দরকার শারীরিক পরিশ্রম

জমানো টাকা ভালো বিছানা দেয়; কিন্তু ভালো ঘুম তো দিতে পারে না। তেমনিভাবে স্বাস্থ্য বীমা চিকিৎসা সেবা দিতে পারে; কিন্তু সুস্বাস্থ্য দিতে পারে কি? ভালো দামী খাবার স্বাদ দেয়; কিন্তু হজমশক্তি তো আর দেয় না। এই হজম শক্তি বলুন বা সুস্বাস্থ্য কিংবা নিরবিচ্ছিন্ন ঘুম ;  এর সবগুলির জন্য দরকার শারীরিক পরিশ্রম, মোটা টাকা নয়। আপনার ব্যাংক ব্যালেন্স যতই বাড়ুক তা কিন্তু শারীরিক পরিশ্রমের বিকল্প হতে পারবে না। সুতরাং শুয়ে বসে নয়, খেটে খেতে হবে।


মানুষ যখন শারিরীক শ্রম দিয়ে কাজ করে সেটাকে বলা হর লেবার। কিন্তু শ্রমটা যদি হয় মাথার, সেটা হয়ে যায় বলে স্কিল।  কিন্তু শ্রম বাদ দিয়ে যেমন স্কিল নয়, তেমনি স্কিল বাদ দিয়েও শ্রম নয়। দুটোতেই ব্যালেন্স রাখতে হয়।


ব্যর্থ সমাজে মেধাবীরা ব্যর্থ হয় না, তাকে ব্যর্থ বানানো হয়।

ব্যর্থ সমাজের প্রকৃতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে- রাশিয়ান লেখক আন্তন চেখভ বলেন--

ব্যর্থ সমাজে মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানে জেগে ওঠে না। সে জেগে ওঠে শ্লোগানে। এখানে- পাঠাগার কম থাকে। উপসানালয় বেশী থাকে। যে উপাসনালয়গুলো আবার সপ্তাহের ছয়দিনই খালি পড়ে থাকে। ব্যর্থ সমাজে প্রতিটি চিন্তাশীল মানুষের বিপরীতে হাজার হাজার বোকা থাকে এবং প্রতিটি জ্ঞানীর বিপরীতে থাকে হাজার হাজার পচনশীল মনগড়া ব্যাখ্যা থাকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হয় সর্বদা নির্বোধ। সমাজের অতি তুচ্ছ বিষয়গুলি নিয়ে মানুষ আলোচনায় মেতে থাকে। মূল সমস্যাগুলো হারিয়ে যায়। সমস্যা সমাধানের চেয়ে একে অন্যের উপর প্রতিনিয়ত দোষ চাপাতে থাকে।

অর্থহীন গান ও সস্তা বিনোদনের পিছনে লক্ষ লক্ষ মানুষ ছুটে। ফলে, সস্তা মানুষজন প্রচুর জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং সমগ্র সমাজ-দেশ রুচির দুর্ভিক্ষে ভোগে। রাজনৈতিক নেতাদের দেবতার মতো করে পূজা-অর্চনা করা হয়। আর এক দলের দেবতাকে অন্য দল সহ্য করতে পারে না। ক্ষমতাসীনরা যে-কোনো একটা খেলা দিয়ে মানুষকে দিনের পর দিন নেশাগ্রস্থ করে রাখে।

চিন্তাশীল মানুষদের কেউ মূল্য দেয় না। অধিকাংশ মানুষ আজেবাজে কথা আর টাকা টাকা করে সময় পার করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ অজ্ঞরা এখানে জ্ঞানীদের ভাগ্য নির্ধারণ করে। -সংগৃহীত

======

 আসলে নিজে কাচের ঘরে থাকিয়া অন্যের কাচের ঘরের দিকে ঢিল ছুড়িবার হুমকির কোনো অর্থ হয় না।

======

দার্শনিক সক্রেটিসের অমর উক্তি হইল—নো দাইসেলফ, অর্থাৎ নিজেকে জানো। নিজেকে জানিবার মাধ্যমেই জীবন ও জগৎ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন সম্ভব। ইহার মাধ্যমে মানুষ হইতে পারে বিনয়ী, সৎ, সাহসী ও স্বল্পভাষী। ইহার মাধ্যমে দম্ভ ও অহংকারকে চূর্ণ করিয়া আস্তে কথা বলা রপ্ত করিতে পারে মানুষ। 

এই উপমহাদেশে সাতচল্লিশের দেশভাগের পর কবি অন্নদাশঙ্কর রায় ক্ষোভ প্রকাশ করিয়া লিখিয়াছিলেন, ‘তেলের শিশি ভাঙল বলে/ খুকুর পরে রাগ করো/ তোমরা যেসব বুড়ো খোকা/ ভারত ভেঙে ভাগ করো!/ তার বেলা?’ 

=======

দার্শনিক প্লেটো বলিয়াছিলেন, সেই রাজনীতিতে অংশগ্রহণ কষ্টদায়ক, যেই রাজনীতি নিম্নবর্গের মানুষের হাতে চলিয়া যায়। অবস্থাদৃষ্টে এই অনুভূতি বাংলাদেশের সচেতন মহলে সৃষ্টি হওয়া দোষের কিছু নহে। 

============

খাই, খাই

 ‘খিদে’ নামের একটি ছড়া লিখেছিলেন লুত্ফর রহমান রিটন। ছড়াটি শুরু হয়েছে এভাবে, ‘আবদুল হাই/ করে খাই খাই/ এক্ষুণি খেয়ে বলে/ কিছু খাই নাই।’

আমরা বাঙালিরা সব খাই। জল খাই, ঘুষ খাই, মদ খাই, গাঁজা খাই। এমনকি হুংকার ছাড়ি: খাইছি তোরে!  বাঙালিরা চা খাই, কফি খাই, শরবত খাই। আর, হ্যাঁ, যেটা ভাবছেন, সেই শরাবও খাই। কেবল তরল পদার্থ? বাঙালি সিগারেট খায়, বিড়ি খায়, চুরুট খায়। দুর্বল পেটরোগা মানুষ, যার কোনো কিছু খেলে হজম হয় না, সেও কিন্তু ‘গ্যাস খায়’।

এই বাঙালি পরের মুখে ‘ঝাল খাবে’, মাস্টারের কাছে ‘কানমলা খাবে’, বন্ধুদের কাছে ‘ফাঁপর খাবে’, ভয়ে ‘থতমত খাবে’, এতে আর আশ্চর্য কী ? এই বাঙালি ভুল করলে ‘বকা খাবে’ না, আর ভালোবেসে ‘চুমু খাবে’ না? ছেঁড়া চটি পরে ‘হোঁচট খাবে’ না? অতঃপর তারা যদি আয়েস করে পায়েস খায়, আর মাঠে গিয়ে ‘হাওয়া খায়’, কাজ করতে ‘হিমশিম খায়’, আর পা পিছলে ‘আছাড় খায়’, এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু আছে কি?খাপে খাপে ‘খাপ খাওয়া’, তেলে জলে ‘মিশ খাওয়া’, ‘মাল খেয়ে’ ‘টাল খাওয়া’, বোকা বনে ‘ধোঁকা খাওয়া’, খাওয়া নিয়ে একেবারে ‘ঘোল খাওয়া’র ব্যবস্থা!

=============


বন্ধুত্বপূর্ণ জীবন

অ্যারিস্টটল বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সমাজে বাস করে না সে হয় দেবতা, না হয় পশু।’ মূলত সমাজে বাস করার ফলে রক্তের সম্পর্কের বাইরেও মানুষ গড়ে তোলে পারস্পরিক বিশ্বাস, আস্থা ও নির্ভরতার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ‘বন্ধু’ শব্দটার মধ্যেই মিশে আছে ক্ষণিকের জীবনে পরমের সান্নিধ্য। সচরাচর বন্ধু বলতে রক্তের বাইরের সম্পর্কের সমবয়সি মানুষের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক বোঝায়, যার সঙ্গে ব্যক্তিগত সবকিছুই ভাগ করা যায়। তবে সময় বদলেছে; সেই সঙ্গে বদলেছে বন্ধুত্বের ধারণা। শুধু সমবয়সি নয়, বয়সে বড় কিংবা ছোট কেউও বন্ধু হতে পারে। বাবা-মায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক না হলে যেমন সন্তানের জীবন অপূর্ণ রয়ে যায়, তেমনিভাবে শিক্ষকের সঙ্গে সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ না হলেও অসম্পূর্ণ রয়ে যায় ‘জীবনের শিক্ষা’।

=======

সুস্থ শরীরের জন্য যেমন সুষম খাদ্য জরুরি, তেমনি প্রফুল্ল মন ও মেধা বিকাশের জন্য প্রয়োজন সুস্থ বিনোদন। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে চিত্তবিনোদন একটি।

=== ==

নির্মম সত্য হইল—কেহ চিরকাল ক্ষমতা ধরিয়া রাখিতে পারে নাই। হয়তো কেহ দশ, বিশ, ত্রিশ, চল্লিশ বৎসর ক্ষমতার আসমানে অবস্থান করিতে পারে—ইহা একেক দেশে একেক রকম—কিন্তু শেষ ফলাফল হইল ক্ষমতার আসমান হইতে তাহাকে একদিন জমিনে নামিয়া আসিতেই হইবে। এবং আরও একধাপ বাড়াইয়া বলা যায়—সকলকেই অন্ধকার মাটির ঘরে পাকাপাকি প্রবেশ করিতে হইবে। পৃথিবীর অনেক দেশেই দেখা গিয়াছে, বিপুল ক্ষমতাধরদের পতনের কিছু বৎসর পর তাহাদের এপিটাফে প্রদীপ দেওয়ার মতোও কেহ থাকে না।

=========

বাংলায় একটি প্রবাদ রহিয়াছে—‘সুসময়ে অনেকেই বন্ধু বটে হয়, অসময়ে হায় হায় কেহ কারো নয়।’ এই জন্য আমরা দেখিতে পাই—প্রকৃতিতে যখন ফুলের মেলা বসে, গাছে গাছে যখন সবুজ পাতার ছড়াছড়ি হয় তখনই প্রজাপতির মেলা বসে। মৌমাছি ব্যস্ত হয় মৌ সংগ্রহে। শীতের শীর্ণ গাছে কোকিল বসিতে দেখা যায় না। কিন্তু বসন্তে গাছে গাছে যখন গজাইয়া উঠে নূতন কুঁড়ি আর হরিত পত্র—বসন্তের কোকিল তখন কুহুকুহু রবে মাতোয়ারা করিয়া তোলে সারা এলাকা। যুগে যুগে বসন্তের কোকিলেরা এইভাবে সুসময়ে আসিয়া সমস্ত চরাচরে তাহাদের কণ্ঠের দাপটে রাষ্ট্র করিয়া দেয়—

========

গ্রীষ্মকালে সম্পর্ক ভাঙে বেশি

ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে ফেসবুক এক অভিনব সমীক্ষা চালিয়েছে। এই সমীক্ষার ফল স্বরূপ উঠে এসেছে বেশ কিছু মজার মজার তথ্য।

ফেসবুকের ভ্যালেন্টাইন রিসার্চ বলছে আমেরিকার ৫০টি বড় বড় শহরের মধ্যে সানফ্রান্সিকোর লোকজনের প্রেমে পড়ার চান্স সবচাইতে কম। সান ফ্রান্সিকোর এমন একটা শহর যেখানে সিনগল পুরুষের সংখ্যা সিংগল মহিলাদের থেকে অনেক বেশি। অন্যদিকে ম্যামফিসে সিনগল মহিলারা সংখ্যার বিচারে হেলায় হারিয়েছেন সিনগল পুরুষদের।

এই রিসার্চে উঠে এসেছে প্রেমের মাধ্যম হিসাবে যারা ফেসবুককে ব্যবহার করেন অর্থাৎ ফেসবুকেই সে সম্পর্ক গুলো গড়ে ওঠে তার অন্তত অর্ধেক ক্ষেত্রে সেই সম্পর্ক যদি তিনমাস টিকে যায় তাহলে অন্তত চার বছর আয়ু হয় সেই সম্পর্কের।

এই রিপোর্ট অনুযায়ী গ্রীষ্মের প্রখর তাপে প্রেমও বোধহয় পুড়ে যায় বেশি করে। কারণ ফেসবুক বলছে মে থেকে জুলাই-এর মধ্যে ব্রেকআপ হয় সর্বাধিক।

===========

মহামতি হেলেন কেলার বলিয়াছেন, ‘শিক্ষার চূড়ান্ত ফল হইল সহনশীলতা’। দুঃখজনকভাবে বলিতে হয়, আজকের সমাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অসহনশীলতার ছড়াছড়ি! অর্থাৎ, প্রশ্ন রহিয়া যায়, আমরা প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করিতেছি কি না।

============

গ্রেট অটোম্যান সুলতান সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট ষোড়শ শতাব্দীতে বলিয়াছিলেন, ‘মহান আল্লাহ ভিন্নতা পছন্দ করেন। তাহা না হইলে এক রঙের ফুলই সৃষ্টি করিতেন; দেখা যাইত সকল জায়গায় একই রঙের পাখি, একই রঙের মানুষ; কিন্তু আমরা একেক জন একেক রকম। কারণ, বিচিত্রতাই সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য।’ সুতরাং আমাদের চারিদিকে ভিন্নতা থাকিবে—ইহাই স্বাভাবিক;

