ভিডিও গ্যালারি, ফটো গ্যালারি,
ভিডিও গ্যালারি, ফটো গ্যালারি,
অভ্যাস-১ ▌ খাবারের ছয়টি নিয়ম মেনে চলুন
আমাদের প্রতিটি কোষের চারপাশে থাকে ‘লাইসোজম’ নামে একটি ফ্রিজ। কোষেরা নিজেদের চাহিদার অতিরিক্ত খাদ্য এই লাইসোজমে জমা করে রাখে । তারপর একসময় শরীরে খাদ্যে বা পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিলে এই লাইসোজম-এর খাদ্য খায়। আপনি যদি শুধুমাত্র পানি ছাড়া সকল খাবার গ্রহণ ১৩ থেকে ১৮ ঘন্টা বন্ধ রাখেন। তাহলে, আপনার দেহের কোষগুলো নিজেদের লাইসোজমে থাকা খাদ্যকে খাওয়া শুরু করে! আর যদি উপস না করে খেতেই থাকেন, তাহলে শরীরের কিছু জিন মিউটেশন হয়ে নানা ধরনের লাইফস্টাইল রোগ তৈরি করে।
১। লবণ, চিনি মেশানো ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার , রুটি, ভাত,, তেল, ঘি, চর্বি ইত্যাদি যতটা সম্ভব কম খাবেন। একটি ছোট প্লেটে ভাতের চেয়ে সবজি বা তরিতরকারি বেশি নিয়ে একটি ছোট চামচের মাধ্যমে খাবেন অতি ধীরে ধীরে কচ্ছপের গতিতে। হাত থেকে খাবারের দূরত্ব বজায় রাখবেন। হাত ভালোভাবে ওয়াশ না করে কোন খাবারই হাত দিয়ে ধরবেন না।
২। মুখ বন্ধ করে খাবার ছিটাবেন, খাবারের সময় কারো সাথে বা মোবাইলে কথা বললে মুখের লালা তিন ফুট পর্যন্ত চারদিকে ছড়াতে থাকে যা খালি চোখে দেখা যায় না এতে একজনের রোগ জীবাণু অন্যজনের পেটে যায়।
৩। দিনের তিন বেলা খাবার কে ৬ থেকে ১০ ভাগে ভাগ করে খাবেন, দিনে দু ঘন্টার বেশি না খেয়ে থাকবেন না, অন্তত পানি হলেও খেতে হবে। খাবারের সময় এবং গতি’ এই দুটি বিষয় খুবই ইমপোর্টেন্ট অর্থাৎ সূর্যের আলো থাকা অবস্থায়, যখন যা পারেন অল্প অল্প খাবেন এবং সেটা খুব ধীর গতিতে চিবাবেন। সন্ধ্যার পর কিছুই খাবেন না।
৪। লাইভ ফুড অর্থাৎ তাজা ফলমূল শাক সবজি মাছ তৈরি তরকারি বেশি খাবেন আর , ডেড ফুড ও প্রসেস ফুড কম খাবেন। খাবারের সময় বা খাবারের পর পর পানি বা ঔষধ খাবেন না অন্তত খাবারের আধা ঘন্টা পরে খাবেন। ক্ষিধে না লাগলে কেউ জোর করে খাওয়ালেও খাবেন না, শরীরে খাবা্রের দরকার হলে ক্ষিদের মাধ্যমে শরীর সিগন্যাল দিবে তখন খাবেন।
৫। ঘুমের প্রয়োজন হলে শরীর সিগনাল দিবে তখন ডান পাশ ফিরে ঘুমাবেন, অসময়ে নয়। কখনো রাত করে ঘুমাবেন না। সব সময় বসে কাজ করবেন না, মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করবেন।
৬। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে কোনো সময় আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা হাটঁতে হবে অথবা ব্যায়াম বা শারিরিক পরিশ্রম করতে হবে। হাটা পথের দূরত্বে গাড়ি ব্যবহার করবেন না। ১ থেকে ৫-৬ তলা পর্যন্ত সিঁড়ি দিয়ে চলুন।
অভ্যাস-২ ▌ সপ্তাহে তিনবার থেকে দিনে তিনবার মলত্যাগ করাটা আদর্শ করুন।
অভ্যাস-৩ ▌গোসল করার নিয়মগুলি মেনে চলুন
গোসল করার সময় প্রথমেই মাথা ও চুল ভেজানো একদম উচিত নয়। কারণ, মানুষের শরীরে রক্তসঞ্চালন একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় হয়ে থাকে। শরীরের তাপমাত্রা বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগে। মাথায় প্রথমেই পানি দিলে সঙ্গে সঙ্গে রক্তসঞ্চালনের গতি বহু গুণ বেড়ে যায়। সে সময় বেড়ে যেতে পারে স্ট্রোকের ঝুঁকিও। তা ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত রক্তচাপের ফলে মস্তিষ্কের ধমনি ছিঁড়ে যেতে পারে। এজন্য স্ট্রোক সাধারণত বাথরুমেই বেশি হয়। স্ট্রোক তখনি ঘটে, যখন কোনো কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় বা মস্তিষ্কের কোনো রক্তনালি ফেটে যায়।
গোসলের সময় প্রথমে পায়ের পাতা ভেজাতে হবে। এরপর আস্তে আস্তে ওপর দিকে কাঁধ পর্যন্ত ভেজাতে হবে। তারপর মুখে পানি দিতে হবে। সবার শেষে মাথায় পানি দেওয়া উচিত।
শীতের দিনে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা যায়। তবে সাধারণ তাপমাত্রার পানি হাতে নিয়ে মাথা ভেজাতে ও ধুতে হবে । কারণ, গরম পানি মস্তিষ্কের শিরা-উপশিরা, চোখ ও চুলের জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া এটি ত্বকের আর্দ্রতা কেড়ে নেয়। প্রচুর ফেনা হয় এমন সাবান, শাওয়ার জেল অথবা বডি ওয়াশ এড়িয়া চলা উচিত। কারণ, এগুলো শরীরের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট করে। গোসলের সময় সাবান, শাওয়ার জেল অথবা বডি ওয়াশ ব্যবহারের পর ভালোভাবে শরীর ধোয়া না হলে শরীরে এসব ক্যামিকেল ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হয়।
সপ্তাহে কয়েকবার ( এক/দুই বা তিন দিন পরপর) গোসল করা স্বাস্থ্যসম্মত। অন্যসময় সংক্ষিপ্ত গোসল হতে পারে। সেক্ষেত্রে বগল এবং কুচকি পরিষ্কার করে অল্প পানিতে অল্প সময় গোসল যথেষ্ট হবে। আমাদের ত্বক থেকে এক ধরনের তেল নিঃসরিত হয়, যা ত্বককে মসৃণ এবং উজ্জ্বল রাখে। এ ছাড়াও ত্বকের বাইরের স্তরে কয়েক ধরনের স্বাস্থ্যকর জীবাণু ও অন্যান্য মাইক্রো-অরগার্নিজমের একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান থাকে। যারা রোগ প্রতিরোধক হিসেবে ভূমিকা রাখে এবং শরীরে প্রোটিন উৎপাদনে সাহায্য করে। গোসলের সময় ত্বকের নিঃসরিত তেল এবং এসব ভালো জীবাণুও পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে ত্বক উজ্জ্বলতা হারিয়ে খসখসে হয়ে যেতে পারে। আর ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে সংক্রামক রোগও হতে পারে। তাই, সবসময় সাবান, শাওয়ার জেল অথবা বডি ওয়াশ ব্যবহার এবং বেশি বেশি গোসল করা বিজ্ঞানসম্মত নয়। তবে যদি ত্বক তৈলাক্ত হয়, এবং যদি কারও ব্রণের সমস্যা থাকে, তবে তার প্রতিদিন গোসল করা এবং দিনে কয়েকবার মুখ ধোয়া উচিত। আবার দীর্ঘসময় ধরে গোসল করলেও ত্বক আর্দ্রতা হারায় এবং চুলকানি হতে পারে। ১০ মিনিট পর্যন্ত গোসলের জন্য আদর্শ সময়। ভারী খাবার খাওয়ার কমপক্ষে এক ঘন্টা পরে গোসল করা উচিত। তবে খাবারে আগে গোসল করা উত্তম।
গোসলের পানি মোছার জন্য গামছা বা তোয়ালে যেটাই ব্যবহার করুন না কেনো, ভেজা শরীরে ঘষে বা ডলে নয় আলতোভাবে চেপে মুছতে হবে। লম্বা চুল দীর্ঘসময় তোয়ালে বা গামছা দিয়ে জড়িয়ে রাখার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। কারণ এতে চুল দুর্বল হয়ে পড়ে যায়। গোসলের পরপরই ময়েশ্চারাইজার, ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করলে ত্বক রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে পড়া থেকে রক্ষা পায়।
বাথরুমে এক্সহস্ট ফ্যান না থাকলে বাথরুম বদ্ধ স্থান হওয়ার কারণে, সেখানে বিভিন্ন ধরনের জীবাণু বাসা বাঁধে। এক্সহস্ট ফ্যান ভেতরের বাতাস বাইরে বের করার মাধ্যমে বাথরুম জীবাণুমুক্ত রাখবে।
অভ্যাস-৪ ▌মন-মেজাজ ভালো রাখার সঙ্গে শরীর ও মনকে কার্যকর রাখতে পরিমিত ঘুম দরকার।
রাত ১০টা-১১টার মধ্যে শুয়ে পড়া এবং ভোর ৫টা-৭টার মধ্যে ওঠা স্বাস্থ্যসম্মত। শিশু (৬-১৩ বছর): ৯-১১ ঘন্টা, কিশোর (১৪-১৭ বছর): ৮-১০ ঘন্টা, এবং প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৬৫ বছর): ৭-৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে। শোবার ঘর শান্ত, অন্ধকার এবং ঠান্ডা হওয়া উচিত। শক্ত ও নরমের মাঝামাঝি গদি এবং নরম বালিশ ব্যবহার করুন। শোবার ১ ঘন্টা আগে মোবাইল/ল্যাপটপ বন্ধ করুন। ঘুমের ২ থেকে ৩ ঘন্টা আগে রাতের খাবার শেষ করুন। তবে এটি যেন হালকা খাবার হয়, ভারী খাবার একেবারেই নয়। চা/কফি/কোমল পানীয়/ক্যাফেইন ইত্যাদি সন্ধ্যার পর পরিহার করুন। ৪ সেকেন্ড শ্বাস নিন → ৭ সেকেন্ড ধরে রাখুন → ৮ সেকেন্ডে ছাড়ুন। পিঠ বা বাঁ দিকে ফিরে শোয়া সর্বোত্তম (ডান দিকে শুলে হৃদযন্ত্রের চাপ কমে)। উপুড় বা পেটের উপর ভর দিয়ে শোবেন না (গলা ও মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে)। ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরুন। প্রস্রাবের বেগ এড়াতে ঘুমের ১ ঘন্টা আগে পানি কম পান করুন। বিছানায় শুয়ে ২০ মিনিটের বেশি জেগে থাকলে বা ঘুম না এলে উঠে বই পড়ুন। ঘুমানোর আগে মানসিকভাবে উত্তেজনাকর কিছু দেখা বা আলোচনা কিংবা অতিরিক্ত চিন্তা বা মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকুন। চাইলে ডায়রি লিখুন বা শান্ত সংগীত শুনতে পারেন। ঘুমানোর কয়েক ঘণ্টা আগে হাটা বা জগিং কিংবা ব্যায়াম করা উচিত নয়। ঘুমানোর সময় নাইট মোড বা ডিম আলো ব্যবহার করুন। খুব উজ্জ্বল আলো ঘুমের হরমোন (melatonin) ক্ষরণে বাধা দেয়। দিনে কাজ শেষ করে নিজের জন্য সময় বের করা উচিত। এই সময়টাতে পছন্দের কাজ করা, যেমন - গান শোনা, বই পড়া বা প্রকৃতির সান্নিধ্যে যাওয়া, হালকা হাঁটাহাঁটি করা বা চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নেওয়া যেতে পারে। দিনে ২০-৩০ মিনিট পাওয়ার ন্যাপ নিন (দুপুর ৩টার আগে) দিনে ২০ মিনিটের বেশি কিছুতেই ঘুমাবেন না । নিয়মিত হাটা বা জগিং কিংবা ব্যায়াম ঘুমের উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে।
অভ্যাস-৫ ▌ নিচ থেকে ভারী কোনো বস্তু উঠা্নোর নিয়ম।
অভ্যাস-৬ ▌ যেভাবে পড়লে কখনই ভুলে যাবেন না: সঠিক নিয়মে পড়াশোনা বা কাজ করতে হবে।
সুযোগ মাত্র ১টা। একটা মাত্র পেনাল্টি মারার সুযোগ পেয়েছেন জীবনে, এর পরই অবধারিত জয় অথবা পরাজয়। এরকম মনোযোগ দিয়ে কোন কিছু কয়েকবার পড়–ন। দেখবেন কমপক্ষে ৮০% আপনার মনে থাকবেই। এবার এক দিনের জন্য রেখে দিন। এক দিন পরে আবার মনে করার চেষ্টা করুন। কিছুটা হয়তো ভুলে যাবেন, কমপক্ষে ৮০% মনে থাকবেই। এবার বিষয়টা এক দিনের জন্য রেখে দিন। তারপর আবার একবার পডুন। এবার দেখবেন কমপক্ষে ৯০% নির্ভুল বলতে পারবেন। এভাবে মাঝে পড়ে যদি আপনি রেখে দেন, কমপক্ষে একমাস পর্যন্ত একটুও ভুলবেন না। মনে রাখবেন, প্রতি মাসে এবার রিভিশন না করলে ধীরে ধীরে মরিচা পড়তে থাকবে এবং এক সময় সব হারিয়ে যাবে, কিছুই খুঁজে পাবেন না। প্রতিদিন আপনি নতুন কিছু শিখছেন। পুরাতন ফাইলে ধুলা পড়ে জং পড়ে যাচ্ছে। একমাস পর নিচ থেকে পুরাতন ফাইলটা বের করে একটু পরিষ্কার করুন, দেখবেন জং পড়বে না। দ্বিতীয়তঃ আপনি যদি পড়া বা কোনো কাজ মন থেকে করেন তাহলে সে কাজটি করে আপনি মজা পাবেন। অনেকে নিজেকে দক্ষ হিসাবে জাহির করার জন্য এক সাথে অনেকগুলো পড়া বা কাজ করার চেষ্টা করে। ফলে সে একটি কাজেও ঠিকমতো মনোযোগ দিতে পারে না। বলা যায় যে, একসাথে অনেক পড়া বা কাজ করা আপনার মনোযোগ বৃদ্ধির জন্য শত্রুু হিসাবে কাজ করে। তাই একনাগাড়ে অনেকক্ষণ পড়াশুনা বা লাগাতার পড়া কিংবা কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে একটু থামুন এবং বিশ্রাম করে নেন। পড়া বা কাজ করার সমায় যদি আপনার মনে হয় যে আপনি পড়া বা কাজের উপর ফোকাস বা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন, তাহলে কাজে একটা বিরতি টানুন এবং উঠে ৫ মিনিট এর জন্য হাঁটতে পারেন।
অভ্যাস- ৭ ▌পড়ার সময় ঘুম এলে যা করবেন
পড়তে পড়তে যখনই আপনার খুব ঘুম লাগবে, তখনই বিরতি দিন এবং ২০ থেকে ৩০ মিনিটের একটি পাওয়ার ন্যাপ নিয়ে নিন। পর্যাপ্ত পানি পান করুন। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ডিহাইড্রেশন মস্তিষ্ককে সঙ্কুচিত করতে পারে! তাই পড়ার সময় পর্যাপ্ত পানি না পান করলে মনোযোগ হারাতে পারে। এটি মোকাবেলা করতে পড়ার টেবিলে সব সময় ঠান্ডা পানির একটি বোতল রাখতে হবে। পড়ার সময় একটু একটু করে চুমুক দিয়ে খেতে হবে। টেবিল থেকে উঠুন এবং কিছুক্ষণ ঘোরাফেরা করুন। জোরে জোরে শব্দ করে পড়া মনে মনে পড়ার চেয়ে ভালো। এ ছাড়া একটি রাফ খাতা আপনার পাশে রাখুন। যা পড়ছেন তার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো লিখে রাখতে পারেন। আপনার নোটগুলো মুখস্থ করার জন্য এটিই সেরা উপায় নয়। পড়ার বিষয়গুলো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পড়ুন। যখনই ঘুম পাচ্ছে তখনই মুখ ধুয়ে নিন। যারা অনলাইনে বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাচ্ছে। তারা প্রতি ২০ মিনিটে কম্পিউটারের পর্দা থেকে দূরে সরে চোখকে বিশ্রাম দিন। কফি বা অন্যান্য পানীয় পান করতে পারেন। অবশ্য খুব বেশি ক্যাফেইন শরীরের পক্ষে খারাপ।
অভ্যাস-৮ ▌লিফটে চড়ার আদব-কায়দা।
দুই বা তিন তলায় ওঠার জন্যে লিফটে ভীড় না জমানোটাই শোভনীয়। লিফটে নিজেকে কিছুটা সংকুচিত করে রাখাই লিফটের ভদ্রতা। এছাড়া লিপ্টে উঠেই গেইটের কাছে দাঁড়াবেন না। লিফটে যথাসম্ভব উচ্চস্বরে কথা বলা হতে দূরে থাকুন। লিফটে আড়মোড়া ভাঙা, আঙুল ফোটানো এসব অভদ্রতা। লাইনে দাঁড়ান, ধীরে-সুস্থে লিফটে উঠুন ও নামুন। ‘লেডিস ফার্স্ট’ এ প্রথা লিফটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। লিফটে লাইনে যে যেভাবে দাঁড়াবে, তাকে সেভাবেই উঠতে দিন। তবে অসুস্থ বা শিশু হলে ভিন্ন কথা। আরলিফট যদি হাসপাতালের হয় তাহলে রোগীর অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। নিজে ঢোকার পর অন্যদের ঢোকা ও দাঁড়ানোর জন্য জায়গা করে দিন। আর কল বাটন চেপে থাকলে এলিভেটর না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কারণ এলিভেটর আপনার তলায় আসার পর আপনাকে না পেলে অবস্থানরতরা বিরক্ত হবেন।
অভ্যাস-৯ ▌খাবার টেবিলে আদব-কায়দা।
অতিথি হিসেবে কোথাও গেলে নিজের ইচ্ছেমতো চেয়ার টেনে বসে না পড়ে আপ্যায়ক চেয়ারে না বসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আর অবশ্যই বসার সময় কর্কশ শব্দে চেয়ার না সরিয়ে আস্তে করে টেনে নিয়ে পিঠ সোজা করে বসতে হবে। প্রধান অতিথি বসবেন হোস্টের ডানপাশে।খাবার টেবিলের সবার সাথে গতি রক্ষা করতে হবে খাওয়ার সময়। টেবিলে খাবার পরিবেশন করতে হবে হোস্টের বামপাশ থেকে। তরল জাতীয় খাবারগুলো প্রধান পদের বামে এবং অন্য খাবারগুলো ডানে রাখতে হয়। যে খাবারের পদটি আপনি খেতে চাইছেন, তা হাতের নাগালের মধ্যেযদি না থাকে, তবেপাত্রটির কাছে থাকা মানুষটিকে অনুরোধ করুন, পাত্রটি এগিয়ে দেওয়ার জন্য। অন্যকে টপকে বা খাবার টেবিলে ভর দিয়ে পাত্রটি টেনে নিতে যাবেন না।
খাবার টেবিলে শব্দ করে খাওয়া আদব-কায়দাহীনতারই পরিচয়। মুখ বন্ধ রেখে চিবিয়ে খেতে হবে। দাওয়াতে বা রেস্তোরাঁয় মাছের কাঁটা বা মাংসের হাড় চিবিয়া খাওয়া বেশ দৃষ্টিকটু একটি ব্যাপার। এ অভ্যাস পরিহার করা উচিত। খাবার টেবিলে হাঁচি বা কাশি পেলে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে মুখে রুমাল বা হাত দিয়ে ঢেকে নিতে হবে। টেবিলে মুখের খাওয়াটুকু শেষ করেই কথা বলতে হবে। খাবার টেবিলে ন্যাপকিন কোলের ওপর বিছিয়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করতে হবে। খাওয়ার মাঝে টেবিল ছেড়ে কোথাও গেলে ন্যাপকিনটি চেয়ারের ওপর রেখে যেতে হবে। খাওয়া শেষ হলে ন্যাপকিন টেবিলের নিজের স্থানের বামপাশে রেখে দিতে হবে। দাঁতে খাবার আটকে গেলে তা টেবিলে বসে বের করার জন্য খোঁচাখুঁচি করা খুবই বিব্রতকর। অবশ্যই মুখে হাত দিয়ে ঢেকে অপর হাত দিয়ে বের করা উচিত। একেবারে বেশি খাবার মুখে পুরে না দিয়ে প্রতিবার অল্প অল্প পরিমাণে মুখে পুরে নিন। খাওয়া শেষে প্লেটে হাত ধুবেন না। খাবার টেবিল থেকে ওঠার সময় পাশেরজনকে বলে টেবিল থেকে উঠুন।
অভ্যাস- ১০ ▌ছুরি-চামচ ব্যবহারের নিয়ম।
আমেরিকান স্টাইলে ছুরি ও কাঁটা চামচ দিয়ে কয়েক গ্রাস খাবার কেটে নিতে হয়। খাবার সময় ছুরিটিকে প্লেটে রেখে কাঁটা চামচ দিয়ে খেতে হয়। কাঁটা চামচ ধরতে হয় ডান হাতে। * ইউরোপিয়ান স্টাইলে ছুরি ডান হাতে এবং চামচ বা কাঁটা চামচ থাকে বাম হাতে। প্রতি গ্রাস খাবার কেটে নিয়ে তারপর মুখে দিতে হয়। পুরো খাবার সময়টাতেই দুই হাতে ছুরি আর চামচ থাকে। * কাঁটা চামচ ব্যবহারের সময় এবং হাতলের ওপর অংশ ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি, তর্জনি ও মধ্যমা দিয়ে ধরতে হয়। বৃদ্ধাঙ্গুলি কাঁটা চামচকে শক্ত করে এবং কাঁটাগুলোকে ওপরের দিকে মুখ করে রাখতে সাহায্য করে। এ সময় বাম হাতে ধরা ছুরিটির ধারালো প্রান্ত নিচের দিকে মুখ করে থাকে। * ডান হাতে ছুরি ব্যবহারের সময় ছুরির হাতল থাকবে হাতের তালুতে এবং তর্জনি থাকবে হাতলের ঠিক ওপরে, যাতে ছুরির ব্লেডে চাপ প্রয়োগ করা যায়। * খাবার বিরতিতে আপনার কাঁটা চামচ ছুরির ওপর ক্রস করে রাখুন। এর কাঁটাগুলো নিচের দিকে মুখ করে থাকবে। খাওয়া শেষে ছুরি ও কাঁটা চামচ পাশাপাশি রাখুন। * স্যুপ খাওয়া শেষ হলে স্যুপের চামচ স্যুপের প্লেটে রাখুন, কাপের ভেতর রাখবেন না। যদি আলাদা গামলায় স্যুপ পরিবেশন করা হয়, তাহলে স্যুপের চামচ স্যুপের কাপের নিচে প্লেটের ওপর রাখুন। * শক্ত মুষ্টি করে চামচ ধরবেন না। * স্যুপ গরম হলে তাতে ফুঁ না দিয়ে চামচ দিয়ে নেড়ে ঠাণ্ডা করুন। স্যুপের চামচের পাশ দিয়ে স্যুপ মুখে ঢালুন। চামচের পার্শ্বদেশ আপনার মুখে প্রবেশ করবে, চামচের প্রান্তভাগ নয়। * মাছ কেটে খেতে হলে আগে মাছটিকে কাঁটা চামচ দিয়ে ধরুন। তারপর ঠিক মাঝ বরাবর মুড়ো থেকে লেজ বরাবর কাটুন। এরপর ফিস নাইফ ব্যবহার করে মাঝখান থেকে পাশে মাছ আলগা করে নিন। প্রথমে ওপরের অংশ খেতে হবে, এরপর নিচের অংশ। ছুরি দিয়ে কাঁটা সরান এরপর নিচের অংশ খেয়ে নিন। ফিস নাইফ থাকবে আপনার ডান হাতে। * মাংস খাবার সময় সঠিক ছুরি ও কাঁটা চামচ ব্যবহার করুন। মাংস খাবার সময় চামচ ব্যবহার করা হয় না। * পাস্তা, নুডলস, স্প্যাগেন্ডি কাঁটা চামচ দিয়ে খেতে হয়। খাবার আগে চামচ বা কাঁটা চামচে ঠিকমতো পেঁচিয়ে নিতে হয়।
অভ্যাস-১১ ▌ রাস্তায় হাটা বা চলাফেরার নিয়ম।
পথচারী হিসেবে সড়ক দিয়ে হাঁটার নিয়ম হলো সব সময় রাস্তার ডান পাশ দিয়ে হাঁটতে হবে। কারণ আমাদের দেশের নিয়ম অনুযায়ী গাড়ি বাম পাশ দিয়ে চলে। পথচারীও যদি বাম পাশ দিয়ে চলে তাহলে পিছন থেকে আগত গাড়িগুলো কিছু বুঝে ওঠার আগেই আঘাত করতে পারে। মোবাইল ফোন ব্যবহার, গান শোনা, বা অন্য কোন কিছুতে মনোযোগ দিয়ে হাঁটা থেকে বিরত থাকুন। রাস্তা যতই খালি থাকুক না কেনো সবসময় ফুট ওভার ব্রিজ এবং যেখানে জেব্রা-ক্রসিং রয়েছে সেখান দিয়ে সিগন্যাল পরলে রাস্তা পার হন। যতটা সম্ভব ফুটপাত দিয়ে হাটুন। থা্মুন, দেঙ্খুন তারপর পার হব, এই শব্দ তিনটি মন্ত্রের মত আনুসরণ করুন। রাস্তা পার হওয়ার আগে বাম দিকে তাকান এবং কোন যানবাহন আসছে কিনা তা নিশ্চিত করুন। রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুত হাঁটুন, কিন্তু দৌড়াবেন না। রাস্তা পার না হয়েও অর্থাৎ ফুটপাত দিয়ে হাটার সময়ও কান খাড়া বা সতর্ক অবস্থায় থাকুন। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে বাঁক বা মোড়ের রাস্তা ব্যাবহার করবেন না। রাস্তায় খেলা করা বা দৌড়াদৌড়ি করা থেকে বিরত থাকুন। রাস্তায় হাটার সময় একসাথে ৪-৫ জন জটলা পাকিয়ে হাটলে ফুটপাতে অন্যদের হাটার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়, এইসময় লাইন করে হাটুঁন। গাড়ির জানালা দিয়ে হাত বা মাথা বের করবেন না এবং থুথু, কপ ফেলবেন না।
অভ্যাস-১২ ▌ চেয়ারে বসার সঠিক নিয়ম।
. চেয়ারের উচ্চতা এমনভাবে নির্ধারণ করুন, যাতে আপনার পায়ের তালু মেঝে স্পর্শ করে। হাঁটু বা গোড়ালি ভাঁজ করে বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না। হাঁটু যেন সব সময় কোমর সমান কিংবা কোমর থেকে কিছুটা উঁচুতে থাকে। চেয়ার এমনভাবে অ্যাডজাস্ট করুন, যাতে মেরুদণ্ডের ওপর চাপ না পড়ে। প্রয়োজনে চেয়ারে আলাদা কুশন বা বালিশ ব্যবহার করতে পারেন। শরীর শক্ত করে আড়ষ্ট হয়ে বসবেন না। বরং যতটা সম্ভব আরাম করে বসুন। কাঁধ রিল্যাক্স করার চেষ্টা করুন, যাতে কনুই আর হাত মেঝের সঙ্গে সমান্তরালে থাকে। কনুই এমনভাবে রাখুন, যাতে হাতের সঙ্গে ‘এল’ শেপ তৈরি করে।. পিঠ সোজা করে, ঘাড় একটু পেছনের দিকে নিয়ে সোজা হয়ে বসুন। সোজা তাকিয়ে থাকতে আপনার ঘাড়কে যাতে আলাদা করে কোন কষ্ট করতে না হয়। চেষ্টা করবেন দীর্ঘসময় যেন একইভাবে বসে থাকতে না হয়। প্রতি আধা ঘণ্টা অন্তর ১০ মিনিটের বিরতি নিন। কম্পিউটারের মনিটরের উচ্চতা চোখের দৃষ্টিসীমার একটু ওপরে হওয়া উচিত। এতে করে আশপাশে বা ওপরে–নিচে তাকাতে অতিরিক্ত কসরত করতে হবে না। মাঝেমধ্যে চেয়ার ছেড়ে একটু হাঁটাহাঁটি এবং শরীর টানটান করে নিতে ভুলবেন না। দাঁড়িয়ে দুই হাত পেছনে কোমরের উপরের অংশে নিয়ে সামনের দিয়ে ঠেলে নিয়ে শরীর টান টান করতে পারেন। এরপর বসে মাথা পেছনের দিকে এলিয়ে দিয়ে গোলাকারে ঘোরাতে হবে। প্যান্টের পকেটে মোটা মানিব্যাগ বা অন্য কিছু নিয়ে অথবা কাজ হয়ে বাঁকা হয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করবেন না।
অভ্যাস-১৩ ▌খাওয়ার পর যে কাজগুলো করা যাবে না।
খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমানো একদম ঠিক নয়। এর ফলে খাবার ভালোভাবে হজম হয় না। গ্যাস্ট্রিক তৈরির একটি বড় কারণ এটি। এর কারণে পেটে সংক্রমণও হতে পারে। ধূমপান এমনিতেই খারাপ। তবে খাওয়ার পরপরই একটি সিগারেট পান করাকে ১০টি সিগারেট পানের সঙ্গে তুলনা করা চলে। খাওয়ার পর পর গোসল করার অভ্যাসও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে হাত, পা ও শরীরের অন্যান্য অংশে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। এতে পাকস্থলীর রক্ত চলাচল কমে যায়, এটি হজম শক্তিকে দুর্বল করে তোলে। খাওয়ার পরপরই ফল খাবেন না। কারণ এটি খাবারকে পাকস্থলীতে আটকে দেয় এবং অন্ত্রে পৌঁছুতে বাধা দেয়। তাই খাবার এক ঘণ্টা আগে বা পরে ফল খাওয়া উচিত । খাওয়ার পর পরই চা পান উচ্চ পরিমাণ এসিড তৈরি করে। যার কারণে খাবারের প্রোটিনকে দেহ ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে না। খাবার হজম করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে চা পান করুন।
অভ্যাস-১৪ ▌দাঁড়ানোর সময় সঠিক ভঙ্গির নিয়ম কী?
