ভারতের স্বাধীনতা কি শুধু ব্রাহ্মণ্য হিন্দু সন্ত্রাসবাদের হিন্দু ধর্মের জন্য? ভারতের জাতীয় পতাকা ও এমবেøমে স্বাধীনতার প্রথম আলো বৌদ্ধধর্মের ধর্মচক্র প্রচারে বিশ্বজয়! সম্রাট অশোকের বৌদ্ধভারতে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হল ব্রাহ্মণ্য হিন্দু সন্ত্রাসবাদ। ভারতে বৌদ্ধদের ব্রাহ্মণ্য হিন্দু সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। বৌদ্ধ ধর্মকে হিন্দু ধর্ম করতে বৌদ্ধ সম্রাট বৃহদ্রথের ব্রাহ্মণ সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ বৃহদ্রথকে হত্যা করেছিল! ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতারণার রাজনীতিতে বৌদ্ধ সম্রাটের ব্রাহ্মণ সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ মহামতি সম্রাট অশোকের বংশজ মৌর্য বংশের সর্বশেষ বৌদ্ধ সম্রাট বৃহদ্রথকে হত্যা করেছিল; এবং মগধের সিংহাসন অধিকার করে নিজেকে হিন্দু রাজা ঘোষিত করেছিলেন। এবং তাঁর নির্দেশে বৌদ্ধ ধর্মের মুল গ্রন্থ বৌদ্ধ ত্রিপিটককে নিশ্চিহ্ন করে হিন্দু ধর্মকে মহিমান্বিত করতে বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়া কেড়ে নিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতারণার রাজনীতিতে বৌদ্ধদের ভারত ভ‚মি ও দেশ (SOUTH ASIA) দখল করার নাম হিন্দুধর্ম! হিন্দু সন্ত্রাসবাদ হিন্দুরাজনীতি শিবলিঙ্গ দিয়ে বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়া দখল করেছে। হিন্দু শাসক শশাঙ্ক, আদি শঙ্করাচার্য্য এবং কুমারিল ভট্ট ফতোয়া দিলেন,বৌদ্ধ মাত্রই বধ্য বা বৌদ্ধদেরকে হত্যা কর (পৃষ্ঠা ১২, দেশ, কলিকাতা, ৪ মে, ২০০১)।”
পুরীর রথ যাত্রার বৌদ্ধ সংস্কৃতিতে হিন্দু সন্ত্রাসবাদ বৌদ্ধদের পুরীর জগন্নাথ মহাবিহার কেড়ে নিয়ে গৌতমবুদ্ধকে হিন্দু পান্ডিতগণ জগন্নাথ বানিয়ে বুদ্ধ পুরাণ রচিত হলো! এবং ওড়িয়া ভাষায় মহাভারতের লেখক সারলা দাস প্রকাশ করলেন, “বউদ্ধ রুপেতে বিজে আছি জগন্নাথে।” ওড়িষার সাবেক মূখ্যমন্ত্রী বুদ্ধভক্ত জানকীবল্লভ পট্টুনায়কের ভাষায়, “বৌদ্ধদের প্রভাব রথযাত্রার উপর পড়েছে। বুদ্ধদেবেরমূর্তিকে রথে বসিয়ে নগর প্রদক্ষিন করার প্রথা চীন পরিব্রাজক ফাহিয়ানের সময় থেকে আছে।” বৌদ্ধ ঐতিহ্য ধর্মচক্র (অশোক চক্র) নিয়ে স্বাধীন ভারতের পতাকা এবং জাতীয় স্মারক সনদ (এম্বলেম) বিরাজমান। ভারতে ব্রাহ্মণ্য হিন্দু সন্ত্রাসবাদ বুদ্ধ গয়া দখল করার মতো ভারতে জৈন, মুসলমান, শিখ এবং খৃষ্ঠান ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে কোন হিন্দু সদস্য নেই। বৌদ্ধদের তিরুপতি বালাজী মন্দির এবং পুরীর জগন্নাথ মন্দির হিন্দু রাজনৈতিকগণ দখল করার পর গৌতমবুদ্ধকে হিন্দু রাজনীতির ভগবান বা অবতার বলে বৌদ্ধধর্মকে হিন্দু রাজনীতি তিলে তিলে কিডন্যাপ করেছেন। ভারতে ব্রাহ্মণ্য হিন্দু সন্ত্রাসবাদের হিন্দু মৌলবাদী সেনাবাহিনী বেঈমানের ভ‚মিকায় অবতীর্ণ হয়ে সন্ন্যাসীর রুপ ধরে শত শত বছর পর্যন্ত ত্রিশূল দিয়ে সর্বত্র ভারতীয় বৌদ্ধগণকে হত্যা করেছে। পলিটিক্যাল হিন্দুধর্ম ভারতীয় বৌদ্ধগণের মানবাধিকার হরণ করেছে। হিন্দুরাজনীতি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের বৌদ্ধ তিরুপতি মহাবিহার দখল করে হিন্দু মন্দিরে রুপান্তরিত করেছে এবং বুদ্ধ মূর্তিকে হিন্দুর ভগবান বেঙ্কটশ্বর বানিয়েছে। হিন্দুরাজনীতির দলিত হত্যা বন্ধ কর।
প্রতিটি ধর্মে আলাদা আলাদা কিতাব, আলাদা নবী, আলাদা মহামানব, আলাদা ঈশ্বর! এতে হিন্দু রাজনীতির আধিপত্যবাদের অসুবিধা কেন? কেন সকলকে হিন্দু রাজনীতির অবতার বানাতে হবে? বিচারের বানী নিরবে নিভৃতে কাঁদে! ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করার উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভারতে ১১৯২ সালে রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী বিশ্বাসঘাতক হলায়ুধ মিশ্র হিন্দু রাষ্ট্রধর্মের নেতা হয়ে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ করতে ব্রাহ্মণ্য হিন্দু সন্ত্রাসবাদের ‘শেখ শুভোদয়া’ শীর্ষক বই লিখেছিলেন। তিনি তাঁর রচিত দিনলিপির (ডায়েরী) উক্ত বইতে মুসলিম তুর্কী মিশনের যোদ্ধাদের সাথে মহামন্ত্রীর গোপন ষড়যন্ত্রে রাজা লক্ষণ সেনকে সরিয়ে বখতিয়ার খিলজিকে বাংলার সিংহাসন আরোহনের নীলনক্সার পুঞ্জীভ‚ত লোমহর্ষকর বাস্তব ঘটনাবলী অকপটে রচনা করে স্বীকার করলেন। ১২০২ সালে রাজা লক্ষন সেনের মহামন্ত্রী হলায়ুধ মিশ্র বিশ্বাসঘাতকতায় বখতিয়ার খিলজির বাংলা জয়, – ভারতে ব্রাহ্মণ্য হিন্দু সন্ত্রাসবাদ এবং বখতিয়ার খিলজির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন! রামষই পন্ডিতের লেখা “শূন্য পুরান” শীর্ষক বই বলছে (16th Century), ভারতে ব্রাহ্মণ্য হিন্দু সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসী তুর্কি মুসলমান বখতিয়ার খিলজি ও মুসলমান শাসকগণ বৌদ্ধগণকে মুসলমান বানিয়েছিলেন! মহেঞ্জোদারো -হরপ্পায় বৌদ্ধধর্ম ও চর্যাপদে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ প্রসঙ্গ! ‘চার্টার অব রাইটস’ সবারই অধিকারকে রক্ষা করে। ধর্ম কি? একটি বৃহৎ প্রশ্ন বটে! লোভ দ্বেষ মোহসহ ষড়রিপুকে জয় করার নাম বৌদ্ধ‘ধর্ম!
হিন্দুরাজনীতির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে ((দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২) ত্রয়োদশ শতাব্দীতে বাঙালি বৌদ্ধগণ by force মুসলমান হয়েছিলেন! ১৯৯৩ সালের ২২ আগষ্টের আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকীয়, “সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা কেমন করিয়া ভুলিয়া গেলেন অসংখ্য বৌদ্ধ ধর্মস্থান ধ্বংস করিয়া একদিন গড়িয়া উঠিয়াছিল রাশি রাশি হিন্দু মন্দির।” ভারতে সম্রাট অশোক সা¤্রাজ্যের পূজনীয় বৌদ্ধধর্মকে হিন্দু রাজনীতি ধ্বংস করল কেন? হিন্দু জাতিভেদ প্রথায় মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই হিন্দু রাজনীতির সন্ত্রাসবাদের হিন্দু ধর্ম!
বুদ্ধভ‚মি ভারতে হিন্দুরাজনীতির হিন্দু সন্ত্রাসবাদ বৌদ্ধদের শ্রেষ্ঠতম তীর্থভ‚মি “বুদ্ধগয়াবিশ্ববৌদ্ধদের পবিত্রতম বুদ্ধগয়া মহাবোধি বিহার ম্যানেজম্যান্ট কমিটিতে জোর করে পাঁচজন হিন্দু মেম্বার দিয়ে হিন্দু শাসকগণ বুদ্ধগয়া দখল করে আছেন। ব্রাহ্মণ্যধর্মী বল্লাল সেন যখন বাংলার রাজা হলো, তখন সে বৌদ্ধধর্মীদের হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে ব্রাহ্মণ্য হিন্দু সন্ত্রাসবাদের হুলিয়া জারি করলো। বল্লাল সেনাবাহিনীকে হুকুম দিল, ওদের ( বৌদ্ধধর্মীদের ) পিছনে ধাওয়া করে হত্যা করো। (গুরুচাঁদচরিত ষষ্ঠ সংস্করণের ২৩৮ ও ২৩৯ পৃষ্ঠা দেখুন)। বৌদ্ধ ভারতে হিন্দু সন্ত্রাসবাদ আন্দোলনের উত্তাল ঢেউয়ের মাথায় বৌদ্ধবিশ্বের প্রার্থনার জায়গা বুদ্ধগয়ায় হিন্দু রাজনীতির শিবলিঙ্গ দুর্বৃত্তপনা কেন?
একদা হিন্দুধর্ম ত্যাগ করার পর সম্রাট অশোকের প্রার্থনা ছিল, “বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি।” পৃথিবীতে যতগুলি ধর্ম আছে তাহার প্রত্যেকটিতেই দরিদ্র অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াইবার কথা জোর দিয়া বলা হইয়াছে। মানুষের মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই হিন্দুরাষ্ট্র ও হিন্দুধর্মের জাতিভেদ প্রথা! হিন্দুরাষ্ট্র ও হিন্দুধর্মের জাতিভেদ প্রথায় মানবাধিকার নেই এ বং রাজা বল্লাল সেন বৌদ্ধধর্মীদের নমঃশূদ্র করতে হুলিয়া জারি করলো! ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুরাজনীতির প্রাচীন বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ! বৌদ্ধরা কিভাবে নমঃশূদ্র হলো? In 1235 A. D. ব্রাহ্মণ্যধর্মী বল্লাল সেন যখন বাংলার রাজা হলো, তখন সে বৌদ্ধধর্মীদের হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে হুলিয়া জারি করলো। বৌদ্ধরা তা মানলো না। শুরু হলো রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগ ও অত্যাচার। অকথিত অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, বৌদ্ধরা জলে জঙ্গলে (পূর্ববঙ্গে) পালালো।
ভারতে ব্রাহ্মণ্য হিন্দু সন্ত্রাসবাদের জন্যে বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন! কর্নাটকের রাজা বিজয় সেনের বাংলাদেশ দখল করাতে একাদশ শতাব্দীতে বৌদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো! হিন্দু রাজা শশাঙ্ক ৭ম শতাব্দীতে বুদ্ধগয়ায় মহাবোধি মন্দির দখল করে বোধিবৃক্ষ ধ্বংসসহ শত শত বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞ করার ইতিহাস চীনা পরিব্রাজক বৌদ্ধভিক্ষু ইউয়েন সাং তাঁর ভ্রমন কাহিনীর ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করেছেন। ব্রাহ্মণ্য হিন্দু ধর্মের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দিতায় বৌদ্ধ চর্যাপদের উৎপত্তি এবং হিন্দুরাজনীতির বৌদ্ধধর্ম এবং “বুদ্ধগয়া দখল ট্রাজেডি! বুদ্ধগয়া ভবিষ্যৎ বৌদ্ধজাতির উন্নতির প্রেক্ষাপট, সেই পূত পবিত্র বুদ্ধের প্রেক্ষাপট অঙ্গনে শিবলিঙ্গের গর্ত পূজায় অত্যাচার করে নষ্ঠ করে বৌদ্ধদের ভবিষ্যতকেই ভষ্মীভ‚ত করা হচ্ছে, শুধু প্রতীকিভাবে নয়, আক্ষরিক অর্থে।
বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়ায় হিন্দুরাজনীতির শিবলিঙ্গ কেন? বিশ্বশান্তির উৎস নিরুপণ করতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মহাশয় জাতিসংঘের ভাষণে ঘোষণা করলেন, “ভারত বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য পূজনীয় বুদ্ধ দিয়েছে এবং পূজনীয় গৌতমবুদ্ধই (বুদ্ধের উপদেশ) বিশ্বশান্তির উৎস ও প্রার্থনা ছিল, “বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি – বুদ্ধ বন্দনা !যুদ্ধ নয় বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চলমান জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে শুক্রবার নিজের ভাষণে তিনি এ কথা বলেন (27 September 2019 খবর এএনআই’র)।” জাতিসংঘে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বুদ্ধ বন্দনা কেন? আমার দেশ আমার পরম তীর্থভ‚মি এবং মানবাধিকারই সর্বকালের ধর্মের মূলমন্ত্র।
দেশ পত্রিকার মতে, “হিন্দু শাসক শশাঙ্ক, আদি শঙ্করাচার্য্য এবং কুমারিল ভট্ট ফতোয়া দিলেন, বৌদ্ধ মাত্রই বধ্য বা বৌদ্ধদেরকে হত্যা কর (পৃষ্ঠা ১২, দেশ, কলিকাতা, ৪ মে, ২০০১)! বিশ্ববৌদ্ধদের পবিত্রতম বুদ্ধগয়া মহাবোধি বিহার ম্যানেজম্যান্ট কমিটিতে জোর করে পাঁচজন হিন্দু মেম্বার দিয়ে হিন্দু শাসকগণ বুদ্ধগয়া দখল করে আছেন। হিন্দু রাজনীতির প্রাচীন বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ by force মুসলমান হয়েছিলেন (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২)
হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ না করে বা বৌদ্ধ ধর্মালম্বী না হয়ে পূজনীয় গৌতমবুদ্ধকে হিন্দুরাজনীতি নবম অবতার বানিয়ে বানিয়ে গোলে মালে আধুনিক সমাজের চোখে ধূলো দিচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে ইহাও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে চীন সরকার বুদ্ধ জন্মভ‚মি লুম্বিনী সার্বিক উন্নয়ন প্রকল্পে তিন বিলিয়ন ডলার দান করেছেন। চীনের উক্ত মুক্ত হস্তের দান অবলোকনে ভারত সরকার সন্ত্রস্ত হয়ে পরেছেন।
বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়া এবং মুসলমানদের বারাণসী জ্ঞানবাপী মসজিদে হিন্দুরাজনীতির শিবলিঙ্গ কেন? হিন্দুরাজনীতি শিবলিঙ্গ দিয়ে বৌদ্ধদের বুদ্ধগয়া দখল করেছে। প্রসঙ্গত: ভারতীয় ধর্মান্ধ হিন্দুপন্ডিতগণ হাজার বছর পুর্বে অহিংসা পরমধর্ম প্রচারক এবং মানবাধিকারের সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠাতা বেদ বিরোধী গৌতমবুদ্ধকে হিন্দুধর্মের জগন্নাথ বুদ্ধ পুরাণ শীর্ষক তিন হাজার পৃষ্ঠার বই লিখে উড়িষ্যায় রথ যাত্রা এবং পুরীর বৌদ্ধমন্দিরকে জগন্নাথ মন্দির নাম বদলিয়ে দখল করেছে। ধর্মান্ধ হিন্দুশাসকগণ কর্তৃক ভারতে বৌদ্ধধর্ম ধ্বংসের সচিত্র বই উৎকল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মহাপন্ডিত বংশিধর মোহান্তি রচনা করেছেন।
হিন্দুরাজনীতি বুদ্ধের দেহকে দেখে কিন্তু বুদ্ধের উপদেশ মেনে চলে না এবং বুদ্ধের উপদেশ ছিল, “যে আমার দেহকে দেখে সে আমাকে দেখে না, যে আমার উপদেশ মেনে চলে সে আমাকে দেখে ও মেনে চলে। মানবাধিকার এবং আইনের শাসন অগ্রাহ্য করে POLITICAL HINDUISM & বৈদিক পন্থী হিন্দুরাজনীতির ভারত সরকার “বুদ্ধগয়া টেম্পল অ্যাক্ট ১৯৪৯” শীর্ষক বেআইনি হিন্দুমার্কা সনদ রচনা করে ২০১২ সালের ভারতের সুপ্রীম কোর্টের রায় নাকচ করে! মানুষের সকল মৌলিক অধিকার পরিপস্থী এবং মানবতা বিরোধী এক কালো আইনের নাম “বুদ্ধগয়া ম্যানেজম্যান্ট কমিটি।” ১৯৪৯ এর বুদ্ধগয়া টেম্পল ম্যানেজম্যান্ট অ্যাক্টে চারজন বৌদ্ধসদস্য, হিন্দু জেলা ম্যাজিষ্ঠ্রেট সহ চার হিন্দু সদস্য (৫ জন হিন্দু সদস্য), ম্যানেজম্যান্ট কমিটি নিয়ে বুদ্ধমূর্তির সম্মুখে শিবলিঙ্গ সরিয়ে বৌদ্ধ বাতাবরণ সৃষ্ঠির প্রয়াস ছিল।
চার্টার অব রাইটস’ সবারই অধিকারকে রক্ষা করে। দেশ পত্রিকার মতে, “হিন্দু শাসক শশাঙ্ক, আদি শঙ্করাচার্য্য এবং কুমারিল ভট্ট ফতোয়া দিলেন, বৌদ্ধ মাত্রই বধ্য বা বৌদ্ধদেরকে হত্যা কর (পৃষ্ঠা ১২, দেশ, কলিকাতা, ৪ মে, ২০০১)! বিশ্ববৌদ্ধদের পবিত্রতম বুদ্ধগয়া মহাবোধি বিহার ম্যানেজম্যান্ট কমিটিতে জোর করে পাঁচজন হিন্দু মেম্বার দিয়ে হিন্দু শাসকগণ বুদ্ধগয়া দখল করে আছেন। হিন্দু রাজনীতির প্রাচীন বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ by force মুসলমান হয়েছিলেন (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২) ধর্ম কি? একটি বৃহৎ প্রশ্ন বটে! লোভ দ্বেষ মোহ সহ ষড়রিপুকে জয় করার নাম বৌদ্ধধর্ম!
খৃষ্ঠপূর্ব ১৫০০ বছর পূর্বে ঋগে¦দের (প্রথম বেদ; ১/১০৫/৮ ও ১০/৩৩/২) মতে বৈদিক ধর্ম পন্থী আর্য্যদের রাজা ইন্দ্র মহেঞ্জোদারো ও হরপ্পার প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করেন। প্রাগৈতিহাসিক বৌদ্ধদর্শনের বিভিন্ন প্রসঙ্গ বৈদিক সাহিত্যে বিরাজমান এবং প্রাচীন উপনিষদের বিভিন্ন উপদেশ বৌদ্ধধর্ম থেকে নকল করা হয়েছে বলে গৌতমবুদ্ধ ত্রিপিটকের (মধ্যম নিকায়ের ৭৫ নন্বর) মাগন্দিয় সূত্রে ব্যাখ্যা করেছেন। বৈদিক উপনিষদ সাহিত্যসহ বিভিন্ন পুরান কাহিনীতে বৌদ্ধধর্মকে নকল করে হিন্দুধর্ম করা হয়েছে ।
জাতিভেদ প্রথায় বিভেদ বিদ্বেষের নামই কি হিন্দুধর্ম। হিন্দুরাজনীতি ভারতে বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করেছে। বৌদ্ধ প্রধান দেশ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক মহানগরীর বিখ্যাত রাজকীয় এমারেল্ড (মরকত মনি) বুদ্ধ মন্দিরের চারিদিক জুড়ে আছে দশরথ জাতকে রামকীর্তির অভিনব চিত্রশালা। মুসলমানদের বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির বানানোর মত হিন্দুরাজনীতি ইসলামিক হিজরি (১৪৪৫) সালকে ভেঙে চন্দ্র বা সূর্য ক্যালেন্ডারের নামে হিন্দুমার্কা বঙ্গাব্দ (১৪৩০) রচনা করেছেন।
হিন্দুরাজনীতি সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারতকে হিন্দু ভারত করল কেন? বৌদ্ধরা কিভাবে নমঃশূদ্র হলো? ব্রাহ্মণ্যধর্মী বল্লাল সেন (In 1235 A. D.) যখন বাংলার রাজা হলো, তখন সে বৌদ্ধধর্মীদের হিন্দুধর্ম গ্রহণ করতে হুলিয়া জারি করলো। বৌদ্ধরা তা মানলো না। শুরু হলো রাষ্ট্রশক্তির বলপ্রয়োগ ও অত্যাচার। অকথিত অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, বৌদ্ধরা জলে জঙ্গলে (পূর্ববঙ্গে) পালালো। ওদের পিছনে ধাওয়া করে হত্যা করো। (গুরুচাঁদ চরিত ষষ্ঠ সংস্করণের ২৩৮ ও ২৩৯ পৃষ্ঠা দেখুন)। ব্রাহ্মন ও উচ্চবর্ণের ভারতে রক্তাক্ত দলিত বিদ্বেষ কেন? ব্রাহ্মন ও উচ্চবর্ণের হিন্দু যেই মানব, বৌদ্ধ দলিত, রোহিঙ্গা মুসলমান ও সেই মানব (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২)! ইতিহাসের আলোকে ধর্মীয় নিপীড়ন প্রতিরোধ প্রসঙ্গ প্রার্থনা ছিল, “বুদ্ধং সরণং গচ্ছামি!