===============

বাস্তবে এখনো অনেক বিখ্যাত, সফল, ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী মানুষ আছেন, যারা ঠিক এর বিপরীতটি করেন। মানে, কথা বলেন কম। বেশি কথা বলা তো দূরে থাক, অতীব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মুখ খোলেন না। মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের বদলে তারা মনুষ্যদৃষ্টি এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন। নীরবে নিঃশব্দে মানুষের, সমাজ ও পৃথিবীর কল্যাণে কাজ করে যান।বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনও ছিলেন একদম কম কথা বলা অন্তর্মুখী মানুষ, যিনি প্রয়োজনেও কথা না বলে নীরবতাকে ভালোবেসে নির্জন নিস্তব্ধতাকে ব্রত বলে গ্রহণ করেছিলেন অন্তর থেকে।নিজের সীমানা না জানিলে মানুষ পদে পদে ভুল করে। পৃথিবীতে এমন কোনো বড় অপরাধী নাই, যিনি মেধাবী নহেন।

============

সংস্কৃতি দুই প্রকার, বস্তুগত সংস্কৃতি ও অবস্তুগত সংস্কৃতি। বস্তুগত সংস্কৃতি হচ্ছে—মানুষের অর্জিত বা তৈরিকৃত দ্রব্যের সমষ্টি। যে সংস্কৃতি দেখা যায়, ছোঁয়া যায়, তা-ই বস্তুগত সংস্কৃতি। বস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যে রয়েছে নাগরিকের চলাফেরার ধরন, আচরণবিধি, পোশাক-পরিচ্ছদ, বিভিন্ন আসবাবপত্র, ঘরবাড়ি, দালানকোঠা এবং বিভিন্ন উত্পাদন কৌশল ও হাতিয়ার হলো বস্তুগত সংস্কৃতির উপকরণ।অবস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যে রয়েছে সাহিত্য, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, জ্ঞান, শিল্পকলা, সংগীত, মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও আইন। সমাজ, রাষ্ট্র ও জাতি পরিবর্তন করতে অবস্তুগত সংস্কৃতিকে সমাজ সংস্করণের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে ধরা 

====================

ইয়ামানাকা ফ্যাক্টরস

কয়েক বৎসর পূর্বে ‘নেচার’ নামের বিজ্ঞান সাময়িকীতে এক গবেষণায় বলা হইয়াছে যে, স্তন্যপায়ী প্রাণী অবশ্যই বৃদ্ধ হইবে; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ড. সিনক্লেয়ার ইতিপূর্বেই দাবি করিয়াছেন যে, বৃদ্ধ হওয়াটা একটি রোগ। ইহার চিকিৎসা করা যায়, বৃদ্ধ হওয়াটা বিলম্বিত করা যায়। এমনকি বন্ধও করা যায়! এই ব্যাপারে সিনক্লেয়ার ব্যাখ্যা দিয়াছিলেন যে, ২০০ বৎসর পূর্বে একজন মানুষ সবচাইতে দ্রুত ভ্রমণ করিতে পারিত একটি ঘোড়া যত জোরে ছুটিতে পারে সেই গতিতে। এখন নূতন প্রযুক্তি বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাইয়াছে। সেই পরিবর্তনের হাওয়া লাগিয়াছে জীববিজ্ঞানেও। সিনক্লেয়ার মনে করেন, রোগব্যাধি হঠাৎ করিয়া হয় না। ইহা শরীরের ভিতর বাসা বাঁধে। ধীরে ধীরে তাহার উপসর্গ, লক্ষণ প্রকাশ পায়। মৃত্যুও আসে সময়ের পথ পাড়ি দিয়া। বৃদ্ধ হইবার প্রক্রিয়াটিও একই রকম। সিনক্লেয়ার দাবি করিয়াছেন যে, তাহারা প্রমাণ করিয়াছেন—এই রোগও সারানো যায়, প্রতিহত করা যায়, কিংবা ইহার প্রকাশ বিলম্বিত করা যায়। তাহারা অবশেষে তিনটি জিনের সন্ধান পাইয়াছেন—যেইগুলিকে বলে ইয়ামানাকা ফ্যাক্টরস। এই জিনগুলি কোষের পরিচয় বদলায় না; কিন্তু বৃদ্ধ হওয়া আটকাইয়া দেয়। ইতিপূর্বে তাহারা ইঁদুরের উপর পরীক্ষা চালাইয়াছেন, ইঁদুরগুলির চোখের স্নায়ু নষ্ট হইয়া গিয়াছিল। ড. সিনক্লেয়ারের দল ঐ ইঁদুরের চোখের স্নায়ুতে প্রাণ ফিরাইয়া তাহাদের দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার করিয়াছেন বলিয়া দাবি করিয়াছেন।

বিজ্ঞানের যতগুলি শাখা রহিয়াছে, তাহার মধ্যে চিকিৎসাবিজ্ঞান সবচাইতে কম বিকশিত।

======


ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স’  

আমরা এমন একটি সমাজে বসবাস করছি, যেখানে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ হীনম্মন্যতায় ভুগছে, যার একটি বড় অংশ তরুণ প্রজন্ম। হীনম্মন্যতা এমন এক ধরনের মানসিক সমস্যা, যা নিজের ভালো দিকগুলোকে অস্বীকার করে অহেতুক অন্যের তুলনায় নিজেকে দুর্বল ভাবতে বাধ্য করে।

প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে কেউ এগিয়ে যাবে, কেউ পিছিয়ে পড়বে। পিছিয়ে পড়া মানুষটি ইচ্ছাশক্তি ও কর্মশক্তি দিয়ে আবার সামনের দিকে ধাবিত হবে এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত হয় তখন, যখন অন্য কারো সাফল্য আমরা সহজভাবে মেনে নিতে পারি না। অথবা অন্য কারো তুলনায় নিজেদের কম যোগ্যতাসম্পন্ন কিংবা কম আকর্ষণীয় মনে করতে শুরু করি। মনস্তত্ত্বের ভাষায় এটিই ‘ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স’।

 মনোবিজ্ঞানীদের মতে, সাধারণত ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স শৈশবের কোনো জটিল অভিজ্ঞতার কারণে তৈরি হয় বা এমন কোনো পরিবারে শিশুর বেড়ে ওঠে, যেখানে শিশুকে ক্রমাগত হেয় করা হয় কিংবা শিশুকে উত্সাহিত না করে বরং সাফল্য অর্জন করতে না পারায় কটাক্ষ বা বিদ্রুপ করা হয়। 

আমরা এমন একটি সমাজে বসবাস করছি, যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক বা সাফল্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক সৌন্দর্য, উচ্চতা এমনকি গায়ের রং দিয়ে সমাজে মানুষকে বিচার করা হয়। ফলে আমাদের আশপাশে এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা খুব অল্পতেই ভেঙে পড়েন। এইসব মানুষদের দুর্বলতায় প্রতিনিয়ত আঘাত করছি আমরা।

=============

একাডেমিক পড়ায় জ্ঞানের পরিধি বাড়ে না ততটা। চিন্তাশক্তি তৈরি হয় না। সুতরাং, পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি সব ধরনের বইপড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা অতি জরুরি। দেশে লাইব্রেরি আছে। কিন্তু পড়ুয়া নেই। কখন, কীভাবে যে একটা বইয়ের একটি বাক্য জীবন পরিবর্তন করে দিতে পারে, তা নিয়ে আমরা চিন্তাও করি না। বরং, আমাদের যে সময়টা বইয়ে দেওয়া দরকার ছিল, তা এখন  টিকটক, ফ্রি ফায়ার, ফেইস বুক, ইউটিউব ইত্যাদিতে ব্যয় হচ্ছে। এভাবে নিজের মেধা নিজেরাই নষ্ট করছি আমরা, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

===========

১৭৭৬ সালে আমেরিকা সৃষ্টির পরিকল্পনা বা স্বাধীনতা ঘোষণার মুখবন্ধে (Declaration of Independence) পাঁচ জাতীয় নেতা ও জাতির জনক জর্জ ওয়াশিংটন, থমাস জেফারসন, বেন্জামিন ফ্রাংকলিন, জন এডামস  ও জন মেডিসনরা লাইফ, লিবার্টি ও পারসুয়েট অব হ্যাপিনেসের (Life, Liberty and Pursuit of Happiness) যে অঙ্গীকার করেছিলেন, সে সময় সেই আমেরিকার সমাজব্যবস্থায় কৃতদাস প্রথা প্রচলিত ছিল। কৃতদাসেরা সমাজে সাধারণ নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত ছিল না। শিক্ষা ও আর্থিকভাবে সমাজের এই অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী, আব্রাহাম লিংকনের নেতৃত্বে সিভিল ওয়ারের পর কৃতদাস প্রথা বিলুপ্তির মাধ্যমে আমেরিকান সভ্যতার নতুন রূপান্তর ঘটার পরেও আমেরিকান ডেমোক্রেসির গবেষক সমাজবিদ, ফ্রেঞ্চ দার্শনিক হেনরি টকিয়েভেলি অষ্টাদশ শতাব্দীর গবেষণায় বের করেন যে, অধিকাংশ আমেরিকান সুখী না হয়ে তারা অসুখী থাকে বিভিন্ন কারণে। 

কথা হলো, আমেরিকান ফাউন্ডিং ফাদারেরা সেই আড়াই শ বা হাজার বছর পরের ভাবনাটিও তারা ভাবতে পেরেছিলেন বলেই এগুলোর অঙ্গীকার করেছিলেন। তারা জানতেন এই লাইফ, লিবার্টি ও পারসুট অব হ্যাপিনেস তাৎক্ষণিক, দশ, বিশ, পঞ্চাশ বা শত বছর এমনকি হাজার বছরেও শতভাগ অর্জিত হবে কি না, তা নিশ্চিত বা গ্যারান্টি না দিয়ে অঙ্গীকারে সীমাবদ্ধ ছিলেন।

ভালো থাকিতে হইলে সর্বদা যে প্রচুর অর্থ থাকিতে হইবে এমন নহে। সক্রেটিস বলিয়াছেন, ‘জাগতিক জীবনে ভালো থাকিতে প্রয়োজন কর্ম এবং জীবনকে উপভোগ করিবার মতো সময় ও পরিবেশ। আর তাহা পাইতে হইলে প্রয়োজন একটি গোটা কমিউনিটির মনের প্রশান্তি ও স্থিতিশীলতা।’ 

===

প্লেট সহজলভ্য ছিলো না বলে মানুষ একসময় কলাপাতা কেটে তাতে খাবার খেত। এখন সবার বাড়িতে প্লেট,

=======


যে গোমড়া, সে একটা দামড়া। সংসারে হাসতে হয়। 

-----------


জ্ঞান সবার প্রয়োজন নেই, পাওয়ারদের প্রয়োজন। অর্থ-কড়ি দিয়ে সবকিছু অর্জন সম্ভব, তবে জ্ঞান নয়। প্রবাদ আছে, লক্ষ্মীর সাথে নাকি স্বরসতীর খুব বিরোধ। অর্থাৎ ধনীরা কখনো জ্ঞানী নয়। যদি তাই হতো, নতুন একটা মানবিক পৃথিবী আমরা পেতাম।

------

হিরো বা পাওয়ার কারা

হিরোরা খুব বেশি পরিমাণে আশাবাদী মানুষ, তারা নিজেদের সফলতা-ব্যার্থতা বা সুখ-অসুখের জন্য কখনই কোনো পরিস্থিতি, অবস্থা কিংবা পরিবেশকে দায়ী করে না। সে বন্যা, খরা, রোদ, বৃষ্টি, ভূমিক¤প ইত্যাদির কাছে নতি স্বীকার করতে চায় না। মোটকথা সে কোনো পরিস্থিতি দ্বারা নিজেকে নিয়ন্ত্রিত হতে দিতে চায় না।

জিরো বা নির্ভরশীল মানুষরা পরিস্থিতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আবহাওয়া ভালো না থাকলে, তাহলে তারাও ভালো থাকে না। কিন্তু আশাবাদীরা আবহাওয়া মানে না। রোদ উঠল নাকি বৃষ্টি হলো, তাতে তাদের কিচ্ছু আসে যায় না। তারা মূলত নিজেদের জ্ঞান দ্বারা পরিচালিত হয়। 

জিরো বা নির্ভরশীল  মানুষগুলো সামাজিক আবহাওয়া দ্বারাও নিয়ন্ত্রিত হয়। কেউ তাদেরকে একবেলা ভালো খাওয়ালো, তারা তাতে খুশি হয়। আবার কেউ তাদেরকে দাওয়াত দিল না, তাদের মন খারাপ হয়, তারা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে ওঠে। তারা মূলত অন্য মানুষের দয়ার ওপর নির্ভর করে নিজেদের জীবনকে তৈরি করে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অন্য মানুষকে ক্ষমতাশালী করে।


যেকোন ধরনের নেশা সামলে রাখুন'

আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কিছু না কিছু বিষয়ে নেশা কিংবা আসক্তি থাকে।  কিছু কিছু আমাদের মরণ ফাঁদে ফেলে দেয়। কিছুদিন আগেও নেশা হিসেবে ধূমপান ও মদ্যপানকেই বিবেচনা করা হতো। বর্তমানে সেক্স এবং অতিরিক্ত খাবারও নেশার তালিকায় চলে গেছে। এইসব কমন নেশা ছাড়াও আপনি নিশ্চয়ই আপনার আশেপাশে এমন অনেক মানুষকে দেখেছেন যারা আরো বিভিন্ন বিষয়ে আসক্ত-

- কমবয়সী ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেটে গেইম খেলে সময় নষ্ট করছে। কিংবা