ভালো ভঙ্গিমায় দাঁড়ানোর জন্য আপনার মেরুদণ্ড সোজা রাখা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি আপনার পুরো শরীরে রক্ত সঞ্চালন সহজ করে। পা মাটিতে সমতল রাখুন। আপনার হাঁটু সামান্য বাঁকিয়ে রাখুন, লক না করে। আপনার হাঁটুকে আপনার পায়ের আঙ্গুলের উপরে সামনের দিকে ঠেলে দেওয়া এড়িয়ে চলুন। পিঠ সোজা রাখুন, অতিরিক্ত ঝুঁকে পড়া বা বাঁকানো এড়িয়ে চলুন। কাঁধ শিথিল করুন এবং সেগুলোকে নীচে এবং পিছনে রাখুন। কাঁধ সামনের দিকে গোল করা এড়িয়ে চলুন। আপনার মাথা আপনার মেরুদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখুন। সোজা সামনে তাকান; আপনার মাথা সামনে বা পিছনে কাত করা এড়িয়ে চলুন। আপনার কান আপনার কাঁধের উপরে থাকা উচিত। আপনার বাহুগুলিকে স্বাভাবিকভাবে পাশে ঝুলতে দিন। গভীর এবং সমানভাবে শ্বাস নিন, যাতে আপনার ডায়াফ্রাম প্রসারিত হয়।
অভ্যাস-১৫ ▌ বসে প্রস্রাব করা ইসলামি সুন্নাহ।
পায়খানা বা প্রস্রাবের সময় কিবলামুখী হয়ে না বসা, ডান হাত দিয়ে শৌচকার্য করা, তিনটি ঢিলার কম দিয়ে শৌচকার্য না করা ইসলামি সুন্নাত। আমরা ইসলামি সুন্নাহ মেনে বসে প্রস্রাব করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। তবে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করার ভঙ্গি স্বাস্থ্যের উপর কোনও প্রভাব ফেলে না। অর্থাৎ দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা পুরুষদের জন্য ক্ষতিকর নয়। বহু সংস্কৃতিতে বাচ্চাদের শেখানো হয় ছেলেরা দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগ করবে আর মেয়েরা বসে। যারা বসে মূত্রত্যাগ করেন তাদেরকে 'সিটজস্পিঙ্কলার' বলা হয়, এর মানে ওই কাজটি ঠিক পুরুষালী নয়। পাবলিক টয়লেটগুলিতেও পুরুষদের জন্য দাঁড়িয়েই প্রস্রাব করার ব্যবস্থা থাকে। তবে সুন্নাহ মেনে পুরুষদের দাঁড়িয়ে করার থেকে বসে প্রস্রাব করা উচিত।
যারা মুখের ডান পাশ দিয়ে খাবার চিবান,তারা ডানহাতি অর্থাৎ তারা কোনো কিছু করতে ডান হাত ব্যবহার করেন; আর যারা মুখের বাম পাশে খাবার চিবান, তারা বাম হাত দিয়ে সবকিছু করেন। তবে কোনো কারণ ছাড়া বাম হাতে পানি পান করা মাকরুহ। তবে প্রয়োজন হলে বাম হাতের সাহায্য নেওয়া যায়। আমাদের দেশে বাম হাতে খাবার স্পর্শ করাকে অশালীন কাজ হিসেবে দেখা হয়। একইভাবে খাবার সরবরাহ করা ও খাবারের থালা বা পাত্র ধরতে ডান হাত ব্যবহার করার রীতি অনুসরণ করা হয়। কাউকে টাকা দিতে বা গ্রহণ করতে ডান হাত ব্যবহার করা হয়। এ ক্ষেত্রে বাম হাতকে কাজে লাগানোকে অভদ্র হিসেবে দেখা হয়। তবে সব দেশেই করমর্দনের ক্ষেত্রে মানুষ এগিয়ে দেয় ডান হাত। এ ক্ষেত্রেও বাম হাত ব্যবহার করে না মানুষ।
অভ্যাস-১৭ ▌প্লিজ‘ এবং ‘ধন্যবাদ‘ শব্দগুলি বলার অভ্যাস করুন।
কোনও কিছু চাওয়ার সময় ‘দয়া করে‘ বা ‘প্লিজ‘ বলার গুরুত্ব এবং কোনওকিছু প্রাপ্তির সময় ‘ধন্যবাদ‘ বা 'থ্যাংক ইউ' বলা চর্চার মাধ্যমে অভ্যাসে পরিণত করুন । যদি কেউ আপনাকে শুধুমাত্র Thanks বলে তাহলে আপনি বুঝবেন ওই ব্যক্তি সরাসরি আপনার কাছে কোন সাহায্য অথবা মন্তব্য প্রত্যাশা না করা সত্ত্বেও আপনি সেটা করেছেন। যেমন ধরুন, বাস অথবা ট্রেনে বয়স্ক কেউ দাঁড়িয়ে আছে দেখে আপনি তাকে নিজের সিটটায় বসতে বললেন। এক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি আপনাকে Thanks বলবে । অথবা আপনি নিজে থেকেই কারোর সৌন্দর্যের প্রশংসা করলেন। এক্ষেত্রেও ওই ব্যক্তি আপনাকে Thanks বললেই হবে। এবার ধরুন কোনো ব্যক্তি আপনার কাছে নিজে থেকেই কোনো সাহায্য প্রত্যাশা করেছেন, আপনি কাকে সহযোগিতা করলে ওই ব্যক্তি আপনাকে Thank you বলবে্ন। কেউ যদি আপনাকে শুধু Thanks বলে তাহলে আপনিও Thanks বা Never mention বলতে পারেন। কিন্তু যদি আপনাকে Thank you বলে তাহলে আপনার পক্ষে welcome, You are welcome, you are most welcome. বা..'না না ঠিক আছে' বলাটাই সমীচীন। প্লিজ শব্দটি "অনুরোধ করার সময় ভদ্রতা এবং শ্রদ্ধা" বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। "যদি তুমি দয়া করো" বা "যদি তুমি দয়া করো" এই বাক্যাংশটিকে সংক্ষিপ্তরূপ হচ্ছে প্লিজ।
অভ্যাস-১৮ ▌কোনো কিছুতে হাত দেওয়া বা নেওয়ার আগে অনুমতি নেওয়া একান্ত জরুরি।
"অনুমতি নেওয়া শুধু শিষ্টাচার নয়, এটি অপরের স্বাধীনতাকে সম্মান করার শিক্ষা" । অনুমতি নেওয়া সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস তৈরি করে। বিনা অনুমতিতে কিছু নিলে ভুল বোঝাবুঝি বা বিরোধের সৃষ্টি হয়। আপনার নিজেদের নয় এমন কোনও জিনিসে, এমনকি তার মা–বাবার জিনিসেও হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই তাদের অনুমতি নিতে হবে। কারো ব্যক্তিগত মোবাইল, কম্পিউটার, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্ট, ই-মেইল ইত্যাদিসহ সে কোন কিছু ওই ব্যক্তির অগোচরে দেখা তার একান্ত ব্যক্তিজগতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা বা গোয়েন্দাগিরি করার শামিল, যা অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ। কারো ব্যক্তিগত ছবি তোলার আগে বা ভিডিও করার আগে তাদের অনুমতি চাইবেন। কারও ঘরে প্রবেশ করার আগে দরজায় কড়া নাড়ানো এবং অনুমতি চাওয়া বাধ্যতামূলক।
অভ্যাস-১৯ ▌সরি‘ বা ‘দুঃখিত‘ বলতে শিখুন।
কোনো ভুল করলে তখন সরি বা ‘দুঃখিত‘ বলতে শেখা অতীব জরুরি। বাঙালির প্রধান সমস্যা সরি বলতে না চাওয়া। সরি বলাকে সে নিজের হার মেনে নেওয়া এবং সবার সামনে নিজেই ছোট হয়ে যাওয়া হিসেবে বুঝে থাকে। অথচ বাস্তবতা ঠিক উল্টো—সরি বলার মানে হচ্ছে সহমর্মী হওয়া। এটি আত্মোপলব্ধি ও মানসিক পরিপক্বতার প্রতিচ্ছবি। অর্থাৎ আমার ভিতর কোন দম্ভ আর অহংকার নাই বুঝাতে 'সরি' ব্যবহার করা হয়। এলটন জনের একটি বিখ্যাত গানই আছে, ‘সরি সিমস টু বি দ্য হার্ডেস্ট ওয়ার্ড’। সত্যিই তা-ই। কারও মনে আঘাত দেওয়া নিয়ে একদম মন থেকে অনুভব করাকে ‘দুঃখিত’ বা ‘সরি’ বলে । সরি বললে বহু জটিলতা কেটে যেতে পারে। এইএকটি শব্দ পাল্টে দিতে পারে আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অনেক কিছুই। সব ক্ষেত্রেই এটি মন্ত্রের মতো কাজ করতে পারে। উন্নত বিশ্বে সরি বলাকে মনে করে 'সুপার গ্লুর' মতো একটা শব্দ, যা জীবনের যেকোনো বিষয়কে মেরামত করে দিতে পারে। তাই তারা এমনকি হাঁচি বা কাশির সময়ও মুখ চাপা দেওয়ার পাশাপাশি সরি বলে।
অভ্যাস-২০ ▌’এক্সকিউজ মি‘ বলতে শিখুন।
‘এক্সকিউজ মি‘ সাধারণত ব্যবহার করা হয়- যখন আপনি কারো সাথে কথা বলার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করছেন। অথবা আপনি কারো মনোযোগ আকর্ষণ এর চেষ্টা করছেন তখন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে sorry এর পরিবর্তেও ব্যবহার করা হয়। যেমন-"এক্সকিউজ মি, আপনি কি আমাকে রাস্তাটা বলতে পারবেন?" # আবার যখন আপনি ভুল করে কারো গায়ে ধাক্কা দেন, কারো পথে বাধা দেন, বা ছোটখাটো কোনো ভুল করেন, তখন এটি ব্যবহৃত হয়। * উদাহরণ: (ধাক্কা লাগার পর) "ওহ, এক্সকিউজ মি! # কাউকে অতিক্রম করার অনুমতি চাইতে: বা ভিড়ের মধ্যে বা সরু জায়গায় যখন আপনি কারো পাশ দিয়ে যেতে চান, তখন বিনয়ের সাথে "এক্সকিউজ মি" বলে পথ চাইতে পারেন। # যদি আপনি কারো কথোপকথনে বাধা দিতে চান বা কোনো জরুরি কথা বলার জন্য সাময়িক বিরতি চান, তখনো এটি ব্যবহার করা যায়। যেমন: "এক্সকিউজ মি, আমি কি একটি প্রশ্ন করতে পারি?" # কখনো কখনো যখন কোনো কথা বা কাজ আপনার কাছে অগ্রহণযোগ্য মনে হয়। তখনও বলে পারেন। যেমন-"এক্সকিউজ মি! আপনি এটা কীভাবে বলতে পারলেন?" # যদি আপনি কারো বলা কোনো কথা বুঝতে না পারেন তখন "এক্সকিউজ মি" ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন- "এক্সকিউজ মি, আপনি কি আবার বলবেন? # কোনো অপ্রীতিকর কাজের জন্য ক্ষমা চাইতে: বলা হয়। যেমন- * হাই তোলা, কাশি দেওয়া, হেঁচকি তোলার পর ভদ্রতা প্রকাশ করতে "এক্সকিউজ মি" বলা হয়। উদাহরণ: (হাই তোলার পর) "এক্সকিউজ মি।"
অভ্যাস-২১ ▌নিজেকে বাঁচান অপ্রয়োজনীয় মানুষের আগ্রাসন থেকে
উচ্চশিক্ষিত থেকে শুরু গ্রামের কৃষক পর্যন্ত পর্যন্ত সবাই ভাইরাল হওয়ার নেশায় অপসংস্কৃতি দিকে ঝুঁকছেন। ফলোয়ার আর ভিউয়ের নেশায় ভিডিওতে অশালীন কথাবার্তা ও অঙ্গভঙ্গিতে অশ্লীলতার দিকে ইঙ্গিত করছেন। এসব দেখে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করছেন অনেক তরুণ, আসক্ত হচ্ছেন ডিজিটাল ডিভাইসে। ফলস্বরূপ, তরুণদের উন্নত রুচিসম্মত চিন্তাভাবনার পরিবর্তে নিচু মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। লাইফ আপনার, ডিসিশনও আপনার।"."নেগেটিভিটি যেখানেই দেখবেন, সেখান থেকেই নিজেকে সরিয়ে নেবেন। এটা দুর্বলতা নয়, বরং নিজের প্রতি দায়িত্বশীল থাকা।"."নিজেকে বাঁচান অপ্রয়োজনীয় মানুষের আগ্রাসন থেকে। আপনার জন্য আসল মানুষগুলোকে চিনে নিন। যারা আপনার ভালোটা চায়। বাকি দুনিয়াকে জঞ্জাল ভাবুন, পথে চলতে গিয়ে আগাছা আর কাঁটাঝোপ থাকবেই, কিন্তু আপনাকেই পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।"
"সব কথার উত্তর দিতে নেই, সবকিছুর প্রতিক্রিয়াও দিতে নেই। নিজেকে প্রমাণ করার দরকার নেই, শুধু নিজের পথে স্থিরভাবে এগিয়ে যান।","এমন সময় আপনি যা করবেন তা হলো ইগনোর। কারণ জীবনে কিছু মানুষ থাকবেই, যাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আবর্জনা ছড়ানো, অন্যের জীবনে বিষ ঢালা। অপ্রয়োজনীয় তর্ক বা, কাউকে কিছু বোঝাতে যাবেন না। কেউ যদি আপনাকে মূর্খ বলে, হেসে বেরিয়ে আসুন। এতে আপনার এনার্জি আর মানসিক শান্তি—সবই বাঁচবে।". কাকে রেসপন্স দিতে হবে, আর কাকে এড়িয়ে যেতে হবে।
অভ্যাস-.২২ ▌বয়স্কদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করুন।
বয়স্করা এই পৃথিবীতে বহুকাল যাবৎ বসবাস করার দরুন তারা বেশ প্রাজ্ঞ হয়ে থাকেন, আর আমাদের উচিত তাদের থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চার করে জ্ঞান বৃদ্ধি করা। রাস্ট্রের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে তাদের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। যেকোনও বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতি সম্মান জানানো উচিত সেটা যে কোনো ক্ষেত্র। খাবার পরিবেশনের সময়ও সবার আগে বাড়ির বয়স্কদের খাবার দেওয়া শিষ্টাচার, এমনকি ছোটদেরও আগে। সিঁড়ি/রাস্তায় হাত বাড়িয়ে দেওয়া, ভারী জিনিস বহনে সাহায্য করা, গণপরিবহনে সিট ছেড়ে দেওয়া , বয়স্ক ব্যক্তি প্রবেশ করলে বা কথা বললে উঠে দাঁড়ানো: বয়স্কদের পথ আগে ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদি বয়স্কদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ভালো আচরণ । বয়সে বড়, জ্ঞানে বিশাল , তারাই প্রকৃত আলোর মশাল।
অভ্যাস-২৩ ▌মানুষের দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলা অভদ্রতা।
কারো সাথে আঙুল তুলে কথা বলা বেয়াদবি। কারণ এর মাধ্যমে আপনি যাদের দিকে আঙুল তুলছেন তাদের প্রতি আপনার শ্রদ্ধার সম্পূর্ণ অভাব বুঝায়। আঙ্গুল তোলা অন্যের প্রতি আক্রমণাত্মক ভাব প্রকাশ করে। তাই সব সংস্কৃতিতেই এটিকে অশালীন মনে করা হয় । কথা বলার সময় যদি আপনার এই অভ্যাস আসে , তাহলে সচেতনভাবেই একটি পরিহার করুন। এছাড়া কথা বলার সময় এলোমেলোভাবে বসা বা দাঁড়ানো কিংবা সামনের দিকে ঝুঁকা অথবা পিছনের দিকে বেঁকে যাওয়া ভঙ্গিতে কথা বলাও অসৌজন্যতা হিসেবে দেখা হয়।
শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সাথে আমাদের পৃথিবীতে কিছু মানুষ রয়েছেন কিন্তু তারা বাকী আর পাঁচজনের মতোই। তাই কোনো রকম ভেদাভেদ গড়ে না তুলে তাদের সাথেও স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে। সমাজে প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী যাতে কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ, অপব্যবহার, অবহেলা ও বিব্রতকর অভিজ্ঞতার শিকার না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা একটি সামাজিক সমস্যা। নারীদের প্রতি এ সহিসংতা শুধু পুরুষরাই যে সংঘটিত করেন তা নয়, নারীরাও করতে পারেন। শিশু থেকে কিশোরী, যুবতী থেকে বৃদ্ধা, স্কুলছাত্রী থেকে পোশাককমীর, ডাক্তার, আইনজীবী এমনকি ভিখারিনীও রেহাই পাচ্ছে না মানুষরূপী কিছু হায়েনাদের হিংস্র থাবা থেকে। একুশ শতকে এসে যেখানে নারীর স্বাধীনতা ও আত্মপ্রতিষ্ঠার জাগরণ ঘটবে, সেখানে অশিক্ষা আর পুরুষতান্ত্রিকতা তথা পুরুষ শাসিত সমাজের কারণে ইভ টিজিং থেকে শুরু করে নানামুখী নিযার্তনের শিকার হচ্ছে। এই সামাজিক ব্যাধি রোধে সোচ্চার হতে হবে।
নিজে মেনে চলুন এবং ছোটদের শেখান যে, যখন তারা তাদের বন্ধুদের বাড়িতে যাবে , তখন যেন তারা সেখানে শান্ত, ভদ্র এবং নম্র হয়ে থাকে। বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করুন যে, কিভাবে অন্য পরিবারের শিডিউলের সাথে কীভাবে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া যায়। তাদের সাথে এমনভাবে একাত্ত হয়ে যাক যে, তারা যেন আপনাকে ওই পরিবারেরই একজন সদস্য হিসেবে মনে করেন। তাদের পরিবেশিত খাবারের উপর যেন কোনো খুঁতখুঁতে, একগুঁয়ে ভাব না থাকে এবং আপনার পছন্দের খাবারের জন্য কোনো কিন্তু কিন্তু ভাব না করেন। বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে আপ্যায়ণকারীকে যথাযথ শুভেচ্ছা এক্স প্রশংসা জানানোটাও সভ্য আচরণের একটা অংশ।
খেলনা, খাবারসহ সবকিছু অপরের সাথে ভাগ করে নেওয়ার অর্থ হল তার প্রতি যত্নশীলও হয়ে ওঠা। একজন সুনাগরিকের প্রধান নীতি হলো "আমার আছে, তোমার নেই" নয় - "আমাদের আছে" । যখন আপনি নিজের খাবার, বই-নোট বা জ্ঞান অন্যদের সাথে ভাগ করে নেয়, তখন আপনাদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি ও সহযোগিতা করার মানসিকতা তৈরি হয় এবং আন্তরিকতা ও উদারতা প্রকাশ পায়। । এটি পারস্পরিক বিশ্বাস এবং বোঝাপড়া বাড়ায়, যা এটি একটি বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সভ্য সমাজ গঠনে সহায়। এটা সমষ্টিগতভাবে আমাদের উন্নতিতে সাহায্য করে। ব্যক্তিগত শেয়ারিং,স্বেচ্ছাশ্রম, গ্রুপ প্রজেক্ট, পিকনিক প্ল্যানিং ইত্যাদি নতুন নতুন উদ্ভাবন ও সমাধানসহ ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে এবং সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করে। বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত যে, অন্যদের সাথে কিছু ভাগ করে নেওয়া আমাদের মনে সুখ ও মানসিক শান্তি বয়ে আনে। ভাগ করে নেওয়া কেবল একটি অভ্যাস নয়, এটি একটি জীবন দর্শন।
অভ্যাস-২৭ ▌নিজেকে পরিষ্কার এবং জিনিসপত্র নিজেরাই গুছিয়ে রাখুন।
অগোছালো পরিবেশ মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। একটি গোছানো পরিবেশ মনে শান্তি আনে। খাওয়ার সময় চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নোংরা না করা অথবা নিজের জামাকাপড়গুলি ব্যবহারের পর যথাযথ স্থানে গুছিয়ে রাখা্র অভ্যাস চর্চা করতে হবে। নিজের প্লেট নিজে ধোবেন, আপনার ব্যবহৃত জিনিস কেনো অন্য কেউ ধুবেন, নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন? নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার অভ্যাস আপনার মধ্যে দায়িত্ববোধ ও শৃঙ্খলা তৈরি করবে। ঘরের কাজকর্মসহ ক্লাশরুম পর্যন্ত নিজে বা পরস্পরকে সহযোগিতা করার মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। উন্নত সব দেশে মানুষ এভাবেই বাল্যকাল থেকে পরিবারে ও স্কুলে নিজের কাজ নিজের কাজ করার শিক্ষা পেয়ে থাকে। কর্মক্ষেত্র বা পড়ার স্থান পরিষ্কার রাখলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। যখন আপনি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকেন এবং আপনার চারপাশের পরিবেশ সুশৃঙ্খল থাকে, তখন আপনি মানসিকভাবে আরও শক্তিশালী এবং শারীরিকভাবে আরও সুস্থ অনুভব করেন। এটি আপনাকে জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও আরও কার্যকর হতে অনুপ্রাণিত করে। তাই, এই অভ্যাসটিকে আপনার দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলুন। কোনো অবস্থাতেই যেখানে সেখানে আবর্জনা না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।