কেন সকল নবী পয়গম্বরকে হিন্দু রাজনীতির আধিপত্যবাদের ইসলামের নবী বলতে হবে? কেন সকলের ধর্মকে বিনষ্ট করার চেষ্টা করতে হয়? কেউ কি তার বাড়ী জমি অন্যকে দান করে দেয়? তাহলে বেহেস্ত দেবার প্রলোভন টা কী জালিয়াতি নয়? এই পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ম, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। সা¤প্রদায়িকতা রাজনীতিতে কীভাবে প্রবেশ করেছে এবং কীভাবে তা দূর করা যায়, এ প্রসঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এখন কেবল মুখে কথা বললে হবে না, সা¤প্রদায়িকতা প্রতিরোধ করতে হবে। যে ভেদবুদ্ধি মানুষকে স¤প্রদায় দিয়ে চিহ্নিত করছে, এর বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে। সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজটি করতে হবে। কেবল ধর্মীয় স¤প্রীতি নয়, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জন্যও নাগরিক সমাজসহ সবাইকে কাজ করতে হবে।
হিন্দু রাজনীতির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে “বন্দে মাতরম” শীর্ষক কবিতার লেখক সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়, “তখন বিশুদ্ধাত্মা শাক্যসিংহ (বুদ্ধ) অনন্তকালস্থায়ী মহিমা বিস্তারপূর্বক, ভারতাকাশে উদিত হইয়া, দিগন্ত প্রসারিত রূপে বলিলেন, – আমি তোমাদের রক্ষা করিব। বর্ণ বৈষম্য মিথ্যা। যাগযজ্ঞ মিথ্যা। বেদ মিথ্যা, সূত্র মিথ্যা, ঐহিক সুখ মিথ্যা, কে রাজা, কে প্রজা, সব মিথ্যা। ধর্মই সত্য। মিথ্যা ত্যাগ করিয়া সকলেই সত্যধর্ম পালন কর। (বঙ্কিম রচনাবলী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২ থেকে ৩৮৩, সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত! জয় সত্য ও মানবতার জয়। আবার আলোকিত হবে, বৌদ্ধময় হবে, সাম্য ও শান্তির বাণী ছড়িয়ে পড়বে চারিদিকে। ধর্মান্ধ বেয়াদপ সন্ত্রাসবাদ ব্রাহ্মণ সেনাপতি পুষ্যমিত্র শুঙ্গ জানোয়ারের মতো বৌদ্ধ ভিক্ষু কে হত্যা করল কেন?
বৌদ্ধ সম্রাট অশোকের শিলালিপি ভারতীয় হিন্দু পন্ডিতগণ পড়তে পারলেন না; কিন্তু বৃটিশ পন্ডিত জেমস প্রিন্সেপ উক্ত শিলালিপি সম্বন্ধে বিভিন্ন গ্রন্থ সম্পাদনা কর স¤প্রতি মানবমনে উদীয়মান বুদ্ধের অনুভবে ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী জর্জ অসবোর্ন বৌদ্ধভিক্ষু হলেন। এই গ্রন্থে চিত্রে বুদ্ধ জীবনী ও আনবিক যুগে বৌদ্ধ ভারত সন্ধানে বিরাজমান। মানব জাতির উন্নয়নে গৌতমবুদ্ধের ধ্যান ও ধর্মের অবদান।
বাংলা ভাষা পালি ভাষার বিবর্তিত রুপ এবং বাংলা লিপি বহু চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে এবং নানা ষড়যন্ত্রের দুর্ভেদ্য প্রাচীর বিদীর্ণ করে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারিতে প্রতিষ্ঠিত হলো অনাগত বংশের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা আন্দোলন প্রবর্তন সূত্রময় ‘শহীদ দিবস।’
প্রতœতাত্তি¡ক গবেষণায় এই সিন্ধু প্রদেশে প্রত্নতাত্তি¡ক বৌদ্ধ নিদর্শনের ইতিহাস থেকেই প্রাগৈতিহাসিক কাশ্যপব্দ্ধুর বৌদ্ধধর্ম এবং বৈদিকপূর্ব ধ্যানমগ্ন রাজর্ষি মহেঞ্জোদারো (মহষসূদর্শন সূত্রে মহষসূদর্শন) বোধিসত্ত¡ রূপরেখাটির” সূত্র বেরিয়েছিল! হিন্দুপন্ডিতগণ দশরথ জাতককে বদলায়ে রামায়ণ রচনা করার পর উক্ত রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের বত্রিশ নম্বর শ্লোকে সনাতন ধর্মের নবম অবতার গৌতমবুদ্ধকে চোর (HATE CRIME OF হিন্দুধর্ম) এবং বৌদ্ধদেরকে নাস্তিক বানিয়েছে। বৌদ্ধ জাতকই রামায়ন ও মহাভারতের উৎস!
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি
বারমুডা ট্র্যাঙ্গেল। নামের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে অজস্র রহস্য। অতলান্তিক মহাসাগরের পশ্চিম প্রান্তের এই অংশেই নাকি অতীতে উধাও হয়ে গিয়েছে বহু জাহাজ এবং বিমান। কেন? উত্তর মেলেনি। অবশেষে কি সেই জটিল ধাঁধার সমাধান হতে চলেছে? নতুন এক গবেষণায় বারমুডা নিয়ে আশার আলো দেখতে পেলেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, এই অংশের সমুদ্রের নীচে বিশাল এক রহস্যময় কাঠামোর খোঁজ মিলেছে। এমন এক পাথুরে কাঠামো, পৃথিবীর আর কোথাও কখনও যা দেখা যায়নি!
অতলান্তিকের রহস্যময় এলাকাকে চিহ্নিত করতে কাল্পনিক ত্রিভুজাকার সীমা টেনে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পুয়ের্তো রিকো, মিয়ামি আর বারমুডাকে অদৃশ্য রেখায় জুড়লেই পাওয়া যায় কুখ্যাত বারমুডা ট্র্যাঙ্গেল। নতুন গবেষণা বলছে, এই অঞ্চলের সমুদ্রতলের (ওশানিক ক্রাস্ট) ঠিক নীচে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিস্তৃত একটি পাথরের স্তর রয়েছে। অন্য কোথাও সমুদ্রের নীচে এমন স্তরের অস্তিত্ব নেই। অন্তত বিজ্ঞানীদের এমন কোনও স্তরের কথা জানা নেই। একটি পাথরের কাঠামো বারমুডাকে আলাদা করে দিয়েছে বিশ্বের সকল প্রান্ত থেকে।
আমেরিকার এক দল বিজ্ঞানী দীর্ঘ দিন ধরে বারমুডা ট্র্যাঙ্গেল নিয়ে কাজ করছিলেন। তাঁরাই এই রহস্যময় পাথরের স্তরের হদিস পেয়েছেন। জিয়োফিজ়িক্যাল রিসার্চ লেটার্স নামক পত্রিকায় তাঁদের বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে। কাঠামোটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গবেষকদলের প্রধান উইলিয়াম ফ্রেজ়ার বলেন, ‘‘সাধারণত সমুদ্রতল শেষ হলে ম্যান্টেল (পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ স্তর) শুরু হয়ে যায়। কিন্তু বারমুডায় তা হয়নি! বারমুডা যে ভূগর্ভস্থ পাতের উপর রয়েছে, তার মধ্যে সমুদ্রতলের নীচে ম্যান্টেলের আগে আরও একটি স্তর রয়েছে।’’ কেউ যেন জোর করে স্তরটি সেখানে ঢুকিয়ে দিয়েছে, দাবি বিজ্ঞানীদের। ফ্রেজ়ার জানিয়েছেন, এই স্তরের উৎস এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বারমুডাকে ঘিরে যে রহস্য রয়েছে, তার ব্যাখ্যা মিলতে পারে এই স্তর থেকে।
আরও পড়ুন:
এমনিতেই বারমুডার কাছে দ্বীপপুঞ্জের ভূমিরূপ কিছুটা আলাদা। এই অংশের সমুদ্র তুলনামূলক ফুলেফেঁপে থাকে। জলস্তরও চারপাশের চেয়ে উঁচু। কিন্তু এই উচ্চতার কোনও জুতসই ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। অনেকে বলেন, সমুদ্রের নীচে থাকা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এবং মিথেন গ্যাসের নিষ্ক্রমণ জলস্তর বৃদ্ধির কারণ। কিন্তু বিজ্ঞানীদের দাবি, বারমুডার আশপাশে সমুদ্রের নীচে অগ্নুৎপাতের প্রমাণ মেলেনি। শেষ বার এখানে অগ্নুৎপাত হয়েছিল ৩.১ কোটি বছর আগে। তবে ওই সময়ের আগে বারমুডা সংলগ্ন এলাকায় আগ্নেয়গিরি সক্রিয় ছিল, নিয়মিত অগ্নুৎপাত হত।
বিজ্ঞানীদের একাংশের ধারণা, ৩.১ কোটি বছর আগের সেই ধারাবাহিক অগ্নুৎপাত থেকেই রহস্যের সূত্রপাত। অগ্নুৎপাতের কারণে ম্যান্টেল অংশের পাথর ঢুকে গিয়েছিল সমুদ্রতলের ত্বক বা ক্রাস্টের মধ্যে। কোথাও কোথাও তা এখনও আটকে আছে। সমুদ্রতলকে তা অন্তত ১৬৪০ ফুট উঁচু করে তুলেছে। সমুদ্রতল ফুলে থাকা অবশ্য বিরল নয়। হাওয়াই-সহ একাধিক দ্বীপশৃঙ্খল তৈরিই হয়েছে ‘ম্যান্টেল হটস্পট’-এর কারণে। ম্যান্টেলের উষ্ণ পদার্থ উপরে উঠে এলে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ শুরু হয়। ওই হটস্পট ভূ-ত্বকের সংস্পর্শে এলে সমুদ্রতল ফুলে ওঠে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ পাত নড়াচড়া করলেই আবার তা আগের অবস্থায় ফিরে আসে। বারমুডায় তা হয়নি। তিন কোটি বছর ধরে কোনও আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা না-থাকা সত্ত্বেও কেন সমুদ্রত্বক আগের অবস্থায় ফিরল না, সেটা বড় রহস্য। বিজ্ঞানীদের ধারণা, বারমুডার নীচে ম্যান্টেল অংশে এমন কিছু ঘটছে, উপরে যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ফলে তা অন্তরালেই থেকে যাচ্ছে। ম্যাসাচুসেটসের ভূবিজ্ঞানী সারা মাজ়ার কথায়, ‘‘বারমুডার নীচে সক্রিয় অগ্নুৎপাতের দিনগুলির কিছু অবশেষ এখনও রয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই অতলান্তিকের ওই নির্দিষ্ট অংশ পারিপার্শ্বিকের চেয়ে উঁচু।’’
আরও পড়ুন:
সমুদ্রত্বকের নীচে কী ভাবে নতুন পাথুরে কাঠামোর খোঁজ পাওয়া গেল? পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বড়সড় ভূমিকম্পগুলির ভূগর্ভস্থ রেকর্ডিং সংগ্রহ করেছিল মার্কিন ওই গবেষকদল। তা থেকে তারা বারমুডার নীচে অন্তত ৫০ কিলোমিটার গভীরের চিত্র পেয়েছেন। ভূকম্পনের তরঙ্গ যে যে অংশে এসে হঠাৎ করে বদলে গিয়েছে, সেই অংশগুলিকে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তার মাধ্যমেই অস্বাভাবিক এবং অজানা এই দীর্ঘ পাথরের স্তরের হদিস পাওয়া গিয়েছে। এই স্তরের পাথরের ঘনত্ব আশপাশের অন্য পাথরের চেয়ে কম।
বারমুডার কাছে গিয়ে জাহাজ বা বিমান গায়েব হয়ে যাওয়ার রহস্যের সঙ্গে সমুদ্রতলের নীচের এই পাথুরে স্তরের কী সম্পর্ক, এখনও তা স্পষ্ট নয়। কেন উধাও হয়ে যাওয়া কোনও জাহাজ বা বিমানের ধ্বংসাবশেষটুকুও কখনও পাওয়া যায়নি, কেনই বা মেলেনি কোনও মৃতদেহ, উত্তর বিজ্ঞানের অজানা। তবে এই ২০ কিলোমিটারের পাথর সমাধানের ইঙ্গিত বয়ে আনতে পারে।
পিতার থেকে আসা ওয়াই ক্রোমোজ়োম বিলুপ্ত হলে পুরুষের ভবিষ্যৎ কী হবে? লিঙ্গ নির্ধারণ করতে পারে নতুন জিন!
পুরুষের লিঙ্গ নির্ধারণকারী গুরুত্বপূর্ণ ওয়াই ক্রোমোজ়োমই নাকি বিলুপ্তির পথে! সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই ক্রোমোজ়োম হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন প্রশ্ন, তা হলে কি মানব সভ্যতার বিবর্তনের ইতিহাস এখানেই ইতি? পুরুষেরা কি বিলুপ্ত হয়ে যাবেন?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৫
পুরুষের লিঙ্গ নির্ধারক ওয়াই ক্রোমোজ়োমে জিনের সংখ্যা দিন দিন কমছে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বাবা দেন ওয়াই, মা দেন এক্স—লিঙ্গ নির্ধারক এই দুই ক্রোমোজ়োমের সমন্বয়ে মাতৃজঠরে গড়়ে ওঠে পুরুষ ভ্রুণ। কিন্তু পুরুষের লিঙ্গ নির্ধারণকারী এই গুরুত্বপূর্ণ ওয়াই ক্রোমোজ়োমই নাকি বিলুপ্তির পথে! সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই ক্রোমোজ়োম হারিয়ে যেতে বসেছে, বিজ্ঞানীরা সে বিষয়ে নিশ্চিত। এখন প্রশ্ন, তা হলে কি মানব সভ্যতার বিবর্তনের ইতিহাসের এখানেই ইতি? ওয়াই ক্রোমোজ়োম পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেলে কি পুরুষেরাও বিলুপ্ত হয়ে যাবেন? সে ক্ষেত্রে তো মানব সভ্যতায় লিঙ্গের ভারসাম্য আর থাকবে না। পাট চুকে যাবে মানুষেরও। তা-ই কি ভবিতব্য?
জীববিজ্ঞানী জেনি গ্রেভ্স মানুষ-সহ বিভিন্ন প্রাণীর বিবর্তন নিয়ে কাজ করেন। ২০০২ সালে তিনিই প্রথম পুরুষের ওয়াই ক্রোমোজ়োমের আয়ু সম্পর্কে সন্দেহপ্রকাশ করেছিলেন। বলেছিলেন, গত ৩০ কোটি বছরে পুরুষের ওয়াই ক্রোমোজ়োম ক্রমে বিলুপ্তির দিকে এগিয়েছে। উধাও হয়ে গিয়েছে প্রাচীন ওয়াই ক্রোমোজ়োমের ৯৭ শতাংশ জিনই। এ ভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক কোটি বছরেই পুরুষের এই ক্রোমোজ়োমটি সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু তার অর্থ পুরুষের বিলুপ্তি নয়, দাবি গ্রেভ্সের। তিনি বলেন, ‘‘আগামী ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে পুরুষেরা বিলুপ্ত হয়ে যাবে, এটা যে কেন ভাবা হচ্ছে, কেনই বা তা নিয়ে পুরুষেরা উদ্বিগ্ন, আমি জানি না। পৃথিবীতে আমরা মানুষ হয়ে আছিই তো মাত্র এই কয়েক লক্ষ বছর ধরে।’’
আরও পড়ুন:
ওয়াই ক্রোমোজ়োম না থাকলেও পুরুষেরা পৃথিবীতে থেকে যাবেন, দাবি গ্রেভ্স-সহ বিজ্ঞানীদের একাংশের। এ ক্ষেত্রে আপাতত তাঁদের ভরসা অন্য প্রাণীদের নিদর্শন। পৃথিবীর বুকে একাধিক স্তন্যপায়ী প্রাণী, মাছ এবং কিছু সরীসৃপের জিন থেকে লিঙ্গ নির্ধারক বিশেষ সেক্স ক্রোমোজ়োম বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তবু তারা বহাল তবিয়তেই আছে। ইঁদুর শ্রেণির কিছু প্রাণীর শরীর থেকে নিঃশব্দে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে ওয়াই ক্রোমোজ়োম। পরিবর্তে অন্য ক্রোমোজ়োম সেই জায়গা নিয়েছে। এলোবিয়াস ট্যালপিনাস, এলোবিয়াস টানক্রেই এবং এলোবিয়াস অ্যালাইকাস নামের তিনটি ইঁদুরের শরীরে এখন রয়েছে শুধু এক্স ক্রোমোজ়োমই। ওয়াই ক্রোমোজ়োমের লিঙ্গ নির্ধারক জিন অন্যত্র সরে গিয়েছে। টোকুডাইয়া ওসিমেসিস নামের আরও এক ইঁদুরের শরীরে ওয়াই ক্রোমোজ়োমের জায়গায় এসেছে নতুন ক্রোমোজ়োম।
গ্রেভ্স বলেন, ‘‘যদি নতুন কোনও ক্রোমোজ়োম আমাদের ওয়াই-এর চেয়ে ভাল কাজ করে, তবে খুব দ্রুত তা ওয়াই-এর বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। হয়তো ইতিমধ্যে পৃথিবীর কোনও প্রান্তে কোনও মানবগোষ্ঠীর মধ্যে সেই ক্রোমোজ়োম চলেও এসেছে। আমরা তো এখনই তা জানতে পারব না।’’ ওয়াই ক্রোমোজ়োমের ভূমিকাটি যদি মানবদেহের অন্য কোনও ক্রোমোজ়োমের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়ে যায়, তবে পুরুষের শরীরে বিশেষ ফারাক হবে না। পুরুষ থাকবে এবং তাদের প্রজনন ক্ষমতাও অপরিবর্তিত থাকবে।
আরও পড়ুন:
ওয়াই ক্রোমোজ়োমের ভবিতব্য নিয়ে অবশ্য বিজ্ঞানীরা দু’ভাগে বিভক্ত। একাংশ গ্রেভ্সদের তত্ত্বে বিশ্বাসী নন। ওয়াই ক্রোমোজ়োম যে বিলুপ্ত হয়ে যাবে, তা তাঁরা মনে করেন না। তাঁরা মনে করেন, ওয়াই ক্রোমোজ়োম দীর্ঘ সংগ্রামের সম্মুখীন হয়েছে এবং তা টিকে থেকেছে। ভবিষ্যতেও টিকে থাকবে। এই দ্বিতীয় তত্ত্বে বিশ্বাস করেন বিবর্তনবাদী জীববিজ্ঞানী জেন হিউজেস। ২০১২ সালে তিনি পরিসংখ্যান তুলে দেখান, গত ২.৫ কোটি বছরে মানবদেহ থেকে ওয়াই ক্রোমোজ়োম বিলুপ্তির হার অনেক কমেছে। অর্থাৎ, পুরুষের ওয়াই ক্রোমোজ়োম স্থিতিশীল হচ্ছে। হিউজেসের কথায়, ‘‘আমরা একাধিক স্তন্যপায়ী প্রাণীর ওয়াই ক্রোমোজ়োমের তুল্যমূল্য বিচার করে দেখেছি। প্রথম দিকে জিনের বিলুপ্তির হার খুব বেশি ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তা স্থিতিশীল হয়েছে এবং একসময় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অর্থাৎ, আর কোনও জিন বিলুপ্তই হয়নি।’’ বক্তব্যের সপক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে হিউজেস বলেন, ‘‘আসলে ওয়াই ক্রোমোজ়োমের মধ্যে যে জিনগুলি থাকে, মানুষের শরীরে তার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই শরীরে সেই জিন ধরে রাখার তাগিদও বেশি। আমাদেরই শরীরই একে সহজে হারিয়ে যেতে দেবে না।’’
গ্রেভ্স অবশ্য হিউজেসের এই যুক্তি মানেননি। শরীরে তার গুরুত্ব বেশি হলে এবং রক্ষণ শক্তিশালী হলেই যে কোনও জিন বিলুপ্ত হতে পারে না, তা তিনি মানতে চান না। তাঁর দাবি, সম্প্রতি মানুষের শরীরে ওয়াই ক্রোমোজ়োম কিছু বাড়তি জিন তৈরি করছে। সেগুলি অধিকাংশই নিষ্ক্রিয়। এটি বিলুপ্তির অন্যতম লক্ষণ বলে দাবি করেন গ্রেভ্স।
কেন ওয়াই ক্রোমোজ়োম বিপন্ন?