- কেনাকাটার প্রতি আসক্ত মানুষ মাসের শেষে কারো না কারো কাছে হাত পাতে,

এরকম অসংখ্য নেশা তালিকায় আপনার আসক্তি কী কী? কোন কিছুর প্রতি আসক্তি কি আপনার সফলতার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে? আপনার আসক্তি খুঁজে বের করুন, সেটা যদি আপনার উন্নতির সহায়ক হয়, চালিয়ে যান, আর যদি ক্ষতিকারক হয় তাহলে এক্ষুনি বন্ধ করুন ।

নিজের সমস্যার কথা বাইরের কাউকে বলার দরকার নেই। মনে রাখবেন,আপনি যাদেরকে সমস্যার কথা বলছেন তাদের মধ্যে ২০% লোক ভাল করে আপনার সমস্যা শোনেই না, আর বাকী ৮০% লোক আপনার সমস্যা আছে দেখে মনে মনে খুশী হয়। বরং এতে আপনি অন্যদের কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছেন ।

জীবনে কাউকে কোনো কিছুর জন্য দোষারোপ বা কারো বিরোদ্ধে কোনো অভিযোগ করবেন না। বরং তার প্রতি বিনয় হোন এবং তাকে প্রশংসা ও কাজে সহায়তা করুন। এটা প্রতিশোধের নিনজা টেকনিক। মনে রাখবেন, অভিযোগ/দোষারোপ জিরোরাই করে, হিরোরা তাকে বশিভুত করার গেম খেলে।

অন্যের সঙ্গে দেখা হলেই স্নিগ্ধ হাসি মুখে তুলে ধরুন। তবে খেয়াল রাখবেন হাসিটি যেন হয় আন্তরিকতাপূর্ণ হয়। প্রত্যেকেরই সুন্দর নামটি মনে রাখুন। সম্বোধনের সময় প্রত্যেকের নাম উল্লেখ করবেন, তাকে আপনি  ‘বিশেষ’  গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে মুহূর্তে তার কাছে আপনি অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠবেন। আর আপনার সামনে একাধিক ব্যক্তি একসঙ্গে থাকলে সেখানে শুধু একজনের সাথে কথা বলবেন না, সবার সাথে টুকটাক কথা বলবেন। এই সৌজন্যতা আপনাকে মহান নেতা হ্তে সহায়তা করবে।

অন্যের কথা না শুনে আপনি যদি শুধু বলতে থাকবেন না, তাদেরকে বলতে উৎসাহিত করুন এবং মনোযোগ দিয়ে শুনুন। তার কথাটি যে শুনছেন এবং বুঝেছেন তার প্রমাণস্বরূপ পাল্টা কোনো মন্তব্য বা প্রশ্ন জুড়ে দিন। পাশাপাশি তার পরামর্শ নিন। কারো পরামর্শ চাওয়ার অর্থ আপনি তার মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর এতে পরামর্শদাতা নিজেকে মূল্যবান বলে মনে করে আপনাকে শ্রদ্ধার আসনে স্থান দিবে।


====

‘আত্মমর্যাদা’ বা অহংবোধ

প্রত্যেক মানুষেরই ‘আত্মমর্যাদা’ বা অহংবোধ রয়েছে। তার এ অহংবোধে যেন আঘাত না লাগে, সেটি মাথায় রেখে সতর্কভাবে কথা বলুন এবং প্রশংসার মাধ্যমে তাকে উৎসাহ দিন। উৎসাহ পেলে মানুষের কাজ করার ক্ষমতা বহুগুন বেড়ে যায়। আপনার স্বভাবে অন্যকে উৎসাহ দেওয়ার প্রবণতা সেট করুন। যেমন- ফেজবুকে লাইক দেয়া, কমেন্ট করা, এগুলো হচ্ছে অন্যকে উৎসাহ দেওয়ার প্রবণতা।

কারো আচরণে বা কাজে আপনি বিরক্তবোধ করলেও কিছুতেই প্রকাশ্যে  বিরক্তি প্রকাশ করবেন না। কেউই বিরক্তিকর মানুষ  পাশে দেখতে চায় না। তাই অন্যে বিরক্ত হয় এমন সব আচরণ বাদ দিন। 

ভালোভাবে গল্প বলতে পারা এমন একটি দক্ষতা, যা সবাই অর্জন করতে পারে না। আপনি যদি গল্প বলায় দক্ষতা অর্জন করতে পারেন, তাহলে ধরে নিন সফল হয়ে ওঠার দিকে অনেকধাপ অগ্রসর হলেন।


ভুল মানুষগুলোর পেছনে ফালতু কাযে সময় নষ্ট 

 কথায় আছে- আপনার যদি দুইজন কোটিপতি ঘনিষ্ট বন্ধু থাকে, তাহলে তৃতীয় কোটিপতি ব্যক্তি হবেন আপনি।  শেখ সাদি বলেছিলেন...তুমি কার ঘরে জন্ম নিয়েছ, সেটা বড় কথা নয়, তুমি কাদের সংগে চলাফেরা কর, সেটাই বিষয়। কারন, একটা বক যদি কাকের সাথে বসবাস করে, তাহলে বকের বাহিরর্টা কাকের মত না হলেও ভিতরটা একই হয়ে যায়। তাই ক্ষতিকর বন্ধুকে আঁকড়ে ধরে রাখলে আপনি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন । ভুল মানুষগুলোর পেছনে ফালতু কাযে সময় নষ্ট হবে। দিনের ২৪ঘন্টা সময়কে ভাগ করে কোন কাজের পর কোন কাজ কতক্ষণ ধরে করবেন, তা ঠিক করে নিন। যে কাজটা আজ করতে পারেন, তা কালকের জন্য ফেলে রাখবেন না। 


গুজবপ্রিয় বাঙালি 

বাঙালি গুজবপ্রিয় জাতি। বাঙালি গল্প করতে গিয়ে গুজব ছড়ায় বলেই বাংলা ভাষায় “গল্পগুজব” নামে একটি জোড়া শব্দ আছে।

কবি শামসুর রাহমান-এর ‘পণ্ডশ্রম’ নামে একটি ছড়া আছে,

‘এই নিয়াছে ঐ নিল যা! কান নিয়েছে চিলে,

চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে’।

নেইকো খালে, নেইকো বিলে, নেইকো মাঠে গাছে;

কান যেখানে ছিল আগে, সেখানটাতেই আছে।’

কেউ কেউ বলেন, গুজব বাতাসের চেয়েও দ্রুত গতিতে ছড়ায়। আগে গুজব ছড়াত মূলত মুখে মুখে। এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

আসল মানুষ নিজেকে লুকিয়ে লুকিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বা এআই দিয়ে ছবি ও ভিডিও এডিট করে প্রতিদিন অজস্র গুজব ভিডিও ফাঁস করে, ভাইরাল করে। এমনকি ডিপ ফেইক প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন ভুয়া ভিডিও তৈরি করে এমনভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে, যা দেখে বিশেষজ্ঞরা বলতে বাধ্য যে, ঘটনা কিন্তু ১০০% সত্যি। মানুষ তাতে আগ্রহ নিয়ে সেটি দেখতে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে।

 ফলে গুজবকে রাজনৈতিক প্রচার, ব্যক্তিগত রাগ-ঘৃণা ও ব্যাবসায়িক স্বার্থ হাসিলে কারসাজি এবং সাম্প্রদায়িক উসকানির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এরা। কাজেই গুজবে কান দেবেন না, কান কিন্তু চিলে নিয়ে যাবে।


=======

=সুন্দরবনের খলিশা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধুতে প্রায় ৮৫-৯০% নেক্টার থাকে, যা এই মধুকে বিশেষভাবে অনন্য করে তোলে। 

প্রাকৃতিক চাক থেকে প্রাপ্ত এই খলিশা ফুলের নেক্টার সমৃদ্ধ মধুকে আমরা “সুন্দরবন লিকুইড গোল্ড হানি” নামে অভিহিত করেছি। কারণ, চাহিদা অনুযায়ী খলিশা ফুলের মধুর যোগান খুবই সীমিত এবং অন্যান্য মধুর তুলনায় এটি আরও পরিপক্ক ও সুস্বাদু। 

এই দুর্লভ ও প্রিমিয়াম কোয়ালিটির মধু আপনাদের কাছে পৌঁছে দিতে খাস ফুডের কর্মী ও মৌয়ালরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে খলিশা ফুলের মধু সংগ্রহ করে থাকেন। 


সেরা ২০টি স্ট্যাটাস

১। তর্কে জেতা বুদ্ধিমানের কাজ নয় বরং বুদ্ধিমানের কাজ হল তর্কে না জড়ানো।

২। পা পিছলে পড়ে যাওয়া লজ্জার কথা নয়। বরং যথা সময়ে উঠে না দাঁড়ানোই লজ্জার ব্যাপার।

৩।  তুমি যতটা মূল্যবান ততটা সমালচানার পাত্র হবে। আম গাছে সবাই ঢিল মারে, তিতা গাছে নয়।

৪। জ্ঞানী মূর্খকে চিনতে পারে কেননা সে জ্ঞানী। পক্ষান্তরে মূর্খ জ্ঞানীকে চিনতে পারে না, কেননা সে মূর্খ।

.৫। ভূল করা দোষের কিছু নয়, যে যত বেশি কাজ করে তার তত বেশি ভুল হয় কিন্তু ভুলকে মেনে না না নেওয়া বা ভূলের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা দোষণীয়।

৬। মানুষের সাথে বন্ধুত্ব ছিন্ন করে অর্থ উপার্জন করতে যেও না। কারণ, বন্ধুত্ব স্থাপনই অর্থাপর্জনের মূল মাধ্যম।

 ৭। যদি তুমি দুনিয়াকে কিছু উপহার দিতে না পার,  তবে তুমি দুনিয়ার একটি বোঝা।

৮। তুমি পাহাড়ের চুড়ার মত হইয়ো না। কারণ, এতে তুমি মানুষকে ছোট দেখবে আর মানুষও তোমাকে ছোট দেখবে।

৯।  অন্ধকারকে সারাক্ষণ গালমন্দ না করে ছোট্ট একটি বাতি জ্বালানো অনেক ভাল।

১০। )সব কিছু জানা তোমার দরকার নেই। কিন্তু তুমি যা কিছু বলবে, সে সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

১১। নির্বোধের কথার উত্তর না দেয়াই তার যথার্ত উত্তর। 

১২। জ্ঞান ও ভদ্রতা এই দুটি জিনিস ছাড়া আর কোনো কিছুই অতিরিক্ত হওয়া ভাল নয় । 

১৩। জ্ঞানী আগে চিন্তা করে পরে কথা বলে আর নির্বোধ আগে কথা বলে পরে চিন্তা করে।

১৪) যার গোপনীয়তা প্রকাশ পেয়ে যায়, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সংখ্যা বেড়ে যায়।

১৫) ব্যর্থ মানুষেরা দু প্রকার। এক প্রকার হল, যারা কাজের চিন্তা করেছে কিন্তু কাজ করেনি। আরেক প্রকার হল, যারা কাজ করেছে কিন্তু চিন্তা করে তা করেনি।

১৬) কথা বলার আগে পর্যাপ্ত সময় নিন যাতে কথা পরিপক্ব হয়। কারণ, ফল পরিপক্ব হতে পর্যাপ্ত সময়ের প্রয়োজন।

১৭। মানুষ যখন কারো প্রশংসা করে তখন খুব কম লোকেই তা বিশ্বাস করে। কিন্তু যখন কিনা কারো বদনাম করা হয় তখন প্রায় সবাই তা বিশ্বাস করে।

১৮) নীতিহীন মানুষ কাঁটা হীন ঘড়ির মত। যা ডাসবিনে ফেলা ছাড়া কোনো মূল্য নেই।

১৯) বিনয় ও সততা একটি মূল্যবান গাছের মত। সেটি সবসময় পরিচর্যার প্রয়োজন হয়, যেন ফুল-ফলে আপনাকে সমৃদ্ধ করতে পারে ।

২০) মূলত মানুষ তিন প্রকার। একশ্রেণীর মানুষ হল খাদ্যের মত যাদের দরকার হয় সবসময়। আরেক শ্রেণীর মানুষ হল, ওষুধের মত যাদের দরকার হয় মাঝে মাঝে। আরেক শ্রেণীর মানুষ হল রোগের মত যা আপনার কখনোই দরকার হয় না।


 

যেকোন একটি কাজে দক্ষ হয়ে উঠুন'

আপনি যদি সকল বিষয়ে দক্ষ হয়ে থাকেন তবে একটু থামুন। নিজেকে পুনরায় বিচার করুন। আপনার ভিতরের শক্তি এবং ক্রিয়েটিভিটির দিকে নজর দিন। যে সকল বিষয়ে আপনি গর্ববোধ করতে পারবেন, সেগুলো নিয়ে ভাবুন। এদের মধ্য থেকে আপনি যেকোন একটি বিষয়ে দক্ষ হবার জন্যে কিংবা দক্ষতা বাড়ানোর জন্যে নিয়মিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। সর্বদা মনে রাখুন- কোন কিছুতে অভিজ্ঞ হয়ে উঠতে চাইলে প্রচুর সময় ও কর্মশক্তির প্রয়োজন হয়। 

সফলতার সুত্র হল, ১। চেষ্টা করুন, ২। পরিকল্পিতভাবে চেষ্টা করুন এবং ৩। চেষ্টা করতেই থাকুন, যতোক্ষণ পর্যন্ত সফল হতে না পা্রেন। রাতারাতি কোনো কিছু শিখে উঠতে পারবেন না। মনে রাখুন যা অকালে হয়, তা সকালে মরে। আপনাকে নিয়মিত কাজে লেগে থাকতে হবে, ব্যর্থ হলেও আবার ঘুরে দাঁড়াতে হবে। কোনভাবেই হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ভুল থেকেই শিক্ষা নিয়ে নতুন পরিকল্পনা যোগ করতে হবে। আপনি যে বিষয়ে অভিজ্ঞ হতে চান, তা অন্যকেও শেখান। এতে আপনার দক্ষতা আরো বৃদ্ধি পাবে। 


