এক জীবনে ক’টা সম্পর্ক সামলাতে পারে মানুষের মস্তিষ্ক? চালু ধারণাই আরও জোরালো নতুন গবেষণায়

সৃষ্টির আদি পর্ব থেকে মানুষের মস্তিষ্ক বিবর্তিতই হয়েছে সামাজিক বন্ধন গড়ার জন্য। তবে ঠিক কতগুলি সম্পর্কের ভার আমাদের মস্তিষ্ক সামলাতে পারে, তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫৮

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

মানুষ সামাজিক জীব। তারা একা বাঁচতে পারে না। সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলাই তাদের স্বাভাবিক প্রবণতা। গবেষণা বলছে, সৃষ্টির আদি পর্ব থেকে মানুষের মস্তিষ্ক বিবর্তিতই হয়েছে সামাজিক বন্ধন গড়ার জন্য। তবে ঠিক কতগুলি সম্পর্কের ভার আমাদের মস্তিষ্ক সামলাতে পারে, তার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। মানুষের পক্ষে এক জীবনে খুব বেশি হলে ১৫০টি সম্পর্ক লালন করা সম্ভব, দাবি গবেষকদের।

মানুষের মস্তিষ্কের ওজন প্রায় ১.৩৬ কিলোগ্রাম, সাধারণ ভাবে দেহের ওজনের দুই শতাংশ। এই মস্তিষ্কের এক- তৃতীয়াংশ জুড়ে থাকে নিওকর্টেক্স অঞ্চল। স্মৃতিশক্তি, ভাষার বিকাশ, বিভিন্ন সমস্যার সমাধান এবং আত্মচেতনার জন্য মস্তিষ্কের এই অংশ দায়ী। এই অংশই মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা এবং সর্বোপরি ‘সামাজিকতা’কে নিয়ন্ত্রণ করে। বিজ্ঞানীদের মতে, সামাজিক বন্ধন আমাদের আয়ু বাড়িয়ে দেয়। মানুষ যত একে অপরের সঙ্গে মিশবে, কথা বলবে এবং সম্পর্ক গড়ে তুলবে, তত স্ট্রোক, অবসাদ, স্মৃতিবিভ্রম, হার্টের রোগের সম্ভাবনা কমবে। তত বেশি দিন মানুষ বাঁচতে পারবে।

আরও পড়ুন:

পৃথিবীতে টিকে থাকার জন্য মানুষের সামাজিক বন্ধন প্রয়োজন। আবশ্যিকও বলা চলে। তবে তার সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। অগুন্তি সামাজিক বন্ধন আমরা গড়ে তুলতে পারি না। গবেষণা বলছে, এক জীবনে সর্বোচ্চ ১৫০ জনের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাঁদের কারও সঙ্গে সম্পর্ক বেশি ঘনিষ্ঠ হয়, কারও সঙ্গে কম। এ ছাড়া, সারা জীবনে যত জনকে আমরা চিনি, তার সংখ্যা হতে পারে হাজারের বেশি। তবে মানুষের সামাজিক ‘নেটওয়ার্ক’ সীমা ১৫০।

মানুষের আগে শিম্পাঞ্জি, বাঁদরদের নিয়ে এই সংক্রান্ত গবেষণা করে দেখা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মস্তিষ্কের নিওকর্টেক্সের বিস্তৃতির উপরে সামাজিক নেটওয়ার্কের সীমা নির্ভর করে থাকে। শিম্পাঞ্জিদের ক্ষেত্রে এই সীমা ৫০-এ সীমাবদ্ধ। মানুষের নিওকর্টেক্সের আকার বড় বলে নেটওয়ার্কও বড়। ব্রিটিশ মনোবিদ রবিন ডানবার বিষয়টি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন। তাঁর মতে, মানুষের সামাজিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ১৫০ সংখ্যাটি সৃষ্টির আদি পর্ব থেকেই এক। সমাজমাধ্যম এবং ডিজিটাল যোগাযোগের যুগেও তা বদলায়নি।

১৫০ জনের মধ্যে আমাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন অন্তত পাঁচ জন। সাধারণত বন্ধু বা পরিবারের সদস্য হয়ে থাকেন তাঁরা। আবেগগত দিক থেকে এঁদের আমরা সবচেয়ে কাছের বলে মনে করি। মনের সব কথা এই পাঁচ জনের সঙ্গে ভাগ করি। সপ্তাহে অন্তত এক বার এঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। এর বাইরে আমাদের আরও অন্তত ১০ জন বন্ধুর বৃত্ত থাকে, যাঁদের সঙ্গে মাসে অন্তত এক বার দেখা হয়। মোট এই ১৫ জন আমাদের সামাজিক মনোযোগের ৬০ শতাংশ পেয়ে থাকেন। বাকিদের জন্য পড়ে থাকে ৪০ শতাংশ।

গবেষণা বলছে, এই ১৫ জনের সঙ্গে আরও কিছু মানুষ মিলিয়ে মোট ৫০ জনের আর একটি বড় সামাজিক বৃত্ত তৈরি হয়। মাঝেমধ্যে দেখা করে হইহুল্লোড় করার মতো সম্পর্ক এঁদের সঙ্গে। তার বাইরে মনের তেমন কোনও যোগ এই বৃত্তের সঙ্গে থাকে না। সামাজিক যোগের এর পরের বৃত্তেই রয়েছে ১৫০ জন। খুব ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ না থাকলেও জীবনের বড় কোনও ঘটনায় বা অনুষ্ঠানে এঁদের আমন্ত্রণ জানানো যায়। এঁদের সঙ্গে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ডানবার বলেছেন, ‘‘রাত ৩টেয় হংকং বিমানবন্দরে আচমকা এঁদের কারও সঙ্গে দেখা হলে পিঠ চাপড়ে দিতে আমরা দ্বিধা করব না।’’

জীবনের সব পর্বেই যে এই ১৫০ জন ধ্রুবক থাকবেন, তা নয়। সময় এবং পরিস্থিতির বিচারে এই বৃত্তের মানুষ পাল্টে যেতে পারেন। যাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে, ধীরে ধীরে তাঁরা আমাদের সামাজিক নেটওয়ার্কের বাইরে বেরিয়ে যাবেন। নতুন কেউ সেই স্থানে চলে আসবেন। পাড়ার লোকজন, অফিসের সহকর্মী এই বৃহত্তর বৃত্তের অঙ্গ।

১৫০ জনের বৃত্তের বাইরে আরও ৩৫০ জনের কথা বলেছেন ডানবার, যাঁদের সঙ্গে আমাদের পরিচয়মাত্র থাকে। কোনও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর মতো সম্পর্ক নয়। এ ছাড়া সারা জীবনে আরও অন্তত ১০০০ জন থাকবেন, যাঁদের মুখ আমরা চিনি। যেমন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আমরা এঁদের চিনলেও এঁরা আমাদের চেনেন না। ফলে এই পরিচিতি ‘একতরফা’।

ডানবারের এই ধারণার সঙ্গে অনেকে একমত হতে পারেন না। গবেষকদের একাংশের মতে, মানুষের সামাজিক যোগাযোগের সীমা ১৫০-তে বেঁধে দেওয়া সম্ভব নয়। তা ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভর করে। বিশেষ করে সমাজমাধ্যমের যুগে পরিচিতি এবং সম্পর্কের পরিধি আরও বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক, মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।


শুধু বুদ্ধিই নয়, মানসিক রোগও আমরা পেয়েছি আদিমানবের থেকে! বলছে জিন নিয়ে নতুন গবেষণা

আধুনিক মানুষের মধ্যে পাওয়া ৩৩ হাজার ভিন্ন ভিন্ন জিনের আদিম উৎস খুঁজে বার করার চেষ্টা করেন গবেষকেরা। তাতে দেখা যায়, ওই জিনগুলির আবির্ভাব হয়েছে গত ৩০ লক্ষ বছর থেকে চার হাজার বছরের মধ্যে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫৮

আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের আগেও ছিল মানসিক সমস্যা! —প্রতীকী চিত্র।

শুধু বুদ্ধিই নয়, মানসিক সমস্যাও জিনগত ভাবে আদিম পূর্বপুরুষদের থেকেই পেয়েছে মানুষ। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানব মস্তিষ্কের বিবর্তন হয়েছে। বদল এসেছে জিনের ধারাতেও। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, মানসিক সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলির আবির্ভাব হয়েছে প্রায় ৪,৭৫,০০০ বছর আগে। ওই প্রাচীন কালে আধুনিক মানুষ (হোমো সেপিয়েন্স)-এর অস্তিত্বের কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত মেলেনি।

আধুনিক মানুষের সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া যায় আফ্রিকা মহাদেশের মরোক্কোয়। সেখানে যে জীবাশ্মটি পাওয়া গিয়েছে, সেটির আনুমানিক বয়স প্রায় তিন লক্ষ বছর। তারও আগে আধুনিক মানুষের অস্তিত্ব ছিল কি না, তা জানা যায়নি। ধরে নেওয়া হয়, ওই সময় থেকেই আধুনিক মানুষের আবির্ভাব হয় পৃথিবীতে। তার আগে (প্রায় সাত থেকে দুই লক্ষ বছর আগে পর্যন্ত) পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াতেন প্রাচীন মানব প্রজাতি হোমো হাইজেলবার্গেনসিসেরা। যদিও তাঁদের থেকেই সরাসরি আধুনিক মানুষের বিবর্তন হয়েছে বলে কোনও প্রামাণ্য তথ্য নেই। সাম্প্রতিক গবেষণালব্ধ ফল থেকে ইঙ্গিত মেলে, পৃথিবীতে আধুনিক মানুষের আবির্ভাবের আগে থেকেই মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত জিনের অস্তিত্ব ছিল।

মানুষের সবচেয়ে কাছের পূর্বপুরুষ কারা, তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। তবে প্রচলিত মতগুলি অনুসারে, মানুষের জীবিত পূর্বপুরুষদের মধ্যে রয়েছে শিম্পাঞ্জি এবং বোনোবো বানর (সাধারণ শিম্পাঞ্জির চেয়ে এদের শারীরিক গড়ন কিছুটা আলাদা)। এই দুই প্রাণীর সঙ্গেই মানুষের জিনের অনেকাংশে (প্রায় ৯৮ শতাংশ) মিল রয়েছে। আনুমানিক প্রায় ৫০ লক্ষ বছর আগে শিম্পাঞ্জি এবং বোনোবো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মানুষের বিবর্তন শুরু হয়। ওই সময় থেকে এখনও পর্যন্ত মানুষের মস্তিষ্কের আকার প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

আদিম মানুষের জীবাশ্ম থেকে তাঁদের মস্তিষ্কের আকার সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়। কিন্তু ওই সময়ে তাঁদের মগজের কী কী করার ক্ষমতা ছিল, তা নিয়ে খুব বেশি তথ্য জীবাশ্ম দিতে পারে না। এই সংক্রান্ত তথ্যের জন্য প্রয়োজন হয় মানবদেহের জিন সংক্রান্ত গবেষণা। সম্প্রতি বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মানুষের জিনের ধারার সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধি, মস্তিষ্কের আকার, উচ্চতায় বদল এসেছে। এমনকি বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার সঙ্গেও জিনগত ধারার যোগ মিলেছে।

আরও পড়ুন:

নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের ‘সেন্টার ফর নিউরোজেনোমিক্স অ্যান্ড কগনিটিভ রিসার্চ’-এর গবেষক ইলান লিবেডিনস্কি এই দু’টি ক্ষেত্রকে নিয়ে একসঙ্গে গবেষণা চালান। তাতে লিবেডিনস্কি এবং তাঁর সহকর্মীরা দেখেন, মানুষের বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলির আবির্ভাব হয়েছে প্রায় পাঁচ লক্ষ বছর আগে। তার পর পরই এমন কিছু জিনেরও আবির্ভাব হয়, যেগুলির সঙ্গে বর্তমানে মানসিক সমস্যার যোগ রয়েছে। লিবেডিনস্কি জানান, মস্তিষ্ক এবং জিনের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধি এবং মানসিক রোগ উভয়ই মানুষের মধ্যে এসেছে বলে গবেষণায় আভাস মিলেছে।

এই তথ্যগুলির জন্য আধুনিক মানুষের মধ্যে পাওয়া ৩৩ হাজার ভিন্ন ভিন্ন ধরনের জিনের আদিম উৎস খুঁজে বার করার চেষ্টা করেন গবেষকেরা। তাতে দেখা যায়, ওই জিনগুলির আবির্ভাব হয়েছে গত ৩০ লক্ষ বছর থেকে চার হাজার বছরের মধ্যে। তুলনামূলক নতুন জিনগুলির আবির্ভাব হয়েছে গত ৬০ হাজার বছরের মধ্যে। বস্তুত, ওই সময়েই হোমো সেপিয়েন্সরা আফ্রিকা মহাদেশ থেকে বেরিয়ে অন্য মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েন বলে ধরে নেওয়া হয়।

কোন জিনগুলি কোন সময়ে আবির্ভূত হয়েছে, তারও একটি ‘টাইমলাইন’ তৈরি করেছেন গবেষকেরা। যেমন, হজম সংক্রান্ত ব্যাধিগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত জিনের আবির্ভাব হয়েছিল প্রায় আট লক্ষ বছর আগে। বর্তমানে ক্যানসারের সঙ্গে যে জিনোম সংক্রান্ত বিষয় জড়িত, সেটির আবির্ভাব হয় আনুমানিক ৫,৯০,০০০ বছর আগে। মানসিক সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলির এই সময়ে কোনও অস্তিস্ত দেখা যায়নি।

এর পরে আবির্ভূত হয় মানুষের উন্নত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলি। যেমন, কোনও নতুন পরিস্থিতিতে সমস্যার যৌক্তিক সমাধান করার বুদ্ধির সঙ্গে যে জিনগুলি জড়িত— তা বিবর্তিত হয়েছে আজ থেকে প্রায় পাঁচ লক্ষ বছর আগে। গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলির পর পরই আবির্ভাব হয়েছে মানসিক সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলি। প্রায় ৪,৭৫,০০০ বছর আগে এই সংক্রান্ত জিনগুলির আবির্ভাব হয়। আরও অনেক পরে, গত ৫০ হাজার বছর ধরে ভাষার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলি বিকশিত হয়েছে। তারও পরে মদের প্রতি আসক্তি এবং বিষণ্ণতার সঙ্গে সম্পর্কিত জিনগুলি দেখা যায় মানবদেহে।



‘খাওয়া বন্ধ করো’! খিদে কমাতে বলা সেই প্রোটিনের সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা, নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে স্থূলতা

এমসি৪আর মস্তিষ্কের এক সংবেদী স্নায়ু। পেপটাইড হরমোন এমএসএইচ দ্বারা সক্রিয় হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেন, শরীর স্থূল হওয়ার অন্যতম কারণ হল এই এমসি৪আর-এর মিউটেশন। একেই সক্রিয় করে সেই প্রোটিন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৫৯

বিজ্ঞানীরা বলছেন, খিদে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এক প্রোটিন। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

সাঁতার, ব্যয়াম করে ওজন নিয়ন্ত্রণে আসছে না! কারণ, পেটের খিদে। শরীর চর্চা করে যতটা মেদ ঝরাচ্ছেন, ততটাই আবার পেটে পুরছেন। এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আমাদের শরীরেই রয়েছে এক প্রোটিন, যা খিদেয় লাগাম পরাতে পারে। এমআরএপি২ নামে এই প্রোটিন খিদের নিয়ন্ত্রক হিসাবে কাজ করে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মস্তিষ্কে থাকা খিদের রিসেপটর (সংবেদী স্নায়ু) এমসি৪আরকে কোষের পৃষ্ঠে পাঠিয়ে দেয় এই প্রোটিন। সেখানে গিয়েই এই রিসেপটর বলে, ‘এবার খাওয়া বন্ধ করো’! বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই আবিষ্কার এবার স্থূলতা (ওবেসিটি) নিয়ন্ত্রণে বড় ভূমিকা নিতে পারে।

