অর্থনীতির বিনিয়োগ ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন
বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তো কোনো দেশে বিনিয়োগের জন্য বাধ্য নন। তারা যে দেশে বিনিয়োগ অনুকূল পরিবেশ পাবেন, সেখানেই বিনিয়োগ করবেন। বিনিয়োগ করার পর দীর্ঘ দিন তার রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তাই কোনো উদ্যোক্তাই অনিশ্চিত পরিবেশে বিনিয়োগ করে তাদের পুঁজিকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে চাইবেন না। বর্তমানে দেশের মুদ্রা বাজারে মার্কিন ডলারের সংকট চলছে। চাইলেই পর্যাপ্ত পরিমাণে মার্কিন ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। শিল্পে বিনিয়োগের জন্য প্রচুর ডলারের প্রয়োজন হয়। কারণ আমাদের দেশে যারা বিনিয়োগ করেন, তাদের বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি করতে হয়।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যারা প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে আসেন, তাদের অনেকেই শেষ পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই চলে যান। কারণ রাষ্ট্রীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ম্যানেজ করে সেবাগ্রহণ করা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। প্রতি ক্ষেত্রেই ঘুষ-দুর্নীতির ব্যাপার রয়েছে। বিদেশি উদ্যোক্তারা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ঘুষ দিয়ে কাজ করানোর ব্যাপারটি পছন্দ করেন না।
বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়ন অর্জনকারী একটি দেশ। বাংলাদেশে রয়েছে ১৭ কোটি মানুষের বিরাট এক বাজার। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো বিদেশি উদ্যোক্তা যদি বাংলাদেশে প্রকল্প স্থাপন করে পণ্য উত্পাদন করে, তাহলে তারা স্থানীয় বাজারের সুবিধা গ্রহণের পাশাপাশি বিদেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে পারবে। তবে বাংলাদেশে ট্যাক্সের রেট অনেক বেশি। কর প্রশাসন ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল। বিদেশ থেকে শিল্পের কাঁচামাল আনতে ঝামেলা হয়। অর্থনীতির আরো নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন।
==================
প্রাকৃতিক নির্বাচনে ডারউইন বলে গেছেন—সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট—অর্থাত্ যোগ্যতমরাই টিকে থাকবে। এই পৃথিবীতে কত ধরনের ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে! আমরা সেই ‘খেলা’র খুব সামান্যই বুঝতে পারি। অনেকের মতে, আমরা আসলে দেখতে পাই সাগরে ভাসমান হিমবাহের উপরের সামান্য অংশটুকু। হিমবাহের নিচে যে সিংহভাগ অংশ আছে, আমরা তাহ দেখতে পাই না।
অন্যদিকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার মতো যারা ‘কথা’ দিয়াছে, সকল সময় তারা ‘কথা’ না-ও রাখতে পারে। ‘দুরন্ত ষাঁড়ের চোখে বেঁধেছি লাল কাপড়/ বিশ্ব সংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে এনেছি ১০৮ নীলপদ্ম/ তবু কথা রাখেনি...।’ সুনীলের কবিতার মতো কেউ যদি কথা না রাখেন, তখন কী হবে? তবে এটাও সত্য যে, স্বার্থ ও প্রয়োজন যতক্ষণ আছে ততক্ষণ কথা না রাখে উপায় কী?
=============
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার প্রায়শই বলতেন, ‘আমেরিকার কোনো স্থায়ী বন্ধু বা শত্রু নেই। আমেরিকার জন্য একামাত্র বিবেচ্য হলো স্বার্থ।’
==========
উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলির পশ্চাত্পদতার জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রে সর্বত্র নিয়মশৃঙ্খলার অভাবই দায়ী। বলা হয়, ডিসিপ্লিন ইজ ফাস্ট বা শৃঙ্খলাই প্রথম; কিন্তু আমরা মনে করি, আসলে ইহা হওয়া উচিত ‘ডিসিপ্লিন ইজ ফার্স্ট, ডিসিপ্লিন ইজ সেকেন্ড অ্যান্ড ডিসিপ্লিন ইজ লাস্ট। অর্থাত্ শৃঙ্খলাই প্রথম, দ্বিতীয় ও শেষ কথা। ইহা ছাড়া উন্নয়নশীল বিশ্বের ভাগ্যোন্নয়ন হইবে না। উন্নত বিশ্বের নিয়ম অনুযায়ী মিটিং-মিছিলের অনুমতি লইলে নির্দিষ্ট স্কয়ার বা এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকিতে হইবে। যেই সকল দেশের রাস্তাঘাটে সামান্য ময়লা ফেলিলেও বড় ধরনের জরিমানা গুনিতে হয়, সেই সকল দেশে বিশৃঙ্খলার কোনো স্থান নাই; কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে এই সকল ব্যাপারে তোয়াক্কা করা হয় না। এইখানে আমরা যেন ‘সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে’। আমাদের এইখানে অফিস-আদালত, সড়ক-মহাসড়কসহ কোথায় নাই বিশৃঙ্খলা?
============
নিজের ক্ষেত্রে সবই ভালো, সবই সুন্দর। কিন্তু অন্যের সবকিছুই কুিসত, নোংরা ও জঘন্য। যেমন— নিজের কেউ যদি বেশি খায়, তাকে আমরা বলি, ‘ভোজনরসিক’। অথবা ‘জানেন, আমার ছেলেটা না খেতে খুব পছন্দ করে’। আর যখন এটা অন্য কারো ক্ষেত্রে হয়, তখন আমরা বলি, ‘এমন পেটুক জীবনে দেখি নাই ।’ অথবা, ‘কী হাভাতে রে বাবা, যেন দুনিয়াসুদ্ধ খেয়ে ফেলবে।’ একটা রাক্ষস পয়দা হয়েছে।
নিজের আত্মীয়-স্বজন টাকা খরচ কম করলে আমরা বলি, হিসাবি, মিতব্যয়ী। কিন্তু অন্যের ক্ষেত্রে সেটা হয়ে যায়, হাড়কিপটে, ছোটলোক ইত্যাদি। আসলে শব্দ-প্রতিশব্দগুলোকে আমরা নিজেদের স্বার্থ ও সুবিধামতো ব্যবহার করি।
—-------------
জ্ঞানীগুণী প্রাজ্ঞ মানুষ মিতব্যয়ী হইয়া থাকেন। একটি জিনিস যতক্ষণ পর্যন্ত কাজে লাগানো যাইতেছে ততক্ষণ অবধি উহাকে কাজে লাগানোটা হইল অপচয় রোধ করা।
==========
আসলে সারাদিনে মানুষ বা যেকোন প্রাণীদের যে শারীরবৃত্তীয় কর্মকান্ড চলে একটি বিশেষ নিয়ম মেনে, তার পারিভাষিক নাম হচ্ছে ''সারকাডিয়ান রিদম'' (Circadian Rhythm) বা "প্রাকৃতিক দিবা-রাত্রি ছন্দ"।
আর এই ''সারকাডিয়ান রিদম'' নিয়ন্ত্রণের জন্য জীবের শরীরেও থাকে প্রাকৃতিক ঘড়ি! যা অতি সূচারুভাবে প্রকৃতির আলো-আঁধারি বা দিন-রাতের দৈর্ঘ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করে।
এই 'বায়োলজিক্যাল বডি ক্লক বা জৈবিক দেহ ঘড়ি' এর রহস্য উদঘাটনের জন্য মার্কিন বিজ্ঞানী জেফ্রি হল, মাইকেল রসবাস এবং মাইকেল ইয়ঙকে ২০১৭ সালে নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। আশির দশক থেকে ফ্রুট ফ্লাই বা “ড্রসোফিলা” নামক একধরণের ফলের মাছির ওপর গবেষণা শুরু করেন এই বিজ্ঞানীত্রয়, আবিষ্কার করেন একধরনের ‘’পিরিয়ড জিন’’ (Period Gene), এই Gene রাতের বেলায় দেহ কোষে একপ্রকার প্রোটিন তৈরি করে, দিনের শুরু থেকেই ভাঙতে শুরু করে সেই প্রোটিন, এই আবিষ্কার সারকাডিয়ান রিদমের আনবিক ক্রিয়াকে বুঝতে সাহায্য করেছে।
সার্কাডিয়ান রিদমের দেহ ঘড়ি পৃথিবীর ঘূর্ণনের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে এবং মানবদেহের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ রক্ষা করে চলে।
এই দৈনিক ছন্দ আমাদের অজান্তেই আমাদের স্বাস্থ্য এবং শারীরিক সুস্থতার ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে, আমাদের মেজাজ ও সজাগ থাকার প্রক্রিয়ার ওপরেও সারকাডিয়ান রিদমের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। শরীর ও মনের ব্যবহারিক পরিবর্তন ঘটিয়ে খিদে, ঘুম, আচার-আচরণ, হৃদস্পন্দন প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে এই সারকাডিয়ান রিদম।
ভোরবেলায় ঘুম থেকে ওঠার কিছুক্ষণ পর মানুষের রক্তচাপ হঠাৎ বাড়তে শুরু করে, দুপুরের পর বাড়ে উত্তেজনায় সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা, সন্ধ্যাবেলায় শরীরের তাপমাত্রা সবথেকে বেশি থাকে। সন্ধের পর মানুষের মস্তিষ্কে অবস্থিত পিনিয়াল বডি থেকে আলোক সক্রিয় মেলাটোনিন হরমোন ক্ষরিত হয়, এই হরমোন ঘুমানো আর জেগে ওঠা নিয়ন্ত্রণ করে। মেলাটোনিনের ক্ষরণ অন্ধকারে বৃদ্ধি পায় আর আলোতে কমে যায়, টিভি, কম্পিউটার বা স্মার্ট ফোনের স্ক্রিন থেকে যে কৃত্রিম আলো বেরোয় তা এই মেলাটোনিন ক্ষরণে বাধা দেয়, ফলে ঘুম আসতে চায় না। কৃত্রিম আলো আমাদের সারকাডিয়ান রিদম বা নিদ্রা-জাগরণের চক্রে ব্যাঘাত ঘটায়। যদি প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই দেহ ঘড়ি ঠিকঠাক না চলে তাহলেই মানুষের শরীরবৃত্তিয় ক্রিয়াকলাপ, খাওয়া-ঘুম থেকে আচার আচরণ সব পাল্টে যাবে। সারকাডিয়ান ছন্দের গন্ডগোলের জন্য বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক অস্বাভাবিকতা গুলো দেখা যায়।
মানুষের প্রতিটি অঙ্গের নিজস্ব জৈবিক ঘড়ি রয়েছে, আর মস্তিস্কে রয়েছে একটি ‘’মাস্টার ক্লক’’ যা ওই সমস্ত ঘড়িগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর পরিবেশের যে ছোট ছোট প্রভাবগুলি যেমন আলো, পরিবেশের তাপমাত্রা ইত্যাদি জৈবিক ঘড়িগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে তাদের বলা হয় ‘’জিটযেবার”, বাংলায় বলা যায় ‘’সমলয়ক’’। 'সারকাডিয়ান রিদম সম্পর্কিত বিজ্ঞানের শাখাটি হল ‘’ক্রনোবায়োলজি’’।
======
মধ্যযুগের ইউরোপে, যুদ্ধে যাওয়ার আগে নাইটদের স্ত্রী ও কন্যাদের এই 'সতীত্ব বেল্ট' পরানো সাধারণ ব্যাপার ছিল।
এই অনুশীলনের উদ্দেশ্য ছিল তাদের স্বামীদের দূরে থাকাকালীন মহিলাদের বিশ্বস্ততা নিশ্চিত করা; এটি কয়েক মাস বা ক্ষেত্রবিশেষে কয়েক বছর ধরে স্থায়ী হতে পারত। তারা কোনো অবস্থাতেই এই বেল্টটি খুলতে পারতো না, কারণ কেবল তাদের স্বামী (নাইটদের) কাছেই বেল্টটিকে খোলার চাবি থাকতো।
========
পৃথিবীতে প্রায় ১২ হাজার প্রজাতির পাখি রহিয়াছে, তাহার এক-তৃতীয়াংশই পরিযায়ী। কিছু পাখি প্রতি বত্সর ২২ হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়া চলিয়া যায় দূর দেশে। পরিযায়ী পাখি সাধারণত ৬০০ হইতে ১ হাজার ৩০০ মিটার উঁচু দিয়া উড়িয়া চলে দিনের পর দিন। ছোট পাখিদের গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। দিনরাতে এরা প্রায় ২৫০ কিলোমিটার উড়িতে পারে। বড় পাখিরা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত অনায়াসে উড়িতে পারে। আশ্চর্যের বিষয়, এই সকল পাখি তাহাদের গন্তব্যস্থান সঠিকভাবে নির্ণয় করিতে কখনো ব্যর্থ হয় না। সমুদ্রে নাবিক যেমন কম্পাস ব্যবহার করে, এই পাখিদের দেহেও সেই রকম বা তাহার চাইতেও উন্নত কিছু কৌশল রহিয়াছে
এমনকি যেই সকল পাখি একা ভ্রমণ করে তাহাদের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়াছে, জীবনে প্রথম বার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করিলেও তাহারা ঠিকই গন্তব্যে পৌঁছাইয়া যায়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রই পাখিদের পথ চিনায়।
মানুষ যতগুলি রং দেখিতে পায়, পাখি দেখিতে পায় তাহা অপেক্ষা অনেক অধিক। তাহারা অতিবেগুনি রশ্মি দেখিতে পায় বলিয়া তাহাদের বিশ্বের রং-রূপ আমাদের তুলনায় ভিন্ন। মানুষের চোখে যেই সকল পশুপক্ষী ধূসর, বিবর্ণ, পাখিদের চোখে তাহাদেরই কোনো কোনোটি দ্যুতিময়, বর্ণচ্ছটায় উজ্জ্বল।
===========
পরের বউ বেজায় ভাল
নিজের বউ দেখতে কাল
কথায় বলে-পরের পিঠা, বড়ই মিঠা। বেশির ভাগ পুরুষই মনে করেন তার প্রেমিকা বা স্ত্রীর তুলনায় তার বন্ধুর বা প্রতিবেশীর স্ত্রী বা প্রেমিকা অনেক বেশি আকর্ষণীয়। আর এই ধারণাই একজন পুরুষকে নিয়ে যায় পরকীয়ার পথে। নিজের প্রেমিকা বা স্ত্রীকে বেশির ভাগ সময়ই একঘেঁয়ে বলেও মনে হয়। প্রেমিকা বা স্ত্রী যতই সুন্দরী হোক না কেন, পুরুষের মন ধরে রাখতে পারেন না। ছেলেদের ক্ষেত্রে শৈশবে যেমন খেলনা বা জামা-কাপড় নিয়ে রেষারেষি থাকে, তা বড় হয়ে রেষারেষিটা নারীভিত্তিক হয়ে ওঠে। বন্ধুর আছে, আমার নেই- এমন মনোভাবও পরস্ত্রীর প্রতি আকর্ষণ জন্মায় পুরুষের। গবেষণায় এমনও বলা হয়, দেখা গেছে বেশির ভাগ পুরুষই একটি প্রেম বা বিয়ের সম্পর্কে বেশি দিন থাকতে পারেন না। তারা জীবনভর সম্পর্ক রক্ষা করলেও মনে মনে হাঁপিয়ে ওঠেন। ফলে অন্য নারীর প্রতি আকৃষ্ট হন। তবে পুরুষরা দায়বদ্ধতাকে সবচেয়ে বেশি ভয় পান। পরস্ত্রীর সঙ্গে প্রেম করলে দায়বদ্ধতা একেবারেই থাকে না। সেটাও পরস্ত্রীতে আকৃষ্ট হওয়ার আরেকটি বড় কারণ।
===========
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলিয়াছেন—‘এ জগতে হায়, সেই বেশি চায় আছে যার ভূরি ভূরি—/ রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি।’ অর্থাৎ অর্থলোভী মানুষের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। তাহার মধ্যে ন্যায়-অন্যায়বোধ কাজ করে না। প্রথমে হয়তো সে নিরীহ থাকে। নিজের চাহিদাও থাকে সীমিত; কিন্তু সে যতই অর্থমোহে নিমজ্জিত হয়, ততই সে বেপরোয়া হইয়া উঠে।অর্থের জন্য মানুষ কী না করিতে পারে? অনেকেই এমন নিচে নামিয়া যায় যে, মনুষ্যত্ব বলিয়া আর কিছু থাকে না।
==========
—---------
মানববন্ধন ছিল একসময়ে ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী সবচাইতে আকর্ষণীয়, গণতান্ত্রিক ও সভ্যতার প্রতীকী প্রতিবাদের ভাষা। এখানে কোনো শব্দ থাকে না, থাকে না সরব স্লোগান। নিঃশব্দ সচেতন মানুষ তাহার ন্যায়সংগত দাবিসংবলিত প্ল্যাকার্ড বা ব্যানার হাতে লইয়া জনগণ ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণে সারিবদ্ধভাবে নীরবে দাঁড়াইয়া থাকে।
কখনো অনশন পালন করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয় মৌন মিছিল। করা হয় অবস্থান ধর্মঘট, অর্থাত্ একটি স্থানে বসিয়া পড়া। আবার শৃঙ্খলিতভাবে ব্যানার লইয়াও দাঁড়াইয়া থাকিতেও দেখা যায়। এমনকি কখনো কখনো কাফনের কাপড় পরিধান করিয়া প্রতিবাদ জানানো হয়, যাহার অর্থ হইল সিদ্ধান্তটি পরিবর্তনে প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত।ইহা ছাড়া আরো বিনম্র প্রতিবাদও দেখা যায়। যেমন—ছবি আঁকিয়া প্রতিবাদ, গ্রাফিতি আঁকিয়া কিংবা গণসংগীত, দেশাত্মবোধক অথবা সুনির্দিষ্ট কোনো গান পরিবেশন করিয়া প্রতিবাদ, কয়েক বত্সর পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র একটি অভিনব প্রতিবাদ করিয়াছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের পূর্ব পার্শ্বে অবস্থিত একটি পুরাতন কৃষ্ণচূড়া গাছ কাটিয়া ফেলিবার কারণে তাহারা কাটিয়া ফেলা গাছের একটি গুঁড়িকে সাদা কাপড়ে মুড়াইয়া মিছিল করে। অর্থাত্ তাহারা ইহাকে বৃক্ষ হত্যা বলিয়া বিবেচনা করে। প্রতিবাদের নূতন নূতন ভাষার বিকাশ অব্যাহত থাকুক।
======
===========
=============
মানুষের বিশ্বাস,আচার-আচরন এবং জ্ঞানের একটি সমন্বিত কাঠামোকে সংস্কৃতি বলে। সংস্কৃতিচর্চার মাধ্যমেই উন্নত জাতির জন্ম হয়। তাই বলা হয় সংস্কৃতির উন্নত রূপই হল সভ্যতা। কিন্তু সংস্কৃতির উপাদানগুলো ক্রমাগত বদলায়, সময়ান্তরে নতুন নতুন উপাদান সংস্কৃতিতে যুক্ত হয়। ফলে বলা যায় সংস্কৃতি পরিবর্তনশীল। সাধক সম্প্রদায়ও তাদের মতো করে স্বতঃস্ফূর্ততার চর্চা করেন তাকে লোকজ সংস্কৃতি বলে । ধর্মভিত্তিক রাজনীতির ফলে সংস্কৃতিতে ধর্মের প্রভাব বেড়েছে।
==============
‘চুটজপাহ’ সংস্কৃতি ও আমরা
যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা সমাজ কাঠামোতে কোনো না কোনোভাবে উচ্চ–নিচ বিভাজনটি থাকে, ইংরেজিতে তাকে হায়ারার্কি বলা হয়। এই উচু নিচু বিভাজনটা ইহুদী সংস্কৃতিতে একদম নাই। তাদের সমাজে বা প্রতিষ্ঠানে ‘চুটজপাহ’ সংস্কৃতি চালু আছে। চুটজপাহ সংস্কৃতি হচছে: মনে করুন একটি প্রতিষ্ঠানে ১০জন মানুষ আছে। এই দশজনের কেউ দারোয়ান আবার কেউ কর্মী বা কর্মকর্তা। সেখানে কেউ কাউকে স্যার বা ম্যম বলবে না। সবাই সবাইকে নাম ধরে কিংবা ভাইজান বলে ডাকবে। সার্টিফিকেট বা টাকার জোরে কেউ নেতা হবে না, কাজে যোগ্যতার ভিত্তিতে পদ মর্যদা হবে। সবাই মিলে আনন্দ আর সুবিধা-অসুবিধা ভাগাভাগি করে কমিউনাল বা কৌম সমাজ গড়ে তুলে। অপরদিকে হিন্দু সমাজ হচ্ছে জাত-পাত ভেদাভেদ-এর সমাজ। এ সমাজের ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়রা নিজেদেরকে উঁচু জাত বলে মনে করে। এভাবে বংশ পরস্পরায় নিজেদেরকে সেরা বলে মনে করার কারণে তাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে এক ধরনের অহংকার এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। যার ফলাফলে তারা করবো ক্ষেত্রে উন্নতি করে। তারাই হয়ে উঠে নেতা বা কর্তা। আপনি হিসাব করলে দেখবেন, ভারতে যত সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী কিংবা প্রতিষ্ঠিত ব্যাক্তি দেখা যায়, তারা প্রায় সবাই এই দুই বর্ণের লোক। কাজেই আপনার প্রজন্ম বা আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধুবান্ধবকে অন্য অনেক মানুষ থেকে সেরা হিসেবে আখ্যা দিন এবং তাকে এগিয়ে যেতে সর্বদা উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করুন।
====
পৃথিবীতে তারাই শক্তিশালী, যাদের স্বতন্ত্র নিজস্ব স্বাধীন সংস্কৃতি আছে। ইন্দোনেশিয়া পৃথিবীর সর্ববৃহত্ মুসলিমপ্রধান দেশ। সে দেশে জটায়ু পাখির মূর্তি দেখবেন রাস্তায়। তাদের এয়ারলাইনসের নাম গরুড়া। আপনি রামায়ণ পড়লে বা জানলে নিশ্চয়ই জানবেন, এ দুই পাখির ভূমিকা কী ছিল? এক জন সীতাকে রাবণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য লড়াই করে রক্তাক্ত হয়ে পড়েছিল; আর এক জন ছিল বাহক। অথচ এ দুই পাখির মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপন এবং রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইনসের নাম এর নামে হওয়াটা ইন্দোনেশিয়ানদের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করেনি; করেনি প্রশ্নবোধক। একসময় যে সমাজে পাড়ায় পাড়ায় গলি-মহল্লায় বাড়িতে বাড়িতে সন্ধ্যা নামলেই হারমোনিয়াম বেজে উঠত, যে সমাজে ক্লাব বা পাড়ার সংগঠনগুলোর দায়িত্ব ছিল বছরে একটা নাটক দুটো গানের অনুষ্ঠান আয়োজন করা, আজ সে স্বাধীনতা হরণ হয়ে গেছে। সমাজ আজ গান-বাজনা, উদার পোশাক নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সংকুচিত হয়ে আসছে আমাদের সংস্কৃতির পরিধি।
=====
রক্ত চন্দনকে ‘লাল সোনা’ বলেও অভিহিত
করা হয়। কারণ সোনার মতোই মূল্যবান
এই গাছ। খুবই বিরল প্রজাতির একটি গাছ
রক্তচন্দন। দ.ভারতের শেষাচলম পাহাড়ের
ওই ঘন জঙ্গলেতেই একমাত্র পাওয়া যায়।
দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু লাগোয়া অন্ধ্রপ্রদেশের চার জেলা— নেল্লোর, কুর্নুল, চিত্তোর এবং কাডাপ্পা জেলায় এই গাছ মেলে। পূর্বঘাট পর্বতের আবহাওয়া এই গাছের জন্য অনুকূল। গাছটির উচ্চতা ৮-১২ মিটার হয়।
লাল চন্দন হলো এক ধরনের ‘এনডেমিক স্পিসিস’। ‘এনডেমিক স্পিসিস’ বলতে এমন একটি উদ্ভিদ বা প্রাণীর প্রজাতিকে বোঝায় যা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। অর্থাৎ এই গাছ ওই অঞ্চল ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না।
যেহেতু, প্রাকৃতিকভাবে ‘এনডেমিক স্পিসিস’ বিশ্বের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না তাই আন্তর্জাতিক বাজারে রক্ত চন্দনের চাহিদা আকাশছোঁয়া।
মূলত, দুই ধরনের চন্দনকাঠ পাওয়া যায়। একটি সাদা, অন্যটি লাল। সাদা চন্দনে সুন্দর গন্ধ থাকলেও লাল বা রক্ত চন্দনে কোনও গন্ধ নেই।
কিন্তু এই কাঠের বিশেষ গুণ রয়েছে। যার কারণে বিশ্ব জুড়ে এর বিপুল এই চাহিদার কারণেই এই কাঠ পাচার হয় বিপুল পরিমাণে। আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সঙ্ঘ (আইইউসিএন) ২০১৮-য় এই গাছকে ‘প্রায় বিলুপ্ত’ শ্রেণির তালিকাভুক্ত করেছে। চোরা কাঠকারবারিদের পাল্লায় এই কাঠ এত বিপুল পরিমাণে কাটা এবং পাচার হয়েছে যে, সারা বিশ্বে আর মাত্র পাঁচ শতাংশ গাছ অবশিষ্ট রয়েছে।
মূলত, আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে এই কাঠের বিপুল ব্যবহার হয়। হজম, ডায়রিয়াসহ বেশকিছু রোগের চিকিৎসায় এই কাঠ কাজে লাগে। এছাড়াও, মনে করা হয় রক্ত পরিশোধনের গুণ রয়েছে রক্তচন্দন কাঠের। নানা ওষধি গুণ ছাড়াও বিভিন্ন শিল্পেও এই কাঠের বিপুল চাহিদা রয়েছে। পূজা-অর্চনা এবং বিভিন্ন প্রসাধনী দ্রব্য তৈরিতেও এই কাঠের বিপুল চাহিদা রয়েছে।
রক্তচন্দন থেকে পাওয়া নির্যাস বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। এতে বেশ কিছু ‘আর্থ মেটাল’ পাওয়া যায়। সেটিও বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। প্রাকৃতিকভাবে আগুন রোধ করতে সক্ষম। কারণ, রক্তচন্দনের কাঠ সহজে পোড়ানো যায় না। পূর্বঘাট এলাকা শুষ্ক হওয়ায় সেখানকার জঙ্গলে অনেক সময়েই দাবানলের ঘটনা ঘটে।
এটি একটি দামী কাঠ। আন্তর্জাতিক বাজারে কেজি প্রতি সাত হাজারেরও বেশি টাকায় এই কাঠ বিক্রি শুরু হয়। ভারতে এই গাছ কাটা আইনত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তবে আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এই কাঠ পাচার হয়। পাচার রোধে 'রেড স্যান্ডলার্স অ্যান্টি-স্মাগলিং টাস্ক ফোর্স'ও গঠন করা হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশে প্রাকৃতিকভাবে রক্তচন্দনের দেখা পাওয়া গেলেও বর্তমানে ব্যবসায়িক চাহিদা এবং গাছের অস্তিত্ব সঙ্কটের কথা ভেবে অন্য রাজ্যেও এই গাছের চাষ করার চেষ্টা চলছে। আন্তর্জাতিক স্তরে, চিন, জাপান, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এবং অস্ট্রেলিয়ায় এই কাঠের বিপুল চাহিদা রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা চিনে। তাই সেই দেশেই সবচে বেশি পাচার হয় রক্ত চন্দন। আসবাব, ঘরসজ্জা এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে চিনে এই কাঠের চাহিদা খুব বেশি।
পুষ্পা কীভাবে এই কাঠ পাচার করে নিজের সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে তা ই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সিমেমার দুই পর্বের গল্পে। ব্যাপক সাড়া সেই সিনেমায়। আর আয়ও রক্ত চন্দনের মতোই সর্বকালের রেকর্ড ভাঙ্গা। মহিমা সেই লাল সোনাই।
সূত্র... বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড
=============
অন্ধের দেশে চশমা বিক্রেতা
===============
মজার ব্যাপার, এই যারা গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে মুখে ফেনা তোলে, সেই বিরোধী মানুষজন এক ফোঁটা গণতন্ত্র মানে না।
=============
মানুষ জন্মগতভাবেই স্বাধীন। প্রকৃতি তাকে সে স্বাধীনতা দিয়েই পাঠায়। যে শিশু ধনীর ঘরে বড় হয় কিংবা যে শিশুটি ভাঙা ঘরে বড় হয়, তাদের দুই জনের জন্য একই চাঁদের আলো, দিনের বেলায় এক সূর্য আর সে একই বাতাস।মানুষ স্বাধীনতা চায় এবং না পেলে বিদ্রোহ করে। আর্থিক সচ্ছলতার সাথে সাথে বদলে যেতে থাকে মানুষের স্বাধীনতা। ধনী পরিবারের সন্তান আর মধ্যবিত্ত বা গরিবের সন্তানের জন্য জামাকাপড়, খাবার; এমন কি স্কুল-পাঠশালাও আলাদা হতে শুরু করে। বাস্তবে পরাধীনতার মূল শৃঙ্খল পরিয়ে দেয় অর্থনীতি।
=============
===============
এই পৃথিবীতে জীববৈচিত্র্য সৃষ্টি হইয়া পুনরায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়াছে কয়েক বার। ছোট-বড় কোনো প্রাণীই, এমনকি ব্যাকটেরিয়াও বাঁচিয়া থাকিতে পারে নাই। একমাত্র টার্ডিগ্রেড নামের আট পা-বিশিষ্ট ছোট্ট প্রাণী টিকিয়া গিয়াছে। শুধু টিকিয়াই থাকে নাই, উহারা একমাত্র প্রাণ, যাহা জলে, স্থলে এমনকি আউটার স্পেসেও বিরাজমান আছে ঠান্ডা, গরম এবং প্রায় অক্সিজেনশূন্যতাকে তোয়াক্কা না করিয়া। আমাদের রাষ্ট্রীয় জীবনেও আমরা টার্ডিগ্রেডের ন্যায় একটি গোষ্ঠী বা শ্রেণি দেখিতে পাই,
রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন হইতেই দুর্নীতি, অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়া টিকিয়া আছে। ইহাদের বিলুপ্ত তো দূরের কথা, সংখ্যা দিনে দিনে সম্প্রসারিত হইতেছে। ঠান্ডা-গরম-অক্সিজেনশূন্যতার মতো ইহাদেরও কোনো বিকার নাই, কোনো পরিবর্তন নাই। শুধু প্রশাসন কেন, কোন খাতে এই টার্ডিগ্রেড সম্প্রদায় টিকিয়া নাই? শিক্ষায়, শাসনে, স্বায়ত্তশাসনে, ব্যবসায়—সর্বত্র ইহারা বিরাজমান। অনেক ইতিবাচক উদাহরণই আছে। কিন্তু মেরুদণ্ডে রোগ লইয়া সোজা হইয়া দাঁড়ানো অতি কষ্টের, ইহা যাহাদের বোঝা সবচাইতে বেশি প্রয়োজন, তাহাদেরকে বুঝিতে হইবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।
==========
============
===================
অস্কার ওয়াইল্ড লিখেছিলেন- "ম্যারেজ ইজ এ পারমানেন্ট ডিসএগ্রিমেন্ট"........
মানে স্থায়ী একটা মতের অমিল। স্বামী আর স্ত্রীর মতের মিল হলে, বিবাহিত জীবনের সমস্ত স্বাদই চলে যায়। সেই দাম্পত্য হয়ে যায় চিনি আর দুধ ছাড়া চায়ের মতো।
==============
২য় হচ্ছে ever green ফর্মুলা প্রয়োগ ----সব সময় ভাবতে হবে :: never become old-- you are always ever green gold.
Practically বয়স বাড়বে কিন্তু Mentally বয়সচকে রুখে দিতে হবে মনে সবুজ রঙ মাখিয়ে নিয়ে । বয়স যত হোক, মন হবে সদ্য ফোটা তাজা ফুলের মত মধুরসে ভরপুর; যার আকর্ষণে মানুষ পঙ্গপালের মতো ছুটে আসবে দলে দলে। খূব সোজা- মন থেকে হঠাও যত বাজে -- শরীর লাগাও সুপরিকল্পিত কাজে !