সুন্দর করে কথা বলা এক ধরনের আর্ট। চেঁচিয়ে, চিৎকার করে এবং অট্টহাসির সাথে জোরে জোরে কথা বলাটা যোগাযোগের কোনও সঠিক প্রক্রিয়া নয়। আপনি কতটা উত্তেজিত বা ক্রুদ্ধ সেটা কোনও বিষয় নয়, কিন্তু নমনীয়তার সাথে কোমলভাবে কথা বলার চর্চার লক্ষ্যে স্থির থাক্তে হবে। অন্যজনের কথা বলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকতে ও অপেক্ষা করতে হয় যতক্ষন না আপনার বলার সময় আসে। কথা বলার সময় মৃদু ও নম্রস্বরে এবং যতটা সম্ভব স্পষ্টভাবে কথা বলার চেষ্টা করুন। এমনভাবে কথা বলবেন যেন শ্রোতা আপনারকথা বুঝতে পারেন। যে বিষয় সম্পর্কে আপনি জানেন, সে বিষয় নিয়ে কথা বলুন, অন্যথায় চুপ করে থাকুন। কথার মাঝখানে কথা বলে অন্যের মুড নষ্ট করবেন না। শুধু নিজে কথা না বলে অন্যকেও কথা বলতে সুযোগ দিতে হবে। কোনো কথার বিপরীতে কথা বলতে চাইলে শান্তভাবে বলুন। কখনো কাউকে চেঁচিয়ে ডাকবেন না। এতে অন্যদের মাঝে বিরক্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। কথা বলতে বলতে অযথা বা অপ্রয়োজনীয় তর্কে মেতে উঠবেন না। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিলে কথা না বাড়িয়ে সে জায়গা থেকে সরে যেতে হবে। অল্প পরিচিত কোনো নারী বা পুরুষের সাথে নিজের সমস্যার কথা বলবেন না। খুব ঘনিষ্ঠ না হলে ব্যক্তিগত কথা বলা উচিত হবে না, কারণ এতে আপনারই সমস্যা হতে পারে। অন্যদের সাথে চোখ সরিয়ে নয়, বরং চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। কথা মধ্যে কখনও জঘন্য অসম্মানজনক এবং অপ্রীতিকর বাজে ভাষা ব্যবহার করবেন না।
আর সততা হচ্ছে — নিজের ক্ষতি হলেও সত্য বলার সাহস রাখা, সৎ পথে উপার্জনের চেষ্টা করা এবং আত্মমর্যাদা অটুট রাখা। নৈতিকতা হলো মানুষের অন্তরের সেই কণ্ঠস্বর, যা তাকে বলে দেয়—কী ভালো, কী মন্দ; কী উচিত, কী অনুচিত। যখন মানুষ তার বিবেকের কথা শোনে, তখন সে নৈতিকভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়। নৈতিকতা বিসর্জন মানে নিজের আত্মা ও বিবেকের বিরুদ্ধে যাওয়া। সততা ও নৈতিকতা মানুষকে সত্যিকার মানুষে পরিণত করে। সততা ছাড়া কোনো সম্পর্কই দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তা ব্যক্তিগত হোক বা পেশাগত। যখন আপনি সৎ থাকেন, তখন মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করতে শেখে। এই বিশ্বাসই যেকোনো সম্পর্কের ভিত গড়ে তোলে। মিথ্যা বা অসততা সাময়িক সুবিধা দিলেও দীর্ঘমেয়াদে তা শুধু অবিশ্বাস আর তিক্ততাই সৃষ্টি করে। জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আসে যখন বহু প্রলোভন আসতে পারে। হতে পারে সেটা দ্রুত ধনী হওয়ার সুযোগ, অন্যায়ভাবে সুবিধা পাওয়া। কিন্তু এই প্রলোভন এড়িয়ে চলুন। মনে রাখবেন, ক্ষণিকের প্রলোভন সাময়িক আনন্দ দিতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা ক্ষতির কারণ হয়। কোনো চাপের মুখেও অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না। সততা একটি অভ্যাস। ছোট ছোট সৎ কাজ আপনার চরিত্রকে মজবুত করে। প্রতিটি ধাপে নৈতিকতার প্রশ্নে আপস না করার সিদ্ধান্ত নিন। মনে রাখবেন, আপনার সততাই আপনার সবচেয়ে বড় সম্পদ ।
অভ্যাস-২০ ▌টাকা ধার করার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
আপনি হয়তো বলবেন ওর কাছে তো মাত্র একবার টাকা ধার চেয়েছি। বন্ধু তো বন্ধুই যদি প্রয়োজনে বন্ধুর পাশে না দাঁড়ায় তাহলে কিভাবে হবে? কিন্তু আপনার এই আচরণ ভিখারী মানসিকতার পরিচায়ক। ফ্রয়েড বলেন, যদি কেউ মনে করে, তাকে আপনার আর্থিক দায়িত্ব বহন করতে হয়, তখন আপনাদের সম্পর্ক তার নিচু ধারণা ও বিরক্তিকর মনোভাব তৈরি হয়। তখন সে আপনার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করবে।
অভ্যাস-২১ ▌নিজের মাঝে সব সময়ে একটি ইতিবাচক ও লড়াকু মনোভাব ধরে রাখুন।
অতীতের ব্যর্থতাকে যদি পজিটিভ দৃষ্টিতে দেখতে পারেন, তবে তার থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি সফল ভবিষ্যৎ গড়তে পারবে। আর যদি অতীতের ভুল ও ব্যর্থতা নিয়ে শুধু আফসোসই করেন, তবে বর্তমান আর ভবিষ্যতে যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই পাবে্ন না। সবসম্য় ইতিবাচক মনোভাব তুলে ধরুন। নেতিবাচক মানুষ কখনো কোনো সুফল বয়ে আনে না, তাই তাদেরকে পরিহার করাটাই উত্তম।
অভ্যাস-২২ ▌ ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই সুখী হওয়া সম্ভব।
মনোবিজ্ঞান মতে, সুখ হল জেনেটিক বা বংশানুগতি সম্বন্ধীয়। এটি অনেকটা মানুষের কোলেস্টেরল লেভেলের মতো, যা জেনেটিক্যালি প্রভাবান্বিত, আবার বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানুষের আচার-আচরণ বা লাইফস্টাইল এবং খাদ্যাভ্যাস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আত্মবিশ্বাসে বিশ্বাসী, মর্যাদাবান, হৃদয়বান, জ্ঞানী-গুণী, সৎ মানুষ সাধারণত সব সময় সুখী হয়। যারা শুধু নিতে চায়, দিতে জানে না বা চায় না, তারা সুখী হয় না। আবার পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষরাও দিনের ২৪ ঘণ্টা সুখী হয় না। সুখী মানুষের জীবনেও হতাশা, দুঃখ-কষ্ট আসে। পার্থক্য হল সুখী মানুষরা হতাশা, দুঃখ-কষ্টকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারে, অন্যরা তা পারে না। যে সুখী নয়, সে সুস্থও নয়। শারীরিক অসুস্থতায় ভুগলেও মানুষের জীবনে সুখ থাকে না। হার্ভার্ডের মনোবিজ্ঞানী ড্যান গিলবার্ট বলেন, তোমার সুখ তোমাকেই সংশ্লেষণ করতে হবে। তোমার শরীরে মনস্তাত্ত্বিক একটি ‘ইম্মিউন সিস্টেম’ রয়েছে, যা তোমার পারিপার্শ্বিকতা উপলব্ধি করার মাধ্যমে তোমাকে সুখী করে তুলবে। অগাধ টাকা অর্জন তোমার জীবনের সব দুঃখ দূর করে দিয়ে অনাবিল আনন্দ ও সুখ বয়ে আনবে, এ ধরনের কল্পনা ভুল । যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ারেন বাফেট পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় ধনীদের মধ্যে অন্যতম। এখনও তিনি ৫০ বছর আগের তিন কক্ষবিশিষ্ট একটি বাড়িতে বাস করেন, তিনি মনে করেন, ধন-দৌলত নয়, মনের সুখই আসল সুখ।
তবে বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় দেখেছেন,অর্থ সব সময় সুখ দিতে পারে না সত্যি, কিন্তু একজন লোক যখন অন্য সবার চেয়ে বেশি উপার্জন করেন, তখন তিনি নিজেকে সুখী মনে করেন। সম্প্রতি একটি গবেষণা বলছে, সংসার সুখে থাকে মূলত পুরুষের রোজগারের ওপর। সংসার টিকে থাকার পেছনে পুরুষের রোজগারই বেশি প্রাধান্য পায়। আবার পাহাড় পরিমাণ সম্পদ অর্জিত হলেও জীবনের পূর্ণতা আসবে না। এই সম্পদ ধরে রাখার দুশ্চিন্তায় এবং আরো অর্জনের লোভ-লালসার মধ্যে সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। কাজেই যার যা আছে বা যে অবস্থায় আছে তা নিয়ে থাকাতেই সুখ ।
অভ্যাস-২৩ ▌ শুভেচ্ছা জানানো এই নিয়মগুলি মেনে চলুন
১। মৌখিক শুভেচ্ছার ক্ষেত্রে পুরুষরা নারীদের আগে, ছোটরা বড়দের এবং অধস্তন তার উর্ধস্তনকে শুভেচ্ছা জানাবেন ২। কারো সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় যার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হচ্ছে সে আগে হাত বাড়াবে্ন।
৩। আপনি যত উপরের লেভেলের মানুষ হোন না কেন, কোনো কক্ষে প্রবেশের সময় সবাইকে হ্যালো বলবেন। ৪। কাউকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় তার সম্পর্কে ছোট একটা কথা যোগ করে দিন। যেমন ধরুন বললেন, 'এই হলো রাশেদ, সে সিনেমা পছন্দ করে।' এতে করে অপরিচিত দুটি মানুষ হঠাত পরিচিত হয়ে কথা বলার মত একটা বিষয় খুঁজে পায়। ৫। যখন কোন ব্যক্তি কক্ষে প্রবেশ করে সে প্রথম বসে থাকা মানুষটার দিকে হাত বাড়াবে এবং বসে থাকা মানুষটি দাঁড়িয়ে হাত মেলাবে কারণ বসে থেকে হাত মেলালে অভদ্রতা।
অভ্যাস-২৪ ▌ ভদ্রতার এই নিয়মগুলো মেনে চলুন
১। কেউ যদি আপনাকে খাওয়াতে নিয়ে যায় তবে অল্পদামি কোন খাবার বাছাই করুন। কিন্তু তারা যদি চায় আপনি দামি কিছু খান তবে আপনি চাইলে তা নিতে পারেন। ২। কেউ যদি আপনাকে তার মোবাইলে কোন ছবি দেখতে দেয় তাহলে অন্যছবি দেখা শুরু করবেন না, এটা সেই ব্যক্তির ভাল নাও লাগতে পারে। ৩। কারো সাথে দেখা করতে গেলে খালি হাতে যাবেন না, সে যদি বলেও কিছু লাগবে না তবুও ছোট কিছু নিয়ে যান। ৪। যদি একসাথে পাবলিক টয়লেটে প্রশ্রাবের জন্য যান, তবে একত্রে পাশাপাশি টয়লেট ব্যবহার করবেন না এবং অবশ্যই পাশের লোকটির সাথে কথা বলা শুরু করবেন না, এটা খুবই অস্বস্তিকর।. ৫। জনসম্মুখে দাঁত মাজা, নখ কাটা, চুল আঁচড়ানো খুবই অযৌক্তিক কাজ, এগুলো এড়িয়ে যাবেন। ৬। পাবলিক টয়লেটের হাতল বা মগ/বদনি কিংবা সিড়িঁর রেলিং টিস্যু ছাড়া ধরবেন না। ৭. কোন অফিসে গেলে শার্টের উপরের বোতাম লাগিয়ে নিন এবং শার্ট ইন করে পরুন।
অভ্যাস-২৫ ▌ অভ্যাসগত মুদ্রাদোষগুলি পরিহার করুন
১। পেছনে হাত ধরে থাকা অভদ্রতা। আপনি যখন পেছনে দুহাত একটি আর একটিকে ধরে রাখবেন, তখন তা আপনার সামনের ব্যক্তিকে নেতিবাচক ইঙ্গিত দিবে। সে ভাববে আপনি একজন রাগী অথবা অহংকারী ব্যক্তি। এবং এই ভঙ্গীতে দাঁড়ালে আপনাকে অদ্ভুত ও অসুন্দর লাগবে।
২। পা ক্রস করে দাঁড়ানো অসৌজন্যতা। আপনি যদি কথোপকথনের সময় পা আড়াআড়ি করে সামনে পিছনে রাখেন তার অর্থ আপনি সামনের জনের কথা ঠিক বিশ্বাস করতে পারছেন না। তার সাথে যদি পকেটে হাত গুঁজে রাখেন তাহলে সে ভাববে আপনি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও দ্বিধান্বিত। ৩। দুই হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাখা আত্মকেন্দ্রিকতা প্রকাশ করে । এই শারীরিক প্রতিক্রিয়ার অর্থ আপনি নিজেকে আলোচনা থেকে সরিয়ে নিয়েছেন । ৪। দুই হাত মুখের সামনে ধরা ভঙ্গীটি আগের ভঙ্গীর উন্নত রূপ। আপনি নিজেকে আড়াল করতে চাচ্ছেন, কারণ আপনার কোন আগ্রহ নেই। ৫। সামনে ঝুঁকে হাঁটা মানে আপনি বিষাদগ্রস্ত মানুষ আপনি যদি এভাবে হাঁটেন তাহলে মানুষের ভাবনায় আসে আপনি হতাশ। আপনার আত্মবিশ্বাস কম । ৬। অভ্যাসবশত বাঁকা হাসি দেওয়া কিন্তু নেতিবাচক অর্থ প্রকাশ করে। বাঁকা হাসি আপনাকে দুষ্ট ও শয়তান প্রকৃতির মানুষ বলে ইঙ্গিত দেয়।
৭। আলোচনার সময় টেবিলে হাত সামনে দিকে ছড়িয়ে রাখা অসহযোগিতার বার্তা। এমন করলে সামনের ব্যক্তি ভাভে আপনি তাকে বা তাদের থামতে বলছেন। এবং তার/তাদের মনোযোগ আপনার হাতের দিকে চলে যায়। ৮। কথা বলার সময় কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়ানো একটি আক্রমণাÍক ভঙ্গী। এর অর্থ আপনি সামনের ব্যক্তির মতের বিপক্ষে অবস্থান করছেন এবং তার কথা আপনার কাছে বিরক্তিকর লাগছে। তাই কথা বলার সময় অভ্যাসবশত এভাবে দাঁড়ানো উচিত না। ৯। কথা বলতে বলতে হাত দিয়ে মুখ ঢাকার অর্থ হতে পারে আপনি কিছু আড়াল করার চেষ্টা করছেন। ১০। কারো সামনে দাঁড়িয়ে হাত নাড়িয়ে কথা বলা আক্রমণাÍক মনোভাব প্রকাশ করে। আমরা যখন কাউকে নিজের মতে আনতে পারি না তখন প্রায় এভাবে হাত নেড়ে কথা বলা শুরু করি। কিন্তু এমন প্রতিক্রিয়া সামনের ব্যক্তিকে আরো নেতিবাচক করে দেয়। এটা আমাদের ব্যক্তিত্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
অভ্যাস-২৬ ▌ কারো বাড়িতে গেলে এই শিষ্টাচারগুলো মেনে চলবেন।
১। কারো বাড়িতে গিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করে বসবেন না, আর কে কে আসবে! এটা অসৌজন্যতা। ২। আপনি যদি অতিথি হোন তবে টিভি বা কম্পিউটার নিয়ে বসে পরবেন না। ৩। অতিথিদের সাথে থাকাকালীন কারো সাথে ফোনে বেশি কথা বলবেন না। ৪। প্রথমে অতিথিদের ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিন, যাতে করে তারা তা প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে এবং পরে অন্যরুম দেখান। ৫। সব অতিথি খাবার খেতে বসে গেলে আয়োজকের জন্য অপেক্ষা না করে খাবার খাওয়া শুরু করবেন না। ৬। আপনার যদি আগে চলে যেতে হয় তবে কেবল ঘরের মালিককে বিদায় জানান। কারণ সবার কাছ থেকে বিদায় নিলে সবাই ভাববে তাদেরও চলে যাওয়া দরকার। ৭। কারো বাড়িতে গিয়ে তার অনুমতি না নিয়ে ঘরের কোন জিনিসে হাত দিবেন না।
অভ্যাস-২৭ ▌ ফোন ব্যবহারে শিষ্টাচারের নিয়মগুলো অবশ্যই মেনে চলুন
১। এসএমএস করে নিজের খুশির সংবাদ জানাবেন না, কল করে জানাবেন।
২। সিনেমা হলে, লাইব্রেরীতে, হল্রুমে, ক্লাসরুমে মোবাইল সাইলেন্ট মুডে রাখবেন। ৩। দ্বিতীয়বার রিং হওয়ার পরেও যদি কল না ধরে তবে কল কেটে দিন। ৪। বন্ধুদের সাথে কথা বলার সময় মোবাইল এক নজর দেখতে পারেন, কিন্তু যদি কল ধরতে হয় বা করতে হয় তবে একটু দূরে গিয়ে করুন। ৫। কথার মাঝেই যদি লাইন কেটে যায়, তবে আপনি আবার কল দিন। ৬। যদি অপরিচিত কাউকে কল দেন তাহলে আপনার পুরো নাম বা পরিচয়টা বলুন। আপনি যদি বলেন 'আমি রবি', তবে সে যদি জিজ্ঞেস করতে হয় কোন রবি? তা খুবই অস্বস্তিকর।
মেসেজিংয়ের ক্ষেত্রে:
১। কেউ যদি আপনাকে মেসেজ পাঠায় তার মেসেজের উত্তর দিন। কিন্তু তাকে কল করবেন না। ২। খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু যেমন কারও মৃত্যুর সংবাদ ব্যাতিত অন্য কোনো দুঃসংবাদ বা বিচ্ছেদের ঘটনা মেসেজের মাধ্যমে বলাকে এড়িয়ে চলুন। মেসেজে যেকোনো তথ্যের ভুল ব্যাখ্যা ছড়িয়ে যেতে পারে। ক্ষুদ্র একটি দুঃসংবাদ অতি সহজেই বৃহৎ কোনো দুঃসংবাদের গুজবে রূপান্তরিত হতে পারে । ৩। কেউ যদি আপনাকে মেসেজ পাঠায়, তার মেসেজের উত্তর দিন। কিন্তু তাকে কল করবেন না। ৪। বেশিরভাগ সময়ই দ্রুত মেসেজ লেখার ফলে আমাদের মেসেজের ভেতর কিছু ভুল ত্রুটি থেকেই যায়। তাই কাউকে মেসেজ পাঠানোর আগে নিজে একবার পড়ুন। ৫। কেউ আপনাকে মেসেজ পাঠালে ২ ঘণ্টার ভেতর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। ৬। কাউকে দুটি মেসেজ পাঠানোর পরও যদি সে আপনার মেসেজের উত্তর না দেয় তাহলে বুঝবেন সে আপনাকে এড়িয়ে চলছে। তাই কাউকে পুনরায় মেসেজ দিয়ে আপনার ব্যক্তিত্ত্বকে ছোট করবেন না
অভ্যাস-২৮ ▌ এযাবতকালের সেরা কিছু উপাদেশ মেনে চলুন
১। তর্কে জেতা বুদ্ধিমানের কাজ নয় বরং বুদ্ধিমানের কাজ হল তর্কে না জড়ানো। নির্বোধের কথার উত্তর না দেয়াই তার যথার্ত উত্তর। আপনি যতটা মূল্যবান হবেন, ততটা আলোচনা-সমালচানার পাত্র হবেন। আম গাছে সবাই ঢিল মারে, তিতা গাছে নয়। ২। ভূল করা দোষের কিছু নয়, যে যত বেশি কাজ করে তার তত বেশি ভুল হয় কিন্তু ভুলকে মেনে না নেওয়া বা ভূলের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা দোষণীয়। সব কিছু জানা আপনার দরকার নেই। কিন্তু আপনি যা কিছু বলবেন, সে সম্পর্কে জ্ঞান থাকা আবশ্যক। ৩। মানুষের সাথে বন্ধুত্ব ছিন্ন করে অর্থ উপার্জন করতে যাবেন না। কারণ, বন্ধুত্ব স্থাপনই অর্থাপর্জনের মূল মাধ্যম। ৪। যদি আপনি আপজনদেরকে কিছু না কিছু উপহার দিতে না পারেন, তবে আপনি তাদের একটি বোঝা। ৫। আপনি পাহাড়ের চুড়ার মত হবেন না। কারণ, এতে আপনি মানুষকে ছোট দেখবে্ন আর মানুষও আপনাকে ছোট দেখবে। ৬। অন্ধকারকে সারাক্ষণ গালমন্দ না করে ছোট্ট একটি বাতি জ্বালানোর চেষ্টা অনেক ভাল। ৭। জ্ঞান ও ভদ্রতা এই দুটি জিনিসে ফোকাস করলে সবকিছু ধীরে ধীরে আপনার দখলে চলে আসবে । ৮। জ্ঞানী আগে চিন্তা করে পরে কথা বলে আর নির্বোধ আগে কথা বলে পরে চিন্তা করে। তাই কথা বলার আগে পর্যাপ্ত সময় নিন যাতে কথা পরিপক্ব হয়। কারণ, ফল পরিপক্ব হতে পর্যাপ্ত সময়ের প্রয়োজন। ৯) যার গোপনীয়তা প্রকাশ পেয়ে যায়, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সংখ্যা বেড়ে যায়। ১০) ব্যর্থ মানুষেরা দু প্রকার। এক প্রকার হল, যারা কাজের চিন্তা করেছে কিন্তু কাজ করেনি। আরেক প্রকার হল, যারা কাজ করেছে কিন্তু চিন্তা করে তা করেনি। ১১) মানুষ যখন কারো প্রশংসা করে তখন খুব কম লোকেই তা বিশ্বাস করে। কিন্তু যখন কিনা কারো বদনাম করা হয় তখন প্রায় সবাই তা বিশ্বাস করে। ১২) নীতিহীন ও ব্যক্তিত্বহীন মানুষ কাঁটাহীন ঘড়ির মত। যা ডাসবিনে ফেলা ছাড়া কোনো মূল্য নেই। ১৩) মূলত মানুষ তিন প্রকার। একশ্রেণীর মানুষ হল খাদ্যের মত যাদের দরকার হয় সবসময়। আরেক শ্রেণীর মানুষ হল, ওষুধের মত যাদের দরকার হয় মাঝে মাঝে। আরেক শ্রেণীর মানুষ হল রোগের মত যা আপনার কখনোই দরকার হয় না।
অভ্যাস- ২৯ ▌কিছু ভাল আচার-আচরণ, যা আপনাকে সেরা করে তুলবে।
# নির্জনে বা প্রকাশ্যে চেঁচিয়ে, চিৎকার করে এবং অট্টহাসির সাথে জোরে জোরে কথা বলাটা জঘন্য অভদ্রতা। আপনি কতটা উত্তেজিত বা রাগান্বিত সেটা কোনো বিষয় নয়, কিন্তু নমনীয়তার সাথে কোমলভাবে কথা বলতে চর্চা করতে হবে। # নিজেদের নয় এমন কোনও জিনিসে, এমনকি তার মা–বাবার জিনিসেও হাত দেওয়ার আগে অবশ্যই তাদের অনুমতি নিন। প্রাইভেসি হল সর্বজনীন, যে কারও ঘরে প্রবেশ করার আগে দরজায় কড়া নাড়ানো এবং অনুমতি চেয়ে নিন। # হাঁচি বা কাশির সময় মুখ হাত দিয়ে চাপা দিন। কারো সামনে নাকে-গালে হাত দেওয়া বা খোঁটা অশোভনীয় এবং অভদ্রতা। # কথা বলার আগে অনুমতি নেওয়ার জন্য ‘এক্সকিউজ মি’ বলতে শিখুন। # কাউকে নিয়ে মজা করা বা কাউকে উপহাসের পাত্র করে তোলা চরমভাবে অভদ্রতা। # পাবলিক ট্রান্সপোর্টে বা কোথাও কোনো বয়স্ক ব্যক্তি চোখে পড়লে তাকে নিজের বসার স্থানটি ছেড়ে দেওয়া এবং তাকে সার্বিক সহযোগিতা করতে হবে। # কোনও ব্যক্তির দিকে হাত বা আক্সগুল তুলে বা ঈশারা করে কথা বলাটা হল অভদ্রতার পরিচয়।
অভ্যাস-৩০ ▌ত্যাগ করুন ক্ষতিকর ৭ বদঅভ্যাস:
১. সকালের নাশতাটা হচ্ছে সারাদিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোজন। চেষ্টা করুন পর্যাপ্ত পুষ্টি ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার দিয়ে সকালের নাশতাটা একটু ভালোমতো করে নিতে। এরপর দিনের বাকি সময়টুকুতে ২ঘন্টা পরপর হালকা কিন্তু পুষ্টিকর কিছু খেয়ে নিন। ২. চা-কফি বা চিনি মেশানো পানীয় দিনে এক বা দুই কাপ হলে ঠিক আছে। কিন্তু এর বেশি হলেই এ থেকে যোগ হওয়া বাড়তি ক্যালরি আপনার জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। ৩. দ্রুত খাওয়া শেষ করতে গাপুস-গুপুস কায়দায় খাবার গ্রহণ করার বদভ্যাসটি এই মুহূর্তে ত্যাগ করুন। ভালোভাবে না চিবানোর কারণে খাবারের জারক রস মিশতে পারে না, ফলে হযম হয় না। ৪. আলসেমির ফাঁদে রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে দাঁত মাজায় অবহেলাজনিত কারণে হয় দাঁতে প্লাক, দাঁত ও মুখের নানাবিধ অসুখসহ পেটের পীড়া এবং গলার নানান অসুখ। ৫.ঘুমের স্বল্পতা আপনার পরিপাক ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলার কারণে অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণের অভ্যাস গড়ে উঠতে পারে। ফলাফল ওবেসিটি বা স্থূলতা। দৈনিক অল্প ঘুমোনোদের অনেকেই আবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে একটানা দীর্ঘক্ষণ মরার মতো পড়ে পড়ে ঘুমান। এটাও মোটুত্বের কারণ। ৬. বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে অযথা সময় নষ্ট করবেন না। সব সময় খেয়াল রাখুন যে-সময়টা আপনি ব্যয় করছেন, তাতে আপনার কি লাভ হচ্ছে? যদি কোনো লাভ না হয়, তাহলে কৌশলে খেটে পড়ুন। ৭. চাপ অনুভূত হওয়ার পরেও মূত্রত্যাগে অহেতুক বিলম্ব করবেন না। প্রস্রাবের বেগ দীঘর্ক্ষণ চেপে রাখলে আপনার কিডনি ও মূত্রথলির জন্য তা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেবে।
অভ্যাস-৩১ ▌চর্চা করুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার-১:
১। অন্যজনের কথা বলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকতে ও অপেক্ষা করতে শিখুন, যতক্ষন না আপনার বলার সময় আসে। ২। যে কেউ ঘরে প্রবেশ করার সময় বা বের হবার সময় দ্রত এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে বা হাতলটা টেনে ধরে ঢুকতে/বেরুতে সাহায্য করুন। যাবার সময় অবশ্যই বাড়ির গেট পযন্ত এগিয়ে দিন এবং তিনি অদৃশ্য না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকুন। ৩। যত অপর্যাপ্ত খাবারই হোক না কেন, খাবারগুলি অপরের সাথে ভাগ করে নেবার অভ্যাস তৈরি করুন। ৪। খাওয়ার সময় চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নোংরা হলে বা কাজের সময় জিনিসপত্র এলোমেলো হলে সেগুলি ব্যবহারের পর যথাযথ স্থানে গুছিয়ে রাখুন। ৫। খাবার টেবিলের শব্দ করে চা বা অন্য কোনো খাবার খাবেন না। মুখ বন্ধ করে খাবার চিবাবেন। খাবারের সময় একদম কথা বলবেন না, কারণ আপনার মুখের লালা চারিদিকে ছড়াতে থাকে, যা খালি চোখে দেখা যায় না। এভাবে মুখের লালার সাথে মিশ্রিত জীবাণু বিভিন্ন খাবার বা অন্যের পাতে যায়। ৬। সিড়ির রেলিং কিংবা দরজার হাতল কিংবা অথবা টয়লেটের কোন পাত্র / বদনি টিস্যু টিস্যু ছাড়া খালিহাতে ধরবেন না। ৭। ইতিবাচক শব্দগুলি প্রয়োগের দ্বারা কারো কাজের প্রসংশা করা চর্চা করুন। ৮। বাহির থেকে ঘরে বা কর্মস্থলে ফিরে কিংবা কোন কাজ শেষ করে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস তৈরি করুন। এ অভ্যাস দিনে কয়েকবার বজায় রাখুন। ৯। অন্যের সাথে কথা বলার সময় বা কারো সামনে বসে মোবাইল ফোন কিংবা কোন কিছু কোনো কাজ করা বা পড়া থেকে বিরত থাকুন যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি একা হচ্ছেন। ১০। কোথাও গিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বসা, পা নাচিয়ে চলা, হেলাল দিয়ে বাঁকিয়ে বসা কিংবা টেবিলে ঝুঁকে কারো সাথে কথা বলা এগুলো চরম অভদ্রতা।
অভ্যাস-৩২ ▌চর্চা করুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার-২ :
১। অপরিচিতজনের সঙ্গে কথাবার্তার সময় প্রথমে নিজের পরিচয় দিন। তারপর তার সঙ্গে আলাপ করুন। কর্পোরেট কালচারে অপরিচিত সবাইকে স্যার ও ম্যাম বলে সম্বোধন করতে হয়। অন্যকিছু গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু কর্পোরেটের বাইরে সবাইকে ভাইজান/ আপামনি/ বড়ভাই/ ছোটভাই/ মামা/ আংকেল/ আন্টি ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত। .২। কেউ ভিজিটিং কার্ড দিলে তার সামনেই কার্ডটি অন্তত একবার পড়ুন এবং ইতিবাচক মন্তব্য ও ধন্যবাদ জানান। ৩। যত বেশি মানুষের সঙ্গে মিশবেন, তত বেশি সৌভাগ্যের দরজা আপনার জন্য খুলে যাবে। সুযোগ শিশুক মানুষের আশেপাশেই সর্বদা অপেক্ষমাণ থাকে, দরকার শুধু সেটা খুঁজে বের করা। ৩। সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকা কিংবা প্রয়োজন ছাড়া কথা না বলার অভ্যাস দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। সবার সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার জন্য তাই বাড়াতে হবে অন্যের সাথে মেশার দক্ষতা। ৪। পড়াশুনা বা কর্মে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে এমন রিং টোন দিন যা অন্যকে বিরক্ত না করে; পারলে ভাইব্রেশন মোডে বা মিটিংয়ে থাকলে সাইলেন্ট মোডে দিয়ে রাখুন।
অভ্যাস-৩৩ ▌চর্চা করুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার-৩ :
১। কথা বলার সময় আপনার অঙ্গভঙ্গি যেন আপনার বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে। তাহলেই শ্রোতা আপনার কথা সহজে বুঝতে পারবে। আপনি মুখে যদি কোনো বস্তুর কথা বলেন এবং হাত দিয়ে তার আকৃতি দেখানোর মত ভঙ্গিমা করেন, তাহলে তা শ্রোতারা সহজেই বুঝতে পারবে। ২। কৌতুক ব্যবহার করুন। হাস্যরস মানুষকে আকৃষ্ট করে। তাই আপনি যদি আপনার কথায় প্রয়োজনমত কৌতুক ব্যবহার করেন তাহলে খুব সহজেই মানুষকে আকৃষ্ট করতে পারবেন। এ ছাড়াও কৌতুক আমাদের সম্পর্ককে সহজ করে তোলে। তাই কেনো রসকসহীন কথার মাঝে মাঝে কিছু হাসির কথা বা ইঙ্গিত ব্যবহার করলে খুব সহজেই শ্রোতাকে আপন করে নিতে পারবেন এবং শ্রোতার মনোযোগ আপনার দিকে ধরে রাখতে সক্ষম হবেন। তবে যদি আলোচনাটা যদি হয় কোনো শোকের কিংবা কষ্টের, তাহলে সেখানে কৌতুক ব্যবহার করতে যাবেন না আবার।
অভ্যাস-৩৪ ▌চর্চা করুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার-৪ :
১।কাজের প্রয়োজনে কোনো প্রতিষ্ঠানে গেছেন, সেখানে সালাম দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা ভদ্রতা। বসতে আনুমতি চাওয়া, খুব সংক্ষেপে আপনার প্রয়োজন তুলে ধরা, প্রশ্নের সঠিক জবার দেয়া ইত্যাদি কর্পোরেট ভদ্রতা।.২। চেয়ারে বসে টেবিলে হাত রাখা কিংবা দাঁড়ানো অবস্থায় টেবিলে হাত রেখে ঝুঁকে পড়া চরম অভদ্রতা। ৩। কোনো ভুলে সরি বলতে শেখা খুবই জরুরি। ৪। সাক্ষাতে কেউ কথা বলার সময় মোবাইল টেপা বা অন্য কাজ করা অভদ্রতা।
অভ্যাস-৩৫ ▌চর্চা করুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার-৫ :
১। ব্যক্তিগত পরিচয় কর্মস্থলে তুলে ধরাটা ভুল। কর্পোরেটে কেউ ব্যক্তিগত পরিচয় জানতে চাইলে ভদ্রভাবে বলুন-সরি স্যার, ব্যক্তিগত বিষয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারছি না। কর্পোরেট জগতের বাইরে আপনার যে ব্যক্তিগত জীবন আছে। দুটোকে এক করবেন না। ২। কেউ যখন আপনার সহায়তা কামনা করে কিন্তু কাজটা যদি আপনার না হয়, তাহলে বলুন- “আপনি একটু কষ্ট করে অমুককে বলে দেখুন।” ৩। আমরা আমাদের পূর্বঅভিজ্ঞতাকেই বেশি গুরুত্ব দেই। কিন্তু এতে অনেক সময় নতুন আইডিয়াকে নষ্ট করে ফেলা হয়। তাই কখনো বলবেন না, “আগে তো সবসময় এভাবেই করেছি!” বরং বলুন- “কেন এটি অপেক্ষাকৃত ভালো সমাধান মনে হচ্ছে আপনার কাছে, একটু বুঝিয়ে বলবেন কি?” ৪। কখনো বলবেন না “আমার পক্ষে এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব না।” বরং বলুন- “আপনি কি আমাকে এর সমাধান করতে/পেতে সাহায্য করবেন প্লিজ?”
অভ্যাস-৩৬ ▌চর্চা করুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার-৬
১। সরাসরি কারো ভুল ধরিয়ে দিলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার মনে আঘাত দিয়ে আমরা বলি, “তুমি ভুল বলছো।” এর ফলে কাজের পরিবেশ নষ্ট হয়, শত্রুতা শুরু হয়। তাই বলুন- “এই ব্যাপারে আমার ভাবনা একটু ভিন্ন। কারণ...” ২। অনুমানের উপর ভিত্তি করে কথা বলা ঠিক নয়। অনুমান না করে আমাদের উচিত ফ্যাক্ট খুঁজে বের করার চেষ্টা করা। তাই কখনো বলবেন না “আমি ভেবেছিলাম” বরং বলুন- “এখন আমার কি করা উচিত?” ৩। অন্যের সমালোচনা করা সহজ, কিন্তু কাউকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়াটা ভীষণ কঠিন। সমালোচনায় কোনো লাভ হয় না বরং ক্ষতি হয়, কাজে উৎসাহ দিতে হবে। তাই কখনো বলবেন না “আপনার কাজ কিছুই হয় নাই।” বরং বলুন- “ঠিক আছে আপনি এভাবে করেছেন। কিন্তু আমার মনে হয় পরবর্তীতে একটু অন্যভাবে চেষ্টা করা যেতে পারো। যেমন...”
অভ্যাস-৩৭ ▌চর্চা করুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার-৭
১। নিজের কোনো আইডিয়া থাকলে সাহসের সাথে বলা উচিত। কলিগরা কী বলবে বা স্যার কী বলবে, সে সব ভেবে নিজেকে গুটিয়ে রাখবেন না। বরং বলুন- “আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে!” ২। *সময় সবারই থাকে, সমস্যা হয় প্রায়োরিটি সেট করা নিয়ে। যে সবসময়ই ব্যস্ত, সে আসলে কম প্রোডাক্টিভিটির মানুষ। তাই অজুহাত হিসাবে কখনো বলবেন না, “আমি একদমই সময় পাইনি।” এই কথা বলা দুর্বলতা হিসেবেই সবার চোখে ধরা পড়বে। বরং নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়ে বলুন- “এই কাজ আমি অমুক সময়ের মধ্যে শেষ করবো।” .৩। অহমিকা বর্জন করতে হবে। অন্যের কাছে নিজের দক্ষতা জাহির করতে যাবেন না। আপনার কি কি যোগ্যতা রয়েছে অথবা আপনি কোন কোন বিষয়ে পারদর্শি তা অন্য কাউকে বা সহকর্মীদের জানানোর প্রয়োজন নেই। কথায় নয় বরং কাজের মাধ্যমে সবার কাছে নিজেকে তুলে ধরুন। ৪। অন্যের অনুপস্থিতিতে কখনো সমালোচনা করবেন না। এই ধরণের আলাপ আলোচনা থেকে দূরে থাকুন। কেউ অন্যের বিরুদ্ধে কথা বললে আপনি তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে সবার কাছে আপনি সম্মানিত হবেন।
অভ্যাস-৩৮ ▌চর্চা করুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার-৮
১। “সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি” সোজা হয়ে দাঁড়ান, সোজা হয়ে বসুন! আপনি দাঁড়িয়ে বা বসে থাকার সময় আপনার শরীরকে কিভাবে রাখেন তা আপনার ভদ্রতার ক্ষেত্রে যামন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি শরীরের জন্যেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাসে কুঁজো হয়ে বসে থাকা, মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ব্যবহার করা এগুলো আমাদের পশচারের (মেরুদন্ডসহ পিঠের পেশীসমূহ) জন্য ক্ষতিকর। সঠিক ভঙ্গিমায় দাঁড়ানোর সময় আপনার কাঁধের সামনে, কোমরের পেছনে, হাঁটুর সামনে, গোড়ালির একটু সামনের দিক পর্যন্ত একটি সরলরেখায় থাকে। এর ফলে আপনার “সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি” একদম সঠিক জায়গায় থাকে, তাই আপনার শক্তি কম খরচ হয় আর আপনি সহজভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন। ২। বসে থাকার সময় আপনার ঘাড় সোজা, কাঁধ শিথিল, কনুই চেয়ারের হাতলে, হাঁটু ফ্লোরের সাথে সমকোণে, পায়ের পাতা ফ্লোরের সাথে লাগানো থাকা উচিৎ। আপনার কম্পিউটারের স্ক্রিনের উচ্চতা ঠিক করুন যেন নিচু হয়ে তাকিয়ে থাকতে না হয়। ৩। ফোনে কথা বলার সময় হেডফোন ব্যবহার করবেন।
অভ্যাস-৩৯ ▌চর্চা করুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার-৯
১. গ্রুপ ডিসকাশনে যারা বেশিরভাগ সময়ই চুপ করে থাকে, তারা কিন্তু অন্যদের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয় তার কিছু সমস্যা আছে। নয়তো দ্রুত সে তার বক্তব্যকে গুছিয়ে বলতে পারে না। । এ ক্ষেত্রে প্রথমে অন্যদের বক্তব্য মন দিয়ে শুনতে হবে। ২। কোনো জায়গায় কোনো অস্পষ্টতা আছে কিনা তা বুঝতে হবে। বক্তাকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে বলার অনুরোধের মাধ্যমে আলোচনায় অংশ নেওয়া যেতে পারে। .৩। এমনও হতে পারে, অন্যরা যে যুক্তি দিচ্ছে, তার সঙ্গে আপনি একমত নন। এ ক্ষেত্রে যুক্তি পেশ করতে পারেন। তবে কোনো বিষয় জানা না থাকলে জানার ভান করা উচিত নয়। এতে নিজেরই ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
অভ্যাস-৪০ ▌চর্চা করুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার-১০
* খাবার টেবিলের এমন কিছু ভদ্রতা আছে, যেমন অতিথিদের সামনে হাড় না চিবানো, শব্দ করে ঢেঁকুর না তোলা, প্লেট-গ্লাসে খুব বেশি আওয়াজ না করা ইত্যাদি। একই সাথে খাবার টেবিল অপ্রীতিকর কথা না বলা, বোন প্লেটের ব্যবহার, ন্যাপকিনের ব্যবহার ইত্যাদিও জানতে হবে। *কেবল ছুরি-চামচ ব্যবহার করে খেতে পারাই নয়, একই সাথে কোনটা কীসের জন্য এবং কোনটা কখন কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সেগুলো জেনে রাখা খুবই জরুরি। * হাঁচি ও কাশি দেয়ার সময় মুখে কাপড় ধরা,এক্সকিউজ মি বলা, কারো গায়ের কাছে হাঁচি বা কাশি না দেয়া। শব্দ করে হাঁটা মোটেও ভালো কিছু নয়। একই সাথে কারো বাড়িতে গেলে জুতো খুলে রাখা, কোথাও প্রবেশের আগে পাপোসে পা মুছে নেয়া, মোজা দুর্গন্ধমুক্ত রাখা ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে সর্বদা।
অভ্যাস-৪১ ▌চর্চা করুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার-১১
১। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অফিসের পরিবেশে কখনই উচ্চস্বরে কথা বলবেন না। এতে করে হতে পারে আপনার পাশের কলিগটি খুব বিরক্ত হচ্ছেন। তাই যতটা সম্ভব অল্প স্বরে কথা বলুন। ২। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা অফিসের ফ্লোরে সবসময় প্রফেশনাল হওয়ার চেষ্টা করবেন। এখানে এমন ঘটনা প্রায়ই হয়ে থাকে যে, একজন আরেকজনের কাজে বা টেবিলে উঁকি মেরে দেখেন যে সে আসলে কি করছে। এটা খুবই বাজে ধরনের একটি স্বভাব এবং অপরাধমূলক কাজ। এতে ব্যক্তিত্বের হানি ঘটে। এ ধরনের কাজ থেকে দূরে থাকাই ভালো।: ২। অফিসে আরেকটি বিষয় অবশ্যই শক্তভাবেই মেনে চলা উচিৎ সেটি হল বেতন নিয়ে কারও সাথে আলোচনা করা উচিৎ না।
অভ্যাস-.৪২ ▌চর্চা করুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিষ্টাচার-১২
১। অনেকে কারো সাথে পরিচয় হওয়া মাত্রই তার ব্যক্তিগত পরিচয় জানতে চায়। এটা নিতান্তই অভদ্রতা। নিজে থেকে না বললে একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারে প্রশ্ন করা কারো উচিত নয়। ২। অনেকেরই আবার বিভিন্ন মুদ্রাদোষ থাকে। কেউ কথা বলার সময় হাত নাড়ে বেশি। আবার অনেকে আছেন, যারা কোনো কাজের জন্য কারো গায় হাত দিয়ে অনুনয়-বিনয় করেন। এসব জঘন্য বদস্বভাব ত্যাগ করুন। ৩। কেউ মানুষের সামনে দাঁত খোঁচায়, কেউ বা হাত চাপা না দিয়ে ঢেঁকুর তোলেন, হ্ইা তোলেন, জোরে কাশেন, হাঁচি দেন। কেউ বা যেখানে-সেখানে থুথু পানের পিক ইত্যাদি ফেলেন। এসব মূদ্রাদোষ ত্যাগ করুন।
অভ্যাস-.৪৩ ▌কিছু কর্ম বিধান মেনে চলুন।
প্রাচীন নীতিশাস্ত্র অনুযায়ী কর্ম বিধান হচ্ছে-
১, এই পৃথিবীতে আমাদের ভালো কাজের ফল যেমন আমরা ভোগ করবো, তেমনই খারাপ কাজের ফল ভোগের জন্যও আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।
২. জীবনে কিছুই নিজে থেকে ঘটে না। তাকে ঘটাতে হয়। অর্থাৎ কোনো কিছু পেতে চাইলে তার জন্য কিছু ঘটাতে হবে, বা উদ্যোগ নিতে হবে। কিছু ঘটানো ছাড়া ভালো কিছু আশা করা বৃথা। ৩. জীবনে বিনয় ও নম্রতার শিক্ষা অত্যন্ত জরুরি। উদ্ধত ও অবিনয়ীদের পতন অবশ্যম্ভাবী। ৪. জীবনে পরিবর্তন চাইলে আগে নিজেকে পরিবর্তিত করতে হবে। অনেক সময় আমরা ভাবি, কেনো আমাদের জীবনে ভালো কিছু ঘটছে না। ভালো কিছুর জন্য নিজে ইতিবাচক চর্চা করুন। ৫. আশেপাশে যা-ই ঘটুক, ভালো কিছু হলে সবাইকে নিয়ে উৎযাপন করুন আর খারাপ কিছু হলে সমাধান করতে মনোযোগ দিন। ৬. জীবনে যে কোনো কাজে সাফল্য পেতে হলে যে কোনো একটি বিষয়ে মনঃসংযোগ অত্যন্ত জরুরি। একসঙ্গে একাধিক বিষয়ে ফোকাস করলে, কোনো কাজই ঠিকমতো হয় না। ৭. শুধু নিজের জন্য না বেঁচে জীবনের কিছুটা অংশ অন্যের কাজে লাগানো খুব জরুরি। খাবার কিংবা অন্য কিছু যতটুকু সম্ভব অন্যের সাথে শেয়ার করুন। ৮. জীবনে ভুল হতেই পারে। কিন্তু সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে চলতে হয়। যাতে একই ভুল বারবার না ঘটে। ৯. কথাতে আছে, ' যে সয়, সে রয়। রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন'। ধৈর্য ধরে থাকলে ক্রমে সুযোগ ও কাক্ষিত ফল আসবেই। ১০. জীবনে যে কাজ করবেন, তা পূর্ণ এনার্জি সহকারে করবেন। তবেই সেই কাজের স¤পূর্ণ সুফল পাওয়া যাবে