জার্মানির কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা একটি গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। তার নাম সিআরসি ১৪২৩। সেই কেন্দ্রের গবেষকেরা খিদে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন। তাঁরা দেখেন, খিদের নেপথ্যে রয়েছে নির্দিষ্ট এক প্রক্রিয়া। এমআরএপি২ (মেলানোকর্টিন ২ রিসেপটন অ্যাকসেসরি প্রোটিন ২) মস্তিষ্কের রিসেপটর এমসি৪আর (মেলানোকর্টিন-৪ রিসেপটর)-কে প্রভাবিত করে। এটি খিদে নিয়ন্ত্রণ এবং শক্তির ভারসাম্য রাখতে উল্লেখ্য ভূমিকা নেয়। এই গবেষণা নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত হয়েছে।

আরও পড়ুন:

এমসি৪আর মস্তিষ্কের এক সংবেদী স্নায়ু। পেপটাইড হরমোন এমএসএইচ দ্বারা সক্রিয় হয়। এই এমসি৪আর নিয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন বিজ্ঞানীরা। তাঁরা দেখেন, শরীর স্থূল হওয়ার অন্যতম কারণ হল এই এমসি৪আর-এর মিউটেশন। গবেষক দলের নেতৃত্বে রয়েছেন প্যাট্রিক স্কিরার। তিনি জানান, রিসেপটর যখন সক্রিয় হয়, তখন তার ৩ডি ছবি তোলা হয়েছে। সাধারণ আয়ন এবং সেটমেলানোটাইড নামে এক ধরনের ওষুধের সংস্পর্শে এলেই এই রিসেপটর সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেই অবস্থায় তার কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করেন বিজ্ঞানীরা। খিদে কমানোর জন্য এই ওষুধ সেটমেলানোটাইড ব্যবহার করা হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ওই ওষুধই সক্রিয় করে তোলে রিসেপটরকে।

আরও পড়ুন:

বিজ্ঞানীরা ফ্লুওরোসেন্স মাইক্রোস্কপি প্রক্রিয়াও ব্যবহার করেছে। এতে কোষে বিশেষ উজ্জ্বল রং প্রয়োগ করা হয়। তা করে বিজ্ঞানীরা দেখেন, কোষের মধ্যে এমসি৪আর-এর অবস্থান এবং চরিত্রের বদল ঘটায় এমআরএপি২ প্রোটিনটি। এটিই এমসি৪আর-কে কোষের পৃষ্ঠে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে গিয়ে ওই রিসেপটর বলে, ‘‘এ বার খিদে নিয়ন্ত্রণ করো’’! বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই প্রক্রিয়া তাঁরা বোঝার কারণে, তা স্থূলতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। তাঁরা মনে করছেন, প্রোটিনের এই চরিত্র স্থূলতা নিয়ন্ত্রণেও কাজে আসবে। এই গবেষক দলে রয়েছেন ব্রিটেনের সেন্ট অ্যান্ড্রিউ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পাওলো অ্যানিবাল। তিনি জানান, কোষের মধ্যে অণু কী আচরণ করে, তা এই গবেষণায় কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে। রিসেপটরের চরিত্রও অনেকটাই স্পষ্ট।



স্ত্রী স্তন্যপায়ীদের আয়ু পুরুষদের চেয়ে বেশি কেন? জবাব মিলে যেতে পারে সেক্স ক্রোমোজ়োমে

জার্মানি, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি এবং বেলজিয়ামের প্রাণী বিশেষজ্ঞেরা সম্মিলিত ভাবে স্তন্যপায়ী এবং পাখিদের আয়ু নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। মোট ৫২৮ প্রজাতির স্তন্যপায়ী এবং ৬৪৮ প্রজাতির পাখি, তাদের যৌনজীবনকে তাঁরা কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:০৩

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে স্ত্রীর আয়ু বেশি! গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে দীর্ঘায়ু স্ত্রীরাই। সম্প্রতি একটি গবেষণায় এমনটাই দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। দীর্ঘায়ুর কারণও তাঁরা খুঁজে বার করেছেন। দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীর ক্ষেত্রে পূর্ণবয়স্ক পুরুষের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি বাঁচে পূর্ণবয়স্ক স্ত্রীরা। যদিও পাখিদের ক্ষেত্রে হিসাব উল্টো। সে ক্ষেত্রে পুরুষেরা তুলনামূলক বেশি দিন বাঁচে।

জার্মানি, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি এবং বেলজিয়ামের প্রাণী বিশেষজ্ঞেরা সম্মিলিত ভাবে স্তন্যপায়ী এবং পাখিদের আয়ু নিয়ে একটি গবেষণা করেছেন। মোট ৫২৮ প্রজাতির স্তন্যপায়ী এবং ৬৪৮ প্রজাতির পাখি, তাদের যৌনজীবনকে তাঁরা কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন। চিড়িয়াখানায় রাখা প্রাণী তো বটেই, পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে জঙ্গলে থাকা প্রাণীদেরও। এই সংক্রান্ত গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ নামক পত্রিকায়।

আরও পড়ুন:

দেখা গিয়েছে, স্তন্যপায়ীদের মধ্যে স্ত্রী প্রজাতির আয়ু পুরুষের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। কিন্তু পাখিদের মধ্যে পুরুষের আয়ু স্ত্রীর চেয়ে বেশি প্রায় পাঁচ শতাংশ। কিন্তু কেন? স্ত্রী এবং পুরুষের মধ্যে আয়ুর ফারাক নিয়ে একাধিক মত উঠে এসেছে বিজ্ঞানীদের মধ্যে। তবে ক্রোমোজ়োম সংক্রান্ত তত্ত্বে সমর্থন তুলনামূলক বেশি। একে বলা হচ্ছে ‘হেটারোগ্যামেটিক সেক্স হাইপোথিসিস’। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, যে হেতু স্ত্রী-র শরীরে দু’টি করে এক্স ক্রোমোজ়োম থাকে এবং পুরুষের শরীরে থাকে একটি এক্স ও একটি ওয়াই ক্রোমোজ়োম, সেই কারণেই স্ত্রীর আয়ু তুলনামূলক দীর্ঘ হয়। কী ভাবে? বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, যদি কখনও এক্স ক্রোমোজ়োমে মিউটেশন (পরিবর্তন) হয়, যাদের কাছে সেই ক্রোমোজ়োম একটির বেশি নেই, তাদের সঙ্কট বাড়ে। মিউটেশন সে ক্ষেত্রে দীর্ঘায়ুর পথেও বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জার্মানির বিশেষজ্ঞ ফার্নান্ডো কোলচেরো মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে এ কথা জানিয়েছেন।

একই যুক্তি পাখিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পাখিদের ক্ষেত্রে পুরুষের শরীরে থাকে দু’টি জ়েড ক্রোমোজ়োম। স্ত্রীর শরীরে থাকে একটি জ়েড এবং একটি ডব্লিউ ক্রোমোজ়োম। ফলে একই রকমের দু’টি ক্রোমোজ়োমধারী পুরুষের আয়ু স্ত্রীর চেয়ে বেশি হয়। তবে স্তন্যপায়ী হোক বা পাখি, উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে ব্যতিক্রম। তাই বিশেষজ্ঞেরা আরও সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন। গবেষণা চলছে।

স্ত্রীর আয়ু বেশি হওয়ার কারণ হিসাবে দ্বিতীয় যে তত্ত্বটি উঠে আসছে, তার নাম ‘সেক্সুয়াল সিলেকশন হাইপোথিসিস’। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, পুরুষেরা বেশি আগ্রাসী হয়। তাই তাদের মধ্যে শত্রুতাও বেশি। অনেক ক্ষেত্রেই স্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পুরুষ স্তন্যপায়ীরা নিজেদের মধ্যে মারপিট করে। এতে তাদের শক্তিক্ষয় হয়। ফলে আয়ুও কমে।

স্তন্যপায়ীদের নিয়ে এই গবেষণার ফল কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রেও সমান ভাবে প্রযোজ্য। মহিলাদের আয়ু পুরুষের চেয়ে বেশি। নেপথ্য কারণ হিসাবে লিঙ্গ নির্ধারক এক্স ক্রোমোজ়োমের কথাই বলা হয়। এ ছাড়া, অতিরিক্ত ধূমপান এবং মদ্যপানও অধিকাংশ পুরুষের আয়ু কমিয়ে দেয় বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। এখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি দিন বেঁচে থাকার নজির রয়েছে এক মহিলার। ফ্রান্সের বাসিন্দা জিন ক্যালমেন্ট ১২২ বছর (১৮৭৫ থেকে ১৯৯৭) জীবিত ছিলেন। এ ছাড়া আর কোনও মানুষের জীবৎকাল ১২০ বছরের গণ্ডি পেরোয়নি। পুরুষদের মধ্যে দীর্ঘতম আয়ুর অধিকারী এখনও পর্যন্ত জিরোয়েমন কিমুরা। তিনি ১১৬ বছর (১৮৯৭ থেকে ২০১৩) বেঁচে ছিলেন।



মিশর তো নয়ই, চিলেও নয়! আরও প্রাচীন মমি আবিষ্কার ভিয়েতনাম ও চিনে, বদলে যেতে চলেছে ‘ইতিহাস’

এশিয়ায় আবিষ্কার হওয়া মমিগুলিই প্রমাণ করে নব্য প্রস্তর যুগ শুরুর আগে, যখন মানুষ শিকার করে খেত, তখন থেকেই দেহ সংরক্ষণের চল ছিল। নব্য প্রস্তর যুগ শুরু ৭০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে। ভিয়েতনামে আবিষ্কার হওয়া মমিটি আরও বেশি পুরনো।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:১০

মৃতদেহকে মমি করে রাখার এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাচীন নিদর্শন মিলল এশিয়ায়। ছবি: সংগৃহীত।

মমি— কথাটি শুনলে প্রথমেই মাথায় আসে প্রাচীন মিশরের কথা। হলিউডের বিভিন্ন সিনেমার দৌলতে মমির সঙ্গে মিশরের সম্পর্ক গেঁথে গিয়েছে মানুষের মনে। কিন্তু সবচেয়ে প্রাচীন মমির খোঁজ মিশরে তো নয়-ই, আফ্রিকা মহাদেশেও নয়, মিলেছিল দক্ষিণ আমেরিকার চিলেতে। এত দিন পর্যন্ত সেটিই ছিল মৃতদেহ সংরক্ষণের সবচেয়ে প্রাচীন উদাহরণ। এ বার জানা গেল, মৃতদেহ সংরক্ষণের ইতিহাস আরও পুরনো। চিলের চেয়েও পুরনো মমি আবিষ্কার করলেন গবেষকেরা। তা-ও আবার এই এশিয়া মহাদেশেই।

প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় সবচেয়ে পুরনো যে মমিটি মিলেছে, তা প্রায় ৪৫০০ বছরের পুরনো। উত্তর চিলেতে মিলেছে প্রায় ৭০০০ বছরের পুরনো মমি। চিলের ওই মমিই প্রমাণ করে দক্ষিণ আমেরিকার প্রাচীন চিনচরো সভ্যতায় মৃতদেহ সংরক্ষণের চল ছিল। মৃতদেহ সংরক্ষণে সবচেয়ে প্রাচীন উদাহরণ হিসাবে এটিকেই গণ্য করা হত। তবে সেই ইতিহাস ভেঙে দিচ্ছে চিন এবং ভিয়েতনামের সাম্প্রতিক আবিষ্কার। চিনে পাওয়া গিয়েছে ৯০০০ বছরেরও বেশি পুরনো মমি তৈরির নিদর্শন। ভিয়েতনামে যে নিদর্শন মিলেছে, তা আরও পুরনো। ভিয়েতনামের প্রায় ১৪০০০ বছরের পুরনো ওই মমিই এখনও পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া বিশ্বের প্রাচীনতম দেহ সংরক্ষণের নিদর্শন। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়াতেও মমি তৈরির উদাহরণ মিলেছে।

এই আবিষ্কারই প্রমাণ করে নব্য প্রস্তর যুগ শুরুর আগে, যখন মানুষ শিকার করে খেত, তখন থেকেই দেহ সংরক্ষণের চল ছিল। নব্য প্রস্তর যুগ শুরু ৭০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ থেকে। ভিয়েতনামে আবিষ্কার হওয়া মমিটি আরও বেশি পুরনো। এশিয়ায় এই নতুন আবিষ্কারগুলি পুরোপুরি মমি অবস্থায় উদ্ধার হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে মাটির নীচে চাপা থাকতে থাকতে অনেকটাই কঙ্কালসার হয়ে পড়েছে সেগুলি। তবে কঙ্কালগুলি বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে, সেগুলি মমি করেই রাখা হয়েছিল।

চিন, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়ার ১১টি স্থান থেকে মাটি খুঁড়ে এমন ৫৪টি কঙ্কাল উদ্ধার করে বিশ্লেষণ করেন গবেষকেরা। সবগুলি কঙ্কালেই একই ধরনের কিছু বিশেষত্ব। দেহগুলিকে হাঁটু ভাঁজ করে একটি বিশেষ ভঙ্গিমায় সমাধিস্থ করা হয়েছিল। কিছুটা কুঁকড়ে থাকা অবস্থায়। আরও একটি বিশেষত্ব হল, কঙ্কালগুলির কোথাও কোথাও হাড়ের মধ্যে দাগ এবং পোড়া চিহ্ন দেখা গিয়েছে। প্রায় আট বছর ধরে এই গবেষণা চলেছে। ২০১৭ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দেহ একবারে পুড়ে যাওয়ার ফলে এই পোড়া চিহ্নগুলি তৈরি হয়নি। বরং দীর্ঘ সময় ধরে কম তাপে দেহগুলিকে পোড়ানো হয়েছিল। যার জেরে এই পোড়া চিহ্নগুলি তৈরি হয়েছে হাড়ের মধ্যে। তা ছাড়া একবারে দেহ পুড়ে গেলে হাড়ের সর্বত্রই পোড়া দাগ থাকার কথা। এ ক্ষেত্রে তেমন নয়। হাড়গুলির কিছু কিছু অংশেই কেবল পোড়া চিহ্ন রয়েছে।

আরও পড়ুন:

স্বাভাবিক উপায়ে মৃতদেহকে মমি করে রাখা বা সংরক্ষণের যে পদ্ধতিগুলি প্রাচীন কাল থেকে প্রচলিত রয়েছে, তার মধ্যে একটি হল, দেহকে তাপে পোহানো। এ ছাড়া ধোঁয়া, নুন, তুষার বা রাসায়নিক ব্যবহার করেও দেহ মমি করার চল ছিল। এর মাধ্যমে দেহের নরম কলা (টিস্যু)-গুলি থেকে জলীয় ভাব দূর করে দেওয়া হয়। ফলে দীর্ঘ সময়ের জন্য দেহে পচন ধরে না।