যে গোমড়া, সে একটা বোকা দামড়া।
জগত সংসারে হাসতে হয়।
===============
=========
একজন মানুষের স্বাভাবিক শব্দ গ্রহণের মাত্রা ৪০-৫০ ডেসিবেল। কিন্তু আমাদের রাজধানীতে দিনের বেলা শব্দের মাত্রা ৮৫ ডেসিবেলের নিচে নামে না, অনেক সময় তা আরো বেড়ে যায়। বিধিমালা অনুযায়ী আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবেল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবেল অতিক্রম করতে পারবে না। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত নীরব এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা রয়েছে।
কিন্তু কে শোনে কার কথা, কে মানে আইন? রাস্তায় সমস্বরে হর্ন বাজে। এলাকায় এলাকায় বিল্ডিংয়ে-ছাদে নিয়মিত গায়ে হলুদ, বিয়ে, পার্টি, ব্যান্ডসংগীত হয়।
গাড়ির হর্ন, কলকারখানার শব্দ, মাইকের শব্দ, খোলা জায়গায় বিয়ের অনুষ্ঠান, কনসার্ট, সভা-সমাবেশ, মেলা, যাত্রাগান ইত্যাদির মাধ্যমে শব্দদূষণ বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষ সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ ডেসিবল শব্দে কথা বলে। ৭০ ডেসিবল পর্যন্ত মানুষের কান গ্রহণ করতে পারে এবং ৮০ ডেসিবলের ওপর গেলেই তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
মাথা ধরা, হার্টের অসুখ, কানে কম শোনা, খিটখিটে মেজাজ ইত্যাদি নানা উপসর্গ এখন শহুরে মানুষদের কাহিল করছে। এসবের মূল কারণ এই মাত্রাতিরিক্ত শব্দ।
শব্দদূষণে দোষী হিসেবে প্রমাণিত হলে প্রথম অপরাধের জন্য এক মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা দু ধরনের দণ্ডই প্রদান করার বিধান রয়েছে। দ্বিতীয় বার একই অপরাধ করলে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড দেওয়ার কথা বলা রয়েছে। প্রয়োজনে এই আইন আরো কঠোর করতে হবে। পাশাপাশি চালক ও সমাজের মানুষদের সবাইকে শব্দদূষণ প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শব্দদূষণ প্রতিরোধে জনসচেতনতার লক্ষ্যে কার্যক্রম আরো বাড়াতে হবে।
===============
আজি হইতে ২০০ বত্সর পূর্বে ঔপন্যাসিক মেরি শেলি অল্প বয়সে লিখেন ‘ফ্রাংকেনস্টাইন : অর দ্য মডার্ন প্রমিথিউস’ নামে একটি ভৌতিক উপন্যাস ও কল্পকাহিনি। এই উপন্যাসের প্রধান চরিত্র একজন সুইডিশ উন্মাদ বিজ্ঞানী। তাহার নাম ড. ভিক্টর ফ্রাংকেনস্টাইন। যিনি একটি শবদেহ হইতে সৃষ্টি করেন একটি মনস্টার বা দানব। শেষ পর্যন্ত এই দানবের হস্তে তাহার স্রষ্টার নির্মম মৃত্যু হয়। মেরি শেলির এই উপন্যাসের ‘ফ্রাংকেনস্টাইন’ কথাটি এতটাই শক্তিশালী যে, এত বত্সর পরও তাহার এই চরিত্রটি প্রাসঙ্গিক।
উন্নয়নশীল বিশ্বের রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য তৈরি করা হয় ফ্রাংকেনস্টাইন। এই সকল দেশে যাহারা ক্ষমতাসীন থাকেন, তাহারা এই সকল দানব তৈরি করিয়া ভাবেন তাহারাও বুঝি তাহাদের লোক! ইহার ফলে সেই দানবরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করিয়া দেশকে ফোকলা করিয়া ফেলে। তাহাদের অন্যায়, অনিয়ম ও অত্যাচার-নির্যাতনে দেশবাসী হইয়া উঠে অতিষ্ঠ। যখন প্রয়োজন হয় ও সময়-সুযোগ আসে, তখন তাহারা ফ্রাংকেনস্টাইনের মতো দৈত্য-দানবের রূপ ধারণ করে। তাহারা সরকারি দলের নাম ভাঙাইয়া হেন অপরাধ ও অপকর্ম নাই যাহা করে না।এরা এদের স্রষ্টাকে চিবিয়ে রস পান করছে;রসটুকু ফুরিয়ে গেলে হাড্ডি-মাংসটুকু গিলে ফেলবে।
=======
রিপল ওয়েভ বা ক্ষয়িষ্ণু ঢেউয়ের দর্শন
ছেলেবেলায়। খেলার ছলে পুকুরে ঢিল ছুড়ে ঢেউ সৃষ্টি করেনি এমন ছেলেবেলা কমই আছে। পুকুরের মধ্যে যখন ঢিল ছুড়ে ঢেউ সৃষ্টি করা হয়, ঐ ঢেউ বৃত্তাকার আকৃতিতে পুকুরের ধারে গিয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়। এ ধরনের ঢেউকে ক্ষয়িষ্ণু ঢেউ বলে। ঢেউ সৃষ্টি ও নিঃশেষ হওয়ার মধ্যে একটি সময় অতিবাহিত হয়। নির্দিষ্ট সময়ের পরেই ঢেউটা নিঃশেষ হয়ে যায়।
======================
অর্থনৈতিক সক্ষমতা আমাদের আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ করতে পারে, সামাজিক সক্ষমতা আমাদের সামাজিক ভিত্তিকে মজবুত করতে পারে; কিন্তু সেই ভিত্তিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রয়োজন হয় একটি দক্ষ জনগোষ্ঠীর। আর দক্ষ জনগোষ্ঠী গঠনে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের কোনো বিকল্প নেই। এই জনগোষ্ঠীকে যদি একটি জনশক্তিতে রূপান্তর করা যায়, তাহলে জাতির এগিয়ে যাওয়ার পথ আরও ত্বরান্বিত হবে। এজন্য প্রয়োজন একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজব্যবস্থা, যেখানে থাকবে জ্ঞানের বিকাশ ও চর্চার জন্য যথোপযুক্ত পরিবেশ।
অনেক পূর্ব হইতেই সেইখানে আমরা ব্যর্থ। একইভাবে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে পারিবারিক ঐতিহ্য বা শিক্ষার ধারাবাহিকতাও বিনষ্ট হইয়াছে নানান প্রেক্ষাপটে। বাংলাদেশে এখন তারকা বলতে আমরা বুঝি রাজনীতিবিদ বা ক্রিকেটার। মিডিয়া খুললেই তাদের দেখা পাবেন। ক্রিকেটের কথায় আসি। উপমহাদেশের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত আর পাকিস্তান ক্রিকেট না খেললে আমরাও খেলতাম না। যুদ্ধ আর জাতিগত বিদ্বেষের আরেক নাম ছিল এই ক্রিকেট খেলা। ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট মানেই ছিল লড়াই। এখনো আছে।
====
==============
কার্ল মার্কসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ তথ্যে এই বিষয়টি উঠিয়া আসিয়াছে। ইংরেজিতে যাহাকে বলা হয় Dialectical Materialism। Dialectical শব্দটি আসিয়াছে গ্রিক Dialego শব্দ হইতে, যাহার অর্থ আলোচনা বা তর্ক করা। ইহাকে মার্কসবাদের ভিত্তিমূল বলিয়া গণ্য করা হয়। জার্মান দার্শনিক হেগেল এই তত্ত্বের জনক হইলেও কার্লমার্কসের মাধ্যমে ইহা বিকাশ লাভ করিয়াছে।
দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের দ্বিতীয় সূত্র হইল, প্রতিটি বস্তুর মধ্যে পরস্পরবিরোধী প্রবণতা বা বৈপরীত্য থাকে। এই পরস্পরবিরোধী প্রবণতার দ্বন্দ্ব-সংঘাত বস্তুর পরিবর্তন ঘটায়। সমাজব্যবস্থার মধ্যেও অন্তর্নিহিত দ্বন্দ্ব থাকে। যেমন—সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় সামন্তপ্রভু ও ভূমিদাসদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। এই দ্বন্দ্বের ফলে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার অবসান হইয়াছে এবং উদ্ভব হইয়াছে ধনতন্ত্র বা পুঁজিবাদের।
=====================
বই হলো মানুষের সম্পূর্ণ ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন
বই মূলত জ্ঞানীর জ্ঞান সাধনার ফসল। জ্ঞান সাধক তাঁর অভিজ্ঞতালব্ধ ভাব-অনুভূতি ভবিষ্যত প্রজন্মকে জানানোর তাগিদ থেকে বই লেখেন।
চীনা প্রবাদে আছে, যে ব্যক্তি পর পর তিন দিন বই পাঠ থেকে বিরত থাকে সে তার কথা বলার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে।একটি সভ্য, সহনশীল ও মানবিক সমাজ গঠনে বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই।
—-
========================
অঙ্গীকারনামা
একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও সভ্য জীবন যাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান, দক্ষতা এবং আচরণ অর্জন করার পাশাপাশি সমাজ ও দেশের কল্যাণে অবদান রাখতে আমি ‘সহজ জীবন বাংলাদেশ ( সজিব)-এ অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের নৈতিক মূল্যবোধ, সভ্য আচার-আচরণ, দক্ষতার উন্নয়ন এসব “মানবিকতা” কোনো ব্যক্তি বা রাষ্ট্র কারো একার পক্ষে সমাজে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। এজন্য দরকার সমমনা মানুষদের নেটওয়ার্ক “সহজ কুটির” তৈরি করা এবং সম্মিলিতভাবে “সহজ লাইফস্ট্যাইল” চর্চা করা। আমি অঙ্গীকারাবদ্ধ যে, ব্যক্তিগত অহমিকা ত্যাগ করে এবং সকল পক্ষের স্বার্থ বিবেচনা করে সহজ জীবন-যাপনে আমি সর্বদা সচেষ্ট থাকব।
নাম—
বর্তমান ঠিকানা-
মোবাইল নং-
কর্মসূচি
সংক্রামক এবং অন্যান্য রোগ থেকে মানুষকে রক্ষার জন্য প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা
================================
কবি কালীপ্রসন্ন ঘোষ তাহার ‘পারিব না’ কবিতায় লিখিয়াছেন, ‘পারিব না—এ-কথাটি বলিও না আর,/ কেন পারিবে না তাহা ভাবো একবার’।
=================
===========
লার্নিং ইজ আ নেভার এন্ডিং প্রসেস। শেখার যেমন কোনো বয়স নেই, তেমনি নেই শেষও। যে কোনো বয়সে, যে কোনো অবস্থাতেই শেখার সুযোগ রয়েছে। আমরা প্রতিনিয়তই শিখছি—হোক তা প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা অপ্রাতিষ্ঠানিক। আবার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই যে আমাদের শিক্ষিত করে তোলে, সবক্ষেত্রে এমনটাও নয়! একইভাবে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করলেই যে শিক্ষিত হওয়া যায়, এ কথাও ঠিক নয়! মূলত এ কারণেই ‘সুশিক্ষিত’ ও ‘স্বশিক্ষিত’ শব্দ দুটির সঙ্গে প্রতিনিয়ত পরিচিত হতে হয় আমাদের।
========
কলসির তলায় ছোট্ট ছিদ্র থাকিলে খুব বেশি সমস্যা হয় না। কিন্তু সেই ছিদ্র যদি বড় হয় এবং ছিদ্রের সংখ্যা ও আয়তন যদি দিনদিন বৃদ্ধি পায়, তাহা হইলে সেই কলসির ভিতরে প্রয়োজনের চাইতেও ঘন ঘন পানি ভরিতে হয়। মানুষের শরীরেও যদি কোথাও নীরবে রক্তক্ষরণ দিনদিন বৃদ্ধি পায়, তাহা হইলে যতই আয়রনসমৃদ্ধ ভালো ভালো খাবার খাওয়া হউক না কেন, শরীরের ফ্যাকাশে বর্ণের পরিবর্তন হইবে না। ঠিক একইভাবে একটি অনুন্নত রাষ্ট্র যখন ক্রমশ উন্নয়নের সোপানে পা রাখিতে শুরু করে, তখন রাষ্ট্রটি হয় ঐ কলসি বা মানবশরীরের মতো—যাহার ভিতরকার দুর্নীতি নামক বড় বড় ছিদ্র বা অধিক রক্তক্ষরণকে আটকাইতে হয়।
কিন্তু প্রশ্ন অন্যখানে। দূর হইতে যখন আকাশে ধোঁয়া দেখা যায়, তখন সহজেই অনুমান করা যায়, সেইখানে আগুন লাগিয়াছে।
—----------------------------
গাছ না কেটেই ৭০০ বছর ধরে কাঠ উৎপাদন করছে জাপানিরা।
১৪ শতকে অসাধারণ 'ডাইসুগি' কৌশলের সৃষ্টি করে জাপান। ডাইসুগি এমন একটি পদ্ধতি যে, প্রাচীন গাছগুলো না কেটেই নতুন করে বৃক্ষরোপন করার পদ্ধতি। ছবিতে উল্লেখিত ৭০০ বছর পুরাতন বনসাইটিকে না কেটে তার উপর দিয়েই নতুন করে বৃক্ষরোপন করা হয়েছে
=======
+==================
==================
জনপ্রিয়তা থাকলে সমালোচনা হবেই।
আর যোগ্যতা থাকলে মানুষ আপনাকে নিয়ে হিংসা করবেই।
সোনা কাটিয়া লাল করিলেই,
সোনা মিয়া লাল মিয়া হয়ে যায়
কুঁজোর চিৎ হয়ে শোয়ার শখ
"ঢাকার" নামকে পরিবর্তন করে "খোলা" রাখার জন্য জোর দাবি জানাছি।
মুজতবা আলী আফগানিস্তান সম্পর্কে রসিকতা করে লিখেছিলেন যে সেখানে জানমাল বলা হয় না, বলা হয় মালজান, কারণ জানের চেয়ে মাল বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
সারা বিশ্বে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে সব কেয়ারগিভার বা যত্নপ্রদানকারীদের মধ্যে ৮১ শতাংশই নারী নারীরা =
====================
======
আঠার সালের ২৯ জুলাই এয়ারপোর্ট রোডে একটি স্কুলের সামনের ফুটপাতে গণপরিবহনের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত তা শুধুমাত্র সড়কের নিরাপত্তা আন্দোলন হিসেবেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। শিশু শিক্ষার্থীদের শ্লোগান ছিল বিচারহীনতার বিরুদ্ধে। প্ল্যাকার্ডে লেখা তাদের প্রধান শ্লোগান ছিল, উই ওয়ান্ট জাস্টিস। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজপথ, মহাসড়কের দখল নিয়ে কয়েকদিন ধরে ট্রাফিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এক অনন্য দৃষ্টান্ত রেখেছিল। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ, লাইসেন্স না থাকাসহ নানা বিষয়ে আইন ভঙ্গের অভিযোগে সরকারের মন্ত্রী, আমলা, বিচারপতি, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার গাড়ি আটকে দিয়ে ‘সরি’ বলতে বাধ্য করেছিল শিক্ষার্থীরা। কোথাও কোথাও রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে সেখানে ‘রাষ্ট্র মেরামত চলছে, সাময়িক অসুবিধার জন্য আমরা দু:খিত’ প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে দিতে দেখা গিয়েছিল।
==========
======
==================
দার্শনিক প্লেটোর মতে, সেই নিকৃষ্ট শাসক, যারা জোর করে শুধু ক্ষমতা চায়, জনগণের জন্য পরিকল্পনা থাকে না যাদের।
======
======
রাজনীতি হতে হবে দেশের কল্যাণের জন্য। যেখান থেকে উপকৃত হবে পুরো জাতি। কিন্তু বর্তমান রাজনীতিবিদরা দেশ এবং জাতির কল্যাণের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছে। তারা রাজনীতিকে বানিয়েছে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের পথ। ব্রিটিশরা ২০০ বছরে যা করতে পারেনি, এদেশের স্বার্থান্বেষী, পাজি, বিশ্বাসঘাতক ও প্রতারক রাজনীতিবিদরা ৫০ বছরেই তা করে ফেলেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রকৃতি হতে হবে উদার-নৈতিক, সংকীর্ণমনা নয়। তবে এমন রাজনীতিবিদ সমাজে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এখনকার রাজনীতিকে সবাই মনে করে ক্ষমতা এবং টাকার মহোৎসব। রাজনীতিতে প্রবেশ করতে পারলেই ভুরি ভুরি টাকার মালিক হবে, সবসময় পাওয়ার নিয়ে চলাফেরা করবে। এমন মানসিকতাসম্পন্ন রাজনীতিবিদদের অভাব বর্তমান সমাজে নেই বললেই চলে। বরং অভাব একজন আদর্শিক রাজনীতিবিদের।
এখনকার রাজনীতিবিদরা সুযোগসন্ধানী। কখন দুর্নীতি করে টাকার পাহাড় গড়ে তুলবে সবসময় সেটার অপেক্ষায় থাকে। এমনকি অনেক রাজনীতিবিদ দেশের অর্থ পাচারের মতো ঘৃণ্য অপরাধও করে থাকে। যেখানে দেশের মানুষ এখনো চিকিৎসার অভাবে মারা যায়, যেখানে বাসস্থানের অভাবে ফুটপাতে মানুষ ঘুমায়, যেখানে অনাহারে মানুষের দিনাতিপাত করতে দেখা যায়, সেই দেশ থেকে রাজনীতিবিদরা করছে অর্থ পাচার। কিন্তু সেই অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা ছিল দেশ ও জাতির কল্যাণে।
অন্যদিকে দুর্নীতি যে বাস্তবেই একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং দুর্নীতি করে বিচারহীনতা উপভোগ করা যায় না, এমন দৃষ্টান্ত স্থাপনে ঘাটতির ফলে চুনোপুঁটি থেকে রুই-কাতলার দুর্নীতির মহোৎসবের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। বালিশ-কেটলি-পর্দা কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে ক্যাসিনো–বাণিজ্যের মতো উৎকট সাগরচুরি ও অবৈধতার তথ্য দেশবাসীকে হতবাক করেছে।
================
মানুষ মাত্রই রাজনৈতিক প্রাণী, কথাটা বলেছিলেন অ্যারিস্টটল।
=============
‘আই হেইট পলিটিকস’
বর্তমান রাজনীতির প্রতি তরুণ প্রজন্মের একটা অনীহা কাজ করে। বেশিরভাগ তরুণের ফেসবুক প্রোফাইলে পলিটিক্যাল ভিইউজে দেখা যায় ‘আই হেইট পলিটিকস’। যেখানে আজকের তরুণরা নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা, সেখানে তরুণদের মাঝে তৈরি হয়েছে রাজনীতির প্রতি এক ধরনের অনীহা। তার কারণ কী?
'আই হেইট পলিটিক্স' নামক একটা তথাকথিত লিবারেল 'বিকল্প রাজনীতি' ধীরে ধীরে ছাত্র রাজনীতিকে নাকচ করে দেয়ার শক্তি পেয়ে গেল সুধীজন সমাজ থেকে এবং বাঘা বাঘা কর্পোরেটরা হয়ে উঠল এই বিরাজনীতিকরণের আবছায়া পৃষ্ঠপোষক। সমাজ-রাষ্ট্র, দুনিয়া বদলাতে হবে,
বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি এই 'রাজনীতিমুক্ত' হওয়ার সামাজিক যে চাপ, তার কারণ সরকারি ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাস, নিপীড়ন-নির্যাতন,চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, ও ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি, হলগুলোকে টর্চারসেলসহ অমানবিক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম তথা কর্তৃত্ববাদী আস্ফালন শিক্ষাঙ্গনকে এতটাই অচলায়তনে পরিণত করতে থাকল যে, একপ্রকার বাধ্য হয়ে তরুণরা 'আই হেইট পলিটিক্সে'র ছায়াতলে আপাত 'নিরাপদ' আশ্রয় খুঁজতে থাকল।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশনে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার একটা প্রকল্প ছিল ইউজিসির উচ্চশিক্ষার ২০ বছর মেয়াদী কৌশলপত্রে, যেটার মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। এই প্রেসক্রিপশনের কারণে ছাত্র সংসদের অকার্যকর থাকা আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। আর ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণবিরোধী প্রশাসনগুলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন না দিতে পারলে তো সুখবোধ করেই। আজকের ছাত্র রাজনীতি আগামীর জাতীয় নেতৃত্ব তৈরি করতে পারেনি। ছাত্র সংসদ থাকলে যাওবা সম্ভাবনা ছিল, সেটাও নষ্ট করা হয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও কার্যকর না থাকলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকাও যা, কার্যসিদ্ধ থাকাও তা!
বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি শুধু বুয়েটে না, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই নিষিদ্ধ। কেন নিষিদ্ধ, তার স্পষ্ট উত্তর— ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন ও তার কর্তৃত্ববাদী কার্যকলাপ। এরই মধ্যে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে ২০১৯ সালে জারি করা বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বুয়েট ক্যাম্পাসে কেন উচ্চারণ করা যাচ্ছে না, কারা করতে দিচ্ছে না এবং তার সঙ্গে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা না-করার কী সম্পর্ক, সবগুলোকেই মিলিয়ে পাঠ করতে হবে, কেননা এ বিষয়গুলোও ভীষণরকম রাজনৈতিক। বুয়েট বাংলাদেশের ‘ব্রেইন ড্রেইনে’র সবচেয়ে বড় উদাহরণ, তাদের তৈরি করা অধিকাংশ মেধাই দেশের বাইরে চলে যায়
যখন গণতন্ত্র সংকটে থাকবে, তখন অগণতান্ত্রিক চর্চার প্রাদুর্ভাব বাড়বে এবং একটা পক্ষ খুবই কর্তৃত্ববাদী ও দাপুটে হয়ে যাবে। এই কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে কিংবা না নিয়ে আরেকটা পক্ষ চুপ করে থাকবে। চুপ থাকাটা যখন সংস্কৃতিতে পরিণত হবে, তখন বিরাজনীতিকরণ চমৎকার ঠাঁই পেয়ে যাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই। সেটা ব্যক্তিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক সব পরিসরেই। যখন আপনি কথা তুলতে পারবেন না, কিংবা কথা তুলতে পারলেও সে কথাকে গুরুত্ব দেয়া হবে না, কিংবা দমিত হবেন, তখন না-কথা বলাটাই শ্রেয় জ্ঞান করে অন্যদিকে মনোযোগী হওয়ার প্রক্রিয়া থেকেই বিরাজনীতিকরণের শুরু। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরেই এ দশায় বিরাজমান
যারা ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে এবং মনে করেন, এর কারণে শিক্ষা-কার্যক্রম ঠিকঠাক করা যায় না, রাজনীতি-নিষিদ্ধ থাকা ক্যাম্পাসে পড়ালেখা খুব ভালো হচ্ছে, গবেষণা প্রস্তাব করি। ছাত্রীদের তুলনায় ছাত্রদের পরীক্ষার ফল— ছেলেদের হলগুলো টর্চারসেল হওয়ায় প্রথমবর্ষ থেকেই ছাত্রদের ফলাফল খারাপ হতে থাকে, কেননা তাদের অধিকাংশকেই অনিচ্ছায় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের মর্জি অনুযায়ী চলতে হয়।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মুখ্যত বিদ্যাশিক্ষার জায়গা। তবে, বিদ্যাশিক্ষা মানে শুধু ক্লাস আর পরীক্ষা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে তো আরও না। বিশ্ববিদ্যালয় সমস্ত মহাজগৎ ব্যাপ্ত জ্ঞানের সৃজন ও বিতরণে ব্রতী হবে, জ্ঞান ও চিন্তার স্বাধীনতাকে উর্ধ্বে তুলে ধরবে— এটাই তার প্রধান দায়িত্ব। এই দায়িত্বের অংশ হিসেবে শুধু শ্রেণিকক্ষ আর পরীক্ষাগারই শিক্ষার্থীর শেষ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠবে, তা মোটেও কাম্য না। প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের মানসিক-শারীরিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিকাশের স্বার্থে ক্লাস-পরীক্ষার পাশাপাশি রাজনৈতিক মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অধিকার সমুন্নত রাখা।
====
ঐতিহ্যগতভাবে পাঞ্জাব উপমহাদেশের অন্য যেকোনো অঞ্চল থেকে বেশি বৈচিত্র্যময়। তিনটি ধর্ম—ইসলাম, হিন্দু, শিখ বিভিন্ন রকম অস্বস্তিসহ বসবাস করছে তিন ভিন্ন ভাষা—উর্দু, হিন্দি ও পাঞ্জাবি নিয়ে, যাদের সবার আলাদা লিপি রয়েছে।
================
রবীন্দ্রনাথ যে যুগে জন্মেছিলেন এবং যেভাবে চারপাশে থেকে তিনি আনন্দ সংগ্রহ করেছিলেন, সে সময়কার জীবনব্যবস্থা যেমন ছিল শান্ত, স্থির হয়ে দাঁড়ানো, স্তব্ধ হয়ে দেখা। আজকের এই অস্থির, ঊর্ধ্বশ্বাস গতি, উন্মাদ গতির যুগে মানুষ জীবনকে ও রকম নিবিড়ভাবে উপভোগ করার সেই সময়, সেই মানসিক অবস্থাটা কি মানুষের আছে? যেখানে প্রতি মুহূর্তে মানুষের ওপরে এত অত্যাচার হচ্ছে, এত নৈরাজ্য, এত অবিচার, এত ব্যর্থ ফরিয়াদ, সেখানে মানুষের গভীর গভীর আনন্দ উপভোগের সেই শর্তটাই তো নেই।'
আমার রেজাল্ট দেখতে ইচ্ছে করে না। আমার মনে হয় আমার যা করার কথা ছিল আমি সেটুকু করেছি কি না। এইটাই আমার রেজাল্ট। আমি যদি করে থাকি, আমি সন্তুষ্ট।মাটির প্রদীপ কহিল স্বামী, আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি।
============
=============
============
জনগণের সম্পদ ধ্বংস করা এবং সরকারি অফিস, গাড়ি, গণপরিবহন, ইন্টারনেট অবকাঠামোতে আগুন দেওয়া অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ। এর মাধ্যমে দেশের বাণিজ্য, উৎপাদন ও নাগরিকের দৈনন্দিন জীবন রুদ্ধ হয়ে যায়।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার দেড় দশক ধরে সর্বোচ্চ সময় ক্ষমতায় থেকে হঠাৎ দেখতে পাচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিগুলো এমন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে যে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি সবই ব্যর্থ; এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হলো।
==============
পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ দলটি—যারা সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল—পথভ্রষ্ট হয়ে অর্থ আয়ের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে কি না? তৃণমূলে তাদের অবস্থান এখন কেবল গৌরবময় অতীতের ফ্যাঁকাসে ছায়ার মতো। তাদের নেতারা অকপটে স্বীকার করছেন যে স্বাধীনতা সংগ্রামের নীতি, সততা, দেশপ্রেম ও মূল্যবোধের নৈতিক শক্তি নয়, পেশিশক্তিই তাদের টিকে থাকার একমাত্র কৌশল।
গোয়েন্দা, অন্যান্য সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান—এককথায় সরকারি চাকরিরত সবাই জানতেন যে রুটির কোন দিকটায় মাখন আছে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করেছেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব ও স্বজনপ্রীতির কারণে বাংলাদেশে দুর্নীতির সূচক ঊর্ধ্বগামী এবং ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান এত বেড়েছে, যতটা আগে কখনো ছিল না।
আমরা আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি ও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার ক্রমশ ও উদ্বেগজনক অবক্ষয় এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজনীতিকরণ দেখেছি, যা সুশাসনকে একেবারে পঙ্গু করে দিয়েছে।
==============
ক্ষমতাসীনরাও এই দেড় দশকে এত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েনি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, হেফাজতে ইসলামের শাপলা চত্বরের ঘটনাও তারা মোকাবিলা করেছেন কিন্তু কোনোটাই এতটা শ্বাসরুদ্ধকর ও বিপজ্জনক ছিল না।এই আন্দোলন বুঝিয়ে দিয়েছে যে, ক্ষমতাসীনদের দল এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় অক্ষম। পরিস্থিতি আরও ব্যাপক ও দীর্ঘ হলে হয়তো সব কিছু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত।
============
দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকার লোপাট হচ্ছে, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলছেন তার নিজের পিয়ন পর্যন্ত চারশ কোটি টাকা লোপাট করেছেন। সাবেক পুলিশ প্রধান, সেনাপ্রধানের দুর্নীতির খবরে যখন গোটা দেশ হতবাক, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণের নাভিশ্বাস, সেই মুহূর্তে দেশের প্রধান শত্রু হিসেবে শনাক্ত করা হলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। যারা বৈষম্যহীন সমাজ চায়, যেটা কিনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল,
=============
=============
এক ধরনের সংকট বোঝাতে এই প্রবচনটি ব্যবহার করা হয়।
==========
এখানে ক্ষমতা ছাড়া অন্য কিছুর গুরুত্ব নেই। যে দলটি ইতোমধ্যে ক্ষমতায় আছে, তাদের একমাত্র চিন্তা হচ্ছে কীভাবে সেখানে টিকে থাকা যায় এবং তাদের পরাজিত করতে পারে এমন সব ধরনের বৈধ প্রচেষ্টাকে কীভাবে নস্যাৎ করা যায়। আর তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীর ক্ষেত্রে বলা যায়, তারা যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টায় রত আছে। খুব কম সময়ই তাদের চিন্তায় জনগণের স্বার্থ থাকে।
শুধু এরশাদ-পরবর্তী যুগের শুরুর দিকে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখা গিয়েছিল, যখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এবং সংসদে বিএনপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকাকালে দলের প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানের পছন্দের রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থা থেকে সরে এসে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় যাওয়ার বিষয়ে তারা আওয়ামী লীগের প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। সংসদের ট্রেজারি বেঞ্চ বিরোধী দলের এই প্রস্তাব গ্রহণ করার ফলে এটি রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে অত্যন্ত ইতিবাচক ও অনুকরণীয় উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
আমরা আলোচনা করতে পারি না কারণ, রাজনৈতিক আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা পুরোনো ধ্যান-ধারণার মধ্যেই আটকে আছি। আমাদের কাছে আলোচনা করতে যাওয়া মানে দুর্বলতা প্রকাশ, সমঝোতা মানে আত্মসমর্পণ, বিরোধী দলের মতাদর্শ মেনে নেওয়া মানে—যাদের বিনাশ করতে চাই, তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করে দেওয়া এবং তাদের ভালো কিছু স্বীকার করা মানে নিজেদের মধ্যে দ্বিধা সৃষ্টি করা, ইত্যাদি।
২০০৪ সালের আগস্টে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা আওয়ামী লীগ-বিএনপি সম্পর্ককে পুরোপুরি বদলে দেয়। শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের সম্ভাবনা বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় টিকে থাকাই রাজনীতির চূড়ান্ত ও একমাত্র রূপে পরিণত হয়।
যেহেতু গণতন্ত্রে কেউই কখনো একচ্ছত্রভাবে ক্ষমতায় থাকার বিষয়ে নিশ্চিত না, তাই গণতন্ত্রকে ভণ্ডুল করার নানামুখী প্রচেষ্টা চালানো হয়।
নির্বাচনে কারচুপি একটি সহজাত বিকল্পে পরিণত হয়, যা বাস্তবায়ন করতে পুলিশ, আমলাতন্ত্র ও গোয়েন্দা সংস্থার ক্ষমতায়ন প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ, সাধারণ মানুষ ছাড়া মোটামুটি সবাই এর সুবিধাভোগী। ফলে এখন আমরা এমন একটি অবস্থায় পৌঁছেছি যেখানে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেকোনো কিছুই করতে পারে এবং আমলাতন্ত্র এতটাই শক্তিশালী যে, তাদের ছাড়া কিছুই করা সম্ভব না।
রোমান সম্রাটদের মধ্যে অন্যতম জ্ঞানী মার্কাস অরেলিয়াস (১৬১ থেকে ১৮০ খ্রিষ্টাব্দ) সিনেটের কাছে বন্দি জার্মানদের সার্বভৌমত্ব দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু সিনেট চেয়েছিল তাদের দাসে পরিণত করতে। সে সময় অরেলিয়াস বলেন, 'হে রোমের সম্মানিত পিতাগণ! আমরা সারা পৃথিবীতে পরিবর্তন এনেছি। আমরা কি নিজেদেরও পরিবর্তন করতে পারি না?'
—----
==============
===================
প্রথম প্রধানমন্ত্রী। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, আদর্শবাদী, পন্ডিত এবং কূটনীতিবিদ নেহরু ছিলেন একজন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব। লেখক হিসেবেও নেহরু ছিলেন বিশিষ্ট। ইংরেজীতে লেখা তাঁর তিনটি বিখ্যাত বই- 'একটি আত্মজীবনী'(An Autobiography), 'বিশ্ব ইতিহাসের কিছু চিত্র'(Glimpses of World History), এবং 'ভারত আবিষ্কার'(The Discovery of India) চিরায়ত সাহিত্যের মর্যাদা লাভ করেছে। তার পিতা মতিলাল নেহেরু একজন ধনী ব্রিটিশ ভারতের নামজাদা ব্যারিস্টার ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। মহাত্মা গান্ধীর তত্ত্বাবধানে নেহেরু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম প্রধান নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন। পরবর্তীকালে তার মেয়ে ইন্দিরা গান্ধী ও দৌহিত্র রাজীব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
================
মৃত মানুষকে নিয়ে ‘তুমি কোন দলে?’ প্রশ্ন করার মধ্যে যে অমানবিকতা থাকে,
·
·
· ==============
আজ ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ এক বিশাল আগ্নেয়গিরির মতো এত ক্ষোভের উদ্গিরণ কোথা থেকে, কীভাবে হলো? একটি গোটা দেশ ও জাতির এই যে মানসিক আঘাত বা ইংরেজিতে বললে ট্রমা—
==========
কার কী বা কতটা দোষ, কার কী ও কতটা দায়িত্ব, সেসব বিশ্লেষণ করার এখতিয়ার, যোগ্যতা, অধিকার আমার চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের অনেক বেশি। এসব প্রশ্ন উঠবে, তর্ক হবে, অধিকারী যাঁরা এ নিয়ে কথা বলবেন। তাঁদের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে শুনব।
======================
· কেন বারবার চাই, এক স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠুক, যাকে দেখে শুধু বাংলাদেশের বাংলাভাষী মানুষ নয়, পৃথিবীর সব বাঙালি মাথা উঁচু করে হাঁটবে?
· ==========================
· রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের ও লালনের মন্ত্রে আমি দীক্ষিত। এই দেশ যখন কাঁদে, তখন আমরা সবাই কাঁদি, এর রিক্ততায় নিজেকে রিক্ত বোধ করি।আজকের বিক্ষুব্ধ ও অস্থির সময় থেকে নিষ্ক্রমণের কোনো বাস্তব ও স্থায়ী পথ দেখান। কোনো এক মিলনের প্রাঙ্গণে আমাদের সবাইকে নিয়ে যান, যেখানে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পতাকার নিচে বিশ্বের বাঙালি আবার জমায়েত হতে পারে।
· =====
· ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে অনেকেই ছাত্র নয়। তারা অনেকে জোর করে ক্যানটিনে খায়, তারা রুম দখল করে রাখে। সাধারণ ছাত্রদের গণরুম নামের একটা জেলখানায় থাকতে বাধ্য করে। মিছিল–মিটিংয়ে না গেলে পেটায়।গেস্টরুমের অত্যাচার, সিট বণ্টনের নৈরাজ্য, ছাত্রলীগের মিছিলে-মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য চাপ, না গেলে নানা ধরনের অত্যাচার—এসব ক্ষোভ ছাত্রদের মধ্যে ছিল।
· এগুলো তো বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। কোটা সংস্কার তো একটা উপলক্ষ, ছাত্রদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের কারণেই আন্দোলনটা এত বড় হয়েছে। সেই ক্ষোভ থেকেই ছাত্ররা বেরিয়ে এল।
· আন্দোলন হলেই মানুষ গাড়ি পোড়ায়, ভাঙচুর করে। এর একটা কারণ হলো নানা বিষয় নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ থাকে। আবার আন্দোলনের মধ্যে নানা মতলববাজ গোষ্ঠী ঢুকে যায়। মতলববাজদের মধ্যে যেমন রাজনৈতিক দল থাকে, আবার বিভিন্ন সংস্থার লোকও থাকে। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে।
·
============
১৯৬৯ সালে পুলিশের গুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও বামপন্থী কর্মী আসাদ নিহত হওয়ার পর গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল।
============
মানুষ যে রাস্তায় নেমে এসেছে, ধ্বংসাত্মক কাজ করেছে, এগুলো তাদের কারা শিখিয়েছে? আমাদের রাজনীতিবিদেরাই সেটা শিখিয়েছেন। গাড়ি পোড়ানো, ভবনে আগুন দেওয়া, এটাই তো আমাদের এখানে রাজনীতির বৈশিষ্ট্য। সরকারে থাকা আওয়ামী লীগ কোনো দিন বিরোধী দলে গেলে তারাও এটাই করবে।
======
দীর্ঘদিন মানুষ তার ভেতরের যে আকাঙ্ক্ষা, তার যে কষ্ট—এগুলো প্রকাশ করতে পারেনি। এ কারণে একটা চাপা ক্ষোভ দিনের পর দিন পুঞ্জীভূত হয়েছে। অনেক কারণেই সেটা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি, দুর্নীতি, গরিবে-ধনীতে বৈষম্য, জীবনযাত্রার মান নিচে নেমে যাওয়া থেকে শুরু করে ভোট দিতে না পারা ও
===========
চট্টগ্রামে বিআরটিসির বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় ক্লোজড সার্কিট টিভি ক্যামেরার (সিসিটিভি) ফুটেজ দেখে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সোহেল রানা নামের এক লেগুনাচালককে।
চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সোহেল জানিয়েছেন, নগরের বায়েজিদ থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি দিদারুল আলমের নির্দেশে বিআরটিসির বাসে আগুন দেন তিনি। এই অপকর্মের জন্য দিদার তাঁকে চার লাখ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অগ্রিম হিসেবে দেওয়া হয় ৫০০ টাকা।
প্রশাসনের সহায়তায় হয়তো বিরোধী দলের নেতা-কর্মীকে সাময়িকভাবে মাঠছাড়া করা সম্ভব, কিন্তু নিজের দলের কাঠামোর ভেতরে যে ঘুণপোকা বাসা বেঁধেছে, তার আক্রমণ থেকে বাঁচার উপায় কী?