 

না বলতে পারাটা হল মাথা উচু করে বাচাঁ। আপনার কাঁধে কেউ ততক্ষণ পর্ন্তত চড়তে পারবে না, যতক্ষণ আপনি মাথা নিচু না করবেন

না বলতে শিখুন,  

যে কাজটি আপনি করতে পারবেন না কিংবা যে কাজটি করতে গেলে আপনার সময়, অর্থ বা সম্মানের ক্ষতি হবে, এমন কাজে হুট করে রাজি হয়ে যাবেন না। আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, আমরা যা করতে পারবো না; সে বিষয়ে কথা দেওয়া একেবারে অযৌক্তিক; তাতে আমরা হয় ব্যর্থ হব, নয়তো বন্ধুত্ব বা ব্যক্তিত্ব হারাব। কোন কাজে আপনি অনিশ্চিত থাকলে, সরাসরি 'না' বলে দিন। দ্বিতীয়বার কাউকে হতাশ করার চাইতে প্রথমবার না বলে দেয়াই শ্রেয়। 

জীবনে অন্যদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সুন্দর করে না বলতে পারাটা খুবই জরুরী। অনুরোধে ঢেঁকি গিলার চেষ্টা করবেন না। যদি তা করেন তাহলে আপনাকে সবাই ভাঙ্গিয়ে খাবে এবং এক সময় কথা রাখতে না পারার কারণে আপনি সবার কাছে ছোট হয়ে যাবেন।

 

টাকা যখন সামাজিক স্ট্যাটাস

একটা সময় ছিল, যখন বাংলার মানুষ স্যান্ডেল বা জুতা খুবই কম পায়ে দিতেন । স্রেফ অনুষ্ঠানে গেলে কেউ কেউ জুতা পরে যেতেন। যারা জুতা পরতেন; ঐ ‘জুতা’ই ছিল তাদের আভিজাত্য। শিক্ষার হার বাড়ার সাথে সাথে একসময় জুতা হয়ে গেল নিত্যপণ্য, বা খুবই প্রয়োজনীয়। ফলে জুতা তার আভিজাত্য হারাল।

 তেমনি ২০ বা ৫০-এর দশকে স্ট্যাটাস ছিল স্কুলের গণ্ডি পার হয়ে মেট্রিক পরীক্ষায় পাশ করা মানে বিশাল ব্যাপার। এই শিক্ষিতদেরকে মহান পাওয়ার হিসেবে  সবাই শ্রদ্ধার চোখেই দেখত। কিছু বছর আগেও একজন চিকিত্সক, প্রকৌশলী, ব্যারিস্টার, ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিভিন্ন পেশায় যে পরিবারের সন্তানরা ছিলেন, তাদের নিয়ে পুরো এলাকা গর্ব করতেন, শ্রদ্ধা করতেন। 

সময়ে সময়ে স্ট্যাটাস পরিবর্তন হয়। এখন টাকার যুগ। কার কত আছে, তা দেখে সামাজিক স্ট্যাটাস তৈরি হয়। টাকা না থাকলে উচ্চশিক্ষিত মহাজ্ঞানী ব্যক্তির চেহারাও ফ্যাকাশে হয়ে যায়। টাকা থাকলে মিথ্যা কথাও বানী,,,মূর্খ পাগলও মহাজ্ঞানী। বলা হয়ে থাকে, টাকা দেখলে নাকি কাঠের পুতুলও হাঁ করে ফেলে। টাকা মানুষের শরীর ও মনকেও উজ্জীবিত করে। মানুষের কত টাকা প্রয়োজন—তার কোনো ঊর্ধ্বসীমা নাই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাহার ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতায় যেমন বলেছেন—‘এ জগতে, হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি—।’ অর্থাত্ মানুষের অর্থ উপার্জনের তৃষ্ণা কখনো ফুরায় না।

 

মানুষ একই সঙ্গে দেবতা ও দানব।

সিগমুন্ড ফ্রয়েড মানুষের মনের মধ্যে তিনটি স্তরের কথা বলেছেন। সবচেয়ে নিচে আছে অচেতন স্তর—এই স্তরে ব্যক্তির জন্মগত আদিম কামনা-বাসনা ও পশুপ্রবৃত্তিগুলি বিরাজ করে। আর সবার ওপরে থাকে চেতন স্তর—যেখানে আবেগ-অনুভূতি, চিন্তাভাবনা থাকে। মানুষ বেশির ভাগ সময় মানুষ এই চেতন স্তরে থাকে। মানুষ একই সঙ্গে দেবতা ও দানব। মানুষের সচেতন স্তর  দয়া-মায়া-মমতা, ভালবাসা, মানবতা, বিবেক, জ্ঞান, বুদ্ধি, সহানুভূতি সব পরিপূর্ণ থাকে। অন্যদিকে অবচেতন স্তরে থাকে- মানুষের পশুপ্রবৃত্তি, লোভ-রাগ কামনা-বাসনা অহংকার হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি।

চেতন স্তর মানুষের মধ্যে যত বিকাশ হবে, পৃথিবী তত মায়া-মমতায় পরিপূর্ণ সুখে-শান্তিতে বসবাসের উপযুক্ত হিসেবে গড়ে উঠবে। অন্যদিকে অচেতন স্তর-এর চর্চা’ পৃথিবীতে যত বেড়ে যাবে, পৃথিবীর যত বসবাসের অনুপযুক্ত আর অশান্তির মাধ্যমে ধ্বংসের দিকে যাবে। এটা যেন শুভ-অশুভের লড়াই। এই সাপ-লুডু খেলায় শুভ শক্তি মই দিয়ে উপরে উঠে সাপের মুখে পড়ে গভীর খাদে তলিয়ে যায়। বলা যায়, তৈলাক্ত বাঁশে আমরা বানর হয়ে এভাবে উঠা-নামা করে দিন পার করছি।

প্রতিনিয়তি পৃথিবীতে চলছে শুভ-অশুভ শক্তির দ্বন্দ্ব। এখানে মানুষই দেবতা, মানুষই দানব। উভয় শক্তিরই দড়ি টানাটানি হচ্ছে। যর জোর বেশি, তারই জয় হবে। এই পৃথিবীকে রক্ষা করতে হলে শুভ সত্তার বিকাশ করতে হবে, যাতে বিনাশ ঘটানো সম্ভব হয় দানবসত্তার। সুতরাং খারাপ চিন্তা মাথা থেকে বিদায় করুন, মানুষের কল্যানে কাজ করুন।


মধ্যযুগের ভারতচন্দ্র রায়ের অন্নদামঙ্গল কাব্যের ঈশ্বরী পাটনী (নৌকা পারাপার যার জীবিকা) তিনিও যে কোনো পিতা-মাতার মতো দেবীর কাছে বর চান তার সন্তানদের জন্য

প্রণমিয়া পাটনী কহিলো জোড়হাতে—

‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’ 


জগতে কোনো কিছুই একা-একা নিপুণভাবে পরিচালিত করা যায় না। এর জন্য সঠিক যথাযথ ও বিশ্বস্ত করিৎকর্মা ব্যক্তিদের প্রয়োজন হয়; কিন্তু করিৎকর্মা ব্যক্তিবর্গের জায়গায় যদি কিছু আগাছা চলে আসে, তা হলে তা  তলে তলে ভয়ংকর ক্ষতিসাধন হতে থাকে। আগাছার ক্ষতিকর দিকগুলি একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, আগাছা মূল গাছটির রস-পুষ্টির উপর ভাগ বসিয়ে স্ববংশে বেড়ে উঠে, শেষ পর্যন্ত আগাছা্রা সেই মূল গাছটিকেই চারিদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে। নিঃশ্বাস রুদ্ধ করে ফেলে।

 

 সহজ জীবন 

কারো কাছে জীবন মানে একটি সুখী সুন্দর পরিবার গঠন, কারো কাছে জীবন একটি যন্ত্রণার নাম, আবার কারো কাছে জীবন মানে অঢেল সম্পদশালী হওয়া, কিন্তু সহজ মানুষের কাছে জীবন মানে শুধুই ভালোবাসা আর হাসি-আনন্দের মাধ্যমে প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ করা।

আপনি পৃথিবীতে যখন এসেছিলেন তখন এত দুর্বল ছিলেন যে, মায়ের সাহায্য ছাড়া নড়া-চড়া বা খাবারটুকুও মুখে নিতে পারতেন না। আপনি যখন এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন, তখনও এরকম  অত্যন্ত দুর্বল ও অসহায় থাকবেন। তার অনেক আগে থেকেই অর্থাৎ মধ্য বয়সের পর থেকেই একাকিত্বের মাধ্যমে শুরু হবে এই বিরক্তিকর পথ চলা। বয়স যত বাড়বে, তত একা হতে থাকবেন আর সুত্র অনুযারী একা মানে বোকা।

একটাই জীবন! আমার এই জীবনের দৈর্ঘ্য কত, তা আমরা কেউ জানি না। অর্থাৎ  একই  সময় জন্ম নেয়া এই মানুষগুলোর একসাথে থাকার এই পরিসর খুবই ছোট। তারপরও ক্ষণিকের এই যাত্রায় নিজেদের মধ্যে কেন এত হানাহানি, এত মারামারি, এত হিংসা, এত বিদ্বেষ, এত সংঘাত, এত বেঈমানী। 

 আগেকার দিনে কলেরা, বসন্ত, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা, প্লেগ, কালাজ্বরের মতো মহামারি, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ, ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃত্যু গড় আয়ু কমিয়ে ফেলেছিল। ফলে মানুষ প্রবীণ হওয়ার সুযোগ তেমন একটা পেত না। যারা প্রবীণ হতো, তাদের বেশির ভাগই নারী। এই প্রবীণ নারীরা সমাজে, পরিবারে খানিকটা অসম্মান-অপমানের শিকার হতেন। তাদেরকে সমাজ ও পরিবার বুড়ি হিসেবে সম্বোধন করতো। কানা বুড়ি, চরকা বুড়ি, কুটনি বুড়ি, কুঁজো বুড়ি, উকুনে বুড়ি, পেত্নি বুড়ি, ডাইনি বুড়ি—এসব বলে প্রবীণ নারীর চলাফেরা, আচার-আচরণ  নিয়ন্ত্রণ করা হতো। ঘৃনা নিয়ে বলা হতো—চাল নষ্ট মুড়ি আর পাড়া নষ্ট বুড়ি। ফলে প্রবীণ নারীরা রাগে-দুঃখে, অসম্মান, অপমানে  অভিযোগ, নালিশ, অভিশাপ দিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করতেন। তবে প্রবীণ পুরুষদের হাতে জমিজমা, সহায়সম্পদ থাকায় তেমন একটা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় না। 

সময়ের সাথে সাথে বয়স্কমানুষের প্রতি মনোভাব পরিবর্তন হলেও প্রবীণদের জন্য আলাদা করে বিনোদন নেই, আছে বিক্ষিপ্তভাবে। প্রবীণের মন-মানসিকতা, চাহিদা, বিনোদন বিবেচনায় নিয়ে প্রবীণ ক্লাব,সমিতি তৈরি করা সময়ের দাবি। প্রবীণদের জীবনের নানান চ্যালেঞ্জ, সংকট, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, প্রেম-বিরহ, ব্যথা-বেদনা, নিঃসঙ্গতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময়সহ বার্ধক্যকে উপভোগ করার প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে।


 কমফোর্ট জোন কী। কেন মানুষ আটে আটকায়

একটি সুপরিচিত কথা রয়েছে—‘আপনি যদি আপনার আরামের অঞ্চল থেকে বেরিয়ে না যান তবে আপনি সবসময় একই জায়গায় আটকে থাকবেন।’ 

একটি জনপ্রিয় গল্প আছেঃ একবার একটি এরোপ্লেন তার পাশে থাকা একটি রকেটকে জিজ্ঞাসা করল- রকেটভাই, তুমি এত দ্রুত গতিতে কিভাবে উড়ে যাও বলতো? তখন রকেট বলে যে, আমার মত পাছায় আগুন ধরিয়ে দিলে তুমিও আবার মত দ্রুত যেতে পারবে। অর্থাৎ চাপে ও তাপে সবকিছুর অবস্থান পরিবর্তন হয়। লক্ষ কোটি বছরের চাপে ডায়মন্ড বা গোল্ড তৈরি হয়। জীবনে যে যত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়াতে, পারে সে তত সফল মানুষ। আর চ্যালেঞ্জ বাদ দিয়ে যে বা যারা কমফোর্ট জোনে থাকে; তারা সব দিক থেকে ব্যর্থ মানুষ। কমফোর্ট জোন হলো সেই আরামদায়ক জায়গা যেখানে মানুষ নিজের রুটিনমত কাজ নিরাপদে করতে পারেন। সাধারণত মানুষ আটে আটকায়। অর্থাৎ সে যা কিছু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি-অফিস, বিয়ে সাদি সবকিছু ৮ কিলোমিটার জায়গার মধ্যেই করে। যারা এই ৮কে অতিক্রম করতে পারেন, তারাই নেতা।

জীবনের চ্যালেঞ্জগুলি নেবার জন্য একটি বৃহত্তর ক্ষমতার সঙ্গে লড়াই করা ভীষণ জরুরি আর তা হলো ‘ভয়’; এবং এটি প্রায়শই আমাদেরকে কমফোর্ট জোন বা আরামের অঞ্চলের বাইরে যেতে বাধা দেয়।  আরাম অঞ্চল বা কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসা নিজের উন্নতির জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়। এটি এমন একটি যাত্রা, যার জন্য সাহস, দৃঢ়তা এবং পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন জরুরি হয়ে পড়ে।  আপনার উন্নতি তখনই ঘটবে যখন আরাম বা কমফোর্ট জোন থেকে বেরিয়ে অজানায় পা রাখতে পারবেন।


