কবি কাজী নজরুল ইসলাম পাঞ্জাবীর সাথে সর্বদা ধুতি পরতেন কেন? বাঙালি পোষাক/ Dress in ancient bengal
শাড়ি পরা প্রথম মূর্তি পাওয়া যায় সিন্ধু প্রদেশের এক পুরোহিতের পাথরের মূর্তিতে। সিন্ধু উপত্যকার লোকেরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে লম্বা কাপড়ের টুকরা কোমরে ব্যবহার করতো কিন্তু বুক থাকত খোলা। সিন্ধু এলাকার মহিলাদের এই কাপড়ের নাম ছিল নিভি বা শাড়। এই শাড় আরো লম্বা হলে লোকে একে শাড়ি বলত। শাড়ির একটা অংশ মাথায় তোলার প্রচলন শুরু হয় মোঘল শাসনামলে। এ সময় থেকে মহিলাদের মাথা ঢাকার রেওয়াজ চালু হতে শুরু হয়।
পরবর্তীতে কাঁচুকি নামে এক টুকরা কাপড় শরীরের উপরের অংশে পরার প্রচলন নারীদের মধ্যে চালু হয়,। ইংরেজ নারীদের পরা ব্রা-এর অনুকরনে কাঁচুককে ব্লাউজের রুপান্তর শুরু হয়। তবে ইংরেজ আমলেও সব মেয়েরা স্তন ঢেকে রাখার অধিকার পেত না। কেরেলা রাজ্যসহ ভারতের অনেক রাজ্যে নিয়ম ছিল ব্রাহ্মণ ব্যতিত অন্য কোনো হিন্দু নারী তার স্তনকে ঢেকে রাখতে পারবে না। ইংরেজরা এই ব্রাহ্মণ্য আইনের সুযোগ নিয়ে নামে মুলাককারাম এক প্রকার ট্যাক্স বা ‘স্তন কর’ চালু করে। স্তনের সাইজের উপর নির্ভর করে ট্যাক্স বা কর কম বা বেশি দিতে হতো। এই আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় কেরেলার এক নারী, নাম নাঙ্গেলী। ১৮০৩ সালে ট্যাক্স কালেক্টর-এর সামনে নিজের স্তন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে ফেলেন তিনি। স্তন কাটার কিছুক্ষণ পরেই নাঙ্গেলীর মৃত্যু হয় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে। এই ঘটনায় সেখানে আন্দোলন এমন দানা বেধে ওঠে যে, এই ঘটনার পর থেকেই স্তন কর বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে হিন্দু নারীরা তাদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করার অধিকার দাবি করে, তখন হিন্দু পুরোহিতরা স্পষ্ট করে বলে- নীচু বর্ণের নারীদের শরীরের উপরের অংশ আবৃত করা ধর্ম-বিরোধী। বিষয়টি নিয়ে ১৮৫৯ সালে দক্ষিণ ভারতে একটি বড় দাঙ্গা হয়। এই দাঙ্গা “কাপড়ের দাঙ্গা” নামে অভিহিত। নাঙ্গেলী যেখানে বসবাস করত, পরবর্তীতে নাঙ্গেলীর স্মরণে সেইস্থানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “মুলাচিপারামবু”, যার অর্থ “The land of breasted women”.
তখন চরকায় বোনা সুতো আর তাঁতে বোনা সেলাইবিহীন মোটা কাপড় ছিলো বাঙ্গালিদের পরার কাপড়। পুরুষদের পোশাক ছিলো খাটো ধুতি, কাধে গামছা, আর নারীদের শাড়ি। এগলো সব সেলাইহীন পোশাক। বাংলার সহজিয়া স¤প্রদায়সহ আনেক ধর্মীয় গোষ্ঠী এখনো সেলাইহীন পোশাক পরে। এদেশে লুঙ্গী আসার পর থেকে ধুতিকে হিন্দুয়ানী পোশাক আর লুঙ্গি মুসলমানদের পোশাক বলে মগজে গেঁথে দেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত অনেক মুসলমানই ধুতি পরত। মসজিদে নামাজ পড়ার সময় ধুতির গিট খুলে দিত। পাকিস্তানী আমলেও পাঞ্জাবীর সাথে ধুতি পরা হতো।
যেমন-কবি কাজী নজরুল ইসলাম পাঞ্জাবীর সাথে সর্বদা ধুতি পরতে পছন্দ করতেন। এখন বাঙালী হিন্দুসমাজেও ধুতি প্রায় হারিয়ে গেছে।
যারা বাঙালিয়ানা দেখাতে পায়জামা, পাঞ্জাবী, ফতুয়া, লুঙি পরে, সে পোশাক আদৌ বাঙালির পোশাক নয়। পাঞ্জাবী পাঞ্জাবের পোশাক। এটি আফগানিস্তানের কাবুলিওয়ালারা এদেশে নিয়ে আসেন। আর কাবুলীওয়ালাদের পরনের পায়জামা ছিল ইরানী পোশাক। ্বাঙ্গালীদের প্রিয় লুঙ্গি ছিল তামিল নাড়ুর পোশাক। এটি শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া ঘুরে মায়ানমার থেকে বাংলাদেশে এসেছে। লুঙ্গির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে ধুতি পরিত্যাগ করে লুঙ্গীকে নিজেদের পোশাক বানিয়েছে বাঙ্গালিরা।
উপসংহারে বলা যায়ঃ সুতা এবং কাপড় বোনার শিল্প ভারতবর্ষে এসেছিল মেসোপটেমিয়া সভ্যতা থেকে। সিন্ধু উপত্যকার নারী- পুরুষ সুতা বুনত। ভারতে সুতা প্রথম চাষ ও বুনন শুরু হয় খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে। ঐ সময় সুতায় যে রঙ ব্যবহার হতো, তা এখনো ব্যবহার করা হয়; যেমন- নীল গাছ বা হলুদ থেকে পাওয়া রং। এখানে উল্লখ্য, ব্রিটিশ বণিকরাও ভারত থেকে নীল কিনে নিয়ে যেত ইউরোপে। লাভজনক আখ বা অন্যান্য ফসল বাদ দিয়ে ‘নীলচাষে বাধ্য করতে ইংরেজদের হাতের চাবুক আর নীলকুঠি এখনও বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থানে সময়ের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অর্থাৎ আমাদের প্রাচীন ইতিহাসের দিকে তাকালেও দেখা যাবে, মুসলিম শাসনের পূর্বে এদেশের নারী-পুরুষ উভয়েই একই ধরনের পোশাক পরিধান করতেন। নারী ও পুরুষ উভয়ই শরীরের উপরের অংশ খোলা রাখতেন।
জীবনযাত্রা নির্বাহের পদ্ধতি, সাহিত্য, শিল্প, বিজ্ঞান, দর্শন, ধর্ম অনুশীলনের মাধ্যমে মগজের উৎকর্ষ সাধন করাই হচ্ছে সভ্যতা।
·
·
·
· ধর্ষণ
নারীরা কি মনে মনে ধর্ষণ কামনা করে? নতুন গবেষণা
হোমিনিডি গোত্রের বনবোদের একটি শাখা হোমিনিনা উপজাতি থেকে আসা
হোমো স্যাপিয়েন্স তথা জ্ঞানী মানুষের আবির্ভাব দুই লক্ষ বছর আগে হলেও মানবসভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছেন আজ থেকে মাত্র পাঁচ হাজার বছর আগে। গবেষকদের মতে, মানবসভ্যতার শুরুটা ছিল মাতৃতান্ত্রিক। সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এটি পুরুষতান্ত্রিক হয়ে ওঠে। সম্পত্তি যৌথ মালিকানা থেকে একক মালিকানায় পরিবর্তিত হবার পর থেকেই সম্পদশালী ও ক্ষমতাবান পুরুষরা মনে করতে থাকে, মেয়ে মানুষ হচ্ছে তাদের অন্য আর দশটা সম্পত্তির মতোই ভোগ্যপণ্য। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ-সভ্যতায় ধীরে ধীরে এটি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। আজকে আমরা জানবো ধর্ষণ কারা করে, কেন করে এবং প্রতিরোধের উপায়ইবা কি -
ভারতের ধর্ষণ নিয়ে চমৎকার একটি নিবন্ধ লিখেছেন বেলজিয়ামের অধ্যাপক জ্যাকব ডি রুভার৷ সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘ভারতে প্রতি ঘণ্টায় তিন জন নারী ধর্ষিত হয় – এই তথ্য জেনে ইউরোপের সংবাদ মাধ্যমগুলো ভুলে যাচ্ছেন যে, ঘণ্টায় তিনজন ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন ১২৫ কোটি মানুষের দেশে৷ এক কোটি দশ লাখ মানুষের দেশ বেলজিয়ামেই কিন্তু প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একজন ধর্ষণের শিকার হয়৷ ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের জনসংখ্যা ৫ কোটি ৬০ লাখেরও কম৷ সেখানে প্রতি ঘণ্টায় ৯ জনেরও বেশি নারীকে ধর্ষণ করা হয়৷
বেলজিয়ামের অধ্যাপক এ সব তথ্য দিয়ে বোঝাতে চেয়েছেন, ধর্ষণ শুধু ভারতে নয়, সব দেশেই হয়। জনসংখ্যা অনুপাতে ভারতে অন্যান্য উন্নত রাষ্ট্রের তুলনায় ধর্ষণ অনেক কম হয়৷
আমেরিকা ধর্ষণের দিকে বিশ্বে এক নাম্বারে আছে। সেদিন কাগজে পড়েছি- ফ্লোরিডার এক উন্মুক্ত সৈকতে দিনের বেলা শত শত মানুষের উপস্থিতিতে এক নারীকে কলেজের কয়েকজন বখাটে ছাত্র মিলে ধর্ষণ করলেও কেউ বাধা দিতে এগিয়ে আসেননি।এই ঘটনা ঘটার সময় কেউ পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগও করেননি। কী ঘটছে তারা দেখেছেন কিন্তু কেউ এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল না, বরং যে যার কাজ নিয়েই ব্যস্ত ছিল। আমেরিকার লোকজনের এই মানসিকতার কারণ এইসব তাদের নিত্য চেনা ঘটনা । ‘‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি পাঁচজনে কমপক্ষে একজন নারী হয় ধর্ষণের শিকার হন, নয়ত ধর্ষণের হাত থেকে কোনোভাবে বেঁচে ফিরেন৷ ধর্ষণের ঘটনায় আমাদের দেশের মিডিয়া থেকে শুরু করে সাধারন জনগন পর্যন্ত প্রতিবাদী হয়, উন্নত দেশগুলিতে তাও হয় না।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি ৭টি মুসলিমপ্রধান দেশ- তিউনিসিয়া, মিশর, ইরাক, লেবানন, পাকিস্তান, সৌদি আরব এবং তুরস্ক নিয়ে জরিপ পরিচালনা করে দেখেছেন-এই ৭টি দেশের মধ্যে তুরস্ক এবং লেবাননের মেয়েরা সবচেয়ে বেশি খোলামেলা পোশাক পরে, কিন্তু এই দেশ দুটিতে অন্য ৫টি দেশের তুলনায় নারীরা ধর্ষিত হয় একেবারেই কম, পক্ষান্তরে আরব অঞ্চলের বালুকাময় মরু প্রান্তরে বালু ঝড় থেকে বাঁচতে কিংবা রৌদ্রের প্রখর তাপ থেকে রক্ষা পেতে ঐ অঞ্চলের মানুষ বরাবরই পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে রাখে।কিন্তু এসব বেদুইনদের নারী নির্যাতন সব বর্বরতাকে হার মানায়। বিশ্বে ফিনল্যান্ডের নারীরা সবচেয়ে বেশি যত্রতত্র স্বল্পবসনা হয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং মাতালো হয়, তারপরও সে দেশে ধর্ষন নেই বললেই চলে। আমাদের পাহাড়ি নারীরা মাত্র একটি কাপড় ব্যবহার করে শরীরের উপরের ও নিচের অংশ ঢেকে থাকে। কই, সেখানে তো ধর্ষননের কোন রেকর্ড নাই। সুতরাং পোশাকের কারণে ধর্ষন হয় একথা একদম ভুল।
প্রকৃতপক্ষে পোশাক নয়, মানসিক দৃষ্টিভংগির পরিবর্তন দরকার।
অনেকে বলছেন দেশে পতিতালয় সহজলভ্য নয় বলে ধর্ষণ হয়।এই কথার বিপরীতে দেখা যায় -ব্রাজিলে সবচেয়ে সহজলভ্য হচ্ছে মেয়েরা, সেখানে পতিতালয় সবচেয়ে বেশি। তারপরেও ব্রাজিলে প্রতি ঘণ্টায় চারজন১৩ বছরের কম বয়সী কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়। পৃথিবীতে নারীদের জন্য সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক দেশগুলোর অন্যতম হচ্ছে ব্রাজিল।
যে কোনো সামাজিক অবস্থা, যে কোনো ধরনের ব্যক্তিত্ব বা মানসিকতার লোকই ধর্ষক হতে পারে। এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ করার অভিযোগ তুললেন বিশ্বসেরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক–ছাত্রী। আবার টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার শতবর্ষের অন্ধ বৃদ্ধাকে ধর্ষণ করেছে ১৪ বছরের এক কিশোর! এ থেকে বুঝা যায় যে, বয়স এবং শিক্ষার উপর নির্ভর করে ধর্ষক তৈরি হয় এটাও ঠিক নয়।
ধর্ষককে ক্রসফায়ার বা মৃত্যুদণ্ড, বিশেষ অঙ্গহান িকরলেই যে ধর্ষণ রোধ হবে, এমনটি মনে করা যায় না। কারণ ধর্ষণের অপরাধে প্রকাশ্যে শিরশ্ছেদ, গুলি করে হত্যা, ফাঁসি দিয়ে হত্যার দণ্ড নিশ্চিত করা দেশগুলোতে আজো ধর্ষণ বন্ধ করা যায়নি বা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন সম্ভব হয়নি।
কেউ কেউ বলছেন, যৌন উত্তেজনা প্রশমনের জন্য টাকাওয়ালারা বহুবিধ সম্পর্ক, পরকীয়া আর ধর্মীয় চার বিবি তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে সামাজিক বৈধতা নিচ্ছেন। কিন্তু যারা বিভিন্ন কারণে তা করতে পারেন না, তারা এক অদ্ভুত অবদমন বা মানসিক অস্থিরতা নিয়ে দিন যাপন করছেন। পুরুষের শরীরে যৌন হরমোন তুঙ্গে থাকে ১৯ থেকে 2৬ বছর বয়স পর্যন্ত কিন্তু আমাদের ছেলেরা পড়াশুনা বা চাকরির খোঁজে কিংবা ক্যারিয়ারের কারণে এই সময়টা যৌনতা অবদমন করতে ব্যস্ত থাকে তারা,ফলে প্রাকৃতিকভাবে তারা মানসিক হতাশাগ্রস্ত ও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। ফলাফল ধর্ষণের এত বিস্তার, যা আজ মহামারী।
যৌন নির্যাতন শুধু মেয়ে ও নারীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ— এটা কিন্তু নয়। অনেক শিশু, বালক, বা ছেলে-পুরুষও এই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। হয়তো সামাজিক লজ্জাবোধ থেকে অনেকেই এটা চেপে রাখে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাদরাসার কতিপয় শিক্ষকও আজ ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত। আবার মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত বা ধর্মগুরুরাও এই ধর্ষণ কাজের অপরাধ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারেনি। এমনকি কতিপয় করপোরেট হাউস থেকে মিডিয়া হাউসগুলোও একই অভিযোগে অভিযুক্ত।
ফ্রয়েডের মতে, মানুষ মূলত তিনটি সত্ত্বার সমন্বয়ে গঠিত। ইড, ইগো এবং সুপার ইগো। 'ইড' মানুষকে জৈবিক চাহিদা পুরণে প্ররোচিত করে। 'ইড' হচ্ছে মানুষের ভিতরের এক সুপ্ত পশুপ্রবৃত্তি যার প্ররোচনায় মানুষ যেকোনো অসামাজিক, অনৈতিক, অপরাধ থেকে শুরু করে খুন-ধর্ষণের মতন বর্বর কর্মকাণ্ড করে। আর 'ইগো'র কাজ হচ্ছে 'ইড' এর কাজগুলোকে বাস্তবায়ন করার জন্য প্ররোচিত করা। অন্যদিকে 'সুপার ইগো' হচ্ছে মানুষের বিবেক। 'সুপার ইগো' মানুষকে মানবিক হতে সহায়তা করে, ভাল কাজ করতে উদ্দীপ্ত করে, অনৈতিক কাজ থেকে বিরত রাখে। এই সুপার ইগো তৈরি হয় ব্যক্তির পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং সামাজিক শিক্ষা এবং মূল্যবোধের উপর। পরিবার থেকে আমরা কি শিক্ষা পেয়েছি,প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কাঠামো আমাদের কী ধরনের মুল্যবোধ শিখিয়েছে বা শেখাচ্ছে? যাদের সাথে আমরা সামাজিকভাবে মেলামেশা করছি তাদের মন-মানসিকতা কেমন এইসবের উপর সুপার ইগো তৈরি হয়।
মধুমিতা পাণ্ডে ইংল্যান্ডের অ্যাংলিয়া রাস্কিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ে পি.এইচ.ডি করছেন। গবেষণায় মধুমিতা দেখলেন- ধর্ষণ একটা লম্বা সুতা, যার এক প্রান্তে আছে ধর্ষণ নামের কর্মটি। কিন্তু এসুতার অন্য প্রান্তটা শুরু হয়েছে্ পরিবার ও সমাজের বিভিন্ন অনুষঙ্গ থেকে; যেমন ‘নারীকে অধস্তন হিসেবে দেখা, ইভটিজিং, নারীবিদ্বেষী ওয়াজ-্নচিহত, নারীকে তাচ্ছিল্য করে কথা বলা, হয়রানি করা’ এইসব কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়দিই শেষমেষ ধর্ষণে গিয়ে পৌঁছায়।’
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ-সংসারে বাবা সন্তানের সামনেই মাকে প্রহার করছে। অশ্লীল ভাষায় গালাগালিসহ করছে। পান থেকে চুন খসলেই নারীর ওপর নির্যাতন— প্রকাশ্য পারিবারিক কলহের মাঝেই ধীরে ধীরে যে ছেলেটি শিশু-কিশোরের বয়স পেরিয়ে যুবক হয়, তখন তার মাঝে নারীর প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধাবোধ ঠিক তেমনটা প্রতিফলিত হয় না।নারীকে অবলা ভোগ্যবস্তু হিসেবে সে বিবেচনা করে।
আবার লম্পট পুরুষরা বন্ধুদের নিয়ে বিভিন্ন প্ল্যান করে এগোয় প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য। এখান থেকেও ধর্ষণের মানসিকতা তৈরি হয়।
আমাদের দেশে দেখা যায়, শতকরা নব্বই ভাগ ঘটনায় নারীটি ধর্ষককারীকে চেনে। গ্লোবাল স্টাডি বলছে প্রায় ৩০% ক্ষেত্রে অপরাধী লোকটি দেখা যায় নারীটির নিকট আত্মীয় আঙ্কেল, ভাই, বাবা, মামা কিংবা কাজিন। প্রায় ৬০% ক্ষেত্রে ভিকটিম ধর্ষনের শিকার হয় প্রতিবেশী, পরিবারের বন্ধু স্থানীয় কোন ব্যক্তি, শিক্ষক দ্বারা এবং কেবল মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষক হয় সম্পূর্ণ অচেনা।
ধর্ষণ সংঘটনকারীদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরই বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে । ১৭ থেকে ২০ বছর বয়সীরা জড়িত ১৫ শতাংশ। আর মোট ধর্ষণের ৮০ শতাংশ এককভাবে হয়।
ধর্ষণের অন্যতম কারণ নারী-পুরুষ পরস্পরের শরীর-ও মন সম্পর্কে না জানা ও ভুলভাবে জানা। দেখুন পুরুষের অন্ডকোষে কোটি কোটি মিলিয়ন শুক্রানুর জন্ম হয়। এই শুক্রাণুগুলো পৃথিবীতে জায়গা করার জন্য প্রচন্ড পেশার সৃষ্টি করে পুরুষকে, যে কারণে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাধ্যমে সে আক্রমণাত্মক জ্ঞান শূন্য হয়ে যেতে পারে। কিন্তু নারীর মধ্যে মাসে একটা মাত্র ডিম্ব তৈরি হবার কারণে তার মধ্যে কোন যৌন প্রেশার থাকে না। তাছাড়া কেলেঙ্কারি এবং প্রেগনেন্সি হওয়ার ভয় তো তার আছেই। তার উপর মানসিক আবেগ আর শারীরিক অনুভূতি ধীরে ধীরে জায়গাতে না পারলে নারী যৌনতার জন্য প্রস্তুত হতে পারে না। ফলে নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে সকল যৌনতাই ধর্ষণে পরিণত হয়।
=================
।।
ক্লিওপেট্রা.......
মাত্র ১৭ বছর বয়সে মিশরের রানী হয়েছিলেন।
তিনি ৯টি ভাষা জানতেন।
ইতিহাস, ভূগোল, শরীরবিদ্যা, রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, প্রাণিবিদ্যা, রসায়ন ইত্যাদি সমস্ত কিছুই তিনি জানতেন।
নিঃসন্দেহে তিনি প্রভাবশালী রানী ছিলেন মিশরের। এবং তিনি মিশরের আদিবাসী না হয়েও মিশরের সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী নারী ছিলেন, মাত্র ২২ বছর রাজত্ব করার পর সাপের কামড়ে তিনি মারা যান।
তার মৃত্যু আজও রহস্যে ভরা।
নিজের ভাইকে বিয়ে করেন এই সম্রাজ্ঞী, তাকে নদীর জলে ডুবিয়েও মারেন।
তার বাবা যখন মারা যান তখন তার বয়স ছিল ১৮ বছর। নিজেও কিশোরী, তার ২ ভাইও তখন কিশোর। সেই সময় বাবার মৃত্যুশোক কাটিয়ে তিনি ১৮ বছর বয়সেই সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি তার ২ ভাইকেই বিয়ে করবেন এবং তাদের বিবাহ করেন।
তবে এর পিছনে ছিল অন্য কারণ।
তিনি চেয়েছিলেন ভাইদের সঙ্গে তিনিও সিংহাসনের সমান দাবিদার হবেন। তাই সহজ পন্থা হিসেবে তাদের বিবাহ করার পথ বেছে নেন।
তবে এটা খুব অবাক বিষয় ছিলনা। কারণ তার পরিবারে তার বাবা মা ছিলেন সম্পর্কে ভাইবোন। আবার তার অনেক তুতো ভাইবোনও নিজেদের মধ্যে বিবাহ করেন।
সেই সময়ের মিশর রাজ পরিবার বিশ্বাস করত তাদের পরিবার দেবতার আশীর্বাদ ধন্য। মূলতঃ রাজরক্ত যাতে পবিত্র থাকে সেই জন্য রাজ পরিবারে নিজেদের ভাই বোনের মধ্যে বিবাহ চালু ছিল।
যাইহোক তিনি নিজের ২ ভাইকে বিবাহ করে সিংহাসনে নিজের দাবি সুনিশ্চিত করার পর কিন্তু এক ভাই তথা পতি তাকে সিংহাসনের দাবি থেকে সরিয়ে দেন।
এতে সম্রাজ্ঞী কিন্তু দমে যাননি। তিনি ক্ষমতা ছাড়তে রাজি ছিলেননা।
তাই মিশরের এই বিখ্যাত সম্রাজ্ঞী হাত মেলান জুলিয়াস সিজারের সঙ্গে। তারপর ভাই তথা স্বামীর সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রার কাছে যুদ্ধে হেরে যান তার ভাই তথা স্বামী।
ক্লিওপেট্রা আর তাকে বাঁচিয়ে রাখার রাস্তায় হাঁটেননি। নীল নদের জলে ভাই তথা স্বামীকে ডুবিয়ে হত্যা করেন অতি সুন্দরী সম্রাজ্ঞী ক্লিওপেট্রা।
বলা হয় ক্লিওপেট্রা নাকি নিজের সৌন্দর্যকে ব্যবহার করে অনেক শক্তিধর রাজাকে সেই সময় এক এক করে বশবর্তী করেছিলেন। তাদের কাছ থেকে রাষ্ট্র সংক্রান্ত অনেক গোপন তথ্যও নিজেকে ব্যবহার করে আদায় করে নিতেন ক্লিওপেট্রা।
ঠিক এভাবেই তিনি এন্টনি নামক সিজারের এক সেনানায়কের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এবং নিজের সঙ্গে মিশরের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছিলেন।
বলা হয় তিনি unknown nine দ্বারা chosen one হিসেবে বসেছিলেন মিশরের সিংহাসনে কোন এক বিশেষ লক্ষ্য পরিপুরণের জন্য, সেই লক্ষ্য পরিপূরণ হয়ে যাওয়ার পরেই তিনি সর্পাঘাতে মারা যান।
কিভাবে মারা যান তিনি আজও রহস্যময়।
তার মৃত্যুর পর রোমে এবং মিশরে অদ্ভুতভাবে christianity জোরদার ভাবে চালু হয়ে যায়।
রহস্যময়ী ও মহাসুন্দরী রানী ক্লিওপেট্রা মিশরের আদিবাসী মিশরীয় ছিলেন না, বরং তিনি ছিলেন গ্রীক রাজা মহাবীর আলেকজান্ডার দি গ্রেট-এর একজন অন্যতম সেনাপতি টলেমী - যিনি আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তাঁর সাম্রাজ্যের অধিকৃত ও অন্তর্ভূক্ত মিশর রাজ্যের মনোনিত শাসনকর্তা হওয়ার পরবর্তিতে টলেমীর সৃস্ট টলেমী রাজ বংশের শেষ রানী। রোম সাম্রাজ্যের বিজেতা জুলিয়াস সিজার মিশর বিজয়ের পর রানী ক্লিওপেট্রা জুলিয়াস সিজারকে বিবাহের পরবর্তীকালে জুলিয়াস সিজার ( যার নামে “জুন” মাসের নামকরন হয় ) রোমে তৎকালী রোমান পার্লামেন্টে নিহত হওয়ার পরবর্তীতে আরেক রোমান সেনানায়ক ও বিজেতা মার্ক এন্টনীকে বিবাহ করে মিশরের রানী হিসেবে বিদ্যমান থাকার পরবর্তীতে রোমান সাম্রাজ্যের আরেকজন বিখ্যাত বিজোতা সিজার আগোস্টাস ( যার নামে আগস্ট মাসের নামকরন হয়) মিশর আক্রমন করলে যুদ্ধে রানী ক্লিওপেট্রা ও মার্ক এন্টোনী পরাজিত হলে মার্ক এন্টোনী হারিকারি পদ্ধতিতে নিজ তরবারি দিয়ে নিজে আত্বহত্যা করার পর বিজয়ী রোমান সেনানায়ক আগস্টাস মিশরের রানী হিসোবে ক্লিওপেট্রাকে মেনে নিতে বা তাঁকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানালে তৎকালীন প্রাচিন মিশরীয় রীতি অনুযায়ী বিষধর সাপের কামরে রানী ক্লিওপেট্রা আত্নবত্যা করেন ।
===============
==============
===========
।
—--------------
=============
=========
হোমো সাপিয়েন
চিন্তাশীল তথা হোমো সাপিয়েনদের যাত্রা শুরু হয়েছিল এখন থেকে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার বছর আগে আফ্রিকার ইথিওপিয়া তাঞ্জানিয়া অঞ্চলে।। তাঁরা লতাপাতা, ফলফুল ইত্যাদি খেত। বাস করতে পাহাড়ের গুহায়। খাদ্য সংগ্রহের জন্য তারা দল বেধে ছুটে বেড়াত পূর্ব আফ্রিকার ইথিওপিয়া, কেনিয়া, তাঞ্জানিয়া অঞ্চল থেকে শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত । তবে এদের চাইতে আরো উন্নত দৈহিক গড়নের যে নতুন প্রজাতির মানুষ পূর্ব আফ্রিকায় জন্ম নেয় তাদের হোমো হাবিলিশ বলা হয়, এর অর্থ হচ্ছে সক্ষম মানুষ। যারা খাড়া হয়ে দাঁড়াতে সক্ষম ছিল।এরা পাথর দিয়ে তারা নানা হাতিহার তৈরি করে যা পশু, পাখি ইত্যাদি শিকারে তারা ব্যবহার করে। এখান থেকেই পাথরের যুগ খ্রিস্টপূর্ব ২৫ লাখ বছরের দিকে শুরু হয়। এরপর খ্রিস্টপূর্ব ২০ লাখ বছরের দিকে পূর্ব আফ্রিকায় এরেক্টাস নামে আরেক কর্মঠ মানব প্রজাতিরউদ্ভব ঘটে। এরা খাদ্য ও বাসস্থানের সন্ধানে ইউরেশিয়া মহাদেশে প্রবেশ করে। ইউরোপের অনেক জায়গায় তারা অভিগমন করে। এশিয়া মহাদেশেও এদের বসতি বিস্তার বৃদ্ধি পেতে থাকে।
আমরা জাভা মানবের কথা জানি যারা বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া বসবাস করেছে। এদেরও আগমন সেই সুদূর আফ্রিকা থেকে। বলা হয়ে থাকে খ্রিস্টপূর্ব ১৮ থেকে ১৪ লাখ বছরের দিকে ইন্দোনেশিয়ায় জাভা মানবদের উদ্ভব বসতি শুরু হয়েছে। অন্যদিকে চিনের পিকিং মানবরা এই একই প্রজাতির মানুষ। ৬ লাখ বছর আগে পূর্ব আফ্রিকা থেকে আরেক প্রজাতির মানুষ সাহারা হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। এদের হাইডেলবার্গ মানব বলা হয়ে থাকে। হাইডেলবার্গ মানবের মতোই আরেকটি প্রজাতি ইউরোপের জার্মান ভূখণ্ডে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। এদের নিয়ান্ডারথাল মানব বলা হয়। যারা বুদ্ধিমত্তায় আগের সব মানব প্রজাতির চাইতে অনেক উন্নত ছিল। ৪ লাখ বছর আগে এদের অন্যতম কীর্তি আগুনের ব্যবহার। এরা গোটা ইউরোপ চষে বেড়িয়েছে।
এদিকে হোমো সাপিয়ান তথা চিন্তাশীল মানব প্রজাতি জীবিকার প্রয়োজনে প্রয়োজনে ইউরেশিয়ায় প্রবেশ করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন হোমো সাপিয়েনদের সঙ্গে নিয়ান্ডারথালরা বুদ্ধিতে এঁটে উঠতে পারেনি। যদিও নিয়ান্ডারথালরা দৈহিকভাবে হোমো সাপিয়েনদের চাইতে বড় ছিল কিন্তু নিয়ান্ডারথালরা একসময় এসে হোমো সাপিয়েনদের ভয়ে নিজেদের জায়গা ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে বাধ্য হয়। হোমো সাপিয়ানরা ইউরোপের সর্বত্র ছড়িয়ে পরে।
খ্রিস্টপূর্ব ৬০ থেকে ৪৫ হাজার বছরের দিকে এই মানুষরাই ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপ অঞ্চলগুলোতে একের পর এক প্রবেশ করতে থাকে। অস্ট্রেলিয়ায় তাদের অভিগমন তখনই ঘটে। এমনকি এশিয়ার পূর্ব প্রান্তে জাপান হয়ে সাইবেরিয়া অতিক্রম করে খ্রি.পূ. ২৫-১৫ হাজার বছরের দিকে বর্তমান আমেরিকা মহাদেশে প্রবেশ করে। এদেরকে আমরা রেড ইন্ডিয়ান বলেই জানি।
খ্রিস্টপূর্ব ১২ হাজার বছরের দিকে ভূমিতে বসবাসকারী মানুষ কৃষিবিপ্লব সংগঠিত করতে পেরেছিল। এটি মানুষের ইতিহাসকে মানুষ নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সাহায্য করে।
১৪৯২ সালে কলম্বাস ক্যারিবীয় স্পেনের রাজা ও রানীর ইচ্ছা পূরণের জন্য পুরাতন পৃথিবীতে যাওয়ার নাম করে বের হয়ে আবিষ্কার করলেন ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ। এখানে অচিরেই তারা উপনিবেশ স্থাপনে একের পর এক অভিযান প্রেরণ করে। দক্ষিণ আমেরিকা ভূখণ্ড স্পেন পর্তুগালের খরায়ত্ব হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় উপনিবেশ।
ইউরোপ থেকে দলে দলে মানুষ আটলান্টিক অতিক্রম করে লাতিন আমেরিকায় প্রবেশ করে। আমেরিকাও ভূখণ্ড ও ততদিনে ব্রিটিশদের দখলে চলে যায়। দুই মহাদেশেই ইউরোপীয়দের অভিবাসন চলে। সাথে তারা নিয়ে যায় আফ্রিকা থেকে ধরে ধরে নেওয়া কালো মানুষদের। যাদের তারা দাস বানিয়েছে জমি চাষাবাদও বাগান তৈরির জন্য।
ইউরোপে গত তিন শতকে যে রেনেসাঁস, শিল্পবিপ্লব, ভৌগোলিক আবিষ্কার ১৮ শতকের আলোকিত যুগ, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, বিপ্লব ও শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তন ও অর্থনৈতিক পরিবর্তন এনেছে, জীবনব্যবস্থায় নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রসার ঘটিয়েছে। ইউরোপের উপনিবেশবাদীগণ ৩টি মহাদেশে তাদের উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে ইউরোপীয়দের স্থায়ী অভিবাসন করতে পেরেছে। উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়া।
===
চেঙ্গিস খান
চেঙ্গিস খান সিংহাসনে বসেছিলেন ৫১ বছর বয়সে। আলেক্সান্ডার, সিজার কিংবা নেপোলিয়নদের মত দিগ্বিজয়ীরা যৌবনে যত অঞ্চলে পা রাখতে পারেননি চেঙ্গিস তার চেয়ে ঢের ঢের বেশি অঞ্চল জয় করে নিয়েছিলেন বার্ধক্যে।
এরকম একজন দুর্ধর্ষ বিজেতা, দুর্দান্ত সংগঠক ও যোদ্ধা অথচ তিনি জানতেন না যে দুনিয়াতে 'লিখনপদ্ধতি' নামে একটি ব্যাপার আছে। তার সময়ে যাবতীয় রাজকীয় তথ্য , ফরমান এবং নির্দেশনা প্রথমে দূতকে মুখস্ত করানো হত। তারপর মৌখিকভাবে তা যথাস্থানে পৌঁছে দেয়া হত।
' চীন অভিযানে বেরিয়ে চেঙ্গিস খান প্রথম জানতে পারেন দুনিয়াতে 'লিখনপদ্ধতি' নামে একটা ব্যাপার আছে। জানার সাথে সাথে তিনি তার পুত্র এবংকর্মকর্তাদেরকে এ পদ্ধতিটি আয়ত্ত করার জন্য আদেশ দেন। তার যাবতীয় বাণী, আইন, বিধি ইত্যাদি লিখে রাখার জন্যও তাদের নির্দেশনা দিয়ে দেন।। এ বিধানগুলো চিরকাল মানুষ সভয়ে পালন করবে এই ছিল তার বিশ্বাস।
অনেকে চেঙ্গিস খানের নামের শেষে 'খান' শব্দটি দেখে তাকে ইসলাম ধর্মের অনুসারী ভেবে থাকেন কিন্তু তিনি মোটেই তা ছিলেন না। তিনি ছিলেন নীল আকাশের পূজারী। বংশধর রেখে যাওয়ার ক্ষেত্রেও এ লোকটি বিরল মাইলফলক রেখে গেছেন। তার পুরুষ বংশধরের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৬০ লক্ষের উপরে। চেঙ্গিস খানের ৫ জন স্ত্রী এবং অর্ধ সহস্রাধিক উপপত্নী ছিল। তবে এদের মধ্যে তিনি তার প্রথম স্ত্রী বোর্তের আশপাশে কাউকে আসতে দেননি। বিয়ের কিছুদিন পরেই বোর্তে অপহৃত হয়েছিল। চেঙ্গিসখান সেখান থেকে বোর্তেকে উদ্ধার করেছিলেন এবং স্ত্রীর সন্তানসম্ভাবা হলে চেঙ্গিস খান সে সন্তানকে নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন। অসংখ্য সন্তানের পিতা হওয়া সত্ত্বেও শুধু বোর্তের গর্ভে জন্ম নেওয়া চার ছেলেকেই উত্তরাধিকারী হিসাবে মনোনীত করেছিলেন তিনি।
তার সমাধি গোপন রাখার জন্য মৃত্যুর আগে তিনি সৈন্যদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। বলা হয়ে থাকে তার সমাধিকে নিচিহ্ন করার জন্য সমাহিত অঞ্চলের উপর দিয়ে এক হাজার ঘোড়া ছুটিয়ে নেয়া হয়েছিল।
================
===================
============
=============
=======
।।
আমাদের সমাজে তিন শ্রেণির মানুষ আছে। অল্প সংখ্যক উদারপন্থী, বেশিরভাগ মানুষ মধ্যপন্থী আর কিছু সংখ্যক উগ্রপন্থী। https://youtu.be/DY3fZOK_Pmk
ইহুদী, খৃষ্টানসহ অন্যান্য জাতির মাঝেও প্রচুর উগ্রপন্থী আছে। এমনকি নাস্তিকদের মাঝেও উগ্রপন্থী আছে, যারা কারনে-অকারনে, যে কোনো আলোচনার মাঝে ধর্মকে ঢুকিয়ে চুলকানি তৈরি করে। আবার জাতি ও পরিবেশভেদে একই ধর্মের আচার-আচরণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন-ইন্দোনেশিয়ার মুসলিমরা পশ্চিমা স্টাইলে জীবন-যাপন করে, তার বিপরীত চিত্র দেখা যায়, পাকিস্তান, ইরান, আফগানিস্থানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে। তবে ধর্মীয় কারণে কিছু সমস্যার বিত্তের ভিতর আটকে থাকে প্রত্যেক সমাজ। যেমন- ইহুদী নারী-পুরুষ অন্য ধর্মের কাউকে বিয়ে করলে, সমাজচ্যুত হতে হয়। কারণ অন্য ধর্মের কেউ তাদের ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে পারে না। তাই তারা সামাজিকভাবে অন্য ধর্মের কারো সাথে মিশতে চায় না। ফলে তারা আত্মকেন্দ্রীক মানসিকতা নিয়ে বড় হয়। ইহুদীদের এই বদ্গুণের ছায়া আমদের মুসলিম সমাজেও পড়ছে। আমরা শহরে একই বিল্ডিং-এ থাকলেও কেউ কাউকে চিনি না। ঈদে কোলাকোলি করি বটে, তবে মসজিদ আর নিজ ঘরের বাইরে আমদের কোন সংস্কৃতি নাই। সমাজে কোনো বিনোদনের আযোজন করা হলে রক্ষণশীল মুসলিমরা ইসলাম গেল, মুসলিম ডুবলো বলে চারদিক থেকে চিৎকার করি। এই বিষয়টা কাজী মোতাহার হোসেন তার “আনন্দ ও মুসলমান গৃহ” প্রবন্ধটি্তে খুব দুঃখ করে লিখেছিলেন এভাবে-
“মুসলমান গান গাইবে না, ছবি আঁকবে না, এককথায় মনোরঞ্জনকর ললিতকলার কোনো কিছুতে থাকবে না। মুসলমান পুরুষেরা কেবল কাজ করবে, আর ঘর শাসন করবে; মেয়েরা কেবল রাঁধবে, বাড়বে, আর বসে বসে স্বামীর পা টিপে দিবে;- তা’ছাড়া খেলাধুলা, হাসি-তামাসা বা কোনও প্রকার আনন্দ তারা করবে না।
আনন্দ? কি হবে আনন্দে? মুসলমান তো বেঁচে থাকতে আনন্দ করে না, সে মরে গিয়ে বেহেশতে পেট ভরে খাবে, আর হুরপরীদের নিয়ে অনন্তকাল ধরে আনন্দ করবে। ব্যস! এই তার সান্ত্বনা!
