ভারসাম্যের গোপন সূত্র।

গোল্ডেন রেশিওকে সাধারণত গ্রিক বর্ণ φ (ফি) দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এই অনুপাতটি শুধু গণিতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং প্রকৃতি, স্থাপত্য, শিল্প, এমনকি মানুষের শরীরেও দেখা যায়।

সূর্যমুখীর বীজের সর্পিল ঘূর্ণি, পাতার বিন্যাস, মিশরের পিরামিড, লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মোনালিসা, এমনকি মানুষের মুখের অনুপাতেও এই φ দেখা যায়। গাণিতিকভাবে বললে,

যদি কোনো রেখাকে এমনভাবে ভাগ করা হয় যেন,

বড় অংশ : ছোট অংশ = পুরো অংশ : বড় অংশ = φ (প্রায় 1.618) হয়, তাহলে একে গোল্ডেন রেশিও বলা হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেসব বস্তুর গঠন এই অনুপাতের কাছাকাছি থাকে, সেগুলো মানুষের চোখে সবচেয়ে সুষম, সুন্দর ও স্বাভাবিক মনে হয়।

এই কারণেই গোল্ডেন রেশিওকে বলা হয় — “প্রকৃতির সৌন্দর্যের গাণিতিক রহস্য” কিংবা “গাণিতিক পরিপূর্ণতার প্রতীক”।


পৃথিবীর সবচেয়ে অপ্রতিরোধ্য প্রাণী 

 বাঘ সিংহ? হাঙর? নাকি অন্য কিছু? উত্তরটি শুনলে চমকে উঠবেন । এটি একটি ক্ষুদ্র, অণুজীবের মতো প্রাণী, যার নাম 'টার্ডিগ্রেড', সাধারণত ‘ওয়াটার বেয়ার’ বা ‘মস পিগলেট’ নামে পরিচিত। এই অণুবীক্ষণিক জীব, যার আকার মাত্র ০.৫ থেকে ১.৫ মিলিমিটার, পৃথিবীর সবচেয়ে চরম পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে! একে আপনি যেখানেই রাখেন না কেন, সেখানেই দিব্যি টিকে থাকবে! কোথায় বাঁচতে পারে না এই টার্ডিগ্রেড? হিমায়িত তুষারময় অ্যান্টার্কটিকা থেকে শুরু করে উত্তপ্ত মরুভূমি, এমনকি মহাশূন্যের জিরো গ্র‍্যাভিটিতেও   টিকে থাকতে পারে!! কি অবাক হচ্ছেন? কিন্তু কীভাবে সম্ভব এমন অসাধারণ ক্ষমতা?

এরা প্রাণীজগৎ বা Animalia রাজ্যের অধীনে পড়লেও, এদের একটি পূর্ণাঙ্গ পর্ব বা Phylum আছে — যার নাম Tardigrada। এই নাম এসেছে ল্যাটিন শব্দ tardus (ধীর) এবং gradus (পদক্ষেপ) থেকে — কারণ এরা আট পায়ে ধীরে ধীরে হাঁটে। বর্তমানে প্রায় ১,৩০০ প্রজাতির টার্ডিগ্রেড চিহ্নিত হয়েছে। গবেষকরা বলছেন, এদের দেহে রয়েছে এক অনন্য জৈবিক প্রক্রিয়া, যা এদের অস্বাভাবিক সারভাইভিং  করে তোলে । টার্ডিগ্রেডের এই অসাধারণ টিকে থাকার ক্ষমতার পেছনে রয়েছে ‘ক্রিপ্টোবায়োসিস’ নামক একটি বিশেষ অবস্থা — বিশেষ করে অ্যানহাইড্রোবায়োসিস। এই অবস্থায় তারা তাদের শরীরের জল ৯৯% পর্যন্ত হারায়, দেহ সঙ্কুচিত হয়ে একটি শুকনো বলের মতো হয়ে যায়। 

এই সময় বিপাক প্রক্রিয়া প্রায় শূন্যের কাছাকাছি চলে যায় —হৃদস্পন্দন, শ্বাস-প্রশ্বাস, হজম, সব বন্ধ। এরা তৈরি করে বিশেষ প্রোটিন, যেমন Tardigrade Damage Suppressor (TDS) এবং LEA প্রোটিন, যা কোষের ক্ষয় রোধ করে। এই অবস্থায় তারা টিকে থাকতে পারে –২৭২° সেলসিয়াস (পরম শূন্যের কাছাকাছি! ভাবুন একবার! ) থেকে +১৫০° সেলসিয়াস তাপমাত্রায়, ৬,০০০ বায়ুমণ্ডল চাপে (মারিয়ানা ট্রেঞ্চের চেয়েও গভীর), এবং মানুষের তুলনায় ১,০০০ গুণ বেশি বিকিরণেও। ২০০৭ সালে নাসার FOTON-M3 মহাকাশযানে টার্ডিগ্রেড পাঠানো হয়েছিল — সেখানে ১০ দিন ধরে খোলামেলা মহাশূন্যে থেকেও এরা বেঁচে ফিরে এসেছিল এবং ডিম পেড়েছিল!

এরা পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই বাস করে — শ্যাওলা-লাইকেনের উপর, সমুদ্রের তলদেশ, হিমবাহের ভিতর, মরুভূমির বালুকণা, গাছের ছাল, এমনকি পাহাড়ের চূড়া ও গুহার অন্ধকারেও। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টার্কটিকার বরফে ৩১ বছর ধরে জমাট বাঁধা একটি টার্ডিগ্রেড পানি দিয়ে পুনর্জাগরিত হয়ে হাঁটতে শুরু করেছিল!  তবে, তাদের এই অসাধারণ ক্ষমতা সত্ত্বেও, পরিবেশ দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন তাদের বাসস্থানের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাই এই সুপারপাওয়ার প্রাণীকে রক্ষা করতে আমাদের প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে।


“হাঁটা গাছ”  

Socratea exorrhiza (যেটাকে “Walking Palm Tree” বলে) সত্যি আছে অ্যামাজন জঙ্গলে। এর শিকড়গুলো অনেকটা লাঠির মতো, আর গাছটা যদি কোনো একদিকে আলো বা শক্ত মাটি পায়, তখন সেই দিকের শিকড় বড় হয়, আর উল্টোদিকের শিকড় শুকিয়ে যায়। এতে মনে হয় যেন গাছটা “হেঁটে” গেছে — কিন্তু বাস্তবে গাছটা শুধু দিক বদলায়, সত্যিকারের “হাঁটে” না।

মানে, এটা হাঁটার মতো দেখায়, কিন্তু গাছটা নিজের জায়গা থেকে কয়েক ইঞ্চির বেশি নড়ে না

তবে হ্যাঁ, দেখতে এমন লাগে যেন জঙ্গলের মধ্যে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে—আর সেই কারণেই একে সবাই বলে “Walking Tree”! 


এমন এক শহর, যেখানে সূর্য কখনও অস্ত যায় না!