বিজ্ঞানীদের দাবি, স্তন্যপায়ীদের পূর্বপুরুষদের ক্ষেত্রে এক্স এবং ওয়াই ক্রোমোজ়োম অভিন্ন ছিল। একত্রে তাদের ছিল প্রায় ৮০০টি জিন। কিন্তু আজ থেকে ২০ কোটি বছর আগে পুরুষের লিঙ্গ নির্ধারণের ‘বিশেষজ্ঞ’ হয়ে ওঠে ওয়াই ক্রোমোজ়োম। তখন থেকে পুরুষের শরীরে এক্স এবং ওয়াই মিলিত হওয়া বন্ধ করে দেয়। ওয়াই ক্রোমোজ়োম তার জিন হারাতে শুরু করে। তবে মেয়েদের শরীরে এক্স আরও একটি এক্স ক্রোমোজ়োমের সঙ্গে মিলিত হতে পারত। তাই এই ক্রোমোজ়োমটি অপরিবর্তিত থেকে গিয়েছে। অন্য দিকে, জিন হারাতে হারাতে এখন ওয়াই ক্রোমোজ়োমে বিপন্ন। তাতে পড়ে আছে মাত্র তিন শতাংশ জিন। বিবর্তনকেই এর জন্য দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা।
মানসিক অসুস্থতার সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে! এই প্রথম সে রকমই এক জিনের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা
১২১ জনের মানসিক স্বাস্থ্যের তথ্য নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। গবেষকেরা বলছেন, ওই ১২১ জনেরই জিআরআইএন২এ জিনটির পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এই জিনের সঙ্গেই যোগ রয়েছে মানসিক অসুস্থতার।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৬
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১ সালে পৃথিবীতে প্রতি সাত জন মানুষের মধ্যে এক জন মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁদের মধ্যে কেউ উদ্বেগ, কেউ বা অবসাদে আক্রান্ত হয়েছেন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানসিক সমস্যার নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে জিনের। কোনও পরিবারে কারও মানসিক সমস্যা থাকলে তাঁর নিকটজনের আক্রান্ত হওয়ার একটা সম্ভাবনা রয়েই যায়। মনে করা হচ্ছে, এই সম্ভাবনা তৈরি করে দেয় জিন। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, কিছু জিনের মিলিত প্রভাবে দেখা দিতে পারে মানসিক সমস্যা। সে রকমই এক জিনের সন্ধান প্রথম বার পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
জার্মানির লেইপজ়িগ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন গবেষক এই জিন নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। সেই দলে ছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোহানেস লেমকে। লেমকে জানান, তাঁরা এমন একটি জিনের সন্ধান পেয়েছেন, যা মানসিক সমস্যার জন্ম দেয়। জিনটি যে মানসিক সমস্যার জন্য দায়ী, সেই প্রমাণও তাঁরা পেয়েছেন বলে দাবি লেমকের। তিনি জানান, ওই জিনের নাম হল জিআরআইএন২এ।
আরও পড়ুন:
১২১ জনের মানসিক স্বাস্থ্যের তথ্য নিয়ে গবেষণা করেছেন ওই দলটি। গবেষকেরা বলছেন, ওই ১২১ জনেরই জিআরআইএন২এ-এর পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছে। লেমকে জানান, পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এই জিআরআইএন২এ জিনের কিছু রূপের সঙ্গে যোগ রয়েছে স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ার। এমনকি, মানসিক অসুস্থতার সঙ্গেও যোগ রয়েছে এই জিনের। বিজ্ঞানীরা এ-ও মনে করেন, জিআরআইএন২এ-র পরিবর্তনের কারণে যে অসুস্থতা দেখা দেয়, তার লক্ষণ শৈশব বা কৈশোরেই ধরা পড়ে। শুধু প্রাপ্তবয়স্ক হলেই যে সেই অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যাবে, এমন নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এমনিতে জিআরআইএন২এ-এর পরিবর্তনের কারণে মৃগী বা বু্দ্ধিমত্তার অভাব দেখা দিতে পারে। তবে এই ১২১ জনের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ওই জিনের পরিবর্তনের কারণে তাঁদের মানসিক রোগ হয়েছে।
আরও পড়ুন:
বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্নায়ুকোষগুলিকে সক্রিয় করে জিআরআইএন২এ। তাদের বৈদ্যুতিক সঙ্কেত পাঠানোর ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে সক্রিয় করে তোলে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, জিনের কিছু রূপ এনএমডিএ রিসেপটরের সক্রিয়তা কমিয়ে দেয়। এই এনএমডিএ রিসেপটর মস্তিষ্কের কোষগুলির মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে। স্মৃতি রক্ষার বিষয়টি দেখভাল করে। জিনের কিছু রূপ সেই এনএমডি-রই সক্রিয়তা কমিয়ে দেয়। গবেষকেরা মনে করছেন, এই সক্রিয়তা কমে যাওয়ার তথ্য তাদের চিকিৎসার কাজে সাহায্য করবে। মানসিক রোগের চিকিৎসার প্রাথমিক স্তরেই যদি এই সক্রিয়তা বৃদ্ধি জন্য কিছু ওষুধ দেওয়া যায়, তা হলে রোগীর অবস্থার উন্নতি হতে পারে। ফলে এই গবেষণা মানসিক রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
বঙ্গোপসাগরে কেন এত ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হয়? ঢিলছোড়া দূরত্বে মলাক্কা প্রণালীর ঝড়কে কেন বিরল বলল মৌসম ভবন
সম্প্রতি বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন অঞ্চলে পর পর দু’টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। ঝড়গুলি বিস্তর বিপর্যয়ও ঘটিয়েছে। মলাক্কা প্রণালীর ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ারকে তো সরাসরি ‘বিরল’ বলে উল্লেখ করেছে ভারতের মৌসম ভবন।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:০২
বঙ্গোপসাগরের কাছে মলাক্কা প্রণালীতে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড়কে বিরল বলা হয়েছে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বঙ্গোপসাগর ঘূর্ণিঝড়প্রবণ। গ্রীষ্মের শেষে মে-জুন মাস থেকে শুরু করে শীতের শুরুতে অক্টোবর-নভেম্বর মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণে অবস্থিত সমুদ্রটির উপর একের পর এক ছোটবড় ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। কোনওটি বিধ্বংসী হয়ে ওঠে, কোনওটি আবার স্থলভাগের কাছাকাছি আসার আগেই শক্তি হারায়। বঙ্গোপসাগরের ঠিক বিপরীতে ভারতের পশ্চিম উপকূলে রয়েছে আরব সাগর। সেখানে কিন্তু ছবিটা অন্য। আরব সাগরেও মাঝেমধ্যে ঘূর্ণিঝড় দানা বাঁধে। তবে তা সংখ্যায় এত বেশি নয়। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বঙ্গোপসাগরে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হওয়ার বিশেষ কারণ রয়েছে। আরব সাগরের ক্ষেত্রে তার অনুকূল পরিস্থিতি নেই।
সম্প্রতি বঙ্গোপসাগর এবং সংলগ্ন অঞ্চলে পর পর দু’টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের উপকূল থেকে অনেক দূরে দক্ষিণ প্রান্তের এই ঝড়গুলি বিস্তর বিপর্যয় ঘটিয়েছে। ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ারকে সরাসরি ‘বিরল’ বলে উল্লেখ করেছে ভারতের মৌসম ভবন। এই ঘূর্ণিঝড়টি ইন্দোনেশিয়া এবং তাইল্যান্ডে তাণ্ডব চালিয়েছে। দুই দেশে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৬৫০-এর গণ্ডি। সেনিয়ার শান্ত হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে দানা বাঁধে ঘূর্ণিঝড় দিটওয়া। এর প্রভাবে শ্রীলঙ্কায় বিস্তর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থলভাগে আছড়ে না পড়েই ভারতের দক্ষিণের দ্বীপরাষ্ট্রে ৩৫০-জনের বেশি মৃত্যু ঘটিয়েছে দিটওয়া। তার পর ভারতের উপকূলের সমান্তরালে ক্রমে উত্তরে এগিয়েছে এবং শক্তি হারিয়েছে।
আরও পড়ুন:
বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ বলছে, বঙ্গোপসাগরে বেশি ঘূর্ণিঝ়ড় হওয়ার মোট পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে।
ভৌগোলিক অবস্থান
বঙ্গোপসাগর তিন দিক দিয়ে ভূমি দ্বারা বেষ্টিত। তাই সমুদ্রে উৎপন্ন হওয়া জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু অন্য কোনও দিকে যেতে পারে না। সাগরে আটকে পড়ে। জলের উপর থাকতে থাকতে বায়ুর শক্তি বাড়ে এবং ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। ক্রমে তা স্থলভাগে আছড়ে পড়ে। আরব সাগরের উত্তর এবং পূর্ব দিকে স্থলভাগ থাকলেও বাকি দু’দিক খোলা। তাই এখানে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু আটকে পড়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক কম।
জলের উষ্ণতা
ঘূর্ণিঝড় তৈরির অন্যতম প্রধান কারণ সমুদ্রের জলের উষ্ণতা। আরব সাগরের চেয়ে বঙ্গোপসাগরের জল অনেক বেশি উষ্ণ। এখানে জলের তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। এর ফলেও ঘূর্ণিঝড় তৈরির সম্ভাবনা বঙ্গোপসাগরে বেশি হয়।
আরও পড়ুন:
আর্দ্র বায়ু
ঘূর্ণিঝড় তৈরির জন্য জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রশান্ত মহাসাগর এবং ভারত মহাসাগর থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ আর্দ্র বায়ু বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে। আরব সাগরের ক্ষেত্রে তা হয় না। কারণ, তার চারপাশে পশ্চিম এশিয়ার মতো শুষ্ক স্থলভাগ রয়েছে। সেখান থেকে শুষ্ক বায়ু আরব সাগরের উপর আসে। তাতে আর্দ্রতা বেশি থাকে না।
খামখেয়ালি মৌসুমি বায়ু
দক্ষিণ-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু দ্বারা তুলনামূলক বেশি প্রভাবিত হয় বঙ্গোপসাগর। এই বায়ু প্রচুর জলীয় বাষ্প বয়ে আনে। মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালি স্বভাবের কারণে গোটা অঞ্চলে আবহাওয়ার পরিস্থিতি অস্থির, অস্থিতিশীল হয়ে থাকে। এর ফলে বাতাসের গতিবিধি বেশি হয়, যা ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূল।
আরও পড়ুন:
রক্ষক পশ্চিমঘাট
আরব সাগরের দিকে ভারতের পশ্চিম উপকূল জুড়ে রয়েছে বিশাল পশ্চিমঘাট পর্বত। পশ্চিম দিকে ঘূর্ণিঝড়ের অন্যতম প্রতিবন্ধক এই পর্বতমালা। বলা যায়, পশ্চিম উপকূলের রক্ষাকর্তা পশ্চিমঘাট। তার ফলে আর্দ্র বাতাস বাধা পায় এবং ঘূর্ণিঝড়ের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে পারে না। যদিও বর্তমানে আবহাওয়া এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বিজ্ঞানীদের হিসাব গুলিয়ে যাচ্ছে। আরব সাগরেও আগের চেয়ে অনেক বেশি এবং অনেক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে। তবে বঙ্গোপসাগরের পরিস্থিতি বদলায়নি।
মলাক্কা প্রণালীর ঘূর্ণিঝড়
বঙ্গোপসাগরের একেবারে পূর্ব প্রান্তে রয়েছে মলাক্কা প্রণালী। ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরের ভূখণ্ডকে বিচ্ছিন্ন করে ৯০০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই জলপ্রণালী। এর ঠিক পশ্চিমে রয়েছে বঙ্গোপসাগরের পূর্বাংশ যা আন্দামান সাগর নামেও পরিচিত। কিছু দিন আগে এখানে তৈরি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ার। বঙ্গোপসাগর ঘূর্ণিঝড়প্রবণ হলেও মলাক্কা প্রণালীতে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়া অত্যন্ত বিরল। বিজ্ঞানীরা তাই বিস্মিত হয়েছিলেন। ঘূর্ণিঝড় সেনিয়ার ইন্দোনেশিয়ার দিকে এগিয়ে সেখানে তাণ্ডব চালিয়েছে। তাইল্যান্ডেও ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে এই বিরল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে।
আরও পড়ুন:
কেন বিরল
বস্তুত, ইন্দোনেশিয়ার কাছে এই অংশ দিয়ে নিরক্ষরেখা বিস্তৃত। ব্লুমবার্গের রিপোর্ট বলছে, নিরক্ষরেখার কাছাকাছি অঞ্চলে পৃথিবীর ঘূর্ণনগতি অত্যন্ত কম। সেই কারণেই এখানে ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূল পরিস্থিতি নেই বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। হংকং পর্যবেক্ষণাগার জানিয়েছে, মলাক্কা প্রণালীতে শেষ বার ঝড় হয়েছিল ২০০১ সালে, যার নাম ছিল টাইফুন ভামেই। তার পর এই প্রথম সেখানে আবার কোনও ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড় তৈরি হল। এর নেপথ্যে মলাক্কা প্রণালীর জলের উষ্ণতা বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করেছে হংকং পর্যবেক্ষণাগার।
ঘূর্ণিঝড় দিটওয়া
মলাক্কা প্রণালী থেকে দূরে শ্রীলঙ্কার উপকূলের কাছে তৈরি হয়েছিল ঘূর্ণিঝড় দিটওয়া। এর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। বন্যার জলে ভেসে গিয়েছে গ্রাম এবং শহর। দেশের মধ্যবর্তী অংশের সঙ্গে রাজধানী কলম্বোর যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন। উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছে ভারতীয় বায়ুসেনাও। বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ দিকে ঘূর্ণিঝ়ড় একেবারে বিরল না হলেও শ্রীলঙ্কার উপকূলের কাছাকাছি এই অংশে এত প্রবল ঘূর্ণিঝড় সাধারণত দেখা যায় না। সেই কারণে পূর্বাভাস থাকলেও সে ভাবে প্রস্তুতির সময় মেলেনি বলে মনে করছেন অনেকে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারতের তামিলনাড়ু, পুদুচেরী এবং দক্ষিণ অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলে বৃষ্টি চলছে।
পৃথিবীর থেকে মঙ্গলে তাড়াতাড়ি চলে ঘড়ির কাঁটা, বলছে দুই বিজ্ঞানীর গবেষণা
দুই বিজ্ঞানী পদার্থবিদ্যার কিছু সূত্র প্রয়োগ করে বোঝার চেষ্টা করেন, পৃথিবী এবং মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং বার্ষিক গতি তাদের প্রমাণ সময়কে কতটা প্রভাবিত করতে পারে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৩
অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের সূত্র ধরেই মঙ্গল নিয়ে নতুন এক আবিষ্কার দুই বিজ্ঞানীর। ছবি: আইস্টক।
অ্যালবার্ট আইনস্টাইন আগেই বলেছিলেন। এ বার দুই বিজ্ঞানীর নতুন গবেষণাও সে রকমই বলছে। তাতে দেখা গিয়েছে, পৃথিবীতে ঘড়ির কাঁটা যে গতিতে চলে, মঙ্গলে তার তুলনায় সামান্য দ্রুত চলে। কতটা, সেই পরিমাণও জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবী থেকে পরিমাপ করে দেখা গিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় মঙ্গলের ঘড়ির কাঁটা এই গ্রহের ঘড়ির তুলনায় গড়ে ৪৭৭ মাইক্রোসেকেন্ড (০.৪৭৭ মিলিসেকন্ড) আগে চলে।
বিজ্ঞানীদের কাছে একপ্রকার স্পষ্ট যে, মঙ্গলে ঘড়ি নিয়ে গেলে তার কাঁটা পৃথিবীর তুলনায় সামান্য এগিয়ে চলবে। তাঁদের একাংশ মনে করছেন, এই হিসাব মিলে যাওয়ায় বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা মিলবে। সৌরমণ্ডলের সর্বত্র ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করার ক্ষেত্রে সমস্যা কিছুটা হলেও দূর হবে। আগামী কয়েক দশকে মঙ্গল-সহ সৌরমণ্ডলে মানুষের আনাগোনা আরও বৃদ্ধি পাবে। বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করছেন, প্রত্যেক গ্রহের যদি একটি প্রমাণ সময় বার করা যায়, সে ক্ষেত্রে সেখান থেকে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে মহাকাশচারীদের সুবিধা হবে।
আইনস্টাইনের সেই সূত্রের কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আইনস্টাইন বলেছিলেন, সময়ের কাঁটা সর্বত্র এক গতিতে চলে না। তাঁর আপেক্ষিকতাবাদ সূত্র (রিলেটিভিটি থিওরি) অনুসারে, কোনও নির্দিষ্ট এলাকার সময় সেখানকার মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উপর নির্ভরশীল। যে সব এলাকায় মাধ্যকর্ষণ শক্তি তীব্র, সেখানে ঘড়ির কাঁটা তুলনায় ধীরে চলে। যেখানে মাধ্যকর্ষণ শক্তি তুলনায় দুর্বল, সেখানে ঘড়ির কাঁটাও তুলনায় দ্রুত ঘোরে। ঠিক সে কারণেই পাহাড়ের মাথায় যাঁরা বসবাস করেন, তাঁদের হাতে ঘড়ির কাঁটা তুলনায় দ্রুত ঘোরে। সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে ঘড়ির কাঁটা সেই তুলনায় সামান্য ধীর গতিতে ছোটে।
আরও পড়ুন:
একই ভাবে, কোনও গ্রহ তাঁর ‘অভিভাবক’ নক্ষত্রের চার পাশে যে গতিতে ঘোরে, তার উপর নির্ভর করে সেখানকার সময়। কোনও গ্রহ নিজের কক্ষপথে যত দ্রুত গতিতে নক্ষত্রের চারপাশে ঘোরে, সেই গ্রহের ঘড়ির কাঁটাও তত দ্রুত ঘোরে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনও গ্রহে সময়ের গতি নির্ভর করে সেই গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং নিজের কক্ষপথে তার বার্ষিক গতির উপর। সে কারণে পৃথিবী থেকে মাপলে এক এক গ্রহের এক এক রকম সময় দেখায়। ২০২৪ সালের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, পৃথিবীতে যে গতিতে ঘড়ির কাঁটা ঘোরে, তার তুলনায় চাঁদে তা ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ৫৬ মাইক্রোসেকেন্ড বেশি দ্রুত ঘোরে।