অস্ট্রেলিয়ার কিছু আদিবাসী জাতির মধ্যে তাপ এবং ধোঁয়ায় পোহানোর চল ছিল। পাপুয়া ও নিউ গিনিতে এখনও এই চল রয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রাচীন ওই কঙ্কালগুলির সঙ্গে বর্তমান সময়ে তাপে পোহানো দেহ সংরক্ষণের অনেকটা মিল রয়েছে। প্রাচীন ওই কঙ্কালগুলিতে কনুই, খুলির সামনের অংশ এবং পায়ের দিকের অংশেই পোড়া দাগ রয়েছে। বস্তুত, মানবদেহের এই অংশগুলিতেই পেশির স্তর তুলনামূলক পাতলা। তবে গবেষণার প্রারম্ভিক পর্যায়ে পুরোটাই ছিল অনুমান সাপেক্ষ বিষয়।

আরও পড়ুন:

এ বিষয়ে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য কঙ্কালগুলির এক্স-রে করা হয়। এ ছাড়া ইনফ্রারেড স্পেকট্রোস্কোপিও করানো হয়। এক্স-রে করার পরে স্পষ্ট হয়, তাপের ফলে হাড়গুলির গড়নে কিছুটা বদল এসেছে। স্পেকট্রোস্কোপিতে দেখা যায়, ৮৪ শতাংশ হাড়ের নমুনাকেই দীর্ঘ ক্ষণ ধরে কম তাপে সেঁকা হয়েছিল। ওই তাপের কারণেই হাড়ের কিছু কিছু জায়গায় কালো হয়ে গিয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান করছেন গবেষকেরা।

এই গবেষক দলের প্রধান অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক শিয়াও-চুন হাং। মিশর এবং চিলের মমির প্রসঙ্গে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই নতুন আবিষ্কার মানুষের শবদেহ সংরক্ষণের ইতিহাসকে আরও কয়েক হাজার বছর অতীতে নিয়ে গেল।” সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’কে এক ইমেলে তিনি জানান, পরিবার এবং প্রিয়জনদের যে কোনও উপায়ে সবসময় নিজের কাছে রেখে দেওয়া মানুষের এক চিরন্তন আকাঙ্ক্ষা। নতুন আবিষ্কারও সেই চিরন্তন আকাঙ্ক্ষাকেই প্রতিফলিত করে বলে জানান তিনি।



বয়স্কদের শরীরে তরুণ রক্ত দিলে কমতে পারে ত্বকের বয়স! নতুন গবেষণায় চমক

বয়স্কদের শরীরে তরুণের রক্ত কিংবা তরুণের শরীরে বয়স্ক কারও রক্ত প্রবেশ করালে কী হয়, আদৌ রক্তের ক্ষেত্রে বয়সের পার্থক্য থাকে কি না, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই গবেষণা চলছে। সম্প্রতি তাতে সাফল্য মিলেছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৫ ০৮:১৩

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বয়স হয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বুড়িয়ে যাচ্ছে ত্বক। রূপচর্চা করে, নিয়মিত যত্ন নিয়ে ত্বককে কিছু বেশি সময়ের জন্য সতেজ রাখা যায় বটে, তার বয়স তো ঠেকানো যায় না! তবে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ত্বকের কোষগুলির বয়স কমিয়ে আনার কৌশল বার করা গিয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের দাবি। সম্প্রতি একটি গবেষণায় তেমন ইঙ্গিতই পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

বয়স্কদের শরীরে তরুণের রক্ত কিংবা তরুণের শরীরে বয়স্ক কারও রক্ত প্রবেশ করালে কী হয়, আদৌ রক্তের ক্ষেত্রে বয়সের পার্থক্য থাকে কি না, তা নিয়ে অনেক দিন ধরেই গবেষণা চলছে। সম্প্রতি জার্মানির এক দল বিজ্ঞানী এই সংক্রান্ত গবেষণায় সাফল্য পেয়েছেন। গবেষণার ফল দেখে তাঁরা বিস্মিত। দাবি, ত্বকের বয়স কমে আসার লক্ষণ দেখা গিয়েছে তাঁদের পরীক্ষায়। যদিও এ নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন, মানছেন অনেকেই।

আরও পড়ুন:

জার্মানির বেইয়ের্সডর্ফ এজি সংস্থার বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে মানুষের ত্বকের একটি মডেল তৈরি করেছিলেন। সেই ত্বকের কোষগুলিতে প্রবেশ করানো হয় তরুণ রক্তের সিরাম (রক্তরস)। প্রাথমিক ভাবে এতে ত্বকের কোষে কোনও পরিবর্তন চোখে পড়েনি। কিন্তু এর পর ওই পরীক্ষায় যোগ করা হয় অস্থিমজ্জা কোষ (বোন ম্যারো সেল)। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এর পরেই ওই ত্বকের কোষে বয়স কমার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এর থেকে মনে করা হচ্ছে, অস্থিমজ্জা কোষের সঙ্গে তরুণ রক্তের সিরাম বিশেষ পদ্ধতিতে সংযুক্ত হয়। তাতে কোষের বয়স কমার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়।

জার্মানির বিজ্ঞানীরা গবেষণাপত্রে লিখেছেন, ‘‘ত্বক আমাদের দেহের সবচেয়ে বড় অঙ্গ। বার্ধক্য নিয়ে গবেষণা করার জন্যেও ত্বক সবচেয়ে উপযোগী। বার্ধক্যের লক্ষণগুলি ত্বকেই সবচেয়ে আগে ধরা পড়ে। মানুষের সার্বিক স্বাস্থ্য তাঁর ত্বকে প্রতিফলিত হয়।’’ ত্বকের টিস্যুর বয়স নির্ধারণ করতে বিজ্ঞানীরা ডিএনএ মিথাইলেশন এবং কোষের বিস্তার পরিমাপ করে দেখেছেন। তরুণ রক্তরসের সঙ্গে অস্থিমজ্জা কোষের সংস্পর্শে ত্বকের বয়স হ্রাস পেয়েছে।

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অস্থিমজ্জা কোষের সংস্পর্শে এসে তরুণ রক্তরস ৫৫টি ভিন্ন ভিন্ন প্রোটিন তৈরি করেছে। তার মধ্যে অন্তত সাতটি যে কোনও ত্বকের তারুণ্যের জন্য উপযোগী। তবে এই প্রোটিনগুলি নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, ‘‘গোটা প্রক্রিয়াটিতে আমরা বেশ কিছু প্রোটিনকে চিহ্নিত করেছি, যা আমাদের ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করার কারণ হতে পারে। বার্ধক্যের প্রেক্ষাপটে এগুলি নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।’’

আয়ু বাড়াতে কিংবা যৌবন ফেরাতে রক্তের ভূমিকা রয়েছে বলে একটা ধারণা দীর্ঘ দিন ধরেই প্রচলিত। দেশে দেশে রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারদের কাহিনি সে সব ধারণার ভিত্তিতেই ডালপালা মেলেছে। এ সবের বৈজ্ঞানিক কোনও ভিত্তি এত দিন ছিল না। জার্মানির গবেষকেরা দেখালেন, ত্বকের যৌবন ফেরানোর ক্ষমতা থাকলেও থাকতে পারে রক্তের মধ্যে। বিজ্ঞানের দৌলতে এখন মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। মানুষ অনেক বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকছেন। ত্বকের তারুণ্য ফেরানোর এই গবেষণা ভবিষ্যতেও যদি সফল হয়, তবে তা আগামী দিনে বৃদ্ধ বয়সের সহায় হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে। বার্ধক্য হয়ে উঠবে আরও সতেজ, আরও সবল।



আলুর জন্ম কী ভাবে? জিনসূত্র খুঁজতে খুঁজতে বিজ্ঞানীরা দেখলেন, অবদান রয়েছে টম্যাটোরও

কয়েক হাজার বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালার পাদদেশে প্রথম আলুচাষ করেছিল ইনকারা। ষোড়শ শতাব্দী থেকে অভিযাত্রীদের হাত ধরে তা ইউরোপে পৌঁছোয়। সেখান থেকেই ক্রমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে আলুর মহিমা। কিন্তু এত জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও আলুর বিবর্তনের ইতিহাস এত দিন ছিল অজানাই।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৫ ০৯:০১

ছবি: সংগৃহীত।

চিপ্‌স থেকে বিরিয়ানি, তরকারি থেকে মাংসের ঝোল— একটা জিনিস না থাকলে সবই ফিকে। আর সেই আলুই যে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সব্জি, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গত কয়েক শতাব্দী ধরে দুনিয়ার প্রায় সব দেশেই অন্যতম প্রধান খাদ্য হয়ে উঠেছে আলু। কিন্তু এ হেন আলুর জন্ম হল কী ভাবে? সম্প্রতি সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

কয়েক হাজার বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ পর্বতমালার পাদদেশে প্রথম আলুচাষ করেছিল ইনকারা। ষোড়শ শতাব্দী থেকে অভিযাত্রীদের হাত ধরে তা ইউরোপে পৌঁছোয়। সেখান থেকেই ক্রমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে আলুর মহিমা। কিন্তু এত জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও আলুর বিবর্তনের ইতিহাস এত দিন ছিল অজানাই। তবে সম্প্রতি কৃষিজাত আলুর ৪৫০টি এবং বন্য আলুর ৫৬টি প্রজাতির জিনোম বিশ্লেষণ করে জানা গিয়েছে, লক্ষ লক্ষ বছর আগে দক্ষিণ আমেরিকায় দুই সব্জির সংমিশ্রণে আলুর জন্ম হয়েছিল! এক দিকে বন্য টম্যাটো, আর এক দিকে আলুর কাছাকাছি এক প্রজাতির মধ্যে প্রাকৃতিক আন্তঃপ্রজননে জন্মেছিল আজকের আলুর পূর্বসূরি।

নতুন এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ‘সেল’ জার্নালে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আজ থেকে প্রায় ৯০ লক্ষ বছর আগে টম্যাটো এবং আলুরই এক জাতভাইয়ের মধ্যে সংকরায়নের ফলে আলু তৈরি হয়েছিল। আর সেই থেকেই নাকি আলু হয়ে উঠেছিল কন্দজাতীয় সব্জি। এর নেপথ্যে রয়েছে দু’টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জিন। সেগুলিকেও চিহ্নিত করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন:

কী ভাবে হয়েছিল এই সংকরায়ন?

গবেষণায় জানা গিয়েছে, আধুনিক আলুর বাবা-মা হল টম্যাটো এবং পেরুর এক প্রাচীন সব্জি, যার নাম ‘এটিউবারোসাম’। এ বার, একটু তলিয়ে ভেবে দেখলেই এক অদ্ভূত বিষয় নজরে পড়বে। টম্যাটো গাছের ভোজ্য অংশটি হল ফল। অথচ, আলু গাছের যে অংশটি আমরা খাই, সেটি আদতে কন্দ বা টিউবার। তাই আধুনিক আলু গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘সোলানাম টিউবারোসাম’। আবার, আলুর জাতভাই এটিউবারোসামের সঙ্গে আলুর মিল রয়েছে বটে, তবে এতে কন্দ নেই! তা হলে কী ভাবে এল আধুনিক আলু? তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন গবেষকেরা। আদতে, আজ থেকে প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ বছর আগে একই পূর্বপুরুষের থেকে টম্যাটো ও এটিউবারোসামের জন্ম। একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার ৫০ লক্ষ বছর পর প্রাকৃতিক ভাবেই ফের সংকরায়ন হয় এই দুইয়ের। আর তাতেই জন্ম হয় আলুর।

আলুর মতো এটিউবারোসামেরও পাতলা, ভূগর্ভস্থ কাণ্ড রয়েছে। তবে কোনও কন্দ নেই। অন্য দিকে, জিনগত বা বংশগত দিক থেকে আলু টম্যাটোর অনেক বেশি ঘনিষ্ঠ আত্মীয়! সে কারণেই গবেষকেরা আরও বিভ্রান্ত হচ্ছিলেন। এই ধাঁধার রহস্য উন্মোচনের জন্যই কৃষিজাত এবং বন্য— দুই ধরনের আলুর ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখতে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণায় দেখা যায়, আলুর প্রতিটি প্রজাতির মধ্যে এটিউবেরোসাম এবং টম্যাটো গাছের জিনের সুষম মিশ্রণ রয়েছে! অর্থাৎ, একেবারে প্রথম দিকের আলুগুলি যে এই দুই ভিন্ন প্রজাতির গাছের প্রাকৃতিক সংকরায়নের ফল ছিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। উদ্ভিদজগতে এমন বিরল ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু টম্যাটো ও এটিউবেরোসাম— দু’টি প্রজাতি আলাদা আলাদা ভাবে প্রায় ৫০ লক্ষ বছর ধরে বিবর্তিত হলেও এদের মধ্যে এতই বেশি জিনগত মিল ছিল, যে ফের তাদের সংকরায়ন সম্ভব হয়।

আরও পড়ুন:

লন্ডনের ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে উদ্ভিদবিজ্ঞানী স্যান্ড্রা ন্যাপ বলছেন, ‘‘বিরল এই ঘটনার ফলে জিনের এমন পরিবর্তন ঘটেছিল যে অভিযোজনের ফলে পরবর্তী বংশধরদের ক্ষেত্রে কন্দ তৈরি হয়। ফলে নতুন এই উদ্ভিদগুলি আন্দিজ পর্বতের দুর্গম, প্রতিকূল পরিবেশে, অনুর্বর মাটিতে কিংবা অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা ও শুষ্ক আবহাওয়াতেও সহজেই বংশবৃদ্ধি করতে থাকে।’’ এই কন্দই আজকের আলুকে আন্দিজ এলাকার পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সাহায্য করেছিল। প্রতিকূল পরিবেশে পুষ্টি সঞ্চয় করে রাখা, অযৌন জননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করা— সবেতেই আলুকে বাঁচিয়ে রেখেছিল এই কন্দ।

এখন সারা বিশ্বে ৫,০০০-এরও বেশি আলুর প্রজাতি রয়েছে। পেরুর ইন্টারন্যাশনাল পট্যাটো সেন্টার রিসার্চ অর্গানাইজ়েশনের মতে, রোজকার খাবার হিসাবে চাল এবং গমের পরেই আলুর স্থান। চাইনিজ় অ্যাকাডেমি অফ এগ্রিকালচারাল সায়েন্সেসের জীববিজ্ঞানী সানওয়েন হুয়াং বলেন, ‘‘আজকের দিনে আলু সত্যিই মানবজাতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য খাদ্যগুলির মধ্যে একটি। আলুর মতো বহুমুখীতা, পুষ্টিগুণ এবং দেশ-কাল-সংস্কৃতি ভেদে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা খুব কম ফসলের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। মানুষ প্রায় সব রান্নাতেই আলু খায়। মূলত শর্করা বলে হেয় করা হলেও আলুতে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ফাইবার এবং স্টার্চ থাকে। এটি প্রাকৃতিক ভাবে গ্লুটেন-মুক্ত এবং কম চর্বিযুক্তও।’’ হুয়াং আরও জানাচ্ছেন, প্রজননের সময় আলুর জিনোমে থাকা সমস্ত ক্ষতিকর মিউটেশন এড়ানো এত দিন বেশ কঠিন কাজ ছিল। তবে নতুন এই আবিষ্কারের পর টম্যাটোকে ব্যবহার করে ক্ষতিকর মিউটেশনমুক্ত ‘সুস্থ’ ও উৎকৃষ্ট আলু তৈরি করা যেতে পারে। শুধু তা-ই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ফলন যে বাধার মুখোমুখি হয়, তার মোকাবিলাও করা যাবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।



অতিরিক্ত ঘুম রোগবালাই তো বটেই, মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে! বলছে নতুন গবেষণা

মানুষের ঘুমের সময়সূচি নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরেই কৌতূহলী। সারা দিনে ঠিক কত ক্ষণ ঘুমোনো উচিত, তা নিয়ে অনেকে অনেক রকম মতামত দিয়ে থাকেন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ ০৯:০৪

প্রয়োজনের বেশি ঘুমোলেও বিপদ! গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

সামনে পরীক্ষা? বইয়ের পাতায় চোখ রেখেই হয়তো কেটে গেল সারা রাত! অথবা ওটিটি-তে নতুন কোনও ওয়েব সিরিজ়? রাতের ঘড়ির কাঁটা কখন যে ঘুরে যায়, হিসাব থাকে না। রাতে ঘুম কম হলে পরের দিন সকাল থেকে চোখেমুখে তার স্পষ্ট ছাপ পড়ে। চোখের নীচে কালি জমে, মাথা ভার হয়ে থাকে, অল্প কাজেই আসে ক্লান্তি। কম ঘুমের এই সমস্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আমাদের জানা। কিন্তু ঘুম যদি বেশি হয়?