ভাবতে পারো, এক জায়গা আছে যেখানে বছরে কয়েক মাস সূর্য ডুবে না একটুও। এই শহরগুলো মূলত উত্তর মেরু আর দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি, যেমন—নরওয়ের Tromsø বা Svalbard। ওখানে গ্রীষ্মের সময় “Midnight Sun” নামে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে । মানে, রাত ১২টাতেও রোদ পড়ে থাকে, পাখিরা উড়ে, মানুষ ঘুরে বেড়ায়, আর আকাশে সূর্য হাসে!

পর্যটকদের জন্য এটা একদম স্বপ্নের জায়গা। সারারাত রোদে ক্যাম্পিং, ছবি তোলা, কিংবা স্রেফ সূর্যাস্তের অপেক্ষা — যেটা কোনোদিনই আসে না!


অত্যাশ্চর্য তথ্য

আমরা যে অক্সিজেন শ্বাস নিচ্ছি, তার বেশিরভাগই আসে গাছ থেকে নয় — বরং সমুদ্রের শৈবাল ও ক্ষুদ্র জীবদের থেকে!

পৃথিবীর মোট অক্সিজেনের প্রায় ৫০–৮০% উৎপন্ন হয় সমুদ্রের শৈবাল, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন এবং সায়ানোব্যাকটেরিয়া (Cyanobacteria) নামের অতি ক্ষুদ্র জীবের মাধ্যমে।

এরা এতটাই ছোট যে খালি চোখে দেখা যায় না, কিন্তু তাদের ভূমিকা বিশাল — সূর্যের আলো ব্যবহার করে ফটোসিনথেসিসের মাধ্যমে অক্সিজেন তৈরি করে, যা বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে এবং আমাদের জীবনের মূল জ্বালানিতে পরিণত হয়।

ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটনকে বলা যায় সমুদ্রের “অদৃশ্য বন”। তারা প্রতিনিয়ত অক্সিজেন উৎপন্ন করছে, আবার একই সঙ্গে সমুদ্রের কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি কোনো একদিন সমুদ্রের এই ক্ষুদ্র প্রাণীরা কাজ বন্ধ করে দেয়, তাহলে পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য ধীরে ধীরে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়বে!



পানির নিচে আগুন জ্বলে!  

আগুন জ্বলার জন্য লাগে তিনটা জিনিস:

জ্বালানি (Fuel)

অক্সিজেন (Oxygen)

তাপ (Heat)

পৃথিবীর গভীরে, সমুদ্রের নিচে আছে এক অদ্ভুত জিনিস —

যার নাম Methane Hydrate বা Fire Ice

এটা দেখতে বরফের মতো, কিন্তু ভিতরে ভরপুর মিথেন গ্যাস থাকে।

যখন এই মিথেন বরফ থেকে বেরিয়ে আসে,

আর কোনোভাবে আগুনের সংস্পর্শে আসে — তখন

“পানির নিচেই আগুন জ্বলে ওঠে!”

Caspian Sea (ক্যাস্পিয়ান সাগর) – এখানে প্রাকৃতিক গ্যাসের কারণে আগুনের শিখা দেখা যায়।

Iraq-এর Baba Gurgur এলাকা — এখানে শত শত বছর ধরে মাটির নিচ থেকে আগুন জ্বলছে!

Azerbaijan-এর "Yanar Dag" মানে “জ্বলন্ত পাহাড়” — এখানে পাহাড়ের গায়ে আগুন জ্বলতে থাকে, আর নিচে পানি প্রবাহিত হয়!

এগুলো পর্যটকদের কাছে এক ধরনের “জাদুর জায়গা”!  

পানির নিচে  আগুন জ্বলে তখনই, যখন দাহ্য গ্যাস (মিথেন বা প্রাকৃতিক গ্যাস) পানির ভিতর থেকে বের হয়,

এমনকি কিছু জায়গায় জীবাণু (microbes) নিজেরাই মিথেন তৈরি করে!

সোডিয়াম বা পটাশিয়াম ধাতু যদি পানিতে ফেলা হয়, সঙ্গে সঙ্গে আগুন ধরে যায়!

কারণ এরা পানির সঙ্গে প্রচণ্ডভাবে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি করে, 




রোদে না যাওয়া মানে শুধু ভিটামিন D-এর অভাব না, 

বরং পুরো শরীরের বায়োলজিক্যাল ব্যালান্সের ভাঙন!


রোদে না গেলে যেসব সমস্যা হয় তার লিস্ট করতে গেলে বহু পাতা বিশিষ্ট বই লিখতে হবে!

রোদ হলো ফ্রি মেডিসিন, ফ্রি ভ্যাকসিন, ফ্রি এনার্জি সোর্স।

তবুও আমরা একে ভয় পাই, কারণ আধুনিক প্রোপাগান্ডা আমাদের ব্রেইনওয়াশ করে প্রকৃতিবিরুদ্ধ জীবনযাপনে ঠেলে দিয়েছে।

অথচ ১৯২০-৩০ এর দিকে ইউরোপেই এমন ক্লিনিক ছিলো যেখানে মানুষকে ভর্তি করার পর রোদ পোহানোর জন্য বেড ছিলো! একে বলা হতো হেলিওথেরাপি।

সূর্যের আলো মানুষের সার্কাডিয়ান রিদমের সবচেয়ে শক্তিশালী জাইটগিবার (Zeitgeber)। জাইটগিবার বলতে বোঝায় এমনসব বাহ্যিক সংকেত যা আমাদের শরীরের biological clock বা circadian rhythm-কে সময়ের সঙ্গে সিংক বা রিসেট করে।

কখন ঘুমাতে হবে, কখন উঠতে হবে, কখন ক্ষুধা লাগবে -এ সবই নিয়ন্ত্রিত হয় অন্তর্নিহিত ঘড়ি দ্বারা, আর সেই ঘড়িকে সময়মতো চালাতে সাহায্য করে বাহ্যিক জাইটগিবার-রা।

সূর্যের আলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাইটগিবার! আমাদের মস্তিষ্ক ও শরীর এই সূর্যালোক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার জন্য ডিজাইন করা।

সূর্যের আলো মস্তিষ্কের সুপ্রাচিয়াসমেটিক নিউক্লিয়াস (SCN)-এর উপর প্রভাব বিস্তার করে। SCN হলো সার্কাডিয়ান রিদমের প্রধান নিয়ন্ত্রক।

সূর্যের আলো যখন চোখের উপর পড়ে তখন একটি সংকেত SCN-এর অভ্যন্তরীণ ঘড়ির সময়সূচী সমন্বয় করে। এরই নাম- সার্কাডিয়ান রিদম সিনক্রোনাইজ। এর ফলে মানুষের শারীরিক ও মানসিক কার্যকারিতা সঠিক ও সবচেয়ে উত্তম হয়, যার মধ্যে রয়েছে ঘুম-জাগরণ চক্র, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, হরমোন নিঃসরণ, খাদ্যগ্রহণ ও বিপাক ইত্যাদি।

সার্কাডিয়ান রিদমের প্রকৃত দৈর্ঘ্য গড়ে ২৪ ঘন্টা ১১ মিনিট অর্থাৎ পৃথিবীর দিন থেকে কিছুটা বেশী। তাই এটি প্রতিদিন কিছুটা দেরিতে চলতে চায়। সকালে সূর্যের আলো এটিকে সঠিক ২৪ ঘণ্টার চক্রে ফিরিয়ে আনে।

কিন্তু যদি সকালে সূর্যের আলো না পাওয়া যায় তবে দেহঘড়ি তার বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দেরিতে চলতে শুরু করে। দিনের পর দিন এভাবে ঘটতে থাকলে একসময় সার্কাডিয়ান রিদমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়! যাকে বলে ‘সার্কাডিয়ান ডিসরাপশন’!