কিন্তু গৃহে যখন আমাদের থাকতেই হবে, তখন আমরা এর সংস্কারে লেগে যাই না কেন? সমাজকে যখন আমরা বাদ দিতে পারি না, তখন একে সরস এবং আনন্দময় করেই গড়ে তুলি না কেন?”
আমাদের মনে রাখতে হবে,
জ্ঞানচর্চা, সংকৃতিচর্চা আর নারীশিক্ষা এই তিন ব্যতীত এই যুগে উন্নয়ন অসম্ভব। আমরা শুধু যে টাকা-পয়সায় গরীব তা নয়, পাশাপাশি জ্ঞানেও গরীব, সংকৃতিতেও গরীব । ইহুদীদের থেকে পাওয়া আত্মকেন্দ্রীক মানসিকতার খোলাস ছেড়ে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। হ্যা, ইহুদীদের থেকে কিছু ভাল গুণ আমরা নিতে পারি। যেমন-টাকা-পয়সা অপব্যয় না করে সঞ্চয় করা, যে-কোনো ছোট বাচ্ছাদের সাথে দেখা হলে কৌশল বিনিময় করা, প্রশংশা ও উৎসাহিত করা এবং সামাজিক জীবনে ইহুদীদের চুটজপাহ সংস্কৃতি চর্চা করা। চুটজপাহ সংস্কৃতি হচছে: মনে করুন একটি প্রতিষ্ঠানে ১০জন মানুষ আছে। এই দশজনের কেউ দারোয়ান আবার কেউ কর্মী বা কর্মকর্তা। সেখানে কেউ কাউকে স্যার হা ম্যম বলবে না। সবাই সবাইকে নাম ধরে কিংবা ভাইজান বলে ডাকবে। সার্টিফিকেট বা টাকার জোরে কেউ নেতা হবে না, কাজে যোগ্যতার ভিত্তিতে পদ মর্যদা হবে। সবাই মিলে আনন্দ আর অসুবিধা ভাগাভাগি করে কমিউনাল বা কৌম সমাজ গড়ে তুলব। মধ্য যুগের খোলাশ ছেড়ে বর্তমান সৌদি আরব ক্রাউনপ্রিন্স সালমান যেভাবে এগুচ্ছে, সেভাবে।
প্রখ্যাত পরিবেশবাদী দার্শনিক মারে বুকসিন বলেছিলেন, আদিম কৌম সমাজ ব্যবস্থার দুটো ভাল দিক ছিল- ১টি হল সুসম বন্টন অর্থাৎ সবাই সমান ভাগ পেতো, আর একটি হল সৌহাদ্য, অর্থাৎ পরষ্পরের সাথে শেয়ারিং। কর্ম করতে অক্ষম অসহায় মানুষদের দায়িত্ব কৌম সমাজ বহন করত। -তাদের সোসাইটি ছিল অর্গানিক।
অর্গানিক সোসাইটি মানে হল ইন্টার ডিফেন্সি, ইন্ ডিফেনসি নয়। আজকের মানুষের মতো স্বাধীন বা স্ব-অধীন নয়, পরষ্পরের অধীন। যেমন আমাদের শরীর হল একটা ইন্টার ডিফেন্সি, সিস্টেম। দুই, হাত, দুই চোখ, দুই কান, দুই পা কিংবা দুই কিডনি যেমন পরষ্পরের সাথে ব্যালেন্স করে (কোন কারণে একটি আক্রান্ত হলে অন্যটিতে প্রভাব পড়ে), তেমনি শরীরের প্রতিটি অঙ্গ অন্য অঙ্গের সাথে ব্যালেন্স করে চলে। একই কারণে ডায়বেটিস হলে, কিডনি, দন্ত, রক্তচাপ কিংবা হার্টের সমস্যা দেখা দেয়। পরষ্পরের উপর এই নির্ভরতাকে বুকসিন নাম দিয়েছেন ইন্টার ডিফেন্সি।
তাহলে সমাজ কিভাবে ইন্টার ডিফেন্সি হয়? বুকসিন বলেন- মানুষ প্রকৃতিরই একটি অংশ। যেমন, বায়ুশূণ্য যে-কোন একটি কক্ষে যদি কাউকে বন্দী করে রাখা হয়, তাহলে সে কতক্ষণ আর বাছবে? কয়েক মিনিট মাত্র। এতে দেখা যায়, মানষের বেচে থাকা শুধু তার নিজের উপর নির্ভর করছে না; প্রকৃতির অক্সিজেনের উপরও সমানভাবে নির্ভর করছে। এভাবে মানুষের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা সবকিছু কোন না কোনভাবে প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।
বুকসিন বিষয়টি বুঝানোর জন্য তার ইকোলজিক্যাল ফ্রিডম বইয়ে দুইটি কোম সমাজের উদাহরণ দিয়েছেন।- এক হলো, ল্যাটিন আমেরিকার হিপ্পো সমাজ আর একটি হলো অন্তু ইন্ডিয়ান সমাজ। বুকসিন এইসব সমাজ স্ট্যাডি করে দেখেছেন, তাদের জীবনাচরণে এমন কোন শব্দ নেই, যে শব্দ দিয়ে আধিপত্যবাদ, শোষণ, নিপিড়ন, বৈষম্য, ধর্ষণ এসব বুঝায়। যেমন, আমি, আমার, এই ধারণা তাদের মধ্যে নেই। তারা আমার স্বামী, আমার স্ত্রী,এভাবে বলে না, তারা বলে, আমি উমুকের সাথে আছি, উমুক আমার সাথে আছে।
হিপ্পো বা অন্তু সমাজে কোনো সন্তান জন্ম গ্রহণ করলে শিশুটি সমাজের সকল স্তন্যদায়ী মাতার দুগ্ধ পান করে বড় হয়। যাদের দুগ্ধ নেই, তারা মুখের লালা মিশ্রিত ছিবানো খাবার খাইয়ে সন্তানটি বড় করে। এর মধ্য দিয়ে তারা মনে করে সমস্ত মা-কে এ সন্তান ধারণ করেছে। এ প্রকৃয়ার মধ্য দিয়ে সন্তানটি সকল মায়ের সন্তানে পরিণত হয়। এই কারণে তাদের মধ্যে আমি-আমার ধারণা তৈরি হয় না। পৃথিবীব্যাপী কোটি কোটি শিশু অনাহারে অপুষ্টিতে রাস্তায় প্রভুহীন কুকুরের মতো মানবেতর জীবন-যাপন করছে, শুধু আমি এবং আমার সন্তান এই কনসেপ্টের কারণে।
দার্শনিক ’মারে বুকসিন’ আফ্রিকার আদিবাসী মাতৃতান্ত্রিক কৌম সমাজের কিছু ছেলে মেয়ের মধ্যে মজার এক খেলা উপস্থান করেন। তিনি এক ঝুড়ি মিষ্টি একটা গাছের কাছে রেখে ছেলেমেয়েদের সেখান থেকে ১০০ মিটার দূরে রাখেন। এরপর তিনি ছেলেমেয়েদের জানায়, যে সবার আগে মিষ্টির ঝুড়ি স্পর্শ করবে, ঝুড়ির সব মিষ্টি সে পাবে। এরপর যখন সে বলল, প্রস্তুত হও এবং যাও। এরপর ছেলেমেয়েরা সবাই হাত ধরাধরি করে দাড়াঁল এবং গাছের দিকে একসঙ্গে দৌড় দিল। ঝুড়ির মিষ্টি তারা সবাই ভাগাভাগি করল আর মজা করে খেলো। যখন ‘বুকসিন’ তাদের জিজ্ঞেস করল, কেন তারা সবাই হাত ধরাধরি করে দৌড় দিল? উত্তরে সবাই বলল, উবুন্টু। উবুন্টু মানে "কিভাবে একজন সুখী হতে পারে যখন অন্যরা দুঃখী?" তাদের ভাষাতে, উবুন্টু অর্থ " আমি অন্যদের সাথে শেয়ারে আছি "।
আমাদের ছা-পোষা বাঙালি ভাইরা বুঝতে চায় না, নিজের সন্তান বলে যার জন্য সে জীবনের সকল কিছু বিসর্জন দিচ্ছে, সেই শুক্রকিটটি তার অন্ডকোষে উৎপন্ন ‘হাজার হাজার কোটি’ শুক্রাণুর মধ্যে মাত্র একটির অর্ধেকাংশ। তার বাকীসব বিলিয়ন বিলিয়ন শুক্রাণু প্রতিদিন মরে যাচ্ছে বেচে থাকার আশ্রয় না পেয়ে। তাই অন্য মানুষ বা প্রাণির যে শুক্রাণুর অংশটি বেচে থাকার সুয়োগ পেয়েছে, তাকে রক্ষা করা তার নৈতিকতার মধ্যেই পড়ে। মানুষ দল বেঁধে বাস করলেই তা সমাজ হয় না। প্রত্যেক মানুষ একে অপরের কল্যাণের কথা ভেবে সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে নিয়ম ও শৃঙ্খলার অদৃশ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বাস করলে সেই জনগোষ্ঠীকে সমাজ বলে।
—-------------------------
===================
===============
গ্রামসির জাতীয় ভাষা ও একমূখী শিক্ষানীতি
স্কুল ও মাদ্রায় শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাস ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার কারণে একটি ককটেল সমাজ তৈরি হচ্ছে।https://youtu.be/8rf2J06Pn6M
বিভিন্ন রকম শিক্ষার এক জোড়াতালি ও গোজামিল দিয়ে চলছে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা।
.
“একটি অশিক্ষিত সমাজে একজন শিক্ষিত মানুষের উত্তম স্থান হল কারাগার”, তিনি সেখানে কেবল শান্তিতে রাত কাটান।
.--------------------------------------------------------------
আন্তোনিও গ্রামসির জীবনকাল ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত; দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইটালীতে ফ্যাসিস্ট মুসোলিনীর কোপানলে পরে গ্রামসি কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন। জেলেই তাঁর জীবনের পরবর্তী এগারো বছর কেটেছিল। অনিদ্রা, ক্ষুধামন্দা, রক্তবমির মধ্যে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে, জেল থেকে বেরিয়েই তিনি মারা যান। জেলের মধ্যে লিখিত তার বিখ্যাত বই ‘প্রিজন’স নোটবুক’-এর কারনে গ্রামসিকে ২০ শতকের সবচেয়ে শিক্ষাতাত্ত্বীকদের একজন বলে মানা হয়।
. গ্রামসি লিখেছেন, ভাষা হল চিন্তার বাহক। ভাষার কারণেই কেউ নতুন কিছু বললে অন্যরা তা বুঝতে পারে, আবার পূর্বে কখনো শুনেনি এমন কিছুও বলতে পারে। সকল সৃজনশীল চিন্তা ভাষার মাধ্যমেই হয়। তাই গ্রামসি বলেছেন, এক অঞ্চলে যদি একাধিক ভাষার প্রাধান্য থাকে, সেখানে ঐক্য ও চিন্তার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়। কারণ, ভাষা হচ্ছে মানুষের মধ্যে কানেক্টিভিটি।
বিষয়টা নিয়ে আমাদের বাংলাভাষাকে পর্যবেক্ষন করি. ভারত ও পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে যাবার পর ভারত উর্দুকে হিন্দী লিপিতে লেখা শুরু করে এবং ইসলামী ও ফার্সী শব্দগুলির পরিবর্তে স্থানীয় শব্দ ব্যবহার শুরু করে। ফলে উর্দু ভাষা হয়ে যায় হিন্দী ভাষা আর পাকিস্তানী মৌলবাদীরা বাংলা ভাষার তৎসম শব্দগুলিকে হিন্দুয়ানি ব্যাপার বলে পরিত্যাগ করে তার বদলে রাষ্ট্রীয়ভাবে উর্দূ-ফারসি-আরবী শব্দ ব্যবহার শুরু করে। পাগলামী এতদূর পর্যন্ত গড়িয়েছিল যে, উর্দূর মতো আরবী হরফে বাংলা লেখার চেষ্টাও হয়েছিল। এর ফলস্বরূপ একই তরলকে মুসলিমরা পানি বলা শুরু করে আর হিন্দুরা সেই আদি বাংলা শব্দ জল। পানি এবং জল দুটিই অমূল্য শব্দ। তবে একটার বদলে অন্যটি হওয়া ঠিক নয়। জলকে বাদ দিলে—জলাশয়, জলাতংক, জলবায়ু, জলাধার, জলযান, জলপ্রপাত, জলবিদ্যুত,জলকেলি ইত্যাদি শুব্দ বদলাতে গেলে ভাষাগত অনর্থই তৈরী হবে।
সম্প্রতি অক্সফোর্ড প্রেস ঘোষণা করেছে-তারা অক্সফোর্ড ডিক্সনারীর নতুন সংস্করণ এখন থেকে অনলাইনে প্রকাশ করবেন। কারণ প্রতিদিন এত নতুন শব্দ ইংরেজিতে যোগ হচ্ছে, যা প্রিন্টে আপডেট করা কঠিন। অন্যদিকে পৃথিবীর অনেক ভাষা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ শব্দ। ইন্টারনেটের বদৌলতে ইংরেজি সহ ১০/১২টি ভাষা ছাড়া বাকী সব ভাষা গুরুত্ব হারাচ্ছে দ্রুত। এমতাবস্থায় জলের বদলে পানি নয়, জল-পানি দুটোই আমাদের ভাষায় থাকুক; ইংরেজির ট্রাক-লরি কিংবা ফ্লাট-এপারমেন্ট এর মত। কারণ কোন ভাষায় যত বেশী শব্দ যোগ হয়, ভাষাটি তত সমৃদ্ধ।
এবার চলুন গ্রামসির একমূখী শিক্ষায় চলুন। গ্রামসি বলেন , আমরা ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে (যেমন, ইংলিশ স্কুল, ধর্মীয় মক্তব, জেনারেল স্কুল, ক্যাডেট স্কুল ইত্যাদি) আলাদা ভাগে শিক্ষা গ্রহণ করার ফলে, সমাজে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্ঠিভঙ্গির আর বিপরীত জ্ঞানের হযবরল শ্রেণীর প্রাণী তৈরি করছি, মানুষ নয়। এর ফলে পরিবারে-সমাজে তথা রাষ্ট্রে শ্রেণী বিভেদ শুধু বজায় থাকবে না, দিন দিন তা ভয়াবহ রূপ নিয়ে একটি ককটেল সমাজ তৈরি হবে। যা প্রতিনিয়তই বিস্ফোরিত হবে আগ্নেয়গিরির মত। একটা শ্রেণী জ্ঞান বুদ্ধিতে এগিয়ে থাকবে, আর অন্যশ্রেণী আদিম অবস্থায় পড়ে থাকবে। গ্রামসি বলতেন- সমাজের সচ্ছল, শিক্ষিত পরিবারের ছেলেমেয়েরা সম্পদগত সুবিধার কারণে শিক্ষায় এগিয়ে থাকবে, কিন্তু যারা সুবিধাবঞ্ছিত তাদের কি হবে? তাই একমূখী শিক্ষা দরকার।
মানুষের শরীরটাকে একটা হার্ডওয়্যার । উন্নত শিক্ষা মানে দামী এআই সফ্টওয়্যার, যার মাধ্যমেই সভ্যতা এগিয়ে যাবে, এই সফ্টওয়্যার প্রত্যেক হার্ডওয়্যারেই থাকতে হবে। কিন্তু আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষায় কোনো সফ্টওয়্যার বা উন্নত শিক্ষা নাই।
১১৭৪ সালে মুহাম্মদ ঘোরীর রাজত্বকাল থেকে মসজিদ কেন্দ্রিক মক্তব গড়ে উঠে, এবং এই মক্তবে পাঠক্রম বর্ধিত করে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা চালু করা হয়। সে আমলে পর্যায়ক্রমে জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, ভূগোল, হিসাববিজ্ঞান, কৃষি, লোকপ্রশাসন, জীববিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা ও চারুকলা প্রভৃতি বিষয় মাদ্রাসা পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত ছিল। হিন্দুরাও এই মক্তবে পড়ত। মূলতঃ রাজ কর্মচারী হওয়ার জন্য এই মক্তবগুলোতে আসতো। রাজা রামমোহন রায়ও এই মক্তবের ছাত্র।
ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৮০ সালে কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর ১৮৬৬ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাশাপাশি হিন্দুধর্মীয় শিক্ষার জন্য সংস্কৃত কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো।
বাংলাদেশে মাদ্রাসার পাঁচটি শিক্ষা ধারা লক্ষ করা যায়। সেগুলি হচ্ছে: (১) কিন্ডার গার্টেন মাদ্রাসা ও ক্যাডেট মাদ্রাসা, (২) শর্ট কোর্স মাদ্রাসা, (৩) স্বতন্ত্র ও বিশেষ নেসাবের মাদ্রাসা, (৪) উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা, গবেষণার (তাখাচ্ছুস) মাদ্রাসা, এবং (৫) আহলে হাদিস মাদ্রাসা। এ ছাড়া রক্ষণশীল এলিট মুসলমানরা নিজেদের শহরগুলোতে গড়ে তুলেছেন এক ধরণের মাদ্রাসা। যেগুলো ‘ক্যাডেট মাদ্রাসা’ ও নানা নামে পরিচিত। এসব প্রতিষ্ঠানে কখনও ইংরেজী ভাষায় শিক্ষা দেওয়া হয়। তাদের পোষাক-পরিচ্ছদও আধুনিক।
সাধারনত সমাজে যারা গরীব, যাদের কোনোরকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকা এবং যারা চারিদিক থেকেই অবহেলিত, তারাই তাদের ছেলে মেয়েদেরকে মাদ্রাসাতে ভর্তি করিয়ে থাকেন। ধনিদের সন্তানটি কোনো কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে, বা পঙ্গু হয়ে থাকে, কেবল তবেই আল্লাহর কাছে মান্নত করে সন্তানটিকে মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেন। বলতে গেলে আলেম হিসেবে তৈরি করার উদ্দেশ্যে সন্তানকে মাদ্রাসায় ভর্তি করার মতো লোক খুব নগন্য সংখ্যকই বলা যায়।
মাদ্রাসা শিক্ষা বিশেষ করে কওমী, হাফেজিয়া ধারার শিক্ষার উদ্দেশ্য ইহোলৌকিক নয় পারলৌকিক। সঙ্গতই এই বিশাল শ্রমশক্তি একটি উন্নত সমাজের সহায়ক না হয়ে, হচ্ছে এর অন্তরায়।
সত্যিকার অর্থে বিভিন্ন রকম শিক্ষার এক জোড়াতালি ও গোজামিল দিয়ে চলছে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। বিভিন্ন ধারার শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, দৃষ্টিভঙ্গি ও বিশ্বাস ভিন্নভিন্ন হওয়ার কারণে রাষ্ট্র-সমাজ-পরিবার সর্বত্রই একটা সাংঘর্ষিক পরিণতি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
গ্রামসির মতে, একমূখী শিক্ষা না থাকার অর্থ হচ্ছে একটি ককটেল সমাজ । যাতে আমরা বাস করছি
============
বিটগেনস্টাইন-এর দ্বিতীয় সূত্র
-----------------------------------------------------
==========
ইসলাম ধর্মমতে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারীর পাবার কথা পুরুষের প্রাপ্য সম্পত্তির অর্ধেক। কিন্তু সমাজের অভ্যন্তরের নানা সামাজিক বৈষম্য ও অসুবিধার কারণে নারী তার এই প্রাপ্যভাগটুকুও নিতে পারেনা। কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী তার “ফরায়েজী” নামক প্রবন্ধে নারীর বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা আলোচনা করে দেখিয়েছেন কোন কোন কারণে নারী উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে ধর্মমত কর্তৃক অসমবন্টনের প্রাপ্য ভাগটুকুও নিতে অসমর্থ হয়। আর হিন্দু আইনে উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে নারী কোনভাগই পায়না। ফলে নারী তার সারাটা জীবন সম্পূর্ণ সহায়–সম্পত্তিহীন অসহায় অবস্থায় পার করে। সম্পত্তিহীন নারী তার প্রথম জীবন পার করে পিতার দায় হয়ে, দ্বিতীয় জীবনের দায় তার স্বামীর উপর এবং শেষজীবনের দায় গ্রহণ করে তার সন্তান–সন্ততি। নারীর কোন নিজস্ব বসত–বাড়িও থাকেনা। পিতার বাড়ি, স্বামীর বাড়ি, এবং শেষ–মেষ পুত্র–কন্যার স্বামীর বাড়িতে সে আশ্রয় লাভ করে। সারাজীবন ধরে নারী বঞ্চিত হয় তার নিজের পরিচয়টুকু থেকেও। পিতার বাড়িতে অমুকের মেয়ে, স্বামীর বাড়িতে অমুকের বউ, সন্তানের বাড়িতে অমুকের মা– এধরনের পরিচয় তাকে সারাজীবন ধরে বহন করে যেতে হয়।
অনেক দিন পর্যন্ত পুরুষরা সন্তান উৎপাদনের কারণ সম্পর্কে জানত না। ফলে পুরুষের পক্ষে সন্তানের কর্তৃত্ব নিয়ে চিন্তার সুযোগ ছিল না। নারীর পরিচয়ে সন্তান বড় হত। পাশাপাশি, একই সময় কৃষি নিয়ন্ত্রণ করত নারীরা। সন্তান জন্ম ও লালনের সময় পুরুষের সাথে নারী শিকারে যাওয়া থেকে বিরত থাকত। ওই অবসরে সে কৃষিকাজ আবিষ্কার করে। আহরিত ফলমূলের বীজ থেকে যে শস্য উৎপাদিত হয়, তা প্রথম নারীই খেয়াল করে। ফলে মানব ইতিহাসে কৃষিকাজ নারীর হাত ধরে বিকশিত হয়েছে।
আত্মা কি.......?????????
একটা গরুকে জবাই করার পর যখন এর মাংশগুলোকে টুকরো করা হয়, তখন খন্ডিত টুকরো গুলোকে আমরা লাফাতে দেখি। অথবা সাপ, কেঁচো, টিকটিকি ইত্যাদির লেজ কেটে বা ছিঁড়ে ফেললে, ঐ ছিঁড়া অংশকেও আমরা কিছুক্ষণ লাফাতে দেখি, তার মানে সেখানে প্রাণ আছে। তাহলে শরীর টুকরো করার সাথে সাথে প্রাণও কি টুকরো হতে থাকে? প্রতিটা জীবকোষেই কি তাহলে প্রাণ থাকে? কিংবা কোন গাছের একটা থেকে দশটি শাখা কেটে রোপণ করলে তা থেকে পৃথক পৃথক দশটি জীবিত গাছ উৎপত্তি হয়। এই দশটি গাছের যে দশটি জীবন, এটা কোথা থেকে আসে? স্বর্গ থেকে, না আগের গাছ থেকে??