মানুষের ঘুমের সময়সূচি নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরেই কৌতূহলী। সারা দিনে ঠিক কত ক্ষণ ঘুমোনো উচিত, তা নিয়ে অনেকে অনেক রকম মতামত দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি তেমনই একটি গবেষণায় উঠে এসেছে নতুন ধরনের তথ্য। বিজ্ঞানীদের দাবি, কম ঘুমের চেয়েও শরীরের বেশি ক্ষতি করতে পারে বেশি ঘুম! এমনকি, ঘুমের পরিমাণ অত্যধিক হয়ে গেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে! দীর্ঘ দিন ধরে ঘুম সংক্রান্ত নানা পরিসংখ্যান ঘেঁটে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন:

গবেষণায় কী উঠে এল

সাম্প্রতিক গবেষণায় ঘুম সংক্রান্ত আরও ৭৯টি সমীক্ষার ফলাফল খতিয়ে দেখা হয়েছে। গবেষকেরা অন্তত এক বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন বয়সের মানুষের ঘুমের সূচি নিবিড় ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাঁরা দেখেছেন, যে সমস্ত মানুষ কম ঘুমোন (এ ক্ষেত্রে রাতে সাত ঘণ্টার কম ঘুমের কথা বলা হয়েছে), তাঁদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি। কিন্তু যাঁরা বেশি ঘুমোন (রাতে ন’ঘণ্টারও বেশি ঘুম), তাঁদের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি। স্বাভাবিক বলতে এখানে প্রতি রাতে অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমের কথা বলা হয়েছে। ২০১৮ সালেও ঘুম নিয়ে এই ধরনের একটি গবেষণা হয়েছিল। সেখানে ফলাফল প্রায় অনুরূপ ছিল। গবেষকেরা ৭৪টি সমীক্ষার ফল খতিয়ে দেখে জানিয়েছিলেন, রাতে ন’ঘণ্টার বেশি ঘুমোলে মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে ১৪ শতাংশ।

কী কী সমস্যা

মনে রাখতে হবে, বেশি ঘুমোনোর সঙ্গে সরাসরি মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক নেই। তবে ঘুম বেশি হলে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তা নিয়ে গবেষকেরা সতর্ক করেছেন। প্রথমত, বেশি ঘুম মানসিক অবসাদের অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে। এ ছাড়া, শরীরে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, হজমের অসুবিধা হতে পারে অতিরিক্ত ঘুমের কারণে। সবচেয়ে বেশি যেটা চোখে পড়ে, তা হল ওজন বৃদ্ধি। ঘুম বেশি হলে শরীরে বাড়তি মেদ জমে এবং ওজন বেড়ে যায়। তা বিভিন্ন জটিল রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। অর্থাৎ, বেশি ঘুম মৃত্যুর কারণ নয়। বেশি ঘুম আসলে রোগব্যাধির কারণ, যা ভবিষ্যতে মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।

ঘুম এবং রোগব্যাধি

যাঁরা বেশি ঘুমোন, তাঁদের বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে। তা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ওষুধের প্রভাবে তাঁদের অতিরিক্ত ঘুম পেতে পারে। সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য তাঁদের বাড়তি ঘুম প্রয়োজন হতে পারে। আবার, অসুস্থ ব্যক্তিদের ঘুম কম হওয়াও স্বাভাবিক। হয়তো শারীরিক অসুস্থতার কারণেই অনেকে রাতে ঠিকমতো ঘুমোতে পারেন না। অতিরিক্ত ঘুম হতে পারে অসুস্থতার কারণ নয়, অসুস্থতার লক্ষণ।

কতটা ঘুম দরকার?

গবেষকদের মতে, কারও স্বাভাবিক ঘুমের পরিমাণ বেশি এবং কারও কম হতে পারে। ঘুম ব্যক্তিবিশেষের অভ্যাসের উপর নির্ভরশীল হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই বয়স হয়ে ওঠে অন্যতম বড় কারণ। গবেষণা অনুযায়ী, কৈশোরে তুলনামূলক বেশি ঘুম প্রয়োজন হয়। যাঁদের বয়স ১৩ থেকে ১৯, তাঁদের রাতে আট থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক যে কোনও মানুষের সাধারণ ভাবে প্রতি দিন সাত থেকে ন’ঘণ্টা ঘুম দরকার। বেশি বয়সে অনেকে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘুমোন। তবে শারীরিক সমস্যা না থাকলে বাড়তি ঘুমের প্রয়োজন পড়ে না। শুধু ঘুমের পরিমাণ নয়, কী রকম ঘুম হচ্ছে, তাতেও গুরুত্ব দেওয়া দরকার বলে মনে করেন গবেষকেরা। পরিমিত গাঢ়, গভীর ঘুম শরীরের পক্ষে উপযোগী।



মেয়ে জন্মাবে? না ছেলে? ৫০-৫০ সম্ভাবনার তত্ত্ব খারিজ করল সমীক্ষাভিত্তিক নতুন গবেষণা

কিছু ব্যক্তির কেবলমাত্র একই লিঙ্গের সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। এঁরা যত বারই সন্তানধারণ করুন না কেন, দেখা যাবে প্রতি বার একই লিঙ্গের সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তাঁরা। গত ১৮ জুলাই ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এমনটাই দাবি করা হয়েছে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ০৯:১২

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

সন্তান মেয়ে হবে? না ছেলে? অঙ্কের নিয়মে সে সম্ভাবনা ৫০-৫০ শতাংশ হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু এ বার সেই তত্ত্ব উড়িয়ে দিল সমীক্ষাভিত্তিক নতুন গবেষণা। জানা গেল, কিছু কিছু দম্পতির নাকি কেবলমাত্র একটি লিঙ্গের সন্তানধারণেরই প্রবণতা থাকে! বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে সেই প্রবণতাও।

কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে বার বার একই লিঙ্গের সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এঁরা যত বারই সন্তানধারণ করুন না কেন, দেখা যাবে প্রতি বার একই লিঙ্গের সন্তানের জন্ম দিয়েছেন তাঁরা। গত ১৮ জুলাই ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। সমীক্ষাভিত্তিক ওই গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে, যে সব দম্পতির ক্ষেত্রে বার বার একই লিঙ্গের সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়, তাঁরা সকলেই তুলনামূলক ভাবে বেশি বয়সে প্রথম সন্তান নিয়েছেন। ফলে বেশি বয়সে সন্তানধারণের সিদ্ধান্ত নিলেও বার বার একই লিঙ্গের সন্তান জন্মানোর সম্ভাবনা বাড়তে পারে বলে জানাচ্ছে নতুন গবেষণা।

সাধারণ হিসাব অনুযায়ী, সন্তান ছেলে বা মেয়ে হওয়ার সম্ভাবনা ৫০-৫০ হওয়ার কথা। কারণ, প্রাথমিক ভাবে, সমান সংখ্যক শুক্রাণু কোষ এক্স এবং ওয়াই যৌন ক্রোমোজোম বহন করে। আর এই এক্স বা ওয়াই ক্রোমোজোমই নির্ধারণ করে, সন্তানের লিঙ্গ কী হবে। কিন্তু তা হলে যে সব দম্পতির বার বার পুত্র কিংবা কন্যা জন্মায়, তাঁদের ক্ষেত্রে সম্ভাবনা তত্ত্বের এই সাধারণ নিয়ম খাটে না কেন? এই প্রশ্নই ভাবিয়ে তুলেছিল বস্টনে হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেল্‌থের প্রজনন বিশেষজ্ঞ জর্জ চাভারোকে। সেই থেকে একই লিঙ্গের একাধিক সন্তান জন্মানোর পৃথক পৃথক উদাহরণ নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করেন চাভারো ও তাঁর সহকর্মীরা।

আরও পড়ুন:

গবেষণার প্রথম ধাপ হিসাবে প্রথমে শুরু হয় সমীক্ষা। ১৯৫৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫৮,০০০ জনেরও বেশি মানুষের গর্ভধারণ এবং সন্তানের লিঙ্গ সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। দেখা যায়, এদের মধ্যে প্রায় এক তৃতীয়াংশ পরিবারের ক্ষেত্রে সন্তানেরা একই লিঙ্গের! এর মধ্যে কোনও কোনও পরিবারে আবার তিন, চার এমনকি পাঁচটি সন্তানও রয়েছে, যাদের সকলের লিঙ্গ একই। এই দম্পতিরা সকলেই একের পর এক সন্তানধারণ করে গিয়েছেন, সম্ভাবনা তত্ত্বের নিয়মে অন্তত একটি অপত্যের লিঙ্গ ভিন্ন হবে, এই আশায়! কিন্তু সে গুড়ে বালি। বরং প্রতি বারই দেখা গিয়েছে, জন্ম নিয়েছে একই লিঙ্গের সন্তান।

চাভারোর কথায়, ‘‘সন্তানের লিঙ্গ কী হবে, সেই সম্ভাবনা প্রতিটি দম্পতির ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা হতে পারে। প্রত্যেক দম্পতির কোনও একটি নির্দিষ্ট লিঙ্গের সন্তান ধারণের ‘বিশেষ সম্ভাবনা’ থাকে। তবে পরিবারভেদে এই সম্ভাবনাও ভিন্ন হয়। সে কারণেই, সমগ্র জনসংখ্যার নিরিখে দেখলে ছেলে বা মেয়ে জন্মানোর সম্ভাবনা আপাত দৃষ্টিতে ৫০-৫০ শতাংশ বলে মনে হয়।’’ চাভারো জানাচ্ছেন, যে পরিবারগুলিতে একই লিঙ্গের সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে, তাঁরা কেউ কেউ তত ক্ষণ পর্যন্ত সন্তানধারণের চেষ্টা করে যান যত ক্ষণ না অন্য লিঙ্গের সন্তান জন্মাচ্ছে। আবার যে সব পরিবারে প্রথম দুই সন্তানের মধ্যে একজন পুত্র এবং একজন কন্যা হয়, তাঁরা অনেক ক্ষেত্রেই তৃতীয় সন্তান নেওয়ার কথা ভাবেন না। সমীক্ষায় এ ধরণের উদাহরণগুলিও খতিয়ে দেখা হয়েছে। চাভারো বলছেন, ‘‘তাতেও দেখা গিয়েছে, বিভিন্ন পরিবারে বেশি সংখ্যায় একই লিঙ্গের সন্তান জন্মানোর প্রবণতা দেখা গিয়েছে। বিশেষত সেই সব দম্পতির ক্ষেত্রে এটা দেখা গিয়েছে যাঁরা বেশি বয়সে প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।’’

নতুন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, মায়ের বয়স বেশি হলে একই লিঙ্গের সন্তান জন্মানোর সম্ভাবনাও বেড়ে যেতে পারে। কেন? তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন চাভারো। তিনি বলছেন, প্রজননক্ষম বছরগুলিতে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীযৌনাঙ্গের পিএইচের পরিবর্তন হয়। যৌনাঙ্গের অভ্যন্তরের পরিবেশ বেশি অ্যাসিডিক হয়ে ওঠে, যা এক্স ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণুর পক্ষে অনুকূল। কারণ, এক্স ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণু ওয়াই ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণুর চেয়ে আকারে কিছুটা বড়। এতে অ্যাসিডিক পরিবেশে টিকে থাকার জন্য ‘বাফার জাতীয়’ রাসায়নিকও থাকে। সে কারণে সেই ধরনের শুক্রাণুর সঙ্গেই ডিম্বাণুর মিলন হবে। ফলে সে ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সন্তানই হবে কন্যা। আবার, ঋতুচক্রের যে পর্যায়ে ডিম্বাশয় থেকে একটি ডিম্বাণু নিঃসৃত হয়, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পর্যায়ের দৈঘ্য ক্রমশ ছোট হতে থাকে। ফলে সার্ভিকাল মিউকাস, ওভিডাক্ট তরল সব মিলিয়ে এমন পরিবেশ তৈরি হতে পারে যা ওয়াই ক্রোমোজোম বহনকারী শুক্রাণুর বেঁচে থাকার পক্ষে অনুকূল। সে ক্ষেত্রে বেশির ভাগ অপত্য হবে পুত্র।

আরও পড়ুন:

অর্থাৎ, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোন জৈবিক কারণগুলি সেই ব্যক্তির উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলবে, তার উপর নির্ভর করে সন্তানের লিঙ্গ কী হবে। আবার, যে সব দম্পতির বার বার একই লিঙ্গের সন্তান জন্মেছে, তাঁদের জিনগত তথ্য বিশ্লেষণ করে দু’টি বিশেষ জিন খুঁজে পেয়েছেন চাভারো ও তাঁর সহকর্মীরা। যদিও সন্তানের লিঙ্গনির্ধারণে ওই জিনগুলির ভূমিকা কী তা এখনও স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে আরও গবেষণা চলছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

তবে নতুন এই গবেষণা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে বিজ্ঞানীমহলে। ইতালির বোলোগনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নিকোলা বারবানের কথায়, ‘‘চাভারোর আবিষ্কার ভবিষ্যতে এই সংক্রান্ত গবেষণাকে গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করবে। তবে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন।’’ আবার, এই ফলাফলে সন্তুষ্ট নন অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিসিস্ট ব্রেন্ডন জিট্শ। তিনি বলছেন, ‘‘১৯৩১ সালের পরে জন্মানো গোটা সুইডিশ জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে একটি বৃহত্তর সমীক্ষায় আমরা আগেই দেখিয়েছি যে, শুধু ছেলে বা মেয়ে জন্মানোর ঘটনা কোনও বিশেষ নিয়ম মেনে হয় না।’’ জিট্শ আরও জানিয়েছেন, অপত্যের লিঙ্গ কী হবে, তার সঙ্গে এত সহজে জিনগত যোগসূত্রের সম্বন্ধ টানা সম্ভব নয়। এ জন্য পৃথক এক নমুনার উপর গবেষণা করে দেখতে হবে। চাভারোর সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা বেশির ভাগই ছিলেন মার্কিন এবং শ্বেতাঙ্গ। ফলে অন্য জনসংখ্যার উপর সমীক্ষা না করে এ বিষয়ে এত দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছোনো যাবে না। তা ছাড়া, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পিতার বয়স ছিল মায়ের বয়সের কাছাকাছি। ফলে অপত্যের লিঙ্গ কী হবে তা পিতার বয়সের উপর কতটা নির্ভর করে, তা-ও দেখার।


আঘাত এলে গাছপালারা আর্তনাদ করে ওঠে, আর সেই শব্দ শুনতে পায় পতঙ্গেরা! জানাল গবেষণা

কোনও উদ্ভিদের উপর ধারাল অস্ত্রের কোপ পড়লে বা উপড়ে ফেলার চেষ্টা হলে তাদের দেহ থেকে এক ধরনের ‘আলট্রাসাউন্ড’ নির্গত হয়। খরা পরিস্থিতিতে জলের অভাব হলেও এমনটা হয়।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৫ ১৯:২১

ছবি: রয়টার্স।

প্রাণ থাকলেও তারা নীরব! উদ্ভিদজগৎ সম্পর্কে এতদিনের ধারণাটা ছিল এমনই। কিন্তু ইজ়রায়েলের তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা জানাচ্ছেন এমন ধারণা ভুল। তাঁদের দাবি, কোনও রকম আঘাত এলে বা প্রতিকূল পরিবেশের মুখে পড়লে গাছেরাও আর্তনাদ করে। আর সেই সূক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম ‘আলট্রাসাউন্ড’ শুনতে পায় পতঙ্গেরা!