আরও পড়ুন:
কলোরাডোর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেকনোলজি ইন বোল ডারের দুই বিজ্ঞানী নেইল অ্যাশবি এবং বিজুনাথ পাটলা মঙ্গলের সময় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তাঁরা পদার্থবিদ্যার কিছু সূত্র প্রয়োগ করে বোঝার চেষ্টা করেন পৃথিবী এবং মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এবং বার্ষিক গতি তাদের প্রমাণ সময়কে কতটা প্রভাবিত করতে পারে। মঙ্গল পৃথিবীর তুলনায় কম গতিতে নিজের কক্ষপথে সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে। সে কারণে সেখানে ঘড়ির কাঁটা পৃথিবীর তুলনায় সামান্য কম গতিতে ঘোরার কথা। কিন্তু একই সঙ্গে মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠে যে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ। সে কারণে মঙ্গলের প্রমাণ সময় পৃথিবীর প্রমাণ সময়ের তুলনায় অনেকটা এগিয়ে।
বিজ্ঞানীদের একাংশ বলছেন, অ্যাশবি এবং পাটলা নিজেদের গবেষণায় পৃথিবী বা মঙ্গলের কক্ষপথকে গুরুত্ব দেননি। এই দুই গ্রহের কক্ষপথও ভিন্ন। মঙ্গলের কক্ষপথ পৃথিবীর তুলনায় অনেক বেশি ডিম্বাকার। ওই বিজ্ঞানীদের দাবি, এই বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। এই কক্ষপথের কারণে মঙ্গলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তির হেরফের হয়। সেই অনুসারে বছরের বিভিন্ন সময় মঙ্গলে ঘড়ি কাঁটার গতিরও হেরফের হওয়ার কথা বলেই মনে করেন ওই বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানী পাটলা জানিয়েছেন, তাঁদের এই গবেষণা ভবিষ্যতের অনেক গবেষণার ভিত্তি মাত্র। ভবিষ্যতে এই গবেষণার উপর ভিত্তি করে মঙ্গলে ইন্টারনেট পরিষেবা চালু করা যেতে পারে।
মৃতকে সমাধি দেওয়া আধুনিক মানুষ শুরু করেনি! আগুনের পর আর এক ভুল ধারণা ভেঙে গেল বিজ্ঞানীদের
এদের মস্তিষ্কের আকার ছিল অনেক ছোট। আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের প্রায় এক তৃতীয়াংশ। অনেকটা কমলালেবুর মাপের মস্তিষ্ক ছিল এদের। তবে উচ্চতা ছিল প্রায় পাঁচ ফুট। অন্তত দু’লক্ষ বছর আগে এই মানবপ্রজাতিই তৈরি করেছিল সমাধিস্থল।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৫
দক্ষিণ আফ্রিকায় দু’লক্ষ বছরের পুরনো সমাধিস্থল খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। —প্রতীকী চিত্র।
মস্তিষ্কের আকার ছোট না বড়, তার উপরেই নির্ভর করে বুদ্ধিমত্তা। প্রাণীজগৎ সম্পর্কে এটাই প্রচলিত ধারণা। কিন্তু সত্যিই কি তাই? বছরের পর বছর ধরে সেই প্রচলিত ধারণা নিয়েই এ বার প্রশ্ন তুলে দিল প্রত্নতাত্ত্বিকদের নতুন খোঁজ।
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহান্সবার্গ থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে রয়েছে রাইজ়িং স্টার গুহা। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম আলোচিত প্রত্নতাত্ত্বিক অঞ্চল এটি। সম্প্রতি এখানে বিশ্বের প্রাচীনতম সমাধিস্থলের নিদর্শন মিলেছে। তবে সেটি কোনও আধুনিক মানুষ (হোমো সেপিয়েন্স)-এর তৈরি নয়। তা হলে কারা এই সমাধি দিয়েছিল? সেই প্রশ্নের উত্তরই ইঙ্গিত দিচ্ছে, মস্তিষ্কের আকার সম্ভবত বুদ্ধিমত্তার বিকাশের একমাত্র কারণ নয়।
সাম্প্রতিক কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক খোঁজে প্রমাণিত হয়েছে, আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই আদিমানবেরা আগুন জ্বালাতে শিখে গিয়েছিল। আনুমানিক চার লক্ষ বছর আগে মানুষের কোনও এক আদিম প্রজাতি আগুন জ্বালাতে জানত। তা প্রয়োজন মতো নিয়ন্ত্রণ করতেও জানত। অনুমান করায় হয়, ওই আদিম প্রজাতি ছিল নিয়ানডারথালেরা। এ বার জানা গেল মৃতদেহ প্রথম সমাধিও দিয়েছিলেন আধুনিক মানুষ ভিন্ন অন্য এক প্রজাতি।
সমাধিস্থলটি অন্তত ২,০০,০০০ বছরের পুরনো। ওই সময়ে পৃথিবীতে আধুনিক মানুষের আবির্ভাব হয়ে গিয়েছিল। আজ থেকে প্রায় তিন লক্ষ বছর আগে আফ্রিকা মহাদেশেই প্রথম আবির্ভাব হয় আধুনিক মানুষের। তবে তখন পৃথিবীতে তারাই একমাত্র মানবপ্রজাতি ছিল না। হোমো গণের অন্য আদিমানবেরাও ওই সময়ে ঘুরে বেড়াত পৃথিবীতে। তাদেরই মধ্যে একটি হল হোমা নালেদি। প্রত্নতাত্ত্বিকদের দাবি, রাইজ়িং স্টার গুহায় ওই কবরগুলি দিয়েছিল হোমো নালেদিরাই। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এদের মস্তিষ্কের আকার আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের তুলনায় অনেক ছোট। প্রায় এক তৃতীয়াংশ। অনেকটা কমলালেবুর আকারের মস্তিষ্ক।
আরও পড়ুন:
খননকার্য শুরু হয়েছিল এক দশকেরও বেশি সময় আগে। ২০১৩ সালে। জোহান্সবার্গের উইটওয়াটারস্ট্র্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক লি বার্জারের নেতৃত্বে একটি দল গুহায় খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করে। ওই খননকার্যের সময়েই প্রথম জানা যায়, হোমো নালেদি নামে এই আদিম মানবপ্রজাতির কথা। গুহা থেকে পাওয়া যায় দেড় হাজারেরও বেশি হাড়গোড়ের জীবাশ্ম। যেগুলি ছিল মানুষের মতো অন্তত ১৫টি প্রাণী। পরে গবেষকেরা ঘোষণা করেন, ওই হাড়গুলি হোমো নালেদির।
এই প্রজাতির আদিমানবদের উচ্চতা ছিল প্রায় পাঁচ ফুট। হাত এবং পায়ের আঙুলগুলি ঈষৎ বাঁকানো। হাতগুলির গড়ন ছিল এমন, যাতে তারা কোনও বস্তুকে ধরে প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে পারে। তবে এদের মস্তিষ্কের আকার অনেক ছোট। এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে ২০১৭-১৮ সালে ফের এক দফা খননকার্য শুরু হয় ওই গুহায়। সেই খননকার্যে সম্প্রতি ওই গুহার মধ্যেই খুঁজে পাওয়া গিয়েছে আদিমানবদের সমাধি। গুহার কিছু চেম্বারের মধ্যে পাললিক শিলাস্তরের নীচে পাওয়া গিয়েছে হাড়গুলি।
আরও পড়ুন:
ওই পাললিক শিলাগুলিও বিশ্লেষণ করে দেখেন গবেষকেরা। তবে ওই মাটি জলের তোড়ে বা কোনও জায়গা থেকে পিছলে দেহের উপর পড়েছে— এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি গবেষণায়। যা থেকে প্রত্নতাত্ত্বিকেরা নিশ্চিত ওই দেহগুলি জেনেবুঝেই গুহার ওই অংশে রাখা হয়েছিল। তার পরে সেগুলিকে মাটি দিয়ে চাপা দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি গুহার ওই অংশে কেউ বাস করত, এমন প্রমাণও মেলেনি। যা থেকে গবেষকেরা নিশ্চিত, ওই অংশটিকে একটি সমাধিস্থল হিসাবেই ব্যবহার করত আদিমানবদের এই প্রজাতি।
দক্ষিণ আফ্রিকার রাইজ়িং স্টার হল বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা একটি গুহা অঞ্চল। এখান থেকেই এক দশক আগে পাওয়া গিয়েছিল হোমো নালেদির জীবাশ্ম। নতুন খুঁজে পাওয়া জীবাশ্মগুলিও ওই একই আদিম প্রজাতির। তা থেকেই গবেষকেরা আরও স্পষ্ট হয়েছেন, হোমো নালেদিদের মধ্যে সমাধি দেওয়ার চল ছিল। এই মানবপ্রজাতির কোন সময়ে আবির্ভাব হয়, কোন সময়ে পৃথিবী থেকে তারা হারিয়ে যায়— তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে অনুমান করা হয়, সাড়ে তিন থেকে আড়াই লক্ষ বছর আগে এরা বাস করত পৃথিবীতে।
হোমো নালেদিদের এই সমাধিগুলি আবিষ্কারই আরও ভাবিয়ে তুলেছে প্রত্নতাত্ত্বিকদের। মানব বিবর্তনের ইতিহাসে মস্তিষ্কের আকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রচলিত ধারণায়, যে মানবপ্রজাতিগুলির মস্তিস্কের আকার বড়, তাদের বুদ্ধিমত্তাও তত উন্নত ছিল। কিন্তু মস্তিষ্কের আকারই কি এর একমাত্র কারণ? তা হলে আধুনিক মানুষের চেয়ে এত ছোট মাপের মস্তিষ্কের এই আদিমানবেরা কী ভাবে সমাধি বানাল!
আরও পড়ুন:
দক্ষিণ আফ্রিকার গুহায় পাওয়া এই সমাধিগুলির কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলি যত্ন সহকারে খনন করা হয়েছিল। তার পরে মাটি দিয়ে ভরাট করে, তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। গবেষকদের কথায়, এটি কোনও আকস্মিক ঘটনা নয়। বরং নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে এই সমাধিগুলি দেওয়া হয়েছিল বলে আভাস মিলেছে। শুধু তা-ই নয়, এই গুহার দেওয়ালে খোদাই করা কিছু জ্যামিতিক নকশাও মিলেছে। উদ্দেশ্যপূর্ণ ভাবে মসৃণ করা পাথরের উপরে এই নকশাগুলি ইঙ্গিত করে হোমো নালেডিরা প্রতীকও তৈরি করতে পারত। তবে এ বিষয়ে আরও বিশদ গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকদলের অন্যতম সদস্য প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক অগাস্টিন ফুয়েন্তেস। তাঁর মতে, এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়া গেলে এই খোঁজ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। প্রতীক আঁকা, শৈল্পিক অভিব্যক্তি প্রকাশের মতো সৃজনশীলতার উপরে যে শুধু আধুনিক মানুষেরই একচেটিয়া আধিপত্য ছিল না, তা প্রমাণ করতে আরও সাহায্য করবে এই গবেষণা।
আদরের পুষ্যি ‘ক্যাট’ কী ভাবে এল মানুষের ঘরে? বনবিড়ালের থেকে বিবর্তনের তত্ত্ব খারিজ নয়া গবেষণায়
বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি ছিল, যখন মানুষ প্রথম চাষবাস করা শুরু করেছিল, তখন থেকেই বিড়াল পুষতে শুরু করেছিল তারা। সেই নিয়ে যুক্তিও রয়েছে বিজ্ঞানীদের। যদিও নতুন গবেষণা সেই যুক্তি মানছে না।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৬
— প্রতীকী চিত্র।
বহু বাড়ির সোফা, নরম কম্বল থাকে তাদের দখলে। সে সব থেকে সরানোর চেষ্টা করা হলে দখল করে মনিবের কোল। এই পোষ্য বিড়ালের জন্ম কোথায়, কী ভাবে এল তারা মনিবের সোফায়-সংসারে, ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা। আর তাতেই চমকে গিয়েছেন।
প্রত্নতত্ত্ববিদদের একটা অংশ মনে করতেন, প্রায় ৯,৫০০ বছর ধরে মানুষের সঙ্গে বসবাস করছে বিড়াল। সেই শুরুটা হয়েছিল ভূমধ্যসাগরের পূর্বে লেভঁতে। এখন তা পশ্চিম এশিয়ার অন্তর্গত। বিজ্ঞানীদের দাবি ছিল, যখন মানুষ প্রথম চাষবাস করা শুরু করেছিল, তখন থেকেই বিড়াল পুষতে শুরু করেছিল তারা। সেই নিয়ে যুক্তিও রয়েছে বিজ্ঞানীদের। তাঁরা মনে করতেন, চাষ করে শস্য যখন ঘরে রাখতে শুরু করল মানুষজন, তখন ইঁদুরের উৎপাত শুরু হয়। তারা দেখে, সেই ইঁদুর ধরে খায় বন্য বিড়াল। তার পরেই বন্য বিড়ালদের পোষ মানাতে শুরু করে মানুষজন। পৃথিবীতে বিড়ালের সবচেয়ে পুরনো সমাধি মিলেছে সাইপ্রাসে।
নতুন গবেষণা বলছে, বিড়াল পোষা নিয়ে বিজ্ঞানীদের এই ধারণা ঠিক নয়। পোষ্য বিড়ালের জন্ম অনেক পরে। ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন জায়গায় সমাধিস্থল পরখ করে এই দাবি করেন বিজ্ঞানীরা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্রেগার লারসন জানান, ১০ হাজার বছর বা তারও পুরনো হাড়গোড় পরীক্ষা করা হয়েছে। সেগুলির মধ্যে কিছু হাড়গোড় পোষ্য বিড়ালের বলে দাবি করা হয়। সেই হাড়ও পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, এখন মানুষের ঘরে যে পোষ্য বিড়াল থাকে, তাদের পূর্বপুরুষ বনবিড়াল নয়।
গবেষকেরা ৮৭টি প্রাচীন এবং আধুনিক কালের বিড়ালের জিন নিয়ে পরীক্ষা করেছেন। তাতে দেখা গিয়েছে, এই পোষ্য বিড়াল যার বিজ্ঞানসম্মত নাম ফেলিস ক্যাটাস, তার জন্ম লেভঁতে নয়, বরং উত্তর আফ্রিকায়। এই আধুনিক পোষ্য বিড়ালের পূর্বপুরুষদের সঙ্গে মিল রয়েছে আফ্রিকার বন্য বিড়াল বা ফেলিস লিবিকার। ওই বিজ্ঞানীদের দাবি, এই পোষ্য বিড়াল ইউরোপের সমাজে ছড়িয়ে পড়েছিল ২,০০০ বছর আগে, যখন রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান হয়। তারা বনবিড়ালের বংশধর নয়।
জার্নাল সেল জেনোমিকসে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত একটি গবেষণা বলছে, ৭৩০ খ্রিস্টাব্দে চিনে পা পড়ে এই পোষ্য বিড়ালদের। সিল্ক রুট ধরে বণিকদের সঙ্গে তারা এসেছিল চিনে। গত পাঁচ হাজার বছর ধরে ওই দেশে যত বিড়ালের হাড়গোড় উদ্ধার হয়েছে, সেগুলির মধ্যে ২২টি বিড়ালের হাড়গোড়ের ডিএনএ পরীক্ষা করেন বিজ্ঞানীরা। তা পরখ করেই এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তাঁরা। বিজ্ঞানীদের দাবি, ৫,৪০০ বছর আগে চিনে মানুষের সঙ্গে যে বিড়াল জাতীয় প্রাণী বাস করত, তাদের সঙ্গে আজকের পোষ্য বিড়ালের কোনও মিল নেই। ওই প্রজাতির বিজ্ঞানসম্মত নাম রাখা হয়েছে প্রায়োনেইলারাস বেঙ্গালেনসিস। কথ্য ভাষায় তাদের লেপার্ড ক্যাট বলেন বিজ্ঞানীরা। চিনের সাতটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে এই প্রজাতির বিড়ালের হাড়গোড় মিলেছে।
আরও পড়ুন:
পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক শু-জিন লুও জানান, এই লেপার্ড ক্যাট এবং মানুষ উভয়েই উভয়ের উপকার করত। কিন্তু তাকে পুরোপুরি পোষ মানাতে পারেনি মানুষ। সাড়ে তিন হাজার বছর কেটে গেলেও তাকে বশ করতে পারেনি। সে নিজের মতো ইঁদুর ধরে খেত। পাশাপাশি পোষা মুরগিও খেয়ে নিত। এতেই সংঘাত শুরু হয়। তার পরে এক দিন বনে ফিরে যায় লেপার্ড ক্যাট। আজও সেখানে রয়ে গিয়েছে বন্য জীব। অবলুপ্তি ঘটেনি তার।
অনেক বিজ্ঞানী মানতে চাননি, যে আধুনিক পোষ্য বিড়ালের জন্ম উত্তর আফ্রিকায়। তবে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাথন লোসোসের মতে, এই তত্ত্বে আশ্চর্য হওয়ারও কিছু নেই। তিনি মিশরের প্রাচীন গুহাচিত্র, খোদিত লিপির কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, সমাধির গায়ে যে বিড়ালের ছবি খোদিত রয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, তাদের গলায় রয়েছে হার। কানে রয়েছে দুল। প্লেট থেকে খাবার খাচ্ছে তারা। তবে ফারাওদের দেশেই প্রথম বিড়ালকে পোষ মানানো হয়েছিল কি না, তা স্পষ্ট নয়। লোসোসের মতে , এমনও হতে পারে, যে বনবিড়ালের বাচ্চাকে প্রথম পোষ মানানো হয়েছিল। কারণ, তা করা অনেক সহজ। ক্রমে সেই বনবিড়ালই মানুষের ঘরে জায়গা করে নিয়েছে। তাঁর মতে, এই নিয়ে আরও ডিএনএ গবেষণার প্রয়োজন।
বছরে দু’ইঞ্চি করে উত্তর-পূর্বে সরছে, মায়ানমারের পাতের সঙ্গে ধাক্কা খাচ্ছে বাংলাদেশের পাত! ভূমিকম্পে ঝুঁকি কতটা
কলম্বিয়ার এক দল বিজ্ঞানী বাংলাদেশের ভূতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেছেন। রিপোর্টে দেখিয়েছেন, ভূমিকম্পপ্রবণ না হলেও বাংলাদেশে ভবিষ্যতে অতি তীব্র ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৭:৫৫
বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থানে শঙ্কিত বিজ্ঞানীরা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প। উৎসস্থল মাটির ১০ কিলোমিটার গভীরে। কিন্তু তাতেই বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে বাংলাদেশে। ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহতের সংখ্যা ছয় শতাধিক! ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে প্রচুর। বিজ্ঞানীরা কিন্তু এই পরিসংখ্যানে খুব একটা অবাক হচ্ছেন না। তাঁদের মতে, বাংলাদেশের ভৌগোলিক এবং ভূতাত্ত্বিক অবস্থানই এই ভূমিকম্পের জন্য দায়ী। আরও বড় মাত্রার কম্পনও হতে পারত। বাংলাদেশে ভবিষ্যতেও বিধ্বংসী ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তাঁরা জানাচ্ছেন।
ভূতাত্ত্বিক মাইকেল স্টেকলারের নেতৃত্বাধীন কলম্বিয়ার এক দল বিজ্ঞানী বাংলাদেশের ভূতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেছেন। ২০০৩ সাল থেকে তাঁরা বাংলাদেশে কাজ করছেন। সেই দেশের মাটিতে সশরীরে উপস্থিত থেকে সরেজমিনে খতিয়ে দেখছেন পরিস্থিতি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ জিপিএস যন্ত্র বসিয়েছিলেন স্টেকলারেরা। একইসঙ্গে নিকটবর্তী অন্য দেশগুলিতেও যন্ত্র বসানো হয়েছিল। ভূতাত্ত্বিক পাতের ছোটখাটো পরিবর্তন সে সব যন্ত্রে ধরা পড়ে। দেখা গিয়েছে, স্থায়ী জিপিএসগুলির অবস্থানেও কিছুটা করে পরিবর্তন হচ্ছে। সেই পরিবর্তনগুলি বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের মাটি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হয় গবেষকদল।