নির্বোধ থাকো না। চিন্তা করো 

নিজের ভিতরে খুঁড়ে দেখো—কে তুমি? বিশ্লেষণ করো নিজেকে। মূলে যাও, উৎস যাও। পরিস্থিতির ওজন না বুঝে যা  খুশি বলো না।  যা কিছু প্রত্যাশা করো না। চিন্তা করো। গভীরভাবে আত্মবিশ্লেষণ করো। পরিস্থিতিকে সন্ধিবিচ্ছেদ করো। বুঝে দেখো—যা হচ্ছে বা হতে চলেছে;, তা কেন দরকার? তমি যা করছ, তা কি ঠিক করছ? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে তারপর পদক্ষেপ নাও। নইলে পতন ঘটবে। আগ-পিচ না ভেবে হয়তো পাইপলাইনে থাকবার জন্য লাফ দিয়ে পাইপের মধ্যে ঢুকে পড়লেন। সেই পাইপলাইনে জ্যাম তৈরি করে সমস্যা তৈরি করলেন। কিন্তু লাভ কিছুই হলো না, বরং বড় ক্ষতি হয়ে গেল। হিসেব করে ক্ষতির মাত্রা দেখলে অবাক হয়ে যাবেন। কাজেই  নিজের ওজন বুঝে পা ফেলতে হবে,  ওজন না বুঝে ঝাঁপ দিলে বিপদে পড়তে হবে।


আসলে আমাদের বেশির ভাগ মানুষই খুব বেশি ‘চিন্তা’ করার ধীশক্তি রাখেই না।  বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন মনে করতেন—‘৫ শতাংশ মানুষ চিন্তা করতে পারেন। ১০ শতাংশ মানুষ মনে করেন যে, তারা চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা রাখেন। অন্যদিকে ৮৫ শতাংশ মানুষ যেন পণ করেছে, তারা বরং মারা যাবেন তবু চিন্তাভাবনার ধার ধারবেন না।’ তারা আসলে অবোধ শিশুর মতো। যেই শিশু জানে না—আগুনে হাত দিলে হাত পুড়বে—সে তো আগুনের উজ্জ্বল জ্যোতি দেখে তাকে ধরতে ব্যাকুল হবেই। 

দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছেন—‘একজন মানুষকে উত্তরের চাইতে তার প্রশ্ন দ্বারা বিচার করো।’ কারণ প্রশ্ন করতে হলে চিন্তাভাবনা করতে হয়।  সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী বলে খ্যাত সক্রেটিস কিন্তু উত্তর দিতেন না, শুধু প্রশ্ন আর পাল্টা প্রশ্ন করতেন, এই ধারালো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যুবকদের দল তার পিছনে সারাদিন ঘুরঘুর করত।

আইনস্টাইন হওয়ার চক্করে ওভার প্যারেন্টিং 

 যখন সন্তানের জন্য অতিরিক্ত ভালো চাইতে শুরু করবেন, বিপত্তি ঘটে তখনই। তাকে ওভার প্যারেন্টিং বলে।  আমরা নিজেদের জীবনের না পাওয়াগুলো সন্তানের প্রাপ্তির খাতায় যোগ করতে গিয়ে মনের অজান্তেই সন্তানের ওপর কত ধরনের যে চাপ প্রয়োগ করি, তার ইয়ত্তা নেই। শুধু পুথিগত বিদ্যার পেছনে ছুটতে গিয়ে জীবনের অনেক জরুরি শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আমাদের সন্তানরা। সন্তানদের মানুষ করার নামে যে অতিরিক্ত অভিভাবকত্ব ফলাচ্ছি আমরা, তার ফলাফল অনেক ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হচ্ছে। অমুক আর তমুকের সন্তানের সাফল্য দেখে বার বারই নিজের সন্তানকে হেয় করতে থাকেন। আপনার এ ধরনের তুলনা সন্তানকে শুধু অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকেই ঠেলে দেয় না, আত্মবিশ্বাসকেও গুঁড়িয়ে দেয়, যার পরিণতি আরো ভয়ংকর। অথচ সন্তানদের শেখানো উচিত প্রতিযোগিতা যদি করতেই হয়, তা হবে কেবল নিজের সঙ্গে। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা। 

আধুনিক সমাজে সবাই বিচ্ছিন্ন। নিউক্লিয়ার পরিবারে বেড়ে উঠছে সন্তানেরা। বাবা-মায়ের বাইরে দাদা-দাদি, নানা-নানি, চাচা-ফুফু, মামা-খালাদের সংস্পর্শ নেই বললেই চলে। এ বিচ্ছিন্ন বিলাসিতা আমাদের এবং পরবর্তী প্রজন্মকে মানসিক ভাবে পঙ্গু করে দিচ্ছে।  দেখা যায়, আমাদের দেশে সন্তানকে ঝুট-ঝামেলামুক্ত জীবন দিতে চান অনেক বাবা মা-ই। অতি আরাম-আহ্লাদ, ফুলের টোকাটি গায়ে না যেন লাগে প্রেক্ষিত তৈরি করে সন্তানদের বড় করতে চান। এভাবে তারা হয়ে ওঠে ননির পুতুল। কিন্তু সন্তানকে যতই আপনার শীতল ছায়ায় রেখে আরাম দেন না কেন, বাইরের কঠিন পৃথিবীর সঙ্গে লড়াইটা কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে একাই লড়তে হয়। নিজের ঘর পরিষ্কার করা, মেহমান আপ্যায়ন, ছোটখাটো রান্না, বিভিন্ন বিল দেওয়াসহ নানা কাজে সন্তানদের অংশ নিতে দিন। এই ছোট ছোট অংশগ্রহণই একদিন বড় কাজ করার রসদ জোগাবে। এতে করে চারদিক সামলিয়ে জীবনে কীভাবে এগিয়ে যেতে হয় এবং নেতৃত্বের মৌলিক গুণাবলির দীক্ষা ছোটবেলা থেকেই পাবে সন্তানরা।অল্পতে তুষ্ট থাকা, সাধারণ জীবনে অভ্যস্ত থাকার চেষ্টা, নিজের শখগুলোর যত্ন নেওয়া, মানুষের বিপদে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা পরিবার থেকেই শুরু হওয়া প্রয়োজন। জীবনে কেবল ভালো ছাত্র হওয়ার পেছনে না দৌড়িয়ে ভালো মানুষ হওয়ার চর্চা জারি রাখা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারকে হতে হবে এসব শুভচর্চার সূতিকাগার।মনে রাখা দরকার, সন্তানের প্রথম বিদ্যালয় হচ্ছে পরিবার। নৈতিক শিক্ষা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, সহনশীল আচরণবিষয়ক শিক্ষা সন্তান বাবা-মায়ের কাছ থেকেই শেখে। পরিবারে আমরা যে আচরণ করব, আমাদের সন্তানরা সেটাই শিখবে।


বাংলাদেশ কেন ইমিগ্রেশন ইস্যুতে নেতিবাচক একটি নাম?

ইউরোপে জনবলের অভাব মেটানোর মতো যথেষ্ট লোকবল বাংলাদেশের আছে। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবসম্মত না হওয়ায় এর সুযোগ নিতে পারছে না। ভারত ও নাইজেরিয়া এই সুযোগটা ভালোভাবেই কাজে লাগাচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ইংরেজিটা গুরুত্ব পায় না।

বাংলাদেশের মেডিক্যাল শিক্ষার প্রসার ঘটলেও ডাক্তারদের ইংরেজির মান নিয়ে কেউই ভাবছেন না। কানাড়া ও ইউরোপের লক্ষ লক্ষ ডাক্তারের চাহিদা মেটাচ্ছে মূলত ভারত, পিলিফাইন, মিশর, পাকিস্তান ও নাইজেরিয়ার মতো দেশগুলো, যারা ইংরেজিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

শুধু ইংরেজির মান বৃদ্ধি এবং রোগীর সঙ্গে যথযথ ব্যবহারের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে পারলে ইউরোপে উচ্চ বেতনে হাজার হাজার বাংলাদেশির কর্মসংস্থান সম্ভব। বর্ত্মানে জার্মানি, ব্রিটেন, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে ব্যবসায়ীদের অব্যাহত কর্মীসংকট কাটাতে ইমিগ্রেশন সহজ করেছে।

দেশের ৩৭২টি নার্সিং কলেজের মধ্যে ৩১৫টিতেই নাই নিজস্ব হাসপাতাল। তাহা হইলে নার্সরা হাতে-কলমে শিখবে কীভাবে? বেসরকারি ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ভাড়ায় শিক্ষক এনে পাঠদান করছে। শিক্ষার্থীদেরকে কোনো এক হাসপাতালে গিয়ে টাকার বিনিময়ে কাজ শিখতে হয়। এভাবে কি নার্সিং শিক্ষার উন্নতি আশা করা যায়? এই জন্য নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর ও কাউন্সিলকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

ইউরোপে ডাক্তার, নার্স, বয়স্ক ও অক্ষমদের দেখাশোনার জন্য কেয়ার ওয়ার্কার, বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনে অভিজ্ঞ লোকবল এমনকি মাছ ধরার জন্য ফিশারম্যানও দরকার। এ খাতগুলোর জন্য ব্রিটেনসহ ইউরোপীয় দেশগুলো সেখানে প্রবেশের শর্তও সহজ করেছে। কিন্তু এ সহজ পন্থা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এসব দেশে ইমিগ্রেশন ইস্যুতে নেতিবাচক একটি নাম। এটা উত্তরণের উপায়গুলো কি তা পর্যালোচনা করা দরকার।  ইউরোপ-আমেরিকানারা স্বপ্ন দেখছেন রকেটে চড়ে মঙ্গল গ্রহে যাবার আর আমরা স্বপ্ন দেখছি ইউরোপ-আমেরিকা যাবার। এই স্বপ্নযাত্রায় আমাদের প্রথম সমস্যা ভাষা শেখা, যা আমরা অনায়াসে কাটিয়ে উঠতে পারি।

 

২১ মে বিশ্ব চা দিবস। 

তথ্য অনুযায়ী ২০০৪ সালে সর্বপ্রথম চায়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে একে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ২০০৫ সালে প্রথমবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে বিশ্ব চা দিবস উদযাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কায়েএই দিবস পালন করা হয়। ২০১৫ সালে চা দিবসে উদযাপন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়। ২০১৯ সালে জোতিসংঘ কয়েকটি দেশের সম্মিলিত উপস্থিতিতে ২১ মে, চা দিবসের আয়োজন করে।   

আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। প্রতিবছর ২৯ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী নিজের পছন্দের নৃত্যের মুদ্রার মাধ্যমে উদযাপনে মেতে ওঠেন বিভিন্ন দেশের নৃত্যশিল্পীরা। নাচ বা নৃত্য আনন্দ প্রকাশের চেয়েও আরো বেশি কিছু; শুদ্ধ শিল্প চর্চার পরিশীলিত রূপ। নৃত্যের মুদ্রার শিল্পে মনের পর্দায় প্রকাশ পায় অব্যক্ত ভাব ও ভাষা। নৃত্য প্রাচীন সংস্কৃতির অংশ এবং ভাষার বাহনও বটে। সেটির আরো শিল্পিতরূপ তুলে ধরে ক্ল্যাসিক ধারার নৃত্য। 

বিশ্ব পানি দিবস।

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের শরীরের শতকরা ৬০ থেকে ৭০ ভাগ থাকে পানি। পানি ছাড়া একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষও সর্বোচ্চ ২ সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারেন। প্রতিবছর ২২ মার্চ বিশ্বব্যাপী পানি দিবস উদযাপন করা হয়। সূত্রপাত হয় ১৯৯২ সালে সুদূর ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরো শহরে। পরিবেশ এবং উন্নয়ন সম্মেলনে পানি দিবসের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এজেন্ডা ২১-এর সেই প্রস্তাব গ্রহণ করা হয় এবং তার পরের বছরই বাস্তবায়ন করা হয়। ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ সাধারণ সভা করে ২২ মার্চকে পানি দিবস হিসেবে নির্বাচন করে এবং পালনের ঘোষণা দেয়। ২০০৩ সাল থেকে পানি দিবস পালন করা

সমগ্র পৃথিবীর শতকরা ৭১ ভাগই পানি। বাকি ২৯ ভাগ স্থল বা মাটি


ব্রেইন-ড্রেইন’ : আমাদের অগ্রগতির পথে বড় অন্তরায়

উচ্চশিক্ষিত মানুষেরা কম সন্তান নেন। একারণে ক্রমেই বিশ্বে বুদ্ধিমান মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।এর পাশাপাশি ব্রেইন ড্রেইনের কারণেও আমরা মাথামোটা জাতিতে পরিণত হচ্ছি। দেশে সুযোগ সুবিধার অভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা জীবন যাপনের ঝুঁকির এড়াতে “ব্রেইন ড্রেইন” মেধা পাচার হয়ে থাকে।