=========
‘যারা সৎভাবে জীবন যাপন করতে চান, তাদের জন্য বা তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য সৎভাবে জীবন যাপন করা কঠিন হয়ে যায়, যখন অসৎ উপায়ে উপার্জিত পয়সা সমাজকে বিকলাঙ্গ করে দেয়।
=============
দেশের রাজনীতিতে শুদ্ধতা আনয়নে আমরা যদি কেবল সরকারের ওপরই নির্ভর করে বসে থাকি তবে তা অবিচার করা হবে। রাজনৈতিক শুদ্ধতা আনয়নে সব রাজনৈতিক দলগুলোর যার যার দায়িত্ব রয়েছে। একটি দল তার নিজস্ব লক্ষ্য এবং আদর্শকে ধারণ করে চলছে কি না তা দেখা সরকারের নয়, দলীয় দায়িত্ব। সেই সাথে দেশের কোথায় কোনো ধরনের অব্যবস্থা বিরাজ করছে তা জনগণ এবং সরকারের সামনে তুলে ধরে বিরোধী দলগুলো তাদের রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করবে-এটাই প্রত্যাশিত। দেশের রাজনীতিতে বিরোধী দলগুলো কেবল বিরোধিতার খাতিরে যে কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে,
============
পেরিক্লিসের যুগের পলিটিকস আর আজকের রাজনীতি তাই এক নয়।
=============
মার্কস দেখেছিলেন সাম্যবাদী সমাজের স্বপ্ন– তাঁর আগের সব ভাবুকদের মতো তিনিও ছিলেন মূলত কবি। প্লাটো কিংবা টমাস মূরের মতো শুধু য়ুটোপিয়ার সূক্ষ্মতন্তুজাল বয়ন না করে তিনি অবশ্য প্রায়োগিক সম্ভাব্যতার পথও দেখিয়ে যান। লেনিন করেন সেই প্রয়োগকর্ম, স্থাপন করেন সোভিয়েত নামক রাষ্ট্র।
-===============
ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে দেখেছি, তাঁরাই হয়েছেন জনগণমনঅধিনায়ক যাঁরা বুদ্ধি এবং আবেগের মিশেল ঘটাতে পেরেছেন তাঁদের রাজনীতিতে। সুভাষচন্দ্র কিংবা চিত্তরঞ্জন বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমাপেও অসাধারণ ছিলেন। তবু স্বাধীনতাকামী ভারতবাসীর আবেগকে তাঁরা ধরতে পেরেছিলেন। তাঁদের যে-স্বপ্ন ছিল ঐক্যবদ্ধ ভারতবর্ষের তা যে সফল হতে পারেনি, তার পেছনেও সম্ভবত আবেগের রাজনীতির বিপদসমূহ। তুলনায় অনেক বেশি নিরাবেগ বুদ্ধিজীবী জিন্না ও নেহেরু, পেরেছিলেন কসাইয়ের মতো নির্লিপ্ততায় ছুরি চালাতে, মানচিত্রের ওপর শুধু নয়, ভারতবাসীর মানসচিত্রের ওপরও।
==============
জিয়াউর রহমানের কঠিন শাসনে দেশকে বদলে যেতে দেখেছি,
চট্টগ্রামের মুসলিম ইনস্টিটিউট হলে অনুষ্ঠিত সেই সভায় জাগদলের সমাপ্তি ঘোষণা করে নতুন যে দলের রূপরেখা দেয়া হয় তারই আরেক রূপ বিএনপি। সে সভায় প্রয়াত স্পীকার তুখোড় বক্তা নামে পরিচিত শামসুল হুদা চৌধুরীর বক্তব্য শুনে ‘থ’ বনে গিয়েছিলাম। স্বভাবসুলভ ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় তিনি পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের বিষয় নিয়ে বলেছিলেন, জেনারেল অরোরা ও জেনারেল নিয়াজীর সেই দলিল নাকি সই হয়েছিল নড়বড়ে এক চারপেয়ে টেবিলে। মুচকি হাসিতে শামসুল হুদা ব্যঙ্গ করছিলেন এই বলে, আমাদের বিজয়ও নাকি তেমনি নড়বড়ে।
======================
· দুই বাংলা কে এগিয়ে
· ব্রিটিশ শাসনামলের আগে যুক্তবঙ্গ ছিল ভারত উপমহাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজ্য। যখন সারা পৃথিবীর 25% জিডিপি শুধু ভারতীয় হতো সেই সময় তার ১২% উৎপন্ন হতো শুধু এই যুক্ত বাংলাতেই। ১৬১০ সালে সুবেদার ইসলাম খান ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থাপন করেন এবং সম্রাট আরঙ্গজেবের সুবেদার মুর্শিদকুলি খান ১৭০৪ সালে ঢাকাকে বাদ দিয়ে বাংলার রাজধানী হিসেবে বহরমপুরকে নিজের নামে মুর্শিদাবাদ নামকরণ করে শহর গড়েন, সেখান থেকে রাস্ট্র পরিচালনা শুরু করলেন। মুর্শিদাবাদ ও কোলকাতায় দীর্ঘকাল যাবত বাংলার রাজধানী থাকার কারণে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে পশ্চিমবঙ্গের এগিয়ে থাকাটাই স্বাভাবিক।
পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি প্রদেশ হওয়ায় স্বতন্ত্রভাবে নিজের অর্থনীতি নির্ধারণ করতে পারে না। তার সংগৃহীত রাজস্বও consolidated fund of India তে জমা পড়ে - এবং এই ফান্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গ কতটা ভাগ পাবে, তা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ঠিক করেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশ একটি স্বতন্ত্র রাস্ত্র। তার অর্থনীতি, রাজস্বনীতি সে নিজেই ঠিক করে। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ অসাধারণ মিল রয়েছে কেবল ধর্ম ছাড়া। একই ভাষা ও জমির উর্বরতা, বৃষ্টিপাত , ভ্যাপসা গরম এবং একই ঘন জনসংখ্যা। তবে বাংলাদেশ একটি আমদানি নির্ভর দেশ।
পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা হলো 10.14 কোটি এবং আয়তন হলো 88,752 বর্গকিলোমিটার আর বাংলাদেশ এর জনসংখ্যা হলো 16.47 কোটি এবং আয়তন হলো 148,460 বর্গকিলোমিটার। অর্থাৎ বাংলাদেশের আয়তন ও জনশক্তি পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশের খনিজ সম্পদ, কৃষিজ সম্পদ,সমুদ্র সম্পদও এমনকি রপ্তানি আয় পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশে গার্মেন্টস, চামড়া সহ অনেক বড় বড় শিল্প রয়েছে। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ও পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে বেশি। দুইবাংলার উত্তরবঙ্গ দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় পিছিয়ে আছে।
· ১৯৪৭ সালে থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাইকারিভাবে হিন্দু বুদ্ধিজীবীদের বাংলাদেশ ত্যাগ বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তির চর্চাকে মারাত্মকভাবে ব্যহত করেছে। ১৯৭১ সালে দেশ পরিচালনা করার জন্য যে শক্তিশালী আমলা কাঠামো দরকার ছিল, তা বাংলাদেশের ছিল না। অদক্ষতা ও অসততার সংমিশ্রনে তৈরি আমলাতন্ত্র এবং অন্যায় সুবিধা দিয়ে অন্যায় সুবিধা নেওয়ার প্রবণতার ফলে স্বাধীনতার পর দেশে দুর্নীতি লুটপাটের একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির তৈরি হয়। বর্তমানেও সরকার মানেই একশ্রেণীর আমলা আর কিছু রাজনীতিবিদ মিলে লুটপাট ও দুর্নীতির প্রতিযোগিতা। কারণ এ দেশে সরকারের সাথে জনগণের একাত্বতা গড়ে উঠেনি। কেউ ট্যাক্স দিতে চায় না, ব্যবসায়ীরা ৯০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে রাজি হয় ১০০ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য। এর কারণ হচ্ছে সরকারকে কেউই নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করছে না।
·
অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে গরিব ও বেকার মানুষকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিচ্ছে। সেখানে দল-মত নির্বিশেষে সকল গরিব মানুষ চাল ডাল তেল বিদ্যুৎসহ মাসে মাসে ৪-৫ হাজার টাকা পাচ্ছে জীবন জীবিকা পরিচালনার জন্য। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প থেকে শুরু করে, যুবশ্রী, কন্যাশ্রী, গতিধারা প্রকল্প, ২ টাকা কেজি দরে চাল ও গম প্রদান করার খাদ্যসাথী প্রকল্প, বিনামূল্যে ৭০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের হাসির আলো প্রকল্প, এরকম ডজন ডজন প্রকল্পের মাধ্যমে গরিব মানুষের জন্য অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ফলে জনগণ সরকারকে নিজেদের একটা অংশ মনে করছে।
কলকাতায় কার্যত বাঙালির নেই বললেই চলে। কলকাতার অর্থনীতি এখন প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করে মাড়োয়ারি সমাজ। তবে সেখানে কায়িক শ্রম দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করেছে বিহার-উত্তর প্রদেশ থেকে আসা মানুষ। নগর অঞ্চলে হিন্দিভাষী ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে। এই হিন্দিভাষী মানুষরা বিজেপির উত্থানকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিতে আসছে। হয়ত, ‘এমন একটা সময় আসবে, যখন কলকাতা ও নগরগুলোতে বাংলায় কথা বলার লোক থাকবে না। ’আদমশুমারি মোতাবেক, পশ্চিমবঙ্গের ৬৮ শতাংশ মানুষ গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করে। তারা তৃণমুলকে ভোট দিয়েছে একাধিক গ্রামমুখী সামাজিক কল্যাণ প্রকল্পের কারণে। কিন্তু
পশ্চিমবঙ্গের ১২৫টি মিউনিসিপ্যালিটি এলাকার ৬০ শতাংশ ওয়ার্ডে বিজেপি এগিয়ে আছে। তাদের বক্তব্য হলো, তাদের টাকায় গ্রামকে ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। অথচ তাদের শিক্ষিত বেকারদের কাজের সুযোগ হচ্ছে না, শিল্পায়্নের আগ্রহ তৃণমূলের নেই।
=============================================
প্রাণী
মানুষ ও প্রাণী উভয়েই কামে আসক্ত।মানুষের যেমন একাকীত্ব ঘোচাতে জীবনসঙ্গী লাগে ঠিক তেমনি জঙ্গলের নেকড়েরও একজন জীবনসঙ্গী প্রয়োজন হয়। গভীর সমুদ্রে যে ভয়ঙ্কর হোয়াইট শার্ক থাকে তারও নারী সঙ্গীর প্রয়োজন হয়। একটা মাদী হাতিকে প্রজননের সময় জোর করে তার অপছন্দের পুরুষের সাথে মিলিত হতে বাধ্য করানোর ফলে জন্মের পর সে তার শিশু বাচ্চাটিকে পা দিয়ে মেরে ফেলে। মানুষের মত প্রাণীদেরও পছন্দ অপছন্দ আছে।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে ১৩ বার সহবাসের পর পুরুষ সঙ্গীকে খেয়ে ফেলেছে মহিলা অক্টোপাস। রাণী মৌমাছির সঙ্গে যৌন মিলনের পরই মৃত্যু হয় পুরুষ মৌমাছির। রাণী মৌমাছি একবারেই ১৮- ২০ টা পুরুষ মৌমাছির সাথে মিলিত হতে পারে।
একটানা ১৪ ঘন্টা যৌনমিলনের ফলে বিলুপ্ত হতে চলেছে ইঁদুর জাতীয় মারসুপিয়াল প্রাণী। সুইসাইডাল মেটিং এর কারণে এই প্রাণীটি পৃথিবী থেকে বিলুপ্তির পথে। একটি রেডব্যাক স্ত্রী মাকড়সা যৌন সঙ্গম চলাকালীন অথবা যৌন সঙ্গমের পর পুরুষ মাকড়সাকে খেয়ে ফেলে।
। প্রায় আশি শতাংশ পুরুষ রেডব্যাক মাকড়সা নারী সঙ্গীর সাথে সঙ্গম করতে না পেরে মারা যায়।
ম্যান্টিস নামে একটি পোকা আছে। পুরুষ ম্যান্টিসের তুলনায় স্ত্রী ম্যান্টিস আকারে বড় হয়।নারীরা পুরুষদের আকৃষ্ট করতে ফেরোমোনের রাসায়নিক সংকেত পাঠায়।যখন পুরুষ মহিলাটির সাথে সঙ্গম করে তখন মহিলাটি পুরুষটির মাথা শিরোচ্ছেদ করে তাকে খেয়ে ফেলে। সবুজ অ্যানাকোন্ডার সাথে মিলনের জন্য একসাথে দশটির বেশি পুরুষ প্রতিযোগিতা করে এবং যা ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত চলে। আকারে বড় হওয়ায় সবুজ অ্যানাকোন্ডা এক পর্যায়ে সন্তান জন্মদানের পুষ্টির জন্য অন্য পুরুষ অ্যানাকোন্ডাদের খেয়ে ফেলে। সঙ্গমের পর মারা যায় পুরুষ পিঁপড়া।
প্রাপ্ত বয়স্ক প্রতিটি নারী ও পুরুষ একে অপরের সঙ্গ চায়।এই সঙ্গ চাইতে গিয়ে সমাজ যেন দুষিত না হয় তার জন্য বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন। মানুষ অন্য প্রাণীদের থেকে আলাদা বলেই বিয়ে মানে তাদের কাছে দায়িত্ব। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটি জীবন রেখে যাওয়া।নারী ও পুরুষের দৈহিক মিলনের ইতিহাস অনেক পুরোনো।
পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণী যেমন আচরণে সমান নয় ঠিক তেমনি মানুষও।মানুষের মধ্যে কিছু মানুষ যেমন এক নারীতে সন্তুষ্ট হয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দেয় ঠিক তেমনি
' পেয়ার বন্ডিং মেকানিজম ' খ্যাত কেপ পর্কুপাইন নামক প্রাণীরা ও এক সঙ্গী দিয়ে তাদের সারাটি জীবন পরিবার নিয়ে সুন্দরভাবে কাটিয়ে দেয়।মানুষের মত উল্লুকরাও এক নারীর সাথে সঙ্গমে মিলিত হয় এবং পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকে। নেকড়ে সারাজীবনের জন্য একজনকেই সঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়। মানুষের মত রোমান্টিক প্রেমে বিশ্বাসী হয় রাজহাঁস। পেঙ্গুইন, ঈগল, কালো শকুন,সারস পাখি , বীবর, পেঁচা এরা সবাই সঙ্গী হিসেবে একজনকে জীবনসঙ্গী করে।পুরুষ লিজার্ডের সাথে স্ত্রী লিজার্ডের প্রায় বিশ বছর পর্যন্ত সম্পর্ক থাকে।একে অপরের প্রতি মায়া ও মমতা থাকে।এমনকি সঙ্গমের সময়ও একে অপরকে মায়া করে।সন্তান জন্মদানের সময় পুরুষ লিজার্ড স্ত্রী লিজার্ডটিকে পাহারা পর্যন্ত দেয়। প্রাণীদের মধ্যেও ভালোবাসার অনুভূতি আছে, মায়া ও মমতা আছে এবং প্রাণীরাও একে অপরের প্রতি রাগ করে।।
==========
==
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ মার্কেসাস আইল্যান্ড। এই দ্বীপে বসবাসকারী বাসিন্দারা পলিনেশিয়ান। এঁদের একটি যৌনরীতি বেশ চমকে দেওয়ার মতো। এখানের দম্পতিরা তাঁদের সন্তানের সামনেই করেন, যৌন সঙ্গম। না মশাই বয়সে ছোট বা অবুঝ শিশুর সামনে নয়। কিশোর কিশোরী সন্তানদের জীবনরহস্য এবং যৌনতার পাঠ দেওয়ার জন্য সঙ্গম নিয়ে তাঁরা বিশেষ লুকাছুপি করেন না। যৌনতা নিয়ে যাতে কোনও ছুঁতমার্গ তৈরি না হয় সে কারণেই এই রীতি চলে আসছে কয়েক শতাব্দী ধরে।
প্রশান্ত মহাসাগরে আরও একটি বৃহৎ দ্বীপমালা ট্রোবায়ান্ড। পাপুয়া নিউগিনির প্রায় সাড়ে চারশ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই দ্বীপ। এখানে বসবাসকারী উপজাতির সন্তানরা অত্যন্ত অল্প বয়সে প্রবেশ করে যৌনজীবনে। ছেলেদের জন্য সে বয়স দশ বারো, মেয়েদের জন্য ছয় কি সাত। এই বয়সের বালক বালিকারা নিয়ম করে দল বেঁধে ঘন জঙ্গলের যায়। সেখানেই চলে এদের উদ্দাম যৌনতার পাঠ। এই বয়সেই তারা তাদের মনের মত যৌনসঙ্গী নির্বাচন এবং বদল দুই’ই করতে পারে। এই কাজের জন্য তাদের কোনও শাস্তি বা নিষেধ নেই। কারণ এই উপজাতির কাছে খাওয়া, ঘুমের মতোই, নিয়মিত যৌনতা বাধ্যতামূলক এবং স্বাভাবিক।
দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের পনেরোটি দ্বীপ নিয়ে তৈরি কুক আইল্যন্ড। দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ মানগাইয়া। এই দ্বীপের প্রথা অনুসারে, ছেলেদের বয়স তেরো হলেই, তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় গ্রামের বাইরে একটি কুঁড়ে ঘরে। সেখানে তার জন্য থাকে একজন বিবাহিত নারী। সেই নারী তার তাঁকে দেয় যৌন অভিজ্ঞতার প্রথম পাঠ।
এই জনজাতির কাছে এটাই যৌন শিক্ষার ধরন। এখানের ছেলেদের বয়:সন্ধি পেরতে না পেরতেই বিয়ে হয়। একবার যৌনমিলনে কীভাবে একজন নারীকে চূড়ান্ত তুষ্ট করা যায়, সেই শিক্ষা এই দু সপ্তাহ ধরে কিশোরটি অর্জন করে।
আসা যাক আর এক রীতির কথায়। দেখতে অসামান্যা সুন্দরী। পরনে দারুণ রঙিন সব পোশাক। দেখে মনে হবে ইউরোপের জনজাতি। পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত হিন্দুকুশ পর্বতশ্রেণী। সেই হিন্দুকুশ দুর্গম এলাকায় বাস করে এক শ্বেতাঙ্গ জাতি, কালাশ। চোখের মণি নীল। শরীরে বইছে আর্য রক্ত। পাকিস্তানের প্রান্তে বাস হলেও সংস্কৃতি, সমাজব্যবস্থা কিছুর সঙ্গেই পাকিস্তানের মানুষদের কোনও সাযুজ্য নেই।
এই জনজাতির ছেলেদের বয়স পনেরো হলেই গ্রীষ্মকালে একদল ভেড়ার পাল নিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দুর্গম পাহাড়ে। পুরু বরফে ঢাকা পাহাড়ের উপত্যকায় তাদের খুঁজে নিতে হয় জীবন ধারণের উৎস। নিয়ে যাওয়া ভেড়ার দুধ, আর সেই ভেড়ার ঝলসানো মাংস হয় খাদ্য।
============
ইন্দোনেশিয়ার পণ অনুষ্ঠানে নব-দম্পতিদের অন্য কারও সাথে রাত কাটাতে হয় ইন্দোনেশিয়ার একটি পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী সেখানকার মানুষ বিশ্বাস করে, নব-দম্পতিদের তাদের স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কারও সাথে রাত কাটাতে হবে। আর তাদের মধ্যে যৌন মিলন হতে হবে। মোট সাতটি অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য একই সঙ্গীর সাথে ঘনিষ্ঠ-চিত্র প্রতীকী এটাও বলা হয় তারা যদি মোট সাতটি অনুষ্ঠান উদযাপনের জন্য একই সঙ্গীর সাথে ঘনিষ্ঠ হয় তবে এটি তাদের জন্যে সৌভাগ্য আর শুভেচ্ছা বয়ে নিয়ে আসবে।
প্রাচীন মিশরে সর্বজনীন হস্তমৈথুন অনুষ্ঠান হত-চিত্র প্রতীকী প্রাচীন মিশরে সর্বজনীন হস্তমৈথুন অনুষ্ঠান হত প্রাচীন মিশরের মানুষ বিশ্বাস করত যে নীল নদের ভাটা এবং প্রবাহ তাদের সৃষ্টির দেবতার বীর্যপাতের কারণে হয়েছে। সে কারনে ফসলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল নিশ্চিত করতে মিশরের পুরুষরা নীল নদে সর্বজনীন হস্তমৈথুন অনুষ্ঠান করত। ফেরাউনের যৌন শক্তির প্রতিনিধিত্বকারী দেবতা মিন-এর মিশরীয় উৎসবের সময় পুরুষরা নিয়মিত জনসমক্ষে হস্তমৈথুন করত। সাম্বিয়ান যোদ্ধাদের বীর্য পান করতে হয় শিশু ও ছেলেদের।
পাপুয়া নিউ গিনির সাম্বিয়ান উপজাতির ছেলেদের সাত বছর থেকে দশ বছর বয়স পর্যন্ত মেয়েদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। এমনকি ছেলেদের তাদের মায়ের কাছ থেকেও বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। তাদের ১০ বছর বয়স পর্যন্ত কোনও মেয়ের আশেপাশে যেতে দেওয়া হয় না। আর দশ বছর বয়স পর্যন্ত এই ছেলে শিশুদেরকে শক্তিশালী যোদ্ধাদের বীর্য পান করানো হয়। বীর্য পান করলে এই শিশু ছেলেরাও বড় যোদ্ধা হবে-
কিছু ক্ষেত্রে ছেলেদের নির্দেশ দেওয়া হয়, তারা যেন দিনে প্রায় ২০ বার গুরুজনের বীর্য পান করে। তাদের বিশ্বাস যোদ্ধাদের বীর্য পান করলে এই শিশু ছেলেরাও বড় যোদ্ধা হবে এবং তাদের সঙ্গীকে সব ধরণের যৌন আনন্দ দিতে সক্ষম হবে।
মাঙ্গাইয়া দ্বীপে অল্প বয়স্ক ছেলেদের সাথে বয়স্ক নারীরা যৌনমিলন করেন দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের একেবারে দক্ষিণ প্রান্তে মাঙ্গাইয়া দ্বীপ। সেই দ্বীপ বিখ্যাত অদ্ভুত এক যৌন ঐতিহ্যের কারণে। সেখানে ১৩ বছর বয়সী ছোট ছেলেদের তাদের বয়সের থেকে বেশি বয়সী নারীদের সাথে যৌনমিলন করতে হয়। কৌশল শেখানোর জন্য এই অদ্ভুদ নিয়ম-চিত্র প্রতীকী ছেলেদের বয়স্ক মহিলাদের সাথে যৌন মিলন করতে বলা হয় যাতে তারা তাদের সঙ্গীদের কিভাবে খুশি করবে সেই কৌশল শেখানোর জন্য এই অদ্ভুদ নিয়ম। প্রাচীন গ্রীসে পুরুষেরা কিশোরদের সঙ্গে সঙ্গম করতেন প্রাচীন গ্রীসে পুরুষদের যৌন আনন্দ লিঙ্গ বা পছন্দের উপর নির্ভর করে না। বিবাহিত ও অবিবাহিত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা অল্পবয়সী ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট হয় আর যৌনমিলন করতে তাদের বেছে নেয়। তখনকার পুরুষরা কিশোরদের সাথে সহবাস করত। ট্রোব্রিয়ান্ডার গোত্রের মেয়েরা ছয় বছর বয়সেই যৌনকর্মে লিপ্ত হয় পাপুয়া নিউ গিনির ট্রোব্রিয়ান্ডার উপজাতির কাছে ছয় বছর বয়সী একটি মেয়ের সাথে যৌন মিলন করা ন্যায্য এবং বৈধ। ভেবে দেখুনতো একটি মেয়ে যার বয়স খেলনা নিয়ে খেলা কিন্তু সে কারো আনন্দের খেলনা হচ্ছে। ছেলেরাও ১০ থেকে ১২ বছর বয়স থেকেই যৌন কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে-চিত্র প্রতীকী অন্যদিকে ছেলেরাও ১০ থেকে ১২ বছর বয়স থেকেই যৌন কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। গ্রামীণ অস্ট্রিয়াতে নারীরা তার সঙ্গীকে বগলের স্বাদযুক্ত আপেল খাওয়ান গ্রামীণ অস্ট্রিয়ায় অল্পবয়সী নারীরা তাদের বগলে একটা আপেলের টুকরো নিয়ে একটি ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন করে। নাচের পরে নারীরা পছন্দের আগ্রহের পুরুষের কাছে যায় এবং তাদের আপেলের একটি টুকরো খেতে দেয়। যদি আপেল পুরুষটি খেয়ে ফেলে-চিত্র প্রতীকী যদি সেটা পুরুষটি খেয়ে ফেলে তার অর্থ দাড়ায় সেই পুরুষটি ঐ নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে রাজি। তার পর এই যুগল উদ্দাম যৌন মিলন শুরু করেন। আর যদি পুরুষটি আপেলের টুকরোটি ফিরিয়ে দেয় তার অর্থ দাড়ায় তাদের মধ্যে যৌন মিলনের কোন সুযোগ নেই। তখন সেই নারী আপেলের টুকরোটি নিয়ে অন্য কোনও পুরুষের দিকে যাবেন। তাদের এই রীতির কারন হচ্ছে পুরুষটি সর্বদা যৌন আনন্দ পেতে পছন্দ করবে সেটা সেই নারীর শরীরের যে অংশ থেকেই হোক না কেন। ভা
==================
আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগেই প্রাচীন মিশরীয়রা জন্মনিয়ন্ত্রণের বেশ কিছু পন্থা আবিষ্কার করেছিল। আসলে প্রাচীন মিশরীয় সমাজে অবাধ যৌন স্বাধীনতা উপভোগ করার জন্যে এই পন্থা আবিষ্কারে তারা একরকম বাধ্যই হয়েছিল। এই পন্থাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল মধু আর সোডিয়াম বাই কার্বনেটের এক বিশেষ মিশ্রণ। যৌন মিলনের আগে এই বিশেষ মিশ্রণ নারী দেহের যৌনাঙ্গের ভেতরে প্রলেপের মতন করে লাগানো হতো।
সেই প্রাচীন কালেই এলিট ক্লাসের মিশরীয় নারীরা যৌনতার বিষয়ে যথেষ্ট আধুনিক ছিলেন। শোনা যায় প্রথম যৌবনে ক্লিওপেট্রা নাকি নিজের একাকিত্ব দূর করতে এক রকম ভাইব্রেটর ব্যবহার করতেন। প্যাপিরাস পাতা দিয়ে বানানো এক ধরণের সরু ঠোঙার ভেতরে অসংখ্য জীবন্ত মৌমাছি ঢুকিয়ে দেওয়া হতো। মৌমাছিদের গুঞ্জনের ফলে যে কম্পনের সৃষ্টি হয় তাকে নিজের শরীরে উপভোগ করতেন ক্লিওপেট্রা।
প্রাচীন মিশরীয় সমাজ যৌনতা প্রসঙ্গে এতটাই আধুনিক ছিল যে অন্যান্য সভ্যতাগুলোর মতন তারা নারীর কুমারিত্ব নিয়ে বিশেষ বিব্রত হতো না। প্রাচীন মিশরীয় শব্দমালায় ‘ভার্জিন’ বলে কোনও শব্দের উল্লেখই পাওয়া যায় না। বিবাহের সময়ও প্রাচীন মিশরের পুরুষরা নারীদের কুমারিত্ব নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাত না। বিবাহের আগে কোনও নারী যদি স্যাক্রেড প্রস্টিটিউশনের সঙ্গে জড়িত থাকতো তবে তাকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হতো।
প্রাচীন মিশরে বিবাহের আগে শারীরিক মিলনকে সহজভাবে দেখা হলেও বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক বেশ ঘৃণ্য কাজের মধ্যেই পড়তো, বিশেষ করে নারীর ক্ষেত্রে। বিবাহের পর অন্য পুরুষের সঙ্গে শারীরিক মিলনের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির উদাহরণও রয়েছে প্রাচীন মিশরীয় ইতিহাসে। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও সেই শাস্তি ছিল বেশ লঘু।
প্রাচীন মিশরে ডিভোর্সের প্রথা প্রচলিত থাকলেও তা চাইলেই সম্ভব হতো না। মূলত দুটি কারণে ডিভোর্সকে মেনে নিত প্রাচীন মিশরীয় সমাজ। সন্তানহীনতা এবং বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া ছিল সেই দুটি কারণ।
পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম ওরাল সেক্স’এর উদাহরণ কিন্তু প্রাচীন মিশরীয় মাইথোলজিতেই খুঁজে পাওয়া যায়। দেবতা সেথ তার ভাই দেবতা ওসাইরিসকে খুন করেছিলেন তাদের হাফ সিস্টার দেবী আইসিস’কে পাবার জন্যে। ওসাইরিসকে খুন করার পর তার শরীরকে অসংখ্য টুকরো করে নীল নদের উপত্যকায় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দেবতা সেথ। দেবী আইসিস অবশ্য নিজের ভালোবাসার মানুষ ওসাইরিসকে পুনরায় বাঁচিয়ে তুলেছিলেন। এই কাজ করতে গিয়ে তিনি নীল নদের বিস্তীর্ণ উপত্যকা জুড়ে ওসাইরিসের শরীরের অংশ খুঁজে একত্রিত করেছিলেন। তবে সব কিছু খুঁজে পেলেও ওসাইরিসের যৌনাঙ্গ খুঁজে পাননি তিনি। ফলে ওসাইরিসের শরীরে প্রাণের সঞ্চার সম্ভব হচ্ছিল না। তখন দেবী আইসিস নীল নদের তীরের পবিত্র মাটি দিয়ে একটি পুরুষাঙ্গ বানান। তারপর মাটির তৈরি সেই পুরুষাঙ্গকে নিজের দুই ঠোঁটের মাঝে রেখে তাতে উষ্ণতা প্রদান করেন এবং তা ওসাইরিসের শরীরে সঠিক জায়গায় স্থাপন করেন। সঙ্গে সঙ্গে দেবতা ওসাইরিস যৌন উত্তেজনা অনুভব করেন এবং তার শরীরে প্রাণের সঞ্চার হয়।
প্রাচীন মিশরে যৌনাঙ্গের মতন দেখতে অ্যামুলেট পরিধান করার রীতি ছিল। সাধারণত দেবতার মন্দিরে স্যাক্রেড প্রস্টিটিউশনের সঙ্গে যুক্ত নারীরা দেবতার যৌনাঙ্গের আকৃতির অ্যামুলেট পরতেন তাদের দুই বাহুতে।
—-------------------
ইরাকের ভাসমান বাড়ি বা মেসোপটেমিয়ান ভেনিস। মার্শ আরবদের অনুপ্রেরণামূলক গল্প এবং তাদের আশ্চর্যজনক টেকসই ভাসমান বাড়ি, ভাসমান বাড়িগুলির এই শহর, ওরফে ইডেন গার্ডেন, মেসোপটেমিয়ান ভেনিস বা মাদান, দক্ষিণ ইরাকের একটি জলাভূমি এলাকা ছিল....
এই ভাসমান বাড়িগুলোর নাম ছিল “মুদিফ” এবং এগুলোর নির্মাণ সাধারণত তিন দিনেরও কম সময়ে হয়ে যেত। এটিও গুরুত্বপূর্ণ যে তারা কোন পেরেক, কাচ বা কাঠ ব্যবহার না করেই তৈরি করা হয়েছিল। এমনকি যে দ্বীপে বাড়ির স্ট্যান্ড ছিল সেগুলিও মাটি ও রাশ দিয়ে তৈরি। মাদান বা মার্শ আরবরা ইরাকের টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদীর সংযোগস্থলে জলাভূমিতে বসবাস করে। তারা একটি আধা-যাযাবর উপজাতীয় মানুষ যাদের নিজস্ব স্বতন্ত্র সংস্কৃতি রয়েছে যাদের জীবনধারা গত কয়েক হাজার বছরে খুব কম পরিবর্তিত হয়েছে। তাদের জীবনের পুরো পথটি জলাভূমির চারপাশে ঘোরে - সবচেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে, তারা ঐতিহ্যগতভাবে ভাসমান ঘর তৈরি করে যা সম্পূর্ণরূপে খোলা জল থেকে সংগ্রহ করা নল দিয়ে তৈরি এবং কাসাব, এক ধরণের বিশাল ঘাস যা দেখতে বাঁশের মতো।
===========
বাঙালির বিলাত যাত্রা
আধুনিককালে, বহির্বিশ্বে বাঙালির যাত্রা শুরু হয়েছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পাল তোলা জাহাজে করে লস্কর নামক নাবিকদের কর্মসূত্রে, তাও বঙ্গদেশে কোম্পানিটির দেওয়ানি লাভের শতাধিক বছর আগে থেকে। বাঙালি হিন্দুর কালাপানি (ভারত সাগর) পাড়ি দেয়াতে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা থাকায় লস্করদের প্রায় সকলেই ছিলেন বাঙালি মুসলমান। আবার, ঊনিশ শতকের দ্বিতীয় পর্ব থেকে বাঙালি শিক্ষিত ও ধনী (হিন্দু) ভদ্রলোকেরাও ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কেউ কেউ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে তবে বেশির ভাগই বিদ্যার সন্ধানে—বিলাতে আসতে শুরু করেন। কিন্তু দেশে ফেরার পরে সমাজপতিদের বিচারে তাঁদের কঠোর দণ্ড ভোগ করতে হতো। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরও রেহাই পাননি। ঊনিশ শতকের শেষ দিকে এসে ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা অনেকটা শিথিল হলে পরে উচ্চশিক্ষিতদের মাধ্যমেই বিলাতে বাঙালি বসতি স্থাপনের সূচনা হয়। কারণ, লস্করেরা বিলাতে আগে এলেও, এদেশে বসবাস করা নয় বরং স্বদেশে ফেরাটাই ছিল তাঁদের লক্ষ্য। তাদের বসতিস্থাপন বিচ্ছিন্নভাবে শুরু হয়ে, বিশ শতকের ৬ষ্ঠ দশক থেকে একটা ধারায় পরিণত হতে থাকে এবং ব্যাপকতা লাভ করে ১৯৭৫ সালের পরে। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এই বাঙালির উত্তরসূরিরা আজ ব্রিটিশ-বাঙালি হয়েছে। তারা বিলাতে মূলধারার শিক্ষা, সাহিত্য, রাজনীতি ও প্রশাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমাজ উন্নয়ন ইত্যাদির পাশাপাশি বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা ও পৃষ্ঠপোষকতা, সংবাদপত্র প্রকাশনা ও সাংবাদিকতা মাধ্যমে নিজেদের নিয়ে গেছেন এক নতুন উচ্চতায়। এই ব্রিটিশ-বাঙালির সাফল্যগাথা বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে কমবেশি সবার জানা থাকলেও, এঁদের পূর্বসূরিদের প্রায় সাড়ে চারশ বছরের গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় এখনো অনেকটা অনালোচিত ও বিস্মৃতপ্রায়। ফারুক আহমদ বিগত প্রায় তিন দশক থেকে বিলাতের বাঙালিদের ওপর গবেষণা করে আসছেন। এই সমাজ-সচেতন লেখক-গবেষক এই গ্রন্থটি রচনা করেছেন বিলাতের বাঙালির অভিবাসনের অনালোচিত ও বিস্মৃত প্রায় চারশ বছরের ইতিহাস নিয়ে। তিনি আঁকর সূত্রে গিয়েছেন, সেখান থেকে এ-যাবৎ-অজানা রোমাঞ্চকর সমস্ত কাহিনি বের করে এ গ্রন্থে মলাটবন্দি করেছেন। বইটি শুধু ইতিহাসের বিদগ্ধ পাঠককেই নয়, সাধারণ পাঠককে যেমন রোমাঞ্চিত করবে, তেমনি বিলাতে বেড়ে ওঠা প্রজন্মকেও দেবে শিকড়ের সন্ধান।
==========
আপনি (ডাক্তার) বিবর্তন বোঝেন না
কিন্তু এন্টিবায়োটিকের রেজিস্টেন্স বোঝেন।
আপনি কৃষি বিজ্ঞানী,বিবর্তন বোঝেন না ,
কিন্তু হাইব্রীড বোঝেন।
আপনি উকিল কিংবা বিচারক, বিবর্তন মানেন না, কিন্তু ডিএনএ টেস্ট বুঝেন।
আপনি বিজ্ঞানের ছাত্র বা শিক্ষক বিবর্তন বোঝেন না , কিন্তু ক্রোমোজোমের ডেফিনেশন মেনে কেন সন্তান ছেলে ,মেয়ে কিংবা হিজড়া হয় জানেন।
অর্থাৎ আপনি যে কোন পেশার একজন স্পেশালিস্ট হতে পারেন, আপনি সে পেশার মূল আউটপুটা বুঝেন কিন্তু এর ভিতরের এলগরিদমটা বুঝেন না । আপনি মূলত ব্যবহারকারী, উদ্ভাবক নন, নিজেকে মিথ্যা পদবী লাগিয়ে ঘুরেন।
======
==============
বেশিরভাগ মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট হয় দুইজন বা তিনজন নিয়ে চালানোর সময়। তারা যখন পরস্পরের মধ্যে কথাবার্তা বলে, তখন চালকের হঠাৎ মনোযোগ বিচ্যুতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। আর একা ড্রাইভ করলে তিনটি ওভারের কারণে দুর্ঘটনা হয়। ১)ওভার স্পিড ২)ওভারটেক এবং ৩) ওভার কনফিডেন্স। সুতরাং একাধিক জন নিয়ে চালানোর সময় চালকের মুখ-কান গান বন্ধ রাখতে হবে আর একা চালানোর সময় তিনটি ওভার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
মোটরসাইকেল চালানোর নিয়মঃ
১। মোটরসাইকেল চালানো শিখেই রাস্তায় নেমে যাবেন না । নুনতম ১৫ দিন থেকে ১ মাস এলাকায় ২০-৩৫ কিমি বেগে চালাবেন। মাঝে মাঝে খুব অল্প সময়ের জন্য বড় রাস্তায় ওঠবেন, অন্যান্য যানবাহনগুলোর চালানোর সম্পর্কে ধারনা পেতে আপনাকে সময় লাগবে। এরপর ৩-৬ মাস এই ব্যাস্ত রাস্তায় ৩০-৪০ কিমি গতিতে মোটর সাইকেল চালান। রাস্তা ফাঁকা থাকলেও গতি বাড়াবেন না। আস্তে আস্তে মোটর সাইকেল সরবোচ্চ নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা বাড়বে।
২। রাস্তার মাঝে থাকা বাঁকগুলো দেখে গতি কমাবেন। রাস্তার মাঝে ছোট খাট গর্ত থাকে, ভাঙ্গা অংশ থাকে কিংবা রাস্তার পাশে বালি থাকে, এগুলো কিন্তু ভালো বিপত্তি ঘটিয়ে দিতে পারে।
৩। ওভারটেক করার সময় সতর্ক থাকুন। বাইকের বাম পাশের স্ট্যাডিংয়ে ক্লাচ লিভারের উপরে একটা ছোট সুইচ থাকে, যা দিয়ে অতিদ্রুত লাইট হাই-লো করা হয়। ওভারটেক করার দরকার হলে সামনের গাড়িকে এটির মাধ্যমে সংকেত দিন। তার সবুজ সংকেত পেলে তবে পর্যাপ্ত গতিতে ওভারটেক করুন। চলন্ত অবস্থায় বামে সিগনাল লাইট দেয়া মানে এইমুহুর্তে ওভারটেক করা নিরাপদ। আপনি নিশ্চিন্তে ওভারটেক করতে পারেন। সামনের গাড়ী ডানপাশে সিগনাল লাইট জ্বালিয়ে দেয়ার মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয় যে, এইমুহুর্তে ওভারটেক করা বিপদজনক।সুতরাং ডানে লাইট জ্বলা অবস্থায় ওভারটেক করবেন নাহ।
৪। বৃষ্টিতে আপনার বাইকের টায়ার কিংবা গ্রিপিং অথবা রাস্তার সাথে চাকার সামঞ্জস্যতা ধরে রাখাটাই অনেক কঠিন ব্যাপার। তাছাড়া ভেজা রাস্তায় ২০থেকে ২৫ কিমি গতিতে মোটর সাইকেল চালাবেন।
==============
ডায়াবিটিস সারানোর নতুন এক উপায় আবিষ্কার
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে এই নতুন গবেষণার খবর ছাপা হয়েছে। সাংহাই চ্যাংঝেং হাসপাতালের চিকিৎসক ইন হাও এবং তাঁর টিম ডায়াবিটিস সারানোর নতুন এক উপায় আবিষ্কার করেছেন। মুখ্য গবেষক ইন ও তাঁর সহকারী কিফার দাবি করেছেন, নতুন উপায়ে কোষ প্রতিস্থাপন পদ্ধতিতে ডায়াবিটিস সম্পূর্ণ ভাবে সারিয়ে তোলা সম্ভব।
কিফার বলছেন, ২০২১ সালে এক রোগী ডায়াবিটিসের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন। তাঁর কিডনির অবস্থাও ভাল ছিল না। টাইপ ২ ডায়াবিটিসে আক্রান্ত ছিলেন সেই ব্যক্তি। ইনসুলিনও কাজ করা বন্ধ করে দিচ্ছিল। সেই সময় ‘আইলেট কোষ’ প্রতিস্থাপন পদ্ধতির প্রয়োগ করেন চিকিৎসকরা।
আইলেট হল অনেকগুলো কোষের সমষ্টি। অগ্ন্যাশয়ের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিতে থাকে এই কোষপুঞ্জ। তিন রকম আইলেট কোষ আছে আমাদের শরীরে—আলফা, বিটা এবং ডেল্টা। আইলেট কোষপুঞ্জে আলফা কোষ থাকে ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং বিটা থাকে ৬০ থেকে ৭৫ শতাংশ। এই বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন নামে একটি হরমোন বের হয়। বিশেষ করে ফ্যাট এবং কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেলে সেটি গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয় লিভারের মাধ্যমে। সেই গ্লুকোজকে দেহকোষের মধ্যে প্রবেশ করাতে সাহায্য করে ইনসুলিন। আর আলফা কোষে থাকে গ্লুকাগন। এই গ্লুকাগন লিভারের মধ্যে গ্লুকোজকে ভেঙে তাকে জারিত করে। তখন শক্তি তৈরি হয়। যদি আইলেট কোষপুঞ্জ নষ্ট হয়ে যায়, তা হলে এই গোটা প্রক্রিয়াটা ব্যাহত হয়। তখন গ্লুকোজ জারিত হতে না পেরে কোষে জমতে শুরু করে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গিয়ে ডায়াবিটিস হয়। চিকিৎসকেরা তখন বাইরে থেকে ইনসুলিন দিয়ে অথবা ওষুধ খাইয়ে ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন।
চিনা গবেষকরা, এই প্রক্রিয়াটাই শরীরের ভিতরে নতুন করে তৈরি করার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। তাঁরা বিশেষ উপায়ে পুরনো কোষ সরিয়ে নতুন করে অগ্ন্যাশয়ে আইলেট কোষপুঞ্জ প্রতিস্থাপন করছেন যাতে গোটা চক্রটা আবার শুরু হতে পারে। শরীর নিজে থেকেই ইনসুলিন তৈরি করতে পারে। বাইরে থেকে যাতে আর ইনসুলিন দেওয়ার দরকার না পড়ে।
এই গবেষণা এত দিন প্রাথমিক পর্যায়ে ছিল। প্রথমবার একজন রোগীর উপর প্রয়োগ করে সাফল্য পাওয়া গেছে বলে দাবি। চিনা গবেষকরা জানাচ্ছেন, আগামী দিনে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে ডায়াবিটিস নির্মূল করাই তাঁদের আসল লক্ষ্য। বিস্তারিত-
https://www.anandabazar.com/.../scientists.../cid/1520078
দুই বছর টাইপ-টু ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকার নিনজা টেকনিক-
অন্যদিকে বিবিসির এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ তিন মাস পর্যন্ত প্রতিদিন ৮৫০ ক্যালরিযুক্ত খাবার খেলে এবং তাতে ওজন কমাতে পারলে অন্তত দুই বছর টাইপ-টু ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। ইংল্যান্ডে বেশ কিছু রোগীর ওপর পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।
আগে ধারণা করা হতো টাইপ-টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে সেই রোগে সারা জীবন ভুগতে হবে এবং দিনে দিনে তা আরও খারাপের দিকে যাবে। নতুন গবেষণা সেই ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে দৃষ্টিশক্তি সমস্যা, হৃদরোগ এবং অঙ্গহানির মতো শারীরিক সমস্যায় ভুগতে হয়।
৫৮ বছর বয়স্ক জো ম্যাকসোরলি থাকেন স্কটল্যান্ডের প্লাসগো শহরের কাছে। ছয় বছর আগে তার টাইপ-টু ডায়াবেটিস রোগ ধরা পড়ে। ঐ সময়ে চিকিৎসকরা দুই ধরনের ওষুধ দিয়েও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। কিন্তু গবেষণা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খেয়ে নিয়মিত ব্যায়াম নিজের ওজন কমিয়ে তার টাইপ-টু ডায়াবেটিস নিরাময় হয়ে গেছে, তাও কোনো ওষুধ ছাড়াই। স্কটল্যান্ডে মি. ম্যাকসোরলিসহ ১৪৯ জন মানুষ ১২ থেকে ৩০ সপ্তাহ কম ক্যালরির খাবার খাওয়ার কর্মসূচিতে অংশ নেন। ওজন কমার পর কয়েক সপ্তাহ ধরে তাদের ধীরে ধীরে আবার সাধারণ খাবার খেতে দেয়া হয়। এক বছর পর দেখা গেল এদের মধ্যে ৬৯ জন রোগমুক্ত হন। মাত্র ৪ শতাংশ রোগীকে শর্করা কমাতে ওষুধের সাহায্য নিতে হয়। আর দুবছর পর এদের মধ্যে ৫৩ জন রোগমুক্ত থেকে যান এবং তাদের কোনো রকম ওষুধ খেতে হয় না। বিস্তারিত-
https://www.bbc.com/bengali/news-47476028
==================================================
ভেঙ্গে যাওয়া নৌকায় উঠবেননা এটা নিজে তো ডুববেই, আপনাকেও ডুবাবে,
=============
আমাদের প্রতিটি কোষের চারপাশে থাকে ‘লাইসোজম’ নামে একটি ফ্রিজ। কোষেরা নিজেদের চাহিদার অতিরিক্ত খাদ্য এই লাইসোজমে জমা করে রাখে । তারপর একসময় শরীরে খাদ্যে বা পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিলে এই লাইসোজম-এর খাদ্য খায়। আপনি যদি শুধুমাত্র পানি ছাড়া সকল খাবার গ্রহণ ১৩ থেকে ১৮ ঘন্টা বন্ধ রাখেন। তাহলে, আপনার দেহের কোষগুলো নিজেদের লাইসোজমে থাকা খাদ্যকে খাওয়া শুরু করে! আর যদি উপস না করে খেতেই থাকেন, তাহলে শরীরের কিছু জিন মিউটেশন হয়ে নানা ধরনের লাইফস্টাইল রোগ তৈরি করে।
১। লবণ, চিনি মেশানো ও দুগ্ধ জাতীয় খাবার , রুটি, ভাত,, তেল, ঘি, চর্বি ইত্যাদি যতটা সম্ভব কম খাবেন। একটি ছোট প্লেটে ভাতের চেয়ে সবজি বা তরিতরকারি বেশি নিয়ে একটি ছোট চামচের মাধ্যমে খাবেন অতি ধীরে ধীরে কচ্ছপের গতিতে। হাত থেকে খাবারের দূরত্ব বজায় রাখবেন। হাত ভালোভাবে ওয়াশ না করে কোন খাবারই হাত দিয়ে ধরবেন না।
২। মুখ বন্ধ করে খাবার ছিটাবেন, খাবারের সময় কারো সাথে বা মোবাইলে কথা বললে মুখের লালা তিন ফুট পর্যন্ত চারদিকে ছড়াতে থাকে যা খালি চোখে দেখা যায় না এতে একজনের রোগ জীবাণু অন্যজনের পেটে যায়।
৩। দিনের তিন বেলা খাবার কে ৬ থেকে ১০ ভাগে ভাগ করে খাবেন, দিনে দু ঘন্টার বেশি না খেয়ে থাকবেন না, অন্তত পানি হলেও খেতে হবে। খাবারের সময় এবং গতি’ এই দুটি বিষয় খুবই ইমপোর্টেন্ট অর্থাৎ সূর্যের আলো থাকা অবস্থায়, যখন যা পারেন অল্প অল্প খাবেন এবং সেটা খুব ধীর গতিতে চিবাবেন। সন্ধ্যার পর কিছুই খাবেন না।
৪। লাইভ ফুড অর্থাৎ তাজা ফলমূল শাক সবজি মাছ তৈরি তরকারি বেশি খাবেন আর , ডেড ফুড ও প্রসেস ফুড কম খাবেন। খাবারের সময় বা খাবারের পর পর পানি বা ঔষধ খাবেন না অন্তত খাবারের আধা ঘন্টা পরে খাবেন। ক্ষিধে না লাগলে কেউ জোর করে খাওয়ালেও খাবেন না, শরীরে খাবা্রের দরকার হলে ক্ষিদের মাধ্যমে শরীর সিগন্যাল দিবে তখন খাবেন।
৫। ঘুমের প্রয়োজন হলে শরীর সিগনাল দিবে তখন ডান পাশ ফিরে ঘুমাবেন, অসময়ে নয়। কখনো রাত করে ঘুমাবেন না। সব সময় বসে কাজ করবেন না, মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করবেন।
৬। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যে কোনো সময় আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা হাটঁতে হবে অথবা ব্যায়াম বা শারিরিক পরিশ্রম করতে হবে। হাটা পথের দূরত্বে গাড়ি ব্যবহার করবেন না। ১ থেকে ৫-৬ তলা পর্যন্ত সিঁড়ি দিয়ে চলুন।
=============
‘বাজার থেকে বেশি জনপ্রিয় আটটি ব্র্যান্ডের মিনিকেট চাউলের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এ চাউলগুলোর সবই মোটা চাউলকে মেশিনে ব্লেন্ডিং করে কেটে-ছেঁটে পলিশ করা হয়েছে। চিকন চাউলের চাহিদা থাকার কারণে মাঝারি চিকন ও চিকন হাইব্রিড ধান উৎপাদনই দেশে প্রাধান্য পাচ্ছে।কিন্তু কোন ধরনের চাউল মানব দেহের জন্য সবচেয়ে ভালো চলুন জেনে নিই-
ব্রাউন রাইস বা বাদামি চালের ভাত সাদা চাউলের ভাতের চেয়ে বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। ব্রাউন রাইস সহজেই ভেঙে যায়। ফলে এটি সাবধানে রান্না করতে হয়। গবেষণা অনুসারে, প্রতিদিন এক কাপ বাদামী চাউলের ভাত খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে।
লাল চাউলের রং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টোসায়ানিন নামক যৌগ থেকে আসে। যা লাল এবং বেগুনি রঙের শাকগুলোতে পাওয়া যায়। লাল চাউলের ভাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং আয়রনও থাকে। ফলে এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং উচ্চ রক্তচাপ হ্রাস করতেও সহায়তা করে। লাল চাউলের ভাত হজম হতে বেশি সময় লাগে বলে ক্ষুধাও নিয়ন্ত্রণ করে।
কালো চাউল ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ফাইটোনিট্রিয়েন্টস, ফাইটোকেমিক্যালস, ভিটামিন-ই, প্রোটিন, আয়রন সমৃদ্ধ। কালো চালের ভাতে প্রায় ১৬০ রকমের ক্যালরি থাকে। যা অন্যান্য চালের তূলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।
সাদা চাউলের ভাতে পুষ্টি কম। তবে এটিতে স্টার্চের ঘনত্বের কারণে যে কোনো চাউলের চেয়ে দেহে বেশি শক্তি দেয়।
চাউলের পুষ্টি ধরে রাখার জন্য ভাত রান্নার সঠিক পদ্ধতিঃ চাউল ভালো করে ধুয়ে কিছুক্ষণ পাত্রে পানি দিয়ে চাল ভিজিয়ে রাখার পর ওই পানি ভালোভাবে ছাড়িয়ে নিতে হবে। পাত্রে চালের দ্বিগুণ পরিমাণ পানি ও হাঁড়িতে ঢাকনা দিয়ে অল্প তাপে রান্না করতে হবে ।
ভাতের চেয়ে পান্তা ভাত খাওয়া শরীরের জন্য অনেক বেশি উপকারী। এগারো-বারো ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখালে ভাতের ফারমেন্টেশন বা গাজন প্রক্রিয়ের কারণে ভাতের মধ্যে থাকা কার্বোহাইড্রেট ভেঙে যায়।" ফলে নানা ধরনের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিকর খনিজ পদার্থ তৈরি হয়। যেমন- আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, জিংক, ফসফরাস, ভিটামিন বি ইত্যাদি। গবেষকরা দেখেছেন-১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে আয়রনের পরিমাণ থাকে ৩.৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে তৈরি পান্তা ভাতে এর পরিমাণ বেড়ে গিয়ে হয় ৭৩.৯ মিলিগ্রাম। অর্থাৎ ২১ গুণ বৃদ্ধি পায়।
তবে গরম ভাতে পানি মেশাবেন না। যে পানিটা মেশাবেন সেটাও যেন গরম না হয়। নরম পান্তা খেতে গিয়ে বেশিক্ষণ পানিতে রেখে পচিয়ে ফেলবেন না। শক্ত ভাত পানিতে মেশালে আরও শক্ত হয়ে যায়। তাই শক্ত ভাতে পানি মেশানো ভাল।
চিঁড়ে শক্তি ও পুষ্টি,দুই-ই জোগায় শরীরে। চিড়ায় চর্বি ও চিনি নেই। এতে ক্যালরিও কম, তাই যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন তারা চিড়া খেতে পারেন। তবে নিয়মিত চিঁড়ে খেলে শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস পায়। ফলে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
===============================
—---
৪।
আদর্শিক রাজনৈতিক ভিত্তি তৈরি করতে হবে
৫।
—--
আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং আসাম্প্রদায়ীক বাংলাদেশ নির্মাণ করা সম্ভব?