আরও পড়ুন:
স্টেকলারেরা জানান, বাংলাদেশ যে ভূমির উপরে গড়ে উঠেছে, তা ধীরে ধীরে উত্তর-পূর্ব দিকে সরছে। সরণের হার অতি সামান্য— বছরে দু’ইঞ্চি মাত্র। কিন্তু তা অবজ্ঞা করার মতো নয় মোটেই। কারণ, শুধু সরণেই থেমে নেই বাংলাদেশের ভূমি-পাত। তা মায়ানমারের নীচে থাকা পৃথিবীর ভূত্বকের অংশের সঙ্গে ধাক্কাও খাচ্ছে। তার ফলে মাঝেমধ্যে হচ্ছে ভূমিকম্প। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, বাংলাদেশের পাত সরে যাওয়া এবং মায়ানমারের পাতের সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে মাটির গভীরে চাপ উৎপন্ন হচ্ছে। এই চাপকে নিয়ে চিন্তার কারণ আছে। ভবিষ্যতে কখনও একসঙ্গে এই চাপ মুক্ত হলে অতি তীব্র ভূমিকম্পের উৎস হতে পারে বাংলাদেশ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে ঢাকা-সহ একাধিক বড় শহর।
কতটা বিধ্বংসী হতে পারে বাংলাদেশের ভূমিকম্প? স্টেকলার বলেন, ‘‘কতটা বিধ্বংসী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তা নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। কারণ, আমরা জানি না ঠিক কত দিন ধরে মাটির নীচের ওই অংশে চাপ তৈরি হচ্ছে। তবে তা বছরের পর বছর ধরে জমে আসছে।’’ অনুমান করাও কি সম্ভব নয়? স্টেকলারের কথায়, ‘‘একটা অনুমান আমরা করতে পারি। আমরা জানি, গত চারশো বছরে বাংলাদেশে অতি তীব্র কোনও ভূমিকম্প হয়নি। ভূমিকম্পের ফলে মারাত্মক কোনও ক্ষয়ক্ষতির কথা শোনা যায়নি। ফলে সেই থেকে চাপ জমছে। গত অন্তত চারশো বছরে মাটির নীচের সেই চাপ বড় কোনও বিস্ফোরণের মাধ্যমে বেরিয়ে আসেনি।’’
আরও পড়ুন:
‘নেচার জিওসায়েন্স’ পত্রিকায় বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থার বর্ণনা করেছেন স্টেকলারেরা। জানিয়েছেন, বাংলাদেশের নীচে যে পাতের সংঘর্ষ চলছে, কোনও এক মুহূর্তের ব্যাঘাতে যদি তা একে অপরকে ঘেঁষে বেরিয়ে যায় বা পিছলে যায়, ৮.২ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে ওই অঞ্চলে। ধসে যেতে পারে মাটি। এমনকি, কম্পনের মাত্রা ৯ পর্যন্তও পৌঁছোতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। এত তীব্র ভূমিকম্প কখনও সেখানে হয়নি।
তবে ভূমিকম্পের এই বিপর্যয় বাংলাদেশে আসন্ন— এমন কথা জোর দিয়ে বলছেন না গবেষকেরা। তাঁদের দাবি, এই বিপর্যয় ঘটতে কয়েক বছর লাগতে পারে। আবার কয়েকশো বছরও লেগে যেতে পারে। বাংলাদেশ-মায়ানমারের এই ভূমি-পাতের সীমা ১৫০ মাইল লম্বা। কোন অংশ হবে বিধ্বংসী সেই ভূমিকম্পের উৎসস্থল, তা-ও নিশ্চিত করে বলতে পারেননি কেউ। তবে রাজধানী ঢাকাও বিপদরেখার মধ্যেই রয়েছে।
ভূমিকম্পে বাংলাদেশের ঝুঁকির অন্যতম কারণ সে দেশের মাটি। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বয়ে আনা শত শত বছরের পলি দিয়ে তৈরি বাংলাদেশের মাটি। গোটা দেশে অসংখ্য নদী রয়েছে। ফলে মাটিতে পলির আধিক্য রয়েছে। স্টেকলারদের মতে, ভূমিকম্পের সময় এই আলগা পলি বাংলাদেশের বিপদ বাড়িয়ে তুলতে পারে। বাড়তে পারে কম্পনের মাত্রাও। ফলে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। ঢাকা শহরের গঠনপরিকল্পনা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিজ্ঞানীরা। দাবি, শহরের অধিকাংশ বহুতল তৈরির সময়েই নিয়মকানুন মানা হয়নি। ঢাকার মধ্যে এবং সংলগ্ন এলাকায় কিছু অংশের মাটি বেশ ভঙ্গুর। এতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। স্টেকলারের কথায়, ‘‘ঢাকা শহরটা একটা জেলির বাটির উপর গড়ে উঠেছে।’’
শুক্রবারের ভূমিকম্পের উৎসস্থল ছিল বাংলাদেশের নরসিংদী থেকে ১৪ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিমে। ভারতের জাতীয় ভূতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের তথ্য বলছে, রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ৫.৭। এর ফলে কলকাতা-সহ উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তও কেঁপে উঠেছিল। ঢাকার একটি বহুতলের রেলিং ভেঙে পড়েছিল কম্পনের অভিঘাতে। তাতে চাপা পড়ে মৃত্যু হয় তিন পথচারীর। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোথাও দেওয়াল ভেঙে কোথাও মাটির দেওয়ালে চাপা পড়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আগামী দিনে আরও বড় ভূমিকম্প হলে কলকাতা-সহ ভারতের বিভিন্ন অংশেও তার প্রভাব পড়তে চলেছে, সতর্ক করেছেন বিজ্ঞানীদের একাংশ।
এক বার নয়, রাতে দু’দফায় ঘুমোত মানুষ, শতিনেক বছর আগেও! কী ভাবে বদলে গেল আমাদের মস্তিষ্কের নিদ্রাচক্র
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘুমের মাঝে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান নিলে আখেরে সুবিধা হত মানুষজনের। দীর্ঘ শীতের রাত কাটত সহজেই। প্রশ্ন উঠছে, হাজার হাজার বছর আগে রাতে ঘুম থেকে উঠে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত কী করতেন মানুষজন?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০৩
মানুষের একটানা আট ঘণ্টা ঘুমের অভ্যাস খুব পুরনো নয়। ছবি: শাটারস্টক।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়! আপনি বসে ভাবেন, কেন এমন হল। আসলে এর নেপথ্যে রয়েছে বিশেষ এক কারণ। আসলে রাতে টানা ঘুম সে ভাবে বলতে গেলে আধুনিক অভ্যাস। বিবর্তনের ফসল। হাজার হাজার বছর আগে মানুষ রাতে একটানা ঘুমাতেন না। দু’দফায় ঘুমাতেন। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে এই অভ্যাসে বদল ঘটে। সে সময়ে ভারতে রাজত্ব করছেন মোগলেরা। ইংল্যান্ডে মৃত্যু হয়েছে প্রথম এলিজাবেথের। ওই সময় থেকে কেন সেই অভ্যাস বদলাল,তার নেপথ্যেও রয়েছে কারণ।
মানুষের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, হাজার বছর আগে টানা আট ঘণ্টা কেউ ঘুমাতেন না। পরিবর্তে প্রতি রাতে দু’দফায় ঘুমাতেন তাঁরা— প্রথম এবং দ্বিতীয়। প্রতি দফায় কয়েক ঘণ্টা করে ঘুমাতেন তাঁরা। মাঝে এক ঘণ্টা বা তার বেশি সময়ের ব্যবধান থাকত। সাধারণত মাঝরাতে নেওয়া হত সেই ব্যবধান। সে সময় উঠে ঘুরে বেড়াতেন লোকজন। তার পরে আবার ঘুমিয়ে পড়তেন। উঠতেন ভোরবেলা। ইতিহাসবিদেরা দেখেছেন, ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকায় এই রীতিরই চল ছিল।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘুমের মাঝে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধান নিলে আখেরে সুবিধা হত মানুষজনের। দীর্ঘ শীতের রাত কাটত সহজেই। প্রশ্ন উঠছে, হাজার হাজার বছর আগে রাতে ঘুম থেকে উঠে ঘুমোতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত কী করতেন মানুষজন? ইতিহাসবিদেরা বিভিন্ন তথ্য ঘেঁটে দেখেছেন, হাজার হাজার বছর আগে মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে খামারে থাকা পশুদের এক বার দেখে আসতেন লোকজন। খাবার দিয়ে আসতেন। শীতের দেশগুলিতে আগুন জ্বালিয়ে ঘুমাতে যেতেন মানুষজন। মাঝরাতে উঠে সেই আগুনে কাঠ দিতেন। আঁচ বাড়িয়ে দিতেন। এ সব কাজই করতেন ব্যবধানের সময়ে। অনেকে আবার বিছানায় বসেই প্রার্থনা সেরে নিতেন।
আরও পড়ুন:
শিল্পবিপ্লব যখন হয়নি, তার আগে মানুষজন রাতে ঘুম থেকে উঠে আর এক বার ঘুমোতে যাওয়ার আগের সময়টায় পড়াশোনা করতেন। কেউ ওই সময়টা ডায়েরি, চিঠি লেখার জন্য বরাদ্দ রাখতেন। প্রতিবেশীর সঙ্গে গল্পগুজব করতে যেতেন, এমন উদাহরণও পেয়েছেন ইতিহাসবিদেরা। অনেক দম্পতি এই সময়টা একটু নিজেদের মতো করে একান্তে কাটাতেন। গ্রিক কবি হোমার এবং রোমান কবি ভার্জিলের লেখাতেও ওই দু’দফা ঘুমের মাঝে ব্যবধানের কথা উল্লেখ রয়েছে।
সেই নিয়মের বদল এল কী ভাবে? কী ভাবে দু’দফার বদলে টানা ঘুমের অভ্যাস হল মানুষের? কিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডারেন রোডস জানান, ২০০ বছর বা তার কিছু বেশি সময় ধরে রাতে একটানা ঘুমাতে শুরু করেছেন মানুষজন। তার অন্যতম কারণ, সামাজিক পটবদল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কৃত্রিম আলোর কারণেই মানুষের ঘুমের ধাঁচে বদল এসেছে। সপ্তদশ, অষ্টাদশ শতকে প্রথমে তেলের আলো, তার পরে গ্যাসের আলো আসে। ক্রমে আবিষ্কার হয় বিদ্যুতের। তার ফলে রাতেও মানুষ নিজের কাজ সারতে সক্ষম হন। এর আগে সূর্যাস্তের পরে অন্ধকারে মানুষের কিছু করার থাকত না। তাই সূর্যাস্তের পরেই ঘুমিয়ে পড়তেন। ক্রমে সেই ছবি বদলাতে লাগল।
আরও পড়ুন:
রাতে উজ্জ্বল আলো আমাদের শরীরে জৈবিক প্রভাবও ফেলেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঘুমের আগে ঘরে উজ্জ্বল আলো জ্বললে মেলাটোনিন হরমোন ক্ষরণ দেরিতে হয়। এই মেলাটোনিন ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। তা যত দেরিতে ক্ষরিত হয়, তত ঘুমেরও দেরি হয়। শিল্পবিপ্লব শুধু মানুষের কাজের ধারা বদলায়নি, ঘুমের ধাঁচও বদলে দিয়েছে। কারখানায় কঠিন পরিশ্রমের পরে বাড়িতে গিয়ে একটানা ঘুমোতে শুরু করলেন লোকজন। কয়েক ঘণ্টা ঘুমানোর পরে ব্যবধান নেওয়ার রেওয়াজ লুপ্ত হয়ে গেল।
ইস্টার দ্বীপের ওই প্রকাণ্ড মূর্তিগুলির স্রষ্টারা কেমন ছিলেন? দীর্ঘ দিনের প্রচলিত ধারণা ভেঙে দিল নয়া গবেষণা
চিলের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দূরে রয়েছে ইস্টার দ্বীপ। এই ছোট দ্বীপটিতে ছড়িয়ে রয়েছে প্রায় এক হাজার পাথরের মূর্তি। স্থানীয়েরা এগুলিকে বলেন, মোয়াই।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০৬
ইস্টার দ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তে এমন আবক্ষ প্রস্তর মূর্তি ছড়িয়ে রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
আনুমানিক ১৩০০-১৭০০ সালের কথা। গোটা গোটা পাথর খোদাই করে প্রকাণ্ড মুখের মূর্তি তৈরি হয়েছিল। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের ইস্টার দ্বীপে গেলে আজও এগুলি দেখা যায়। আবক্ষ ওই মূর্তিগুলির স্রষ্টা সেখানে বসবাসকারী প্রাচীন রাপা নুই জনগোষ্ঠী। এত দিন ধরে প্রচলিত ধারণা ছিল, রাপা নুই জনগোষ্ঠী মিলিত উদ্যোগেই এই মূর্তিগুলি তৈরি করেছিল। সেই ধারণা এ বার ভ্রান্ত প্রমাণ করে দিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা।
প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ছোট্ট একটি দ্বীপ ইস্টার আইল্যান্ড। আয়তন প্রায় ১৬৩ বর্গকিলোমিটার। চিলের মূল ভূখণ্ড থেকে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপে ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে বিশাল পাথরের বিশাল মূর্তি। কী ভাবে এগুলি তৈরি হয়েছে, তা আজও এক বিস্ময়। স্থানীয়েরা এগুলিকে বলেন, মোয়াই। ইস্টার দ্বীপে এমন প্রায় এক হাজারটি প্রস্তর মূর্তি রয়েছে। গড়ে ১৩ ফুট উঁচু, ওজন প্রায় সাড়ে ১২ টন। কোনও কোনও মূর্তির ওজন আবার ২০ টনেরও বেশি।
প্রাচীন কালে কী ভাবে এই মূর্তিগুলি তৈরি হয়েছে, তা নিয়েও দীর্ঘ সময় বিস্ময়ই রয়ে গিয়েছিল। তবে এখন স্পষ্ট, এর ভাস্কর্যগুলির নেপথ্যে রয়েছে রাপা নুইয়েরা। এই জনগোষ্ঠী কবে থেকে ইস্টার দ্বীপে বাস করছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অনুমান করা হয়, ৩০০-১২০০ সালের মধ্যে এই দ্বীপে বসতি গড়ে তুলেছিল রাপা নুই গোষ্ঠী। ইস্টার দ্বীপে এখনও এই জনগোষ্ঠীর বাস রয়েছে। চিলের ২০১৭ সালের জনগণনা অনুসারে, ইস্টার দ্বীপের ৪৫ শতাংশ বাসিন্দাই রাপা নুই। সেই গোষ্ঠীর পূর্বপুরুষেরা এই প্রকাণ্ড প্রস্তর মূর্তিগুলি তৈরি করেছিলেন এককালে।
রাপা নুই গোষ্ঠী এবং মোয়াই নিয়ে অতীতেও বিস্তর গবেষণা হয়েছে। দীর্ঘ দিনের প্রচলিত ধারণা অনুসারে, রাপা নুই গোষ্ঠী মিলিত উদ্যোগে সংগঠিত ভাবে মোয়াইগুলি তৈরি করেছিল। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা যায়, এগুলি মোটেই মিলিত উদ্যোগে তৈরি হয়নি। রাপা নুই গোষ্ঠী অতীতে বিভিন্ন ছোট ছোট দলে বিভক্ত ছিল। ওই ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলি আলাদা ভাবে তৈরি করেছে মূর্তিগুলি।
নিউ ইয়র্কের বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক কার্ল লিপোর নেতৃত্বে একটি দল সম্প্রতি ইস্টার দ্বীপেই এই মূর্তিগুলি নিয়ে গবেষণা করে। তারা এই দ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তে ড্রোন উড়িয়ে প্রায় ১১ হাজার ছবি সংগ্রহ করে। ওই ছবিগুলির মাধ্যমে প্রত্নতাত্ত্বিক দল একটি ত্রিমাত্রিক (থ্রি-ডি) মডেল তৈরি করে। তাতে বিভিন্ন স্থানে অসমাপ্ত মোয়াইয়ের ছবি ধরা পড়েছে। তা বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, অর্ধর্নিমিত মূর্তিগুলিতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য রয়েছে। দু’টি ভিন্ন জায়গায় কাজের নমুনার মধ্যেও অমিল রয়েছে। গত বুধবার প্লাস ওয়ান জার্নালে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুন:
প্রত্নতাত্ত্বিকেরা ত্রিমাত্রিক মডেলে অন্তত ৩০টি পৃথক এলাকাকে চিহ্নিত করেছেন, যেখানে মূর্তিগুলি খোদাই করা হত। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, একটি এলাকার সঙ্গে অন্য এলাকায় পাথর কাটা বা মূর্তি খোদাইয়ের কাজে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। অর্থাৎ, এই মোয়াই তৈরির কাজ কেন্দ্রীয় ভাবে নিয়ন্ত্রিত হত না। প্রতিটি এলাকায় স্বতন্ত্র ভাবে মূর্তিগুলি তৈরি করা হত। এর থেকে প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান, রাপা নুই জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক ভাবে ঐক্যবদ্ধ কোনও সমাজে বাস করত না। বরং, ছোট ছোট কিছু গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে বাস করত তারা।
ইস্টার দ্বীপে ত্রিমাত্রিক মডেলের মাধ্যমে ৪২৬টি অসমাপ্ত মোয়াইয়ের ছবি ধরা পড়েছে। যেগুলি খোদাই করতে করতে মাঝ পর্যায়েই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আরও দেখা গিয়েছে, পাথরের গায়ে গর্ত করে ৩৪১টি ব্লক তৈরি হয়েছিল মূর্তি খোদাইয়ের জন্য। সেগুলিতে পরে আর খোদাই শুরু হয়নি। এ ছাড়া পাথরের গায়ে ১৩৩টি ফাঁকা জায়গাও দেখা গিয়েছে। সম্ভবত মূর্তি কেটে সেগুলি সরিয়ে নেওয়ার ফলে ওই ফাঁকা জায়গাগুলি তৈরি হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত যে মোয়াইগুলির খোঁজ মিলেছে, সেগুলির গড় ওজন প্রায় সাড়ে ১২ টন। কোনওটির ওজন ২০ টনের আশপাশেও রয়েছে। মূর্তির গড় উচ্চতা প্রায় ১৩ ফুট। তবে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বড় মোয়াইটি অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই রয়ে গিয়েছে। গবেষকদলের প্রধান লিপোর মতে, এই মূর্তিটির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলে এটিই হত ইস্টার দ্বীপের সবচেয়ে বড় মোয়াই। অসমাপ্ত ওই মূর্তিটি লম্বায় প্রায় ৬৯ ফুট এবং এটি সম্পূর্ণ হলে ওজন হত প্রায় ২৭০ টন। বস্তুত, এই মূর্তিগুলি তৈরি হয়ে যাওয়ার পরে তা সরিয়ে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হত। লিপোর কথায়, “অন্যত্র সরানোর ক্ষেত্রে অনেক বড় হয়ে গিয়েছে কিছু মূর্তি। আমার অনুমান, (রাপা নুইদের) বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির ফলে বড় আকারের মোয়াই তৈরির চেষ্টা হত। তবে এই অসমাপ্ত কাজগুলি তাদের সীমাবদ্ধতাকেই ইঙ্গিত করে।”
নেকড়ের ডিএনএ এখনও রয়ে গিয়েছে বেশির ভাগ কুকুরের জিনে! তালিকায় বহু পোষ্য প্রজাতিও, দাবি গবেষণায়
সারমেয়দের আবির্ভাব হয়েছে নেকড়ের থেকেই। আজ থেকে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে। কিন্তু গবেষকদের দাবি, সারময়দের শরীরে নেকড়ের এই ডিএনএ বিবর্তনের সময় থেকে যাওয়া কোনও জেনেটিক অবশিষ্টাংশ নয়। তা হলে কী ভাবে এল?