--------------------------------------------------------------------------------------------->
মানুষ কল্পনা করে তার শরীর সক্রিয় রাখে যে শক্তি সেটাই প্রান। শরীরে যখন মরে যায় বা দেহ পচে যায়, তখন এই শক্তি বা প্রাণ মরে না, আত্মা হয়ে অনন্তকাল টিকে থাকে। এটাই মানুষের কল্পিত আত্মা। ‘আত্মা অবিনশ্বর’ এই কথাটা সব ধর্মেই বলা আছে।
আসলে আত্মার ধারণা অনেক পুরোন। যখন থেকে মানুষ নিজের জীবন ও মৃত্যু নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে, - তখন থেকে আত্মার ধারণা এসেছে। আদিকাল থেকেই মানুষ ইট, পাথর বা অন্যান্য জড় পদার্থের যে জীবনীশক্তি নেই, তা বুঝতে পারার পর অবাক বিস্ময়ে সে ভেবেছে - জীবগতের যে চলে ফিরে বেড়াবার ক্ষমতাটি রয়েছে, তা কোথা থেকে আসে' কোথায় বা যায়। আত্মা নামক কল্পনাটি সে শুন্যস্থান পূরণ করেছে, তারা রাতারাতি পেয়ে গেছে জীবন-মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করার খুব সহজ একটা সমাধান। আত্মা নিয়ে জীবন মৃত্যুকে ব্যাখ্যা করার করার প্রচেষ্টা প্রথম শুরু হয়েছিলো নিয়ান্ডার্থাল আমলে, নিয়ান্ডার্থালরা প্রিয়জন মারা গেলে তার আত্মার উদ্দেশ্যে ফুল নিবেদন করতো। এমনকি তারা মৃতদেহ কবর দেয়ার সময় এর সাথে খাদ্যদ্রব্য, অস্ত্র সামগ্রী, শিয়ালের দাঁত এমনকি মাদুলীসহ সব কিছুই রেখে দিত, যাতে তাদের আত্মা শান্তিতে থাকতে পারে আর সঙ্গে থাকা জিনিসগুলো ব্যবহার করতে পারে। অনেক গবেষক (যেমন নিলসন গেসছিটি, রবার্ট হার্টস প্রমুখ) মনে করেন, মৃতদেহ নিয়ে আদি মানুষের পারলৌকিক কল্পনার ফলশ্রুতিতেই মানব সমাজে ধীরে ধীরে আত্মার উদ্ভব ঘটেছে।নিয়ানডার্থাল মানুষের আগে পিথেকানথ্রোপাস আর সিনানথ্রোপাসদের মধ্যে এ ধরনের ধর্মাচরণের কোন নিদর্শন পাওয়া যায় নি।
অনেক সময় ঘুমন্ত মানুষের অস্বাভাবিক স্বপ্নদেখাকেও আত্মার অস্তিত্ব দিয়ে ব্যাখ্যা করতেন প্রাচীন মানুষেরা। এখনো জাপানীরা বিশ্বাস করে একজন মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন তার ভেতরের আত্মা খুব ছোট পিন্ডের আকার ধারণ করে তার মুখ দিয়ে বের হয়ে যায়। তারপর যখন ওই আত্মা আবার দেহের ভিতরে প্রবেশ করে তখনই ওই মানুষটি ঘুম থেকে জেগে উঠে।
আফ্রিকার কালো মানুষদের মতে সকল মানুষের আত্মার রং কালো রং-এর। আবার মালয়ের বহু মানুষের ধারণা, আত্মার রঙ রক্তের মতই লাল, আর আয়তনে ভুট্টার দানার মত। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের অনেকের ধারণা আত্মা আসলে তরল। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা অনেকে আবার মনে করে আত্মা থাকে বুকের ভিতরে, আয়তনে অবশ্যই খুবই ছোট।
খ্রীষ্টপূর্ব ছয় শতক পর্যন্ত হিব্রু, ব্যবলনীয়, গ্রীক এবং রোমাদের মধ্যে মৃত্যু-পরবর্তী আত্মার কোন স্বচ্ছ ধারণা গড়ে ওঠেনি । জরথ্রুস্ট্র ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যার আত্মা সংক্রান্ত চিন্তা ভাবনা আধুনিক মানুষের অনেকটা কাছাকাছি ছিল। জরথ্রুস্ট্র ছিলেন খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০ বছর আগেকার একজন পারশিয়ান। তার মতানুযায়ী, প্রতিটি মানুষ তৈরি হয় দেহ এবং আত্মার সমন্বয়ে। জরথ্রুস্ট্রবাদীদের মতে, প্রতিটি মানুষই নিজের ইচ্ছানুযায়ী স্বাধীনভাবে কাজ কর্ম করার অধিকারী, এবং সে অনুযায়ী, তার ভাল কাজ কিংবা মন্দকাজের উপর ভিত্তি করে তার আত্মাকে পুরষ্কৃত করা হবে কিংবা শাস্তি প্রদান করা হবে। জরথ্রুস্ট্রের দেওয়া আত্মার ধারণাই পরবর্তীকালে গ্রীক এথেনীয় দার্শনিকেরা তাদের দর্শনের অংগীভুত করে নেয়। এই দর্শনের তিন পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন সক্রেটিস, প্লেটো এবং অ্যারিস্টটল। প্লেটোর বক্তব্য ছিল যে, প্রাণী বা উদ্ভিদ কেউ জীবিত নয়, কেবলমাত্র যখন আত্মা প্রাণী বা উদ্ভিদদেহে প্রবেশ করে তখনই তাতে জীবনের লক্ষণ পরিস্ফুট হয়। প্লেটোর এই ভাববাদী তত্ত্ব আ্যারিস্টটলের দর্শনের রূপ নিয়ে পরবর্তীতে হাজার খানেক বছর রাজত্ব করে। পিরামিড-মমি আর আমাদের রাখাইন জমিদারদের সমাধী সবি হচ্ছে আত্মা বিশ্বাসের স্বাক্ষর। আত্মা সংক্রান্ত কুসংসস্কার শেষ পর্যন্ত এভাবেই মানব সমাজে ধীরে ধীরে জাঁকিয়ে বসে।
জরথ্রুস্ট্রের মৃত্যুর প্রায় এক হাজার বছর পর অত্যন্ত প্রভাবশালী ধর্মবেত্তা সেন্ট অগাস্টিন (খ্রীষ্টধর্মগ্রহন করার আগ পর্যন্ত নয় বছর অগাস্টিন ম্যানিকিন (Manchean) গোত্রর্ভুক্ত ছিলেন, যারা জরথ্রুস্ট্রবাদ চর্চা করত।)খ্রীষ্টধর্মের ভিত্তি হিসেবে একই ধরণের (মানুষ = দেহ + আত্মা) যুক্তির অবতারণা করেন। এর সাথে যোগ হয় পাপ-পূণ্য এবং পরকালে আত্মার স্বর্গবাস বা নরকবাসের হরেক রকমের গালগপ্প। এগুলোই পরে ডালপালায় পল্লবিত হয়ে পরে ইসলাম ধর্মেও স্থান করে নেয়।
আত্মা নিয়ে বর্তমান বৈজ্ঞানিক সমাজের কৌতুহলও পিছিয়ে থাকেনি তাই বিভিন্ন সময় ইউরোপ-আমেরিকায় বিভিন্ন দেশে গঠিত হয়েছিল আত্মিক অনুসন্ধান কমিটি। ১৮৮২ সালে লন্ডনে যে আত্মিক সমিতি গঠিত হয়েছিল, তার সভাপতি ছিলেন কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত প্রফেসর হেনরি সি জুইক, তার সহকারীদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আর্থার জ়ে ব্যালফুর। যতদূর জ়ানা যায় বাংলাদেশে ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ‘আত্মিক অনুসন্ধান সমিতি’ গঠিত হয়, এর প্রসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহন করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডঃ এ্যান্ড্রু অলক দেওয়ারী।
সে যাই হোক, ভারতীয় আর্যরা আত্মা সন্মন্ধ্যে ব্যাপক আলোচনা করেছে কিন্তু তা পাশ্চাত্যের মত বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টি ভঙ্গি নিয়ে না, আধ্যাতিক চিন্তার মধ্যেই ভারতীয়রা তাদের চিন্তা সীমাবদ্ধ রেখেছিল।
কিন্তু তারপরও বিবর্তনের আধুনিক তত্ত্ব না জানা সত্ত্বেও প্রাচীন ভারতের যুক্তিবাদী চার্বাকেরা সেই খ্রীষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে তাদের সময়কার অর্জিত জ্ঞানের সাহায্যে আত্মার অস্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছিলেন। আত্মা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করতে করতে শেষ পর্যন্ত ঠোঁট কাটা চার্বাকেরা ঈশ্বর-আত্মা-পরলোক-জাতিভেদ-জন্মান্তর সব কিছুকেই নাকচ করে দিয়েছিলে। তারাই প্রথম বলেছিলেন বেদ ‘অপৌরুষেয়’ নয়, এটা একদল স্বার্থান্নেষী মানুষেরই রচিত। জনমানুষের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়া সেই সব স্বার্থান্নেষী ব্রাক্ষ্মণদেরকে ভন্ড, ধূর্ত, চোর, নিশাচর বলে অভিহিত করেছিলেন চার্বাকেরা, তারা বাতিল করে দিয়েছিলেন আত্মার অস্তিত্ব। চার্বাকেরা একটি চমৎকার উপমা দিয়ে ব্যাপারটি বুঝিয়ে ছিলেন। বলেছিলেন, আঙ্গুর এবং মদ তৈরির অন্যান্য উপাদানগুলোতে আলাদা করে কোন মদশক্তি নেই। কিন্তু সেই উপকরণগুলোই এক ধরণের বিশেষ প্রক্রিয়ায়র মাধ্যমে কোন পাত্রে মিলিত করার পরে এর একটি নতুন গুণ পাওয়া যাচ্ছে, যাকে আমরা বলছি মদ। আত্মা বা চৈতন্যও তেমনি।
নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিক তাঁর ‘The Astonishing Hypothesis: The Scientific Search for the Soul’ গ্রন্থে পরিস্কার করেই বলেছেন: আমার ‘আমিত্ব’, আমার উচ্ছ্বাস, বেদনা, স্মৃতি, আকাংখা, সংবেদনশীলতা এবং আমার মুক্তবুদ্ধি এগুলো আসলে মস্তিস্কের স্নায়ুকোষ থেকে উদ্ভুত অণুগুলোর বিবিধ ব্যবহার ছাড়া আর কিছুই নয়।’ স্নায়ুকোষ অণুগুলোর এই ব্যবহারই হচ্ছে ‘মন’ । আসলে মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের মৃত্যু মানেই কিন্তু ‘মন’ এর মৃত্যু, সেই সাথে মৃত্যু তথাকথিত আত্মার।
অনেক সময় দেখা যায় দেহের অন্যান্য অংগ প্রত্যংগ ঠিকমত কর্মক্ষম আছে, কিন্তু মস্তিষ্কের কার্যকারিতা হারিয়ে গেছে। এ ধরনের অবস্থাকে বলে কোমা। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হারানোর ফলে জীবিত দেহ তখন অনেকটা জড়পদার্থের মত থাকে । তাহলে জীবন ও মৃত্যুর যোগসূত্রটি রক্ষা করছে কে? আত্মা, নাকি মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষের সঠিক কর্মক্ষমতা? একবার কেউ কোমায় চলে গেলে তাকে পুনরায় জীবনে ফেরৎ আনা অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু যারা চেতনা ফিরে পান, তারা সাধারণতঃ ২/১ দিনের মধ্যেই তা ফিরে পান,আবার একমাস পরও কোমা থেকে ফিরে আসার নজির রয়েছে।
ব্রাইন শ্রিম্প (brine shrimp), গোলকৃমি বা নেমাটোড, কিংবা টার্ডিগ্রেডের মত কিছু প্রাণি আছে যারা মৃত্যুকে লুকিয়ে রাখতে পারে। যেমন, ব্রাইন শ্রিম্পগুলো লবনাক্ত পানিতে বংশবৃদ্ধি করতে থাকে, কিন্তু পানি যখন শুকিয়ে যায়, তখন তারা ডিম্বানু উৎপাদন, এমনকি নিজেদের দেহের বৃদ্ধি কিংবা মেটাবলিজম পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। শ্রিম্পগুলোকে দেখতে তখন মৃত মনে হলেও এরা আসলে মৃত নয় – বরং এদের এই মরণাপন্ন অবস্থাটিকেই বলে ‘ক্রিপ্টোবায়টিক স্টেট’। আবার কখনো তারা পানি খুঁজে পেলে তখন নতুন করে ‘নবজীবন প্রাপ্ত’ হয়। এর আর একটি জলন্ত উদাহরন লাং ফিস (ভিডিওটি দেখুন)। এদের অদ্ভুত ব্যাপার স্যাপার অনেকটা ভাইরাসের মত। ভাইরাস জীবণ ও জড়ের মাঝামাঝি স্থানে থাকে। ভাইরাসকে কেউ জড় বলতে পারেন, আবার কেউ জীবিত । এমনিতে ভাইরাস ‘মৃত’, (‘ক্রিপ্টোবায়টিক স্টেট’-এ থাকে) তবে তারা ‘বেঁচে’ ওঠে অন্য জীবিত কোষকে আশ্রয় করে। ভাইরাসে থাকে প্রোটিনবাহী নিউক্লিয়িক এসিড। এই এসিডই ভাইরাসের যাবতীয় বৈশিষ্ট্যের আধার। উপযুক্ত দেহ কোষ বিভাজনের মাধ্যমে জীবিত হয়ে উঠে।
"আসলে মানব দেহের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংগ রয়েছে - মস্তিস্ক, হৃৎপিন্ড, আর ফুসফুস। যে কোন একটির বা সবগুলোর কার্যকারিতা নষ্ট হলে মৃত্যু হতে পারে। যেমন, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বন্ধ হলে কোমা হয়, হৃৎপিন্ডের কার্যকারিতা বন্ধ হওয়াকে বলে সিনকোপ, আর ফুসফুসের কার্যকারিতা বন্ধ হওয়াকে বলে আসফিক্সিয়া।" আগেকার যুগের (বর্তমানেও) মানুষেরা মৃতুর এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা জানত না বা জানে না বলেই কল্পনার ফানুস উড়িয়ে মানুষ ভাবে, ঈশ্বরের নির্দেশে যমদূত এসে প্রাণহরণ করলেই কেবল একটি মানুষ মারা যায়। আর তখন তার দেহস্থিত আত্মা পাড়ি জমায় পরলোকে। তারা আত্মা বলতে বাতাসের মত কোন নির্দিষ্ট অদৃশ্য শক্তি কল্পনা করে, যা শরীরের কোন নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে। এই শক্তি শরীর থেকে বেরিয়ে গেলেই কেউ মারা যায় বলে ধারনা করে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা হল-মস্তিস্ক, হৃৎপিন্ড, আর ফুসফুস এর যে কোন একটির বা সবগুলোর কার্যকারিতা বন্ধ হলে মৃত্যু হয়।
মানুষের মত বহুকোষী প্রাণীদের মৃত্যু দু’ ধরনের। দেহের মৃত্যু (Clincal Death) এবং কোষীয় মৃত্যু (Cellular Death)। দেহের মৃত্যুর স্বল্প সময় পরেই কোষের মৃত্যু ঘটে। শরীরের কোষ বেঁচে থাকে তৎক্ষণই যতক্ষণ এর মধ্যে শক্তির যোগান থাকে। শক্তি উৎপন্ন হয় কোষের অভ্যন্তরস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া থেকে। মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যকারিতা ক্ষুন্ন হলে কোষেরও মৃত্যু হয়।
===========
===================
============
================
===============
প্রাচীন গুহা মানবদের জীবন প্রবাহ থেকে জানা যায়, তখন যৌনাচার হত যাচ্ছে তাই ভাবে, অর্থ্যাৎ যে যেভাবে পারে। শক্তিমান পুরুষ আকর্ষণীয়া নারীকে তার শক্তিবলে ধর্ষন করতো,তখন মানুষে মানুষে কাড়াকাড়ির বা সংঘাত-সংঘর্ষের বিষয় ছিল মূলত মাত্র দুটি, খাদ্য ও যৌনতা। আর এই কাড়াকাড়িতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ত বয়স্ক পুরুষেরা যাদের খাদ্যের সঙ্গে সঙ্গে কিছুটা যৌনতারও প্রয়োজন তখনও ফুরিয়ে যায়নি। যুবতি মেয়েদের নিয়ে জোয়ান ভাই ও অন্যান্য প্রতিবেশি যুবকদের মধ্যে যাতে সংঘর্ষ না বাধে তার জন্য নিয়ম তৈরী ও তার প্রয়োগের চেষ্টা করতে থাকে। এভাবেই, একের পর এক নিয়ম ও আইন প্রণীত ও সংশোধীত হতে হতে আজকের সংসার, সমাজে এসে পৌছেছে। আজকের সমাজেও বিভিন্ন জাতি-উপজাতিতে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম। মুসলিম সমাজ ৪টি বিয়ের অনুমতি দেয়।
তারপরও অবাধ যৌনতা আছে তাদের। যেমন- বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় প্রায় ২ কোটি মানুষ অনিরাপদ যৌন স¤পর্কের কারণে এইচআইভিসহ নানা যৌন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির মুখে থাকে। কারণ সেক্স ইন্দোনেশিয়ায় সবচেয়ে সহজলভ্য। এমন কোনো বাস/ট্রেন টার্মিনাল, বাজার নেই, যার পাশে কোন পতিতালয় নেই। রাজধানী জাকার্তার ট্রেন লাইনের দু’পাশে মাইলের পর মাইল ঝুপড়ি পতিতালয়। ট্রেনের গতি এখানে অতি ধীরে হয়। কারণ বেশিরভাগ যাত্রী এখান থেকেই উঠেন।
ইরানের পার্লামেন্টারি রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট রিপোটে বলা হয়, সেখানে অবিবাহিত ৭০ শতাংশ ইরানী নারীর প্রেমিক রয়েছে। তরুণ-তরুণীদের এই অনৈতিক যৌনতা থেকে বের করে আনতে 'সিগহে' ব্যবস্থা/মোতা বিবাহ চালু করা হয়েছে। 'সিগহে'মোতা বিবাহ শিয়া মুসলমান সংস্কৃতির এক প্রাচীন চর্চা, যার মাধ্যমে নারী-পুরুষ অস্থায়ীভাবে বিয়ে করতেন। এটা আসলে এক ধরণের পতিতাবৃত্তি।
এবার আসুন আমাদের অবস্থা জানি। একটি ছেলে বা মেয়ের সাথে সারা জীবন কাটিয়ে দিব - আমরা মানসিকভাবে এভাবেই বড় হই। বৈচিত্র না থাকায় আমরা একগেয়েমিতে ক্লান্ত ও মহা বিরক্ত থাকি মানসিকভাবে। ফলাফল স্ত্রীর সঙ্গে সব সময়ই দা¤পত্য কলহে জডিয়ে পড়ছি। অবস্থাটা এমনই যে 'অসুখী' এবং 'বিরক্ত' হয়ে থাকাটাই এখন আমাদের স্বামী-স্ত্রীর জন্য নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দা¤পত্য স¤পর্কের আবেগ- অনুভ‚তি যখন ভোতা হতে শুরু করে, তখন পুরুষরা স্ত্রীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতে থাকে। আবার সে গোপনে অন্য নারীর সঙ্গে স¤পর্কে জড়াচ্ছেন; যার নাম পরকীয়া।
আমাদের অবিবাহিত যুবকদের অবস্থা আরো করুণ। যখন তাদের শরীরে যৌন হরমোন উৎপাত শুরু করে, তখন তারা ‘যৌনতা কন্টোলের সাধনা করে’ পড়াশুনায় ব্যস্ত। এর ফলে যৌন বিকারে ভোগে বিকৃত উপায়ে যৌনতার স্বাদ খোঁজে। যখন তারা কর্মজীবনে প্রবেশ করে সংসারী হয়, তখন তাদের যৌন জীবন নি¤œগামী। কিন্তু পশ্চিমে? তারা ষাটোর্ধ বয়সে টোনাটুনির মতো পরম নির্ভরতায় সুখের সংসার করে। সঙ্গীর প্রয়োজন আসলে পৌঢ় বয়সেই বেশি হয়। দারিদ্রের কষ্ট, অপ্রাপ্তির কষ্টের থেকে একাকীত্বের কষ্ট কোন অংশেই কম নয়।
—-----------
¦
====
কী ভাবে রান্না করবেন?
পানি ফুটতে দিন। ফুটে গেলে চাল দেওয়ার আগে হাড়ির মধ্যে নারকেল তেল দিন। যদি আধ কাপ চালের ভাত রান্না করতে চান তা হলে এক চা-চামচ নারকেল তেল মেশাবেন। ভাত হয়ে গেলে খাওয়ার আগে ১২ ঘণ্টা ফ্রিজে রাখুন। খাওয়ার আগে পরিমাণ মতো গরম করে নিন।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষকরা কেবল শিক্ষার্থীদের শিক্ষক আর লেখক-সাংবাদিকরা গোটা দেশের শিক্ষক!
মানুষকে পশু বললে ক্ষেপে যায়, কিন্তু সিংহ বললে খুশি হয়!! সিংহ কি পশু নয়?
বরযাত্রার সময় বর সবার পিছনে থাকে আর বাকীরা সামনে। কিন্তু কবর যাত্রায় মৃত দেহ সবার আগে থাকে আর মানুষ- জন পিছনে! সমস্ত পৃথিবী সুখের দিনে আগে আর দুঃখের দিনে পিছনে।
ধর্মান্ধরা অন্য ধর্মের সমালোচনায় খুশিতে বিগলিত হয়, নিজ ধর্মের সমালোচনার গন্ধ পেলেই হিংস্র হয়ে ওঠে।
সারাটা জীবন বোঝা বইলো দেয়ালের পেরেকটা আর মানুষ সুনাম করলো পেরেকে টাঙানো ছবিটার!!
ছেলেরা যৌবনের শুরুতে প্রেম করার জন্য মারিয়া হয়ে ওঠে; তবে নিজের বোনকে সবসময় এসব থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করে।
পুরুষ কখনোই সুন্দর মন চায় না, সুন্দর শরীর চায়! আর নারীরা চায় বিত্তবান পুরুষ,
কান্না হলো নারীর দাবি আদায়ের বড়ো অস্ত্র!
নারী সুন্দর করে হেসে কথা বললেই পুরুষরা সুযোগ খোঁজে!
টাকার বিকল্প হচ্ছে ‘বিনয়’। কেননা, বিনয় দিয়েও অনেক কাঠিন্যকে জয় করা যায়!
ধর্ম নিয়ে পুরুষ যতটুকু আগ্রহী নারী ততটুকু নয়!
বেশি কথা বলা নারীদের পুরুষ কম পছন্দ করে।
খ্যাতিমানদের সাথে ছবি তুলে যারা নিজেকে প্রচার করতে চায় বুঝতে হবে তারা ব্যক্তিত্ব সংকটে ভুগছে!
বাধ্য না হলে বাঙালি আইনের ধার ধারে না!
নিঃস্বার্থভাবে মানুষ অপরের প্রশংসা করে না, চাপ, লাভ এবং লোভে করে!
শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষার মুখ্য উদ্দেশ্য সার্টিফিকেট অর্জন, জ্ঞানার্জন নয়!
কাজ করলে কাজ বাড়তেই থাকে, আর না করলে একসময় খুঁজেও পাওয়া যায় না!
ধার করার কথা মনে থাকলেও যথাসময়ে যারা ফেরত দেওয়ার কথা ভুলে যায়, বুঝতে হবে তাদের মনুষ্যত্বে ঘাটতি রয়েছে।
মৌলিকত্ব না থাকলে জনপ্রিয়রাও একসময় কালের গর্ভে হারিয়ে যায়।
স্ত্রী এবং লেখক উভয়ই প্রতিনিয়ত প্রশংসা কামনা করে।
মেহমানের উপস্থিতিতে গ্রামের মানুষ খুশি আর শহরের মানুষ বিরক্ত!
যারা ওয়াজ করে তারা কখনোই দান-খয়রাত করে না।
পুরুষ বেশি কাম প্রত্যাশী, কারণ তারা শারীরিক আর নারী বেশি আদর-ভালবাসা প্রত্যাশী, কেননা তারা সামাজিক।নারীরা স্বভাবতই যেমন স্মৃতিকাতর আর পুরুষরা যৌনকাতর।
পুরুষের পছন্দের তালিকায় হাস্যময়ী নারীরাই শীর্ষে।
পশ্চিমারা পশুদের প্রতি যতটা দায়িত্বশীল সন্তানের প্রতি ততটুকু নয়।
নিজারী ইসমাইলিয়া স¤প্রদায়, শিয়াদের মধ্য থেকে একটি দলছুট স¤প্রদায়। নিজারী শিয়াদের দাবী ও তালিকা মোতাবেক তাদের প্রথম ইমাম হল আলী (রাঃ)। তাঁর পুত্র হুসাইন (রাঃ) দ্বিতীয় ইমাম, যথাক্রমে তাঁর পুত্র জয়নুল আবেদিন তৃতীয়, তাঁর পুত্র মোহাম্মদ আল বাকের চতুর্থ, তাঁর পুত্র ঈমাম জাফর সাদেক (রহঃ) পঞ্চম। ঈমাম জাফর সাদেকের দুই সন্তান, যথাক্রমে মুসা কাজেম ও ইসমাইল।
এই ইসমাইল এর ১৪ তম অধঃস্থন পুরুষ নিজার এবং নিজারের ২৭ তম অধঃস্থন পুরুষ প্রথম আগা খান। খলিফা আলী (রাঃ) এর সূত্র ধরে তাদের হিসেবে বর্তমানের প্রিন্স করিম আগা খান ইসমাইলিয়া স¤প্রদায়ের ৪৯ তম ইমাম। এদের নিজস্ব কোন ধর্মগ্রন্থ নাই। তারা দাবী করে যে, কুরআন হল তাদেরও ধর্ম গ্রন্থ। তারা আরও দাবী করে যে, কোরআন সর্বকালের সমাধান দিতে দুনিয়াতে আসেনি।
১৪০০ বছর আগে তদানীন্তন আরবের সমস্যার সমাধান দিয়েই কোরআনের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। তাদের ভাষায় সুন্নিরা কোরআনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ওহী আসার সিল-সিলা বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে যে দাবী করা হয়, সেটিও আসলে ভুল ব্যাখ্যা! তাদের দৃষ্টিতে সঠিক হল, কেয়ামত পর্যন্ত আসমানি ওহী আল্লাহর সু-নির্দিষ্ট বান্দাদের উপর আসতে থাকবে। যেভাবে ইসমাইলিয়া ইমামদের উপর আসে। ফলে তারা কোরআনের কথা অস্বীকার করে না বরং সম্মান করে, তবে কোরআনে ১৪০০ বছর পূর্বের তদানীন্তন সময়ের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য আছে বলে, কাউকে পড়তে উৎসাহিত করা হয় না।
তাদের মতে এই ১৪০০ বছরে পৃথিবীর অনেক কিছুই বদলিয়েয়ে, কোরআনে সে সবের কোন আধুনিক ব্যাখ্যা নাই। কোরআনে এসবের ব্যাখ্যা নাই বলে, ধর্ম তো আর এক স্থানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনা! তাই ধর্ম-কর্মের গতি অব্যাহত রাখতে, ধর্মের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, আধুনিক প্রশ্নের ব্যাখ্যা ও দিক নির্দেশনা দিবেন ধর্মের ইমাম গন। রাসুলের (সাঃ) বংশধর হবার সুবাধে ইসমাইলিয়া ঈমামদের সকল পাপ মার্জনীয়। তাঁদের পাপ সমূহ লিপিবদ্ধ হয় না, তাঁরা চিরকাল নি®পাপ ও নিষ্কলঙ্ক থাকবেন। অধিকন্তু ইমামেরা জগতের সমস্ত পাপী ইসমাইলিয়া অনুসারীর পাপ ক্ষমা করতে পারেন। একজন ইমাম যে কাউকে নি®পাপ করতে পারেন। পাপীরা ইমাম আগা খানের নিকট এসে পাপের পায়চিত্তের জন্য ক্ষমা চাইলে, তিনি স্বীয় গুনে তা ক্ষমা করার অধিকার রাখেন। প্রিন্স করিম ইমাম আগা খান পাকিস্তান ভ্রমণে আসলে, শত শত যুবতি নারী শ্রদ্ধা ও গভীর ভালবাসায় রাস্তায় দুই পাশে শুয়ে, মাথার চুল বিছিয়ে রাস্তা বানিয়েছিলেন।
ইমাম প্রিন্স করিম আগা খান যুবতীদের বিছানো চুলের উপর দিয়ে পায়ে হেটে, তাদের উৎসর্গকে ধন্য করেছিলেন। ইসমাইলিয়ারা ইসলাম ধর্মের রীতি-নীতি অনুসারে নামাজ, রোজা, হজ্জ পালন করে না। বরং নামাজের স্থলে দৈনিক তিন বার আল্লার সাথে শিরিক মিশ্রিত কিছু দোয়া পড়ার নিয়ম শিক্ষা দিয়ে থাকে। তাদের বিশ্বাস, প্রিন্ম করিম আগা খানের চেহারার দিকে নজর দিতে পারলেই, হজ্ব কর্ম স¤পাদন হয়ে যায়। প্রিন্স করিম ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে কখনও কখনও বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করে থাকেন। তখন তিনি তাঁর অনুসারীদের দেখা দেওয়ার ব্যবস্থাটি করে থাকেন। এতে করে অনুসারীদের হজ্জের অনুষ্ঠানটি পালন করার সুযোগ ঘটে যায়।
বাংলাদেশে তিনি যতবার এসেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে ততবার লাল গালিচা সম্বর্ধনা পেয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে বর্তমান ঈমাম প্রিন্স করিম আগা খান বাল্যকালে কেনিয়া এবং বাকী জীবন ইউরোপে কাটানোর কারণে খৃষ্ট ধর্মের প্রভাব তাঁকে আচ্ছাদিত করেছিল। তিনি খৃষ্টধর্মের বাইবেলের সু-সমাচার পদ্ধতির উপর আকৃষ্ট ছিলেন। ফলে তাদের ধর্ম বিশ্বাস মুসলমানদের মত না হয়ে তা খৃষ্ট ধর্মের কাছাকাছি হয়ে যায়।
ইমাম করিম আগা খানের বড় মেয়ে, 'প্রিন্সেস জাহারা' হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রাজুয়েশন শেষে বিয়ে করেন ব্রিটিশ মডেল ও ব্যবসায়ী মার্ক বয়ডেন-কে। এরপর থেকে ইসমাইলিয়া স¤প্রদায়ের মাঝে খৃষ্টানদের অনুপ্রবেশের সুযোগ ঘটে যায়। এই ঘটনার পরে, ইমামে জামান ধর্মীয় রীতিতে সংশোধনী আনেন। নতুন আইনে বলা হয়, প্রতিপত্তি লাভের আশায় ইসমাইলিয়া মুসলমান মেয়েরা যদি খৃষ্টান ছেলেদের পছন্দ করে, তাহলে কন্যার বাবা-মা বিয়েতে বাধ সাধতে পারবে না।
তাদেরকে তাদের মত সিদ্ধান্ত নেবার সুযোগ দিতে হবে। আগা খান তরিকা বোর্ডের মাধ্যমে সুদকে হালাল ঘোষণা করেছেন। স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদি ঋণ দেবার ব্যবস্থা করেছেন। এই ব্যবস্থায় তারা পৃথিবীর দেশে দেশে বহুজাতিক কো¤পানি প্রতিষ্ঠা করে। সহজে ঋণ দেবার কারণে দুনিয়াতে তাঁর সাফল্য ও সফলতা ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করে। আগা খান এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ লাভ থেকে চ্যারিটি, সমাজ উন্নয়ন, খেলাধুলা ও সহযোগিতার নামে সাহায্য দিয়ে থাকে। এতে করে ব্যক্তি প্রিন্স আগা খান একটি প্রবল, উদার ও বিশাল হিতাকাক্সক্ষী মানুষ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
আগা খানের সংস্থা লাভের সাথে আদর্শিক দৃষ্টি ভঙ্গিকে জড়িয়ে রাখে বলে এনজিওদের মত মার খায় না। উদারহরণ হিসেবে বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের নাম বলা যায়, যারা ব্যবসার সাথে একটি আদর্শিক দৃষ্টিভঙ্গিকে উজ্বল করতে চায়, ফলে সেটা দিন দিন উন্নতির দিকে যাচ্ছে। প্রতিজন নিজারী ইসমাইলিয়া শিয়া, প্রতিবছর তাদের ইমাম প্রিন্স করিম আগা খানকে তাদের ধর্মীয় ভাষায় দাসন্দ দিয়ে থাকেন। যার পরিমাণ পৃথিবীর সকল ইমমাইলীয়াদের বাৎসরিক আয়ের ১২.৫%! ধারনা করা হয় এই ফান্ডেই প্রতি বছর হাজার মিলিয়ন ডলার জমা হয়।
প্রিন্স করিম আগা খানের হিসেবে পুরো দুনিয়াতে অনুসারীর সংখ্যা ছিল ৫০ লাখ। সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙ্গে বহু দেশে বিভক্ত হয়ে যাবার ফলে, আগা খান তাজিকিস্তানে ঢুকে পড়ে এবং অকঋঊউ মাধ্যমে ব্যাপক শিল্প কারখানা গড়ে তুলে। দীর্ঘ বছর কমিউনিস্টের যাঁতা কলে পিষ্ট সেখানকার মুসলমানেরা ইসলামের মূল ভিত্তি থেকে অনেক দূরে চলে যায়। এই সুযোগটি কাজে লাগায় আগা খানের অনুসারীরা। তারা মানুষদের ইহ-কালীন অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীর সাথে সাথে পর-কালীন মুক্তির জন্য ইসমাইলিয়া ধর্মকে উপস্থাপন করে।
দলে দলে মানুষ তাদের সাথে ভিড়ে যায়! এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র তাজিকিস্তান থেকেই প্রায় ১ কোটি অনুসারীকে দলে ভিড়াতে সক্ষম হয়!
ব্যক্তি জীবনে প্রিন্ম করিম আগা খান: বর্তমান ইমাম আগা খানের ব্যক্তিজীবনের দুই একটি ঘটনা উল্লেখ না করলে নয়। আগা খান ইমামত পাবার দুই বছর পর তথা ১৯৬৯ সালে ব্রিটিশ মডেল কন্যা সারাহকে বিয়ে করেন। সারাহর জন্য এটি ছিল দ্বিতীয় বিয়ে, তিনি মুসলমান হয়ে নাম রাখেন বেগম সালিমাহ আগা খান।
দীর্ঘ সংসার জীবনের এক পর্যায়ে সালিমাহ স্বামীর আচরণে সন্দেহ পোষণ করেন! স্বামীর সাথে বিভিন্ন নারীর রাত কাটানোকে সহজে মেনে নিতে পারেননি। এই নিয়ে স্ত্রী সালিমাহ ১০ বছর পৃথক থেকেছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি ২০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে তালাক প্রাপ্ত হন। আগা খান ১৯৯৮ সালে গ্যাব্রিয়েল নামের ইউরোপিয়ান আরেক তরুণীকে বিয়ে করেন, যিনি মুসলমান হয়ে নাম রাখেন বেগম ইনারা আগা খান। তিনিও পূর্বের স্ত্রীর ন্যায় স্বামীর আচরণের খুশী ছিলেন না ফলে ২০১১ সালে ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে তালাকপ্রাপ্তা হন।
=========
================
রামমোহন হিন্দু নারীকে দিয়েছেন প্রাণ, বিদ্যাসাগর দিয়েছেন জীবন; রামমোহনের যেখানে শেষ, বিদ্যাসগরের সেখানে শুরু। রামমোহন চেয়েছেন শুধু বিধবার প্রাণটুকু, আর বেশিকিছু নয়; কিন্তু বিদ্যাসাগরের কাছে ওই প্রাণটুকু যথেষ্ট নয়, নারীর জন্যে তাঁর দরকার জীবন, যা শুধু নিশ্বাসপ্রশ্বাস নয়, উপভোগের। ( নারী, পৃষ্ঠা ২৭২ হুমায়ুন আজাদ
বিবাহ বহির্ভূত যৌনতা ও প্রগতিশীলদের ভাবনা।
৩০ শে অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৫:২৯
শেয়ারঃ
0 10 1
ধর্ম প্রবর্তক ও প্রচারকদের চিন্তাজগতের একটি বড় অংশ জুড়ে ছিল নারী পুরুষের যৌন সম্পর্ক। এ ব্যাপারে তারা ছিলেন যার পর নাই উদ্বিগ্ন। ফলশ্রুতিতে ধর্ম গ্রন্থসমূহে এসেছে যৌনতা সম্পর্কিত নানা বিধি নিষেধ। যেন যৌনতাই ধর্মের প্রধান শত্রু! প্রচলিত ধর্মগুলো মানুষের তৃপ্তি ও আকাঙ্খা পুরনের প্রশ্নে উদার নয়। তবুও মানুষ সৃষ্টির ঊষা লগ্ন থেকে উপেক্ষা করেছে আরোপিত সকল বিধি নিষেধ। স্বয়ং ধর্ম প্রবর্তকেরাও লঙ্ঘন করেছেন স্বীয় প্রচারিত ধর্মীয় বিধান; হয়েছেন বহুগামী!