ধরুন, আপনার ঘড়ি দিনে ১১ মিনিট এগিয়ে বা পিছিয়ে যায়। অবশ্যই প্রতিদিন সকালে এই ঘড়িটিকে ১১ মিনিট পিছিয়ে বা এগিয়ে দিতে হবে। যদি সপ্তাহ বা মাস ধরে ঘড়িটিকে সিনক্রোনাইজ না করেন তবে আপনার সিডিউলের যে পরিণতি হবে— প্রতিদিন সকালে সূর্যের আলোতে যেয়ে দেহের সার্কাডিয়ান রিদম সিনক্রোনাইজ না করলে আপনার স্বাস্থ্যেরও একই অবস্থাই হবে!

আর বর্তমানে আমরা সেটাই দেখতে পাচ্ছি মানব জাতির সার্বিক  হেলথ ম্যানেজমেন্টে! সামনে আরো দেখতে পাবো- যখন বিশ্বে প্রত্যেকটি পরিবারে অন্তত একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত সদস্য বা একজন ডিজএ্যাবল সদস্য থাকবে!

যেমন, বর্তমান বিশ্বে এমন পরিবার পাওয়া বিরল, যে পরিবারে অন্তত একজন ডায়াবেটিস বা হাইপারটেনশন বা কার্ডিও রোগী নেই!

সার্কাডিয়ান রিদম প্রতিদিন সঠিকভাবে সিনক্রোনাইজ হলে রাতের শুরুতেই ঘুম আসার প্রক্রিয়া সহজ হয় এবং ঘুমের মান উন্নত হয়। যারা বিভিন্ন ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য পিল বা সাপ্লিমেন্ট কোনো সমাধান নয়। বরং নিয়মিত সকাল, দুপুর ও সন্ধ্যায় সূর্যের আলোতে এক্সপোজ হওয়া এবং রাতে সবধরনের কৃত্রিম আলো থেকে কঠোরভাবে দূরে থাকার মধ্যেই তাদের জন্য স্থায়ী সমাধান ও প্রকৃত উপকার রয়েছে।

রোদে যাওয়ার ব্যাপারটা মানুষ ফ্রিতেই পায়, তাই কঞ্জিউমার ক্যাপিটালিজম রোদকে ভিলেন বানিয়েছে। কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রি, স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড ও ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেটিং রোদকে ক্ষতিকর হিসেবে প্রচার করেছে, যেন মানুষ ভিটামিন D-এর জন্য বাইরে না যেয়ে সানস্ক্রিন, সাপ্লিমেন্ট ও ওষুধের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে!

এতে মানুষ নিত্যনতুন লাইফস্টাইল ডিজিজেও আক্রান্ত হচ্ছে!

রোদে না গেলে যা হয়—

- ভিটামিন D ঘাটতি

- ইনফ্লামেটরি ডিজিজ (যেমন আর্থ্রাইটিস, অটোইমিউন সমস্যা)

- ঘুমের ব্যাঘাত (কারণ মেলাটোনিন উৎপাদন ব্যাহত হয়)

- মেটাবলিক সিনড্রোম (ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা)

- চোখের দুর্বলতা

- মানসিক ক্লান্তি

- এমনকি কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি

ভিটামিন D মূলত সূর্যের আলো থেকেই প্রাপ্ত হয়, খাদ্য থেকে নয়।দেহে ভিটামিন D তৈরি হয় UV-B রশ্মির মাধ্যমে। UV লাইট ছাড়া দেহে ভিটামিন D তৈরি হয় না।

যখন সূর্যের আলো ত্বকে পড়ে, তখন ত্বকের 7-ডিহাইড্রোকোলেস্টেরল রূপান্তরিত হয়ে প্রোভিটামিন D3 হয়, যা পরে লিভার ও কিডনিতে প্রসেস হয়ে ভিটামিন D-তে পরিণত হয়।

এই ভিটামিন D ছাড়া কোনো সুস্থ-সবল মানুষের অস্তিত্ব কল্পনা করা সম্ভব না! এটি হাড়, ইমিউন সিস্টেম, হরমোন, মুড, মেটাবলিজম -সবকিছুর সঙ্গে জড়িত। যাদের ভিটামিন D ঘাটতি আছে তাদের শরীরটা হলো নানান রোগের বাসা!

এই ভিটামিন D ছাড়া—

- হাড় দুর্বল হয়ে যায়

- রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়

- মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি, ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়

- হরমোনাল ভারসাম্য নষ্ট হয়

- ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।

বাজারের বেশিরভাগ কৃত্রিম সানস্ক্রিনে থাকে অক্সিবেনজোন (Oxybenzone), অ্যাভোবেনজোন (Avobenzone), অক্টিনক্সেট (Octinoxate) ইত্যাদি কেমিক্যাল! এগুলো ত্বকের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করে, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টর হিসেবে কাজ করে! এই কেমিক্যালস জলজ প্রাণীর জন্যও বি/ষা/ক্ত। সবচেয়ে ভয়ংকর যেটা- এগুলো সূর্যের আলোতে অক্সিডাইজ হয়ে ত্বকেই ফ্রি র‍্যাডিকেল তৈরি করতে পারে! অর্থাৎ তথাকথিত যে সুরক্ষা দিতে এসেছে, সেটাই শেষমেশ ক্ষতি করে।

বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে রোদের অপকার নেই বললেই চলে। এখানে রোদের তীব্রতা কখনোই ইউরোপ বা আমেরিকার মতো ক্ষতিকর হয় না। রোদের অপকার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুষ্টি বা লাইফস্টাইলজনিত। সূর্যের আলো নিজে ক্ষতিকর নয়; অতিরিক্ত এক্সপোজার, পানিশূন্যতা এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ঘাটতির কারণে ক্ষতি হয়।

সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সূর্যস্নান করলে ভিটামিন D উৎপাদন হয় সর্বোচ্চ মাত্রায় এবং কোনো ক্ষতি ছাড়াই।

বাকী সময়ের রোদে না গেলে ভাল, কারণ কালো হয়ে যাবেন! তবে এটা ক্ষতিকর কিছু না।

রোদে গেলে ত্বক কালো হয়, কারণ যখন রোদের UV-B রশ্মি ত্বকে পড়ে, তখন ত্বকের মেলানোসাইটস কোষগুলো বেশি করে মেলানিন উৎপন্ন করে। এই ত্বক কালো হওয়া কোনো ক্ষতি না, বরং বডির ইন্টেলিজেন্ট সেল ডিফেন্স সিস্টেম!