অভ্যাস-৪৪ ▌কারো ভুল ধরতে যাবেন না।
মানুষের জীবনটা হচ্ছে অগণিত ভুলের যোগফল মাত্র। কারো মতামতে কিংবা কাজে ভুল ধরা অথবা ভুল দেখানো কখনো উচিত নয়। দোষ ধরা বা ভুল ধরার ফলে সে নিজেকে ছোট মনে করবে। এতে তার হীনমনোবৃত্তি দেখা দেবে। ফলে তার সব কথা বা কাজ ত্রুটিপূর্ণ হতে বাধ্য। কাউকে সংশোধন বা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তার দোষগুলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বের করে তাকে আক্রমণ না করে বরং উৎসাহপূর্ণ পরামর্শ দিন, সাহস দিনÑ তবে অবশ্যই সে উন্নতি করতে পারবে। মনে রাখবেন, যিনি যত বেশি কাজ করবেন; তার ততবেশি ভুল হবে। কাজ না করে ঘরে বসে থাকুন, কোনো ভুল হবে না। মোট কথা: কখনো কাউকে কিংবা নিজেকে ছোট ভাববেন না। কাউকে ছোট বলে নিরুৎসাহিত করবেন না কিংবা অন্যের তাচ্ছিল্য ব্যবহারে মন খারাপ করবেন না। কেউ ভুল করে ফেললে সবার সামনে তিরস্কার না করে তাকে আলাদাভাবে বলে শুধরে নেওয়ার সুযোগ করে দিন।
অভ্যাস-৪৫ ▌ নিজের ভুল হলে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নিবেন।
যখনই বুঝবেন যে, আপনি কোনো ভুল করে ফেলেছেন অথবা আপনার ব্যবহারে কেউ দুঃখ পেয়েছেÑ তখনই সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে নিবেন। মনে রাখবেন, নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া হচ্ছে অন্যের হৃদয় জয় করার একটি শক্তিশালী অস্ত্র। এতে আপনি ছোট হননি কিছুতে, বরং আপনি যে অতি ভদ্র ও সভ্য তার পরিচয় তুলে ধরেছেন। সভ্য ইংরেজরা দেখবেন কোনো কিছু বলার বা জিজ্ঞেস করার আগে সরি বা এক্সকিউজ মি বলে শুরু করেন। এটাই ভদ্রতা। পৃথিবীতে কোনো জিনিসই ফেলনা নয়। কাজে লাগাতে জানলে সবই কাজে লাগে। কর্মক্ষেত্রে কিংবা যে কোনো অবস্থাতেই এমন কতগুলো মানুষের সাথে অনিচ্ছা সত্ত্বেও চলতে ফিরতে হয়Ñ যারা বিকৃতমনা, যাদের ব্যবহার, মন-মেজাজ বিরক্তিকর। এদের সঙ্গে চলতে ফিরতে প্রতি মুহূর্তে সংযত হয়ে ব্যবহার করতে হবে। এদের ভুল-ত্রুটি এবং খারাপ গুণগুলি অবহেলা করে ভালো গুণগুলির প্রশংসা করতে হবে। এদের উৎসাহ দিতে হবে।
অভ্যাস-৪৬ ▌সদাহাস্য বিনম্রভাব রপ্ত করুন অনুশীলনের মাধ্যমে:
কথায় বলে, সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। মুখের সৌন্দর্যের প্রথম এবং প্রধান উৎস হলো স্নিগ্ধ হাসি। যে মুখ হাসতে জানে না, সে মুখ কখনো সুন্দর নয়। যে মন খুুলে হাসতে পারে না, সে-ই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে অসুখী ব্যক্তি। মাত্র সামান্য কিছু লোক আছেন, যারা ঘুম থেকে উঠে সুন্দর করে একটু মিষ্টি করে হাসেন। কিন্তু বেশিরভাগ লোকই নাস্তা সারা পর্যন্ত মুখটাকে হাঁড়ি করে রাখেন। তারা জানেন না সুখ-শান্তি ও প্রভাব-প্রতিপত্তির মূল রহস্য হলো মধুর স্বভাব, হাস্যোজ্জ্বল মুখ। দৈনন্দিন কাজে হাজারো বাধা-বিপত্তি আর ঝামেলাকে আপনি হাসিমুখে (রসিকতার মধ্য দিয়ে) দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতে পারলে আপনার জীবন হয়ে উঠবে আরো আনন্দময়। পরিবেশটাও হবে ঝলমলে আনন্দমুখর। সদাহাস্য বিনম্রভাব রপ্ত করতে হয় অনুশীলনের মাধ্যমে। সদাহাস্য বিনম্র ভাবটা জন্মায় বিদ্যাবুদ্ধি আর জ্ঞান থেকে। আপনি যত নামজাদা ব্যক্তিত্বপূর্ণ মানুষ হবেন, ততবেশি নম্র, মধুর ও জাগ্রত চিত্তের অধিকারী হবেন।
অভ্যাস-৪৭ ▌অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন ও মতামত নিন:
মনোযোগী শ্রোতা পেলে সবাই আরামবোধ করে। কারণ মানুষ নিজের মনের ভাব অন্য মনে নামিয়ে দিয়ে হালকা হতে চায়। এ পৃথিবীর প্রায় সবাই বলনেওয়ালা, শোনার মানুষ নেই বললেই চলে। কারণ সবজান্তা মনোভাব আমাদের রক্তে। জানার স্পৃহা যাদের, কেবল তারাই অন্যকে গুরুত্ব দেয়। তারা জানে, প্রতিটি মানুষের কাছে শেখার কিছু না কিছু আছে। তারা মৌমাছির মতো। মৌমাছি যেমন ফুলের বুকে হুল ফুটিয়ে মধুটুকু সংগ্রহ করে। জ্ঞান প্রত্যাশী, উন্নতিকামী মানুষেরাও তেমনি মনোযোগী হয়ে প্রতিটি মানুষের জ্ঞান-অভিজ্ঞতাকে সঞ্চয় করে এবং প্রয়োজন মত কাজে লাগায়। কাজেই অন্যকে তার নিজের সম্পর্কে বলতে উৎসাহিত করুন। কথার মাঝে কথা বলবেন না। যখন আপনার কিছু বলার থাকে না, তখন অবশ্যই চুপ করে থাকবেন। বিভিন্ন বিষয়ে অন্যের কাছে পরামর্শ চান এবং তার মতামত মন দিয়ে শুনুন।
অভ্যাস-৪৮ ▌ কাউকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য বা হেয় করবেন না:
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাউকে এমন কোনো মন্তব্য করতে যাবেন না- যা অন্যকে হেয় প্রতিপন্ন করে। তার কোনো অদক্ষতা, অক্ষমতার প্রতি তার দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন না। কারণ, এই আচরণ দ্বারা আপনি শুধু তাকে আঘাতই করবেন- যদিও সে কিছুই মনে না করার ভান করতে পারে। এমনভাবে দ্বিতীয় কারো সঙ্গে দৃষ্টি বিনিময় করবেন না, যাতে তৃতীয়জন ভাবতে পারেন, তাকে নিয়ে হাসি তামাশা বা টিপ্পনি কাটা হচ্ছে। অন্যের সঙ্গে ফিসফিস করে বা ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলবেন না- যা তৃতীয় জনের পক্ষে বোধগম্য নয়, আর মাত্র একজনের সঙ্গে কথা বলবেন না। অপরের দুর্বলতায় খোঁচা দিবেন না। যে কথা বা কাজ অন্যজনে দেখতে চায় না, জানতে চায় না- সে কথা ও কাজের প্রতি উৎসাহী হবেন না। মনে রাখবেন, প্রতিটি মানুষই চাঁদের মতো- যার একটা অন্ধকার দিক আছে। যে দিক সে কাউকে দেখাতে চায় না।
আক্রমণাত্মক ঠাট্টা মসকারা, কাউকে কটাক্ষ বা ব্যঙ্গক্তি করা একেবারেই অনুচিত। মুখের কথায় প্রতিপক্ষের কলিজায় আঘাত করার পর হেসে বলে ওঠেন, আরে ভাই মজা করলাম। তুমি কি মজাও বোঝো না? এত মজার বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নিচ্ছ কেন? কিন্তু ফ্রয়েড বলেন, উপহাস হচ্ছে অবচেতন মনের সত্যি কথাগুলো মুখ থেকে বের করে দেওয়ার একমাত্র উপায়। এর অর্থ হচ্ছে আপনি যা কিছু বলেছেন, আপনি সত্যি সত্যি সেগুলো বলতে চেয়েছিলেন। যদিও আপনার সচেতন মন সেটি অস্বীকার করছে। এতে আপনার গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হয়ে যায়। আপনার স্বভাবের মধ্যে নীচু মানসিকতার আচরণ এখনো রয়ে গেছে, সুযোগ পেলেই সেগুলো বের হয়ে আসে।
পাবলিক বা প্রাইভেট জায়গায় কোনো মানুষের আবেগকে নিয়ে উপহাস করা বা তাকে নিয়ে ট্রল করা অত্যন্ত খারাপ কাজ। ট্রল বলতে বাহ্যিক দৃষ্টিতে ‘নিছক মজা করা’ বলে মনে হতে পারে, কিন্তু ভয়ানক বাস্তবতা হলো-ট্রলের মধ্যে পরোক্ষভাবে কাউকে অপমান করা এবং তাকে হাসির পাত্রে পরিণত করা হয়। আমরা কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নই। ভুল হওয়া একটি স্বাভাবিক বিষয়; কিন্তু এই স্বভাবজাত ভুলকে কেন্দ্র করে একশ্রেণীর মানুষ ট্রল করে থাকে। কারো আকার-আকৃতি নিয়ে ট্রল করাও একশ্রেণীর খারাপ মানুষের রীতিমতো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এসব খাপ রসিকতা, উত্যক্ত করা নীচ ও গরিব মানুষিকতার লক্ষণ।
অভ্যাস-৪৯ ▌মানুষকে তার উৎকৃষ্ট নামে আবেগ মিশিয়ে ডাকুন:
প্রত্যেক মানুষের নিজের উৎকৃষ্ট নামটা নিজের কাছে সবচেয়ে মধুর লাগে। ব্যঙ্গ সম্বোধনের দ্বারা মানুষকে হেয় ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হয় বলে তার মন বিষিয়ে উঠে। ফলে তাকে সে মনে মনে ঘৃণা করে। কাজেই মানুষের সুন্দর নামটা মনে রাখতে চেষ্টা করুন। কাউকে উপহাস করা বা বিকৃত নামে ডাকা থেকে বিরত থাকুন। অপরিচিত কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে হলে আবেগ মিশিয়ে ভাইজান/ আপামনি বলে সম্মোধন করে তারপর বলুন। অন্যদের যাদের নাম মনে নেই, তাদেরকে সন্মানের সাথে বড়ভাই/ ছোট ভাই, আপু, মিয়া ভাই, মামা, আংকেল/আন্টি এভাবে সম্মোধন করুন।
অভ্যাস-৫০ ▌ উপকারির নিকট সব সময় কৃতজ্ঞ থাকুন
যিনি আপনার কোনো প্রশ্নের জবাব দিয়েছে তার প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন; থ্যাঙ্কস বলুন, খুশিমনে ধন্যবাদ দিন। পরবর্তীতে তার সাথে দেখা হলে তাকে তার আগের কথা বা কাজের জন্য পুনরায় ধন্যবাদ দিয়ে মনে করিয়ে দিন। কেউ উপকার করলে মাঝে মাঝে তার উপকারের কথা তাকে স্মরণ করিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন কিন্তু পরের উপকার করে আপনি তা মনে রাখবেন না। কৃতজ্ঞতা পাওয়ার আশায় কোনো কিছু করা বা দেওয়া উচিত নয়, বরং দেবার আনন্দেই দেয়া উচিত। উপকারির কাছে অকৃতজ্ঞতাই আশা করা উচিত, তাতে হতাশ হবার ভয় থাকে না। অনেকে অপর লোকের কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করেন এবং তা না পেলে নিরাশ হয়ে পড়েন। এটা উচিত নয়। অপরের কাছ থেকে যত কম আশা করা যায়, হতাশাও তত কমে যাবে। সব সময় মনে রাখবেন, অভিযোগ-প্রতিবাদ শুধু বোকা লোকদের ভাষা; এইসব পরিহার করতে হবে।
অভ্যাস-৫১ ▌কীভাবে অন্যের সাথে কথা বলবেন
বলার ক্ষেত্রে মনের সাহস যত বেশি থাকবে, আপনার বক্তব্য ততই প্রাঞ্জল হবে। মনে রাখবেন- কে কতটা ভালো বক্তা, সেটা বিচার করা যায়- শ্রোতা সম্পর্কে কতটা ভয়-ভীতি ও সংকোচ কাটাতে পেরেছে তার ভিত্তিতে। প্রথমে কোনো বিষয় নির্ধারণ করুন। তারপর সে বিষয়ে যতবেশি পারেন পড়াশোনা করুন এবং ভাবুন। যত বেশি জানবেন, তত বেশি ভালো বলতে পারবেন। ভালো বক্তার প্রথম কাজ হলো- প্রথমে এমন কিছু বলা, যা শ্রোতার মনে তৎক্ষণাৎ আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে। বক্তব্যের সময় শ্রোতার সঙ্গে মত বিনিময় করুন। এতে তাদের মতামতকে দাম দেওয়া হবে। যে বিষয় তারা জানতে আগ্রহী, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলুন। শ্রোতারা কতটা আগ্রহের সঙ্গে বক্তব্য শুনছে, তা লক্ষ্য করুন। মনে রাখবেন, বক্তা যদি নিজের কথাতেই নিজে প্রভাবিত না হয়, তাহলে শ্রোতা কিছুতেই প্রভাবিত হবে না। কথা বলার সময় কণ্ঠস্বরে স্বাভাবিকতা বজায় রাখুন।
অভ্যাস-৫২ ▌ রেগে যাবেন তো হেরে যাবেন:
আমরা যখন অনেক বেশি রেগে যাই, তখন চিৎকার করি কেন?" আমরা যার উপর রাগ করি সেই মানুষটি তো আমাদের সামনেই থাকে তবুও কেন আমাদেরকে চেঁচিয়ে তার সাথে কথা বলতে হবে? কারণ, এই রাগ তাদের অন্তরের মাঝেও দূরত্ব সৃষ্টি করে। "আবার যদি আমরা ভেবে দেখি, দুজন মানুষ যখন একে অন্যের প্রেমে পড়ে, তখন তারা একে অন্যের সাথে নরম স্বরে কথা বলে। কারণ তারা একে অন্যের অন্তরের খুব কাছে থাকে। " রাগ নিয়ন্ত্রণের ১০ উপায়: ১) রাগের মাথায় কিছু বলার আগে একবার চিন্তা করে নিন ২) কিছুক্ষণ নিজের সঙ্গে কথা বলুন ৩) যত দ্রুত সম্ভব স্থান পরিবর্তন করুন ৪) একবার নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করুন তারপর কথা বলুন ৫) জোর জোরে শ্বাস নিন ৬) কাজের মধ্য থাকলে একটু বিরতি নিয়ে নিন ৭) সম্ভাব্য সমাধানের কথা চিন্তা করুন ৮) বিদ্বেষ নিজের মধ্যে আটকে রাখবেন না।
অভ্যাস-৫৩ ▌কাউকে সরাসরি হুকুম না করে আব্দার কিংবা অনুরোধের সুরে বলুন
অনেকে আছেন- যারা সব সময় সর্বোসর্বা হয়ে অন্যকে দিয়ে কাজ করাতে বোকার মতো হুকুম করেন। কিন্তু তারা জানেন না যে, হুকুম জিনিসটা কেউ পছন্দ করে না। কোনো কাজে হুকুম দেওয়া মানে তাকে ছোট প্রমাণ করা। এটা খুব খারাপ। কোনো কাজের জন্য কাউকে সরাসরি হুকুম না করে একটু ঘুরিয়ে আব্দার কিংবা অনুরোধের সুরে বলুন, অথবা কাজটা করতে পরোক্ষভাবে তাকে উৎসাহিত করুন। প্রত্যক্ষ বাক্য না বলে সবসময় পরোক্ষ বাক্য বলার অভ্যাস করুন। যেমনÑ এই করিম, বাজারে যাও; এটা প্রত্যক্ষ বা সরাসরি বাক্য। এটা না বলে এভাবে বলুনÑ করিম, বাজার করা দরকার, এখন গেলে সবকিছু টাটকা পাওয়া যাবে, তাই না? সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। তাই এমন কিছু মানুষের সান্নিধ্যে থাকুন যারা স্বল্পভাষী। দেখবেন আপনিও ধীরে ধীরে সেই গুণাবলী অর্জন করছেন। সব অর্জনের মূলেই থাকে সাধনা। আর এ জন্য প্রয়োজন ধৈর্য।
অভ্যাস-৫৪ ▌বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনসহ চেনা-পরিচিতজনদেরকে যতটা সম্ভব প্রশংসা করুন।
প্রত্যেক মানুষের মনের গভীরে থাকে প্রশংসা পাবার আকুতি। মানুষের বাহ্যিক পরিপাটি, সবই তার প্রতিফলন। কাজেই বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনসহ চেনা-পরিচিতজনদেরকে যতটা সম্ভব প্রশংসা করতে কুণ্ঠাবোধ করবেন না। তার গুণগুলোর সোজাসুজি প্রশংসা করুন। আপনার প্রশংসা তার মনকে ভরিয়ে তুলবে। এমন কি আপনার ছোট প্রশংসাটির জন্য দেখবেন, সারাজীবন সে আপনাকে মনে রাখবে। প্রশংসা হচ্ছে আত্মার খাদ্য। উপযুক্ত খাদ্য পেলে মন আত্মবিশ্বাসে, মনোবলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। কিন্তু সাবধান, তোষামোদ করবেন না। তোষামোদ হচ্ছে, জাল করা টাকার মতো- যা চালাতে গেলে প্রতি মুহূর্তে ঝুঁকি। সৎ থাকুন যখন কেউ আপনার প্রশংসা করছেন এবং আপনি কার প্রশংসা করছেন। প্রশংসা কখনো প্রত্যাখ্যান করবেন না এবং অবশ্যই মনে করবেন না যে আপনাকে প্রশংসা ফেরত দিতে হবে। বিনয়ী হতে হলে আপনাকে মাত্রাতিরিক্ত লাজুক, শান্ত বা সাধু হতে হবে এমনটা নয়।
অভ্যাস-৫৫ ▌কীভাবে নিজেকে বিনয়ী হিসেবে উপস্থাপন করবেন:
১) অর্থহীন অহঙ্কার থেকে বিরত থাকুন ২) আপনি কত অর্থ-সস্পদের মালিক এসব আলোচনা এড়িয়ে চলুন : আপনি কত ধনী বা আপনি কত অর্থ উপার্জন করেছেন এসব আলোচনা বন্ধ করুন। আপনার অতিরিক্ত অর্থ প্রাপ্তির সাফল্য-গাঁথা অন্য মানুষের বিরক্তির কারণ হতে পারে। ৩) নিজের গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করবেন না: আপনি স্মার্ট, মেধাবী ও চতুর এগুলো বলার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। আপনার যদি ভালো কোনো গুণাবলী থেকে থাকে, তাহলে মানুষ নিজ থেকেই আপনার প্রতি আকৃষ্ট হবে। ৪) অহেতুক অন্যের কথাবার্তায় নিজেকে জড়াবেন না: সব সময় নিজেকে অপরের কথা বা আলোচনায় জড়ানোর প্রবণতা ত্যাগ করুন। আপনি তাদের কাজে আসলে তারা আপনাকে নিজে থেকে আলোচনায় আহ্বান জানাবে। ৫) আপনার সাফল্যের পথে অন্যদের সঙ্গী করুন : এতে করে আপনার কাজের কৃতিত্ব কমবে না বরং বাড়বে।
অভ্যাস-৫৬ ▌নিজের দোষ-ত্রুটির সমালোচনা করতে শিখুন, অন্যের নয়।
সমালোচনা হচ্ছে পোষা পায়রার মতো, তাকে যেখানে যত দূরে ছেড়ে দেয়া হোক, ঠিক নিজের ঘরে ফিরে আসবেই। সহজ কথায়, আপনি যতটুকু অপরের সমালোচনা করবেন-নিজেই (প্রকাশ্যে-গোপনে) ততটুকু অপরের সমালোচনার সম্মুখীন হবেন। নিজের দোষ-ত্রুটির সমালোচনা করতে শিখলে তার দ্বারা অবশ্যই বড় হওয়া সম্ভব। কাজেই অপরের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিজের সমালোচনা করতে শিখুন। অযথা মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা ভালো। যার বাসায় সাদা-কালো টিভি আছে, তাকে রঙিন টিভির গুণ বর্ণনা করা ঠিক নয়। এক কথায়, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কারো কোনো বিষয়ে বিরূপ মন্তব্য করবেন না। কিংবা অপেক্ষাকৃত উন্নত কিছুর সাথে তুলনা করবেন না। মানুষের জীবনী শক্তির অধিকাংশই শেষ হয়ে যায় শুধু পাশের মানুষের নেগেটিভ কথা শুনতে শুনতে। লক্ষ্য করে দেখবেন, আপনি যখন কোনো ভালো কাজ করতে যাচ্ছেন, তখন একগাদা মানুষ জড়ো হয়ে আপনাকে নিরুৎসাহিত করবে।
অভ্যাস-৫৭ ▌খুঁতখুঁতে স্বভাব পরিত্যাগ করুন।
এমন অনেক ব্যক্তি আছেন, যারা অনেক খুঁতখুঁতে। সব কিছু একেবারে নিখুঁত না হলে তাদের মন ভরে না, নিজের সব কিছুকে খুঁতহীন একটা অবস্থায় নিয়ে যেতে চান। এরকম মানুষ সমাজজীবনে, কর্মজীবনে, ব্যক্তিজীবনে অস্থির লোক হিসেবে গণ্য হয়। আবার অনেক লোক আছেন, যারা সামনে দিয়ে মশা গেলেও ধরে ফেলেন কিন্তু পিছন দিয়ে হাতি গেলেও টের পায় না। এরা শ্রমিকের পেটে লাথি মেরে হুজুরের কাছে সিন্নি পাঠায়। মজুরকে শোষণ করে মাজারে দান করে। এরা শ্রমিকের ন্যায্য পাওনার বেলায় খুব হিসাবি, অথচ ভোগ-বিলাসিতার বেলায় হিসাবি নয় মোটেই। এই মনোভাব খুব জঘন্য। তাদের মনে রাখা উচিত- একজন কর্মী যদি তার কাজের যথার্থ পুরস্কার পায়, তাহলে তার হৃত উদ্যম অবশ্যই শতগুণে বেড়ে যায়। কর্মী বা সহপাঠীরা যত ভুল করুক, উত্তেজিত হবেন না, আফসোস করবেন না; মনে করবেন, ভুল আপনার। কাজটা অন্যভাবে বুঝানোর বা দায়িত্ব দেয়ার দরকার ছিল।
অভ্যাস-৫৮ ▌মুদ্রাদোষ পরিহার করুন:
অনেকে কারো সাথে পরিচয় হওয়া মাত্রই তার ব্যক্তিগত পরিচয় জানতে চায়, গ্রামের বাড়ী, কোথায় থাকে, কি করে, কত আয় করে এসব জানতে অস্থির ইয়ে উঠে। এটা নিতান্তই অভদ্রতা। নিজে থেকে না বললে একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপারে প্রশ্ন করা কারো উচিত নয়। অনেকেরই আবার বিভিন্ন মুদ্রাদোষ থাকে। কেউ কথা বলার সময় হাত নাড়ে বেশি। আবার অনেকে আছেন, যারা কোনো কাজের জন্য কারো গায় হাত দিয়ে অনুনয়-বিনয় করেন। কেউ মানুষের সামনে দাঁত খোঁচায়, কেউ বা হাত চাপা না দিয়ে ঢেঁকুর তোলেন, হ্ইা তোলেন, জোরে কাশেন, হাঁচি দেন। কেউ বা যেখানে-সেখানে থুথু পানের পিক ইত্যাদি ফেলেন। আমাদের দেশে খুব কম মানুষ আছেন, যারা টেলিফোনটি বাজা দেখতে পারেন না। তারা আপনাকে বসিয়ে রেখেই ফোনটি ধরবেন। আপনি যে এত কষ্ট করে ট্রাফিক জ্যাম ঠেলে তার কাছে গিয়েছেন, তার থেকেও মূল্যবান হয়ে ওঠে টেলিফোন। এটা ঠিক নয়। জাপানে আপনি যদি মিটিংয়ের ভেতর ফোন ধরেন, ওখানকার মানুষ এটাকে চরম অভদ্রতা বলে ধরে নেয়।
অভ্যাস-৫৯ ▌ মুড নেই বলে গুটিয়ে থাকবেন না।
মুড না থাকা অস্বাস্থ্যের লক্ষণ। কথায় কথায় মুড নেই বলে দরকারি কাজ থেকে হাত গুটিয়ে থাকতে থাকতে আমরা অলস স্বভাবের হয়ে পড়ি। পরে অনেক সাধনাতেও আর মুড আসতে চায় না। পাগল সাজতে সাজতে হ্যামলেটকে যেমন পাগলামিতে পেয়ে বসেছিলো, অনেকটা তেমনি। আপনাদের জীবনে এমন কখনও হয়েছে যে, আপনি কারও সাথে দেখা করতে গিয়েছেন; আর সেই মানুষটি আপনার সামনেই একটার পর একটা ফোনে কথা বলে যাচ্ছে? কখনও ইন্টারকমে, কখনও মোবাইলে? আর আপনি তার সামনে বসে বসে মাছি মারছেন। জ্বি, আমার জীবনে অসংখ্যবার এমন হয়েছে। আমি ভেতরে ভেতরে চরম বিরক্ত। একটা পর্যায়ে ভদ্রভাবে বলতেই হয়, আমার এখন যেতে হবে। অনেকক্ষণ কাউকে অপেক্ষায় রাখবেন না। সময় বুঝে ফোনে কথা বলুন। খুব ভোরে বা বেশি রাতে জরুরি না হলে ফোন করবেন না। কথা বলার আগে বিষয়গুলো নোটবুকে লিখে নিন, যেন কোনো বিষয় বাদ না পড়ে।
অভ্যাস-৬০ ▌কথার জাদু দিয়ে অন্যকে আকৃষ্ট করুন।
প্রত্যেক জরুরি কথা শুরু করার আগে এবং শেষ হলে কয়েক মুহূর্ত থেমে থাকুন। এতে কথাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে শ্রোতার মনে আলাদা আসন করে নেবে। কথা কম হবে অথচ বেশি প্রভাবশালী শব্দে সমৃদ্ধ হওয়া চাই। ছোট ছোট উদ্ধৃতি, প্রবাদ-প্রবচণ, বাণী এবং হাস্যকর সংলাপযুক্ত করে বক্তব্যকে নাট্যরসে সমৃদ্ধ করে তুলুন। গলার সুর ও প্রকাশভঙ্গির উঠানামা করুন। গুরুত্ব অনুসারে শব্দের ওপর জোর বাড়ান-কমান। পরিবার, শৈশব স্মৃতি, স্কুল-কলেজ দিনগুলো, জীবনে নানা বাধা, আশা-আকাক্সক্ষা, জয়, শখ, বিনোদন, বিখ্যাত ব্যক্তির সাক্ষাৎ ইত্যাদি অভিজ্ঞতা গুছিয়ে বললে চমৎকার ফল পাবেন। বক্তব্যের বিষয়ের সঙ্গে সাদৃশ্যমূলক উপমা দিন। কোনো গল্প বা হাসির টিপ্পনি যদি বলেন, তা হওয়া চাই সংক্ষিপ্ত, অথচ জোরালো এবং চিত্ত আকর্ষক। যদি অপর কেউ কোনো কৌতুক- রহস্যের অবতারণা করেন, সেটা আপনার জানা থাকলেও তা অপরকে বলতে বাধা দেবেন না বরং খুব উৎসাহ নিয়ে শুনবেন।
অভ্যাস.৬১ ▌জিহ্বার উপর কড়া শাসন করুন
রাগের সময় অনেক অশোভনীয় বেফাস কথাও মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। আর বলে ফেলা কথাটা বন্দুকের ছুটে যাওয়া গুলির মতো- যা ফেরানো আর সম্ভব নয়। অথচ রাগের সময় সামান্য একটা মুখ ফসকানো কথাই সর্বনাশ ডেকে আনতে যথেষ্ট। এই জন্যই প্রত্যেক ব্যক্তিত্ববান মানুষকে তার জিহ্বার উপর কড়া শাসন চালাতে হবে। ক্রোধকে দমন করার একমাত্র উপায় হলো- যা নিয়ে ক্রুদ্ধ হচ্ছেন তা হাস্যরসের তীক্ষè বাণীতে উপেক্ষা করুন। দেখা যায় কাউকে গালিগালাজ দেওয়ার চেয়ে রসিয়ে দু’একটা সাধু বাক্যেই বেশি ঘায়েল করা যায়। সব সময় মনে রাখবেন, একটা তিন ইঞ্চি মাত্র লম্বা জিহ্বা একটা ছয়ফুট মানুষকে নিমিষেই হত্যা করতে পারে। আর একটা কথা, অসময়ে হুট করে অন্যের দুয়ারে ঢুঁ মারবেন না। টেলিফোন থাকলে অ্যাপয়েনমেন্ট করুন। নয়তো কলিংবেল টিপে বা দরজায় নক করে দূরে দাঁড়িয়ে থাকুন। ভুলেও খোলা দরজায় সংকেত না দিয়ে ঢুকবেন না।
অভ্যাস- ৬২ ▌অকারণে সময় নষ্ট? মেল রবিনের ৫ সেকেন্ড রুল:
বাস্তবে আমাদের ব্রেন খুব কম্পোটেবল থাকতে চায়। আমরা যখন আরাম করি, কিংবা যখনি মজার খাবার খাই বা মজার ভিডিও দেখি, তখন ব্রেনে ডুপামিন নামক কেমিক্যাল রিলিজ হয়। ফলে একটা ভাল অনুভুতি তৈরি হয়। এই সময়টা আপনি অযথা বসে নষ্ট করেন। এই অবস্থা থেকে বের হবার জন্য আপনার কিছুটা অ্যাকটিবেশন এনার্জির প্রয়োজন হয়। যার দ্বারা আপনি উঠে কাজ শুরু করে দেবেন। কিন্তু আপনার ব্রেন চায় না আপনি ঐ এনার্জিটা খরচ করেন। তাই, ওই কাজটা না করার জন্য ব্রেন অসংখ্য অজুহাত তৈরি করে। ব্রেনের এ অজুহাত বন্ধ করার জন্য ৫ সেকেন্ডের মধ্যেই সচেতন হয়ে যান। নিজেকে বলুন, ইয়েস এক্ষুণি আমি এটা করবো। কোন কাজ যদি ৫ সেকেন্ডের মধ্যে শুরু না করেন, তাহলে আপনার ব্রেন আপনার সাথে ট্রিক্্স খেলতে শুরু করবে। মনে হবে আর দশ মিনিট যাক, এতে দেখা গেল আপনি দশ মিনিটের বদলে এক ঘন্টা সময় পার করে দিলেন।
অভ্যাস-৬৩ ▌এই চারটি কথা কাউকে বলবেন না:
১। আর্থিক ক্ষতি: যদি আর্থিক ক্ষতি হয়, তবে তা কারো সঙ্গে আলোচনা করা উচিত নয়। কারণ সকলেই শুনবেন তবে কেউ সাহায্য করবেন না। উল্টো আপনার আর্থিক অবস্থা স¤পর্কে কিছু মানুষ জেনে যাবেন। ফল হবে, তারা আপনার দুর্বলতার সুযোগ খোঁজার চেষ্টা করবেন। ২। ব্যক্তিগত সমস্যা: আর্থিক ক্ষতির মতো ব্যক্তিগত সমস্যার কথাও কারো সামনে আলোচনা করা উচিত নয়। যারা নিজের ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে বাইরের মানুষের সঙ্গে আলোচনা করেন, তাদের মাথা নিচু করতেই হয়। কারণ যাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে তারাই একদিন অপমান করবে। শুধু তাই নয়, সেই ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার স¤পর্কে রসাল আলোচনা, হাসি-তামাশা করা হবে। ৩। স্ত্রী-র চরিত্র: নিজের স্ত্রী-র চরিত্র স¤পর্কে কখনও কারো সামনে আলোচনা করা উচিত নয়। ৪। অশিক্ষিত ব্যক্তির অপমান: যদি কখনও অশিক্ষিত ব্যক্তির কাছে অপমানিত হন তা কখনও কারো সঙ্গে আলোচনা করবেন না।
অভ্যাস- ৬৪ ▌কিভাবে ইতিবাচক নেতা হয়ে উঠবেন?
মিস্টার রাসেদ একজন উত্তরাধিকার সূত্রে ধনী ব্যক্তি ছিলেন। বিয়ের এক বছর পরেও তিনি তার স্ত্রীর সাথেও ভালোভাবে কথা বলতেন না এবং হাসি মজাও করতেন না। তিনি নিজের জীবনে বেশি খুশি ও সুখী ছিলেন না। একান্ত প্রয়োজন না হলে তিনি কখনো কারো সাথে কথা বলতেন না। তার স্ত্রী এই পরিস্থিতি নিয়ে খুবই দু:চিন্তায় পড়লেন। এটা কাটাবার জন্য তাকে একটি কথা বলার ক্লাবে ভর্তি করে দেয়া হলো। ক্লাবে ওনাকে একটা সিম্পল টিপস্ দেয়া হয়। টিপসটি হলো ওনাকে প্রতি ঘন্টায় অন্তত একবার কোনো মানুষের সাখে স্মাইল করতে হবে বা মৃদু হাসতে হবে। এটা উনি খুব সিরিয়াসলি নিলেন এবং এপ্লাই করা শুরু করে দিলেন। রাস্তাঘাটে পরিচিত কারো সাথে দেখা হলে সৌজন্যমূলক স্মাইল দেয়া শুরু করলেন। তিনি উপলব্দী করলেন, যাদের তিনি স্মাইল দেন, তারাও তাকে দেখে স্মাইল দিচ্ছেন। ধীরে ধীরে সবাই তার সাখে কথা বলা শুরু করে দিলেন এবং তিনি একজন ইতিবাচক নেতা হয়ে উঠলেন।
অভ্যাস-.৬৫ ▌ সামনের মানুষটির মুড বুঝে কথা বলুন।
আপনার জীবনে এমন ঘটনা অনেক আছে যে, যখন আপনি খুব খারাপ মুডে আছেন, আর একজন এসে খুব উত্তেজিতভাবে আনন্দ প্রকাশ করে আপনার সাথে কথা বলছেন, তামাশা করছেন। এই সময় ওই লোকটির প্রতি বিরক্তিও আসতে পারে বা রাগ আসতে পারে। ফলে মানুষটি আপনার থেকে দূরে সরে যেতে চেষ্টা করে। এটা আরো বেশি মাত্রায় দেখা যায়, যদি দুজনের মধ্যে ক্লোজ রিলেশন না থাকে। এই কারণে যখন আপনি কারো সাথে কথা বলা শুরু করবেন, তখন আপনাকে দেখতে হবে যে, সামনের মানুষটির মুড কেমন আছে। যদি সে ‘লো’ বা খারাপ মুডে থাকে, তাহলে আপনি তার সাথে খুব বেশি এক্সাইটেড মুডে কথা বলবেন না। প্রথমে আপনি শান্তভাবে তার সাথে কথা বলা শুরু করুন। তারপর ধীরে ধীরে আপনার মুড এবং এক্সসাইট লেবেল বাড়ান। এই টেকনিকটা আপনার সামনে থাকা মানুষটির ডুডও ঠিক করে দিতে পারে।
অভ্যাস- ৬৬ ▌নতুন পরিচিত কারো প্রশ্নের জবাব একলাইনে দেবেন না।
আমরা নতুন কারো সাথে পরিচিত হলে তার সাথে কথা আগে বাড়াতে পারি না। নাম পরিচয় হয়তো জানা হলো কিন্তু কথা আর এগুতে না পারার কারণে চুপচাপ, তখন একটাই চিন্তা মনে আসে কীভাবে এই দমবন্ধ করা পরিস্থিতি থেকে বের হওয়া যায়। এই ঘটনার পর যতদূর সম্ভব দুজন দুজনকে এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করে। কারণ তারা সে আগের পরিস্থিতিতে আবার পড়তে চান না। যদি আপনি এই পরিস্থিতিতে পড়তে না চান এবং নতুন কারো সাথে সুন্দর সম্পর্ক চান, তাহলে কখনোই তার প্রশ্নের জবাব একলাইনে দেবেন না। যেমন আপনি কোথায় থাকেন? কী করেন? এই প্রশ্নগুলোর জন্য বড় কোনো উত্তর খুঁজুন। মানে আপনি যেখানে থাকেন বা আপনার কর্মস্থল সম্পর্কে আরো কিছু ইন্টাররেস্টিং তথ্য বা ঘটনা যোগ করুন; যা আপনার সামনের মানুষটিকে আরো কিছুটা আকর্ষণ করতে এবং প্রভাব বাড়তে সহায়তা করবে। এটা কথোপকথন এগিয়ে নিয়ে যেতেও সাহায্য করবে।
অভ্যাস- ৬৭ ▌ Parroting : মানে তোতা পাখির মত রিপিট করা।
যদি আপনি সামনের মানুষটির সাখে কথা আরো বাড়াতে চান, তাহলে সামনের মানুষটির কথার অংশ রিপিট করতে হবে। যেমন- এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল, পথে এক মুখ চেনা মানুষের সাথে দেখা। যার সাথে সম্পর্ক আগে বাড়েনি; সে সম্পর্ক বাড়াতে চায়। চেনা মানুষটি বলল- সে একটা বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরছে। লোকটি রিপ্লাই দিলো: বিয়ে? -হ্যাঁ, আমার মামাত বোনের বিয়ে। -মামাত বোন? -হ্যাঁ, আমার বড় মামার একমাত্র মেয়ে। ডাক্তারি পড়ছে। - ও ডাক্তার? -হ্যাঁ, স্বামীও ডাক্তার; ছেলেটার বাড়ি কুস্টিয়া। - কুস্টিয়া? -হ্যাঁ কুস্টিয়া শহরে তাদের পৈত্রিক ব্যবসা। এভাবে রিপিট করে কথা বাড়ান। আপনি যদি কথা বলার সময় সামনের মানুষটির দিকে না থাকিয়ে এদিক-ওদিক তাকান, তা সামনের মানুষটিকে এই সিগন্যাল দেয় যে, আপনি তার প্রতি ইন্টারেস্টেটেড বা আগ্রহী নন। কথা বলার সময় আপনি সামনের মানুষটির চোখের দিকে সরাসরি তাকান বা আই কন্ট্রাক্ট করুন।
অভ্যাস- ৬৮ ▌ কিভাবে মানুষকে আকৃষ্ট করবেন?:
১। আপনার বডি ল্যাংগুয়েজ সব সময় ওপেন থাকতে হবে। আপনি যদি দুটি হাত জড়সড় করে রাখেন, বা দাঁড়াবার সময় দুটি পা ক্লোজ করে রাখেন, তখন তা হবে ক্লোজ বডি ল্যাংগুইজের উদাহরণ। কিন্তু আপনি যদি আপনার দুটি হাত মুক্ত রাখেন এবং পা দুটির মধ্যে একটু ফাঁক বা দুরত্ব রাখেন, এবং একটু জায়গা নিয়ে দাঁড়ান, তখন তা হবে ওপেন বডি ল্যাংগুইজের লক্ষণ। ২। কথা বলার সময় সরাসরি তার চোখের দিকে তাকাতে হবে। এত আপনাকে আগ্রহী এবং আত্মবিশ্বাসী দেখাবে। কথা বলার সময় যদি আই কন্টাক্ট না করেন, তাহলে আপনাকে নার্ভাস দেখাবে, অনাগ্রহী দেখাবে। তবে মনে রাখবেন, সর্বক্ষণ চোখের দিকে তাকানোও ঠিক নয়। ৩। আপনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটির সন্মানে একটি হালকা স্মাইল দিতে হবে। কথা বলার সময় আপনাকে সামনের দিকে একটু ঝুকে বলতে হবে, যাতে বুঝাবে যে, আপনি তার প্রতি খুবই আগ্রহী।
অভ্যাস-৬৯ ▌ বাড়িতে পড়া পারলেও স্কুলে গিয়ে সব ভুলে যাচ্ছে শিক্ষার্থী?
খেলাধুলা:
ছোট থেকেই শারীরিকভাবে দৌঁড়ঝাপ লাফালাফি ও শরীরে ঘাম তৈরি হয় এমন খেলাধুলার অভ্যাস মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। দুষ্টুমি ও ছোটাছুটিতে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়, ফলে মস্তিষ্কের বিকাশ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। কাজেই বিকেল ৫টার পরে অবশ্যই আউটডোর খেলাধূলার মাধ্যমে নিজেকে বিকশিত করতে হবে।
সূর্যের আলো ও পানি:
সূর্যের আলো মনোযোগ বৃদ্ধির অন্যতম যোগান। ঘরে সূর্যের আলো প্রবেশ করে এমন স্থানে শিক্ষার্থী যাতে মাঝে মাঝে বসতে পারে লক্ষ্য রাখতে হবে। ক্লান্তি কাটানোর ভাল উপায় হল মাঝেমধ্যে পানি খাওয়া। পানির ঘাটতি হলেও শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। টেবিলে ও ব্যাগে কাচেঁর পানির বোতল থাকবে এবং একটু পর পর গলা ভিজাতে হবে। ঘুম পেলে বইয়ের পাতায় চোখ না রেখে লেখার কাজ করা যেতে পারে। কিছুটা সময় খোলা হাওয়ায় এলেও শরীর, মন তরতাজা হবে, তবে অবশ্যি চোখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিতে হবে।
দিবানিদ্রা থেকে সাবধানঃ স্কুল থেকে ফেরার পরে প্রথম কাজ হবে খাওয়াদাওয়ার পরে একটু বিশ্রাম নেওয়া। ৫/১০ মিনিটের ন্যাপ হতে পারে, তবে তা দিবানিদ্রা যেন না হয়। দুপুরে বা বিকেলে যখনই ফি্রবেন, ওই সময়টাতে নিজের শখের কিছু কাজ করতে হবে। কোনোভাবেই টিভি দেখানো বা হাতে মোবাইল দেওয়া যাবে না। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে পড়তে বসা ভাল। ওই সময়ে পড়াশোনা ভাল হয়। কিন্তু যত বেশি আলসেমি করা হবে তত বেশি অমনোযোগী হয়ে উঠবেন।দুপুরে ভারী খাবার খেয়ে বা রাতে খাওয়ার পরে পড়তে না বসানোই ভাল। ওই সময়টাতে আলস্য বাড়ে।
মেডিটেশন: হোমওয়ার্ক শুরুর আগে অন্তত ৫ মিনিট মেডিটেশন বা শান্ত হয়ে বসা অভ্যাস চর্চা করতে হবে। এতে মনোযোগ, একাগ্রতা বাড়বে, বুদ্ধিরও বিকাশ হবে। পড়াশোনায় মন বসবে। তবে পড়ার সময় কোনো গেজেট আশে-পাশে থাকবে না। একাটানা না পড়ে মাঝেমধ্যে মিনিট দশেক বিরতি নেওয়া যায়।
পুষ্টি:স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে, মস্তিষ্ককে সতেজ করে তুলতে ও জ্ঞান বিকাশের জন্য সঠিক পুষ্টি প্রয়োজন। তাই কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফ্যাটের সঙ্গে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার মিটাপানির মাছ-সামুদ্রীক মাছ দেওয়া উচিত। ভিটামিন ও খনিজের অভাব দূর করতে বেশি করে সব্জি, ফল এবং শষ্যদানা বা বাদাম পরিমাণ মতো রাখা প্রয়োজন।
অভ্যাস- ৭০ ▌ ঘুম ও বিশ্রাম:
পরিমিত ঘুম আমাদের দৈহিক ও মানসিক ক্লান্তি দূর করে। দেহ মনে সজীবতা ফিরিয়ে আনে। সারাদিনের ক্লান্তি-দুঃখ-বেদনা-দুশ্চিন্তা- হতাশা- অবসাদ অনেকটা চলে যায় রাতে ভালো ঘুম হলে। কোনো কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে সারাটা দিনই খারাপ যায়, মেজাজ হয় খিটখিটে। খাওয়া-দাওয়া অরুচি লাগে। কাজে মনোযোগের অভাব হয়, অল্প কাজেই অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ি। একনাগাড়ে চিন্তা করার ক্ষমতা কমে যায়, গা ম্যাজ ম্যাজ করে। দীর্ঘদিনের অনিদ্রা দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। আবার অতিনিদ্রাও ক্ষতিকারক। মোট কথা হলো, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য পরিমিত নিদ্রা অপরিহার্য। অবশ্যই রাত ১১টার আগে বিছানায় যাবেন। যখন ঘুম আসে না তখন সে জন্য দুর্ভাবনা না করে সে সময় যা ভালো লাগে এমন কিছু করলে পরে ঘুম আসে। তালে তালে শব্দ হচ্ছে এমন কিংবা ঝম ঝম শব্দে বৃষ্টি পড়া অথবা কোনো বাজনার তাল ঘুমের সাহায্য করে।
অভ্যাস- .৭১ ▌ অনন্ত চাহিদা মানে অশান্তির ঘর:
জীবনের দাবি হচ্ছে চাহিদা। মানব জীবন চাহিদার শেষ নেই। একটা চাহিদা না মিটতেই আর একটা চাহিদার উদ্রেক হয়। একজন প্রকৃত মানুষ জীবনে যা যা চায় তার সবকিছু পূর্ণ হওয়া উচিত নয়। শিশু এবং মূর্খ যারা তারাই সবকিছু চায়। কারণ চাওয়ার গুণাগুণ বিচারের ক্ষমতা এদের নাই। সাধারণ মানুষের সদাশয় সুখি হয়ে থাকে, কারণ তাদের চাওয়া অতি সাধারণ, যা সহজে পূর্ণ করা সম্ভব। মানুষের অনন্ত চাহিদা তাকে অশান্তির পথে টেনে নেয়। অল্পতে সস্তুষ্ট থাকতে পারলেই মন শান্ত ও সুখি হবে। আমরা সর্বদা ভাবি কি পেলাম না, কী নাই আমাদের? কী আছে, তা ভুলেও আমাদের ভাবনায় আসে না। কী পেলাম না তা নিয়ে হিসাব না করে, যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চেষ্টা করুন। আপনার থেকে বেশি যাদের আছে তাদের দিকে না তাকিয়ে, আপনার থেকে কম যাছে যাদের তাদের দিকে তাকিয়ে নিজের পার্থক্য করুন।
অভ্যাস-৭২ ▌ সুখ-শান্তি মানসিক অনুভূতি মাত্র:
সুখ-শান্তি- আনন্দ মনের ভালো লাগা ভালোবাসার সাথে জড়িত। মনে ভালোবাসা থাকলে আনন্দের কোনোদিন অভাব হয় না। একঘেঁয়ে সুখ বা আনন্দ লাভই যদি কারো উদ্দেশ্য হয়, তবে তা সফল হওয়া কঠিন। কারণ নিরানন্দের পরেই শুধু আনন্দের, কর্মের পরেই বিশ্রামের, অসুন্দরের পাশে সুন্দরের এবং কষ্ট বা দুঃখের পরেই সুখের অনুভূতি আসে। যে লোক সব সময় গাড়িতে চড়ে তার পক্ষে গাড়ি চড়ায় কোনো সুখ নেই। যে রোজ ভালো খায় তার পক্ষে ভালো খাওয়াটটা সুখের অংশ বলে মনে হবে না। কাজেই সুখের স্বাদ পেতে হলে আগে কিছুটা দুঃখের অভিজ্ঞতা থাকা চাই। সুখের মতো শান্তিও একটি মানসিক অনুভূতি। পুকুরের পানি শান্ত তার কোনো চাঞ্চল্য নাই কিন্তু নদীর পানি স্থান পরিবর্তনশীল তাই তা অশান্ত। এই অর্থে সব সময় শান্তি আদৌ আমাদের কাম্য নয়। কারণ মানুষ চায় অবস্থার পরিবর্তন করতে। যদি সে নাও চায়, প্রকৃতি থেকেই তার পরিবর্তন হবে।
অভ্যাস- ৭৩ ▌ অজুহাতের ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যর্থ মানুষ:
মানুষকে সুগভীর অধ্যয়ন করলে দেখবেন ব্যর্থ মানুষগুলি এক ভয়ানক ব্যাধিতে আক্রান্ত। সেই ব্যাধির নাম এক্সকিউসাইটিস। আর বেশিরভাগ ‘আমজনতা’র মধ্যে এই রোগের কয়েকটি লক্ষণ অবশ্যই বিদ্যমান থাকে। লক্ষ্য করবেন, এই এক্সকিউসাইটিস কিন্তু একটা সফল মানুষ ও এক ব্যর্থ মানুষের মধ্যে প্রভেদের প্রধান কারণ। আপনি দেখবেন একজন মানুষ যত বেশি সফল, সে ততই কম অজুহাত দেখান। অন্যান্য যে কোনো রোগের মতোই এক্সকিউসাইটিসের যথাযথ চিকিৎসা না হলে তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এই রোগগ্রস্ত মানুষের চিন্তা-ভাবনা অনেকটা এরকম : ‘আমার ভাগ্য খারাপ।’ নিজের এই ব্যর্থতার কি অজুহাত দেওয়া যায়... শিক্ষা কম, বয়স বেশি? দুর্ভাগ্য? ব্যক্তিগত দুর্ভোগ? বউ ভালো না? পরিবারের দোষ ইত্যাদি খুঁজে বেড়ায়। অজুহাতের ব্যাধিতে আক্রান্ত এই ব্যর্থ মানুষটি ‘ভালো’ একটি অজুহাত খুঁজে বের করে সেটাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।
অভ্যাস-৭৪ ▌ ভুল থেকে শিক্ষা:
জীবনের চলার পথে বাধা-বিপত্তি আসবেই। এরূপ বাধা আমাদের এগিয়ে চলার ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয় এবং নম্রতা শেখায়। ভয় এবং সন্দেহ মনকে হতাশার অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়। কোনো কাজ সুসম্পন্ন করতে চাইলে একটি জ্বলন্ত আকাক্সক্ষা দিয়ে শুরু করতে হয়। অল্প আগুন যেমন অনেক উত্তাপ দিতে পারে না, তেমনি দুর্বল ইচ্ছাশক্তি কোনো মহৎ সিদ্ধিলাভ করতে পারে না। প্রস্তুতি আত্মবিশ্বাস তৈরি করে। প্রস্তুতির অর্থ পরিকল্পনা ও অনুশীলন। বিজয়ীরা নিজেদের চাপের মধ্যে রাখেন, সে চাপ প্রস্তুতির। প্রস্তুতি জীবনের যে কোনো ক্ষেত্রে সাফল্য লাভের পথে অনেকটাই এগিয়ে দেয়। জ্ঞানী ব্যক্তিরা নিজের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন; আবার অপরের ভুল থেকেও শিক্ষা নেন। জীবন এত দীর্ঘ নয় যে, কেবলমাত্র নিজের ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলেই চলে; অপরের ভুল থেকেও শিক্ষা নিতে হয়।
অভ্যাস-৭৫ ▌ বিশ্বাসের শক্তি:
ঈগলের বাসায় ছিলো তার চার চারটি ডিম। প্রতিদিন সকালে সে এগুলো রেখে খাবারের খোঁজে উড়ে যেত। একদিন দমকা হাওয়ায় ঈগলের একটি ডিম বাসা থেকে ছিটকে পড়ে গেল। গড়াতে গড়াতে সেই ডিম এসে পড়লো এক মুরগির বাসার উঠোনে। মুরগি সেই ডিমটিকে যতœ করে তা দিতে থাকলো। একদিন সেই ডিম ফুটে ঈগলের একটি সুন্দর বাচ্চাও বের হলো। মুরগির বাচ্চাদের সাথেই ঈগলের বাচ্চাটি বড় হয়ে উঠতে লাগলো। কিন্তু সে ভেতর থেকে যে সবসময় অন্য কিছু অনুভব করতো। আকাশে ঈগলের একটা ঝাঁককে উড়ে বেড়াতে দেখে সে মুরগিকে বললো, ইস, যদি আমিও তাদের মত উড়ে বেড়াতে পারতাম। মুরগি হেসে উত্তর দিলো, তুমি কিভাবে উড়বে? তুমি তো মুরগি এবং মুরগি কখনো উড়ে না। মুরগির এই কথাটিই ঈগল বিশ্বাস করতে শিখলো এবং তার জীবনটা বাকী মুরগিদের মতই কাটিয়ে দিলো। এই গল্পের শিক্ষা হলো: তুমি যা বিশ্বাস করতে শেখো একদিন তুমি তাই হয়ে উঠবে।
অভ্যাস-৭৬ ▌দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনা:
অনেক মানুষকে দেখেছি, যারা ছোটদের কাজ বা কথাকে বিদ্রুপ করে এবং তাদের বিশেষ কোনো অক্ষমতা নিয়ে উপহাস করে। ফলে বাল্যেই ছোটদের মনে আত্মবিশ্বাসহীনতার বিষবৃক্ষ রোপণ করে দেওয়া হয়। তাতে তারা নিজের যোগ্যতার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং হতাশার ফলে অকর্মণ্যে রূপান্তরিত হয়। মোট কথা জীবন থেকে সুখ-আনন্দ পেতে হলে হাসিমুখে জীবন-সংগ্রাম করে যেতে হবে। স্মরণ রাখবেন, যে মন পরিশ্রম করে সুখ পায় না, আনন্দ পায় না- সে মন পশুবৃত্তি পরিপূর্ণ। কী পেলাম, আর কী পেলাম না, সে হিসাব কষে সময় নষ্ট না করে কাজ করে যেতে হবে। দেখবেন, পরম প্রাপ্তি একসময় জীবনকে ভরিয়ে দেবে। সারাদিনের কাজের শেষে পিছনের দিকে তাকিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করুন- আজ আমি কী শিখেছি? আপনার শেখা প্রতিদিনের তথগুলি কোথাও নোট করে রাখুন। সব বিচার-বিশ্লেষণ করার পর আগামিকালের জন্য সংশোধিত পরিকল্পনা করুন।
অভ্যাস-৭৭ ▌ আত্মবিশ্বাসের উপকারিতা:
যদি কোনো মানুষের এই ধারণা থাকে যে, তার মাঝে আরো অনেক লুকানো শক্তি আছে; তাহলে সে যা কাজ করছে, প্রয়োজনে তার থেকে বহুগুণ বেশি কাজ সে অবশ্যই করতে পারবে। আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে কোনো কাজে কৃতিত্ব লাভ করা যায় না। যার যত বেশি আত্মবিশ্বাস, সে তত বেশি কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে। আত্মবিশ্বাসী লোকেরা কখনো উদ্যোগহীন হয় না। প্রতিবারই তারা আত্মবিশ্বাসের অস্ত্র দিয়ে প্রতিবন্ধকতার শৃঙ্খল খ--বিখ- করে থাকে। আত্মবিশ্বাসের উপকারিতা হচ্ছে : ১। আত্মবিশ্বাসে মন সর্বদাই সবল ও নির্ভীক থাকে। ২। আত্মবিশ্বাসে কর্মক্ষমতা দিন দিন বাড়তে থাকবে। ৩। কাজের অহেতুক ভয়-ভীতি চলে যায়। যার আত্মবিশ্বাস নেই, কোনো কাজ আরম্ভ করার পূর্বে তার সন্দেহ হয়, বুঝি কাজটা সফল হবে না। হতাশা, চিন্তায় তার কাজ বিনষ্ট হয়ে যায়। মনে রাখবেন, প্রতিটি মানুষের কাজের চেহারাটি তার আত্মবিশ্বাসের অনুরূপ হবে।
আত্মবিশ্বাসের একটা দুর্বার শক্তি আছে, যে শক্তি প্রাপ্তিকে সহজ করে দেয়। বাজপাখি প্রায় ৭০ বছর জীবিত থাকে। কিন্তু ৪০ আসতেই ওকে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ওই সময় তার শরীরের তিনটি প্রধান অঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়ে। ১. থাবা (পায়ের নখ) লম্বা ও নরম হয়ে যায়। শিকার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ২.ঠোঁটটা সামনের দিকে মুড়ে যায়। ফলে খাবার খুঁটে বা ছিঁড়ে খাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ৩. ডানা ভারী হয়ে যায়। ফলস্বরূপ শিকার খোঁজা, ধরা ও খাওয়া তিনটেই ধীরে ধীরে মুশকিল হয়ে পড়ে। সে প্রথমে তার ঠোঁটটা পাথরে মেরে মেরে ভেঙে ফেলে। একই রকমভাবে নখগুলো ভেঙে ফেলে, আর অপেক্ষা করে নতুন নখ ও ঠোঁট গজানোর। নখ ও ঠোঁট গজালে ‘ও’ ওর ডানার সমস্ত পালকগুলো ছিঁড়ে ফেলে। ১৫০ দিনের যন্ত্রণা ও প্রতীক্ষার পর সে সব নতুন করে পায়। আমাদেরও আলস্য উৎপন্নকারী মানসিকতা ত্যাগ করতে হ্েব বাজের ঠোঁট, ডানা আর থাবার মত। নিজেকে কখনোই হারতে দেবেন না।
আত্মবিশ্বাস বিকাশের তিনটি উপায়।
১) সাফল্যের কথা ভাবুন, ব্যর্থতার ভাবনাকে প্রশ্রয় দেবেন না। কঠিন পরিস্থিতিতে চিন্তা করুন ‘আমি জিতবো’, ‘আমি সফল হবো’ ধারণাটি বদ্ধমূল করে তুলুন। সাফল্যের চিন্তা আপনার মনকে সফল হওয়ার পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে সাহায্য করে। ২) নিয়মিতভাবে নিজেকে মনে করিয়ে দিন যে, আপনি নিজেকে যেমনটি মনে করেন, আপনি কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো। সফল মানুষেরা মহামানব নয়। সাফল্যের জন্য অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার দরকার হয় না। সাফল্য কোনো অলৌকিক ব্যাপার নয়, সৌভাগ্যের সঙ্গেও সাফল্যের কোনো সম্পর্ক নেই। সফল মানুষটিও সাধারণ মানুষ, তবে তার নিজের ওপর, নিজের কাজের ওপর আস্থা আছে। কখনও নিজেকে ছোট করবেন না। ৩) বড় বড় আশা রাখুন। আপনার বিশ্বাসের আয়তন যতখানি, ততটাই বড় হবে আপনার সাফল্যের আয়তন। ছোট ছোট লক্ষ্য স্থির করলে প্রাপ্তিও হবে যৎসামান্য। বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করুন, বিপুল সাফল্য পাবেন।
আমরা যেমন মাছে-ভাতে বাঙালি, জাপানিরাও মাছে-ভাতে জাপানি। কিন্তু আমাদের সাথে জাপানিদের মূল পার্থক্য হল- তাদের লেগে থাকার ক্ষমতা আমাদের চেয়ে শতগুণ বেশি। আমরা ধরি আর ছাড়ি। কিন্তু জাপানিরা কোনো কিছু ১০০% আয়ত্ব আসা পর্যন্ত ছাড়ে না। সহজে আয়ত্ব করার কিছু কৌশল তারা প্রয়োগ করে । এখানে পড়ালেখায় ধৈর্য ও মনোযোগ বাড়াতে জাপানিদের মতো ৫ কৌশল:
শিসা কঙ্কো
প্রায় ১০০ বছর আগে থেকে জাপানের ট্রেনের চালকেরা এই পদ্ধতি অনুসরণ করতেন দুর্ঘটনা এড়াতে। ট্রেন আসার সময়ে খুব জোরে চেঁচিয়ে এবং সঙ্কেত দেখিয়ে সতর্ক করা হত, যাতে ওই সময়ে লাইন পারাপার কেউ না করেন। ইংরেজিতে এর অর্থ হল ‘পয়েন্টিং অ্যান্ড কলিং’। মনোযোগ বাড়াতে এই পদ্ধতির সবচেয়ে কার্যকর বলেছেন গবেষকরা। শিশুরা যেন চেঁচিয়ে ও স্পষ্ট উচ্চারণে পড়ে। প্রতিটি লাইন জোরে জোরে পড়লে তা কানে যায় এবং মুখস্থও হয় দ্রুত। আর জোরে পড়ার সময়ে অন্য কোনও দিকে মন যাবে না। এতে একাগ্রতাও বাড়বে।
জানশিন
পড়ার নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুটি নিয়ে ভাবতে হবে। ওই সময়ে অন্য কোনও কাজ করা যাবে না। পড়তে বসে অন্য ভাবনা মাথায় ঢ়ুকলে মুহুর্তে সেটি থেকে সরে আসতে হবে।
নাইকান
প্রতিদিন নিয়ম করে নাইকান বা আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে, যেমন— কি কি শিখলাম, কোন কোন বিষয়ে পুনরায় রিভাইজ বা চোখ বুলাতে হবে, তালিকা ধরে কোন পড়া কতটুকু নিয়ন্ত্রনে এলো, তা বুঝে নিজেকে নম্বর দিতে হবে।
চৌরেই
চৌরেই-এর অর্থ ‘মর্নিং মিটিং’। রোজ সকালে ঘুম থেকে জাগার পর পড়তে হবে। কারণ, এই সময় মানুষের মস্তিষ্ক ১০০% সার্প থাকে। জ্ঞান-বুদ্ধি বিকাশের এটা খুবই উপযুক্ত সময়।
কাকেইবো
কাকেইবো মানে পড়া বিষয়টি একবার লেখা। এজন্য শিক্ষাকে পড়ালেখা বলে। প্রতিদিন কি কি পড়া শেষ হয়েছে, তা লিখে ফেলতে হবে। পড়াটি ৫০গুণ মনে সেট হবে লেখার মাধ্যমে।
অভ্যাস-৭৯ ▌ ভাইরাল হওয়ার অসুস্থ প্রতিযোগিতা
ভাইরাল হতে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো যোগ্যতা কিংবা বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। তাই উচ্চশিক্ষিত থেকে গ্রামের কৃষক পর্যন্ত পর্যন্ত সবাই ভাইরাল হওয়ার নেশায় অপসংস্কৃতি দিকে ঝুঁকছেন। ফলোয়ার আর ভিউয়ের নেশায় অশালীন কথাবার্তা ও অঙ্গভঙ্গিতে ভিডিও তৈরি করছেন। এসব দেখে দেখে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করছেন অনেক তরুণ, যারা আসক্ত হচ্ছেন ডিজিটাল ডিভাইসে। ফলস্বরূপ, তরুণদের উন্নত রুচিসম্মত চিন্তাভাবনার পরিবর্তে নিচু মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। "এমন সময় আপনি যা করবেন তা হলো ইগনোর। ."নেগেটিভিটি যেখানেই দেখবেন, সেখান থেকেই নিজেকে সরিয়ে নেবেন। এটা দুর্বলতা নয়, বরং নিজের প্রতি দায়িত্বশীল থাকা।" কারণ জীবনে কিছু মানুষ থাকবেই, যাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আবর্জনা ছড়ানো, অন্যের জীবনে বিষ ঢালা। "সব কথার উত্তর দিতে নেই, সবকিছুর প্রতিক্রিয়াও দিতে নেই। অপ্রয়োজনীয় তর্কে যাবেন না, কাউকে কিছু বোঝাতে যাবেন না। কেউ যদি আপনাকে মূর্খ বলে, হেসে বেরিয়ে আসুন। এতে আপনার এনার্জি আর মানসিক শান্তি—সবই বাঁচবে।" শুধু নিজের পথে স্থিরভাবে এগিয়ে যান।",. "নিজেকে বাঁচান অপ্রয়োজনীয় মানুষের আগ্রাসন থেকে। আপনার জন্য আসল মানুষগুলোকে চিনে নিন।
অভ্যাস-৮০ ▌ হতাশ হবেন না।
যদি চার বছর বয়স পর্যন্ত কথা বলতে না পারা, সাত বছর বয়স পর্যন্ত রিডিং পড়তে অক্ষম মানসিক প্রতিবন্ধি হিসেবে ধরে নেয়া বালকটি একদিন আলবার্ট আইনস্টাইন হতে পারে, তাহলে আপনিও কিছু একটা হতে পারবেন। ★ যদি ছেলেবেলায় হরমোন ডেফিশিয়েন্সি, অপুষ্টির শিকার ছেলেটি, যার বাবার চিকিৎসা করানোর মতো টাকা ছিল না, সে একদিন সাফল্যে আকাশ ছুঁতে পারা লিওনেল মেসি হতে পারে, তাহলে আপনার সামনেও নিশ্চিত অনেক দরজা খোলা আছে। ★ যদি নিজের কো¤পানি থেকে নিজেই বরখাস্ত হওয়া দুর্ভাগা ব্যক্তিটি পরবর্তীতে বিশ্বকে পাল্টে দেওয়া স্টিভ জবস্্ হতে পারে, তাহলে আপনারও অনেক কিছু করে দেখাবার বাকি আছে। ★ যদি শ্যমলা হওয়ার কারণে শেতাঙ্গদের ট্রেনে জায়গা না পাওয়া লোকটি একদিন মহাত্মা গান্ধী হতে পারে, তাহলে আপনি কেন দমে যাবেন? ★ যদি সাতাশ বছর নির্জন দ্বীপে কারাবাস করার পর ফিরে আসা লোকটি নোবেল বিজয়ী নেলসন ম্যান্ডেলা হতে পারে তাহলে আপনিও পারবেন।
অভ্যাস-.৮১ ▌ পরিবর্তন করুন নিজের মানসিকতাকে:।
এই গল্পটা নিশ্চয় অনেকবারই শুনেছেন। ‘একটা পুকুরের দুই পাড়ে খুব ভোরে একজন চোর এবং একজন মৌলভী একই সাথে হাত-মুখ ধুচ্ছিলেন। চোরকে দেখে মৌলভী ভাবলেন, এই লোকটি কত ভালো সকাল সকাল ওযু করতে এসেছে। আর মৌলভীকে দেখে চোর ভাবলো, এই লোক নিশ্চয় আমার মতই চোর।’ আপনি নিজের মানসিকতা প্রথমে পরিবর্তন করে নিন। অন্যের ইতিবাচক এবং ভাল দিকগুলো দেখার চেষ্টা করুন। তখন আপনার মনে হবে অন্যেরাও আপনার ভালো দিকগুলোই দেখছে। আপনি কী করছেন তা নিয়ে লোকে অনেক কথাই বলবে। কিন্তু একদিন নিরিবিলিতে বসে ভেবে দেখুন, তাদের বলা কথাগুলো আপনার কোনো উপকার করেছে কি? লোকের ভিত্তিহীন সমালোচনাকে উপেক্ষা করতে শিখুন।
অভ্যাস-৮২ ▌ হীনম্ম্যনতা আপনার আত্ম-উন্নয়নের অন্তরায়। :
আপনি যদি সারাক্ষণ হীনম্ম্যনতায় ভোগেন, নেতিবাচক চিন্তায় আপনার মন আচ্ছন্ন থাকে, আপনি নিজেকে সময় দিতে পারবেন না। নিজেকে ক্রমাগত অন্যের সাথে তুলনা করে আপনি কখনো তার মতো হতে তো পারবেনই না, উপরন্তু তার মতো হতে না পেরে আপনি হতাশায় মুষড়ে পড়বেন। আপনাকে সময় দিতে হবে নিজেকে উন্নত করার জন্য। নিজের শক্তিশালী দিকগুলো খুঁজে বের করে সেগুলোকে আরো বেশি শক্তিশালী করার জন্য। আর নিজের দুর্বলতা, অক্ষমতাকে সক্ষমতায় পরিণত করার জন্য। একজন হয়তো খুব ভালো করে, গুছিয়ে কথা বলতে পারে। যেকোনো আড্ডার আসরের মধ্যমণি সে। একেকজন একেক দিকে পারদর্শী হয়। এখন আপনি যদি সব কিছু নিজের মধ্যে ধারণ করতে না পেরে হাহুতাশ করেন, আপনি ভুল করবেন। সেই আগের বলা কথাই আবার বলবো, “নিজের শক্তির জায়গা খুঁজে বের করুন।
অভ্যাস-৮৩ ▌ শুধু নিজের কথা নয়, অন্যের কথাও ভাবুন:
আমরা সবাই নিজের সুযোগ-সুবিধা, আরাম-আয়েশ, ভালো-মন্দ সবার আগে হিসেব করে নিই। তবে সেটা যদি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রেই মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যায় এবং অন্যর কথা না ভেবে শুধু নিজেরটাই বেশি বেশি ভাবতে থাকি তাহলে তা বেশি স্বার্থপরতায় রূপ নেয়। মূলত নিজের সুবিধার জন্য অন্য কারো ক্ষতি করছি এটাই আসলে স্বার্থপরতা। অনেক সময় মানুষ নিজেরটা এতটাই ভাবে যে অন্যের কথা ভাবতে চায় না। নিজের সুবিধা আদায়ের জন্য সহকর্মী বা পাশের মানুষটিকে অন্যের কাছে ছোট করে। অন্যের জীবনের সাথে নিজের জীবন তুলনা করবেন না। কেউ আপনার সুখের দায়িত্ব নিয়ে বসে নেই। আপনার কাজই আপনাকে সুখ এনে দেবে। মনে কষ্ট পুষে রাখবেন না। কারণ সময়ের স্রোতে সব কষ্ট ভেসে যায়। গরীবকে সাহায্য করুন। দাতা হোন, গ্রহীতা নয়। অন্য লোকে আপনাকে কী ভাবছে তা তাদের ব্যাপার আপনার এ নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। ধরুন কেউ কোন কাজ করতে গিয়ে সামান্য ভুল করে ফেলেছে। হয়তো কোন অন্যায় কথা বলেছে অথবা সামান্য বেয়াদবি করে বসেছে। আর আপনি তখন তার সঙ্গে এমন চোটপাট শুরু করলেন যে, পারলে এখনই তার ধর থেকে গর্দান আলাদা করে ফেলবেন। তার ফোন রিসিভ করেন না, করলেও এমন রাগ দেখান যেন কাছে পেলে ছিড়ে ফেলবেন। ফ্রয়েড বলেন, অপরের কোন দোষ ত্রুটি সহ্য করতে না পারেন, তাহলে কারো সঙ্গে তোমার সম্পর্ক গড়ে উঠবে না বরং যাদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে তারাও পালিয়ে যাবে।
আপনি যখন ক্ষুব্ধ হন, তখন আপনার চারপাশে যাকে পাবেন, তার মুখের উপর বিলাপ করবেন এটা সেটা নিয়ে। রেগে গেলে শরীরের ভিতরে আগুন জ্বলতেই থাকে, তখন আপনি কাউকেই ছাড়বেন না। আপনি চিৎকার করে তো কোন সমস্যার সমাধান করতে পারেন না। বরং আপনার চারপাশের মানুষগুলোকে কষ্ট দিতে থাকেন। ফলে এভাবে চলতে থাকলে আপনার প্রতি চরম আসক্ত মানুষটিও একদিন আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে কোন ব্যাখ্যা না দিয়েই।
অভ্যাস-৮৪ ▌ অতিরিক্ত ভালো মানুষী দেখানো বন্ধ করুন।
কেউ যখনই কোন মেসেজ পাঠায় আপনি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়ে দেন। কেউ ডাকলেই সঙ্গে সঙ্গে তার ডাকে সাড়া দেন। কেউ কিছু চাইলেই তা রেডি করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। আপনি ভাবেন এটাই হচ্ছে প্রকৃত বন্ধুত্ব। কিন্তু ফ্রয়েড বলেন, যা সহজ প্রাপ্য, চাইলেই পাওয়া যায়ঃ তার গুরুত্ব মানুষ দেয় না। আপনি বন্ধুদের কাছে নিজেকে বেশি সহজ লভ্য করে তুলবেন না। তাদের অবচেতন মনে আপনি এই ধারণা সৃষ্টি হবে যে, একে তো চাইলেই পাওয়া যায়। তাই তাকে ধরে রাখার চেষ্টা করার কি দরকার? সবার সাথে সহজে মিশে আপনি ভাবছেন, আপনি সবার কাছের বন্ধু। কিন্তু এতে সবার সাথে সম্পর্ক শীতল হতে থাকে এবং একসময় আপনার গুরত্ব অদৃশ্য হয়ে যায়। আপনি সকলের সঙ্গে অন্তরঙ্গ হতে চান। ঠাট্টা মসকারা করে সবাইকে কাছে টানতে চান। তাই আপনি নিজের কথা বর্ণনা করতে শুরু করেন। নিজের যত অপকর্ম আছে, উল্টাপাল্টা কথা আছে, আপনার যত দুর্বলতা আছে, সব বলতে থাকেন। এতে আপনি ভাবেন, আপনাকে সবাই আপন করে নিয়েছে। কিন্তু নিজের সম্পর্কে আপনার স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে আপনার সম্পর্কে লোকের ধারণা পালটে যায়। এর অর্থ হচ্ছে সবাই তাদের অবচেতন মনে আপনাকে দুর্বল মানুষ হিসেবে চিহ্নিত করছে। এতে তারা চেষ্টা করে আপনাকে এড়িয়ে চলতে।
অভ্যাস-৮৫ ▌ সুখ কি?