ধর্ম সমূহ সাধারণত কিছু কিছু মানুষের পারস্পারিক আত্মীয়তার সম্পর্কের মধ্যকার যৌন সম্পর্ককে নিষিদ্ধ করেছে,পিতা ও কন্যা, শশুড় ও পুত্রবধূ, জামাতা ও শাশুড়ি, ভাই-বোন সম্পর্ককেও।
কিন্তু বাস্তবতা হলো এই এমন কোন পারস্পারিক সম্পর্ক পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না যে সম্পর্কের মধ্যে কখনো কোথাও যৌনতা সংঘঠিত হয়নি। এধরনের যৌনতা বিশ্বে এখনো বিদ্যমান, বেশ প্রকটভাবেই বিদ্যমান।
যৌন সম্পর্ক সেটা পরকীয়া হোক বা অন্য যে কোন বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কই হোক, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি কি সেটা আমরা সকলেই কম বেশি জানি। আমরা আলোচনা করব একজন প্রগতিশীল মানুষ হিসেবে আপনি বিবাহ বর্হিভূত যৌনতাকে কিভাবে দেখেন।
১) ধরে নিচ্ছি আপনি একজন মুসলিম বংশোদ্ভূত নাস্তিক। একটি মুসলিম মেয়েকে বিয়ের পরে আপনি যদি নিশ্চিত হন যে, বিয়ের আগে আপনার স্ত্রী একজনের সঙ্গে মাস ছয়েক লিভ টুগেদার করেছিল বা তাদের যৌন সম্পর্ক ছিল। সেক্ষেত্রে আপনার প্রতিক্রিয়া কি হবে? আপনি কি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাবেন? উক্ত পরিস্থিতিতে আপনি কি নিজেকে প্রতারিত মনে করবেন? উত্তর হ্যা/না এর পক্ষে কিছু বলুন।
২) আপনি নাস্তিক নন। ইসলামে বিশ্বাসী এবং নিজেকে আধুনিক ও প্রগতিশীল মনে করেন। নিয়মিত না হলেও মাঝে মাঝেই মসজিদে যান নামাজ পড়তে। আপনি অবিবাহিত এবং এপর্যন্ত অনেক মুসলিম নারীর সাথেই আপনার যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। আপনার ভাইয়ের একজন হিন্দু মেয়ে বন্ধু আছে। তাদের মধ্যে যৌন সম্পর্কও আছে। তবে তারা পরস্পরকে বিয়ে করতে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ নয়। তাদের সম্পর্কটিকে আপনি কিভাবে দেখবেন? এই মেয়েটি হঠাৎই একটি হিন্দু পরুষকে বিয়ে করলো, আপনি কি মনে করেন ওই মেয়েটি তার স্বামীকে বঞ্চিত/প্রতারিত করেছে? আপনার নিজের যৌন সম্পর্কগুলো সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া কি? আপনি কি আপনার স্ত্রীকে বঞ্চিত করেছেন?
৩) বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে একজন নারী বা পুরুষ কি আদৌ তার স্বামী/স্ত্রীকে কিছু বঞ্চিত করে? করলে কিভাবে?
যুদ্ধ এবং যৌনতাই আমাদের ভাবনাকে নিয়ন্ত্রন করে, অর্থনীতি শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধ এবং যৌনতাকেই পূঁজি করে টিকে থাকে, সম্প্রসারিত হয়। আপাতদৃষ্টিতে যতটা পরিপাটি মনে হয় আমাদের সমাজের গাঁথুনি, সেটা বোধ হয় অনেক দুর থেকে দেখবার ফল, কিংবা আমাদের সমাজে যৌনতাভিত্তিক লুকোচুরি থাকলেও সেটা স্বাভাবিক ভাবে বিকশিত না হয়ে যতটা ছড়িয়েছে ভেতরে ভেতরে, সেটা জেনে আশ্চর্য হই প্রতিবারই।
যৌনঅপরিতৃপ্তির কারণে পরকীয়ার কারণে স্বামী কিংবা স্ত্রীকে হত্যা করা, শিশু সন্তানদের হত্যা করবার মতো বিভৎসতার নজির শুধু এই শতকেই পত্রিকায় এসেছে এমন নয়, র্থ্যাৎ ১০০ বছর আগেও এমন ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে।
সভ্যতায় নারী একটা সময় পূজিত হয়েছে তার উর্বরতার জন্য, নারীরাই সন্তান গর্ভে ধারণ করতে পারে এবং নারীরাই পুরুষের বিজ গর্ভে ধারণ করে নতুন প্রজন্মের জন্ম দেয়- এই অলৌকিক গুণের জন্যই নারী দেবিরুপে পূজিত হয়েছে, যা কিছু ফলবন্ত, ভুমি, নদী, শষ্য সবই পূজিত হয়েছে নারীরুপে, আকাশ বর্ষণ করে, সেই বর্ষণসিক্ত ভুমি ফলবতী হয়, সুতরাং আকাশ পুরুষ, ধরণী নারী।
===========
বয়ে যাওয়া জলধারা, যার কোনো শাখা নদী নেই, কিংবা যার কোনো উপনদী নেই, বাংলাদেশে সেসব জলধারাকে নদ বলে, নদী সেগুলোই যাদের শাখাপ্রশাখা আছে,
যমুনা, মেঘনা, পদ্মা, করোতোয়া, সবই নদী, কারণ এদের ভাটির কোথাও না কোথাও এরা একটা দুটো শাখা ছড়িয়েছে, আত্রাই থেকে উৎপন্ন হয়েও কোনো শাখা নদী তৈরি করে নি, তাই পূনর্ভবা নদ, ব্রহ্মপূত্রেরও কোনো শাখা নদী নেই, কপোতাক্ষ কিংবা আড়িয়াল খাঁ শুধু কোনো জায়গায় একটা জলের শাখা ছড়াতে পারে নি বলেই আজীবন নদ রয়ে গেলো।
আমাজানের আদিবাসীরা প্রতি পূর্ণিমায় অবাধ যৌনাচারের সুযোগ রেখেছে, এ কারণেই সেখানে পুরুষে পুরুষে যৌনদ্বন্দ্ব নেই, ভারতের নগরগুলোতে প্রখ্যাত সুন্দরীদের মন্দিদের দেবদাসী করা হতো, তারা বিশিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ এবং অন্য সব কুলীনদের যৌনচাহিদা পুরণ করতো পয়সার বিনিময়ে।
ব্যাবিলনে কিংবা মিশরের উপরের অংশে, মন্দিরে সুন্দরীদের সেবাদাসী করে রাখবার প্রবনতা ছিলো। অর্থ্যাৎ সমাজের একটা অংশ, যারা সে সময়ে সমাজকে নিয়ন্ত্রন করতো, তাদের নিজেদের ভেতরে যৌনতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়ার কোনো রকম আগ্রহ ছিলো, সুতরাং তারা ভবিষ্যতে সুন্দরী ও কাম্য হয়ে উঠতে পারে এমন রমনীদের দেবতা তথা সমাজপতিতের সবার ভোগের জন্যই উন্মুক্ত রাখতো। যেকেউ মন্দিরে গিয়ে তাদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করবার সুযোগ পেতো না।
যৌনতার অন্য একটা ব্যবহার ছিলো যুদ্ধে, পুরুষের সুন্দরী নারীর প্রতি কামনাকে পূঁজি করে সম্রাট এবং সেনাপতিগণ একদা নারীদের গুপ্তচরের পেশায় নিয়োজিত করতো, তাদের কাজ ছিলো শত্রু শিবিরের গুরুত্বপূ্র্ণ মানুষদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে এইসব সংবাদ সেনাপতিকে জানানো। তারা একই সাথে গুপ্তঘাতকের কাজও করতো।
মানুষের লিঙ্গ ২টা – পুরুষ আর নারী । দুনিয়ায় মানুষ আগমনের শুরুতে ব্যাপারটা কেমন ছিল তা আমার জানা না থাকলেও পরবর্তীতে কোন এক কারণে নারীকে “কমজোর”,”নির্ভরশীল” মনে করা শুরু হল- ফলে মেয়েদের কাজকর্ম , চিন্তাধারা অনেকটা “কমজোর” ও “নির্ভরশীল” দের মতো হয়ে গেল...ধীরে ধীরে হাজার বছরের বিবর্তনের ধারায় এই ধারনা ছেলে- মেয়ে সবাইকে গ্রাস করল-মেয়েরা প্রকৃতপক্ষেই “কমজোর”,”নির্ভরশীল” তথা দ্বিতীয় লিঙ্গ হয়ে গেল...
সকল মানুষ ই জন্মের সময় প্রথমে মেয়ে থাকে । কয়েক সপ্তাহ পরে Y chromosome মেয়েকে ছেলে বানায় । মেয়েই আসে শুরুতে তারপর ছেলে। মেয়ে থেকেই ছেলের উৎপত্তি (*১)।
উদাহরণ ১:
আমরা সবাই জানি সন্তানের জন্ম দিতে মায়েদের কি পরিমাণ কষ্ট হয়। সবচেয়ে বড় কষ্টকর ব্যাপারটা হল সন্তানের মাথা বের হওয়া । যে পথ দিয়ে সন্তান বের হয়- তা এই কাজের জন্য সঠিক মাপের নয় । বিজ্ঞানীরা দেখেছেন আদিম যুগে মানুষের মাথা ছিল ছোট ! তখন প্রসবকালে এতটা কষ্ট হত না। কিন্তু মানুষের মস্তিষ্কের উন্নতি হয়েছে দ্রুত- তাই মাথার আকার বেড়েছে – কিন্তু Vagina তো তার সাথে তাল মিলিয়ে বড় হয়নি । আর তাই দিন দিন মায়েদের প্রসবকালে যন্ত্রণা বাড়ছে।
উদাহরণ ২:
প্রাচীনকালে মানুষের শারীরিক কাঠামো ছিল ভিন্ন- শক্তি ছিল অনেক বেশি । ধীরে ধীরে মানুষ বাহুবলের বদলে নিজেদের প্রজ্ঞা , মেধা , বুদ্ধিকে ব্যবহার করেছে- পেশী শক্তির চেয়ে মাথার পরিশ্রম , ব্যবহার হয়েছে বেশি – ফলশ্রুতিতে আজকের মানুষ আগের দিনের মানুষের চেয়ে অনেক ভিন্ন- শারীরিক ক্ষমতা কম- কিন্তু মস্তিষ্কের ক্ষমতা অনেক বেশি... আদিম যুগের মানুষের বৈজ্ঞানিক নামটা পর্যন্ত আলাদা । বিবর্তনের মাধ্যমে দিন দিন কত নতুন ভাইরাস,ব্যাক্টেরিয়া তৈরি হচ্ছে...(এরা ক্ষুদ্র বলে বিবর্তন-মিউটেশন সহজে হয়) এর পরও যদি কেউ বিবর্তনে বিশ্বাস না করে- তাকে বোঝানোর কোন মানে নেই । মানুষ বিবর্তনের মাঝ দিয়ে এসেছে- এটা নিয়ে হয়ত ধর্মীয় কারণে তর্ক থাকতে পারে। কিন্তু মানুষ আগমনের পর থেকে যে বিবর্তিত হয়েছে- এই সত্যটা আশা করি সবাই মানবেন।
কিছু মানুষ আছে যারা বাঘ-কুকুরের উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে যে প্রকৃতির নিয়মই হল মেয়েরা পুরুষের “আনন্দের” জন্য তৈরি । হুমায়ূন আহমেদ টাইপ কিছু লেখকও এই ধরনের চিন্তা আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়। কিন্তু তাদের মাথায় তখন পিঁপড়া , মৌমাছি , Betta strohi মাছের উদাহরণ মাথায় আসে না। (*৪)বাঘিনী,মেয়ে-কুকুর যেমন বাঘ-কুকুরের ছেড়ে যাওয়া সন্তানকে আগলে বড় করে, ছেলে Betta strohi ও তেমনিভাবে Betta strohi সন্তান মুখে আগলে রেখে বড় করে। এরকম মাছ আরও অনেক আছে । কিছু প্রজাতিতে পুরুষ মুখে ডিম নিয়ে তা দেয় ।এদেরকে Mouthbrooder মাছ বলা হয় ।আর কিছু প্রজাতিতে পিতা সন্তানের সাথে সাথে থাকে- বিপদে পোনারা তাদের বাবার মুখে ঢুঁকে যায়...নিশ্চয়ই টিভিতে দেখেছেন এটা। পিঁপড়া – মৌমাছিদের সমাজে নারী যে পুরুষের ঊর্ধ্বে তা তো সবাই জানে ।আসলে প্রকৃতিতে ২ টাই ঘটে । কোন প্রজাতিতে পুরুষ হয় “নায়ক”, কথাও নারী হয় “নায়ক” (“নায়িকা” না )। তাই “প্রকৃতির নিয়মে নারীরা পুরুষের চেয়ে নিচে” –এই ভাবনা যেন কারও মাঝে না থাকে ......এটা আমাদের সৃষ্টি করা নিয়ম – প্রকৃতির না । কোন এক সময় মেয়েরা পুরুষের চেয়ে “দুর্বল” হয়ে গিয়েছিল সাময়িকভাবে । পরে তারা সেই “দুর্বলতায়” অভ্যস্ত হয়ে যায় । আর হাজার বছরের পরিক্রমায় এই দুর্বলতা তাদের জিন এ গেঁথে গেছে পাকাপাকিভাবে ...
প্রাচীন ধর্ম ও সমাজব্যবস্থাগুলো ও তাই প্রমাণ করে । সেখানে নারীরাই ছিল “নায়ক” । সময়ের সাথে এক বিকৃত বিবর্তনে নারীজাতি আজকের “মেয়ে” তে পরিণত হয়েছে । আর তাই পরবর্তী সময়ে আসা ধর্ম-সমাজ সবকিছুতে “নারীরা দুর্বল” ফুটে উঠেছে ।
আমি আসলে এখনো আমার মূল বিষয়ে আসিনি । আমার লেখার বিষয়বস্তু প্রাচীনকাল বা বিবর্তন না- বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ।
আবার ছোটবেলায় ফিরে যাই-
একটু আধটু জ্ঞান হবার পর থেকে মাথায় ১টা জিনিস কাজ করত –পাশ্চাত্যের “উন্নত” দেশগুলোতে নারী-পুরুষ বৈষম্য অনেক কম । ওখানকার মেয়েরা Freely কাজকর্ম করে – রাস্তায় চলাফেরা করে । তারা ছেলেদের মতই পোশাক আশাক পরে । অযথা নিজেকে অতিরিক্ত ঢেকে ঢুঁকে রাখে না । ওখানে ছেলে মেয়ে হাজারবার সেক্স করলেও কেউ খারাপভাবে তা দেখে না। এটাই তো ন্যাচারাল- এটাই তো হওয়া উচিৎ । আর এ জন্যই ওরা আসলে এত উন্নত ।যত সমস্যা আমাদের এই কনজারভেটিভ দেশগুলোতে ।
কিন্তু ঘটনা কি আসলেই তাই?
আবার মন দিয়ে এখন সেই মুভিগুলো দেখা উচিৎ আমার, যেগুলো দেখে এই ধারনা তৈরি হয়েছিল । তাহলে আমি হয়ত এখন দেখতে পেতাম (যা তখন পাইনি) তা হল মুভিতে নায়কটা পুরো সিনেমাতে সাধারণ কাপড় পরে অভিনয় করেছে। দরকারে ২-১ বার হয়ত জামা খুলেছে কিন্তু এর বেশি কিছু না... আর মুভির নায়িকাটা? সে তো মোটামুটি ৫০ ভাগ দৃশেই তার স্তনের কিয়দংশ বের করে রেখেছে , হাঁটুর নিচে কাপড় যায়ই না। জামার হাতা- সেটা আবার কি????ছেলেরা শৌর্য-বীর্য , “Personality”, পেশা –এসব মানবিক(পেশা মানবিক না হলেও সেটা নিজের মন-মাথা দিয়েই বেছে নিতে হয় ।) দিক দিয়ে আকর্ষণীয় হবে (শারীরিক সৌন্দর্য তো আছেই, কিন্তু ছেলেদের ক্ষেত্রে তা এসব দিয়ে পোষায় নেয়া যায় ),বিপরীত লিঙ্গকে আকর্ষণ করবে । আর মেয়েরা তাদের রূপ-সৌন্দর্য আর শরীরের মতো বস্তুগত জিনিস দিয়ে তা করবে...তাহলে মেয়েদের সাথে বস্তুর কি পার্থক্য?
পাশ্চাত্যে মেয়েদের normal dressup ই হয়ে গেছে শরীর দেখানো মতো। আমাদের কারো চোখে এটা খারাপ, আবার কারও বা HOT, SEXY লাগলেও তাদের কাছে এটা স্বাভাবিক ।
“তাদের কাছে এটা স্বাভাবিক” –এই কথাটা আমরা প্রায়ই বলি এবং পুরো ব্যপারটা পাশ কাটাই Culture এর দোহাই দিয়ে । কিন্তু ১টি বার ভাবুন- ছেলেরা নিজেদের শরীর ঢেকে ঢুকে রাখবে আর মেয়েরা যথাসম্ভব তা দেখিয়ে বেড়াবে , ছেলেরা মানবিক গুন দিয়ে আকর্ষণীয় হবে আর মেয়েরা দেহ দিয়ে হবে – এটা যখন ১টা সমাজের চোখে “NORMAL” লাগে তখন সেই সমাজের আর কি বাকি থাকে?? (যেভাবে চলছে তাতে হয়ত একদিন আমাদেরও এটাই “NORMAL” লাগবে- আর খারাপ মনে হবে না...)
অনেকে নারীদেহকে “অনিন্দ্য সৌন্দর্য”, “দেখার মতো জিনিস”, “সুন্দর সৃষ্টি” ইত্যাদি উপমা দিয়ে সেটাকে “মেলে ধরার” পক্ষপাতী । কিন্তু এই “নারীদেহ” কাদের কাছে “অনিন্দ্য সৌন্দর্য”, “দেখার মতো জিনিস”, “সুন্দর সৃষ্টি” ?? অবশ্যই তা ছেলেদের কাছে ...আর মানেন আর না মানেন এর কারণ যৌনতা ছাড়া আর কিছু না । (কিছু অনবদ্য শিল্পকলায় হয়ত সত্যিকার অর্থেই Neutrally শুধুমাত্র সৌন্দর্যের sense থেকে এর বন্দনা করা হয়েছে- কিন্তু তার সংখ্যা নগণ্য । আর ওগুলো special case- ওগুলো ১ শতাব্দীতে ২-১টা সৃষ্টি হয় )
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে আমরা ধরেই নিয়েছি ছেলেদেরকে আনন্দ দেয়া, যৌন সুড়সুড়ি দেয়াই মেয়েদের কাজ !!! তাই নয় কি ??? নারীরা শো-কেসে সাজানো শো পিস এর মতো – প্রদর্শিত হওয়াই তাদের কাজ । পুতুলের প্রাণ নেই-তাই কেউ তাকে আনন্দ দেয় না । ছেলেরাও মেয়েদেরকে আনন্দ দেয়ার জন্য জননাঙ্গ অর্ধেক বের করে ঘুরে না,জননাঙ্গ চেপে ধরা-ফুলে থাকা পোশাক পরে না । কিন্তু মেয়েরা তাদের জন্য এটা করে...এবং খুব আনন্দের সাথেই করে এবং তারপর “নারী স্বাধীনতা” নিয়ে লাফালাফি করে ...... তারা নিজেরাই নিজেদেরকে ছেলেদের পণ্যে পরিনত করেছে – নিজেদেরকে শুধুই আনন্দের খোরাক বানিয়ে ফেলেছে । কি উন্নত যুগে আমরা বাস করছি!!!...আর আমাদের মনের অজান্তেই (কারণ আমরা মন বন্ধ করে রাখি-ভেবে দেখি না কিছু) এই নোংরা চিন্তাধারা আমাদের মনে গেঁথে যাচ্ছে... অসভ্য বর্বর যুগে আবার ফিরে যাচ্ছি আমরা নতুন আঙ্গিকে ...
পরবর্তী আলোচনায় যাওয়ার আগে একটা জিনিস নিয়ে কথা বলা দরকার –বর্তমান ভারতীয় কালচার ।
ভারত এখন দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশগুলোর ১টা । সম্মান করার মতো নানা দৃষ্টান্ত আছে ভারতের । কিন্তু আজ আমি তাদেরকে ঘৃণা করার ২-১ টা কারণ বলব-
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ৫ জন ধনীর ২ জন ভারতের ।আবার সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যেও প্রথম সারিতে আছে ভারত । বৈষম্যের এই তীব্রতা শুধু অর্থনৈতিক না- এটা তাদের দেশের সবখানে । জ্ঞান- বিজ্ঞান , শিক্ষা – এসব দিকে না গিয়ে আজ তাদের কালচার নিয়েই শুধু কথা বলব ।
ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র , কিন্তু তাদের দেশের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সারা বিশ্বে কুখ্যাত । তাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দল নির্বাচনে দাঁড়ায়। ভারতে আইন করে সমকামিতা , Live Together সিদ্ধ করা হয়েছে । কিন্তু আজও তাদের দেশে সতীদাহের খবর পাওয়া যায় ...
ভারতের টিভি চ্যানেলগুলোর বাংলাদেশে রমরমা কদর । এসব চ্যানেলে দেখানো হয় ঝকঝকে তকতকে এক কালচার । দেখে মনে হয় ভারত আমেরিকাকেও হার মানিয়েছে । মেক-আপের সাগরে ভাসা সিরিয়ালের পাত্র-পাত্রী(অপূর্ব কাহিনী ও অসাধারণ শব্দশৈলীর কথা এখানে না-ই বললাম...), আলোয় উদ্ভাসিত ঝকঝকে তকতকে প্রাসাদতুল্য ঘরবাড়ি দেখে মাথা ঘুরে যায়। দেশের বাইরে শুটিং হওয়া অধিকাংশ সিনেমা দেখে মনে হয় ভারত আর আমেরিকা তো একই জিনিস ।
কিন্তু ভারত কি আসলে তাই??
ডিডি ন্যাশনাল টাইপের সরকারী ভারতীয় চ্যানেল-এ এখনো প্রাথমিক শিক্ষা , টিকা দান, কন্যা সন্তানকে মানুষের মর্যাদা দেয়া, বাল্যবিবাহ রোধ করা নিয়ে বিজ্ঞাপন দেখানো হয়...
ভারতের “মিডিয়া কালচার” কিন্তু পুরপুরি মিথ্যা না- এটা ভারতের মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের কালচার , যারা পাশ্চাত্যকে অনুকরণ করার ছ্যাঁচড়া পণে ব্রত । এই কালচার আসল ভারতের, ভারতবর্ষের কালচার না । এটা ১ টা বিকৃত ধারা । যে ধারা নোংরামিতে এখন ১ নাম্বার । ইংলিশ মুভিও বাবা-মা সহ দেখা যায়- হিন্দি যায় না । একেকটা হিন্দি গানের ভিডিও তো বিকৃত-মনের মানুষেরও ঘিন্না ধরায় ।আর গানের কথা?”আমার নাম শীলা,শীলার অনেক যৌবন,আমি প্রচণ্ড যৌন আবেদনময়ী-কিন্তু আমি কারও ‘হাতে’ যাই না...” প্রতিটা গানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অর্ধ-নগ্ন মেয়েদের নোংরা নাচ। Hollywood এর ভাল দিকগুলো তারা গ্রহণ করতে পারেনি।পারেনি তাদের নিজ কালচারকে ধারণ করতে । আবার Western এর মতো পুরপুরি নগ্ন ও হতে পারেনি । কিন্তু অনুকরণ তো করতেই হবে... তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে তাদেরকে অর্ধ-নগ্ন থাকতে হবে - নইলে তো আর “আধুনিক” হওয়া যাবে না- “স্মার্ট” হওয়া যাবে না... Western Culture এর চেয়েও ভয়াবহ নোংরা কালচার আমাদের পাশে ফণা তুলে বসে আছে আর দংশাচ্ছে পশ্চিমাদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি ...
এতক্ষণ ভারত নিয়ে অনেক কথা বললাম- কারণ বিশাল ভারতের পাশে আমরা ছোট্ট ১টা দেশ । সবদিক দিয়ে তাদের দ্বারা আমরা প্রবলভাবে প্রভাবিত। ভারতীয় চ্যানেল , সিনেমা – সবকিছুরই অবাধ বিচরণ বাংলাদেশে । এই অবাধ বিচরণ কিন্তু থামানো যাবে না। চেষ্টা করাও হবে বোকামি । এই যুগে আমরা অবশ্যই সবকিছুর সান্নিধ্যে আসব- আসতেই হবে । কিন্তু সেই সবকিছু থেকে আমরা খারাপটাকে চিনে নিয়ে বর্জন করতে পারব না? এটা তো আমাদেরকেই করতে হবে ।এতটুকু বুদ্ধি-বিবেক-শক্তি আমাদের নেই??
আমাদের দেশের বেশীরভাগ মেয়ের(মেয়ে=মেয়ে,মহিলা সব...) প্রিয় টিভি চ্যানেল হিন্দি সিরিয়ালের চ্যানেলগুলো । সিনেমা ও সিরিয়ালের জগতই তাদের কল্পনার জগত । নাজিয়ার মতো ২-১ টা মেয়ে আছে যারা M.I.T তে গিয়ে বুঝিয়ে দেয় মেয়েরা সবদিক দিয়েই সব পারে ।কিন্তু অন্য মেয়েরা তা বুঝতে চায় না। আর তাই ম্যাথ অলিম্পিয়াডে ১০ টা ছেলের পর ১ টা নাজিয়াকে পাওয়া যায় । কিন্তু সভ্য সমাজের সব মেয়েই তো এখন পড়াশুনা করে- তাহলে সমস্যাটা কী?
সমস্যাটা হল স্কুল-কলেজ-প্রাইভেট-Boyfriend-“JUST FRIEND” এই কয়টা জিনিস ই তাদের জগত ।(ছেলেদেরও তাই) তার সাথে আছে সিনেমা-সিরিয়াল ও তথাকথিত আবেগ এর ভার্চুয়াল জগত । এর বাইরে আর কিছু নাই। আধুনিকতা প্রকাশের জন্য বসুন্ধরা সিটিতে বান্ধবী ,Boyfriend ও “JUST FRIEND” দেরকে নিয়ে ঘোরা যায়, ভ্যালেন্টাইন্স-ডে তে কার্ড-চকলেট কেনা যায় । কিন্তু সাইন্সের স্টুডেন্ট হয়ে “কলেজ বায়োলজি” ছাড়া আর কোন আধুনিক বিজ্ঞানের(আধুনিক শব্দটি না হয় বাদ-ই দিলাম) বই কিনে পড়া হয় না।
বাংলাদেশে মোটামুটি সব মেয়ের ই “স্বপ্ন” থাকে ডাক্তার হওয়া । প্রতি বছর সরকারি মেডিকেলে অর্ধেকের মতো মেয়ে ভর্তি হয়। বের হয় কয়জন তা আমি সঠিকভাবে জানি না , তবে এই বছর বগুড়া মেডিকেল থেকে মেয়ে পাশ করে বের হয়েছে ৫ জন । (ভর্তি হয়েছিল ঠিক অর্ধেক) । পুরো মেডিকেল এর পরিসংখ্যানটাও এরকম ই হবে হয়ত । দেশে ভাল মহিলা ডাক্তার কয়জন আছে তা দেখেও বোঝা যায় যে জাস্ট ১টা রোমান্টিক তথা আবেগী চেতনা থেকে তারা মনে করে তারা “স্বপ্ন” দেখে ,কিন্তু আসলে তা সত্যিকারের স্বপ্ন নয় (অনেক মেয়ে দেখে কিন্তু সমাজের কারণে তারাও আগাতে পারে না-“ডাক্তারির এত লম্বা পড়া শেষ করার পর বুড়ি মেয়েকে বিয়ে করবে কে?”-এই মহান চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা পড়াশুনার মাঝেই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দেয় আর ভাবে “বিয়ের পরে পড়বে-সমস্যা কী?” কিন্তু তারা নিজেরাও জানে যে সেটা কত বড় সমস্যা ) সারাদিন কোচিং করে- বই মুখস্থ করে প্রশ্ন কিনে তারা মেডিকেল এ Chance পায় এবং তারপর তাদের “স্বপ্ন” পূরণ হয়ে যায় ...
হিন্দি-ইংলিশ নোংরামি দেখে আমাদের দেশের মানুষও নোংরামিটাকেই স্মার্টনেস ভাবছে । মেয়েরা ভাবছে নিজের শরীরের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার মতো জামা কাপড় পরাটাই স্মার্টনেস ,নারীমুক্তি,আধুনিকতা আর অনেক বেশি Cool.. “প্রথম আলো”র “নকশা”এর মতো ম্যাগাজিনও তাদেরকে এটাই শিখায়।(“প্রথম আলো”র মতো ১টি পত্রিকা কিভাবে এরকম একটি কাজ করতে পারে তা আমি বুঝে পাই না... ) তাই নিজের স্তনের আকৃতি সবাইকে দেখিয়ে চাপা কামিজ, টিশার্ট , ফতুয়া পরে তারা ঘুরে বেড়ায় । জামার গলা হয় স্তনের ক্লিভেজ দেখানোর জন্য যথেষ্ট আর হাতা হয় মাইক্রোস্কপিক । আর ছেলেরাও HOT girlfriend অথবা “JUST FRIEND “ বানানোর জন্য এসব মেয়ের জন্য পাগল হয়ে থাকে । যা দেখে অন্য Normal মেয়েরা হীনমন্যতায় ভোগে ও তারাও একসময় তার বান্ধবীর মতো “HOT” হবার আপ্রাণ চেষ্টা করে । ওদিকে টিভিতে মেয়েদের কসমেটিকস এর বিজ্ঞাপনে আমাদের মেয়েদেরকে দেখানো হয় – “তুমি মেয়ে- তুমি সুন্দর, সেক্সি না হলে তোমার জীবনের কোথাও সফল হতে পারবে না ।” একটা জাতিকে অসুস্থ বানাতে এর চেয়ে বেশি আর কি লাগে? আমাদের সবার এখন ধারনা হয়ে যাচ্ছে মেয়েদের সৌন্দর্যই সব, তারা দেহ-সর্বস্ব । হুমায়ূন তার বইতে লিখছেন “হরিণ সুন্দর চোখে আর ননারী সুন্দর বুকে”!!!!
এখানে ১টা জিনিস Clear করা দরকার – টিশার্ট , ফতুয়া মেয়েরা পরতে পারবে না- আমি কিন্তু তা মনে করি না। ড্রেস ১টা পরলেই হল । কিন্তু টা যেন হয় শালীন ।আর এই শালীনতা যেমন টিশার্ট পরে রক্ষা করা যায়, তেমনি বোরকা পরেও ভঙ্গ করা যায়। Easy Feel করার জন্য, Relaxation এর জন্য টিশার্ট অবশ্যই best । কিন্তু...
এখন মেয়েরা যেসব টিশার্ট পরে সেগুলো কি নরমাল টিশার্ট ?? মেয়েদের জন্য টিশার্ট আলাদা- ওগুলোর হাতা হয় ছোট, গলা হয় বড় আর সাইজ এমন হয় যেন তা লেপটে থাকে গায়ের সাথে- যে পরে তার দিকে তাকালেই যেন তার ফিগার আমাদের চোখকে টেনে ধরে রাখে , তার হাঁটাচলার সাথে সাথে স্তনের স্পষ্ট নড়াচড়া যেন আমাদেরকে পাগল করে দেয়...শরীরের বাঁকগুলো আমাদের বুকে কাঁপন তোলে ,তাকে বিছানায় পাবার জন্য মন ছটফট করে । বন্ধুর কানে ফিসফিস করি- “দোস্ত, মাগীটারে দেখ......উফফফ......দোস্ত...লাগামু......লাগামু...”
এরকম ড্রেস কি Easy Feel করার জন্য, Relaxation এর জন্য পরা হয়?নাকি নিজের দিকে বিপরীত লিঙ্গের কামাতুর দৃষ্টিকে উপভোগ করার জন্য পরা হয়?? যে মানুষ নিজের প্রতি অন্যের এরকম মনোভাব তৈরি করাতে চায়-পছন্দ করে সে কতটা FREAK ?? তাদের যখন এসব এতই মজা লাগে তখন তারা গলায় ১টা “Open For SEX” লেখা signboard ঝুলায় রাস্তায় ঘুরলেই পারে- তারপর রাস্তার সব মানুষের “উত্তপ্ত ভালবাসা” দিয়ে নিজের দেহ-মন ভরিয়ে তারা বাসায় ফেরত যাবে....
যদি তারা ওপরের কাজটাও করত এবং দেহ-মন শান্ত হবার পর নরমাল লাইফ কাটাত – আমার মতে সমাজের এখনকার চেয়ে কম ক্ষতি হত। ১টা অপূর্ণ সহজাত প্রবৃত্তিকে বিকৃতভাবে উস্কে দেয়া হত না...বন্ধুর কানে ফিসফিস করা সেই ছেলেটির অতৃপ্ত, উস্কে যাওয়া যৌনাকাঙ্ক্ষার শিকার অন্য কোন অবলা মেয়ে হত না... সারাদিন যৌন সুড়সুড়িতে থেকে অসুস্থ মানসিকতা নিয়ে বেড়ে উঠত না যুব-সমাজ। যে ক্ষুধা তৈরি করত মেয়েটি-তা আবার সে মিটিয়ে দিত ।
বাংলাদেশে ইভ টিজিং , ধর্ষণ বৃদ্ধির এগুলো ও কি কারণ না?? একদিকে বিবেকহীনতার কারণে, মানুষের মূল্যবোধ এমনিতেই কমে গেছে বহুগুণে । ছোট থেকে সেক্স বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না থাকায় বিকৃত জিনিসকেই আমরা সঠিক ভাবছি । আবার ১টি দল আছে যাদের মাঝে ধর্ম-মূল্যবোধের কিছুটা অবশিষ্ট থেকে সেটার সাথে - সাথে নোংরামি মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে ... সেই দলটি পুরপুরি অভদ্রও হতে পারছে না-ভদ্র ও থাকতে পারছে না। সেক্স করছে না ধর্ম ও সতীত্বের ভয়ে– কিন্তু সেক্স এর সুড়সুড়ি দিচ্ছে সব মানুষকে। ২ এর মাঝখানে থেকে আরেক বিকৃত রুচির পাগল মানুষ হয়ে গেছে তারা । ১জন মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিকে যদি সুড়সুড়ি দিতে থাকা হয়- সে তো খুব সহজেই বিকৃত কাজে ঝাঁপিয়ে পড়বে...মনোবিজ্ঞান তো তাই বলে...আর তাই নারী-পুরুষের স্বর্গীয় আকর্ষণ, অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছে ইভ টিজিং- ধর্ষণ দিয়ে। এরকম দুঃখ আর কি হতে পারে?