মেলানিন হলো এক প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন, এটা সূর্যের ক্ষতিকর UV রশ্মি শোষণ করে ত্বককে পোড়া, ক্যান্সার ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।

এদেশে যারা সারাদিন সারাজীবন মাঠের কড়া রোদে কাজ করে তাদের কি কখনো স্কিন ক্যান্সার হইতে শুনেছেন? স্কিন ক্যান্সার হয় কাদের সেটা একটু খোঁজ নেন।

বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক, জেলেরা বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে কাজ করেন। তাদের ত্বক প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। তাদের মধ্যে ভিটামিন D লেভেল বেশি এবং ত্বকে মেলানিনের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় UV তাদের ক্ষতি করতে পারে না। তাদের মধ্যে স্কিন ক্যান্সারের হার প্রায় শূন্য! তারা সুস্থ, শক্তিশালী ও সাধারণত হাড়-গোড়ের রোগে কম ভোগেন!

গবেষণায় দেখা গেছে, স্কিন ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি হয় ফর্সা চামড়ার, ঠান্ডা আবহাওয়ার মানুষদের মধ্যে, যেমন ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার জনগোষ্ঠী।

এর কারণ তাদের মেলানিন কম, ফলে ত্বক UV রশ্মি প্রতিরোধ করতে পারে না। শীতের দেশে রোদের কোণ কম থাকে, তাই হঠাৎ করে গ্রীষ্মের রোদে গেলে ত্বক সহজে পুড়ে যায়।

বাংলাদেশ, ভারত, আফ্রিকার মতো দেশে, যেখানে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই রোদে থাকে এবং সবার ত্বক গাঢ় মেলানিনে সুরক্ষিত, সেখানে স্কিন ক্যান্সার অতি বিরল ঘটনা।

তবে এমনিতে অবশ্যই দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টার প্রখর রোদে দীর্ঘক্ষণ না থাকা ভালো। কারণ এই সময় অস্বস্তি, পানিশূন্যতা বা হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়তে পারে।

মানুষের শরীরে প্রাকৃতিকভাবেই সানস্ক্রিন দেয়া আছে। কৃত্রিম বি/ষা/ক্ত কেমিক্যাল লাগানোর কোনো দরকার নেই। সেই প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনটি হলো মেলানিন (Melanin)। মেলানিন হলো আমাদের শরীরের বিল্ট-ইন অ্যান্টি-ইউভি সিস্টেম!

ত্বকের মেলানোসাইট কোষগুলো মেলানিন তৈরি করে। UV রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে এটা ত্বক, চোখ, এমনকি মস্তিষ্ক পর্যন্ত সুরক্ষা দেয়। UV রশ্মি ত্বকে পড়লে মেলানিন তা শোষণ করে এবং এর ক্ষতিকর শক্তিকে তাপে রূপান্তরিত করে ছড়িয়ে দেয়। ফলে DNA ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, কোষে ক্যান্সার সৃষ্টির সম্ভাবনা কমে যায়।

UV রশ্মি ছাড়াও রোদের প্রায় ৫৪% হলো Near Infrared Light (NIR), যা চোখে দেখা যায়না, কিন্তু শরীরের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। এটি শরীরের ইনফ্লামেশন কমায়, মেলাটোনিন উৎপাদন বাড়ায়, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে, গাট মাইক্রোবায়োম ভাল রাখে, চোখ ও হাড়গোড় সুস্থ রাখে। এটি প্রকৃতির একটি বিনামূল্যের থেরাপি!

NIR রশ্মি ইমিউন সিস্টেমকে এমনভাবে শক্তিশালী করে যে, এটি সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক টিকার মতো কাজ করে!

এর উপকারিতাগুলো হলো—

- ইনফ্লামেশন (সোয়েলিং/জ্বালাভাব) কমায়

- সেলুলার মেলাটোনিন উৎপাদন বাড়ায়। যা ঘুম নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে

- মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যক্ষমতা বাড়ায়, ফলে শক্তি উৎপাদন ভালো হয়

- ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে

- গাট মাইক্রোবায়োম সুস্থ রাখে। পরিপাকতন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে

- চোখ, ত্বক ও হাড়ের কোষ পুনর্গঠনে সহায়তা করে

- সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় করে।

- ডিপ্রেশন ও মানসিক চাপ কমায়


চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইন

পেঙ্গুইনদের একটি প্রজাতি, যাদের চিনস্ট্র্যাপ পেঙ্গুইন নামে ডাকা হয়, এদের ঘুমের ধরন অনেকটাই অদ্ভুত। দুনিয়ার মধ্যে অন্যতম অস্বাভাবিক ঘুমের ধরন হচ্ছে এদের। দীর্ঘ, একটানা ঘুমের পরিবর্তে, তারা প্রতিদিন হাজার হাজার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ঘুম দেয়, যার প্রতিটির স্থায়িত্ব মাত্র চার সেকেন্ডের মতো।

​এই ক্ষুদ্র-ঘুমগুলি তারা দাঁড়ানো ও শোয়া উভয় অবস্থাতেই দেয়, যা তাদের স্কোয়াস বা সিলের মতো শিকারীদের হাত থেকে সর্বদা সতর্ক থাকতে সাহায্য করে।

​পুরো একটি দিনে, এই অসংখ্য ছোট ছোট ঘুম যোগ করে মোট এগারো ঘণ্টা বিশ্রাম নেয়া হয়।

​এই খণ্ড খণ্ড ঘুমের ধরনটি শিকারী-ভরা অ্যান্টার্কটিক পরিবেশে জীবনধারণের জন্য এক অবিশ্বাস্য অভিযোজন, যা নিশ্চিত করে যে পেঙ্গুইনরা তাদের সতর্কতা সম্পূর্ণরূপে না কমিয়েই তাদের বিশ্রাম নিতে পারে।

​গবেষকরা মনে করেন যে, অ্যান্টার্কটিকের উন্মুক্ত উপকূলে দীর্ঘ প্রজনন ঋতুতে বিশ্রামের প্রয়োজনের সাথে ক্রমাগত সতর্কতার ভারসাম্য বজায় রাখতেই এই অনন্য ঘুমের ছন্দে বিবর্তিত হয়েছে।