কাউকে দিয়েই সম্ভব না। সব দলই আদর্শ বিক্রি করা বহুরুপী আর ক্ষমতালোভী আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতার জন্য সবকিছু করছে। নিজের আদর্শকে কবেই কবর দিয়েছে।
রাজনীতি যে শাসকের বিরুদ্ধে নিত্যনতুন বয়ান তৈরি করা; শাসকের প্রতিটি ভুল ও গণবিরোধী কাজকে চ্যালেঞ্জ করা; সমাজের প্রতিটি অংশে বিশেষভাবে ছাত্র-যুবক-শ্রমিক-কৃষক ও পেশাজীবীদের যুক্ত করা; বিকল্প সমাধান দেখানো; জনগণকে স্বপ্ন দেখানো; আশা তৈরি করা—এসব আজকের বিরোধী রাজনীতিতে অনুপস্থিত।
https://youtu.be/zpmBQeBaZ0o?si=aCkFjGtycvSRjzh6
—-----------
===============
===========
ভবিষ্যতে হাইব্রিড মানুষ?
প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ হাইব্রিড হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন গবেষকেরা।
ভবিষ্যতে মানুষের মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন গুগলের প্রকৌশল পরিচালক রে কুর্জওয়েল। তাঁর মতে, আর ১৫ বছরের মধ্যেই মানুষ তাঁর মস্তিষ্ক সরাসরি ক্লাউডের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারবে। কুর্জওয়েলের মতে, মানুষ তাঁদের সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করতে ক্লাউড প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত হতে শুরু করবে।
মানুষ আর মানুষ থাকবে না, হয়ে যাবে যন্ত্রমানব। মানবজাতির মধ্যে আগামী ২০০ বছরের মধ্যেই বিশাল পরিবর্তন আসবে। ইসরায়েলের জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক যুবাল নোয়া হারারি বলেন, মানুষ নিজেকে আপগ্রেড করে আগামী ২০০ বছরের মধ্যেই সাইবর্গ বা যন্ত্রমানবে রূপান্তর করতে সক্ষম হবে। দীর্ঘায়ু লাভের জন্য মানুষ শরীরে যন্ত্র বসিয়ে নিজেকে সাইবর্গ করে তুলবে।
অধ্যাপক হারিরি মনে করেন, বিশ্বের ধনী ব্যক্তিরা নতুন ধরনের দীর্ঘায়ুসম্পন্ন মানবজাতিতে পরিণত হবে এবং জীবন-মৃত্যুর সম্পূর্ণ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যাবে।
৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯
এলপিজি সিলিন্ডারে কতটা গ্যাস অবশিষ্ট আছে তা বোঝার সহজ ও কার্যকর উপায় জানালেন বিশেষজ্ঞরা। দরকার শুধু এক টুকরো ভেজা ন্যাকড়ার।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, তা বুঝতে একটি ভেজা ন্যাকড়ার পানি ভালো করে ঝরিয়ে নিয়ে সেই ন্যাকড়াটি পেঁচিয়ে দিতে হবে সিলিন্ডারের গায়ে। এরপর মিনিটখানেক অপেক্ষা করলেই দেখা যাবে ন্যাকড়ার কিছুটা অংশ ভেজা থাকলেও কিছুটা অংশ শুকিয়ে যাবে। যে অংশটুকু ভেজা থাকবে, বুঝে নিতে হবে সেইটুকুই গ্যাস অবশিষ্ট রয়েছে সিলিন্ডারে।
=========
=============
পৃথিবীর কিছু বিপজ্জনক এবং কুখ্যাত বিশ্বাস মতে চলা কিছু গোষ্ঠী এবং সেই সব গোষ্ঠীর নেতাদের কথা চুলন আজ জানা যাক।
নেক্সিয়াম
১৯৯৮ সালে কিথ রেনিয়ের নেক্সিয়াম নামে এক বিশেষ গোষ্ঠীর প্রবর্তন করেন। নেক্সিয়াম বিশেষ ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে অন্যতম চর্চিত গোষ্ঠী হয়ে ওঠে। ২০১৮ সালে প্রকাশ্যে আসে যে নেক্সিয়াম আসলে যৌন ধর্মাচরণ করত। নেক্সিয়ামের মোট ১৮ হাজার সদস্য ছিল। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন অভিনেত্রী অ্যালিসন ম্যাক।
এই গোষ্ঠীর গুরু কিথ ধর্মাচরণ করার জন্য একটি বিশেষ জায়গা তৈরি করছিলেন। এই বিশেষ জায়গায় নারী অনুসারীদের যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হতো। এই জায়গায় কিথ নিজের নারী ভক্তদের সঙ্গে অবাধ যৌনমিলন করতেন এবং তারা যাতে কখনো কারো কাছে মুখ না খোলেন, তার জন্য তাদের নগ্ন ছবি তুলে রাখতেন।
তবে একটা সময় পর ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে কিথের বহু ভক্ত প্রকাশ্যে কিথের সম্পর্কে একাধিক অভিযোগ আনেন। ২০২০ সালে বহু মহিলা কিথের বিরুদ্ধে মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। মহিলা পাচার এবং শিশুদের নিয়ে পর্নোগ্রাফি তৈরিসহ একাধিক অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কিথকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বন্ধ হয় নেক্সিয়াম।
সিনানন
চার্লস ডেডেরিচ নামে এক ব্যক্তি ১৯৫৮ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মনিকাতে সিনানন নামে একটি বিশেষ গোষ্ঠী শুরু করেন। বিশেষ বিশ্বাস মেনে চলা গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচিত হলেও সিনানন প্রথমে মাদক পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসাবে শুরু হয়েছিল।
সিনানন গোষ্ঠীর সভায় একজন সদস্যকে মন খুলে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হতো। তবে যখনই একজন সদস্য কথা বলতে শুরু করতেন, ঠিক তখনই সভায় উপস্থিত বাকিরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা শুরু করতেন। এই গোষ্ঠীর সদস্যরা বহু অর্থ অনুদান দিয়ে এই বিশেষ গোষ্ঠীতে নিজেদের জায়গা পাকা করতেন। পাশাপাশি এই গোষ্ঠীতে যোগ দিলে কায়িক শ্রম করা বাধ্যতামূলক ছিল।
সিনানন-প্রধান চার্লস অনুগামীদের বুঝিয়েছিলেন শিশুদের জন্ম দেওয়া উচিত কাজ নয়। আর সেই কারণেই তিনি তার পুরুষ ভক্তদের বন্ধ্যত্বকরণের জন্য চাপ দিতেন। চার্লস বহু মহিলা ভক্তকে গর্ভপাতেও বাধ্য করেছিলেন।
১৯৭৮ সালের ২ ডিসেম্বর পুলিশ সিনাননের প্রধান ডেরায় অভিযান চালিয়ে চার্লসকে তার লেক হাভাসুর বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখে। তাকে পাঁচ বছরের জন্য নজরবন্দি করে রাখার সাজা শোনানো হয় এবং প্রায় তিন লাখ ৭৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ-ও নির্দেশ দেওয়া হয়, চার্লস আর সিনানন চালাতে পারবেন না। ১৯৯৭ সালে চার্লস মারা যান।
চিলড্রেন অব গড
১৯৬৮ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার হান্টিংটন বিচে ধর্মদ্রোহী প্রচারক ডেভিড বার্জ ‘টিনস ফর ক্রাইস্ট’ নামে বিশেষ বিশ্বাস মতে চলা গোষ্ঠী শুরু করেন। ডেভিড যিশু খ্রিস্টের আদর্শের সঙ্গে ১৯৬০-এর দশকের অবাধ প্রেমের তত্ত্বকে একত্রিত করে এমন এক মতাদর্শের প্রবর্তন করেন যা তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করেছিল।
বিশ্বজুড়ে এই গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ হাজার। ১৯৭০-এর দশকে ধর্মাচরণের আড়ালে অবাধে যৌনচর্চার জন্য এই গোষ্ঠী কুখ্যাত হয়ে ওঠে। এমনকি, এই গোষ্ঠীর নারী অনুগামীরা ‘ধর্মীয় পতিতা’-র তকমা পান।
গোষ্ঠীপ্রধান বার্জ শিশুদেরও যৌনমিলনের জন্য উৎসাহিত করতেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগও ওঠে, গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ায় প্ররোচনা দিতে তিনি মহিলা নারীদের অন্য পুরুষদের সঙ্গে সঙ্গম করতে চাপ দিতেন।
বলিউডের অস্কারজয়ী অভিনেতা জোয়াকিন ফিনিক্স এবং রোজ ম্যাকগোয়ানের পরিবারও এই গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তবে পরে তারা এই দল ছেড়ে বেরিয়ে আসেন।
এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তদন্ত চলাকালীন ১৯৯৪ সালে বার্জ মারা যান। ‘টিনস ফর ক্রাইস্ট’-এর নাম বদলে রাখা হয় ‘চিলড্রেন অব গড কাল্ট ফ্যামিলি ইন্টারন্যাশনাল’। এখনও এই গোষ্ঠীর অস্তিত্ব রয়েছে। তবে বর্তমানে সদস্যেরা আর যৌনাচার করেন না বলেও এই গোষ্ঠীর দাবি।
==========
প্রাচীন চীনে পুরুষদের খোজাকরণের নির্মম ইতিহাস!
ক্ষমতাবান রাজা বাদশাদের অনেকেই উপভোগের জন্য নিজেদের হারেমে প্রচুর নারী রাখতো। প্রাচীন চীনে হারেমে প্রায় ২০ হাজার নারী ছিল। এই নারীগুলোকে জোর করে ধরে আনা হতো। তাই এরা যেন পালিয়ে না যায় তার জন্য পাহারাদার রাখা হতো। নারী দিয়ে পাহারার কাজ চলে না, পাহারাদার হতে হবে কোনো পুরুষ। কিন্তু পাহারাদার হিসেবে যে যে পুরুষ থাকবে, তারা আবার রক্ষিতাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলবে নাতো? এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য রাজারা এ পাহারাদারদের যৌন ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া। যাকে বলে খোজাকরণ।
খোজাকরণ মূলত তিন ধরনের হ্তো। ১. শুধু পুরুষাঙ্গ কর্তন করে ফেলা; ২. শুধু শুক্রথলী কর্তন করা ও ৩. পুরুষাঙ্গ ও শুক্রথলী উভয়ই কর্তন করা। প্রাচীন চীনে তৃতীয় প্রকার খোজাকরণ প্রচলিত ছিল। এই প্রক্রিয়ায় খুব ধারালো ছুরির সাহায্যে পুরুষাঙ্গ ও অণ্ডকোষ উভয়ই কেটে ফেলা হতো। চীনে খ্রিষ্টপূর্ব ১৬০০ অব্দ থেকে শুরু করে পরবর্তী কয়েক হাজার বছর পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া প্রচলিত ছিল। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় ঝুঁকি বেশি। এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর মানুষের মৃত্যু হতো। মৃত্যুহার কমানোর জন্য ধীরে ধীরে পুরুষাঙ্গ রেখে শুধুমাত্র শুক্রথলী কেটে খোজা বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
প্রথমে ব্যক্তিটিকে ঐ কক্ষে নিয়ে একটি কাঠের পাটাতনে শুইয়ে দেয়া হতো। তারপর হালকা গরম পানি দিয়ে যৌনাঙ্গ ও যৌনাঙ্গের আশেপাশের স্থান ধুয়ে নেয়া হতো। এরপর অবশ করার উপাদানের প্রলেপ দিয়ে যৌনাঙ্গকে অবশ করে ফেলা হতো। তখনকার সময়ে অবশকারী হিসেবে প্রচণ্ড ঝালযুক্ত মরিচ বাটা ব্যবহার করা হতো। অবশ করার পর সহযোগীরা মিলে দেহটিকে কাঠের পাটাতনের সাথে শক্ত করে বেঁধে ফেলতো। কর্তক ব্যক্তি সুবিধা করে দুই পায়ের মাঝখানে দাঁড়িয়ে শুক্রথলী ও পুরুষাঙ্গ হাতের মুষ্টির ভেতর ধরতো। চোখের পলকেই ধারালো ছুরি দিয়ে একসাথে কেটে ফেলা হতো মুষ্টির ভেতরে থাকা অণ্ডকোষ ও পুরুষাঙ্গ।
এই অবস্থায় প্রচুর রক্তপাত হতো। কর্তন প্রক্রিয়া শেষ করার পর পরই একটি মূত্রনালিতে একটি নল প্রবেশ করিয়ে দেয়া হতো। প্রস্রাব বের হবার রাস্তা যেন বন্ধ হয়ে না যায় সেজন্য ।
এরপর রোগীকে ঐ কক্ষে তিন দিন রেখে দেয়া হতো। ঐ সময়ে রোগীকে কোনো প্রকার খাবার দেয়া হতো না। এই ধাপ পার হতে পারলে চতুর্থ দিনে রোগীকে প্রস্রাব করতে বলা হতো। যদি প্রস্রাব করতে পারতো তাহলে অপারেশন সফল হয়েছে বলে ধরে নেয়া হতো, আর যদি প্রস্রাব করতে না পারতো তাহলে এক্ষেত্রে রোগী ব্যথা ও ইনফেকশনে মারা যেত। তবে প্রাচীন চীনারা ধীরে ধীরে এই কাজে এতটাই দক্ষ হয়ে উঠেছিল যে, অপারেশনে মৃত্যুহার নেমে এসেছিল প্রতি হাজারে ১ জন।
========
===============
========
“পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে।” – এই বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবক্তা, ১৬ শতকের অন্যতম গণিতবিদ, পদার্থবিদ, আধুনিক পণ্ডিত, অনুবাদক, গভর্নর কূটনীতিক, অর্থনীতিবিদ ও কিংবদন্তী জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাস কোপার্নিকাসের
সকলে মনে করতো পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য ও অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ আবর্তিত হয়। কিন্তু কোপার্নিকাস তার পর্যবেক্ষণ থেকে বলেছেন, সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ আবর্তিত হয়। তিনিই প্রথম বলেছিলেন, “পৃথিবী নয়, সূর্যই হলো সৌরজগতের কেন্দ্র। ১৪৭২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পোল্যান্ডের টোরুন শহরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। জার্মান বংশোদ্ভূত এক ধনী পরিবারের সন্তান। বাবা নিকোলাস কোপার্নিগ ছিলেন একজন প্রভাবশালী বণিক। চার ভাইবোনের মধ্যে কোপার্নিকাস ছিলেন সবার ছোট। মাত্র দশ বছর বয়সে পিতাকে হারান। পিতার মৃত্যুর পর মামার বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করেন।ইতালির বোলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। চিকিৎসা, আইন ও ধর্মশাস্ত্রে অধ্যয়নের জন্য তিনি সেখানে গেলে পরিচয় হয় প্রখ্যাত দার্শনিক প্লেটো এবং সে সময়ের বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ডোমেনিকোর সাথে। বোলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় তিনি প্রফেসর ডোমেনিকোর সাথে জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের কাজে যুক্ত ছিলেন। সেখানে থাকাকালেই ১৪৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম মহাকাশ পর্যবেক্ষণের কথা লিপিবদ্ধ হয়।উচ্চতর শিক্ষা শেষে তিনি রোম বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। সে সময় তার মনে মহাবিশ্ব সম্বন্ধে টলেমির সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে সন্দেহ জাগে। পৃথিবী এই মহাবিশ্বের মাঝে অবস্থিত, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য, তারা আর চাঁদ ঘুরছে- এই নিয়মে তিনি কিছু ত্রুটি খুঁজে পান। ক্লাসে যখন ছাত্রদের টলেমির সিদ্ধান্ত পড়াতেন, তখন তার বার বার মনে হতো তিনি ভুল শিক্ষা দিচ্ছেন।
প্রকৃত সত্যকে জানবার জন্য এ বিষয়ে আরো গভীর অধ্যয়ন শুরু করলেন। সে সময় টেলিস্কোপ ছিল না, তাই সাধারণ পর্যবেক্ষণ আর গাণিতিক পদ্ধতির উপর নির্ভর করা ছাড়া উপায় ছিল না। ফ্রুয়েনবার্গ গির্জায় থাকাকালে একাকী তিনি চালিয়ে যান গবেষণা ও অনুসন্ধানের কাজ। এক্ষেত্রে কারো কাছ থেকে সহযোগিতা বা পরামর্শ তিনি পাননি। গির্জাটি ছিল একটি পাহাড়ের উপর। এর কাছাকাছি একটি গম্বুজ থেকেই নিকোলাস তার পর্যবেক্ষণ চালাতেন। গির্জার দেওয়ালে একটি উঁচু চূড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহরাজির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতেন। খালি চোখেই নিজের পর্যবেক্ষণের ফলাফল লিপিবদ্ধ করে রাখতেন এবং সময়ে সময়ে সেগুলো প্রকাশ করতেন। কোপার্নিকাস বলেন, “সূর্যের চারিদিকে পৃথিবী ঘোরে বলে ঋতু পরিবর্তন হয়। আর পৃথিবী তার নিজ অক্ষের উপর আবর্তিত হয় বলেই দিন—রাত্রি হয়।” তার গবেষণালব্ধ মতবাদসমূহ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রকাশ করার সাহস করেননি। কারণ তিনি ছিলেন গির্জার যাজক। তার মতবাদ প্রচলিত ধর্মবিশ্বাসের সম্পূর্ণ বিরোধী। তার বিপ্লবাত্মক মতবাদ লিপিবদ্ধ হওয়ার পরেও দীর্ঘ তেরো বছর অপ্রকাশিত রাখতে হয়। ১৫১০ থেকে ১৫১৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কোপার্নিকাস তার নতুন মতবাদের সংক্ষিপ্তসার হিসাবে একটি পান্ডুলিপি প্রস্তুত করেন। ১৫১৪ খ্রিষ্টাব্দে ব্যক্তিগত পর্যায়ে তিনি তার বন্ধুদের মাঝে প্রচার করেন।তার বইয়ের মধ্যে দিয়ে তিনি যে সত্যের প্রতিষ্ঠা করে গেছেন, তার উপর ভিত্তি করে গ্যালিলিও, কেপলার, নিউটন, আইনস্টাইন জ্যোতির্বিজ্ঞানের নতুন নতুন দিগন্তকে উন্মোচন করেছেন।১৫৪৩ সালের ২৪ মে ৭০ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
========
========
শুয়োরের বাচ্চার দাঁত গজালে কি সে আসলেই তার বাপের পাছায় কামড় দিয়ে শক্তি পরীক্ষা করে? -আহমদ ছফা
—-
----
যুব সংগঠনের নাম-আদর্শ যুবদল বা সমাজ বা সম্প্রদায়
ডায়লগ-সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই
পতাকা- সবুজ সাদা পাশাপাশি, মাঝখানে উদিত সূর্য
মূলনীতি পাচটিঃ ১) প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন 2) তথ্য ও প্রযুক্তি শেয়ারিং 3) ভালো আচরণ ও গুনাবলী অনুশীলন 4) অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন ও সংস্কৃতি চর্চা 5) যুক্তি ও বিজ্ঞান নির্ভর পরিকল্পিত জীবন যাপন করা
প্রত্যেক সদস্যের মৌলিক কাজ তিনটিঃ ১) মাথা ঠান্ডা ও এটিটিউট ঠিক প্রত্যেকের সঙ্গে প্রতিটি বিদায় যেন গুডবাই হয় সেই চেষ্টা করা। ব্যতিক্রমে সরি বলা এবং নিজেকে সংশোধন করার পদক্ষেপ নেয়া । ২) প্রতি সপ্তাহের নেটওয়ার্ক টার্গেট করে প্রতিদিন নতুন নতুন বন্ধু বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া এবং টার্গেটকৃতদেরকে কার্যকরী পরিষদের সাথে লিঙ্ক করিয়ে দেয়া। ৩) সোশ্যাল মিডিয়ায় এক্টিভ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য ও জ্ঞান সংগ্রহ করা এবং দলীয় প্রচার-প্রচারণায় সহযোগিতা করা।
কোন একটা অঞ্চলে দুই/তিনটি আলাদা অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘকাল একসাথে বাস করতে থাকলে, তারা তাদের দুই বা তিন ভাষা থেকে কিছু কিছু শব্দ মিলিয়ে একটা অদ্ভুত ভাষা তৈরি হয়। প্রত্যেক ভাষার সহজ শব্দগুলো সহজেই অন্যরা শিখে ব্যবহার করে। ফলে এক প্রজন্মের মধ্যেই একটা জগাখিচুরি মার্কা অদ্ভুত ভাষা তৈরি হয়। এই ধরণের ভাষাকে বলা হয় পিডগিন ভাষা। কিন্তু আশ্চর্য একটা ঘটনা ঘটে দ্বিতীয় প্রজন্মে এসে। এই পিডগিন ভাষায় কথা বলা লোকগুলোর বাচ্চারা যখন বড় হয়, তখন তারা কথা বলার মধ্যে নিজেদের অজান্তেই সেই ভাষার গ্রামার তৈরি করে ফেলে। নতুন প্রজন্মের এই ব্যকরন যুক্ত ভাষাকে বলা হয় ক্রিওল ভাষা। অ্যামেরিকার লুইসিয়ানা প্রদেশের আফ্রিকান বংশদ্ভুদ মানুষরাত ১৭৯২ সাল থেকে ফ্রেন্স এবং স্প্যানিশ ভাষার মিশ্রনে একটা ক্রিওল ভাষা ব্যবহার করে আসছে।
যদি বাচ্চাটির বাবা মা বাসায় বাংলায় কথা বলে, আর সে স্কুলে গিয়ে অন্য একটি ভাষা শিখে, তাহলে- বাচ্চাটি অনায়াসেই দুইটি ভাষাতেই কথা বলবে। কিন্তু চেষ্টা করলেও এই বাচ্চাদের মত দ্রুত এবং নিখুত ভাষায় কথা বলা বড়দের জন্য খুবই কঠিন হয়। কারণ বাচ্চাদের মস্তিষ্কের এমন একটি অংশ সক্রিয় থাকে যার কারনে বাচ্চারা সহজেই অন্য একটি ভাষা শিখে ফেলতে পারে। নোয়াম চমস্কি এবং তার গবেষক দল এই বিষয়টার নাম দিয়েছেন, “ইউনিভার্সারল গ্রামার মেশিন”। মানুষের এই ইউনিভার্সাল গ্রামার মেশিন বয়স বাড়ার সাথে সাথে দুর্বল হতে থাকে। ফলে বেশি বয়সে ভাষা শেখাটা খুবই কঠিন কাজ। কাজে ছোট বয়সে আপনার বাচ্ছাকে একাধীক ভাষা রপ্ত করার প্রশিক্ষণ দিন। এখন থা হল
==================
সম্প্রতি ওনেক অভিভাবক স্কুলে পড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের পাঠ্যক্রমে জীবনের এসব বেসিক ট্রেনিং, জ্ঞান, বা শিক্ষার বিরুদ্ধে বক্তৃতা করছেন। আর দেশের সিংহভাগ বাবা-মায়েরা সেই বক্তার সঙ্গে বিনাপ্রশ্নে একমত হচ্ছেন। আমাদের বাবা-মায়েদের বড়ো অংশই শিক্ষা বঞ্চিত এবং সেকেলে। একটা দেশের পাঠ্যক্রম তৈরি করা বিশেষজ্ঞদের কাজ, তারা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন কারিকুলাম, গবেষণা ও বাস্তব ফলাফল বিবেচনায় নিয়ে পাঠ্যক্রম তৈরি করে। সুতরাং নিজেকে মহা পন্ডিত ভেবে নিয়ে কিছু একটা গলা ফাটিয়ে বলাটা নেহায়েত বাচালতা। এর মুখে বলবে সন্তানকে শিক্ষিত করতে চায়, কিন্তু আদতে যেটা চায় সেটা হল একটা চাকরি করার সার্টিফিকেট।
মুসলমানরা স্পেন দখল করে ৭/৮ শত বছর রাজত্ব করেন। এত সময়ে ৪০-৫০% স্পেনবাসি মুসলিম হয়। স্পেনের সরকারী ভাষাও আরবী করা হয়। খ্রীষ্টান রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানী ইসাবেলা ১৪৯২তে স্পেন জয় করলে ১৫০২তে সব মুসলমানকে ইসলাম ত্যাগ করে খ্রীষ্টান হতে নির্দেশ দেয়া হয়। তখন স্পেনের লোকসংখ্যা ছিল ৯৮ লাখ। ১৬১০ পর্যন্ত ৩০ লাখ মুসলিম যারা ইসলাম ত্যাগ করতে সম্মত হয়নি তাদেরকে স্পেন থেকে বহিস্কার করা হয় বা তারা স্পেন ছেড়ে যায়। যে স্পেন মুসলমানরা রাজত্ব করেছিল ৭/৮শ বছর সে স্পেনে এখন মুসলমান ৪.৪৫%।
যেভাবে মুসলিম দেশ থেকে বিশ্বের প্রথম নাস্তিক দেশ হয়েছিল আলবেনিয়া ।
বুলগেরিয়া, আলবেনিয়া, সার্বিয়া, মন্টিনেগ্রো, বসনিয়া, রোমানিয়াসহ বেশ কিছু দেশ নিয়ে দক্ষিণ ইউরোপের বলকান অঞ্চল গঠিত। প্রাচীন আমল থেকেই এ অঞ্চলে যুদ্ধ বিগ্রহ লেগে থাকে। অটোমান শাসনামলে তুর্কিরা বলকান অঞ্চলের অনেকটা অংশ নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। আলবেনিয়া এ সময়ে তুর্কি শাসনের অধীনে ছিল।
অটোমান সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়লে বুলগেরিয়া, সার্বিয়া, মন্টিনেগ্রো আর গ্রিস বলকান অঞ্চলে তুর্কিদেরকে যুদ্ধে পরাস্ত করে। এ ডামাডোলের মধ্যে আলবেনীয় নেতা ইসমাইল কেমালি স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসেন। নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে ১৯২৫ সালে আলবেনীয় প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। তবে তিন বছর পরেই ক্ষমতা চলে যায় রাজপরিবারের হাতে। রাজা জগু রক্ষণশীল শাসনে মুড়ে ফেলেন ছোট্ট দেশটিকে।
১৯৩৯ সালে মুসোলিনির ইতালি আচমকা আলবেনিয়া আক্রমণ করে দখল করে ফেলে। ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত জার্মান আর ইতালীয় কর্মকর্তারা আলবেনিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। এই দখলদারিত্বের মধ্যেই দেশটির কম্যুনিস্টরা গড়ে তোলে ‘আলবেনিয়ান ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’।
প্রায় লক্ষাধিক গেরিলা এই বাহিনীর হয়ে ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯৪৪ সালের নভেম্বরে আলবেনিয়া মুক্ত হয়। পরে যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধেও আলবেনিয়া সৈন্য পাঠায়। রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয় এবং এনভার হোক্সার নেতৃত্বে ১৯৪৬ সালে পিপলস রিপাবলিক অব আলবেনিয়া নামের সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। হোক্সা হয়ে যান দেশের সব থেকে ক্ষমতাশালী ব্যক্তি।
উল্লেখ্য, অন্য অনেক দেশের নেতারা যেমন প্রথমে কঠোর থেকে পরবর্তী আমলে নরম হন, হোক্সার শাসনামল ছিল ঠিক তার উলটো। উদার নেতা থেকে আশির দশকে তিনি পরিণত হন আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিঃসঙ্গ, কঠোর এক নেতায়, যার নতুন নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা প্রায়ই ছোট্ট দেশটির সাধ্যে কুলাতো না। তবে তার আমলের অন্যান্য ঝানু নেতাদের তুলনায় হোক্সাকে ভাগ্যবানই বলতে হবে। ১৯৮৫ সালেই মারা যাওয়ায় তাকে দেখে যেতে হয়নি সমাজতন্ত্রের পতনের পর কীভাবে বিক্ষুব্ধ জনতা তিরানায় তার মূর্তি ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলছে। হোক্সা অনেক বই লিখে গিয়েছেন।
এবার আসা যাক আলবেনিয়ার নাস্তিক দেশ হয়ে ওঠা প্রসঙ্গে। ১৯৭৬ সালে ইউরোপীয় দেশ আলবেনিয়াকে সরকারিভাবে নাস্তিক দেশ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। এনভার হোক্সা মার্ক্সের সাথে একমত হয়েছিলেন যে ধর্ম একটি আফিম, পুরো দেশকে নষ্ট করে দিচ্ছে। একমাত্র মুসলিম দেশ, যা পরিচিতি পেল নাস্তিক দেশ হিসেবে। প্রকৃতপক্ষে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আলবেনিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটতে শুরু করে।
ভয়ঙ্কর যুদ্ধের পর যেখানে অন্যান্য দেশগুলো অর্থনৈতিক সঙ্কটের সাথে লড়াই করছিল এবং তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতিতে নিয়োজিত ছিল, তখন আলবেনিয়ায় ধর্মকে শেষ করার জন্য প্রচারণা চালানো হয়েছিল। এখানে ব্যাপকভাবে ধর্মীয় স্থান ভাঙার কাজ শুরু হয়। এ সময় ১৯৭৬ সালে, আলবেনিয়াকে বিশ্বের প্রথম নাস্তিক দেশ (প্রথম নাস্তিক দেশ) ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, ২,১৮৯টি মসজিদ এবং চার্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়। নাস্তিকবাদ অফিসিয়াল পলিসিতে পরিনত হয়। ধর্মীয় নামের শহর, নগরগুলোকে নতুন নাম দেয়া হয়, ব্যক্তির নামও বদলে ফেলা হয়। ১৯৮২ মানুষের নামের ডিকশনারি বের করা হয়। যার মধ্যে ৩,০০০ সেক্যুলার নাম ছিল।
১৯৭৬ সালে যখন আলবেনিয়াকে নাস্তিক দেশ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন দেশটিতে মুসলিম জনসংখ্যা বেশি ছিল। কিন্তু কমিউনিস্ট স্বৈরশাসক আনোয়ার হোক্সা দেশকে নাস্তিক দেশে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেন।
স্বৈরশাসক এনভার হোক্সা কমিউনিস্ট দার্শনিক কার্ল মার্কসের দ্বারা বেশি প্রভাবিত ছিলেন। স্বৈরশাসক আনোয়ার হোজা ধর্মকে আফিম মনে করতেন এবং বলতেন ধর্মের কারণে পৃথিবী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যেতে পারে। সেখানেও লেবার পার্টি তাদের স্লোগান করে এবং আলবেনিয়াকে নাস্তিক দেশ ঘোষণা করে।
নিষেধাজ্ঞার সাথে সাথে দেশে যে কোনও ধরণের ধর্মীয় অনুশীলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়েছিল। যদি কোনও ব্যক্তি তার ধর্মে বিশ্বাসী হন, কোনও ধরণের ধর্মীয় বই পড়েন বা কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন বা উপস্থিত হন, তবে তিনি কঠোর শাস্তি পান। হোখা বলেছিলেন যে ধর্মের পরিবর্তে লোকেরা তাকে ও দলকে সম্মান করবে। এ কারণে প্রথম নাস্তিক দেশে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে খারাপভাবে চূর্ণ করা হয়েছিল।
আলবেনিয়াকে নাস্তিক দেশ বানানোর প্রচারণার সময় দুই হাজারেরও বেশি উপাসনালয় হয় ধ্বংস বা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই মাজারগুলিতে মসজিদের সাথে গীর্জাও অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিপুল সংখ্যক লোকের সাথে সামরিক বিচার পরিচালিত হয়েছিল এবং তারপর তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
ওই সময়ে অনেকে ধর্মের বিরুদ্ধে চলচ্চিত্র নির্মাণ এবং লোকদের দেখানোর জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন যাতে তাদের মন পরিবর্তন হয়।
বেশ্যাবৃত্তির শুরুটা ঠিক কবে থেকে ?