বউ পেটানো,নারী নির্যাতন আগে ছিল অশিক্ষিতের কাজ- এখন তা ভদ্র সমাজে ঢুঁকে গেছে। বুয়েটে পড়া ছেলে তার ৭ বছর প্রেম করে বিয়ে করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা স্ত্রীর ওপর নির্যাতন চালায়- এর মতো হতাশা আর কয়টা আছে??আর এর পেছনে কারণ?? কারণ মেয়েরা আছে দোটানায়। কর্মক্ষেত্রে , বিদ্যাপীঠে মেয়েরা এখন সামাজিকভাবে অনেক সম্মানিত। কিন্তু মেয়েদের ১টা দল তাদের নিজেদের আত্মসম্মান,মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে বিপরীত লিঙ্গের কাছে দিনদিন সেক্স টয় তে রূপান্তরিত হচ্ছে।আর তারাই বোধকরি দিনদিন দলে ভারি হচ্ছে...Western country গুলতে এখন যেকোনো কিছুর “সৌন্দর্য বর্ধনের” জন্য নারী ব্যবহৃত হয় । খেলার উত্তেজনা বাড়াতে, দর্শকদেরকে তুষ্ট করতে তাদেরকে নাচানো হয়...যদি ছেলে মেয়ে সবাই নাচত – একই রকম জামা কাপড় পরে তাহলে না হয় সেটাকে স্বাভাবিকভাবে নেয়ার চেষ্টা করা যেত । কিন্তু তা তো হয় না। Cheerleader হয় মেয়েরা ।অনেক সময় দলে কিছু ছেলেও থাকে, কিন্তু তারা “প্রধান আকর্ষণ” না। তাদের ড্রেস আপ ও থাকে স্বাভাবিক । দিন দিন আমরা যে আদিম যুগে ফিরে যাচ্ছি এটা কি তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ না?
Western ও Indian (Indian টা আসলে Western এরই অপভ্রংশ )এই দুই দিকের সাপের ছোবলে আমাদের দেশও নীল হয়ে যাচ্ছে । গতকাল ফেসবুক থেকে লিঙ্ক পেয়ে বাংলাদেশের ১ ফ্যাশন হাউজের ওয়েবসাইটে গেলাম । সেখানে কিছু বাঙালি মডেল শাড়ী পরে এমন পোজ দিয়েছে যে বিশ্বাস করতে অনেকক্ষণ লাগে যে এটা আসলেই বাংলাদেশি ওয়েবসাইট আর মডেলরা বাঙালি ..... এরপর নেটে সার্চ দিয়ে বাংলাদেশের অনেকগুলো ফ্যাশন হাউজ ও তাদের ফ্যাশন শো এর ছবি দেখলাম ...আমি এই ব্যাপারগুলো সম্পর্কে একদম অজ্ঞ ছিলাম। “নকশা”য় কিছু ছবি দেখে ভাবতাম এটাই বর্তমান “ফ্যাশন” পরিস্থিতি এবং সেটাতেই আমার তীব্র আপত্তি ছিল । কাল হতভম্ব হয়ে গেলাম ।( আমি আর এগুলোর লিঙ্ক দেয়ার দরকার মনে করছি না- আপনারা একটু সার্চ দিয়ে দেখে নিয়েন । ) এখন ১টা জিনিস আবার বলতে চাই; যদিও আগেও তা কয়েকবার বলেছি –এসব সাইটে কিন্তু ১০ টা মেয়ের অর্ধ নগ্ন ছবির পর ১ টা ছেলের ছবি পাওয়া যায় এবং সেই ছেলে কিন্তু অর্ধ-নগ্ন না ... যারা এসব ফ্যাশন শো তে অংশ নেয়, ফ্যাশন হাউজের মডেল হয় তারা কি দেখছে না যে তারা নিজেদেরকে অন্যের উপভোগের “বস্তু” বানিয়ে ফেলেছে ?? পতিতারা আমাদের সমাজে ঘৃণ্য (যদিও শখ করে কেউ পতিতা হয়না) । তারা অন্যের কাছে নিজেকে “সামগ্রী” বানিয়ে ভোক্তাকে তুষ্ট করে দেয় । ভোক্তার বিকৃত যৌনাকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করে দেয় । কিন্তু আমাদের সমাজের “লেবেল-হীনা পতিতা”রা তো সেই বিকৃত যৌনাকাঙ্ক্ষা তৈরি করে দিচ্ছে ...আর তার জন্য ভুগছে আমাদের পুরো সমাজ । যৌনতা ব্যাধি হয়ে গ্রাস করে রেখেছে অধিকাংশ মানুষকে । সেক্সকেই জীবনের ১ নাম্বারে নিয়ে এসেছে সবাই ।নতুন প্রজন্ম (ছেলে-মেয়ে সবাই)নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের কাছে সুন্দর, আকর্ষণীয় ,সেক্সি করার জন্য নিজেদের সময় পার করে দিচ্ছে । চুলের কাটিংটা কেমন হবে সেটা নিয়ে যতটা চিন্তা করি আমরা, চুল কাটার কাঁচিটা কিভাবে বানানো হয়- সেটা নিয়ে তার এক সহস্রাংশ সময়ও ভাবি না। সেক্স আমাদের জীবনের ১টা পার্ট – হ্যাঁ , খুব মজাদার ১টা পার্ট । কিন্তু তাতে নোংরামি কেন থাকবে? আর এর বাইরে তো আরও অনেক পার্ট আছে- অনেক সুন্দর , আরও বেশি মজাদার, গুরুত্বপূর্ণ ।কিন্তু সেগুলো নিয়ে আমরা ভাবি না।আমাদেরকে ভাবতে দেয়া হয় না। আমাদের মিডিয়া সারাদিন শখ-শারিকার নাচ দেখায়, বুয়েটের জীবন পোদ্দার স্যার এর গবেষণা দেখায় না, বাংলাদেশি ছাত্রের ৪ Frequencyর অ্যান্টেনা আবিষ্কারের খবর তারা দেখায় না। (দেখালে ১ মিনিট দেখায়) তাই সেটার খবর কেউ রাখে না ...
আমরা জীবনে আমেরিকার মুভি দেখি ছোট থেকে , কিন্তু আমেরিকার রেপ এর হার জানি বড় হয়ে । (অনেকে তা জানি-ই না...)আর তাই ওদের সমাজ সম্পর্কে ১টা ভুল ধারনা আমাদের মনে তৈরি হয় ।আমরা মনে করি ওদের ওপেন সেক্স লাইফ ,নগ্নতাই ওদের সমাজের সাথে আমাদের পার্থক্য।আর ওদের এত উন্নতির কারণ ওদের সমাজের সাথে আমাদের সমাজের এইসব পার্থক্য। কিন্তু সত্য হল এই যে এসব নগ্নতা , অশালীনতা, নারীকে পণ্যে রূপান্তর – এসবের জন্য তাদের উন্নতি বরং কমে গেছে । পুঁজিবাদের চরম স্বার্থপরতা, বস্তু-কেন্দ্রিক ও অর্থ-কেন্দ্রিক চেতনা তাদের আমজনতাকে ঘিরে রেখেছে । আমরা তাদের যে উন্নতি দেখি তা তাদের সমাজের খুব ক্ষুদ্র ১টা অংশের সৃষ্টি, অভিবাসীদের সৃষ্টি । বাকিদের অবস্থা পুরা উল্টা ।তাদের জ্ঞান আমাদের চেয়েও কম। পৃথিবীতে যুদ্ধ শুরু হলেও তার খবর তারা রাখে না। গতবার ইসরাইলের ফিলিস্তিন আক্রমণের পর এটা নিয়ে আমেরিকার জনমত নেয়ার চেষ্টা চালান হয় ১ টা টিভি চ্যানেল থেকে। বেশীরভাগের উত্তর ছিল – “তাই??হামলা চালিয়েছে? এ সম্পর্কে তো আমি কিছু জানি না...” তাদের দেশে যারা মানবাধিকার নিয়ে ফাল পারে তাদের সংখ্যা হাজার জনে ১ জন ।এর কারণ??? কারণ ওই সমাজব্যবস্থা । তাদের চিন্তার জগত । ওটা যদি সুন্দর হত , তারা আর বেশি উন্নত হত। তাদের কম উন্নতির কারণকেই আমরা উন্নতির কারণ মনে করে ভুল করি , আর উন্নতির কারণ ; তথা গবেষণা , কর্মঠ চেতনার চর্চা করি না।
পরিশেষে অল্প কিছু কথা বলব । আমাদের চেনা দুনিয়া ৩ টা । পাশ্চাত্য , মধ্যপ্রাচ্য আর প্রাচ্য । ল্যাটিন আমেরিকা, চীন-জাপান এদের খবর আমরা বেশি পাই না। তাই ওদের সমাজের অবস্থা আমরা ঠিকমত বলতে পারি না।এই ৩ দুনিয়ার মাঝে পাশ্চাত্যের যৌন বৈষম্য, নোংরা যৌনতা নিয়ে এতক্ষণ কথা বললাম । মধ্যপ্রাচ্যে মেয়েদের মৌলিক অধিকার পর্যন্ত নাই । শেখরা ৫-৬ টা বিয়ে করে, টাকা উড়ায়, জন্মদিনে ইউরোপের গায়িকার সাথে নাচে । ওখানকার সবচেয়ে উন্নত দেশ ইরানে মেয়েরা ভোট দিতে পারে না। বাকি দেশ গুলোর কথা বাদ-ই দিলাম ।প্রাচ্যের পাকিস্তান তো কোন দেশই না। সেখানে এখনো নিয়মিত ফতোয়া দিয়ে দোররা মারা হয় মেয়েদেরকে। ভারতও পুরাই রসাতলে গেছে । একদিকে সতীদাহ, বাল্যবিবাহ হয় , অন্যদিকে মেয়েদেরকে চিয়ার-লিডিং এ নামানো হয় , “শীলা কি জাওয়ানি” গাইয়ে নাচানো হয় । বাদ থাকে বাংলাদেশ । ৫ বছর আগে হলেও হয়ত বলতাম নারীর ক্ষমতা , মূল্যায়ন , স্বাধীনতা কম থাকলেও বাংলাদেশের মেয়েদেরকে বাজারে পাওয়া যায় না ।কিন্তু আজ বাংলাদেশের মেয়েদেরকে শুধু বাজারে না, রাস্তা ঘাটে পাওয়া যায় ।
তার মানে আজ পৃথিবীর যেদিকে তাকাই , সেক্স ১টা অনেক বড় সমস্যা । সেক্স এর কারণে আমরা কলুষিত । সমাজ অবক্ষয়ের সবচেয়ে বড় কারণগুলোর ১টা এই সেক্স । ১টা সমাজকে কিভাবে ধ্বংস করে দেয়া যায়-এর উত্তরে লেনিন প্রথমেই বলেছিলেন যুব-সমাজকে যৌন-চিন্তায় আক্রান্ত করে দাও ...আজ সবখানেই এই দশা । সাম্য , সুন্দর যে সমাজের কল্পনা আমরা করি তা কি কখনই আনা যাবে না? আগে স্বপ্ন দেখলেও এখন Doubt হয় । হয়ত যদি মানুষের কোন লিঙ্গ না থাকত , অর্থাৎ সবাই এক লিঙ্গের হত – সেটাই হত পারফেক্ট ... সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা মানুষের হাড়ের কোষ থেকে শুক্রাণু তৈরি করে তা দিয়ে ডিম্বাণু নিষিক্ত করে সন্তান জন্ম দেয়ার পদ্ধতি উদ্ভাবক করেছেন।(*২, *৩) ২ লিঙ্গের প্রয়োজন আর নেই...শুধু নারীরাই পারবে সন্তান জন্ম দিতে । হয়ত সমাজের এত ঝামেলা বৈষম্য কমাতে পরে এরকম লিঙ্গ বিহীন কোন পৃথিবীতেই বাস করবে মানুষ !!!! পারফেক্ট পৃথিবী হবে সেটাই ... কেউ আর নিজের দেহের দিকে নজর দিবে না- নজর দিবে সুন্দর কাজে , সৃজনশীলতায় ,জ্ঞান-বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে , মানবতায়।
যত তথ্য প্রযুক্তি , যোগাযোগের উন্নতি ঘটবে ততই কালচারাল মিশ্রণ ঘটবে । এটাকে থামানোর কোন রাস্তা নেই । হয়ত একসময় পুরো পৃথিবীর কালচার এক হয়ে যাবে । কিন্তু সেই কালচার যে অপ-কালচার-ই হবে সেটা তো না। আমরা নিজের বিবেক আর চেতনাকে জাগ্রত করে, চিন্তার সাথে সব কাজ করে চাইলেই সব নোংরামি বাদ দিয়ে সব কালচার এর সৌন্দর্য ধারণ করে এমন এক বিশ্ব তৈরি করতে পারব যেখানে আমাদের লিঙ্গ, জাতি , ধর্ম এসবের নিরিখে কোন পরিচয় থাকবে না – থাকবে শুধু ১টি পরিচয়-আমরা মানুষ ।
আইনের দেশ আমেরিকায় যৌনতা বিষয়ক ১০টি আজব আইন
পৃথিবীতে মানবতার কথা বলে যে দেশটি, যে দেশটি সন্ত্রাসবাদের বিপক্ষে সর্বদা যুদ্ধাংদেহী তার নাম হচ্ছে ইউনাইটেড স্টেটস্ অব আমেরিকা। দেশটি সম্পর্কে জানতে গিয়ে সেখানকার অদ্ভুত ১০ টি যৌন আইন পাওয়া গেল। আইনের বক্তব্যগুলো শেয়ার করছি। কিছু অ্যাডাল্ট শব্দ প্রয়োজনের তাগিদে ব্যাবহৃত হয়েছে।
১। অ্যারিজোনা সহ আঠারো (১৮) টি স্টেটে ওরাল সেক্স নিষিদ্ধ।
২। ভার্জিনিয়াতে লাইট অন অবস্থায় সেক্স করা আইনিভাবে নিয়ম বহিঃর্ভুত বলে গন্য করা হয়, ইলিগাল।
৩। উইলোডেল এবং অরিগন অংগরাজ্যে যৌনক্রিয়াকালীন সময়ে বাঁজে কথা (টকিং ডার্টি) বলা বেআইনী।
৪। জর্জিয়াতে অবিবাহিত কাপলদের ক্ষেত্রে যৌন মিলন নিষিদ্ধ। (আমার কথাঃ ইজ ইট পসিবল ইন আমেরিকা!!)
৫। ওয়াশিংটন ডিসিতে মিশনারী পজিশন ছাড়া যেকোন সেক্সুয়াল পজিশন নিষিদ্ধ, বেআইনী!
৬। কানরসভীল এবং উইসকোনসিনে সংগীনি অর্গাজমে থাকাকালীন পিস্তল, বন্দুক ইত্যাদি দিয়ে গুলি করা বেআইনি। (লেখকের কথাঃ এই অবস্থায় ফায়ার শুটিং কেন প্রয়োজন হতে পারে!!!)
৭। হারিসবার্গ, পেনসিলভানিয়াতে কোন ট্রাক ড্রাইভারের সাথে টোল বুথে যৌনকর্মে লিপ্ত হওয়া আইনত নিষিদ্ধ!
৮। ফ্লোরিডাতে Porcupine নামে একধরনের রডেন্টের সাথে কোন ধরনের যৌন সম্পর্ক বেআইনী (লেখকের অনুভুতিঃ )
৯। উতাহ/উটাহ অংগরাজ্যে ফার্স্ট কাজিনকে বিয়ে করা বেআইনী, তবে ৬৫ বছর বয়সের পরে (কাজিনের) কোন আইনী বাধা নেই।
১০। আবার ওয়াশিংটন ডিসি। এখানে পেট এনিমেলের সাথে আপনি (যদি একজন পুরুষ হন) সেক্সুয়ালি ইনভলভড হতে পারবেন। শর্ত পেটের ওজন কোনমতেই ৪০ পাউন্ডের বেশি হতে পারবেনা!
যৌনতা অনেকের কাছে একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে। নতুনত্বের খোঁজ করতে গিয়ে তারা নিজেদের বিপদ
মেয়েটির বয়স ১৯ বছর। জিভে ক্যানসার। ধূমপান-মদ্যপানের অভ্যাস নেই। চিকিৎসকেরা রোগের কারণ নিয়ে খানিকটা আতান্তরে। বাড়ির লোকেরা জানালেন, তাঁদের মেয়ে কোনও রকম নেশা করে না। কলেজ থেকে সোজা বাড়ি ফেরে। বেশির ভাগ সময়ে বাড়িতেই থাকে। চিকিৎসা শুরু হল। পাশাপাশি চলল তার সঙ্গে কথাবার্তাও। এক দিন মেয়েটি চিকিৎসকের কাছে স্বীকার করল, বাবা-মা অফিস যাওয়ার পরে তার একাধিক পুরুষ বন্ধু বাড়িতে আসে। তাদের কারও কারও সঙ্গে তার শারীরিক সম্পর্কও রয়েছে। রয়েছে ‘ওরাল সেক্স’-এর অভ্যাসও। চিকিৎসক বুঝলেন, এত অল্প বয়সে মেয়েটির এমন মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্য কারণ কী হতে পারে।
এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। কলকাতার এক প্রথিতযশা চিকিৎসকের এই অভিজ্ঞতা এখন শুধু এ রাজ্য নয়, জাতীয় স্তরেই ক্যানসারের কারণ সম্পর্কে নতুন করে উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে। এ রাজ্যের চিত্তরঞ্জন ক্যানসার ইনস্টিটিউট থেকে শুরু করে মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল পর্যন্ত সর্বত্রই চিকিৎসকেরা এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের অধিকর্তা অনিল ডিক্রুজের বক্তব্য, শুধু মুখ নয়, তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ওরো-ফ্যারিঞ্জিয়াল ক্যানসারের ঘটনা দ্রুত বাড়ছে। তিনি বলেন, “এ দেশে এখনও মুখের ক্যানসারের পিছনে তামাকই সবচেয়ে বড় কারণ। কিন্তু এটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই যে, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস থেকে জিভের এবং মুখের ভিতরে নানা অংশের ক্যানসার হচ্ছে।” যৌন অভ্যাসের সঙ্গে ক্যানসারের মতো মারণ রোগের যোগসূত্রের দিকটি নিয়ে এ দেশে যেহেতু কোনও চর্চাই হয় না, তাই তার ফল আরও মারাত্মক হতে পারে বলে চিকিৎসকদের আশঙ্কা।
২০২০ সাল নাগাদ ভারতে ক্যানসার মহামারীর আকার নেবে বলে বারবার হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এই রোগের সম্ভাব্য বহু কারণ সম্পর্কেই সচেতনতা বাড়ানোর কাজ এখনও শুরু হয়নি। চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ মনে করছেন, ধূমপানের কারণে যত শতাংশ মানুষের মুখে ক্যানসার হয়, ইদানীং তার প্রায় সমসংখ্যক মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন ‘ওরাল সেক্স’-এর কারণে। এই অভ্যাস গ্রাস করছে বিশেষত তরুণ প্রজন্মকে। একটি মার্কিন সমীক্ষা জানাচ্ছে, যাঁদের জীবদ্দশায় এক থেকে পাঁচ জনের সঙ্গে ‘ওরাল সেক্স’-এর অভিজ্ঞতা হয়েছে, তাঁদের মুখের ক্যানসার হওয়ার ভয় অন্যদের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। এ রাজ্যে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট (সিএনসিআই)-এর অধিকর্তা জয়দীপ বিশ্বাসও একই কথা জানিয়েছেন। তাঁর মতে, শুধু ‘ওরাল সেক্স’ নয়, সামগ্রিক ভাবে সুরক্ষিত যৌনতা সম্পর্কে সচেতনতা না বাড়লে ক্যানসারের প্রকোপও বাড়তে থাকবে। গত এক দশকে অল্পবয়সীদের মধ্যে ক্যানসারের হার অনেক বেড়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিদেশে কন্ডোম ব্যবহারের চল অনেক বেশি। এ দেশে শুধু ‘ওরাল সেক্স’ নয়, সুরক্ষিত যৌনতা নিয়েই কোনও ধারণা নেই। অনেক সময়েই আমরা দেখছি, অল্প বয়সী মেয়েরা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ছে। অল্প বয়সে গর্ভপাতের সময়ে কোনও চোট পেলে কয়েক বছর পরে তা থেকে ক্যানসার হতে পারে।”
ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস নেই, অথচ মুখের ক্যানসারে আক্রান্ত কমবয়সীদের ভিড় বাড়ছে তাঁদের চেম্বারে। এঁদের মধ্যে বড় অংশেরই ‘ওরাল সেক্স’-এর অভ্যাস রয়েছে। যথাযথ প্রচার না থাকায় চিকিৎসার ক্ষেত্রেও নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা থেকে যাচ্ছে। রোগী ভাবতেও পারছেন না, ব্যক্তিগত জীবনের নানা অভ্যাস কী ভাবে এই মারণ রোগকে ডেকে আনছে। তিনি বলেন, “একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে এডসের ভয় নিয়ে বিস্তর প্রচার হয়। কিন্তু এই একই কারণে ক্যানসারও যে বাড়তে পারে, সেই প্রচারটা হয় না বললেই চলে। মূল কথা হল, দেহরসের মাধ্যমে এই ভাইরাস এক জনের থেকে অন্য জনের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে তাই অঙ্কের নিয়মেই ভয়টা বেড়ে যাচ্ছে।”
মেয়েদের মধ্যে এ দেশে যে ক্যানসারের হার এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি, তা হল জরায়ুমুখ ক্যানসার। এর পিছনে অপরিচ্ছন্নতা একটা বড় কারণ। বিশেষত ঋতুকালীন সময়ে অপরিচ্ছন্ন থাকা বা নোংরা পুকুরে নিয়মিত স্নান করার ফল মারাত্মক হতে পারে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “সাধারণ ভাবে মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত পরিবারে জরায়ুমুখ ক্যানসারের ঘটনা বেশি ঘটার কথা নয়। কিন্তু ইদানীং তেমন পরিবার থেকেই অল্পবয়সী মেয়েদের এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখছি আমরা।” এর কারণ কী? তিনি বলেন, “জরায়ুমুখ ক্যানসারের জন্য দায়ী হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস। এর বাহক পুরুষ। কিন্তু এর জেরে রোগটা হয় মহিলাদের। একাধিক যৌনসঙ্গী থাকলে তাই জরায়ুমুখ ক্যানসারের ভয় বেড়ে যায়।”
মনোবিদদের মতে, ‘ওরাল সেক্স’ যুগ যুগ ধরে চালু রয়েছে। কিন্তু এখন কমবয়সীদের মধ্যে প্রবণতাটা বেড়েছে। মনোবিদ জ্যোতির্ময় সমাজদার বলেন, “তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মানসিক বাধা ক্রমশ কেটে যাচ্ছে। তাই অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় তারা অনেক কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখতে চাইছে। আমাদের চেম্বারে বহু অল্পবয়সী ছেলেমেয়েকে পাই যারা জানায় যে, যৌনতা তাদের কাছে একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে। এ ভাবেই হয়তো নতুনত্বের খোঁজ করতে গিয়ে তারা নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে। আর এখন যেহেতু একাধিক যৌনসঙ্গী থাকছে অনেকেরই, তাই নতুনত্বের খোঁজটাও প্রবল হয়ে উঠছে।” চিকিৎসকেরা এও জানাচ্ছেন, বাছবিচার না করে হরমোনের প্রয়োগ অল্পবয়সী মেয়েদের ক্যানসারের ভয় বাড়িয়ে তুলছে। ছোটখাটো প্রয়োজনে মাসিক ঋতুস্রাব পিছিয়ে দেওয়ার জন্য অনেকে ওষুধ খান। এর ফল মারাত্মক হতে পারে। আবার বহু পুরুষ তাঁদের ‘পৌরুষ’ ধরে রাখতে নানা রকম ওষুধ খাচ্ছেন। তাঁদের বেপরোয়া যৌনজীবনও প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।”
চিকিৎসকেরা কি এ বিষয়ে রোগীদের সতর্ক করতে পারেন না? গৌতমবাবুর জবাব, “হয়তো পারেন। কিন্তু এখানে যৌনতা নিয়ে খোলামেলা আলোচনার পরিসর নেই। অনেক সময়ই চিকিৎসককে ভুল বোঝার অবকাশ থেকে যায়।” এসএসকেএম হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক অনুপ মজুমদারও বলেছেন “পাশ্চাত্যে এ নিয়ে রাখঢাক নেই। কিন্তু এখানে চিকিৎসক রোগীকে ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে প্রশ্ন করতে সঙ্কোচ বোধ করেন। সরকারি হাসপাতালের ভিড়ে ঠাসা আউটডোরে তো সেটা অসম্ভব। যদি কোনও প্রশ্নপত্রের ব্যবস্থা রাখা যেত, তা হলে হয়তো অনেকটাই সুবিধা হত।”
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
যৌনতা যেন আশ্রয় নেয় লুকানো ক্যামেরায়(18+)
জন্মের পর থেকেই নানান কুসংস্কার, বিধি-বাধা জীবনের মধ্যদিয়ে জীবন আতিবাহিত করে আমাদের দেশের মত মূর্খ দেশের মেয়েরা। দেশকে দোষ দিয়ে কি হবে ? দেশ তো চালাই আমরা নিজেরাই নিজেদের মত, এতে কার ওপর কেমন প্রভাব পরবে তা চিন্তা করার সময় আছে আমাদের? পারিবারিক সমস্যা, বকাবকির মধ্যদিয়ে স্কুল জীবনের গণ্ডি পেরতে না পেরতেই শুরু হয় কলেজ জীবনের নতুন যুদ্ধ আর তার সাথে তো এলাকার রাস্তার পোলাপানদের EVE teasing !!! একদিকে পরিবারের চাপ অন্য দিকে পরাশুনার চাপ তারপর ছেলেদের ডিস্টার্ব তো ফ্রী আছেই, নতুন নতুন মোবাইল আসার সাথে সাথে ফ্লাক্সি-লোডের দোকানে দামি লিস্টে নাম তোলা হয়, তখন যে কোন মেয়ে স্বাভাবিক চিন্তাধারা থাকবে “ যদি আমারও কেউ থাকতো যে আমাকে বুঝে,সব সময় আমার পাশে থাকবে, যে আমাকে অনেক ভালবাসবে” আর সাথে সাথেই প্রেমিকের লম্বা লাইন পরে যায়।
পছন্দ মতও একজনের সাথে প্রেম বেশ জমিয়ে তুলে, বাসায় বকাবকি হলেই যায় প্রেমিকের সাথে পালিয়ে আর মাঝে মাঝে দৈহিক সম্পর্কও অনেকেই করে তুলে। যদি প্রেমিক ভালো হয় তো মেয়ে বেঁচে যায় আর প্রেমিক’র নিয়ত খারাপ থাকলে কিছু করার নেই দিব্যি তাদের সেক্স করার ভিডিওটা তাদের ফ্রেন্ডদের মধ্যে বিলিয়ে দিবে এ যেন হাজী মহসিনের বিলিয়ে দেয়ার সম্পদ। এখানে বলা চলে ; ”” যৌনতা কড়া নাড়ে
প্রেমিকের অন্তরে,ভালবাসাকে ব্লাকমেইল করে;
যৌনতা আশ্রয় নেয় লুকানো ক্যামেরায়,ইথারে ভেসে যায় দেশ হতে দেশান্তরে;
ধর্ষিত ভালবাসার চিৎকারকে অগ্রাহ্য করে,মনুষ্যত্বকে ৩০ টাকা দরে বেঁচে-
যৌনতা উঠে পড়ে মগডালে”””
একটু বড় হতে না হতেই বিয়ে হয়ার পর আবার চিরাচারিত অত্যচারের শিকার হয় এই মেয়েগুলাই আজ যেমন রুমানা নামের একজনের এই অবস্থা। আর কতো দিন এগুলা চলবে !!! মানুষ যত শিক্ষিত হয় তার মন মানসিকতা ততই কমে ।
যৌনতা,ধর্ম,সমাজ ও জীবন (১) / / আবদুল্লাহ-আল-মাসুম
১১ ই নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:২৯
শেয়ারঃ
0 12 1
যৌনতা শব্দটি শুনলেই লজ্জায় কুকড়ে যায় আর আড়ষ্টতায় আকড়ে নিজেকে গুটিয়ে নেয়
বাঙালি সমাজ।
যৌনতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন জীবনের
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি অংশ।সভ্য দেশগুলোতে বয়সণ্ধি কালীন সময়ে বিদ্যালয়গুলোতে সম্যক জ্ঞান দেবার জন্য
আলাদা করে পাঠ্যসূচীতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা আছে।
মুসলমান সমাজ যৌনতা শব্দটিকে ভয় পায়।
বাঙালি সমাজ এই বিষয়টিকে এড়িয়ে যাবার ভান করে।
কিন্তু, প্রকৃতি কোনো সমাজ বা ধর্মের ছেলে মেয়েদেরকে আলাদা চোখে দেথে না।
প্রতিটি মেয়েকেই পেরুতে হয় প্রতি মাসের গোপন ইশারার রক্তচক্ষু ডিঙিয়ে।
প্রতিটি ছেলে শিশুকেই কৈশোর ডিঙোতে ডিঙোতে অনুভব করতে হয় যৌবনের সর্বগ্রাসী চরম ক্ষুধা।
অন্ধকার আর আলোর সংমিশ্রনে তখন তাদের মনে তৈরী হয় এক অপার অশেষ আলেয়া।
এই রহস্য আর রহস্য অনুসন্ধানে কখনো কখনো দিক হারিয়ে অনুসন্ধিতসু মনে বেড়ে ওঠে বিকৃত,দূষিত,ক্ষতিকর,ভয়াবহ চিন্তা চেতনা।
নদীর বহমান ধারা আটকে দিলে সেটা প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরন।
ক্রমবর্ধমান সবুজ ঘাসের উপর কোনো পাথর চাপা দিয়ে রাখলে তা অর্ধমৃত আর হলুদ হয়ে যায় ।
যথাযথ জ্ঞানের অপ্রতুলতা থাকার কারনে..আমাদের তথাকথিত প্রাগসর সমাজের অধিকাংশ কিশোরী প্রথম রক্তস্রাবের দিন হয়ে ওঠে চরম আতঙ্কিত আর নিজের প্রতি এক ধরনের ঘৃনায়
সে হয়ে ওঠে মানসিক ভাবে ভীষন ক্ষতিগ্রস্ত আর ঘরকুনো।
অথচ..যদি সে জানতো প্রকৃতি তাকে শৈশবের সীমানা পেরিয়ে এই ঘটনার ভেতর দিয়ে তাকে দিয়েছে মাতৃত্বের অধিকার আর এই বিষয়টি অত্যন্ত গৌরবময় সার্টিফিকেট ..তাহলে সে নিশ্চই এই নারী হয়ে ওঠার শুভ সঙ্কেতকে জীবনের নতুন জাগরনী গানের শিহরনে নতুন করে উদ্দীপ্ত হতো !
আমি অনেক মেয়েকে বলতে শুনেছি ..তার শরীর খারাপ করেছে..অসুস্থ..এই ধরনের শব্দাবলী।
কিন্তু,মজার ব্যপার হচ্ছে..নিয়মিত রেড সিগন্যাল
একমাত্র মেয়েদের জীবনে একটি কাঙ্খিত অবধারিত সুস্থতা আর সবুজ সঙ্কেত।
মিনষ্ট্রেশন কোনো অসুস্থতা নয় বা এটি কোনো রোগের পূর্বলক্ষনও নয়।
বরং বিষয়টি অনিয়মিত হলে বা বন্ধ হয়ে গেলে ভাবনার বিষয়।
দ্রুত বিশেষজ্ঞের শরনাপন্ন হওয়া একান্ত জরুরী।
শুধুমাত্র গর্ভবতী হলেই যে এটি অনিয়মিত হবে বিষয়টি সেরকমও নয় হরমোনের অসামান্জস্যতার কারনেও তা হতে পারে।
এটা তো গেল শারীরিক দিক।
মানসিক ক্ষতিও হতে পারে অপরিসীম।
প্রসঙ্গত: ছোট্ট একটা কাহিনী বলি..
সারাজীবন খুব বাধ্যবাধকতার ভেতর বড় হয়েছে সীমা।
বিয়ের প্রথম রাতে স্বামীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার মুহূর্তে ধরা পড়ে তার মানসিক রোগ।যৌনতা সম্পর্কে দীর্ঘদিনের লালিত একটি ভয় তাকে পাথরের
মতো শক্ত করে তোলে।
সমস্যা এই পর্যন্ত হলে হয়তো তার বিয়েটা টিকে যেতো সময়ের ব্যবধানে।
কিন্তু,বিয়ের প্রথম তিনমাসে পাঁচবার সংগমের ঠিক প্রবেশের মুহুর্তে সীমা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।এক ধরনের কোমার মতো অবস্থা হয় আর দুচোখ হয়ে ঘন লাল ..পাশাপাশি মুখ দিয়ে গো গো শব্দ আর ফেনা বেরুতে থাকে।
সীমা সুন্দরী,শিক্ষিত,ভদ্র আর সম্পদশালী ঘরের মেয়ে। তার স্বামী তাকে হারাতে চাইবে কেন ?আরো ছ মাস চেষ্টা করেও যখন এই সমস্যা থেকে বের হতে পারে না.. তখন.আলাদা হয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায়ই খোলা থাকে না।
:
কিশোরী বয়েসে আনিকাকে তার মা বলে যে..