 ফ্রান্‌ৎস কাফকা

৪০ বছর বয়সে ফ্রান্‌ৎস কাফকা (১৮৮৩–১৯২৪) — যিনি কখনো বিয়ে করেননি, সন্তানও ছিল না — একদিন বার্লিনের এক পার্কে হাঁটছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন, এক ছোট্ট মেয়ে কাঁদছে। কারণ জানতে চাইলে মেয়েটি বলল, তার প্রিয় পুতুলটি হারিয়ে গেছে।

কাফকা মেয়েটির সঙ্গে অনেক খুঁজলেন, কিন্তু পুতুল আর মিলল না। তখন তিনি মেয়েটিকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,

“আগামীকাল এসো, আমরা আবার একসাথে খুঁজব।”

পরের দিনও পুতুলটি না পাওয়ায় কাফকা মেয়েটিকে একটি চিঠি দিলেন—

চিঠিটি যেন পুতুলের পক্ষ থেকেই লেখা:

“প্রিয় সখী, কেঁদো না। আমি পৃথিবী ঘুরতে বেরিয়েছি। আমার ভ্রমণের গল্প তোমায় লিখে জানাব।”

এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কাফকা মেয়েটিকে নতুন নতুন চিঠি পড়ে শোনাতেন—

যেন পুতুলটি দূরদেশ থেকে নিজের অভিযান, অভিজ্ঞতা আর গল্প শেয়ার করছে। মেয়েটি সেই চিঠিগুলো মুগ্ধ হয়ে শুনতো।

একদিন কাফকা মেয়েটিকে একটি নতুন পুতুল এনে দিলেন।

মেয়েটি অবাক হয়ে বলল, “এটা তো আমার আগের পুতুলের মতো নয়!”

কাফকা হেসে তাকে আরেকটি চিঠি দিলেন, যেখানে লেখা ছিল—

“ভ্রমণ আমাকে বদলে দিয়েছে।”

মেয়েটি পুতুলটিকে জড়িয়ে ধরে খুশিমনে

বাড়ি ফিরে গেল, আর গল্পটা সেখানেই শেষ নয়—

অনেক বছর পর, যখন মেয়েটি বড় হয়ে গেছে, একদিন সে পুতুলটির ভেতরে একটি ছোট্ট চিঠি খুঁজে পেল। সেখা


নেকড়ে 

নেকড়ে একটি গর্বিত প্রাণী, তাই তুর্কিরা তাদের সন্তানদের সিং*হে*র পরিবর্তে নে*ক*ড়ে*দের সাথে তুলনা করে। নে*ক*ড়ে একমাত্র প্রাণী যে তার স্বাধীনতার সাথে কখনো আপোষ করে না এবং কারো দাস হয় না, তবে ধরা পরার দিন থেকে খাবার গ্রহণ ব*ন্ধ করে দেয়, তাই আপনি এটিকে চিড়িয়াখানা বা সার্কাসে দেখতে পাবেন না। নে*ক*ড়ে কখনও মৃ*ত*কে খায় না, বা নে*ক*ড়ে মাহরাম (মা, বোন) এর দিকে তাকায় না, অর্থাৎ নে*ক*ড়ে তার মা এবং বোনকে বাকি প্রাণীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা জানে এবং খারাপভাবেও দেখে না। নে*ক*ড়ে তার স্ত্রীর প্রতি এতটাই অনুগত যে অন্য কারও সাথে তার সম্পর্ক নেই। একইভাবে, বিশ্বাসী (অর্থাৎ, তার স্ত্রী) একইভাবে নে*ক*ড়ে*র প্রতি অনুগত। নে*ক*ড়ে তার আদর্শ সন্তানদের জন্ম দেয় যাদের বাবা-মা একই থাকে ৷ যদি দম্পতির মধ্যে একজন মা*রা যায়, অন্যজন অন্তত তিন মাস মৃ*ত্যু*র জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে। নে*ক*ড়ে*কে আরবীতে "ইবনে আল-বার" বলা হয়, যার অর্থ "ভাল ছেলে" কারণ তার বাবা-মা বৃদ্ধ হয়ে গেলে সে তাদের জন্য শিকার করে এবং তাদের সম্পূর্ণ যত্ন নেয়। সেজন্য, তুর্কি এবং মঙ্গোলরা তাদের সন্তানদের সিং*হে*র পরিবর্তে নে*ক*ড়ে*দের সাথে তুলনা করে। তারা বিশ্বাস করে যে "সিং*হে*র মতো র*ক্ত*পিপাসু সন্তান হওয়ার চেয়ে নে*ক*ড়ে*র মতো কর্তব্যপরায়ন শাবক হওয়া ভালো। 


মাত্র ১০ মিনিট দড়ি লাফালেই মেলে আধা ঘণ্টা দৌড়ানোর সমান ফলাফল!

দড়ি লাফ এমন এক ব্যায়াম যা একসাথে শরীরের অনেক পেশিকে সক্রিয় করে, দ্রুত হার্টবিট বাড়ায় এবং দীর্ঘক্ষণ তা বজায় রাখে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে—দড়ি লাফানোর প্রভাব দীর্ঘ সময় দৌড়ানোর মতোই কার্যকর।

এটি শরীরের সহনশক্তি (স্ট্যামিনা) বৃদ্ধি করে, হৃদযন্ত্রকে মজবুত রাখে এবং সামগ্রিকভাবে ফিটনেস উন্নত করে।

তাই যাদের সময় কম, তাদের জন্য দড়ি লাফানো হতে পারে সবচেয়ে সহজ, কার্যকর এবং সময় বাঁচানো ব্যায়ামগুলোর একটি।


অপারেশন বেলুগা 

১৯৮৪ সালের ডিসেম্বরে, রাশিয়ার কাছাকাছি চুকচি সাগরে (Chukchi Sea) প্রায় ৩,০০০ বেলুগা তিমি বরফের ফাঁদে আটকা পড়েছিল। তিমিগুলো ঘন বরফে ঘেরা ছোট ছোট পানির গহবরে আটকে ছিল। বরফগুলি কিছু এলাকায় প্রায় ৩ মিটার (১০ ফুট) পর্যন্ত পুরু ছিল।

​বিশাল বরফের প্রতিবন্ধকতা থাকার কারণে তিমিগুলো বরফের মাঝখানে আলাদা ছোটো ছোটো পুল থেকে মূল সমুদ্রে ফিরতেও পারছিলনা, তিমিগুলোর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল এবং তাদের মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল। তাদের উদ্ধারে সাহায্য করার জন্য, অ্যাডমিরাল মাকারভ (Admiral Makarov) নামে একটি বরফ কাটার জাহাজ আনা হয়েছিল, যা বিশেষ শক্তিশালী মাস্তুল দ্বারা সজ্জিত ছিল। জাহাজটি বরফ ভেঙে তিমিদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল, কিন্তু নাছোড়বান্দা বেলুগা তিমিগুলো প্রথমে অনুসরণ করতে রাজি হয়নি।

​যখন জাহাজের কর্মীরা স্পিকারের মাধ্যমে চেইকভস্কি-এর গান বাজানো শুরু করলো , তখন তিমিগুলো অবশেষে মাকারভ নামের জাহাজটিকে সরু খোলা চ্যানেল ধরে অনুসরণ করতে শুরু করে। এর ফলে প্রায় ১০০ মাইল যাত্রার পর তিমিগুলো বরফমুক্ত সমুদ্রে পৌঁছাতে সক্ষম হয়।

​এই সফল উদ্ধার প্রচেষ্টা কয়েক দিন ধরে চলেছিল এবং পরবর্তীতে এটিকে "অপারেশন বেলুগা" নাম দেওয়া হয়। এটি একটি সফল উদ্যোগ ছিল, যেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং জাপান-সহ বেশ কয়েকটি দেশ জড়িত ছিল।


যে ভিটামিনের অভাবে শরীরে অতিরিক্ত শীত লাগে !

আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেটে নানা রকম মজার প্রশ্ন-উত্তর ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু বিনোদনের জন্যই নয়, অনেক সময় এই ধরনের সাধারণ জ্ঞানভিত্তিক প্রশ্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা ও চাকরির ইন্টারভিউতেও আসে। তাই জেনে রাখা ক্ষতি নয়। বিশেষজ্ঞদের মতামত ও তথ্যভিত্তিক সূত্র ধরে এমনই কিছু আকর্ষণীয় প্রশ্ন-উত্তর তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে।

১️. কোন ভিটামিনের অভাবে অতিরিক্ত শীত লাগে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরে আয়রন ও ভিটামিন বি–১২–এর ঘাটতি হলে অতিরিক্ত শীত অনুভূত হয়।

২️. ইনস্টাগ্রাম কোন দেশের কোম্পানি?

জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ইনস্টাগ্রাম হলো আমেরিকার কোম্পানি, যা বর্তমানে মেটা প্ল্যাটফর্মস ইনকর্পোরেটেডের মালিকানাধীন।

৩️. বিশ্বের কোন দেশে সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প হয়?

ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলোর মধ্যে জাপান শীর্ষে। বছরে অসংখ্যবার ছোট-বড় ভূমিকম্প অনুভূত হয় সেখানে।

৪️. কোন প্রাণীর শরীরে তিনটি হৃদপিণ্ড থাকে?

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি—অক্টোপাসের শরীরে থাকে তিনটি হৃদপিণ্ড।

৫️. ভারতের প্রথম কোন শহরে বিদ্যুৎ পরিষেবা শুরু হয়েছিল?

ভারতে প্রথম বিদ্যুতের ব্যবহার শুরু হয় কলকাতায়, ১৮৯৯ সালে।

৬️. ভারতের কোন শহরে টাকাপয়সা ও সরকার নেই?

তামিলনাড়ুর বিখ্যাত শহর অরোভিলে নেই প্রচলিত অর্থনীতি বা সরকার। এখানে সবাই মিলে কাজ করে ও সম্পদ ভাগ করে নেয়।

৭️. কোন প্রাণী দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আকাশের দিকে তাকাতে পারে না?

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুকর একমাত্র প্রাণী, যা দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় আকাশের দিকে তাকাতে পারে না।

৮️. কখন মানুষের হৃদপিণ্ড ১ মিলিসেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, হাঁচি দেওয়ার সময় মানুষের হৃদপিণ্ড ক্ষণিকের জন্য থেমে যায়।

৯️. বিশ্বের কোন দেশের পতাকা চতুর্ভুজ নয়?

বিশ্বের একমাত্র দেশ নেপাল, যার পতাকা ত্রিভুজাকৃতি এবং অনন্য নকশার জন্য পরিচিত।

১০. ‘আমন্ত্রণ’ ও ‘নিমন্ত্রণ’-এর পার্থক্য কী?

বাংলা ব্যাকরণে ‘আমন্ত্রণ’ মানে বিশেষ অতিথিকে ডাকা, আর ‘নিমন্ত্রণ’ মানে খাওয়ার আয়োজনসহ কাউকে অনুষ্ঠানে আহ্বান জানানো।



কিছু প্রজাতির গাছ রাত্রে "কথা বলে" 


আমরা সাধারণত গাছকে নীরব, স্থির, শব্দহীন জীব বলে ভাবি। কিন্তু আধুনিক গবেষণা আমাদের এই ধারণাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কিছু প্রজাতির গাছ আসলেই রাত্রে বিশেষ ধরনের শব্দ উৎপন্ন করে, যা মানুষের কানে শোনা না গেলেও সংবেদনশীল যন্ত্রে ধরা পড়ে। অনেকেই একে "গাছের কথা বলা" বলে অভিহিত করছেন।

গাছের "কথা বলা" আসলে কী?

গাছ প্রাণীর মতো সরাসরি কথা বলে না। তবে গাছ তাদের দেহের ভেতরে ঘটে যাওয়া জৈব প্রক্রিয়ার কারণে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শব্দ তরঙ্গ তৈরি করে। এগুলো সাধারণত আল্ট্রাসনিক (Ultrasonic) শব্দ— অর্থাৎ, মানুষের শ্রবণ সীমার বাইরে (২০ কিলোহার্টজের ওপরে)।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা:

রাতে যখন গাছের পাতার স্টোমাটা (শ্বাস-ছিদ্র) বন্ধ হয়ে যায়, তখন পানি ও পুষ্টি পরিবহণের চাপ পরিবর্তিত হয়।

এই সময় জাইলেম (Xylem) নামক টিস্যুর ভেতর দিয়ে পানি চলাচল করতে গিয়ে ছোট ছোট বুদবুদ তৈরি ও ফেটে যায়।

প্রতিটি বুদবুদ ফাটার সময় ক্ষুদ্র শব্দ উৎপন্ন হয়— যেটাকে বিজ্ঞানীরা "acoustic emission" বলেন।

এটাই মূলত গাছের রাতের "কথা বলা"।

কোন গবেষণা থেকে এ তথ্য জানা গেছে?

টেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয় (ইসরায়েল) – ২০১৯ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় প্রমাণ পাওয়া যায় যে, কিছু গাছ রাতে মানুষের শোনার অযোগ্য কিন্তু মাইক্রোফোনে ধরা পড়া শব্দ সৃষ্টি করে।

সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয় – তারা গাছের "ক্যাভিটেশন" প্রক্রিয়া (Xylem-এর ভেতর পানি বুদবুদ ফাটা) রেকর্ড করেন এবং দেখেন যে গাছ আসলে নিয়মিত শব্দ নির্গত করছে।

কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় (আমেরিকা) – গবেষকরা জানান, গাছ যখন খরা বা চাপে থাকে, তখন তারা আরও বেশি শব্দ করে— যেন সতর্কবার্তা পাঠাচ্ছে।

কোন প্রজাতির গাছ বেশি "কথা বলে"?

