অভ্যাস-১০১  ▌মানসিকভাবে শক্তিশালী মানুষরা যে কাজ করেন না: 

১. নিজের জন্য দুঃখবোধ করে সময়ের অপচয় করেন না, নিয়ার ভালো দিকগুলো খোঁজে বের করে তারা। ২. হাল ছেড়ে দেন না-নিজের জন্য উঠে দাঁড়ায় বারা বার। ৩. তারা পরিবর্তনে লজ্জা পান না-পরিবর্তন অনেক সময় আতঙ্কের কারণ হতে পারে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন না করলে অন্যরা তাকে ছাড়িয়ে যাবে, সে ভয়ে সে থাকে। ৪. নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না এমন কোনো বিষয়ে তারা মনোযোগ দেন না- সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা না করে বরং নিজের পরিবেশ-পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে তারা। এতে সুখ বাড়ে, মানসিক চাপ কমে, নতুন সুযোগ তৈরি হয় এবং বেশি সাফল্য অর্জিত হয়। ৫. তারা অতীতে বাস করেন না-অতীতে যা ঘটে গেছে তা কখনোই বদলানো সম্ভব নয়। অতীতে বাস করাটাও আত্মবিনাশী। যা বর্তমানকে উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত করবে এবং বিষণœতায় আক্রান্ত করে। ৬. ব্যর্থ হলেই হাল ছেড়ে দেন না-ব্যর্থতা অতিক্রম করেই  সে সব সময় সামনে এগিয়ে যেতে থাকে।


অভ্যাস- ১০২ ▌যেসব কথা বন্ধুকে কখনো বলবেন না:  

নিজের ঘরের সব কথা বন্ধুকে বলে দেবেন না।  ১. সঙ্গীর সঙ্গে যে বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছে, সেটি ভুলেও বন্ধুকে বলবেন না। ২. অনেকে শারীরিক স¤পর্কের কথা বন্ধুকে না জানানো পর্যন্ত শান্তি পায় না। এটা আপনার এবং আপনার সঙ্গীর জন্য খুবই অস্বস্তির বিষয়। ৩. যেসব গোপন কথা সঙ্গী আপনাকে বলে সেগুলো বন্ধুকে বলা ঠিক না। আপনার বন্ধু ঠিকই অন্যকে বলে বেড়াতে পারে এসব কথা। ৪. কোনো বিষয় নিয়ে পরিবারের মানুষদের সঙ্গে ঝগড়া হলেও বন্ধুকে জানাবেন না। এতে আপনার পারিবারিক কলহের কথা সবাই জেনে যাবে। ৫. আপনাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন, সেটা বন্ধুর না জানলেও চলবে। অযথা নিজেদের অস্বচ্ছলতার কথা বন্ধুকে জানিয়ে সঙ্গীকে ছোট করবেন না। আপনার সামনে বন্ধু সান্তনা দিলেও পিছনে গিয়ে ঠিকই হাসাহাসি করবে। ৬. সঙ্গীর খারাপ অভ্যাসগুলো বন্ধুকে না জানানোই বুদ্ধিমানের কাজ। এতে আপনার সঙ্গীকে আপনার বন্ধুর শ্রদ্ধাবোধও কমে যাবে, যা আপনার জন্যও লজ্জাজনক।



অভ্যাস-১০৩  ▌নিজের মত থাকুন। আপনি আপনার টাইম জোনে আছেন।

শুনেছি, যে মানুষটা মাত্র ২৫ বছরেই বড় এক কো¤পানির সিইও হয়েছিলেন, তিনি বেঁচেছিলেন মাত্র ৫০ বছর। এর বেশি আর থাকা হলো না এই সুন্দর পৃথিবীতে। আরেকজন আছেন, যিনি সিইও যখন হলেন, তখনই তার বয়স ৫০। মানুষটা বেঁচে ছিলেন ৯০টা বছর! বেঁচে থাকাই তো বড় কথা।

বেঁচে থাকলে আপনার টাইমজোন আসবেই। অল্পতেই সব কেউ পেয়ে গেলো মানে সে আপনার চেয়ে ভালো আছে এমন তো নয়। আবার আপনি যা চান সেটা পাননি বলে আর কখনো পাবেন না, এমনও নয়।

আপনি আপনার মতোই থাকেন; আপনার মতো করে আপনার গতিতেই কাজটুকু মন দিয়ে করে যান। দেখেন কি হয়! যাদের দেখে আপনি শুধু আফসোস করেন, জেনে রাখেন তারা তাদের টাইমজোনে কাজগুলো করছে। আপনার সাথে নাও মিলতে পারে কিংবা আপনি তাদের সাথে তাল না-ই মিলাতে পারেন। আপনি শুধু আপনার টাইমজোনে থাকেন। সময় আসবেই।

আপনি খুব পিছিয়ে নেই, আবার আপনি কারো চেয়ে খুব বেশি এগিয়েও নেই। আপনি আপনার সময়ে আছেন। আর এটাই আপনার টাইম জোন। 

 

অভ্যাস-১০৪  ▌বয়সের ভারে বৃদ্ধ না হয়ে বরং কাজের ভারে যুবক থাকার চেষ্টা করো।

বৃদ্ধ হবার অর্থ অচল হয়ে থাকা। মানুষ কোনো কিছু না করলে তাকে অচল বলা যায়। এখানে কিছু করার অর্থ কোনো আয় করা নয় বরং কোনো কাজে লেগে থাকা। কারও বয়স যদি হয় ২০ আর সে কোনো কাজ না করে তাহলে তার মূল বয়স হবে ৬০। আবার কারও বয়স যদি হয় ৮০ কিন্তু সারাদিন কোনো না কোনো কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখে, তবে তার বয়স দাঁড়ায় ৩০ বছরে। কারণ সাধারণত ৩০ বছরের যুবকেরা সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকে।

জীবনে এখনও অনেক পথ তোমাদের পাড়ি দিতে হবে। এখানে কল্পনাকে প্রশ্রয় দেবে না, মনের মাঝে নানারঙের স্বপ্ন না এঁকে বাস্তবতার ফানুস উড়াবে। যারা কাজ না করে শুধু স্বপ্ন নিয়ে পড়ে থাকে, তারাই বাস্তবতার মোকাবেলা করতে পারে না। কিন্তু যারা বাস্তবতায় বিশ্বাসী তারাই এ জগৎসংসারে টিকে থাকে। 

কোনো কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত না করেই আমরা কেন জানি নিজ ক্যারিয়ারকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই। এই মনোভাবের কারণেই নিজেকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিই আমরা, যার জন্য অলসতা আর অমনোযোগিতা আমাদের মাঝে ভর করে। 


অভ্যাস-১০৫  ▌কাউকে হেয়, তুচ্ছ বা ছোট করবেন না। 

শৈশবে বিভিন্ন ভয়ের কল্পকথা, ধর্মীয় ভীতিকর কাহিনী দিয়ে কারো মনে ভয়ের জায়গা তৈরি করবেন না। কাউকে হেয়, তুচ্ছ বা ছোট করা বা দমিয়ে রাখবেন না। তাহলে তার মানসিক ও শারিরীক বৃদ্ধি ব্যাহত হবে এবং তার সৃষ্টিশীল চেতনা শক্তির ধীরে ধীরে মৃত্যু হবে। 


অভ্যাস.১০৬ । কাজে লাগাতে জানলে ময়লাও কাজে লাগে...


যত বেশি বেশি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যায়, ততো বেশি নিজেকে বদলানোর সুযোগ তৈরি হয়। সবার সক্ষমতা সব ক্ষেত্রে সমান না। আইনস্টাইন বলেছিলেন, একটা মাছকে যদি গাছ বাইতে বলা হয়, তাহলে সে সারাজীবন ধরে গাছ বাওয়ার চেষ্টা করবে, আর ভাববে, এই দুনিয়ায় তারচেয়ে অক্ষম, অথর্ব কেউ নাই। কিন্তু তাকে পানিতে সাঁতার কাটতে দিলে? তখন সে কি আবিষ্কার করবে? এটাই হচ্ছে বিষয়। সবাই কোনো না কোনো জায়গায় সামর্থ্যবান। কিন্তু তাকে তার সেই শক্তির জায়গাটা বুঝতে হবে। 


অভ্যাস- ১০৭ জীবনের লক্ষ্য অর্জনে দৈনন্দিন কর্মসূচি তৈরি করুন।

আপনার জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য কী? লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাওয়ার আগে সেই পথ সম্পর্কে একটি ধারণা পেতে আপনাকে বিভিন্ন তথ্য কালেকশন করে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। আর সেই পরিকল্পনাগুলোকে ছোট ছোট স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্যে পরিণত করুন, যা হতে পারে বার্ষিক, মাসিক এমনকি দৈনন্দিন জীবনের অংশ! নিজেকে প্রশ্ন করুন, ‘আজকের দিনশেষে আমার অর্জনের খাতায় কি কি দেখতে চাই?’

 

অভ্যাস- ১০ ▌প্রতিটি মানুষকে বুঝতে চেষ্টা করুন

এই গ্রহের প্রতিটি মানুষ আলাদা এবং তাদের চাহিদা আলাদা, পছন্দ-অপছন্দ আলাদা, চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপ্তিও আলাদা। আপনি ভাবলেন, এই মানুষটির সাথে একবেলা হাঁটতে গেলে ভালো হয়, কিন্তু দেখা গেল হাঁটাহাঁটি তিনি চরম অপছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে আপনার হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই কারো কারো সঙ্গে রিলেশন গভীর করার জন্য সেই মানুষটিকে বুঝতে পারাটা জরুরি। আপনার কাছে যে মেয়েটি পিংক রঙের একটি ব্যাগ চাইছে, তাকে সেটা যদি কিনে দেন, তাহলে তার সঙ্গে রিলেশন গভীরতা অনেক বেড়ে যেতে পারে। 


অভ্যাস- ১০ ▌নেওয়ার পূর্বে দেওয়া (গিভ অ্যান্ড টেক )


সকল সম্পর্কের ক্ষেতে গিভ অ্যান্ড টেক কৌশল প্রয়োগ করুন। জোর করে কারো কাছ থেকে কিছু নেওয়া ক্ষমতাবানদের পক্ষেও বিপজ্জনক। ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাববে। তাই পাওয়ার পূর্বে দিতে শিখুন। এটা পাওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। সত্যিকার উপহার, উদার কাজ, প্রশংসা, তোষামোদ, সৎ স্বীকারোক্তি- তারা যা নিতে চান, তা-ই দিন।


প্রাচীন চীনে চেং-এর ডিউক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, ক্রমবর্ধমান ক্ষমতাশীল ও উন্নত ‘হু রাজ্য’ কেড়ে নিতে হবে। কাউকে এটা না বলে হু-র বৃদ্ধ শাসকের সঙ্গে তার যুবতি মেয়ের বিয়ে দিলেন। তারপর তিনি পরিষদ সভা ডেকে মন্ত্রীদের বললেন, ‘আমি একটা সামরিক অভিযানের কথা ভাবছি। কোন দেশ আক্রমণ করা যায়?’ তার প্রত্যাশা মতোই একজন মন্ত্রী বললেন, ‘হু রাজ্য ছাড়া আমরা সেরা হতে পারব না।’ ডিউক ক্ষোভ দেখানোর ভান করে বললেন, ‘হু এখন আমার আত্মীয় দেশ। আপনি কেন তা আক্রমণ করার পরামর্শ দিচ্ছেন?’ অনৈতিক মন্তব্যের জন্য তিনি ঐ মন্ত্রীর সাজার ব্যবস্থা করলেন। হু-র শাসক এ কথা শুনলেন। হু-র সততার অনন্য দৃষ্টান্ত এবং তার মেয়ের সঙ্গে নিজের বিয়ের কথা ভেবে আত্মকের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য তিনি কোনো সতর্কতা অবলম্বন করলেন না। কয়েক সপ্তাহ পরে ডিউক বাহিনী হু-রাজ্য দখল করে নিলো। খুব কঠিন শত্রুতা বশ করার কার্যকরী উপায় হচ্ছে, তাকে কিছু উপহার দেয়া। উপহার আমাদের মধ্যেকার শিশুটিকে বাইরে নিয়ে আসে। তাই সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনের প্রতিরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে। এই জন্য বলা হয়, ‘আপনি যখন উপহার নিতে যাচ্ছেন, বিপরীতে আপনাকে কিছু না কিছু দিতে হবেই। 


অভ্যাস-১০ ▌আশা যেখানে নেই, ভালোবাসা সেখানে থাকে না।


রাশিয়ান উপকথাঃ এক কৃষকের বাগানে একটি আপেল গাছ ছিলো। তাতে কোনো ফল ধরতো না। কিন্তু সেখানে কিছু পাখি বাস করতো। তিনি এটা কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং কুড়াল হাতে নিয়ে গিয়ে গাছের গোড়ায় জোরে কোপ বসালেন। পাখিরা অনুনয় করে তাকে যে, গাছটি তাদের আশ্রয় দেয়, না কাটার জন্য অনুরোধ করলো। কিন্তু তিনি তাদের অনুরোধে কোনোরকম কান না দিয়ে তার কুড়াল দিয়ে গাছে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় কোপও দিলেন। তখন তিনি লক্ষ্য করলেন অনেকগুলি মৌমাছি তাকে ঘিরে ধরেছে। উপরের দিকে তাকিয়ে মধুপূর্ণ একটি মৌচাক দেখলেন। তিনি হাতের কুড়াল ফেলে দিলেন। আশায় তার বুক ভরে উঠলো। খুশিতে গাছে সার-পানি দেয়া শুরু করল।

মানুষ মাত্রই স্বার্থকে কেন্দ্র করেই চলে। যেখানে আশা নেই, সেখানে ভালোবাসা থাকে না। যেখানে স্বার্থ থাকে না, সেখানে কান্না, অনুনয় আকুতি কোন কিছুই কাজে দেয় না। মানুষ যখনই স্বার্থের লোভ দেখেন, তখনই সব সহজ করে দেন। 


অভ্যাস- ১১ ▌অন্য বক্তির স্বার্থ বুঝুন, নয়তো হতাশ হবেন

আপনার ক্ষমতা লাভের জন্য আপনার থেকে বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন লোকদের কাছ থেকে বারবার সাহায্য চাওয়ার প্রয়োজন পড়বে। এই সাহায্য চাওয়ার একটা পদ্ধতি আছে, যাদের কাছে সাহায্য চাইছেন তাদের স্বার্থ বোঝা। অধিকাংশ লোকই এতে সফল হয় না, কারণ তারা তাদের নিজের প্রয়োজন এবং নিজের চাওয়ার মধ্যেই বন্দী থাকে। তারা ধরে নেন যে, যার কাছে তারা সাহায্য চাইছেন, সেই বড় নেতা নিঃস্বার্থভাবে তাদেরকে সাহায্য করবে। যা তারা উপলব্ধি করে না, তা হলো এই, সব থেকে ক্ষমতাশালী ব্যক্তিও নিজের প্রয়োজনের পিঞ্জরে আবদ্ধ থাকে এবং আপনি যদি তার স্বার্থ না দেখেন, তাহলে তিনি আপনাকে হতাশ করবে। আপনি যদি নেতাকে বোঝাতে পারেন যে, আপনি কিভাবে তার প্রয়োজন মেটাতে পারেন বা তার কাজ করে দিতে পারেন,; আপনাকে সুবিধা ও সাহায্যের জন্য তার বাধা যাদুর মতো উড়ে যাবে। কৃতজ্ঞতার তার দিয়ে সম্পর্ক জোড়া লাগাবার চেষ্টা করো না , পারস্পরিক স্বার্থ রক্ষা হয় এমন উপকরণ দিয়ে সম্পর্ক গাঁথুন, তা কিন্তু সহজে ছিঁড়বে না। 


অভ্যাস- ১১অন্যের গোপন কথা এবং সুপ্ত ইচ্ছের কথা জানতে চেষ্টা  করুন।

যদি আপনার কখনো মনে হয় যে, কোনো ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলছেন, আপনি এমন ভাব করুন যে, তার প্রতিটি কথা আপনি বিশ্বাস করছেন। এটা তাকে আরো বলতে উৎসাহ দেবে; তিনি তার বক্তব্যে আরো উদ্দীপ্ত হবেন এবং শেষে নিজের ক্ষতি করবেন। আবার যদি আপনার মনে হয় যে, কেউ আংশিক সত্যি কথা বলছেন, খানিকটা লুকোচ্ছেন, আপনি এমন ভাব দেখান যে, তার কথা বিশ্বাস করেননি। আপনার বিরোধিতা তাকে বাকি সত্যাটা বলতে এবং আপনার অবিশ্বাস ভাঙাতে প্ররোচিত করবে। জ্ঞানী লোকেরা আপনাকে তাদের চিন্তা, আবেগ এবং পরিকল্পনার কথা বলবে না। তাদের দুর্বলতা, গোপন উদ্দেশ্যসমূহ তারা গোপন রাখে। ফলে আপনি ধারাবাহিকভাবে অন্ধকারে থাকেন। কাজেই, আপনি কি করছেন বা কি করবেন সেটা  অন্যদের বুঝতে না দিয়ে, তাদের গোপন কথা এবং সুপ্ত ইচ্ছের কথা জানতে চেষ্টা করতে হবে। নিজের মনের কথা খুলে অন্যদের বলার ভান করে, আপনি তাদেরকে তাদের গোপন কথা প্রকাশ করার জন্য প্রস্তুত করবেন। 

কাউকে খাটো করে দেখবেন না কাজেই শত্রুকে কোনো সুযোগই দেবেন না। আপনি মাঝপথে থামার মতো নির্বুদ্ধিতা করবেন না। যদি কোনো ভাইপার আপনার পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে জীবন্ত ছাড়া পায়, আপনাকে দ্বিগুণ বিষ ঢেলে কামড়াবে। দুঃসময়ে বিষ বেশি শক্তিশালী হয়। 


অভ্যাস- ১১ ▌নিজেকে রক্ষা করার জন্য চারিদিকে দুর্গ নির্মাণ করবেন না

রাজা [ষোড়শ লুই]। উচ্চ আভিজাতরা যাতে তার সভায় থাকেন শুধু তাই খেয়াল রাখতেন না, তিনি নিম্ন অভিজাতদের সর্বদা খুঁজতেন। সবকিছু খেয়াল করতেন। অভিজাতরা স্থায়ীভাবে সভায় না থাকলে তিনি অসন্তুষ্ট হতেন এবং যাদের খুব কম দেখা যেতো তারা তার রোষে পড়তেন।

তিনি তার কাছে আসার সমস্ত মানুষ জনকে আন্তরিকতা দিয়ে কাছে টেনে রাখতেন, কখনো কাউকে খবরদারি, কটু কথা বলা, রাগ দেখানো কিংবা অভদ্রতা দেখাতেন না। তিনি মনে করতেন, নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত দুর্গ তৈরি করা আসলে আপনাকে সাহায্য পাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে।

 পরিবর্তে নিজেকে অন্যের কাছে মেলে ধরুন। পুরনো বন্ধু খুঁজুন, নতুন বন্ধু করুন, নিজেকে আরো বিভিন্ন মহলে প্রবেশ করান। শত শত বছর ধরে এটাই যোগ্য নেতাদের কৌশল। আপনি অন্যদের সঙ্গে যত মিশবেন, আপনি তত উদার ও সহজ হতে পারবেন। আপনাকে যত্রতত্র যেতে হবে, বিভিন্ন মহলে ও বিভিন্ন ধরনের লোকের সঙ্গে মিশতে হবে। কোথাও স্থায়ী না হয়ে আপনি সর্বদা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ্রুঘুরে বেড়ান। দেখা গেছে যেসব ব্যক্তি শৈশবে বাবার কর্মসূত্রে বা অন্য কারনে বিভিন্ন জায়গায় বেড়ে উঠেছেন, তারাই পরবর্তীতে সফলতা পেয়েছেন। যেসব ভাড়াটিয়া ঘুরে ঘুরে বাসা পাল্টিয়ে থাকেন, তাদের সন্তানরা বাস্তব ক্ষেত্রে হিরো হয়। 


অভ্যাস- ১১ ▌কারোর পক্ষ অবলম্বন করে বসে থাকবেন না

বোকারা সব সময় পক্ষ অবলম্বন করার জন্য ছোটেন। নিজের স্বতন্ত্রতা রক্ষা করে আপনি অন্যদের প্রভু হোন। আপনার স্বতন্ত্রতার খ্যাতি যত ছড়াবে, আপনাকে পক্ষে টানার জন্য তত বেশি লোক আপনার কাছে আসবেন। চাওয়া একটা ভাইরাস। আমরা যদি দেখি যে একজন লোককে অন্যরা চাইছেন, আমরাও তাকে চাওয়ার আগ্রহ দেখাই। পক্ষ অবলম্বনের চেয়ে প্রয়োজনে দু’পক্ষের কাছে নতি স্বীকার করুন। নতি স্বীকার আপনাকে পাওয়ারে পরিণত করবে। ইংরেজি প্রবাদ আছে যে, একটি ওক গাছ যখন ঝড়কে বাধা দেয়, একে একে তার শাখাগুলোকে হারায়, তাকে রক্ষা করার কিছুই থাকে না। গুঁড়িটাও মট করে ভেঙে পড়ে। কিন্তু যে ওক গাছ ঝড়ের সামনে ঝুঁকে পড়ে, সে দীর্ঘদিন বাঁচে, তার গুঁড়ি মোটা হয়, শিকড় গভীরে যায়।  


অভ্যাস- ১১ ▌আপনার উন্নতির পিছনে একমাত্র বাঁধা আপনার ভিতরের ভয়।  

আমাদের অধিকাংশই ভীরু। আমরা চাপ এবং সংঘর্ষ এড়াতে চাই। আমরা সাহসিকতাপূর্ণ কাজের কথা ভাবি কিন্তু খুব কম সময়েই জীবনে তা করি। খুব কম লোক সাহসী হয়ে জন্মান। আপনাকে অবশ্যই সাহসিকতার অভ্যাস করতে হবে। তবে কাজটির লাভ ক্ষতি বিবেচনা করে তবেই পরিকল্পনা করুন। 


অভ্যাস- ১১ ▌শুধু সাহসের জোরে নয়, পরিণতিও বিবেচনায় রাখুন

একটা ডোবায় দুই ব্যাঙ বাস করতো। গ্রীষ্মের তাপে ডোবা শুকিয়ে যাওয়ায় নতুন বাসস্থানের খোঁজে ডোবা ছেড়ে যাত্রা করলো। যাওয়ার পথে একটা গভীর কূপ পড়লো। তাতে যথেষ্ট পানি ছিলো, তা দেখে একটি ব্যাঙ আরেকটিকে বললো, ‘আমরা এই কূপে নামি এবং বসবাস করতে শুরু করি, এটা আমাদের আশ্রয় ও খাবার দেবে।’ অন্যটি সর্তকতার সঙ্গে উত্তর দিলো, ‘কিন্তু যদি পানি শুকিয়ে যায়, তবে আমরা অত গভীর থেকে কী করে উঠবো?’ ফল বিবেচনা না করে কিছু করবেন না। 


অভ্যাস- ১১ শত্রুর দুর্বলতার খোঁজ নিন

গ্রাম বাংলায় একটা প্রবাদ আছে: সব সুন্দরীদের একটা গন্ধযুক্ত পায়ুপথ আছে। অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের নির্দিষ্ট একটা দুর্বলতার জায়গা থাকে; পরোক্ষভাবে কৌশলে সেটার খোঁজ নিন। লোকে যা পেতে চায়, তা পাওয়ার জন্য তারা সব কিছু করতে রাজি থাকেন। দুর্বলতার একটা চিহ্ন হলো এই যে, আপনি যখন তার দুর্বলতার বিষয়টা স্পর্শ করবেন, তখন ব্যক্তিটি শিশুর মতো ব্যবহার করবেন। এই খাঁজটা বের করতে পারলেই, আপনার ইচ্ছেমত তাকে বশ করতে পারবেন। 


অভ্যাস- ১১ ▌আপনার শক্তিসমূহকে সংহত করুন


রবীন্দ্রনাথ স্কুল পালিয়েছেন। নজরুল তো বেশি পড়তেই পারলো না। লালন তো বুঝলই না স্কুল কি? আজ মানুষ তাঁদেরকে নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করছে। স্টিভ জবস্ শুধু মাত্র ১ দিন ভাল খাবারের আশায় ৭ মাইল পায়ে হেঁটে গির্জায় যেতেন। ভারতের সংবিধান প্রণেতা বাবা আম্বেদকর নিম্ন বর্ণের হিন্দু ছিলেন বলে স্কুলের বারান্দায় বসে বসে ক্লাস করতেন। কোনো পাবলিক বাস তাঁকে নিতো না। সাবেক বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিকুর রহমান বাজার থেকে চাঁদা তুলে পড়ালেখা করেছেন। সুন্দর চেহারার কথা ভাবছেন? শেখ সাদীর চেহারা খুবই বিশ্রী ছিল, তৈমুর লং খোঁড়া ছিলেন, নেপোলিয়ন বেঁটে ছিলেন। আব্রাহাম লিঙ্কনের মুখ ও হাত যথেষ্ট বড় ছিল। স্মৃতিশক্তির কথা ভাবছেন? আইনস্টাইন নিজের বাড়ির ঠিকানা ও ফোন নাম্বার মনে রাখতে পারতেন না। কোন প্রতিবন্ধকতা সাফল্যের পথে বাধা হয়ে উঠে না।  


অভ্যাস- ১১ ▌জীবনটা রেস নয়, জীবনটা জার্নি!


একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরেই এদেশের ছেলেমেয়েদের একটা বড় অংশ বলতে থাকে: আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা। এখন আর বয়স নেই? অনেক সময় আমাদের এমনটা মনে হতে পারে। বাস্তবতা হল, লক্ষ্য পূরণ করা আসলে যেকোনো বয়সে সম্ভব। আপনার বয়স ২০,বা ৯০ যাইহোক না কেন লক্ষ্য পূরণ করা নির্ভর করে আপনার মানসিক প্রস্তুতি, আগ্রহ এবং সঠিক কৌশলের ওপর।


লিও তলস্তয় সাইকেল চালানো শিখেছিলেন ৬৭ বছর বয়সে, আর্টিস্ট পাবলো পিকাসো বিয়ে করেছিলেন ছিয়াত্তর বছর বয়সে। লিওনিদ হুরউইজ, ৯০ বছর বয়সে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন! সবচেয়ে বেশি বয়সী যে মানুষটি এভারেস্টে উঠেছেন তাঁর নাম ইউকিরো মুইরা, ৮১ বছর বয়সে! হাল ছেড়ে দিবেন না। সফলতার মার্কশিট বলে কিছু নাই। যদি থাকতো তাহলে ড্রপ আউট স্টুডেন্ট বিল গেটস বিশ্বের সবচেয়ে ধনী হতেন না, মার্ক জুকারবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্তফা দেওয়ার দশ বছর পর অনারারি ডক্টরেট পেতেন না । লক্ষ্য পূরণ করতে সঠিক মানসিক প্রস্তুতি, আত্মবিশ্বাস এবং ধারাবাহিক পরিশ্রমের মাধ্যমে আপনি যেকোনো বয়সেই সফল হতে পারবেন। বয়স একটা সংখ্যা মাত্র।  


অভ্যাস-০ ▌নিজেকে অভিনেতা/অভিনেত্রী হিসেবে তৈরি করুন

নিজেকে গড়ার প্রথম পদক্ষেপ হলো নিজেকে অভিনেতা হিসেবে তৈরি করা এবং নিজের চেহারা এবং আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ নেয়া। অভিনেতার স্তিতিস্থাপকতা অর্জন করুন। যাতে প্রয়োজন মতো মুখে যে কোনো আবেগ ফুটিয়ে তুলতে পারেন। আপনার মনে কি আছে? দুঃখ, হতাশা? মুখে কিন্তু সেটা ফুটে উঠতে দেবেন না। চারপাশের প্রয়োজন অনুযায়ী মনের আবেগ চেঞ্জ করে মুখে ফুটিয়ে তুলুন।

গ্রিক পুরানের সমুদ্র-দেবতা প্রটেউস। তিনি যে মুহূর্তে যে রকম দরকার হতো, তিনি সেরকম রূপ ধারণ করতে পারতেন। এটাই তার বিশ্ব জয়ের প্রধান কারন। 


অভ্যাস- ১২ ▌যাঁরা আপনার থেকে বেশি ক্ষমতাবান। তাদের সঙ্গে নিজেকে সম্বন্ধযুক্ত করুন।

যখন কোনো মানুষ কোনোকিছু করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে অনর্ববরত চেষ্টা করতে থাকেন, তখ্ন অসুবিধা যাই থাকুক, তিনি সফল হবেনই। ক্ষমতার জগতে আপনার অন্য লোকের সাহায্য দরকার হবে, যাঁরা আপনার থেকে বেশি ক্ষমতাবান। এ জন্য যদি আপনি একটি উপযুক্ত ক্ষমতার উৎস খুঁজে পান, তার সঙ্গে নিজেকে সম্বন্ধযুক্ত করুন।

বিনয়ী হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ; রূঢ় হওয়া বোকামি। অভদ্রতা দ্বারা শত্রু তৈরি করা নিজের বাড়িতে আগুন লাগানোর মতো অযৌক্তিক কাজ। বিবেকবান মানুষ ব্যবহারে উদার হন। মোম স্বাভাবিক অবস্থায় শক্ত এবং ভঙ্গুর। একটুখানি আগুনের উষ্ণতা প্রয়োগ করে নরম করা যায়। তাই মোমের কাছে যেমন আগুনের উষ্ণতা, মানুষের কাছে তেমনি বিনয়। নিজের ব্যাপারে অধিক কথা বলা কখনোই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আপনার সফলতা, ব্যবসা বা চাকরি সম্পর্কে যত বেশি বলবেন, তা তত লোকজনের ইগোকে আঘাত করবে। আপনি আপনার বন্ধুদের মধ্যেও যথেষ্ট পরিমাণ ঈর্ষা জাগাবেন। 


অভ্যাস- ১২ ▌সঠিক সময় নিরূপণের দক্ষতা অর্জন করুন


কখনো তাড়াতাড়ি করবেন না। সব সময় ধৈর্যশীল হোন, দেখবেন যে সবকিছু একসময় আপনার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। সঠিক সময় নিরূপণের জন্য গোয়েন্দা হোন; পরিস্থিতির ভাব শুঁকে উপযুক্ত সময় বের করুন, সেটা আপনাকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবে। যখন সময় হয়নি তখন পিছনে সরে যাওয়া আয়ত্ব করুন এবং যখন ফললাভের অবস্থায় এসেছে দেখবেন, তখন হিংস্রভাবে আঘাত করতে শিখুন।

এক সুলতান দুজন লোককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন। তাদের একজন জানতেন সুলতান তার ঘোড়াটিকে ভালোবাসতেন। তিনি প্রস্তাব দিলেন তার জীবন রক্ষা করলে তিনি ঘোড়াটিকে এক বছরের মধ্যে নাচতে শেখাবেন। প্রিয় ঘোড়া নাচার খোশখেয়ালে সুলতান রাজি হয়ে গেলেন। অন্য বন্দী তার বন্ধুর দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে বললেন, আপনি জানেন, ঘোড়া নাচে না। কীসের জন্য আপনি এরকম উম্মাদ কল্পনাযুক্ত কথা বললেন? প্রথম বন্দী বললেন, আমি প্রকৃতপক্ষে সময় বিলম্ব করার জন্য এমনটি করেছি।এতে আমার চারটে সুযোগ সৃষ্টি হবে। প্রথমত, এই বছরের মধ্যে সুলতান মারা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, আমি মরে যেতে পারি। তৃতীয়, ঘোড়াটি মারা যেতে পারে এবং চতৃর্থত এহেন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টিদ হতে পারে যেখানে, যখন আমার ফাঁসির আর দরকার হবে না রাজার।

কাজ তাড়াতাড়ি দ্রুত করতে গিয়ে নতুন বিপদ দেখা দেয়। কাজেই- অপেক্ষা করুন এবং পরিকল্পিতভাবে মন্থর হোন। সময় আসবে, এমন সুযোগ পাবেন, যা আপনি ভাবতেও পারেননি। আপনার ক্ষমতার ভিত্তি তৈরি করতে অনেক বছর লাগতে পারে। তবে প্ল্যানে ফ্লাশ হবেন না। যে সাফল্য ধীরে ধীরে গড়া হয় একমাত্র তাই টিকে থাকে। 


অভ্যাস- ১২ ▌রাগ বিপজ্জনক ও অভদ্রতা, এটি ত্যাগ করুন

কোনো ব্যক্তির সঙ্গে রাগ করে কথা বলা একটা অপ্রয়োজনীয় বিপজ্জনক পদ্ধতি, নিজের বোকামি ও অভদ্রতা। কিন্তু আপনি নিজে শান্ত থেকে যদি শত্রুকে রাগিয়ে দিতে পারেন তাহলে আপনি স্পষ্ট সুবিধা লাভ করবেন।

খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে চিনে তিন রাজ্যের লড়াইয়ের সময় সম্রাট সাও-এর উপদেষ্টারা কিছু দলিল আবিষ্কার করে তাকে দেখালেন যে, তাঁর কিছু সেনানায়ক শত্রুর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করছেন এবং তাদের গ্রেপ্তার করে সাজা দেওয়ার জন্য উপদেষ্টারা তার কাছে আবেদন জানালেন। সম্রাট সাও তাদেরকে বিষয়টা ভুলে যেতে বিল্ললেন এবং তাদেরকে সাজার পরিবর্তে সম্মুখ যুদ্ধে রাখলেন। তিনি ষড়যন্ত্রকারী সেনানায়কদের স্পেশাল ফোর্সের তদারকিতে রাখলেন, যেন পালানোর কোনো সুযোগ না পায়। যুদ্ধের এরকম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে, বিচার করতে যাওয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ বাহিনীর মনোবল নষ্ট হতো। তিনি যুদ্ধ শেষে যথাসময়ে সেনানায়কদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন। সাও তাঁর মাথা ঠাণ্ডা রাখলেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিলেন। একটা কথা মনে রাখবেন- যে কোনো সময়, মাথাগরম করে শত্রুর সামনে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানানোই হল উৎকৃষ্ট প্রতিক্রিয়া।  


অভ্যাস- ১২ বিভিন্ন রিলেশনশিপ সম্পর্কে জানুন

দুইজন নারী পুরুষ গোপনে প্রেম করছেন কিন্তু সবার সামনে তা প্রকাশ করেন না। এইভাবে লুকিয়ে প্রেম করার নাম 'পকেটিং রিলেশনশিপ'

আবার গভীর আবেগ বিনিময়ের মাধ্যমে একে অপরের কাছাকাছি এলেও এই প্রেমিক-প্রেমিকা মানতে নারাজ যে, তাঁরা প্রেম করছেন। তাদের এই সম্পর্ককে বিয়ের দিকে এগিয়ে নিতে যারা বারবার ভাবছেন। এই অনিশ্চয়তার সম্পর্কের নাম সিচুয়েশনশিপ রিলেশন না বন্ধুত্ব, না প্রেমের এই সম্পর্কে বলা হচ্ছে ‘সিচুয়েশনশিপ’ অর্থাৎ দায়হীন সম্পর্ক।  তরুণ-তরুণীরা সম্পর্কে জড়াচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এই সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করতে বললে তাঁরা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারছেন না। সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা থাকে। যুগলেরা একসঙ্গে সময়ও কাটান। তবে সম্পর্কটি ততক্ষণই থাকে, যতক্ষণ কোনো পক্ষই এই সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত না করে। অর্থাৎ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে কেউ ভাবে না। আপাতদৃষ্টে তাই যে কেউ তাঁদের দেখে ধন্দে পড়তে পারেন। কারণ, এখানে দুজন ব্যক্তির মধ্যে যে কেউ, যেকোনো সময় অন্যজনকে ছেড়ে চলে যেতে পারে। কারণ, সিচুয়েশনশিপে আর যা-ই থাকুক, প্রতিশ্রুতি থাকে না! সিচুয়েশনশিপ সম্পর্কে ধারাবাহিকতা থাকে না। থাকে না সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা। তাই এ ধরনের সম্পর্ক একটা সময় পরে হতাশা ও উদ্বেগের মতো মানসিক সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। নিজের আত্মবিশ্বাস কমে যায়। এখান থেকে দীর্ঘ অবসাদ ও বিষণ্নতায় ভুগতে শুরু করেন তাঁরা। সিচুয়েশনশিপে দুজন ব্যক্তির চাওয়া ভিন্ন হলে, সম্পর্ক উপভোগের চেয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া চাপ মনে হলে সেখান থেকে বের হয়ে আসুন। আর আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে যেতে চান, তবে আপনার সঙ্গীর সঙ্গে সরাসরি, স্পষ্টভাবে আলোচনা করুন।


‘টুইন ফ্লেম: বিপরীত লিঙ্গের দুজন মানুষের মধ্যে যদি নানা বিষয়ে মানসিক মিল বা সাদৃশ্য থাকে এবং তাঁরা একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন, তখন তাকে ‘টুইন ফ্লেম’ বলে। ‘টুইন ফ্লেম’ মূলত একধরনের আত্মিক সম্পর্ক, যা কেবল অনুভবের মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়। দুজন ভিন্ন মানুষ, কিন্তু তাঁদের মধ্যকার চিন্তাভাবনা, আচার, ব্যবহার ও কথায় অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। আচরণগত ও রুচিগত সাদৃশ্যের কারণে এ জাতীয় সম্পর্কের মানুষদের মধ্যে আকর্ষণবোধ বেশি কাজ করে। তাই কখনো কখনো তাঁদের ‘মিরর সোল’ বা ‘সোলমেট’ হিসেবেও ডেকে থাকেন কেউ কেউ। মার্কিন রিলেশনশিপ কোচ ও কাপল থেরাপিস্ট অ্যাঞ্জেলা আমিয়াস বলেন, টুইন ফ্লেম সম্পর্ক স্ফুলিঙ্গের মতো।  প্রাথমিকভাবে এর তীব্রতা খুব বেশি হয়। এ জাতীয় সম্পর্ক দ্রুত গভীর হয়।  এটা এমন এক অনুভূতির সৃষ্টি করে, যাতে মনে হবে যে তিনি আপনার খুব কাছের, খুবই আপন। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগবে। তাঁর সঙ্গে সময় কাটাতে ইচ্ছা করবে। তাঁকে স্পর্শ করতে মন চাইবে। তাঁর জন্য মন উচাটন হবে।

মার্কিন মনোবিদ ও স্নায়ুরোগবিশেষজ্ঞ ড. লেইভের মতে, ‘টুইন ফ্লেম’ একটি জটিল পরিস্থিতি। এটা মোহের মতো কাজ করে, যা স্বাস্থ্যকর ও প্রশান্তিদায়ক, তবে বাস্তবসম্মত নয়। কেননা এতে ফ্যান্টাসি, প্রত্যাশা ও স্বপ্ন অনেক বেশি থাকে, যা ভবিষ্যতে অনেক সময় জটিলতার সৃষ্টি করে। টুইন ফ্লেমের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেতে পারেন। মোট কথা, তিনি হবেন আপনার আয়না। ‘টুইন ফ্লেম’ সম্পর্কে যুক্ত মানুষেরা একদিকে যেমন পরস্পরের খুব আত্মঘনিষ্ট হন, অন্যদিকে খুব অল্পেই তাঁদের মধ্যে দূরত্বেরও সৃষ্টি হয়। তবে যত কিছুই হোক না কেন, একটা সময় পর তাঁরা আবার একই জায়গায় এসে মেলেন। মনের কোণে বহুদিন ধরে বলতে চাওয়া চাপা পড়ে থাকা কথাগুলো সহজে বলতে পারবেন তাঁর কাছে।যেহেতু এই সম্পর্কে তীব্রতা বেশি, তাই এখানে রাগ, অভিমান, ভয়, সংশয়ও বেশি কাজ করে। আপনি যখন ‘টুইন ফ্লেম’ খুঁজে পাবেন, তার মানে হলো, নিঃসন্দেহে আপনি দুর্লভ কিছু পেলেন। তবে সেটা ধরে রাখাও কম কঠিন নয়।

 সেপিওসেক্সুয়াল: মানুষ এখন কেবল সংসার পাতা বা সন্তানের জন্য প্রেম, বিয়ে করে না। অনেকের কাছেই শারীরিক সৌন্দর্য ছাপিয়ে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে বুদ্ধিমত্তা। যাঁরা একটা মানুষের বুদ্ধিমত্তার প্রেমে পড়েন, তাঁদেরই ডাকা হয় সেপিওসেক্সুয়াল। সেপিওসেক্সুয়ালরা   গভীর চিন্তাশক্তি, কৌতূহলী মনোভাব, প্রচলিত ব্যবস্থাকে প্রশ্ন করার মানসিকতা ও ব্যক্তিত্ব  দিয়েই অন্যকে কাছে টানে বেশি। এদের কাছে আকর্ষণ শরীরে নয়, বরং মেধায় লুকিয়ে থাকে। ওই মানুষটার সঙ্গে বিজ্ঞান, মনস্তত্ত্ব, রাজনীতি, দর্শন নিয়ে আলোচনা করতেই ভালোবাসেন তাঁরা।  যেহেতু শারীরিক আকর্ষণ এখানে গৌণ। তাই সেপিওদের হয় বন্ধুত্ব। সেই বন্ধুত্ব সময়ের সঙ্গে গাঢ় হয়। সেপিওরা সাধারণত অন্তর্মুখী স্বভাবের হন। 

‘গোস্টিং রিলেশন: একদিন কারো সঙ্গে প্রথমে পরিচয় হয়, তারপর হোয়াটসঅ্যাপ কথা হয়। এরপর কয়েকবার কফি শপে দেখা হয়। তাকে ভালোবেসে ফেলে।   ভাবসাব দেখে মনে হতো, সেও হয়তো মনে মনে তাঁকে পছন্দ করে। একদিন সাহস করে  মনের কথা জানিয়ে দেয় । সেই মেসেজ ‘সিন’ হয়েছিল। কিন্তু কোনো জবাব আসেনি। এর পর থেকে  কথা বলা বন্ধ করে দেয়  । মেসেজের উত্তর দেওয়া দূরে থাক, সিনও করত না। ফোনও ধরত না।   যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ওদিক থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এরপর মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়ে ।  একে  ‘গোস্টিং’বলে। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত দশ বছরে সম্পর্কবিষয়ক থেরাপিস্টদের কাছে যত মানুষ পেশাদার সাহায্যের জন্য গিয়েছেন, তাঁদের শতকরা ৩০ ভাগই কোনো না কোনোভাবে গোস্টিংয়ের শিকার। ’ ‘মেন’স হেলথ’-এর একটি প্রতিবেদনে গোস্টিংয় রিলেশনের শিকার ব্যক্তিরা কী ধরনের মানসিক অবস্থার ভেতর দিয়ে যান, তা বলা হয়েছে— ১. যাঁর মাধ্যমে ‘গোস্টিং’য়ের শিকার হয়েছেন, প্রাথমিকভাবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে ‘কারণ জানা’র জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন তাঁরা। লম্বা লম্বা বার্তা পাঠান। তাঁর আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। এই সব কারণে পরে আরও বেশি করে সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করেন, লজ্জিত হন, ‘আত্মমর্যাদা’ হারান।  গোস্টিংয়ের শিকারদের অনেকে শুরুতে নিজেকে দায়ী করেন। কবে কী বলেছেন, কী করেছেন—এই কারণে অপর পক্ষের ‘মন উঠে গেছে’, এভাবে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে পুরো দায় নিজের ঘাড়ে চাপান।

আনারস ডেটিং বা পাইনঅ্যাপল ডেটিং। অনলাইনের বাইরে এ এক অভিনব কায়দা। স্পেনের জনপ্রিয় সুপারমার্কেট মেরকাদোনায় প্রথম চালু হয়েছে এই ধারা। খুব সাধারণ একটা সংকেত ঝুড়িতে আনারস উলটো করে রাখার মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে, আমি একা,  একজন সঙ্গী খুঁজছি। শপিং কার্টে আনারস বা কোনো ফল উল্টো করে রাখা মানেই আপনি একা। এই উলটো আনারস বা ফল দেখে আগ্রহীরা এগিয়ে এসে আপনার সঙ্গে কথা বলবে। আনারস ছাড়াও রেস্টোরেন্টে খাবার উলটো বা এলোমেলো করে রেখেও  বসে থাকাও এই আনারস ডেটিং ট্রেন্ডকে মিন করে।  