কেউ যেন তাকে চুমু না খায় বা কাউকে যেনো শরীরে ধরতে না দেয়..সেরকম কিছু হলে তার পেটে বাচ্চা হয়ে যাবে।
পূর্নাঙ্গ জ্ঞানের অভাব মেয়েটিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে..তা কখনো কল্পনাও করতে পারে নি আনিকার মা।
মধ্যবয়েসী গৃহশিক্ষক একদিন একা পেয়ে অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী আনিকাকে কোলে টেনে নেয,স্তন স্পর্শ করে আর গালে ,কাঁধে চুমু খায়।
আনিকা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে পালিয়ে যায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এবং তার পেটে বাচ্চা হবে এরকম একটি ভয়ে ফুলের টবে দেয়ার কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা করে।
মেয়েটির জানা ছিলো না ..শুধুমাত্র মেয়েদের যৌনাঙ্গে
পুরুষাঙ্গ বা শিশ্ন প্রবেশ করলে যৌনক্রিয়ার ফলে..গর্ভে শিশু ভ্রূন জন্ম নিতে পারে।
শুধুমাত্র যৌনক্রিয়া করলেই যে গর্ভে শিশু ভ্রুন জন্ম নেবে বিষয়টি তা ও নয়।
যৌন-সম্ভোগের পর যদি বীর্য কোনো মেয়ের যোনীতে
স্খলিত হয় এবং সেটি যদি একটি নির্দিষ্ট উর্বর সময় হয়..তাহলেই কেবল মাত্র বীর্যের শুক্রানু যোণীর ডিম্বানুর ভেতরে প্রবেশ করে জীবনের সূচনা করতে পারে।
বলা হয় অল্প বিদ্যা ভয়ংকর।তাই বলা যায় অর্ধ শিক্ষা বা আংশিক শিক্ষা অনেক সময় জীবন নাশী..যেমন হয়েছে কোমল মতী আনিকার ক্ষেত্রে ।
পলাশের গল্পটাই কেন বলি না ?
....
হঠাত করে একদিন ঘুম ভেঙে গেলো তার ভোর চারটায়।
তার পুরুষাঙ্গ থেকে এক ধরনের আঠালো সাদা তরল বের হয়ে এসেছে।
তার লুঙ্গির একটা অংশ ভরে গেছে।
খুব ভয় পেয়ে যায় পলাশ।
এই সমস্যার কথা সে ভুলতেও পারে না বা কাউকে বলতেও পারে না।
তার রুমে একসাথে ঘুমায় তার থেকে ৩ বছরের বড়ো কাজের ছেলেটা।রহমান।
শেষ পর্যন্ত রহমানকে সমস্যাটা বলে ফেলে পলাশ।
রহমান গম্ভীর হয়ে বলে -ভাই জান , এইটা পুরুষ মানুষের অনেক খারাপ একটা রোগ।আফসন তড়াতড়ি কবিরাজেরর কাছে যান।গাছের শিকড় ধুইয়া পানি খাইলে এইটা সাইরা যাইবো। অনেক মর্দা পোলা..যোয়ান মানুষের এই রোগ হয় আর এইটা বেশী বাইরা গেলে আপনের ঐ জায়গাটা পচন শুরু হইবো।
পলাশ অত্যন্ত ভয় পেয়ে যায়। কবিরাজের ঠিকানা সংগ্রহ করে স্কুল পালিয়ে কোচিং সেন্টারের বেতন চুরি করে সে যায় কবিরাজের কাছে।
গোপনে সেবন করে শেকড় বাকর।
কিডনীতে দেখা দেয় তার সমস্যা।আর একটি কিডনী
নষ্ট হয়ে যায় ভুল চিকিতসায়।
যদি ছেলেটি জানতো..মাঝে মাঝে এরকম হওয়া ..ঘুমের ভেতর বীর্যপাত হওয়া জীবনেরই একটি অংশ..তাহলে হয়তো তার কিডনীটি বেঁচে যেত!
এটি নিয়ে খুব ভয়ের কিছু নাই।তবে ..এই বিষয়টি মাত্রারিক্ত হলে যৌন রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া দরকার।
আমাদের বাঙালি সমাজে বিষয়টিকে একটি দোষ বা স্বাস্হ্য সমস্যা হিসেবে দেখা হয় ।
বলা হয়-স্বপ্ন দোষ।
কিন্তু আমি বলে দিতে চাই মেডিকেল সাইন্স একে দোষ বা গুন বলে না। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
এই বয়েসে অনেক ছেলেরা হস্ত-মৈথুনের আশ্রয় নেয়।
হাতের মুঠো গোল করে পুরুষাঙ্গে উপরে নীচে ঝাকানোকে হস্তমৈথুন বলে ।
অনেকে উঠতি যুবক আবার ধর্মীয় অপরাধবোধ আর ব্যক্তি-জ্ঞানের অ পর্যাপ্ততা থেকে মানসিক ভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হয় এই ঘটনা সম্পাদনের পর।
ক্ষতি টা যত না শারীরিক ,তার চেয়ে হাজার গুন মানসিক।
রক্ষনশীল সমাজের ৯০ ভাগ তরুন এই গোপন আনন্দ করে। নিজের সঙ্গে নিজের মধু ভাগ করে নেয় ।
এই ব্যপারে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন যাই হোক না কেন..
আইনগত ভাবে এটি বেআইনি নয়।
এবং মেডিকেল সাইন্স একে দোষ বা গুন বলে না। এটি হতে পারে।
তবে যে কোনো বিষয় মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতির কারন হতে পারে।পুরুষাঙ্গের ভেইন গুলো ক্ষতিগ্রস্হ হতে পারে।
তবে..এরুপ কর্মকান্ডে অতি উতসাহে এবং অতি সুখ,আনন্দ,রোমাঞ্চ লাভের প্রত্যাশায় জোকের তেল বা কোনরুপ মালিশ বা ইয়াবা বা ভায়াগ্রা ব্যবহার করা অনুচিত।সমূহ সমস্যার উদ্ভব ঘটতে পারে।
অনেক মেয়ে মিনষ্ট্রেশন এর সময় অস্বাস্হ্যকর কাপড় ব্যবহার করেন..যেগুলো থেকে পরবর্তীতে ভাইরাস যোনীর ভেতরে ঢুকে রক্তে প্রবাহিত হতে পারে আর ওভারিয়ল সিস..টিউমার এবং দীর্ঘসূত্রী অ কল্যান হিসেবে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
তাই পরিচ্ছন্ন আর সচেতন থাকা সুস্থ জীবনের জন্য
একান্ত জরুরী।
সমাজে সমাজে অনেক ব্যবধান ।
বিশেষ করে যৌনতা বিষয়ক চিন্তার ক্ষেত্রে।
হাওয়াই দ্বীপ পুঞ্জে বিবাহ দেবার পূর্বে মেয়েদের সতীচ্ছদ
ছেড়ার জন্য প্রফেশনাল ভাড়া করে।প্রথমবার সংগম করার জন্য সেই পেশাদাররা মোটা অংকের টাকা নিয়ে থাকে।
সৌদি আরব আর মিশরের কিছু কিছু অঞ্চলে মেয়েদের বিবাহ দেবার পর অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পিতারা অপেক্ষা করেন কখন প্রথমবার -এর প্রমান স্বরুপ শাদা চাদরে লাল ইশারার প্রমান আসবে।
এলেই তারা উল্লাসে ফেটে পড়েন।
কোনো কোনো ধর্মে বিবাহের পর প্রথম সংগমের অধিকার থাকে ধর্মগুরুর। এটিই ধর্মীয় রীতি।তাই নববিবাহিত স্ত্রীকে তুলে দিতে হয় ধর্মগুরুর কাছে।
এটিই তাদের জন্য ধর্মীয় রীতি।
হিন্দু সমাজে মাসতুতো পিসতুতো ভাই বোনদের মধ্যে বিবাহ পূর্ব যৌনতা তো বটেই..এমনকি বিবাহও নিষিদ্ধ। যা আবার মুসলিম সমাজে নয় ।
পশ্চিমা সমাজে যৌনতার সম্পর্কটি ধর্ম বা সমাজ নিয়ন্ত্রন করে না। এই বিষয়টি দুজনের সম্পূর্ন মানসিক বোঝাপড়ার উপর নির্ভরশীল।
মানুষ যখন গোত্রভুক্ত হয়ে বসবাস করতো ..
সমাজ ও সভ্যতা সৃষ্টির গোড়ার দিকে
একজন নারী থাকতো দলীয় প্রধান আর তার অধীনস্থ সকলেই তার সঙ্গে যৌন সম্ভোগে জড়িত হতো।
মুসলিম সমাজ দাসী এবং যুদ্ধবন্দিনীদের সঙ্গে যৌনসম্পর্কের অনুমোদন দেয় ।
কিন্তুু..
মানবিকতার প্রশ্নে আধুনিক সমাজ তা নাকচ করে।
একইভাবে মুসলিম সমাজে স্বামীর ইচ্ছানুযায়ী যখন তখন সংগমে অংশগ্রহন করতে নারী বাধ্য হলেও
মানবাধিকার অনুযায়ী এবং ধর্ষনের প্রচলিত আন্তর্জাতিক সজ্ঞা অনুযায়ী ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে
স্ত্রীর সঙ্গেও সংগম করা শাস্তিযোগ্য এবং সেটি ধর্ষন বলেই চিহ্নিত।
সমকামিতা আমাদের সমাজে অত্যন্ত গর্হিত অপরাধ হলেও কোনো কোনো সমাজ আর কোনো কোনো দেশের নতুন আইন প্রণয়নের মাধ্যমে তাদের অধিকার সংরক্ষণ শুরু হয়েছে।
তবে..
প্রকৃতি বলে.. নারী ও পুরুষ পরষ্পরের জন্য সৃষ্টি হয়েছে।
সেই ধারাকে ভেঙে এই অভিনব বিষয়টি অনেক সমাজেই ভীষনভাবে অগ্রহনযোগ্য আর নিন্দনীয়।
সমাজ ভেদে চিন্তা চেতনার কতো ফারাক !
অনেক মেয়ে রোমাঞ্চ সামলাতে না পেরে আঙুলের সহযোগীতা নিয়ে মাষ্টারভেশন করে..কিন্তু সেই মুহুর্তে ধারালো কিছুর ব্যবহার ..যেমন..পেন্সিল,কলম ইত্যাদির ব্যবহার
পারফরেশন বা ইউট্রাস আলসারসহ নানারকম ঝুকি থেকে যায়।
তাই অপ্রাকৃতিক পদ্ধতিতে সাবধনতা জরুরী। পরবর্তী জটিলতা থেকে রক্ষা পেতে হলে।
থাইল্যান্ডের ব্যাংককে পিং পং শো বলে একটা শো হয়-যেখানে মডেল মেয়েরা বোতল এবং ধারালো বিভিন্ন দ্রব্যাদির ব্যবহার পাবলিকলি প্রদর্শন করে।
মনে রাখতে হবে..এটি স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এবং একই সাথে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে আনন্যাচারাল সেক্সুয়াল বিহেভিয়র।ন্যাচারাল নয় ,এরকম কোনো বিষয় যৌনতার ক্ষেত্রে মনে খুব বেশী কাজ করলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া একান্ত কর্তব্য।
তবে ..এই রকম বিষয়ে পারফেক্ট হচ্ছে ..সাইক্রিয়াটিষ্ট।মনের ডাক্তার।
বিকৃতি এক রকমের মানুষিক রোগ।
তাই একে অবহেলা বা লজ্জায় ঢেকে রাখার চেয়ে সুন্দর জীবনের বৃহত স্বার্থে চিকিতসতের শরনাপন্ন হতে হবে।
বিবাহ পূর্ববর্তী যৌনতা অনেক সময় মেয়েদেরকে অনেক রকম অনাকাঙ্খিত উদ্ভট সমস্যার মুখোমুখি করে।
তার মধ্যে..
১.গর্ভ ধারন
২.অবিশ্বস্ত পুরুষ সঙ্গীর ব্ল্যাকমেইলিং
৩.যৌনবাহিত রোগের সংক্রমন
৪.মানসিক ভাবে ভেঙে পড়া
প্রভৃতি সমস্যার উদ্ভব ঘটায়।
মনে রাখতে হবে..
নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারাটা সব দিক থেকে নিরাপদ।
যেহেতু অনেক সময় আবেগের চূড়ান্ত মুহুর্তে নীতির চেয়ে প্রয়োজন টা এবং আত্মতৃপ্তিটাই বড়ো হয়ে দাড়ায়..সেরকম কিছু হলে .
পরামর্শ হচ্ছে..
সঙ্গী যেনো অবশ্যই বিশ্বস্হ,সচেতন এবং বুদ্ধিধমান বা বুদ্ধিমতী হয়..
নতুবা পরবর্তীতে মুশকিলের কোনো অন্ত থাকবে না।
কনডোম এবং পিল দুটোর সহযোগিতা নিলে পরবর্তী অনেক সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
পরিশেষে বলতে চাই.মুহুর্তের চরম আনন্দ যদি
শান্ত জীবনে টর্নেডো হয়ে সুন্দর জীবনকে ছারখার করে দেয়ার সম্ভাবনা থাকে...
তাহলে তা সে যত আকর্ষনীয় সুখই হোক না কেন..
তা পরিত্যাজ্য
যৌনতা বিষয়ে ভাবনা ০২
০৫ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ২:২৪
শেয়ারঃ
0 1 0
দেবদাসী, মন্দিরবাসীনি কিংবা অন্য যেকোনো নামেই অভিহিত করা হোক না কেনো তাদের, প্রাচীন সভ্যতায় সুন্দরী তরুণীদের একাংশকে সব সময়ই কোনো না কোনো উপাসনালয়ে অন্য সব পুরোহিত এবং আমত্য ও উচ্চ বংশীয় পুরুষদের যৌনলিপ্সা এবং অন্যান্য মানসিক চাহিদা পুরণ করে কাটাতে হতো।
তারা সমাজের সবার জন্য উৎসর্গকৃত নগরনন্দীনি। ইশরাত, মেসোপটোমিয়া, ব্যাবিলন এবং ফনিশিয়ান সভ্যতার একক দেবী, ক্রমশ পুরুষের আধিপত্যে তার উর্বরতা ব্যতীত অন্য কোনো পরিচয় টিকিয়ে রাখতে পারে নি। কিংবা অন্য ভাবে বলা যায় সভ্যতা মাতৃতান্ত্রিকতা ছেড়ে পিতৃতান্ত্রিক হয়ে উঠবার পথেই ইশরাত পরম দেবীর আসনচ্যুত হয়ে সাধারণ এক দেবি হয়ে উঠেন, যাকে পরবর্তীতে যখন সেমেটিক ধর্মের সৃষ্টি হলো, তখন পাপিষ্ঠা অভিধা দেওয়া হলো।
প্রাথমিক পর্যায়ে ইশরাতের উপাসনা হতো সকল রকমের উদযাপনে, যুদ্ধাজয়, নবান্ন আর পার্বনে ইশরাতের ভজনা হতো নিয়মিত। এবং এইসব ভজনা আদতে সমাজের সকল পুরুষের পারস্পরিক যৌনবিদ্বেষ এড়ানোর একটা সহজ উপায় গণ্য হতে পারে। খোলা মাঠে সমুদ্রের সামনে কিংবা নদী উপকূলে সবাই যৌনাচারে মেতে উঠতো পার্শ্ববর্তীনির সাথে। এবং এই প্রথা শুধুমাত্র সেখানে উদ্ভুত সভ্যতার একান্ত অংশ এমন নয়, বরং সেটার প্রচলন অন্য সব সভ্যতায় আছে যাদের সাথে এই ইরাকের দজলা আর ফেরাত নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলের কোনো সম্পর্ক কখনই গড়ে উঠে নি।
নগরকেন্দ্রীক সভ্যতার উদ্ভব, উপাসনালয় সৃষ্টি এবং পৌরোহিত্বের যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন হওয়ার পরে ইশরাতের উপাসকের জন্ম হলো, নগরের সকল বিবাহিত রমণীকে বিবাহিত জীবনের পরবর্তী একটা সময়ে সামাজিক রীতি অনুসারেই মন্দিরের সামনে অপেক্ষা করতে হতো , সেখানে যে কেউ তাদের আঁচলে সামান্য উপঢৌকন দিয়ে তার সাথে মিলিত হতে পারতো। যদিও ততটা আশ্চর্য হওয়ার মতো সংবাদ নয় এটা, যারা পয়সা উপঢৌকন দিতো তাদের অধিকাংশই ছিলো বিবাহিত পুরুষ। বিবাহিত পুরষের কামনিবৃতির উপকরণের অভাব নেই, এরপরও বিবাহিত পুরুষের এমন আচরণ আদতে পুরুষের ভেতরে কাম্য নারী নিয়ে দ্বন্দ্বকে দমিয়ে রাখার একটা সামাজিক প্রয়াস।
এই শ্রেনীর কাউকেই ঠিক প্রচলিত সংজ্ঞায় গণিকা বলা সম্ভব নয়, গণের সম্ভোগের জন্য নিয়োজিট থাকলেও বর্তমানের গণিকাদের যেভাবে অর্থের বিনিময়ে বহুপুরুষ ভোগ করতে পারে, সেবাদাসীদের তেমন অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ ছিলো না। আর বিবাহিত যেসব নারী অন্তত একবার হলেও অপরিচিত পুরুষের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হতে বাধ্য হতো, তাদের ঠিক গণিকা পর্যায়ভূক্ত করা যায় না।
সুতরাং সাধারণের ভেতরে জনপ্রিয় ধারণা, গণিকাবৃত্তি পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন পেশা, এই ধারণা সম্ভবত সত্য নয়। পশুপালন, কৃষিকাজ, মৎস্যপালন এবং মৎস্যবিক্রয়ের পেশা আদিমতম, এবং এর সাথে আছে ভাড়াটে সৈনিকের পেশা, নগরনির্মাণের পেশা, এবং এইসব পেশার প্রসার হওয়ার পরে অবশ্যই এইসব মানুষের বিভিন্ন চাহিদার সাথে যৌন চাহিদা পুরণের জন্য গণিকাদের সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এটা প্রাচীনতম পেশা নয় মোটেও।
আর গণিকাবৃত্তি অন্তত প্রাচীন সমাজে অত্যন্ত সম্মানিত একটা কাজ ছিলো। রীতিমতো চৌষট্টি কলার চর্চা করে বিখ্যাত গণিকা হওয়া যেতো। একজন উচ্চপ্রশিক্ষিত গণিকার কদর ছিলো সবখানেই। সেটা রাজদরবার কিংবা বন্দর, যেখানেই হোক না কেনো, একজন প্রশিক্ষিত গণিকার সম্মান আর উপার্জনের পরিমাণ যেকোনো ব্যবসায়ীর তুলনায় কম ছিলো না মোটেও।
উচ্চাভিলাষী সুন্দরী কিংবা অসুন্দরী মেয়েরা প্রতিষ্ঠিত গণিকা শিক্ষাঙ্গনে উপস্থিত হতো শিক্ষার জন্য, তাদের সর্বশিক্ষায় পারদর্শী করে তোলা সম্ভব ছিলো না।
অভিনয়, নৃত্য, বাদ্যযন্ত্র বাজানোর দক্ষতা, ছবি আঁকার এবং ছবি বুঝতে পারার ক্ষমতা, গান তৈরি এবং সুর করবার দক্ষতা, গৃহসজ্জা এবং রান্নার দক্ষতা, ধাঁধা তৈরী এবং ধাঁধা সমাধানের দক্ষতা, লিখতে পড়তে শেখা, কবিতা ও গল্প তৈরি করা এবং লিখতে পারার দক্ষতা, বিভিন্ন রত্ন চেনার দক্ষতা, জুয়া খেলবার দক্ষতা, এবং আরও অনেক ধরণের যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়েই একজন চৌষট্টি কলাবিশারদ হতে পারতো।
এমন একজন পারদর্শী রমণী রাজার অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হয়ে উঠবেন এবং নগরের সবার শ্রদ্ধাভাজন হয়ে উঠবেন, যার বাসগৃহে মন্ত্রনা সভা বসবে, কোথাও যুদ্ধ এবং বাণিজ্যের বিষয়ে তার মতামত জানতে চাওয়া হবে, এসব খুবই স্বাভাবিক একটা বিষয় ছিলো তখন, অন্তত প্রাচীন ভারতে এটা রীতিমতো একটি শিল্পে পরিনত হয়েছিলো। এইসব গুনাবলীর সাথে তাকে আবার কামকলাপারদর্শী হতে হতো। কামের ষোলেআচারও তাকে শিখতে হতো।
সম্ভবত তাদের কাজ মূলত গণিকাবৃত্তি নয় বরং দক্ষ আমলা হিসেবে যেনো তারা যেকোনো মানুষের সাথে আলোচনায় লিপ্ত হতে পারে এবং তাকে সবধরণের সুখস্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারে, এমন উদ্দেশ্য নিয়েই এই শিক্ষালয় খোলা হয়েছিলো।
একই ভাবে প্রশিক্ষিত এবং কামকলায় দক্ষ রমণীদের চাহিদা ছিলো প্রাচীন চীনে, কিংবা ব্যবিলনে।
মিশরের মন্দিরের সেবাদাসীদের সম্মান ছিলো আলাদা। ইশরাতের মন্দিরের সেবাদাসী কিংবা মিশরের মন্দিরের সেবাদাসীদের বিরুদ্ধে কটুকথা রটনা এবং উচ্চারণ রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে অপরাধ ছিলো।
মিশরীয় সভ্যতাই সম্ভবত পুরুষের ক্ষমতার লোভের চরম উদাহরণ হতে পারে। সেখানে অন্তত ১৫০০ বছর আগ পর্যন্ত সম্পদ বন্টিত হতো মাতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থায়, অর্থ্যাৎ মাতার সম্পদ পেতো কন্যারা, ছেলেরা ধনসম্পদের উত্তরাধিকারী বিবেচিত হতো না, সুতরাং সেখানে রানীর মৃত্যু হলে সম্রাট ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি টিকিয়ে রাখবার জন্য কন্যাকে নিজের স্ত্রী করে নিতেন, একই ভাবে পিতার মৃত্যুর পরে পুরুষ সন্তান সম্পদের লোভে, হয় মাকে কিংবা বোনকে স্ত্রীর মর্যাদা দিতো। এবং এই প্রথা নিজস্ব যৌনচাহিদা পুরণের কোনো পন্থা নয়, বরং সম্পদের অধিকারের লোভ। এইসব সম্রাটের নিজস্ব হারেমে প্রশিক্ষিত গণিকা এবং অন্যসব স্ত্রীরাও থাকতো, তবে তাদের প্রধান স্ত্রী কিংবা মূল রানী হতো সম্রাটের রক্তসম্পর্কিত কিংবা সম্রাঞ্জীর রক্তসম্পর্কিত কোনো কন্যা।
যদিও ইহুদী ধর্ম গোত্রের ভেতরে গোত্রের সদস্য- সদস্যদের কাউকেই গণিকা বৃত্তিতে উৎসাহিত করতো না, বরং সেটা তাদের নৈতিক আইন অনুসারের জঘন্য অপরাধ বিবেচিত হতো, তবুও ইতিহাসে খুব অল্প সময়ের জন্যই তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলো, তাই তাদের নিজস্ব গোত্রে তারা পতিতাবৃত্তি দমন করতে পারলেও নগর থেকে পতিতাদের উচ্ছেদ করতে পারে নি।
যত বড় নগর, তত বেশী গণিকা, তত বেশী ব্যাভিচার, এমনটাই বাস্তবতা।
গ্রীক সভ্যতাও একটা পর্যায়ে শুধুমাত্র গণিকাবৃত্তির জন্যই বিখ্যাত। তাদের নগরে যদিও পতিতাদের নাগরিকত্বের অধিকার ছিলো সামান্য তবে নগরের অধিকাংশ সম্পদের মালিক ছিলো এই গণিকারা, তারাই নগরের সম্ভ্রান্ত নাগরিকদের বিলাস ও ব্যভিচারের অর্থ প্রদান করতো।
ঔচ্চাভিলাষী যেকোনো নারী সে সময়ে স্বইচ্ছায় গণিকাবৃত্তি মেনে নিতো, এবং তারা অর্থে-বিত্তে- সম্মানে পিছিয়ে ছিলো না। বরং সামনের কাতারেই ছিলো।
এখনও পরিস্থিতি তেমন বদলায় নি, মানুষের রমনেচ্ছা এখনও রয়েছে, পুরুষ এখনও নিজের কামনিবৃত্তির নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচনের চেষ্টা করছে।
নারীদের সবাই যে দক্ষ গণিকা হয়ে উঠতে পেরেছিলো এমন নয়, বরং চৌষট্টি কলায় দক্ষ যে রমণী, তার শষ্যাসঙ্গী হতে যে পরিমাণ আর্থিক সঙ্গতি লাগতো তা যোগান দিতে পারতো শুধুমাত্র উচ্চতর রাজকর্মচারীগণ, সম্রাট নিজেই নিজের নগরে একজনকে উপঢৌকনসহ বহাল রাখতেন , যখনই অন্য দেশের কোনো সম্ভ্রান্ত নাগরিক কিংবা সম্রাট নগরে আসতেন , এই গণিকা তাদের মনোরঞ্জন করতো।
সে সময়ের পরে একটা সময়ে ইসলাম ধর্ম আসলো, সেখানে বিদ্যমান নিয়মতান্ত্রিকতা অন্তত সে সময়েরব বিবেচনায় অনেক বেশী অগ্রসর ছিলো, নেপথ্যের কারণ যাই হোক না কেনো, নারীকে নিজের যৌনদাসত্বে আটকে রাখবার বাধ্যবাধকতা ছিলো না সেখানে। বরং যদি নারী নিজের স্বামীকে পছন্দ না করতো তবে সে নিজের আগ্রহেই বৈবাহিক সম্পর্ক রদ করতে পারতো।
তালাকের দীর্ঘ একটা নিয়ম ছিলো, সেখানে একবার তালাক ঘোষণার পরে ৩ মাসের ইদ্দতকালীন সময় থাকতো, যে সময়ের ভেতরে স্বামী তার স্ত্রীর সাথে শাররীক সম্পর্ক স্থাপন করতে পারতো চাইলেই এবং সেটা করলেই তালাক রদ হয়ে যেতো। তবে যদি পুরুষ তিন মাস সঙ্গম বিরত থাকে, এরপর পুনরায় তালাক দিতে হবে। পুনরায় ৩ মাসের সময়, এভাবে এক চন্দ্রবছর পরেও যদি স্বামী স্ত্রীর বনিবনা না হয়, তবে স্বামী স্ত্রীকে ভরণপোষণের দায়িত্ব না নিয়েই তালাক দিতে পারে।
মুহাম্মদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের অদ্ভুত যুক্তিবোধ জন্মাতে পারে নি, কিংবা এটা তাদের ধারণায় ছিলো তবে মুহাম্মদের প্রবল প্রতাপের সামনে তারা এটার চর্চা করতে পারে নি।
আবু বরকের খিলাফতের শেষের দিক থেকে ওমরের খিলফতের অধিকাংশ সময়ই তালাকের পরিমাণ এত বেড়ে গেলো, উমর এবং তার পূত্র আব্দুল্লাহ, দুজনেই একটা প্রথার জন্ম দিলেন, যা কোরান সম্মত নয় , কিন্তু তার চর্চা মানুষ এখনও করছে, এবং সেটাই সাধারণের ধারণায় তালাকের মূল বক্তব্য।
এই সময়ে ব্যভিচারের নমুনা হলো, মুসলিম একই সাথে ৪টির বেশী স্ত্রী রাখতে পারবে না, সুতরাং কেউ কেউ প্রাক্তন স্ত্রীকে তালাক দিয়ে কয়েক দিনের জন্য অন্য কোনো কাম্য রমনীকে বিবাহ করছে এবং মেয়াদ কিংবা ইদ্দত শেষ হওয়ার আগেই পুরোনো স্ত্রীকে ত্যাগ করে নতুন এবং নতুন স্তীকে ত্যাগ করে পুরোনো স্ত্রী- এমন পরিবর্তন করে বস্তুত সুন্নাহ মতে যতটা সম্ভব তার চেয়ে বেশী ব্যভিচারের লিপ্ত হলো। উমর সে সময়ে বাধ্য হয়েই ফরমান জারী করলেন- পূর্বে যেমন তিন ধাপে তালাক সম্পন্ন হতো, এখন থেকে তা হবে না। একবার তালাক উচ্চারণ করলেই সেটা ৩ বারের কাজ করবে, এবং ইদ্দতকালীন সময় হবে ৩ মাস, এরপরে সে রমনীকে বিবাহ করিতে হলে হিল্লা বিবাহের প্রয়োজন হবে।
আব্দুল্লাহ আরও একধাপ এগিয়ে এটার ব্যখ্যা দিলেন, যদি কোনো পুরুষ ব্যবসায়িক সফর, কিংবা যুদ্ধব্যতীত অন্য কোনো কারণে কোনো রমনীর সাথে ৩ মাস একাধারে মিলিত না হয়, তবে তাদের তালক হয়ে যাবে।
সম্ভবত এমন কোনো নিদর্শন তখন বিদ্যমান ছিলো, হয়তো যে রমণীর স্বামী বিদেশে, তার যৌনচাহিদা পুরণের পন্থা হিসেবে সে আশেপাশের যুবকদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেছে, কিংবা অন্য কোনো লোভের বশবর্তী হয়েই আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের এমন সিদ্ধান্ত।
বিশ্বজুড়ে ধর্ষণের পরিসংখ্যান দেখছিলাম, সবচেয়ে বেশী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে দক্ষিণ আফ্রিকায়, সেখানে প্রতি ১০০ জনে ১জন ধর্ষিতা হয়। বাংলাদেশের নাম সে তালিকায় নেই, সুতরাং এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বাংলাদেশে ধর্ষণের হার কত।
ধর্ষণকে দুই ভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, জোরপূর্বক শাররীক সম্পর্ক স্থাপন, যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তির যৌনাঙ্গ কিংবা পায়ুপথে সঙ্গম করা হয়েছে।
এবং অন্য ধরণের যৌননিপীড়ন, কিংবা যৌনলাঞ্ছনা, যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি শাররীক ভাবে আক্রান্ত হয়েছেন বিপরীত কিংবা সমলিঙ্গের মানুষদের দ্বারা কিংবা তাকে মৌখিক ভাবে হেনেস্তা করা হয়েছে।
তবে এসব যৌনলাঞ্ছনা কিংবা যৌননিপীড়নের সংজ্ঞা বদল করে যে সত্য প্রকাশিত হয়, সেটা ভয়ংকর। প্রতিটি দেশে অন্তত এক তৃতীয়াংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েরা স্বীকার করে নিয়েছে, তাদের জীবনে কোনো না কোনো সময় তারা পরিচিত কিংবা অপরিচিত পুরুষের হাতে যৌনলাঞ্ছিত হয়েছে।
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ আসে না তেমন ভাবে, কিংবা বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এমনটাই সত্য যে এখানে আক্রান্ত ব্যক্তির পক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ট্যাবু কিংবা রক্ষণশীলতার প্রভাবে উদ্ভুত মানসিক জড়তা কাটিয়ে পুলিশে অবহিত করবার আগ্রহ থাকে না।
সাধারণ পরিসংখ্যান বলছে যৌনলাঞ্ছিত হয় মেয়েদের অধিকাংশই যৌনলাঞ্ছিত হয়েছে পরিচিত মানুষদের কাছে, প্রতি ৩টি যৌনলাঞ্ছনার ঘটনার একটি ঘটায় একেবারে অপরিচিত মানুষ, অর্থ্যাৎ শতকরা ৭০ শতাংশ ঘটনা ঘটবার সময় যৌনলাঞ্ছিত ব্যক্তি যৌনআগ্রাসী ব্যক্তির পরিচয় এবং তার সাথে সামাজিক সম্পর্ক সম্পর্কে অবহিত থাকে।
এই পরিচিত তাকে দ্বিমুখী যাতনায় পিষ্ট করে, শাররীক আগ্রাসনে ঘটে যাওয়া ক্ষতি, সামাজিক ধারণা উদ্ভুত শাররীক বিশুদ্ধতা এবং সতীত্ব কলুষিত হওয়ার বোধ এবং আক্রান্ত ব্যক্তি এবং আগ্রাসী ব্যক্তির সামাজিক ক্ষমতার তারতম্য- সব মিলিয়ে পুলিশকে অবহিত করতে অনেক ধরণের বাধার সম্মুখীন হতে হয় একজন আক্রান্তকে।
পারিবারিক ভাবে নিরুৎসাহিত করা হয় অনেক সময়, সামাজিক সম্মানহানির ভয়ে অনেক ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করেন না। এইসব নানাবিধি ট্যাবুর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে ধর্ষণ এবং যৌনলাঞ্ছনার ঘটনাগুলো জনসমক্ষে কিংবা জরিপে উঠে আসে না।
যতগুলো অপরাধ পুলিশের কাছে অভিযোগ হিসেবে আসে তার ৮০ ভাগই অমীমাংসিত অবস্থায় আসে, কিংবা অধিকাংশ সময়ই ধর্ষক মুক্তি পেয়ে যায়। এবং এইসব জটিলতার কারণে অনেকে আইনী ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে চান না।
প্রশ্ন হলো যারা আইনগত ভাবে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আমরা কি ব্যবস্থা গ্রহন করবো। চেক প্রজাতন্ত্র আগ্রাসী ধর্ষকদের ক্যাস্ট্রেশন করে, অর্থ্যাৎ তাদের বাধ্যতামুলক ভাবে মৃত্যুদন্ড কিংবা খোজা হওয়ার যেকোনো একটা পরিণতি মেনে নিতে হয়।
ইউরোপের অন্যান্য দেশে এবং যুক্তরাষ্ট্রে সহিংস ধর্ষকদের নিয়মিত ঔষধ সেবন করতে হয় যা তাদের যৌনকামনাকে দমন করে। যৌনচাহিদা দমন করবার ঔষধ দিয়ে ধর্ষকদের ধর্ষণ প্রবনতা কমানো সম্ভব কি না এটা নিয়ে বিতর্ক আছে।
এটা নিয়ে বিতর্ক উস্কে দিচ্ছে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, তারা প্রাকৃতিক বিবর্তনের সূত্র ধরে এমন ঘোষণা দিচ্ছে এটা বিবর্তনের প্রভাব এবং এটা জৈবিক একটি প্রতিক্রিয়া, যদিও অন্য সব সাধারণ মানুষের ধারণা ধর্ষণপ্রবনতা আদতে মানুষের তাৎক্ষণিক উগ্র যৌনাবেগ, যা দমনে ব্যর্থ হয়ে তারা ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে, এবং কেনো এই উগ্র যৌনাবেগ সৃষ্টি হয় এটার নানাবিধ কার্যকরণ নির্ধারণের প্রচেষ্টা করেছে বিহেভিয়ারিয়াল সায়েন্টিস্ট এবং সোশ্যাল সায়েন্টিস্টগণ।
অদ্ভুত সত্য হলো ধর্ষণ শুধুমাত্র মানুষের নিজস্ব যৌনআগ্রাসন নয়, বরং বেবুন এবং শিম্পাঞ্জীরাও এমন আচরণ করে, তারা দলের অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের উপরে চড়াও হয়ে নিজেদের যৌনকামনা চরিতার্থ করে, কখনও একক ভাবে , কখনও দলীয় ভাবে তাদের এমন আচরণ করতে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা।
তবে ধর্ষকদের নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেওয়া, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য যাচাই করা, তাদের নিয়মিত পুলিশের কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দেওয়া এবং প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে রেখে তাদের যৌন কামনা দমনের ঔষধ সেবনে বাধ্য করা, সবগুলো ব্যবস্থাই করতে হয় রাষ্ট্রীয় খরচে। বাংলাদেশের জন্য এমন কোনো ব্যবস্থা কি কার্যকরী কোনো পদ্ধতি বিবেচিত হতে পারে।
বাংলাদেশ কি ধর্ষকদের মুষ্ককরণ ঘটাবে, তাদের মৃত্যুদন্ড রদ করে এমন বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাবে?