তৃতীয় বিশ্বের মেধাবী ছাত্র, দক্ষ এবং উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিরা তাদের দেশ হতে তুলনামূলক উন্নত দেশে অভিবাসন করতে চান, যাতে তার দক্ষতা ও মেধা  আরও ভালোমতো কাজে লাগাতে পারেন।  অদক্ষ শ্রমিকদের কোনো উন্নত দেশ সাধারণত নাগরিকত্ব দিতে চা্য় না। বেশির ভাগ উন্নত দেশের অভিবাসন নীতি সেইভাবেই তৈরি। কিন্তু দক্ষ, মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিতদের প্রয়োজন সব উন্নত দেশেই আছে। এটা যেন অনেকটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কণিকার কবিতার মতো—‘কেরোসিন-শিখা বলে মাটির প্রদীপে,/ভাই ব’লে ডাক যদি দেব গলা টিপে।/হেনকালে গগনেতে উঠিলেন চাঁদা—/কেরোসিন বলি উঠে, এসো মোর দাদা!’ এইখানে উন্নত বিশ্ব হল কেরোসিনের শিখা, আর মাটির প্রদীপ হল অদক্ষ অশিক্ষিত শ্রমিক। অন্যদিকে আকাশের চাঁদ হল দক্ষ মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি। সুতরাং গগনেতে চাঁদ উঠিলে অর্থাৎ এই দক্ষ মেধাবী ও উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিকে তো তারা চাইবেই। এভাবেই আমাদের আকাশের  চাঁদগুলি বিদেশেই স্থায়ী হয়ে যান আর আমরা চাঁদহারা অন্ধকারের ডুবে আছি।

বেশ নীরবেই দেশ থেকে ‘মেধা পাচারের বিপ্লব’ ঘটে যাচ্ছে। অথচ সেদিকে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই! সবাই শুধু ক্ষমতা দখলের চিন্তা আর দেশকে লোপাট করার চিন্তায় মশগুল নেতা-আমলারা। 

মেধাবী প্রজন্মের সঠিক পরিচর্যা ও তাদের বেড়ে ওঠার পরিবেশ ও মূল্যায়নের ওপরই নির্ভর করে একটা রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ কেমন হবে। এদেশে মেধাবীরা তাঁদের মেধার মূল্যায়ন পায় না। অথচ তাঁর চেয়ে কম যোগ্যতার কেউ একজন রাজনৈতিক চেষ্টা-তদবির বা ঘুষ–বাণিজ্যের মাধ্যমে তাঁর কাঙ্ক্ষিত যোগ্য আসনটি দখল করে নিচ্ছেন। ফলে সিস্টেমের প্রতি, সার্বিকভাবে দেশের প্রতি তার একটা অনীহা জন্মে যায়। তখন তিনি দেশত্যাগে মরিয়া হয়ে ওঠেন। এ ক্ষেত্রে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর একটার কালজয়ী কথা মনে পড়ছে, ‘যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মাতে পারে না।’ এভাবে চলতে থাকলে দেশ অচিরেই মেধাশূন্য মাথা মোটা জাতিতে হব আমরা। 

 

টানেলের শেষপ্রান্তে অবশ্যই আলো আছে

অনেক জ্ঞানী-গুণীর মতে, আধুনিক জীবনে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ হল আমাদের কর্মের চালিকাশক্তি। অর্থাত্ মানসিক চাপ হচল ঘানি। আর সেই ঘানি আমাদের ভিতর হতে নিংড়িয়ে কর্মরস বের করে। এই ঘানি বা চাপ আমাদের জন্য প্রতিবন্ধকতা নয়। এই জন্য আধুনিক জীবনটা যেন অনেকটা প্রেশার কুকারের মতো—যাতে অল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে কা্জ হাসিল করা হয়; কিন্তু সেই প্রেশার কখনো-সখনো ভয়ংকর বিপদও ডেকে আনে। 


উদ্বেগের ক্ষেত্রে উইনস্টন চার্চিল বলেছেন, ‘যখন আমি আমার সমস্ত উদ্বেগের দিকে ফিরে তাকাই, তখন আমার সেই বৃদ্ধের গল্পটি মনে পড়ে, যে বৃদ্ধে তার মৃত্যুশয্যায় বলেছিলেন—তার জীবন দুশ্চিন্তাজনিত আতংকে জর্জরিত ছিল, যেই সকল দুশ্চিন্তার প্রায় কোনোটাই, কখনো ঘটে নাই।’ 

আমরা কখনোই আমাদের ‘ভবিষ্যত্’ জানি না। আমরা যা যেইভাবে ভাবি, কখনই তান সেইভাবে হয় না। অতীতেও হয় নাই, ভবিষ্যতেও হবে না। সুতরাং টানেলের শেষপ্রান্তে অবশ্যই আলো  আছে। শুধু প্রশ্নটা হল, টানেলটা কতখানি লম্বা এবং আপনি সেই লম্বা টানেল পাড়ি দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন কি-না, কিংবা ভয় পাচ্ছেন কি-না। কখনো না কখনো আলো আসবেই—এই বিশ্বাস  রেখে  এগিয়ে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।


 জার্মান প্রবাদে আছে—‘সময় হল চোরের সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতক বন্ধু। একটা না একটা সময় আসবেই, যখন চোরের স্বরূপ উন্মোচন হবে।’

কথায় আছে—‘চোরের মায়ের বড় গলা/ নিত্য দেখায় ছলাকলা,/ চোরকে নিয়ে বড়াই করে/ চোরের জন্য লড়াই করে।’ প্রশ্ন হইল চোরের মায়ের কেন বড় গলা?

হনুলুলুতে বাস করিত এক চোর।সেই চোরের মা বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করিতেন। চোরের মায়ের জীবনের অন্যতম শখ ছিল—গলাভর্তি গয়না পরা। সেই শখ পূরণ করিতেই ছেলে তাহাকে প্রতি মাসে টাকাপয়সা ছাড়াও একটা করিয়া নেকলেস পাঠাইত। এইভাবে চোরের মায়ের গলাভর্তি গয়নায় ভরিয়া গেল। তাহার বড় গলা ভরা গয়না দেখিয়া গ্রামের সকলেই বলিত ‘বড় গলাওয়ালা মা।’ মন সময় কোথাও চুরি করিতে গিয়া ধরা পড়িল তাহার ছেলে। আইনের লোক তাহার মাকে খুঁজিতে গিয়া জানিতে পারিল—এই এলাকায় চোরের মাকে কেহ চেনেন না। তবে ‘বড় গলাওয়ালা মা’ বলিতেই সকলে চিনিয়া ফেলিল। সেই হইতে নাকি বাংলাদেশে এক নূতন প্রবাদের জন্ম হইল—‘চোরের মায়ের বড় গলা’। 

বাংলায় একটি প্রবাদ রহিয়াছে, বেড়ায় খেত খায়। আবার সরিষার মধ্যে ভূত থাকিবার কথাও আমাদের অজানা নহে। এই সকল কারণে দেশে একের পর এক অনিয়ম, দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটিয়া চলিয়াছে। এই পরিস্থিতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চরম দায়িত্বহীনতাই দায়ী।

=====

দার্শনিক জর্জ বার্নার্ড শ বলিয়াছেন যে, নূতন কিছু করাই তরুণদের ধর্ম। তরুণরা সত্যিই নূতনের পূজারি। বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নতি ও অগ্রগতির পুরাভাগে রহিয়াছে তরুণদের অংশগ্রহণ। আমরা জানি, তরুণরাই জাতির সবচাইতে উজ্জ্বল, সৃষ্টিশীল ও উদ্যমী শক্তি। তাহারা একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। 

====


স্যোশাল মিডিয়া ও আমাদের তারুণ্য


ভিন্ন মত’কে স্বীকৃতি জানিয়ে মাওসেতুং বলেছিলেন, ‘শত ফুল ফুটতে দাও।’ কিন্তু বর্তমানে স্যোশাল মিডিয়ার অবয়ব জুড়ে শত ফুলের বদলে শত ‘হুল’ ফুটছে। রুচিশীল যুক্তি- তর্ক সেখানে বিরল। মত-ভিন্নতা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পর্যবসিত হয় গাল-মন্দে। ভিউ বাণিজ্যের গর্তে পড়ে মানুষ হারাচ্ছে বিবেক আর সময়।  জন্ম নিচ্ছে বিচ্ছিন্নতা ও অসহিষ্ণুতা। 

সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সর্বস্তরের মানুষই কিন্তু এখন পারফর্মার। প্রবাসী ভাই-বোন থেকে শুরু করে পাড়ার বখাটে কিশোর সকলেই পারফর্মার। নিজের ছোট্ট গন্ডিতে বসে নিজেকে মহান রাজা ভাবার এই সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায়? তাই ঘরে ঘরে এখন গায়ক, নায়ক, সংবাদকর্মী। সবাই যদি পারফর্ম করে দর্শকটা আসলে কে হবে?  ফলে নতুন এক শ্রেণির উৎপত্তি হলো, সেটা হল ট্রলবাজ শ্রেণি। এরা যেকোনো উদ্যোগকে ট্রল করবার জন্য  ওঁত পেতে অপেক্ষায়  থাকে।

২০১৬ সালে চীনে টিকটকের জন্ম। অতিমাত্রায় টিকটকের ব্যবহার যে একটি সামাজিক ব্যাধি তা আগেই টের পেয়েছিলো চীন, তাই সেই চীনেই টিকটক এখন নিষিদ্ধ। অথচ বাংলাদেশের রাস্তাঘাট অলগলিতে এই টিকটকারদের শুটিংয়ের যন্ত্রণায় এলাকাবাসী বিরক্ত। এদের কারণে রাস্তাঘাটে হাঁটাই যায় না। যেখানে সেখানে এরা শুটিং করতে নেমে যায়। রাজধানীর আগারগাঁও একটি রাস্তা আছে, তার নামই হয়ে গেছে ‘টিকটক পাড়া’। এই পাড়ার নাকিব প্রায় সবাই টিকটকার, ঘরের বেড্রুম থেকে অলি-গলি চিপাচাপা সবখানে মোবাইল ক্যামরা সচল।

 টিকটকারদের আছে নানা রকম গ্যাং বা গ্রুপ। যোগাযোগের জন্য রয়েছে ম্যাসেঞ্জার, টলিগ্রাম ও নানা চ্যাট গ্রুপ। সেখানে নানারকম অবৈধ কর্মকাণ্ডের আলাপ আলোচনা চলে রাতভর। অভিযোগ আছে, টিকটক ব্যবহার করে অনেকেই জড়িয়ে পড়েছেন চাঁদাবাজি, মাদকসহ নারীসংক্রান্ত নানা অবৈধ কাজে। টিকটক পার্টির নামে জুয়ার আসর, মাদক কেনাবেচা আর সেবনের কার্যক্রমও চলে হরহামেশা, গড়ে উঠছে কিশোর গ্যাং ।  

মাইক্রোফোন পেলেই কিংবা ক্যামেরা চলেই এরা দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো অনর্গল কথা বলতে শুরু করে। অথচ জ্ঞানী ব্যক্তি মাত্রই নিশ্চিতভাবে কম কথা বলবেন। কারণ, অধিক কথা বলতে গেলেই ‘ভুল’ কথা বলবার আশঙ্কা বাড়বে। সুতরাং জ্ঞানীরা সাধারণত যতটুকু বলে থাকেন, জেনে-বুঝেই বলেন।

এইসব টিকটকাররা একদিকে যেমন অশ্লীল কর্মকাণ্ডের বিস্তার ঘটাচ্ছে অন্য দিকে তৈরি করছে মানসিক বৈকল্য। 

==========

১৫ শতকের অন্ধকার যুগে দ্য ভিঞ্চি বা মাইকেল অ্যাঞ্জেলোরা যদি কাজ না করে অ্যাপ্রিসিয়েশনের আশায় বসে থাকতেন, পৃথিবীর শিল্পমাধ্যমের এই যুগান্তরারী উন্নয়ন কি আদৌ সম্ভব হতো?