ই-লাইফ জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে ইজ়রায়েলি গবেষকেরা জানিয়েছেন, কোনও উদ্ভিদের উপর ধারাল অস্ত্রের কোপ পড়লে বা উপড়ে ফেলার চেষ্টা হলে তাদের দেহ থেকে এক ধরনের ‘আলট্রাসাউন্ড’ নির্গত হয়। খরা পরিস্থিতিতে দীর্ঘকাল ধরে জলের অভাব হলেও এমনটা হয়। মানুষ সাধারণত ২০ থেকে ২০০০০ হার্ৎজ় পর্যন্ত কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায়। কিন্তু ‘আলট্রাসাউন্ড’-এর কম্পাঙ্ক ২০০০০ হার্ৎজ়ের বেশি। তাই মানুষের শ্রবণশক্তি তার নাগাল পায় না।

আরও পড়ুন:

তেল আভিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওয়াইজ ফ্যাকাল্টি অফ লাইফ সায়েন্সেস’-এর অধ্যাপক ইয়োসি ইয়োভেল এবং লিলাচ হাদানির গবেষণাগারে উদ্ভিদ ও পতঙ্গেও ‘শব্দের আদানপ্রদান’ সংক্রান্ত ওই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন রিয়া সেল্টজ়ার এবং গায়জ়েয় এশেল। তাঁর গবেষণাগারে টম্যাটো গাছের উপর গবেষণাটি করেন। সেখানে কিছু গাছের পর্যাপ্ত যত্ন নেওয়া হয়েছিল। কয়েকটিতে দীর্ঘ দিন জল দেওয়া হয়নি। আবার কয়েকটির বেশ কিছু পাতা ছিঁড়ে নিয়ে সালোকসংশ্লেষের হার কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন:

গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে টম্যাটো গাছগুলি পর্যাপ্ত যত্ন পেয়েছে তারা শান্ত থেকেছে। অন্যগুলি থেকে ভেসে এসেছে বিশেষ কম্পাঙ্কের ‘আলট্রাসাউন্ড’। টম্যাটো গাছের পাতায় কয়েকটি প্রজাতির স্ত্রী পতঙ্গ ডিম পাড়ে। অর্থাৎ, টম্যাটো তাদের ‘পোষক উদ্ভিদ’ (হোস্ট প্লান্ট)। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ‘আর্তনাদের শব্দ’ শুনেই কয়েকটি প্রজাতির স্ত্রী পতঙ্গেরা জলসঙ্কটে পড়া গাছগুলিকে পরিহার করেছে। বেছে নিয়েছে সুস্থ স্বাভাবিক গাছগুলিকে। বছর কয়েক আগেই জীববিজ্ঞানী লিলাচ এ সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করেছিলেন। তাঁর মতে, শুধু পোকামাকড় নয়, বাদুড়ের মতো প্রাণীও সম্ভবত গাছেদের ‘শব্দ’ শুনতে পায়।



আমাদের মস্তিষ্কের মারাত্মক একটি রোগ এসেছে নিয়ানডারথালদের থেকে! প্রমাণ মিলল জিন-গবেষণায়

হোমো স্যাপিয়েন্সের সঙ্গে যে একাধিক প্রাচীন মানব প্রজাতির যৌনমিলন ঘটেছিল, ২০১৩ সালে তা প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই প্রাচীন কাল থেকে প্রাচীন জিন বয়ে চলেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৫ ০৯:০২

আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের রোগে প্রাচীন জিনের হদিস! —ফাইল চিত্র।

সময়টা আজ থেকে প্রায় দুই কি তিন লক্ষ বছর আগে। পৃথিবীর বুকে তখন চলছে মধ্যপ্রস্তর যুগ। সেই সময় পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াত নিয়ানডারথালেরা, মানুষের প্রাচীন পূর্বপ্রজাতি। একইসঙ্গে হোমো স্যাপিয়েন্স বা আধুনিক মানুষের আবির্ভাবও তখন হয়ে গিয়েছিল। এই দুই মানবপ্রজাতির যৌনমিলনের একাধিক প্রমাণ অতীতেও পেয়েছেন বিজ্ঞানী এবং প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। শুধু নিয়ানডারথালদের সঙ্গে নয়, হোমো স্যাপিয়েন্সের সঙ্গে একাধিক প্রাচীন মানব প্রজাতির মিলন ঘটেছে। বিজ্ঞানীরা আগেও আন্দাজ করেছিলেন, প্রাচীন এই সমস্ত জিন এখনকার বহু রোগের উৎস হতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেল, আধুনিক মানুষের মস্তিষ্কের একটি মারাত্মক রোগ এসেছে নিয়ানডারথালদের জিন থেকে। প্রাচীন এবং আধুনিক মাথার বহু খুলি ঘেঁটে এই তত্ত্বে উপনীত হয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

কী এই মস্তিষ্কের রোগ

বর্তমান সময়ে মস্তিষ্কের গুরুতর একটি রোগে আক্রান্ত হন অনেকে। তার নাম চিয়ারি ম্যালফর্মেশন। এই রোগে আক্রান্ত মানুষের মাথার খুলির আকারের সঙ্গে তাদের মস্তিষ্ক বা ঘিলুর আকার মেলে না। মস্তিষ্কের নীচের অংশ বেড়ে গিয়ে মেরুদণ্ড পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে মাথার খুলির পিছন দিকে স্বাভাবিকের তুলনায় ছোট আকারের অক্সিপিটাল হাড় তৈরি হয়। মাথা ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা এবং আরও অনেক গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে এই রোগে। পৃথিবীতে প্রতি ১০০ জনের মধ্যে এক জন চিয়ারি ম্যালফর্মেশনে আক্রান্ত হন।

চিয়ারি ম্যালফর্মেশনে আক্রান্ত মানুষের মাথার গড়ন। ছবি: সংগৃহীত।

প্রাচীন মানবের যৌনমিলন

মানুষের পূর্বপুরুষের এমন অনেক প্রাচীন প্রজাতি রয়েছে, যাদের মাথার খুলির আকার আমাদের চেয়ে আলাদা। ২০১৩ সালের একটি গবেষণায় প্রথম দাবি করা হয়েছিল, চিয়ারি ম্যালফর্মেশনের মূলে রয়েছে এই সমস্ত প্রাচীন মানব প্রজাতির জিন। হোমো স্যাপিয়েন্সের সঙ্গে যে এই ধরনের প্রজাতির যৌনমিলন ঘটেছিল, তা প্রমাণ করে দেখিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই থেকে প্রাচীন জিন বয়ে চলেছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। তবে এগুলি এত দিন অধিকাংশই ছিল অনুমানের পর্যায়ে।

কী ভাবে এগোল গবেষণা

ফিলিপিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্টিয়োআর্কিয়োলজিস্ট কিম্বারলি প্লম্পের নেতৃত্বে একটি দল সম্প্রতি এই ধারণাটি নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁদের মতে, এই আন্তঃপ্রজননের উত্তরাধিকার বর্তমানে অনেক জীবিত মানুষের জিনেও শনাক্ত করা যায়। গবেষকদের ওই দলটি মোট ১০৩টি মাথার খুলি নিয়ে কাজ করেছেন। তাতে চিয়ারি ম্যালফর্মেশনে আক্রান্তদের খুলি যেমন ছিল, সুস্থ মানুষের খুলিও ছিল। এর পাশাপাশি প্রাচীন প্রজাতির আটটি জীবাশ্ম খুলিও পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছিল। জীবাশ্ম খুলিতে ছিল নিয়ানডারথাল, হোমো ইরেকটাস, হোমো হেইডেলবারজেনসিসের মতো প্রাচীন মানব প্রজাতির নমুনা।

প্রাচীন মানব প্রজাতি নিয়ানডারথাল। ছবি: সংগৃহীত।

উৎস নিয়ানডারথাল

রোগাক্রান্ত মানুষের খুলিগুলি আকারে ছিল ভিন্ন ভিন্ন। যে অংশে মস্তিষ্কের সঙ্গে মেরুদণ্ডের সংযোগ ঘটে, সে অংশের আকারও আলাদা ছিল। তবে এই ধরনের মাথার খুলির আকারের সঙ্গে একমাত্র একটি প্রাচীন প্রজাতির খুলির মিলই পাওয়া গিয়েছে। সেটা হল নিয়ানডারথাল। গবেষকেরা জানিয়েছেন, হোমো ইরেকটাস, হোমো হেইডেলবারজেনসিসের মাথার খুলির সঙ্গে বর্তমান সুস্থ মানুষের মাথার খুলির অনেক মিল পাওয়া গিয়েছে। এর থেকেই বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, নিয়ানডালথালদের থেকেই আধুনিক মানুষের জিনে চিয়ারি ম্যালফর্মেশন নামক রোগটি প্রবেশ করেছে। অন্য কোনও প্রাচীন মানব প্রজাতির থেকে নয়। এতে ২০১৩ সালের গবেষণার দাবি আরও স্পষ্ট ভাবে প্রতিষ্ঠিত হল। পাশাপাশি, হোমো স্যাপিয়েন্সের সঙ্গে নিয়ানডারথালের মিলন, প্রজনন এবং জিনগত বিনিময়ে আরও গভীর ভাবে আলোকপাত করল এই গবেষণা।

স্থান-কাল নির্বিশেষে?

সাম্প্রতিক গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনাগুলি নিয়ে আরও কাজ করতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা। বয়স এবং সময় নির্বিশেষে আধুনিক মানুষ এবং প্রাচীন মানবের মাথার খুলিগুলি আমাদের বলে দিতে পারে চিয়ারি ম্যালফর্মেশনের সঙ্গে নিয়ানডারথালদের কী সম্পর্ক ছিল। তারাও এই রোগে ভুগত কি না। আজকের মানুষের মতো একই সমস্যা তাদের মাথাতেও হত কি না। বিশ্বের আলাদা আলাদা প্রান্তের মানুষের সঙ্গেও এই নমুনা মিলিয়ে দেখতে চান বিজ্ঞানীরা। আমরা জানি, আফ্রিকার জনগোষ্ঠীগুলির মধ্যে নিয়ানডারথালদের ডিএনএ কম। তুলনায় নিয়ানডারথাল ডিএনএ বেশি পাওয়া যায় ইউরোপ এবং এশিয়ায়। চিয়ারি ম্যালফর্মেশনের ক্ষেত্রেও সেই তত্ত্ব মিলে যায় কি না, পরীক্ষা করে দেখতে হবে।

চিকিৎসায় লাভ

বিজ্ঞানীদের ধারণা, রোগের উৎস সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া গেলে আগামী দিনে এই রোগের সঙ্গে মোকাবিলা আরও সহজ হবে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য এই রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে। অনেকেই আশাবাদী, ভবিষ্যতে এই রোগকে সম্পূর্ণ রূপে নির্মূল এবং বিলুপ্ত করে দেওয়া সম্ভব। তবে গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। ফলে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, ‘‘এই তথ্য আমাদের চিয়ারি ম্যালফর্মেশনের কারণ জানতে এবং এই রোগকে আরও বিশদে বুঝতে সাহায্য করে। পরবর্তী সময়ে এই রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসাতেও এই তথ্যগুলি কাজে লাগবে পারে।’’


ব্রেন বুড়োলে আয়ু কমে! চনমনে মস্তিষ্কের সঙ্গেই বেঁচে থাকার সম্পর্ক বেশি, বলছে নতুন গবেষণা

ক্যালিফর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক ৪৪,৪৯৮ জনের তথ্য নিয়ে তার উপর পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখেছেন। প্রয়োগ করেছেন রক্ত বিশ্লেষণ কৌশল (ব্লাড অ্যানালিসিস টেকনিক)।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২৫ ০৮:৫৮

মানুষের মস্তিষ্কের সতেজতায় লুকিয়ে দীর্ঘায়ুর চাবিকাঠি! গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

বয়স বাড়ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বুড়িয়ে যাচ্ছে আমাদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। অকালে কারও চুল পাকছে, কারও পড়ে যাচ্ছে দাঁত। কিন্তু আপনার মস্তিষ্কের (ব্রেন) ‘বয়স’ কত? তার খোঁজ কি নিয়েছেন কখনও? নতুন গবেষণা বলছে, মস্তিষ্কের ‘বয়স’ই বলে দিতে পারে আপনার আয়ু। বেঁচে থাকার সঙ্গে চনমনে, তাজা মস্তিষ্কের সম্পর্ক অনেক বেশি।

আমাদের শরীরের এক একটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বুড়িয়ে যেতে এক এক রকম সময় নেয়। কোনও অঙ্গ হয়তো কমবয়সেই বুড়িয়ে যায়। আবার কোনও অঙ্গ বেশি বয়সেও থেকে যায় তাজা। গবেষকেরা সম্প্রতি শরীরের এমন ১১টি অঙ্গের উপর পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখেছেন। জানিয়েছেন, মস্তিষ্কই আয়ু নির্ধারণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযোগী।

ক্যালিফর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক ব্রিটেনের স্বাস্থ্য গবেষণা ডেটাবেস থেকে মোট ৪৪,৪৯৮ জনের তথ্য নিয়ে তার উপর পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখেছেন। ৪০ থেকে ৭০ বছর বয়সি ওই ৪৪,৪৯৮ জনের তথ্যে রক্ত বিশ্লেষণ পদ্ধতি (ব্লাড অ্যানালিসিস টেকনিক) প্রয়োগ করা হয়েছে। এর থেকে তাঁরা পেয়েছেন ওই মানুষগুলির মোট ১১টি অঙ্গের আনুমানিক বয়স। এর মধ্যে মস্তিষ্ক ছাড়াও ছিল হার্ট, ফুসফুস, পেশি, কিডনি, লিভার, অন্ত্র, অগ্ন্যাশয়, চর্বি, শিরা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

আরও পড়ুন:

এই অঙ্গের ‘বয়স’ ব্যক্তিবিশেষের স্বাস্থ্যের দীর্ঘ ১৭ বছরের পরিসংখ্যানের (রেকর্ড) সঙ্গে তুলনা করে দেখা হয়েছে। সাধারণ ভাবে দেখা গিয়েছে, অঙ্গের চনমনে ভাব যত কম, মৃত্যুর ঝুঁকিও তত বেশি। এদের মধ্যে থেকে মস্তিষ্ককেই আদর্শ প্রতিনিধি হিসাবে বেছে নেওয়া যেতে পারে, জানিয়েছেন গবেষকেরা। পরিসংখ্যান বলছে, যাঁদের ব্রেন যত কম বুড়িয়েছে, তাঁদের আয়ু তত দীর্ঘ হয়েছে। স্ট্যানফর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্টিস্ট টনি উইস্‌-কোরে বলেছেন, ‘‘ব্রেনই হল আমাদের দীর্ঘ জীবনের দ্বাররক্ষী। যদি আপনার ব্রেন বুড়িয়ে যায়, মৃত্যুর সম্ভাবনাও বেড়ে যাবে। আর আপনার বয়স যতই বাড়ুক, ব্রেন সতেজ থাকলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।’’

