কথায় আছে, 'গুরু মেলে ঘরে ঘরে/ শিষ্য মেলে কপাল জোরে'। অর্থাৎ যথার্থ জ্ঞান আহরণ করিবার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন শিষ্য বা ছাত্র পাওয়া সহজ নহে। বড়বিদ্যা গ্রহণ করিবার মতো গুণ খুব বেশি শিষ্যের থাকে না। একইভাবে আমরা বলিতে পারি-'উত্তর মেলে পৃষ্ঠা জুড়ে/ প্রশ্ন মেলে যোজন দূরে'। অর্থাৎ ঠিকঠাক প্রশ্ন করিতেও অনেক যোগ্যতা লাগে।
=====
রমজান আসার সঙ্গে সঙ্গে আরম্ভ হয়ে যায় মূল্যছাড়ের হিড়িক। মালয়েশিয়াতেও বিপুল পরিমাণ পণ্যে মূল্যছাড় দেয়। ইউরোপ, আমেরিকায় দেশগুলো অন্য ধর্মের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল। সেখানেও রমজান উপলক্ষ্যে বিভিন্ন কোম্পানি বাজারে পণ্যে ব্যাপকভাবে মূল্যছাড় দেয়।
অন্যদিকে, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড় উৎসব ক্রিসমাস ডে, থ্যংকসগিভিং ডে, ব্ল্যাক ব্ল্যাক ফ্রাইডে ও হ্যালোউন।এসব উৎসব পালন করার জন্য উন্নত বিশ্বে সরকার বা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য ব্যাংক ঋণ প্রদান করে। সেখানে উৎসব ঘিরে অযৌক্তিকভাবে মূল্য বৃদ্ধির কোনো প্রবণতা ব্যবসায়ীদের নেই।সব সময় আমরা সততা, মানবতা ও ইসলামের নীতি-নৈতিকতার কথা বলি। নৈতিকতার মানদণ্ডে আমরা হরহামশা নিজেদের শ্রেষ্ঠ দাবি করি বটে। আমরা লোভ সংবরণ করতে পারি না। লোভ-লালসা চরিতার্থ করার জন্য অসৎ পথ অবলম্বন করছি। সমাজে চলছে ভীষণ এক ভয়াবহ অস্থিরতা। অন্যায়-অপরাধ করে অতি দ্রুত বিত্তশালী হওয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। কালোবাজারি, মজুতদারি করে মসজিদে গিয়ে সিজদা দিয়ে আল্লাহর কাছে জান্নাত খোঁজে।পবিত্র রমজান সহিষ্ণুতা, কৃষ্ণসাধন, আত্মশুদ্ধি ও সংযমের মাস হলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা এ মাসে ভীষণ বেপরোয়া ও অসংযমী হয়ে হাদিসে আরো বর্ণিত আছে, 'যে ব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত কোনো পণ্য গুদামজাত করে রাখবে, মানুষকে কষ্ট দেবে, সে এই সমুদয় সম্পদ দান করে দিলেও তার গুনাহ মাফের জন্য যথেষ্ট হবে না [মিশকাত ২৭৭২]।
=======
স্বামী-স্ত্রী উভয়ই পরস্পরের প্রতি সম্মান মর্যাদা, দায়িত্ব-কর্তব্য, সহনশীলতা, বিশ্বস্ততা নিয়ে দাম্পত্যে থাকলে সন্তানরা বাবা-মায়ের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে বড় হয়।
উপায়হীন দাম্পত্য হলো স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে অপছন্দ করে, ঘৃণা করে, মতের ভিন্নতা থাকে, আলাদা বিছানায় শোয়, ছেলেমেয়ের দিকে তাকিয়ে একই বাসায় থাকে, আর্থিক সামাজিক বিষয় এমনভাবে থাকে যে কেউ কাউকে ছেড়ে যেতে পারছে না।
কিন্তু দাম্পত্যের সংকট ছেলেমেয়েরা শিশু বয়সেই বুঝতে পারে। বাবা-মায়ের আচরণ, চলাফেরা, কথাবার্তা, শিশু মনে গভীর দাগ কাটে। বাবা-মা অনেক সময়ই সন্তানকে নিজের পক্ষে আনতে, সহানুভূতি পেতে একে অপরের চরিত্র সম্মানহানি করতে সচেষ্ট হয়।
শিশুরা বাড়িতে সহিংসতার বড় সাক্ষী হয়ে যায় বাচ্চারা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভোগে, বিছানায় প্রস্রাব করে দেয়, অকারণে পেটব্যথা হয়, স্কুলে যেতে অনাগ্রহী হয়ে ওঠে, সামাজিক মেলামেশায় উৎসাহ পায় না, নিজ ঘরে একাকী থাকতে পছন্দ করে, কোনো কাজে উৎসাহ বোধ করে না, হতাশায় ভুগতে থাকে। বাবা মায়ের কাছ থেকে প্রাপ্ত গুণাবলি শিশুকে পরিণত বয়সে সাহসী, সৎ, মেধাবী, জ্ঞানী, বুদ্ধিমান মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কথায় আছে যেমন গাছ তেমনই ফল ! দাম্পত্য জীবনে প্রতারণা, নিষ্ঠুরতা, অপমান, অসম্মান, মিথ্যা, লুকোচুরি সন্তানকে মানসিকভাবে দুর্বল হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে। অন্যদিকে একটি মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ পরিবারে গড়ে ওঠা শিশুরাই ভবিষ্যতে প্রবীরে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বড় ধরনের ভূমিকা পালন করতে পারে।আমাদের সন্তানরা ঝগড়া-বিবাদের দাম্পত্য দেখে বড় হয়ে দাম্পত্য যাপনে অনাগ্রহী হয়ে উঠতে পারে।