বেশ্যাবৃত্তির প্রসঙ্গ উঠলেই সবাই বলে “আদিম পেশা”। “আদিম” মানে কী ? আদিম জাতি বলতে আমরা সেই সময়ের মানুষের কথা বুঝি, যখন তারা পোশাকের ব্যবহার জানত না। বেশ্যাবৃত্তি ঠিক তখন থেকেই সৃষ্টি হয়েছে বলে আমার মনে হয় না। আমার মনে হয় সমাজে বেশ্যাবৃত্তি শুরু হয়েছে পোশাকের ব্যবহার জানার অনেক পর। নাগরিক-সভ্যতা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বেশ্যাবৃত্তির সূত্রপাত।নাগরিক জীবন শুরু হল বহির্দেশীয় মানুষদের অনুপ্রবেশ বা আগমনের পর, ভারতে যাঁরা “আর্য” পরিচিত।এই বহির্দেশীয়রাই ভূমিকন্যাদের যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করত। ধনশালী, বলশালী ও উচ্চস্তরের সাদাবর্ণের মানুষগুলো ভূমিকন্যা বা অনার্য কন্যাদের সঙ্গে শারিরীক লিপ্ত হলেও স্বীকৃতি দেয়নি। অনার্য-কন্যাদের সঙ্গে শোওয়া যায়, কিন্তু গ্রহণ করা যায় না।আর তাই পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারতে যত যুদ্ধের কাহিনি পাওয়া যায়, তার সবই আর্য-অনার্যের দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষের কাহিনি। আর্যের জয়, অনার্যের পরাজয়। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালনের নামে আর্যদের দাদাগিরির কাহিনিই বর্ণিত হয়েছে মনুসংহিতা, পুরাণ ইত্যাদি তথাকথিত শাস্ত্রগুলিতে। মনুসংহিতায় এইভাবেই পেয়ে যাই হাজারো জারজ সন্তান।আর্যরা ধর্ষণ করলে অনার্যদের শাস্তির বিধান ছিল।আর্যদের চাইতে তুলনামূলকভাবে ভারতীয় আদি অনার্যদের সমরাস্ত্রের দিক থেকে কমজোরী ছিল। তারা আর্যদের মতো তির-ধনুক, বর্শা, ছোরা, কুঠার ব্যবহার করলেও আর্যদের ব্যবহৃত শিরস্ত্রাণ ও কবচের ব্যবহার জানত না। তাই বারবার পরাজয় ঘটেছিল। অসুর, দৈত্য, রাক্ষস-খোক্ষস তকমা পেয়ে বহু সহস্র অনার্য পুরুষের মৃত্যু হয়েছে। আর অনার্যদের অসহায় রমণীরা আর্যদের দাসী ও যৌনসঙ্গী বা রক্ষিতা হিসাবে গৃহীত হয়েছিল। এদেরই একটা বড়ো অংশ যৌনজীবিকার পথ বেছে নিল। সেইসব রমণীরা বুঝল নারী-শরীরের প্রতি পুরুষদের লালসা তীব্র।অতএব এই শরীর মাগনা কেন, মূল্য দিতে হবে।
এরপর যখন সমাজে রাজতান্ত্রিকতার উন্মেষ ঘটেছিল, তখন এইসব রমণীদের শত্রু নিধন এবং গুপ্তচরবৃত্তির কাজে লাগানো হত।বিশিষ্ট্য অতিথি, অমাত্য এবং অপরাপর উচ্চধনীবর্গদের নারী-শরীর উপঢৌকন দিতে হত। বলা যায়, ঠিক এই সময় থেকেই বেশ্যাবৃত্তি রাষ্ট্রানুমোদিত হয়ে যায়। এই বৃত্তি তখন থেকেই রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা ও আনুকূল্যে পুষ্ট হতে থাকে।
অবশ্য প্রচলিত অর্থে বেশ্যা বা গণিকা বা পতিতা বলতে আমরা যা বুঝি, প্রাচীন ভারতে এইসব রমণীরা তেমনটা ছিলেন না। স্বয়ং দেশের রাজা গণিকাদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বার্ষিক ১০০০ পণ বেতন দিয়ে রাজা তাঁর প্রাসাদে গণিকাদের নিয়োগ করতেন। গণিকা বা বেশ্যাদের আয়ের একটা অংশ “কর” হিসাবে রাজার কোশাগারে সংগৃহীত হত।প্রাচীন ভারতে গণিকারা রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি হিসাবে গণ্য হত।তদুপরি বেশ্যাদের ঘরে যেমন জ্ঞানী-গুণীদের আলোচনা-সভা বসত, আবার প্রাচীন ভারতেও এমন জ্ঞানী-গুণীদের এবং শিক্ষাব্রতীদের বেশ্যালয় ছিল প্রধান আখড়া।আরও জানা যায়, প্রাচীনকালে বেশ্যালয়ে বা গণিকালয়ে গমন খুব একটা গোপনীয় বা লজ্জাকর ছিল না। সেযুগের নাগরিকরা বসন-ভূষণে সজ্জিত হয়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে দিনে-দুপুরে বেশ্যালয়ে যাতায়াত করতেন।
প্রাচীনকালে বহুভোগ্যা নারীদের নানাবিধ নামে উল্লেখ করা হত বেশ্যাবৃত্তির চরিত্রানুসারে। তাই প্রত্যেকটি নামের মাহাত্ম্যও স্বতন্ত্র।যদিও মোটিভেশন একই, সকলেরই পেশা শরীর বিক্রি করা।প্রাচীনকালে “গণিকা” বলতে বোঝাত বহুভোগ্যা নারীকেই।গণ বা দলবদ্ধ হয়ে যে নারী যাপন করে তিনিই গণিকা। অনুরূপ “বেশ্যা” বলতে বোঝাত, যে নারী বেশ বা সাজসজ্জা দ্বারা পুরুষদের প্ররোচিত করে প্রলোভিত করে তাঁরাই বেশ্যা।আবার ‘বেশ’ শব্দের আদি অর্থ হল বাসস্থান, এই বিশেষ বাসস্থানে যে নারী বাস করেন তিনিই বেশ্যা। “পণ্যাঙ্গনা” বলা হত সেই নারীদের, যে নারীদের পণের বাজি রেখে সম্ভোগ করা হত।“বারস্ত্রী” তাঁরাই, যে নারীরা যুগপৎ মন্দিরের সেবাদাসী ও রাজা বা অমাত্য মর্যাদার রাজকর্মচারীদের ভোগ্যা হতেন। পরিচারিকা বা ক্রীতদাসী রক্ষিতারা হলেন “ভুজিয়া”। যে নারীর চরিত্রের পতন হয়েছে তিনি “পতিতা” ইত্যাদি।অনুমান করা হয়, প্রধানত ব্রাহ্মসমাজের প্রচারের দৌলতেই ‘পতিতা’ শব্দটি বেশ্যার সুভাষণরূপে গ্রহণীয় হয়ে ওঠে। ১৮৯৪ সালে লেখা ‘বিচারক’ গল্পে রবীন্দ্রনাথও দেখছি ব্যবহার করেছেন। সমর সেন ‘গণিকা’ শব্দটিই বেশি ব্যবহার করতেন।“প্রবাসী” পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের তাঁর পত্রিকায় বারবার ‘বেশ্যা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। সাম্প্রতিককালে গণিকা বা বারবনিতাদের মতো “যৌনকর্মী” শব্দটিও একটি জীবিকাকে বর্ণনা করে।“যৌনকর্মী” শব্দটি যেন তাঁদের জীবিকাকে আরও বেশি করে চিহ্নিত করে।
বর্তমানে ধাত্রীবিদ্যা, উদ্যানবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা ইত্যাদি যেমন নানা শিক্ষা আছে, ঠিক তেমনই সেকালে গণিকাবিদ্যাও ছিল এমনই এক শিক্ষণীয় বিষয় এবং সেই শিক্ষা এক্কেবারেই নিন্দনীয় ছিল না। এ বিষয়ে পৃথক বিদ্যালয়ও ছিল। রীতিমতো পরিচর্যা, প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলন দ্বারা আগামীদিনের গণিকাদের এইসব শিক্ষালয় থেকে উত্তীর্ণ হতে হত। নৃত্য-গীতবাদ্য ছাড়াও চিত্রকলা, জ্যোতিষশাস্ত্র, অভিনয়, রন্ধনবিদ্যা, ভাষাশিক্ষা, লিখন, মার্জিত ভাষায় কথা বলা, মালাগাঁথা ইত্যাদি এরকম ৬৪ কলায় পারদর্শী করে তোলা হত। ৬৪ কলায় সুশিক্ষিতা, রূপবতী, গুণবতী বেশ্যা বা গণিকারাই জনসমাজে মর্যাদাপ্রাপ্ত হতেন।
তথ্যসূত্রঃ বারবনিতাদের গল্প বারিদবরণ ঘোষ। বাবু কোলকাতার বিবি বিলাস।পৃথ্বীরাজ সেন সংস্কৃত সাহিত্যে বারাঙ্গনা।
দ্য সিল্ক রোড
আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে চলে গেলে— লিখিত জিনিসের কোন অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যাবে না। তাই এই সময়ের আগে যা ঘটেছে তাকে বলা হয় প্রাগৈতিহাসিক সময় বা প্রিহিস্টোরি। কিন্তু মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেছে আজ থেকে প্রায় পনেরো হাজার বছর আগে। তার আগে মানুষ যাযাবর জীবনযাপন করত।
প্রাচীনকালে বর্তমান ইরাক ও তার আশেপাশের অঞ্চলটি ছিল খুবই উর্বর জায়গা। দজলা এবং ফোরাত নদীর পলিমাটি জমে এখানে যে উর্বর অঞ্চল গড়ে উঠেছিল, তাকে লোকে বলত মেসোপটেমিয়া। এই অঞ্চলেই গড়ে উঠেছিলো ইতিহাসের প্রথমদিকের গ্রামগুলো, প্রথম শহর-বন্দরগুলো, এবং প্রথম সভ্যতা। প্রাচীনকালে যেসব সাম্রাজ্য তৈরি হয়েছিল, তার মধ্যে অন্যতম ছিল পারস্য সাম্রাজ্য। খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে এটি ছড়িয়ে পড়ে মিসর, গ্রিস এবং হিমালয়ের পশ্চিম অঞ্চল পর্যন্ত।
প্রাচীন মেসোপোটেমিয়ায় জন্ম নেওয়া একটি বাণিজ্যপথ পৃথিবীকে চিরতরে বদলে দিয়েছিলো। তবে এই পথকে কিন্তু একটি রাস্তা ভাবলে ভুল হবে। বরং এটি ছিল- বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অনেকগুলো পথের সমষ্টি বা নেটয়ার্ক। এই পথের নাম- দ্য সিল্ক রোড। এই পথেই মার্কো পোলো ইতালি থেকে চীন পর্যন্ত তার বিখ্যাত যাত্রা করেন। পূর্ব এবং পশ্চিমের মানুষেরা এই পথে নানানভাবে ব্যবসা করেছে। এই পথ চীনকে যুক্ত করেছিলো পশ্চিমা দুনিয়ার সঙ্গে।
স্তেপ হলো এক ধরনের বিস্তীর্ণ ঘাসি জমি। এই ঘাসি জমি ছড়িয়ে রয়েছে বর্তমান রাশিয়ান দক্ষিণ এলাকা ও ইউক্রেন জুড়ে। এই ঘাসি জমির মধ্য দিয়ে পারস্যের বাণিজ্য পথ, চীনের নিজস্ব সড়ক অর্থাৎ সিল্ক রোড জুড়ে যায় । প্রাচীনকালে এই স্তেপ অঞ্চল ছিলো একেবারেই বুনো এলাকা। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বাস করা যাযারর গোত্রগুলো। তারা, গম, চাল, মদ ইত্যাদির বিনিময়ে সংগ্রহ করত চীনের সিল্ক বা রেশম। আর এই গুরুত্বপূর্ণ পণ্যটির কারনেই এই পথের নাম হয়েছিল দ্য সিল্ক রোড। এই সিল্ক রোডের মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্মের দর্শন উত্তর ভারত থেকে গিয়ে প্রবেশ করলো চীনে। আর সেখান থেকেই তা ছড়িয়ে পড়লো পুরো এশিয়া জুড়ে।
শিম্পাঞ্জি
আমরা যদি গরিলা, শিম্পাঞ্জি আর মানুষের DNA নিয়ে একটু ভাবতে বসি তাহলে একটা অদ্ভুত বিষয় দেখতে পাব। শিম্পাঞ্জি আর গরিলার DNA এর মধ্যে পার্থক্য ২.৩ %, অন্যদিকে শিম্পাজি আর মানুষের DNA এর পার্থক্য মাত্র ১.৬ %। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, গরিলা ওরাং ওটাং বা অন্য কোন অ্যাপ শিম্পাঞ্জির কাছের প্রজাতি নয়, বরং মানুষই হলো শিম্পাঞ্জিদের সবচেয়ে নিকটের প্রজাতি।
===========
বরফযুগ, “হান্টার গ্যাদারার”
আজ থেকে প্রায় ১৭০০০ বছর আগে পৃথিবীর আবহাওয়া নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে যায় প্রায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শেষ হয় বরফ যুগ। এর আগের প্রায় ১ লক্ষ বছর পৃথিবী ছিল ভয়াবহরকম শীতল; গোটা স্থলভাগের ২৫ ভাগ তো ছিল রীতিমতো বরফের নিচে! কিন্তু এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রায় ১ হাজার বছর পর পৃথিবীর তাপমাত্রা আবার কমতে থাকে। এই ঠাণ্ডা পরিবেশ থাকে প্রায় ৪ হাজার বছর ধরে। শেষ পর্যন্ত, আজ থেকে ১১,৬০০ বছর আগে তাপমাত্রা আবার বাড়তে থাকে। অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই তাপমাত্রা বেড়ে বেশ আরামদায়ক উষ্ণ পরিবেশ তৈরি হয়। তারপর থেকে আর কোনোদিন পৃথিবীতে সেই ভয়াবহ বরফযুগ আসেনি।
এই উষ্ণ আবহাওয়ার ফলে বরফ গলে পৃথিবীর বিশাল একটা অঞ্চল বরফের নিচ থেকে বের হয়ে আসে। আর এই উষ্ণ আবহাওয়াতে জন্মাতে থাকে প্রচুর গাছপালা, বাড়তে থাকে পশু-পাখির সংখ্যা। একই সাথে দ্রুত বাড়তে থাকে মানুষের সংখ্যাও। এই সময়টাতে মানুষ মূলত পশু-পাখি বা মাছ শিকার করা, বন্য ফলমূল এবং মধু সংগ্রহ করে জীবনযাপন করত। এই ধরণের মানব সমাজ “হান্টার গ্যাদারার” বা শিকারি-সংগ্রহজীবী নামে পরিচিত। এই শিকারি-সংগ্রহজীবীরা ছিল মূলত যাযাবর। এক জায়গায় এরা বেশিদিন বাস করত না। নতুন এই উষ্ণ আবহাওয়াই মূলত শিকারি জীবন ছেড়ে কৃষিভিত্তিক সমাজ এবং স্থায়ীভাবে বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে দিয়েছিল।
নাটুফিয়ান ও সিডেন্টারি লাইফ
এই ধরণের স্থায়ী বসতি অবশ্য খুব বেশিদিন টিকত না। তবে সাড় এগারো হাজার বছর আগে নাটুফিয়ানরা তো রীতিমত গ্রাম তৈরি করে বসবাস শুরু করে।
কৃষিকাজের সবচেয়ে প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায় মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে। মধ্যপ্রাচ্যের যে এলাকায় প্রথম কৃষিকাজ শুরু হয় তাকে বলা হয় হিলি ফ্ল্যাঙ্কস Hilly Flanks। আজ থেকে প্রায় ১১ হাজার বছর আগে একদল লোক বর্তমান ফিলিস্থিনের জর্দান নদীর পশ্চিম তীরে এবং সিরিয়ার তেল আসওয়াদ অঞ্চলে চাষাবাদ শুরু করেছিল। এই লোকগুলোকে বলা হয় নাটুফিয়ান সংস্কৃতির লোক। ওরা গম, মটর, মসুর ডাল সহ আরও কিছু শস্য চাষ শুরু করেছিল। কিন্তু প্রশ্ন হলো- নাটুফিয়ানরাই কেন প্রথম চাষাবাদ শুরু করেছিল? অনেকেই হয়ত ভাবতে পারেন যে, ঐ অঞ্চলটাতে আসলে এই বন্য শস্যগুলো প্রচুর পরিমাণে ছিল, তাই নাটুফিয়ানরা চাষাবাদ শুরু করতে পেরেছিল। আসলে তখন ইউরেশিয়ার বিশাল অঞ্চল জুড়েই এইসব বন্য প্রজাতির ফসল ছিল। ব্যাপারটা এমন না যে, শুধু হিলি ফ্লাঙ্ক অঞ্চলেই এই শস্যগুলো পাওয়া যেত। এখানে আসল কারণটা হলো- নাটুফিয়ানরা প্রথমে 'সিডেনটারি লাইফ' বা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিল, আর তারপর কৃষিকাজ শুরু করেছিল।
প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে দেখা যায় যে, কৃষিকাজ শুরু করার আগেই ওরা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিল। খ্রিষ্টপূর্ব ৯৫০০ সালে, অর্থাৎ আজ থেকে ১১৫০০ বছর আগে নাটুফিয়ানরা স্থায়ীভাবে এক জায়গায় বসবাস করতে শুরু করে। এরপর প্রায় ৫০০ বছর ওরা একই জায়গায় বসবাস করলেও তখনও কৃষিকাজ শুরু করেনি। কৃষিকাজ শুরু করার আগে ঐ ৫০০ বছর ওরা শিকারি জীবনযাপন করেছিল। ইউফ্রেটিস নদীর তীরে আবু হুরায়রা নামক এক গ্রামে নাটুফিয়ানদের একটি বসতি পাওয়া গেছে। চাষাবাদ শুরু করার আগে ওদের এই গ্রামের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ এর মত।
কিন্তু নাটুফিয়ানরা কেন স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিল? যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়ীভাবে বাস করার বেশ কয়েকটি সুবিধা আছে। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে বেশ শক্তি খরচ হয়। তারপর ওদের সাথে বেশকিছু হাতিয়ার বা জমানো খাদ্য থাকে, সেগুলো বহন করে নিয়ে যাওয়াও বেশ কঠিন। ফলে দলের অনেকেই হয়ত স্থায়ীভাবে বাস করার ব্যাপারে রাজি হয়ে থাকবে। কিন্তু অনেকে রাজি থাকলেই কিন্তু সেটা সম্ভব হয় না, দলে অনেকেই আবার এর বিরুদ্ধে থাকতে পারে। এজন্য হয় দলের সবাইকেই রাজি হতে হবে, নয়ত অন্য কেউ যদি তাদেরকে বাধ্য করে তবেই সেটা সম্ভব।
এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সিডেন্টারি লাইফ বা স্থায়ীভাবে বসবাস করার যেমন কিছু সুবিধা আছে তেমনি কিছু অসুবিধাও আছে। সবচেয়ে বড় প্র্যাক্টিক্যাল অসুবিধা হলো, ঝগড়া বিবাদ মেটানো বা কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্ট। একটি যাযাবর দলের মধ্যে কনফ্লিক্ট মেটানোটা অনেক সহজ, এবং অনেক ক্ষেত্রে তা এমনিতেই সমাধান হয়ে যায়। কারণ, খুব বড় সমস্যা হলে দল ভাগ হয়ে যায়, আর সমস্যাও এমনিতে মিটে যায়। কিন্তু বসতি স্থাপন করে থাকলে সেখানে বিবাদ মেটানোটা খুবই জরুরি, এবং তুলনামূলকভাবে অনেক কঠিন। এজন্য দরকার নির্দিষ্ট নিয়মকানুন। বসতি স্থাপন করলে সহজেই দলের সম্পদ জমা হয়ে যায়। ফলে, সম্পদের মালিকানা বিষয়ক আরও কিছু স্পষ্ট ধারণা এবং নির্দিষ্ট নিয়মকানুন থাকাটাও দরকার। আর যখন সম্পদের মালিকানার মত বিষয় চলে আসে, তখন প্রয়োজন দলের নেতা বা অথোরিটির মত আরও কিছু বিষয়। অর্থাৎ, বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে তখন মোটামুটি এক সেট সামাজিক আইন এবং স্ট্রাকচার দরকার।
একটি হান্টার গ্যাদারার দল কোথাও স্থায়ী বসতি স্থাপন করতে চাইলে তাদের এই জিনিসগুলোর দরকার হবেই। কারণ, এছাড়া তারা একসাথে বসবাস করতে পারবেনা। আর এই জিনিসগুলো থাকলে এক সময় তৈরি হয় শ্রেণি বিভাজন। অন্যকথায়, তখন সমাজে এলিট ক্লাস বলে একটা আলাদা শ্রেণি তৈরি হয়। এরাই বসতির বিভিন্ন সম্পদের অধিকার কিভাবে ভাগ করা হবে এইসব নির্ধারণ করবে, কিছু প্রাথমিক নিয়ম তৈরি করবে, পাশাপাশি অন্যদের সম্পদের থেকেও ভাগ নেবে। হান্টার গ্যাদারার জীবন বাদ দিয়ে স্থায়ীভাবে বাস করতে হলে, খুব ছোট পরিসরে হলেও একটা রাজনৈতিক কাঠামো প্রয়োজন।
আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য ঠিক তাই বলছে! কৃষিকাজ শুরু করার অনেক আগে থেকেই ওরা সামাজিক শ্রেণিবিভাগসহ একটি জটিল সমাজব্যবস্থা তৈরি করেছিল। এই বিষয়ে অনেক ধরণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তার মধ্যে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ হলো ওদের কবর। এলিটদের কবরের সাথে বিভিন্ন ধরণের গয়নাসহ অনেক ধরনের মূল্যবান জিনিস পাওয়া গেছে। কিন্তু বাদবাকি সাধারণ মানুষের কবরে কিছুই ছিল না। এই জিনিসগুলোর মধ্যে কিছু জিনিস বসতি থেকে বেশ দূরের কিছু এলাকা থেকে আনা হত। কিছু জিনিস তৈরি করতে বেশ শ্রমও লাগত। প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণা থেকে দেখা যায়, এইসব গয়না এবং অন্যান্য জিনিস পরিধান করা ছিল সামাজিকভাবে উঁচু শ্রেণিতে থাকার একটা চিহ্ন। তাছাড়া, এইসব জিনিসের ব্যবসায়িক লেনদেনের প্রমাণও পাওয়া যায়। ফলে এইসব থেকে মুনাফাও পেত এলিট ক্লাস। ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক এলিট ছাড়াও ওদের মধ্যে কাল্ট ভিত্তিক ধর্মীয় পুরোহিত টাইপের একটা শ্রেণিও তৈরি হয়েছিল। অনেকগুলো নাটুফিয়ান প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট থেকে সেই প্রমাণ পাওয়া গেছে।
মোটকথা, প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে দেখা যায় যে, কৃষিকাজ শুরু করার আগেই ওরা স্থায়ীভাবে বসবাস করত, এবং সেই সময়ই ওদের বেশকিছু সামাজিক আইন-কানুন ছিল। পাশাপাশি ছিল সামাজিক শ্রেণিবিভাগ। অর্থাৎ, নাটুফিয়ানদের সংস্কৃতি থেকে দেখা যাচ্ছে- স্থায়ীভাবে বসবাস করার জন্য কৃষিকাজ বা পশুপালনটা জরুরি নয়। জরুরি হলো সামাজিক এবং রাজনৈতিক কাঠামো। এইগুলো ছাড়া স্থায়ীভাবে বাস করা সম্ভব নয়। আর স্থায়ীভাবে বাস করার জন্য ভৌগেলিক অবস্থানটাও মূল বিষয় নয়। কারণ, তখন ইউরেশিয়া জুড়েই একইরকম সম্পদ পাওয়া যেত।
আসলে ঐ বিশেষ সময়টাতে হান্টার গ্যাদারারদের স্থায়ীভাবে বসবাস করাটা একদমই বাস্তবসম্মত ছিল। কারন অস্থায়ী গুহাতেও হান্টার গ্যাদারারদের খাদ্য জমা করার বেশকিছু প্রমাণ পাওয়া যায়। আর তখন যেহেতু আবহাওয়া উষ্ণ ছিল, তাই চারিদিকে ছিল প্রচুর শস্য এবং পশু। ফলে, নাটুফিয়ানরা হয়ত প্রায়শই বাড়তি খাদ্য পেয়ে যেত। একারণেই তারা গ্রাম তৈরি করে বসবাস শুরু করে। এভাবে বাস করার কয়েক প্রজন্ম পরে নিজেদের সুবিধার জন্যই তারা কৃষিকাজ শুরু করেছিল, শুরু করেছিল পশুপালন। কিন্তু সবকিছুর শুরু হয়েছিল মূলত সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো জন্মের মধ্য দিয়ে। এই কাঠামো ছাড়া একত্রে বেশি মানুষ বাস করা বাস্তবসম্মত নয়।
তবে কৃষিবিপ্লব এবং মানব সভ্যতা শুরুর যে ট্র্যাডিশনাল ব্যাখ্যা, সেই ব্যাখ্যা কিন্তু আলাদা। জ্যারেড ডায়মন্ড, জেফ্রে সাকসের মত বড় বড় সব তাত্ত্বিকের মতে- কৃষি বিপ্লব, সভ্যতার শুরু এবং মানবজাতির উন্নতির পেছনে সবথেকে বড় ভূমিকা রেখেছিল স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ভৌগেলিক অবস্থা। তাঁদের মতে এইসব সম্পদের কারণেই মানুষ প্রথম স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে, কৃষিকাজ এবং পশুপালনের প্রতি আকৃষ্ট হয়। পরে ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে সামাজিক শ্রেণিবিন্যাস, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন ইত্যাদির জন্ম হয়। কিন্তু নাটুফিয়ানদের সংস্কৃতি থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ঘটনা সম্পূর্ণ আলাদা। মানুষ কৃষিকাজ শুরু করার আরও ৫০০ বছর আগে থেকেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে। অন্তত, নাটুফিয়ানদের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট থেকে সেটারই প্রমাণ পাওয়া যায়। পাশাপাশি আরও একটি বিষয় স্পষ্ট যে- প্রাকৃতিক সম্পদ নয় বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনই হলো স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আবশ্যকীয় উপাদান। সামাজিক সংগঠন এবং সামাজিক শ্রেণিবিভাজন ধারণা ছাড়া স্থায়ীভাবে বাস করা সম্ভব নয়।
আমরা জানি, সভ্যতা তৈরি এবং তার অগ্রগতি সামাজিক এবং রাজনৈতিক কাঠামো ছাড়া সম্ভব নয়। যেমন, আজ থেকে সাড়ে আট হাজার বছর আগে ইউরোপে কৃষিভিত্তিক সমাজ শুরু হয়। এটা হতে পেরেছিল কারণ মধ্যপ্রাচ্য থেকে কৃষকরা ইউরোপে মাইগ্রেট করেছিল। আর মাইগ্রেট করার সময় তারা মূলত নিয়ে গিয়েছিল তাদের সামাজিক এবং রাজনৈতিক কাঠামো। কৃষির সব উপাদান তো ইউরোপেই ছিল। তাহলে কৃষকরা মাইগ্রেট করার পর কেন ইউরোপে কৃষিকাজ শুরু হলো? কারণ, এই শুরুর জন্য দরকার ছিল কৃষিভিত্তিক সমাজের কাঠামো আর কৃষিকাজের জ্ঞান।
কৃষিকাজ শুরু করার পর ইউরোপের সামাজিক এবং রাজনৈতিক কাঠামো ছিল অন্যান্য অঞ্চল, যেমন আফ্রিকার থেকে আলাদা। আফ্রিকাতে গরম আবহাওয়া আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল। তবে ওরা কিন্তু সবার প্রথমে কৃষিকাজ বা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেনি। শুরু করেছিল নাটুফিয়ানরা। কারন ওদের ছিল সেই কাঠামো।
সামাজিক কাঠামোর কি গুরুত্ব সেটা এবার নিশ্চয়ই বোঝা গেল। কিন্তু সেই কাঠামোটার ধরণ কেমন, সেটার উপর নির্ভর করছে সেই সমাজ টিকে থাকার সম্ভাবনা। নাটুফিয়ানদের সংস্কৃতি কিন্তু টিকে থাকেনি। নাটুফিয়ানরা যে ধরণের সামাজিক এবং রাজনৈতিক এলিট শ্রেণি গড়ে তুলেছিল সেটাকে বলা হয় Extractive Political Institutions। যখন একটা সমাজে শুধু অল্পকিছু এলিট লোকজন সুবিধা পেয়ে সম্পদের মালিক হয়, তখন সেই ধরণের রাজনৈতিক অবস্থাকে বলা হয় Extractive Political Institutions। এই ধরণের সামাজিক সংগঠনের একটা ভালো দিক আছে। সেটা হলো ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকে; অর্থাৎ, ক্ষমতার কেন্দ্রে অল্পকিছু মানুষ থাকে। ফলে, এই মানুষগুলো চাইলে বাকি লোকগুলোকে দিয়ে পরিশ্রম করিয়ে একটা উন্নয়ন শুরু করতে পারে।
তবে এই ধরণের ব্যবস্থা প্রাথমিকভাবে একটি হান্টার গ্যাদারার দলকে সেটেল ডাউন করার জন্য আদর্শ হলেও সেটা দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন বা টিকে থাকার অনুকূল নয়। নাটুফিয়ানরা এক্সট্রাকটিভ ইন্সটিটিউশন তৈরি করার কারণে তাদের সমাজ কলাপ্স করেছিল, এবং তাদের কোনো উত্তরাধিকার তারা রেখে যেতে পারেনি। ঠিক যে কারনে নাটুফিয়ানরা কলাপ্স করেছিল, সেই একই কারনে আধুনিক সময়ের সোভিয়েত রাশিয়াও কলাপ্স করেছিল। এই ধরনের এক্সট্রাকটিভ ইন্সটিটিউশন প্রাচীনকালের চেয়ে আধুনিককালে আরও অসুবিধাজনক হতে পারে।
আধুনিক রাষ্ট্রের ব্যর্থ হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করার আগে আমরা আরও একটি প্রাচীন সভ্যতার উদাহরণ দেখব।
প্রাচীনকালে কৃষিকাজ যে শুধু মধ্যপ্রাচ্যের একটি জায়গায়ই শুরু হয়েছিল তা কিন্তু নয়। আধুনিক গবেষণা অনুযায়ী প্রাচীন পৃথিবীর অন্তত ১১টি জায়গায় স্বাধীনভাবে কৃষিকাজ শুরু হয়েছিল। তার মধ্যে একটি ছিল অ্যামেরিকা মহাদেশ। বর্তমান মেক্সিকোতে আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগে কৃষিভিত্তিক সমাজের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়ে এক নগর সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতি এখন মায়া সভ্যতা নামে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। মায়ানরা প্রথম নগর তৈরি করেছিল প্রায় ২৫০০ বছর আগে। কিন্তু প্রথমদিকের এই নগরগুলো সফলতার মুখ দেখেনি। এর প্রায় ৭৫০ বছর পর মায়ানদের মধ্যে নতুন এক ধরণের সামাজিক ও রাজনৈতিক ধারা বিকাশ লাভ করে, এবং এর ফলে শুরু হয় মায়ানদের ক্লাসিক্যাল যুগ। এই ধারাটা ২৫০ থেকে ৯০০ সাল পর্যন্ত। এই সময়টাই ছিল মায়া সভ্যতার স্বর্ণযুগ। এই সময়ের মধ্যে ওরা খুবই সমৃদ্ধশালী ও জটিল এক সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করেছিল।
কিন্তু এই উন্নত ও জটিল সভ্যতাও টিকে থাকতে পারেনি। পরবর্তী ৬০০ বছরে মায়ানদের এই ধারাটাও শেষ পর্যন্ত কলাপ্স করে। মায়ানদের সভ্যতা কোন সাম্রাজ্য তৈরি হতে পারেনি। ওদের ছিল গ্রিকদের মত নগরকেন্দ্রিক সংস্কৃতি। এই নগরগুলোর নিজেদের মধ্যে ভালো যোগাযোগ ছিল। ছিল আলাদা আলদা সিলমোহর ও বর্ণমালা। ওদের ছিল প্রায় ৩১ টির মত আলাদা ভাষা। তবে এই ভাষাগুলো ছিল প্রায় একই ধরণের। ওরা বাণিজ্য শুরু করেছিল, এমনকি কোকোবিনের সাহায্যে ওরা মুদ্রারও প্রচলন করেছিল। অর্থাৎ, ওদের সামাজিক কাঠামো প্রায় আধুনিক সমাজের মতই জটিল পর্যায়ে চলে গিয়েছিল।
প্রতিবছর কি ঘটছে তা রেকর্ড রাখার জন্য ওদের ছিল বিশেষ এক ধরণের ক্যালেন্ডার। এর নাম ছিল 'Long Count।' এই জিনিসটা থাকার কারণে মায়া সভ্যতার অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক দিকগুলো নিয়ে অনেক নিখুঁতভাবে বিশ্লেষণ করা সম্ভব। মায়ানদের ছিল বেশ ভালো মানের সেচব্যবস্থা এবং স্থাপত্য প্রযুক্তি। কিন্তু মায়ানদের এই জটিল সভ্যতা তৈরি এবং দারুণ উন্নতির পেছনের কারনও ছিল সেই- Extractive Political Institutions। এটা নাটুফিয়ানদের থেকে অনেক জটিল এবং উন্নত। কিন্তু তবুও মূলগত দিক থেকে এটাও তৈরি হয়েছিল এক ধরনের কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা ভিত্তিক কাঠামোর উপর ভর করে। ফলে এখানেও অল্পকিছু এলিট শ্রেণিই বেশিরভাগ সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করত।
মায়াদের অর্থনীতি যেভাবে উন্নতি করেছিল তার সাথে মিল দেখা যায় আফ্রিকার Bushong দের সমাজের। দুই জায়গাতেই নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর কারণে বেশ ভালো অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়, কিন্তু দুই ক্ষেত্রেই এই লাভের গুড় খেয়ে ফেলে অল্পকিছু এলিট শ্রেণির মানুষ। মায়ানদের ক্ষেত্রে যেটা হয় সেটা হলো- ৩০০ সালের দিকে ওদের অর্থনৈতিক অবস্থা যখন বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠে, তখন ওরা অল্পকিছু প্রযুক্তিগত উন্নতি করে। কিন্তু এরপর সেচ ব্যবস্থাতে সামান্য উন্নতি করা ছাড়া ওরা আর কোনো নতুন জিনিস বা নতুন প্রযুক্তির দিকে আগায়নি। ওদের সভ্যতা যেন ঐ জায়গাতেই থেমে গিয়েছিল!
ভালো অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে জনসংখ্যা বেড়ে যায়। কিন্তু ঐ সময়টাতে ঐ অঞ্চলের আবহাওয়া রুক্ষ হতে থাকে। ফলে ফসল উৎপাদন কমে যায়। কিন্তু ওরা সেচ ব্যবস্থা উন্নত করার দিকে পরের দিকে আর তেমন একটা মনোযোগ দেয়নি। কারণ, একপর্যায়ে ওরা বিভিন্ন কুসংস্কারভিত্তিক কাজে অংশ নিয়ে বাস্তব প্রয়োজনে প্রযুক্তির দরকার এটা হয়ত ভুলে গিয়েছিল। ওদের সংস্কৃতিতে শুক্রগ্রহ বা শুক্রদেবতা ছিলেন যুদ্ধের দেবতা। ওরা এক পর্যায়ে আকাশে তারার অবস্থান দেখে যুদ্ধ করা শুরু করেছিল। এই যুদ্ধের কারণেই হয়ত এক পর্যায়ে ওদের সমাজ রাজা শূন্য হয়ে পড়েছিল। আর রাজা শূণ্য হওয়া মানেই হলো প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক কাঠামোর অভাব। যে কাঠামোর উপর ভিত্তি করে ওদের কৃষির সম্প্রসারণ হয়েছিল, তারপর সেটা থেকে বাণিজ্য শুরু হয়েছিল, সেগুলো এখন আর সম্ভব নয়। এক পর্যায়ে যেভাবে ওদের উন্নতি হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই আবার অর্থনীতির আকার ছোট হতে থাকে, মানুষ কমতে থাকে। মায়া সভ্যতা কলাপ্স করে।
মায়া সভ্যতা কলাপ্স করার বেশ কিছু কারণ ছিল। এর মধ্যে একটি ছিল খরা। খরা ছিল প্রাকৃতিক কারণ। খরার কারণেই খাদ্যাভাব দেখা দেয়, যা ধীরে ধীরে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয় মায়ানদের। প্রাকৃতিক কারণ বাদ দিলে আমরা দুইটা বিষয় দেখতে পাব যার কারণে মায়া সভ্যতা টিকতে পারেনি। তার একটি হলো Extractive Political Institutions এবং আরেকটি হলো নতুন প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ না দেওয়া। আধুনিক রাষ্ট্রের আলোচনায় আমরা দেখতে পাব যে- এই দুইটি জিনিস উপস্থিত থাকলে একটি আধুনিক রাষ্ট্র কখনোই উন্নতি করতে পারে না। মায়া সভ্যতা এতই উন্নতি ও জটিল হয়েছিল যে তা প্রায় আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার মতই। প্রাচীনকালের এক সভ্যতা এত জটিল অবস্থায় পৌছে গেলে, তারা যদি প্রতিনিয়ত নতুন প্রযুক্তির দিকে মনোযোগ না দেয়, তবে সে সভ্যতা যেকোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখেই কলাপ্স করতে পারে।
নাটুফিয়ান এবং মায়ানদের সমাজের কলাপ্স থেকে বোঝা যায় যে, সামাজিক এবং রাজনৈতিক কাঠামো একটি সভ্যতার উন্নতি এবং টিকে থাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এই বিষয়টা আরও ভালো বোঝা যায় অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী সমাজের একটি ঘটনা থেকে।
১০০ বছর আগ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার Yir Yoront গোষ্ঠীর লোকেরা মূলত প্রস্থর যুগের পাথরের হাতিয়ার দিয়েই তাদের জীবন চালাতো। কিন্তু ইউরোপিয়ানরা অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করার এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে স্টিলের কুঠারের প্রচলন হয়। সাধারণত নতুন প্রযুক্তি একটি জাতি বা সমাজকে উন্নতি এনে দেয়। কিন্তু এক্ষেত্রে ঘটে ঠিক উল্টো ঘটনা। এই স্টিলের কুঠার পাওয়ার পর এই আদিবাসীরা দেখল- এই নতুন কুঠার খুবই কাজের জিনিস। অল্প সময়েই খাবার সংগ্রহ করা যাচ্ছে। ফলে ওরা হয়ে গেল অলস। আদিবাসীদের মধ্যে ঘুমের প্রবণতা বেড়ে গেল। ফলে নতুন প্রযুক্তি পেয়ে উন্নতির বদলে হতে লাগল অবনতি! এই ঘটনা থেকে এটা বোঝা যায় যে, উন্নতির জন্য নতুন প্রযুক্তি বা সম্পদের চেয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বা সংগঠন বেশি জোরালো বেশি ভূমিকা পালন করে।
যেসব রাষ্ট্র দীর্ঘ সময়ের জন্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি ধরে রেখেছে এইসব রাষ্ট্রের উন্নয়নকে বলা হয়, Sustainable Development বা “টেকসই উন্নয়ন”। টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি রাষ্ট্রকে প্রতিনিয়ত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করে যেতে হয়। এই দুই অর্থনীতিবিদ তাদের দীর্ঘ দিনের গবেষণায় দেখেছেন যে- একটি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে দীর্ঘ সময় ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন হয় প্রতিনিয়ত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন; আর এই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য দরকার হয় ইন্টিলেকচুয়াল প্রপার্টির রিজার্ভ বা মেধাসত্ত্ব আইন।
একজন গবেষক যখন একটি নতুন জিনিস তৈরি করেন, বা একটি নতুন পদ্ধতির আবিষ্কার করেন তখন সেই জিনিসটার কৃতিত্ব সেই গবেষকে দেওয়া হয়। যদি একজন বিজ্ঞানী একটি ফল থেকে একটি ভিটামিন তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেন, তবে সেই আবিষ্কারের কৃতিত্ব ঐ বিজ্ঞানীরা নামে নিবন্ধন করা হবে। পরবর্তীতে কোন কোম্পানি যদি এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ভিটামিন তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে, তবে লাভের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ঐ বিজ্ঞানীকে দিতে হবে। এই বিষয়টাকে বলা হয় পেটেন্ট রাইট, বা মেধাস্বত্ত্ব আইন। গবেষণা থেকে দেখা যায় যে- একটি রাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হবে কিনা সেটা এই পেটেন্ট রাইটের প্রয়োগের উপর নির্ভর করে।
একজন মানুষ যখন একবার কোনো আবিষ্কারের পেটেন্ট পেয়ে যায়, তখন সে চায় এই আবিষ্কারের ফল যেন তিনি আজীবন ভোগ করে যেতে পারেন। কিন্তু অন্য কেউ যদি ঐ জিনিসের থেকেও ভালো কোনোকিছু আবিষ্কার করে ফেলে, তাহলে কিন্তু তিনি আর ঐ পেটেন্ট থেকে কোন আয় করতে পারবেন না। ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তিনি তার প্রভাব খাটিয়ে এই ঘটনাটা যেন না ঘটতে পারে সেই ব্যবস্থা করেন। যারা কোন গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেন, তারা অল্প সময়ের মধ্যেই প্রচুর ধন সম্পদ ও ক্ষমতার অধিকারী হয়ে পড়েন। ফলে, এই প্রভাব খাটানো খুবই সহজ হয়। এখন, এই অবস্থা হলে তো প্রযুক্তির কোন অগ্রগতি হবে না। আর প্রযুক্তির অগ্রগতি না হলে টেকসই উন্নয়নও সম্ভব নয়।
তাই, টেকসই উন্নয়নের জন্য এমন একটা ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন যেখানে কেউ এভাবে প্রভাব খাটাতে পারবে না। এমন একটি ব্যবস্থা হলো Pluralistic political institutions। এই রাজনৈতিক কাঠামো হলো Extractive Political Institutions এর ঠিক উল্টো। এই পদ্ধতিতে অল্পকিছু মানুষ তাদের নিজেদের সুবিধার জন্য কোনভাবেই প্রভাব খাটতে পারবে না। যা দেশের সর্বসাধারণের জন্য ভালো, Pluralistic রাজনৈতিক কাঠামোতে শুধু সেই সিদ্ধান্তটাই নেওয়া হয়।
এই প্লুরালিস্টিক রাজনৈতিক কাঠামো থাকলে সব সময় নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি হবে। কেউ যদি আগের প্রযুক্তির চাইতে ভালো প্রযুক্তি তৈরি করতে না পারে তবে আগের আবিষ্কারকই মেধাস্বত্ত্বের ফল ভোগ করবে। ফলে দেশের মেধাবী মানুষরা আগের প্রযুক্তির চাইতে ভালো প্রযুক্তি তৈরি করার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যায়। পলিটিক্যাল ইকোনোমিস্ট Joseph Schumpeter এই বিষয়টার নাম দিয়েছেন 'creative destruction' । একটি রাষ্ট্রে যখন এই ক্রিয়েটিভ ডিস্ট্রাকশন প্রক্রিয়াটা চলতে থাকে, তখন সেখানে নিয়মিত আরও উন্নতমানের প্রযুক্তি এবং পণ্য তৈরি হতে থাকে। একমাত্র pluralistic political institutions ই এই ক্রিয়েটিভ ডিস্ট্রাকশনের গ্যারান্টি দিতে পারে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রে যদি pluralistic এর বদলে Extractive রাজনৈতিক কাঠামো থাকে তবে কোনভাবেই ক্রিয়েটিভ ডিস্ট্রাকশনের মাধ্যমে বেটার টেকনোলজি এবং বেটার প্রোডাক্ট তৈরি করা সম্ভব নয়।
তবে এখানে আরেকটি কথা আছে। প্লুরালিস্টিক পলিটিক্যাল কাঠামোর পাশাপাশি ওই রাষ্ট্রে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণও লাগবে। কারণ, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কেন্দ্রীকরণ ছাড়া pluralistic political institutions আবার সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে ফেলবে।
তার মানে একটি রাষ্ট্রে pluralistic political institutions লাগবে, পাশাপাশি লাগবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ। এটা থাকলে তখন রাষ্ট্রে ক্রিয়েটিভ ডিস্ট্রাকশনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি তৈরি হবে। এবং এই নতুন নতুন প্রযুক্তিই মূলত দেশের টেকসই উন্নয়ন ঘটাবে।
তাহলে একটি রাষ্ট্র কেন ব্যর্থ হয়? যদি এই দুই অর্থনীতিবিদের তত্ত্বকে অল্পকথায় ব্যাখ্যা করি তাহলে বলা যায়- কোন এলাকার স্থানীয় সম্পদ যত বেশিই থাকুক না কেন, সেই সম্পদ দিয়ে আসলে একটি দেশের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন সম্ভব নয়। একটি সমাজ বা দেশ টিকে থাকতে হলে তাদের প্রতিনিয়ত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন করতে হয়। আর এই উন্নয়নই একটি দেশকে অর্থনৈতিক অগ্রগতি এনে দেয়। আর এই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য যা সবথেকে বেশি প্রয়োজনীয় তা হলো দেশটির রাজনৈতিক কাঠামো। দেশে যদি সঠিক রাজনৈতিক কাঠামো না থাকে, আইনের প্রয়োগ না থাকে, তবে সেই দেশে অল্পকিছু মানুষ সুবিধা ভোগ করে ধনী হয়। আর এক পর্যায়ে সেই সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়ে পড়ে বা কলাপ্স করে। তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামো।
----------
আজ থেকে ২৩ শত বছর আগে সাইরিন নামে এক প্রাচীন গ্রীক নগরে জন্ম নেন এরাতোসথেনেস নামে এক জ্ঞান পাগল মানুষ। প্রাচীন সাইরিন নগরী অবস্থিত বর্তমান লিবিয়াতে। সাইরিনে জন্মগ্রহণ করলেও জ্ঞান অর্জনের প্রতি মারাত্মক আকর্ষণ তাকে নিয়ে যায় গ্রিক নগরী এথেন্সে। এথেন্সে বিচিত্র সব বিষয়ে জ্ঞান অর্জন শেষে তিনি চলে আসেন আলেকজান্দ্রিয়াতে। এই আলেকজান্দ্রিয়া অবস্থিত বর্তমান মিশরে। ঐ আমলে আলেকজান্দ্রিয়া নগরটা ছিল জ্ঞান অর্জনের কেন্দ্র। গ্রীকরাই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই নগরী। মেসেডোনিয়ার রাজা আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট নিজে গোড়া পত্তন করেন এই নগরীর। আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরী ছিল প্রাচীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লাইব্রেরী। সমস্ত পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ সব পুঁথি-পুস্তক সমাহার ছিল এই লাইব্রেরী। এরাতোসথেনেস ছিলেন এই বিখ্যাত লাইব্রেরীর পরিচালক।
বলা হয় যে, ঐ আমলের এমন কোন বিষয় নেই যা নিয়ে এরাতোসথেনেসের জ্ঞান ছিলনা। যারা তার জ্ঞানের জন্য তাকে হিংসা করত, তারা অনেকেই টিপ্পনি কেটে বলত- “এরাতোসথেনেস হলো পৃথিবীর সব বিষয়ে দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী”। কিন্তু তারা নিজেরাও এটা জানত যে, এরাতোসথেনেস ছিলেন শ্রেষ্ঠ।
এরাতোসথেনেস একদিন আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরীতে কিছু প্রাচীন পুঁথি নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলেন। ঐ আমলের বেশিরভাগ পুঁথিই ছিল প্যাপিরাসের। সেই প্যাপিরাসের পুঁথিতে এমন অদ্ভুত একটা কথা লেখা ছিল- যেখানে তার চোখ আটকে যায়। সেখানে লেখা আছে, “সায়ানের দক্ষিণ সিমান্তের কাছে একটি এলাকায়, অর্থাৎ নীলনদের প্রথম খাড়া জলপ্রপাতের কাছে একটি এলাকাতে- ২১ শে জুন দুপুর বেলা খাড়া করা লাঠির কোন ছায়া পরে না”। এই ঘটনা একটা সাধারণ লোক পড়লে হয়ত আবাক হতেন না। দুপুর বেলা লাঠির ছায়া পড়ে না, না পড়ল! তাতে অবাক হওয়ার কি আছে! কিন্তু এরাতোসথেনিস ছিলেন বিজ্ঞানী মানুষ, তিনি খুবই আবাক হলেন। তার যতদুর মনে পরে আলেকজান্দ্রিয়া বা এথেন্সে তিনি এমন কোন ঘটনা দেখেন নি। এই সময়টাতে সূর্য একদম মাথার উপরেই থাকার কথা, কিন্তু তারপরও ছায়া একদম মিলিয়ে যেতে তিনি দেখেননি। ফলে তিনি অপেক্ষা শুরু করলেন। সত্যি সত্যি দেখা গেল ২১ জুন তিনি খাড়া লাঠিরও ছোট একটা ছায়া পাচ্ছেন।