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৬
কুকুরদের অনেক প্রজাতির জিনেই এখনও কিছু না কিছু মাত্রায় নেকড়ের ডিএনএ পাওয়া যায় বলে দাবি গবেষকদের। —প্রতীকী চিত্র।
আপনার ঘরে যে পোষ্য সারমেয়টি আছে, হতে পারে তার জিনে এখনও রয়ে গিয়েছে নেকড়ের ডিএনএ! নেকড়ে থেকেই পৃথিবীতে কুকুরের আবির্ভাব। ফলে প্রাথমিক ভাবে মনে হতেই পারে, এটি নেকড়ের ডিএনএ-র কিছু অবশিষ্টাংশ। কিন্তু নয়া জিন গবেষণায় দাবি করা হচ্ছে, এটি কোনও অবশিষ্টাংশ নয়। বর্তমানে পৃথিবীতে যত ধরনের কুকুর রয়েছে, তার প্রায় দুই তৃতীয়াংশের জিনেই কিছু না কিছু মাত্রায় নেকড়ের ডিএনএ পাওয়া গিয়েছে।
পথকুকুরদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এক নির্দেশের পরে গোটা দেশে ওই নির্দেশ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলেছে। ঠিক এমনই এক সময়ে মার্কিন বিজ্ঞানীরা দাবি করলেন, বেশির ভাগ কুকুরের জিনেই সম্ভবত এখনও নেকড়ের ডিএনএ রয়েছে। নেকড়ের এক প্রজাতি (অধুনা বিলুপ্ত) থেকে বিবর্তিত হয়ে সারমেয়দের প্রথম আবির্ভাব হয়। অনুমান করা হয়, আজ থেকে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে এই পরিবর্তন এসেছে। তখন এই কুকুরেরা বন্যই ছিল। গৃহপালিত হয় আরও অনেক পরে। কবে থেকে কুকুরেরা গৃহপালিত হয়েছে, তা নিয়েও ভিন্ন মত রয়েছে।
দীর্ঘ দিন ধরে প্রচলিত ধারণা ছিল, ১৮৩৭-১৯০১ সালের মধ্যে সারমেয়দের কিছু প্রজাতিকে গৃহপালিত করা হয়। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, এই পরিবর্তন এসেছে অন্তত ১০ হাজার বছর আগে। এ বার জানা গেল, কুকুরদের বেশিরভাগ প্রজাতির জিনেই এখনও নেকড়ের ডিএনএ রয়ে গিয়েছে। সারমেয়দের জিন নিয়ে এই গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস। গবেষকদের দাবি, এটি নেকড়ে থেকে কুকুরে বিবর্তনের সময় থেকে যাওয়া কোনও জেনেটিক অবশিষ্টাংশ নয়। তাঁদের অনুমান, গৃহপালিত কুকুর এবং বন্য নেকড়ের মধ্যে গত কয়েক হাজার বছর ধরে প্রজনন হয়েছে। সম্ভবত ওই আন্তঃপ্রজননের কারণেই এখনও কুকুরের বেশির ভাগ প্রজাতির মধ্যে কিছু না কিছু মাত্রায় নেকড়ের ডিএনএ রয়ে গিয়েছে।
বিজ্ঞানীদের মতে, আধুনিক সারমেয়দের বিভিন্ন প্রজাতির জিনে উপস্থিত নেকড়ের এই ডিএনএ-ই তাদের আকার, ঘ্রাণশক্তি, এমনকি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকেও প্রভাবিত করে। কুকুর এবং নেকড়ের মধ্যে আন্তঃপ্রজনন সম্ভব। জিনগত ভাবে বেশ কিছু সাদৃশ্য থাকায় এদের আন্তঃপ্রজননে জন্ম নেওয়া শাবকও প্রজননে সক্ষম হয়। তবে কুকুর এবং নেকড়ের আন্তঃপ্রজননকে এতদিন পর্যন্ত এক বিরল ঘটনা বলেই মনে করতেন বিজ্ঞানীদের একটি বড় অংশ। নয়া জিন গবেষণা সেই ধারণাকে নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল।
এই গবেষকদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির বিজ্ঞানীর অড্রে লিন। তাঁর মতে, কুকুরের জিনে যে এখনও নেকড়ের ডিএনএ এতটা পরিমাণে থেকে যেতে পারে, তা এই গবেষণার আগে জানা যায়নি। তাঁর কথায়, “এই গবেষণার আগে বিজ্ঞানীদের বেশির ভাগই মনে করতেন, সারমেয়দের জিনে নেক়ড়ের ডিএনএ খুব বেশি থাকতে পারে না— কুকুরদের কুকুর হওয়ার জন্য এটিই শর্ত বলে ভাবা হত।” তবে তার মানে এমন যে সব ক্ষেত্রেই গৃহপালিত কুকুরদের সঙ্গে নেকড়ের মিলন হয়েছে। এই গবেষণাপত্রের সহলেখক মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির কিউরেটর লোগান কিস্টলারের ব্যাখ্যা, “গবেষণালব্ধ ফলের অর্থ এই নয় যে নেকড়েরা আপনাদের বাড়িতে এসে আপনার পোষ্যের সঙ্গে মিলন করছে।”
আরও পড়ুন:
কুকুরদের জিন নিয়ে এই গবেষণার জন্য লিন এবং তাঁর গবেষকদল হাজার হাজার কুকুর এবং নেকড়ের জিনোম বিশ্লেষণ করেন। তাতে দেখা যায়, কুকুরের ৬৪ শতাংশেরও বেশি আধুনিক প্রজাতি ‘নেকড়ের বংশধর’। এমনকি ছোটখাট চেহারার চিহুয়াহুয়া কুকুরের মধ্যেও প্রায় ০.২ শতাংশ নেকড়ের ডিএনএ আছে। চিহুয়াহুয়া কুকুর পোষ্য হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য। সেই চিহুয়াহুয়ার জিনেও নেকড়ের ডিএনএ মেলায় ঈষৎ রসিকতার ছলেই লিন বলেন, “যাঁদের বাড়িতে পোষ্য হিসাবে চিহুয়াহুয়া আছে, তাঁরা এর মানে নিশ্চয়ই ভাল ভাবে বুঝে গিয়েছেন।”
নেকড়ের ডিএনএ সবচেয়ে বেশি কার শরীরে
গবেষণায় দেখা গিয়েছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে নেকড়ের ডিএনএ রয়েছে দুই প্রজাতির উল্ফডগের (গৃহপালিত কুকুর এবং বন্য নেকড়ের আন্তঃপ্রজননের মাধ্যমে উদ্ভূত প্রজাতি) মধ্যে। চেকোশ্লোভাকিয়ান উল্ফডগ এবং সারলুস উল্ফডগ— উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত নেকড়ের ডিএনএ পাওয়া যায়। যে প্রজাতিগুলিকে সাধারণত পোষ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে নেকড়ের ডিএনএ মিলেছে গ্র্যান্ড অ্যাংলো-ফ্র্যাঙ্কাইস ট্রাইকালার হাউন্ডের মধ্যে। এদের জিনে প্রায় পাঁচ শতাংশ নেকড়ের ডিএনএ মেলে। সালুকি এবং আফগান হাউন্ডও এই তালিকায় উপরের দিকেই রয়েছে।
আরও পড়ুন:
এই প্রজাতিগুলির বেশির ভাগই বড়সড় আকারের। সাধারণত বড় আকারের কুকুরদের মধ্যে নেকড়ের ডিএনএ পাওয়ার প্রবণতা দেখা গেলেও সব ক্ষেত্রে তা সঠিক নয়। যেমন সেইন্ট বার্নার্ড। এরা বড় প্রজাতির কুকুর হলেও এদের মধ্যে নেকড়ের ডিএনএ মেলেনি। আবার ছোটখাটো আকারের প্রজাতিতে পাওয়া যাবে না, এমনও নয়। চিহুয়াহুয়া ছোটখাট আকারের সারমেয়। তবে তাদের শরীরে নেকড়ের ডিএনএ মিলেছে।
মনুষ্যবসতির মধ্যে বাস করে, কিন্তু পোষ্য নয়— গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো এমন কুকুরদের যে নমুনাগুলি পরীক্ষা করা হয়েছে, দেখা গিয়েছে ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রেই তারা ‘নেকড়ের বংশধর’। কখন, কী ভাবে নেকড়ে এবং আধুনিক কুকুরের মধ্যে আন্তঃপ্রজনন হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিস্টলারের মতে, গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো কুকুরগুলির সঙ্গে নেকড়ের আন্তঃপ্রজননের সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি। সেখান থেকেই আধুনিক কুকুর প্রজাতিগুলির জিনে নেকড়ের ডিএনএ মিলেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাঁর ধারণা, দলছুট স্ত্রী নেকড়েদের সঙ্গে সম্ভবত এই সারমেয়দের আন্তঃপ্রজনন হয়েছে। যদি এ বিষয়ে কোনও অকাট্য প্রমাণ এখনও পাননি গবেষকেরা।
ডাল থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ত শিকারের উপর! গাছে চড়া সেই প্রাগৈতিহাসিক কুমিরের বিষয়ে উঠে এল নতুন তথ্য
গাছে চড়া কুমিরের অস্তিত্বের কথা আগেই জানা গিয়েছিল। এ বার সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেল এদের শিকার ধরার কায়দা। জীবাশ্মবিদদের অনুমান, গাছের ডাল থেকে শিকার ধরতেও পটু ছিল এরা। অনেকটা চিতাবাঘের মতো।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০৪
অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া গেল গাছে চড়া কুমিরের সাড়ে পাঁচ কোটি বছরের পুরনো ডিমের খোসা। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছিল চার দশক আগে। ১৯৮৩ সালে। খোঁজ মিলল ৪২ বছর পর। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড থেকে পাওয়া গেল গাছে চড়া প্রাগৈতিহাসিক কুমিরের ডিমের খোসা। কথা হচ্ছে, পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রাগৈতিহাসিক মেকোসুচিন কুমিরকে নিয়ে। তাদের অস্তিত্বের কথা আগেই জানা গিয়েছিল। এ বার জানা গেল বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই সরীসৃপদের শিকার ধরার কায়দা।
অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বে কুইন্সল্যান্ডের মুরগন শহরে এক খামারবাড়িতে মাটি খুঁড়়ে পাওয়া গিয়েছে জীবাশ্ম হয়ে যাওয়া এই ডিমের খোসাগুলি। জীবাশ্মবিদদের দাবি, সেগুলি প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি বছরের পুরানো। মেকোসুচিন কুমিরের এত পুরানো জীবাশ্ম এর আগে পাওয়া যায়নি। অস্ট্রেলিয়ার লবণাক্ত এবং মিষ্টি জলে বর্তমানে কুমিরের যে প্রজাতিগুলি দেখা যায়, তাদের আবির্ভাব হয়েছে প্রায় ৩৮ লক্ষ বছর আগে। তবে এদেরও আগে থেকে অস্ট্রেলিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিছু দ্বীপে ঘুরে বেড়াত গাছে চড়া কুমিরেরা।
কুমির বংশের এই উপগোষ্ঠীর মধ্যে বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি ছিল। সবগুলিই বর্তমানে বিলুপ্ত। ধরে নেওয়া হয়, মেকোসুচিন কুমিরের সর্বশেষ কিছু প্রজাতি পৃথিবী থেকে হারিয়ে গিয়েছে আজ থেকে প্রায় তিন হাজার বছর আগে। সেই হারিয়ে যাওয়া কুমিরদের প্রাচীনতম জীবাশ্ম এ বার খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা। ওই জীবাশ্ম (ডিমের খোসা) বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, মেকোসুচিন কুমিরেরা শুধু গাছে চড়তেই জানত না, গাছ থেকে ঝাঁপ দিয়ে শিকার ধরতেও পটু ছিল।
স্পেনের বার্সেলোনার ‘ইনস্টিটিউট ক্যাটালা ডি প্যালিওন্টোলজিয়া মিকেল ক্রুসাফন্ট’-এর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক জীবাশ্মবিজ্ঞানীদের একটি দল কুইন্সল্যান্ডে ওই ডিমের খোসাগুলি খুঁজে পায়। এই গবেষণায় তাদের সাহায্য করে সিডনির নিউ সাউথ ওয়েল্স বিশ্ববিদ্যালয়ও। গবেষণায় উঠে এসেছে, মেকোসুচিন কুমিরেরা অন্তত ৫ মিটার (প্রায় ১৬ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হত। এদের মধ্যে কিছু কুমির গাছের উপর থেকে শিকার করতে পারত। গবেষকেরা গাছ থেকে ঝাঁপিয়ে শিকার ধরা এই কুমিরদের নাম রেখেছেন ‘ড্রপ ক্রোক’।
আরও পড়ুন:
গবেষকদলের অন্যতম সদস্য নিউ সাউথ ওয়েল্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল আর্চার। গাছে চড়া কুমিরদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অনুমান করা হচ্ছে, এদের মধ্যে কিছু কুমির জঙ্গলেই শিকার করত। এরা সম্ভবত চিতাবাঘের মতো শিকার ধরত। পছন্দের খাবারের উপর গাছের উপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ত। অন্তত কিছু ‘ড্রপ ক্রোক’ সর্ব ক্ষণের জন্য না হলেও দীর্ঘ সময় গাছেই থাকত।” গত মঙ্গলবার ‘জার্নাল অফ ভার্টিব্রেট প্যালিওন্টোলজি’তে এই গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।
মেকোসুচিন কুমিরের জীবাশ্ম আগেও পাওয়া গিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। কুইন্সল্যান্ডেরই অপর এক প্রান্ত থেকে সেগুলি পাওয়া গিয়েছিল। তবে তা এত পুরনো ছিল না। সেগুলি ছিল প্রায় আড়াই কোটি বছরের পুরানো। নতুন খুঁজে পাওয়া জীবাশ্মগুলি এই সরীসৃপদের শারীরিক গঠন এবং অভিযোজন ক্ষমতা আরও ভাল করে বুঝতে সাহায্য করছে বিজ্ঞানীদের।
আরও পড়ুন:
গবেষকদলের প্রধান জেভিয়ার পানেডসও একই কথা জানাচ্ছেন। তাঁর কথায়, “এই প্রাগৈতিহাসিক ডিমের খোসাগুলি মেকোসুচিন কুমিরের শারীরবৃত্তীয় গঠন, প্রজনন এবং অভিযোজনের ক্ষমতা বুঝতে সাহায্য করছে। তারা কী ধরনের প্রাণী ছিল, কোথায় থাকত, কী ভাবে বংশবিস্তার করত— এই সবেরই আভাস মেলে এই জীবাশ্ম থেকে।”
গাছে চড়া এই কুমিরেরা কবে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে, তা সুস্পষ্ট ভাবে এখনও বলা যায় না। তবে অনুমান করা হয়, প্রায় তিন হাজার বছর আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে কুমিরের এই উপগোষ্ঠী। নিউ সাউথ ওয়েল্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা গবেষকদলের অন্যতম সদস্য মাইকেল স্টেনের মতে, অন্য শিকারি প্রাণীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উঠতে না পেরে এবং শিকারের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ফলে এই কুমিরেরা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে ঠিক কী কারণে এরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে, তা বুঝতে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এই প্রাগৈতিহাসিক ডিমের খোসা এদের প্রজনন এবং অভিযোজন সংক্রান্ত গবেষণায় আরও নতুন দিক খুলে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাগে ফেটে পড়লে সত্যিই কি ক্রোধ প্রশমন হয়? এত দিনের ধারণা ওড়াল গবেষণা, বাতলে দিল নিয়ন্ত্রণের উপায়
গবেষণা বলছে, অনেক মানুষই রাগ প্রশমিত করতে শরীর চর্চা শুরু করে দেন। যেমন ব্যায়াম করেন বা দৌড়োতে যান। গবেষণা বলছে, তাতে শরীর ভাল থাকলেও রাগ কিন্তু প্রশমিত হয় না।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০৮
কী ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে রাগ? ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
রাগ হলে তা উগরে দিলেই স্বস্তি! প্রচলিত ধারণা এমনই বলে। উদাহরণ হিসাবে প্রেশার কুকারের কথা বলা হয়। তা থেকে ধোঁয়া বেরিয়ে এলেই তার চাপ কমে। যেমন রাগ প্রকাশ করলেই তা প্রশমিত হয় বলে মনে করেন বহু মানুষ। যদিও বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই প্রচলিত ধারণা ঠিক নয়। আমেরিকার ওহায়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা রাগ নিয়ে ১৫৪টি গবেষণাপত্র খতিয়ে দেখেছেন। তাঁদের দাবি, কিছু ক্ষেত্রে রাগ প্রকাশ করলে তা আরও বেড়ে যেতে পারে।
২০২৪ সালে ওহায়ো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাটি প্রকাশিত হয়। সেখানে গবেষক ব্র্যাড বুশম্যান বলেন, ‘‘রাগ প্রকাশ করলেই তা প্রশমিত হবে, মন শান্ত হবে— এই ধারণা ভাঙা দরকার। রাগ প্রকাশ করার বিষয়টি আপাত ভাবে ভাল মনে হলেও তার বৈজ্ঞানিক কোনও ভিত্তি নেই।’’ বিজ্ঞানীরা বলছেন, তা বলে রাগকে উপেক্ষা করাও ঠিক নয়। রাগের প্রতিফলন বরং তার কারণ তুলে ধরতে পারে। নিজের আবেগকেও যাচাই করা যায়।
গবেষণা বলছে, অনেক মানুষই রাগ প্রশমিত করতে শরীর চর্চা শুরু করে দেন। যেমন ব্যায়াম করেন বা দৌড়োতে যান। গবেষণা বলছে, তাতে শরীর ভাল থাকলেও রাগ কিন্তু প্রশমিত হয় না। সে তার জায়গাতেই রয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
১০ হাজার ১৮৯ জনকে নিয়ে গবেষণাগুলি করা হয়েছিল। যাঁদের উপরে গবেষণা করা হয়েছে, তাঁদের বয়স, লিঙ্গ, সংস্কৃতি, জাতি ভিন্ন। বিজ্ঞানীদের দাবি, শারীরিক উত্তেজনা প্রশমিত করলে তা রাগও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বুশম্যান বলেন, ‘‘রাগ কমানোর সবচেয়ে ভাল উপায় হল এমন কিছু কাজকর্ম করা, যা শারীরিক উত্তেজনা কমায়।’’ সে কারণেই রাগের সময় দু’পাক দৌড়ে এলে তা প্রশমিত হয় না। কারণ, দৌড়োনোর ফলে শারীরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
বেশ কিছু দেশের কিছু জায়গায় রয়েছে ‘রেজ রুম’। রাগ হলে সেখানে গিয়ে জিনিসপত্র ভাঙাভাঙি করেন লোকজন। বিনিময়ে মেটাতে হয় টাকা। গবেষণার সময়ে সেই ‘রেজ রুম’-এও উঁকি দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে গিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন। বিজ্ঞানী সোফি কেজায়েরভিকের মতে, গবেষণা করে দেখা গিয়েছে, রাগ প্রশমনের ক্ষেত্রে শারীরিক উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করা খুব দরকার। বিজ্ঞানীদের একাংশ এ-ও মনে করেন, রাগের আসলে দু’টি অংশ। এক, শারীরবৃত্তীয়, দুই, জ্ঞান বা বোধ বিষয়ক। এর আগে বিজ্ঞানীরা রাগের এই জ্ঞান বা বোধ বিষয়ক অংশ নিয়েই গবেষণা করেছেন। সেই মতো মানুষজনকে রাগ প্রশমনের পরামর্শ দিতেন চিকিৎসকেরা।
তা হলে কী ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে রাগ? বিজ্ঞানীরা বলছেন, তার জন্য শারীরিক উত্তেজনা প্রশমন করে এমন কাজকর্ম করতে হবে। তাঁরা বলছেন, হালকা যোগ বা পেশিকে শিথিল করে, এমন কিছু করতে হবে। জোরে জোরে গোল গোল করে শ্বাস নেওয়া এবং ছাড়াও অভ্যাস করা যেতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, যোগ করে শারীরিক উত্তেজনা বৃদ্ধির সম্ভাবনা যে নেই, তা নয়। তবে তাতে রাগও প্রশমিত করা সম্ভব। বিজ্ঞানী সোফি বলছেন, যে উপায়ে চাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেই পদ্ধতিতে রাগ প্রশমনও সম্ভব। বুশম্যান বলছেন, শারীরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়, এমন কাজকর্মে হৃদ্যন্ত্র ভাল থাকতে পারে। তবে রাগ কমবে না। বিজ্ঞানীদের মতে, রাগ প্রশমনের সবচেয়ে ভাল উপায় হতে পারে, রাগের সময়ে এক থেকে ১০ পর্যন্ত গোনা।
সঙ্গীতের সাত সুরে কাবু হবে দুঃখ-হতাশা! থেরাপির কলাকৌশলই হতে পারে ভবিষ্যতের পেশা
অবচেতন মনের গভীরে প্রবেশের পথ খুঁজতে সাহায্য করে সঙ্গীতের মূর্ছনা। কখনও কখনও গভীরের ক্ষতের দাগ মিলিয়ে যায় সাত সুরের স্বরলিপিতে।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:৫৫
— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
মনের কথা বলতে না পারলে সে কষ্টের ভার বাড়তে থাকে। সময়ের ব্যস্ততার সঙ্গেই দুঃখের পারদ চড়তে থাকে। ক্রমবর্ধমান জীবনের দৌড়ে মনকে শান্ত করতে, তার ভার কমাতে সঙ্গীতের আশ্রয় খোঁজেন অনেকেই। নানা পরীক্ষা নিরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে, মানুষের মনে ইতিবাচক প্রভাবে ফেলতে পারে সাত সুরের রামধনু।
সঙ্গীতের মূর্ছনার থেরাপি মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। তাই এই বিশেষ পদ্ধতিতে চিকিৎসাও হয়ে থাকে। কিন্তু এই বিষয়টি কী শেখা যায়? এ দেশের হাতে গোনা কিছু সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা কোর্সের মাধ্যমে ‘মিউজিক থেরাপি’ শেখানো হয়ে থাকে।
কী শেখানো হয়?
এই বিশেষ বিষয়টি সঙ্গীত, মনোবিদ্যা, স্নায়ুবিদ্যার সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে। তাই কন্ঠ এবং যন্ত্রসঙ্গীতের কৌশল, গান শোনা এবং তা বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি, মনোবিদ্যার পাঠও গ্রহণ করতে হয় পড়ুয়াদের। এতেই বিভিন্ন সময়ে মানুষের মনের ভেতরে হয়ে চলা পরিবর্তন এবং তাতে তাঁর ব্যবহারে রদবদলের বিষয়গুলি বোঝা সম্ভব।
এ ছাড়াও কোন সুর,বা বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজ কী ভাবে মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে, শরীরের কোন অঙ্গ কেমন প্রতিক্রিয়া দিতে পারে— সেই বিষয়গুলিও মিউজিক থেরাপি-র মাধ্যমে শেখার সুযোগ থাকে।
কী ধরনের কোর্স করতে হয়?
মিউজিক থেরাপি নিয়ে স্নাতক স্তরেই ডিগ্রি কোর্স করা যেতে পারে। এ ছাড়াও মনোবিদ্যায় স্নাতকেরা ওই বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করার সুযোগ পেয়ে থাকেন। আন্তর্জাতিক স্তরে এই বিষয়টি নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে ডিগ্রি কোর্স করানো হয়। এ ছাড়াও পিএইচডি করার সুযোগও রয়েছে।
তবে, এ দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরের কোর্সই বেশি প্রচলিত। উচ্চশিক্ষার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে নিয়মিত ভাবে ক্লাস করানো হয়। এ ছাড়াও কোর্স সম্পূর্ণ হওয়ার পর ইন্টার্নশিপ এবং ট্রেনিং-এর মাধ্যমে পড়ুয়ারা বিভিন্ন হাসপাতাল, সংশোধনাগার, মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বহুজাতিক সংস্থা ওয়েলনেস সেন্টার-এ কাজ শেখার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
পেশা প্রবেশ:
প্রাচীন কালে রাজা কিংবা সম্রাটেরা রাজ্যপাটের দায়িত্বের ভার সামলানোর কাজ থেকে ক্ষণিকের স্বস্তির জন্য সঙ্গীত সমারোহ বেছে নিতেন। সেই সময় থেকে গান শুনে মন ভাল রাখার অভ্যাস রয়েছে অনেকেরই। কিন্তু এই অভ্যাসই বর্তমানে পেশা প্রবেশের পথ হয়ে উঠেছে। জটিল রোগ থেকে সুস্থতার পথে হাঁটতে কিংবা বিশেষ ভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের জন্যও কথোপকথনের মাধ্যম হয়ে উঠছেন মিউজিক থেরাপিস্ট।
দেশের ছবিটা:
বর্তমানে শিক্ষা কিংবা কর্মক্ষেত্রে অবসাদ, হতাশার ছায়া প্রকট হয়ে উঠেছে। শান্তির খোঁজে অনেকেই বেছে নেন থেরাপির আশ্রয়। তাই দেশের বিভিন্ন হুজাতিক সংস্থা কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েলনেস সেন্টারে এমন বিশেষজ্ঞদের চাহিদা রয়েছে যথেষ্ট। নিয়মিত ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়াও চলে। এ ছাড়াও ডিগ্রি এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের পর প্রাইভেট প্র্যাকটিশ করারও সুযোগ রয়েছে।
বিদেশে কেমন চাহিদা?
তবে, মিউজিক থেরাপিস্টদের চাহিদা শুধু এই দেশেই নয়, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ-এর বিভিন্ন দেশেও এমন বিশেষজ্ঞদের প্রবল চাহিদা রয়েছে। সেখানে মর্ডান মেডিসিন-এর সঙ্গে সঙ্গীতের সাহায্যে রোগ নিরাময়ের প্রচলন রয়েছে। তাই এই সমস্ত দেশে এই পেশায় কর্মরতদের আলাদা করে লাইসেন্সও দেওয়া হয়ে থাকে। তাই, বিদেশে গিয়েও কাজ করার সুযোগ থাকছে।
ইংরেজদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে চালু ধারণায় ধাক্কা! আদিম জিন বিশ্লেষণ করে নতুন তত্ত্ব দিলেন বিজ্ঞানীরা
ইংল্যান্ডে অ্যাংলো স্যাক্সন সমাজকে নতুন আলোকে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। ইংরেজদের পূর্বপুরুষেরা কোথা থেকে এসেছিলেন, সেই নিয়েও নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন তাঁরা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৪
গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ইংরেজদের পূর্বপুরুষেরা কোথা থেকে এসেছিলেন? তারা কোথায় বসবাস করতেন? এই নিয়ে প্রচলিত যে ধারণা ছিল, তাতে কিছুটা ধাক্কা দিলেন জিন নিয়ে গবেষণা করা এক দল বিজ্ঞানী। তাঁদের দাবি, আজকের ইংরেজদের কোনও কোনও পূর্বপুরুষ এসেছিলেন পশ্চিম আফ্রিকা থেকেও। জিন পরীক্ষা করে সেই সংযোগই খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা।
বিজ্ঞানীদের দাবি, ইংরেজদের পূর্ব পুরুষদের কেউ কেউ পশ্চিম আফ্রিকার ছিলেন। ইংল্যান্ডের কেন্ট এবং ডরসেট থেকে দু’টি কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। সেই কঙ্কালের জিন পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ওই দুই ব্যক্তির পূর্বপুরুষদের পশ্চিম আফ্রিকার মানুষজনের সংযোগ ছিল। তার পরেই প্রশ্নের মুখে বেশ কিছু পুরনো তত্ত্ব। ইংল্যান্ডে অ্যাংলো স্যাক্সন সমাজকে নতুন আলোকে দেখছেন বিজ্ঞানীরা। ইংরেজদের পূর্বপুরুষেরা কোথা থেকে এসেছিলেন, সেই নিয়েও নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন তাঁরা।
কেন্টের আপডাউন সমাধিস্থলে এক কিশোরীর কঙ্কাল উদ্ধার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। ডরসেটের ওয়ার্থ মাট্রাভার্স থেকে আর এক যুবকের কঙ্কালও পরীক্ষা করেছেন তাঁরা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই দুই কঙ্কাল যাঁদের ছিল, তাঁদের সমাধিস্থ করা হয়েছিল সপ্তদশ শতকে। সে সময় ইংল্যান্ডে শুরু হয়েছিল অ্যাংলো স্যাক্সন যুগ। রোমান সাম্রাজ্যের পতন হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, এই দুই কঙ্কাল যাঁদের, তাঁদের পূর্বপুরুষ পশ্চিম আফ্রিকার। ওই দু’টি কঙ্কালের জিন সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতেই দেখা গিয়েছে, ডিএনএ-র ২০ থেকে ৪০ শতাংশ আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের মানুষের থেকে এসেছে। ল্যাঙ্কাশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ডানকান সেয়ার নিজের গবেষণায় লিখেছেন, এই দু’টি কঙ্কাল যাঁদের, তাঁদের উভয়েরই পূর্বপুরুষ ‘জিনগত এবং ভৌগোলিক ভাবে মিশ্র বংশোদ্ভূত’। অর্থাৎ ইংরেজরা যখন আফ্রিকা বা এশিয়ার দেশগুলিতে উপনিবেশ গড়তে শুরু করেনি, তারও আগে ব্রিটেনে এসেছিল আফ্রিকানদের উত্তরসূরিরা। বিজ্ঞানীদের দাবি, তার স্পষ্ট প্রমাণ তাঁরা পেয়েছেন।
আরও পড়ুন:
এই তত্ত্ব উঠে আসার পরে প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে আফ্রিকা থেকে এসেছিলেন এই কঙ্কালদ্বয়ের পূর্বপুরুষেরা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আফ্রিকার মানুষজনের সঙ্গে ব্রিটিশদের একাংশের শুধু জিনগত সংযোগই নেই, দুই মহাদেশের মানুষের মধ্যে সংস্কৃতিরও আদানপ্রদান হত। কেন্ট এবং ডরসেটের যে সমাধি থেকে ওই দু’টি কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছিল, সেখানে ছিল বেশ কিছু শিল্পসামগ্রী। কিশোরীর সমাধি থেকে মিলেছিল একটি পাত্র। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সেগুলি আসলে আফ্রিকার। তার পরেই জিন এবং শিল্পসামগ্রী, দুইয়ের আদানপ্রদানের প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
জার্মান বিজ্ঞানী জশচা গ্রেটজ়িঙ্গারের মতে, যে কিশোরীর কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে, তার কোনও পূর্বপুরুষ আফ্রিকান নন, এমন কাউকে বিয়ে করেছিলেন। তার জেরেই কেন্টের ইংলিশ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বিত হয়েছিল।
এতদিন বিজ্ঞানীদের অনেকেই মনে করতেন, মধ্যযুগের মানুষজন ছিলেন সমজাতির (হোমোজিনাস)। তাঁদের মধ্যে তখনও ভিন্জাতির মিশ্রণ ঘটেনি। প্রচলিত ধারণা ছিল, ইংরেজদের পূর্বপুরুষেরাও আদতে ইউরোপের বিভিন্ন অংশ থেকে স্থানান্তরিত হয়ে ইংল্যান্ডে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। ইংরেজদের পূর্বপুরুষের মধ্যে রয়েছে অ্যাংলো স্যাক্সন, কেল্টিক, জার্মানিক উপজাতি। কিন্তু নতুন এই তত্ত্ব পুরনো সেই তত্ত্বকেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। জিন নিয়ে গবেষণার পরে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মধ্যযুগ ইংল্যান্ডের মানুষ ছিল মিশ্র বংশোদ্ভূত।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, যে দুই কঙ্কাল উদ্ধার হয়েছে, তার জিনের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে আফ্রিকার ইয়োরুবা, মেন্ডে, মান্ডেকা, এসান প্রজাতির মানুষজনের সঙ্গে। গ্রেটজ়িঙ্গারের মতে, ষষ্ঠ শতাব্দীতে যখন বাইজ়ান্টাইন উত্তর আফ্রিকা দখল করে, তখন সেখান থেকে অভিবাসন হয়েছিল ইংল্যান্ডে। তাদেরই উত্তরসূরি হল ওই দুই কঙ্কাল, যাঁদের মৃত্যু হয় সপ্তদশ শতকে।
ডাইনোসর যুগের এই উড়ন্ত সরীসৃপেরা কী খেত? ধোঁয়াশা কাটল জীবাশ্ম নিয়ে নতুন গবেষণায়
কোনও প্রাণীর খাদ্যাভাস কী ছিল, তা শারীরিক গঠন থেকে অনেকাংশে অনুমান করা যায়। তবে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাকস্থলীর নমুনা পাওয়া অত্যন্ত জরুরী। তবে টেরাসরদের ক্ষেত্রে এমন নমুনা এখনও পর্যন্ত খুব বেশি পাওয়া যায়নি।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:১৩
টেরাসর। ডাইনোসর যুগে উড়ে বেড়াত এই সরীসৃপেরা। —প্রতীকী চিত্র।
ডাইনোসর যুগে ওরা আকাশে উড়ে বেড়াত। বড়সড় চেহারার উড়ন্ত সরীসৃপ টেরাসর। এখনও পর্যন্ত টেরাসরদের বিভিন্ন প্রজাতির খোঁজ মিলেছে। তবে তাদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে দীর্ঘ গবেষণার পরেও ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছিল। এ বার সেই ধোঁয়াশা কিছুটা হলেও কাটল। উড়ন্ত ওই সরীসৃপদের অন্তত একটি প্রজাতি যে তৃণভোজী ছিল, তা প্রমাণ হল সাম্প্রতিক গবেষণায়।
টেরাসরদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে এত দিন ধরে বিভিন্ন ধারণা প্রচলিত ছিল গবেষকদের মধ্যে। তবে সবই অনুমানভিত্তিক। এদের মধ্যে কোনও প্রজাতিকে ধরে মাংসাশী, কোনওটি পতঙ্গভুক, কোনও প্রজাতিকে মৎস্যভোজী, আবার কোনওটিকে তৃণভোজী বলে ধরে নেওয়া হত। তবে এত দিন পর্যন্ত কেবল মৎস্যভোজী হওয়ার বিষয়েও প্রমাণ মিলেছিল। তা-ও সব প্রজাতির নয়। সাম্প্রতিক গবেষণা ডাইনোসর যুগের এই উড়ন্ত সরীসৃপদের বিষয়ে নতুন তথ্যের জানান দিল।
কোনও প্রাণীর খাদ্যাভাস কী ছিল, তা শারীরিক গঠন থেকে অনেকাংশে অনুমান করা যায়। তবে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য পাকস্থলীর নমুনা পাওয়া অত্যন্ত জরুরী। তবে টেরোসরদের ক্ষেত্রে এমন নমুনা এখনও পর্যন্ত খুব বেশি পাওয়া যায়নি। এখনও পর্যন্ত টেরোসরের পাঁচটি জীবাশ্মের সঙ্গে পাকস্থলীর নমুনার খোঁজ মিলেছিল। সেখানে আঁশ জাতীয় বস্তু পাওয়া গিয়েছে। যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় উড়ন্ত সরীসৃপদের মধ্যে কিছু প্রজাতি ছিল মৎস্যভোজী।
সম্প্রতি বেজিঙে ‘চাইনিজ় অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’-এর জীবাশ্মবিদ্যা বিভাগের গবেষক শাওলিন ওয়াং এবং তাঁর সহযোগীরা ‘সিনোপটেরাস অ্যাটাভিসামাস’-এর জীবাশ্মের পাকস্থলীর নমুনা পরীক্ষা করে দেখেন। ডাইনোসরদের যুগে আকাশে যে প্রাণীরা উড়ে বেড়াত, তাদের মধ্যে একটি সিনোপটেরাস। উত্তরপূর্ব চিনে খুঁজে পাওয়া ওই জীবাশ্মের পেটের অংশে অসংখ্য ছোট ছোট গ্যাস্ট্রোলিথ শণাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। জীবাশ্মের পেটের দিকের একটি অংশ থেকে পাওয়া গিয়েছে ৩২০টি ফাইটোলিথ। বস্তুত, ফাইটোলিথ হল একটি আনুবীক্ষণিক সিলিকা, যা গাছের মধ্যে তৈরি হয়। এর আগে কোনও টেরাসরের পাকস্থলীতে এমন নমুনা পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:
তবে এই ফাইটোলিথগুলি যে ওই উড়ন্ত সরীসৃপের পেটেই ছিল, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আশপাশের অন্য নমুনাও পরীক্ষা করে দেখেন জীবাশ্মবিদেরা। ফাইটোলিথগুলি যে পরে অন্য কোথাও থেকে পাকস্থলীতে এসে জমেনি, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আশপাশের পাথরগুলি যাচাই করেনি তাঁরা। কিন্তু আশপাশের পাথরগুলিতে কোনও ফাইটোলিথ মেলেনি। অন্য কোনও তৃণভোজী প্রাণীকে খাওয়ার ফলে পেটে ওই ফাইটোলিথগুলি জমেছে কি না, তা-ও পরীক্ষা করে দেখা হয়। সে ক্ষেত্রে অন্য প্রাণীর দেহাবশেষের নমুনা (হাড়, আঁশ বা অন্য কিছু) পাকস্থলীর মধ্যে পাওয়ার কথা। তেমন কিছুও মেলেনি সিনোপটেরাসের জীবাশ্মে। যা দেখে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত, ‘সিনোপটেরাস অ্যাটাভিসামাস’ প্রজাতির টেরাসরেরা তৃণভোজীই ছিল। ‘সায়েন্স বুলেটিন’ সাময়িকীর সাম্প্রতিক সংখ্যায় গত মাসে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
মানুষের চ্যাপ্টা মুখ, বড় মস্তিষ্ক তৈরি হয়েছিল বেনজির দ্রুততায়! ‘শ্রেষ্ঠ’ হয়ে ওঠার পথে নতুন ‘ইতিহাস’ আবিষ্কার
থ্রিডি স্ক্যানিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খুব দ্রুত বদলে গিয়েছে মানুষের বাহ্যিক গড়ন এবং সে গতি ছিল প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। মুখ এবং মস্তিষ্কে পরিবর্তনের হার ছিল সবচেয়ে বেশি।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৫
ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত। মূল ছবি: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি।
যেমনটা হওয়ার কথা ছিল, হয়নি। বরং প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি গতিতে বিবর্তিত হয়েছে প্রাচীন মানব। শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নিমেষে পিছনে ফেলে দিয়েছে গরিলা, শিম্পাঞ্জি, বানর, হনুমানদের! বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, অত্যন্ত দ্রুত গতিতে মানুষের মুখ চ্যাপ্টা হয়েছে, বড় হয়েছে মস্তিষ্ক। সমসাময়িক অন্য বনমানুষদের (এপ) হারিয়ে মানুষের শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠার নেপথ্যে এই গতিকেই দায়ী করছেন গবেষকদের একাংশ।
সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (ইউসিএল) এক দল বিজ্ঞানী মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস নতুন করে ঘেঁটে দেখেছেন। নতুন খোঁজে দীর্ঘ দিন ধরে চলেছে গবেষণা। তার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রসিডিংস্ অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি বি’-তে। থ্রিডি স্ক্যানিং প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খুব দ্রুত বদলে গিয়েছে মানুষের বাহ্যিক গড়ন এবং সে গতি ছিল প্রত্যাশার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। বিশেষ করে মানুষের মুখ এবং মস্তিষ্কে পরিবর্তনের হার ছিল বেশি। মূলত সামাজিকতা এবং বুদ্ধিমত্তা মানুষকে এই দ্রুত বিবর্তনের দিকে ঠেলে দিয়েছে, মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
ইউসিএল-এর নৃতত্ত্ববিদ আদিয়া গোমেজ় রোবেল্স বলেছেন, ‘‘বনমানুষের সব রকম প্রজাতির মধ্যে মানুষের বিবর্তন ছিল দ্রুততম। বড় মস্তিষ্ক এবং ছোট মুখের সঙ্গে খুলির অভিযোজন কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এখান থেকেই তার প্রমাণ মেলে। সেই কারণেই মানুষ এত দ্রুত বিবর্তিত হতে পেরেছে। বড় মস্তিষ্ক থাকার সুবিধার সঙ্গে এই অভিযোজনগুলির সম্পর্ক থাকতে পারে। একইসঙ্গে সামাজিক কিছু কারণও এই ধরনের বিবর্তনকে ত্বরাণ্বিত করে থাকতে পারে।’’
আরও পড়ুন:
এই সংক্রান্ত পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীরা ভার্চুয়াল মাধ্যমে একাধিক আধুনিক প্রাণীর মাথার খুলির থ্রিডি মডেল তৈরি করেছিলেন। তার মধ্যে ছিল সাতটি হোমিনিড প্রজাতি (গ্রেট এপ, যেমন মানুষ, গরিলা, শিম্পাঞ্জি, ওরাংওটাং প্রভৃতি) এবং ন’টি হাইলোবেটিড প্রজাতি (লেসার এপ, যেমন গিবন জাতীয় বানর)। প্রায় দু’কোটি বছর আগে একই পূর্বপুরুষ থেকে হোমিনিড এবং হাইলোবেটিডের সৃষ্টি হয়েছিল। তার পর ধীরে ধীরে তারা পৃথক ভাবে বিবর্তিত হয়েছে। হোমিনিডদের শারীরবৃত্তীয় বৈচিত্র্য নানা ভাবে বিকশিত হয়েছে। হাইলোবেটিডেরা অভিন্নই রয়ে গিয়েছে। ফলে পরীক্ষার সময়েও গিবনের খুলিগুলি প্রজাতি নির্বিশেষে এক ধরনের ছিল। মানুষ-সহ গ্রেট এপদের খুলিতে পার্থক্য চোখে পড়েছে বার বার। গ্রেট এপদের মধ্যে মানুষের বিবর্তন সবচেয়ে দ্রুত হয়েছে।
এই পার্থক্য আরও ভাল ভাবে বুঝতে প্রতিটি খুলি মোট চার ভাবে ভাগ করে নিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা— মুখের উপরের অংশ, মুখের নীচের অংশ, মাথার সামনের অংশ এবং মাথার পিছনের অংশ। প্রতি প্রজাতির ক্ষেত্রে কোন অংশে কত পরিবর্তন হয়েছে, বলে দিয়েছে প্রযুক্তিই। দেখা গিয়েছে, গ্রেট এপদের অধিকাংশের রয়েছে বড়, সামনের দিকে প্রসারিত মুখ এবং তুলনামূলক ছোট মস্তিষ্ক। একমাত্র মানুষেরই ছিল চ্যাপ্টা মুখ, বড় গোল মাথা। গিবনদের মুখও কিছুটা চ্যাপ্টা ছিল। কিন্তু তাদের মস্তিষ্ক ছিল ছোটই।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, বৃহত্তর ও জটিলতর মস্তিষ্ক থেকে যে বৃহত্তর বুদ্ধিমত্তা পাওয়া গিয়েছিল, তাই মানুষের দ্রুত বিবর্তনের প্রাথমিক চালিকাশক্তি। তবে সামাজিক কারণগুলির ভূমিকাও অস্বীকার করা যায় না। গোমেজ় রোবেল্সের কথায়, ‘‘মানুষের পরে সবচেয়ে দ্রুত বিবর্তিত হয়েছে গরিলারা। তবে তাদের মস্তিষ্ক অন্য গ্রেট এপদের চেয়ে বেশ ছোট। তাদের ক্ষেত্রে বিবর্তন সম্ভবত সামাজিক নির্বাচনভিত্তিক ছিল। তাদের খুলির উপরের উঁচু অংশ (ক্রেনিয়াল ক্রেস্ট) সামাজিক মর্যাদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে। মানুষের মধ্যেও এই ধরনের কিছু সামাজিক নির্বাচন যে একেবারে ঘটেনি, তা জোর দিয়ে বলা যায় না।’