 ‘সিমার ডেটিং’।ইংরেজি Simmer অর্থ ‘ধীর বা অল্প আঁচ’। ধীরে ধীরে অল্প আঁচে রান্না করলে যেমন মসলা ভালোভাবে তরকারির ভেতর মেশার সময় ও সুযোগ পায়, পুষ্টিমান থাকে অক্ষুণ্ন, পোড়ার আশঙ্কা কম থাকে আবার খেতে লাগে সুস্বাদু। সম্পর্কও মেনে চলছে রান্নার এই সহজ ও পুরোনো সূত্র। যার নাম ‘সিমার ডেটিং’। সিমার ডেটিংয়ে প্রথম দিন ডেটে গিয়েই  জানাশোনা, ভাববিনিময়ের মতো প্রক্রিয়াগুলো ধীরে উপভোগ করা। এ সম্পর্কে চাপ কমানো উদ্দেশ্য আছে বলেই এই সম্পর্কের নাম দেওয়া হয়েছে সিমার ডেটিং। একটা মানুষকে চেনা সহজ নয়। সম্পর্কে দুজনের বোঝাপড়া খুবই জরুরি। তরুণ প্রজন্ম মানসিক স্বাস্থ্যকে শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্ব দেয়। সম্পর্ক যাতে সুখের হয়, দীর্ঘস্থায়ী হয়, শান্তি থাকে, । শারীরিক সম্পর্কের চেয়ে এখানে আবেগীয় নির্ভরশীলতা, বিশ্বস্ততা, সম্মান, বোঝাপড়া, সম্পর্কের গভীরতাই অধিক গুরুত্ব পায়। 


অভ্যাস- ১২ ▌ওপেন রিলেশনশিপ ও হেলদি রিলেশনশিপ

বর্তমান সময়ে খুব স্বাভাবিক একটি বিষয় হচ্ছে লিভ-ইন-রিলেশনশিপ কিংবা লিভ-টুগেদার। আপনার সঙ্গে সম্পর্কের আগে বা পরে আপনার ্সঙ্গী অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন, বা রাখবেন না, এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়।   আপনার  সঙ্গী শুধুই আপনাকে ভালোবাসবে এবং আপনার প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে- এই বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি করা এবং তা রক্ষা করার দায়িত্ব আপনার এবং এটার জন্য নিজের  সঙ্গীর কাছে নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে হয়। এ জন্য অভিযোগ, কৈফিয়ত কিংবা অধিকারবোধ চর্চা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। শুধুমাত্র মানসিক নির্ভরশীলতার কারণেও প্রিয় মানুষটি অন্য কারো সঙ্গে সম্পর্কে থাকতে পারে। কাজেই সঙ্গীকে স্পেস দিলে সম্পর্ক আনন্দের ও গভীর হবে।



অভ্যাস- ১২ ▌সঙ্গীর ভিন্ন চিন্তা, ভিন্ন মেজাজ ও বাজে অভ্যেস

এক ঘরে একসঙ্গে থাকালে সঙ্গীর ভিন্ন চিন্তা, ভিন্ন মন-মেজাজ ও বাজে অভ্যেসগুলোর মুখোমুখি হতে হয় প্রতিনিয়ত। এর সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে হয়! তবে জীবনে কোন কিছুই স্থায়ী নয়। আজকের সঙ্গীর যে গুনটি দেখে পাগল হয়ে কাছে টানছেন, কালকে সেটি নাও থাকতে পারে। যে মানুষটার সঙ্গে কমিটমেন্ট করেছিলেন আজীবন একসাথে থাকার। তিনি যদি টক্সিক হয়ে উঠেন, তাহলে তাঁকে দেয়া প্রতিশ্রুতি থেকে বের হয় এসে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে হয়। এমন মানুষের সঙ্গে থাকতে হবে, যিনি আপনার মূল্যায়ন করবে। 



অভ্যাস- ১২ ▌দলপতি বা প্রধানকেই টার্গেট করুন

একপাল ভেড়ার মধ্য থেকে একটা বা দুটো ভেড়া চুরি করার জন্য মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না; যে কুকুররা পাল পাহারা দেয় তাদের সঙ্গে লাগতে গিয়ে জীবন ও অঙ্গহানীর ঝুঁকি নেবেন না। রাখালের প্রতি লক্ষ্যস্থির করুন। তাকে প্রলুব্ধ করে সরিয়ে দিন। কুকুরেরা তাকে অনুসরণ করবে। কান্ডারী ছাড়া ভেড়ার পাল এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে পড়লে আপনি আপনার সুবিধা মতো একের পর এক তুলে নিতে পারবেন।

অধিকাংশ লোক খেলার এই দিকটা শেখেন না। আপনাকে দলের কেন্দ্র থেকে বাইরে রাখার জন্য দলের লোকেরা দেয়াল তৈরি করেন; কখনো জোর করে ঢুকবেন না- কারণ, আপনি তখন দেয়ালের ভিতর আরো দেয়াল পাবেন। এই সব দেয়ালে দরজা যেমন আছে ্তেমনি চাবির গর্তও আছে। চাবির গর্তের দিকে তাকান, দরজা খোলে যে চাবি তা বের করুন, যাতে জবরদস্তির কোনো চিহ্ন নেই। অর্থাৎ কোনো দলকে ধরার জন্য তাদের চাবি দলপতিকে ধরুন।



অভ্যাস- ১২ ▌নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করুন, গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন


যে হীনম্বন্যতায় ভোগে, তার যতই যোগ্যতা থাক, সে তুচ্ছ নগণ্যই রয়ে যায়। কারণ মনের অবস্থা থেকেই ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়ার উৎপত্তি হয়। কেউ নিজেকে তুচ্ছ মনে করলে, সে অনুরূপ হতে বাধ্য। তাই নিজেকে যে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না, সে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পার না, গুরুত্ব পায় না।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চেহারা ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার নয়। সঠিক পোশাক পরুন, ভালো ফল পাবেন। মনে রাখবেন আপনার নিজেকে দেখে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে, আপনি নিজের গুরুত্বটা অনুভব করবেন। মন মেজাজ ভালো করতে, আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে, পোশাক-পরিচ্ছদকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করুন। নিজেকে চটপটে সপ্রতিভ দেখালে আপনি নিজেও বুদ্ধিমান মানুষের মত চিন্তা করতে পারবেন। বড় বড় বিক্রি করতে গেলে নিজেকে বিত্তবান দেখানো খুব জরুরি। আপনার বাইরের চেহারাটা আপনার সঙ্গে কথা বলে এবং অন্যদের সঙ্গেও কথা বলে। মানুষ কিন্তু আপনার বাইরের চেহারা দেখেই আপনার মূল্যায়ন করে। অর্থাৎ আপনাকে মূল্যায়নের প্রথম ভিত্তি আপনার চেহারা ও পোশাক। আর যে কোনো ধারণা গড়ে তুলতে যতটা সময় লাগে; তাতে প্রথম দর্শনে যে ধারণাটা সৃষ্টি হয় তা-ই সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হয়। জীবনের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানোর একমাত্র পথ হলো নিজের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠা। 


অভ্যাস- ১২ ▌পরিবেশ সামলাতে শিখুন :

‘চেষ্টা করে লাভ নেই’, ‘সফল হওয়া এত সোজা নয়’ বারবার এইসব ‘জ্ঞানগর্ভ’ প্রচার শুনে শুনে বেশিরভাগ মানুষ নিম্নোক্ত যে কোনো একটি শ্রেণির মানুষ হয়ে ওঠে। প্রথম দল : যারা সম্পূর্ণ হাল ছেড়ে দেয়। অধিকাংশ মানুষ মনে মনে বিশ্বাস করতে শুরু করে যে তাদের মধ্যে সেই ক্ষমতা নেই। এই দলটি চাকরি-অন্বেষণকারী, সুযোগ সন্ধানী লোকেদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নমুখী। এদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাহীন। ভাগ্যলক্ষ্মী কখন সুপ্রসন্ন হবে এই আশায় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর মত নিরর্থক এদের জীবন।



অভ্যাস-৩০ ▌নতুন দলের সঙ্গে মেলামেশা করুন

একটি ছোট দলে নিজের সামাজিক পরিবেশ সীমায়িত রাখলে তা নিরস, বিরক্তিকর, একঘেঁয়ে হয়ে যায়। আরেকটা জরুরি বিষয় হলো সাফল্যের জন্য প্রয়োজন মানুষ চেনা। একটি ছোট পরিধিতে নিজেকে বন্দি রেখে মানুষ চেনার প্রয়াসটা অনেকটা ছোট্ট একখানা বই পড়ে অঙ্ক শেখার মতো। নতুন বন্ধুত্ব গড়ে নতুন সংগঠনে যোগ দিন, আপনার সামাজিক পরিধি বিস্তৃত করুন। তাছাড়া, যে কোনো জিনিসের মতই মানুষের বৈচিত্র্য ও বিবিধতা জীবনে নতুন স্বাদ আনে, নতুন বন্ধুত্বের মাধ্যমে জীবনকে ব্যাপক দিশা দেয়, মনের রসদ জোগায়। 


অভ্যাস- ১৩সস্তার তিন অবস্থা, প্রধম শ্রেণিভুক্ত হয়ে উঠুন :

সব কাজে সেরা পথটা বেছে নিন, এমন কি যে পণ্য বা সেবা ব্যবহার করবেন তাও যেন সবচেয়ে সেরা হয়। ‘বেশ কয়েকমাস যাবৎ দু-চার পয়সা সাশ্রয়ের জন্য আমি এক কম দামী হোটেলে খাওয়া-দাওয়া করছিলাম। জায়গাটা অপরিচ্ছন্ন। একদিন এক বন্ধু আমাকে টেনে নিয়ে গেলো শহরের এক সেরা রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ করতে। অবাক হয়ে দেখলাম, আমি যে দামে খাবার খাই তার চেয়ে সামান্য বেশি দাম দিয়ে পেলাম সুস্বাদু খাবার, সুন্দর আতিথেয়তা, সুন্দর পরিবেশ। মানুষ গুণমান দেখে একে অপরের মূল্যায়ন করে। তাই জিনিসের গুণগুলি দেখুন, লাভবান হবেন। সস্তায় পেয়ে বস্তা ভরবেন না। প্রচুর পরিমাণ আজেবাজে জিনিস কেনার বদলে গুটিকয়েক সেরা জিনিস রাখা শ্রেয়।



অভ্যাস- ১৩ ▌যত বেশি বন্ধুত্ব তত বেশি উপরে ওঠার সম্ভাবনা


সাফল্যের একটা মূল নীতি জানাই। অন্যের সাহায্যেই সাফল্য পাওয়া যায়। আপনার বর্তমান অবস্থা ও আপনি ভবিষ্যতে যা হয়ে উঠতে চান, তার মধ্যে একমাত্র বাধা হলো, অন্যের সমর্থন। ইতিহাসে এক সময় মানুষ বলপ্রয়োগ করে অন্যের উপর প্রতিপত্তি লাভ করতো, শক্তির জোরে বা ভয় দেখিয়ে সকলকে অধীনস্ত রাখতো। তবে মনে রাখবেন, আজকার মানুষ হয় স্বেচ্ছায় আপনাকে সমর্থন করবে, তা না হলে একেবারেই সমর্থন করবে না।

 এবার প্রশ্ন হলো, আমাকে কি করতে হবে?’ এক কথায় উত্তর হলো, যত বেশি বন্ধুত্ব গড়ে তুলবেন, ততই বেশি উপরে ওঠার সম্ভাবনা থাকবে। আর সবার প্রিয় হয়ে উঠলে আপনাকে না ঠেলে তোলাও সহজ হবে। 


অভ্যাস- ১৩ ▌“শীপল” (Sheeple) কি? কারা “শীপল” ? শীপল হবেন না।

ভেড়ার পালে একটা নেতা থাকে । ভেড়ারা নেতাকে এমন অন্ধভাবে অনুসরণ করে, নেতা যদি নদীতে ঝাঁপ দেয়, তাহলে অন্যান্য ভেড়ারা কোন বিকল্প চিন্তা না করেই তাকে অনুসরণ করে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ইংরেজিতে একটা শব্দ আছে “শীপল” (Sheeple)। শীপ এবং পিপল-এর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে এই শব্দটি। যে মানুষ ভেড়ার মতো আচরণ করে,তাকেই শীপল বলা হয়। বিশেষ করে একজন মানুষ যখন কোন ব্যক্তি বা মতবাদকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে, কোন চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই, সন্দেহাতীত বা প্রশ্নাতীতভাবে উক্ত ব্যক্তি বা মতবাদের নির্দেশনা মান্য করে বা অনুসরণ করে, তাদেরকেই শীপল বলা হয়। বাংলাদেশে দুই ধরণের শীপল-এর সংখ্যাধীক্য লক্ষ্য করা যায়। নাম্বার ওয়ান- ধর্মীয় শীপল এবং নাম্বার টু- রাজনৈতিক শীপল! ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক শীপল-এর মিশ্রণও আর এক ধরনের শীপল আছে। তবে কেউ যদি নিজে শীপল হয়ে থাকেন, তাহলে অন্যান্য শীপলদের উপস্থিতি সে টের পায় না। পড়াশুনার কারণে বিশ্বের অনেক দেশে শীপলদের সংখ্যা দিন দিন কমছে, আর বাংলাদেশে বাড়ছে বেশ দ্রুতগতীতে।


নিজের ব্রেনকে কাজে লাগিয়ে মানুষ অন্যের মতামত, চিন্তা বা সিদ্ধান্তকে বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারে, চ্যালেঞ্জ করতে পারে্‌ ভিন্নমত পোষণ করতে পারে। কিন্ত,মানুষ তা না করে ধর্মীয় বা রাজনৈতিক নেতাদের অন্ধভাবে অনুসরণ করে?? আপনার ব্রেনটিকে কাজে লাগান। চিন্তা করুন, গবেষণা করুন, প্রশ্ন করুন, প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করুন! তখন দেখতেই পাবেন আপনার চারপাশে শীপলদের উপস্থিতি কত ভয়াবহ!! একটা কলম না লিখলেও সক্রেটিসকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী বলা হয়। কারণ প্রশ্ন ছাড়া কোন সিদ্ধান্তকে মেনে নিত না। সবকিছুতে সে প্রশ্নের পর প্রশ্ন ছুড়ে দিত। 


অভ্যাস- ১৩ ▌প্রথম শ্রেণির মানুষ হয়ে উঠুন

শরীরকে যা খাওয়ানো হয়, শরীর তেমনটি হয়ে ওঠে। অনুরূপ মনকে যে খোরাক দেওয়া হয় মনও তেমন হয়ে ওঠে। অবশ্য মনের খোরাক প্যাকেটে বা দোকানে কিনতে পাওয়া যায় না। যে বই, ব্যক্তি বা পরিবেশ আপনার ভাবনা-চিন্তাকে প্রভাবিত করে- সেই সবই আপনার মনের খোরাক।

দীর্ঘ সময় যাবৎ হতাশাবাদী মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করলে মনের মধ্যে হতাশার প্রভাব পড়ে। ফলে আমরাও সেরকম চিন্তা করতে থাকি। এভাবে তুচ্ছ, সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করলে আমাদের কাজে, অভ্যাস অনুশীলনে সেই তুচ্ছতা প্রকাশ পাবে।

আবার যারা বড় বড় চিন্তা করতে পারেন, তেমন মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করলে আমাদের চিন্তা-ভাবনায় উন্নতি হবে। সফল মানুষের সঙ্গে থেকে আমরাও সফল হয়ে উঠবো। 


অভ্যাস- ১৩আপনার অবসর সময় কিভাবে কাটবে চিন্তা করুন।

দু’জন সহকর্মী জন এবং মিল্টনের অবসর সময়। সপ্তাহ শেষে জন কয়েকজন বন্ধুর সাথে সন্ধ্যায় সময় কাটায়, যারা তার মনের খোরাক জোগায় । আবার আরেক সন্ধ্যায় বাইরে ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখা, সমাজ কল্যাণমূলক কাজে বা বন্ধুর বাড়িতে কাটানো হয়। জন বই পড়ে, সংবাদ শোনে। মোট কথা, জনের সপ্তাহ শেষের দিনগুলি সুপরিকল্পিত। নানা আনন্দবর্ধক কাজে হৈ চৈ করে কাটে তার সময়।


মিল্টনের সপ্তাহ শেষের কোনো পরিকল্পনা থাকে না। মিল্টন ও তার স্ত্রী নিজেদের গন্ডির বাইরে খুব কম লোককে নিমন্ত্রণ করে, খুব কমই বাইরে যায়। সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে, বাকি দিনটা ঘরের কাজকর্ম করে কেটে যায়। বিকেলে শ্বশুরবাড়ি, বা বাপের বাড়ি যায়।

মিল্টনের দিনগুলি একঘেঁয়েমিতে কাটে। দিনগুলি হয় বিরক্তিকর, নিরানন্দ, রসহীন। মিল্টন আনন্দোচ্ছল মুহূর্তগুলি থেকে বঞ্চিত থাকে।

এখন জন ও মিল্টনের দুই পরিবারে কি ধরণের প্রভাব পড়ে দেখি? দু এক সপ্তাহে হয়তো লক্ষণীয় প্রভাব পড়ে না। তবে কয়েক মাস বা বছরে এর বিপুল প্রভাব পড়ে। ভিন্ন পরিবেশে মেলামেশার প্রভাবে জন সবসময় তরতাজা অনুভব করে, তার কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি পায়, নতুনভাবে চিন্তা-ভাবনা করে। তার অবস্থা অনেকটা পরিপুষ্ট খেলোয়াড়ের মতো। অন্যদিকে মিল্টন থাকে অপরিতৃপ্ত, তার চিন্তাশক্তি ব্যাহত হয়, মেজাজ খিটখিটে থাকে। কোনো রোগা ঘোড়াকে চাবুক মারলে যেমন হয়, মিল্টনের অবস্থাটা অনেকটা সেরকম।

কাজেই এবার আপনি সিদ্ধান্ত নিন, জন হবেন, না মিল্টন?  


অভ্যাস- ১৩ ▌এমন কিছু বন্ধু তৈরি করুন যাদের মতামত আপনার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

আজকালকার জগতে সঙ্কীর্ণ মনোভাবাপন্ন মানুষের ভবিষ্যৎ অন্ধকারময়। যে মানুষটা সবদিক বিচার করে দেখতে পারে, সেই কাজে দায়িত্বভার ও পদমর্যাদা পায়। যদি আপনি বিএনপি পার্টিকে সমর্থন করেন তাহলে আপনার কয়েকজন বন্ধু যেন আওয়ামিলীগার হয়। এভাবে উল্টোটাও প্রযোজ্য (নারী হলে পুরুষ)। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করুন। বিপরীতমুখীদের সঙ্গে আলাপ করুন। তবে লক্ষ্য রাখবেন এরা সবাই যেন সম্ভাবনাময় বিচক্ষণ ব্যক্তি হয়। 


অভ্যাস- ১৩এমন বন্ধু বাছাই করুন, যারা তুচ্ছ, অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলির উর্ধ্বে উঠতে পারে।

যারা আপনার ধ্যান-ধারণা ও কথাবার্তার চেয়ে আপনার কাছে কোন যন্ত্রপাতি আছে, কোনটি নেই, সে ব্যাপারে যোগান দিতে, শেয়ার করতে বেশি আগ্রহী, যারা তুচ্ছ বিষয়ের উর্ধ্বে উঠতে পারে। এমন বন্ধু খুঁজে নিন যারা আপনার সাথে গঠনমূলক কাজে আগ্রহী, যারা আপনার সত্যিকার সাফল্য চায়। আপনার বন্ধুরা যেন আপনার পরিকল্পনা, আপনার ধ্যান-ধারণা, ভাবনায় নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। তা না করে যদি তুচ্ছ নগণ্য মানুষকে নিজের নিকটতম বন্ধু করে তোলেন, আপনি নিজেও ক্রমশ তুচ্ছ চিন্তা-ভাবনা করতে শুরু করবেন। মনে রাখবেন, ভালো খাবার আপনার শরীর সুস্থ রাখবে, আর খাদ্যে ফুড পয়জনিং হলে আপনার জীবন মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাবে 


অভ্যাস- ১৩ ▌যে বন্ধু বৎসল তার বন্ধু ভাগ্য হবেই


বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে নিজেই প্রথমে পদক্ষেপ নিন। যদি আপনি বন্ধুত্ব গড়ে তোলার দায়িত্ব অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন, তাহলে সম্ভবত আপনার বেশি বন্ধু জুটবে না। নিজে থেকে এগিয়ে আসাও নেতৃত্বের লক্ষণ। বড় মাপের মানুষই কিন্তু প্রথমে এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে আপনার সঙ্গে আলাপ জুড়ে দেবে, ‘হ্যালো, আমার নামা জ্যাক।’ লক্ষ্য করে দেখবেন বাস্তাবিকই ঐ ব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ উনি বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে জানেন।


কখনো লক্ষ্য করেছেন কি, লিফটে অপেক্ষমান মানুষ কেমন সটান দাঁড়িয়ে থাকে? আমি একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম, পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলবো। এরকমভাবে পরপর ২৫বার অপরিচিত মানুষের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, ২৫বারই কিন্তু বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার পেয়েছি।