পুনর্বাসন সব সময়ই অপরাধীদের জন্য বিশাল একটা সমস্যা, দীর্ঘ একটা সময় কারাগারে আটক রেখে তাকে সংশোধনের ব্যবস্থা করা কিংবা তাকে প্রচলিত নিয়মের সবক দিয়ে রাষ্ট্রের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করা এমনটাই কারাগারের লক্ষ্য ছিলো। তবে সে লক্ষ্য অর্জিত হয় নি।
সব সময়ই সংশোধনাগার আদতে রাষ্ট্র যাদের নিজের অস্তিত্বের জন্য হুমকি মনে করে তাদের আটকে রাখবার জায়গা হয়েছে, এবং এদের অনেকেই ভয়ংকর রকমের সোশিওপ্যাথ, তারা সামাজিক মানুষদের ঘৃনা করে, এবং তারা সামাজিক মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তাদের সাথে বসবাস করে একজন খুব বেশী সংশোধিত হয় না।
প্রতিটা উন্নত দেশে এখন নিয়ম হয়েছে কোনো অভিযুক্ত ধর্ষক যখন তার আবাস পরিবর্তন করবে তখন সেটা সেখানকার স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হবে। এবং প্রতিটা মিউনিসিপালটি অফিসে তার রেকর্ড এবং বর্তমান অবস্থা লিপিবদ্ধ থাকবে, এবং যেকেউ ইচ্ছা করলে এই তথ্য জানতে পারবে।
অভিযুক্ত ধর্ষকদের আমরা ঘৃণা করি, সামাজিক মানুষ হিসেবে আমাদের পরিচিত জনদের প্রতি বিদ্যমান হুমকি হিসেবে আমরা চিহ্নিত করি এদের, তবে এদের অনেকেই সিরিয়াল ধর্ষক নয়। তাদের অনেকেই একবার ধর্ষণ করে অভিযুক্ত হওয়ার পর সত্য সত্যই সংশোধিত হয়ে সুনাগরিক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে।
একজন সাম্ভাব্য অপরাধী এবং এবং একজন সংশোধিত মানুষের ভেতরে প্রভেদ করবার কোনো উপায় আসলে তথ্য উপাত্তে থাকে না।
রাষ্ট্র অনেক সময়ই মানুষের মানসিকতা এবং মানসিক অবস্থাকে যাচাই করতে ব্যর্থ হয়, সুতরাং এমন একটা অপরাধ যা ৩০০ বছর আগেও অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে সেটা দমনের জন্য শুধুমাত্র কঠোর আইনের প্রয়োগ নয়, এটার উৎস জানা জরুরী, সামাজিক এবং মানসিক কারণগুলোর সাথে এটাও নির্ধারণ করা প্রয়োজন আমাদের বিবর্তনের ধারায় আমরা কেনো ধর্ষণপ্রবন হয়ে উঠেছি। এবং আমাদের নিজস্ব ধর্মীয় কিংবা সামাজিক নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ কি আমাদের নিজেদের জেনেটিক প্রোফাইলের বিরুদ্ধে যেতে সহায়তা করবে।
যদি আমাদের নিজস্ব বিবর্তনের ইতিহাসের কোথাও এমনটা থাকে যে আমরা স্বভাবতই ধর্ষণপ্রবন আমাদের শিক্ষা এবং সংস্কৃতি আমাদের ধর্ষণ প্রবনতাকে রোধ করে, তবে আমাদের সে ভাবেই আগাতে হবে, সেসব সামাজিক সংস্কার এবং নৈতিকতা এবং সামাজিক শিক্ষার প্রবর্তন এবং চর্চা করতে হবে ,যা একজন মানুষকে অন্য মানুষের প্রতি যৌনআগ্রাসী না হয়ে বরং পারস্পরিক সম্মতিতে আনন্দময় এবং নির্ভেজাল শাররীক সম্পর্কে লিপ্ত হতে আগ্রহী কিংবা অনুপ্রাণীত করবে।
যৌনতা বিষয়ক ভাবনা ০৪
সারভাইবাল ফর দ্যা ফিটেস্ট- শব্দটি সম্ভবত ডারউইন যে প্রেক্ষিতে ব্যবহার করেছিলেন শুধুমাত্র সে প্রেক্ষিতেই ব্যবহৃত হয় না এখন। বরং যেকোনো পরিস্থিতিতেই সফল ব্যক্তিদের জন্য এটা প্রজোয্য । তবে বিবর্তনের ভাষ্যে- প্রাণীদের ভেতরে যে প্রাণীই দীর্ঘ সময় টিকে থাকবে যে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। এটা একটি প্রাণীর প্রজনন এবং সন্তান উৎপাদনের সাথে সংযুক্ত একটি ধারণা। বিবর্তন একটি প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন পরিবেশগত চলকের সাথে প্রাণীর মিথঃস্ক্রিয়া ঘটছে নিয়মিত, এবং পরিবেশের প্রভাবে প্রাণীর মৃদু পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিবর্তন প্রাণী ঘটাচ্ছে পরিবেশের প্রভাবে। এবং দীর্ঘ সময় ধরে একটি চলমান প্রক্রিয়ায় আমরা সম্পূর্ণ নতুন ধাঁচের একটি প্রজাতি পাচ্ছি যা আচরণগত দিক থেকে এমন কি কাঠামোগত দিক থেকে সম্পূর্ণ পৃথক একটি প্রাণী।
কখন দুটো প্রাণীকে আমরা ভিন্ন প্রজাতির বলে আখ্যায়িত করতে পারি? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা একটু কঠিন। কিছু ব্যতিচার বাদ দিলে আমরা শুধুমাত্র প্রজাতিচিহ্নিত করতে পারি তাদের প্রজননের ধরণ দেখে। সাধারণত একই প্রজাতির প্রাণীদের ভেতরে প্রজনন ও নিষেক ঘটে। অর্থ্যাৎ আমরা যেসব প্রাণী দেখি, আদতে তারা স্বপ্রজাতির সাথেই মিলিত হয়ে প্রজনন প্রক্রিয়ায় নিজের ভবিষ্যত বংশধরদের জন্ম দিতে পারে। এই ব্যবধানটুকুই আসলে প্রজাতিগুলোর ভেতরের ব্যবধান।
ব্যতিচার আছে, গাধা এবং ঘোড়ার মিলনে খচ্চর নামক প্রাণীর জন্ম হয়, কিন্তু সাধারণত খচ্চরের প্রজনন ক্ষমতা নেই। একই ভাবে বাঘ এবং সিংহের ভেতরে মিলনে নতুন একটি প্রজাতির জন্ম হয়, এবং তাদের প্রজনন ক্ষমতা থাকলেও প্রকৃতিতে এদের উপস্থিতি প্রায় শূণ্য- তার একটা কারণ সাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশে বাঘ এবং সিংহ মিলিত হওয়ার সুযোগ পায় না।
প্রাকৃতিক পরিবেশে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে যা ভালো গুণ সেটাই টিকে থাকে এবং প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারা খারাপ গুণগুলো পরবর্তী প্রজন্মে প্রবাহিত হয় না। সুতরাং ভালোরাই টিকে থাকে প্রাকৃতিক পরিবেশে, এবং ভালোগুণগুলোই টিকে থাকে বিরুদ্ধ পরিবেশে ।
তবে আমাদের বিদ্যমান সামাজিক ব্যবস্থায় যেসব ভালো মন্দ নৈতিকতার ধারণা বিদ্যমান, বিবর্তনে ঠিক তেমন নৈতিকতা নেই, বরং এখানে প্রতিটা জীবই পরস্পরের সাথে প্রতিযোগিতা করছে, প্রতিযোগিতা নিজের জীন অন্য একটি প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়ার লড়াই । এভাবেই জীবন টিকে থাকে, জীন টিকে থাকে।
সুতরাং প্রায় সব সময়ই প্রাণী মাত্রই বহুগামী এবং এটাই সবচেয়ে সহজ পন্থা নিজের জীন পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়ার। উপযুক্ত স্ত্রী প্রাণীর উপস্থিতিতে পুরুষ এবং পুরুষ শুধুমাত্র মিলিত হওয়ার জন্য লড়াই করছে এমন পরিস্থিতিই জীব জগতের প্রায় সর্বত্রই, এবং এই লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে একজন পুরুষ প্রাণীকে প্রচুর পরিমাণ বীর্য উৎপাদন করতে হয়। যত বেশী পরিমাণ বীর্য থাকবে তত সেই প্রাণীর জীনের টিকে থাকবার সম্ভবনা। এবং যেহেতু স্ত্রী প্রাণীমাত্রেরই সীমিত ডিম্বানু, তাই স্ত্রীজাতীয় প্রাণী অনেক বেশী বাছাই করে পুরুষ সঙ্গীর সাথে মিলিত হয়।
তবে যেকোনো সামাজিক প্রাণীর মতোই এই স্ত্রী জাতিয় প্রাণী একগামী নয়, তারাও বহুগামী এবং সুযোগ পেলে তারাও অন্য উপযুক্ত পুরুষের সাথে মিলিত হয়। বহুগামীতার ভেতরে তেমন কোনো নৈতিকতার দোহাই নেই জীব জগতে। এটাই বিবর্তণের ধারা, এভাবেই প্রতিটা প্রাণীই নিজের জীনকে ছড়িয়ে দিতে চায়।
বৈজ্ঞানিকেরা ফ্লেমিঙ্গো জুটি নিয়ে অনেক উৎসাহব্যঞ্জক কথা বললেও এই ফ্লেমিঙ্গো জুটিরাও ঠিক এক গামী নয়, অধিকাংশ সময়ই তারা বহুগামী, জীব জগতে একমাত্র বোকারাই একগামী সম্ভবত, কিংবা তারাও ঠকে যাওয়াদের দলে।
এই লড়াইটা কত তীব্র সেটা বুঝা যায় পুরুষ প্রাণী এবং নারী প্রাণীর পরবর্তী প্রজন্ম বাছাইয়ের ক্ষেত্রে- পাখী, বিশেষত জলচর পাখী, তাদের উপরে নির্ভর করা পক্ষীশাবকদের সেবা ও খাদ্য খোঁজার জন্য একজন বিশ্বাসী পুরুষ পাখীর প্রয়োজন হয়, পুরুষ পাখী নিজের প্রজন্ম মনে করে মায়া মমতায় এইসব পক্ষীশাবকদের দেখাশোনা করবে।
নিজস্ব শাররীক বৈশিষ্ঠ্য ও গুণাবলী দেখিয়ে যখন কোনো স্ত্রী জাতীয় পাখীকে পুরুষ পাখী সঙ্গম এবং প্রজননের জন্য প্রলুব্ধ করতে পারে, ঠিক তখনই সে স্ত্রী পাখীর বাসায় গিয়ে তার আগের ডিমগুলো ঠুকড়ে নষ্ট করে ফেলে।
একই ভাবে যদি সে পাখীর প্রাক্তণ কোনো পুরুষ থাকে, সে পুরুষ নজরে রাখে সব সময়ই স্ত্রী পাখীকে, এবং নিজের পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করবার জন্য নিয়মিত পাহাড়া দিয়ে যায় নিজের বাসা। এর পরও অবশ্য শেষ রক্ষা হয় না। সুযোগ পেলেই খাবার খুঁজতে গিয়ে অন্য কোনো পুরুষ পাখির সাথে মিলিত হয়ে আসে স্ত্রী পাখী।
তবে কিছু কিছু ব্যতিক্রম আছে, সেখানে স্ত্রী পাখীরাই পুরুষ পাখীর জন্য লড়াইয়ে লিপ্ত হয়, এবং সেসব ক্ষেত্রে পুরুষের কাজ নিজস্ব গৃহ পাহাড়া দেওয়া, স্ত্রী পাখীই সমস্ত কাজ করে, মানে তারাই আহার্য সন্ধানে যায় এবং তারাই লড়াই করে।
এই বৈশিষ্ঠ্যের জন্যই এইসব ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত পুরুষের বীর্যের পরিমাণ কম বরং স্ত্রী প্রজাতীর পাখীর ডিম্বানুর পরিমাণ অনেক বেশী।
এবং ঘর পাহাড়া দেওয়া এই পুরুষ পাখীও সুযোগ পেলে অন্য কোনো স্ত্রী পাখীর সাথে মিলিত হয়। সম্পূর্ন প্রক্রিয়াতে বিশ্বস্ততার কোনো জায়গা নেই। কোনো প্রজাতীর নারী ও পুরুষের শুক্রানু এবং ডিম্বানু উৎপাদনের পরিমাণ আদতে নির্ধারণ করে তাদের জীবন ধারা। যেসব প্রজাতীর প্রাণী যৌথ জীবন যাপন করে এবং যাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ২ জন, সেসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই পুরুষ প্রাণীটিই আহার্যের সন্ধানে যায়, এবং এইসব প্রাণীদের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই পুরুষ প্রানীর শুক্রাণুর পরিমাণ স্ত্রী প্রাণীর ডিম্বানুর তুলনায় বেশী। তবে যদি স্ত্রী জাতীয় প্রাণীই আহার্যের সন্ধানে যায় তবে এ ক্ষেত্রে স্ত্রী জাতীয় প্রাণীর ডিম্বানু উৎপাদনের পরিমাণ বেশী।
এত দিন সামাজিক নৈতিকতাবোধে আচ্ছন্ন জীব বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিলো শুধুমাত্র প্রজননের জন্যই প্রাণীরা মিলিত হয়, উপযুক্ত পরিবেশে নির্ধারিত একটি সময়েই তারা জুটি খুঁজতে যায়, তবে এ ধারনা সঠিক নয়, সকল প্রাণীই পরবর্তী প্রজন্ম উৎপাদনের জন্য সঙ্গমলিপ্ত হলেও তারা অনেক সময়ই আনন্দের জন্যই মিলিত হয় পুরুষ প্রাণীর সাথে। সামাজিক জীব, যেমন শিম্পাঞ্জী কিংবা বেবুন কিংবা গরিলা কিংবা অন্য সকল যুথবদ্ধ প্রাণীও নিজের আনন্দের জন্য মেটিং সিজনের বাইরে মিলিত হয় পুরুষের সাথে।
প্রকৃতিতে পুরুষজাতীয় প্রাণী ইর্ষাকাতর তারা যদি সন্দেহও করে কোনো সন্তান তার ঔরসজাত নয়, তবে নৃশংস ভাবে হত্যা করে সে সন্তানকে। তবে দীর্ঘ দিনের সামাজিক অভ্যাস ও চর্চায় মানুষের ভেতরে ব্যতিক্রম দেখা যায়। এরা অন্য সব প্রাণীর মতো নয়, বরং এরা অন্য পুরুষের সন্তানদেরও নিজ সন্তানের মতো লালন করে, এমন কি উপযুক্ত প্রমাণ থাকা স্বত্ত্বেও তারা নিজের সন্তানকে হত্যা করে না, সামাজিক বিধান এবং আমাদের নৈতিকতা বোধ কিংবা আমাদের স্নেহশীলতার নিদর্শন বোধ হয় এটাই।
মানুষ এখানেই অন্য সব প্রাণীর তুলনায় ব্যতিক্রম। তারা দীর্ঘ দিনের সামাজিকতা অভ্যাসে নিজস্ব জীনের প্রবাহ না হলেও পরবর্তী প্রজন্মকে স্নেহ করতে শেখে, এবং এরাই অন্য মানুষের সন্তানকে দত্তক নিয়ে লালন পালন করে, এমন কি রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও এই স্নেহশীলতা কমে না।
যৌনতা কেনা পুরুষরা বেশি অপরাধপ্রবণ
যৌনতার পেছনে যেসব পুরুষ অর্থ ব্যয় করে তারা বেশি অপরাধপ্রবণ। অন্যরা, যারা যৌনতা কেনে না তাদের চেয়ে এইসব পুরুষরা নারীর প্রতি সহিংসতাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করে বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২ জনের ওপর পরিচালিত এ গবেষণার ফল চলতি সপ্তাহে প্রকাশ করা হয়েছে।
'প্রস্টিটিউশন রিসার্চ এন্ড এডুকেশন' গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী ও যৌন ব্যবসা-বিরোধী কর্মী মেলিসা ফারলি।
গবেষণায় স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা অর্থ দিয়ে যৌনতা কেনে এবং যারা যৌনতা কেনে না তাদের বয়স, শিক্ষা, জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে জোড়ায় জোড়ায় ভাগ করা হয়। এরপর নারী সম্পর্কে তাদের অভিমতের তুলনা করা হয়।
অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেক যৌনতার পেছনে অর্থ ব্যয় করে। আর বাকী অর্ধেক করে না।
এতে দেখা গেছে, যৌনতার পেছনে অর্থ ব্যয়কারী পুরুষরা নারীর প্রতি সহিংসতা, খারাপ আচরণ, নেশা জাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার, সহিংস আক্রমণ, অস্ত্রের ব্যবহারসহ নানা ধরনের অপরাধ বেশি করে।
এছাড়া, নারীদের প্রতি আচরণ এবং অভিমতের ক্ষেত্রেও দুই গ্রুপের পুরুষের মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়েছে।
দেখা গেছে, পতিতাদের প্রতি যৌনতা কেনা পুরুষদের সহানুভূতি যৌনতা না কেনা পুরুষদের চেয়ে অনেক কম।
আর নারীর প্রতি অভিমতের ক্ষেত্রে যৌনতা না কেনা পুরুষরা মনে করে, নারীদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে, ছলচাতুরি করে কিংবা পাচার করে পতিতাবৃত্তিতে নামানো হয়।
অন্যদিকে, যৌনতা কেনা পুরুষরা মনে করে, পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত নারীরা আদতেই ভালো মেয়ে নয়।
যুদ্ধ এবং যৌনতাই আমাদের ভাবনাকে নিয়ন্ত্রন করে, অর্থনীতি শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধ এবং যৌনতাকেই পূঁজি করে টিকে থাকে, সম্প্রসারিত হয়। আপাতদৃষ্টিতে যতটা পরিপাটি মনে হয় আমাদের সমাজের গাঁথুনি, সেটা বোধ হয় অনেক দুর থেকে দেখবার ফল, কিংবা আমাদের সমাজে যৌনতাভিত্তিক লুকোচুরি থাকলেও সেটা স্বাভাবিক ভাবে বিকশিত না হয়ে যতটা ছড়িয়েছে ভেতরে ভেতরে, সেটা জেনে আশ্চর্য হই প্রতিবারই।
যৌনঅপরিতৃপ্তির কারণে পরকীয়া প্রবন মানুষেরা স্বগৃহে এবং স্ববরে স্থিতি পাবে ভায়াগ্রা আসবার পরে- এমন মন্তব্যও ভ্রান্ত প্রমাণিত হলো, পরকীয়ার কারণে স্বামী কিংবা স্ত্রীকে হত্যা করা, শিশু সন্তানদের হত্যা করবার মতো বিভৎসতার নজির শুধু এই শতকেই পত্রিকায় এসেছে এমন নয়, বাংলাদেশের পত্রিকায় গত শতকে, অর্থ্যাৎ ১০০ বছর আগেও এমন ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে।
তখনও পরকীয়াপ্রবন নারী প্রেমিকের সাথে গাঁটছাড়া বাঁধবার আগে স্বামীকে হত্যা করে ফেরারী হয়েছে, কিংবা ভুল করে নিজের কন্যাকে হত্যা করেছে।
এটাকে সামাজিক অবক্ষয় বলবার অবকাশ বোধ হয় নেই এখন। সভ্যতা কখনই এমন রাস্তায় যায় নি, বরং এই যৌনতাকে নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করেছে সভ্যতা। আমাদের সভ্যতার অবদান বড়জোর এইগুলোকে একটা নিয়মতান্ত্রিকতার ভেতরে নিয়ে আসা।
সভ্যতায় নারী একটা সময় পূজিত হয়েছে তার উর্বরতার জন্য, নারীরাই সন্তান গর্ভে ধারণ করতে পারে এবং নারীরাই পুরুষের বিজ গর্ভে ধারণ করে নতুন প্রজন্মের জন্ম দেয়- এই অলৌকিক গুণের জন্যই নারী দেবিরুপে পূজিত হয়েছে, যা কিছু ফলবন্ত, ভুমি, নদী, শষ্য সবই পূজিত হয়েছে নারীরুপে, আকাশ বর্ষণ করে, সেই বর্ষণসিক্ত ভুমি ফলবতী হয়, সুতরাং আকাশ পুরুষ, ধরণী নারী।
বয়ে যাওয়া জলধারা, যার কোনো শাখা নদী নেই, কিংবা যার কোনো উপনদী নেই, বাংলাদেশে সেসব জলধারাকে নদ বলে, নদী সেগুলোই যাদের শাখাপ্রশাখা আছে,
যমুনা, মেঘনা, পদ্মা, করোতোয়া, সবই নদী, কারণ এদের ভাটির কোথাও না কোথাও এরা একটা দুটো শাখা ছড়িয়েছে, আত্রাই থেকে উৎপন্ন হয়েও কোনো শাখা নদী তৈরি করে নি, তাই পূনর্ভবা নদ, ব্রহ্মপূত্রেরও কোনো শাখা নদী নেই, কপোতাক্ষ কিংবা আড়িয়াল খাঁ শুধু কোনো জায়গায় একটা জলের শাখা ছড়াতে পারে নি বলেই আজীবন নদ রয়ে গেলো।
আমাদের নিজেদের ভেতরেও এই ফলবন্ত হয়ে উঠবার প্রতি একটি মোহ কাজ করছে, সামাজিক পুরুষাকার এভাবেই চিহ্নিত হয়েছে। পূজ্য নারী নগরভিত্তিক সভ্যতা শুরুর পর থেকেই সমাজের কতৃত্ব হারিয়েছে ধীরে ধীরে, নগর সভ্যতা এবং সেমেটিক ধর্মের আগমনে নারী হয়েছে অবগুণ্ঠনবাসীনি। তাদের চাষ আর পশুপালনের কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ এখানেও তাদের উর্বরতাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
সে সময়ে নারীর যৌনতার অবাধ স্বাধীনতাকে রুদ্ধ করবার প্রয়াসেই সেমেটিক ধর্মে নারীকে পাপের আকর বলা হয়েছে। এমনটাই নারীবাদি নৃবিজ্ঞানীদের অভিমত ছিলো।
ইভ, তার যৌনতা এবং লোভের জন্য স্বর্গ থেকে বহিস্কৃত একজন, নারীর শুদ্ধতা এবং উৎকর্ষতা শেষ পর্যন্ত তার যোনীর অভেদ্যতা। এই সামাজিক ধারণারও জন্ম হয়েছে এই ধর্মগুলোর অবাধ প্রসারে।
প্রতিটা সমাজ নিজের মতো করে যৌনতাকে নিয়ন্ত্রন করতে চেয়েছে, চেয়েছে অর্থনীতি বিকাশ এবং সামাজিক স্থিরতা নির্মান করতে চেয়েছে যৌন সম্পর্কগুলোকে কোনো না কোনো নিয়মে বেধে।
গ্রীসে চল ছিলো, কোনো মেয়ে বিবাহযোগ্যা হলে তাকে পতিতাবৃত্তি করতে হতো, মন্দিরের বেদীতে গিয়ে বসে থাকতে হতো, যে কেউ সামান্য অর্থ দিয়ে তাকে ভোগ করবার পরে তার বিবাহের সুযোগ মিলতো। হেরোডেটাস নিজের ইতিহাস গ্রন্থে লিখেছেন- সুন্দরী মেয়েদের তেমন সমস্যা হতো না, তারা অতি সহজেই মানুষের নজরে পরতো এবং পরবর্তীতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারতো। তবে সমস্যা হলো অসুন্দরীদের। তারা বছরের পর বছর মন্দিরের চাতালে অপেক্ষা করতো, যদি কোনো দিন কোনো দয়াবানের করুণা হয় এবং তার সামনে পয়সা ছুড়ে দিয়ে তার সাথে সঙ্গমের আগ্রহ দেখায় তবেই তার জামাই জুটবে।
আমাজানের আদিবাসীরা প্রতি পূর্ণিমায় অবাধ যৌনাচারের সুযোগ রেখেছে, এ কারণেই সেখানে পুরুষে পুরুষে যৌনদ্বন্দ্ব নেই, ভারতের নগরগুলোতে প্রখ্যাত সুন্দরীদের মন্দিদের দেবদাসী করা হতো, তারা বিশিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ এবং অন্য সব কুলীনদের যৌনচাহিদা পুরণ করতো পয়সার বিনিময়ে।
ব্যাবিলনে কিংবা মিশরের উপরের অংশে, মন্দিরে সুন্দরীদের সেবাদাসী করে রাখবার প্রবনতা ছিলো। অর্থ্যাৎ সমাজের একটা অংশ, যারা সে সময়ে সমাজকে নিয়ন্ত্রন করতো, তাদের নিজেদের ভেতরে যৌনতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হওয়ার কোনো রকম আগ্রহ ছিলো, সুতরাং তারা ভবিষ্যতে সুন্দরী ও কাম্য হয়ে উঠতে পারে এমন রমনীদের দেবতা তথা সমাজপতিতের সবার ভোগের জন্যই উন্মুক্ত রাখতো। যেকেউ মন্দিরে গিয়ে তাদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করবার সুযোগ পেতো না।
বিয়ের প্রথা যেমনই হোক না কেনো, সেটা আদতে একটা সামাজিক স্বীকৃতি, একজন নারী ও পুরুষের একত্রবাসের স্বীকৃতি, কনে পন দেওয়া কিংবা বরপন দিয়ে দুজন এই স্বীকৃতি আদায় করে নেয় সমাজ থেকে।
দক্ষিণ আফ্রিকার একটি উপজাতিতে নিয়ম হলো, তাদের বিবাহযোগ্যা নারীকে যখন কোনো পুরুষ পছন্দ করবে, তখন সেই মেয়েকে নিজের যোগ্যতা প্রমান করতে হবে সবার সামনে নেচে। তার নাচ দেখে যদি অন্য সবাই যৌনউত্তেজিত হয় তবেই সেই মেয়ের বিয়ের স্বীকৃতি মিলে, অর্থ্যাৎ যখন একজন নারী অন্য একজন পুরুষের সাথে একত্রবাস শুরু করবে, সেসময় থেকেই যৌন্যতার দ্বন্দ্বে যেনো সে পুরুষ অন্য পুরুষের সাথে জড়িয়ে না পড়ে এটা নিয়ন্ত্রনের জন্যই গোত্রের সবাইকে এক করে তাদের সবাইকেই যৌনউত্তেজনা দেওয়ার প্রথা।
প্রথা অদ্ভুত হতে পারে, সময় সময় খুবই উৎকট এবং অশালীন মনে হতে পারে, কিন্তু সামাজিক স্থিরতা নিয়ে আসবার দীর্ঘমেয়াদী প্রয়াসে এইসব রীতিই সংস্কৃতি হিসেবে চর্চিত হচ্ছে। এবং খুব বেশী অগ্রসর না হলেও সেসব সভ্যতা গত ১০ হাজার বছর ধরে নিজস্ব সংস্কৃতি অক্ষুন্ন রেখেই টিকে আছে।
যৌনতার অন্য একটা ব্যবহার ছিলো যুদ্ধে, পুরুষের সুন্দরী নারীর প্রতি কামনাকে পূঁজি করে সম্রাট এবং সেনাপতিগণ একদা নারীদের গুপ্তচরের পেশায় নিয়োজিত করতো, তাদের কাজ ছিলো শত্রু শিবিরের গুরুত্বপূ্র্ণ মানুষদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে এইসব সংবাদ সেনাপতিকে জানানো। তারা একই সাথে গুপ্তঘাতকের কাজও করতো।
তারাশঙ্কর তার এক গল্পে এমনটাই জানিয়েছেন যে, আমরা যাদের বেদে-বেদেনী বলি তারাও আসলে কোনো এক সময় রাজার গুপ্তচর ছিলো, তাই বেদে-বেদেনীরা ছদ্মবেশ নিতে পটু, এটা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তারা সংস্কৃতি হিসেবে চর্চা করছে, তারা পতিতাবৃত্তিও করে প্রয়োজনে।
স্বামীর বয়স্ক সব আত্মীয়দের সাথে পর্যায়ক্রমে সঙ্গমলিপ্ত হওয়ার প্রথাও আছে কোথাও কোথাও। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়েই পুরোহিতদের যৌন চাহিদা পুরণের অনেক রকম পন্থাই আবিস্কৃত হয়েছে।
পুরোহিতদের কাজ সমাজে একটা শৃঙ্খলা নির্মান, তারা নিজেদের ধর্মীয় বয়ান কিংবা অভিজ্ঞতার আলোকে সমাজের বিভিন্ন ঝুট ঝামেলা নিয়ন্ত্রন করেন, তাদের ক্ষোভ প্রশমন করেন, এবং আবশ্যিক ভাবে এইসব পুরোহিতদের কামুকতা বেশী, সুতরাং তারা সকল সুন্দরী নারীদের ভোগ করতে আগ্রহী, রাজার কনয়া কিংবা চন্ডাল কন্যা কোনো বিভাজন নেই, পুরোহিতের সাথে সঙ্গম না করলে বিবাহ বৈধ হবে না। এমন রীতিও একটা সময়ে প্রচলিত ছিলো।
অনেক রকম যৌনসংস্কৃতি চর্চিত হয়েছে। সভ্যতার অগ্রগতির এবং প্রযুক্তির উন্নতির জন্য আমরা সেসবের কিছু অংশ জানছি। অনেক রীতিকেই আমাদের অতিরিক্ত জটিল সমাজের প্রেক্ষিতে এবং আমাদের চর্চিত সংস্কৃতির প্রভাবে রীতিমতো অভব্য এবং অসভ্য মনে হয়। অথচ আমাদের পরিপাটি সামাজিক বুননেও এইসব যৌনদ্বন্দ্ব সব সময় ক্রিয়াশীল।
আমাদের সভ্য মানুষদের বিবাহবহির্ভুত সম্পর্কে জড়িয়ে পরা কিংবা সামাজিক ভাবে অবৈধ সম্পর্ক চর্চা করা কিংবা সামাজিক ভাবে অনৈতিক বিবেচিত কর্মকান্ডে অতিরিক্ত উৎসাহী হয়ে উঠবার কারণটা মোটেও সামাজিক অবক্ষয় নয়, বরং আমাদের নিজস্ব মূল্যবোধ এবং চর্চিত সংস্কৃতি এই প্রথাকে কখনই দমন করতে পারে নি। মানুষের যৌনতার চাহিদাকে উপেক্ষা করে দানবের জন্ম দিয়েছে।
সেমেটিক ধর্ম নিজে নিজস্ব কিছু নিয়মের সৃষ্টি করেছিলো, নিজস্ব গোত্রের জন্য এই নিয়মগুলো হয়তো কার্যকরী ছিলো, কিন্তু একটা পর্যায়ে তারাই ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলো এবং তাদের সংস্কৃতি কিংবসা সংস্কার অন্য সব অধিকৃত দেশে ছড়িয়ে পড়লো।
ইসলাম সর্বশেষ ধর্ম একটা নির্দিষ্ট কাঠামো বেধে দিয়েছে, এর আগে কোনো সভ্যতায় এতটা স্পষ্ট নির্দেশনা ছিলো না। কাদের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন বৈধ হবে এবং কাদের সেটা স্থাপন করা অবৈধ হবে এটার বিস্তারিত সেখানে বলা আছে।
আমার অনেক আগে একটা প্রশ্ন জেগেছিলো মনে, সংকলিত হাদিসের অর্ধেকের বেশীই যৌনতা সম্পর্কিত, আরবের মানুষের কি অন্য কোনো কাজ ছিলো না?