যে রক্তপরীক্ষার পদ্ধতি এখানে ব্যবহার করা হয়েছে, তা মূলত প্রোটিনের মাত্রা পরিমাপ করে। সেই প্রোটিন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়। জটিল কিছু গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা বার করেছেন, কোন অঙ্গ কেমন চলছে। কোন অঙ্গ কতটা সতেজ। যে অঙ্গ যত ‘বয়স্ক’, তার প্রোটিন তত বেশি ক্ষয়ক্ষতি নির্দেশ করেছে। সেই অঙ্গে রোগ ধরার সম্ভাবনাও তাই তত বেশি। একই ভাবে এমন ‘বয়স্ক’ অঙ্গের সংখ্যা যার শরীরে যত বেশি রয়েছে, তার রোগভোগের সম্ভাবনাও তত বেড়ে যায়।

আরও পড়ুন:

গবেষণা বলছে, যাঁদের ব্রেন ‘অত্যন্ত বয়স্ক’ (বৃদ্ধ বয়সের সাত শতাংশ), তাঁদের ক্ষেত্রে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ। তুলনায় যাঁদের ব্রেনের বয়স কম, তাঁদের ব্রেন সাধারণ জৈবিক বয়সের সঙ্গেই সঙ্গতিপূর্ণ। ‘অত্যন্ত চনমনে’ মস্তিষ্কের অধিকারী যাঁরা, তাঁদের অকালমৃত্যুর (শারীরিক কারণে) সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ কমে যায়।

বিজ্ঞান, প্রযুক্তির উন্নয়নে মানুষের গড় আয়ু যত বাড়ছে, ততই চারপাশে বাড়ছে এমন মানুষের সংখ্যা, যাঁদের স্মৃতি দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে। তাঁরা অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত হচ্ছেন। যে রোগ নিরাময়ের কোনও ওষুধ এখনও নেই। গবেষকদের দাবি, ‘বয়স্ক’ ব্রেনের মানুষদের অ্যালঝাইমার্সে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ৩.১ গুণ বেড়ে যায়। যাঁদের ব্রেন চনমনে, তাঁদের এই রোগের সম্ভাবনা থাকে ৭৪ শতাংশ কম।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কী ভাবে ব্রেনকে সতেজ রাখবেন?



মেয়েদের কি অঙ্কে ‘মাথা’ কম? প্রাথমিক স্কুলে বড় আকারের সমীক্ষা চলল ফ্রান্সে, রিপোর্ট কী

বছর সাতেক আগে ফ্রান্সের স্কুলস্তরের প্রায় ২৫ লক্ষ ছেলে ও মেয়ের গাণিতিক দক্ষতা নিয়ে একটি সমীক্ষা শুরু করেছিল সে দেশের সরকার। সেই সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যের উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে নতুন গবেষণা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৫ ০৮:৫৫

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

অনেকেই মনে করেন, মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় অঙ্কে ‘কাঁচা’! সত্যিই কি তাই? সত্যিই কি লিঙ্গভেদে অঙ্কের বোঝাপড়াও ভিন্ন হয়? নতুন গবেষণা বলল— না, শৈশবের মস্তিষ্ক ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে অঙ্কে একই রকমের পারদর্শী বা একই রকম দুর্বল। লিঙ্গের নিরিখে কোনও প্রভেদ নেই অঙ্ক বোঝার ক্ষেত্রে।

বছর ২০ বছর আগে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক এলিজ়াবেথ স্পেল্ক ঠিক এই কথাটাই জোরের সঙ্গে বলেছিলেন কিছু পরীক্ষানিরীক্ষার উপর ভিত্তি করে। তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন, বিজ্ঞান ও অঙ্কের প্রতি ঝোঁক কিংবা বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে শারীরিক বা লিঙ্গগত কারণে কোনও পার্থক্য নেই। থাকলে তা শৈশবেই স্পষ্ট হয়ে যেত। ২০০৫ সালে ‘আমেরিকান সাইকোলজিস্ট’ নামে এক জার্নালে সেই প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। সম্প্রতি ‘নেচার’ জার্নালে আবারও এক নতুন গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন স্পেল্ক এবং ইউরোপীয় গবেষকদের একটি দল, যেখানে আগের সিদ্ধান্তের সপক্ষে আরও শক্তিশালী যুক্তি খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। বছর সাতেক আগে ফ্রান্সের স্কুলস্তরের প্রায় ২৫ লক্ষ ছেলে ও মেয়ের গাণিতিক দক্ষতা নিয়ে একটি সমীক্ষা শুরু করেছিল সে দেশের সরকার। সেই সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যের উপরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে স্পেল্কদের নতুন গবেষণা।

২০১৮ সালের ওই সমীক্ষা বলছে, প্রাক্‌প্রাথমিক স্তরের ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে গাণিতিক দক্ষতায় বিশেষ ফারাক নেই। কিন্তু স্কুলে ভর্তি হওয়ার মাত্র চার মাস পর থেকেই দেখা গিয়েছে, অঙ্কে মেয়েদের পিছনে ফেলে সামান্য এগিয়ে গিয়েছে ছেলেরা। ছেলেদের অঙ্কের প্রতি ঝোঁকও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। উঁচু শ্রেণিতে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যত সময় পেরিয়েছে, ততই মেয়েদের তুলনায় গণিতে আরও এগিয়ে গিয়েছে সহপাঠী ছেলের দল। কাজেই এর থেকে অনেকেই মনে করতে পারেন, ছেলেদের অঙ্কের ‘মাথা’ মেয়েদের তুলনায় ভাল। অনেকে তেমনটা বিশ্বাসও করেন। কিন্তু স্পেল্কের যুক্তি, তা-ই যদি হয়, তা হলে শিশুকাল কিংবা প্রাক্‌প্রাথমিক স্তর থেকেই এই ফারাক চোখে পড়া উচিত ছিল। অথচ সমীক্ষা বলছে অন্য কথা! ২৫ লক্ষ শিশুর উপর দীর্ঘ সময় ধরে সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, প্রাক্‌প্রাথমিক স্তরে অঙ্কে ছেলে-মেয়ে উভয়েই সমান দক্ষ।

আরও পড়ুন:

এর আগে ২০০৩ সালে ৪০টি দেশের ২,৭০,০০০ এরও বেশি কিশোর-কিশোরীকে নিয়ে একই ধাঁচের একটি পৃথক আন্তর্জাতিক সমীক্ষা করেছিলেন নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কেলগ স্কুল অফ ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক পাওলা স্যাপিয়েঞ্জা ও তাঁর সহকর্মীরা। সেই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, মেয়েরা যখন শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক ক্ষেত্রে ছেলেদের সমান সুযোগসুবিধা পায়, তখন তাদের অঙ্কে প্রাপ্ত নম্বরে তথাকথিত ‘লিঙ্গ বৈষম্য’ও থাকে না। এর থেকেই গবেষকেরা সিদ্ধান্তে পৌঁছোন, অঙ্কে কার মাথা কেমন হবে, তা লিঙ্গের উপর নয়, বরং পারিপার্শ্বিক আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সম্পর্কিত। আশ্চর্যজনক ভাবে, যে সব দেশে ছেলে-মেয়েদের সমান সুযোগসুবিধা রয়েছে, সেই দেশগুলিতে এই বৈষম্য নেই। বরং সে সব দেশে কোনও কোনও ক্ষেত্রে অঙ্ক ও বিজ্ঞানে মেয়েরাই ছেলেদেরকে ছাপিয়ে গিয়েছে!

তা হলে পরিসংখ্যান বলছে, শিশুকালে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে গাণিতিক দক্ষতায় কোনও পার্থক্য থাকে না। ফ্রান্সের মতো দেশে একজন ছেলে ও মেয়ের আর্থসামাজিক অবস্থাতেও বড়সড় বৈষম্য নেই। তা সত্ত্বেও সমীক্ষায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরা অঙ্কে পিছিয়ে পড়ল কেন? এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত রয়েছে। এই ফারাক সামাজিক কারণে, মেয়েদের শৈশব থেকে যে ভাবে বড় করে তোলা হয় সেই কারণে, না কি দীর্ঘ সামাজিক ইতিহাস এর পিছনে রয়েছে, তা নিয়ে মতভেদও রয়েছে। পরিবার তথা সমাজ গোড়া থেকেই ছেলে-মেয়ের মধ্যে যে বৈষম্য তৈরি করে দেয়, তারই প্রভাব শিশুর গাণিতিক দক্ষতায় পড়ে কি না, সে সবও দেখার রয়েছে। তবে তা আপাতত স্পেল্কদের আলোচনার বিষয় নয়। আপাতত শুধু জেনে নেওয়ার ছিল, মেয়েরা ছেলেদের থেকে লিঙ্গগত কারণেই অঙ্কে কাঁচা কি না! উভয়ের মস্তিষ্কে এমন কোনও ফারাক রয়েছে কি না, যা অঙ্ক বোঝায় ফারাক গড়ে দেয়। সেই সম্ভাবনা আবারও নাকচ করে দিল সমীক্ষা।


দুই বাবার সন্তান নিজেও জন্ম দিতে সক্ষম! ইঁদুরের উপর সফল পরীক্ষা কি এর পর মানুষের উপরেও হবে?

দুই পুরুষের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে বলে অ্যান্ড্রোজেনেসিস। এই প্রক্রিয়ায় গবেষণাগারে এর আগে দুই পুরুষ ইঁদুর থেকে নতুন ইঁদুরের জন্ম দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। তবে সেই ইঁদুরগুলি নিজেরা সন্তানধারণ করতে পারেনি। এ বার তা-ও সম্ভব হল।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০২৫ ০৯:০৫

দুই পুরুষের থেকে নতুন ইঁদুরের জন্ম! —ফাইল চিত্র।

দুই বাবা সন্তানের জন্ম দিয়ে ইতিহাস তৈরি করেছিল। তাদের সেই সন্তান সুস্থসবলও হয়েছিল। দিব্যি খেয়েদেয়ে, হাঁটাচলা করে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু বাধা আসে বংশবিস্তারে। দুই বাবার সন্তান নিজে আর সন্তানের জন্ম দিতে পারছিল না। এত দিনে সেই ‘অসম্ভব’কেও সম্ভব করে দেখালেন বিজ্ঞানীরা! সুস্থ ভাবে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিল দুই বাবার সন্তানও। মানুষ নয়, গোটা পরীক্ষাটি আপাতত করা হয়েছে ইঁদুরের উপর। ভবিষ্যতে মানুষের উপরেও এই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা সম্ভব কি না, এই সাফল্যের পর তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।

দুই পুরুষের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে বলে অ্যান্ড্রোজেনেসিস। এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন সন্তান উত্তরাধিকার সূত্রে কেবল পুরুষের কাছ থেকেই জিনগত উপাদান পেয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ায় গবেষণাগারে এর আগে দুই পুরুষ ইঁদুর থেকে নতুন ইঁদুরের জন্ম দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। তবে সেই ইঁদুরগুলি নিজেরা সন্তানধারণ করতে পারেনি। চিনের সংহাই জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা হাল ছাড়েননি। তাঁরা দুই পুরুষ ইঁদুর থেকে প্রজননক্ষম সুস্থ ইঁদুর তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাতে সম্প্রতি এসেছে সাফল্য। তাঁদের গবেষণাপত্র ২৫ জুন পিএনএএস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

আরও পড়ুন:

কী ভাবে কী করা হয়েছে?

প্রথমে দু’টি পুরুষ ইঁদুরের থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করেন বিজ্ঞানীরা। তা ইঁদুরের ডিম্বাণুর সঙ্গে মেশানো হয়। এই ডিম্বাণুটি থেকে নিউক্লিয়াসটি সরিয়ে ফেলা হয়েছিল আগেই। নিউক্লিয়াসেই স্ত্রী-ডিএনএ থাকে। তা সরিয়ে ফেলা হলে স্ত্রী ইঁদুরের বিশেষত্ব আর ওই ডিম্বাণুতে অবশিষ্ট থাকে না। ডিএনএ সম্বলিত নিউক্লিয়াসটি সরিয়ে ফেলার পর দুই পুরুষ ইঁদুরের শুক্রাণু দিয়ে ডিমটিকে নিষিক্ত করা হয়। তৈরি হয় ২৫৯টি ভ্রূণ। নিষেকের প্রক্রিয়াটির জন্য অন্য ইঁদুরের গর্ভ (সারোগেট) ব্যবহার করা হয়েছিল। কিন্তু ২৫৯-এর মধ্যে মাত্র তিনটি ভ্রূণ থেকে ইঁদুরের জন্ম হয়। তার মধ্যে বাঁচিয়ে রাখা গিয়েছিল দু’টিকে।

চিনের গবেষণাগারে দুই পুরুষ ইঁদুর থেকে জন্ম নেওয়া দু’টি প্রাপ্তবয়স্ক ইঁদুর। পিএনএএস জার্নালে প্রকাশিত ছবি।

এই দুই ইঁদুর প্রাপ্তবয়স্ক হলে অন্যান্য ইঁদুরের সংস্পর্শে আসে এবং যথাসময়ে তারা সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গবেষণাপত্রে তাঁরা লিখেছেন, ‘‘অ্যান্ড্রোজেনেসিস পদ্ধতিতে তৈরি ভ্রূণের বিকাশ আরও উন্নত করার চেষ্টা করছি আমরা। দু’টি শুক্রাণু কোষ থেকে প্রাপ্ত জেনেটিক উপাদান ব্যবহার করে আমরা প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রজননক্ষম ইঁদুর তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।’’ গোটা প্রক্রিয়ায় আরও উন্নতি প্রয়োজন, মেনে নিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। দুই পুরুষের শুক্রাণু থেকে নতুন ইঁদুর তৈরিতে সাফল্যের অনুপাত ২৫৯:৩ মাত্র।

কল্যাণীর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিক্যাল জিনোমিকস’-এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক পার্থপ্রতিম মজুমদার বলেন, ‘‘যে পদ্ধতিতে দুটি পুরুষ ইঁদুর থেকে নতুন ইঁদুর তৈরি করা হয়েছে, তা স্বাভাবিক পদ্ধতি নয়। দুটি পুরুষ ইঁদুরের থেকে শুক্রাণু নেওয়া হয়েছে। একটি মা ইঁদুরের ডিম্বাণু নেওয়া হয়েছে। সেই ডিম্বাণু থেকে বার করে নেওয়া হয়েছে নিউক্লিয়াস। সাধারণত যৌনজনন পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে ইমপ্রিন্টিং কন্ট্রোল রিজন। ক্রোমোজোমের মধ্যে এমন কিছু জিন থাকে, যেগুলি সমলিঙ্গে সন্তানধারণ আটকায়। চিনা বিজ্ঞানীরা এ ক্ষেত্রে সেই বিশেষ জিনগুলিকেই কোনও না কোনও ভাবে সরাতে সক্ষম হয়েছেন। এটা ওঁদের আবিষ্কৃত কোনও পদ্ধতি নয়। আগেই এই পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়েছে। চিনারা সেই পদ্ধতি খুব ভাল ভাবে রপ্ত করেছে। তার ফলও পেয়েছে।’’

নতুন ইঁদুর তৈরিতে শুধুই বাবার অবদান, মা ইঁদুরের কোনও ভূমিকা নেই? পার্থ বলেন, ‘‘সেটা বলা যাবে না। আমরা আমাদের কোষে মাইটোকন্ড্রিয়াগুলি স্বাভাবিক নিয়মেই মায়ের কাছ থেকে পেয়ে থাকি। এই মাইটোকন্ড্রিয়া কিন্তু নিউক্লিয়াসের বাইরে সাইটোপ্লাজমের মধ্যে থাকে। ওঁরা শুধু নিউক্লিয়াস সরিয়েছেন। সাইটোপ্লাজমে হাত দেননি। ফলে নতুন ইঁদুরেও মাইটোকন্ড্রিয়ার মাধ্যমে মায়ের অবদান থেকেই গিয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘তাতেও অবশ্য নতুন ইঁদুরের প্রজননক্ষম হওয়ার কথা নয়। এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু স্টেম সেল (স্টেম কোষ) প্রবেশ করানো হয়েছে। কী ভাবে প্রজননক্ষম ইঁদুর তৈরি হল, বিজ্ঞানটা ওঁদের কাছেও খুব স্পষ্ট নয়।’’

বিজ্ঞানীরা প্রায় সকলেই একমত, ইঁদুরে যা সম্ভব হয়েছে, তা ভবিষ্যতে মানুষের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যায় কি না, সেই ভাবনার সময় এখনও আসেনি। ইঁদুরের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া এখনও অত্যন্ত জটিল এবং কঠিন। অধিকাংশ প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে আপাতত এই পদ্ধতি ইঁদুরে আরও উন্নত করার দিকেই মন দিতে চান গবেষকেরা। গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ‘‘বর্তমানে এই পদ্ধতির সাফল্যের হার কম। তবে এই আবিষ্কারটি আগামী দিনে স্তন্যপায়ীদের মধ্যে অ্যান্ড্রোজেনেসিসে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে।’’

তবে অনেকেই মনে করছেন, দুই পুরুষ থেকে নতুন প্রাণ উৎপাদন সম্ভব হলে আগামী দিনে সমকামী যুগলদের জন্য তা খুশির খবর বয়ে আনবে। সে ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের হাত ধরে তাঁরাও সন্তানধারণের কথা ভাবতে পারবেন। কিন্তু এখনই সেই পর্যায়ের ভাবনাচিন্তায় নারাজ বিজ্ঞানীরা। পার্থ বলেন, ‘‘ইঁদুরের উপর যে পরীক্ষাটি করা হয়েছে, মানুষের উপর তা করতে দেওয়া হবে বলেই আমি মনে করি না। নীতিগত ভাবে তা সম্ভব নয়। সবথেকে বড় কথা হল, এই প্রক্রিয়া জটিল। এতে বিকৃত শিশুর জন্মের সম্ভাবনাও থেকে যায়। মানুষের ক্ষেত্রে আগামী ৫০ বছরেও এই পদ্ধতির প্রয়োগ আমি দেখতে পাচ্ছি না।’’ ইঁদুরে সাফল্য এলেও অ্যান্ড্রোজেনেসিস নিয়ে আপাতত ধীর গতিতে এগোতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা।



মৃতের রাজ্য থেকে ‘ফিরিয়ে আনা হল’ প্রাগৈতিহাসিক মানবীকে! কী কেরামতি দেখাল ডিএনএ প্রযুক্তি?

প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বছর আগে মেসোলিথিক যুগের বাসিন্দা ছিলেন ওই মানবী। সে সময় ব্রিটেনের সমারসট এলাকায় বসবাসকারী চেডারম্যানের সঙ্গে ডিএনএ-গত মিল রয়েছে তাঁর।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৫ ২০:২২

সাড়ে ১০ হাজার বছরের মানবীর মুখ ‘ফিরিয়ে’ আনলেন বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। ছবি: সংগৃহীত।

চোখের রং নীলচে-ধূসর। ত্বক হালকা বাদামি। মুখমণ্ডলে বয়সজনিত বলিরেখার আভাস। কপালে গভীর ভ্রূকুটি! বেলজিয়াম থেকে আবিষ্কার এক প্রাগৈতিহাসিক মানবীর দেহাবশেষের মুখ পুনর্গঠনের পরে এমনই ছবি প্রকাশ করেছেন সে দেশের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। আর তাতে উঠে এসেছে নানা অভিনব তথ্য।

ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকদল জানিয়েছে, ডিএনএ ম্যাপিং এবং ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে ওই প্রাগৈতিহাসিক মানবীর ছবি। প্রায় সাড়ে ১০ হাজার বছর আগে মেসোলিথিক (মধ্য-প্রস্তর) যুগের বাসিন্দা ছিলেন তিনি। সে সময় ব্রিটেনের সমারসট এলাকায় বসবাস ছিল চেডারম্যান জনগোষ্ঠীর। তাঁদের সঙ্গে ডিএনএ-গত মিল রয়েছে ওই নারীর। সাধারণ ভাবে, মেসোলিথিক যুগের অধিকাংশ মানুষের তুলনায় ওই নারীর চোখ বেশি নীলচে। ত্বকও কিছুটা ফর্সা। যেমনটা হত চেডারম্যানের।

আরও পড়ুন:

গবেষকদলের সদস্য ডি গ্রুথ মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-কে বলেছেন, ‘‘খুলির গঠন দেখে আমাদের অনুমান, ওই মহিলার বয়স ছিল ৬০ বছরের মধ্যে। চেডারম্যানের মতোই তিনিও ছিলেন উন্নতনাসা।’’ ১৯৮৮-৮৯ সালে ডিনান্টের মার্গাক্স গুহায় মেসোলিথিক যুগের একটি সমাধিস্থলের খোঁজ মিলেছিল। তাতে মোট আট জন নারীর দেহাবশেষ পাওয়া যায়। তার মধ্যেই ছিল ওই মহিলার দেহ। গ্রুথের মতে, বিষয়টি অস্বাভাবিক। কারণ সাধারণ ভাবে সে যুগে পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের জন্য একটি সমাধিক্ষেত্র ব্যবহারেরই রীতি ছিল। তা ছাড়া, দেহাবশেষগুলির বয়স পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, কয়েকশো বছর ধরে ওই গুহা-সমাধিক্ষেত্রটি ব্যবহার করা হত।

আরও পড়ুন:

সে যুগের ধর্মীয় রীতি মেনে দেহগুলিতে গিরিমাটি মাখানো হয়েছিল। গর্ত বোজাতে ব্যবহার করা হয়েছিল পাথর। সাধারণ ভাবে সে সময় ইউরোপে বসবাসকারী শিকারি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ওই মহিলার ডিএনএ-র সিকোয়েন্স মেলাতে গিয়ে গঠনের স্পষ্ট ফারাক ধরা পড়েছে ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের কাছে। যা নৃবিজ্ঞানীদের একাংশের দীর্ঘদিনের ধারণার বিপরীত। গবেষকদলের প্রত্নতত্ত্ববিদ ফিলিপ ক্রোম্বে বলেন, ‘‘এত দিন পর্যন্ত পশ্চিম ইউরোপে পাওয়া প্রাচীন দেহাবশেষগুলির ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে তাঁরা সকলেই একই জিনগত গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম ঘটেছে, যা বেশ আশ্চর্যজনক।’’



গুহামানবের কাল থেকেই ছারপোকা মানুষ ভালবাসে! নতুন গবেষণায় আড়াই লক্ষ বছরের পিছু নেওয়ার ইতিহাস

মানুষের সঙ্গে ছারপোকাদের প্রাচীন সম্পর্কের ইতিহাস নিয়ে আগেও বিস্তর গবেষণা হয়েছে। তবে জিন প্রযুক্তিগত পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, আজ থেকে প্রায় ২,৪৫,০০০ বছর আগে মানুষ যখন গুহাবাসী ছিল, তখন থেকেই মানুষের পিছু নিয়েছিল ছারপোকারা।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৫ ০৮:৫৮

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

দেখতে দেখতে সবই কি সত্যি সত্যি বদলে যায়? প্রেম পাল্টায় বটে। শরীরও পাল্টায়। তবে ছারপোকাদের জন্য নয়। সাম্প্রতিকতম গবেষণা বলছে, শুধু মানুষের প্রতিই ছারপোকাদের একনিষ্ঠ প্রেম টিকে রয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ বছর ধরে। আদিম প্রস্তর যুগের গুহামানবদের রক্ত-গন্ধ যে ‘নেশা’ ধরিয়েছিল, তার রেশ ছারপোকার দল বয়ে চলেছে আজও।

মানুষের সঙ্গে ছারপোকাদের প্রাচীন সম্পর্কের এই ইতিহাস নিয়ে আগেও বিস্তর গবেষণা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে, সেই সম্পর্ক আড়াই লক্ষ বছরের পুরনো। জিন প্রযুক্তিগত পরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, আজ থেকে প্রায় ২,৪৫,০০০ বছর আগে মানুষ যখন গুহাবাসী ছিল, তখন থেকেই মানুষের পিছু নিয়েছিল ছারপোকারা। তার আগে ছারপোকারা গুহায় থাকা বাদুড়দের রক্ত খেত। বাদুড়রাই ছিল তাদের খাদ্যের একমাত্র উৎস। তার পর এক দিন ছারপোকারা বাদুড়ের গুহাতেই থাকা নিয়ান্ডারথাল মানুষদের রক্তের স্বাদ পেয়ে যায়! সেই শুরু। তার পর থেকে ক্রমে ছারপোকারা দু’টি স্বতন্ত্র প্রজাতিতে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি প্রজাতি শুধু বাদুড়ের রক্ত ​​খেয়ে বেঁচে থাকে। অন্যটি শুধুই মানুষের রক্ত খায়।

সাম্প্রতিক এই গবেষণাটি ‘বায়োলজি লেটার্স’ নামে এক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, গুহাবাসী মানুষ যখন যাযাবরের জীবন যাপন করতে শুরু করেছিল, তখন থেকে ছারপোকারাও সংখ্যায় কমতে শুরু করে। তার পর এক সময় যাযাবর মানুষ বসতি স্থাপনের দিকে ঝোঁকে। তখনই ফের হুহু করে বংশবৃদ্ধি করতে শুরু করে ছারপোকারা। সেও আজ থেকে প্রায় ১৩,০০০ বছর আগের কথা! পরবর্তীতে ক্রমে ক্রমে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে একে একে সভ্যতা গড়ে তোলে মানুষ। শুরু হয় নগরায়ন। ব্যাস, সংখ্যায় আরও বাড়তে থাকে ছারপোকারা।

আরও পড়ুন:

ভার্জিনিয়া টেকের আর্বান এন্টোমোলজি বিভাগের অধ্যাপক ওয়ারেন বুথের কথায়, ‘‘বাগানে কিন্তু ছারপোকাদের দেখা মেলে না। কারণ, এরা বংশবিস্তারের জন্য সম্পূর্ণরূপে মানুষের উপর নির্ভরশীল।’’ এন্টোমোলজি হল জীববিদ্যার একটি শাখা, যেখানে মূলত কীটপতঙ্গ নিয়ে গবেষণা করা হয়। একই বিভাগের আর এক গবেষক লিন্ডসে মাইল্‌স বলেন, ‘‘অতীতে মানুষ যখনই বসতি গড়ে থিতু হয়েছে, তখনই উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়ে গিয়েছে ছারপোকাদের সংখ্যা। ছারপোকাদের জন্য এ যেন এক চুক্তির মতো!’’

ছারপোকার এই বিবর্তনের ইতিহাস জানা গিয়েছে ডিএনএ-র জিনোম বিশ্লেষণ করে। তবে এই গবেষণা শুধু মানুষ এবং ছারপোকাদের সম্পর্কই নয়, বরং সামগ্রিক ভাবে কীটপতঙ্গদের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের উপরেই আলোকপাত করতে সাহায্য করবে বলে মনে করছেন ভার্জিনিয়া টেকের বিজ্ঞানীরা। কারণ, সেই আদিমকাল থেকেই মানবসভ্যতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে থেকেছে এরাও। কখনও কখনও তার মাসুলও গুনতে হয়েছে মানুষকে। ঠিক যেমনটা হয়েছিল বিউবোনিক প্লেগের সময়, যখন ইঁদুরের ত্বকে থাকা সংক্রামিত খুদে পোকা থেকে মানুষের মধ্যেও এই রোগ ছড়িয়েছিল। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ গিয়েছিল সেই মারণরোগে। গবেষণাপত্রটির আর এক লেখক ব্রায়ান ভেরেলির কথায়, নতুন এই গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, জার্মান তেলাপোকা কিংবা কালো ইঁদুরদের থেকেও হাজার হাজার বছর আগে মানুষের সঙ্গে ছারপোকাদের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তবে পার্থক্য এটাই যে, ছারপোকারা কোনও রোগ ছড়ায়নি, মানুষের তেমন কোনও ক্ষতিও করেনি। ভেরেলি ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান সংক্রান্ত পরিসংখ্যানবিদ। তিনি বলেন, ‘‘এই গবেষণা থেকে প্রমাণ হয়, ছারপোকাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কতটা দীর্ঘ এবং দৃঢ় ছিল! এরা কিন্তু যে কোনও সময় মানুষকে ছেড়ে লাফিয়ে অন্য কোনও প্রাণীর শরীরে আশ্রয় নিতে পারত, কিন্তু তেমনটা তারা করেনি।’’

আরও পড়ুন:

জার্মানির টিউবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ক্লাউস রেনহার্ড-ও জানাচ্ছেন, আজ থেকে প্রায় ৪০,০০০ বছর আগে যখন আদিম মানুষ গুহাজীবন ছেড়ে যাযাবরের জীবন বেছে নেয়, সে সময় সত্যিই ভয়ানক এক জিনগত বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছিল ছারপোকাদের। সে সময় ছারপোকাদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গিয়েছিল। এর অবশ্যম্ভাবী ফল ছিল আন্তঃপ্রজনন, অর্থাৎ জিনগত ভাবে সম্পর্কিত দুই প্রাণীর প্রজনন। তাতে ছারপোকাদের জিনগত বৈচিত্র্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আদতে দেখা যায়, এতে ছারপোকাদের বিশেষ ক্ষতি হয়নি! শুধু তা-ই নয়, ছারপোকাদের আরও নানা ভাল দিক উল্লেখ করেছেন রেনহার্ড। তিনি বলেন, ‘‘ছারপোকারা খাবার না খেয়ে এক বছরেরও বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে। একটি গর্ভবতী স্ত্রী ছারপোকাকে বাক্সবন্দি করে রাখলেও সে মাত্র ছ’মাসে ৩০,০০০-এরও বেশি সন্তান উৎপাদন করতে পারে, যার প্রত্যেকটিই জিনগতভাবে সম্পর্কিত! এমনকি, এরা এতই ভাল যে, রক্ত খাওয়ার আগে তারা মানুষের ত্বককে অসাড় করার জন্য এক প্রকার তঞ্চনরোধক প্রবেশ করিয়ে দেয়, যাতে ব্যথা না লাগে!’’

ভারত, পাকিস্তান থেকে আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইজ়রায়েল, ইরান... ছারপোকাদের বাস সর্বত্র। আমেরিকায় ছারপোকা নিয়ে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটিয়া মামলা-মোকদ্দমা পর্যন্ত চলে। ছারপোকা সংক্রান্ত আইনও রয়েছে নিউ ইয়র্কে। তবে যত যা-ই হোক, ছারপোকাদের মতো নাছোড়বান্দা প্রেমিকের হাত থেকে মানুষের মুক্তি নেই। আড়াই লক্ষ বছরের সম্পর্ক বলে কথা!