সব গাছেই এ ধরনের শব্দ হয়, তবে কিছু প্রজাতি বেশি সক্রিয়। যেমন—

আঙুর গাছ (Grapevine)

তামাক গাছ (Tobacco)

গম ও ভুট্টা (Crops)

বনাঞ্চলের বড় গাছ যেমন ওক (Oak), পাইন (Pine)

এসব গাছে রাত্রিকালীন শব্দ কার্যকলাপ বেশি ধরা পড়েছে।

শব্দটা কেমন শোনা যায়?

মানুষ কানে শুনতে পায় না। কিন্তু বিশেষ যন্ত্রে ধরলে এগুলো অনেকটা পপিং, ক্লিকিং বা ফাটার মতো শব্দ। মজার বিষয় হলো, একেক প্রজাতির গাছের শব্দ একেক রকম— যেন আলাদা আলাদা ভাষা!

এই আবিষ্কারের গুরুত্ব কী?

এই গবেষণা শুধু অদ্ভুত তথ্যই নয়, বরং বাস্তব প্রয়োগও রয়েছে—

কৃষিতে বিপ্লব আনতে পারে – গাছের শব্দ বিশ্লেষণ করে কৃষক বুঝতে পারবেন গাছ পানি চাইছে কিনা বা চাপের মধ্যে আছে কিনা।

পরিবেশ রক্ষায় সাহায্য করবে – বনাঞ্চলে গাছের "শব্দ" পর্যবেক্ষণ করে খরা, রোগ বা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বোঝা যাবে।

গাছের সাথে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত – ভবিষ্যতে হয়তো এমন প্রযুক্তি আসবে, যেখানে আমরা গাছের "কথা" অনুবাদ করে সরাসরি বুঝতে পারব।

শেষ কথা-

গাছ শুধু বাতাস দেয়, ফল দেয় বা ছায়া দেয় তা-ই নয়—তারা নীরবে একে অপরের সাথে এবং পরিবেশের সাথে যোগাযোগও করে। মানুষের কানে শোনা না গেলেও আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, কিছু গাছ সত্যিই রাতে "কথা বলে"।


অত্যাশ্চর্য তথ্য

আমাদের চোখ — প্রকৃতির এক বিস্ময়কর ক্যামেরা!  বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের চোখের রেজোলিউশন প্রায় ৫৭৬ মেগাপিক্সেল, যা কোনো আধুনিক ডিজিটাল ক্যামেরার ক্ষমতাকেও হার মানায়!

মানুষের চোখ একই সঙ্গে লক্ষাধিক রঙ আলাদা করতে পারে, দূরের পাহাড়ের ধূসর ছায়া থেকে শুরু করে কাছের ফুলের পাপড়ির সূক্ষ্ম রেখাও অনায়াসে ধরতে পারে। এমনকি অন্ধকারে হালকা আলোয়ও আমাদের চোখ এমন নিখুঁতভাবে মানিয়ে নিতে পারে যা এখনো কোনো কৃত্রিম প্রযুক্তি পুরোপুরি নকল করতে পারেনি।

একটি চোখের রেটিনায় থাকে প্রায় ১২ কোটি রড সেল (আলো বুঝতে সাহায্য করে) এবং ৬০ লক্ষ কোণ সেল (রঙ চিনে নিতে সাহায্য করে) — এদের সমন্বয়েই তৈরি হয় মানবদৃষ্টির এই অবিশ্বাস্য নিখুঁততা!



কুমির 

কুমির হলো নিশ্চলতার প্রকৃত ওস্তাদ। তাদের সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বেঁচে থাকার কৌশলগুলোর মধ্যে একটি হলো তাদের হৃৎস্পন্দনকে কমিয়ে প্রতি মিনিটে মাত্র ২ বা ৩টি স্পন্দনে নামিয়ে আনার ক্ষমতা। এই অসাধারণ অভিযোজন তাদের পানির নিচে শান্ত এবং গতিহীন থাকতে সাহায্য করে, যার ফলে অন্যান্য প্রাণীদের পক্ষে তাদের সনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে।

​হৃৎস্পন্দন কমে যাওয়ায়, কুমিরেরা এক ঘণ্টারও বেশি সময় পানির নিচে ডুবে থাকতে পারে, শিকারের জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার সময় বা বিপদ থেকে লুকিয়ে থাকার সময় শক্তি সংরক্ষণ করে। নিখুঁতভাবে স্থির থাকার মাধ্যমে, তারা তাদের আশেপাশের পরিবেশের সাথে এমনভাবে মিশে যায় যতক্ষণ না আঘাত হানার সঠিক মুহূর্তটি আসে।



সভ্যতা, বসতি, রাষ্ট্র—সবকিছুর সূচনা হয়েছিল গমকে ঘিরে। গমই মানুষকে গৃহপালিত করেছিল। 


দশ হাজার বছর আগে গম ছিল নিছকই এক বুনো ঘাস। তখন এটি পৃথিবীর কেবল মধ্যপ্রাচ্যের অল্প কিছু জায়গায় সীমাবদ্ধ ছিল। বর্তমানের দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্ক, পশ্চিম ইরান এবং লেভান্ট অঞ্চলের পাহাড়ি ঢালে এর ব‍্যাপক উৎপাদন দেখা যায়। আর আজকের দিনে ইউক্রেন বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গম উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতমগমকে পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সফল প্রজাতি বলা যায়। গম ছিল খুঁতখুঁতে উদ্ভিদ। এটি পাথর, নুড়ি বা আগাছার সঙ্গে জায়গা ভাগাভাগি করতে চাইত না। ফলে মানুষ দিনরাত খেটে খেতের জমি পরিষ্কার করেছে, পাথর সরিয়েছে। গম চাইত না অন্য গাছ তার পুষ্টি কেড়ে নিক, তাই মানুষ গনগনে রোদে বসে আগাছা পরিষ্কার করেছে। গমের যাতে ক্ষতি না হয়, তার জন্য মানুষ পোকামাকড় মেরেছে, বন্য প্রাণীদের হাত থেকে রক্ষা করতে বেড়া দিয়েছে। গম যেন পিপাসায় কষ্ট না পায়, সেই জন্য নদী থেকে পানি টেনে এনেছে, খাল কেটেছে, কখনো ভারি বালতি টেনে এনেছে। গমের ক্ষুধা মেটাতে মানুষ পশুর বিষ্ঠা পর্যন্ত সংগ্রহ করে সার হিসেবে ব্যবহার করেছে।