এত দিন পরে নিজেই খুঁজে পেলাম সে উত্তর, আদতে মানুষ সভ্যতার শুরু থেকেই এই যৌনতা এবং যুদ্ধ দিয়েই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, সুতরাং এটার গুরুত্ব তাদের কাছে অনেক বেশী। আর সেই গুরুত্বের প্রকাশ ঘটছে সাহাবীদের সাধারণ জিজ্ঞাসায়। তারা নিজেরাও প্রচলিত সংস্কৃতির সাথে নবউদ্ভাবিত ধর্মের সংস্কৃতিকে খাপ খাইয়ে নিয়ে নিজেদের যৌনজীবন এবং যৌনতার চর্চা করতে চেয়েছে
আস্তিকের যৌনবিকৃতি দমনের জন্যই ধর্মের আগমন?
১২ ই মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৪:৫২
শেয়ারঃ
0 1 0
ধর্মের অপরিহার্যতা সম্পর্কে তথাকথিত আস্তিকদের যুক্তি আমাকে আশ্চর্য করে, আবশ্যিক ভাবেই যৌনআগ্রাসী একটা চরিত্র ধারণ করে সেসব যুক্তি। ধর্মীয় অনুশাসন না থাকলে মানুষ অধিকমাত্রায় ধর্ষণ করতো- প্রাথমিক যুক্তি হিসেবে কিংবা আলোচনার সূচনায় এটার উপস্থিতি রীতিমতো আপত্তিকর হলেও তাদের কোনো বিকার থাকে না। তারা যুক্তির পরতে পরতে নিজের ধর্ষকামী চরিত্রকে উন্মোচিত করতে থাকে এবং অবশেষে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়, তারা এই ধর্ষণ করতে পারতো কিন্তু করছে না, কারণ তারা ধার্মিক। ধর্মীয় বোধের কারণেই তারা নিজেরা ধর্ষক হয়ে উঠতে পারছে না, নিজের যৌনবিকৃতিকে দমন করবার জন্য মানুষের ধর্মের প্রয়োজন হয় না।
এটা যে লৈঙ্গিক বৈষম্যের প্রকট প্রকাশ, এবং এটা যে যৌনআগ্রাসী বক্তব্য বিবেচিত হতে পারে এবং সেটা যে নারীর প্রতি অবমাননা কর, এই বোধটুকু ধার্মিক এবং আস্তিকের ভেতরে তৈরি হয় না।
ঠিক যে কারণে সামহোয়্যারে অনেকগুলো নিক ব্যন হলো, সেটাও ঠিক একই রকম ধার্মিক মানসের অধিকারী একজনের যৌনআগ্রাসী মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায়।
মানুষ শুধুমাত্র ধর্মীয় বোধের কারণে অপরাধ প্রবন নয় এই বাস্তব সত্যটা মনে হয় শুধু আস্তিকদের বিকৃত মস্তিস্কেই জন্মায়। সামাজিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য এবং সামাজিক ক্ষমতাকেন্দ্রের চারপাশে থাকতে পারা এবং না পারার প্রতিক্রিয়াগুলো সম্মিলিত ভাবে মানুষের ভেতরে যেসব অভাববোধের ধারণা জন্মায়, সেই ধারণাগুলোর কারণেই মানুষ সামাজিক বৈভব অর্জন করতে চায়, এবং এই অর্জনের ক্ষমতা সবার সমান থাকে না।
যারা স্বকীয় যোগ্যতায় এসব সামাজিক বৈষম্যকে অতিক্রম করতে পারে , তাদের ভেতরে ধর্মীয় কারণেই শুধুমাত্র অপরাধপ্রবনতা দমনের ভাবধারা দেখা যায় না। এবং এর বাইরেও লোভ আর লালসা, যা একটা অসম সমাজের বিকৃত মানসিক উপজাত, সেসবের প্রভাবেই মানুষ সামাজিক আইন কিংবা শৃঙ্খলাকে পাশ কাটিয়ে অনৈতিক কিংবা অসামাজিক সুবিধা নিতে চায়। এখানেই অপরাধপ্রবনতার জন্ম।
যেসব সমাজে এখনও এসব সামাজিক প্রকট বৈষম্য নেই, সেখানে মানুষ নিজের সম্পদ এবং পরের সম্পদকে আলাদা করে দেখে না, সেখানে নারী সংক্ষিপ্ত আচ্ছাদনে নিজেকে আবৃত করলেও কেউ ধর্ষনউন্মুখ হয়ে তাকে তারা করে না।
এমন কি বাংলাদেশের পাহাড়ী অঞ্চলের কিছু কিছু এলাকায় এখনও উপজাতি মেয়েরা উর্ধাঙ্গ অনাবৃত রেখেই চলাফেরা করে, সেসব স্থানেও ধারাবাহিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে না। তাদের যৌনবিকৃতি কিংবা বিকৃত যৌনকামনাও নেই। সেখানে তথাকথিত উন্নত সভ্য দেশের ধর্মও বিকশিত হয় নি। তারা কিভাবে নিজেদের অপরাধ প্রবনতা দমন করে?
সমাজ নিজের বৈষম্য এবং অন্যায়ের বিরোধিতাকে দমন করে একটা সামাজিক শৃঙ্খলা নির্মাণের প্রয়োজনেই পুলিশি কাঠামো তৈরি করে, প্রশাসনিক কাঠামোর ভেতরেই ক্ষমতাবানদের বিলাসের অর্থ সংস্থান এবং নিরন্ন মানুষ, যারা এই বিলাসব্যসনের অর্থ যোগায় তাদের বিক্ষোভ দমনের জন্যই রাষ্ট্রের প্রশাসন ও পুলিশী ব্যবস্থা ব্যতিব্যস্ত থাকে।
সেখানে পুলিশ কার বিরুদ্ধে সক্রিয় হবে এবং কার বিরুদ্ধে নিরব থাকবে, এটা নির্ধারণ করে দেয় ক্ষমতাচক্রে সেই নির্দিষ্ট ব্যক্তির অবস্থান। ধর্ম তেমন ভুমিকা রাখে না এখানে।
বিকৃত যৌনকামনাকে চরিতার্থ করবার সামাজিক মতবাদ তৈরি হয়েছে বর্তমানের সময়ে এসে, এ সময়ে প্রাচীন ধর্মগুলোর অনুসারীদের কিয়দংশ ধর্মীয় মতবাদকে খানিকটা বিকৃত করে নিজেদের যৌনবিকৃতিকে চরিতার্থ করবার উপলক্ষ্য খুঁজে পেয়েছে। অবাধ যৌনতা কিংবা যৌনআগ্রাসণ ঠিক তেমন ভাবে কোনো প্রাচীণ ধর্মের মূল উপজীব্য ছিলো না।
তবে আধুনিক আস্তিকেরা নিজেদের এইসব সামাজিক চাহিদা এবং বিকৃত চাহিদাকে ভুলে থাকেন ধর্মের কেতাবের আদেশ নিষেধ মেনে। তাতেই আমাদের নিজেদের বাইরে যাওয়া নিরাপদ হয়।
পুরুষতান্ত্রিক এই মনোভাবের কোনো অর্থ আমি খুঁজে পাই না। পুরুষেরা নিজেদের ধর্ষকামীতা দমন করে ধর্মীয় বিধিনিষেধে, নারী নিজের ধর্ষকামীতা দমনের জন্য ইশ্বরানুগ? নারী আস্তিকও কি ঠিক একই রকম যুক্তির জাল বিস্তার করে? নারী আস্তিক যখন এই যুক্তির ধারাবাহিকতা শুনবে, যে চাইলেই তার সম ধর্মের অনুসারী একজন পুরুষ তাকে ধর্ষণ করে ফেলতে পারতো, এবং সম্ভবত সে এটা চায়ও, কিন্তু সেই চাওয়া সে পুরণ করছে না, অনুগ্রহ করে নয়, বরং ধর্মীয় নিষেধের কারণে। তখনও কি সে নিজের ধর্মের প্রতি অনুরক্ত থাকতে পারে?
যেই ধর্মবোধ তাকে নিছক একটা শরীরে পরিণত করে সমধর্মের পুরুষদের কাছে? তাকে সস্তা খাওয়ারে পরিনত করে? কিংবা একই যুক্তির ধারাবাহিকতায় তারও ধর্ষকামী চরিত্র উন্মোচন করে।
কোনো নারী কি নিজের এই পরিচিতি মেনে অতিশয় ধার্মিক হয়ে উঠতে পারে?
সভ্য মানুষের বসতিতে কেউ দরজা লাগায় না
২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৫:৪৩
শেয়ারঃ
0 0 0
সভ্য মানুষের মহল্লায় কেউ দরজা লাগিয়ে ঘুমায় না।
আমরা সভ্য হচ্ছি এবং লোভ-লালসার শিকার হচ্ছি প্রতিনিয়ত। আমাদের আধুনিকতা আমাদের খোলস পড়তে শেখাচ্ছে, আমাদের আড়াল শেখাচ্ছে, সভ্যতা আমাদের শেখাচ্ছে নীতিবোধ এবং নৈতিকতা, এবং এইসব ব্যবসায়িক লেনদেনের প্রভাবে পরিবর্তিত হওয়ার আগেই আমরা আমাদের সারল্য বিসর্জন দিয়েছি।
অন্ত্যজ আদিবাসী, যাদের নগরে কোনো পুলিশ নেই, যাদের বসতিতে কোনো জল্লাদ নেই, যাদের কোনো জেলখানা নেই, তারা সভ্যতার সংস্পর্শ্বে এসে সভ্যতার কালিমা মাখছে গায়ে। বিষয়টা উঁচু গলায় সভ্য হয়ে উঠবার দাবি জানানো সবারই।
অনেক দুরে না গিয়ে একেবারে নিকটের চাকমা গ্রাম কিংবা ম্রোদের গ্রামে নজর দিলেও হবে, নজর দেওয়া যায় হাজং কিংবা সাঁওতাল বসতিতে। এইসব বসতির মানুষেরা দরজা লাগিয়ে ঘুমায় না, তাদের সর্দার কিংবা গ্রামপ্রধান ব্যতীত অন্য কোনো প্রশাসন নেই। পুলিশ নেই বসতিতে।
দরজা হাঁট খোলা, তবে এইসব বাসতিতে চুরি হয় না, কেউ অন্যের সম্পদ না বলে গ্রহন করে না, কেউ পরস্ত্রীর দিকে বাঁকা নজরে তাকায় না,মনোমালিন্য নেই এমন না, তবে সর্দারের কথা মেনে নিয়ে সবাই জীবনযাপন করছে এবং কোথাও কোনো ছন্দপতন নেই।
শিক্ষা মানুষকে কলুষিত করে না, বরং আলোকিত করে, তবে এখানে মডারেশনকামী সুশীল মানুষেরা, যারা নিজেদের শোভন রুচির মানুষজন মনে করেন, তারা অশুচীদের ছোঁয়াচ থেকে নিজেকে বাঁচাতে চান। তারা নিজের মনে অনেক কিছুই তৈরি করেছেন। কোনটা অশোভন এবং কোনটা শোভন এটাও আমরা তাদের কাছ থেকে জানি, এবং একটা ছোটো কুঁড়ির চারপাশে বিভিন্ন মাপের জাল বিছানো হয়, সেটাও দেখি বসে বসে। এখানে ২৪ ঘন্টা চৌকিদারি, এরপরও ভাবের ঘরে চুরি হয়ে যায়।
কার ঘাড়ে কখন কতৃপক্ষের কোপ এসে পড়বে ঠিক নেই। স্বেচ্ছাচারি কিংবা স্বৈরাচারী আচরণ দেখে মনে হয় না আদিবাসী অশিক্ষিত পিছিয়ে পড়া সমাজেও এরচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যবস্থা সম্ভব।
উচ্চশিক্ষিত মানুষগুলো নিজেরাই এমন একটা নীতিমালা তৈরি করে বসে আছে, যেই নীতিমালায় অনেক হাস্যকর বিধান আছে, প্রথম পাতার বৈচিত্র আনতে পোষ্ট মুছে ফেলবার বিধানটিও বলা যায় ব্লগের ৫৪ ধারা। যেকোনো সময়েই এটার প্রয়োগ করা সম্ভব।
আমি বিনীত ভাবে কতৃপক্ষের কাছে জানতে চাই, ঠিক এই মুহূর্তে কিংবা আগামী কাল, কিংবা আগামী একমাস পরে, যেকোনো একটি বিশেষ মুহূর্তে একটা তালিকা দিবেন আমাকে, যেই তালিকায় প্রথম পাতার বৈচিত্র প্রকাশ পাবে।
প্রথম পাতায় যা যা আসে, কিংবা ধারাবাহিকভাবে ব্লগে যা লিখিত হয় সেগুলোর বৈচিত্র আনতে হলে অন্তত ৩ ঘন্টায় প্রথম পাতায় দেওয়ার মতো কিছু পাওয়া যাবে না। এমন কি এমনও হতে পারে, সারাদিনে একবারও প্রথম পাতার সবগুলো পোষ্ট বদলে দেওয়া সম্ভব হবে না।
আমি এমনটা বলতে পারি, আজকে প্রকাশিত ১০০ পোষ্ট বাছাই করে যদি প্রথম পাতার ১০টা পোষ্ট বসাতে বলা হয়, কতৃপক্ষ, মডারেটর, কেউই আসলে দ্বিরুক্তি না করে প্রথম পাতা সাজাতে পারবে না।
পরীক্ষা প্রার্থনীয়।
অনুরোধ, অযথা কাউকে প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে দিতে এমন হাস্যকর অজুহাত খুজবেন না, কাউকে যদি আপনার পছন্দ না হয়, নীতিমালার হাস্যকর ব্যবহার করে আপনারা তা করতেই পারেন।
ধরেন ২ ক, ২ খ থেকে শুরু করে ৫ ক পর্যন্ত বিভিন্ন নীতিমালার অদ্ভুত ব্যবহার আপনারা করেছেন। সেগুলো করেই যেকোনো পোষ্ট মুছে দিতে পারেন, দয়া করে এমন কথা বলবেন না, যে কথা জানলে ব্ল্যাক বেঙ্গল গোটের হাসির মহামারি হবে। তারা এভাবে হাসতে হাসতে মৃত্যু বরণ করলে সেটা দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
বিজ্ঞানবাদী মানুষের ধর্মবাদ-
ধর্মের বিরুদ্ধে কিংবা প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের লড়াইয়ের মাত্রাগত তারতম্যতার কারণে লড়াইটা অনেক সময় খোদ বিজ্ঞানের বিরুদ্ধেই হয়ে যায়। বিজ্ঞানমনস্কতার দাবী করে বিজ্ঞানকে ধর্মের খোলস পড়িয়ে দেওয়া ছদ্মবৈজ্ঞানিক মানসিকতাও নিন্দনীয়। মূলত প্রশ্নটা শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগত উপলব্ধির জগতেই চলে আসে।
ধর্মে গোঁজামিল থাকলেও এর মানবহিতৈষ্যি ভুমিকাও ধর্মবাদীদের আচরণ এবং কুসংস্কারগ্রস্থতার কারণে সমালোচিত হয়, এবং সময়বিশেষে ধিকৃত হয়, এমন ভাবেই বিজ্ঞানবাদীতা এবং এর চর্চাকারী মানুষের কারণে বিজ্ঞানের কল্পিত ধর্মময়তার প্রকাশ চলছে ।
বিজ্ঞজনের উক্তি ইনভার্টেড কমার ভেতরে রেখে কোনো বক্তব্য প্রতিষ্ঠা বক্তব্যের বৈজ্ঞানিকতা প্রমাণ করে না। ধর্মের বৈজ্ঞানিকতা দাবি করা ধর্মবাদী এবং বিজ্ঞানকে ধর্ম করে তোলা বিজ্ঞানবাদী উভয়ের জন্যই এ কথা সমান ভাবে প্রযোজ্য।
ভাববাদী মানসিকতা নিয়ে বিজ্ঞানকে উপলব্ধি করতে চাওয়া, পপুলার কালচার এবং পপুলার সায়েন্সের নিবন্ধ খুঁজে বিজ্ঞানকে উপলব্ধি করতে চাওয়া সময়ে সময়ে বৈজ্ঞানিক বিভ্রান্তি তৈরি করে। তবে সাধারণ পত্র-পত্রিকা এবং ফোরামে বিজ্ঞানের চর্চা হয় কম, বরং বিজ্ঞান সম্পর্কে সাধারণ মানুষের পঠিত ধারণার চর্চা হয় বেশী। বিজ্ঞানপুঁথি পড়ে একেকজন ছদ্মবিজ্ঞানবাদী নাঙ্গা তরবারী উঁচিয়ে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
ফাঁপা বিজ্ঞানসম্পর্কিত ধারণা যখন উন্মোচিত হয় তখন বিজ্ঞান উপহাস করে এইসব বিজ্ঞানবাদীদের, পরিহাসের বিষয় অনেক জ্ঞানী জনের উক্তি সম্বলিত এইসব বিজ্ঞানময় প্রবন্ধ বিষয়ে কিছু বললে বিজ্ঞানবাদী এবং ধর্মবাদী উভয়ের জন্যই স্পর্শ্বকাতর হয়ে উঠতে পারে।
প্রথম আলোর বিজ্ঞানপ্রজন্মে এবং প্রায় মুক্তমনা হতে চাওয়া সচলায়তনেও লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার নিয়ে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। মানুষের গবেষণা এবং বিজ্ঞানের মূল সূত্র জানবার প্রক্রিয়ায় এত বড় একটা আয়োজন আগে কখনই ঘটে নি।
লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে উচ্চ শক্তিসম্পন্ন প্রোটন প্রোটন সংঘর্ষ এবং আরও বড় পরিসরে সীসা- সীসা পরমাণুর ভেতরে সংঘর্ষের মাধ্যমে মূলত তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যার এখন পর্যন্ত করা অনুমাণের যথার্থতা যাচাই করা হবে।
পপুলার সায়েন্স পত্রিকা পড়া মানুষেরা অনেকটা ধর্মের মতোই প্রশ্ননিরপেক্ষ মনে করতে পারে এই অনুমাণকে। তবে শেষ পর্যন্ত এটা একটা মডেল, যে মডেল এখন পর্যন্ত সীমিত পর্যায়ে ভবিষ্যত বানী করতে পারে, আমাদের পরীক্ষণের ফলাফলগুলোকে ব্যখ্যা করতে পারে একটা পর্যায় পর্যন্ত।
কিন্তু গাণিতিক হয়ে উঠা পদার্থবিজ্ঞান এবং সৃষ্টিতত্ত্ববিজ্ঞানে এমন একটা তত্ত্বের ভেতরে পরিবর্তনযোগ্য প্যারামিটার শতাধিক, এগুলোর যেকোনোটাই পরীক্ষণের ফলাফল বদলে দিতে পারে।
তাই এত নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ তৈরির চেষ্টা। তরল হিলিয়াম দিয়ে একটা ভুগর্ভস্ত চেম্বার করে ১.৩ কেলভিন তাপমাত্রায় রাখা বিশাল বড় মাপের একটা কাজ। যদিও এই চেম্বার থেকে হিলিয়াম হারিয়ে যাওয়ায় পরীক্ষণ কিছু দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে বর্তমানে তবে যদি মহাবিশ্বকে বিবেচনা করতে হয় তবে এটাই মহাবিশ্বের শীতলতম স্থান।
পৃথিবীর পরীক্ষাগারে এরও বেশী শীতল অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। পরম শূণ্য না হলেও তার কাছাকাছি তাপমাত্রায় পৌঁছানে একটা নিয়মিত বিষয় বড় বড় গবেষণাগারে । ০.১ ডিগ্রী কেলভিন তাপমাত্রা তৈরি এখন তেমন আলোচিত ঘটনা নয়। তবে মূলত তাপমাত্রা নয় বরং এখানে বিবেচিত হয় পরমাণুর গতিশক্তি।
কোনো উপায়ে আমরা যদি পরমাণুর গতিশক্তি হ্রাস করতে পারি তবে তার তাপমাত্রা কমে যাবে, শুতরাং বিভিন্ন কারিগরি ব্যবস্থায় আমরা শুধুমাত্র পরমাণুগুলোর গতিশক্তি হ্রাস করি, এভাবেই আমরা কিছু পরমাণু পাই গবেষণাগারে যাদের গতিশক্তি মূলত ০.১ ডিগ্রী কেলভিনে পরমাণুর গতিশক্তির চিত্র যেমন হবে তেমন।
মূলত পপুলার সায়েন্সের নিবন্ধগুলোতে এই কথাই বলা হয়েছে এটা মহাবিশ্বের উষ্ণতম স্থান বিবেচিত হবে। প্রোটন -প্রোটন সংঘর্ষের পরে সেখানের তাপমাত্রা উঠে যাবে সূর্য্যের তাপমাত্রা ১ লক্ষ গুণ বেশি হয়ে যাবে এই অনুমাণ আসলে প্রোটনের গতিশক্তি বিবেচনায়। অর্থ্যাৎ আমাদের সংঘর্ষরত প্রোটনের গতিশক্তিকে আমরা যদি রূপান্তরিত করি তাপ গতিবিদ্যার সূত্রে তবে প্রোটনের ৭ টেরা ইলেকট্রনভোল্ট শক্তি পাওয়ার ঘটনা ঘটবে যদি প্রোটোনের তাপমাত্রা সূর্য্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রার লক্ষ গুণ হয়ে যায়। তবে প্রোটনের শক্তিটা কিন্তু তাপমাত্রার কারণে সঞ্চিত হচ্ছে না এখানে।
প্রথম আলোর সাময়িকি পড়ে অনেকক্ষণ হাসলাম, এখানে সংঘর্ষের সময় সূর্য্যের চেয়ে ১০ হাজার গুণ বেশী তাপ উৎপন্ন হবে। বিজ্ঞান বেচে খাওয়া মানুষদের সম্পর্কে শ্রদ্ধাবোধ থাকে না, তবে অজ্ঞতা নিয়ে পরিহাস করাও উচিত নয়। সূর্য্যে প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয় সেটার ১০ হাজার গুণ তাপ উৎপন্ন হওয়ার সম্ভবনাই ভীতিপ্রদ। এ কারণেই সম্ভবত পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরে একজন আতংকিত মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
মূলত বস্তু কি কারণে ভর পায় এ নিয়ে একটা অনুমাণ রয়েছে বিজ্ঞান গবেষকদের। তারা একটা প্রক্রিয়া নির্ধারণ করেছেন, যেটা দিয়ে সম্ভবত পদার্থের ভর তৈরি হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো কণিকার ভর থাকে না, এটা একটা সাম্যতার শর্ত ভঙ্গের মতো বিষয়। সাম্যতা ভেঙে নতুন প্রতিসাম্যতা তৈরি কিংবা এমন একটা অনুকুল পরিবেশ তৈরি যাতে শুধুমাত্র আমাদের পরিচিত কণিকারাই অবশেষে টিকে থাকতে পারে। এই অনুমাণগুল অবশ্যই প্রশ্নসাপেক্ষ এবং এসবের উত্তর জানাও প্রয়োজন।
কোন প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র আমাদের পরিচিত কণিকাগুলোই টিকে থাকলো এটা যাচাই করা যাবে এই পরীক্ষায় এটা একটা বড় বিষয় বৈজ্ঞানিকদের জন্য। হিগস বোসন পাওয়া যাবে কি যাবে না এটা একটা বড় মাপের প্রশ্ন, সেটার প্রাপ্যতা অবশ্যই বিজ্ঞানগবেষকদের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় বিষয়। কি কি প্রক্রিয়ায় সংঘর্ষে সমান ও বিপরীত ধর্মী কণিকারা একই পরিমাণে উৎপন্ন হলেও শেষ পর্যন্ত বিপরীত কণিকারা ধ্বংস হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, ইলেক্ট্রো উইক থিওরীর প্রধান সমস্যা একই কাঠামোতে দুই ধরণের ইলেক্ট্রনের উপস্থিতি, নিউট্রিনোর ভর, এইসব দুর্বলতা সত্ত্বেও সবচেয়ে শক্তিশালী অনুমাণ সুপারসিমেট্রিক থিউরী, এটার পরীক্ষণের সাফল্য কামনা করতেই হয়।
তবে যখন সস্তা বৈজ্ঞানিক নিবন্ধে অনুমিত ১৭০ গিগা ইলেক্ট্রন ভোল্টের হিগস বোসনখেয়ে কণিকার ভর কিভাবে ০.৫ মেগা ইলেক্ট্রন ভোল্ট হয় এই সংক্রান্ত জটিলতাগুলোকে উপেক্ষা করা হয় তখন গোলমাল বাধবেই।
হকিংয়ের অনুমাণ যথার্থ, বিজ্ঞানের মূল সূত্রগুলো বুঝবার জন্য বিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই, কিন্তু বৈজ্ঞানিক সূত্রগুলোর যথার্থতা বুঝতে হলে কিঞ্চিৎ সময় নষ্ট করে হলেও একটু গভীর পড়াশোনার প্রয়োজন।
রোমান্টিক মহাকাশবাদী মানুষের নিবন্ধ পড়েও বিব্রত হলাম। তারার জন্ম রহস্য আমাদের জানা নেই, কিন্তু তারা একবার জন্ম নিলে এটা ঠিক কি প্রক্রিয়ায় ধ্বংস হবে এ সংক্রান্ত অনুমাণ আমাদের আছে। মৃত্যু বর্ণিল, যেকোনো তারকার পতনই কৌতুহলউদ্দীপক, এবং অনেক বেশী মানুষের নজর তারকার পতন এবং ধ্বংস দেখতে উন্মুখ।
তবে দুঃখজনক সত্য হলো আমরা তারাদের ধ্বংস কিংবা তারাদের বর্ণচ্ছটার অন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় বিবেচনা করতে পারি না এই ফটোগ্রফিক প্লেটগুলোও কিয়দংশে তুলির কারসাজি, অবশ্য মোনালিসার ভ্রুবিহীন ছবি দেখেও হাজার পাতা লেখা হয়েছে অতীতে, অনাগত ভবিষ্যতেও হাজার পাতা লিখবে মানুষ মোনালিসা বিষয়ে।
তবে দুঃখজনক হলো যখন পপুলার সায়েন্সের অনুবাদ করতে গিয়ে মানুষ গ্রহগুলোকে স্বপ্রভায় ভাস্কর অনুমাণ করে নেয়। গ্রহগুলো নিজস্ব জ্বালানীর অভাবেই অনুজ্জল, তাদের নিজস্ব আগুণ নেই, তাই তারা পরের আগুণে আলোকিত হয়ে উঠে। বৃহঃস্পতিও অনেকাংশেই নিজে জ্বলে উঠতে পারলো না বলেই দেবতার বাসস্থান হয়েই কাটিয়ে দিচ্ছে তার সৌরজগতকাল। এমন ভাবেই পপুলার সায়েন্সের চর্চাকারী ছদ্মবৈজ্ঞানিকেরাও বিজ্ঞানময়তার চর্চা করেও নিজস্ব অনুভুতি এবং চর্চার অভাবে অন্য মানুষের উক্তি আর উইকিপিডিয়া এবং বিভিন্ন গ্রন্থের সমালোচনা এবং সংকলিত অংশ পড়েই গ্রহদের মতোই পরের আলোতে ভাস্কর জীবন যাপন করছেন।
তাদের নিজস্ব আলো হোক, তারা স্ব মহিমায় ভাস্কর হয়ে উঠুন, এবং অন্তত যখন কোনো বিজ্ঞানপ্রবন্ধ লিখেন তখন নিজে যাচাই করে দেখুক তার বক্তব্যের যথার্থতা। নয়তো আমাদের বিজ্ঞানকে ধর্ম মনে করা বিজ্ঞানবাদীদের বাঁদর নাচই দেখতে হবে।
নারী নিগ্রহ
শিশু কারা? ইসলামী বিবেচনায় যখন রজঃস্বলা হয়ে উঠে মেয়ে শিশু তখন সে বালেগ। আর যখন বীর্য জন্মায় পুরুষ শিশুর তখন সে বালেগ। কোনো বয়সের সীমারেখা নেই এখানে। উষ্ণ মন্ডলে নারী শিশু ৯ বছর বয়েসেও রজঃস্বলা হয়ে উঠতে পারে। তবে মোটামুটি কমবেশী সবাই বয়সন্ধি কালেই বালেগ হয়ে উঠে।
১৪০০ বছরে সভ্যতা অনেকটা পথ পারি দিয়েছে। এখন জাতিসংঘ সনদে উল্লেখ করা হয়েছে ১৮ বছরের কম বয়স্ক যেকোনো মানুষই শিশু। বাংলাদেশ অবশ্য একটু পিছিয়ে আছে। তারা আইনত শিশুর বয়সসীমা নির্ধারণ করেছে ১৬ বছর।
বাল্যবিবাহ প্রবণতা রোধ করা যায় নি। গ্রামে এখনও মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। সোমত্ত মেয়ে ঘরে রাখবার ঝামেলা অনেক বাবা মা করতে চান না। তাই স্বামীর ঘরে স্বামীর নিরাপত্তা হেফাজতে মেয়েকে পাঠিয়ে দিয়ে তারা খুশী।
বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণে সংজ্ঞায়িত হয়েছে এইভাবে
যদি কোনো পুরুষ বিবাহবন্ধন ব্যতীত ষোলো বছরের অধিক বয়সের কোনো নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়াই, ভীতি কিংবা শক্তি প্রদর্শন করে কিংবা তাকে প্রতারিত করে সম্মতি আদায় করে সঙ্গমলিপ্ত হন কিংবা হওয়ার চেষ্টা করেন-
ষোলো বছরের কম বয়স্ক কোনো নারীর সাথে তার সম্মতি কিংবা অসম্মতিতে সঙ্গমলিপ্ত হন তবে তিনি ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন।
যদি নারী পুলিশ হেফাজতে থাকবার সময় ধর্ষিত হন তবে যাদের হেফাজতে থাকবার সময় এই ধর্ষণ সংঘটিত হয়েছে তাদের সবাই ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন যদি না ভিন্নরূপ প্রমাণিত হয়। হেফাজতের ব্যর্থতা জন্য ৫ থেকে ১০ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হইবেন।
যদি অন্য কোনো পুরুষ ধর্ষণের দায়ে দন্ডিত হন তবে তার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড,
যদি কোনো ব্যক্তি কতৃক ধর্ষণ বা উক্ত ধর্ষণ পরবর্তী তাহার অন্যবিধ কার্যকলাপের জন্য ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু ঘটে তবে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যু দন্ডে কিংবা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হইবেন। ধর্ষণের চেষ্টা করবার শাস্তি ৫ থেকে ১০ বছরের কারাদন্ড এবং এর সাথে উপযুক্ত অর্থদন্ড।
যদি ধর্ষণ কোনো সংঘবদ্ধ দলের দ্বারা সংঘটিত হয় এবং ইহার ফলে যদি ধর্ষিতা নারী বা শিশুর মৃত্যু হয়ত তবে সকল ব্যক্তিবর্গই একই অপরাধে দন্ডিত হইবেন এবং এরজন্য নির্ধারিত শাস্তি ভোগ করিবেন ।
ধর্ষণ এবং যৌন নিপীড়ন আদালতের পরিভাষায় ভিন্ন। যৌন কামনা চরিতার্থ করবার জন্য কোনো নারী কিংবা শিশুর যে কোনো অঙ্গ স্পর্শ্ব করেন তবে সেটা যৌনপীড়ন, এ জন্য তাকে ৩ থেকে ১০ বছর মেয়াদের কারাদন্ড ভোগ করতে হবে।
যদি কেউ নিজের যৌনকামনা চরিতার্থ করবার জন্য নারীর প্রতি অশালীন অঙ্গভঙ্গি করে কিংবা তার শ্লীলতা হানীর চেষ্টা করে তবে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২ থেকে ৭ বছর সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত হইবেন।
আমাদের আইনের কমতি নেই। প্রচুর শক্ত এবং কঠোর আইন বিদ্যমান। তবে উপযুক্ত ব্যবহার নেই। এখানে ইভ টিজিং কিংবা অশালীন অঙ্গভঙ্গি কিংবা ইঙ্গিতের শাস্তি আদালতে প্রদান করা হয় না। বরং সামাজিক সালিশে অভিযুক্তকে মৌখিক ভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়। এলাকার মুরুব্বীরা মুখে নিষেধ করে তাদের দায়িত্ব পালন করে যান। তবে বাংলাদেশের অনেক মেয়ের স্কুলে যাওয়ার স্বাধীনতা থাকে না বখাটেদের দৌরাত্বে, তারা স্কুলে না গিয়ে বাসায় পারিবারিক কারাগারে বন্দী জীবন যাপণ করে।
যারা একটু সাহসী, তারা স্কুলে যাওয়ার পথে লাঞ্ছিত হয়, অনেকে মেয়ে শিশুই বয়সন্ধি কালের অতিরিক্ত আবেগে আত্মহত্যা করে, এমন অনেক ঘটনাই পাওয়া যাবে যেখানে লাঞ্ছনা এবং অশালীন মন্তব্যের শিকার শিশুরা বয়সন্ধি কালে সদ্য প্রবেশ করেছে, এইসব ১৩ বছরের মেয়ে শিশুরা আত্মহত্যা করে নিয়মিতই, তবে সামাজিক পৌরুষ তাতে বিন্দুমাত্র দমে যায় না।
নারী ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতন বন্ধের শক্ত আইন হয়, নারীর বৈষম্য দুর করবার জন্য সরকার বাজেটে ২৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখে ,তবে আমাদের স্কুল আর কলেজের মেয়েদের লাঞ্ছনা এবং লাঞ্ছিত মেয়েদের আত্মহত্যার হার কমে না। বাংলাদেশে পুলিশ হেফাজতে, ঘরে এবং স্কুলে কলেজে যাওয়ার পথে অপহৃত এবং ধর্ষিত মেয়েদের সংখ্যা কমে না।