সাপেরও টিমওয়ার্ক আছে! হ্যাঁ, বিজ্ঞানীরাও হতভম্ব!

দীর্ঘদিন ধরে সাপকে আমরা এমন এক শিকারি প্রাণী হিসেবেই জেনে এসেছি, যারা একা থাকে, একা চলাফেরা করে এবং একাই শিকার ধরে। সরীসৃপবিদ্যা ও অ্যানিমাল বিহেভিয়ারে সাপকে সাধারণত সলিটারি প্রেডেটর বা একাকী শিকারি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। তাদের জীবনধারা, শিকারের কৌশল এবং স্নায়ুতন্ত্রের গঠন সব মিলিয়ে বিজ্ঞানীরা এতদিন ধরে বিশ্বাস করে এসেছেন যে সাপেদের মধ্যে সহযোগিতামূলক বা দলবদ্ধ শিকারের মতো জটিল আচরণ নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক একটি বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ এই ধারণাকে মৌলিকভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে অন্তত একটি সাপ প্রজাতি আছে যারা প্রয়োজন হলে একা নয়, বরং দলবদ্ধভাবে, পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে শিকার করে। এই সাপটি হলো কিউবান বোয়া, যার বৈজ্ঞানিক নাম Chilabothrus angulifer। এটি কিউবার স্থানীয় একটি নির্বিষ বোয়া প্রজাতি, যা বনাঞ্চল, পাহাড়ি এলাকা এবং বিশেষভাবে চুনাপাথরের গুহা অঞ্চলে বসবাস করে। এই চুনাপাথরের গুহাগুলোয় আবার বিশাল বাদুড় কলোনির আবাস, যা কিউবান বোয়ার প্রধান খাদ্য উৎসগুলোর একটি।

কিউবার অনেক গুহায় হাজার হাজার বাদুড় (Fruit bats) একসঙ্গে বাস করে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ও ভোরের সময় এই বাদুড়েরা দল বেঁধে গুহা থেকে বের হয় এবং আবার ফিরে আসে। এই সময়টিই শিকারির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন, ঠিক এই সময়েই একাধিক কিউবান বোয়া গুহার মুখে উপস্থিত হয়। প্রথম নজরে এটি স্বাভাবিক বলে মনে হতে পারে, কারণ যেখানে শিকার প্রচুর, সেখানে একাধিক শিকারির একত্রিত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু দীর্ঘ ও সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণে বোঝা যায়, এই সহাবস্থান মোটেই কাকতালীয় নয়। সাপগুলো গুহার মুখে এলোমেলোভাবে অবস্থান নেয় না, বরং তারা নিজেদের শরীর এমনভাবে স্থাপন করে যে গুহার প্রবেশপথ কার্যত একটি ব্যারিকেডে পরিণত হয়। প্রতিটি সাপ অন্য সাপের অবস্থান বিবেচনা করে নিজের জায়গা বেছে নেয়, যাতে বাদুড়দের উড়ানের পথ সর্বাধিকভাবে সংকুচিত করা যায়। ফলে গুহা থেকে বের হওয়ার সময় বাদুড়েরা স্বাভাবিক গতি ও দিক বজায় রাখতে পারে না। এই বিভ্রান্ত ও বাধাগ্রস্ত অবস্থাতেই তারা সাপেদের সহজ শিকারে পরিণত হয়। এখানে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, প্রতিটি সাপ কেবল নিজের সুবিধার জন্য কাজ করছে না! বরং পুরো শিকার প্রক্রিয়াটি এমনভাবে সংগঠিত হয় যে একাধিক সাপের সম্মিলিত উপস্থিতিতে শিকার ধরার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়। এই আচরণকে প্রাণীবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় cooperative hunting বা সমবায়ী শিকার। এর অর্থ হলো, একাধিক শিকারি পরস্পরের অবস্থান ও ভূমিকা বিবেচনা করে এমনভাবে কাজ করে, যাতে প্রত্যেকের শিকারের সাফল্য বৃদ্ধি পায়। সাধারণত cooperative hunting স্তন্যপায়ী প্রাণী ,কিছু মাছ,বা কিছু পাখির মধ্যে দেখা যায়, যেমন নেকড়ে, সিংহ, হায়না কিংবা ডলফিন, পেঙ্গুইন, ঈগল। সাপের মতো সরীসৃপের মধ্যে এমন আচরণ প্রায় অজানা ছিল। এই কারণেই কিউবান বোয়ার এই আচরণ বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রমাণ করে যে সাপদের আচরণগত ক্ষমতা আমাদের পূর্বধারণার তুলনায় অনেক বেশি জটিল।

গবেষকদের মতে, এই আচরণ কোনো সামাজিক বন্ধন বা পারিবারিক সম্পর্কের ফল নয়। কিউবান বোয়ারা সামাজিক প্রাণী নয় এবং তাদের মধ্যে স্থায়ী দল গঠনের প্রমাণও নেই। এটি মূলত পরিবেশগত বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার একটি কৌশল। যেখানে শিকার প্রচুর এবং শিকার ধরার জন্য একাধিক সাপের উপস্থিতি কার্যকর, সেখানে তারা সহাবস্থান ও সমন্বয় মেনে নেয়। অর্থাৎ এটি সামাজিকতা নয়, বরং টিকে থাকার জন্য গড়ে ওঠা একটি আচরণগত অভিযোজন। এই পর্যবেক্ষণ থেকে বোঝা যায় যে সাপের আচরণগত ক্ষমতা আমরা এতদিন যতটা সরল ভেবেছি, বাস্তবে তা ততটা সীমাবদ্ধ নয়। সাপের মস্তিষ্ক তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও তারা পরিবেশ থেকে তথ্য নিতে পারে, অন্য সাপের উপস্থিতি বুঝতে পারে এবং সেই অনুযায়ী নিজের আচরণ সামঞ্জস্য করতে পারে।

এই আবিষ্কারের গুরুত্ব অত্যন্ত গভীর। প্রথমত, এটি সাপ সম্পর্কে আমাদের দীর্ঘদিনের ধারণাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়। দ্বিতীয়ত, এটি প্রমাণ করে যে সরীসৃপদের আচরণগত বৈচিত্র্য এখনও পুরোপুরি অনাবিষ্কৃত। তৃতীয়ত, এটি প্রাণী আচরণ বিবর্তনের দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দেখায় যে সহযোগিতামূলক শিকার কেবল স্তন্যপায়ী বা উচ্চবুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়! সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই গবেষণা আমাদের শেখায় প্রকৃতি সম্পর্কে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হওয়া বিপজ্জনক। যে প্রাণীকে আমরা সহজ, নিম্নস্তরের বা বুদ্ধিহীন প্রাণী বলে ভাবি, প্রকৃতি বারবার প্রমাণ করে দেয় যে বাস্তবতা অনেক বেশি জটিল। কিউবান বোয়া এই আচরণের মাধ্যমে আমাদের জ্ঞানের সীমাকে চ্যালেঞ্জ করছে।

এই কারণে কিউবান বোয়া আজ শুধু একটি সাপ নয়, বরং Ethology তে একটি মাইলফলক। সত্যি বলতে, প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণীর মধ্যেই এমন কিছু গল্প লুকিয়ে আছে, যা আমরা এখনো পুরোপুরি শুনে উঠতে পারিনি।

AditiPrakritikannya


শীতে ব্যাঙ বরফ হয়ে যায়… গলে আবার জীবিত! এটা কি কোনো জাদু নাকি আসল বিজ্ঞান?

ভাবুন তো—

হৃদস্পন্দন নেই

শ্বাস বন্ধ

শরীর পুরো বরফ

চোখ পাথরের মতো শক্ত

ডাক্তার দেখলে বলবেন: “১০০% ডেড”

কিন্তু বসন্তের উষ্ণ রোদে…

বরফ গলে

হঠাৎ নড়ে উঠে

আবার লাফ দেয়!

না, এটা কোনো রূপকথা না।

এটাই বাস্তব বিজ্ঞান!

কোন ব্যাঙের এমন সুপারপাওয়ার?

সব ব্যাঙ নয়, বিশেষ করে এক প্রজাতি—

Wood Frog (কাঠ ব্যাঙ)

এরা থাকে উত্তর আমেরিকার প্রচণ্ড ঠান্ডা এলাকায়, যেখানে শীতকালে তাপমাত্রা যায় -২০° সেলসিয়াসেরও নিচে!

এত ঠান্ডায় যেখানে মানুষ, গরু বা মানুষ তো দূরের কথা—মশাও টিকে না…

সেখানে এরা করে দেখায় এক অবিশ্বাস্য কাণ্ড!

কীভাবে ব্যাঙ “বরফ” হয়ে বেঁচে থাকে?

এখন শুরু হচ্ছে আসল মজা

১. ব্যাঙের শরীরে ঢুকে যায় “চিনি”

শীত আসার আগেই ব্যাঙের লিভার থেকে গ্লুকোজ (চিনি) তৈরি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে পুরো শরীরে।

চিনি কাজ করে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ফ্রিজ হিসেবে!

যেমন আমরা গাড়িতে অ্যন্টি-ফ্রিজ দেই—ব্যাঙ দেয় নিজের শরীরে

২. শরীরের ৬৫-৭০% পর্যন্ত পানি বরফ!

ব্যাঙের—

রক্ত জমে যায়

চোখে বরফ ধরে

শরীর শক্ত কংক্রিট

কিন্তু চিনি কোষগুলোকে ফাটতে দেয় না।

৩. হার্ট বন্ধ, শ্বাস বন্ধ—তবু সমস্যা নেই!

শীতকালে:

হৃদস্পন্দন = ০

শ্বাস = ০

ব্যাঙ তখন থাকে এক প্রকার “লাইভ স্ট্যাটু মোডে”

(পুরো ডেড নয়, আবার পুরো লাইভও না!)

বসন্তে কী হয়?

বসন্তের রোদ পড়তেই—

বরফ গলতে শুরু করে

হৃদপিণ্ড আবার কাঁপে

ফুসফুস শ্বাস নেয়

ব্যাঙ উঠে দাঁড়িয়ে ভাবে:

“আচ্ছা, এবার বিয়ে করার সময়!”

এই ব্যাঙরা গলে ওঠার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই—

হাঁটে

খাবার খায়

এমনকি প্রজননের কাজও শুরু করে!

মানুষ কেন এটা করতে পারে না?

মানুষ চেষ্টা করলে কী হবে জানেন?

কোষ ফেটে যাবে

ব্লাড ভেসেল নষ্ট

ব্রেন ড্যামেজ

কিন্তু ব্যাঙের শরীর কৌশলে প্রোগ্রাম করা—

যেন একেবারে Nature-made Cryogenic Technology!

বিজ্ঞানীরা কেন ব্যাঙ নিয়ে এক্সাইটেড?

এই ব্যাঙের ক্ষমতা দেখে বিজ্ঞানীরা ভাবছেন—

মানুষের অঙ্গ (হার্ট, কিডনি) আরও দীর্ঘদিন ফ্রিজে রাখা

দুর্ঘটনায় মানুষকে “ফ্রিজ মোডে” রেখে বাঁচানো

ভবিষ্যতে স্পেস ট্রাভেল

মানে,

ব্যাঙ = ভবিষ্যতের চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষক!

মজার কিছু ফ্যাক্ট

ব্যাঙ বরফে থাকাকালীন টয়লেটেও যেতে পারে না

রাস্তায় পড়ে থাকলে মানুষ ভাবতে পারে—“মরে গেছে”

গলে উঠেই প্রেমের গান শুরু!

শেষ কথা-

আমরা ভাবি—

“ব্যাঙ তো ছোট, দুর্বল প্রাণী!”

কিন্তু প্রকৃতি বলে—

“ওরা ছোট, কিন্তু অসম্ভব স্মার্ট!”

পরের বার শীতে কোনো ব্যাঙ দেখলে মনে রাখবেন—

ওটা হয়তো ঘুমাচ্ছে না…

ওটা হয়তো পুরো বরফ হয়ে সুপারহিরোর মতো বেঁচে আছে!

====


প্রাচীন গ্রীসে একসময় তৈরি হয়েছিল এমন একটি যন্ত্র, যার কথা শুনলেই শরীর শিউরে ওঠে। এটার নাম ব্র্যাজেন বুল (Brazen Bull)। দেখতে ছিল একদম ধাতুর তৈরি বিশাল ষাঁড়ের মতো। ভেতরটা ফাঁপা, পাশের দিকে একটি দরজা।

নির্মাতা ছিলেন একজন দক্ষ ব্রোঞ্জ কর্মী, পেরিল্লোস। তিনি এমনভাবে ভেতরে নল আর চোঙের ব্যবস্থা করেছিলেন, যাতে ভেতরে থাকা মানুষের আর্তনাদ বাইরে বেরিয়ে আসে এক ক্ষুব্ধ ষাঁড়ের গর্জনের মতো।

ভেতরে কাউকে ঢুকিয়ে এরপর বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেওয়া হতো। তারপর মূর্তির নিচে আগুন ধরানো হতো। ব্রোঞ্জের শরীর ধীরে ধীরে গরম হতে হতে ভয়ংকর লাল হয়ে উঠত। ভিতরের মানুষ পু*ড়ে যেতে থাকত; তাপে, দমবন্ধ হয়ে, মৃত্যুর দিকে অসহায়ভাবে এগোতে থাকত।

পেরিল্লোস ভেবেছিলেন, তার এই সৃষ্টি দেখে শাসক ফ্যালারিস বোধহয় খুশি হবেন। কিন্তু নিষ্ঠুর ফ্যালারিসের মনে ছিল অন্য পরিকল্পনা। তিনি পেরিল্লোসকে বললেন, “তুমি নিজেই ভেতরে ঢুকে দেখাও, কীভাবে শব্দ বের হয়।” পেরিল্লোস ভেতরে ঢুকতেই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হলো। তারপর জ্বলে উঠল আগুন। আর এভাবেই নিজের বানানো ভয়ংকর যন্ত্রের প্রথম শিকার হলেন তিনিই

===

আনন্দ ও ‍ মুসলমান গৃহ

কাজী মোতাহার হোসেন

“মুসলমান গান গাইবে না, ছবি আঁকবে না, এককথায় মনোরঞ্জনকর ললিতকলার কোনো সংশ্রবেই থাকবে না। মুসলমান পুরুষেরা কেবল কাজ করবে, আর ঘর শাসন করবে; মেয়েরা কেবল রাঁধবে, বাড়বে, আর বসে বসে স্বামীর পা টিপে দিবে;- তা’ছাড়া খেলাধুলা, হাসি-তামাসা বা কোনও প্রকার আনন্দ তারা করবে না। সবসময় আদব-কায়দা নিয়ে দুরস্ত হয়ে থাকবে।

আনন্দ? কোথায় আনন্দ? কী হবে আনন্দে? মুসলমান তো বেঁচে থাকতে আনন্দ করে না, সে মরে গিয়ে বেহেশতে প্রবেশ করে পেট ভরে খাবে, আর হুরপরীদের নিয়ে অনন্তকাল ধরে আনন্দ করবে। ব্যস! এই তার সান্ত্বনা!

গৃহে যখন আমাদের থাকতেই হবে, তখন আমরা এর সংস্কারে লেগে যাই না কেন? সমাজকে যখন আমরা বাদ দিতে পারি না, তখন একে সরস শোভন এবং আনন্দময় করেই গড়ে তুলি না কেন?”

উৎস:  প্রবন্ধ “আনন্দ ও মুসলমান গৃহ” , কাজী মোতাহার হোসেন।