সুখী কে? এ প্রশ্নেরও কোনো নির্ধারিত উত্তর নেই। এটা সেই গল্পের মতো। রাজার অসুখ হয়েছে। কোনো ডাক্তার-কবিরাজের ওষুধেই কাজ হচ্ছে না। এক কবিরাজ বললেন, সুখী মানুষের জামা গায়ে দিলেই রাজা ভালো হয়ে যাবে। পাইক- পেয়াদা বেরোলো সুখী মানুষের খোঁজে। কিন্তু হতাশ। ‘সুখেরই পৃথিবী, সুখেরই অভিনয়, আসলে কেউ সুখী নয়’। খুঁজতে খুঁজতে এক কুঁড়েঘরে এক লোক পাওয়া গেল, যিনি সত্যিকারের সুখী। সবাই বলল, ভাই তোমার একটা জামা দাও। রাজার জীবন বাঁচাতে হবে। কিন্তু সুখী মানুষের নির্বিকার জবাব, আমার তো কোনো জামা নেই। তাই তো, জামা না থাকলেও সুখী হওয়া যায়। কেউ এক বেলা খাবার জোগাড় করতে মাইলের পর মাইল হাঁটে, কেউ খাবারের পর তা বার্ন করতে মাইলের পর মাইল হাঁটে। কেউ বছরে একবার পোলাও খেতে সারা বছর অপেক্ষা করে। কেউ হয়তো চাইলে সারা বছরই পোলাও খেতে পারে, কিন্তু তার গ্রিন সালাদ ছাড়া আর কিছু খাওয়ার অনুমতিই নেই।
খী জীবনের জন্য টিপস: ১. প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন। ২. নির্জন কোন স্থানে একাকী অন্তত ১০ মিনিট বসুন। ৩. ঘুম থেকে উঠেই প্রকৃতির নির্মল পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন। সারাদিনের করণীয়গুলো স¤পর্কে মনস্থির করুন। ৪. নির্ভরযোগ্য প্রাকৃতিক উপাদানে ঘরে তৈরি খাবার বেশি খাবেন আর প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাবেন। ৫. সবুজ চা এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ৬. প্রতিদিন অন্তত ৩ জনের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করুন। ৭. গালগপ্প, অতীতের স্মৃতি, বাজে চিন্তা করে আপনার মূল্যবান সময় এবং শক্তি অপচয় করবেন না। ভালো কাজে সময় ও শক্তি ব্যয় করুন। ৮. সকালের নাস্তা রাজার মত, দুপুরের খাবার প্রজার মত এবং রাতের খাবার খাবেন ভিক্ষুকের মত। ৯. জীবন সব সময় সমান যায় না, তবুও ভালো কিছুর অপেক্ষা করতে শিখুন। ১০. অন্যকে ঘৃণা করে মন নষ্ট করবেন না। জীবন খুব ছোট, সকলকে ক্ষমা করে দিন সব কিছুর জন্য। ১১. মনে রাখবেন, সময় যতই ভালো বা খারাপ হোক, তা বদলাবেই।
অভ্যাস-৮৬ ▌গলাবাজী-চাপাবাজী এড়িয়ে চলুন
আপনার মাথায় অনেক পরিকল্পনা আছে, আইডিয়া আছে, অনেক বড় বড় লক্ষ্য আছে। কিন্তু কাজের বেলায় ঠন ঠন। আপনাকে শুধু বড় বড় বুলি আওড়াতে শোনা যায়। শুধু বলেন আগামীমাস থেকেই নেমে পড়বো। তারপর ফাটিয়ে দেব। আপনার এই আচরণে আপনার চারপাশের মানুষগুলো ধীরে ধীরে একটি জিনিস বুঝে ফেলছে। সেটা হচ্ছে, আপনাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তাই আপনার কাছ থেকে কেটে পড়লেই ভালো। ফ্রয়েড বলেন, যারা শুধু পরিবর্তনের কথা বলে কিন্তু কোনো কাজ করে না তারা চারপাশের মানুষের কাছে জন্য চাপাবাজ হিসেবে পরিচিত হয়। মূলত আপনি যখন বড় বড় পরিকল্পনার কথা বলেন তখন আপনি চান তারা আপনার প্রশংসা করুক। কিন্তু তারা দেখে যে, সবকিছুই অন্তঃশ্বাস শূন্য ফাঁকা বুলি। তখন আপনার গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়। াপনাকে সবাই ফালতু ভেবে নেয়।
অভ্যাস-৮৭ ▌ টেনশন দূর করতে হলে:
কাজের সংখ্যা নয়, কাজের উৎকর্ষই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিনে কতগুলো কাজ করতে পারলাম- তার চেয়ে জরুরি হলো কতটা ক’টা কাজ ভালো ও সুসম্পন্ন করা গেলো। কাজের গুরুত্ব ও পরিমাণ বুঝে ঠিক করতে হবে, কোন কাজ কতখানি সময়ে কীভাবে সম্পন্ন করতে হবে। মনে রাখবেন অগোছালোভাবে অনেক কাজ করতে গিয়ে সব কাজই খানিকটা ত্রুটিপূর্ণ খানিকটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়, আর তা থেকে তৈরি হয় টেনশন। এমন কিছু হঠাৎ ঘটতে পারে, যা এড়ানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে পরিস্থিতিকে মেনে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট অবস্থাকেও যে মেনে নিতে পারে, তার হারাবার কিছুই থাকে না। সমস্যা চিরস্থায়ী নয়। মনে করলে দেখতে পাবেন বিগত দিনে আপনি অনেক বড় বড় সমস্যায় দিশেহারা হয়েছিলেন, ভয়ে আতঙ্কে জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছিলেন। সে সব সমস্যাগুলো কি এখন আছে? নিশ্চয়ই নেই। আজকের সমস্যাও আগামিকাল থাকবে না। তখন হয়তো নতুন সমস্যা দেখা দিবে। কাজেই সমস্যায় বিচলিত হবেন না। ভেঙ্গে পড়বেন না। সমস্যাকে ধৈর্যের সাথে মোকাবিলা করুন। সমস্যা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে তা সময়ের উপর ছেড়ে দিন। দেখবেন সেটা নরম হতে হতে সমাধানের নাগালে এসে যাবে। মোট কথা বাস্তবকে মেনে নিন। প্রত্যেক মানুষের অন্তত এমন একজন বন্ধু থাকা উচিত, যাকে মনের কথা বলে হালকা হওয়া যায়। রাগ উত্তেজনা কখনো মনে পুষে রাখতে নেই। এতে কষ্ট ও টেনশনের বাড়বে।
অভ্যাস-৮৮ ▌ ভাবনার আদান-প্রদান:
মনের খোরাক জোগানোর নানা উপায় আছে, দুটি উপায় বলি, প্রথম, আপনার জীবিকার সঙ্গে যুক্ত পেশাদার সংগঠনের সঙ্গে নিয়মিত দেখা সাক্ষাৎ করুন। মনে রাখবেন, যে মনটা শুধুই নিজের ওপর নির্ভরশীল তা পরিপুষ্ট হতে পারে না, দুর্বল হয়ে পড়ে। আপনার পেশা বহির্ভূত অন্তত একটি দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করলে আপনার ভাবনা-চিন্তা প্রসারিত হবে। আপনি বৃহত্তর জগৎটা চিনতে শিখবেন। নিয়মিত অন্যান্য পেশার মানুষের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করলে মন যে রসদ পাবে তা অভাবনীয়, আপনি নিজেই হয়তো আশ্চর্য হয়ে যাবেন।
অভ্যাস-৮৯ ▌ চাহিদা যত বেশি সুখ তত কম: ‘
নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস’। সত্যিকারের সুখের সন্ধান পাওয়া সত্যি কঠিন। কবি-সাহিত্যিকরা সুখের অনেক সন্ধান করেছেন। তবে প্রশ্নটা হলো, সুখ আসলে কী? এ প্রশ্নের উত্তর হাজার হাজার বছর ধরে খোঁজা হচ্ছে। এটার আসলে সঠিক কোনো উত্তর বা মাপকাঠি নেই। কেউ সুখ খোঁজে সাফল্যে, কেউ সুন্দরী নারীতে, কেউ লেটেস্ট মডেলের গাড়িতে, কেউ চকচকে ফ্ল্যাটে, কেউ পার্টিতে, কেউ গানে, কেউ পাঠে, কেউ বিত্তে, কেউ চিত্তে। তবে সুখের সরল সমীকরণ হলো, চাহিদা যত বেশি সুখ তত কম। কিন্তু সরল অঙ্কই যে গরলে ভর্তি তা তো সবারই জানা। অমুকের গাড়িটা আমার গাড়ির চেয়ে সুন্দর, তমুকের ফ্ল্যাটটা দক্ষিণমুখী, অমুক আমার চেয়ে কম যোগ্য হয়েও বেশি বেতন পাচ্ছে, তমুকের স্ত্রী অনেক স্মার্ট, অমুকের সন্তান আমার সন্তানের চেয়ে ভালো ছাত্র; যত তুলনা করবেন, যত মেলাবেন; সুখ আপনার থেকে তত দূরে সরে যাবে।
অভ্যাস- ৯০ ▌ আত্মবিশ্বাসী মানুষের সাথে মিশুন:
এমন মানুষের সাথে মিশুন যারা আত্মপ্রত্যয়ী। আপনি কখনোই আশেপাশের সবাইকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন না। কিছু মানুষ হয়তো বিনা কারণেই আপনার সমালোচনা করবে। আপনি আশেপাশে লক্ষ্য করলে তিন ধরনের মানুষ পাবেন : ১.যারা আপনার কাজকে উৎসাহ দেয়। ২.যারা আপনি কী করছেন তা নিয়ে মোটেই মাথা ঘামায় না। ৩.যারা আপনার ভলো-মন্দ সব কাজেরই খুঁত খুঁজে বের করে। ১ এবং ২ নাম্বার মানসিকতার অধিকারী মানুষকেই আপনি প্রাধান্য দিন, ৩ নাম্বার এর কথা ভুলে যান, কারণ কোনোভাবেই তাদের সন্তুষ্ট করা সম্ভব না। আপনি একবার যদি মনের দিক থেকে নিজেকে ছোট করে ভাবেন, বা নিজের দক্ষতা স¤পর্কে নিজের কাছেই সন্দিহান হয়ে পড়েন, তবে সফলতা অর্জন করা মুশকিল হয়ে পড়বে। তাই ভুলেও কখনো নিজেকে ছোট ভাবা চলবে না। কেবল মন্ত্রের মতো মনে মনে জপ করতে থাকুন আপনি পারবেন, আপনার সে যোগ্যতা আছে।
অভ্যাস-৯১ ▌ যেভাবে ভয়কে জয় করবেন:
ভয়কে জয় করতে ভয়ের কাজটি বারবার চর্চা করে যেতে হবে। যতক্ষণ না মনের জড়তা, উৎকন্ঠা, আতংক কাটে। যেমনÑ গাড়ি চালাতে চাইছেন কিন্ত ভয় আঁকড়ে আছে। কী করবেন? প্রথমে ড্রাইভারের পাশে বসে দেখতে হবে কিছুদিন ক্রমান্বয়ে। তারপর এক-দুই দিন নিজে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে কল্পনা করবেন আপনি চালাচ্ছেন। আশেপাশের যন্ত্রগুলো স্পর্শ করবেন। এরপর সাথে অভিজ্ঞ কাউকে পাশে বসিয়ে সাহস করে চাবি ঘুরিয়ে দিলেন। ব্যাস, ঐদিনই আপনার অর্ধেক ভয় হাওয়া হয়ে যাবে। সফলতার পথে যাত্রা করলে সেই পথে বাধা-বিপত্তি আসবেই, সাথে আপনি হয়তো বারবার হারতও পারেন। তবে সেই হারকে নেতিবাচকভাবে না নিয়ে ইতিবাচকভাবে নিন। আপনি যতবার হারবেন আপনার জেতার সম্ভাবনা তত বেশি বেড়ে যাবে। আর সাথে ফ্রি হিসেবে পাবেন জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার কৌশল। এখানেও আপনার চাই স্থির চিন্তাশক্তি ও অটুট আত্মবিশ্বাস।
অভ্যাস- ৯২ ▌ অন্যের ভিত্তিহীন অপমানজনক আচরণ এড়িয়ে চলবেন যেভাবে:
# রেগে যাবেন না। অযথা কেউ যদি আপনাকে কথার মাধ্যমে আঘাত করে আপনি কেনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে ব্যাপারটা এড়িয়ে যান। # বন্ধুদের মধ্যে কথোপকথনের দ্বারা যদি অপমানিত বোধ করেন তাহলে হাসিমুখে তাদের আলোচনায় অংশগ্রহণ করুন এবং আপনি যে তাদের কথায় আঘাত পেয়েছেন সেটা বুঝিয়ে বলুন। # প্রতিনিয়ত যারা আপনাকে অপমানের চেষ্টা করে তাদেরকে নিজ থেকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। মনে-প্রাণে বিশ্বাস করুন যে সবার মধ্যেই অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা থাকে। আমরা শুধু সেই ক্ষমতা ঠিকঠাক চিনতে পারি না এই যা। তাই যদি কেনো প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হন তাহলে একবার চোখ বন্ধ করে মন থেকে ভাবুন। খুঁজে বের করুন এমন কোনো ঘটনা বা জীবনের এমন কোনো অভিজ্ঞতার কথা যা আপনাকে সব সময় অনুপ্রেরণা দেয়। দেখবেন কোনো কিছু আপনার সফল হওয়ার ¯পৃহাকে আটকে রাখতে পারবে না।
অভ্যাস-৯৩ ▌ আপনি কি করেছেন বা করতে চাইছেন, তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিন, মনে মনে রাখবেন না।
আপনি নিজেকে একজন ভালো মানুষ মনে করেন। কারণ আপনি মিথ্যা বলেন না। কারো ক্ষতি করেন না। খারাপ কাজও করেন না। এমনকি আপনি কারো গীবতও করেন না। আপনি চান আপনার চারপাশের মানুষেরা আপনাকে ভালো মানুষ হিসেবেই চিনুক। কিন্তু না হঠাৎ দেখলেন আপনার চারপাশের মানুষগুলো আপনার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আপনাকে কেউ পাত্তা দিচ্ছে না । আপনি ভাবছেন আমি আবার কি করলাম? সবাই এমন করছে কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ফ্রয়েড বলেন আপনার কতটা ভালো মানুষ, সেটা মানুষ বিচার করে আপনার আচরণ ও কথাবার্তা দেখে। আপনি মনে মনে হয়তো ভালো কিছু করতে চেয়েছিলেন কিন্তু কথায় ও আচরণে সেটি ফুটিয়ে তুলতে পারেননি, তাই উল্টো হয়ে গেছে। কোনো বিষয় নিয়ে স্পঠিক সময়ে নীরবতা কিংবা একটি ভুল বাক্য মানুষের মনে অনাকাঙ্ক্ষিত চিত্র তুলে ধরে। আর ওই চিত্রটি আপনার পুরো গ্রহণযোগ্যতাকে মাটি করে দেয়। আপনি বুঝতেও পারবেন না যে, কখন ও কেনো আপনার বিরুদ্ধে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল।
অভ্যাস-৯৪ ▌নিজের ক্ষমতা বিকশিত করার পরামর্শ:
১.নিজেকে বলুন ‘পথ একটা নিশ্চয়ই আছে।’ বিশ্বাস করুন, ‘এই সমস্যার সমাধানের একটা না একটা উপায় নিশ্চয়ই আছে।’ আপনি দেখবেন সমাধানের জন্য গঠনমূলক ভাবনা-চিন্তার উদ্ভব হয়েছে। ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।’ এই উক্তিটি গুরুত্বপূর্ণ, এতে আস্থা রাখুন। সমস্যা তখনই দুঃসাধ্য হয়ে ওঠে, যখন মনে করা হয় যে তার কোনো সমাধান নেই। বিশ্বাস করুন, সমাধান পাওয়া সম্ভব। ২.একটু পিছিয়ে এসে আবার নতুন উদ্যমে নতুন করে চেষ্টা করুন। বাধা পাওয়া মাত্র সম্পূর্ণ প্রকল্প ছেড়ে পালাবেন না, বরং একটু দূরে সরে মনটাকে সজীব করে তুলুন, সহজ কিছু করুন, যেমন গান শোনা, হাঁটতে যাওয়া বা ঘুমানো। আবার যখন আগেকার কাজটা নিয়ে বসবেন, দেখবেন আপনিই সমাধান খুঁজে পেয়েছেন। ৩.সাফল্যের পথ খুঁজে বার করতে নিজের ভুলত্রুটির অধ্যয়ন করুন। হেরে গেলে সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিখুন, যাতে পরেরবার আপনার জিত হয়।
অভ্যাস-৯৫ ▌ পাগলামির মিশ্রণ ছাড়া কোন প্রতিভার জন্ম হয় না:
সক্রেটিস পাগলদের ২টি ভাগে ভাগ করেছিলেন। প্রথমটি স¤পূর্ণভাবে জৈবগত সমস্যা আর দ্বিতীয়টি মূলত সামাজিক রীতিনীতি বিবর্জিত আচরণের পর্যায়ভুক্ত। সক্রেটিস দ্বিতীয় ভাগটিতে শিল্পী, প্রেমিক, ধর্মান্ধ, ভাববাদী অথবা নবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। পরবর্তীতে প্লেটো বললেন, দ্বিতীয় ভাগটির উন্মাদনা যতক্ষণ পর্যন্ত না ধ্বংসাত্মক হিসেবে বিবেচিত হয়, তার আগপর্যন্ত এটি বরং সামাজিক ক্ষমতা বৃদ্ধিতেই সাহায্য করে। অর্থাৎ মানব সভ্যতা বিকাশে এই দ্বিতীয় ভাগের পাগলদের ভূমিকাই মূখ্য। পাগলামি না থাকলে কখনোই কিছু সৃষ্টি করা সম্ভব হবে না। আপনার চিন্তাশক্তি অটুট ও স্থির রাখতে দরকার নিজের উপর নিজেরই আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার পাগলামি। আপনি নিজেকে কখনো দুঃখী আর নিঃস্ব ভাববেন না। নিজেকে যদি সব সময় দুঃখীদের কাতারের কেউ ভাবতে পছন্দ করেন তাহলে গঠনমূলক চিন্তা ভাবনা কখনোই আপনার মাথায় আসবে না।
অভ্যাস-৯৬ ▌ যারা কাজ করে তাদেরই সাফল্য আসে:
অসফল মানুষেরা সাধারণ দু’রকমের; যারা চিন্তা না করে কাজ করে অসফল হয়েছে। দ্বিতীয়ত, যারা চিন্তা করে কিন্তু কখনো কোনো কাজ করেনি। জীবনের পথে চলতে গিয়ে চিন্তা করার ক্ষমতাকে ব্যবহার না করা; লক্ষ্যস্থির না করে গুলি ছোঁড়ার মতো অর্থহীন। সাফল্য লাভের জন্য কোনো যাদুদ- নেই। বাস্তব জগতে যারা কাজ করে তাদেরই সাফল্য আসে। কঠিন শ্রম ছাড়া কোনো সাফল্য নেই। প্রকৃতি পাখিদের খাবার সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এগুলি তাদের বাসায় পৌঁছে দেয়নি। খাবার সংগ্রহের জন্য পাখিদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। শৃঙ্খলাহীন ব্যক্তি অনেক কিছু একসঙ্গে করতে চায়। কিন্তু কিছুই করে উঠতে পারে না। শৃঙ্খলার অর্থ নির্দিষ্ট লক্ষ্যে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা। জলপ্রপাত থেকে কোনো জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে না যদি তার স্রোতের শক্তিকে শৃঙ্খলিত করা না যায়। শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপনের জন্য স্বাধীনতাকে খর্ব করতে হয়।
অভ্যাস-৯৭ ▌ ব্যর্থতা সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর পথ:
একটি ইংরেজি প্রবাদে বলে, ‘শান্ত সমুদ্রে কখনো দক্ষ নাবিক হওয়া যায় না।’ প্রথমে সমস্ত সমস্যাই কঠিন মনে হয়, কালক্রমে তা সহজ হয়ে আসে। জীবনে আমাদের অবস্থান দিয়ে সাফল্য বিচার হয় না। সেই অবস্থানে পৌঁছতে গিয়ে যে সমস্ত বাধা অতিক্রম করতে হয় সেই বাধা অতিক্রমের ক্ষমতা দিয়েই সাফল্যের পরিমাপ করা হয়। আমরা অপরের তুলনায় কীভাবে কাজ করছি তাই দিয়ে সাফল্য বিচার করা যায় না। আমরা আমাদের শক্তি ও সামর্থ্যরে কতটা ব্যবহার করতে পেরেছি তাই দিয়েই সাফল্য নির্ধারিত হয়। ব্যর্থতা সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর পথ। সিনিয়র টম ওয়াটসনের কথায়, ‘যদি সফল হতে চাও তবে ব্যর্থতার হার দ্বিগুণ করে দাও।’ ইতিহাস পড়লে দেখা যায় যে, সমস্ত সাফল্যের কাহিনীর সঙ্গে আছে ব্যর্থতার কাহিনীও। কিন্তু সফলতা লাভের পর ব্যর্থতা মানুষের নজরে পড়ে না। সবাই মনে করে লোকটি ভাগ্যবান; ‘ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় ছিলো বলেই সফল হয়েছে।
অভ্যাস-৯৮ ▌ ভালোবাসায় অসম্ভবও সম্ভব হয়:
মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে কাজ করে- আপনার প্রয়োজনে নয়। র্যালফ ও তার ছেলে একদিন একটি বাছুরকে গোয়ালে নিয়ে যাবার চেষ্টা করছিলেন। বাবা ও ছেলে মিলে অনেক টানাটানি ধাক্কাধাক্কি করে ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। বাছুর অনড়। একটি ছোট্ট মেয়ে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। সে এসে তার ছোট্ট আঙ্গুলটি ধীরে ধীরে বাছুরটির মুখে বুলিয়ে দিলো, পাশ থেকে কিছু ঘাসপাতা ছিঁড়ে এনে বাছুরের মুখে দিলো। বাছুরটিও স্নেহাপ্লুপত হয়ে মেয়েটিকে অনুসরণ করে গোয়ালে গিয়ে ঢুকলো। শুধু অধ্যবসায় নয়, সঙ্গে নতুনভাবে পরীক্ষাও করুন। লক্ষ্যে অবিচলিত থাকুন, তবে একই পাথরে মাথা খুঁড়ে লাভ নেই। নতুনভাবে কাজ করে দেখুন, পরীক্ষা করে দেখুন। মনে রাখবেন, সব পরিস্থিতির একটা ভালো দিক আছে। সেটা খুঁজে বের করুন। ভালো দিকটা দেখুন, হতাশা ও নিরাশাকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেবেন না।
অভ্যাস-৯৯ ▌ উত্থান-পতন মেনে নিয়ে লেগে থাকুন:
সব সময় মনে রাখবেন আপনি আজ যে অবস্থায় আছেন তার থেকে অনেক খারাপ অবস্থায় আছে পৃথিবীর অনেক মানুষ। আজ যদি আপনি কারও উপকার করেন তাহলে তার ভালো প্রতিদান পাবেন। আর যদি কারও প্রতি অন্যায় করেন বা ঠকিয়ে কিছু করেন, তাহলে তা হবে আত্মঘাতী। তাই যতদূর সম্ভব পারা যায় মানুষের উপকার করার চেষ্টা করুন। জীবনের উত্থান-পতন আছে। যদি আপনি কোনো একটি কাজে প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন তাহলে হতাশ না হয়ে বরং ভাবুন কী কারণে তা ব্যর্থ হলো। তাহলেই তা অন্য নতুন কোনো উপায়ে শুরু করা যায়। জীবনে যত বেশি উত্থান-পতন হবে, আপনার লক্ষ্য ততই নিকটে আসার মতো আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে। কখনো হাল ছেড়ে দেবেন না। কারণ, আপনি জানেন না, আপনার লক্ষের কত কাছাকাছি আপনি আছেন। ক্রুটি সংশোধন করে করে কাজ করতে থাকুন।
অভ্যাস-১০০ ▌ অন্যকে খুশি করতে পয়সা খরচ যে কারণে অর্থহীন:
স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু এবং সহকর্মীদের খুশি করতে সবাই বেশ অর্থ খরচে প্রস্তুত থাকেন। অথচ এটা অর্থহীন পয়সার অপচয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কারো জন্যে পয়সা খরচ করে বড় একটা উপহার কিনলে অল্প সময়ের জন্যে খুব ভালো লাগবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে নয়। অর্থকষ্টে না থাকতে চাইলে এসব অর্থ সঞ্চয় করে রাখুন। মানুষের অর্থনৈতিক জীবনটা অনেক বেশি বাস্তবিক। তাই হিসাব করে খরচ করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে নিজের কাছে অর্থ থাকাটাই পুরস্কারের মতো। অর্থ খরচ করেও কাউকে স্থায়ীভাবে তুষ্ট করা যায় না। তাই অর্থ খরচ শেষ পর্যন্ত অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। বন্ধুত্ব ধরে রাখতে দামি উপহার শর্ত হতে পারে না। আপনি যেমন তেমন মানুষটাকেই গ্রহণ করে নেবেন তারা। এর জন্যে তাদের দামি জামা বা বিশেষ উপহার প্রদান বা অর্থ খরচ করে দামি রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে হবে না।