নতুন বন্ধুত্ব পাতানোর তিনটি উপায় বলি : ১. যে কোনো জায়গায়, যে কোনো সময় সুযোগ পেলেই নতুন লোকের সঙ্গে আলাপ করুন। প্রথমে আপনার নাম এবং কোথায় থাকেন, এখানে কি কাজ তা সংক্ষেপে বলুন। ২.লক্ষ্য রাখবেন, অন্যজন যেন আপনার নামটা স্পষ্ট শুনতে ও বুঝতে পারে। এবং লক্ষ্য রাখবেন, আপনি যেন অন্যজনের নামটা তারই মতন করে উচ্চারণ করেন। তারপর তাকে তাকে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিন। কোথায় থাকে? কোন কাজে এসেছে কিনা? ইত্যাদি। এরপর সামান্য প্রশংসা করুন। যেমন তার জামাটা খুব সুন্দর, তাকে দেখতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে কিংবা তার কিছু কোনো স্বভাব আচরণ ইত্যাদি। ৩। তার কথা প্রশ্নবোধক আকারে রিপিট করুন। যেমন আপনি কক্সবাজারে থাকেন? অমুক ভাইয়ের সাথে দেখা করতে এসেছেন? এভাবে। এবার সময় আর একটু বেশি পেলে কথার হাত পা টেনে বের করুন। কোনো বাক্য শেষ করে চুপ হয়ে যাবেন না। অতিরিক্ত কিছু বলুন। যেমন-কেউ যদি আপনার নাম জিজ্ঞাসা করে তাহলে নাম বলার পর বলুন বিখ্যাত অমুকের নামের সাথে আমার নামের মিল আছে। তবে সে সুন্দর আমি বিশ্রী; ভালোভাবে কথা বলতে পারি না, আমার শিক্ষাগত যোগ্যতাও ভালো না। এভাবে নিজের কিছু বদ গুণ, কুৎসা, রচনা-কল্পনা মজাদার মসলা মিশিয়ে ইন্টারেস্টিংভাবে বলুন; যতক্ষণ না সে আপনার সাথে ইজি হচ্ছে। এভাবে কথা বলাতে তাকে উৎসাহিত করে তুলুন। তাকে তার মতামত, মন্তব্য, কৃতিত্ব সম্বন্ধে বলার সুযোগ দিন। ইজি হলে তার ঠিকানা ও ফোন নম্বর চেয়ে নিন। 


অভ্যাস- ১৩ ▌যে যত সফল হয়, সে কথাবার্তায় ততই উদার হয়


আগামী একমাস যতগুলি সম্ভব আলোচনায় উপস্থিত থাকবেন। দুটি জিনিস লক্ষ্য রাখবেন, কথাবার্তায় কে সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ করছে আর কে সবচেয়ে সফল। আমি নিজের কয়েকশ অভিজ্ঞতা থেকে লক্ষ্য করছি : যে সবচেয়ে বেশি কথা বলে আর যে সবচেয়ে সফল তারা দুজন কখনোই একই ব্যক্তি হয় না। দেখবেন, যে যত সফল হয়, সে কথাবার্তা কম বলে এবং উদার মানসিকতার হয়, সে মনোযোগী শ্রোতা হয়ে অন্যকে বলতে উৎসাহিত করে বেশি। কথাবার্তায় এই উদারতা বন্ধুত্বের পরিধি বাড়ায়। মনে রাখবেন : সাধারণ মানুষ দুনিয়ার নানা কথার চেয়ে নিজের কথা বলায় বেশি আগ্রহী।  


অভ্যাস-৪০ ▌যে কাজে থাকে বেশি ভয়, সেটিই বেশি সাকসেসফুল হয়।


মানুষের জীবনের সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে- অধিকাংশ মানুষই মৃত্যুবরণ করে তাদের মেধা কাজে না লাগিয়েই। তারা জানতেও পারে না মহান কিছু করার শক্তি তাদেরও ছিলো। যখন আপনি কোনো কাজের ইচ্ছা প্রকাশ করবেন, তখন বাস্তবে সেই কাজটা করার আগে বারবার কল্পনার মাধ্যমে সেই কাজটার ‘মহড়া’ দিন। কাজের সমস্ত খুঁটিনাটির দিকে নজর রাখুন। এর ফলে বাস্তবে কাজটা করা আপনার কাছে অনেক সহজ হয়ে যাবে।

 মন থেকে ‘আমি পারবো না’ বাক্যটি মুছে ফেলুন। যে কাজে ভয় সেটিই বেশি সাকসেসফুল হয়। সাহস করে কাজটা শুরু করুন। মনে রাখবেন কলম না ধরলে কখনো লেখা আসে না। তেমনি কাজে নেমে পড়ুন, দেখবেন ঠিকই কাজ হয়ে যাবে।


যা করবেন না: # প্রয়োজনের সময় সাহায্য না চেয়ে চুপ করে থাকবেন না। । # কোনো বিষয় না বুঝলেও চুপ করে থাকবেন না। # অহেতুক শুয়ে সময় নষ্ট করবেন না। # কোনো ব্যাপার অসহ্য মনে হলে বিরক্ত হবেন না। # আপনাকে নিয়ে অন্যের বিরূপ মন্তব্য শুনতে গিয়ে রেগে যাবেন না।

যতো বেশি বেড়াবেন, নানা ধরনের পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা ততো বাড়বে। ভ্রমণ শেখায় অনেক, বাড়ায় কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা। শেখায় প্রতিকুল পরিবেশে নিজেকে অনুকুল করে নিতে। তাই ঘরে বসে থাকবেন না 


অভ্যাস- ১৪ ▌সাফল্য মানে বারবার ভিন্নভাবে চেষ্টা করা


একজন ওয়েস্টার্ন লেখকের নাম লুই লামুর। জীবনে তিনি উপন্যাস লিখেছিলেন ৩৫০টি। পুরস্কার পেয়েছেন অসংখ্য। তার লেখা অনুকরণ করে বাংলাদেশে সৃষ্টি হয়েছে ওয়েস্টার্ন সিরিজ। নানা ভাষায় তার লেখা অনূদিত হয়েছে। তার প্রথম উপন্যাস তিনশো প্রকাশক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।


আবিষ্কারক ছিলেন টমাস আলভা এডিসন। শৈশবে মিশিগানের পোর্ট হিউরনের স্কুলে তাকে ভর্তি করানো হলে শিক্ষকরা এডিসনের মাকে ডেকে এনে জানালেন, আপনার ছেলে খুব অলস। তাছাড়া সে সহজে কিছুই বুঝতে পারে না। এডিসনের মা তাকে স্কুল থেকে বাড়িতে এনে নিজেই পড়াতে লাগলেন। তার বয়স যখন দশ, তখন তিনি নিজেই তৈরি করেছিলেন তার গবেষণাগার। সারা জীবনে তিনি তেরোশোটি আবিষ্কার করেছিলেন। তার এই অসাধারণ সাফল্যের কারণ জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিয়েছিলেন- আমার ভিতর প্রতিভা বলে কিছু নাই।‘এক শতাংশ মেধা আর ৯৯ শতাংশ পরিশ্রম।’ দুই হাজারবার চেষ্টা করে তিনি আবিষ্কার করেছিলেন ইলেকট্রিক বাল। এক সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, দুই হাজারবার ব্যর্থ হওয়ার অনুভূতি কেমন? এডিসন বলেন, ‘আমি একবারও ব্যর্থ হইনি। বালবটা আবিষ্কারের দুই হাজারটা প্রক্রিয়া ছিল। আমি শুধু সেসব ট্রাই করেছি।’

জন মিল্টনের নাম আমরা অনেকেই জানি। তিনি ৪৪ বছর বয়সে স¤পূর্ণ অন্ধ হয়ে যান। এর ষোল বছর পর তিনি লিখেছিলেন বিশ্বসাহিত্যের অমর সৃষ্টি ‘প্যারাডাইস লস্ট’সহ আরো অনেক ক্ল্যাসিক। 


অভ্যাস- ১৪ ▌সফল ব্যক্তিদের কিছুপরামর্শ মেনে চলুন

১. না চাওয়া পর্যন্ত কিছুই পাবেন না‘আপনি যদি কোনো কিছু না চান, তাহলে উত্তর হবে সবসময়- কিছুই পাবেন না।’

২. অভিযোগ করার আগে আরেকবার ভাবুনখুব মারাত্মক সমস্যা না হলে কারো নামে অভিযোগ করা উচিত নয়। এটা নেতিবাচক মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ।

৩. সময় এমন একটা জিনিস, যা কখনো ফিরে আসে নাসময় এমন একটা সম্পদ , যা কাউকে দিয়ে দেওয়া যায়, খরচ করা যায় বা নষ্ট করা যায়। তবে একবার চলে গেলে এটা আর ফেরত পাবেন না।

৪.ইতিবাচক আচরণ ধরে রাখুন। ইতিবাচক আচরণ আপনাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।

৫. এমনভাবে করুন, যেন তা দ্বিতীয়বার করতে না হয়।

কিছু করতে চান, তা এমনভাবে করুন, যেন তা দ্বিতীয়বার করতে না হয়।

৬. নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠুনআপনি যা বলেন, তাই করতে চেষ্টা করুন। কথা ও কাজে মিল রাখুন।

৭. কিছুই কবরে নিয়ে যেতে পারবেন না। ইতালিয়ান প্রবাদ আছে- ’সব খেলা শেষে রাজা প্রজা সবাইকে এক বাক্সেই ঢুকতে হবে।’ যার অর্থ দাঁড়ায় আপনি আপনার জীবনে অর্জিত অর্থ, সম্মান, প্রতিপত্তি ইত্যাদি কোনো কিছুই কবরে নিয়ে যেতে পারবেন না এটা সবসময় মাথায় রাখুন

০৮. সময় মানে টাকা নয়, এটা তার চেয়েও দামি। সময় টাকার চেয়ে অনেক বেশি মূল্যবান। জীবনের শেষে আপনার অনেক টাকা থাকলেও আপনি সময় কিনতে পারবেন না।

০৯. দরকার হলে ঝুঁকি গ্রহণ করুনজীবনের প্রয়োজনের কোনো কোনো সময় ঝুঁকি গ্রহণ করা বুদ্ধিমানের পরিচয় দেয়। 


অভ্যাস- ১৪ ▌ছা পোষা বাঙ্গালীর অসভ্য, সংকীর্ণমনা মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন

কারো ইচ্ছায় হউক, অনিচ্ছায় হউক’ কোটি কোটি মানব সন্তান জন্ম নিয়েছে পৃথিবীতে। কিন্তু এ মানব সন্তানগুলো জন্মের সময় জন্মস্থান কিংবা জন্মদাতা বেঁছে নেবার সুযোগ কি পেয়েছিল? যারা জন্ম নিয়েছে পৃথিবীর দুর্বল জন্মদাতার অধীনে, তারা অন্য সবল মানবের নিষ্ঠুরতার স্বীকার হয়ে করুন জীবন-যাপন করছে। কেউ চুরি কছে, কেউ দাসত্ব করছে, কেউ সঠিক শিক্ষা না পেয়ে কট্টরপন্থী কিংবা কেউ সাধারণ শ্রমিক; এরা সবাই সুবিধাবঞ্চিত মানব সন্তান। আমরা শুধু আমাদের ঔরসজাতদের সুবিধার কথা ভেবেছি, আর অন্যদের বঞ্চিত করে চলেছি। এটা চরম অমানবিকতা।

আপনি যেই হোন, যেকোন মুহুর্তে পৃথিবী থেকে আপনাকে বিদায় নিতে হবে এবং এ পৃথিবীতে আপনি আর আসতে পারবেন না। ফলে অজস্র টাকা আর মরিচিকার পিচনে ছুটে জীবন শেষ করে বোকারাই। জ্ঞানীরা অন্যের সাথে শেয়ার করে জীবন উপভোগ করে; অন্যকে ভাল রাখার মাধ্যমে নিজে ভাল থাকার চেষ্ঠা করে। স্বার্থপররা নিজের শুক্র কিটের বাইরে বাইরে কিছুই বুঝতে চায় না, এমনকি নিজের মেয়েদেরকেও বঞ্চিত করে ছেলেদের পেট বাড়ায়। এই অসভ্য সংকীর্ণমনা মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে, আপনি পশুদের কাতারে থাকবেন মানুষ নয়



অভ্যাস- ১৪ এক নাগাড়ে সর্বোচ্চ ৯০ মিনিট-এর বেশি মনোযোগ ধরে রাখতে চেষ্টা করবেন না।

এক নাগাড়ে সর্বোচ্চ ৯০ মিনিট মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব। তবে এই ৯০ মিনিট হতে হবে একটা বিরতিহীন। আবার কাজের মাঝে ফোন বা অযাচিত কেউ যেন সময় খাদক হয়ে না উঠতে সেজন্য এক সময় চোখের সামনে পরিকল্পনাগুলো ঝুলিয়ে রাখার রীতি চালু ছিল। আজকের দিনে মোবাইল ফোনে রিমাইন্ডার এলার্ট সময় ব্যবস্থাপনাকে আরো সহজ করে তুলেছে।

যদি আপনি কর্মস্থলে সময় ব্যবস্থাপনার ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে আপনার সময় তো বাঁচবেই, আপনি খুব অল্প সময়ে গুণগত মানসম্পন্ন কাজও করতে পারবেনন এবং আপনার কাজের উৎকর্ষতাও বাড়বে। অন্যদিকে সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা না জানলে শুধু কর্মক্ষেত্র নয়, আপনার পারিবারিক ও ব্যক্তিজীবনেও যে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। স্মরণ রাখতে হবে, আমরা অনেক কিছুই করতে পারবো, কিন্তু সময়কে টেনে লম্বা করতে পারব না। 


অভ্যাস- ১৪ ▌অন্যকে বদলানোর আগে প্রতিদিন একটু একটু করে হলেও নিজেকে বদলে ফেলুন।

বিশ্লেষণ: ব্যক্তিগত ও পেশাগত মানোন্নয়নের জন্য ক্রমাগত প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। এর উপরেই আপনার ভবিষ্যৎ নির্ভরশীল। আপনার পেশার সাফল্যের জন্য যারা গুরুত্বপূর্র্ণ তাদের জন্য দিনের অন্তত কিছুটা সময় বরাদ্দ রাখবেন। 


অভ্যাস- ১৪ মুখ গোমড়া করে থাকবেন না

আপনার মুখই আপনার ব্যক্তিত্বের পরিচয়। আপনি হয়তো মানুষ হিসেবে ভালো, গোমড়া মুখ আপনার সহজাত। সাধারণত অন্তর্মুখী অসুখী মানুষের মুখ গম্ভীর হয়। তারা বেশি কথা বলতে পারে না। লোকে তাদের ভুল বোঝে। ভাবে অহংকারি, মিশুক নয় দুর্বোধ্য, বন্ধুরা তাদের এড়িয়ে চলে।

গোমড়া মুখকে হাসিমুখে পরিণত করতে গেলে মুখের ব্যায়াম করতে হবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নানা অভিব্যক্তি করুন। মুখের পেশী সংকোচন ও প্রসারণ করুন। বারবার পেশী সংকোচন করতে করতে আয়নায় দেখুন কোন পজিশনে আপনাকে ভালো লাগছে। সেই পজিশনটা ধরে রাখুন।

নির্জন জায়গায় গিয়ে রোজ পাঁচ মিনিট হা হা করে হাসুন। এতে মুখের পেশী ফ্লেক্সিবল হবে। আড়ষ্ঠ ভাবটা কেটে যাবে। ঢাকা শহরে প্রায় সকল পার্কে লাফিং ক্লাব আছে। শতশত মানুষ ভোরের আলোতে বিভিন্ন ভঙ্গিতে হাসছে। প্রয়োজনে নিজেরা করে নিবেন।

হাসিমুখই আপনার সাইনবোর্ড। সাইনবোর্ড দেখেই অচেনা খদ্দের দোকানে ঢোকে। তারপর সে জানতে চায় দোকানে কি কি আছে। গোমড়া মুখের অসুবিধার শেষ নাই। যেমন- # গোমড়া মুখের ছেলে-মেয়েরা সুখি হয় না। # গোমড়া মুখকে সবাই এড়িয়ে চলে। পারতপক্ষে কাজ না থাকলে কেউ কাছে ঘেঁষে না। # গোমড়াদের লোকে ভয় করে অথবা ঘৃণা করে। # গোমড়াদের শত্রু অনেক বেশি। গোমড়াদের কোনোদিনই বন্ধুর সংখ্যা বাড়ে না।


সারকথাঃ মুখের হাসি আর ব্যাংক ব্যালান্স কদাচ মিলিয়ে যেতে দেবেন না। একমাত্র বুদ্ধিমানই এ দুটো রাখতে জানে। আপনি হাসুন। আপনার সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়াও হাসবে। আপনি গোমড়া মুখ হলে সবাই আপনাকে এড়িয়ে চলবে।  


অভ্যাস- ১৪ ▌অপেক্ষা করবেন না, কিছু একটা শুরু করুন।

অনেকে বলেন, ছোটবেলায় কোনো গাইডেন্স পাইনি, তাই কোনটা ভালো বুঝতে পারিনি। আরো অনেকদূর যেতে পারতাম, যদি এইসব আগে জানতে পেতাম। দেখুন, চোখ না ফুটলেও কুকুরের বাচ্চারা তাদের মাকে ঠিকই দেখতে পায়। মায়ের স্তন কোথায় তা ঠিক বুঝতে পারে। চোখ ফোটার জন্য অপেক্ষা না করে আপনিও স্তন্যদায়িনী মায়ের খোঁজে একটু এদিক ওদিক তাকান।


চোখ কান খোলা রেখে প্রকৃতি থেকে শিখুন। প্রকৃতির রাজ্যে পশুরাজ থেকে সামান্য কীটপতঙ্গ সবাই স্বাবলম্বী। সবাই তাদের খাদ্য সংগ্রহ করছে কঠোর পরিশ্রম করে। একটু বড় হয়ে গেলে কেউই আর বাবা-মায়ের উপর নির্ভরশীল হয় না। বাবা-মাও সন্তানের কাছে প্রত্যাশা করে না। প্রত্যাশা নেই বলে সন্তানদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষও হয় না।

পিঁপড়ের কাছ থেকে শৃঙ্খলা শিখুন। একই টার্গেটের দিকে লক্ষ্য রেখে একসঙ্গে সারি দিয়ে এরা চলে। বাধাকে কীভাবে অতিক্রম করতে হয় তাদের কাছ থেকে শিখুন। পিঁপড়ের সারির সামনে একটি কাঠের টুকরো রাখুন। তারা হয় তার ওপরে উঠে সেটা অতিক্রম করে যাবে, না হয় তার নিচে দিয়ে সেটা অতিক্রম করবে। আর বাধা দেখে পালিয়ে যাবে না।

কোনো মানুষ জাতপাত ধর্ম ভাষা বিচারে শ্রেষ্ঠ বা নিকৃষ্ট হতে পারে না। প্রত্যেকের মগজের ওজন এক। সুতরাং, সমস্ত প্রতিকুলতা কাটিয়ে উঠে নিজেকে আমূল বদলে ফেলুন 


অভ্যাস- ১৪ ▌সুখের সংসার তৈরিতে প্রতিনিয়িত কাজ করুন

কেউ যত ভাল লোক - মেয়েকে বিয়ে করোক না কেন, তার খুঁত থাকবেই। দাম্পত্য সঙ্গীর খুঁতের দিকে তাকিয়ে থাকলে, তার যোগ্যতাকে কখনো দেখতে পাওয়া যায় না। দাম্পত্য সঙ্গীর অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করলে, বর্তমান জীবনকে হারাতে হয় । অন্যের সংসারের জৌলুসকে সুখ ভেবে নিয়ে, নিজের সংসারকে অসুখের আখড়ায় পরিণত করা যাবে না। সংসার জীবন হলো একটি গাছের চারা, যাকে নিয়মিত পরিচর্যা করলে একটি ফলদায়ক গাছে পরিণত হবে; পরিচর্যা না-করলে, ধুঁকতে-ধুঁকতে, দ্রুতই মরে যাবে। উপার্জন ছাড়া সংসার করার ভাবনাটিই তামাশা এবং অপরাধ। অভাব এমন একটা ছুরির নাম, যা প্রতিনিয়তই ভালোবাসাকে কাটতে থাকে। প্রেম ভালোবাসাহীন সংসার একটি অভ্যাস মাত্র। এই অভ্যাস একসময় পরিণত হয় দাসত্ব ও মালিকানায়। সংসারে, ডিভোর্স না-হওয়া মানে এই নয় যে─ এরা সুখী। কারণ─ ডিভোর্স সবসময় কাগজেকলমে হয় না, ডিভোর্স মূলত আরম্ভ হয় মনে, এবং চিরকাল মনের ভিতরেই এই ডিভোর্স ঘৃণার সাথে রয়ে যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। তাই সংসার নামের চারাগাছ পরিচর্যা করুন নিয়মিত।


অভ্যাস- ১৪ ▌জীবনে অর্থ ক্যারিয়ার-এর পিছনে জীবন শেষ করবেন না।

 অর্থের পেছনে ছুটতে থাকা একটা অনন্তকালের যাত্রা। ছুটতেই থাকো, ছুটতেই থাকো। প্রতি মুহূর্তে নতুন নতুন চাহিদারা তাড়িয়ে বেড়াবে। প্রতিনিয়ত গন্তব্যটা আরো একটু করে দূরে সরে যাবে। ক্যারিয়ারের সিঁড়িটাও বোধহয় অমন। উঠতে উঠতে কোনো একদিন ভীষণ ক্লান্ত লাগবে। একদিন থামতে হবে। এরপর মনে হবে, এই ভয়ংকর প্রতিযোগিতায় কি পেলাম আর কি হারালাম। ভালোবাসা? কখনো মনে হয়, জীবনের সবচেয়ে আরাধ্য ওটা। কখনো মনে হয়, মরীচিকার মতো জ্বলজ্বলে মিথ্যে সেটা।


অভ্যাস-০ ▌নিজে ভিক্ষুক হবেন না কিন্তু ভিক্ষুকদের কাছ থেকে শিখুন


হতাশা ও অপারগতা থেকে লোকে শেষ পর্যন্ত ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করে। কিন্তু কী অসাধারণ ধৈর্য ভিক্ষুকদের। এই ধৈর্যই ভিক্ষুকদের মূলধন। একশ জনের কাছে হাত পাতলে দুজন হয়তো সামান্য ভিক্ষা দেয়। ভিক্ষুক একজন বড় সেলস্্ম্যান; সে শুধু করুণ কণ্ঠ বিক্রি করে মানুষের মানবতা জাগ্রত করে। এটা খুব শক্ত কাজ। মানুষ নিজের বস্তুগত প্রয়োজন ও মুনাফা ছাড়া এক টাকাও হাতছাড়া করতে চায় না। সেই মানুষের কাছ থেকে পাঁচ/দশ টাকা আদায় করা মানে বিরাট কিছু। ভিক্ষুককে অভিনয়ও শিখতে হয়। সে হাজার টাকা রোজগার করলেও ছেঁড়া জামা কাপড়ের বদলে ভালো জামা-কাপড় পরতে পারে না। কারণ তাহলে সে মানুষের দয়া কিনতে পারবে না। তবে আপনি ভিক্ষুক হবেন না, কারণ ভিক্ষুকের কোনো আত্মমর্যাদা বোধ নেই। ভিক্ষুক কখনও নিজেকে বদলাতে চায় না। মানবতার নামে নরম প্রকতির মানুষদের ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল করা তার কাজ। ভিক্ষা দেবার প্রবণতাই প্রমাণ করে দেশে লক্ষ লক্ষ সহৃদয় মানুষ আছে। ভিক্ষা তাই একটি পেশা। ভিক্ষুকের থেকে আপনি দুইটা জিনিস শিখবেন। এক) অসীম ধৈর্য ধরে পেশায় লেগে থাকা। পেশাগত জীবনে কোনরকম অস্থিরতা করা যাবে না। ক্রপমাগত চেষ্টা করে যাওয়া চাই; আর দুই) দক্ষ অভিনেতা হয়ে উঠা। সকল রকম ফুটানি পরিহার করে অতি সাধারণ লাইফস্টাইল চর্চা করতে হবে। আপনার কি আছে তা কাউকে বুঝতে দিবেন না, প্রকাশ করবেন না। 


অভ্যাস- ১৫ ▌ক্ষুধার্ত থাকুন ভালো থাকুন'


ইদুঁরের কলোনির উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপর ভিত্তি করে মানব সভ্যতাকে বোঝার চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা। যা 'ইউনিভার্স ২৫' নামে বিখ্যাত। এতে ইদুঁরের জন্য একটি 'আদর্শ দুনিয়া' নির্মাণ করেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে ইঁদুরেরা থাকবে এবং বংশবৃদ্ধি করবে। যাকে ইদুরের স্বর্গও বলা যায়। অঢেল খাবার, পানি ও থাকার জন্য প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জায়গা। শুরুতে সেখানে তিনি চার জোড়া ইঁদুর রাখা হয়, যেগুলা অল্প সময়ের মধ্যে বংশবৃদ্ধি শুরু করে। অবাক করা ব্যাপার হল, ইঁদুরদের সেই স্বর্গে মাত্র ৩১৫ দিন পরেই বংশবৃদ্ধির হার কমে যায়। যখন ইঁদুরের সংখ্যা বেড়ে ৬০০ তে পৌছালো, তখন সেখানে দুটি জাত তৈরি হয়ঃ ভালো ও 'বিকৃত'। এর পর থেকে দূর্বল ইঁদুরগুলো সবলদের আক্রমণের শিকার হয় এবং কোণঠাসা হয়ে পড়ে'।

নারী ইঁদুররা বেশি সন্তান জন্ম দেবার পরিবর্তে জন্ম নেয়া সন্তানদের প্রতি আক্রমনাত্মক হয়ে উঠে এবং জন্মহার ক্রমেই কমতে শুরু করে । পুরুষদের মাঝে একটি নতুন জাতের ইঁদুরের উৎপত্তি হয়, যারা নারীদের সাথে বংশবৃদ্ধি ও জায়গার জন্য 'লড়াই' কর‍তে অস্বীকৃতি জানায়। তারা শুধু খাদ্য ও ঘুম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

বিজ্ঞানী জন ক্যালহোনের মতে, আগামীতে সমৃদ্ধ পৃথিবীর মানব জাতীর জন্য দুটি ধাপ আসছে। 'প্রথমত হচ্ছে জীবন অর্থহীন হয়ে পড়া এবং বংশবৃদ্ধির ইচ্ছার অভাব তৈরি হওয়া, সন্তান প্রতিপালনের প্রতি অনিহা। ক্যালহোনের এই বৈজ্ঞানিকপরীক্ষার মাধ্যমে নাগরিক সমাজ ও সভ্যতার অবক্ষয় টের পাওয়া যায় । 'দ্বিতীয়্ত হচ্ছে মৃত্যু'। কারণ সমৃদ্ধির পরিনাম হচ্ছে মৃত্যু। তাই স্টিভ জবসের সূত্র মেনে চলুনঃ "ক্ষুধার্ত থাকুন ভালো থাকুন।" 


অভ্যাস- ১৫ সুযোগের জন্য অপেক্ষা করবেন না


বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি পড়ছে, বেরুতে পারছেন না, অথবা ট্রেন লেট করছে আপনি আটকে পড়েছেন। এটা আপনার পক্ষে বড় একটা সুযোগ একটা পিডিএফ বই বা বিভিন্ন তথ্য পড়ে নেবার। আমাদের ৭০ শতাংশ কর্মরত ব্যক্তি অনিদ্রা ও হতাশায় ভোগে। মনের মতো চাকরি বা ব্যবসা তারা পাননি। এদের মধ্যে অনেক উদ্যোগী পুরুষ আছেন, যারা অনুকুল পরিকাঠামোর জন্য অপেক্ষা করেন না। যা তারা হাতের কাছে আছে তা দিয়েই পরিকাঠামো তৈরি করে নেন। বুদ্ধিমান ব্যক্তির কাছে সব সময়ই সুসময়। তারা যতখানি সম্ভব পরিস্থিতি অনুকুলে আনতে কাজ শুরু করে দেয়। কিন্তু অক্রিয় ব্যক্তিরা পরিস্থিতি একশো ভাগ অনুকুল হলে তবেই কাজ শুরু করেন। 


অভ্যাস- ১৫ ▌ লাইফস্টাইল টিপটপ আর সংসার গুছালো করুন।

মানুষের লাইফ স্টাইল কেমন হবে, সেটা তার পারিবারিক শিক্ষা এবং আশেপাশের পরিবেশের উপরে নির্ভরশীল। ছোটবেলায় যে পরিবার ও পরিবেশে মানুষ বড় হয়, সেটাই তার ভেতরে পাকাপাকিভাবে একটা ছাপ রেখে যায়। যে শিক্ষিত মা সীমিত উপার্জনের মাঝেও খুব সুন্দর করে গুছিয়ে ছেলেমেয়েদের বড় করেন। তাদের ঘরদোর বলেন আর লাইফস্টাইল, সবকিছুই খুব টিপটপ থাকে। 


অভ্যাস- ১৫ ▌নিজের ব্যবহারকে পুজিঁতে পরিণত করুন


আমেরিকার সোলপক নামে একটি নতুন উদ্যোক্তাদের গ্রুপ আছে, যারা শূন্য পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করে শিকাগো শহরে কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা করে থাকেন। এই ব্যবসায়ী গ্রুপের প্রধান ক্যাপিটাল হল তাদের ব্যবহার। তারা তাদের প্রত্যেক মানুষকে নিজের খদ্দর বা ক্রেতা মনে করেন এবং অতি গরিব খদ্দেরদের সঙ্গেও অতি সম্মানিত অতিথির মতো ব্যবহার করেন। তারা মনে করেন এ গরিব খদ্দেরেরা তাদের বিজ্ঞাপন। এই গরিব খদ্দেরা তাদের সুনাম বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াবেন। এই গরীব খদ্দরেরা তাদের বস/কর্তা বা মুনিবের মাধ্যমেও একজন ধনী ক্রেতা আনতে পারে। তাই সবসময় নিজেকে সেল করা শিখুন, এতে ধীরে ধীরে আপনার প্রভাব বাড়তে থাকবে। তাই খদ্দেরদের মুখ ও নাম মনে রাখার চেষ্টা করুন। রাস্তায় দেখা হলে সালাম করুন। সদ্য পরিচিত হওয়া যে মানুষটি আপনাকে একটা ভিজিটিং কার্ড দিলো, সেটা তা সামনে পড়ুন। সম্ভব হলে কার্ডটি নিয়ে কিছু প্রশ্ন করুন। কে জানে আগামী দিন এই লোকটিই আপনার জীবনে অসামান্য সুযোগের উৎস হয়ে উঠতে পারে। 


অভ্যাস- ১৫ ▌গ্যাসলাইটিং প্রতিরোধ করুন

জীবনসঙ্গী বা সন্তানকে আড়ালে বা সবার সামনে ছোট করা, বকাবকি করা, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা, কোনো কিছু নিয়ে প্রশ্ন তোলা, চিৎকার চেঁচামেচি করা,খোঁটা দেয়া,অবিশ্বাস করা, অপমান বা অসম্মান করাটাকে গ্যাসলাইটিং’ বলে। এটা এক ধরনের মানসিক অত্যাচার। কারো সামনে কিংবা বেডরুমের মধ্যে এভাবে যে কাউকে, সঙ্গী বা সন্তানকে লজ্জা দিলে বা অপমান করলে, তাদের, আত্মবিশ্বাস, মনোবল একেবারে তছনছ হয়ে ভেঙ্গে যায়। ফলে ভিকটিম নিজেকে অসহায়, দুর্বল, অযোগ্য ও ব্যার্থ মানুষ ভাবতে শুরু করে এবং ক্রমেই, তার মানসিক ট্রমা বেড়ে যায় এবং সে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকেন। কাজেই কাউকে নিয়ে হাসাহাসি করবেন না। কাউকে হেয় করবেন না। কারো মুখের অভিযোগ বা ধমকের সুরে কথা বলবেন না যে, ‘তুমি কী বোঝো? চুপ করো’, ‘মেয়ে মানুষ মেয়ে মানুষের মতো থাকো’ ‘এটা কোরো না’, ‘এখানে যেয়ো না’, ‘অমুকের সঙ্গে মিশবে না’, ‘এ ধরনের পোশাক পরবে না’ ইত্যাদি কথা প্রতিনিয়ত শুনতে শুনতে হীনম্মন্যতায় ভুগতে থাকা মানুষটি ভিতরের আশা-আকাঙ্ক্ষা, পছন্দ-অপছন্দ, স্বপন-ইচ্ছা-স্বাধীনতা সব মরে যায়।


স্ত্রী ও স্বামী বা প্রেমিক-প্রেমিকা দুজনই গ্যাসলাইটিং করতে গিয়ে পরস্পরের গতিবিধির ওপর নজর রাখেন, বারবার ফোন করেন, ছবি বা টেক্সট পাঠানোর জন্য জোর করেন। দুজনই এর মাধ্যমে নিশ্চিত হতে চান যে সঙ্গী তার অবস্থান সম্পর্কে মিথ্যা বলছে কি না। ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে ফোন না ধরলে কৈফিয়ত চাওয়া,ফোনে একবার না পেলে বারবার ফোন করা, গোপনে টাকা সরানো, কল লিস্ট চেক করা,্ম্যাসেজ চেক করা, ফেসবুক পাসওয়ার্ড জানতে চাওয়া, বিকৃত নামে ডাকা ইত্যাদি গচ্ছে ‘গ্যাসলাইট আচরণ।’ আবার অনেকে অন্য মানুষের বয়স, চেহারা, পোশাক, লিঙ্গ, ব্যবহার, জাতি, ধর্ম ও বিশ্বাস নিয়ে বাজে মন্তব্য করে এটাকে জাতিগত গ্যাসলাইটিং বলে। এই গ্যাসলাইটিংয়ের কারণে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে ফালতু বলে মনে করেন । পরিবারে মা -বাবা বা অন্য কেউ যদি গ্যাসলাইটিংয়ের শিকার হন, সেটা শিশু ও অন্যান্যদের ওপর খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। 


অভ্যাস- ১৫ ▌গরিব হোন কিন্তু গরিবের মতো আচরণ করবেন না।


গরিব হওয়াটা আপনার হাতে নেই। কিন্তু গরিবি হঠাতে গেলে অন্যান্য কারো সহযোগিতার চেয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগ বেশি দরকার হয়। গরিব থেকে সচ্ছল হওয়া এমনকি ধনী হওয়াও একেবারে সম্ভব। তবে এ জন্য প্রচণ্ড খাটতে হয়। শুধু স্বপ্ন দেখলে চলে না। সময় ও পরিপল্পনা লাগে। তবে আপনি গরিব হলেও মনটা সমৃদ্ধ করে তুলুন। সেটা আপনারই হাতে। গরিব হলেও দারিদ্রকে সবার আগে তাড়াতে হবে মনের ভেতর থেকে। রাজার মতো আচরণ করুন। তবে রাজার মতো বিলাসিতা করতে যাবেন না। আমি আপনাকে স্পেন্ট নামক একটি গেম-এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিব। যুক্তরাষ্ট্রের রয়েল সোসাইটির অধীনে এই গেমটি পরিচালিত হয়। এটি ধনী পরিবারের সন্তানদেরকে এমন একটি পরিস্থিতিতে ফেলে, যেখানে তাকে একজন দরিদ্র ব্যক্তি হিসাবে এক মাস বেঁচে থাকতে হবে। খাবারের কষ্ট, থাকার কষ্টসহ একজন দরিদ্র ব্যক্তি্র প্রতিদিন কি অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন-রাত কাটে তা তাকে ভোগ করতে হয়। কিন্তু গরিব হলেও তার আচরণ যদি রয়েল ফ্যামিলির মানুষের মত বজায় থাকে, তবেই সে উপযুক্ত সার্টিফিকেট পায়; যা তার রয়েল ফ্যামিলিতে গেইট বা সিঁড়ির সঙ্গে ঝুলানো থাকে। 


অভ্যাস- ১৫ক্রিয়েটিভিটি প্রয়োগ করে ধনী হয়ে উঠুন।

এক প্রশ্নের উত্তরে বিশ্বের সেরা ধনী বিল গেটস বলেছিলেনঃ সম্পদ মানে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকা জমা থাকা নয়! সম্পদ হচ্ছে মূলত সম্পদ তৈরি করার ক্ষমতা। উদাহরণস্বরূপ: একজন ব্যক্তি লটারি বা জ্যাকপট জিতল। যদিও সে 100 মিলিয়ন ডলার জিতেছে, সে আসলে একজন ধনী মানুষ নয়: সে প্রচুর টাকাসহ একজন গরিব মানুষ, এবং এ কারণে 90% লটারি বিজেতা 5 বছরের মধ্যে আবার গরিব হয়ে যায়।

ধনীরা মূলত টাকায় নিঃস্ব। উদাহরণস্বরূপ, অধিকাংশ উদ্যোক্তাই হচ্ছে ধনী। তারা আসলে সম্পদের পথে আছেন, যদিও তাদের কাছে টাকা নেই, কারণ তারা তাদের টাকা-বুদ্ধি বিনিয়োগ করছেন এবং সেটাই হলো সম্পদ। যদি আপনি একটি যুবককে দেখেন যে, সে নতুন জিনিস শিখতে চায় এবং সবসময় নিজেকে উন্নত করতে চায়, তবে জানবেন সে একজন ধনী ব্যক্তি। কিন্তু যদি আপনি একটি যুবককে দেখেন যে, সে বিশ্বাস করে ধনী হতে প্রচুর বিনিয়োগ করতে হয়; টাকাওয়ালাদেরই টাকা আসে, চুরি দুর্নীতি ছাড়া টাকা ইনকাম সম্ভব নয়, সব ধনীরা চোর, তবে জানবেন সে একজন গরিব, কারণ তার চিন্তাভাবনা গরিব! ধনীরা বিশ্বাস করে যে, তাদের শুধু তথ্য এবং প্রশিক্ষণের প্রয়োজন ধনী হওয়ার জন্য। আর গরিবরা মনে করে তাদের প্রচুর টাকা লাগবে, ব্যবসা শুরু করার জন্য। 


অভ্যাস- ১৫ ▌নিজেকে একটু ছেঁটে নিন


সাধারণত মানুষের ক্ষমতা ও অর্থবল বেড়ে গেলে তার অপরিকল্পিত কাজ বৃদ্ধি হয়। সোজা বাংলায় বলে অতি বাড় বাড়া। গরিব যদি ধনী হয়ে উঠে তাহলে তারা পুরনো বন্ধু-বান্ধব পরিচিতদের ধীরে ধীরে চিনতে পারে না। ক্ষমতায়িত লোকেরা তার চেয়ে বেশি ক্ষমতাবানদের সাথে মেশে। গণতান্ত্রিক সুশীল নেতা বা নেত্রীও একচ্ছত্র ক্ষমতা পেলে স্বৈরাচারিতে পরিণত হয়।

বহু জাদরেল অফিসার রিটায়ার করার পর সাপ থেকে কেঁচোয় পরিণত হন। নামের আগে যতক্ষণ না একটা এক্স বা প্রাক্তন বসছে ততক্ষণ আর তিনি এ পৃথিবীর মানুষ থাকেন না। আমার এক প্রতিবেশির যখন টাকা-পয়সা বেশি ছিলো না, তখন তিনি আমাকে দাদা বলে ডাকতেন। যেই তাঁর আঙুল ফুলে কলাগাছ হলো, অমনি তিনি আমাকে দেখলে মুখ ঘুরিয়ে নিতেন। আড়ালে দাদার বদলে গাধা বলতেন।

যার যত অর্থ জমে তার তত স্বার্থ বিনাশ হয়। ক্ষমতায়িত ব্যক্তি তার কাজকর্মের জন্যই প্রতিদিন শত্রু তৈরি করে। এই শত্রুরা তার পতন ডেকে আনে। যখন অর্থ যশ একনাগারে চলতে থাকে; তখন নিজেকে কন্ট্রোল করতে শিখুন। কোথায় থামতে হবে তা উপলব্ধি করুন। অতিরিক্ত আশা, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস, অতিরক্তক কল্পনা ছেঁটে নিন। নয়তো আপনাকে স্থায়ীভাবেই থেমে যেতে হবে। 


অভ্যাস- ১৫কিছু স্মরণী মনে রাখুন

এক : কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম ও পরিচয় ভুলে যাবেন না। তাদের সাথে আপনার আন্তরিকতার পরিচয় দিন।

দুই : কোনো ব্যক্তি দিনের পর দিন ঘোরালেও তার প্রতি বিন্দুমাত্র অসন্তুষ্ট হবেন না। মনে দম রাখুন।

তিন : কোনো ব্যক্তিকে কখনও বলবেন না, আমি বেকার। কাজটা দিয়ে বা করে আমাকে সাহায্য করুন অথবা আমার জন্য কিছু কনসিডার করুন।

চার :  খদ্দর বা ক্লায়েন্ট সব সময় ঠিক এবং সবচেয়ে বুদ্ধিমান। কথায় কথায় তাকে এটা বুঝিয়ে দিন। আবোল-তাবোল কথা বলে ও বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান দিতে এবং প্রতিবাদ করতে যাবেন না।

পাঁচ : কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে নিখুঁত ভদ্র ব্যবহার প্রত্যাশা করবেন না। কোনো ব্যক্তি চ্যাটাং চ্যাটাং কথা শুনিয়ে মেজাজ হারালেও আপনি হাসিমুখে বন্ধুসুলভ আচরণ বজায় রাখুন। এটা আগুনে পানি ঢালার মত কাজ করবে।

ছয় : পৃথিবীর সমস্ত লোক এমনকি শিশুদেরও আপনার ক্লায়েন্ট ভাবতে শিখুন। তাহলে আপনার ব্যবহারের বিরাট পরিবর্তন ঘটবে। 


অভ্যাস-০ ▌নিজেকে পরাজিত ভাববেন না


গত মহাযুদ্ধে জার্মানি ও জাপান পরাজিত হয়েছিলো। কিন্তু জার্মান ও জাপানিরা নিজেদের পরাজিত ভাবেনি। তাই এই দুই জাতি আবার কিছুদিনের মধ্যেই অসাধারণ উন্নতি করেছে। জিতবার মতো, হারার জন্যও তৈরি থাকতে হয়; হারা মানে আবার আরও বড় ধরনের প্রস্তুতি। পরাজিত মানসিকতা, বিপর্যস্ত মানসিকতার চেয়ে ক্ষতিকর। মনে রাখবেন,সাফল্য ও ব্যর্থতা হাত ধরাধরি করে চলে। একটি বিখ্যাত উক্তি মনে রাখুন: সফল হবার জন্য বুদ্ধিমান, বিদ্বান, বিত্তবান ও ভাগ্যবান হবার প্রয়োজন নেই। এমন মানুষের দরকার, যে কখনও নিজেকে পরাজিত মনে করে না; পরাজয় মেনে নেয় না। মিলটন অন্ধ হয়ে যাবার পর অমর মহাকাব্য প্যারাডাইস লস্ট লেখেন। নিজেকে দীন-হীন ভাববেন না। নিজেকে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলে ভাবতে শিখুন। তুচ্ছ মানুষেরা আপনাকে তুচ্ছ প্রমাণ করার চেষ্টা করবে, কিন্তু বড় মাপের মানুষেরা আপনার ভেতরের গুণগুলি খুঁজে বার করার চেষ্টা করবে। সুযোগ পেলে অন্যের অসাক্ষাতে অন্যের প্রশংসা করুন। সর্বদা মনে রাখুন, আত্মবিশ্বাসের অভাব থেকে লোকে অন্যের নিন্দা করে।পরিকল্পনাহীন জীবনযাপন করবেন না। আগামী বছর আপনি কী করবেন এই বছর পরিকল্পনা করুন। আগামী মাসের পরিকল্পনা এই মাসে করুন। আগামীকালের পরিকল্পনা আজ রাতে ঘুমোবার আগে সেরে ফেলুন। 


অভ্যাস-৬১ ▌শুরু বা শেষ করুন যথাসময়ে।


আমাদের পূর্বপুরুষরা কৃষক ছিলেন, শ্রমিক ছিলেন। থাকতেন মাটির কাঁচা ঘরে। অর্থাভাবে-অন্নাভাবে কখনও-সখনও উপোসও করতেন। পরতেন মলিন পোশাকপরিচ্ছদ। বাবারা আমাদেরকে মফস্বলে এনে পড়াশোনা করালেন, বুদ্ধিবৃত্তিক কাজকর্ম করে জীবিকা নির্বাহ করা শুরু করলাম,কায়িক পরিশ্রম না-করতে না-করতে আমাদের দেহে পুরু চর্বি জমল, সার্বক্ষণিক রোগবালাই বাসা বাঁধল, ডায়াবেটিস হানা দিলো। চিকিৎসকরা আমাদের খাবারের পরিমাণ বেঁধে দিলেন, প্রতিদিন দৌড়াতে বলে দিলেন। শ্রমিকদের মতো দৌড়াব না বলে আমরা সুট-বুট পরে দালানে ঢুকেছিলাম, আমরা এখন মেসিন কিনে সেই একই দালানের ভেতরই দৌড়াচ্ছি। শবজি খাব না বলে আমরা বড়লোক হয়েছিলাম; এখন বাজারে শবজির দামই বেশি, শবজি এখন বড়লোকদেরই খাবার। সময় বাঁচানোর জন্য আমরা ফোন কিনেছিলাম। পরে, দেখলাম— ফোনই আমাদের জীবনের সিংহভাগ সময় খেয়ে ফেলেছে। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিয়ে করব না ভেবে আমরা কেউ-কেউ ত্রিশেও বিয়ে করছি না, পঁয়ত্রিশে বা চল্লিশের পরে করছি ।আর বুড়ো বয়সে যুবকের ভূমিকায় অভিনয় করছি।; কোনোকিছুই শুরু বা শেষ করছি না যথাসময়ে। এ ভাবে আমরা পরাজয় হচ্ছি। 


অভ্যাস-৬২ ▌পরিবর্তনের বিরোধিতা করবেন না


পরিবর্তন ইতিহাসের অনিবার্য গতি। আপনি কিছুদিন তার গতিরোধ করতে পারেন, কিন্তু চিরদিন পারেন না। পরিবর্তনের বিরোধিতা করলে পরিবর্তনের ঝড়ে ও বৃষ্টিতে আপনি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবেন। পরিবর্তনের পক্ষে থাকুন। নতুন ভাবনা-চিন্তা উপেক্ষা করবেন না। একসময় যা প্রাসঙ্গিক ছিলো আজ তার প্রাসঙ্গিকতা নেই। পুরুষের সবচেয়ে ভালো এবং বোকামীর দিক হলো সে কোনোদিন পরিবর্তন হয় না।

কনফুসিয়াস বলেছিলেন— পুরুষের সবচেয়ে খারাপ এবং বোকামীর দিক হলো সে সহজে পরিবর্তন মেনে নেয় না। আর রুমি বলেছিলেন-গতকাল আমি চালাক ছিলাম তাই পুরো পৃথিবীটাকে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম। আজ আমি জ্ঞানী তাই নিজেকে পরিবর্তন করছি। 


অভ্যাস-৬৩ ▌অন্যের দুর্বলতাকে এড়িয়ে তাদের ভালো কাজের প্রশংসা করুন।


এক রাজা ছিলেন যার একটা চোখ এবং একটা পা ছিল। তিনি অনেক চিত্রশিল্পীকে জিজ্ঞেস করলেন উনার একটা সুন্দর ছবি একেঁ দিতে পারবে কিনা। কিন্তু কেউই সাহস করতে পারল না। পারবেই বা কেমনে, এক চোখ আর এক পা না থাকলে কেমন করে কারো ছবি সুন্দর করে আঁকা যায় কিন্তু একজন রাজার কথায় রাজি হল এবং অনেক ভেবে-চিন্তে একটা ছবি আঁকা শুরু করল। সবাই ছবিটা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেল। রাজা উনার ছবি দেখে অনেক খুশি হলেন। ছবিতে রাজা এক পায়ে দাঁড়িয়ে এক চোখ বন্ধ করে শিকার করার জন্য নিশানা ঠিক করছেন।

শিক্ষা : আমরা কেন অন্যের দুর্বলতাকে লুকিয়ে তাদের ভলো কাজের প্রশংসা করতে পারি না? কেন আমরা অন্যের দোষ ত্রুটিগুলো সবাইকে বলে বেড়াই? আমাদের উচিত নিজেদের পরিবর্তন করা। 


অভ্যাস-৬৪ ▌ভিড় এডিয়ে চলুন। চেনাজানা নিরীহ মানুষ, ভিড়ের মধ্যে হয়ে যায় এক অচেনা মানুষ,


মানুষ একলা একরকম আচরণ করে আর যখন সে ভিড়ের মধ্যে যায়, তখন তার আচরণ হয় অন্য রকম। স্তাভ লে বঁ নামের ফরাসি পণ্ডিতের দ্য ক্রাউড: আ স্টাডি অব দ্য পপুলার মাইন্ড নামে বইতে (১৮৯৫ সালে) প্রথম ভিড় করা মানুষের এই মনস্তত্ত্ব তুলে ধরা হয়।

অনেক একা মানুষ যখন কোনো মুহূর্তে এক হয়ে যায়, তখন তাদের মন মোটেও একলা মানুষের মনের মতো থাকে না। তার মনে তখন সঠিক চেতনা থাকে না। সব মানুষের মন মিলে বিশাল এক মনের মতো কাজ করে। তখন তাদের সিদ্ধান্তও হয় অন্য রকম। কোনো আদিম প্রাণীর মতো। তার শরীর অতিকায় বিশাল। কিন্তু বোধবুদ্ধি, যুক্তি বলে কিছু নেই।  


অভ্যাস-৬৫ ▌সমালোচকদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করবেন না।


যদি আপনি খুব বলবান হন, সমালোচকদের পিটিয়ে ঠাণ্ডা করতে চাইবেন। যদি ধনবান হন, তাহলে টাকা দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করতে চাইবেন আর যদি আপনি কমজোরি হন তাহলে ধুত্তোর নিকুচি করেছে বলে কাজটা ছেড়ে দেবেন। কিন্তু কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলে নিজের কানে ছিপি দেবেন। সমালোচনায় আপনার কান বন্ধ রাখুন। কোনোমতেই সমালোচকদের কণ্ঠরুদ্ধ করবেন না। তাহলে বড় কাজ করার চ্যালেঞ্জটা নষ্ট হয়ে যাবে। পৃথিবীতে এমন কোনো দার্শনিক বা তাত্ত্বিক নেই যাদের দর্শন-তত্ত্ব সমাজ নির্বিবাদে মেনে নিয়েছে। তবে, মাঝে মাঝে কানের কুলুপটা খুলে একবার একঝলকে শুনে নিন সমালোচকদের মোদ্দা কথাটা কি। যদি দেখেন রাবিশ তাহলে আবার কানের ছিপি বন্ধ করে যে কাজ করছিলেন দ্বিগুণ উৎসাহে তাতে লেগে পড়ুন। 


অভ্যাস-৬৬ ▌নিজের বিপদকে সম্পদে পরিণত করতে শিখুন।

প্লেপন নামে এক চীনা ব্যবসায়ীর ১৭ বছর বয়সে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। ২০ বছর বয়সে তিনি পারিবারিক ব্যবসায়ে যখন যোগ দেন তখন ব্যবসা পড়তির মুখে। এক পয়সা লগ্নি করার মতো কোম্পানির ফান্ডে নেই। কিন্তু প্লেপন এই পড়ে যাওয়া পৈত্রিক ব্যবসাকে রমরমা করে তোলেন।

ডায়াবেটিসের রোগী বলে তার বিয়ে হচ্ছিলো না। তিনি অনেক কষ্টে চুক্তিভিত্তিক বিয়ের পাত্রী জোগাড় করেন। যে ডায়াবেটিস প্লেপনের জীবনে অভিশাপ ছিলো, তিনি ডায়াবেটিস কনট্রোলে করে শান্তিতে সাফল্যের সাথে জীবন-যাপন করছেন। তার বিশ্বাস আগামী এক দশকের মধ্যে ডায়াবেটিসের নিরাময়যোগ্য ঔষধ আবিষ্কার হবে। তথন সে সন্তান নেবে। কাজেই 'সব সময় একটা কথা মনে রাখবেন, 'রাত যত গভীর হয়, প্রভাত তত নিকটে আসে। কোন বিপদ বা সমস্যাকে ভয় পাবেন না। বিপদ বা ভয়কে সম্ভাবনা হিসেবে তৈরি করার চ্যালেঞ্জ নিন।  


অভ্যাস-৬৭দুঃসময় এবং বৃদ্ধ বয়সের জন্য এখন থেকেই সঞ্চয় করুন


আমাদের দেশে মানুষ সবচেয়ে কষ্ট পায় দুঃসময়ে এবং বৃদ্ধ বয়সে। যৌবনে তারা সঞ্চয় করে না। সঙ্গতি না থাকলেও ধারদেনা করে ছেলে-মেয়েদের পড়ায়। সন্তানের বিয়েতে খরচ করে। ছেলে-মেয়েদের বিলাস-ব্যসনের মধ্য দিয়ে মানুষ করে। ভাবে ছেলে-মেয়েরা তাদের দেখবে। বেশিরভাগ ছেলে-মেয়েই বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখে না। দেখলেও ছেলের বউরা বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে নিত্য অপমান করে। দুঃসময় এবং বৃদ্ধ বয়সের জন্য সঞ্চয় করার ব্যাপারটা সবার আগে। ছেলে-মেয়েদের ভালো স্কুল কলেজে পড়ানো আপনার দ্বিতীয় অগ্রাধিকার। যাদের উদ্বৃত্ত টাকা আছে তারা যা খুশি খরচ করতে পারেন। পনি যদি শিক্ষার্থী হন, তাহলে দুঃসময়ের জন্য আর যদি উপার্জন করেন তাহলে বিদ্যা বয়সের জন্য সঞ্চয় করতে হবে। আয় বা বেতনের টাকা সব ভোগের পিছনে ব্যয় করবেন না। বিয়ের আগে বেতনের দুই তৃতীয়াংশ টাকা ও বিয়ের পরে এক তৃতীয়াংশ টাকা জমাতে হবে শৈশবে বাবা-মা, যৌবনে স্বামী বা স্ত্রী ও বার্ধক্যে ছেলে-মেয়েদের ওপর যারা নির্ভর করে, তারা ভীষণ কষ্ট পায়। নেহাৎ দরকার না হলে কারও কাছে অর্থ সাহায্য নেবেন না। মনে রাখুন, মাটিতে পড়ে গেলে কেউ এসে হাত ধরে তুলবে বলে কারও অপেক্ষায় পড়ে থাকবেন না। 


অভ্যাস-৬৮ ▌অন্যকে দুঃখ দেবেন না


আমাদের জীবনে অর্ধেক দুঃখ আসে আমরা অপরকে দুঃখ দেই বলে। বাকি অর্ধেক দুঃখ আসে অন্যেরা আমাদের দুঃখ দিতে চায় বলে। অন্যকে দুঃখ না দিলে আমাদের অন্তত অর্ধেক দুঃখ কমে যায়। মানবসমাজ ব্যক্তিস্বার্থের প্রশ্নে পশুকেও হার মানিয়ে দেয়। কোথাও উৎস নারী, কোথাও অর্থ। যে প্রেমিক এতদিন প্রেমের কথা শোনাতো, একদিন সে আর একজনকে পেয়ে আপনাকে নির্মমভাবে ত্যাগ করে চলে গেলো। অথবা প্রাণের বন্ধু বিশ্বাসঘাতকতা করলো। এভাবে কাছের মানুষগুলো দ্রুত বদলে যাচ্ছে। আপনি অসুস্থ জেনেও আমার নিকট-আত্মীয় দেখতে এলো না। ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে কথা বললো। এভাবে মানুষ ক্রমশ নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে। সে যেন এক জনবহুল প্লাটফর্মে একা দাঁড়িয়ে আছে। প্রাথমিক সম্পর্কগুলো একে একে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আপনি অপরকে সুখী করার আন্তরিক চেষ্টা না করলে নিজে সুখি হতে পারেন না। দেশে এখন প্রচুর বিত্তবান মানুষ আছে, কিন্তু চিত্তবান মানুষ কমছে। তাই সুখও কমছে।


অভ্যাস-৬৯ ▌নিজেকে অভ্রান্ত ভাববেন না, অন্যদের তো নয়ই।


যখন টাকা নেবেন, অন্যে গুনে দিলেও নিজে দুবার গুনে নেবেন। দিন বদলায়, যুগ বদলায়, সমাজও বদলায় ও নতুন সমাজ পুরনো দিনের ধ্যান-ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে অথবা নতুন দিনের ভোরে পুরনো দিনের ভাবনা-চিন্তা ভুল ছিলো বলে প্রমাণ হয়।

তাই কখনো ভাববেন না, যা ভাবছেন, যা বলছেন সেটাই শেষ কথা। অথবা আপনার গুরু বা আপনার নেতা আপনাকে যা বুঝিয়েছেন সেটাই সত্যি। আবার বিপরীতটাও সত্যি নয়। বলতে পারেন তখনকার মতো সত্যি, কিন্তু চিরকালের জন্য নয়। পৃথিবীতে যুগ যুগ ধরে বহু মানুষ তাঁদের বিশ্বাসের জন্য প্রাণ দিয়েছেন। প্রাণ দানটা সত্যি। কিন্তু বিশ্বাসটা সত্যি নাও হতে পারে। দুটি পরস্পরবিরোধী বিশ্বাসের পক্ষে বহু লোক থাকে। সেই বিশ্বাসের জন্য দুপক্ষের লোকই প্রাণ দেয়। বার্টান্ড রাসেলকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিলো আপনার বিশ্বাসের জন্য আপনি কি প্রাণ দিতে পারেন? রাসেল বলেছিলেন, না। আমার বিশ্বাসটা তো ভুল হতে পারে। সময়ই একমাত্র বিচার করতে পারে কোনটা ভুল, কোনটা ঠিক।  


অভ্যাস-৭০ ▌একমাত্র বদনেশা ছাড়া অন্য কোন কিছু চট করে ছাড়বেন না।


অধিকাংশ লোকই যত ধরেন তত ছাড়েন। উপকারী বন্ধুকে ছেড়ে দেন। কিছুদিন ধরে ডেটিং করে, দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করার পরও প্রেমিকাকে ছেড়ে দেয়। বৃদ্ধ বাবা-মা, ভাই-বোনদের সঙ্গে রক্তের সম্পর্কও অস্বীকার করে স্বতন্ত্র জীবনযাপন করেন। যেমন- রাজা রামমোহন রায় গর্ভধারিণী মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন না। বিদ্যাসাগর কলকাতায় চলে গিয়ে মাকে প্রায় ভুলে গিয়েছিলেন। বিমল মিত্রের সঙ্গে তাঁর মায়ের বিরোধ চিরস্থায়ী হয়েছিলো। এক সময়ের উপকারকে ছেড়ে যাওয়া আকছার ঘটে। বহু শিষ্য গুরুকে ছেড়ে চলে যায়।


রবীন্দ্রনাথ একদা বলেছিলেন, আমরা যাহা শুরু করি তাহা শেষ করি না। কেন আমরা চট করে ধরি, চট করে ছেড়ে দেই? প্রথমে ধরি আবেগের বশে, অথবা অন্যের অনুকরণ করে। তারপর আমাদের বাস্তব মনস্তত্ত্ব কাজ করে, ফলে ছেড়ে দিই।

যতক্ষণ না পাই, মনটা আকুলি-বিকুলি করে। তারপর পেয়ে গেলে তৃষ্ণাটা মিটে যায়। বিরক্ত হই। খিদে পেলে যেমন খেতে ইচ্ছে করে, আবার খাওয়া শেষ হয়ে গেলে ভরা পেটে মধুও তেতো লাগে, তেমনি। দ্বিতীয়ত মানুষ মূলত স্বার্থপর প্রাণি। তার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা সবটা প্রয়োজনভিত্তিক। যতক্ষণ শিক্ষকের সান্নিধ্য তার কাজে লাগে ততক্ষণ সে শিক্ষকের অনুগত ছাত্র।

তোমার যখন কাউকে কিছু দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে, তখন তোমার চারপাশে বহু মানুষের ভিড় থাকবে। যখন যাকে দরকার হয় মানুষ তখন তাকে ধরে আর দরকার না থাকলে ছাড়ে। যেটা ছাড়া উচিত অথচ সারাজীবন মানুষ ধরে রেখে দেয়, আর তাতেই মারা যায়, তা হলো সিগারেট। খুব কম লোকই নেশা ছাড়তে পারে। নেশাখোরেরা মুক্তি চায় না। পক্ষে যুক্তি চায় 


অভ্যাস-৭১ ▌অতিরিক্ত অর্থ আপনাকে অহংকারী ও বিচ্ছিন্ন করে তুলবে।


আপনি যত বিলাসবহুল জীবনযাপন করবেন তত বেশি খাদ্যদূষণে আপনার শরীর ব্যাধিতে ভরে উঠবে। দেখা দেবে নানা লাইফস্টাইল অসুখ। প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্থ নানা মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করবে। সবচেয়ে যে ক্ষতিটা করবে, মানুষের সঙ্গে সুস্থ স্বাভাবিক সম্পর্ক নষ্ট করে দেবে। দৃষ্টিভঙ্গি এমনভাবে আচ্ছন্ন করবে যে মনে হবে টাকা দিয়ে আপনি সবই কিনতে পারেন। আপনার ধারণা হবে একমাত্র আপনিই এ পৃথিবীতে যোগ্যতম ব্যক্তি । আমি জীবনে খুব কমই মানুষ দেখেছি, যারা বিদ্বান অথচ বিনয়ী, ধনী অথচ স্থিতধী, রূপসী অথচ সরল। মনে রাখবেন আপনার বংশগতি, জন্ম মেধা, রূপ সৌন্দর্য এমনকি বহু ক্ষেত্রে অর্থও দৈব বশে পেয়েছেন। কিন্তু আপনার পৌরুষত্ব, ব্যক্তিত্ব, চিন্তাধারা, মূল্যবোধ, আপনার নিজস্ব অর্জন। । 


অভ্যাস-৭২ ▌জ্যেষ্ঠ হলেই শ্রেষ্ঠ হয় না, চুল পাকলে বুদ্ধি বাড়ে না।


অভিজ্ঞতা সময় দিয়ে বিচার হয় না। একদিনেও অনেক বিচক্ষণ ব্যক্তি এক বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে। বয়সই অভিজ্ঞতার মাপকাঠি নয়। আশি বছরেও অনেকে সাবালক হয় না। যে বৃদ্ধ বারবার একই ভুল করে তার বয়স এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থাকে। এডিসন বাল্ব আবিষ্কার করতে গিয়ে ৯৯৯ বার পরীক্ষা করেছিলেন। প্রতিবারেই তার পরীক্ষা ভুল প্রমাণিত হয়। আলো জ্বলেনি। হাজারতম পরীক্ষাটি সফল হলো। এডিসনকে লোকে বললো, হাজারবারের চেষ্টায় তুমি সফল হতে পারলে। এই যে এতদিন লেগে গেলো বাল্ব আবিষ্কার করতে এই সময়টা কি নষ্ট হলো না? এডিসন বললেন, না, আমার কিছু নষ্ট হয়নি। কারণ প্রতিটি এক্সপেরিমেন্ট আমাকে অভিজ্ঞতা দিয়েছে যে, এইভাবে এই পদ্ধতি হয় না। অন্য পদ্ধতি চাই।  


অভ্যাস-৭৩ ▌যে চাকরি ভালো লাগে না সে চাকরি বেশিদিন করবেন না।


মাইনে কম অথচ কাজটা করে আনন্দ পান সেই চাকরিই করবেন। মাইনে বেশি অথচ প্রতি মুহূর্তে মনে হয় এ ধরণের কাজ করে কর্মসন্তুষ্টি পাচ্ছেন না, সে চাকরি নেবেন না। পছন্দমত কাজ পেতে গেলে আপনার নিজস্ব বিষয়ে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়ান। নিয়মিত আপনার বিষয়টি নিয়ে চর্চা করুন। আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সে বিষয় ছাড়া কদাচ অন্য বিষয়ে চাকরি নেবেন না। যদি ভুল চাকরিতে ঢুকে পড়েন এবং পছন্দমতো চাকরি না পান তাহলে সে সময়টা কোনোমতে চাকরিটা করে যান। কিন্তু বেশি করে মন দিন আপনার হবি চর্চায়। সমাজ সেবা, নাটক, ছবি আঁকা। লেখালেখি, খেলাধুলা এমন সব কাজে জড়িয়ে থাকুন যাতে চাকরি জীবনের গ্লানি কেটে যায়। 


অভ্যাস-৭৪ ▌কোনো শিশুকে প্রথমেই চুপ করিয়ে দেবেন না।


আগে তাদের কথা বলতে শেখান, তারপর শেখান চুপ কোথায় করতে হয়। ছেলে-মেয়েদের বেয়াদপি দেখে বাবা-মায়ের রাগ করা অবান্তর। কারণ আপনাদের সন্তান আপনাদেরই প্রতিমূর্তি। বাবা-মায়ের প্রত্যেকের ২৩টা করে ক্রোমোজোম দিয়ে তৈরি হয় সন্তান। তাদের দৈহিক ও মানসিক গঠনের জন্যও বাবা-মায়ের জিন অনেকটাই দায়ী। বাচ্চাদের ভূতের ভয় বা জুজুর ভয় দেখাবেন না। বাচ্চাকে কদাচ মারবেন না। বাচ্চাকে যদি মারধর করে বশে আনার চেষ্টা করেন, তাহলে বাচ্চা নিজেও মনে মনে জানবে একমাত্র মারধর করে, ভয় দেখিয়ে কাউকে থামিয়ে দেওয়া যায়। বউরা স্বামীকে কর্কশভাবে ভৎর্সনা করে। শিশু এটা দেখে। তার মধ্যে হিংসা ও আক্রোশ জন্মাতে থাকে। বড় হয়ে সে মানুষ হিসাবে ঝগড়াটে, অস্থির, খিটখিটে স্বভাবের ও বদমেজাজি হয়ে ওঠে। সে যখন বিয়ে করে তখন তার স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে এইরকম ব্যবহারই সঙ্গত মনে করে।  


অভ্যাস-৭৫ ▌ক্ষমতাবানের দম্ভ দেখে অবাক হবেন না।

জ্ঞানীরা কখনও প্রয়োজনের অধিক অর্থ উপার্জন করতে মুখে রক্ত তুলে ছুটাছুটি করে না। তারা ইচ্ছা করে ধনী হতে চায় না। তারা দারিদ্রের মধ্যে দিয়ে তিল তিল করে যে আর্থিক নিরাপত্তা অর্জন করে, তা শেষ বয়সের পক্ষে যথেষ্ট বলে মনে করে। ধনী হতে পারেননি বলে দুঃখ করেন না। একটা সূত্র মনে রাখবেন, যত বেশি ধনী হবেন, তত বেশি মত্যুর দিকে এগিয়ে যাবেন।ক্ষমতাবানদের সাথে বন্ধুত্ব করুন, কিন্তু বন্ধু ক্ষমতায় গেলে তার কাছে কিছু প্রত্যাশা করবেন না। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার সহজ রাস্তা হলো তাদের প্রশংসা করা, তাদের স্বার্থসিদ্ধির পথে সহায়তা করা। 