====

আইনের শাসন

ব্রিটানিকার তথ্যানুযায়ী খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গ্রিক আইনপ্রণেতা সোলন প্রথম অ্যাথেন্সকে আইনের আওতায় আনবার পরিকল্পনা করেন। একইভাবে, খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে অ্যারিস্টটল আইনের একটি মডেল সংবিধান প্রণয়নের চেষ্টা করেন। সুতরাং, প্রাচীনকাল হতেই ‘ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা আমরা দেখতে পাই। এই ক্ষেত্রে বলতেই হয় ইংল্যান্ডের কথা। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস-এর আইনি ব্যবস্থা হাজার বত্সর ধরে ক্রমশ বিকশিত হয়েছে।

অতীতের কিছু কিছু আইনি ব্যবস্থা ছিল বিস্ময়কর। যেমন দ্বাদশ শতাব্দীর শেষাবধি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্তকে নিজের নির্দোষ প্রমাণের জন্য এক ‘অগ্নিপরীক্ষা’ দিতে হত। অভিযুক্তকে একটি গরম লোহার পাত হাতে তু্লে নিতে হত অথবা ফুটন্ত পানির কড়াই হতে একটি পাথর তুলে নিতে হত।  এতে অভিযুক্তের হাতে ক্ষতের সৃষ্টি হত। যদি তার হাতের ক্ষত তিন দিন পর নিরাময় হতে শুরু করত, তবে মনে করা হত ঈশ্বর তার পাশে আছে। অর্থাত্ অভিযুক্ত নিরাপরাধী। এইভাবে অভিযুক্তকে তার নির্দোষতা প্রমাণ করতে হত। পরবর্তী সময়ে এই ধরনের অগ্নিপরীক্ষার মাধ্যমে বিচার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল


আমাদের দেশে এখন তিন ধরনের

আমাদের দেশে এখন তিন ধরনের মানুষের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। প্রথম শ্রেণিতে আছেন—যারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। এরা দলের হয়ে সব সময়ই হাততালি দেয়। দল ভালো করলেও  বাহবা দেয়, জঘন্য খারাপ কিছু করলেও বাহবা দেয়। এদের বলা যায় দলবাজ। এর বাইরে একদল—‘গোপাল কলা খায়’-মার্কা মানুষ আছেন, যারা ‘কী করতে হবে’ বিষয়ে রেডিও-টেলিভিশনে-সেমিনারে-গোলটেবিল বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। নানা বিষয়ে নসিহত করেন। এরা চমত্কার করে কথা বলেন। ধোপদুরস্ত পোশাক পরেন। রুটি-রুজি নিয়ে তাদের ভাবতে হয় না। কারণ তারা প্রায় সবাই ভালো রোজগার করেন বা করেছেন। এদের অনেকেই আবার ‘অবসরপ্রাপ্ত’। জীবনের তিন কাল আরাম-আয়েশে কাটিয়ে শেষ বয়সে অবসর বিনোদনের উপায় হিসেবে ‘কী করতে হবে’-বিষয়ে জ্ঞানদান করতে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এদের অনেকের মনের কোণে একটু পদ-পদবি-সম্মান-পদক-পুরস্কারের মোহও কাজ করে। এই শ্রেণির ব্যক্তিরা নিজেদের নাম দিয়েছেন—সিভিল সমাজ বা নাগরিক সমাজ বা সুশীল সমাজ। 


এই রাজনৈতিক সমাজ আর সুশীল সমাজের বাইরে আরো এক শ্রেণির মানুষ আছেন। তারা হলেন—আমপাবলিক। সুশীল সমাজ আর রাজনৈতিক সমাজ এদের নাম দিয়েছেন—জনগণ। এই জনগণও এক আজব চিজ। তারা কারো সাতেও নেই পাঁচেও নেই। আবার তারা সবখানেই আছে। তারা সুশীল সমাজের টিভি টকশো মনোযোগ দিয়ে শোনে।  এই কথাগুলো সমাজে প্রচার করে বেডায়। কিন্তু যখন কোনো সুশীল ব্যক্তি ভোটে দাঁড়ায়, তখন তাকে ভোট দেয় না! ভোট দেয় তাদের, যাদের কারণে তারা দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করে এবং সারা বছর যাদের গালাগাল করে। এই জনগণকে  মহামতি প্লেটো বলেছেন—‘যে ব্যক্তি অন্যকে সৎ উপদেশ দেয় কিন্তু নিজে সত্কর্ম করে না, সেই ব্যক্তি মশালবাহী অন্ধের ন্যায়, তার দ্বারা অন্যেরা পথ দেখে কিন্তু নিজে দেখতে পায় না।’

 

হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য ‘নাইওর’ 

গ্রামবাংলা থেকে ‘নাইওর’ শব্দটিও হারিয়ে যেতে বসেছে। বিয়ের পর নানা উপলক্ষ্যে মেয়েরা শশুরবাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে অতিথি হয়ে আসে। শশুরবাড়ির দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে তারা নাইওর এসে যেন কটা দিন প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়। একে ‘নাইওর’  বলে।  শশুরবাড়ি্তে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি বা সেই বাড়ির বড়দের কড়া শাসনে থাকতে হতো মেইএদের। ইচ্ছে-স্বাধীনমতো কিছু করার অধিকার ছিল না। সেই জীবন ছিল জড় বস্তুর মতো। স্বাভাবিকভাবেই তার প্রাণ হাঁসফাঁস করত একটু মুক্তির স্বাদ পাওয়ার জন্য। বাপের বাড়িতে আসার জন্য তার প্রাণ কাঁদত। যদি বাপের বাড়ি থেকে বাপ ভাই কেউ আসতো তাহলে মেয়েরা আকাশের চাঁদ যেন হাতে পেতো। তখন সন্তান হওয়ার সময় মেয়েকে বাপের বাড়িতে আনাটাই ছিল নিয়ম। সন্তান প্রসবের পর মেয়েটির ও নবজাতকের যে যত্নের প্রয়োজন হয়, সেটি বাপের বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও কল্পনা করা যায় না। নাইওর এসে  শিশুটি পেত তার জন্মস্থান নানাবাড়ির ঠিকানা বলার অহংকার।

==========

 

যে যায় লঙ্কায় সে হয় রাবন

বিপদ কেটে গেলে আমাদের অবস্থা হয় উপকথায় কথিত কাকের মতো। কাক যেমন গাব খাইতে খুব পছন্দ করে; কিন্তু গলায় আটকে গেলে জপ তোলে—‘আর গাব খাব না/ গাবতলা দিয়ে যাব না।’ কিন্তু গলা হতে গাবের আঁটি নেমে গেলেই কাক পুনরায় রব তোলে—‘গাব খাব না, খাব কী?/ গাবের তুল্য আছে কী?’

উন্নয়নশীল প্রায় সকল দেশে বারংবার পরিবর্তনের কথা বলে ছাত্র-জনতা বা সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। এরপর কোনো কোনো ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন যে আসে না তা নয়; কিন্তু কিছুদিন না যেতেই নূতন শাসকরা দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে একই কাজ শুরু করেন এবং অর্থ পাচারসহ দেশে সৃষ্টি করেন দুঃসহ পরিস্থিতি। সরকারি দল প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ক্ষেত্রবিশেষে বিচার বিভাগকে কবজা করে ফেলেন তারা। এভাবে এই সব দেশে যারা ক্ষমতায় থাকেন, শেষপর্যন্ত তাদের আরাধনা হয়ে দাঁড়ায়- ‘এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই’।

 এইভাবে সংস্কার বা পরিবর্তনের ধুয়া তুলে ক্ষমতা গ্রহণ করলেও তারা দুর্নীতি ও অপশাসনের ক্ষেত্রে অনেক সময় পূর্ব শাসনামলকেও ছাড়িয়ে যান। এই চক্রাবর্তে আটকে আছে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্ব।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, যেই সহ দেশের হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেস্ক (এইচডিআই) তথা মানব উন্নয়ন সূচক খুব কম থাকে, সেই সব দেশে ছাত্র-জনতা বা সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা বেশি থাকে। মূলত বেকারত্ব, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, মূল্যবৃদ্ধি, নৈরাজ্য, দুর্নীতি বা লুটপাটের হাত ধরেই ঘটে এইসব অভ্যুত্থান। 

এই সব দেশে অভ্যুত্থান সফল হয় দুর্বল রাষ্ট্র ও দুর্বল নাগরিক সমাজের কারণে। যেমন- লাতিন আমেরিকা সোনা, তামা, কটন ও চিনি সম্পদে সমৃদ্ধ। তারপরও এই সহ দেশের নাগরিকরা দরিদ্র ও পশ্চাত্পদ।  বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯০ সাল হতে আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের দেশগুলোতে মোট ২৭ বার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। আবার ১৯৫০ হইতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে মোট ৪৮৮টি অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে আফ্রিকাতেই ঘটেছে ২১৬টি। এর মধ্যে ১০৮টি অভ্যুত্থান ছিল সফল। এই সকল দেশের জনগণ দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও অপশাসনে ছিলেন নিষ্পেষিত ও অসন্তুষ্ট। এই অনিয়ম ও অপশাসনের কবল থেকে এখনো তারা মুক্ত হতে পারেনি । কারণ ঐ একটাই-যে যায় লঙ্কায় সে হয় রাবন।

 

আমাদের জাতিসত্তাঃ আবেগপ্রবন এক জাতির নাম বাঙালি

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ব্যক্তিত্বের গঠন কাঠামোয় মানব মনের তিনটি স্তরের কথা বলেছেন। সবচেয়ে নিচে রয়েছে অচেতন স্তর—যা সর্বাধিক বিস্তৃত, পাপপূর্ণ ও জঘন্য প্রকৃতির। ব্যক্তির জন্মগত আদিম কামনা-বাসনা ও প্রবৃত্তিসমূহ এই স্তরে বিরাজ করে। আর সবার ওপরে চেতন স্তর—যেখানে আবেগ,অনুভূতি, চিন্তাভাবনার বসতি। মানুষ বেশির ভাগ সময় চেতন স্তরে থাকে। এ স্তরের মাধ্যমে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ ও পরিবেশের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে। এই স্তরটির ব্যাপ্তি যার যত বেশি, সে তত সচেতন ও সুনাগরিক থাকে। তার আবেগ-অনুভূতি, চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণে থাকে। লোভ-লালসা পরিহার করতে সমর্থ হয়। তাই সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে। বিশ্ব জুড়ে সমগ্র মানবজাতির দৈনন্দিন কাজকর্মে মানবমনের এই চেতন স্তর কাজ করলেও বাঙালি হরহামেশা যেসব কাজ করে, তা অচেতন স্তর থেকেই করা। যেখানে তার খরাপ প্রবৃত্তিসমূহ বিদ্যমান থাকে। আমরা আবেগপ্রবন এক জাতি, লোভ বলি আর লালসা, স্বার্থপরতা বা আত্মকেন্দ্রিকতার নৈপুণ্যে উথলে পড়া এক জাতি আমরা। সুযোগের সদ্ব্যবহারে সর্বদা সচেষ্ট থাকি। কোনো কাণ্ডই  সে যত সাধারণ কাণ্ড হোক, তা একেবারে তুলকালামে পরিণত করাই এ জাতির কর্ম। 

 

মূল্যস্ফীতি ১ শতাংশ বাড়লে সুখের গড় ৩ শতাংশ কমে

১৯৭৫-১৯৯১ সালে ইউরোপে পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা যায়—মূল্যস্ফীতি ১ শতাংশ বাড়লে সুখের গড় পরিমাপ (১ থেকে ৪ স্কেলে) ৩ দশমিক ২ থেকে ৩ দশমিক ১ শতাংশে কমে আসে।

আমদানিকৃত কিছু পণ্য—তেল, গম, চিনি, পেঁয়াজের কথা না হয় বাদই দিলাম। শতভাগ দেশে উত্পাদিত কাঁচা মরিচ সপ্তাহান্তে বেড়ে হয়েছে ১০ গুণ। ডেঙ্গুর মৌসুমে ডাব মনে হয় যেন জাপানের পণ্য। আলু কিনতেও হিমশিম খাচ্ছে জনগণ। চাহিদার তুলনায় ২০ লাখ টন বেশি উত্পাদিত হলেও হিমাগার ও মজুতদারের দৌরাত্ম্যে ১০ টাকার আলু ৭০ টাকা! দেশে প্রতি বছরই ডিম, দুধ ও মাংসের উত্পাদন বাড়ছে। তা সত্ত্বেও বাজারে অস্থিরতা  আছে।

প্রাচীন গ্রিসের ডেলফি নগরের ভবিষ্যদ্বাণীর মন্দিরের প্রধান ফটকে লিপিবদ্ধ ছিল—‘কোনো কিছুতেই বাড়াবাড়ি করবে না।’কিন্তু আমাদের সব কাজ কারবারের চলছে চরম রকমের বাড়াবাড়ি। প্রতিদিন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ৪৪ থেকে ৪৫টি দল অভিযান পরিচালনা করে করে জেল জরিমানা ও মামলার জট বাঁধিয়ে ফেলে। কিন্তু আমাদের মনের মধ্যে বা ব্যক্তিত্বে যে চুরি, অতি মুনাফালোভী মানসিকতার জট ঢুকে বসে আছে, সেখানে পরিবর্তন করতে না পারলে কোনো কিছুতেই এখান থেকে মুক্তি মিলবে কি?

 

বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নীতিহীনতা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত রাশিয়া, জাপান, জার্মানি বা ফ্রান্সের উন্নত হতে মাত্র ১০ থেকে ১২ বছর সময় লেগেছে। কিন্তু এত সমপদ ও সম্ভবনা থাকার পরও স্বাধীনতার প্রায় ৫৫ বছরেও বাংলাদেশের উন্নত দেশে পরিণত হতে পারল না। দুর্নীতির মতো সত্যকে সঠিকভাবে মোকাবেলা না করা এবং যোগ্য ব্যক্তিদের মূল্যায়ন না করাও এ দেশের পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ। 


ব্যতিক্রম ছাড়া দেশের একটা এলাকা বা প্রতিষ্ঠানও খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে একজন নীতিবান ব্যক্তিকে সম্মানিত করা হয়েছে। ‘সত্-নীতিবান ও দেশপ্রেমিক হয়ে সাধারণ জীবনযাপন করা নির্বুদ্ধিতা এবং চুরি-দুর্নীতি-লুটপাট করে ধনী হওয়া সম্মান ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয়’—এই নীতি সমাজে স্থায়ী রূপ লাভ করেছে। বাংলাদেশের একমাত্র সমস্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের নীতিহীনতা এবং এর ফলে সৃষ্ট পরশ্রীকাতরতা, রাজনৈতিক সহিংসতা, দুর্নীতি, বিভেদ ও অনৈক্য। 

—------------

কোনোকিছু দ্রুত শেখার উপায় জেনে নিন

অনুশীলনের সময় সংক্ষিপ্ত বিরতি কেবল বিরতিই নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি। এটি শেখার প্রক্রিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। গ্যাপ ইফেক্ট গবেষণা শনাক্ত করেছে যে, কোনো দক্ষতা অনুশীলন করার সময় মাত্র ১০ সেকেন্ডের জন্য বিশ্রাম নিলে তা আপনার মস্তিষ্ককে আপনি যা শিখেছেন তা পুনরায় মনে করতে এবং শক্তিশালী করতে দেয়।