এই কাজগুলোর কোনোটাই মানুষের শরীরের উপযোগী ছিল না। মানুষ বিবর্তিত হয়েছিল গাছে চড়া, দৌড়ানো, ফল তোলা, পশু শিকার করার জন্য, কিন্তু সারাদিন ঝুঁকে কাজ করা, ভারী বোঝা টানা বা কাঁধে পানি বহনের জন্য নয়। এর ফল হয়েছে ভয়াবহ। প্রাচীন কঙ্কাল গবেষণায় দেখা যায়, কৃষির যুগে মানুষের মধ্যে পিঠের ব্যথা, হাঁটুর ও মেরুদণ্ডের চাকতি সরে যাওয়া, বাত, হার্নিয়া ইত্যাদি বেড়ে গিয়েছিল। কৃষিকাজে মানুষকে সারাক্ষণ পরিশ্রম করতে হতো, ফলে তারা ধীরে ধীরে স্থায়ীভাবে বসতি গড়তে বাধ্য হয়। শিকারি-সংগ্রাহকেরা দিনে চার-পাঁচ ঘণ্টা কাজ করে বাকি সময় বিশ্রাম বা আনন্দে কাটাতে পারত, কিন্তু কৃষকের সারাদিন কাটতো মাটির ক্ষেতেই। 


 “The Great Green Wall”,


আফ্রিকার মরুভূমির বুকে এক বিশাল সবুজ প্রাচীর গড়ে উঠছে! এই প্রকল্পটির নাম “The Great Green Wall”, যার লক্ষ্য হলো মরুকরণ থামানো এবং পরিবেশকে পুনরুজ্জীবিত করা।

এই প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে — সাহারা মরুভূমির দক্ষিণ সীমানা জুড়ে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এটি হবে প্রায় ৮,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত এক সবুজ বেল্ট, যা পশ্চিমের সেনেগাল থেকে শুরু হয়ে পূর্বের জিবুতির উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত।

এই বিশাল সবুজ প্রাচীর কেবল গাছ লাগানোর উদ্যোগ নয় — এটি আফ্রিকার কোটি মানুষের জীবনে আশার আলো জ্বালাচ্ছে। কারণ এতে বন পুনরুদ্ধার, কৃষি উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা — সবই একসাথে ঘটছে!

বর্তমানে এই প্রকল্পের ফলে লক্ষাধিক হেক্টর জমি আবারও চাষযোগ্য হয়েছে, আর মরুভূমির বালির বদলে ফিরে আসছে সবুজ জীবন।



টেলিস্কোপ ফিশ


টেলিস্কোপ ফিশ বা Gigantura chuni হলো গভীর সমুদ্রের এক আশ্চর্য ও রহস্যময় প্রাণী, যাকে পৃথিবীর মানুষ খুব কমই দেখেছে। এটি সাধারণত ট্রপিক্যাল ও সাবট্রপিক্যাল মহাসাগরের ১,৫০০ থেকে ১০,০০০ ফুট গভীরে বাস করে — যেখানে আলো পৌঁছায় না, আর অন্ধকারই রাজত্ব করে।

এই মাছটির সবচেয়ে বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য তার চোখ। টেলিস্কোপ ফিশের চোখ দুটি নলাকার, সামনের দিকে মুখ করে কিন্তু উপরের দিকে ঘুরে যেতে পারে। এমন চোখ তাকে গভীর অন্ধকারে উপরের দিক থেকে আসা ক্ষীণ জৈব-আলোকিত ঝলক শনাক্ত করতে সাহায্য করে। সেই আলোই তাকে বলে দেয়, কোথাও কোনো ছোট মাছ বা ক্রাস্টেশিয়ান নড়ছে — অর্থাৎ তার পরবর্তী আহার উপস্থিত।

টেলিস্কোপ ফিশ অন্য মাছের মতো দৌড়ে শিকার ধরে না। এটি এক ধৈর্যশীল শিকারি, দীর্ঘক্ষণ স্থির থেকে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। যখন শিকার কাছে আসে, তখন হঠাৎ তার মুখ ১২০ ডিগ্রি পর্যন্ত খুলে গিয়ে শিকারটিকে একবারেই গিলে ফেলে। এর শরীরের ত্বক স্কেলবিহীন ও অত্যন্ত নমনীয়, আর পেটটি এমনভাবে প্রসারিত হয় যে, এটি নিজের দৈর্ঘ্যের অর্ধেক পরিমাণ শিকারও সহজে খেতে পারে।

গভীর সমুদ্রের এই প্রাণী সাধারণত ছোট ল্যান্টার্ন ফিশ ও ক্ষুদ্র ক্রাস্টেশিয়ান খায়, যারা নিজেরাই ক্ষীণ আলো ছড়িয়ে সমুদ্রের অন্ধকারে টিকে থাকে। এভাবে টেলিস্কোপ ফিশ সমুদ্রের খাদ্যশৃঙ্খলে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে — এটি মাঝারি স্তরের শিকারি, যে ছোট জীবদের শক্তি বড় শিকারিদের কাছে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে।

এর জীবনচক্র, প্রজনন বা আয়ুষ্কাল সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এখনও খুব কম জানেন। কারণ, গভীর সমুদ্র থেকে যখনই এই মাছটিকে তোলা হয়, পানির চাপের তারতম্যে এর দেহ প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবুও, বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই অদ্ভুত জীবটি সমুদ্রের গভীরে টিকে থাকার অভিযোজনের এক অনন্য নিদর্শন।

আজ, টেলিস্কোপ ফিশ শুধু গভীর সমুদ্রের এক আশ্চর্য শিকারি নয় — এর স্বচ্ছ দেহ, অনন্য চোখ ও বিশেষ দৃষ্টিশক্তি আধুনিক প্রযুক্তিতেও অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞানীরা এখন এর চোখের গঠন ও আলো শনাক্ত করার পদ্ধতি ব্যবহার করে লো-লাইট ইমেজিং ও আন্ডারওয়াটার ভিশন সিস্টেম তৈরির গবেষণা করছেন।


অত্যাশ্চর্য তথ্য

প্রকৃতির এমন কিছু গাছ আছে, যেগুলো যেন নিজের ভেতরেই লুকিয়ে রেখেছে রহস্য আর বিস্ময়ের গল্প! তেমনই এক গাছ হলো স্যাণ্ডবক্স ট্রি (Sandbox Tree) — যাকে অনেকে বলেন “বিস্ফোরক গাছ”!

এই গাছের ফল দেখতে অনেকটা ছোট কুমড়োর মতো, কিন্তু এর ভেতরে লুকিয়ে থাকে বিপজ্জনক এক প্রাকৃতিক বিস্ময়। ফলটি যখন পুরোপুরি পাকে, তখন সেটি বিস্ফোরণের মতো শব্দে ফেটে যায় — আর সেই সঙ্গে এর বীজ চারদিকে ছিটকে পড়ে ঘণ্টায় প্রায় ২৫০ কিমি বেগে!

এই কারণে স্যাণ্ডবক্স ট্রি-কে স্থানীয়রা ডাকে “ডায়নামাইট ট্রি”, “মাংকিনো ডোন্ট ট্রি” বা “হুরা ক্রেপিটান্স” নামেও। শুধু তাই নয়, এর কাঁটাযুক্ত গায়ে থাকা দুধের মতো রসও অত্যন্ত বিষাক্ত, যা ত্বকে লাগলে জ্বালাপোড়া এমনকি ফুসকুড়ি পর্যন্ত হতে পারে!