অভ্যাস-৭৬ ▌কারও অভদ্র আচরণে দুঃখ পাবেন না

ভদ্রতা অনেকটা জন্মগত। ভদ্রলোকের ছেলেরাই সাধারণ ভদ্রলোক হয়। এটি একটি জেনেটিক উত্তরাধিকার। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ছেলে-মেয়েরা খুবই ভদ্র। রাজনীতিকদের ছেলেরা সাধারণত অভদ্র হয় কারণ রাজনীতিকদের মধ্যে খুব কম লোকই ভদ্র। পরিবেশগত কারণে ভদ্রলোকদের সংখ্যা কমছে। কারণ নিজে সুখীবোধ না করলে লোকে ভদ্র আচরণ করতে পারে না। আজকাল নানা কারণে লোকের মেজাজ খিঁচড়ে থাকে। ভেতরে ভেতরে থাকে অভাববোধ, অপারাগতাবোধ, হীনম্মন্যতা। তাই মন বিক্ষিপ্ত হলে চিত্তও হতাশগ্রস্ত ও বিষাদগ্রস্ত হয়ে থাকে। অন্যের কাছ থেকে ভদ্র ব্যবহার চাইলে নিজে ভদ্র ব্যবহার করুন। অন্যের অভদ্রতার দ্বারা প্রভাবিত হবেন না। আপনি নিজে ভদ্র না হলে অন্যের কাছ থেকে ভদ্র ব্যবহার দাবি করতে পারেন না। ভদ্র হতে গেলে রাগ ক্ষোভ দমন করুন। হেসে কথা বলুন। একশো জনের মধ্যে একজন ভদ্রলোক দেখতে পেলে তাকে সম্মান করুন। 


অভ্যাস-৭৭ ▌আপনি যেমন তেমনটি থাকুন। কাউকে অনুসরণ করবেন না।


কাউকে অনুকরণ করে বা কৃত্রিম উপায়ে আপনি যা নন, তা হবার চেষ্টা করবেন না। অনেক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ বলে নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করবেন না। আপনার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে নিজেই সচেতন থাকুন। চট করে কাউকে ইমপ্রেস করার জন্য বড় বড় কথা বলবেন না। কোনো বিষয়ে অল্প জেনে বেশি জানার ভান করবেন না। অল্প জানা অপরাধ নয়। তবে বেশি বিষয়ে অল্প জানা আরও ভালো।


অভ্যাস-৭৮ ▌অতিরিক্ত স্মার্ট হবার চেষ্টা করবেন না।


ওভার স্মার্টরা কিছু কিছু সরল লোকদের ও অজ্ঞদের প্রভাবিত করতে পারে কিন্তু বুদ্ধিমানদের কাছে ধরা পড়ে যায়। স্মার্ট কথাটার মানে হলো চালাক-চতুর। বুদ্ধিমান ও চালাকের মধ্যে তফাৎ হলো: বুদ্ধিমান তাঁর অজ্ঞতা এমনভাবে ঢেকে রাখতে জানে, যা বাইরের লোক বুঝতে পারে না। আর চালাক ব্যক্তি তার বুদ্ধিকে এমনভাবে জাহির করতে যায় যে, তা বোকামির পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছায় ও লোকে তা ধরে ফেলে। বুদ্ধিমান যেখানে যেমন সেখানে তেমন ব্যবহার করেন। বোকাদের কাছে তিনি বোকা হয়ে থাকেন। চালাকেরা বোকাদের কাছে চালাক সাজতে যান আর চালাকদের কাছে আরও চালাক সাজেন। চালাকেরা অল্প খরচে সস্তায় দামী জিনিস হাতাতে চায়। কিন্তু দামী জিনিস সস্তায় বিক্রি হয় কখনো? প্রকৃত স্মার্টনেস হলো শুধু পোশাকে নয়, সামগ্রিক আচরণের মধ্যে একটা বুদ্ধি ও সংস্কৃতির ছাপ ফুটিয়ে তোলা। 


অভ্যাস-৭৯ ▌আবেগের বশে কাউকে চট করে কোনো প্রতিশ্রুতি দেবেন না।

প্রতিশ্রুতি দেবার আগে ভাববেন আপনার সে প্রতিশ্রুতি পালনের ক্ষমতা আছে কি না, অথবা সেই প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য মনে ইচ্ছা আছে কি না। চরিত্রবান ব্যক্তিরা একবার কথা দিলে তা যত তুচ্ছ হোক বা যত কঠিন হোক তা পালন না করে স্বস্তি পান না। যে সব ব্যাপারে মানুষ চট করে কথা দেয়, সেসব ব্যাপারে শতকরা ৫০ থেকে ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে কথা রাখে না।

বাইরে বেড়াতে গিয়ে অনেকের সঙ্গে আলাপ হয়ে যায়। সে আলাপ বন্ধুত্বে পরিণত হয়। বিদায় নেবার আগে পরস্পরের ঠিকানা নেন ও নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। তারপর যে যার জায়গায় ফিরে গিয়ে আর কারো সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। শতকরা ৩০ জন যোগাযোগ করলেও প্রথম প্রথম সে যোগাযোগ থাকে কিন্তু তা স্বল্পস্থায়ী হয়। কিছুদিন পরে দুজনেই দুজনের প্রতিশ্রুতি ভুলে যান।


প্রেমের ক্ষেত্রে মিথ্যে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ঝরে। সেই প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মেয়েরা। প্রেমে আর যুদ্ধে কেউ কথা রাখে না।


অভ্যাস-৮০ ▌উপকার করে প্রতিদানের আশা করবেন না


সব সময় মনে রাখবেন আপনি যে কাউকে সাহায্য করার সুযোগ পাচ্ছেন, তাতে সবচেয়ে লাভ হচ্ছে আপনার। কেন? কাউকে উপকার করার মধ্যে এক অসীম আত্মতৃপ্তি বা আনন্দানুভূতি আছে। এই আনন্দ অনুভূতি অন্য কিছুতে পাওয়া যায় না। আমাদের মানসিক আনন্দের কতগুলি স্তর আছে। এর মধ্যে একটি স্তর হলো অহংস্তর। কারো জন্য কিছু করতে পারলে এই অহং খুব শক্তিশালী হয়। একজন কবি যখন কবিতা লেখেন বা গল্পকার গল্প লেখেন তখন লেখার সঙ্গে সঙ্গে তিনি যে আনন্দটুকু পান সেটাই তাঁর বড় পুরস্কার। অন্যকে সাহায্য করা বা উপকার করা ঠিক কবিতা লিখে আনন্দ পাবার মতো। তবে মনে রাখবেন উপকৃত ব্যক্তি আপনার মক্কেল নয়। মক্কেলকে লোকে উপকার করে তার কাছ থেকে প্রতিদানের আশায়। আপনি প্রতিদানের প্রত্যাশা করলে বেছে বেছে তাদেরই উপকার করুন, যাদের কাছ থেকে আপনার ব্যবসা পাবার সম্ভাবনা আছে। যদি নিজের আনন্দের জন্য কাউকে কিছু করেন তবে প্রতিদান দেবার ক্ষমতা যাদের নেই তাদের জন্য কিছু করুন।  


অভ্যাস-৮১ ▌স্মার্ট হয়ে উঠুন


# সাধারণ জ্ঞান-বিজ্ঞান শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি স্তরে পৃথিবীতে কোথায় কী হচ্ছে, কী ঘটছে তা নখদর্পণে রাখুন। ইন্টারনেট ও সেলফোনের মতো এত শক্তিশালী মাধ্যম পেয়ে তা শুধু ভিডিও গেম ও প্রেমের জন্য ব্যবহার করবেন না। তার প্রকৃত ব্যবহার করুন।

# আলোচনা, ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় নিয়মিত অংশ নিন।

# নিয়মিত ক্লাস লেকচার শুধু নয়, টিভির আলোচনাও শুনুন। পড়ার চেয়ে শোনা চট করে মনে থাকে।

# প্রতি পনেরো দিন অন্তর একটি করে ভালো বই পড়ুন।

# নিয়মিত ব্যায়াম করুন। সিগারেট, মদ ও কোল্ড ড্রিঙ্কস্্ বর্জন করুন। বেশি করে শাক-সবজি ও পানি পান করুন।

# ভালো উচ্চারণ শিখুন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কবিতা পড়ুন।

# বিনয়ের সঙ্গে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বা বসে চোখে চোখ রেখে কথা বলুন। কথায় জোকসকে যোগ করতে শিখুন। হাসুন এবং হাসান। 


অভ্যাস-৮২ ▌অতীতের কোনো ভুলের জন্য দুঃখ করবেন না।

সমগ্র মানবসভ্যতার ইতিহাস ভুলের মধ্যে দিয়ে সঠিক পথে যাবার ইতিহাস। শুধু একটা পরীক্ষা নয়, জীবনের সমস্ত পরীক্ষায় সফল হবার মতো করে নিজেকে প্রস্তুত করতে লডাকুভাবে তৈরি হতে হয়। অন্যের প্রতি অন্যায়ের প্রতিবাদ করুন। কিন্তু আপনার প্রতি কেউ অন্যায় করলে, আপনাকে অপমান করলে, আপনার প্রতি ঔদ্ধত্য দেখালে আপনি নিজে প্রতিশোধ নিতে যাবেন না। অতীতের ভুলের জন্য আর আফসোস করবেন না, একবারের জন্যও মনে আনবেন না। যা গেছে চলে যাক গোল্লায়, যা করে ভালো করে আল্লায়। এই মনোভাব মনে ধরে রাখুন।  


অভ্যাস-৮৩ ▌অর্থনৈতিকভাবে কারো ওপর নির্ভরশীল হবেন না।

ছেলে-মেয়েরা একটু বড় হলেই তাদের বলে দিন বাবা-মা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব তোমাদের সাধ্যমত লেখাপড়া শেখানো। তারপর তোমরা আমার ওপর আর্থিকভাবে নির্ভর করো না। আমরাও বৃদ্ধ বয়সে তোমাদের ওপর নির্ভর করবো না।

যতক্ষণ ছেলে-মেয়েরা জানবে আমাদের পিছনে বিত্তশালী বাবা আছে, ততদিন ছেলে-মেয়েরা স্বাবলম্বী হবে না। যুদ্ধে সৈনিকদের মনোবল বাড়াবার শেষ উপায় আপনাদের জাহাজটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া। তখন আর সৈন্যদের যুদ্ধ করা ছাড়া উপায় থাকে না। বৃদ্ধ বয়সে সম্পদ খুইয়ে ছেলে-মেয়েদের পিছনে খরচ করবেন না। বৃদ্ধ বয়সে অন্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার পদে পদে যন্ত্রণা।


অভ্যাস-৮৪ ▌সাফল্যের জন্য আত্মহারা হবেন না।

ব্যর্থতার জন্যও খুব বেশি ভেঙে পড়বেন না। সাফল্য এলে দায়িত্ব বেড়ে যায়। লোকের প্রত্যাশা বেড়ে যায়। লোকে অকারণে ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে ওঠে। তাই সফল লোকের ওপর সাফল্য ধরে রাখার জন্য চাপ বাড়ে। এই চাপ থেকে সাফল্যকে ধরে রাখার জন্য হয় সে সাধ্যাতিরিক্ত পরিশ্রম করে, নয় তো আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ে। সফল ব্যক্তির শত্রুর সংখ্যা বাড়ে। কার্যসিদ্ধির জন্য বন্ধুর ছদ্মবেশে প্রচুর স্বার্থপরায়ণ লোক এসে তাকে কুপরামর্শ দেয়। সেই হিতৈষীদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য সে অনেক সময় অন্যায় ও অসঙ্গত কাজ করে। সে আরো সাফল্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করার চেষ্টা করে না। ফলে আবার ব্যর্থতা আসে। হতাশা। হতাশা থেকে ডিপ্রেশন। ডিপ্রেশন সমস্ত কর্মপ্রচেষ্টা বন্ধ করে দেয়। 

সাফল্য আপনাকে বসিয়ে দেয়। আপনাকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করে। কিন্তু ব্যর্থতাই আপনার চালিকাশক্তি। সে আপনাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। আমি জীবনে বারবার ব্যর্থ হয়েছি বলেই বারবার নতুন অভিজ্ঞতার সামনাসামনি হতে পেরেছি।


অভ্যাস-৮৫ ▌যে  সব জায়গায় মাথা গরম করবেন না

# দুজনে মিলে যেখানে কথা কাটাকাটি হচ্ছে ,তুমুল বাক-বিতণ্ডা চালাচ্ছে অথবা যখন উত্তপ্ত তর্ক-বিতর্ক চালাচ্ছে আপনি তার মধ্যে ঢুকে পড়ে অযথা নিজের মাথা গরম করবেন না। 

# নিজে পারতপক্ষে কোনো তর্কে জড়াবেন না। যদি দেখেন কোনো আলোচনা তর্ক পর্যন্ত গড়াচ্ছে, আপনি আর সেটাকে বাড়তে দেবেন না। বলবেন, হতে পারে তুমি যা বলছো সেটাই ঠিক। কিন্তু আমি এতদিন এটাই জানতাম। মোটকথাঃ তর্কযুদ্ধে ঢুকে পড়লেও কখনো জয়ী হবার চেষ্টা করবেন না। কারণ তর্ক করে কিছু পাওয়া যায় না, বরং যা আছে সেটিও হারাতে হয়। বিশ্বাস, বন্ধুত্ব, ভালোবাসা, আস্থা, শ্রদ্ধা পাঁচ মিনিটের তর্কে এ সবই খুইয়ে বসে থাকবেন।

# হঠাৎ কোনো প্রস্তুতি না নিয়ে একা কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে যাবেন না।

# ভিড়ের বাসে কেউ আপনার পা মাড়িয়ে দিলে বা আপনাকে ঠেলে জায়গা দখল করতে গেলে, আপনি তাকে তাীব্রস্বরে প্রতিবাদ করবেন না। শুধু ব্যঙ্গের হাসি হেসে বলুন থ্যাঙ্ক ইয়্যু।

# কোনো কর্তব্যরত সরকারি কর্মচারীর ওপর ভুলেও মাথা গরম করে হামলা চালাবেন না। জলে কুমির, বনের বাঘ আর গর্তে সাপের মতো সরকারি অফিসার বা কর্মীরা তাঁদের অফিসে প্রবল শক্তিশালী।

# আপনি সবলের ওপর মাথা গরম করল্‌ তাঁর হাতেই মার খাবেন। আর দুর্বলের ওপর মাথা গরম করলে পাবলিকের হাতে মার খাবেন।  অতএব মাথা গরম করবেন না।


অভ্যাস-৮৬ ▌ভদ্রতা হচ্ছে সেরা বিনিয়োগ

ভদ্রতা সামান্য বিনিয়োগ, কিন্তু প্রতিদান অনেক বেশি। ভদ্র ব্যবহার যে পায় তারও আত্মমর্যাদা বেড়ে যায়। ভদ্রতার বীজ ছড়িয়ে দিন। ভদ্র ব্যবহার অপরের চোখে আপনাকে উন্নত মানুষরূপে প্রতিভাত করবে।

সৌজন্যবোধ ও আদবকায়দা হাত ধরাধরি করে চলে। বাড়িতেও আদবকায়দা অনুশীলন করা দরকার, বেশিরভাগ লোকই এটা এড়িয়ে চলে। বাচ্ছাদেরও অল্প বয়সে সৌজন্যবোধ শিক্ষা দেওয়া উচিত, একবার শিখলে তা সারা জীবন থাকবে। স্মরণ রাখা দরকার, ভদ্র ব্যবহার অন্যকেও ভদ্র ব্যবহারে অনুপ্রাণিত করে। সেজন্য ভদ্র ব্যবহার অনুশীলন করা দরকার। অন্য কেউ আপনার সাথে যত অভদ্র আচরণ করুক না কেন আপনি ভদ্র ব্যবহারের মাধ্যমে এই জঘন্য রুচিকে প্রতিহত করুন।


অভ্যাস-৮৭ ▌দয়া ও মমত্ববোধ দেখান

দয়া এমন একটি ভাষা, যা বধিরও শুনতে পায়, অন্ধও দেখতে পায়। টাকা দিয়ে একটি ভালো কুকুর কিনতে পারেন, কিন্তু তার প্রতি দয়া না দেখালে সে লেজ নাড়বে না।

এক বালক একটি কুকুরছানা কিনতে দোকানে গেলো। চারটি ছানার প্রত্যেকটির দাম ৫০ ডলার। এক কোণে আর একটি কুকুরছানা একা বসেছিলো। ছেলেটি জিজ্ঞেস করলো, ঐ বাচ্ছাটিও এক মায়ের বাচ্চা কিনা এবং ঐ বাচ্চাটিও বিক্রির জন্য আছে কিনা। দোকানের মালিক বললো, ঐ বাচ্চাটিও অন্যগুলোর সঙ্গে একই মায়ের বাচ্চা; কিন্তু ঐ বাচ্চাটির অঙ্গহানি আছে বলে ঐটি বিক্রির জন্য নয়। 

ছেলেটি জিজ্ঞেস করলো, কি ধরণের অঙ্গহানি আছে। দোকানদার বললো যে, বাচ্চাটির একটি পা নেই। ছেলেটি জিজ্ঞেস করলো, এটিকে নিয়ে আপনি কি করবেন? জবাব এলো, একে চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হবে। ছেলেটি বাচ্চা কুকুরটির সঙ্গে একটু খেলতে চাইলে দোকানদার মত দিলো।

ছেলেটি তখন কুকুরটিকে কোলে নিতেই, কুকুরটি তার হাত চেটে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটি ঠিক করলো যে সে কুকুর বাচ্চাটি কিনবে। দোকানদার বললো, তুমি এই বিকলাঙ্গ কুকুরছানাটির জন্য ভালো কুকুরছানার দাম দেবে কেন? ছেলেটি কিছু না বলে তার ট্রাউজারের কিছুটা তুলে দেখালোÑ সে একটি নকল পা পরে আছে। ছেলেটি বললো, আমি এর জন্যও একটি নকল পা বানাবো। সে সব সময় আমার সঙ্গে থাকবে। একেই বলে সহমর্মিতা।


অভ্যাস- ১৮ ▌সবার উপরে মানুষ সত্য

এই  পৃথিবীতে ভণ্ড, প্রতারক, মিথ্যাবাদী, লোভী, অহংকারী  যেমন আছে, তার উল্টোটাও আছে। আছে অনেক হৃদয়বান, উদার মহানুভব, সত্যবাদী মহামানব। আসলে আমাদের প্রত্যেক মানুষকে সমানভাবে ভালোবাসা দরকার। কে ধনী, কে গরিব, কে পীর, কে বাটপার তা পরখ করা নয়। কারণ প্রত্যেকে আমরা একে¯ অপরের উপরে নির্ভরশীল। একদিন পেট আর পায়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হচ্ছিল- কার শক্তি বেশি তা নিয়ে। পা পেটকে বলল, তোমাকে আমি বহন করে নিয়ে বেড়াই। তাই  তোমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, আমারই শক্তিই বেশি। পেট বলল, আমি খাবার খেয়ে হজম করি, তোমায় পুষ্টি জোগাই, তা না হলে তুমি হাঁটতে পারতে কি করে? পা ও পেট এভাবে নানা যুক্তি দিয়ে নিজেদের শক্তিশালী প্রমাণের চেষ্টা করলেও তারা শেষ পর্যন্ত স্বীকার করতে বাধ্য হয় জীবন বাঁচানোর জন্য তার দুজনেই সমান গুরুত্বপূর্ণ।


অভ্যাস- ১৮▌স্থায়ী বন্ধু রাখতে গেলে টাকা ধার দেবেন না, ধার চাইবেনও না।

টাকা ধার দিলে বন্ধু হারাবেন ও একজন শত্রু তৈরি করবেন। কারণ, বাংলাদেশের একটা বিপুল সংখ্যক মানুষ মনে করে কারো কাছ থেকে টাকা ধার নিলে সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার দরকার নেই।  টাকা ধার দেওয়ার পরে আপনি বুঝতে পারবেন যে, টাকা ধার দিয়ে আপনি নিজেই বরং বিপদে পড়ে গেছেন। আপনি একজনকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে উল্টা নিজেই পড়েছেন মহাবিপদে। আজ দেব কাল দেব করে টাকা দিচ্ছে না। এক পর্যায়ে এমন পরিস্থিতিও দাঁড়ায় যে, সে আপনাকে দেখলে মাথা নিচু করে বা অন্য রাস্তা দিয়ে চলে যাবে।

পুরো পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর এক মাত্র দেশ যেখানে টাকা পয়সা অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে ধার দেনার কোন লিখিত ডকুমেন্ট রাখা হয় না।   আপনার কষ্টার্জিত টাকা ধার দেওয়া মানে, তাকে আপনার শত্রুতে পরিণত করা। আপনি অযথা মানুষকে শত্রুতে পরিণত করতে যাবেন কেন? হ্যা, যদি কাউকে টাকা ধার দিতে হয়, তাহলে তা একেবারেই দিন উপহার হিসেবে; ফেরতের আশা করবেন না। আবার কারো কাছ থেকে ধার নিবেনও না। পেটে-ভাতে কষ্ট করে চলবেন। প্রয়োজনে পানি খেয়ে চলবেন; না খেয়ে থাকবেন। তারপরেও কারো কাছ থেকে টাকা ধার করবেন না। যাদের অল্প দিনের জন্যে টাকা ধার নিতে হয়, তারা ক্রেডিট কার্ড নিতে পারেন। এতে অন্যকেও বিব্রত আর বিরক্ত করা হলো না, আবার নিজের মান-সম্মানও বাঁচলো।


অভ্যাস-৯০ ▌কারো জন্য জীবন থেমে যায় না

আমরা কেউ চাই না সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে। জীবন একটাই, এর চেয়ে বড় সত্য আর  কিছু নেই। এই জীবন অন্য কারোর জন্য নয়, প্রত্যেকের নিজের জন্যই বেঁচে থাকতে হয়। অন্য কারও উপর অভিমান করে মহামূল্যবান জীবনটা নষ্ট করার মধ্যে কোনো মহাত্ম নেই। সামান্য একজন  মানুষের ভুল ভালোবাসা পাওয়ার জন্যে মিছামিছি আবেগের বলি হয় সুন্দর একটা জীবনের। আসলে ভালোবাসা সুন্দরতম অনুভূতির নাম। ভালোবাসা যেখানে থাকবে, সেখানে দুঃখ থাকবে, হাসি থাকবে, কান্না থাকবে, কষ্ট থাকবে। আর সব মিলিয়েই জীবন। 

একটা ছেলে একটা মেয়েকে অনেক ভালবাসতো, ছেলেটি মেয়েটিকে প্রপোজ করল, তখন মেয়েটি না করে দিল। ছেলেটির বন্ধুরা ভাবলো ছেলেটি এবার হয়তো ড্রাগ, অ্যালকোহল নেয়া শুরু করবে এবং নিজের জীবনটাকে ধ্বংস করবে। কিন্তু তারা অবাক হল যখন ছেলেটি এসবের কিছুই করল না। ছেলেটি বললো, “আমার কেন খারাপ লাগবে? আমি এমন একজনকে হারিয়েছি; যে কখনোই আমাকে ভালবাসেনি, আর সে এমন একজনকে হারিয়েছে; যে সত্যিই তাকে অনেক ভালবাসতো।”

এটাই চরমভাাবে সত্যি যে, এই বিশাল পৃথিবীতে কারও জন্যে সব শেষ হয়ে যায় না। নিজের মতো করে বাঁচতে চাইলে বাঁচার অনেক পথ আছে। সুন্দরভাবে বাঁচার আনন্দও আছে। একটা হাত সরে গেলেও  হাজারটা হাত থাকে। পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে সেই প্রসারিত হাত অপেক্ষার প্রহর গুনে বসে থাকে আপনাকে পূর্ণ করবে বলে। যে যেতে চায় তাকে যেতে দাও,। যে কটা দিন বাঁচবে মাথা উঁচু করে বাঁচবে। হেরে যাওয়া নয়,  জয় ছিনিয়ে আনাই হোক জীবনে বেঁচে থাকার লক্ষ্য।


অভ্যাস-৯১ ▌আপনি কি হেরে যাচ্ছেন কিছু মানুষের সমালোচনার তোপে?