শিকারি, তবে ভিন্ন প্রজাতির! ডাইনোসর নিয়ে নতুন গবেষণা প্রশ্ন তুলল হিংস্র টি-রেক্সদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণায়
টি-রেক্সের প্রথম জীবাশ্ম মেলে ১৯০২ সালে। তারও চার দশক পরে আরও এক জীবাশ্মের খোঁজ মেলে, যার গড়ন টি-রেক্সের তুলনায় কিছুটা ছোট। অনেকেই মনে করতেন, সেটি ভিন্ন প্রজাতির। আবার অনেকে মনে করেন, সেটি অপ্রাপ্তবয়স্ক টি-রেক্সেরই জীবাশ্ম।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৮
টির্যাইনোসরাস-রেক্স। হিংস্র ডাইনোসরদের মধ্যে অন্যতম। —প্রতীকী চিত্র।
‘টির্যাইনোসরাস-রেক্স’, সংক্ষেপে টি-রেক্স। আজ থেকে সাড়ে ছ’লক্ষ বছর আগে পর্যন্ত যত ডাইনোসর ঘুরে বেড়াত পৃথিবীতে, তাদের মধ্যে অন্যতম হিংস্র প্রজাতি। স্টিফেন স্পিলবার্গ পরিচালিত ‘জুরাসিক পার্ক’ সিনেমার দৌলতে আরও বেশি পরিচিতি পেয়েছে এরা। সেই টি-রেক্সদের নিয়ে গত কয়েক বছরে যা কিছু গবেষণা হয়েছে— সেই সব নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল সাম্প্রতিক এক গবেষণা।
প্রায় দু’দশক আগে, ২০০৬ সালে আমেরিকার মন্টানায় পাওয়া গিয়েছিল একটি জীবাশ্ম। জোড়া ডাইনোসরের জীবাশ্ম। দু’টিই ভিন্ন প্রজাতির। জীবাশ্মবিদেরা এর নাম রেখেছেন ‘ডুয়েলিং ডাইনোসর’। অনুমান করা হয়, দু’টি ডাইনোসর লড়াই করতে করতে একই জায়গায় মারা গিয়েছে। সেই থেকেই জীবাশ্মের নামকরণ। যদিও লড়াই করতে করতে মারা যাওয়ার কোনও প্রমাণ্য তথ্য এখনও মেলেনি।
ওই দু’টি জীবাশ্মের মধ্যে একটি ‘ট্রাইসেরাপটস হরাইডাস’-এর। তিন শৃঙ্গবিশিষ্ট তৃণভোজী ডাইনোসর। অপরটি এত দিন মনে করা হত একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক টি-রেক্সের জীবাশ্ম। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেল, সেটি আদৌই টি-রেক্সের জীবাশ্মই নয়। সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রজাতির এক ডাইনোসরের জীবাশ্ম। এমনকি সেটি কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক ডাইনোসরও নয়, বরং পূর্ণবয়স্কই। গবেষকদের দাবি, সেটি ‘ন্যানোটাইর্যানাস ল্যানসেনসিস’-এর জীবাশ্ম হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।
ন্যানোটাইর্যানাস আদৌ ডাইনোসরের কোনও পৃথক প্রজাতি কি না, তা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে বিতর্ক চলেছে। দ্বিমত রয়েছে জীবাশ্মবিদদের মধ্যেও। ১৯০২ সালে মন্টানা থেকে টি-রেক্সের আংশিক কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল। সেটিই ছিল এই হিংস্র ডাইনোসরের একদা অস্তিত্বের প্রথম প্রমাণ। প্রায় চার দশক পরে, ১৯৪২ সালে মন্টানাতেই পাওয়া যায় ন্যানোটাইর্যানাসের মাথার খুলি। জীবাশ্মবিদদের একাংশের বক্তব্য ছিল, এটি পৃথক প্রজাতির ডাইনোসর। যাদের আকার টি-রেক্সের তুলনায় কিছুটা ছোট। তবে একটি বড় অংশ মনে করতেন, ন্যনোটাইর্যানাস পৃথক কোনও প্রজাতি নয়, সেগুলি আসলে অপ্রাপ্তবয়স্ক টি-রেক্স। সাম্প্রতিক এক গবেষণা, দীর্ঘ দিনের ওই বিতর্কে ইতি টানল বলেই মনে করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে ‘নেচার’ জার্নালে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে। ওই গবেষণা চলাকালীন ২০০টিরও বেশি টি-রেক্সের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হয়। ‘ডুয়েলিং ডাইনোসর’ থেকে পাওয়া নমুনাও পরীক্ষা করা হয়। সব নমুনাগুলি বিশ্লেষণ করে গবেষকেরা নিশ্চিত, ‘ডুয়েলিং ডাইনোসর’ জীবাশ্মে যেটিকে টি-রেক্সের বলে মনে করা হত, মারা যাওয়ার সময় সেটির বয়স ছিল প্রায় ২০ বছর (টির্যাইনোসরাস প্রজাতির ডাইনোসরের জীবনচক্র হয় ৩০ বছরের)। ফলে সেটিকে কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক ডাইনোসর বলে বিবেচনা করা যায় না।
জীবাশ্ম থেকে এদের শারীরিক গড়নের কিছুটা অনুমান পাওয়া যায়। গবেষকদের ধারণা, টি-রেক্স এবং ন্যানোটাইর্যানাস উভয়েই হিংস্র প্রকৃতির ছিল এবং শিকার করে খেত। এই দুই প্রজাতি দেখতে অনেকটা একই রকম হলেও অনেক পার্থক্যও রয়েছে। একটি পূর্ণবয়স্ক টি-রেক্স লম্বায় ৪২ ফুট পর্যন্ত হত। এদের পা তুলনামূলক মোটা এবং বড়। অন্য দিকে পূর্ণবয়স্ক ন্যানোটাইর্যানাস লম্বায় ১৮ ফুট পর্যন্ত হত। এরা টি-রেক্সের তুলনায় চটপটে এবং দ্রুত চলাফেরা করতে পারত। শিকার ধরার জন্য এদের এরা মূলত নিজেদের হাত ব্যবহার করত। এদের হাত ছিল তুলনায় কিছুটা বড় এবং মজবুত। টি-রেক্সের হাতের হাড়গুলি ছিল তুলনায় কিছুটা ছোট। এরা মূলত কামড়ে শিকার ধরত।
সাম্প্রতিক গবেষণায় ‘ডুয়েলিং ডাইনোসর’-এর ওই নমুনার সঙ্গে টি-রেক্সের জীবাশ্মের অন্য নমুনাগুলিও পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। তাতে হাতের হাড়ের গড়নের ফারাক স্পষ্ট ধরা পড়েছে। গবেষকদলের অন্যতম সদস্য তথা নিউ ইয়র্কের স্টনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরবিদ্যা বিশেষজ্ঞ জেম্স নেপোলির মতে, ওই জীবাশ্মটি যে প্রাণীর, সেটি আকারে ছোট হলেও তার উপরের অঙ্গগুলি ছিল তুলনায় বড়। বিশেষ করে তার হাতগুলি। কিন্তু টি-রেক্সের হাত ছোট হয়। তা ছাড়া, কোনও প্রাণী পূর্ণবয়স্ক হয়ে গেলে তার হাড় ছোট হয়ে যাবে— এমনটাও সম্ভব নয়। তাই ওই জীবাশ্মটি কোনও ভাবেই টি-রেক্সের হতে পারে না।
আরও পড়ুন:
আমেরিকার ‘নর্থ ক্যারোলিনা মিউজ়িয়াম অফ ন্যাচারাল সায়েন্সেস’-এর জীবাশ্মবিদ্যা বিভাগের প্রধান লিন্ডসে জ়ানোও এই গবেষকদলের অন্যতম সদস্য। তিনি নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনাও করেন। জ়ানোর মতে, নতুন এই খোঁজ বিতর্কে ‘ইতি টানা’র পাশাপাশি গত কয়েক দশকে টি-রেক্সকে নিয়ে গবেষণাকেও ওলটপালট করে দিল। জীবাশ্মবিদদের অনেকেই মনে করছেন, জ়ানোর ওই উদ্বেগ অযৌক্তিক নয়। কারণ, গত কয়েক দশক ধরে অনেক ক্ষেত্রেই ন্যানোটাইর্যানাসের জীবাশ্মের উপর ভিত্তি করে টি-রেক্সকে উপর গবেষণা করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নতুন এই খোঁজের পরে অতীতের গবেষণাগুলিকে পুনরায় খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
আরও পড়ুন:
এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ্যে আসার পরে একই উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ ব্রুসেট। তিনি এই গবেষকদলের সঙ্গে যুক্ত নন। তবে টির্যাইনোসরাস নিয়ে তিনিও গবেষণা করছেন। সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’কে তিনি জানান, ‘ডুয়েলিং ডাইনোসর’-এর জীবাশ্মে যেটিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক টি-রেক্স বলে মনে করা হত, তিনি সেটির উপর ভিত্তি করেই গবেষণা চালাচ্ছিলেন। এখন তাঁরও মনে সংশয় জেগেছে, ওই নমুনার ভিত্তিতে গবেষণায় যে ফল মিলেছে, তা আংশিক ভাবে হলেও ভুল ছিল। তবে এখনও পর্যন্ত যতগুলি এমন ছোট মাপের টি-রেক্সের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে, তার সবগুলিই যে ন্যানোটাইর্যানাস— এমনটা মানতে রাজি নন তিনি। এ ক্ষেত্রে অপ্রাপ্তবয়স্ক টি-রেক্সের থেকে ন্যানোটাইর্যানাসকে সব ক্ষেত্রে পৃথক ভাবে চিহ্নিত করা বেশ কঠিন বলেই মনে করছেন তিনি।
ডাইনোসরেরা আদৌ বিলুপ্তির মুখে ছিল না, সংখ্যায় বাড়ছিল বরং! গ্রহাণু বিপর্যয়ই নিশ্চিহ্নের কারণ, দাবি নতুন গবেষণায়
প্রাচীন পাথর নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ডাইনোসরদের ইতিহাস সম্পর্কে চমকপ্রদ সব তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, গ্রহাণু বিপর্যয়ই ডাইনোসরদের বিলুপ্তির একমাত্র সম্ভাব্য কারণ।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:০১
গ্রহাণুর ধাক্কায় লন্ডভন্ড পৃথিবী, তাতেই বিলুপ্ত ডাইনোসর! গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
পৃথিবীর বুকে দিব্যি দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল বিশালাকায় ডাইনোসরেরা। তাদের বিলুপ্তি আদৌ অনিবার্য ছিল না! আজ থেকে সাড়ে ছ’কোটি বছর আগে ডাইনোসরেরা বরং সংখ্যায় বাড়তে শুরু করেছিল। বিশাল গ্রহাণু এসে পৃথিবীকে ধাক্কা না-মারলে এত দ্রুত তাদের বিলুপ্তি সম্ভব ছিল না, দাবি করা হচ্ছে নতুন গবেষণায়। এই তথ্য প্রতিষ্ঠিত হলে ডাইনোসরদের নিয়ে দীর্ঘ দিনের প্রচলিত ধারণা বদলে যেতে পারে। বদলে যেতে পারে ইতিহাস!
নিউ মেক্সিকো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যান্ড্রু ফ্লিনের নেতৃত্বে এক দল বিজ্ঞানী প্রাচীন পাথর নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ডাইনোসরদের ইতিহাস সম্পর্কে চমকপ্রদ সব তথ্য পেয়েছেন। তাঁদের দাবি, গ্রহাণু বিপর্যয়ই ডাইনোসরদের বিলুপ্তির একমাত্র সম্ভাব্য কারণ। অন্তত উত্তর আমেরিকার ক্ষেত্রে এই তথ্যকে তাঁরা সঠিক বলে মনে করছেন। পৃথিবীর বাকি অংশের জন্য ডাইনোসর সংক্রান্ত আরও গবেষণা প্রয়োজন।
সাড়ে ছ’কোটি বছর আগে ক্রিটেসিয়াস যুগ চলছিল পৃথিবীতে। সে সময়ে প্রকাণ্ড গ্রহাণুর ধাক্কায় লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল বসুন্ধরা। বহু প্রজাতির সঙ্গে পৃথিবীর বুক থেকে একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় ডাইনোসরেরাও। বেঁচে যায় কেবল পাখি। এখনও অনেক পাখি প্রাগৈতিহাসিক ডাইনোসরের উত্তরাধিকার বহন করছে। বিজ্ঞানীদের একাংশের বক্তব্য ছিল, ডাইনোসরেরা তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই ক্রমশ বিলুপ্তির দিকে এগোচ্ছিল। পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিল না। অতিরিক্ত হিংস্র স্বভাবও তাদের কাল হয়েছিল। গ্রহাণু বিপর্যয় সেই বিলুপ্তি নিশ্চিত করেছে মাত্র। ডাইনোসর সংক্রান্ত এত দিনের প্রচলিত সেই ধারণায় এ বার ধাক্কা লাগল। ফ্লিনের কথায়, ‘‘আমাদের গবেষণা দেখাচ্ছে, অন্তত উত্তর আমেরিকায় ডাইনোসরেরা বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছিল না। দিব্যি ছিল।’’
আরও পড়ুন:
মেক্সিকোর বিজ্ঞানীদের দাবি, নিউ মেক্সিকোর একটি বিশেষ ধরনের শিলার উৎপত্তির সময়কাল খুঁজতে গিয়ে ডাইনোসরদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণায় প্রথম সন্দেহ জাগে। মূলত দু’টি পদ্ধতিতে ওই শিলার উৎপত্তিকাল খোঁজা হয়েছে। প্রথমত, শিলার মধ্যে পাওয়া স্ফটিকের দু’টি আর্গন আইসোটোপের অনুপাত বিশ্লেষণ, যার মাধ্যমে শিলার সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারিত হয়। দ্বিতীয়ত, শিলা গঠনের উপাদানের মধ্যেকার চৌম্বকীয় কণার সারিবদ্ধতা বিশ্লেষণ করা হয়, যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সময়ে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের দিক নির্ধারণ করা যায়। এই দুই পদ্ধতির মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে উপনীত হন— ডাইনোসরদের গণবিলুপ্তির সাড়ে তিন লক্ষ বছর আগে ওই শিলা তৈরি হয়েছিল।
কিন্তু এই শিলার সঙ্গে ডাইনোসরের সম্পর্ক কী? এগুলি নাশোইবিটো শিলা গোত্রের অন্তর্গত। ডাইনোসরের সবচেয়ে কমবয়সি জীবাশ্মটি নিউ মেক্সিকোর ওই শিলাতেই পাওয়া গিয়েছিল। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই সময়ে উত্তর আমেরিকার দক্ষিণাংশের ডাইনোসরেরা যথেষ্ট বৈচিত্র্যময় ছিল। ফ্লিন বলেন, ‘‘উত্তর আমেরিকায় এমন কোনও ডাইনোসর ছিল না, যারা বিলুপ্তির কাছাকাছি পৌঁছেছিল।’’ এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভ ব্রুসেট জানান, উত্তর এবং দক্ষিণ আমেরিকার ডাইনোসরদের মধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে তফাৎ রয়েছে। কিন্তু ‘‘গ্রহাণু বিপর্যয়ের আগে পর্যন্ত এই ডাইনোসরেরা নির্দিষ্ট কোনও সঙ্কটে ছিল, এমন প্রমাণ মেলেনি। ওটাই বিলুপ্তির একমাত্র সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।’’
নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানী মহল উদ্বেলিত। ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইকেল বেন্টনের কথায়, ‘‘নিউ মেক্সিকোতে এত দীর্ঘ সময় পরেও ডাইনোসরদের বেঁচে থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। এটা দারুণ ব্যাপার। অন্তত একটা জায়গায় হলেও এই প্রাণীরা বৈচিত্র্যপূর্ণ ছিল।’’ তবে এই গবেষণা শুধু বিশেষ একটি স্থানকেন্দ্রিক, মনে করিয়ে দিয়েছেন বেন্টন। সমগ্র পৃথিবী তো বটেই, এমনকি সমগ্র উত্তর আমেরিকার ক্ষেত্রেও এই গবেষণার সারমর্ম প্রযোজ্য হবে কি না, তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। এর জন্য অন্যত্র আরও বিশদে গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করা হচ্ছে।
বয়স বাড়লে কুঁকড়ে যায় মস্তিষ্ক! পুরুষ না মহিলা, সঙ্কোচনে কার গতি বেশি? নতুন গবেষণায় হদিস
নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল বিজ্ঞানী সম্প্রতি মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা করেছেন। বয়সকালে লিঙ্গভেদে কী ভাবে মস্তিষ্কের আচরণ বদলে যেতে পারে, তা দেখিয়েছেন তাঁরা।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫৭
বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয় মানুষের মস্তিষ্ক। —ফাইল চিত্র।
কালের নিয়মে বয়স বাড়ে। শ্রবণশক্তি কমে, ঝাপসা হয়ে আসে দৃষ্টি। শরীরের বাকি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতো বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয় আমাদের মস্তিষ্কও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কুঁকড়ে যেতে থাকে। নতুন গবেষণায় জানা গেল, মহিলাদের চেয়েও বয়সকালে পুরুষের মস্তিষ্ক দ্রুত সংকুচিত হয়! কমে যায় মস্তিষ্কের ধূসর এবং সাদা বস্তুর (গ্রে অ্যান্ড হোয়াইট ম্যাটার) আয়তন।
নরওয়ের অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী সম্প্রতি মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা করেছেন। গত কয়েক বছরে ৪,৭২৬ জনের মস্তিষ্কের রিপোর্ট নিয়ে কাজ করেছেন তাঁরা। প্রত্যেকের অন্তত দু’বার মস্তিষ্কের স্ক্যান করা হয়েছে। দু’টি স্ক্যানের মধ্যে বছর তিনেকের ব্যবধান রাখা হয়েছে। যাদের এই গবেষণার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল, তাঁদের বয়স ১৭ থেকে ৯৫। অর্থাৎ, বয়স্কদের মস্তিষ্কের খুঁটিনাটি জানা উদ্দেশ্য হলেও বিজ্ঞানীরা কমবয়সি মস্তিষ্ককে কম গুরুত্ব দেননি। দুইয়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে তাঁরা সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
আরও পড়ুন:
বয়স্কদের মধ্যে স্মৃতিভ্রংশতার রোগ অ্যালঝাইমার্সের প্রবণতা বেশি থাকে। এই রোগে যাঁদের মৃত্যু হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, তাঁদের মস্তিষ্কের আয়তন প্রবল সংকুচিত হয়েছে। পরিসংখ্যান কিন্তু বলছে, পুরুষের চেয়ে নারীরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন। অথচ, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, নারীদের মস্তিষ্কের সঙ্কোচনের হার পুরুষের চেয়ে কম। মস্তিষ্কে বয়সের প্রভাব নিয়ে বিজ্ঞানীদের কৌতূহল তাই আরও বাড়িয়ে দিয়েছে নতুন এই গবেষণা। অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুবিজ্ঞানী অ্যানি র্যাভ্নডাল মস্তিষ্ক সংক্রান্ত গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘মহিলাদের মস্তিষ্ক যদি আরও দ্রুত সঙ্কুচিত হত, তবে তাদের মধ্যে অ্যালঝাইমার্সের সম্ভাবনা আরও বাড়ত।’’
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, পুরুষের মস্তিষ্কের বিস্তীর্ণ অংশ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয়ে যায়। মস্তিষ্কের বাইরের অংশ বা কর্টেক্সেও ক্ষয় ধরে। বয়সের ঠিক কতটা প্রভাব মস্তিষ্কের কোথায় কোথায় পড়বে, তা লিঙ্গ দ্বারাই নির্ধারিত হয়। তবে এখনই নিশ্চিত করে পুরুষ এবং মহিলার মস্তিষ্ক-ক্ষয়ের পার্থক্য মানতে চাইছেন না বিজ্ঞানীদের একাংশ। তাঁদের মতে, এটি সংক্ষিপ্ত গবেষণা। এর ফলাফলকে কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন। তা ছাড়া, মানুষের মস্তিষ্কের যে অংশে হিপোক্যাম্পাস (স্মৃতি নিয়ন্ত্রক) থাকে, সেখানে বয়সের প্রভাব পড়ছে না, দেখেছেন অসলো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। সে ক্ষেত্রে, মস্তিষ্ক সঙ্কুচিত হলে তা স্মৃতিশক্তিকে প্রভাবিত করে কি না, তা-ও আরও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মত অনেকের।