কিন্তু এটি কিভাবে সম্ভব? এরাতোসথেনেসের বৈজ্ঞানিক মন চিন্তা করতে থাকল। তিনি ভেবে দেখলেন পৃথিবীর পৃষ্ঠটা যদি সমতল হয় তবে এটি কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাহলে পৃথিবী নিশ্চই কোন গোলোক, আর এর পৃষ্ঠটা নিশ্চয় বাকা। তিনি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হলেন যে আসলেই ২১ জুন দুপুরবেলা সায়েনে থাকা কোন লম্বা লাঠিতে ছায়া পরে না। এরপর তিনি একজন লোক নিয়োগ করে সায়েন থেকে আলেকজান্দ্রিয়ার দূরত্ব মেপে বের করলেন। এরপর তিনি মেপে দেখলেন আলেকজান্দ্রিয়ার ছায়ার সাথে লাঠিটি ৭ ডিগ্রি কোন তৈরি করে। পৃথিবী যদি একটি গোলোক হয়, তাহলে তার পরিধিও এবার বের করা সম্ভব। কারন বৃত্তের ৩৬০ ডিগ্রিকে সাত দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় ৫০। তাহলে পৃথিবীর পরিধি হবে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে সায়েনের দূরত্বের ৫০ গুণের মত। তার নিয়োগ করা লোক মেপে দেখেছিলেন যে দুই জায়গার দূরত্ব ৮০০ কিলোমিটারের মত। ফলে তিনি ঘোষণা করলেন যে- পৃথিবীর পরিধি হলো ৮০০ গুণ ৫০ = ৪০০০০ কিলোমিটার। ভাবলে অবাক হতে হয় আজ থেকে প্রায় ২৩০০ বছর আগে একটা লাঠির সাহায্যে তিনি হিসেব করে পৃথিবীর পরিধি বের করে ফেলেছিলেন।
তবে ২৩০০ বছর আগে আধুনিক কোন যন্ত্র ছাড়াই পৃথিবীর পরিধি মেপে বের করাটা কিন্তু তার মূল কৃতিত্ব নয়। ঐ আমলে কেউ চিন্তাই করত না যে, পৃথিবীটাকে আমরা মেপে ফেলতে পারি। আমাদের এই পৃথিবীটা যে একটা ছোট গোলাকার গ্রহ, এটাকে যে মেপে দেখা সম্ভব, এই ধারণাটাই আমরা প্রথম পেলাম এরাতোসথেনেসের কাছ থেকে। ঐ সময়টাতে এই চিন্তাটাই ছিল সবচেয়ে বৈপ্লবিক।
আজকের দিনে আমরা মহাবিশ্বের বিলিয়ন বিলিয়ন কিলোমিটার দুরের নক্ষত্রদের হাই ডেফিনেশন ছবি তুলতে পারি। মহাবিশ্বের কোথায় কোথায় ডার্ক ম্যাটার আছে তার ত্রিমাত্রিক নকশা করে ফেলতে পারি। কিন্তু এই যে এত বিশাল মহাবিশ্বে আমাদের ক্ষুদ্র পৃথিবীর অবস্থান, এইসব সম্পর্কে চিন্তার শুরুটাই হয়েছিল এরাতোসথেনেসের ঐ পরিমাপের ফলে।
এরাতোসথেনেসের এই কাহিনীটা নেওয়া হয়েছে কার্ল সাগানের লেখা কসমস বইটি থেকে। এরাতোসথেনেসের আমাদের পৃথিবীটাকে পরিমাপ করে এই পৃথিবীতে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে চিন্তা করার শুরুটা করে দিয়েছিলেন, অন্যদিকে কার্ল সাগান আমাদের শিখিয়েছেন এই বিশাল মহাবিশ্বে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে চিন্তা করতে।
কোটি কিলোমিটার দুরের মহাকাশযান থেকে যখন প্রথম বারের মত পৃথিবীর ছবিটি তোলা হয়েছিল, তখন পৃথিবীকে মনে হচ্ছিল একটি ধুসর বিবর্ণ নীল বিন্দু। কার্ল সাগানই এর নাম দিয়েছিলেন পেল ব্লু ডট। আজকের দিনে আমরা হরহামেশাই বলি, “আমরা হলাম নক্ষত্রের সন্তান”, কিন্তু এভাবে মহাজাগতিক প্রেক্ষাপটে চিন্তা করতে আমাদের শিখিয়েছিলেন এই কার্ল সাগান।
কার্ল সাগান তার কসমস বইতে- সেই প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি আমরা এই মহাবিশ্ব, পৃথিবী এবং মানবজাতি সম্পর্কে যা কিছু জেনেছি, আমাদের যে মহাজাগতিক বোধ তৈরি হয়েছে- তার এক নতুন মহাকাব্য তৈরি করেছেন। এই কসমস বইটিকে সাধারণ এক বিজ্ঞান বা ইতিহাসের বই বললে আসলে এর গভীরতা বোঝানো যাবে না। এটা হলো আমাদের এই মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানবজাতির বোধের এক পরিপূর্ণ উপাখ্যান। আমরা যদি মহাজাগতিক পরিসরে চিন্তা করি, তাহলেই বোঝা যাবে এই মহাবিশ্বের তুলনায় আমরা এবং আমাদের পৃথিবী কত ক্ষুদ্র। আর তখন আমাদের মধ্যে জেগে ওঠে সম্পূর্ণ আলাদা এক ভ্রাতৃত্ববোধ।
আমরা যদি মহাবিশ্ব সৃষ্টির শুরু থেকে আজ পর্যন্ত পুরো সময়টাকে নিয়ে চিন্তা করি, তাহলেই বুঝতে পারব মহাকালের কত ক্ষুদ্র সময়জুড়ে আমাদের অস্তিত্ব। আমরা যদি এই পুরো সময়টাকে এক বছর হিসাবে ধরে নেই তাহলে বিষয়টা বুঝতে আমাদের সুবিধা হবে। এই এক বছরের ক্যালেন্ডারের আমাদের মহাবিশ্ব সৃষ্টি যদি হয় ১ লা জানুয়ারী, তাহলে এই পৃথিবীতে আমাদের মানব প্রজাতির আগমন হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১ টা ৫২ মিনিটে! আর আমরা কৃষিকাজ শুরু করেছিলাম ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট ৩২ সেকেন্ডে। অর্থাৎ পুরো বছর জুড়ে আমাদের মানব প্রজাতির কোন অস্তিত্বই ছিল না। আমরা সিনে এসেছি বছরের শেষ দিন, তাও আবার রাত বারোটা বাজার মাত্র ৮ মিনিট আগে। মহাকালের কাছে আমরা যেমন অর্বাচীন, মহাবিশ্বের কাছে আমরা তেমনি ক্ষুদ্র। আজকাল অনেক লেখকই মহাজাগতিক বর্ষপঞ্জির মত করে একটা কিছু তাদের বইতে রাখেন, এই আইডিয়াটাও তৈরি করেছেন কার্ল সাগান তার এই কসমস বইতে। কার্ল সাগান এবং তার কসমস প্রতিটি গভীর বোধসম্পন্ন মানুষের এক অবশ্যপাঠ্য। আপনি যদি কসমস না পড়ে থাকেন, তাহলে আমি বলব আজই শুরু করুন মানবজাতির সাথে এই মহাবিশ্বের সম্পর্কের এই মহা-উপাখ্যান।
==========
ভাইকিংরা আজ থেকে প্রায় ১০০০ বছর আগে গ্রিনল্যান্ডে গিয়ে বসবাস শুরু করে। গ্রিনল্যান্ডে এই নর্স সমাজ প্রায় ৫০০ বছর টিকে ছিল। ৫০০ বছর পর ওদের সমাজ কলাপ্স করে। একটি সমাজ কলাপ্স করার পেছনে বেশ কিছু কারন থাকে। গ্রিনল্যান্ডের এই ভাইকিংদের পতনের প্রধান কারনটা ছিল একটু ব্যতিক্রমী। সোজা কথায় বলতে গেলে- মাছ খাওয়ার অনিহার কারনে ওরা টিকে থাকতে পারেনি।
মেরু অঞ্চলে বছরের একটা বিশাল সময় জুড়ে সূর্যের তাপ থাকে না। ফলে ভিটামিট ডি পাওয়ার জন্য এইসব অঞ্চলের মানুষদের সামুদ্রিক মাছের উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু প্রাচীনকালের মানুষ তো আর আজকের দিনের মত ভিটামিট ডি টেস্ট করতে পারত না। মূলত স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ সামুদ্রিক মাছ ধরা পরে, বিশেষ করে এই অঞ্চলটাতে স্যামন মাছের ছড়াছড়ি। ফলে এই অঞ্চলের মানুষের একটা সহজ খাদ্য হলো সামুদ্রিক মাছ। অন্যদিকে এই সহজ খাদ্যটাতেই ওমেগা ৩ এবং ভিটামিট ডি থাকে। এই অঞ্চলে টিকে থাকার জন্য এই দুইটা জিনিস আবশ্যক।
আইসল্যান্ডেরও অবস্থাটাও সেম। সেখানেও একদিকে যেমন প্রচুর মাছ ধরা পরে, তেমনি সূর্যের আলোও নেই। ফলে এই অঞ্চলের বাসিন্দারা কোনদিন ভিটামিন ডি এর অভাবে বিপদে পরে নি।
কিন্তু গ্রিনল্যান্ডের ল্যান্ডস্কেপটা একটু আলাদা। সেখানে এত মাছ ধরার সুবিধা নেই। আরেকটি বিষয় হলো ভাইকিংরা গিয়ে বসতি করেছিল দ্বীপের ভেতরের দিকে। ওরা সাথে করে নিয়ে গিয়েছিল ভেড়া, ছাগল এবং আরও কিছু গবাদি পশু। পাশাপাশি ওরা গ্রিনল্যান্ডে থাকা সিল শিকার করতে পারত। ছিল কিছু রেইন্ডিয়ারও। ফলে এই দিয়ে ওদের খাদ্যের অভাব মিটে যেত। ফলে কষ্ট করে মাছ ধরার প্রতি ওদের ধীরে ধীরে অনিহা দেখা দিতে থাকে। এবং এক পর্যায়ে ওরা মাছ ধরা একদমই বাদ দিয়ে দেয়। প্রত্নতাত্ত্বিক এবং গবেষকরা ওদের শেষ দিনগুলিতে মাছ খাওয়ার কোন প্রমাণ পান নি।
মেরু অঞ্চলে বসবাস করে দীর্ঘদিন মাছ না খেলে সেই সংস্কৃতির মানুষরা বেশি দিন টিকে থাকার কথা না। ভিটামিট ডি এর অভাবে মানুষের শরীর মারাত্মক দুর্বল হয়ে যায়, হাড় ডিজেনারেট করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আর এই মাছ না খাওয়ার কারনেই প্রধানত গ্রিনল্যান্ডের ভাইকিংদের সংস্কৃতি কলাপ্স করে।
আধুনিককালে স্ক্যান্ডিনেভিয়ানরা আর অত মাছ খায় না। বৈশ্বিক যুগে এসে ওদেরও খাদ্যাভ্যাস বদলে গেছে। কিন্তু তাহলে আধুনিককালে নরওয়ে বা আইসল্যান্ডে যারা বাস করে তারা টিকে আছে কি করে? ওরা মূলত ত্রান নামে একটি জিনিস প্রায় সারা বছর নিয়ম করে খায়। এই জিনিসটা মূলত মাছের তেল। খেতে খুবই বিস্বাদ, কিন্তু না খেলে উপায় নেই (আমি নিজেও খাই)। অবশ্য এই জিনিসের ক্যাপসুলও পাওয়া যায়, তবে অনেকেই র জিনিসটা খেতেই বেশি পছন্দ করেন। কারন সেটা একদম অর্গানিক।
--
পৃথিবীর সব জায়গার মিঠা পানিতে ডেলোইড (Bdelloid) নামে একটা অদ্ভুত প্রাণী পাওয়া যায়। এরা দেখতে অনেকটা ইংরেজি কমার মত। এই প্রাণীগুলো এতই ছোট যে, খালি চোখে এদের দেখবার উপায় নাই। সাইজ যত ছোটই হোক, এরা কিন্তু প্রাণী। না ব্যকটেরিয়া, না শৈবাল। এদের শরীরের সাথে ছোট চাকার মত থাকে, সেই চাকা ঘুরিয়ে এরা পানির মধ্যে আরামে ঘুরেফিরে ব্যকটেরিয়া খেয়ে বেড়ায়। পানি ছাড়া এই প্রাণীগুলো অচল। পানি যখন শুকিয়ে যায় বা পানি বরফ হয়ে যায়, তখন এরা ঘুমিয়ে পরে। ওদের এই ঘুমন্ত দশাকে বলা হয় টুন।
একবার এই টুন দশায় যাওয়ার পর আপনি এদের মাইনাস ১০০ ডিগ্রিতে ফ্রিজিং করে রেখে দিন, বা ঘন্টাখানেক সেদ্ধ করেন- তাদের ওদের তেমন কিছুই যায় আসে না। এদের দেহ ভেঙ্গে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়া তো দূরে থাক, এরা দিব্যি বেঁচে থাকে। এদের সাইজ খবই ছোট হওয়ার কারনে- আফ্রিকার ধূলিকণা যখন আটলান্টিক মহাসাগর পারি দিয়ে আমাজনে বনে চলে যায়, তখন সেই ধূলিকণার সাথে এই ডলোয়েডরাও পুরো অ্যাটলান্টিক পাড়ি দিয়ে আফ্রিকা থেকে অ্যামেরিকায় চলে যায়। এরপর কোন জলাশয়ে গিয়ে পরার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই জীবিত হয়ে ডিম দিয়ে, তাতে বাচ্চাও ফুটিয়ে ফেলে।
এদের প্রজনন হার এতই বেশি যে, দুই মাসের মধ্যে এরা যেকোনো মাঝারি আকারের পুকুরকে বাচ্চা দিয়ে ভরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এই যে প্রডাকশন রেট- তা কিন্তু একদমই পুরুষ সদস্য ছাড়া। সারা পৃথিবীতে ডেলোইডদের প্রায় ৫০০ টি মত প্রজাতি পাওয়া গেলেও- একটি প্রজাতিতেও এদের কোন পুরুষ সদস্য নেই। সোজা কথায় এদের সাথে “সেক্স” ব্যাপারটার কোন সম্পর্কই নেই।
গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে যে- এরা মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরেই এমন সেক্স না করে টিকে আছে। দুইটি আলাদা ডেলোইড নিয়ে তাদের DNA পরীক্ষা করলে দেখা যাবে- এদের শরীরের একই জিনের মধ্যে পার্থক্য প্রায় ৩০%। এই পার্থক্য থেকে বোঝা যায় যে- ওরা অন্তত ৪০ থেকে ৮০ মিলিয়ন বছর আগে সেক্স করা বাদ দিয়েছে।
তবে এই অতিক্ষুদ্র প্রাণীই নয়, সেক্স করে না এমন বড় আকারের প্রাণীও কিন্তু রয়েছে। অ্যামেরিকার নিউ মেক্সিকোতে এক ধরণের গিরিগিটী পাওয়া যায় যারা সেক্স ছাড়াই বাচ্চা উৎপাদন করে। কিন্তু ডেলোইডরাই একমাত্র প্রাণী যাদের ৫০০ প্রজাতির একটি প্রজাতিতেও সেক্সের অস্তিত্ব নেই। আর একারনেই হয়ত সব ডেলোইডরা দেখতেই প্রায় একই রকম। বিজ্ঞানীদের কাছে তাই এই প্রাণীগুলো এক বিস্ময়- যারা বিগত ৮০ মিলিয়ন বছর আগে সেক্সকে বিদায় জানিয়ে এখনো ৫০০ প্রজাতি নিয়ে টিকে আছে। ব্রিটিশ এক জীববিজ্ঞানী তাই এদেরকে নাম দিয়েছেন, “ইভ্যোলুশনারি স্ক্যান্ডাল”।
এই “সেক্স” বা যৌন জনন ব্যপারটার শুরু হয়েছিল মূলত পরজীবীর আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। আজ থেকে বিলিয়ন বছর আগে যখন সেক্সের উৎপত্তি ঘটেছিল- তখন এটি ছিল টিকে থাকার একটা কৌশল। যৌন জননের ফলে সহজেই জেনেটিক ভেরিয়েশন তৈরি হতো, আর জেনেটিক ভেরিয়েশনের ফলে নতুন পরিবেশে বা পরজীবীর আক্রমণ থেকে টিকে থাকতে একটা সুবিধা পাওয়া যেত। কিন্তু দেখুন সেই ছোট ঘটনা কতদুর গড়িয়েছে। এখন পুরুষরা BMW, বিলিয়ন ডলার আর ক্ষমতার পেছনে ছুটছে- কারন এগুলো পেলে সে তার ইচ্ছামত সুন্দরীকে বাছাই করতে পারবে, তাদের সঙ্গী হিসেবে পাবে।
আর এই সেক্স শব্দটা আমাদের সাধারণ মানুষের কাছে যতটা ফ্যাসিনেটিং, বিজ্ঞানীদের কাছে সম্ভবত তার থেকে অনেক বেশি ফ্যাসিনেটিং এবং অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। সেক্স বিষয়টার অস্তিত্ব কেন আছে সেটা নিয়েই রয়েছে বিপুল পরিমাণ গবেষণা। অন্যদিকে মানুষের যৌনতা এবং তার যৌন আচরণ অন্যসব প্রাণীর থেকে অনেক আলাদা।
ম্যাট রিডলি মানুষের যৌন আচরণের এই আকর্ষণীয় এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখেছেন আস্ত এক বই, নাম The Red Queen: Sex and the Evolution of Human Nature।
এই বইতে তিনি মানুষের যৌন আচরণ এবং এর বিবর্তন নিয়ে বস্তারিত আলোচনা করেছেন। তবে সেই আলোচনা শুধুমাত্র একটা দুইটা টপিকেই আটকে থাকেনি। উঠে এসেছে লক্ষ লক্ষ বছরের ইভ্যোলুশনারি হিস্টোরি। এই বইয়ের পাতায় পাতায় রয়েছে অবাক হবার মত সব বিষয়। ম্যাট রিডলি একজন ব্রিটিশ জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক, সাংবাদিক, রয়েল সোসাইটির ফেলো এবং সফল ব্যবসায়ী। তার লেখালেখির পরিধি জনপ্রিয় বিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান থেকে শুরু করে অর্থনীতি পর্যন্ত বিস্তৃত। কৌতূহলী মানুষের জন্য The Red Queen বইটা একটা মাস্ট রিড।
----
নোয়াম চমস্কি এবং কিছু ভাষাবিদের তত্ত্ব অনুসারে- বাচ্চাদের মস্তিষ্কে, “ইউনিভার্সাল গ্রামার মেশিন” নামে একটি অংশ এ্যাকটিভ থাকার কারনে বাচ্চারা স্বাভাবিকভাবেই কোন নতুন ভাষা শিখে নেয়। কিন্তু একটা বয়সের পর মানুষের আর এই ক্ষমতা থাকে না। তখন নতুন ভাষা শিখতে হলে মানুষকে অনেক অনুশীলন করে তারপর সেই ভাষা আয়ত্ত্ব করতে হয়।
লেখকের তত্ত্ব অনুসারে- মানুষের ভাষার শুরুটা হয়েছিল হোমো ইরেক্টাসের আমলে। এই প্রাচীন মানুষেরা ছড়িয়ে পরেছিল প্রায় সারা পৃথিবীতে। নতুন নতুন পরিবেশে চলার জন্য এরা নতুন এক ধরণের সংস্কৃতি তৈরি করেছিল। আর এই কাজগুলো করার জন্য তাদের দরকার হয়েছিল সংকেত ভিত্তিক এক ধরনের শব্দ আবিস্কারের। এই প্রাচীন মানুষগুলোর মস্তিষ্ক যখন বড় হচ্ছিল, তখন এরা ধীরে ধীরে নতুন ধরণের অঙ্গভঙ্গী এবং গলার স্বর আয়ত্ত্ব করছিল। আর এই কাজটা হয়েছে বিশাল একটা সময় জুড়ে। প্রায় ৬০ হাজার প্রজন্ম ধরে চলেছে এই আয়ত্ত্ব করার কাজ। এই ৬০ হাজার জেনারেশন ধরে যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে সেগুলোর সংখ্যাও অনেক বিশাল। মানুষের স্বরযন্ত্র এবং ডায়াফ্রামের মধ্যে থাকা ১০০ এরও বেশি ছোট ছোট পেশিতে হয়েছে বিভিন্ন রকম পরিবর্তন।
===========
------------
সুদুর অতিতে অ্যামেরিকা মহাদেশে যে সাম্রাজ্যগুলো গড়ে উঠেছিল যেমন- অ্যাজটেক সভ্যতা, মায়া সভ্যতা বা ইনকা সভ্যতা, এসব সভ্যতার মানুষেরা পশুপালনে অভ্যস্ত ছিল না। তাদের সাথে পশুদের কোন ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল না। এর ফলে প্রাণীর শরীর থেকে কোনো রোগ তাদের মধ্যে প্রবেশ করতেও পারেনি, আর এর ফলে তাদের শরীরেও তেমন কোন ইম্যুনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়নি। ইউরোপীয়রা যখন আমেরিকান সাম্রাজ্য দখল করতে গিয়েছিল তখন সংখ্যা ওই নেটিভ আমিরিকানদের তুলনায় এতই কম ছিল যে, আধুনিক অস্ত্র দিয়েও আমেরিকা দখল করা সম্ভব হতো না। ইউরোপীয়রা আমেরিকা জয় করতে পারার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো- তাদের রোগ। ইউরোপীয়দের শরীর থেকে যে রোগগুলো আমেরিকানদের শরীরে প্রবেশ করেছিল; সেটা তাদের এতই কাবু করে ফেলেছিল যে, কয়েক বছরের মধ্যেই তাদের জনসংখ্যার ৯০% মানুষ মারা যায়।
--------------
প্রাচীন মানুষেরা যখন দল বেঁধে মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে এসে বসতি শুরু করে– তখন তারা ইতোমধ্যে কৃষিকাজ, পশুপালন, কাপড় বুনন ইত্যাদি জীবন ধারনের মূল বিদ্যাগুলো জানত। সুমেরীয়রা নিশ্চয় এগুলো তাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকেই পেয়েছিল। কিন্তু ওদের পূর্বপুরুষরা বিদ্যাগুলো পেল কিভাবে? জার্মানির বিখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ক্লাউস শ্মিট মনে করেন– এই বিদ্যাগুলোর সাথে জড়িত আছে প্রায় সাড়ে এগারো হাজার বছর পুরনো এক প্রাচীন স্থপনা–যার নাম গোবেকলি তেপে।
গোবেকলি তেপে হলো পৃথিবীর প্রাচীনতম উপাসনালয়। তুরস্কের উরফা শহর থেকে ৬ মাইল দূরে এক পাহাড়ঘেরা জায়গায় অবস্থিত এই গোবেকলি তেপে। গোলাকারে সাজানো বিশাল বিশাল পাথরের স্তম্ভ আর কারুকার্য খচিত পাথরের ভাস্কর্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই আশ্চর্য মন্দির। এর একেকটি স্তম্ভের ওজন সাত থেকে দশ টন পর্যন্ত, আর উচ্চতা পাঁচ থেকে সাত মিটার অর্থাৎ ২৩ ফুট পর্যন্ত। এই বিশাল বিশাল স্তম্ভগুলো আসলে বিশাল একেকটা আস্ত পাথরের টুকরো। এখানে একটি আধা খোদাই করা পাথর পাওয়া গেছে যার ওজন প্রায় ৫০ টন। পাওয়ায় গেছে বিশাল বিশাল পাথরে খোদাই করা দশটি ভাস্কর্য। এই পাথরগুলো বহন করে আনা, খোদাই করা এবং খাড়া করে বসানো একটি জটিল প্রক্রিয়া। আজ থেকে সাড়ে এগারো হাজার বছর আগে ওই প্রাচীন মানুষগুলো কিভাবে এটি সম্ভব করেছিল তা ভাবলে সত্যি আশ্চর্য হতে হয়।
প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণা থেকে জানা যায় যে- এই স্থপনাগুলো যারা তৈরি করেছিল তারা ছিল শিকারী ও সংগ্রহজীবী এক ধরণের যাযাবর মানুষ। তখনও মানুষ স্থায়ীভাবে বসবাস করার শুরু করেনি। কয়েক হাজার মানুষ অন্তত দশ বছর পরিশ্রম করে এই স্থপনাটা নির্মান করেছিল।
যাযাবর শিকারি সমাজের মানুষদের পক্ষে দশ বছরব্যপী একটি স্থপনা চালিয়ে যাওয়া অনেক কঠিন একটি উদ্যোগ। কিন্তু এই উদ্যোগ সফল হয়েছিল।
পাথরের স্তম্ভগুলো এবং এর আশেপাশের অঞ্চল নিয়ে গবেষণা করে প্রত্নতাত্ত্বিক ও বিজ্ঞানীরা এমন কিছু জিনিস জানতে পেরেছেন– যা একদম অপ্রত্যাশিত, কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ফসলের জিন নিয়ে যে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেন, তারা দেখতে পেয়েছেন যে- আজকে আমরা সেসব গমের প্রজাতি চাষ করি তারমধ্যে থেকে একটি প্রজাতি এসেছে গোবেকলি তেপের আশপাশের অঞ্চল থেকে। তখনও মানুষ আসলে কৃষিকাজ শুরু করেনি। কিন্তু হাজারের উপর মানুষকে দশ বছর খাওয়াতে হলে খাদ্যের ব্যবস্থা তো করতে হবে। তখন মানুষ বাধ্য হয়েই ওই অঞ্চলে অল্প পরিসরে গমের চাষ শুরু করেছিল। গোবেকলি তেপের উপসনালয়ে বিশাল বিশাল পাথরের হামান দিস্তার মত জিনিস পাওয়া গেছে। প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রমাণ পেয়েছেন যে এগুলোর মধ্যে শস্যদানা প্রক্রিয়জাত করা হত । অর্থাৎ এটাই ছিল সম্ভবত কৃষির প্রাথমিক অবস্থা। এই অঞ্চল থেকেই হয়ত মানুষ প্রথম কৃষিকাজের প্রাথমিক পাঠ নিয়েছিল। গোবেকলি তেপে যখন তৈরি করা হয়, তার কয়েক হাজার বছর আগেই শেষ বরফযুগ বিদায় নিয়েছে। তখন ওই অঞ্চলের আবহাওয়া ছিল আরও আদ্র। ওই অঞ্চলে তখন ছিল প্রচুর ঘাসি জমি। গমসহ আরও অনেক শস্য ছিল তখন ওই আশেপাশের অঞ্চলে। একদিকে খাদ্যের চাহিদা, অন্যদিকে শস্যের জমি– এই দুই মিলেই তৈরি হয়েছিল কৃষিকাজের শুরু।
এই অঞ্চলে তখন শুধু শস্যই ছিল না, ছিল অনেক প্রকার বন্য প্রাণী । এর মধ্যে সবচেয়ে উপযোগী ছিল এক ধরনের হরিণ (gazelle)। প্রত্নতাত্ত্বিকদের গবেষণা থেকে জানা যায় যে– হেমন্ত আর গ্রীষ্মকালের মাঝামাঝি সময়ে শিকারীরা প্রচুর পরিমাণে শিকার করত। এটা অন্তত নিশ্চিত করে বলা যায় যে– বছরের অন্তত নির্দিষ্ট কিছু ঋতুতে ওরা গ্রাম তৈরি করে বসবাস করা শুরু করেছিল। আর এটাই ছিল সম্ভবত পৃথিবীর প্রথম গ্রাম। এই গোবেকলি তেপেকে কেন্দ্র করেই হয়ত মানুষ প্রথমবারের মত স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছিল। জলবায়ু নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে– গোবেকলি তেপে ছিল টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর একদম উপরের (পর্বতের উচ্চ) দিকের অঞ্চলে অবস্থিত। শেষ বরফযুগ বিদায় নেওয়ার পর কয়েক হাজার বছর যখন খুব শুষ্ক আবহাওয়া ছিল, তখন টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদীর একদম উপরের দিকের এই অংশটাতে মানুষ অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিতে আসত। এই অঞ্চলটাতে তখন অপেক্ষাকৃত আদ্র ও ঘাসি জমি ছিল।
সভ্যতা শুরুর পর মানুষের মধ্যে দেবতার ধারণা অনেক পরিপক্ক হয়, যার প্রভাব আমরা দেখতে পাই সুমেরীয় মন্দিরগুলোর মধ্যে। কিন্তু সুমেরীয়রা সভ্যতা তৈরি করেছিল গোবেকলি তেপি তৈরি করারও প্রায় ছয় হাজার বছর পরে।
=============
ডলফিনরা কিন্তু মাছ নয়, বরং আমাদের মতই স্তন্যপায়ী প্রাণী। একটা মানুষ বা গরু যেমন পানির নিচে সারাদিন থাকতে পারবে না, বার বার শ্বাস নিতে উপরে উঠতে হবে- ঠিক তেমনি ডলফিনদেরও তাই করতে হয়। কিন্তু একবার চিন্তা করেন, এই অবস্থায় ওরা তাহলে ঘুমাবে কিভাবে? ওদের ঘুমটাও তাই একটু আজব। ডলফিনরা ঘুমের সময় তাদের মস্তিষ্কের অর্ধেক জাগ্রত করে রাখে, আর অর্ধেক ঘুমিয়ে রাখে। তাহলে চোখের পাতা?? হ্যাঁ অদ্ভুত হলেও সত্যি, ওরা এক চোখের পাতা খোলা রাখে আর অন্য চোখের পাতা বন্ধ রাখে !!!
আসলে মানুষের মত স্থলের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ঘুমের সাথে ডলফিন, তিমি ও অন্যান্য জলজ স্তন্যপায়ীদের ঘুমের বেশ কিছুটা তফাৎ রয়েছে। আমাদের মত ওরা ঘুমের সময় পুরো শরীরের ঐচ্ছিক পেশিগুলো অকেজো করে দেয় না। আমাদের মস্তিষ্কের যেমন দুইটা ভাগ আছে, তেমনি ওদের মস্তিষ্কও ডান হেমিস্ফিয়ার আর বাম হেমিস্ফিয়ার এই দুইভাগে আলাদা করা । ডানভাগ শরীরের বাম অংশ নিয়ন্ত্রণ করে, আর বামভাগ শরীরের ডানদিন নিয়ন্ত্রণ করে। এই ডলফিনরা ঘুমের সময় তাদের মস্তিস্কের যেকোনো একভাগ কার্যকর রাখে। যেভাগ কার্যকর রাখে তার বিপরীত দিকের চোখের পাতা খোলা রাখে। এই ঘুমের সাথে মানুষের ঘুমের আরও কিছু মূলগত পার্থক্য রয়েছে। ওদের এই ধরণের ঘুমকে বলা হয় স্লো ওয়েব স্লিপ।
আজ থেকে ১৬০০ বছর আগে ব্রিটেনের ইতিহাস হঠাৎ করেই একটা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। রোমান সাম্রাজ্য ব্রিটেন থেকে তাদের সেনাবাহিনী তুলে নেয়। এর ফলে শুরু হয় অর্থনীতিক মন্দা। পাশাপাশি সেনাবাহিনী না থাকায় বহিঃশত্রুর আক্রমনের থেকে কোন নিরাপত্তা নেই। শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধশালী দেশটি হঠাৎ করেই মারাত্মকরকমের অনিরাপদ হয়ে ওঠে। ধনী গরীব সবাই গাদাগাদি করে প্রাচীন পাহাড়ি দুর্গগুলোতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। যে দুর্গগুলো সেই লৈহযুগের পর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে ছিল, সেগুলোই হয়ে উঠে মানুষের একমাত্র নিরপদ আশ্রয়। দেশে শিক্ষাদান পড়াশুনা সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়। আক্ষরিক অর্থেই ব্রিটেনে নেমে আসে এক অন্ধকার যুগ।
এই পরিত্যক্ত রাজ্যে একদিন একদল নতুন মানুষ প্রবেশ করে। ওরা এসেছিল ইউরোপে রোমান সাম্রাজ্যের যে উত্তর সীমান্ত, তারও বেশ খানিকটা বাইরে থেকে। সেই অর্থে ওরা ছিল একদমই ভিনদেশী। এই মানুষগুলোই এংলো স্যাক্সন নামে পরিচিত। এদের মধ্যে কেউ কেউ ছিল যোদ্ধা। এরা ব্রিটেনের আদিবাসী রাজাদের সাথে মারাত্মক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু করে দেয়। তবে এই দলটার বেশিরভাগ লোকই এসেছিল নতুন আবাদী জমির খোঁজে। আশা ছিল নতুন অঞ্চলে গিয়ে খামার করে, কৃষিকাজ করে- একটা সুখী জীবন পাবে। ওরা ব্রিটেনের দক্ষিণ এবং পূর্ব উপকূলে এসে নেমেছিল। এরপর ধীরে ধীরে দ্বীপের নিচু অঞ্চলগুলো দখল করতে করতে এগিয়ে যেতে থাকে। আর এভাবে এরা তৈরি করে সম্পূর্ণ এক নতুন সভ্যতা।
এই আংলো স্যাক্সনরাই মূলত ইংল্যান্ডের গোড়া পত্তন করেছিল। প্রাচীন ব্রিটেনের দাস ব্যবস্থা, পুরনো মন্দির, ছোট ছোট বাড়ি, কেল্টিকদের দ্রুইড যাদুকরের পরিবর্তে আজকের দিনে ব্রিটেনের যে পরিচিত চেহাড়া আমরা দেখি, তার ভিত্তি তৈরি করেছিল এই আংলো স্যাক্সনরাই। থর এবং ওডিনের পুজার বদলে নতুন যে বিশ্বাস আজকের দিনে আমরা দেখি- সেটার শুরুও হয়েছিল ওদের মাধ্যমেই। ওরা আসার আগে মানুষ কথা বলত ল্যাটিন এবং কেল্টিক ভাষায়। আজকের দিনে সেই ভাষার কোন অস্তিত্ব আধুনিক ইংরেজির মধ্যে পাওয়া যাবে না। ওরা যে ভাষাটার প্রচলন করেছিল সেটাকে এখন আমরা ওল্ড ইংলিশ বা প্রাচীন ইংরেজি বলি। আজকের দিনে আমরা যে আধুনিক ইংরেজি দেখি সেই ইংরেজির প্রায় ২৬ শতাংশ এসেছে এংলো স্যাক্সনদের ওল্ড ইংলিশ থেকে।
আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগে, ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা দ্বীপপুঞ্জ থেকে প্রায় ৭০০০ হাজার কিলোমিটার সমুদ্র পাড়ি দিয়ে– পালতোলা ক্যানুতে করে এসেছিল একদল লোক। তারা এসে পৌঁছায় অদ্ভুত এক দ্বীপে। এই দ্বীপের গাছপালা বা জীবজন্তু কোনকিছুই যেন তাদের চেনা নয়। জন্তু-জানোয়ারগুলো দেখতেও যেমন অচেনা, গাছগুলো’তো আরও বেশি অদ্ভুত রকমের। এই দ্বীপটাকে বলা হয় মাদাগাস্কার। আর এই মানুষগুলোকে বলা হয় মালাগাসি জনগোষ্ঠী।
আজ থেকে প্রায় প্রায় ১৮৫ মিলিয়ন বছর আগে ভারত উপমহাদেশ, এন্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া আর মাদাগাস্কার এক সাথে জোড়া লেগে ছিল। এরপর ১২৫ মিলিয়ন বছর আগে এই বিশাল ভূমি দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। এক ভাগে ছিল ভারত উপমহাদেশ আর মাদাগাস্কার, আর অন্য ভাগে ছিল এন্টার্কটিকা আর অস্ট্রেলিয়া। এরপর ৮৮ মিলিয়ন বছর আগে ভারত উপমহাদেশ আর মাদাগাস্কারও শেষ পর্যন্ত আলাদা হয়ে যায়। ভারত এসে ধাক্কা খায় এশিয়া মহাদেশের সাথে, আর এর ফলে তৈরি হয় হিমালয় পর্বত। অন্যদিকে ভারত মহাসাগরের মধ্যে মাদাগাস্কার থেকে যায় একা। আফ্রিকা মহাদেশ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে, সমুদ্রের মধ্যে হওয়াতে মাদাগাস্কারের জীবজগত বেড়ে উঠতে থাকে বাকি পৃথিবীর থেকে সম্পূর্ণ আলাদাভাবে। মাদাগাস্কারে তৈরি হয় এক আশ্চর্য জীবজগত।
পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় প্রাণীকূলের সন্ধান পাওয়া যায় এই মাদাগাস্কারে । এখানে যেসব প্রাণী বা উদ্ভিদের দেখা পাওয়া যায়, তাদের অধিকাংশই পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। ফলে আমরা যেসব চেহাড়া ও আকৃতির জীব দেখি তাদের সাথে এদের মিল কম। ফলে এই দ্বীপের প্রাণী ও উদ্ভিদগুলো আমাদের কাছে খুবই অদ্ভুত লাগে। মাদাগাস্কারের প্রায় ৯৬ শতাংশ সাধারণ উদ্ভিদ, পাম জাতীয় উদ্ভিদগুলোর ৯৭ শতাংশ, ৮৫ শতাংশ অর্কিড, ৯০ শতাংশ সরীসৃপ, ৩৭ শতাংশ পাখি আর ৭৩ শতাংশ বাদুরই এন্ডেমিক। অর্থাৎ এদের পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। মাদাগাস্কারে পাওয়া যায় এমন উভচরদের ১০০ শতাংশই এন্ডেমিক ।
এই দ্বীপটি আফ্রিকার তীর থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার সমুদ্রের গভীরে। তবে আফ্রিকার লোকজন এই দ্বীপে আসার অনেক আগেই কয়েক হাজার কিলোমিটার দূর থেকে একদল মানুষ এসে এখানে স্থায়ীভাবে বসতি শুরু করে দেয়। পরবর্তীতে কিছু আফ্রিকান এবং আরবীয় লোকজনও এই দ্বীপে এসে ওই জনগোষ্ঠীর রক্তের ধারায় মিশে যায়। ওরা তৈরি করে এক ভিন্নরকম সভ্যতা। ওদের রয়েছে সম্পূর্ণ নিজস্ব সংস্কৃতি, নিজস্ব মিথ, এমনকি একটি প্রাচীন পৌরাণিক মহাকাব্য- ইবোনিয়া। সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় হলো- ওদের এই পৌরাণিক কাহিনী আর রামায়ণের মধ্য অসাধারণ মিল। রামায়ণ হলো রাক্ষস রাজা রাবনের হাত থেকে রামের স্ত্রীকে উদ্ধার করার অভিযান, আর ইবোনিয়া হলো পাথর মানব রাভাতোর হাত থেকে রামপেলাকে উদ্ধার করার অভিযান।
ইবোনিয়ার জন্ম হয়েছিল দেবতাদের ইশারায়। তিনি যখন তার মায়ের গর্ভে ছিলেন, তখন থেকেই তার কিছু আশ্চর্য ক্ষমতা দেখা দিতে থাকে। মায়ের গর্ভ থেকেই তিনি কথা বলতে শুরু করেন, আর সেখানেই তিনি একদিন ঘোষণা দেন যে- রামপেলা নামে এক অসাধারণ গুণবতী মেয়েকে তিনি বিয়ে করবেন। আর এই ঘটনা অবশ্য-অবশ্যই ঘটবে।
ইবোনিয়া আর রামপেলা বড় হতে থাকে। প্রকাশ পেতে থাকে তাদের অসাধারণ সব গুণ। যখন তাদের বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক, একদিন রাভাতো নামে এক পাথর মানব রামপেলাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ইবোনিয়া রামপেলাকে ফিরিয়ে আনার জন্য যেকোনো কিছু করতে রাজি । কিন্তু কাজটি অতটা সহজ নয় । রামপেলার কাছে পৌছাতে হলে তাকে অনেকগুলো পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এজন্য শুধু ক্ষমতা প্রয়োগ করলেই হবে না, প্রয়োজন হবে বিশেষ ধরণের জ্ঞানের । এই জ্ঞান আছে কেবল একজনের কাছে। তিনি হলেন মহান প্রতিধ্বনি দেবতা। কিন্তু মহান প্রতিধ্বনিকে তর্ক যুদ্ধে পরাজিত না করলে তিনি এই জ্ঞান ইবোনিয়ার কাছে প্রকাশ করবেন না। ইবোনিয়া তার সমস্ত জ্ঞান প্রয়োগ করে মহান প্রতিধ্বনিকে তর্কযুদ্ধে পরাজিত করেন। এরপর রামপেলাকে ফিরিয়ে আনার জন্য সেসব কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে তার সব উপায় তিনি জেনে নেন মহান প্রতিধ্বনির কাছে।
কিন্তু ইবোনিয়ার বাবা মা এই ভয়ঙ্কর অভিযানে যেতে তাকে বাধা দেয়। এই বিষয় থেকে দূরে রাখার জন্য তার বাবা-মা অনেক সুন্দরী ও গুণবতী মেয়েদের সাথে তাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ইবোনিয়া কিছুতেই রাজি হয় না। এই কঠিন যাত্রায় অদ্ভুত ও শক্তিশালী সব প্রাণীদের কিভাবে পরাজিত করতে হবে সেই বিষয়ে শক্তির প্রমাণ চাওয়া হয় ইবোনিয়ার কাছে। যদি সে তার শক্তির প্রমাণ দিতে পারে তবেই তাকে যেতে দেওয়া হবে এই কঠিন অভিযানে। তেব শেষ পর্যন্ত ইবোনিয়া এই কঠিন অভিযানে বেড়িয়েই পরেন।
যাত্রাপথের প্রতিটি বাধাতেই ইবোনিয়া তার শক্তি আর বুদ্ধির পরিচয় দেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই শক্তিশালী পাথর মানবের শক্তিশালী সুরক্ষাবলয় থেকে রামপেলাকে ছিনিয়ে নেওয়া। ইবোনিয়া বুঝতে পারেন যে– রামপেলাকে ছিনিয়ে নিতে হলে রাভাতোর ঘনিষ্ঠ হতে হবে। তিনি খুনখুনে-বৃদ্ধের এক ছদ্মবেশ ধারণ করে রাভাতোর বিশ্বাস ও ঘনিষ্ঠতা অর্জন করেন। তিনি ভালিহা নামে এক ধরণের বাশের তৈরি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সবাইকে মুগ্ধ করেন। পাশাপাশি তিনি ফানোরনা নামে এক ধরনের গুটি খেলায় রাভাতোসহ সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। পুরোপুরি বিশ্বাস অর্জন করার পর একদিন তিনি সুযোগ বুঝে রামপেলাকে নিয়ে পালিয়ে যান। কিন্তু রাভাতো আর তার সৈন্য তাকে আক্রমন করে। মারাত্মক যুদ্ধ হয় তাদের সাথে। ইবোনিয়া সবাইকে পরাজিত করে রামপেলাকে নিয়ে তার নিজের রাজ্যে ফিরে আসে। বিশাল আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাদের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
এই দুইটি মহাকাব্যের অনেক কিছুতেই মিল পাওয়া যায়। কিন্তু রামায়নের সাথে কি সত্যিই ইবোনিয়া মহাকাব্যের কোন যোগ আছে? ভারতীয় কবি ও কূটনৈতিক অভয় কুমার মনে করেন– রামায়ণ ও ইবোনিয়ার সাথে কোন ঐতিহাসিক যোগাযোগ আছে। তিনি এই বিষয় নিয়ে গবেষণার সময় জানতে পারেন যে, মালাগাছি ভাষার প্রায় ৩০০ শব্দ এসেছে সংস্কৃত থেকে। কিন্তু এটি কি কোনভাবে সম্ভব? এই বিষয়ে নিশ্চিত কোন তথ্য দিতে হলে আমাদের নিশ্চয় আরও অনেক তথ্য এবং গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তবে কিছু জিনিস বিবেচনা করলে মনে হতে পারে যে বিষয়টি সম্ভব ।
আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে, প্রথম শতাব্দীর দিকে ভারতীয় সংস্কৃতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতে ব্যপক মাত্রায় ছড়িয়ে পরে। এর ফলে কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, লাওস, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও মালয় অঞ্চলে ভারতীয় সংস্কৃতির একটা স্থায়ী ছাপ রয়ে যায়। এই প্রভাব এতটাই তীব্র যে- বর্তমান সময়ে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় প্রতীক হচ্ছে গরুরা (Garuda)। উত্তর ভারতীয়রা গরুরা উচ্চারন করলেও বাংলাতে হিন্দুদের এই দেবতা গরুড় পাখি হিসেবেই পরিচিত। গরুড় ছিলেন হিন্দুদের দেবতা বিষ্ণুর বাহন। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী তিনি এক পাখি মানব। এই পাখি মানব ইন্দোনেশিয়ার মত একটি দেশের জাতীয় প্রতীক হওয়াটা একটা ইঙ্গিত বহন করে। এতেই বোঝা যায় যে আর্য সংস্কৃতির প্রভাব ওই সময় কতটা জোরালো ছিল। ইন্দোনেশিয়াসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশে এখনও রামায়ণ মঞ্চ নাটক হিসেবে বেশ জনপ্রিয়। ওই বিশেষ সময়টাতে আর্য সংস্কৃতি এতটাই প্রভাব বিস্তার করে যে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াতে তা একদম স্থায়ী প্রভাব রেখে যায়।
এই প্রভাবের জন্যই কম্বোডিয়া, জাভা, ফিলিপিনো, থাই, লাও, বার্মিজ ও মালয় ভাষাতে রামায়নের একটা করে ভার্সন রয়েছে। তবে এই রামায়নগুলো কিন্তু হবহু ভারতীয় সংস্কৃত রামায়নের মত নয়। বিভিন্ন দেশে গিয়ে সেই দেশের নিজেদের সংস্কৃতির ছাপ পড়েছে সেই রামায়নগুলোর উপর। যেমন, ইন্দোনেশিয়ার রামায়নের কথাই ধরা যাক। এটি লেখা হয়েছিল প্রাচীন জাভা ভাষাতে। এই রামায়নের প্রথম অর্ধেক মূল সংস্কৃত রামায়নের মত হলেও বাকি অর্ধেক কিন্তু অনেকখানি আলাদা। এই অংশে ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী স্থানীয় দেবতা Dhayana এবং তার সন্তান গারেং, পেত্রুক, বাগোংসহ আরও অনেক স্থানীয় চরিত্রদের কাহিনী যোগ করা হয়েছে। এর ফলে ইন্দোনেশিয়ান রামায়ন এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। ঠিক একইভাবে অন্যান্য অঞ্চলের রামায়নেও যোগ হয়েছে নতুন নতুন মাত্রা।
আরেকটি বিষয় হলো- যে রামায়ন এই বিস্তৃত অঞ্চলে ছড়িয়ে পরেছিল সেটা কিন্তু মূল সংস্কৃত রামায়নটি নয়। কম্বোডিয়াতে যে রামায়ন এসেছিল সেটাতে ছিল মূলত বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রভাব। বৌদ্ধ ধর্মও ওই কাছাকাছি সময়েই ছড়িয়ে পরেছিল। আর বৌদ্ধ ধর্মও নিজেদের সাথে করে ভারতীয় সংস্কৃতি ও মিথ পুরো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়াসহ চীন জাপান পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়। আর ইন্দোনেশিয়াতে যে রামায়ন এসেছিল সেটাও মূল সংস্কৃত রামায়ন নয়। এটি ছিল ভত্তিকাব্য । ভত্তিকাব্য শব্দের অর্থ হলো ভত্তির লেখা কাব্য। এই সংস্কৃত কবি বিশেষ একটি উদ্দেশ্য নিয়ে এই কাব্যটি রচনা করেছিলেন। রামায়নের কাহিনী আর পাণিনির সংস্কৃত ব্যাকরণের সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন তিনি তার কাব্যে। আর এর ফলে সম্ভবত মূল সংস্কৃত রামায়নের থেকে ভত্তির এই রামায়ণ সাধারণ মানুষের কাছে বেশি সহজ সরল মনে হয়েছিল। তিনি ব্যকরনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে নিজের ভাষায় রামায়ণকে নতুন করে লিখেছিলেন। আর এই রামায়ণই ভত্তির বর্ননার গুণে চলে এসেছিল ইন্দোনেশিয়ায় ।
এখন ইন্দোনেশিয়া অঞ্চল থেকে কয়েকশত বছরে যদি মাদাগাস্কারে বেশ কয়েকটি মাইগ্রেশন হয়, তবে রামায়নের কাহিনী ওই মানুষগুলো সাথে করে মাদাগাস্কারে নিয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না। আর ইবোনিয়া মহাকাব্যটি কত বছর পুরনো সেটা সম্পর্কেও তেমন স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় না। গবেষকদের মতে এই মহাকাব্য মাদাগাস্কারের ছাপাখানা তৈরি হওয়ারও কয়েকশত বছর আগে থেকে প্রচলিত। কিন্তু কত বছর আগে থেকে এটি প্রচলিত, তা নিয়ে সঠিক কোন গবেষণা নেই। সে যাই হোক, রামায়নের সাথে ইবোনিয়ার কাহিনীর যোগ থাকুক বা না থাকুক, এটি বিশ্বসাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
উত্তরে সাহারা মরুভূমি আর দক্ষিণে সুদানের সাভানা তৃণভূমি– এর মাঝখানে যে অঞ্চলটা আছে সেটা হলো আফ্রিকার সাহেল অঞ্চল। সাহেলের দশটি দেশই হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে অশান্তির জায়গা। কারন অনেকগুলো। বেশিরভাগ দেশেই হয় সামরিক শাসন চলছে, অথবা সরকার খুবই দুর্বল। সন্ত্রান্স, জঙ্গিবাদ, গোলাগুলি থামানোর মত শক্তি প্রশাসনের নেই। তার উপর প্রতিনিয়ত লিবিয়া থেকে অবাধে অস্ত্র ঢুকছে। জনসংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে, কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থা খুব দ্রুত খারাপ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলটি মহাখড়ার কবলে আছে প্রায় চারশ বছর ধরে। পাশাপাশি আছে বিদেশী শক্তির বাম হাত প্রবেশ। এছাড়াও এই অঞ্চলের যাযাবর পশুপালক ও কৃষকদের মধ্যে একটা ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব আছে । এই দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ লেগেই থাকে । সাথে আছে স্থানীয় ক্রিমিনাল গ্যাং। এই অঞ্চলটা নরক হওয়ার জন্য এগুলোই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু বোনাস হিসেবে আছে কয়েকটি ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠী এবং তাদের মধ্যে বিবাদ। আইসিস, বোকো হারাম, আল কায়েদা সবাই আছে এই অঞ্চলে। এতসব সহিংসতা ও অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকলে সেই অঞ্চলের সাধারণ মানুষও মারাত্মক অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু এই অঞ্চলের সমস্যা আর অশান্তি শুধুমাত্র এই অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। রপ্তানি হচ্ছে। শুধুমাত্র বিগত কয়েক বছরেই এই অঞ্চলের ৩.৮ মিলিয়ন মানুষ এই অঞ্চলে থেকে ভূমধ্যসাগর পার হয়ে ইউরোপে গিয়ে ঢুকেছে। তুলনামূলক কম জনসংখ্যার অঞ্চল হলেও ইউরোপে ২৬ মিলিয়নের বেশি শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। এই হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে শরণার্থী ব্যবস্থাপনা নিয়ে ইউরোপ অলরেডি প্রচুর চাপের মধ্যে আছে। তার উপর সাহেল অঞ্চল থেকে আসা শরণার্থীরা এমন একটি সামাজিক পরিস্থিতি থেকে এসেছে যে তারা ইউরোপীয় সমাজের সাথে মোটেই খাপ খাওয়াতে পারছে না । অন্যদিকে বেশিরভাগ ইউরোপীয় নাগরিক এই অঞ্চলের মানুষ এবং তাদের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। এর ফলে ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে একটা নতুন ভয়ংকর পরিস্থিতি। ইতোমধ্যে সুইডেনসহ বেশকিছু দেশ এই খারাপ প্রভাব বুঝতে পেরেছে এবং সেই সমস্যা সামাল দিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। সুইডেনে ঘন ঘন আতংক ছড়াচ্ছে, নরওয়েতে বন্দুক হামলা হচ্ছে। তাহলে ইউরোপ কি শরণার্থী বিষয়ে তাদের অবস্থান বদলাতে যাচ্ছে? আর ইতোমধ্যে যে সমস্যার বীজ তৈরি হয়েছে– ইউরোপ কি এই সমস্যা সামাল দিতে পারবে? অন্যদিকে সাহেল হলো একটা সমস্যার ফ্যাক্টরি। এই ফ্যাক্টরিতে যে বোমা তৈরি হচ্ছে সেই বোমা কখন বিস্ফোরিত হবে? কারাই বা বিস্ফোরন ঘটাবে? এখানে ফ্রান্স এবং অ্যামেরিকার সেনাবাহিনী যে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চালাচ্ছে তার ভবিষ্যৎ কী? সাহেল অঞ্চল আগামী দিনে কিভাবে বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করবে?