কল্পনা করুন আপনি একটি নতুন খেলা নিখুঁত করার চেষ্টা করছেন। কয়েকবার পুনরাবৃত্তির পরে, দ্রুত বিরতির জন্য থামেন। এই বিরতির সময়, মস্তিষ্কের নিউরনগুলো দ্রুত  আপনি যে ক্রিয়াটি অনুশীলন করেছিলেন তা অনুকরণ করে। এই নিউরাল রিপ্লে দক্ষতাকে শক্তিশালী করে, আপনার মস্তিষ্ক অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে, তাই আপনার পরবর্তী প্রচেষ্টা আরও শক্তিশালী হয়।

মূল কাজের ছোট ছোট অংশে অনুশীলন করুন: কয়েক মিনিটের জন্য দক্ষতার ওপর ফোকাস করুন। এরপর ছোট একটি বিরতি নিন। ১২ থেকে ১মিনিটের  জন্য বিরতি দিন। আপনার মস্তিষ্ককে তার কাজ করতে দিন।

এটি অধ্যয়ন থেকে শুরু করে খেলাধুলা পর্যন্ত যেকোনো কিছুর জন্য কাজ করে,  ক্লান্তি কমানোর সঙ্গে সঙ্গে আপনাকে দ্রুত অগ্রগতিতে সহায়তা করে। মনে রাখবেন, এটি আলসেমি নয়,  এটি কৌশলের সেরা অংশ।


নির্বোধ থাকো না। চিন্তা করো 

নিজের ভিতরে খুঁড়ে দেখো—কে তুমি? বিশ্লেষণ করো নিজেকে। মূলে যাও, উৎস যাও। পরিস্থিতির ওজন না বুঝে যা  খুশি বলো না।  যা কিছু প্রত্যাশা করো না। চিন্তা করো। গভীরভাবে আত্মবিশ্লেষণ করো। পরিস্থিতিকে সন্ধিবিচ্ছেদ করো। বুঝে দেখো—যা হচ্ছে বা হতে চলেছে;, তা কেন দরকার? তমি যা করছ, তা কি ঠিক করছ? এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে তারপর পদক্ষেপ নাও। নইলে পতন ঘটবে। আগ-পিচ না ভেবে হয়তো পাইপলাইনে থাকবার জন্য লাফ দিয়ে পাইপের মধ্যে ঢুকে পড়লেন। সেই পাইপলাইনে জ্যাম তৈরি করে সমস্যা তৈরি করলেন। কিন্তু লাভ কিছুই হলো না, বরং বড় ক্ষতি হয়ে গেল। হিসেব করে ক্ষতির মাত্রা দেখলে অবাক হয়ে যাবেন। কাজেই  নিজের ওজন বুঝে পা ফেলতে হবে,  ওজন না বুঝে ঝাঁপ দিলে বিপদে পড়তে হবে।

আসলে আমাদের বেশির ভাগ মানুষই খুব বেশি ‘চিন্তা’ করার ধীশক্তি রাখেই না।  বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন মনে করতেন—‘৫ শতাংশ মানুষ চিন্তা করতে পারেন। ১০ শতাংশ মানুষ মনে করেন যে, তারা চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা রাখেন। অন্যদিকে ৮৫ শতাংশ মানুষ যেন পণ করেছে, তারা বরং মারা যাবেন তবু চিন্তাভাবনার ধার ধারবেন না।’ তারা আসলে অবোধ শিশুর মতো। যেই শিশু জানে না—আগুনে হাত দিলে হাত পুড়বে—সে তো আগুনের উজ্জ্বল জ্যোতি দেখে তাকে ধরতে ব্যাকুল হবেই। 

দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছেন—‘একজন মানুষকে উত্তরের চাইতে তার প্রশ্ন দ্বারা বিচার করো।’ কারণ প্রশ্ন করতে হলে চিন্তাভাবনা করতে হয়।  সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী বলে খ্যাত সক্রেটিস কিন্তু উত্তর দিতেন না, শুধু প্রশ্ন আর পাল্টা প্রশ্ন করতেন, এই ধারালো প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যুবকদের দল তার পিছনে সারাদিন ঘুরঘুর করত।

============

আব্রাহাম লিংকন বলিয়াছিলেন, ‘আপনি কিছু সময় কিছু লোককে মিথ্যা কথা বলিয়া বোকা বানাইতে পারেন, কিন্তু সকল সময় সকলকে বোকা বানাইতে পারিবেন না।


বয়স কত 

পঞ্চাশ-ষাট বছর পূর্বে কী ছিল আমাদের অবস্থা? গ্রামগঞ্জে কাদামাটির রাস্তা, ছনের ঘর, দুই বেলা কোনোরকমে দুই মুঠি অন্নের সংস্থান—এর চাইতে খুব বেশি ভালো অবস্থা কি ছিল আমাদের দেশের সিংহভাগ মানুষের ছিল? সেকালে মেয়েদেরকে বয়স কুড়ি হলেই বুড়ি  বলা হতো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হৈমন্তী’ গল্পে হৈমন্তীকে কোনো-এক দিদিমা জিজ্ঞাসা করলেন, ‘নাতবউ, তোমার বয়স কত বলো তো।’ হৈমন্তী বলল, ‘সতেরো।’ সেইকালে কনের বয়স সতেরো বছর হওয়াটা মানে, সেই কনে আইবুড়ো। সেই কারণে হৈমন্তীর বয়স লুকাতে তার শাশুড়ি বললেন, ‘তোমার বাবা যে বললেন, তোমার বয়স এগারো!’ হৈমন্তী চমকিয়ে বলল, ‘ আমার বাবা বলেছেন? কখনো না।’  এ নিয়ে বিস্তর ঝামেলা হল। অতঃপর বাবা আসলে হৈমন্তী  তাকে প্রশ্ন করল, ‘কেউ যদি বয়স জিজ্ঞাসা করে কী বলব?’ হৈমন্তীর বাবা বললেন, ‘মিথ্যা বলবার দরকার নাই, তুমি বলবে—আমি জানি না...।

==================


বৌদ্ধ দর্শন বলে যে, কথা বলার আগে পাঁচটা ব্যাপার যাচাই করে নিয়ো। এগুলো হলো, কথাটা কি সত্য? কথাটাতে কি মায়া-দয়া আছে? কথাটাতে কারও উপকার হবে? কথাটা কি প্রয়োজনীয়? কথাটা বলার এখনই কি উপযুক্ত সময়?

========


সম্রাট আকবর ও অশোককে ভারতবর্ষে দ্যা গ্রেট নামে ডাকা হয়

প্রতিটা মানুষকে দাড়ি কমা মেনে চলতে হয়। কখন থা্মতে হবে, কখন চলতে হবে, এই পরিস্থিতি যদি কেউ না বুঝে, তাহলে তার পরিণতি হয় ভয়াবহ। জার্মানির ‘কোল গার্ল’ নামে পরিচিত  প্রথম নারী চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল টানা ১৬ বছর ক্ষমতায় থেকে বিশ্বের নারীদের জন্য একজন রোল মডেলে পরিণত হয়েছেন। সময়মত পদ থেকে বিদায়  নেওয়ার মাধ্যমে মার্কেল তার ৩১ বছরের রাজনৈতিক জীবনের এক স্বর্ণ যুগের ইতি টেনেছেন। অপরদিকে হিটলার, গাদ্দাফি থেকে শুরু করে আমাদের হাসিনা  একক ক্ষমতা ধরে রাখতে দুর্নীতি থেকে শুরু করে খুন-গুম পর্যন্ত এমন কোন অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। কিন্তু তার এ শাসন যদি এক ব্যক্তির আধিপত্য না হয়ে একাধিক ব্যক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টা হত, তাহলে আওয়ামীলীগের প্রভাব-প্রতিপত্তি  ও টাইম জোনের সময়টা অনেক বেড়ে যেতো। যেমন সম্রাট আকবর ও অশোককে ভারতবর্ষে দ্যা গ্রেট নামে ডাকা হয় তাদের শাসনামলে সম্মিলিত ব্যবস্থার কারণে। যে-কোনো সংগঠনে দুর্যোগ তৈরি করে একক নেতৃত্ব । পরিবার, সংগঠন কিংবা রাষ্ট্র সব ক্ষেত্রে কেউ যদি দিনের পর দিন এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে থাকে; এক ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, তখন তার সীমাবদ্ধতার কারণে হওয়া ভুলগুলো থেকে রেহাই পাওয়া যায় না।  পরিবার, সংগঠন বা দেশটি ভয়াবহ খাদে পড়ে যায়। 

১৯৭৫ সালে একদলীয় (বাকশাল) শাসনব্যবস্থায় সরকার পরিবর্তনের কোনো ব্যবস্থা সংবিধানে রাখা ছিল না। পরিবর্তন হলে, সেটি হতো রাষ্ট্রপতির ইচ্ছায়। ফলে সরকার পরিবর্তন হলো রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যা করার মধ্য দিয়ে। শেখ মুজিবের সরকার এমন এক সময়ে উৎখাত হয়েছিল, যখন তাঁর জনপ্রিয়তা তলানিতে নেমে এসেছিল। হাসিনার আবস্থাও  একই গতিপথে ।

শেখ হাসিনা ভেবেছিলেন ক্ষমতার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ আছে তাঁর হাতে, যা কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারবে না। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে, কোনো উপদেষ্টা তো দূরের কথা হাসিনার সামনে বড় বড় নেতারাও কোনোরকম সিদ্ধান্ত বা প্রস্তাব উপস্থাপন করতে পারতো না। দুই বোন ঘরের মধ্যে যে সিদ্ধান্ত নিত, তা-ই পুরো দেশের জন্য কার্যকর হয়ে যেত। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে যতেষ্ট সময় হাতে পেয়েছে  হাসিনা । কিন্তু একের পর এক ব্যক্তিগত বিতর্কিত বক্তব্য ও ভুল সিদ্ধান্তের ফলে ক্রমেই বেড়েছে আন্দোলনের তীব্রতা। ফলাফল পলায়ন। শেখ হাসিনা এখনো মনে করে আওয়ামীলীগ এবং বাংলাদেশ তার পৈতৃক সম্পত্তি।

একসময় এরশাদ, খালেদার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক শাসনের যূপকাষ্ঠে পুরো দেশ বলি হয়েছে। সবশেষে হাসিনা, তাঁর আত্মীয়স্বজন, জ্ঞাতিগুষ্টি, চামচা ও লাঠিয়াল দিয়েই শাসনকাজ পরিচালিত করে। এর বিরুদ্ধে মানুষ ক্ষুব্ধ হচ্ছিল; কিন্তু তা প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছিল না।

হাসিনার শাসনামলের গুম, খুন,দমন-পীড়ন, লুটপাট ও পুঁজি পাচার  শুধু এশিয়া নয়, পুরো পৃথিবীর রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। অর্থনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতিকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন হাসিনা, সরকারের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিদেশে পাচার করা হয়েছে কয়েক লাখ কোটি টাকা। হাসিনার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-সংসদ সদস্য, নেতা-কর্মী, হাসিনার পৃষ্ঠপোষকতা-ধন্য অলিগার্ক ব্যবসায়ীরা এই পুঁজি লুণ্ঠন ও পুঁজি পাচারযজ্ঞের প্রধান কুশীলব। এই গণতন্ত্রহীন লুটপাটতন্ত্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে চরম বিশ্বাসঘাতকতা । 

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীনের পুত্র সোহেল তাজ বলেছেন, ২০০৯ সালেই শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘বিএনপি অনেক টাকা কামিয়েছে। এখন আমাদেরকে দুহাতে টাকা বানাতে হবে।’ হাসিনার এই মাল কামাও নীতির কারনে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের প্রায় সব নেতা-কর্মীই গত সাড়ে ১৫ বছরে কোনো না কোনোভাবে অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কোটিপতি হওয়ার মিশনে অংশগ্রহণ করেছেন।

শেখ হাসিনার সময়ে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অর্জিত হয়েছিল, সেটাও ছিল ঋণ করে ঘি খাওয়া। একের পর এক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি সারা দেশে  লাগামহীনভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে শত শত উন্নয়ন প্রকল্প। প্রতিটি প্রকল্পে প্রকৃত ব্যয়ের তিন-চার গুণ বেশি ব্যয় দেখানোর মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে লাখ লাখ কোটি টাকা।

প্রতিবছর জিডিপিকে বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে, মাথাপিছু জিডিপি বাড়িয়ে দেখানোর জন্য দেশের মোট জনসংখ্যাকে কমিয়ে দেখানো হয়েছে। দেশের রপ্তানি আয়কে বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতির হারকে সব সময় কমিয়ে দেখানো হয়েছে।

 শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকাটা অনেকটাই নির্ভর করত পুলিশ বাহিনীর ওপরে। তরুণেরা এগিয়ে আসছিল, গুলির সামনে বুক পেতে দিচ্ছিল। তখন শেখ হাসিনা সেনাবাহিনী ডাকলেন। সেনাবাহিনী জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়ালো না। তাতে করে শেখ হাসিনার স্বপ্নের সৌধ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। সেনাপ্রধান ওয়াখারুজ্জামান -এর ঐতিহাসিক ভূমিকা বঙ্গবন্ধুর পরে বাংলাদেশকে দ্বিতীয়বার পুনর্জন্ম করেছে।

একাত্তরে শেখ মুজিব ছিলেন জনগণের নেতা। পঁচাত্তরে ছিল শেখ মুজিবের শাসনের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান।  ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত সময়ের শেখ মুজিবের রাজনীতিতে অনেক ভুলত্রুটি ছিল, তাঁর অনেক ব্যর্থতা ছিল। কিন্তু, ওগুলোর অজুহাতে স্বাধীনতাসংগ্রামে শেখ মুজিবের অতুলনীয় অবদানকে অস্বীকার করা্র উপায় আছে কি?।