কিছু মানুষ কি আপনার সব কিছুকেই নেগিটিভলি নিচ্ছে এবং আপনার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে অযথাই? আসুন জেনে নিই কেমন করে জীবনে তাদের সহ্য করবেন ? # নির্লিপ্ত থাকুনঃ যখন কেউ আপনার স¤পর্কে নেতিবাচক কথা বলবে সবসময় তখন পাল্টা জবাব না দিয়ে নির্লিপ্ত থাকুন। ঠিক তার চোখের দিকে তাকিয়ে হাসুন। সে নিজেই লজ্জা পেয়ে যাবে আপনার নির্লিপ্ততায়। # প্রশংসা করুনঃ তার ব্যক্তিগত জীবনের ছোট ছোট অর্জনগুলোর প্রশংসা করুন। দেখবেন সে দ্বিধাবোধ করছে পরের বার আপনার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করতে । #  সঠিক সময়ে না বলতে শিখুন। কোন আড্ডায় আপনাকে ছোট করা হচ্ছে? খুব শান্ত স্বরে বলুন "আমরা কি ভিন্ন কোনো বিষয়ে কথা বলতে পারি?  নয়তো আমার এখন চলে যাওয়া উচিত"।

মোট কথাঃ আপনি যখন অন্যের ব্যাপারে নেতিবাচক কথা শুনতে অনাগ্রহ প্রকাশ করবেন। তখন আপনার বন্ধুটিও আপনার ব্যপারে নেতিবাচক কথপোকথনে প্রতিবাদ করবে। এভাবেই গড়ে তুলতে হবে একটি সভ্য সমাজ।


অভ্যাস-৯২ ▌মানুষ বড় হয় তার কর্মে, ঐশ্বর্যের নয়।

একবার এক লোক মাইক্রোসফটের অফিসে কেরানির পদে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিতে গেল। ইন্টারভিউতে পাস করার পর তার কাছে ই-মেইল আইডি চাওয়া হল অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পাঠাতে হবে বলে। লোকটি বললো তার কোনো ই-মেইল আইডি নেই। প্রশ্নকর্তা এটা শুনে বললেন, ‘এই যুগে বসবাস করেও আপনার ই-মেইল আইডি নেই? তাহলে এমন মানুষের আমাদের দরকার নেই। এ বলে তাকে চাকরি না দিয়ে ফিরিয়ে দেয়া হল। লোকটির কাছে কিছু টাকা অবশিষ্ট ছিল। ২০ টাকা দরে তিনি বাজার থেকে টমেটো কিনলেন। সেই টমেটো ৩০ টাকা করে বিক্রি করলেন। তিনি একইভাবে টমেটো বিক্রি করে বেশ ভাল টাকা আয় করলেন। আস্তে আস্তে তিনি টমেটো বিক্রির জন্য ঠেলাগাড়ি কিনলেন, দোকান দিলেন, আর তারপর সুপার শপ দিলেন। এভাবে, তিনি এক সময় বিশাল ব্যবসায়ী হয়ে গেলেন। এখন তিনি একজন কোটিপতি ব্যবসায়ী। তার সাক্ষাৎকার নিতে এক সাংবাদিক এলেন। এ কথা সে কথার পর সাংবাদিক তার ই-মেইল আইডি চাইলেন। লোকটি এবারও জানালেন, তার কোনো ই-মেইল আইডি নেই। সাংবাদিক অবাক হয়ে বললেন, আপনি এত বড় একজন মানুষ আর আপনার ই-মেইল আইডি নেই! এটা কিভাবে সম্ভব! তখন লোকটি হেসে বললেন, আমার যদি ই-মেইল আইডি থাকতো, তবে আমি আজ মাইক্রোসফটের কেরানী হয়েই থাকতাম। 


অভ্যাস-৯৩ ▌অন্যকে দমিয়ে নিজে বড় হতে চাইবেন না।

এক শিক্ষক ব্ল্যাকবোর্ডে একটা দাগ এঁকে তার ছাত্রদের বলেছিলেন দাগটা ছোট করতে। প্রত্যেকে দাগটি মুছে মুছে ছোট করলেও একজন ওই দাগটির পাশেই বড় একটি দাগ এঁকে শিক্ষকের আঁকা দাগটিকে ছোট করে দিলেন।

আমাদের মানসিকতা অনেকটা ওই বেশি সংখ্যক ছাত্রের মতই। আমরা চাই অন্যকে দমিয়ে রেখে নিজে বড় হতে। এটা আমাদের সহজাত ধর্ম। মূলত এটাই মহামানবদের সাথে আমাদের পার্থক্য গড়ে দেয়। সবকিছুই মানসিকতার পার্থক্য। কারো কাছে অর্থ-ক্ষমতা- প্রতিপত্তিই সব। আবার কেউ সম্মানটাকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। কেউ চায় টাকার বিছানায় ঘুমাতে, টাকার উপর মরতে। আর কেউ চায় মরে গিয়েও অমর হতে। সবকিছুই নির্ভর করে দৃষ্টিভঙ্গির উপর। আমরা আসলে জিততে চাই না। আমরা চাই অন্যকে হারিয়ে দিতে। শুধু কি তাই, হারিয়ে দেয়ার মধ্যে আবার পৈশাচিক আনন্দও খুঁজে বেড়াই। যেমন-বাংলাদেশী পর্যটকের অভাবে কলকাতার ব্যবসায়ীরা অনাহারে মরছে। এই ধরনের খবর প্রচার করা, শেয়ার করা খুবই গরীব মানসিকতার পরিচায়ক। আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিৎ জেতার, তবে অন্যকে দমিয়ে দিয়ে নয়।  


অভ্যাস- ১৯৩ ▌সকল সংস্কৃতি মিলেমিশে একটি বৃহত্তর সম্প্রদায় গড়ে তুলুন।

ব্রিটিশ নাট্যকার ইসরাইল জাংউইল-এর দ্য মেন্টিং পট নামের  নাটকে মূলত অভিবাসী সম্প্রদায়গুলোর একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে একটি নতুন জাতির উদ্ভবের কাহিনী বলা হয়। মেন্টিং পটে বিভিন্ন ধরনের ধাতুকে একত্রে রাখা হয় এবং তারপর উত্তপ্ত করে গলানো হয়। এই উত্তাপে প্রতিটি ধাতু তার নিজস্ব গঠনতন্ত্র হারিয়ে ফেলে এবং অন্য ধাতৃগুলোর সঙ্গে মিশে একক, সমন্বিত ধাতু তৈরি করে। যুক্তরাষ্ট্রেও তেমন ব্যাপারটি ঘটেছে। সেখানে বিভিন্ন জাতি, সংস্কৃতি এবং ধর্মের মানুষ একত্রে মিশে একটি অভিন্ন সামাজিক পরিচয় তৈরি করেছে। মেন্টিং পটের মাধ্যমে একটি বহুমুখী, সহনশীল এবং সংহত সমাজ গড়ে ওঠে যেখানে সকল সংস্কৃতি মিলেমিশে একটি বৃহত্তর সম্প্রদায়ের জন্ম হয়। এতে মুক্তভাবে মতামত বিনিময়ের সুযোগ থাকায় নতুন আইডিয়া এবং উদ্ভাবনের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে, যা প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, সাহিত্য এবং শিল্পকলায় বিপ্লব ঘটিয়েছে। এই জন্যই যুক্তরাষ্ট্র সকলের কাছে এখনো স্বপ্ন পূরণের দেশ হিসেবে পরিচিত ৷ আপনার পরিবার ও পরিবেশের চারপাশে এমনিভাবে বিভিন্ন ধর্ম বর্ণ সম্প্রদায়, ধনী-গরীব, বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের সংমিশ্রণে নতুন একটি সমাজ তৈরি করুন।


অভ্যাস- ১৯ ▌সহজে নিজেকে স্মার্ট করে তুলুন ৪টি কৌশলে


আপনি দেখতে-শুনতে যথেষ্ট ভালো, পোশাক-আশাকও হালফ্যাশনের পরেন, তবুও কি আপনাকে সবাই আনস্মার্ট বলে? আপনার সামনে কেউ কিছু না বললেও আপনার আড়ালে কি আপনাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করে? অথবা খ্যাত বলে ডাকে? সবকটি প্রশ্নের জবাব যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে বুঝতে হবে, আপনার নিজেকে উপস্থাপনে কমতি রয়েছে। স্মার্টনেস মানেই দেখতে ভালো লাগা বা ট্রেন্ডি পোশাক পরা নয়। স্মার্টনেস হলো অভ্যন্তরীণ মানসিক ব্যাপার। আপনি যা, নিজেকে ঠিক সেভাবেই উপস্থাপন করা হলো স্মার্টনেস। ঠিক কীভাবে নিজেকে সবার কাছে উপস্থাপন করবেন তা যদি বুঝে উঠতে না পারেন, তাহলে নিজের মধ্যে কিছু ছোট ছোট পরিবর্তন নিয়ে আসুন। যেমন- কথা বলুন বুঝে শুনে : বাড়তি কথা বলা কমিয়ে দিন। যতটুকু প্রয়োজন কথা ঠিক ততটুকু বলার অভ্যাস করুন। কখন, কোথায়, কী বলতে হবে তা বোঝার চেষ্টা করুন। কথা বলুন গুছিয়ে। আপনি কী বলতে চাইছেন তা যেন, আপনার বক্তব্যে পরিষ্কার বোঝা যায়। খাবার খান নিঃশব্দে : নিঃশব্দে ধীরে ধীরে চিবিয়ে খাবার খান। খাবার সময় যতটা সম্ভব কম কথা বলুন। পোশাক পরুন রুচিশীল : আপনাকে পোশাকটা আদতে মানাচ্ছে কি না, দেখুন। পোশাক পরুন নিজের ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী। পরুন হালকা রঙের পোশাক। হালকা রং সবাইকেই মানিয়ে যায়। হেসে কথা বলুন এবং ভালো ব্যবহার করুন : স্মিতহাস্যে কথা বলুন সবার সাথে। সামনের মানুষটি যদি বিরক্তিকরও হয়, আপনার কথা শুনে সে যেন আপনার বিরক্তিটুকু ধরতে না পারে। স্মরণী: জীবনে উন্নতির পথে পথে যাদের সঙ্গে দেখা হবে তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন, কারণ জীবনের প্রয়োজনে বারবার তাদের সঙ্গেই দেখা হবে।  


অভ্যাস- ১৯ একবারে একটি কাজই করুন

একসাথে হাজারো কাজে নিবিষ্ট না হয়ে একটি কাজই করুন এবং সেটি মন দিয়ে করুন। ই-মেইল লেখা হোক, বাচ্চার সাথে খেলা হোক, যা-ই করেন না কেন স¤পূর্ণ একাগ্রতা নিয়ে করুন। এক মিনিটের কাজও শতকরা একশভাগ একাগ্রতা নিয়ে করুন।

যখন আপনাকে কেউ ডাকবে, তখন হাতের কাজ একটু বন্ধ রেখে তার সাথে মন দিয়ে কথা বলুন। ফোনে কথা বলতে বলতে কম্পিউটারে কাজ করা, কিছু ম্যাসেজ লেখা, টিভি দেখা ও গাড়ি চালানো- এসব অভ্যাস বাদ দিন। 


অভ্যাস- ১৯ ▌আপনি যা-ই করেন, তা  সংঘবদ্ধভাবে করুন। 

স্ফুলিঙ্গ এক জায়গা থেকে শুরু হয় কিন্তু ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। সত্তরের দশকের আগে মহিলাদের গৃহবন্দী করে রাখত আমাদের সমাজ। খাওয়া পরার জন্য রীতিমতো হাত পাততে হত স্বামী, বাবা অথবা সন্তানের কাছে। পুরুষ মানুষের মূল্য বুঝাতে লোকে বলতো সোনার আংটি বাঁকা হলেও দাম কমে না। আর নারীর মূল্য বুঝাতে লোকে বলত: মেয়ের নাম ফেলি; পরে নিলেও গেলি, যমে নিলেও গেলি। অর্থাৎ কোনরকম ফেলতে পারলেই বাঁচে। মেয়েদের উপনাম ছিল তিনটা- আপদ, বিপদ ও মুসিবত। ১৯৫৯ সালে ভারতে ৭জন গুজরাটি গৃহবধূ ঘরের মধ্যে থেকেই স্বাবলম্বী হয়ে নিজেদের স্বাধীন করতে স্বপ্ন দেখলেন। যশয়ন্তী, পার্বতী, উজাম, ভানু, লাগু, দিওয়ালী ও জয়াবেন নামের সাত গৃহবধূ তৎকালীন ৮০ টাকা (বর্তমান প্রায় ১০,০০০) ঋণ করে পাপড়ের ব্যবসায় নামেন। তাদের উদ্যোগ ছিল এমন একটি ব্যবসা, যেটা ঘরের মধ্যেই তৈরি করা যায়, ঘরের বাইরে বেরোতে হবে না। প্রথমে মাত্র চার প্যাকেট পাঁপড় তারপর আস্তে আস্তে ব্যবসা বাড়ে। কিন্তু তারা কর্মচারী নিয়োগ করেননি বরং অন্যান্য পরিবার থেকে যুক্ত হওয়া মহিলাদের পার্টনারশিপ নিয়েছিলেন। নাম দিলেন "লিজ্জত পাঁপড় ", ভারতে লিজ্জতের বর্তমান রেভেনিউ ১৬০০ কোটি, লিজ্জত পরিবার ৪৫০০০! তারা হাজার হাজার নারীকে সাবলম্বী করেছেন! ২০২১ সালে ভারত সরকারের পদ্মশ্রী পুরস্কারে সম্মানিত করা হয় শ্রীমতী যশয়ন্তীকে।


মোট কথা হল: আপনি যা-ই করেন, তা যদি সংঘবদ্ধভাবে করতে পারেন, তাহলে জয় সুনিশ্চিত হয়। সুতরাং যেকোনো ক্লাব, ফোরাম, সংঘ বা দলের সাথে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে হলেও সঙ্গে থাকুন,সঙ্গবদ্ধ থাকুন। সংগৃহীত।  


অভ্যাস- ১৯ ▌আপনার স্বপ্নগুলোকে অনুসরণ করুন

স্বপ্ন আপনার সফলতার ক্ষেত্রে জ্বালানী হিসেবে কাজ করে। কোনো গাড়ি যেমন জ্বালানী ছাড়া চলতে পারে না, ঠিক তেমনি আমাদের জীবন স্বপ্ন ছাড়া সাফল্য লাভ করতে পারে না। মূল কথাঃ স্বপ্ন মনে লালন-পালন করুন এবং অক্লান্ত পরিশ্রম করুন স্বপ্ন পূরণের জন্য। কেউ হতে চেয়েছিল ডাক্তার, কিন্তু হয়ে গেলেন ইঞ্জিনিয়ার, আপনিও কি আপনার জীবনের সাথে এমন করেছেন? করে থাকলে এখনই নিজেকে সংশোধন করুন। সফল ব্যক্তিরা কখনোই নিজেদের স্বপ্ন ও লক্ষ্যকে ভোলেন না। তাঁরা নিজেরাই পথ তৈরি করে নেন এবং সে অনুযায়ী হেঁটে চলেন।

যখনই আপনি আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে কোনো একশন নিতে চাইবেন, আপনার মন ঠিক সেই মুহূর্তেই আজেবাজে চিন্তা ঢুকিয়ে দেয় মাথার মধ্যে। এসব চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে আপনাকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে ছোট ছোট পদক্ষেপ নিতে হবে দৃঢ়তার সাথে। কোনো কিছুতেই স্বপ্ন থেকে, লক্ষ্য থেকে সরে যাবেন না। 


অভ্যাস- ১৯ ▌অন্যের সাহায্য-সহযোগিতা প্রার্থনা করুন

কিছু মানুষ নিজ থেকে অন্যকে সাহায্য করার জন্য মুখিয়ে থাকেন আবার কিছু মানুষ সাহায্য চাইলেও মুখ ফিরিয়ে দেয় দেন। তাদের কী করা উচিত, সেটি নিয়ে মাথা ঘামান না। সত্যি কথা বলতে, আমাদের সবারই সাহায্য দরকার। এমন কিন্তু নয় যে কারো কাছ থেকে সাহায্য নিলে আমরা ছোট হয়ে যাব,বরং ধীরে ধীরে আমরা উন্নতির পথে অগ্রসর হব। আমাদের জীবন অনিশ্চিত। আপনি সবসময়-ই সঠিক হতে পারবেন না। সেজন্যই মাঝে মাঝে একটি বিরতি দেওয়া প্রয়োজন এবং অবশ্যই অন্যের সাহায্য নেয়া প্রয়োজন । আরো বেশি মুক্তমনা হোন এবং পরিবর্তনকে স্বাগত জানান। নিজের দুর্বলতাগুলো খুঁজে বের করা বেশ দুষ্কর নয়। পরিবারের কোনো সদস্য, বন্ধু কিংবা সহকর্মীর সাহায্য নিন। সেজন্যে উদার হোন এবং সমালোচনা শোনা এবং গ্রহণ করার জন্য মনকে ইতিবাচকভাবে প্রস্তুত করুন। 


অভ্যাস- ১৯জাপানীদের লাইফ স্টাইল অনুসরণ করুন

জাপানীরা পরিশ্রম করে শরীরকে ঠিক রাখার জন্য, কারি কারি টাকার জন্য নয়। । গাড়ি-বাড়ি ফ্লাট করতে হবে এমন চিন্তা তাদের মধ্যে নেই। বর্তমান সময়টাকে তারা প্রাধান্য দেয়। তবে তারা বিলাসিতায় গা ভাসায়। প্রয়োজন ছাড়া একটা পয়সা কোথাও নষ্ট করে না। অনেকে একই কাপড় বেশিরভাগ সময় পড়ে থাকে। এক জোড়া জুতা যতক্ষন না নষ্ট হয় ততক্ষনই পড়ে। তারা অপচয় করাকে বেশি অপছন্দ করে। আমাদের মত গাড়ির বিলাসিতা তাদের নেই। কারো বাসায় যাওয়ার আগে কমপক্ষে ১ সপ্তাহ আগে ফোন করে জিজ্ঞেস করে ওইদিন যেতে চাই সমস্যা আছে কিনা। যদিও এরা খুব কমই একজন আরেকজনের বাসায় যায়।। যদি যায় সেখানে খুবই সামান্য পরিমানে জিনিস নেয় যেমন ২ পিস আপেল বা ৩০০ গ্রাম আংগুর অথবা যার বাসায় যাবে, তার পছন্দের কেক বা মিষ্টি।। আবার যার বাসায় যায় সেও শুধুমাত্র চা বা রেডি বিস্কুট বা যেকোনো ফল দিয়েই আপ্যায়ন সারে।।সন্তান থাকলেও বাবা মা যেমন নিজে একা থাকতে পছন্দ করে।  তাদের একমাত্র চাহিদাই হচ্ছে ভাল থাকা ও ভাল খাওয়া।


অভ্যাস- ২০০ ▌নিজেকে প্রতিপক্ষের যায়গায় কল্পনা করুন

কখনো কি না ভেবে কথা বলে কিংবা অতিরিক্ত রেগে গিয়ে পরে অপরাধবোধ হয়েছে আপনার? আপনি নিশ্চয় দেখে থাকবেন, চারপাশে মানুষ চিৎকার করে কলহ করছে, এমনকি কোনো কর্মী বসের সঙ্গে ঝগড়া করে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন। একটি সফল বৈবাহিক সম্পর্ক, ক্যারিয়ার, এমনকি ব্যাবসায়িক সম্পর্কও উত্তেজনার কারণে নষ্ট হতে পারে। তাই সাফল্যময় পরিপূর্ণ একটি জীবন পাওয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই অন্য কাউকে মনঃক্ষুণ্ন করে এমন কথা বলা, বা সমালোচনা কিংবা তর্ক-বিতর্ক অথবা কাজ করা বন্ধ করতে হবে। নিতান্তই কারো সঙ্গে যদি রেগে যান’ তাহলে ধীরস্থির হয়ে তাকে বোঝান ব্যাপারটা এবং বিনয়ের সঙ্গে সরি বলে ক্ষমা চেয়ে নিন। তার জায়গায় নিজেকে চিন্তা করুন। এমনটি করতে পারলে আপনি কদাচিৎ নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ হারাবেন।

প্রথমে আপনি যেমন ইচ্ছা তেমন ব্যবহার করে ফেললেন এবং পরবর্তীতে কষ্ট পেলেন, এমন করা বন্ধ করুন। প্রচণ্ড রাগ, হিংসা কিংবা দুঃখ পেলে অন্য কারো সঙ্গে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। দাঁড়িয়ে থাকলে বসে পড়ুন এবং নিস্তব্ধ থাকুন। অন্য কেউ যদি আপনার থেকে কিছু শোনার আগ্রহ পোষণ করে, তবে তাকে বলুন ‘আমাকে ভাবার জন্য একটু সময় দিন’।