এবার আসি সৌদি আরবের দিকে। ১৭৪০ সালে মধ্য আরবের নজদ অঞ্চলের বেশ কিছু অংশ স্থানীয় আমির মুহাম্মাদ বিন সৌদ নিয়ন্ত্রন করতেন। ১৯৩০ সালের মধ্যে তার এক বংশধর নিজেদের শাসন এলাকা আরও অনেকখানি বৃদ্ধি করেন এবং এলাকার নাম বদলে নাম রাখেন সৌদি আরব। এখন একটা দেশের নাম যদি একটা পরিবারের নামে রাখা হয়, তাহলে ওই দেশের অন্য পরিবারগুলোর কি হবে! শুনতে আজব শোনালেও সৌদি আরবের ক্ষেত্রে ঠিক এটাই হয়েছে। এর ফলে দেশের মধ্যে তৈরি হয়েছে অনেক জটিলতা। দেশটির উপসাগর অঞ্চলে রয়েছে বেশকিছু সিয়া মতালম্বী। উগ্র সুন্নি মতবাদের বিকাশের ফলে সেখানে জন্ম নিয়েছে অসন্তোষ। কিন্তু ১৯৩৮ সালে অ্যামেরিকানরা সৌদি আরবে তেলের সন্ধান পায়, বদলে যায় সৌদি আরবের পরিবর্তী ইতিহাস। তেল এনে দেয় সম্পদ, সম্পদ এনে দেয় বিশ্বের বড় বড় শক্তির ঘনিষ্ঠতা। কিন্তু তেল একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। এক সময় তেল শেষ হয়ে যাবে, আর অন্যদিকে বিশ্বেও তেলের চাহিদা কমবে। তাই সৌদি আরবকে এখন বিকল্প খুজতে হচ্ছে। এই বিকল্প অর্থনীতি কি ঘনিষ্ঠতা পরিবর্তন করবে? কোন পথে যাচ্ছে সৌদি আরব? সৌদির পরবর্তী অর্থনীতি কি কয়েকশত বছরের পুরনো ইসলামী সংস্কৃতিকে বালিত করে দেবে? কেমন হবে সৈদি আরবসহ বাকি আরব বিশ্বে?
অন্যদিকে ভূ-রাজনীতি ভূমি থেকে আকাশে উঠতে যাচ্ছে। কারন ভূমিতে যেমন সম্পদ আছে, তেমনি চাঁদেও আছে। ভূমিতে জায়গা দখল করলে বন্দুক রাখার ষ্টেশন বানানো যায়, তেমনি মহাকাশ বা চাঁদেও ষ্টেশন বানানো প্রয়োজন। ২০২০ সালের অক্টবর মাসে অ্যামেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান,সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি, যুক্তরাজ্য এবং লুক্সেমবার্গ আর্টেমিস চুক্তি নামে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এই চুক্তি অনুযায়ী তারা ২০২৮ সালে চাঁদে ১৩ তম মানুষ এবং প্রথম নারী পাঠবে। এই অভিযানের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো চাঁদে একটি বেজ ক্যাম্প তৈরি করা এবং খনিজ সম্পদ আহরন করা। কিন্তু এই বেজ ক্যাম্পটিই পরবর্তীতে দূরমহাকাশে মানব বসতি স্থানান্তরের জন্য লাঞ্চ প্যাড হিসেবে ব্যবহার হবে। চুক্তি অনুযায়ী যেসব দেশ এতে অংশ এবং কার্যক্রম পরিচালনা করবে তাদের অবশ্যই ২০২৪ সালের মধ্যে স্বাক্ষর করতে হবে এবং কার্যক্রম সম্পর্কে জানাতে হবে। এতে পরবর্তীতে ২১ টি দেশ স্বাক্ষর করলেও বাকি দেশগুলো স্বাক্ষর করেনি। কিন্তু সমস্যা সেটা না। সমস্যা হলো- এতে না স্বাক্ষর করেছে রাশিয়া, না স্বাক্ষর করেছে চীন। প্রথমত এরা স্বাক্ষর করবে না, আর স্বাক্ষর করতে চাইলেও সম্ভবত এদের স্বাক্ষর করতে দেওয়া হবে না।
অন্যদিকে স্পেস ষ্টেশন নিয়েও অ্যামেরিকার সাথে রাশিয়ার দ্বন্দ্ব হয়েছে। তাই স্পেস স্টেশনেও আর অ্যামেরিকা ও রাশিয়া একসাথে কাজ করছে না। চীন আর রাশিয়া আলাদা আলাদাভাবে চাঁদে তাদের বেজ ষ্টেশন তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে। এখন রাশিয়া, চীন বা অ্যামেরিকা কেউই চাইবে না চাঁদে বেজ ক্যাম্প করার জন্য প্রতিপক্ষ কোন নিয়ম তৈরি করুক। কে’ইবা অন্যের তৈরি করা নিয়ম মানতে চায়! রাশিয়ান স্পেস এজেন্সির প্রধান Dmitry Rogozin অলরেডি ঘোষণা দিয়েছেন যে– কোন রকম সম্মতিতে না এসে চাঁদে বা মহাকাশে আগ্রাসন চালালে আরেকটি আফগানিস্থান বা ইরাক তৈরি হতে পারে। তাহলে এতসব দ্বন্দ্বের মধ্যে কেমন হতে যাচ্ছে আগামী দিনের মহাকাশ রাজনীতি?
বিখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক এবং লেখক টিম মার্শালের মতে দশটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল আগামী দিনের বৈশ্বিক রাজনীতির গতিপথকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করবে । এই অঞ্চলগুলো হলো- ইরান, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, তুরস্ক, গ্রিস, সাহেল, ইথিওপিয়া, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া এবং মহাকাশ। তিনি তার পাওয়ার অফ জিওগ্রাফি বইতে এই অঞ্চলগুলোর ইতিহাস, বর্তমান অবস্থা এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
• •
জ্যারেড ডায়মন্ডের এক ডাক্তার বন্ধুর গল্প বলি। ডাক্তার ভদ্রলোক তখন নতুন ডাক্তার হয়েছেন। একদিন কল পেয়ে নতুন এক হসপিটালে গেছেন এক দম্পতির জটিল কোন এক রোগের চিকিৎসা করতে। গিয়ে দেখা গেল- জামাই বউ একটি কেবিনের মধ্যে রয়েছে। জামাই দেখতে একদম ছোটখাট একজন মানুষ, খুবই রোগা, একদম অজানা একটি জীবাণুর সংক্রমনের কারনে নিউমোনিয়াতে ভুগছেন। বেশ কিছুক্ষন দেখার পর ডাক্তার সাহেব রোগীকে জিজ্ঞেস করলেন- আপনি কি সম্প্রতি এমন কোন যৌনকর্মে লিপ্ত হয়েছিলেন, যার ফলে আপনার এই ইনফেকশন হতে পারে? এই প্রশ্নটি শোনার পর জামাই বেচারা তো সাইজে আরও ছোট হয়ে গেল। কিন্তু তার ছিল উচ্চারনে সমস্যা, তাই সে কি বলছিল তা ডাক্তার সাহেব তেমন কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। হঠাৎ তিনি খেয়াল করলেন বউ এর মধ্যেই স্টিলের একটি বড় বোতল দিয়ে জামাইকে মারার জন্য উঠে পড়েছে। তিনি বহু কষ্টে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পর বুঝতে পারলেন- জামাই বেচারা কিছুদিন আগে তাদের পারিবারিক ভেড়ার খামারে গিয়েছিলেন। সেকথা বলতেই বউ বোতল-হস্ত হয়েছে।
এই ধরনের ঘটনা খুব কম ঘটলেও, একদম বিরল নয়। আপাত দৃষ্টিতে দেখলে এই ঘটনার তেমন কোন ঐতিহাসিক গুরুত্ব অন্তত খুজে পাওয়া যায় না। কিন্তু এই ঘটনাটা মানুষের সংক্রমিত রোগ বা ইনফেকসিয়াস ডিজিজের মূল কারণটা আমাদের চোখের সামনে এনে তুলে দেয়। সেই কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে শুরু করে করে আজকে পর্যন্ত যতগুলো জীবাণুর কারনে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে তার প্রায় সবগুলোই এসেছে প্রাণীদের শরীর থেকে। কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে- সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে গুটিবসন্ত আর ম্যালেরিয়ার কারনে। এরপরে রয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা, যক্ষা, প্লেগ ও কলেরা। আর এইসব জীবাণু যে শুধু মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে তা’ই নয়, এই জীবাণুর কারনে বদলে গেছে ইতিহাসের অনেক গতিপথ।
ইউরোপ এশিয়ার মানুষেরা অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন ধরনের পশুপালনের সাথে অভ্যস্ত। এই পশু তাদের জীবনযাপনকে একদিকে যেমন সহজ করেছে, তেমনি তার পাশাপাশি পশুর শরীর থেকে যুগ যুগ ধরে অনেক রোগ এই অঞ্চলের মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে। ফলে হাজার বছরের ইতিহাসে এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ মারাও গেছে। কোন জীবাণুর দ্বারা মানুষ সংক্রমিত হলে- হয় সে মানুষটি মারা যায়, আর যদি না মারা যায়, তবে তার শরীরে ওই জীবাণুর বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্ম নিতে পারে। সব ক্ষেত্রে না হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্ম নেয়। ফলে পশুপালনের অভ্যাসের মধ্য দিয়ে এই ইউরোপ ও এশিয়া অঞ্চলের মানুষের শরীরে এইসব রোগ জীবাণুর প্রতি এক ধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইম্যুনিটি তৈরি হয়েছে।
অ্যামেরিকা মহাদেশে যে সাম্রাজ্যগুলো গড়ে উঠেছিল যেমন- অ্যাজটেক, মায়া বা ইনকা সভ্যতা, তারা পশুপালনে অভ্যস্ত ছিল না। অন্য কোন কারনেও তাদের সাথে পশুদের কোন ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল না। এর ফলে প্রাণী শরীর থেকে খুব বেশি রোগ তাদের মধ্যে প্রবেশ করতেও পারেনি, আর এর ফলে তাদের শরীরেও তেমন কোন ইম্যুনিটি তৈরি হয়নি। ইউরোপীয়রা যখন অ্যাজটেক বা এই ধরনের প্রাচীন আমেরিকান সাম্রাজ্য দখল করতে গিয়েছিল তখন, ইউরোপীয়দের সংখ্যা স্থানীয়দের তুলনায় এতই কম ছিল যে- আধুনিক অস্ত্র দিয়েও ওদের দেশটা দখল করা সম্ভব হতো না। ইউরোপীয়দের আমেরিকা জয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলির মধ্যে একটি হলো- তাদের রোগ। ইউরোপীয়দের শরীর থেকে যে রোগগুলো আমেরিকানদের শরীরে প্রবেশ করেছিল সেটা তাদের এতই কাবু করে ফেলেছিল যে, কয়েক বছরের মধ্যেই তাদের জনসংখ্যার ৯০% মানুষ শেষ হয়ে যায়।
মানুষের ইতিহাস নিয়ে আগ্রহী যে কারও কাছেই এটা একটা ইন্টারেস্টিং ঘটনা। এই Germs বা জীবাণু যেমন ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছে, তেমনি Gun (বন্দুক) এবং Steel (লোহা-ইস্পাত) ও তেমনি ইতিহাসের অনেক গতিপথ ওলট-পালট করেছে। ইয়্যলির মত আমার মনেও অনেক আগে থেকেই প্রশ্ন ছিল যে- আমরা উপমহাদেশের মানুষরা কি ইউরোপীয়দের থেকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অনেক পিছিয়ে? তাহলে কেন প্রযুক্তি, এমনকি চিন্তা চেতনায়ও আমরা ওদের থেকে এত পিছিয়ে!
জ্যারেড ডায়মন্ড নামে এক আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী আশির দশকে পাখির বিবর্তন নিয়ে গবেষনা করতে পাড়ি জমান জীব বৈচিত্রে ভরা পাপুয়া নিউগিনির দ্বীপে। সেখানে এক বীচে হাঁটতে হাঁটতে তার আলাপচারিতা হয় স্থানীয় যুবক ইয়্যালির সাথে। একথায় সেকথায় ইয়্যালি জ্যারেডকে এমন একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেন যা তাকে রীতিমত ভাবনায় ফেলে দেয়। তো প্রশ্নটা কি ছিল? প্রশ্নটা ছিল এই যে, আপাতদৃষ্টিতে নিউগিনি ও সাদা চামড়ার ইউরোপ আমেরিকানদের সাথে বুদ্ধিবৃত্তিতে কোনো পার্থক্য দেখা না গেলেও কেন সাদা চামড়ার লোকগুলো প্রযুক্তিতে নিউগিনির লোকদের থেকে এত বেশি এগিয়ে? সাদা লোকরা কিনা আকাশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে উড়োজাহাজে অথচ নিউগিনির প্রযুক্তি পড়ে আছে সেই প্রস্তর যুগে।
প্রশ্নটা শুনতে সহজ হলেও এর উত্তর লুকিয়ে আছে অনেক গভীরে। জ্যারেড ডায়ামন্ড সেদিন কৌতুহুলী ইয়্যালিকে হতাশ করলেও এর ২৫ বছর পর আমদের সবাইকে এই প্রশ্নের উত্তর উপহার দেন তার গানস, জারমস অ্যান্ড স্টিল ( Guns, Germs, and Steel)। বইটি প্রকাশ পাওয়া মাত্রই পাঠক ও বোদ্ধা সমাজে ব্যাপক সারা ফেলে এবং বছর ঘুরতেই পায় পুলিৎজার পুরস্কার।
ইয়্যালির এই প্রশ্নের উত্তর দিতে লেখক আমাদের যেন চড়িয়ে বসান আলাদীনের যাদুর পাটিতে, আর ঘুরিয়ে নিয়ে আসেন সেই শিকারী যুগ থেকে কৃষিবপ্লবের যুগে আবার,
কৃষিযুগ থেকে বর্তমান শিল্প বিপ্লবের যুগে। সভ্যতা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তের এই ধারাবাহিক বিবরন কোনো সহজ কাজ নয়। অথচ জ্যারেড ডায়মন্ড এই কাজটি করেছেন কত সহজ ভাষায়, কত সাবলিল ভঙ্গিতে। কেন ইউরোপিয়ানরা এশিয়া , আমেরিকা বা আফ্রিকায় উপনিবেশ গড়ে তুললো? কেন এর উল্টোটা ঘটতে পারেনি? মানে এশিয়ানরা বা আমেরিকানরা ইউরোপ দখল করতে পারেনি, কেন কোনো সভ্যতা এগিয়ে গেছে তর তর করে আর কোনো সভ্যতা থেমে আছে সেই দড়ি, কাচি, লাঠিতে? কেন একেক এলাকায় বিশাল সময় ধরে রাজনীতি ও শাসন ব্যবস্থা একটা বিশেষ প্যাটার্ন ফলো করে? যেমন বিশাল চীন ভুখন্ড হাজার বছর ধরে একক চীন শাষনের অধীনে অথচ ইউরোপ প্রায় সময়ই ছিল অনেকগুলো দেশে বিভক্ত। বইটির পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে এমন সব অসাধারণ প্রশ্ন যা পাঠকের জানার আগ্রহকে আরও জাগিয়ে তুলবে
সত্যি বলতে এই বইটি পড়ে আমি যতটা রোমাঞ্ছিত হয়েছি, কোনো জবরদস্ত রহস্য উপন্যাস পড়েও তা হইনি। আমাকে চুম্বকের মত টেনে নিয়ে গেছে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। বইটির যৌক্তিক বিশ্লেষণী অনবদ্যতা এতই আমাকে মুগ্ধ করেছে যে আমি ভুলতেই বসেছিলাম বইটি মানবতা
বিশ্বাসের মতপার্থক্যের কারনে কোটি কোটি মানুষকে জীবন দিতে হয়েছে।
মানব জাতির আদি পিতা হযরত আদম (আঃ) এর তিন পুত্র ছিলেন, ১. হাবিল ২. কাবিল ৩. শীষ (আঃ)।
কাবিল তার আপন সহোদর ভাই হাবিলকে হত্যা করেছিল, পরবর্তীতে আল্লাহ আদম (আঃ) কে আরো একটি পুত্র সন্তান দান করেন যিনি শীষ (আঃ) নামে পরিচিত।
আদম পুত্র শীষ (আঃ) এর ধারাবাহিকতায় পৃথিবীতে লক্ষাধিক মসীহ নবী এবং রাসুল আল্লাহ মানবজাতির জন্য প্রেরণ করেছিলেন।
শীষ (আঃ) এর ধারাবাহিকতায় আসেন নুহ (আঃ) এবং নূহ (আঃ) এর ৪ পুত্রদের মাধ্যমে গোটা পৃথিবীতে ভিন্ন গোত্রের সৃষ্টি হয়।
১. হাম (বহু খোদায় বিশ্বাসী), ২. সাম (এক খোদায় বিশ্বাসী), ৩. ইয়াফীস (দেব দেবীতে বিশ্বাসী), ৪. ইয়াম।
নূহ (আঃ) পুত্র সামের মাধ্যমে একাত্মবাদ বা এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী তিনটি ধর্মের মানুষের সৃষ্টি হয়, যেমনঃ
১. ইহুদী
২. খৃষ্টান
৩. মুসলিম।
পুত্র সামের বংশ পরিক্রমায় আসেন মুসলিমদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আঃ)।
ইব্রাহিম (আঃ) এর দুই স্ত্রী ছিলেন।
১. সারাহ (যিনি জেরুজালেম বসবাস করতেন।)
২. হাজেরা (যিনি মক্কা বসবাস করতেন।)
সারাহ ইব্রাহিম (আঃ) এর মাধ্যমে আসেন, হযরত ইয়াকুব (আঃ)।
অন্যদিকে হাজেরা ইব্রাহিম (আঃ) এর মাধ্যমে আসেন ইসমাইল (আঃ)।
নোটঃ ইসমাইল (আঃ) এর পর এই গোত্র থেকে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া আর কোন নবী রাসুল আসেননি।
অন্যদিকে, ইয়াকুব (আঃ) এর বংশ পরিক্রমায় পৃথিবীতে লক্ষাধিক মসীহ বা নবী রাসুল এসেছেন।
ইয়াকুব (আঃ) এর ১২ পুত্র ছিল, যার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন পুত্র হযরত ইউসুফ (আঃ) এবং ২য় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটি হচ্ছেন ইয়াহুদা (যার মাধ্যমে ইহুদি ধর্মের সৃষ্টি)।
নোটঃ জেনে রাখা ভালো যে, ইয়াকুব (আঃ) এর আরো একটি নাম ছিল - (ইজরায়েল)।
আজকের ইজরায়েল রাষ্ট্র ইয়াকুব নবীর নাম অনুসারে নাম করন করা হয়েছে।
আমরা বনি ইসরাইল নামে যাদেরকে জানি তারা ইয়াকুব (আঃ) এর বংশধর এবং ইয়াকুব (আঃ) এর পুত্র ইয়াহুদার মাধ্যমে সৃষ্টি যা পরবর্তীতে বনি ইসরাইল নামে জাতিতে পরিনত হয়।
বনি ইসরাইল ছিল ইহুদি সম্প্রদায়। (কথিত আছে, তারা জান্নাতি খাবার খেয়েছিল, তাতেও তারা সন্তুষ্ট ছিল না বরং নিজেরা আবাদি করে খাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ করে ফলে সৃষ্টিকর্তা তাদের জন্য জান্নাতি খাবার বন্ধ করে দেন।)
একটা পর্যায় ইয়াকুব (আঃ) এর বংশধরেরা আল্লাহর অবাধ্য হয়ে যান, যার ফলে আল্লাহ তাদের জন্য ফেরাউনের মতো একজন শাসক প্রেরণ করেন।
তারা ফেরাউনের গোলামে পরিণত হয়।
নিদারুন করুন পরিনতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অবশেষে ইহুদি সম্প্রদায় সৃষ্টিকর্তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং তাদের এই ক্রান্তিকাল থেকে রক্ষা করতে সাহায্য প্রার্থনা করেন। -
ফেরাউন থেকে মুক্তির জন্য সৃষ্টিকর্তা তাদের নিকট একজন মসীহ প্রেরণ করেন, যিনি মুসা (আঃ) নামে পরিচিত।
হযরত মূসা (আঃ) যার উপর তাওরাত কিতাব নাযিল হয়।
হযরত মূসা (আঃ) তিনি ফেরাউন'কে পরাজিত করেন এবং আবার একাত্মবাদ প্রচার করেন ও ইহুদীরা এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস স্থাপন করে।
ইহুদীরা মূসা (আঃ) কে মেনে নেয় এবং এক খোদায় বিশ্বাসী হয়ে উঠে।
কিন্তু দেখা যায় মূসা (আঃ) এর পরবর্তী সময়ে ইহুদীরা আবার সৃষ্টিকর্তার অবাধ্য হয়ে যায়।
ফলে, কোন একজন ভিনদেশী শাসক দ্বারা আবার জেরুজালেম থেকে বিতাড়িত হতে হয়।
আবারো ক্ষমার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা তাদের নিকট একজন মসীহ প্রেরণ করেন যিনি ডেবিট বা দাউদ (আঃ) নামে পরিচিত।
দাউদ (আঃ) এর মাধ্যমে জেরুজালেম দখল হওয়ার পর দাউদ (আঃ) একাত্মবাদ ও এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস প্রচার করতে থাকেন।
দাউদ (আঃ) এর উপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ যাবুর নাযিল হয়।
দাউদ (আঃ) এর পুত্র সোলাইমান (আঃ)।
সোলাইমান (আঃ) এর মাধ্যমে এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসীদের ব্যাপক প্রসার ঘটে এবং তিনি এই ধর্ম গোটা বিশ্বে প্রচার করেন।
নোটঃ মনে রাখা ভালো যে, ঐ যে নূহ (আঃ) এর দুই পুত্র হাম ও ইয়াফীস তাদের মাধ্যমে ততোদিনে ইউরোপ, এশিয়া আফ্রিকাতে দেব দেবীর উপাসনা, বহু খোদায় বিশ্বাসীদের প্রসার লাভ করে গেছে।
জেরুজালেমে ইহুদীদের আবার একটি জাতির বিস্তর লাভ করলেও তারা আবারও সৃষ্টি কর্তার অবাধ্য হয়ে যান এবং একজন শাসক দ্বারা জেরুজালেম থেকে বিতাড়িত হন।
নোটঃ কিন্তু ইহুদীরা জানতো তাদের মাঝে আবার একজন মসীহা আসবেন, এবং জেরুজালেম থেকে গোটা বিশ্বকে শাসন করবেন, যার কারনে জেরুজালেম এর দখল তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আজ অবধি তারা এই বিশ্বাসের উপর আছে যে, তিনি আসবেন - হয় সেইটা মসীহা না হয় দাজ্জাল।
জেরুজালেম থেকে বিতাড়িত হওয়ার প্রায় ২০০০ বছর কেটে যায়, এই সময়ের মধ্যে আল্লাহ তাদের হেদায়েত এর জন্য বহু নবী মসীহাকে প্রেরণ করেছেন, কিন্তু তারা তাদেরকেও হত্যা করেছে।
২০০০ বছর পর যখন আল্লাহ তাদের কাছে মসীহা হযয়ত ঈসা (আঃ) কে প্রেরণ করেন, ঠিক তখনও তারা তাকে অস্বীকার করে।
তারা বলে ঈসা কিভাবে আমাদের মসীহা হয়, সেতো একজন জারজ সন্তান, তার মা মরিয়ম একজন ব্যাভীচারিনী নারী।
এমনকি তারা তাকেও হত্যা করে। (যদিও ইসলাম ধর্মে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন ঈসাকে আল্লাহ তুলে নিয়েছেন।)
ইতিমধ্যে ঈসা (আঃ) অসংখ্য অনুসারী তৈরি করেছেন, জেরুজালেম থেকে রোম সব স্থানে ঈসা (আঃ) এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করতে একাত্মবাদ ও এক সৃষ্টিকর্তার ধর্ম প্রচার করেন। (ঈসা আঃ যিনি খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক।)
উনাকে হত্যার পর একটা সম্প্রদায় খুশি হয়েছিল (তারা হচ্ছে ইহুদী), আরেকটি সম্প্রদায় ব্যতীত হয়েছিল (তারা হচ্ছে খ্রিস্টান)।
এই ঘটনায় ইহুদীরা খুশি হলেও ঈসা (আঃ) এর জন্য ব্যতীত অনুসারী খ্রিস্টান সম্প্রদায় ঈসাকে মসীহা বলে স্বীকার করেন।
ফলে, এইখান থেকে আরো একটি জাত (সম্প্রদায়) ও ধর্মের সৃষ্টি হয়, যার নাম খ্রিস্টান।
ঈসা (আঃ) পরবর্তী সেন্ট পল নামে একজন পাদ্রি এই ধর্ম প্রচার করতে থাকেন। (যদিও মুসলিমদের এইখানে আপত্তি আছে যে, সেন্ট পল ঈসা (আঃ) এর রেখে যাওয়া কিতাব ও বার্তাকে বিকৃত করে উপস্থাপন করেছেন)।
ঈসা (আঃ) এর উপর একটি পবিত্র ধর্মগ্রন্থ নাযিল করা হয় যার নাম ইনযিল (বাইবেল)।
নোটঃ এইখানে মনে রাখতে হবে যে, ইয়াকুব (আঃ) বংশধর থেকে নবী আসার যে পরিক্রমা ঈসা (আঃ) এর মাধ্যমে শেষ হয়।
এবং ইসমাইল (আঃ) বংশধর থেকে একজন নবী রাসূলের পৃথিবীতে আগমন ঘটে।
যিনি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যাকে আমরা আখেরি বা শেষ নবী হিসাবে জানি, উনার মাধ্যমে পৃথিবীতে নবী রাসূল আসার যে রীতি ছিল তা মহান সৃষ্টিকর্তা বন্ধ করে দেন।
মহান সৃষ্টিকর্তা সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসীহা হিসাবে প্রেরণ করেন।
ইহুদী ও খ্রিস্টান সম্প্রদায় দুয়ে তখন মুহাম্মদ (সাঃ) কে অস্বীকার করে।
কারন, তারা মনে করেন শেষ নবী তাদের গোত্র থেকে আসবে।
যেহেতু তাদের গোত্র থেকে মুহাম্মদ (সাঃ) আসেনি সুতরাং তিনি নবী নন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) একাত্মবাদ ও এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী একটি ধর্ম প্রচার করেন। যার নাম ইসলাম ও জাতি মুসলিম সম্প্রদায়।
এখন এইখানেও আমরা একটি ধর্মের সৃষ্টি দেখি যার নাম ইসলাম (মুসলিম) ধর্ম, যে ধর্মের অনুসারীরা একাত্মবাদ ও এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী।
মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন নাযিল হয়।
নোটঃ জেনে রাখি, ইহুদীরা বিশ্বাস করে তাদের একজন মসিহা আসবেন যিনি জেরুজালেম থেকে সারা বিশ্বকে শাষণ করবেন।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও বিশ্বাস করে মসীহা আসবেন এবং জেরুজালেম থেকে গোটা বিশ্ব শাসন করবেন।
মুসলিম সম্প্রদায়ও বিশ্বাস করে ইমাম মাহাদী ও ঈসা (আঃ) আসবেন এবং দাজ্জালকে দমন করে গোটা বিশ্বকে শাসন করবেন এই জেরুজালেম থেকেই।
যদিও মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, ঈসা (আঃ) আসবেন তবে তিনি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মত হয়ে।
কিন্তু এই ধর্মীয় সংঘাতের কারনে শতাব্দীর পর শতাব্দী বহু মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
প্রা*ণ দিতে হতে পারে, কারন এই সংঘাত বিশ্বাসের ও দখলদারিত্বের, কোন ধর্ম একে অপরকে ছাড় দিবে না কারন তিনটি ধর্মের জন্য ধর্মীয় দিক থেকে জেরুজালেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
জেরুজালেমে ধর্মীয় তিনটি গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা আছে,
১. আল আকসা মসজিদ (মুসলিমদের প্রথম কিবলা বায়তুল মোকাদ্দাস)
২. টেম্পল মাউন্ট (ইহুদীদের ধর্মীয় উপাসনালয়)
৩. চার্চ অফ দি হলি সেপুলচার (খ্রিস্টানদের গির্জা বা ধর্মীয় উপাসনালয়)।
নোটঃ জেনে রাখি যে জাতি হিসাবে ইহুদীরা কখনোই জেরুজালেম স্থায়ী ভাবে পায়নি।
জেরুজালেম থেকে বিতাড়িত হয়ে কখনো কেনান, মিশর, ইউরোপে তাদের অবস্থান করতে হয়েছে, যদিও আবারো তারা জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম ছিল কারন, সৃষ্টিকর্তা তাদের প্রার্থনায় তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
=======
মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম হোমো স্যাপিয়েন্স। অস্ট্রালোপিথিকাস নামক গণের গ্রেট এপ থেকে বিবর্তিত হয়ে ২৫ লক্ষ বছর আগে পূর্ব আফ্রিকায় মানুষের প্রথম উদ্ভব ঘটে। পৃথিবীর বর্তমান মানুষ প্রজাতি হোমো স্যাপিয়েন্সের উদ্ভব ঘটে প্রায় তিন লক্ষ বছর আগে। প্রায় সত্তর হাজার বছর আগে স্যাপিয়েন্সের এক বিবর্তনীয় পরিবর্তন ঘটলো যাকে আমরা মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক বিপ্লব বলতে পারি। হঠাৎ করে মানুষের তার চিন্তা করার ক্ষমতা জন্মালো এবং সে যোগাযোগ দক্ষতা অর্জন করলো। অধিকতর কৌশলসম্পন্ন অস্ত্র, এমনকি আগের থেকে আরো বড় বানিজ্য নেটওয়ার্ক গঠন করতে শুরু করলো।
কীভাবে খাবারের খবর অন্যদের কাছে পৌঁছে দিতে হয়। যদি শুধু মুখের ভাষা বিবেচনা করি, সেই হিসেবেও সেপিয়েন্সদের এই ভাষা প্রথম ভাষা নয়। অনেক প্রাণীর, যেমন গরিলা, শিম্পাঞ্জি এবং বানরের অনেক প্রজাতির নিজস্ব মুখের ভাষা আছে। উদাহরণ হিসেবে সোনালি-সবুজ পশমওয়ালা এক জাতীয় বানরের নাম করা যায় (Green monkey), যারা একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বিভিন্ন মৌখিক ধ্বনি ব্যবহার করে।তিমি ও হাতিরও এরকম অনেক ধরনের ধ্বনি তৈরির ক্ষমতা আছে। আমাদের পূর্ব পুরুষগণ তাদের জীবন অতিবাহিত করতো শিকার করে ও অন্যান্য খাদ্যশস্য সংগ্রহ করে। কোন এক জায়গায় স্থিত হয়ে বসবাস না করে তারা ক্রমাগত জায়গা পরিবর্তন করেছে। তাদের স্থানান্তরের প্রধান কারণই ছিল খাদ্য। বর্তমান থেকে প্রায় ১০০০০ বছর আগে পৃথিবীর প্রায় সকল অঞ্চলের মানুষই শিকার ও সংগ্রহ পরিত্যাগ করে কৃষিতে স্থিত হয়ে গেলো। সত্যিকারার্থেই এটা ছিল একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন। আমরা তাই এটাকে মানুষের কৃষি বিপ্লব বলে অবহিত করে থাকি। এ সময়ে যে বড় পরিবর্তনটা ঘটলো তা হলো, সংখ্যায় মানুষ অনেক বেড়ে গেলো।
প্রাচীন শিকারি-সংগ্রাহকরা সংক্রামক রোগে অনেক কম আক্রান্ত হতো। কৃষি কিংবা শিল্পভিত্তিক সমাজে যে সমস্ত রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল (যেমন গুটিবসন্ত, হাম, যক্ষা) সেগুলোর বেশিরভাগেরই উৎপত্তি আসলে গৃহপালিত পশুপাখি থেকে। এইসব রোগজীবাণু পরবর্তী সময়ে মানুষের শরীরে স্থানান্তরিত হয় মূলত কৃষিবিপ্লবের পরে, আগে নয়।কৃষি বিপ্লবের ফলে গোত্রভিত্তিক সমাজ ভেঙে ক্রমে পরিবারভিত্তিক সমাজ তথা গ্রাম গঠিত হতে থাকে। প্রায় তিন হাজার খ্রিস্ট পূর্বাব্দে ঠিক এ ধরণের সমস্যা থেকেই লিখন পদ্ধতি ও মুদ্রার উদ্ভব ঘটায় মানুষ।মানুষের প্রথম মুদ্রা কিন্তু কোন ধাতব মুদ্রা ছিল না। একেক সভ্যতায় একেক রকম মুদ্রার প্রচলন দেখা যায়। সবচেয়ে বেশি দেখা যায় কড়ির ব্যবহার, খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের মাঝামাঝি সময়ে, মেসোপটেমিয়াতে। রূপাকে মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করে সেখানকার মানুষ। ১৭৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ব্যবিলনীয় রাজা হাম্মুরাবি যে আইনমালা লিপিবব্ধ ও প্রয়োগ করেন, সেটি হাম্মুরাবি কোড নামে পরিচিত। এই আইনের প্রয়োগ ছিল পুরো ব্যবিলনীয় রাজ্যে, যার মাধ্যমে শুল্ক নির্ধারণ করা হতো; চুরি/ডাকাতি/হত্যাসহ অন্যান্য অপরাধের বিচার করা হতো। ফলে পুরো সাম্রাজ্যের মানুষ জানতো কোনটা করা যাবে আর কোনটা করা যাবে না।
, নতুন নতুন আইডিয়া ও নতুন সম্পদের খোঁজে রাজা ও সম্রাটগণ দু’হাত ভরে বিনিয়োগ করতে শুরু করেব। স্পেনের রাজা কলম্বাসের আটলান্টিক পাড়ি দেয়ার অর্থ যোগালেন। বিনিময়ে তিনি পেলেন সোনা রূপায় সমৃদ্ধ বিরাট আমেরিকান সাম্রাজ্য।একইভাবে ব্রিটিশ সরকার জেমস কুককে আর্থিক সহায়তা দিয়ে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চল অনুসন্ধানে পাঠায়, যার ফলস্বরূপ আবিস্কৃত হলো অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। উভয় ক্ষেত্রেই লাভবান হলো ইউরোপিয়ান অর্থনীতি।স্পেন ও ব্রিটেনের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ইউরোপিয়ান রাষ্ট্রগুলো ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের আনাচে কানাচে এবং এশিয়া, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকায় তাদের উপনিবেশ গড়ে তোলে। উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যে কেবল বিট্রিশ সাম্রাজ্যই পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক ভূমিতে তাদের বিস্তার কায়েম করে। ইউরোপের দিকে তাকালে দেখা যায়, সাম্রাজ্য বিস্তারের ফলে তাদের সমষ্টিগত ক্ষমতা অনেক বেড়েছে, তাদের আদর্শ, চিন্তাধারা, প্রযুক্তি আর বৈচিত্র্যময় খাবার ছড়িয়ে পড়েছে সারা পৃথিবীতে,
বিবর্তন মানুষকে দেহে-মনে একটা শিকারি-সংগ্রাহক প্রাণী হিসেবেই তৈরি করেছিল। সেখান থেকে প্রথমে কৃষিনির্ভর ও তার পরে শিল্পনির্ভর জীবনে প্রবেশ করে মানুষ তার প্রাকৃতিক জীবন হারিয়েছে। এই কৃত্রিম জীবন তার চাওয়াগুলো পূরণ করতে পারছে না, তার সহজাত প্রবৃত্তিকে বিকশিত হতে দিচ্ছে না। তাই তার সন্তুষ্টিও হচ্ছে না। আদিম মানুষের ম্যামথ শিকারের যে সুতীব্র উত্তেজনা আর বুনো উল্লাস, তা আজকের একটা শহুরে মধ্যবিত্ত পরিবার কল্পনাও করতে পারবে না। অতএব এটা বলা যুক্তিসংগত যে, আমাদের প্রত্যেকটা নতুন আবিস্কার আমাদেরকে আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বর্গ থেকে একটু একটু করে দূরে নিয়ে যাচ্ছে।
বয়স প্রতিরোধেও বিজ্ঞানীদের অগ্রগতি আশানুরূপ। জিন কাঠামোতে পরিবর্তন এনে তারা কৃমি জাতীয় একটি প্রাণীর আয়ু দ্বিগুণ করতে সক্ষম হয়েছেন। ইঁদুরের ক্ষেত্রে প্রয়োগের প্রক্রিয়া চলছে এখন। একদিন যে মানুষের ক্ষেত্রেও এটা সক্ষম হবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন বিজ্ঞালব্ধ জ্ঞানের প্রয়োগে মানুষ প্রজাতিটি তার শরীরের এমন পরিবর্তন করবে যে টেকনিক্যালি তাকে আর হোমো স্যাপিয়েন্স বলা যাবে না। আমরা একটি নতুন প্রজাতিতে পরিণত হব – অর্ধেক জৈবিক আর অর্ধেক যান্ত্রিক।
=============
পশ্চিমা বিশ্বে যৌনতাকে দেখা হয় ক্ষুধা বা নিদ্রার মতোই মানুষের একটা স্বাভাবিক শারীরিক এবং মানসিক চাহিদা বা প্রবৃত্তি হিসাবে। সে কারনেই এখানকার মানুষ যৌনতাকে উপভোগ করে, মানুষের যৌন-স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। তারমানে এই নয় যে, এরা রাস্তা-ঘাটে বা যেখানে সেখানে বা যারতার সঙ্গে যৌনতা করে বেড়ায়। এদের যৌনতায় সুন্দর একটা সম্পর্ক থাকে, প্রতিজ্ঞা থাকে, থাকে শিল্প। আর এ-কারণেই পশ্চিমারা তাদের সন্তানদের এই প্রয়োজন বা চাহিদার বিষয়টাও ভাবে। সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলে বাবা-মা সন্তানের সঙ্গে যৌনতা নিয়ে প্রয়োজনীয় আলোচনা করেন, সন্তানের প্রেমের সম্পর্ককে সম্মান করেন, আর তাদের প্রাইভেসি বা ব্যক্তিগত সম্পর্ক তৈরির জন্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে দেন।
এবার বলি পশ্চিমা বিশ্বে বসবাসরত বাঙালিদের কথা। বাঙালিরা পশ্চিমা বিশ্বে বসবাস করেও, তাদের সন্তান পশ্চিমা বিশ্বে জন্মগ্রহণ করার পরও, তারা যৌনতাকে দেখেন পাপ, অশ্লীলতা আর অপরাধ হিসেবে। তারা সন্তানের যৌন স্বাধীনতা হরণ করার উদ্দেশ্যে কন্যা সন্তানের জন্য বাংলাদেশ থেকে পাত্র ধরে নিয়ে আসেন, কন্যা সন্তানকে পাহারা দিয়ে রাখেন, অনেকে কন্যা সন্তানকে জোর করে বোরখা হিজাব পরতে বাধ্য করেন।
======================
আমাদের দেশের অসংখ্য মানুষের কাছে একটি ঘৃণিত প্রাণী হচ্ছে শুকর। ওমিপ্রাজল, ওয়ারফারিন, লিভোথাইরক্সিন, অ্যাসপিরিন, সিটালোপ্রাম , কোডেন, ইভুপ্রোফেন, হাইড্রোকর্টিসন, সিমভাস্টাটিন এমন আরো অসংখ্য ওষুধ যে আপনি খাচ্ছেন তা তৈরি হচ্ছে শুকরের দেহ থেকে।আপনার অগ্নাশয়ে এনজাইমের ঘাটতি হলে তা পূরণ করা হয় শুকরের অগ্নাশয় নিঃসৃত এনজাইম ব্যাবহার করে। মানুষের থাইরয়েড গ্লান্ডে সমস্যা হলে শুকরের শুকনো থাইরয়েড গ্লান্ড ব্যাবহার করে মানুষকে সুস্থ করা হয়।রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করতে আপনারা যে হেপারিন ব্যাবহার করেছেন তা এসেছে শুকরের নাড়িভুঁড়ি থেকে।
গরুর মুত্রের কথা শুনে যারা হাসাহাসি করেন তারা কি জানেন প্রিমারিন নামক ঔষুধ তৈরির জন্য প্রতিবছর সাত লাখ পঞ্চাশ হাজার ঘোড়ার প্রস্রাব ব্যাবহার করা হয় ? গরুর মুত থেকেও এই ধরণের ওষুধ তৈরি হয় কারণ গরুর মুতে প্রচুর পরিমাণে ইস্ট্রোজেন হরমোন থাকে।
ক্যাপসুলের উপরে যে একটি আবরণ থাকে একে জেলাটিন বলে এবং যা তৈরি হয় শুকর থেকে। কিন্তু এতোকিছু জেনে আপনি কি করবেন ? শুকরের হৃদপিন্ড লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা মানুষকে সুস্থ করে ফেলেছে এসব বা কয়জনে জানেন? আমরা শুধু ঘৃণা করার শিক্ষা পেয়েছি , ভালোবাসার শিক্ষা নয়।
আপনারা দিনের পর দিন যে ইনসুলিন গ্রহণ করেছেন তাও তৈরি হতো শুকর থেকে। আমেরিকার ৭৪ শতাংশ ওষুধ তৈরি হয় গরু, শুকর , কুকুর, উট , সাপ ও বিভিন্ন প্রাণী থেকে।একটা অনাহারী কুকুরকে কেউ একটু খাবার দিলে আপনারা যেভাবে উপহাস করেন বোবা বলেই কুকুর হয়তো তার প্রতিবাদ করতে পারেনা। আপনি কুকুরকে খাবার না দিলেও অন্য বাড়ি থেকে মারামারি করে খাবার খেয়ে এসে ঠিক আপনার বাড়িটাই পাহারা দিবে এবং এটাই হচ্ছে কুকুর। মানুষের শুরু থেকেই কিছু প্রাণী মানুষের সাথেই চলছে।গরু , ছাগল , কুকুর , বিড়াল , উট , শুকর এদের অন্যতম।
আমরা পৃথিবীর অনেক প্রাণীকেই অহেতুক/ অকারণে ঘৃণা করি ও হত্যা করি। অথচ ওদের শরীর থেকেই আসছে আমাদের জীবনরক্ষাকারী নানা ওষুধ। আমাদের জীবন রক্ষাকারী বিভিন্ন টিকা বানর , শুয়োর ও ইদুরের শরীরে পরীক্ষা করে তারপর তাদের দেহে সফল হলে তা মানুষের দেহে পরীক্ষা করা হয়।মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে ওদের জীবন নিয়ে জুয়া খেলা হয়। তারপরও মানুষের কাছে কিছু প্রাণী অহেতুক ঘৃণার পাত্র। মানুষের ঘৃণায় ওই বোবা প্রাণীদের কিছুই যায় আসেনা। কারণ ওরা মানুষের চরিত্র কেমন তা খুব ভালো করেই জানে।।
===========
আব্রাহামীয় ধর্ম বা সেমেটিক ধর্ম
গাজা আর ফিলিস্তিন হচছে ইস্রাইলের ২পাশে ছোট্ট দুটি অঞ্চল, অনেকটা পাকিস্তান আর বাংলাদেশের মত, প্যালেস্টাইন-ইজরায়েল বর্ডার জর্জ হাবাস লাইন.
আমরা যাকে ইব্রাহীম আঃ বলে জানি,ইহুদীদের কাছে তিনিই হচ্ছেন ১ম ইহুদি আব্রাহাম । তার নাতি হচ্ছে জ্যাকব বা এয়াকুব নবী । ইহুদীরা নিজেদেরকে এই যাকোব বা (ইয়াকুব)-এর উত্তরপুরুষ বলে মনে করেন। এই জ্যাকব বা ইয়াকুব (আ.)-এর এক পুত্রের নাম ছিল ইয়াহুদা। সেই নামানুসারে তাদের অনুসারীদের ‘ইহুদি’ বলে ডাকা হয়। এই জেকব বা ইয়াকুব-এর বারো পুত্র ফিলিস্তিনের ছোট্ট এওটা অংশ কেনান এলাকাকে বার ভাগে ভাগ করে শাসন করতো। এই বারো পুত্রের একজন হচ্ছেন বেনিয়ামিন-। তার উপাধি নাম ছিল ইসরাঈল। তার শাসনাধীন গোত্ গুলোকে একত্রে বলা হত বনী ইসরাঈল । বনী ইসরাঈল নামে কোরআনে একটি সূরাও আছে। এই বনী ইসরাঈলের ইসরাঈল নাম অনুসারে ইহুদীদের বসবাসরত জায়গাটির নাম হয় ইসরাইল।
ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ ওল্ড টেস্টামেন্ট অনুযায়ীই ইসরায়েলিরা তাদের বসবাসের এই কেনান এলাকাকে পবিত্র ভূমি বা প্রমিসড ল্যান্ড বলত; ঐ সময় প্যালেস্টাইনে ছোট একটা অংশে ইজরাইলিরা বাস করত। অর্থাৎ ফিলিস্তিনি এবং ইজরাইলি এই দুটি জাতিই এই বিতর্কিত অঞ্চলের আদি অধিবাসী। পরবর্তীকালে প্রথম খৃষ্টাব্দে অর্থাত ৭০ সালে রোমান সম্রাট ক্লদিয়াস দ্বারা ইজরাইলিরা ঐ জায়গা থেকে উচ্ছেদ হয়। এরপর তারা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তবে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়লেও তাদের ইহুদি জাত্যাভিমান ছিল প্রবল। তারা যখন নির্বাসিত জীবনযাপন করছিল তখন তারা সেখানে বসে তাদের প্রিয় মাতৃভূমি জেরুসালেমের দিকে মুখ করে মাথা ঝাকিয়ে কাঁদতে থাকতো আর বিরহ গীত গাইতো।
জেরুজালেম-এ ইহুদিরা কিছু ভূমি প্রাপ্য ছিল। কিন্তু মুশকিলটা হচ্ছে তারা তাদের ধর্মগ্রন্থ অনুযায়ী প্রমিসড ল্যান্ড নামে বিশাল ভূমি দাবী করা। ইসলামের আভির্বাবের পর মুহাম্মদ (দ.) যখন এই বিবাদিত ধর্মীয় স্থানের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করত, তখন ইহুদিরা বলত, মুহাম্মদ আমাদের নবী ও ধর্ম অনুসরণ করে। হঠাৎ একদিন মুহাম্মদ(দ.) নামাজরত অবস্থায় কাবার দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। এর দুটো কারণ ছিল, এক মক্কা ও কাবা দখল করা, দুই ইহুদিদের গর্ব খর্ব করা।
পরবর্তীতে মুহাম্মদের (দ.) শশুর ওমর (র।) যখন খলিফা হয়, সেই সময় এই ইহুদিদের ইবাদত গৃহ আক্রমণ করে একটা মসজিদ নির্মাণ করেছিল। ঐ মসজিদ পরবর্তীতে খৃষ্টানদের দখলে চলে যায়, এবং তারা তা গির্জা হিসাবে ব্যবহার করে। তারপর জায়গাটি ফের মুসলিমদের অধীনে আসে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তির পক্ষে থাকায় ইহুদিদের সেটলমেন্টের ব্যবস্থা করল ব্রিটিশ সরকার। ঠিক এই জায়গাতেই লাগল সংঘর্ষ। কারণ ফিলিস্তিনিরা নিজেদের দখল ছাড়তে নারাজ ছিল। ইউনাইটেড নেশনস-এর স্থির করে দেওয়া প্যালেস্টাইন-ইজরায়েল বর্ডার জর্জ হাবাস লাইন যদি ফিলিস্তিনিরা মেনে নিতো; তাহলে ফিলিস্তিনরা এভাবে স্বাধীনতা হারাতো না । ইজরাইলিরা যেভাবে প্যালেস্টাইনে আধিপত্য বিস্তার করেছে, একই কায়দায় মুসলমান হিজবুল্লাহ গোষ্টি খৃস্টান অধ্যুষিত দেশ লেবানন দখল করে আজ প্রচন্ড শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।
গাজা ফিলিস্তিনের অংশ হলেও গাজার সঙ্গে বর্তমান ফিলিস্তিনের কোন সীমান্ত নেই। গাজার একদিকে ভূমধ্যসাগর। দুদিকে ইসরাইল (সীমান্ত ৫১ কিলোমিটার) ও একদিকে মিশর (সীমান্ত ১১ কিলোমিটার)। গাজা থেকে ফিলিস্তিনের মূল ভূখণ্ডে যেতে হলে ইসরাইলের ওপর দিয়ে যেতে হয়। গাজার আয়তন ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার। লম্বায় প্রায় ১০০কলো আর প্রস্ত ৩০কিলো। জনসংখ্যা ২৩ লাখ। পৃথিবীর মধ্যে সম্ভবত তৃতীয় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। ১৯৪৮-এর যুদ্ধে গাজা এলাকা মিশরের দখলে চলে যায়। এভাবেই ছিল ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত। ১৯৬৭ আরব-ইসরাইল যুদ্ধে গাজাসহ মিশরের সিনাই এলাকা দখল করে নেয়। ১৯৭৯ সালে মিশর-ইসরাইল চুক্তির মাধ্যমে ইসরাইল সিনাই থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় কিন্তু গাজা ইসরাইলের দখলে থেকে যায় ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত। ১৯৯৪ সালে অসলো চুক্তির মাধ্যমে ইসরাইল ফিলিস্তিনকে বিভিন্ন এলাকা ছেড়ে দিতে সম্মত হয়। এরই অংশ হিসেবে গাজা ফিলিস্তিনের অংশভুক্ত হয়।
ফিলিস্তিনে বর্তমানে যে সরকার আছে তা ফিলিস্তিনের নেতা ইয়াসির আরাফাতের দলের সরকার। ফিলিস্তিনে ইয়াসির আরাফাতের দলের বিরুদ্ধে ১৯৮৭ সালে গাজা ভূখন্ডে হামাসের জন্ম হয়। ইয়াসির আরাফাতের দলের বিরুদ্ধে হামাসকে তখন গোপনে সহযোগিতা করছিলো ইসরায়েল। ২০০৫ সাল পর্যন্ত হামাস কোন স্বশস্ত্র সংগঠন ছিলো না। ২০০৫ সালে ইসরায়েলের স্বশস্ত্র বাহিনী গাজা ভূখন্ড ছেড়ে চলে আসে, তখন ছোট এই দেশে দুই প্রান্তে দুই সরকার গড়ে উঠে। এভাবে চলে ২০০০ সাল পর্যন্ত। এ সময়ে গাজার গেরিলারা ইসরাইলে আত্মঘাতী হামলাসহ রকেট হামলার সূচনা করলে ইসরাইল সীমান্তে দেয়াল ও কাঁটাতারের প্রতিবন্ধক তৈরি করে। এভাবে চলতে থাকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। এসময়ে গাজায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে হামাস জয়লাভ করে। এভাবে ২০০৭ সালের জুনে গাজার রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়।
হামাসের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সব ধরণের সংযোগ বন্ধ করে দেয়। অপরদিকে ইসরাইল ও মিশর গাজাকে সবদিক থেকে বন্ধি করে ফেলে, এর ফলে গাজা একটা ওপেন-এয়ার জেলখানায় পরিণত হয়।
তবে প্রতিদিন গাজা উপত্যকা থেকে ১৯ হাজার মুসলমান গিয়ে ইসরায়েলের বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে যার মাধ্যমে গাজা উপত্যকার ১৯ হাজার মুসলমানদের পরিবার চলে। এছাড়া ইসরায়েল নামক ইহুদী রাষ্ট্রে প্রায় ২৪ লক্ষ মুসলমান বাস করে। কাজেই এই অঞ্চলের লড়াইটা ধর্মের লড়াই নয় , এখানে চলছে ভূমি দখলের লড়াই। করেছে।
আমি মনে করি এস সমধান দুইটি। ১- গাজা ফিলিস্তিন ও ইসরাইল একটি রাস্ট্র হিসেবে থাকা নতুবা ৩টি আলাদা রাস্ট্র গড়ে তোলা। কারণ দুই রাস্ট্রভিত্তিক সমধান করা হলে ফিলিস্তিনিরা জ্ঞান-বিজ্ঞানসহ সবকিছুতে পিছিয়ে পডবে এবং গাজার লোকেরা ফিলিস্তিনের অধীনতা মানবে না বর্তমানের মত। ফলে পূর্বপাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তান তৈরি হবে; যার ভবিষ্যত যুদ্ধ আর দ্বন্ধ।
=========
হাজার বছর আগে বাঙ্গালি জাতির মুখের ভাষা ‘বাংলা’কে কেড়ে নিয়েছিল দক্ষিণ ভারত থেকে আগত সেন রাজারা। সেন রাজাদের হিন্দু পণ্ডিতরা নির্দেশ জারি করেছিল, 'যারা বাংলা ভাষা বলবে ও শুনবে তারা রৌরব নামক নরকে যাবে।' ওই সময় তুর্কি বংশোদ্ভূত ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি নির্যাতিত বাঙালিদের মুক্ত করতে এগিয়ে আসেন এবং ১২০৪ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১৮ জন ঘোড়সওয়ারি নিয়ে সেন রাজাকে পরাজিত করে বাংলাকে স্বাধীন করেন। বক্তারা বলেন, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজির বাংলা বিজয়ের মাধ্যম সেই দিন শুধু ভূমির বিজয় হয়নি, সঙ্গে মুক্ত হয়েছিল বাঙ্গালিদের মুখের ভাষা ‘বাংলা’।
ভাষাবিদ দীনেশ চন্দ্র সেন বলেন, 'মুসলমান সম্রাটরা বর্তমান বঙ্গ-সাহিত্যের জন্মদাতা বললে অত্যুক্তি হয় না। বঙ্গ-সাহিত্য মুসলমানদেরই সৃষ্ট, বঙ্গ-ভাষা বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা।' অধ্যাপক ও গবেষক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, 'যদি বাংলায় মুসলিম বিজয় ত্বরান্বিত না হতো এবং এ দেশে আরও কয়েক শতকের জন্য পূ্র্বের শাসন অব্যাহত থাকত, তবে বাংলা ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যেত এবং অবহেলিত ও বিস্মৃত-প্রায় হয়ে অতীতের গর্ভে নিমজ্জিত হতো।'
মধ্যযুগে মুসলিম শাসকদের রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলা ভাষার যে সাহিত্যচর্চা শুরু হয়, তার মাধ্যমে বাংলা ভাষা একটি পরিপূর্ণ ভাষা হিসেবে আত্মপ্রকাশের যোগ্যতা অর্জন করে
· ১. মানসিক প্রস্তুতি সফলতার প্রথম ধাপ
· মানসিক প্রস্তুতি লক্ষ্য অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। যেকোনো বয়সে লক্ষ্য স্থির করতে হলে প্রথমেই নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। বয়স যতই হোক, সঠিক মানসিকতা ছাড়া আপনি সফলতা অর্জন করতে পারবেন না। নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন এবং ইতিবাচক চিন্তা করুন।
· যেকোনো নতুন লক্ষ্য শুরু করার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন—“কেন এই লক্ষ্য অর্জন করতে চাই?”
· এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর পাওয়া গেলে, তা আপনাকে মানসিকভাবে আরও দৃঢ় করে তুলবে। শুধু তাই না, ব্যর্থতা বা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হলে এই মানসিক প্রস্তুতি আপনাকে লক্ষ্যে অটল থাকতে সাহায্য করবে।
· .
·
·
· আজই লক্ষ্য স্থির করুন এবং এক ধাপ করে তা পূরণের পথে এগিয়ে যান।
·
·
·
·
· মাথার বোঝা নামাতে পারলে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে,
নাভি থেকে শ্বাস বেরোলেই তাকে বলে নাভিশ্বাস। কিন্তু বাঙ্গালীর এখন পেট চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরোচ্ছে! এ সময়টার দৌড় যতই কম হবে ততই মঙ্গল।
সম্পদ যতো, তাঁর সাথে চাহিদা আর অভাব আসবে তাতো । আগে আমার কিছুই ছিলনা, অভাবও ছিলনা। আর এখন যে দিকেই তাকাই , খালি নাই আর নাই। আগে আমার অভাব পড়লেও সেটা ছিল এক দুই হাজারের ব্যপার। কোন ভাবে মেটান যেত। আর এখন আমার অভাব লক্ষ কোটি টাকার। এটা মেটাবো সে চিন্তায় আমার এখন আর রাতে ঘুম আসেনা স্যার
· মালায়লাম ভাষায় একটা মুভি আছে, নাম হ্যাপি ডেইজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষে সবাই যখন সনদ নিয়ে চলে যাচ্ছে তখন একজন ডিগ্রিধারীর মনে একটা প্রশ্ন উদয় হয়। সে তার প্রফেসরকে প্রশ্ন করে-
· স্যার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমি কী শিখলাম আর কী-ই বা অর্জন করলাম?
· তখন স্যার তাকে বলেন,‘তুমি ভালো এবং খারাপের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে, তুমি অসহায়কে সাহায্য করতে পারবে। তুমি শিখেছ আত্মত্যাগ এবং ভালো বন্ধুত্বের মাধ্যমে। বিদ্যায়তনে কেউ কিছু অর্জন করতে আসে না কিন্তু অর্জন করার সক্ষমতা আয়ত্ত¡ করতে পারে। তুমি যদি জীবনের কোনো এক সময়ে কিছু একটা করতে চাও তবে তুমি কিছুতেই পিছু হটবেনা।’
· সা
—---------------
সরকার একদিকে মোটরসাইকেলের গতিসীমা বেঁধে দিচ্ছে, আরেক দিকে ৩৭৫ সিসির মোটরসাইকেল বাজারে ছাড়ার অনুমতি দিচ্ছে। এই ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কি?
—-------------
============
রিচার্ড ডকিন্স তার "গড ডিল্যুশন" বইতে বলেছিলেন, মানুষের ডিএনএ পরিবার, সমাজ, দেশ অথবা বিদেশ চেনে না। মানুষের ডিএনএ তে আছে সেলফিশ জিন। একটি ভাইরাস যেমন জীবদেহ দখল করে তাকে নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য কাজ করে, মানুষের ডিএনএ তেমনি। এটি তার নিজের জিন সুরক্ষার স্বার্থে আমাদের দেহকে ব্যবহার করে।
রেডব্যাক স্ত্রী মাকড়সা যৌন সঙ্গমের পর পুরুষ মাকড়সাকে খেয়ে ফেলে।ম্যান্টিস নামে একটি পোকা আছে। সঙ্গম শেষে নারী মান্টিস পুরুষটির মাথা শিরোচ্ছেদ করে তাকে খেয়ে ফেলে। সবুজ অ্যানাকোন্ডার সাথে মিলনের জন্য একসাথে দশটির বেশি পুরুষ প্রতিযোগিতা করে এবং যা ৪ সপ্তাহ পর্যন্ত চলে। আকারে বড় হওয়া স্ত্রী সবুজ অ্যানাকোন্ডা এক পর্যায়ে সন্তান জন্মদানের পুষ্টির জন্য সঙ্গমের পর পুরুষ অ্যানাকোন্ডাদের খেয়ে ফেলে।
মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও এইসব প্রাণি নারীর সাথে সেক্স করতে মরিয়া কারণ তার কোনো স্বাধীন ইচ্ছা নেই, সে হলো জিনের একটি বাহক মাত্র। নিজেকে পরবর্তী প্রজন্মে হস্তান্তর করার উদ্দেশ্যে সে চালিত। নোয়াহ হারারি বলেছিলেন, ঘরপ্রেম বা দেশপ্রেম একটি ফিকশন। এর উদ্দেশ্য দেশ নয়, নিজের জেনারেশন রক্ষা করা। জিনগতভাবেই আমরা সেলফিশ বলেই আমরা প্রত্যেকেই নিজের স্বার্থের প্রশ্নে আপোষহীন। আপনি যদি আমার স্বার্থে আঘাত করেন, তবে আমি বিদ্রোহী হব। এটা আমার অস্তিত্বের লড়াই। এই কারণে আমরা একইসাথে দেশপ্রেমী এবং একইসাথে দেশদ্রোহী। আসলে আমরা সবাই এক একজন হিংস্র শিকারী।
শেখ হাসিনার স্বৈরাচারের পেছনে দায়ী যোগ্য প্রতিদ্বন্ধীর অভাব।
============
Nature এর তরফে বিশ্বের সর্বোচ্চ বিজ্ঞান বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা প্রকাশিত হবার পর হইচই পড়ে গেছে।
প্রথম দশে সাতটি চীনের আর একটি করে আমেরিকার, জার্মানি আর ব্রিটেনের।
বলাই বাহুল্য ভারতের কোন প্রতিষ্ঠানের নাম নেই।
কারণটা অজানা নয়, চীন লাগাতার উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগ করে চলেছে।
আর ভারতে উচ্চ শিক্ষায় এই বছর আগের কয়েক বছরের মতোই লাগাতার আবার ব্যাপক বাজেট হ্রাস করেছে।
এইভাবেই আমরা এগিয়ে যাবো।
============
ওরে আমার দরদী..
আগে জানলে তোর ভাংগা নৌকায় চরতাম না
============
জুলিয়াস সিজার
জুলিয়াস সিজার। প্রখ্যাত রোমান সেনাপতি ও শাসক । পুরো নাম গাইয়াস জুলিয়াস সিজার। খ্রিস্টপূর্ব ১০০/১০১ পূর্বাব্দ ১২/১৩ জুলাই রোমে জন্ম নেওয়া এই মহাযোদ্ধা গোটা বিশ্বের ইতিহাসে অনন্য এক সমরনায়ক ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে সুপরিচিত। পিতা গাইয়ুস জুলিয়াস সিজার ছিলেন রোমান সিনেটর মা আউরেলিয়া কোট্টা। ট্রোজান রাজকুমার ঈয়েনেয়াস-এর বংশধর জুলিয়াস সিজার ।
বীর এই যোদ্ধার উত্থান এক দিনে হয়নি, বছরের পর বছর নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে সিজার ইতিহাসে তাঁর বর্তমান অবস্থান তৈরি করেছেন। প্রচলিত আছে, জুলিয়াস সিজার যে বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে বংশের আদিমাতা হলেন গ্রিকদের প্রেম ও সৌন্দর্যের দেবী ভেনাস। নিজে উচ্চবংশের মানুষ হলেও সিজার বিয়ে করেছিলেন অতি সাধারণ বংশের এক নারীকে। সাধারণ এক নারীকে বিয়ে করার জন্য তাঁকে রোম ছেড়ে এশিয়া মাইনরের দিকে পালাতে হয়। সেখানে যুদ্ধরত একটি দলের সঙ্গে যোগ দিয়ে সিজার তাঁর সমরনৈপুণ্য প্রমাণ করেন। দুই বছর পর রোমে ফিরে আইন ও রাজনীতি বিষয়ে লেখাপড়া শুরু করেন জুলিয়াস সিজার। রাজনৈতিক কৌশল খাটিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী সুল্লার মতবাদের প্রবক্তা হিসেবে কাজ করতে থাকেন। এ সময় পুরো রোম জলদস্যুদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল। রোম সিনেটের সিদ্ধান্তক্রমে জুলিয়াস সিজার শক্ত হাতে জলদস্যুদের দমন করেন। এ ছাড়াও নানা বিদ্রোহ দমন ও রাজ্যবিস্তারে সফল অভিযান সিজারকে একজন দক্ষ সমরনায়কের খ্যাতি এনে দেয়।
খ্রিস্টপূর্ব (৬৮)সরাসরি রাজ নীতিতে যুক্ত হন জুলিয়াস সিজার। সে বছর সিনেটের সদস্যপদ লাভের পাঁচ বছর পর লাভ করেন রোম সিনেটের ধর্মাধ্যক্ষের পদ। এ পদ লাভের ফলে সিজার তৎকালীন রোমের সেরা তিন বীরের একজন হয়ে যান। কৌশলে ওস্তাদ সিজার প্রতিদ্বন্দ্বী পম্পেইয়ের সঙ্গে নিজের মেয়ের বিয়ে দেন। কিছু দিন পরই পম্পেইয়ের সমর্থনে সিনেটের কনসাল হয়ে যান জুলিয়াস সিজার। তিনি গল, (বর্তমান ফ্রান্স) জার্মানি, ব্রিটেনসহ রোম সাম্রাজ্যের অর্ধেকটাই নিজের দখলে আনেন। গল উপ জাতিদের পরাজিত করে তিনি রোমের সীমানা উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের তীর (বর্তমান ইংলিশ চ্যানেল) পর্যন্ত বিস্তৃত করেন ।
এরপর আরো বেশি যুদ্ধে জড়াতে হয় সিজারকে । পম্পেইয়ের সঙ্গে সম্পর্কেও ধরে ছেদ । কিন্তু সব যুদ্ধে জয়লাভ করে সিজার তখন মাস্টার অব রোম ! পম্পেইকে পরাজিত করে রোমের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হন সিজার । ফলে দেশটিতে গণতন্ত্রের অবসান হয় । রোম সাম্রাজ্য রক্ষার্থে সিজার একদিকে যখন একনায়কতন্ত্রের পরিকল্পনা করছিলেন , একই সময় অন্য একটি পক্ষ গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অবস্হান নেয় । এরই জের ধরে ৪৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ১৫ মার্চ ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াস নামের দুই ব্যক্তি সিজারকে হত্যা করে ।
একজন সেনানায়ক ও রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার পাশাপাশি সিজার একজন প্রখ্যাত লেখকও ছিলেন । তিনি ব্রিটেনে যা দেখেছিলেন তার সুন্দর একটি বর্ণনা লিখে গিয়েছেন । সিজারের অভিযানের পরবর্তী থেকে আমরা ব্রিটেনের লিখিত ইতিহাস পেয়েছি । রোমান সম্রাট শুধু রাজ্য জয়ই করেননি , তিনি ক্যালেন্ডারের পাতাতেও তার নাম লিখে রেখেছেন । ইংরেজি ক্যালেন্ডারের জুলাই মাস এসেছে তার নাম থেকেই ।
============
“এটি বলে যে একটি বস্তু যখন আলোর গতি (speed of light) সংলগ্ন গতিতে চলে, তখন সময়ের গতি সেই বস্তুর জন্য ধীর হয়ে যায় ”
============
নভেম্বর ২০২৪ থেকে বাংলাদেশের বিমানবন্দর থেকে ইমিগ্রেশন পার করতে ব্যাংক রেমিটেন্সের স্টেটমেন্ট লাগবে।
============
============
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম আদি পুরুষের নাম ছিল কৃত্তিবাস ওঝা। তাঁর পাণ্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে ৰাঙলার নবাব হোসেন শাহ তাঁকে ভূসম্পত্তি দান করেছিলেন, বাংলায় রামায়ণ লিখতে উৎসাহ দিয়েছিলেন ও অনুরোধ জানিয়েছিলেন
হোসেন শাহকে সঙ্গত ভাবেই ৰলা হয় ৰাংলা সাহিত্যের জনক (Father of Bengali
literature)। কৃত্তিবাস ঠাকুর সম্ভবতঃ হোসেন শাহের জীবিতকালে রামায়ণ রচনা শেষ করতে পারেননি। শেষ করেছিলেন তৎপুত্র নসরৎ খাঁ-এর শাসনকালে।
শোণা যায়, হোসেন শাহ কৃত্তিবাস ওঝাকে রামায়ণ রচনার দায়িত্ব দেবার আগেগৌড়ে এক পণ্ডিতসভা ডেকেছিলেন। ৰাঙলার নানান স্থান থেকে বড় বড় পণ্ডিতরা সেখানে এসেছিলেন। এসেছিলেন নদীয়া জেলার রাণাঘাট মহকুমার শান্তিপুরের নিকটবর্ত্তী ফুলিয়া গ্রাম থেকে কৃত্তিবাস ওঝাও। তার পিতার নাম ছিল বনমালী মুখোপাধ্যায়, মাতার নাম ছিল মালিনী দেবী। পণ্ডিতেরা অনেক তর্কের পরে কৃত্তিবাসের শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নেন ও হোসেন শাহ তাকেই রামায়ণ রচনার দায়িত্ব দেন। তোমরা হয়তো ৰলতে পার, আমি রামায়ণ অনুবাদ না ৰলে রামায়ণ রচনা বলছি কেন। না, কৃত্তিবাসী রামায়ণ বাল্মীকী রামায়ণের হুবহু অনুবাদ নয়। কৃত্তিবাস বাল্মীকী রামায়ণ থেকে প্লট নিয়েছিলেন সত্য কিন্তু লিখেছিলেন যা তা তাঁর স্বকীয়তায় ভাস্বর...লিখেছিলেন বাংলার পাঁচালী রীতিতে।
কৃত্তিবাস ঠাকুরের পাণ্ডিত্যে সেকালের ৰাঙলা ছিল মুগ্ধ ....অভিভূত।
“যতেক বিদ্বান জ্ঞানী আছয়ে সংসারে,
ফুলিয়া পণ্ডিতে কেহ নিন্দিতে না পারে"।
তৰ্কে হেরে-যাওয়া ব্রাহ্মণেরা কিন্তু গায়ের জালা মেটালেন কিছুদিন পরে। তাঁরা
বললেন, হিন্দু শাস্ত্র রামায়ণকে ৰাংলা ভাষায় লিখে কৃত্তিবাস ধর্মহানি ঘটিয়েছেন। হোসেন শাহ চাইলেন মহাভারতও ৰাংলায় লেখাতে, ভাগবত শাস্ত্ৰও বাংলায় লেখাতে। কিন্তু ব্রাহ্মণদের ঘোরতর বিরোধিতায় আর কোন পণ্ডিত তখন সেই কাজে এগিয়ে আসতে চাইলেন না। নবাৰ ৰাঙলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্ৰী গোপীনাথ বসুর (পুরন্দর খাঁ) স্বীয় ভ্রাতা মালাধর বসুকে (গুণরাজ খাঁ ---বর্ধমান জেলার কুলীনগ্রাম নিবাসী) ভাগবত শাস্ত্র অনুবাদের দায়িত্ব দেন। নবাৰ সন্তুষ্ট হয়ে ভাগবতের ৰাংলা অনুবাদের নাম রাখলেন 'শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ ও মালাধর বসুকে খেতাৰ দেন গুণরাজ খাঁ।
গোপীনাথ বসু কাটোয়ার নিকটবর্ত্তী সিদ্ধিগ্রামের কাশীরাম দাশকে (তিনিও কায়স্থ)
মহাভারত রচনার অনুরোধ জানান। তাঁকেও হোসেন শাহ ভূসম্পত্তি দান করেন। যাই
হোক, কৃত্তিবাসের বিরুদ্ধে ৰাঙলার ব্রাহ্মণ সমাজ প্রতিহিংসাপরায়ণ ও প্রতিহিংসামুখর হয়ে
ওঠেন। তারা রটনা করলেন যে কায়স্থ প্রধানমন্ত্রী ও মুসলমান নবাৰ মিলে ৰাঙলাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে। তারা ,ৰলতেন– “কাশী দেশে, কৃত্তিবেসে, আর ৰামুন ঘেঁষে এই তিন সৰ্বনেশে।” অর্থাৎ ব্রাহ্মণেরা যেন সতর্ক থাকেন যাতে তারা কোন কায়স্থ বা মুসলমান
বা কৃত্তিবাস ঠাকুরের সমর্থক ৰামুনের সঙ্গে বেশী ঘেঁষাঘেষি মেশামেশি না করেন। ওঁরা ৰামুনের সাহায্যে হিন্দুশাস্ত্রকে ৰাংলায় অনুবাদ করে বাঙলাকে ধ্বংস করে দেৰে। ব্রাহ্মণ সমাজ কৃত্তিবাস ওঝাকে পতিত ৰলে ঘোষণা করেন ও ফুলিয়া মেল থেকে বহিষ্কার করে দেন। কৃত্তিবাস ঠাকুরের পুত্রসন্তান ছিল না। তাই গ্লানির ৰোঝা ৰহন করতে হয়েছিল তাঁর ভ্রাতুষ্পত্র অনুপম ওঝাকে ( অনুপম ওঝার নাম নিয়ে কিছু মতভেদ আছে)।"
(তথ্য সূত্র : বাঙলা ও বাঙালী, শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকার)